মরণ-ঝাঁপ ও জনগণেশ : পরিমল ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ | ১১৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
বিগত আড়াই দশক ধরে এই রাজ্যে সরকারের ভ্রান্ত নীতি আর ব্যবসায়িক পুঁজির যুগলবন্দীতে সরকারি স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্রমশ পঙ্গু করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রমরমা হয়েছে। বলা বাহুল্য, তাতে পৌরহিত্য করেছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ, সমাজের বিপুল অংশের মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সহমত নির্মাণ করেছে। (তাতে পুরোহিতের ছাঁদার যোগান নিশ্চিত হয়েছে, সেটা বিজ্ঞাপনের পাতায় চোখ রাখলেই টের পাওয়া যায়।) মধ্যবিত্ত তো বটেই, নিম্ন আয়ের মানুষেরাও আজ এক প্রকার বাধ্য হয়েছেন এই বেসরকারি ব্যবস্থার কাছে যেতে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে দানা বেঁধে উঠছে অনিশ্চয়তা, স্নায়ুচাপ, ক্ষোভ।
দমদমে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনা এই জটিল পরিস্থিতির ইঙ্গিতবাহী। যে চা-দোকানি মেয়েকে সরকারি অবৈতনিক স্কুলে না পাঠিয়ে আয়ের সিংহভাগ খরচ করে পাড়ার নামজাদা মিশনারি প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাঠাচ্ছেন, আর যে মাংসবিক্রেতা টাকার অভাবে ভাইঝিকে পাঠাতে পারলেন না, যে মধ্যবিত্ত গৃহবধূ স্কুলের দিদিমণির কাছে মেয়েকে টিউশন পড়তে পাঠিয়েছেন “স্পেশাল কোচিং” – এর আশায়, আর যে বস্ত্র ব্যবসায়ী ফি বছর স্কুলে মোটা টাকা ডোনেশান দেন মেয়েকে “স্পেশাল অ্যাটেনশন” -এর লোভে, যে অভিভাবক সেটা দিতে পারেন না, আর যে ছোকরা বিপিও কর্মচারী চোখ শানিয়েছে স্কুল ছুটির পর স্কার্টের নীচে কিশোরী হাঁটু দেখে ... এরা সকলেই ভেতরে এক-একটি কালো চোরা স্রোত পুষে অপেক্ষা করে থাকে, আর একদিন একটি মর্মান্তিক ঘটনা, সেই ঘটনাকে ঘিরে রটনা, এই সব স্রোতগুলোকে মিলিয়ে দেয়। আর সবাই ইটপাটকেল নিয়ে জড়ো হয় দিনভর লাইভ সম্প্রচারিত উন্মত্ত জনগণেশের পুজোয়।
আমেরিকার স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা – কিছু কাটাছেঁড়া (প্রথম কিস্তি) : ঈপ্সিতা পালভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ | ৩৫২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
এই বাধ্যতামূলক বিমা প্রকল্প নিয়ে আপত্তি উঠেছে অন্যান্য অংশ থেকেও, তবে সেটি সম্পূর্ণ অন্য কারণে। রিপাব্লিকান দলের আপত্তির উলটো কারণেও বলা চলে। বেসরকারিকরণ আরো বেশি করে হোক, এমনটিই চান রিপাব্লিকানরা। সরকারি মেডিকেইড, মেডিকেয়ার নিয়েও তাঁদের বিস্তর আপত্তি, কেননা রিপাব্লিকান দলের মতে এসব ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ কমানো দরকার, ওবামা-সরকার সেটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। রিপাব্লিকান পথের ঠিক উল্টোমুখের যাত্রী, আমেরিকা দেশের কিছু র্যামডিকাল অংশও বাধ্যতামূলক বিমা প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলেছে, কেননা তা বেসরকারি বিমাকোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়াবে। PNHP, মানে Physicians for a National Health Program, আমেরিকার প্রায় ১৮০০০ ডাক্তারদের অ্যাসোসিয়েশন এর ঘোর বিরোধী। এঁরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, এই অ্যাক্ট আমেরিকান স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসুখের চিকিৎসার সঠিক প্রেসক্রিপশন নয়। বা, বড়জোর, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মরফিন গোত্রীয়।
কেন? এক তো এটা দিয়ে এর পরেও সমস্ত মানুষকে চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। র্যাডিকল-রা হিসেব করে দেখিয়েছেন, আড়াই-তিন কোটি মানুষ এর পরেও স্বাস্থ্যবিমার আওতার বাইরে থেকে যাবেন। আর এতে করে আমেরিকান স্বাস্থ্যব্যবস্থার অন্য যে মুখ্য সমস্যা, ক্রমবর্ধমান খরচ, তারও বিশেষ সুরাহা হবেনা। কেউ কেউ এও বলছেন, শুধু সুরাহা হবে না, তাই নয়, এতে করে কিছু ক্ষেত্রে আরো বিপদকেই ডেকে আনা হল।
অন্য " কুয়োতলা" : ঈশানী রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ | ১১৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
এমনকি এই যে আমাকে আর ভাইকে নিয়ে ছড়া লিখেছে কত , কিন্তু মনেই পড়ে না , বাবার কাছে বসে ছড়া শুনছি ঘরে বসে | আর এমনিতে যদি কবিতা পাঠের কথা বল ,সে তো অজস্র | কবিতার আসর , সাহিত্যবাসর লেগেই থাকত | অনেক কবিতা পড়ত সেখানে | শুনে শুনে আমার যে কত কবিতাই মুখস্থ !
-- ছড়া ? বা: ! আচ্ছা, কবিতায় ছন্দ নিয়ে কিছু বিশেষ মতামত ছিল ?
--অবশ্যই ! বাবা প্রায়ই লিখেছে , ‘ ছন্দে লেখো আগে | পরে ছন্দ ভাঙার খেলা’ | এই যে সবাই কবিতা লেখে ; ছন্দের ছাঁকনি খুব দরকার | ওই ছাঁকনি ব্যবহার করলেই অ-কবি রয়ে যাবে ছাঁকনিতে আর কবিরা স্বতন্ত্র হয়ে বিরাজ করবেন | তখন সেই সব কবিদের মধ্যে আবার মূল্য নির্ণয়ন করা যাবে…কে কত উজ্জ্বল | এই তো, শান্তিনিকেতনে হয়েছিল ..কবিতা লেখার ক্লাস | সে কী উত্তেজনা | ছেলেপুলেরা লিখছে , বাবাকে দেখাচ্ছে, পড়ে শোনাচ্ছে | বাবা মাত্রা মেপে ঠিকঠাক করে শিখিয়ে দিচ্ছে | বাবা বলত , ' ছন্দ গড়তে শেখার পর…. বুঝতে পারবে | ওই যে সেই খুব চেনা কথা ক'টি ….বাবাই লিখেছিল , ' ভাঙা ….গড়ার চেয়েও মূল্যবান কখনো সখনো ' .. |
হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ এপ্রিল ২০১৩ | ১৫৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
এর থেকে মনে হয়, হাসাকে যতটা সুখী ভাবতাম-মানে এখন ভাবছি বসে- ততটা সুখী নিশ্চয় সে ছিল না। শাশুড়ী ও পোড়া রুটি প্রসঙ্গে তার অত খচে যাওয়ারই বা কি ছিল, সেসব কি তার দুর্বল পয়েন্ট, অ্যাকিলিসের হিল? আর বনিতা, সে-ই কি সার্থক সুখী ছিল? নাকি সুখের কল্পনা করে রস পেত এত?সে কি হাসা'র নাম করে নিজের ভবিষ্যৎজীবনের সুখের ছড়াই বানাত বসে বসে? এমন বনিতা , যার পায়ে সোনার নূপুর, যার শাশুড়ী পালিয়ে বেঁচেছে, এবং যে দিনান্তে পেট ভরে রুটিটা - পোড়া হোক যাই হোক-অন্ততঃ খেতে পায় ! এইরকম সব প্রশ্ন পায় এখন ভাবতে বসলে। হাসা ও বনিতাকে পেলে খুঁটিয়ে জেনে নেওয়া যেত। কিন্তু তাদের পেলে তবে তো ! আমারও বয়স বাড়লো, আর দুজনেই এক এক করে- না, যা ভাবছেন তা নয়, একসঙ্গে নয়- যে যার মত আলাদা আলাদা কোথায় যে খসে পড়লো, কে জানে। আর তাদের খুঁজে পাওয়া গেল না।
সিলেবাসের মেয়েরা : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ এপ্রিল ২০১৩ | ১৩২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
মরা মাছের চোখের মত তা ছিল ক্ষুদ্র ও নিষ্প্রভ, আমাদের স্কুল জীবন বা মফস্বল। মরা মাছের চোখ যায় যত দূরে, সাইকেল বুঝি কখনো অপেক্ষা করত ঠিক ততটা দূরে পার্শ্ববর্তী স্কুলের শেষ ঘন্টাটি শোনার জন্য। কার জন্য, আজও জানি না। তবে, রবিবারে ক্ষমাদি আসতেন সেতার শিখতে পাশের বাড়িটিতে, তার শাড়ি বা সালোয়ার মিশে থাকত তার পেলব ত্বকে, আজ যদি বলি সে’ই ছিল সেতার আর হাসলে ঝালা বাজত দুই বাড়ির সীমানায় থাকা কাঞ্চন ফুলের গাছে, তাহলে আজ সেই শহরের অনেকেই মেনে নেবেন, সেই ছিল আমাদের মধুবালা টু সুচিত্রা সেন। মাধ্যমিকের পর জেনেছিলাম ক্ষমাদির ছেলে পড়ে আমার থেকে এক ক্লাস নীচুতে, কাজেই দলে ভারী হওয়ারই সম্ভাবনা। গুপী ডাক্তারের মেয়ে মহাশ্বেতা ছিল আমার থেকে দুই বছরের ছোট। শান্ত মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে তর্ক করত নাওয়া-খাওয়া ভুলে, সেই JNU যাওয়ার আগে পর্যন্ত। কানগুলো লাল হতে হতে কখন যে ঝান্ডা হয়ে পতপত করে উড়ত টের পেতাম না।
শ্যামাপোকা : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৩ | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ | ৯৪০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫৭
- এক থাপ্পড় লাগাব অসভ্য মেয়ে, সিনিয়ারদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় জাননা ?
- যাব্বাবা, আমি কোথায় ভাল মনে বলতে গেলাম, তোমার জীন্সটা ফ্যান্টা, আর তুমি চমকে দিলে ? দেখ, সিনিয়ার বলে অত এয়ার নিওনা, মোটে তো দুবছরের বড় –
- চমকে দিলাম আবার কী ভাষা, ঠিক করে কথা বল। আমাকে কী বলে ডাকলে তুমি ? আমার নাম শুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছোট করে, স্মিতা। বুঝলে ?
- কী করে জানব দিদিভাই, দুনিয়ার লোক তোমায় শ্যামা বলে ডাকে শুনি, তাই আমিও বললাম, শ্যামাদি। খুব অন্যায় করেছি না? পায়ে ফায়ে ধরতে হবে নাকি?
চিহ্ন : মাজুল হাসান
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৩ | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ | ১০৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আমার মা ফার্মগেট চিহ্নিত করে রাখে একটা ব্যানার দিয়ে। যাতে লেখা ‘গরু-ছাগলের বিরাট হাট’। পাশ দিয়ে দুইটা বড় বিল্ডিং, তারপর টুকরি-মাথায় কয়টা বেঞ্চি, কিছু গাছ, হ্যাঁ পার্ক, তারপরেই চক্ষু হাসপাতাল। মায়ের চোখে সমস্যা। মা আমাকে চিনতে পারো তো মা? মা-মা! বারবার বলার পরও তার এই বাতিক যায় না। আরে বাবা, অই ব্যানার যে আজীবন থাকবে না—এই জানা কথা তারে কে বোঝায়? এমন তো হইতে পারে একদিন দেখা গেল—সামনে দিয়ে কালো বিড়াল পথ কেটে যায়নি, বাম চোখ সকাল থেকে থেকে-থেকে নাচেনি, আমার মা যাকে বলে চৌখ নাচানি, বলে ডাইন চৌখ নাচলে সুসংবাদ আর বাম চৌখ নাচিলে তোর কপালোত শনি। এমন তো হতে পারে সব পূর্বাভাসের দেবতারা, চিহ্নগুলো উধাও হয়ে গেছে! তখন? মা তারপরেও নাখালপাড়াকে চিনে রাখে ‘এইখানে ভাল হাতের কাজ করা হয়’, ইন্দিরা রোডকে ‘বনসাই প্রশিক্ষণ’ আর নিজের বাসাকে চিনে রাখে তিন রোড আগে একটা মস্ত বড় খাড্ডা দিয়ে। আমার ভয় করে। মা আমাকে চিনতে পারো তো মা? আমি তোমার লাল, মা, আমি তোমার লাল, লাল পান্না। আমি বলি মা পান্নাতো সবুজ। তবু মা টাকা জমায়, বুড়া বয়সে তাকে কে দেখবে? কে? এর কাছ থেকে চেয়ে, আধিয়ারের কাছে তিন ছটাক ধানের প্রাপ্য বুঝে নিয়ে, বাপের পকেট কেটে, আমাদের গিফটের টাকা জমানোর নাম করে, আমার সুন্নতের কচকচি নতুন ২ টাকার বান্ডিলের কথা এইমাত্র মনে পড়ল, এইভাবে নিজের পাত থেকে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য সরিয়ে রাখে মা। ‘মা আমি তো আছি’—বলতে পারি না। বলতে পারি না, মা এক ভয়ানক রূপসীর হাত থেকে পালিয়ে আছি, ওরা আমাকে মিষ্টি খাওয়াইতে চায়। মা সুরা পড়ে, ফুঁ দেয়, আমার চোখে মুখে লেপ্টে যায় বর্ণমালা। মা আমার হাতে লেখে ‘পুত্র’, চোখে লেখে ‘নীল’, হাতে-পায়ে ফোঁড়ার দাগের একটু নিচে লিখে দেয়— ‘৮ সোনারগাঁও জনপথ রোড, উত্তরা, মাস্কট প্লাজা থেকে সোজা পশ্চিমে একটা ৪ রাস্তা, তারপরে আরেকটা ৪ রাস্তা, দুই তিনটা বাড়ির পর একটা তিন ডাবগাছঅলা বাড়ি’—যাতে লোকে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারি এই আমার বাড়ির ঠিকানা।
না হাঁচিলে যারে : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ | ৫৭০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯৯
এক যে ছিল ভীষণ কেবলী মেয়ে, টিঙটিঙে রোগা, থাকার মধ্যে মাথায় ঘন চুল, মুখচোরা আর প্র্যাকটিকালে ভয়। কেমিস্ট্রী ছাড়া সবকিছু পড়তে ভালবাসে, পাকপাড়া থেকে বেলগাছিয়া এসে ট্রামে করে কলেজ যায়। আর ছিল এক ডাক্তারীর ছাত্র, বেজায় গম্ভীর, নেহাত দরকার না পড়লে কথাটথা কয় না, সবসময় রামগরুড় মুখ করে ঘোরে কিন্তু পেটে শয়তানি বুদ্ধি গিসগিস করে। সেদিন ডিসেম্বর মাস, অসময়ে প্রবল বৃষ্টি। হাঁচতে হাঁচতে কেবলী কলেজে চলেচে, বগলে তিনটে প্র্যাকটিকাল খাতা, এক হাতে তোয়ালেরুমাল, অন্য হাতে বাসের রড, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ।
বস্টনে বংগে : দ্বিতীয় পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ এপ্রিল ২০১৩ | ১২১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মশলার কথা শুনেছিলাম ব্যাঙ্গালোরে থাকতে, করিমের মুখে। করিম কিছুকাল বস্টনে ছিল, তারপর এ ফর আলাস্কা থেকে জেড ফর জিম্বাবোয়েতে কাটিয়ে অবশেষে ব্যাঙ্গালরে পৌঁছয়। ছোট ছোট করে কাটা চুল, দারুন ম্যানলি চেহারা আর তার সাথে একটা সাঙ্ঘাতিক ইচ্ছাকৃত কন্ট্রাস্টে কানে গোঁজা কাঠগোলাপ ফুল, এই হচ্ছে করিম। আমি বস্টনে আসব শুনে ও আমাকে বস্টন মশালার সাথে যোগাযোগ করতে বলল। আমি বস্টন মশালাকে ইন্টারনেটে খুঁজলাম, এম ডি এইচ থেকে লাস ভেগাসের ইন্ডিয়ান স্ট্রিপ শো সব পেলাম খালি বস্টনের সাউথ এশিয়ান এলজিবিটি গ্রুপ মশালার খোঁজ পেলাম না। কারণটি অত্যন্ত সহজ, কিন্তু আমার মোটা মাথায় ঢুকতে একটু সময় লাগল। আমি জানি আপনারা আমার থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান, এর মধ্যেই ধরে ফেলেছেন গোলমাল কোথায়, তাই সে কথায় পরে আসছি।
আঁধারপর্বঃ রক্তাক্ত নেকলেস : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০১৩ | ১৮২০ বার পঠিত
একবার কেউ অঞ্জলি এলা মেনন'কে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন, তাঁর ছবি সর্বোচ্চ দামে বিকোবার সুখে। অঞ্জলি বলেছিলেন, ছবি বিক্রির দাম দিয়ে উৎকর্ষ বিচার করাটা মূর্খতা। হতে পারে তাঁর একটা ছবি বাজারে অত্যন্ত মহার্ঘ মূল্য পেয়েছে, কিন্তু এটা জেনে রাখা দরকার গণেশ পাইনের আঁকা ছবির মূল্য নির্ধারন হয় প্রতি বর্গ ইঞ্চির হিসেবে। শিল্পী হিসেবে তাঁর সিদ্ধির কাছাকাছি অতি সামান্য ক'জনই আসতে পারেন। দীর্ঘদিন তাঁর তেল রং কেনার সামর্থ্য ছিলোনা। মন্দার মল্লিকের স্টুডিওতে অ্যানিমেশনের কাজ করতেন। সেই উপার্জনে জলরঙে ছবি আঁকতেন। সেভাবেই ওয়াশ থেকে গুয়াশ এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর সিদ্ধির আসন পাতা হয় টেম্পেরা মাধ্যমে। অত্যন্ত স্বল্প মাত্রায় ছবির জন্ম হতো তাঁর হাতে। একার ক্যানভাসে একটা প্রদর্শনী ভরা যেতোনা, তাই ঐ মাপের শিল্পী হয়েও গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে ছবি দেখাতেন। তিরিশ চল্লিশ লাখে এক একটা ছবি বিকোনো খুব মামুলি ব্যাপার ছিলো তাঁর কাছে। সতীর্থ ও বন্ধুরা তাঁর এই সাফল্যে ঈর্ষাপর হয়ে পড়ায় আশির দশকে বেদনাবশে দীর্ঘকাল ছবি আঁকেননি। একান্ত অন্তর্মুখী ও প্রচারবিমুখ শিল্পী ছিলেন তিনি। তাঁর আঁকা সত্তর দশকের টালমাটাল সময়ের চিত্রকাব্য দেখে মকবুল ফিদা হুসেন মুম্বাইয়ের একটি পত্রিকায় গণেশের মুক্তবন্ধ প্রশংসা করেন। কলকাতার সীমাবদ্ধ শিল্প বাজারের থেকে তাঁর ছবি এইভাবে বিশ্বের দরবারে হাজির হয়। তার পর আর ফিরে তাকাননি তিনি। সত্যি কথা বলতে ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁর সেই সর্বনেশে সত্তরের ক্যানভাসমালা দেখেই মন্ত্রবন্দী হয়ে পড়েছিলুম। একদিকে কলকাতাকেন্দ্রিক পৃথিবীর 'গভীর, গভীরতর অসুখ', অধ্যাপক আর ট্র্যাফিক পুলিশ হত্যার বিপ্লব । অন্যদিকে এশিয়ার মুক্তিসূর্যের হাতে জরুরি অবস্থার 'অনুশাসন পর্ব'। মানুষের শুভবুদ্ধি আর বিবেকী আয়োজনের নাভিশ্বাস। সেই সময়ের পটপ্রেক্ষায় গণেশের ক্যানভাস মানুষের কষ্ট, যুদ্ধ ও প্রতিবাদের একটা সেরিব্রাল দলিল হয়ে উঠেছিলো।
সাজানো ঘটনা, প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে : জিগীষা ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ এপ্রিল ২০১৩ | ৩৬৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৩
কিন্তু, আসল ব্যাপারটা মোটেই এরকম নয়, এই ‘অহিংস’ ঘটনা ঘটার দিন বিকেলে প্রেসিডেন্সির বন্ধ গেটের বাইরে সাধন পাণ্ডে মহাশয়ের নেতৃত্বাধীন জনসভার বক্তব্য থেকে আসল ব্যাপার পরিস্ফুট হয় । ‘চক্রান্ত’-এর অন্ধকার কেটে আলোর দ্যাখা পান ডিরোজিয়ানরা এবং অন্যান্য মূঢ় ব্যক্তিবর্গ । আসলে তৃনমূল ছাত্র পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রেসিডেন্সি থেকে বেরিয়ে ছাত্রছাত্রীরা হামলা করে, যে জন্য মিছিলে উপস্থিত লোকজন বাধা দিতে বাধ্য হন । যে কারণে পরের দিন প্রেসিডেন্সির হাজারে হাজারে ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক-কর্মচারী-প্রাক্তনী যখন পথে নামেন, তখন প্রেসিডেন্সির ছাত্র দেবর্ষি চক্রবর্তী এবং প্রেসিডেন্সি প্রাক্তনী ছন্দক চ্যাটারজির বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করে টি এম সি পি , ১৪৭, ১৪৮ ও ১৪৯ নং ধারায়, দাঙ্গা বাধানো এবং উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে । এই দেবর্ষি চক্রবর্তী আগেরদিন হাসপাতালে গেছিলেন আহত হয়ে ? ও সে তো নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে গিয়ে লেগে গেছিল । আরেকজন ছাত্রকেও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল না? ওরা দুজন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছিল । সিম্পিল ।
সাইবার জগত থেকে হেফাজতঃ সমীকরণ সহজ নয় : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১০ এপ্রিল ২০১৩ | ১১৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শাহবাগ জনতার সেই চেতনা, যে-চেতনা অনুমান করেছিলো জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের কোন আঁতাত তৈরি হয়েছে। ট্রাইবুন্যাল-রূপী প্রহসনের নাটকে জনগণের দাবীর যে অপমান ঘটেছে শাহাবাগ তারই বহিঃপ্রকাশ। শাহবাগ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু শাহবাগে আওয়ামী লীগ একটা নেতৃত্বকে চাপিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি বাকিদেরও সন্দ্বিগ্ধতার কারণে এরাও আবার একক নেতৃত্ব হতে পারেনি, কিছুটা হলেও যৌথ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিলো। বাকিরা যেহেতু সংগঠিত ছিলো না, তাই চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বের অগণতান্ত্রিকতা আর অস্বচ্ছতাও যথাসময়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারণী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও বদলে ফেলার মত গুরুতর ঘটনা শাহবাগে ঘটেছে। আবার, নেতৃত্বের যে কোন আপোষের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র সাধারণ জনতা ও কর্মীরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাও নেতৃত্বের ভূমিকাকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে।
বৃষ্টিভেজা গদ্যের অভিমুখ সর্বদাই বিষাদলক্ষ্যী হয় : মুজিব মেহদী
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১০ এপ্রিল ২০১৩ | ৯০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
যাত্রামুখে দেখি চোখ বড়ো করা কালো মেঘ গায়ে লালাভা মেখে ওত পেতে আছে, শিলাপাতের সম্ভাবনাসহ, ‘আকাশের শিলাস্তূপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা, আর এ দিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন’, শঙ্কা জাগে মনে, আমার খেতের গর্ভিণী ধানের ছড়া, আমার গাছের আমের যত বোল, আমার খড়ের প্রিয় চালাঘর, এ যাত্রা সর্বনাশের সামনে দাঁড়িয়ে গেল তাহলে, হঠাৎ এ-ও মনে হয়ে যায় যে ‘...আর যাকে ইচ্ছা তার ওপর থেকে এ অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন’, সহসাই এরকম বিশ্বাস জেগে ওঠে মনে যে আমার ওপর থেকে তা ফিরে যাবে অন্যদিকে, হ্যাঁ, যাবেই ফিরে ইচ্ছাশক্তির বলে, এ বিশ্বাস আমাকে দেন ভারতবর্ষীয় কৃষি ও আবহাওয়াবিদ খনা, তাঁর ‘ধলা মেঘে গলা পানি/ কালা মেঘে ছাগল দৌড়ানি’ আর্যাযোগে, ঝরঝরে লাগতে থাকে নিজেকে, মেঘের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং কনিষ্ঠাঙ্গুলি দুটোই একযোগে তুলে ধরি, বলি যে, দুটোর যেকোনোটা খুশি ঢুকিয়ে বসে থাক, শান্তি পাবে, বেচারা মেঘের লালচোখ মুহূর্তে নত হয়ে যায়, ব্রেভো, গর্বে আবারও সাঁইজির চরণ জাগে পোড়া মুখে, কেন যে জাগে, ‘মানুষে মানুষের বিহার/ মানুষ হলে সিদ্ধ হয় তার/ সে কি বেড়ায় দেশ-দেশান্তর/ যেজন পিড়েয় পেরুর খবর পায়’, বারকয় চরণটি ভাঁজতে ভাঁজতেই আমার বোরাক এসে পৌঁছায় কদমতলে, এ কদম সেদিন যে সে কদম ছিল না, নিচে তার ছিল যথেচ্ছ প্রশ্রয়, কামনার ইঙ্গিত
মহেন্দ্র কর্মা ও মাওবাদী হামলা - গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং কিছু প্রশ্ন : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০১৩ | ১১১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
আমি এখানে যা লিখছি তা আদৌ মাওবাদী রণদামামার ‘জাস্টিফিকেশন’ নয়, বরং যা ঘটছে, তা কেন ঘটছে, কেন এমনটাই ঘটছে, অমনটা নয় — সেটা ‘এক্সপ্লেন’ করার সামান্য চেষ্টা। যদিও আমি সবজান্তা বা শেষ কথা নই। অর্থাৎ আমি যদি বলি যে অমুক যে অকালে জিভের ক্যান্সারে মারা গেল তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই, অত সিগ্রেট খেলে অন্যরকম না হওয়াটাই স্বাভাবিক, — তখন আমি আসলে বলতে চাই যে সিগ্রেটের নেশার বিরুদ্ধে কিছু না করে শুধু কেমোথেরাপি/ সার্জারি/রেডিয়েশন দিয়ে জিভের ক্যান্সারের রোগিকে বাঁচানো বা ক্যান্সার নির্মূল করা, কোনটাই সম্ভব নয়।
তাই মাওবাদী এজেন্ডার বিরুদ্ধে বললেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থক, আত্মসুখী চাটুকার বা রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বলতে গেলেই necessarily মাওবাদী এজেন্ডার সমর্থক — এই “আমরা-ওরা”র বাইরে নিশ্চয়ই কোন স্পেস আছে, সেটা খুঁজছি।
গেল যে খেলার বেলা : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০১৩ | ৫৪৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৯
সব চরিত্র কাল্পনিক দেখে এক সময় আমায় বোঙায় ধরেছিল। সে কথা এই মায়াপাতার লোকজন কিছু কিছু জানেন। তারও আগে রেইনকোটের ভেজা বিষাদ। কিম্বা দোসর-এর সেই সাদা -কালোর নিষ্ঠুর মায়া। মৃত্যু-অপ্রেম আর ভালোবাসার বেঁচে থাকার গিঁট-পড়া কাটাকুটির মধ্যে বিষাদ তার থাবা নামাচ্ছে। বিষাদ, স্নেহময় , তার নখ বসাচ্ছে।কর্তব্য,পূর্বনির্ধারিত। পৃথিবীর কোনো গানের সুর-কোনো জলের স্বাদ,পাতালের কোনো ভোগবতীর ধারা, ফলের রসালতা, পৃথিবীর কোনো ওষুধ, কোনো অ্যালপ্রাজোলাম-ফ্লুওক্সেটিন-সিটালোপ্রাম এই মহৎ বিষণ্ণতার শালপ্রাংশুমহাভুজ শরীরে একটি আঁচড়ও কাটতে পারে না। এই বিষণ্ণতার রাস্তা ধরে ঐ তৃতীয় মানুষটি হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। পাহাড়ী রাস্তার মেঘ-কুয়াশা-তিস্তাজলের মধ্য দিয়ে। সখী হাম মোহন অভিসারে যাঁউ...
অসম্পূর্ণ বিভাজন : প্রান্তিকা *
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ৩১ মে ২০১৩ | ২৫৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
ছকে বাঁধা জীবনে আমি পারিনি মানাতে। আমি যা চাই, যা পছন্দ করি তা সমাজ পছন্দ করে না। কারণ আমার মন বললেও আমার শরীরের গঠন অনুযায়ী আমার জীবনযাপনের পদ্ধতি সমাজের বাঁধাধরা নিয়মকে আঘাত করে। এক জনের শরীর দেখে তাকে বিচার করা সমাজের কাছে যতটা সহজ, এক জনের অবয়বহীন মানস দেখে তাকে বিচার করা ততটাই কঠিন। আমার শরীরটা একজন নারীর। সমাজ চায় না আমি ছোট করে ছেলেদের মতন চুল রাখি। আমার বিনুনি বাঁধা উচিত। আমি কোন পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি তাতে সমাজের কিছু আসে যায় না। আমাকে নিয়মের মধ্যে থাকা উচিত। সমাজ চায় না আমি জিন্স প্যান্ট পরি, আমার পোশাক হওয়া উচিত সালোয়ার আর শাড়ি। সমাজ চায় না আমি সাইকেল-বাইক চালাই, চায় কারুর বাইকের পিছনে আমি বসি। সমাজ চায় না আমি বাড়ির বাইরে বেরোই, কাজ করি। চায় আমি রান্না বান্না আর সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের দেখাশুনা করি। চায় না আমি মাঠে ঘাটে গিয়ে খেলাধূলা করি, শরীরচর্চা করি। চায় আমি বাড়ির উঠোনে স্কিপিং করি আর শাহ্রুকের রোমান্টিক ফিল্ম দেখি। চায় না আমি কোন ‘নারী’কে সঙ্গিনী হিসাবে বেছে নি। কারণ শরীরের উপর ভিত্তি করে যে সকল নিয়ম কানুন গড়ে উঠেছে, এ সব কিছু তারই অংশ বিশেষ। মন বা মানসের কোন স্থান এখানে নেই। ছত্তিরিশটা বছর ধরে মোটা কাপড়ের নীচে শরীরটাকে আষ্টেপৃষ্টে ঢাকা দিয়ে বাড়ির বাইরে বার হই, লোকের সাথে মিশি। বাড়ি ফিরে বিবস্ত্র হয়ে আয়নার সামনে যখন দাঁড়াই, কুঁকড়ে যাই। যাঁরা আমাকে চেনেন জানেন তাঁদের কাছে আমি কোন আলোচনার বস্তু না, কিন্তু যাঁরা আমাকে চেনেন না, আমাকে নতুন দেখলেন তাঁরা শুধু আমাকে বিস্ময়সূচক দৃষ্টি নিয়ে আপাদমস্তক পরীক্ষা করে গেলেন। আমি চলে গেলে পিছন থেকে কিছু অস্পষ্ট কথা শুনতে পাই, ‘এটা কে? ছেলে না মেয়ে?’
ছক্কা ঋতুপর্ণ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অন্য যৌনতা | ৩১ মে ২০১৩ | ৮৫৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৭
শিল্প আর শিল্পী নাকি আলাদা। এই আবেগ ভ্যাদভ্যাদে মৃত্যুদিনে সেসব কথা ভাবতে ভালো লাগেনা। এ সব ব্যক্তিগত অনুভূতি বড়ই ব্যক্তিগত। ফিল্ম টিল্ম গোল্লায় যাক, গোল্লায় যাক শিল্পের শবসাধনা, কবিতার বদলে ট্রামে ছেঁচড়ে যাওয়া জীবনানন্দের ডেডবডি মনে পড়ে। সেই দশকে নাকি ওটাই ছিল একমাত্র ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যু। তাকে আপতিক ভাবতে অসুবিধে হয়, যেমন অসুবিধে হয় ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে একজন সফল ফিল্ম মেকারের মৃত্যু। আসলে তো তাঁকে নেই করে দেওয়া হল। টিভিতে, খবরের কাগজে, সোশাল মিডিয়ায় যত কলকাকলি আর হাহুতাশ দেখি, সব শুধু সিনেমা। সিনেমা সিনেমা আর সিনেমা। লোকটা কোথাও নেই। কিন্তু আজ তো সিনেমার দিন না। একটা লোক মারা গেছে। একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। সে শুধু সিনেমা নয়। নিজের আইডেন্টিটিকে সে কখনও সিনেমা দিয়ে ঢাকেনি। মেয়েলি দোপাট্টা পরে কানে দুল ঝুলিয়ে টিভি শোতে এসেছে। যত বয়স হয়েছে তত নরম হয়েছে তার গলার আওয়াজ, আর তীব্রতর হয়েছে তার আইডেন্টিটি। নমনীয়তাকে, নরম স্বরে কথা বলাকে আমরা পুরুষের দুর্বলতা বলে ধরে নিই। কিন্তু ঋতুপর্ণ জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, ব্যাপারটা অতো সোজা নয়। যতগুলো নতুন পুরস্কার ঝুলিতে ঢুকেছে, ততই মেয়েলি হয়েছেন তিনি। ততই নরম হয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর। মেয়েলিপনাকে শক্তি দিয়ে আগলে রেখেছেন। ছুঁড়ে দেওয়া ইঁটগুলোকে, "লেডিস ফিংগার" তাচ্ছিল্য আসবে জেনেও, আঁকড়ে ধরেছেন ওই মেয়েলি আলখাল্লাকে। সেই নরম সাহস, সেই এফিমিনেট দৃঢ়তা ছাড়া ঋতুপর্ণ নেই। হয়না।
আমার অগীত- অঞ্জলি : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ মে ২০১৩ | ৯৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
একে তো রবি ঠাকুরের সার্দ্ধশতবর্ষ। সে এক খটমট বাংলা। তবু ১৫০ বছর বলা যাবে না। তাহলে অশিক্ষিত প্রমাণ হবে। মৃত্যুতে, জন্মে, বিবাহে, পৈতেতে, গাছ পোঁতায়, ফাংশনে, পুরস্কারে, তিরস্কারে, রাজদ্বারে, শ্মশানে, সর্বত্র গাওয়ার মত গান যে রবি ঠাকুর লিখে গেছেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের মত। না দ্বিতীয়জন গান লেখেন নি তবে সব ওকেশনের উপযুক্ত একটি করে কোটেশন ঝেড়ে গেছেন। সেগুলো যাতে সব বিষয়ের বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা যায়, সেই জন্য। ফিজিক্স, অংক, অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, মাইক্রোবায়োলজি, এথিক্স, ফিলজফি, ফিল্ম চর্চা, কোন বিষয় বাদ দেন নি। রাশিয়ান পাব্লিকেশনের সব বইয়ের প্রথম পাতা খুললেই দেখতে পেতাম সেগুলো আমরা, সেই যুগে, যখন ভারত-রাশিয়া ভাই ভাই। বইগুলোও খুব চকচকে সস্তা সুন্দর।
রবি ঠাকুরের গানও তেমনি। কোন অকেশন বাদ নেই। ভুল করে এবার আপনি যদি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে “সমুখে শান্তি পারাবার” গেয়ে ফেলেন, তাহলে পাপ দেবে না রবি ঠাকুর? অথবা বিয়ের দিন, আমরা দুজনা স্বর্গ খেলনা অথবা আজি এ আনন্দযজ্ঞে না গেয়ে, গেয়ে ফেলেন, এসেছিলে তবু আসো নাই জানায়ে গেলে। লোকে অশিক্ষিত বলবে না? তো, গীতাঞ্জলি নিয়ে যা লিখতে যাব, তাতে তো একই ব্যাপার। এত গুরুগম্ভীর ব্যাপার। আকাশে চক্ষু তুলে দীর্ঘশ্বাস, মাঝে মাঝে একটু একটু বলতে হবে, আর কয়েক মুহূর্ত থামতে হবে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর মত।
জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী – শতবর্ষে (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ মে ২০১৩ | ১৮৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
তাঁর গল্পের প্রধান চরিত্ররা সকলেই অ্যান্টি হিরো। অসফল মানুষ, জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ মানুষ। সমুদ্র গল্পের লোকটিও তাই, মঙ্গল গ্রহ বা তারিণীর বাড়ি বদল গল্পের তারিণী, সামনে চামেলি গল্পের ক্রাচ বগলে লোকটিও তাই। কিন্তু প্রতিটি চরিত্রই হল গভীর অনুভূতিপ্রবণ। তাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় সব সময় সজাগ। এই সব ব্যর্থ মানুষের ভিতর আবার অন্য মানুষও আছে। তিনি ছিলেন জাত শিল্পী। শুধু মাত্র কাহিনি কথনের যখন রমরমা, দগদগে কাহিনি যখন বিক্রি হয়ে যায় হাজার হাজার, তখন প্রায় নিভৃতে তিনি শিল্পের সাধনা করে গেছেন। হ্যাঁ, একমাত্র জীবনানন্দকেই যেন মনে পড়ে যায় জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীকে পড়তে পড়তে। আমি যখন জীবনানন্দের জলপাইহাটি উপন্যাসটি পড়ি, সেই ব্যর্থ অসফল মানুষটির কথা পড়ি, তখন মনে পড়ে যায় জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর কথা। ট্রাঙ্ক বন্দী সেই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার হয়েছিল জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর মৃত্যুর বছর সাত আট বাদে তো নিশ্চয়। শিল্পের কথা যখন বলছি, ‘রাইচরণের বাবরি’ গল্পটির কথা বলি।
বস্টনে বংগে : তৃতীয় পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২০ মে ২০১৩ | ১২৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
যারা ভাবছেন, বিয়ের অধিকার না পাওয়া গেল তো কী এসে গেল, ইকুয়াল ডোমেস্টিক পার্টনারশিপ তো দেওয়াই হচ্ছে, তাদের জন্য একটা ছোট্ট সওয়াল। ধরুন কোন স্কুলে বলা হল, সবাইকে সমান ভাবে পড়ান হবে, একভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, খাতা দেখা হবে, শুধু খাওয়ার জলের কলটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হবে, মেনে নেবেন? জল একই থাকবে, শুধু কলটাকে সবুজ রঙ করে দেওয়া হবে? জানি আপনি মেনে নেবেন না, কেননা আপনি যদি মেনে নেওয়ার দলের হতেন তা হলে এই লেখাটা এতদূর পড়তেন না। দিনের শেষে সাম্যের অধিকার এক মৌলিক অধিকার, যে অধিকারের প্রশ্নে আপোষ করা চলে না।
সংবাদ সারাক্ষণ - দ্বিতীয় পর্ব : শ্রমণ গৌতম শীল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২০ মে ২০১৩ | ৯০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
স্বপন তখন তরুণ ছিল। এ সব শুনেছে, খুব যে বুঝেছে এমন না। কিন্তু সত্যি সত্যি দেখা গেল এই সব লোকগুলো পড়ছে তাদের কাগজ। তারা অমিতাভ নাইটের বদলে খাবারের দাম কেন বাড়ছে তা নিয়ে যতটা গভীরে যাওয়া সম্ভব খবরের কাগজে ততটা গিয়েই খবর করতো। খবরের পাঠকের দুনিয়া কলকাতা শহরে ভাগ হয়ে যেতে শুরু করলো। সুখবাজার অমিতাভ নাইটে জোর বেশি দিত। আরেকটা কাগজ ছিল ‘দিনকাল’ বলে। তারা বাংলা সমাজতন্ত্রীদের, বিশেষ করে আলো বসুর কুকীর্তি নিয়েই মত্ত থাকতো। পরের পর তদন্তমূলক সাংবাদিকতা তাদের ব্যানার হেডলাইন হত। সেটা আর সুখবাজার পড়তো ফেডারেশনের সমর্থকরা। বাংলা সমাজতন্ত্রীদের নিজেদের দলীয় মুখপত্র ‘লোকশক্তি’ পড়তো পার্টি মেম্বার আর সমর্থকরা। উত্তেজিত তর্ক-বিতর্ক এক সময় থামলে তখন শোনা যেত ‘সমকালীন’-এর পাঠকদের গলা। কী হয়েছে, কেন হয়েছে, কী হবের ব্যাখ্যা নিয়ে তারা হাজির! কাগজ বাড়ছিল। বাড়ছিল বলে ছোট আর মাঝারি বিজ্ঞাপন আসছিল নিয়মিত। দেরী হত মাইনেতে বিজ্ঞাপনদাতা আর পাঠকের টাকা আদায় করতে লোক কম ছিল বলে। বেশি ছিল না মাইনে। কিন্তু স্বপনের মনে হত একটা কাগজ করছে যার একটা জায়গা আছে। পাড়ার সাধারণ লোকেরা, সে যে দলের সমর্থকই হোক, স্বপনকে বলতো কাগজটা কিন্তু খবরটা করে। সরাসরি যারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে জড়িয়ে তারা অবশ্য চুপ থাকতো, কিন্তু তারাও চেষ্টা করতো ‘সমকালীন’ কী লিখেছে জেনে তবে কথা বলতে চায়ের দোকানে। সে সব ভেঙে দিয়েছিল বীতশোক। তার আগে অব্দি স্বপন বুঝেছিল একে বলে সম্পাদকীয় নীতি। আর অমিতাভ, শালা শ্বশুরবাড়ির পয়সায় মদ-মেয়েবাজি করে, গদার-ত্রুফো আওড়ে চ্যানেল পলিসি বানাবে? কিম্বা অনুরাগ বা জয়ন্ত ওই সব চিটিংবাজী করে বানাবে পলিসি?
জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী – শতবর্ষে (প্রথম পর্ব) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ মে ২০১৩ | ১৫৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
সে ছিল একটা নির্জন রাস্তা আর সেই রাস্তায় ক্রাচ বগলে সে হাঁটে। দুঃখী, বঞ্চিত আর ব্যর্থ মানুষের কল্পনা আর আকাঙ্খার গল্প। খুব বড় লেখক, আমার পিতৃতুল্য লেখক জিজ্ঞেস করতে লাগলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। তখন তিনি শিশুর মতো। আমরা যারা ওই পুস্তক প্রকাশনীতে যেতাম, শচীন দাস, সমীর চট্টোপাধ্যায়, কখনো কবি তুষার চৌধুরী এবং পবিত্র মুখোপাধ্যায় – সকলেই তাঁকে পড়েছেন। তাঁর নানা লেখা নিয়ে আমাদের নানা কৌতুহল নিরসন করতেন হয়ত কখনো, কিন্তু বারবার প্রসঙ্গান্তরে চলে যেতেন। আমার মনে আছে তাঁকে শুনিয়েছিলাম আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতার কথা। গ্রামীণ যাত্রাদল আসছে শীতের ধানকাটা মাঠ ভেঙে, সুবর্ণরেখা নদী পার হয়ে। হিরোইনের কোলে দুধের বাচ্ছা। কোন ভোরে বেরিয়েছে ধ-ডাংরি যাত্রাদল। বেলা বারোটার পর এসে পৌঁছল। হিরোইনের মাথার চুলে খড়কুটো, বাচ্ছা কাঁদছে। রাস্তার দুপারে দাঁড়িয়ে গাঁয়ের চাষাভুসো মানুষজন দেখছে তাকে। কে যেন হেঁকে উঠে ডাকল আমাকে, হিরোইন হিরোইন দেখুন স্যার... তিনি মগ্ন চোখে তাকিয়ে আমার দিকে। আমি কুন্ঠিত গলায় বললাম, আপনি এইটা নিয়ে লিখবেন?
এসপ্ল্যানেড : শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৩ | ০২ নভেম্বর ২০১৩ | ২০৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সৌমিত্র, এম ডি-র লোক। এম ডি অফিসে ডিরেক্টরদের লোক আছে এটা পছন্দ করেনা। নিজেও স্বস্তিতে থাকেনা। প্রচুর গরমিল থাকে হিসেবে তাদের। সময় মতো কোনো ডাটা এক্সেল শিট-এ ওঠেনা। ভাউচারে সই হয়ে যায় কিন্তু সেই ভাউচার হারিয়ে যায় আবার। অডিট এসে ধরলে বলে আসলে খুচরো মাছ বিক্রি করে যে টাকা হয় তার বিল আর কে দেবে! অথচ কোটি কোটি টাকা মাছের বিক্রিতে নাকি আসে। এমন সব গল্পের মধ্যে বেশ কিছু টাকা চলে যায় এম ডি-র পকেটে। তার লোকদের খেয়ে-খাইয়েও তার ভালই থাকে। কিছু করার নেই। কোম্পানিটাই জালি। ব্রিটিশ একটা কোম্পানির এক বড় মাথা আছে এই কোম্পানির বোর্ডে। তার মামাশ্বশুর আছেন ব্রিটিশ কোম্পানিটিতে। তারা কেউ কারোর সঙ্গে এমনিতে ব্যবসা করেনা, অথচ দুই কোম্পানির দুই বড় মাথা পরস্পরের কোম্পানির বোর্ডে আছে। কি হয়? দুজনে দুজনের জন্য ঘুরিয়ে টাকা কামায়। এখানকার বাজারে সরকার চাষের জন্য যে মাল কেনে, যেমন বীজ,সার ইত্যাদি, সেই মাল কেনা প্রভাবিত করে মামাশ্বশুর। মন্ত্রী-সান্ত্রী নেতাদের সঙ্গে তার ভালই যোগাযোগ। আবার ওখান থেকে সমাজসেবার জন্য ফান্ড আসে মামাশ্বশুরের এন জি ও-তে। কোটি কোটি টাকা আসে। মাঝে মাঝে পাঁচড়া, তালদি, ধুবুলিয়াতে পোলিও শিবির, এইডস সচেতনতা, হুইলচেয়ার দানের আসর বসে। ব্যাস্! দুপক্ষই আরামে আছে। এম ডি এসব সামলায়। তাই তাকে সরায় না মামাশ্বশুর। ইদানীং হাতের বাইরে যেতে পারে বলে কৌশিককে বসিয়ে রেখে চাপ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া এম ডি-র যে পার্সোনাল সেক্রেটারি, কৌশিকের বৌ বলেছে সেটাও মামাশ্বশুরের ফিট করে দেওয়া। এম ডি তাকে নিয়ে এখানে ওখানে লীলা করে, সে সব রেকর্ড করা থাকে। এম ডি আবার এই বোর্ডের একজন ডিরেক্টরের জামাই এবং বর। মানে তার শ্বশুর এবং বৌ দুজনেই আছে বোর্ডে। লে ক্যাচাল!
কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন : কলিম খান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ নভেম্বর ২০১৩ | ১২৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
"আমাদের প্রয়োজন শ্যামাকে নিয়ে। নজরুল ইসলাম হঠাৎ কেন শ্যামাসঙ্গীত লিখতে-গাইতে গেলেন, তার রহস্য আমাদেরকে জানতে হবে। আমরা বুঝতে চাই, তাঁর এই আচরণের যাথার্থ্য কী? ‘শ্যামা’ ধারণার উদ্ভব ও তার ঐতিহাসিক বিকাশধারার বিশেষ এক ক্ষণে, আমরা কেন দেখছি যে, সেই ধারণা নজরুলের মতো একজন কবির মনের মণিকোঠা জুড়ে বসে গেল এবং শ্যামাসঙ্গীত হয়ে প্রকাশিত হল তাঁর মাধ্যমে? নজরুলই বা কেন তাঁকে মনের মণিকোঠায় লালন করে তৃপ্তি পান, সৃষ্টির আনন্দ পান? ঐ বিশেষ কালখণ্ডে, কোন অমোঘ নিয়মে, নজরুল ও শ্যামাসঙ্গীত যথাক্রমে আধার-আধেয় হবার ভবিতব্য এড়াতে অক্ষম হয়? আর সেজন্যেই, আমাদের সর্বাগ্রে জানতে হবে শ্যামাকে। কিন্তু জানতে হলে তো ভারতের ইতিহাস পড়তে হয়। প্রশ্ন হল : ভারতের ইতিহাস কোনটি এবং কীভাবে তা পাঠ করা হবে? সেটি নির্ণয় করে নিয়ে তবেই আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে শ্যামাকে উদ্ধার করতে পারি।
তারা দু'জন : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৩ | ০২ নভেম্বর ২০১৩ | ৯৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
গাঙ্গুলি বাড়ির বৌ হয়ে যেদিন প্রথম এসেছিল সৌদামিনী, শাশুড়িমা থুতনি ধরে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, তোমার নামটা বাছা আমি একটু বদলে দেব। একে অতবড় নাম ধরে ডাকাও যায়না, তাছাড়া আর একটা সমস্যাও আছে। তোমার কোনও ডাক নাম নেই? সৌদামিনী বলল, হ্যাঁ আছে তো, মিনু। উনি বললেন, তাহলে আজ থেকে সবাই মিনু বলেই ডাকবে তোমায়। সবাই আর কে, বাড়িতে তো আর মোটে তিন জন, কত্তা, গিন্নী আর সৌদামিনীর বর মহাদেব। সৌদামিনী তবুও জিজ্ঞেস করল, সমস্যা কী একটা আছে বলছিলেন মা? গাঙ্গুলি গিন্নী বললেন, আসলে আমাদের বাড়িতে যে কাজের মেয়ে, তার নামও সৌদামিনী। অবশ্য তাকে আমরা সদু বলে ডাকি। এ নামটা তো আমার মায়ের আমলের, এই আধুনিক যুগেও এমন নামে দু-দুজন? যাক, সমস্যা আর থাকল না।
সুন্দরবন এতদিন আমাদের বাঁচিয়েছে কিন্তু এখন সুন্দরবনকে কে বাঁচাবে? : কল্লোল মুস্তাফা
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৯ আগস্ট ২০১৩ | ৩৮৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩২
সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে যেমন ১৪ কিমি দূরত্বের কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফায়েত্তি কাউন্টিতে ১৯৭৯-৮০ সালে ১২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয় মানুষকে এভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। এমনকি কিছু দিন পরে এর ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৬৯০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করা হয়। ফলাফল সাথে সাথে বোঝা না গেলেও ৬৬ থেকে ১৩০ ফুট উচু বিশালাকৃতি পেকান বৃক্ষগুলো(একধরণের শক্ত বাদাম, কাজু বাদামের মতো) যখন একে একে মরতে শুরু করল ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের হিসেবে ফায়েত্তি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বিশেষত সালফার ডাই অক্সাইডের বিষ ক্রিয়ায় পেকান, এলম, ওক সহ বিভিন্ন জাতের গাছ আক্রান্ত হয়েছে, বহু পেকান বাগান ধ্বংস হয়েছে, অন্তত ১৫ হাজার বিশালাকৃতির পেকান বৃক্ষ মরে গেছে। এবং এই ক্ষতিকর প্রভাব কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এমনকি ৪৮ কিমি দূরেও পৌছে গেছে।
শিপ অব থিসিয়াস ঃ কিছু ব্যক্তিগত কথা : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ আগস্ট ২০১৩ | ৮৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
তাই এই ভীষণ চেনা মানুষগুলোর ভালোমন্দ দুরু দুরু বুকে দেখতে দেখতে একটা গোটা বড়োসড়ো সিনেমা পুরো উপভোগ করে ফেলি। আমার মনে মালগুডি ডেজ, চাঁদমামায় দেখা জাতকের গল্প ও ছবি, প্রিয় বান্ধবীর অ্যাকসেন্ট, প্রিয় বন্ধুর অর্থপিশাচ হয়ে যাওয়া, তিনটি মহাদেশ ও তার মানুষের ভালোমন্দের ছাপ, দারিদ্র্য, দারিদ্র্যকে ছাপিয়ে উঠে মানুষ হওয়া ও না হতে পারার অসহায়তা, আর এ যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির ডিভিডি সংগ্রহের সমস্ত প্রিয় অপ্রিয় স্বল্পপ্রিয় চরিত্র জট পাকিয়ে যায়। যে দ্বন্দ্ব নিয়ে এই সিনেমা তৈরী, আমি সেই দ্বন্দ্বেরই শিকার হই। সিনেমাটা দেখার পরের আমি সিনেমাটা দেখার আগের আমিই আছি কিনা বুঝতে পারিনা। এর উত্তর জানা অবশ্য ততটা জরুরি কিনা জানিনা।
মৃত্যুরাখাল ও সদানন্দ - প্রথম কিস্তি : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ আগস্ট ২০১৩ | ১৪৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
মৃত্যুরাখালের তো গর্বের শেষ নেই। যে জীবন নিয়ে মানুষের এতো অহমিকা, স্বজন-পরিজন সংসারের তৃপ্ত আবহ, অর্থ-কীর্তি-সচ্ছলতার উত্তুঙ্গ মিনার, তা'কে এক ফুঁয়ে সে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। তার সামনে নত হয়ে থাকে রাজার রাজা, ভিখারির ভিখারি, সম্মান-অসম্মানের ভিতে গড়া অনন্ত নক্ষত্রবীথি, পাবকের পবিত্র অগ্নি থেকে মৃত্যুরাখাল কাউকে রেহাই দেয়না। সে তো ভাবতেই পারেনা একটা রক্তমাংসের মানুষ সদানন্দ হয়ে নিজেকে ঘিরে রেখেছে আনন্দের সমুদ্রে। রাখাল তার নাগাল কখনো পাবেনা। তার কিন্তু চেষ্টার কমতি নেই। সদানন্দের আশি বছরের দীর্ঘ জীবন জুড়ে বারম্বার হননপ্রয়াস চালিয়ে গেছে সে। কিন্তু ঐ সমুদ্রটা কখনও পেরোতে পারেনি। সে হেরে যায় সদানন্দের কছে। জগৎসংসার জানে সে হলো জীবনের শেষ কথা, সদানন্দ বলে সে হলো অনন্ত সম্ভাবনার দ্বার।
রূপকথার নটেগাছ মুড়োয় না : পরিমল ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ আগস্ট ২০১৩ | ৩৯৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬৩
-দুনিয়ার সেরা ইঞ্জিনিয়ারেরা বসে এমন একটা জায়গা বানিয়ে দিতে পারবে? এখানে যে জড়িবুটি হয়, তাই খেয়ে আমাদের বাপদাদা পরদাদারা বেঁচেছে, আমরা বাঁচছি, আমাদের ছেলেপুলে নাতিপুতি বাঁচবে। কিন্তুই খাদান হলে? যা বক্সাইট আছে সেটা তুলে ফেলতে নাকি পঁচিশ বছর লাগবে। তারপরে কী হবে? পঁচিশ বছরের জন্য কশো বছর বন্ধক রাখব আমি?
কুমুটি মাঝির গলায় ছিল অনাগত প্রজন্মের ভার। অস্ত সূর্যের আলো এসে পড়েছিল তাঁর মুখে। পায়ের কাছে গর্তগুলো চেয়েছিল অক্ষিবিহীন কোটরের মতো। বনে কোথাও একটা কাঠঠোকরা ঠক ঠক করে শব্দ করছিল।
আপাতত ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখতে হবে না কুমুটি মাঝিদের। তবে, "তারপর তারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল" - রূপকথার এই শেষ লাইন লেখার সময় আসেনি এখনও। নিয়মগিরি পাহাড়ের নীচে লাঞ্জিগড়ে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার রিফাইনারি, তার জঠরে খিদে, পাহাড়ের গা বেয়ে কনভেয়ার বেল্ট করিডোর পড়ে আছে অজগরের মতো।
রূপকথার শেকড়বাকড় : পরিমল ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৩ | ১৪৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
বর্ণ গন্ধ ধ্বনির এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রেক্ষাপটটা জরুরি। না হলে সব উন্নয়ন বিতর্কই শেষ পর্যন্ত মাথা কোটে অসার নাগরিক তাত্ত্বিকতার আবর্তে, “কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতেই হয়” জাতীয় বুলিতে। যারা পাচ্ছে, তাদের যে কিছুই হারাতে হচ্ছে না, আর যারা হারাচ্ছে তারা যে পাচ্ছে না কিছুই – আবহমান এই নির্মম সত্যিটা খোদাই হয়ে থাকে একটি যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে, একটি নীরব চোখের ভাষায়, একটি ঠোঁটের কুঞ্চনে। তেমন এক মুখের সামনে এসে মুখোমুখি বসতে হয়। ঠিক তেমনই একটি পাহাড়ের মাথায় এক স্বচ্ছ শীত অপরাহ্ণে, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বনটিয়ার ঝাঁক আর কাঠঠোকরার ঠক ঠক শব্দে, আর্দ্র বনজ গন্ধে তিরতিরে ঝর্নার ধ্বনিতে, প্রতিভাত হয় ধর্মস্থানের সংজ্ঞা। পুরাণকথার নায়কের আঁতুড়ঘরের হালহদিশ নিয়ে যখন দেশ পোড়ে, সাম্প্রদায়িকতার দাঁতনখ শানিয়ে ওঠে, তখন এক কন্ধ রমণীর বাচন – “ তুমো মন্দির ইটা বালি রে তিয়ারি, আমো মন্দির গাছা লতা পাথরো ঝরনা জন্তু রে!” - ঝোড়ো হাওয়ার মতো আমাদের সনাতন দেবালয়ের পোড়ো দরজাটা সমূলে নাড়িয়ে দেয়।
সুটিয়ার কথা - পর্ব ১ : রিণিতা মজুমদার
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৪ আগস্ট ২০১৩ | ৫৯১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯০
১৯৯৮ সাল থেকে সুশান্ত চৌধুরির ক্ষমতা বাড়ে, তার দলে আরও কিছু দুষ্কৃতীদের দল যুক্ত হয়। দুই গুণ্ডা মিলেই তাদের তোলাবাজির কারবার জমিয়ে তোলে, স্থানীয় ব্যবসায়ী, দোকানদার এবং বাসিন্দা এদের কাছ থেকে এরা নিয়মিত তোলা আদায় করত এদের স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করতে দেবার বিনিময়ে। দুজনেই বাইরের লোক হলেও অবিলম্বে এরা সুটিয়ায় জমিয়ে বসে, এবং নিজেদের দলে স্থানীয় হতাশ, কাজ-না-পাওয়া ছেলেপুলেদের ভেড়াতে শুরু করে। এই স্থানীয় ছেলেদের বেশির ভাগই এই সব দলের "ইনফর্মার" হিসেবে কাজ করত। দেখতে দেখতে ছোটখাটো তোলাবাজির ঘটনা বাড়তে বাড়তে ২০০০ সাল নাগাদ এই সব বড় আকার ধারণ করে, এবং এর সাথে যুক্ত হয় গণধর্ষণের মত ঘটনাবলী। এর মূলে ছিল এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চালুন্দি নদীর বন্যায় সুটিয়া এবং আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েন। বেশ কয়েকটি গ্রাম হতশ্রী হয়ে পড়ে। এই সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি ত্রাণসাহায্য এসে পৌঁছয় এবং সেইসব বিলিব্যবস্থার কাজে লাগে স্থানীয় ছেলেরা। এর পরে যা হয়, ধীরে ধীরে তারা নিজেরাই সেই সব রিলিফের মাল সরাতে থাকে, এবং সুশান্ত আর বীরেশ্বরের সহায়তায় তাদের গুণ্ডাবাহিনি এই সব গ্রামে তাদের দৌরাত্ম্য শুরু করে। গুন্ডাবাহিনি রিলিফের দখল নেয় এবং তারাই স্থানীয় স্কুল পালানো, কর্মহীন, হতাশ কমবয়েসী ছেলেদের নিজেদের দলে নিয়োগ করতে শুরু করে, ক্রমে সুটিয়া এবং আশপাশের সমস্ত গ্রামের রিলিফ সেন্টারের দখল তারা নিয়ে নেয়, এবং তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয় পুরো এলাকায়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তারা তোলাবাজি আর অত্যাচার চালাত, লোকাল ইনফর্মারদের সাহায্যে তারা স্থানীয় পরিবারগুলো সম্বন্ধে খবর জোগাড় করত, তারপরে বাইকবাহিনী নিয়ে চড়াও হত সেই পরিবারের ওপর, মহিলাদের অত্যাচার এবং ধর্ষণ করত, তারপরে টাকা দাবি করত। কখনও দাবির কম টাকা নিয়েই তারা খুশি হয়ে যেত, কখনও কখনও তারা বাধ্য করত পরিবারটিকে নিজেদের আংশিক জমিজিরেত বেচে টাকা তুলে দেবার জন্য। পুলিশে খবর দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিত তারা। কখনও তারা লাগাতার কয়েক দিন ধরে কোনও একটি বাড়িকে ঘিরে থাকত, কাউকে বেরোতে দিত না যতক্ষণ না তাদের দাবি মানা হত। সবাই জানত, স্থানীয় পুলিশের সাথে তাদের যথেষ্ট বোঝাপড়া ছিল এবং দুই গুণ্ডাবাহিনির নেতাই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় পুষ্ট ছিল, তাদের ধরা সোজা ছিল না। মেয়েদের তারা ধরে নিয়ে যেত নাগবাড়ি এলাকায় একটা ছোট পরিত্যক্ত ঘরে, তারপরে সেখানে তার ওপর অত্যাচার চালাত। একটিমাত্র কেসে আমি জনৈক সারভাইভারের নিজের মুখ থেকে শুনেছি সেই অত্যাচারের কাহিনি, বাকি কেসগুলো আমি শুনেছি অন্যদের মুখ থেকে এবং লোকাল থানার এফআইআর থেকে। আমি আবার সুটিয়া যাব আরও বিস্তারিত জানতে।
অ্যান্টি রেপ বিলঃ কিছু মিথকথা ও তথ্য : কবিতা কৃষ্ণন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ মার্চ ২০১৩ | ৯১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
২ নম্বর মিথকথাঃ সহবাস সম্মতির বয়স কমিয়ে ১৬ করা হলে ধর্ষণ,বেশ্যাবৃত্তি ও নারী চালান আরো বেড়ে যাবে।
ঘটনাঃ এই সম্মত সহবাসের আইনী বয়স কিন্তু ১৬ বছরই ছিল, সেই ১৯৮৩ সাল থেকে শুরু করে একটানা ৩০ বছর। হঠাৎ করে, মাত্র নয় মাস আগে, কোনো রকম আলাপ, আলোচনা বা বিতর্কের মধ্যে না গিয়েই সরকার একটি নতুন আইন চালু করেন, Protection of Children from Sexual Offences Act, May 2012 নামে এবং কলমের এক খোঁচায় সম্মতির বয়স বাড়িয়ে ১৮ করে দেন। JVC কমিটি এই সংশোধনী ধারাটির বিরোধিতা করেন ও সম্মতিসুচক সহবাসকারীদের অযথা দণ্ডনীয় অপরাধী হিসেবে গণ্য না করার সুপারিশ করেন।
না, সম্মতিসুচক সহবাসের বয়স ১৬তেই ধরে রাখার মানে এইই নয় যে অল্প বয়সে বা বিয়ের আগেই যৌনসংসর্গকে অনুমোদন করা বা উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কোনো ভাবেই এই আইন অপ্রাপ্তবয়স্কদের কোনো শিক্ষা দিচ্ছে না। বরং এই আইন মোতাবেকে এইটাই ঘটছে যে, সম্মতিসূচক সহবাসের জন্য কোনো কিশোর কিশোরীকেই তৎক্ষণাৎ অপরাধী মেনে গারদে ঢোকানো হচ্ছে না। এই ‘সম্মতির বয়স’এর মানে এইটাই যে কোনো কোনো কিশোর বর্তমানে ১৮ বছরের কমবয়েসি কোনো মেয়ের সাথে সহবাস করলেই সে অপরাধী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবং ঘটনাটিকে বিধিসম্মত ভাবে ধর্ষণের আওতাতেই ফেলা হচ্ছে।
ভারতীয় সমাজ আদৌ চায় না যে এইসব অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের সম্মতিসূচক যৌন সংসর্গের জন্যও অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হোক বা কোনো কিশোরকে এইজন্য ধর্ষক হিসেবে সাজা পেতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক তরুণই এর ফলে জেলে যেতে পারেন। কেউ কোনো নালিশ ঠুকলেই এইসব ছেলে মেয়েরা শুধুমাত্র সম্মত সহবাসের দরুনই গারদে বা কোনো ‘হোম’এ আটকা পড়ে যাবে।
বস্টনে বংগে : প্রথম পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ১৯ মার্চ ২০১৩ | ১২৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
তো বস্টনের গপ্পো বলতে গেলে প্রথমেই যেটা বলতে হবে তা হল আমার অ্যাপার্টমেন্টের কথা। পয়সা বাঁচাতে (থুড়ি সেন্ট বাঁচাতে) আমি একটা পাঁচজনের সঙ্গে শেয়ার করা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। যেহেতু এটা আমার প্রথমবার দেশের বাইরে তাই চেয়েছিলাম একটা মিশ্র সংস্কৃতির বাড়িতে থাকতে। তো ভগবান/জেসাস আমার ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেন নি। আমাদের বাড়িতে আমরা দুজন মেয়ে তিনজন ছেলে, তিনজন স্ট্রেট, একজন গে একজন লেসবিয়ান, দুজন কাপল, একজন ভারতীয়, চারজন আমেরিকান, একজন হিন্দু, দুজন খ্রিস্টান, দুজন ইহুদি, আর আমি যাকে আমার সম্ভাব্য বয়ফ্রেন্ড হিসেবে দেখছি সেই পাকিস্তানি মুসলিম ছেলেটিকে ধরলে একেবারে সর্বধর্মসমন্বয়। এবার এই বাক্যটা আরেকবার মন দিয়ে পড়লেই বুঝে যাবেন আমিই আমাদের বাড়ির বস্টনে বং-গে।
শহীদুল জহিরের গল্প ও আটকে-পড়া বাঙালির যুদ্ধ - তৃতীয় কিস্তি : মাজুল হাসান
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : অপর বাংলা | ২৮ মার্চ ২০১৩ | ২০৮০ বার পঠিত
দেখা যাচ্ছে, “পারাপার”-এর নির্যাতন এ গল্পে এসে বিস্তৃত হয়েছে আরো তৃণমূল পর্যায়ে। হয়ে উঠেছে আরো বেশি নির্মম; প্রাণঘাতী। তাই “এই সময়”-এ এসে জহিরকে লিখতে হয়েছে, পাড়ার মাস্তাদের (তিন ভাই—আবু, হাবু, শফি) হাতে নিহত মোহাম্মদ সেলিম নামের এক কিশোরের কথা। একটি অসম বয়সী কিশোর-যুবতীর প্রেমের ট্রাজেডীর আড়ালে জহির এই গল্পে যে ম্যাসেজটি দিয়েছেন তা হলো, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ষোলকলা-পূর্ণ হয়েছে। কারণ, স্বাধীনতা বিরোধী মওলানা জব্বার (জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বদু মওলানার এক্সটেনসশন), এরশাদ সাহেব, মালেকা বানু আর মেজর ইলিয়াস, সবাই আজকে গাঁটছড়া বেঁধেছে।
প্রসঙ্গঃ রোরুদ্যমান রামু এবং তদ্বিষয়ক একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র : মারুফুল আলম
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৮ মার্চ ২০১৩ | ৬৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
অনন্তর,পরিশেষে বলা জরুরি,ভৌগলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য এই যে,বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহে সাম্প্রদায়িক সংকট যথেষ্ট প্রকট। অন্তত এই বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু এর অবনতি ঘটিয়ে যারা ফায়দা হাসিলে সচেষ্ট তারাই যে এই সাম্প্রদায়িক অপরাধটি সংঘটিত করেছে তা বুঝতে বাড়তি কোনো বিদ্যেবুদ্ধি কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা সত্যি যে,রামুতে কতিপয় মুসলিম সন্ত্রাসির নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও হামলা হয়েছে নোয়াখালির দাঙ্গার পর সন্দেহ নেই এটিই সবচে' বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ধর্মান্ধ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে সুকৌশলে যারা এই সাম্প্রদায়িক অপরাধ সংঘটনে পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করেছে অবশ্যই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইতোমধ্যে রামু নিয়েও শুরু হয়েছে পরস্পর দোষারোপের সেই নোংরা রাজনীতি। তবে কি অচিরেই আমরা রামুর এই সহিংস ঘটনাটিকেও বিস্মৃতির অতলেই হারিয়ে যেতে দেখবো? আর সেটি কি আদৌ আমাদের জন্যে মঙ্গলজনক হবে? আর কতকাল সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিশেবে বিবেচিত হবে? সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক রাজনীতিকরা স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধিতে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা জংগিবাদের ধুয়ো তুলে খাল কেটে কি কুমিরকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে যাবে? এদেশের অসাম্প্রদায়িক প্রকৃত মুসলিমদের কি কিছুই করণীয় নেই? তারা কি শুধুই হাত গুটিয়ে বসে বসে দেখবে আর ইসলামের মহত্বই প্রচার করে যাবে? একজন নির্যাতিত বাংলাদেশি বৌদ্ধের তুলনায় একজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা কিংবা ফিলিস্তিনি মুসলিমের প্রতি এদেশীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মমতা কি আসলেই বেশি? হ্যাঁ,এইসব,সবকিছুই বিবেচনাপূর্বক রামু ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু সমাধানকল্পে একটি স্বচ্ছ বিচারবিভাগীয় তদন্ত এই মুহূর্তে সত্যিই ভীষণ জরুরি। তা না হলে যে সভ্যতার পোড়াঘ্রাণে বারম্বারই অসহ হয়ে উঠবে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই নয় কি?
জেগে থাকে শাহবাগ, জেগে থাকে বাংলা! : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ১৬৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শাহবাগের মোড়– প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনটি একটি বারুদের স্তুপে স্ফুলিংগ সংযোগ সূচনায় গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন । সেখান থেকে গণজাগরণ, গণ বিস্ফোরণটি ঘটে। প্রথমদিকে আন্দোলনটি শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তরুণদের আহ্বানে খুব শিগগিরই এতে ব্যপক সাড়া মেলে; কারণ সচেতন নাগরিকরা কাদের মোল্লার মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, শীর্ষ জামাত নেতার শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মেনে নিতে পারেননি। তরুণরা এই আন্দোলনটিতে পথ দেখালেও শিগগিরই ছাত্র-জনতা সকলেই এতে যোগ দেন; দেশের জেলা শহরগুলোতে তো বটেই, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও গণদাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। জনমত তৈরি হয়, শুধু কাদের মোল্লা নয়, সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি –ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনটি দানা বাঁধে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী, বাঙালি ও সমমনারাও খুব শিগগিরই ১৯৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধ বিরোধী আন্দোলনটির সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করতে থাকেন। এই নয়া বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ হয়ে শাহবাগের চেতনা ছড়াতে থাকে দেশে দেশে।
উৎকর্ষ বলব ? : জিগীষা ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ৩২৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
অনভ্যস্ত ফার্স্ট ইয়ার আমাদের পক্ষে বুঝে ওঠা সত্যিই কষ্টকর যে ইউনিয়ন না থাকা মানে দিন দিন আমাদের কথা বলার ন্যূনতম অধিকার চলে যাওয়া । প্রেসিডেন্সির ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য সাতচল্লিশ থেকে সত্তর পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক, তাকে রক্ষার দায় যদি নাও বোধ করি, তাও, নিজেরা হেসেখেলে নিজেদের ক্যাম্পাসটায় বেঁচে থাকার জন্যই বোধয় একটা সুস্থ স্টুডেন্ট’স বডি প্রয়োজন । যা হচ্ছে হোক যদি চলতে থাকে , তেমন হাল হবে নাতো , নীম্যোলার যেমন বলে গেছিলেন , ওরা যখন ধরতে আসবে তখন কেউই থাকবে না যে প্রতিবাদ করবে . .
ধানাই পানাই ২০ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৭ জানুয়ারি ২০১৩ | ১২২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
উনি বললেন, শুনুন তবে। আমাদের ডিভিশনের এক কাস্টমার ভুটান বাম্পার লটারিতে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছে। টিকিটটা সে আমাদের দিয়ে গেছে, প্রোসীড্স কালেক্ট করতে। এদিকে ইনসিয়োর্ড পোস্ট করতে গিয়ে জিপিও বলছে, দেশের বাইরে ইনসিওর হয়না। আমি বললাম, হ্যাঁ, তাও তো বটে, ভুটান তো অন্য দেশ। গাঙ্গুলী সাহেব বললেন, তখন সবাই আলোচনা করে ঠিক হল, আমাদেরই একজন চলে যাবে টিকিট নিয়ে। তখন দত্ত যাবে বলে ঠিক হ’ল, তার প্লেনের টিকিট ফিকিটও কাটা হয়ে গেল, তারপর শুরু হ’ল ঝামেলা। ঘোষ এসে বলল, ও কেন যাবে? আমাদের কাডারের কেউ যাবে। দত্তই বা ছাড়বে কেন, এই নিয়ে তুলকালাম। দুটো দল হয়ে গেল ডিভিশনে। যত বোঝাই, মশাই, এটা প্লেজার ট্রিপ নয়, সোজা গিয়ে কাজ ফুরোলেই চেক নিয়ে রিটার্ন। এতে এক দিনও বাড়তি নেই, যে একটু ঘুরেঘারে দেখবেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আসলে দু পক্ষেরই জেদ চেপে গেছে, কেউ ছাড়বেনা। ব্যাপারটা এমন হ’ল, যে বাইরে বেরোলে দেখে নেব টাইপের জায়গায় চলে গেল। এদিকে আমারও জেদ চাপতে শুরু করল, তবেরে, দুদলের কাউকেই পাঠাবনা। এদিকে দিন তো বসে থাকবেনা, সোমবার হচ্ছে টিকিটের প্রাইজ মানি ক্লেম করার শেষ দিন। তাই তো বলি, এবার রামনাম জপতে জপতে কোনও রকমে আপনি প্লেনে চেপে- আমি বললাম, দাঁড়ান স্যার, সবই তো বুঝলাম কিন্তু এর মধ্যে আমি এলাম কোত্থেকে? আমি তো আপনাদের এপাড়ার লোক নই, এই দু দলের কোনওটাতেই বিলং করিনা, তবে?
আমার কারাবাস এবং - দ্বিতীয় কিস্তি : আসিফ মহিউদ্দীন
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : অপর বাংলা | ৩১ জুলাই ২০১৩ | ১২৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
হ্যাঁ, তারা সকলেই নাস্তিক এবং ধর্ম সম্পর্কে তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নিজ নিজ চিন্তা ভাবনা, বিচার বিশ্লেষণ রয়েছে। তারা কেউ খুন করে নি, ডাকাতি করেনি, গাড়ি পোড়ায় নি, মসজিদে আগুন দেয় নি, কোরআন পোড়ায় নি। গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতারের সময় একটি প্রশ্নই করেছিল, "আপনারা কী নাস্তিক?" উত্তরটা হ্যাঁ হবার সাথে সাথেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর এই গ্রেফতার হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের চাপের কারণে। অর্থাৎ নাস্তিক হওয়া বাঙলাদেশে একটি অপরাধ বলেই গণ্য হচ্ছে! তাদের ভাল পুরষ্কারই দেয়া হল।
টোরাণ্টোর রঙ্গ বোঙ্গো - দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি : সুমিত রায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ৩১ জুলাই ২০১৩ | ৮৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
বইয়ের বাজারে মন্দা লেগেছে কিছুদিন, এবারের হিসেবে তো সারা বাজার যোগ করলে বইয়ের দোকান পুরো একটাও হবে না, বারোআনা হতে পারে। তার মধ্যে নজরে পড়ার ব্যাপার হচ্ছে অনেক ইংরেজী বই-- অবশ্যই প্রায় সবই বাংলা বইয়ের অনুবাদ। রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ তো আছেই, "শ্রাদ্ধবার্ষিকীতে" দাড়ি মুচড়ে যতোটা উপায় করে নেওয়া যায়, কিন্তু সুনীল গাঙুলী বা শীর্ষেন্দু মুখুজ্জের উপন্যাস, এমন কী "পদিপিসির বর্মিবাক্স"? বাংলা সাহিত্যের এসব অমূল্য সম্পদ কি আমরা আমাদের বাংলাভাষা-অভাষী ছেলেপুলেদের হাতে পৌঁছে দিতে চাইছি? মধ্যে আমরা, আমাদের অভিবাসী সমাজের বেবী বুমাররা (সত্তরের বা তার আগের দশকে যাঁরা এসেছেন) যখন অবসর নেবার কাছাকাছি আসছি তখন কোলকাতার বহুতল বাড়ীর দালালেরা সদলে এসে অনেক ঝাঁপ খুলতেন আর চেঁচামেচি করে খদ্দের ডাকতেন। তা এখন অনেকেই কেনার থেকে বেচার কথা ভাবছেন, কাজেই সে বাজারটি মন্দা, দোকানীরাও অদৃশ্য। দুটি দোকান টিম্টিম্ করছে। তবে নজরে না পড়েই পারে না যেটি সেটি হোলো এক জ্যোতিষীর দোকান, সেখানে জ্যোতিষসম্রাট স্বয়ং দোকান আলো করে বসে আছেন। ইনি বেশ যশস্বী মনে হোলো, এঁর সচিত্র বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যায় কাগজপত্রে, যাঁরা পরশুরামের সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড মনে করতে পারেন, তাঁরা শ্যামানন্দ ব্রহ্মচারীর মূর্তিটি ভেবে নিন। গোড়ায় লোকজন হচ্ছিলো না, বোধ্হয় লোকে ভয়ে দূরে ছিলো, মেলা শেষের কালে দেখি বেশ ভীড়। এইটি যোগ হতেই মেলা একেবার খাঁটি মেলায় দাঁড়ালো। কেন, এদেশী কার্নিভালে স্ফটিক গোলক্ধারিণীদের দেখেননি? যাক, জ্যোতিষী আবার আসুন, বাতের ব্যথাটা চাগাড় দিচ্ছে, একটা পাথর-টাথর ধারণ করার দরকার হয়ে পড়ছে।
কী করিতে হইবে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ৩১ জুলাই ২০১৩ | ১১৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
যুবকরা যত্রতত্র বাজে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। যুবক বয়স হল খাটনির সময়। হাতের মুঠোয় ধরা জলের মতো যৌবনকে গলে যেতে দেবেন না। রাজ্য প্রগতির পথে গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে, রথের রশিতে হাত লাগান। ঘাম ঝরান। যুবকরা স্বামী বিবেকানন্দের পথ অবলম্বন করে ফুটবল খেলুন, যুবনেতাদের অনুসরণ করে প্রোমোটারি করুন, মেয়ে দেখলে সিটি দিন, পাড়ার ক্লাবে তাস পেটান, চোর পেলে পিটিয়ে মারুন, যা খুশি করুন। কেবল আলস্য অভ্যাস করবেন না। গপ্পো থেকেই আসে গুজব। গুজবের সঙ্গে অপপ্রচার, আর অপপ্রচার মানেই চক্রান্ত। অলস মস্তিষ্ক হল মাওবাদীদের কারখানা। হীরকরাজ্যে আলস্য ও চক্রান্ত দুইই নিষিদ্ধ। যুবকরা নিজেরা নিজের মূল্য না বুঝে অকারণ রাজনীতি ও চক্রান্তে জড়িয়ে পড়লে তাদের চোখে আঙুল্ দিয়ে বোঝানো হবে। অলস যুবক দেখলেই নাগরিক কমিটি গড়া হবে। শোধরানোর চেষ্টা করা হবে। তাতেও কাজ না হলে থানায় গিয়ে কড়কে দেওয়া হবে। এর নাম বেলঘরিয়া পদ্ধতি। এর হাত থেকে বাঁচতে হলে পাড়ার ক্লাবে নাম লেখান, নাগরিক কমিটির হয়ে মাতব্বরি করুন, বাড়িতে বসে গীতা পাঠ করুন। মোট কথা গঠনমূলক কাজে ঘাম ঝরান, কারণ কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
মণিপুরের এনকাউন্টার মৃত্যুঃ আফস্পার চূড়ান্ত অপব্যবহার : মুকুল সিনহা
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ১৬ জুলাই ২০১৩ | ৯৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আমার সৌভাগ্য যে স্বামীহারাদের সংগঠন আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে তাদের সাহায্য করতে। এর ফলে আমি, মণিপুর রাইফেলস ও পুলিশের লোককে জেরা করবার সুযোগ পেয়েছিলাম, দিল্লি আর ইম্ফল, দুই জায়গাতেই। আমি যখন ইম্ফল যাই ২০১৩র মার্চ মাসে, তখন সাক্ষাত হয়েছিলো বাবলু লয়টংবাম নামে এক আইনজীবির সাথে। উনি কয়েকজন জেদী আইনজীবির একটি ছোটো গ্রুপকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এই এনকাউন্টারের শিকার হওয় মানুষগুলির স্বজনদের আইনি সাহায্য দিতে। শয়ে শয়ে স্বামীহারা মহিলারা এই কমিশনের শুনানি চলাকালীন হাজিরা দিতেন। কমিশনের মাথায় ছিলেন বিচারপতি হেগড়ে। আমি,আমার অভিজ্ঞতায়, এই প্রথম একটা কমিশনে হাজির ছিলাম যেখানে কমিশন একেবারে হৃদয় দিয়ে তদন্তে নেমেছিলেন। আমরা ইম্ফলে ছিলাম ছয়দিন আর নয়াদিল্লিতে চারদিন। আর মার্চের শেষেই কমিশন তার রিপোর্ট পেশ করেন।
ঋতু, সম-যৌনতা, বৃহন্নলা এবং অতীত ও বর্তমানের রক্ষণশীল ভারতীয় সমাজ : বিশ্বেন্দু নন্দ
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৮ জুলাই ২০১৩ | ৪৬৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৭
দেবতাদের মধ্যে সমযৌনতা খুব একটা অপ্রচলিত নয়, যদিও অনেক সময় এগুলি সঙ্গমের চিত্র বহন করে না, বরং আচারে প্রকাশ পায়। অগ্নি অন্য দেবতার বীর্য গ্রহণ করে। যদিও তিনি স্বাহার স্বামী, তিনি সোমের(চাঁদ) সঙ্গে রমণ করেন, কেননা তিনি মুখ দিয়ে পৃথিবীর উৎসর্গ স্বর্গে বসে পান করেন। হিন্দু শাস্ত্র বলে এটি আসলে মিথুন ভঙ্গিমা, যেখানে অগ্নির মুখ যোনির কাজ করে। রামায়ণ আর শৈব পুরাণে যখন পার্বতী আর শিব উপগত হন, তখন দেবতাদের আশঙ্কা হল এই অনন্ত কাল ধরে চলা সঙ্গমে বিশ্বে প্রলয় আসন্ন। এবং তাঁরা বিশ্ব পিতামাতার মিলনে বাধা দান করে। উচ্ছ্রিতদণ্ড রাগান্বিত শিব স্বর্গে উপগত তাঁর অস্খলিত বীর্য কোনও দেবতাকে ধারন করার নির্দেশ দিলে, অগ্নি সেই বীর্য ধারণ করে পান করেন। তবে কথাসরিৎসাগরে বলা হয়েছে শিব অগ্নিকে এটি পান করতে বাধ্য করেন। বেদে মিত্রা আর বরুণের বহু অন্তরঙ্গতার গল্প রয়েছে। ভগবৎপুরাণে এদের দুজনের এক অযোনিসম্ভূত সন্তানের কথা বলা হয়েছে। বরুণের বীর্য বল্মীক স্তুপের ওপর পড়লে বাল্মিকির জন্ম হয়। উর্বশীকে দেখে মিতা এবং বরুণ বীর্য স্খলন করে জলে পড়লে অগস্ত্য আর বশিষ্ঠ্যর জন্ম হয়।
টোরাণ্টোর রঙ্গ বোঙ্গো - প্রথম কিস্তি : সুমিত রায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৭ জুলাই ২০১৩ | ২৭৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪২
বঙ্গ সম্মেলনের তেত্রিশ বছরের ইতিহাস দেখলে আমাদের এখানকার অভিবাসী জীবন বিবর্তনের একটা চলচ্চিত্র পাওয়া যাবে, যেমন হওয়া উচিত। আমাদের সমাজ বেড়েছে, সমাজের সঙ্গতি বেড়েছে, সম্মেলনও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। গোড়ার দিকের বোল ছিলো আমাদের সংস্কৃতির ধারা এখানে বহমান রাখা, তা সে আমরা নিজেরাই করতাম, দেশ থেকে গুণীদের এনে করবার রেস্ত ছিল না। মধ্যে ধুয়ো উঠলো আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী করে যেতে হবে। সে ভবীরা এসব ছেঁদো কথায ভোলবার নয়, তারা এ সম্মেলনের ধারে কাছেও ঘেঁষলো না। তবে আমরাও হতাশ হবার পাত্র নয়, আমরা আস্তে আস্তে দেশ থেকে নামকরা শিল্পীদের আনতে আরম্ভ করলাম, প্রথমে রবীন্দ্রসঙ্গীত, তারপর নাটকের দল, আধুনিক গাইয়ে-- তারপর আস্তে আস্তে বাউল, পল্লীগীতি এমনকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও ঢুকে গেলো কখন ফুড়ুত্ করে। বছর দশেক বা পনেরো আগে থেকে আমাদের সমাজে অনেক নতুন ধরণের মানুষ আসতে শুরু করলেন আর সম্মেলনের আর্থিক ব্যাপারটাতেও বেশ ঘোরতর পরিবর্তন এলো। সেটা কী, তা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে, কিন্তু ফলং আমরা ওই দ্বিতীয় প্রজন্ম-টজন্মের ছেঁদো কথা বাদ দিলাম, সম্মেলন হোলো "সন্মেলন" (এই সম্মেলনের ছাপা নির্ঘণ্ট পশ্য) আর সংস্কৃতির ফোকর দিয়ে বলিউডি নাচগানধামাকা ঢুকে গেলো। আমজনতা ভারি খুশি, এবং এই সব মেলার সেইটেই আসল কথা।
আমার কারাবাস এবং - প্রথম কিস্তি : আসিফ মহিউদ্দীন
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : অপর বাংলা | ১৭ জুলাই ২০১৩ | ১০৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
গাড়ি থেকে যখন নামানো হল, তখন আমরা সংখ্যায় পরিণত হয়েছিলাম। গরু বাছুরের মত আমাদের বারবার গোনা হচ্ছিল, এরপরে একটা অন্ধকার করিডোরে নিয়ে যাওয়া হল। আমরা চারজন একজনার পিছনে আরেকজন ঢুকছি, আমাদের সামনে পিছনে চারজন কারা প্রহরী। সবার আগে রাসেল ভাই, তারপরে শুভ, তারপরে আমি, সবশেষে বিপ্লব ভাই। আমাদের ১৪ সেলে নিয়ে গেল। ১৪ সেলের দরজা দিয়ে ঢোকার সাথে সাথেই চারদিক থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল, তাদের টিনের বাসন দিয়ে শব্দ করে কান ঝালাপালা আবস্থা। তারা সবাই একসাথে স্লোগান দিতে লাগলো; বলতে লাগলো, "নাস্তিকমুক্ত জেলখানা চাই", "নাস্তিকদের আজই ফাঁসি চাই", "জেলখানায় নাস্তিক, মানি না মানবো না"
বিপ্লবী ও যৌনতাঃ অগ্নিযুগ থেকে মাওবাদ (প্রথম পর্ব) : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৪ জুলাই ২০১৩ | ২৪৬৩ বার পঠিত
তা' গড়পড়তা বাঙালী যে মাদার-ফিক্সেশনে ভোগে সে কথা তো অনেকেই মনে করেন। তাই তারা বৌ আনতে যায় না, বলে - মা, তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি। (আজকের কোলকাতার প্রজন্ম নিয়ে কথা বলছি না, বলছি পূর্ব প্রজন্ম ও আজকের গ্রামীণ সমাজকে সামনে রেখে।) তবু রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিতে চাই, উনি হলেন ইউরোপীয় তথা আধুনিক শহুরে সংস্কৃতির পথিকৃৎ। বাংলা সাহিত্যে ও মননে পরিশীলিত রোম্যন্টিক প্রেমের কাঠামো নির্মাণের বিশ্বকর্মা। এ নিয়ে নীরদ সি চৌধুরি মশায় ওনার "বাঙালি জীবনে রমণী' বইটিতে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। দেখিয়েছেন বংকিমের ইংরেজি উপন্যাস "রাজমোহন'স ওয়াইফ"এ পুকুরে স্নান সেরে ফেরা ভিজে কাপড়ের মেয়েদের দেখে সরস মন্তব্য করা পুরুষরাই বাঙালির তৎকালীন সমাজের সিংহভাগ। তাই হেমেন মজুমদারের নিজের স্ত্রীকে মডেল করে আঁকা সিক্তবসনার ছবির এত কাটতি। তাই "চলে নীল শাড়ি নিঙারি নিঙারি পরাণ সহিত মোর" বা একটু পরিশীলিত "নীলাম্বরি শাড়ি পরি নীল যমুনায়, কে যায়!" একেবারে বাঙালির প্রাণের গান। নীরদ দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের সফিস্টিকেটেড "বিধি ডাগর আঁখি যদি দিয়েছিলে" নয়, ভারতচন্দ্রের "দেখিলাম সরোবরে কোন এক কামিনী, কোনমতে মোর সনে বঞ্চে এক যামিনী' আমাদের পুরুষমানসিকতার সঠিক প্রতিফলন।
ইশরাত জাহানঃ তথ্যের খোঁজে (প্রথম পর্ব) : মুকুল সিনহা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ জুলাই ২০১৩ | ২০২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
এখন, প্রশ্ন উঠতেই পারে, এফআইআরে যদি নাম আছেই, তা হলে আর তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করার জন্য সিবিআইকে ১৭৯জন সাক্ষীর ব্যবস্থা কেন করতে হল! সিবিআইয়ের বর্তমান চার্জশীটে এই এনকাউন্টারকে আইবি আর গুজরাত পুলিশের যৌথ অপারেশন বলে বিবৃত করা হয়েছে, এবং এতে রাজিন্দর কুমার সমেত চারজন আইবি অফিসারের নামও দেওয়া রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবেই কোনও আইবি অফিসারকেই হত্যার ষড়যন্ত্র, অপহরণ ইত্যাদি সম্ভাব্য কোনও ধারাতেই অভিযুক্ত করা হয় নি। এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডটি ঘটাবার পেছনে এতগুলো পুলিশ অফিসার এবং আইবি অফিসারদের আসল উদ্দেশ্য, বা মোটিভ কী ছিল, এই সম্বন্ধে কোনও কথাই বলা হয় নি। এটাও ব্যাখ্যা করা হয় নি কেন এই চারজনকে তিনটে আলাদা আলাদা জায়গা থেকে তুলে আনা হল আর কেনই বা তাদের আমেদাবাদের একটা রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলা হল। চার্জশীটে যা লেখা আছে, তার থেকে অনেক বেশি কিছু লেখা নেই।
বস্টনে বংগে : পঞ্চম পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৬ জুলাই ২০১৩ | ১১৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
সত্যি কথা বলতে কি, এটাই আমার বস্টনে প্রকৃত কামিং আউট। কেন না আগের দুটো ঘটনাকে কামিং আউট না বলে ক্যাচ আউট আর বোল্ড আউট বললে বোধ হয়, ঠিক বলা হয়। কিন্তু ল্যাবের কামিং আউটটা একেবারে স্টেজে দাঁড়িয়ে, মাইক হাতে নিয়ে ঘোষণা। আর তার সঙ্গে একটা মজার ঘটনা জড়িত, সেটা বুদ্ধদেবকে নিয়ে। বুদ্ধদেব আমার ল্যাবের বাঙালি সহকর্মী। আমার থেকে একটু বড়, বিবাহিত, একটি বেশ মিষ্টি দু বছরের ছোট্ট ছেলে রয়েছে। বুদ্ধদেব দেখলাম দারুণ মিশুকে, প্রথম দিনেই আমাকে বাড়ি নিয়ে চলে গেল, তারপর যা হয়, গপ্পো, আড্ডা, কফি। প্রথম দু-একদিন খারাপ লাগে নি, কিন্তু তারপর বুঝলাম, ওর জীবনের ফিলসফি হল, এই দুনিয়ার সব কিছুই খারাপ। কালোরা খারাপ, মুসলিমরা খারাপ, মিডল ইস্ট খারাপ, মেক্সিকানরা খারাপ, ডেমোক্র্যাট খারাপ, ইন্ডিয়া খারাপ তো বটেই, কলকাতা আরো খারাপ। কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলাম, এর সাথে বেশিক্ষণ সময় কাটালে নির্ঘাত ডিপ্রেসড হয়ে যাব। অতএব, বুদ্ধং শরণং থেকে আমাকে পালাতে হবে। কিছুদিন অল্পবিস্তর এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলাম, তাতে দেখলাম ও ভারি দুঃখ পেয়ে গেল। কী করি, কী করি ভাবছি, টুরিং পথ দেখালেন।
পূব-পশ্চিমের বাংলা ভাষা : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ২৬৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
ভাষা তার নিজের সুবিধার্থেই অর্থের সীমা সম্প্রসারণ করে, প্রয়োজনের চাপে নতুন শব্দও নির্মাণ করে, প্রয়োজনের তাপে অশুদ্ধ শব্দকে শুদ্ধিকরণ করে নেয়। ব্যকরণের আদালতের রায় যাই হোক না কেন ‘সাহিত্যিক’ আর ‘ভাষাভাষী’ উভয়টির প্রয়োগ নিয়ে যেমন আজ আর কেউ প্রশ্ন করবেন না, তেমনি আদালতের নিয়োগপ্রাপ্ত সম্মানিত তদাকরকারীদের রায় যাই হোক না কেন, অন্যতম শব্দটির অর্থের যে সম্প্রসারণ ঘটে গেছে, তাকে আর পুরনো সীমায় বেধে রাখা যাবে না। কী ক্ষতি ‘অন্যতম ব্যক্তি’ বলতে ব্যক্তির বেলায় যেমনটা আমরা বুঝি, ‘অন্যতম গ্রন্থ’ বলে ব্যক্তির কীর্তিকে তেমনি আমরা বোঝাতে পারি? ভাষা এইভাবেই নিয়ত তার অর্থ সম্প্রসারণ করে চলে।
বরং বাংলা ভাষার সত্যিকারের বিপদ যদি কোনদিক দিয়ে থাকে, সেটা সমাজের উচ্চক্ষেত্রগুলোতে তার চর্চা না করার ফল। শৌখিন রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা দিয়ে তাকে সামান্যই রক্ষা করা যাবে। আমরা কি খেয়াল করছি রবীন্দ্র-নজরুলের ব্যবহার করা শব্দগুলোও তরুণতর প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট ঠেকছে, ক্রমে তারা ধূলিমলিন হয়ে পড়বে? জায়গীর বাদ যাক, কেন না প্রথাটাই নেই, কিন্তু বাংলাভাষা এখন শুধুমাত্র আটপৌরে জীবনেই ব্যবহৃত হচ্ছে, সমাজের-রাষ্ট্রের উচ্চস্থানগুলো থেকে সে কোন রসদ সরবরাহ পাচ্ছে না। উচ্চশ্রেণির সন্তানেরা যদি শিক্ষার প্রধান অংশ ইংরেজিতে সম্পন্ন করেন, আমলাতন্ত্র-সামরিকতন্ত্র-বনিকতন্ত্র সর্বত্র যদি ইংরেজিই দাপুটে ভাষা হয়ে থাকে, মায় আদালতে পর্যন্ত যদি প্রায় সমুদাংশ সওয়াল-জওয়াব মাতৃভাষায় না হয়; তো বাংলার ওপর ইংরেজির প্রভাব শুধু হুকুম বলে নড়ানো যাবে না, তার আগেই অজস্র হাকিম সরে যাবেন। কিন্তু যদি কোন হাকিমের হুকুমে যদি এই আদেশ কার্যকর করা যায় যে, বঙ্গদেশে আজ থেকে সরকারি-বেসরকারী কোন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ না দর্শিয়ে বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষায় পরীক্ষা নেয়া যাবে না, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো কর্মক্ষেত্রে-আদালতে সাধারণ মানুষের অবোধ্য কোন ভাষায় আলাপ করা যাবে না, সকল পাঠ্যগ্রন্থ অবিলম্বে বাংলায় প্রণয়ন করা হবে -- হুকুম করে ভাষাদূষণ বন্ধ করতে হবে না, আপনাতেই সেখানে প্রাণের স্রোত বইতে থাকবে।
মহাশ্বেতার সঙ্গে ইলিয়াসের সংলাপ : শালগিরার ডাকে - দ্বিতীয় পর্ব : মহাশ্বেতা দেবী - আখতারুজ্জমান ইলিয়াস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ২২৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মহাশ্বেতা দেবীঃ ...মুন্ডাদের মধ্যে, আমি খেরিয়াদের মধ্যে যে ধরণের কাজ করি, সেরকম কাজ করার ছিল না। কিন্তু ওদের সংগঠিত করার ছিল। সেটা আমি সব সময় বিশ্বাস করি, ওরা নিজেরাই সংগঠিত হোক। মিনিমাম কতোগুলো কাজের ভিত্তিতে ওরা নিজেরাই সংগঠিত হোক। ওদেরকে পলিটিক্যাল ফোর্স বলে মনে করা হতো। সেটা সব সময় মিথ্যাও হয়নি। তাই...মুন্ডা গেল...অঞ্চলের দিকে মুন্ডা, ওঁরাও সব আর মাঝামাঝি তো সব চলছেই; ইঁট ভাটার শ্রমিক, সেসব ইনভেস্টিগেট করে লেখাটেখা, কংক্রিট কাজের মধ্যে আমি বেশী বলবো যে ‘ক্রিমিনাল ট্রাইব’ এ শব্দের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষিত হল।
৩৭৭: কিছু কথা : বর্ন ফ্রী
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ | ৯৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
প্রথমত আদালত জানাল যে লিঙ্গভিত্তিক যে সাম্যের অধিকার সংবিধান দিয়েছে, যৌনতা বা সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন তার আওতায় আসবে না (দিল্লি হাইকোর্টের ভাবনা ভিন্ন ছিল)। এখানে ভাবা দরকার যে, সংবিধানে কেন লিঙ্গভিত্তিক সাম্যের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। একথা অনুমান করা কষ্টকর নয় যে সংবিধান প্রণেতারা বুঝেছিলেন, সমাজে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য আছে, তাই তার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচের দরকার রয়েছে। একই রকম ভাবে আমাদের সমাজে যৌনতাভিত্তিক অসাম্যও রয়েছে, কিন্তু আদালত দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো রক্ষাকবচ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না। তারা বলে দিলেন যে যৌনতা সমানাধিকারের মাপকাঠি হতে পারে না। অর্থাৎ, এক কথায়, কোনোরকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের সংগ্রামের অধিকার তারা কেড়ে নিলেন।
তাঁরা আরও জানালেন যে, যারা “প্রকৃতিসম্মত যৌনক্রিয়া” করেন আর যারা “প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌনক্রিয়া” করেন তারা দুটি ভিন্ন গোত্রভুক্ত (ক্লাস)। তাই এক গোত্রের সাম্যের অধিকার, অন্য গোত্র দাবি করতে পারে না। কিন্তু আইনের চোখে কেন হেটেরোসেক্সুয়াল আর হোমোসেক্সুয়ালদের ভিন্ন গোত্র হিসেবে দেখা হবে, তা তাঁরা ব্যাখ্যা করলেন না। আরো মজার ব্যাপার হল, তাঁরা এটা বুঝলেন না যে, এই গোত্রবিভাজন খুবই আপেক্ষিক। আজ যদি স্বামি-স্ত্রী দুরকমের যৌনক্রিয়া করেন তবে তাদের কীভাবে গোত্রভুক্ত করা হবে, এই রায় থেকে সেটা বোঝা গেল না।
বিয়ে করা যায় না জেনো সহজে : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৩ | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ৫৭৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯৪
অতএব ভয়ংকর জরিটরি দেয়া বিকটদর্শন সব লাল বেনারসী ধুপধাপ পড়তে লাগল আর তালপাতার সেপাই সেলসম্যানটি নানা ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে সেগুলো গায়ে ফেলে দেখাতে লাগল।জেঠিমার সবগুলোই পছন্দ, কেবলীর কোনটাই না, বাকীদের মধ্যেও মতের মিল নেই। প্রায় হাতাহাতি হতে যাচ্ছে এমন অবস্থায় বুদ্ধিমতী পটলদি হাল ধরেন - "লাল নয়, কাছাকাছি কিছু দেখান"। তেমন-লাল-নয় অর্থাৎ ম্যাজেন্টা, মেরুন, গাঢ় গোলাপী ইত্যাদি বেনারসীর একটি পাহাড় জমা হল, এবার পটলদি নিজের গায়ে ফেলে ফেলে দেখাতে লাগলেন, সকলেরই মোটামুটি পছন্দ এমন কয়েকটি কেনাও হয়ে গেল, ফাঁকতালে পটলদিরও হয়ে গেল একটা।
ধৃত-রাষ্ট্রের বালিকারা : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৩ | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ১১৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
নাহ্...আর ভাবিবে না দুলালী বেওয়া! আর কিছু মনে করিবে না! টোকানি তখন ছয় বছরের। টোকানির হাত ধরে সে, রঞ্জিতা মুর্মু আর ধিরতুর বউ শান্তি কুমারী বর্মন মিলে ছুটেছিল চোদ্দ মাইল মূল সড়কের সামনে। সেখানে তার বড় বেটি কুড়ানী যে ছিল। ভ্যানগাড়ির উপর হাত-পা মেলে। মুখে রক্ত। টোকানি হাতে তালি দিয়ে বলেছিল, ‘বুবু- বুবু এ্যাংকা ঘুমায় রছে, মাও!’ আর তখন মেয়ের সদ্য ওঠা দুই কিশোরী বুকের মাঝে মুখ গুঁজে সে যেমন চিৎকার করেছিল, তেমন চিৎকারই কি ভেসে আসছে বর্মন পাড়া থেকে? কার্তিকের দুপুরে চিল ছানা হারিয়ে ফেলা সোনালী রঙা মা চিলের আর্তনাদের মত? টোকানি ঘুমে কাদা। মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে মা-মেয়ে এক সাথে ছুটবে নাকি দুলালী একাই যাবে? আল্লা চাহে ত’ টোকানির কোন ক্ষতি হবে না। কোন বাঘডাঁশ এসে তার এই হাঁসের ছানার মত মেয়ের পালকে কামড় দেবে না! আল্লাহ চাহে তো? বাইরে থেকে শেকল তুলে দিয়ে সেই মাঝ রাতে সে ছুটেছিল শান্তি-ধিরতুদের বাড়ি। শান্তি দুলালীর ছোট বেলার সই। মাটির শিব গড়ে ভাল বরের পূজা করতে করতেই ধিরতুকে তার ভাল লেগেছিল। শান্তির বিবাহ ঠিক হয়েছিল অংপুর শহরে ‘নিউ লক্ষ্মী বস্ত্রভান্ডার’-এর আড়তদার লক্ষ্মীনারায়ণ বর্মনের সাথে। কিন্তু অন্ধ হলেও দারুণ ফর্সা ধিরতুর কম্পনহীন সবুজাভ-নীলচে চোখের মণি, একহারা দীর্ঘ গড়ন টেনেছিল শান্তিকে। গায়ে হলুদের সন্ধ্যায় হবু শাশুড়ি সন্ধ্যামালতী মাসীর পায়ে পড়ে সে কেঁদেছিল। পাজি দুলালীরা এ নিয়ে শান্তি কুমারীকেও কম কথা শুনায় নি, ‘তুই এ্যালা গান্ধারির মতো চোখে একখান কাপড় বান্ধিব্যি শান্তি? তোর বরের যে চক্ষু নাই! গান্ধারির মত একশ’ চ্যাংড়ার মা হবি?’ শান্তি কুমারী এ কথার উত্তরে হাত জোড়া করে কপালের কাছে নমস্কার করে বলতো, ‘ওনারা স্বর্গের দেবী।’
আমেরিকার স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা – কিছু কাটাছেঁড়া (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ঈপ্সিতা পালভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ অক্টোবর ২০১৩ | ৪৭৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৯
ওঁরা বলছেন, এর বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে। বলছেন আমরা স্বাস্থ্যকে পণ্য হিসেবে দেখে ‘ওয়াল স্ট্রীট হেলথ কেয়ার’ চাইনা । স্বাস্থ্য ও একটি মানবিক অধিকার, এই অধিকারের জায়গা থেকে পরিষেবা চাই। বলছেন, চালু করতে হবে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (ন্যাশানাল হেলথ প্রোগ্রাম)। একজনের কাছ থেকেই সব খরচ আসবে - ‘সিঙ্গল পেয়ার বিমা’, আর এই একজন হবে সরকার। কানাডার মডেলে। সোজা কথায়, দেশে ইতিমধ্যেই বৃদ্ধদের জন্য যে ‘মেডিকেয়ার’ চালু আছে, সেটাই দেশের সবার জন্য চালু করতে বলা হচ্ছে। দেশের জনগণের উপর ২% ট্যাক্স বা চাকুরিদাতাদের উপর ৭% পে-রোল ট্যাক্স বসালেই এই ব্যবস্থার টাকা উঠে আসবে। প্রোগ্রেসিভ পেরোল ট্যাক্সের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এই টাকার পরিমাণটা এখনকার প্রদেয় প্রিমিয়াম বা কো পে র খরচের চেয়ে অনেক কম। আর এর ফলে আসবে প্রকৃত সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা। এই ব্যবস্থার দাবি অনেকদিনের। একাধিক স্টাডিতে দেখানো হয়েছে, বেসরকারি বিমা উঠিয়ে একটামাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করলে শুধু পরিচালনাখাতে খরচ কমানো যাবে প্রতি বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ স্বাস্থ্যখাতে খরচের এক-চতুর্থাংশ জমানো যাবে। এটা সবার জন্য স্বাস্থ্যের খাতে ব্যয় করা যেতে পারে। এছাড়া তো আছেই মুনাফাজনিত লাভ কমানো।
লাঞ্চবক্স, ধোবিঘাট, বহমানতা : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ অক্টোবর ২০১৩ | ৮৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
“কেউ যায় না/ শুধু জায়গা বদলে বদলে/ সব কিছুই/ জায়গা বদলে বদলে/ সকলেই/ থাকে।“
আমাদের পুবদিকের জানলা দিয়ে নিচের দিকে তাকালে যে টালিছাদ বাড়িটা দেখা যায়, তার ইটের দেয়ালে গতকাল সকাল থেকে নীল রঙের প্রলেপ লাগতে শুরু করেছে। নতুন নীল রং। যেন আশ্বিনের আকাশ। ওই বাড়িটার মানুষজনের সাথে আমার ব্যাক্তিগত চেনাশোনা নেই। কেবল সকালে-রাতে একগুচ্ছ সম্পর্ক লক্ষ্য করি। সবুজ হাওয়াই চটি, বেতের চুপড়ি, ছেঁড়া টেডি বিয়ার, কালো চশমা, হাতল ভাঙা চেয়ার, বেগুনি কামিজ – এসবের দৈনন্দিনতায় আঁচ করে নিতে চাই টালিছাদের নিচে বসবাসকারী নারীপুরুষদের, যেমনটা চিনতে চেয়েছিলাম সেই ইমরান নামের কিশোরকে, যার জন্য দিদি জাসমিন ক্যামকর্ডারে গুছিয়ে রাখছিল সুখ-দুঃখ, যেমনটা বুঝে নিচ্ছিলাম ওই দেশপান্ডে আন্টিকে, যে যত্নে লালন করে নিঃসঙ্গ ইলার ভালো থাকা-খারাপ থাকা।
লাঞ্চবক্স দেখে এলাম। দু’বছর আগে, সম্পর্ক নিয়ে তৈরী হওয়া আরেকটা ছবির কথা খুব মনে পড়ছে। ধোবিঘাট।
নতুন ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিল - এত প্রতিবাদ, এত বিক্ষোভ - আপনি ভাববেন না? : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১২৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সাবেক এমসিআই নিয়ে হাজার অভিযোগের মধ্যেও একটা স্বস্তি ছিল - সেফটি ভালভ-ও বলতে পারেন - যে, তার প্রতিনিধিরা নির্বাচিত, চিকিৎসকদের ভোটে নির্বাচিত। ঠিক যেমন, দেশের হাল নিয়ে যত আক্ষেপই করি না কেন, গণতন্ত্রের শক্তির উপর আমাদের আস্থা সদা অটুট। আমরা আশা রাখি, বেশী বাড়াবাড়ি করলে সেই নেতাকে আমরা ভোটে হারিয়ে ক্ষমতাহীন করে ফেলতে পারব - না, শেষমেশ পেরে উঠি না হয়ত - কিন্তু, এই আশাটা একটা বড় জোরের জায়গা, এবং নেতারাও কোনো এক জায়গায় সচেতন থাকেন, যে, পরের দফায় তো ভোটে জিতে আসতে হবে। এনএমসি বিল সেই আস্থার জায়গাটাই ভেঙে দিয়েছে। প্রস্তাবিত কমিশনের বেশীর ভাগ সদস্যই হবেন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মনোনীত। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও সেই কমিশনে নিয়মিত ভিত্তিতে অধিকাংশ রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব থাকার অবকাশ নেই। রাজ্যের প্রতিনিধিরা যেখানে থাকবেন, তাঁদের ভূমিকা মূলত পরামর্শদাতা বা উপদেষ্টার - সেই পরামর্শ অনুসারে চলতেই হবে, কমিশনের এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
এনার্সি আর ক্যাব, দুটিই দানবিক প্রক্রিয়া : পার্থপ্রতিম মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : NRC/CAA | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১২৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
প্রথম থেকে এই তালিকা বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। বর্তমানে এনার্সি শুধু আসাম নয়, ভারত নয়, এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রক্ষাপটেও একটি উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয়। প্রতিটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী, তাদের গণসংগঠন, প্রতিটি ভাষিক গোষ্ঠী, তাদের প্রতিনিধিত্বকারী দল উপদল, প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠী যাদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ভূগোল-ইতিহাস, তারা নিজের সুবিধামতো, নিজের রাজনৈতিক লাভ, সামাজিক লাভ ক্ষতি বিবেচনায়, একটি করে আনুমানিক সংখ্যা ঠিক করেছেন, এবং প্রত্যাশা করেছেন সেই সংখ্যাই প্রতিফলিত হবে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকায়। অসমীয়া চেয়েছেন বাঙালির নামকর্তন হোক প্রভূত পরিমাণে, বাঙালিরা উল্টোটা চেয়েছেন। হিন্দুরা চেয়েছেন মুসলমান বিতাড়িত হোক এই ভূখণ্ড থেকে, মুসলমানরা চেয়েছেন মুসলমানের সংখ্যা কম হোক, হিন্দুরা চিহ্নিত হোক বেশি পরিমাণে। এবং এই ভাবেই সম্পূর্ণ নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে নাম বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকা।
নাগরিকপঞ্জি -- শেষ প্রহর : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ২৬৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
এই যে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ নামক জুজুটি দেখিয়ে গোটা বাঙালি জাতিকেই অভাবনীয় এক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেই জুজুটি কতটা ঠিক? হিটলারের জার্মানির সঙ্গে এখানেও মোদীর ভারতের অদ্ভুত মিল। পুরো জুজুটাই তৈরি করা হয়েছে গুলগল্পের ভিত্তিতে। ২০১১ সালের জনগণনার বহুপ্রতীক্ষিত অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য অনেক টালবাহানার পর সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতবর্ষ মোটেই বাংলাদেশ থেকে আগত বে-আইনী অনুপ্রবেশকারীতে ছেয়ে যাচ্ছেনা। আইনী-বেআইনী মিলিয়ে ২০১১ সালে ভারতবর্ষে বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষের সংখ্যা ছিল ২৩ লক্ষ। মনে রাখতে হবে, এটা শুধু 'বে-আইনী' অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা নয়। বহুসংখ্যক মানুষ আইনী পদ্ধতিতেই ভারতবর্ষে বসবাস করছেন, যাঁদের একটা বড় অংশ আইনসঙ্গত উদ্বাস্তু (সেই সংখ্যাটা বিরাট, যদিও স্বাভাবিক মৃত্যুর কারণেই সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে)। তার মধ্যে একটা বড় অংশেরই বাস পশ্চিমবঙ্গে। ফলে আসামেই ১৯ লক্ষ বে-আইনী বাংলাদেশী অভিবাসী এসে বসে আছেন, এ একেবারেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
সারল্যের রঙ এবং একটি পাঁচালীর সহজ পাঠ অভিজ্ঞতা : রাজদীপ্ত রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৭৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ছবিটি প্রথম দর্শনে যতটা সরলরৈখিক দেখায় ততটা একতলবিশিষ্ট আদপে নয়, এবং ঠিক সে কারণেই পরিসর বা বিনির্মিত বিষয় বৈচিত্রে গাঢ় মনোযোগ ও বিশ্লেষণ দাবী করে। ছবি দেখে ফেলার পর যে চিন্তা ভাবনার অবশ্যম্ভাবী বুদবুদ ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে দর্শকের মন এবং মগজকে। তার এক সুদূরপ্রসারী আমেজ আর কথাজাল তৈরি হয়। অনেকটা সময় ধরে সে আমেজের বিস্তার, অনেকগুলি কথামুখের ধাপে তার অবধারিত আলোকপাত। মানসমুকুলের গপ্প তৈরি করার উপাদান অথবা গপ্পের বুননের ধরন, তার বাধাহীন এগিয়ে চলা, বাঁক নেওয়া বা ন্যারেটিভের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে উপনীত হওয়া, সমস্তটাই মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় গল্পের মেজাজ, অনুভূতির ভিত্তি এবং বিষয়ের সংগে। বলার ধরন এবং কি বলা হচ্ছে সেই বিষয়ের সনির্বন্ধ সমণ্বয়ে যে অভূতপূর্ব নির্মাণ প্রকল্পের ছায়াপ্রতিমা ক্রমপ্রতীয়মান হতে থাকে এই আপাত সহজ অথচ গভীর চলচ্ছবি-আখ্যানের সরল দ্রুতির চালে ছন্দে, বিষাদে, হরষে – সেই একান্ত শিল্পরূপটিই সহজ পাঠের গপ্প-কে চলচ্চিত্র হিসেবে একুশ শতকের বাংলা সংস্কৃতির চালচিত্রে অসাধারন করে তুলেছে।
অনিল অম্বানীর সংস্থা ও অফসেট দায়দায়িত্ব : রবি নায়ার, অনুবাদ -অর্ক দেব পরঞ্জয় ( অথরস আপফ্রন্ট) প্রকাশিত 'মিথ্যার উড়ান' বই এর অংশবিশেষ, অনুমতিক্রমে প্রকাশিত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ এপ্রিল ২০১৯ | ২৩৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সিস হল্যান্ডের আমলে ৩৬টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের এই নয়া রাফাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপরেই তিনি এক-একটি ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার বলপূর্বক তাঁদের বাধ্য করেছে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে পার্টনার হিসেবে এই প্রকল্পের অংশীদার করতে। ব্যাবসার স্বার্থে এই চুক্তিটি হাতছাড়া করতেই এই গা-জোয়ারি মেনে নেন তাঁরা। ফ্রান্সিস হল্যান্ডের এই দাবি দ্যসল্ট সংস্থার মুখপাত্র মেনে নিতে চাননি। কিন্তু ফাঁস-হওয়া তথ্য থেকে পরিষ্কার, সংস্থার বহু কর্মকর্তা চাননি, ভারতীয় অফসেট পার্টনার হিসেবে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বেছে নেওয়া হোক। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই চুক্তির প্রাক্-শর্তই ছিল, রিলায়েন্সকে শরিক হিসেবে নিতে হবে।
এদিকে মোদী সরকারের প্রতিনিধিরা, বিজেপি-র নেতারা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ান, রাফালে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে অন্তর্ভুক্তিকরণ একান্তই দ্যসল্টের সিদ্ধান্ত। ভারত সরকারের নাকি এই সিদ্ধান্তে কোনও ভূমিকাই নেই। দ্যসল্ট কেন এমন অনভিজ্ঞ দেউলিয়া সংস্থাকে শরিক হিসেবে অগ্রাধিকার দেবে, যারা অতীতে এমন কোনও কাজ করেনি? দ্যসল্টের তরফে এই অস্বস্তিকর প্রশ্ন সবসময়েই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আড়াই দিনের ভারতদর্শন : কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ এপ্রিল ২০১৯ | ১২৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
নীতিশকুমারের, বস্তুত বিজেপি-র, সমর্থকটি দাবি করবেন, “বহোত কাম হো রহা হ্যায়”। ঠিক-ই। পাটনা শহরের চতুর্দিক “কাজে” ঢাকা – ফ্লাইওভারের পর ফ্লাইওভার, নতুন নতুন সরকারি-বেসরকারি ইমারত। “কাজ” মানে এক ঢিলে দুই পাখিঃ চোখে আঙ্গুল দিয়ে আর্থনীতিক উন্নয়ন দেখিয়ে দেওয়া, স্টেট জিডিপি-র বাড়-বাড়ন্ত; পাশাপাশি, অথবা সেটাই মূল উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক আপনজনদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পথ করে দেওয়া। লোকের জন্য পথ বলতে প্রায় কিছু নেই, যেটুকুবা আছে তা ধনাঢ্যের অশ্লীল বাহনের দখলে। চতুষ্পার্শে ভর্তি নোংরা, দুর্গন্ধে টেকা দায়। ধনিকের কিছু আসে যায়না, তাদের কাচ-তোলা গাড়িতে বাইরের বাতাসের প্রবেশ নিষেধ। আর দরিদ্র মানিয়ে নিতে নিতে একেই জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছে। করে নিয়েও বাঁচার সুরাহা হয়না। দুর্ভাগ্য যেন বিহারবাসীর সহজাত। সেই কবে শুরু হয়েছিল গ্রাম থেকে শহরে আসা – পাটনায় স্থান সংকুলান, অতএব কলকাতা। সে নগরী, ক্রমে, নিজেই হেঁপোরুগী। বঙ্গবাসী জনতাও আজ কাজের খোঁজে দলে দলে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশ বিভুঁয়ে। অতএব, বিহারী কর্মজীবীকে কাজ খুঁজতে যেতে হয়, পঞ্জাব, হরিয়াণা, মহারাষ্ট্র, অথবা অন্যত্র।
অর্থনীতির রিপোর্টকার্ড: প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব : মৈত্রীশ ঘটক ও উদয়ন মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৯ | ২৭০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আকাশের চাঁদ হাতে এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট জেতার সাড়ে চার বছর পর আমরা দাঁড়িয়ে আছি এমন এক সন্ধিক্ষণে যখন কর্মসংস্থানের হার বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন, কৃষিক্ষেত্র বিপর্যস্ত, অসংগঠিত ক্ষেত্র রক্তশুন্য, টাকার মূল্য তলানিতে, চলতি খাতে ঘাটতি ক্রমবর্ধমান, সুদের হার চড়া ব্যাংকিং ক্ষেত্র অপরিশোধিত ঋণের ভারে ন্যুব্জ, কর ব্যবস্থা বেহাল, কর্পোরেট মুনাফার হার নিম্নমুখী, রপ্তানি ক্রমশ কমছে, এবং জিডিপি বৃদ্ধির হার যাবতীয় সংখ্যাতাত্ত্বিক চাতুরির পরেও আগের দশকের তুলনায় কম। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া প্রত্যাশার বুদবুদ আজ ফেটে গেছে। পড়ে আছে শুধু ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আর আশাভঙ্গের তিক্ততা। মার্কিন রাজনীতিবিদ মারিও কুমো একবার
নকুলদানা, ঘুষপেটিয়া, চৌকিদার, এক্সপায়ারিবাবু এবং আমাদের ভোট : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১১ এপ্রিল ২০১৯ | ১৫৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
দেশের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন। প্রত্যেক ভোটেই কিছু নতুন শব্দের জন্ম দেয়। তার কিছু টিকে যায়, বাকিটা হারিয়ে যায়। যেমন ২০১৪-এ ছিল সারদা, নারদা।এবারের ভোটে কতগুলো নতুন শব্দ বা বাক্যবন্ধ কানে আসছে।তার কয়েকটি এরকম। নকুলদানা, ঘুষপেটিয়া, চৌকিদার, এক্সপায়ারিবাবু, স্পিডব্রেকার দিদি, এ-স্যাট, নাকাতল্লাশি, জুমলা। দলবদলেরও একটা নতুন ঘটনা এবারে চোখে পড়ছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফা ভোট কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। কোচবিহারে এবার তৃণমূল প্রার্থী একসময়ে বামফ্রন্টের মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। উল্টো দিকে বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এই সেদিনও ছিলেন তৃণমূলের নেতা, এবারে বিজেপির প্রার্থী। আলিপুরদুয়ারেও ছবিও প্রায় এক। তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তির্কে একসময়ের বামফ্রন্টের দাপুটে নেতা, এবারে তৃণমূলের প্রার্থী।
সংশোধন ও ধ্বংস - বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে কিছু কথা : স্বাতী মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০১৯ | ১৪৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
ভারতবর্ষের জিডিপির ৩.৮৩% শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করা হয়। এর মধ্যে গবেষণার বরাদ্দ ০.৩%। অস্থায়ীকরণের ফলে এক সন্ত্রস্ত, সদা আশঙ্কিত শিক্ষক শ্রেণী তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষা এবং গবেষণার মানের সরাসরি ক্ষতি করতে বাধ্য। সরকারি তথ্য অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও জনসংখ্যার ২৫%, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৩৫%র থেকে ১০% কম। এই এনরোলড ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কতজন শেষ পর্যন্ত ডিগ্রী লাভ করেন, এবং কতজন কলেজ-ছুট হন, তার কোন তথ্য নেই। বিড়লা-আম্বানির পরামর্শ মেনে খোলা বেসরকারি ইঞ্জনিয়ারিং কলেজগুলোতে আস্তে আস্তে তালা ঝুলছে, এআইসিটিইর নির্দেশে ২০২০ সাল থেকে আর কোন নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলবার অনুমতি দেওয়া হবেনা। বাজারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২৫% ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট সঠিক শিক্ষা পেয়ে পাশ করছেন। এরই মধ্যে গত তিন বছরে অনাদায়ী শিক্ষা লোন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ২০১৮ অর্থবর্ষে সেটা ৯%তে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্বের হার যেহেতু ৬%, ৪০ বছরে সব থেকে বেশি, অতএব এই অনাদায়ী লোনের পরিমাণ যে আরও বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। এ কথাও বলা বাহুল্য যে এঁদের মধ্যে কেউই 'রাইট অফ' পাবেন না - সেটা কেবল বৃহৎ পুঁজিপতিরা পেয়ে থাকেন।
রাজনৈতিক হিংসা এবং স্বপ্নভঙ্গের শূন্যতা বিষয়ে একটি অসম্পূর্ণ আলোচনা : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ এপ্রিল ২০১৯ | ১২৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ভোটে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়ে মমতা আন্দোল শুরু করেছিলেন ১৯৯০ থেকেই। তবে তিনি ক্ষমতায় আসার পর পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে খান খান হয়ে গেল। পশ্চিম বঙ্গে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, গুন্ডা এবং বিপুল অর্থ ছাড়া ভোটে লড়াই করা সম্ভব নয়। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কানে এসেছে, প্রমাণ করা সম্ভব নয়, চলতি ভোটে বিপুল টাকা ছড়িয়েছে এই রাজ্যে আসন বৃদ্ধিতে উৎসাহী একটি দল।
সারা দেশে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিপরীতে আমরা দেখছি, নতুন এক ঝাঁক তরুণ নেতা উঠে আসছেন। কানাহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, শহেলা রশিদ, জিগনেশ, হার্দিক। এরা কেজরিওয়াল পরবরতী প্রজন্ম। এইটুকুই যা আশার আলো। বাকিটা বড়ই অন্ধকার।
দ্রোহ-প্রেম-১ : তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২১ এপ্রিল ২০১৯ | ১৫২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ফিরভি ইঁয়াদ আ গ্যয়ে, তো কেয়া করে! খুদকো ডাঁটে কেয়া? ইঁয়াদকো রুখ দে কেয়া?"
বলতে বলতে জল গড়িয়ে পড়ছিল ওঁর তুবড়ে যাওয়া গাল বেয়ে। গালের খাঁজে এসে ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে যাচ্ছিল সে নিম্নগামী নুন জলের স্রোত। চিবুক ছুঁয়ে সে জল পড়ে যাওয়ার আগেই তার উপর পশমের আস্তিন বুলিয়ে নিচ্ছিলেন মানুষটা। স্বজনের স্মৃতিতে বৃদ্ধ চোখে ভরে আসা মুক্তোজল, বড় দামী। ফেলা যায় না যে!
তিনি মহম্মদ আতাউল্লা। তুরতুকের বাসিন্দা। ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরের এই তুরতুক। কয়েক কিলোমিটার দূরেই পাকিস্তান সীমান্ত। এই তুরতুক গ্রামের মানুষেরা এখনও নিজেদের পরিচয় দেন বাল্টিস্তানি বলে। বছর কয়েক আগে বাল্টিস্তানই নাম ছিল এই প্রদেশের। আর দেশের নাম ছিল পাকিস্তান। তার পরে এল সেই চরম অস্থির বছরটা, ১৯৭১। মানচিত্রের সঙ্গেই ছারখার হয়ে গেল শতশত জীবন, পরিবার, সম্পর্ক, ভালবাসা। সীমান্তকে দিব্যি রেখে ভাগ হয়ে গেল জমিন। কিন্তু মানুষগুলোর ভাগ হওয়া তো জমিনের মতো সহজ নয়! সে যে কঠিন, বড় কঠিন!
সেই কঠিনেরই শিকার হয়ে 'ভারতীয়' বনে গেলেন বাল্টিস্তানি আতাউল্লাজি। আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগে, বয়স তখন ২০। তখন রক্তে ফুটছে দেশপ্রেম। ভেবেছিলেন, যে করেই হোক ফিরে পাবেনই নিজের জায়গায়। ভেবেছিলেন, প্রিয়জনদের কাছে যাবেনই ফিরে! ভেবেছিলেন যুদ্ধের ক্ষমতা বুঝি ভালবাসার চেয়ে বেশি!
বোকা ছেলে!
স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য, গণস্বাস্থ্য-আন্দোলন - আসন্ন লোকসভা নির্বাচন, একটি ম্যানিফেস্টো-ভিত্তিক পাঠ : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০১৯ | ৯৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
দেশের স্বাস্থ্যের হালহকিকত নিয়ে ভাবতে বসলে আশার আলোটুকু এতোই দুর্লভ, যে একটু গুছিয়ে আগলে না রাখতে পারলে অন্ধকারই অনিবার্য বোধ হওয়ার আশঙ্কা। সেইখানে, নিজের ভাবনা অস্বস্তি, হাজার না-পাওয়ার পাশে ছোটখাটো প্রাপ্তিগুলো, নিদেনপক্ষে প্রাপ্তির আশাটুকু সাজিয়ে লিখে রাখা জরুরী।
একদিকে দেশের স্বাস্থ্যের পেছনে সরকারের খরচ ক্রমেই কমতে কমতে আণুবীক্ষণিক হয়ে দাঁড়ানোর বাস্তব, প্রতিবছর স্রেফ চিকিৎসার খরচা মেটাতে গিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষের নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যাওয়া, বিশ্বের সুস্থ দেশের সারণীতে আমাদের দেশের ক্রমেই পিছিয়ে পড়া, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ডামাডোলের পেছনে এক এবং একমাত্র ডাক্তারদেরই দায়ী ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে (আর এরাজ্যে তো কথাই নেই, আক্ষরিক অর্থেই “এগিয়ে বাংলা”) ডাক্তারদের উপর আক্রমণের খবর।
এই সব আর কি ... : অচল সিকি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০১৯ | ১৪৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
এই পাঁচটা বছর বুঝিয়ে দিল। বদলে দিল। বিজেপি যখন ঘরের দোরগোড়ায় চলে এল, তখন বুঝলাম গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অবজ্ঞা করার ফল কতটা ভয়ানক হতে পারে। এই পাঁচটা বছরের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। এই পাঁচটা বছর আমাকে রাজনীতি চেনাল, আমি জানলাম রাজনীতির বাইরে কিছু হয় না, কিচ্ছু হয় না। আমি জানলাম, আমার চারপাশে কত ক্লোজেট থেকে বেরনো লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, উচ্চশিক্ষিত, সাদা কলারের লোকজন, যাঁরা সব দেখেশুনেও অন্ধভাবে সাপোর্ট করেন যোগীকে, ছাপ্পান্ন ইঞ্চিকে। মনে করেন এঁরাই আচ্ছে দিন আনবেন, এখনও, মনে করেন, এঁরাই বিকাশ আনবেন। এঁরা মনে করেন, মুসলমানরা তো “ওরকমই”। নিচু জাতকে তো “পায়ের তলাতেই” রাখতে হয়, নইলে মাথায় চড়ে বসে। “ওদের” সাথে তো “ওদের” ভাষাতেই কথা বলতে হয়। “ওরা” তো আমাদের থেকে আলাদাই, ওরা শুধু জুতোয় সোজা।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ২ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ মে ২০১৯ | ১৭২৫ বার পঠিত
যখন আমি রান্নাঘরে হামলে পড়লাম দেখি যে কার্ল তখনও খায়নি। সবজায়গায় খুঁজলাম আমি, কিন্তু একটু খুদকুঁড়োও পেলাম না। একটা খালি বোতলও কোথাও নেই যেটা দিয়ে আমি কিছু টাকা পেতে পারি। আমি ক্ষেপে গেলাম একেবারে। ছুটে বেরুলাম, ঠিক করলাম ক্লিশির কাছের ছোট রেস্তোরাঁটায়, যেখানে মাঝামাঝেই খাই, ওখানে ধার চাইব। রেস্তোরাঁর ঠিক সামনে পৌঁছে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। ফিরে এলাম। দুম করে যদি চেনা কারুর সাথে দেখা হয়ে যাবার মতো মিরাকল কিছু ঘটে এই আশায় এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম। এইভাবে অন্তত একঘন্টা গোঁত্তা মেরেছি, যতক্ষণ না একেবারে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে পড়াটাই মনস্থ করলাম। রাস্তায়, আমার এক রাশিয়ান বন্ধুর কথা মন পড়ল, বুলেভার ছাড়িয়ে এখান থেকে কাছেই থাকে।
হাইওয়ে ব্লুজ - ১ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ মে ২০১৯ | ১৫৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
কথা ফুরালেও কিন্তু আমার পথ কখনও ফুরায় না। চলতে চলতে, হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ি সাকচি মার্কেটে। বিষ্টুপুরের গোপাল ময়দানে। আলো আঁধারি মেশা নভেরাম হোটেলের চাউমিনে। পথ এখানে বিস্তৃত। পথ এখানে মায়াবী। গভীর, ঋজু, কালো কোবরার মত বিষাক্ত, ভয়ার্ত, অথচ রহস্যময়ী। এই পথ আমাকে টানে। পথের দৃশ্য, তার চারপাশের ফেলে রাখা বিস্কুটের প্যাকেট, জলের মোচড়ানো বোতল, ভাঙা চশমার কাচ... ছেঁড়া চপ্পল, পানের থুতু, কফের দাগ... কেমন যেন এক অস্তিত্বের সম্মুখীন করে তোলে। আর আমি হাঁটি। আর পরবর্তীকালের পাদটীকার মত জুড়ে ফেলি নিজেকে।
রাজনীতি ও যৌনকর্মী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ মে ২০১৯ | ২৯৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
আদিম এই পেশাটিতে ঠেলে দেবার পেছনে যদিও দারিদ্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ঘর বাঁধবার দুস্তর স্বপ্ন, যা মরিয়াও মরে না-- এইগুলি এবং হিউম্যান ট্রাফিকিং প্রায় একশ পার্সেন্ট দায়ী, তবু কাঁচা পয়সার প্রাবল্য একটা বড় ব্যাপার। অনেক মেয়েই সেই লোভ কাটিয়ে উঠতে পারেনা। আর পুনর্বাসনের নামে তার সামনে যেসব প্রকল্প রাখা হয়, সেগুলোর অবস্থা অতি করুণ। দিনে দশ বার ঘন্টা সেলাই মেশিন চালিয়ে বা বিড়ি বেঁধে সে মাসিক যা ইনকাম করবে সোনাগাছিতে একদিনে তার বহুগুণ বেশি করবে। এই খানে ছোট্ট একটি তথ্য। একজন জনপ্রিয় যৌনকর্মী দিনে গড়ে প্রায় কুড়ি জন খদ্দেরের সন্তুষ্টি বিধান করে। এদের প্রায় প্রত্যেকের টাকায় তার আত্মীয় স্বজন প্রতিপালিত হয়। যেন সব লেডি দস্যু রত্নাকরের জীবনকাহিনী। পাপের ভাগ নয়, টাকার ভাগ চাই।
রাষ্ট্র-অতি রাষ্ট্র, নাগরিক-অনাগরিক, ফ্যাতাড়ুরা এবং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিদ্যাসাগরঃ একটি কষ্টকল্পিত মনোলগ : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ মে ২০১৯ | ১৩৪০ বার পঠিত
বিভিন্ন সময়-চিহ্নের স্থায়ী ছাপ নিয়ে যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং একক ব্যক্তির একক ভোটাধিকার চালু হলো সেগুলো মূলত সমাজের উপরের স্তরের ক্ষমতা চিহ্ন। এরকম এক ঐতিহাসিকতায় প্রধানত কৃষিসম্পর্কে আবদ্ধ শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠা নতুন ভারতীয় জাতি-রাষ্ট্রে মডার্নিটি বা আধুনিকতা প্রকৃত অর্থে engrafted হয়ে যায়, ঐতিহাসিকভাবে সামাজিক পরিবর্তন ও গতিশীলতার (social and historical dynamics) নিয়মে জন্ম নেয় না। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি-সমাজ-কৌম-রাষ্ট্র-নাগরিকতার যে সম্পর্ক নতুন করে রচিত হয় ১৯৪৭ পরবর্তী ভারতবর্ষে তা প্রায়-সম্পূর্ণ ব্রিটিশ রাজনৈতিক সংবিধানের ধারায় তৈরি হওয়া। বিশেষ করে আমরা যদি দুটি বিষয় একবার স্মরণ করে নিতে পারি – (১) ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ স্বয়ং গান্ধী তাঁর নিজের জীবনের ক্ষেত্রে একাধিকবার দুটি passion-এর কথা বলেছেন। প্রথমটি হল ব্রিটিশ সংবিধান (Pax Britannica-ও বটে) এবং দ্বিতীয়টি নার্সিং বা শুশ্রুষা। (২) প্রধানত শিল্প বিপ্লবোত্তর ইউরোপে সমাজ এবং কৌমের ধারণা খসে গেছে প্রায় ৩০০ বছর জুড়ে। নাগরিক ও রাষ্ট্রের মাঝে সরাসরি সম্পর্ক – অধিকার এবং কর্তব্যের বাঁধনে, cash nexus-এর প্রবল উপস্থিতিতে। এখানে মধ্যস্থতাকারী কোন সামাজিক পরিসর নেই, যা আছে তা নাগরিক পরিসর বা সিভিল স্পেস। ডেমোক্রাসির স্বর্ণযুগে কিংবা সামাজিক পরিসরের সবল, জোরালো উপস্থিতির সময় আধুনিকতা নির্মিত নাগরিকতার ভাষ্য ছাড়াও আরও অনেক স্বর, কণ্ঠ, আত্মপ্রকাশ করে – indiscernible থেকে discernible হয়ে ওঠে, invisibility থেকে visibility-র স্তরে উঠে আসে।
রাত কত হইল? উত্তর মেলে না... : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ মে ২০১৯ | ১৩১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
যতদিন না স্টেট ফান্ডিং চালু হচ্ছে, সিপিএমের এটা একটা অনেক দিনের দাবি, ততদিন ভোটে কোটি কোটি টাকা খরচ না করতে পারলে লড়াই করাই অসম্ভব। বিজেপির হাতে যত টাকা, মায়াবতী, অখিলেশ, চন্দ্রবাবুদের হাতে যত অর্থবল, তৃণমূলের তার সিকি অংশও নেই। সিপিএম নেতা গৌতম দেব অভিযোগ করেছিলেন, ২০১১-র ভোটে তৃণমূলের ফান্ডে চিটফান্ডের টাকা ঢুকেছিল। হয়তো ঢুকেছিল, কিন্তু তা আজও প্রমাণ হয়নি। ২০১৪তেই তৃণমূলের হাতে টাকা যথেষ্ট কম ছিল। বিজেপি তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গ দখলের পরিকল্পনা করে। এবং তারা জানত, মমতাই প্রধান বাধা। দলেরই একজন টাকা দিয়ে নিয়োগ করে এক এজেন্সিকে। যার ফল আমরা দেখেছিলাম, পাঁচ লক্ষ টাকা করে নিচ্ছেন একেক জন নেতা।
ঘাম ঝরানো সৃষ্টি: নলিনী বেরার শবর চরিত : কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ মে ২০১৯ | ২৪০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
নলিনী উপন্যাস জুড়ে এরকম অসংখ্য চরিত্র- মানুষের যন্ত্রণা, হাসি, আনন্দ, দুঃখ, বেদনা, সর্বোপরি মানবীয় দ্বন্দ্ব, স্ব-বিরোধিতা নিয়ে জীবন্ত উঠে আসে। চরিত্রগুলোকে দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়। সাতশো চল্লিশ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি হয়ে ওঠে একটি যাত্রা যেখানে পাঠক হয়ে ওঠেন লোধা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জনসমুদায়গুলির নানান বহুত্বময়তার সঙ্গী। বন-নির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে কৃষি মজুরে পরিণত হওয়া, তার ভিতরকার জটিল রাষ্ট্রীয় ও দলীয় রাজনীতি, পঞ্চায়েত, পুলিশ, পার্টি, কাঠ-ব্যবসা,সব মিলিয়ে যে সমাজ পরিবর্তন তার ফাঁকে ফাঁকে নলিনী আবিষ্কার করেন ঐতিহাসিকতা
শীর্ষ আদালতের রায়ে বিজেপির আড়াই খানা অ্যাজেন্ডা পূর্ণ হল : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ নভেম্বর ২০১৯ | ৩৯২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫০
রামজনমভূমি-বাবরি মসজিদ নিয়ে শীর্ষ আদালতের ৫ সদস্যের বেঞ্চের রায়ে যা বলা হয়েছে, এই কথাটাই তো ৩০ বছর আগে বলেছিলেন এল কে আদবানি। তখনও মসজিদ ভাঙা হয়নি, ১৯৮৯ সালে তাঁর সমাধানসূত্র ছিল মসজিদকে তুলে নিয়ে গিয়ে (রিলোকেট) নতুন জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হোক, আর সেই জায়গায় মন্দির তৈরি হোক। মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পর, আদবানি একদিকে বলেছিলেন, সেদিনটা (৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২) নাকি ছিল (মাই কান্ট্রি মাই লাইফ) তাঁর জীবনের সব থেকে দুঃখের দিন। আর বলেছিলেন, ভারতে এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যে দল প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে পারে যে তারা ক্ষমতায় এলে নতুন করে ওই খানেই বাবরি মসজিদ তৈরি করে দেবে। শনিবার, ৯ নভেম্বর, শীর্ষ আদালতের রায় শোনার পর এই কথাগুলোই মনে পড়ে গেল।
বিশ্বাসঘাতকতার আখ্যান 'সিজনস অব বিট্রেয়াল' : অরিজিৎ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৩ নভেম্বর ২০১৯ | ১৯১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
১৯৪৭ আর্থ' এ একটা দৃশ্য ছিল অমৃতসর থেকে লাহোরের দিকে আসা উদ্বাস্তু পরিপূর্ণ একটা ট্রেন লাহোর স্টেশনে এসে যখন দাঁড়িয়েছিল, লাহোরের আত্মীয়স্বজনরা ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ বেরোচ্ছে না দেখে যখন উঁকি মেরে দেখতে যায়, এক ঝলক দেখেই আতঙ্কে বাইরে ছিটকে সরে আসে, কেউ কেউ বা ওখানেই বমি করে দেয়। ট্রেনটা ভর্তি ছিল শুধু ছিন্নভিন্ন লাশে। একজনও কেউ জীবিত ছিল না ট্রেনে। লাহোর থেকে যখন অমৃতসরে ট্রেন যায় এদিকের উদ্বাস্তুদের নিয়ে, তখন সেই ট্রেনটাও পালটা লাশে ভরে ওঠে। অমৃতসর স্টেশনের আত্মীয় স্বজনরাও ঠিক একইভাবে আতঙ্কে সিঁটিয়ে উঠেছিল। সিনেমায় ওই দৃশ্যটা দেখে মনে মনে ভয় পেয়েছিলাম। পরে ভেবেছিলাম সিনেমার প্রয়োজনে অনেক কিছুই তো দেখাতে হয়, তাই এটাও হয়ত বানানো। এরকম যে বাস্তবে হতে পারে কখনো মাথাতেও আসে নি। অনেক অনেক পরে মান্টো পড়ার সময় বুঝেছিলাম এরকম কেন, এর থেকেও অনেক সাঙ্ঘাতিক জিনিস মানুষ করতে পারে। উন্মাদনার চরম সীমায় মানুষ যে কী করতে পারে আর কী করতে পারে না, তা মানুষ নিজেও জানে না। গুরুচণ্ডালী পাবলিকেশনের 'দময়ন্তী'র লেখা 'সিজনস অব বিট্রেয়াল' আবার সেই উন্মাদনার দিনগুলোতে নিয়ে ফেলছিল যেন।
চিকিৎসক রোগী সংঘর্ষের উৎস সন্ধানে - শেষ পর্ব : ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ নভেম্বর ২০১৯ | ২০৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
উপরের স্তরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনেকেই আবার এইসব দুষ্টচক্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, একথা বললে বোধহয় ভুল হবে না। এদের অনেকেই রোগী দেখার ন্যায্য প্রাপ্য অর্থের ওপর মোটা লভ্যাংশ বা কমিশন পেয়ে থাকেন রোগীকে ভর্তি করা, (এড়ানো সম্ভব এরকম) অস্ত্রোপচার, এবং কতদিন রোগী ভর্তি রইলেন, তার ওপর। হাসপাতালের স্বার্থ এবং বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের স্বার্থ এক্ষেত্রে এক হয়ে যায়। বৈদ্যুতিন চ্যানেলে ঘনঘন মুখ দেখানো বেশ কিছু চিকিৎসক হাসপাতালগুলির আংশিক মালিকানা ভোগ করে থাকেন মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবে। কিছুদিন আগে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৯১ জন রোগী এবং ২ জন সেবিকার মৃত্যু ঘটেছিল। সে স্মৃতি আজও মলিন হয়ে যায়নি। প্রাথমিক গ্রেপ্তারি এবং মামলা-মোকদ্দমার পর হাসপাতালটির মালিকানার হস্তান্তর ঘটেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি। ঐ সময় জানা গিয়েছিল, অতি-প্রবীণ ও শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক ডা. মণি ছেত্রীর নামেই ঐ হাসপাতালের লাইসেন্স, এবং তিনি ঐ হাসপাতালের একজন অংশীদার। ফলে তাঁকে কিছু দিনের জন্য কারাবরণ করতে হয়। এইরকম বহু মেগা-বিশেষজ্ঞ কার্যত কর্পোরেট হাসপাতালগুলির আংশিক মালিকানা ভোগ করেন, যদিও বিষয়টি প্রায়শ গোপনে থাকে। ফলে হাসপাতালের লভ্যাংশ নেব অথচ দুর্নীতির দায়ভাগ নেব না— এ প্রায় দস্যু রত্নাকরের পরিবারের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
আমাদের চেনা ভূতদের উৎসব-চতুর্দশী এবং হ্যালোউইন উৎসব : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ নভেম্বর ২০১৯ | ১৬২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লোকায়ত প্রভাবের জন্য অথর্ব বেদে অসুর, প্রেত ইত্যাদির প্রাধান্য ছিল। এজন্য এসময় অব্দি প্রধানত ছিল আয়ুর্বেদ ছিল “দৈব ব্যাপাশ্রয় ভেষজ”। পরবর্তীতে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে এবং আরো অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে আয়ুর্বেদে ধীরেধীরে ত্রি-দোষ তত্ত্ব এলো – বায়ু, পিত্ত ও শ্লেষ্মা। এ তত্ত্বে রোগের উদ্ভব দেহের অভ্যন্তরে বলে বিবেচিত হল, কোন ভূত-প্রেত বা অজানা শক্তির বাহ্যিক প্রভাবে নয়। উত্তরণ ঘটলো “যুক্তি ব্যাপাশ্রয় ভেষজ”-এ। এখানে বায়ু, পিত্ত ও শ্লেষ্মার প্রকোপ হ্রাস ও বৃদ্ধির সাথে খাদ্য ও অনুপানের নিবিড় সম্পর্ক চিকিৎসকেরা গভীরভাবে অনুধাবন করলেন। উদ্ভিদ জগতের প্রায় সমস্ত ভক্ষ্য বস্তুর মধ্যে এই শাকগুলোও ছিলো। (প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হবে, প্রাণীজ ঔষধির মধ্যে মোষ, গরু, বরাহ, ময়ূর, খরগোশ, বেজি ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীর মাংস খাবার নির্দেশ রয়েছে চরক সংহিতায়, বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তোলার জন্য।) লৌকিক বিশ্বাসে কিছু উদ্ভিজ খাদ্য দেহের উপকারের জন্য গৃহীত হল। পিতৃপুরুষের মঙ্গলকামনায় এবং খারাপ ভূতদের তাড়ানোর জন্য এরা প্রচলিত হল ১৪ শাক হিসেবে।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ৩ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৯ জুন ২০১৯ | ১৩৭১ বার পঠিত
আমরা কোথায় যাচ্ছি, কী করি এরকম কোনও প্রশ্নই তার কাছ থেকে এল না। দিব্য হেঁটে গিয়ে ডিভানের ওপর বসল যেন নিজেরই ঘরে রয়েছে। তারপর চা আর স্যান্ডউইচ দিতে বলল, ঠিক সেই গলায় যেভাবে ও হয়তো কাফেতে ওয়েটারকে খাবার দিতে বলে। এবং ওই একই স্বরেই জানতে চাইল আমাদের সঙ্গে শোবার জন্য আমরা ওকে কত দেব। এও বলল, ভাড়া মেটাবার জন্য দুশো ফ্রাঙ্ক ওর দরকার, পরের দিন যেটা ওকে দিতে হবে। দুশো ফ্রাঙ্ক মনে হয় রফা হিসেবে ভালোই, ও বলল, কিন্তু এটুকুই ওর লাগবে। এমনভাবে ও কথা বলছিল যেন কেউ ভাঁড়ার ঘরের মিটসেফের দিকে তাকিয়ে বলছে : ‘‘উম্ম্ম্... দাঁড়াও দেখি, তোমার লাগবে হল ডিম, মাখন, একটু পাউরুটি আর অল্প জ্যাম হলে ভালো হয়।’’ একদম এইভাবে।
হেইল হিন্দি : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৯ | ৩৬৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৬
'হিন্দি' একটি ভাষাবিশেষ নয়। এটি একটি সংস্কৃতি। উত্তর ও মধ্যভারতের বিশাল এলাকা এই সংস্কৃতির অঙ্গ। পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল,জম্মু, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এর অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত প্রান্তেরই অসংখ্য নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি স্বীকৃত সরকারি ভাষা। কিন্তু যোগাযোগ রক্ষাকারী ভাষা হিসেবে এই সমস্ত জায়গায় হিন্দির কোনও বিকল্প নেই। হিন্দিবলয়ের কেন্দ্র হিসেবে যদি উত্তরপ্রদেশ ও বিহারকে নেওয়া যায় তবে দেখা যাবে এই দুটি রাজ্যেও বহু নিজস্ব ভাষা আছে। বিহারে ভোজপুরি (দুরকম, গঙ্গার উত্তর ও দক্ষিণে), মগহি, মৈথিলি, অঙ্গিকা প্রধান। উত্তরপ্রদেশে ভোজপুরি, অবধি,বুন্দেলখণ্ডি, পহাড়ি ইত্যাদি। একইভাবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হিন্দি, হরিয়ানভি, পূর্বি পঞ্জাবি (মনে রাখতে হবে পশ্চিম পঞ্জাব থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের ভাষা আলাদা ছিলো)।
জিন সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ক কিছু বক্তব্য : অভ্র চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৯ | ১৮৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দে বিখ্যাত সোভিয়েত বিজ্ঞানী ভ্যাভিলভ তাঁর বিখ্যাত গবেষণায় পৃথিবীর নয়টি অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছিলেন যেগুলিকে জিনসম্পদের উৎস বলা চলে। ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ইরাকঅঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার চিলি ও আন্দিজঅঞ্চল, মেক্সিকো—অঞ্চলগুলি ছিল এরকম। পরবর্তীতে মার্কিন বিজ্ঞানী হারল্যান-এর গবেষণাতেও (১৯৭১খ্রীষ্টাব্দ) এই ব্যাপারটা প্রমাণিত হয়। মানুষ যতরকমের শস্য বা প্রাণী ব্যবহার করে, তার কতগুলো নির্দিষ্ট উৎসকেন্দ্র রয়েছে অর্থাৎ সেন্টার অফ অরিজিন। মানে জিনসম্পদ সারা পৃথিবী জুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে নেই। জিনসম্পদের সাথে খনিজ তেল বা কয়লার পার্থক্য রয়েছে। সেগুলি একান্তই প্রকৃতির দান। মানে, পৃথিবীর কোথায় খনিজ তেল বা কয়লা আছে, সে ব্যাপারে মানুষের কোনও হাতই নেই; তবে এগুলি উত্তোলনের প্রযুক্তি তার করায়ত্ত হতে পারে। জিন সম্পদ কিন্তু নিছক প্রকৃতির দান শুধু নয়।
ডাক্তারি পড়ুয়াদের বর্তমান আন্দোলন ২০১৯ – দিগন্ত ছাড়িয়ে নতুন ভূমিতে : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জুন ২০১৯ | ৩৫৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৯
সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক-অর্থনীতি বা পোলিটিক্যাল সায়ান্সের সামান্য পাঠও আমাদের অবহিত করে যে সামাজিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা বা চাকরির সম্ভাবনাহীনতা যখন প্রাধান্যকারী জায়গায় থাকে তখন একদিকে জনমোহিনী রাজনীতির সামান্য অনুদানও জনসমাজ খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চায়, আবার অন্যদিকে শূণ্যদিশা জনসমাজের প্রবল ক্ষোভ এবং অপূর্ণতা mob violence বা গণহিংসার চেহারা নিয়ে আছড়ে পড়ে। স্মরণ করতে পারি সত্যজিতের “জনঅরণ্য”, মৃণালের একাধিক ছবি, শ্যাম বেনেগাল বা গোবিন্দ নিহালনি-র বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কথা। আমরা দেখেছি নিস্ফলা ক্রোধ এবং আক্রোশ কিভাবে জনসমাজে প্রতিবিম্বিত হয়। এখানে ডাক্তারকে স্থাপন করলে দেখবো সে একজন সফল, ঈর্ষণীয়ভাবে স্বচ্ছল এবং ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। এর বিপরীতে রোগীটি আর্ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত সম্বলহীন এবং ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দূরে থাকা একজন ব্যক্তি মানুষ। একদিক থেকে দেখলে এ দ্বন্দ্ব ক্ষমতা এবং ক্ষমতাহীনতার মধ্যেকার দ্বন্দ্বও বটে। কিন্তু ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও একজন আমলা বা পুলিস বা শিল্পপতি বা রাজনৈতিক নেতার সাথে ডাক্তারের পার্থক্য হল একজন আমলা বা পুলিস বা রাজনৈতিক নেতা সরাসরি ক্ষমতাকেন্দ্রের অংশীদার, এর উপাদান। একজন শিল্পপতি বহুলাংশে এদের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী ক্ষমতাকেন্দ্রের সাথে যুক্ত নয়। এবং এ অর্থে “ক্ষমতাচ্যূত”, ফলে এরা জনরোষের ক্ষেত্রে একটি soft target যাকে সহজেই আক্রমণ করা যায়, নিজেদের প্রবল ক্ষোভকে সহজে উগড়ে দেওয়া যায় এদের ওপরে।
বাতাসের সাথে আমি : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৬ জুন ২০১৯ | ১৩৭১ বার পঠিত
আমার কথা শেষ করতে পারলাম না। ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠ আমাকে বলতে লাগল, তোমার মত এত সেলফিশ আত্মকেন্দ্রিক লোক আমি দেখি নি। সারাদিনে একটা ফোন দেবার সময় তোমার হয় না। স্বাভাবিক কোন কিছুই তোমার মধ্যে নাই। স্বাভাবিক আবেগ, স্বাভাবিক মানুষের অনুভূতি। মিনিমাম দায়িত্বজ্ঞান বলতে যে জিনিস মানুষের থাকে, সেটাও তোমার নাই। আমি এতদিন, এতোটা দিন ধরে তোমাকে সহ্য করে গেছি। তোমার অন্যায়, তোমার এইসব পেইন দেয়া আমি সহ্য করে গেছি। কিন্তু আর নয়। এরকম কোন সম্পর্ক চলতে পারে না। এরকম কোন সম্পর্ক আসলে হয়ই না। তোমার সাথে হয়ত আমার কোন সম্পর্কই ছিল না। এবং থাকলে আজ থেকে, এই মুহুর্ত থেকে আর থাকবে না। একটা সেলফিশ, আত্মকেন্দ্রিক ইডিয়টের সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না, আজ সারাদিন ভেবে এটাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং, তোমার সাথে আমার সব কিছু আজ, এই মুহুর্তে, এখানেই শেষ।
ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিল নারী কণ্ঠ।
পথ খোঁজাটাই পথ : কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুন ২০১৯ | ১১৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
যে নিরন্তর গণ আন্দোলন এখানে রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, ইত্যাদি পাপ থেকে মুক্ত রেখেছিল, সেই আন্দোলন – যে চাপেই হোক – স্তিমিত হয়ে পড়ল, তাকে গতিময় রাখার কোনো চিন্তাগত প্রয়াস দেখা গেলনা। বাম নেতৃত্বের তরফে এই বিকাশ বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান হয়েছে বলে জানা নেই। হয়তো তাঁরা এই পর্যবেক্ষণের ভার ছেড়ে রেখেছিলেন পেশাদার বুদ্ধিজীবীদের ওপর, বিস্মৃত হয়েছিলেন, বাম রাজনৈতিক দর্শনে বুদ্ধির চর্চাটা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদেরই করতে হয়, ঠিকাদার নিয়োগ করে এ কাজ চলে না, এবং বুদ্ধিজীবীদেরও কর্মী হয়ে উঠতে হয়। ফল হয়েছে মারাত্মক, পেশাদার বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন এ-রাজ্যে একটা বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অতিপরিবাহিতা ও সেই সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বিতর্ক : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুন ২০১৯ | ১২১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধ্যাপক পান্ডে এবং এবং তাঁর ছাত্র দেব কুমার থাপা একটি গবেষণাপত্রে ঘোষণা করেন যে তাঁরা এমন একটি পদার্থের সন্ধান পেয়েছেন যা ঘরের উষ্ণতায় অতিপরিবাহী [1]। এইরকম একটি পদার্থের খোঁজ বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই করছেন, কাজেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার পরেই গবেষকমহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এবং খুব ভালো কোন কাজের ক্ষেত্রে যেমন হয়, বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করতে থাকেন, যে দাবিটি যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ কিনা। সেই সঙ্গতি খুঁজতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে যা তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। এই বিতর্কের মীমাংসা এখনও সম্পূর্ণভাবে হয়নি, তবে ২০১৯ সালের মে মাসে ঐ একই গবেষণাপত্র আরো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরিবর্ধিত সংস্করণে পূর্বোক্ত গবেষকেরা ছাড়াও আরো কয়েকজন যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এই বিতর্কের আরো গভীরে ঢোকার আগে আমাদের গবেষণার বিষয়টি নিয়ে সামান্য একটু জেনে নেওয়া দরকার। সুপারকন্ডাক্টিভিটি বা অতিপরিবাহিতা খুবই জটিল তত্ত্ব, তাই আমরা যথাসম্ভব সহজ করে, যতটুকু না জানলেই নয় ততটুকুই জানবো।
স্মৃতিগন্ধঃ পেত্রা : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জুন ২০১৯ | ১৭২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এই যাযাবর থিতু হল এমন দেশে যেখানে তারা পেয়েছিল বৃষ্টির গন্ধ । মরুভূমির মধ্যে সেই সুবাস তাদের অভ্যস্ত নাক চিনে নিতে দেরি করলো না। বৃষ্টির জল ধরে রাখার কৌশল রপ্ত হল। তারা বানিয়েছে বাঁধ , জলাধার , সিরামিকের পাইপ লাইন , বিস্ময়ের পর বিস্ময়।মরু অঞ্চলে জলধারাকে তারা ইচ্ছেমত ব্যাবহার করেছে অতুলনীয় মেধা আর দক্ষতা দিয়ে। পাইপ দিয়ে , নালা দিয়ে , পাহাড়ের গায়ে ধাপ বানিয়ে সারা শহরকে জলসিক্ত করে গেছে। পেত্রা আরো রহস্যময় এই কারণে যে এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার করা বাকি ! শিলালিপি আর গ্রাফিত্তি কতটুকুই বা ধরে রাখে ? রোমান এবং গ্রিকদের লেখা থেকে অনেক তথ্য জানা যায় , বিশেষ করে ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস আর ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবোর লেখা থেকে। তবে এই কৌশল তারা বেশ ভালো করে গোপন রাখত বলে ডিওডোরাস লিখে গেছেন।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ৪ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৮ জুন ২০১৯ | ১৩৭৩ বার পঠিত
আমার মাথা এখন কাজ করছে ক্ষিপ্র গতিতে। আমায় যেটা করতে হবে সেটা হল, ওদের দুজনকে আমার ঘরটার মধ্যে রাখা, ভল্টের থেকে টাকা বের করে আনা, এনে মেয়েটার হাতে দেওয়া, তারপর ও আরেকবার বাথরুমে গেলেই ওর ব্যাগ থেকে টাকাটা নিয়ে গ্যেটের ফাউস্টের ভেতরে আবার রেখে আসা। কার্লকে বরং ওর হাতে পঞ্চাশ ফ্রাঙ্ক দিয়ে দিতে বলব, যেটার কথা কার্ল বলছিল আরকি; ওটা ট্যাক্সি ভাড়ায় চলে যাবে। সকালের আগে ও নিশ্চয়ই দুশো ফ্রাঙ্কের খোঁজ করবে না; যদি সত্যিই ওর টাকার দরকার থাকে, তাহলে যেভাবেই হোক তার ব্যবস্থা করে নেবে, আর যদি তা না হয়, তবে খুব সম্ভব নিজেকে বলবে যে টাকাটা হয়তো ট্যাক্সিতে ফেলে এসেছে। যেটাই হোক না কেন, মোদ্দা কথা, যে অবস্থায় ও এই বাড়িতে ঢুকেছিল সেভাবেই বেরুবে — একটা আচ্ছন্ন ঘোরের মধ্যে।
ঈদ সাহিত্য - উৎসব স্তিমিত হলেও থেকে যায় রেশ : নাহার তৃণা
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ঈদের কড়চা | ১২ জুন ২০১৯ | ১২৮৬ বার পঠিত
ঈদ উৎসবের বিবিধ উপকরণের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো ঈদ সংখ্যার সাহিত্য সম্ভার। ঈদ আর ঈদ উপলক্ষ্যে তৈরি সেমাই, পায়েশ, কোর্মা পোলাও আর অন্যান্য আনন্দ সকল ফুরিয়ে গেলেও ওমর খৈয়ামের উপমার আল ধরে অনন্ত যৌবনের তীব্র সম্ভাবনা নিয়ে সাহিত্য প্রিয় পাঠকের জন্য ঈদের আনন্দ যূথবদ্ধ করে নিয়ে আসে ঈদ সংখ্যা সাহিত্যসম্ভার। সারা বছর অপেক্ষায় থাকা লেখক পাঠকের কাছে ঈদের সাহিত্য সংখ্যা ভীষণ আরাধ্যের বস্তুবিশেষ। এক সময় ঘরে ঘরে এই উৎসব কেন্দ্রিক সাহিত্যের প্রথম পাঠক হবার লড়াই চলতো রীতিমত চর দখলের কায়দায়। তখনকার ঈদ সংখ্যার কারিগরিমান যেমনই থাকুক না কেন গুণগত মান আজকের চেয়ে অনেকগুণ বেশিই ছিল বলে মনে করেন প্রাচীন- বোদ্ধা পাঠক শ্রেণী। আজকের বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিক তাঁদের সোনার কলমে সৃষ্টি করেছিলেন কত সব স্বর্ণালী সাহিত্য। তাঁদের মধ্যে শওকত আলী, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, রাবেয়া খাতুন, রিজিয়া রহমান, হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, প্রমুখেরা উল্লেখযোগ্য। ঈদকে ঘিরে শিল্প সাহিত্য বর্তমানেও সংস্কৃতির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত।
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ : সায়ন্তন চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জুন ২০১৯ | ১২৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছিল, আনাজপাতির দাম বাড়ছিল, অটোভাড়া বাড়ছিল, চাকরির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সুমনের পুরোনো গান ভেসে আসছিল, কন্ঠ জোরে ছেড়ে খুব একটা লাভ হচ্ছিল না, কারণ আমরা হেজে গেছি। আমাদের মতো এরকম হাজার হাজার পরিবার যারা দেখেছে কিভাবে ভিড়ের মানুষ ক্রমশ প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে বয়ে নিয়ে যায় উলঙ্গ রাজার পোশাক, আমরাই যারা ঝেড়েমুছে সে পোশাক পরিয়েছি বারবার রাজার গায়ে, সেইসব মানুষেরা ততদিনে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আলো আকাশের নীচে যেদিকেই হেঁটে গিয়ে তারা দাঁড়িয়েছে, তারও খানিক আগে এসে পথরোধ করেছে শস্য নয়, মাংস নয়, তাদেরই নিজস্ব ছায়া। বয়েসের তুলনায় অরুণ বড়ো হয়ে গেছিল অনেক, শুনতে পেতাম রাজনীতির সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়ছে, কলেজের দিনগুলো তাকে সময়ের অশনি চিহ্ন ও সংকেতগুলোর মধ্যে সমাচ্ছন্ন করে তুলছিল। মানচিত্রের গায়ে আঁকা দেশ নয়, আমাদের হৃদয়ের গভীরের দেশ পালটে যাচ্ছিল ক্রমশই। মানুষের শ্রম নয়, নিবিড়তা নয়, অন্য কোনো অন্ধকার অনুভূতিকে সম্বল করে দেশের ভেতরে এক দেশ গড়ে উঠছিল, যেখানের জল-আবহাওয়ায় আমার প্রজাতি ক্রমে দানব হয়ে যায়।
বদলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ আগস্ট ২০১৯ | ১৫৩২ বার পঠিত
এই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই অবদান, সেটা হল, ‘দল বদল’। গত কয়েক বছরে ২৫-২৬ জন বিধায়ক, অসংখ্য পঞ্চায়েতসদস্য হাজার হাজার দলের সদস্য এদল, ওদল সেদল ঘুরে বেরিয়েছেন। এই সংস্কৃতি তৃণমূলের আমদানি। এখন তৃণমূল তার খেসারত দিচ্ছে। প্রধানমনম্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করছেন ৪০ জন তৃণমূল বিধায়ক নাকি তাঁর দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এই অতি নিম্ন মানের রাজনীতি এই রাজ্য আগে দেখেনি। এরই মধ্যে দেশে তো বটেই, রাজ্যেও হিন্দুত্ববাদীদের উত্থান রাজনীতিতে এক সাম্প্রদায়িক মাত্রা যোগ করেছে। ফলে এখন, একদিকে ৫৬ ইঞ্চির হুঙ্কার অন্যদিকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বোঝাবুঝির চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে বাঙালি।যে বাঙালিকে নিয়ে বামপন্থীরা এতদিন বলতেন, সচেতন ভাবে তারা নাকি বামেদের ভোট দেন, বাংলার মাটি নিয়ে দুর্জয় ঘাঁটি-ফাটিও বলা হত তখন, সেই বাঙালি এখন রামনবমীতে নকল লেজ লাগিয়ে রাস্তায় অস্ত্র হাতে ধেই ধেই করছে।
ছবি দেখা : উই মিনজিনের একটি ছবি - এই সময়ের কিছু ভাবনা : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ছবিছাব্বা | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ১১৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শিল্পী যখন তাঁর ছবির নাম দেন এক্সিকিউশন - ঠিক কোন অর্থে নেব এই শব্দটিকে? এমনিতেই ছবির নামকরণের বিষয়টি কিছু গোলমেলে। নামকরণের মাধ্যমে শিল্পী নিজের ভিশনটিকে দর্শকের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন - এবং, সেই সুবাদে ছবিটি কোনো এক জায়গায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমন প্রশ্ন বারবার উঠেছে। সম্ভবত এই কারণেই অজস্র ছবির তলায় আমরা আনটাইটেলড, অর্থাৎ অনামা, শব্দটি দেখে থাকি, কেননা আঁকিয়ে নামকরণের ঝামেলায় যান নি - দর্শকের সামনে ছবির আকাশটি উন্মুক্ত রেখেছেন। এ তো জানাই কথা, যেকোনো ছবির অর্ধেকটি আঁকেন শিল্পী, আর বাকি অর্ধেকটি সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব নিবিষ্ট দর্শকের। সেইখানে, শিল্পীর স্বাধীনতাকে স্বীকার করলে, দর্শকের স্বাধীনতাকে নামকরণের মাধ্যমে সীমায়িত করে দেওয়া তো কোনো কাজের কথা নয়।
হাইওয়ে ব্লুজ - ৫ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ১৫৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এভাবেই সিট আসছে, যাচ্ছে। সিটের অধিকার পাচ্ছে অন্যকেউ... আবার অন্যকেউ সুযোগ বুঝে চেপে বসছে অন্যের ঘাড়ে... উদাসীন বাউল যাঁরা, তাঁরা ছাড়া এই পৃথিবী বড়ই প্ররোচনাময়। সবকিছুই যেন খুবই কষ্টের। তাঁকে ছাড়া আনন্দ নেই, আলো নেই, এগোনো -পেছনো নেই। ভাবছি। আর দেখছি ঘাটশিলা পর্যন্ত ছিল তাঁর আসা যাওয়ার খেলা। আর এই পথটাই ছিল লীলাময়তায় ভরা। ভাবছিলাম, এই মায়ার পৃথিবীতে কে যে ঈশ্বর! কে যে অন্ধকার!
বাচ্চার কান্না, ঘামের গন্ধ, চিৎকারের রঙ বেরঙের সুরে ভাসতে ভাসতে, ট্রেন গালুডিহি পেরিয়ে ঢুকে পড়ে আসনবনীতে... আহা খানিক পরেই জামশেদপুর!
ফাদার অফ পাবলিক হেলথ-৫ : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ১৪৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
নলিন বলল, ‘শুনেছিলাম মুসলিমরা পৌত্তলিক নয়। এবং পৌত্তলিকতাকে ঘৃণা করে। এখানে এসে অন্য জিনিস দেখলাম। দেখলাম রীতিমতো মুর্তি গড়ে ওলাবিবির উপাসনা হচ্ছে। ওলাবিবি একা নন, সঙ্গে আছে আরও ছয় বিবি ঝোলাবিবি, আজগৈবিবি, চাঁদবিবি, বাহড়বিবি, ঝেটুনেবিবি ও আসানবিবি। তোমারা কি বিবিগান শুনেছো? বিবিগান আখ্যান অনুসারে ওলাবিবি এক কুমারী মুসলমান রাজকন্যার সন্তান। তিনি অলৌকিক উপায়ে অদৃশ্য হয়ে যান এবং পরে দেবী রূপে আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাবের কারণ ছিল দাদামশাইয়ের ও রাজ্যের সব মানুষের আরোগ্য দান। তাঁর মাথায় থাকে মস্তকাবরণী, গলায় গলবস্ত্র ও গয়না। পায়ে তিনি নাগরার জুতো পরেন। এক হাতে জাদুদণ্ড ধরে থাকেন। এই দণ্ডের মাধ্যমে তাঁর ভক্তদের রোগ দূর করেন। এই কলেরা আর ওআরএস এর কাজটাজ মিটলে আমি ঠিক করেছি শেষ জীবনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাংলার লোকসংস্কৃতির চর্চা করব।’
বন্দী কাশ্মীর : জঁ দ্রেজ, কবিতা কৃষ্ণান, মৈমুনা মোল্লা, বিমল ভাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ আগস্ট ২০১৯ | ১৭৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমাদের বিমানটি নামার সময় যখন এয়ারলাইন্সের কর্মীরা ঘোষণা করলেন যে যাত্রীরা মোবাইল চালু করতে পারেন, উড়ানের সমস্ত লোকজন (বেশিরভাগই কাশ্মীরী ছিলেন) বিদ্রূপের হাসিতে ফেটে পড়েন। "কী অসাধারণ রসিকতা", এই ছিল প্রতিক্রিয়া, কারণ সেই ৫ই আগস্ট থেকেই মোবাইল, ল্যান্ডলাইন ফোন আর ইন্টারনেট সবকিছু বন্ধ।
শ্রীনগরে পা রাখার সাথে সাথেই আমরা একটা পার্কে কয়েকটা ছোট বাচ্চাকে খেলতে দেখলাম, শুনলাম তারা বলছে 'ইবলিশ মোদী’। ‘ইবলিশ' মানে 'শয়তান'।
জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাবদে আমরা বার বার লোকদের কাছ থেকে যে শব্দগুলি শুনছিলাম তা হ'ল 'জুলম' (নিপীড়ন), 'জ্যাদতি’(অতিরিক্ত / নিষ্ঠুরতা) এবং 'ধোকা '(বিশ্বাসঘাতকতা)। সাফাকাদালের (শ্রীনগরের কেন্দ্রে) একজন যেমন বললেন, "সরকার আমাদের কাশ্মীরিদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করেছে, আমাদের বন্দী করে রেখে আমাদের জীবন এবং ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা তো আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে, হাত-পা বেঁধে, জোর করে গলা দিয়ে কিছু ঢেলে দেওয়ার মতো"।
বাংলায় সতীদাহ এবং কয়েকটি ইউরোপীয় আখ্যান : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ আগস্ট ২০১৯ | ২৬৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
বার্নিয়ের খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন, যে সতীদাহের সংখ্যা মুঘল রাজত্বে কমে এলেও, 'রাজা'-শাসিত এলাকাগুলিতে এর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্যরকম বেশি (the number of self-immolations is still very considerable, particularly in the territories of the Rajas, where no Mahometan governors are appointed)। বাংলা ছিল মুঘল সুবার অংশ। ফলে বাংলায় যৌক্তিকভাবে সতীদাহের সংখ্যা কম হওয়াই স্বাভাবিক। অবশ্য এই কম-বেশির কোনো আঞ্চলিক চরিত্রও থাকতে পারে। এই দুই ইউরোপিয়ানের বর্ণনায় অবশ্য সেরকম কিছু ইঙ্গিত না পাওয়া গেলেও মুঘল-শাসিত এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা কম ছিল কেন, এ বিষয়ে তাঁরা একবাক্যে একটি কারণ লিখেছেন। মুঘল এবং মুসলমান রাজত্বে রাজ্যশাসক (সম্ভবত সুবাদার বা ফৌজদার)এর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো সতীদাহ হতনা। তাঁরা প্রথমে যাচাই করতেন, মেয়েটি সম্পূর্ণ স্ব-ইচ্ছায় মরতে চায় কিনা। তাকে সুবেদারের কাছে সশরীরে অনুমতি চাইতে আসতে হত। তারপরেও তাকে বিরত করার চেষ্টা হত নানা উপায়ে (বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে)। তারপরও কাজ না হলে তবেই অনুমতির প্রশ্ন। তাতেও, মেয়েটি নিজে নাবালিকা হলে, বা তার নাবালক সন্তান থাকলে অনুমতি দেবার চল ছিলনা। ফলে জোর করে ধরে জ্বালিয়ে দেবার প্রশ্ন মুঘল রাজত্বে একেবারে ছিলনা বললেই চলে। যেটুকু হত, তা অত্যন্ত সুদৃঢ় স্ব-ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব ছিলনা। কয়েকটি ক্ষেত্রে, বার্নিয়েরের বর্ণনায় পাওয়া যায়, উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে, আগুন জ্বলে যাবার পর মনের জোর হারিয়ে বা যন্ত্রণায় কোনো মহিলা চিতা থেকে নেমে পড়তে চেয়েছেন, সেক্ষেত্রে বাঁশে করে তাঁকে চেপে রাখা হয়েছে। অন্য কয়েকটি বর্ণনায় মহিলারা নিজের হাতে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আগুন জ্বালাচ্ছেন। যেটাই হোক, সজ্ঞান সম্মতি ছাড়া কোনো নারীর জ্যান্ত অবস্থায় চিতায় ওঠা মুঘল শাসনে কার্যত অসম্ভব ছিল।
উত্থানপর্বের এ কে রায় : অজিত রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৭ আগস্ট ২০১৯ | ১০৭০ বার পঠিত
ইতিমধ্যে আরেকটা কাণ্ড ঘটেছে। মিস্টার ঘটক নামে একজন সাব-ইন্সপেক্টর তোপচাঁচি থানায় পোস্টেড ছিলেন। আদিবাসীরা তাঁকে গুম করে খুন করে লাশ গাপ করে দিয়েছে। আদিবাসীগুলো এম সি সি, নাকি জে এম এম ক্যাডার সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে বিনোদবাবু ওদেরকে শনাক্ত করতে পারেন।
'বিনোদবাবু, সে আবার কে?'
'বিনোদবিহারি মাহাতো। ফরমার কমিউনিস্ট।'
'বেশ।
বেশ। বিনোদবাবুকে ডেকে ক্রস-এগজামিন করুন। উনিও যদি মুখ খুলতে না চান, গ্রেপ্তার করে হাজতে পুরুন। তারপর আমি দেখব।'
'স্যার, বিনোদবাবু বর্তমানে জে এম এমের প্রেসিডেন্ট। তাছাড়া নামকরা অ্যাডভোকেট।'
'সো হোয়াট! মেইনটেন্যান্স অফ ইন্টারনাল অ্যাক্ট আছে কী করতে? জাস্ট ডু ইওর ডিউটি।'
এমন সময় একজন অফিসার ঢুকে সাক্সেনাকে সেলাম ঠুকে জানাল, 'স্যার,রায়সাহাব অনেক্ষণ থেকে আপনার সাথে দেখা করবেন বলে বাইরে ইন্তেজার করছেন।'
'রায়সাহেব কে?'
'সিঁদরির সিটিং এম এল এ, এ কে রায়।'
'আচ্ছা আচ্ছা, উনি? কমিউনিস্ট ট্রেড ইউনিয়নিস্ট? ডাকুন তাঁকে।'
থোঁতা-মুখ-ভোঁতাকাহিনী : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৭ আগস্ট ২০১৯ | ২৫৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
এক যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ ও স্বাধীন। গান গাহিত, শাস্ত্র পড়িত না। লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দাকানুন কাকে বলে, কাকে বলে গণতন্ত্র।
রাজা বলিলেন, 'এমন পাখি তো কাজে লাগে না, অথচ বনের ফল খাইয়া রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।'
গুজরাতি মহামন্ত্রীকে ডাকিয়া বলিলেন, 'কখন পাকিস্তানিরা আসিয়া কী মন্ত্র দেবে ঠিক নাই। তার আগেই পাখিটাকে গণতন্ত্র শিক্ষা দাও'। রাজার ভাগিনাদের উপর ভার পড়িল পাখিটাকে শিক্ষা দিবার।
চিকিৎসক রোগী সংঘর্ষের উৎস সন্ধানে- পর্ব ১ : ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৭ আগস্ট ২০১৯ | ১৪০৪ বার পঠিত
বর্তমানে সারা দেশের মতো এই রাজ্যেও সামাজিক অস্থিরতা এবং আইন শৃঙ্খলার দারুণ অবনতি সংক্রমণের মতো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। দলিত, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষজনের উপর সম্পন্ন ও প্রভাবশালীদের অত্যাচার; রাজনৈতিক দলগুলির গোষ্ঠীসংঘর্ষ বা নিজেদের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াইতে সাধারণ নীচু তলার কর্মীদের প্রাণহানি; নানা ধর্মীয় প্ররোচনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা; তোলাবাজি, অগ্নিসংযোগ বা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়ানো; রাজনৈতিক মদতপুষ্ট পার্টির ক্যাডারদের তাণ্ডব আজ দৈনন্দিন কাহিনি হয়ে দাড়িয়েছে। গত দেড় দু'বছর ধরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে রোগীর আত্মীয়স্বজন এমনকি অসম্পর্কিত জনতারও চিকিৎসকদের উপর যূথবদ্ধ আক্রমণ এবং প্রহারের ঘটনা। কর্পোরেট হাসপাতাল, সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ছোট ও মাঝারি নার্সিংহোম গুলির উপর লাগাতার হামলা। প্রায় সব ক্ষেত্রেই আপাত কারণ হল অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু। অর্ধসত্য-অর্ধমিথ্যা এইসব অভিযোগ এবং উত্তেজনার পিছনে যা উপস্থিত থাকে তা হল, সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা, অবহেলা, চিকিৎসকের অনুপস্থিতি, স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্ব্যবহার এবং হাসপাতাল চত্বরে বহির্বিভাগে দেখানো, পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে ভর্তি হওয়া নিয়ে সর্বভূতে বিরাজমান উৎকোচ ও ঘুষতন্ত্র, দালালরাজ। আর বেসরকারি কর্পোরেট হাসপাতালের ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতি, অস্বাভাবিক ভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলা খরচাপাতি এবং বহুক্ষেত্রেই চিকিৎসকের দ্বারা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অপ্রয়োজনীয় রোগী ভর্তি, অহৈতুকী দামী ওষুধ এবং পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার।
রাম কে নাম : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ আগস্ট ২০১৯ | ১৬০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
একটা শিল্পবস্তু কি রাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করবার ক্ষমতা আর রাখে? মাকেল মুরের ফারেনহাইট ৯/১১ আমেরিকার ইতিহাসে সর্বাধিক লাভ করা তথ্যচিত্র হয়েও জর্জ বুশের দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়া আটকাতে পারেনি। আনন্দ পটবর্ধন পরের পর দলিত প্রান্তবাসী প্রতিবাদী স্বরদের তাঁর তথ্যচিত্রে আনার পরেও নরেন্দ্র মোদির বিপুল ভোটে পুনর্নির্বাচিত হওয়া রোধ করতে পারেনি। আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে শিল্প এতটাই সাধারণের জীবনযাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন, এমনকি আভা-গাঁর্দও, যে কিছুতেই কোনও প্রভাবই তা ফেলতে পারছে না। এমনকি 'রাম কে নাম', তার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েও, নিছক শিল্পের হিসেবেই একটি ম্যাড়ম্যারে এবং সরলরৈখিক তথ্যচিত্র মাত্র। এই ধরণের তথ্যচিত্র প্রদর্শনের সমস্যা হল, এদের টার্গেট অডিয়েন্স সম্বন্ধে সঠিক ধারণা না থাকা। এগুলো গ্রামের দিকে, বা বস্তিতে দেখালে মানুষ কতটা গ্রহণ করবেন সন্দেহ আছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের যে পরিমণ্ডলগুলিতে দেখানো হয়, এবং যাঁরা দেখেন, সেই ছাত্রছাত্রীরা ইতিমধ্যেই অসাম্প্রদায়িক, উদারনৈতিক, বামপন্থী সেকুলার। ফলে পুরো ব্যাপারটাই প্রিচিং টু দ্য কনভার্টেড হয়ে যায়।
ডিগিং আদানি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ আগস্ট ২০১৯ | ১৭২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আজ মহামহিম গৌতম আদানির কর্মকান্ডের ওপর নির্মিত ফোর কর্ণারের তথ্যচিত্র ডিগিং আদানি দেখে প্রত্যয় হলো যে এই একটা বিরাট ভুল আমি করেই চলেছি। যেভাবে শকুনের ফিস্টির, মানে পরিবেশ ও মানুষ খাওয়া উন্নয়নের ছবি পরতের পর পরত উঠে এলো স্ক্রিনে, তাতে আমি নিশ্চিত যে এইরকম বহুকেলে ছাপ (লাস্টিং ইমপ্রেশন) রেখে যাওয়া আর কোনো মাধ্যমের পক্ষে বিরল-সম্ভব। যেমন, বেঁটেখাটো গোলগাল ফর্সাপানা একটি লোক, বিন্দুমাত্র হাসলে যার ঠোঁটের দুদিকের কোণ উন্মুক্ত হয়ে থাকে, সেইই হলো সেরা প্রফিটজীবী গৌতম আদানি, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা যার সম্বন্ধে বলেছেন, এমন কোনো কাজ নেই যা সে প্রফিট- মেকিংয়ের জন্য করতে পারেনা। এবার থেকে ধনের দেবতা কুবের আর ঠোঁটখোলা হাসি হাসা আদানি আমার মনে একাকার হয়ে গেল, জেগে রইল শুধু পরমারাধ্য প্রফিট।
জল-জঙ্গল-জমিন : অদ্বিতীয় ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ আগস্ট ২০১৯ | ১০৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গত জুন মাস থেকে জল-জঙ্গল-জমিন এর পক্ষ থেকে ‘বর্ষামঙ্গল’ কর্মসূচির সূচনা করে। কেষ্টপুর খালের এক অংশ পরিষ্কার করে, তার পাশে গাছ বসানো হয়। এবং আবর্জনার বেশিরভাগটাই প্লাস্টিক। তারপর প্রত্যেক সপ্তাহে আহিড়ীটোলা ঘাট পরিষ্কার করা। রানাঘাটের চূর্ণী নদীর যা বেহাল অবস্থা , তার একটা অংশ সংস্কার করা হয়। উল্টোডাঙ্গার মুরারিপুকুর এর একটা অংশ পরিষ্কার করা হয়। বাঁকুড়াতে এক জমিতে নতুন গাছ বসানো হয়। এবং গ্রামে গ্রামে কর্মশালা করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা, অশোকনগর অঞ্চলে ১২টি স্কুলে একটা অঙ্গীকারপত্র নিয়ে যাওয়া হয় , যার বক্তব্য গুলি হল, সাইকেল চালানোর অভ্যাস বাড়ানো, প্লাস্টিক, থার্মোকল, রাংতা ব্যবহার না করা, পরিবর্তে চটের ব্যাগ ব্যবহার করা, ব্যাগে টিফিন বক্স রাখা, যেকোনো অনুষ্ঠানে গাছের চারা উপহার দেওয়া, এসি ব্যবহার না করার চেষ্টা করা, ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও আবর্জনা না ফেলা, কষ্ট হলেও শৌচালয় ব্যবহার করা। এছাড়াও স্কুলে সেমিনার করা হয়। হুগলির এবং মুর্শিদাবাদের কিছু স্কুলে আগস্টে সেমিনারের ডেট ফিক্স করা হয়েছে।
শেষের দিব্যেন্দু পালিত : পুরুষোত্তম সিংহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ আগস্ট ২০১৯ | ১৩২৮ বার পঠিত
দিব্যেন্দু পালিত ভিন্ন ধারার এক ঔপন্যাসিক। বাজার চলতি ফর্মে তিনি কোনদিন হাঁটেন নি। নিভৃতে বসে শিল্পের দায়বদ্ধতা পালন করে গেছেন। ‘ঢেউ’ উপন্যাসের রচনাকাল ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে আগস্ট, গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে। এ উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম পুরস্কার পান ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে। জীবনের বহুকৌনিক বোধে তিনি উপনীত হন। মৃত্যুই যেন মানুষকে এক নতুন বোধের জগতে নিয়ে যায়। চেতনার গভীরে এক ঢেউ নিয়ে আসে, যা মানুষকে নতুন করে পথ চলতে শিক্ষা দেয়। এ উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটেছে সপ্তম পরিচ্ছেদে। মিসেস চৌধুরীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মধ্যবিত্ত অপূর্ব ও মালবীর জীবনে এক নতুন চেতনা এসেছে। অপূর্ব চেয়েছিল নতুন করে উপন্যাস লিখবে। শিল্পীর জীবনও যেন এক উপন্যাস। সেই আত্মকেন্দ্রিকতাকেই সে ধরতে চেয়েছিল। লেখক অচেতনে সেই প্লটই যেন দিয়ে গেলেন। অপূর্ব ও মালবীর নতুন বিবাহ, মধ্যবিত্তের সংসার, সেখানে আশা- আকাঙ্ক্ষা আছে। মনোজ হঠাৎ নিয়ে আসে মৃত্যু সংবাদ। শেষ পরিচ্ছেদটি গড়ে উঠেছে মিসেস চৌধুরীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে সবার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। লেখক নিভৃতে থেকে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কয়েকটি মানুষের ( অপূর্ব, মালবী, মনোজ, বিমলকৃষ্ণ ) চেতনায় যে বিবিধ আলোড়ন তা দেখিয়েছেন। স্মৃতির সঙ্গে বাস্তবের কোন সম্পর্ক নেই। সেই বাস্তবকে সামনে রেখেই সবাই গেছে স্মৃতিচারণায়। জীবনের পথে চলতে গেলে সব সত্য প্রকাশ করা যায় না।
একজন প্রবল ব্যতিক্রমী নারী - ডক্টর কাদম্বিনী গাঙ্গুলী : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মার্চ ২০১৯ | ১৫৬৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫১
কাদম্বিনীকে কোন ছাঁচেই ঠিকঠাক ফেলা যায় না, তিনি স্নেহময়ী মাতৃমূর্তি নন, বিদ্রোহিনী নন, সন্ন্যাসিনীও নন - আবার এই সবই। তাঁর ছবিটা এই রকম - ফিটন চেপে এক মহিলা যাচ্ছেন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, রোগী দেখতে। হাতে কুরুশ-কাঠি, অপূর্ব সূক্ষ্ম কাজের লেস বুনছেন যাতায়াতের সময়টুকুতে, বিধবা বড় ননদের জন্য হিন্দু মতে রান্না করছেন, পূত্রবধূকে লিখছেন, ‘কাল বিকালেও রাঁধুনি আইসে নাই। আজও ক্যাঁও ক্যাঁও করিয়াছে শরীর ভাল না। কাল আসিবে কি না জানি না।’ আবার বিহার, ওড়িশায় খনিমজুর মেয়েরা কেমন আছেন, তা সরেজমিনে দেখে রিপোর্ট দিচ্ছেন সরকারকে।
অনশনের তিন সপ্তাহ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ২১ মার্চ ২০১৯ | ১২২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
দোলের দিন পাড়ায় প্রভাতফেরি হল। কী সুন্দরী সব মহিলা, সুবেশ পুরুষ, খোল দ্বার খোলের সঙ্গে অভিজাত পদক্ষেপে হেঁটে যাচ্ছেন। যে তরুণের বাইকে চেপে প্রেস ক্লাবে যাচ্ছিলাম সে বলল,দেখছেন রাস্তাও লালে লাল, আর আবীরের গন্ধমাখা। অসাধারণ গদ্য আর কবিতা পড়লাম কিছু। সত্যি অসাধারণ। এমনকি যেখানে ছেলেমেয়েরা অনশনে বসেছে সেখানেও বাঁধানো বেদীর মস্ত গাছে নতুন কচি পাতা। শুধু বাইশ দিনের উপোসে শুকনো মুখগুলোতে বসন্ত অনুপস্থিত। হাতে প্ল্যাকার্ড, রোদ এড়াতে ছাতা আর ফুটপাথে বিছানো ত্রিপলের ওপর ক্ষিদে আর আশাভঙ্গের অভিঘাতে শুয়ে আছেন যারা, তারা এ দেশের হবু শিক্ষক।
স্বাস্থ্য পরিচর্যার উন্নতিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মীদের ভূমিকা : প্রতীচী প্রতিবেদন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১৯ | ১০০২ বার পঠিত
প্রতীচীর বার্ষিক আলোচনা সভায় পশ্চিমবাংলার নানা প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী, যেমন, এ এন এম, আশা, চিকিৎসক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, এবং সমাজের অন্যান্য কর্মস্তরের দেড় শত মানুষের দু দিন ব্যাপী “স্বাস্থ্য পরিচর্যার উন্নতিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মীদের ভূমিকা” শীর্ষক সভায় আলোচিত প্রশ্নোত্তর নিয়ে কথাবার্তা।
ফেকুকথা : একটি কাল্পনিক কথোপকথন : যে নিরাপত্তার খাতিরে নোটবন্দীর জমা টাকার পরিমাণ জানাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অমান্য করেছিল তার চেয়ে সঙ্গততর কারণে এই আখ্যান রচয়িতার নাম গোপন থাক।
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ১৭৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
যেমন ধরেন ওই নোটবন্দী খেলা — পারবে? কোনও সুস্থ মাথার লোক (গাঁজা ফাঁজা না খেয়ে) ভাবতেও পারবে না যে এভাবেও টাইট দেওয়া যায় নিজের দেশের জনতাকে। আর যা কারণ ঠাউরালেন তাতে হেসে খুন হই আর কি। গোলাপী খেলনা নোটের ভেতর থেকে মাইক্রোচিপ অবধি খুঁজে পেল টিভি অ্যাঙ্কর (এমন অ্যাঙ্কর থাকলে ১৯১১ সালে হিমশৈল অবধি দৌড়ে পালাত, টাইটানিক দেখে, ধাক্কা মারা তো দূরস্থান)। আর সেই সরল গোলগাল ফুচকার মতো যুক্তি, যা কিনা ফুটো না করিলে তাতে হায় মশলা আলু বা টকজল কিছুই ঢোকে না, এমন দুর্দম, অনমনীয়। কী? না এতে জাল নোট আটকাবে - পাড়ার রঙিন ফোটোকপি দোকানদার অবধি হেসে খুন, এই নোট আবার জাল করতে হয় নাকি? এ তো এমিনিই এত জ্যালজ্যালে। আবার ধরেন, এতে নাকি টেরোরিজম চুপসে এই অ্যাত্তটুকুন হয়ে যাবে। তা তো কই…
আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - তৃতীয় পর্ব : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ১০৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কবিতা থেকেই খুঁজতে চাই কার বাড়ি রানাঘাট, কার মেদিনীপুর, কার শিমুলপুর, কার বাড়ি অজয় নদীর ধারে। স্থানাঙ্ক জানা মানে শুধু স্থান নয়, অবস্থানও। কোন কবির কোন ঝোঁক, তাও বেরিয়ে আসতে পারে। কে কোন জাতীয় মদ খান, কার কোন পোশাক প্রিয়, কে চাইবাসা কতবার গেছেন, কে ধলভূমগড়, এই নিয়ে বহু চর্চা হয়েছে। গায়ত্রী চক্রবর্তী প্রসঙ্গ এখনো বিনয় প্রসঙ্গ এলে যেন আগে এসে পড়ে। কিন্তু, আগে তো কবির কবিতা পড়ি, কবিতা নিয়েই আলোচনায় প্রবৃত্ত হই। সেখানে কবিকে খুঁজতে চাওয়াই তো সঙ্গত। রবীন্দ্রনাথের ' কবি কোনখানে তোর স্থান' বলে একটি লাইন মনে পড়ে গেল।
যুদ্ধের_ধুয়ো_এবং_ধো৺য়া : ডা: স্বস্তিশোভন চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ১০৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
......উনি দিব্যি হেসে উঠলেন। একেবারেই একটা তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন, ঠিক মন্তব্য নয়, প্রশ্ন! তার প্রশ্নের ধরনের দেখে সকলে ইতস্তত: করেও হেসে উঠল। তিনি মজা পেলেন। যে বলেছিল, সে একটা উত্তর দিল আমতা আমতা করে। তিনি আরো এমন একটি মন্তব্য করলেন, সকলে আরো বেশ খানিকটা হেসে উঠলো।
এই "উনি"টি কোনো কমেডিয়ান নন, অনুষ্ঠানটিও কোনো পাড়ার জলসা নয়, যে এমন ছ্যাবলামো অনায়াসে করা যায়! অনুষ্ঠানটি চলছিল দেরাদুনে, ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বিভিন্ন স্বপ্নের প্রকল্প পেশ করছিল ওনার সামনে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে।
হ্যাঁ, ঘটনাচক্রে উনি দেশের প্রধানমন্ত্রীও বটে।
আদিবাসী শিশু মাতৃভাষায় পড়বে কবে? - দ্বিতীয় পর্ব : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ২৭৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
পাহাড় ও সমতলের ভাষাগত সংখ্যালঘু, তথা আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে আদিবাসীর মাতৃভাষায় পাঠের ওই বেহাল চিত্র প্রায় একই। পার্বত্য চট্টগ্রাম, বৃহত্তর উত্তরবঙ্গে, কক্সবাজার ও পটুয়াখালিতে ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে অল্প কয়েকটি চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, রাখাইন ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্রাকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে এসেছে এ ক্ষেত্রে। অনেক দেরিতে হলেও ২০১৪ সালে প্রথম খোদ সরকারই এগিয়ে আসে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে। তবে আর সব সরকারি প্রকল্পের মত চার বছরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ উদ্যোগ।
বাংলাদেশের প্রায় ৭০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠির ২৫ লাখের বেশী মানুষ হাজার বছর ধরে বংশপরম্পরায় ব্যবহার করছেন নিজস্ব মাতৃভাষা। পাশাপাশি বাঙালির সঙ্গে ভাব বিনিময়ে তারা ব্যবহার করেন বাংলা। প্রতিটি আদিবাসী জনগোষ্ঠির রয়েছে নিজস্ব প্রাচীন ভাষা, রীতিনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
এসএসসি আন্দোলন বিষয়ে কিছু কথা : সুলগ্না পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ মার্চ ২০১৯ | ৬৮০ বার পঠিত
কেন এই আন্দোলন নায্য আন্দোলন। এই যে ৭ বছরে তৈরি হয়েছে হাজার ভ্যাকেন্সি,সেই তুলনায় নিয়োগ হয়েছে খুবই কম। ফলাফল? স্কুলগুলো ধুঁকছে শিক্ষকের অভাবে,বেকারত্ব বাড়ছে আর আমাদের মতন স্থায়ী শিক্ষকদের ওপরে চাপ বাড়ছে। আমরা overburdened। কিন্তু তাতে সরকারে কি কিছু এল গেল? নাঃ কাঁচকলা। কিসসু এল গেল না। শুধু আমরা দেখলাম ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে,সংকুচিত হচ্ছে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা,দলে দলে শিশুরা গিয়ে ভর্তি হচ্ছে প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা আর পড়ছে না। হ্যঁা মিড ডে মিল,ড্রেস,ব্যাগ দেওয়া সত্ত্বেও তারা ড্রপ আউট,কারণ কে পড়াবে তাদের? শিক্ষক কই?
আর উল্টোদিকে একটা গোটা দশককে আমরা চোখের সামনে শিকার হতে দেখছি বেকারত্ত্বের,সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও।
মনের স্বাস্থ্য ও নারী : অনুরাধা কুন্ডা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মার্চ ২০১৯ | ১১৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
রোদে যেও না, রং পুড়ে যাবে। শোনো, তুমি কালো, রং ফর্সা হবার ক্রিম মাখো, নইলে কেউ ফিরে দেখবে না। তুমি বেঁটে। কষ্ট হোক,তাও হিল পরো। নইলে বেগুন গাছে আঁকশি দিতে হবে বলে পাত্রপক্ষ বাতিল করে দেবে। তুমি লম্বা, মানে ঢ্যাঙ্গা। এমনভাবে সাজো যাতে একটু কম লম্বা দেখায়। নয়তো ছেলেরা কমপ্লেক্সে ভুগতে পারে। তোমার চোখে এত বেশি পাওয়ার! লেন্স পরো। হাত পা খড়খড়ে? সর্বদা ব্যাগে রাখো হ্যান্ডলোশন। শরীর কে যত্নে রাখো, যাতে সারাদিন আগুনের পাশে বসে রাঁধলেও ত্বক সুন্দর থাকে। ক্লান্তির ছাপ যেন না পড়ে এতটুকু। পত্রিকা জ্ঞান দেয়, রান্না করতে করতে মুখে মেখে নিন টোম্যাটোর রস; পোড়া ভাব কেটে যাবে। আপিস যাবার সময় ব্যাগে রাখুন ফাউন্ডেশন আর গয়না। টয়লেটে ফ্রেশ হয়ে বিয়েবাড়ি চলে যান। পার্টি থাকলে আরেক সেট্ পোশাক রাখুন সঙ্গে। শরীরকে যত্নে রাখুন, আগলে রাখুন সতীচ্ছদ। সাইকেল চড়িস না বেশি মেয়ে, হাইমেন্ ছিঁড়ে যেতে পারে। নাচ ? বস্তি প্রদেশের অতিরিক্ত ব্যবহার মেয়ে মানুষের ভালো নয়। আস্তে হাঁটো। ধীরে মৃদুস্বরে কথা বলো। চোখ আনত অনাঘ্রাত থাকো। তোমার শরীর তো নিবেদনের জন্য।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতি বা চিকিৎসা ও দুর্নীতি-ডাঃ পার্থসারথি গুপ্ত স্মারক বক্তৃতা - দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব : ডাঃ বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ৯৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
নব্বই দশক নাগাদ, মুক্ত অর্থনীতির আবির্ভাবের সাথেসাথেই আপনি জানতে শুরু করলেন, যে, সরকারি হাসপাতাল সাক্ষাৎ নরক, সেখানকার ডাক্তারেরা ফাঁকিবাজ দুর্ব্যবহারী ইত্যাদি ইত্যাদি - আর, হ্যাঁ, এখন কলকাতাতেই এসে গিয়েছে বিশ্বমানের চিকিৎসা, চিকিৎসাপরিষেবা, ওই পাঁচতারা হোটেলতুল্য হাসপাতালগুলিতে। এই একই সময়ে নেতামন্ত্রীরা ধীরে ধীরে নিজেদের চিকিৎসার জন্যে যেতে শুরু করলেন বেসরকারী হাসপাতালে।অর্থাৎ, বেসরকারী হাসপাতালই যে উন্নততর পথ, তা সামাজিক মান্যতা পেয়ে যেতে থাকলো।ঝাড়া সিকি শতকের মগজধোলাইয়ের পরে, আপনাকে যদি কেউ উল্টোটা বোঝাতে আসে, কেউ যদি বলেন আপনাকে , যে সংখ্যার চিকিৎসক মিলে যে সংখ্যার রোগী সামলানো হয় সরকারি স্বাস্থ্যকাঠামোয়, আর সেই চিকিৎসার রেজাল্ট অধিকাংশ অসুখের ক্ষেত্রেই বিশ্বের গড়ের চাইতে কম নয়, একে যদি আপনি সাফল্য না মানেন, একে যদি আপনি দক্ষতা বলে স্বীকার না করেন, তাহলে আপনার কাছে দক্ষতার সংজ্ঞা ঠিক কী?
মুনাফা কার ? : আর্কাদি গাইদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ৭৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ইংরেজিতে একটা শব্দবন্ধ রয়েছে -a gift that keeps on giving. একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের শাসকরা এরকম একটা উপহার আবিষ্কার করেছে - low scale conflict বা ক্ষুদ্র আকারের সংঘাত।এ যেন সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, হাঁসটাকে যতদিন বাঁচিয়ে রাখা যায়,ততদিন সোনার ডিম দেবে।ইজরায়েলের প্যালেস্তাইন, রাশিয়ার চেচনিয়া,আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য,ভারতের কাশ্মীর,এই সংঘাতগুলো দীর্ঘকালীন সময় ধরে চলছে,তার প্রধান কারণ এটাই যে এই সংঘাতগুলো মিটিয়ে ফেলায় মুনাফা নেই।
শ্রদ্ধা যখন কাঠগড়ায় : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১১৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কাকে বলব শুভ বুদ্ধি আর কাকেই বা বলি অশুভ বুদ্ধি? পুলওয়ামা কান্ডের পরে সেটাই গুলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।নিতান্ত ছা-পোষা গেরস্ত মধ্যবিত্ত মানুষেরা এতকাল সুখে সোস্যাল-মিডিয়ায় সেলফি-যাপন করছিল। তারাও হঠাৎ হাল্লা রাজার মতন যুদ্ধু- যুদ্ধু বলে লাফিয়ে উঠল। যারা সেই তালে তাল মেলাতে রাজী নয়, তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের ঝড় উঠল।এই অবধি হলে ঠিক ছিল। এসব চেনা ঘটনা। এ রকম দেশাত্মবোধের জোয়ার ২০১৬ সালেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এবার ঘটনা গড়িয়ে চলল আরো একটু দূর। একদিকে রাজ্যপাল থেকে সেনা-নেতা, সব তাবড় লোকেরা কাশ্মিরীদের বয়কটের ডাক দিচ্ছেন – পুরো দেশটাকে একটা বাইনারীতে ভেঙ্গে ফেলার মরিয়া চেষ্টা, অন্য দিকে সামান্যতম বিরোধীমতের আভাসে সোস্যাল মিডিয়ায় ভয় দেখান, যৌন-হেনস্থা, নোংরাতম কথা বলা পেরিয়ে শুরু হল বাড়ি ধাওয়া করে হেনস্থা, ভাঙচুর। এবং চাকরী থেকে তাড়ানো। কারণ?
পুলওয়ামা বিস্ফোরণ, সর্বভারতীয় মব আর যুদ্ধ পরিস্থিতি : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ২২৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৮
পুলওয়ামা বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে দেশজুড়ে যে জিঙ্গৈজমের রবরবা, তা যে মব মানসিকতা সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যে চারাগাছে গত কয়েকবছর সারজল পড়েছিলো নিয়মিত, আজ তা মহীরূহে পরিণত। সেই একই রেটরিক, যুদ্ধ চাই যুদ্ধ চাই চিৎকার, সেই ইশকুল-কলেজ-অফিস ফেরত ভারতবাসীর আইপিএলসুলভ আবাল মস্তি নিয়ে যুদ্ধের গজল্লা ---কিচ্ছু পাল্টায় নি। যেমন পাল্টায়নি কাশ্মীর নিয়ে মানুষের সীমাহীন অজ্ঞতা, যদিও গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত কাশ্মীরের প্রথম সংস্করণ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় কীই বা লেখা যায়? আমার জানা নেই কোন ভাষায় লিখলে, কোন শব্দ ব্যবহার করলে মানুষকে অন্য মানুষ সম্পর্কে সচেতন করা যায়।
কাশ্মীর-কন্টক : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১১০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
যার হবার কথা ছিল মাথার মণি, সে হয়ে গেল গলার কাঁটা। ভূস্বর্গ কাশ্মীর, তার অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্তিকামী জনগণকে নিয়ে যে কোন রাষ্ট্রের সাধনার ধন হতে পারত। কপালদোষে তাকে নিয়েই গলার কাঁটা বেঁধে যাওয়ার মতো হাঁসফাঁস অবস্থা ভারতের। না পারা যাচ্ছে গিলতে, না ওগরাতে। আর এই দুরবস্থার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের পারস্পরিক অবিশ্বাস, শাসকের ভ্রষ্টাচার, দমন ও শাসিতের মরীয়া বিদ্রোহ, চরমপন্থার জলঘোলা করা এবং অবশ্যই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের লম্বা নাক ঘন ঘন গলানো। দুই দেশই নিজের স্বার্থে যে ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে চলেছে তার নাম কাশ্মীর। তবে এখন আর সে ভূস্বর্গ নয়, রক্তাক্ত, অসন্তুষ্ট এক নরকসদৃশ ঠাঁই যেখানে আত্মঘাতী জঙ্গী নিরাপত্তার ঘেরাটোপ অনায়াসে টপকে বিস্ফোরণে খতম করে দিতে পারে সেনা জওয়ানদের, আবার অন্যদিকে পাঁচশর বেশি নিরপরাধ নাগরিক শিকার হন নির্বিচার পেলেট গানের। তাদের মধ্যে শিশু, নারী, বৃদ্ধ অনেক। মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা, অবিশ্বাস, সন্ত্রাস আর ষড়যন্ত্র যেখানে রাজ করে সেই ভূখণ্ডই আজকের কাশ্মীর।
আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - দ্বিতীয় পর্ব : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৮৭৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৬
হাজার বছর আগের কবিরা এমনকি আজকের ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট দেওয়া কবিদের সঙ্গেই যেন কিভাবে এক অলীক আত্মীয়তায় রয়েছেন। তাই , কাহ্নু, কৃত্তিবাস, জয়, বিনয় , সুনীল, মৃদুল, জয়দেব(বসু), সোমনাথ যেন নিরবচ্ছিন্ন কালপ্রবাহে একই সূত্রে বাঁধা, কিন্তু তাদের দেশ একই।সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে।মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় সত্যজিৎ রায়ের কথা। মনে পড়ে গেল বিভূতি ভূষণ। অপুর হাতে ধরা গ্লোব, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতা আবৃত্তি করে অপু এই পুরস্কার জিতেছিল। সুদুরের পিয়াসী, কৌতূহলী, অপু এই গ্লোব সবসময় হাতে রাখত, সত্যজিতের ‘অপরাজিত’ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু এও মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ: ' সত্যেন করতেন কিছু/যদি না ছুটতেন ছন্দের পিছু পিছু'।
চিত্র : সুদীপ্ত গাঙ্গুলী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ জুলাই ২০১৯ | ২৪৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
চিত্র নাম তার। কে বলে চিত্র মেয়েদের মতো সাজে? কেউ কি একবারও ভালো করে দেখেছে ওর দিকে? কেউ কি জানে ঠিকমতো যে মেয়েদের মতো সাজা কাকে বলে? মেয়েদের সাজ বলে কি সত্যিই কিছু আছে? যারা এই ছেলে আর মেয়ের সাজ আলাদা করলো তারা ভেক ধরে নেই? ভেক কি সে একাই ধরে? সেটা কি ভেক আদৌ? প্রতিবার সেই সরোবর বা নদীর ধারে গিয়ে স্বপ্ন দেখে চিত্র। যাবার আগে একটু ভিক্ষে করে পয়সা যোগাড় করে। তারপর ভালো করে সাজে। অন্নের সংস্থান নেই, আর সাজ ! কিন্তু এতো সাজ নয়, এ অভিসারও নয়, এতো একটু নিজেকেই নিজে দেখা, একটু নিজের কাছাকাছি আসা, আত্মাকে উপলব্ধি করা। ঠোঁটে রঙ লাগায়, মাথায় সুগন্ধী তেল। পায়ের নখ থেকে, বাহু, গলা, মাথার চুল পর্যন্ত পরিপাটি করে। এমন পরিপাটি তো পাড়ার বৌরাও দেখে নি। চিত্র অপরিচিত, ভিনদেশী হয়ে যায় পুরোপুরি। তারপর ভিনদেশী সেই যুবক অথবা যুবতী মালিনীর স্থির জলে বসে সেই দেশী পদ্মের বনে রাজকুমারের স্বপ্ন দেখে।
কী করবি বই পড়ে : ফয়েজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৭ জুলাই ২০১৯ | ৯৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আর বাউন্ডুলে ফ্রান্স গেলেও ঘুরেই বেড়ায়। আমারও তাই দশা। ছুটিছাটা পেলেই প্যারিসের লং ডিসটেন্স বাস ডিপো থেকে কোনো একটা বসে উঠে অজানা জায়গায় যাই। কদিন আরামে নিজের সাথে কাটিয়ে আবার ফিরে আসি। এবারে ভাবলুম, ট্রেন ব্যবহার করি। বাসওয়ালাগুলোও বোধয় এতো দিনে চিনে গেছে আমাকে। তাছাড়া ট্রেনের ভাড়া বাসের থেকে বেশ কম শুনেছি। আমার তখন সম্বল বলতে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া কটা ইউরো আর এক বাংলাদেশী মাইয়ারে বাংলা পড়াইয়া যা কিছু পাই, তাই। তার অর্ধেক তো চলে যায় ওরই বাপের রেস্তোরাঁতে ইলিশ ভাত, মাংস ভাত খেতে। কত আর পাউরুটি চিবোবো।
বইটি হস্তগত করে, একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লুম। দেখি চোখ কোন দিকে যায়, আমিও সেই দিকগামী হবো। তবে দুগ্গার কৃপাকে এইভাবে abuse করলে মাও যে আর বেশিদিন রক্ষে করবেননে সেটা বুঝি।
কোথায় যাচ্ছি ঠিক করার একটা দারুণ উপায় মাথায় এলো। ট্রেন স্টেশনে মানচিত্র দেখে যে অজানা নামটা বেশ সুন্দর লাগলো, সেটার একটা টিকেট কেটে উঠে বসলাম।
‘পাইয়া ফিরিঙ্গ ডর’—একটি বহুকৌণিক ঐতিহাসিক আখ্যান : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ জুলাই ২০১৯ | ১৭৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
রসগ্রাহী পাঠকমাত্রেই জানেন, ঐতিহাসিক উপন্যাসকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে গেলে, তথ্যের খুঁটিনাটি ও সত্যতা-সম্পর্কে লেখককে কতখানি নিষ্ঠাবান হতে হয়। আমি আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে যতটুকু বুঝি, রাজর্ষি এই কাজে সম্পূর্ণ সফল। সপ্তদশ শতকের বাংলা, বিশেষ করে, সমতটের বাকলা-বাখরগঞ্জ থেকে, সন্দ্বীপ ও চট্টগ্রাম হয়ে, আরাকান বা রাখান-দেশ অবধি বিস্তৃত ভূখণ্ডের ভুগোল ও ইতিহাস, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে এই উপন্যাসে। শুধু তা-ই নয়, সামাজিক আচার-ব্যবহার, খাদ্যাভ্যাস, বাচনভঙ্গী, এমনকী নৌবিদ্যার খুঁটিনাটি বর্ণনাতেও, লেখকের মনোযোগ ও যত্নের ছাপ সুস্পষ্ট। অথচ, তথ্যের এমত প্রাচুর্য কখনও বাহুল্য হয়ে ওঠেনি। বরং, পটভূমির বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে, গল্পের চরিত্রগুলিকেও আরো বেশি রক্তমাংসের বলে মনে হয়েছে।
“আয়ুষ্মান ভারত” – ভারতীয় জনতা কি আয়ুষ্মান হবে? : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুলাই ২০১৯ | ১২৯১ বার পঠিত
এবারেরে বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্বাস্থ্য নিয়ে প্রায় কোন উল্লেখই করেননি। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে স্বাস্থ্যবান সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন, উল্লেখ করেছেন আয়ুষ্মান ভারতের কথা বা যাকে আরও ব্যাখ্যা করে বললে আয়ুষ্মান ভারত–প্রধান মন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা বা AB-PMJAY বলা হচ্ছে (আমরা এরপরে এ প্রবন্ধে আয়ুষ্মান ভারত বা AB-PMJAY বলে উল্লেখ করবো)। উল্লেখ করেছেন সুপুষ্ট শিশু এবং মায়েদের কথা। New England Journal of Medicine (NEJM)-এ ২৩ মে, ২০১৯, সংখ্যায় “Getting Coverage Right for 500 Million Indians” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের বক্তব্য অনুযায়ী ভারতে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যে সংস্কার করা হয়েছে তার দুটি স্তম্ভ – (১) দরিদ্রতম (আগেকার অবস্থা যাই থাকুকনা কেন) ৫০ কোটি ভারতবাসীর জন্য স্বাস্থ্য বীমা যার পরিমাণ প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রতিবছর ৭,০০০ ডলার বা ৫০০,০০০ টাকা, (২) যেসব সুযোগ-সুবিধে বর্তমানে রয়েছে সেসবের রূপান্তর ঘটিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্য পুনর্বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যার নতুন পোষাকি নাম হচ্ছে “Health and Wellness Centers” (HWC) তথা স্বাস্থ্য ও সুস্থতার কেন্দ্র। ১,৫০,০০০ HWC খোলা হবে ভারত জুড়ে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য যেসব সাবসেন্টার বা SC ছিলো সেগুলোকে HWC-র স্তরে উন্নীত করা হবে।
গণপিটুনির ধারাবিবরণী : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ জুলাই ২০১৯ | ২৭০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ক্যামেরার সামনে একের পর এর খুন হয়ে চলেছে। খুনীদের চেহারা ক্যামেরায় স্পষ্ট। অথচ তাঁদের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। ক্যামেরা বন্ধ করানোর কোনও চেষ্টা নেই। বরং, বীরত্ব, জিঘাংসা আরও ফুটে বের হচ্ছে। আইনের শাসনের প্রতি মানুষের মনে কতদূর অবজ্ঞা জন্মালে এটা হতে পারে, সেটা ভেবে দেখুন। ধরুন, আমি গয়নার দোকান থেকে চুরি করছি। ক্যামেরা চলছে জেনেও আমার কোনও হেলদোল নেই। কেন না, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, কোই মাই কা লাল, আমার কিছুটি বাঁকা করতে পারবে না।
সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না : দীপঙ্কর সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৪ জুলাই ২০১৯ | ৩০৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
‘মিয়া’ শব্দের অর্থ হতে পারে, জ্ঞানী, ভদ্রলোক, মহাশয়, এইরকম। কিন্তু মিঞা পয়েট্রি যাঁদের কথা বলে, তাঁদের ‘মিয়া’ বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। অপাক্তেয় যেন। তাঁদের অস্তিত্বই যেন অবাঞ্ছিত । সেই তাচ্ছিল্যকেই হাতিয়ার করে, তাচ্ছিল্যের অপসংস্কৃতিকে বৌদ্ধিক স্তরে চিহ্নিত করে দেয়ার থেকেই নিজেদের ‘মিয়া’ বলে ঘোষণা করে দেয়ার কবিতাই মিঞা পয়েট্রি। নিজেদের কথাটি সংগবদ্ধ করে মিঞা’র আসল অর্থও জানিয়ে দেয়া।
হাইওয়ে ব্লুজ - ৪ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০১৯ | ১৩৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
একা মানুষের শত্রু হচ্ছে সে নিজে। তার একলা মন চাইবে পথে এসে মিশুক অন্য কেউ... হাত ধরুক... পায়ে পায়ে জুতো লেগে গতি হোক ধীর, মৃদু... অথচ কেউ আসে না, কেউ আসবে না হয়ত কখনো, কোনদিন, শুধু একটা দমকা বাতাস সবসময় ভিজিয়ে রাখবে তোমাকে... অধীর করে তুলবে... আর এই একলা জার্নি যোগ হবে দু'টো শালিকের শান্ত চেহারা। মন্দ ভেবে, আড়াল ভেবে যতই তাকে এড়িয়ে যাওয়া না কেন, ঠিক এসে ভাব জমাবে তোমাকে সঙ্গে।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ৫ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০১৯ | ১৫৯৬ বার পঠিত
ভদ্রলোক হচ্ছেন কোলেতের লিগাল গার্ডিয়ান। কোলেতের যখন পনেরো, এরকম সময়ে ও বাড়ি থেকে হঠাৎ পালিয়ে যায়। সে যাই হোক, উনি বললেন যে, উনি যদি আমায় কোর্টে নিয়ে যান তাহলে দশ বছরের জেল আমার পাকা। জিগ্যেস করলেন, সেটা আমার জানা আছে কিনা। বললাম হ্যাঁ। আমার মনে হয় উনি বেশ অবাক হয়েছেন দেখে যে আমি নিজেকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করছি না। কিন্তু যেটা দেখে উনি সবথেকে বেশি অবাক হয়েছেন তা হল, আমরা দুজনেই লেখক। তুমি জানো লেখকদের প্রতি ফরাসিদের একটা বিরাট সম্মান আছে। একজন লেখক কখনও একটা ছিঁচকে গুন্ডা হতে পারে না। আমার মনে হয় উনি বোধহয় ভেবেছিলেন দুজন পাতি রেড ইন্ডিয়ান বা ব্ল্যাকমেলার দেখবেন এখানে এসে। কিন্তু তোমাকে দেখার পর ওর ভাবনা পালটাল। পরে আমাকে জিগ্যেস করছিল তুমি কী ধরনের বই লেখো, সেগুলোর মধ্যে কিছু অনুবাদ হয়েছে কিনা। আমি বলেছি তুমি একজন দার্শনিক, সেজন্যেই তোমার লেখা অনুবাদ করাটা বেশ কঠিন...
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থাঃ কিছু প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ : পুণ্যব্রত গুণ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ জুলাই ২০১৯ | ১৫৭৬ বার পঠিত
কি রকম বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে পশ্চিমবঙ্গে আজ? ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে বললেন, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে হবে, কিন্তু হয়তো তিন মাস পরে। অপারেশনে কোন ইমপ্ল্যান্ট লাগবে, সেই ইমপ্ল্যান্ট ডাক্তার বাইরে থেকে কেনাতে পারবেন না, এক মাস বাদে ইমপ্ল্যান্ট সরবরাহ হলে অপারেশন হবে। তবু বিনামূল্যে চিকিৎসা র সুবিধা পাচ্ছেন অনেক গরিব মানুষই।
আমার মূল ক্লিনিক হাওড়া জেলার উলুবেরিয়া মহকুমায়, রোগীরা প্রায় সবাই শ্রমজীবী মানুষ।১৯৯৫ থেকে ২০১৪ অব্দি আমার মাত্র দুজন রোগী হার্টের অপারেশন করাতে পেরেছিলেন, বাকিদের ওষুধ পত্র দিয়ে চালিয়ে যেতে হয়েছে। ২০১৪র পরে যাদের প্রয়োজন তাঁদের মেডিকেল কলেজে পাঠালে এনজিওপ্লাস্টি হয়েছে, জনা দুয়েকের বাইপাস অপারেশন ও।
অন্য ডাল : পিয়ালি বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৮৩৮ বার পঠিত
অলিগলি পেরিয়ে চলতে চলতে আলো ফুটতে লাগলো।দূর থেকে দেখি আবছা আলোয় কত শত নৌকার ভীড়।কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষন। এ বাজার সূর্য উঠলেই ভেঙে যায়।ডালের ভাসমান সবজি ক্ষেত এর সবজি নিয়ে আসেন কৃষকরা।সেই সবজি চলে যায় শ্রীনগরের বাজারে বাজারে হাত ফেরতা হয়ে।কোনো দরাদরি র হাঁকডাক নেই।হাল্কা ভোরের হাওয়ার বেচাকেনা, আগুপিছু নৌকার ভাসাভাসি,পোষালে এর বোঝা খালি,ওর খালি বোট ভরে যায়।
বিট,শালগম, ওলকপি,লাউ,পেঁয়াজ,টমাটো,পদ্মের নাল,কুমড়ো,আলু,রাঙালু,কত রকমের শাক।বিক্রি হচ্ছে গাছের চারাও।আমরা ছাড়া আর দু একজন বিদেশি ট্যুরিস্ট ক্যামেরা চোখে।জলবাজারে চলতি ট্যুরিস্টের ভীড় নেই। পাশ দিয়ে বেয়ে আসে টিনের তোরঙ্গ ভরা কুকিসের বোট।ওপরে লেখা " ডিলিইশাস"।আমন্ড, নারকেল,আখরোট এর পুর ভরা কুকি।ছিপছিপে এক নৌকো এগিয়ে আসে জাফরান বেচতে।না বললে দূরে সরে যায়।
ডোডিতালের পথে : ডোডিতালের পথে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১০২৭ বার পঠিত
উত্তরকাশী জেলায় ৩০২৪মিটার উচ্চতায় প্রাকৃতিক হ্রদ ডোডিতাল-এখান থেকেই জন্ম নিয়ে আশিগঙ্গা নদী মিশেছে গঙ্গাতে।পথ শুরু হয়েছে উত্তরকাশী থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের সঙ্গমচট্টি থেকে।আগোডা,বেবরা হয়ে ডোডিতাল।প্রথমদিন পেরোতে হবে ৮ কিলোমিটার,গন্তব্য বেবরা গ্রাম, এপথের শেষ গ্রাম।থাকা যায় আগোডাতেও,গ্রামের লোকের বাড়িতে হোম-স্টে প্রথায় অথবা নিজেদের তাঁবুতে।ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ গিয়েছে।প্রথম দু কিলোমিটার অবশ্য ‘পথ’ কিনা তা নিয়ে ঘোর সংশয় জাগে।গাইড জানালেন ২০১৩ সালের বৃষ্টি,ধ্বসে ভেঙ্গে গিয়েছে পথ।এখন তো সবে ২০১৮,সারানোর সময় হয়নি বোধহয়।মনে পড়ল –হৃষিকেশ থেকে শুরু করে সারা রাস্তা জুড়ে দেখে এসেছি কর্মকাণ্ড,চারধামের জন্য তৈরি হচ্ছে সুপ্রশস্ত রাজপথ পাহাড় কেটে, গাছ কেটে।সময় কোথায় গ্রামের পথের দিকে নজর দেওয়ার, হোক না সে গ্রামের একমাত্র পথ।সে যাক,দু কিলোমিটার পর ‘পথ’ চোখে পড়ল।
কাঁথা স্টিচ সপ্তাহ আর সুখময় দাদুর উন্মন কল্পনা : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১৩৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আজ ৬ই পৌষের নিদ্রাহীন রাতে, ৭ই পৌষ সকালের প্রার্থনায় অনুপস্থিতির জন্য তেমন মনখারাপ না হলেও, যে দেবতা অগ্নিতে, বনষ্পতিতে, চরাচরে ব্যপ্ত, তাঁর কাছে বা নিজেদের ই কাছে প্রশ্ন ঐ একটাই, যে প্রজন্ম আঘাত পেল, আঘাত পেয়েও স্বপ্ন দেখতে ভুললো না, আমরা ঠিক কতটা আত্মবিস্মৃত হলে , কতটা ক্ষমতালোভীর নৈকট্যের আকাংখায় নিমজ্জিত হলে, আজকে এই খানে এসে দাঁড়াতে পারি। উত্তরের খোঁজ টা সম্ভবত শুধু নিস্তব্ধ ভোরের একাকী স্তবে আটকে থাকবেনা, তাকে কলরব হতে হবে।
NRC -- বার্থ সার্টিফিকেট দেখাব কীকরে? : জয় গোস্বামী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : NRC/CAA | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ | ২৯৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
তৃতীয়ত, শুধু হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে বিভেদ তৈরি করছে তা নয়। এই যে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত যারা, তাদের প্রমাণপত্র দিতে হবে, এ প্রমাণপত্র কী করে দেব। বলা হচ্ছে, তুমি যে ওদেশ থেকে চলে এসেছ, তোমার উপরে নিপীড়ন হয়েছে, সেই নিপীড়নের প্রমাণ দেখাও। সে সেই নিপীড়নের প্রমাণ দেখাবে কি করে? আমি অন্য দেশে ছিলাম, সেখানে আমি সংখ্যালঘু ছিলাম, সেখানে আমার উপর নিপীড়ন হয়েছে, আমি চলে এসেছি এই দেশে, সেই নিপীড়নের প্রমাণ আমি দেখাব কীকরে? আবার আমি যে এই দেশে জন্মেছি, এবং এই দেশের নাগরিক, তারই বা প্রমাণ দেখাব কীকরে? আমার নিজেরই কি বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমি যদিও এদেশে জন্মেছি, আমারই কি বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমার তো বার্থ সার্টিফিকেট পাওয়া যাবেনা। আমি দেখাব কীকরে? তা এই ভাবে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনকে যেভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে, অপমানের মধ্যে, প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, এবং একই সঙ্গে বিদ্বেষের বীজ বপন করা হচ্ছে, তা চিন্তা করা যায়না।
গ্রেটা এবং আমি : অপরাজিতা সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ অক্টোবর ২০১৯ | ১২৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
মিছিল শেষে বাড়ি এলাম এই। পা দুটো ব্যথা করছে, গলা চিরে গেছে, হাততালি দিয়ে দিয়ে হাত দুটো লাল। মা দরজা খুলে দিয়ে একটু কটমট করে তাকাল, কিন্তু আমি হাত পা ধুয়েই রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের জল চাপিয়ে দেওয়ায় আর বেশি রাগ দেখাল না। টেবিলের একপাশে বসে মা খাতা দেখছে, আমি মাকে চা দিয়ে নিজের কাপটা নিয়ে অন্যদিকে বসলাম। সারাদিন ফোনটার দিকে তাকাই নি আজ, দুটো একটা ছবি তোলা ছাড়া। ছবিগুলো দেখলাম ভালোই হয়েছে, যদিও তোলার সময় থরথর করে কাঁপছিলাম রাগে। শেয়ার টেয়ার সেরে গ্রেটা থানবার্গের নতুন স্পিচটা দেখব বলে হেডফোন গুঁজছি কানে, মা একবার মুখ তুলে তাকাল। এটার মানে সবই তো হল, পড়তে কখন বসবে? আমিও চোখ নামিয়ে প্লে করলাম, মাত্র কয়েক মিনিটের স্পিচ, মা মুখ খোলার আগেই হয়ে যাবে। রাগে মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে গ্রেটার, এতটাও আগে দেখিনি কখনো।
এমপ্যাথি, র্যাশনাল কমপ্যাশন, কাঁটাতার, ছিন্নমূল, আজকের ছবিটবি : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ অক্টোবর ২০১৯ | ১৬৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
না, শিল্পী কখনই সাংবাদিক নন - নিত্যকার ঘটনার জার্নাল মেইনটেইন করা তাঁর অবশ্যপালনীয় দায় নয়। তাঁর মনের মধ্যে আসা দৃশ্যকল্পকে তিনি রঙতুলি দিয়ে ধরেন কাগজে, ক্যানভাসে। কিন্তু, সেই মনের মধ্যে আসা দৃশ্যকল্পে সমকাল, পারিপার্শ্বিক হানাহানি, মানুষের অসহায়তা, সমাজের গরিষ্ঠ অংশের অনিশ্চয়তা ঠাঁই পাবে না এতটুকু? ছবিতে শুধুই ফুটে উঠতে থাকবে শিল্পীর সমকালবিমুক্ত অন্তর্দর্শন (শিল্পীর অন্তর্জগত যদি সমকালীন সঙ্কটে আলোড়িত না হয়, তাহলে সেই অন্তর্দর্শন তো নিছক আত্মকেন্দ্রিকতা), কিম্বা স্বপ্নের নারী, অথবা দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতিদৃশ্য? এ কী তাঁদের অন্তর্জগতের যথার্থ প্রতিফলন? নাকি, তাঁরা সর্বার্থেই এমন অন্তঃসারশূন্য হয়েছেন, যে ক্লিশে বিষয় বাদ দিয়ে কিছুই আনতে পারেন না ক্যানভাসে?
না-তারকার পুজো -- লোকনবমী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
পুরুলিয়ার তেলকুপি এক ঘুমন্ত গ্রাম। পুজো নেই, ঢাকের বাদ্যি নেই, তবে মেলা কাশফুল। এখানে গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে গ্রামবাসী নিজে থেকেই বলতে থাকেন, এই হলো গে প্রাচীন তৈলকম্প গ্রাম, হাজার বছর আগে শিখর রাজবংশের রাজধানী। ঐ যে দেখছেন নদীগর্ভে অর্ধপ্রোথিত দেবালয় ওই হ'লো মা মহামায়ার মন্দির। ওই যে বেনাঘাসের বনে মাথা উঁচু ক'রে আরেকটি, ওটি ভৈরবের থান।
আমি জিতেন মাঝিকে বলি, কতো নেবে দাদা নৌকো ক'রে মহামায়ার মন্দিরে যেতে ? একথা জেনেই বলি যে আসলে এইগুলি সবই জৈন দেউল। কালের প্রকোপে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের বলশালী দেবতার চাপে কখন হিন্দুমন্দিরে পরিণত হয়েছে কেউ জানে না। নৌকা যখন চড়ায় ঠেকে, মন্দিরের ভেতর ঢুকে দেখি কোন দেবতা নেই, কিন্তু স্থানীয় অর্চনার ছাপ আছে তেল সিঁদূরে। জিতেন বলে এইরকম অনেক মন্দিরে পশুবলিও দেওয়া হয়।
জে এন ইউ তে ভয়াবহ হামলা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : NRC/CAA | ০৫ জানুয়ারি ২০২০ | ৯১২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৫
আজ মুখোশে মুখ ঢেকে বড় রড হাতে নিয়ে জেএনইউ হস্টেলে ঢুকেছে গুন্ডাবাহিনি, যা ছাত্রদের অভিযোগ অনুযায়ী এবিভিপির। রাষ্ট্রপোষিত গুন্ডা। ফি বাড়ানোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, এনার্সি, সিএএ-র বিরুদ্ধে ছাত্রদের একতা, শাহিনবাগ ধর্ণা,গোটা দেশে বিশাল আন্দোলন, দেশবিদেশে বেইজ্জত হবার অপমান, আর কতো সইবে ফ্যাসিস্ট সরকার।
জেএনইউয়ের অধ্যাপক, ছাত্র নির্বিশেষে আজ তাই রক্তাক্ত। নির্বাচিত ছাত্রসংসদ প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ সাংঘাতিকভাবে আহত। হাসপাতালে ভর্তি। অনেক সহযোদ্ধারও একই হাল। আহত অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন।
জোর করে জয়শ্রীরাম বলানো হচ্ছে, আর তাও নাকি হচ্ছে সংঘপরিবারঘনিষ্ঠ অধ্যাপকের অংুলিহেলনে।
দৃপ্তা ষড়ঙ্গীর জন্য - বন্ধুরা : উপমা নির্ঝরিণী, নির্নিমেষ ভট্টাচার্য,তনুজ সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জানুয়ারি ২০২০ | ১৯৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
দৃপ্তার কাছে অরাজনীতির বিলাসিতার সুযোগ ছিল। কিন্তু, ও শপিং মল, নেটফ্লিক্সের জীবনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরাসরি ময়দানে নেমেছে। যখন ওর কাছে রাস্তায় নামার সুযোগ ছিল না, তখন ও ক্রমাগত উচ্চমানের রাজনৈতিক মীম বানিয়েছে। আর আজ এই সঙ্কটকালে ও কম্পিউটারের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়েনি। জামিয়ায় আক্রমণের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেছে সেখানে।
আজ সকালে এবিভিপির গুণ্ডাবাহিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে হামলা করেছে। র আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন তারা আক্রমণ করেছিল, তখন চোখের সামনে দেখেছি সাংবাদিকের মাথা থেকে টুপ টুপ করে পড়া রক্তবিন্দু ভাঙা কাচের গুঁড়োয় মিশে যাচ্ছে, চারদিকে আগুন জ্বলছে এবং এ টি এমের ভিতরে একলা মেয়েকে ঘিরে ধরে সঙ্ঘীগণ অত্যাচার চালাচ্ছে। তারপর ঘটে গেছে জামিয়া, আলিগড়ের ঘটনা। রাষ্ট্রের নৃশংসতার মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর প্রদেশ ভয়াবহ অত্যাচার চলছে। আর কাশ্মীরের কথা তো আমরা জানতেই পারছি না। দেশজুড়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দৃপ্তা নিজেও হুমকি শুনেছে। এই হুমকিগুলো আমাদের ভয় কাটিয়ে দিতে সাহায্য করে। আজ বিকেল বেলা দৃপ্তা যখন বলল ওকে ঘিরে ধরে লাঠিপেটা করা হয়েছে, তখন আমার হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, বুঝতে পেরেছিলাম যে,
দক্ষিণাবর্ত : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ | ১৫২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
এর ঠিক দুদিন পরেই এসে পড়ল সেই অভিশপ্ত দিন, ৬ই ডিসেম্বর। তারপর সারা ভারত জুড়ে তাণ্ডব – এমন কি এই কলকাতা শহরেও আমার জীবনের সেই প্রথম কার্ফিউ দেখা। সুমনের বসে আঁকো তখনও বেরোয়নি – মগজে কারফিউ শব্দবন্ধ তখনো অচেনা, শহরে কারফিউ চিনে ফেললাম। কিন্তু দাঙ্গা হল না পশ্চিমবঙ্গে। রাজাবাজার, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস, কোথাও না। আস্তে আস্তে আবার স্বাভাবিক হয়ে এল শহর – কিন্তু মনের কালো ছায়াটা সরছিল না কিছুতেই। উত্তর ভারত জুড়ে চলমান অশান্তি – আদবানীর গ্রেপ্তারী, খবর আসছিল সবই, যদিও খবরের কাগজই ছিল আমাদের প্রধান ভরসা – আর ডিডি ওয়ান এর সংবাদ। আর এসবের মধ্যেই ১৯ তারীখে এসে পড়ল বাবা, মা, বোন – কুচবিহার থেকে। তিনদিন গজল্লা পাড়ার পরে ২১শে সন্ধেবেলা ট্যাক্সি ধরে সোজা হাওড়া - রাতে ম্যাড্রাস মেল সাড়ে দশটায়। স্লিপার থ্রি-টায়ার। থ্রি-এসি তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে, এসি কামরা বিরাট বড়লোকেদের ব্যাপার।
মরফিন : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ জানুয়ারি ২০২০ | ২১২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
সকাল আরো কাছ এগিয়ে আসে, বিছানায় যাওয়া জরুরী, কাল সকালে মিটিং আছে। ঘড়িটা ড্রয়ার থেকে টেনে বের করতে গিয়ে চোখ পড়ে যায় সেই মরফিন প্যাচ্-গুলোর প্যাকেটে। এখনো রয়ে গ্যাছে এরা? বেশ কয়েকটা প্যাচের প্যাক দেখলাম, হাত দিয়ে সরিয়ে আরো পেলাম মরফিন ট্যাবলেটও। মনে পড়ে গেল সেই ক্যানাল রোডের দোকান থেকে কেনা – সাথের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটা এগিয়ে দিয়েছিলাম, সেটা শুধু মরফিনেরই জন্য। ওরা আবেগহীন আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেয় যন্ত্রণা – এই ডাক্তারের হাতের লেখা খুব সুন্দর, কালি পেনে লিখেছে। আমিও পড়ে নিতে পারি, ডাক্তার লিখে দিয়েছে চাইলে মাস দুয়েকের জন্য স্টক করে নিতে পারি মরফিন প্যাচ এবং ট্যাবলেট। ওরা প্যাচ এনে দেখায়, আমার চোখ চলে যায় ছোট ছোট ট্যাবলেটে। কেমন প্রশান্তি এনে দেবে এরা?
বিবাহ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২৭৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
ঠিক তখনই মেঘ ফেটে যায় দুভাগে। ঝলমলিয়ে চাঁদ ওঠে আর দৃশ্যমান হয় সারা জগত, কাঁসাইয়ের ধারের প্রাচীন মন্দির, সাদা ফেনার হুল্লোড়, ধানের ক্ষেত আর বাতাসে মাথা নাড়ানো গাছের দল। কালো পর্দা সরিয়ে হঠাতই আবির্ভূত হয় এইসব আর রহস্যময় শতাব্দী প্রাচীন রূপের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চরাচর। কানু বৌকে ডাকতে ভুলে যায়, হয়তো ভুলেই থাকতো যদি না তার চোখে পড়তো নদীর মাঝখানে সাদা চরের কালো পলিথিন কুঁড়ের সামনে কার যেন আবছা ছায়া। প্রথমেই সে ভাবলো মাছচোর। বাবা ভৈঁরোনাথের দিব্বি, আজ ওকে ধরবই, এ কথা ভাবতেই লাঠিটা ঘরে রেখে এসেছে বলে দারুণ দুঃখ হলো কানুর। তবু হেই হেই থাম থাম চিৎকারে সাজোয়ান পা-জোড়া ছুটে চললো এক পাথর থেকে আর এক পাথরে, পড়তে গিয়ে টাল সামলে নিলো কতোবার।
রবীন মণ্ডল - ফিরে দেখা : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৬৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আর দেখুন, রবীন মণ্ডল তো কলকাতার লোক কেনে নি। কিনেছে দিল্লী আর মুম্বাইয়ের বায়াররা। লাস্ট ফোর-ফাইভ ইয়ার্স, দে আর বায়িং টু বিল্ড আপ দেয়ার স্টক। এরপর কী হবে? মার্কেটে যা পড়ে আছে, ওরাই কিনে নেবে - দরকার হলে, বেশী দামে হলেও। দেন, দে উইল ক্রিয়েট আ ডিমান্ড, আ ক্রাইসিস - প্রাইস চড়চড় করে বাড়বে। দিস হ্যাপেনড উইথ সুজা অ্যান্ড টেক মাই ওয়ার্ডস, দ্য সেম ইজ গোয়িং টু হ্যাপেন উইথ রবীন মণ্ডল।
বেশ কথা। শাঁসালো কালেক্টর কদ্দূর সহমত হলেন, বলতে পারি না। আমার শুধু মনে পড়ে গেল, রবীন মণ্ডল চেয়েছিলেন, তাঁর ছবি দেখে দর্শক যেন দর্পণের মুখোমুখি হন। কে সেই দর্শক? দর্পণের মুখোমুখি হয়ে ডিজাইনার হেয়ার-সালোঁ থেকে ছেঁটে আসা চুলটুকু গুছিয়ে নেওয়া বাদে সেই ধনী মানুষটি আর কী করবেন?
মনোনকে এক্সপেরিমেন্ট : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৫৪০ বার পঠিত
মনোনকে হোক বা যাই হোক ওপরে যেতেই হবে, ব্যাগ নিতে হবে, আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করত হবে। ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। ওপরের ল্যান্ডিংএ পৌঁছনোর আগেই মনে হল সবাই সরে গেল, সামনের ঘরের দরজাটা আলতো করে বন্ধ হয়ে গেল। ঘরে ঢুকে তাতামির ওপর শুয়ে পড়লাম, ঘড়িতে সকাল ছটার এলার্ম দিয়ে রাখলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার এত আতঙ্কের মধ্যেও ঘুমিয়েও পড়লাম। সকাল হল, বাইরে বের হয়ে গ্রামের একটি লোককেও দেখলাম না। বাস ঠিক সাতটায় এল। গতকালেরই চালক, সে যেন আমাকে দেখে আশ্চর্য হল না, হেসে বলল, ‘সুপ্রভাত’।
বুড়ো ঝিনঝিনতলা : সায়ন্তন চৌধুরী
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২০৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আজকের সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের আলো অনেক বাদামি মিহি ধুলো-ধুলো হয়ে একদিন ছিল পুরোনো পৃথিবীর গায়ে, যখন এই এলাকায় কয়লার একটা খনি বেরিয়ে পড়ে, আর সেকারণেই গুরুত্বপূর্ণ যেদুটো মূল রেললাইন তার মাত্র কয়েকবছর আগেই পাতা হয়েছিল পুবে বকুলপুর আর পশ্চিমে গড়ানডাঙা দিয়ে, ব্রিটিশ সাহেবরা তাদেরকে জুড়ে দেয় একটা মিটারগেজ লাইনের সাহায্যে এবং ঝিনঝিনতলার উত্তরদিকে নদীর তীরে একটা বাংলোও বানানো হয় তখন। কিন্তু এখানকার কয়লা এত নিম্নমানের যে কিছুদিনের মধ্যেই সেই হুজুগ একদম ফুরিয়ে যায়, পরে স্মরণযোগ্য কালের ভেতর আর মাত্র একবারই ঐ মিটারগেজ লাইনটা ব্যবহার করা হয়েছিল যখন একটা ৪-৬-০ ইঞ্জিনে চড়ে ম্যাকফার্লঙ সাহেব এসে পৌঁছান এই বুড়ো ঝিনঝিনতলায়; অবশ্য তখনও বুড়ো ঝিনঝিনতলার নাম ঝিনঝিনতলা হয়নি, সে বুড়োও হয়নি। কোনো একদিন যখন বিকেলের হাওয়া খেতে বুড়ো ঝিনঝিনতলার কানাসাদা মেঘগুলো নদীর ওপর গিয়ে জমা হয়েছিল দলে দলে, সেরকম সময়ে সাহেব এসে পৌঁছেছিলেন এই অক্ষাংশে, দ্রাঘিমার পাড়ে, যেন এইসব পথে, পথের বাতাসে উত্তরসাগরের লবণাক্ত স্বাদ নিয়ে এলেন তিনি, আর নদীর ধারের বাংলোটা তখন জায়গায় জায়গায় একটু জীর্ণ হয়ে গেলেও দিব্যি বাসযোগ্য, সেইখানের নির্জনতা ম্যাকফার্লঙ সাহেবকে মুগ্ধ করল।
ও য়া টা র : অহনা মল্লিক
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৩৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
ছুটতে ছুটতেই দারিয়ানাসু লুকোনো দরজার দূরত্ব মনে মনে মেপে নেয়, মনে মনেই একবার হাসে। নিশ্চিন্ত হবার হাসি, পেছনে ছোটা ঘোড়সওয়ারদের বোকা বানানোর হাসি। আরও পিছনে হৈ-হৈ করতে থাকা লোকগুলোকে এখন দেখা যাচ্ছে না, টিলার আড়ালে হারিয়ে গেছে। ঘোড়সওয়ারদেরও দারিয়ানাসু আগেই বোকা বানিয়ে দিতে পারত, হরিণের মতো ছুটতে পারে সে, কিন্তু পিঠের দামি বোঝাটা ফেলে দিতে চায়নি। অবশ্য তাতে কিছু ক্ষতি হয় নি তার, আর বিশবার শ্বাস নিতে-না-নিতেই সে পৌঁছে যাবে লুকোনো গোল দরজার পাশে। ব্যাস, তারপর একটা ছোট্ট লাফ, তারপর দু’পলকে দরজার ফাঁকটুকু বুজে যাবে। হাঃ হাঃ হাঃ, ঘোড়সওয়ারগুলো বুঝতেই পারবে না কোথায় ভ্যানিস হল তাদের শিকার। ছাউনিতে গিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদবে অন্যদের কাছে, বলবে ভুতুড়ে মানুষের কথা, যাদের দেখা যায় কিন্তু ধরা যায় না।
শিল্প শিল্পী দর্শক এবং : হিরণ মিত্রের মুখোমুখি বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ছবিছাব্বা | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৬৬৬ বার পঠিত
আমরা আগে জানতাম যে শিল্পী প্রতিভা নিয়ে জন্মায়, আজকের দিনের কথা হচ্ছে যে, শিল্পী তৈরি করা হয়, শিল্পী কিছু নিয়ে জন্মায় না। শিল্পীকে বানিয়ে তোলা হয়। একটা দল, দলের কতগুলি ভাবনা, শৃঙ্খলা আছে, সেই শৃঙ্খলা দিয়ে শিল্পীকে তৈরি করা হয়। An artist been made, been born না, সেই ‘মেড’ যেহেতু তখন তার নিশ্চয় কোনো শৃঙ্খলা থাকবে, কার্যকারণ থাকবে, সেই কার্যকারণ দিয়ে শিল্পী তৈরি করা হয়।
এক্সপেরিমেন্ট : ফ্রেডরিক ব্রাউন - অনুবাদ দেবাশিস ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৯৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এটা কিন্তু প্রথম টাইম মেশিন, হ্যাঁ মশায় ।” প্রোফেসর জনসন বেশ একটু গর্বের সঙ্গে তাঁর দুই সহকর্মীকে বললেন, “মডেলটা একটু ছোট করেই বানালাম, যদিও । তিন পাউন্ড পাঁচ আউন্সের বেশি ভারি জিনিসের ওপর এ পরীক্ষা চলবে না, আর অতীত বা ভবিষ্যতে বারো মিনিটের বেশি দূরে পাঠানোও যাবে না । তবে, এতে সত্যিই কাজ হয় ।” ছোট্ট জিনিসটা দেখতে অনেকটা ডাকঘরের সেই চিঠি ওজন করার যন্ত্রের মতন, তফাত শুধু এই যে, এক্ষেত্রে ওজন করার পাটাতনের নিচের অংশে খান দুই ডায়াল আছে । প্রোফেসর জনসন ধাতুর তৈরি একটা ছোট্ট ঘনক হাতে তুলে নিলেন । “একটা পেতলের ঘনক, এর ওজন এক পাউন্ড এবং দুই দশমিক তিন আউন্স । আমাদের পরীক্ষাটা হবে এর ওপরেই, প্রথমে আমি একে পাঁচ মিনিট ভবিষ্যতে পাঠিয়ে দেখাব ।”
কিংবদন্তীর আড়ালে যা কিছু থাকতে পারে : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৮১৪ বার পঠিত
কখনও পূর্ণচাঁদের আলোয়, কখনও সন্ধ্যার প্রায়ান্ধকারে একটা ঘোড়া ছুটে যায়। ঘোড়ার পিঠে দীর্ঘকায় এক পুরুষ। তার হাতে বন্দুক, আর তার কোলে নাকি এক সুন্দরী নারী বসে থাকে। ঘোড়াছুটেযাওয়া ওই পথের দুপাশ জুড়ে ছড়িয়ে যায় জমাটবাঁধা অসংখ্য ধূলিপিন্ড। প্রতিটি খন্ডের ভেতরে গল্প শোনা যায়। সেই গল্প কাঁধে তুলে নেয় কোনও পাগল কিংবা প্রেমিক। লোকজীবনের হাটেমাঠে, সিদলমাখা গরম ভাতের সঙ্গে, পালাগানের আসরে সেই গল্প শোনে জাপান ঘোষ, পূর্ণিমা বর্মন, ইছুপ মন্ডল।
যারা আস্তাবলে আগুন ধরিয়েছিল : সায়ন্তন চৌধুরী
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২০৭৭ বার পঠিত
এই বাড়ির সামনের গলিটা থেকে বেরিয়ে বড়োরাস্তা ধরে একটু এগোলে রাস্তাটা আড়াআড়িভাবে আরেকটা রাস্তা কেটে দিয়ে বেরিয়ে গেছে, ঐ চৌমাথা জায়গাটা একটু বাজার মত, চায়ের দোকান, মুদিখানার দোকান, সেলুন, ডাক্তারখানা — এইসব আছে, ডাক্তারখানাটার পাশে 'সুহাসিনী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের' লাগোয়া একটা ছোট্টো কালী মন্দির; দুবেলা ঐখানে গিয়ে একটু ফুল-বাতাসা দিয়ে আসা — ব্যাস, এইটুকুই জয়প্রকাশের কাজ সারাদিনে, এইকাজটাই তিনি গত পঞ্চাশ বছর ধরে করে আসছেন। এছাড়া আর কোনো পার্থিব ব্যাপারের সঙ্গে তাঁর কোনো সংস্রব নেই, লোকেও মাঝেসাঝে যদি পুজোটুজো দিতে আসে তো এল, এছাড়া তাঁকে কেউ পাত্তা দেয়না। পুজোও কমে গেছে মন্দিরটায়, নমো নমো করে টিকে আছে; মন্দিরটার পিছনে একটা বটগাছ মাথার ওপর ঝাঁকড়ে রয়েছে ছাতার মতো, ফলে মন্দিরটার সারা গায়ে শ্যাওলা, অযত্নের ছাপ, দেয়ালগুলোর চুনখসে ইঁটের পাঁজরা বেরিয়ে পড়েছে এখানে-সেখানে, মফস্বল শহরের অন্যান্য বড়ো বড়ো চমৎকার মন্দিরগুলোর তুলনায় নেহাতই একটা উপদ্রব মাত্র। লোকের আর দোষ কি, খামখা পুজো দিতে আসবে কেন? তবু ঐখানটাতেই সারাজীবন জয়প্রকাশ পুরোহিত হয়ে রয়ে গেলেন, ঐখানটাতেই ঘন্টা নেড়ে টুং টুং করে গেলেন — ছেলের কথাটা মনে পড়ল তাঁর — লোকের কারোর মুরোদ বেশি হয়, কারোর কম, কিন্তু তা বলে তোমার মত নিমুরুদে বাপ যদি একপিস দেখেছি মাইরি!
প্রেম কী কবি তুমি কি জানো? : ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১২২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বাঙালি মাত্র বিদেশে গেলেও দেশের খাবার খোঁজে। দিল্লী স্টেশনের বাইরে বাংলা সাইনবোর্ড যারা দেখেছেন তারা জানেন। মালিক হতে পারে রাজস্থানি, দুটো বাঙালিকে কাজে রেখে দিব্বি দু পয়সা করে খাচ্ছে। আমিও এতে দোষের কিছু দেখিনা। কথাতেই বলে, আপ রুচি খানা। যা পছন্দ হবে খাও, কে কি বলবে হ্যা ! তো, ওই গাইডগিরি করার সময়, কানে কানে ফিসফিস করে সাদেক মিয়ার হোটেলের (মানে ওই, রেস্টুরেন্ট, আমরা ওটাকেই হোটেল বলি) কথা বলে দিতুম। এই সাদেক মিয়ার কথা আগেও বলেছি, এনার মাইয়ারে আমি বাংলা পড়ানোর নাম করে গল্পগুজব করতুম হফতায় দুদিন। টুরিস্টদের বলতুম, দেশের কথা মনে পড়ে যাবে, ফেরার টিকেট দু দিন এগিয়ে আনতে হবে, এতো ভালো এর খাবার।
সিঙ্গুর মামলা ও আমাদের প্রাপ্তি : সরসিজ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৪৪৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬২
কিন্তু, অধিগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটাই যে বেআইনি ছিল, এই ব্যাপারে উনি কোনো সন্দেহ রাখেননি। ওনার মতে, যেহেতু আগেই জমি চিহ্নিত হয়েছিল, ও ক্যাবিনেট মিটিঙে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছিল, সেহেতু চাষিদের অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে থাকা অসন্তোষ, অভিযোগের বা আপত্তির, তৎকালীন ল্যান্ড-কালেক্টর কোনো বিচার করেননি, আর, মেকানিকালি উপেক্ষা করেছেন, বা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আগে থেকেই নিয়ে ফেলা সিদ্ধান্তের ওপর সিলমোহর ফেলতে একটা আই-ওয়াশ বা ছলনার মাধ্যমে চাষিদের ও জমির মালিকদের অভিযোগের বিবেচনা করা হয়েছিল, যার অন্তিম পরিণতি, সেই অভিযোগগুলির উচিত বিবেচনা না হওয়া। কমপেনসেশন বা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যেভাবে ঠিক হয়েছে সে নিয়েও উনি প্রশ্ন তুলেছেন। অতএব, ওনার মতে, জমি অধিগ্রহণ জনস্বার্থে হয়ে থাকলেও, অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (অষ্টম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৫৩৫ বার পঠিত
যে সময়কার কথা, তখন না ছিলো মাইন, না ছিলো রাষ্ট্র, না ছিলো এ-কে ৪৭। এইসবের অনেক অনেক আগে, কুয়াশাঢাকা কোন গণোনোত্তর অতীতে, থাকত সাত ভাই। সাত ভাই বড় হতে থাকল সেই গাঁয়ের বনে ঢাকা শান্ত ছায়ায়। বড় ছয় ভাই ছিলো দামাল দুরন্ত অরণ্যসন্তান। ছোটোটি ধির-স্থির, শান্ত-শিষ্ট, জ্ঞানগম্ভীর। তার গভীর কাজলচোখে ছায়া পড়ে অরণ্যের, আকাশের ও মননের আয়নায় ফুটে ওঠে প্রজ্ঞাঋদ্ধ তারারাজি। আর তার রক্তে রক্তে বইতো গানের তরঙ্গলহরী বুঝি। এক সাথে বারো রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারত সে। বনের গাছপালা, পশুপাখি, পোকামাকড়েরাও বুঝি শান্ত হয়ে শুনতো সেই বাজনা, ভেসে যেতো সুরের প্রবাহে। বাকি ছয়ভাই খেত-খামারের কাজ করতে লাগল দিনভর, বয়ঃক্রমে ঘর বাঁধলো, বিয়ে করল। পড়ে রইলো লিঙ্গো। অথচ তার গান-বাজনায় এতই মুগ্ধ ছিলো তার দাদাবৌদিরা, যে তাকে ঘরের কাজ, বনের ফল-কাঠ-বীজ-শিকার জোগাড়, খেতি-বাড়ির কাজ, এমনকি রান্না-বান্নার কাজ করার জন্য বকুনি দিতে মন সইতো না কারুরই। সে এ’সবের ধার ধারতো না, শুধুই গাইতো আর বাজাতো। ক্রমে ক্রমে তিক্ত হয়ে উঠলো তার ছয় দাদার গৃহী মন।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (নবম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩৩০ বার পঠিত
এই সব পড়ে নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে যুবকবৃন্দ হাজির হল পাশের গ্রামের গাইতার কাছে। তার আশীর্বাদ নিয়ে হাজির হল সেই পাশের গ্রামের ঘোটুলে – এইবার চলল সারারাত দেদার গানের পালা। সেই গ্রামের ঘোটুলের লেয়া, মানে যুবতীরা-রা গানের মাধ্যমে হেঁয়ালী কৌতুকের প্রশ্নশেলে বিঁধতে থাকলো লেয়োর, মানে পাশের গ্রামের ঘোটুলের যুবকদের, আর সেই লেয়োরেরা গানে গানেই জবাব দিতে লাগল, উত্তর প্রত্যুত্তরে জমে উঠলে রাতের মৌতাত, রঙ্গকৌতুকের ফোয়ারা। এই গানের লড়াইয়ের নাম ‘দ্রার’। নাচে গানে সকাল হল। এ’বার বেরোনোর পালা। নাচিয়ে গাইয়ের দল আবার চলল গাইতার বাড়ির উঠোনে – এইবারের নাচের নাম ‘দেউর তেররুহানা’। নর্তকেরা একে অপরের কাঁধে চড়ে বানিয়ে তুললো মানব-মীনার – তারিফ ও আশীর্বাদ কুড়োলো গ্রামবাসীর, গাইতার। এইবার সাদরে খাওয়ানো হবে নাচিয়ে-গাইয়েদের, তারপর আবার সেই গ্রামের গাইতা-পত্নীর থেকে ‘শেষা’ বিদাই গ্রহণের পালা।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (দশম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩১৮ বার পঠিত
গোণ্ডি ভাষায় বিয়ে মানে মারমীং। বস্তারের গোঁড় জনজাতির মধ্যে নানান ধরণে বিয়ে প্রচলিত। বিভিন্ন দ্রাবিড়-গোষ্ঠির মত এইখানেই মামা-ভাগ্নীর বিয়ে বহুলপ্রচলিত। মানা হয়, মামার ঔরসে প্রথম সন্তান ধারণের অধিকার ভাগ্নীর। অবশ্যই, বিবাহোত্তর। পিসতুতো ভাই বোনেদের বিয়েও এইখানে সামাজিক স্বীকৃতি ও সমাদর পেয়েছে। এই এণ্ডোগ্যামি-কে ‘সমাজে দুধ ফেরানো’ ধরা হয়। অবশ্য সমস্ত বিয়েই যে এইরকম হয় না নয়। আপন আপন জীবনসঙ্গী চয়ন করে নেওয়ার সম্পুর্ণ সামাজিক অধিকার রয়েছে বস্তারের যুবক-যুবতীদের। বিভিন্ন ধরণের বিয়ে হলেও, প্রথাগত ভাবে মূল রূপরেখা একই রকমের। প্রথমে বরপক্ষ কন্যা পক্ষের বাড়ি যায় তত্ত্ব নিয়ে (কোনো কোনো প্রথায় এর উল্টোটাও হয়)। তত্ত্বে থাকে ফল, গুড়, মহুয়া, সালফি ইত্যাদি। সন্ধ্যে বেলা দুই পরিবারের মানুষেরা আর গ্রামের জ্যেষ্ঠরা বসে, খানা-পিনা চলে দেদার, সূচিত হয় বিবাহবন্ধনের প্রথম ধাপ। এর পর আরো দুইতিনবার এইভাবে তত্ত্ব নিয়ে যাওয়ার পর দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায়। তারপর বিয়ে। বস্তারের বিভিন্ন ধরণের বিয়ের মধ্যে প্রধান ধরণগুলো নিয়ে একটু জেনেশিখে নেওয়া যাক। অবক্ষয়ের মুখে এই জানাশেখাগুলোই তো সম্বল।
‘প্রেম ও পাগল’ : অ্যাভয়েডেড এরিয়া : মৌপিয়া মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
নবারুণ ভট্টাচার্যের লেখার সঙ্গে সহবাস আমার কাছে সাধারণত খুব স্বস্তিদায়ক হয় না। ঠিক যেরকম চ্যাপলিনের ছবি দেখাটা – মানে ঐ মজা, হাসি, ব্যঙ্গ, কৌতুক, খিস্তি খাস্তার আড়ালে থাকা যে বাস্তবের চাবুকটা আছড়ান এঁরা, সেটার শব্দ যাঁরা শুনতে পান… তাদের পক্ষে এই পাঠগুলো খুব সহজ হয় কিনা জানিনা… কিন্তু আমার অস্বস্তি হয়। তারপরে অনেকক্ষণ বা অনেকদিন নানা ভাবে এই আখ্যানগুলোর চরিত্ররা তাদের নানা ঘটনা নিয়ে ঘুরে ফিরে যাতায়াত করে মগজে, মনে… অস্বস্তি হয়।
নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতা : শাশ্বতী মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
অথচ সেই মুহূর্তে বাস্তব তার ‘ইন্টারোগেশন’ নিয়ে তাঁর সমস্ত ইচ্ছেকে ধূসরিত করছে, না মানলেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার কলঙ্ক লাগানো শহীদদের প্রতি বর্বরোচিত আক্রমণের নগ্নতায় বিপন্নতা দেখা দিচ্ছে। কবিতাকে সশস্ত্র করছেন আদিবাসীর বল্লম, চর দখলের সড়কি, বর্শা, তীক্ষ শর, বন্দুক ও কুরকি দিয়ে। আবার কয়লাখনির মিথেন অন্ধকারে হিরের মতো জুলন্ত চোখের শাসানির যে ভয় শাসককে দেখালেন তা দেশকালের সীমানার বাইরে চির প্রতিস্পর্ধী এক কবির। নবারুণ স্থির থাকবেন কী করে, তিনি যে দেখেছেন তরাই থেকে সুন্দরবনের সীমা সারা রাত্রি কান্নার পর শুষ্ক দাহ্য হয়ে আছে। (এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না)
বস্তার-দুঃশাসনীয় (দ্বিতীয় পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৪ এপ্রিল ২০১৬ | ৩৫৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
গোটা বস্তার সম্ভাগের যা আয়তন, তার ৫১% জমি তুলে দেওয়া হয়েছে মাইনিং, পাওয়ার-প্ল্যাণ্ট সহ বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য। এর মধ্যে ভিলাই স্টীল প্ল্যাণ্টের খাঁই মারাত্মক। ঐখানে কাজ করা এক বন্ধু জানিয়েছিলো যে প্ল্যাণ্টের যন্ত্রপাতির অবস্থা তথৈবচ। অথচ, ভারতের গৌরব এই বি-এস-পি, নবরত্নের এক রত্ন সে, তাকে তো উৎপাদন করে চলতেই হবে। তাই, আউটপুট বাড়াতে, ইনপুট বাড়াতেই হবে। এ’দিকে ছত্তিসগড়ের রাজনন্দগাঁও জেলাস্থ দল্লী-রাজারার মাইন শেষ হওয়ার মুখে। অতএব, বস্তার সম্ভাগের কাঁকের ও নারায়ণপুর জেলা জুড়ে রাওঘাটে আকরিক লোহার নতুন মাইন বানাও নতুন, দান্তেওয়াড়া জেলার খ্যাতনামা বৈলাডিলার চলতি মাইনের প্রোডাকশান ক্যাপাসিটি ২৯ মিলিয়ন টন থেকে ২০২০র মধ্যে ১০০ মিলিয়ন টন কর, রাজনন্দগাঁওর মহামায়া অঞ্চলে ও বস্তার-সংলগ্ন বালোদ জেলার দুলকিতে নতুন মাইন বানাও, প্রভৃতি উদ্যোগ। শুধুই কি ভিলাই স্টীল প্ল্যাণ্ট? আয়রণ ওর মাইনের নাম করে নারায়ণপূরের অবুজমাড়ে, কাঁকেরের চারগাঁ নামের দুইটি গ্রামে এসে গিয়েছে নিক্কো-জয়সওয়াল কোম্পানী। দান্তেওয়াড়ার বাচেলি ও কিরণ্ডৌলে তৈরী হচ্ছে আয়রণ ওর বেনেফ্যাকশান প্ল্যাণ্ট। ইতিমধ্যে বস্তারেই তৈরী হচ্ছে তিনটি স্টীল প্ল্যাণ্ট – ডিলমিলি, নগরনাড় ও লোহাণ্ডিগরে। প্রথমটি আবার ‘আল্ট্রা মেগা’। কাঁকেরের আমাবেড়া অঞ্চলে তৈরী হচ্ছে বক্সাইট মাইন।
আউশভিৎস : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ এপ্রিল ২০১৬ | ৪৭৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৮
প্রতি সন্ধেবেলা যখনই অফিসফেরতা বাসটা ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে ডানদিকে বাঁক নেয় ত্রিদিবের আজকাল পেটের ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে ভয় পাকিয়ে উঠতে থাকে। তার মনে হয় কলকাতার সভ্যতা থেকে এবার সে আদিম অন্ধকারের রাজ্যে প্রবেশ করছে।
তার নতুন কেনা ফ্ল্যাট হাঁসপুকুর ছাড়িয়ে এক অনন্ত নিঃসীম মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে নিঃঝুম হয়ে। চারদিকে ঘাপটি মেরে থাকা অন্ধকার লাফিয়ে পড়তে চায় সুযোগ পেলেই। সেই অন্ধকারকে টর্চের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা করে দিয়ে দুই পাশের মজা পুকুরের মধ্যেকার সরু রাস্তা দিয়ে পাঁক কাদা আর সাপখোপ এড়িয়ে সন্তপর্ণে মেন গেটের দিকে এগিয়ে যেতে হয় । এই নতুন ফ্ল্যাটের পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে গণ্ডগ্রাম। মরা ঝোপ, বুনো জংগল, ক্ষেতের জমিতে সিমেন্ট ফেলে তার ওপর মাথা তুলছে প্লাস্টিক কারখানা, খোলা মাঠের এখানে ওখানে শ্বেতীর মতন জমাট বেঁধে টুকরো টুকরো বাড়িঘর, কলাবন, অবৈধ খাটাল। কলকাতার দিকে কিছুটা এগোলে ঠাকুরপুকুর বাজার। কিন্তু এইদিকটায় বড়ই নির্জন। সন্ধ্যে হয়ে গেলে শুধু টিমটিম করে মোবাইল রিচার্জের দোকান, চায়ের গুমটি অথবা ম্যাড়ম্যাড়ে মুদীর দোকানের আলো জ্বলে। মাঝে মাঝে রাস্তা কাঁপিয়ে বাস বা ট্রেকার চলে যায় গুম গুম করে। এই ধু ধু প্রকৃতির মধ্যে রিয়েল এস্টেট বানাবার কথা সমাদ্দার ছাড়া আর কেউ ভাবতেই পারত না।
আঁধার ভাল : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৪ এপ্রিল ২০১৬ | ২৪২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
“হোক ঝঞ্ঝা” শুরু হয়েছিল একটা স্পেসিফিক ঘটনা থেকে। বয়েজ হোস্টেলের কাছে একটা ফেস্টিভ্যালের সময়ে একটি মেয়ে মলেস্টেড হয়েছিল। উপাচার্য থেকে শুরু করে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমপ্লেন্টস কমিটি কেউ সঠিক স্টেপ নেয়নি। কোন অ্যাকশনই হয়নি প্রথমটা। পরে, যখন কমপ্লেন্টস কমিটি বসল, অধ্যাপিকা সঙ্ঘমিত্রা সরকার, ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের হেড, কমিটির চেয়ার পার্সন মেয়েটির বাড়ি গিয়ে বলে বসলেন, তুমি সেদিন কী জামাকাপড় পরে ছিলে? তুমি কি মদ্যপান করেছিলে? ওয়্যার ইউ আন্ডার এনি কাইন্ড অফ ড্রাগস?
মেয়েটি, মেয়েটির পরিবার অপমানিত বোধ করে। ভিক্টিমের চরিত্র হনন করে, ভিক্টিম অ্যাবিউজ করে, অপরাধের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া পুরনো ট্যাকটিক্স। কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রদের কেরিয়ার বাঁচাতেই , কমপ্লেন্টস কমিটি এভাবে মেয়েটির ওপর কিছুটা দায় চাপিয়ে একটা হালকাফুলকা অভিযোগ লিখিয়ে অল্প শাস্তির মধ্যে দিয়ে ছেলেগুলোকে ছাড় দিয়ে দিতে চাইছে। ছাত্রছাত্রীরা এটাই বুঝল। আর ফেটে পড়ল হোক ঝঞ্ঝা।
চোখ আর নদীর জল : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ এপ্রিল ২০১৬ | ১২৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শ্রীচরণেষু বাবা, তোমার তৃষ্ণা মিটিয়াছে...? কপোতাক্ষর ধারের মানুষ তুমি, আর আছে বেতনা, রূপসা, ভৈরব, চিত্রা, মধুমতী, তখন সেই সব নদ নদীতে কত জল, অথচ তুমি নাকি এক ফোটা জল পাওনি। কী আর দুঃখের কথা লিখি তোমাকে, এখন নাকি ওই সব নদীতে আর জল নেই। আমাদের গাঙের স্টিমার বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু বালি ওড়ে কপোতাক্ষর বুক থেকে। যত শুনি বুক হিম হয়ে যায়। আকন্ঠ তৃষ্ণা নিয়ে মানুষ ঘুরছে নদীর পাড়ে পাড়ে। বাবা তোমার তৃষ্ণা কি মিটেছিল সেই উত্তরের দেশের তিস্তা, করতোয়া, যমুনা, ডাহুক, তালমা, চাওয়াই......এই সমস্ত নদীর জলে। সেই সব নদী কি জল দেয়?
বস্তার-দুঃশাসনীয় (তৃতীয় পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১২ এপ্রিল ২০১৬ | ১৫১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
সংবিধানে যে সকল এলাকা পঞ্চম তফসিলভুক্ত – মানে যে সমস্ত জায়গার জনসংখ্যার গরিষ্ঠাংশ বাসিন্দা আদিবাসী, সেই সকল এলাকায় পঞ্চায়েতি রাজ জারি করা হয়েছে ১৯৯৬ সালে প্রণীত পঞ্চায়েৎ একস্টেনশান টু শ্যেড্যুল্ড এরিয়াস (পেসা) অ্যাক্ট মাধ্যমে। উক্ত কেন্দ্রীয় আইন, ২০০৬ সালের দ্য শ্যেড্যুল্ড ট্রাইবস অ্যাণ্ড আদার ট্রেডিশিনাল ফরেস্ট ডোয়েলার্স রেকগনিশান অব ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট (এফ-আর-এ) এবং রাজ্য ছত্তিসগড়ে প্রযোজ্য ছত্তিসগড় পঞ্চায়েতি রাজ অধিনিয়ম ১৯৯৩ অনুসারে কোনো আরণ্যক গ্রামের মানুষের ব্যাবহারযোগ্য ব্যক্তিগত জমি মানে ভিটেমাটি, খেতি-আবাদী এবং গ্রামের নিস্তারী, মানে সেখানকার দেবদেবীদের থান, উৎসবের জায়গা, শ্মশান, গোচারণভূমি – সমস্ত কিছু যদি ‘বিকাশ’-এর ধ্বজিত উদ্দেশে হাপিস করতে হয়, তাহলে প্রভাবিত সমস্ত গ্রামের গ্রাম সভার মাধ্যমে রেসল্যুশান পাস করতে হবে, গ্রামবাসীদের গরিষ্ঠাংশের সম্মতি প্রয়োজন। এছাড়াও, উক্ত এফ-আর-এ আইন অনুসারে আরণ্যক গ্রামের গ্রামবাসীরদের নানাবিধ অধিকার-জ্ঞাপক পাট্টা দেওয়া হয় – যেমন বসবাসের অধিকার, খেতি-আবাদির অধিকার, খাদ্য হিসেবে আহৃত ফল-মূল-ব্যাঙের ছাতা, পানীয় হিসেবে আহৃত মহুয়া, সালফি প্রভৃতি, জীবিকার উদ্দ্যেশ্যে আহৃত তেন্দু পাতা, গালা, ধুপ বানানোর রেসিন-সমূহের অধিকার, পরম্পরা-নির্দিষ্ট স্থানে পুজো, উৎসব অন্ত্যেষ্টাদি সকল রিচুয়াল-উদযাপনের অধিকার, অরণ্য ও জীব-বৈচিত্র বাঁচিয়ে রাখার অধিকার ইত্যাদি। এই পাট্টার আবেদন-ও করা হয় উক্ত গ্রাম-সভা মারফৎ।
খুদা মেহ্ফুজ রখ্খে : বিক্রম পাকড়াশী
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১২ এপ্রিল ২০১৬ | ১০২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মুশকিলটা এইখানে, যে এই ধরণের কাজে গণতান্ত্রিকভাবে চাট্টি আলোচনা, বা কথা বলাটা গ্রাহ্য নয়। পাবলিক বলতেই পারে, এইসবই তারা করে আসছে শতশত বছর ধরে, কিন্তু বললেই শুনতে হবে, এরকম ধাষ্টামো করার সাহস ও শিক্ষা আমাদের থাকবে কেন? ছাগুলে পাবলিকের পাগুলে কথা নাহয় বাদই দেওয়া হলো, কিন্তু এমনকি আমাদের সিভিল ইÏনিয়ার ভাইবোনেরা ও উচ্চপদাসীন বিশেষজ্ঞরাই বা খবরের কাগজে - টিভিতে-মায় ফেসবুকে নিজেদের মতামত দেখে পুলকিত হয়ে ওঠার নাবালক লোভে বিশু থেকে শিশু হয়ে উঠছে আর আমরা সেই দেখে ধিনিকেষ্ট নাচ জুড়েছি। এভাবে হয় না। এজলাসে এই মোকদ্দমা উঠলে এই এতগুলি পণ্ডিতের রায় শুধু এক্তিয়ারবহির্ভূতই নয়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসাবে গণ্য হতে পারে। ফলতঃ, আমোদগেঁড়ে জনতা নিজেদের মধ্যে প্রতর্ক করুক। কিস্যু আসে যায় না। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ সম্পূর্ণ ঠিক কথা বলে থাকলেও না। সোসাল মিডিয়া আর খবরের কাগজে চ্যানেলে বসে এসব হয় না। তাই অন্ততঃ সাংবাদিক ভাইবোনদাদাদিদিবেয়াইবোনাই সকলকেই করজোড়ে অনুরোধ, এই বিশেষজ্ঞ মতামতটা দেওয়া একটু তামাদি রাখুন না। অনুভব করছি, তাই বলছি।
ম্যাক্সিমিনি উওমেন্স বুটিক : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ৩০ এপ্রিল ২০১৬ | ২৯৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৯
ক্রিস্টাল হার্বাল ক্লিনিকে গিয়ে বলতে, গোটা ছয়েক ওষুধ লিখে দিল । সে ওষুধ আবার ওদের কাছ থেকেই কিনতে হয় । বিল হল চব্বিশ টাকা । সব ক্যানসেল করে একটা ট্যাবলেটের শিশি নিয়ে এলাম । রাত্তিরে দুটো বড়ি, ঘুমোবার আগে । সে কী কেলো বড়দা! কিছুতেই কিছু হয়না । ইংরিজির বদলে গড়িয়াহাট থেকে দুটো বাংলা সিডি আনা করালাম । মাতৃভাষায় যদি কিছু উপকার হয় । তাও হল না । ব্যবসাটা কোনওক্রমে করতে হয় তাই করা । লেখা ফেখা মাথায় উঠেছে । পুরো বনবনাইটিস । শেষে বড়দা, আপনার এই দোকানের উল্টোদিকে ওষুধ পাওয়া গেল । আপনার দোকান, যা কিনা আমায় ভাড়ায় দেওয়া - টিপটপ মিটশপ । প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম দোকানটার আয়পয় ভালো । কিন্তু চার-চারটে বছর বসছি, এতদিনে একবারও এ বিষয়টা চোখে পড়েনি কেন কে জানে ! ফারুখ যখন রোজ দোকান বন্ধ করে, এই সাড়ে ন’টা নাগাদ, রাস্তার উল্টো ফুটে ম্যাক্সিমিনি বুটিকের মামনিরা তাদের ম্যানিকুইনগুলোকে জামা ছাড়ায় । রোগা রোগা ম্যানিকুইন, তাদের চ্যাপ্টানো নিতম্ব, বুকের কাছে সামান্য ঢিবি ।
ছায়ামারীচ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৬ মে ২০১৬ | ৯৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
- সাল সত্তরের শুরুও হতে পারে, আবার ওয়াইটুকেও হতে পারে। তুমি কোনটা চাও? তুমি পরে আছো খুব হালকা নীলচে জামা, ছাই রঙের ট্রাউজার। ফুলশার্ট, পাড়ার দর্জি হারুদা বানিয়েছে। সন দুহাজার হলে জামাটা গোঁজা। চশমা সত্তর হলে নেই, নয়ত আছে। তোমার হাইট পাঁচ ফুট আট, গায়ের রং প্রায় ফরসা, গাল একটু বসা।
কথা না বাড়িয়ে সোমনাথ হাঁটছিলো। গরম হাওয়া বইছে রাশবিহারী অ্যাভেনিউ বরাবর, ট্রামলাইন পেরিয়ে সে হাওয়া ঘুপচি দোকানগুলোয় ঝাপটা মারছিলো।
- ক্যালিফোর্নিয়া গ্যাছেন? ওখানে এমনি হাওয়া দেয় গরমে
ডিমনিটাইজেশনঃ সরকারের ধান্দাটা কী? : সোমেন বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ নভেম্বর ২০১৬ | ১২৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কালো টাকা উদ্ধার করা হবে কোথা থেকে? মানে কালো টাকাদের সাকিন কোথায়?
মূলত তিন জায়গায়। এক, বিদেশে। সুইস ব্যাঙ্ক জাতীয় জায়গায়। ডলার বা ইউরোরূপেণ সংস্থিতা।
দুই, এক্ষেত্রে সোনা, ফ্ল্যাট, জমি ইত্যাদি বহুরূপেণ সংস্থিতা। মানে বেহিসেবি টাকাগুলো এইসবে কনভার্ট করে নেওয়া হয় বা হয়েছে।
তিন, বাড়িতে, বা লোকে যেমন বলছে কমোডে, বালিশের ওয়াড়ে নোট হিসেবেই। আরও সুবিধার জন্য ধরে নিই পাঁচশো-হাজারের নোটরূপে বিরাজিত।
বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য কেবলমাত্র তিন নম্বরটা। নিন্দুকেরা বলছে, শতাংশের বিচারে এই তিন নম্বরটা নেহাতই নগণ্য। কত? মাত্র ৬ শতাংশ!! আচ্ছা, ছেড়ে দিন। আমি নিন্দুকের কথা বাদই দিই। কালো টাকার এক্স্যাক্ট স্ট্যাটিস্টিক্সটা যেহেতু ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাই বেকার কুযুক্তির অবতারণা হতে পারে।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (চতুর্থ ভাগ) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৫ জুন ২০১৬ | ১৫৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
এই সব তথাকথিত টাউনে যারা হোমড়া চোমড়া, তাদের মোটমাট প্রত্যেকেই অনাদিবাসী, গরিষ্ঠাংশের তেল—বনোপজ-লকড়ির ব্যবসা। (নুনটা জঙ্গল থেকে লুঠ করা ব্যবসায়িক-ভাবে অপ্রয়োজনীয়, কারণ আপাতত বিশ্ব-বাজার ছেয়ে আছে সৈন্ধবলবণে, জঙ্গলের বিভিন্ন গ্রামে থাকা আদিবাসীদেরও মুখিয়ে থাকতে হয় সমুদ্র থেকে তোলা নুন কবে বাজারে আসবে, তার উপরে। বস্তারের ধারেকাছে তো সমুদ্র নেই। বস্তারিয়া কৌম-প্রাকৃত ফুড সিস্টেমে ইতিহাসের কতটা স্রোত-ঢেউ-বাতাসিয়া-লুপের ফলে, মলয়াদ্রি বা সহয়াদ্রির উপকুলবর্তী জঙ্গল থেকে আসা মানুষেরা সৈন্ধব লবণ নিয়ে এসেছিলো, অথবা কত শতাব্দী-সহস্রাব্দের সৈন্ধব লবণের খাদ্য-প্রাকৃতিক বা ফুড-কালচারাল হেজিমনির বশবর্তী হয়ে রক-সল্ট ছেড়ে সৈন্ধব লবণ দিতে শুরু করল রান্নায়, আন্দাজ দুষ্কর।) তবে এই সমস্ত হোমড়া চোমড়ারা কেউই বস্তার তো ধূস্তরি মায়া, এক বা ম্যাক্সিমাম দুই জেনারেশন আগে কেউই হালের ‘ছত্তিসগড়’ এলাকাতেও থাকতোও না, থাকত মূলতঃ উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা বা মহারাষ্ট্রতে, অথবা নর্মদা নদীর উত্তর উপকুলের টেবল-টপ-সমতলময় ডেকানিয় উত্তর-মধ্যপ্রদেশে, মানে যেইখানে গোণ্ডওয়ানাল্যাণ্ড মিশে গ্যালো অ্যাংগোরাল্যাণ্ড, সেইখানে।
প্রিয় মণিদার স্মরণে এব্রাহাম (আবু) : এব্রাহাম মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুন ২০১৬ | ১৩৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
মণিদাকে আমার মাঝে মাঝে মনে হত living Encyclopedia, এক অসামান্য গুরু, যার সংস্পর্শে আসা ভাগ্যের কথা। সেই সময় আমি প্রায়ই মণিদার সঙ্গে Beethoven এর বিখ্যাত Trio for violin, viola & cello শুনতাম। একদিন শোনার পর হঠাৎ মণিদা guitar নিয়ে একটা সুর ভাঁজতে লাগল আর আমি তা শুনে manuscript এ সুরটা scoring করতে লাগলাম। সৃষ্টি হল string orchestra র পরিবেশনায় সেই অবিস্মরণীয় মহীনের ঘোড়াগুলির গান 'ভালবাসি জোৎস্নায়' এর অসামান্য prelude, মণিদার magic voice, বুলাদার হাতের ছোঁয়ায় অনবদ্য guitar bass, তার সাথে বিশুর drumming-এর perfect sense of tempo, যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের বলে আমি বিশ্বাস করি। ইতিমধ্য “সংবিগ্ন পাখিকুল ও কলকাতা” বিষয়ক নিয়ে আমাদের struggle চলছে। লোকজন বলতে শুরু করেছে আমরা নাকি উন্মাদের দল।
কানন দেবী : কল্লোল লাহিড়ি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৮ আগস্ট ২০১৬ | ১৪৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ভয় পেয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটা। অনেক লোকের মাঝে তাকে সকাল থেকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এই পাড়াতে, এইরকম বাড়িতে আগে কোনোদিন আসেনি সে। তার বাড়ির লোকেরাও কোনোদিন আসেনি। তাকে আসতে দিতেও মন চায়নি তাদের। প্রায় জোর করেই চলে এসেছে ছোট্ট মেয়েটি। কারণ সে জানে তার ওপর এবার সংসারের অনেকটা দায়িত্ত্ব। কিছুদিন আগেই বাবা মারা গেছেন। মাকে সঙ্গে নিয়ে তাকে উঠে আসতে হয়েছে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে সারাদিন, সারা রাত অমানুষিক পরিশ্রম করেও বাড়ির লোকের মন পায়নি তারা। চলে আসতে হয়েছে সেই অপমানকর আশ্রয় থেকেও। মায়ের সেই দুঃখ ছোট্ট মেয়েটি ভুলতে পারেনি কোনোদিন। ভুলতে পারেনি পড়শিদের সেই কানা-ঘুষো। আসলেই যাকে বাবা বলে ডাকতো, আদতে সেই কি ছিল তার বাবা? নাকি মায়ের অন্য কেউ...? লজ্জায় রাঙা হয়ে যেত ছোট্ট সেই মেয়েটার মুখ। দারিদ্র্য ছিল। কিন্তু দারিদ্র্যের সাথে সম্মানবোধ ছিল খুব তীব্র। ছোট্ট মেয়েটা মনে মনে পণ করেছিল আর যাইহোক দিদি, মা, এই সংসারটাকে সে কোনোদিন ভেসে যেতে দেবে না। সবাই যাতে দুবেলা খাবার পায়, পড়ার কাপড় পায়, মাথা গোঁজার জায়গা পায়, সন্মানের সাথে জীবন নির্বাহ করতে পারে তার জন্য ছোট্ট মেয়েটা নিজের সমস্ত শখ, আহ্লাদ, নিজের ছোটবেলাটা বিসর্জন দিয়ে একলা একলা প্রতীক্ষা করছে। অনেক আলো, অনেক যন্ত্রপাতি আর বেশ কিছু রঙ-চঙে মানুষের মাঝে। মনে হচ্ছে আজ তার অগ্নি পরীক্ষা। হ্যাঁ, এই ছোট্ট বয়সেই।
কৌশিক গাঙ্গুলির ‘সিনেমাওয়ালা’: একটি ব্যতিক্রমী ছবি : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৮ আগস্ট ২০১৬ | ২৯৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৫
বিগত এক দশকের বাংলা ছবি (মানে, কাগজের ভাষায়, তথাকথিত "মননশীল" বাংলা ছবি) দেখলে একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, বাংলা সিনেমার সাথে আন্তর্জাতিক সিনেমার সম্পর্ক, যা সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক একদা স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, এখন প্রায় পূর্ণতঃ ছিন্ন হয়েছে। বাংলা সিনেমা, অধুনা, তার নির্মাণে ও মেজাজে, পরিপূর্ণ মধ্যবিত্ততার একটি পঙ্কিল আবর্তে পাক খেতে খেতে, একমনে, নিজেই নিজেকে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছে। বিশ্বসিনেমার ভাষা যতই বদলে যাক না কেন, যতই জটিল হয়ে উঠুক না কেন তার অন্তর্গত আখ্যানের বুনন, বা সেই আখ্যানের সঙ্গে বহির্বাস্তবের লেনদেন ও টানাপোড়েন, বাংলা ছবি, তবুও, দৃশ্যের মাধ্যমে একটি নিটোল, নাটকীয় অথচ অন্তঃসারশূন্য গপ্প বলাকেই তার পবিত্র কর্তব্য ঠাউরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে ব্যস্ত থাকবে। এমনকী, ছবির ভাষা নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে, শুধু যদি এটুকুই প্রত্যাশা করি যে সেই গল্প, আদতে, মধ্যবিত্তের কোন গূঢ় আস্তিত্বিক সংকট বা জটিল স্ববিরোধকে দর্শকের সামনে উপস্থাপিত করবে, তাহলেও আশাভঙ্গের শিকার হতে হয়। কেননা, মধ্যবিত্তের হাঁচি-কাশি-টিকটিকি-প্রেম-অপ্রেম-আমাশার গল্পকে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, সভ্যতার সংকট হিসেবে উপস্থাপিত করাই, এখন তার নতুন দস্তুর। এবং এই অন্তঃসারশূন্যতাকে আড়াল করার জন্যে রয়েছে আরোপিত কেতা, যা, বস্তুতপক্ষে, ষাট-সত্তরের দশকের আভাঁ-গার্দ ছবির থেকে ধার করা, পরবর্তীতে মিউজিক ভিডিওর জমানায় ব্যবহৃত হতে-হতে বাসি মাংসে পরিণত হওয়া, ক্যামেরা বা সম্পাদনার কৌশলমাত্র। বিশ্বসিনেমার কথা বাদ দিলেও, কেবল যদি হিন্দি বা মারাঠী সমান্তরাল ছবির কথাই ধরি, তাহলেও বোঝা যায়, বাংলা সিনেমা ঠিক কোন গর্তে গিয়ে মুখ লুকিয়েছে।
নবারুণ ভট্টাচার্য বিষয়ে আমার মনে হওয়া কথাগুলি : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ আগস্ট ২০১৬ | ২৫২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
কিন্তু দ্বিতীয় ও সচেতন পাঠে আমি দেখতে পাই এই সব ক্রিয়াকর্ম। ঠিক যেভাবে ছোটবেলায় আস্বাদন করে, প্রায় চেখে চেখে চেটে চেটে পড়া উপেন্দ্রকিশোরের টুনটুনির গল্প-এর বাঘের বাচ্চাদের মেরে কেটে ঝুলিয়ে রেখে তেলের মধ্যে টপ টপ রক্ত পড়ার ছ্যাঁক ছোঁক আওয়াজ ও বাইরে বসে বাঘ বাবাজির সে আওয়াজে পিঠে ভাজা হচ্ছে ভাবার ঘটনা, আজকের আমার সচেতন দৃষ্টিতে, পরিবেশপ্রীতি ও পশুপ্রীতির দৃষ্টিতে বিষম, অসহ্য, পলিটিকালি ইনকারেক্ট, গ্রহণীয় নয়। ঠিক যেভাবে প্রায় অধিকাংশ রসালো প্রাচীন কাহিনি আজ হয় পাগল, নয় শারীরিকভাবে অক্ষম, নয় কোন না কোন ভাবে শোষিত মানুষের অ-সংবেদনশীল বিবরণের কারণে পরিত্যাজ্য হয়ে যাচ্ছে।
ইতরের দেশে বসে শরণ নিচ্ছি : চৈতালি চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ আগস্ট ২০১৬ | ১৫৯৯ বার পঠিত
তা-ও তো, তখনও হারবার্ট পড়িনি। ফ্যাতাড়ুদের বৃত্তান্ত তো নয়-ই! হারবার্ট পড়তে দিল আমারই হাতিবাগান পাড়ার কোনও এক বন্ধু। পড়লাম আর শিউরে-শিউরে উঠলাম। এই বেস্-এর ওপর দাঁড়িয়ে, আমি লিখব কী করে? কোন কনভিকশন নিয়ে ? লিখব, আর ভুশ করে ডুবে যাব তো ছাইগাদায়। ব্যবহৃত হব, আধো-অন্ধকার, পুরনো বাড়ির কলতলায় বাসন-মাজার আঁশটে কাজে। বাড়িগুলি প্রোমোটারের হাতে চলে গেলে, কাঁসা-পিতল বাতিল হয়ে গেলে, সে-কাজেও লাগব না আর !
শতবর্ষে নরেন্দ্রনাথ : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ মার্চ ২০১৬ | ২০৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
হেডমাস্টার গল্পের কথা মনে করি। দেশভাগের পর হিন্দু ছাত্ররা ওপার থেকে এপারে চলে আসায় পূর্ববঙ্গের সাগরপুর এম,ই, ইস্কুলের হেড মাস্টার মশায়ের ছাত্র কমে গিয়েছিল খুব। দেশভাগের পর তিনি ঠিক করেছিলেন ওপার থেকে আসবেন না, কিন্তু আসতে বাধ্য হন, ইস্কুল চলছিল না। যা ছাত্র ছিল, তাদের সকলের কাছ থেকে বেতন আদায় হয় না। বুড়ো হয়েছেন। কলকাতায় এসে তাঁর দিন চলবে কী করে পরিবার নিয়ে? পঞ্চাশোর্ধ হেড মাস্টার মশায় সওদাগরী অফিসে চাকরি খুঁজতে বেরিয়েছেন। গ্রামের ছাত্রর অফিসে এসে তার কাছেই চাকরি প্রার্থনা করছেন। একটি মেয়ের বিয়ে হয়নি, তিনটি নাবালক পুত্রও আছে। কত বড় সংসার, কী করে চলবে? হেড মাস্টার মশায়কে তার ব্যাঙ্কে ক্লার্কের চাকরি দিয়েছিল ছাত্র নিরুপম। হেড মাস্টার মশায় খুব ভালো ইংরিজি পড়াতেন। তাঁর ছাত্ররা কৃতী। তিনি তাঁর এতকালের অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। গল্পটি এত হৃদয় গ্রাহ্য, এত মানবিক যে পড়তে পড়তে স্তম্ভিত হয়ে থাকতে হয়। পার্টিশন আমাদের জীবনকে কত রকম ভাবে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিল তা নরেন্দ্রনাথের গল্পে ধরা যায়। মানুষের বেঁচে থাকার ভিতরেও যে নির্মমতা তৈরি হয়েছিল, তা তাঁকে না পড়লে ধরা যায় না। নরেন্দ্রনাথের অধিকাংশ গল্প জীবিকার কথা বলেছে। পার্টিশন জীবিকা বদল করে দিয়েছিল। মেয়েদের ঘর থেকে বাইরে এনেছিল জীবিকার খোঁজে (অবতরনিকা )।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (প্রথম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৭ মার্চ ২০১৬ | ১৭৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
একই পদ্ধতিতে, নকশাল-দমনের উদ্যেশ্যে সন ২০০৬তে সালওয়া জুডুম কম্যাণ্ডো-বাহিনী গঠিত হয় বস্তার সম্ভাগে।এই বাহিনীর পুরোভাগে ছিলেন ভা-ক-পা বিতাড়িত কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্র কর্মা। বাহিনীর সদস্য হল ছোটো ছোটো আদিবাসী কিশোরেরা। তাদের হাতে বন্দুক ধরিয়ে দেওয়া হতে লাগল এবং দুই সপ্তাহের ট্রেণিং দেওয়া হতে লাগল, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হল বস্তারের জংলা গাঁ-গঞ্জে যখন তখন হানা দেওয়ার, যত খুশি লুট, খুন, ধর্ষণ ও গৃহদাহ সংঘটিত করার। গ্রাম-কে-গ্রাম জ্বলে ছাই হয়ে গেলো। তটস্ত আদিবাসীরা পাহাড়ি জঙ্গল ছেড়ে নেমে এলো পাকা-রাস্তা তথা হাইওয়ের দুইধারে খাঁচার মত করে তৈরী ‘ক্যাম্প’-গুলিতে। পাশাপাশি ‘কোয়া’-উপজাতির আদিবাসী কিশোর যুবকদের দিয়ে তৈরী হল কোয়া-কম্যাণ্ডো। একই ধরণের কার্য্যকলাপের উদ্দ্যেশ্যে। এই সবের জন্য টাকাপয়সা সহ সমস্ত সুবন্দোবস্ত করে দিলো সরকার।
এই সব ‘স্থানীয় কম্যাণ্ডো’-বাহিনীর পাশাপাশি জোরকদমে ‘মিলিটারাইসেশান’। স্থানীয় থানাগুলির হাতে চলে এল প্রচুর অর্থ, ক্ষমতা ও ক্ষমতার উৎস তথা ভয়াল অস্ত্রশস্ত্র। বস্তারজুড়ে প্রায় সমস্ত থানা পরিণত হল কাঁটাতার পাঁচিলে ঘেরা ক্যাম্পে। এবং একের পর এক আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হতে থাকল অঞ্চলে, অজস্র গ্রামকে ঘিরে ফেললো সি-আর-পি-এফ, বি-এস-এফ, কোব্রা ব্যাটেলিয়ন নাগা ব্যাটেলিয়নের ক্যাম্প। শক্ত নজরদারীতে ঘেরবন্দী হয়ে গেলো বস্তারের মানুষেরা। তার পাশাপাশি অন্ধ্রের কুখ্যাত নকশাল-দমক গোষ্ঠী ‘গ্রেহাঊণ্ড’ এসে করে যেতে লাগল একের পর এক এনকাউণ্টার। ২০০৮-এ যখন অপারেশান গ্রীণ হাণ্ট আরম্ভ হয় তখন থেকে আজ অর্থাৎ ২৬শে মার্চ ২০১৬ অবধি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হয়েছে বস্তারে।
ইশরাত জাহানঃ তথ্যের খোঁজে (তৃতীয় পর্ব) : অচল সিকি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ১২০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
বৃন্দা গ্রোভার সম্পূর্ণ কথোপকথনটিকে নস্যাৎ করে জানিয়েছেন, এই উক্তি কোর্টে টিকবে না। প্রমাণ হিসেবে এটাকে কোনওভাবেই দেখা যেতে পারে না। কোর্টের নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একজন “উইটনেস” হিসেবে কোর্টের সামনে তখনই নিজেকে ডিপোজ করতে পারে, যখন সে ঘটনাটা ঘটতে শুনেছে, বা দেখেছে বা পুরো ঘটনা বা তার অংশবিশেষ নিজে করেছে। একজন জাস্ট শুনল অন্য দুটো লোক কিছু বলছে, সেইটা সে কোর্টে বললে সেটা উইটনেস হিসেবে কোর্টে গৃহীত হয় না। হেডলি যতক্ষণ জানিয়েছে সে নিজে লশকরের সাথে যুক্ত ছিল, এগে একাধিকবার মুম্বাইতে এসেছিল, রেকি করে গেছিল, সে লশকর অপারেটিভ আর আইএসআইয়ের থেকে এত টাকা পেত, সেটা মুম্বাইয়ের অমুক ব্যাঙ্কের অমুক ব্র্যাঞ্চ থেকে সে তুলত, ততক্ষণ সেগুলো সাক্ষ্যপ্রমাণ। কারণ সে নিজে থেকেছে, নিজে টাকা পেয়েছে, নিজে এসেছে, নিজে গেছে, কিন্তু ইশরাতের কেসে সে কিছুই জানত না – শুধু জেনেছে দুজনের কথোপকথন পাশ থেকে শুনে। হিয়ারসে এভিডেন্স-কে এভিডেন্স হিসেবে গ্রাহ্য করে না আদালত। আর, পাবলিক প্রসিকিউটর কি অমিতাভ বচ্চন নাকি, যে উনি কেবিসির হট সীটে বসে কম্পিটিটরকে তিনটে অপশন দিয়ে তার মধ্যে একটা পছন্দ করে নিতে বলছেন? এইভাবে জেরা হয় নাকি?
রোজাভা বিপ্লব আপনাকে স্বাগত জানায় : দেবব্রত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ | ১৫৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কুর্দ ভাসায় ‘রোজাভা’ শব্দটির অর্থ ‘পশ্চিম’। টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল,কুর্দিস্তানের পশ্চিমে,সিরিয়ার উত্তরে এবং তুরস্কের সীমানায় আবদুল্লা অচালানের ‘ডেমোক্র্যাটিক কনফেডেরালিস্ম’ বা রাষ্ট্র বিহীন গণতন্ত্রের তত্বের ভিত্তিতে রোজাভা গড়ে তুলছে এক অভূতপূর্ব গণতন্ত্রের মডেল। আইসিস মানেই যখন চরম পরধর্ম অসুহস্নিতা তখন রোজাভা সব ধর্মের মানুষের জন্য এক খোলা বাতাস। আইসিস মানেই যখন নারী গৃহবন্দী, বোরখা বন্দী,ইতিহাস বিহীন,রাজনীতি বিহীন এক সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। ইসলামিক স্টেট এ বিধর্মী হলে যখন গন ধর্ষণ আইনসম্মত,যৌনদাসী নিয়মানুগ তখন রোজাভায় বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ এবং বলপূর্বক বিবাহ আইনত নিসিদ্ধ্ব। আইসিস মানেই যখন চরম মধ্যযুগীয় পুরুষ আধিপত্য তখন রোজাভা প্রতিটি সংস্থায় তা রাজনৈতিক পার্টিই হোক বা মিউনিসিপ্যালিটি ৪০% নারী কোটা বাধ্যতামূলক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ভেঙ্গে দিচ্ছে হাজারো বছরের পুরুষ প্রাধান্য। প্রতিটি সংস্থা রোজাভা পরিচালনা করছেন যৌথ নেতৃত্বের ভিত্তিতে। কো প্রেসিডেন্ট, কো মেয়র, কো চেয়ারম্যান - এক জন পুরুষ হলে অন্যজন মহিলা হতে বাধ্য। মহিলারা অংশ নিচ্ছেন সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আমরা কিছুদিন যাবত যে সমস্ত মহিলা যোদ্ধাদের ছবি দেখছি তারা সবাই এই রোজাভার মহিলা যোদ্ধাবাহিনী YPJ এর সদস্য।
কল্পনাতীত বর্বরতা এবং "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" : সি জে পলিক্রনিউ, অনুবাদঃ অরিজিৎ হাজরা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ | ১৭৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
তুর্কী চিরকালই ন্যাটোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার ভূকৌশলগত গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। গোটা নব্বই এর দশক জুড়ে তুর্কী যখন তার কুর্দিশ জনগণের উপর ভয়ঙ্কর হামলা চালাতে থাকে, তখন থেকেই তুর্কী (ইসরায়েল এবং মিশর বাদ দিয়ে, এরা অন্য গোত্রভুক্ত) মার্কিন অস্ত্রের সব থেকে বড়ো ক্রেতা। এই সম্পর্ক কিছু কিছু সময়ে চাপের মুখে এসেছে, যেমন ২০০৩ সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে, তুরস্ক সরকার তাতে যোগ দিতে অসম্মত হয়, যাতে তুরস্কের ৯৫% মানুষের সমর্থনও ছিল। গণতন্ত্রের আসল অর্থটা কী সেটা বুঝতে না পারার জন্যে তুরস্ককে তীব্র তিরস্কৃত ধিক্কার জানানো হয়। তুরস্ক মিলিটারি তুরস্ক সরকারের এমন এক ঘৃণ্য অবস্থান মেনে নেওয়ার জন্য, পল অয়ালভিতস, যাকে কিনা সংবাদ মাধ্যম বুশ সরকারের “idealist in chief” বলে অভিহিত করেছিল, তিনি তীব্র ভর্ৎসনা করেন এবং এর জন্য তাদের ক্ষমাপ্রার্থী হওয়া উচিত, তাঁর এও দাবি ছিল। এইরকম গুটিকয়েক ঘটনা বাদ দিলে এই দুই দেশের সম্পর্ক থেকেছে বন্ধুত্বের। সম্প্রতি তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইসিসকে কিভাবে মোকাবিলা করা হবে সে ব্যাপারে এক চুক্তিতে পৌঁছয়ঃ (আইসিস কে আক্রমণের বিনিময়ে, মার্কিনীদের) তুর্কী সিরিয়ার কাছকাছি তার যুদ্ধঘাঁটিগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহারের করতে দেবে, প্রতিদানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইসিসকে আক্রমণ করবে – যদিও তা না করে শেষত তারা কুর্দিশ শত্রুদের আক্রমণ করে।
আমিই কি হারবার্ট নাকি? : চৈতী রহমান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ জুলাই ২০১৬ | ১১৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আজন্ম পরিচিত কিন্তু ছুঁয়েও না দ্যাখা তিস্তাপারের বৃত্তান্ত, দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন, খোয়াবনামা যেভাবে আলমারিতে এসেছিল, হারবার্ট সেভাবে আসেনি। হারবার্টকে আনা হয়েছিল নিজের হাতে, সচেতনে। নতুন শিখতে থাকা পাখিপড়া তত্ত্বজ্ঞানের বুদবুদ মাথায় নিয়ে,অন্যের পরামর্শে হারবার্ট পড়তে বসা হয়েছিল আট বছর আগে। উদ্দেশ্য নিয়ে হারবার্ট পড়ার কারণ হলো, এতে নাকি মূলধারার বাইরের প্রথাবিরোধী প্রতিষ্ঠানবিরোধী উত্তরাধুনিক নানা জ্ঞানের সমাহার রয়েছে। তাছাড়া, নবারুণের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ লাইনটি সংসদ থেকে ফুটপাথ, ডান থেকে বাম, সবাই যে যার সুবিধামতন যেভাবে মুখস্থ আওড়ায় তাতে মনে হয়েছিল সে বেশ কেওকেটা লেখক হয়ে থাকবে! নাম দেখে অনুবাদ বই বলে ভুল করা মহাজ্ঞানী ‘আমি’ উপন্যাসের কোত্থাও কোনো তত্ত্বের উল্লেখ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। বড় বড় তত্ত্ব শেখার উদ্দেশ্য নিয়ে বসে, আনকোরা অনভিজ্ঞ মাথা আর বাছা বাছা মজার খাবার খাওয়া জিবে সোয়াদ নিলে কোন বই থেকে কতখানিই বা শেখা যায়!
ব্ল্যাঙ্ক ভার্স ও মুদ্রণযন্ত্রের সম্পর্ক : শারদ্বত মান্না
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ জুলাই ২০১৬ | ২৬৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
মনের ভাবপ্রকাশের জন্য মানুষ যা সৃষ্টি করেছে নিজের বাগ্যন্ত্রের মাধ্যমে, তা-ই হয়ে উঠেছে সাহিত্য। নিজের মনের ভাব অপরে জানুক, মনে রাখুক, তার ভাবপ্রকাশেও যেন আমারই ভাবের ছায়া পড়ে – এই আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। হয়তো ব্যক্তিত্বের উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গেই এই স্বকীয়তার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে মানব মননে। তখন থেকেই ভাষা গঠনের পর পরই ভাব প্রকাশের বাহ্যিক, প্রকাশিত রূপকে সংরক্ষণের চেষ্টাও শুরু, হয়তো। এই সংরক্ষণ করতে গিয়ে মানুষ বুঝল। সেইসব প্রকাশ্য রূপই সে মনে রাখতে পারছে, যেগুলি সে ঝোঁক দিয়ে বলছে, বলছে, ছন্দে, বলছে অন্ত্যমিলে। মৌখিক সাহিত্যের পরম্পরায় আমরা এর প্রমাণ পাই। এরই সঙ্গে আসছে ভাষার লিখিত রূপ, লিপি। কিন্তু মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে সেই লিপি, বা ভাষার লেখ্য রূপ খুব কম সংখ্যক মানুষেরই আয়ত্ত ছিল। লিপিকরের সংখ্যাও ছিল অপ্রতুল। সংখ্যাগুরু মানুষ তাই সাহিত্যরস আস্বাদন করতে নির্ভর করেছেন মৌখিক সাহিত্যের ওপরেই।
খোয়াবনামার ভাষ্যকার : পরিমল ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ জুলাই ২০১৬ | ১৩৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
অবশ্য তাতে তাঁর কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। কারণ তিনি নিশ্চিতভাবেই জানেন, আজ থেকে কয়েক দশক পরে যখন পূর্ব কলকাতার এই জলাভুমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, যখন এই শহরটাও আর বাসযোগ্য থাকবেনা, তখন ঠাঁইনাড়া মানুষ তাঁর লেখা পড়ে জানবে এই আশ্চর্য বাস্তুতন্ত্রের কাহিনি। এও এক সত্যি রূপকথা।
সত্যিই কি তাই হবে? সত্যিই কি আন্তর্জাতিক রামসর স্বীকৃতি পাওয়া এই জলাভূমি সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে?
আমি জানি না। আমি কেবল স্বপ্ন দেখতে পারি।
আমি স্বপ্ন দেখি, তাঁকে মাথায় রেখে গড়ে উঠেছে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, যেখানে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিয়ে হাতেকলমে গবেষণা করছে ছাত্রছাত্রীরা। দেশ বিদেশের বিভিন্ন শহর থেকে প্রতিনিধি দল আসছে এই মডেল রূপায়ণের জন্য। রাজ্যের নানান প্রান্ত থেকে স্কুলের ছেলেমেয়েরা আসছে শিক্ষামূলক ভ্রমণে ।
আমি স্বপ্ন দেখি, এই জলাভূমি মুক্ত রাখার জন্য এক বিশাল মিছিল, যাতে পা মিলিয়েছে সেই তরুণ প্রজন্ম যারা সেদিন ক্যাম্পাস মুক্ত রাখার জন্য পথে নেমেছিল।
এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি হয়েছে রাস্তার অন্য পারে পূর্বকলকাতার জলাভূমি, আমি স্বপ্ন দেখি, বিশাল মাল্টিমিডিয়া প্যাভিলিয়ান। হাতুড়ি ঠুকে মেলার উদ্বোধন করছেন জলাভূমির একনিষ্ঠ ভাষ্যকার।
কলকাতার নতুন লোগোয় হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া আর শহিদ মিনারের বদলে এখন থেকে জলজমিনের ছবি।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (পঞ্চম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৮ জুলাই ২০১৬ | ১৫০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
যত ঘুরছি, কথা বলছি, জানছি, শিখছি, একটা বিষয় পরিস্কার হচ্ছে। ফৌজি-কৃত ভায়োলেন্স এবং মাইনিং-এর মধ্যে একটা আলবাৎ-কোরিলেশান রয়েছে। যে সব জায়গায় মাইনিং আরম্ভ হয়, সেই সব অঞ্চলে তার আগ-আগ দিয়ে বন-বাদাড় সাফ করে গড়ে ওঠে আধাসামরিক ক্যাম্প। ক্যাম্প বলতে মূলতঃ কাঁকের ও নারায়ণপুর জেলায় বর্ডার সিক্যুরিটি ফোর্স এবং সশস্ত্র সীমা বল এবং বস্তার, দান্তেওয়াড়া, সুকমা, বীজাপুর জুড়ে সি-আর-পি-এফ, মূলতঃ তাদের ‘এলিট’ শার্প-শ্যুটার কোব্রা ব্যাটেলিয়ন। বস্তার সম্ভাগ দেশের কোনো বর্ডারের ধারেকাছে নয়, তাই বি-এস-এফ বা সশস্ত্র সীমা বল এ’খানে কি করছে তা সভ্রেনেরই মালুম।
গোড়ায় গলদ : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৪ জুলাই ২০১৬ | ৮০২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮০
জিহাদীদের সিরিজ খুনের চাপাতির কোপ "নাস্তিক ব্লগার" এর পরিধি ছাড়িয়ে শিগগিরই বিদেশি, ভিন্ন ধর্মালম্বী, অধ্যাপক, হোমিও চিকিৎসক, সমকামী, এমনকি মসজিদের ইমাম, শিয়া ও পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে শেষমেষ সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে অভিযানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃংখলা বাহিনী। অভিযানে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী-জঙ্গি। অবশ্য আমরা মুক্তমনারা আগেই সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলাম, ব্লগার খুন হচ্ছে জিহাদের সূচনা মাত্র; খেলাফত, তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খোয়াবে মশগুল মুজাহিদরা শিগগিরই হত্যার পরিধি বিস্তৃত করবে। রাষ্ট্র দখল করাই যেহেতু তাদের লক্ষ্য, তাই তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আঘাত হানবে শিগগিরই। আর সরকারি উদাসিনতায়, বলা ভালো, জিহাদীদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞ দেশজুড়ে ছড়াতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত : সরসিজ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ | ১০২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এই লেখা যখন লিখছি, ইন্টারনেট তখন উত্তপ্ত আলোচনায় ব্যস্ত। তিরিশে নভেম্বর, দুহাজার ষোলোর যুগান্তকারী রায়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে ছবি শুরুর আগে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত শোনানো হবে। সত্যিই তো, ক্ষতি কি? এতে যখন ক্ষতি কিছু নেই, তাহলে আলোচনাতেও ক্ষতি নেই। মূল আলোচনা শুরু করবার আগে দু-চার বাজে কথা বলে রাখা যেকোনো ভালো লেখার লক্ষণ। যেমন ধরুন, শোনা যায়, চীন-ভারত যুদ্ধ চলাকালীন, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে, নিয়ম করে জাতীয় সংগীত শোনানো হতো। এই নিয়মের চল নাকি ছিল সত্তর দশকেও। না, এ ধরণের কোনো রায় এর আগে কোনো আদালত না দিয়ে থাকলেও, সরকারবাহাদুর মাঝে মধ্যেই এজাতীয় নীতি বা নিয়ম তৈরি করে থাকে। বস্তুত, এই নীতি নির্ধারণের কাজ সরকারেরই, বা আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আইন সভার। নীতি নির্ধারণে কোনো ভুল হচ্ছেনা কিনা, এবং, নির্ধারিত নীতি না মানবার শাস্তি দেয়ার কাজ আদালতের।
আমাদের শোচনীয় বিচ্ছেদ : আলিজাই জাফর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ | ৬৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
সত্যি বলতে কি, আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অদ্ভুত ব্যাপার হল আমাদের ঘন ঘন চেহারা (ভূমিকা) বদলানোর প্রবণতা। বিশ্বের কাছে বেশির ভাগ সময়ে, আমরা সহোদর ভাই-বোনের মত; সারাক্ষণ বাবার নেকনজরে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে বাবা বেড়াতে নিয়ে যায় কি একটা খেলনা কিনে দেয় কি আরো ভালো হয় যদি হাতখরচের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দেয়। আর বাকি সময়ে আমরা বিবাহবচ্ছিন্ন দম্পতির মত, একসঙ্গে থাকছি, সারাক্ষণ পরস্পরের পেছনে লাগছি, পরস্পরকে দোষারোপ করছি যে কার জন্য একসঙ্গে থাকা যাচ্ছে না, কিন্তু কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছি না যে আমরা আর একসঙ্গে নেই আর সেইমত সমঝোতাতেও আসতে পারছি না। মনে হয় যেন আমাদের ভাগাভাগির ক্ষত এখনও এত জীবন্ত, এত যন্ত্রণাদায়ক যে আমরা যে ছেড়ে এসেছি তা ওরা মেনে নিতে পারে না, আর ওরাই যে আমাদের ছেড়ে আসতে বাধ্য করেছে আমরাও এটা মেনে নিতে পারি না । এইরকম একটা ক্ষেত্রে আমরা শুধু এই ভেবেই শান্তি পেতে পারি যে অন্যজনও আমার মতই আহত হয়েছে; সর্বপ্রকারে সেই চেষ্টা করাই এখন আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।
আক্রান্ত জনতার মিডিয়া : দেবব্রত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ অক্টোবর ২০১৬ | ১৫১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
যেখানে প্রথাগত সাংবাদিকতা ব্যর্থ,যুদ্ধের ময়দানে অনুপস্থিত, নির্দিষ্ট মিডিয়া হাউসের রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী খবরকে বিকৃত উপায়ে পরিবেশন করতে বাধ্য,সেখানে স্বাধীন আমজনতার সাংবাদিকতা এখন ভবিষ্যতের নূতন প্রহরী। নাজি জের্ফের মত এই সমস্ত স্বাধীন দেশপ্রেমী সাংবাদিকরা সংবাদের দুনিয়ায় গণতন্ত্র বজায় রাখছেন। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রবিরোধীদের ভূমিকার তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন। সরকার এবং বিদ্রোহীরা যাতে গণতান্ত্রিক অবস্থান বজায় রাখে এবং আরও স্বছ ভাবে কাজ করতে বাধ্য হয় তার জন্য নিরলস কাজ করছেন। আর মধ্য প্রাচ্যের এই নূতন মিডিয়ার দুনিয়ায় নাজি জের্ফ এক অনবদ্য ব্যক্তিত্ব। আজকের দুনিয়া যেখানে জনসেবা ক্রমশ ক্ষীয়মাণ এবং সাংবাদিকতার চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে দ্রুত,সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্ত স্বাধীন নাগরিক সাংবাদিকদের গ্রুপ, ক্রমে আরও বেশি বিশ্বস্ত, বেশি নিরপেক্ষ এবং প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক মতামত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্রমশ নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন। অন্তত মধ্যপ্রাচ্যে নাগরিক সাংবাদিকতা প্রথাগত মিডিয়ার জায়গা সক্ষম ভাবে প্রতিস্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতার এই হটাৎ বিস্ফোরণ সাময়িক কোন ঘটনা নয় বরং এইটাই ভবিষ্যতের ছবি হতে চলেছে। নাজি জের্ফ যেমন বলেছিলেন “To defeat us, they would have to shut down the Internet. And they can’t do that because all of them use the Internet.”
বস্তার-দুঃশাসনীয় (ষষ্ঠ পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৫ অক্টোবর ২০১৬ | ১৫১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
অরণ্য তার অগণন সন্ততীদের জন্য যুগ-যুগান্ত ধরে সাজিয়ে রেখেছে খাদ্য তথা পুষ্টি-সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ঢালাও আয়োজন। কাঁকের-নারায়ণপুরের গ্রামগুলিতে বনৌষধি হিসেবে কাজে লাগে আম, আমলকি, হত্তুকী, ভেলওয়া, বজ্রদন্তী, পাঠ-জড়ী, ফলসা, বকফুল, রসনা, ভাসাম-পাত্রী, ভরহা, পোটর, হলুদ ফুল, ভুঁইনিম, নিমপাতা, মোগ্রালাটা, কুমড়ো-পাতা, ভালু-মুএসলি, সাদা মুএসলি, চার, লাসা, ফুটু, বোডা, অর্জুন গাছের ছাল, বেল, লেজোমররা, ভুঁইকুমড়ো, পৈরা-ফুটু ও নানাবিধ ব্যাঙের ছাতা, পোকামাকড়ের শুকানো মাংস প্রভৃতি থেকে তৈরী হয় নানাবিধ ওষুধ। উপশমের উপাচারও নানাবিধ। কয়েকটা উদাহারণ দেখা যাক
অনিরুদ্ধ আগুন : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১১ অক্টোবর ২০১৬ | ১৩৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
চন্দ্রাবতী মায়ের প্রসঙ্গ তুলে খোঁটা দেয়, ‘বাবা তুমি কাপুরুষ’। এ শব্দটা মেয়ে শিখলো কোত্থেকে? মা ছাড়া বড় হওয়া গাঁও-গেরামের মেয়ে, কৈশোর না-পেরোনো বয়সেই অনেকখানি পরিণত। প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা হয় না চন্দ্রাবতীকে, বরং আত্ম-আবিস্কারে মগ্ন হয় অঘোর গায়েন, সত্যি কি কাপুরুষ সে? দোষতো তার নিজের। কেনো নিজের অবস্থা বিবেচনা না করে সে আত্মসমর্পণ করেছিল প্রেম আর মোহের কাছে? তার বান্ধা পালা শুনে সুলেখা পাগল হয়েছিল বলেই কি নিজের অভাবী-আধপেটা জীবনে ওকে জড়ানো কোনো বিবেচনাসম্পন্ন কাজ ছিল? কিন্তু কীই বা করার ছিল? বয়সটা মোহাচ্ছন্নতার, অবাধ্য যৌবনের। কাপুরুষের মতো তখনো সুলেখার বারবার বিয়ে করার তাগিদকে অগ্রাহ্য করেছে সে, কালক্ষেপণ করেছে, ভৎর্সনা করেছে সুলেখাকে, ‘পাগলরে যদি বল নিজের ঘরে আগুন লাগাইয়া দিতে সে কি লাগাইবো?’ সুলেখাকে নিজের দুর্বহ জীবনের সাথে জড়াতে ঠিক বিবেক থেকে সায় পেতো না অঘোর -হয়তো এটা কাপুরুষতা। তবু সুলেখার সুখের কথা ভেবে কাপুরুষই থাকতে চেয়েছে সে, কিন্তু পারলো কই? ভালোবাসার ক্রমাগত আহবানের কাছে কত সময় কাপুরুষ থাকা যায়?
একটি অবাস্তব গল্প : সোমেন বসু
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ | ৯৩৬ বার পঠিত
মোট আটজন। একটা ছোট বৃত্ত। চারটে বড় পাঁচ ব্যাটারীর টর্চ। জ্বলছে। একটা তার মধ্যে মাঝেসাঝে একটু পাড়াটা বা মাঠে চোখ বোলাচ্ছে। যেসব মনুষ্য এবং মনুষ্যেতর প্রাণীরা তাদের এই কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করছে, তাদের মধ্যে কোনও অবাঞ্ছিত চাঞ্চল্য ঘটছে কিনা মেপে নিচ্ছে। আর বাকি তিনটে আলো স্থির। ঐ বৃত্তটার কেন্দ্রে। কেন্দ্র মানে ঠিক বিন্দু নয়। বরং আর একটা বৃত্ত। দু'জন কনস্টেবল শাবল দিয়ে ক্রমাগত ঝপাঝপ কুপিয়ে যার পরিধি আর গভীরতা সমানে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনটে টর্চের সাথে পাঁচজোড়া চোখও ওই দিকেই নিবদ্ধ। বাকি একজোড়া চোখ আলাদা। সেও দেখছে ওদিকেই। কিন্তু ওই আলগোছে। মাঝেমাঝেই চোখ সরাচ্ছে। কখনও বুজছে। এই চোখজোড়ার মালিক গোটা দলটার মধ্যেই যাকে বলে অড ম্যান আউট। বাকিরা সবাই সশস্ত্র, সবার কাছেই থ্রি নট থ্রি রাইফেল, কেবল এই দলটার নেতা যে, স্থানীয় থানার মেজবাবু, এস আই দিবাংশু কর, যে সিগারেট টানছে, গর্ত খোঁড়াটা নজর করছে আর মাঝেমাঝে আড়চোখে ওই লোকটাকে দেখছে, তার খালি কোমরে সার্ভিস রিভলভার। কিন্তু এই লোকটা নিরস্ত্র। সুঠাম চেহারা, একটা চোখ আর ঠোঁটের কোনটা ফুলে রক্ত জমে আছে। পরনে একটা ছেঁড়া গেঞ্জি আর আস্ত লুঙ্গি। দুটো হাত সামনে জড়ো করা। হ্যান্ডকাফ লাগানো। কোমরেও একটা মোটা দড়ি বাঁধা যার খুটটা পেছনে এক কনস্টেবলের শক্ত মুঠোয়।
দেশভাগের অভিজ্ঞতাঃ জম্মু ১৯৪৭ : বেদ ভাসিন - অনুবাদ শমীক মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৬ | ১৩৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
দেশভাগের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক দাঙ্গা, অনেক রক্তপাত, অনেক হানাহানির স্মৃতি। তার কিছু নথিভূক্ত, বেশির ভাগই নয়। যে হত্যালীলা ঘটে গেছে ১৯৪৭ সালে এই উপমহাদেশে, তার তুলনা বিশ্বের ইতিহাসে খুব কমই আছে। আর পুরোটাই ঘটেছে ধর্মের নামে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, নবগঠিত সরকারের অক্ষমতার ফল হিসেবে, কিংবা তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।
দেশভাগের রক্তপাত বলতে আমরা মূলত পড়েছি এবং শুনেছি পঞ্জাব আর বাংলার কথা। এর বাইরেও, জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে নীরবে ঘটে গিয়েছিল ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক হানাহানি, যে ইতিহাস প্রায় কোথাওই নিরপেক্ষভাবে নথিবদ্ধ করে রাখা হয় নি।
বেদ ভাসিন নামটা আমাদের অনেকের কাছেই হয় তো সে রকম পরিচিত নয়। ইনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কাশ্মীরি জার্নালিস্ট। শুধু জার্নালিস্ট পরিচয় দিলে এঁর জীবনের ব্যাপ্তির সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করা যাবে না, সারা জীবন ধরে তিনি কাশ্মীর আর কাশ্মীরিদের জন্য প্রচুর কাজ করে গেছেন, ইন্টারনেটে একটু সার্চ করলে অনেক লেখাপত্র পাবেন। ভারত এবং পাকিস্তান, উপমহাদেশের দুটি টুকরোতেই তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন।
ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন তিনি হাইস্কুলের ছাত্র, সতেরো বছরের কিশোর এবং কাশ্মীরের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। সারা জম্মু কাশ্মীর যখন সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে জ্বলছে, তখন গুটিকয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন শান্তিকামী ছাত্র তাঁর নেতৃত্বে লড়ে চলেছিল শান্তির পক্ষে।
নামকরা কাশ্মীরি দৈনিক কাশ্মীর টাইমসের তিনি সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘ ছত্রিশ বছর – ১৯৬৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। গত বছর, সাতই নভেম্বর ২০১৫, ছিয়াশি বছর বয়েসে তাঁর দেহাবসান হয়।
এই লেখাটি শ্রী ভাসিনের একটি পেপারের বঙ্গানুবাদ, যা তিনি পড়েন ২০০৩ সালে জম্মু ইউনিভার্সিটিতে, Experience of Partition: Jammu 1947 শিরোনামে। কাশ্মীর টাইমসের বর্তমান সম্পাদক, বেদ ভাসিনের কন্যা অনুরাধা ভাসিনের কাছ থেকে এই পেপারটির মূল লিখিত রূপ পাওয়া গেছে সম্প্রতি। মূল ইংরেজি পেপারটি এখনও পর্যন্ত অনলাইনে কোথাও পাওয়া যায় না।
কলকাতার ক্যাচড়া : দীপাংশু আচার্য
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৭ অক্টোবর ২০১৬ | ১০৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মহানগরের পর্দা সরালেই মহারগড়ের প্রসেনিয়াম! কখনও আপনি দর্শক, কখনও আপনিই নটরাজ। হয় ফ্যালফ্যাল, নতুবা, স্বপ্নের বডি কাঁধে নিয়ে তপ্ত-মটকা ধেই ধেই। কোনও নাট্যকার নেই। যখন ইচ্ছে যেখানে ইচ্ছে যা ইচ্ছে। সিগনাল-তোড়ু বাইক থেকে ভিড়মি-জাগানো মাইক, কোলকাতা পুলিশের কেচ্ছা হইতে পাবলিক প্লেসের পেচ্ছাপ, দাদার হালুম টু চাঁদার জুলুম – মোদ্দা প্লট, কল্লোলিনীর কল খারাপ, আর মিস্তিরিরও ফোন অফ। ছিল তিলোত্তমা, হলো তিলোঃট্রমা! অতেব, টানার যেমন হ্যাঁচড়া, খিচুরির যেমন ছ্যাঁচড়া, কলকাতার তেমন ক্যাচড়া। জড়িয়ে পড়লেন দীপাংশু আচার্য
বস্টনে বংগে : দ্বাদশ পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৭ অক্টোবর ২০১৬ | ১৯২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
এইসবের মাঝখানে পড়ে আমার ভাবনাচিন্তারা সব কেমন গুলিয়ে যেতে থাকল। মনের মধ্যে প্রশ্ন ওঠা শুরু হল, সত্যিই কি এই বিভিন্ন ধরনের অসাম্যের বিরূদ্ধে আন্দোলন হাত ধরাধরি করে চলতে পারে? কি ভাবে ক্যুইর আন্দোলনে একজন বামপন্থী (মতান্তরে ভাম্প্যান্টি) ও একজন দক্ষিনপন্থীর (মতান্তরে ভক্ত চাড্ডীর) সহাবস্থান হতে পারে? যখন সমকামী আন্দোলনের জন্য কথা বলছি তখন কি আমার অন্য রাজনৈতিক/সামাজিক পরিচয়টাকে সরিয়ে রাখতে হবে? তখন আমার শুধু একমাত্রিক পরিচয়, আমি একজন সমকামি? কিন্ত তাহলে, যে ঘেটোর বিরুদ্ধে এই আন্দোলন, সে গন্ডীই কি নিজের চারিদিকে টেনে নিচ্ছি না আমি? আবার লিঙ্গ-আন্দোলনকে যদি ডান-বামে ভাগ করি, তাহলে কি শক্তিক্ষয় করছি না নিজেদের? "মিনিস্কিয়ুল মাইনরিটি" কি আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে না? যদি দেখি ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শোভা পাচ্ছে স্পন্সর অনুপম খেরের কাট আউট, যিনি আমার মতে জে এন ইউ ইস্যুতে বাকস্বাধীনতার কন্ঠরোধ করতে চেয়েছিলেন, তখন কি করব? যেহেতু ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল তাই তার সঙ্গে থাকব, না কি সরে আসব, আর না কি অপছন্দটাকে যথাস্থানেভ্য জানিয়ে রেখে চুপচাপ বসে যাব? আর না কি সন্ত টেরেসার মত বলব, টাকায় কোনও দাগ নেই? টাকা কোথা থেকে এল গুরুত্বপূর্ণ নয়, কি কাজে খরচ হল সেটাই আসল?
আমার পুজোনামচা : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১১৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
যেহেতু লঘু-গুরুর প্রসঙ্গ হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে এসে থেবড়ে বসেই পড়ল, তখন বলেই ফেলি, অফিস- কাছারিতে একটা দিনও যে ঈদের জন্য বরাদ্দ নেই (ফ্লেক্সি আছে খালি) - এইটা সারারাত পুজোয় ঘুরে রোল-বিরিয়ানি-আইসক্রিম-চাউমিন-ফুচকা একসাথে হজম করার থেকেও সত্যি বেশ কষ্টকর। শুধু এটুকুই 'অভিযোগ' ভেবে যেসব চরমপন্থী হনুর আঁতে হওয়া ঘা'য়ে কয়েক চিমটে নুন পড়ে গেছে বলে রে-রে করতে আসবেন ভেবে আস্তিন গুটাচ্ছেন, তাদের বলি, বাংলাদেশে এই লঘু-গুরুর হিসেবটা এ বঙ্গদেশের মাপে এক্কেরে লুডোর গুটি - ছক্কা আর পুঁটের মাপজোখ : সেখানে পুজোর বদলে তাই ঈদসংখ্যা বেরোয়, তিনদিন ছুটি বরাদ্দ, সাথে টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং 'দ্য কাউন্টডাউন বিগিন্স' জাস্ট লাইক বঙ্গদেশের পুজো। কিন্তু তবুও ঈদ, দুর্গাপুজোর মতো 'সার্বজনীন' হয়ে উঠতে পারেনি ধর্মীয় বেড়াজালে অক্সিজেন লেভেল কমিয়ে।
হারামপূজা এবং মঞ্জুভাইয়েরা : মুহাম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৬৫২ বার পঠিত
এই মঞ্জু ভাইয়ের কাজ ছাড়া পূজা মণ্ডপ যেন তৈরিই হয় না। সবাই চায় মঞ্জু ভাই ওদের মণ্ডপে কাজ করুক। আর মঞ্জু ভাইয়ও হয়েছে একটা মানুষ, আটটা দশটা মণ্ডপের কাজ নিয়ে পূজার কয়টা দিন পাগলের মত ঘুরে। আমি একবার জিজ্ঞাস করেছিলাম, খুব কামাচ্ছেন? উনি হাসি দিয়ে বললেন, আরে নাহ, টাকার জন্য না, ধর্মীয় কাজে টাকার হিসাব করলে চলে!! পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আসলেই তাই। যে মঞ্জু ভাই কে বিয়ের প্রোগ্রামের জন্য দেন দরবার করে পেতে হয় আমাদের সবার, সেই মঞ্জু ভাই অনায়াসে সকলের সাথেই আছে, টাকা পয়সাও যে যত যখন পারছে দিচ্ছে। মঞ্জু ভাইদের জন্যই এখনো দেশ নিয়ে আশা করতে পারি। খাদ থেকে হয়ত বেঁচেও যেতে পারি আমরা।
সাংস্কৃতিক বিনিময়, নাকি আগ্রাসন? : সেখ সাহেবুল হক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৩১৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
পুজোয় ছুটি বেশি, ঈদে দুদিন ছুটি দিলেই তোষণ থিওরি চলে আসে। সরকার প্রতিমা বিসর্জন সংক্রান্ত দূষণ নিয়ে যতটা চিন্তিত, কুরবানিতে তেমন ব্যবস্থা নিলে অনেক অভিযোগের অবকাশ থাকে না। এইসব বহুকালের ব্যক্তিগত অভিযোগ স্বজাতি বাঙালীর কাছে, বাঙালী হিসেবে খানিক আত্মসমালোচনার।
ঈদ নিয়ে মিডিয়ার হইচই নেই, বিজ্ঞাপনদাতাদের দাপাদাপি নেই, এমনকি জরুরী খবর ছেড়ে উৎসব কভার হয় না। যদিও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে ভাইচারার জায়গাটা থাকে।
মুসলমানরা পুজোয় অঞ্জলি দেন না ঠিকই, মুসলিমদের সহযোগিতাপূর্ণ অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়। অথচ দুঃখের বিষয় সেটিকে উপপাদ্য আকারে প্রমাণ করতে হয়। কখনো মন্ডপে টুপিওয়ালা কিশোরের ছবি, কিংবা মন্ডপের সামনে কর্মরত দাড়িওয়ালা মুসলমান বৃদ্ধের ছবি সহকারে বর্ণনা দিয়ে। নতুন করে প্রমান করার কিছু নেই! পশ্চিমবঙ্গের অনেক পুজোর কমিটিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বহুকাল থেকেই। সারা পশ্চিমবাংলার পাশাপাশি মুসলিম প্রধান এলাকা গাডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় মুসলমানরাই পুজোর দায়িত্ব নেন।
নোটবন্দীর ন’মাস : দেবর্ষি দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৩২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ডিজিটাল ব্যবসার বহর বেড়েছে, জেটলিজি বলেছেন। প্রথমত, আদৌ বেড়েছে কিনা সন্দেহের ঊর্দ্ধে নয়। নভেম্বর ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, চেক, ইত্যাদি অ-নগদী লেনদেন এক ঝটকায় বেড়ে গেছিল। তারপর কিন্তু ডিজিটাল বা অন্যান্য অ-নগদী কেনাবেচার পরিমাণ ক্রমাগত কমে আসছে। দীর্ঘকালীন প্রবণতায় যতখানি বাড়ার কথা ডিজিটাল কেনাবেচারপরিমাণ তার বেশি বাড়ে নি। কারণ সহজবোধ্য। লোকে ঠেকায় পড়ে ডিজিটালে গিয়েছিল, শখ করে যায় নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের অভ্যাসে ফিরে এসেছে, কারণ ডিজিটাল পেমেন্ট অনেক সময় খরচা বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যে সরকার এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলার মাশুল বাড়িয়েছে। লোকজন নগদ খরচায় আরো হিসেবি হয়ে পড়েছে। ফলে ডিজিটাল ব্যবসা বেড়েছে। তৃতীয়ত, প্রাক-নোটবন্দীর তুলনায় আজকের বাজারে নগদের পরিমাণ কমেছে। এই কমাটা সরকারের সচেতন সিদ্ধান্ত। সরকার কম নগদ ছাড়ছে যাতে লোকে বাধ্য হয় কম নগদ ব্যবহার করতে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ডিজিটাল ব্যবসা শুরুতে যত বেড়েছিল তার থেকে নেমে এসেছে। শেষ হিসেবে যত বেড়েছে তার পেছনে নোটবন্দীর কতখানি অবদান তা তর্কসাপেক্ষ।
নোটবাতিলের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল ? : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ২১৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
কালো টাকার সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য অনেক রাস্তা নেওয়ার ছিল। এই কালো টাকা সত্তর বছর ধরে তৈরি হয়ে আসছে এবং এক মুহূর্তে কোনও এক জাদুদণ্ড বুলিয়ে তা নির্মূল করা সম্ভব নয়। গোটা ব্যবস্থাকে দায়বদ্ধ করে তোলার জন্য লোকপাল নিয়োগ করা সম্ভব। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা – এরা দায়বদ্ধ নয়। এদের দায়বদ্ধ করে তোলার মধ্যে দিয়েই কালো টাকাকে ধ্বংস করা সম্ভব।
...
বড় বড় ঋণ খেলাপী শিল্পপতিদের পাশাপাশি লাভ হয়েছে, হতে চলেছে কাদের ? পেটিএম কোম্পানির। শপিং মলগুলোর। বিগ বাজার, মোর, রিলায়েন্স ফ্রেস, স্পেনসার্স এর মতো একচেটিয়া খুচরো ব্যবসার কারবারিদের,যারা খুচরো ব্যবসায়ে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসেছে গত কয়েক দশকে আর অধিকার করে নিতে চাইছে দেশের খুচরো ব্যবসার বিশাল বাজারটা,যার সিংহভাগ এখনো ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীদের দখলে আছে। লেসক্যাশ ও ক্যাশলেস ট্রানজাকশান এর প্রায় বিকল্পহীন বন্দোবস্তের মধ্যে দিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের হটিয়ে খুচরো ব্যবসার বৃহৎ বাজারে একচেটিয়া ব্যবসায়ীদের জাঁকিয়ে বসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
...
হুমায়ুনপুর : স্বাতী মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৪৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
হুমায়ুনপুরের ইতিহাস নিয়ে অনেক গল্প আছে। শোনা যায় ১৬৭৫ সালে রূপা রাম আর রতিয়া সিং টোকাস এই গ্রাম স্থাপন করেন। আরও একটি কাহিনী বলে ১৬৭৫ নয়, ১৬৮৩ সালে চৌধুরী দেবী সিং ফোগাট এই গ্রামের পত্তন করেন। আরেকটা গল্প আছে, সে তো আরও রোমাঞ্চকর — বাদশা ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে জাট বিদ্রোহের নায়ক গোকুলা জাট স্বয়ং নাকি এই গ্রামের পত্তন করেন! তবে এ নেহাতই কিম্বদন্তী, লড়াকু জাট নেতা গোকুলা দিল্লীতে তাঁর জীবদ্দশায় কোনোদিন পা রাখেননি। ইতিহাস বলছে যে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ার পরে আগ্রাতেই বাদশা ঔরঙ্গজেবের আদেশে তাঁকে হত্যা করা হয়। মূল ধারার ইতিহাসের বইয়ের পাতায় দিল্লী শহরের অলিগলির এ হেন লোকশ্রুতি-মিশ্রিত ইতিহাস কমই উঠে আসে।
হুমায়ুনপুরের জমির মালিক আজও কিছু জাট পরিবার। নগরায়নের কবলে পড়ে এক এক করে তাঁদের জমি চলে গেছে সফদরজং এনক্লেভের দখলে — বড় বড় অট্টালিকা উঠেছে, দক্ষিণ দিল্লীর অভিজাত মানুষজনের ঠাঁই হয়েছে সেখানে। পাশে গড়ে উঠেছে আরকে খান্না টেনিস স্টেডিয়াম, হৌজ খাস ডিসট্রিক্ট পার্ক, হৌজ খাস ডিয়ার পার্ক, অভিজাত দিল্লীবাসী সেখানে হাওয়া খেতে আর শরীরচর্চা করতে আসেন। কখনো কখনো ইতিহাসপ্রেমী কেউ হয়তো চলে আসেন হুমায়ুনপুরের পুরাতন ঐতিহ্যের টানেও, হৌজ খাসে ঘুরতে ঘুরতে ডিয়ার পার্কের ভিতরে কালি গুমটি বা বাগ-এ-আলম গুম্বদটাও দেখে যান। এইসবের মাঝে হুমায়ুনপুর গ্রামের এঁদো গলি বড় বেমানান, যেন অন্য একটা জগৎ। সন্ধ্যাবেলা গেলে এখনো দেখতে পাবেন খাটিয়ায় বসে হুঁকো টানছেন বিশাল পাগড়ি পরা একেকজন প্রৌঢ় চৌধুরী।
ডেরা কি সাচ: সাচ কি সৌদা : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৪২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
শুধু এদেশে বলে নয়, সারা পৃথিবীতেই টাকা থাকলে আইন আদালত ন্যায়বিচার সবই কেনা যায় কোন না কোন পর্যায়ে। সে গল্প আমাদের খুব একটা অজানা এমন নয়। কিন্তু দিনের শেষে আমরা – যাদের হাড্ডি এখনো পিলপিলায়ে যায়নি সবটা, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে থাকি? নেতাজী তো ফিরবেন না – জ্যোতিবাবুও না, তাহলে বিপ্লব কবে কখন, কোথায় হবে? আমরা কি অপেক্ষা করব কবে সেই মহামানব আসবেন, বিপ্লবের ভ্যানগার্ড, আমরা তাঁর পিছনে ছুটে যাব হ্যামলিনের ইঁদুরদের মত – বিপ্লবকে কুলোর বাতাস দিয়ে বরণ করে আনতে? নাকি আমরা ফিরে যাব সেই সব মানুষের কাছে, যারা প্রতিনিয়ত লড়াইটা লড়ছেন? মার খাচ্ছেন, কখনো পাঁচকুল্লার রাস্তায় তো কখনো সিঙ্গুরের মাটিতে, কখনো ভাঙরের জমিতে কখনো বস্তারের জঙ্গলে? মার খাচ্ছেন, গুলি খাচ্ছেন, আবার আরো হাজারে হাজারে লড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে?
আরে দাদা এত ঘাবড়াবেন না – আমাদের কাছে বেছে নেবার জন্য রাস্তা আছে তো। পিঠে বেঁধেছি কুলো, কানে গুঁজেছি তুলো, এখন কত কিলোবি, কিলো – এমনি করে যায় যদি দিন যাক না। চলতে থাকুক – ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না আমার সন্তানকে নিয়ে যেতে আসে ওরা।
ডেরা সাচা সৌদা - সত্যি কাহিনি : হরনিধ কৌর - অনুবাদ রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৫১৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
এই ধরণের নানান বঞ্চনা আর অত্যাচার এই মানুষগুলোর মোহভঙ্গ ঘটাচ্ছিল, সেই সঙ্গে জন্ম নিচ্ছিল ক্রোধ এবং হতাশা। অথচ এর থেকে বেরোনোর কোন রাস্তা তাদের সামনে খোলা ছিল না। ফলস্বরূপ সমাজের একটা বড় অংশ ড্রাগ এবং অন্যান্য নেশার ঝোঁকে পড়ে যাচ্ছিল। এক সময় প্নজাব আর নেশা প্রায় সমার্থক হয়ে গেছিল – অশিক্ষা আর দারিদ্র পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছিল ক্রমশঃ। মানুষগুলো উদভ্রান্ত, দিশাহারা হয়ে পড়ছিলেন। স্বভাবতঃই এই প্রেক্ষিতে যখন ডেরা সাচা সৌদার মত আশ্রম এগিয়ে এল তাদের ত্রাতা হিসাবে, এরাও সাড়া দিলেন। না দেবার কোন কারণ ছিল না, কারণ ডেরা তাদের সম্মানজনক জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ডেরায় এই মানুষগুলির শিক্ষালাভের ব্যবস্থা আছে, তাদের ড্রাগ ও অন্য নেশা থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা আছে এবং সর্বোপরি, খাদ্যসংস্থান আছে। ডেরা তাদের কর্মসংস্থান দেয়, জীবনের উদ্দেশ্য দেয়। দিশাহারা অসহায় মানুষের কাছে খড়কুটোর মতন যে বাবাজী দিশা দেখাচ্ছে, সে রেপিস্ট কি না জানতে বা মানতে তাদের বয়ে গেছে। ভুললে চলবে না – পেটে সর্বগ্রাসী খিদে থাকলে কে আমাকে খাবার দিচ্ছে, সে খুনী না ধর্ষক, তাতে আমার কিছুই এসে যায়
সময় হয়েছে মধ্যবিত্তদের খালিপায়ে হাঁটার : রবিশ কুমার - অনুবাদ শমীক মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৫৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
গত বছরেও প্রাইম টাইমে আমরা নিয়মিতভাবে ফ্ল্যাট ক্রেতাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছিলাম। শুধু আমরাই নয়, চ্যানেলের পর চ্যানেলে, মধ্যবিত্তের সান্ধ্যকালীন অবসরযাপনে, আমাদের এই প্রিয় দেশের অ্যাঙ্করেরা এই বিষয়ে তাদের পারদর্শিতা দেখিয়ে চলেছিলেন, সর্ব সময়ে এই মধ্যবিত্ত দর্শক শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায় তাঁদের নিজেদের ধরে রাখার একটা দায় ছিল। এবং তার কিছুদিন পরেই তাঁরা ফিরে গেছিলেন তাঁদের সেই চিরাচরিত হিন্দু-মুসলমান টপিকে। অন্যদিকে, মাসের পর মাস ফ্ল্যাটের ক্রেতারা প্রতি রবিবার নয়ডা আর গ্রেটার নয়ডা এলাকায় বিল্ডারদের অফিসের বাইরে বসে ধর্ণা সমাবেশ করতেন। কিন্তু কিছুই বদলায় নি।
মধ্যবিত্ত নাগরিকরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেন না যে তাঁরা তাঁদের জনতার আইডেন্টিটিকে ধীরে ধীরে সন্ধ্যেবেলার টেলিভিশনের উপচারের অনুষঙ্গে বদলে ফেলছেন, দিনের পর দিন ধরে। অ্যাঙ্কররা এই জাতীয়তাবাদী উপচারের নতুন পুরোহিত। জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে তাঁরা উপস্থিত সবাইকে নিজের আইডেন্টিটি বিসর্জন দেবার আহ্বান জানান।
জনতার হাতে যত বেশি ক্ষমতা থাকে, গণতন্ত্র তত বেশি শক্তিশালী হয়। জনতার আইডেন্টিটি হারিয়ে ফেললেই আপনি মহাশক্তিধর সেই সিস্টেমের ক্ষমতার সামনে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন – হ্যাঁ, সেই সংখ্যালঘু, যার মৃত্যুতে আপনি আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠেন। এই হাততালি দিতে দিতে আপনি ভুলে যান যে, আপনিও সেই সংখ্যাগুরুর শক্তির সামনে ধীরে ধীরে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছেন।
চার ল্যাবারু খোঁজেন গোরু : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ এপ্রিল ২০১৭ | ৩৩১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
নেহাতই চক্ষুলজ্জা বশে নেহাম্যাডাম একটি প্ল্যান বানিয়ে আনলেন, যার মাথামুন্ডু, এবিসিডি, শুরু বা শেষ কিসুই নাই, যেটি অনায়াসে যেকোন সুস্থবুদ্ধি লোকের সেরিব্রাল অ্যাটাক ঘটানোর উপযুক্ত। হাতে সময় একেবারেই নাই, চাগরির দায় বড় বিষম, হিড়িম্বা রাত জেগে এক্ষপির প্ল্যান বানালেন, প্রত্যেকের দায়িত্ব আলাদা শীটে লিখে দিলেন। অন সেকেন্ড থট, যত সলিউশন বানাতে হবে, প্রতিটি তৈরি করার মেথডও লিখে হাতে হাতে ধরিয়ে দিলেন। (আগে একবার নেহা স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসিড সল্যুশন বানানোর জন্য “একটু হেল্প” চেয়েছিল।)
সবার জন্য স্বাস্থ্যের লক্ষ্যে গঠিত উচ্চ-স্তরীয় বিশেষজ্ঞ দলের প্রধানের বক্তব্য : ডা কে শ্রীনাথ রেড্ডি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ এপ্রিল ২০১৭ | ৭৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমরা বলেছি দক্ষ স্বাস্হ্যকর্মীর যোগান বাড়াতে হবে। এরপর বলেছি যে, অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র ও রোগ নির্ণায়ের পরীক্ষা নিরীক্ষার খরচ যদি সরকার বহন করে, যা কিনা দেশের জিডিপি-র ০.৫%, তাহলে চিকিৎসা খাতে ব্যক্তিগত ব্যয়ের অঙ্কটা যথেষ্ট পরিমাণে কমানো যাবে। এই পদক্ষেপগুলো নিলে সরকারি স্বাস্হ্য ব্যবস্হার প্রতি লোকেদের আস্হা বাড়বে। তামিলনাড়ুর মডেল অনুসরণ করে রাজস্হান সরকার যখন বিনামূল্যে অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র সরবরাহ শুরু করল, সরকারি প্রাথমিক স্বাস্হ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসার সুযোগ নেওয়া লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার মানে সরকারি স্বাস্হ্য ব্যবস্হার প্রতি লোকেদের আস্হা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরপর আমরা বললাম যে বেসরকারি স্বাস্হ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর যথাযথ নজরদারি ব্যবস্হা চালু করা হোক, নানাধরণের স্বাস্হ্য বিমা প্রকল্পগুলোর বদলে সারা দেশে একটাই স্বাস্হ্য বিমা প্রকল্প চালু করা হোক, এমন একটা চুক্তি করা হোক যাতে বেসরকারি স্বাস্হ্য পরিষেবা সংস্হাগুলো দায়িত্বপূর্ণ ভাবে ও দায়বদ্ধতার সাথে সরকারি স্বাস্হ্য পরিষেবা সংস্হাগুলোর পরিপূরক হিসাবে কাজ করে।
স্টেন্টবাজি ও অন্যান্য ভোজবাজি : প্রবীর গঙ্গোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ এপ্রিল ২০১৭ | ৯৩০ বার পঠিত
আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে, স্টেন্ট সরবরাহের প্রতিটি ধাপে অনৈতিকভাবে দাম বাড়ানো হয়; ফলে অযৌক্তিক চড়া দামে স্টেন্ট কিনতে বাধ্য হয়ে রোগীরা পড়েন চরম আর্থিক দুর্দশায়। এর সঙ্গে আছে ডাক্তার-রোগীর মধ্যে স্টেন্ট-সংক্রান্ত খবরাখবর আদান-প্রদানের মধ্যে নানারকম বিভ্রান্তিমূলক অসংগতি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—জনস্বার্থে, রোগীরা যাতে একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন, তাই স্টেন্ট-এর দাম বেঁধে দেওয়া হল। বীরেন্দর সাংওয়ান দিল্লি হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। বিষয়: স্টেন্ট-এর দাম বেঁধে দেওয়া আর স্টেন্টকে জাতীয় অত্যাবশ্যক ওষুধ তালিকার আওতায় আনা। এইটি বিবেচনা করে করোনারি স্টেন্টকে জাতীয় অত্যাবশ্যক ওষুধ তালিকার আওতায় আনা হয়েছে। ফরমান জারির পরে পরেই ফরমান পেয়েই তো স্টেন্ট-নির্মাতা, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত। তড়িঘড়ি নির্মাতারা ও পরিবেশকরা হাসপাতালগুলো থেকে সর্বাধুনিক স্টেন্টগুলো তুলে নিলেন। কী কারণ? না, স্টেন্টগুলোতে নতুন করে লেবেল সাঁটতে হবে। যেসব হাসপাতাল থেকে স্টেন্ট তুলে নেওয়া গেল না, তাদেরকে মুখে বলে দেওয়া হল দামি ও উঁচু মানের স্টেন্টগুলো যেন রোগীদের না দেওয়া হয়। অথচ এন পি পি এ (National Pharmaceutical Pricing Authority)-র স্পষ্ট নির্দেশ: নির্মাতা, আমদানিকারক ও খুচরো ব্যবসায়ীরা এই মুহূর্ত থেকে বেঁধে- দেওয়া দামে স্টেন্ট বেচবেন; কোনো কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা যেন না করা হয়। এই মর্মে এন পি পি এ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছে: বাঁধা-দামে রোগীরা যেন সবরকমের স্টেন্ট পায়। ওদিকে হৃদ্রোগবিশারদরা বলছেন: বি ভি এস (bioresorbable vascular scaffold) স্টেন্ট—যা রোগগ্রস্ত ধমনিকে সারিয়ে শরীরেই শোষিত হয়ে যায়—কোথাও মিলছেই না। ‘কোম্পানি ওগুলো তুলে নিয়ে গেছে নতুন দাম সাঁটবে বলে কিন্তু আমাদের আশঙ্কা, ওগুলো আর হাসপাতালে ফিরে আসবে বলে মনে হয় না।‘—বলেছেন বম্বে হাসপাতালের এক প্রবীণ হৃদ্রোগবিশারদ।
পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য নিয়ে মমতা ব্যানার্জীর উদ্যোগঃ সবার জন্য স্বাস্থ্য কি এই ভাবে হবে? : ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ এপ্রিল ২০১৭ | ১৪০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সমস্ত চিকিৎসা বিনামূল্যে হবে শুনে মনে হতে পারে, ‘এই তো! আমাদের সবার জন্যে স্বাস্থ্যের স্বপ্ন সত্যি হল বুঝি।’ কিন্তু আসল ছবিটা কিন্তু সেরকম দাঁড়াচ্ছে না। সব বিনামূল্যে পাওয়া যাবে ঘোষণা হয়ে গেলেও অনেক কিছুই কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না, সব ওষুধ মিলছে না, অপারেশন, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপির জন্যে রোগীদের লম্বা ডেট দেওয়া হচ্ছে, পেসমেকার, স্টেন্ট, প্রস্থেসিস যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া না যাওয়ার কারণে রোগীদের ঘোরানো হচ্ছে। পরিকাঠামো, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা না বাড়িয়ে সব বিনামূল্যে পাওয়া যাবে ঘোষণা করে দেওয়ায় চিকিৎসার মান ক্রমশ নেমেই চলেছে, কোথাও বাচ্চা পুড়ে যাচ্ছে ওয়ার্মারে, কোথাও পেশেন্ট পার্টি ডাক্তার-নার্স পেটাচ্ছে। আসলে যেটা নেই-ই সেটা ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে বলে ঘোষণা করে দেওয়ার ফল ভুগছেন রোগী ডাক্তার কর্মচারী সকলেই।
আত্মপক্ষ : আফসার আমেদ
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ৯৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সত্যি মেয়েটাকে বিপদে ফেলেছি। বেচারী যে পরিবেশে অভ্যস্ত, তা থেকে ছিন্ন করেছি। প্রথম প্রথম তো একটু অসুবিধে হবেই। এখন নাসিমার তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, এখানে যে তাকে থাকতে হবে, মেনে নিয়েছে। কিছু কিছু অসুবিধের সম্মুখীন হচ্ছে। কিছু কিছু খটকার সামনে পড়ছে। সে পড়ুক। এখন ইচ্ছেমতো গোছগাছ করছে, ঘর সাজাচ্ছে। বেশ খুঁতখুঁতে, তাই সময় লাগে বেশি। আজ বোধহয় অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করবে। নাসিমাকে নিরস্ত করা যাবে না। নাসিমার এমনই স্বভাব। আমি বাধা দিই না। ও কাজ করতে থাকে। আর আমি লেখাপড়া করতে থাকি। আমার নজরে থাকে নাসিমার গতিবিধি। চলাফেরার চেনা ধরন ঠিকঠাক আছে কি না বুঝি। কোথাও ছন্দপতন হলে আগাম ধরতে পারি। ঠিকই আছে। ঠিকই চলছে। এখানে বসবাস করা যাবে। সামনের মাস থেকে বাড়ি করব। লেবার কনট্রাক্ট দেব। চোখের সামনে বাড়ি উঠছে। কোন্টা কীরকম হবে, নাসিমা ইচ্ছেমতো বানিয়ে নিতে পারবে। অফিসের লোনও স্যাংশান হয়ে গেছে। নাসিমারও স্বপ্ন নতুন একটা নিজস্ব বাড়ি।
প্রসঙ্গটি বিব্রতকর : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ১১৭৫ বার পঠিত
পার্বতী মেয়েটি বুদ্ধিমতী, ভীষণই বুদ্ধিমতী। তবে তার এই বুদ্ধিমত্তার সাথে যুক্ত হয়েছে গ্রাম্য অশালীন কৌতূহল আর অসহ্য বাচালতা। ‘রাজলক্ষ্মী’তে আসার পর পরই তা টের পেয়েছে মোনা, আর যতটা সম্ভব সাবধান থেকেছে আচরণে-কথায়। পারতপক্ষে সমীরের সাথে একা-একা কথাই বলেনি। সবার সাথে মিলে কথা বলার সময়ও যথাসাধ্য নির্বিকার থেকেছে, কখনও সাথে আসা আরও দু-বন্ধু নিশি-দ্যুতির চেয়েও বেশি। ভরা পূর্নিমায় সমীরদের শত বছরের পুরনো দালানের ছাদে বসে বন্যার ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে’ শুনতে ইচ্ছে হলেও প্রাণপণে তা দমিয়ে রেখেছে। দমিয়ে রেখেছে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ী ছড়ায় সমীরের হাতে হাত রেখে পা ভেজানোর ইচ্ছেটাও। তবু বিকেলের জলখাবারে সমীরের বৌদি টেবিলে ফুলকো লুচি আর ছানার ডালনা এনে দিলে ওরা যখন ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়– শোন, শোন এগুলো মোটেই তোদের আজিজ সুপারের লুচি নয়, খেয়ে দেখ কী ভীষণ মোলায়েম আর টেস্টি, আরে এগুলো হল আসল লুচি, আজিজ সুপারে যা খাই ওগুলো তো ক্লোন রে ক্লোন, লুচির ক্লোন– তখন সমীর মুখ টিপে হেসে– খাও খাও, নিজের বাড়ি মনে করে খাও– বলে যখন মোনার প্লেটে আরও দুটি লুচি তুলে দেয়, তখন আর কারো চোখে না হোক পার্বতীর চোখে সন্দেহ ছাপিয়ে ‘চোর ধরে ফেলা’র মতো সাফল্যের আনন্দ পড়তে ভুল হয় না মোনার। নিশি-দ্যুতির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপও করে মোনা। ওরা উড়িয়ে দেয়– দুর, গৃ-হ-প-রি-চা-রি-কা এত পাত্তা দেয়ার দরকার আছে? পাত্তা তো মোনা দিনে চায়নি। কিন্তু ওর মুখে লেগে থাকা রহস্যময় হাসি, চপলা দৃষ্টি, সুযোগ পেলেই গা ঘেঁষে অযাচিত কৌতূহল কেমন যেন উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়। পাত্তা না দিয়ে উপায় থাকে না। সমীরকে বলেও ফেলে একবার– তোমাদের কাজের মেয়েটি ভারি ইঁচড়ে পাকা তো..., সমীর সুযোগ পেয়েই টিপ্পনি কাটে– ও বাবা এরই মাঝে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে কমপ্লেন শুরু হয়ে গেল? আপাত বিষয়টা হাসিঠাট্টার মাঝে ফুরিয়ে গেলেও শেষতক তো আর শেষরক্ষা হল না, পচা শামুকে পা কাটার মতো পার্বতীর কারণেই ঘটনা ঘোট পাকিয়ে গেল।
পেন্ডুলাম : জয়ন্ত দে
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ১৪৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
কিন্তু ওরা বোঝেনি আমরাও ভেতরে ভেতরে তৈরি ছিলাম। ন্যাকড়ার বল বানিয়ে কেরোসিনে চোবানো হল। বোমা বাঁধা হল। এমনকি টেরিটরিয়াল আর্মিতে কাজ করে এরকম কিছু লোক বন্দুকের যোগান দিল। বোমা-লাঠি-বন্দুক নিয়ে গঠিত হল প্রতিরোধ বাহিনী।
এরপর বাবা কী বলবে আমি জানি। বাবা আজ সংক্ষেপে বলছে, তবু আমি জানি বাবা কী বলবে। ছেলেটি কঠিন চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকের ভেতর ছটফট করছে হাওয়া। বাবাকে থামাতেই হবে। গলা তুলে ডাকার চেষ্টা করি, বাবা, বাবা ও... ।
বাবা হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, বন্দে মাতারম! ফিয়ার্স লেনে, সাগর দত্ত লেনে প্রচুর হিন্দু মরছে। ঠিক হল একটা হিন্দুর লাশ দেখলে দশটা মুসলমানের লাশ ফেলতে হবে। একদিকের হিন্দুদের রেসকিউ করলাম, অন্যদিকে হিন্দু হত্যার বদলা। লাশে লাশে ভরে গেল কলকাতা। আর এ সময়েই লুটে এনেছিলাম এ ঘড়ি। এক মুসলমানের অন্দরমহল থেকে। সেই ১৯৪৬! আজ কত বছর? কত বছর হল?
হ্যাপি মাদারস ডে : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ মে ২০১৭ | ৯২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩০
পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হল, মা ছাড়াও অন্যরা এ দায়িত্ব বেশ নিতে পারে। কোলের শিশুটিকে নামিয়ে রেখে যখন দেশান্তরে যেতে হয়, তখনও মায়ের কোল ছেড়ে মাসির আদরে শিশুটি ভালোই থাকে। এরপরে স্কুলে ভরতির পালা। এদিক-ওদিক স্কুলে স্কুলে ঘুরে যে জ্ঞানটা পেলাম, সেটা হল মায়েরা চাকরী করলে সেই সন্তানেরা মানুষ হয় না। অতএব কোন কোন স্কুল চাকরী করা মায়েদের সন্তান ভর্তি করে না। কেউ বা ইন্টারভ্যুতে মায়ের ডিউটি-আওয়ারস শুনলে সেই যে চোখ মাথায় তোলে, শিশুটি দরজা দিয়ে বেরনর আগে আর সে চোখ নিচে নামে না। প্রশ্ন শুনলাম, how do you expect your daughter to grow up, if you do not give her time? উত্তরটা জানা ছিল। কারণ আমি নিজে চাকরী-করা মায়ের মেয়ে। যদিও সত্যির খাতিরে বলতেই হয় আমার মায়ের অফিসিয়াল ডিউটি আওয়ারস আমার থেকে অনেক কম ছিল, কিন্তু সাংসারিক কাজের ঘণ্টা যে মায়ের অন্তহীন ছিল! সে খবরে কারোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু মোদ্দা কথা বুঝলাম, আমার মত ট্যাঁরা মা, যে সন্তানের স্কুলে ভর্তির মত মহান কাজের জন্য নিজের তুশ্চু চাকরী ছাড়তে রাজি না, সে রকম মা থাকাটাই স্কুলে ভর্তির জন্যে বিপদ।
পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য আইন ২০১৭ : বিশল্যকরণীর সন্ধানে : ডাঃ সিদ্ধার্থ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ মে ২০১৭ | ১২৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বন্যার জলের মত অভিযোগ আসতে লাগল। ভুল চিকিৎসায় পা কেটে বাদ দেওয়া, যে সব চিকিৎসা করাই হয়নি তার অর্থ আদায় করা, বিদেশে ভ্রমণরত...... , মৃত রোগীকে বাড়ির লোকের অমতে ভেন্টিলেটরে চাপিয়ে দশ লক্ষ টাকার ফর্দ ধরানো, হৃদধমনীর মধ্যে যে ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছে বলে টাকা নেওয়া হয়েছে – রোগীর মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তে সেই বস্তুগুলির অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া, এককথায় গুণতে গেলে গুণের নাই শেষ। বহু দিনের পুঞ্জীভূত অবরুদ্ধ অভিযোগ, অশ্রু, ক্ষোভ, ভুল চিকিৎসায় বা অবহেলায় স্বজন হারানর যন্ত্রণা এবং বারবার প্রতারিত হওয়ার ক্রোধ হড়পা বানের মতো নেমে এল মুদ্রিত ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের পাতায় পাতায়। সাংবাদিক মহলে হৈ হৈ পড়ে গেল – কে কত রোমাঞ্চকর, অশ্রুসিক্ত, ভয়াবহ ঘটনা তুলে ধরতে পারেন এই বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে।
কারমাইকেল থেকে - চতুর্থ পর্ব : পার্থ প্রতিম মৈত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৪ মে ২০১৭ | ১০৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ট্রপিকাল থেকে ছাড়া পেয়েছি প্রায় দু’মাস। এখনও দুই সপ্তাহান্তে একবার যেতে হয় হাসপাতালের আউটডোরে। লাইন দিতে হয়। টিকিট কাটতে হয়। অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখন খিটখিটে দিদিটা নাম ধরে ডাকবে। কোন ডাক্তার যে দেখবে, ভগা জানে। কমবয়সী ডাক্তারগুলো হেসে কথা বলে, আমার সঙ্গে নয় সবার সঙ্গে। মৃদু কথা বলে। কেন? এখনও তালেবর হ’য়ে ওঠেনি তাই ? আমাকে ওরা পরীক্ষা করে, তারপর বসিয়ে রাখে ডাক্তার সাহার জন্য। তিনি এলে আবার পরীক্ষা করেন। ওষুধ লিখে দেন। সে ওষুধের জন্য ফার্মাসীতে দীর্ঘ লাইন দিতে হয়। তারপর উইণ্ডোতে পৌঁছালে ভোরিকোনাজল আছে কি না সেটা দেখতে স্টোরে পাঠানো হয়। থাকলে পেয়ে যাই। নৈলে পরদিন লাইন। একদিন তো অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে যাবার মুখে ডাক্তার সাহার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন’ বলে রাস্তার পাশে একটা হাফ ওয়ালে বসেই পেট টিপে, স্টেথো লাগিয়ে, অজস্র প্রশ্ন করে তবে ছাড়লেন। লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য রুগী সাক্ষী রইলেন এই অপূর্ব চিকিৎসার।
সোনি সোরিঃ যে লড়াই এখনও চলছে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ নভেম্বর ২০১৭ | ১০৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
বস্তারের যেখানে অত্যাচার, সেখানেই অদম্য সোনি সোরি। স্কুল কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত অসহযোগিতা করলেও নির্যাতিতা মেয়েদের হয়ে মামলা রুজু করেছেন সোনি। পরিষ্কার বললেন, তার গুপ্তাঙ্গে পাথর ঢোকানো পুলিশ অফিসারটি এবার রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পেয়েছে, ওর সদম্ভ চলাফেরা দেখলে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যায়, মগর ক্যা করু, দেশ কা সংবিধানমে বহোত বিশোয়াস রখতি হুঁ।
না, বন্দুক হাতে তুলে নেবার কথা একবারও ভাবেননি সোনি। বরং একবারই গলা ধরে এলো বাবাসাহেবের এই সত্যিকারের সন্তানের, যখন বললেন তার ভেঙে দেওয়া স্কুলহোস্টেলে পঞ্চাশটি অনাথ বাচ্চা থাকতো যাদের বাবা মায়েরা খুন হয়েছে রাষ্ট্রের পোষা আতঙ্কবাদী সালোয়া জুড়ুমের সদস্যদের হাতে। তাদের কি হল তিনি জেলে যাবার পর জানা নেই, শুধু এই সেদিন গহন বনের ছায়ায় এক গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা শুনে সোনি যখন ছুটে যাচ্ছিলেন দুটি মাওবাদী তার পথ আটকায়। যাবার হুকুম নেই। কথা কাটাকাটি শুরু হতেই বন্দুক হাতে ছুটে আসে আর এক তরুণ, প্রাক্তন শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে মাফি মাঙে। এ সেই অনাথদের একজন।
ফেমিনাজি থেকে সাবর্ণ রেপ এপলজিস্ট, ২৪ ঘণ্টায় : নিবেদিতা মেনন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ নভেম্বর ২০১৭ | ১৪৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার যেটা, সেটা হল রায়া সরকার এবং আরও কয়েকজন, যারা মেহমুদ ফারুকি আর খুরশিদ আলম ধর্ষণ মামলায় সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁদের ভোল বদলানো বা পালটি খাওয়া। কিছু স্বাক্ষরকারীর মতে উভয় ক্ষেত্রেই যেহেতু বিশেষভাবে ধর্ষণের অভিযোগই করা হয়েছে, তাই তার বিচারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পদ্ধতিতেই এগোন দরকার। মেহমুদ ফারুকির মত খুরশিদ আলমও আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন। উভয়ক্ষেত্রেই যে নারীবাদীরা অভিযোগ সমর্থন করেছিলেন, উদার বামপন্থী নারীবাদী বৃত্তের ভেতর থেকেই তাঁদের ‘ফেমিনাজি’ বলে আক্রমণ করা হয়েছিল। ‘ফেমিনাজি’ অর্থাৎ কোনও প্রমাণ ছাড়াই যারা পুরুষের বিরুদ্ধে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু আমাদের অবস্থানটা হল এইরকম যে যেকোন অভিযোগকে বিচার পাওয়ার দিকে এগিয়ে দেবার আগে আমরা তার ‘প্রমাণ’ চাইব না কিন্তু আশা করব যে কি ধরণের অভিযোগ জানানো হছে সে বিষয়ে অভিযোগকারীর যেন পরিষ্কার ধারণা থাকে। আমরা জানি খুরশিদের ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী মধু কিশওয়র অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর একটা ভিডিও রেকর্ডিং বানিয়েছিলেন আর প্রথামাফিক অভিযোগ জানানোর আগেই সেটা গণমাধ্যমে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু এঁরা যখন অন্য নারীবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তখন তাঁরা এইভাবে এগোনোর বদলে সঠিক পদ্ধতিতে অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহিত করেছিলেন। দুঃখজনকভাবে খুরশিদ আত্মহত্যা করায় এই মামলা বন্ধ হয়ে যায়। যে নারীবাদীরা এই দুই ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীদেরসমর্থন করেছিলেন, তাদেরই ফেমিনাজি বলা হয় কারণ তাঁরা গণমাধ্যমের বিচারে (মিডিয়া ট্রায়ালে) আগ্রহী, যার সবটা তাঁদের আয়ত্তে থাকে না। আশ্চর্যজনকভাবে রায়া সরকার, যিনি একদিন কবিতা কৃষ্ণণকে সাম্প্রদায়িক আর ফেমিনাজি হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণ পর্যন্ত করেছিলেন (সেই সব পোস্ট অবশ্য পরে ডিলিট করে দিয়েছেন), তিনিই আজ কোনও প্রেক্ষিত বিচার না করেই যেকোনও পুরুষের ওপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। অন্য নারীবাদীরা যারা সেই সময় আমাদের আক্রমণ করেছিলেন আশ্চর্যজনকভাবে তাঁরাও দিক বদলে অন্য দিকে চলে যাচ্ছেন অতি দ্রুত। তাহলে কে এই দুই বিপরীত পক্ষ তৈরী করে তাদের লড়িয়ে দিল আর কোন দিকটাই বা বেশি ক্ষমতাবান!
বিচারের বাণী নীরবে, নিভৃতে- বাস্তারে : অরিজিৎ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ নভেম্বর ২০১৭ | ১৩৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
স্টেট ভার্সেস জোগা, জুগল অ্যান্ড সুদারের কেসে, পাঁচ মাসে তেরো খানা এফ আই আর দায়ের করা হয়েছিল নানা ব্যক্তির নামে। যদিও, সেই এফ আই আরে কোথাও জোগা, জুগল আর সুদারের নাম ছিল না। এর কিছুদিন পরেই, পুলিশের স্টেটমেন্টে ওই তিনজনের নাম যোগ করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অবশ্য তিনজনেই বেকসুর খালাস হয়েছিল। আরেকটা কেসে ৫০ জনের নামে এফাইআর দায়ের হওয়ার পাঁচ মাস পরে পুলিশের হটাৎ করে আরো তিনজনের নাম মনে পড়ে যায় এবং তাদেরকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করা হয়। মানে ব্যাপারটা দাঁড়ালো এই যে, যত দিন যায়, পুলিশের মেমোরি তত শক্তিশালী হয়।
অন্যদিকে,অপর আর একটি কেসের দুই অভিযুক্ত, মিদিয়াম লাচু ও পুনেম ভিমার নাম পুলিশের চার্জশিটে কোথাও ছিল না , শুধুমাত্র ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের একটা রিপোর্টে তাদের নাম উল্লেখ করা ছিল।পুলিশ সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে এবং বিনা বিচারে তারা জেল খাটছে আজ ছ'বছর ধরে।
পারিবারিক মহিলা লোক আদালত - যেমন দেখছি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ নভেম্বর ২০১৭ | ৮৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
সত্যিই টিভি সিরিয়ালের এক একটি কেস মহিলা কমিশনে দাখিল হওয়া এক একটি আবেদন। ব্যক্তি আর সমাজ জীবনের জলছবি। মেয়েরা মাথা নীচু করে আর সবকিছু মেনে নিচ্ছেন না। কিন্তু সংসারের কর্ত্রী হয়ে থাকবো এই বাসনা থেকে এখনো বেরোতে পারেননি। স্বামী নিজের বোনকে নিয়ে চলে গেছে, এগারো মাস বাদে ফিরে এসেছে, তবু স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে আবার সংসারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়। ছেলে ডিপিএসেই পড়ুক চায়। টাকা দেবে কে, একথার উত্তরে একুশ বাইশের মেয়েটি জানায়,
----ওকে রাজারহাট নিউটাউনে সবাই চেনে। সিন্ডিকেট করে ও। এখানকার কাউন্সিলরের ঘর থেকে বেরিয়ে আমায় সেদিন বলছে, কত টাকা পেলে আমায় ছাড়বি ? কুড়ি লাখ, ত্রিশ লাখ ?
আপনারা সিসিটিভি দেখুন। বলেছে কিনা। ও ইচ্ছে করলেই আমার ছেলেকে পড়াতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকট ও সমাধান বিষয়ক প্রস্তাবনা―চতুর্থ পর্ব : স্বকৃত নোমান
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৫ নভেম্বর ২০১৭ | ১২৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোর লক্ষ্য কী? মোটা দাগে ৪টি লক্ষ্য : এক. আরাকানে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, দুই. রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি হিসেবে আরাকানকে স্বাধীন করা, তিন. বাংলাদেশের কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ ও আরাকান নিয়ে একটি স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। চার. আরাকানে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে যেসব সংগঠন কাজ করছে সেগুলো হচ্ছে―রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), হরকাতুল ইয়াকিন, আকামুল মুজাহিদিন আরাকান, ফেইথ মুভমেন্ট অব আরাকান, রোহিঙ্গা আজাদি ফোর্স, জমিয়তে ইত্তেহাদুল রোহিঙ্গা, জমিয়তে ইত্তেহাদুল ইসলাম, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন, বার্মা আরাকান অর্গানাইজেশন ইউকে, ভয়েস অব রোহিঙ্গা ইউনাইটেড, রোহিঙ্গা রিফিউজি হিউম্যান রাইটস, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, অ্যাসেম্বলি অব রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন, আরাকান রোহিঙ্গা স্টুডেন্ট ডেমোক্রেসি অ্যাসোসিয়েশন, আরাকান ইউনাইটেড ফোর্স, আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন ফ্রন্ট (এএলপি), আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, সাওতুল্লাজিন, ইত্তেহাদুল ইসলাম প্রভৃতি।
ম্যাঁয় চলি পিয়া কি দেশ : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ নভেম্বর ২০১৭ | ২১৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
বনারসি গানের একটা অন্য ঐতিহ্য রয়েছে। শাস্ত্রীয় গায়নে লোকজ আবেগের উৎসার বনারসের মতো আর কোথাও দেখা যায়না। যদি শাস্ত্রীয় গায়ন, অর্থাৎ ধ্রুপদ, ধমার, চতুরঙ্গ,খ্যয়াল, ইত্যাদি সব ধারাতেই এই মাটির আঘ্রাণ এতো স্পষ্ট হয়, তবে উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীত, অর্থাৎ, টপ্পা, ঠুমরি, দাদরা, কাজরি, হোরি, চৈতি, তরানা, ঘাটো ইত্যাদি শৈলীতে তো কথাই নেই। এইসব ধারার সব থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপায়ণ আমরা বনারসি বনাওটে খুঁজে পাই। এছাড়া অপ্রচলিত তিরওয়ত, সদরা, খামসা, লাওনি, কীর্তন, ভজন, কথাগায়ন, রামায়নগায়ন, রাগমালা, কব্বালি ইত্যাদি সব ধরণের সঙ্গীতধারাই বনারসে চর্চিত হয়েছে। এখানে কেতাবি শাস্ত্রীয়তা আর লোকজ সঙ্গীত কেতা চিরকাল সমান ইজ্জতের সঙ্গে মানুষের কাছে আদৃত রয়ে গেছে। গান শোনার জন্য বনারসের নানা ঠেকে তাঁরা জড়ো হ'ন। তা সে সংকটমোচন মন্দিরে হোক বা গঙ্গা উৎসবে, তুলসিঘাটের ধ্রুপদমেলা বা বালাজিমন্দিরে। শ্রোতাদের মধ্যে কেউ পানবিক্রেতা, কেউ রাবড়িওয়ালা, কেউ বিখ্যাত অধ্যাপক, কেউ বা বরিষ্ঠ রাজপুরুষ বা যজমান পুরোহিত, অথবা পরিচয়হীন, ধারালো, বনারসি ভবঘুরে পথের লোক। এমন কি তথাকথিত লপুয়া'লফঙ্গা 'ইতর'সমাজের লোকজনকেও দেখা যাবে এককোণে মাটিতে বসে দাদ দিয়ে চলেছেন গানের সঙ্গে। সব মিলিয়েই ফুটে ওঠে বনারসি চাল। বনারসি অদার সঠিক এই ধরণ। লোকজ গানের সম্ভ্রম আর সম্ভ্রান্ত গানের লোকজ উল্লাস সবই বনারসে পরস্পর আলিঙ্গন করে চলে। এই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারিনী গিরিজা দেবী'র গায়নেও বনারসি অদার ছাপ চিরকাল অতি স্পষ্ট বিরাজমান ছিলো।
মনের টান থাকলেই ফোনে পেয়ে যাবি : সুব্রত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৭ | ১০৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
হঠাৎই অফিসের কাজে জাপান চলে গেলাম। গৌতমদা বলল – এই যে তুই জাপান চলে যাচ্ছিস ... আমিও ইউরোপ চলে যাবো ভাবছি। খুব ভালোবাসতো আমাকে, আর আমিও। জাপানে পৌঁছে একদিন ফোন করলাম। গৌতমদা প্রচণ্ড এক্সাইটেড আমার ফোন পেয়ে, বলল – সুব্রত, উফফ তুই কীভাবে বরফের মধ্যে ঘুরছিস ভাবতে পারছিনা! আচ্ছা শোন, এপ্রিলের ১৭ তারিখে যাদবপুর এ কনসার্ট আছে। চলে আসিস”। আমার যাওয়ারও কথা ছিল সেই সময় দেশে, তা কোনও কারণে পিছিয়ে গেলো। মিস করলাম কনসার্টটা। একটু খটকা লেগেছিলো, কী ব্যপার, ছন্দপতন হচ্ছে নাকি! আগে গৌতমদা বললে শত বাধা সত্ত্বেও অফিস কাটিয়ে ঠিক হাজির হয়ে যেতাম। শুধু যেতাম বললে ভুল হবে, এরকম হতো যে, হঠাৎই খেয়াল করতাম গৌতমদার সাথে ট্যাক্সি করে কনসার্ট করতে যাচ্ছি,আর, ফিরতাম এক সপ্তাহ পর। যাই হোক, সেবার দেশে ফেরার পর, সল্ট লেকে BE park এ গান আড্ডা হল আবার।আমি জাপান থেকে গৌতমদার জন্য একটা Pan flute কিনে এনেছিলাম (সেটা আজ ও আছে গৌতমদার ঘরে সাজানো), বলল যে নেক্সট অ্যালবামে ওটা ইউজ করবে। গৌতমদা was gifted in such a way যে কোন মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট প্রথম বার তুলে নিয়েই বাজাতে পারত। আর একসেট বিদেশি গিটারের স্ট্রিং। তা গৌতমদার তখন কোন গিটারই নেই! আসলে একটা করে গিটার কিনত আর গিটার শিখতে সদ্যআগ্রহী কাউকে দিয়ে দিত, তো বলল ঠিক আছে আরেকটা গিটার কিনবে কয়েকদিনের মধ্যেই, তারপর স্ট্রিংগুলো লাগাবে। সেই দিন আমাদের গান স্বাভাবিক ভাবেই চলল প্রায় রাত দুটো অবধি। যেমন চলত আর কী! তারপর আমরা আমদের এক বন্ধুর গাড়ি করে ট্যাক্সি ধরিয়ে দিলাম ফুলবাগান থেকে। বিদায় জানানোর আগে আমরা সেই প্রথম দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলাম। বোধ হয় আমি পরের দিনই জাপান চলে যাবো সেই জন্যেই হয়তো। বসন্তকালের সেই রাতে হুল্লোড় করতে করতে আমরা ফিরে এলাম, আর গৌতমদার ট্যাক্সি আস্তে আস্তে সেই ধূসর রাত্রে মিলিয়ে গেলো...
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : রেজাউল করিম
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৭ | ৮৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
অমর্ত্য সেন বলেছেন "monumental blunder", আমাদের দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হতাশ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের এই দীর্ঘশ্বাসে আমরা শঙ্কিত হয়ে উঠি। হাসপাতালের সামনে মুমূর্ষু রোগীর অন্তহীন প্রতীক্ষা, জরুরি বিভাগে মৃতপ্রায় মানুষের শয্যার জন্য হাহাকার, সম্ভ্রমহীন চিকিৎসা পরিষেবা ও সর্বোপরি রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের পারস্পরিক আস্থাহীনতা - এই নিয়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা। পীড়িত মানুষ হাসপাতালের কাছে একটি সংখ্যামাত্র, যা ভিক্টর হুগোর কয়েদী চরিত্রটি মনে করিয়ে দেয় "I am not a man. I am a number"। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ তাই সর্বত্র। চিকিৎসকের তথাকথিত অমানবিকতার কাহিনিও তাই যে মানুষের মুখে মুখে ফিরবে তা কোন অত্যাশ্চর্য রূপকথা নয়, এ চূড়ান্ত বাস্তব। এই "অমানবিকতা ও স্বার্থপরতা" কি চিকিৎসাব্যবস্থার ত্রুটি নাকি স্বাস্থ্যকর্মীদের এ সহজাত অভ্যাস ? তারা কি মানবিক মূল্যবোধের উচ্চতর আদর্শ থেকে পতিত হয়েছে, তারা কি উচ্চবর্গের প্রাণী? নাকী তারা এক অলীক স্বপ্নরাজ্যের অধিবাসী, যেখানে মূল্যবোধের অভাবই শাশ্বত সত্য!! সংবাদপত্র চিকিৎসার ময়না তদন্ত করে - কী করলে একটি মানুষ বাঁচতে পারতেন কিন্তু হৃদয়হীন চিকিৎসকের নিষ্ঠুরতার বলি হয়ে অকালে চলে গেলেন, তার মর্মস্পর্শী উপাখ্যানে নিজের অজান্তে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। বিচারক-মন ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। প্রয়োজনীয় কিন্তু ব্রতচ্যুত এই ক্রুর চিকিৎসক-নামক প্রাণীটিকে একাঘ্নী বাণে বিদ্ধ করবার জন্য নিজেকেই অর্জুন বলে ভাবতে ইচ্ছে করে! তাৎক্ষণিক বিচারে দোষী সাব্যস্ত এই পাপীদের শাস্তি মনে আনে অদ্ভুত প্রশান্তি, বিপন্নতাবোধও কি একটু কমে! দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা আদতে একটি ব্যবসা, ধনী আর দরিদ্রের ব্যবধান সেখানে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকট। চিকিৎসকরাও সেই ব্যবস্থার অঙ্গ। যে দেশে সংবাদপত্র ভরে কোন স্বাস্থ্যকর বাণী শোনা যায় না, যেখানে লুটপাট, ধর্ষণ, উচ্চপদাধিকারীদের নৈতিক পতনের রসালো বর্ণনায় আমরা অভ্যস্ত, সেখানে চিকিৎসককুল কী করে নিষ্কলঙ্ক থাকবেন তা ভাবা দুষ্কর। তবু যখন প্রিয়জন বিয়োগ-ব্যথা মেনে নিতে পারি না, ব্যবস্থার ত্রুটির চেয়ে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত বিচ্যুতি বড় হয়ে দেখা দেয়। মনে মনে ভাবি, চিকিৎসা-ব্যবস্থায় যেন এই বৈশ্য মনোভাব না থাকলেই সব নিখুঁত হত - নিষ্কলঙ্ক আয়েশার ভ্রুযুগলের একতিল খামতি হল এই ভণ্ড চিকিৎসকের উপস্থিতি।
নট ইন আওয়ার নেম : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ জুন ২০১৭ | ১০৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
অল্পবয়সী ছেলেদুটো নড়েচড়ে বসল, চোখ হয়ে গেল ছুরির মতো ধারালো,
- ক্যায়া খা রহা হ্যায় আপ ?
শিক্ষকটির মুখে ফুটে উঠল একটা বোকা, ভ্যাবলা হাসি। সত্যি তো, আমার টিফিন বক্সে উঁকি মেরে কেউ যদি ধমকায়, কি খাচ্ছেন, আমি কি ভোম্বল হয়ে যাবো না ! আরো দুজন আতিশয্যে উঠে পড়েছেন। এরা বাঙালী। চোখ হাসিতে ঝিকমিক, রগচটাদের প্রশ্রয় দিয়ে বললেন,
--গোস্ত খাচ্ছে দাদা। কোন সন্দেহ নেই তায়। আরে পাবলিকমে কিউ খাতা হ্যায় রে ?
এই ছেলেদুটোর আরো বন্ধুবান্ধব আছে ভেতরে। ওদের মুখের শক্ত রেখা আমাকে মনে করিয়ে দিল পানিয়াল পাগলির কথা। মাংসে লেগে ফিরে আসা দুমদাম প্রহারের আওয়াজ।
কী করছি নিজে বোঝবার আগেই একটুকরো মাংস উঠে এলো আমার কাঁপা হাতে।
প্লাবনভূমি : পরিমল ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ আগস্ট ২০১৭ | ১৩২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
একাত্তরে বাংলাদেশ যুদ্ধের পর সেই ইতিহাসটা আবার রিপিট হল। দুর্ভাগা এই রাজ্য! এমনিতেই জমি বাড়ন্ত, ব্যবসাবাণিজ্য সব চলে যেতে শুরু করেছে তখন, কলকারখানাগুলো ধুঁকছে। তার ওপর এসে আছড়ে পড়ল এই বিপুল মানুষের ঢেউ। ফের একটা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শামিল হওয়া। তারপরে তো ক্ষমতায় এল পার্টি। অপারেশান বর্গা হল। দশটা বছরে ভূমিহীনদের মধ্যে যত পাট্টা বিলি হয়েছে, স্বাধীনতার পর এতগুলো বছরে সারা দেশে আর কোথাও হয়েছে কি? খোঁজ নিয়ে দেখো। যদিও সেটা শেষ কথা নয়। সেটা হতে পারত একটা শুরু। হল না।
কিন্তু মেজকা, ভূমিসংস্কার করতে গিয়ে গ্রামের আসেপাশে সব পতিত নাবাল জলা জংলা জমিগুলোকে খাস করে নেওয়া হল। ওর মধ্যে কিন্তু নদীর প্লাবনভুমিও ছিল, বছরের পর বছর পড়ে থাকত ওড়কলমি শেয়াকুল বনডুমুরের ঝোপঝাড়ে ভরা। সবার জন্য অবারিত - গ্রামের আতুরি বুড়িরা পাতালকোঁড় হিঞ্চে-ব্রাহ্মী-গিমে শাক শাপলা তুলে নিয়ে বাজারে আসত। পুজোপার্বণে গরীবগুর্বো মেয়েবউরা তুলে আনত আকন্দকুঁড়ি ধুতরোর ফুল, দুর্ভিক্ষের সময় গেঁড়িগুগলি। পাঁচ-দশ বছরে একবার বড়োসড় বন্যা হলে জলে ভরে গিয়ে বসতিগুলোকে বাঁচাত, কিন্তু ...
বানভাসিরা : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ আগস্ট ২০১৭ | ১৫২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
দাড়িওয়ালাদের অবির্ভাব ঘটল। তীব্র অসন্তোষে গনগন করছে ওদের মুখ, আমাদেরও তো ঘর ভেসেছে ---
রায়হান গা বাঁচায়, আরে ভাইসাব আমরা তো সামান্য সাংবাদিক। এই যে ছবি টবি তুলে নিলাম এগুলো পত্রিকায় দিয়ে নিউজ করলে আপনাদের জন্যে ত্রাণ চলে আসবে। সুন্দর চেহারার এক দাড়িওয়ালা চোখ ঘোঁচ করে জানতে চায়, কিন্তু লিস্টি যে করলেন আপনারা আমাদের নাম তো লিখলেন না? রায়হান মাখনের মত হাসে, ভাইরে আপনারা ত এখানে ছিলেন না তাই লেখা হয়নি। এবার হবে দেখবেন। কায়দা করে দাড়ি রাখা বেঁটে মত একজন সামনে এসে মারমুখী দাঁড়ায়, এখন ত এসেছি, নিন আমাদের নাম লিখেন লিস্টিতে।
মিত্রর পত্র : অভিজিত মজুমদার - অনুবাদ সায়ন কর ভৌমিক
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ৩১ আগস্ট ২০১৭ | ১৯৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আজ সেই বহুপ্রতীক্ষিত ও বহুপ্রতিশ্রুত ৫০ (x ৬) দিন পর আমাদের দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত মশা থেকে মুক্ত, গঙ্গা নদীতে বইছে পবিত্র টাকা, বয়স্কদের ওষুধের জোগান নিশ্চিত, সন্ত্রাসবাদ, নক্শালপন্থা, মাওবাদ, জালটাকার বাণিজ্য, ড্রাগ ব্যবসা, মানব পাচার সব কিছু উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, এখন দয়া করে সেই 'অর্ধেকের বেশি সাংসদ', যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার যুদ্ধকে বাধা দিয়েছিলেন, তাদের নাম গুলো প্রকাশ্যে আনুন। দুই তৃতীয়াংশের বেশী সাংসদ তো আপনারই জোটের। দয়া করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন তাদের ওপর। অন্তত আপনার ঘরের সাংসদদের ওপর তো বটেই। ইংরেজীতে কথাই আছে, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম, তাই না?
সর্বজনীন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ৯৬১ বার পঠিত
এইখানে, ঠিক এইখানে তার নাড়ীর ওপর হাত রাখে দুর্বার মহিলা সমণ্বয় সমিতি। আলেকজান্দ্রা কলন্তাই যখন দেহোপজীবিনীর সংজ্ঞা দেন এই বলে যে সে এমন এক ব্যক্তি যে অন্যদের ওপর বেঁচে থাকে, যার শক্তি যৌথতার জন্য ব্যবহৃত হয় না, যে "শ্রমপরিত্যাগকারী", তখন তার সামনে যে বিষয়গুলি অনুপস্থিত থেকে যায় তা হল হিউম্যান ট্র্যাফিকিং, রাজনৈতিক মদত আর ব্যক্তিস্বাধীনতার চূড়ান্তকরণ। হ্যাঁ, তার কথা ঠিক, শুধু উঁচু হিলের জুতোর জন্য এই পেশায় যায় কিছু মেয়ে, কিন্তু সংখ্যায় তারা নগণ্য। গতকালের TOI তে খবর আছে পুণে থেকে উদ্ধার করা এক বাঙালি মেয়ের হাসপাতালে শুয়েও যে আরো চারজনকে উদ্ধার করার কাজে সার্থক হয়েছে একটি এন জি ও র সহায়তায়। একজন বাংলাদেশি মাইনর। কাজ দেবে বলে নিয়ে গিয়ে যে ব্রথেলে বিক্রি করা হয়েছিল তার মালিক এক শিবসেনা নেতা। ভয়ে পুলিশ প্রথমদিকে নিকম্মা হাবভাব করছিল। পরে যাই হোক সাহায্যও করে।
পশ্চিমবঙ্গে নিম্ন দামোদরের বন্যা কেন হচ্ছে? কী করণীয়? >> (১) ডিভিসি প্রকল্পের আগে ব্রিটিশ আমলে : আজাদি লাইভ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ১২৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ফের এবছর ভয়াবহ বন্যার কবলে নিম্ন দামোদর এলাকা। ১৯৭৮ এবং ২০০১ সালের বন্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এর তীব্রতা। তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডিভিসি-র বাঁধগুলির কার্যকারীতা এবং পরিচালনা। একটি বড়ো দৈনিকে হেডিং হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জলে ডুবল বাংলা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দুটো প্রশ্ন তুলেছেন, এক) ডিভিসির জলাধারগুলোতে ড্রেজিং করছে না কেন কেন্দ্র সরকার? দুই) জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই অবস্থায়, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ‘ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা হলো’ – এটা লব্জে পরিণত হয়ে গেছে যেমন, তেমনি সম্ভবতঃ সামনের দিনে আরেকটি লব্জ তৈরি হতে চলেছে, ‘ঝাড়খণ্ডের জলে বন্যা বাংলায়’। মুশকিল হলো, এই কথাটা বলা আর ‘সূর্যের তাপে খরা বাংলায়’ বলার মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই ধরনের কথা, সমস্যাটি ঠিক কী, তা গুলিয়ে দেয়। সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়। এবং একইসাথে ভেতরে ভেতরে, এটা কোনো সমস্যা না, এই বোধও তৈরি করে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল নিষ্ক্রিয়তা।
আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, সমস্যাটি ঠিক কী, তা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরার। এবং তা এখনও পর্যন্ত দামোদরের বন্যা নিয়ে যা যা গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে। তার মধ্যেই থাকবে, কী করা যায়, কতটা করা যায়, সেসবও। আমরা অবশ্যই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ানোর পক্ষপাতী। সমস্যাটিকে বর্তমানের নিরিখে বোঝার পক্ষপাতী। এবং আমরা প্রশ্ন তীক্ষ্ণতর এবং সূক্ষতর করার পক্ষপাতী, যাতে ফারাকটিকে চেনা যায়। মোটা দাগের কোনো মতামতের তুলনায় সূক্ষতর প্রশ্নের মধ্যেই সমস্যাটি এবং তার মোকাবিলার ভবিষ্যৎ নিহিত বলে আমরা মনে করি। তাই পাঠকরাও যদি পারেন, সাহায্য করুন, সূক্ষতর প্রশ্ন করে। বা তার উত্তর দিয়ে।
এক টুকরো নাইলনের দড়ি : সম্বুদ্ধ বিশী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ১৪৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
উপসংহারে লেখকরা লিখছেন, “ফাঁসীর আগে ধনঞ্জয় বলেছিল সে নিরপরাধ। গরিব বলে তার ফাঁসী হচ্ছে।" অতি সাধারণ কথা। যেকোনো ফাঁসীর আসামীই একথা বলতে পারে। পুরো বইটা পড়বার পরে এই বাক্যের অভিঘাত কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। একটা সিস্টেমের কাছে মানুষ কি পরিমাণ অসহায়, সেটা বারবার মনে হচ্ছিল এই লাইনটা পড়ে। বইটা যেদিন শেষ করি, সেটা কালীপূজোর রাত। যেরকম হয়, রাতের স্তব্ধতা ভেঙে মাঝে মাঝে পটকা কি তুবড়ির আওয়াজ আসছে। আমার কাছে তখন কিরকম অবাস্তব লাগছিল সবকিছু। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমার ধারণা, বইটা পড়লে যে কারোর মধ্যেই এই ঘোরটা তৈরি হবে। মানুষ যে framework এ বাস করে, তার ভিত ধরে টান দিলে এরকম হয়।
পশ্চিমবঙ্গে নিম্ন দামোদরের বন্যা কেন হচ্ছে? কী করণীয়? >> (২) ডিভিসি জলাধার ও নিম্ন দামোদরের বন্যা : আজাদি লাইভ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ১১৩৬ বার পঠিত
ফের এবছর ভয়াবহ বন্যার কবলে নিম্ন দামোদর এলাকা। ১৯৭৮ এবং ২০০১ সালের বন্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এর তীব্রতা। তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডিভিসি-র বাঁধগুলির কার্যকারীতা এবং পরিচালনা। একটি বড়ো দৈনিকে হেডিং হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জলে ডুবল বাংলা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দুটো প্রশ্ন তুলেছেন, এক) ডিভিসির জলাধারগুলোতে ড্রেজিং করছে না কেন কেন্দ্র সরকার? দুই) জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই অবস্থায়, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ‘ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা হলো’ – এটা লব্জে পরিণত হয়ে গেছে যেমন, তেমনি সম্ভবতঃ সামনের দিনে আরেকটি লব্জ তৈরি হতে চলেছে, ‘ঝাড়খণ্ডের জলে বন্যা বাংলায়’। মুশকিল হলো, এই কথাটা বলা আর ‘সূর্যের তাপে খরা বাংলায়’ বলার মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই ধরনের কথা, সমস্যাটি ঠিক কী, তা গুলিয়ে দেয়। সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়। এবং একইসাথে ভেতরে ভেতরে, এটা কোনো সমস্যা না, এই বোধও তৈরি করে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল নিষ্ক্রিয়তা।
আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, সমস্যাটি ঠিক কী, তা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরার। এবং তা এখনও পর্যন্ত দামোদরের বন্যা নিয়ে যা যা গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে। তার মধ্যেই থাকবে, কী করা যায়, কতটা করা যায়, সেসবও। আমরা অবশ্যই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ানোর পক্ষপাতী। সমস্যাটিকে বর্তমানের নিরিখে বোঝার পক্ষপাতী। এবং আমরা প্রশ্ন তীক্ষ্ণতর এবং সূক্ষতর করার পক্ষপাতী, যাতে ফারাকটিকে চেনা যায়। মোটা দাগের কোনো মতামতের তুলনায় সূক্ষতর প্রশ্নের মধ্যেই সমস্যাটি এবং তার মোকাবিলার ভবিষ্যৎ নিহিত বলে আমরা মনে করি। তাই পাঠকরাও যদি পারেন, সাহায্য করুন, সূক্ষতর প্রশ্ন করে। বা তার উত্তর দিয়ে।
অলীক মানুষঃ সৌন্দর্য ও বিষাদের প্রতিমা নির্মাণ : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ১১৭৪ বার পঠিত
উপন্যাসটি বিবৃত হয় কখনও সহজ বর্ণনায়, কখনও লম্বা-নেকো সেপাই নামের এক পাহারাদারকে আচাভুয়ার মত দাঁড় করিয়ে মনোলগের আকারে, কখনও টুকরো সংলাপে। উপন্যাসে বিধৃত হয় মাটির মায়াবন্ধন, ভোগবাসনার এই দুনিয়া, জীবনের রহস্যময়তা, শফির ক্রমাগত মেটামরফোসিস, ক্রমশ কিংবদন্তীর দিকে উড্ডীন এক নাচার পিরের অসহায় আত্মসমর্পন এবং জীবনের প্রতি ঘৃণা ও ভালোবাসার টানাপোড়েনে তৈরি একটি আলো ও অন্ধকারের নকশাদার জামদানি। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, ওই নক্শায় আলো ও অন্ধকারের চৌখুপি সমান উজ্জ্বল। এমন কী, অন্ধকার যেন তীব্রতায় আচ্ছন্ন করে প্রচলিত সমস্ত বোধ, আমাদের বেস্ট-সেলার গ্যাদগেদে রচনাসমূহ। নির্মাণকৌশলের ভেতরে চারিয়ে যাওয়া Negetivism এক অসামান্য দক্ষতায় প্রচলিত, মান্য এবং তথাকথিত শাশ্বত জীবনবোধকে অতিক্রম করে। অন্য এক অপরিচিত ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় পাঠককে। সাদা জিন ও কালো জিন সমস্ত উপন্যাসজুড়ে অদৃশ্য দোরঙা সুতোর বিনুনি বুনতে থাকে। লৌকিক আর অলৌকিকের দ্বন্দ্বে জমিনে ফোটে বিস্ময়কর কুসুম।
মায়ের কর্তব্য ভিন্ন কিছু নাই : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ মার্চ ২০১৭ | ১৫৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
স্বামী তো অদ্ভুত আচরণ করছে, সে দেখল। অপারেশনের দিন দেখতে এল, তারপর কেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে, অন্যমনস্ক হয়ে, কেমন যেন উদাসীন, বাড়ি চলে গেল, একটু মিষ্টি কথাও না বলে। গলা আটকে এল কান্নায়, মেয়েটির। বাচ্চাটা আমাদের দুজনের তো। তাহলে কেন আমাকেই শুধু থাকতে হবে ঠান্ডা সাদা এই নার্সিং হোমটায়। আর তুমি ভিতু আত্মীয়ের মত, অসুস্থা গিন্নিকে দেখে কাষ্ঠ হাসি হেসে চলে যাবে, তারপর পরদিন বলবে, সারা সন্ধে ছেলে বন্ধুরা তোমাকে ঘিরে রেখেছিল মালের আড্ডায়, কেননা, বাচ্চা হলেই গিন্নির প্রেম চলে যাবে, সব অ্যাটেনশন কেন্দ্রীভূত হবে বাচ্চার দিকে, তাই একলা হয়ে যাবে স্বামী, এই ভয়ে সে পারছিল না একা একা সন্ধেটা কাটাতে।
চণ্ডালিনী বৃত্তান্ত - পর্ব ৫ : আলপনা মন্ডল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ মার্চ ২০১৭ | ৯৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
আমার চণ্ডাল রাগ খপ করে চেপে ধরলো সেই হাত -কিন্তু শক্তিতে দুর্বল ধরে রাখতে পারলোনা বেশিক্ষণ । আমার নিজের ওপরই রাগ হতে থাকলো ,নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হল । কিন্তু এইভাবে হেরে যেতে আমি পারবোনা । একটা ঘিনঘিনে ভাব ,অদ্ভুত ভয় নিয়ে কি করে কাটাবো সারাদিন ? এর একটা বিচার দরকার । আমার মনের একদিকে তখন ভয় আমি যদি চ্যাঁচামেচি করি আমার ১৫০টাকার চাকরি তক্ষুনি যাবে । আবার সেই সুন্দরবনের খুদ কুড়োর পান্তা খাওয়া ,আবার বোনের স্কুলের মাইনে বন্ধ হওয়া ,মাঠে মাঠে গোবর কুড়ানো । কিন্তু আমার মনের অন্যদিক তখন চণ্ডাল রাগে ফুটছে,'সাটার পাটা’ যদি না ফেলে দিয়েছি আমি শালা বড় মাতব্বরের মেয়ে নই । কিন্তু কী করি -ফাঁদ তো পাততে পারি ? দিদিমা নাতি বিষয়ে অন্ধ ,সে যে একটি লোভী ,ভীতু ,শুয়োরের বাচ্চা সে বিষয়ে দিদিমা আমার মত এক কাজের মেয়ের কথা বিশ্বাস করবে কেন ? দাদুকে গিয়ে ধরলাম।
চণ্ডালিনী বৃত্তান্ত - পর্ব ৪ : আলপনা মন্ডল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | ৮৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
রাত হোয়ে গেল অথচ মেয়ে ভেড়ার পাল নিয়ে এখনো বাড়ি ফিরলোনা দেখে আমার বাবা মা কাকা কাকি এদিক ওদিক হ্যারিকেন নিয়ে খুঁজে বেড়াতে থাকলো – আমি তো তখন অনেক দুরে, অন্য এলাকার গম্ভীর মাঠের মাঝে নূতন কাটানো খালের একদম নিচের ঠাণ্ডা মাটিতে অঘোরে ঘুমাচ্ছি। ঘন অন্ধকারে, খালের ভেতরে মানুষ দেখবে কি করে? ওই খালের আসে পাশে নাকি মড়া বাচ্চাদের পুঁতে দেওয়া হত তাদেরই কেউ আমায় নিয়ে গেল নাতো? আমাদের এলাকার পেছন দিকে সেই গম্ভীর মাঠ, মাঠের এক কোনায় সেই নূতন কাটানো খাল, আর খালের ওপারে অন্য পাড়া। এপাড়া থেকে হাঁক পাড়া হচ্ছে কেউকি আমার মেয়ে, ভেড়ার পাল দেখেছো নাকি? মাঠ পেরিয়ে ও পাড়া থেকে উত্তর আসছে কই তেমন তো কিছু দেখিনি। আমি তখন অঘোর ঘুমে, আর আমাকে ঘিরে রয়েছে বড়মা আর বাকি সব ভেড়াদের পাল। সন্ধে হলে পোষা গরু ভেড়া ছাগলের দল নিজেরাই পথ চিনে ঘরে ফেরে, আমার ভেড়ার পাল’ও ফিরে যেতে পারত, আমি তো তাদের খোটায় বেঁধে ঘুমাতে যাইনি – কিন্তু ওই, বড়মার তো তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব আছে। তারা সবাই শেয়ালের ভয় ভেঙ্গে আমাকে গোল করে ঘিরে ধরে পাহারা দিচ্ছে ওই যে আমি বলেছিলাম ‘আমি একটু শুলাম তোমরা আমাকে ছেড়ে যেওনা’।
ডায়রি নয়, লিখিত এজহার! - পর্ব ১ : অভিজিত কুণ্ডু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : অন্য যৌনতা | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | ৯৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পরবর্ত্তী সময় “জেন্ডার কনস্ট্রাক্ট” নিয়ে তো অনেক পড়াশোনা করেছি, কিন্তু তখন তো বয়স মাত্র'চার'। কিন্তু ওই বয়সেই এই বোধটুকু তৈরী হয়েছিল যে ছেলেদের এত কোমল হ'তে নেই - এত মায়া মমতা, এত' দয়া দাক্ষিণ্য কি 'ছেলে'দের হ'লে চলে? তাদের ত' হ'তে হবে খাপছাড়া, বেমানান, ডানপিটে, মিটিমিটি, বদমাইশ। তবেই না ছেলে, ব্যাটাচ্ছেলে!! আর এ দেখ - সবকিছুই কেমন মানানসই, বড় সুন্দর, বড় নরম, "ভালো' এবং আদুরে টাইপ!! পাল্টে দাও, পাল্টে দাও একে !!
চণ্ডালিনী বৃত্তান্ত - পর্ব ১ : আলপনা মন্ডল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ | ২৩৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৩
আমি আলপনা,আলপনা মন্ডল,প্রথাগত অর্থে অশিক্ষিত। দাদার সংসারে ক্লাস ফোর এ ছাত্রবন্ধু কিনে দেয়নি বলে অভিমানে লেখা পড়া ছেড়ে ৯বছর বয়েসে কলকাতা পালিয়েছিলাম।আর পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি , আমি আর কোনদিন ছাত্রবন্ধু কিনে উঠতে পারিনি। আমার কম্পিউটার নেই,চালাতেও পারিনা, আধুনিক ফোনও নেই (তবে জিও আছে) এমনকি আপনাদের এই সভায় আমার প্রথম পোস্ট টি লিখতেও কেউ আমাকে সাহায্য করছেন। তবে শিখে যাব,পারবই। গুরুচণ্ডা৯ নাম দেখে আগ্রহ জেগেছিল, কিন্তু গ্রুপে সবাই দেখলাম বামুন/কায়েত তবুও আমার মত চণ্ডাল -অশিক্ষিতা কে জায়গাবদল করবার আমার কথা বলবার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আমাদের কথা কেউ মনেও রাখেনা। আমি এখনও নিজে কম্পিউটার চালাতে জানিনা, কম্পিউটারে কী করে টাইপ করতে হয় জানিনা। আধুনিক ফোন নেই তবে জিও আছে । আমি বলি,ব্যাঁকা ট্যারা করে রুল টানা কাগজে লিখি, কাটি, মুছি, কেউ আমাকে সাহায্য করেন,তিনি সাজান গোছান, আমাকে পড়ান, মতামত নেন তারপর পোস্ট করেন। এখনো আমি পুরোপুরি লেখিকা নই কিন্তু কথা আমার । আমার নিজের জীবনের ।
জাদুর নাম ডিমনেটাইজেশন -প্রথম পর্ব : শেখর মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ | ৬৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
১৯৪৬ ও ১৯৭৮ সালেও টাকার ডিমনেটাইজেশন ঘটেছিল। তার ফলে কালো টাকা ও জাল টাকা নির্মূল হয়নি। বরং, সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির হিসাবমতো, ১৯৭৫-৭৬ আর্থিক বর্ষে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জাতীয় আয় (জিডিপি) এর ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। ১৯৮০-৮১ তে তা বেড়ে হয় ১৮ থেকে ২১ শতাংশ। বর্তমানে কালো টাকা জাতীয় আয়ের ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। সুতরাং, তত্ত্বের পাশাপাশি সময়ের ধারায় বাস্তবেও এটা প্রমাণিত যে, ডিমনেটাইজেশন নীতি কালো ও জাল টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদর্শ অস্ত্র নয়। তাত্ত্বিক দিকটা এবার একটু বিশদে দেখা যেতে পারে। আগেই বলেছি যে, কালো টাকা আসল অপরাধী নয়। আসল অপরাধী হল কালো কারবার। অনেকসময়ই ওয়েলথ, অ্যাসেট ও মানি, এমনকী আয়ও সমার্থক ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থনীতিতে এগুলির প্রভেদ গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েলথ, অ্যাসেট ও মানি এই তিনটিই স্টক কনসেপ্ট অর্থাৎ, একটি সময়-বিন্দুতে এদের পরিমাপ করা দস্তুর।
প্রশ্নোত্তরে পাওয়ার গ্রিড, ভাঙড়ের গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের পটভূমিতে : শমীক সরকার ও পিনাকী মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ | ৮৫৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮২
যেভাবে বারবার 'পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসকারী' ইত্যাদি হালকাভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে – সেটাও খুব তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে নেই। পাওয়ার গ্রিডের বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে, ডিটেলে ক্ষতির পরিমাণ লিপিবদ্ধও করা আছে। সেগুলো মূলতঃ যখন টাওয়ার বসানো আর তার লাগানো হচ্ছে, সেই সময়কার এককালীন ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু কোথাও এমন উদাহরণ নেই যে চাষের জমির ওপর দিয়ে হাই ভোল্টেজ লাইন গেলে সেখানে আর চাষ করা যায় না। বা ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ব্যহত হয়, মাছ মরে যায় – ইত্যাদি ইত্যাদি। বরং এই অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে একটাও প্রামাণ্য কেস স্টাডি নেই। সায়েন্টিফিক কমিউনিটির (যারা বিজ্ঞান গবেষণার কাজ করে) মধ্যে এরকম কোনো কনসেন্সাস বা ঐক্যমত্য তো দূরস্থান, 'একাংশের মধ্যে সিরিয়াস কনসার্ন' – এরকম কিছুও শোনা যায় না । গোটা পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার ব্যাপী হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন আছে। চাষের জমি, পুকুর, ভেড়ি – এসবের ওপর দিয়েই আছে বহু দশক ধরে। চাষ, মাছের ভেড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে – এরকম অভিযোগ শোনা যায়নি। সত্যিই যদি যেত, যদি একটা অঞ্চলেরও বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হয়ে থাকতো গত পঞ্চাশ বছরে, তাহলে সেটার প্রমাণ থাকতো চোখের সামনেই। সেটা একটা উদাহরণ হয়ে যেত। কিন্তু শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা প্রযুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে আমাদের চোখ কান সবসময় খোলা রাখা উচিৎ। পৃথিবীতে চাকা আবিষ্কারের সময় থেকে শুরু করে আজ অব্দি একটাও এমন প্রযুক্তি বোধহয় নেই যার কোনো পরিবেশগত কুপ্রভাব নেই। আর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি – এই কথাগুলো শুনলেই সেগুলোকে অন্ধভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করারও কিছু নেই। ভবিষ্যতে যদি কোনো ক্ষতি সত্যিই চোখে পড়ে সেগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে।
বাবা, ভাই এবং অন্যান্য ... : নেহা দীক্ষিত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ জুলাই ২০১৭ | ৯২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
প্রিয়ার কথায়, “প্রথম যেবার এটা ঘটে, মা তখন রান্নাঘরে। বাবা একটু আগে কাজ থেকে ফিরেছে।আমি বাবার ঘরে গিয়েছিলাম, চা দিতে। বাবা দরজাটা বন্ধ করে দেয় আর আমার সালওয়ার ধরে টান মারে। আমি চেঁচিয়ে উঠেছিলাম যখন আরো এগোতে শুরু করল, কিন্তু বাবা চুপ করিয়ে দিল, বললো আমি চেঁচালে জিন কুপিত হবে –বলতে বলতে প্রিয়া নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, শূন্যদৃষ্টিতে। পরে ওর বাবা ওকে বুঝিয়েছিল, প্রিয়ার উপর যে জিনটা ভর করেছে, সেই মাঝে মাঝে বাবার উপরেও চড়াও হয় আর ধর্ষণ করিয়ে নেয়।
প্রিয়া যখন মাকে জানালো, মা বললো চুপ করে থাকতে। মা পড়াশুনো শেখেনি কখনো, বাড়ির বাইরেও পা দিয়েছে ক্বচিৎ কদাচিৎ। অমিত, প্রিয়ার এক বছরের ছোট ভাই। অমিতকে যখন প্রিয়া বাবার কথা জানালো, সেই রাতেই অমিত ওকে ধর্ষণ করে।“ও খুব গোদাভাবে আমাকে বললো যে এটা ও করছে নিজের তৃপ্তির জন্য”, প্রিয়া জানালো।
ঈদের রঙ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ জুলাই ২০১৭ | ২০২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
দলবেঁধে আসত দিভাই আপুলি দাদুর বন্ধুরা । কে হিন্দু কে মুসলিম এরকম অনেককেই আমি সত্যি জানতাম না। ওদিকে রান্নাঘরে তখন মা ক্ষেপে গেছে। অসম্ভব। আমি কারো জাত নষ্ট করতে দিতে পারব না। টিকিয়া কিছুতেই মা দেবে না। আর এরা খাবেই। শেষ পর্যন্ত মিথ্যে বলে তবে টিকিয়া বের করা হত। আমি আর ভাইয়া ঘুরঘুর করতাম সেলামি নেওয়ার জন্যে। ব্যাগ ভরে টাকা পয়সা নিয়ে আমরা ছুটে যেতাম আইসক্রিমের দোকানে। তখন নতুন নতুন আইসক্রিম আসছে মার্কেটে। বিরতিহীন খেয়ে যেতাম আমরা ছোটরা। জিভ ভারি হয়ে কথা আটকে যেত। অইদিন গরিবদের ছেলেমেয়েরাও আইসক্রিম কিনতে আসত। তারাও সস্তা কাপড়ের নতুন জামাকাপড় পরে আনন্দ করত। কিন্তু এত আনন্দের ভেতরেও খারাপ লাগত যখন দেখতাম এই ঈদের দিনেও কেউ ভিক্ষে করছে বা ছেঁড়াফাটা পুরান জামা পরে মুখ কালো করে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের শহরে হামবড়ামি করত যারা তাদের কেউ কেউ এদের তাড়িয়ে দিত। কেউ কেউ আবার দুষ্টুমি করে আমাদের বাড়ি দেখিয়ে দিত। মা যতটা পারত দিত। বাপি মাকে শিখিয়েছিল, দিও কিঞ্চিত না করে বঞ্চিত। আমরা তো অই হামবড়ামি টাইপের ধনীলোক ছিলাম না। ওদের গেট বন্ধ থাকত, শবে বরাত, ঈদ, কুরবানির দিনগুলোতে। গরীবরা কিছু না পেয়ে কত কি যে অভিশাপ দিত। শেষবারের মত বলত, আল্লাহ বিচার করবিনে, একদিন আমাগের মত ভিক্ষে করতি হবিনে ওগের। এই ধনসম্পদ কিছুই থাকপি নানে তহন। আল্লাহ কিন্তু ওদের ছাপ্পড় ফুঁড়ে দিয়েছে, দিয়েই গেছে। গরীব আরো গরীব হয়েছে। আমি আর ভাইয়া এগুলো ভালো করে দেখে টেখে ঠিক করেছিলাম, কাউকে মুখে কিছু বলব না। সুযোগ পেলে মেরে দেবো।
রথের রশিতে টান : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ জুলাই ২০১৭ | ২৫২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কিন্তু এর আগে কখনো এমন হয়নি। গুর্জরদেশের সৌরাষ্ট্রের উপর দিয়ে যখন সমগ্র জম্বুদ্বীপে আর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কামনায় শ্রীকৃষ্ণ তাঁর রথযাত্রা সূচিত করেছিলেন, তখন থেকেই সে যাত্রার নিয়তি ছিল অপ্রতিরোধ্য বিজয়। অবশ্য রথযাত্রা করতেই হত। কিছুকাল পূর্বেই হস্তিনাপুর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে রাজকার্য, অমাত্য, সান্ত্রী, শাসন ইত্যাদি কর্মে সাতাশ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে শূদ্র, দ্রাবিড় এবং নিষাদদের হাতে। এ রায়দান অসহ্য, এবং সমগ্র জম্বুদ্বীপের আর্য স্বাভিমানের উপর মস্ত বড় আঘাত। দূষিত রক্তের অধিকারী এই সব পশুর মত লোকজন, যারা গণ্ডায় গণ্ডায় সন্তান উৎপাদন, সন্ত্রাসী কার্য্যকলাপ এবং অরণ্য আশ্রমের সমাহিত শান্ত পরিবেশকে দূষিত করা ছাড়া আর কিছুই করেনি এতকাল ধরে, সেই তাদেরকে এখন তোষণ করে চলতে হবে! এবং সেটাও হস্তিনাপুর রাজচক্রবর্তীর পেছনে জনসমর্থন সংহত করবার খাতিরে! এতখানি অন্যায় স্বাভিমানী আর্যের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রথম গর্জন এসেছিল পশ্চিম প্রান্তের মহারট্ট প্রদেশের তিলক কুলপতির থেকে। তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করে বলেছিলেন এই রায় কার্যকর হলে সমগ্র জম্বুদ্বীপ দ্রাবিড় রক্তে সিঞ্চন করে পরিশুদ্ধ করবেন তিনি। আর্যহৃদয়সম্রাট চতুর শ্রীকৃষ্ণ বুঝেছিলেন এটাই উপযুক্ত ক্ষণ। এখনই যদি আর্য সংখ্যাগুরুকে রক্তের স্বাদ না দেওয়া যায়, তাহলে সাম্রাজ্য গঠনের স্বপ্ন অধরাই থাকবে। এই সাম্রাজ্য গঠনের মূল বাধা যে প্রাচীন প্রথা, অর্থাৎ মহাজনপদগুলির গণতান্ত্রিক উপায়ের মাধ্যমে সম্রাট নির্বাচন, সেই গণতন্ত্রকে পিষে ফেলে আর্য একনায়কতন্ত্রের বিজয়রথ চালাবার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। ঠিক সেই কারণেই মন্দির স্থাপনার আহ্বান।
অসন্তোষের কারণ : কৌশিক দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জুলাই ২০১৭ | ১২৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
নিদারুণ অবিশ্বাসের পরিবেশে ভালো কাজ হয় না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানি, জটিল রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসার ক্ষেত্রে ষষ্ঠেন্দ্রিয়ের ভূমিকা বিরাট। রোগী দেখার সময় পূর্ণ মনোযোগ রোগীর দিকে দিতে পারলে তবেই মনের সবটা, ষষ্ঠেন্দ্রিয় সমেত, কাজ করে। যদি অর্ধেকটা মন পড়ে থাকে নিজের পিঠ বাঁচানোর দিকে, রোগী দেখার সময় যদি ভাবতে হয় “এই রোগী নিয়ে কী ধরণের কেস খেতে পারি” বা “এর বাড়ির লোক ঝামেলা করতে পারে কিনা”, তাহলে মনের সেই আশ্চর্য রত্নভাণ্ডারে তালা পড়ে যায়, বদলে সামনে আসে কৈকেয়ীর গোঁসাঘর আর মন্থরার ফিসফাস। রোগীকে ভালোবেসে দেখা, তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে “কিচ্ছু হবে না, আমি তো আছি” বলা, বা হাল ছেড়ে দেবার আগে নিজের জ্ঞানবুদ্ধি অনুসারে নিয়মের বেড়া ডিঙিয়ে শেষ চেষ্টা করার বদলে এখন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি শব্দ খাতায় লিখে রাখা, আত্মীয়দের কটার সময় কী জানানো হয়েছে তা নথিবদ্ধ করে সই করিয়ে নেওয়া, বইতে যেটুকু লেখা আছে তার বাইরে যাবার চেষ্টা না করা, দায়িত্ব নিজের কাঁধে না রেখে অন্যান্য স্পেশালিস্টদের রেফার করে দেওয়া, ইত্যাদি। যেন রোগীকে নয়, নিজেকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসা করছি। এভাবে আর যাই হোক, সুচিকিৎসা হয় না। যাঁদের প্রতি সমানুভূতি লাভ করার কথা, তাঁদেরকেই সম্ভাব্য আক্রমণকারী বা আদালতের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবতে হবে বলে যদি জানতাম, তাহলে আমরা অনেকেই হয়ত অন্য পেশা বেছে নিতাম, যেখানে এর চেয়ে কম পরিশ্রমে এর চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারতাম। চিকিৎসা পেশার একটা নেশা আছে, যেটা চলে গেলে আমাদের অনেকের জন্যেই কাজটি অর্থহীন হয়ে যায়।
ন্যায়বিচারের রাজনীতি : শমীক সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৪১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
জাস্টিস বা ন্যায়বিচারের রাজনীতির বিষয়ী কে? একজন জাজ। জাস্টিস রাজনীতি মানবাধিকার রাজনীতিকে তার নিজের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। মানবাধিকার রাজনীতির ভূমিকা আমরা আগে একটু আলোচনা করেছি। মানবাধিকার রাজনীতি কোনো স্বাধীন রাজনীতি নয়। সর্বমঙ্গলের রাজনীতির যে মাতব্বরী, যে গায়ে পড়া ভাব, তার কমপ্লিমেন্টারিটি বা পরিপূরক। জাস্টিস রাজনীতির একটা অবশ্যম্ভাবী পূর্বশর্ত আক্রমণ। অভিজিত নন্দী ফেসবুকে লিখেছিলেন, “কখনো একটি মেয়ে, কোন পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত হলে, তার পরিচয় হয়ে ওঠে সেটাই। সেই পরিচয়টা তখন তাকে ধারণ করে। মেয়েটি তার সবকিছুকেই সেই ছাঁচে ফেলতে বাধ্য হয় – অনেক সময় বাধ্য হচ্ছে না জেনেই। তার চারিপাশের পৃথিবীটা সম্বন্ধে তার ধারণা গড়ে উঠতে থাকে একটি আক্রান্ত মেয়ের প্রাসঙ্গিকতা থেকেই। যাবতীয় ব্যক্তিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা এবং সহানুভূতিও তাকে সেদিকেই ঠেলে দেয়। একই ঘটনা ঘটে যখন একটি দলিত মানুষ বা একজন মুসলমান যদি আক্রান্ত হয় কোন বর্ণহিন্দু দ্বারা। 'আক্রান্তের দর্শন' একটি অবশ্যম্ভাবী এবং বিপজ্জনক সম্ভাবনা আধুনিক পৃথিবীতে।" এইখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোনো একজন ব্যক্তি (বা দশজন ব্যক্তি) র 'আক্রান্ত' নামে একটা পরিচয় গড়ে ওঠা বা গড়ে তোলা এবং তার মধ্যে দিয়েযেন বা পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি হিসেবে জাস্টিস রাজনীতির অনুপ্রবেশ। কিন্তু এইবার আসল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা। আক্রান্ত কি রাজনীতির বিষয়ী? সে নিজেকে বিষয়ী মনে করলেও সে কি আদৌ বিষয়ী? নাকি এখানেও কোনো ছুপা বিষয়ী আছে?
কী করে সন্দেশটা খেতে হবে, শিখিয়েছিলেন লিয়াকতদা : মুকুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৮২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
বাউল-ফকিরদের তিন দিনের এক উত্সবে প্রাণের বাগান তখন জমজমাট। মনসার থানের পাশে এক গাছতলায় এক দল কিশোরকিশোরী হইহই করছে। দুপুরে খাওয়ার পর গানবাজনা তখন বন্ধ। বড়রা বিশ্রাম নিচ্ছে। এক শহুরে মা বলে উঠলেন, ‘ইস্, কী যে করছিস তোরা সব এই ধুলোময়লায়!’ বাচ্চারা খুব একটা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু এক জিনস, ফুল শার্ট পরা ‘বুড়ো’ লোক মিটিমিটি হাসতে হাসতে সেই মা-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ধুলোকে ময়লা বলছেন কেন?’ আমার শহুরে শিক্ষা সেই মায়ের শাসনে চমকায়নি। চমকালাম লিয়াকত আলির ওই প্রশ্ন শুনে। এ ভাবেই লিয়াকত আলির সঙ্গে পরিচয়। শহুরে মানুষের অভিজ্ঞতায় ধুলো আর ময়লা এপিঠ-ওপিঠ। কিন্তু প্রকৃতি যেখানে এখনও ‘আধুনিকতা’র ছোবলে ক্ষতবিক্ষত নয়, সেখানকার ধুলো যে ময়লা নয়, সেটা লিয়াকতই প্রথম শিখিয়েছিল আমাদের অনেককে।
ধুকুপুকু বুক কাঁপে শুধু যে রাতে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৪১৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৪
হিন্দি সিনেমার গান শুনে বাঙালি কেন উলুতপুলুত হয়, আপাতদৃষ্টিতে বোঝা মুশকিল। যে ঘরানার গানের শ্রেষ্ঠ লিরিক নাকি 'মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হ্যায়', অর্থাৎ কিনা 'আমার কিছু মালপত্তর তোমার কাছে পড়ে আছে' আর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ লিরিক তর্কযোগ্যভাবে 'বিড়ি জ্বালাইলে', অর্থাৎ কিনা 'সিঁড়ির নিচে বিড়ির দোকান', সে গান শুনলে এমনিই ভদ্রজনের মাথা হেঁট হয়ে যাবার কথা। হিন্দি বলয়ের কথা আলাদা, ওদের এরকমই কপাল। ইউপি-বিহারে আধুনিক কালে কোনো জীবনানন্দ জন্মাননি। আর অতীতের গৌরব যা ছিল, সেসব স্টিমরোলার চালিয়ে কবেই ফ্ল্যাট করে দেওয়া হয়েছে। ব্রজবুলি বা মৈথিলির যে মাধুর্য তাকে র্যাঁদা মেরে বাতিল করেই আধুনিক হিন্দুস্তানির বাড়বাড়ন্ত। আর লক্ষ্ণৌ এর যে ডায়লেক্ট গায়ে -কাঁটা দেওয়া ঠুংরি গজল উৎপাদন করেছে একটানা, বাহাদুর শার সঙ্গে তাকে প্রাথমিকভাবে বার্মায় নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। দূরদর্শনের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম এসে তৎসম হিন্দুস্তানি দিয়ে কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়েছে। অভাগা হিন্দিবলয়ের অধিবাসীদের দুর্ভাগ্যে তাই খোঁটা দিয়ে লাভ নেই। সবই কপাল। কিন্তু বাঙালিরা কেন "আমার কিছু মালপত্তর (ওহো আহা), তোমার কাছে পড়ে আছে (ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ)" বলে আহা উহু করে বোঝা মুশকিল।
এক বহিরাগত সিনেমাওয়ালা - শেষ পর্ব : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৯৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কিন্তু এসবের আগেও বলতে হয় "কভি হাঁ কভি না"র কথা। ১৯৯২ সালেই, "বাজিগর", "ডর" রিলিজ হওয়ার আগেই নির্মিত এই ছবি তৈরির গল্প নিজেই এক ট্র্যাজিকমেডি। জনপ্রিয় সিরিয়াল হিসেবে "ফৌজি" সার্কাস" ইত্যাদির পরে শাহরুখ একটু একটু নাম করেছেন। মুম্বই এসে একে একে ছবিতে কাজ পাচ্ছেন, সইটই চলছে। কুন্দনের সাথে "ওয়াগলে কী দুনিয়া" ও "উমীদ" বলে দুটি টেলিভিশনের কাজের সুবাদে শাহরুখের পরিচয় ছিলো। কভি হাঁ কভি না'র গল্প ভালো লাগায় কথাবার্তাও চূড়ান্ত হলো। ফি ছিলো পঁচিশ হাজার টাকা। এরপর ছবি তৈরি হয়ে বসে রইলো, ডিস্ট্রিবিউটররা কিনতে রাজি হলেন না (এ একেবারেই সুধীর ও বিনোদের মত দশা)। বাজিগর, ডর ততদিনে বেরিয়ে ব্লকবাস্টার, তাও এই অবস্থা। এসে গেল ১৯৯৪ সাল। ছবিটি কোনদিন দিনের আলো দেখবেনা বুঝে শাহরুখ নিজেই মুম্বই এলাকায় ডিস্ট্রিবিউটিং রাইটস কিনলেন। কুন্দন পরে বলেছেন, ঐ লো বাজেট ছবি যতদিনে খ্যাতি পায় বা কাল্ট হয়, ততদিনে একযুগ কেটে গেছে। ঠিক যেভাবে জানে ভি দো ইয়ারোঁ যেসব কলেজের ছেলেমেয়েদের সময় বানানো হয়েছিলো, সমাদর পেয়েছিলো তার পরের প্রজন্মের কাছে, সেইরকম।
পহেলি ঝাঁকি ও তারপর : ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সিকি শতাব্দী : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৩৪৫ বার পঠিত
কমিশন উত্তর প্রদেশের তৎকালীন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংকে কড়া ভাষায় অভিযুক্ত করে। সঙ্ঘ পরিবার যা যা চেয়েছিল কল্যাণ সিং এর সরকার তাই তাই করেছে বলে কমিশন মন্তব্য করে। পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হয় সেই সমস্ত আধিকারিকদের যারা সঙ্ঘের কার্যকলাপে বাধাস্বরূপ ছিলেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঢিলেঢালা করে তোলা হয়। তারা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট এর কাছেও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। কলরাজ মিশ্র, উমা ভারতী, গোবিন্দাচার্য, শঙ্কর সিং বাঘেলা, বিনয় কাটিয়ার, সাক্ষী মহারাজ প্রমুখ বিজেপি নেতাদেরও কমিশন এই ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করে। কমিশন অবশ্য নরসীমা রাও এর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে এই ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করে নি, যা খানিকটা অবাক করার মতো ব্যাপার।
হিন্দুত্বের রঙ গেরুয়া - আর সেই গেরুয়া রঙের আড়ালে বাংলায় আরএসএসের কীর্তিকলাপ (প্রথম পর্ব) : শৈবাল দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০১ অক্টোবর ২০১৭ | ৪৪২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
সবথেকে খারাপ লাগত যেটা, সেটা হচ্ছে এদের বেশির ভাগেরই বাংলা আর বাঙালিদের সম্বন্ধে একটা নিচু দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে চলা। এদের কাছে বাংলায় কথা বলা যে-কোনও লোকই বাংলাদেশি, যারা সঙ্ঘের জয়যাত্রাকে রুখে দেবার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে অবিরাম। আমি একবার শুনেছিলাম আশুতোষ ঝা নামে এক নামী ল কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রকে ভোপালের বাসিন্দা জনৈক ময়াঙ্ক জৈন টাস্ক দিচ্ছে, হয় অন্তত ৫০ জন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে এসো, নয় তো সঙ্ঘ ছেড়ে দাও।
এঁদের অনেকেই খোলাখুলি অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে রাখতে উৎসাহ দিতেন, যাতে কিনা দরকার পড়লে মুসলমানদের আর রাজ্যের পুলিশদের সাথে টক্কর দেওয়া যায়।
আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে, আমি কিছু সিনিয়র সঙ্ঘ সদস্যের সুনজরে পড়ে গেছিলাম। প্রশান্ত ভাট থেকে ডক্টর বিজয় পি ভাটকর, প্রায় যতজন সিনিয়র সঙ্ঘ ইন্টেলেকচুয়ালকে আমি জানতাম, প্রত্যেকেই হিন্দুত্বের ওপর আমার কাজকর্মের খুব প্রশংসা করেছিলেন।
ইজাইয়াহ, ইল্বল ও ঘাতকের শুদ্ধীকরণ : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ অক্টোবর ২০১৭ | ১৬১০ বার পঠিত
পশ্চিম য়ুরোপের লোকজন আর পূর্ব য়ুরোপের স্লাভ-স্লোভাকদের মধ্যে সম্পর্ক আমাদের দেশের মতো বর্ণাশ্রমের নিয়ম মেনে চলেছে। একজন জর্মন, থাকতেন ইংলন্ডে, আদৃত ছিলেন ফ্রান্সে, ভাবতেন আমেরিকাকে নিয়ে। কিন্তু তাঁর পথ নিলো একটা স্লাভ-কসাকদের দেশ। যাদের পশ্চিম য়ুরোপে মানুষই মনে করা হতনা। য়ুরোপের 'যুক্তিবোধ' অর্থোডক্স চার্চের 'গণতন্ত্রহীন' আনুগত্যকেই সাম্যবাদের বীজতলা হিসেবে ভেবে নিয়েছিলো। সেই কোনকালে যখন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ পাহাড়ে থাকতেন, সারদাদেবী খুব উদ্বিগ্ন, রাতে ঘুম আসেনা। তাঁকে লোকজন বলেছে রাশিয়ান দানবরা আসবে পাহাড় পেরিয়ে। সব্বাইকে জ্যান্ত খেয়ে নেবে। তখন কোথায় মার্ক্স-এঙ্গেলস, কোথায় লেনিন? তার পর আবার সেই দাড়িওয়ালা জর্মনের পথ নিল য়ুরোপের বিচারে একটা অর্ধসভ্যদেশ, চিন। কেন ফ্রান্স পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ হলনা? সেটাই তো স্বাভাবিক ছিলো। ভলতেয়রের থেকে মার্ক্সের বিবর্তনটিই সরলতম উপপাদ্য হতে পারতো। চিরন্তনভাবে অ্যাডাম স্মিথ বা হেগেলের পথ দিয়ে ডিসকোর্সটিকে ব্যাখ্যা করার থেকে একটা ব্যতিক্রমী সমান্তরাল বিকল্পও তো সম্ভব ছিলো। সত্যিকথা বলতে কী, একসময় রাশিয়ার সব চিন্তাশীল, অগ্রণী মানুষেরা প্রশ্নহীনভাবে ফরাসি মননকেই অনুসরণ করতেন। তবু ফ্রান্স সমস্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সারোগেট মা হয়েই থেকে গেলো। অথবা জর্মনটির নিজের দেশ? তারা হয়ে গেল নাৎসি। পশ্চিম য়ুরোপের কোনও দেশ এই দর্শনটিকে আত্মসাৎ করার হিম্মত দেখাতে পারলে সমাজতন্ত্রকে আর জুজু ভাবার অবকাশ থাকতো না কারো কাছে।
রইলো বাকি, বাজার, বাজার, তোমার মন নাই, মানুষ?
কাকে বলে রোগী কেন্দ্রিক চিকিৎসা? ( প্রথম পর্ব) : অরিন্দম বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ অক্টোবর ২০১৭ | ১১১৮ বার পঠিত
ঝলসানো চামড়ার ও ফোসকার ড্রেসিং করাতে আমার পরিচিত একটি ক্লিনিকে গেলাম। সেখানে এক অপরিচিতা নার্স আমার চিকিৎসা করলেন। তিনি ড্রেসিং করার সময় থমথমে মুখে কাগজ দেখে মন দিয়ে কাজ করে গেলেন, আমার সঙ্গে একটি কথাও বললেন না। আমার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল যে তাঁর সামনে একজন মানুষ বসে আছে, সে মাঝে মাঝে যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠছে, তাকে আমল দেওয়া দূরের কথা, যন্ত্রণা হচ্ছে কি না, একবার জিজ্ঞেসও করলেন না, খস খস করে কাঁচি দিয়ে, এমন ভাবে পোড়া চামড়া কেটে দগদগে কাটা ঘায়ের ওপর মলম আর পটি দিয়ে ড্রেসিং করলেন হাতটা যেন শরীরের বাইরের কোন একটা অংশ, তারপর নিপুণ হাতে পরিপাটি করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিলেন। দিয়ে আমাকে মৃদু শাসনের সুরে বললেন, এই ভাল করে ড্রেসিং করে দিলাম, বাইরে বসে একটু জিরিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে যান। দেখবেন যেন একটুও জল লাগাবেন না, সাত দিনে সেরে যাবে।
চিকিৎসা শুরু হবার দশ দিনের মাথায় হাতের ঘা সেরে গেল, পটি খোলা হল। আমি সুস্থ হলাম। আমার চিকিৎসা যে চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্টরা, নার্স-রা করেছেন তাঁরা সকলে অভিজ্ঞ ও দক্ষ, তাঁদের পেশাগত নৈপুণ্য প্রশ্নাতীত, ক্লিনিকটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, তাতে প্রায় যত রকমের আধুনিক ব্যবস্থা থাকা প্রত্যাশিত সব ছিল। আমার দেশ, নিউজিল্যাণ্ডে, সরকার দেশের মানুষের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন, তাই আমার চিকিৎসার মোট খরচ নামমাত্র, এবং আমি যথাসময়ে কোন রকম গোলমাল ছাড়াই পুরোপুরি ভাল হয়েও গেছি ।
রোহিঙ্গা সংকট ও সমাধান বিষয়ক প্রস্তাবনা- তৃতীয় পর্ব : স্বকৃত নোমান
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ অক্টোবর ২০১৭ | ১১৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আরবীয় ইসলাম বঙ্গে এসে বঙ্গীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নানা বিষয়ে আপোষ করতে বাধ্য হয়। এই আপোষের কথা সবাই জানেন। তবু ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি যখন ভারতে ইসলাম প্রচারে এলেন তখন ভারতবাসী নিম্নবর্ণের হিন্দুদের পোশাক ছিল ধুতি ও নেংটি। খাজা ও তার সঙ্গীদের পোষাক ছিল পায়জামা ও আলখাল্লা। খাজার এক শিষ্য একদিন খাজাকে বললেন, ‘হুজুর, হিন্দুরা তো অনৈসলামিক পোশাক ধুতি-নেংটি পরে। আপনি এদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে দিন।’ . খাজাসাহেব শিষ্যের কথা পাত্তা তো দিলেনই না, উল্টো তিনি নিজেই ধুতি পরা ধরলেন। পায়জামা-আলখাল্লা দেখে এতদিন খাজাসাহেবকে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ঠিক ওভাবে গ্রহণ করতে পারছিল না। তিনি যখন ধুতি পরা ধরলেন তারা ভাবল, আরে, খাজাসাহেব তো আমাদেরই লোক! এই যে তিনি আমাদের মতো ধুতি পরছেন! তখন নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তার অনুরাগী হতে লাগল। তার হাতে বয়েত নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। পরবর্তীকালে খাজাসাহেব তার সেই শিষ্যকে বললেন, আমি যদি প্রথমেই এদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করতাম তারা আমার কথা শুনত না। কিন্তু এখন আমি যা বলি তা-ই শুনবে। . বঙ্গীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আরবীয় ইসলামের আপোষ বা সমন্বয়টা ছিল ঠিক এরকম। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের মনোভাবটা নেই। হ্যাঁ, একটা অংশের ছিল।
সুর তো ফকির : সুশোভন প্রামাণিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ অক্টোবর ২০১৭ | ১০৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আলাউদ্দিনঃ দেখো দিকি আবার মালা ক্যানো!
রবীন্দ্রনাথঃ নন্দলাল খাঁ সাহেব বলছেন; ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে’, ভেবে দেখতে হবে কে কার অলঙ্কার!
মালা খাঁ সাহেবের না খাঁ সাহেবের মালা।
খাঁ সাহেব স্মিত হেসে আসন গ্রহণ করেন।
রবীন্দ্রনাথঃ সাহানা
‘সুরের রসে হারিয়ে যাওয়া সেই তো দেখা সেই তো পাওয়া---
বিরহ মিলন মিলে গেলো আজ সমান সাজে’।।
রবীন্দ্রনাথঃ নির্মল থামলে কেন ? ভয় পেয়ো না, খাঁ সাহেবও একদিন শিখেছেন তুমিও তো শিখছো। তফাৎ হল খাঁ সাহেব ওস্তাদ আহমদ আলীকে গুরু পেয়েছিলেন তুমি স্বয়ং খাঁ সাহেবকেই পাচ্ছ। আসলে ‘অরূপরতন’ নাটক মঞ্চস্থ হবে। তারই প্রস্তুতি চলছে। খাঁ সাহেব সঙ্গীত ভবনে যারা তারের যন্ত্র বাজায় তাদের তার যতটা যত্নে টেনে বাঁধা, সুর ততটা নয়। আপনি যে ক'দিন আছেন, একটু সুর বেঁধে দিন।
আলাউদ্দিনঃ গুরুদেব আমি তো বেসুরা আতাই, জীবনে তো একটা সুর লাগাইতে পারলাম না। আমি হলেম গিয়ে ম্লেচ্ছ, ডাকাতের বংশ।
রবীন্দ্রনাথঃ ডাকাতের বংশ বলেই তো খাঁ সাহেব যখন যাকে গুরু পেয়েছেন প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁর সুরের নির্যাসটুকু এমন করে নিজের করে নিয়েছেন যে, সে বেচারা নিজের ধন আর নিজের কাছে রাখতে পারলো না। এমন ডাকাত তো আমার সঙ্গীত ভবনে আরও কয়েকটা চাই।
কুমারীবালাদের বিশ্বকাপ : মধুবন্তী দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ অক্টোবর ২০১৭ | ১০৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শেষ বিকেলের মরা আলোয় চিকচিক করে ওঠে রিকশচালক হরেন দাসের চোখ। খালপাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘অঙ্কটা খুব সহজ, দাদাভাই। বাইরের দেশের লোকজনের সামনে দেখাবে সল্টলেকে কোনও গরীব নেই, নোংরা নেই। সব ঝকঝকে চকচকে। তাই আমদের চলে যেতে বলেছে। কালো প্লাস্টিক না কী রাখা যাবে না। কালো প্লাস্টিক মানেই নোংরা, জঞ্জাল।’’ হরেনের ছেলে আকাশ লেবার খাটেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের যাদবপুর, টালিগঞ্জ, নেতাজিনগর, বাঘাযতীন কী করে তৈরি হয়েছিল? সেগুলো জবরদখল নয়? তাহলে ওই এলাকাগুলো ফাঁকা করা হোক। একতা হাইটস ভাঙা পড়ুক। আমরা গরীব, আপনাদের সরকারের আমাদের কাজ দিতে পারে না, তাই আমরা ঝুপড়িতে থাকি। সেটা অন্যায়?’’
এক বহিরাগত সিনেমাওয়ালা : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ অক্টোবর ২০১৭ | ১১৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
কিন্তু এই কাজগুলোর সবকটাতেই সেই সময়ের দুটি চরিত্র স্পষ্ট। এক, এই সেই সময় যখন শিক্ষিত চাকরি করা স্বচ্ছল মধ্যবিত্তের সাথে নিম্নবিত্তের মানসিক দূরত্ব অনেক কম ছিল। দুই, ভারতীয় সমাজে তখনও ব্যক্তির থেকে সমষ্টির ভালোমন্দ বেশি গুরুত্ব পেত। এই দুটি ঘটনাই এখন অতীত, এবং ব্যক্তি বা সমষ্টির মধ্যে কার গুরুত্ব বেশি, সেই বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই, কুন্দন শাহের ছবিতে কালের নিয়ম মেনেই সেই চিহ্নগুলো ফুটেছে শুধু এট্কুই বক্তব্য। কুন্দন শাহের বংশে সিনেমার কোন ইতিহাস নেই। পরিচালক হিসেবেও তিনি নিজেকে বর্ননা করেছেন বৃত্তের বাইরের একজন হিসেবে, যাঁকে মেইনস্ট্রিমে ফেলা যায়নি, এবং তথাকথিত প্যারালাল সিনেমার কুশীলবদের তালিকাতেও রাখা হয়নি। এমনও নয়, তিনি একমাত্র পরিচালক যিনি মধ্যবিত্তের সুখদুঃখ নিয়ে কাজ করেছেন। কুন্দন শাহকে শুধু আলাদা করেছে তাঁর গল্পের চরিত্রেরা, কারণ তারাও আসলে অনেকেই পরিচালকের মতই সাফল্য-ব্যর্থতার বৃত্তের বাইরের মানুষ, তাদেরও কোন হিসেবে এঁটে ফেলা যায় না। দেগে দেওয়া যায়না "ব্যর্থ" হিসেবে। বরং তারা অবলীলায় ব্যর্থতার লাশ বয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠে পরবর্তী ব্যর্থ প্রোজেক্টের অনুসন্ধানে যাত্রা করে।
নিয়ন বাতি : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৩৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
লাক্সের নিয়ন বিজ্ঞাপনের পরই একটা বিশাল বোর্ড জুড়ে একটি হাস্যোজ্জ্বল তরুণী লাইফবয় সাবানের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তার হাসি ও তারুণ্য মজিবুল হকের চোখকে ধরে রাখে। মজিবুল হকের ডান পাশে তার স্ত্রী, রেজওয়ানা চৌধুরী। রেজওয়ানা অনেকক্ষণ ধরে মজিবুলকে দেখে, গত এক বছর হল তার স্বামী এই রকম, কিছুটা আনমনা, ব্যবসার কাজে মন নেই। পঞ্চাশ পার হয়ে গেছে, মধ্যবয়সের সঙ্কট। লাইফবয় মেয়েটির দিক থেকে মজিবুল চোখ ফেরাতে পারছে না, রেজওয়ানা খুব অস্বস্তিতে পরে। মেয়েটিকে যত খুশী দেখুক না মজিবুল, রেজওয়ানার সমস্যা হল তাদের গাড়ির ড্রাইভারকে নিয়ে। ড্রাইভার সেলিম আয়নায় আড়-চোখে তার মালিকের দিকে তাকায়, রেজওয়ানা সেলিমের মুখ দেখতে পায় না, কিন্তু তার মনে হয় সেলিম এই পরিস্থিতিকে খুব উপভোগ করছে। রেজওয়ানা ভাবে মজিবুলকে খুব দ্রুত একটা কিছু বলতে হবে।
আসাম ইতিহাসের কৃষ্ণগহ্বর - ২ : পার্থ প্রতিম মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১০১২ বার পঠিত
ধুবরীর নেপাল দাসের দোকানের জলবোমা সাঁটিয়ে বাসে উঠেছিলাম। ফকিরাগ্রাম যাবো, সেখান থেকে ট্রেন ধরে গৌহাটি। জল ধোওয়া সবুজ দেখতে দেখতে ঝিমুনি এসে গেছিল। চলন্ত বাস দাঁড়িয়ে পড়লে শরীরেও সেই অনুভূতি সঞ্চারিত হয়। কনডাক্টর গৌরীপুর হাঁকতেই কোষগুলো সুতীক্ষ্ন হয়ে ওঠে। কতবার ভেবেছি গৌরীপুর আসবো। প্রমথেশ বরুয়া, লালজীর ভিটে দেখার চাইতেও প্রতিমা পাণ্ডের মাহুত বন্ধুর টান। তাছাড়া এখানেই আমার বাবার শৈশব। মামার বাড়ি। কপাল ঠুকে নেমে পড়বো নাকি ভাবতে ভাবতে জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই চোখে পড়লো দেয়াল জোড়া শ্লোগান। "তেজ দিম, তেল নিদিওঁ"। তেজ, মানে রক্ত দেবো, তেল দেবো না। কিন্তু গৌরীপুরে তেল কোথা, ভাবতে ভাবতেই বাস ছেড়ে দিল। আর সারাটা পথ জুড়ে দেয়ালে, দেয়ালে রক্ত দেবার অঙ্গীকার..."তেজ দিম, তেল নিদিওঁ"।
মানবিকতা ও বৈধতার অন্ধকার চেহারা : আসামের 'বিদেশি' আটক-শিবিরের ঝাঁকি-দর্শন - দ্বিতীয় পর্ব : হর্ষ মন্দার, অনুবাদ - স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৬৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আন্তর্জাতিক আইনও স্পষ্টভাবে বলেছে যে অভিবাসীদের জেলে আটকানো যাবেনা, এবং তাঁরা অপরাধী নন। জাতিসংঘের শরণার্থীদের নির্দেশনার হাইকমিশনারের নির্দেশ অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত আটক শিবির গুলিতেই কেবল কাউকে আটকে রাখা যাবে। নির্দেশনাগুলি বলে যে, সরকার “শরণার্থী বা অভিবাসীদের, অপরাধ আইনের অধীনে বন্দী ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করে কোন জায়গায় রাখতে” বাধ্য। ২0১২ সালে প্রকাশিত জাতি সংঘের নির্বিচারে আটকদশার বিষয়ে কার্যনির্বাহীপরিষদের (UN Working Group on Arbitrary Detention) রিপোর্টে, নয় নং নীতিতে বলা হয়েছে "শরণার্থী বা অভিবাসীদের রক্ষণাবেক্ষণ, এই উদ্দেশ্যটির জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি পাবলিক জায়গায় করা দরকার; তবে বিবিধ বাস্তব কারণে যদি সেটা করা সম্ভব নাও হয় সেক্ষেত্রেও তাঁদের অবশ্যই আইনতঃ অপরাধীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কোন জায়গায় রাখা উচিত।" UNHRC এও বলে যে আটক-আদেশ কোনভাবেই শাস্তি্মূলক নয়। জেলখানা, কারাগার এবং কারাগার বা জেলের মত ু’রে যেসব জায়গা ব্যবহার করা হয় সে সব জায়গাগুলিকে এ বাবদে ব্যবহার করা উচিত না।
একা থাকার অসুখ থেকে : মোজাফফর হোসেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | ১০৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই ঝড় সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না আমার। জানতাম কেবল, এই ঝড় সৃষ্টির পেছনে আমার কোনো হাত নেই। জানতাম, আমাকেই খোঁজা হচ্ছে এখন। যতক্ষণ ঝড়ো বাতাস বইতো, ততক্ষণ আমি ঘামতে থাকতাম এই জানালাবিহীন গুমোট কক্ষে। এত ঝড় বাইরে অথচ এখানে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো বাসাটুকুও কষ্ট করে সঞ্চয় করতে হয়। মাথার ওপর দিয়ে কয়েকটি চামচিকা অনবরত যায়-আসে। ভয় হয়, ওরা শেষমেশ এই গোপন আস্তানার খবরটা ঝড়ের কাছে ফাঁস করে না দেয়। টিকটিকিটাকেও চোখ শাসিয়ে বারণ করে দিই।
মাকড়সা দেখলেই মনে পড়ে যায় স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুসের কথা। আচ্ছা, ব্রুস যদি ঐ মাকড়সার প্রচেষ্টাকে গুনুত্ব দিয়ে না দেখতেন, কিংবা মাকড়সা যদি সত্যি সত্যি সেদিন না থাকতো ওখানে, তাহলে কি তিনি জয়ী হতে পারতেন? একটা মাকড়সার কারণেই কি তিনি তার রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে পারলেন--বদলে গেল একটা দেশের ইতিহাস?
আত্মজা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | ১৩৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
সেদিন দেখলাম স্টিয়ারিং একহাতে ধরে আর এক হাত দিয়ে বুকপকেট থেকে মোবাইল বার করল ড্রাইভার। কিন্তু কিছু বলব কি, খুব জোর একটা ধাক্কায় মাথা ফেটে গেল আমার, আর সেটা ভাল করে বোঝবার আগেই জল উঠে এল ঠিক আমার নাকের তলায়। এক সেকেন্ডের খুচরোতে দেখলাম ঘোলা জল রঙ বদলালো লালে। পাঁকের বিশ্রী গন্ধ, দু পা ওপরে, জলের ভেতর মাথা নিচের দিকে করে পড়ছি তো পড়ছি, যেন একটা বিরাট অন্ধকূপ, যার শেষেও আলো নেই। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কী করলে মুক্তি পাব এই তীব্র শ্বাসকষ্ট থেকে ভাবতে ভাবতে আরও অন্ধকারে জড়িয়ে গেল চুল, পরনের শাড়ি উধাও হল। মামাবাড়িতে দেখা ছোটবেলার অনেক ঘটনাই মনে আছে। যে ঘটনাটা ঠিক এখন উঠে এসে লটকে রইল চোখের পাতায় তা হল লোহার শিকে চারদিক বন্ধ একটা ছোট খাঁচা। ভেতরে একটা নেংটি ইঁদুর। ছোটমামা খাঁচাশুদ্ধ সেটাকে চুবিয়ে ধরেছে পুকুরের জলে। সেটা বার বার খাঁচার ছাদের দিকে উঠে আসছে, কিন্তু পুরু সরের মতো জমা জলে থৈ না পেয়ে আবার নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।
শক্তি হয়ে এসো হে বৈশাখ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | ১৮৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
হো হো হাসিতে তলিয়ে যায় সন্দেহবাজ লোকগুলো। আলোর দিকে পেছন দিয়ে বসে থাকে ওরা। অন্ধকারে মিশে যায় ওদের সাম্প্রদায়িক অসুন্দর মন। বাগানের অন্যদিকে তখন গান গাইছে দিভাই আপুলিরা, আনো আনো, আনো তব প্রলয়ের শাঁখ , মায়ার কুঞ্ঝটিজাল যাক দূরে , যাক যাক যাক --
কোনো এক নদীগন্ধমাখা শহরের তরুণ প্রাণরা বৈশাখকে বরণ করে নিতে কত কিছুই না বানাচ্ছে। পোস্টানো ছবিতে আমি ওদের হাত দেখি, হাতের আঙুল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রঙ, কাগজ। উদ্ভাসিত আলো এসে ছুঁয়ে গেছে ছেলেমেয়েদের চোখ মুখ। ওদের হাসি, হাসিতে বৈশাখী হাওয়া, ঝড়, বৃষ্টি , রোদ্দুরের জন্যে অনাবিল আহবান। কেউ কেউ ডাকে, ম্যাম আসুন। আসুন না প্লিজ। এ তো আপনারও শহর। দীর্ঘ রাস্তা জুড়ে আলপনা হবে। রঙ কেনা হয়ে গেছে। আপনিও আল্পনা আঁকবেন আমাদের সাথে। কি যে ভালো লাগবে ম্যাম!
সহযাত্রী : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ এপ্রিল ২০১৮ | ২১১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এরপর আমার কেন জানি মনে হল তাকেও জিজ্ঞেস করা দরকার কোথায় যাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?ভদ্রলোক বললেন, রশিদপুর। এখানে এই জগন্নাথপুরে আসছিলাম এক কাজে কিন্তু কাজটা হয় নাই। বাবা, আপনার বাড়ি কি এই জায়গায়?জ্বি। আপনার বাড়ি?আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গাড়ি চলতে শুরু করল। ভদ্রলোক নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। কী করি, দেশের বাইরে যাচ্ছি কি না, ইত্যাদি। দেশের বাইরে যাবার প্রশ্নটা তিনি করলেন কারণ ভদ্রলোক জানেন জগন্নাথপুর একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। তার প্রশ্নের কারণে আমাকেও প্রশ্ন করতে হল, আপনি এখানে এসেছিলেন কোথায়?ভদ্রলোক বললেন, সে এক লম্বা কাহিনী। একটা গল্প বলি?বললাম, বলেন।
স্টিফেন হকিঙের চিঠি : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ এপ্রিল ২০১৮ | ৯৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মহাশয়, আমার নাম নীলাভ। ডাক নাম নীল। আমার কিছু জিজ্ঞাসা আছে আপনার কাছে। হ্যাঁ, আগে বলে নিই, আমার বয়স চোদ্দো। ক্লাস এইট। আমার দাদার কুড়ি। ফিজিক্স পড়ে। দাদার জন্মদিনে দাদাকে একটি বই দিয়েছিল বাবা – এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম- সময়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। দাদার কাছ থেকে নিয়ে বইটা আমিও পড়েছি। সবটা ধরতে পারিনি , কিন্তু পড়তে খুব ভাল লেগেছে। বুঝিনি সবটা বলেই কিছু কিছু প্রশ্ন জেগেছে আপনার লেখা ওই বইটি নিয়ে, বলা যায় সময় নিয়ে। তা রাখছি। ১) বড় হতে কত সময় লাগে স্যার?২) আমার কাছে সময় সবসময় কম মনে হয় কেন? কারোর কারোর কাছে যে সময় আর ফুরোয় না, যেমন অভিরূপ। তার কথা পরে বলছি।
তৃতীয়া : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ এপ্রিল ২০১৮ | ১৫৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
বন্ধুত্বের একটা পর্যায় তুমি থেকে তুই-তে উত্তরিত হয়, আর কিছু বন্ধুত্ব তুমিতেই থেকে যায়, তাতে তার গাঢ়ত্ব কিছুমাত্রায় লঘু হয় না। সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরের নানাবিধ বিপণনীর উজ্জ্বলতায় রকমারি জিনিস কিনছিলাম, কাঁধের ওপর একটা হাত পড়লে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি বাঙালি চেহারার লোক, আমার মতই বয়স হবে। 'অমল না? কী হল, চিনতে পারলে না, আমি হানিফ।' স্মৃতি শক্তি আমার কোন সময়ই প্রখর ছিল না, আর আজ সময়ের অদৃশ্য আঘাতে সেই স্মৃতির আধার – আমার মস্তিষ্ক – আরো খণ্ডিত, আরও ভঙ্গুর। আমার চোখে কোন উজ্জ্বলতা না দেখে হানিফ বলল, 'আমি দুলাল, এবার চিনতে পারলে তো?'
একলা বৈশাখের কবিতা : ১ বৈশাখ ১৪২৫
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১৫ এপ্রিল ২০১৮ | ৯২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
পয়লা একলা - ঐ একই হলো, এমনিতেও পয়লা হলে সচরাচর একলা হয়। সে যাই হোক, সংক্রান্তি পেরিয়ে গেল, আজ কবিতার শুভ হালখাতা মহরৎ।
কবিতার ভৌগোলিক গন্ডী হয়না, কিন্তু সাহিত্যের ভূগোল কিছু থাকে তো। ক'দিন আগেই আলোচনা হচ্ছিল বাংলা সাহিত্যের কলকাতা-কেন্দ্রিকতা নিয়ে। সেই ভূগোলের সীমানা ভাঙার চেষ্টা করছি, আপাতত তার সামান্য ছোঁয়া এখানেও থাকবে। হুগলী কপোতাক্ষ আড়িয়াল খাঁ বুঢ়া লুঈ ছুঁয়ে সুদিন আসুক, নতুন বছরের কবিতা পড়ি আমরা।
এই পর্বে লিখছেন যশোধরা রায়চৌধুরী, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, মিঠুন ভৌমিক, সোমনাথ রায়, জারিফা জাহান, সায়ন কর ভৌমিক, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সুমন মান্না।
প্রকাশিত হল নববর্ষ ১৪২৫ সংখ্যার প্রথম পর্বের কবিতাগুলি। খুব শিগ্গিরই বেরুবে আরো কবিতা, এই সংখ্যার পরের পর্বে।
দলিত ও বিচারব্যবস্থা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০১৮ | ১১৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
যেটুকু বুঝেছি, বাবু ডঃ সুভাষ কাশিনাথ মহাজন ভার্সেস স্টেট অব মহারাষ্ট্র মামলাটি শুধু সুপ্রিম কোর্টের রুলিং নয়, নিজস্ব গতিপ্রকৃতির কারণেও খুব কৌতূহলদ্দীপক। দলিত চাকুরের কনফিডেনসিয়াল রিপোর্টে ভিত্তিহীন খারাপ কথা লেখার অপমান সহ্য করতে না পেরে দলিত মানুষটি যখন দলিত নিপীড়ন আইনের সাহায্যে মামলা দাখিল করতে চায় তখন তার বড় সাহেব সুভাষ মহাজন সেই অনুমতি দিতে অস্বীকার করে দিনের পর দিন। তখন মহাজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, অথচ তার কিন্তু আগাম জামিন পেতে কোন অসুবিধে হয়না। আগাম জামিনের প্রসঙ্গ মহাজনের আবেদনে ছিলই না, সে চেয়েছিল কেবল মামলা প্রত্যাহার। কোথাকার জল কোথায় গড়ায়, শেষ অব্দি এই মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে আদালত আর্টিকেল ২১, যা কিনা ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে, সেই ধারা বিচার করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে দুমদাম গ্রেপ্তারির আগে সবারই আগাম জামিনের অধিকার থাকা উচিৎ। সরকারের সরবরাহ করা তথ্য নাকি দেখিয়েছে দলিত ক্লেশ নিবারণী আইনেরও অনেক অপব্যবহার হয়। তাই সুপ্রিম কোর্টের মতে, প্রথমে দলিত অভিযোগের একটি প্রাথমিক তদন্ত জরুরী, তারপর এফ, আই,আর এবং চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে শেষে দরকার নিয়োগকর্তার অনুমতি। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই অনুমতি আসবে পুলিশের সিনিয়র সুপারিন্টেনডেন্ট (SSP)কাছ থেকে। এরপর আদালতে মামলা উঠবে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এখনই জগদ্বিখ্যাত। এরপর সে খ্যাতি অন্য গ্রহেও পৌঁছবে এই আশঙ্কা কি সত্যিই অলৌকিক ?
ধর্ষণ সংখ্যালঘুর ওপর ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার : দোলন গঙ্গোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০১৮ | ৭০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এখন কথা হল, নারী কোন একমাত্রিক পরিচিতি নিয়ে চলে না। যোনিগত পরিচিতি ছাড়াও মেয়েদের বংশ, জাত, ধর্ম, শ্রেণী ইত্যাদি নানা পরিচয় থাকে।যত জীবন চলতে থাকে ততই মৌলিক পরিচয়গুলির সঙ্গে যুক্ত হয় তার প্রথাগত শিক্ষার তকমা, পেশার পরিচয়, তার রাজনৈতিক অথবা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কজনিত পরিচয়।আর এই যে লিঙ্গ, জাতপাত, ধর্মীয়, শ্রেণীগত, যৌনতা অথবা শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বিষয়ে মেয়েদের পরিচিতি, এর মধ্যে কোন পরিস্থিতিতে কোন পরিচয়ের কারণে তাকে ধর্ষিত, নির্যাতিত হ’তে হবে, তা নির্ভর করে তার পরিচিতিগত অবস্থানের প্রান্তিকতার ওপর।অনেকসময় একাধিক প্রান্তিক পরিচিতির কারণেও মেয়েদের ওপর অত্যাচার নেমে আসে।
অপমানের ইতিবৃত্ত : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০১৮ | ১৯৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
চারটে বাচ্চা হয়েছিল। সাদা কালো পশমের বলের মতন। ভাল করে হাঁটতেও পারত না। দাঁড়াতে গেলে পা বেঁকে যেত। তুরতুর করে ছুটে ছুটে গলির এই ধার থেকে ঐ ধার করত তারা। তাদের নেড়ি-মা ডাস্টবিন, হোটেলের আশপাশ, হাসপাতালের ময়লা জঞ্জাল আবর্জনা ঘেঁটে যদি কিছু পেত, মুখে করে নিয়ে আসত। রাত্রিবেলায় মায়ের পেট ঘেঁসে ঘুমোত চারখানা চোখ সবে ফোটা বাচ্চাগুলো।
গতকাল একটা তীব্র স্পিডে ছুটে আসা সুইফট ডিজায়ার দুটো বাচ্চাকে মাড়িয়ে দিয়ে গেল । রাস্তার ওপরেই খেলা করছিল তারা। গাড়ির আওয়াজ বুঝে সাবধানী এবং সচকিত হবার মত অভিজ্ঞতা ছিল না। গাড়িটাও, চাইলে স্পীড কমাতেই পারত। গলির মধ্যে আর কত স্পিডেই বা গাড়ি চালানো সম্ভব! দেখতে পায়নি এমনও নয়, কারণ তখন দুপুরবেলা। হয়ত, দেখতে পেয়ে গতি হালকা কমিয়ে দুখানা হর্ন দিতে পারত। অথবা স্টিয়ারিং হালকা বাম দিকে ঘুরিয়ে দিলেও কাজ চলে যেত হয়ত। কিন্তু, সম্ভবত দাঁড়াতে চায়নি। সম্ভবত, তার অনেক তাড়া ছিল।
আইনত হযবরল-প্রথম পর্ব : সরসিজ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ৩১ মে ২০১৮ | ১২০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমরা লক্ষ্য করছি, বিভিন্ন আলোচনায় বারবার উঠে আসছে জুডিশিয়ারি বা বিচারব্যবস্থার ভূমিকা বা কাজ কী, সেই প্রসঙ্গ। কিন্তু, এই আলোচনা করতে গেলে, এই ভূমিকা এবং কর্মপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে কার হাতে, তাও তো বুঝতে হবে। আর তার জন্য, বুঝতে হবে, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া। বুঝতে হবে, আমাদের বিচারব্যবস্থায়, হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির গুরুত্ব ঠিক কতটা। তবে, তার আগে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক, ভারতবর্ষে আইন তৈরির প্রক্রিয়া দুটির ব্যাপারে। আমাদের দেশে আইন দুইভাবে তৈরি হয়। সংসদে নেতা মন্ত্রীরা যে আইন পাশ করেন, সেই আইন এর রূপকর মূলত আমলারা। আইনসভায় পাস্ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে ও সরকারি গেজেটে পাবলিশ হলে, তবেই তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি মেলে। আমার বা আপনার যদি সেই আইন বা তার কোনো বিশেষ অংশ নিয়ে কিছুমাত্র আপত্তি থাকে, তাহলে আমরা সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতেই পারি, এই যুক্তিতে যে, নতুন তৈরি আইনটি সংবিধানের কোনো বিশেষ ধারার পরিপন্থী। আমাদের যুক্তিতে সন্তুষ্ট হলে, আদালত সেই আইনটিকে অসংবিধানিক বা আলট্রা-ভাইরিস ঘোষণা করতে পারে, ঠিক যেমনটি হয়েছিল, সিঙ্গুর ল্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট একট, ২০১১'র ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, আইন সব কিছুর ঊর্ধ্বে না, বরং, আইন মাত্রই প্রশ্নসাপেক্ষ, আইনের ঠিক, ভুল, কম, বেশি ইত্যাদি সবই তর্কসাপেক্ষ। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
জামাল মোমিন এবং ভদ্রলোকেরা : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৮ মে ২০১৮ | ১৬০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
এই অ্যালিয়েনেশন, নিজেদের পৃথক ভাবার প্রবণতা বহু প্রজন্ম ধরেই আমাদের মধ্যে পালন করে চলেছি আমরা – এখন খালি ওই যাকে বলি অনুকুল জল হাওয়া, তার সুবাদে এগুলি প্রকাশ্যে আনতে দ্বিধাবোধ করিনা, জানি এটা সামাজিকভাবে গৃহিত এখন। প্রতিবাদ করতে গেলে, জামালদের হয়ে কথা বলতে গেলে আপনাকে “পাকিস্তানে চলে যান” শুনতে হতেই পারে। তবে কিনা শুনলাম তো অনেক – এবার মনে হয় পালটা বলা দরকার যে না, আমি পাকিস্তান যেতে রাজি নই। এই দেশ, এই মাটি, এই সংস্কৃতিকে তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী ভালবাসি, বুঝি, আমি, আমরা। অতএব যেতে হলে তোমরা যাবে – আমাদের জলজমিন ছেড়ে, যেখানে খুশী, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট যে চুলোয় চাও। আমরা এখানেই থাকব, জামালরা এখানেই থাকবে, সুলতানারা থাকবে।
একটি অরাজনৈতিক প্রতিবেদন ও আবেদন : সুতপা দাস
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৮ মে ২০১৮ | ৯৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
দেড়শো শিক্ষকের মধ্যে নাকি ভিডিও দেখে সত্তর জনকে সনাক্ত করা গেছে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী জেলা প্রশাসন তাদের বেতন বন্ধ করেছে এবং তারা গ্রেফতারের অপেক্ষায়। রাজকুমারবাবুর পোলিং অফিসার বয়ান দেওয়ায় তিনি সহ আরও দুজন শিক্ষককেও অ্যারেস্ট করেছে পুলিশ, হেফাজতে নিয়েছে অপরাধীর মতো, অথচ প্রয়াত প্রিসাইডিং অফিসারের হত্যাকারীদের ধরবার কোনো তৎপরতা তো নেইই, বরং প্রশাসন আত্মহত্যার তত্ত্বে সীলমোহর লাগাতে ব্যস্ত!
এমতাবস্হায় সোশ্যাল মিডিয়ায় এক শিক্ষক গ্রুপে মতবিনিময়ের মাধ্যমে পুনরায় কলকাতায় এক প্রতিবাদমিছিল আয়োজন করা হয়েছে আবারও সম্পূর্ন অরাজনৈতিক ব্যানারে, আগামী ২৮/০৫/১৮ তারিখ বেলা দেড়টায়। খবরটি ক্রমাগত চর্চা হতে থাকায় পাল্টা ‘খবর’ হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক স্তর থেকে নাকি শিক্ষক গ্রেফতার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে খবরের যাথার্থ্য অবশ্য যাচাই করা যায়নি!
শিক্ষকসমাজের ত্রুটিবিচ্যুতি ফলাও করে প্রচার করে যে বাজারী সংবাদমাধ্যম, শিক্ষকসমাজের ন্যায়প্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের শাস্তি ও অনর্থক প্রতিহিংসামূলক হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারা ঘন্টাখানেক তো নয়ই, মিনিটখানেকের প্রচারের আলো ফেলতেও রাজী নয়!
আমরা আপোষ করেছি সমাজের নাগরিক তৈরীর ক্ষেত্রে, তাই আজ এ লড়াই আমাদের ভবিতব্য।
ঠাঁইনাড়া : ষষ্ঠ পাণ্ডব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০১৮ | ২২৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
আলী যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে তখন সে প্রথম বারের মতো কলকাতা যায়। সেবার হুগলী নদীর উপর বিশাল লোহার ব্রীজ হয়েছে। আজব সে ব্রীজ! তার তলায় থাম নেই, উপর দিয়ে বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি চলে, লোকে পায়ে হেঁটে যায়, আর নিচ দিয়ে লঞ্চ-স্টীমার যায়। আলীদের বাড়ির সবাই গোটা ব্রীজ হেঁটে হেঁটে পার হয়। ওপাড়ে গিয়ে আরও হেঁটে ময়দান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাইকোর্ট সব ঘুরে দেখেছিলো। নিউ এম্পায়ার থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালের ছবি দেখেছিলো। মামীদের খুব ইচ্ছে ছিল থিয়েটার দেখার, কিন্তু এতগুলো মানুষের টিকিট কেনা সম্ভব ছিলো না। এই দিন আলী জীবনে প্রথম বারের মতো দোকানে বসে কাবাব-রুটি আর কুলফি খেয়েছিলো। অমন খুশবুদার আর মাখনের মতো মোলায়েম কুলফি আলী আর কোনদিন খায়নি। দোকানে আরেকটা খাবার দেখেছিল, তার নাম ‘ফালুদা’। নানা রকমের ফল, বাদাম, সিরাপ, ক্ষীর, বরফ দিয়ে বানানো। কি লোভনীয় দেখতে, আর কি তার খুশবাই!
সুলতানা বিচার পাবেন ? : জুবি সাহা
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ১০ মে ২০১৮ | ১২২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
সুলতানার গ্রামের মানুষ তার প্রতিবশীরা অবশ্য বলেছিলেন, সরল,পরিশ্রমী এই মেয়েটির ন্যায়বিচারের জন্য যতদূর প্রয়োজন, তাঁরা যাবেন। সেই কথা তাঁরা রেখেছেন। এরপরই সুলতানার ধর্ষণ আর হত্যার বিচার আর দোষীদের শাস্তির দাবিতে সুলতানার গ্রামের মানুষ রাস্তায় নামেন। তাঁদের সাথে আমরা যাই সোনারপুর থানায়। সুলতানার দুই সন্তানও সেদিন বিচার চাইতে গিয়েছিল সোনারপুর থানায়।
যেভাবে গোটা ঘটনাটার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রথম থেকে অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, সুলতানার ধর্ষণ হয়েছে কিনা তার থেকেও বড় হয়ে উঠেছে মেয়েটি মদ খেয়েছিল কি খায় নি, সোনারপুর থানায় যাওয়ার পর যেভাবে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এলাকার মানুষদের ভয় দেখাতে শুরু করে,প্রায় এক ঘণ্টা তাদের সাথে উত্তপ্ত বাগবিনিময়ের পরই একমাত্র থানায় ঢোকা সম্ভব হয়। আমাদের শুনতে হয় যে, এলাকার মেয়ে,আমরা বুঝে নেবো,যদিও এত বড় নৃশংসতার পরও তাদের কাউকে কোনভাবে পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় নি।
ভারতে আদিবাসী-সম্পর্ক : কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ মে ২০১৮ | ১৩০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এর সংগে আছে মৌলিক অধিকার হনন। সারা দেশ জুড়ে আদিবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মনিয়োজনের অধিকাগুলো থেকে বঞ্চিততো হনই। এর চেয়ে বড়ো অধিকার হনন ঘটে তাঁদের সাংবিধানিক মর্যাদার বঞ্চনায়। যেমন আসামেঃ এখানকার চা-বাগান, এখানকার শস্যক্ষেত্র, এবং আর্থনীতিক সমৃদ্ধিতে ঝাড়খণ্ড সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রা থেকে আসা আদিবাসীদের অবদান বিপুল। অথচ, এ রাজ্যে তাঁরা তফসিলি জনজাতি (এস-টি) মর্যাদা পাননা। কারণটা শ্রেণিগত – এ মর্যাদা পেলে সাংবিধানিক রক্ষা কবচগুলো ব্যবহার করে অন্তত একটা অংশের আদিবাসী নিজেদের জীবনযাত্রার মান বাড়াবার সুযোগ পাবেন, কিন্তু সেটা পেলে অবিশ্বাস্য সস্তা মজুরিতে চা-বাগানে কাজ করবে কে? সরকার, স্পষ্টত, অসমিয়া শাসকশ্রেণির পক্ষে, বা তাদেরই প্রতিভু। এর উপর আছে কথায় কথায় ঝাড়খণ্ডী আদিবাসীদের উপর সরকারি মদতে আসামেরই বোডোদের মতো কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীর অকল্পনীয় হিংসা – গত শতাব্দীর ভারতে আসামের কোকরাঝাড় জেলায় লক্ষ লক্ষ সাঁওতাল বোডো জঙ্গীদের হাতে প্রাণ হারান, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে লোকেরা পালাতে বাধ্য হন শরণার্থী শিবিরে।
অশোক মিত্র (১৯২৮-২০১৮) : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ মে ২০১৮ | ১৪৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
প্রাথমিক মুগ্ধতা কেটে যাওয়ার পরে, আমার অশোক মিত্রের লেখা খুব ভালো লাগতো না। তবে এটুকু স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি তাঁর লেখাতেই সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, অরুণ কুমার সরকারদের কথা পড়েছি। শুধু এই জন্যেই তাঁকে মনে রাখা যায়। পরে যোগাড় করে কিছুটা পড়েছি, কিন্তু আধুনিক সমসাময়িক সাহিত্য চর্চা মানেই যে একেবারেই বহুল প্রচলিত পাঠকের রুচি নির্মাণে আগ্রহী সাহিত্য পত্রিকা, কিম্বা শুধুই ক্রুদ্ধ, সমান্তরাল অন্তর্মুখী অতি নাগরিক জগত তৈরি করে নেওয়া ছোটো পত্রিকার লেখা পাঠ নয়, তার যে একটা খোঁজ আছে, ইতিহাস আছে, এবং আধুনিকতা জিনিসটা যে একেবারে টুপ করিয়া পড়িল গোছের কৃষ্ণপ্রেমে নিবেদিত কদম্ব পুষ্প না, এই বোধটা যে কজনের লেখা পড়ে তৈরি হয়েছিল, অশোক মিত্র তাঁদের মধ্যে একজন।
হাওয়ার কথা, অথবা যা হওয়ার কথা ছিল : মৌসুমী ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ মে ২০১৮ | ১৪৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
শ্রী অশোক কুমার মুখোপাধ্যায় যে ‘নিবন্ধের’ কথা লিখেছেন, এবং লীলা মজুমদারের ওপর বেরনো যে বইটির কথা এখানে উঠেছে, আমার এই লেখাটি আমি সেই প্রসঙ্গেই লিখছি। ৬ মে সকালে রবিবাসরীয়তে অশোকবাবুর লেখা পড়ার পর দুপুরবেলায় আমি আনন্দবাজারের সম্পাদককেও একটি ইমেল লিখেছিলাম। তিনি তখন তখনই উত্তর দেন, এবং বলেন যে, বিষয়টির কথা তিনি জেনেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমি আমার ইমেল এবং সম্পাদকের বক্তব্য প্রসঙ্গে একটি পোস্ট লিখেছিলাম ফেসবুকে। দু’দিন পর অশোক মুখোপাধ্যায়ের এই ঋণস্বীকার। আমি এই কথাটাই আনন্দবাজারের সম্পাদককে লিখেছিলাম, যে, আপনারা একটা লাইন ছেপে দেবেন দুঃখ প্রকাশ করে। ব্যাস, আপনাদের দিক থেকে আপনারা পরিষ্কার হয়ে যাবেন।
আমার কোনো উৎসব নেই : জিনাত রেহেনা ইসলাম
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ১৩৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
'বেজাতে' বিয়ে বলে নিজ মহল্লায় দামামা বেজেছিল। পাত্র ডাক্তার এই কথাটা কর্পূর হয়ে 'হিন্দু ছেলে' এটাই প্রচার হয়েছিল। তো, এই কালী পুজো নিয়ে আমার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কালীমা আমার প্রতিদিনের। ছাত্রজীবন থেকে কলেজ টানা সময় জুড়ে আমায় 'মা কালী' বলে পথে ঘাটে ডেকে দিত কেউ। অবশ্যই পুরুষকণ্ঠ। কখনো পেছন ফিরে দেখিনি। দেখতে নেই এটাই ছিল পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা। তখন অবশ্য আমি খুব ভয় পেতাম এই ডাকে। লজ্জা হত খুব। কী এমন আছে এই চেহারায়? নিজের মাও মাঝে মাঝে কেঁদে ফেলতেন, আমার পেটের মেয়ে এমন কালো কীকরে?বুঝতাম না এই সমাজে মেয়েদের কেন কালোরঙ হওয়া বারণ ? কেন এত নেগেটিভ? তারপর মাথায় সিঁদুর চড়ানোর পর আমায় কেউ কোনদিন 'মা কালী' বলে ডাকেনি। সিঁদুর ছাড়ার পরও। জানিনা, বিবাহিত মেয়েদের বুঝি সব মাফ। ধীরে ধীরে নিজের গায়ের রং ও চেহারার সঙ্গে কম্ফর্টেবল হয়ে গেলাম। নিজেকেই ভালবেসে ফেললাম।
বিয়ের আগেই জানতাম আমার স্বামী কালীভক্ত। বিয়ে রেজেষ্ট্রির আগের দিনই সে নিয়ে যায় আমায় দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি পুজো দিতে। সেখানেই লাইনে দাঁড়িয়ে সে জানায় আমার কাছে তার একটিই দাবি। মন্দিরে তার পাশে দাঁড়িয়ে পুজো দিতে হবে ও প্রসাদ খেতে হবে। তার এই ভক্তি একইভাবে সন্তানের মধ্যে জন্ম নিল । প্রতিদিনই ড্রাইভার অভিযোগ করত মেয়ে স্কুলের পথে যেখানেই মন্দির দেখছে গাড়ীর কাচ নামাতে বলছে। নেমে পড়ে প্রণাম করছে। এরপর আমার নিজের বাড়িতে মেয়ের পছন্দের কালী মায়ের ওয়াল হ্যাঙ্গিং লাগানো হল। তার নিজের পূজা করার জায়গা ক'রে দেওয়া হল। আনা হল লাল কাপড়,ঘণ্টা,কর্পূর, সিদুর,গঙ্গাজল,ধূপকাঠি। কাছের মন্দিরের পুরোহিতের কাছে গিয়ে লিখে আনা হল মন্ত্র। আমার মা এখানেই কখনো কখনো কোরান পাঠ করতেন, নামাজ পড়তেন। আমার বাবা কালীপুজোর জন্য চারটে করে জবাফুল এনে দিতেন বাজার থেকে প্রতিদিন।
কালীপ্রসাদী হাঙ্গামা : কলকাতা কাঁপানো কেচ্ছা : দীপাঞ্জন ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ১৯৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
বাঙালিরা, বিশেষ করে শহর কলকাতার উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত বাঙালি নিজেকে উদার এবং সহিষ্ণু বলে গর্ব অনুভব করে। সেটা খুব একটা মিথ্যেও নয়, কারণ অন্য জাতে বা ধর্মে বিয়ে করার মতো যেসব কান্ড ভারতের অন্যান্য জায়গায়, বিশেষ করে তথাকথিত গোবলয়ের মতো জায়গায় হলে গোলযোগের চূড়ান্ত হত, সেসবও কলকাতায় হামেশাই হয়ে থাকে। এই উদাতার অনেকটাই আসলে বাঙালি নবজাগরণের ফল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং রাজা রামমোহন রায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা| স্বাধীনতা-উত্তর যুগেও বিশেষ করে ৩৪ বছরের নাস্তিক, কমিউনিস্ট শাসনও রাজনীতিতে জাত-পাত যাতে না ঢোকে তার শক্তপোক্ত বন্দোবস্তো করেছিল। কিন্তু, বলাবাহুল্য, অবস্থা চিরকালই এমন ছিল না| উনবিংশ শতকের শুরুতে, কলকাতা যখন টানা পশ্চিমী প্রভাবের আওতায়, তখনও, হিন্দু সমাজ, এমনকি কলকাতার হিন্দু সম্প্রদায়ও ছিল ভয়ংকরভাবে রক্ষণশীল। আর এই সময়েই ঘটেছিল শহরের বৃহত্তম কেচ্ছাটি। কালীপ্রসাদী হাঙ্গামা নামে কুখ্যাত এই কেলেঙ্কারিটির জল গড়িয়ে গিয়েছিল বহুদূর। এতে জড়িয়ে গিয়েছিল শহরের অনেক নামীদামী পরিবার, জল গড়িয়েছিল নানা ধর্মের উপাসনাস্থলে, যার মধ্যে কলকাতার বিখ্যাত হিন্দু মন্দির কালিঘাটও ছিল|
বাজি-বেত্তান্ত : তাপস দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ৩৪৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
ভুঁইপটকা ছিল দেওয়ালে বা মেঝেয় ছুঁড়ে মারার জন্য - জোর আওয়াজ। কম্বাশন বাই প্রেশার, অর্থাৎ ভুঁইপটকা আর পেটোর মশলায় তফাৎ ছিলো না কোনো, পুলিশ তাই বেআইনি করে দেয়। এবছরে, আশ্চর্য, আবার সেগুলিকে বাজারে দেখছি, তা প্রায় তিরিশ বছর বাদে। চপেরই মতো, পেটো ইন্ডাস্ট্রিও কি কুটির শিল্প হিসাবে সরকারি তকমা পেলো তাহলে?
তাগাথাং, মূলখারকা : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ১৫৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমরা ঝটপট শহুরে ক্লেদাক্ত জামাকাপড় ছেড়ে ফেলে টুপি-মোজা-জ্যাকেট সম্বলিত হয়ে চল্লুম রান্নাঘরের পানে, সেখানে তখন অপেক্ষা করছে গরমাগরম মোমো আর কফি। সেই সন্ধ্যায় আমরা দু'রকম জায়গার চারজন মানুষ গল্প করতে করতে কখন একাত্ম হয়ে গেছিলাম টের পাইনি। হুঁশ ফিরলো জীবন দা, যে কিনা এই হোমস্টের মালিক তার কথায়। 'এখানে অনেক গেস্ট আসেন, কিন্তু সেরকম কোনো সাইট সিইং, বাজার-মল, সিনেমা হল এসব কিচ্ছু না থাকায় ফিরে চলে যান একদিন বাদেই।' হায়রে Mall, Hall ও কোলাহল প্রেমী বাঙালী, প্রকৃতির কাছে এসেও প্রকৃতিকে না ছুঁয়ে সেই গতানুগতিক "এখানে দেখার কী আছে"?
আমাদের এখানে একদিন থেকে পরদিন মূলখারকা চলে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তাগাথাং ঢুকেই আমরা ঠিক করে ফেলেছিলাম একদিনে আমাদের মন ভরবে না।
আমার পুজো : অরুণকান্তি দাস
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ১১৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আমি যখন অষ্টম বা নবম শ্রেণীর ছাত্র তখন আমাদের গ্রামে প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয়। আমাদের কাজ মূলত: ছিল কর্মকর্তাদের ফরমাশ খাটা - বাজারের জিনিসপত্র বয়ে আন রে, মণ্ডপঘর পরিষ্কার কর রে, আঙিনা ঝাঁট দে রে ইত্যাদি । এতে ঠিক পুজোর আমেজ ছিল না । মনে এই ভাব জাগতো, "পুজো তো বড়দের ব্যাপার। আমাদের কি?" তবে ওই দূর্গাপুজোর দুটো ব্যাপার মনে আছে এখনো । এক, পদ্মফুল আনার গল্প । দুই কাকুর সাথে আমরা কমবয়েসী দুজন গিয়েছিলাম ধোয়া চাদর নিয়ে পদ্ম তুলতে । চাদরে পোটলা বেঁধে ফুল ভর্তি করে নিয়ে এসেছিলাম। আর মনে আছে আমার এক পিসতুতো বোন, নাম ছিল ডলি, প্যান্ডেলের সামনে আরতি নেচে আরতি করেছিল। দুটো পদ্ম ফুলের মধ্যেকার পদ্মচাকি ফেলে দিলে একটা ঝুমকোর মতো দেখায়। ওর সাজগোজ হয়ে যাবার পর দুটো পদ্মের ঝুমকো ও কনুই-এর ওপরে পদ্ম দিয়ে একটা গয়নার মতো বেঁধে দিয়েছিলাম।
তুমিও : সৃজিতা সান্যাল শূর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ৯০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
প্লেটে রুটি দিয়ে চেয়ার টেনে বসতে বসতে অদিতি বলল, "সত্যি কথা! এরকম হবে আমি ভাবিনি, কি করে করছে বলো তো মেয়েগুলো ? এরকম তো আকছারই হয়ে এসেছে। এত বাড়াবাড়ির সাহস পাচ্ছে কি করে এরা?" "এটাই তো ! দ্যাখো, কাউকে ভাল লাগলে তো আমরাও অ্যাপ্রিশিয়েট করি টরি। তোমাকে বলে না কেউ? বৌদি কি দারুণ লাগছেন। ছেলেপুলে একটু আধটু কবে ফ্লার্ট করেছে, তাতেও তুমিও তুমিও করে লাফাচ্ছে।" প্রবাল একটা চামচ তুলে নেয়।
"হ্যাঁ। আমিও এটাই ভাবছিলাম জানো। " অদিতি মুখ খোলে। " তোমার শিপ্রাকে মনে আছে? সেই যে আমার মণিপিসির মেয়ে। ঝুনুর বিয়েতে তোমরা দেখেছিলে। অনেক বছর আগে। ভোলোনি হয়ত। অমন চটকদার চেহারা আমাদের কারো ছিল না। বিয়ের দিন , তুমি আর জামাইবাবু খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করেছিলে ওকে। চওড়া পিঠের ব্লাউজ পরেছিল আর টপনট। ঘন্টাখানেক পরে দেখলাম চুল খুলে পিঠে ছড়ানো। তোমাদের টানা অ্যাপ্রিশিয়েশানে বেচারির একটু সমস্যাই হয়েছিল। কেঁদে অস্থির হয়ে গেছিল। ছেলেমানুষ তো, মানে লেগে্ছিল ওর। কিন্তু দ্যাখো , কেউ কিছু জানতে পেরেছে?
রুপিন নদীর পাশ দিয়ে, রুপিন পাস্ পেরোনো : সরসিজ দাসগুপ্ত
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ১৩১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
তিনদিন হাঁটবার পর, এমনস্থানে পৌঁছনোর কথা, যেখানে খচ্চরের পক্ষেও রাত্রিবাস সম্ভব নয়। অতএব, ওই প্রচন্ড শীতকে মোকাবিলা করবার মতন শীতবস্ত্র আমাদের সঙ্গে রাখতেই হবে। মোটের ওপর এইসমস্ত বিষয়, এবং, এর সাথে সাথে, কিছু হাঁটবার, বিশ্রাম নেওয়ার, ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার ব্যাপারে অবগত হওয়ার পওকে উনিশে অক্টোবর দশমীর সকালে, আরম্ভ হলো, আমাদের রুপিন পাস্ ট্রেক। এবং, ওই তখন থেকেই, সভ্যতার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ!
বিতর্ক - আমাদের উৎসব ধর্মীয় সামাজিক কুপ্রথার পালন নয়, এ নেহাত নান্দনিক ফূর্তিফার্তা, উদযাপন : গুরুচণ্ডা৯র বিতর্কসভা
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ২৩৬১ বার পঠিত
উৎসব টুৎসব মিটল, এবার কথাটা বলা যাক। প্রতি বছর পুজো এলেই দুমদাম করে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় মহালয়া থেকে। হরেক রকম বিষয়ে। যেমন ধরুন, পিতৃপুরুষের তর্পণের দিনকে শুভ মহালয়া বলা উচিত কি উচিত না। ঐতিহ্যগতভাবে কেউ শুভ মহালয়া বলেননি কখনও, কিন্তু হতেও পারে, ধর্মীয় চিহ্নগুলিকে বাদ দিয়ে উৎসব স্রেফ ফুর্তিতে পরিণত হচ্ছে। তার পরই আসে কুমারী পুজো। বাচ্চা একটি মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে পুজো করার মধ্যে অনেকে পুতুল খেলা ছাড়া আর কিছু দেখতে পাননা। উল্টোদিকে এর তীব্র বিরোধীরা ধর্মীয় কুপ্রথার পুনর্নবীকরণ দেখতে পান। পুজো গড়ায়, বিতর্কও গড়ায়, এবং দশমীতে এসে চরমে পৌঁছয়। দশমীর পেট টপিক সিঁদুর খেলা। সিঁদুর খেলা কি স্রেফ নান্দনিক ফূর্তি, নাকি নারীর বশ্যতার প্রতীক? এইসব নানা ব্যাপার।
বিছে : অভিজিৎ মজুমদার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৭ নভেম্বর ২০১৮ | ২০২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
প্রায় এক সপ্তাহ সেই ফোনের অপেক্ষা করেছিল শতদ্রু। আসে নি।
আর এই এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে ওই অজানা অবয়বটা আকৃতি নিয়েছিল ওর মাথায়। সেই অবয়বটার দেহ সুগঠিত ও পিচ্ছিল, দুটো বাড়ানো সরু হাতের শেষে আঁকশির মত দাঁড়া, ঘন ভুরুর নীচে দীঘল চোখে মায়া ও মোহ, আর শ্রীলেখা মিত্রর মত ভারী ঠোঁঠের তলায় তীক্ষ্ণ মাদকভরা একটা লুকোনো হুল।
শতদ্রু এরপর আর দেরি করে নি। বহুদিন ধরে লুকিয়ে রাখা সেই বিছের ছবিগুলো এয়ারমেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল কলকাতায় রাজীব ঘোষের অফিসের ঠিকানায়। এক ঝটকায় বিছেটার সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়েছিল নিজের জীবন থেকে।
তখন কে জানত, আবার ন বছর বাদে এভাবে বিছেটা ওর সামনে এসে দাঁড়াবে? এই রকম করুণ, থ্যাঁৎলানো, মৃতপ্রায় অবস্থায়?
গচ্ছিত মায়াদিন : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ঈদের কড়চা | ২৩ জুন ২০১৮ | ১৩৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কটা একটা করে বছর আব্বুলিশ বলতে যখন ব্যস্ত, আড়ম্বরের কাছে সরলতা কোটোয় বন্দী বোকা-জীবন তখন রকমফেরের পরখ পেতেই ঈদ সে যাপনমুখী। এখানে হলে সলমন থাকে, গুজরাটে - কেরালায় কাজ করা আজিজুল- মোক্তার এরা থাকে সপ্তাহ খানেকের ছুটির আনন্দে। এখানে মাঠে সার্কাস বসে, বিকেলে চপ-রোল-চাউমিন-জিলিপি-বাদামের মেলা থাকে। ঈদগাহ সাজানোর রঙিন কাগজী বেলাভূমিতে মিতায়ু সুর্মা উদ্বেল থাকে আনন্দে - তিতিক্ষায়। এখানে লালবাগে প্রেম থাকে ফুরফুরে, ইতিহাস মেখে উথালপাতাল অধুনা থাকে বেমিশাল....।
আদতে তো একটাই দিন। সমস্ত কুশল সংবাদ, ভালবাসা, খুশি, মুহূর্ত সময় আগলে অহেতুক প্রশ্রয় দেওয়ার দিন...এমন গচ্ছিত মায়াদিন -
উনিশতম অশ্বারোহী : মলয় রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৮ | ২২৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আইডিওলজি ব্যাপারটা তো কোনও বিমূর্ত, ওপর থেকে চাপানো প্রত্যয়ের বিন্যাস নয় । আর আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুমানসমূহ এবং ভাবনা ও অভ্যাস কেবল অন্যের দ্বারা কলকাঠি নাড়ার ফলাফল নয় । কিংবা তা প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ নয়, যে, যখন ইচ্ছে থামিয়ে দেয়া চলে বা গুটিয়ে নেওয়া যায় । তা যদি হতো তাহলে সংস্কৃতিকে যেদিকে যেমন ইচ্ছে চালনা করা যেতো । ইরানের শাহ শত চেষ্টা করেও নিজের ইচ্ছেমতন চেহারা দিতে পারেননি সেদেশের সংস্কৃতিকে । আবার খোমেইনিও সফল হননি । সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত চাপের দরুন পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেল । সোভিয়েত দেশও ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেল এবং টুকরোগুলো নিজের সংস্কৃতিতে ফিরে গেল । যোগোস্লাভিয়া ছিৎরে গেল । অথচ চাপিয়ে দেয়া নান্দনিকতার রেশ থেকে সংস্কৃতিটির বিশুদ্ধ মুক্তি বেশ কঠিন, বলা যায় অসম্ভব — পদাবলী বা মঙ্গলকাব্যে আর ফেরা যায় না । পক্ষান্তরে, তৃণমূল স্তরে প্রতিরোধগুলো যতদিন টিকে থাকে ততদিন সংঘর্ষ চালিয়ে যায়।
ধর্ষণ ও নারীর দায় : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৮ | ১২৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
প্রতিদিন অজস্র বিজ্ঞাপনে এ-কথাই নানাভাবে বোঝান হচ্ছে যে, পুরুষের করায়ত্ত হয়ে তার যৌনকামনা মেটানোর জন্যে নারী সর্বদাই প্রস্তুত, দরকার কেবল সঠিক ডিওডোরান্ট, সঠিক মাউথ-ফ্রেশনার, অমুক দাড়ি কামানোর সাবান কিংবা তমুক জাঙিয়ার। অর্থাৎ নারী এবং যৌনতা, দুই-ই পণ্য, এবং বিক্রয়ের জন্য হাজির। অন্য নানা পণ্যের সঙ্গে এগুলোকেও কেনা যায়। ক্রেতব্য সাবানের যেমন কোনো ব্যক্তিগত ইচ্ছা থাকে না, তেমনি ক্রেতব্য নারীর নিজস্ব ইচ্ছার প্রশ্নটাও অবান্তর। থাকলেও, তা চুক্তিভঙ্গের সামিল, এবং ক্রেতাসুরক্ষা দপ্তরে নালিশ ঠোকা যায়।
ভালো লাগে আরবার/ পৃথিবীর কোণটি : অভিষেক সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৮ | ১৪৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
পরিবেশ বলতে কী বুঝি আমরা? গাছ-পালা,পশু,কীটপতঙ্গ, নদ-নদী, পাহাড়, সমুদ্র, অন্তরীক্ষ এইসব? মানে মানুষ এবং তার সমাজের বাইরের জিনিসপত্র। জাতিভেদ মেনে নিয়ে প্রজাপতিকে চুমু খেলে তা কি সু-পরিবেশ চেতনা? ধোঁয়াহীন ইলেক্ট্রিক গাড়িতে করে দিল্লি-মথুরা হাইওয়ে দিয়ে চলতে চলতে জানালা দিয়ে চিপসের খালি প্যাকেট ফেলে দেওয়া? পরিবেশের বাইরে আসলে কে? কী? যে স্মলপক্সের ভাইরাস নির্মূল করার জন্য আমাদের দীর্ঘ অধ্যাবসায় আসলে তো প্রকৃতি সেও। গোড়াতেই তাই মেনে নেওয়া ভালো যে মানুষের পরিবেশ চেতনা আসলে মানুষেরই স্বার্থে। কখনো সেটা প্রত্যক্ষ ভাবে অর্থ, কখনো বা নন্দনবোধ, কখনো বা কারুণ্য ও সহমর্মীতা। এবারে দ্যাখার দরকার যে স্বার্থটা য্যানো দীর্ঘমেয়াদী হয়।
কলিম খান, গরুর রচনা ও তর্কশীল বাঙালি : দেবতোষ দাশ
বুলবুলভাজা | | ১৭ জুন ২০১৮ | ৯২৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৫
এই বিকারগ্রস্ত সময়ে কলিম প্রায়ই বলতেন, ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে এই বাংলাকে রক্ষা করছে তিনটি শক্তি। কী সেই ত্রিশক্তি? বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, একটি সরোবর কত বড়ো ছিল, বোঝা যায় সেটি শুকিয়ে গেলে। আমরা সেই শুকনো সরোবরের তীরে দাঁড়িয়ে আছি এখন। ট্র্যাজেডি হল, এখনও বুঝতে পারছি না বা চাইছি না ক-ত জল ছিল একদা সেই সরোবরে। ভাষা ও সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার হারিয়ে আমরা আজ ভিখারি। সুযোগ পেয়ে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব তো চলবেই!
রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'সভ্যতার সংকট'-এ লিখেছিলেন 'অতীতের সঙ্গে ভারতের নৃশংস আত্মবিচ্ছেদ'। নৃশংস শব্দ ছাড়া এই আত্মবিচ্ছেদকে সত্যিই বর্ণনা করা যায় না। আমরা ঐশ্বর্যহীন হয়েছি স্বেচ্ছায়, ফলত প্রতি পদে পদে সহ্য করতে হবে 'মুর্খ ভক্ত'দের তাণ্ডব। কলিম-বর্ণিত ‘ত্রি’ফলা’র ফলাগুলো নষ্ট করেছি বা করে চলেছি অহরহ।
রেনবো জেলির দু'চার কথা : সৌকর্য্য ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ জুন ২০১৮ | ৬৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
রেনবো জেলি আমার বুকের ভেতরকার গলিগুলো চুপচাপ ঘুরে, ফুল কোড়ানোর মত নরম আর রঙীন। এই ছবিটা বানানোর প্রক্রিয়া বা অভিজ্ঞতা নিয়ে পত্রপত্রিকায় কথা বলেছি বিস্তর। কিভাবে মৌসুমি ভৌমিকের রেফারেন্সে মহাব্রতকে পাওয়া, কিভাবে তিনমাস অক্লান্ত পরিশ্রমসাধ্য ওয়ার্কশপের পর মহাব্রতর ঘোঁতন হয়ে ওঠা, কিভাবে পুরো স্ক্র্যাপ দিয়ে রোবট বানানো, কিভাবে ধার করে আর স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে প্রোডাকশন করা, সাড়ে চোদ্দ দিনের শিডিউলে পুরো ছবিটা শ্যুট করা...সব। কিন্তু যেটা বলা হয়নি সেটা হ’ল এই গোটা যুদ্ধটায় আমার বিকের ভেতরের ঘোঁতনকে আমি সামলেছি কী করে। সকালবেলা ঘুম ভাঙা প্রতিদিন, তাকিয়ে দেখতাম আলো হয়ে রয়েছে চারধার। বুকের ভেতরকার ঢিপঢিপ বলত আরো একটা দিন বয়ে গেল, ইন্টারেস্ট বাড়ল লোনের। কবে শ্যুট জানিনা কারণ ডেট দেয়নি সবাই। কম টাকার ছবি বলে সবার ডেট পাওয়ার প্রেফারেন্সও কম হয়। বুকের ভেতর থেকে ঘোঁতন বলত, “কী হবে রে রাজন?” আমি বালিশটা জড়িয়ে ধরে বলতাম, “কিছু হবে না, সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে, দ্যাখ আর তো কটা দিন”।
‘ভাষাই পরম আলো’- শ্রী কলিম খান (১৯৫০-২০১৮) : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জুন ২০১৮ | ৩৫২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
কলিম খান যে কাহিনি আমাদের সামনে ন্যারেট করলেন, তা পাঠককে আবিষ্ট করে রাখল ঘটনাজালে। এখানে আরও একটা সূত্র এসে যায়, কলিম খান মার্ক্সিস্ট। বলতে গেলে ধ্রুপদী মার্ক্সিস্ট, যিনি ভারত-ইতিহাস লিখতে গেলেও সামন্ততন্ত্র শব্দটা লিখে ফেলেন। ফলে তিনি দেখালেন ইতিহাস আসলে অর্থনীতিও। আর, মহাভারত-রামায়ণ-পুরাণ ধরে তাঁর নির্মিত ইতিহাসব্যাখ্যা দেখাতে থাকল পুঁজি আর শ্রমসম্পর্কের বিবর্তনের একটি সম্ভাব্য ধারা। যা সচরাচর আমাদের পাঠে আসে না।
যিনি কলিম খান পাঠ করেছেন, তিনি ‘সচরাচর’ শব্দটি লেখার পর ভাবতে বসবেন আসলে তিনি কী লিখেছেন। শব্দের স্মৃতিতে যে ইতিহাস, তা ব্যবহারিক অর্থেই বক্তাকে সেই ইতিহাসের অংশ করে দেয়। যেমন ধরুন যে মানুষটা বলেন যে তিনি চাষবাস করে খান, তিনি আসলে এও বলে ফেলেন যে তিনি খাওয়ার জন্যে শুধু চাষ করেন না, বাসও করেন। কৃষি না করলে বনচারী যাযাবর উপজাতির লোক গৃহস্থ হত না। তার গৃহে স্থিত হওয়ার দরকারই ছিল না। শব্দের আলো এইভাবে লোকসমাজের স্মৃতির মধ্যে জ্বলে, সূর্যের মতই অজান্তেই আলো দিয়ে যায়।
সংখ্যালঘু মানুষ সম্মান চান, অনুকম্পা নয় : দোলন গঙ্গোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ আগস্ট ২০১৮ | ৭৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
জনপ্রিয় সিনেমা আসলে সমাজের মূলধারার চিন্তার প্রতিফলন।আমাদের সমাজে বেশীরভাগ তথাকথিত উদার মানুষ, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং যারা সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন, দূর্ভাগ্যজনকভাবে তারা অনেকসময়ই নিজেদের বিশ্লেষণকে এই সিনেমাটির মত করেই সীমিত করে রাখেন।আমরা অনেক সময়ই নিজেদের সুবিধাভোগী অবস্থান থেকে, ‘উচ্চ’ অবস্থান থেকে, ভুক্তভোগীদের, এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে মুসলমান সমাজের অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চাই।এটি খুবই বিপজ্জনক ঝোঁক।যেমন, অনেক সভা-সমিতিতে দেখি, হিন্দু মৌলবাদের কথা বললেই, লোকজন বলেন যে, সব মৌলবাদই খারাপ। সমান গুরুত্ব দিয়েই নাকি মুসলমান মৌলবাদের কথা বলতে হবে।নিশ্চই মৌলবাদ মাত্রই খারাপ।কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দু মৌলবাদ বেশী বিপজ্জনক কারণ মুসলমানরা এদেশে সংখ্যালঘু।সংখ্যাগুরুর মৌলবাদ এবং সংখ্যালঘুর মৌলবাদ কখনই এক নয়।
সাবাস বাংলাদেশ! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়… : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৪ আগস্ট ২০১৮ | ২৩৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ছোট ছেলেমেয়েদের রাস্তাদখল আর কর্তৃত্বের অধিকার কে দিল? আসলে এই অধিকার দিল তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর মালিকানাবোধ। তারা এখন বড়দের শেখাচ্ছে এইদেশের মানুষ প্রজা নয়, তারা নাগরিক, নাগরিকের অধিকার লুন্ঠিত হলে তা প্রতিষ্ঠার অধিকার ও দায়িত্ব তাদের আছে। এই দেশের মালিক এই দেশের মানুষ, কিছু লোভী ব্যক্তি আর নিপীড়ক গোষ্ঠী নয়। বড়রা যদি এই মালিকানা দাবি করতে না পারেন, তাহলে ছোটরাই এগিয়ে এসে বড়দের পথ দেখাবে।
আসলে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে গণজাগরণ ঘটেছিল, সেটি ছিল প্রজন্ম ’৭১র বিদ্রোহ। মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় প্রজন্ম সেদিন যুথবদ্ধ হয়ে পথ দেখিয়েছিল দেশকে। আর এখন যারা আন্দোলন করছে, এই ছোটরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্ম, যাদের হাতে আগামীতে দেশের স্টিয়ারিং থাকলে, কখনোই পথ হারাবে না বাংলাদেশ!
আধুনিক মৎস্যপুরাণ : সব্যসাচী সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ আগস্ট ২০১৮ | ৯১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মাছ জাতীয় জলের প্রাণীদের মাইক্রোবের আক্রম্ণ থেকে রক্ষা করার জন্য কৃত্রিম পুকুরে অল্প পরিমাপে ফর্মালিনের ব্যবহার প্রচলিত। তবে এই সব ব্যবহারেই লিখিত বিধিনিষেধ যা অনেক স্বীকৃত গবেষণা দ্বারা উপলব্ধ, সেগুলো মেনে চলে কাজ করার বিধিনিষেধ আছে। এই ধরণের বেশিরভাগ রাসায়নিক হাওয়ার অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে আর তা সূর্যের আলোতে ও খুবই অল্প পরিমাণে বিশেষ কিছু মেটাল আয়নের সহযোগিতায় তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যেতে থাকে। এই প্রয়োজনীয় মেটাল আয়নগুলি ট্রেস মেটাল, যেগুলোকে আমরা প্রয়োজনীয় মিনারেল বলে থাকি সেগুলো সাধারণতঃ আমাদের জলে থাকে। সেজন্য এই ফর্মালিন যুক্ত মাছ হাওয়া ও জল মুক্ত অন্ধকার প্যাকিংএর বাক্সে বরফের সঙ্গে রাখার চেষ্টা চলে। বরফ যে কোনো সাধারণ জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়াকে এমনকি পচনকেও মন্থর করে তোলে। খুব বেশি পরিমাণ ফর্মালিন ব্যবহার করা শক্ত, কারণ এটা সাধারণ তাপে ফর্মাল্ডিহাইড হিসেবে হাওয়ায় পৌঁছে গিয়ে তীব্র ভাবে মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া করতে থাকে এবং ত্বকে জ্বালা, শ্বাস নিতে কষ্ট, বমি ভাব,চোখে জ্বালা ও জল পড়া ইত্যাদি উপসর্গ সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতে পারে ।এছাড়া এর তীব্র গন্ধ অসহ্য আর যারা মাছের পচন রোধে এটা ব্যবহার করছে তাদেরও স্বাস্থ্যের বারোটা বাজিয়ে দিতে থাকে।
মহেশ লাইব্রেরী : স্বাতী মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ আগস্ট ২০১৮ | ২৮০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে, নব্য উদারবাদী অর্থনীতির স্বর্ণযুগে বসে, ছাপাখানার প্রথম যুগের এই বহুভাষী সংস্কৃতি হয়তো আজকের দিনে বোঝা একটু কঠিনই। পুঁজির ভাষা ইংরেজি। ক্ষমতার ভাষাও। তার সাথে অবশ্যই রয়েছে রাষ্ট্রশক্তির প্রচ্ছন্ন মদতে হিন্দি আগ্রাসন, যার ফলস্বরূপ উত্তর ভারতের নানান হিন্দুস্তানি ভাষা এক এক করে জমি হারিয়েছে। এই প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে রোশন কিশোর লাইভমিন্টে একটি লেখায় বলেন, “হিন্দি, অথবা সরকারি হিন্দি … আস্তে আস্তে বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে অসংখ্য লোকের কথ্য ভাষাকে গ্রাস করেছে। একজন সাধারণ দিল্লীবাসীর ক্ষেত্রে সেই ভাষা হয়তো পাঞ্জাবি, হরিয়ানভি, বা উর্দু।
টিভি সিরিয়াল, মান এবং টিআরপি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ আগস্ট ২০১৮ | ১৬৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখা ভাল, যে, তার শিল্পগত দিক নিয়ে এখানে একটি কথাও বলা হবেনা। এখানে মূলত চাহিদা, যোগান ইত্যাদি গোদা ব্যাপার নিয়ে কথা হবে। কারণ, যদিও ‘মান’ পড়ে যাবার জন্য অনেকে সিরিয়াল নির্মাতাদের দোষ দেন, অনেকে সৃষ্টিশীলতার অভাবের কথা বলেন, তার কিছু বাস্তব ভিত্তি থাকাও খুবই সম্ভব (আবার নাও থাকতে পারে), কিন্তু মনে রাখা দরকার, যে, যতই শিল্পের তকমা দেওয়া হোক, আর পাঁচটি পণ্যের মতই, টিভি সিরিয়ালও একটি পণ্য। ঠিক কেমন মাল বানাতে হবে, এ নিয়ে টুথপেস্ট বা গাড়ি কোম্পানিরা যেমন বিস্তর গবেষণা করে একটি পণ্য বাজারজাত করে, টিভি সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও অবিকল তাই।
শোনা কথা ৩ - দেশ ও সীমানা : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ আগস্ট ২০১৮ | ২৪১১ বার পঠিত
আসলে বুঝি না, দেশ মানে একটা রাজনৈতিক-ভৌগোলিক সীমানা নয়, দেশ মানে জবরদস্তির ভক্তি নয়, দেশ মানে একাত্মতা। দেশ মানে একটা ভূখন্ড যাকে আমি চিনি এবং যে আমাকে চেনে। সেই ভূখন্ডের সীমানা যা কিছুই হতে পারে। তাই আমার আমেরিকান সিটিজেন দিদি বৎসরান্তে 'দেশে' ফেরে আর আমার কাজের দিদি 'দেশে' যায়।
আমি বাবা-মাকে কলকাতায় ফোন করি। ফোন রেখে দিয়ে বলি, বাড়িতে ফোন করেছিলাম। আমায় কেউ বকে না। কেউ বলে না, কেন মুম্বাইয়ে যেখানে থাকো সেইটা কি বাড়ি না? সেটা কি গাছতলা? কেউ বকে না। তাই আমি কলকাতায় গেলে নির্দ্বিধায় বলি, "বাড়ি গেছিলাম", ফিরলে বলি, "বাড়ি থেকে ফিরলাম"। আসলে বুঝি, বাড়ি মানে ইঁট, সিমেন্ট, জানলা নয়। বাড়ি মানে অন্যকিছু। ঠিক কি সেটা জানি না।
আসামের বিদেশি ট্রাইব্যুনালের রোজনামচা : সৌরদীপ দে - অনুবাদ স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ আগস্ট ২০১৮ | ২৩৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
এই আটক-হওয়া মানুষদের অবস্থা বন্দীদের থেকেও খারাপ। তিনি ক্যাম্পের একটি দুঃখজনক বিবরণ দিয়েছেন, যেখানে দেখিয়েছেন যে এঁরা অন্যান্য "নাগরিক বন্দীদের" তুলনায় কেমন অনেক বেশি বিধি নিষেধের মধ্যে থাকেন। কোকড়াঝাড় কারাগারের নারী বন্দীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মহিলাদের প্রায় এক দশকের মধ্যে একটি মোটামুটি ৫০০ বর্গ মিটারের ঢাকা জায়গার বাইরে বেরোতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এই আটক-হওয়া মানুষদের অধিকার সম্পর্কে কেন্দ্র বা রাজ্যের থেকে কোন নির্দেশিকা বা নির্দেশ নেই। আসাম জেল ম্যানুয়ালের দ্বারা এই আটককেন্দ্রগুলি পরিচালনা করা হয়। রাজ্য আটক-কেন্দ্র ও কারাগারের মধ্যে বস্তুতঃ কোন তফাত করে না , এবং জেল কর্তৃপক্ষ আটক-হওয়া-মানুষ আর কোন অপরাধের-দায়ে-অভিযুক্ত বা দোষী-প্রমাণিত-হওয়া কারাবন্দীদের মধ্যে বেছে বেছে আসাম জেল ম্যানুয়ালের বিধিগুলোর প্রয়োগ করেন। জেল-নিয়মের আওতায় থাকা বন্দীরা প্যারোল বা কাজ-করে-মাইনে পাওয়ার মত যে সব সুবিধাগুলি পান, সেগুলোর থেকে এই আটক-হওয়া মানুষেরা বঞ্চিত।
পুরুষ, নারী ও ছয় বছরের উপরের ছেলেদের তাদের পরিবার থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি বলে যে কীভাবে এই নির্বিচারে, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবন্দীদের মত অবস্থায় আটক করে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। প্রতিবেদনটি আরও জানায় যে আসন্ন NRC র ( যা কিনা সম্ভবতঃ লাখ লাখ মানুষকে রাজ্যহারা করবে) প্রেক্ষিতে কিভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার, বিশেষতঃ সব থেকে পবিত্র সংবিধানের আর্টিকল ২১ দ্বারা সুনিশ্চিত করা যে অধিকার, বিপন্ন। এই সব রাজ্যহারা মানুষদের নিয়ে কী করা হবে, সে বাবদে ভারতের কোন নীতি নেই।
সুতরাং, আটক শিবির সম্পর্কে সত্যিগুলো বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রিপোর্টে অনেককিছু আছে এবং পরিস্থিতির গভীরতা বোঝার জন্য, আমি আন্তরিকভাবে চাই যে সবাই এই নিবন্ধ এবং পূর্ণ রিপোর্টটি পড়ুন
ভাষা-ভীমরতি, সমালোচক ও হ-য-ব-র-ল (প্রথম পর্ব) : সৌরভ মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ আগস্ট ২০১৮ | ১৫৯১ বার পঠিত
শব্দের মূলে নাকি ক্রিয়া, সেই ক্রিয়াই নাকি ঠিক করে শব্দের অর্থ! এই মতে বাংলাভাষার সংস্কৃত-ঘেঁষা শব্দগুলির হিল্লে হলেও শব্দভাণ্ডারের ‘দ্রাবিড়ীয়’, দেশী, বিদেশী শব্দগুলির অর্থ বাতলাতে গিয়ে চটকদার কিন্তু রহস্যময় কিছু বিষয়/ গল্প/ ধারণা উঠে আসে। উঠে আসে অদ্ভুত সব প্রায় অসম্ভব তত্ত্ব, -কৃষ্ণ আসলে কালো টাকা, বিষ্ণু আসলে পুঁজি (‘সেপারেশন অফ্ সারপ্লাস্’ বোঝানোর সময় এ’ কথা অবশ্য মার্ক্সসাহেবও তার ‘ক্যাপিটাল’-এ বলেছেন), জগন্নাথ হল ‘যন্ত্ররাজ বিভূতি’ - কি আশ্চর্য্য, ‘ইংলিশ ফ্যাক্ট্রি অ্যাক্টে’র আলোচনা করতে গিয়ে এ’ কথাও মার্ক্সসাহেব বলে গেছেন! এরপর ‘শিক্ষিত’ শব্দের অর্থে যখন পাওয়া গেল ‘কোনও একটি বিষয়ে অল্পবিস্তর বিদ্যে আর বাকি ৯৯৯টি বিষয়ের আকাট মূর্খামির যোগফল’ –এমন জায়গায় আঘাত লাগে যে জনসমক্ষে বলা দায়!... এই পদ্ধতির নাম ‘ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি’।
কালাজ্বর, একটি অন্ধকার ঘর ও এক অপরাজিত যোদ্ধা : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১০ আগস্ট ২০১৮ | ৩৩৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
অতুলনীয় মেধা,অতি উজ্জ্বল ছাত্রজীবন ও তীক্ষ্ণ ধীশক্তির অধিকারী হিসাবে সুপরিচিত অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর কালাজ্বরের প্রতিষেধক বিষয়ক গবেষণা আরম্ভ হয়। ক্যাম্পবেল কলেজে (বর্ত্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে) শুরু হয় ভীষণ মারণব্যধি কালাজ্বরের বিরুদ্ধে তাঁর ঐতিহাসিক সংগ্রাম। গবেষণার জন্য তিনি পেলেন ছোট একটি ঘর, যেখানে জলের কল, গ্যাস পয়েন্ট বা বিদ্যুত সংযোগ কিছুই নেই। কিন্তু এইসব অসুবিধা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে একটি পুরনো কেরোসিন ল্যাম্প সম্বল করে প্রকৃত বিজ্ঞানতপস্বী উপেন্দ্রনাথ শুরু করেন তাঁর গবেষণা। ধাতুঘটিত যৌগকে রোগনিরাময়ের জন্য ব্যবহার করার পদ্ধতি তখন খুব বেশি প্রচলিত হয়নি। এই প্রসঙ্গে, মিশরের রাণীরা রূপটান হিসেবে ঘন নীল রঙের একধরণের অ্যান্টিমনি পেষ্ট ব্যবহার করতেন, অর্থাত অ্যান্টিমনির ভেষজ গুণের কথা তখনও জানা ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমে Paul Ehrlich ও তাঁর সহযোগীরা আর্সেনিক, অ্যান্টিমনি ইত্যাদির যৌগকে সিফিলিস, আফ্রিকান স্লীপিং সিকনেস ইত্যাদি অসুখের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেন।
অমিয়ভূষণঃ এক বিরল প্রজাতির লেখক : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ মার্চ ২০১৮ | ৬৮২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬২
অমিয়ভূষণ মজুমদারের জন্ম ১৯১৮ সালের ২২শে মার্চ। এ বছর তাঁর জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু এ কথাও আমাদের জানা এই বিরল প্রজাতির লেখকের জন্মশতবর্ষ সাহিত্যসংস্কৃতি জগতের প্রখর আলোর নীচে আসবে না। বিপণন কৌশলের অন্যতম শর্ত হয় সাধারণ্যে গ্রহণযোগ্যতা। প্রতিষ্ঠান তাই চায়। জনচিত্তজয়ী লেখমালা, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া ও অন্যান্য বিনোদনের জন্য প্রচারের পাদপ্রদীপের আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাকে আরও মহিমা দান করে কৌশলী প্রতিষ্ঠান। ব্যতিক্রমী স্রষ্টার জন্য থাকে কিছু মননশীল পাঠক, ব্যতিক্রমী সৃষ্টির গৌরবকে তাঁরা অনুধাবন করতে পারে, সেই রচনাকে তাঁরা কুর্নিশ জানায়। এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে নগণ্য। কিন্তু কালোত্তীর্ণ মহৎ সৃষ্টির তাতে কিছু আসে যায় না। সেখানেই অমিয়ভূষণ সৃষ্টি আলাদা হয়ে গেছে চলাচলের নিরাপদ পথ থেকে। আর এক মজুমদার, কমলকুমারের মতই তাকেও বিদগ্ধ পাঠক এবং সমালোচক ‘লেখকদের লেখক’ হিসেবে গণ্য করেছেন।
পরাজয়ের একাকীত্ব, পরাজিতের বৃন্দগানঃ অসীম চট্টরাজের লেখা : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ মার্চ ২০১৮ | ২২৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
যদিও ২০০০ সাল নাগাদ প্রকাশিত হচ্ছে, গল্পগুলি পড়লে বোঝা যাচ্ছে আরো বছর পনেরো কুড়ি আগে লেখা। বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে বড় করে কৃষি বনাম শিল্প বিতর্ক শুরুর কিছুটা আগেই, অনেক পুরোনো একটি বিষয়ের অবতারণা করার প্রয়োজন অনুভব করছেন অসীম। বাঁকুড়া এবং বীরভূমের গ্রামে যাঁর পারিবারিক শিকড় রয়েছে, যিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ভারী শিল্প নগরীতে বড় হচ্ছেন, তাঁকে শিল্পনগরের যন্ত্র এবং উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনজীবন, নতুন রকমের সমাজ এবং বিচিত্র মানুষকে নিয়েই তাঁর রোজগেরে বাস্তব, কিন্তু কৃষির সঙ্গে জড়িত মানুষ কী ভাবে যন্ত্র জিনিসটার মুখোমুখি হচ্ছেন, তার প্রায় কয়েকশো বছরের পুরোনো প্রায় শিল্প বিপ্লবের সময়কার সংঘাতটা তাঁকে ভাবাচ্ছে। বা বলা ভালো এক দেড় দশক পরেকার আমাদের রাজ্যের সম্ভাব্য সংঘাতও প্রতিভাত হচ্ছে।
হারাধন মন্ডলের গল্প তে দেখা যাচ্ছে, "হারাধন মন্ডল - দি ওয়েল্ডার, মেড ইন পাথরঘাটা - এ ভিলেজ নিয়ার শান্তিনিকেতন", বিচিত্র ঠোঁটকাটা আমোদ গেঁড়ে, হাতের কাজে উৎকর্ষের সীমানায় পৌছনো, ‘লোহায় লোহায় বিবাহ’ দেওয়া শ্রমিক, মুক্তধারার যন্ত্রবিদের মত যন্ত্রের জয়ের গান না গেয়েই প্রায় বিনা বাক্যব্যয়ে, শেষ পর্যন্ত ফিরে যা্চ্ছে তার গ্রামে। এবং বাসে গান গেয়ে পয়সা জোটানো বাউল, যে নিজে চিরায়ত জীবন দর্শন চর্চার বিশুদ্ধতার দাবী বিশেষ করছে না, গান বাঁধছে শুধু,
"চাগরি যদি করবি চাষা
আজব কলে বাঁধরে বাসা
চাষা পরাণ বলে বুদ্ধি খাসা
ফিরতে তোমার চাই জানা।"
অথচ বাউল ও হারাধন, দুজনেই যেন কোথাও একটা ভবিতব্যকে অস্বীকার করতে পারছে না, তাদের চোখের সামনেই "একপেট স্কিলড আনস্কিল্ড ওয়ার্কার নিয়ে বাস ছুটে চলে দুর্গাপুরের দিকে", সকলের ফেরার পথটি জানা আছে কিনা জানা নেই, বাস রাস্তার অবিশুদ্ধ বাউলের গানে সমাধান বিশেষ নাই।
একজন পরিবেশ কর্মীর ভাবনা চিন্তা : ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ মার্চ ২০১৮ | ১১০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
একটি জানা গল্প আবার বলতে ইচ্ছে করছে। গল্পটা আফ্রিকা মহাদেশের। বান্টু অঞ্চলের। একজন নৃতত্ববিদ একটা মজার খেলা আমদানী করলেন ৷ একটা গাছের ডালে একঝুড়ি আপেল ঝুলিয়ে দিলেন ৷ দূরে একটা দাগ দিলেন। দাগ ধরে সাতটি বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে দৌড়বে বলে। শর্ত হল, যে আগে পৌঁছতে পারবে সব কটা আপেল তার। সাহেবের যে দেশে জন্ম সেখানে বাচ্চাদের এরকম খেলা দিলে তারা হয়ত হৈ হৈ করে দৌড়াত এবং একজন প্রথমে ছুঁতো। সবকটা ফল সেই পেত। এটা-ই তো খেলার শর্ত। কিন্তু এই বাচ্চারা যে দেশে জন্মেছে তাদের উচিৎ অনুচিত বোধ একেবারেই আলাদা। বাচ্চাগুলি সকলে মিলে হাত ধরাধরি করে একই সাথে ঝুড়ির কাছে হাজির হলো। সাহেব তো অবাক - শুনি নাই কভু, দেখি নাই কভু অবস্থা। জানতে চাইলেন এরকম তারা কেন করতে গেল। উবন্তু। উত্তর দিল সবাই মিলে ৷ বুঝিয়ে দিল সাহেবকে উবন্তু কথাটির মানে, উবন্তু বলতে কী বোঝায় ৷ তাদের কথা এই যে যদি আর সকলে দুঃখ পায় তবে একজন কি করে আনন্দ পাবে। সবাই একসাথে ভোগ করতে না পারলে সেটা আনন্দ নয়। সবাই আছে তাই আমি আছি - এই হল ওই বাচ্চাগুলির শিক্ষা। এত অল্প বয়সে ওরা এটা জানে না আজকের এগিয়ে থাকা, স্মার্ট, বিজ্ঞানমনস্ক সভ্যতায় আতিপাতি করে খুঁজলেও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না বাচ্চাদের সহজাত সদ্ভাবনায়। এই শিক্ষার অস্তিত্ব আধুনিকতায় আর মোবাইল অ্যাপে হারিয়ে গেছে। একেবারে গোড়া ধরে নাড়া দেয় আজকের মূল্যবোধে, জীবনচরিতে, জোটবদ্ধ হওয়ার ফাঁকা আওয়াজে আর মৌলিক ভাল-মন্দ বোধে।
জুলফি : কৌশিক ঘোষ
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৫ মার্চ ২০১৮ | ৮৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
বীরেনবাবু ভূগোল পড়াইতেন। তিনি ম্যাপ লইয়া ক্লাসে আসিতেন। দেওয়ালে ম্যাপ টাঙ্গাইয়া তিনি একে একে ছাত্রদের ডাকিতেন এবং কোনো এক বিশেষ স্থান, নদী, রাজধানী, পর্বত ইত্যাদি খুঁজিতে বলিতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাত্ররা ব্যর্থ হইত। তখন বীরেনবাবু সস্নেহে সেই বিফল ছাত্রকে কাছে ডাকিতেন এবং শুধাইতেনঃ 'ফুচকা খাইবি?'বলাই বাহুল্য, ভীরু ছাত্র মাথা নাড়িত। অতপর, বীরেনবাবু সেই ছাত্রের জুলফিদ্বয় দুই হাতের আঙুলে ধরিয়া উপরের দিকে আকর্ষণ করিতেন। তখন, সেই অসহায় বালক দুই পায়ের আঙগুলে ভর দিয়া মাধ্যাকর্ষণ অগ্রাহ্য করিয়া দন্ডায়মান হইত। নীচে নামিলে অধিক ব্যথার উদ্রেক হইবে। জুলফির আকর্ষণে পদযুগল মাটি ছাড়িয়া উপরে যাইলে অধিকতর যাতনা! এইরূপ ত্রিশঙ্কু অবস্থায় শাস্তিপ্রাপ্ত বালক ত্রাহি ত্রাহি রব ছাড়িত। ইহাতে হাস্যরসের উপাদান থাকিলেও সহপাঠীরা ইহাতে আদৌ কৌতূক পাইত না। ঘুঁটে পুড়িয়া যাইত, কিন্তু গোবর হাসিত না। শরতের আমলকী বনের ন্যায় বালকদিগের বুক আশংকায় দুরুদুরু করিত। না জানি কখন কাহার ডাক পড়ে? কাস্পিয়ান সাগর বা রাইন নদী চিহ্নিত না করিতে পারিলে অদৃষ্টে বীরেনবাবুর ফুচকা রহিয়াছে।
আন্তর্জাতিক নারীদিবস – হা! হা! : চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১৮ | ১৩৪২ বার পঠিত
আ! ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস, হা! হা! এই হা-হা আমার নয়। ‘বেটি বঁচাও’ শ্লোগানেরই তলানিটুকু এই হাসি। পুরুষ যেদিন ঘুম থেকে উঠেই তাঁর অধিকৃত নারীর প্রতি কটাক্ষ ছুঁড়ে বলতে পারে, আজ তো তোমাদের দিন ! ওয়েল, সেই দিনটিকে উপভোগ করার জন্য নারী তার প্রাত্যহিক কর্মযজ্ঞের কোটা মিটিয়ে হয়তো-বা কোনও এক টেবিলের একপ্রান্তে লিখতে বসবে তার নিজস্ব লেখা, হ্যাঁ সেলফ-সেন্সরশিপ সমেত। নারী যাবে কোনও সভায়, মেয়েদের চোখের তলার ক্লান্তি তথা দৈনন্দিনতার সাতকাহন গেয়ে একচিলতে স্বস্তি পেতে। নারী, ছোট-ছোট কন্যাসন্তান্দের নিয়ে অনুষ্ঠান বানাবে আর ঘন ঘন ঘড়ি দেখবে, সূর্য ডোবার আগেই এই শ্বাপদসংকুল শহরে কিংবা গ্রামে, এদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে তো! যদিও আন্তর্জাতিক নারীদিবসে, বাৎসরিক শ্রেষ্ঠ রসিকতা এই এইটেই যে, সাত থেকে সত্তর বছর বয়সের রমণীরা, তাদের নিজেদেরকেই নির্বিঘ্নে, রেপড না হয়ে, ঘরে ফেরানোর গ্যারান্টি কি দিতে পারছে, আজকের এই উত্তর-আধুনিক সভ্য পিতৃতন্ত্রের দিনকালে?
রুটি ও গোলাপ চাই : দোলন গঙ্গোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১৮ | ১৩১০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আজ সকাল থেকে পুলিস-পিসিকে মনে পড়ছে। পুলিস-পিসি আমাদের বাগবাজারের বাড়ির প্রতিবেশি ছিলেন। পুলিস-পিসি লালবাজারে কর্মরতা ছিলেন।সে আমলে মানে সত্তরের দশকের শুরুতে মহিলা পুলিস সচরাচর দেখা যেত না।আমাদের চারপাশে অন্তত ঐ একজনই ছিলেন।পুলিশ-পিসি ছিলেন অবিবাহিত, কড়া ধাঁচের মানুষ। আমরা পাড়াসুদ্ধ কচিকাঁচারা ওকে ভয় পেতুম।শুধু ছোটরাই নয়, পাড়ার বড়রাও, এমনকি মুরুব্বিরাও পুলিস-পিসিকে বেশ সমঝে চলত।মহিলারা ওর সঙ্গে খানিকটা সম্ভ্রম আর খানিকটা ‘আহা বেচারী, বিয়ে হোল না’ গোছের অনুভূতির মিশেল এক দূরত্ব বজায় রাখতেন।আজ মনে হয়, আমাদের সেই গোপীমোহন দত্ত লেনের সাবেকি পাড়ার জীবনে পুলিস-পিসিকে খানিক ব্রাত্যই করে রাখা হয়েছিল।
কিন্তু কেন পুলিস-পিসি পাড়ায় থেকেও এমন ‘আলাদা’ থেকে গেলেন?আর শুধু কি পাড়ায়? তাঁর নিজের পরিবারেও কি তিনি মূলস্রোতের বাইরে ছিলেন না? পুলিস-পিসি বাস করতেন তার বাবার বাড়িতে, এক মাঝারি সাইজের একান্নবর্তী পরিবারে।রোজ ঘড়ি ধরে সকাল নটায় পুলিস-পিসি কাজে বেরোতেন। পিসি কাজে বেরোনো অবধি নিজের প্রাত্যহিক রুটিনে চলতেন আর কাজ থেকে ফিরেই সেতার বাজাতে বসে যেতেন নিজের ঘরে। পরিবারের সঙ্গে তার লেনাদেনা ছিল নিতান্ত কেজো এবং নিক্তিতে মাপা। সংসারে থেকেও তিনি ছিলেন সংসারের বাইরে।
নারী 'দি' বস : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৮ মার্চ ২০১৮ | ১৩০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
কিন্তু ঘটা করে এই একটা দিন কীসের উদযাপন? কেন উদযাপন? গত এক বছরে প্রায় প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সকালটা তেতো হয়েছে এক বা একাধিক ধর্ষণের খবরে। চার থেকে আশি - কেউ তো বাদ নেই 'ধর্ষিতা' পরিচয়ে শিরোনাম হতে। হিসেব বলছে নাকি এক দিল্লিতেই গড়ে দিনে পাঁচটা ধর্ষণের 'কেস' পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়। তাহলে 'কিন্তু-তবু-যদি-লোকে কী বলবে'র গেরোয় হাঁসফাঁস করা বাকি 'কেস'গুলোর খতিয়ান কেমন, ভাবুন তো! ধর্ষণ- শারীরিক নিগ্রহ আর ভারতীয় উপমহাদেশের যা বিয়ের কনসেপ্ট অর্থাৎ সম্পূর্ণ অচেনা (হালে অবিশ্যি ফোনে দু'দন্ড বাক্য বিনিময়ের পর বাপ-মায়ের দ্বারা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক এর একখান গালভরা নাম দেওয়া গেছে : 'অ্যারেন্জ্ঞড কাম লাভ ম্যারেজ', এক্কেরে আচ্ছেদিন মার্কা ব্যাপারস্যাপার আর কী। রাজা বলেছেন দিন এসছে, উহাকে তোমরা, নালায়ক প্রজাগণ, সোচ্চারে বল 'আচ্ছে দিন' এবং ভাব, ভাবা প্র্যাকটিস কর যে এর থেকে আচ্ছেদিন তুমি জীবনেও দেখনি, দেখবে ঠিক love হবে, লাভ এই লাভ তো এটাও সেরকমই একখান ব্যাপার) একজনের গলায় সোনা-দানা-খাট-পালঙ্ক (ইহাদের পণ বলে না, ইহারা হল গিয়ে 'আপনার মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেবেন' এর কড়ি আঙুলে ফেলা ক্যারিকেচার)নিয়ে ঝুলে পড়ার পর শারীরিক-মানসিক ট্রমার রুটিনে এই একদিন আলতো শো-পিস পরানোর নামই কি উদযাপন?প্রথম মহিলা মহাকাশচারী, মহিলা রাষ্ট্রপতি, মহিলা পর্বতারোহী...এসব সাধারণ জ্ঞানের অসাধারণ মেয়েদের কথা তো সবার অল্পবিস্তর জানা অতএব অজানা কয়েকজন অতি সাধারণ মেয়ের কথাই না'হয় এখন বললাম।
নারীদিবস, মানসিক অসুস্থতা ও গর্ভ-ধারণ : স্বস্তি শোভন চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ৯৮১ বার পঠিত
আমি কেনো 'নারী দিবস' নিয়ে এতসব বলছি?? আসলে আমার মা বছর দেড়েক আগে চলে গেছেন, বউ আছে, দিদি আছে। ছোট পারিবারিক বৃত্তের মধ্যে এরা আমাকে ঘিরে থাকা মানুষ এবং 'নারী'। এর বাইরেও বৃহত্তর পারিবারিক গন্ডীতে, বন্ধু বা চেনা-জানার মধ্যে আছেন আরো অনেক মানুষজন যারা আদতে 'নারী', এদেরকে অস্বীকার করে তো আমার জীবন হতে পারে না। এরা এবং সারা পৃথিবীজুড়ে আরো অন্য নারীরা প্রায় চিরকাল যে সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয় প্রতিনিয়ত, যে শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার বা পারিপার্শ্বিক অসহনশীলতার শিকার হয় প্রত্যহ, অহরহ, তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা আমারও। তাকে স্বীকার না করলে আমি নিজেই একজন পিছিয়ে পড়া মানুষ!!
নিজেরে করো জয় : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ১৫২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
ম্যাম, আই হ্যাভ ভেরি গুড নিউজ। - মাত্র কদিন হল কাজে লেগেছো মা, বলে বলে হয়রান হয়ে যাই, ঠিক করে লিটারেচার রিভিউ অব্দি শুরু করলে না, গুড নিউজ কিসের? অনুজা যা বলে তার মর্মার্থ এই রকম-তার স্বামী পুনে (বা বরোদা বা নাগপুরে) বিশাল চাকরি পেয়েছে, বিশাল বাংলো, বিশাল গাড়ি, আয়া, বাবুর্চি ইত্যাদি, ইত্যাদি। অনুজা কাল থেকে আসবে না। - তা কী করে হয়, নিয়মানুযায়ী নোটিস দিতে হবে।রুলস পড়ে দেখো। - ওসব নিয়মটিয়ম আপনি দেখুন ম্যাডাম। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে যাব, এখানে আবার নিয়ম কিসের? আর, আমার তিন মাসের স্যালারিটা দিয়ে দিন। স্পর্ধা দেখে হিড়িম্বা অবাক হতে ভুলে যান। - যতটা লিটারেচার জোগাড় করেছো,গুছিয়ে লিখে দাও আগে, তারপর স্যালারির কথা ভাবা যাবে। - কী বলছেন? আমাকে এখন প্যাকিং শুরু করতে হবে, যাওয়ার আগে কত কাজ, এখন আমি লিখতে বসব? পিসিতে আছে, দেখে নেবেন। - কাজটার প্রতি কোন আগ্রহই নেই বোঝা যাচ্ছে,এসেছিলে কেন? - ওহ, এমএসসি করে কি ঘরে বসে থাকব? একটু টাইম পাস, হাতখরচ এসবও তো লাগে। টাকাটা কখন পাব? - এখনও তো ঘরে বসতেই যাচ্ছ। - নিজের সংসারে বসা আর বাপের বাড়িতে বসা এক হল?
প্রতিমাদি : শক্তি দত্ত রায়
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ৮৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
নারীদিবসের গোলাপি শুভেচ্ছা, সুললিত শুভেচ্ছাবাণীতে ফেসবুক ভরপুর। গয়নার দোকানের বিজ্ঞাপন, দোকানে দোকানে নারীদিবসের ভর্তুকিতে দামি জিনিস পাওয়া যাচ্ছে, খুব আনন্দ করছে অনেকে, কেউ আবার বিরাগ পোষণ করছে, অনেক পুরুষরা লঘু রসিকতাও করছেন। আমার প্রতিনিয়ত মনে পড়ে দীর্ঘ কর্মজীবনে দেখা অন্তরালের বিজয়িনীদের কথা। তখন তো এত কিছু ছিলো না, থাকলে হয়তো কেউ তাঁদের সম্বর্ধনা দিতো। সে তো অন্যরকম সময় ছিল। দেশভাগের ক্ষত, মুক্তিযুদ্ধ, সপ্নদর্শী আত্মঘাতীর দল চারদিকে, ক্ষুৎকাতর সাহিত্য, সব মিলিয়ে এক আশ্চর্য গোধূলি, ভালো কি মন্দ বোঝা যায়না। তারই মধ্যে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছে সংসারের হাল ধরতে, সবার বাড়িতেই পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু আত্মীয়, দিশাহারা সময়। সেই অলাতচক্র ভেদ করেছেন যে সব মেয়েরা, যাঁরা করতে পারেননি, সবার কথাই মনে পড়ে, এইসব দিনে আরো বেশি।
সাজ - এক অবান্তর সংলাপ : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ৯০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
"ওঃ দিদুন! তুমি না ইনকরিজিবল! আমাদের চিড়িতন, হরতন, ইসকাবনের মতন দেখতে লাগে?"" কী জানি! আমার তো বয়স হচ্ছে – চোখে হাই পাওয়ারের চশমা – আমার চোখে তো সব এক ধাঁচের লাগে! ওই যে সেদিন তোর তুলিদিদির এনগেজমেন্টের পার্টি ছিল, আমি তো এক জায়গায় বসে বসে দেখছিলাম – সবাই কেমন একই রকমের ঢেউ খেলান চুল, একই রকমের মেকআপ, ঝকঝকে দামি শাড়ি- গয়না পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল – আমার তো সবাইকেই এক রকম লাগছিল। সবই ছিল – সবার ঝকঝকে মুখ, তকতকে চেহারা – কিন্তু কেমন মেকিয়ানা, নকলনবিশি - নিজস্বতা ব্যাপারটা খুঁজে পেলাম না রে!"" তুমি না আমার সব কেমন ঘেঁটে দিচ্ছ! তুমি বলছ আমরা কসমেটিক্স কোম্পানি গুলোর অন্ধ অনুসরণ করি!""একদম। আর জানিস-ই তো কস্মেটিক্স তৈরি করতে, তাঁর টেস্টিং করতে কত কত নিরীহ প্রাণী মারা যায়। তারপরেও তোরা তাদের বয়কট করিস না। অবশ্য শুধু কসমেটিক্স কোম্পানিই তো নয়, সে দলে আছে সব গয়নার কোম্পানি, জামা কাপড়ের, অ্যাক্সেসরীজের ব্র্যান্ড, হেয়ার স্টাইলিং এর ব্র্যান্ড – সবাই। একজন বলল, হীরে হল মেয়েদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু – ব্যস অমনি সবার হীরের গয়না কেনার হিরিক পড়ে গেল।
আজ ওরা খুন করবে ত্বকীকে : অমল আকাশ
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১২ মার্চ ২০১৮ | ৭৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
- মা যখন আমাকে মনে করে কাঁদেন, সেই নি:শব্দ তরঙ্গরাশি থৈ থৈ করে খুঁজে ফিরে আমাকে-সুধীজন পাঠাগার, শ্রমকল্যাণ, সায়াম প্লাজা, গলাচিপা, কলেজ রোড।তারপর চারারগোপ পার হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কুমুদিনীর পাড় ঘেসে শীতলক্ষ্যা নদীর খালে। তখন আমি যদি শীতলক্ষ্যার জলে না থাকি, তবে যে মায়ের বুকের হাহাকার সারা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরে আমায়।শহরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গাছের পাতারা বিষন্ন হয়ে নড়তে ভুলে যায়। রাস্তা গুলো এলোমেলো হয়ে ছুটে যায়, কে কোথায়! সমস্ত হাইরাইজ ভবন, ভবনের দরজা-জানালা, জানালার কাঁচ ও পর্দা, পর্দার রং ও সেলাই সব মলিন হয়ে থরথর কাঁপতে থাকে ভীষণ।লোকে ভাবে ভূমিকম্প। আমি জানি, মায়ের বুক যখন কান্নায় ভেঙে ভেঙে যায়, তখন এমন কম্পন উঠে শহর জুড়ে। শীতলক্ষ্যার তলে আমাকে খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না। আর এই পথ এখন মায়ের কান্নার খুব চেনা পথ। কতো কান্না যে জমে আছে নদীর পলিতে! দেখতে পাচ্ছোনোতো! দেখবে কি করে! লোভী ব্যবসায়ীরাতো নদীর জল কেমিক্যাল আবর্জনায় নোংরা-কালো করে আড়াল করে ফেলেছে সব।এখন নদীর তল ডুবুরিরাও দেখতে পাবেনা।
প্রাকৃতজনের বিদায় : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১২৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
তাই তো তাঁর গল্পের নায়িকা অশঙ্ক উচ্চারণে বলতে পারে, "এখানে আমি হেঁটেছিলাম- তুইও হাঁটিস এখান দিয়ে; এখানে দাঁড়িয়ে আমি মিছিল দেখেছিলাম- তুইও দেখিস এইখানে দাঁড়িয়ে, এখানে সেজানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল এখানে,এই গাছতলায়-এখানে তুইও দাঁড়াস। আর এই যে রাস্তাটা,এই রাস্তায় সেজান মিছিল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল-তুইও এই রাস্তা দিয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাস,হ্যাঁরে পারবি তো?" কী পবিত্র প্রত্যয়, অকলুষিত স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষার নির্ভীক পরম্পরা। শিউরে ওঠে মন, রোমকুপে বেজে যায় সাহসি দুন্দুভি। মনে পড়ে যায় ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' উপন্যাসের নিলভনা ভ্লাসভকে। ট্রেনের কামরায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, পুলিশি নির্যাতনে মৃতপ্রায় রক্তাক্ত মা নিলভনা দমে যাননি ভয়ে। বিপ্লবী সন্তান পাভেল ভ্লাসভের বক্তৃতাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দিতে নির্ভীক মা নিলভনা বলেছিলেন, ভাল মানুষের সন্তানেরা, একবার জাগো...। উপন্যাসিক শওকত আলির উপন্যাস, দক্ষিণায়নের দিন এর নায়িকা রাখী যেন ঠিক এভাবেই আলোর পথ চিনিয়ে দিচ্ছিলেন তার ভবিষ্যৎ অনাগত সন্তানকে, খোকা পারবি তো ?
এক নগ্ন দেবতার সান্নিধ্যে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ৮৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
মণীন্দ্র গুপ্তের স্বচ্ছন্দ, অন্য গদ্যে ধরা পড়ে কবিতার জীবন - তার জন্ম, বীজ ও ক্ষেত্র, বৃদ্ধি, প্রজনন, দেহ, ব্যক্তিত্ব এবং মৃত্যু। এই পর্যায়গুলোতে পাঠকের স্বচ্ছন্দ চলনের অভাব কবিতায় প্রবেশের পথকে দুর্গম করে। লেখক তীব্র শ্লেষের সঙ্গে জানান কঠিনপ্রাণ, কঠোর আমলাতান্ত্রিকেরা কবি হবার নিশ্চয়তা থেকে চিরমুক্ত। এই দৃপ্র বলিষ্ঠতা, জ্যা মুক্ত তীরের মতো লক্ষ্যভেদী ভাষা আর বেদুইন টানের কারণে সমালোচকদের মণীন্দ্র গুপ্তকে মনে হয়েছে আদ্যন্ত এক পুরুষ, দুঃসাহসী, সংস্কারমুক্ত, তথাকথিত নারীসুলভ কমনীয়তাবর্জিত। তবু এই অনমনীয় অকাট্য বিশ্লেষণী শক্তিই তার তূণীরের একমাত্র অস্ত্রসম্ভার নয়। কেন লেখেন, এই প্রশ্নের উত্তরে একবার লিখেছিলেন, শুধু মানুষের সঙ্গ নয়, প্রকৃতি এবং বনবাসীদের দেখলে বোঝা যায় অর্থনীতির বাইরে তৃষিত প্রাণ কিভাবে তৃপ্ত হয়। চলে যাবার আগে এইসবই লিখে জানিয়ে যেতে চেয়েছেন।
রবিশংকর বল ও স্বপন সেন ... এক মিনিট নীরবতা : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১২৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পুজোর পর এক বন্ধু ফোন করল,তুমি কি জানো,স্বপন আর নেই। গত ফেব্রুয়ারিতে মারা গেছে। নিঃশব্দে চলে গেছে। তার স্ত্রী কাউকে জানায়নি। এমনকী রবিকেও না। রবিকে আমি ফোন করলাম খবর নিতে,তুমি কি জানো রবি,স্বপন বেঁচে নেই? সে জানত না। একটু বাদে ফোন করে আমাকে বলল,সত্য। স্বপনের খবর তার জানা ছিল না। বাড়িতে ফোন করে জানল এখন। কোনো বন্ধুই জানে না। বিকাশ,সর্বজিত,ভাস্কর,অদীপ কেউই না। কাউকে জানায়নি ওর স্ত্রী। অসুস্থ সন্তান নিয়ে সে বেঁচে আছে। সেই জানার দু'মাসের মাথায় ডিসেম্বরে রবি চলে গেল। লেখক রবিশংকর বল। স্বপন সেনের সঙ্গে নিশ্চয় তার দেখা হয়েছে। অনুজপ্রতিম দুই বন্ধু চলে গেছে। বাইরে বসন্ত আসছে। নতুন পাতা ফুটছে শালবনে। চারদিকে নতুন জীবনের গন্ধ। আমি লিখছি এই শোক গাথা। হায়!
নমামি বরাক উৎসব ও বন্ধ কাগজকলের গপ্পো -২ : পার্থপ্রতিম মৈত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২১ জানুয়ারি ২০১৮ | ১২৮৭ বার পঠিত
জানোনা হঠাৎ এই নদী উৎসব শুরু হলো কেন? আজ ব্রহ্মপুত্র, কাল বরাক, করিমগঞ্জের কুশিয়ারা, পরশু পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা, কেন? মনে হয়না? কেন ? কেন নদী উৎসব হচ্ছে এবং হবে? তার কারণ নর্থ-ইষ্ট থেকে বরাক ব্রহ্মপুত্র বেয়ে, বাংলাদেশের নদনদী সমুদ্র বন্দর ছুঁয়ে হলদিয়া, কোলকাতা হয়ে পণ্য পৌঁছাবে বারাণসী ঘাট অবধি, যেটা মোদীর কেন্দ্র। বরাক কুশিয়ারা দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলবে। তার জন্য কী প্রয়োজন? নদীখনন। নদীখননের জন্য কী প্রয়োজন? টাকা। কে দেবে? গৌরী সেন। মানে নরেন্দ্রভাই দামোদরভাই। তাও না? তাহলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক? আজ্ঞে হ্যাঁ? তাই।
আপাততঃ এটুকু জেনে রাখুন ভারতবর্ষে টাকার বন্যা বইয়ে দেবার এক নতুন পরিকল্পনা ছকা হয়েছে। আন্তর্দেশ জলপথ পরিবহন। প্রাথমিক প্ল্যানটা হলো বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বারাণসী থেকে হলদিয়া হয়ে সদিয়া ৪০০০ কিমি জলপথ সংযোগ, ড্রেজিং, ভেসেল কেনা ইত্যাদি। সবটাই প্রায় ঋণের টাকায়, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের ঔদার্যে সফ্ট লোন। কিছুদিন আগে নমামি ব্রহ্মপুত্র উৎসবের মাঝখানে এই বিষয়ে অনেকগুলি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। নমামি বরাক উৎসবের মাঝখানে ড্রেজিং শুরু হচ্ছে।
শোনা কথা ২ - হিসাব-কিতাব : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | বাকিসব : শোনা কথা | ৩১ জুলাই ২০১৮ | ১৫৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
আচ্ছে দিনের বাজারে অবশ্য সবসময় উন্নয়নের হিসেব রাখা মুশকিল। কখন কোথা দিয়ে বিকাশ হয়ে যাবে, টেরটিও পাবেন না। ভাববেন আমের বাজারদর যাচাই করবেন, সরকারপক্ষ আপনার হাতে ধরিয়ে দেবে আমলকী ফলনের বার্ষিক হিসেব। যেমন ধরুন, কর্মসংস্থান। বিরোধীপক্ষ সরকারের কাছে জানতে চাইলেন গত চার বছরে কত নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। মোদীজি তার উত্তরে কতজন বছরে পাশ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, সি এ হচ্ছে তার হিসেব দিয়ে দিলেন। নাও, এবার ঠ্যালা সামলাও। তাই বলছি, হিসেব মেলানোর চেষ্টা না করাই ভালো।
মেডিকেলের এই আন্দোলন কাদের উত্তরাধিকার : আদিত্য সরকার
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২১ জুলাই ২০১৮ | ১২১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
অনিকেত এই চিকিৎসকদের সন্তান। অয়ন, সুমন, হিল্লোল এই চিকিৎসকদের উত্তরাধিকার। সুযোগ্য উত্তরাধিকার।
অনিকেতরা সেই ডাক্তারিছাত্রদের প্রতিনিধি যারা ১৯৮০-র দশকে স্বাস্থ্য আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা এক্স-রে, ই সি জি ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা চালু করার জন্যে। অয়নরা সেই ডাক্তারিছাত্রদের উত্তরসূরি যারা নব্বই এর দশকে কলকাতার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে গেছেন, বস্তিবাসী মানুষদের স্বাস্থ্যের হাল হকিকতের খোঁজ তাঁদের মধ্যে গিয়ে নিয়ে এসেছেন।
আর তাই শুধু বর্তমান নয়, যে কোন শাসক দলের কাছেই এই উত্তরাধিকার একটা বড় দু:স্বপ্ন। আসন্ন স্বাস্থ্য আন্দোলনের একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি।
এইটা মেনে নিতে চাইছেনা রাষ্ট্র। এইটা মানতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। তাই চাইছে একদম ফার্স্ট ইয়ার থেকে, একদম 'তৃনমূল' স্তর থেকে এই সম্ভাবনা সমূলে বিনাশ করতে।
অনিকেতদের এই আন্দোলন এই মূহুর্তে তাই এতখানি গুরুত্বপূর্ণ, এতখানি সময়োচিত, এতখানি জরুরি।
মেডিকেল কলেজে হোস্টেল নিয়ে ঠিক কী হয়েছে? : সায়ন্তন মুখোটি
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২০ জুলাই ২০১৮ | ১৩১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান। সোশ্যাল মিডিয়াতে নয়। সশরীরে। গণ ডেপুটেশন দিন, অথরিটি কে, হেলথ সেক্রেটারিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে।
সমস্ত রাজনৈতিক রঙ ফেলে রেখে আসুন। এটা স্বাধীন ছাত্রছাত্রী আন্দোলন।
কনভেনশন করুন, নাটক করুন, গান করুন, কবিতা লিখুন। সবাইকে জানান। আসতে বলুন মেডিকেলে।
মেডিকাল কলেজ -- কী ঘটছে : ঘটনাস্থল থেকে
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ২২ জুলাই ২০১৮ | ১০৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
বিখ্যাত মানুষজন এসেছিলেন অনেকে, যাদের মিডিয়া বিদ্বজ্জন বলে টলে। বললেনও তাদের মধ্যে অনেকে, ভালই বললেন, তাদের অনেকেই সুবক্তা। বললেন কমলেশ্বর ভট্টাচার্য, অনীক দত্ত, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, কোশিক সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, পল্লব কীর্তনীয়ারা। ছাত্র রাজনীতিকে "অরাজনৈতিক" করে দেওয়ার কথা উঠে এল বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্যে, কৌশিক সেন অবশ্য বললেন ছাত্রদের তোলাবাজির রাজনীতি দেওয়ার কথা। পরিচালক অনীক দত্ত বললেন নিজের হারিয়ে ফেলা শহর কলকাতাকে ফিরে পেতেই তিনি এ আন্দোলনের পাশে, এই কলকাতা তাকে বিশ্বাস যোগায় এ শহরে থাকতে চেয়ে ভুল করেননি তিনি। কিন্তু যে বয়স্ক মানুষটি বললেন আমরা অনশন করব তোমাদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনিই বোধহয় গোটা সভাগৃহটাকে এক্সুরে বেঁধে দিলেন , কিংবা যে অভিভাবক বললেন আমরা আছি তোমাদের পাশে, থাকব এ লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত। অন্যান্য কলেজ থেকে আসা পড়ুয়ার দল যারা স্লোগান তুলল গলা মেলাল স্লোগানে, তারাই আজকের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠল ক্রমশ। ব্যাকগ্রাউন্ডে পল্লব গাইলেন 'হোক লড়াই'। মৌসুমী গাইলেন তাঁর ক্লাসিক বহুস্বরের গান 'তুমি কোথায় ছিলে অনন্য'। গান আর স্লোগান, ভিড়ে ঠাসা সভাগৃহে ছাত্রছাত্রীদের অঙ্গীকার, এর পরে কনভেনশনই পরিণত হল মিছিলে। না হয়ে আর উপায় ছিলনা।
শোনা কথা ১ - বংশবিস্তার : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ জুলাই ২০১৮ | ১৫৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সুপ্রীম কোর্টে ৩৭৭ নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চের শুনানি শেষ হয়েছে। তাতে ৩৭৭-এর পক্ষের কে একজন সুপ্রীম কোর্টে যেন বলেছেন শুনলাম, ৩৭৭ উঠে গেলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কেননা, সেক্ষেত্রে না কি জওয়ানরা সীমাসুরক্ষার কথা ভুলে নিজেদের মধ্যে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হবেন। হুম, গুরুতর সমস্যা। সীমা সুরক্ষার কথা ভুলে যাওয়া কোনও কাজের কথা নয়। অন্তত বুলাদি তাই শিখিয়েছিলেন।
এ সবের বাইরে গত সপ্তাহে আরও কিছু সাধারন ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজন গনপিটুনিতে মারা গেছেন, কোথায় যেন কাকে গেস্ট হাউসে আটকে রেখে চারদিনে চল্লিশবার ধর্ষণ করা হয়েছে, টাকা নীচে ও পেট্রল ওপরে উঠে চলেছে, কিছু চাষী এদিক ওদিক আত্মহত্যা করেছে। আর ও হ্যাঁ, শ্রীদেবীর মেয়ে জাহ্নবীর প্রথম সিনেমা রিলিজ করেছে।
দাস্তাঁ-এ-মুহব্বত : অনুপম ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ জুলাই ২০১৮ | ১০৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কোথা দিয়ে কেটে গেছে দুটি বছর, টেরও পাইনি। সাক্ষাৎ পরিচয় হয়েছে এক অনবদ্য পরিবারের সাথে। আমার জানা নেই, এমন পরিবার কোলকাতা শহরে আর দ্বিতীয় আছে কি না। সাহিলের বাবা মারিয়ো পিটার পেরিওয়াল ধার্মিক খ্রিস্টান। ভালোবেসে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছেন শেহনাজকে। শেহনাজ ধর্মে মুসলিম। পিটারের মা বাবাও পরস্পরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন। এবং পিটারের মা কিন্তু খ্রিস্টান নন, মাড়োয়াড়ি। পিটারের শ্যালক, মানে সাহিলের মামা আবার যাঁকে বিয়ে করেছেন, তিনি ধর্মে হিন্দু এবং বাঙালি। দু'বছরে ঈদ, ক্রিসমাস, বিজয়া দশমী, তিনটি উৎসবের নেমন্তন্ন পেয়েছি ওদের বাড়িতে। এমন নয় যে পরিবারে কেউ ধর্মের ধার ধারেনা। একই ছাদের তলায় নামাজ পড়া এবং রবিবারে চার্চে যাওয়া নিত্যকারের কাজ হিসাবেই দেখতাম আর অবাক বিস্ময়ে ভাবতাম, এও সম্ভব!!
ছবি দেখা - দর্শকের কল্পনা – বারবার দেখার অনুভূতি – যোগেন চৌধুরীর (অ)সাধারণ ফুলদানি : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ছবিছাব্বা | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২২৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
গল্প খোঁজার জন্যে “ছবির সাথে সহবাস”-এর প্রয়োজন। দিনের অনেক সময়, বারবার যাতে চোখ যায়, এমন জায়গায় ছবিটি থাকা প্রয়োজন। যাঁদের বাড়ির দেওয়ালে ছবি রয়েছে (আবারও বলি, এইখানে ছবি বলতে প্রিন্ট বা ওরিজিন্যাল সবকিছুকেই বোঝাতে চেয়েছি), তাঁদেরকে এই বিষয়টি আলাদা করে বোঝানোর কিছু নেই। এইটা অনেকাংশেই, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতানির্ভর। কিন্তু, যাঁদের বাড়িতে ছবি নেই, তাঁরা একবার চেষ্টা করে দেখুন। আগেই বলেছি, অনলাইন স্টোরে বেশ উঁচু মানের প্রিন্টের দাম তো তেমন কিছু নয়। শুধুই পশ্চিমের নয়, ভারতীয় মাস্টারদের ছবির প্রিন্টও পাওয়া যায় সেইখানে। আর, ওরিজিন্যাল ছবি ঝোলাতে পারলে তো কথা-ই নেই।
আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - প্রথম পর্ব : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৩০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
অভিযোগ এই: আধুনিক কবিতা এতদূর দুর্বোধ্য হয়েছে যে তা প্রায় সিন্ধুর খরোষ্ঠী লিপির নিহিত অৰ্থ বা ব্যাঞ্জনা বের করার মত দুঃসাধ্য ও অসম্ভব ব্যাপার। এই অভিযোগ কতদিনের বলা মুশকিল, তবে জীবনানন্দ থেকেই সম্ভবত এই নিয়ে বেশি শোরগোল শুরু হয়। পরে এই একই অভিযোগে আক্রান্ত হন বারবার যে কবি তাঁর নাম শক্তি চট্টোপাধ্যায়। এমনকি বুদ্ধদেব বসুর মত আধুনিক কবি, যাঁকে কবিতাবিষয়ক অন্যতম উদারমনা শ্রেষ্ঠ বোদ্ধা ধরা হয়, পঞ্চাশ-ষাটের দশকের দিকে এসে এই জাতীয় কথা বলতে শুরু করেন, 'এদের কবিতা এত দুর্বোধ্য যে কিছুই বোঝা যায় না'। শুনেছি উপর্যুপরি দুর্বোধ্যতার অভিযোগে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাচারী শক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনে কোথাও বলেছিলেন যে প্রকৃত ও শিক্ষিত পাঠক সবাই না।কবিতার গূঢ় অর্থ ও কূটাভাস নির্ণয়ে এক্ষেত্রে পাঠককে প্রস্তুত হতে হয়, এগিয়ে আসতে হয়। যদি ভাবেন পাঠকের প্রতি এটি এক নিছক কাব্যিক ও শাক্ত প্রত্যাঘাত তাহলে অধিক তর্কে না গিয়ে হালকা একটি কথা বলি, রাগসঙ্গীতের প্রকৃত ও সমঝদার শ্রোতা কারা? ডোভার লেনে বসলে আমজাদ আলির সরোদ ধরার ভঙ্গি নাহয় ধরে ফেললেন, কিন্তু রাগ উপভোগ করতে পারবেন তো? নাকি অপরাধবোধে ঘুম পাবে? যদি একজন ফুটবল খেলার দর্শক খেলার সাধারণ নিয়মকানুন না জানেন তাহলে কি তার কাছে খেলাটি সমান উপভোগ্য হবে?
অরিত্রীদের কেন মরতে হচ্ছে : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১১২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এসব ইশকুলের অধ্যক্ষা মাননীয়রা ছাত্রীদের বয়স, স্বাভাবিক অনায়বোধ, সহজাত অভিমান না বুঝে অমানবিক এবং বিকৃত মানসিকতার শিক্ষকদের চরমতাকে বিবেচনা করে অভিভাবকসহ ছাত্রীদের হরহামেশ অপমান করে থাকে। এদের না আছে আত্মমর্যাদাবোধ, না আছে অন্যদের মানব মর্যাদাবধের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। ছোটবড়, ছেলেমেয়ে, ধনী নির্ধনের মানবমর্যাদা বোধে আঘাত করা যে অপরাধ— এই শিক্ষা, শিষ্ঠাচার, প্রয়োজন এবং ভব্যতা সভ্যতা তাদের নেই। এসবের ধারও তারা ধরে না। কেননা একজন অরিত্রী মরে গেলে আরো দশজন অরত্রী অই সিটে ভর্তি হওয়ার জন্যে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে আছে তাদের বাবামায়েরা।
অত্যন্ত দ্রুততার সাথে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে এই প্রথম এ ইশকুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু অরিত্রী কি ফিরবে ? ওর বাবামা কি ফিরে পাবে কাঠগোলাপ কানে গোঁজা হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে ?
পাত্থর : শক্তি দত্তরায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৫৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
মাছ কটা সোমারীর হাতে, কাপড়ের বালতি নিয়ে বুড়ি লালমাটি আর পাথরের পথে কষ্টে হাঁটে। জলছেঁড়া সূর্য্যিটা বড় তাপ ছাড়ছে, কপালটা ঘামছে, অথচ এখনই ডুবচান দিয়ে উঠল। বড়রাস্তায় উঠতেই ট্র্যাক্টর চালিয়ে থামল চাবাগানের নার্সারির রোজারিও। একপ্যাকেট ডঙ্কা আগরবাতি হাতে দিয়ে বলল - একটা মোমও দিল - মৌসী, মেরীজুনের নামে পাত্থরঠাকুরের কাছে একটু প্রে কোর। রোজারিও তেজপুরের চার্চে যায় ফি-রোববার। ওর ঘরে যীশুবাবার ক্রুশবেঁধা ছবি। আহা, ভগবানের এত দুখ, তো মানুষের হবে না কেনে! রোজারিওর দুঃখও সুরিয়া জানে। ওর মেয়েদুটি খুব ধলা। একটা বারো একটা চৌদ্দ। মিসামারির ম্যাথুসাহাব ফৌজিসাহাব - সেও খিরিস্তান। লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়া দিব বলে কোচিন না কই নিয়া গেল। গরিব রোজারিও বলে এংলোইন্ডিয়ান সাহেবের জাত। মেয়ে দুটি ভালো খাবে পরবে বলে দিয়ে দিল। এখন শুনছে জুন নাকি লুকিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে তারা দুই বহিন বহুত খারাপ আছে। গরিব সাহেব রোজারিও এখন চার্চে মোম দেয়, উদালগুড়ি পীরের মাজারেও মোম দেয়। এই চারহাত ভগবানকে মোম ধূপকাঠি দিতে চায় বুড়ির হাতে। হ্যাঁ, সুরিয়া কালকে গোলাপফুলের মত মেয়েদুটির নাম করে দিয়ে দেবে বৈকি ঠাকুরের কাছে। এটা চা বাগান - কার নানা পরনানা কোন জাত কোন গেরাম কোন জেলা থেকে কোন আড়কাঠির সঙ্গে এখানে ওখানে এসে পড়েছিল তারা জানেনা। তাদের সন্তান সন্ততিরা সবাই কুলি। এখন অবশ্য কুলি বলেনা, লেবার বলে। তারা এত জাতজন্মের খোঁজ রাখেনা। ঘামে শ্রমে হাঁড়িয়ার ঠেকে ওঠাবসা একসঙ্গে। তাদের দেবদেবীরাও একাকার। পাতি তোলে বাগানে নিড়ানি দেয়, চাঘরে ডায়নামো চলে, ড্রায়ারের আগুন গরম তাতে খাটে। দুপুরে একই পাত্র থেকে লাল চাহাপানি খায়। ওদের বামুন শুদ্দুর নাই, ওসব আছে বাবু কোয়ার্টারে। ডাক্তারবাবু বামুন, চাঘরবাবু শুদ্দুর, বাগানবাবু বড়গোঁহাই। তাদের খাওয়া ছোঁয়া ঠাকুরদেবতায় একটু আধটু নিয়ম নিষেধ আছে। বেচারী রোজারিও একুল ওকুল কোন কুলেরই নয়।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতি বা চিকিৎসা ও দুর্নীতি-ডাঃ পার্থসারথি গুপ্ত স্মারক বক্তৃতা : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৭৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
বাজার অর্থনীতির নিয়মে স্বাস্থ্যপরিষেবাকে চলতে দেওয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটি অমোঘ যুক্তি রয়েছে। প্রথমত, বাজারের অত্যাবশ্যক শর্ত, তথ্যের সাম্য। অর্থাৎ, ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুজনেই কেনার জিনিসটা নিয়ে সমান অবগত থাকবেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে, হাজার গুগলের সহায়তা সত্ত্বেও, চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে এই তথ্যের সাম্য আসা একেবারে অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, ফ্লোরিডার বিচারকের যুক্তিটি। কেনার বাধ্যবাধকতা কাজ করলে বাজারের নিয়ম খাটে না। আপনার যদি দামে না পোষায়, এবং তদসত্ত্বেও যদি আপনি কিনতে বাধ্য হন, তাহলে বাজারের নিয়ম চললো কি? আপনি যদি সত্যিই অসুস্থ হন, তাহলে তো আপনি যেকোনো মূল্যেই, ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও, চিকিৎসা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি বছর, এই দেশে কয়েকলক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাচ্ছেন, স্রেফ চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে। অন্তত খাতায়কলমে, তত্ত্বগতভাবে, বাজার অর্থনীতি কিন্তু এমন পরিস্থিতির কথা বলেন না। তৃতীয়ত, বাজারের নিয়ম অনুসারে, ক্রেতা এবং বিক্রেতার সম্পর্কটি সরাসরি এবং সেইখানে তৃতীয় ব্যক্তির সরাসরি লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্ন নেই (মধ্যবর্তী মুনাফাভোগী বা দালালের প্রশ্ন আনছি না)।
মনোজ মিত্রকে অনুসন্ধান : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : নাটক | ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২৩৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আজ আমাদের অগ্রজ মনোজ মিত্রর জন্মদিন। তিনি ৮০ সম্পূর্ণ করে ৮১-তে পা দিলেন। ভারতীয় নাটক, নাট্য সাহিত্যে তাঁর অবদান পাঠক এবং নাটকের দর্শক মূল্যায়ণ করবেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দূরের পাঠক হয়ে তাঁর নাটক পড়ি। এবং উচ্চ মানের সাহিত্য পাঠের স্বাদ পেয়ে থাকি। অসামান্য বহুমাত্রিক সংলাপ পড়ে মুগ্ধ হই। সেই ১৯৫৯ সালের মৃত্যুর চোখে জল একাঙ্ক থেকে চাকভাঙা মধু, পরবাস, সাজানো বাগান, গল্প হেকিম সায়েব, রাজদর্শন, যা নেই ভারতে, অশ্বত্থামা, আশ্চর্য ফান্টুসি, ভেলায় ভাসে সীতা, অলকানন্দার পুত্র কন্যা......তালিকা বাড়াব না। ১৯৭৫-৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে নরক গুলজার নাটকের সেই গান, ' কেউ কথা বলো না, কেউ শব্দ করো না, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না' তিনিই লিখেছিলেন। সেই গান এখন ভেসে বেড়ায় সব রকম সেনসরশিপের বিরুদ্ধে।
মান্টো - বোল কি লব আজাদ হ্যায় : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ অক্টোবর ২০১৮ | ২৬৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
অমৃতসরে তিরিশের দশকের আর পাঁচটা ভাবনা চিন্তা করা যুবকরা যখন ভগত সিং এবং বলশেভিক বিপ্লবের আগুনের আঁচ অগ্রাহ্য করতে পারছেন না, সেখানে মান্টোর তৈরী হয়ে ওঠার গল্পটা আমাদের দেশের অন্যান্য ভাষা সাহিত্যের আধুনিকতার সূচনাপর্বের পর্বের ছবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রচুর পড়ছেন, অসকার ওয়াইল্ড, চেকভ, পুশকিন, মপাসাঁ, হুগো। অমৃতসরেই সমাজবাদী 'মুসাওআত' পত্রিকায় কর্মরত আবদুল বারি আলিগ নামক এক সাংবাদিকের পাল্লায় পড়ে হুগো এবং অস্কার ওয়াইল্ড অনুবাদ করছেন, এবং বারি সাহেবের উদ্যোগে অমৃতসরেই এই সব অনুবাদ কিছু প্রকাশিত হচ্ছে ১৯৩৩-১৯৩৪ এর সময়টার মধ্যে। এর পরে টিবিতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং আমাদের সৌভাগ্য যে সেরেও উঠছেন, কিন্তু তার পরে লাহোরে চলে যাচ্ছেন একটা পত্রিকার কাজ নিয়ে। সেখান থেকে নাজির লুধিয়ানভির আমন্ত্রনে 'মুসাবিরা' পত্রিকাটিতে কাজ করার জন্য বম্বে আসছেন ১৯৩৬ নাগাদ। এর পরে কিন্তু আবার ১৯৪২ নাগাদ দিল্লী চলে যাচ্ছেন রেডিওতে নাটক আর নানা স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ নিয়ে, মন পড়ে থাকছে বম্বের বন্ধুদের কাছে।
এলারামের ঘড়ি, মই ও ছোটকুমার : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮ | ২৩২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
এলারামের ঘড়িকে রবীন্দ্রনাথ অমর করে রেখে গেছেন। ঘড়িটি না বাজা পর্যন্ত সুখশয্যা ত্যাগ করতে কর্তাবাবুর ঘোরতর আপত্তি ছিল, এমনকি ঘরে আগুন লাগলেও না!
কিন্তু আমাদের মহারানীমাতার আপাতত সমস্যা হল, ঘড়ি বেজে, বেজে, বেজে কেলান্ত হয়ে থেমে গেলেও গোবুরাজা, বড়কুমার বা ছোটকুমার কেউই নয়নপদ্ম উন্মীলন করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন না, এমনকি গোবুরাজার নাক যেমন ইমন রাগ ও কাহারবা তালে খরবায়ু বয় বেগের সুরে ডাকছিল, তেমনই ডাকে, ডেকেই যায়, সেই অসাধারণ গীত যে সারাদিনে থামবে তার কোন লক্ষণ দেখা যায় না।
গোবুমহারাজ ও কেবলীরানীর সঙ্গে গুরুর অনেক পাঠিকা ও পাঠকরা পূর্ব পরিচিত। তাঁদের অবগতির জন্য বলি, এনারা আর সেই সংসার অনভিজ্ঞ যুবক যুবতী নেই। দিল্লিতে এঁরা মোটামুটি একটি সংসার পেতে বসেছেন। বন্ধুবান্ধবরা অবশ্য সর্বদাই এই সাধের ফেলাটটিকে রেলওয়ে প্লাটফর্মের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন, তাতে মহারাজ বা রানীমা কারো কিছুই এসে যায় না।চতুর্দিকে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বই, বই এবং আরো বই, দুটি নয়নতারা, একটি কাঁঠালিচাঁপা ও সাতটি নাম না জানা গাছ, বড়কুমার ও ছোটকুমারের অজস্র ভাঙা খেলনা, একটি ছোট খাওয়ার টেবিল,বেতের সোফা ইত্যাদি নিয়ে তাঁরা দিব্যি আছেন।
ছবি দেখা – সুনীল দাসের শিল্পকৃতি ও কিছু অপ্রসঙ্গ : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ৫২৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৪
ছবি দেখার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? (অথবা, রাগসঙ্গীত শোনার? সাহিত্যপাঠের? কিম্বা, ভালো সিনেমা দেখার? এককথায়, শিল্পবিষয়ে সচেতন চর্চার কি আদপেই কোনো যুক্তি আছে?) ভেবেছিলাম, এই প্রশ্নের অতি স্বাভাবিক উত্তরটি অস্তিবাচক। কিন্তু, কিছু আলাপ-আলোচনার শেষে বুঝলাম, এই প্রশ্নের সর্বজনগ্রাহ্য উত্তর পাওয়া মুশকিল।
যেমন, আমার মনে হয়, এই অভ্যেস জরুরী। এই প্রসঙ্গেই, আগের একটি লেখায় বলেছিলাম, নান্দনিকতার বোধ গড়ে তুলতে এই অভ্যেস অবশ্যপ্রয়োজনীয়। পশ্চিমী দেশে, স্কুলের বাচ্চাদের নিয়মিত আর্ট গ্যালারী বা চিত্রপ্রদর্শনীতে নিয়ে যাওয়ার চল রয়েছে। এবং, শুধু দেখাই নয়, ছবি দেখে কেমন লাগলো, সেই অনুভব নিয়ে তাদের দস্তুরমতো লিখতেও হয়। এইভাবেই নান্দনিকতার বোধ তৈরী হয়, আর সাথে সাথে নিজের ভালো লাগাটিকে বিচার বা বিশ্লেষণ করার বোধটিও তৈরী হয়। সুকুমার হৃদয়বৃত্তির গঠনে এমন চর্চা বা পাঠ জরুরী, এমনই আমার ধারণা।
পৃথিবীর ছায়া : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ১৩৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
সে অনেক দিন আগের কথা। বছর ত্রিশ তো হবেই। আমরা থাকতাম ময়মনসিংহ শহরের আমলাপাড়া এলাকায়, তখ্নও সেই শহরে কিছু বাংলো বাড়ি অবশিষ্ট ছিল, তাদের সামনে ছিল মাঠ, পেছনে বাগান, বড় আঙ্গিনা বা পুকুর। আমরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম সে বাড়িটা ছিল দোতলা, পুরনো জমিদার বাড়ি, সামনে প্রায় বিঘাখানেক ফাঁকা জমি। ঐ শহরে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাটবাড়ির ধারণা তখনও আসে নি, কিন্তু আমাদের বাড়িতে তিনটে পরিবার ভাড়া থাকত। ওপরে একটি, নিচে দুটি। বাড়িওয়ালা এমনভাবে নিচের তলাটি ভাগ করে দিয়েছিলেন যাতে অন্য অংশটির ভাড়াটেদের দেখা না যায়। বাড়ির সামনে একদিকে একটা বড় আম গাছ, অন্যদিকে গাঁদা আর জবার ছোট বাগান। তারকানাথ রায় রোড থেকে শুরু করে ঘাসের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলা পথটা একটা ছোট সিঁড়ির তিন চারটা ধাপ বেয়ে উঠে এসেছে নিচু বারান্দায়।
জীবনরেখারা : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ১১১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
মাথায় কাপড়ের মস্ত গাঁঠরি, তাতে শুধু গোলাপি নয় আছে কতো বান্ডিল বান্ডিল নানা রঙের জামাকাপড় । সে হল আমাদের বিমলা আন্টি । আমি আন্টি বলি, বলতে ভালো লাগে । বিমলা আন্টি আমাদের পাড়ার ধোপানি । ওর একটা খিটকেল বর আছে, রামস্বরূপ। কোন জামাকাপড় তাড়াতাড়ি ইস্ত্রি করতে হলে রামস্বরূপকে ফোন করতে হয় । সে বলে এখখুনি নিয়ে আসছি । আমি বলি বিমলা আন্টি আসবে? তাকেই পাঠাও না কেন? তোমার ওই হাঁড়িচাচার মতো মুখটা কি না দেখলেই নয়?
বিমলা আন্টি এসেই তার গুছিয়ে পরা কোটা শাড়ির ঘোমটা একটু টেনে গলা তুলে বলে, কাপড়া । তারপর গাঁঠরি খুলে বলে, গিনলো। আবার নতুন কাপড় দেওয়া শুরু হয়। এবার টাকা দেবার পালা । আমি ফস করে বলে বসি, তুমি কী সুন্দর দেখতে, বিমলা আন্টি ।
মাথা নিচু করে টাকা গুনছে বিমলা আন্টি । আমার এই কথায় তার নিচু চোখের পাতা,বসা গাল ,টিকলো নাক, গর্বিত চিবুক, কোথাও এতটুকু পরিবর্তন দেখতে পাই না । চোখ দুটো তুলে বলে, সত্তর রুপিয়া, ইয়ে লো তিস রুপিয়া ওয়াপস ।
বজ্রডঙ্কুশ এবং উদংষ্টিট্টিভ, অথবা শব্দের চাল-চলন নিয়ে একটি অসম্পূর্ণ রচনা : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ২০৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
বজ্রডঙ্কুশ বা উদংষ্টিট্টিভ। এর মানে কী? শশীশেখর তাঁর ছেলের নাম রেখেছিলেন মৃগাঙ্কভূষণ। স্কুলে একদিন ছাত্রের মুখে বাবার নাম শুনে শিক্ষক বললেন,‘সেকী! শশীশেখরের ছেলের নাম মৃগাঙ্কভূষণ কেন? বাবাকে বল নাম বদলে মৃগাঙ্কশেখর করে দিতে। ছেলে বাবাকে বাড়ি ফিরে সেকথা বলতে শশীশেখরের জবাব, ‘মাস্টারকে বলিস আমার ছেলের নাম আমি বজ্রডঙ্কুশ রাখব না উদংষ্টিট্টিভ রাখব, তাতে মাস্টারের কী। এরকমই নতুন শব্দ সুকুমার রায়ের হিজবিজবিজ, কুমড়োপটাশ, কাঁকড়ামতী নদী বা ল্যাগব্যাগর্নিস পাখি। এরা কেউ বাস্তবে নেই, কিন্তু নাম থেকেই এদের কী কোনও ছবি মনে আসে? বা সুকুমার এই সব চরিত্রের চেহারার যে বর্ণনা লিখে গেছেন, মনে হয় নাকি, সেসব এক্কেবারে সঠিক! শব্দের এটাই শক্তি, এটাই জোর।
বংশগতি : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ২০০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
স্যার, এইবার আমি আমার পিতার কথা বলব, আমার মনে হচ্ছে যে মানুষের জীবনের সাথে তার পিতার জীবন জড়িত, ফলে আমার বিষয়ে বলতে গেলে আমার পিতার কথা আসবে, আমার বিষয়ে বুঝতে আমার পিতার বিষয়ে বুঝতে হবে। আপনি কি মনে করেন এই ব্যাপারে? বলব কি স্যার?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলুন।
আমার পিতার নাম ছিল আরশাদ মিয়া। তবে লোকে তাকে ডাকত কাবিল কবিরাজ নামে। তিন গ্রাম গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াইতেন আর অনেক অনেক লতাপাতা সংগ্রহ করতেন। আর আমাদের বাড়ির পাশে ছিল সামান্য ধান্য ক্ষেত। সেখানে চাষবাসও করতেন অল্প অল্প। আচ্ছা এই মুহুর্তে, এই ধান্য জমির কথা স্মরণে আসায় আমার দাদাজির কথা মনে হলো আমার। তিনি আমার পিতার পিতা। ফলে তিনিও আমার সাথে সংযুক্ত, তাই ধান্য জমি সংশ্লিষ্ট অদ্ভুত ঘটনাটি আমার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, বলব কি স্যার?
ওকে বলুন।
মাই ফ্রেন্ড! মাই রাইটার! : চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ অক্টোবর ২০১৮ | ১৬৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মাণ্টোকে প্রথম চিনলাম আমি ইসমত চুঘতাইয়ের অনুভূতিতে চোখ ডুবিয়ে আমার| মিথ্যে বলব না, খুব পিতৃতান্ত্রিক, খুব এলোমেলো, এ-ও মনে হয়েছিল আমার, একটা স্তরে| তারপর মাণ্টোর জীবনের বহুমাত্রিকতা, বদগন্ধ গলিপথে ভেসে-চলা নদীর মতো যে-যাপন তা একটু-একটু করে পান করলাম আমি| মাণ্টো অনুবাদের কাজে হাত দিলাম| হ্যাঁ, সংকোচবশত তো বটেই| আর হাতে লেগে গেল কাঁচা রক্ত, পুঁজ, অসুস্থের কাশি, যৌনকর্মীর হাসি, নির্যাতন ও অশ্রুচিহ্ন, তা আজও মুছল না|
ও! সে ছিল রবি| রবিশংকর বল| আমাকে ঘাড় ধরে মাণ্টো চিনিয়েছিল! যেভাবে মানুষ ডেকার্স লেন, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, চাঁদনি চক, চিৎপুর.....কোলকাতার লেন, বাই-লেন চেনে আর নেশায় বুঁদ হয়ে যায়| আমার হাতে ইসমত চুঘতাইয়ের জলছবি সেঁটে দিয়েছিল সে|
যাঁরা বদলে দিতে পারেন (শেষ পর্ব) : সায়ন্তন মাইতি
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ২৮৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
এই গুলিয়ে ফেলা থেকে আরো বড় বিভ্রান্তি জন্ম নেয়। মধ্য যৌনতায় (খেয়াল করবেন, ‘মধ্যলিঙ্গ’ বলি নি) অবস্থানকারী মানুষরা যেহেতু ‘ট্রান্সজেণ্ডার’ এর অংশ, তাই কেউ কেউ সমকামিতা আর অন্তর্বর্তী লিঙ্গকে একসূত্রে ফেলে দেয়। এদের উৎপাতেই ফেসবুকে ‘গে শি-মেল হিজড়ে’ নামের একাধিক পেজ অবস্থান করছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সমানাধিকার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকে, কিন্তু সাইটটাকে সাজানো হয় অন্তর্লিঙ্গ মানুষদের ছবি দিয়ে। অন্তর্লিঙ্গ ও সমপ্রেম দুটোই যেহেতু গোঁড়াদের বক্রদৃষ্টির আওতায়, তাই উদারপন্থীরা হিজড়ে ও সমকামীদের এক মঞ্চে বসিয়ে তাঁদের পক্ষে সওয়াল করেন। চেতনা উদযাপক লেখায় অনেকে রূপান্তরিত, রূপান্তরকামী, ইউনাক, অ্যাণ্ড্রোজিনাস, বৃহন্নলা সব্বার কথা লিখে যান। বুঝি যে, তাঁরা দরদ দিয়ে লিখছেন, সমবেদনাও জাগাচ্ছেন পাঠকদের মধ্যে, কিন্তু উল্লিখিত নামগুলোর মধ্যে একের সাথে আরেকের পার্থক্য কিছুই বোঝাতে পারছেন না। ফলে ঠেলাগাড়ির ঠেলা খেয়ে সবাই গিয়ে পড়ছে ‘ট্রান্স’ বর্গে।
সালোকসংশ্লেষ : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ এপ্রিল ২০১৫ | ১০৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শহর কোলকাতা থেকে অনতিদূরে মৌবনীদের সবুজ-মেরুন দোতলা বাড়ি। এর আগে যদিও লাল-হলুদ ছিল। প্রমিতা ওপারের মেয়ে, তায় তার ঢাকা নিবাসী মাসতুতো বোনের ছেলে এখানে থেকে এমবিএ পড়ছিল কিছুদিন। বাপের বাড়ির সদস্য পেয়ে শ্রীমতীদের মনের জোর বেড়ে গেলে গৃহশান্তির জন্য পুরুষমানুষকে অনেককিছুই করে ফেলতে হয় যা তাদের নীতিবিরুদ্ধ। তবে ওই, রাখে বাবা অদ্বৈতানন্দ তো মারে কে! মানে, মৌবনী সবে এমএসডব্লু শেষ করে চাকরিতে ঢুকবে ঢুকবে, ওমনি তার ভালোবাসাবাসি হলো বিভাসের সাথে। এ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। কেজি স্কুল থেকে আজ পর্যন্ত এই নিয়ে মৌবনী দুটি ছেলে ও একটি মেয়ের হাত ধরে বাড়ি এলো। প্রমিতা প্রথমবার সোনার বোতাম গড়ালেন, দ্বিতীয়বার সাদা পাথর দেওয়া আংটি ও তৃতীয়বার মানে অধ্যাপিকা বান্ধবীটির বেলায় পত্রপাঠ বাড়ি থেকে বার করে দিলেন। মাস্টার্স-এর সময়টায় মৌবনী পেয়িং গেস্ট থাকছিল যোধপুর পার্কের একটা ফ্ল্যাটে। কাজের সুবাদে তাদের উল্টোদিকের ফ্ল্যাটটিতে নিয়মিত আসত বিভাস। এভাবেই একদিন মুখোমুখি-চৌকাঠ পেরিয়ে তেলরং-ক্যানভাস সমেত হুড়মুড় করে ঢুকে পড়া মৌবনীর হৃদয়ে। প্রতিমার অবিশ্যি ছেলেটির পেশা টেশা দেখার চেয়ে পুলকের কারণ এই ছিল যে, সে পুরুষ। বিভাসের মা ছন্দা আবার কোন এক অদ্বৈতানন্দের দীক্ষিতা। তিনি পুত্র ও বাবাজী সমেত মৌবনীর বাড়িতে- এলেন দেখলেন জয় করলেন।
নীল ওড়না,গান্ধারী ও শুক্লরাতের চাঁদ : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ এপ্রিল ২০১৫ | ৪৪৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
বাইরে ডাক্তার ও সুঁইকুমারীর সমবেত গগনভেদী আর্ত্তনাদ, লোকজনের হৈচৈ,পাড়াতুতো কুকুরবাহিনীর উচ্চস্বরে প্রতিবাদ - এতসবের মধ্যেও চেম্বারে ঢুকে প্রথমেই নজরে পড়ল ডাক্তারবাবুর ফোনটি( ততক্ষণে আমরা নিজেদের মধ্যে ফিরে এসেচি, এ দরজা ভেঙে ঢোকার ক্ষমতা গরুর হবে না)। অকম্পিত হাতে ফোন তুলে দৃঢ়স্বরে বাড়ীতে বলে দিলাম বাচ্চাদের ক্যারাটে ক্লাশ থেকে নিয়ে আসতে। কর্ত্তা যথারীতি সামান্য প্রতিবাদ করছিলেন, তোমরা কোথায় আছ? আমি তো ঠিক চিনি না ক্যারাটে ম্যাডামের বাড়ী (পড়ুন - টিভিতে ম্যাচ চলছে) এইসব। তার উত্তরে আরও দৃঢ়স্বরে জানিয়ে দিলাম যে আমাদের গরু তাড়া করেছে, এ জীবনে বাড়ী ফেরা হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ফিরতে না পারলে সবুজ ব্যাগে ব্যাংকের পাশবই ও টাকা রাখা আছে (সেই সেলফোন, এটিএম কার্ডবিহীন সময়ে ব্যাংকের বইয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল)।
লোমড়ি : সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ এপ্রিল ২০১৫ | ১৮২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
বুড়া ঠেসান দিয়ে বসে থাকে কুয়োর ধারে। চারদিকে মানুষের কথা বয়ে যাচ্ছে ফিসফিস ফিসফিস, কিছুই ধরতে পারছে না সে! হঠাৎ তার বাপের একটা কথা মনে পড় যায় বিজলিচমকের মত। যখন আঁধার নামে, তাজা লোমড়ির রক্ত খেয়ে জেগে ওঠেন মারী দেবী, তাঁকে খুশি করতে পারলে যা চাই তাই দেন মা । জরুরি কাজ মনে পড়ে যাবার মত করেই ধড়মড় করে উঠে বসে। “আমি যতক্ষণ না ফিরি, নিয়ে যাবি না ওদের” ব’লে খ্যাপা মোষের মত বেরিয়ে যায় বুড়া। জমায়েত একধারে সরে গিয়ে পথ করে দেয়, নিবারণ হাহুতাশ করে, পাগলে গেছে গো বুড়াটা। বুড়া ততক্ষণে পিছনের মাঠ পেরিয়ে সোজা খেত বরাবর নারান বাবুর মাঠে। লোমড়িটা ওদিকেই গেছে নিশ্চই খরগোশ ধরতে, এসময় এগুলো বেশ গায়ে গতরে হয়ে ওঠে।
আটকুড়িয়া : মাজুল হাসান
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ এপ্রিল ২০১৫ | ১১৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
গাড়ির বর্ণনায় এতটুকু বলা যায়ঃ গাড়িটি চলছে মন্থর; মন্থর। তার ওপর গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে এমন এক বান্ধবীর অবির্ভাব যার সাথে অনেকদিন দেখা নেই, যে সীল মাছ পছন্দ করত। সীল মাছের মসৃণ ত্বক দেখার বাসনায় সে বিয়ে করেছিল চিড়িয়াখানার এক বড় কর্মকর্তাকে। তা, সেই বান্ধবীর ফিরে আসা তাই প্রতীকের কাছে গোলকধাঁধার মতো মনে হয়। পুরো ব্যাপারটা ছিল নিছক একটা দুর্ঘটনা। হয়তো কোনো আত্মীয়কে সি-অফ করতে এসেছিল সে। কিন্তু যখন সে প্রতীককে বলে, সে তার কাছেই এসেছে, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে, ব্যাপারটা এমন যেন কোনো পোষা বিড়ালকে ফেউ-লোকেরা বস্তাবন্দি করে অনেক দূরে ছেড়ে এসেছিল আর সেই বিড়াল বিশ্বস্ত আত্মার মতো, কুকুরের মতো ঘ্রাণশক্তির গুণে পুরনো মালিকের কাছে ফিরে এসেছে - তখন পুরো ইতিহাসটি আবারো উঠে আসে। কী কারণে সে চলে গেলো? কেনই বা ফিরল? আর এমন একটা সময়েই বা কেন? যখন সে আটকুড়িয়া যাবে বলে সব কিছু গুছিয়ে এনেছিল। তার বাস তো ছাড়তে গিয়েও পেছন থেকে লাগাম টেনে ধরা গরুর মতো আটকে ছিল, যেন সময়ের দড়িটি ছিঁড়বে-ছিঁড়বে অবস্থা, এমন সময় তা লোহার শেকলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে; বাতাসের জলীয় কণা তার শরীরে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছে, মুহূর্তে মরিচা ধরে খয়ে যাচ্ছে, আবার কোনো দৈব কারসাজিতে নিকেলের হাসি হেসে শক্তপোক্ত হয়ে উঠছে ঝনঝনিয়ে।
ব্যোমকেশের (অ)বিনির্মাণ : পরিচয় পাত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ১০০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
দিবাকর ব্যানার্জি ইতিপূর্বে প্রমাণ করেছেন যে তাঁর আন্তর্জাতিক সিনেমার সঙ্গে মোটের ওপর পরিচিতি রয়েছে। কখনো আলেহান্দ্রো গনজালেজ ইনারিতু প্রতিম নেটওয়ার্ক ন্যারেটিভের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি (‘লাভ, সেক্স আউর ধোঁকা’), কখনো ভারতীয়করণ ঘটিয়েছেন কোস্তা গাভরাসের ‘জেড’ এর মত ক্লাসিক ছবির (‘সাংহাই’)। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ব্যোমকেশের জন্যে তাঁর দর্শকের মানসিক প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেই মনে হচ্ছে চারপাশের প্রতিক্রিয়া দেখে। বাংলায় এ ছবি করলে তাঁর এমনকি প্রাণ সংশয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এমনটাই আমার অন্তত মনে হচ্ছে। একটা ওয়েল-ডিফাইনড লিটারারি টেক্সটকে চলচ্চিত্রের বয়ানের অন্তর্ভুক্ত করলে তার নানা ইন্টারপ্রিটেশন উঠে আসে স্বাভাবিক নিয়মেই, এবং দর্শকের কাছে সেটা সবসময় রুচিকর নাও ঠেকতে পারে। এজন্যেই অনেকে নিজের ছবি-করিয়ে হিসেবে স্বাধীনতাটা বজায় রাখার জন্য স্বল্পপরিচিত বা অপরিচিত টেক্সট বেছে নেন, ফলে তার পাঠের ধরন নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু দিবাকর যে কাজটি করেছেন তার নজির অন্তত ভারতীয় মূলধারার ছবিতে খুঁজে পাচ্ছি না। ব্যোমকেশের এমন (অ)বিনির্মাণ, গোটা ক্যাননকেই কার্যত হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া অথচ তাকে নিপুণভাবে ন্যারেটিভের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, ইতিপূর্বে দেখেছি বলে মনে করতে পারিনা।
বস্টনে বংগে : দশম পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ২১৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
এর মধ্যে বাড়িতে একদিন কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে খেতে ডেকেছিলাম। তার মধ্যে রেখা আর আলিশাও ছিল। ওদের আগেই ফুটফুটে দুটো যমজ হয়েছিল আলিশার গর্ভে, সাম্প্রতিক কালে রেখা অন্তসত্ত্বা। ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা চারমূর্তি বসে গল্পগাছা করছিলাম। কথাবার্তা ঘুরতে ঘুরতে গে ম্যারেজ, লেসবিয়ান কাপল, আই ভি এফ, দত্তক ইত্যাদি হয়ে কিভাবে যেন কাটজুতে পৌঁছে গেল। আমি বললাম যে প্রাক্তন বিচারপতি কাটজু মনে করেন, বিয়ের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য সন্তান উতপাদন ও প্রতিপালন। তাই যেহেতু গে কাপলদের সন্তান হবে না, তাই গে ম্যারেজ অর্থহীন। আইলীন হঠাৎ রেগে গেল। কাটজুর উদ্দেশ্যে কিছু বাছা বাছা গালাগাল দিয়ে শুতে চলে গেল। খানিকবাদে ড্যানও চলে গেল। আইলীন যদিও তুমুল এলজিবিটি সমর্থক তবু এরকম রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। সম্ভবত রেড ওয়াইন একটু বেশি হয়ে গেছে। ওরা দুজন চলে যাওয়ার পর আমি এই কথাটা গণেশকে বলতে ও অবাক হয়ে আমাকে বলল, ও তুমি জান না? আমি বললাম, কী জানব?
“সালাফী সেক্যুলার” ও “সুফি সেক্যুলার” দ্বন্দ্বঃ ইসলামকে উদারভাবে প্রচার করে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদকে ঠেকানো যাবে? : সুষুপ্তু পাঠক
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২১ মে ২০১৫ | ২৯২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৬
আজকের বিশ্বে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত লেখালেখি হয়, যতখানি ভাবতে হচ্ছে, সেমিনার, সম্মেলন, গবেষণা করে জানতে চাওয়া হচ্ছে ইসলামকে কিভাবে উগ্রতা থেকে উদার ও সহনশীল করে তরুণ-যুবাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়- তার এক পার্সেন্টও অন্য কোন ধর্মকে নিয়ে করার প্রয়োজন পড়েনি। ইসলাম ধর্মের উদারপন্থি যেমন আছে তেমনি কট্টরপন্থিও আছে। অন্য ধর্মেও এরকম বিভক্তি দেখা যায়। তবে তারা একে অপরকে “অখ্রিস্টান” বা “অহিন্দু” টাইপ কিছু ঘোষণা করেন না। একে অপরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত করেন না। ইসলামে এটা নিত্য সহা এক সত্য। রোজ এক দল নিজেদেরকে প্রকৃত ইসলাম অনুসারী ও বিপক্ষকে ইসলাম থেকে খারিজ বলে দাবী করেন। ইসলামের হাজারো পন্থির সকলের একই কুরআন, একজনই নবী মুহাম্মদ, প্রত্যেক পন্থিদেরই আল্লামা, শাইখুল হাদিস আছেন। তারা আপনাকে কুরআন থেকে দেখিয়ে দিবেন একমাত্র তারাই প্রকৃত মুসলমান ও ইসলাম অনুসারী। নবী মুহাম্মদকে তারাই অক্ষরে অক্ষেরে পালন করেন। আপনার আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে আপনি আমি একজন মুসলমান হিসেবে কাদের খপ্পরে পড়বো সেটা নির্ভর করে সেই অঞ্চলে কারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন তাদের উপর।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ আগস্ট ২০১৫ | ৫৩২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭৩
বিষয়টা একটু অদ্ভুতই। বস্তুত ধনঞ্জয়ের উকিলই যখন ধনঞ্জয়ের বয়ানের উল্টো কথা বলেন, তখন মনে হয়, এ যেন শুধু নিয়মরক্ষার খেলা। আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিতই আছে। যারা এই আখ্যানের বিরোধিতা করছেন, সে শুধু বিরোধিতা করার জন্য। আসলে তাঁরাও অন্য কোনো আখ্যানে বিশ্বাস করেননা। এবং বিরোধিতাটাও শুধু নিয়মরক্ষার্থে এবং সেটাও পূর্বনির্ধারিত এই আখ্যানেরই অংশ। এই সেই আখ্যান যেখানে উকিল ধনঞ্জয়ের পক্ষের সমর্থন করতে গিয়ে এমন কথা বলবেন, যা, ধনঞ্জয়ের বয়ানকেই মিথ্যে প্রমাণ করে সরকারি আখ্যানের ভাষ্যকে জোরদার করবে। দুজন প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের অসঙ্গতিগুলিকে উপেক্ষা কিংবা সম্পাদনা করে এমন মাপে নিয়ে আসা হবে, যাতে তারা খাপে খাপে মিলে যায় আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের সঙ্গে। যেন জিগস পাজল মেলাতে বসা হয়েছে হাতে একটি র্যাঁদা নিয়ে। এখানে সমাধানটি পূর্বনির্ধারিত। যদি কোনো টুকরো না মেলে, তাকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে, কিংবা ছেঁটে করে নেওয়া হবে মাপমতো। বিরোধিতাটাও হতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বার্থে। কিন্তু সেটাও মাপমতো, যাতে সেটা মূল আখ্যানের পক্ষে যায়, বা সরাসরি পক্ষে না গেলেও মূল আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিপজ্জনক না হয়। বিপজ্জনক স্ববিরোধিতাগুলি কেউ কেউ গুরুত্বই পাবেনা আদালত চত্বরে।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় -এক অসঙ্গতির উপাখ্যানঃ কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর : দেবাশিস সেনগুপ্ত , প্রবাল চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ আগস্ট ২০১৫ | ৮৪৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
প্রসঙ্গ - টাকার খেলা কে কে খেলেছে।
আমাদের জানা নেই। তবে টাকার খেলা ছাড়াও অনেক ঘটনাই ঘটা সম্ভব। মামলায় অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে পুলিশের ক্রেডিট মেলে, সরকারি আইনজীবীরও। এই পরিস্থিতিতে সহজে যাকে দোষী প্রমাণ করা যায়, পুলিশের তাকেই পছন্দ হবে। ফ্ল্যাটবাড়িতে খুন হয়ে সিকিউরিটি এজেন্সি যদি চাপে পড়ে থাকে, তারা পুলিশকে সাহায্য করবে নিজের স্বার্থেই। আর আদালত এই মামলার রায়ে নিজেই বলেছে - মেয়েদের উপর আক্রমণ বেড়ে চলেছে, বহু দোষী ছাড়া পেয়ে যায়, সমাজ সুবিচার চায়, তার আকুতিতে সাড়া দেওয়ার দায় আছে আদালতের, ধনঞ্জয়ের শাস্তিবিধান হয়েছে এইসব বিবেচনা করে। অর্থাৎ যে-খেলা এই মামলায় চলেছে, তা এই সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লজিকের দৈনন্দিন খেলা। ধনঞ্জয়ের জন্য বিশেষ করে এবং অর্থব্যয় করে এর আয়োজন হয়েছিল এমন নাও হতে পারে।
বস্টনে বংগে : একাদশ পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৩ আগস্ট ২০১৫ | ২৩৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
দিল্লী থেকে ফিরে এসেছি অনেকদিন হয়ে গেল। এর মধ্যে আমেরিকায় গে ম্যারেজ লিগাল হয়ে গেছে। সামাজিক সাম্যের লক্ষ্যে একটা বড় পদক্ষেপ। কিন্তু অনেকেই বলছেন যে এটা একটা আপাত সাম্য, হেটেরোনর্মাটিভ সমাজের ছুঁড়ে দেওয়া রুটির টুকরো। অনেকে মনে করছেন, সম্পর্কের বহু রঙ কে অস্বীকার করে এটাও একধরনের চাপিয়ে দেওয়া কপি পেস্ট। আমেরিকার সুপ্রীমকোর্টের রায়ের শেষ অনুচ্ছেদ পড়লে তাদের বক্তব্যকে অস্বীকার করা যাচ্ছে না। ওই রায়ে বলা হচ্ছে, “No union is more profound than marriage, for it embodies the highest ideals of love, fidelity, devotion, sacrifice, and family. In forming a marital union, two people become something greater than once they were.” অর্থাৎ, বিবাহের থেকে গভীর আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার প্রশ্ন, কি করে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি ঠিক করে দিতে পারে কোন সম্পর্কটা প্রোফাউন্ড আর কোনটা নয়? কোন নিক্তিতে মাপা যেতে পারে, সুখের ভালবাসা কার জন্য বেশী গভীর, আমার জন্য না কি তার নতুন প্রেমিকের জন্য? অবয়বহীন ভালবাসার কি গভীরতা মাপা যায়? যারা ভাবতে পারেন “বিয়ের প্রয়োজন যার হয় তার হয়, আমার হয় না”, তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা মাপতে যাওয়ার আমরা কে?
কার্ফিউড নাইট: আগ্নেয়গিরির শিখরে পিকনিক : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ আগস্ট ২০১৫ | ৮০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৩
তাই সবকিছুর পরেও এই বই সেই মানুষদের গল্প বলে, সেই ভূখণ্ডের গল্প বলে, আধিপত্যবাদের নিষ্পেষণে গুঁড়িয়ে যেতে যেতেও যা তুমুল জীবনের উদযাপনে বাঁচতে চায়। গ্রামের স্থানীয় মসজিদে গিয়ে সৌদির ক্যাম্প থেকে ফেরা কট্টর ইসলামিস্ট ছোকরা যখন চোখ-মুখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা’ (শ্রেষ্ঠ কে?) তার উত্তরে কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ চেঁচিয়ে ওঠে না, বরং একে অন্যের মুখ চাওয়া-চায়ী করে। চেঁচাবে কি করে? আরবি জানলে তো! ছেলেপুলের কাছে তুমুল প্যাঁক খেয়ে চোখমুখ লাল করে সেই ইসলামিস্ট বুঝিয়ে দেয় যা এই স্লোগানের উত্তরে আল্লাহু আকবর বলাটাই নিয়ম। তারপর আব্বার চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা”। দুই একজন মিনমিন করে বলে ওঠে ‘আল্লাহু আকবর’। প্রোগ্রাম সুপারফ্লপ হবার পর এক বছর ধরে সেই ছোকরা আওয়াজ খেতে থাকে গ্রামের অন্য ছেলেপুলের কাছে। ততদিনে কিন্তু ধর্মের হাত ধরে রেজিস্টান্স পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে। পণ্ডিতদের মাস এক্সোডাস ঘটে গেছে, শ্রীনগরের রাস্তা উজিয়ে উঠছে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিখোঁজ এবং ঘরছাড়া। কিন্তু জীবন যেখানে যেটুকু চেটেপুটে নেবার, নেবেই। আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে পিকনিক করার নাম-ই কাশ্মীর, বারবার মনে করিয়ে দেয় এই বই।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ আগস্ট ২০১৫ | ৫০২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আগমনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিখে ফেলা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে রামধনির খারিজ হওয়া বয়ান হুবহু মিলে যায়। এই মিল আপতিক বা সাজানো হওয়া কঠিন, কারণ সংবাদপত্রের প্রতিবেদকের পক্ষে বহুদিন পরে রামধনি আদালতে গিয়ে কী বলবেন সেটা আন্দাজ করা অসম্ভব। যেটা সম্ভব, সেটা হল, রামধনি হয়তো আদালতে সত্যি কথাই বলছিলেন। এটি অবশ্য একটি সম্ভাবনাই, কিন্তু সেটা ফেলে দেবার মতো নয়। এবং আদালতে সংবাদপত্র প্রসঙ্গটি আসেইনি। রক্তের দাগের প্রসঙ্গটি অবশ্য এসেছিল। হাইকোর্টে ধনঞ্জয়ের কৌঁসুলী প্রশ্ন তোলেন, যে, এই নৃশংস খুনের(হেতালের শরীরে ২১ টি আঘাত ছিল) পরেও কোনো সাক্ষীই কেন ধনঞ্জয়ের হাল্কা রঙের জামাকাপড়ে কোনো রক্তের দাগ দেখতে পায়নি? সরকারপক্ষের আখ্যানে এর কোনো উত্তর নেই। বিচারক রায়দানের সময় এই ধাঁধার সমাধান করেন এই ভাবে, যে, যেহেতু খুনের আগে ধর্ষণ হয়েছে, তাই খুনের সময় ধনঞ্জয়ের শরীরে জামাকাপড় ছিলনা। এবং সেখানে রক্তের দাগ লাগার তাই কোনো প্রশ্নই নেই।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (চতুর্থ পর্ব) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ আগস্ট ২০১৫ | ৩১৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
এখানেই এই উপাখ্যান শেষ হতে পারত। কিন্তু মানুষের মৃত্যর পরও তার ছায়া থেকে যায়, আর উপসংহারের পরেও থেকে যায় পরিশিষ্ট। ২০১৩ সালে শঙ্কর কিষ্ণরাও খাড়ে বনাম স্টেট অফ মহারাষ্ট্র মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার পূর্বতন মৃত্যুদন্ডের সিদ্ধান্তগুলি খতিয়ে দেখে। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সেই মামলার রায়ের কিয়দংশ উদ্ধৃত করা হয়। এটা কোনো আপতিক ঘটনা নয়, যে, আমরা আগের পরিচ্ছেদে ওই মামলার যেদুটি অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, সুপ্রিম কোর্টও উদ্ধৃত করে সেই দুটি অনুচ্ছেদ থেকেই। এবং তারপর এক লাইনে মন্তব্য করা হয়, “Prima facie, it is seen that criminal test has not been satisfied, since there was not much discussion on the mitigating circumstances to satisfy the ‘criminal test’.”
খুব ছোটো করে এর মানে এইরকম, যে, ধনঞ্জয়ের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সেই পারিপার্শ্বিকতাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা দন্ডদানের পরিমাপ বাড়ায় (অ্যাগ্রাভেটিং সারকমস্ট্যানসেস)। যাতে দন্ডদানের পরিমাপ কমে, সেই পারিপার্শ্বিকতা (মিটিগেটিং সারকমস্ট্যানসেস) কে দেখা হয়নি। দার্শনিকভাবে দেখলে, এও এক পূর্বনির্ধারিত আখ্যানের একরকম স্বীকৃতি, যার চাপে কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে উপেক্ষা করা হয়, আর কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে দেওয়া হয় অধিকতর গুরুত্ব।
দেশ আমার দেশ : কৃশানু মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৫ | ১০৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
দেশ কী? জানি না। জানি ওই ২০১১র সেপ্টেম্বর মাসে পাওয়া কাগজটা আমার দেশ এর পরিচয় বহন করে। জানি ১৯৪৭ সালে আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। এও জানি, ওই ১৯৪৭ এই কিছু মানুষের টেনে দেওয়া কতগুলো দাগের মধ্যবর্তী অংশকে সারা জীবন দেশ বলে মেনে নিতে হবে। অথচ আমি জানি, আমি যেখানে থাকি, তার একশ মাইলের মধ্যে এমন জায়গা রয়েছে, যেখানকার অধিবাসীরা আমার ভাষাতেই কথা বলে, আমি যা খাই, তাই খায়, একই বৃষ্টিতে ভেজে। কিন্তু তারা ওই দাগের অন্যপ্রান্তে। আমি এও জানি, এক হাজার মাইল দূরে রয়েছে আরও অনেক মানুষ, যারা একেবারে অন্যরকম। আমার সাথে তাদের কিছুই মেলে না। কিন্তু তারা আমার দেশবাসী।
ক্রিকেটের দেশ : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৫ | ২১৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি নিজের ‘দেশ’, তা বলতে আমি হাতি ঘোড়া বেগুনপোড়া যা-ই বুঝিনা কেন, তাকে সমর্থন করব না? ভারত বা বাংলাদেশের হয়ে গলা ফাটাবো না? উত্তরে বলি (আমার কাছে উত্তর চাননি হয়তো, তবু এতখানি ধ্যাস্টামো যখন করেই ফেলেছি), সমর্থন আমিও করি – আপনিও করেন। সমর্থন করতেই পারি। খেলা দেখতে যারা ভালোবাসি, খেলা দেখবো। কিন্তু সেই দেখা, সেই সমর্থনকে আমার স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতাকে গ্রাস করতে দেবো কেন? ধরুন কাল যদি ভারতের বুকে বসে ‘ভারতবাসী’ হয়ে কেউ অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করেই (কী ভাগ্যি কাল বিপক্ষে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নেই), তবে তার সহজ এবং একমাত্র ব্যখ্যাটা এটাই হয়না যে সে বা তারা ‘দেশদ্রোহী’। না হয়না। কারণ প্রথম কথা ‘দেশ’ এর সংজ্ঞা প্রত্যেকের কাছে আলাদা এবং রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সীমানাকে অস্বীকার করা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। আর দ্বিতীয় কথা, এটা ‘যুদ্ধ’ নয়। দু দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দল নিজেদের মধ্যে খেলেছে, আমরা কোন না কোন দলকে ‘দেশ’ হিসাবে (বা আমার দল হিসাবে) ধরে নিয়ে সমর্থন করছি আমার স্বাধীন নির্বাচন অনুযায়ী, কোন রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতায় নয়। আমার বিপরীত দিকে বসা মানুষটারও তার মতন করে নির্বাচন করার অধিকার আছে বৈ কি। সেটা আমার সঙ্গে না মিললে সমর্থকের কথার লড়াই চলতেই পারে – দেশের বিরুদ্ধে লড়াই হয় না।
জীবনে অনেক যুদ্ধ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ, প্রতিদিনের হাসার যুদ্ধ। ওটা থেকে পালাবার পথ নেই বিশ্বাস করুন, ক্রিকেট আপনাকে ওই যুদ্ধে একটুও বাড়তি সুবিধা দেবে না। স্টেডিয়ামের লক্ষ ওয়াটের আলোর ছিটেফোঁটাও ঢুকবে না আপনার ঝুপড়িতে বা এক চিলতে ফ্ল্যাটে – ম্যান অফ দি ম্যাচের কোটি টাকার গাড়ি আপনার একটা ই এম আই শোধের কাজে আসবে না। না ওটা আমাদের যুদ্ধ নয় – স্রেফ এন্টারটেইনমেন্ট। ক্রিকেট থাকুক, সমর্থন থাকুক, আনন্দ বিষাদ থাকুক, সেই সঙ্গে স্যানিটিও থাকুক।
ভারতের খোঁজে : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৫ | ৩০৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৫
ভারতকে খুঁজে পাই ছ'বছরের কিছু বেশি আগে, যখন সদ্য অ্যামেরিকা এসেছি। অক্সিজেনের ঘাটতি না হলে সেটা যে ছিল টের পাওয়া যায় না, আমার ভারতে পাওয়াও কিছুটা ওরকম। ভৌগোলিক ভারতবর্ষে থাকতে মনেপ্রাণে উপলিব্ধি করতাম, কলকাতাটাই আমার দেশ। বাকি এলাকাগুলো পাসপোর্ট-ভিসাহীন বিদেশ, আসলে দেশ আর ঘরের পার্থক্য বুঝিনি। যাই হোক, সেই পার্থক্য নিরূপণের জন্য এ লেখা নয়, তবে দেশ মানে কেবল ঘুম থেকে দাঁত মাজতে মাজতে পাড়া ঘোরার আরামটুকুই নয়, সেটাই হয়তো বাকি লেখায় বোঝার চেষ্টা করবো। অ্যামেরিকায় এসে যেটা খেয়াল করতে শুরু করি, যে, এদেশের বৈভব ও বিস্তারে আমার কোনও অধিকার নেই। অধিকার নেই আমার কলেজ যাওয়ার রাস্তার গা ছমছমে অঞ্চলটায় কেন পুলিশ থাকেনা জিজ্ঞেস করার কিম্বা সিম্পলি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ম্যাগাজিন হক করার। ভারতে এসব বললেও হাইলি কোনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পাত্তা দেবেনা, কিন্তু বলবার/করবার অধিকারটুকু আছে- এই অধিকার থাকা আর না থাকার বোধ একটাভাবে নিজের জীবনচর্যাটায় পার্থক্য এনে দিচ্ছিল- দেখছিলাম, সত্যিই বিদেশে আছি। কিন্তু এ গল্প দেশ ও বিদেশের, মহাভারতের নয়; তবে হয়তো এইখান থেকেই শুরু। কোনওভাবেই মানিয়ে নিতে পারিনি অ্যামেরিকান সমাজে। মানিয়ে না নিতে পারা অবশ্যই অক্ষমতা, আর, আর-পাঁচজন দেশির মতন আমিও অ্যাপার্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ও দেশি পার্টিতে বন্দি হয়ে বছর কাটাতে লাগলাম। আর, এই জীবনটা খুব পীড়া দিচ্ছিল। ক্রমশঃ কোর্সওয়ার্ক ক্লাসরুম থেকে দূরে সরে এলাম যখন এদেশি বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাও কমলো, ফলে বিচ্ছিন্নতা বাড়লো- পুরো সমাজটার মধ্যে একদম বাইরের একজন অবজ়ার্ভার হয়ে থাকলাম। এবং এই পীড়াদায়ক বিচ্ছিন্নতা যেহেতু সবচেয়ে বাজে রাখে নিজেকে বারবার একটা খোঁজার জায়গা এলো, কোথায় আটকাচ্ছে বোঝার জায়গা এলো।
কোথায় বা যাব তোকে ফেলে? : কৌশিক দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ মার্চ ২০১৫ | ২৯৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৬
জ্যোতি মারা যাবার পর এক দরদী রাজনৈতিক ব্যাক্তি এরকম বলেছিলেন... ভালই হয়েছে, মেয়েটা মরে বেঁচেছে। নইলে জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকত। যদি সমাজের কোনো একটা মানসিক বিকার নিয়ে আমার সত্যিকারের বিবমিষা থাকে, তাহলে এটা। মেয়েটির বেঁচে থাকার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় এই মনোভাব। শুধু অন্য লোকে এ কথা বিশ্বাস করলে সমস্যা ছিল না; অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েটি নিজেও তাই বিশ্বাস করে। সমষ্টি এবং ব্যষ্টির নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া এই বিষাক্ত বিশ্বাসকে আক্রমণ করা ধর্ষককে হত্যা করার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েটিকে আর তার পরিবারকে “কিচ্ছু হয়নি” বলে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আপাত দৃষ্টিতে একথা বলা অন্যায়। কিচ্ছু হয়নি মানে? এত বড় সর্বনাশের পর এই কথা? এই আরেকজন পুরুষতান্ত্রিক শূকর। সংবেদনশীলতার কণামাত্র নেই। এই সব অভিযোগ শুনেও আমি এই কথাটা বলতে চাই এবং বলে থাকি। যাঁদের বলেছি, তাঁরা প্রায় সকলেই আমাকে মার্জনা করেছেন। ব্যক্তিগত স্তরে যাঁদের সে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু যাঁদের এই কথাটা শোনা এবং বিশ্বাস করা প্রয়োজন, তাঁদের জন্য এখানে বলছি। “কিচ্ছু হয়নি।” অপরাধ নিতে পারেন। মার্জনা না করলেও চলবে। কিন্তু এই যে আপনার চরম অভিজ্ঞতাকে একরকম ট্রিভিয়ালাইজ করলাম, সেই অপরাধে আমাকে রোজ সকাল-বিকাল গালি দেবার ফাঁকে এই কথাটা নিজেকেও শোনান। শেষে যদি একদিন এটা বিশ্বাস করতে পারেন, দেখবেন বাঁচতে ইচ্ছে করছে। পাশের বাড়ির মেয়েটি যদি এসে গোপনে কাঁদে আপনার কাছে, তার কানে কানেও এই কথাটাই বলুন, “কিচ্ছু হয়নি। কোথাকার কে লম্পট কী করল, তার জন্য তোর জীবন যাবে? জীবন বুঝি এতই ফেলনা?”
চাপাতির নীচে বাক স্বাধীনতা : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ৩০ মার্চ ২০১৫ | ১১৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
চাপাতিধারীদের অতর্কিত হামলা আতঙ্কের যে সমাজে আমাদের বসবাস, তাতে নবতর সংযোজন এই ব্লগার খুন। যে গভীর পাপ আমাদের মানহীন শিক্ষাব্যবস্থায়, আমলাতন্ত্রের দাপটে, সংস্কৃতি চর্চায়, সামাজিক সংগঠনের ভূমিকাহীনতায়, দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায়য় এত বছর ধরে চর্চা করে আসা হয়েছে, তার ফলাফল হাতেহাতে পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান লেখকদের আড্ডা কি আর হবে এই দেশে? আইনস্টাইনের জন্মদিন পরের বছর কি পালন করা যাবে? শিশু-কিশোরদের মা বাবারা পাঠাবেন তো সাংস্কৃতিক আয়োজনে? সবশেষ ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড (৩০ মার্চ) এই ভীতির সংস্কৃতিকে আরও পাকাপোক্ত করার শয়তানি আযোজন।
আমরা জানি যারা আসছে, সেই নতুন প্রজন্মের জন্যই আমাদের লড়ে যেতে হবে। সহিষ্ণু-মানবিক একটা সমাজ নির্মাণের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ চলবে।
ব্রিটিশরাজ ও গাঁজার গল্প : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৩৬৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
গাঁজা জিনিসটা সেইসময়ে যেহেতু খুব সস্তার নেশা ছিল, সেটা নিয়ে পার্লামেন্ট আগে খুব মাথা ঘামায় নি। মুঘল আমলেও গাঁজার ওপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ বসেনি। তবে ১৭৭০-এ কোম্পানি যখন প্রায় দেউলিয়া হয়ে পার্লামেন্টের দ্বারস্থ হয়, বেল আউট প্যাকেজের পাশাপাশি কোম্পানির থেকে লাভ বাড়ানোর অপশনগুলো পার্লামেন্ট বিচার করে। ১৭৯০ এ ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার গাঁজা-চরস-ভাং-এর ওপর ট্যাক্স বসানো হল। এই ট্যাক্স বসানোর ব্যাপারে পরবর্তীকালে কিছু মজার ঘটনা ঘটেছিল। গাঁজা ভাং-এর ব্যাপক ব্যবহারে কালেক্টররা বুঝে উঠতে পারছিল না কীভাবে ট্যাক্সেশন করলে সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ আসে। ফলে কখনো দোকানগুলোকে গুণগত তারতম্যে বিক্রির ওপর ট্যাক্স দিতে হয়, কখনো ট্যাক্সের নিয়ম পালটে দৈনিক ফিক্সড ট্যাক্স করা হয়, কখনো দামের ফারাক না দেখে সব ধরণের গাঁজা ভাং-এর ওপর ওজন অনুযায়ী ট্যাক্স ধরা হয়। ১৭৯০ এর নির্দেশনামায় কালেক্টররা সরাসরি ট্যাক্স নিতেন না, নিজের এলাকায় গাঁজা ভাং চরস বিক্রির থেকে জমিদারদের ট্যাক্স কালেক্ট করতে হত। ১৭৯৩ এ ৩৪ নং রেগুলেশন অনুযায়ী কোম্পানির অধীনস্থ এলাকায় গাঁজা ভাং চরস চাষও ব্যবসা করার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হয়। বলাবাহুল্য, লাইসেন্সিং ছিল রেভিনিউ আদায় করার সবচেয়ে সহজ পন্থা। লাইসেন্স পাওয়া এবং রাখার জন্য নিয়মিত ফি দিতেই হত। রেগুলেশনের কারণ হিসেবে সেটা উল্লেখও করা হয় যে লাইসেন্সের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কমবে এবং সরকারের অর্থাগমও সম্ভব হবে। ১৮০০ সালে আরেকটা রেগুলেশন বের হয়, যাতে বলা হয় এগুলোর মধ্যে চরস সবচেয়ে ক্ষতিকারক এবং চরস বানানো বা বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। আর মজার ব্যাপার, ১৮২৪এ আরেক নির্দেশনামায় বলা হয় যে গাঁজা বা অন্যান্য নেশার জিনিসের থেকে মেডিকেলি চরসের কোনো বেশি ক্ষতিকারক প্রভাব নেই, ফলে ব্যান তুলে নেওয়া হল। ১৮৪৯এ বেশি আবগারি শুল্ক আদায়ের জন্য খুচরো গাঁজার ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। এই সময় থেকে পরের কয়েক দশক ট্যাক্স দৈনিক হিসেবে হবে না ওজনের ওপর হবে এই নিয়ে বিভিন্ন আইন আসে। ফলে দ্যাখা যাচ্ছে যে কোম্পানির শাসনের আমলে গাঁজা ভাং-এর ব্যাপারে অর্থাগমের সুযোগ নিয়েই বেশি মাথা ঘামানো হয়েছিল। গাঁজা নিয়ে আফিং-এর মতন ব্যবসার সুযোগ ছিল না। কারণ গাঁজা সস্তা, প্রায় ঘরেই চাষ করে ঘরেই খাওয়া যায়, আর লোকে যেরকম সেরকম ভাবে জোগাড় করে নিতে পারে। সুতরাং চাষ আর পাইকারি ব্যবসাতে ট্যাক্স বসানোই এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় ছিল। একই কারণে খুচরো গাঁজার ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণও করতে চেয়েছিল কোম্পানি।
এক গঞ্জের ইতিবৃত্ত এবং কিছুটা স্মৃতিমেদুরতা - ১২ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৯৪৬ বার পঠিত
নিখিলদার ব্যাগ থেকে সেই বোতলের উপস্থিতি টের পেলাম – সেখান থেকে মদ সরিয়ে আমি কার্তিকদাকে প্রথম চাখতে দিই। সেই সময়ের স্কুল অব থটস ছিল এই যে থ্রি এক্স রাম খেতে হয় হয় কষা মাংসের চাট দিয়ে। যথারীতি মাংস রান্নার ভার পড়ে কার্তিকদার উপরে – সেই বয়সে মদের ভাগ না-এলেও আমার প্রতি কার্তিকদার ভালোবাসার জন্য কষা মাংস আমি চেখে ছিলাম। দুর্গাপূজার ভাসানের সময় বাড়িতে মদের অনুপ্রবেশ নিমো গ্রামের সীমানায় বাঙাল অনুপ্রবেশের মতই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ঘটনা বলে পরে প্রমাণিত হয়েছে। আরো হালকা বয়েস বাড়লে প্রথম সময় এল মদ নিজের জিভে চাখার। আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড ছিল গদাকাকু। এত দিন পর্যন্ত কেবল মদ সাপ্লাইয়ে সাহায্য করেছি – যখন খাওয়া হত তখন আমার বয়সীদের উপস্থিতি এ্যলাও ছিল না। ফলে পরিমাপে গোলমাল করে ফেললাম – প্রথমে নিখিলদার ব্যাগ থেকে হাতানো থ্রি-এক্স রাম ও পরে গদাকাকুর সামনে বসে তার গাইডেন্সে অক্টোবরের শেষের বিকেলে ছাদে জিন পান। সন্ধ্যা বাড়ছে, আমার বাড়ছে কনফিউশন – তখনও বাড়ির ঠাকুরকে প্রণাম করে বিজয়া দশমী করতাম সবাইকে – সেই প্রথম বার স্কিপ হল, বড় কারো কাছে যেতে পারছি না মুখে গন্ধের ভয়ে – মাথা ঘুরছে, পায়ের নিচে বসানো আছে আলি চাচার বানানো তুবড়ির বস্তা, নিজেদের বানানো রঙমশাল, আর অগুনতি বুড়িমার চকোলেট বোম্বের বাক্স। পরের স্মৃতি আবছা – নদুকাকুর ঘরে খাটের ধারে আমি বমি করছি মেঝেতে, আমার বাম পাশে শুয়ে আমার উপর দিয়ে উঠে মেঝেতে বমির চেষ্টা করছে আমার গাইড গদাকাকু। ফুলমা আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে আর বলছে এই গদাটার জন্য – ফলত গদাকাকু কোন জলপট্টি পাচ্ছে না, না পাচ্ছে বমি করার জন্য কোন হেল্প। সে নিশা আমাদের সহজে ছোটে নি – এবং পলকে পলকে তারে মনে উঠেছে। গাঁজা আমাদের ঘোষ বাড়িতে কোন দিন ট্রাই হয় নি। সেই দিন নিশা করে আমার এবং গদা কাকুর ঘৃণা লজ্জা ইত্যাদি ভয় প্রায় হাটে বিকিয়েছিল।
মদীয় মদকাহিনি : ঈপ্সিতা পালভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৫৭৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৪
ওয়ার্কশপে গেছি। সে আমার প্রথম আম্রিগাবাস। ওয়ার্কশপে বারোটা দেশের তেরোটা ছেলেপুলেদের প্রায় সব কটা ঘোর মালখোর। প্রায়টা জুড়লো, আমার জন্য। তখন আমি মদ টদ মোটে ছুঁতুমটুঁতুম না, মানে বিয়ার মুখে দিয়ে বি গ্রেড নিমের পাঁচন মনে হওয়া আর ওয়াইন খেয়ে মাথা ঘুরে যাবার পরে আর কিছু ছোঁবাটোবার ইচ্ছেটিচ্ছে হয়নি।
তো, সে তোরা নিজেরা যা ইচ্ছে খাবি খা, কিন্তু না, আমা হেন ঘোর মদনাস্তিককে দীক্ষিত না করে তাদের আত্মার শান্তি, প্রাণের আরাম কিছুই হচ্ছেনা। বিশেষত আমার রুমমেট হার্মাদ কন্যা তো এই কনভার্টিকরণকে পুরো ধর্মপ্রচারের মতন সিরিয়াসলি নিয়ে নিল। কীসব ফলের ফ্লেভারে বিয়ার দিয়ে আমার ক্লাস শুরু হল। তা, তাতে সবে একটু একটু উন্নতি দেখাচ্ছি বলে টিচার যখন রায় দিচ্ছেন, তখনি সব ভেস্তে দিলেন এক প্রফ।
ভারতের জমিনীতি সংস্কার : মৈত্রীশ ঘটক, পরীক্ষিৎ ঘোষ, ও দিলীপ মুখার্জী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ | ১৭৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
নতুন জমি/ ভূমি সংস্কার আইন এজন্যেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রশাসনের লক্ষ্য সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করা ও কম্পিউটারাইজ করা। এর জন্য যা দরকার জমি মালিকদের সঠিক জমির হিসেব দেওয়ার সহযোগিতা। জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ফলে প্রচুর জমির মালিকানা গোপন ও বেনামী, অন্যদিকে সরকারি অধিগ্রহণ হলে মালিকরা অবশ্যই চাইবেন সঠিক ক্ষতিপূরণ যার জন্য জমির হিসেব ঠিকঠাক থাকা প্রয়োজন। এই ভাবেই জমি সংশোধন ও অধিগ্রহণের মধ্যে এক সহজ সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয় অংশ ঠিকঠাক কাজ করতে হলে প্রথম অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন, আর প্রথম ক্ষেত্রে উন্নতি হলে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক সুবিধে হবে। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে মালিকদের উৎসাহ দিতে, কিছু পুরস্কার যেমন, সরকারি সুযোগ সুবিধে দেওয়া যেতেই পারে। সহজে সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ, NREGA, ভর্তুকি, জন বন্টন ব্যবস্থা ইত্যাদির ব্যবস্থাও করা যায়। একই ভাবে গত পঞ্চাশ বছরে জমি সংস্কার বলবৎ করতে আমাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুদিনের জন্য উর্ধ্বসীমা আইন কিছুটা শিথিল করা যেতেই পারে যাতে মালিকরা সঠিক তথ্য দিতে আগ্রহী হন। বিশেষত দেখা গেছে যে জমিসংস্কার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি উন্নতির পরিপন্থী হয়েছে, ও এর দায়ভাগ আরো বেশি বর্তায় জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ওপর (Ghatak and Roy, 2007 )। এমনকি জমির রেকর্ড ঠিক করার জন্য ও সঠিক তথ্য জানালে আয়করে ছাড় দেওয়াও যেতে পারে। আদিবাসী এলাকায় কৃষি জমি বিক্রির ওপর অকারণ বিধিনিষেধ আরোপ, আদিবাসীদেরই স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে। এই বিধিনিষেধ তফশিলী জাতি, উপজাতি আদিবাসীদের সঠিক জমি ব্যবহারে সাহায্য তো করেই নি উপরন্তু তাদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও গড়ে তোলে নি। আপাতদৃষ্টিতে বৈষম্যের নামে শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি করে আদতে কিছু লাভ হয়নি। জঙ্গল রক্ষা আইন সংরক্ষণের নীতির বিরোধী হয়ে উঠেছে । সম্পত্তি আইনে আওতায় জঙ্গল জমি আনার উদ্দেশ্য অবাধ কৃষি ও বন কাটা নয় বরং, তাদের পুরুষানুক্রমে চলে আসা শিকার ও সংগ্রহণ বৃত্তি থেকে যদি তারা উচ্ছেদ হয় তার প্রকৃত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও করা। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বাস্তবের সাথে আদর্শের মেলবন্ধন না ঘটাতে পারা আমাদের ব্যর্থতা, ঠিক যেরকম বন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন ও বন ধ্বংস রোধ করার ভারসাম্য রক্ষা করতেও আমরা সক্ষম হইনি। সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য জমির বন্টন আরো সমান ভাবে হওয়ার সাথে সুষ্ঠু জমি বাজার ও জমির আরো উন্নত ব্যবহার পদ্ধতি গড়ে তোলার মধ্যে যে কোনো সংঘাত নেই সেই সত্যি যত তাড়াতাড়ি বোঝা যায় ততই মঙ্গল।
নাটকটাটক : জয়ন্তী অধিকারী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ | ১০১৮ বার পঠিত
প্রায় দুই দশক আগেকার এক সোনারোদ পুজোআসছে শরতের সকাল। তখন আকাশের নীলিমা গভীরতর ছিল, শিউলি তাড়াতাড়ি ও বেশী ফুটত, আসন্ন পুজোর গন্ধে বড় আনন্দ ছিল, পুজোর ধুমধাম অনেক দীর্ঘস্থায়ী ছিল, দিল্লীর বাঙালী ক্লাবসমূহে প্রচুর মেম্বার ছিল, “নাটকটাটকে” আবালবৃদ্ধবনিতার প্রবল উৎসাহ ছিল, সর্বোপরি সকলের ওজন ও রক্তচিনি দুইই অনেক কম ছিল। যথারীতি প্রচুর গবেষণা, ঝগড়া, তিনটি রেজিগনেশন পেশকরণ ও সামান্য সাধাসাধির পর প্রত্যাহার নেওন ইত্যাদির পর "গান্ধারীর আবেদন" বিপুল ভোটে জয়ী হল। ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন ইত্যাদি কাষ্টিং হয়ে গেছে, ভানুমতীও রেডী, কেবল গান্ধারী তখনো ফাইনাল হয়নি।
অরুণা শানবাগ, নিষ্কৃতিমৃত্যু ও উন্মাদের ভাষা : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুলাই ২০১৫ | ১০৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কেইএম হাসপাতালের প্রাক্তন মেট্রন দুর্গা মেহেতা-কে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি ও তাঁর অন্যান্য নার্সরা চাননি অরুণাকে নিষ্কৃতিমৃত্যু দেওয়া হোক l উত্তরে তিনি টিভির পর্দায় জানালেন- আমাদের অধিকার মানুষকে বাঁচানোর, হত্যা করার নয় l অরুণা আমাদেরই একজন ছিল l তুমি নিশ্চয় চাইবে না তোমার কোনো প্রিয়জনকে এভাবে হত্যা করা হোক l (We have right to give life to anybody, not the right to kill anybody. She was one of us. You don’t want your family member to be killed.) এ আবেগসর্বস্ব বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া কোনো যুক্তিনির্ভর মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয় l তবে, অরুণার শায়িত শরীরের সাথে আবেগ ব্যতিরেকে আরও টুকরো টুকরো কিছু বাস্তবতা জড়িয়ে ছিল l নার্সরা জানান- অনেক বছর আগে জন্মদিনে একবার অরুণাকে মাছের টুকরো ভেঙে খাওয়ানো হয়েছিল l অরুণা নাকি সেদিন খুশি হয়েছিল খুব l তার ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে উঠেছিল l বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিল আপাত-ভাষাহীন চোখ l মনে পড়ে যাচ্ছে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবির আনন্দভাই-এর কথা, যে একমাত্র মুন্নার প্রশ্নের উত্তরেই ‘পলক ঝপককে’ জবাব দিত, আর বাকিদের কাছে সে ছিল স্রেফ একটা ‘কেস’ l
পুরানো সেই দিনের কথা - পর্ব ১ : মানস সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ অক্টোবর ২০১৫ | ১০৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পৃথিবীতে একটা মাত্র ডাইনোসর আছে যার সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত নাম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে চলে, জীনাস নেম, স্পিসিস নেম - দুটোই একসাথে উচ্চারিত হয়। আজ অবধি আর কোনো ডাইনোসর বিজ্ঞানীমহলের বাইরে এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তার নামের মধ্যেই তার একচ্ছত্রাধিপত্যের পরিচয়, সে ডাইনোসরের রাজা, 'অত্যাচার-সম্রাট' টাইর্যানোসরাস রেক্স। জীনাস Tyrannosaurus, অর্থাৎ অত্যাচারী টিকটিকি, স্পিসিস rex, অর্থাৎ king। স্থলচর মাংসাশী ডাইনোসরদের মধ্যে টী-রেক্স সর্ববৃহৎ নয়, জাইগ্যানোটোসরের মতো কেউ কেউ তার চেয়ে বড়। কিন্তু আকারটাই তো রাজকীয়তার শেষ কথা নয়। রেক্স ছাড়া টাইরানোসরাসের আরও অনেক প্রজাতি আছে, টাইরানোসরাস বাদেও অনেক বাঘা বাঘা জাত-শিকারী ডাইনোসর আছে। Carcharodontosaurus আছে,Velociraptor আছে। ভেলোসির্যাপটরকে আমরা একরকমভাবে চিনি, 'জুরাসিক পার্ক'-এর র্যাপটর এরাই। এরা সবাই থেরোপড। থেরোপডদের মধ্যে থেকেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও আধুনিক ডাইনোসররা উঠে এসেছিল। এদের একটা শাখা এখনও পৃথিবীতে মজুত আছে। তাদের আমরা বলি 'পাখি'।
বাজে গল্প (৫)- রোগ : বিক্রম পাকড়াশী
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১১ অক্টোবর ২০১৫ | ১০১৯ বার পঠিত
তবে উপায়? বিকাশ প্রথমে ওয়াটার থেরাপির ধান্দা করলেন। দিনে আট গেলাস জল পেটে ঢুকতে লাগলো, মদ্যপান বন্ধ, আর প্রতি ঘন্টায় দুচোখে জলের ঝাপটা। এতে করে কোনও লাভ হল না, বার বার বাথরুম যাবার প্রয়োজন পড়ল, ঝাপটা দিতে গিয়ে জামা ভিজে একশা হল, সন্ধ্যায় ইয়ারবক্সীরা 'উল্লাস' বলার একটি সাথী আপাততঃ হারিয়ে সামান্য বিমর্ষ হলেন। রাতে ঘুম এল না। ঘুম আসার জন্য সানন্দায় কানে কানে পড়তে গিয়ে মাথাটা শেষে খেলল। বিকাশবাবু গোপনে ওনার সহধর্মিনীর প্রসাধন সামগ্রী হাঁটকে শসা, লেবু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভেষজ দেওয়া ক্রিম চোখে লাগাতে শুরু করলেন ও কদিনের মধ্যেই ক্রিম সরাতে গিয়ে ধরা পড়লেন। লাগিয়ে ফল হল কচু, হাতি আর ঘন্টা। চৌর্যের কোনও কারণ বাৎলানো দায় হল, গৃহিনীর মুখনাড়া সার হল, বিবিজান লবেজান করে দিলেন। কিছুতেই কিছু হল না দেখে মরিয়া বিকাশ খুব ভোরে উঠে আদা-মধু আর কল ওঠা ছোলা মুখে ফেলে দু-আঙুলে টেনে টেনে চোখের চামড়ার ব্যায়াম আরম্ভ করলেন। এতে তাঁর জীবনযাত্রা পূর্বের চেয়ে স্বাস্থ্যকর হল, তর্জনীর গাঁটে ব্যথা হল, কিন্তু চোখের কোনও রদবদল ঘটল না। হতাশ, ভগ্ন, ভীত, রোগগ্রস্ত বিকাশ সেন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন।
পাশের পাড়ার মেয়েটি (প্রথম পর্ব) : অচল সিকি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ অক্টোবর ২০১৫ | ১১৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সাধারণভাবে কোনও বই পড়া শুরু করার আগে আলাদা করে কোনও মানসিক প্রস্তুতি নেবার দরকার হয় না – কিন্তু এই বইটা পড়ার আগে আমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়েছিল। বইটা পড়ার জন্য হয় তো আগে থেকে ঘটনাটার কিছু না জানলেই ভালো হত, একটা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বইটা পড়ে একটা মতামতে পৌঁছনো যেত। কিন্তু এটা কোনও কাল্পনিক গল্পের বই নয়, কঠিন বাস্তবের ন্যারেশন। এই ন্যারেশনের একটা অংশ আমি জানি, জানতাম, ঘটনার শুরু থেকেই আমি নজরে রেখেছিলাম, নিজের মত করে খবর জোগাড় করতাম, পড়তাম, ফলে নিজের অজান্তেই একটা মত – সহজ ইংরেজিতে যাকে বলে ওপিনিয়ন, আমার তৈরি হয়ে ছিল। ফলে পুরোপুরি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এই বই পড়া আমার পক্ষে আর কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না। আমি জানতাম, বইটা পড়ে ফেলার পরে আমি ঠিক আগের মত স্বাভাবিক থাকতে পারব না, বইটা আমাকে ধাক্কা মারবে জোরে, আর হন্ট করে চলবে অনেকদিন ধরে। পড়বার পরে বুঝেছিলাম, আমার এই ধারণা অমূলক ছিল না।
গল্পের ভাষা, ভাষার গল্প : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ অক্টোবর ২০১৫ | ১৪০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আরও একটা ফ্যাক্টর কাজ করে। সেটা হল অনিশ্চয়তা আর রহস্যময়তা। কথক এমন ভাবে তার কথকতার জাল ছড়াতে থাকেন, সাদামাটা ঘরোয়া দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে যেন একটা জাদুকরি কুহকজড়ানো বাতাস বইতে থাকে কথকতার আসরজুড়ে। রোজকার ঘামঝরানো পরিশ্রমের বাইরে কথক হয়তো এক জাদুগালিচার গল্প বলেন। হয়তো এক সন্তের গল্প বলেন যার কৃপায় বোবা কথা বলে, কাটামুন্ড জোড়া লেগে যায়। এমন জুতোর গল্প বলেন যেটা পায়ে দিয়ে ইচ্ছেমত দেশভ্রমণ করা যায়। এ অভিজ্ঞতা তো আপনাদের সবার আছে। মানুষের বুকের ভেতরে যে অসম্ভব বাসনাগুলো গোপনে লুকিয়ে থাকে, যে ফ্যান্টাসি আমরা গোপনে লালন করি, গল্পের রহস্যময়তা তাকে স্পর্শ করে। যেন ভারচুয়াল রিয়ালিটির ভেতর দিয়ে আমাদের বাসনার নিবৃত্তি হয়। এই আধো বুঝতে পারা, আধো বুঝতে না পারার ভেতরে স্ট্রেস থাকে। এই স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে গল্প শোনে, সে না-বোঝা রহস্যময়তার ভেতর থেকে আরও গল্প নিজের মত করে বিনির্মাণ করে নেয়। আর, অনিশ্চয়তা তো থাকবেই। কথক যদি কী হতে পারে, আসলে সেটা বিশাল একটা সাপ নয়, একটা মোটা দড়ি, কুমির নয়, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল একটা গাছের গুঁড়ি – এসব আগেই বলে দেন, তবে তো সেটি আর গল্প থাকে না, সাংবাদিকসুলভ নিছক ঘটনার বিবরণ হয়ে ওঠে। নীরস সেই গল্প যেন ফোটোগ্রাফিক রিয়েলিটির মত কঠিন সত্য, গল্পের যে মাধুরী মানুষকে চিরকাল আবিষ্ট করে রেখেছে, সেই প্রাণলাবণ্যটুকু আর থাকে না।
পাশের পাড়ার মেয়েটি (দ্বিতীয় পর্ব) : অচল সিকি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ অক্টোবর ২০১৫ | ১১৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
২০১০ সালের শেষদিকে, সিবিআই ইনভেস্টিগেটিং অফিসার কৌল মোটামুটি ছক কষেই ফেলেছেন এই ঘটনাকে অনার কিলিং-এর তকমা লাগিয়ে সলভ করতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, ক্রিমিনাল কেসে তদন্তের ফলাফল আগেই ভেবে রাখলে সেই অনুযায়ী ঘটনাক্রমকে সাজাতে হয়। এখন সরাসরি তথ্যপ্রমাণ, যেগুলো বা যারা কথা বলে না, যেমন বালিশের ওয়াড়, বিছানার চাদর, কিংবা বোতলে বা গ্লাসে আঙুলের ছাপ, সিঁড়িতে রক্তের দাগ – এদের বয়ান তো বদলে ফেলা যায় না, এরা যে অবস্থায় রেকর্ডেড হয়েছিল, সেইভাবেই রেকর্ডেড থাকে। এর চেয়ে অনেক সহজ, সাক্ষীদের বয়ান বদলে ফেলা। তা, সে ব্যাপারে কৌল খুবই সফল হচ্ছিলেন, একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বয়ান ততদিনে বদল হয়ে আসছিল, কিন্তু কৌল পড়লেন স্বয়ং নূপুর তলওয়ারকে নিয়ে। মৃত আরুষির শরীর ঢাকা ছিল একটি সাদার ওপর গোল ডিজাইন করা চাদর দিয়ে। কৌল সেটিকে দাবি করেন সাদা চাদর, এবং সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত গল্প ফাঁদতে গিয়ে তিনি নূপুরের ওপর চাপ দিতে শুরু করেন, যাতে নূপুর স্বীকার করেন, চাদরের ব্যাপারে তিনি কৌলকে আগে “মিথ্যে কথা” বলেছিলেন। নূপুর অস্বীকার করেন – তিনি প্রথম থেকেই চাদরের সঠিক বর্ণনা দিয়েছিলেন, সে চাদর বেশ কয়েকবার টিভি চ্যানেলে দেখানোও হয়ে গেছে, এখন কৌল সাদা বললেই নূপুরকে তা মেনে নিতে হবে কেন? নূপুর পরিষ্কার জানান, তিনি বয়ান বদল করবেন না, তিনি মিথ্যে বলেন নি কখনওই। কৌল, এমনকি নূপুরকে ভয় দেখান যে, তিনি নূপুরের বিরুদ্ধে কুড়িজন সাক্ষী দাঁড় করিয়ে দেবেন নূপুরকে মিথ্যেবাদী প্রমাণিত করার জন্য।
পাশের পাড়ার মেয়েটি (তৃতীয় পর্ব) : অচল সিকি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ অক্টোবর ২০১৫ | ১৩১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
শ্যাম লালের একটি নিকনেম চালু ছিল গাজিয়াবাদের আদালতে। সাজা লাল। দীর্ঘ বিচারকজীবনে, কখনও কোনও অভিযুক্তই নাকি তাঁর বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি পায় নি। প্রত্যেকেই শাস্তি পেয়েছে তাঁর জাজমেন্টে। শ্যাম লাল নিজে যদিও দাবি করেন অনেকেই তাঁর রায়ে মুক্তি পেয়েছেন বা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, কিন্তু এ রকম একটা কেসের রেফারেন্সও তিনি দিতে পারেন নি। আরুষি হত্যাকাণ্ডের কেস তাঁর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল সম্ভবত এই কারণে, ন্যায় প্রদানের থেকেও এই কেসে তাঁর কাছে জরুরি ছিল এই কেসের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত পালন করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তোলার। “শেষ পর্যন্ত” কথাটি অবশ্যই ব্যঞ্জনামূলক, কারণ, শেষ করার জন্য কোনও চাপ তাঁর ওপর ছিল না, চাপটা ছিল তাঁর নিজের কাছেই। আরুষি হত্যার রায় প্রকাশের ছদিন পরেই শ্যাম লাল অবসর নেন। দেশের সমস্ত মিডিয়া যখন গভীর আগ্রহের সঙ্গে এই কেসটা ফলো করছিল, একটা সঠিক বিচার হওয়া খুব দরকার ছিল, কিন্তু শ্যাম লালের হাতে বেশি সময় ছিল না। অবসর নেবার আগেই তাঁকে মামলার শুনানি শেষ করে জাজমেন্ট শুনিয়ে যেতে হত। শ্যাম লাল চাইলেই কেসটি আরও শুনানির জন্য পরবর্তী বিচারকের হাতে ছেড়ে যেতে পারতেন, শেষ করার জন্য কোনও চাপ ছিল না, কিন্তু তিনি সে পথে হাঁটেন নি।
বেশ্যাপাড়ার গল্প : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ অক্টোবর ২০১৫ | ১৯২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
যেদিন খদ্দের থাকে না, আমরা অনেক অনেক গল্প করি। বরাবর এমনটাই হয়ে আসছে। আমাদের দেওয়ালে চারজনের ছবি লাগানো আছে। আমি চারজনকেই চিনি। একটা আদ্যা মা, একটা নেতাজি, একটা মাধুরী দীক্ষিত, আরেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দীপালির ট্রাঙ্কে আরও একটা ছোট্ট মতো ছবি আছে। আমি জানি ওটা কার। পলাশের। আমাকে কেউ বলেনি। কিন্তু জানি। একদিন দুপুরবেলা খাটের ওপর ছবিটা পড়েছিল, আর আমি রাগ করে একটু চিবিয়ে ফেলেছিলাম। দীপালি কী মারই মেরেছিল। ওই একদিনই। আর কখখনও না। তারপর নিজেই একঘন্টা কাঁদলো। দীপালি ওর মা বাবার কথা একেবারে বলে না। গোমতীর কারো কথাই বলে না প্রায়। কেবল একজন দিদিমণির কথা বলে – তার নাম মায়া। উনি দীপালিকে খুব ভালোবাসতেন। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাতেন, ঘি ভাত রান্না করে খাওয়াতেন। সেইসব গান দীপালি গায়। মাঝে মাঝে। বিশেষ করে ওই শুভাশিস এলে। শুভাশিসকে একটানা দু’বছর হলো দেখছি, মাসে সাধারণত একবার আসে। শুরুর দিকে, মাইনে পেয়ে। আমার জন্য ক্রিমবিস্কুট আনে, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে। আর টাকা দেওয়ার পর আমাদের একটা-দুটো করে কবিতা শুনিয়ে চলে যায়। আমি আর দীপালি তখন খুব হাসি।
সাঁকোবাড়ি : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ অক্টোবর ২০১৫ | ৯৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সেই সাতক্ষীরের গল্প এখন মিলিয়ে গেছে। মেসো, মাসি এপারে এসে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। বাবা, মা, কাকা কাকিরা নেই। বারাসতের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে গেছে। মাসতুতো ভাইদের সংসার কেমন চলছে জানে না বিমলেশ। ওপার থেকে আসা দুই ভাই খুব কষ্ট করেছে শুনেছিল সে। সাতক্ষীরের কথা তারা বলতে বলতে থেমে গেছে মনে হয়। বিমলেশ রবীন্দ্রসদন চত্বরে বাংলাদেশ বই মেলায় হাজির। সকলেই বাংলাদেশের প্রকাশক। বই সব বাংলাদেশের। “সাঁকোবাড়ি” একটি প্রকাশন সংস্থার নাম। কী সুন্দর নাম! সে বাংলাদেশের কিছু কিছু লেখকের বই পড়েছে। বই তার নেশাও। কিন্তু এই লেখকের নাম সে জানে না। সাতক্ষীরের লেখক, নাট্যকার। সে এতদিন বাদে জানল সাতক্ষীরে একজন লেখকের বাড়ি। হয় তো আরো আছে। এত বছরে সে জানে না। খবরের কাগজে দেখেছে সৌম্য সরকার এবং মুস্তাফিজুর রহমান নামে দুই ক্রিকেটারের বাড়ি সাতক্ষীরে। তাতে আহ্লাদ হয়েছিল বটে, কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে তার আগ্রহ খুব নেই। সে ঢুকতেই দেখল সাঁকো বাড়ি। সাঁকো বাড়ির স্টলে এক বিরল কেশ প্রবীণ বসে আছেন। ময়লা রঙ। চোখের চশমার পাওয়ার কম নয়। ইনিই কি তার ফেসবুকের বন্ধু আমিরুল বাশারের অগ্রজ। তারই বয়সী হবেন, কিংবা তার চেয়ে বেশি। সে কুন্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করল, খায়রুল বাশার মশায় কি আপনি, লেখক খায়রুল বাশার।
পুনরুত্থান : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ২৩৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
লাইব্রেরিতে সোভিয়েত দেশ খুব একটা কেউ পড়ত না। বরং ‘কালনাগিনীর প্রতিহিংসা’ কিংবা ‘মরণগুহার ভয়ংকর’ খোঁজ করেও পাওয়া যেত না। আমার কিন্তু সোভিয়েত দেশ ভালো লাগত। কী মসৃণ ঝকঝকে কাগজ, কী সুন্দর রঙিন ছবি। তখন অন্য কোনও পত্রিকায় রঙিন ছবি প্রায় দেখাই যেত না। নতুন পত্রিকা এলেই আমি প্রথমে পৃষ্ঠা খুলে গন্ধ শুঁকতাম। কাগজ থেকে, অক্ষর থেকে রাশিয়ার বাতাস ফুসফুস ভরে টেনে নিতাম। বুকের ভেতরটা বিশ্বাসে ভরে উঠত। মনে হত আমার শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে লেনিনগ্রাদ, মস্কো, বাকু, আজারবাইজান, তাসখন্দের বাতাস। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করতাম পৃথিবীর ভেতরে শ্রেষ্ঠ দেশ হচ্ছে ইউ এস এস আর। পত্রিকায় এক একজন লেখকের নাম খুঁজে পাই, লাইব্রেরি থেকে তাদের বই খুঁজে নিয়ে পড়ি। বাংলায় অনুবাদ। তুর্গেনিভ, গোগোল, তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি। নিকোলাই অস্ত্রয়েভস্কির ‘ইস্পাত’ পড়ে তো দু’রাত ঘুমই হল না। আমারও ইচ্ছে করত মাতৃভূমি না বলে আমাদের দেশকে পিতৃভূমি বলে ডাকতে। সেই লেনিনগ্রাদ থেকে ভারখায়ানস্ক – পৃথিবীর আদ্ধেকটা জুড়ে তো ওরাই রয়েছে। যুদ্ধ হলে শুধু একটা বোতাম টিপবে, আমেরিকা ফিনিশ।
শাহবাগ, দ্রোহ অথবা ইউজিন পেতিয়ে’র গান (Les Chanchons de Revolution) - প্রথম পর্ব : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ১১৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সিন নদীর পারে সেবারের জুলাইটা ছিল সত্যিই অন্যরকম। ইউজিন, তোমার কি মনে পড়ে? জুলাই বরাবরই এই ফরাসী দেশে ভিন্ন আভা, ভিন্ন দীপ্তি নিয়ে আসে। প্রায় পৌনে একশ বছর আগের জুলাইয়ের চোদ্দ তারিখের গল্পটা পিতামহ পিতামহীরা শোনায় নি কি? দিকে দিকে খবর রটে গেছিল যে বাস্তিল দুর্গের উপর কামান থেকে গুলি ছোঁড়া হবে সাধারণ, নিরস্ত্র মানুষের উপর। আর সে খবরে এত দিনের ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত ও বিপন্ন মানুষ যত ভয় পাবার বদলে বরং উল্টো হঠাৎই অতিকায় দৈত্যের মনের জোর নিয়ে ছুটলো সো-জা বাস্তিল দুর্গ বরাবর। ১৪ই জুলাইয়ের দু’দিন আগেই রাজা ভার্সেই থেকে সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে জনতার উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। জনতাও এর উত্তরে সাথে সাথেই পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তÍত হয়ে গেছিল। শহরের ঘণ্টা বেজে উঠলো। জনগণের পক্ষ থেকে সতর্ক ঘণ্টা। জনতা দরকারে রাষ্ট্রীয় অস্ত্রভাণ্ডারও দখল করতে প্রস্তÍত। একটি গার্ড রেজিমেন্ট জনতার পক্ষে অবস্থান নিল। ঠিক তার দু’দিন পরেই অর্থাৎ চোদ্দ তারিখেই যেই না খবর রটলো যে বাস্তিল দুর্গ থেকে মানুষের দিকে গুলি ছোঁড়া হবে, অমনি সব ধেয়ে গেল দুর্গ বরাবর। তারপর বাকিটা ইতিহাস। গিলোটিনে অভিজাতদের মাথা। লিবার্তে-ফ্রাতের্নিতে-ইগালিতে...সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা...মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মায়...তথাপি সে সদা শৃঙ্খলিত! তবু, ইউজিন...যেমনটা তোমার পিতামহ বলতেন আর এ-ও জানা কথাই...প্রতিটা বিপ্লবের পরই আসে একটি করে প্রতিবিপ্লব...হাজার অন্যায়ের প্রতিবাদেও কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘট করতে পারত না। নারী রয়ে গেল আগের মতই নিরক্ষর, গৃহকর্মের দাসী। তবে বিপ্লবটা কোথায়? তবু ১৭৯২ থেকে ১৮৭০...গুনে গুনে ৭৮টা বছর পরে আবার এই জুলাই...সে যেন একইসাথে রক্তবর্ণ অথচ পিঙ্গলাভ মেঘ, যা যে কোন ঝড়ের আগে দেখা যায়।
নাগর : মাজুল হাসান
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ১০৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
প্রথম দেখায় বিন্দুরে বুকিং দিছিল মতি। এমন মাল না চাখলে জিবলা কাইট্টা ফালান্ উচিত। কিন্তু বিন্দু তো আটটা-দশটা বাজারী মাইয়্যার মতো না। হলে সিট পাওয়ার জন্য একটু তদবীরে এসেছিল। পরে অবশ্য কৃতজ্ঞতাবশত দলের বড় মিছিলগুলানে অ্যাটেন্ড করত। সেই থেকে শুরু।
যা হোক, মতিন ওরফে কুক্কুরু-মতি সেইদিন সাক্ষাত মোরগা-মতি। দুধচিনি বেশি কিং সাইজ চা খেয়ে কথা উঠছিল, কী করে অপোন্যান্ট গ্রুপকে ক্যাম্পাস ছাড়া করা যায়? তখন গাণ্ডু-হেলালের টেম্পার দেখার মতো। বলে, ‘অত কওনের কাম নাই, ল সেন্ট্রাল মাঠে যাই, কাটারি হান্দায়া দেই। ব্যস ফাইনাল।’
‘কিন্তু বিন্দু যে আমারে টাসকি দিলো দোস্ত!’
‘হ, কঠিন মাল একখান।’—এখনও নিজের কথা কানে বাজে কুক্কুরু-মতির। কী করে পারত সে? যার সাথে একটা লটরপটর চলতেছে তারে নিয়া এমন ছালবাকলাহীন কথা! এখন মাথা দপদপ করে। শেষে রাগ বাড়ে নিজের ওপরই। ওর নাম কুক্কুরু-মতিন না হয়ে গাণ্ডু-মতিন হওয়া উচিত ছিল। বুঝতেই পারেনি এই বিন্দুর প্রেমে পড়ে যাবে, আর ওর গলার কাটা হয়ে উঠবে বিলা-মেজবাহর ডাইল উৎসবের রাত। কারণ, শুধু দেখে খান্ত হয়নি, সেদিন রগরগে কিপটা ব্লুটুথ দিয়ে নিজেদের মোবাইলে নিয়ে যে যার মতো ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বিদিক নাচ-গানা করেছিল। সেদিন ঘুরেফিরে একই কথা—মামা কইও না, কইও না, শহীদ হয়া যাই! সেদিন ‘ম্যায় দুধারি তলওয়ার হু’ গান গাইতে গাইতে তারা ভাগ করে নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ দিকের টেন্ডারবাজি—‘বকশিবাজার তোর, গিরিঙ্গি লেন গাণ্ডুর আর গেদু-আলিমের হইল কোর্টচত্বর।’
শাহবাগ, দ্রোহ অথবা ইউজিন পেতিয়ে’র গান (Les Chanchons de Revolution) - শেষ পর্ব : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ১০২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
...তবু বিপ্লবের পিছু পিছু পায়ে পায়ে নিঃশব্দে হেঁটে আসে যে প্রতিবিপ্লব ক্ষুধার্ত ডাইনির মতো, সে সহসাই পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপ্লবের কাঁধে ছুরি বসায়। বাঘনখে বিদ্ধ করে তার হৃৎপিণ্ড। তাই কি হয় নি? মার্চের ২২ তারিখেই অভিজাতদের কিছু দাঙ্গাবাজ গায়ে পড়ে হামলা করলো কমিউনের লড়াকু শ্রমিকদের সাথে। শ্রমিকরা আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করতেই ওরা ছুরি, পিস্তল, লাঠি রেখে পালালো। কমিউনের সেনাপতি লুলিয়ার লোকটিকে তোমাদের যে ভাল লাগত না, সেটা ত’ ঠিকই ছিল ইউজিন! অভিজাতরা তাড়াতাড়িই যে আবার দখল করে নিল দুর্গ মঁ-ভালেবিঁ। ব্যর্থতার শাস্তিতে বহিষ্কৃত হবার সাথে সাথে কমিউনের পিছু নিল সে। ভার্সেই থেকে আসা অভিজাতদের শেষ বাহিনীর পক্ষে কাজ করলো লুলিয়ার। হায়, শ্রমিক নারীরা পর্যন্ত লড়াইয়ে এগিয়ে এলো। নিজেদের দরিদ্র, নিরন্ন বস্তি রক্ষায় পুরুষের পাশাপাশি তারাও কামান চালালো। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়লো রাস্তায়। নিকোলা আর জাঁকের স্ত্রী, প্রেয়সিরা খুন হলো রাস্তায়। মৃত স্বামীর শবদেহের পিছু হাঁটতে হাঁটতে শিশু সন্তানের কাণে শ্রমিক মেয়েরা শ্লোগান দিয়েছে, ‘ভিভা পারি কমিউন!’ তবু ভার্সেইয়ের সেই বিপুল সৈন্যবাহিনীর সাথে শেষরক্ষা হলো কি? শ্রমিক নেতা ফ্লুঁরাসকে পেছন থেকে খুন করলো বুর্জোয়া সেনাপতি দেসার্ত, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হাত থেকে যার জীবন বাঁচিয়েছিল ফ্লুঁরাসই। ফ্লুঁরাসের মৃতদেহ টুকরো করার দৃশ্য ভার্সেইয়ের গোলাপ বাগানে উপভোগ করলো বুর্জোয়াদের স্ত্রী ও রক্ষিতারা। ৬ই এপ্রিল শহীদ শ্রমিকদের শবযাত্রায় কফিনের পিছু পিছু দুই লাখ শ্রমিকের শবযাত্রার ঢল...শুধু পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না কমিউনের...ভার্সেই সৈন্যরা এপ্রিলের ৭ তারিখ দখল করে নিল নিউলি-তে সিন নদীর ঘাট। মে মাসের শেষ নাগাদ জার্মানরা বন্দী ফরাসী সৈন্যদের ছাড়ার পর বুর্জোয়াদের শক্তি আরো বাড়লো। ফরাসী বুর্জোয়াদের সাথে হাত মেলালো জার্মান বাহিনীও...আটটা দিন...আট/আটটা দিন সে কি খাণ্ডবদাহন! লোশেজের কবরখানা ভরে উঠলো নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধের লাশের স্তুপে। ত্রিশ হাজার মানুষ হত্যার পর শুরু হলো পাইকারি গ্রেপ্তার। লড়াইয়ের শেষ দুই দিনে হেরে যাবে বুঝে শ্রমিকেরা নিজের হাতে নিজের প্যারি প্রিয়তমার দেহে জ্বালালো আগুন। বুর্জোয়া ভার্সেই যেন পায় নিছকই এক অগ্নিদগ্ধ শহর। তিন দিন ধরে দাউ দাউ করে জ্বললো আগুনের লকলক শিখা।
রাতের অন্যান্য পাখি : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ৯৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
প্রায় গাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি, এমন সময়ে পেছন থেকে লোকটির গলা কানে আসে। ফিরে দেখি, এদিকেই হেঁটে আসছে। ও ইশারায় আমাকে অপেক্ষা করতে বলে। ওপর থেকে তার চেহারার প্রকৃত বিশালত্ব আন্দাজ করা যায় না। তাকে ছোটো, এমনকী, যথেষ্ট অসহায় বলে মনে হয়। তার হাঁটার ভঙ্গীতে ক্লান্তির ছাপ ফুটে ওঠে। আমি ঢালু জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকি।
“আমাকে দেখলে চিনতে পারবে? পরে?” ফেরার পথে লোকটি জিজ্ঞাসা করে।
আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ও চুপ করে থাকি।
“মনে থাকবে নিশ্চয়ই।” লোকটা মুখ থেকে অনেকটা ধোঁয়া ছেড়ে হাসে। অল্প কাশি হয়। সে বুকের ওপর আড়াআড়ি হাত রাখে। ও ধীরে ধীরে সামলে নেয়।
একটি কুকুর হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে এসে পড়েছিল। হর্ণ দিতে ছিটকে সরে যায়। আমি আড়চোখে বাঁ-দিকে তাকাই। দেখি, চোখ বন্ধ। ও ঠোঁটের কোণে অল্প হাসি লেগে আছে।
“ইটস নট ইজি, ইয়াং ম্যান। নট সো ইজি।”
ভোট দেব কোনখানে : তাপস দাশ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০১৪ | ৯২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
একাধিক ভোটের কাউন্টিং এজেন্ট হওয়ার সুবাদে দেখেছি, ব্যালটের পেছনে ভোটার নিজের বাতিল ভোটের সম্পক্ষে যুক্তি লিখে এসেছেন, কিম্বা সিম্পল খিস্তি l বাতিল ভোট তখন একটা বেশ ভালো পার্সেন্টেজ পেত l ইভিয়েম সে সুযোগ থেকে নাগরিককে বঞ্চিত করেছিল l একসঙ্গে দুটো বোতাম টেপা যেত না l টিপলেও ফ্র্যাকশন অফ সেকেন্ডের ফারাক বুঝতে পারত মেশিন আর প্রথম ভোটকে কাউন্ট করত l ২০১৪র ভোট এদিক থেকে জরুরি হয়ে উঠেছে l এই প্রথম ভারত দেশ না-ভোটের অধিকার দিয়েছে l একটা স্টেপ যাকে অস্বীকার করে আর থাকা যায়নি l কিন্তু রাইট টু রিকল নেই, এখনো l আর এখনো বুঝে উঠতে পারিনি যে কী করে আমার সব সামাজিক ইস্যুর প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারেন একজন ব্যক্তি – পাঁচ পাঁচ বছরের জন্যে l আমার প্রতিটি রিয়াকশন কী ভাবে পৌঁছয় একজন প্রতিনিধির কাছে ! আর যাঁরা মনে করেন, যে ন্যূনতম হলেও পৌঁছয় – একজন প্রতিনিধি অন্তত থকা জরুরি – তাঁদের কাছেও আমার জিজ্ঞাসা – এই প্রতিনিধিরা সর্বোচ্চ স্তরে যাওয়ার আগে কিম্বা পরে এমন লেভেলের ব্যক্তিগত আক্রমণে যান, যে তাঁদের দেউলিয়া মনে হতে থাকে l এঁদের ঠেকাতে তখন আবার পুলিশ লাগে কিম্বা কমিশন – যারা আবার সকাল সাড়ে ৯ টায় সেন্ট পার্সেন্ট পোলিং হয়ে গেলেও বলতে থাকেন – ভোট হয়েছে যথাযথ l আর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়ে একজন আরেকজনের বক্তব্যই শোনেন না l শুধু তাই নয় – খিস্তি করেন, মারামারি করেন, এবং তাঁদের মারামারি ঠেকাতে বারের মত বাউন্সার লাগে, যাদের নাম হয় মার্শাল l এঁরা এ-ও জানেন যে এঁদের সমস্ত কীর্তি কলাপ টিভিতে দেখা যাচ্ছে – লাইভ l কিন্তু এঁরা একই সঙ্গে এ-ও জানেন যে ভোটারদের সঙ্গে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে গেছে l যে ভোটারদের নিয়ে প্রতিনিধি মিছিল করেন বা করতে চান l ক্রমশ মানুষ ও মিছিল আলাদা হয়ে যায়।
পাইয়ে দেবার ঘরানা : সিদ্ধার্থ বরদারাজন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০১৪ | ৮৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
"ছাড়পত্র" শব্দটা শুনতে নিরীহ মতন, আসলে এর প্রকৃত অর্থ হছে মোদীর ইচ্ছামত ধনের প্রসার যে কোনওদিকে - সমান্তরালভাবে, মাঠে ঘাটে, উল্লম্বভাবে, মাটির ওপরে বা নিচে, এবং পরোক্ষভাবে, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দাবি মেনে নেবার মাধ্যমে, ইনসিওরেন্স এবং খুচরো বিপণন ক্ষেত্রে। আর যদি পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়মকানুন, মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষিজমি বা কোনও গোষ্ঠীর অস্তিত্ব এই প্রসারণের পথে বাধা সৃষ্টি করে, তা হলে তাদের ছিঁড়েখুঁড়ে উন্নয়ন নিজের রাস্তা করে নেবে, সরকারের প্রত্যক্ষ মদত এবং সহযোগিতায়। কঠোর সিদ্ধান্ত নেবার এই ক্ষমতাই মোদীকে এত জনপ্রিয় একটি আইকন করে তুলেছে ভারতীয়দের কাছে - এবং আন্তর্জাতিকভাবেও, বিশেষত বড় বড় বণিকগোষ্ঠীর কাছে। কেন এবং কীভাবে দেশের সেরা বিজনেসম্যানেরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে মোদীর সমর্থক হয়ে গেলেন, তা খুঁজতে গেলে ভারতীয় রাজনীতির মূলে বয়ে চলা জীবনের ছন্দের দেখা মেলে। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও দেখার বিষয় যে এই একদেশদর্শিতা এক অভূতপূর্ব সংকট তৈরি করেছে, তাৎক্ষণিক পাইয়ে দেবার খেলা ক্রমশ তার স্বাভাবিক সীমানা ছাড়িয়ে ফেলেছে। নিও-লিবারাল পলিসি এবং লাইসেন্স রাজ অবসানের ফলে কম্পানিগুলো যে সুবিধে ভোগ করতে শুরু করেছিল, এবং সরকারের যে লাভ হবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল কোম্পানিগুলোর থেকে, তা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। মাদ্রাজ স্কুল অফ ইকোনমিক্সের এন এস সিদ্ধার্থনের মতে, বর্তমান ব্যবসায়িক পরিবেশে মুনাফা ম্যানুফ্যাকচারিং-এর মাধ্যমে ঘটছে না, ঘটছে সরকারের মদতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের প্রকাশিত রিপোর্টের কিছু অংশ তুলে ধরে তিনি দেখিয়েছেন, যদিও কয়লা আর টুজি স্পেকট্রামের অ্যালোকেশনের দুর্নীতিতে কোম্পানিগুলোর প্রচুর লাভ হয়েছে, আসলে কিন্তু লাভ হয়েছে কোম্পানিগুলোর "প্রেফারেন্সিয়াল অ্যালটমেন্টে"র ফলে, যে ধরণের অ্যালটমেন্ট না হলে হয় তো কোম্পানিগুলো সাদাসিধাভাবেই ব্যবসা করতে থাকত - বড় কোনও লাভের মুখ তারা দেখত না। এই প্রাকৃতিক সম্পদ কিন্তু শুধুই কয়লা বা টুজি স্পেকট্রামেই সীমাবদ্ধ নয়, এমন কি জল আর জমিও এর মধ্যে আছে। আর এই সবের মধ্যে উঠে আসছে মোদী-বিবৃত নতুন কর্পোরেট ভারতের পোস্টার বয় গৌতম আদানীর মুখ, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর উত্থানের সাথে সাথে যিনি অবিলম্বেই দেশের সর্বাধিক আলোচিত বিজনেসম্যান হিসেবে পরিগণিত হতে চলেছেন।
বস্টনে বংগে : সপ্তম পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ৩১ মে ২০১৪ | ২০০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
এই গণেশকে সঙ্গে নিয়েই একদিন আমি পৌঁছে গেলাম স্বর্গলোকে, এবার ঠিক সময়ে। মেহফিল তখন সবে জমে উঠেছে। স্বর্গলোক দ্বিতল বিশিষ্ট। উর্ধভাগে গন্ধর্ব-কিন্নরদের নাচ, ভূ-গর্ভস্থ কক্ষে সর্বসাধারণের জন্য নৃত্যাঙ্গন। দেখলাম সেই অনিন্দ্যসুন্দর স্বল্পবসন দিব্যপুরুষদের নাচ দেখার জন্য শুধু আমরা সমকামি পুরুষরাই নই, বহু নারীরাও ভিড় জমিয়েছেন। স্টেজের ওপর নাচের সঙ্গে সঙ্গে বহু ডলারের টিপ্সও হাওয়ায় উড়ে চলেছে। পরে অবশ্য দেখলাম, যা কিছু নোট উড়ে চলছে তার বেশির ভাগটাই এক ডলারের নোট। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ আরো উদ্দাম হতে লাগলো। আমাদেরও তখন অল্প অল্প নেশা হওয়া শুরু হয়েছে। স্টেজ থেকে নেমে এসে একজন দিব্যপুরুষ আমাদের সঙ্গে এসে বসলেন। সাধারনতঃ এই সময়, আধো আলোছায়াতে, একটুকু ছোঁওয়াছুঁয়ির ফাল্গুনি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আমার কপাল খারাপ। গণেশ আই আই টি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করে এসে এম আই টিতে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র। বামপন্থী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। অতএব ও গে বার ডান্সারদের সমাজতাত্তিক ইতিবৃত্ত জানতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিউটি (দিব্যপুরুষের এই নামই আমি দিয়েছিলাম) খানিকবাদে বিরক্ত হয়ে অন্য টেবিলে উঠে চলে গেল। গণেশ অবশ্য তার আগে ওর হাতে বেশ একটা ভালো টিপস দিয়ে দিল।
সিকিম পশ্চিম বাংলা আর বাংলাদেশের তিস্তা : মাহবুব সুমন
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৭ মে ২০১৪ | ৯০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং তাদের পরিবেশ জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সিকিমবাসী আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। পশ্চিম বাংলা, আসামেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ক্ষতিকর এসব বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে। গনসংহতি আন্দোলন সহ বাংলাদেশের বাম মোর্চা গত ৮ থেকে ১০ এপ্রিল ২০১৪ তিস্তার পানির দাবিতে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট দোয়ানি পর্যন্ত রোড মার্চ করেছে। যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল তিস্তা নিয়ে উদ্ভুত এই সমস্যা একা বাংলাদেশের মরুকরণ বা খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা নয়, কিংবা পশ্চিম বাংলার উন্নয়নের সমস্যা নয়। অথবা এককভাবে তা সিকিমের আদিবাসী, সাধারন মানুষদের জীবন, জীবিকা, ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার সংগ্রামও হতে পারেনা। ক্ষতিগ্রস্ত আমরা সবাই। ফলে বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের এই সংগ্রাম সিকিম, পশ্চিম বাংলা, বাংলাদেশ সহ সকলের।
রামচরিতমানস : সিদ্ধার্থ সেন
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১০ মে ২০১৪ | ১১৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
রামচন্দ্র জানতেন, এবং বুঝতেন, জম্বুদ্বীপে পাকাপাকি সাম্রাজ্য বিস্তার করতে গেলে, পপুলার সাপোর্ট তাঁর দরকার। শুধুমাত্র গায়ের জোরে এই আসমুদ্র-হিমাচল দাবিয়ে রাখা বেশিদিন সম্ভব নয়। আজ লঙ্কা জয়ের দরকার হয়ে পড়েছে কারণ এই অযোধ্যাই হবে তাঁদের আর্য-সাম্রাজ্যের পরীক্ষাগার। কিন্তু দশরথ বা গৌতম মুনির মতন ওটাকেই মূল লক্ষ্য বলে রামচন্দ্র ধরে নেননি। কারণ কেউ জানুক বা না জানুক, এটা ঘটনা যে আর্যত্ব দিয়ে রামচন্দ্রের কিছু এসে যায় না। ওটা ততদিন-ই দরকার, যতদিন ক্ষমতার পক্ষে কাজ করবে। রামচন্দ্র বোঝেন ব্যবসা। ক্ষমতার ব্যবসা। যে বা যা তাঁকে ক্ষমতা এনে দেবে, তিনি তাকেই ব্যবহার করবেন। যেমন, এই মুহূর্তে, অযোধ্যার ক্ষমতায় নিজের গদি সুনিশ্চিত করতে হলে, লঙ্কা অভিযান দরকারি, আর তাই ব্যবহার্য।
রবীন্দ্রনাথ দিচ্ছে ডাক- নরেন্দ্র মোদী নিপাত যাক : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ মে ২০১৪ | ৬৮৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২৫
কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ তো অহিংস, তিনি হঠাৎ কেন এরকম ভাবে মোদিকে আক্রমণ করবেন। এর দায় লেখকের। ডাক পাঠকের মত সেও শুনেছে। শুধোলে ঠাট্টা করে বলে, ওনার দেড়শর ওপর বয়স, এখন কি আর মুখের ভাষা ঠিক থাকে। কিন্তু সে বস্তুত বিশ্বাস করে, এ না বলে গুরুদেবের উপায় ছিল না। তিনি হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, চলমান বিশ্বযুদ্ধ দেখতে দেখতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন। মুসোলিনির রাজসিক মায়াকে ঔদার্য ভেবে পরে মাথার চুল ছিঁড়েছেন। হিংসা বড় পীড়া দ্যায় তাকে। তবু সেসবই শেষ কথা নয়। দাদু উত্তরাধুনিক, সোভিয়েত পতনের পরে ক্রিশ্চান আলোকপ্রাপ্তি ছেড়ে উত্তর উপনিবেশবাদের মধ্যে ইতিহাসের আশ্রয় দেখতে পাচ্ছেন। বিশ্বনাগরিক বলে আরাফত, শ্যাভেজ, জাপাতিস্তাদেরও ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর থেকে শিল্পবিপ্লবের আগ্রাসী রূপটা ক্রমশঃ প্রতীত হচ্ছে তাঁর মানসে। অরণ্য, কৃষি ধ্বংস করে পরিকল্পনাহীন ভাবে বেড়ে চলেছে কিছু উঁচু মানুষের দাবি। দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে, এত দরিদ্র হচ্ছে যে দারিদ্রের সংজ্ঞা পালটে দিতে হচ্ছে। পৃথিবী উষ্ণতর হচ্ছে। মানুষকে বের করে আনা হচ্ছে জল-মাটি-অরণ্য-পাখি-র সংশ্লেষ থেকে। আরও একলা হচ্ছে, এলিয়েনেটেড হচ্ছে সে। আর রবীন্দ্রনাথ দেখছেন, আমাদের ঐতিহ্যে, সংস্কারে, উৎসবে মিশে আছে এর বিরোধিতার বীজ। জাপাতাদের সংগঠক জেনারেল মার্কোস বলছেন, একমাত্র ট্রাইবাল কমিউইনিটি স্ট্রাকচারেই তিনি দেখছেন আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার শক্তি। রবীন্দ্রনাথও দেখছেন, এই হিন্দুত্বকে যা সবাইকে অমৃতের পুত্র বলে সম্বোধন করে। যা কুল-মান-এর তোয়াক্কা না করে মনের মানুষের সন্ধানে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। যে হিন্দুত্ব দেখায়, ছোট ছোট মানুষের কাজ, তাদের অ্যাবস্ট্রাক্ট লেবার-এর সম্মেলন শতশত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ-এর পরেও থেকে যায়। দুহাজার বছরের ইতিহাস পুনর্পাঠের সূত্র দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বলছেন, ইতিহাস, সমস্ত যুগে সমস্ত দেশে এক হবে এই কুসংস্কার ত্যাগ না করলেই নয়। তিনি জানেন রাজার রাজা হয়ে মানুষের বেড়ে ওঠার জন্য এই পঠনের দরকার কতটা। বিতর্কের গভীরে ঢুকে খুঁজে আনতে হবে সত্য কী, ঝড়ে বাইরের নিয়ম নড়ে যাওয়ার পর ভবিষ্যতের জন্য অটুট হয়ে কোনটা পরে থাকে।
জনাব কবীর সুমন কে খোলা চিঠি : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ নভেম্বর ২০১৪ | ১২৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, শতাব্দী ধরে উন্নয়নের উল্টোপিঠে দুর্ভিক্ষ অশিক্ষা আর অস্থিরতায় ফেলে রাখা 'কোনো এক গাঁয়ের বধূর' নাতনিরাই যে রাজিয়া আমিনা হয়ে বন্দুক তুলে দাঁড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়,সন্ত্রাসবাদ যে আর্থসামাজিক বৈষম্যেরই ফল সেইটা বলার লোক দেখলাম কমে আসছে। দশবছর আগেও অনেকে এগুলো বলতেন। এখন পৃথিবী ক্রমেই একমেরুর দিকে এগিয়ে চলেছে, হয় তুমি আমাদের নাহলে শত্রুপক্ষ- মাদ্রাসা কী ও কেন সেই প্রশ্নে না গিয়েই চলল মাদ্রাসাবিরোধী প্রচার। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকেন্দ্র না বানাতে পারলে কোয়াকদের তুলে দেওয়া যায় না। গ্রামে স্কুল না বসিয়ে মাদ্রাসা তোলা যায় না। বসিয়েও যায় কিনা প্রশ্ন। কিন্তু যে রাষ্ট্র নাগরিকদের শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করতে পারেনা, সে কী করে বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তোলার কথা বলে সেই প্রশ্ন করার লোকও কমে যাচ্ছে দেখলাম। 'স্লোগান পালটে হয়ে যায় ফিসফাস'।
ভারত ক্রমশঃ তার ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্রটা মেলে ধরছে। অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক আচারগুলোতেও সংখ্যালঘু-দলিতদের সরিয়ে দেওয়ার পর্যায়টা চলছে। বছরখানেক আগে,হায়দারাবাদ গেছিলাম। জামা মসজিদ ঘোরার সময়ে আমি ও আমার বন্ধু একটি করে ফেজ টুপি কিনে মাথায় পরি। তারপর এদিক ওদিক ঘুরে হুসেন সাগরে নৌকোয় উঠলাম, যাওয়ার সময়ে টুপিটা খোলা ছিল, পাশে কিছু সহযাত্রী বসেছিলেন, আইটিতে চাকরি করেন বা ওরকম। নৌকোয় ফেরার সময়ে টুপিটা মাথায় দিতে দেখি পাশে আর কেউ এসে বসছেন না। পরিতাপের বিষয়,আমাদের দেশে এটাই রিয়েলিটি- মার্জিনের ওপারে এক বিশেষ পরিচিতির বাইরের লোককে ঠেলে দেওয়া।
কবীর সুমনের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি : পরিচয় পাত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ নভেম্বর ২০১৪ | ৩৫৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৫
আলীয়া মাদ্রাসা আর খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার পার্থক্য মানুষকে বোঝাতে হবে। কিন্তু খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার সমস্যাগুলি তো তাতে চাপা পড়ে যাবে না। এক বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আমরা আধুনিক যুগে জীবিকানির্বাহের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত করে ছেড়ে দিচ্ছি, যাদের একমাত্র রোজগারের রাস্তা, সাঈদী সাহেবের ভাষা্য়, কারো বাপের জানাজা পড়িয়ে ১০ টাকা আয় করা। ধর্মের শিক্ষা সেকুলার প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ এবং স্কলারলি ভাবে ক্লাসিকাল ভাষা আর দর্শন চর্চার মাধ্যমেই হওয়া উচিত, এই ধরনের ধর্ম শিক্ষা পরধর্মবিদ্বেষী মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরগাছা শ্রেণীর মানুষ তৈরি করে, তৈরি করে হুজুরদের ক্যাননফডার। আল্লামা শফি, জুনায়েদ বাবুনগরী এই গরিবের ছেলেদের নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে পথে নামান, পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দেন। বিনিময়ে নিজেরা রোজগার করেন প্রভূত অর্থ। আওয়ামী-বামপন্থী জোট সরকারের বামপন্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই মাদ্রাসাগুলিকে চেয়েছিলেন সরকারের আওতায় আনতে, শফি হুজুররা হুমকি দিয়েছিলেন যে তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বইবে। মাদ্রাসা ছাত্রদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগে জল ঢেলে দেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এদের দিয়ে মাদ্রাসায় গ্রেনেড তৈরি করাতে গিয়ে দুটি ছেলেকে বিস্ফোরণে মেরে ফেলেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। তবু চেষ্টা করেছিলেন নাহিদ। বাংলাদেশ পারে, আমরা পারিনা কেন?
আপনি গেয়েছেন “শোন তালিবান তালিবান/আমি তোমাদের সাথে নেই/ আমি ধর্মে মুসলমান/ আছি লালনের সঙ্গেই”। লালনের হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরের মূর্তি কিন্তু কওমী মাদ্রাসা ছাত্ররা গিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল সুমন। আর তালিবানরা সকলেই মাদ্রাসা ছাত্র, তালেবা শব্দের মানেই ছাত্র, তাই থেকেই তালিবান। তাদের চেয়ে বেশি আরবী আপনি নিশ্চয় জানেন না।
বরং এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়না কেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন গ্রামের গরিব সংখ্যালঘু মানুষকে অবৈতনিক সরকারি শিক্ষা আর মিড ডে মিলের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, কেন তাকে মাদ্রাসায় যেতে হয়? সবাই ছেলেমেয়েকে কোরআনে হাফেজ করতে চান এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিক্ষার অধিকারের দাবী পিছিয়ে পড়ল, উঠে এল মাদ্রাসা শিক্ষার অধিকারের দাবী?
একটি বিভ্রান্তিকর ভাষণের নেপথ্যে : ইন্দ্রনীল চৌধুরি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ জুন ২০১৪ | ১৫০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
... কি আশ্চর্য্য, বিমান বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যর দায় স্বীকারের কথা উঠলেই সব তছনছ হয়ে যায়, কিন্তু বাম সমর্থকদের 'প্রতিনিধি' সেজে পার্টির সাধারণ সম্পাদককে কাঠগড়ায় দার করানোটা আবার কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ! নেপথ্য ভাষ্যকারকে সবিনয় অনুরোধ যে এই সুবিদাবাদী, সংকীর্ণ দলবাজির রাজনীতি এবং দ্বিচারিতা বন্ধ করুন। এতে বামপন্থার কোনো লাভই হবে না। সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক পার্টির আজ এই বিপর্যয়ের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। তাঁর তথাকথিত 'থার্ড-ফ্রন্ট'-এর নামে মুলায়াম সিংহ-জয়ললিতার লেজুরবৃত্তিও মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁকেও যেমন এই বিপর্যয়ের দায় নিতে হবে, তেমনি এই রাজ্যের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব, পার্টির রাজ্য সম্পাদক ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরও এই বিপর্যয়ের দায় মাথা পেতে স্বীকার করা উচিত। কারণ পশ্চিমবঙ্গে গত ছয় সাত বছর ধরে বামপন্থী রাজনীতির যে কদর্য অবক্ষয় আমরা দেখেছি - গায়ের জোরে জমি অধিগ্রহণ, নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানো, রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি, রিজবানুরের অপমৃত্যু, মহিলাদের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য এবং সর্বপরি আক্রান্ত বামপন্থী কর্মীদের পাশে না দাঁড়াতে পারা - তার জন্য রাজ্যের বাইরের কাউকে দায়ী করা অনুচিত।...
মোদীবিরোধী রাজনীতি -- একটি প্রাথমিক খসড়া : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ জুন ২০১৪ | ৩৫১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৩
...রাজনীতিতে দীর্ঘকালীন জয়-পরাজয় শুধু একটি ভোটে নির্ধারিত হয়না। হয় দীর্ঘকালীন অ্যাজেন্ডা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে। যাকে বলা হয় মেরুকরণ। নির্বাচনে বিভিন্ন দলের হাজার হাজার অ্যাজেন্ডা থাকে। কিন্তু জনসমাজে সবকটিই গুরুত্ব পায়না। অল্প কয়েকটিই পায়। অর্থাৎ, জনতার চর্চার, তর্কের মূল বিষয় থাকে সীমিত সংখ্যক কিছু অ্যাজেন্ডা। যাকে ঘিরে মেরুকরণ তৈরি হয়। রাজনীতির দীর্ঘকালীন লক্ষ্যে তিনিই জয়লাভ করেন, যিনি নিজের অ্যাজেন্ডাকে জনতার অ্যাজেন্ডা হিসেবে তৈরি করতে পারেন (উল্টো ভাবে বলা যায়, জনতার অ্যাজেন্ডা তাঁর অ্যাজেন্ডা হয়ে ওঠে -- এর মধ্যে ডিম আগে না মুর্গি আগে, সে আলোচনায় এখানে ঢুকছিনা)। সেই অ্যাজেন্ডাকে ঘিরেই জনসমাজ এবং বাকি দলগুলি আবর্তিত হয়। পক্ষ ও বিপক্ষ নির্মিত হয়। স্বল্পমেয়াদে এটি সবসময় অ্যাজেন্ডা-রচয়িতার ভোটে জয় নির্ধারিত করে তা নয়, কখনও সখনও তিনি হেরেও যেতে পারেন, যদি মেরুকরণে উল্টো দিকের পাল্লার ওজন বেশি হয় (যদিও সাধারণভাবে সেরকম হয়না)। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে জাতি ও অন্যান্য দলগুলিকে নিজের অ্যাজেন্ডার চারপাশে আবর্তিত করতে পরা সাফল্যের একটি বড়ো সোপান...
আচ্ছে দিন : অচল সিকি
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৩ আগস্ট ২০১৪ | ১৯৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
হে রাজন, এই ঘোর দুঃসময়ে, যখন পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশী ধ্যানধারণার জলাঞ্জলী ঘটবে, পাশ্চাত্য কুশিক্ষার প্রভাবে কিছু মানুষ সমকামী, লিঙ্গান্তরকামী প্রভৃতি বিকৃতরুচির অমানুষদের সমাজের মূলস্রোতে আনবার কুচেষ্টায় রত হবে, তখন, তখন সূচনা হবে এই আচ্ছে দিন উপযুগের।
হে মহারাজ, এই যুগের উত্থান ঘটবে গুর্জর প্রদেশে এক অতিপ্রতিভাশালী এবং শক্তিশালী নেতার হাত ধরে। এই নেতা শৈশবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করলেও পরে সন্ন্যাস সংকল্প করবেন, কিন্তু হালে পানি না পাওয়ায় অতঃপর তিনি হিন্দু রাজনীতিতে যোগদান করবেন। জম্বুদ্বীপ সাধারণ অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ভুবনে পরিচিত হলেও এই হিন্দু রাজনীতির নেতারা জম্বুদ্বীপকে হিন্দুপ্রধান দেশ বলে মনে করবেন, হিন্দু ব্যতীত অন্য ধর্মের মানুষদের এঁরা তৃণাদপি তুচ্ছ জ্ঞান করবেন। ম্লেচ্ছজাতির গণকমান অনুযায়ী বিংশ শতকের শেষভাগে এই নেতার মনে হিন্দুভাব প্রকট হয়ে ওঠে এবং নিজ প্রদেশকে যবনমুক্ত করবার জন্য কিছু নিরপরাধ হিন্দুর শোচনীয় মৃত্যুর দায় তিনি যবনজাতির উপর চাপিয়ে দেবেন এবং হাজারে হাজারে যবনপুত্রকন্যাকে তাঁর অনুগামীরা বিবিধ উপায়ে আহত, নিহত, ধর্ষণ এবং গণধর্ষণ করে দীর্ঘকালের জন্য একেবারে চুপ করিয়ে দিতে সক্ষম হবেন।
এই সময়ের ছোটগল্প : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ আগস্ট ২০১৪ | ৯৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লেখককে তো ইতিহাসসচেতন হতেই হয়। না হলে কীভাবে তিনি এই সভ্যতার, মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার কথা লিখবেন। মানুষ কত দীর্ঘপথ পাড়ি দিল। কত ধর্মযুদ্ধের নামে অন্যায় যুদ্ধ, এখনও ডাইনির মাংসপোড়া গন্ধে উল্লাস শোনা যায়, কত সাম্রাজ্যের উত্থানপতন হল। এসব কিছু মন্থন করে জীবনের রহস্যময়তার কথা, কোনও এক সার সত্যের সন্ধান করে যান লেখক। পুরাণের নতুন পাঠ, মঙ্গলপাঠের নবনির্মাণ, যে পাশ্চাত্য লেখনরীতিকে মডেল করে একসময় আধুনিকতার সংজ্ঞা ঠিক করা হয়েছিল, তাকে অতিক্রম করে দেশজ পাঁচালি, ব্রতকথা, পুরাণ, মঙ্গলকাব্যের বিনির্মানের মধ্য দিয়ে,আমাদের লোককথা, উপকথাকে নতুন আঙ্গিকে লিখছেন অনেকেই। অন্যরকম শৈলীতে যারা লিখছেন, তাদের ভেতর রবিশঙ্কর বল, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, গৌতম সেনগুপ্ত উল্লেখযোগ্য।
‘আমি কী নারীবাদী?’: ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ গবেষণার অভিজ্ঞতা : ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১০ মার্চ ২০১৪ | ১৪৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
নৃবিজ্ঞানের জেন্ডার পঠনপাঠনের কোর্স পড়তে পড়তে নারী হিসেবে আমার মাঝে যৌন নিপীড়ন নিয়ে নানান রকমের সচেতনতা তৈরী হয়েছিলো। তারপরেও ব্যক্তি জীবনে আমি ভাবতাম যা কিছু আমার জীবনে দমনমূলক, নিপীড়নমূলক তার কারণ কোন না কোন ভাবে আমি, আমার অসাবধানতাই আমাকে উৎপীড়নের সুযোগ করে দিচ্ছে কিংবা আমি যেহেতু নারী তাই নিপীড়িত হবই। এই লালিত বোঝাপড়া সমেত আমি ধর্ষিত নারীদের নৃশংস নিপীড়ন অভিজ্ঞতা শুনতে শুরু করি।
ধর্ষিত নারীদের নিপীড়ন অভিজ্ঞতার কথন শুনতে শুনতে গবেষক আমার জীবন মূল্যবোধ, ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে থাকে। সহিংসতাবিদ্ধ নারীর সাথে আমার ‘যন্ত্রণা’ বোধে মিলের জায়গা তৈরী হয়। ১৮ জন নারীর যৌন উৎপীড়ন অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে করতে, লেখতে লেখতে কখনও আমি রেগে উঠি, কখনও আমার অসহায় লাগতে থাকে, আমার গা গুলিয়ে বমি আসতে থাকে, আমি হাঁপিয়ে উঠি, প্রতিনিয়ত অসুস্থ বোধ করি। আমি দেখতে থাকি মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে বসবাসে অভ্যস্ত আমার আজীবন ‘নির্ভরতা আর শ্রদ্ধার’ সম্পর্কগুলো ভাঙ্গতে শুরু করেছে, আমার মধ্যবিত্ত শ্রেণীচৈতন্যের ধরে নেয়া ধারণাগুলো (আমার বাবা, ভাই তো নয়ই আমার পরিচিত কোন মানুষই ধর্ষক হতে পারে না) নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে (তারমানে কিন্তু এই নয় যে পিতা কিংবা ভাই মাত্রই ধর্ষক)। গবেষণা আমাকে এই বোঝাপড়ায় পৌঁছে দেয় যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণীভেদে নারী আসলে কেবল ‘ভোগের বস্তু’ তাই যেকোন সময়ে, যেকোন পরিসরে, যেকোন সম্পর্কে নারী ধর্ষণের শিকার হতে পারে
বস্টনে বংগে : ষষ্ঠ পর্ব (মেয়েলিপনা ও পৌরুষ) : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ১০ মার্চ ২০১৪ | ১৩৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই অসহিষ্ণুতার পেছনে এক পৌরুষ-সাধনার চালচিত্র রয়েছে। মানিয়ে নেওয়া, নরমভাবে সমাধানের পথ খোঁজা, ক্ষেত্র বিশেষে মেনে নেওয়া এইসব মিনমিনে ভাব আমরা সজ্ঞানে বর্জন করেছি। আমাদের সমাজজীবনে আমরা একটা সহজ সমীকরণ করে নিয়েছি, নমনীয়তা ইক্যুয়াল টু মেয়েলি ইক্যুয়াল টু দুর্বলতা। মেয়ে মাত্রই দুর্বল, তাই যা কিছু মেয়েলি তাই পরিত্যাজ্য। আমরা প্রথমে আবেগপ্রবণতা আর চোখের জলকে মেয়েলি বলে দাগিয়ে দিয়েছিলাম, ক্রমে মায়া-মমতা-সহানুভুতি এগুলোও আস্তে আস্তে সেই তালিকায় ঢুকে গেছে। সেই কারনেই আমরা নেতা হিসেবে দেখতে চাই এমন একজনকে যিনি নির্মম, কঠোর, বলদর্পী হয়ত বা হিংস্রও।
টিকিটের দাম ও আমার থিয়েটারঃ কাটাকুটি খেলা : শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১৩১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
মঞ্চে যা ঘটছিল তখন তাতে কাহিনীর পর কাহিনী অত্যন্ত দুর্বল, আরোপিত ও ন্যূনতম সাহিত্য পদবাচ্য না। একদিকে বিপ্লবের প্যামফ্লেটধর্মী উৎকট নাটক, অন্যদিকে প্রাণান্তকর ভাঁড়ামো। এমনকি নান্দীকারের করা জাতীয় নাট্যোৎসবে বাইরে থেকে আসা নাটকগুলোও সাঙ্ঘাতিক প্রেডিক্টেবল হয়ে উঠেছিল। মনোজ মিত্রের অলকানন্দার পুত্রকন্যা, সুমনের কোরিওলেনাস, নর্মান বেথুন, উষা গাঙ্গুলির কোর্টমার্শাল, মহাভোজ এমন কিছু নাটক এদিক ওদিক আগে বা পরে আসবে সে সময়ে। কিন্তু এগুলো ব্যতিক্রম। তাছাড়া নিষিদ্ধ একটা সম্পর্কের স্বাদকে আন্ডারলাইন করে একটি পত্রিকাগোষ্ঠী তীব্র প্রচার চালিয়েছিল ওই নাটকটি নিয়ে। বহুপঠিত সেই পত্রিকা পড়েই তখন বেশিরভাগ দূরের দর্শক আসতেন কলকাতায় নাটক দেখতে। হ্যাঁ, তখনো আসতেন! কলকাতাতেও বাংলা সিনেমায় অঞ্জন চৌধুরী, স্বপন সাহার যুগ চলছে। শহুরে মধ্যবিত্ত দর্শকেরা হলে যাচ্ছেন না। গ্রামের দিকে ভিডিও পার্লারে তিন ধরণের সিনেমা হয়। একটা পর্নোগ্রাফি, অন্যটা হিন্দি এবং কখনো-সখনো বাংলা। সিঙ্গল স্ক্রিন-ই তখন সব। সেখানে বাংলা সিনেমা চলে এবং লোকজন দেখতে আসেন। কিন্তু তাঁরা কেউই নাটকের দর্শক না। ফলে নাটকের সঙ্গে এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠেনি। নাটকের সঙ্গে তখন কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে সিরিয়ালের।
ওদের থিয়েটার, আমাদের থিয়েটার : সুপ্রতিম রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ৮২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
ঝিন্চ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না। মানুষের থিয়েটারকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এবার থিয়েটারকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে বলা হতো থিয়েটারে দর্শক হয়না। এখন হয়। কী এমন বিপ্লব ঘটিল। ঘটিল এটাই যে যে রস আগে বাজারি ছবি, কমেডি সার্কাসে, টিভিতে পাওয়া যেত সেই রস এখন থিয়েটারেও মিলছে। আমরা সবাই ড্যাংড্যাং করে নাচছি আর বলছি থিয়েটারের সুদিন এলো! হালে একটি নাটক (প্রায় আড়াই ঘন্টার) দেখে দর্শকরা উচ্ছসিত প্রশংসা করছেন। বলছেন অসাধারণ লাইট, দুর্ধষ্য সেট, কোরিওগ্র্যাফ, কি চমৎকার অভিনয়! সত্যি বলতে কি জঘন্য সংলাপ, অকারণে অভিনেতাদের পটুত্ব জাহির, কিছু সার্কাস-জিবনাস্টিক এবং ‘ওদের থিয়েটার’ এর মতন করার একটা অসফল প্রয়াস। দর্শক মুগ্ধ, কারণ ‘ঝিন্চ্যাক প্রোডাকশন’। ‘জীবনের সাথে সম্পর্কহীন এক abstraction এর চর্চা’।
ট্রিবিউট টু হলধরস্ : তাপস দাশ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ৮৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আপনি নাটক করলে লোক না হলে, টিকেট না বিক্রি হলে দর্শক তৈরি নয় বলে গাল না দিয়ে আয়নার সামনে প্র্যাকটিস করে দেখুন, আপনার না মাইরি ওটা হচ্ছে না l মানে নাটকটা l ফিরে যান, টু দ্য বেসিক, ফিরের থেকে শুরু করুন, লেগে থাকুন, হাল চাষুন, হলধরদের মত, দলকে পাপড়ি হিসেবে দেখুন, দলবাজির ক্ষেত্র নয়, দেখবেন, আপনার সীমিত ক্ষমতা নিয়েও আপনি কিছুদূর যেতে পারবেন l কিছু্দূর, কেননা যদি আপনি বয়স্ক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সেই সোনার সময়টা ফেলে এসেছেন, যখন দিনে ১৫০০ স্কিপিং করে নাট্যতত্ত্ব পড়ে মহলায় যাওয়া আর সম্ভব নয়, শরীর দেবে না, আপনিও তো জানেন যে দেহপট সনে নট সকলি হারায় l মন খারাপ করবেন না, মন ভালো করুন, ভালো নাটক করার চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনার নাটকেও একটু একটু করে লোক হবে l টিকেট কেটেই লোকে নাটক দেখবে l খিস্তি করতে হবে না l
দারিদ্র্য কমছে ভাল কথা; অপুষ্টি বাড়ছে কেন? : দীপঙ্কর বসু ও দেবর্ষি দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ | ১৬৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
গত দু’দশকে ভারতের HCR দ্রুত কমে এসেছে। আর্থিক সংস্কার (মানে ১৯৯১-এর পর থেকে নয়াউদারনীতির প্রয়োগ) যে সফল হয়েছে তার প্রমাণ হিসেবে প্রায়শ এই HCR কমে আসার কথা বলা হয়। কী রকম কমেছে একটা ধারণা করে নেওয়া যাক। শহর অঞ্চলগুলোতে HCR কমেছে ৩২% (১৯৯৩-৯৪) থেকে ২১%-এ (২০০৯-১০)। গ্রামীণ এলাকায় কমেছে আরো দ্রুত হারেঃ ৫০% থেকে ৩৪%, একই সময়সীমায়। প্ল্যানিং কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১০-এর পরের দু’বছরে সারা দেশের HCR আরো ৮% কমেছে। ফলে ২০১১-১২-তে দারিদ্র্যের হার ২২%-এ নেমে এসেছে। সরকারি নীতি যারা ঠিক করেন তাঁরা, এবং তাঁদের সেনাপতি কাগজ-টিভিওয়ালারা, গরীবির ওপর জোরদার ধাক্কা নিয়ে প্রভূত আপ্লুত। অর্থাৎ, খুব তো শাইনিং ইন্ডিয়া শাইনিং ইন্ডিয়া করে গালমন্দ দিলে। এই দেখ প্রমাণ, আর্থিক সংস্কার সত্যি সত্যি ভাল কাজ করছে। না না, জনপ্রতি আয়-ফায় বাড়ার কথা বলছি না। সে তো মুকেশদা, রতনকাকুরা বেশি কামালে দেশের জনপ্রতি আয় বেড়ে যাবে, তাতে রামা কৈবর্তের কী এল গেল। ওসব ছেঁদো তর্ক থাক। সংস্কারের সুফল এক্কেবার নিচুতলায় পৌঁছোচ্ছে, বুঝেছ?
মালোপাড়ার বাংলাদেশ : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ | ১৫৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মত হলো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণই ছিলো, এমনকি হিন্দু-মুসলিম মিলন, পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও উপভোগের অজস্র দৃষ্টান্তও ইতিহাসে পাওয়া যায়। মমতাজুর রহমান তরফদার ভাষায় "হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্পর্ক ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ এবং ধর্মান্ধতার ঘটনা ছিল বিরল।" যদিও "সতর্কতার সাথে এসব গ্রন্থ পড়লে মনে হয় যে কিছু কিছু মুসলমান কর্মকর্তার ব্যক্তিগত খেয়াল ও ধর্মান্ধতা এসব সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য দায়ী ছিল। আবার, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটেছিল" ( হোসেনশাহী বেঙ্গল)। অর্থাৎ প্রাকবৃটিশ আমলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের তুলনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই প্রধান প্রবণতা ছিলো, এই মতটি একভাবে মেনে নেয়া যায়, কিন্তু জিনিসটা ব্রিটিশরা আসার আগে এ দেশে ছিল না, এই মতটি মেনে নেয়ার মত না।
সীমান্ত থেকে : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ | ২৯২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
আমরা অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফাঁকে ফাঁকে সাস্টেনেবিলিটি শব্দটা গুঁজে দিয়ে ফান্ডিং চাইছি আজকাল। সাস্টেনিবিলিটির আরেক নমুনা দেখলাম সাইজুদ্দিন ঢালির ক্ষেতে এসে। অসাধারণ চাষের বাহার। এক জায়গায় বেগুন হয়েছে তো পাশে কুমড়ো, কিছুটা সর্ষের ক্ষেত। একটা ধানের বীজতলা। আর টাটাদের পাঁচিলের গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে রজনীগন্ধার গাছগুলি। জিগেশ করলাম ‘চাষে এখন খরচা কেমন? জল পান কোথা থেকে?’ সাইজুদ্দিন বললেন ‘শ্যালো আছে আমার, জল তুলে নিই’ওয়াটার রিসোর্সের ক্লাস করা আমি এবার আঁতকে উঠি- ‘জলসেচ ছিল না এখানে?’ – ‘ছিল তো। বাগজোলা থেকে জল আসত। তো ২০০০ সাল নাগাদ সে সব পুরো রাজারহাটে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই নোটিশ বেরোনোর কিছু আগে। যাদের পাম্প কেনার পয়সা নেই, তারা এমনিই চাষ ছেড়ে দ্যায়।’ কী ভয়ংকর! মাটির তলা থেকে জল তুলে চাষ করা কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে এখানে আলাদা করে লিখছিনা। কিন্তু সত্যিই শিউরে উঠি আমি, কয়েক বছর আগে সেচ বন্ধ করে তারপর জমি দখল করে বাড়ি তোলার ধান্দা যাদের, তারা তো আক্ষরিক অর্থে নিজের মাকে বিক্রি করে দিতে পারে! জমিতে চাষ করছিলেন যে চাচা, তিনি বললেন- ‘আমি তো চাষ ছাড়া আর কিছুই জানিনা। জমি চলে গেলে এই বয়সে খাবটা কী?’ এ প্রশ্ন অনেকবার আলোচনা-টোনায় শুনেছি। কিন্তু এখন যিনি খাবটা কী বললেন, ওই বীজতলার ধান ছড়িয়ে বড় করে আমার অন্ন তিনিই হয়তো সংগ্রহ করেন। সাইজুদ্দিননে জিগেশ করলাম, ওই যে বড় বাড়িগুলো, একসময়ে আপনার, আপনার ভাই বন্ধুদের মাঠ ছিল। এখন পিচ-কংক্রিট। কেমন লাগে? উত্তর দিলেন- ‘কী বলব দাদা, ওখানে এখন তো আমাকে ঢুকতেও দ্যায়না, দেখতেও দ্যায়না ভেতরে কী আছে। কিন্তু একটা হাসপাতাল যদি হত। দরকারে অদরকারে আমিও যেতে পারতাম।’
সমকামী ও লিঙ্গান্তরকামী ভারতীয়দের জীবনের অসহায়তা- ৩৭৭ ধারার পরিধির বাইরে : অনিরুদ্ধ দত্ত
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ | ১২৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই প্রেক্ষাপটে, সুপ্রীম কোর্টের নতুন রায় ৩৭৭ ধারার প্রযোজ্যতাকে একটা নতুন ধরণে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই রায়ের পরে ৩৭৭ ধারা আরো বেশি করে 'সমকামিতা'-বিরোধী আইন হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে, যাতে এটা আরো বেশি বিপজ্জনক ভাবে প্রযুক্ত হতে পারে। এই আইন নাকি বিশেষভাবে 'সমকামিতা' কে অবৈধ করে, এইরূপ অপপ্রচারের ফলে পুলিশ এবং সমাজের রক্ষণশীল অংশ আরো বেশি করে জানতে পারছে যে ৩৭৭ ধারাকে প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌনতার মানুষদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে । কিন্তু এই ধারা নিয়ে চর্চা করে এবং গণমাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এই আইনের গুরুত্বকে যতটা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে, এই বিচার ও ৩৭৭ ধারার সঠিক অর্থ নিয়ে ততটা আলোচনা হয়নি। সুপ্রীম কোর্টের এই নতুন রায়ের দরুণ যে যে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ দেখা গেছে তা আসলে ২০০৯ সালের সেই সিদ্ধান্তের প্রতীকি গুরুত্বের ফল ।
সংখ্যালঘু যৌনতার অধিকারের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক রায়ের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে খাটো করার জন্য এই কথা বলা হচ্ছে না। কিন্তু হয়ত আন্দোলনকর্মীদের, বিচারব্যবস্থার এবং গণমাধ্যমের উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে লিঙ্গান্তরকামী বা যৌনসংখ্যালঘু মানুষের জীবনে অসহায়তা এবং তাঁদের অধিকারলঙ্ঘন শুধুমাত্র ৩৭৭ ধারার নিরিখে বিচার করা যাবে না, বরং তা এই আইন এবং বিচারের চেয়ে অনেক সুদূরপ্রসারী আকার নেয়। শুধুমাত্র ৩৭৭ ধারার প্রতি অতিরিক্ত নজর না দিয়ে যৌনতা ও লিঙ্গ -ভিত্তিক বৈষম্যের সেই বিস্তৃত ক্ষেত্র সমকালীন ও ভবিষ্যৎ ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসতে হবে।
বস্টনে বংগে : অষ্টম পর্ব : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৪ জুলাই ২০১৪ | ১৩৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
যখন এই লেখা লিখছি তখন গাজাতে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। খবরের কাগজের পাতা থেকে শুকনো রক্তের গন্ধ এসে লাগছে নাকে, টিভির স্ক্রিন থেকে রক্ত চুঁইয়ে নামছে মাটিতে। আর তার মাঝে বসে আমরা গরম সিঙ্গাড়ায় কামড় দিতে দিতে বোঝার চেষ্টা করছি, দোষটা কার বেশি, ইজরায়েলের না হামাসের। আর যেই বাচ্চাটা ঝলসে গেল, এক্কেবারে মরে গেল, তার কতটা দোষ ছিল? আহা, সে তো কোল্যাটারাল ড্যামেজ। আতঙ্কবাদের বিরূদ্ধে লড়তে গেলে কয়েকশ বাচ্চা তো মারা যাবেই। কেন, ইরাকে যায় নি? আফগানিস্থানে যায় নি? যেমন মাওবাদীদের শায়েস্তা করতে গেলে বিনায়ক সেনকে জেলে পুরতেই হবে, সোনি সুরির যৌনাঙ্গে ধারালো পাথর পুরে দিতেই হবে ওদের সবক শেখানোর জন্য, উন্নয়নের জন্য উচ্ছেদ হতে হবে বনবাসীদের, শহরে আলো দেওয়ার জন্য ডুবিয়ে দিতে হবে গ্রাম কে গ্রাম, ঠিক তেমনি বিশ্বজুড়ে শান্তিকল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য শেষ করে দিতে হবে পরবর্তী প্যালেস্তাইনি প্রজন্ম, হত্যা করতে হবে উত্তরকালের গর্ভস্থ পরীক্ষিতকে।
সুনন্দার কথা , জুলিয়ার কথা : সুনন্দা মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ | ১১৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
স্বভূমে পরবাসী আমি সেদিন কাজে যাবার পথে স্মার্টফোনের পাতায় খবর দেখতে গিয়ে সেই ঝাপটা খাই। ৩৭৭ ফিরে আসার খবর। মোবাইলে মেসেজ ভেসে আসে। আর ওলট পালট হতে থাকে আমার ভিতর। বাসভূমি থেকেও কি চিরকাল তবে স্বদেশহারা থেকে যাব আমরা? কখনো এ দেশে, শৈশবের মাঠে, কৈশোরের শুঁড়িপথে হাত ধরে হাঁটা হবে না আমাদের, ঠোঁটে ঠোঁট রাখা হবে না বৃষ্টির বোলপুরে, অকারণে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে? সন্তান, স্বাগতম, শুভেচ্ছা কিছুই পাব না?
আমরা একটিভিস্ট নই, রাজনীতিক নই, নিতান্ত সাধারণ মানুষ। মুখচোরা, পড়ুয়া, হাসিখুশি, চোখে চশমা, ঠিক আর পাঁচজনের মত মানুষ। আমরা ভয় পাই। ক্লান্ত, অন্তহীন লড়াইএর ভয়, অহেতুক আক্রমণের ভয়, ঘৃণার ভয়, কৌতুহলের ভয়, জীবিকা হারানোর ভয়। আর অপমানিত হই। যখন সর্বশক্তিমান ধর্মগুরু বলেন আমাদের সারিয়ে দেবেন যে কোনো দিন। যখন কাগজের পাতা থেকে টিভির পর্দায় আমাদের যৌনজীবনের ঠিক কতটা "এগেইনস্ট দ্য নেচার" এই নিয়ে ডিবেট চলে। যখন ধরেই নেওয়া হয়, আমাদের প্রেম প্রেম নয়, দুটি যৌনাঙ্গের বিকৃত সহাবস্থান মাত্র। একে অন্যকে আঁকড়ে এই ভয় বুকে নিয়ে আমরা ঘুমোই, আর সারাদিন আমার চোখ জ্বালা করে। সারাদিন।
বস্টনে বংগে : নবম পর্ব (৩৭৭ ফিরে দেখা) : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ | ১২৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩০
সুপ্রীম কোর্টের রায় নিঃসন্দেহে হতাশ করেছিল কিন্তু তার থেকেও বেশি আঘাত দিয়েছিল সেই রায়ের ভাষা। সে সম্পর্কে অন্যত্র লিখেছি তাই এখানে আর লিখছি না। তবে দুঃখ, কষ্ট হতাশার সঙ্গে যেটা যোগ হয়েছিল, সেটা একটা রাগ, একটা হতাশাজনিত ক্ষোভ। শুধু আমার মধ্যে নয়, আমার মত চারপাশের অনেক মানুষের মধ্যেই দুঃখর থেকেও বেশী ফুটে উঠেছিল রাগ, দেশের প্রতি প্রবল অভিমান। সেই সময় সেই অভিমানের অভিঘাত থেকে একটা লেখা লিখেছিলাম। প্রকাশের অযোগ্য ভাষার কারণে সেই লেখাকে সেই সময় প্রকাশ করা যায় নি। আজ এক বছরের মাথায় সেই লেখাটাকেই একটু কাঁচি চালিয়ে সভ্য করে দিলাম। মনে হল, সেই যে প্রবল রাগের অনুভূতি সেটাও ডকুমেন্টেড হয়ে থাকা দরকার।
স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ | ১৬৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
এখন আমি কোন কিছু কেয়ার করি না। আমার কর্ম ক্ষেত্রে কিংবা অন্য কিছুতে আমার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত সঠিক কি না, তা বিচার করবার জন্য অন্য কারুর প্রয়োজন আমি অনুভব করি না। IITতে আমার বন্ধুরা যারা সব সময় আমার যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ করত তবুও আমি যাদের বিশ্বাস করতাম, তাদের সবাইকে আমি মেইল করি। তারা আমাকে খুব সাপোর্ট করেছে। এর পর আমি আরও কিছু লোকের সামনে নিজেকে প্রকাশ করলাম, তার পর আরও কিছু লোকের সামনে। আমি খুব মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কেউ কেউ আমার কথা অবিশ্বাস করেছেন, কেউ বা আমার বক্তব্যকে সম্মান জানিয়েছেন, আমাকে অপমান করেছেন আবার কেউ প্রচণ্ড চমকে গেছেন। হ্যাঁ, IITতে হোমোফোবিক আছে, কিন্তু সব থেকে যেটা প্রয়োজন IITতে অনেক উচ্চমনের ব্যক্তিরা আছেন, তারা আমাকে আশা দিয়েছে। আমি যা ভেবেছিলাম, IIT সেই রকম নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ পারফেক্ট বলে কিছু কি পাওয়া যায়? আমি বাস্তব, শেষমেশে ছাত্র সমাজের কণ্ঠ হিসাবে আমার গল্প স্বাধীনতা পেয়েছে। আমি, আমার ক্লাসে কিছু বন্ধুদের পেয়েছি যারা গে-দের ভাল দিক গুলো চিন্তা করে গে হওয়া কতো ভালো তা আমাকে বলে। আমি অনেক প্রোফেসার পেয়েছি যারা আমার কাছে সমকামীদের প্রতি তাঁদের সাপোর্ট প্রকাশ করেছেন। এ সব কিছুর ভিতর দিয়ে আমি দিনের শেষে বিছানায় যাই, জানি আমি এবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো। যদিও আমি অনেক অনুশোচনা, লজ্জা, ডিপ্রেশানের ভিতর দিয়ে গেছি। মেডিক্যাল পরীক্ষা দিয়েছি, আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ছি, সামাজিক বাধানিষেধ পেয়েছি। কিন্তু যখন আমার গল্পটা কতটা ‘প্রেরণাদায়ক’ জানিয়ে আমি আবারও মেইল পাই, তখন আমি অনুভব করি একটা সময় আসবে যখন কোন নতুন সমকামী নিজের প্রকৃত পরিচয় দিতে কখনোই বিব্রত বোধ করবে না, সে কাঁদবে না বরং লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে টিভি সিরিয়ালের কোন নতুন হিরোর উপর তার ক্রাশের কথা সে তার রুম মেট’দের কাছে গল্প করবে।
জানুয়ারি থেকে আসামে চা শ্রমিকদের রেশন বন্ধ হবে : দেবর্ষি দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ | ১২১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এ তো গেল রাজ্য সরকার। কেন্দ্র সরকার কেন FCI যোগান বন্ধ করতে গোঁ ধরে বসে আছে সে আরেক রহস্য। দ্বিমত নেই শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার দায়িত্ব মালিকের। কিন্তু মালিককে তার দায়িত্ব স্মরণ করানোর কাজে কংগ্রেসের রাজ্য সরকার বা ভাজপার কেন্দ্র সরকার, কারোই কষ্মিণকালে আগ্রহ দেখা যায় নি। হরেদরে শস্তা খাদ্য আসছে FCI-এর গুদাম থেকে, অর্থাৎ সরকারি পয়সাতে। যখন সেই যোগান বন্ধ হতে যাচ্ছে মজুরের রেশন মার খাবে, মালিকের কেশাগ্র বঙ্কিম হবে না। হুট করে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আর মালিকের কী করা উচিত উপদেশ বিতরণ করার বদলে, কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন পক্ষের (অবশ্যই মালিক ও মজুরপক্ষ) সাথে আলোচনায় বসে সমাধান সূত্র বার করার চেষ্টা করতে পারত। আসলে শ্রমিকের অধিকার কর্তন করাতে কংগ্রেসে ভাজপায় বিশেষ মতভেদ নেই।
এই মুহূর্তে ওপরের ঘটনাবলী কংগ্রেসকে ঘ্যানঘ্যান করার সুযোগ দিয়ে দিয়েছেঃ NFSA লাগু করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্র সরকার এখনো দেয় নি। মানে, জানুয়ারি থেকে ECA বাদ দিন, NFSA-এর রেশনও পাওয়া যাবে না।
ফিফথ ডাইমেনসন এবং তারপর : প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ | ১১৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আবার মই? কি বলি বলুন, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে মই নিয়ে সে সময় ভারী উৎসাহ ছিল - সত্যজিত রায়ের ট্রেন যেমন অপু-দুর্গার কাছে বৃহত্তর পৃথিবীর প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছে সেরকম ভাবেই হয়ত ঊর্ধ্বগামী মই দেখলেই লোকে দো'তলা তিনতলা ছাড়িয়ে সোজা ছায়াপথের কথা ভাবতে শুরু করতেন। যাই হোক, এ মই নিয়ে এসেছিলেন ইংলিশ চিকিৎসক রবার্ট ফ্লাড। ফ্লাড অবশ্য শুধু চিকিৎসক নন - জ্যোতিষী, গণিতবিদ, অতিপ্রাকৃত-বিশারদ, একই অঙ্গে অনেক রূপ। ফ্লাডের তত্ত্ব অনুযায়ী মইয়ে উঠে গুনে গুনে ঠিক ন'টি সিঁড়ি চড়লেই আপনার আত্মা পৌঁছে যাবে সূক্ষ্মতর ব্রহ্মান্ডে, কিছু সময় বিশ্রাম, তারপর ফের পাশে রাখা দ্বিতীয় মই দিয়ে নেমে আসা। আবারো জগৎসংসারের ঠ্যালা সামলানোর পালা, তারপর ফের মইয়ে চড়া। ফ্লাডের যেহেতু অঙ্কে ছিল বিষম উৎসাহ, উনি দাবী করেছিলেন এই ন'টি স্টেপ নেহাত গাঁজাখুরি ব্যাপার নয়। রীতিমতন পাইথাগোরিয়ান গণিতের সাহায্য নিয়ে তৈরি হয়েছে এ মই, প্রতিটি সিঁড়ি কতটা চওড়া, কতটাই বা লম্বা সবেরই ফিরিস্তি দেওয়া যাবে অঙ্কের হিসাবে।
কোরিয়ান শিজো কবিতা : রাকা দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ | ১৮৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
দশটা বছর ব্যয় করে এই পর্ণকুটির তৈরি করা
আধখানা তার বাতাস থাকে, আধখানা তার চাঁদের বাড়ি
কোথায় তোমায় বসতে দেব? বরং তুমি বাইরে এসো।
সং সুন নামে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের এক কোরিয়ান কবির লেখা । রাজদরবারে কাজ করতেন আগে, পরে সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান, লেখালিখি নিয়েই জীবন কাটান। এই কবিতাটার পিটার লি-কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে আমি বাংলা করেছি। এখানে যদি একেকটা লাইনকে দেখা যায় আলাদা করে, বোঝা যাবে প্রত্যেকটায় আসলে দুটো বাক্যাংশ আছে, দুটো ছবি। প্রথম লাইনেই যেমন দুটো স্টেটমেন্ট, একটা বলছে দশ বছর পরিশ্রমের কথা, অন্যটা বলছে বাড়ির কথা। দ্বিতীয় লাইনে তো আধাআধি ভাগ হয়ে গেছে লাইনটাও, বাড়িটারই মত... যার অর্ধেকটায় থাকে বাতাস, আর বাকি অর্ধেকটায় চাঁদ। শেষ লাইনেও অমন দু ভাগ, প্রথম অংশটা বলছে বাড়িতে ঢুকতে/বসতে দেবার জায়গা নেই (যেহেতু বাতাস ও চাঁদ আগেই সবটা দখল করে রেখেছে), আর শেষ টুকরোটা জানাচ্ছে, বাড়ির বাইরেই বরং অতিথিকে গ্রহণ করা হবে।
ছোট্ট একটা ছিমছাম কবিতা। তিন লাইনের জাফরির ফাঁক দিয়ে আসা একটুকরো গল্পের আভাস। শিজো আসলে এরকমই।
বইমেলা ২০১৪ ডায়েরিজ – বঙ্গদারু গাছের তলে : অমিতাভ প্রহরাজ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১১৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বড় ঘটনাবহুল গেল... কিছু মনখারাপ, কিছু অভিমান, কিছু আনারস সময়, কিছু মিষ্টি মারামারি, কিছু ঝগড়া, কিছু ভুল, এবং অবশ্যই এক ভালোবাসা সহ দুর্ধর্ষ দুশমন নিজস্ব শ্লাঘা খানের অতর্কিত আক্রমণ, অনর্গল ঘটতে ঘটতে কাটিয়ে ফেললাম গতজন্ম। বিরক্তিতে তিতির অপেক্ষায় ছিলাম, অনেক শিহর অনেক ম্যাজিক ও আলোদের ফটোগ্রাফ কোন খবর না দিয়ে বেজিঝক চলে এলো। সঙ্গে তার দুই ভাই, বেইন্তেহা আর বেপনাহও ছিল। আমার বড্ড বাসি হলো রে, মায়া ও মায়াবী দুজনেই হলো।
এক মানুষ লম্বা স্থান অধিকার করে আছি, শুধু এই কারণেই কত নতুন মানুষ হলো আমার। গর্বের জন্য মিনিমাম কোয়ালিফিকেশান অনেকটা বেড়ে গেল। আমি যে এক বিচিত্র ঘটনা, তা খুব একটা অজানা নেই আমার। তবু এ্যাতো এ্যাতো জনের অপরিচয় কেটে গেল, ভাবা যায়না... সেই ফাঁকতালেই খুঁখার উগ্রপন্থী শ্লাঘা খান ঢুকে গেছিল... চৌকন্না থাকতে হয় খুব.... তবে চৌকন্না ছিলাম বলেই বহুদূর থেকে ভেসে আসা এক জিনিয়াসিনির স্পর্শে ফিসফিস হয়ে গেলাম....কিছু পরে তাও নয়, খালি ঠোঁটনৃত্যের সাহায্যে বাজে বকা নামিয়ে রাখলাম তার পায়ে... কিন্তু কী বিতিকিচ্ছিরি এই মানবমনের সংস্কার, একজন ঠোঁটনৃত্য বা ফিসফিস করলে অন্যজনও ফিসফিসে মগ্ন হয়ে যায়। কী আপদ, এতে যে ভেঙানো হচ্ছে বোঝে না??
বাঙালির মদ : সংহিতা মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১১৫২ বার পঠিত
সেই যে দেড়েল মাতালের কথা দিয়ে বাঙালির মাতলামি বা মাতলামির মূলে থাকা মদ খাওয়ার কথা শুরু হয়েছিল, তাঁর পেশা ছিল রিক্সাটানা। তিন চাকার সাইকেল রিক্সাটানা। যাঁরা অমন পরিশ্রমের কাজ করেন তাঁদের নাকি না খেলে চলে না। খেলে অধিকাংশ সময়েই বেসামাল হয়ে পড়েন। তখন ব্যাথার গোড়া উগরে ঢেলে দেন সাহসে কুলোলে জ্যোতিবাবুর ঘাড়ে। আর মিনমিনে মেনিমুখোরা জ্বালা মেটাতে পেটান বউকে, মেয়েকে, ছেলেকে। এই কর্মটি যে নেহাৎ খেটে খাওয়া মানুষের শ্রেণীচরিত্র নয়, তাও স্পষ্ট হয়ে যায় যখন দেখি এক কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার সাহেব তাঁর রাজ্য সরকারি অফিসার স্ত্রীকে পিটিয়ে পরোটা বানাচ্ছেন শুক্র, শনি, রবিবার। তাঁরা এক নতুন পাড়ায় বাসা নেওয়ার পর বছর চারেক ধরে কর্তাটির শুক্রবার মধ্যরাত্র থেকে শুরু হওয়া পাড়া কাঁপানো খেউড় আর তাঁর প্রহারে আহত, আক্রান্ত কর্ত্রীর আর্তনাদে পাড়া কাঁপলে পরে পাড়ার লোকের মাতাল পেটানোর নেশা হয়। এক শুক্রবার তাঁরা বাড়ির দরজা ভেঙে মাতালকে বার করে নিয়ে বেধে রাখে পাড়ার সব থেকে ক্ষয়াটে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে। উন্মত্ত কিছু চড়-চাপড় আর জোর করে তেঁতুল জল দিয়ে নেশা ভাঙানোর প্রয়াস চলে। কেউ পুলিস ডাকে নি।
মানসের গল্প : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সেদিন সকাল থেকেই মনটা কু গাইছিলো। কারখানা বন্ধ থাকায় কাজে যেতে হয়নি। আগের দিন মালফাল খেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরলাম। মা ফালতু বাওয়াল দিলো, যদিও ঘুমচোখে বেশিক্ষণ টের পাইনি। সকাল থেকেই মাথাটা টলছিলো। বমি। বিকেলে ওরা ডাকতে এলো, ভাসানের প্রসেশন। একটু গুমোটের মত ছিলো দিনটা, আকাশটা ঝুলে নেমে এলে যেমন হয়, মেঘলা দলা দলা চিটচিটে আকাশ। আমার জানার কথা না, জানিওনা, যে এইরকম লিকুইড বোতলে ভরে বোমা বানানো হয়। কিন্তু আমি না জানলেও ঐ লোকটা জানতো। ফিনিশ-সোভিয়েত যুদ্ধের কথা, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গান্স কম পড়ার কথা, সে সালা ঊনিশশো ঊনচল্লিশ-চল্লিশের ঘটনা। লোকটা অত জানে, তবু পুজোকালের দিকে টেলিফোন বুথে দাঁড়িয়ে টাইমপাস করছিলো। কপাল মাইরি! অথচ আমার দেখা অল্পস্বল্প পাসফাস করা লোকজন দিব্যি বউবাচ্চা নিয়ে ভাসান দেখে চাউমিন খেয়ে নালেঝোলের জীবন কাটিয়ে গেল। যাই হোক, ফিনিশ শুনে আমার হেভি হাসি পেয়েছিলো। মজার নাম, না? ফিনিশ! সেদিন আরেকটু হলেই আমিও ফিনিশ হয়ে যাচ্ছিলাম। মুখে পেট্রলটা নিয়ে সবে ছুঁড়তে যাবো, আড়চোখে দেখি বেগুনি সালোয়ার পরে একটা মেয়ে, সাধনদার শালীফালি হবে মনে হয়, হাসছে। ব্যস, পেটে চলে গেল একঢোঁক। তখনই বসের সাথে আলাপ। হেঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়েছিলো।
মাতলামি ও আঁতলামি : রজত শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১১৫৮ বার পঠিত
আঁতলামির সঙ্গে মাতলামির এই দ্বন্দ চিরকালের, এ দ্বন্দ সহজে মিটবার নয়। যুগ যুগ ধরে আঁতেলরা মাতালদের হেয় করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গান লিখে, পদ্য লিখে, পোস্টার বানিয়ে, লেকচার দিয়ে, সব রকম ভাবে! ফলে মাতালদের চিরকালের বদনাম! তবে কয়ালের মাঠের ঘটনার পর আপাতত বেশ জোর দিয়েই বলা যায়, অবশেষে মাতালরাও জেগে উঠেছেন। মাতালদের জন্য বিশেষ স্কুল ও কলেজ খোলা হয়েছে – যেখানে সব রকমের মাতলামী সহজ ভাবে শেখানো হবে। মিন্টো পার্কের কাছে লা মাতালিয়া স্কুলে এখন ছাত্র ছাত্রীর কী ভিড়! আর লেক রোডে দারুচন্দ্র কলেজও নাকি দারুন চলছে।
খেলা জমে উঠেছে – দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে জেতে।।
যুদ্ধে যা ঘটেছিল : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১৩০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মহাশয়, আমাদিগের কপালে পাকিস্তান হইয়াছিল কেন তাহা লইয়া কত কথাই না শুনা যায়। শুনা যায় মোগলদিগের সহিত কোচবিহারের মহামান্য নৃপতির যুদ্ধ হইয়াছিল। মোগলের প্রতিনিধি রংপুর ঘোড়াঘাটের নবাব সৌলৎ জং এসে আমাদিগের মহারাজা উপেন্দ্রনারায়নকে ঝাড় সিংহেশ্বরের প্রান্তরে লড়াই করে হারিয়ে দিল এক কালে। সেই যুদ্ধে আমাদিগের মহারাজার অন্দরমহলের বিভীষণ এক জ্ঞাতি ভাই দীনেন্দ্রনারায়ণ সিংহাসনের লোভে মোগলদিগের সহিত গোপনে যোগাযোগ করেন। এবং আমাদিগের মহারাজা উপেন্দ্রনারায়ণ পরাস্ত হন ঝাড় সিংহেশ্বরের যুদ্ধে। সেই লোভী জ্ঞাতিভাই দীনেন্দ্রনারায়ণকে সিংহাসনে বসায় মোগল সম্রাটের তরফে ঘোড়াঘাট-রংপুরের নবাব সৌলৎ জং। কিন্তু পরের বছরই আমাদিগের পরাজিত মহারাজা আবার যুদ্ধ করেন ভূটান রাজার সাহায্য লইয়া। এবং তাঁহার জয় হয়। জয় হয় বটে কিন্তু কিছু মৌজার প্রজা নাকি সাবেক শাসক মোগলদের প্রতি তাঁহাদের আনুগত্য বজায় রাখেন। কেন, না তাঁহারা নাকি মোগল সৈন্য ছিলেন। প্রথম যুদ্ধের পর মোগলের হাতে কোচবিহার গেলে এই সমস্ত অঞ্চলে বসবাস করিতে থাকে মোগল সৈন্যদের কিছু অংশ। মোগল প্রতিনিধি রংপুরের নবাবের নিকট তাঁহারা খাজনা দিতে থাকেন। কোচবিহারের মহারাজা তাঁহার উদারতায় এই বিষয়ে আর দৃকপাত করেন নাই। সামান্য কয়েকটি গ্রাম যদি খাজনা না দেয়, কী যায় আসে। আমাদিগের পূবর্পুরুষ মোগল সৈন্য ছিল কি না জানা নাই, কিন্তু কৃষিই ছিল তাঁহাদের মূল জীবিকা তা আমাদিগের অবগত। স্বাধীনতার পর রংপুরের নবাব যেহেতু পাকিস্তানে মত দান করেন, সেই কারণে ভারতে থাকিয়াও আমরা পাকিস্তানি হইয়া গেলাম। ইহাতে আমাদিগের দোষ কী? আমাদিগের কাহারো কাহারো নিকট রংপুরের নবাবের প্রজা হিসাবে খাজনার রসিদ রইয়াছে সত্য, কিন্তু তাহা স্বাধীনতার আগের কথা। স্বাধীনতার পর আমরা আর খাজনা দিই নাই রংপুরে গিয়া। আমরা কোচবিহার রাজাকেও খাজনা দিতে পারি নাই, কেন না রাজার প্রজার তালিকা হইতে আমরা বাদ ছিলাম সত্য।
Freedom is the drug... : ঋতম সেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১২০৯ বার পঠিত
সহৃদয় পাঠক, যিনি আমার এই ব্যক্তিগত গদ্যটি এখন এই মুহূর্তে পড়তে বসলেন, আপনি কি নেশা ভাং করেন? আমার ধারণা অতি অবশ্যই করেন। নেশা এমনই এক টান যার পাল্লায় না পড়ে উপায় নেই। গানের নেশা, গল্পের নেশা, নাচের নেশা, সুরের নেশা, তালের নেশা, ছবির নেশা, কবিতার নেশা, সিনেমার নেশা, নাটকের নেশা আপনার কি নেই? আকাশ, বাতাস, সমুদ্র, নক্ষত্র, পাহাড়, সমতল, দিগন্ত এদের পাল্লায় পড়ে আপনি কি ঘন্টার পর ঘন্টা কিচ্ছুটি না করে নিজের ভেতর ঢুকে পড়ে, বুঁদ হয়ে সময় কাটান নি? সূর্যোদয়ের মদ, সূর্যাস্তের গাঁজা আপনি কখনো স্পর্শ করেননি বললে আপনি মিথ্যে কথা বলছেন। অনন্ত রাত্রির কোকেন কখনো কি শোঁকেন নি? এখন মোদ্দা কথাটা হল গিয়ে আপনার সময় নেই। আপনার মাথার ওপর বাঘের মত বস রয়েছে, আপনার বেডরুমে কুমিরের মত হাঁ করে বসে আছে সংসারের হাজার দায়িত্ব।এমনই এক ড্রাগনের সময়ে আমরা বসবাস করতে বাধ্য হয়েছি, যেখানে আমাদের নেশাগুলিকে অর্থাৎ আমাদের গোটা পৃথিবীটাকেই আমাদের কাছ থেকে জোর করে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এমনই ফাঁদে আমরা পড়েছি যে আমাদের হাত পা তো বটেই এমন কি বুদ্ধিবৃত্তি থেকে আরম্ভ করে অনুভূতিগুলিকে পর্যন্ত শিকল টিকল জড়িয়ে বেঁধে মোটা জংধরা তালা লাগিয়ে চাবি দিয়ে সে চাবি আমরা নিজেরাই গিলে নিয়েছি, এবং ভুলে গেছি। ভাবুন মশাই সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত এমনই আপনার জীবন যে আপনার নিজের ইচ্ছে মত কিস্যু করার উপায় নেই। আপনার সময় আপনি বিক্রি করে দিয়েছেন। নিজেই করেছেন, এবং এত কম মূল্যে করেছেন (আমি শুধু আর্থিক মূল্যের কথা বলছিনা) যে সর্বক্ষণ আপনার নিজেকে দেখে নিজেরই লজ্জা লাগে। এই রকম একটা সময়ে আপনি কি করবেন? আপনি কিনবেন। কী কিনবেন? নেশা কিনবেন। আর সেই সব নেশা হবে নকল নেশা। পৃথিবীর নেশার মত, মানুষের নেশার মত তারা আপনার আত্মার উন্নতি ঘটাবে না। বরং প্রভাবিত করবে আপনার শরীরকে, আপনার মাথায়, রক্তে, স্নায়ুতন্ত্রে কিছুক্ষণের জন্য এমন রমরমা ছড়াবে যে আপনার মনে হবে আপনি মুক্ত। আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। কিছুক্ষণের জন্যেই আপনার এই যে সর্বক্ষণের দাসত্ব সেটা আপনি ভুলে থাকবেন।একসময়ে আপনার শরীর বিদ্রোহ করবে। আর আপনিও আপনার নেশা থেকে সটান আপনার যন্ত্রণার মধ্যে আছড়ে পড়বেন।আছড়ে পড়বেন সেই জন্য যন্ত্রণা আরো বাড়বে। কিন্তু আপনার মনে আছে সেই ইউফোরিক অবস্থাটা, ফলে আপনি আবার নেশা করতে বাধ্য হবেন, এবং আবার আছাড় খাবেন। এই যে ভয়ংকর লুপ সেটা চলতে থাকবে। আপনার শরীর মন উভয়েই দুর্বল হয়ে পড়বে। আপনি নিজেও সেটা বুঝতে পারবেন। তখন এসে হাজির হবে অপরাধবোধ।আর যেহেতু আপনি সবচেয়ে দুর্বল আপনার নিজের কাছে, সেই জন্য, শুধুমাত্র সেই জন্যেই, আপনি আপনার এই অপরাধবোধের ভারটা চাপাবেন তাদের ওপর যারা বয়সে, পদমর্যাদায়, অথবা শুধুমাত্র আপনার ভাবনায়, আপনার থেকে ছোটো। তাদের ওপর যাদের আপনি ছোটো মনে করেন। আপনি জোর গলায় ফতোয়া জারি করবেন, মেয়েরা মদ গাঁজা সিগারেট খাবে না। আপনি ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে আনন্দ করতে দেখলে পুলিশে খবর দেবেন। আপনি স্লোগান দেবেন “মদ গাঁজা চরস বন্ধ, তাই কি প্রতিবাদের গন্ধ?” কবিদের মদ খেয়ে চিৎকার করে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখলে, শিল্পীদের গাঁজায় ধুর হয়ে রঙ নিয়ে রাস্তা রঙ করতে দেখলে, আপনার গালিব, শক্তি, র্যাঁবো, পাবলো পিকাসো কাউকেই মনে পড়বে না, মনে হবে এদের হোক ক্যালানো। ইতিমধ্যে আপনার বয়স বেড়েছে, এবং যে ভয়ংকর লুপে আপনি পড়েছেন, তার ফলে আপনার বয়স বাদে অন্য কিছুই বিশেষ বাড়েনি। আপনার শরীর আর দেয় না, ফলে আপনি কৃত্রিম নেশাটাও ধরুন আর করতে পারেন না। ফলে আপনি আরো চেঁচাবেন বব ডিলনকে বলবেন বদ গাঁজাখোর,জন লেননকে বলবেন মাতাল, কবির সুমনকে বলবেন মাওবাদী, লিওনার্দ কোহেনকে বলবেন মাগীবাজ। নোংরামিটাও একটা নেশা। এটা আপনি বুঝবেন না, কিন্তু এই সর্বগ্রাসী নেশাটি আপনাকে টুঁটি চেপে পাকড়াও করবে। দল বেঁধে ঘেউ ঘেউ করতে যে কি মজা, তা তো আপনার পাড়ার কুকুরগুলি আপনাকে প্রত্যেক রাতে দেখিয়েই দিয়েছে। খিস্তি করার আনন্দে আত্মহারা হয়ে নেশামুক্ত পৃথিবীর দিকে আরো দশ পা এগিয়ে যাবেন। এর ফলে সবথেকে বেশি সুবিধা হবে তাদের যাদের কাছে আপনি নিজেকে বিক্রি করেছেন। বুঝতে পারছেন? সুবিধা হবে ধনতন্ত্রের। এই মাও মাকুদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে, অথবা এদের সঙ্গে নেশা করে ফেলে যদি আপনি একদিন হঠাৎ বুঝতে পেরে যান কে বা কারা আপনাকে বেঁধে রেখেছে, পঙ্গু করে রেখেছে আপনার চেতনাকে, আপনার গোটা জীবনটাকেই, তবে তো তাদের সর্বনাশ। আপনি যদি একদিন আপনি সত্যি কি চান বুঝে ফেলে সমস্ত বাঁধন দুঃস্বপ্নের মত ঝেড়ে ফেলে অনুভব করেন মাথার চারিদিকে হরিণের দৌড়ে আসার মত বৃষ্টির শব্দ, যদি মেতে ওঠেন স্বাধীনতার নেশায়? যদি বলেন না। যদি বলেন আপনি আর নিজেকে, নিজের সময়কে বিক্রি করবেন না, কারোর কাছে? তাহলে স্যার, ম্যাডাম আপনাকে বলছি শুনুন। আপনারা প্রত্যেকে যদি এটা করেন, তাহলে গোটা মেশিনারিটাই বিকল হয়ে যাবে। সেই যন্তরমন্তর থেকে তখন বেরোবে অন্যরকম মন্ত্র। যেমন ধরুন- “দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান”। এবারএকটা গল্প শুনুন। কিছুদিন আগেই এক নেশার আড্ডায় এক শিল্পী আমায় এই গল্পটা বলে। বৌদ্ধ গল্প। বুদ্ধের কাছে এক শিষ্য এসেছে একটা প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্ন খুবই গম্ভীর।
সোনার কৌটো রূপোর খিল : গুলে বকা চৌধুরানী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ৮৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
তাঁদের এ ধরণের কথা বলার পেছনে অবশ্য যুক্তি আছে প্রচুর। দেশে মানুষের হাতে সে সময় ক্যাশ টাকা থাকত খুব কম। আশির দশকের আগ পর্যন্ত বড়ো ভাইয়ের বিদেশি দূতাবাসের চাকরির কারণে আমাদের বাড়ীতে ক্যাশ ইনফ্লো ছিল সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি। ক্যাশ ইনফ্লো জীবনে এক ধরণের স্বাচ্ছন্দ্য ও সাচ্ছল্য এনে দেয়। অবশ্য, সেই সঙ্গে খরচ করার মানসিকতাটাও থাকতে হয়! সেই মানসিকতার কারণেই,হাই ডায়েবেটিস-হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়েও কী মহা উৎসাহে আম্মা সারাদিন রান্নাঘরে বসে নানা পদের খাবার তৈরি করতেন! আমার বন্ধুরা ঠাট্টা করে প্রায়ই একটা কথা বলত, আমাদের বাড়ির পুডিং ছুঁড়ে মেরে নাকি মানুষ পর্যন্ত ঘায়েল করা যাবে! আম্মা দেখতে ছিলেন, রূপকথার রাজকন্যার মতো সুন্দর। চুলার আঁচে,তাঁর নাক-গাল-চিবুক টম্যাটোর মতো লাল হয়ে যেত তবু তাঁকে কখনো ক্লান্ত-বিরক্ত হতে দেখিনি! মুখের হাসিটি ছিল, সদা অমলিন। রাজধানীতে তখনো প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ শুরু হয়নি। কেরোসিন তেলের চুলো বা পাম্প দেওয়া স্টোভেই রান্না সারতে হত। কী যে দুর্বিষহ ছিল সেই প্রক্রিয়া! প্রায়ই রান্নার মাঝপথে কেরোসিন যেত ফুরিয়ে কিংবা চুলোর ফিতে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যেত। আর,সে রকম মুহূর্তে আমার কদর যেত বেড়ে। আমার খোঁজে দিগ্বিদিকে দূত বেরিয়ে পড়ত! তারের মধ্যে সুতো গেঁথে, সেই সুতো দ্রুততম সময়ে চুলোয় ঢোকানোতে আমি ছিলাম একজন এক্সপার্ট। স্কুলে,সুঁইতে সুতো ঢোকানোর খেলায় আমি বরাবর প্রথম হতাম!
মুনাফেক : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ঢাকায় মদ বেশ দামী। বিশেষত বিদেশী মদের ওপর আবগারী শুল্কের হার অত্যন্ত বেশি। অবশ্য, রেজিস্টার্ড বারের বাইরে শস্তার মদও মেলে। ঢাকাতে আমি সর্বত্র দেখেছি “বাংলা মদ” নামে ঘরে তৈরি সবচেয়ে শস্তার মদ তৈরি এবং বিক্রি হতে। ঢাকার পুরনো এলাকাগুলোতে এই বাংলা মদ এখনও মেলে। এক লিটারের দাম ৩০০ টাকা। এর মূলত খরিদ্দাররা হল ঝাড়ুদার, চামার, ডোম, দেহব্যবসায়ী এবং ইঞ্জিনীয়ারিং আর মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। আসলে এটা হল জীবনদায়ী ওষুধ বানাবার জন্য শস্তায় বিদেশ থেকে আমদানী করা মিথাইল মেশানো অ্যালকোহল। প্রত্যেক বছর এই বিষাক্ত মেথিলেটেড স্পিরিট খেয়ে প্রচুর লোকের মৃত্যু ঘটে।
অবশ্য, ঢাকায় খানদানী মদ্যপায়ীর সংখ্যাও কম নেই। তাদের কেউ কেউ সামাজিক স্তরের অনেক ওপরের দিকে বাস করেন, ঢাকার খানদানী এলাকায় তাঁদের বাড়ি, দামি গাড়ি, বিদেশি পাসপোর্ট থাকে তাঁদের কাছে, অথবা খানদানী ক্লাব বা ডিলারদের সঙ্গে তাঁদের ওঠাবসা থাকে। বাকিরা হল মুখ্যত নতুন প্রজন্ম, যারা কর্পোরেট মিডিয়া হাউস, মোবাইল ফোন কোম্পানি, এনজিও বা বিজ্ঞাপন এজেন্সির হাত ধরে বড় হয়েছে। এই বিশাল মাইনের প্রফেশনালরা খুব দ্রুত বেড়ে উঠেছে ১৯৯০-এর মাঝামাঝি থেকে, সামরিক শাসনের শেষ হবার পরে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সাথে সাথে।
জয়‘বাংলা’! : আরফান আহমেদ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ৯৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
অইযে চৌধুরী সাহেব, অইযে তার বিরাট বাংলো, অইযে সাহেবের নাতনী, প্রেম করে এক চাকরের সঙ্গে। চৌধুরী সাহেব তার নাতনীর জন্মদিনের পার্টি দেন। লোকেরা আসে, নাতনী গ্র্যান্ড পিয়ানোতে গান বাজায়। বেয়ারা থালা হাতে মদ বিলান। আর না হলে অইযে ছেলেটি, প্রেমে খেল দাগা। তার হবু শ্বশুর, জালেম দুনিয়া পাপের সংসার! ছেলেটি রাগে দুঃখে মদ গেলে , বৃষ্টিতে গান গায়। মাইয়টা তবে কি করবে? সেও শাওয়ারের নীচে একটু দুঃখী ক্লিভেজ দেখায়। আবার ধরেন সৎ পুলিস অফিসার নতুন থানায় এসেই, ভেঙে চুরে দেন সকল চোলাই কারখানা। এই সবই হয়। নায়িকার বাবা মদ খায়, কারণ এইটা তার স্ট্যাটাস। নায়কের বাবা খাইলে হয় স্ট্যাটাস নয় তো পাড় মাতাল, চুল্লুখোর। নায়ক খায় দুঃখে, প্রেমিকা ভাগসে তবে গেল মদ, এই সন্ত্রাসী জীবন আর ভাল্লাগে না তবে গেল মদ, দুই একটা গানও গাওয়া যায়। অইযে দারুণ মধ্যবিত্তের নায়ক রাজ্জাক মদ গিলে বলে মাতাল নই, বেঈমান বল বেঈমান। আর না হলে অই নিন্মবিত্তের আসল পুরুষ মান্না, এংরি ইয়াং ম্যান, মদ গেলে লাইক আ হাঙ্গরী ম্যান। বুকের জ্বলা নিভান। আর ছোট বেলায় শুনে ছিলাম, নায়ক জাফর ইকবাল নাকি পানির কাজ মদ দিয়ে চালাতেন। আমি মনে মনে ভাবতাম, ও তাহইলে সচু (শৌচ), আর গোসল বোধয় অই মদ দিয়েই করতেন। আর ভিলেনরা তো মদ এমনি এমনি খান। জাম্বো মদ খায় রেইপ করে। এটিয়েম সামসুজ্জামান, গ্রামের মোড়ল বেশ্যা বাড়ি যায়, মাল খায়, আর সুন্দরীরে চায়। রাজীব শহুরে বারে যান, টয়োটা হাঁকিয়ে নায়িকার বাড়ি যান। আর অই শ্রমিকশ্রেণী তো মাঝে মাঝেই গিলে, মোটর শ্রমিক, কি নৌযান শ্রমিক, এইসমস্ত ‘ছোটলোকের বাচ্চারা’ বাংলা গিলে।
গল্প মানেই মিথ্যে : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
ন’টা বেজে গেছে, পাশে কিউবিক্ল থেকে মন্দিরাদি বেরিয়ে গেল। সিং আর অরূপ বেরোচ্ছে এবার। আনোয়ারা আর নতুন সাউথ ইন্ডিয়ান মেয়েটা কি একটা ইয়ার্কি মারতে মারতে খিলখিল করে যাচ্ছে গেটের দিকে। রায়বাবু আবার মুখ ভ্যাটকালেন, এটা অফিস না ফাজলামো মারানোর জায়গা – ইশ, ব্যাটার মুখ ভীষণ বাজে, মারানো ফারানো ভদ্রলোকের কথা? কস্তুরী বলল, স্যার, আমি যাই? রায়বাবু বললেন, যাবে? পাগলা নাকি? কাজ শেষ করেছ? তোমার এন্ট্রিগুলো কি আমার পিসি এসে করে দেবে? হাত চালাও হাত চালাও – কস্তুরী বলল, স্যার, এরপর বাস পাব না। রায়বাবু বললেন, পাবে পাবে, অনেক রাত অবধি বাস চলে। নাও, হাত চালাও ঝটপট। তোমার চাকরি থাকল কিনা তাই নিয়ে আমার বিশেষ চিন্তা নেই। তবে তোমার জন্য দেখছি এবার আমারটা যাবে।
হাত চালাও বললেই তো আর চলেনা, কস্তুরী কী বোর্ডে আঙুল চালাতে চালেতে ভাবতে লাগল, দামানিয়া অ্যান্ড কোম্পানীর কাজটা ছাড়লাম কেন? মাইনে অনেক বেশি ছিল। হপ্তায় অন্ততঃ দুদিন মাছ খাওয়া যেত। কামাল বলে লোকটা পেছনে এসে দাঁড়াত প্রথম প্রথম। ক’দিন পর ঝুঁকে কাঁধে হাত দিয়ে এন্ট্রি বুঝিয়ে দিত। তারপর যেদিন কাঁধ থেকে হাত আস্তে আস্তে নীচে নামতে লাগল, কস্তুরী চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের জোরে এক ধাক্কা দিয়ে একদলা থুথু মুখ থেকে থু – করে ছুঁড়ে দিয়েছিল তার মুখে। তারপর হনহনিয়ে বেরিয়ে এসেছিল অফিস থেকে। ইশ, পঁচিশ দিন মত কাজ হয়েছিল, মাইনেটাও পাওয়া যায়নি। সেদিন মেট্রোয় দামানিয়ার সঙ্গে দেখা। বলল, আরে লক্শমী, তুমি কাম ছোড়ে দিলে কেনো, একবার তো বোলবে কী পরেশানি? কস্তুরী বলল, আমি লক্ষ্মী নই। দামানিয়া কক্ষনো মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনা, তাকাবার আরো কত জায়গা আছে, বলল, হাঁ হাঁ, তুমি বন্দনা, ইয়াদ হোলো। কোথাও জয়েন না কোরলে এসো একদিন –
মধ্যবিত্ত বাঙালির নেশাভাঙ বা দারু-বাসনা : অনীক রুদ্র
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১১৮২ বার পঠিত
তামাকু এবং অহিফেন সেবনের নেশা বাঙালির দীর্ঘকালের সঙ্গী ছিল। এখন বরং কিছুটা কমেছে। ভাল আফিং - তামাক পাওয়াও যায় না। কলিকাতার সিমলা পাড়ার দত্তবাড়ির ছেলে শ্রীযুক্ত নরেন্দ্রনাথ একদা হুঁকো তানলে জাত যায় কিনা দেখার অভিলাষে ছেলেবেলাতেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন। পোস্তর ঢেড়ি ভেজানো জলপান করতে আমরা আমাদের অনেক দাদু ঠাকুমা - দিদিমাদের ও দেখেছি। এখনও সস্তায় এমন নেশা করা যায় মানালি বা আফগানিস্তানের গাঁজা ( গ্রন্স নামে ও যার সুখ্যাতি) অবশ্য বহুমুল্য এখন। একদা সাধু সন্ত বাউল থেকে শুরু করে, শিল্পীদের মধ্যে গঞ্জিকা সেবন, পঞ্চমুখী কল্কেতে টান দিয়ে আগুন তুলে দেওয়া বিখ্যাত ছিল। শহরের উল্লেখযোগ্য কবি ও ইন্টেলেকচুয়াল রূপচাঁদ পক্ষীর নামও আমরা জানি। নাম বদলের চেষ্টা করলেও গাঁজা পার্ক আজও স্বমহিমায় অবস্থান করছে। কিন্ত গেঁজেলদের সংখ্যা খুব একটা বেড়েছে বলা যায় না। ছাত্রাবস্থায় মধ্যবিত্ত বাঙালি, হয়ত অর্থনৈতিক অসুবিধার জন্য শুখা নেশায় বহুলাংশে অভ্যস্ত ছিল। গাঁজা- ভাঙ- চরস- চণ্ডু -মাজুম - ফুটুস- বাদামী চিনি, স্ম্যাক-ক্র্যাক প্রভৃতি নেশারও বেশ চল ছিল। মধ্যবিত্তের বিকাশ ঠিকমত হচ্ছিল না বলেই, অভিভাবকরা সন্তান সন্ততিদিগের পর্যাপ্ত রাহা খরচ জোগাতে না পারায় - কালির সিরাপ, ফিনাইল- ডেনড্রাইট জাতীয় বস্ত শুঁকে নেশা করার রেওয়াজ এখনও চালু আছে। সেদিক থেকে মদ্যপানের নেশায় খরচও বেশি হয়। বঙ্গজীবন থেকে গত চার দশকে অন্তর্হিত হয়েছে বুনিয়াদী এবং কোয়ালিটি শিক্ষা, হয়তো নেশার বস্তুর প্রসারের কারণেই। শিক্ষায় জাতীয় স্তরে বাংলার স্থান এখন পিছন থেকে তিন নম্বরে। নেশার প্রসার তার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় পানশালা বা মদের দোকানের সংখ্যা যত বেড়েছে তার সামান্য ভগ্নাংশেও বাড়েনি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাঙালি রাজনীতিবিদ বহু চেষ্টায় সমর্থ হয়েছেন "অ্যাল-কোলাহল" তৈরি করে, নেশার চক্রে ছেলে-ছোকরাদের ভিড়িয়ে দিয়ে, তাদের, বিশেষত বাঙালিদের আরও অকর্মণ্য ও অলস করে তুলতে। গাঁজা প্রসঙ্গে একটি কহাবত লাগু আছে দীর্ঘকাল। তা হল "গাঁজা পীয়ে রাজা.... বিড়ি পীয়ে চোর"। ক্যানাবিস বা গাঁজার অপকারী দিকের তুলনায় উপকারী দিকই বেশি। আমাদের শিক্ষকমশাই প্রফেসর জি সি চট্টোপাধ্যায় তার ক্যানাবিস সংক্রান্ত সেমিনারে এই গবেষণার কথা তুলে ধরেছিলেন। আর মদ্য?
ঝিনুকের খোল : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
পালানোর আরো জায়গা আছে। রিমঝিম নিজেদের ভাড়াফ্ল্যাটের বারান্দায় পালায় । বারান্দার গ্রিলের ফুটোগুলো বড় বড়। বাইরে গাছ, টুকরো আকাশ। তারে তারে মেলা কত না রঙের কাপড়, ওবাড়ির, সেবাড়ির। গাছে গাছে কতরকমের শেডের সবুজ পাতা, এলোমেলো, লাট খায়। তেমনি সব বারান্দাগুলো থেকে নিচে ঝুলিয়ে রাখা তারে শার্ট, প্যান্ট, ম্যাক্সি, এমনকি শীতের দিনে শাল কম্বলও, রঙ্গিন।
ওখানে একবার গিয়ে পড়লে পালানো সোজা। কেউ বুঝতে পারবে না। দেখবে রিমঝিম বাড়িতেই আছে, বারান্দায় কাপড় মেলছে। অনেকক্ষণ ধরে কাপড় মেলছে তো মেলছেই । কেউ কিচ্ছু বুঝবে না। দেখবে রিমঝিম টুকরো, ফ্যাকাশে আকাশটার দিকে তাকিয়ে, নিভু নিভু শীর্ণ ডালটায় কচি সবুজ পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে চুল মুছছে, চুল ঝাড়ছে, ঝাড়ছে তো ঝাড়ছেই। আসলে তো তখন রিমঝিম পালাচ্ছে।
বাথরুমে স্নানে ঢুকে রিমঝিম বড় করে কল খুলে দিয়ে পালায়। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে পালায়। ঝর ঝর করে গায়ের উপরে ঝরতে থাকে জল, আর রিমঝিম তখন কোথায় হারিয়েছে। বড় বড় পাহাড় আর ঝরনার সামনে , সেই এক সবুজ, নরম পৃথিবীতে পালিয়ে গেছে। ছোট্টবেলায় দেখা লিরিল সাবানের বিজ্ঞাপনের মেয়েটার মত হয়ে।
বিহ্বলা গণিতের কোরাস : শামসেত তাবরেজী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১৩৩৪ বার পঠিত
মুগ্ধ করছে, ডর নাই জানে! কথাটা ভিন্নতর ভোল
ডলফিনের কানে কানে একদিন দুঃস্বপ্নে বলেছি
হাত-জোড় করে! জানিয়েছে, মহারথী মহা এক শোল
ফুরিয়ে আসছে তারও সময়দীপন। তার জন্য কেঁদেছি,
তাতে কিবা লাভ! সমস্ত লোকসান মানেই তিজারা,
তাতেই লাইসেন্স মেলে গম্যতার গম ও লূতার।
কীচকের সূরে খসে পরিশ্রান্ত যত-তত আধোলীন তারা
র্যাদা ঘষে ঘষে ঘাম ফ্যালে বিহ্বল সিনিক ছুতার।
কি দেখব এসব! বিপণিরচিতা, সংঘ-মেদ, পাষণ্ড নুনু
নিম্নগ মাটির টানে, চায় কি ও ঢুকে যেতে, মরে যেতে সেথা?
কর্ণবিলাস, তার কাজ হল শুনে যাওয়া রুচিরাক্ত নীপার ঘুঙুর
সেত্তেনত্রিয়ন আর জ্বলবে না, তাই বুকে ব্যথা?
মাধ্বী মহোৎসবে : অগ্নি রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৮ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
বাঙালি চলেছে বাগানে। রিলকের ভাষায় মাধ্বী মহোৎসবে! দূরন্ত তাদের সাজ। কফ ও কলারওয়ালা কামিজ। রূপোর বকলস আঁটা শাইনিং লেদারে যেন মুখ দেখা যায়। রেস্ত যাদের কম, তাদের পায়ে ইন্ডিয়া রাবার ও চায়না কোট। এলবার্ট ফ্যাশানের বাঁকা টেরি তে কাটা সিঁথি। উত্তুরে হাওয়া যদি দেয় তবে ক্রেপ বা এন্ডির চাদরও।সদ্য পাশ হওয়া আইনের চুলোর দোরে আগুন। মদের দোকানের সদর দরজা সন্ধ্যের পর বন্ধ, তো হয়েছেটা কী? সেই দুঃখে বঙ্গপুঙ্গবেরা কি খালি হাতে ফিরবেন নিজ গৃহে? নিজ শয্যায়? নিজ স্ত্রী সান্নিধ্যে? এমন অলুক্ষুণে কাজ হয় নাকি বাপু! না, খদ্দেররা খালি হাতে ফিরছেন না। পাঠক এ সেই সুসময়, যার বর্ণনায়, টেকচাঁদ ঠাকুর জানিয়েছিলেন, ‘কলিকাতার যেখানে যাওয়া যায়, সেইখানেই মদ খাওয়ার ঘটা। কি দুঃখী, কি বড় মানুষ, কি যুবা, কি বৃদ্ধ সকলেই মদ পাইলে অন্ন ত্যাগ করে’।
জোড়াসাঁকোর ঠেকের দরজা খোলা অনেক রাত পর্যন্ত। মেছোবাজারেরও। সর্বত্র ফরফর করে ফুটছে ইংরেজি মিশেল বাংলার খই। ফুটছে রাতচরা হুল্লোড়, বটকেরা। শৌখিন কুঠিওয়ালা সাহেবরা একটু জলযোগ সেরে বসেছেন এস্রাজটি নিয়ে। রেস্তহীন গুলিখোর গেঁজেরল মাতালরা আর করে কী। লাঠি হাতে তাদের অনেকেই কানা সেজে ঘুরছে মৌতাতের সম্বলটুকু খুঁজতে। ‘অন্ধকে কিছু দান করো গো বাপ’ – তাদের সেই করূণ কন্ঠস্বর ছাপিয়ে যাচ্ছে রাস্তার দুপাশের বাড়ীর কিছু খেমটার তালিমের আওয়াজে। তা তা ধিন তা। শনিবার মহারাত এগোচ্ছে রবিবার ভোরের দিকে। সুতানুটির পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসে মিলে মিশে গিয়েছে কোহল, বেলি আর আতরের গন্ধ।
মদ্যপায়ী বঙ্গবাসী পদ্যপায়ী জীব : অভিষেক সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৮ অক্টোবর ২০১৪ | ১৩৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শৈশব ব্যাপারটা নিয়ে আমার বিশেষ আদিখ্যেতা নেই। গেছে- বাঁচা গেছে, আপদ গেছে। বাঙালির শৈশব(অন্তত আমি যখন শিশু ছিলুম) তো ঠিক অ্যালিস বা চার্লির শৈশব নয়। কোনও নার্নিয়ার গপ্পো নেই। শিশু অর্থাৎ বারোয়ারি দুচ্ছাই! যেই না সিলিং-এর নুরনকশায় একটা হিজিবিজবিজ দেখতে পেয়েছে, অথবা ব্যাকরণ শিং-এর সঙ্গে দু’দণ্ড আপন মনে কথা বলতে বসেছে – সবে মনে হয়েছে, দূর এইখানটায় হ য ব র ল ফেল, আমি হলে তো এইটা বলতাম – সাতপাঁচ ভেবে যেই না খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠতে যাবে,অমনি কোথ্থেকেকে এক হুমদো কাকীমা এসে, ‘ওমা! আপন মনে কী বিড়বিড় করছিস?’ বলে গাল টিপে দিয়ে চলে যাবে। তুমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছ তাতে কারও কিছু যায় আসে না, তোমার কোনও নির্জনতা নেই। সর্বক্ষণ গোটা দুনিয়া তোমার ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে, তুমি উলঙ্গ, ল্যাংটো। তোমার যে কোনও নিরিবিলিকে, একলাযাপনকে দুনিয়ার সামনে বেপর্দা করে দেওয়া যায়। বাবা সিগারেট খাওয়ার সময় বলবে, ‘বড়রা খায়’; চপ-মুড়ি খেতে খেতে রোববারের সিনিমা চোখে মাসিমা বলবে, বড়রা দেখে; মধ্যকৈশোরে পা-রাখা দিদি বাড়িতে তুমি থাকলে আরামসে বয়ফ্রেন্ডকে ডেকে নেবে, ফোনে বলবে; একা আছি’। তুমি নেই চাঁদ, তুমি আসলে একটা ছায়া। তুমি ভোট দাও না, দেশের সেবায় মিছিল করো না, বন্যাত্রাণ কি বিচিত্রানুষ্ঠানে চাঁদা দাও না, মাধ্যমিকে ফার্স্ট হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর করুণা কুড়োও না, তুমি জাস্ট নেই।
এনরেগা আন্দোলন ও টিম আন্নার আন্দোলনের সাফল্য ।।। : অরূপা মহাজন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ | ৭৬৯ বার পঠিত
ভারত সরকারের অনুসৃত "নিও লিবারেল' অর্থনীতির ফলে ভারতীয় সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ভৌগোলিক-জনগোষ্ঠীগত ও শ্রেণিগত অসাম্য, দরিদ্রতা ও রোজগারহীনতা তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিও লিবারেল গ্রোথ মডেলের "ট্রিকল ডাউন এফেক্টের' অসারতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে । সমাজের মুষ্টিমেয় ধনকুবেরদের ধনভাণ্ডার ক্রমাগত স্ফীত হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজের গরিষ্ঠাংশ দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে গ্রোথরেট বৃদ্ধির সুফল স্বাভাবিকভাবে বাজারের নিয়মে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পৌঁছে যাওয়ার দাবির অন্ত:সারশূন্যতা প্রমাণ করে দিয়ে এক ক্ষুদ্র সচ্ছল অংশের মধ্যেই আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। বাজারচালিত উন্নয়নের পথ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পরম্পরাগত রুজি-রোজগারের মাধ্যমকে কেড়ে নিচ্ছে, সেজের মত ব্যবস্থাগুলির ফলে কৃষকদেরকে হারাতে হচ্ছে তাদের চাষের জমি, বিকৃত উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি গ্রাম-সমাজকে করছে বাস্তুভিটেহারা, গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে রুজি-রোজগারের সন্ধানে শহরমুখী প্রব্রজনের ফলে শহরে বিস্তৃত "ঘেটোগুলি' গড়ে উঠছে, উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ লুণ্ঠন প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে পরিবেশ দূষণের চরম বিপদ ডেকে আনছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ অহিংস থেকে সহিংস বা তার উল্টো কিংবা এই দুটোর মিশ্রণের বিভিন্ন রূপ, মাত্রা ও ব্যাপ্তির বিদ্রোহ যে গড়ে তুলবে তাই স্বাভাবিক। সচেতন কিংবা স্বত:স্ফূর্ত এই বিদ্রোহগুলিই আমাদের নীতি-নির্ধারকদের তাদের অনুসৃত জনবিরোধী পথে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়, বাধ্য করে থমকে দাঁড়াতে কিংবা সাময়িকভাবে পিছু হঠতে।
রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে হাসান আজিজুল হক : সাক্ষাৎকারঃ মুহিত হাসান
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ | ১২৩৬ বার পঠিত
ঐ যে স্কুলপড়ুয়া আমার যে বড় ভাই ছিলেন, চাচাতো ভাই---তাদের মনে হয় পাঠ্য ছিলো একটা বই---সে বইটা গল্পগুচ্ছ। কিন্তু আমার স্মৃতিতে এতটা স্পষ্ট নেই যে পুরো গল্পগুচ্ছের সব গল্পই---প্রথম খণ্ডে অন্তত---সব গল্প থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না---তিন খণ্ডে তো পরবর্তীকালে গল্পগুচ্ছ বেরিয়েছে। প্রথম খণ্ডেরও সব কটি গল্প ছিলো কিনা তাতেও আমার সন্দেহ। আমার মনে হয়, প্রথম খণ্ড থেকে কিছু গল্প---সাত-আটটা গল্প হতে পারে আরকি--- আলাদা করে নিয়ে র্যাপিড -রিডার ধরণের কিছু একটা করা হয়েছিলো। রবীন্দ্রনাথেরই গল্পগুচ্ছ---তার মধ্যে যে গল্পগুলো ছিলো স্পষ্ট মনে আছে আমার। এবং যতদূর মনে হয় প্রথম খণ্ডের দুটো তিনটে গল্প সেখানে ছিলো না। সে জন্যই বলছি, গল্পগুচ্ছেরও ভেতর থেকে বাছাই করা কিছু গল্প। দ্রুতপঠনের জন্যে এ বইটা তৈরি করা হয়েছিলো। এই বইটা, যত্রতত্র যেখানে সেখানে পড়ে থাকতো। আমার ঐ ভাইয়ের পড়াশোনায় তো তেমন মন ছিলো না। বইপত্র কোথায় কী থাকত সেটার খবর রাখতেন না। এই গল্পগুচ্ছের প্রথম মলাটটা নেই। মলাটটা উঠে চলে গেছে, শুধু গল্পগুচ্ছ লেখা আছে---এটুকু মনে আছে। আর যত্রতত্র পড়ে থাকতো এটাও মনে আছে। কখনো হয়তো ঢেঁকির কাছে আছে, ঢেঁকিটা আছে উঠোনে। আঙিনার একপাশে ঢেঁকি, সেই ঢেঁকিটার ওপরে। কখনোবা ঢেঁকিটার পাশে। কখনো মাটির খুব চওড়া বিস্তৃত যে তাওয়া, সেই তাওয়ার কোনো একটা জায়গায়।
কবিগানের বিলুপ্তি ও কবিয়াল মদন সরকার : মুজিব মেহদী
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ | ৮৩৯ বার পঠিত
নেপথ্যে মুখস্থবিদ্যার একটা মহিমা আছে সন্দেহ নেই। কিন্তু যখন একপাক্ষিক গায়ন নয়, সতত জারি করাই আছে যুদ্ধ, তখন তো আর কেবল মুখস্থ জ্ঞান ঝাড়লে হয় না। প্রতি মুহূর্তে নতুন করে পদ বাঁধতে হচ্ছে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য পদবন্ধাকারেই আরেকটা প্রশ্ন ছুড়তে হচ্ছে। এই সহজাত কবিত্বে তাঁদের প্রতি যারপরনাই শ্রদ্ধাবিনত হতে হলো। মনে হলো, এ ক্ষমতা অপরিসীম। বাক্যে-বাক্যে, কখনো তা সম্ভব না হলে অবশ্যই পরের বাক্যের সাথে একটা বলপ্রয়োগহীন অন্ত:মিল থাকছেই। সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হলো এর স্ফূর্তিটা। পরে জেনেছি এসব কবিতার সবই তাঁরা তৎক্ষণাৎ বানান না, এর কিছু কিছু আগেই তৈরি করা, সময়মতো যা উপস্থাপন করেন মাত্র। তবে উপস্থাপিত সব পদই যে তা নয়, সেটা বোঝা যায় তাৎক্ষণিকভাবে উত্থাপিত প্রশ্নের সাথে সংগতি স্থাপনের উপযোগিতা দেখে। এসবে যথেষ্টই পারঙ্গম মনে হলো তাঁদের, যে স্ফূর্তি নবীন কবিতাকর্মী আমার তখনো নেই (এখনো কি আর আছে!)।
লা টোম্যাটিনো : সুমন্ত মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ | ১১০৯ বার পঠিত
মেয়েদের ইজ্জত-সিকিউরিটির অজুহাত দেবেন না। ওরা বলেই দিয়েছে, প্রচুর বাউন্সার রাখবে, কেউ দুষ্টুমি করলেই ঘেঁটি ধরে বাইরে বের করে দেবে। অফিস টাইমের মেট্রোতে লোকে যা হাত চালায়, তার থেকেও বেশি সমস্যা হবে ওখানে গেলে?
দেওয়ালিতে গাদা গাদা প্রদীপ জ্বলে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং হয় না তাতে? দুর্গাপুজোর ভাসানে গঙ্গার জল নোংরা হয় না? আপনার পাড়ার পুজোর বাজেট কত? এক্সমাস কে তো আমরা কবেই নিজের করে নিয়েছি, টমেটো খেলাতেই দোষ? আর, ইকনমিক্স না বুঝুন, এটুকু তো বোঝেন, ডিমান্ড বাড়লেই দাম বাড়বে? আজ পনেরো টন, কাল পনেরোশো টন, টমেটো চাষীদের হাল ফিরে যাবে, এটুকু বুঝছেন না?
উত্তরবঙ্গ - ১৩ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২০ এপ্রিল ২০১১ | ১১৭৪ বার পঠিত
আমরা দুই বিরহী প্রেমিক চার বছরের মাথায় সেই সকালে প্রথমবারের জন্য মর্নিং ওয়াক করতে বেরোলাম। চা-বাগানের মাথায় হাল্কা লেপের মত জড়িয়ে আছে কুয়াশা, তার বুক চিরে হুশ্-হুশ করতে করতে বেরিয়ে গেল আসামগামী কোনও এক্সপ্রেস ট্রেন, কিংবা কে জানে, কামরূপ বা তিস্তা-তোর্সা ঢুকল বোধ হয়। আমরা লেডিজ হস্টেলের দিকের রাস্তাটা ধরলাম। সারা ক্যাম্পাস ঘুমিয়ে, কেউ দেখবে না, কেবল কিছু স্বাস্থ্যসচেতন প্রফেসরদের সাথে দেখা হয়ে যাওয়া ছাড়া, তা, তাতে আর কবে ফোর্থ ইয়ার ভয় পেয়েছে!
কলকাতার কানাচে ২ -- নিউজ চ্যানেল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০১১ | ১১৮৮ বার পঠিত
একথা ভাবলে ভুল হবে, স্রেফ আঁতেল সাহিত্য আর গ্রুপ থিয়েটার নিয়েই নিউজ চ্যানেলের সমস্ত মাথাব্যথা। এই জাতীয় এলিটপনাকে কবেই নিউজ চ্যানেল ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। ভোটে যেমন, টিআরপিতেও তেমনই একজন দর্শকের একটিই ভোট। তিনি রোগা না মোটা, লম্বা না কালো, আঁতেল না হাড়হাভাতে, তাতে কিস্যু যায় আসে না। এই ব্যাপারে নিউজ চ্যানেল পরিপূর্ণ উত্তরাধুনিক। শিল্পের কোনো রকম হায়ারার্কিতেই তার বিশ্বাস নেই। তাই শুধু এলিট সাহিত্য বা শিল্প নয়, জনতার দীর্ঘ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারও আজ বাংলা নিউজ চ্যানেলেরই হাতে। নতুন মোড়কে বাংলা লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ বিস্মৃতপ্রায় ফর্মকে তারা তুলে এনেছে জনতার দরবারে, যার নাম খেউড়। এবং এর অবিরত পরিবেশনায় বাঙালি দর্শককুলকে করে তুলেছে মুগ্ধ ও মোহিত।
একাত্তরের অ্যান্টিথিসিস - লাশগণনার ভূতুড়ে ইতিহাস ( প্রথম কিস্তি) : ফারুক ওয়াসিফ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৫ এপ্রিল ২০১১ | ৭১৬ বার পঠিত
শর্মিলা বোসের "সিভিল ওয়ার' তত্ত্বের ভুল হলো তা পাকিস্তানকে একটি জাতিরাষ্ট্র ভেবেছে এবং মুসলমানিত্বকে সেই জাতিরাষ্ট্রের ঐক্যসূত্র ধরে নিয়েছে। যে পাকিস্তান মুসলমানদের একজাতি বলেছে, সে নিজেই আবার বাঙালি মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েপ্রমাণ করেছে, তারা এক জাতি নয়। ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম ঐক্যটা কংগ্রেসি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাময়িক রাজনৈতিক কৌশল ছিল, এবং রাজনৈতিক কারণেই হিন্দু জমিদার শ্রেণীর ভীতি অপসারিত হওয়ায় ঐক্যটাও প্রয়োজন হারিয়েছে এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে। একে দেশভাগ বলে না, বলে ভাঙ্গন এবং তা রাষ্ট্রের ভাঙ্গন। এর মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্র পেয়েছে তার আসল রূপ। যে রূপটা বণিক-সামরিক পাঞ্জাবি এলিটতন্ত্রের, যা ব্রিটিশ-মার্কিনের ঔপনিবেশিক জের বহন করছে, ঔপনিবেশিক ব্রিটেন আর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার উত্তরাধিকার ও রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে। আর বাংলাদেশের আবির্ভাব এই জোটেরই বিরুদ্ধে। যে কোনো রকম উপনিবেশিকতা ও আঞ্চলিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে ভাষাভিত্তিক, সেক্যুলার, কৃষকমেজাজি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে। এটাই নিশ্চয় এই রাষ্ট্রের মকসুদে মঞ্জিল নয়, তবে সেটা অন্য আলোচনা। এখন কেবল এই সত্যটা আমাদের মনে থাকা চাই দ্বিজাতিত্ত্বের মিছা আশা এবং ভারতবর্ষীয় একজাতিতত্ত্বের মায়ার নাগপাশের বাইরে এর আবির্ভাব হয়েছিল। আর মান্য করা চাই যে, এই রাষ্ট্রের ভিত নির্মিত হয়েছে সংগ্রামে, রক্তে, অশ্রুতে আর আগুনে। যার সম্মান ও সার্থকতা আজ অবধি আমরা দিতে পারি নাই। সংশোধনবাদী ইতিহাস চর্চা এরই সুযোগ নিচ্ছে এবং নিতে থাকবে।
দেবকী বসুর 'কবি' - একটি অটেকনিকাল পাঠ (নবম কিস্তি) : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৫ এপ্রিল ২০১১ | ১৫৭৭ বার পঠিত
ঠাকুরঝির উপর ওঝার অত্যাচারের তীব্র সঙ্কটের মুহূর্তে, রাজনের প্রশ্নে, সে উত্তর দেবে, হ্যঁ¡, সে ঠাকুরঝিকে ভালবাসে, কিন্তু সেই বাক্যেও থাকবে একটা "কিন্তু'। এই "কিন্তু' বেয়ে সে চলে যাবে, "জাত', "ঘর' ইত্যাদি প্রশ্নে। তার নিজের বাসনার একটা পরোক্ষ উল্লেখ থাকবে, যখন নিতাই রাজনের কাছে বলবে, বৃন্দাবনের ঘর সে ভেঙে দিতে চায় না, তাহলে বৃন্দাবনের বুকে সেই একই ব্যথা বাজবে, যা তার নিজের হচ্ছে। এই বেদনা হচ্ছে কেন? বাসনা অপরিপূরণে। তাই এই ভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে নিতাইয়ের বাসনা। কিন্তু তাও দেখুন, "জাত', "বিয়ে' বা "ঘর' ইত্যাদি সামাজিক ভাবে প্রদত্ত ধারণার নিরিখে। মুক্ত স্বতন্ত্র একটি ব্যক্তির নির্জলা বাসনার আকারে, যে ভাবে এসেছিল ঠাকুরঝির উচ্চারণ, আদৌ সেটা আসে না পুরুষ-অবস্থান থেকে। এই জায়গাটা বারবার ভাবায় আমায়, সামাজিক অভিজ্ঞতার নিরিখেও। আমার মনে হয়, সিমোঁ দ বোভোয়ার নিতান্ত ভুল দিয়েছিলেন বইয়ের নামটা। নারী সেকেন্ড সেক্স নয়, ফার্স্ট সেক্স। প্রথম লিঙ্গ নারী। যেখান থেকে নারী বা পুরুষ দুই লিঙ্গই জন্মায়। আমার ভীষণ ঈর্ষা হয় নারী অবস্থানকে, যে জন্ম দেওয়ার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। একটিও মৌলিক পুরুষ অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা নেই যা নারীর হতে পারে না কিছুতেই। কিন্তু দুটি মৌলিকতম অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি নারীর আছে যা কিছুতেই পুরুষের হতে পারে না। এক, গর্ভধারণ ও জন্ম দেওয়া। আর দুই, স্তন্যপান করানো।
'বনাম' চয়নের বাহির? : দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ এপ্রিল ২০১১ | ৮১৬ বার পঠিত
এটা একটা গোদা হিসেব- সংখ্যালঘুর ডলার বিতরণী জয়ের হিসেব। তাই, কেউ কেউ মনে করছেন, দরকার নেই বাপু- এমন তিলকে তাল করে পয়হা নষ্ট করার!! আর সংখ্যালঘু অতিধনী যখন আগেই ঠিক করে রেখেছেন, ডলার দিয়ে কোনো পার্টিকে জেতাবেন, তা হলে আর ইয়ের এপিঠ ওপিঠ এর বনাম বাইনারি (দুইয়ের লড়াই, এখানে দুইয়ের মধ্যে আবার কোনো গুণগত অমিল নেই) নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন কি? ইভিএমে একটা "ক্যানসেলড' বোতাম দিয়ে দিয়ে দাও না বাবা! পার্টির লোকেরা বড্ডো জ্বালাতন-পোড়াতন করে ভোটের দিন: "ভোট দিতে চলুন- এটা আপনার অধিকার!' আরে নিকুচি করেছি অধিকারের!!! সরকার বাহাদুর আমার অন্য অনেক অধিকার দেন না, তা পেতে গেলে দীর্ঘমেয়াদী মামলা মোকোদ্দমা করতে হয়, আর এই তো ভোটের অবস্থা!!! তার থেকে "বাতিল' বোতাম টিপে আসি চুপচাপ। পার্টি করা ছেলেপিলে বা মেয়েরা বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়াবে।
বিহুঃ অসমিয়া সমাজের আয়ুরেখা নির্মাণের এক সংক্ষিপ্ত ইতিকথা : সুশান্ত কর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ এপ্রিল ২০১১ | ৯৯৫ বার পঠিত
এই যে "নামরে জাত' - জাত কিন্তু বিহু গানের এক রকমফেরের নাম। তেমন কোনো শাস্ত্রীয় বিধিবিধান না থাকলেও স্থানে কালে বিহু নাচের যেমন তেমনি গানেরও বেশ রকমফের প্রচলিত রয়েছে । বিহু গানের ঘোষা, পদ, যোজনা, চুটি, বা খন্ড ছিগা নাম , যোরা নাম, জাত (জাত নাম), বহুয়া নাম ইত্যাদি বেশ ভাগ রয়েছে। চুটি মানে ছোট, ছিগা মানে ছেঁড়া, নাম কথাটার অসমিয়া অর্থ গীত , এসছে বৈষ্ণব পরম্পরার থেকে। এই চুটি নামই মূল বিহু। শুরুতে শুধু এগুলোই ছিল। সাধারণত এগুলো চার পংক্তির স্তবক হয়। চুটি নাম দিয়ে বিহুনাম "পকি উঠে' মানে জমে উঠে। বাংলা কবির লড়াইর মতো বিহুতে জোরানামের প্রচলন পরবর্তী ঘটনা । লোকসংস্কৃতির গবেষকেরা একে কী বলবেন জানিনা । এ হলো বিহুর মূল কারক থেকে অপসারণ বা বিস্তার। জোরানামের সময় অব্দি এসে তরুণ জিজ্ঞেস করছে, বাঁহরে আগলৈ চাই পঠিয়ালো/ বাঁহর কোনডাল পোন ( সোজা-লেখক)/ সঁচাকৈ সুধিছো মিছাকৈ নক'বা / তোমার মরমিয়াল কোন? । তরুণী যেন জলের ঘাটে দাঁড়িয়ে জলাজমিতে মহিষ চরাতে ব্যস্ত তরুণকে শুনিয়ে জবাব দিচ্ছে: তিরোতার জনম দি বিধাতাই স্রজিলে/ পুরুষর লগতে যোর/ আয়ো লোকর বোপায়ো লোকর/ তোমাকে বুলি যাওঁ মোর।
ক্ষুদ্রRিণের বৃহৎ বাণিজ্য : আনু মুহম্মদ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১২ এপ্রিল ২০১১ | ৬৯২ বার পঠিত
সিডরের ভয়ঙ্কর আঘাতে যে লাখ লাখ মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতা। সম্প্রতি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে একশনএইড পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৪২টি ক্ষুদ্রঋণদানকারী সংস্থা সেসব অঞ্চলে কাজ করছে এবং ১৫ লাখ মানুষের কাছে প্রায় ১ হাজার ২শ কোটি টাকা ঋণ আছে। এসব সংস্থার মধ্যে ব্র্যাক, আশা ও গ্রামীণ ব্যাংকও আছে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ এতই প্রবল ছিল যে, অনেকেই প্রাপ্ত রিলিফ সামগ্রী, সরকার প্রদত্ত গৃহনির্মাণ সুবিধা বিক্রি করে কিস্তি শোধ করেছেন। অনেকে নতুন ঋণ নিয়ে পুরনো কিস্তি শোধ করেছেন। এই চিত্র অস্বাভাবিক বা বিচ্ছিন্ন নয়। গত বছরে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণাপত্রে লামিয়া করিম নাকছাবি গরম্ন, মুরগি, ঘরের টিন, আসবাবপত্র বিক্রি করে ঋণের কিস্তি পরিশোধের একাধিক উদাহরণ দিয়েছেন। এ ধরনের বহু ঘটনার সাক্ষী বহু গবেষক ও সাংবাদিক যার অল্পই প্রকাশিত।
কী করি : পবিত্র ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১২ এপ্রিল ২০১১ | ৮৮৫ বার পঠিত
তবে ওয়ার্ল্ড কাপটা কিন্তু দেখছিলাম। না না হেলিকপ্টার শট, পাল্লু স্কুপ বা টেরী উংলী দেখতে নয়; আসলে দেখতে চাইছিলাম ধোনি আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা [একমাত্র সচিন বাদে। ভগবানের আবার আঞ্চলিকতা কি?] কি রকম ল্যাজে গোবরে হয়। শরদ পাওয়ার চোট্টামি করে ইডেন থেকে একমাত্র ভালো ম্যাচটা সরিয়ে দুটো পচা পচা ম্যাচ রেখে দিল। কিচ্ছু বলিনি; জাস্ট ওয়াচ করে গেছি। টিভি-রেডিও-খবরের কাগজে বিশ্বকাপ নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতি নতুন কিছু নয়। মেরী বিস্কুটের লাকি কুপনে ফাইনালের টিকিট কিম্বা এক কিলো বাসমতি চালের সাথে গাভাস্কারের সই করা ব্যাটও পুরোনো হয়ে গেছে। থালা-বাটি-গ্লাস, ডেকরেটরের বাঁশ, ডায়বেটিসের বড়ি, সুইসাইডের দড়ি, সাবান-স্যাম্পু-ক্রিম, বনমুরগীর ডিম, দাদের মলম, পার্কারের কলম -কাজের অকাজের সব জিনিসকেই এসময় বিশ্বকাপের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সেটাই রেওয়াজ। ওসব আমরা বড়ো একটা গায়ে মাখি না।
টক-মিষ্টি-ঝাল ভোজ : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | খবর : টুকরো খবর | ১২ এপ্রিল ২০১১ | ১১০৫ বার পঠিত
মা গাড়ি চালাতে জানেনা, কাজেই বাবাকেই বাজার যেতে হবে। মঙ্গলবারে আপিস থেকে ফিরে। অবশ্য মাকে সঙ্গে না নিয়ে গেলে হবে কি করে? কি কি লাগবে তা নিজে দেখে বেছে না কিনলে তার আবার চলেনা। দেশে থাকতে তো আমি আর মা রোজ বাজার যেতাম। ঘুরে ঘুরে ফল, সব্জি কেনা হতো, তাজা শাক,হার্বস কেনা হতো। কারুন আর আরভান্দ নদী থেকে ধরা টাটকা মাছ, চাষীকাকুদের খামার থেকে জ্যান্ত মুরগী। সবে তন্দুর থেকে বেরিয়েছে সেই হাতে গরম লাভাশ আর সাংগাক রুটি কিনতাম আমরা। সত্যি বলতে কি এখন বুঝতে পারি যে সেই ছোটবেলাতেই এই বাজারে ঘুরে ঘুরে আমি দিব্যি একজন খাবারদাবারের সমঝদার হয়ে উঠেছিলাম, এদেশে যাকে বলে "ফুডি'। এখানের বাজারে আর আমার যাওয়া হতোনা। বাবারা কতক্ষণ ধরে বাজার করবে তার ঠিক নেই! মানে, ঠিক আছে আর কি, মায়ের মেজাজের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠিক হবে কতক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি হবে। দেরি হলেই বুঝবেন যা যা খুঁজছিলো তা পাচ্ছেনা, তাই বাজার একেবারে চিরুনী দিয়ে আঁচড়ানো হচ্ছে। আর এসে পরে যা চমৎকার তার 'মুড'! তখন তার সামনে যায় সাধ্যি কার! "এই পোড়া দেশে কি ভদ্রস্থ শাকসব্জিও পাওয়া যায় না?', "হতভাগারা ফলগুলো পাকা অব্দি গাছে রাখাতে পারেনা?',"কি সব মুরগী! ধাড়ি ধাড়ি, স্বাদের "স' নেই!',"কিছুই পাওয়া যায়না তা রান্নাটা হবে কি তোদের মুন্ডু দিয়ে?', "তার ওপরে এই ছাতার মাথা হাঁটু ব্যথা নিয়ে আমি কি করে এতসব উদ্ধার করবোটা কি করে শুনি?' ইত্যাদি মধুর ভাষন আর কি।
সাঁওতালী রবীন্দ্রসংগীত সাঁওতালদের প্রেরণা যোগাবে : মিথুসিলাক মুর্মু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০১১ | ৬৯৩ বার পঠিত
বেশ কয়েকদিন পূর্বে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি রবীন্দ্র সংগীতের সিডি পেলাম, সিডিটি আমার মান্যবর ড. ডেনিস দিলীপ দত্ত আমাকে দিলেন। বাংলা ও সাঁওতালী ভাষায় ভারতীয় সংগীত শিল্পী সারদা প্রসাদ সরেন রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছেন। সম্ভবত তিনিই বাংলা ভাষা রবীন্দ্র সংগীতকে চমৎকারভা?ব সাঁওতালী ভাষায় অনুবাদ করেছেন এবং তাল-লয়, সুর সমস্ত কিছু ঠিক রেখে সঠিক শব্দ চয়ন করেছেন, যা আমাকে এবং আমার সাঁওতাল ভাইবোনদেরকে মোহিত করেছে। যারাই ক্যাসেটটি শ্রবণ করেছেন, প্রত্যেকেই শিল্পীর কণ্ঠে সাঁওতালী রবীন্দ্র সংগীতের অমৃত স্বাদ পেয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলা ও সাঁওতালী ভাষাতে যদি ওই নির্দিষ্ট গানটি করা যায়, তাহলেও অপূর্ব মিল, অপূর্ব সুরের মুর্চ্ছনা ফুটে উঠবে। একই অভিব্যক্তি, একই কথা এবং একই উপলব্ধি ফুটে ওঠে। সাঁওতালী শিল্পী সারদা প্রসাদ সরেনকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি চমৎকার সুরের মোহনায় আদিবাসী সাঁওতালকে উপস্থিত করার জন্যে। বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের সাঁওতালদের গানের নিজস্ব যে অর্ধ শতাধিক স্বতন্ত্র সুর, তাল ও লয় রয়েছে, সেগুলোর মতোই আগামীতে রবীন্দ্রসংগীত জায়গা করে নিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। দেশের মাটির কথা, মানুষের কথা, প্রকৃতির কথা, সৌন্দর্যের কথাগুলোই তো আদিবাসী সাঁওতালদের গানের কথায় পাওয়া যায়।
ভগবান সত্য সাঁই - বিশ্বাস এবং যুক্তির উপান্ত : রাম পুনিয়নি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ মে ২০১১ | ৬৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
যাই হোক, সাঁইবাবার প্রয়াণের পর ক্ষমতাতে উচ্চপ্রতিষ্ঠিত শিম্পাঞ্জীরা মধু খাওয়ার জন্য মৌমাছির মত তাঁর মরদেহের চারপাশে ভিড় জমিয়েছিলেন। কেউ জানেন না, এই রাজ্য বা কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা যে ভীড় জমিয়েছেন - সেটা ব্যক্তি না সরকারী পর্যায়ে! কেউ জানেন না, এই ধরণের সম্মান দেখানো সংবিধান সম্মত কিনা! আমরা সবাই জানি - এ ধরণের বিশ্বাস বা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ব্যক্তিগত স্তরে সংবিধান সম্মত, কিন্তু রাজনৈতিক এবং সরকারী স্তরে নৈব নৈব চ! আমাদের সংবিধান বার বার যুক্তিপূর্ণ চিন্তাকে প্রচার করতে বলে। আব্রাহাম কুভুর এবং প্রেমানন্দের মতো যুক্তিবাদীদের প্রতিবাদ; ক্ষমতার কেন্দ্র, অগ্রাহ্য করেছেন। তাঁদের তোলা প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়া বা কর্ণপাত করার কোনো প্রয়োজন, ওই ক্ষমতাসীনরা, বোধ করেন নি। কোনো একজন, বেশ মনোজ্ঞ মন্তব্য করেছেন এই ব্যাপারে! দুই ধরণের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই ভগবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রথম জনেরা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তাদের পাপ লুকোবার চেষ্টা করে আর দ্বিতীয় জনেরা অকপট কিন্তু প্রথম দলের সঙ্গে কাজ করেন।
দুই তান্ত্রিক গুরুর গপ্পো : অর্পিতা ব্যানার্জী
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৩ মে ২০১১ | ৯৪৭ বার পঠিত
এই পৃথিবীতে দুই তান্ত্রিক গুরু আছে। তাদের নাম হল ধনা আর গণা। তারা তন্ত্রবিদ্যায় খুব পারদর্শী। কী বলছেন? কেমন তাদের তন্ত্রবিদ্যা? বলব, বলব। বলব বলেই তো গপ্পো ফেঁদে বসেছি। কিন্তু তাদের বিদ্যার পরিচয় দেবার আগে তাদের নিজেদের পরিচয়টা আরেকটু খোলসা করে জেনে নিলে বেশ হয়। লোকে বলে ধনা আর গণা হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুই তান্ত্রিক। তবে তাদের মধ্যে কে কার থেকে বড় তান্ত্রিক তা নিয়ে বেশ তর্ক আছে। এটুকু বলে নিই যে বয়সে গণা ধনার থেকে অনেকটাই বড়।
গণার বাবা-কাকারাও কিন্তু তান্ত্রিক ছিল, তারা নানা দেশে তাদের বিদ্যার চর্চা করত, যেমন এথেন্স, স্পার্টা, মেসোপটেমিয়া, ভারত (মানে আজকের ভারত যে ভূগোলে সেইখানে) ইত্যাদি প্রভৃতি। গণা তার গুরুজনদের বিদ্যাকে আরো প্রসারিত করে তাদের মুখোজ্জ্বল করেছে। এখন গণা আজ ইউরোপ তো কাল আমেরিকা তো পরশু ভারত, থুড়ি ইন্ডিয়া করে বেড়ায়। গণার এখন খুব ডিমান্ড। পৃথিবীর সব দেশই গণাকে চায়।
গুরু হবার সহজ গাইড- কী লিখবেন , কেন লিখবেন : সৈকত বন্দোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | | ২৩ মে ২০১১ | ৯৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কঠিন বইপত্তর নিয়ে ফান্ডা লড়াতে চান? বই রিভিউ করে বাজারী গুরুদের মুখে ঝামা ঘষে দিতে চান? পড়ুন "গুরু হবার সহজ গাইড - কী লিখবেন কেন লিখবেন"
পণ্ডিতরা এতদিন আমাদের বুঝিয়ে এসেছেন, বইপত্তর রিভিউ করা খুব কঠিন কাজ। এর জন্য উচ্চমানের ফান্ডা লাগে। লম্বা দাড়ি ও ঝোলা ব্যাগ দরকার হয়। এতদিন আমি-আপনি কঠিন বই নিয়ে লিখতে গেলে ওঁরা "তুই ব্যাটা কী জানিস' বলে সর্বসমক্ষে হ্যাটা করেছেন। বাজারের ব্যাগ থেকে টপাটপ ইংরিজি রেফারেন্স তুলে এনে নাকের ডগায় ছুঁড়ে মেরেছেন। ডানদিকে-বাঁদিকে দেরিদা ও নেরুদা, ফ্রয়েড ও ফুয়েন্তেস ঝেড়েছেন। দূর-দূর করে নিজেদের ঠেক থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বিদেয় করে দিয়েছেন। আমরা, অনধিকারী শুদ্দুরেরা, জুতোপেটা খেয়ে নীরবে ফিরে এসেছি ঘরে।
এই রচনা সেই অপমানিত ও অসুখী আত্মাদের জন্য, যাঁরা আঁতেলদের কাছে এভাবেই আজীবন অপদস্থ হয়েছেন। লাথিঝাঁটা খেয়ে, মুখ চুন করে, দিনের শেষে, বিফলমনোরথ, ফিরে এসেছেন ম্লান কফিহৌস থেকে। সেই সকল বঙ্গভাষী, যাঁরা ব্যর্থ-লেখক, যাঁরা ল্যালা, মূর্খ, চণ্ডাল, অনাথ ও আতুর, তাঁদের এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি ও নতুন জীবনের এক রত্নগুহার গুপ্তধনের সন্ধান দেবার নিমিত্তই রচিত হল ঈশ্বরপ্রদত্ত এই সটীক দশটি বিধান (টীকা বর্তমান লেখকের)। পাতি-পাবলিকরা একে হতচ্ছেদ্দা করলে পাবেন অনন্তকাল নরককুণ্ডের পারপিচুয়াল গরম তেলের ছিটে। দিনে দশবার তেলেভাজা হবেন, ডেলি আপনার মুণ্ডু কেটে আপনারই হাতে ধরিয়ে দেবে বিশালবপু বরকন্দাজরা। আর শুদ্ধচিত্তে নিষ্ঠাভরে অনুসরণ করলেই তুড়ি মেরে প্রবন্ধ লিখবেন। এনি ডে পণ্ডিতদের নাক কেটে নেবেন। ম্যাগাজিনে ম্যাগাজিনে আপনার নাম দেখা যাবে। জীবদ্দশায় যশ ও ধন পাবেন, পরকালে মেনকা-রম্ভা (লেডিসদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা আছে)।
একাত্তরের অ্যান্টিথিসিসঃলাশগণনার ভুতুড়ে ইতিহাস (শেষ কিস্তি) : ফারুক ওয়াসিফ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৩ মে ২০১১ | ৭০৬ বার পঠিত
শর্মিলার থিসিস বা চিন্তা আর পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও তার দেশীয় দোসরদের চিন্তা একাকার হয়ে যায়। এ কারণেই শর্মিলা বোসের ইতিহাস এক বিষাক্ত ইতিহাস। তিনি বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসকেই বদলে দিতে চান। তিনি দিচ্ছেন নতুন সৃষ্টিতত্ত্ব বা জেনেসিস। এটাই তাঁর আগ্রহের মূল প্রণোদনা, তাঁর লক্ষ্য এবং এ জন্য তিনি সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও অরক্ষিত জায়গায় আঘাত করেছেন। জয়া চ্যাটার্জি বেঙ্গল ডিভাইডেড বইয়ে ১৯৪৭ এর বঙ্গভাগের জন্য ভারতীয় কংগ্রেস এবং হিন্দু সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদকে দায়ি করেন, দায়ি করেন তাদের সংখ্যাগুরু বাঙালি মুসলমান কৃষকের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি না করার মানসিকতাকে। আর শর্মিলা বোস করেন তার বিপরীত, পাকিস্তান-ভাগের জন্য অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দোষী করেন, কারণ তা সংখ্যালঘু পাঞ্জাবী শাসকদের অধীনস্ততা মানতে চায়নি। জয়া চ্যাটার্জির কাজ যেখানে প্রগতিশীল অবস্থান থেকে ইতিহাসের বিনির্মাণ, শর্মিলা বোসের কাজ প্রতিক্রিয়াশীল জায়গা থেকে বিনির্মিত বিমানবিক ইতিহাস হয়ে ওঠে। কিন্তু বাংলা ভাগ আর পাকিস্তান ভাগ এক ঘটনা নয়। কারণ বাঙালিরা এক জাতি কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসীরা ধর্মে এক হলেও জাতিতে এক নয়। শর্মিলা বোস তাঁর ঘোরগ্রস্ত চোখে তাদের এক জাতি ঠাউরেছেন বলেই পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী উপনিবেশ কায়েম তাঁর চোখে পড়ে না, বাদ পড়ে যায় একাত্তরের আগের ২৪ বছরের বঞ্চনা ও সংগ্রামের ইতিহাস। এজন্য ই স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়ে যায় "গৃহযুদ্ধ' আর হানাদার ও মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি এক পাল্লায় তুলে পরিমাপ করেন। কারণ তাঁর পাল্লা একটাই, দৃষ্টিও একরোখারকম সংকীর্ণ। একাত্তরের আগের স্বাধীনতা সংগ্রামকে "বিচ্ছিন্নতাবাদী ষড়যন্ত্র' হিসেবে দেখেন বলেই বাঙালিদের ওপর চালানো গণহত্যা ও গণধর্ষণের অভিযোগ হয়ে ওঠে "অতিরঞ্জন' এবং বাঙালিদের বাড়াবাড়ির "মানবিক' প্রতিক্রিয়া।
দেখা হবে ভালোবাসা, বেদনায় : জয়দেব বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মে ২০১১ | ৭৮২ বার পঠিত
কারণ, এটা তো মানতে হবে: হে নিশান, যতোই জীর্ণ হও, হে লাল নিশান, তুমিই তো আমাকে লালন-পালন করেছিলে! তুমি তো আমাকে একের পর এক প্রেম-প্রস্তাব শিরা ছিঁড়ে যাওয়া যন্ত্রণায় প্রত্যাখ্যান করতে শিখিয়েছিলে, শুধুমাত্র রাজনীতির কারণে! তুমিই তো আমাকে যৌবন-দিনে দীর্ঘ-দীর্ঘ নিদাঘ শুধু মিছিলে হাঁটিয়েছো কলেজ-ÏØট্রট থেকে সিধো-কানহো-ডহর! যখন আমার আমার ক্লাসের বন্ধু-বান্ধবীরা সিনেমা দেখতে যেতো, তখন আমি হেঁটেছি গলা-অ্যাসফল্টের রাস্তায়, শুধু তোমার জন্য। ও আমার জীর্ণ লাল নিশান, তুমিই তো আমাকে মুঠো করে ধরতে শিখিয়েছো কবিতা! বলো, কেন আজও আমার উত্তর দিনাজপুরের ডি-সি-এম শুধু কবিতার কথা বলে? কেন আমার রাজ্য-কমিটির সদস্য কবিতার কথা বলে? ও আমার বিবর্ণ নিশান, আমার নিজের ছেলে বড়ো হয়ে কী করবে জানি না, কিন্তু অনেক বামপন্থী ছেলে-মেয়েরা কি একদিন তোমাকে রাঙিয়ে তুলবে না?
দেবকী বসুর 'কবি' - একটি অটেকনিকাল পাঠ (দশম ও শেষ প্রবাহ) : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ৩০ মে ২০১১ | ১৬৭০ বার পঠিত
অন্য কথায় চলে যাচ্ছি, "কবি'-তে ফেরা যাক। কুসংস্কারমুক্ত সীতা থেকে ন্যাশনাল সে?শালিস্ট মহান্ত - পিতৃতন্ত্র এভাবেই দিন কাটাচ্ছিল। এর মাঝখানে বাড়তে শুরু করল মুচি রাজন ডোম নিতাই আর ভোজপুরী মজুর বালিয়ার বাস্তবতা। "কবি' চলচ্চিত্রের জোরটা এইখানে যে সে এই অন্য বাস্তবতাটাকে নিয়ে এল সেই একই পিতৃতন্ত্রের কাছে। দর্শক তো সে-ই যে তারাশঙ্করের পাঠক ছিল, কিন্তু দর্শনীয় গেল নড়ে। যতটা নড়ার সম্ভাবনা ছিল উপন্যাস "কবি'-তে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি করে। তারাশঙ্করের অন্তর্বিরোধ, তাঁর লেখাতেই মহান্তের যে নীল চশমার কথা পেলাম, সেই নীল চশমা দিয়ে তিনি যে নিজেই দেখছেন, তাঁর শিল্পীসত্তার সমস্ত পর্যবেক্ষণ ও আবিষ্কারের পরও, তার অবস্থানই তার চোখে ওই চশমাটা গুঁজে দেয়, এই জায়গাটাই আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে "কবি' চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে। লেখাটা এবার ক্রমে গুটিয়ে আসছে। চলচ্চিত্রে আমরা পৌঁছেছি পঁয়ত্রিশ মিনিটের কিছু বেশি, তার মানে মোট দৈর্ঘের এক তৃতীয়াংশেরও কম। এখনও পরপর দৃশ্য ধরে, উপাদানগুলোকে পরপর স্পষ্টতায় নিয়ে আসাই যায়। কিন্তু কোনও নতুনতর দৃষ্টিকোণ নয়, তা হবে এতক্ষণ ধরে তুলে আনা দৃষ্টিকোণগুলো দিয়েই বারবার আলাদা আলাদা উপাদানকে দেখানো। এবং সেটা এখন আপনারা নিজেরাই করে চলতে পারবেন। আমি এই লেখাটা শুরু করেছিলাম, দেবাশিসের মত আমার ছাত্রস্থানীয় কারুর কারুর জন্যে, কেন "কবি' চলচ্চিত্রটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝাতে, ওই নানা সম্ভাব্য দৃষ্টিকোণগুলো সামনে ধরে দিতে। সেগুলো এতক্ষণে মাথায় বসেই গেছে। এর পরেই আসছে নিতাইয়ের নিমন্ত্রণ, মহাদেব কবিয়ালের কাছ থেকে, দিন প্রতি ছয় টাকা বায়নায়। টাকাটাকে বাজারদরের সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন, মনে করুন, মেলায় এসে যে মালাটা দর করেছিল ঠাকুরঝি, তার খুব বেশি দাম মনে হয়েছিল, সেটার দাম ছিল ছয় পয়সা। এই প্রথম অর্থনৈতিক রকমে সেই স্বীকারটা এসে পৌঁছতে শুরু করল, যেটা এতক্ষণ আমরা সাংস্কৃতিক রকমে দেখছিলাম।
বাদল সরকার এবং : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মে ২০১১ | ৯৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পরাধীন ভারতের অন্যতম সেরা নাট্যপ্রযোজক ভদ্রলোকের নাম রবীন্দ্রনাথ। ইউরোপিয়ানদের এদেশে মঞ্চসজ্জা দেখে যিনি অনুধাবন করতে পারেন বাস্তবতার নাম করে বোকামো করা হচ্ছে এবং যিনি জানেন আসলেই একটি স্টুলকে একই মঞ্চে রাজসিংহাসন থেকে দারোয়ানের বসার জায়গা সব বানানো যায় দর্শকের কল্পনাশক্তির উপরে ভর করে(বাঙ্গালীর কাছে যাত্রা,কথকতায় কল্পনা বিস্তারের পাখা ছিল),তিনিও কিছু কথা বুঝেছিলেন,বলেছিলেন। যেমন গানের ব্যবহারের শক্তি,যেমন মঞ্চসজ্জায় স্বাতন্ত্র্য তৈরী করা,যেমন একটিমাত্র জালের আড়াল দিয়ে রক্তকরবীর গোটা নাটকে যক্ষপুরীকে তুলে আনা ইত্যাদি। তা কল্পনা যদি এতটাই পারে,তাহলে সেই কল্পনা একটি মঞ্চেই আবদ্ধ থাকে কেন? নাটক যদি শিক্ষার মাধ্যম হয়,নাটক যদি সচেতনতার প্রচারক হয়,নাটক যদি সমস্যা আলোচনার একটি নিবিড় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্থান হয় তাহলে সেই নাটক শুধু মঞ্চেই আটকে থাকবে কেন? তাহলে তো মঞ্চ পাওয়া না পাওয়া,তার জন্য বিশেষ কর্তৃপক্ষকে খুশী করা ইত্যাদি হিসেবে, আর দর্শককূল হিসেবে শুধু পরিশীলিত মধ্যবিত্ততেই খেলা শেষ! সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন বাদল সরকার। কিন্তু মঞ্চ বিরোধিতা করেননি। সেটা নিতান্তই অপপ্রচার। আসলে নিজের কাজ নিয়ে শহর-গ্রাম তোলপাড় করে বেড়াচ্ছিলেন। আমাদের নাট্যকর্মীকূলের একটি বড় অংশ অফিস শেষ করে এসে থিয়েটারের মহড়ায় অভ্যস্ত। অভ্যস্ত হাফ বা ফুল ছুটি নিয়ে এসে মঞ্চে অভিনয় করায়। তাঁরা যেমন-তেমন ব্যবস্থায় অভিনয় বা প্রযোজনা করেন না। গোছানো সাজানো গ্রামীণ মঞ্চ নেই। আলো,শব্দের বিশেষ প্রক্ষেপণ নেই খোলা মঞ্চে। মানুষ এক জায়গায় বসে প্রবন্ধ পাঠের মুখ করে দেখছেন না নাটক। আসছেন-যাচ্ছেন,ধরে না রাখতে পারলে হেসে বিদ্রুপ করে চলে যাবেন,পাশেই বিক্রেতারা বিক্রি করে চলেছে,ক্রেতা কিনছে,সেই পরিবেশ তাঁদের সমস্যা করেছে। তাঁদের সমস্যা করেছে বাদল সরকারের শরীরি ভাষা।
কবিতা : প্রীতম বসু
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১৪ নভেম্বর ২০১১ | ৮৩৬ বার পঠিত
দুপুর গেল, বিকেল এল, বন্ধ তবু কক্ষ রে!
""ঘুমিয়ে মেসো পড়ল নাকি?'' বললো বিশে পক্ক রে!
সন্ধ্যে হল, খতম লড়া,
ছ লাইনের ছোট্ট ছড়া!
বললে মেসো, ""কাটিয়ে দিয়ে জীবন লোহা-লক্কড়ে,
"সাতটা কাকে' পড়তে গিয়ে, গেলুম পড়ে চক্করে।'
ওলিতিল ঈন্তের্ফেরেে ্রপ্পিঙ্গ লে্তিওন্স : সলিল বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ নভেম্বর ২০১১ | ৬৬৭ বার পঠিত
লোকে একটা কথা আকছারই বলে, - "ছাত্র ইউনিয়ন বন্ধ করে দাও, ছাত্র ইউনিয়ন দরকার নেই।' এই কথাটার আমি ঘোরতর বিরোধী। অবশ্যই ছাত্র ইউনিয়ন থাকা উচিত। ছাত্ররা রাজনীতি করবে না, এই কথাটা আমি মানি না। কিন্তু সেটা কি রাজনীতি? দলীয় রাজনীতি আর দলের রাজনীতি মনে হয় আলাদা জিনিস। দলীয় রাজনীতি করবে আমি তার বিরোধী, কিন্তু রাজনীতি করবে না কেন? অবশ্যই করবে। আর, যাঁরা বলবেন ছাত্ররা তার উপযুক্ত নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার তারা কিছু জানে না, তাঁদের বলব, কোন জগতে বাস করেন? পৃথিবীর দিকে তাকান। ইতিহাস ভাবুন।
মাওবাদী সম্পর্কে মমতা ব্যানার্জীর সাক্ষাৎকারঃ একটি প্রতিক্রিয়া : অনিন্দ্য পাত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ নভেম্বর ২০১১ | ৮১৯ বার পঠিত
মাইরি বলছি, পিত্ত কিঞ্চিৎ প্রজ্জ্বলিত হয়ে আছে। মানে এতটাই প্রজ্জ্বলিত যে ফোন করে সক্রিয় তৃণমূল কর্মী এক অত্যন্ত ভালোমানুষ বন্ধুকে ঝেড়ে গালাগাল না দেওয়া অব্দি ঠিক শান্তি হল না। ওটা একটা প্রতিক্রিয়া? তাও দিচ্ছে কে? না একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আজ্ঞে হ্যঁ¡, গতকালের (১৪/১১/২০১১) কথা বলছি। তারানন্দের ঐ পশ্চাৎপক্ক সাংবাদিক ভাইটু, যিনি কিনা মাঝেমাঝেই নিজেকে সবজান্তা দে-র সমগোত্রীয় বলে ভাবেন (বলে মনে হয়), অত্যন্ত বাজে বকেন, নিউজ-এর চেয়ে নিজের ভিউজ দিতেই বেশী পছন্দ করেন এবং সবজান্তা দে-র মতই বোঝেনও না যে একটু ভাবনাচিন্তা করা মানুষজন বিমান বসুর পরে শ্রেষ্ঠ খোরাক হিসেবে এঁদেরকে স্থান দিয়েছে - সেই ভদ্রলোকের নেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার এবং তাতে প্রশ্নকর্তা এবং উত্তরদাতা উভয়ের ভূমিকা মিলিয়ে যে টোটাল প্যাকেজটা - সেটা, সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত না হয়ে বলছি, ইয়েতে যাকে বলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
লা জবাব দিল্লি - এক্সট্রা কোচ ৫ঃ ই-গভর্নেন্স কারে কয়? : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১১ | ১২১৮ বার পঠিত
আজ, ২০১১ সালে এই ব্যাপারগুলো অনেক বেশিমাত্রায় অ্যাডপ্ট করে নিয়েছে মিনিস্ট্রির এমপ্লয়ীরা। অন্য সব মিনিস্ট্রির কথা জানে না গ্যঁ¡ড়া, তবে পাওয়ার মিনিস্ট্রির নিজস্ব ইনট্রানেট আছে, নিজস্ব ইমেল সিস্টেম আছে, এমনকি আর ক্যাশ সেকশন থেকে আগেকার মত স্যালারি স্লিপও নিতে হয় না, ইন?ট্রানেটে লগিন করলে সেখানেই ই-পেস্লিপ দেখতে পাওয়া যায়, দরকারমতো ডাউনলোডিয়ে নিলেই হল। ইন?ট্রানেটে সরাসরি চলে আসে এনআইসি-র ডেটা, নর্দার্ন গ্রিড ইস্টার্ন গ্রিড সাদার্ন গ্রিড ইত্যাদির ডেটা, সরাসরি সেখান থেকে কপি করে তুলে নেওয়া যায় প্রয়োজনীয় তথ্য।
শিক্ষা বিষয়ক : সলিল বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ জুন ২০১১ | ৭৩২ বার পঠিত
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করা, ভাবনাচিন্তা করা, প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার সঙ্গে জড়িত থাকা, ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে এই উপলব্ধি হয়েছে যে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা বলে যা প্রচলিত, তার সঙ্গে "শিক্ষা' র সম্পর্ক খুবই কম। স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির এই সিস্টেমটাকে বরং বিদ্যালয়-ব্যবস্থা বলা যেতে পারে। এই ব্যবস্থাটিতে শিক্ষা বস্তুটি অনুপস্থিত থাকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা থেকে কিছুই শেখা হয় না তা বলে দেওয়া যায় না। যদিও কেউ কেউ তাই বলেন। এমনিতে ক্লাসরুমে বসে শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রদের যেটুকু ভাবের বিনিময় ঘটে, তাতে ছাত্র ও শিক্ষক উভয়েই যে জ্ঞানার্জন করেন, তা হয় ঘটনাচক্রে। তাই বলা যেতে পারে এই ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও ছাত্ররা একেবারে কিছু শেখে না তা নয়। তবে সে শিক্ষার পেছনে এই প্রচলিত ব্যবস্থার অবদান কম। "শিক্ষা' যেটুকু হয় সেটা হয় ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে কিছুটা বাইরে থেকে।
দিঘি থাক মাঝখানটিতে : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুন ২০১১ | ১৫৪০ বার পঠিত
এদেশের সমাজ, যেকোনো উন্নত সমাজের মতোই, প্রকৃতির দেওয়া জলকে ব্যবহার করবার বহু বহু উপায় জানত। পুকুর তার একটি। নদী থাকে নদীর জায়গায়, তার কিনারে বসে শহর, গ্রাম, শস্যের ক্ষেত। কিন্তু যেখানে বড় নদী নেই? সেখানে জলকে কীভাবে কাছে আনবে মানুষ? সেইসব কাছের জলভাণ্ডার ছিল পুকুর-দিঘি-সরোবর। এদেশে একটা বিরাট সুবিধা এই যে বর্ষার এক নির্দিষ্ট সময় আছে। প্রায় দিন তারিখও ঠিক আছে তার। যে অতিথি অঘোষিত, হঠাৎ আসেন, তাকে নিয়ে গৃহস্থ বিব্রত হতে পারেন, কিন্তু যে অতিথি আগাম খবর দিয়ে, তূরী-ভেরী বাজিয়ে 'রাজব্য উল্বতধ্বনির' প্রবেশ করেন তাঁর জন্য তৈরি থাকার সময় পাওয়া যায়, আয়োজন করা যায়। শেষ বসন্তে জল কমে যাবার পর থেকে পল্লির মানুষেরা নিজের নিজের এলাকার পুকুরের পাঁক কেটে তুলতেন। সেই তোলা পাঁকের কিছু অংশ নিয়ে সারা বছরে ভাঙাচোরা পাড়ের মেরামতি হত। বাকিটা বয়ে নিয়ে যেতেন নিজেদের জমিতে। গ্রীষ্মে শুকনো খরখরে হয়ে যাওয়া সেই পাঁক মাটি বর্ষার আগে আগে 'মই দিয়ে' খেতে ছড়িয়ে দিলে খুব ভালো সার হয় সেকথা জানা ছিল। সম্পূর্ণ গৃহস্থেরা পুকুর কাটাতেন, কেবল নিজের বাড়ির চৌহদ্দিতে নয়, বাইরেও। জল দান করা বড় পূণ্য কাজ ছিল।
পরমাণু দুঃস্বপ্ন আজও অব্যাহত (হেলেন ক্যালডিকটের সাক্ষাৎকার ) : জিতেন নন্দী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুন ২০১১ | ৭৯৭ বার পঠিত
হ্যঁ¡, আমি পারি। চুল্লিতে ইউরেনিয়াম ফিশনের সময় প্রায় দু'শ নতুন পদার্থ তৈরি হয়। এর সবগুলোই তেজস্ক্রিয় এবং মানুষের তৈরি। এর কোনোটা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী, কোনোটা কোটি কোটি বছর বেঁচে থাকে। এখন এর মধ্যে অনেকগুলো এক্সরে-র মতো গামা তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণ করে। কিন্তু অনেকেই তা করে না। অতএব যখন বাইরে থেকে আসা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করা হয়, অর্থাৎ আপনাকে একটা তেজস্ক্রিয় পদার্থের আবরণে ঢেকে ফেলা হয়, আপনি এক্স-রে ধরনের কোনো বাইরে থেকে আসা মাত্রা পান। কিন্তু এটা সকলের বোঝা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি আপনি প্লুটোনিয়াম, আমেরিসিয়াম, কিউরিয়াম বা তেজস্ক্রিয় আয়োডিন নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেন, যদি পদার্থগুলো খাদ্য-শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরে --- অ্যালগি, ক্রাস্টাসিয়ান, ছোটো মাছ, বড়ো মাছ, মানুষ ---- অথবা উদ্ভিদ, যেমন লেটুস, পালং, ঘাস থেকে গরুর শরীরে ও গরুর দুধে --- জৈবগতভাবে সঞ্চিত হয়, তাহলে আপনি আপনার শরীরের ভিতরে এইসব পদার্থ গ্রহণ করে নিচ্ছেন। এগুলো থাকছে, যেমন স্ট্রনশিয়াম ৯০ জমা হচ্ছে হাড়ে। সেখানে এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিমাণ একটি পরিচালন-জিনকে একটি কোষে পরিবর্তিত করে, যার থেকে পাঁচ বছর পরে আপনার লিউকোমিয়া হয়, কিংবা পনেরো বছর পরে হয় ক্যানসার। আর এই ব্যাপারটা অন্য সকল পদার্থের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই লোকে অস্পষ্টভাবে মাপা কিছু বাইরে থেকে আসা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার সঙ্গে অভ্যন্তরে বিকিরণকারী তেজস্ক্রিয়তার তফাতটা বোঝে না। আর তাই সকলকেই আভ্যন্তরীণ বিকিরণকে বুঝতে হবে। আমি আমার "নিউক্লিয়ার ম্যাডনেস' এবং সম্প্রতি প্রকাশিত "নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইজ নট দ্য আনসার টু গ্লোবাল ওয়ার্মিং' বই দুটোতে এই বিষয়টা নিয়ে লিখেছি যাতে সকলে বুঝতে পারে।
আজম খানঃ প্রথম প্রজন্মের জাগর পুরুষ : ফারুক ওয়াসিফ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৬ জুন ২০১১ | ৯৮৩ বার পঠিত
লেবানিজ কবি খলিল জিব্রান লিখেছিলেন, 'বিদায়ের সময়ই মানুষ বুঝতে পারে তার সত্যিকার ভালোবাসা'। আজম খানের বিদায়ের লগ্নে তাই বুঝতে পারি, তিনি কী ছিলেন। সাংস্কৃতিক এলিটরা তাঁকে নেননি, শিল্পবাদী বুর্জোয়া সংস্কৃতির কাছেও তিনি 'রাস্তার ছেলেই' ছিলেন। এবং রাস্তা থেকে যা উঠে আসে, মুক্তিসংগ্রামের প্রেরণা থেকে যা জাত হয়, তার মধ্যে প্রতিরোধী উপাদান থেকেই যায়। 'ব্ল্যাক পাওয়ার' মতবাদের প্রবক্তা, ত্রিনিদাদীয়-মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ রাজনীতিবিদ কওয়ামে তুরে মনে করতেন, সকল নিপীড়িতের সংস্কৃতি হলো প্রতিরোধের সংস্কৃতি...তাই নিপীড়িত জনগণ থেকে উঠে আসা শিল্পীকে অবশ্যই তার শিল্পের আদলে প্রতিরোধের আদলকে ধারণ করতে হয়'। একাত্তরের বেহাত বিপ্লবের বিপ্লবী, হায় বাংলাদেশের হাহাকার জাগানো আজম খানকে তাই প্রতিরোধী চেতনার শিল্পী হিসেবেই ভাবতে হবে। তাঁকে 'গুরু' বলা হয়, কিন্তু তিনি তার থেকেও বেশি কিছু ছিলেন। সত্তর আর আশির দশকের রাগি কিন্তু সরল যুবকদের দুঃখ, হতাশা, ক্রোধ আর প্রেমযাতনাকে তিনি ব্যক্ত করেছিলেন, হয়ে উঠেছিলেন তাদের ভালোবাসার মানুষ।
'জলাভূমিটা বোজানো যেন সত্যিই বন্ধ হয়' : প্রতিমা দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুন ২০১১ | ৬০১ বার পঠিত
আমি প্রতিমা দত্ত, স্বর্গীয় তপন দত্তর ওয়াইফ। গত ৬ মে আমার স্বামীকে নৃশংস ভাবে গুলি করে মারা হয়েছে। বালি লেবেল ক্রসিং-এর ধারে। গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ তিনি একটি জলাভূমি নিয়ে লড়াই করছিলেন। যদিও তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু নিয়েই লড়াই করছিলেন। বালি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক --- তার গ্রাহক সমিতি বানিয়ে উনি লড়াই করছিলেন। যাতে, গ্রাহকরা যে টাকা জমা রাখছে, সে টাকা ফেরত পায়। ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই-এর জন্য গ্রাহক সমিতি বানিয়ে সেখানে উনি লড়াই করছিলেন। জলাভূমি বাঁচাও কমিটি বানিয়ে সেখানে লড়াই করছিলেন। উনি একটা কথা বলতেন, আমি একটা রাজনৈতিক দলের কর্মী, কিন্তু সেখানে থেকে আমি উপলদ্ধি করছি, রাজনৈতিক দলে থেকে, একটা ব্যানারের তলায় থেকে সব মানুষের জন্য সব কাজ করা যায় না। তাই জন্য নাগরিক মঞ্চ দরকার হয়। আর তাই জন্যই তিনি সিটিজেনস সায়েন্স ফোরাম বানিয়েছিলেন। জলাভূমি রক্ষা কমিটি বানিয়েছিলেন। যাতে বেশি সংখ্যক মানুষকে সাথে নিয়ে এই আন্দোলনগুলো করা যায়।
গুয়াহাটি শিলচর পথকথা : সুশান্ত কর
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২০ জুন ২০১১ | ১১৪৯ বার পঠিত
আমি জানি না রেল কিম্বা সড়ক যে পথেই হোক শিলচর যাবার মতো সুন্দর পথ অসমে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা। আমি জানি না, অসমের আর কোথাও দয়াং কিম্বা জাটিঙ্গার মতো সবুজ, স্বচ্ছ নদী রয়েছে কিনা। আমি জানি না ভুবন পাহাড়ের মতো বিশাল রোমাঞ্চকর গুহা অসমে আর রয়েছে কিনা। বাকি সব পাহাড়, অরণ্য, ইতিহাসে ধন্য রাজনীতি, সংস্কৃতি কিম্বা ধর্মের কেন্দ্রগুলোর কথা না হয় উল্লেখ করলামই না। সে গুলো নিয়ে অন্য কখনো, অন্য কোথাও লিখব না হয়। আপাতত দাঁড়ানো যাক।
গো গোয়া : প্রগতি চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ জুন ২০১১ | ১২২৪ বার পঠিত
"গো গোয়া'। গোয়া পর্যটনের বিজ্ঞাপন। প্রায় প্রতিটি রাজ্য, বিশেষ করে যারা পর্যটনকে ভালোরকম অর্থকরী শিল্প হিসেবে দেখছে, এই ক্যাচ ফ্রেসগুলি নিয়ে আসে। "ঈশ্বরের দেশ', "ভারতবর্ষের হৃদয়'...।
আমাদের "গো গোয়া' স্থির হল অক্টোবরের শেষে। এই সময় কেরালায় দ্বিতীয় বর্ষাকাল। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর। বিকেল থেকে মেঘ করে আসে, সারা রাত্তির বৃষ্টি। সকাল বেলায় নীলকান্তমণি আলোয় চারিদিক ঝকমক করে। পাঞ্জিম-এও দেখলাম মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের থাকার আস্তানা,শহরের ল্যাটিন পুরোনো হেরিটেজ অঞ্চল ফন্টেইনাস -এ। "পাঞ্জিম ইন'। বেশী পুরোনো নয়, উনিশ শতকে বানানো। রাস্তার দিকে রট আয়রনের "বালকাও'। ঝুল বারান্দা। ভেতরের ঘর,সিঁড়ি , দালানের পাষে মস্ত খাবার জায়গা কলোনিয়াল আসবাব, ছবি,আয়নায় সাজানো। সেরামিকের নীল-সবুজ টালি বসানো ফোর-পোস্টার বেড। ফন্টেইনাসে এই রকমই সব বাড়ী। সদর দরজার দেওয়ালে লাগানো নীল-সাদা হাতে আঁকা আজুলেজো (Azulejo) টালি তে গৃহকর্তার নাম, বাড়ীর নম্বর। রাস্তায় একটু এগিয়ে আঠেরো শতকের সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ।
পুরুষশূন্য হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ জুন ২০১১ | ১৪৫৬ বার পঠিত
আয়লার পর সুন্দরবন গিয়ে আমার মনে হয়েছিল ,যদি আয়লার ধ্বংসলীলা না ঘটতো তাহলে সুন্দরবনের সমস্যা দেশের তো বটেই ,এমনকি রাজ্যের সচেতন মানুষদের কাছেও অজানা রয়ে যেতো । সুন্দরবনবাসীদের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছিল ,যদি আয়লার মত বা তার চেয়ে বড় কোনও সমুদ্র তুফান আবার হয়, তাহলে কি হবে । তারপর তিনবছর কেটেছে । আয়লার ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণগুলি বিভিন্নজন, যারা বিষয়টি বোঝেন ও কাছ থেকে দেখেছেন,তাঁরা চিহ্নিত করেছিলেন । সমাধানের উপায়ও বাতলে দিয়েছিলেন ,তার মধ্যে ছিল বাদাবন বাড়ান ,এমব্যঙ্কমেন্ট সারানোর নিয়মিত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বীরভূমের পান্নালাল দাশগুপ্তের পথে ফ্লাড সেন্টার তৈরী পর্যন্ত নানারকম সমাধান সূত্র ,এই পরামর্শগুলির পিছনে ভাবনা ছিল ,সমবেদনা ছিল ,ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতার জোর ।কিন্তু কিছুই হয়ে ওঠেনি সুন্দরবনে । পানীয় জলের সংস্থান টুকুও নয়।
রোমানা মঞ্জুর প্রসঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা : আল-বিরুনী প্রমিথ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৭ জুন ২০১১ | ৭৭৯ বার পঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষিকা রোমানা মঞ্জুরের সাথে গত ৫ জুন কি বীভৎস এবং ঘৃণ্য কাজ সংঘটিত হয়েছে সে সম্পর্কে কম বেশি আমরা সকলেই অবগত । কাজেই সে সম্পর্কে আমি নিজে আর বিস্তারিত কিছু বলতে চাইনা, কেবল সম্পূর্ণ বিষয়টিতে আমার নিজের কাছে কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়েছে, সেটাই আমি এখানে ব্যক্ত করতে আগ্রহী।
প্রথমত, তার সাথে যা হয়েছে সেটা নিয়ে লেখালেখি করতে গিয়ে কিংবা বলতে গিয়ে অনেক জায়গাতেই আমি দেখছি যে বলা হচ্ছে 'তার মত মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত একজন নারীর সাথে এরকম ঘৃণ্য কাজ হওয়াটাকে কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না' বা এরকম কিছু কথা। এসব কথার অর্থ কী? তিনি যদি 'মেধাবী' কিংবা 'উচ্চশিক্ষিত' না হয়ে থাকতেন তাহলে কি তার বিরুদ্ধে এই আচরণ গ্রহণযোগ্য হতো ? তিনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা না হতেন তাহলে কি এই ভয়াবহ আচরণকে অনুমোদন করা যেত ? যখন কারো প্রতি সহানুভূতি জানাতে গিয়ে এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে 'মেধাবী', 'উচ্চশিক্ষিত' এইসকল শব্দ ব্যবহৃত হয় তখন খেয়াল রাখাটা জরুরি, যে যারা 'মেধাবী' কিংবা 'উচ্চশিক্ষিত' হিসাবে সমাজে সেভাবে পরিচিত নন তাদের সাথে এরকম কিছু হলে তখন সেই বিষয়টা প্রান্তিক হয়ে যায়। আমাদের মনে রাখবার দরকার যে কেউ 'মেধাবী', 'উচ্চশিক্ষিত' হোক না হোক কারো সাথেই এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় । এখানে ব্যক্তির শ্রেণীগত অবস্থান, সামাজিক অবস্থানের চাইতেও ব্যক্তি স্ব্য়ং বেশী গুরুত্বপূর্ণ , রোমানা মঞ্জুরের সাথে যা হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা সকলে যেরকম সোচ্চার সেরকম কিছু আমার বা আপনাদের কারো বোনের সাথে হলেও সকলের সোচ্চার হওয়াটাই কাম্য । এক্ষেত্রে মানুষ নিজে যদি তার সামাজিক অবস্থান , শ্রেণীগত অবস্থানের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় তাহলে প্রতিনিয়তই এরকম ঘটনা ঘটে যাবার সম্ভাবনা আরো বেশি ।
দ্বিতীয়ত, রোমানা মঞ্জুরের নিজের যেই শ্রেণীগত অবস্থান, তাতে তার ১০ বছর ধরে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করাটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে তার নিজের গাফিলতি এবং বস্তাপচা কিছু সংস্কার মেনে চলবার অসমর্থনযোগ্য প্রয়াস হিসাবেই দেখতে পছন্দ করব।
শ্যাওলা : শক্তি দত্ত রায়
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১২ জুন ২০১১ | ৮৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
বাবা সত্যি এসে পড়েছেন। ভাইকে ডাকেননি, আমাকে ডেকেছেন। মাও তাড়াতাড়ি হাতটাত মুছে এগিয়ে এসেছেন। বোন ছুটে এসেছে। বাবার সঙ্গে চেন বাঁধা কি সুন্দর কুকুরছানা - কী হবে ওর নাম! তিব্বতীরা এসেছিল। বাবা ভূটান সীমান্ত থেকে একটা উলের কোট আর কুকুরছানা কিনে ট্রেনে বুক করে নিয়ে এসেছেন, আমাদের পুজোর উপহার। মা চা নিয়ে এসে বললেন স্যুটকেসটা কই, ট্রেনের জামাকাপড় ছাড়ো তো আগে, নাও কাপড়টা ধরো। বাবার খেয়াল হলো, তাইতো, কুকুর তো নিরাপদেই এসেছে কিন্তু ওকে গার্ড সাহেবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে আর মালপত্র আনা হয়নি। তবে হ্যঁ¡, বোনাসের তিনশো টাকা থেকে দুচারটে জামা কাপড় কিনে নিলেই হবে। বাবা সর্বদাই নিরুদ্বিগ্ন। ওমা, পকেটও ফাঁকা। একটুক্ষণ স্তম্ভিত থেকে মা-ই বললো, পকেটমার হয়ে গেল?
ক্রুসেডে সামিল হোন : সৃজন সমাদ্দার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৯ আগস্ট ২০১১ | ১০৯৬ বার পঠিত
সমস্যা হল পোস্ট-ইন্ডাস্ট্রিয়াল যুগে তির-ফির আর বিশেষ পাত্তা পাচ্ছে না। সভ্যতার কেরিয়ারে এখন হাই স্কুল পর্ব। গেটস স্যার চোখ রাঙিয়ে রীতিমত শাসাচ্ছেন "সাবধান! এখন থেকে কিন্তু সব বুদ্ধির খেলা'। আমরা বাঙালিরা আবার সেখানে ডবল প্রমোশন পেয়ে বসে আছি, মুশকিল! মগজাস্ত্রে ধোঁয়া দেবার তালে নিজের বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে অসীম দু:সাহসে বিড়ি ফুঁকে চলেছি। তো এই সিগারেট কান্ড, এই আমাদের, মানে এই বীর, বেপরোয়া বাঙালি যুবকদের ইমপ্রেস করার কৌশল হতে পারে কি? হতেই পারে। আমরাই যখন "আজ কা অর্জুন'। উফ:! অতই সোজা! আরে বোকারা, আমাদের আজ পুরো রাত জেগে সন্ধের ঝিলিমিলি লিখে লিখে কাল নোবেল পেতে হবে, তাই একটু মাল সিগ্গী স্টকে চাই। তোরা মীন হোয়াইল মাঠে কিছু দৌড়ঝাঁপ করে সোনা নিয়ে আয় দেখি। তা না, এই সব ফালতু অশৈল করে ভাবছিস কু থেকে সু হয়ে জাবি। আগে রুপা (গাঙ্গুলী) তো হ, একটা ক্লাস বানা, তারপর কাউন্টার পাবি। বেলেল্লাপনার টিকিট, প্রতিভার ট্যঁ¡ক খসিয়ে কাট!
আর নয়, কেন? : কবীর সুমন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ আগস্ট ২০১১ | ১০৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমি এমন "গায়ক'এর গানও শুনেছি যিনি আমার নিজের বানানো গানের তাল পালটে সেটিকে আত্মস্থ করে গেয়েছেন। শ্রোতারা খেয়ালও করে নি যে গানটার রিদমটাই পালটে গেছে। এইভাবেই আমার একটা ৫ মাত্রার গান নির্দ্বিধায় ৬ মাত্রা, কখনও কখনও ৮-মাত্রাও হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং একজন শ্রোতার একটা ভুরুও বাঁকে নি, বরং গানশেষে সেই গায়ক অজস্র তারিফ এবং তারিফ পেয়েছেন। এইসব বিখ্যাত আর জনপ্রিয় শিল্পীরা গানের মাত্রা বদল কেবল শস্তা জনপ্রিয়তা পাবার জন্যেই করেন নি, তাঁরা এটা করেছেন কারণ ৫-মাত্রার গান হ্যান্ড্ল করা তাঁদের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তাই একজন সেটাকে ৬ মাত্রায় বদলে নিলেন, আরেকজন, ৮ মাত্রায়। পরিশেষে, শ্রোতাদের তৃপ্ত মুখগুলি আর শিল্পীর খুশি-খুশি মুখ দেখে আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, একদিন আমার কিছু শুভানুধ্যায়ী আমাকে এই দেশে ফিরে এসে গানকে জীবিকা হিসেবে নেবার বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন, তাঁদের কথা সেদিন শুনলে আজ আমাকে এই জিনিস দেখতে হত না। আমি কিছুই করতে পারি নি, নিজের ক্ষোভ, রাগ, হতাশা, কিছুই ব্যক্ত করতে পারি নি সেই দিন। আজ, তেষট্টি বছর বয়েসে, জীবনে অনেক কিছু দেখবার পরে, আজ হয় তো সময় হয়েছে, আমি গলা ছেড়ে বলতে পারি এই বং সোসাইটি (ঞ্ছবাঙালিঞ্জ নয়) আর এই বং জীবনযাত্রার প্রতি আমার অপছন্দ, আমার ঘেন্নার কথা। "বাংলা' বলে আর কিছু বেঁচে নেই। অনেকদিন আগে মরে গেছে। অনেকদিন আগে শোনা এক বাউল-গান মনে পড়ে যাচ্ছে - "বাউল বাউল করো তোমরা / বাউল কে আছে / বড় দু:খ পাইয়া বাংলার বাউল মইরাছে।'
রাজনীতির ছবি, ছবির রাজনীতি (প্রথম পর্ব) : যোশী যোসেফ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ আগস্ট ২০১১ | ৬২৪ বার পঠিত
অ্যাফস্পা ১৯৫৮ পুরস্কার পেল, যা আমরা আলোচনা করছিলাম,তাই এটা আমাকে পীড়া দিচ্ছে। আমি জানি আমি যে সব সংস্থার জন্য কাজ করি সেখানে আমি এই সব জিনিস একজন আধিকারিক হিসাবে দেখাতে পারব না, কিন্তু একজন শিল্পী, একজন নাগরিক, একজন ভারতীয় হিসাবে আমি বাঁচতে পারব না যতক্ষণ আমি এই সত্যটাকে কোথাও, কোনো আকারে লিপিবদ্ধ করছি। তাই আমি নিজেই একজন দ্বৈত সত্ত্বায় পরিণত হচ্ছি, একজন আধিকারিক সত্ত্বা, যে তার পরিচয় বহন করে, চেষ্টা করে এমন কিছু করার যা খুব অবাস্তব নয়, একদম ডাহা মিথ্যে কথা নয়। আমার কর্মরত সংস্থার জন্য মণিপুরের ওপর একটা ছবি করার সময় কোনোভাবে মণিপুরের সত্যটাকে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার ভেতরকার যন্ত্রণাদীর্ণ সত্ত্বা ভালোভাবে ঘুমোতে পারে না, আমি যে সব নিজের চোখে ঘটতে দেখেছি। আমি সবার সঙ্গে মদ্যপান করি, যেহেতু মণিপুরে মদ নিষিদ্ধ তাই আপনি খোলাবাজারে মদ পাবেন না, তাই আমাদের মদ্যপান করতে আর্মি পিআরওর কাছে, অসম রাইফেলস পিআরওর কাছে যেতে হয়, সব মিডিয়ার লোকজনেরও আর্মি পিআরওর কাছে কোটা বাঁধা আছে। সেখানে অনেক মালায়ালি অফিসার আছেন, উকিল অফিসার আছেন, তো আপনি তাদের সঙ্গে বসে মদ খান, আর ৪-৫ পেগের পরে, একটা অন্য মণিপুর, যেখানে হিন্দি গান মানা, হিন্দি গান গাওয়া হয় না, আর রাতে মনিপুরিদের কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো জিনিস যা পাওয়া যায় তা হল হিন্দি গান। তাই রাতের একটা মনিপুর আছে, রাত ৯টা ১০টার পর, মণিপুর যা অ্যাফস্পাতাড়িত নয়।
জাতীয়তাবাদের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার এবং অসমে মাতৃভাষার কাজিয়া : সুশান্ত কর
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১৫ আগস্ট ২০১১ | ৮১০ বার পঠিত
২০০৫এ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুনর্বিন্যাস (Refreshers Course) পাঠক্রমে গিয়ে শেষ দিনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সবাই জানেন, তিনি আজকাল মাতৃভাষা নিয়ে বেশ আবেগিক। ক্যালকাটার "কলকাতা' হবার পেছনে তাঁকে বেশ ঘাম ব্যয় করতে হয়েছে। বরাকের ১৯কে সে বাংলাতে জনপ্রিয়তার পেছনেও তাঁর এক বড় ভুমিকা আছে। বক্তৃতার এক জায়গাতে, তিনি আক্ষেপ করে বললেন, "গিয়ে দেখুন না এখন দার্জিলিঙে! ওখানে বাঙালি আর আগের মতো পাবনে না।' পরের বছর সত্যি সত্যি আমি সপরিবারে দার্জিলিঙ-গ্যাংটকে ঘুরতে গেছিলাম। গিয়ে দেখি, ওখানকার প্রায় সমস্ত বড় বড় হোটেল, রেঁস্তোরার, ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক এবং কর্মচারি, রেলের কর্মচারি সবাই বাঙালি। আমাদের গাড়িতে করে ঘুরিয়ে আনবার জন্যে যাদের ডাক পরেছিল তাদের মধ্যে কেউ শুধু ছিল ভুটিয়া কিম্বা নেপালি! সুনীলের কথা শুনে আমার মনে হছিল, আমি ব্রহ্মপত্র উপত্যকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বসে আছি। সেখানে বক্তব্য রাখছেন কোনো অসমিয়া বুদ্ধিজীবি। বলছেন, "গিয়ে দেখুন না বরাক উপত্যকাতে! ওখানে অসমিয়া আর আগের মতো পাবেন না। ওখানকার বেতারে বাজে কেবল বাংলাদেশের গান!' পাঠকের মনে পড়বে বিখ্যাত অসমিয়া বুদ্ধিজীবি ইসমাইল হোসেন চাকরি সূত্রে শিলচর থেকে গুয়াহাটি গিয়েই "সাদিনে' বেশ ক'টি সংখ্যাতে সেরকমই অনেক কথা লিখে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। বহু অসমিয়াও তখন তাঁর বিরুদ্ধে তখন কলম ধরেছিলেন। সুনীল ইংরেজির পক্ষেও বেশ কিছু সওয়াল করেছিলেন। আমি শুধু তখন প্রশ্ন করেছিলাম, ইংরেজির এই আধিপত্য অক্ষত রেখে কী বাংলার প্রচার প্রসার সম্ভব বলে তিনি মনে করেন? তিনি কী উত্তর দিতে পারেন, "দেশ' পত্রিকার পাঠকেরা তা ভালই জানেন।
স্বাধীনতাঃ সাইবার কহানি : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ আগস্ট ২০১১ | ১০০৩ বার পঠিত
ঠিক এখান থেকেই শুরু হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলোচনাটা। ধরে নিন, আজকে ১৫ ই অগাস্ট কেউ ইন্টারনেট-এ পোস্ট করলেন বহু পুরোনো একটি কম্যুনিষ্ট শ্লোগান। "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়'! কি হবে? বা কি কি হতে পারে? ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। এই শ্লোগানটা তার কিছু চিহ্ন বহন করছে অবশ্যই। কেউ কেউ যেমন ভাবতে পারেন সাদা চামড়ার লোকেরা চলে গিয়েছে তেমনি কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে তার জায়গায় এসে বসেছে বাদামী সাহেবরা। এমন ভাবনান্তর থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশেষত, আজকের এত বছর পরেও খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের কিই বা উন্নতি হয়েছে? শহরে হাস্যকর রকমের খরচ বাড়ানো বড়লোকের নার্সিংহোম, বেসরকারী হাসপাতাল বাড়া ছাড়া কি পেয়েছি আমরা স্বাস্থ্যে? আমলাশোলে বা খয়রাশোলে লোক মরলে আসে খবরে। এলে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়ে যায় সেটাও। আর যদি ওইভাবে না মরে ধুঁকে ধুঁকে মরে, তাহলে খবরেও আসবে না। আমরা প্রজ্ঞাসম্পন্নরা সেমিনারে বা ভোটবাজারে মুখ গম্ভীর করে আলোচনা করবো অনেক। কেউ কেউ বলতেও পারেন (আমি শুনেছি খাদ্য সম্পর্কে হওয়া একটি সেমিনারে), যে আসলে দারিদ্রের কারণ হল লোকের অলসতা। এই কিছুদিন আগে যেমন বাংলাদেশের বন্ধুরা আলোচনা করছিলেন অনেক খাওয়াই নাকি খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ, এমন বলেছেন বাংলাদেশের কোনো এক মন্ত্রী। আমাদের এখানে প্রফুল্ল বাবু খাদ্য "কাঁচকলা খাক্' বলে কাঁচকলা প্রফুল্ল হয়ে গিয়েছিলেন। খাদ্য আন্দোলন হয়েছিল। শিক্ষা মানে এক বিভীষিকাময় ব্যবস্থা। বাকী সব প্রসঙ্গেই এমন কথা বলাই যায়। আর কথা বাড়াচ্ছিনা এ প্রসঙ্গে। বলার কথায় চলে আসছি। যদি এই সব দেখে কেউ লেখেন "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়' তাহলে?
রবীন্দ্রনাথের ভাষাতত্ত্ব : সুশান্ত কর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ আগস্ট ২০১১ | ২০৫৯ বার পঠিত
আগেকার বৈয়াকরণিক আর আভিধানিকদের গভীর বিশ্বাস ছিল যে সংস্কৃতই বাংলার জননী, আর সংস্কৃত ব্যাকরণই এর আদর্শ। শ্রীনাথ সেন যেমন লিখছেন তাঁর "প্রাকৃত ব্যাকরণ এবং অভিধানে', "বাঙ্গলা ভাষা সংস্কৃত ব্যাকরণের দ্বারা প্রশমিত হইতে পারে এবং তাহা হইলেই ইহার কল্যাণ' তিনি আরো স্পষ্ট করেই লিখছেন, বাংলা ব্যাকরণ," সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুষঙ্গী হইতে পারে, স্বতন্ত্র ব্যাকরণ হইতে পারে না।' সুতরাং দ্বিজে¾দ্রনাথ-রবী¾দ্রনাথ দুই ভাই এবং সাহিত্য পরিষদের অপরাপর বিদ্বজ্জনেরা সেই কাজগুলোই করলেন যেগুলো করলে বাংলাকে বাংলা বলে দাঁড় করানো যায়। কেরি যেখানে লিখেছিলেন বাংলার তিন চতুর্থাংশ শব্দ সংস্কৃত, সেখানে "বাংলা ভাষা পরিচয়ে' গিয়ে রবী¾দ্রনাথ লিখে ফেললেন, "বানানের ছদ্মবেশ ঘুচিয়ে দিলেই দেখা যাবে, বাংলায় তৎসম শব্দ নেই বললেই হয়।' ব্যাকরণের প্রচলিত উপাত্তগুলোকেই ধরে ধরে তাঁরা সমালোচনা শুরু করলেন, আর দেখিয়ে গেলেন সংস্কৃতের থেকে বাংলার তফাৎটা কোথায়। এই করতে গিয়ে রবী¾দ্রনাথকে দেখা গেল অসমিয়া-ওড়িয়া সহ আশেপাশের বেশকিছু ভাষা নিয়েও তুলনামূলক আলোচনাও করে নিতে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর "চর্যাপদে'র আবিষ্কারটাও মোটেও আকস্মিক ছিল না। তাও ছিল বাংলার "বাঙ্গালি'ত্ব আবিষ্কার প্রয়াসের অংশ মাত্র।
রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ : সুমিত রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ আগস্ট ২০১১ | ১০৪৪ বার পঠিত
নিরাশ হতে হল ছাদে যাবার চেষ্টায়। দোতলা থেকে তেতলায় ওঠার সিঁড়িটিতে নাকি ফাটল দেখা দিযেছে, সেই কারণে এই সতর্কতা। ছাতেই সেই বার্মিজ ঢঙের চন্দ্রাতপ, প্যাভিলিয়ন, কবির অনেকটা সময় কেটেছিল এইখানে। অদেখা ইয়ারোর কিছু স্বপ্ন নিয়েই ফিরতে হল, তবে এভাবে দেখলে ব্যাপারটা হজম করা যায়। এর প্রতিকার করা আজকের প্রযুক্তি কৌশলের কাছে কিছুই নয়, বাংলাদেশে বহু ভালো প্রযুক্তিবিদ আছেন, আশা করি সরকার এতদিনে সব ঠিক করে তেতলা ওঠার পথটা খুলে দিয়েছেন। অসুবিধের মধ্যে গাইডরা সবসময় জিউলির আঠার মতো সঙ্গে ছিলেন, এই এঁদের কাজ, এতে আপত্তি করা যায় না। তাছাড়া যাঁর শবদেহ থেকে শ্মশ্রু উৎপাটিত হয়েছে, তাঁর মশারীর চাল যে চুরি হবে না, সে গ্যারাণ্টি কে দেবে। তবে একটু সময় একলা থেকে স্মরণ করতে পেলে ভালো লাগতো।
রবিঠাকুর আমাদের বাড়িতে নিষিদ্ধ ছিলেন : মলয় রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ আগস্ট ২০১১ | ১৫৭৭ বার পঠিত
ছোড়দি সেতার বাজিয়ে গেয়েছিলেন, সঙ্গতে তবলায় পন্ডিতজি। গান শেষ হতে, বড়ো জ্যাঠা আর সতীশ কাকা দুজনেই দুষলেন পন্ডিতজিকে, অমন ম্লেচ্ছ গান শেখাবার জন্য। পন্ডিতজি তর্ক দিয়েছিলেন যে শহরের বহু গণ্যমান্য বাঙালি পরিবারে তিনি এই গান শিখিয়েছেন। তাঁকে জানানো হয়েছিল যে, তারা সব ম্লেচ্ছ পরিবার, অব্রাহ্মণ। গানটা নিয়ে সমবেত প্রসাদপ্রার্থিরা যে একমত নন, তা স্পষ্ট হয়েছিল বড়িশা-বেহালার জ্ঞাতি দাশরথিজেঠুর এই মন্তব্যে, ""ওহে আমরা নিজেরাই তো ভঙ্গকুলীন, সিরাজদৌলার চাকর, আমাদের আবার মেলেচ্ছো''! ইমলিতলা পাড়ার কোনো বাসিন্দাকে কিন্তু ম্লেচ্ছ তকমা দেয়া হতো না। আমরা পাড়ার সমবয়সীদের সঙ্গে, চোর-পুলিশ খেলার সময়ে, যার বাড়িতে ইচ্ছে ঢুকে যে-কোনও ঘরে লুকিয়ে থাকতে পারতুম, এমনকি নাজিমদের পোড়ো বাড়িতে বা ওদের বাড়ির সামনের মসজিদে। নাজিমের দিদি কুলসুম আপা আমাদের বাড়িতে হাঁসের ডিম বিক্রি করতে এসে, মা আর কাকিমাদের সঙ্গে গল্প করতেন।
একটি ভোটার কমল : কবীর সুমন
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২২ আগস্ট ২০১১ | ১০১১ বার পঠিত
কী ছিল, তুমি বললে ভোট ছিল ...
ভোট ছিল কবীর, বল ছিল না।
বোমা ছিল।
রাজু বলে একটা ছেলের দুটো চোখ উড়ে গেল,
আরেকটা ছেলে মরে গেল।
পনেরোই অগাস্টে ভোট ছিল না কবীর, বোমা ছিল।
রাস্তায় ফেলে রেখেছিল কেউ একটা।কে গো?
আমি কী করে জানবো বলো তো কবীর,
আমি কী করে জানবো?
কেউ একজন, কেউ একজন ...
নিশ্চয়ই কোনও পুরুতঠাকুর না।
বা কোনো মৌলবীসাহেব না, বা
গির্জার কোনও পাদ্রি নন, বা ধরো
আন্নাকালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক নন
বা ধরো, কোনো তাঁতি বা নাপিত নন
বা ধরো, এই পশুচামড়ার ব্যবসা যাঁরা করেন,
তাঁরাও নিশ্চয়ই নন।
২২শে শ্রাবণঃ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ আগস্ট ২০১১ | ১৪১০ বার পঠিত
এইসব জ্ঞান শতবর্ষপ্রাচীন লেখনীর। এইসব গান শতবর্ষেরও পূর্বে স্বরলিপিকৃত। অথচ আজিকার এই ন্যানো-বায়ো প্রযুক্তসভ্যতার শিখরদেশে, দূরবর্তী সম্পর্কের ট্রমাঘোরের সাইকো-বিশ্লেষণে, অনির্দিষ্ট যুক্তিজালের ফাজিনেস্-এর মধ্যেও সেই প্রাচীন অক্ষর আর প্রাচীন সুরতালের মন্দ্ররোল শুনিতে পাইতেছি আমরা। প্রায় নিরুচ্চারে রাতের পাখির ন্যায় একাকী গভীরে প্রতিভাত হয় বাণী তাঁর। আমরা বুঝিব না, এই বাণী অনাগতকালের আবার ইহারই উচ্চারণ বিশ্ববীণার তন্ত্রীসমূহে স্থলে জলে নভতলে উপবনে অসীমকালের হিল্লোল হইয়া বাজিয়াছে? আর ঠিক সেই কারণটিতেই, আজিকার এই খণ্ডমুহূর্তে, এই সামান্য জীবনের বারিসিক্ত আচ্ছাদনটিতেও আমাদের উদ্বেলতার উদ্ভাস লইয়া শ্রুত হইতেছেন তিনি, গুরুদেব।
মকবুল বললেন ।।। : কবীর সুমন
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১০ আগস্ট ২০১১ | ৯১৪ বার পঠিত
তাহলে বোধহয় নিয়ম করে দিতে হবে ট্রাফিক লাইটের ধরো বেশ কিছুটা আগে
থেকে হর্ণ বাজবে না।অসম্ভব, হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো বারণ।
বাজে না?
হুঁ, এস এস কে এম হাসপাতাল, বাঙ্গুর হাসপাতাল দেখো না, প্রতিটা হাসপাতালের সামনে যেন আরও দ্বিগুন উৎসাহে লোকে, গাড়ীর সব চালকেরা হর্ন বাজায়।
কেউ কোনো নিয়ম মানে এ দেশে?ঠিক, তাহলে ওই প্রচণ্ড আওয়াজ, হর্নের আওয়াজ মানে এক সেকেণ্ড সামনের গাড়ীটা স্টার্ট নিতে দু সেকেণ্ড দেরী করল কি পেছনের সব কটা গাড়ী এক সাথে ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভো ভ্যা ভি ভ্যা আরম্ভ করে দিল
কারও ধৈর্যের বালাই নেই।
এর মধ্যে কি করে লোকে গান শুনবে!
এতো গেল একটা দিক, আর একটা দিক আমি ভাবছিলাম, কবীর
ভাবছিলাম ধরো ওরই মধ্যে কেউ একজন শুনে ফেলেছেন
ব্র্যান্ড ইমেজ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৬ মার্চ ২০১১ | ১০৩৮ বার পঠিত
একমুখ ধোঁয়া গাল ফুলিয়ে গিলে ফেলে জবাব দিল দীপ্তেন, হ্যাঁ, বলতে পারিস। আসলে ভুবনেশ্বরের কিছু টিপিকাল ব্যাপার আছে। একেকটা রাস্তার মোড়কে এরা "ছকো' বলে রেফার করে। মানে সাদা বাংলায় চক্। চক্-এর ওড়িয়া হল ছক। আর ওড়িয়ারা তো যে কোনও অ-কারান্ত শব্দের শেষেই একটা করে "অ' লাগায়, তাই ছকঅ। এমনি আছে মেফেয়ার ছকঅ, মানে মেফেয়ার হোটেলের সামনের মোড়, জয়দেব বিহারঅ ছকঅ, ওমফেড ছকঅ, পাটিয়া ছকঅ ইত্যাদি। পাটিয়া চকের মোড়ে সন্ধ্যেবেলায় বাজার বসে, ঐ এলাকার লোকজন সন্ধ্যেবেলায় ওখান থেকেই সব্জিবাজার টাজার করে আর কি।
আজ আমাদের নেড়াপোড়া : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ মার্চ ২০১১ | ৩০২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
সভ্যতা এভাবেই ভাবে- ক্রিয়া করে, অর্থের শাস্ত্রই ধর্ম তার। বিনিময়ের অতীত যা যা, তাকে অতীত করে দিয়ে নিয়ে আসে শিল্পবিপ্লব, কলোনি-বানানোর লড়াই, ইনকুইজিশনের নেড়াপোড়া। তবু সেই যজ্ঞের কালি আবির হয়ে গুঁড়োগুঁড়ো মিশে যায় সব চেয়েছির রাজত্বে। বেদবিরোধী শূন্য উপাসক বৌদ্ধ নাগার্জুনের মায়ায় ধর্মসংস্থাপক শঙ্কর ধর্মকেই মায়া ভেবে বসেন। স্তূপের আদল রেখে শিবলিঙ্গ পুঁতে যান মানুষের বাড়িতে বাড়িতে, অবধারিত করে যান খাদ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ, ব্রতয় ব্রহ্মচর্য, কর্মে আত্মনির্যাতন । নেড়া বৌদ্ধের মতই শিখা কেটে ফেলেন ব্রাহ্মণ বিশ্বম্ভর মিশ্র। উপবীত ছিঁড়ে ফেলে ভূলুণ্ঠিত হন মোক্ষের উপাস্যে। ভারতের প্রান্তে প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ে বেদ-বিমুখ জাতবিহীনদের হোলিখেলা। সম্বলে বাঁদরের রঙ, ভাঙের সিদ্ধিদ্রব্য। ক্রমশ: মন্দির বহির্ভূত:, যজ্ঞরহিত উচ্ছ্বাসের সামাজিক সংশ্লেষ তৈরি হতে থাকে আশূদ্র ভারতসমাজে। হোলিকা নিধনের ফাগোৎসবের দিন ইতিহাস মুখ ঘুরিয়ে দেয় লালন সাঁইজির সাধুসঙ্গের উৎসবে, একব্রহ্মের উপাসক রবিঠাকুরের বসন্ত উৎসবে। শূদ্রভারত তো এভাবেই ব্রাহ্মণ্য উৎপাদনতন্ত্রের অত্যাচারের সমস্ত দাগ গায়ে রেখেও, কান্না-অবিচারের ঊর্ধ্বে উঠে যেতে শেখে আনন্দের উপাসনায়।
শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরি - প্রথম কিস্তি : শতরূপা বসুরায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১১ | ৭০১ বার পঠিত
এইটুকু বুঝতে বাকি ছিল না যে শ্যামাসুন্দরী বিয়ের পরে ডায়েরি লিখতে শুরু করেন। অর্থাৎ যদি ৬ বছর বয়সে ওনার বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে ৭/৮ বছর বয়সে প্রথম ডায়েরি লেখা শুরু। ডায়েরির প্রথম পাতায় যে "শিশু' শব্দটি আছে.. তা যে লেখিকার স্মৃতি রোমন্থন তাও বুঝতে অসুবিধা হলো না। ভাবতে অবাক লাগে যে সেই সময় শ্যামাসুন্দরী নিজে একটি ৮ বছরের শিশু তবুও তিনি তার লেখার মধ্যে তার হারিয়ে যাওয়া শৈশব কে খুঁজে বেরিয়েছেন। ওই ফুরিয়ে যাওয়া শৈশবের সঙ্গে যে একবুক নি:সঙ্গতা যে হাহাকার তাও ধরা দেয় ওই সাদা পাতায়। শুধুই শৈশব তার সঙ্গে আর কিচ্ছুই নেই! হয়ত ভাবতে চান নি লেখিকা.. হয়ত মনে রাখার মত ছেলেবেলাও ছিল না ওনার। তাই হয়ত সাদা পাতায় শুধুই ওই একটি শব্দ।
পরের পাতার খাট, উনুন, ঝাঁটা, এই সব যখন এঁকেছেন তখন বুঝেছি পলক ফেলার আগেই শৈশব পেরিয়ে মাত্র ৮ বছর বয়সেই তিনি সংসার সংগ্রামে নেমেছেন। খাট, উনুন, ঝাঁটা এই সবই তো মধবিত্ত গ্রাম্য সংসারের একটা প্রতীক.. তাই হয়ত ওইগুলি তখন তার জীবনের বেঁচে থাকার উপকরণ! আর বাইরের জগৎ তো তখন দেখতে শেখার বয়স হয় নি.. সমাজ তখন তাকে সেই সম্মতিও দেয় নি.. যত পড়ছিলাম ততই Radice র কথা গুলো কানে বাজছিল। "Arthur Symons felt that the Impressionist in verse should record his sensitivity to experience, not the experience itself; he should express the inexpressible' ... শ্যামাসুন্দরী সেই inexpressible কেই তুলে ধরেছেন। তার এই ডায়েরি পড়বার জন্য ভাষার দরকার হয় না। দরকার একটা মননের।!
গ্রামের মহিলাদের কোনও বন্ধু নেই - প্রথম কিস্তি : কাবেরী গায়েন
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৮ মার্চ ২০১১ | ১১৯৩ বার পঠিত
মুসলমান অংশে ঢুকতে সাহায্য করলেন এক মেয়ে, মর্জিনা বেগম, বড়-বাড়ির বোন, বেচারির মনে শান্তি নেই, স্বামী তার নতুন বিয়ে করেছেন অথচ কোলে তার ফুটফুটে ছেলে। ভাইদের বাড়িতে থাকেন, ছেলে কোলে নিয়ে তার মাঠে-ঘাটে চলতে বাধা নেই। তবুও তার কোন সই নেই। এই বাড়ির বউরা বেশ পর্দানশীন। কেউ বাড়ির বাইরে যান না। বাড়ির বড়-বউ বি.এ. পাশ কিন্তু তার কোথাও যাওয়ার "হুকুম নাই'। বেশ কাতর গলায় জানালেন:
হ, আবার সই ! পুষ্করিণীতেই যাইতে পারি না, গোসলখানায় পানি দিয়া যায়, হেই পানিতে গোসল সারি। ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এর মাইয়ারাও এই বাড়িতে ডোকতে পারে না। ... লণ্ডন কি খুব সুন্দার ? ... আর বউরা তো ছোড, মুই তো মুরুব্বি, মোরডে কেউ হাস-তামসাও করে না। ... মোর ছবি তো তোলতে পারবেন না, মোর মাইয়্যার এউক্ক্যা ফডো তোলেন। দোয়া করবেন আপা যেন মোর মাইয়াউগ্য একদিন আমনের মতো অইতে পারে, দ্যাশ-বিদ্যাশ যাইতে পারে।
আমরা শুধু বাংলাভাষায় গদ্য হয়ে ঝরি : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ মার্চ ২০১১ | ১৪৯০ বার পঠিত
ধীরে ধীরে টের পেতে শুরু করেছি আমি লিখে চলেছি ক্রমাগত। বিভিন্ন রঙের পেন ফেলে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি কালো কালির দামী কলমে। অহরহ দোলের কলম তখন পিচকারী। শুকনো ঘাসের শহরে বেদনার সার সার বোতলগুলিতে জমা রেখেছি ছোট খাট হাফ ও কোয়ার্টার প্রেম। গানশোনা শেষে ক্লাস ঘরে ঢুকে বুঝবার চেস্টা করেছি সাদা দেওয়ালেতে লেখা বৈষ্ণব পদাবলী। কোনদিন যদিও বা বৃষ্টি নামে এই নয়ডা শহরে, তুঘলকী কায়দায় ঘুরে বেড়াই শূন্যমাঠে, ললিতকলা আকাডেমির করিডোরে। এক গভীর চোখের মালায়ালী একদিন তুমুল ঝড় বাগিয়ে বল্লো, এই কাঁচ আর পাথর সব ভেঙ্গেচুরে দাও। যমুনা নদীতে অথচ তখন শুধুই সাবানের ফেনা। এরপর একদিন কাঁচ পাথর ও ভ্রম ভেঙ্গে গেলে কোন এক পূর্ণিমার অস্থির রাতে চলে যাই জয়পুরে। ময়ুরেরা লাফিয়ে পার হয় রাস্তা আর আমি যাই উড়ে উড়ে। ঝকঝকে রাস্তার পাশে ঠান্ডা বিয়ারের আয়োজন ও মেলা প্রলোভন। কাঁদতে গেলে এমনই শুনশান রাত লাগে, এমন শুকনো চারিপাশ আর ওই দরজা ঢাকা চাঁদ। সকাল হতে না হতে সব রঙে ভরে যায়, রাস্তা ঘাট ও ঘর। কানে সর্বদা বাজে তামাটে সারিন্দার সুর, চারপাশে রামধনু দেখি আর বুঝতে পারি অনর্গল যা এতদিন লিখে চলেছি আমি তা আসলেই আমার মফস্বলী বর্মে ফিরে আসার উপাখ্যান, লালজুতো পরা খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তনের সাদামাটা একঘেয়ে কাহিনী। এমনটাই লেখা হবে জানি শুকনো কাঁটায় ঘেরা ঊষর দিন, একা সপ্তহান্তে পাহাড়ে যাই, একা ঘরে কাঁদতে কাঁদতে কলম বন্ধ করে হাসি। ছাত্র- ছাত্রী, টু বি স্পেসিফিক, প্রশান্ত ও পারমিতা এসে ঘরে বসে থাকে দীর্ঘায়িত অন্ধকারে।
গ্রামের মহিলাদের কোনো বন্ধু নাই - শেষ পর্ব : কাবেরী গায়েন
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১৪ মার্চ ২০১১ | ১০০১ বার পঠিত
কে না জানে "এরা যত বেশী জানে, তত কম মানে'। স্বামী চান না, শাশুড়ি চান না, সমাজ চায় না এই মেলামেশার মধ্য দিয়ে ওই নির্দিষ্ট বাড়ির নির্দিষ্ট মান্যতাসংস্কৃতির শান্ত পুকুরে এমনকি পলকা ঢেউও উঠুক। হাজার বছরের পাখিপড়া শিক্ষায় মেয়েরা এত পোক্তভাবে আয়ত্ত করেছেন এই শিক্ষা যে শিক্ষককে আর পাহারাও দিতে হয় না, তারা নিজেরাই বলেন সই থাকার মত খারাপ কাজের ধার তারা ধারেন না, "পাখির শিক্ষা এখন পুরা হইয়াছে'।
যারা ঘরের বাইরের কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না (৯২.৭%) তাদের পক্ষে তো বাড়ি আর পাড়ার বাইরে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি গ্রামের যে মহিলারা চাকরি করছেন তাদেরও বান্ধবী নেই, বা থাকলেও ওই মহিলারাই সেই স্বীকৃতি দেন না জনসমক্ষে। কারণ গ্রামের মেয়েদের চাকরীতে যাওয়ার লড়াইটা এখনো সমাজ-সংসারকে এই বুঝ দেবার পর্যায়ে আছে যে সে নেহাত বাধ্য হয়ে, পরিবারের প্রয়োজনে "বাড়তি' টাকা উপার্জনে বের হচ্ছে, কাজের বাইরে আর কোন সম্পর্ক তার নেই পৃথিবীর সাথে, তাই বান্ধবী যদি থেকেও থাকে সেই থাকাকে প্রকাশ করার সামর্থ্য সে অর্জন করেনি এখনো। এখনো সে নিজেকে এবং পারিপার্শ্বিক সবাইকে আশ্বস্তই করতে চায় যে সমাজ নির্দিষ্ট বিবাহিত সম্পর্কসমূহের বাইরে তার অন্য কোন জগত নেই। স্বামী-সংসারেরও এই আশ্বস্তিটুকু প্রয়োজন।
দেবকী বসুর 'কবি' - একটি অটেকনিকাল পাঠ (অষ্টম কিস্তি) : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১৪ মার্চ ২০১১ | ১২৬৮ বার পঠিত
চলচ্চিত্রেও এই বাক্যের আগেই একাধিকবার দেখেছি আমরা বৃন্দাবনকে ঠাকুরঝির প্রতি একটা সস্নেহ প্রশ্রয় নিয়ে একটা আগলে রাখার ক্রিয়ায়। তাই কোনও অসুখী দাম্পত্য থেকে যে পরিপূরণের বা ক্ষতিপূরণের মত করে নিতাইয়ের প্রতি ঠাকুরঝির আগ্রহ এসেছিল তা নয়, এসেছিল ওই যাদু-উপাদান থেকে, ""কই এমনি মুখে মুখে বেঁধে গান করুক দেকি?'' এর পরের কিছু বাক্যেও একাধিকবার এসেছে "কবি' নিতাইয়ের প্রতি ঠাকুরঝির এই বিস্ময়। পরেও এসেছে। নিতাই একটা কিছু পারে যা সাধারণ নয়, অন্যরকম। নিতাইয়ের সেই অন্যরকমত্বটাকে গোড়া থেকেই সম্মান দিয়ে আসছে কেবল দুইজন, রাজন আর ঠাকুরঝি। ঠাকুরঝি তাকে সবসময়েই ডাকে "কবিয়াল' বলে। "কবি' উপন্যাসে যেমন, চলচ্চিত্রেও তেমনি, কবিকে গোড়া থেকেই কবি বলে চিনে আসছে ঠাকুরঝির এই প্রেম। বারবার ঠাকুরঝিকে নিয়ে বাঁধা পংক্তি চলে আসছে কবিগানে, "ছটায় ছটায় ঝিকিমিকি তোমার নিশানা' বা "কাল যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ কেনে' এই দুই গানেরই আবিষ্কারের আধার ঠাকুরঝি। আমরা পরে দেখব, এই গানগুলি এতটাই ব্যক্তিগত ঠাকুরঝির কাছে যে নিতাই সেটা কবিগানের আসরে গাওয়ায় ঠাকুরঝি তাকে মন্দ লোক বলে ডাকবে। আমি এটা বলতে চাইছি না যে দাম্পত্য অসুখ থেকে সঞ্জাত প্রেম প্রেম হত না, এটাই বলতে চাইছি যে এই প্রেমটা বরং একটা বাড়তি কিছুর দ্যোতক, চিহ্নিত করছে কবিয়ালের কবিগান গাওয়ার ওই বাড়তি ক্ষমতাকে।
আবাস : সৈয়দ সাইফুর রহমান সকিব
বুলবুলভাজা | | ২৬ মার্চ ২০১১ | ৭১৮ বার পঠিত
একটু একটু বসন্ত রঙিন হয়, ডালপালা ছড়িয়ে যুবক হাটে গঞ্জে। কিন্তু বাড়ির সামনে দিয়ে একবার অন্তত বুকের রোম দাড়ায়, হৃদয়ে জাগে কোলাহল। বর্ণিল সর্পিল পথে যতদুর চোখ যায় কিছু নয় শুধু এ পথটুকু থমকে থাকে দিন রাত্রি। এখন তোমার অঢেল চুলের রাজ্য। অমন চাহনি পড়তে পড়তে পড়িমরি ধান ক্ষেত সবুজের ফাঁকে কি নিটোল হাসি। ছাড়ো, বিধবার হাত ধরতে নেই যে! এক দৌড় হাসির ফোয়ারা শুনে পেয়াদা পাথর, নীলকন্ঠ শুষ্ক গলা। আবারও অমর হাসিতে ভেঙ্গে যায অন্তিম প্রহর। রাত্রির তারাতে নস্যি হয় নিষেধাজ্ঞা, প্রয়োজনীয় শীতল সিথানে গয়না অনুরোধ। এসো, চলে যাই যেখানে বনেদী অহংকার নাই, ধুকে মরা নাই। সরিষা ঝাঝের মত চোখে পানি তুলে মৃত্যু চাই তোমার, আহারে মন্দা ভাব ক্ষুধা চলে না এখন, স্থির বনবাস মৃত্যু গৃহে।
উদ্ভট অর্থনীতি : অর্পিতা ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ৮৭৫ বার পঠিত
তর্ক উঠতে পারে, তাহলে দাম বাড়ার সাথে চাহিদা কমে যাবার মত অর্থনৈতিক ব্যাপার যা মানুষের সমাজে হামেশাই চলে, সেটাও যে ঐ বাঁদরেরা দেখিয়ে দিল, তার ব্যাখ্যা কি হবে? এই ব্যবহারও তো বাঁদরদের শেখানো হয়েছে। তাদের বারবার করে দেখানো হয়েছে যে একই সংখ্যক চাকতি দিয়ে আর একই পরিমাণ জিনিষ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক নীতির প্রাকৃতিক ভিত্তি কিভাবে প্রমাণ হল? আর চাকতির বদলে সেক্স, সেটার কি ব্যাখ্যা হবে? সেটা তো এটাই দেখায় যে বেশ্যাবৃত্তি প্রকৃতিতেও রয়েছে। তাই কি? আগেই বলেছি যে গবেষণাগারের খাঁচায় পোরা বাঁদরের শেখানো-পড়ানো ব্যবহারকে প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি বলে ধরে নেওয়ার মধ্যে গোলমাল আছে। যদি বলা হয়, চাকতি দিয়ে সেক্স কেনাটা তো শেখানো হয়নি। ঠিক কথা। কিন্তু "কেনা'-টা তো শেখানোই। চাকতি দিলে বদলে কিছু পাওয়া যায়, এটা তো বিলক্ষণ শেখানো হয়েছে ওদের। সেই কিছুকে বাঁদররা নিজের পছন্দমত ভেবে নিয়েছে। এতে এটা হয়তো প্রমাণ হয় যে কোনো একধরণের ক্রিয়া শেখালে তার সাধারণ বিধিটা বাঁদরগুলো শিখে নিতে পারে। অর্থাৎ চাকতির বিনিময়ে আঙ্গুর পাওয়া যায় এটা শেখালেই ওরা বুঝে যায় যে ঐ চাকতি দিয়ে যেকোনো জিনিষ-ই পাওয়া যেতে পারে।
মানুষের বাঁদরামি : পার্থ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ৯১৫ বার পঠিত
বাঁদরামির জ্ঞানের নির্মাণে আর একটি জায়গা ছিল মানুষের সত্তা বা এসেন্স বা লোগোসের খোঁজ। প্রশ্নটা পুরোনো - "মানুষ' বলতে আমরা কি বুঝি? মানুষের শাঁসটা কি আর খোসাটাই বা কি (এখানে অবশ্য ধরে নেওয়া হচ্ছে যে শাঁস আর খোসা আলাদা বিষয়)? এই প্রশ্নের জবাবে পশ্চিম একটা ভাবনার স্ট্রাকচার বানায় যার নাম ডুয়ালিজম বা দ্বিত্ত্ববাদ। অনেক ডুয়ালিস্ট মডেলের সাথে আমরা পরিচিত, যেমন পুরুষ/নারী, প্রকৃতি/সংস্কৃতি, পূর্ব/পশ্চিম, মন/শরীর, আমি/তুমি, সুস্থ/পাগল, শাঁস/খোসা ইত্যাদি। এবার "মানুষ' নামের তাত্ত্বিক সমস্যাতে ফেরা যাক। মানুষ একদিকে যেমন জৈবিক, প্রাকৃতিক আবার সে একইসাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিও বটে। এখন প্রশ্ন হল এই ডুয়ালিটিতে কোনটা শাঁস, কোনটা খোসা? পশ্চিম বাছাই করে আমাদের বলে দিয়েছে যে দুর্গামূর্তির খড়ের গোঁজের মত জৈবিক সত্তাটাই মানুষের এসেন্স আর মূর্তির ওপরের রংচং আসলে সংস্কৃতি। মানুষের প্রকৃতি আসলে জৈবিক, বায়লজিকাল। এই স্বত:সিদ্ধ থেকে তাই বলা যেতেই পারে যে যেহেতু বাঁদর মানুষের পূর্বপুরুষ, তার মধ্যেও সেই একই জৈবিক বৈশিষ্ট্য থাকবে। অর্থাৎ মানুষ আর বাঁদরের হার্ডওয়্যারটা একই, পার্থক্য শুধু সফটওয়্যারে। তাই বাঁদরামির গবেষণা পশ্চিমি সাহেব-মেমদের আত্মানুসন্ধানের চেষ্টা (গবেষণা করা ব্যাপারটা প্রাকৃতিক না সাংস্কৃতিক?)।
লেখালিখি পড়াঃ দ্বিতীয় কিস্তি : ছোটা চণ্ডাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ৬৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এদের তাকে বাঁধিয়ে রাখা যেতে পারে, বুকে নয়। "ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড'-এর প্রভাব "মিডনাইটস চিলড্রেন'-এও পাই, কিন্তু সেক্ষেত্রে রুশদির টানটান গল্প বলার পটুত্ব বেঁধে রাখে শেষ অব্দি। প্রভাব থাকেই, কিন্তু তার সাথে থাকে কিছু নতুনত্ব, বক্তব্যে এবং লিখনভঙ্গীতে, সামঞ্জস্য প্রয়োজন তাদের। অন্যথায় বিপদ, যা ঘটেই থাকে। বন্ধুবর বলেছিল দেবর্ষী সারগি পড়তে, নাকি দারুণ! পড়ে ফেললুম, মনে হল মন্দ না, অন্য রকম ভাবে লিখছেন, ভালো কথা, কিন্তু কী লিখছেন, কথা নয় কাহিনি নয়, দর্শন, ঈশ্বর-মনুষ্য চিন্তা, গভীরতা কতখানি, ডোবা যায় না, চুল ভেজে না, শুধু গায়ে একটু ছিটে লাগে মাত্র। "দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং' পড়ে বুঁদ হয়ে ছিলুম কয়েক মাস, এই পার্থক্য, আমি বরং কুন্দেরায় ফিরে যাব বার বার। স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ভগীরথ মিশ্র বা অনিল ঘড়ুই খুব একটা খারাপ না লাগলেও সেই অনূভুতি আসেনি যা প্রথম এবং মাঝের দিকের শীর্ষেন্দু পড়ে আসত। শুধু মোটামুটি, খারাপ না, ঠিকঠাক, এসব পড়ে আর শুনে হতাশ! পাগল করে দেবে কে, আবার?
দেবকী বসুর 'কবি', ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ (সপ্তম কিস্তি) : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ১২২০ বার পঠিত
প্রথমে চলচ্চিত্রে প্রসঙ্গটা কিভাবে এল সেটা দেখে নেওয়া যাক। প্রথমে রাজনের মন্তব্যে ইঙ্গিত আছে সেই অতিনির্ণয়ের, আগেই যেটা আমরা দেখেছি, আধুনিকতার পেশা থেকে জীবিকা অর্জন আর ঐতিহ্যের সক্রিয়তা চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেটা নয়, কৌতূহলটা অন্য জায়গায়। এই একমাত্র জায়গা "কবি' চলচ্চিত্রের যেখানে খুব স্পষ্ট একটা নির্মাণের গরমিল পেয়েছি আমি, এবং যা একটুও ছিল না "কবি' উপন্যাসে। এতটাই বেমানান লেগেছে এটা অবশিষ্ট চলচ্চিত্রটা তৈরির সুচারু সুপরিকল্পিত রকমের সঙ্গে যে, "কবি' চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনও কেউ যদি আজও বেঁচে থাকেন, এবং তার স্মৃতিতে থেকে থাকে এই খুঁটিনাটি তো সেটা আমি জানতে আগ্রহী। গরমিলটা কোথায় সেটা আগে দেখে নেওয়া যাক উপন্যাস থেকে।
দিন আনি দিন খাই - পর্ব ৫ : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ১৩৯৬ বার পঠিত
গুরুদেব আমায় খুলে দিলো পাবলিশিং হাউস - মহাগুরু সাহিত্য মন্দির। সুর্য সেন স্ট্রিটে পাল বস্ত্রালয়ের উপর বিশাল ঘর নিলাম। কাঠ দিয়ে আমার আলাদা চেম্বার। আমি নিভৃতে বসে লেখালিখি করতে পারব। সামনের ঘরে বস ট্রেড সামলাবে। গুরুই বলল, তোর তো অনেকদিন লেখালিখির অভ্যেস নেই, আগে কয়টা মানে বই লিখে হাতটা সড়গড় করে নে, পরে ওষুধ-চিকিৎসা নিয়ে ৩০/৪০টা খন্ডে জাব্দা জাব্দা বই লিখিস! দেখলাম আইডিয়াটা খারাপ না। আগে লেখাটা দরকার। লেখাটা রেডি থাকলে প্রয়োজন মত ক্যারেক্টারের নাম বদলে দিলেই হল। রাম-লব-সীতা হলে রামায়ন। অনিমেষ-অর্ক-মাধবীলতা হলে কালপুরুষ। এই রকম। নাউ উই নিড ফিউ নেমস। বসই সেসব যোগাড় করে আনলেন আশেপাশের স্কুল কলেজ থেকে। ই সি বিদ্যাসাগর, আশু ভট্টাচার্য, ভূ চৌধুরী, ক্ষে গুপ্ত, পি আচার্য। ট্রিপল এম.এ.। বি.এড, বি.টি, পিএইচডি, স্বর্ণপদক। আমি চুটিয়ে মানে বই লিখতে লাগলাম, হু হু সেল। প্রকাশকের তকমার আড়ালে যে মেঘনাদের মত লেখক বসে আছে তা নিশ্চয়ই কেউ ভাবেনি। আমাদের বাঙালদের "র' আর "ড়' এ একটা চিরকালীন ঝাড় আছে, এই সময় আমার কোম্পানীতে যোগ দেয় পরিতোষ, তার দায়িত্ব হল এই বানানের ঝাড়গুলো ঠিক করা।
দেবকী বসুর 'কবি' , ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ (ষষ্ঠ কিস্তি) : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ১৩৭১ বার পঠিত
সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর এই তিন যুগে তপস্যা ক্রমান্বয়ে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই তিন বর্ণকেই আশ্রয় করিয়াছিল। কিন্তু এই তিন যুগে শূদ্রের তাহাতে অধিকার হয় নাই। এই নীচ বর্ণ ভবিষ্যতে ঘোরতর তপস্যা করিবে। কলিযুগই তাহার প্রকৃত সময়। শূদ্রজাতির দ্বাপরে তপস্যা করা অতিশয় অধর্ম। সেই শূদ্র আজ নির্বুদ্ধিতাবশত: তোমার অধিকারে তপস্যা করিতেছে। সেই জন্য এই বিপ্রবালক অকালে কালগ্রাসে পতিত হইয়াছে।
রাজা রাম তখন এর নিরসনে গেলেন পঞ্চসপ্ততিতম সর্গে। কোথায় ঘটছে এই শূদ্রের তপস্যা তার তদন্তে গিয়ে রাম শেষ অব্দি খুঁজে পেলেন।
দেখিলেন শৈবল পর্বতের উত্তর পার্শ্বে একটি সুপ্রশস্ত সরোবরের তীরে কোন এক তাপস বৃক্ষে লম্বমান হইয়া আছেন এবং তিনি অধোমুখে অতিকঠোর তপস্যা করিতেছেন। তদ্দৃষ্টে রাম তাঁহার সন্নিহিত হইয়া জিজ্ঞাসিলেন, তাপস! তুমি ধন্য, বল, কোন্ যোনিতে জন্মিয়াছ।
ষট্সপ্ততিতম সর্গে আমরা পাই কাহিনীর শেষটুকু।
উত্তরবঙ্গ - ১২ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ১১৭৭ বার পঠিত
একদিন বঙ্কা পড়াশোনা শেষ করে খুব ক্লান্ত হয়ে ছাদে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল, অ্যাকসিডেন্টালি বা ইনসিডেন্টালি তার মুখটা ছিল পাকিস্তান বর্ডারের দিকে ফেরানো। উইংয়ের ছেলেরা এর থেকে দল বেঁধে সহজ পাটিগণিত সমাধান করে ফেলে এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে মাথায় রেখে সেদিন সারারাত ছাদ থেকে তারস্বরে, পাকিস্তান বর্ডারের দিকে মুখ করে আমরা গেয়েছিলাম, একটাই লাইন : আন তবে বীণা, আ-আ-আ-আ-আ-আ-আ, আন তবে বীণা, আ-আ-আ-আ-আ-আ-আ ... সে যে কী অপূর্ব শুনতে হয়েছিল, কী বলব।
আদিবাসী শিশু মাতৃভাষায় পড়বে কবে? : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ৯০৪ বার পঠিত
দীর্ঘদিন পাহাড়ে, বনে-বাদাড়ে, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো ঘুরে জেনেছি, এ দেশে সাধারণভাবে শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে থাকা হত-দরিদ্র প্রধান প্রধান আদিবাসী গোষ্ঠিগুলোর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, রাখাইন, মনিপুরী, গারো, সাঁওতাল ও খাসিয়া) প্রত্যেকেই নিজেস্ব ভাষা ও নিজ ভাষার বর্ণলিপি অনেক সমৃদ্ধ। আবার কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠির নিজেস্ব বর্ণমালা না থাকলেও তাদের রয়েছে রোমান বর্ণমালায় ভাষা চর্চার ঐতিহ্য। কিন্তু চর্চার অভাবে এ সব বর্ণমালার সবই এখন বিলুপ্ত প্রায়।
এরফলে নতুন প্রজন্মের আদিবাসীরা নিজ ভাষায় কথা বলতে পারলেও নিজেস্ব ভাষায় তারা একেবারে প্রায় অজ্ঞ। অথচ মাত্র চার দশক আগেও পরিস্থিতি এতোটা বিপন্ন ছিলো না। তখন নিজ মাতৃভাষা লিখিত চর্চার পাশাপাশি নিজস্ব উদ্যোগে শিশুশিক্ষায় ভাষাটির বর্ণপরচিয়ও চলতো।
চাকমা রাজা ব্যরিস্টার দেবাশীষ রায় আলাপকালে বলেন, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সারাদেশের শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে আদিবাসী শিশুর ঝরে পড়ার হার অনেক বেশী। এর একটি কারণ- ভাষাগত বাধা। আদিবাসী শিশু বাসায় যে ভাষায় কথা বলছে, স্কুলে সে ভাষায় লেখাপড়া করছে না। বাংলা বুঝতে না পারার কারণে শিশুমনে পাঠ্যবই কোনো দাগ কাটছে না, স্কুলের পাঠ গ্রহণ করাও তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
চলচ্চিত্রচঞ্চরী - দ্বিতীয় পর্ব : প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ১১৩৯ বার পঠিত
অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস ঘোষণার প্রাক্মুহূর্তে প্রকাশিত হল একটি বুলবুলভাজা, চলচ্চিত্রচঞ্চরী।
আগের কিস্তির সূত্র ধরে ফিরে আসি টলিউডে। লেখার একদম শেষের দিকে উল্লেখ করেছিলাম যে সত্তর দশকেও আমরা পেয়েছি "নিশিপদ্ম', "থানা থেকে আসছি', "এখানে পিঞ্জর', "ধন্যি মেয়ে'র মতন সিনেমা যেগুলি তথাকথিত আর্টহাউস্ ফিল্ম না হয়েও পেয়েছিল সমালোচকদের প্রশংসা এবং সাথে বক্স-অফিস সাফল্য। সত্তরের "এখানে পিঞ্জর' (প্রফুল্ল রায়), "শ্রীমান পৃথ্বীরাজ' (বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ), আশির "দাদার কীর্তি'র (শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়) মতন প্রভূত জনপ্রিয় সিনেমাগুলি স্বনামধন্য সাহিত্যিকদের কালজয়ী ছোট গল্প বা উপন্যাস আবলম্বনে তৈরি । "নিশিপদ্ম' বা "ধন্যি মেয়ে'র চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন অরবিন্দ মুখার্জ্জী যিনি নিজে সাহিত্যিক ছিলেন এবং "দেশ' বা "নবকল্লোল'এ তাঁর একাধিক ছোট গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। সাহিত্যিকদের রূপোলী পর্দার জগতে বিচরণের যে ট্র্যাডিশন প্রেমেন্দ্র মিত্র-শৈলজানন্দরা তৈরি করে দিয়ে গেছিলেন, সত্তর-আশির দশকে সেটাই বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন অরবিন্দ। যাই হোক্, মূল প্রসঙ্গে ফিরি - বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লের-ই রমরমা, অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লে সেভাবে এল কই? সত্যজিৎ রায় থেকে তপন সিনহা, অগ্রদূত থেকে তরুণ মজুমদার - জনপ্রিয় সিনেমাগুলি প্রায় সব সময়েই অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লের ওপর তৈরি।
লেখালেখি পড়া - প্রথম কিস্তি : ছোটা চণ্ডাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ জানুয়ারি ২০১১ | ৬৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কবিতায় ""সবুজ রহস্যময় আত্মা''-র রহস্য তৈরি করার রাস্তা খুঁজে পেতে হয়, পেরেক ঠুকে হয় না। অতএব সজ্ঞানে কবিতা কে কঠিন করে, একটু বাঁকিয়ে চুরিয়ে লিখে আত্মপ্রসাদ লাভ করবেন না তাতে আখেরে, আপনার বা আমাদের কারুর ই লাভ হবে না, বাংলা সাহিত্যের দু:খের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।
এরকম কঠিন করে দেওয়ার ইচ্ছাধারী রা যেমন আছেন, তেমন ই আছেন সহজ করে দেওয়ার অবতারেরাও। এদের লেখা পড়তে গিয়ে যে মাঝে মধ্যে ভালো একেবারেই লাগেনি তা নয় (উদা: পিনাকী ঠাকুর), তবে এত বেশী সহজ, স্মার্ট এবং নতড়ঁ ফষ করে দেওয়ার সফল চেষ্টা, যে সেটাই বেশী করে চোখে পড়ে, কানে আসে। উদাহরণ দিতেই হবে? বেশ, হাতের কাছে শ্রীজাত আছে তো নাকি, পড়ে ফেলুন। শব্দের কারুকাজ, ঝিন্চ্যাক লাইন আর খেলা খেলা ছন্দের চৌকাঠ পেরিয়ে যখন ভিতরে যাবেন, তখন দেখবেন বাড়ি তৈরি ই হয়নি, শুধু দরজা আর চৌকাঠ। হায় তবে যে কোথায় পড়েছিলুম, মাঠের ধারে হলুদ বাড়ি গড়েছে মিস্তিরি!
উপন্যাস নিয়ে : সৈকত চ্যাটার্জী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ জানুয়ারি ২০১১ | ২১৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
রমা তার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে এই অনুযোগ করেই, যে অমর ঐ উপন্যাসে তাকে "কাঁচামালের' মত ব্যবহার করেছে। কিন্তু অমরের মতে সমস্যা এটাই - ""যে সম্বন্ধ সে তুলে ধরবার চেষ্টা করছে তা নিয়ে যদি সে নাটক করত তাহলে এ আলোড়ন হত না। সে যদি এমন আষ্টেপৃষ্টে নিজেকে বেঁধে না ফেলত তার বইয়ের সঙ্গে, তাহলে তার মা এমন মর্মান্তিকভাবে অভিভূত হতেন না, আত্মীয়স্বজনেরা এমন ভাবে চাইত না তার দিকে। লোকে জানত অমর আজকাল সাহিত্য করছে। সেখানেই চুকেবুকে যেত ব্যাপারটা, কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামাত না। কিন্তু তার বই পড়ে এ কথা সুস্পষ্ট যে এ বই লেখকেরই এক অবিচ্ছিন্ন ডায়েরী। ডায়েরীর মত নগ্নভাবে প্রায় শিল্পকে বিপন্ন করে নিজেকে মেলে দেওয়ার চেষ্টা অনেকেই নিতে পারেনি।'' অংশটিতে আমার চোখে পড়ে "আষ্টেপৃষ্টে নিজেকে বেঁধে না ফেলত' এবং "অবিচ্ছিন্ন ডায়েরী' শব্দগুলি। এই শব্দ কটি জীবনানন্দ দাসের সমগ্র গদ্যকর্মের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে পারি কারণ এ আমরা পড়েছি যে জীবনানন্দ দাস উপন্যাস সম্বন্ধে
'diversified autobiography'
- র প্রসঙ্গ এনেছিলেন এবং তাঁর দিনলিপি ও "লিটারারি নোটস'-এর মধ্যে কোন ফারাক থাকে না। বলতে পারি , উপন্যাসের অমর আর জীবনানন্দ দাস দুজনের প্রকল্পই যেন উপন্যাসের মাধ্যমে কীভাবে নিজের জীবনকেই অনুসরণ করা যায়, কীভাবেই বা নিজের জীবনকে আবিষ্কারের বিষয় করে তোলা যায় তারই অনুসন্ধান।
অসীম রায়ের অন্বিষ্টও কী এটাই ছিল?
আজ কা শোলে : পবিত্র ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৯ জানুয়ারি ২০১১ | ৮৭৬ বার পঠিত
আর প্র্যাক্টিকালি সেটাই তো দরকার। জয়-বীরু কি চিরদিন তোদের আগলাতে থাকবে? আজ নয় কাল তো তোদের হাতেই হ্যান্ড-ওভার দিয়ে যেতে হবে না কি? তারপর গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠবে গ্রামরক্ষী বাহিনী। পাঠশালা-স্কুল-কলেজে, খেতে-খামারে, পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে, গাছের ডালে, খড়ের চালে শোভা দেবে উন্নততর বামের উন্নততর কমান্ডো ফৌজ। বন্দুক প্রশিক্ষণও তো সেই জন্যেই। তারপর আসুক না শালা মাওবাদী। সঙ্গে সঙ্গে দুরুম। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন জীবনের যেকোন সমস্যার অব্যর্থ সমাধান। ছেলে ভাত খেতে চাইছে না? দুরুম। ডালে নুন বেশী হয়েছে? দুরুম। পরীক্ষায় নম্বর কম দিয়েছে? দুরুম। ধার করে শোধ দেয় না? দুরুম। অনাহার-অপুষ্টি-অশিক্ষা-দু:খ-দারিদ্র্য-জ্বর-জ্বালা-যন্ত্রণা সবকিছু থেকে মুক্তি। দুরুম। দুরুম। দুরুম।
সার্থক মেয়ে জনম আমার -- : শ্রাবণী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জানুয়ারি ২০১১ | ৮৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলে এই দলিত মহিলাটি রাজ্যের ভার নেওয়া থেকে দলিত মহিলাদের ধর্ষণের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সনে অন্য সমস্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এই পরিসংখ্যানের বাইরে অজস্র কেস আছে যার কোনো রিপোর্ট হয়নি বা পুলিশ রিপোর্ট নেয়নি! অজস্র সংগঠন, দেশের আইন,অ্যাক্টিভিস্ট, আমাদের মত সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে মহিলা যারা প্রত্যেকে হয়ত অনুভব করছি মেয়েটির দুর্দশা, তারা অসহায় কোন অশুভ শক্তির কাছে,ব্যবস্থার কাছে নাকি নিজেদের কাছে কে জানে? পনেরই জানুয়ারী শ্রদ্ধেয় বহেনজী তাঁর জন্মদিন পালন করছেন, এবার হয়ত লাড্ডুর সাইজ আরো বড় হবে। কেন্দ্রের বন্ধুদের দাক্ষিণ্যে কোর্টের কাছে বেকসুর ছাড় পাওয়ায়, ভক্তরা গলায় পরাবে আরো মূল্যবান টাকার মালা। কাগজে কাগজে আজ তাঁর ছবিতে ছয়লাপ, দলিতদের মসীহা, তাদের উন্নতির শক্তিরূপে। ওদিকে দলিত সতের বছরের কিশোরী মেয়েটি আজো অপেক্ষা করে মুক্তির, শুধু জেলের খাঁচা থেকে নয়, মুক্তি এদেশে এই নারী জন্মের শৃঙ্খল থেকে।
দেবকী বসুর 'কবি', ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ (পঞ্চম কিস্তি) : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১৭ জানুয়ারি ২০১১ | ১১৯০ বার পঠিত
মহাদেব কবিয়ালের গানে এর পরবর্তী অংশে যে প্রসঙ্গগুলি এসেছে তার দু-একটা এখানে উল্লেখ করে রাখি। এর পরেই মহাদেব কবিয়াল উল্লেখ করবে নিতাইয়ের জাত-ব্যবসার কথা। সেটা বলতে এখানে চুরি-ডাকাতির কথা তুলেছে মহাদেব। যেমন নিতাইয়ের বাবার কথা বলেছে সে, সিঁদ কেটে বাড়ি বাড়ি চুরি করত, বা তার ঠ্যাঙাড়ে ঠাকুর্দার কথা, এবং তার মায়ের বাবার কথাও যে কিনা দ্বীপান্তরে মরেছে। এছাড়া নানা জায়গায়, ডোমদের আর একটা পেশা ছিল শ্মশানে। ডোমদের এই ধরনের পেশাগুলির একটা ইতিহাস ছিল। বাংলার সামাজিক ইতিহাস নিয়ে কোনও খুব স্পষ্ট মতামত দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু নানা সময় যা কিছু শুনেছি বা পড়েছি, তার থেকে এইটুকু মাথায় আসছে যে, বোধহয় ব্রিটিশ আমলে ডোমদের এইসব অপরাধ ও মৃত্যুকেন্দ্রিক পেশার সূচনা প্রাকব্রিটিশ বাংলায়। সেখানে ডোমরা ছিল একটি যোদ্ধা জাতি। বিভিন্ন রাজার হয়ে যুদ্ধ করত এই ডোমরাই। এই ইতিহাসই বোধহয় ধরা আছে ওই ছেলেভোলানো ছড়ায়: "আগে ডোম, বাগে ডোম, ঘোড়াডোম সাজে'। আগে এবং পিছনে ডোম সৈন্যদের নিয়ে, অশ্বারোহী ডোম যোদ্ধাদের নিয়ে, "ঢাক মেঘর ঘাঘর' ইত্যাদিতে যুদ্ধের বাজনা বাজাতে বাজাতে যুদ্ধে যেতেন তখনকার বাংলার রাজারা। তারপর রুল ব্রিটানিয়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপে, রাজশেখরের ভাষায়, "আন্ডার দি সুদিং ইনফ্লুয়েন্স অফ দি বিগ রড', রাজারা ভ্যানিশ, রাজায় রাজায় যুদ্ধও ভ্যানিশ। ফলত বহু জায়গাতেই ডোমরা তাদের যুদ্ধবিদ্যা সম্পৃক্ততা থেকে সহজেই রত হল চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি পেশায়। ডোমদের যেটা পোষাকি নাম, "রাজবংশী' বা "বীরবংশী', যার একটি মহাদেব কবিয়ালের গানে এর পরেই এসেছে, অন্যটিও এসেছে চলচ্চিত্রের অন্যত্র, তারও শিকড়টা তাই রাজা বা বীর, যা এদের সেই লুপ্ত হয়ে যাওয়া পেশাকেই চিহ্নিত করে।
বাঙালবাড়ির কিস্সা - নবম কিস্তি : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ১৫১৩ বার পঠিত
-- উনি কি জানতেন যে বিংশ শতাব্দীতে রণজিৎ গুহ- গায়ত্রী স্পিভাক চক্রবর্তিরা মিলে একটা অন্যরকমের ইতিহাস, ধোপা-নাপিত-কামার-কুমোরের ইতিহাস লেখার জন্যে গজল্লা করবেন? তবে এইটা লিখেছেন যে জ্যেঠা রাজকৃষ্ণ অত্যন্ত ধার্মিক ও ""নামে রুচি,জীবে দয়া, ভক্তি ভগবানে'' গোছের লোক ছিলেন। খরা-বন্যা-মহামারীর সময় প্রজাদের জন্যে ধানের গোলা খুলে দিতেন, যে যা চাইত ধার দিতেন, হিসেব রাখতেন না। দিয়ে খুশি হতেন। একেবারে টিমন অফ এথেন্স! ফলটাও হাতে হাতে পেলেন। লোকে ধার শোধ করতে ভুলে গেল। আস্তে আস্তে ওনার তালুকদারীর নৌকোয় ফুটো হতে লাগল। ফলে দশবছর বয়সে পিতৃহীন গগনচন্দ্রকে ইংরেজি স্কুলে পড়ার জন্যে দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে রেঁধে বেড়ে খেয়ে থাকার শর্তে নওয়া-যশোদল যেতে হল। সেখানে আবার স্কুলে স্ট্রাইক ও হয়েছিল, ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে, স্কুল বন্ধ হল, তার ব্যাপক গল্প আছে।
হে-হে, বংশের ধারা যাবে কোথায়? আম্মো না নাকতলা স্কুলে ১৯৬৬তে স্ট্রাইক করিয়েছিলাম।
--ঢের হয়েছে। এবার একটা চুটকি গল্প বলে শেষ কর, খালি প্যারাবলের মত শেষে কোন মর্যালিস্ট লেকচার দিও না।
উত্তরবঙ্গ - ১১ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ৩০ জানুয়ারি ২০১১ | ১০৫৪ বার পঠিত
কলেজের তরফে কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। কিন্তু ভার্সন শোনা যায় কিছু কিছু। সে জলপাইগুড়ি শহরেরই এক লোকাল মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের ছেলে লোকাল মেয়েকে "তুললে' সেটা শহরের এক ধরণের অপমান হয়ে দাঁড়ায়, কারণ আর যাই হোক, আমরা ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের ছেলেরা, আসলে কলকাতা বা তদ্সন্নিহিত অঞ্চল থেকে আসা একদল বহিরাগত গুণ্ডা অ্যান্টিসোশ্যাল প্রকৃতির ছেলে ছাড়া তো কিছু নয় টাউনের লোকেদের কাছে! সেই ছেলেদের কারুর প্রেমে পড়বে জলপাইগুড়ি টাউনের মেয়ে, এটা কী করে মেনে নেয় টাউনের এলিজিবল ব্যাচেলরের দল? শোনা যায়, অর্ঘ্যও টার্গেট হয়েছিল সেইভাবেই। মেয়েটিরও দেখা করতে আসার ছিল তিস্তার পাড়েই, তাকে কোনওভাবে ঘরে আটকে অন্যরা আসে, এবং একা অর্ঘ্যকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় বর্ষার ভরা তিস্তার জলে। কোনও সাক্ষী ছিল না, কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই, কেস উঠেছিল, কিন্তু টেঁকে নি। কেবল মনে সন্দেহটা রয়ে গেছে। জলপাইগুড়ির বর্ষার কথা মনে পড়লেই এখনও অর্ঘ্যকে মনে পড়ে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জমানায় ইসলাম : মুসতাইন জহির
বুলবুলভাজা | | ৩০ জানুয়ারি ২০১১ | ১০২০ বার পঠিত
লেখক বইয়ের ব্যাক-কভারে পাঠকের কাছে একটা আহ্বান রেখেছেন বিজ্ঞাপন আকারে। কষ্ট উপশমের জন্য এই উপাখ্যান পড়ে বেদনা ভাগাভাগি করতে। বলেছেন, আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের মুসলমান এবং বাঙালি এই দুই পরিচয় নিয়ে রক্তাক্ত হই। কেন হই, কারা করে? তিনি উল্লেখ করছেন, সেটা হই আমরা আবার দুইদিক থেকে। বাইরের দিক থেকে উন্নত বিশ্বের মানুষ আর ভেতরের দিক থেকে "আমাদের পাহাড়সম জাতীয় অজ্ঞতা, পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে মানুষের অনীহা, ধর্মের নামে প্রতারিত হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা'ই কারণ-পদার্থের অন্যতম। দু:খের মধ্যে আরো কী আছে সেটা দেখতেই প্রলুব্ধ হয়েছিলাম বইমেলা থেকে বইটি কিনতে। সাথে সবিস্তারে কাহিনীকল্পনার রসায়নে কি উত্তর তিনি তৈরি করেছেন সেটা পরখ করে দেখারও ইরাদা ছিল বৈকি। "ইতিহাস', "ধর্মতত্ত্ব' আর "দর্শনের' উপাদান মিশিয়ে বর্তমনকালের হাড়িতে বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের যে খিচুড়ি পরিবেশিত হয়েছে তাতে এই জনগোষ্ঠীর দেহে সত্যিকার আঘাতের ক্ষতবিক্ষত রক্তচিহ্ন, আত্মমর্যাদা ও অধিকার আদায়ের লড়াইগুলো উধাও হয়ে গেছে। সমস্ত আয়োজন ঘিরে রেখেছে "অজ্ঞতার পাহাড়' প্রদর্শনের কাফেলা আর "ধর্মের নামে প্রতারিত হওয়ার জন্য উন্মুখ' থাকা মুসলমানদের আমেরিকান ইসলামের নির্বিচার ভোক্তা বানানোর উপদেশ। প্রকল্পের দিক থেকে এটা সাম্রাজ্যিক খায়েশেরই উত্তম বহি:প্রকাশ।
দেবকী বসুর 'কবি', ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ (চতুর্থ কিস্তি) : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১০ জানুয়ারি ২০১১ | ১৪১৫ বার পঠিত
সেই যে রেলের প্রসঙ্গ থেকে শরত্চন্দ্র আসতে শুরু করল, বারবার মাথায় এসেই যাচ্ছে এগুলো। এই বাবুর শরত্চন্দ্র সংস্করণটা মনে পড়ছে? এলএ পাশ করার পর ডেপুটি হওয়ার অপেক্ষারত নতুনদা? নতুনদা নামে যদি মনে নাও পড়ে, পাম্পশু থেকে নিশ্চয়ই পড়বে। এই বাবুটিরই নিকট কেউ হওয়ার সম্ভাবনা আছে নতুনদার। নভেম্বর বিপ্লবের বছরে শ্রীকান্ত ছাপা, তার বেশ কিছু বছর আগে ঘটেছিল নতুনদা উপাখ্যান, শ্রীকান্তর কিশোর বয়সে। ১৯০০ সালে শরত্চন্দ্রের বয়স ১৪, তার মানে ১৯০২ নাগাদ ধরে নিতে পারি নতুনদা মাঘের শীতে বরফশীতল নদীর জলে ডুব দিয়ে বসে কুকুরের হাত থেকে বেঁচেছিলেন, তখন যদি তার বয়স বাইশ-চব্বিশ ধরে নিই, তাহলে ১৯৩৮-এ তার বয়স প্রায় ষাট। তাহলে তারাশঙ্করের এই বাবুটির পিতা তিনি হতেই পারেন। এবং এই বংশধারা তো আবহমান ছিলই। শ্রীকান্তর বন্ধু ইন্দ্রর দাদা নতুনদা উপাখ্যান অন্তে একটি অনাবিল অপ্রতিরোধ্য ভাঁড়ে পর্যবসিত হয়েছিলেন, কিন্তু সে তো শরত্চন্দ্রের পোয়েটিক জাস্টিস, কাব্যিক ন্যায়বিচার, আদতে ঘটনাটা ছিল এই যে, যদি এমনকি ভাঁড় হয়েও থাকে, সেই ভাঁড়ই, সেইরকম ভাঁড়েরাই, ফিরে গিয়ে ডেপুটির চাকরি পাবে, ইন্দ্র জানিয়েছিল শ্রীকান্তকে।
উত্তরবঙ্গ - ১০ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১০ জানুয়ারি ২০১১ | ১১৪৯ বার পঠিত
তার পরের ঘটনাগুলো ম্যাজিকের মত ঘটল। দেড়শো ছেলে একসাথে নেমে এল নিচে, প্রথমে হস্টেলের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে তালা মারা হল। তারপর ম্যাজিকের মত সকলের হাতে চলে এল অØষন। জিনিসগুলো এক্স্যাক্টলি আমাদের ঘরেই ছিল, কেউ জানতাম না, কী করে যে সেই মুহুর্তেই জেনে ফেললাম তাও মনে পড়ছে না, কেবল মনে আছে আমার ঘরেই লকারের মাথা থেকে বেরোল একটা হকিস্টিক, একটা চেন। আমি হকিস্টিকটা নিলাম, রুমমেট কে-কে নিল চেন। প্রায় পুরো হস্টেল এই রকম চেন রড হকিস্টিক ইত্যাদি জিনিস নিয়ে নিচে মেন গেটের সামনে লবিতে পজিশন নিল, কেবল মাষন একজন ফোর্থ ডান ব্ল্যাক বেল্টের মোকাবিলা করার প্রচেষ্টায়।
মায়া মিডিয়া : অনির্বাণ বসু
বুলবুলভাজা | খবর : মায়া মিডিয়া | ১০ জানুয়ারি ২০১১ | ১৩৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
তিনি বলছেন ইন্ডিয়ার কয়েকশ' মিলিয়ন গরিবলোকের উপকার, যাদের কোনো আইডেন্টিটি নেই, যারা কোনো বেনিফিট পান না। তিনি আরও বলছেন ঝুঁকির থেকেও বড় হল এই গরিবলোকেদের আইডেন্টিটি দেওয়া, তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে ঝুঁকি পুরোপুরি দূর হয়। এর পরই অরুণোদয় মুন্সিয়ানার সাথে আমাদের দেখাচ্ছেন একটি উপকারের উদাহরণ। দিনমজুর রাম বাবুর নম্বর না থাকার জন্য এতদিন সেল ফোন হচ্ছিল না, এখন আইডেন্টিফিকেশন হবার সাথে সাথে সেলফোন হল - আই ডি কে ধন্যবাদ। তার পর আবার অরুণোদয়ের তথ্য সম্বৃদ্ধ রিপোর্টিং - ৩০০০কোটি টাকার প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে "পুওরেস্ট অফ দ্য পুওর'-দের দিয়ে। ২০১৪ সালের মধ্যে ৬০০ মিলিয়ন ভারতবাসী এই কার্ড পাবেন। একজন আদর্শ সাংবাদিকের মত অরুণোদয় লেখার শেষদিকে ইন্ডিয়ানদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। বলছেন, হরি সিং-এর মত ভিখারীরাও, যারা দিল্লীর ওখলা ফ্লাই-ওভারের তলায় থাকেন, আশা করছেন লাইফ বেটার হবে, - "থ্যাংক্স্ টু এ ফিউ ডিজিট্স্।' আই ডি ছাড়া ফ্লাই-ওভারের তলায় থাকা আর আই ডি নিয়ে ফ্লাই-ওভারের তলায় থাকার যে তফাত, তা বুঝে নিতে কোনো অসুবিধেই হল না এইবার।
আসামের বাংলা কবিতা চর্চা- প্রথম কিস্তি : অমিতাভ দেব চৌধুরী
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৪ জুলাই ২০১১ | ২৮১৭ বার পঠিত
বষয়টিকে একটু বিশদ করার প্রয়োজন মনে করি। যে কোনও বাঙালিরই মানসভুবন কলকাতা আর দেশভাগে বাস্তুচ্যুত বাঙালির শিকড়ভুবন পূর্ববঙ্গ। বাস্তুচ্যুত যে কোনও বাঙালি কবিরই নান্দনিক জগৎ কলকাতায়, সেখান থেকে ইশারা আসে, খবর আসে। সেখানকার আলো হাওয়ায় কেলাসিত হয়ে বহির্বিশ্বও তার কাছে এসে ধরা দেয়। আবার তার প্রাণের শিকড় তো, অন্তত গত শতাব্দী পর্যন্ত, চারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের কোনও চোখে না দেখা-নাম শোনা কিংবা চোখের দেখা-প্রাণের-কথায়-ভরা গ্রামে। সেখান থেকে কি আসত? আসত স্মৃতি আর রূপকথা। কিন্তু তার বাস্তবের পৃথিবী? দেশভাগের পর বাস্তুচ্যুত বাঙালির বাসভুমি তো ছড়িয়ে আছে আবিশ্ব - নিউ ইয়র্কের পানশালা থেকে আসাম কিংবা মিজোরামের অনাবাদী জমির পাশের ঘাসবৃক্ষ পর্যন্ত।
এখন, এই বাস্তবের পৃথিবীর শিশিরবিন্দুগুলিকে ভালো না বেসে, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে কবি যদি শুধু ঘুরে বেড়ান এক অতৃপ্ত মানসলোকে কিংবা স্মৃতিপৃথিবীতে - তাঁর এই পর্যটন তো, পুরাণের ভাষায় বললে, গণেশের সেই মাতৃপ্রদক্ষিণ, যা আসলে কার্তিকের প্রকৃত ভ্রমণটিকে দাবিয়ে রাখার জন্য বানানো এক নিপুণ কথার ফাঁদ।
তো একজন কবির তো আসল সত্যটা জানা চাই। কথার ফাঁদ কতদিন আটকে রাখবে তাঁর কবিত্বকে? আর এই কথার ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়েছে আসামের বাংলা কবিতা তার আশ্চর্য ভূগোল-সচেতনতায়। মূলত দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারনে বিগত শতাব্দীটি ছিল কাঁটাতারের আর উদ্বাস্তু প্রব্রজনের। তার ভূগোল-চেতনার মাধ্যমে আসামের বাংলা কবিতা সব মানস-কাঁটাতারকে অগ্রাহ্য করার শক্তি পেয়েছে।
বাউনের খাদ্যপ্রেম - প্রথম কিস্তি : রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ০৪ জুলাই ২০১১ | ২৯৭৮ বার পঠিত
"আমাদের জলখাবার সম্বন্ধেও তাহার অত্যন্ত সংকোচ ছিল। আমরা খাইতে বসিতাম। লুচি আমাদের সামনে একটা মোটা কাঠের বারকোশে রাশকরা থাকিত। প্রথমে দুই-একখানি মাত্র লুচি যথেষ্ট উঁচু হইতে শুচিতা বাঁচাইয়া সে আমদের পাতে বর্ষণ করিত। দেবলোকের অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিতান্ত তপস্যার জোরে যে-বর মানুষ আদায় করিয়া লয় সেই বরের মতো, লুচি কয় খানা আমাদের পাতে আসিয়া পড়িত তাহাতে পরিবেশনকর্তার কুণ্ঠিত দক্ষিণহস্তের দাক্ষিণ্য প্রকাশ পাইত না। তাহার পর ঈশ্বর প্রশ্ন করিত,আরো দিতে হইবে কিনা। আমি জানিতাম, কোন্ উত্তরটি সর্বাপেক্ষা সদুত্তর বলিয়া তাহার কাছে গণ্য হইবে। তাহাকে বঞ্চিত করিয়া দ্বিতীয়বার লুচি চাহিতে আমার ইচ্ছা করিত না। বাজার হইতে আমাদের জন্য বরাদ্দমত জলখাবার কিনিবার পয়সা ঈশ্বর পাইত। আমরা কী খাইতে চাই প্রতিদিন সে তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া লইত। জানিতাম, সস্তা জিনিস ফরমাশ করিলে সে খুশি হইবে। কখনো মুড়ি প্রভৃতি লঘুপথ্য, কখনো-বা ছোলাসিদ্ধ চিনাবাদাম-ভাজা প্রভৃতি অপথ্য আদেশ করিতাম। দেখিতাম, শাস্ত্রবিধি আচারতত্ত্ব প্রভৃতি সম্বন্ধে ঠিক সূক্ষ্মবিচারে তাহার উৎসাহ যেমন প্রবল ছিল, আমাদের পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে ঠিক তেমনটি ছিল না।'
মহাভারত সপ্তম পর্ব : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৬ জুলাই ২০১১ | ১২৬০ বার পঠিত
বাইরে এখন নরম লাল আলো একটু একটু করে ভেসে উঠছে। রাত্রির অন্ধকার কেমন পা পা হেঁটে চলে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। ওই, স্তবগান শুরু হচ্ছে মন্দিরে! পুত্র ব্যাস যা ব্যাখ্যা করতে চাইছে তা তিনি জানেন। বশিষ্ঠ্য-বিশ্বামিত্র বা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় বিরোধ আজ আর বিষয় নয়! আজ নতুন যুগের সঙ্গে নতুন সংকট এসেছে। দেবধর্ম বা বেদধর্ম নয়, ধনের ধর্মই প্রবল এখন। দোয়াবের দুই তীর ধরে যে অসংখ্য নগর গড়ে উঠেছে তাদের কেউ কেউ রাজশাসিত, কেউ কেউ গণের অধীন। সর্বত্রই এখন সামাজিক আইনের বিরোধ চলছে। যেখানে যে আইন আছে, সেখানে সেই আইনই মানুষের অসহ ঠেকছে! কী একটা বিষয় যেন তাকে সর্বত্র খোঁচা দিয়েই চলেছে। কিছুতে তার শান্তি নেই। কিছুতে স্বস্তি পেতে পারছেনা সে। বিলাসের চূড়ান্ত থেকে কৃচ্ছসাধনের শেষ সীমা অবধি গিয়েও যেন কিছুতেই হচ্ছেনা সমাধান। এ বিরোধের প্রকৃতি সত্যি পরিষ্কার নয় সত্যবতীর কাছে। তিনি আর কত বুঝবেন? কেনই বা বুঝবেন? সত্যিই তো, যার সন্তান সে এসে গেছে এবারে। সেই ঠিক করে দিক কে কী করবে? তিনি কেন আর টানবেন এই সব? এই প্রাসাদের বাইরের যে জীবন তাঁকে অমৃতের আস্বাদ একবার দিয়েছিল তারই কাছে ফেরাই উচিত। দূর থেকে ভেসে আসছে স্তব, কান পেতে শোনার চেষ্টা করলেন তিনি। গায়ত্রী, না কি অন্য কিছু? ছাই আজকাল কানেও সমস্যা। হেসে ফেললেন নিজেই। বুড়ি হয়েছ সত্যবতী, বুড়ি। চলো, এবারে তবে বাণপ্রস্থেই চল!
এত তাড়াতাড়ি ? : কবীর সুমন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ জুলাই ২০১১ | ১০১৬ বার পঠিত
রাজ্য পরিচালনার ভার যে রাজনৈতিক দলের হাতেই থাকুক না কেন, শাসকশ্রেণী অর্থাৎ পুলিশবাহিনীর সঙ্গে তাদের অশুভ আঁতাত যে কোনও সময়েই বিয়ের মত বাঁধনের চাইতেও বেশী শক্তপোক্ত হয়ে দাঁড়ায়, এমনটা যেন একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে উঠেছে। আর ঠিক এমনটাই না হলে মনে হয় না যে ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষে রাজ্যে শাসন করা আদৌ সম্ভব হবে । গোটা বিশ্ব জুড়ে মানুষ, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক নেতা, সবাই শান্তির কথা বলে, সমস্যা ইত্যাদির শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বাতলায়। কিন্তু তারা এই কথা বলে হয় শাসকদল অথবা জোটের অন্তর্ভূক্ত হয়ে, নিজের হাতের মুঠোয় পুলিশি ক্ষমতা রেখে। এ এক আজব পরিস্থিতি; আমি এক রাজনৈতিক নেতা সশস্ত্র পুলিশবাহিনী এবং কম্যান্ডোদের (আমার স্ট্যাটাস যদি তাই হয়) সুরক্ষাবেষ্টনীর মধ্যে থেকে সাধারণ জনগণকে হিতোপদেশ বিতরণ করতে আসবো, তাদের সমস্যার প্রজাতান্ত্রিক সুরাহা দর্শাবো, আমার নিরাপত্তারক্ষীরা পুরো ঘটনার সময় চারদিকে নজর রাখবে, তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে থাকবে, সেইসব সাধারণ মানুষ যারা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছে তাদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাবে, কারণ তারা দেখতে চায় কোন ভোট-নাগরিকের হাতে আমার সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা। এত এত সংখ্যক পুলিশ আর সশস্ত্র কম্যান্ডোরা, বিপুল পরিমাণ এই আগ্নেয়াস্ত্রের ভান্ডার রক্ষীদল এবং প্রজাতন্ত্রের হাতে, এসব দেখে আমার মন কু-গায়, হয়ত প্রজাতন্ত্র একটা অতিবিপজ্জনক প্রস্তাবনা - এই বুঝি খুব খারাপ কিছু ঘটে গেল। এইভাবে দেখলে মনে হয় আমাদের গণতান্ত্রিক অব্যবস্থা একটা রূদ্ধশ্বাস থ্রীলার।
বাউনের খাদ্যপ্রেম - দ্বিতীয় কিস্তি : রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ০৮ জুলাই ২০১১ | ১৪০৯ বার পঠিত
তবে কবিরাজ গোস্বামী হিং দিতে কিন্তু বলেন নি। এটার নাম তিনি দিয়েছিলেন- দুগ্ধতুম্বী ( তুম্বী= লাউ)। এরপর, শ্রীরাধার মনে হলো- না:! কম পড়ে যাচ্ছে!!!! আবার তিনি কচি মোচা কেটে ," মরিচাঘ্য' রাঁধতে বসলেন। মোচার ছোটো ছোটো শস্য গুলো ঝিরি ঝিরি কেটে জলে ডুবিয়ে খানিকক্ষণ রেখে দিলেন। তারপর, দুধ, মরিচ আর হিং দিয়ে ঘন ঘন নেড়ে ফুটে গেলে নামিয়ে রেখে ঠাণ্ডা হতে দিলেন।
কবিরাজ গোস্বামী হিং দিতে এখানেও বলেন নি! শ্রীকৃষ্ণ হিং ভালোবাসতেন কিনা জানা যায় না, তবে কবিরাজ গোস্বামী হিং ভালোবাসতেন না- এটা পরিস্কার! এত কিছু করে, শ্রীরাধার মনে হলো, এবার কিছু "অম্ল' বা টক তৈরী করতে হবে। আজকাল হলে শ্রীকৃষ্ণ এত কিছু খাবার পর জেলুসিল খেতেন! কিন্তু, তখন তো ওসব পাওয়া যেত না! দেখি! শ্রীরাধা কী কী রাঁধলেন!!
মকবুল বললেন : কবীর সুমন
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৭ জুলাই ২০১১ | ১০১৮ বার পঠিত
এই হাজার দশেক ছেলে মেয়ে চাকরি পাবে পুলিশে মকবুল, খারাপটা কী?
-আহা হা খারাপ কেন হবে কবীর সুমন, দশ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি, সোজা কথা! চাট্টিখানি কথা!
তবে কি,আমি ভাবছিলাম চাকরি তো আরও নানান ক্ষেত্রে হতে পারতো।
এই পুলিশেই দশ হাজার চাকরি, মানে, পুলিশেই?
-তোমার কী মনে হয় কবীর ?
কাউন্টারটা দাও।
-অ্যাঁ এটা তো আমার বলার কথা,আজকে তুমি আমায় কাউন্টারটা দাও।
দেখ মকবুল, আমার মুখ দিয়ে তুমি কিছু বের করতে পারবে না।
-পারবো, পারবো ।
একদিন না একদিন ঠিক পারবো।
কাউণ্টারটা দাও।
আরে, এই সবেতো আমি নিলাম।
-তাতে কি? কাউন্টারটা দাও
শোনো কবীর সুমন, আমি ভাবছিলাম কি, কী চমৎকার একটা পলিটিকাল চাল চাললেন দেখো এই রাজনীতিক। অসামান্য এঁর মেধা, কী তীক্ষ্ণধী ।
বিকৃত আদর্শের ব্যবসা : ওয়াক্কাস মীর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জুলাই ২০১১ | ৯১১ বার পঠিত
ধর্মের মূলকথাই হলো মানবিকতা। ধর্মকে বোঝার আর বোঝানোর মূলকথাও তাই। কোরানের ব্যাখ্যা করতে হলে আগে দেখা দরকার যে আমরা কোন পথে হাঁটবো। আমরা কি সেই পুরনো সময়ে আটকে থাকা আক্ষরিক মানে বেছে নেবো? নাকি দেশ-কালের উপযোগী ভাবার্থকে নিয়ে এগোবো? বলতে বাধ্য হতে হয় যে আমাদের মুসলিম বুদ্ধিজিবীদেরই কোথায় যেন খামতি থেকে গেছে। যাঁরা ইসলামের আসল ব্যখ্যা তুলে ধরতে পারতেন, ধর্মাচরণের রাস্তায় কোথায় যেন তাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন। তার ফলে ধর্মকে লড়াইয়ের হাতিয়ার বানিয়ে একদল তথাকথিত ধর্মগুরু আজ সারা মুসলিম দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের কাজই হলো মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বোঝানো যে "আমাদের ওপর অন্যায় হয়েছে, তাই এখন শোধ তোলার দিন'। এদেরই প্ররোচনায় মানুষের মনে প্রতিনিয়ত ঘৃণা আর তিক্ততা ভরে যাচ্ছে। আর সেই থেকেই রোজ তৈরী হচ্ছে হাজার হাজার সন্ত্রাসী, খুনে, আতংকবাদী। কোনো অর্থাভাব নয়, কোন বঞ্চনা নয়, শুধুমাত্র ঘৃণা আর বিকৃতির আদর্শ রোজই জন্ম দিচ্ছে উগ্রপন্থার।
পুজোর হুজুগ ৩ -- পুজোয় চাই : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৫ অক্টোবর ২০১১ | ১০০২ বার পঠিত
পুজোর সময়টা একটু ব্যস্ত থাকব। তেমন কিছু না, একটু ঘুরতে হবে আর কি। নানা বেড়াতে-টেড়াতে নয়। ওসব সুখ কি আর কপালে আছে? সাধ করে তো আর যাচ্ছি না। এই বুড়ো বয়সে কোথায় পায়ের উপরে পা তুলে আয়েস করব, লোকজন এসে প্রণাম টনাম করবে, অনেকদিন তো হল এবার একটু প্রধানমন্ত্রী হন স্যার বলে সাধবে, তা নয়, আবার রথে চড়তে হচ্ছে। না না কলা-টলা বেচতে যাচ্ছি ভাববেন না। ওটা বজরং দলের ডিপার্টমেন্ট। গদা হাতে ল্যাজ লাগিয়ে লাফাবে, কলা-টলা বেচবে। হই-হল্লা করবে। ওসব ছোটোখাটো জিনিস নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনা।
পুজোর হুজুগ ১ -- পুজোর থিম, থিমপুজো : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৩ অক্টোবর ২০১১ | ১২৬১ বার পঠিত
পুজোর জগতেও এবার এসে গেল পরিবর্তন। ষষ্ঠীর দিন এক বাংলা চ্যানেল জানালেন, এবার ফোকাসে পরিবর্তন। আর কলকাতা-কলকাতা নয়। এবার পুজো গোটা বাংলার। এবার পুজো বৃহৎ চেতনার। বঙ্গ চেতনা ও মানবচেতনার। ছোটোখাটো ইস্যুতে থিমকে আর বেঁধে রাখা যাচ্ছেনা যাবেনা। হাওড়ার পুজো কমিটির প্রধান জানালেন, তাঁদের এবারের পুজোর থিম জঙ্গলমহল, সাঁওতাল সমাজ ও নাগাল্যান্ড। জঙ্গলমহল আর ভূমিপুত্র না হয় বোঝা গেল, কিন্তু নাগাল্যান্ড কেন? না, নাগাল্যান্ড সরকার তাদের ভূমিপুত্রদের নিয়ে যে ধরনের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, বাংলার সরকার দশকের পর দশক ধরে তার কানাকড়িও করতে পারেননি। এই জ্বলন্ত ইস্যুকেই তাঁরা তুলে ধরছেন তাঁদের থিমে। অন্যদিকে সল্টলেকের পুজো কমিটির প্রধান জানালেন, তাঁদের এবারে থিম নারীশক্তি। যিনিই ত্রাতা, তিনিই মাতা। ভাবছেন সে আর নতুন আর কি হল? দেবী দুগ্গা তো এমনিতেই নারী শক্তি। কিন্তু শুনতে সোজা হলেও আসলে ব্যাপার ততটা নয়, এসব বুঝতে হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বৃহৎ পরিপ্রেক্ষেতির প্রেক্ষাপটে। এ নারী তো সে নারী নয়। এ যে পরিবর্তিত নারী।
পুলিশি রাষ্ট্র, ব্লগার নির্যাতন এবং বাক-স্বাধীনতা হত্যা : আসিফ মহিউদ্দীন
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৭ অক্টোবর ২০১১ | ১২৫৭ বার পঠিত
এরপরে তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে এবং প্রায় সারারাত জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের জিজ্ঞাসা ছিল প্রধানত বিভিন্ন আন্দোলনে আমি ঘরের খেয়ে বনের মোষ কেন তাড়াচ্ছি, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও কেন তাদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিজের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছি, এই রাষ্ট্রবিরোধী কাজের জন্য আমি অর্থনৈতিক ভাবে কীভাবে লাভবান হয়েছি, এত বড় এবং লম্বা লেখা আমি কোন ধরণের আর্থিক সুবিধা ছাড়া কেন লিখলাম সেটা, আমি নাস্তিক কিনা, আমি শুকর খাই কিনা, নামাজ রোজা কেন করি না, ধর্মবিরোধী লেখা কেন লিখি, ইত্যাদি।
বেসিমারি ও ৫২ নং জাতীয় সড়ক : দেবর্ষি দাস
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১২ অক্টোবর ২০১১ | ৯২৬ বার পঠিত
মিঞাদের আরো নাম আছে। পুরাতন অসমিয়াদের কাছে তারা 'ময়মনসিংগিয়া'। সম্বোধনটি তাচ্ছিল্যমিশ্রিত। তবে এর খানিক ইতিহাসভিত্তি আছে। বৃটিশদের ভূমিরাজস্বের খাঁই ছিল ভরপেট। আসামদেশ দখল করার পর সায়েবদের খেয়াল হল এখানে জমির অভাব নেই। অথচ জনসংখ্যা অপ্রতুল। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য জমি চাষে লাগানো দরকার। ব্রহ্মপুত্রের চর, পলিজমি পাট চাষের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু চাষ করবেটা কে? বাংলার জনঘনত্ব সেই সময় আসামের কয়েকগুণ। অতএব প্রশাসন পূর্ববঙ্গ থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় চাষিদের আনার উদ্যোগ নিল। এদের প্রায় সবাই মুসলমান ছিলেন, এবং বেশিরভাগ ময়মনসিংহের। কালে পূর্ববঙ্গের মুসলমান মাইগ্রান্ট চাষি মানেই ময়মনসিংগিয়া নাম হল। বর্তমানে তাদের 'ন-অসমিয়া' নাম দিয়ে অসমিয়া সমাজে একাত্ম করার চেষ্টা চলছে। সরকারি প্রচেষ্টা আর কী। মধ্যবিত্ত মানসের অবস্থা বাসের মত।
পাট চাষ নিয়ে এই লেখা,মাঝখানে শিবের গীত এসে গেছে। পরশু, ১০ অক্টোবর বেসিমারি গঞ্জে পুলিশের গুলিতে ৪ জন পাট চাষি মারা গেছেন, অনেকে আহত। দাবি ছিল পাটের জন্য ন্যায্য দামের, পাটের স্তুপ বানিয়ে ৫২ নং সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের মাথায় ঢিল পড়লে পুলিশ কয়েন, মানে গুলি, ছোঁড়ে।
উত্তরবঙ্গ ৭ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১৩১৫ বার পঠিত
ফর্ম ভর্তি হয়ে চলে এলে হস্টেলে কাজে নেমে পড়ত শিল্পীরা। আমিও এই শিল্পকর্মে নিযুক্ত থেকেছি অনেকদিন। শিল্পটা আর কিছুই না, একটা দেশলাই কাঠির ডগায় অল্প একটু তুলো লাগিয়ে, সেই তুলো জিওলিনে ভিজিয়ে সুক্ষ্ম হাতে যাওয়া এবং আসার তারিখদুটোকে মুছে দেওয়া। সবুজ কালি উঠে গিয়ে জায়গা দুটো ক্লোরিনের কল্যাণে একেবারে কোরা কাগজ হয়ে যেত। এইবার নিজেদের সবুজ কালিতে, সেই ভদ্রলোকের হাতের লেখার স্টাইলে নিজেদের পছন্দমত ডেট বসানো হত। সাধারণত পুজোর ছুটি পড়ত মহালয়ার দিন থেকে, থাকত ভাইফোঁটা পর্যন্ত। আমরা সেটাকে বাড়িয়ে নিতাম আগে পিছে এক থেকে দু সপ্তাহ মতন। মোটামুটি মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই হস্টেল ফাঁকা হয়ে যেত, আবার ভর্তি হত ভাইফোঁটার পরের সোমবার। অনিচ্ছুক হবার কারুর উপায়ও ছিল না, কারণ মেজরিটি চলে যাবার ফলে মেস টেসও বন্ধ হয়ে যেত। বাইরে একদিন দু দিন খাওয়া যেত, কিন্তু দীর্ঘদিন বাইরে খাওয়া ছাত্রদের পক্ষে বেশ অসুবিধাজনক ছিল। ফলে, সেই বিশেষ দিনটিতে প্রায় দেড়শো দুশো ছাত্র একসাথে ট্রেনে চড়ত।
রূপান্তরকামী ডিয়েড্রের গল্প : অর্পিতা ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১০৩১ বার পঠিত
আইডেন্টিটি বা পরিচয় কী? সমাজের দ্বারা নির্ধারিত না জৈবিক, নাকি দুইয়ে মিলেই, নাকি আরও অন্য কিছু? ম্যাকক্লস্কির ক্ষেত্রে সমাজ বা বায়োলজি, এ দুইয়ের বাইরে পরিচয় নির্ধারণের আরো একটা জায়গা রয়েছে, যা তাকে বলে দেয় কোনটা তার "আসল' পরিচয়। ম্যাকক্লস্কি স্বীকার করেন না যে মানুষের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট পরিচয় গাঁথা আছে যাকে বের করে আনাই মানুষের একমাত্র নিয়তি, বরং পরিচয় মানুষের স্বাধীনতার ফসল, যা সে নিজের পছন্দমত গড়ে নিতে পারবে।
ম্যাকক্লস্কি বার বারই জৈবিক লিঙ্গ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শরীরের আর পাঁচটা অঙ্গের তুলনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু কারুর চোখ কটা হলে সেটা তো তার গোটা সমাজের সাথে সম্পর্ক স্থির করে দেয় না, যেমনভাবে দেয় তার লিঙ্গ পরিচয়, ফলে এই তুলনাগুলো কিছুতেই মানুষের অর্ডারের ধারণাকে টলাতে পারে না।
রিটার্ন অফ দ্য ফ্যাতাড়ু : অধীশা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ৮২৪ বার পঠিত
লোকটা আসলে কে? নকলেই বা কে? নামটা জানা, আর কাজ তো বটেই, যে কাজের ঠেলায় FBI-এর প্রাণ ওষ্ঠাগত, Pentagon পরেশান। কিন্তু তা ছাড়া আর বিশেষ কিছু বলা মুশকিল। আফগানিস্তান কাণ্ডের গুরুত্ব বোঝাতেই হয়ত, এই প্রথমবার আসাঙ্গে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সাহায্য নিল গোপন ফাইলপত্র ফাঁস করার কাজে। এতে ধামাকাটা হল আরো জোরে। এবং এতে করে, এই প্রথমবার, আসাঙ্গেকে সচক্ষে দেখল পৃথিবী। সাদা চুল, ফ্যাকাশে, দোহারা মানুষ। হাসিটা তীক্ষ্ণ আর চোখদুটো বেশ খতরনাক। জানা গেল, আসাঙ্গের কোনো পার্মানেন্ট ঠিকানা নেই, কম্প্যুটর ব্যাগে ভরে সে ঘুরে বেড়ায় এ দেশে-ও দেশে, থাকে কখন হোটেলে, কখন বন্ধুদের সোফায়। এই যাযাবরটির অনেক বন্ধু, যারা শুধু আশ্রয়ই দয় না, দেয় ইন্ফর্মেশন। আসাঙ্গে এই "volunteer" দের সাহায্যে গড়ে তুলেছে বেশ তুখোড় এক গুপ্তচর-নেটওয়ার্ক। গোপন ফাইলপত্র হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাচার হয়ে যায় লুকোনো সার্ভার ধরে anonymous মেইলবক্সে। কে-কোথায়-কিভাবে-কেন বার করা প্রায় অসম্ভব।
তথ্য-প্রযুক্তি কতদূর এগোলো বাংলা? : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ৯৬৫ বার পঠিত
বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রধান উদ্যোক্তা এবং আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড| রাগিব হাসান। এক ইমেইল বার্তায় তিনি এই লেখককে বলছেন, গত চার দশকে বাংলা ভাষার ব্যবহার এগিয়ে গিয়েছে অনেকটা। এ ক্ষেত্রে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এতদিন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো, যার কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল ছিল না। গত পাঁচ বছর ধরে সার্বজনীন ইউনিকোডে বাংলা লেখা হচ্ছে, ফলে ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। বাংলা ব্লগের বিপুল জনপ্রিয়তা ও বাংলা উইকিপিডিয়ার বিস্তার লাভই এর বড় প্রমাণ।
"অভ্র' সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান খান। মেহেদী, রিফাতুন্নবি, তানভিন ইসলাম সিয়াম, রাইয়ান কামাল, শাবাব মুস্তফা, নিপুণ হক -- এই কয়েকজন বন্ধু গত ছয় বছর ধরে অভ্র নিয়ে কাজ করছেন।
তৃতীয় শিবির : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১২৮৩ বার পঠিত
স্বপন সিগারেট ফেলে দেয়। ও তারপর রনকে চুপুচুপি বলে, "তোকে বলা হয় নি আসলে। আমার সেইসব বইগুলো, উদয়নের 'আমি এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে', কিংবা তুষারের 'শেষ নৌকা', সেগুলোও খুঁজে পাচ্ছে না কয়েকদিন হল। আর, আর আমাদের পত্রিকার পরের সংখ্যার প্রুফ, সেটাও . . .' দূরে গাড়ির আসা-যাওয়ার শব্দ এইখানে বেশ পরিষ্কার শোনা যায়। বৃষ্টি ধরে এসেছিল। আলো যৎসামান্য, ও হলুদ।
এখন স্বপন উঠে দাঁড়ায়। দুহাতে কোটটা ফাঁক করে ধরে। বলে, "আমি কিন্তু ছাড়ব না, রন। আই উইল ডেফিনিটলি প্রোটেস্ট। প্রোটেস্ট রন, প্রোটেস্ট। ইয়েস ইয়েস, প্রোটেস্ট। আমি, আমি এ নিয়ে আন্দোলন করব। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। সংসদে বিল আনব।"
ভিতেবস্ক-এর ভবঘুরে : প্রগতি চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১১৭০ বার পঠিত
প্যারিস তাঁর কাছে হয়ে যায় দ্বিতীয় ভিতেবস্ক, আইফেল টাওয়ারের মোটিফ আসে ছবির মধ্যে। ইয়োরোপের সামনে এসে দাঁড়ায় যুদ্ধ, আর রাশিয়ায় আসে বিপ্লব। পুরোনো ধাঁচ ভেঙ্গে যে নতুন দেশটির দরজা আস্তে আস্তে ইয়োরোপের সামনে খুলে যায়, সেখানে শিল্প ,চারুকলার কি ভূমিকা হবে? শাগাল এই অদ্ভুত,পালাবদলের দিনে হঠাৎ দেশের নবীন বলশেভিক সরকারের আমলা হয়ে ওঠেন, শিল্পকলা বিভাগের কোন একটা দায়িত্বে। কমরেড শাগাল নতুন বিপ্লবী সরকারের দেওয়া পদে সরকারী কর্মী হলেন। কিন্তু আর্টের নামে সোভিয়েত সরকারের প্রচেষ্টা শাগালের মনে হয় নিতান্ত অর্থহীন, শহরের পরে শহরে সিমেন্টে বানানো লেনিন আর মার্ক্সের মূর্তি বসে, প্রোলেতারিয়ান আর্টের ঢেউ অন্য আর্টের ভাবনায় নিষেধ জারি করে। মস্কোয় বসে হাঁপিয়ে ওঠেন শাগাল। কবিদের কর্মশালায় ভীষণ জোরে জোরে চেঁচান মায়াকোভস্কি,থুতু ফেলেন সভার মাঝখানেই। শাগাল ভাবেন কবি বিপ্লবী হলে কি এত চেঁচাতে হয়, থুতু ছেটাতে হয় একঘর মানুষের মধ্যে? সোভিয়েত সরকারি প্রোলেতারিয় শিল্পের খাঁচায় বন্দী হতে চান না শাগাল। খোঁজেন নিজস্ব শিল্পীর জীবন, যেখানে নিজের ভাবনার আকাশে তিনি উড়ন্ত গরুও আঁকতে পারবেন, কারুর কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হবে না, "এটা কি , কমরেড শাগাল?' আবার রাশিয়া ছাড়তে চলেন মার্ক শাগাল।
মনুসাহিত্য : মোগো বাড়ি বরিশাইল : কুলদা রায়
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ৭১৬ বার পঠিত
আমাকে রক্ষা করতে আমার মা জননী একদিন দক্ষিণ দেশে চলে এল। রীতিমত উন্মাদ দশা। আমাকে যে বাঘে খায় নি, কুমোইরে খায় নি, বা ডাইনীতে কাঁচা গেলে নি দেখে তার ধড়ে প্রাণ ফিরে এল। রক্ষাকালীর উদ্দেশ্যে পাঁচসিকে মানত করে বসল। বলল, বাবা, তোর এখানে থাইকা কাম নাই। বাড়ি ফিরে চল।
ছেলেকে নিয়ে ঘরে দোর দিয়ে বসে আছে স্নেহময়ী মা। জানালাও আটকেছে শক্ত করে। চোখে ঘুম নাই। দরোজায় শব্দ হল। মার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। খুলতে গেলে হাত চেপে ধরেছে। বলছে, খুলিস না। খুলিস না। ডাকাইত। ডাকাইত আইছে।
ডাকাইত না। প্রতিবেশী বৌদি এসেছেন। হাতে পাকা আমের ঝুড়ি। খেয়ে মা বলল, অ মা, এ দেহি আম--মিঠা।
উত্তরবঙ্গ ৬ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১০০৮ বার পঠিত
ফার্স্ট ইয়ারের জনতার প্রথম আলাপচারিতায় অবশ্যম্ভাবী টপিক মূলত দুটো, কার কেমন র্যাগিং হল, আর কে কে কেমন প্রেম করে টরে, এবং তারই ল্যাজ ধরে কে প্রেমে কতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে। বর্ষাকালেই প্রেম আর ভূতের গপ্পো ভালো জমে। আমাদের ইনটেক হয়েছিল আগস্ট মাসে, তখন বাংলায় শ্রাবণ মাস, তরাই ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। প্রকৃতি এত সবুজ আর এত নীল আকাশ, আমরা প্রায় কেউই এর আগে দেখি নি। সন্ধ্যে বেলায় লোড শেডিং, ক্যাম্পাসের ব্যাকআপ জেনারেটর খারাপ, কাঁপা কাঁপা মোমবাতির আলোয় ঘিরে বসে জমতে থাকল আঠেরো ঊনিশ বছর বয়েসী একদল ছেলের আড্ডা। বিষয় প্রেম।
ছাপরা হিলে লাল : বিক্রম পাকড়াশী
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ২৩ এপ্রিল ২০১০ | ৯২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শুধু ভূমিকম্প নয়, কাপড়জামা না পরে ভগবানকে উত্তেজিত করলে আরও ভয়ানক শাস্তির বিধান আছে। দেখতে পান না, আফ্রিকায়, ভারতে, পাকিস্তানে, সমুদ্রের দ্বীপগুলিতে, আরবে, রাশিয়ায় জামাকাপড় না পরা বুড়ো লোক, বড়ো লোক, মেয়ে লোক, বচ্চা লোক, কেউ খেতে পাচ্ছে না, যত কাপড় খসে খসে পড়ছে, খাবার তত কমে যাচ্ছে, এমনকি যখন মরে যাচ্ছে, লক্ষ্য করে দেখবেন, গায়ে একটা সুতো অবধি থাকছে না।
প্রিয় বইয়ের সাথে আলাপ : কল্লোল দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ১৯ এপ্রিল ২০১০ | ২৩৯১ বার পঠিত
একদিকে শার্লক হোমস যখন আঙ্গুলের ক্ষয়ে যাওয়া নখ, জুতোর গোড়ালি, কলারের ভাঙ্গা কোনা থেকে মানুষ সম্পর্কে "অকাট্য" ধারণা তৈরী করছেন, তখন একটা মানুষের বলা গল্পের পটভূমি, তার শরীরভাষার মতন, সেইসময়কার যুক্তিকাঠামোর বাইরে থাকা বিষয় কে, গুরুত্ব দিয়ে ভাবা - নি:সন্দেহে সাহসের পরিচয়। এর কিছু আগেকার ঘটনা (১৮৩৮) গৌতম ভদ্র তার "জাল রাজার কথা"তে, দেখিয়েছেন মানুষ চেনার ঐ সব লক্ষণগুলিকে, ঔপনিবেশিক বিচারব্যবস্থা কিভাবে অস্বীকার করছে।
একের মধ্যে বৈচিত্র্য কিম্বা মিলমিশের ১লা বৈশাখ : কৃষ্ণকলি রায়
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ১৫ এপ্রিল ২০১০ | ৯৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আর,এই নানা রকম খাবার? ও তো আমিই করেছি সব। ঐ যে আহা নববর্ষে মায়ের লাল পাড় শাড়ি, শুক্তো, মোচার ঘন্ট, বাটি চচ্চড়ি, রুই মাছের কালিয়া - এই সব নস্টালজিয়ায় ভিজে চুপচুপে হয়ে যেতে আমার মোটেই ভালো লাগেনা। আমার সব উৎসব, সব আনন্দ, সব সময় আমার মনের মধ্যে থাকে, আমার সঙ্গে যায়, যেখানে যাই আমি। বাংলা নববর্ষতে আনন্দ করার জন্য তাই খাস বাঙালী খাবারই খেতে হবে কেন?
এক বক্তার বৈঠক : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ মে ২০১০ | ১৭২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এটাই শম্ভু মিত্রর আর্টের মূল কথা। চর্বিতচর্বন নয়। নতুন করে ভেবে কিছু করা। নতুন হতে হবে, ভাবনাও থাকতে হবে। বিভিন্ন প্রসঙ্গে, নানা ফর্মে এই কথা বারবার উঠে এসেছে - "(যেমন ফিল্মে করা হয়।) আমি জানি যে দেখলে পরে একটা ইমোশন জাগাতে হবে। যেগুলো স্বীকৃত। একটা মেয়ে একদম শাদা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে, হাওয়ায় চুলগুলো উড়ছে, মুখটা শুকনো। দেখালে, বেশ তাকে কেমন দু:খের প্রতীক বলে মনে হবে। এই-যে জানা ছবি, এইটেকে দেখালে আমি ভালো ছবিকার হব। এই তো? কিন্তু এতে ভাঙাটা কোথায়? ছাঁচ ভেঙে ফেলাটা কী করে আসবে? ছাঁচ ভেঙে ফেলতে গেলে পরে আমার চিন্তাটা না প্রকাশ করলে তো হবে না?'
ওড়িশা - কলিঙ্গনগরের পর এবার পস্কো পর্ব : প্রথম কিস্তি - প্রতিরোধ সপ্তাহে যোগ দেবার জন্য আবেদন
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১৬ মে ২০১০ | ১৫৫০ বার পঠিত
আপনারা জানেন যে, দিল্লীর মনমোহন সিংহ সরকার, ভুবনেশ্বরের নবীন সরকার, ও দক্ষিন কোরিয়ার রাষ্ট্রপতির মিলিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে, আমরা, ধিনকিয়া চারিদেশের মানুষরা, গত ২৬শে জানুয়ারী ২০১০ থেকে বালিতুথাতে ১০৭ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ ধর্ণা চালিয়ে আসছি। প্রতিদিন, কৃষক, মৎসজীবি, ভুমিহীন মজুর ও দলিত পরিবারগুলি থেকে হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু এই ধর্ণায় যোগ দিচ্ছেন। দু:খের বিষয় হল, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির আবেদন "জনগনের প্রতিনিধি' এই সরকারগুলির মধ্যে কোনো দায়িত্বজ্ঞান তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ওপর, ঐ সরকারগুলি বরং পস্কো, বেদান্ত, টাটার মতো কর্পোরেটদের প্রতি অভূতপূর্ব পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে।
এক যে ছিলো রাজা : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মে ২০১০ | ৬৬৭ বার পঠিত
যুদ্ধ থামানোর গানের কথা মনে পড়ে। কি অদ্ভুৎ কাকতালীয় এই প্রস্থান। নাকি ইঙ্গিতবাহী বলবো? সরকারী প্রযোজনায় যাঁরা আগে যুদ্ধ থামাতে গান গেয়ে ফিরতো, আজ সরকারী যুদ্ধের দামামার মধ্যেই তাদের একজনের প্রস্থান। হীরক রাজ্যে বড়ো সুখের সময় ছিলো সেটা। আমলা আর মন্ত্রীদের বাড়বাড়ন্ত, বাকিদের নিত্য অনশন। রাজ্য জুড়ে অবিশ্বাসের বিষবাষ্প, স্বয়ং রাজারও নিস্তার নেই। নিজেদের চারপাশে তাকালেই এই অবিশ্বাসের হাওয়া টের পাই। খুব দ্রুত একটা আশচর্য্য প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থায় আমরা এসে পড়েছি, এখানে শুধু কাজ আর টাকা, লালচোখ আর চাবুক। এখন কেউ কেউ যুদ্ধ করেই চলবে। এই যুদ্ধ ও আগামী অনেক যুদ্ধই চলবে বহুদিন ধরে। যতক্ষণ না শেষ মানুষটা মারা যাচ্ছে ততদিন। এখন যন্ত্রের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলারও নেই কেউ। আমাদের চারপাশে অযুত যন্ত্রমানবেরা ঘুরে ফিরবে। তাদের অর্থলিপ্সা, সাফল্য আর বিকৃতকাম পর্বতপ্রমাণ হয়ে উঠলেও গদি টলাতে কেউ এগিয়ে আসার নেই।
এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ মে ২০১০ | ৯৩২ বার পঠিত
আর, এইখানেই সমস্যাটা, উল্টোদিকের পক্ষটা বেছে নিতে গেলেও দেখছি সেই কোল্যাটারাল ড্যামেজ, ভিন্ন রাজনৈতিক মত প্রকাশে মৃত্যু, পুলিশের চর সন্দেহে হত্যা, পুলিশের সঙ্গে এক বাসে যাতায়াতেও; আর, পুলিশের উর্দিপড়া যে মানুষগুলোকে যুদ্ধের নামে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের মৃত্যুও কি খুব কম পীড়াদায়ক? খুব কম পীড়াদায়ক কি সংগ্রামের নামে গ্রামের পর গ্রাম ধরে আবালবৃদ্ধবণিতার মিলিটারাইজ?এশন, ইস্কুলের পথ ভুলিয়ে শিশুর হাতে ইন্স্যাস তুলে দেওয়া, বিনষ্ট শৈশব, সদাসন্ত্রস্ত গ্রামজীবন, সন্দেহের চোখে নিজের প্রতিবেশীকে দেখা, পাশের বাড়ির পাশের পাড়ার লোককে খুন করে মৃতদেহ স্ৎকারহীন অবস্থায় দিনের পর দিন ফেলে রাখা, রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর নামে যুদ্ধটা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া? আর, এগুলোর বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলছেন তাঁদেরও কি দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা অপর পক্ষের লোক বলে? সশস্ত্র লড়াইয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, শ্রেণীশত্রু (পুলিশ/ অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মী, একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্যে পুলিশের খাতায় নাম লেখানো আদিবাসী যুবক) হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সামান্যতম দ্বিধার অর্থ গ্রীণহান্টের বিরুদ্ধে ভয়েস অফ ডিসেন্ট না জানানোর সমতুল্যই কারণ যেকোনও একটা পক্ষ বেছে নিলেই যুদ্ধটাকে বৈধতা দেওয়া হয়ে যায়, মেনে নিতে হয় অপরপক্ষের যুদ্ধে সামিল হওয়ার স্বাভাবিকতাকেও।
অপরাধ যখন : সৌরভ চ্যাটার্জী ও অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৪ মে ২০১০ | ১৯২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
নিজের ঘরেই পাওয়া গেলো রামচন্দ্র সিরাসের মৃতদেহ। সিরাসের এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু, হত্যা না আত্মহত্যা, তা এখনো জানা যায়নি, ঠিক যেমন আজ অব্দি নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি টুরিং-এর মৃত্যুর কারন। চলছে এবং চলবে নিয়মমাফিক পুলিশি তদন্ত। সত্য কি জানা যাবে? শাস্তি কি পাবেন এ এম ইউ-র সেই কর্তৃপক্ষ যারা সিরাসকে সাস্পেন্ড করেছিলেন, প্রাইভেসির অধিকার এবং সমানাধিকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে? কি শাস্তি হবে তাদের যারা শ্রী সিরাসের ব্যাক্তিগত জীবনকে টেনে এনেছিল মিডিয়ার হাটবাজারে?
প্রসংগত, মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে, ১ই এপ্রিল, সিরাসের পক্ষেই রায় দিয়েছিলো এলাহাবাদ হাইকোর্ট, তার সাসপেনশনের উপরে স্টে অর্ডার জারি করে। কিন্তু আইনের লড়াইতে জিতে গেলেও শেষরক্ষা হলো না। কোনও এক অজ্ঞাত কারনে কোর্টের অর্ডার অনেক আগেই হাতে পাওয়া সত্তেও কর্তৃপক্ষ তা কার্যকরী করার নির্দেশ জারি করলো ৮ই এপ্রিল, সিরাসের মৃত্যুর ঠিক এক দিন পরে!
দেবকী বসুর 'কবি', ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ : প্রথম কিস্তি : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৩ নভেম্বর ২০১০ | ১৪৫৬ বার পঠিত
সত্যিই "কবি' ফিল্মটা আমার বিরাট একটা কিছু লেগেছে। তুলসী চক্রবর্তীর অলৌকিক ঐ অভিনয় নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই, সবসময়ই তিনি ঐরকম অভিনয়ই করে এসেছেন। কিন্তু, তার চোখের মুদ্রায়, কদর্য নাচের ভঙ্গীতে, যে ভাবে উঁচু জাতের দম্ভ এবং হিংস্রতাটা এসেছে, সেটা বোধহয় তুলসী চক্রবর্তীর পক্ষেই সম্ভব। নীলিমা দাশের কথা আগেই বললাম। অনুভা গুপ্তা, নীতিশ মুখোপাধ্যায়, হরিধন, এদের সকলেরই অভিনয়, সঙ্গে রবীন মজুমদারের গান, এবং অনিল বাগচীর সঙ্গীত পরিচালনা, এর একটাও যদি সঠিক মানে না-পৌঁছত, "কবি' বোধহয় তার নিজের জায়গায় পৌঁছতে পারত না। নৃত্য পরিচালকের নাম দেখলাম প্রহ্লাদ দাস। তাঁর সম্পর্কে আর কিছুই আমি জানি না, কিন্তু প্রত্যেক বারই তুলসী চক্রবর্তীর ঐ বিকট নাচ দেখতে দেখতে আমার নৃত্যপরিচালকের কথা মাথায় আসে। একজন পঞ্চাশোর্ধ ভারি চেহারার মানুষের শরীরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ঐ নাচের ভঙ্গীর উদ্ভাবন তো সহজ কাজ ছিল না। এই রকম অজস্র টুকরো টুকরো কথা মাথায় আসে আমার। আক্ষরিক অর্থেই এগিয়ে পিছিয়ে এগিয়ে পিছিয়ে "কবি' ফিল্ম আমি অজস্রবার দেখেছি। আপনারা দেখুন, আমার প্রতিক্রিয়া যদি আপনাদের প্রতিক্রিয়ায় স্থানান্তরিত হতে পারে, সেটাই এই কাজের সাফল্য।
লং মার্চের ডায়েরি - প্রথম কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৩ নভেম্বর ২০১০ | ৭৬৪ বার পঠিত
প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মাত্র তিনটি প্রশ্ন আসে। প্রশ্নগুলো নির্দিষ্ট কোন তথ্য জানার উদ্দেশ্য থেকে করা হয় না। বরং প্রশ্নগুলো শুনে ধারণা হয় যে এরা উত্তরদাতাদের কাছ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও অসহিষ্ণু মন্তব্য কামনা করে। যেমন, একটি প্রশ্ন ছিল সরকার যদি আপনাদের কর্মসূচীতে বাধা দেয় তাহলে আপনারা কি করবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে আনু এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে হাসি দিয়ে প্রশ্নকারীর উত্তেজনা প্রশমন করেন। পরে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে সরকার শুধু জাতীয় কমিটির না তার নিজ দলের সমর্থকদেরও ক্ষতি করছে। তাই সরকারী দলের সমর্থকদেরও উচিত তাড়াতাড়ি লং মার্চে অংশগ্রহণ করা। উল্লেখ্য যে ন দিগন্ত, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশনের মত সরকার বিরোধী পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের উপস্থিতি লং মার্চের প্রস্তুউতি পর্বে নিয়মিত ছিল। আর জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ পত্রিকায় লীড নিউজ হবার ফাঁদ থেকে সদা সতর্ক ছিলেন। যেমন এই প্রশ্নটি নিয়েই যখন প্রেস ব্রিফিং পরবর্তী চা চক্রে নেতৃবৃন্দ আলোচনা করেন তখন একজন সরস মন্তব্য করেন, প্রশ্নটা শুনে আমার মাথায় তো একটা শ্লোগান এসেছিল। বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। আরেক জন মন্তব্য করেন, এই সাংবাদিকরা মনে করে এই রকম ঢ়্ৎড়াড়শরহম প্রশ্ন করলে আমরা বুঝি তোফায়েলের (আওয়ামী লীগের একজন নেতা) মত জবাব দেবো।
বাঙালবাড়ির কিস্সা : পর্ব ৭ : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৮ নভেম্বর ২০১০ | ১০৩৬ বার পঠিত
ওই পূর্ব পাকিস্তান থেকে রিফিউজি হয়ে এসে তিনকামরার দাদুর দস্তানায় মাথা গোঁজা পার্কসার্কাসের ভাড়াবাড়িতে বাইশজনের এজমালি সংসার। তাতে এই ভদ্রলোক প্রত্যেক ঋতুতে তোদের ফল খাওয়ায়নি? অন্তত: প্রত্যেক ফল একবার করে? আর তোরা ,অর্বাচীন অপোগন্ডের দল! ইংরেজি গ্রামারের শৌখিন, প্রতিদিন কবিতা পড়ার মত করে স্টেটস্ম্যানের এডিটোরিয়াল পড়া, ফেবার অ্যান্ড ফেবারের নিয়মিত বই কেনা, টি এস এলিয়ট ভক্ত এই ভদ্রলোককে নিয়ে মুচকি মুচকি হাসতিস্, পেটি বুর্জোয়া টেস্ট, তাই না? আসলে ওনার ভালোবাসার ক্ষমতা ছিল বিশাল। ভালবেসে ক্ষতি স্বীকার করতেও উনি কুন্ঠিত হতেন না। তোরা ভালবাসিস শুধু নিজেকে।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইডেঃ ক্রেপ সুজেৎ : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ২৮ নভেম্বর ২০১০ | ১৬১৫ বার পঠিত
আর আর এইবার... সেই দ্বিতীয় জিনিষটি হলো .... যা বলেছেন, ফরাসী ওয়াইন। এদেশে সব চাষের মধ্যে আঙুরের চাষ হলো প্রধান। কাজেই দ্রাক্ষাসবের রমরমা হবে না তো কি? ওয়াইন এখানে খাবারের মূল সঙ্গত হিসেবে ধরা হয়। ঠিক মত ওয়াইন না হলে খাবারের পুরো স্বাদ পাওয়া যায় বলে এঁরা মানতে চান না। রোজকার খাবারের সাথে হয়তো একটাই ওয়াইন দেওয়া হয়, লাল বা সাদা, কিম্বা রোজে। তবে তেমন তেমন ভোজে প্রত্যেকটি পদের সাথে আলাদা ওয়াইন পরিবেশন হয়। শ্যাম্পেন, মার্লো, স'ভিনিয়ঁ ব্লঁ,দমপিরিনিয়ঁ এমন কটা নাম তো সবাইই শুনেছেন,কিন্তু সত্যি কথা জানেন কি ভাই? ফরাসী ওয়াইন সুন্দরীদের রূপবর্ণনা করা.... বাপ রে, তার স্পর্ধা এই নাচীজের নেই। স্বয়ং সাহিত্য সম্রাট 'আয়েষার' রূপ বর্ণনা করিতে পারেননি। ফরাসী ওয়াইনও রন্ধনসাহিত্যে 'আয়েষা'ই।
অনুগল্প : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৭ নভেম্বর ২০১০ | ১০৯৭ বার পঠিত
আমি গল্প লিখতে পারিনা, সবার সব কিছু অ্যাটেম্পট নেওয়াও উচিৎ না; ফলে এরপর অনেক প্রাইভেট টিউশন, ইউথ ফর ইকুয়ালিটি, রিসেশন, অনসাইট পেরিয়েও তিতিরকে খেলতে দিচ্ছি সুবাইয়ের সাথে। সুবাইয়ের বাবা শুকদেব আমার বাড়ির নীচের গ্যারাজে থাকতো একসময়, এখন প্লাম্ববিং-এর কাজ খুব ভালই করছে, ইন্দিরা যোজনায় বেশ সুন্দর একটা থাকার জায়গা বানিয়ে নিয়েছে, বিশ্বকর্মাপুজোর দিন ওদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করে। তাই, তিতির সুবাইয়ের সঙ্গে বর-বউ খেলছিলো দেখে ওদের কাউকে কিচ্ছু বলিনি।
বড় চিজ, পরিব্রাজক বাঘ, মেঘের দেশ : উজান
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৭ নভেম্বর ২০১০ | ৬৬৭ বার পঠিত
একটা ছোত্ত বাচ্চা মেয়ে। মেঘের মেয়ে। সে টাইগারকে জিগ্গেস করলো, তোর নাম কী রে? টাইগার বললো, আমার নাম টাইগার ! মেঘবালিকা জিগ্গেস করলো, তুই কী করিস? টাইগার বললো, আমি খুব ঘুরে বেড়াই। মানুষ-টানুষ ধরে খাই। সব জায়গা দেখি। আমি খুব ভালো। মানুষদের খাই না।
-সে কী রে? এই যে বল্লি, মানুষ ধরে খায়?
-না, না, ও মানুষফানুষ কিছু খায় না। শুধু হরিণের মাংস খায়। ভালো টাইগার।
বহিরাবরণের অন্তরালে : শাহেরীন আরাফত
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১২ নভেম্বর ২০১০ | ৬১৯ বার পঠিত
উপরের ঘটনাটি থেকে কিছু অসঙ্গতি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, আর তা হল-
(১) জনাব তরিকুল ইসলাম, যিনি নিজেই এসএসএফের সহকারী পুলিশ সুপার, তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, মিনা মানসিক রোগী ছিলেন। কিন্তু কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কি কোন মানসিক রোগীকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে রাখবে? তাহলে কি আইনের ধ্বজাধারী তরিকুল নিজেও বিকারগ্রস্ত? আর কোন মানসিক রোগীকে দিয়ে কাজ করানোটাও বেআইনী, তা তো এসএসএফের সহকারী পুলিশ সুপারের জ্ঞাত না থাকার কথা নয়। এখানে উল্লেখ্য যে, তরিকুলের প্রতিবেশীদের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিনা আদতে কখনোই মানসিক রোগী ছিল না। তবে তার উপর চলত ঐ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর অমানুষিক নির্যাতন।
গণতন্ত্র ও আজকের পাকিস্তান : ওয়াক্কাস মীর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ জুন ২০১০ | ৯৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
তা হলে এর শেষ কোথায়? সমাধানের প্রথম ধাপ অবশ্যই অন্যায় স্বীকার করা। এবং তার পরের ধাপে সেই অন্যায় আর যাতে না-হয়, তা নিশ্চিত করা। আহমদী, হিন্দু, ক্রিশ্চান, শিখ, অন্য সমস্ত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণার চাষ হয়ে চলেছে আমাদের জনতার চৌহদ্দিতে, তাকে বন্ধ করতে হবে। একদিনে এই ঘৃণা নিশ্চিহ্ন হবে না, ঘরে বসে শুধু "নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক!' ভাবলেও তা নিশ্চিহ্ন হবে না। মুখ খুলতে হবে। আলোচনা চালাতে হবে।
যুক্তি তক্কো (নিয়ে) গপ্পো : অনামিকা গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০১০ | ১০০৩ বার পঠিত
সমস্যা হ'ল, "ভাল' কী, অথবা "ভাল'-র সংজ্ঞা কী ক'রে নির্ণয় করতে হবে, কোন বিষয়েই যদি দুজনের মত না মেলে, তাহলে তর্ক একটুও এগোতে পারবে না, বরং পেছোতে থাকবে। কাজেই তর্ক শুরুর আগে দেখে নিতে হবে, কোথাও যেন একটু জমি থাকে, যেখান দুজনে একসাথে দাঁড়াতে পারেন, সেখান থেকেই তর্কটা শুরু হতে পারে। একবার সেই জমিটুকু থেকে কথা শুরু হ'লে শচীন-সৌরভের তুলনামূলক বিচার না হোক, ভাল খেলোয়াড় বা খেলার সংজ্ঞা, কিংবা দল বড় না ব্যক্তি, এই নিয়ে কিছু সার্থক আলোচনা হতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ সেই জায়গাটুকু না খুঁজে পাওয়া যায়, ততক্ষণ একজন তামিলে আর অন্যজন ভোজপুরীতে কথা বলছেন - আলোচনা অসম্ভব।
লা-জওয়াব দিল্লি ঃ এক্সট্রা কোচ ৩ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ জুন ২০১০ | ৯৩৩ বার পঠিত
মাথা নিচু হয়ে আসে। দেশের রাজধানীর সবচেয়ে হাই প্রোফাইল জায়গা, সাউথ ব্লকে চাকরি করা একজন সরকারি কর্মচারির মুখে এই কথা।
কথা কিছু আলাদা হয় না যখন স্টার নিউজ বা এনডিটিভির ক্যামেরা বুম করে দিল্লির অশোক বিহারের সেই মহল্লায়, যেখানে গুজ্জর হয়ে রাজপুতকে বিয়ে করার অপরাধে মরতে হয়েছে মোনিকা আর কুলদীপকে, আর অন্য গোত্রে শুধু প্রেম করার অপরাধে মরতে হয়েছে মোনিকার বোনকেও, একই দিনে। মহল্লারই একজন জুগিয়েছে অস্ত্র, মারবার জন্য, একজন জুগিয়েছে গাড়ি, মারার পরে মৃতদেহ ডাম্প করে আসার জন্য।
নতুন জীবন : বিক্রম পাকড়াশী
বুলবুলভাজা | বইপত্তর | ২৭ জুন ২০১০ | ১০৫২ বার পঠিত
একটা নতুন বই। এমন মারাত্মক, আশ্চর্য, আর গোপন - যে কেউ সেই বই পড়ছে তার জীবনটাই বদলে যাচ্ছে চিরকালের মত। প্রথম পাতাটা খুলতেই আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে, সেই বই তার পাঠককে এক নতুন জগতে নিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে যারা এই বইটা পড়ে নি, তারা কী হতভাগ্য, তারা কী বোকা! ওসমান নিজে এই বইটা পড়েছে, সে এখনও ইস্তাম্বুলে কলেজের ছাত্র, মনে মনে জানানকে পছন্দ করে, জানান এই বইটা পড়েছে, জানানের প্রেমিক এই বইটা পড়েছে। জীবন আর ভালোবাসার বিষয়ে যা যা জানা সম্ভব, আর ভবিষ্যতে যা যা জানা যাবে, সব ওতে লেখা আছে।
লা-জওয়াব দিল্লি - এক্সট্রা কোচ ৪ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ আগস্ট ২০১০ | ৭৫৮ বার পঠিত
নতুন এয়ারপোর্টের দু কিলোমিটারের মধ্যে অটোরিক্সা ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এয়ারপোর্ট যাত্রীকে সেখানে পৌঁছতে হলে হয় নিজের গাড়ি, নয় ট্যাক্সি, নয় মেট্রো রেলের সাহায্য নিতে হবে। অটোরিক্সা-চাপা ন্যাস্টি মিডলক্লাস লোকজনের জন্য নয় নতুন এয়ারপোর্ট। নিজের গাড়ি নিয়ে গেলে, আধ ঘণ্টার পার্কিং চার্জ ষাট টাকা, দু ঘন্টার একশো কুড়ি টাকা, ছ ঘন্টার জন্য চার্জ আটশো টাকা। নতুন এয়ারপোর্টে জল কিনে খেতে হলে এক লিটার জলের জন্য দিতে হবে আশি টাকা। আর যদি মেট্রোয় করে যান; এখনও মেট্রোর লাইন চালু হয় নি, কাজ চলছে, তবে শুরু হয়ে যাবে খুব শিগগিরই; কনট প্লেস থেকে এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেস লাইনে করে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে গেলে আপনাকে কাটতে হবে একটা আড়াইশো টাকার টিকিট। চোদ্দ কিলোমিটারের জন্য।
মেক্সিকান মানডে : নিয়ামৎ খান
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ২৩ আগস্ট ২০১০ | ১১৪৬ বার পঠিত
টাকো খেতে হয় পুরোটা হাতে ধরে। এমন ভাবে ধরতে হবে যাতে চাঁদের খোলা দিকটা থাকে ওপর দিকে, আর কামড় বসাতে হয় পাশ থেকে। খাবার সময় পাশ দিয়ে প্রায়শই বাঁধাকপি কি দই, কি স্যস একটু গড়িয়ে পড়বে, হাতে মুখে মাখামাখি হবে। তা হোক, এই খাবারই অমন, একটু মেসি। তাতে কি? আর হ্যাঁ শুনুন, কেউ যদি বলে অথেন্টিক টাকোতে লেটুশ থাকে, চীজ থাকে, হেনা থাকে তেনা থাকে তো সেসব কথায় কান দেবেন না মশাই। বলেছি তো আমাদের উদ্দেশ্যই হলো সাধারণ বাঙালী বাড়িতে সহজে সুবিধায় বানানো। পাড়ার দোকানে কি সব চীজ রাখে? সব বাজারেই কি লেটুশ পাওয়া যায়? কিছুটা ইম্প্রোভাইজেশন তো আমাদের করতেই হবে। তবে কোনো চিন্তা নেই, আসল মেক্সিকোর খুব কাছাকাছি স্বাদই পাবেন আপনি এই টাকোতে। গ্যারান্টী।
ইশক কি আহ : অভীক কুমার মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৩ আগস্ট ২০১০ | ১১৩৪ বার পঠিত
এভাবেই দর্শকদের প্রথম পরিচয় ঘটে কৃষ্ণা বর্মার সাথে, যাকে আপাত দৃষ্টিতে স্বামীসোহাগে তৃপ্ত, ঘরকন্নায় পারদর্শী, সাধারণ উত্তর ভারতীয় গ্রাম্য গৃহবধূ ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। বলা বাহুল্য, এই ভ্রান্তি সাময়িক। কৃষ্ণার চরিত্রটি প্রকৃতপক্ষে noir ধারার femme fatale-এর দক্ষ রূপায়ণ। সিনেমার ইতিহাসে অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরণের চরিত্র পিতৃতান্ত্রিকতার হাতের পুতুল, কিন্তু কৃষ্ণা বহির্জগতের কার্য্যকারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত, এবং এ ছবির নায়কদের থেকে সে সবসময়ই এক ধাপ এগিয়ে। নায়কের প্রসঙ্গে চলে আসে মুখ্য জুটির কথা। ছিঁচকে অপরাধী এবং ইফতিকার ও বব্বনের সঙ্গে দর্শকের পরিচয়ের মুহূর্তটিও বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে - ছবির তথাকথিত নায়কদের আমরা আবিষ্কার করি মদ্যপ এবং প্রায় উন্মত্ত অবস্থায়, এবং পেছনে বেজে চলে কোনো এক তৃতীয় শ্রেণীর ব্যান্ডের গলায় গাওয়া "অজীব দাস্তাঁ হ্যায় ইয়ে' গানটি। এই ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণিত করতে নায়কদ্বয়ের দ্রুত ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জীবন্ত সমাধিস্থ হওয়ার হাত থেকে এক চুলের জন্য বেঁচে যাওয়া নাসিরুদ্দিন-আরশাদ পালিয়ে যায় গোরখ্পুরে, আশ্রয় নেয় পূর্বপরিচিত বিদ্যাধর বর্মাঞ্চর (আদিল হুসেন) বাড়িতে।
উত্তরবঙ্গ ৪ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১৬ আগস্ট ২০১০ | ১০০৮ বার পঠিত
জীবনে কোনওদিন কারুর গায়ে হাত তুলি নি, মারা বা মার খেতে দেখা কোনওটাই আমার পোষায় না। প্রায় সমবয়েসি কিছু ছেলেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতেও আমার রুচিতে বেধেছে, সে দিক দিয়ে আমি সৌভাগ্যবান যে, আমাকে র্যাগ্ড হতে হয় নি। পরবর্তীকালেও সেই বিশেষ সময়গুলোতে আমি কলেজে বা নিজের রুমে স্বেচ্ছাবন্দী থাকতাম, এই ধরণের যৌনউল্লাস থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছি। এবং এইসব করেছি বলে আমি নিজেকে খুব গুড বয় বা ভালো ছেলে বলে তুলে ধরতেও চাইছি না, কারণ এই রকম মানসিকতার আমি একাই ছিলাম না, আমি সৌভাগ্যবান যে পরবর্তীকালে আমাদের ইয়ারের বা সিনিয়র ইয়ারের অধিকাংশ ছেলেকেই আমি এই মানসিকতার দেখেছিলাম। এই ধরণের নোংরামো করে খুবই কম সংখ্যক কিছু ছেলে।
ধংসস্তূপ: বিন্যস্ত ও সততই অমরত্ব পিয়াসী : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ আগস্ট ২০১০ | ১৫১৯ বার পঠিত
এইখানে স্পষ্টতই একটি বর্ষাদিনের ছবি ফুটে উঠতে দেখি। জলে প্রতিফলিত শহরের ছবি, হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে মেয়েদের সতর্ক চলে যাওয়া, বাসে ও রিক্সায়। সেইসঙ্গে, যদুবংশের আচমকা উল্লেখে একটি আসন্ন ধ্বংসের আঁচ লেগে থাকে। অথচ গোটা কবিতায় জল কিংবা বৃষ্টি এই শব্দগুলি অনুচ্চারিত থেকে যায় (যদিও বর্ষা শব্দটি, একবার হলেও, উঁকি মেরে গ্যাছে)। ও তার বদলে চরু শব্দের অনুপ্রবেশ লক্ষিত হয়। এই চরু, যা হতে পারে জল, হতে পারে বৃষ্টি অথবা অন্য কিছু। সব মিলিয়ে প্রতীকের ব্যাবস্থাটাই এখানে উল্টেপাল্টে যায়। সিগনিফায়ারগুলি নিজেদের জায়গা বদল করতে থাকে অবিরল। এক নতুন শব্দব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটান লেখক।
ও লেখক নিজেও এ ব্যাপারে অবহিত থাকেন আগাগোড়া। সে জন্যেই কথা কবিতায় লেখা হয় এইসমস্ত লাইনগুলি
তেলের দামের আর্থ-রাজনীতি : দেবর্ষি দাস, দীপঙ্কর বসু, পানাইয়োটিস টাকি ও শিব শেঠী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ আগস্ট ২০১০ | ১৫০১ বার পঠিত
মোটামুটি তিন ধরনের প্রতিক্রিয়া ইংরিজি খবর মাধ্যমগুলোতে দেখা গেল। প্রথমত, বাজার পেট্রল ও ডিজেলের দামের বিনিয়ন্ত্রণকে উল্লাসের সাথে গ্রহণ করল, প্রতিফলন দেখা গেল তেলের শেয়ারের চড়া দামে । দ্বিতীয়ত, জোরালো অভিযোগ উঠতে থাকল যে এই নীতিপরিবর্তন যথেষ্ট নয়। কেরোসিন ও এলপিজির দামের ওপর ন্যূনতম সরকারি নিয়ন্ত্রণ আছে। তেল ও ডিজেলের বিনিয়ন্ত্রণের পরও তাই
OMC
গুলোর লোকসান এই আর্থবছর ২০১১-তে ৫৩০০০ কোটি টাকা হতে চলেছে। তৃতীয়ত, বিভিন্ন বিরোধী দল নিয়মমাফিক রীতিতে একটি "ভারত বনধ' পালন করে।
ভারতবর্ষের তেলের দামের আর্থ-রাজনীতিকে খুঁটিয়ে দেখার আগে তিনটি প্রশ্নের জবাব খুঁজে নেওয়া যাক। ......
তৃতীয় প্রশ্নটি ভারতবর্ষের তেলের দাম নিয়ে সযত্নে তৈরি করা রূপকথা সম্পর্কিত। এই রূপকথাটির একটি জরুরি উপাদান হল তেলের (মানে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, এলপিজি) দামে সরকার বাহাদুর আমাদের বিপুল পরিমানে ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। সরকারি ঘোষণা, সরকারি নীতি চর্চা বা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয় যে এই ভর্তুকি সরকারি
OMC
গুলোর '
under recovery
' হিসেবে দেখা দেয় ও সরকারি বাজেট ঘাটতিকে (আয় ও ব্যয়ের পার্থক্যকে) বাড়িয়ে তোলে। এই তর্কের পরের ধাপ হল, তেল ভর্তুকি দেশের মূল্যবান সম্পদের অপচয়। সরকারি আয় ব্যয়ের দিক থেকে দেখতে গেলে দীর্ঘকালীন পরিপ্রেক্ষিতে একে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ভর্তুকির কাট ছাঁট তাই দরকার। কীভাবে করা হবে? পেট্রোÌপণ্যের দামের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে দিয়ে, যাতে মূল্য বাজারের চাহিদা-যোগান দিয়ে নির্ধারিত হয়।
তেলের দাম নিয়ে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার খবরের ওপর শুধু চোখ বোলালেই এই রূপকথাটি কত জনপ্রিয় মালুম হয়।
উত্তরবঙ্গ ৫ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ৩০ আগস্ট ২০১০ | ১০১১ বার পঠিত
এই খালি আকাশই জাদু দেখায় নভেম্বরের মাঝ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এটা ক্যাম্পাসের উত্তর দিক। ঝকঝকে হেমন্তের ওয়েদারে আকাশের গায়ে ফুটে ওঠে হিমালয়, পুরো নীল রংয়ের। আর সেই হিমালয়ান রেঞ্জের মাথায় মুকুটের মত ঝকঝক করে তিনটে বরফে ঢাকা শৃঙ্গ : কাঞ্চনজঙ্ঘা, সান্দাকফু, ফালুট। লোকে পয়সা খরচা করে এদের দেখতে আসে কত দূর দূর থেকে, আমরা হস্টেলের ছাদে বসে, নিজের বেডে বসে দিনের পর দিন দেখেছি কাঞ্চনের রূপ, কখনও টকটকে লাল, কখনও আগুনের হল্কার রং, কখনও ধবধবে সাদা, কখনও বিষণ্ন নীল। তবে বছরে ঐ একটা সময়েই দেখা যেত, এক মাসের জন্য। তার পরেই কুয়াশায় ঢেকে যেত তরাই ডুয়ার্স। সে আরেক রূপ।
যে জন আছে মাঝখানে : কৃষ্ণকলি রায় ও অন্বেষা ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ৩০ আগস্ট ২০১০ | ১৮৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কিন্তু এই দেহব্যবসার কাজটা খুব সোজা নয়। খদ্দেররা অনেক সময় শোয়, সব করে, কিন্তু নিজেদের চাহিদা মিটে গেলেই পয়সাকড়ি না দিয়ে পালায়। একদিন পার্কে গেছি, একজন পুলিশের লোক এসে বললো ওর সাথে যেতে। আমি প'¡শ টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু সে কুড়ির বেশি দেবেনা। পুলিশের লোক তো, তাই ওতেই রাজী হলাম। কিন্তু যেই না তার মজা লোটা হয়ে গেল, সে উল্টোবাগে হাঁটা দিলো। কুড়ি টাকারও দেখা পেলামনা। আমি দৌড়ে তাকে ধরে বললাম যে টাকা না দিলে পুলিশে রিপোর্ট করবো। সে তো হেসেই অস্থির। প্রমাণ কোথায় যে এমনি হয়েছে? আমি কন্ডোমটা দেখলাম, গিঁট দিয়ে বাঁধা, ভেতরে ওরই বীর্য্য রয়েছে। কিন্তু সে নির্বিকার মুখে বললো যে এটা যে ওরই তা কে বিশ্বাস করবে?
২৬শে আগস্ট বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ-রক্ষা দিবস : যীশু মহম্মদ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ৩০ আগস্ট ২০১০ | ৬৭২ বার পঠিত
সারা পৃথিবীতেই চলছে খনি/ভূ-সম্পদ/ শিল্পায়নের নামে ভূমি অধিগ্রহণের লুটেরাদের পুঁঁজির খেলা। বেশী দূর না- "হাতের কাছের হয়না খবর/ কি দেখতে যাও দিল্লি-লাহোর' হলেও আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে আছে ভারতের নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, লালগড়। উন্নয়নমূলক কাজকর্ম বা শিল্পায়নরে জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে উদত্য হওয়া সংসদীয় ধরার সুপার-ডুপার বামদের সিঙ্গুরের মতো বছরে পাঁচ ফসলি জমি তুলে/ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে সেখানে কারখানা/সেজ(SEZ)/ কেমিক্যালহাব/ মোটরস কারখানাসহ নানা জাতের শিল্পায়নের দোহাই দিয়ে পাঁয়তারা করেছেন। (অথচ, সিপিএম নাকি সাম্যবাদের গান গায় , আসলে কার্যত পুঁজির দাস। ধান্ধায় ডুব দিলে ঘিলু কি আর ঠিক থাকে?) সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের নিরস্ত্র শোষিত জনতা তা মেনে নেয়নি। অত্যাধুনিক রাইফেলের বাটের ঠেলা/ গুলি খেয়ে/ ধর্ষিত হয়েও দাব্বাড়েছে "ফিকে লালবাহিনী'র গুন্ডাদের/পুলিশদের-। তারা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছে মূলত তথাকথিত "শিল্পায়ন' এবং স্পেশ্যাল ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার জন্য যার প্রধান উদ্দেশ্য হল পুঁজিপতির শ্রমিকশ্রেণীকে ইচ্ছামত শোষণ করার উপযুক্ত বিশেষ সুবিধা এবং অধিকার সুনিশ্চিত করা- যে খায়েশ গুড়িয়ে দিয়েছে সিঙুর এবং নন্দীগ্রামের মানুষ। তবুও নীলনকশা থামে না-। "অপারেশন নন্দীগ্রাম' , বা আজকের 'অপারেশন গ্রিনহান্ট'- শুধুক্রোধ, পাশবিকতা; শুধু ঘৃণা, তাল তাল ও জমাট বাঁধা- কালো, যতটা কালো হতে পারে জমাটবাঁধা রক্ত, মানুষের রক্ত, নকশালীরক্ত খুবলে খাচ্ছে।
পুজোর ব্লগ : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ মার্চ ২০১০ | ১০৯৬ বার পঠিত
যেটা পুজো সংক্রান্ত স্মৃতি আমার খুব স্পষ্ট ভাবে আছে, সেটা পাঁচ ছয় নাগাদ, নিউব্যারাকপুরের স্মৃতিটা ঠিক পুজোর নয়, পুজো উপলক্ষে ব্যায়ামসমিতির করা শরীরের পেশী প্রদর্শন, আর মামাবাড়িতে, মধ্যমগ্রামের বিধানপল্লীতে, দুলুদার দোকানের সামনে ফাঁকা মাঠে পুজোর মণ্ডপে, খুবই মাঠো সব, বাঁশের বেড়ার গায়ে চটের আবরণ, তার মধ্যে তখনকার ডেকরেটরের কাঠ-পিজবোর্ডের চেয়ারে বসে আমি আর গজো, তখনকার এক সঙ্গী, একটা খেলনা পিস্তল দিয়ে মারামারি করছি।
পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে মাওবাদী আন্দোলন ঃ কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ : অনিন্দ্য পাত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ মার্চ ২০১০ | ৮৬০ বার পঠিত
হ্যাঁ। এটা একটা রাজনৈতিক প্রবন্ধই বটে। অবশ্য ঠিক প্রবন্ধ বললে ভুল হবে। কারণ, একটা রাজনৈতিক প্রবন্ধের থেকে লোকের যা যা প্রত্যাশা থাকে সাধারণত:, যেমন - কিছু নতুন ধরণের তত্ত্ব, ব্যাখ্যা, বা মতামত - সেসব প্রত্যাশা এই লেখা থেকে পূরণ হবে - এরকম কোনও গ্যারান্টি দিতে পারছি না। তার চেয়ে বরং এই লেখাকে অনেক দিন ধরে জমা হতে থাকা কিছু একান্ত ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, কিছুটা স্বগতোক্তির মত করেই যা আমি রাখতে চাইছি - সেভাবেই পাঠককে নিতে অনুরোধ করব। স্বাভাবিকভাবেই স্বগতোক্তির কোনও নির্দিষ্ট ক্রম থাকা মুশকিল। তাই ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরোগুলোকে জুড়ে নেওয়ার দায়টা এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নয়, পাঠকের উপরেই ছাড়া রইলো। :-)
অবতার ঃ একটি ব্যক্তিগত নোট : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ মার্চ ২০১০ | ৮২৮ বার পঠিত
এইখানেই অবাক হয়ে গেলাম,
avatar
দেখে, যেখানে সমস্ত গ্রহটার সঙ্গে মানুষগুলো একাত্ম বোধ করছে,আর তাদের সামগ্রিক জীবনচর্যাটাই সেই একাত্মবোধের ওপর ভিত্তি করে, গাছের শিকড়ের সঙ্গে ডেটা ট্রান্সফারের মেকানিজম খুঁজছেন বিজ্ঞানী, কিন্তু সভ্যতা গড়ে তোলার প্রসেস-এ তারা জেনেছে যে ঐ গাছ, ঐ পাখি, ঐ ঘোড়া, ঐ উড়ন্ত পাহাড়, সব কিছুই তাদের বেঁচে থাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
শয়তানের ওকালতি : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৪ মার্চ ২০১০ | ৯৬৬ বার পঠিত
মুসলমানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে নামাজ পড়াতে মিমিক করবার মজা পাওয়া যায়না, হোমোসেক্সুয়াল দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলে গে-কে ভেঙানো যায়না - ঠিক যেমন আমাদের অজস্র প্রাচীন বাংলা জোকস-এর ভেতর (বি:দ্র: গোপাল ভাঁড়) চণ্ডাল, ডোম প্রভৃতিদের নিয়ে একটিও গল্পকথা খুঁজে পাবেন না, সব হাস্যরসের চরিত্র-ই ইনক্লুডেড যাঁরা, তারা-ই। আর যখন-ই এক্সক্লুশন - এড়িয়ে চলা, ঘেন্না, বিরক্তি এগুলো প্রবলতর হয়ে পড়ে, তখন ঐ হাস্যরস নির্মাণের জায়গাটা চলে যায়।
সোনামুখীর মাওবাদীরা : কল্লোল দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১৯ জুলাই ২০১০ | ১১৫৪ বার পঠিত
৩০ জুন, ভোর ৫টা। গ্রামটি ঘিরে ছিলো যৌথ বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশের ৩০০ জনের একটি দল। জঙ্গলে ঝোপে লুকিয়ে ছিলো লাঠি আর বন্দুক। শেষ পর্যন্ত ওরা এলো। মাথায় কলো কাপড়, জংলা ঊর্দি গায়ে ওরা এলো অসংখ্য জিপ আর কালো ভ্যান নিয়ে। সাথে এলো ওখানকারই বীরচন্দ্রী গ্রামের বীর চাঁদেরা, সিপিএম কর্মীরা। প্রশান্ত দাস আর জিতু সাউ, স্থানীয় সিপিএম নেতা। এরা অবশ্য এর কিছুদিন আগে থাকতেই সোনামুখীতে আসছে আর শাসিয়ে যাচ্ছে মহিলাদের - ইজ্জত থাকবে না।
৩০ জুন, যখন যৌথ বাহিনী এলো তখন গ্রামের পুরুষরা সবাই গ্রাম ছেড়ে গেছে। সেটা বড়ো কিছু নয়। এ তো নিত্যনৈমিত্যিক। পুলিশ বা যৌথ বাহিনী আসছে খবর পেলেই পুরুষদের গ্রাম ছেড়ে যেতে হয়। এটাই নিয়ম। অন্যথায় মার-ধোর, জেল-হাজত, মিথ্যা মামলা-হয়রানি। সোনামুখী ও তার আশেপাশের গ্রাম বীরহান্ডি, শিমলি, বাঁকশোল, ঘৃতখাম, দিদিধা, জারুদিয়ায়ও এসব নিত্যিকার ব্যাপার স্যাপার।
সরকারী খবর, সোনামুখীতে মাওবাদীরা ছিলো। অথচ সেদিন যারা আহত, লঞ্ছিত হয়েছেন দুজন বয়স্ক মানুষ বদে সকলেই মহিলা ।
নির্দল হইব না মানুষ হইব? : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৬ জুলাই ২০১০ | ১৫১৮ বার পঠিত
সুতরাং, হে বীর, সাহস অবলম্বন কর। সংসার সমরাঙ্গণে যুদ্ধ কর প্রাণপণ। ¢কন্তু দোহাই তোমার, ¢নর্দলত্বের ঢ্যামনা¢ম ছেড়ে পরে নাও কোন এক দলীয় বর্ম। ব্যস, তারপরে, হে বীর, কোন শালা তোমায় ঠেকাবে? এখন হইতে তোমার সকল কর্ম পা¢র্ট অনুমো¢দত। যাও, চ¢রয়া খাও। জ¢ম লও, কারখানা বানাও, ফÔÉ¡ট বানাইয়া প্রমোটা¢র কর, রাع¡ অবরোধ কর, বন্ধ কর - যাহা ইচ্ছা কর, খা¢ল ¢নর্দলী ক¢রয়ো না। স্বাধীন ¢চন্তা ক¢রয়ো না। পা¢র্টকে অনুসরণ ক¢রও। মনে রা¢খয়ো পা¢র্ট ভুল করে না। নেত«ব«ন্দ ঈশ্বরের দূত। প্রভু তাহাদের ভুল ক¢রবার ক্ষমতা ¢দয়া প্রেরণ করেন নাই।
বাঙ্গালবাড়ির কিসসা - অষ্টম পর্ব : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২০ ডিসেম্বর ২০১০ | ৭৮২ বার পঠিত
কিন্তু আজকে খেলার মাঠে দারোগাবাবুকে তো দেখছি না,ওই ছোঁড়াটা দৌড়ুচ্ছে , পেছনে ওর বাপ। ব্যাপারটা কি?
------- আর বলিস না। দারোগাবাবুর নালিশ শুনে বাপ তো ছেলেকে আচ্ছা করে কড়কে দিল। কিন্তু ছেলেটা এক্কেবারে যাকে বলে রেকটাম-রাইপ। আজ খেলার মাঠে বন্ধুদের তোল্লাই খেয়ে নিজের বাপকেই জিগ্যেস করেছে-- ' বাবা, আইজ ক্লাসে মাস্টারে জিগাইসে স্বাধীনতা সংগ্রামী ত্রয়ীর নাম। আমি দুইটা কইসি,--" লাল' আর" পাল '। আরেকটা নাম কি যেন? কী ""গঙ্গাধর তিলক''?
------ তারপর?
------- তারপর আর কী ! বাপের তেলেভাজার দোকান, তাড়াহুড়ো করে ছেড়ে এসেছে, স্কুলের মাঠে এবারে নতুন প্লেয়ার শ্যাম থাপার খেলা দেখবে বলে।। রেগে গিয়ে বলেছে-- বানচোইৎ! জাননা কী গঙ্গাধর? ''বাল""! তারপর কী হচ্চে দেখতেই পাচ্ছিস।
না, রঞ্জন কিছুই দেখছে না। ওর কানে বাজছে ওই দু-অক্ষরের শব্দটি। কালকেই ওর দলের একটি ছেলে বলেছে--- এইসব বালের নাটক করে কী হবে?
পাড়াতেও এরকম কিছু টিপ্পনী কানে এসেছে।
কী হবে? ও নিজেও জানেনা কী হবে। খালি জানে ওকে নাটক করতেই হবে। আজ নয়তো কাল।
উইকিলিক্স! উইকিলিক্স! : অচিন্ত্যরূপ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ডিসেম্বর ২০১০ | ৯৩৮ বার পঠিত
ওবামা মুখে যতই স্বচ্ছতার কথা বলুন না কেন, গোপনীয়তাই তাঁর সরকারেরও প্রধান অস্ত্র। সে গোপনীয়তার বেড়া যারা ভাঙ্গে, তাদের ক্ষমা নেই। লৌহ যবনিকা শুধু লাল ছাপ-মারা দেশগুলিরই একচেটিয়া সম্পত্তি নয়।
সুতরাং জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ শত্রুপক্ষের লোক, এবং / অথবা স্পাই। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেণ্টের প্রাক্তন আফিসার ক্রিশ্চিয়ান হুইটনের মতে উইকিলিক্সের পুরো টিমটাকেই "শত্রু সৈন্য' হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে "নন-জুডিসিয়াল অ্যাক্শন' নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। ওবামা প্রশাসন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে অ্যাসেঞ্জের বিরুদ্ধে চরবৃত্তির অভিযোগ আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সেনেটর ডায়েন ফেইনস্টাইন বলেছেন ১৯১৭ সালের এসপিওনেজ অ্যাক্টে বিচার হওয়া উচিত অ্যাসেঞ্জের। (উল্লেখ করা যেতে পারে, উড্রো উইলসনের সময় এই আইন চালু করা হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার জন্য। ১৯১৮ সালে সোশ্যালিস্ট কর্মী ইউজিন ডেব্সকে এই আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কারণ, যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন ডেব্স।) প্রতিটি "লিক'-এর জন্য অ্যাসেঞ্জকে দশ বছরের জেল দেওয়া হোক, বলেছেন ফেইনস্টাইন। অর্থাৎ ২৫০০০০ তথ্য ফাঁসের জন্য ২৫ লক্ষ বছর জেল খাটতে হতে পারে উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতাকে!
দেবকী বসুর 'কবি', ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ : তৃতীয় কিস্তি : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২০ ডিসেম্বর ২০১০ | ১২৬৪ বার পঠিত
দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ব্রিটিশের কালো বুটের কাজলকালো ছায়ায় নির্মীয়মান ঔপনিবেশিক পুঁজির মরডান (অনেক লোকেই দেখেছি, কিছুতেই র-টা ড-এর পরে বলে না, শত ধরিয়ে দিলেও, একটু ডর লাগে বলে? সেরকম বানানই লিখলাম।) হতে থাকে ভারতরাষ্ট্রে যে ঐতিহ্যটা আমরা পাচ্ছি তা আর আধুনিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন বিশ্লিষ্ট কর্তিত কিছু নয়, তারা এ অন্যের মধ্যে প্রথম থেকেই বসে আছে, সম্রাট কণিষ্ক যার নাম দিয়েছিলেন অতিনির্ণয় বা ওভারডিটারমিনেশন। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এই গোড়া থেকেই শোয়াশুয়িটা উপন্যাস "কবি' ধরতে পারেনি, কিন্তু ফিল্ম "কবি' পেরেছিল। উপন্যাস যেখানে শুধু বংশ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেই থেমে গেছিল, ফিল্মকে সেখানে ঠিক তার পাশাপাশি উল্লেখ করে দিতে হয় তার আধুনিকতার তকমা মানে চাকরির পদকেও। শুধু তার ডোম বংশ নয় কুলিগিরির চাকরিকে একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়ে সেই একই নাটককে নতুন চেহারায় হাজির করে দেয় "কবি' ফিল্ম। একটু পরে ঠিক এটাই দেখব আমরা কবিগানের আসরে। চণ্ডীর থানের মহান্ত আর স্টেশনমাস্টার তারা পাশাপাশি চেয়ারে আসীন থাকবেন। কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা আর ঐতিহ্য দিয়ে হচ্ছে না, তাকে আধুনিকতার আশ্রয় নিতেই হচ্ছে। তার পাশাপাশি আরও একজন থাকবেন। বর্গসঙ্করের কুলতালিকায় আমাদের বাঙালিদের আর একটা নিজস্ব সংযোজন। সে কথায় পরে আসছি।
পর্দা ফাঁস : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ | ৯৫২ বার পঠিত
এই তো মানবাধিকার নিয়ে এত হইচইয়ের পরেও, দেশে-বিদেশের অনেক চাপের পরেও বিনায়ক সেনের মতো একজন হাই প্রোফাইল লোকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড কি হয়নি? দেশে-বিদেশে প্রচার করে, ফিল্ম শো করে, সই সংগ্রহ করে, কোনো বাপের ব্যাটা সেসব আটকাতে পেরেছে?
মানবাধিকার কর্মীদের সমস্ত আঘাত তিনি বুক পেতে নিয়েছেন। মিডিয়ার সব ঝড়ঝাপ্টা সামলে দিয়েছেন। সমস্ত রাজনৈতিক বিরোধিতাকে উড়িয়ে দিয়ে জঙ্গলমহলকে খাঁকি পোশাক আর মিলিটারি বুটে মুড়ে দিয়েছেন। সবই তো মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এর পরেও,এত কিছু করার পরেও, তাঁর ক্ষমতার উপর এত অবিশ্বাস? তাঁকে লেঙ্গি মেরে এলাকা পুনর্দখলের চক্রান্ত? এ কি রেগে যাবার জন্য যথেষ্ট কারণ নয়? যথেষ্ট অবিশ্বাস, যথেষ্ট আঘাত নয়?
পৌরুষ আর প্রেমে আঘাত পেলে মানুষ কত কিছু করে। আর এ তো ইংরিজি লেখায় সামান্য দুটো বাংলা শব্দ। হতেই পারে।
মি: মিনিস্টার, আপনাকেই বলছি .... : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৬ ডিসেম্বর ২০১০ | ৮৮০ বার পঠিত
তবে আপনি এইসব মহান উক্তি যখন করছেন, তখন ইউকিলিকস র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান নয়, পড়ুন, রক্ষী বাহিনী এগেইন ব্যাক) নিয়ে আপনাদের গর্বের বেলুনটি লিক করে দিয়েছে। বেয়াড়া ইউকিলিকসকে উদ্ধৃত করে দি। গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, গণতন্ত্রের মহাপ্রভু ব্রিটিশ সরকার স্বয়ং নাকি খুনি এই সরকারি বাহিনীটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে! আর প্রতিষ্ঠার পরে গত ছয় বছরে ড়্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নাকি মারা গেছে হাজার খানেক লোক।
ইতিহাস সাক্ষী, পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সিরাজ সিকদারকে বন্দী অবস্থায় গুলি করে হত্যার পর তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও আপনাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ('বঙ্গবন্ধু' বলবো কী?) সংসদে দম্ভ করে বলেছিলেন, কোথায় আজ সিরাজ সিকদার? এরও আগে তিনি কমিউনিস্ট ভূতের আতংকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, নকশাল দেখা মাত্র গুলি করা হবে! মাননীয় মন্ত্রী, সে দিনও আপনারা ভুলে গিয়েছিলেন, নকশাল কারো গায়ে লেখা থাকে না।
সুসমাচার -২০১০ : ঋতেন মিত্র
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৬ ডিসেম্বর ২০১০ | ৯৩৫ বার পঠিত
তাই নামিলেন নীচে। অবশেষে। ফ্লাইট দু মিলেনিয়াম লেট , অথচ আপেক্ষিকতার সূত্র মেনে জৈবিক ক্লকে দেবানন্দীয় স্থবিরতা। বেথলেহেমে প্রথম স্টপ। গন্তব্য নেতাজি আন্তর্জাতিক। চেলা বোঝায় রকেট থেকে এইসা ধোঁয়া- মনে হল, খোদ গড, রজনীকান্ত নকল করে ধূম ছেড়েছেন। বাঙ্গালী ভক্তদের কলকাকলিতে অশান্ত ওয়েটিং এরিয়া দেখে ঘোর সন্দ, যার নামে বিমানবন্দর তিনিই মুখ তুললেন বুঝি? হল না, টি আর পি স্কেলে মেগাতর ভাবুন। তৃতীয় ভুবন পরিদর্শনে ত্রিভুবনেশের পুত্র স্বয়ং হাজির!! যুগ বদলেছে। আকাশপথের পুরানো রুটে আজ একটার বদলে পঁচাশটি তারা। ছবি মেলাতে গিয়ে পদে পদে ঠকবেন। কল্পনাপ্রবণ আঁকিয়েদের কাজ দেখে ভেবেছিলেন, চে গুয়েভারা, চন্দ্রিল ভাট, আর জন লেননের ককটেল , তাই না? দূর, এ তো পাতি কদমছাঁট। তবে হ্যাঁ, সেই মায়াভরা চোখ, সেই শান্ত স্থির চলাফেরা, সেইই হাত তোলার মোলায়েম কায়দা। (এক প্রখ্যাত র:স: গায়িকা গলা ফসকে বিস্মবিষ্ট 'কা-লো?' থ্রো করেই ইনস্ট্যান্ট অপ্রস্তুত, মুদ্রাদোষের অজুহাতে শেষরক্ষে।)
হরিদাস পালের ডায়রি ঃ মুখে কুলুপ : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ | ৮৫৪ বার পঠিত
ধ্যাৎ, আমরা জানি যে ওসব কূটকচালিতে আমাদের মত ছাপোষা মানুষদের পড়তে নেই। তাই শহরের কোন মানবাধিকার কর্মী, কোন সংগ্ঠন এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইছে না। ঘরে জব্দ দাস ক্যাপিটাল, দুটো চিঠি আর একটি লোকের কথায় যদি বিনায়ক সেনের মত হাই প্রোফইল লোক, যাঁর বিরুদ্ধে কোন ক্রিমিনাল কেস নেই, যিনি বহুবছর ধরে গরীবদের জন্যে স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁকে জেলে পোরা যায় তবে আমরা তো শাকভাত খাওয়া ভেতো বাঙালী। দাস ক্যাপিটাল যে আমার ঘরেও আছে, স্যার।
আর ওই হাই প্রোফাইল কেসের পাশাপাশি আরেক কোর্টে এক লো-প্রোফাইল মামলায় এক সত্তর পার বুড়ো বাঙালী অসিত সেনগুপ্ত ঘরে মাওবাদী সাহিত্য রাখার ও এক ছাত্রকে সরকার বদলে মাওবাদী সরকার বানাতে হবে বলার অপরাধে ঐ দেশ্দ্রোহের ধারায় আটবছর জেলে থাকার সাজা পেয়েছেন। বেশ হয়েছে। এবার পি ইউ সি এল এর ছত্তিশগড় ইউনিট বাঙালীমুক্ত হবে। বিনায়ক সেনেরা রায়পুরে মানবাধিকার আন্দোলনকে স্বাস্থ্য ও শিশুদের পরিপ্রেক্ষিতে জুড়ে দিয়ে যে সম্মানজনক ও ঈর্ষণীয় স্তরে নিয়ে গেছিলেন তাতে প্রাক্তন সচিব রাজেন্দ্র সায়েলকে বাঙ্গালোরের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন বিনায়ক জেলে যাওয়ায় সায়েল (যাঁর পেশা বলতে আমেরিকান ক্রিশ্চিয়ান সংস্থার গ্র্যান্ট পাওয়া) আবার রায়পুরে ফিরে এসেছেন। কিন্তু কাজের স্তর কি হবে কে জানে?
দেবকী বসুর 'কবি', ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ : দ্বিতীয় কিস্তি : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১২ ডিসেম্বর ২০১০ | ১৩৯২ বার পঠিত
আমি খুব নিশ্চিত নই, সাউন্ডট্র্যাকের সমস্যার কথা তো আগেই বলেছি, বাংলায় যে আন্দাজটা আমি অনেকটা করতে পারছি, অন্য ভাষায় সেটা হচ্ছে না। তবে আমি আমার হিন্দিভাষী সহকর্মীদেরও শুনিয়ে দেখেছি। তাদেরও বাক্যটা ওরকমই লাগছে। তবে বাক্যটা এখানে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়ও। কী বলতে চাইছে সেটা বোঝা যাচ্ছে খুব সহজেই। গুরুত্বপূর্ণ এখানে গোড়া থেকেই এই অবাংলাভাষী রেলকর্মীর অস্তিত্বটা উচ্চারিত হয়ে যাওয়া। উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্যে খুব সচেতন বদলগুলোর এটা একটা। উপন্যাসে এই চরিত্রটাই নেই। এমনকি উপন্যাসের শেষে নিতাই যখন ফের ফিরে এল চণ্ডীতলা ইস্টিশনে, সেখানের লোকজন তাকে ঘিরে এল। এক সময় মিছে শিরোপার গল্পে যে সম্মান নিজেই নিজেকে দিতে চেয়েছিল, সেই সম্মান এল আপনা থেকেই। উপন্যাসে এটা উল্লেখিত আছে নিতাইয়ের নিজের কেনা মিছে শিরোপা, ফিল্মে সেটা আর বলা হয়নি, শুধু শিরোপাটাই দেখানো হয়েছে। এটাও একটা বদল, কিন্তু তেমন জরুরি কিছু নয়।
কলকাতা কালচার (পর্ব এক) - পুস্তক পরিচয়, কী কিনি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ৩১ অক্টোবর ২০১০ | ১১১৪ বার পঠিত
এতদিন মল প্রাঙ্গণে গিয়ে যাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়তেন, কী কিনবেন, আদৌ কি কিছু কিনবেন, নাকি কাঁধখোলা সুন্দরীদের দেখে-টেখেই বাড়ি চলে আসবেন, এই নিয়ে কনফিউশনে জর্জরিত হতেন, কফির দাম কেন দেড়শো টাকা আর চুল কাটতে ছশো টাকা দেবার কোনো মানে আছে কিনা এই নিয়ে মানসিক অন্তর্দ্বন্দ জীর্ণ হতেন, তাঁদের জন্য সুখবর। আর চিন্তা নেই। মুদ্রণের বাজারে এসে গেছে সুবিখ্যাত পত্রিকা গোষ্ঠীর নবতম অবদান - "কী কিনি"। নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। "বিকিনি"র সঙ্গে ধ্বনিগত মিল থাকলেও আসলে এটি কোনো হেঁজিপেঁজি বস্তু নয়, যে কিনলেন, পরে ফেললেন আর কিস্তিমাত। এটি একটি সিরিয়াস অ্যাফেয়ার। "বিকিনি", নয়, "কী কিনি"। পরা নয় পড়তে হয়। রীতিমতো মাসিক পত্রিকা। লম্বা-চওড়া। আকারে মোটামুটি চোদ্দ ইঞ্চি বাই দশ ইঞ্চি। আর প্রকারে কেনাকাটার এনসাইক্লোপিডিয়া বিশেষ।
লার্স ভন ত্রীয়ের -- অ্যান্টিক্রাইস্ট : বিক্রম পাকড়াশী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ | ৭৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লার্স ভন ত্রীয়েরের নতুন ছবি, অ্যান্টিক্রাইস্ট নিয়ে অনেকদিন ধরেই বাজারে নানান গুজব ভেসে বেড়াচ্ছিলো। সেইসব ভাসমান গুজবের অধিকাংশই একমত যে সিনেমাটা অত্যন্ত দগদগে রগরগে ধরণের হয়েছে। যেন পাড়ার উঠতি ছোঁড়া এসে হাত নাড়িয়ে বলছে - পাগলা খাবি কি রে, ঝাঁঝেই মরে যাবি। এ ধরণের গুজব, শহুরে রূপকথা, যেমন - এক্সরসিস্ট দেখতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা বিবরের মতো সাহসী সাহিত্য গত একশো বছরে হয় নি, এগুলি আসবে ও যাবে। কিন্তু গুজবটা এক্ষেত্রে বেশ বড়ো করেই পৃথিবীতে ছড়ালো, কান চলচ্চিত্র উৎসবে বহু দর্শক ছি ছি করে বেরিয়ে গেলেন, অথচ সেই সিনেমার হিরোইন পেলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার।
"ভাল যুদ্ধে'র ধাঁধা : আর্য্য ভট্টাচার্য্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ | ৮৩৩ বার পঠিত
৫ই নভেম্বর ২০০৮, আমেরিকার ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক পরেই, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কার্জাই বারাক ওবামাকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই বার্তার সারমর্ম ছিল - সাধারণ মানুষ মারা বন্ধ হোক।
"This is my first demand of the new president of the United States - to put an end to civilian casualties"
। হামিদ কার্জাইয়ের সেই বার্তার কোন উত্তর দেওয়া হয় নি। কিন্তু বেড়ে গেছে মৃত্যু সংখ্যা। ইউনাইটেড নেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ সালের প্রথম ৬ মাসে মারা গেছে ১,০১৩ জন সাধারণ মানুষ, ২০০৮ সালের থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ন্যাটোর সৈন্য বাহিনীর প্রখর পাহারায় সদ্য শেষ হল আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নির্বাচন।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে কিছু ত্যাগ তো স্বীকার করতেই হবে। এই যুদ্ধ কতটা প্রয়োজনীয়, কেন এই যুদ্ধ স্বেচ্ছায় নয় বরং বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সেই দেশের ও মানব সভ্যতার জন্য কতটা খারাপ, যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে সে দেশের গণতন্ত্র, দেশ বিদেশের মিডিয়ায় চোখ রাখলেই বোঝা যায় সেসব কথা। হয় কনসেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং নয়ত নিরবচ্ছিন্ন নীরবতা। প্রচলিত এই দুই প্রান্তিক অক্ষের মাঝে দাঁড়িয়ে কিছু তথ্যে ও তত্ত্বে চোখ বুলিয়ে দেখাই যাক না মেলে কিনা এই ধাঁধা।
ভোটের গরম (২) : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৯ মে ২০০৯ | ১৫৭২ বার পঠিত
সোদপুর ব্রীজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় রেলস্টেশনের সামনে অনেক উঁচুতে কংগ্রেসের বিশাল ব্যানার প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে। সোনিয়াজীর হাস্যোজ্জ্বল ঘোমটা-টানা মুখ, হাত নাড়ছেন আমার -আপনার উদ্দেশ্যে, মনমোহনজীও আছেন, কিছুটা খাটো হয়ে। বেশ। ভালো কথা। কিন্তু নীচে-র লেখাটার যে মানে বোঝা গেল না, সেটা মোটেই ভালো কথা নয়। আমার পক্ষে, সম্ভবত: কংগ্রেসের পক্ষেও। একতা আর সদ্ভাবনা তো বুঝলাম, সুরক্ষাও বোঝা গেল, কিন্তু "ভীত-শান্তি'? এমন কোনো শব্দ কী শুনেছি এই বেঁটেখাটো বাঙালী জীবনে? ইহা কী বাংলা ভাষা? কে বলবে রে আমা-আ-য়?
নৈহাটি-গরিফা শিল্পাঞ্চল ঃ প্রদীপের নিচে অন্ধকারের একটি পুরোন কিসসা : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০০৯ | ৭০৫ বার পঠিত
এই কয়েক মাস আগে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে টাটার শহিদোচিত প্রস্থানের পর যখন সারা-রাজ্য "হায় টাটা! হায় ত্রাতা!' এইরকম বিলাপের মধ্যে দিয়ে কেঁদেও কূল পাচ্ছে না, তখন একে একে বন্ধ হয়ে গেছিল বা যেতে বসেছিল নৈহাটি-গরিফার কারখানাগুলি, আমরা জানতেও পারিনি। অবিশ্যি এই বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলি টাটা-র ন্যানো প্রজেক্টের মত অতখানি হাই-প্রোফাইল ছিল না -- নিতান্তই মামুলি কিছু জুটমিল, রঙের, কাগজের কারখানা, বা এইরকম আরো কিছু ছোট-বড় মিল-ফ্যাক্টরি।
খবর্নয়? (৩১ শে মে) -- আইলা : খবরোলার প্রতিবেদন
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ৩১ মে ২০০৯ | ২৮৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আইলা এলো। তান্ডব চালালো। ধ্বংসাবশেষ রেখে গেলো। গতকালের সরকারী হিসেব বলছে, দুই বাংলা মিলিয়ে মৃত ২৬৪, গৃহহীন পাঁচ লাখ, মোট ক্ষতিগ্রস্ত পঞ্চাশ লক্ষাধিক। বেসরকারী হিসেব অবশ্য ই অনেক বেশি। আর সবরকম হিসেবের বাইরেও হয়তো থেকে যাবে অনেক জায়গা, অনেক মানুষ। বাঁধ ভেঙ্গে সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে যাবার পর যে জায়গাগুলিতে পৌঁছানোই এক দায়। সন্দেশখালি, যোগেশগঞ্জ, হেমনগর, গোসাবা, বাসন্তী, পাথরপ্রতিমা - সুন্দরবন অঞ্চলের এসব জায়গা স্বাভাবিক অবস্থাতেই জলতলের অনেকটা নীচে, ছয় থেকে নয় ফুট। বাঁধ বিনা বসবাস ই সম্ভবপর নয়। তাই বাঁধ ভাঙ্গলে জোয়ারজলে গ্রাম গুলি নিশ্চিত ভাবে নিশ্চিহ্ন। ঝড়ের পরের দিন ই আমাদের কিছু বন্ধু পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন এরকম কিছু জায়গায়। যোগেশগঞ্জ দক্ষিনবঙ্গের শেষপ্রান্তের একটি বদ্বীপ - যেখানে রায়মঙ্গল নদী সাগরে মিশেছে। যোগেশগঞ্জ আর সাগরের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে মানুষের বাস নেই, আছে ঘন ম্যানগ্রোভ - সুন্দরবন। শহর কলকাতা থেকে এমনিতে লাগে ছ-সাত ঘন্টা। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে বসিরহাটের আগের ষ্টেশন ভ্যাবলা। সেখান থেকে ম্যাটাডোর বা ট্রেকার ধরে ন্যাজাট। ন্যাজাট থেকে যোগেশগঞ্জ যাওয়ার বোট পাওয়া যায়। অথবা ধর্মতলা বা শিয়ালদা থেকে বাসে করে ধামাখালি গিয়ে সেখান থেকে যোগেশগঞ্জের বোট ধরা। আইলার পর অবশ্য এই দুটি রুটের কোনোটিতেই যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ হাসনাবাদের পর কোনো রাস্তাই আর অক্ষত নেই।
সাম্র্যাজ্যবাদের বেহালা : আর্য্য ভট্টাচার্য্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০০৯ | ৯১১ বার পঠিত
ওরা দশজনের পরিবার বেঁচে আছে শুধু রুটি আর জলের ওপর। রাস্তায় হাঁটতে গেলে ভয় পায় এই বুঝি বা ফাটল মাইন। এই পরিবারটি ভাগ্যবান, অথবা হতভাগ্য। ভাগ্যবান কারণ ঐ বাকী ১.৪৫ মিলিয়ন লোকের মতন ওদের এখনো বাড়ি, ঘরদোর, চাষবাস ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে হয় নি। হতভাগ্য কারণ খাবার নেই, জল নেই, বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাও নেই। সতীশ সিং ১৩ বছরের কিশোর, কথা বলছে এক সাংবাদিকের সাথে। ""জানেন আমি ওদের দেখেছি, শালোয়ার আর কুর্তা পরেছিল। মুখটা কালো কাপড়ে ঢাকা, চোখ দুটো শুধু দেখা যাচ্ছে, হাতে ছিল বন্দুক। বাজারের কাছাকাছি একজনকে ওরা ধরল আর মাথাটা কেটে ফেলল""। সাংবাদিক জিগ্যেস করলেন ""কাউকে বলনি কেন""? চকিত উত্তর ""পাগল নাকি, বাবা আর ভীরজি বলে দিয়েছে তালিবান দের নিয়ে একটাও কথা না বলতে, বললেই ঘরে বন্দি করে দেবে অথবা ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেবে""।
ভোটের গরম (১) : লিখছেন -- ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০২ মে ২০০৯ | ১৫৮৪ বার পঠিত
প্রথমে ভেবেছিলাম নাম দেবো Vote টি কাব্য; কিন্তু কাব্য? এই কাগদেশান্তরী গরমে কাব্য? অগত্যা ভোটের গরম-ই সাব্যস্ত হল। নাম বাবদ মডারেটরের কাছে কিছু কর্জ হল। হ্যাঁ, কেউ যেন সিরিয়াস লেখার আশায় বসে না থাকে (অ্যাজ ইফ , কেউ বসে আছে)। এ ঘোর নিদাঘে আমি শুধু চাট্টি কুচ্ছো করবো, কিছু পি এন পি সি , কিঞ্চিৎ বিলাপ ও বাদবাকি প্রলাপ। হনুদা পড়ে রাগে-দু:খে মুখ ভেটকে উঠে যাবে, কেউ-কেউ পড়বেই না, কিন্তু তাতে আমার কচু। সরি, কচুপোড়া; ৪২ ডিগ্রির কথা মনেই ছিল না।
দ্বিভাষী তত্ব : বোধিসত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০০৯ | ৮৩৫ বার পঠিত
আজ (১৭ মে) সকাল থেকে খবরের কাগজপত্রে বাঘা বাঘা কলমচিদের লেখাপত্র যা পড়লাম, তাতে মনে হল, একটুও বাড়িয়ে বলছিনা, যেন দুটো নির্বাচনের খবর পড়ছি। জোড়ায় জোড়ায়। একটা ইংরেজি একটা বাংলা , একটা কেরল লাইন একটা বেঙ্গল লাইন, একটা আবাপর প্রথম পাতার একটা আবাপর তৃতীয় পাতার, একটা আবাপর একটা বর্তমানের, একটা টেলি একটা কাগুজে, একটা প্রণবের একটা মমতার, একটা মা-মাটি-মানুষের একটা স্থায়িত্বের বা গ্রোথের, একটা গ্রামের একটা রাজ্যের, একটা অন্ধ্র প্রদেশের চালের, একটা আসামের বাড়া ভাতে ভাগ বসানো অনুপ্রবেশকারীর, একটা প্রকাশ কারাতের একটা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের, একটা বিজয়নের একটা অচ্যুতানন্দনের, একটা নন্দীগ্রামের একটা অধীরবাবুর, একটা কবীর সুমনের নাগরিক প্রতিবাদের, একটা শতাব্দী রায়ের ডুরে পাড়ে ঘরোয়া মেনে নেওয়ার, একটা রুপচাঁদ পালের একটা তড়িৎ তোপদারের, একটা মুম্বাই একটা অন্ধ্র , একটা নীতিশের একটা নবীনের, একটা মনমোহন-সোনিয়াজির দিল্লীর আর একটা রাহুল গান্ধীর উত্তর প্রদেশের, একটা চন্দ্রবাবুর একটা করুণানিধির। তবে কাগজেরা একটা বিষয়ে ঢোঁক গিলেছেন, ভোটের আগের দিন বলেছিলেন, এ ভোট নন্দীগ্রামের বিরুদ্ধে সিঙ্গুরের। ওটা হয়নি। ওটাতে নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুর একসঙ্গে ছিলেন ডালহৌসী আর লালবাজারের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গ সি পি আই এম ঃ কিছু ভাবনা : পিনাকী মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০০৯ | ১১৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
অত:পর লোকসভা নির্বাচনেও পর্যুদস্ত সি পি এম। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ধাক্কা এবং তজ্জনিত "আত্মসমীক্ষা'র পর্ব শেষ করে, শরিকি অনৈক্যের ফুটিফাটাগুলোয় প্রেমের প্রলেপ লাগিয়ে, ন্যানো বিদায় এবং বিমানবাবুর মানুষের কাছে বারংবার ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশকে পাথেয় করে সি পি এমের মধ্যে যখন ফিরে আসছিল পঞ্চায়েতপূর্ব সেই আত্মবিশ্বাস,তাপসী মালিকের সিডি থেকে শুরু করে সুবোধ সরকারের টিভি শো, বুদ্ধবাবুর প্রকাশ্য ভাষণ থেকে শুরু করে অশোকবাবুর নেপথ্য ভাষণ - সবেতেই যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল '৭০ এর অমিতাভসুলভ সেই যোশ, ঠিক তখনই "কোথা হইতে কি হইয়া গেল, সি পি এম লোকসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হইয়া গেল'।
খবর্নয়? (২৯ শে জুন) -- লালগড় : খবরোলার প্রতিবেদন
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৮ জুন ২০০৯ | ১৩৫৮ বার পঠিত
গত নভেম্বর মাসে আদিবাসী বিক্ষোভ লালগড়কে আমাদের মিডিয়া মানচিত্রে এনে দিয়েছিল। জে এন ইউ র ছাত্রছাত্রীদের আদিবাসীরা জানালেন, নভেম্বরের ঘটনা কিন্তু আদৌ নতুন কিছু নয়। এরকম ই চলে আসছে গত আট বছর ধরে। নভেম্বরে যা নতুন হয়েছে,তা হলো,তাঁদের প্রতিবাদ।
গ্রামের মানুষ জন শুনিয়েছেন, সেই ২০০০ সাল থেকে পুলিশি অত্যাচারের ধারাবিবরণী। কীভাবে 'রেড'এর নামে মাঝরাতে বাড়িতে পুলিশ ঢুকে বেধড়ক মারতে শুরু করতো, সব কিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দিত, প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজনকে কখনো না কখনো ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মাওয়িস্ট আখ্যা দিয়ে। তিসাবাঁধের নাইকু মুর্মুকে কিভাবে পিটিয়ে মেরেছিল পুলিশ। নব্বই বছরের বৃদ্ধ নাইকু মুর্মুকে। স্কুলে পড়া মেয়েদের যৌন পীড়ন করা হয়েছে 'তল্লাশি' র নাম দিয়ে। মহিলাদের যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করতে হয়েছে মহিলা বলে নিজেকে প্রমাণ করতে, রাত্রিবেলার পুলিশি রেডের সময়। যেকোনো নির্বাচনের আগে অন্তত তিরিশ চল্লিশ জনকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ, 'মাওয়িস্ট' আখ্যা দিয়ে।
চক্রান্ত চক্রান্ত : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৮ জুন ২০০৯ | ২২২৩ বার পঠিত
চক্রান্ত একটা আছেই, কারণ, কেস খুবই গোলমেলে। একদিকে ভারত সরকার গোটা দেশে মাওবাদীদের নিষিদ্ধ করার পর সিপিএমের বড়ো কর্তা প্রকাশ কারাত বড়ো গলায় জানালেন, যে, তাঁরা এই নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে তাঁর দলের মুখ্যমন্ত্রী সেই আইনে লোককে বাটাম দিয়ে জেলে পুরছেন। একদিকে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশক্রমেই নিষিদ্ধকরণের প্রস্তাব, অন্যদিকে আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, আসলে কেন্দ্র নামক অবোধ শিশুকে সিপিএম ন্যাজে খেলাচ্ছে। একদিকে বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিন্দায় মুখর, অন্যদিকে প্রখ্যাত বিদ্রোহী গায়ক-সাংসদ কবীর সুমন চুপচাপ ঘরে বসে গান-বাজনা করছেন। একদিকে "মাও-মমতা-মহাজোট' এর অভিযোগ, অন্যদিকে "মাওবাদ-টাওবাদ সব সিপিএমের চক্রান্ত'। একদিকে "অপারেশন লালগড়' নামক যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আপামর মিডিয়ার সমর-বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা, অন্যদিকে জঙ্গল মহলে মিলিটারি বুটের পদচারণা। খবরের কাগজে পড়া যাচ্ছে, যে, মাওবাদী দমনে মার্কিন উপগ্রহ প্রযুক্তিরও নাকি সাহায্য নেওয়া হয়েছে, যথারীতি, মার্কিনবিরোধিতার পেটেন্ট নেওয়া আজিজুল হক সে ব্যাপারে নীরব।
লা জবাব দিল্লী - ১১ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ জুন ২০০৯ | ৭৯১ বার পঠিত
দেখতে দেখতে ছ'বছর পূর্ণ হয়ে গেল গ্যাঁড়ার, দিল্লিবাসের। শুরু হয়েছিল নয়ডা কুড়ি সেক্টরের এক সহৃদয় ব্যক্তির চিলেকোঠার ঘরে, দু হাজার তিন সালের মে মাসের এক মনোরম গ্রীষ্মের দুপুরে। এই ছবছরে আরও ছবার গ্রীষ্ম এল, এল বসন্ত। নতুন চোখে দেখা দিল্লি নয়ডা গুরগাঁও শহর চোখের সামনেই দেখতে দেখতে কত তাড়াতাড়ি পাল্টে গেল। কত হাজারে হাজারে লোক এল। কত নতুন নতুন সিগন্যাল বসল রাস্তার মোড়ে, কত সিগন্যাল চিরতরে হারিয়ে গেল নবনির্মিত ফ্লাইওভারের তলায়! ফেসলিফ্ট হচ্ছে রাজধানীর, সাজো সাজো রব পড়েছে দিল্লির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে, তৈরি হতে হবে ২০১০ সালের কমনওয়েল্থ গেম্সের জন্য। চেনাজানা আনাচকানাচগুলো দেখতে দেখতে নতুন রূপ নিয়ে বেরিয়ে আসছে নীল হলুদ বোর্ডের আড়াল থেকে।
আয়লা টুর এবং : সুমন্ত এবং অরিজিৎ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুন ২০০৯ | ৩০৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কোথাও গেলে, ফিরে এসে সেটা নিয়ে লিখতে হয়। এটাই নিয়ম। তার ওপর, সেই জায়গাটা যদি হয় "আয়লা'-য় ভেসে যাওয়া সুন্দরবন, তবে তো লেখাটা একটা মাস্ট ডু লিস্টের মধ্যে পড়ে যায়। তাই লিখছি। তথ্য খুব কমই জানি, তাই মূলত: যা দেখেছি সেটাই লিখবো। কোনো থিয়োরী থাকবে না। নিছকই একটা "আয়লা ট্যুর' ভাবতে পারেন। "ট্যুর'-টা শুনতে বা বলতে খুব খারাপ লাগলো, আমাদের সাধ্যমত "ত্রাণ' দিতেই গিয়েছিলাম তো, কিন্তু বিশ্বাস করুন, শেষপর্যন্ত যা দেখলাম, তাতে ঐ "ত্রাণ' নিয়ে যাওয়াটা নিজের কাছে দেওয়ার জন্য একটা অজুহাত ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না।
সুশীলবাবুর মানেবই (দ্বিতীয় ভাগ) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : মায়া মিডিয়া | ১৪ জুন ২০০৯ | ১১৩৫ বার পঠিত
পন্ডিতরা শিল্পায়নের দুই ধরণের সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন। একটি বাংলায় অন্যটি ইংরিজিতে। একটি পিপলস ডেমোক্রেসিতে অন্যটি আনন্দবাজারে। ইংরিজি তাত্ত্বিক শ্রী প্রকাশ কারাত,পিপলস ডেমোক্রেসিতে এ বিষয়ে লিখেছেন, "কলকাতার পার্শ্ববর্তী পাঁচটি জেলায় করা একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যে, বন্ধ কল-কারখানা আর রুগ্ন শিল্পগুলিতে ৪১০০০ একর এমন জমি পড়ে আছে, যা কোনো শিল্প সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছেনা।অএই সমস্ত জমি পুনরুদ্ধার করলে, তা, অনেকগুলি উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করতে পারে। এই সমস্ত জমিগুলিকে বিক্রি করে সেই অর্থে রুগ্ন শিল্পগুলির পুনুরুজ্জীবন ঘটানো যেতে পারে, বা কর্মচারীদের বকেয়া বেতন মেটানো যেতে পারে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্প, বা অন্যান্য শিল্পসংস্থাকে বাকি জমি দেওয়া যেতে পারে। এইরকম জমিগুলি দশকের পর দশক ধরে আইনী জটিলতায় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে।"
সবিতাভাবী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৩ আগস্ট ২০০৯ | ১৭২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ধুধু গ্রীষ্মের দুপুর। সুস্তনী, নিবিড়নিতম্বিনী, মদালসা সবিতাভাবী সোফায় এলিয়ে বসে আছেন। তাঁর আঁচল খসে পড়েছে (বাহ্যতই প্রতিভাত হচ্ছে), শরীরটা কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে। এমন সময় দরোজায় টক্ টক ্। কে? ম্যাডাম, আমি। আমি মহিলাদের অন্তর্বাস বিক্রি করি ম্যাডাম , একবার পরখ করেই দেখুন না আমার জিনিস। সবিতাভাবীর চোখে বিদ্যুৎ, গায়ে রোমাঞ্চ। স্বামী বাড়ি নেই, এই সুযোগ।
চিহ্নিতকরণ অথবা চিত্রগুপ্ত প্রকল্পঃ অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে : সৌরভ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ আগস্ট ২০০৯ | ৭৪২ বার পঠিত
ধনতন্ত্র বনাম সমাজতন্ত্রের কূটকচালি পেরিয়ে যদি সহজ চোখে গত শতাব্দীর দিকে তাকানো যায়, তাহলে উন্নত এবং অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটা বড় ফারাক দেখা যাবে। প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়াই বলুন আর আমেরিকা-ইংল্যান্ডই বলুন, অর্থনীতির পরিসরে রাষ্ট্রের ভূমিকার প্রভূত পার্থক্য সঙ্কেÄও প্রায় সব উন্নত দেশেই সামাজিক বা ভৌগোলিক পরিসরে রাষ্ট্রের উপস্থিতি সর্বব্যাপী এবং সুদৃঢ়। সোজা কথায়, উন্নত দেশের সরকারের হাত অনেক লম্বা - পরিষেবার বরাভয় আর প্রশাসনের খড়্গহস্ত দুটোই।আমেরিকা-রাশিয়াতে গভর্নমেন্টের খাতায় সক্কলের নাম আছে। আমাদের দেশেও কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি একটি প্রকল্প নিয়েছেন প্রত্যেক নাগরিককে (এবং বাসরত অনাগরিককে) আলাদা করে চেনবার, প্রত্যেককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার। সরকারি কম্পিউটারে ধরা থাকবে প্রত্যেকের নাম, ধাম, বৃত্তি, মায় আঙুলের ছাপ পর্যন্ত। প্রকল্পের আনুমানিক খরচ চল্লিশ হাজার কোটি। গত মাসে এই প্রকল্পের কর্ণধার নিযুক্ত হলেন ইনফোসিসের প্রাক্তন সিইও নন্দন নিলেকানি। সার্থক নির্বাচন, নি:সন্দেহ। এই নিয়োগের সাথে সাথে বিষয়টি সংবাদের শিরোনামে এসেছে, এবং স্বাভাবিকভাবেই, প্রতিবাদের ঝড় না উঠুক, বিতর্কের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
যৌনতা ও রাজনীতিঃ এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে? : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ আগস্ট ২০০৯ | ৮১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
যৌনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের (বা, বলা ভালো, ক্ষমতার) সম্পর্কটা সবসময়েই জটিল এবং, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, এরা একে অপরকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে ও নিজেও ব্যবহৃত হয়, বুঝে বা না-বুঝে। আবার সেই যৌনতা যদি প্রথাবিরুদ্ধ হয়, যদি তা হয় সমকামিতার মতো একদা-অপরাধ, তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। কিন্তু শুধুই কি সংঘাত? আর সেই সংঘাতও কি কেবল দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষমতার সঙ্গেই? তথাকথিত বামপন্থী উদারতাও কি বেমালুম হজম করে নিতে পারে যৌনতার ব্যতিক্রম বা ব্যতিক্রমী যৌনতা? না কি তাকেও ঢোঁক গিলতে হয়, যুঝতে হয় নিজের অন্তর্গত স্ববিরোধগুলির সঙ্গে?
কারাগার, দেশে ও বিদেশে : সন্দীপন দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ জুলাই ২০০৯ | ৭১২ বার পঠিত
শারীরিক নির্যাতনের সাহায্যে বিচারাধীন কয়েদীদের পছন্দমত "স্বীকারোক্তি" দিতে বাধ্য করার বিষয়টি গত এক বছরে বহুল প্রচারিত - মার্কিন প্রশাসন, প্রচারমাধ্যম ও সংসদের কল্যাণে। মার্কিন দেশে অবশ্য, গ্রেপ্তার করার আগে বা পরে, বিচারাধীন বন্দীদের উপর শারীরিক নির্যাতনের ব্যাপারে বেশ কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে, যা নেহাতই "ব্যতিক্রমী' ব্যাপারস্যাপার ছাড়া, সাধারণভাবে মেনেও চলা হয়। এই কয়েকমাস আগে আটলান্টার এক গাড়িচালক কয়েকজন পুলিশকে চাপা দিয়ে চলে যাবার চেষ্টা করে। তাকে তাড়া করে ধরে ফেলার পর, ঐ পুলিশরা লোকটির উপরে শারীরিক আঘাত করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেই আঘাতগুলি মোটেই ঠান্ডা মাথার পুলিশী মার নয়, বরং রক্তমাংসের সাধারণ মানুষের মতই। কোনো ক্রমে প্রাণে বেঁচে যাবার পর সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ধরণের আচরণই প্রত্যাশিত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে এই অজুহাত ধোপে টেকেনি, বরং অ-পুলিশী আচরণের অভিযোগে তিনজন পুলিশ অফিসারকে চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয়।
নারী প্রসঙ্গে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৯ জুলাই ২০০৯ | ১০৫৭ বার পঠিত
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে সনাতন ভারতীয় পদ্ধতিতে "কন্যাদান' এর এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। "মুখ্যমন্ত্রী কন্যাদান যোজনা' নামক একটি সরকারি প্রকল্পে সম্প্রতি বিয়ে দিয়ে উদ্ধার করা হল ১৫১ জন দু:স্থ মহিলাকে। গত ২৬শে জুন। বেণীর সঙ্গে মাথার মতো, বিয়ে দিয়ে কন্যা উদ্ধার করার পাশাপাশি আরেকটি সামাজিক কর্তব্যও মধ্যপ্রদেশ সরকার পালন করলেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বিয়ের উপযুক্ত কিনা জানার জন্য, প্রতিটি কন্যার "পরীক্ষা' নেওয়া হল রীতিমতো সরকারি উদ্যোগে। যে-সে পরীক্ষা নয়, প্রতিটি বিবাহেচ্ছুক নারীর "কুমারীত্ব' পরীক্ষা করা হল একদম পাশ-করা স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞদের দিয়ে। খবরে প্রকাশ, যে, জনৈকা পরিক্ষার্থিনী সামান্য ট্যাঁফোঁ করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, যে, পরীক্ষায় না বসলে বিয়ের আসরে এϾট্রর কোনো প্রশ্নই নেই। ফেল করলে কি হবে, সেটা অবশ্য স্পষ্ট করে বলা হয়নি, কিন্তু ফেল করলে কি হয়, সে তো ক্লাস ফাইভের নাদান বালকও জানে।
ইরান বিপ্লবের আসল ও নকল : সৌরভ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুলাই ২০০৯ | ৭৬৩ বার পঠিত
সুধী,
ইন্টারনেটের গলিঘুঁজি দিয়ে যখন এতখানি এসেছেন তখন কোথাও না কোথাও, বড়রাস্তায়, নিশ্চয়ই দেখেছেন নেদাকে। নেদা আগা সোলতান। মেয়েটা বিক্ষুব্ধ তেহরানের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল। হয়ত প্রতিবাদে যোগ দিতে, হয়ত নয়। হঠাৎ এক মোটরবাইক তাকে উপহার দিয়ে যায় একটি বুলেট। ইউটিউবে, ব্লগে, টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে তার বুলেটবিদ্ধ, মুখ-দিয়ে-রক্ত-ওঠা, শেষ কয়েকটি মুহূর্তের দৃশ্য। ইরানের "সবুজ বিপ্লবের" প্রতীকী দৃশ্য।
বিপ্লব!!
মধ্যভারত কথা : দেবর্ষি দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ জুলাই ২০০৯ | ৯৪১ বার পঠিত
শুভ্রাংশু চৌধরি ছত্তিসগড়ে Citizens Journalism Initiative ও CGnet-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য। ছত্তিসগড়ের একটি সংবাদপত্রে এক সময় নিয়মিত কলাম লিখতেন। একবার রাজ্যের চাষিদের আত্মহত্যার খবর নিয়ে লেখেন। চাপ দিয়ে, মিথ্যেপ্রচারের অভিযোগে তাঁর কলাম বন্ধ করে দেওয়া হয়(১)। শুভ্রাংশু দন্ডকারণ্যের কাছের বালিমেলা জলাশয় ও নিয়ামগিরি পাহাড় অঞ্চলে সাংবাদিকতার সূত্রে গেছিলেন(২)। বালিমেলা জলাশয় নেহরুর আমলের বৃহ্ৎ বাঁধ প্রকল্পের একটি নিদর্শন। অঞ্চলের আদিবাসীদের বহু গ্রাম এর ফলে ডুবে যায়, উচ্ছিন্ন লোকেরা যেখানে গিয়ে নতুন ঘর বাঁধেন সেগুলূ জলস্তর বাড়ার পর বাকি দুনিয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সব থেকে কাছের হাসপাতালে যেতে হলে তিন ঘন্টা লঞ্চ, যা দিনে একটা চলে, ও তারপর দুঞ্চঘন্টা হন্টন। অর্থাৎ মোট ৫ ঘন্টা। স্কুল ৩+৪ = ৭ ঘন্টা। বাঁধের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এই গ্রামগুলোতে চার দশক পরেও পৌঁছোয় নি, ওড়িসার বড় শহরগুলোতে চলে যাচ্ছে তারে তারে। জল বয়ে চলেছে হিন্দু উঁচু জাতের চাষিদের জমিসেচের জন্য। উচ্ছিন্ন আদিবাসীদের হাতে যে অনুর্বর জমি আছে তাতে এত কম খাদ্যশস্য হয় যে অধিক অরতথকরী কিন্তু বেআইনি গাঁজার চাষ করে পেট চালাতে হয়। অথচ যে জমিতে তারা মাথা গুঁজেছে বা ফসল ফলাচ্ছে তার কাগজও কিন্তু সরকার তাদের দেয়নি, ক্ষতিপূরণ তো দূর অস্ত।
শাইনিং ইন্ডিয়া, কালো ভারত : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ অক্টোবর ২০০৯ | ১২১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
অবস্থা উদ্বেগজনক, সন্দেহ নেই। ছত্রধর মাহাতো দিয়ে শুরু। তারপর রোজই ধরপাকড় চলছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, যে, এখন থেকে মাওবাদী বলতে শুধু জঙ্গী কার্যকলাপ নয়, জঙ্গীদের প্রতি মতাদর্শগত সমর্থনও বোঝাবে। ফলে যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা মাওবাদীদের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন যুগিয়ে চলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও একই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর কয়েকদিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব এবং পুলিশ অফিসাররা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যে, মাওবাদী বা জনসাধারণের কমিটির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য তাঁরা দেখছেন না। গ্রেপ্তারের পর ছত্রধর মাহাতোকে জেরা করে জনসাধারণের কমিটিকে সাহায্য করেছেন এরকম বহু মানুষের নাম পাওয়া গেছে। এবং সহায়তাকারী এই সমস্ত যেকোনো লোকের বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় বে আইনী কার্যকলাপ নিরোধক আইন (ইউএপিএ) মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। শুধু ঘোষণাতেই ব্যাপারটা থেমে নেই। গ্রেপ্তার চলছে। বন্ধ করা হচ্ছে ছাপাখানা। এই লেখা লিখতে লিখতেও আরও কিছু গ্রেপ্তার হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই।
ভাবনার নিষ্ক্রিয়তা, নিষ্ক্রিয়তার ভাবনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ৯৪৪ বার পঠিত
মার্কসবাদী হই বা না হই, আমরা যখন আমাদের খসড়া নীতিমালাটি তৈরি করি, তখন ঠিক এই ‘আশু’ কর্তব্যের কথাটিই আমাদের মাথায় ছিল। অন্য কিছু না। আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী হন, আপনি ডান হোন বা বাম, ব্যবস্থাপন্থী বা ব্যবস্থাবিরোধী, প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, কিছু ন্যূনতম জিনিস বোধহয় এখনই করা যায়, যা এই ব্যবস্থার মধ্যেও মানুষকে কিছু স্বস্তি দেবে। এবং সেই কাজ করা যায় এই ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে, বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য নির্বিশেষে। আমাদের খসড়ায় ঠিক সেই টুকুই আছে। এর পরে বাকি কথোপকথনের চিন্তা, বাকি তাত্ত্বিক আদানপ্রদান তো করাই যাবে। সে প্রস্তাবও খসড়াতেই আছে। অর্পিতা এই আদানপ্রদানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং করছেন। সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ।
ধানাই পানাই ১৩ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১২৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
স্বামীজি বইটা লিখেছেন। তা বেশ করেছেন, তবে ছবিগুলো না দিলেই পারতেন, তাও খানিক বিশ্বাসযোগ্য হত। অবশ্য বেশ কিছু পাবলিক তাতেও গোল খেয়েছে। তখনকার লোকজন বড় সরল ছিল। একজন আমায় তেড়েফুঁড়ে বলল, ছবিগুলো দেখেছিস? এর চেয়ে বড় অকাট্য প্রমাণ আর কী হতে পারে। আমি বললাম, ভাইটি, আমার নিজের একটা ফোটো ল্যাব আছে জানিস তো? কত সুপারইম্পোজ, মাল্টিপ্ল এক্সপোজার করলাম, তুই আমাকেও ছবির গপ্পো শোনাবি? তখন অবশ্য ‘মরফিং’ শব্দটা শুনিনি, টেকনোলজিও অনেক পেছনে। তবু ছবিগুলো দেখে ভাবতাম, কেন উনি এগুলো দিলেন। একে তো সবই বিদেশি ছবি, তাও আদ্যিকালের। মানে, তখনকার লোক যত বোকা, আরও আগের লোক আরও বোকা ছিল, এগুলোও গিলত। কিন্তু ওদিকে, লার্জ ফরম্যাট ক্যামেরায় সরাসরি ফিল্মের ওপরই সুপারইম্পোজ করা যেত। ল্যাব অবধি যাবার দরকার পড়তনা। প্রথম কথা ভূত বলে কি কিছু আছে? দ্বিতীয় কথা, যদি থাকে। তাদের কি ছবি তোলা যায়?
উচ্চবর্গীয়ের নীতি-নির্ধারণ : অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ৭১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
গত চৌত্রিশ বছর ধরে আমরা ঐ 'সুদিন'-কেই 'বিপ্লব' বলতে শিখেছি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার নাম বদলে হয়েছে 'সুদিন'। নাম যা-ই হোক, সুদিন বা বিপ্লব আমাদের কাছে এক স্ট্যাটিক বা স্থির ক্যাটেগরি, অনেকটা তিথি মেনে আসা পুজো-আচ্চা-র মত। ফলে, আমাদের ভাবনা, চিন্তা, দায়বোধ, রাজনীতি সবই আপাতত-র জন্য। যবে 'সুদিন' আসবে তবে আমাদের ভাবনা-চিন্তাও ঠিক বদলে যাবে, এই বিশ্বাসের শিকড় অত্যন্ত গভীর। আজকের আপাতত-র ভাবনা, রাজনীতি যদি সেই সুদিনকে সক্রিয়ভাবে পিছিয়ে দেবার কাজ করে চলে, তাহলেও সেই বিশ্বাসের ভিত টলানো যায় না।
“...ভাবনার জন্যে ভাবনা হয়” : অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ৭৪৬ বার পঠিত
সরকারি দৃষ্টির দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে উন্নততর গভর্নেন্স-এর দাবি উঠেছে, যা দেখে মনে হয় যেন মিশেল ফুকো-র মৃতদেহের সৎকার-গাথা। অসংগঠিত শ্রমিক, কৃষক, আরো অন্যান্য সকলকে সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে, যায়গায় যায়গায় ক্যামেরা লাগিয়ে আর আরো সব প্রযুক্তির সাহায্যে, উন্নত ম্যানেজমেন্ট-জ্ঞানের সাহায্যে সরকার (বা সরকারের হয়ে বরাত পাওয়া অন্য কেউ) নজরদারি করবে, চোখে চোখে রাখবে। তাতে নানান স্তরে দুর্নীতি কমবে। দক্ষতা দিয়ে সমানাধিকার উৎপন্ন করার এ এক অসাধারণ কল, তা সে কল চলুক আর না-ই চলুক। প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়ে দুর্নীতি দূর করার প্রত্যয়ের ভিতটি যে নড়বড়ে শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার panopticon বানিয়ে এক দক্ষতর controlled society বানানোর তোড়জোড় আমাদের চিন্তার দৈন্যের এক চোখ-ধাঁধাঁনো প্রকাশ।
বরফি : প্রসেনজিত বর্মণ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১১৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এই বাহাত্তর সালেই বরফির সাথে শ্রুতি ঘোষ, অধুনা মিসেস সেনগুপ্তের দেখা। দার্জিলিংয়ের রাস্তার। বরফি তখন দামাল দস্যি যুবক, সাইকেলে বিহার করে, গাড়ির কাচে চুল আঁচড়ায়, বাচ্চা ছেলের চকলেট কেড়ে খেয়ে নেয়, বগল বাজিয়ে নাচে, ঘন্টাঘরের ডগায় চড়ে কাঁটা ঘোরায়। কী কিউট না? এমন ছেলের প্রেমে না পড়ে কি থাকা যায়? অ্যাঁ?
শ্রুতি দার্জিলিংয়ে আসা ইস্তক বরফি তার পিছনে পড়ে ছিলো। টয় ট্রেনে যেতে যেতে, খাওয়ার প্লেটে কল্পনার গোলাপ রেখে, চিঠি লিখে বরফি তার প্রেম নিবেদন করলো। তারপর দুজনে বন্ধু হয়ে গেলো এবং ঘোড়ায় চেপে ঘুরতে বেরোলো। এরপরে তারা সাইকেলে এবং টয়ট্রেনেও চেপেছিলো। তারপর একদিন শুভলগ্ন দেখে চুমু খেয়ে তারা পাকাপাকি ভাবে প্রেমে পড়ে গেলো।
স্মরণে শংকর গুহ নিয়োগী : পুণ্যব্রত গুণ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১২৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
এবার শুরু নতুন ধারার শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরীর কাজ। এ যাবৎ ট্রেড ইউনিয়ন বলতে লোকে বুঝত শ্রমিকদের আর্থিক দাবী-দাওয়া আদায়ের সংগঠনকে, যা বেতনবৃদ্ধি-বোনাস-ছুটি-চার্জশিটের জবাব ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলন করার সংগঠন। অর্থাৎ ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিক-জীবনের এক-তৃতীয়াংশ, আট ঘন্টার সংগঠন, যে আট ঘন্টা শ্রমিক কলে-কারখানায় কাটান।
নিয়োগী শ্রমিকদের খন্ড-বিখন্ড মানুষ হিসেবে দেখতেন না, দেখতেন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে, যে মানুষ উৎপাদনের কাজ ছাড়াও পরিবারে-সমাজে থাকে—খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যা, নিজের অবসর বিনোদন, সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার জন্য যাকে ভাবতে হয়, যাকে সম্পর্ক রাখতে হয় সমাজের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে। নিয়োগীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন ইউনিয়নের কর্মসূচীতে সামিল হল আর্থিক দাবীর লড়াইয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সংস্কৃতি-পরিবেশ-ইতিহাস চেতনা-নারী মুক্তি-সমাজের অন্যান্য শোষিত অংশের মুক্তি, নিপীড়িত জাতিসত্ত্বার মুক্তির মত বিষয়গুলি।
ধানাই পানাই ১৬ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ৯২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
গোমিয়া জায়গাটা আমাদের বাংলার বাইরে। তখন বিহারে ছিল, এখন বোধহয় ঝাড়খন্ডে। সেখানকার খবরের ফলো আপ রিপোর্টিং কোলকাতার কাগজে দীর্ঘদীন ধরে বেরোবে আশা করাই অন্যায়। কলকাতার সমাধান না হওয়া কেসগুলোই কি আর হয়। তবে হ্যাঁ, সেই যে আগের বার বললাম, ‘বিবস্ত্র’ টিবস্ত্র কিছু খুঁজে পেলে হয়, বেশ কিছুদিন ধরেই হয়। ‘সংবাদপত্রের সামাজিক ভূমিকা’ বা এই ধরণের কিছু আর্টিক্ল লিখে পুরষ্কার পাওয়া যেতে পারে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু এখন সংবাদ শুধুই বিক্রয় নির্ভর। আর শুধু সাংবাদিকরাই বা কেন, আমরা সবাই কেমন বিক্রয় নির্ভর হয়ে যাচ্ছি দিন কে দিন। বহুদিন আগে শোনা নচিকেতার গানটা মাথায় কেমন আটকে গেছে – “সবাই পণ্য সেজে, কাকে কিনবে কে যে, সারাদেশ জুড়ে সোনাগাছি। কেন বেঁচে আছি” –
বস্টনে বংগে : চতুর্থ পর্ব (যমদুয়ারে) : বর্ন ফ্রি
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৮ জুন ২০১৩ | ১১২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আজকে এখানে এত দূরে বস্টনে বসেও কোথায় যেন আমি তোর সাথে এক হয়ে যাচ্ছি। তোর আর আমার অপরাধ যে একই, তুই আর আমি দুজনেই যাদের ভালবাসি তাদেরকে আমাদের পরিবার-সমাজ মেনে নেয় না। নিজের ভালবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাবা-মার পছন্দ করে দেওয়া জীবনসঙ্গীকে তুইও মানতে পারলি না, আমিও মানতে পারব না। আমাদের দুজনেরই চুলের মুঠি ধরে আমাদের বাবা-মা-ভাই-দাদা-বন্ধুরা বলে, হয় আমাদের বানিয়ে দেওয়া নিয়ম মেনে ভালবাস অথবা সরে যাও, মুছে যাও। আমি জানি না, আমার সমপ্রেমকে তুই মেনে নিতে পারতিস কি না, আমি জানি না, আমার প্রিয় দিদিরা মেনে নিতে পারবে কি না। আমার ভয় লাগে, যেদিন জানতে পারবে আমার দিদিরাও কি তোর দাদার মত হয়ে যাবে? ভুলে যাবে, আমাকে পায়ে করে ওরা ঘুম পাড়াতো, আমার মেয়ে সাজার ইচ্ছে হলে ছোটবেলায় ওদেরই লিপ্স্টিক-কাজল দিয়ে ওরা আমাকে মেয়ে সাজিয়ে দিত?
ধানাই পানাই ১৫ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১২৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
ডারউইন সাহেব বলেছেন যোগ্যই টিকে থাকবে, সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট। এই যেমন ডোডো পক্ষী, অ্যাত্তোবড় চেহারা, তায় আবার উড়তে পারেনা। মরিশাসে মানুষ নামল, নিজেরা মুগুর দিয়ে মেরে কিছু খেল, তাদের পোষা কুত্তারা বাকিদের সাবড়ে দিল, তারা পালাতে শেখেনি, সব শেষ। সারভাইভ করেনি, ফিট নয়। সেই যে অক পাখি, ব্যাটাবেটিদের সতীপনার চূড়ান্ত। তেনারা বৈধব্য পালন করতেন। বর বা বৌ মরলে আর বিয়ে করব না। এবার জাহাজের নাবিকরা জাস্ট ফাজলামি করেই কয়েকটা কে গুলি করতে লাগল। যাদের বৌ বা বর মরল, তারা চির বৈধব্য পালন করতে লাগল। নো ছ্যানাপোনা, নট কিচ্ছু। তেনারা শেষ হয়ে গেলেন চিরতরে। সেই যে প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, পায়রাদের মধ্যে সবচেয়ে রংবাহারী। এক এক দল যখন উড়ত, ঝাঁকটা এক মাইল চওড়া আর তিন মাইল লম্বা হত। সংখ্যায় তারা ছিল প্রায় পঞ্চাশ কোটি । উড়ন্ত পাখিগুলোকে আমেরিকার মোটা মোটা ইয়াঙ্কিগুলো ছর্রা বন্দুক দিয়ে পুটুস পুটুস মারত। ভাবত, অত বড় ঝাঁকের মধ্যে দশ বারোটা মারলে আর কি হবে। মজা হচ্ছে, সবাই তাই ভাবত আর তাই সবাই দশ বারোটা করে মারত। অত খেতেও পারতনা, মাঠে ময়দানে পড়ে থাকত। সব শেষ হয়ে গেল মাত্র কয়েক বছরে। সেই যে ইলিশ, আগে গঙ্গায় পদ্মায় ঝাঁকে ঝাঁকে – নাঃ এবার বাড়াবাড়ি করে ফেলছি, অন্য কথায় আসি।
ধানাই পানাই ১৪ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১০৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
কী আছে নগ্ন নারীদেহে ? সেই আদ্দিকালে লুকাস ক্র্যানাস দ এল্ডার থেকে শুরু করে, টিশিয়ান, এল গ্রেকো, বত্তিচেল্লি, রাফায়েল, দা ভিঞ্চি, মিচেলেঞ্জেলো, সবাই। ভ্যানগগ, মনে, পিকাসো, আমাদের হুসেন, বিকাশ ভট্টাচার্য, সনাতন দিন্ডা, কে আঁকেননি ন্যুড ? কিন্তু কেন ? সবই কি ঈস্থেটিক ? রবীন্দ্রনাথও বাদ যাননি। যদিও তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মধ্যে ছবি আঁকাটাকে গায়ের জোরে ঢোকানো হয়েছে। এবার কিছু ব্যোমকেশ ঝাঁপিয়ে পড়ল, তারা বলল, ছবিটার পোজিশন দেখে প্রত্যয় হচ্ছে, এটা জানলার বাইরে থেকে আঁকা এবং ছবির মডেল ঘরের মধ্যে মাটিতে শুয়ে ছিলেন। এ কাদম্বরী দেবী ছাড়া কেউনা। মডেল ছাড়া ন্যুড হয়না ? ভারতে একজন বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন, কে এইচ আরা। তিনি ন্যুড আঁকতেন, একেবারে রগরগে ন্যুড। বহু পুরষ্কার পেয়েছেন, সারা পৃথিবী জুড়ে প্রদর্শনী হয়েছে, অথচ তিনি প্রথাগত আঁকার শিক্ষা পাননি, ছিলেন একজন মোটর মেকানিক। একটা ইন্টারভিউ পড়েছিলাম, তাঁকে প্রশ্ন করা হল, আচ্ছা এত যে ন্যুড আঁকেন, আপনার মডেল হয় কে ? তিনি বললেন, ওমা, এতে আবার মডেল লাগে নাকি, আমি তো চোখ বুজলেই পষ্টো এদের দেখতে পাই।
কুডানকুলাম থেকে - প্রথম কিস্তি : মুথুভেল জানাকরাজন, সতীশ এবং জোসেফ জন সুন্দর-এর লাইভ রিপোর্ট
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১৪৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
শুধু কাঁদানে গ্যাস নয়, গুলিও চলল পরমাণু বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর। থুথুকুড়ি-র মানাপাদু গ্রামে পুলিশ অ্যান্থনি সামি নামের এক প্রতিবাদী মৎস্যজীবীকে পেটে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলেছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে, একজন বাচ্চা মেয়ে মারা গেছে পদদলিত হয়ে। একবছর আগে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এই প্রথম পুলিশ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ইদিনথাকারাই গ্রামে ঢোকে এবং প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে তল্লাসী চালায় উদয়কুমার এবং অন্যান্য নেতাদের খোঁজে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যদি কারোর ঘরে উদয়কুমারদের পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে। অসমর্থিত সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, উদয়কুমারদেরকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল, কিন্তু মাথা নিচু করে নেওয়ার কারণে তারা বেঁচে যায়। সারা দক্ষিণ তামিলনাড়ু জুড়ে ইতিউতি প্রতিবাদের খবর শোনা যাচ্ছে, পরমাণু বিরোধী আন্দোলনের ওপর এই পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে। প্রায় ৫০ জন গুরুতর আহত বলে জানা যাচ্ছে। ইদিনথাকারাই চার্চের সামনে ১৪ জন অনশন শুরু করেছে বলে খবর। কুদানকুলামে সরকার সমস্ত ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ফলে কুদানকুলাম থেকে সরাসরি খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
পোনু-মনুসংহিতা : প্রণব কুমার দাস
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৮ মে ২০১২ | ২০১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
আর সেসব কী দণ্ড রে মশায়, পড়লে আপনার দাঁতকপাটি লেগে যাবে। পাপ করে ভেবেছেন মনুর পৃথিবীতে রেহাই পাবেন, সেটি হবার নয়। তা রাজাই দণ্ড দিন বা নিজে নিজেই প্রায়শ্চিত্ত করুন। একটা শুনুন। গুরুপত্নীর সঙ্গে ইয়ার্কি দিয়েছেন, এখন লোহার তৈরী জ্বলন্ত এক নারীমূর্তি আলিঙ্গন করে আগুন গরম লোহার খাটে শুয়ে থাকুন, যতক্ষণ না প্রাণবিয়োগ হচ্ছে। আগুনে এলার্জি আছে বলছেন। তাহলে জাপানী স্টাইলে হারাকিরি (ওই তার কাছাকাছি আর কি) করতে পারেন, হাঁটতে হবে কিন্তু নৈঋতদিকে (ন য়ে ঐ, ঋ তে রেফ, ত)দিকে। অবশ্য আপনি যদি কোমলমতি হন, এইসব কাটাকুটি পছন্দ না করেন তাহলে তিনমাস যাউ (রেসিপি নেই) খেয়ে চান্দ্রায়ণ ব্রতও করতে পারেন।
ধানাই পানাই ২ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৮ মে ২০১২ | ৮৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
আমি ছেলেবেলায় ক্লাস ফোর অবধি লেক ভিউ স্কুলে পড়েছি। স্কুলটা মোটেই পাতে দেওয়ার মত ছিলনা। আমার মামাবাড়ি তখন ছিল হিন্দুস্থান পার্কে, আমি তো সে বাড়িতেই মানুষ(?)।আমাদের পাশের বাড়ি ছিল বাঙ্গালবাড়ি, সে বাড়ির ছেলে মেয়েরা ছিল, মীরা, ইরা, গোপাল, বুড়ি। এরা পিওর বাঙাল ভাষায় কথা বলত। একদিন মীরাকে ডেকে বাবা জিজ্ঞেস করল, অ্যাই তুই কোন ইস্কুলে পড়িস রে? মীরা বলল, লেক ভিউ। নামটা বেশ হাই ফাই, বাবা বলল, ইস্কুলটা ভাল? মীরা বলল, হ্যাঁ, খু-উব ভাল। ওপিনিয়ন নেবার ব্যাপারে বাবা খুব লিবারাল ছিল। গয়লাকে জিজ্ঞেস করত, তুমারা দুধমে জল টল নেই হ্যায় তো? গয়লা দু কানে হাত দিয়ে বলত, রাম রাম, কি যে বোলেন –।
২০১২- আবার তোতা কাহিনী : শ্রী লামা
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২১ মে ২০১২ | ৬৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
বিদূষকেরা বলিল, “মহারানী, সত্য কথা যদি শুনিবেন তবে ডাকুন বিদ্বজ্জনদের, পণ্ডিতদের, লিপিকরদের, ডাকুন যারা উন্নয়ন করে এবং উন্নয়ন তদারক করিয়া বেড়ায়। নিন্দুকগুলো ফেসবুকে লগ ইন করিতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে।”
জবাব শুনিয়া রানী অবস্থাটা পরিষ্কার বুঝিলেন, আর তখনি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকিয়া বিদূষকদের একশোতে একশো নম্বর দেওয়া হইল।
আমাদের অন্য সমস্ত স্বপ্ন ভাষার সঙ্গে বিদেয় নিয়েছে-- তারা সবাই শহীদ হয়েছে : সুশান্ত কর
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২১ মে ২০১২ | ২০৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
শিলচরে বড় হবার সুবাদে ছেলেবেলা থেকে দেখতাম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর দিন কতক পরেই পাড়ায় পাড়ায় আরেকটি দিন উদযাপনের ধুম পড়ে যেত, সেটি ১৯শে মে। ১১ শহীদের ছবি একটা চেয়ার বা অস্থায়ীভাবে তৈরি বেদীর উপর রেখে ফুলে ধূপে সাজিয়ে রাখা হতো, কেউ কেউ পাশে বাংলা দেশাত্মবোধক গান মাইকে বাজিয়ে দিত, কেউ নয়। এই রীতিতে দিবস উদযাপনের রীতিটি বোধ করি শিলচরীয়, বা কাছাড়ি ব্যাপার। কেননা, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতে ওমন দেখা যায় না। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে বা নেতাজী জয়ন্তীতে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রভাত ফেরি হতো, স্কুল থেকেই যোগ দিতে বলা হতো। কিন্তু ১৯শের কোনো পথ চলাতে গেছি বলে মনে পড়ে না। কলেজে গিয়ে জেনেছি যে ১৯শের দিনে খুব সকালে শিলচর শ্মশানে জড়ো হওয়া আর বিকেলে গান্ধিবাগ শহীদ বেদীতে –একটি নিয়মিত প্রথা।
অসুখ সারান : ঈপ্সিতা পালভৌমিক
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২১ মে ২০১২ | ১৫৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
সেখানেও এখন বিধি বাম করে রেখেছেন, ওবামা সাহেব। এখন gay কি homosexuality টাইপ করুন, পাতার পর পাতা জুড়ে এখন তাঁর সমকামী বিবাহকে স্বীকৃতিদানের খবর, আর তাই নিয়ে সমকামীদের হুল্লোড়বাজি । হপ্তা দুই ধরে হট টপিক। আর আরো তো আরো, homosexuality + cure দিয়ে সার্চাতে গেলে আরোই গণ্ডগোল। সমকামীদের ‘অসুখ’সারানো যেত বলে যে স্টাডি দাবি করেছিল, তা কেন ভুল, এসব বলে এতদিন মনোবিদদের পাতার পর পাতার কাউন্টার তো ছিলই, আপনাকে কনফিউজ করার জন্য সবরকম উপকরণ সহ। দুদিন আগে খোদ সেই স্টাডির মূল কত্তাই বোম ফেলেছেন। ক্ষমা চেয়ে। রীতিমতন কান্নাকাটি করে। নিজেই কইছেন, স্টাডি নাকি ভুল ছিল। ক্ষমা চেয়েছেন আলাদা করে সেই সমকামীর কাছেও যিনি নাকি ওই সারানোর থেরাপি নিতে গিয়ে আত্মহত্যা করতে বসেছিলেন।
ক্যানভেসার গল্পকার : আনোয়ার শাহাদাত
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ২৩ নভেম্বর ২০১২ | ৮৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ক্যাপ্টেন সোহরাবকে দিয়ে শেখ আব্দুর রহমানকে বলান যে সে যদি প্রাণে বাঁচতে চায় তাহলে যেন জোরে পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয়। জিপের পেছনে রহমান পরিষ্কার সোহরাবকে বলে বাজান আমার যে পুত্র নাজিরের খালের ঘাটলায় ৫০ সালে পানিতে ডুবে মরেছে সে থাকলে এখন তোমার মত হইত, এই মুহূর্তে কেন জানিনা তোমারে মোর তার মত মনে হইল, তবে বাজান ওই শ্লোগান দেওয়া আমার পক্ষে সোম্ভব না। সোহরাব আবারও অনুরোধ করে বাজান আপনে আমার ধর্মের বাপ, আমারে পাপের ভাগী করবেননা শ্লোগানডা দেন। আব্দুর রহমান কঠোর আরও, সোহরাবের দিকে না তাকিয়ে বলে সোম্ভব না । ক্যাপ্টেন সিপাহীদের ইঙ্গিত করেন পুকুর পাড়ে দাঁড় করাতে । পুকুরের দিকে মুখ করে দাঁড় করাতে গেলে শেখ আব্দুর রহমান ফিরে যায় এবং বলে পিঠমে নেহি বুকমে গুলি চালাও এবং তারপর তার ওই উর্দু- বাংলা মিশ্রণে বলে সে নবীজীর বংশ তার বুকে নবীজীর চুম্বন রয়েছে, তোমাদের গুলি পিছলে যাবে । এই ঘটনা শ্রোতারা এমনভাবে শুনতে থাকে যেন তারা ’৭১ সালের আব্দুর রহমানের ওই ঘটনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গল্পকারের সহকারী তার ওস্তাদকে ইশারা করতে থাকে ওস্তাদ যেন তার আসল কাজ শুরু করে। সহকারী গল্পের মাঝে আরও দু’একবার ইশারা করেছিল, ওস্তাদ থামেনি। এবারেও তার ওস্তাদ গল্পকার থামেনি, বরং সহকারীর উদ্দেশ্যে গল্পকার শ্রোতাদের বলে দেয় যে ছোড়াটা চির-কৃমির বড়ি বিক্রি শুরু করে দিতে বলে এবং বড়ি বিক্রির পরে নাকি লাগলে আবার শুরু করা যাবে। কোন গল্পের মাঝ পথে তা থামিয়ে ক্যানভেসারের বড়ি বিক্রির রীতি সম্পর্কে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা হতাশ হয় কেনোনা গল্পটি চির-কৃমির বড়ি বেচার মধ্যে হারিয়ে যাবে। কিন্তু ওস্তাদ তার সহকারী ও শ্রোতাদের সাফ কথা জানিয়ে দেয় সে কৃমির বড়ি আজ বিক্রি করবে না। শ্রোতারা ফিরে যেতে চায় তাদের গল্পে। গল্পকার চমক দেয় তার গল্প বলায় একথা বলে তাহলে বড়ি বিক্রি নাই যখন কিসসাটাও ক্ষান্ত দেই। শ্রোতারা এর প্রতিবাদে গরম মিছিল-শ্লোগানের মত প্রতিবাদ করেন। সত্য কিন্তু তাদের মুখ-ভঙ্গিতে হতাশার দৃশ্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
Wong Kar Wai’s In the Mood for Love – একটি রমন্যাস : রাজু রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ২৩ নভেম্বর ২০১২ | ১৫৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
পথ চলতে চলতে হঠাৎ দেখা সেই লাস্যময়ী নারীটির সাথে, যার নাগরটি গোপনে প্রণয়াবদ্ধ হয়েছে আমার দয়িতার সাথে। হ্যাঁ, এরকম তো হতেই পারে, তখন আমরা কি করবো? “কি করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই”। বাধনহীন যৌনকামনা আমাকে প্রতি মুহূর্তে আচ্ছন্ন করে, কখনো বা ভাবি আমাদের দুজনের এই উভয়সঙ্কট বুঝি জন্ম দেবে এক মৌন অমর ভালবাসার। হয়তো কাল আমাদের ক্ষমা করে দেবে আমাদের মত এমন দুটি ব্যথিত হৃদয়ের গল্প শুনে সবাই হর্ষাবিষ্ট হবে। নিভৃত হৃদয় যুগলে লুকিয়ে থাকা বিষাদসিন্ধুর সন্ধান কারই বা জানা আছে? এমন দুটি ব্যকুল হৃদয়ের দৌর্মনস্য, নিবিড় গোপনীয়তা আবার আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে নতুন করে প্রেমের ইতিহাস লেখার যে ক্ষণস্থায়ী সুযোগ রচিত হয়েছিল Wong Kar-Wai এর 'In the Mood for the Love' ছবিতে, তা দেখে এক কথায় হতচকিত না হয়ে উপায় নেই। একজন অর্কেস্টার নির্দেশক যেমন, Wong Kar-Wai ও ঠিক তেমনভাবেই সেই ব্যথিত যুগলের মনের মণিকোঠা থেকে উদ্ধার করেছেন এক আবেগবিহ্বলতা, এক চেতনাময় সংগীত, যা ধরা পড়েছে ছবিটির পরতে পরতে, প্রত্যেকটি শটে।
নৈনং ছিন্দতি শস্ত্রাণি : সুচেতনা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৩ নভেম্বর ২০১২ | ৯২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
ঘন জঙ্গলের মধ্যে বজ্রযোগিনীর মন্দির থেকে তখনো কাঁসরঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছিল বাতাসে। দিগন্তজোড়া গাছগাছালির মধ্যেকার ফাঁকফোকর দিয়ে অতি অল্প যেটুকু দৃশ্যগোচর হয়, তাতে কেবলমাত্র মন্দিরের আকৃতি টুকুই বোঝা যায়। সন্ধ্যার অন্ধকারে নাটমন্দিরের জ্বলন্ত প্রদীপমালায় কিছু দুর্বোধ্য অক্ষরের আভাস পাওয়া যায়। সন্ধ্যারতির সময় কিছু ভক্তসমাগম হয়, নারী পুরুষ, বালক, বালিকা সকলেই আসে, ভক্তিভরে অঞ্জলিপ্রদান করে তারা যে যার ঘরে ফিরে যায়। তারপরে শুরু হয় দেবদাসীদের পিশাচিনী নৃত্য। মন্দিরের অনতিদূরে মৃতদেহ সৎকার করতে আসা আত্মীয় পরিজন রা অতি সম্ভ্রমে দূর থেকে এই ডাকিনী নৃত্য দর্শন করে। কখনো বা মৃতদেহ সৎকার সম্পুর্ণ না করেই পালিয়েও যায়। কিছুক্ষন আগেই যে এই সব দেবদাসীরা স্বাভাবিক ভাবে ভক্তবৃন্দের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলো তা বিশ্বাস করাই দুষ্কর হয়ে ওঠে। তাদের দু এক প্রহর আগেও দেখলে মনে হতে পারে তারা আপন আপন গৃহস্থী সামলাতেই ব্যাস্ত। তারা সকলেই কৃশকায়, পরনের লালপেড়ে সাদা শাড়িটি রাঢ় বঙ্গের রীতি অনুসারে পরা। নদীমাতৃক বঙ্গভূমিতে শাঁখ ঝিনুক ইত্যাদির অভাব নেই তাই তাদের আভরণেও শঙ্খের প্রাধান্য। কদাচিৎ বিশেষ তিথিতে পোড়ামাটির গয়নায় সর্বাঙ্গ ঢেকে এই যুবতীরা একসাথে শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীবক্ষে নগ্নিকা নৃত্য করে। কিছু নিজ অভিজ্ঞতা কিছু জনরব আর বাকীটা কল্পনার পাঁচমিশেল-- এই সবে মিলে এই বজ্রযোগিনীর মন্দিরটি চূড়ান্ত রহস্যজালের সৃষ্টি করে সাধারণ গ্রামবাসীর কাছে
সব চরিত্র কাল্পনিক : ইন্দ্রনীল ও ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ২৩ নভেম্বর ২০১২ | ১৪৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
না, আমি কবিতারও কেউ নই। কবিতা কস্মিনকালেও আমাকে ডাকেনি তার সাতমহলা নাটমহলে। অথচ হাভাতে, হাঘরে আমি তার হিমজানালায় গাল ঠেকিয়ে দেখেছি অন্দরের তারা ও তুবড়ি, পানপাত্রের ক্রিস্টাল আর কলস্বনা মেয়েদের; তাদের শাড়ির ভাঁজের খসখস, তাদের হাসির ঠমক যে রূপোর ঘন্টার কেলাসিত টুং টাং-এসবই হল জনশ্রুতি। জনশ্রুতিকে আমি সত্যি হতে জেনেছি, জানালার কাচে গাল ঠেকানো বোকাহাবা ছেলে । আর বাইরে অবিরাম ঝরে গেছে বরফ। সাদা হয়ে গেছে মাঠঘাট। জ্যোৎস্না ও তুষারে।
না, আমি রাজার বাড়ির বরাতি নই। সোনার জলে ছাপা নেমন্তন্নর চিঠি আমার জন্য আসেনি কখনো। তবু ঘুমের ঘোরে কখনো তো শুনেছি রাতের শেষ ট্রেনের বাঁশি; আমার বাড়ির পাশ দিয়ে, আমার জানালার ফাঁক দিয়ে, আমার মশারির চাল আর মনসার ঘট ছুঁয়ে সে আবার মিলিয়ে গেছে দূরে, দিগন্তের দিকে। একবার, শুধু একবার। এ বেঁচে থাকায় শুধু একটিবার।
১ এর ঙঃ সাময়িক যবনিকা : অনমিত্র রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ২৩ নভেম্বর ২০১২ | ১০৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
নো বাজেট কি? – এই মহার্ঘ্য প্রশ্নটা বহুদিন ধরে জ্বালাচ্ছে। এটাকেই আগে শেষ করা যাক। এ বিষয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় মত বোধহয় এটাই যে কোন ছবিই আসলে নো-বাজেট হতে পারে না। কিন্তু যাঁরা এটা মনে করেন তাঁরা হয়তো মাথায় রাখেন না যে নো-এক্সপেন্স বলা হয়নি। এবার যাঁরা জীবনে কোনরকম কোনো প্রোজেক্ট বা প্রোডাকশনের সাথে যুক্ত থেকেছেন তাঁরা বলবেন যে বাজেট তো বাবা সব কিছুরই হয়, হ্যাঁ এটা হতে পারে যে তোমরা হিসাবটা করো না। তবু ইনভিসিবল হলেও সেটা তো আছেই। - ব্যাপারটা ঠিক ওরকম নয়, অন্তত ফিল্মের ক্ষেত্রে। প্রথমে বলে নেওয়া যাক যে নো-বাজেট ছবিকে জিরো বাজেট বা মাইক্রো বাজেটও বলা হয়ে থাকে। আমরা অবশ্য নো প্রেফিক্সটা বসানোরই পক্ষপাতী। এবার প্রশ্নটার উত্তর দুদিক থেকে দেওয়া যায়। প্রথমে সহজ উত্তরটা দিই। ধরা যাক, পটলবাবুর শখ বাগান করা, জবাদি মোবাইলের সদ্য বাজারে আসা সেট কিনতে পছন্দ করে, আবার আলুদা অফিসের বাচ্চা মেয়েদের সাথে উইকএন্ডে ডিনারে যায়; মানে হ্যাবিট থেকে হবি অবধি যে অঞ্চলটা মানুষের জীবনে, তার পিছনেও তো মানুষ টাকা খরচ করে। আর কে কোনখাতে কতটা খরচ করলো সেটা তার সামাজিক পরিচয়ও গড়ে দেয় কিছুটা মাত্রায়। চাঁপাবৌদি যেমন বাড়ি গেলেই নতুন ফ্রিজ, নতুন এসি দেখাতে শুরু করেন, এক্কেবারে প্রাইস ট্যাগ সহ, সেটাতেই তাঁর আনন্দ। ঠিক সেরকমই, আমি ছোটবেলায় ক্রিকেটারদের ছবি জমাতাম খাতায়, বন্ধুদের দেখাতাম বাড়ি এলে, বড় হয়ে সিনেমা বানিয়েছি। ব্যাপারটা পৃথিবীতে বেশিরভাগ লোকই যেহেতু করেনা তাই আমার বা আমাদের এই অদ্ভুত স্বভাব অনেকেই নজর করেছে। একটা পরিচয়ের মতো। বেঁচে থাকারও তো একটা খরচ আছে, নিঃশ্বাস নেওয়ারও। ইচ্ছা থাকলে সেই টাকাটাতেও ছবি বানানো যায়। নো-বাজেট ফিল্ম কিছুটা এরকমই। সারা পৃথিবীতেই। তবে এর বাইরে আরও কতগুলো ব্যাপার আছে। সেগুলোকে দ্বিতীয় তথা জটিল উত্তরটির অন্তর্গত করলাম।
সমুদ্র ও পাঁচজন আমি : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ১৩৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
রাতের ঝাউয়ের বন ঘেঁষে বালিয়াড়ির পাদদেশে ধিকধিক বনফায়ার, ওদের পাঁচটা মুখে আগুনের লাল লেগেছিলো- এখন আর পাঁচটা মুখ নেই, বিয়ারের তোবড়ানো ক্যান হাতে গোড়ালি ভেজানো ঢেউয়ে আমি-এ সমুদ্র এমত বেহায়া- তেমনই ওরাও পাঁচজন বন্ফায়ারের হা-হা:-- পাঁচ কেন, ওরা চার, দুজোড়া কপোত-কপোতিনী, আমি তো ব্রাত্য ঐ দলে, অথচও লোক চাই, দর্শক; নিজেদের প্রেমগুলো নিয়ে দর্শক না দেখলে ফ্যান্টাসি মেটেনা ওদের। ওরাও সমুদ্রের মত ঐ সমুদ্র, চাঁদের রিফ্লেকশন জলে ফসফস বলে ভুল হতে থাকে, হাওয়ায় পেট ফাঁপে ছেঁড়া ক্যারিব্যাগ যেন জেলিফিশ এই সমুদ্র, চাঁদের আলোর পথ করে দেয় মানুষের কাছে, আমার কাছেও লুনাটিক স্পৃহা সব সেই পথ ধরে হেঁটে গিয়ে অতলে তলিয়ে মরে যায়, মরে, তবু বেঁচে ওঠে তবু এই সমুদ্রের ধারে কাঠের আগুন থেকে হাওয়া বেয়ে ছিটকিয়ে যায় জ্বলন্ত জৈবযৌগ, ব্রেনের পাকগৃহ ঘিরে জৈব রিঅ্যাকশন হয়ে চলে, এসে পড়ে অসহ্য অতীত। এমনই সমুদ্র তার গাঢ় সব দুপুরের বেলাভূমি, স্নানের গোপন আর সেই সব কথা যেগুলো উহ্য রেখে সরে গিয়েছিলো আমার এইখান থেকে, আর কিছু ভাবিনা, আর কোনও স্বপ্ন দেখিনা, আর কোনও কান্না রাখিনি আগুনে
বসন্তের জানলা দিয়ে : শৌভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ৮৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শহর থেকে অল্প দূরেই যে একটি চমৎকার হ্রদ রয়েছে, এ আমি অনেকদিন অবধি জানতাম না। হারুণের মুখে প্রথম যখন এর কথা শুনি, তখন থেকেই জায়গাটির প্রতি আমার এক অদম্য আকর্ষণ জন্মায়। ও সেখানে না-যাওয়া অবধি য্যানো কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না।
তখন বসন্তকাল। যদিও শহরে তা নামমাত্র। কাজের চাপ তেমন না থাকায় আমরা প্রায় প্রতি সন্ধ্যাতেই (রোববার বাদে) সদর স্ট্রিটের এই ছোটো পানশালায় জমায়েত হই। আমরা বলতে আমি, হারুণ, অরূপ আর মাস্টার। পানশালাটির নাম ‘সলিটেয়ার’। ও সেখানকার ওয়েটাররাও আমাদের চিনে ফেলেছিলো। ঘন্টাদুয়েক গল্পগুজব করে আমরা যে যার বাড়ি ফিরতাম।
তো এখানেই একদিন হারুণ হ্রদটির কথা আমাকে বলে। সে এও জানায় যে, শহর থেকে ওই হ্রদের দূরত্ব মাত্রই মাইল কুড়ি। কিন্তু নিকটে হলেও, ঘন সবুজ গাছপালায় ঘেরা, অনুচ্চ টিলাবেষ্টিত অধিত্যকাটির সৌন্দর্য না কি প্রায় অপার্থিব। সে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
তার এই কথায় বাকি সবাই সায় দ্যায়। আমি বলি যে, তাদের সৌভাগ্যে আমি ঈর্ষান্বিত। আগে জানলে আমিও নিশ্চয় এতদিনে হ্রদটি দেখে আসতুম
পিরবতীর নাকছাবি : শক্তি দত্তরায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ১৮৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
পীরদিদি, কায়রুবুড়া, ধীরজুদাদা তিনজন হেঁটে আসছিল। তিনজন হাসছিল। তিনজনের হাতেই পাঁপড়ভাজা। পাঁপড়ভাজাগুলো হাতের চাপে ভেঙ্গে পড়ছিল, কিছু কিছু চলে যাচ্ছিল জিভের ডগায় সুস্বাদ জানিয়ে, যেন জীবনের সুখের দিনগুলো। মচমচে সহজেই ভাঙ্গে, অচিরেই গুঁড়িয়ে যায়। আজকে তলব বার। ভাষাতত্বের কি নিয়মে কে জানে সাপ্তাহিক বেতনকে বলে তলব। যে বারে সপ্তাহের বেতন হয় সেটা তলববার। খুশির দিন, সেদিন হাট বসে চা বাগানের মাঠে। মহানিমের ছায়ায় ছোট ছোট চালার নীচে কত কি রূপোর গয়না, গালার চুড়ি, পুঁতির মালা, মাছ, মাংস, সবজির পসরা। সবাই কিছু কিছু কিনবে। তারপর রাত হলে চাঁদের নিচে বা অন্ধকারের আঁচলের তলায় ভাতের পচুই কি মহুয়া। প্রথম নাচগান, তারপর মারপিট, কান্না, বিলাপ, শাপশাপান্ত, তারপর একঘুম, সব গ্লানি হজম। পরেরদিন ভরে আবার পাত্তিতোলা, ফ্যাকট্রিতে মেশিনের আওয়াজে আগুনের তাপে বিরাট কর্মযজ্ঞ
১-এর কঃ ওপেনিং আধলা : অনমিত্র রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ১০২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ঠিক এই জায়গাটাকেই দর্শককূল বা পাঠককূল মনে করে থাকেন অ্যারোগেন্স বলে। অ্যারোগেন্সটা কিন্তু এমনি এমনি আসেনা। সেসব কথায় পরে আসছি। আপাতত বলা যাক যে, এই আমাদের গোষ্ঠীটার ভেতর আবার দুটো স্পষ্ট ভাগ রয়েছে। আমরা মোটামুটিভাবে বন্ধু হলেও আমাদের চিন্তাভাবনার পদ্ধতি আমাদের দুটো আলাদা কাজ করতে ঠেলে দেয়। আমরা যারা এই গোষ্ঠীর এবং মেইনস্ট্রীম সিনেমা নিয়ে খুশি নই, ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে কিছু করতে চাই; একদল মনে করি লোকে না দেখলে কাজ করে কি হবে, আরেকদলের মতানুযায়ী যে করে হোক কাজটা শুরু করা দরকার, তারপর লোকে নিশ্চয়ই দেখবে, না দেখে যাবে কোথায়! ঠিক এই পার্থক্যটাই আমাদের একসাথে কাজ করতে দেয়না, যদিও উদ্দেশ্য আসলে একই। আমি দ্বিতীয় দলের লোক হলেও প্রথম দল সম্পর্কে আগে বলে নেওয়া যাক। এরা বিশ্বাস করে আভাঁ-গার্দ এবং মেইনস্ট্রীম ফিল্ম এর মধ্যে আদানপ্রদানটা খুবই জরুরী। সেটা আমরাও যে করিনা তা নয়, তবে এদের ওই লোকে না দেখলে কিছুই হলো না জাতীয় মনোভাব থেকে এরা একটা কি দুটো শর্ট ফিল্ম বানানোর পরপরই ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার পথ খুঁজতে শুরু করে। কেউ স্ক্রিপ্ট রাইটার তো কেউ এডি (সহকারী পরিচালক) হয়ে ঢুকেও পড়ে। আসল উদ্দেশ্য দশ কি পনেরো বছর ধরে আটঘাটগুলো জেনে নেওয়া, তারপর নিজে ছবি বানানো শুরু করা। কেউ পারে কেউ পারেনা। এরপর কোনোদিন দেখা হলে আলোচনার বিষয় হয়ে যায় তমুকের ক্যামেরাম্যান কেন ইচ্ছা থাকার পরও কোনদিন ইউনিট ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়ে নিজের ছবিটা করে উঠতে পারলোনা, অথবা অমুক পরিচালক আদতে কতটা সৎ কিংবা এই যে বড় বড় প্রোডিউসার-ডিস্ট্রিবিউটর-হলমালিকদের আঁতাত, ইত্যাদি। দেখা না হলেও চলে, তবু এইসব সাক্ষাৎ এবং পরস্পর পরস্পরকে আমরা মনে রেখে দিই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে চলে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় দুটো কারণ হল ১) একটা কমন ক্রাইসিস, যে, ছবিও করতে হবে আবার খেয়ে-পরে বাঁচতেও হবে আর ২) আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিজেকে নিজে পুরোপুরি বিশ্বাস না করতে পারলে অন্য কেউও তোমায় বিশ্বাস করতে পারে না এবং এতে তাদেরকে দোষ দেওয়ারও কিছু থাকে না। এই বিশ্বাসের অভাবই কি সেই ভয়ের জন্ম দেয়না যে দর্শক আমায় রিজেক্ট করতে পারে? আর সেই ভয়ই কি একটা সময়ের পর নিজস্ব সাফল্যের ফর্মুলা অনুযায়ী ছবি করতে বাধ্য করে না? এইভাবেই তো সত্যা-র সাফল্যের পর পাঁচ তৈরী করার কথা ভাবে একটা লোক অথবা ওম্যানিয়া আর চি-চা লেদারের সাফল্যের পর বোঝাই যায় যে ড্রিমাম ওয়েকাপ্পাম দর্শক ভালই ‘খাবে’। মাথার ভেতর কোথাও বোধহয় ওই বিশ্বাসের অভাব বা ওই ভয়টা ‘মশলা’টা মেশাতে শিখিয়ে দেয়। হলই বা নিজস্ব মশলা, মশলাই তো। তাছাড়া কম বয়সে কেই বা বিপ্লব করেনি বলতো! শয়তানের ভেতর মোরাভিয়া ঢুকে যায়, জনি গদ্দারের মধ্যে জেম্স্ হ্যাডলী চেজ। যাই হোক!
‘ওম দর ব দর’ - ভারতীয় সিনেমায় এক মাইলফলক : ঋদ্ধিমান বসু
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ৯৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
“শুনেছি নাকি চাঁদের বুড়ির পোস্টটা নাকি খালি হয়েছে। তুমি চরকা কাটতে জানো ?”
আপাতভাবে অলীক এই সংলাপগুলি ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ওম দর ব দর’-এর অন্তর্ভুক্ত। এই চলচ্চিত্রটিকে ভারতের ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ (Avante - Garde) সিনেমার একটি পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ শব্দটি চলচ্চিত্র জগতে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষামূলক গোত্রের সিনেমার পরিচায়ক । মূল আলোচনায় ঢোকার আগে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ সিনেমা সম্বন্ধে দু’চার কথা বলা দরকার।
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে ম্যান রে (Man Ray), দুচ্যাম্প (Duchamp), রেনে ক্ল্যার (Rene Clair) প্রভৃতি পরিচালকদের হাত ধরে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’-এর সূচনা। এরপর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিভাধর পরিচালক লুই বুনুয়েল (Lui Bunuel) এবং চিত্রশিল্পী সাল্ভাদর দালি (Salvador Dali) মিলে সৃষ্টি করলেন ‘অ্যাঁ শিয়েঁ অ্যাঁদালু’(Un Chien Andalou) নামে এক আশ্চর্য ছবি, যা ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’-এর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পরীক্ষা- নিরীক্ষার আঁচ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল। নানান দেশের পরিচালকেরা নিজগুণে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’-কে আরও সমৃদ্ধ করে তুললেন। ভারতবর্ষেও এর প্রভাব অনুভূত হতে লাগলো ১৯৬০-এর দশকের গোড়া থেকেই। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে, ১৯৪৮ সালে উদয়শঙ্করের ‘কল্পনা’ ছবিটিতে প্রচুর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ রয়েছে, তবে এটিকে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ এর শ্রেণিভুক্ত করা যায় কিনা, সেই নিয়ে বির্তক আছে। সাধারণভাবে ভারতের প্রথম দৃষ্টান্তমূলক ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ সিনেমা বলতে ‘ওম দর ব দর’-এর কথাই মাথায় আসে। বস্তুত,এটিই ভারতবর্ষের প্রথম ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ ফিল্ম, যেটি দেশে ও বিদেশে সমানভাবে বন্দিত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে কমল স্বরুপ এই ফিল্ম-এর জন্য ফিল্মফেয়ার-এ জু্রিস চয়েস পুরস্কার পান। আজ, এই সিনেমা মুক্তি পাবার প্রায় ২৫ বছর পরেও, সিনেমাপ্রেমী মানুষদের মধ্যে এটি নিয়ে সমান উদ্যমে আলোচনা হয়।
অনন্তপুর : সুনন্দা মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ১০৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
পৃথিবী জুড়ে এত বিপ্লবের মহোত্সব, অলি! তুই তো আমায় দেখাতিস স্বপ্নের দিকে উড়ে চলার রাস্তা. আর তুই আছিস বলেই না আমার মনে হত শেষ সিঁড়িতে এখান থেকেও পা রাখা যায়! অনন্তপুর থেকে স্টোনওয়াল খুব বেশি দূর নয়. আর কোনো এক দিন একটা বৃষ্টির বিকেলে আকাশে জোড়া রামধনু উঠবে যখন, রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে তোর ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে পারব, নিশ্চয়ই। সিকিওরিটি কি ইলিউশন? না কি সে সত্যি ই আছে? কোথায় সবচেয়ে সিকিওরড আমি? ধুস, আমি ওসব বিপ্লব টিপ্লব জানিনা অলি! আমি শুধু তোকে আমার পাশে দেখতে চাই, সকালে, বিকেলে, শুনতে চাই তোর ইষৎ অন্যমনস্ক গলায় গুনগুনানি. ছুঁয়ে থাকতে চাই তোকে.এইটুকু চাইবার জন্য বিপ্লব করতে হবে?
সূচি- অশুচি : সুবর্ণ সেঁজুতি
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৪ জুন ২০১২ | ৮৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
অনীতার কথা এইবেলা বলে নেওয়া ভালো কেননা, অনীতা প্রেমে পড়েছে।
সেটা খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়, আকছার পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই চৌদ্দ থেকে চব্বিশ বয়সী একগাদা মেয়ে কিশোরী মায় উদ্ভিন্নযৌবনা পর্যন্ত প্রেমে পড়ছে, শুধু পড়ছে না, বলা ভালো ধপাধপ আছাড় খাচ্ছে। প্রেমের মতো এমন একটা সঘন স-আবেগ তদুপরি সলজ্জ ব্যাপারের সাথে আছাড় খাওয়ার মতো অমন আনকুথ ক্রিয়াশীলতার কথা ভাবতেই কেমন যেন তেতো অনুভূতি হয় মুখের মধ্যে ওর, কিন্তু ব্যাপার টা ঠিক ঐ রকমই আনকুথ বলা যায় একেবারে বিশ্রী রকমের আনকুথ হয়ে গ্যাছে। কারণ অনীতা, আমাদের সুন্দরী ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া চোখে হাফ কাট রিডিং গ্লাস দেওয়া, লেয়ার কাট চুল, স্মুথ হেয়ার সিল্কি শাইনিং স্কিন অনীতা, টম ক্রুজ লুক আর রালফ লরেন পোলো টি শার্ট বিশেষজ্ঞ অনীতা, সর্বোপরি শোভা দে আর সিডনী শেলডন গোগ্রাসে গিলে খাওয়া অনীতা হঠাৎ করে আছাড় খেয়েছে, থুক্কু, মন প্রাণ সবই সঁপে বসে আছে এই দর্জিকে!
ধানাই পানাই ৩ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৪ জুন ২০১২ | ৮০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কাকতালীয় ঘটনার সঙ্গে অপহরণের কোনও আপাত সম্পর্ক নেই, তবে এই কাহিনিতে আছে। আসলে পুরো ধানাই পানাই জুড়েই কাকতালীয় ঘটনার ছড়াছড়ি। সব এখানে লেখা সম্ভব নয়, তবু কিছু তুলে দিলাম। আমার এক বন্ধু, তার নাম বাবলু, ভাল নাম বি- আচ্ছা থাক। বাবলুই চলুক। আমি নিজের বাড়িতে ফোটো ল্যাব বানানোর আগে ওর বাড়িতে ছবি প্রিন্ট করতে যেতাম। ডার্ক রুমটা ছিল ছাদের ওপর। ছবি ছাপার সঙ্গে সঙ্গে গপ্পো গুজবও চলত সমানে। ওর আসল নামটা যেমন উল্লেখ করলাম না, বাড়িটা কোথায় ছিল, সে প্রসঙ্গও এড়িয়ে যাচ্ছি সঙ্গত কারণেই।
ধানাই পানাই ৪ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১১ জুন ২০১২ | ৮২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়, শুধু মানুষের পরিচিতি ছাড়া। আমি একজন হ্যান্ডসাম তরতাজা তাগড়া যুবককে চিনতাম, তার নাম ছিল তিমির। এখনও তিমিরকে মাঝে মাঝে গড়িয়াহাটে দেখি, লোলচর্ম, পলিতকেশ, কুব্জদেহ। হাতে একটা লাঠি আর মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অনেক কষ্টে ভিড়ের মধ্যে শরীরটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তিমির আমারই বয়সী কিন্তু বার্ধক্যের মজাই হল, সে সবদেহ কে শবদেহ একসঙ্গে বানায়না। সন্দেহ হওয়াতে একদিন তার সামনে রাস্তা আটকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, তুই কি – মানে, আপনি কি ‘তিমির’? একরাশ বিরক্তি ভরা মুখে সামান্য বাঁকা হাসি মাখিয়ে সে বলল, আমি যে তিমিরে, সে তিমিরেই...
ধানাই পানাই ৫ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৬ জুন ২০১২ | ৯২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
হ্যাঁ গল্পের মধ্যে আবার দুটো আরও ছোট গল্প। সেই যে এসিয়ান গেমসে চূণীদার ক্যাপ্টেন্সিতে সোনা জেতার কথা বললাম, সেই দলে ছিলেন মেওয়ালাল। বিশ্ব ফুটবলের ‘যাদুকর’ বলা হত স্ট্যানলি ম্যাথিউজকে, আর ভারতের যাদুকর মেওয়ালাল। মেওয়ালালের গোলেই সম্ভবতঃ সোনাটা এসেছিল। সেই মেওয়ালাল গুরুতর অসুস্থ। তিনি প্রাক্তন রেলকর্মী হিসেবে রেলের হাসপাতালে ভর্তি হতে গেছেন। ডাক্তার বলল যায়গা নেই। মেওয়াদার ছেলে বলল, একটু দেখুন না, এসিয়াডে সোনাজয়ী খেলোয়াড়ের যদি এই অবস্থা, সাধারণ কর্মীদের কী হবে? ডাক্তার বলল, তাই নাকি? সোনাজয়ী নাকি? কাল মেডেলটা সঙ্গে আনবেনতো, দেখব কি করা যায়। মেওয়াদা মারা গেলেন পরের দিন।
অসুখ সারান - দ্বিতীয় কিস্তি : ঈপ্সিতা পালভৌমিক
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৬ জুন ২০১২ | ১৩৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
যেখানে সমকামী নিজেই মনে করছেন, তিনি সমকামিতা নিয়ে সুখী নন আর সেই থেকে আসছে অবসাদ, তার আসলি কালপ্রিট নাকি আমাদের সমাজ, যা সকলকেই ভাবতে শেখায় সমকামিতা অসুখ। কারণ, সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর, এই তিন স এর সাথে আমাদের সমাজে সমকামিতা যায় না। কারণ, এই সমাজে সমকামিতার গ্রহণযোগ্যতা নেই, স্বীকার করলে পদে পদে হাস্যাস্পদ হতে হয়, লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। একজন সমকামী তাঁর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগবেন, এই সমাজে সম্মানের সাথে বাঁচার জন্য পরিবর্তন চাইবেন, মনে করবেন এটা একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার, অর্থাৎ তিনি মনে করবেন, তিনি অসুস্থ, এবং নিজের ‘অসুখ’ নিয়ে তিনি অসুখী থাকবেন, তাতে আর আশ্চর্যের কী ! তাই এই ইগো ডিস্টনিক সমকামিতা মানেই অসুখ, তা আদৌ না। চিকিৎসকের নাকি সবার আগে এটি জানিয়ে, বুঝিয়ে কনভিন্স করিয়ে দেওয়া দরকার,সমকামিতার মধ্যে ভুল কিছু নেই। এবং সেই সাথে সবার।যারা অসুখ মনে করছেন, উলটে নাকি তাঁদেরই কাউন্সেলিং দরকার !
মহাভারত - একাদশ পর্ব : শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৬ জুন ২০১২ | ২২৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
দুর্যোধনকেও এই খেলা দেখাতে বসেন ধৃতরাষ্ট্র। তাঁর বক্তব্য এটা ক্ষত্রিয়দের দেখাই দরকার। যুদ্ধ, মৃত্যু, রক্তপাত এসব তার জীবনের অঙ্গ। কাজেই এ তার শিক্ষার অংশ। ধৃতরাষ্ট্র শোনেন আর্তচিৎকার আর দুর্যোধন দেখে। গান্ধারী বলতে পারেন না কথাটা ভুল। তাঁরা ক্ষত্রিয় বলেই তো শাসন করছেন! কিন্তু শাসন যখন অসহায়কে হত্যা করে, তা সে বিচার বা যুদ্ধ যে নামেই হোক, তা তিনি সহ্য করতে পারেন না। সারাজীবন এত অধর্মাচরণ দেখে এসেছেন যে আর ভাল লাগেনা তাঁর। এ খেলা কোথায় নিয়ে যেতে পারে মানুষকে তা তিনি হাড়ে-মজ্জায় বুঝেছেন। নিজের দেশের কথা মনে পরে তাঁর। এই উপমহাদেশের প্রত্যন্ত অংশে থাকা অঞ্চল।কিছুকাল অন্তরই বাইরে থেকে যাযাবর, দস্যু বা অন্য গোষ্ঠী আক্রমণ করে এসেছে। বারেবারে রাজ্য শাসন পাল্টে গেছে। কত যে মিশ্রণ হয়েছে তার শেষ নেই। আর সেই রাজ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রতিদিনই শাসনতন্ত্র বহু বহু অধর্ম আচরণ করে চলেছে। এই দোয়াব এবং উত্তরাপথের অন্যত্র প্রচলিত ধর্মের-আচরণের সঙ্গে কোনো মিল নেই তার। এ নিয়ে কম কথাও শোনেননি তিনি, এই হস্তিনাপুরে বধূ হিসেবে আসার পর থেকে। মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তাঁকে করুণা করে আনা হয়েছে এখানে, একথাটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে অহরহ। ধৃতরাষ্ট্রই বেশী করেছেন। সত্যবতী তুলনায় এত নির্মম না। তাঁর ভয় নেই যে গান্ধারী হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্রের আছে বিলক্ষণ।
রাজনীতির ছবি, ছবির রাজনীতি (শেষ পর্ব) : যোশী যোশেফ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ আগস্ট ২০১২ | ৪৮০ বার পঠিত
এই যে মণিপুরের কথা বলছি এখানে রাতদিন লোকগুলোর ঘাড়ের ওপর শুধু বন্দুকের নিঃশ্বাস, যেকোনো লোক যেকোনো সময় গুলির সামনে পড়ে যেতে পারে। ওরা ভোট দিতে যায়, কিন্তু তার পেছনে কোনো রাজনৈতিক ভাবনা নেই। ওরা ভোট দেয় আঙুলে ঐ বেগুনী কালির দাগটুকু পাওয়ার জন্য। ঐ দাগ দেখলে সেনাচৌকি ওদের ছেড়ে দেবে, বিপ্লবী বলে সন্দেহ করবেনা। ঐ বেগুনী কালির দাগটুকু ওদের গুলি থেকে বাঁচাবে। এই লোকগুলোর গল্প সারা দেশের অন্য সবার গল্পের থেকে আলাদা। এবার সিনেমা বানানোর সময়ে এই গল্পটা,এর ভেতরের যত দ্বিধা, যত টানাপোড়েন তা আমরা তুলে ধরবো কেমন করে? একেক সময়ে মনে হয় যেভাবেই দেখাতে যাই না কেন, আসল ছবিটা কিছুতেই ফুটে ওঠেনা। মনে হয় আমাদের চেনা যত রকম পদ্ধতি আছে কোনটা দিয়েই ঐ ব্যথা-ভয়-কষ্ট গুলো তুলে ধরা যাচ্ছেনা। তখন নিজের ভেতরকার শিল্পী সত্বাটার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আমি একটাই উত্তর পাই -- এই আসল ছবি তুলে ধরতে গেলে অচিরাচরিতের রাস্তাতেই হাঁটতে হবে। সেটা যদি সাধারণের চোখে 'পলিটিকালি ইনকারেক্ট' হয় তো তাই সই। হলিউড বা বলিউডের আর পাঁচটা ছবির মতো করে এগোলে এ গল্পের সাথে অবিচার করা হবে। এই যে আমি এখানে রয়েছি, এত কাছ থেকে লোকগুলোকে দেখতে পাচ্ছি, এদের সুখ-দুঃখ-ভয়- ব্যথা চোখের সামনে রয়েছে, এই অঞ্চলের এই সত্যিগল্পকে সবার কাছে তুলে ধরতে গেলে আমাকে অন্যরকম ভাবেই ভাবতে হবে। আবার সাধারণ সিনেমা দর্শকরাও যাতে এ ছবি দেখতে উৎসাহ পান সেটাও মাথায় রাখা দরকার, সেইভাবে বানাবো কি করে তা বুঝতে পারছি না। সেটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। মেনস্ট্রীম ছবি হলে আমি জানি লোকে দেখবে, অর্থাৎ ছবি বিক্রী হবে ভালো, বাজারে কাটবে। এখন আমাকে এই পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সত্যিগল্পকে এমন একটা রূপ দিতে হবে যাতে লোকে দেখে। আমি বাজার নিয়ে চিন্তা করিনা, কিন্তু মানুষের এই ঘটনাগুলো দেখা দরকার।
ধানাই পানাই ১১ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২১ আগস্ট ২০১২ | ১০৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
কাউকে কুত্তা বললে, সে রেগে যাবে, মারতে পারে, গালাগাল তো দেবেই। অথচ কাউকে বেড়াল বললে আহ্লাদি আহ্লাদি মুখ করবে। এদিকে বেড়ালের মত হাড় হারামজাদা দুনিয়ায় নেই। ব্যাটাচ্ছেলে আদর খাবে, বিছানায় ঘুমোবে, শ্রেষ্ঠ খাবারটি খাবে, সামান্য বাসি হলে নাক সিঁটকে মুখ ঘোরাবে, কিন্তু কোনও উপকারে আসবেনা, কিচ্ছুটিনা। ওদিকে আন্দামানে সুনামিতে ভেসে যাওয়া সাত বছরের ছেলেকে কুকুর জলে ধাওয়া করে সারা দিন টেনে ভাসিয়ে রেখে পরের দিন স্রোত কমলে পাড়ে নিয়ে এল জ্যান্ত। তাও আবার নেড়ি কুকুর। তবু, তবু কত বদনাম।
শুধু ভিলেন বা খারাপ লোকের নাম নয়, কুকুরের নাম প্রচন্ড কম্যুনালও বটে। যারা ওপার বাংলা থেকে ডিস্পপ্লেসড বা দাঙ্গায় অ্যাফেকটেড তাদের অনেকেরই ক্ষোভ ছিল। সঙ্গত কারণেই ছিল। ইন্দ্রজিতদের বাড়ির সাদা ভুটিয়াটার নাম ছিল ভুট্টো। প্রথমে ভাবতাম ভুটিয়া বলে মিলিয়ে নাম, পরে শুনলাম তা নয়। তখন অবশ্য আমরা কেন, আমাদের বাবারাও ভুট্টোর নাম শোনেনি। তিনি তো প্রথমে প্রেসিডেন্ট, পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন সত্তরের দশকের গোড়ায়। আমাদের ছেলেবেলায় ভুট্টো কোথায়? ইন্দ্রজিতের দাদু অবশ্য বলতেন পাকিস্তানে ও-ই সব। লাইন অফ কন্ট্রোলের ওপারেও হয়তো কোনও জহরলাল চেনে বাঁধা থাকত, তবে আমার তা জানা নেই। সুনির্মল সাহার নেড়ি কুকুরটার নাম ছিল কাশেম। যেখান থেকে তাড়া খেয়ে ওরা পালিয়ে এসেছিল, সেই গ্রামে কোনও এক কাশেমের বাড়িতে সুনির্মল নামে পোষা কুকুর থাকলেও থাকতে পারে। সেটাও আমার জানা নেই।
মহাভারত -- সপ্তদশ পর্ব : শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২১ আগস্ট ২০১২ | ১২৯৮ বার পঠিত
কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন তাঁর সন্তান। কিন্তু সেও বোধহয় মনে করে তিনি বহুকাল ধরেই এই বংশের বিষয়ে অযথা ব্যস্ত। কুরুকূলের সমস্যার সমাধান তাদের বা বিশেষ করে পুরুষদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই উচিত ছিল। কখনো মুখে না বললেও তিনি বুঝেছেন। কোথাও তাঁর পুত্রও মনে করে যে নারীরা যেহেতু তিনিও জানেন যে মহারাজ শান্তনুকে ধরেও এই বংশ গাঙ্গেয়র মতন শাসক কখনো পায়নি। মহারাজ কুরু যেমন ধার্মিক, নিষ্ঠ শাসক, তেমনই একজন হতেন গাঙ্গেয়। কিন্তু তাঁর পিতা হতে দেননি, শান্তনু হতে দেননি, তিনিও হতে দেননি। বাকী দুজনেই এখন জাগতিক উত্তরের সীমার বাইরে। তিনি যে আছেন! তাই না এতকাল...। হায় রে, হায় রে! সুখের ছদ্মবেশে কখন যে দুঃখ এসে দাঁড়ায় মানুষ তা টেরও পায় না। সুখের মালা গলায় দুলিয়ে চলতে গিয়ে অকস্মাৎ অনুভব করে, এ মালা সুখের না, এ মালার বড় ভার। তিনিও ব্রাহ্মণ ঋষি পরাশরের সঙ্গিনী হতে না পারার দুঃখকে রাজরাণী হবার সুখ দিয়ে একদিন ঢাকতে গিয়েছিলেন। শান্তনুকে প্রত্যাখ্যান করতে গিয়েও মনে হয়েছিল সঙ্গোপনে, এও একরকম প্রতিশোধ হবে। পরাশর, দূরগামী পরাশরের বংশ যে বংশের কূলগুরু তাদেরই প্রাসাদে তিনি দাঁড়াবেন। রাজেন্দ্রাণী হয়ে পরাশরকেও বুঝিয়ে দেবেন তিনি এতটাও ফেলনা ছিলেন না।
কুড়ি কুড়ি বছরের পর : তাপস দাশ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ আগস্ট ২০১২ | ২৯৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫০
২০ বছরে কিছু পাল্টালো কি? সেদিন একটা বড় কাগজ জনমত নির্ধারণের চেষ্টা করত, আজ করে অনেকগুলো গণমাধ্যম। জনতা কি পুরোটাই এর পিছনে দৌড়ে বেড়ায়? না। একটুও কি প্রভাবিত হয় না? হয় নিশ্চয়। তবু, বয়স আমার, তোমার এবং সবার মুখের রেখায় ত্রিকোণমিতি শেখায়, এস, আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ত্রিকোণগুলোর কৌণিক পরিমাপগুলো করার চেষ্টা করি, পুরোটা সম্ভব হবে না জেনেও।
চিনি আর বোঝার চেষ্টা করি মম চিত্তে শিলাদিত্যের স্রষ্টাকে.. হ্যাঁ, ওটাই আমার এখনকার রিং টোন। আজ বিশে আগস্ট, দুহাজার বারো। আঠারো বছর আগে, সুমনের জন্যে কোমরে রিভলভার তুলেছিলাম, ব্যস্ত মফস্বলের দিন দুপুরে, ওরা সুমনকে মারবে বলেছিলো, আমাদের অর্গানাইজ করা সুমনের প্রোগ্রামে। ছ ঘরা। দেশি। খুব রিস্কি। সুমন জানতেন না। আজও জানেন না।
তখনো আমাদের স্বপ্ন দেখার কাল শেষ হয়নি, যদিও জেনে যাচ্ছি যে এ রাজনীতির গোলকধাঁধা থেকে বিপ্লব বেরবে না। কিন্তু তবু স্বপ্ন দেখছি, কেন না জেনে গেছি, ‘অন্ধকারের তবু আছে সীমানা’।
চিরিরবন্দর ও অন্যান্য ঘটনা: কারও আর দায় নেই : জলধি রায়
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ৩০ আগস্ট ২০১২ | ১৩১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয় । ক্রমশ বাড়ছে ধর্মান্ধ আর সাম্প্রদায়িক শক্তি । প্রশাসনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মবুদ্ধিতে আক্রান্ত । এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বুদ্ধিজীবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের শুভবোধের তাড়নার ক্রমবর্ধমান অভাব, তাঁদের বড় একটা অংশই এখন ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের কুবুদ্ধিচর্চায় নিয়োজিত । মোটা দাগে উপরের তিনটি ঘটনাতেই বুদ্ধিজীবি, শিল্পী, সাহিত্যিকরা ছিলেন নিস্পৃহ । যাঁরা পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন তাঁদের কেউ এক লাইন খরচ করেন নি । প্রতিবাদে এগিয়ে আসে নি কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন ।
লোকে বলছে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, কিন্তু এই সম্প্রীতি কাজে আসছে না সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার সময় কিংবা হামলার পরে ।
হায় সাতক্ষীরা, ধায় সাতক্ষীরা : কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ৩০ আগস্ট ২০১২ | ১২০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সাতক্ষীরায় সব কিছু শান্ত হয়ে আসবে। এই ঘটনা সবাই ভুলে যাবে। ভুলিয়ে দেওয়ার সকল আয়োজন চলছে। এরপরে আবারও সাতক্ষীরার বদলে হয়তো ঝিনাইদাহে ঘটবে। কুড়িগ্রামে ঘটবে। অথবা নরসিংদীতে, ভোলায়, হবিগঞ্জে বা যে কোনো স্থানেই ঘটতে পারে। তারও ক্ষেত্র প্রস্তুত আছে। পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। এই দাঙ্গার প্রধান টার্গেটই ছিল সংখ্যালঘুরা। একাত্তরে পাকিবাহিনীর প্রধান লক্ষ্যই ছিল এই সংখ্যালঘুদের নির্মুল করা। স্বাধীন বাংলাদেশেও বিরানব্বইতে, ছিয়ানব্বইতে, দুই হাজার এক সালে নির্বাচনোত্তর সহিংসার শিকার হয় এই সংখ্যালঘুরা। এগুলো করেছে এরশাদের জাতীয় পার্টি, খালেদার বিএনপি, গোলাম আযমের জামাতে ইসলামী এবং হাসিনার আওয়ামী লীগ তেমন সোচ্চার হয় নি-- চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পছন্দ করেছে। প্রকারন্তরে তাদের এই চুপ করে থাকাটাই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শক্তিশালী করে। চিনাপন্থী রাজনীতিকদের সমর্থন সবসময়ই বিএনপি-জামাতের দিকে। আর প্রগতিশীল বামদের শক্তি ক্রমশ কমছে। তাদের কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসছে। ভরসা কমছে।
ধানাই পানাই ১২ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ৩০ আগস্ট ২০১২ | ১০৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সে গাছগুলো কিন্তু ভগবান যে কদিন জল দিলেন, সে কদিন বাঁচল। মানে, বড়জোর মাস দুই। আবার পরের বছর সিক্সথ জুন। ইতোমধ্যে দুজন ফোটোগ্রাফার টস্কে গেছেন। নতুন যাঁরা এলেন, তাঁদের একজন একটু ছটফটে। খুব মৃদুস্বরে তাঁর কানের গোড়ায় কেউ বলল, ভাই, কনুই মারবেন না, বুঝতে পারছি সার্কিটে নতুন। আমি অল্পেশ গোস্বামী, নামটা বোধহয় জানা আছে। সারা জীবনের মত পুটকি জ্যাম করে দেব। ফ্ল্যাশ, ক্লিক্, ঝাঁঝরি কাড়া, পাঞ্জাবী ভেজা, সাপলুডো, ইত্যাদি। রিওয়াইন্ড অ্যান্ড রিপ্লে।মায়া কেটে গেল এক নিমেষে। মায়া নাকি কাটে না? অরুণবাবু সামান্য মাইনের চাকরি করেন ইস্কুলে। একটা খুব দামি কলম নিয়ে এসেছেন। বকলাম, এটা কী করলেন, এত দামি – উনি বললেন, চুপ স্যার, একদম চুপ। এক ভদ্রলোক একটা বিশাল বড় বাতাবি লেবু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে কোনও দিন দেখেছি বলেই মনে পড়ছে না, কোনও উপকার করা তো দূরে থাক। বললেন, আমার বাগানের স্যার। আরও অনেকে ঘুরছেন খবরের কাগজে কিছু জড়িয়ে। আমার ব্যাগে একটা বিশাল সন্দেশের বাক্স কে যে ঢুকিয়ে দিল পেছন থেকে, বুঝতেই পারলামনা। বিমলি কাছে আসছেনা, দূরে গাছের আড়াল থেকে দেখছে। সুকুমার চোখ মুছল কবার। এ মায়া প্রপঞ্চময়। চলো মন নিজ নিকেতনে।
‘আম্গো ভাহা অহইম্মা’ বনাম ‘আম্গো বাসা কইলকাত্তা’? : সপ্তর্ষি বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ৩০ আগস্ট ২০১২ | ১০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
না, আমার, আমাদের, মানে অফিসিয়ালি 'আসাম'এর বাঙালিদের, ব্যাঙ্গালোরে আপাতত বিপদ নেই। আমরা 'মিড্ল্ ক্লাস', আমরা টিঁকে যাবো। আমরা নিরাপদে বসে বড় বড় জাতীয় সংহতির বুলিও দেবো। ফ্ল্যাট্ করবো বেঙ্গালোর নইলে কলকাতায়। ...কিন্তু যারা তা নয়, যারা এই দেশের ৯৯ ভাগ, যারা অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত তারা বাঁচবে কীভাবে? আজ না হোক কাল টিঁকে থাকার জন্য হয় তাদের বলতে হবে 'আম্গো বাসা কইলকাত্তা' ... আর নাহলে আসামে থাকলে, মুখে কিংবা কায়দায় 'আম্গো ভাহা অহইম্মা' বলে, ভূপেন হাজারিকাকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে সালাম ঠুকে 'অহইম্মা' হয়ে।
সংখ্যালঘুরা কোথায় দাঁড়িয়েঃ দুই পড়শির গপ্পো : রাম পুনিয়ানি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ আগস্ট ২০১২ | ৬৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
স্বাধীনতার ছয় দশক বাদে, গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজা ওড়াতে ওড়াতে, আজ আমরা ঠিক কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি? ভারত জন্ম থেকেই ছিল ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, আর পাকিস্তান, যার সৃষ্টি হয়েছিল ইসলামের নামে, ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানপ্রধান অংশগুলোকে কেটে নিয়ে, ১১ই আগস্ট ১৯৪৭-এ কায়েদ-এ আজম জিন্নার ভাষণ অনুযায়ী তারও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে চলার কথা হয়েছিল। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের কোনও বিরোধ নেই, মানুষ তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং পছন্দমত মন্দিরে, মসজিদে বা গির্জায় যাবে। তিনি আরও বলেছিলেন যে পাকিস্তানের পতাকায় সাদা রঙ সংখ্যালঘুদের জন্য উৎসর্গীকৃত। তবুও, ধর্মীয় ভেদাভেদের বীজ আগে থেকেই বোনা ছিল সে-দেশের সিস্টেমে। যতই সেকুলার ভাষণ দেওয়া হোক না কেন সমাজের অচলায়তন তাতে একচুলও নড়ে না। সাম্প্রদায়িকতা ধীরে ধীরে তাই ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এবং সত্তরের দশকের শেষ দিকে, জিয়া-উল হক এবং মৌলানা মাউদুদির নেতৃত্বে ধর্মান্ধ মোল্লারা ক্ষমতার অলিন্দে আসতে শুরু করল। এই মোল্লা আর মিলিটারির আঁতাত, সঙ্গে আমেরিকার ইন্ধন, সমস্ত একসাথে লঙ্ঘন করতে লাগল জিন্নার সেই ধর্মীয় স্বাধীনতার বাণী, এতটাই লঙ্ঘন করল যে আজ মুসলিম ধর্মের মধ্যেই শিয়া বা আহমদীয়া গোষ্ঠীর মত সংখ্যালঘুরাও সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হতে লাগল পাকিস্তানে, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে থাকল পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে।
তোমার পিঠের কুঁজে বাংলা অক্ষরের সামান্য আহার্য জল : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ মার্চ ২০১২ | ১৪৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমরা জলে পা ডুবিয়ে বসি। আমরা আলকুশি গাছের তীব্র বেগুনী ফুল হাতে রগড়ে হাত মেহেন্দি করি, নোয়া লতার ডাল ভেঙ্গে বালিতে লিখি নাম, আর লজ্জাবতির ঝোপ সরিয়ে খোলা ভেঙে বার করে আনি কাঁচফল, ঠিক তিনটি করে সাদা মুক্তদানা আর কালো ফোঁটা আঁকা চোখের মত, একেকটি খোলায় ঠিক তিনটি, যেন ব্যাটারা জানত ঠিক আমরা তিনজনেই পা দেব সেখানে আজ। নৌকার মাঝি আমাদের পাগলামি দেখে তাড়া দেয়, যেতে হবে দূর বহুদূর। তাকে ভুলনো হয় নানা প্রশ্ন করে, মিলিয়ে দেখতে হবে না আমাদের কাঁটাঝোপে মোড়া আর ধুলোমাখা আগাছা ভরা ছেলেবেলাটাকে। আলকুশিকে তারা বলে নেউস। বেশ শক্ত, ঝোপে রাজার মত সবাইকে কাটিয়ে এগিয়ে সে চড়ে বসে ঝোপের মাথায়, শিরোমণি। সে গাছ হিসাবে লতা কিন্তু কোন আকর্ষ বা স্প্রিং নেই তার। অপরাজিতার মত অভিজাত ফুল ও ফল। ফলগুলি রোমে ঢাকা, যেন এক একটি শুয়োপোঁকা। হাতে লাগলে চুলকায় শোনার পর থেকে আমাদেরও হাত চুলকাতে থাকে। চুলকানোর কারনেই গ্রামের মানুষ পছন্দ করে না, তাই অভিমান করে সে আজ এই নির্বাসনে। সে এমন ভাবেই প্রকৃতির পাঠশালায় নুরুল মিয়া হয়ে ওঠে আমাদের শিক্ষক, বলে যেতে থাকে নেউস থেকে কী কী ওষুধ-বিষুধ হয়। আমরা নেহাতই আমনযোগী, তাই অনেক অনেক রাতে যখন চিলমারি বন্দরে আমাদের সোনার তরীটি ভেড়ে কোন লন্ঠনই আর জেগে নেই।
শিখার কথকতা : তরুণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ মার্চ ২০১২ | ৭৫৩ বার পঠিত
পূর্ণিমা বা শিখা যে নামেই ডাকা হোক, ওদের জীবন এরকমই। নীলকন্ঠের মত সমাজের অনেক ক্লেদ ধারণ করে ওরা সমাজের অবহেলা, অত্যাচার এত দিন মেনে নিয়েছে। ওরা বুঝেছে, সমাজ যাকে আবিলতা বলতে শিখিয়েছে, তা আসলে নিরস্ত্র জীবনের 'পরে ক্ষমতাবানের দম্ভ। তাই, ওদের সামাজিক মানসিক অর্থনৈতিক সব অত্যাচার মেনে নেয়ার দিন শেষ হোক, সেটাও ওরা সর্বান্তকরণেই চায়। তবে তার বিনিময়ে, যে পেশা ওদের পায়ের তলার মাটিটুকু ফিরিয়ে দিয়েছে তাকে ওরা আর খারাপ বলতে রাজি নয় কোনো ভাবেই। আসলে পূর্ণিমা শিখারা বাঁচতে চায়, বাঁচাতে চায়।
দেশভ্রমণ : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১১ মার্চ ২০১২ | ১৪০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
শুভ যোগ বলুন আর ত্রহ্যস্পর্শ মাইনাস ওয়ান, এমন কেলোর কীর্তি এর আগে হয়েছে কি? নারীদিবস আর দোল এবার পিঠোপিঠি। ওদিকে গালে রঙ কত জমেছে কে জানে, আমাদের লেখা জমে গেছে বিস্তর। টেকনিকাল টিমের হুড়কোয় এতদিন চুপচাপ থাকলেও এই মওকা আর ছাড়া গেলনা। জমে যাওয়া জিনিসপত্তর থেকে তুলে নিয়ে কিছু ছড়ানো-ছেটানো লেখা তোড়ায় বেঁধে হাজির করা হল এবারের স্পেশাল বুলবুলভাজায়। নতুন ভার্সানে নতুন গুরু এলে নতুন বুলবুলভাজা আবার বেরোবে। কিন্তু তার আগেই, এই সুযোগ, আর ছাড়াছাড়ি নেই।
কত বাড়ি দেখা হল। এখনও তো বেশি বড় হইনি। যখন মায়ের মতন হব তখন আরো কত বাড়ি দেখব। কত ভাল কত খারাপ। মায়ের মতন বড় হওয় অব্দি কি বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতেই থাকব? না আমি ভাবি যে বাবাকে বলব আমকে বিয়ে দিও না, আমাকে তোমার পার্টিতে নিয়ে নাও। দাদা আছে, আমিও থাকব। আমাকে ঐ চক্চকে সানাইএর মত বাঁশিগুলো বাজাতে দেবে। আমি তো বাজাতে পারি। যখন বাবা থাকে না, আমি একএকদিন বাজাই। জামাইদাদাও এগুলোই বাজায়। ওরা যা বাজাতে বলে সব বাজাতে পারি। আমি তো আর দাদার মতন নেশা খাব না, দুটো পয়সা পেলে ঘরেই আনব। বলব বাবাকে।
রাষ্ট্রই যখন নাগরিকদের বিরোধী : ওয়াক্কাস মীর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ জুলাই ২০১২ | ৭৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
কিন্তু ভেবে দেখুন আমাদের যে কারুর সাথেই তো এমন হতে পারতো। ঘটনাক্রমে যদি আমি বা আপনি আহমদী বা অন্য কোনো ধর্মের পরিবারে জন্মাতাম তাহলে এই আমাদেরই অত্যাচার, অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তায়াহীনতায় দিন কাটতো। একজন মুসলমান নিজের ধর্মে ঠিক যতখানি বিশ্বাস, যতখানি আস্থা রেখে চলেন একজন অমুসলমানের কাছেও তাঁর ধর্ম তো ঠিক ততখানিই। তাহলে সেই বিশ্বাস, সেই আস্থার জন্য তাঁকে বারবার এমন হেনস্থা হতে হবে কেন? আমি জানি রাতারাতি সমস্ত আহমদী বিরোধী নিয়ম কানুন দেশ থেকে উবে যেতে পারেনা। আর নিয়ম কানুন গেলেও মানুষের মন থেকে খুব সহজে এই বৈষম্য মুছে যাবে সে আশাও আমার নেই। কিন্তু অন্তত একটা কাজ আমাদের করতেই হবে।যাঁদের মধ্যে সামান্যতম নৈতিকতা, মানবিকতা আছে তাঁদের আজ এগিয়ে এসে এই ধর্মীয় বৈষম্যের প্রতিবাদ করতে হবে।লাহোরে যা ঘটেছে, সারাদেশেই যা ঘটছে তার প্রতিবাদ করতে হবে। নেই।আজ এই যে আহমদীদের পক্ষ নিয়ে এতগুলো কথা বললাম এর জন্য পাকিস্তানে আমায় কত সমালোচিত হতে হবে তা আমার অজানা নেই।তবু এই কথা আমি বারবার বলে যাবো। কারণ ,এর মত সত্যি কথা আর কিছু নেই।
ধানাই পানাই ৭ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৯ জুলাই ২০১২ | ৯২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
বেশ ক’বছর আগের কথা। তা বছর পনের তো হবেই। পুরী বেড়াতে গেছি। সঙ্গে স্ত্রী আর ছেলে। মেয়ে পরীক্ষা ছিল বলে যায়নি। ওখানে গিয়েই মনে হল, ওড়িষার যে সব ভাল ভাল জায়গাগুলো আমি আগে দেখেছি, সেগুলো এদের ঘুরিয়ে দেখাই। ছেলের মা অবশ্য আগেও অনেকবার পুরীতে এসেছে, তবে পুরীর বাইরে খুবজোর কনারক অবধি গেছে। ছেলেতো এই প্রথম এল। নাকের বদলে নরুণের মত মেয়ের বদলে আর একটা মেয়ে পেয়ে গেলাম। আমাদের পাশের ঘরে তাদের পরিবার উঠেছে, আলাপও হল। বললাম, আমি তো একটা গাড়ি নেবই, তুই যাবি আমাদের সঙ্গে? সেও রাজি। চারজনে বেরিয়ে পড়লাম।
তিনটি কবিতা : মজনু শাহ
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০৯ জুলাই ২০১২ | ১০১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
যখন তুমি পুরুষমানুষ থেকে দূরে আছ, খাও যত ইচ্ছে পপকর্ণ, নিজের ভয়ংকর গোপন কথাগুলো নিজেকেই আরেকবার শোনাও ফিসফিস করে। একখানা জ্যান্ত কবিতার বই সঙ্গে রেখ, তোমার দিকে এগিয়ে আসা বিচ্ছুগুলো পিটিয়ে মারার জন্য ওটা লাগবে। খবরদার, ভুলেও বেড়াল কোলে নিও না, যা দিনকাল পড়েছে, স্তনে আঁচড় দেবার ঘটনা গত পরশুও ঘটেছে ভূতের গলিতে। এ সময় ইউক্লিডের উপপাদ্যগুলো মনে আছে কিনা, সেটা আঙুল দিয়ে লিখে দেখতে পার বালিতে।
তিরিশ বছর পর নেলী : দেবর্ষি দাস
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ৩১ জুলাই ২০১২ | ২৬৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
তো, নেলী আমাদের সাথেই আছে, অনেক দিন ধরে আছে। নেলী, মানে নেলী নামের অঞ্চলটি, আসামের আর পাঁচটা ছোট মফস্বলের মতই। ঘন সবুজ ধানখেত, দিগন্তে মেঘালয়ের কালো পাহাড় দেখা যাচ্ছে, দুএকটা জায়গায় সেগুনগাছ-ঝোপঝাড়, ব্যস্ত বাজার, দূর্গাপূজার মন্ডপ, আর জামাকাপড় থেকে বড়সড় মুসলমানদের জনসংখ্যা অনুমান করা গেল। ১৯৮৩-র দিনটিতে কী হয়েছিল তার কোনো স্মারকচিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে এরকমই তো হওয়ার কথা ছিল। দিল্লী ১৯৮৪ বা গুজরাট ২০০২-হত্যাকান্ডকে রাষ্ট্র ন্যূনতম বিচারের মাধ্যমে জবাব দিয়েছে, তার কারণ তাদের প্রেতাত্মারা ফিরে ফিরে আসে। আর নেলী দেশের দূরের কথা, রাজ্যের রাজনীতিতেও এক বিস্মৃত অধ্যায়। গরিব, পাড়াগেঁয়ে মুসলমানরা মরেছে এরকম এক গণহত্যা কে মনে রাখে। দ্বিতীয়ত, যারা মরেছে মরেছিল অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়। ফলে তাদের সুবিচারের দাবি আরেকটু নড়বড়ে হয়ে যায় বইকি। দিল্লী বা গুজরাটের মৃতদের ঠিকঠাক ধর্ম ছিল না, কিন্তু তারা যে ভারতীয় নাগরিক, অনুপ্রবেশকারী নয় এই নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। তৃতীয়ত, হত্যাকান্ড ঘটেছে এক প্রান্তিক প্রদেশে, ভারতীয় মূলভূমি থেকে অনেক দূরে। তাই আমাদের জাতীয় যৌথ বিস্মৃতি ঘণ হয়ে ওঠে। সংক্ষেপে, নেলীর কথা কেউ শোনে না। একটি হত্যাকান্ডের পরোক্ষ বৈধতার জন্য যখন আগের একটিকে খাড়া করা হয়, নেলীর নাম তখনো আসে না। কেননা নেলীর মধ্যে পরবর্তী কোনো হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেওয়ার মূল্যটুকু নেই। দেশের যৌথ স্মৃতির কাছে নেলী ঘটেইনি।
মা, মাটি ও মানুষ : হিন্দোল ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুলাই ২০১২ | ১১৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
ঐ মহামিছিলকে চিরস্মরণীয় রাখা বাংলার দায়। কেননা, ঐ মিছিলই প্রমাণ করেছিল বাংলার মানুষ একই মানবিকতার সূত্রে গাঁথা। আজও অন্যান্য রাজ্যে- মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, হরিয়ানায় বলপূর্বক জমিদখল চলছে, হত্যা-গুলি-ধর্ষণ–কিছুই বাদ যাচ্ছে না, কিন্তু কোনও রাজ্যের রাজধানীতেই তথাকথিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদেরকে ধরে নেওয়া হয় উদারবাদী বাজার-অর্থব্যবস্থা, শিল্পায়ন-উন্নয়নের সমর্থক, কেননা উন্নয়নের ক্ষীর-ননী তো এই শ্রেণিই পায়, রাস্তায় নামছে না। কলিঙ্গনগর বা পস্কো নিয়ে কটক-ভুবনেশ্বরে দলহীন মিছিল, ভাট্টা-পারসোল নিয়ে লক্ষ্ণৌ বা দিল্লিতে ঝাণ্ডাহীন মিছিল, জইতাপুর নিয়ে মুম্বাইতে স্লোগানহীন বিশাল জনসমুদ্র – দেখা তো যাচ্ছেই না, এমনকি স্বপ্নও দেখছেনা কেউ।
নোনাডাঙাটা কোথায়? : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুলাই ২০১২ | ৮৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
কারা থাকেন এখানে?
প্রশ্নটা হল, কারা থাকেন, বা থাকতেন, এই জনামানবশূন্য পোড়ো এলাকায়, যেখানে, নেহাৎই ঘটনাচক্র ছাড়া "সভ্য" মানুষের পা পড়েনা? প্রত্যক্ষজ্ঞানে আমার জানা নেই। তবে জাহাজের ভুলে যাওয়া খোলে যে বাসা বেঁধে থাকে তাড়া খাওয়া ইঁদুরেরা, সিঁড়ির নিচের ভুলে যাওয়া কোন যে ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া পতঙ্গদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে সে আর অজানা কথা কি। এদিক-সেদিক থেকে যা জানা যায়, নোনাডাঙাও কিছু ব্যতিক্রম নয়। কলকাতার এই তলানিতে মোটামুটি তলিয়ে যাওয়া লোকজনেরই বাস। এখানে যারা আছেন, তারা কেউ এসেছেন, শহরের অন্যান্য বস্তি থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে। কালিকাপুর, খালপাড় থেকে। কেউ এসেছেন সুন্দরবন থেকে, আয়লার পরে। এমনকি সিঙ্গুরের উচ্ছিন্ন কয়েকজন মানুষও নাকি আছেন। এখানকার মানুষদের ইতিহাস মূলত ক্রমাগত উচ্ছেদের ইতিহাস।
ধানাই পানাই ৬ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০২ জুলাই ২০১২ | ৮৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
থানার বাইরে এসে সবে দু’পা ফেলেছি। এক ভদ্রলোক বললেন, আচ্ছা, একটা কথা বলব? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি এ অঞ্চলে ঘোরাফেরা করছেন। কিছুক্ষণ আগে দেখলাম থানাতেও ঢুকলেন। কী ব্যাপার বলুন তো? বললাম, সাধে কি আর ঘুরছি মশাই, এই দেখুন, অমুক ভবনটা খুঁজতে খুঁজতে হন্যে হয়ে গেলাম, এদিকে সাড়ে এগারটায় অ্যাপিয়ারেন্স – ভদ্রলোক বললেন, অমুক ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাশে? আসুন আমার সঙ্গে। আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম, আপনি – উনি বললেন, আমি ওই অফিসেই কাজ করি। যে বাড়িটায় উনি আমাকে নিয়ে গেলেন, সেটা থানার ঠিক পেছনে। যাকে বলে পিঠোপিঠি।
রাজনীতির ছবি, ছবির রাজনীতি (দ্বিতীয় পর্ব) : যোশী যোশেফ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জুলাই ২০১২ | ৫৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আফস্পা ১৯৫৮ বা সোলজার্স ইনসাইড এর মত ছবি ফেস্টিভ্যাল চত্বরের বাইরে বেরোতে পারে না। দেশে বা দেশের বাইরে হাতে গোনা কয়েকটা ফেস্টিভ্যাল ঘুরেই এগুলোর দৌড় শেষ। বলতে গেলে এও এক ধরনের টোকেনিজম। ফেস্টিভ্যাল আহ্বায়করা এগুলো ফেস্টিভ্যালে রাখেন যাতে করে একটা গণতন্ত্র গণতন্ত্র আবহ তৈরী করা যায়। যেন মনে হয়, গণতন্ত্রে ‘সঠিক পথে’ ওঠা আওয়াজ কেবল যে শোনা হয়, তাই নয়, তাকে তার উপযুক্ত মর্যাদাও দেওয়া হয়। তাই যে রাষ্ট্রপতি গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড দেন, তাঁকেই দেখা যায় উত্তর পূর্বে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা সেলুলয়েডে তুলে ধরা এক সংবেদনশীল পরিচালককে পুরস্কৃত করতে। আপাতভাবে গণতন্ত্রের উপস্থিতি প্রকাশ পায়। আফস্পা নামক একটা ড্রাকোনিয়ন আইন চাপিয়ে দিয়ে তারপর নাগরিকদের যন্ত্রনার কথা সহানুভূতির সাথে শোনার জন্য কিছু মঞ্চ তৈরি করে দেওয়া হয়, স্বীকৃতি দেওয়া হয়, অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। যাতে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যন্ত্রনাকে আর ততটা যন্ত্রনা বলে মনে না হয়। ঠিক প্রেসার কুকারের মতো। ভিতরের প্রেসার খুব বেশি বেড়ে গেলে কুকার ফেটে যেতে পারে। তাই নজর রাখা হয় যেন কোন ভাবে ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি না হয়। এদিকে আফস্পা-র নাম করে গণহত্যা চলছে, ওদিকে বিশেষ মঞ্চে অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হচ্ছে। ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয় না কারণ, প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে দেওয়াই হয় না। পুরস্কার-স্বীকৃতি প্রদানের এই টোকেনিজম ব্যান করার থেকে বেশি কাজ করে। নাগরিক সমাজের পক্ষে এই দেখনদারি টোকেনিজম এর মোকাবিলা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
ধানাই পানাই ৮ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১৮ জুলাই ২০১২ | ১২১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ঘটনাটা ঘটেছিল দুহাজার ছয় সালের পয়লা ফেব্রুয়ারী। আমার সেই ভাঙাবাড়ি এখন প্রায় গোটা। সে বাড়িকে অনেক রকম নির্মান এবং স্থাপত্যকলার সাহায্যে বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে। মা আগেই এসেছিল, ক’দিন হ’ল বৌ ছেলেও চলে এসেছে। মেয়ে এখন বিলেতে, তবে ফিরলে এবাড়িতেই উঠবে।
টানা হ্যাঁচড়া ক’রে কিছু একতলার মাল ওপরে তোলা হ’ল, কিছু ওবাড়ি থেকেও এসেছে কিন্তু ওপরে এত জায়গা নেই যে সব ধরে যাবে তাতে। তাই একতলাতে কিছু জিনিষ থেকে গেল।
পয়লা ফেব্রুয়ারী একটু রাত করেই ছেলে ফিরল ক্যারম ট্যারম খেলে। আমি বললাম, যে শেষে ঢুকবে, তালা লাগানো তার কাজ। যা নীচে সবগুলো তালা লাগিয়ে আয়। মিনিট দশেক পর সে উঠে এসে বলল, বাবা, অনেক চেষ্টা করলাম, তালা কিছুতেই লাগছেনা। আমি বললাম,সেকী! ঠিকই তো ছিল, নেমে দেখলাম নাঃ ঠিকই তো আছে। তবে ও কেন লাগাতে পারলনা ? আসলে ওটা ইঙ্গিত ছিল, বুঝতে পারিনি।
আমি সেই ম্যারাকাস বাদক : অনির্বাণ মাইতি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ জুলাই ২০১২ | ১০১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
শুধুমাত্র পরিবারের কথা বলে যাচ্ছি কারণ এদেরকে কাছ থেকে দেখেছি। এরকম কত পরিবার আছে, কত মানুষ আছে যারা ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে আম আদমির কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এদেরকে আমরা বিদ্বজ্জন বলে মানি না, সম্মান করিনা। কারণ এরা প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের কাছে আসেন, আমাদের কথা বলেন, গানে, নাটকে, কবিতায়। নিজের চক্ষে সেদিনগুলো প্রত্যক্ষ করেছি, লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন মঙ্গলকাব্য, গম্ভীরা, মহাভারতের যুদ্ধ, সূর্যশিকার, ক্রীতদাস, গণনাট্যের এক একেকটা প্রযোজনা যখন আছড়ে পড়ছিল, শাসকের বুকে শেলএর মত বিঁধছিল, সেদিন আমি সাক্ষী ছিলাম। সাক্ষী ছিলাম ভোগবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঘাড় সোজা করে লড়ে যাওয়া মানুষগুলোর লড়াইয়ের। তাই আজও হুজুগে শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের থেকে ওদেরকেই বেশি আপন মনে হয়। আমার কমরেড।
ধানাই পানাই ৯ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৪ জুলাই ২০১২ | ৯৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
‘তানহান্না-নানা-নানা-নাআআআ –‘ কি খুড়ো, সুরটা চেনা চেনা লাগছে? অসাধারণ মিউজিক না? বলতো, সেই কতকাল আগে সাদাকালো টেলিভিশনে যখন ‘সোয়ামী’(স্বামী) বলে সিরিয়ালটা হত, একটা অসাধারণ ফীলিং হ’ত না? দারুণ ছিল গল্পগুলো। হবেনা? আর,কে,নারায়ণের লেখা, সঙ্গে তাঁর ভাই আর,কে,লক্সমণের কার্টুন। গল্পগুলো ‘মালগুডি ডে-স’ নাম দিয়েও চলত কিছুদিন। ওই মিউজিকটা কানে গেলেই কিরকম রোমাঞ্চ হত। তা আমরা নারায়ণ-লক্সমণের কথা তো ঘটা করে পড়তাম, যদিও পরে জেনেছিলাম, এর মধ্যে বেশ কয়েকটা, যেমন স্টীম রোলার লটারিতে পাওয়ার গল্পটা, বিদেশ থেকে টোকা, তাতে কি, টোকা মোকা যাই হোক কী অসাধারণ প্রেজেন্টেশন, বল খুড়ো – এর পরিচালকের নাম জানতে, তুমি?
অন্য দিল্লি : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ ডিসেম্বর ২০১২ | ১০৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সরকার কোনও চেষ্টা করে নি আমজনতার মধ্যে এই ক্ষোভ প্রশমিত করার। নিজের নিজের নিরাপদ সিকিওরিটির ঘেরাটোপের মধ্যে তাঁরা ব্যস্ত থেকেছেন ধর্ষণ সংক্রান্ত বিল নিয়ে কবে আলোচনায় বসা যায়, তাই নিয়ে, কিংবা অন্য কোনও বিষয় নিয়ে। সরকারপক্ষের এই নীরবতাই এক বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল গত বাইশ আর তেইশে ডিসেম্বরের বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের।
গত শনিবার সকাল থেকেই দেখেছিলাম দলে দলে ছেলেমেয়ের দল, যাদের বয়েস সতেরো থেকে পঁচিশের মধ্যে, দলে দলে চলেছে ইন্ডিয়া গেটের দিকে। কোনও নেতা ছিল না তাদের। নিজেরাই চলেছিল। হাতে ব্যানার, পোস্টার, তাতে কালো আর লাল অক্ষরে লেখা তাদের ঘৃণা আর ছিছিক্কারের ভাষা। এর আগেও দিল্লির রাস্তায় ছাত্রদের, যুবকদের, এনজিওদের মিছিল দেখেছি, সেই মিছিলের মুখগুলো আমার লাগত এক রকমের। বিষয় হয় তো কোনও ঘটনা বা নিয়মনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কিন্তু প্রতিবাদের আগুন থাকত না মিছিলকারীদের চোখেমুখে। সামনের লাইনের দু তিনজন শ্লোগান বা “নারা-বাজি”তে ব্যস্ত থাকতেন, বাকি পেছনের সারির লোকজন নিজেদের মধ্যে হাসি তামাশা করতে করতে পথ হাঁটতেন। কখনও সামনে মিডিয়ার ক্যামেরা দেখা গেলে সোৎসাহে হাত নেড়ে নিজের অস্তিত্ত্ব প্রকাশ। মিছিলের মুখপাত্র যখন রাগী রাগী মুখ করে নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করতেন বাড়ানো মাইক্রোফোনের সামনে, তখনও ব্যাকড্রপে দেখা যেত অগুনতি উৎসাহী মানুষের হাসিমুখ আর তাদের হাত নাড়া।
আমরা সবাই টিভিতে অনেক দেখেছি এই ধরণের ক্লিপিং। এই প্রথম, গত শনিবারে, একটা নয়, অন্তত তিন চারটে মিছিল দেখলাম, কমবয়েসী ছেলেমেয়ের দল, তাদের কারুর মুখে হাসি নেই, নিজেদের মধ্যে ঠাট্টাতামাশা নেই। গনগনে রাগ মুখে মেখে তারা চলেছে ইন্ডিয়া গেটের দিকে। হাতে পোস্টার।
হরিতকী ফলের মতন - তৃতীয় কিস্তি : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : কাব্য | ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ | ১২৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমার বন্ধু সন্দীপ একটা কবিতার কাগজ বার করে। বেশ কিছুদিন ধরেই বলছে, পরের সংখ্যার জন্য অন্তত গোটা দশেক পদ্য ওর চাই। বড়ো অস্থির সময় যাচ্ছে আজ। কতোবার বসার চেষ্টা করলুম, কতো খসড়া। কতো বার প্রথম দু ' তিনটে লাইন লেখার পরে নিরাশ ছিঁড়ে ফেলা। অথচ কতো কথা বলার বাকি থেকে যাচ্ছে, কতো চমক দেওয়া শব্দবন্ধ মাছির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে মাথার চারিধারে। কিন্তু শাদা কাগজে কালো অক্ষরে তারা ধরা দিতে চাইছে না। মাঝে মাঝে হয় এমন। সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়। নিজেকে বাহুল্য বোধ হতে থাকে। গানের কাছে যাই, মানুষের কাছে যাই, বইয়ের কাছে যাই, কিন্তু শব্দ বাঁধার রেশ গুলো খুঁজে পাইনা। প্রিয় কবিদের প্রচুর পদ্য বারবার পড়ি, কতো জাদুর মতো প্রতীক, তৈরি শব্দের মায়া মাথায় ঝিলিক দিয়ে পালিয়ে যায়। পদ্যের শরীরে যদি প্রাণটাই প্রতিষ্ঠা না করা গেলো তবে তার অলঙ্কার কী প্রয়োজন। মৃতদেহের মাথায় হিরের মুকুট ?
নগরপেঁচার নকশা -- কোলকাতার বারোয়ারি ১৪১৯ : সুরজিত সেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ২৩ অক্টোবর ২০১২ | ৭৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এবচর সাবোন মাসের শেষে, তেমন বিষ্টির দ্যাকা নেই, কোলকাতা ডেঙ্গি জ্বরে কাঁপচে, রোদে চাঁদি ফাটিয়ে দিচ্চে, এমন সময় কাগজের স্টলগুলো পুজো সংখ্যার বোইতে ছেয়ে গ্যালো। বুজলুম মা আসচেন, মানে তাকে ঘেঁটি ধোরে আনার উজ্জুগ চলচে। আগে আমাদের যকোন বয়েস কম ছিলো, তকোন পিত্তিপোক্ষের তপ্পণের পর দেবীপোক্ষের শুরুতে এরা সব একে একে দেকা দিতো, আজকাল ভুবনবাজারের হুজুগে সবার আগে পুঁজির বাজার দখলের পুজো, এমনকি বোধয় সিদ্ধিদাতা গণেশেরও আগে। তাই পুজোসংখ্যাওলাদের একোন হোয়েচে - কী ছাপলুম, তার চেয়ে বড়ো কতা, কে কার আগে সেজেগুজে গলির মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারলুম কি পারলুম না। চাড্ডি খোদ্দের ধোরতে পারলে ঘরের কড়ি ঘরে ঢোকে।
হরিতকী ফলের মতন ... (দ্বিতীয় কিস্তি) : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : কাব্য | ০৬ অক্টোবর ২০১২ | ১১৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
জীবন মানে তো একটা পথ চলা। যেকোন পথে যেতে প্রথমদিন শুধু পথটাকেই দেখি, তাকে মাপি। পরের দিন চোখ তুলে দেখি আশপাশ, কতো গাছ, কতো হাট, কতো খালবিল। তার পরের দিন গাছের পাতা কেমন সবুজ, কী রঙের ফুল, কোন পাখির বাসা, বিলে পদ্ম ফুটেছে না শালুক, মানুষগুলি বাইরে থেকে কেমন? তার পর কোনোদিন পেরিয়ে যাই মানুষগুলির অন্দরমহল, হেঁসেলঘর। প্রথমদিন পথের দুপাশে যেমন সব কিছু অচেনা, অজানা, অবুঝ লেগেছিলো, সেই অস্বস্তিটা যে কোথায় চলে যায়, কে জানে। কবিতাও তো জীবনের সঙ্গে সমান্তরাল চলে, তার প্রথম অবুঝপনা কখন যে অতীত হয়ে যায়, তার কোনও হিসেব থাকেনা। তখন নিশ্চিন্তে বলে উঠি, 'কবিতা বুঝিনি আমি', যেহেতু তখন আমি জেনে গেছি, বুঝি নাই বুঝি, কবিতাকে তো আমি পেয়ে গেছি। ঠিক তোমার মতন........
নোম্যাড : কৌশিক ভাদুড়ী.
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ অক্টোবর ২০১২ | ৮৮৭ বার পঠিত
এভাবে চলতে চলতে একদিন চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রকাশ পায়। ফুটোস্কোপ যেহেতু পূর্বজন্মের উদ্ভাবিত আগলপাগল তত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং তদানিন্তন প্রযুক্তি যথেষ্ট কুশলী নয়, ওটিতে ব্যবহৃত একটি লেন্স যথেষ্ট মজবুত ভাবে লাগেনি, ফলে ওটি খসে যায়। পরজন্মের যন্ত্র ব্যাপারি পরজন্মোচিত তত্পরতায় লেন্সের স্থলে একটি ভাঙ্গা আয়নার টুকরো বসিয়ে দেয়ে। পরজন্মের অবজার্ভার পরজন্মোচিত আচরনবিধি অনুসারে আনুপুঙ্খিক নিরীক্ষণ ছাড়াই যন্ত্রটি বীক্ষণের কাজে ব্যবহার করেন। ফলত মননগ্রামটি পরজন্মের প্রতিবিম্ব হয়ে পড়ে। এই অবসরে কটি জীববৈজ্ঞানিক সংকেত পরিচিত হওয়া যাক।
ক) হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স : হসস, খ) হোমো স্যাপিয়েন্স সুপিরীয়রো : হসসু, গ)পূর্ব জন্ম : পূজ, ঘ)পরজন্ম : পজ।
যাই হোক হোসসু-এর আবির্ভাব বিষয়ে সুমেরিকার জ্ঞানী সমাজে কোনোও দ্বন্দ্ব নেই, শুধু নথি হিসেবে মননগ্রামের একটি অনুলিপি রাখা দরকার। ডেড লাইনও নির্দ্দিষ্টকৃত। ফুটোস্কোপ মেরামতির পরিকল্পনাও শেষ। সে বিশদ অন্যত্র। ইতিমধ্যে পূজ-র সাপুরে খবরওলা যে খেলা দেখাতে এসে পজ-কে খবর সরবরাহ করত, পজর আদালত তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। নির্বিষ রাখা পজ-এ জামিন অযোগ্য অপরাধ। কার্য্যত ঝাঁপি বন্ধ আজ।
রবিবার – কোথাও একটা জন্মদিন : দোলনচাঁপা চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ অক্টোবর ২০১২ | ১০০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পৃথিবীর সমস্ত রবিবারেরাই খুব বুদ্ধিমান। কেননা একমাত্র তারাই মানুষকে অনেকটা সময় ধরে দেখে। একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। ঘুম ভাঙার মধ্যে দিয়ে দেখা শুরু হল। তারপর,মানুষটার সমস্ত একাত্মতায়,নিজস্বতায়,ভাবালুতা এবং আবেগ বর্জিত বাস্তবতা ও কাজের মধ্যে দিয়ে এই দেখাটা চলতেই থাকল। এভাবেই মানুষদের সবচেয়ে বেশি করে চিনে নিল রবিবার। সমস্ত দুর্বলতা ও খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে জেনে নিল আমরা কে কেমন,আমাদের বেঁচে থাকা,একাকিত্ম, ও নিজস্ব অভিনয়গুলো ভাল না খারাপ। আমরা এত কিছু বুঝলাম না। শান্তি ও আনন্দ ভেবে নিতে রবিবারই সবচেয়ে প্রিয় হল আমাদের। আর,সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর থেকে ভাললাগা,খারাপ লাগা ধার নিয়ে ক্রমশ তরল,অজৈব এবং জলীয় হয়ে উঠল সে।
ফেসবুক তোলপাড় করছে একটা ছবি। মালালা ইউসুফজাই। তার শরীরে ঢাকা দেয়া চাদরটা রক্তে ছোপানো। মাথায় পট্টি। শুয়ে রয়েছে চোদ্দ বছরের বিদ্রোহী বাচ্চা মেয়ে। এক বন্ধু ছবি দেখে বলল,এই পরিস্থিতিতে আমরা এই রকম হতে পারতাম না। সাহসে কুলাতো না।
আমরা এ'রকম হতে পারিনা। সবাই সবকিছু পারেনা। তবে আজকাল জানতে ইচ্ছে করে যে আমরা কী পারি। ধর্ষণে ধর্ষণে ক্লান্ত পশ্চিমবঙ্গ! মেয়েদের ওপর অত্যাচারে,বধূহত্যায়,ভ্রূণহত্যায় -সবখানেই আমাদের পা। বছর দুই আগে সল্টলেকে এক আইটি ইঞ্জিনিয়ার দুর্ঘটনায় মারা গেলেন -অফিস থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে - অনেক মানুষ ঘিরে দাঁড়িয়েছিল,কেউ জলটুকুও দেয়নি। ক'দিন আগে পুলিশের ডাকাতি করার গল্প পড়লাম। কই,আমাদের তো মেরুদন্ডে কোথাও কোন শিরশিরানি নেই। এই কলকাতাই আমার কলকাতা নাকি ! চিনতে পারিনা কেন তবে! চিনবার চেষ্টাটা আসলে একটা আশ্রয়ের খোঁজ - বয়স হচ্ছে তো। বয়স হচ্ছে ভেবে নিলে একটা সুবিধাও আছে - পরের প্রজন্মের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো যায়।
ধানাই পানাই ১৮ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২০ অক্টোবর ২০১২ | ৪০৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
আরও বেশ কবছর পরের কথা, মন্ডল সাহেবের বাগান বাড়িতে নেমন্তন্ন। অনেকটা পিকনিকের মেজাজ। লোকজন এদিক সেদিক ঘুরছে। সবেদা গাছগুলোর ছায়ার বেতের চেয়ারে কফি নিয়ে আমরা জনা পাঁচেক। আমার ঠিক উল্টোদিকে এক নম্বর। কিছুক্ষণ পর একজনের বাথরুম পেল, দুজন মাছধরা দেখতে গেলেন, রইল বাকি দুই, মুখোমুখি। উসখুস, গলা খাঁকারি,- মানে ইয়ে, আমি মনে হয় আপনার সঙ্গে কোথাও এক সঙ্গে কাজ করেছি। আমি গ্র্যানাইট পাথর, হবে হয়তো। আচ্ছা অমুক ব্র্যাঞ্চে আপনি একাশি বিরাশি সাল নাগাদ ছিলেননা? আমি বললাম, ছিলাম। - ও, হ্যাঁ মনে পড়েছে, ওখানেই তো আপনার সঙ্গে – আমি বললাম, হবে হয়তো, এত লোকের সঙ্গে কাজ করেছি, সবাইকে মনে রাখা সম্ভব? বাথরুম সেরে একজন ফিরলেন, মাছধরা দেখে বাকি দু জন, আলোচনা শেষ।
সন্দীপন সম্বন্ধে যে দুটো একটা কথা ... : সিদ্ধার্থ সেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ অক্টোবর ২০১২ | ১১১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আসলে, নিজের জীবনের বাইরে একটা লাইন-ও না লেখার সমস্যা এটাই। এক সময়ে ক্লান্তিকর পুনরাবৃত্তির আবর্তে বাঁধা পড়তে হয়। সেটাকে তখন চালাতে হয় ফর্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে। নাহলে 'রুবি কখন আসবে' লেখার পরে 'এখন আমার কোনো অসুখ নেই' লেখার কোনো মানে হয়না। পাড়ার বেকার ছেলের সাথে কিশোরী কন্যার পালিয়ে যাবার কাহিনি 'কুকুর সম্বন্ধে'তে লিখে দেবার পর 'রিক্তের যাত্রায় জাগো'তে লেখার দরকার পড়ে না। তাও এক-ই রকম ভংগীতে। 'স্বর্গের নির্জন উপকুলে' উপন্যাসটাই অদরকারী হয়ে পড়ে। আবার 'কুকুর সম্বন্ধে' আর 'আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি' লেখার পর 'ভারতবর্ষ' লেখার কোনো দরকার পড়ে না। যদিও বুট পরা শ্রীরামচন্দ্রের পদধ্বনি নিয়ে না লিখলে সমাজ সচেতন হওয়া যাবে না, বা ব্যর্থ বিপ্লব নিয়ে না লিখলে, এরকম ভাবনা অপরাহ্নের সন্দীপনকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল কিনা জানি না। 'হিরোশিমা মাই লাভ'কে অনেকে সন্দীপনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে, কেন জানা নেই। সেটা কি এই কারণে যে একমাত্র এই উপন্যাসেই রাজকুমারের তরবারী নামিয়ে রেখে চলিত জং ধরা সাহিত্যভাষার অনেক কাছাকাছি এসেছিলেন, যাতে মানুষ আইডেন্টিফাই করতে পারে সহজে? আর, এই সম্ভাবনার কথা মাথায় আসলে সন্দীপন নিজেই হয়ত মাথায় কালির দোয়াত ঠুকে আত্মহত্যা করতেন।
মহাভারত -- ত্রয়োবিংশতি পর্ব : শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১২ অক্টোবর ২০১২ | ১৪৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
সেই শুরু। তারপরে দীর্ঘ্য সময় গর্গ ভ্রমণ করেছেন মথুরা রাজ্যের প্রতিটি অংশ। যাদবদের রাজনীতি কেন্দ্রীভূত ছিল গণসভার অস্তিত্বের মধ্যে। সেই অস্তিত্বকে যখন কংস উপড়ে ফেলে দিল, রাজা উগ্রসেনকে বন্দী করলো, বন্দী করলো নিজ ভগিনী দেবকী এবং বান্ধব বসুদেবকে তখন মথুরা নগরে কোনো বিরোধী কেন্দ্র রইলো না। কংস ভেবেছিল বসুদেব তাকে সমর্থন করবে। কিন্তু তা না হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়। এই সূত্রটা ধরলেন গর্গ। বসুদেবের মিত্রতা ছিল গোপেদের সঙ্গেও। সে বৈষ্ণবদের ‘বাসুদেব’ হতে চলেছে তখন এবং গোপেরা মূলত বৈষ্ণব। তাছাড়া সে স্বভাব বশতই মিষ্টভাষী। শ্বশুর উগ্রসেন রাজা থাকাকালীন গোপেদের রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার প্রতিনিধিত্ব সেই করতো মথুরাপুরে। প্রথমে গর্গ গোপেদের মধ্যে নিজের অবস্থান শক্ত করলেন। কণাদের পরমাণুবাদ ছাড়লেন। নিজেকে রূপান্তরিত করলেন বৈষ্ণবে। একমাত্র ধর্মই সমাজকে চালনাকারী রাজশক্তির সমকক্ষ হতে পারে। আর সেই ধর্ম বেদ, ন্যায়, সাংখ্য এ সব দিয়ে চললে হবে না। ধর্মের জনপ্রিয়তা ও শক্তির মূল ভিত্তি যে মানুষ তার কাছে সহজ হতে হবে ধর্মকে। বৈষ্ণব ধর্মের মধ্যে আছে সে বীজ। তাই পরিবর্তিত গর্গ বৈষ্ণব হলেন। তারপরে মথুরাপুরে খুঁজে বের করলেন কংস বিরোধী গণসভ্যদের। দ্বিতীয় কাজে তাঁর সাহায্য করেছেন কদম। যেহেতু কংসের নজর বেশী থাকবে গর্গের উপরে, তাই তিনি রাজধানীতে আসতেন না। আসতো কদম। অক্রুর, পৌল সাত্যকীরা ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছেন একমাত্র উপায় অভ্যুত্থান। কিন্তু সামরিক অভ্যুত্থান হওয়া অসম্ভব। কংস নিজের হাতে রেখেছে সৈন্যবাহিনীকে। তাদের প্রতিপালনে সে যথেষ্ট মনোযোগীও। সাধারণ মানুষ সেই বাহিনীর সঙ্গে সমরবিদ্যায় পেরে উঠবে না। তাহলে? রাস্তা ছিল একটাই। কংসের দম্ভকে কাজে লাগানো। ঠিক সেই কাজটাই হয়েছে।
ধানাই পানাই ১৭ : রূপঙ্কর সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১২ অক্টোবর ২০১২ | ১০১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
লোকটা অদ্ভুত। বেশ বলিষ্ঠ চেহারা, বিশাল একজোড়া পালোয়ানী গোঁফ, মাথার চুলে একগাদা তেলে জবজব, হাতে বালা। হাতে বালা অনেকেই পরে শিখদের নকল করে, বিশেষতঃ একটু দাদাগিরি করার যাদের শখ। কিন্তু এর বালাগুলো, হ্যাঁ একটা নয়, প্রায় পাঁচ ছ’ টা, স্টীলের নয়, পেতলের। সবকটা এক হাতে পরা। অন্যহাতে মোটা মোটা লাল সুতো জড়ান। এরকম পাঁচ ছ’খানা পেতলের বালাওয়ালা লোক আমি আগে দেখিনি। লোকটার ভাষাও একটু কেমন যেন। কোলকাতায় পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় যে সব জেলা থেকে মানুষ এসেছে, তাদের প্রত্যেকেই নিজের নিজের ঐতিহ্য চাপিয়ে বাংলা বলে কিন্তু এর বাংলাটা কেমন যেন। প্রথমে শুনলে মনে হয় বিহারী কষ্ট করে বাংলা বলছে। একটু ঠাওর করলে বোঝা যায়, না এটা বাংলাই কিন্তু যেগুলো আমরা শুনে অভ্যস্ত, তাদের কোনওটাই নয়। আমার কেমন জানি মনে হ’ল, লোকটা মালদা জেলার। লোকটা এই ভাড়া করা সুভ্-গাড়িটার ড্রাইভার। বলল, মেসো, গাছ দেখছেন?
ছত্তিশগড়ে মাওবাদঃ এক বিহঙ্গম দৃষ্টি -- চতুর্থ ও শেষ পর্ব : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : রাজনীতি | ১২ অক্টোবর ২০১২ | ৯৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আমি গিয়ে ভাব করি ইনশাস রাইফেল নিয়ে ব্যাজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছত্তিশগড় আর্মড পুলিশের দুই জোয়ানের সঙ্গে। একজন চেয়ে নেয় সাক্ষরতার একটি ম্যাগাজিন। বলে -- আমি উত্তরপ্রদেশের গ্র্যাজুয়েট। বই পড়তে ভালবাসি, এখানে কিছু পাইনে। রোদ্দূর চড়ছে। আমরা দুজন হ্যান্ডপাম্প থেকে জল খেতে একে অন্যের সাহায্য করি, জানতে পারি সকাল থেকে ওর পেটে কিছু পড়েনি। ভোর ছ'টার থেকে ডিউটি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই দুপুরে লাঞ্চের সময় কিছু জুটবে। জিগাই-- রাত্তিরে মশারি? জঙ্গলে ওডোমস?
-- ওসব সি আর পি'র জোয়ানরা পায়, হাজার হোক কেন্দ্রীয় সরকারের সেপাই। আমাদের কে পোঁছে?
ইতিমধ্যে সর্দারজী টাটা সাফারিতে চড়ছেন দেখে সরকারি ছোট আমলাদের মধ্যে টেবিলে সাজানো কাজু-কিসমিস- বিস্কুট-কলা-আঙুর খাবলে নিয়ে পকেটে পোরার অশ্লীল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। দেখতে দেখতে টেবিল সাফ। আমার পকেটে কিছু বিস্কুট, আর কিসমিস। তার থেকে গুনে ক'টি দেই ওই ছয়ফুটিয়া সেপাইকে, ও হেসে ধন্যবাদ দেয়। সলওয়া জুড়ুম শিবিরের জনতাকে মন দিয়ে দেখেছি। মনে হয় ওদের আজ গাঁয়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও ফিরে যাবে না। মানুষ অভ্যাসের দাস। সেই খাঁচার পাখি, বনের পাখি গল্প।
-- এই মালী, চৌকিদার, রাঁধুনি, এস পি ও (স্পেশাল পোলিস ফোর্স)।
-- আমাদের সাক্ষরতা অভিযানের উদ্দেশ্য সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়ার চেয়েও পেশাগত দক্ষতা হাসিল করে সেল্ফ এমপ্লয়মেন্টের দিকে যাওয়া। আর শিক্ষিত কে? যে লোকটি এম বি এ করে দিল্লিতে মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করে রাত্তিরে মত্ত অবস্থায় বৌকে পেটায় সেই শিক্ষিত?
খাম্মামের হারিয়ে যাওয়া মানুষজন - চতুর্থ ও শেষ কিস্তি : সিদ্ধার্থ মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১২ অক্টোবর ২০১২ | ১২৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
অনেক মানুষ মনে করে, এই জঙ্গলের আদিবাসী লোকগুলো কোনওরকম পরিবর্তন চায় না। এটা ভুল ধারণা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল – জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এরা আমাদের সাহায্য চায়। সবার আগে, অন্য যে কোনও মানুষের মত এরাও নিজেদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু চায়। ভদ্রবোধসম্পন্ন মানুষের নিজেদের এক্তিয়ারে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার। উচ্ছেদের পরে আমরা এদের নতুন যে জীবনদান করতে চাইছি, কোনওরকম পুঁথিগত শিক্ষা ছাড়াই এই লোকগুলোর বোঝার ক্ষমতা আছে যে সেই জীবনে মর্যাদাবোধ নেই – এমনই বিচক্ষণ এরা। যতদিন না আমরা এদের সেই অধিকারবোধ দিচ্ছি, এরা নিজেদের জীবন এবং অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম জারি রাখবে, সে যত স্বল্প পরিসরেই হোক না কেন।
অচিন্ত্যনীয় লাঞ্চনা : Prativa Sarker
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ জানুয়ারি ২০২০ | ৪৫১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
অচিন্ত্য প্রান্তর আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন একজন মানুষ। তার মার্জিত ব্যবহার, পরিশীলিত বাচন, তার কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান আমাকে মুগ্ধ করে।
যদি সে সম্পূর্ণ অচেনা কেউ হতো, রূঢ় এবং শিক্ষাহীন, তাহলেও আজ বিমানবন্দরে সিআই এসএফ যে ভাবে তাকে পরীক্ষা করেছে তার আপত্তি সত্ত্বেও, তার তীব্র প্রতিবাদ করতাম। কারণ লিঙ্গ পরিচিতি যে কোন মানুষের একেবারে ভেতরের উপলব্ধির বিষয়, তার একান্ত মানসিক এবং অনুভূতির ব্যাপার।
উদ্বাস্তু হওয়ার ইতিকথা : ইন্দুবরণ গাঙ্গুলী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ জানুয়ারি ২০২০ | ২২৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
খণ্ডিত ভারতের স্বাধীনতার কথা শুনে তৎকালীন বাংলার মুসলিম নেতাদের একাংশের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল, এই ভেবে যে, পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে বাঙালি মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসকগণ। সুতরাং বাঙালি মুসলমানের পরাধীনতা থেকেই যাবে। তাই তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী সইদ সোরহাবর্দি, বাংলা মুসলিম লিগের সম্পাদক জনাব আবুল হাসিম প্রমুখ নেতা প্রস্তাব করেন, ভারতকে দুই ভাগ নয়, তিন ভাগে ভাগ করা হোক, যথা পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ। মোদ্দা কথা, বঙ্গভঙ্গ বন্ধ করে, বাংলাকে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশে পরিণত করা হোক। এ প্রস্তাব নিয়ে তারা সর্বশ্রী শরৎচন্দ্র বসু, কিরণশংকর রায় ও সত্য বকসীর সাথে বহু বৈঠক করেন। এমনকি স্বাধীন বাংলার সংবিধান কী হবে, তার জন্য একটি সাব কমিটিও গড়া হয়। শরৎচন্দ্র বসু এ বিষয়ে গান্ধিজির সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। গান্ধিজি বঙ্গভঙ্গ বন্ধ করার এ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন বটে, কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি আচার্য কৃপালনী ও ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব ভেস্তে যায়। এ সব ঘটনাই ১৯৪৬ সনের মে মাসের।
বইমেলায় পুলিশের হামলা
: সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ২২৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
যতবার,যতজন, শান্তভাবে কথা বলতে গেছেন, প্রতিবারই পুলিশ প্রায় বিনা প্ররোচনায় একই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একের পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ যে আচরণ করে, যে ভাষায় কথা বলে, এবং যে পরিমান মারধোর করে, বইমেলার সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তা অভূতপূর্ব। প্রায় অর্ধশতকের বইমেলার ইতিহাসে কলঙ্কলেপনের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ।
এ জিনিস বইমেলায় কখনও হয়নি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫০২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
পুলিশকে কিছু কথা বলতে যাচ্ছেন কেউ। তর্কাতর্কি হচ্ছে। পুলিশের দিক থেকে যেহেতু বলার কিছু নেই, তাই তাঁরা কিছুক্ষণ বাদেই তেড়ে এসে তুমুল মারধোর করছেন দু-চারজনকে, এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করছেন, গ্রেপ্তার করা হল। আমার দিকেও তেড়ে এসে ঘুষি চালিয়ে দেন এক পুলিশ মহাবীর। যদিও, আমি শান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু করিনি। স্লোগান-টোগান তো দূরস্থান। হিন্দুত্ববাদী কোনো হামলাকারীর গায়ে বলাবাহুল্য একটুও আঁচড় পড়েনি। পুলিশের তর্জন-্গর্জন, মার-্ধোর শুধু একপক্ষের উপরেই বর্ষিত। এবং পুরোটাই পরিচালিত হয় নীল কোট পরিহিত একজন পুরুষ ও সাদা পোশাকের একজন মহিলা অফিসারের নেতৃত্বে। তাঁরা বস্তুত জনতাকে প্ররোচিত করছিলেন। যে ভঙ্গীতে কান্ডটা করছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে, পুরোটাই ইচ্ছাকৃত। হয় তাঁরা মব কন্ট্রোলের কিছুই জানেন না, কিংবা জানেন, কিন্তু তাঁদের গেরুয়াকরণ সুসম্পন্ন হয়েছে।
বিজ্ঞাপনের মেয়ে : চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০২০ | ১৭৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
আমার লেখার উপজীব্য যদি হয়, বিজ্ঞাপনের জগতে মেয়েরা,বেদম ধন্দে পড়ে যাই আমি!কোন জগত? কোন মেয়েরা? যেসব বিজ্ঞাপন সংস্থায় রাত নামে না কখনও, যেখানে হাততালি দিতে দিতে সমানে ছুটে যাচ্ছে মেয়েরা, তাদের কথা? যাদের থাকে শুধু অন্ধকারসম্বল প্লাস্টিক আলো আর মুখোমুখি বসিবার ক্রেতা ও ক্লায়েন্ট!
অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি নেয়ার মুখে পাড়া প্রতিবেশী গুছিয়ে আমার বাড়ির মানুষদের খবর দিয়ে গেছিল,এসব জায়গা ভদ্রঘরের মেয়েদের জন্য নয়। শুয়েবসে কাজ করতে হয়। বিজ্ঞাপন সংস্থার রন্ধনশালাটিতে মেধায় আগুন দিয়ে সুস্বাদু বিজ্ঞাপন বানানোর আগেই,লক্ষ করুন,একটি মেয়ে বিজ্ঞাপিত হয়ে যাচ্ছে লালসামাখা পণ্যরূপে।হ্যাঁ। কোনও বিজ্ঞাপন যাঁরা বিজ্ঞাপনটি দিচ্ছেন তাঁরা পছন্দ করবেন কি না তার ওপর অনেকক্ষেত্রেই নির্ভর করে সংস্থাটির উজ্জ্বল অথবা মলিন ভবিষ্যৎ। তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ক্লায়েন্ট মিটিঙে সঙ্গে খুশবু-ছড়ানো অ্যাকাউন্ট এক্সিকিউটিভ কিংবা ক্রিয়েটিভ হেড নারী থাকাটা অনেককিছুই সংযোজন করে। এ-ও বিজ্ঞাপন।লিঙ্গনির্ভর।সবযুগে।সবসময়। পাথরকুচির মতো অপমান ছড়ানো পথে চলতে চলতে নারী বিজ্ঞাপিত হয়।
দেশভ্রমণের দশ, উপলক্ষ্য নারীদিবস : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০২০ | ৩৮৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আমি মনে করি না ঘরে বসে কেক কেটে বা পার্টি করে, শপিং মলে কিছু বিশেষ ছাড়, পার্লারে কিছু বিশেষ ইভেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে নারী দিবস পালন করা যায়। নারীদের জন্য বছরের প্রত্যেকটা দিনই সমান। প্রতিটা দিন সমান লড়াইয়ের, সমান ভাবে বাঁচার। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে যখন নিজের শিক্ষার অধিকার নিজে বুঝে নিয়েছেন, নিজের পেশাগত যোগ্যতায় কারো থেকে কম নন, কারোর চেয়ে এক বিন্দু কম প্ররিশ্রম করেননি উলটে প্রতি মূহুর্তে আপনাকে প্রমাণ দিয়ে যেতে হয়েছে নারী বলে আপনি মেধায়, দক্ষতায় কম নন তখন নিজের ভালো লাগা, মুক্তির স্বাদ টুকু বলি কেনো দেবেন কারোও কথা ভেবে? জীবন বিশাল বড়। বুড়ো বয়েসে অচল অবস্থায় শুয়ে আক্ষেপ করবেন না অ্যালবামের পাতা ওল্টাবেন আপনার পছন্দ। নিজেকে ভালোবাসা স্বার্থপরতা নয় এটা বুঝতে বুঝতেই জীবন অতিক্রান্ত করে দেবেন? নিজেকে ভালো রাখতে না পারলে যে পৃথিবীর কাউকে ভালো রাখার ক্ষমতা কারোরই নেই।
নাটকের মেয়ে আর মেয়েদের নাটক : অনুরাধা কুন্ডা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০২০ | ১৯৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
যে মঞ্চ মধ্যে মেয়েরা, মানে অধিকাংশ মেয়েরাই পুতুল মাত্র। ডিরেক্টর নন। কোরিওগ্রাফার হলেও হতে পারেন। আলোকসম্পাত করেন না। প্রোডাকশন ম্যানেজার নন। আর যদি বা ঐ যেগুলো নেতিবাচক বললাম, সেগুলো দৈবক্রমে হয়ে পড়েন, তার বিস্তর জ্বালা। পেশাদারী অভিনেতা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে মেয়েদের অনেক সমস্যা ।এখনো। তার কারণ অবশ্যই বিয়ে আর সংসার।কথাগুলো পুরনো হলেও সত্যি। নাটক করবি? তাহলে তো বিয়ে হবে না। আর যদি হয় তবে বিয়ের পর আর নাটক করা যাবে না।কারণ আজো মেয়ের দল বিয়ে হলে চাকরি ছেড়ে ও শ্বশুরবাড়ি চলে যেতেই ভালোবাসে।নাটক তো কোন ছাড়। মঞ্চে ওঠা, মেকাপ আর হাততালির মোহ অভিনয়ের প্যাশনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। ডাক্তার হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন পড়াশোনা করতে হয় ।শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল , অধ্যাপক যাই হও না কেন, ঘাম ঝরিয়ে পড়াশোনা আর চর্চা। ক্রিকেট,ফুটবল যাই খেলো না কেন, দীর্ঘদিন অনুশীলন চাই।শুধু নাটক এমনি এমনি করা যায়! মানে কোনো পড়াশোনা বা অনুশীলন ছাড়া স্রেফ ডায়ালোগ মুখস্থ করেই মঞ্চ কাঁপানো যায়, এমন মূর্খ ধারণা নিয়ে নাটক করতে আসেন বহু মানুষ।
লীলাবতীর কিসসা-ওয়ালী : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৮ মার্চ ২০২০ | ৩৬৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
বিজ্ঞান মানে তো শুধু যুগান্তকারী আবিস্কার নয়, রোজ একটু একটু করে প্রদীপের সলতে পাকানোটাও বিজ্ঞান, যাতে পরের আবিষ্কারের কাজটা সহজতর হয়। তবে আমাদের সাধারণ হিরো-নাহলেই-জিরো ভাবার মানসিকতার প্রেক্ষিতে এই সলতে পাকানোর কাজটাও যে গুরুত্বপুর্ণ, এ না হলে বিজ্ঞানের এগোন বন্ধ হয়ে যাবে এই বোধ তৈরি করা খুব দরকার। এই বইটা খুঁজে খুঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন শাখার বিজ্ঞানীদের নীরব কাজ তুলে এনে কিছুটা সেই ধারণাও তৈরি করতে পেরেছে। আর বহুদূর দেশের বিদেশিনী না বা ইতিহাস খুঁড়ে বার করে আনা আগের যুগের বিজ্ঞানী না, আমারই সময়ে আমারই দেশে এই বিজ্ঞানীরা এত কিছু কাজ করছেন, এটা পড়ে বুড়োরাও এক্সট্রা উজ্জীবিত বোধ করছেন, বাচ্চারা এ লেখা পড়ে মোটিভেটেড হবে বলেই মনে হয়। কোন কোন বাচ্চা হয়তো এই বইএর চরিত্রদের মধ্যে থেকে রোল মডেল খুঁজে নেবে।
মেয়েদের দিন : মুহাম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০২০ | ২৩৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
গরম একটা স্ট্যাটাস দিয়েই চায়ের দোকানে বসে নারী দেশ চালাচ্ছে বলেই গোল্লায় যাচ্ছে দেশ, দেশের নারী কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তা নিয়ে সুচিন্তিত মতামত দিয়ে, সামনে দিয়ে কোন নারী গেলে তাকে এক্সরে করে আগাপাসতলা দেখে নিয়ে তারপরে যেতে দিয়ে দেশ ও সমাজের প্রভূত উন্নতি সাধিত করে আমাদের দিন যায়। আমাদের মাথায়ই ধরে না সেনাবাহিনীর মত জায়গায় নারী কী করে সুযোগ পায়? কিছু জিনিস তো পুরুষের হাতে থাকা উচিত, তাই না? সব কাজ কী সবাইকে দিয়ে হয় নাকি? যে রাস্তায় জ্যাম দেখবেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন সামনে নিশ্চিত কোন নারী সার্জেন্ট বসে আছে, আরে দেখতে হবে না, এইটা আমরা জানি! নারী চাকরি করবে না এমন না, অতটা খারাপ মানসিকতার মানুষ আমি না। নারী চাকরি করবে স্কুলে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা পদটা তো তৈরিই হইছে নারীদের জন্য। এরপর আছে ব্যাংকের চাকরি। কি দারুণ সুযোগ নারীদের জন্য। বেশি জটিল কাজ দেওয়ার দরকার নাই, প্যাচগুজ লাগিয়ে ফেলতে পারে। এই ধরেন রিসেপশনিস্ট হিসেবে নারীর বিকল্প আজও আবিষ্কার হয়নি। সাজুগুজু করে বসে থাক, কেউ আসলে মিষ্টি করে হাসি দাও, স্যার একটু ব্যস্ত আছে বলে বসায় রাখ! সোজা কাজ, কোন ঝামেলা নাই।
করোনা কৈবল্য : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ মার্চ ২০২০ | ৩২৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
করোনা ছড়ানোতে অশীতিপরদের ভূমিকা একেবারে শূন্য। তাদের ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ নেই, খাদ্যতালিকায় প্যাঙ্গোলিন বা বাদুড় না থাকারই কথা। না চাইলেও তাদের বেশিরভাগই কোয়ারেন্টাইন্ড হয়ে থাকতে বাধ্য। থাকেনও প্রায় বারোমাস। চাহিদা বলতে পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাদ্য, বিশ্রাম, যত্ন, চিকিৎসা আর সবচেয়ে যা অধরা, ঐ কিঞ্চিৎ ভালবাসাবাসি।
এর ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে যৌবনের স্পর্ধা, যা অতিমারীর কালেও ভ্রমণ সূচি বা রাত-জাগা হুল্লোড়ে পার্টি বাতিল করে না । আমাদের বয়স অল্প, আমরা ফিট, আমাদের প্রাণে মরবার ভয় নেই, এই বিবেচনায় যারা অকুতোভয়। তাদের ওপরেই কিন্তু ঝুলছে এই ডেমোক্লিসের খাঁড়া - বয়স্ক প্রিয়জনকে মেরে নিজে বাঁচবে কিনা। সমস্যাটা বুড়োবুড়ি নিকেশ হয়ে গেলে ক্রমশ নীচের দিকে নামবে, বৌ না আমি, কে বেশি বাঁচবার অধিকারী ? আমিই যদি না থাকি তাহলে আমার সন্তানকে রাষ্ট্রের পক্ষে প্রয়োজনীয় করে গড়ে তুলবে কে ?
এই প্রশ্নগুলো আসতে বাধ্য কারণ এই অতিমারী আমাদের সভ্যতার ভিত ধরে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ফিরে আসছে বেঁচে থাকবার অন্ধ আদিম দৌড়, যেখানে বাঁচবার একমাত্র অধিকারী সে, যে সবচেয়ে তন্দুরস্ত বা বলশালী। বাঁচো, শুধু নিজের জন্য বাঁচো, অন্য সমস্ত বিবেচনা তুচ্ছ হয়ে যাক তার কাছে।
নোভেল করোনা ভাইরাস – আন্তর্জাতিক আতঙ্ক ও বাণিজ্যের এক নতুন নাম : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১৯ মার্চ ২০২০ | ১১৬৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
১৬ মার্চ হু-র ডিরেক্টর জেনারেল এখনও আমরা যে জায়গায় উপযুক্ত ফোকাস করতে পারছিনা সেদিকে দৃঢ়ভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন –
(১) টেস্টের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ানো,
(২) আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন আক্রান্তকে আলাদা/বিচ্ছিন্ন করে রাখা, এবং
(৩) যারা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছে তাদের খুঁজে বের করা। তাঁর ভাষায় - Social distancing measures can help to reduce transmission and enable health systems to cope... But the most effective way to prevent infections and save lives is breaking the chains of transmission. And to do that, you must test and isolate. তাঁর সর্বশেষ আহ্বান - Once again, our key message is: test, test, test. হু-র তরফে ১২০টি দেশে দেড় কোটি টেস্ট কিট পাঠানো হয়েছে। ডিরেক্টর জেনারেল স্মরণ করিয়েছেন, এরকম সংকটের সময়েই মানুষের মহত্তম এবং কুৎসিৎতম দুটি চেহারাই ধরা পড়ে।
আমেরিকার করোনা, পাবলিকের হাতে কেবল পেনসিল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : টুকরো খবর | ২৫ মার্চ ২০২০ | ৩২১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
এর মধ্যে যেটা জানা, তা হল চাকরি বাকরি হারানোর মধ্যেই লাফিয়ে বাড়ছে করোনার কেসের সংখ্যা। সিএনএনএর সঞ্জয় গুপ্তার মতে, এখন যে তথ্য জানা যাচ্ছে, সেটা আসলে দুসপ্তাহ আগের। এবং কার্যত সংখ্যাটা প্রতিদিনই দ্বিগুণ হচ্ছে। ফলে সংখ্যাটা এখন কোথায়, এবং কোথায় গিয়ে ঠেকবে, বলা কঠিন। অবশ্য, এসবই খুব বেশি হলে আন্দাজ। আসল সংখ্যা কী, তার মাপ কী, কী অভিঘাত, কেউই জানেন বলে মনে হচ্ছেনা। প্রভূত রোগির আশঙ্কায় নিউ-ইয়র্কের গভর্নর জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে একটি ভেন্টিলেটার দিয়ে দুজন রোগির চিকিৎসা করে দেখা হবে। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে নতুন এবং জটিল। চিকিৎসা নিয়ে অন্যান্য জটিলতাও আছে। যথেষ্টই আছে। আমেরিকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা সরকারি নয়, পুরোটাই বীমানির্ভর। বীমাকোম্পানিরা জানিয়েছে, যে, করোনার পরীক্ষা হবে বিনামূল্যে, কিন্তু চিকিৎসার খরচ পুরোটা তারা বহন করবেনা। এখন শোনা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে পরীক্ষাও বিনামূল্যে হচ্ছেনা। অর্থাৎ কাগজেকলমে পরীক্ষা বিনামূল্যেই বটে, কিন্তু তার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফি, ইত্যাদি হাবিজাবি যোগ করে, কাউকে নাকি ৩০০০ ডলারও বিল করা হয়েছে।
লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা : ডা. বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০২০ | ৭৬৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
লকডাউন নিজে নিজেই কোনো সমাধান নয়। লকডাউন অসুখ সারায়ও না, অসুখের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত প্রতিরোধের ক্ষমতাও তৈরী করে দেয় না। বাকি সব ব্যবস্থাগুলোর সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা গেলে লকডাউন, অবশ্যই, খুব কার্যকরী ব্যবস্থা - কার্যকরী মহামারীর ভয়াবহতা ঠেকানোর ক্ষেত্রে, কার্যকরী একজন মানুষ থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে, কার্যকরী অসুস্থ মানুষের সংখ্যা কমিয়ে রাখতে, যাতে আমাদের পরিকাঠামো দিয়ে সেই সীমিতসংখ্যক মানুষের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে - কার্যকরী, আরো প্রস্তুত হওয়ার জন্যে সময় কিনতে। কিন্তু, মনে রাখুন, এগুলো সবই হতে পারে - যদি লকডাউনের সাথে সাথে বাকি ব্যবস্থাগুলোও নেওয়া হয়, তবেই।
সমাজ ও স্বাস্থ্যকর্মী - দেওয়ালের লিখন : ডা. বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০২০ | ২৫৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আমরা জানতাম, এই রোগে সারা পৃথিবীতেই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী করে আক্রান্ত হচ্ছেন - আক্রান্ত হলে মৃত্যুহারও তাঁদের মধ্যে বেশী - ঝুঁকির কথা আমাদের মাথায় থাকে না, এমন তো নয়। আমরা জানতাম, হাসপাতালে মাস্ক-স্যানিটাইজার অকুলান হলেও আপনাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে যে বিপুল পরিমাণ মাস্ক-স্যানিটাইজার জমিয়েছেন, তা দিয়ে একটা হাসপাতালের একটা বিভাগের মাসখানেক চলে যেতে পারে। এ-ও জানতাম, আপনাদের সমাজসেবার অদম্য তাগিদ - একেকজন হাজার মাস্ক বা কুড়ি লিটার স্যানিটাইজার কিনে উচ্চবিত্ত হাইজিং-এ প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়ে যাচ্ছেন - এবং আপনাদের এবম্বিধ সমাজসেবার প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী আমরা, যারা কিনা মাথা খুঁড়েও হাসপাতাল বা দোকান কোথাওই এগুলো পাচ্ছি না - তবুও, সিরিয়াসলি বলছি - খুব ভালো লেগেছিল সেদিন প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর কথায়।
করোনায় বন্দী কুয়েত থেকে : ডঃ নবনীতা নাগ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মার্চ ২০২০ | ৪৬১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
১৫ ই মার্চ থেকে শুরু হয়ে ছিল সতর্কতামূলক গ্ণসংক্রম পরীক্ষা। প্রথম দিন হয়ত একটু এলমেলো অবস্থা ছিল কিন্তু পরে যথেষ্ট সুষ্টু ভাবে অঞ্চল অনুযায়ী মিশর, লেবানন, সিরিয়া থেকে আসা যাত্রী পরীক্ষা করা হয়। অনুপস্থিতিতে জেল ও নির্বাসন এর ভয়ে সকলেই এই পরীক্ষা নিতে বাধ্য। WHO নিয়মাবলী মেনে উপস্থিত সকলের মধ্যে ১ মিটার দুরত্ব বজায় রেখেই তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়, ছিল খাবার এর ব্যাবস্থা ও। পরীক্ষার জন্যে কুয়েত ফেয়ার গ্রাউন্ড এর হলঘর টিতে ৮ ফিট দূরে দূরে চেয়ার পেতে দলে দলে শয়ে শয়ে মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়, নেওয়া হয় ভ্রমণ বৃত্তান্ত। সপ্তাহব্যাপী এই পরীক্ষা চলা কালীন বাকী কুয়েতবাসী কিন্তু ঘরবন্দী। যেহেতু শপিং মল, পার্ক, সিনেমা হল সমস্ত বন্ধ ছিল, ছিল ‘ঘর থেকে কাজ করবার’ কঠিন নির্দেশ রাস্তা য় একদম দরকার না হলে তেমন লোকজন দেখা যায়নি।
ক্রম-উন্মোচিত করোনা – বায়োলজি, নিওলিবারাল অর্থনীতি এবং আমরা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০২০ | ৭৩৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাপে প্রতিটি দেশের, বিশেষ করে গরীব দুর্বল ও ছোট দেশগুলোতে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। এর জায়গা নিয়েছে কর্পোরেট হেলথ সেক্টর যেখানে স্বাস্থ্য নেই, রয়েছে বহুমূল্যে কেনা স্বাস্থ্য পরিষেবা। এ কারণে আফ্রিকার দেশগুলোতে এবোলা মহামারির চেহারা নিয়েছিলো যখন তখন স্বাস্থাকর্মীদের বেশিরভাগের কাছে একটি গ্লাভস কিংবা মাস্কও ছিলো না। এখনো ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষিত হবার বিষময় ফল ২০২০-র পৃথিবী দেখছে।
নষ্ট হয়ে যাই : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০২০ | ৪৮২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
হাজারে হাজারে লোক যাচ্ছে নিমোর উপর দিয়ে দল বেঁধে হেঁটে – ঘরে ফিরছে চাইছে তারা, জি টি রোড বরাবর, রেললাইন বরাবর হেঁটে যাচ্ছে তারা কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খন্ড, বিহারের দিকে। পিঠে, কোলে বাচ্ছা – বড় বড় বাক্স-ব্যাগ নিয়ে ফিরছে। নিমোর রাস্তার ধারে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন লোক খাচ্ছে – চাল, আলু ইত্যাদি জোগাড় হয়েছে। কিন্তু শেল্টার? ইচ্ছা করলেই আপনি ২৫-৫০ জনকে নিয়ে ভাবলেন গ্রামের কোথাও রেখে দেবেন, খাওয়াবেন – সেসব অত সোজা নয়। প্রশাসনের অনুমতিই মোষ্ট লাইকলি আপনি পাবেন না। যে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, তাকে যেতে দাও – শ্রমিক-মজুর এদের কষ্ট-মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামাবার মতন সময় নেই বড়কর্তাদের।
ভোলানাথের করোনা ডায়েরি : তাপস কুমার দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ এপ্রিল ২০২০ | ৪৪৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এতো গলি কথা থেকে এলো? সরু সরু, অন্ধকার, দম আটকে আসা গলি, সাপের মতো এঁকেবেঁকে একটার গায়ে আর একটা জড়িয়ে, দুদিকে ছায়া ছায়া গঠন যতো, বাড়ি, নাকি আর কিছু? প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো ভোলানাথ, গলি ধরে। দ্যাখে উল্টো দিক থেকে কে যেন এসে দাঁড়িয়েছে নিশ্চুপে। আরে এ কী! এ যে অলড্রিন লিংডো ! শিলং থেকে এসেছিলো, আগ্রার রেস্তোঁরায় কাজ করতো, লকডাউনে টাকা না পেয়ে ২রা এপ্রিল ঝুলে পড়েছিল মাঝরাতে, আগ্রার ভাড়া বাড়িতে। কি সর্বনাশ! সে এখানে কেন? পাগলের মতো ঘুরে অন্য দিকে দৌড়োতে শুরু করে ভোলানাথ। পালাতে পারবে না বোধহয়, বুঝেছিলো। তাও দৌড়োচ্ছিলো, প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো, গলি থেকে গলিতে, আরো গলিতে, গলির গলি তস্য গলিতে। যতক্ষণ না আবারো আরো একটা গলির মুখ থেকে ধীরপায়ে হেঁটে আসতে থাকে নতুন দিল্লির এক রেস্টুরেন্টের ডেলিভারি বয় রণবীর সিং। দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা গ্রামের উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছিলো পায়ে হেঁটে, কাজ খুইয়ে। প্রায় সোয়া দুশো কিলোমিটার হাঁটার পরে, যখন তার বাড়ি আরো প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে, আঠাশে মার্চ রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে। হৃদযন্ত্র সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে আবার গলি পাল্টায় ভোলানাথ, দৌড়োতে থাকে পাগলের মতো, হাঁফায়, মুখ দিয়ে মোটা মোটা সুতোর মতো লালা ঝরতে থাকে, বুক যেন ফেটে আসবে।
করোনা-কোরান্টিন ও গ্রাম বাংলার মুসলমান নারী : সাবিয়া খাতুন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ এপ্রিল ২০২০ | ৩০২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
যারা তিনশো পঁয়শট্টি দিনের তিনশো ষাটদিনেই হোম কোরান্টিনে থাকেন। মুসলমান পরিবারের মেয়ে হিসেবে তাই মুসলমান সমাজকে রোজ অনেক কাছ থেকে দেখি। এখান থেকে কয়েকটা চিত্র তুলে ধরছি,এই চিত্রগুলো অন্য সমাজ ও পরিবারেও যে পাওয়া যাবে না তা নয়,হয়ত অল্পকিছু হেরফের হবে।ধরুন, একটা পরিবারে একটা তেরো বছরের ছেলে ও একটা বারো বছরের মেয়ে আছে,ছেলেটি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে খেলার মাঠে যায় ব্যাট হাতে নিয়ে কিন্তু মেয়েটিকে বাড়িতে বসে থাকতে হয়, সে মেয়ে বলে বাড়ির বড়রা তাকে ন'বছর বয়স থেকেই বাড়ির বাইরে,মাঠে খেলতে মানা করেছে,অসহ্য গরমেও চূড়িদার আর মাথায় ওড়না চাপা দিয়ে থাকতে হবে তাকে সবসময়, অথচ ছেলেটি দিব্যি হাফ-প্যান্ট পরে,হাফ-হাতা টিশার্ট পরে তারই বয়সী বোন বা দিদিকে হুকুম করবে জল দিতে,খাবার দিতে,তার জামাকাপড়গুলো কেচে দিতে।
হাসপাতালের পনেরো দিন : অপরাজিতা স্বর্ণালী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ এপ্রিল ২০২০ | ৫৭২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
থালা বাজাতে বাজাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িছাড়া করে দেওয়া, এই অদ্ভুত সময়ের আলো আঁধারীর আড়ালে স্বার্থ ও ঘৃণার এজেন্ডাগুলিতে শান দেওয়ার বিপ্রতীপে, মানুষ এখনো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, মানুষ হয়ে। কুনাট্য প্রতুল, কিন্তু মানুষ এখনো অনেকটা পথ হাঁটবে, এই আশা অলীক নয়। এই বিশ্বাস দৃঢ় হয় যখন আমরা এই সাম্প্রতিক লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা দেখি।
অপরাজিতা স্বর্ণালী কলকাতা এসএসকেএম হাসপাতালের স্টাফ নার্স। তাঁর দু'সপ্তাহের দিনলিপি রইল আজকের বুলবুলভাজায়।
এই লেখাটি তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ঈষৎ সম্পাদিত। আজকের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রাসংগিকতা রক্ষার দায় গুরুতর বোধে আরো কিছুটা সম্পাদনার দাবী অগ্রাহ্য করেই প্রকাশিত হলো, অপরাজিতার দিনলিপি।
সার্স-কোভ-২ তথা করোনার ভ্যাক্সিন এবং আনুষঙ্গিকতা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ এপ্রিল ২০২০ | ৪২৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এখনো অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগ ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “A Trial of Lopinavir-Ritonavir in Adults Hospitalized with Severe Covid-19” জানাচ্ছে - In hospitalized adult patients with severe Covid-19, no benefit was observed with lopinavir–ritonavir treatment beyond standard care. ... কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল। যদিও চরম আতঙ্কের সময়, পরম আর্ততার মুহূর্তে মানুষ যেকোন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে – এমনকি গোমূত্রও!
বিনিদ্র নগরী থেকে উপন্যাসের মৃত্যুপুরী : সাগ্নিক দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০২০ | ২৮৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
বর্তমানে শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক শহরে করোনাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭,৫৫১ ও মৃতের সংখ্যা ৩০৪৮। স্কুল, কলেজ মোটামুটি বন্ধ হয়ে গেছে মার্চের ১২ তারিখ থেকে। আর সরকারি ভাবে লকডাউন শুরু হয়েছে ২০শে মার্চ থেকে। আসলে এরম পরিস্থিতি হতো না, যদি আর একটু আগে লকডাউনটা শুরু হতো। প্রায় ৫ দিন দেরি করে দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সরকার। ১২ই মার্চ ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন স্টেটের তুলনায় নিউ ইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু প্রায় সমান ছিলো, খুব বেশি তফাৎ ছিলো না। আর আজ গোটা ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫,১৫৮ ও মৃতের সংখ্যা ৩৫০। ক্যালিফোর্নিয়া সঠিক সময় লকডাউন করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে, কিন্তু দেরি করে দেওয়ায় নিউ ইয়র্ক পারেনি।
করোনা- রোগের উপসর্গ মাত্র : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০২০ | ৯৪০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬৬
একথা নিশ্চিত যে, দ্রুতগামী যান, যেমন রেল, প্লেনই মারীর মহামারী বা অতিমারী হয়ে ওঠার মূল বাহন। আমরা যদি প্রাক ব্রিটিশ যুগের আর্থ-সামাজিক মডেল দেখি, এই সংগঠিত যান-চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার বদলে দেশের শাসকদের লক্ষ্য থাকত সড়কপথ নিরাপদ রাখা, কিছু নির্ধারিত বাণিজ্য জলপথে চালানো। সমসত পণ্যের স্থানান্তরণ নয়। বাণিজ্যের সংগঠন উত্তর-ব্রিটিশ ধনতান্ত্রিক যুগের লক্ষণ এবং এই সংগঠনের পিছনে জনগণের শ্রমের মূল ভাগ নিয়োজিত হয়। প্রাক ব্রিটিশ বাংলা যখন পৃথিবীর এক বিশাল অংশে বস্ত্র সরবরাহ করত, সে বিকেন্দ্রিভূত, অসংগঠিত উৎপাদন এবং বাণিজ্যের এক মডেল চালাত। যার ফল হিসেবে দেখা যায়, সেইসময়ে বাংলায় মানুষ মোটের উপর স্বচ্ছল। আর, এই বাজারটা যুখন উত্তর-পলাশী যুগে ইংল্যান্ডে গেল, সেখানে স্থানীয় লোক বড় সংগঠিত উদ্যোগকেন্দের কাজ করতে শুরু করল, তাদের জীবনধারণ আগের থেকেও খারাপ হয়ে পড়ল (ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা, এংগেলস, ১৮৪৫)। হয়ত কিছুটা একই ভাবে সংগঠিত ধনতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র শহরগুলি গড়ে ওঠার সময়ে মানুষের ভালো থাকার মূল অক্ষগুলি অবহেলিত হল, কারণ এই শহরের বিকাশ হল কেবলমাত্র ঐ কেন্দ্রিভূত উদ্যোগ ও বাণিজ্যকে পুষ্ট করার স্বার্থে। তাই কি আমরা দেখতে পারি উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা হয়ে ওঠে এশিয়াটিক কলেরার বিশ্ব-আঁতুরঘর?
করোনার দিনগুলি চতুর্থ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০২০ | ৪৩৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মেডিসিনে মাস্টার্স ডিগ্রী করার সময় স্যার বারবার বলতেন, 'ঐন্দ্রিল, মানুষের মুখ ভালো করে লক্ষ কর। মানুষের মুখেই অনেক অসুখের ছবি ফুটে ওঠে। শারীরিক যন্ত্রণা, অসহায়তা , মৃত্যু ভয় এইসবের ছবি পড়তে পারলে তবেই চিকিৎসক হয়ে উঠতে পারবি।'
কিন্তু আজ অনেক চেষ্টা করেও ছবির মানুষগুলির মুখের ভাষা পড়তে পারছি না। মনে হচ্ছে, আতংক না, মৃত্যুভয়ও না, যেনো একরাশ ঘৃণা ফুটে উঠেছে শ্রমিকদের মুখে। আমাদের মতো স্বচ্ছল গা-বাঁচানো লোকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। ঘৃণা সেই রাস্ট্রের প্রতি, যে রাস্ট্র রাতারাতি স্পেশাল প্লেনের ব্যবস্থা করে বিদেশ থেকে প্রভাবশালী নাগরিকদের বাড়ি ফেরাতে পারে, কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করার আগে দেশের মধ্যে থাকা নাগরিকদের বাড়ি ফেরার কোনো ব্যবস্থা করে না।
সুইডেনে করোনার রোজনামচা : সুপর্ণা সান্যাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০২০ | ৫৯৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
জনসাধারণের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দিলে ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল কর্মীরা তাদের বাচ্চাদের বাড়িতে ফেলে রোগীদের সেবার কাজ করবেন কী করে? আর সব রেস্তোরাঁ, দোকান-বাজার বন্ধ করে দিলে যত লোকের কাজ চলে যাবে, যে ভীষণ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, সেটা সামলানো যাবে কেমন করে? ফলে এঁদের অধিকাংশেরই সিদ্ধান্ত যে এঁরা শেষ অবধি লড়ে যাবেন। যতটা দূরত্ব রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় তাই করবেন। এই সঙ্কটকে গুরুত্ব দেবেন, কিন্তু ভয়ে গুটিয়ে থাকবেন না। তাই যথাসম্ভব সেলফ আইসোলেশান, ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে হাঁটাহাঁটি আর স্বাস্থ্য বিভাগের ছবি সহ নির্দেশিকা মেনে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া - করোনার বিরুদ্ধে কিস্তিমাত করার জন্য এই চালই বেছে নিয়েছেন অধিকাংশ সুইডিশরা।
মন্বন্তরে মরি নি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০২০ | ৬৫৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
স্মল পক্সের টিকা দেবার একটি দেশজ পদ্ধতি যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ভ্যারিওলেশন বলা হত তা ভারতের মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলেও চালু ছিল। এমনকি উপনিবেশিক রাষ্ট্রের তরফেও এ পদ্ধতিকে একটি সময় পর্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। জেনারের আবিষ্কৃত টিকা (ভ্যাক্সিনেশন) ভারতে আসার পরে এ চিত্র আমূল বদলে যায়। ১৮০২ থেকে ১৮০৪ সালের মধ্যে ১৪৫,০০০ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়। ১৮০০ থেকে ১৮০২ সালের মধ্যে ভ্যারিওলেশনের সংখ্যা ২৬,০০০, অর্থাৎ ভ্যাক্সিনেশনের এক-চতুর্থাংশ। ভ্যারিওলেশন বনাম ভ্যাক্সিনেশনের লড়াই একাধিক বিষয়কে সামাজিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনার স্তরে প্রতিষ্ঠিত করল – প্রথম, ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব এবং ঔকর্ষ এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল সার্জারিতে, এবার সেটা প্রসারিত হল মেডিসিনের জগতে; দ্বিতীয়, সবাইকে সার্বজনীন ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ভারতীয় দেহের ওপরে এর অধিকার প্রতিষ্ঠা শুরু করল; তৃতীয়, রাষ্ট্রের নজরদারির বাইরে কেউ থাকতে পারবেনা এই দার্শনিক অবস্থান রাষ্ট্রিক নীতির চেহারা নিল; চতুর্থ; রাজা এবং প্রজার সম্পর্ক ধীর অথচ অমোঘ গতিতে রাষ্ট্র এবং নাগরিকের সম্পর্কে রূপান্তরিত হতে শুরু করল।
করোনার দিনগুলি - পঞ্চম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ৩২১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এর মধ্যেই এক অবাঙালি পরিবার এলেন। এরা মাঝে মাঝেই আসেন। স্বামী গেঞ্জি কারখানায় কাজ করেন। স্ত্রীর গ্রেড থ্রি ম্যালনিউট্রিশানে ভোগা চেহারা। আঠাশ বছর বয়েসে ওজনও আঠাশ কেজি। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভোগায় অমন চেহারা হয়েছে।
...
তারপর তিনি তাঁদের দুঃখের সাত কাহন শোনালেন। গেঞ্জি কারখানার মালিক গত মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছেন। তাতে অবশ্য পুরুষটি বিশেষ দোষ দেখেন না। মালিকেরও আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। তার উপর চৈত্র সেলের সময় ব্যবসা ভালো হবে ভেবে ধার দেনা করে অনেক কাঁচামাল তুলেছিলেন।
মহিলা ভালো বাংলা জানেন না। তিনি এক জগাখিচুড়ি ভাষায় জানালেন গত দুই সপ্তাহ ইনসুলিন বন্ধ। এখন শরীর অত্যন্ত দুর্বল। হাঁটতে গেলে মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছেন।
গ্লুকোমিটারের গোটা দুই স্ট্রিপ অবশিষ্ট ছিল। তাই দিয়ে সুগার মাপলাম। পাঁচশো বত্রিশ। বললাম, 'ইনসুলিন না নিলে তুমি শিওর মারা পড়বে।'
...
পুরুষটি বললেন, 'ডাক্তারসাব, পনেরো তারিখে লকডাউন উঠলেই বাড়ি ফিরব। হাতে টাকা পয়সা নেই। খাওয়া জুটছে না। বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে বের করে দেবে বলেছে। তার আগে যমুনাকে খাড়া করে দিন।'
একজন সহৃদয় মানুষের সাহায্যে এক ভায়াল ইনসুলিনের ব্যবস্থা হলো। কিন্তু মহিলা যে ডোজে ইনসুলিন নেন, তাতে খুব বেশি দিন চলবে না।
তাতেই তাঁরা খুব খুশি। বারবার ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, যদি আচ্ছে দিন সত্যিই আসে, তাহলে আবার দেখা হবে। তখনও আমরা কেউই জানিনা লকডাউন ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
যেতে যেতে মহিলাটি আবার ফিরে এলেন। আমায় অবাক করে ছেঁড়া চটের ব্যাগ থেকে একটা নতুন হেলথ ড্রিংকস এর কৌটো বার করলেন। যেটার বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয় এটা খেলে বাচ্চার তিনগুণ বেশি বুদ্ধি ও শক্তি হবে।
মহিলা তাঁর বিচিত্র ভাষায় জিজ্ঞাসা করলেন, 'যদি এটা রোজ দু-চামচ করে মেয়েকে খাওয়াই, তাহলে মেয়ের এই মহামারীতে কিছু হবে নাতো।'
আমি গালাগালি দিতে গিয়ে থমকে গেলাম। কাকে গালি দেব? সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতে চাওয়া ওই অশিক্ষিত মা-কে?
গানের ভিতরে গান : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ৩২৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
তার চেনা এক রেকর্ড কালেক্টর আছে মতিন মিঞা। তার বাড়ি বারাসতে। সে কলকাতা কেন জেলায় জেলায় ঘুরে নানা গান জোগাড় করে আনে। সিডি, টেপ। তারপর শুভমকে ফোন করে, স্যার লাগবে, প্রাণবন্ধু ঘোষাল, সেভেন্টি এইট, সাতষট্টি সালের রেকর্ড, নিজের কথা নিজের সুর, বর্ষার গান, খুব ভালো, শুনে দেখুন, মনে হবে...।
কী মনে হবে মতিনভাই ?
স্যার কাল রাতে আমার গ্রামোফোনে চালিয়ে ছিলাম, মেঘ করেছে ঘন করে, ঠান্ডা বাতাস বইছে, তখন বেলা পড়ে যায় যায়, ষোল সতের তারা, রঙিন শাড়ি, মাথায় লাল ফিতে, হাত ধরে নাচছে আর গাইছে।
তারপর ?
সব যেন এক পেখম তোলা ময়ুরকে ঘিরে গাইছে গো।
তারপর।
কখনো মনে হতে লাগল কৃষ্ণকে ঘিরেছে গোপিনীরা, গোবর্ধন গিরির মাথায় মেঘ জমেছে , মেঘের ছায়া নেমেছে ধরাতলে।
নিস্তার মোল্লার মহাভারত : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ৬০৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৪
পৃথিবীটা কখন বদলাল ভাবি। সেটা কি যেই মুহূর্তে নিস্তার ভাইয়ের বোন নুসরা বেগমের পদক্ষেপ পড়েছিল কেশব ব্যানার্জির বাড়িতে তখন থেকে? মনে পড়ল নিস্তার ভাই সেদিন খুব উত্তেজনা নিয়ে দরজা খুলে দিয়েছিলেন, কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন, হয়তো তিনি ভবিষ্যৎ দেখেছেন সেটাই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহাবিশ্বের কার্য ও ফলাফলের মধ্যে একটা সমীকরণ রয়েছে, সেইজন্য আলোর গতির বেশি গতিবেগে আমরা সংকেত আদানপ্রদান করতে পারি না, তাই মহাবিশ্ব নুসরা বেগম হয়ে নিস্তার ভাইয়ের কথায় বাদ সেধেছিলেন, আমার পুরনো পৃথিবীর সমাপ্তি সেখানেই হয়েছে।
মহাবিশ্ব ভবিষ্যতে কী হবে সেটা আমাকে জানতে দিতে চায়নি। তাই নুসরা বেগমকে ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে আসতে হয়েছিল। দিনটা কী ছিল মনে করার চেষ্টা করি, ১৯৭৫য়ের ৮ই অগাস্ট। হয়তো নিস্তার ভাই আমাকে শেখ মুজিবের আসন্ন মৃত্যু সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন।
বর্ণসংকর : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ১৯৭২ বার পঠিত
রাধি, আজ ভরাপূর্ণিমা। চল, রাস খেলি।
কুঠিয়ালের গোমস্তা হয়তো তার প্রিয় এক নারীকে এমন কিছুই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন আট দিক থেকে কুকুরের ডাক ভেসে এসেছিল। গোল চাঁদের দিকে মুখ তুলে ওরা কেন যে একসঙ্গে কাঁদে, কে জানে। রায়মশাই শুনলেন হাজারও বেজম্মার দল এক সঙ্গে হাসছে। সঙ্গে সঙ্গে টের পেলেন পরনের কাপড় নীচের দিকে ভেসে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে ঘর ভরে গেছে। পিঠের ওপর কে যেন শক্ত জুতো দিয়ে চাপ দিচ্ছে। কে হাসছে ? রাধি ? রাধি, আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রাখ। আমি বেঁকে যাচ্ছি, ধনুকের মত বেঁকে যাচ্ছি। আঃ রাধি, সরে যা। আমার লজ্জা করছে।
বিছানা ভেসে যাচ্ছিল। মলমূত্র কোথা দিয়ে বেরোয় – সবাই জানে। কিন্তু প্রাণপাখি যে নবদ্বারের কোন দ্বার দিয়ে বেরোয় – কেউ সঠিক বলতে পারে না। রাধিকা খুব অবাক হয়ে দেখছিল তখনও বাবুর শরীরের গর্মি বোঝা যাচ্ছে।
জল : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ২৭৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
চাঁদ সেদিন সরু হতে হতে সুতোর মতো, যেন সেদ্ধ ডিম ফালি করা যাবে তা দিয়ে। নিমগাছটায় রাতজাগা কাকের পালক ঝাড়ার আওয়াজ কানে এল আন্নুর। রাত কতো হল কে জানে, সাতদিন পার করে আজও দিলদার ফিরল না। আপসোস। পাশের ঘর থেকে ক্রমাগত ধর্ষণের হুমকি আর দেওয়ালে লাথি মারার আওয়াজ এই সবে থামলো। ঝুলে পড়া তলপেট খালি করতে যাবার এই তো সময়। আন্নু খসে পড়া ওড়না তুলে মাথায় দেয়। খোলামাঠে উদোম হয়ে বসার সময়ও মাথার কাপড়টি ঠিক রাখতে হবে। নাহলে রীত ভঙ্গ হয়। বাহারে দুনিয়া, বাপ ছেলে এক নারীকে ভোগ করলে, টাকা দিয়ে মেয়ে কিনে তাকে ভঁইসার মতো খাটালে, কোন রীত ভাঙে না, দুনিয়া উলটে যায় শুধু মাথায় কাপড় না থাকলে !
স্বর্গ ছেঁড়া : শাহনাজ মুন্নী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ৩০৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
‘স্বর্গ চেনো না, মিয়ারা, বেহেশত চেনো না, জান্নাতের কথা শুনো নাই কোনদিন?’
‘শুনছি, শুনছি।’
লোকেরা বলাবলি করে, ‘স্বর্গের আছে মণিমুক্তাখচিত সোনার তৈরি দরজা, সেইখানে সকল দালানের ইট সোনা রূপায় তৈরি, মাটি খাঁটি জাফরানের, কাঁকর হইল মণিমুক্তা আর ইয়াকুত পাথর, আবে রহমতের নদী সুরম্য স্পন্দনে সারক্ষণ বয়ে চলে সেখানে, যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা, মধুর চেয়ে মিষ্টি, স্বর্গের গাছগুলো সোনা ও রূপার, ফলগুলি নিকটবর্তী, বাতাস মোলায়েম, জান্নাতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেই সোনা রূপার পাত্রে তোমার সামনে চলে আসে সুস্বাদু বেহেশতি খানা, আসে মাছের কলিজার কাবাব, আসে সুমিষ্ট ফলফলাদি, আসে শীতল পানীয় ভর্তি পানপাত্র। আরো নাকি সেইখানে আছে নূর দিয়া তৈরি অলৌকিক হুর। তারা নব্যকুমারী, অতিশয় সুন্দরী, নম্র ও নরম। তারা পরিচ্ছন্ন, স্বপ্নমানসী। হুর বালিকার মৃদু হাসিতে চারদিক আলোকিত হয়, একবিন্দু থুতুতে মিঠা হয়ে যায় দরিয়ার সমস্ত পানি...’
আজাজিল : মাসুদা ভাট্টি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ২৯৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
রাগের মুহূর্তে জামাল সাহেবের কথা বলার সুরটি অবিকল সেই খরিস সাপের মতো, আর তার মুখের সামনে দাড়িয়ে শাহিদা তখন সত্যিকার অর্থেই কাঁপতে থাকে, নারকেলের লম্বা পাতায় শয়তান ভর করলে যেমন অনবরত কাঁপতে থাকে, ঠিক তেমনই। শাহিদাদের নারকেল গাছের আর সব পাতাগুলো যখন নিথর থাকে, শুধু একটি মাত্র পাতা যখন অনবরত কাঁপতে থাকে তখন ওর দাদি বলেন, “শয়তানের ভর হইছে, একখান কাচি পোড়া দিয়া থো”– শাহিদা তখন একটা কাচি চুলোর ভেতর গুজে দিত। সেসব দিন শাহিদা আখতার ভুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, আজকাল তো সে আর শুধু শাহিদা নয়, শাহিদা আখতার। জামাল সাহেব কখনওই তাকে শুধু শাহিদা ডাকেন না, ডাকেন শাহিদা আখতার বলে।
করোনা ও রাজনীতি (করিবেন না): একটি বামৈস্লামিক চব্ব : রৌহিন ব্যানার্জী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ এপ্রিল ২০২০ | ৪১৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
করোনায় ভারতবর্ষে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৃতের নাম ন্যূনতম মনুষ্যত্ব, মানবিক বোধ। তার হয়তো মৃত্যু বরাদ্দই ছিল, কারণ সে বহু আগে থেকেই ধুঁকছিল, আর এরকম শিকার তো করোনা ছাড়ে না বলেই জানা গেছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয় নি। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং হয়েছে, ওদিকে হাজারে হাজারে মানুষ পথে হাঁটছে, হাঁটতে হাঁটতে মরে পড়ে যাচ্ছে, আমরা নির্বিকার। মানুষকে কীটনাশক দিয়ে ধুইয়ে দিচ্ছেন আধিকারিক – আমরা নির্বিকল্প। আধিকারিক ভুল স্বীকার করছেন – আমরা খুশী। আমরা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি যে ভুল যে স্বীকার করলেন – কিসের ভিত্তিতে? ঠিকটা কী? আদৌ আপনি জানেন যা করেছেন তা ঠিক না ভুল? কেউ জানে?
ইকোলজিভিত্তিক কৃষিবিজ্ঞান ও খাদ্য সুরক্ষার জন্য লোকায়ত শস্যবৈচিত্র্যের গুরুত্ব : ডঃ দেবল দেব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৫ এপ্রিল ২০২০ | ৫৫৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
মূল প্রবন্ধ থেকে বাংলায় ভাষান্তরঃ স্বর্ণেন্দু শীল
শস্যের সাবেকি জাতগুলো সুস্থায়ী কৃষির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, কারণ তাদের ফলনের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা বেশিরভাগ আধুনিক জাতের চাইতে বেশি। পর্যাপ্ত পরিমাণ সাক্ষ্যপ্রমাণ এটাই দেখায় যে যখনই সেচের জলের বা সারের স্বল্পতা দেখা যায় - খরা, সামাজিক সমস্যা কিম্বা সরবরাহ ব্যবস্থার সাময়িক গোলযোগে, আধুনিক জাতগুলোর ফলন ঘাটতি অনেক বেশি হয় ও অনেক বেশি অঞ্চল জুড়ে এই ঘাটতি দেখা যায়১০ [Cleveland et al. 1994]। চাষের আদর্শ পরিস্থিতিতে, কিছু সাবেকি জাতের গড় ফলন উচ্চফলনশীল জাতদের থেকে কম হতে পারে, কিন্তু যে প্রান্তিক পরিবেশের জন্য ঐ দেশি জাতটা বিশেষভাবে অভিযোজিত, সেখানে তাদের ফলন উচ্চফলনশীল জাতের থেকে অনেকটাই বেশি।
করোনা-নীতি বিষয়ে একটি প্রশ্নোত্তর : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ এপ্রিল ২০২০ | ৬৩৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩২
আরে, বলতে চাইছেন কী এক্স্যাক্টলি? লকডাউনটা ভুল - এই তো??
এককথায় ঠিক নাকি ভুল - বলা মুশকিল। কিন্তু, তার চেয়েও বড় কথা - বলে আর লাভ নেই। আমরা তো লকডাউনের চতুর্থ সপ্তাহে আছি। লকডাউনই বলুন বা সোশ্যাল ডিস্টান্সিং - তার আর্থিক প্রভাব গভীর। শুধু গরীব লোকই না - আঁচ পড়বে আমার বা আপনার উপরেও - কিন্তু, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষেরা যেমন ঘোর বিপদে, নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে, আপনি বা আমি ততোখানি নই। লকডাউন ঠিক হয়েছিল, নাকি ভুল - এ নিয়ে আলোচনা করার সময় অনেক পাওয়া যাবে - স্রেফ লকডাউন করে করোনার থাবা থেকে কত লক্ষ বা কত কোটি মানুষকে বাঁচিয়ে দেওয়া গেল, সে নিয়েও হাওয়া গরম করার সময় পরে মিলবে - আপাতত এটুকু নিশ্চিত করা যাক, যাতে লকডাউনের কারণে অনাহারে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত না হতে পারে।
‘নতুন’ করোনা – বিভ্রান্তির মধ্যে কীসের ইঙ্গিত? : স্থবির দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ এপ্রিল ২০২০ | ৭৭৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
অমন দূরত্ব নির্মাণের অদূরপ্রসারী ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, বুদ্ধির বৈকল্যে তা যুদ্ধবিশারদদের কাছে ধরা পড়ে না। আমরাও হয়তো এইভাবে সমাজবিচ্ছিন্ন কোনও উৎকট জীবে পরিণত হয়ে যাব। আমরা কি অজান্তে সেই পথই খনন করে, নতুন অসভ্যতার রিহার্সাল দিচ্ছি? অথচ যুদ্ধের যে-কঠোর কৌশল আমরা এখন বাধ্য হয়ে মানছি তা এড়িয়ে যাওয়া যেত, যদি সময়মতো কর্তব্যগুলো কঠোরভাবে পালন করা হত। অন্তর্জলি যাত্রার দৃশ্যকল্প না-লিখে ভিয়েতনাম, কিউবা, থাইল্যান্ড বা দক্ষিণ কোরিয়া তা করে দেখিয়েছে। কারণ, সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার কাঠামোটা মজবুত। আমরা নিধিরাম! গলাবাজী আর ধূর্তামি ছাড়া আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে আছেই বা কী!
মে দিবসের ডাক : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ মে ২০২০ | ৩০৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
মুম্বাই এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। মার্চের শেষ হপ্তাতেও পজিটিভ কেস পাওয়া যাচ্ছিল কেবল উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত এলাকাগুলিতে। হয় তারা বিদেশ প্রত্যাগত বা বিদেশ থেকে আসা কারো সংস্পর্শদোষে দুষ্ট। কিন্তু এই একমাস বাদে ছবিটা সম্পূর্ণ পালটে গেছে। পশ এলাকা গুলিতে রোগী ক্রমশ কম, গরীব বেশি পজিটিভ। এখন ধারাভিতে ৩৪৪, কিন্তু বড়মানুষদের ওয়ার্ডগুলি থেকে মাত্র ৬৫ টি কেস রিপোর্টেড হয়েছে। বস্তিগুলির ঘর ছোট, গাদাগাদি বেশি, জল কম, কমন টয়লেট। করোনার মহা স্ফূর্তি। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে BMC পুলিশকে বেছে বেছে বস্তিগুলিকে সিল করে দিতে বলেছে।
আমি /আপনি হলে বাড়ি ফেরবার জন্য মরিয়া হয়ে পড়তাম না ? বসে থাকতাম কবে রাজ্য কেন্দ্রের নির্দেশে নোডাল অথরিটি গড়ে আটকে পড়াদের লিস্ট বানাবে, সেইজন্য ?
লকডাউন : দক্ষিণ কলকাতার না-মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তা : অর্ক ভাদুড়ী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ মে ২০২০ | ৩৫১৬ বার পঠিত
"রিকশ নিয়ে না বেরিয়ে উপায় নেই। সরকার চাল দিচ্ছে, কিন্তু তাতে মাস চলবে না৷ তাই দু'বেলাই বেরচ্ছি। পুলিশ দেখতে পেলে কখনও কখনও হাওয়া খুলে দিচ্ছে, মারছে, আবার টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে হাওয়া ভরে নিচ্ছি।" সংক্রমণের বিষয়ে বললেন, "হলে হবে। কী আর করা যাবে! এমনিও তো বেঁচে থাকতে কষ্ট হচ্ছে, মরে গেলে যাব। অসুবিধা কী!" আরও বললেন, "খিদেতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আপনি তিনদিন না খেয়ে থাকলে এমনিই অসুখে পড়বেন। পেট ভরা থাকলে ভাইরাস কিছু করতে পারবে না। খালি পেটে থাকলে ভাইরাস আরও কাহিল করে দেবে। ঘরে থাকলে না খেতে পেয়ে এমনিই দুর্বল হয়ে যাব।"
লাশের পরে লাশ : শুভেন্দু দেবনাথ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ মে ২০২০ | ৩৪৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
তিনি জানবেন না তার মজবুত বাড়ির ভিত টিমটি বার দিয়ে নয় কিছু মানুষের বুকের হাড় দিয়ে তৈরি। কিংবা একদিন ওই ধাপার মাঠেই গড়ে উঠবে বিলাসবহুল শপিং মল। আমরা যাব, ব্র্যান্ডেড জিন্স কিনব, মাল্টিপ্লেক্সে বান্ধবী অথবা বউয়ের হাত ধরে পপকর্ণ খেতে খেতে কোনো রিয়েলেস্টিক সিনেমা দেখব, আর ভাবব বিষাদে ডুবে যাব, আর ওই মাল্টিপ্লেক্সের ভিতের ভেতর শুয়ে থাকা মানুষগুলো হাসবে। অথবা ওই ধাপার মাঠ যেমন আছে তেমনিই পড়ে থাকবে। এখন যেমন ওই মাঠের যেখানে সেখানে কিছু নেশাড়িদের দেখতে পাওয়া যায় গাঁজা গাছ খুঁজতে, তেমনই ওই লাশের সারে উর্বর জমিতে নিজে নিজেই জন্মাবে কিছু গাঁজা গাছ। আমরা যেমন যেতাম একসময়, তেমনি কোনো তরুণ কবি ও লেখক ওখান থেকে তুলে আনবে ফুরফুরে সতেজ গাঁজা গাছের চারা, সেই গাছের পাতায় নেশা করবে। মৃত্যুর গন্ধ মাখা ওই তামাকে নেশা আরো বেশি হবে, তারপর নেশাতুর কলমে লিখবে...
ডা: রেড্ডি ও কোভিদ -১৯ ইত্যাদি : দিলীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ মে ২০২০ | ৪২৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
অনেক কারণেই ভারত আমেরিকার সঙ্গে তুলনীয় নয়। আমাদের জনসংখ্যার ৬ শতাংশের বয়স ৬৫ র ওপরে, গড় ২৮ শতাংশ ভারতীয়ের বয়স ২৯, জনসংখ্যার ২৮ শতাংশর বয়স ১৪র নীচে। আমেরিকায় মাথাপিছু ১১ হাজার ডলার খরচা হয় স্বাস্থ্য খাতে, আমাদের এখানে ৭৫ ডলার, অতএব ওদের সঙ্গে আমাদের একরাস্তায় হাঁটা বোধহয় অনুচিত হবে।এমনিতেও দক্ষিণ এসিয়ার করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটাও আমাদের জনসংখ্যার অনুপাতে কমই ঠেকছে। সবকটা সার্ক দেশ মিলেও সারা বিশ্বের করোনা আক্রান্তের ১ শতাংশের সামান্য বেশি। করোনা মৃত্যুর নিরিখে প্রায় ০.৫ শতাংশ। এ সব জনসংখ্যায় অল্পবয়সীদের অনুপাত বেশি বলে নাকি আমাদের মারী নিয়ে ঘর করার অভ্যাস থেকে, আমি জানি না।প্রতি ১০ লক্ষে এখনো অবধি দুশোর কিছু বেশি টেস্ট করা হচ্ছে ভারতে। ইউরোপ বা পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে তুলনায় দাঁড়ায় না ব্যাপারটা। জার্মানি তে দশলক্ষ পিছু ১৫৭৩০ জনের টেস্ট হচ্ছে, ইটালিতে ১৪,১১৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০৫৬৪।যতই চেঁচাই টেস্টিং ওই পর্যায়ে পৌঁছতে পৌঁছতে রোগের চেয়ে চিকিৎসা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে দেশবাসীর জন্যে।
সাগর দত্ত হাসপাতাল - একটি অপরিবর্তনের ছবি : ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ মে ২০২০ | ২৯৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এই মধ্যমগ্রামও যেন আগের শহর নয়। আজ বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা পুরো শুনশান। চৌমাথা থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে একটাও গাড়ি চোখে পড়ল না। ওভারব্রিজের মাঝামাঝি প্রতিদিনই দাঁড়াই। প্লাটফর্মের প্রত্যেকটা সিগন্যাল লাল হয়ে আছে। এই সময় যে হাজার হাজার লোক স্টেশনে ভিড় করে থাকত, আপ ট্রেন একগাদা ক্লান্ত লোককে কলকাতা থেকে বয়ে এনে প্লাটফর্মে উগড়ে দিত, তারা কোথায় গেল? তারা আর আদৌ কোনও দিন প্লাটফর্মে ভিড় করবে তো?সবকিছু বদলে গেছে, ভেবেছিলাম হাসপাতালও বদলে গেছে। অনেকদিন হাসপাতাল ভাঙচুরের খবর নেই, ডাক্তারের মাথা ফাটছে না। বিষ্ঠা মাখতে হচ্ছে না। স্বাস্থ্য কর্মীদের কয়েক জায়গায় পাড়া ছাড়া করা হয়েছে, মাঝ রাতে সিস্টারকে ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অসংখ্য মানুষ সেই সব ঘটনার সমালোচনা করে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
অস্তিত্বের আহ্বান : অচিন্ত্য দাস মজুমদার
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৩ মে ২০২০ | ৩৪৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
কিন্তু এত খাপছাড়া নিত্যনতুন সৃষ্টির সমাহারে বেচারা মানবকূল একেবারে থৈ পায় না। নিজেদের ক্ষুদ্র সীমায়, সীমিত বোধের ছাঁচে সবকিছুকে ফেলে তবে নিশ্চিন্ত বোধ করে। এই অজ্ঞান জাতির বোধে এটুকু কুলোয় না যে, একজন মানুষের সঙ্গে অন্যজনের একটা আঙ্গুলের ছাপও যেখানে মেলে না, সেখানে কোনো একজন গোটা মানুষকে বেশীরভাগের মতো করে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা হীন মুর্খামো ছাড়া আর কিছু নয়। অবশ্য স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকেই যাঁরা বেঁধে-ছেঁদে ফুল-বাতাসায় নামিয়ে এনে কেবল স্বার্থসিদ্ধির যন্ত্রে পরিণত করেছে, সেখানে তাঁর সামান্য সৃষ্টি আর কত মর্যাদা আশা করতে পারে...! আমরা যাঁরা অন্তরাত্মার আহ্বান শুনে নিয়ম-নিগরের তোয়াক্কা না করে সগর্বে নিজেদের অস্তিত্বের কথা জানান দিই, তাঁরাই এই মানবসভ্যতার কাছে বেখাপ্পা, অদ্ভুতুড়ে, কিম্ভুতকিমাকার এক মুর্তিমান দ্রীঘাংচু।
পর্দা ফাঁস : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ মে ২০২০ | ৬৩০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
করোনা অতিমারীকে অবৈধভাবে শ্রমিক আটকে রাখার একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রেনে সোশাল ডিস্ট্যান্সিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গ্রামে পৌঁছলে চোদ্দ দিন আইসোলেশনের ব্যবস্থা ছিল। বরং শ্রমিককে কাজের জায়গায় যে ভাবে রাখা হয়,খুপরি ঘরে গাদাগাদি করে অনেকজন,বা ঘিঞ্জি বস্তিতে ,তাতেই করোনা বেশি ছড়াবার কথা। রাতারাতি তার জন্য বিল্ডার স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ,রোগ প্রতিহত করবার মতো ব্যবস্থা করে দেবে এটা ভাবাও বাতুলতা।শ্রমিক নিজেও এই ভয়টি পাচ্ছে। একে তো তার অন্নাভাব। কেরালা ছাড়া কোন রাজ্যই পরিযায়ীদের জন্য সন্তোষজনক ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি। উপরন্তু মৃত্যুভয়। দেশগাঁও থেকে বহুদূরে,আপনজনের মুখ না দেখে দূর নির্বাসনে মরতে কারই বা মন চায় ! তাই ঘড়ি মোবাইল বেচেও সে ট্রেনভাড়ার যোগাড় করেছে। কেউ সেটা বহন করলে ঠিক আছে, না করলেও কোনো পরোয়া নেই। এই ঐকান্তিক ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে কোন স্পর্ধায় তার চলাচলকে অপ্রয়োজনীয় ( unnecessary travel) বলা হচ্ছে ?
ছবি দেখা – পঁচিশে বৈশাখে রবীন্দ্রনাথের একখানা ল্যান্ডস্কেপ : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মে ২০২০ | ৪০২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
ছবি নিয়ে তিনি আঁচড় কাটতে কাটতে যে গভীরতায় পৌঁছেছিলেন, আজীবন সাঁতারু বহু শিল্পীর সে জলে পৌঁছানো হয়ে ওঠে না। অতএব, প্রত্যাশিতভাবেই, ইউরোপীয় চিত্রদর্শনে অভ্যস্ত চোখ বা প্রাচ্য চিত্ররীতিতে অভ্যস্ত অনুভূতি – দুইয়ের কেউই রবীন্দ্র-অনুভবে গভীর অবগাহনে সক্ষম হলেন না – হওয়া সম্ভবই ছিল না, হয়ত। একটি সাক্ষাৎকারে এই সময়ের শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ বিমূর্ত শিল্পকলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ছবি, তাঁর মননটাই সম্পূর্ণ আলাদা স্তরের – সেই চেতনার স্তরে উত্তরণ সবার পক্ষে সম্ভব নয়।
কোথায় তুমি চলেছ, আমার দেশ? : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মে ২০২০ | ৫৭২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
ফেরো, আমার দেশ, ঘরে ফেরো। আর যেওনা রাক্ষসের নরভুক পুরীর উন্নয়ন-পুজোয় বলি হতে। নিজের ঘরে থাকো। নিজের জোরে থাকো। ও মা আমার, তোমার লক্ষ মুখ যখন কাতরাচ্ছিল, যখন মায়ের কোলেও ঘুমোচ্ছিল না খিদেয় কাঁদা শিশুরা, যখন সতেরো দিনের বাচ্চা কোলে বাড়ি যাবে বলে হাঁটছিলে তুমি, তখনও তোমার মাথার ওপর জেগে ছিল নীল আকাশ। মেঘ। গাছপালারা তাকিয়েছিল দূর থেকে। পাশের সরু ঘোলাটে জলধারাটি যে তোমার ফেটে যাওয়া বুকে ওই কাদাজলের অঞ্জলি জোগাচ্ছিল- এরা সবাই তাকিয়েছিল তোমার দিকে। তোমার অপেক্ষায়। ওরাও আশ্রয়হারা। তুমি ওদেরও বাঁচাও। আমাদের বাঁচাও, শিক্ষিত করো আমাদের।
তুমি নিজের ঘরে থাকো।
গোধূলি গগনে নব পত্রালিকা : শিবাংশু দে
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০২০ | ৩৯৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
রবীন্দ্রসঙ্গীত অপ্রগলভ মানুষের শিল্প। গত দু'দশক ধরে আমাদের দেশে জীবনযাপনের চালিকাশক্তি হলো বাজার অর্থনীতি। প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি জীবনের মূল্য ধরা হয় বাজারে তাদের চাহিদা কতোটা রয়েছে, সেই মাপে। ইংরিজিতে একটা শব্দ রয়েছে ' স্ট্রিট স্মার্ট' । বাংলায় বলা হয় ' চালাকচম্বা '। বিশেষণটির মধ্যে হয়তো কিঞ্চিৎ কৌণিক ব্যঙ্গ থাকে। কিন্তু আমরা লক্ষণটিকে এ যুগের জাগতিক সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করি। আমাদের সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করি এই 'গুণ'টি আয়ত্ব করতে। তারাও সেভাবে বেড়ে ওঠে। জাগতিক সাফল্য কতোটা আসে তার বিচার সব সময় করে ওঠা যায়না। কিন্তু তাদের উদ্বৃত্ত সময়ে গভীরতর চিন্তার পরিসরটি কমে যায়। উদাহরণ হিসেবে 'রবীন্দ্রসঙ্গীত' নামক চিন্তার অঙ্গনটির কথা ভাবা যেতে পারে। এই শিল্পটি যতোটা 'সরল' বোধ হয়, সেটা বোধ হয় ততোটাই কঠিন। 'কঠিন' বলতে বোঝাচ্ছি ফাঁকি দিয়ে এর তল পাওয়া যায়না। এই ধারাটি গাইতে যাওয়ার আগে তাকে পড়তে হয়। সযত্নে, সাবধানে, ভালোবেসে। প্রতিটি শব্দ থেকে, নির্মাণ থেকে উঠে আসে নতুনতর অর্থ, ব্যঞ্জনা, তাৎপর্য। বিশ বছর বয়সে যে গানটি যেভাবে পড়েছিলুম, ষাট পেরিয়ে তার অর্থ বা ব্যঞ্জনা আমার কাছে আলাদা হয়ে গেছে।
চরমপন্থী রবীন্দ্রনাথ- স্বদেশী সমাজ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০২০ | ৫৮৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
আমরা আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাস, ইউরোপের কলোনি ও যুদ্ধ-বাণিজ্য বিস্তারের ইতিহাস, সমস্ত কিছুতেই এই রাষ্ট্রধারণার প্রাবল্য দেখি। এমন কী ধর্মকেও রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হয়। কিন্তু, ভারতীয় দেশগুলিতে যেহেতু এই রাষ্ট্রচেতনা গণমানসে খুবই ক্ষীণ, তাই রাষ্ট্রপরিচালনার নীতিসমূহ নিয়ে আলোচনা-আন্দোলনে জনতার উৎসাহও কম। সম্ভবতঃ, আজকের ভারতেও আমরা দেখতে পাই, এই চেহারাটা। রাজনৈতিক দলগুলির ভাগাভাগি, একই এজেন্ডা নিয়ে একাধিক নামে দল তৈরি হওয়া, ব্যক্তিগত প্রভাবের প্রাচুর্য সবই পলিটিকালাইজেশোনের অভাবকে একভাবে সূচিত করে। এমন কী, রাজনৈতিক দলগুলিও সেখানেই সফল যেখানে তারা রাষ্ট্রনীতির পরিসর, পার্লামেন্টারি ডিবেটের বাইরে সামাজিক সংযোগ করেছে। যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ এইদেশে পলিটিক্স-এর অচলতার কারণ বুঝেছিলেন, এই প্রবন্ধগুলিতে বেশ বিশদে তা আলোচনা করেছে।
পাশে থাকার বার্তা - ব্যাঙ্কসির ছবি : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ মে ২০২০ | ৩৯৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ব্যাঙ্কসি কে, বা তাঁকে কেমন দেখতে, তিনি শ্বেতাঙ্গ নাকি তাঁর গাত্রবর্ণ গাঢ় - সেকথা কেউ জানেন না। অথচ, তিনি ভুবনবিখ্যাত। ক্যামেরার সামনে নিজের মুখটিকে অষ্টপ্রহর ভাসিয়ে রাখার এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার যুগে, তিনি নিজেকে আড়ালে রাখেন - এবং, অনেকে বলেন, এই আড়ালে রাখার সচেতন প্রয়াসই, সম্ভবত, তাঁর বিপণন-কৌশল - আর, সেটাকে যদি কৌশল বলে মেনেই নেন, মেনে নিতেই হয়, সে কৌশল অসম্ভব কার্যকরীও বটে। তিনি পথশিল্পী - রাস্তার ধারের দেওয়ালে তিনি ফুটিয়ে তোলেন নিজের শিল্প - তিনি গ্রাফিত্তি-শিল্পী - এক নিজস্ব ধাঁচের স্টেনসিলে দেওয়ালে আঁকেন সময়ের ধারাভাষ্য। গ্যালারিতে নিয়মিত শো না করেও তিনি বিশ্ববিখ্যাত।
অর্থনৈতিক প্যাকেজ বিশ্লেষণ (প্রথম পর্ব) : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মে ২০২০ | ১৯৪৯ বার পঠিত
পরিষেবায় যেহেতু কারখানা লাগে না, তার পুঁজির দাবিও কম। অন্য ভাবে বললে, দশ কোটি টাকা লগ্নি করে যত বড় পণ্য উৎপাদনের ব্যবসা ফাঁদা যায়, সেই একই লগ্নিতে পরিষেবার ব্যবসার মাপ অনেক বড় হবে। অর্থাৎ, পণ্য আর পরিষেবার মধ্যে ফারাক মুছে দেওয়ার ফলে পরিষেবা ক্ষেত্রে আরও অনেক বড় ব্যবসা চলে আসবে এমএসএমই-র সংজ্ঞার ভিতরে। গ্রামের অতিক্ষুদ্র শিল্প আর শহরের মাঝারি পরিষেবা উদ্যোগের মধ্যে ঠিক ততটাই ফারাক, ভারত আর ইন্ডিয়ায় যতখানি। নির্মলা সীতারামন আজ জানিয়ে দিলেন, তিনি কোন দলের হয়ে খেলছেন। আসলে শুধু তিনি নন, গোটা সরকারই খেলছে একটা দলের হয়ে। অন্নচিন্তায় দীর্ণ, বেকারত্বের গ্নানিতে ম্লান ভারতের কেউ সেই দলে নেই।
জীবন এবং জীবিকার অনিশ্চয়তা: দিল্লী এবং তার আশেপাশের এলাকায় কোভিড-১৯ এর প্রভাব : ডা: শান্তনু প্রামাণিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মে ২০২০ | ৩২৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কোভিড-১৯ মহামারীর সামগ্রিক প্রভাব বুঝতে গেলে, শুধুমাত্র কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, এই রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা, কোভিড-১৯ কেস সনাক্ত করতে পরীক্ষার সংখ্যা- এই সূচকগুলোর ওপর জোর দিলে হবে না। এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলোর পূর্বাভাসও একটি অসম্পূর্ণ চিত্রই প্রকাশ করে, কারণ মডেলগুলো বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন বয়েসের এবং পেশার মানুষ- মহিলা ও পুরুষ- কিভাবে সামাজিক ভাবে মেলামেশা করে সেই জটিল ব্যাপারটাকে একত্রিত করতে পারে না কারণ ডেটা নেই। আবার মহামারীটির প্রভাবের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে মডেলগুলো শুধুমাত্র উপরোক্ত সূচকের কথাই বিবেচনা করে- ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলো বলে যে দু-সপ্তাহ লকডাউনের থেকে চার-সপ্তাহ লকডাউন ভালো, চারের থেকে আট ভালো ইত্যাদি। কিন্তু সার্বিক বিচারে সেটা ঠিক নাও হতে পারে, দেখা যাক আমাদের সার্ভে কি বলে।
অর্থনৈতিক প্যাকেজ বিশ্লেষণ (দ্বিতীয় পর্ব) : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মে ২০২০ | ১৫৯১ বার পঠিত
খোঁজ করা দরকার, কোভিড-১৯ কৃষিক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলল? উৎপাদনের পরিমাণ কমেনি, বরং গত অর্থবর্ষে তুলনায় এই বছর দেশে রবি ফসলের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই শতাংশের মতো। খবরে প্রকাশ, এফসিআই-এর গুদামেও প্রয়োজনের তিন গুণ খাদ্যশস্য মজুত আছে। ফলে, কোভিড-১৯’এর ধাক্কায় খাবারের জোগান কমে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। কৃষিক্ষেত্রে সমস্যা অন্য অনেকগুলো। এক, অভিবাসী শ্রমিকরা ঘরে ফিরে যাওয়ায় রবি শস্য তুলতে বিপুল সমস্যা হয়েছে; দুই, নতুন ফসল বোনার সময় যে জিনিসগুলো লাগে, অর্থাৎ বীজ, ট্রাক্টর, চারার ওষুধ— বাজারে কোনওটারই যথেষ্ট জোগান নেই; তিন, লকডাউনের ফলে ফসলকে বাজারজাত করার সমস্যা— চাহিদার সমস্যা; চার, রফতানির বাজার বন্ধ। এমনই অবস্থা যে কিছু দিন আগে পি সাইনাথ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যে কৃষকরা ক্যাশক্রপ বা পণ্যশস্য উৎপাদন করেন, তাঁরা ঘোর বিপাকের মুখে পড়বেন।
পুঁথি পত্রে যা লিখে রাখছি : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মে ২০২০ | ২১৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এই আপতকালীন সময়ে মানুষের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। ফেসবুকে এক কবিতা ঘুরছে, কখনো সেই কবিতার নাম শঙ্খচিল, কখনো তার নাম ‘মহামারী’। কখনো তা জীবনানন্দের কবিতা, কখনো তা শঙ্খ ঘোষের, কোভিড-১৯ এর মতো সে মিউটেট করেই যাচ্ছে। প্রতিপাদ্য হলো ‘ আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে...আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে...আমাদের দেখা হোক বীজানু ঘুমালে---ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁর কন্যা শ্রাবন্তী ভৌমিক জানালেন, এই কবিতা তাঁর বাবার নয়। বাবার নামে যা ঘুরছে তা কে লিখেছে কেউ জানে না। ঘরে বসে যে যা পারছে করছে। এত ভিডিও, এত কার্টুন, এত সব ভুয়ো সংবাদ আসার বিরাম নেই। সংবাদ ভুয়ো হয় জানি। গুজব রটিয়ে এক এক গোষ্ঠী এক একরকম স্বার্থ সাধন করে। কিন্তু কবিতার গুজব এই জাতিই পারে।
অর্থনৈতিক প্যাকেজ বিশ্লেষণ (তৃতীয় পর্ব) : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ মে ২০২০ | ৩১৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
প্রশ্ন করা যাক, এই সংস্কারে কাদের লাভ, কতখানি লাভ। ভারতে এখনও সত্তর শতাংশ বিদ্যুৎই তাপবিদ্যুৎ। সবচেয়ে বেশি কয়লা খরচ হয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেই— ২০১৭-১৮ সালের হিসেব বলছে, ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল মোট ৮৯৬.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা, তার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহৃত হয়েছিল ৫৭৬.১৯ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ ৬৪.৩% । কাজেই, কয়লাখনি বিক্রি হলে কাদের লাভ, সেই খোঁজ করতে গেলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার খোঁজ না নিয়ে উপায় নেই। ভারতে সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার নাম আদানি পাওয়ার লিমিটেড— মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২,৪১০ মেগাওয়াট। আছে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার— উৎপাদন ক্ষমতা ছ’হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সস্তায় কয়লার ব্যবস্থা হলে মন্দ কী? এ ছাড়াও লাভবান হবে টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লিউ। প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্যও বিবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটা অনুমান করার জন্য কোনও নম্বর নেই যে দেশের পয়লা নম্বর বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার মালিকের নামও গৌতম আদানি।
গুহ্যকথা : অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৮ মে ২০২০ | ৩৫৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
লোকটা হাত নেড়ে বলে, বাতাস না, বাতাস না—ওসব হল গুহ্য কথা—বুঝলেন কিনা! কানের পাশ দিয়ে ফিসফিস করে বয় আর বলে যায়, সাবধান, সাবধান!
লোকটা চোয়াল শক্ত করে বলে, হোমে দুটি ছেলে থাকে না? মাজু আর কেল্টু? হারামির হাড় একটা! এই তো সেদিন এদিকের পরিচিত পাগল, নিত্যকে পিটিয়ে মেরে দিল—কেউ কিছু করল না, জানল না, বুঝল না—মেরে খালের জলে ভাসিয়ে দিল দেহ—গুহ্যকথা, গুহ্যকথা!
“আপনি লিখছেন বিশ্বসাহিত্যের ধারাবাহিকতা বহন করে। লিখছেন সময়ের জন্য।” : পার্থপ্রতিম মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ মে ২০২০ | ৩৯১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আমি যেদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বরিশালের যোগেন মণ্ডলে, বরিশাল কেন রাখলেন? তিনি তো বরিশালে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। জটিল সাহিত্যবোধে, অনেক গভীরতর কথা বলা যেতো, কিন্তু দেবেশ রায় প্রথমেই বললেন তখনকার সময়ে জায়গার নাম দিয়েই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চেনানো হতো। যেমন বরিশালের যোগেন মন্ডল, তিস্তাপারের বাঘারু , জলপাইগুড়ির দেবেশ এরকম। এর বেশি কোন কারণ তখন আমার মাথায় ছিলনা। আমার মাথায় ছিল একটা ঘোর, যে ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে আমি দিস্তার পর দিস্তা বরিশালের যোগেন মন্ডল লিখেছি, শুধু প্রাকৃতিক কর্ম ছাড়া লেখা থেকে চোখ সরাইনি। অসুস্থ হয়ে পড়তাম, একটু সুস্থ হয়ে আবার লিখতে বসতাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম ঐরকম একটা জায়গায় যেখানে যোগেন মন্ডল পাড়ি দিচ্ছেন পাকিস্তানে, সেখানে বইটা শেষ করলেন কেন? তাঁর উত্তর ছিল, আমি শুধু ঐটুকুই বলতে চেয়েছি। তার পরের অংশে আমার কোন আগ্রহ বা দায়িত্ব নেই। আমি তো ইতিহাস লিখছি না উপন্যাস লিখছি।
জাতীয় বিপর্যয় ও যুক্তরাষ্ট্রের দায় : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ মে ২০২০ | ৫২৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
কেন্দ্র হল জমিদার, যাদের কাছে এ রাজ্যের অস্তিত্ব কেবল খাজনা আদায়ের সময়ে, এ বাস্তবতা বহুদিনের। ফলে আজ কেন্দ্রীয় সরকারের মুখে কুলুপ, সর্বভারতীয় মিডিয়ার অভ্রংলিহ নীরবতা, নতুন কিছু নয়। আকাশ থেকে পড়ারও কিছু নেই। এটাই চালু পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে আমরাও মেনে নিয়েছি এবং স্বীকৃতি দিয়েছি। মেনে নিয়েছি, যে, করের টাকা আসলে কেন্দ্রের প্রাপ্য, রাজ্যের কাজ হল কাকুতি-মিনতি করা। বাবু দুটো কলামুলো দিন না। বাবু কখনও দিয়েছেন, কখনও দেননি। আমরা এই লাথিঝাঁটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি। হিন্দুস্তানকে জাতি, দিল্লির মিডিয়াকে "জাতীয়" মিডিয়া, লুঠকে ন্যায়সঙ্গত এবং হাত কচলানোকে ভবিতব্য মনে করেছি। "বঞ্চনা" নিয়ে খিল্লি করেছি। বলিউড আর ক্রিকেট দেখে নিজেকে মূল ধারার ভারতীয় প্রমাণ করতে চেয়েছি। কিন্তু সবই একতরফা। আমরা দিল্লির অপরাধের ঘটনায় গর্জে ওঠাকে মূল ধারায় ঢোকার উপায় ভেবেছি, দিল্লির স্লোগান আওড়ানোকে "কুল" ভেবেছি, দিল্লির আবহাওয়ার বিপর্যয়কে সারা ভারতের বিপর্যয় ভেবেছি। সবেতেই "জাতীয়" মিডিয়া ধোঁয়া দিয়েছে। কারণ জমিদারের সমস্যা গোটা তালুকের সমস্যা।
লকডাউন, হিন্দুত্ববাদীদের ভূমিকা, পুলিশের লাঠি, কাশ্মীরের সুখবর : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ মে ২০২০ | ৩২৫০ বার পঠিত
লকডাউনপর্বে রাষ্ট্রের একটা নির্দয়, ভয়ঙ্কর, কুতসিৎ ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছে সোস্যালমিডিয়া। সেটা হল, গরিব মানুষের উপর পুলিশের অত্যাচার ঘটনা। কয়েকশো পুলিশি অত্যাচারের ভিডিও আপলোড হয়েছে এই সময়ে। গরিব মানুষকে লাঠিপেটা করা, রাস্তায় ফেলে পেটানো, তাদের জিনিস ফেলে দেওয়া, গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো, এমন অসংখ্য ঘটনা উঠে এসেছে সোস্যাল মিডিয়ায়। দেখে মনে হচ্ছিল ইংরেজ আমলের সেপাইরা কালা আদমি পেটাচ্ছে। ঠিকই, প্রকাশ্যে জাতীয় সড়কের উপর ঘটে যাওয়া এত বড়ো অপরাধের জন্য শাস্তি হল না কারও। কিন্তু খবর চেপে রাখা যায়নি। তাৎক্ষণিক কোনও সমাধান পাওয়া গেল না, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে। আশা করব, কেউ কেউ নিশ্চয়ই ওই সব ভিডিও সংরক্ষণও করছেন।
আমপানের ধ্বংসস্তূপ বাংলায় নিকষকালো রাতে লন্ঠনের আলোটুকুই এখন ভরসা : সৈকত মিস্ত্রী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০২০ | ৩৪২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এমন অসংখ্য দৃশ্যের জন্মদিয়ে গেল সাইক্লোন। মত্ত বাতাস টিনের চাল উড়িয়ে ফেলেছে অন্যের বাড়ি। মুড়মুড় করে টালির গুঁড়ো হওয়ার শব্দ, কড়মড় শব্দে গাছ ভাঙার শব্দ আর একরাশ আতঙ্কে প্রহর গুণেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার বিধ্বস্ত এলাকায় গেলে গাছকাটার খটাখট, টিন পেটানোর দমাদম শব্দ আর হাউমাউ কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল। বিদ্যুতের খুঁটিগুলো হেলে আছে, কোনটা টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেছে, চারদিকে ভগ্নস্তূপ আর গুটানো, ছেঁড়া তার। বিপর্যস্ত লোকজনের আশাহীন চোখে একটাই জিজ্ঞাসার ভাষা - "আমাদের কী হবে?"
খাটা পায়খানা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ মে ২০২০ | ৩৫৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
যথারীতি রঙ্কির পেট ব্যথা চাগাড় দিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে টিনের দরজা বন্ধ করেছে, কিন্তু এমন পেট মোচড়ানো যে শেকল তুলে দিতে পারেনি। কিন্তু আমাশার যেমন হয়, মোচড়াবে, কিন্তু একবারে ক্লিয়ার হবেনা, রঙ্কি কোঁথ পেড়েই যাচ্ছে ,পেড়েই যাচ্ছে, পেট আর পরিষ্কার হয় না। শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন এসে উপস্থিত হল,অমনি রঙ্কি গোল গোল চোখে দ্যাখে একজোড়া কালো হাত নিচের টিন কাত করে বড় গামলায় উবুড় করছে। ভয়ে রঙ্কি চিৎকার করতে যাবে। দ্যাখে ওপর দিকে মুখ করে হাসছে তিলোয়া, চুলে অব্দি হলুদ হলুদ কী সব, কিন্তু দাঁতগুলো সাদা ঝকঝকে।
কাল নিরবধি : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০২০ | ১৮৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বায়ান্নোর রক্তস্নাত ফেব্রুয়ারী মাসের রাত। মায়ের গহন গভীর দুঃখী মুখে বেদনার অশ্রুজল। আনিসুজ্জামান ঘ্রান পেলেন বাংলার পলিমাটির। বর্ণমালা খচিত আলপথের ধারে পথ হারানো মা যেন চিরদিনের আকাশ, বাতাস, বাঁশি নিয়ে ভয়ার্ত, সন্ত্রস্ত। সারাজীবনের জন্যে বুকে গেঁথে ছিল দৃশ্যটি। পরবর্তী জীবনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ঋদ্ধ করে তুলতে তার সমস্ত মেধা, শ্রম, চিন্তাকর্মকে সমিধ করে তুলেছিলেন বিপুল নিষ্ঠা, সন্মান ও ভক্তিতে।
ঈদ মুবারক : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০২০ | ৩২৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সত্যি বলতে, তিরিশদিন এমন না খেয়ে থাকলে নাকি গরীবের পেটের জ্বালার খানিক বোঝা যায়- এই যুক্তিখানার বাড়বাড়ন্ত, হালে, বেশ মনোরঞ্জনকারী। গুছিয়ে পরের ভোরের সেহেরির উপকরণের তোড়জোড় আর বিকেল থেকেই হরেক কিসিমের ফল-বাহারি নাস্তা সাজানো উপোসী বাড়ির মহিলাদের, ফুরসৎ নেই আপিস থেকে খানিক আগে ফিরে নামাজ-কোরান পাঠের পর আরামসে মিনিট তিরিশেক, আপনার মতন, গা এলিয়ে নেওয়ার। মশাই, বলুন তো, কোন গরীব মানুষ এমন বিলাসিতায় না খেয়ে থাকে?!
করোনায় নিরানন্দ ঈদ : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৫ মে ২০২০ | ২৪০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
করোনার ক্রান্তিতে গত ২৬ মার্চ, স্বাধিনতা দিবস থেকে সারাদেশে গণছুটি ও গণপরিবহণ বন্ধ রেখে দফায় দফায় বাড়ানো হয় লকডাউন। সবশেষ ঈদের কেনাকাটার জন্য ১০ মে থেকে আংশিক লকডাউন শিথিল হলো। দোকান-পাট, মার্কেট ও শপিং মল সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত খোলা রাখার ঘোষণা এলো। সরকারের পক্ষ থেকে সবখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে দেখা যায়, করোনাকে মোটেই কেয়ার করছে না বাঙালি। দোকান-মার্কেট-শপিং মলে ঘেঁসাঘেষি আর ঠেসাঠেসি করেই চলছে কেনাকাটা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বেরিয়ে এলো প্রচুর ব্যক্তিগত যান, সিএনজি চালিত অটো-রিকশা, অবৈধ ইঞ্জিন রিকশা, রিকশা, ভ্রাম্যমান হকার ও সাধারণ মানুষ। আইন-শৃংখলা বাহিনীও সরিয়ে নিলো তাদের টহল ও নজরদারি।
করোনাময় ঈদ : মুহাম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মে ২০২০ | ২১৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এরা দুই বোন এবার ঈদে কোন নতুন জামা নিবে না বলে দিল! ওরা দুই বোন ঈদে নতুন জামা নিবে না এই কথা ওদের মুখ থেকে না শুনলে হয়ত আমার জীবনেও বিশ্বাস হত না। কিন্তু আমি শুনলাম এবং বিশ্বাস করলাম। খুব আশ্চর্য হয়েও মনে হল এ কেমন ঈদ এসে হাজির হল? এমন হবে কেন? বাচ্চারা যদি ঈদের আনন্দ না করে তাহলে ঈদের আর থাকল কী? ঈদ এলে তো আর আকাশে ঈদ লেখা ভেসে উঠে না। এই বাচ্চারা যখন নতুন কাপড় পরে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় তখন ঈদ লাগে, ধুপ করে সালাম করে সালামি চায় তখন ঈদ হয়, প্রতি বাড়িতেই খাওয়া দিবে, অত খাওয়া অসম্ভব জেনেও ওরা প্রতি বাড়িতেই যাবে এবং আর খেতে পারব না বলেও খাবে, খেয়ে বের হয়েই আর খাওয়া যাবে না, এখন যেখানে যাব সেখানে কিচ্ছু খাব না, শুধু দেখে করেই চলে আসব!
বিস্মরণ : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৫ মে ২০২০ | ২৫৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
পরদিন সকালে বাইসনের পাল এড়িয়ে ঘাসের ওপর হাঁটি, কয়েক মাইল যাবার পরে একটা বড় হ্রদ পড়ল, তার পাড় ধরে দক্ষিণদিকে আরো মাইল দশেক হাঁটলাম। অবশেষে একটা বড় খামার দেখা গেল। অন্তত তিন শ একরের খামার, সয়াবিন চাষ হচ্ছে। চাষ-জমির শেষে কিছু সারি দিয়ে দেবদারু গাছ। সেটা পার হয়ে খামার বাড়ির শস্য রাখার উঁচু সাইলো ঘর, গোলাঘর, শস্য নিয়ে কাজ করার কয়েকটা ট্র্যাক্টর ও কম্বাইন। পাশে একটা দোতলা কাঠের বাড়ি। সেই বাড়ির সামনে যখন আমরা দাঁড়িয়ে তখন সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে, আমাদের লম্বা ছায়া পড়ে বাড়ির দরজায়। আমরা ইতস্তত করি, এখানে জীবিত কি কেউ আছে? পৃথিবী নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এই বাড়ির ভেতর রয়েছে হয়ত মৃতদেহ। যে রোগে তারা মরেছে সেই রোগ কি ছোঁয়াচে নয়? আমরা একটা কাপড় মুখে বেঁধে নিই। হঠাৎ দুটো কুকুর দৌড়ে আসে, শেপার্ড, কিন্তু তারা ঘেউ ঘেউ করে না, দাঁত খিঁচায় না, লেজ নাড়ায়, এমন যেন এই খামার বাড়ির প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই।
হামিদুর রহমানের নোটবুক থেকে : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৫ মে ২০২০ | ২৮৮৪ বার পঠিত
জীবনে এতো রহস্য কেন এটা নিয়ে আমি ভেবেছি। আমার এই লেখাগুলি হয়ত সেইসব রহস্য কিনারা করার এক চেষ্টা। আমি একসময় খুবই যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতাম। সেইসময়ে, বা তার কিছু পরে রফিকুন্নবীর সাথে আমার দেখা। এরপর থেকে রহস্য নিয়ে আমার ভাবনা চিন্তার অনেক বদল হয়েছে।
রফিকুন্নবী বলেন, কী মিয়া এইসব কী কও! মিস্ট্রি থাকব না? তাইলে থাকলো কী! মিস্ট্রি ইজ দি ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট, ইন্ট্রিগ্রাল বুঝো তো, মানেই হইল ধরো মূল একটা জিনিস, অব লাইফ। তাই মিস্ট্রি কখনো সলভ হয় না।
আমি বললাম, সলভ হয় তো। অনেক হয়। শার্লক হোমসীয় কার্যকলাপ হয় তো।
রফিকুন্নবী তখন বিরক্তির সাথে আমার কথা উড়িয়ে দেন। বলেন, ধুর মিয়া! মিস্ট্রি কখনো সলভ হয় না, একটা গেলে ঐ জায়গায় আরেকটা আসে। সলভ দিয়া মিস্ট্রি বিষয়ে ভাবা হইল একটা ফান্ডামেন্টাল মিসটেক। ভাববা রিপ্লেসমেন্ট দিয়া। মানে ঐ রহস্য সইরা কোনটা আসলো।
ঈদে যাদের কথা মনে পড়ছে : অর্ক ভাদুড়ী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মে ২০২০ | ৫৯০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
ঈদ বলতে বুঝি, কয়েকজনের বাড়িতে বচ্ছরকার নেমন্তন্ন। বিরিয়ানি, সেমাই, হালিম। ব্যস। আর রইল জাকারিয়া স্ট্রিট। আমাদের সেকুলারিজমের প্র্যাকটিক্যাল খাতা।
ঈদ নিয়ে তাই আমার বলার কিছু নেই। করোনা, লকডাউন আর সাইক্লোনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া সময়ে তেমন করে ঈদ এলই বা আর কই! আমি বরং বলি কয়েকজন খুচরো মানুষের গল্প, যাঁদের আজ, এই ঈদের সন্ধেয় আচমকা মন পড়ছে, অকারণেই। একজন বর্ণহিন্দুর চোখ দূর থেকে দেখেছে যে 'অপর'দের, তাদেরই কয়েকজন।
করোনা কিন্তু সরকার ও সমাজেরও পরীক্ষা : সায়ন দাস ও অমিতাভ সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০২০ | ২৪২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
টেস্টিং এর ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পার্থক্যও লক্ষনীয়| ২৫শে মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যেখানে মহারাষ্ট্রে টেস্ট ৩,৭৯,১৮৫, কেরালায় ৬৩,০০৯, পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যাটা ২০শে এপ্রিল অব্দি ছিল ৫৪৬৯ আর মে মাসের ২৫ তারিখে ১,৪৮,০৪৯| বিগত প্রায় এক মাসে পশ্চিমবঙ্গে টেস্টের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে| প্রতি পজিটিভ কেস পিছু টেস্টের সংখ্যা এই মুহূর্তে চল্লিশের (৩৮.৮) কাছাকাছি। ১০ই এপ্রিল নাগাদ এই সংখ্যাটাই ছিল ১৮| তুলনায় কেরলে ১০ই এপ্রিল নাগাদ এই সংখ্যাটা ছিল ৩৬.৭ আর ২৫শে মে’র হিসাব অনুযায়ী, ৭০.২, দুক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দ্বিগুন| অর্থাৎ শুরু থেকেই পজিটিভ কেস পিছু বেশিমাত্রায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির টেস্ট করে কেরলে যেখানে কোভিড প্রায় নিয়ন্ত্রণে, সেখানে এই রাজ্যে কম রোগলক্ষণযুক্ত বা উপসর্গহীন অথচ সংক্রমিত এমন অনেক মানুষ এখনও অধরা থাকার সম্ভাবনা প্রবল|
উনিশে এপ্রিল এবং ঋতুপর্ণঃ ফিরে দেখা : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ০২ জুন ২০২০ | ২৭৪৫ বার পঠিত
আমাদের ব্যক্তিগত আগ্রহের জায়গা, যদি সেটা ছবিটি সম্পর্কে জেগে ওঠে, সেখান থেকে অন্য একটা পথ চলা শুরু হতেই পারে। আমাদের পারিপার্শ্বিক, সামাজিক অবস্থান, যে পথ পেরিয়ে এসেছি সে পথের রক্ত ও কাদা আমাদের মনে করিয়ে দিতেও পারে অন্য কিছু। সেই অন্য কিছু, যা জরুরি ও অদরকারির মত পূর্বনির্ধারিত খোপে বসে নেই। সে কথা পরিচালক যে বলতে চাইছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ক্রাফটের সীমাবদ্ধতা সেই যোগাযোগে ব্যর্থ হতে পারে কোন কোন ক্ষেত্রে, কিন্তু উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারেনা। যেমন সন্দেহ থাকার কথা নয় রাজনীতি নিয়ে। উনিশে এপ্রিলে ২০২০ সালে আমি স্পষ্টই দেখি গায়ে হাত না তুলেও পিতৃতন্ত্র কীভাবে ছকের বাইরের লোককে রক্তাক্ত করতে পারে। প্যাসিভ অ্যাগ্রেশন কথাটা নব্বইয়ের দশকে জানা ছিলো কি অনেকের?
কেমন আছেন পড়শিরা? : বাপ্পা দাস
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৫ জুন ২০২০ | ২০৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সাতজেলিয়া, মোল্লাখালি, পাখিরালা, রাঙাবেলিয়া, বাগনা-এর অনেক মানুষ তাই ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন (নাম অপ্রকাশিত) – “বাবুরা এমনভাবে বোটের উপর থেকে ত্রাণ ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেয়, মনে হয় জঙ্গলের পশু-পাখি কে খাবার দিতে এসেছিল। আমরা ভিখারী নই, আমরা চাষ না করলে, মাছ-কাঁকড়া না ধরলে বাবুদের সাদা চামড়ার ফুটানি বের হয়ে যাবে। আমাদের সারাবছর যেভাবে খাটতে হয়, তখন এই দু-একদিনের চাল-ডালের মাধ্যমে আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না।"
রাজনীতির গ্রাসে ওষুধ, কোভিড অতিমারির বিজ্ঞান এবং আর্ত মানুষ : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৭ জুন ২০২০ | ৫৩৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
আমেরিকায় মোট আক্রান্ত ১,৯৮৮,৫৪৪ জন; মৃত্যু ঘটেছে ১১২,০৯৬ জনের; সুস্থ হয়েছে ৭৫১,৮৯৪ জন। সমগ্র পৃথিবীতে মৃত্যু হয়েছে ৩৯৩,০০০ জনের। আমাদের ভারতবর্ষে কনফার্মড করোনা পজিটিভ কেস ২৪৬,৬২২টি, মৃত্যু হয়েছে ৬,৯৪৬ জনের, সুস্থ হয়ে উঠেছে ১১৯,২৯৩ জন। এ যেন এক মৃত্যুমিছিল দেখছি আমরা। আর এখানেই অভাবনীয় গতিতে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং গবেষকেরা অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন কোন একটি নিরাময়ের সন্ধান পেতে, কোন একটি অমৃতকুম্ভের সন্ধানে পথ হাঁটছেন। দুর্ভাগ্যের হল “জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি”-র মতো একইসাথে পথ হাঁটছে কর্পোরেট পুঁজি – কতটা মুনাফা করা যায় মানুষের জন্য জীবনদায়ী ওষুধ আবিষ্কার করে এরকম এক অভ্রান্ত লক্ষ্য নিয়ে। এরকম এক আবিষ্কার-মুনাফা, জীবনের সন্ধান-লাভের সন্ধান দ্বৈততার মাঝে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বাজি হিসেবে উঠে এসেছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন।
কোভিড-১৯ ও CO2 অবনমনের প্রত্যাশা—প্রাপ্তি নাকি প্রত্যাখ্যান : অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জুন ২০২০ | ৩০২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
মনে রাখা দরকার, কোভিড কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এগুলো কিন্তু আসলে দুনিয়াব্যাপী বাজার-অর্থনীতির পন্থায় পালটে যাওয়া জলবায়ুর ফলাফল। অর্থাৎ, রোগের সিম্পটম্স্ মাত্র। লকডাউন হোক, অতিমারির কারণের বিরুদ্ধে, সিম্পটম্স্ বা ফলাফলের বিরুদ্ধে নয়। পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্বরক্ষার জন্য মানবজাতিকেই আবার ভাবা প্রাকটিস করতে হবে। সুতরাং, তিনমাসের থমকে থাকা সভ্যতার গতির মধ্যে যখন দীর্ঘ প্রত্যাশিত প্রাপ্তির ভাঁড়ার পূর্ণ হতে শুরু করেছে, তখন ক্ষমতাবানদের সঙ্গে এঁটে ওঠার লড়াইয়ে কে বিজয়ী হয় সেটাই দেখার—সবুজ-নীল বাসযোগ্য পৃথিবী নাকি তমসাচ্ছন্ন বাজার-অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত দুনিয়াদারি।
গুটিবসন্তের টীকাঃ মহামারীর বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস - পর্ব ১ : ডাঃ জয়ন্ত দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৩ জুন ২০২০ | ৪০৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
পৃথিবীর ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত এই একটিমাত্র অসুখকে আমরা চিরদিনের মত পৃথিবী থেকে বিদায় করতে পেরেছি। কোভিদ-১৯ এর মতো গুটিবসন্ত ছিল একটি ভাইরাসঘটিত অসুখ। আরেকটি রোগকেও আমরা পৃথিবী থেকে প্রায় দূর করে দিয়েছি, পোলিও। সেটাও ভাইরাসজনিত। অথচ পোলিও বা গুটিবসন্তর ভাইরাস মারার মতো কোনো কার্যকর ওষুধ নেই।কীভাবে গুটিবসন্ত দূর করা গেল? তা থেকে আজকে করোনা ভাইরাস দূর করার ব্যাপারে কোনো শিক্ষা নেওয়া যায় কি? কোয়ারান্টিন, লকডাউন আর আজ ক্লোরোকুইন, কাল এজিথ্রোমাইসিন, পরশু ফ্যামোটিডিন, তারপরের দিন হোমিওপ্যাথি বটিকা - এরকমভাবে কি কোনো মহৌষধ আবিষ্কার আর রোগ নির্মূল কোথাও কোনোদিন হয়েছে? বিজ্ঞান এগনোর সাথে সাথে ওষুধ ও টিকা আগের চাইতে ঢের তাড়াতাড়ি আবিষ্কার করা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার সীমা কোথায়? আর পরাধীন দেশে সাহেবদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা - এর বাইরে দেশীয় কোনো উদ্যোগ কাজে লেগেছিল কি?গুটিবসন্ত নির্মূল করার ইতিহাস থেকে হয়তো কিছু শিক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তবে কিনা, ইতিহাসের প্রথম শিক্ষা হল, অতীতের ঘটনা হুবহু একভাবে আরেকবার ঘটে না।
তুষের আগুন এখানেও : মোহিত রণদীপ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ জুন ২০২০ | ৪৪৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
' উচ্চবর্ণে জন্ম নেওয়া শিশুর মনেও শৈশব থেকেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এই ধারণা যে দলিত মানেই 'নির্বোধ', 'বোধবুদ্ধি হীন', 'অযোগ্য', 'অকর্মণ্য'! 'আমাদের জেনারেলদের সব চাকরি ওরাই খেয়ে নিলো'! আর, মুসলমান মানেই 'নোংরা', 'নৃশংস', 'হিংস্র', 'মীরজাফরের জাত', 'পাকিস্তানী', 'দেশদ্রোহী', ' সন্ত্রাসবাদী'...! 'মুসলমান মানেই চারটে বিয়ে আর গন্ডা গন্ডা বাচ্চা!' দলিত এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ সম্পর্কে এইসব ধারণাও ওই সাদা চামড়ার মানুষদের মতোই আমাদের 'উচ্চবর্ণের' বড় অংশের মানুষের মধ্যে বংশপরম্পরায় প্রবাহিত! এইসব ধারণা থেকে মুক্ত নন তথাকথিত 'শিক্ষিত' কিংবা 'বাম-মনস্ক' বহু মানুষও!
আমফান, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গের পাওনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুন ২০২০ | ৩৮৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
বিভিন্ন প্রকল্পে কতটুকু পাওয়া যাবে, তাকেই বলা হয় অনুদান। ১৯৯০ দশক পর্যন্ত বাম সরকারের মন্ত্রীরা, বিশেষ করে অশোক মিত্র যে অভিযোগগুলি করেছেন, তার মর্মার্থ একটিই, যে, এই রাজ্যের নিজস্ব উপার্জনের সমমূল্যের এই টাকা রাজ্যে ফিরে আসেনা। একে তাঁরা বঞ্চনা বলেছেন। অভিযোগ সত্যি হলে ৫০ বছরের লুণ্ঠন বললেও অত্যুক্তি হয়না।নতুন শতাব্দীতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে অর্থ কমিশন কেন্দ্রের আয়ের একটি অংশকে সরাসরি রাজ্যের হাতে অনুদান হিসেবে ফেরত দেবার কথা জানায়। কতটুকু দেওয়া হবে, সেই ভগ্নাংশটি সময়ের সঙ্গে বদলেছে।
করোনা – ভ্যাক্সিন, গোষ্ঠী (herd) ইমিউনিটি, এবং ইমিউনিটির অসম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জুন ২০২০ | ৫৫২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
এ যেন এক মৃত্যুমিছিল চলছে – করোনার মৃত্যুমিছিল। ১৩.০৬.২০২০-তে worldometer-এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৭৬৫,৮৭৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪২৮,৭৫৩ জনের, সেরে উঠেছে ৩,৯৯৮,৭৫১ জন। এর মধ্যে খোদ আমেরিকাতেই মৃত ১,১৬,৮৩১ জন। সংক্রমণের হারে ভারত এখন ৪র্থ স্থানে – সংক্রমিতের সংখ্যা ৩১০,১৩১, মৃত্যু ঘটেছে ৮,৮৯৫ জনের, সেরে উঠেছে ১৫৪,৬৯৬। কিন্তু ভারতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ এখনো ঊর্ধমুখী বা এক্সপোনেনশিয়াল। তাহলে আমাদের মুক্তির উপায় কি? এখানেই আসবে আমাদের ইমিউন সিস্টেম নিয়ে প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার প্রসঙ্গ।
যেদিকে নদী : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ জুন ২০২০ | ২৫৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
শূন্যতা আসলে নিষ্ক্রিয়তার উপলব্ধি। সক্রিয় জীবনযাপনে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য লাগে। ধরা যাক, যে লোকটা মাউন্ট এভারেস্টে উঠছে, খাড়া বরফের উল্লম্ব দেওয়ালে চেপে গেঁথে নিচ্ছে স্নো বুট, সে জানে এখানে তার অক্সিজেন সীমিত, মেপে পা ফেলতে হয়, বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই মাত্র পঞ্চাশ শতাংশ। এখানে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে একটা তুমুল এভালান্স, এখানে এমনকী তার মৃত্যুর পরে তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই এতসব ঝুঁকি তাকে এমন একটা জিগীষা দিয়েছে, যা তাকে পৃথিবীর উচ্চতমে নিয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, তার মৃত্যু আশঙ্কা বেশী, কিন্তু ওই ঝুঁকি আছে বলে তার জীবন সুন্দর। এমনকী, এই আরোহীর মৃত্যুও, আহা, কত দুঃসাহসিক-লিরিক্যাল।
বাঙালির বারাণসী দর্শন পর্ব -১ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২১ জুন ২০২০ | ৪৫১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ঘাটের কিনারায় আস্তানা গাড়া হলো। একেবারে ফেলু মিত্তিরের কাশীবাসের মতই পরের দিন সকালেই আলাপ হয়ে গেল একজন অদ্ভুত লোকের সাথে। ভদ্রলোক বাঙালী, দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ি, তন্ত্রসাধনা সম্পর্কিত বই লেখেন। বয়সে আমার থেকে কয়েক বছরের বড়, শিবপুর বা যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একদা বহুজাতিকে চাকরি করেছেন। এখন সেসবে মন নেই। সংসারী মানুষ, কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় আজ হিমালয় তো কাল কাশী এইসব করেন। বললেন কয়েকটা বই বেরিয়েছে, ছদ্মনামে (আমি খুঁজে দেখেছি, ঐ নামে লেখক ও তন্ত্র ইত্যাদির বই আছে, তবে একই লোক নাও হতে পারে)। এরপর ভদ্রলোক আমায়, বললে বিশ্বাস করবেন না, ভোরবেলার স্নিগ্ধ রোদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে, কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট নিয়ে চাট্টি ভাট দিলেন।
হনন (পর্ব ২) : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ জুন ২০২০ | ৪৪০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
অরুণাচলের অন্যান্য ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকায় যত বাঘ আছে তার চেয়ে ঢের বেশি আছে দিবাং ভ্যালিতে। অরণ্যের প্রতি ভালবাসা এতো গভীর যে ইদু মিশমি সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের সমাধিতে রাখা থাকে বিভিন্ন শস্য ও বৃক্ষের বীজ সম্বলিত একটি বটুয়া। মৃত্যুর পরেও যেখানে সে যাবে, সেখানেই গড়ে উঠবে গহীন অরণ্য।
গত ২০ শে এপ্রিল ২০২০ করোনা অতিমারিতে ব্যস্ত সাধারণকে অন্ধকারে রেখে একটি ভিডিও কনফারেন্সের পর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এই স্বর্গে বন কেটে গড়ে উঠবে বিশাল এক হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট, দেশের বিশালতমগুলির মধ্যে একটি। এই প্রজেক্টের অঙ্গ হিসেবে সরকারি আস্তিনে লুকোনো তাসের মধ্যে রয়েছে দুটি বিশাল বাঁধ, দীর্ঘ সুড়ঙ্গ, ভূগর্ভস্থ পাওয়ারহাউস, ৫০ কিমি ব্যাপ্ত রাস্তাঘাট। এসব করতে কিছু গাছ কাটা তো অবশ্যম্ভাবী। এই "কিছু"র সংখ্যা হলো ২.৮ লাখ গাছ, যাদের অনেকেরই গুঁড়ির ব্যাস ৮ মিটারেরও বেশি।
রুহানি - পর্ব ১ - দস্তরখোয়ানি দাস্তান : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১১ জুলাই ২০২০ | ৭১০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৬
প্রথম হল বাবুর্চি । বাবুর্চির সঙ্গে কথা কইতে আসতেন হেকিম। ওই মোঘলশাহীর মতোই। বাবুর্চি হেঁশেলের বড়বড় রান্নাগুলো প্রচুর পরিমানে করত। এরপরে আসছে রকাবদার। এরা হচ্ছে রসিক রসুইকর। এদের কাজ রান্না নিয়ে গবেষণা ও অল্প পরিমাণে খাবার বানানো প্রকৃত খাদ্য রসিকের জন্য । গান্ডে পিন্ডে গিলবার জন্য না। রান্না হয়ে যাবার পর তার সাজ সাজাওট , তাকে গয়না নোলক মুকুট টায়রা পরানোর কাজও তাদের করতে হোত। রাঁধুনিদের সবথেকে তলায় ছিল নানফুস যারা নান , কুলচা, রোটি , শিরমল , তাফতান এইসব বানাতো। এছাড়া বাসন ধুত একদল ,মশালচিরা মশল্লা তৈরি করত ,খাবারের ট্রে বয়ে আনত মেহরি রা। শুধু এখানেই শেষ হয়ে গেলো না। এর ওপর ছিল দারোগা। আজ্ঞে হ্যাঁ ! দারোগা এ বাওয়ারচি।
বাঙালির বারাণসী দর্শন পর্ব -২ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৭ জুন ২০২০ | ৩৮২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
মোড় থেকেই বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার লোহার রেলিং-ঘেরা হাঁটার রাস্তা, লোকে ডালি-ফালি নিয়ে লাইন দিয়ে চলেছে। এদিকে একইরকম আরও একটা রাস্তার মসজিদে ঢোকার মুখে, যদিও সেখানে কেউ নেই। পাশে কয়েকজন পুলিশ জটলা করছে। পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে বুঝলাম জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। তাই হেলতে দুলতে ওই রেলিং-ঘেরা জায়গাটা দিয়ে চলতে শুরু করলাম। কয়েকপা এগোতেই জটলাকারী পুলিশের দল ছুটে এসে জেরা শুরু করে দিল। ততক্ষণে বেশ রাগ হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন এসবের উত্তরে বললাম আর্কিওলজিকাল সাইট, তাই দেখতে এসেছি। খুব বিশ্রীরকম সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে, যাওয়ার নিয়ম নেই, বলে ভাগিয়ে দিল ওখান থেকে আমাদের।
অতিমারির আয়নায় দুটি ওষুধ – রেমডেসিভির এবং ডেক্সামেথাসন : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ জুন ২০২০ | ৫৮৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
রেমডেসিভির নিয়ে প্রথম ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে (১০.০৪.২০২০) “Compassionate Use of Remdesivir for Patients with Severe Covid-19” শিরোনামে। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বেরোয় ল্যান্সেটে (২৯.০৪.২০২০) “Remdesivir in adults with severe COVID-19: a randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre trial” শিরোনামে। লক্ষ্য করার বিষয় এ ট্রায়ালটি “randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre” চরিত্রের – যেমনটা সঠিক বৈজ্ঞানিক ট্রায়ালের ক্ষেত্রে হবার কথা। রেমডেসিভির-এর বর্তমান আবিষ্কর্তা Gilead Sciences কোম্পানি এবং NIH স্বাভাবিকভাবেই এই ওষুধের ট্রায়াল দিয়েছে। কিন্তু এদের ট্রায়ালগুলো open-label, double-blind নয়। ফলে বিজ্ঞানের বিচারে বিশ্বাসযোগ্যতা কম।
গুটিবসন্তের টীকাঃ মহামারীর বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস - পর্ব ৩ : ডাঃ জয়ন্ত দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ৩০ জুন ২০২০ | ২৩৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
হলওয়েল লিখেছেন, কেবল দক্ষ ব্রাহ্মণেরা টিকা দেবার কাজ করতেন। সাধারণত তাঁরা এলাহাবাদ, বারাণসী, বৃন্দাবন প্রভৃতি সুদূর হিন্দু পবিত্রভূমি থেকে আসতেন। টিকা দেবার পুরো সময়টাতে তাঁরা ‘অথর্ব বেদ’-এর মন্ত্র পড়তেন। হলওয়েল সাহেবের উদ্দিষ্ট পাঠকরা ছিলেন ব্রিটিশ ডাক্তাররা, বিশেষ করে রয়্যাল সোসাইটির সদস্যরা। হলওয়েল যখন লিখছিলেন তখন একই ভ্যারিওলেশন পদ্ধতি তুরস্ক থেকে ইংল্যান্ডে ঢুকেছে, তার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে ইংরেজ ডাক্তারদের সন্দেহ ছিল। ভ্যারিওলেশন হিন্দু সমাজের মাথা অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের কাজ, বেদমন্ত্র পাঠের সঙ্গে করা হত, এমন বললে ইংরেজ ডাক্তারদের কাছে এটি বেশি গ্রহণযোগ্য হত। ভারত সম্পর্কে যেসব ইংরেজ ডাক্তার খবর রাখতেন, তাদের কাছে ব্রাহ্মণদের পরিচয় ছিল সুপ্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার প্রতিনিধি হিসাবে। আসলে কিন্তু ভ্যারিয়েলেশন কেবল ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া ছিল না, আর পদ্ধতিটি সবসময় একই রকম থাকত না।
'পুরনো ইতিহাস ফিরে এলে, লজ্জা কি তুমি পাবে না?' : অমৃতা পান্ডা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ জুন ২০২০ | ৩৮১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এখনও ট্রমা থেকে বেরোতে পারিনি আমি। অতজন অসুস্থ মানুষ একসঙ্গে.... দাদুকে নিয়ে অত রাত্রে বেরোনো, মাথার ওপর কেউ নেই কেউ নেই ভাবনা, সেই সময় বেশ কিছু কাছের মানুষের অসহযোগিতা - এগুলো মনে পড়ে যায়। এখনও মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙে যায়, ভাবি এই বুঝি বাবার জ্বর এল। এই বুঝি কারোর কিছু হল। তারপর ভাবি, নাহ্ সব তো কবেই মিটে গেছে! শুধু বাইরের কিছু মানুষ আমাদের অসুস্থ বানিয়ে শোকেসে তুলে রেখেছে।
যদি এইরকম দুর্ব্যবহার সবাই করতে থাকেন, কি হবে তাহলে ভাবুন! যে মানুষ আজ দুর্ব্যবহার করছেন, তাঁকেও যদি কেউ তা ফিরিয়ে দেয়, বাঁচা যাবে তো? তাই পাড়ায় কারোর করোনা হলে প্লিজ পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
কার্ল সাগান ও করোনা ভাইরাস : ডা: রাজর্ষি রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুলাই ২০২০ | ২৫০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
করোনা ভাইরাস এর অতিমারী বিলেতে একটু বেশি মাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। সেই সঙ্গে আর একটা ব্যাপার দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান (মানে উপমহাদেশীয়, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রী লঙ্কা), এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষেরা এই নতুন রোগটিতে আক্রান্ত হলে, তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি। এই ব্যাপারে স্বভাবতই এই গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে খানিকটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেই সঙ্গে অনেক রকম "তত্ত্বের" পর্যালোচনাও আরম্ভ হয়েছে।
করোনা ঠেকানোর মাস্তানেরা : ডা: জয়ন্ত দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুলাই ২০২০ | ৩৬৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
চন্দননগরের এক ব্যস্ত চিকিৎসক। সামনের ফ্ল্যাটে ‘করোনা বেরিয়েছে’। ক্লাবের ছেলেরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে এসে বলল, ডাক্তারবাবু, চেম্বার বন্ধ করে দিন—রোগীদের বিপদ, আপনিও সপরিবারে থাকেন। ডাক্তারবাবু বুঝতে পারছিলেন না এটা কি হুমকি, নাকি সত্যিই শুভাকাঙ্ক্ষী এরা। শুভাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হল যখন, তখন বুঝিয়ে বললেন। বাজারে বাসে দোকানে না-জানা করোনা রোগীর কাছ থেকেই বিপদ, কারণ আমাদের দেশে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হয় না, সবাই মাস্ক ঠিকমতো পরতে জানেন না। সামনের ফ্ল্যাটে করোনা হয়েছে সেটা তাঁরা জানেন ও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আলাদা আছেন, বাড়ির বাইরে করোনা-আক্রান্ত বেরচ্ছেন না। ক্লাবের ছেলেরা বুঝল। তারপর ডাক্তারবাবু বললেন, একটা কাজ করবেন? ওদের বাড়িতে নিয়মিত রান্না করা খাবার পৌঁছে দেবেন?
রাজনীতির বিনোদন, বিনোদনের রাজনীতি: বুলবুল সম্পর্কে দু একটি কথা : দিব্যকুসুম রায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৩ জুলাই ২০২০ | ৪৪৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
পপুলার ছবি, তার জন্মলগ্ন থেকেই, দায় নিয়েছে ভারতের অতি-জটিল রাজনীতির মুখ্য প্রবক্তা হবার, আবার সে রাজনীতির বিনোদনের যোগান দেবারও বটে।ভারতীয় রাজনীতি-- এবং তার বিনোদনের চাহিদা-- পালটায় প্রতি দশকে, পালটায় তার জননীতি, জনসমর্থন এবং অনুভাগগুলি। সংস্কৃতির এক বিচিত্র নিয়মে অন্তত পঞ্চাশের দশক থেকেই হিন্দি ছবি তাল মিলিয়ে চলছে এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে। একে শুধু রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অনুগমন বললে ভুল হবে, বরং হিন্দি ছবির রূপান্তর অনেকসময়েই তার সহোদরা-- দেশীয় রাজনীতির সাথে সম্পূর্ণ সমান্তরাল, কখনও কখনও মাসেরও বিলম্ব হয় না, উনিশশো পঁচাত্তরের জরুরী অবস্থার (জুন) বজ্রনির্ঘোষের ক’মাস আগে পরের মধ্যে রিলিজ করে যায় ‘দিওয়ার’ (জানুয়ারী) এবং ‘শোলে’ (অগস্ট)। দুটি ছবিই প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী এবং ভিজিল্যান্টিজমের সমর্থক; একপাশে দস্যুরূপী অসুরদলনের রূপকথা, অন্যদিকে সমসাময়িক ধূমায়িত গণ-অসন্তোষের আগুনে হাত সেঁকা। গব্বর সিং আপাত-অরাজনৈতিক, কিন্তু সে কী সত্তরের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রশক্তির প্রতিভূ নয়?
গুটিবসন্তের টীকাঃ মহামারীর বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস - পর্ব ৪ : ডাঃ জয়ন্ত দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৫ জুলাই ২০২০ | ১৯১৬ বার পঠিত
বাংলায় টিকাকারের কাজ করতেন ‘নীচু’ ব্রাহ্মণ, মালাকার/মালি, কুম্ভকার, শঙ্খকার, তাঁতি, নাপিত ইত্যাদিরা। এদের অধিকাংশই কাছেপিঠের শহর-গ্রাম থেকে আসতেন। বাংলার বাইরে আবার এসব জাতের মানুষ ছাড়াও অন্যান্য জাতের লোকেরা টিকাকার ছিলেন, যেমন কুনবি, সিন্দুরিয়া, আর রোজা। রোজা বা ওঝাদের সাধারণ কাজ ছিল ঝাড়ফুঁক। তাই টিকাকরণ একদিকে লোকধর্মের অনুসঙ্গ হিসাবে ছিল, অন্যদিকে প্রান্তিক মানুষের অপদেবতায় বিশ্বাস ইত্যাদির সাথে ঠাঁই করে নিয়েছিল বলে মনে হয়। আরও উল্লেখ্য হল, বাংলার বাইরে অন্তত টিকাকারদের মধ্যে মুসলমান ছিলেন, আবার গোয়ার মতো জায়গায় ক্যাথলিক পাদ্রিরাও ছিলেন। এরা শীতলা মন্ত্র জপ করতেন কিনা তা অবশ্য জানতে পারিনি। ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রীয় বিধান বা আয়ুর্বেদ থেকে উৎপন্ন হয়ে টিকার প্রথাটি লোকধর্মে মিশেছিল, নাকি লোকধর্ম থেকে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিল, নাকি উভয় দিক থেকেই একত্রে এসেছিল, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের সাহায্যে তার বিচার করা কার্যত অসম্ভব।
আজি দখিন দুয়ার - পর্ব-১ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ জুলাই ২০২০ | ৩৮৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ফার রাইট বা উগ্র দক্ষিণপন্থী দলের অ্যাজেন্ডায় যা আছে, সেইসব দলের মুখ্যনেতৃত্ব প্রথাগত লিবারাল সমাজের প্রতি যেসব অভিযোগগুলি করেছেন, বা নিজ নিজ দেশে তাঁরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন ও হচ্ছেন, সেগুলোর সবই মিথ্যাচার বা অতিরঞ্জন নয়। যেমন অর্থনৈতিক সংকট ও তজ্জনিত ধুঁকতে থাকা কর্মসংস্থান, উদ্বাস্তু সমস্যা, সেন্ট্রিস্ট আদর্শের মূলধারার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্নীতি, বা একরকমের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ, যা নিজদেশে মানুষকে পরবাসী করে দিচ্ছে। এগুলোর কোনোটাও গালগল্প নয়, সাধারণ মানুষ বলে যে বহুস্তরীয় পদার্থটিকে নেতারা ভোটব্যাংক ভাবেন, তারা এইসব সমস্যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখতে পায়। কেন এই সমস্যাগুলি তাদের জীবনে মূর্তিমান উপদ্রবের মতো আসছে সে কথা ভাবতে গিয়ে তাদের অনেক সময়ই মনে হয় এইসব সমস্যার অনেকগুলোই জনবিস্ফোরণের ফল।
মহামারী, কোয়ারেন্টাইন ও দেশকাল - পর্ব ২ : দীপঙ্কর দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ জুলাই ২০২০ | ৪৯৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ব্রিটিশ মেডিক্যাল অফিসার এবং ইঞ্জিনিয়াররা জ্বরের সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ হিসেবে মূলত ধান খেতে জমে থাকা জল এবংপাড়া-গাঁয়ের নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকেই দায়ী করলেন। নিজেদের প্রশাসনিক দায়িত্ব এড়াতে মহামারীর জন্যে পরাধীন দেশকেই “land of dirt, disease, and sudden death” বলে দাগিয়ে দেওয়াটা ছিল সাধারণ রেওয়াজ। কিন্তু এই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে “হিন্দু প্যাট্রিয়ট” কাগজে ১৮৭২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ১৮৭৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অবধি মোট ১৪ টি নিবন্ধ লিখলেন ১৮৬৪ সালের এপিডেমিক কমিশনের ভারতীয় সদস্য রাজা দিগম্বর মিত্র। ১৮৫১ সালের ২৯ অক্টোবর কলকাতার কাসাইটোলায় (বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট) গঠিত ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এসোসিয়েশনেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। নীল চাষের সমস্যায় রায়তদের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশদের কাছে সওয়াল করা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, সতীদাহ, শ্মশানঘাটের উন্নয়ন, খাজনার হারের ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রভৃতি সামাজিক বিষয় নিয়ে আইনগত ভাবে ব্রিটিশদের মোকাবিলা করা ছিল সংগঠনের অন্যতম কর্তব্য।
রুহানি - পর্ব ২ - শহর-এ-দাস্তান : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জুলাই ২০২০ | ৩২১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
নবাবের শহরে সব কিছু মাপমতো। এধার ওধার হবার কোনো জো নেই। বাজপায়ীর মালিক নিজে এসে বলেন, শুধু আলুর সবজি কেন? মটর লাও, মটর। মাখোমাখো সুসিদ্ধ মটরের রসা আর সেই দেবভোগ্য কচুরি ফিরদৌসকে ভুলিয়ে দেবে, গ্যারান্টি! তেলতেলে, চুপচুপে, মশল্লায় বিজবিজে, কোনোটাই নয়। আরাম করে চোখ বুজে খেতে হয়। সেখান থেকে চটপট আবার আমিনাবাদ। আবার আমিনাবাদে কেন? কেন আবার? ফিরদৌসকে খুঁজতে বেরিয়েছি, আর মাথায় দোপাল্লি টোপি উঠবে না। তা হয় না। তবে কিনা আমিনাবাদ ভারী ঘিঞ্জি বাজার। বাজারের ভেতরে গাড়ি ঢোকে না। পায়ে হেঁটে টোপির দোকানের ঢুকি। নবাবদের শহর বলে কথা। এক জমানায় ফ্যাশন আর ইস্টাইলে রাজধানী দিল্লিকে টক্কর দিত! একবার চারকোনা টুপি চালু হল। তার নাম চৌঘশিয়া। তারপর পাঁচকোনা। মাথায় টুপি পরানোর জন্য কম মেহনত করেনি এই শহর।
গল্প নিয়ে গল্প - আল মাহমুদ - জলবেশ্যা- কবির লেখা গল্প : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৮ জুলাই ২০২০ | ৩৯৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সোনালী কাবিন কাব্যে ছিল যে তীব্র প্রেম আর আদিমতা, আল মাহমুদ আসলে সেই কবিই। রক্তমাংসের এমন নোনা গন্ধ বাংলা সাহিত্যে বিরল নিশ্চয়। আল মাহমুদের গল্প সেই গল্পই। নর নারীর জৈবিক প্রেম, আদিমতার সাহসী উচ্চারণ যেমন তাঁর কাব্যে দিয়েছিল অচেনা এক সুষমা, গল্পেও তাই। পানকৌড়ির রক্ত, কালো নৌকো, রোকনের স্বপ্নদোলা, নীল নাকফুল, বুনো বৃষ্টির প্ররোচনা… আল মাহমুদ যে গল্প লিখেছেন, সেই গল্পে সোনালী কাবিনের কবিকে চেনা যায়। চেনা যায় তীব্র প্রেম, যৌনতা, আদিমতার এক অচেনা রূপ। আমি যতবার পড়েছি পানকৌড়ির রক্ত কিংবা জলবেশ্যা, পেয়েছি নতুন মাত্রা। জলবেশ্যার কথা নতুন করে বলি। নতুন করে বলি পেঁয়াজ, রসুন, লঙ্কার গন্ধ জড়ান মেঘনা তীরের লালপুর হাটের কথা। সেই হাট আমার অচেনা। আমি দেখিনি। মেঘনা ফেলে এসেছি ওপারে, লালপুর হাটও। কী করে চিনব? চিনেছি আল মাহমুদ এ।
আধুনিক ভারতের পাঠক্রম : সুকান্ত দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ জুলাই ২০২০ | ২৫৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
এই সামগ্রিক পরিকল্পনা সফল করার জন্য NCERT-র বিভিন্ন কমিটি বদলে দেওয়া হয়, প্রতিথযশা ঐতিহাসিকদের পদচ্যুত করা হয়। কিন্তু নতুন পাঠক্রম অনুযায়ী কারা বই লিখবেন, কারাই বা পর্যালোচনা করবেন? শেষ পর্যন্ত এসব বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি, যদিও NCERT-র তৎকালীন অধিকর্তা জানিয়ে রাখেন, নতুন বইগুলোর বিষয়বস্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে কি না, ধর্মবিশেষজ্ঞদের দিয়ে পর্যালোচনা করা হবে! সেইসময়ের শিক্ষা তথা মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মুরলী মনোহর যোশী এতে যোগ করেন, ধর্ম-সংক্রান্ত যে-কোনো বিষয় ধর্মের প্রধানদের অনুমোদন সাপেক্ষেই পাঠ্যবইয়ে ঢোকানো যাবে [Mukherjee, Mridula and Mukherjee, Aditya, 2001]! অর্থাৎ যুক্তি, তথ্য, ঐতিহাসিক সত্য, বিজ্ঞানমনস্কতা দিয়ে আর জ্ঞানচর্চা করা যাবে না, জ্ঞানচর্চা পরিচালিত হবে ধর্মগুরুদের নির্দেশে।
নায়কোচিত : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৯৩ বার পঠিত
টালিগঞ্জের নায়করা অফিস টাইমে মেট্রোরেলে চড়ে বিক্ষোভ দেখাতে গেছেন, তাঁদের জন্য মেট্রোরেলের চাট্টি কামরা বে আইনী ভাবে সংরক্ষিত ছিল, যাত্রীরা সেখানে উঠতে গেলে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে যাঁরা বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন, তাঁরা চক্রান্তকারী। জনমানসে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাই তাঁদের একমাত্র কাজ। তাঁরা ভুলে গেছেন, নায়করা হলেন জাতির মুখ। ফিল্মে রোমান্স এবং অ্যাকশন করে তাঁরা জগৎ উদ্ধার করেন। একাই একশ জনের মহড়া নেন, পিটিয়ে দেশের শত্রুদের প্যান্টুল খুলে দেন, সোজা কথা? সত্যি কথা বলতে কি, তাজমহল, শচীন তেন্ডুলকার আর বলিউড ছাড়া দেশে আছেটা কি? পার্লামেন্ট আর রাষ্ট্রপতিভবন? ছো:।
বঙ্গীয় বারোমাস্যা - লাইনেই ছিলাম দাদা : অমিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৯ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৬২ বার পঠিত
বাপ-পরদাদা যখন মাতৃগর্ভে তারও আগে থেকে, আমরা আছি দাদা। সেই কবে সেকেন্দার কাকু যখন হেলেদুলে এসেছিল, আমরা লাইন দিয়ে পিছন পেতে দিয়েছি। ক্যাঁত শব্দে সীলমোহর প্রাপ্তি এবং হাতে হাতে শোধ - যেমন চলাও তেমনি চলি, যেমন বলাও তেমনি বলি। অথচ শালা ঐ বিশ্বাসঘাতক পুরু! হতচ্ছাড়া শুধু লাইনে এল না তা নয়, বলে বসলে কিনা, ""ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ তো দেখনি! আমার মাটিতে গাড়ু হাতে বসতে এলে আমিও ক্যাঁতাব!'' অত:পর,-""গওয়া হ্যায়, চাঁদ তারে গওয়া হায়'' এবং কাকু শেষ অব্দি "বাপি বাড়ি যা' কেস হয়ে ফুটে গেল। কিন্তু আমরা তো আর ফুল নই যে ফুটে উঠে দোলে দোদুল দোলে।
বর্ণাশ্রম : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১১৪৮ বার পঠিত
"আমরা সমাজটাকে চারটে ভাগে ভাগ করেছি।'' মার্ক্স এঙ্গেলস কি অপর গোলার্ধ কাঁপানো কোনো দেড়েল অর্থনীতিবিদ বা সমাজতাত্বিক নয়, এ ঘোষণা একটি প্রাইভেট সংস্থার প্যানেল রিসার্চ ফিল্ড সার্ভেয়ারের। ভারতবর্ষের জনসংখ্যার, একশ কোটি জনসংখ্যার, চারটি "SEC" অর্থাৎ "Social Economical Class"A, B, C, এবং D । অমর্ত্য সেন বিগলিত হবেন, মনমোহন সিং উৎফুল্ল ও আবুল কালাম মশাই আত্মহারা হয়ে পড়তে পারেন এমন সহজ সাধারণ আর্থসামাজিক পরিকাঠামো বিভাজনে এবং আমাদের দাবি ব্যপারটাকে অবিলম্বে পাঠক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা হোক।
মোহিনী মিডিয়া : অমিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯১৩ বার পঠিত
শিশুকাল থেকে শুনে আসছি একপ্রকার পতঙ্গ শিকারী ফুল আছে। বিনয়ের সাথে আমরা বলতেই পারি,সত্যি কথা। এই অপরূপ মোহিনী ফুলটি, আহা, নাম তার মিডিয়া। ইমোশন রূপ পতঙ্গ, তা সে সস্তাই হোক বা তার তিন প্রকার রূপভেদই হোক, সুতোর টান অতীব নিঁখুত। পরতে পরতে সাজানো ক্রীম আর ক্যারামেল, মাঝে একটু বিরতি,- বুদ্ধিদীপ্ত অ্যালমন্ড। নেহাত গদগদ ভাব অসহ্য ঠেকলে একটু আধটু মরিচ মিশিয়ে দেওয়া - যা আমরা হামেশাই করে থাকি সঠিক অভিপ্রায় ব্যতিরেকেই। এই মিডিয়ার বহুরূপ। আমাদেরই মনন ও উৎকর্ষের খুপরি জরিপ করে তার এই দিন দুগনি রাত চৌনি শ্রীবৃদ্ধি। মৃত্যু নেই, জরা নেই। শুধু ফুলে ওঠা আছে, ফেঁপে ওঠা অমৃত বেলুন। এঁকে নমস্কার কর।
দুই বিন্দু জল : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১১০৪ বার পঠিত
আলপটকা বৃষ্টি হয়ে স্টার থিয়েটারে, অধুনা সিনেমা, দুফোঁটা জল ঢুকেছে বলে কত কথা! নাকি, সেখানে তখন মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছিলেন। হাতিবাগানে তো আর প্রখর বর্ষাকালেও জল জমে না! গোমুখ্যু ইঞ্জিনিয়ার আর আকাট রাজমিস্ত্রির হাতে পড়েই নেথাৎ, আহা, অমন ঐতিহ্যঘৃতগন্ধী বিল্ডিংটা মবলগ চুলকে গেল গা! সাংস্কৃতিক শীর্ষনেতৃত্বের জমানায় তাই প্রকৃত কালপ্রিট ঢুঁড়ে, দামড়ে সিধে করার প্রেসকপি নোটিস গেছে বলে শোনা যায়। এসব শাক সরিয়ে শহর কলকাতার জলনিকাশী ব্যবস্থার কানকো উল্টে যাঁরা লাল না কালচে বিচারের বেহায়া আঁতলামো মারাচ্ছেন, তাদের জন্যে চালুনি ছাড়া অন্য কোনো নাম বরাদ্দ নেই।
মিডিয়া মনস্কতা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৩১ বার পঠিত
বাংলায় চুরি ক্রমশ: বাড়ছে-- মরুদ্যান শুকিয়ে গেল বলে। হপ্তা দুই আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর গোঁফচুরি হয়ে গেল। একটি বন্ধুত্বের সাইটে ছবি-টবি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর একটি "ফেক' প্রোফাইল বানিয়েছিলেন জনৈক যুবক, তাই নিয়ে মিডিয়ার হুল্লোড় যেন যৌবনের জলতরঙ্গ, রুধিবে কার পিতৃদেব। মুখ্যমন্ত্রীর আইডেন্টিটি চুরি হয়ে যাচ্ছে, সম্মানহানি হচ্ছে, রাজ্যের ভাবমূর্তি ম্লান হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে শুরু করে থেকে শুরু করে কোনো কোনো গপ্পের গোরু "ইহা একটি চক্রান্ত' পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তাও কপাল ভালো, এর মধ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত কেউ দেখতে পাননি। (অবশ্য দেখতে পেলেও নির্ঘাত চেপে গেছেন, এই শিল্পায়নের বাজারে মার্কিন বহুজাতিক নিয়ে প্রশ্ন তোলার বুকের পাটা আর কোন বাপের ব্যাটার আছে?)
বইমেলার ঠিকানা - এক চর্বিত চর্বণের উপাখ্যান : অমিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯২৪ বার পঠিত
বছর আট নয় আগে সদ্য বীরভূম থেকে আসা এক ছাত্র কলেজে কলেজ সুলভ মুক্তির স্বাদ পায়নি। কেবল বছরের বিশেষ একটা সময়ে নিজের আদলে মুক্তির খোলা মাঠে দৌড়ে যেত হাফ সোয়েটারে। সে বড় সুখের সময় ছিল যখন বছরের ঐ কটা দিন প্রথম অর্ধের পর কলেজ ছুটি হয়ে যেত ছেলেটির নিজস্ব নিয়মে। রোদ্দুর মেখে ভাঁজ করা নিদাঘ ডানা মেলে দেওয়া ছিল নিপাট সারল্যে। ছিল তখনও পর্যন্ত কোলকাতার রাস্তাঘাত সম্পর্কে অবহিত না থাকা জনিত ভয় এবং কলেজ গেট থেকে বের হতেই বাস থেকে ""বইমেলা, বইমেলা, ময়দান, বইমেলা'' চিৎকারে সেই ভয় নামক কুয়াশার পাতলা হতে হতে মিলিয়ে যাওয়া - অপূর্ব সে আলো। বাস ঢুকছে, দেখা যাচ্ছে বইয়ের স্টল, প্যাভিলিয়ন, জমতে থাকা মাথা, তৎক্ষণাৎ নেমে পড়া সেই জমিনেই - টিকিটের লাইন - দ্রুত পায়ে ঢুকে পড়া আকাঙ্খিত মরুদ্যানে, সম্মোহিত প্রাণ।
সমষ্টির স্বার্থ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৩৩ বার পঠিত
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের উপদ্রব বেড়েছে আর বিহারে নাকি ডাকাতের। বিশেষ করে ব্যাঙ্ক ডাকাতের। বিহার পুলিশের বড়োকর্তারা এই নিয়ে একাধিক গম্ভীর মিটিং এবং তৎসহ প্রচুর চা, বিড়ি, সরকারি পেট্রোল এবং টিএ বিল খরচার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, যে, আসলে দোষটা মোবাইল ফোনের। কেন মোবাইল ফোন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা দক্ষিণমেরুর পেঙ্গুইনদের এ ব্যাপারে কেন দায়ী করা হচ্ছেনা, সে নিয়ে বিশদ তথ্য না পাওয়া গেলেও, সংবাদে প্রকাশ, ব্যাঙ্কে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, যে, ডাকাতরা ডাকাতির কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। যুক্তি মারকাটারি সন্দেহ নেই।
ফলেই পরিচয় : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৭১ বার পঠিত
নেপালের আকাশে নাকি এখন লাল তারা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। স্বৈরাচারী রাজা পিছু হঠেছেন। ক্ষমতাচ্যুত হলেন বলে। এখন একদা বিপ্লবীদের হাতে গণতন্ত্রের বিজয়পতাকা। দীর্ঘদিনের বিরাট লড়াইয়ের শেষে এসেছে বিজয়। বিজয়ী বীররা তাই নামিয়ে রেখেছেন অস্ত্র। সেই অস্ত্রের পরিমান এতই বেশি, যে, ভারত থেকে পাঠানো হয়েছে অস্ত্র রাখার কন্টেনার। সেখানে অস্ত্রশস্ত্র জমা রাখার পর তালা বন্ধ করে একটি চাবি নিয়েছেন প্রচন্ড। অন্য ডুপ্লিকেট চাবিটি ঠিক কার কাছে জমা আছে, সেটা এই মূহুর্তে জানা না গেলেও, এই আনন্দের মূহুর্তে আমরা আর সেসব নিয়ে মাথা ঘামাবোনা। আজ আনন্দের দিন। আজ বহুদিন পরে বিজয় এসেছে ফিরে। আজ আমরা, অর্থাৎ আমি আর আমার চিরপুরাতন পাড়াতুতো প্রেমিকা খেঁদি , হলইবা রিমেক, শাহরুক খানকে দেখব মন দিয়ে।
বই বৈ তো নয় : বৈজয়ন্ত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৭৫ বার পঠিত
লক্ষ্য করে দেখবেন, ইদানীং বঙ্গীয় মধ্যবিত্ত সমাজের (মধ্যবিত্ত বোল্ড এবং আন্ডারলাইন সমেত) যাবতীয় তক্কোবাজির শুরু হয় আবেগ দিয়ে, তারপর ঢোকে সি পি এমাদি, এবং শেষে নির্জলা খেউড়। সিঙ্গুর-নন্দীগেরাম, সি এ বি নির্বাচন থেকে বইমেলা- সবেতেই মোটামুটি একই প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। বলতেই পারেন যে "তুমি কোতাকার কোন হনু এলে বাওয়া যে গাছের ডালে ন্যাজ ঝুলিয়ে জ্ঞান মারাচ্চো?" আম্মো আলাদা কিছু নই। সেই আবেগ, সি পি এমাদি এবং খেউড়। তবে জিনগত মর্ষকামিতার জন্য খালি আয়নায় তাকাই আর দেখি নৈনিতালের একটা ভ্যাদভেদে পুরোনো আলু। তো এই আলুকিত সমাজের জ্ঞানীজনেরাই যখন এই সব বাচালতা পড়ে থাকেন, অতএব নিজেদের নিয়ে চর্বিতচর্বণ করাই ভালো। আপাতত: মিডিয়ার এই চর্বিতচর্বণের ফোকাল পয়েন্ট হল বইমেলা।
বিজ্ঞানস্ট্যাম্প : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১১৭৯ বার পঠিত
রিচার্ড লেয়ার্ড "হ্যাপিনেস" নামের একটা চোদ্দ অধ্যায়ের বই লিখে পেঙ্গুইন থেকে ছাপিয়েছেন বলে নয়, অনির্বাণ চাটুজ্জে সে বইয়ের রিভিউ লিখে এ সংখ্যার গায়েগতরে দেশ-টার দাম তিরিশ টাকা করার পথে সাহায্য করেছেন বলেও নয়, লেখাটায় উন্নয়ন আর জি.ডি.পি.র সঙ্গে সুখে থাকার গুরুচণ্ডা৯য় অসমীকরণের রাজনৈতিক ফোড়ন রিক্যাপিচুলেটেড বলেও নয়, "ব্রেন ফিজিওলজী", "ইলেকট্রোএনসেফ্যালোগ্রাম" আর "ব্রেন স্ক্যান" বিজ্ঞানস্ট্যাম্পগুলো মাঠে নেমেই কী-বোর্ড চুলকে দিল। অর্থনৈতিক গবেষণার প্যারামিটার নেওয়া হচ্ছে মানুষের ভালো থাকার বোধটিকে, এবং তা স্রেফ ডিক্লারেশন নির্ভর নয় আর, হাই ফাই যন্ত্রপাতি প্রমাণিত। অর্থাৎ প্রশ্নাতীত একটি থিওরাইজেশনের পথ তৈরি হচ্ছে।
সুস্থ প্রতিযোগিতা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০০৩ বার পঠিত
আমেরিকা মহাদেশে এখন প্রতিযোগিতার হাওয়া। এমনিতেই আমেরিকায় বচ্ছর বচ্ছর একটি মেগামোচ্ছব কাম মহাপ্রতিযোগিতা হয়, যার নাম অস্কার। দুনিয়া জোড়া ফিল্ম দিগগজদের নাক সিঁটকানোর পরেও আহা, তাহার গ্ল্যামার বেড়েই চলেছে। এবং নিয়ম করে প্রতি বছর শোনা যাচ্ছে, একটি ভারতীয় সিনেমা এবার "বিশ্বজয়ী' হবেই। কার বিশ্ব, কে জয় করে, এসব কূট প্রশ্ন তুলে জিনিসটাকে ঘুলিয়ে দেবার দরকার নেই, মোদ্দা জিনিসটা যা হচ্ছে, বচ্ছরভর ঢাক বাজছে, ঢোল বাজছে, সাতমন তেল পুড়ছে, কিন্তু রাধিকা নাচিতেছেনা, দিনশেষে মার্কশিটে গোল্লা নিয়ে হাসি-হাসি মুখে (হাসি-হাসি, কারণ অংশগ্রহণটাই আসল, জয় নয়) বাড়ি ফিরছে যুগন্ধর হিন্দি সিনেমা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি, প্রতিযোগিতার শেষে "ভালো খেলিয়াও পরাজিত' তকমা নিয়ে ফিরছে কি যেন একটা ভারতীয় সিনেমা।
টিলোস রেডিও, বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৯১ বার পঠিত
ঘরে আলো খুব কম, দেওয়ালের রঙ সাদা নয়, কেননা সার দেওয়া গ্রামাফোন রেকর্ডেরাও ঢেকে গেছে পোস্টারে পোস্টারে এবং আলো সত্যিই খুব কম। শেষ হয় অরুন্ধতি কন্ঠ বিস্তর কূটকচালির পর, যার সবটা আমার পক্ষে এখানে দেওয়া সম্ভব নয়, তবু শেষটুকু দি, কেননা আমাদের কাছে ভাষা ছাড়া কিছুই নেই প্রমাণযোগ্য। শেষে স্লোগান সমবেত হয় ও সকলে উঠে দাড়ায়... ইন এবিলিটি টু সি অ্যা ওয়র্ল্ড ইন টার্মস আদার দ্যেন দোজ দ্য এস্টাবলিশমেন্ট হ্যাজ সেট আউট ফর ইউ, ইফ ইউ আর নট বিশি, ইউ আর তালিবান। ইফ ইউ ডু নট লাভ আস, ইউ হেট আস। ইফ ইউ আর নট গুড, ইউ আর ইভিল। ইফ ইউ আর নট উইথ আস, ইউ আর টেররিষ্ট।... সেদিন শনিবার সকাল, তখন ও কানে আসেনি নন্দীগ্রাম, এক ঘন্টা ভারতীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান এবং সেখানে গেলে দেখা পাব এক ভারতীয় বন্ধুর, এর বেশি কিছু ভাবিনি!
জনতার দরবার : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৫৫ বার পঠিত
পশ্চাদ্দেশ দেখানোর ঐতিহ্য আমাদের বহুদিনের। সেই পুরাকালের কথা, যখন একাই মঞ্চ কাঁপাতেন সুমন চাটুজ্যে আর তাঁর বাক্যগুলি যাদুকরের ছুরির মতো মঞ্চ থেকে উড়ে এসে আমাদের বুকে বিঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে লক্কা পায়রা উড়িয়ে দিত, সেযুগে একদা সুমনবাবু অকস্মাৎ মঞ্চে পিছনঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন, ও বলেছিলেন, ওমুক সংবাদপত্রের শ্রী অমুক চন্দ্র অমুক, এই দেখুন আমার পশ্চাদ্দেশ। বলাবাহুল্য, সাংবাদিকটি সেদিন প্রেক্ষাগৃহের প্রথম সারি আলো করে বসে ছিলেন। সুমনের যুক্তি ছিল অতীব সিম্পল। আপনাদের আছে সংবাদপত্র, আমার আছে মঞ্চ। কাগজে আপনি যা খুশি লেখেন, কোনো জবাবদিহি করেননা, মঞ্চেও আমি যা খুশি করব। কোনো জবাবদিহিতে বাধ্য নই। আহা, যেন, তোমার আছে বন্দুক, আর আমাদের আছে ক্ষুধা। মনে আছে, এই আঁভাগার্দ বিপ্লবীয়ানায় মুগ্ধ ও হতচকিত আমরা, কাগজে কাগজে প্রতিবাদের ঝড়কে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে সে যুগে কত বিমোহিত করতালিতে ভরিয়ে দিয়েছি প্রেক্ষাগৃহ, আর যাদুকরের ঝোলা থেকে বেরোনো পায়রারা উড়ে গেছে এদিক-সেদিক দুনিয়াদারির পথে।
চুমু কান্ড : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৫১ বার পঠিত
চুমু কান্ডের পর এখন কিষ্কিন্ধাকান্ড -- শিল্পা শেঠি আর রিচার্ড গেরের বংশদন্ড। যদ্দুর যা জানা যাচ্ছে, প্রকাশ্য মঞ্চে এই যুগলের চুম্বনের দৃশ্যে ব্যথিত হয়ে জনৈক আইনজীবী জয়পুরে একটি জনস্বার্থ মামলা ঠুকেছিলেন। সেই মামলার শুনানিতে কোর্টে চুমু খাবার দৃশ্যখানি মাগনায় দেখানো হয়। সত্যযুগ হলে এর পর অগ্নিপরীক্ষা এবং সীতার পাতালপ্রবেশ হত। কলিযুগ বলে অন্য ব্যবস্থা, মেরেকেটে তিন মাসের জেল -- ভিডিও ক্লিপিং খুঁটিয়ে দেখে জনৈক বিচারক জানিয়েছেন, যে, এটি অত্যন্ত যৌন উত্তেজনাপূর্ণ আচরণ। অতএব অবিলম্বে রিচার্ড গেরেকে হাজতে পোরা প্রয়োজন। আর শিল্পার ভূমিকাও অত্যন্ত নিন্দনীয়, কারণ শিল্পা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে গেরেকে প্ররোচিত করেছেন, অতএব তাঁকেও সমন ধরানো প্রয়োজন।
আমাকে চমকাও : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১১৭৩ বার পঠিত
এ এক্কেবারে নতুন জিনিস হয়তো নয়, একটু তবু নতুনই বটে। অন্তত: আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এরকমটা কেউ ভাবেনি। বা হয়তো ভেবেছে, জানতে পারেনি কেউ, ফলে বাজারে বিক্রি হয়নি, ইয়েস, যেটা নিয়ে আজ কথা বলতে চলেছি - মশা মারার র্যাকেট। দেখেছেন নিশ্চয়ই। আলবাৎ দেখেছেন। ব্যাডমিন্টন র্যাকেটের মতন দেখতে, শুধু একটা নাইলন স্ট্রিং লেয়ারের বদলে তিনটে মেটাল তারের লেয়ার থাকে। চার্জ দিয়ে রাখতে হয়। তারপর প্লাগ থেকে খুলে সুইচ অন করে, মশাকে ফেদার কর্ক ভেবে লাগাও ব্যাকহ্যাণ্ড ফোরহ্যাণ্ড স্ট্রোক। মশার বডি, মেটাল তার স্পর্শ করলেই স্পার্ক। প্রথমে পিট্পিট্ করে, তারপর তারে আটকে যাওয়া মশাটার থেকে - একটু কাছ থেকে দেখলে ভালো বোঝা যায় - খানিক ধোঁয়া বেরোয়। তারপর ফট্ করে জোরে আওয়াজ হয়, আলোসহ। এই সময় পোড়া গন্ধটা পাওয়া যায় মশাটার থেকে। সারা ঘরে গন্ধ হয়ে যায়। আড়াই হাজার ভোল্ট কারেন্ট মশাটার গায়ে ঢুকে গেছে, তাই, মশাটা মারা যায়। অবভিয়াসলি, এবং সন্দেহাতিত ভাবে।
বৃহত্তর স্বার্থ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৮১ বার পঠিত
অবশেষে হুগো শাভেজও পথে এলেন। বোঝা গেল, ক্ষমতার নাম আসলে বাবাজি। এবং বিকল্প টিকল্প নয়, তার পথ আসলে একটিই। মাসখানেক আগে ব্যান করা হল ভেনিজুয়েলার জনপ্রিয়তম টিভি চ্যানেল গুলির মধ্যে একটিকে, যার নাম রেডিও ক্যারাকাস টেলিভিশন বা সংক্ষেপে আরসিটিভি। টেকনিক্যালি অবশ্য ঠিক ব্যান না, ভেনিজুয়েলা সরকার আরসিটিভির সম্প্রচারের লাইসেন্স রিনিউ করেনি মাত্র। নি:সন্দেহে ব্যানের চেয়ে জিনিসটা শুনতে ভালো, কিন্তু সুনামি শব্দটা শ্রুতিমধুর বলে তো আন্দামানের লোকজনের তাতে কিছু উপকার হয়নি। তাই হরেদরে ব্যাপারটা একই হল, কারণ আইনত: লাইসেন্স বিনা ভেনিজুয়েলার আকাশে কোনো ফ্রি চ্যানেল সম্প্রচার করা অসম্ভব।
ঘরে ফেরার গান : অর্পণ চৌধুরী
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯০৭ বার পঠিত
অনেক মানুষের মত মুকেশ আজকাল ঘরে ফেরে খুব ক্লান্ত চরণে, সঙ্গী তার সবজি বিক্রির নিজস্ব ঠেলাখানি। খুব ভোরে দিন শুরু হয় তার, দক্ষিণ দিল্লীর উপান্তে তার ঘিঞ্জি বাসা। সেখান থেকে এক ঘন্টা দূরে পাইকারি বাজার, সেখান থেকে আরো এক ঘন্টার পথ সবজিমান্ডি। এই তার চেনা পৃথিবী এবং এর বাইরেও যে আরেকটা পৃথিবী আছে, প্রতিদিনের চেনা পৃথিবীর বাইরের সেই পৃথিবীটা তাই কখন দ্রুত পালটাতে শুরু করেছিল মুকেশ টের পায়নি । পাবার কথাও নয়। অথচ রোদের তাপ বাড়তে থাকলে একসময় সে বাধ্য হয়ে ছায়া অনুসন্ধান করে এবং অনেকের মত জানতে পারে রাস্তার উল্টোদিকে নতুন রিটেল চেনের কথা, সেখানে ঠাণ্ডাঘরে সবজি জমানোর কৌশল, উপভোক্তাদের বদলে যাওয়া পছন্দ এরকম কিছু দরকারি অদরকারি কথা। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। সম্বল বলতে পড়ে থাকে তাদের ছেড়ে আসা গ্রামের বাড়ি। তাদের ঘর। আহা। সেখানে ফেরার আবছা পথ, বিনির্মাণকামী।
পালনা : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৭ জুন ২০০৭ | ৮১৩ বার পঠিত
শূন্যে দুলছে একটা শিশুদোলনা। হা-হা হাওয়ায় ওদিক যাচ্ছে, এ দিক আসছে, একটা শিশুদোলনা। পালনা। কয়েকমাস আগে একটা হরর মুভি দেখেছিলাম এক জনপ্রিয় হিন্দি নিউজ চ্যানেলে। সত্যি ঘটনা, তবে ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোকে গ্রাফ, স্কেচ, নাট্য রূপান্তর ইত্যাদি আর চাটনি আচার সহযোগে এমনভাবে পৌঁছে দেওয়া হয় আমাদের ড্রয়িং রুমে, মনে হতেই পারে যে, আমরা রাত এগারোটায় মুভি চ্যানেল খুলে কোনও ভয়ের সিনেমা দেখছি।
খবর্নয় খবর্দার (জুলাই ২৯) : মিঠুন ভৌমিক ও দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৯ জুলাই ২০০৭ | ১৪২১ বার পঠিত
ট্যাক্স নিয়ে ট্যাকটিসের কোনো শেষ নেই। উচ্চ, মধ্য, নিম্ন সর্ব ধরনের বিত্তবান মানুষের কাছেই ট্যাক্স মানে আতঙ্ক, ট্যাক্স মানেই তর্ক, ট্যাক্স মানেই সরকারি নীতির সমালোচনা, সরকার জনগনের ট্যাক্সের পয়সায় কোন অকাজ, কুকাজ করে বেড়াছে তার ফিরিস্তি। তো এত তর্কে না গিয়ে সবাই মিলে ট্যাক্স দেয়া বন্ধ করে দিলেই তো হয়। আমার দেওয়া এই সলিউশান টা খুব অদ্ভুত লাগছে কি শুনতে? তবে সোজা চলে যান লস অ্যাঞ্জেলেসের প্লেন ফিল্ডের ব্রাউন দের বাড়ি তে।
খবর্দার (আগস্ট ১৯) : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ১৯ আগস্ট ২০০৭ | ৬৯১ বার পঠিত
একদিকে যখন বিজ্ঞানমনস্কতা বাড়ানোর জন্য নানা কর্মসূচী চালু হচ্ছে, ঠিক তখনই উইসকনসিনের একটি ঘটনা নতুন করে মনে করিয়ে দিল কুসংস্কারের পাঁচিলটা এখনো কতো মজবুত। মধ্যবয়স্ক এক মহিলা ""ধর্মাচরণের"" নামে প্রচন্ড উৎপাত করে গ্রেপ্তার হয়ে ঘোষনা করলেন, তিনি নাকি ডাইনি এবং তাঁর যাদুচর্চায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে পুলিশ আইনভঙ্গ করেছে। গত মঙ্গলবার পূর্ণিমা ছিল। সেদিন মধ্যরাতে ব্রেনা নামের ঐ মহিলার প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত হয়ে ফোন করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দেখে, নিজের বাড়ির পেছনে প্রায় দশ ফুট উঁচু আগুন জ্বালিয়ে তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে চিৎকার করে মন্ত্র পড়ছেন ব্রেনা। কানের হেডফোনে রেকর্ড করা মন্ত্র বাজছে, আর তার সাথে মিলিয়েই চলছে তারস্বরে আবৃত্তি। পুলিশ নানাভাবে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ওদিকে তখন আগুনের তেজ আরো বেড়েছে। লেলিহান ঐ আগুনে ব্রেনা ছুঁড়ে দিচ্ছেন লাইটারের জ্বালানী তরল, পুরোনো টায়ার, কাপড় ও আরো অনেক কিছু। পরিস্থিতি সামাল দিতে এরপর পুলিশ ব্রেনাকে গ্রেপ্তার করে। তখন দেখা যায় ব্রেনা ভালরকম নেশাগ্রস্ত।
খবর্নয়, খবর্দার (আগস্ট ২৬) : মিঠুন ভৌমিক ও দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৬ আগস্ট ২০০৭ | ১৪২৯ বার পঠিত
এই মুহুর্তে বিশ্বের বেশ কিছু বিজ্ঞানী এক অভূতপূর্ব গবেষণায় মেতেছেন, যা সফল হলে অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপায়ে প্রাণ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। অদ্ভুৎ শোনাচ্ছে? তাহলে আরো শুনুন, বিজ্ঞানীরা এর মধ্যেই সময়সীমাও দিয়ে দিয়েছেন, আগামী ৩-১০ বছরের মধ্যেই তাঁরা ছুঁয়ে ফেলবেন এই মাইলফলক। কৃত্রিমভাবে তৈরী ঐ কোষের ভিত্তি হতে চলেছে ডি এন এ থেকে পাওয়া কিছু রাসায়নিক পদার্থ। কোষের মূল তিনটে অংশ বানানোর ছকও তৈরী। কোষপর্দা, যা একাধারে কোষকে ধরে রাখে, আকৃতি দেয় আর ক্ষতিকর পদার্থদের ঘাড় ধরে বের করে দেয়, সেটা বানানো-ই প্রথম ধাপ। আর হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানীরা এই কাজটা করে ফেলতে সময় নিচ্ছেন মাত্র ৬ মাস। তারপরেই শুরু হবে পরের ধাপ, অর্থাৎ কোষীয় বিপাকসমূহের সংযোজন।
খবর্নয় (অক্টোবর ১৪) : দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ১৪ অক্টোবর ২০০৭ | ৭৯৭ বার পঠিত
আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার সব কিছুতে প্রশাসনের নাক গলানো নিয়ে আমরা যারপরনাই বিরক্ত। আপিসের চাকরি থেকে শুরু করে ছেলের বিয়ে, সবেতেই আজকাল নাক গলায় পুলিশ, প্রশাসন আর পি ডব্লু ডি। কিন্তু ভাবুন তো, এর পর আপনার প্রতি দিনকার কথাবার্তার ওপর ও যদি প্রশাসন লাইন টানা শুরু করে, তখন জিনিস টা কেমন হবে? প্রায় এমন টাই হয়েছে ব্রাজিলে। ব্রাজিলের ফেডারেল ডিসট্রিক্ট গভর্নর, হোসে রবার্তো আরুদা একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন ভার্বের Present Participle এর ওপর। গভর্নরের নিজের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে যে, এখন থেকে কথাবার্তা, বিশেষত সরকারী লেখালেখির কাজে, present participle ব্যবহার করা যাবে না, কারণ সরকারী আমলারা নাকি ক্রিয়াপদের এই বিশেষ রূপ টা কে ব্যবহার করেন নিজেদের অকর্মন্যতা কে ঢেকে রাখার অজুহাত হিসেবে।
খবর্নয় (অক্টোবর ২১) : দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২১ অক্টোবর ২০০৭ | ৮৫৩ বার পঠিত
সেই কবে সুকুমার রায় বানিয়ে গেছিলেন বকচ্ছপ, হাসজারু থেকে হিজিবিজিবিজ এর মতন অদ্ভুত সব মিউট্যান্ট। তারপর সুদুর আমাজন থেকে ভলগা, গঙ্গা পেরিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, বাঘ সিংহ থেকে শুরু করে ইঁদুর, বাঁদর সব কিছুর সংকর তৈরি হয়েছে, বিজ্ঞান থেকে কল্প বিজ্ঞান সব দিকে ছরিয়ে গেছে মিউট্যান্টরা। কিন্তু এতদিন আমরা শুধু দেখে এসেছি উদ্ভিদ বা প্রানীর জিনের মিউটেশান, কিন্তু উদ্ভিদ আর প্রানীর জিনের সংকরায়ণ কি সম্ভব?
সুশীলবাবুর মানেবই : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৫ নভেম্বর ২০০৭ | ৯০২ বার পঠিত
মানুষ কয় প্রকার? প্রকার টকার নেই, চন্ডীদাস বলেছিলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য। মহামতি মার্কস বলিয়াছিলেন, দুই প্রকার -- শোষক ও শোষিত। কিন্তু এসব আসলে ভুলভাল কথা। চন্ডীদাস আউটডেটেড, মার্কস বুলশিট। শোষক-শোষিত, ডান-বাম, এমনকি সিপিএম-তৃণমূল, এইসব এখন চুকে-বুকে গেছে, "হার্মাদ' কবি সোজা-সাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষ আসলে দুই রকম -- সুশীল ও হার্মাদ।
খবর্নয় (ডিসেম্বর ১৬) : দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৭ | ৯২৪ বার পঠিত
অন্ধকার শীতের রাত্রি, একা একা রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, মনে মনে ভাবছেন এককাপ গরম চা পেলে হয়তো বেশ ভালো হতো। হঠাৎই সামনে দেখতে পেলেন একটা রেস্টুরেন্ট, একটু ইতস্তত: করে ঢুকেও পরলেন সেখানে। অল্প কিছু আলো, কিছু মোমবাতি জ্বলছে আশে পাশে, এদিক সেদিক ছড়িয়েছিটিয়ে কিছু ছায়া ছায়া মানুষ, আর মেঝের ওপর এদিকসেদিক, ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে কিছু কবর, মানুষের কবর
খবর্নয় (জানুয়ারী ৬) : দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৬ জানুয়ারি ২০০৮ | ৯৪৮ বার পঠিত
ঝড়, বৃষ্টি বা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুঁশিয়ারী দেওয়াটা আবহাওয়া দপ্তরের একটা বড় কাজ। কিন্তু কতটা নিখুঁত ভাবে তাঁরা আগাম খবর দিতে পারেন এই ব্যপারে? পরিসংখ্যান বলছে যে, আবহাওয়া দপ্তরের ফোরকাস্ট মোটেই খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়। আমাদের কোলকাতার আবহাওয়া দপ্তরের কথা তো ছেড়েই দিলাম, অতি উন্নত দেশের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, ডপলার রাডার, সুপার কম্পিউটারেরও সাফল্যের হার শতকরা ৬০% এর বেশী নয়। সেখানে কোনো মানুষ যদি দাবী করেন যে এই সমস্ত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই ওয়েদার ফোরকাস্ট করে দেবেন তিনি, এবং তার সাফল্যের হার ৮৫% এরও বেশী, তবে কেমন লাগবে শুনতে?
খবর্নয় (ফেব্রুয়ারী ১৭) : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ | ৭৯২ বার পঠিত
সেই যে রাজা মন্ত্রীর জামায় গন্ধ পেয়েছিলেন, সেই গন্ধ বিচার করতে সাহস করে কেউ এগিয়ে আসে নি, শের পালোয়ান ভীমসিং থেকে রাজার শালা চন্দ্রকেতু, সকলেই নিজ নিজ নাক এই বিচারে গলাতে অস্বীকার করেছিলেন। শেষমেশ ভাগ্যিস নবতিপর বৃদ্ধ নাজির হাজির ছিলেন, তাই সে যাত্রা শেষরক্ষা হয়েছিল। কিন্তু মজার কবিতাতেই শুধু নয়, গন্ধের ক্ষমতা আসলে মোটেই হেলাফেলা করার মত নয়। জীবনসঙ্গী / সঙ্গিনী বাছার ক্ষেত্রেও গন্ধবিচার যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। ক্লেইম করছে একটি ডেটিং ওয়েবসাইট, সঙ্গী নির্বাচনের চাবিকাঠি নাকি আসলে লুকিয়ে আছে গায়ের গন্ধে। মেয়েরা পছন্দ করে সেই ছেলেদের, যাদের গায়ের গন্ধ তাদের নিজেদের গায়ের গন্ধের থেকে সবচেয়ে বেশি আলাদা। অ্যান্ড ভাইসি ভার্সা।
খবর্নয় (ফেব্রুয়ারী ২৪) : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ | ৭২৫ বার পঠিত
শ্রী মহেশ প্রসাদ ভার্মাকে চেনেন? ... এই নামে না-ও চিনতে পারেন, কিন্তু মহাঋষি মহেশ যোগী বললে এক্ষুনি চিনতে পারবেন। জীবদ্দশায় তাঁর বিপুল ভ্রমণ, জীবনদর্শন ও কীর্তিকলাপের ডিটেইল খবরাখবর হয় তো আমরা উন্নাসিক তর্কপ্রিয় বাঙালিরা রাখি না, মোটামুটি তাঁকে এই জন্যেই চিনি যে, তিনি পপ গ্রুপ বীট্লসদের ধর্মগুরু ছিলেন, মানে বীটল্সদের শিষ্যত্বই তাঁকে বেশি খ্যাতি এনে দিয়েছিল, আর এ মাসের পাঁচ তারিখে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
খবর্নয় (মার্চ ২) : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০২ মার্চ ২০০৮ | ৭৭৫ বার পঠিত
ভারতে কিছু কিছু কমিউনিটির বিয়েতে অত্যধিক খরচাপাতি করার ট্র্যাডিশন আছে আমরা জানি। লাখ লাখ রুপিয়া উড়ে যায় এক রাতের বিয়েতে, তবে এ সব ঘোড়ারোগ কেবল ভারতীয়দেরই নয়। তৃতীয় ও অনুন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এমন বিয়েতে খরচা করার রীতি আছে। যেমন মেক্সিকো। ওয়েডিং গাউন থেকে শুরু করে, খবরের কাগজের পাতায় প্রত্যেক অতিথি অভ্যাগতদের দ্বারা প্রকাশিত উইশের বন্যা, নিমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন, চার্চের খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা সাধারণত কনের বাড়িকেই খরচ করতে হয়। এর পরেও, বর্তমানে প্রতি দশজোড়া বিবাহিত দম্পতির মধ্যে তিনজোড়া দম্পতির মধ্যে ঘটে যাচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদ, ১৯৭০ সালেও যেখানে অনুপাতটা ছিল দশজোড়ায় একজোড়া। যেহেতু জীবন থেমে থাকে না, তাই বিচ্ছিন্ন দম্পতিরা আবার প্রত্যেকেই নিজেদের নিজেদের পছন্দসই সঙ্গী / সঙ্গিনী বেছে নেন, এবং চক্রবৎ এই চক্করে আর্থিকভাবে বিশালভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন মেয়েদের বাড়ির লোকই, কারণ বিয়ের সিংহভাগ খরচই তাঁদের পকেট থেকে মেটাতে হয়।
খবর্নয় (মার্চ ৯) : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৯ মার্চ ২০০৮ | ৮৭৭ বার পঠিত
--বাবা, বাবা, আমি বিট্টুর সাথে পুকুরে যাচ্ছি, সাঁতার শিখতে।
-- আচ্ছা যাচ্ছো যাও, কিন্তু মনে রেখো, যদি ডুবে যাও, তা হলে আমি আর এ বাড়িতে ঢুকতে দেব না।
ছোটবেলায় আনন্দমেলায় জোক্টা পড়ে বেশ নির্মল আনন্দ পেয়েছিলাম। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি কেউ কাউকে এমনতরো হুমকি দেয়, "যদি মরে যাও, তবে কঠিন শাস্তি দেব'?
ঠিক এমনটাই ঘটেছে দক্ষিণ ফ্রান্সের এক গাঁয়ে। সে গাঁয়ের নামটা বাঙালি জিভে কেমন উচ্চারণ হবে জানি না, Sarpourenx নাম তার। গ্রামের মেয়র কাউন্সিল অফিসে সম্প্রতি এক অর্ডিন্যান্স জারি করেছেন যে গ্রামের কবরখানায় ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই, তিলমাত্র ঠাঁই নাই। শবদেহে শবদেহে ওভারক্রাউডেড। অতএব যাঁদের গ্রামের কবরখানায় প্লট অ্যালট করা নেই, তাঁদের মরা বারণ। নিচে লেখা: Offenders will be severely punished .
খবর্নয় (মার্চ ৩০) : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ৩০ মার্চ ২০০৮ | ৬৩১ বার পঠিত
সপ্তাহে চারদিন ভোর চারটে বেজে পনেরো মিনিটে টড ম্যাথিউজের দিন শুরু হয়। এগারো ঘন্টা কাজের পর ছুটি। আধ মাইল দূরের পাহাড়ঘেরা বাড়িতে তখন বেলা পড়ে এসেছে। স্ত্রী লোরি, দুই পুত্র ডিলান আর ডেভিনকে খানিকটা সময় দিতে না দিতেই, সময় ফুরিয়ে আসে। পরবর্তী সাত-আট ঘন্টা টড কাটান অন্য এক জগতে, আক্ষরিক অর্থেই যা মৃতদের দেশ। তাঁর কাজের টেবিলে ছড়িয়ে থাকে নানা আকারের অসংখ্য মানবকরোটির ক্ষুদ্র সংস্করণ, কম্পিউটারের স্ক্রিন জুড়ে অজস্র মুখ-- মর্গে তোলা আলোকচিত্র, স্কেচ, ফরেনসিক রিকনস্ট্রাকশান .... হাজার হাজার মুখ আন্তর্জালে ভেসে উঠতে থাকে। সেইসব মৃত মুখ, যাদের পরিচয় তো দূরের কথা, নামই জানা যায় নি।
খবর্নয় (এপ্রিল ৬) : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৬ এপ্রিল ২০০৮ | ৮১৬ বার পঠিত
ছোট্ট থেকে শুনে এসেছি। মা কানের কাছে মন্তর পড়ত, যখনই ডাক্তারের কাছে গেছি, ডাক্তারও ঐ একই মন্তর পড়ত, বেশি করে জল খাও, প্রচুর পরিমাণে জল খাও, শরীর ভালো থাকবে, স্বাস্থ্য ভালো হবে। কত বেশি? মোটামুটি আট আউন্স জলভর্তি আট গ্লাস প্রত্যেকদিন। তা হলেই একদম সুন্দর স্বাস্থ্য বজায় থাকবে, রোগব্যাধি সহজে কাছে ঘেঁষবে না। ইহা মার্কেটে কমনলি 8x8 rule নামে পরিচিত। কেবল আমাদের দেশের ডাক্তার নয়, সারা পৃথিবীতেই এই রকম একটা ধারণা চালু আছে। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে এই ধারণা? এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত এভিডেন্স আছে কি? এত জল খেতেই হবে কেন ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে?
দশটি বিধান : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৭ এপ্রিল ২০০৮ | ১০২৬ বার পঠিত
কুড়ি-কুড়ি ক্রিকেটের মাঠে টু-পিস-পরিহিতা চিয়ারগার্লরা নাচিতেছে দেখিয়া অকস্মাৎ মরালিটির মেজদার ঘুম ভাঙিয়া গেল। চোখ খুলিয়া মেজদা দেখিলেন খেলাধুলা লাটে উঠিয়াছে। খেলার মাঠে উর্বশী-রম্ভারা শরীর খুলে নাচিতেছে, রেশম ত্বকে পিছলে যাচ্ছে আলো আর স্টেডিয়াম-ভর্তি ভুখা জনতা চোখ দিয়ে গপাগপ রেশমি কাবাব গিলছে। দিকে দিকে অনাচার। সোডোমি। হিপি-হিপিনি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সমকাম। পাঙ্ক কালচার, নুডিস্ট কলোনি, বিকিনি-বালিকা। দেশ জুড়ে নারীমাংসের মোচ্ছব। ভারতীয় সংস্কৃতির সাড়ে সব্বোনাশ। পাপের পাত্র উপচীয়মান, মানবকুলের আর রক্ষা নাই।
শব্দকল্প : রুমেলা সাহা
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২১ জুলাই ২০২০ | ২৪৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
সূর্যের আদর গায়ে মেখে, পাখির মতো দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়ালাম। আমার শরীরে খোদিত শব্দগুলোকে স্বাধীন করে দিলাম। প্রত্যেকটা শব্দ আমার শরীর থেকে প্রজাপতির মতন পাখনা মেলে উড়ে চলল। উড়তে উড়তে তারা ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত উপত্যকায়। কেউ বসল কৃষকের হালে, কেউ বসল কুমোরের চাকায়, কেউ বসল শ্রমিকের কবজিতে, কেউ গেল ছাত্র-ছাত্রীর পাঠ্যপুস্তকের উপর। কেউ বসল দোকানদারের তুলাদণ্ডে। কেউ আবার ভিক্ষুকের ভিক্ষাভাণ্ডে, কেউ উড়তে উড়তে গিয়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন প্যাড গিয়ে বসল। কেউ আবার উকিলের কালো কোটে, কেউ শিক্ষকের চশমাতে, কেউ প্রবেশ করল কবি-লেখকদের হৃদয়ে। কিছু শব্দ মায়েদের মুখ থেকে শুনল তাদের গর্ভজাত সন্তানরা। কিছু শব্দ নারীর ঠোঁটে অবয়ব ধারণ করল।
উড়ান : রোদ্দুর মিত্র
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২১ জুলাই ২০২০ | ১৫৪২ বার পঠিত
বৃষ্টির তেজ প্রচণ্ড রকমের বেড়ে গেছে এই কয়েক মিনিটে। ঝোড়ো হাওয়ার সাথে শিরশিরে শব্দ, হুড়মুড় করে নেমে এসেছে হারুর ছাদে। বুকটা ক্ষণে ক্ষণেই কেঁপে উঠছে, একটু ভয় ভয়ও লাগছে বটে, কিন্তু ছাদ থেকে হারু কিছুতেই নামবে না আজকে। ওর সব স্বপ্ন, ছেলেবেলায় অঙ্ক খাতার পিছনে সুপারহিরোদের ছবি, ব্যাটম্যানের স্কার্ফ, এক এক করে নষ্ট হয়ে যাবে। বেলগাছের ডালে ঝুলে থাকা বাবার মুখটাও অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই সুযোগ। চোখ বন্ধ করে ঝড়ের মধ্যে শরীরটা ভাসিয়ে দিলেই কেল্লাফতে। একজোড়া ডানা ঠিক খুঁজে নেবে হারুকে। সে ভিজছে, অনবরত ভিজবে অসময়ের বৃষ্টিতে। মায়ের থেকে লুকোনো কান্না, ওষুধের দোকানে ধার, অপমান, চড়া সুদে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। আর তারপর ম্যাজিক!
এই সপ্তাহের খবর্নয় (২৯শে জুন) : দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৯ জুন ২০০৮ | ৯৪২ বার পঠিত
হাওড়া স্টেশনে নেমে সবার আগে কিসের দিকে চোখ পরে বলুন তো? হ্যাঁ, ঠিকই, সবার আগে দরকার হয় কুলীর। সাথে বাক্স প্যাঁটরা তো কম থাকে না। নিজেদের দুটো সুটকেশ, একটা বড় ব্যাগ ছেলে মেয়ের, পুরী থেকে আনা প্রসাদের চ্যাঙারি, বাপের বাড়ি আর শ্বসুর বাড়ির জন্য কেনা গিফটের বোঁচকা বুঁচকি। ভারী তো কম নয়, কে বইবে বলুন তো এই সব !! তার চেয়ে কুলি ডাকা ভাল। না হয় দুটো পয়সা বেশী যাবে, তবু আরামে হাঁটা তো যাবে। তবে এই সব কষ্টের দিন ফুরিয়ে এলো প্রায়। দুটো পয়সা বেশী দেবেনই যখন , তখন আরো দুটো পয়সা বেশী ঢেলে কিনে ফেলুন অ্যান্টি গ্র্যাভিটি সুটকেশ। এই নতুন ধরনের সুটকেশে আপনি যতই জিনিস রাখুন না কেন, আপনার সব সময়েই ওটা খালি মনে হবে। পাঁচ বছরের গবেষনার পরে শেষ পর্যন্ত সফলতা মিলেছে এমন ধরনের সুটকেশ বানানোতে।
এই সপ্তাহের খবর্নয় (৬ই জুলাই) : খবরোলা এন্ড কোং
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৬ জুলাই ২০০৮ | ৮২৬ বার পঠিত
অনেক দিন আগে, মনে পড়ছে, পঁচিশে বৈশাখের আগে পরে দূরদর্শন একটা সার্ভে মত করেছিল, আজকের বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে কতটুকু জানে-টানে। তাতে টিভি ক্যামেরায় মুখ দেখাবার সুযোগ পেয়েছিলেন শহর কলকাতার আপিসবাবু থেকে মেদিনীপুরের চাষীর বউ পর্যন্ত। গ্রামের লোকজন দেখা গেছিল অনেকেই রবীন্দ্রনাথের নাম পর্যন্ত শোনে নি। কলকাতার এক ভদ্রলোক তো রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেই এমন আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন, "তাঁর মত এত বড় একজন শিল্পস্রষ্টা, একাধারে কবি, গায়ক, পেইন্টার, রাজনীতিক ...' ওখানেই থামিয়ে অ্যাঙ্কর তাঁকে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা স্মৃতি থেকে বলতে বলায় তিনি প্রচন্ড আবেগের সাথে হাত পা নেড়ে আবৃত্তি করেছিলেন "দুর্গম গিরি কান্তার মরু'।
এই সপ্তাহের খবর্নয় (আগস্ট ৩১) : খবরোলা অ্যান্ড কোং
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ৩১ আগস্ট ২০০৮ | ৮৯৬ বার পঠিত
ছোট্ট থেকে মিতুলের মা মিতুলকে শেখায়, কোনও খাবার একা একা খাবে না, ভালো খাবার হলে, সবাইকে দিয়ে খেতে হয়, সবার সাথে মিলেমিশে খেতে হয়। ... বাঁদরের মা বাঁদরছানাকে এইরকমভাবে শেখায় কিনা জানা যায় নি, তবে বাঁদরেও দিয়ে থুয়ে খাওয়া পছন্দ করে। অন্যের সাথে মিলেমিশে খাবার যে মজা, অন্যকে কিছু দেবার মধ্যে নিজের ভেতরকার যে আনন্দ, তা বাঁদরের মধ্যেও বিলক্ষণ প্রকাশ পায়। আমেরিকান গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন।
এই সপ্তাহের খবর্নয় (সেপ্টেম্বর ৭) : খবরোলা অ্যান্ড কোং
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ | ১০০০ বার পঠিত
সিয়েরা লিয়ন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ। বলাবাহুল্য, অত্যন্ত গরীব দেশ। ১৯৯১ থেকে ২০০২ অবধি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত এই দেশের অন্যতম প্রধান শহর ফ্রিটাউন থেকে সুইডেনের এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিল এক ফুটবল ক্লাব, এফ সি জোহানসন। এই প্রথম কোনো আফ্রিকার দল খেলল এই টুর্নামেন্টে, তাই উদ্যোক্তারা যারপরনাই উত্তেজিত ছিলেন। যদিও এটা কোনো খবর নয়। প্রথমবার খেলেই প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়ে দেশে ফিরেছে এফ সি জোহানসন, এটাও খবর না। খবর হলো, দেশে ফিরতেই দলটি বাঁধনছাড়া অভ্যর্থনা পায়, কারণ, তারা ফিরে এসেছে। এর আগে অনেকবারই এই দেশের অ্যাথলিটরা বিদেশে গিয়ে বেপাত্তা হয়ে গেছেন, স্রেফ খেয়ে-পরে একটু ভালোভাবে থাকার আশায়। ভালো-খারাপের ঊর্ধ্বে, হয়ত বা শুধু বেঁচে থাকতেই ওঁরা এভাবে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
এই সপ্তাহের খবর্নয় (সেপ্টেম্বর ২৮) : খবরোলা অ্যান্ড কোং
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ | ৮৭৮ বার পঠিত
মিশিগানের সেই দম্পতিকে মনে আছে তো? এই গেল সপ্তাহেই যাদের খবর বেরিয়েছিল? আমেরিকায় রিয়েল এস্টেটের বাজার এখন বেশ মন্দা যাচ্ছে, বাড়ি বেচা-টেচা বেশ কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিন-কে-দিন। তো গেরি আর সিন্ডি মান তাঁদের বাড়ি বেচার এক অভিনব প্ল্যান বের করেছিলেন। পুতুলের বাড়ী বিক্রী করতে চেয়েছিলেন এক লাখ উনসত্তর হাজার ডলারে, সাথে নিজেদের বাড়ি ফ্রি। আসলে নিজেদের বাড়িটাই বেচা উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু খদ্দের জুটছিল না। তা, এই পুতুলের বাড়ীর সাথে আসল বাড়ীটি বেচার ফান্ডা তো মার্কেটে হু-হু করে ছড়িয়ে গেছে, তাঁদের বাড়িটা ইন্টারনেট আর মিডিয়ার কল্যাণে রাতারাতি বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছে। এইমাত্র খবর পাওয়া গেল, তাঁদের বাড়ি কেনার লোক পাওয়া গেছে। আরও ভালো খবর, সেই ক্রেতা কেবল মূল বাড়িটাই কিনছেন, পুতুলের বাড়ীতে তিনি হাতও লাগাচ্ছেন না।
এই সপ্তাহের খবর্নয় (ডিসেম্বর ৭) : খবরোলা অ্যান্ড কোং
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৭ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৮১৮ বার পঠিত
শীত এসে গেল। ক্রমশ কমে আসছে তাপমাত্রা, গরম জামারা সূর্যের আলো দেখছে ইতিউতি, ছুটির দরখাস্তর ফাইলটা মোটাসোটা হচ্ছে প্রতিদিন, হাওয়ায় খুশি খুশি ভাব। এই সপ্তাহের খবর্নয়, তাই, খুব হালকা আর মজাদার হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হলো না। কথায় আছে, Man proposes but God disposes . তাই এই সপ্তাহের খবর্নয় ছেয়ে থাকছে শুধুই সমস্যা, যাদের জন্য রোজ লক্ষ লক্ষ শব্দ খরচ হয়। আমরা তো ""শিক্ষিত ও প্রগতিশীল"", আসুন কিছু শব্দ অপচয় করে সেটাই প্রমাণ করি।
খবর্নয়? (১লা মার্চ) : খবরোলা অ্যান্ড কোং
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০১ মার্চ ২০০৯ | ১৩৩৪ বার পঠিত
NRGEA , মানে সহজ বাংলায় যাকে একশো দিনের কাজের প্রকল্প বলে, তা নিয়ে টাকা নয়ছয়, দুর্নীতির অভিযোগ আছে সব জায়গাতেই। গ্রামে গ্রামে এই নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছেন বহু কর্মী, তাই স্থানীয় প্রশাসনের রোষেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এরই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ভুখন সিং আর নিয়ামত আনসারি। ঝাড়খন্ডের লাটেহার জেলার কোপে আর জেরুয়া গ্রাম প্ঞ্চায়েতে তাঁরা গ্রামবাসীদের লড়াইয়ের পাশে থেকেছেন, লোক আদালতের রায়ে ঐ জেলার বিডিওকে জরিমানা দিতে হয়েছে, গ্রামবাসীরা পেয়েছেন বেকারভাতা। তারই বদলা নিতে ভুখনদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ই ফেব্রুয়ারী, পরেরদিন জেলেও পাঠানো হয়েছে তাঁদের।
আজি দখিন দুয়ার পর্ব-৩ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৫ জুলাই ২০২০ | ২৪১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
পপুলিজমের বৈশিষ্ট্য, যেখানে সঠিক-বেঠিকের হিসেবের থেকেও মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা বেশি প্রয়োজনীয়। কন্তের বিরুদ্ধে একগাদা বিতর্ক, মূলত তাঁর সিভিতে যেসব ডিগ্রির উল্লেখ আছে সেগুলো নিয়ে। মোদীর entire political science-এর মতো মোটা দাগের মিথ্যা না, মমতা ব্যানার্জির জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাস্যকর দাবি নয়, সুচারু অর্ধসত্য আর মিথ্যা দিয়ে সাজানো কন্তের ফোলানো সিভি। অন্যদিকে স্পেনের পাবলো ইগলেশিয়াসের Podemos পার্টি আঞ্চলিক রাজনীতি (যার শিকড় কিনা ভাষা ও সংস্কৃতিগত ভাবে স্বীয় স্বীয় অঞ্চলের এবং আলাদা) হাইজ্যাক করে নির্বাচনে কিস্তিমাত করেছে। তারা এখন তৃতীয় বৃহত্তম দল। যেসব আঞ্চলিক, প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোট নিজেদের দিকে টেনে এনে তারা জিতেছে সেই ইস্যুগুলো তাদের নিজস্ব কর্মসূচির নয়, সেই আন্দোলনগুলিতে তারা কস্মিনকালেও অংশ নেয়নি।
বেড এবং খট্টাঙ্গ পুরাণ : দিলীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ জুলাই ২০২০ | ২১২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট তৈরি করার সময়ে আন্দাজ পেয়েছিলাম এটা সরকারি সদিচ্ছা এবং অর্থ জোগাড় করে ফেললেই তক্ষুনি করে ফেলা যায় না। এমবিবিএস ডিগ্রি থাকলেই যে এটা সামলাতে পারবেন যে-কোনো ডাক্তার এমন নয় ব্যাপারটা। এখানে কাজ করতে হলে পাস করার পর অন্তত বছর দুয়েক ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা চাই তাঁর, বয়স হতে হবে পঞ্চাশের নীচে, কারণ শারীরিক পরিশ্রমও প্রচুর একাজে, সবকটা ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে কাজ করতে হয়। প্রয়োজনে রোগীকে অজ্ঞান করে, তাঁর ফুসফুসে টিউব ঢুকিয়ে, ভেন্টিলেট করার দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এই চিকিৎসকের। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই প্রাণসংশয় হবে রোগীর। অতএব এ কাজ ডাক্তার মাত্রেই করতে পারবেন, এমন নয়।
গল্প নিয়ে গল্প - কালো বরফ, জাতির জীবনের কালো দিনের কথা : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ৩১ জুলাই ২০২০ | ২৬০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শিকড় তো অনেক গহীনে। সেখানে প্রবেশ করবে কী করে রেখা। সে ছিল নিরূপায় নিরালম্ব এক মানবী, খালেকও কি তাই নয়? খালেক--পোকার রক্তে যে শৈশব রয়েছে তাকে সে এড়াতে পারে না। তাকে সে ভোলে নি। টিপু ভাইজান, মনি ভাইজান, ছবিদি, ইস্কুল, পা ভাঙ্গা শালিক...... কী অপূরব এক শৈশব এঁকেছেন মাহমুদুল হক। সেই শৈশবই খেয়েছে তার প্রাণমন। সেই ফেলে আসা গ্রাম, মানুষজন। ১৯৪৭-এর কথা তা। তখন বালকের বয়স আট হবে বড় জোর। ক্লাস টু। তার দাদা টিপু কলেজে ভর্তি হয়েছে। মনি ভাইজান ক্লাস নাইন হবে কি? সেই বালকের অমল শৈশবই এই উপন্যাসের আধার। এই উপন্যাসের প্রাণ। ছোট ছোট এমন অনুষঙ্গে ভরে আছে এই উপন্যাস যে পড়তে পড়তে বুক মুচড়ে যায়। দেখতে পাই আমার জন্মের আগের পৃথিবী। উপন্যাস তো আমাকে জাতিস্মর করে তোলে। দেখতে পাই সেই সময়কে।
প্যানডেমিকমুক্ত পৃথিবী বলে সত্যিই যে কিছু হয় না আর : অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ জুলাই ২০২০ | ৪৬৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
পার্মাফ্রস্ট বলে প্রকৃতিতে একটা ব্যাপার আছে যা স্থলভাগের প্রায় ২৪% এলাকা জুড়ে এর অবস্থান করে । পার্মাফ্রস্ট মানে মাটির নিচে সহস্র-অযুত বছর ধরে জমে থাকা চিরবরফ অঞ্চল। এই হিম-মৃত্তিকাই ধারণ করে আছে মানব সভ্যতার আদিম অস্তিত্বকে। এর বুকেই দাফন আছে বরফ-যুগের প্রাণীদের হাড়-কঙ্কাল, এমনকি কিছু গাছপালার অংশও। এগুলি এতটাই গভীর এবং পুরু বরফের স্তর যে, সাইবেরিয় অঞ্চলের বাসিন্দারা মাটি খুঁড়ে ঘর বানিয়ে তাতে শার্কের মত বৃহৎ প্রানীর মাংস অব্দি সংরক্ষণ করে বছরের পর বছর ধরে । বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই বরফও নাকি এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে । কেননা, বিশ্ব-উষ্ণায়ণের জেরে এই সব অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে লাগামছাড়া হারে। ২৩ জুন, ২০২০ জানা গেল যে, রাশিয়ার মস্কো থেকে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর মেরুবৃত্তের অন্যতম শীতলতম এলাকা ভেরখোয়ানস্ক শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এখানে সচরাচর লোকজন বছরের বেশরভাগ সময়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রির তাপমাত্রায় জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত । বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অংশে অনেক দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে, তাও ধীরে ধীরে নয়, প্রায় রাতারাতি।
বাপের ঠিক নেই : আমোদ বোষ্টুমি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০০৬ | ৯১৪ বার পঠিত
সম্প্রতি বেজায় হাঙ্গামা হয়েছে নরনারীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে। এ নিয়ে একটা সিনেমাও রিলিজ করলো, আর তার পরপরই হাতেনাতে জলজ্যান্ত প্রমাণ। সিনেমাটা দর্শককে খুব ভাবিয়েছিলো, নৈতিকতার প্রশ্নে বিবেকের প্রশ্নে যাকে বলে একটা ওয়ার্ক অফ আর্ট। কিন্তু বাস্তবেরটা সিনেমার চেয়েও ঘাঁটা কেস। কেসটা নতুন কিছু নয়, তবু আপাতত পাড়ার চায়ের দোকানে, অফিস ক্যান্টিনে, ইন্টারনেটের চ্যাটে, এটা এখন হট টপিক, কাগজে হেডলাইন। সমাজ যে কতটা উচ্ছন্নে যেতে বসেছে তার উদাহরণ নিম্নরূপ।
পুলিশও মানুষ : আমোদ বোষ্টুমি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ মে ২০০৬ | ৯৫৩ বার পঠিত
বাল্যকালে গুরুজনদিগকে অধিক জ্বালাতন করিলে, উঁহারা আমাদিগকে সামলাইবার নিমিত্ত রাত্রিকালে প্রেত-রাক্ষসাদি এবং দিবাকালে পুলিশ-ছেলেধরাদি নামক জুজুর ভয় দেখাইয়া প্রশমিত করিতেন। যদিচ ছেলেধরা, প্রেত, রাক্ষসের সহিত চাক্ষুস মুলাকাৎ হয় নাই, তথাপি পথে চলিতে ফিরিতে পুলিশ দেখিতাম। উহারা কখনো সাদা কখনো বা খাকি পোশাক পরিহিত, মাথায় টুপি, হস্তে কাহারো লাথি কাহারো বা পকেটে আগ্নেয়াস্ত্র শোভা পায়। দেখিয়া দূর হইতেই এই মর্মে ভীত হইতাম যে একবার যদি আমাকে দেখিতে পাইয়া পাকড়াইয়া লইয়া যায়, তাহা হইলে আর নিস্তার নাই।
কার্লোস ডিলুনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ মে ২০০৬ | ৮৪৮ বার পঠিত
"আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি কাউকে ঘৃণা করিনা। আমার পরিবারকে আমি ভালোবাসি। মৃত্যুদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত সকলকে জানাবেন, তারা যেন হাল না ছাড়ে, বিশ্বাস রাখে।'' - এই ছিল মৃত্যুদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কার্লোস ডিলুনার শেষ অফিসিয়াল বক্তব্য। খুনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় টেক্সাসের একটি আদালত। প্যানকিউরিক ব্রোমাইড ইনজেক্ট করে সেই মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা কার্যকরী করা হয় ১৯৮৯ সালের সাতই ডিসেম্বর। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে এই জাতীয় দার্শনিক উক্তি সত্ত্বেও, যাজক ক্যারোল পিকেট জানাচ্ছেন, মৃত্যুর ঠিক আগে কার্লোস ভয় পেয়েছিল। হাসতে-হাসতে জীবন দিতে বা নিতে পারে, এমন কোনো পেশাদার খুনীর মতো না, নাইন্থ গ্রেডের স্কুলছুট এই যুবকটিকে তখন মৃত্যুভয়াক্রান্ত এক স্কুলবালকের মতো লাগছিল। তখন তার বয়স ছিল সাতাশ। দন্ডাজ্ঞায় লেখা ছিল - নাম: কার্লোস ডিলুনা। জাতিতে হিস্পানিক। চুলের রঙ কালো। উচ্চতা পাঁচ আট। ওজন একশ পঁচাশি পাউন্ড। চোখের রঙ বাদামী।
শিল্প আমাদের ভিত্তি, কৃষি আমাদের ভবিষ্যত : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ জুন ২০০৬ | ৭৭৯ বার পঠিত
আমরা নেশায় বাঁচি। এটাকে অবশ্য বাঁচার নেশাও বলা যেতে পারে। হাতের কাছে অনেক সহজ নেশা আছে যেমন ইলেক্টিকের কারেন্ট খাওয়া, এটা অবশ্য মাঝে মাঝে খেয়ে থাকি। বেশ ঝিমঝিম ভাব লাগে, কখনও হাত পা ছিটকে ফেলে, কখনও টান দিয়ে ধরে রাখে অদৃশ্য বাঁধনে। ফলে ভ্যারিয়েশন আছে। এটা আপনর কোনদিনই সাপের ছোবল খাওয়ার মত একঘেয়ে লাগবে না। রাহুলদের শ্যাম্পেনে কোকেন মিলিয়ে খাওয়ার আইডিয়াটাও গুচ্ছ। মাঝে সাঝে চলতে পারে,রোজ নয়। কিন্তু নেশা তো রোজ চাই, বেঁচে থাকতে যখন হচ্ছেই। আর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেটা হাইটেক হতে হবে। টেক তো টেক না টেক তো না টেক, একবার তো সি। দেখাই যাক না, টেকনো নেশা না হলে কেন বেঁচে থাকা? সুতরাং আখ্যান আরম্ভ।
একটি ব্যক্তিগত যাত্রা : সামরান হুদা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০০৬ | ৮৬৭ বার পঠিত
সড়ক পথে ভারত থেকে বাংলাদেশ যাওয়াটা বেশ মনোরম। প্রচুর বাস হয়েছে, মাশুলও নগন্য, আর চারপাশ দেখতে দেখতে বেশ যাওয়া যায়। বর্ডারে আগে বেশ ঝামেলা করত কাষ্টমস কিন্তু এখন বাসওয়ালারাই সামলে নেয় সবকিছু,কিছু প্যাকেজ হয়ে থাকবে। সকালে এখানে বাসে উঠে পড়ো আর তারপর ওরাই সব দেখে-শুনে নেবে। ভোর ছটায় কোলকাতা থেকে বাস ছেড়েছে আনুমানিক সন্ধ্যে ছ'টায় ঢাকায় নামিয়ে দেবে, বাসে ওঠার আগে থাকতেই সেটা জানা। বেনাপোল বর্ডারে পৌঁছাতে যা সময় লাগে তার আধ ঘন্টা আগেই পৌঁছালো বাস, ইমিগ্রেশন কাষ্টমস সেরে নিয়ে বাস আবার চটপট ঢাকার পথ ধরলো দেড় ঘন্টার মাথায়। বাসে যিনি অ্যাটেন্ড্যান্ট, তিনি বললেন আজ সবকিছুই খুব তাড়াতাড়ি মিটে গেল, বিকেল পাঁচটার মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছে যাব ইন্শাল্লাহ। আমি পেট্রাপোল থেকে চট্টগ্রামে বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে পাঁচটার মধ্যে পৌঁছে যাব, আর জানতে চাইলাম তারপরে কিভাবে চট্টগ্রামে যাওয়া হবে?
ধান কাটা হল সারা : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ জানুয়ারি ২০০৭ | ১২২৮ বার পঠিত
শ্রীচরণেষু মা,
এ বছরও পৌষ সংক্রান্তিতে বাড়ি যেতে পারলাম না। ভেবেছিলাম পুরুলিয়া যাব, দুয়ার্সিনির বাংলোয় সকাল থেকে দলে দলে মেয়েরা আসবে গান শোনাতে তারপর চলে যাব কাঁসাই নদীর ধারে, এলোমেলো পাহাড় চুঁইয়ে আসা আলোয় ঝলমলে ঘোড়ানাচ , একে একে রঙিনে রঙটানা টুসু বুড়বুড়ি কাটতে কাটতে ডুবে যাবে জলের তলায়, কন্যার বিদায় কখনই সহ্য করা যায় না। চোখ ফেটে জল আসে, আত্মীয় স্বজনদের বিয়েতেও তুমি লক্ষ্য করেছ আমি সেই সময়টা এড়িয়ে যাই। মেঘে ঢাকা তারার গানটা এত টুসুর ভেতরেও ভেসে আসে, কিন্তু বিজয়ার দিন তো কই আমার কান্না পায় না! মা গো, এত রহস্যের কিছু নেই, প্রতিবার বাড়ি থেকে আসার সময় আমি তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারিনা তা কেন আমিও জানি তুমিও জান।
পিং পং : বিক্রম পাকড়াশী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ জানুয়ারি ২০০৭ | ৮১৫ বার পঠিত
উল্টোদিকের বোর্ডে মোট তিনটে ভাগ। ফার্স্ট কোর্ট, সেকেন্ড কোর্ট, থার্ড কোর্ট। হয় নেটের একেবারে কাছে ফার্স্ট কোর্টের কোনা দিয়ে বলটাকে বের করে একটা পয়েন্ট নিতে হবে, বা থার্ড কোর্টের কোনা দিয়ে একটা ঝটকায় টপস্পিনটা বের করে দিতে হবে। এইসমস্ত কথা আমরা ভাবি, কারন একটা পয়েন্ট মানে একটা পয়েন্ট নয়। একটা পয়েন্ট মানে দুটো পয়েন্ট। আমি ৩-৪ ডাইন অবস্থায় জিতলে ৪-৪, হারলে ৩-৫। বোর্ডের ওপর একটা চকখড়ি দিয়ে একটা ছোটো গোল বানিয়ে পর পর ঠিক ঐ জায়গালোতে আমরা বল রেখে যেতে থাকি। ইন্দিবর কুড়িটা রাখতে পারে, ও নির্ঘাত বেঙ্গল খেলবে। নার্ভ রাখতে হবে ইস্পাতের মতো।
দুই মেরুর গপ্প অথবা পাগলের প্রলাপ : অরিজিৎ মুখার্জী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ জানুয়ারি ২০০৭ | ১১৪৫ বার পঠিত
পৃথিবীর দুই মেরু : উত্তর এবং দক্ষিণ নয়, পৃথিবীর দুই মেরু আজ অন্য দুটি জায়গায়... - সুইস আল্পসের মধ্যে দৃষ্টিসুখজাগানো শৈলনিবাস দাভোস, আর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি... - দাভোসে অসংখ্য ফ্ল্যাশবাল্বের আলোয় উজ্জ্বল বিশ্ববাণিজ্যের রথী-মহারথীরা, হলিউডের মহাতারকারা, ফাইভ স্টার হোটেলের কনফারেন্স স্যুটে ঘন ঘন বৈঠকে ব্যস্ত, ব্যস্ততার ফাঁকে ছয় কোর্সের লাঞ্চ-ডিনার...অন্যদিকে নাইরোবিতে আশি হাজার লোকের মুঠো করা হাত, রাস্তার ধারে ধারে জমায়েত, মিছিল, আর যে দেশে মানুষের গড় দৈনিক আয় দুই ডলারের কম, সেই দেশে সাত ডলারে খাবার বিক্রি করতে চাওয়া ফাইভ স্টার হোটেলের খাবার তাঁবুতে ক্ষুধার্ত শিশুদের হানা...
নন্দীগ্রামের সেই রাত : সৌমিত্র বসু, সম্পাদক, অন্যস্বর
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৭ মার্চ ২০০৭ | ১৫৫১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬৭
এটা সেই রাতের ঘটনা। ১৪ই মার্চ রাত। দিনের বেলার "অপারেশন নন্দীগ্রাম' শেষ হবার পর রাতে সিপিএম স্থানীয়ভাবে একটি বারো ঘন্টার বন্ধ ডাকে। এই রকম একটি প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে লোকজন এমনিতেই সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঢুকে পড়ে, সেখানে এরকম একটি বন্ধ ডাকার অর্থ কি? দিনের আলোয় প্রথম পর্বের পুলিশি আক্রমণের পর, যখন খবর আসছিল, ৬০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে, মানুষের মৃত্যুতে আমরা শিহরিত, আতঙ্কিত হচ্ছিলাম, তখনও জানা ছিলনা, এই গণহত্যার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পর্বটি এখনও বাকি থেকে গেছে। ঠিক তখনই, মহাকরণে আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব এই দ্বিতীয় এবং ভয়ঙ্করতম পর্বটির পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনাকে কাজে পরিণত করতে বন্ধ এবং রাতের অন্ধকারের প্রয়োজন ছিল তো বটেই।
উন্নয়নের চেনা একটি মডেল : অর্পণ চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মার্চ ২০০৭ | ৭৪২ বার পঠিত
এখন চারিদিকে বসন্তের বাতাস বিশ্বাস ভাঙ্গার গন্ধে ভারী হয়ে আছে, ক্রমাগত পাড় ধ্বংস হবার আওয়াজের মাঝে নদীর চড়ায় জেগে উঠছে না কোনো বিকল্প আশ্রয়ের জায়গা, নন্দীগ্রামের তাজা ঘা এখনো শুকোয়নি। বাদ-প্রতিবাদের রাজনীতিতে লাশের সংখ্যাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কতগুলো মানুষকে মারলে পরে তবে গণহত্যা বলা যায় তাও প্রশ্ন উঠছে আনাচে কানাচে। তা চলুক, আমরা বরং চোখ রাখব খুব একটা সাম্প্রতিক ঘটনায়, নন্দীগ্রাম কান্ড উত্তর সময়ে মনে রাখেনি হয়ত বেশি কেউ, এই অস্থির বেদনাময় সময়ে ছোটখাটো অন্য অনেক ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখলেও নিউরন ফেল মেরে যায়, কিন্তু তাতে বিষয়টি পাল্টায় না, পাল্টে যায় শুধু বলার ভঙ্গী।
শহর থেকে নন্দীগ্রাম : আত্রেয়ী দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ এপ্রিল ২০০৭ | ৬৮১ বার পঠিত
"কেন এসেছেন আবার আপনারা? কি করবেন? কিছু করতে পারবেন? ঐ হারামজাদাগুলোর ফাঁসি দিতে পারবেন? এখোনো যে দিনরাত গুলি বোমা চালাচ্ছে ঐ হারামীগুলো' -- শীর্ণকায়া বৃদ্ধা, লম্বা আঙ্গুল নেড়ে নন্দীগ্রামে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। তাঁর অর্ধোন্মাদ তীক্ষ্ম গলা আরো একবার শুনলাম প্রজিত-অমিতাভ-সিতাংশুর তথ্যচিত্র "উন্নয়নের জন্যে'র শেষে। কেন গেছিলাম? কেন যাচ্ছি এই প্রশ্ন বার বার করেছি নিজের কাছে। তিন সপ্তাহের কোলকাতা ভ্রমণ, প্রতিবারের মত আত্মীয় স্বজনের বাড়ি নেমন্তন্ন, কিছু নাটক, সিনেমা, কেনাকাটা, বন্ধুর বাড়ির বারান্দায়ে রাত ভোর মদ/সিগারেট, বাইরে খাওয়া, কিছু দায়িত্ব, সামাজিকতা এই দিয়েই তো শেষ হতে পারত। আর বার বার মনে হয়েছে এ কি মিউজিয়াম দেখতে যাওয়া?
কালবেলা : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ মে ২০০৭ | ১০৪৯ বার পঠিত
মেয়েদুটি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।ব্যাকগ্রাউন্ডে বালি, সমুদ্র। খোলা চুল, স্কার্ট,টপ। বছর বারো বয়স হবে হয়তো। কিম্বা তারও কম।অথচ তাদের চোখ, ঠোঁট, সামান্য তেরছা করে ঈষৎ এগিয়ে রাখা বাঁ পা নিশ্চিত মনে করাবে কোন তরুণীকে।অন্তত: এই মুহূর্তে অনেককেই সেরকমই মনে করাচ্ছে । তাঁদের একজন এমা রাশ, অস্ট্রেলিয়ান ফেমিনিস্ট, অ্যাকাডেমিক।গত অক্টোবরে এখানকার বামঘেঁষা "থিঙ্ক ট্যাঙ্ক' দ্য অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট থেকে এমা প্রকাশ করেছেন একটি অ্যাকাডেমিক পেপার,যার শিরোনামটি-ই প্রবল বিতর্কিত-করপোরেট পিডোফিলিয়া।
আদালত ও কয়েকটি মেয়ে (পর্ব -১) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ মে ২০০৭ | ১১৬২ বার পঠিত
১৭৮৯ সালের কথা, অর্থাৎ, যে বছর ফ্রান্সে বিপ্লব হল। জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে লন্ডনের ওল্ড বেইলি কোর্টে তোলা হল এক গরীব লন্ডনবালিকাকে। তার নাম মেরি ওয়েড। কোর্টে তোলার সময় তার বয়স ছিল দশের কিছু বেশি। মেয়েটি রাস্তায় ভিক্ষে করত। যদিও তার মা আদালতে জানান, যে, মেয়েকে ভিক্ষে করতে তিনি শেখাননি। অন্য বড়ো মেয়েদের পাল্লায় পড়ে মেয়ে নিজেই বখে গিয়েছিল, আর মা পিছন ফিরলেই সে তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ত ভিক্ষের কাজে। ভিক্ষা করার জন্য অবশ্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। হয়েছিল, অন্য এক অপরাধে, ওল্ড বেইলি কোর্টের আইনী দস্তাবেজ অনুযায়ী তার নাম, "থেফট উইথ ভায়োলেন্স : হাইওয়ে রবারি' ।
আদালত ও কয়েকটি মেয়ে (পর্ব -২) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ জুন ২০০৭ | ১২৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এবার একটু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি খতিয়ে দেখা যাক। বছরটা বাস্তিল পতনের, আগেই বলা হয়েছে। ইংল্যান্ডে তখন "পাগলা' রাজা তৃতীয় জর্জের রাজত্ব। ব্রিটেন আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে হার স্বীকার করেছে কয়েক বছর আগে। বছর পনেরো আগে, ১৭৭৫ সালে এসে গেছে জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন। গ্রেট ব্রিটেনে শুরু হয়ে গেছে বহু আলোচিত শিল্পবিপ্লব। লন্ডন, লোকসংখ্যার বিচারে, বিশ্বের বৃহত্তম শহরে পরিণত হতে চলেছে। অষ্টাদশ শতকের শুরুতে, লন্ডনের জনসংখ্যা ছিল ছয় লক্ষ, আর ১৭৫০ সালে সাত লক্ষ। এই সংখ্যা ১৮০০ সালে যা পরিণত হয় দশ লক্ষে, এবং ১৮৫০ সালের মধ্যে কুড়ি লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। অথচ, অষ্টাদশ শতক ইংল্যান্ডের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে
না-মেয়েলি কথা : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ জুলাই ২০০৭ | ৯৯৭ বার পঠিত
নাতাশা স্টট, সেনেটর, ডেমোক্র্যাট; ক্যারল ব্রাউন, সেনেটর, লেবার; জুডিথ ট্রোথ, সেনেটর, লিবারাল; কেরি নেটল, সেনেটর, গ্রীন। অস্ট্রেলিয়ার এই মহিলা সেনেটররা রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতাকে সরিয়ে রেখে আপাতত: একজোট দুটি বিলের সমর্থনে।
অ্যাবরশন পিল RU 486 এর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য একটি বিল, অন্যটিতে প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিংএর বিজ্ঞাপনে সত্যভাষণের দাবী।
চারটি মেয়ে, দুটি বিল-বিষয় অ্যাবর্শন। নিছক মেয়েলি প্রসঙ্গ? আসুন, দেখা যাক।
একটি গণহত্যা : কিছু এড়িয়ে যাওয়া প্রশ্ন : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জুলাই ২০০৭ | ৫১৪ বার পঠিত
১৬ই এপ্রিল ২০০৭। ভার্জিনিয়ার ছোট্ট শহর ব্ল্যাক্সবার্গে মারা গেল ৩২ জন; আহত ২৫। অনেক খবর, ভিডিও ফুটেজ, বক্তৃতা আর শোকবিবৃতিতে ভরে গেল সবকটি মাধ্যম। খবরের ফলো-আপ, ভিডিও ফুটেজ বিতর্ক, সংসদে হুল্লোড় সামলে শুরু হল অশ্রুমোচন। অত:পর আরো শোকবিবৃতি এবং চোখের জলে পৃথিবী টইটম্বুর। ঘাতক চো খবর হল। চো যাদের মারল সেইসব হতভাগ্যও বঞ্চিত হলনা। এবং যারা ঘটনার পর প্রায় একমাস ধরে শোকসভা করল, তারাও। শুধুই খবর। তারপর একসময় হ্যারি পটার, আসন্ন নির্বাচন ও মহাকাশবিজ্ঞানের মত জরুরি বিষয়ের চাপে হারিয়ে গেল ব্ল্যাক্সবার্গ ট্র্যাজেডি।
নামাবলী : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ আগস্ট ২০০৭ | ৭৯৯ বার পঠিত
তবে বলি কি, এইসব ঝামেলায় গিয়ে লাভ কি,একটু "আমাদের" মতো হোনই না। চুলের রঙ করে ফেলুন বাদামী। চোখে পরুন কনট্যাক্ট। ইংরিজি ফরাসী বা জার্মানে কথা বলুন, উচ্চারণে আনুন ঠিকঠাক অ্যাকসেন্ট। চামড়ার রঙ নিয়ে কি করবেন শিওর না, তবে "সন্দেহজনক" নাম একদম রাখবেন না। মধ্যপ্রাচ্যে থাকবেন না। পারলে মুসলিম হবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় বোম মেরে প্রিএম্পটিভ মেজার হিসাবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যটাই উড়িয়ে দিতে পারলে। চেষ্টা চলছে, তবে সেটা যতদিন না হচ্ছে, একটু কষ্টে কাটান। প্লিজ বেয়ার উইথ আস।
চারশো সাতান্ন : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১০২৭ বার পঠিত
যদিও এখন শহরে এসে গেছেন জর্জ বুশ, কন্ডোলিজা রাইস কিম্বা হু জিনতাও, শিগ্গিরি এসে পড়বেন শিনজো আবে, স্টিফেন হারপার প্রমুখরা, যদিও এই মুহূর্তে সমস্ত অস্ট্রেলিয়া সিডনির দিকে তাকিয়ে, যদিও এই মুহূর্তে শুরু হ'তে চলেছে এশিয়া প্যাসিফিক ইকনমিক কো-অপরেশন ফোরামের সামিট, যদিও এখন মিডিয়া জুড়ে শুধুই নিরাপত্তার বিবরণ আর নেতাদের মুখ, ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে হলদে কেকের রাস্তা এবং ১২৩; আমরা যাব শহর থেকে দূরে, সঙ্গে থাকবে সম্পূর্ণ অন্য সংখ্যাত্রয় -৪৫৭।
ইউ পি মে দম্ হ্যায় : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৭৯৬ বার পঠিত
খবরটা পড়েই বেশ চম্কে চমস্কি হয়ে গেলাম। সত্যিই তো, পাপ পুণ্য নির্ধারণ করবার তুমি কে হে? এই সেদিন মাত্তর গ্রাম দেশ থেকে কলকাতায় চাকরি করতে গেলে বামুনের বাচ্চাদের জাত যেত, ওখেনে চামড়ার কলে করে জল দেয় কিনা! তা সে সব ছুঁৎমার্গ আটকে রাখতে পেরেছে কাউকে কলকেতা যাওয়ার থেকে? কলকেতা তো কোন ছাড়, লোকে দিনে দুবার করে কালাপানি পার হচ্ছে আজকাল, প্রয়োজনের খাতিরে, অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে নিয়ম চিরদিনই বদলায়। এ কি মোহাব্বতের গুরুকূল নাকি, যে নিয়ম অমোঘ, অপরিবর্তনীয় জিনিস? দরকার পড়লে অনিয়মকে নিয়ম, বেআইনীকে আইনি, পাপকে পুণ্য বানাতে কতক্ষণ?
গুগল, গুগল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৮৪০ বার পঠিত
সম্প্রতি, এই ২০০৭ সালের জুন মাসে, গুগলের বড়োকর্তার এক বক্তব্য নিয়ে একটি খুচরো বিতর্ক হয়ে গেল। দূর পাল্লায় গুগলের লক্ষ্য কি, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গুগলের চিফ এক্সেকিউটিভ এরিক স্মিট বলেছিলেন, যে, এমন একদিন আসবে, যখন মানুষ আর শুধু ইন্টারনেট থেকে পড়া, দেখা, বা জানার বস্তু খুঁজে বার করার জন্য সার্চ করবেনা, বরং, আরও কিছু "অতি-ব্যক্তিগত" প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে।
মহাকালীর বাচ্চা : বৈজয়ন্ত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৯৬৬ বার পঠিত
এই সপ্তাহে মুখ চুলকানো খবরের অভাব নেই- টোটো কাপ হাতে বিশ্বজয়ী ভারত, রিজওয়ানুর রহস্যকান্ড ও পুলিশের অবৈধ জুলুমবাজি, রাহুল গান্ধীর রাজ্যাভিষেক, এবং কলিকাতা ডুবুডুবু, বঙ্গ ভেসে যায় রে। একের পর এক খবর, এক একটি খবর পরিশীলিত, অপরিশীলিত, লিবারেল, অ-লিবারেল, হুল্লোড়ে, গম্ভীর- যাবতীয় বৃত্ত, উপবৃত্ত, পরাবৃত্তের নিস্তরঙ্গ জীবনে এক একটি আধলা ইঁট। জলতরঙ্গ জন্মায়, জল বুজ্কুড়ি কাটে, তরঙ্গ মিলায় যায়, তরঙ্গ উঠে, তারপর ঘরে ফিরে নিরালা নি:ঝুম অন্ধকার।
আজি দখিন দুয়ার -৪ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০১ আগস্ট ২০২০ | ২১২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করাকালীন সেখানকার এক রসায়নের ছাত্রের সাথে আমার প্রায়ই গল্প হতো। ছেলেটি ব্রাজিলের, তখন সে ডক্টরেট করছে। ব্রাজিল বললেই আমার মন চিরকাল উচাটন হয়। রিও বা সাও পাওলোর ছবি, টিভির পর্দায় বা নেটে যেমন দেখেছি, ভেসে ওঠে। সিটি অফ গডের দৃশ্যাবলী, ফুটবল মাঠের ম্যাজিক স্টিলগুলো, অসংখ্য খেলোয়াড়ের নাম, তাদের নিয়ে মাতামাতি, বিশ্বকাপে কলকাতার চালচিত্র ---এইসব অজস্র ছবির কোলাজ। কিন্তু সেই ছেলের কাছে আমি অন্য এক ব্রাজিলের আঁখো দেখি গল্প শুনতাম। ছেলেটির বাবা একজন নামকরা সার্জেন, অগাধ পয়সা। এমনিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশিপ ছাড়া পড়া খুবই খরচসাপেক্ষ। সেই ছেলে খুবই অপরাধবোধ নিয়ে বলেছিলো, তার বাবার কাছে ঐসব খরচ গায়েই লাগেনি। একেবারে হাইস্কুল থেকে ছেলেটি তাই মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা। স্কুল কলেজের পড়াশুনোয় তাকে কোনদিন কোন কাজ করতে হয়নি, অথচ তার বেশিরভাগ বন্ধুরাই নানারকম ছোটখাটো কাজ করতে বাধ্য হয়েছে পড়ার পাশাপাশি। ব্যক্তিগত প্রিভিলেজ, পারিবারিক বৈভব, ব্রাজিলের আর্থিক বৈষম্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (পৃথিবীর অন্যত্রও) ক্রমশ বেড়ে চলা "ট্রাম্পিয়ানা" তাকে বিষন্ন করতো।
দীর্ঘতম ছায়া : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ নভেম্বর ২০০৭ | ৮৭৪ বার পঠিত
নন্দীগ্রামের পরে শুনলে মনে হতে পারে ইয়ার্কি মারা হচ্ছে। কিন্তু একথা সত্য, যে, ১৯৭৭ এ ক্ষমতায় আসার পর সিপিআইএম এর প্রাথমিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি ছিল, বিরোধী পার্টির কর্মী-সমর্থক-নেতাদের উপর কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবেনা। ৭২ থেকে ৭৭, সিপিআইএম এর মতানুসারে, লুটপাট দাঙ্গাহাঙ্গামা নয়, এ রাজ্যে চলেছিল "আধা-ফাসিস্ত" সন্ত্রাস। সিপিআইএম এর হিসাবে, এই সন্ত্রাসে রাজ্যজুড়ে তাদের ১১০০ কর্মী খুন হয়েছিলেন। ঘরছাড়া হয়েছিলেন আরও অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ।
শিশুবেচার হাটে : অরিজিৎ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৭ | ১২৯৫ বার পঠিত
একটা মেয়ের কথা দিয়ে শুরু করি। উনিশ বছরের মেয়েটা, তার একুশ বছর বয়সী সঙ্গী। মেয়েটা সন্তানসম্ভবা। কিন্তু দেশের আইন অনুযায়ী এই শিশুটি অবৈধ, কারণ মেয়েটির বয়স কুড়ির কম। শিশুটি যদি জন্মায়, কোনো খাতায় তার নাম উঠবে না। তার কোনো পরিচয় নেই, নিয়ম অনুযায়ী শিশুটির কোনো অস্তিত্ব নেই। ডাক্তারী কারণে মেয়েটি গর্ভপাত করাতে পারে না, তাই এক দূর গ্রামে গিয়ে শিশুটির জন্ম দেয়, আর তারপর অল্প কিছু পয়সার বিনিময়ে বেচে দেয় অন্য কারো কাছে।
ক্রমেই তোমরা "স"-এর মহিমা বুঝিতে পারিবে : অরিন্দম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ ডিসেম্বর ২০০৭ | ১৩৮৮ বার পঠিত
যেভাবে সোমের পরে মঙ্গল আসে, মঙ্গলের পরে বুধ, ঠিক সেইভাবেই রিজওয়ানুর পরে নন্দীগ্রাম, নন্দীগ্রামের পরে তসলিমা, তসলিমারে পরে সৌরভের শতরান এল। এল, চলেও গেল। থেকে গেল মূখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, সুশীল সমাজের গন্তব্য আর অবশ্যই তির্যকের মন্তব্য। প্রথম দুটি ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও শেষের ঘটনাটি রাজনীতি মুক্ত। সমাজনীতিই সেখানে একমাত্র আলোচ্য বিষয়। আর সমাজনীতির বিষয় আমি বাঁদরদের, খুবই নীতিবাগিশ বলে মনে করি। সংকট্ময় মূহুর্তে ওদের সাহায্যে আমি অনেক সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে পারি। সেদিনও এরকম হল। ভাবছেন তো, কোনদিনের কথা বলছি? দাঁড়ান একটু সবুর করুন, বলছি একে একে।
জনগণ জানেন, আমরা জানি : ফারহা জিয়া : অনুবাদ - বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ জানুয়ারি ২০০৮ | ১১৭৫ বার পঠিত
যথেষ্ট হয়েছে। কথা বলার, পরিষ্কার করে , জোর দিয়ে কথা বলার সময় হয়েছে। কারণ একটাই। আমরা, জনতা, জানি, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে, ঠিক কোন ঘটনাক্রমের শেষ ধাপে গিয়ে, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হল।আমরা কিন্তু জানি এই দায়িত্ত্ব কাদের। বেনজির ভুট্টোর হত্যা ঠিক একক বা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এই জাতীয় ঘটনার আদলের সঙ্গে আমাদের বিশেষ পরিচিতি তৈরী হয়েছে।
ভ্যালেনটাইনের প্রাক্কালে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ | ৯৮৩ বার পঠিত
প্রেম করার, প্রেমে পড়ার আগে পড়ে ফেলুন এই বিশ্বপ্রেমের গাইডবুক। জেনে নিন, কি করবেন, কি করবেন না। সংযম অভ্যাস করুন - প্রেম করবেন পরে। আগে ইন্দ্রিয় জয় করুন, সংযমী হন। স্মরণে রাখবেন স্বয়ং কবিগুরু বৌকে ভাই (ছুটি) বলে ডেকে গেছেন। জাতির পিতা নেহাৎই এমনি-এমনি পিতা হওয়া যায়না বলে কষ্টেশিষ্টে একটু চুপচাপ ফুলে ছাপ দিয়েই আজীবন সংযম প্র্যাকটিস করেছেন। ভুলবেন না আমরা জাতির পিতার সন্তান, কবিগুরু আমাদের ধ্রুবতারা, ব্রহ্মচর্য আমাদের রক্তে। সতত: বিপ্লব বলতে বাতেলা বুঝবেন আর প্রেম বলতে ব্রহ্মচর্য।
রাধে রাধে কমিনভাই, টিক্কা জ্বালাইয়া তামুক খাই : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ | ৮১৫ বার পঠিত
সেজকাকা চটে লাল। দোষের মধ্যে আমার বোনটি গুনগুন করছিল কলেজ-সোশ্যালে শোনা গান,-----"" যেখানেতে ঘটে যত অনিস্টি, সকলের মূলে কমিউনিস্টি,,। ব্যস, শুরু হয়ে গেল লেকচার। ---""না হয় দিনকাল কিছু পাল্টেছে, বাজার আজ ভগবান হয়েছে, তা'বলে নতুন জেনারেশান এইসব আজেবাজে গান গাইবে আর আমাদের শুনতে হবে! '' পুরনো দিনের পার্টি মেম্বার আমার কাকাকে বোঝানো মুশকিল যে এটা আসলে অন্নদাশংকর রায়ের বিখ্যাত ছড়া, আর সুর দিয়েছেন বিখ্যাত গণশিল্পী অজিত পান্ডে। বোন আমার দিকে করুণ চোখে তাকায়-- রেজিস্টার্ড বক্বক্ করনেওলা দাদাটির ওপর তার অনেক ভরসা। দাদা নিশ্চয় কিছু উল্টোপাল্টা যুক্তি-কুযুক্তি দিয়ে বাবাকে চুপ করাবে।
বেসু প্রসঙ্গে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মার্চ ২০০৮ | ৮৫০ বার পঠিত
পুরাতন বিই কলেজ, অধুনা বেসুতে যা ঘটে চলেছে, তা একই সঙ্গে ট্র্যাজিক এবং হাস্যকর। বেসু যখন জ্বলছে, কর্তৃপক্ষ তখন ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে রক্তারক্তি চলছে, বাইরে থেকে পেশীশক্তির আমদানি হচ্ছে অবাধে, ক্রমশ: জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষকরাও, আর কর্তৃপক্ষ অতন্দ্র শার্লক হোমসের ন্যায় কে বা কারা "বেসুকে নন্দীগ্রাম হতে দেব না' বলে এসএমএস চালাচালি করছে,তার রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যস্ত। দুইদল ছাত্রের মধ্যে মারপিট হচ্ছে, সমাধানের সহজ উপায় কি? কর্তৃপক্ষের মতে সোজা উপায় হল দশটার সময় হস্টেল শুদ্ধু ছেলেকে ঘাড় ধরে কলেজ থেকে বার করে দাও। বাস ভাড়া করে হাওড়া আর শিয়ালদা স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে এসো। এবার নিজের ম্যাও তারা নিজেরা সামলাক
পাহাড়ে, বসন্তে : হিমাদ্রী ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ জুলাই ২০০৮ | ৭৪৫ বার পঠিত
এপ্রিল মাসের শুরুতে আমরা পাহাড়ে যাই। তখনও পাহাড়ে গোলমাল এতটা বেড়ে ওঠেনি। গোর্খাল্যান্ডের দাবীতে নতুন করে আন্দোলন সবে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। খবরের শিরোনামে আসাও শুরু হয়েছে। এই উত্তাল হয়ে ওঠা পাহাড়ে খবর আমরা পাই মূলত: খবরের কাগজের মারফত। পাহাড়ের বাস্তবতা কি, সেখানে মানুষ কি ভাবছেন, রাজনৈতিক নেতারাই বা কি ধরণের চিন্তাভাবনা করছেন, সত্যি বলতে কি, এ সম্পর্কে আমাদের, সমতলের মানুষদের তেমন কোনো ধারণা নেই। পাহাড় যেন এক অজানা অঞ্চল, যার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। পাহাড়ের পটভূমিকা আমাদের অজানা, অনেকটা অবোধ্যও বটে। কলোনি আমলের মতো, পাহাড় যেন, আজও দেশের মধ্যে একটুকরো বিদেশ।
করোনার দিনগুলি - ত্রয়োদশ কিস্তি : ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ৩১ জুলাই ২০২০ | ৩৮১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
অনেক রোগী খুপরিতে ঢুকে প্রথমেই স্যানিটাইজারের বোতল থেকে দু-চার ফোঁটা তরল বসার চেয়ার, আমার টেবিলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আজ এক ভদ্রমহিলা গঙ্গাজল এর মত আমার গায়ে কয়েক ফোঁটা স্যানিটাইজার ছিটিয়ে দিলেন। মানে চেয়ার-টেবিলের সাথে তিনি ডাক্তারকেও স্যানিটাইজ করে নিলেন। ওদিকে রোগীর সংখ্যা রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অধিকাংশই জ্বরের রোগী। জ্বর আসলেই এখন অনেকে গন্ধ শুঁকছেন। একজন বললেন, 'ডাক্তারবাবু, খাবার-দাবারের গন্ধ পাচ্ছি না। কিন্তু ডেটলের গন্ধ, ডেনড্রাইটের গন্ধ এগুলো দিব্যি পাচ্ছি।'
একজন রোগী দুদিন আগেই দেখিয়ে গেছেন। জ্বর কমছে না। আবার এসেছেন। তার পুরোনো প্রেসক্রিপশন পুরো সাদা। আমি অবাক হয়ে বললাম, 'এ কি? আমি কোন ওষুধপত্র লিখিনি নাকি?'
উনি বিব্রত মুখে জানালেন, 'হ্যাঁ লিখেছিলেন। কিন্তু বাড়ি গিয়ে প্রেসক্রিপশন স্যানিটাইজ করতেই সব লেখা উবে গেছে।'
ব্যক্তিগত স্পেস, আত্মজীবনী সব ঘেঁটে ঘ, বাঁদররা কী বলছে শুনুন : অরিন্দম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ | ১৪৬৬ বার পঠিত
কয়েকদিন বাজারের দাম এত বেড়ে গিয়েছিল যে নাভিশ্বাস উঠছিল সংসার চালাতে। মাঝে ভেবেছিলাম সংসার থেকে পালাব, সাধনসঙ্গিনী জোগাড়ও করে ফেলেছিলাম কিন্তু সে পে স্লিপ দেখতে চেয়ে বসল। তা দেখালাম কিন্তু দেখে বলে চার অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যায় মাইনে না পেলে আমি তোমার সাধন সঙ্গিনী হব না। মাইনে জিজ্ঞেস করা অপরাধ কিনা, আমি সে সব জটিল প্রশ্ন যাইনি। চুপচাপ চেপে গেছি। ঘরে ফিরে আবার পুরোনো খেলা শুরু করে দিয়েছি, আদিখ্যেতার চরম নিদর্শন অনেকটা প্যাঁচা কহে প্যাঁচানি, খাসা তোর চেঁচানি স্টাইলে। বৌ বলছে, তুমি কী ভাল, আমি ততোধিক চেঁচিয়ে বলছি, তুমি ভালোরও ভালো।
লা জওয়াব দিল্লী - ১ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ | ৯৬৫ বার পঠিত
দিল্লি অতি খাজা জায়গা .... সেই কবে কোন বিস্মৃত অতীতে অর্ণব চ্যাটার্জি অ্যালিয়াস ন্যাবা চিঠিতে লিখে সাবধান করেছিল তার প্রিয় বন্ধু আসমা চৌধুরি জয়িতা, ওরফে জয়ি-কে। তা, কে কার কথা শোনে! এই যুগে ভালো কথার কে-ই বা দাম দেয়, কে-ই বা শোনে। গ্যাঁড়ারই বা অতএব, শোনার কী দায় পড়েছে! একবিংশ শতাব্দী ঝক্কাস করে এসে পড়েছে তার স্লোডাউন সমেত, ওয়াইটুকে-র ম্যাজিক তখন একেবারে গায়ব-ইট'স গন-চলে গেছে কেস, তখন গ্যাঁড়ার দিব্যদৃষ্টি খুলে গেল, একেবারে পোষ্কারভাবে গ্যাঁড়া বুঝতে পারল জীবনের সমস্ত সাফল্য দিল্লিতেই মিলবে। ভুবনেশ্বরে নয়, বাড়ির পাশে কলকাতাতে তো নয়ই, প্রেমিকাকে বিয়ে করে শুরু থেকে পাশে পেতে হলে দিল্লিই একমাত্র সম্ভাব্য ডেস্টিনেশন।
সাঁঝবাতির রূপকথারা : হরিদাস পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৬৬২ বার পঠিত
সাঁঝবাতি আর রূপকথার মধ্যে নাড়ির টান। সন্ধেবেলায় যখন ঘরের আঙিনায় ছায়ারা গাঢ় হয়ে আসে, জ্বলে ওঠে সাঁঝবাতি, একের পর এক, তখনই জন্ম নেয় রূপকথারা। জন্ম নেয় ঠাকুরমার কাঁপা-কাঁপা গলার ওঠাপড়ায়। আর খোকাখুকুরা শোনে,চোখের পাতায় নেমে আসা ঘুমের ঢেউকে তাড়িয়ে দিয়ে। চোখের মণি বড় বড়, বেড়ে গেছে বুকের ধুকপুকুনি। রূপকথা ভয় পাওয়ায়। ঠাকুমা দেখেন নাতিনাতনির চোখে ভয় ঠাঁই করে নিয়েছে। রাক্ষস - খোক্কসের দল ঘিরে ফেলেছে বাড়ি। এবার ঠাকুমা গলার স্বর পাল্টান - কে জাগে? লালকমল না নীলকমল? খোকা-খুকু জেগে আছে। এবার ওরা প্রাণপণে প্রার্থনা করে-- সময় নেই, সবাই জাগো। জেগে ওঠো লালকমল, ঘুমিও না নীলকমল। রূপকথা জাগতে শেখায়। এবার রাক্ষ্স-খোক্কসের দলের হারার পালা। নীলকমলের হাতে আছে এক আশ্চর্য তলোয়ার। ঠাকুমা বলে দেন--- কোন সরোবরের মাঝখানে কোন স্ফটিকস্তম্ভের মধ্যে লুকোনো রয়েছে রক্ষরাজের প্রাণভোমরা। এবার রূপকথা মারতে শেখায়।
"স" এর কী বাহার! বাঁদররা গাইছে - মা, মাগো মা : অরিন্দম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জানুয়ারি ২০০৯ | ১৩৫৩ বার পঠিত
ওরা পাঁচজন যেদিন আমার সঙ্গে থাকে , সেদিন আমি শাহেনশা। পৃথিবীর সব রকম জটিল সমস্যার সমাধান আমি এক মিনিটে করে ফেলি। বর্ষপূরণ বা বর্ষবরণের রাত্রে এবার ওদের সঙ্গে দেখা হয়নি, দেখা হ'ল এই বছরের গোড়ায়। আমি তিন পাত্তর চড়িয়ে বাড়ির উল্টোদিকের কদমগাছটাতে বসে পা দোলাচ্ছি, এদিক ও দিক দেখছি , এমন সময় ওরা এল। ওরা পাঁচজন আর ওদের মধ্যে একমাত্র মহিলা পুঁটি। প্রথমে এসে ওরা একটু লাফালাফি, ঝাপাঝাপি করে , তারপর থিতু হয়ে বসে। বসল। বয়জ্যেষ্ঠ বাঁদরটি আমাকে দেখে বলল,
ব্যান্ডপার্টি, নাইটরাইডার এবং গৌরী ধর্মপাল : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ | ১২৫৩ বার পঠিত
গতকাল দুপুরে আমার বৌয়ের সঙ্গে পাড়ায় একটি ব্যান্ডপার্টির খুব অশান্তি হয়, রাতে মানু সেটা আমায় বলল। বিয়ের ব্যান্ডপার্টি। আমাদের পাড়ায় খুব আসে। আমাদের এলাকায় ভূমিসংস্কারের প্রবল সাফল্যে পুকুর প্রায় লুপ্ত প্রজাতি, সবই এখন প্রোমো-তাড়িত বহুতল। আমাদের বাড়ির গায়েই একটা পুকুর এখনো অবশিষ্ট, বিয়ের মরশুমে প্রায়ই নানা বিয়েবাড়ি থেকে এখানে জল নিতে আসে। একসময় যেগুলো ছিল আচার, কিছু বৌ উপচার হাতে আসতেন, শঙ্খ নিয়ে, উলু দিয়ে, এখন তার সঙ্গে আসে ব্যান্ডপার্টি, এবং টুইস্ট নাচ। এই নাচের সঙ্গে এলভিসের কোনও সম্পর্ক নেই, হিন্দি সিনেমার নাচ দেখে, এবং নাইটক্লাবের নাচ টিভিতে দেখে নাচ-না-জানা লোক যখন পৃথুল দেহ কামোদ্দীপক রকমে আন্দোলিত করতে চায়, কিন্তু হয়ে দাঁড়ায় বিকটতা, তাকে বলে টুইস্ট, এতদিন মূলত বিসর্জনে নাচা হত, ধীরে বিয়েতে ও অন্নপ্রাশনে, এরপরে বোধহয় শবযাত্রাতেও হবে।
"প্রহার'' ও "এ ওয়েন্স ডে'' : ঈশ্বর-ঈশ্বর খেলা : হরিদাস পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ৭৩৮ বার পঠিত
শিব্রাম চক্কোত্তি মশাইয়ের "কিশোর সংকলন''এ ছিল একটি অনন্য স্বাদের কবিতা। ছোট্ট মেয়ে শিবি কিছুতেই "পৃথিবী'' বানান লিখতে পারছে না। ওর খামখেয়ালে ওটা কখনো হচ্ছে পৃথীবী, কখনো পৃথিবি বা কখনো প্রিথীবি। অনেক চেষ্টার পর ও অনায়াসে বলে- " --- থ'য়ে হ্স্বই, বয়ে হ্স্বই বসিয়ে দেব 'থিবি' "। তখন হতাশ গুরুজন ওকে বোঝান যে "পৃথিবীর একটা নিজস্ব নিয়ম আছে। তুই সেটা না বুঝে পৃথিবীকে ইচ্ছেমত বানাতে পারিস নাকি? কেন নয়? শিবি পাল্টা প্রশ্ন করে --
"যেমন করে কার্ল মার্কস্, বুদ্ধ, লেনিন, গাঁধি। ---- আরও অনেকে, ইত্যাদি, আমিও যদি তেমনি করে বানাই?''- প্রশ্ন করে শিবি।
লা জওয়াব দিল্লী - ৭ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০১ মার্চ ২০০৯ | ৯৭৫ বার পঠিত
আবার অন্যদিক থেকে দেখলে, দিল্লিতে বাঙালি, পুনরায়, দুই প্রকার। এক গ্যাঁড়ার মত লোকজন, যারা প্রায়শই বড়মেজ বিভিন্ন রকমের চাকরি পেয়ে বাংলার মাটি ছেড়ে দুর্জয় ঘাঁটি গেড়ে বসছে দিল্লি এনসিআরের বুকে, এবং এখানেই থেকে করেকম্মে খাচ্ছে, পয়দা করছে সেকেন্ড, থার্ড জেনারেশন প্রবাসী বাঙালি। চাকরি অথবা উচ্চশিক্ষা, সঙ্গে সাইড ডিশ হিসেবে উইকএন্ডে বাংলা কল্চর, এই এদের গল্প তো শুনেছেন আগের বারে।
লা জওয়াব দিল্লী - ১০ : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১২ এপ্রিল ২০০৯ | ৯০৯ বার পঠিত
দিল্লিওয়ালা কী করে চিনবেন?
একটা প্রচলিত জোক চলে বাজারে, কলকাতার বাঙালির হাতে পয়সা জমলে বাঙালি কী করে? না, এবারে পূজোয় কোথায় বেড়াতে যাবে, তার প্ল্যান করে। বম্বের মারাঠির হাতে পয়সা জমলে সে কী করে? না, কোন শেয়ারে সেই পয়সা লাগালে তার সবচেয়ে বেশি লাভ হবে, তার ছক কষে। আর দিল্লিওয়ালার হাতে পয়সা জমলে দিল্লিওয়ালা কী করে? ... কী আবার, প্রপার্টি কেনে।
ফসিল্স ---- বাংলা রকগান : ইশান, সোমনাথ ও রজত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : গান | ১৫ জানুয়ারি ২০০৭ | ১৫৫৪ বার পঠিত
উনিশশো নব্বইয়ের গোড়ায় সুমন চট্টোপাধ্যায় যখন তাঁর ব্যারিটোন কন্ঠস্বর সমেত একা একটি আস্ত মঞ্চ জুড়ে আছেন, বোঝা ক্রমশ: কঠিন হয়ে যাচ্ছে, স্টেজে কলকাতার সফলতম একক অভিনয় হচ্ছে, না শুধু একখানি গান, ফসিল্স তখন কোথায়? গলা নয়, সুমনের গোটা শরীর দিয়ে যখন চুঁইয়ে পড়ছে ভদ্রলোক মধ্যবিত্তের জীবন কাহানিয়া, জীবন ও যৌবন, যৌনতা ও ফ্রাস্টেশন, যখন উচ্চারিত হচ্ছে "ভিডিয়ো ক্যাসেটে আর নিল সোফাসেটে বসে মিঠে খুনসুটি' ফসিল্স তখন হরিদাসের ডানার সুপ্তিতে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চুলোয় যাক এই ভদ্রজনোচিত রবীন্দ্রগান, এই বাস্তবধর্মী সুচারু অভিনয়শিল্প, এই সোচ্চার স্লোগান তখনও আস্তিনের আড়ালে। "এসব কি গান না জগঝম্প?' এই অভিযোগে এর পর একদিন কলামন্দিরের স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে হরিদাসের ডানাকে, এবং আলোকিত মঞ্চে আসবেন অঞ্জন দত্ত -- সেসব তখনও ফিউচার টেন্স।
হারবার্ট : ইশান, অক্ষ, সোমনাথ ও ইন্দ্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ১১৪৭ বার পঠিত
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের U/A সার্টিফিকেটের পরেই স্ক্রিন জুড়ে দেখা যায় বোর্ডে বাঁধা সারিসারি বেলুন। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ এবং অরেঞ্জ। সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধ। হরাইজেন্টাল সুতো দিয়ে নয়, আসলে তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে যুক্তি ও ব্যাকরণের অর্ডারে। অচিরেই ফট করে একটি আওয়াজ হবে, এবং ব্রেনে শব্দটি রেজিস্টার হবার আগেই প্রথম সারির ষষ্ঠ বেলুনটি দুমফটাস। আরও এক সেকেন্ড অপেক্ষার পরেই ফেটে যাবে ঠিক তার নিচের সবুজ বেলুনটি। ক্যামেরা প্যান করবে, বেলুনের বোর্ডকে ফোকাসে রেখে ব্যাকগ্রাউন্ডে পর্দার বাঁদিকে দেখা যাবে আউট অফ ফোকাস, ঝাপসা অস্পষ্ট শহর কলকাতা। একটি হলুদ ট্যাক্সি। একটি সাদা অ্যাম্বাসাডার।
তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল : অদ্রীশ বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৬ আগস্ট ২০০৭ | ১০৮২ বার পঠিত
যুদ্ধ এখন আর ঘোষিত হয় না, বরং চলতেই থাকে। এরকমই বলেছিলেন এক জার্মান কবি। বিশেষত গালফ যুদ্ধের পর থেকে দুনিয়ার ভরকেন্দ্র নানা ইক্যুয়েশানে অদল বদল হওয়ায় ক্ষমতা আর আধিপত্যর গল্পটা অনেকটাই অন্যরকম হয়ে গেছে। ঠান্ডা যুদ্ধের অনি:শেষ দশা এখন পৃথিবীর নতুন অবসান দূর্ভাবনা। রাসায়নিক যুদ্ধ, জীবাণু যুদ্ধ, জল ও তেল যুদ্ধ, মহাকাশ যুদ্ধের নিত্যনতুন ফর্মূলা বের হচ্ছে। টেকনোলজিক্যাল বুমের দৌলতে সেই ফর্মূলাকে ডিকোড করা, ভাইরাস ছড়ানো, গোপনে তছনছ করে দেওয়া তথ্যজাল বন্দোবস্ত আজ নতুন নতুন সব যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাজায় রাজায় যুদ্ধের ফর্মূলাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
পুজোর আমি, আমার পুজো : পারমিতা চ্যাটার্জী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ অক্টোবর ২০০৬ | ৮২৯ বার পঠিত
ঝকঝকে নীল আকাশে, সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে এক অন্যরকমের রোদ্দুর এসে পৌঁছে গেছে পৃথিবীর এমুড়ো ওমুড়ো। ঝাপুস ঝুপুস বিষ্টি যে কখনও সখনও হচ্ছে না, তা নয়, তবু তারই ফাঁকে লোকে বাক্স ঝেড়ে বের করে আনছে বালুচরী, জামদানী, বেনারসী, পৈঠানি, কাঞ্জিভরম, শেরওয়ানি আর বিবিধ প্রকার পাঞ্জাবী ও জামেওয়ার শাল, মেলে দিচ্ছে রোদ্দুরে। আমরাও ঝাড়তে বসেছিলাম গুরু ও চন্ডালের ঝোলাখানা। হাতে উঠে এলো একবছর আগের এই লেখাটি। আজ, তৃতীয়ার সকালে, এই লেখাটিই মেলে দিলাম, যদিও এটি কোনোমতেই "আলোচনা' নয়। --- সম্পাদক
ওয়ারহলিয়ানার পনের মিনিট : প্রগতি চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৫ নভেম্বর ২০০৭ | ১২২৩ বার পঠিত
"In future, everybody would be famous for fifteen minutes."
--- Andy Warhol, 1968.
উর্দ্ধলিখিত ভবিষ্যবাণীটির প্রবক্তা, পৃথিবীর প্রথম পপ-চিত্রকর অ্যাণ্ডি ওয়ারহলের খ্যাতি পনের মিনিটের অনেক বেশী সময় স্থায়ী হয়েছে।
ওয়ারহলিয়ানা বা ওয়ারহল-তত্ত্বের ব্যবহার/ আলোচনা/ গবেষণার চলোর্মি তাঁর জীবিতকালে তো বটেই, ১৯৮৭-এ মৃত্যুর কুড়ি বছর পরেও প্রবহমান। বই, সিনেমা, শহুরে জনতার জামাকাপড়, পত্রপত্রিকার নিবন্ধে প্রায়ই দেখা যায় ওয়ারহলকে। যাঁর ছবির আইকনগুলি এতদিন এইভাবে দেখার পর বেশ চেনা আমাদের।
নেট বিষয়ে দুটি লেখা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৭ নভেম্বর ২০০৪ | ১০৫৯ বার পঠিত
পরীক্ষার খাতা হলে এই লেখা এই ভাবে শুরু করতে হত, যে বর্তমান যুগকে বলে তথ্যবিপ্লবের যুগ। কিন্তু এটা পরীক্ষার খাতা নয়, আর ইন্টারনেটও শুধুমাত্র তথ্যের বন্যা নয়। বিশেষ করে আমরা যারা নব্বইয়ের দশকের আগে একটু আধটু রাজনীতি/লেখালিখি/চিন্তাভাবনা করতাম, সোভিয়েত ব্লকের পতন, খোলা অর্থনীতি কেব্ল টিভি উইন্ডোজ নাইন্টিফাইভ পেরিয়ে ইন্টারনেট পর্যন্ত যাত্রা শেষে যারা উত্তর আধুনিকতার বিভিন্ন খোঁয়াড়ে আশ্রয় নিয়েছি, তাদের কাছে, ইন্টারনেট উত্তর আধুনিক দুনিয়ার বিজ্ঞাপনের এক আকর্ষণীয় মডেল সুন্দরী।
ভেঙ্গেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময় : গুরুচন্ডা৯
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০১ ডিসেম্বর ২০০৪ | ৯৩৪ বার পঠিত
সংবাদে প্রকাশ, যে মেয়েদের হোস্টেলে জনৈকা ছাত্রী তার পুরুষ বন্ধুকে নিয়ে প্রবেশ করার অপরাধে হোস্টেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির সুপ্রাচীন জীর্ণ ভবনে যেহেতু ঐতিহ্যপূর্ণ বাস্তুঘুঘুদের বাসস্থান, অতএব, আমরা এই মূহুর্তে ভুলে যাব, যে ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা খোঁয়াড়ে ভরে রাখাটা প্রাগৈতিহাসিক একটি প্রথায় রূপান্তরিত হতে চলেছে সারা বিশ্ব জুড়ে, ভুলে যাব, যে এই অ্যান্টি ব্যারাকিং মুভমেন্ট থেকেই শুরু হয়েছিল সত্তরের দুনিয়া কাঁপানো সেই ফরাসী বিপ্লব।
মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা:কেন যুক্তিসঙ্গত নয় : রিনিতা মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০১ ডিসেম্বর ২০০৪ | ৮৪৫ বার পঠিত
হিংসাত্মক অপরাধ, এই মূহুর্তের অন্যতম গুরুতর সামাজিক সমস্যা। বহু লোকেই বিশ্বাস করেন, যে, দানবিক অপরাধে যারা দোষী, তাদের উপযুক্ত শাস্তি, মৃত্যু। তাঁদের যুক্তি হল, ক্রমবর্ধমান হিংসার মূলোৎপাটনের সর্বোত্তম পন্থা হল অপরাধীকে খতম করে দেওয়া। অনেকগুলি ইউরোপীয় দেশ মৃত্যুদন্ডকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়ায় তা এখনও বহাল তবিয়তে বিরাজমান। অতএব, বিতর্কটি বিদ্যমান,এবং মৃত্যুদন্ড ঘিরে যে বিতর্ক, তা কখনই খুনি ও ধর্ষণকারীর শাস্তি হওয়া উচিত কিনা, সেই নিয়ে নয়, বরং কি শাস্তি হওয়া উচিত, এই নিয়ে। অতএব, বেছে নেওয়াটা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট এবং পানিশমেন্ট হীনতার মধ্যে নয়, বরং মৃত্যুদন্ড এবং তার প্রাথমিক বিকল্প যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মধ্যে।
নেট, এক অতিকথা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০১ ডিসেম্বর ২০০৪ | ১৩২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই বিশেষ ধরণের অস্তিত্বকে আমরা বলতে পারি রিকার্সিভ অস্তিত্ব। রিকার্শন একটি বিশুদ্ধ কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ নির্মান, যা একটি বিশেষ প্রকারের ডেফিনিশনকে সূচিত করে। এ এমন এক ধরণের সংজ্ঞা,যা নিজেই নিজেকে ইনক্লুড করে। অর্থাৎ জীবনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আপনি যদি বলেন, জীবন্ত বস্তুর ধর্মই হল জীবন,তাহলে সেটি একটি রিকার্সিভ ডেফিনিশন,কারণ এখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যে জীবন্ত বস্তুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আপনি বলবেন, যার জীবন আছে সেই জীবন্ত। অর্থাৎ জীবনের এই সংজ্ঞায় আপনি জীবনের সংজ্ঞাকেই ইনক্লুড করেছেন, এবং এটি একটি রিকার্সিভ সংজ্ঞা।
অপহরণ, অপহরণ : গুরুচন্ডা৯
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০১ জানুয়ারি ২০০৫ | ৮৬১ বার পঠিত
চাদ্দিকে এখন অপহরণ অপহরণ হাওয়া। লোকে গপগপ করে চা আর লেড়ো বিস্কুট সহযোগে সাতসকালে গিলছে তাজা নিউজপ্রিন্ট,খবরের কাগজের পোয়াবারো, হাইটেক তদন্ত করে শিগগিরিই ভারত্ন পুরষ্কার পেতে চলেছে বঙ্গের পুলিশ। পাব্লিকেরও মস্তির শেষ নেই, এইফাঁকে শিখে নেওয়া যাচ্ছে অপহরণের নতুন নতুন কায়দা, শার্লক হোম্স টোম্স ছাড়ুন, স্বপনকুমার, হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন, স্বয়ং স্বপনকুমার অব্দি গোয়েন্দা গপ্পে এইরকম অপহরণের কাহিনী লিখতে নির্ঘাত ভির্মি খেতেন।
তসলিমা নাসরিন, এবং আরো কিছু কথা : ঈশান শর্মন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ জানুয়ারি ২০০৫ | ৮২৪ বার পঠিত
তসলিমা নাসরিনের নাম প্রথম শুনি নির্বাচিত কলাম বইটির সুবাদে। কানে আসে বইটি চূড়ান্ত র্যাডিক্যাল এবং সারা বাংলাদেশে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কি এমন নতুন কথা লিখেছেন ঐ মহিলা, জানার আগ্রহে প্রায় দ্রুতপঠনের তৎপরতায় শেষ করে ফেলি নির্বাচিত কলাম, এবং, বলতে দ্বিধা নেই, বেশ হতাশই হই। গোটা বইটিতে এমন একটিও নতুন ধারণা খুঁজে পাইনি, যা ইতিপূর্বে বিভিন্ন নারীবাদী আখ্যানে বহুচর্চিত নয়। অবশ্য এরকমই হবার কথা, কারণ লেখাগুলি সংবাদপত্রে কলাম হিসাবে প্রকাশিত।
ত্রিদিবের গল্প : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ | ১২৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সবচেয়ে বেশি বছর ধরে, সবচেয়ে বেশি করে ত্রিদিব এটা বুঝেছে, তার নিজের জীবনে সবচেয়ে কদর্য ব্যাপারটা আসলে সে নিজেই। কিন্তু, যখন শেষ অব্দি এটা বুঝল, তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে, আর, নিজেকে নিজেই বদলানো মানে নিজেকে দিয়ে বদলানো, যে নিজের মধ্যেই রয়েছে গন্ডগোলটা। ওসব আসলে হয় না। কিন্তু এসব জেনে টেনে গেলে সুবিধে একটা হয়ই। নলেজ ইজ পাওয়ার। সুঠাম সঙ্গত দক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হয়।
বিষণ্নতার উপাখ্যান : বেদবতী দত্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ | ১০৬৭ বার পঠিত
ভয় করে আজকাল, বড়ো ভয় করে। রাত হলে, যখন সুয্যিমামা টুপ করে ডুবে যায় দূরের ঐ গাছগুলোর ওপারে, আর গাছগুলো কালো-কালো ছায়া-ছায়া হয়ে যায়, মনে হয় ঐ ছায়ামূর্তিরা এবার আমার ঘরে ঢুকে পড়বে, ভয় দেখাবে। ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে। যখন আলো ক্রমশ কমে আসত, কমে আসত, কিন্তু শেষ হতনা বিকেলের খেলা, মনে হত এখনও একটু আলো থেকে গেছে আকাশের গায়ে, সেই তখনকার কথা।
মহামারী, কোয়ারেন্টাইন ও দেশকাল - পর্ব ৬ : দীপঙ্কর দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৭ আগস্ট ২০২০ | ২৬৬৫ বার পঠিত
মহামারীর আবহে মামুলি এক মাস্ককে ঘিরে যে বহুমাত্রিক তাৎপর্য সেটিও আমাদের কাছে ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। শতবর্ষ আগের নিছক গজ আর কাপড়ের মাস্ক আজ বিপণনের অমূল্য সামগ্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তাবড় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া আর সর্বজ্ঞ হিতৈষীদের প্রতিনিয়ত উপদেশ ও পরামর্শের ঠেলায় এবং 'ইনফরমেশন প্যানডেমিকে'র দাপটে সাধারণ মানুষ আজ দৃশ্যতই বিভ্রান্ত। আর মানুষের মনের এই বিভ্রান্তি ও আতঙ্ককে মূলধন করেই দুনিয়া জুড়ে পসরা বসেছে নানা ধরনের মাস্কের। শুধু স্বাস্থ্য সুরক্ষার তাগিদে নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের চাহিদা, প্রয়োজন, মর্যাদা, ও মানসিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে রকমারি মাস্ককে অনবরত বাণিজ্যিক ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে 'কালচারাল' বা 'ফ্যাশন স্টেটমেন্ট' হিসেবেও।
দখিন হাওয়ার দেশ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৮ আগস্ট ২০২০ | ৪৩৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
পাইলটের আকাশবাণী হল আর কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা ক্রাইস্টচার্চের বিমানবন্দরে অবতরণ করব, ঠিক এই সময়ে নজরে এলেন দক্ষিণ আল্পস, পাহাড়চূড়ায় তুষার, যেন সদ্য স্নান করে গায়ে ট্যালকম পাউডার মেখে স্থাণুবৎ গা এলিয়েছেন পশ্চিমতটরেখা বরাবর। তরঙ্গের মতন সাদা বরফের চূড়া, তার অনতিগভীরে কোথাও বা পাহাড়ের কোলে পান্না সবুজ ছোট হ্রদ, তারপরেই ক্যান্টারবেরির প্রশস্ত প্রান্তর জুড়ে এঁকেবেঁকে চলা অজস্র শিরা উপশিরার মতন নদী, দেখতে দেখতে ক্রাইস্টচার্চ ঘিরে আকাশপাখি গোল করে ঘুরতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো প্রশান্ত মহাসাগরের নীল দিগন্তে ম্যাজিক।
লন্ডন, বারোই জুলাই : দীপ্তায়ন সেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ জানুয়ারি ২০০৬ | ৯৮৩ বার পঠিত
ট্রেনে আসল ভিড়টা হয় বিকেলবেলা। সাহেবরা খুব ঘড়ি ধরে চলে,পাঁচটা বাজতে না বাজতেই অফিস ফাঁকা। তাই সন্ধে নামার আগে ট্রেনে পা রাখাই দায়। আর মেঘও করে সাধরনত বিকেল-সন্ধ্যার মাঝামাঝি,যাকে বলে গোধূলি। এই রকমই একটা বিকেলবেলা, ক্লান্ত, গৃহাভিমুখী জনতা, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, অক্লান্ত,ভেজা-ভেজা, রেশমের মত। আকাশ আলো হলদে হয়ে যাওয়া, ক্ষয়াটে, পান্ডুর অথচ স্বচ্ছ, বাইরে ভিতরে দেখতে পাওয়া যায়।
ওর লেখা ছাপতে একবার ছাপাখানাকে এক পোয়া কমা অর্ডার দিতে হয়েছিল : অমিয় দেব
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৯ আগস্ট ২০২০ | ৪৫৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
কিন্তু আমার যাদবপুরে এম.এ. পড়তে আসাই হত না যদি না সেই গ্রীষ্মশেষের বিকেলে, কফিহাউসে গিয়ে টেবিল দখলের আগে, প্রেসিডেন্সির সিড়ির তলায় অপেক্ষারত প্রদ্যুম্ন ও আমার কাছে রীতিমত উদয় হয়ে, মানব বার্তা দিত, শহরে এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বসেছে এবং তাতে তুলনামূলক সাহিত্য নামে এক নূতন বিদ্যা চালু হচ্ছে। আমাদের অনার্সের ফল বেরিয়ে গেছে, আমরা স্নাতকোত্তরের দরজায়। মানব জানাল, সে কলকাতায় বাংলা না পড়ে যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য পড়বে। সেই বিভাগের প্রধান, বুদ্ধদেব বসুকে সে চেনে; তিনি তাকে উৎসাহ দিয়েছেন।
মানবদা যা বলেছিলেন : রাহুল পুরকায়স্থ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৯ আগস্ট ২০২০ | ৩১৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পেদ্রো পারামোর দেশ থেকে আলো আসে,
যদি তারে নাই চিনি, আমার সদর পুরো খুলবে না আর!
অচিন ডানায় মেলা প্রেমের আহার, নেশা, রণের আহার
তুমি কাছে টেনে নাও,
শিস দাও মধ্যরাতে মেধার মাতাল,
অপরিচয়ের ক্ষতে আলিঙ্গন রাখো,
নিজেকে খুঁজতে থাকি মানববাবুর লেখার মধ্যে : সোমা মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৯ আগস্ট ২০২০ | ১৬০৭ বার পঠিত
স্মৃতিরোমন্থনের এই মুহূর্তে মনে আসছে তায়েব সালিহ্-র ‘A season of Migration to the North’ বা ‘উত্তরে দেশান্তরিত হবার মরশুম’ নামের ছোটো উপন্যাসটির কথা, মানববাবুর কথায়, “উত্তরে দেশান্তরিত হবার মরশুম প্রধানত সন্ধানের কাহিনি: অন্য একজন মানুষের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে কী করে একজন শেষপর্যন্ত, নিজেকেই খুঁজে পেল।” এই উপন্যাসের শেষে উপন্যাসের কথক নদীর জলে ডুবতে গিয়েও, জীবনকে বেছে নেয়, সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করে ওঠে।
তায়েব সালিহ্-র এই কথকের মতোই আমরা অনেকে নিজেকে খুঁজতে থাকি মানববাবুর লেখার মধ্যে। অনুবাদের জন্য যে টেক্সটকে নির্বাচন করেছেন, তার সঙ্গে আমরাও ঘুরেছি—উত্তর থেকে দক্ষিণে, কেন্দ্র থেকে প্রান্তে বা বলা যায় বিভিন্ন জানা-অজানা প্রান্তে। দেশ থেকে দেশান্তরে ঘোরার এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, ভাষার বহুত্বকে অনুভব করলে বোঝা সম্ভব মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মকাণ্ডের স্বরূপকে।
খাদবপুরের মানববাবু : অবন্তী চক্রবর্তী মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৯ আগস্ট ২০২০ | ৩৬৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
তখন আমি সবে মাধ্যমিক, কিন্তু বাংলা আকাডেমিতে দিব্য যাতায়াত, লাইব্রেরির থেকে Esperanto-র ওপর একটা বই নিয়ে বাবার ঘরে বসে বসে পড়ছি। বাবার সঙ্গে তখন একজন ঝকঝকে মানুষ তরতর করে অনেক গল্প করছেন, আমি কিছু শুনছি, কিছু বইতে মন। যাই হোক, একটা ছটফটে বাচ্চা মেয়েকে এস্পেরান্তো পড়তে দেখে তাঁর আমাকে খুব মজাদার লেগেছিল, সেদিনই প্রথম তাঁর মুখে শুনেছিলাম স্প্যানিশরা J কে খ বলে, আর উনি তার মানে খাদবপুরের অধ্যাপক!
করোনাকে ঘিরে পুনরায় ভেবে দেখা – প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ১১ আগস্ট ২০২০ | ৩৯৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
করোনা অতিমারির সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসামান্য গুরুত্ব আমাদের সবার দৃষ্টিপথ, শ্রুতি এবং ভাবনার ক্ষেত্রপথের একেবারে বাইরে চলে যাচ্ছে। অতি উচ্চ মুল্যের আইসিইউ পরিষেবা, উচ্চচাপের অক্সিজেনের ব্যবস্থা, ECMO ইত্যাদি জন মানসিকতায় ক্রমশ গ্রাহ্য হয়ে উঠছে, মান্যতা পাচ্ছে। মনে ক্ষোভ পুষে রেখেও সাধারণভাবে মানুষ চাইছে বেশি দামের রেমডেসিভিরের চিকিৎসা – নিতান্ত কমদামের এবং একমাত্র “improved survival” ঘটাতে পারে ডেক্সোমেথাসোনের চিকিৎসা নয়। চিকিৎসকেরাও এই সোশ্যাল সাইকি বা গণমানসিকতার বশে থাকছেন বেশিরভাগ সময়েই। বাজারের, মিডিয়ার এবং বিজ্ঞাপনের দুর্মর শক্তি উভয়কেই নিয়ন্ত্রিত এবং প্রভাবিত করছে। ফলে চিকিৎসা আরও বেশি করে হাই-টেক হয়ে উঠছে, ভার্টিকাল প্রোগ্রামের দিকে ঝুঁকছে। এবং ক্রমাগত ঝুঁকবে।
লুঙ্গি সংক্রান্ত বিতর্ক অবসানের অকরুণ কাহিনী : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ জুন ২০০৬ | ১১৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
যদিও এ সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন ছিল না, তবু সম্প্রতি অপিমোড-পুরনারী জনমত সমীক্ষায় আবার প্রমাণিত হয়ে গেছে, পুরুষের চেক লুঙ্গি , বর্ডার সহ বা ছাড়া, নতুন যুগের ব্যস্ত মহিলাদের অথবা ব্যস্ত অথচ কিছুটা নির্বাক যুগের মহিলা দের জীবনেও, শ্রেণী নির্বিশেষে, বিবাহ ও প্রাক বিবাহ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গভীর বিতর্কের যন্ত্রনা ও তৎজাত মানসিক নি:সঙ্গতা ও অবসাদ বয়ে আনছে । প্রতিবাদ ও জমে উঠছে। এ প্রতিবাদ অনর্থক ট্রাফিক জ্যাম তৈরী করে না, পরীক্ষার্থীর, রুগীর, আপিসেচ্ছুক কর্মীর হয়রানি করে না।
দিন আনি দিন খাই (দ্বিতীয় পর্ব)... : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ জুন ২০০৬ | ১১৩০ বার পঠিত
আসলে তো একটাই দিন। আমার মনে হয় কোথাও যেন সব আমানত আছে, আমি একটু একটু করে নিই, রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ার মতন। আমার টাকা পয়সা তো নাই। কোনদিন ছিলও না। সেগুলো সব রাত, আছে হয়ত, কিন্তু চিনতে পারিনা, খুঁজে পাই না। দেহের বয়স বাড়ে, আমার দিনের হিসেব রাখতে রাখতে ছিঁড়ে পড়ে ক্যালেন্ডারের পাতাগুলি। বাড়িতে বাড়িতে ক্যালেন্ডার পাল্টায়। আমার কখনও জীবন একপাতা, কখনও বারো পাতা, ঘন্টা টাইমের হিসাব থাকে সব শব্দের অন্ধকারে, কারখানা, টাইম-কল, পারে এসে লাগা ভটভটি। আমরা সবাই হিসাব করি।
শিল্প -- একটি ব্যক্তিগত ম্যানিফেস্টো... : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ জুন ২০০৬ | ১১১৭ বার পঠিত
শিশুটি ক্ষিধে পেলে খেতে চায়, ঘুম পেলে শুতে। আর বাকি সময় সে প্লাগপয়েন্টের ফুটোয় ঢুকিয়ে দেয় ললিপপের কাঠি। পাশের প্লাগেঁ জে রাখে অন্য আরেকখানা ক্যান্ডি -- রচিত হয় সিমেট্রি। সে ড্রয়ারে ভরে রাখে জুতো, মোজার ভিতর বাদামভাজা। ছোট্টো পুতুলকে বসিয়ে রাখে কালো চেয়ারে, সোফার উপরে রাখে একলা কুকুরছানাটিকে। টিভির পাশে থাকে চামচ, জুতোর ফিতে, ক্যাসেটের খাপ। মেঝেতে ছবির ফ্রেম, পেনের রিফিল, এবং সানগ্লাস, পাশাপাশি। টেবিলের উপরে থাকে ঝর্ণাকলম আর তোবড়ানো কোকের বোতল ।
ডেরাইভার : সুমন মান্না
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৭৪৫ বার পঠিত
যা চলে, তাই গাড়ি - না, ভুরু কুঁচকে তাকানর কিছু নেই এতে। আরে না, তা বলে গালে হাত দিয়ে ভাবতেও বলছি না। বলার কিছু নেই, শোনার কেউ নেই, তবুও কাগজে ছেপে তো আর পরিবেশ দূষণ করছি না যে হুট করে কেউ চেপে ধরবে। এই অনবাদী, বাস্পীয় মায়াভূমি বিস্তারে বহু যোজন। আমি লিখব - চালাব - কখনো দাঁড়িয়ে যাব চড়ুই পাখি দেখে। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলে উঠব - যা চলে তাই গাড়ি।
সেই শস্য অগণন মানুষের শব? : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুন ২০০৭ | ১২৮৭ বার পঠিত
এক মুরগি এবং এক শুয়োরের ভেতরে খুব বন্ধুত্ব। মুরগি ও শুয়োর হাঁটছে পথ দিয়ে, আর আলোচনা করছে দেশের ও সমাজের উন্নতির কথা। বলাবলি করছে, সারা দেশের লোক এখন উন্নয়নের চেষ্টায় কতটা আত্মত্যাগ করছে, কত বড় বড় কাজ করছে সবাই, কত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। মুরগি বলে ওঠে হঠাৎ, চলো বন্ধু, দেশের জন্য, লোকের জন্য আমরাও কিছুটা আত্মত্যাগ করি। রোজ সকালে আমরাও কিছুটা খাদ্য জুগিয়ে দেশের মানুষকে উন্নয়নের কাজে সহায়তা করি।
খুঁটে খাওয়ার গ্রাফিতি : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৩ জুন ২০০৭ | ১১৪৩ বার পঠিত
জলপাত্রটি কানায় কানায় ভরা।তলায় নীল নুড়ি।লালচে বেগুণী পাখনায় জল কাটে, ঘাই দেয়। নুড়ি ছুঁয়ে উঠে আসে। জলপাত্রের কাঁচদেওয়ালে বিম্বিত হয় সে। সিয়ামিজ ফাইটার। লড়ে যায় নিজের প্রতিবিম্বের সঙ্গে। এক দানা, দু'দানা, তিনদানা খাবার-দিনে তিনবার। জল পাল্টানো সপ্তাহে একদিন।
পুরোনো টেবিল। দাগধরা।টেবিল ঘিরে চেয়ার।চার, পাঁচ,ছয়। কিম্বা তার বেশি। মর্নিং টী, লাঞ্চ, আফটারনুন টী। ওরা চা খায়।কফি। সূপ, কাপ নুডলস,স্যান্ডউইচ। টেবিল ঘিরে ওরা ক'জন। প্রতিদিন।
জলসম্পদ -- কিছু ভাবনা : দ্বৈপায়ন বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ জানুয়ারি ২০০৮ | ৯৮৯ বার পঠিত
কথায় বলে, "জলের মতন খরচ করা", অর্থাৎ কিনা মাত্রাহীন, আনলিমিটেড একটা ব্যপার। তো, আমাদের চেতনায় "জল" মানে একটা অফুরন্ত ব্যপার। আর কে না জানে পৃথিবীর তিনভাগ জল, একভাগ স্থল। এই স্থলেও মাটি খোঁড়ো, খোঁড়ো, কোথাও দশ ফুট, কোথাও দুশো ফুট, কোথাও বা আরো বেশী নীচে, জল পাবেই (আগামি বছর কুড়ি অন্তত পাবেই)। তা প্রচুর থাকলে লোকে যেমন "জলের মতন" খরচ করে, তেমনই জলও খরচ করতে করতে, আমরা প্রায় ফুরিয়ে এনেছি। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে natural resourceগুলোর ব্যবহার আজ আমাদের্কে খুব বড় একটা সমস্যার মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।
জিহ্ব : কৃষ্ণকলি রায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২১ জানুয়ারি ২০০৮ | ১২১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমার দাঁতে অনেকটা জীবন জড়িয়ে গেছে। জার্মান শেফার্ড জিভ ইচ্ছে মত ক্লান্ত হয়। ঐ সব ফাঁকফোকর ঘুরে 'তাড়ানো তাড়ানো' পরিচ্ছেদ গুলোতে চরম ক্লান্তি ওর। অন্য সময়ে ওকে ভার্মিয়ের বলে ডাকতেও ইচ্ছে করে কোনো কোনো দিন।
ভালোই। গুঁড়ো গুঁড়ো না তাড়ানো জীবন অনেক ক্ষণ ধরে জিভের আঁচে দমপুখ্ত,'চাওয়াদের' ঝিকমিকে সব চে ভালো বাসাটা থেকে আখরোট-বাসরে সেঁধিয়ে যায়। রোজ রোজ। অহনের সব বেলাগুলো, বার্ষিকগতির রাস্তায় পড়ে পাওয়া ঋতুরা,আমার শৈশব,কৈশোর,আমার প্রৌঢ়ত্ব,ইন্তেকাল,একমাত্র ওই টের পায়। জিভটা। আমার ভার্মিয়ের।
ভবিষ্যপুরাণ : রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২১ জানুয়ারি ২০০৮ | ১৫৩৪ বার পঠিত
প্রণম্য পাঠক, এই মুহূর্তে আপনি বাহিরে আসিলেন, মোবাইল বোতামে মৃদু চাপ দিলেন, ভূগর্ভ হইতে কামোদ্দীপক আশ্চর্য স্লিক শকট অনুগত ভৃত্যের মত আপনার সম্মুখে গরুড়সদৃশ করজোড় ভঙ্গিতে একরূপ উদয় হইল বলিয়া-- এই সমস্তই আমি জ্ঞাত আছি। আপনার জিহ্বা নাচিতেছে প্রশ্ন করিবার নিমিত্ত, অজস্র প্রশ্নে সজ্জিত আপনার যোদ্ধ্বৃবেশ-- ইহাও আমি বিলক্ষণ অবগত। তবে, এখনকারটি হইল, "কে বে তুই?' অর্থাৎ, আমি কে? বলিবার কথা, এই প্রশ্নটি এক অনন্তকে টানিয়া আনে এবং মনুষ্য প্রজাতিকে নানাভাবে বিড়ম্বিত করে।
দিন আনি দিন খাই (পর্ব -৪) : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২১ জানুয়ারি ২০০৮ | ১১৮৫ বার পঠিত
ইয়োর অনার, আমি সত্যি কথাই বলব। আমি তো আর কম দেখলাম না, স্যার, জগতটা যদি ঠিকঠাক দেখেন আপনার ঘেন্না করবে স্যার! এভাবে বেঁচে থাকাও অন্যায়। বাপ ফাপ জানি না কিন্তু যা কিছু করছি তাতে তো কিছু সুবিধার বুঝছি না। আজ আমাদের মানুষ মরছে কাল ওদের। আচ্ছা স্যার আমাদের তোমাদের কী? মানুষের ভাগ বাটোয়ারা সেসব তো হত স্যার মিশরে, হলিউডের ফিল্মে। লোহার শিকলের ঝনঝন শব্দ, মানুষ মরুভূমির বুকে পাথর টেনে আনছে, পিরামিড তৈরি হচ্ছে।
ইতিহাসের গল্প : ত্রিদিব সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুন ২০০৮ | ১১৬৭ বার পঠিত
এই ইতিহাসটার নাম কী হতে পারে শব্দ এবং আলোর যৌথ ইতিহাস? এটা ভাবলেই, এই যৌথ শব্দটা, এবং এই যে আমি একজন আলো, এবং আমিই সেটা লিখছি, এই গোটাটাই একটা তীব্র আভ্যন্তরীণ বিদ্রূপের মত আঘাত করছে আমায়। যৌথ। হ্যাঁ, যৌথ। বিগত বেশ কয়েকটা প্রজন্ম, একটা দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ যুগ, যে কোনো জীবিত আলো বা শব্দের সম্ভাব্য স্মৃতির চেয়ে অনেক অনেক দীর্ঘ একটা যুগ ধরে কাহিনীটা শুধু বিদ্বেষের আর পারস্পরিক হিংস্রতার। সেখানে ইতিহাস কেন, আলো বা শব্দের যে কারোর ভূগোলেও অন্য জনের অনুপ্রবেশের বিপরীতে এসেছে শুধু আক্রমণ আর নিধন।
উত্তরবঙ্গ (প্রথম পর্ব) : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৩ জুন ২০০৮ | ৯৭৯ বার পঠিত
কোনও ধারাবাহিক স্মৃতিচারণ হিসেবে রাখতে চাইছি না আমার এই লেখা, কারণ এই লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কোনও গুরুদায়িত্ব আমার ঘাড়ে নেই। নিছকই কিছু অদূর অতীতের স্মৃতিচারণ, লিখতে গিয়ে যখন যা যেমন মনে আসবে, লিখে ফেলব, তাতে করে পরের ঘটনা আগে আসতে পারে, আগের ঘটনা পরে। অনুচ্ছেদের পরে আরেকটা অনুচ্ছেদ ঠিকই আসবে, পড়তে গিয়ে পাঠক হয় তো খেইও হারিয়ে ফেলবেন না, তবে কোনওরকমের ক্রোনোলজিকাল অর্ডার মেইনটেইন করতে আমি রাজি নই।
কাঠের সেনাপতি : মু. নূরুল হাসান
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ মার্চ ২০০৯ | ৮২২ বার পঠিত
আব্বার সাথে রাশেদের আজ আশ্চর্য শত্রুতা। আজ সারাদিন, দিনমান। ছোট্ট চায়ের টেবলের দু'পাশে ওরা দু'জন ঠিক দুই যুযুধানের মতন দাবার গুটি নিয়ে বসে আছে সকাল থেকে। কখনও গালে হাত, কখনও বাঁকানো ভ্রূ, কখনও চুপচাপ। আব্বার অফিস ছুটি আজ, রাশেদের ইশকুলও তাই। ওদের সারা ঘরে ছুটির আমেজ এলিয়ে আছে, বসার ঘর থেকে রান্নাঘর, সেখান থেকে বারান্দায়, সবখানে। আপাতত শুধু ছুটি নেই দুজনের মাথার ভেতর, তুমুল তান্ডব তাতে, যুদ্ধ পরিকল্পনায় ব্যস্ত, আর বাইরে তবু বেশ নিরাবেগ, অথবা ভঙ্গিটা সেরকমই, খাঁজ কাটা সুন্দর কাঠের সাদা কালো সৈন্যদের ওরা লেলিয়ে দেয় একে অপরের দিকে।
মরা সাহেবের টেবিল এবং অন্যান্য ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর গল্প : বিক্রম পাকড়াশী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ মার্চ ২০০৯ | ৭৭০ বার পঠিত
মরা সাহেবের টেবিল দিয়েই সেদিন শুরু হয়েছিলো - আসলে কি, অফিসে পরপর দুজন বড়সাহেব একই ঘরে মরে যাওয়ার পর প্রাণে ধরে এমনিতেই ওখানে আর কেউ ঢুকতে চাইছিলো না। প্রথম জন টিকলো একটি গোটা মাস, মরলো শনিবার, অফিস ছুটি হলো মঙ্গলবার। দ্বিতীয়জন বড়দিনের ঠিক আগে জিমখানায় দৌড়তে গিয়ে হাঁসফাঁস করে মাটিতে ঘামতে ঘামতে মরে গেলো, সে ছিলো হপ্তাখানেক। দুর্ঘটনার এখানেই শেষ নয়, এক ভরদুপুরে উড়ো খবর এলো যে ওপরের তলায় ডানদিকের ঘরের সাহেব নাকি ছুটিতে ছিলো,বউবাচ্চা সমেত গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে সেও নাকি মারা গেছে। খবরটা সত্যি।
উত্তরবঙ্গ (দ্বিতীয় পর্ব) : শমীক মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০১ মার্চ ২০০৯ | ৯২৩ বার পঠিত
যদিও শুরু করেছিলাম এই বলে যে, ধারাবাহিকভাবে কিছু লিখব না, তবুও শুরু থেকে এতখানি পর্য্যন্ত প্রচন্ডভাবেই ধারাবাহিক হয়ে গেল, খাওয়ার পর শোওয়া, শোওয়া হলে ঘুম থেকে ওঠার মত। আসলে এক ধরণের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে আসার পর নতুন জীবনে যাবার ট্র্যানজিশনটা এত বেশি ঘটনাবহুল মনে হয় নিজের কাছে, যে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণের দিকে মন চলে যায়। জলপাইগুড়িতে চার বছর কাটানোর প্রতিটা দিন আর আলাদা করে মনে নেই, কিন্তু ঐ শুরুর দিনকটা ভীষণভাবে মনে আছে।
মহামারী, কোয়ারেন্টাইন ও দেশকাল - পর্ব ৭ : দীপঙ্কর দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৪ আগস্ট ২০২০ | ৩৫০২ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক বিপণন সমীক্ষক গ্র্যান্ডভিউ রিসার্চের সাম্প্রতিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে এই স্যানিটাইজার বিক্রির মোট পরিমাণ ছিল ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২০ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এর বাজার বার্ষিক ২২.৬ শতাংশ হারে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রকোপে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই গত মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে স্যানিটাইজার বিক্রি হয়েছে ২০ কোটি ডলার মূল্যের। আগের বছরের তুলনায় যার বৃদ্ধি ৪৬৫ শতাংশ। চলতি বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোট কর্মী ও ভোটদাতাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে মার্কিন কংগ্রেস ইতিমধ্যে ইলেকশন অ্যাসিস্ট্যান্স কমিশনকে ৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে স্যানিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদি কেনার জন্যে। আর একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা টেকন্যাভিও নজর রেখে চলেছে ভারতের বাজারের দিকে। তাদের সমীক্ষায় স্পষ্টই বলা হচ্ছে, মহামারীর কল্যাণে আগামী চার বছরে অর্থাৎ ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবসা তুঙ্গে উঠবে যার বৃদ্ধির পরিমাণ হবে ৪১ কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। স্বভাবতই ভারতের বাজার ধরার জন্যে পাল্লা দিচ্ছে থ্রি এম, ডাবর, ইমামি, গোদরেজ কনজিউমার প্রোডাকটস, গোজো ইন্ডাস্ট্রিজ ইনকরপোরেটেড, আই টি সি, ম্যারিকো, রেকিট বেনকাইজার, হিমালয়া ড্রাগ ও ইউনিলিভার গ্রূপের মতো একঝাঁক ডাকসাইটে সংস্থা।
আমরা যারা দিন আনি, দিন খাই পর্ব -১ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৪ আগস্ট ২০২০ | ২৬৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
যৌবন গিয়ে প্রৌঢ়ত্ব ছুঁই ছুঁই, এমন সময় ছোটদাদু চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেন। তখন চাকরি চলে যাওয়া তেমন কোন বড়ো ব্যাপার ছিলোনা, লোকের হামেশাই চাকরি যেত। পরিবারও খুবই সচ্ছ্বল ছিলো -- চারটি কন্যাসন্তানের পিতা ছোট্দাদু বাড়ি এসে "কোনো ভদ্রলোকের বাচ্চা চাকরি করেনা" ঘোষণা করে তাস পিটতে বসে গেলেন। যৌথ পরিবারের কর্তা, বড়োদাদু মার্চেন্ট আপিসের বড়োবাবু। তিনি নার্ভাস হয়ে পরের মাসেই একটা পাকা চাকরির বন্দোবস্ত করে বাড়িতে এসে ছোটভাইকে বলার পর ছোটদাদু নাকি অট্টহাস্য করে বলেছিলেন, "তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে বড়দা? সত্তর টাকার মাইনে পেয়ে এসে আমি এখন পঞ্চাশ টাকায় ঢুকবো?"! বলা বাহুল্য ছোটদাদুকে আর কোনদিন উপার্জন করতে দেখা যায়নি, এবং যৌথ পরিবারটি অনতিবিলম্বে স্বখাতসলিলে ধরাশায়ী হয়। তারপরের দুই প্রজন্ম মুখে রক্ত তুলে খেটেও সেই বিলাসিতার ঋণ চোকাতে পারেনি। যে দারিদ্র পাকিয়ে ধোঁয়া টানে কবি, যে দারিদ্রে জলের ছিটে দিয়ে উজ্জ্বল করে তোলে আঁকিয়ে - সেই রাজকীয় শিল্পমন্ডিত দারিদ্র নয়। শস্তা অগৌরবের দারিদ্র।
পেনসিলে লেখা জীবন (পর্ব ১) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৪ আগস্ট ২০২০ | ৫৮৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
মাল্যবান, জলপাইহাটি, বাসমতীর উপাখ্যান লেখা হয়েছিল পেনসিলে। গোপনে লিখতেন কবি, আর ভাই অশোকানন্দ দাশের বাড়ি গিয়ে ট্রাঙ্কে জমা করে ফিরে আসতেন। ১৭২/৩ রাসবিহারী এভিনিউয়ের সেই বাড়ি অতি সম্প্রতি ভাঙা শুরু হয়েছে। সেখানেই ছিল সন্দেশ পত্রিকার অফিস। বাড়িটি পেনসিলে আঁকা বাড়ির মতো ধূসর হতে হতে মুছে গেল। ট্রাঙ্কগুলি অনেকদিন আগেই জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা পড়েছিল। অনুজ প্রতিম লেখক আফসার আমেদ তা কপি করে আনত ন্যাশানাল লাইব্রেরি থেকে। ভাইরাস আক্রান্ত এই অন্তরীন কালে আমি আমার জীবনের কথা বলব ভাবছি। জীবনানন্দ মুছে যাননি, আমার লেখা অস্পষ্ট হতে হতে হারিয়ে যাবে জানি। আমি সামান্য মানুষ, জীবনভর কলমে লিখেছি, তার উপরে জল পড়ে লেখা ধুয়ে গেছে কতবার। আমি আমার কথা পেনসিলে লিখতে শুরু করলাম।
করোনার দিনগুলি - পঞ্চদশ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৫ আগস্ট ২০২০ | ২৩৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সাধারণত রোগ সেরে গেলে কেউ ডাক্তারের কাছে ফেরত আসেন না। যারা আসেন, হয় তাদের জ্বর কমেনি অথবা পেটে ব্যথা আরও বেড়েছে। প্রথম দিকে হতাশ হয়ে পড়তাম। ভাবতাম, কারোরই তো অসুখ কমাতে পারছি না। আস্তে আস্তে বুঝলাম, দশ জনের মধ্যে দু- তিনজন ফেরত আসছেন। বাকিরা সুস্থ আছেন বলেই আসছেন না।
দিনকে দিন অভিজ্ঞতা বাড়ছে। এখন আর সহজে আনন্দ, মন খারাপ, হতাশা এইসব হয় না।
কতো রকমের মানুষ যে হয়! সাধারণ মানুষ, ‘ডাক্তার বাবু, আমি ঠিক হয়ে যাবো তো?’
এক শহর-ইয়ারের আসর জমেছে পাতায় পাতায় : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৬ আগস্ট ২০২০ | ৩২৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কলকাতার কথা। ঘাটের কথা, পথের কথা, সৌধ, ভাঙা বাড়ির কথা, প্রতিষ্ঠানের কথা, ফিল্মস্টার, চিত্রপরিচালকদের কথা, কিন্নরকণ্ঠীদের কথা, আবার একেবারে আটপৌরে মা-মাসিমাদের জীবনের কথাও। হাসি-ঠাট্টার কানায় কানায় ভরা চোখের জলও। ছোট বড় ব্যক্তিগত গদ্যে বিন্যস্ত আড্ডার মেজাজে লেখা দু’ পর্বের একটি বই। পড়লেন লেখক জয়া মিত্র।
ডকইয়ার্ড থেকে কিছুক্ষণের বিরতি : সায়ন্তন গোস্বামী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ অক্টোবর ২০১১ | ১০৬৫ বার পঠিত
আজকে ডকইয়ার্ড ভোঁভা - ছুটি। না, ঠিক ছুটি নয়, আজ স্ট্রাইক, অর্থাৎ ছুটিই। প্রায় সাড়ে-ছ বছর কাজ করছি, এই প্রথম এমন স্ট্রাইক হলো। কারণ? ... মারপিট। দুই দলের মধ্যে তুমুল মারপিট হলো গতকাল দুপুরে, আমি দেখলাম। অনেকেই দেখলো, দূর থেকে। মারপিট কেন হয়েছে, সেটা ঠিক জানিনা। বক্সীর দলের কোন ছেলে নাকি তোলাবাজীর তিন হাজার সাতশো টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে (পরে জানা গেছে), সেটা প্রথমে বক্সী ধরতে পারেনি। ভেবেছে বাবলুর দলের সাথে ছেলেটার আঁতাত আছে।
গহ্বরতীর্থের কুশীলব : মলয় রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ অক্টোবর ২০১১ | ১১৭২ বার পঠিত
খাজুরাহো মন্দিরের দেয়াল থেকে মাটিতে লাফাবার সময়, ঘুরঘুরে পোকার মুখে পাঠানো আদেশ তামিল করার জন্যে, বাতাসের মাঝপথে, নিজেকে পাষাণ মূর্তি থেকে রক্তমাংসের মানুষে পালটে নিয়েছিল কুশাশ্ব দেবনাথ নামে স্বাস্থ্যবান যুবকটি, যে কিনা হাজার বছরেরও বেশি চাণ্ডেলাবাড়ির একজন গতরি, ভারি-পাছা, ঢাউসবুক উলঙ্গ দাসীর ঠোঁটে ঠোঁট, যোনিতে লিঙ্গ, আর স্তনে মুঠো দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিল ।
পুজোর চিঠি : শঙ্খশুভ্র ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ অক্টোবর ২০১১ | ১০৮৯ বার পঠিত
অমল ধবল পালে খুব একটা হাওয়া এখনো লাগে নি, বরং আগের হপ্তাটা যা গরম গেল, "ভিক্ষে চাইনে মা, কুকুর সামলা' অবস্থায় নিয়ে এসেছে আপামর ইউ এসের পূর্ব উপকূলবাসীদের। সাউথ জার্সি, ফিলাডেলফিয়া ইত্যাদি নাকি সেই '৫৭ সালে এইরকম গরম পেয়েছিলো, আমাদের এদিকটা ঠিক ততটা না হলেও "ছোটে মিয়াঁ শুভানাল্লা', চল্লিশের ঘরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঘোরাঘুরি করেছে। (দেখেছো? ডিগ্রী সেলসিয়াস বেরিয়ে এলো, ফারেনহাইটে ব্যাটারা কী সব এইট্টি নাইন্টি হাঁকে, শুনেই গরম লাগে, ওসব সাহেবসুবোদের জন্যে, তারচেয়ে দ্যাশের টান, ঐ সেন্টিগ্রেডই ভালো)
পুজোর হুজুগ -- পুজোর থিম, থিমপুজো : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ অক্টোবর ২০১১ | ১২৭৩ বার পঠিত
পুজোর জগতেও এবার এসে গেল পরিবর্তন। ষষ্ঠীর দিন এক বাংলা চ্যানেল জানালেন, এবার ফোকাসে পরিবর্তন। আর কলকাতা-কলকাতা নয়। এবার পুজো গোটা বাংলার। এবার পুজো বৃহৎ চেতনার। বঙ্গ চেতনা ও মানবচেতনার। ছোটোখাটো ইস্যুতে থিমকে আর বেঁধে রাখা যাচ্ছেনা যাবেনা। হাওড়ার পুজো কমিটির প্রধান জানালেন, তাঁদের এবারের পুজোর থিম জঙ্গলমহল, সাঁওতাল সমাজ ও নাগাল্যান্ড। জঙ্গলমহল আর ভূমিপুত্র না হয় বোঝা গেল, কিন্তু নাগাল্যান্ড কেন? না, নাগাল্যান্ড সরকার তাদের ভূমিপুত্রদের নিয়ে যে ধরনের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, বাংলার সরকার দশকের পর দশক ধরে তার কানাকড়িও করতে পারেননি।
কৈলাসবাসীর কলকাতা যাত্রা : ইন্দিরা মুখার্জি
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ অক্টোবর ২০১১ | ১০১২ বার পঠিত
মা আসেন প্রতিবছর। মা জানতেও পারেন না দেশের কী অবস্থা, দশের কী হাল। তবুও দেশ ও দশ প্রতি অণুপল শুনতে থাকে মায়ের আগমনের প্রতিধ্বনি। এবার মা আসছেন বদলের বঙ্গে। সেটাই বড়কথা। মায়েরও হাওয়াবদল হবে আশা করা যায়। কিন্তু প্রতিবছরের মত বাজারের দাম বদলায়না। রাস্তাঘাট সারাই হয়না। রাজনীতির অশুভ আঁতাত, খরা-অতিবৃষ্টির টানাপোড়েনে রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি, প্লাসটিক না পেপার, পরীক্ষার পাশফেল, রিসেশান-ইনফ্লেশান চাপানউতোর সবকিছু চাপা পড়ে যায় কৈলাশ এন্ড কোং দের আগমনে। ওবামা-ওসামার উত্থান-পতনে, বিস্ফোরণে, দু:খের যজ্ঞে আহুতি দেয় দেশবাসী।
বৃত্তরৈখিক - পর্ব ২ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২২ আগস্ট ২০২০ | ৩৪৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ছেলেটার কিছুই করার নেই তখন, কিছু করার ইচ্ছেও নেই বোধ হয়। টিলা থেকে নেমে একটু হাঁটা-চলা করে আবার এসে বসলো ঐ টিলার ওপরেই। ঝোলা গোছের কিছু একটা সঙ্গে ছিলো তার, সেটা থেকে বের করলো মিইয়ে যাওয়া একটা মুড়ির মোড়ক, সেটা খুলে মুড়িটা খেয়ে খানিকটা হেঁটে একটা ঝর্ণার জল খেয়ে নিলো পেট ভরে, তারপর আবার ঐ টিলার ওপরেই ফিরে এসে শুয়ে পড়লো চিৎ হয়ে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে তখন, ওপরের নীল আকাশটায় লেগেছে সূর্যাস্তের রঙের ছোঁয়া, ভাসমান এক-একটা সাদা মেঘ এসে সেই নীল ক্যানভাসে লাল-কমলা রঙের ওপর ছোট ছোট প্যাটার্ণ তৈরি করছে; সেই অপরূপ দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন বুজে এলো তার ক্লান্ত চোখ দুটো, না জেনেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।
হরেক রঙের চরিত্রে বোনা আখ্যান জুড়ে ব্যক্তিমানুষের চিরন্তন সংকটের ছবি : সঞ্চারী সেন
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ২৩ আগস্ট ২০২০ | ৩২৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কুররাতুলায়েন হায়দার। স্বাধীনতা-পরবর্তী জমানায় উর্দু সাহিত্যের বহুধাপ্রবাহিত আধুনিক ধারার একটি বিশেষ স্রোতের অন্যতম পথিকৃৎ—যা প্রবাহিত মূলত মনের বিচিত্র উপত্যকা দিয়ে। বহুবর্ণময় তাঁর সাহিত্যের চরিত্রগুলি—এদেশের, বিদেশের, নানা জাতের, নানা শ্রেণির, নানা ভাষার। তেমনই কথাসাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় ছিল তাঁর অবাধ গতায়াত— উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটক, ভ্রমণকহিনি। সমসাময়িক অন্যান্য উর্দু সাহিত্যিকের থেকে তাঁর দরিয়ার প্রবাহ ভিন্নতর। আলোচনায় লেখক ও উর্দু থেকে বাংলা ভাষায় সাহিত্য-তরজমাকার সঞ্চারী সেন।
পেনসিলে লেখা জীবন (পর্ব ২) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ৫৫১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
হাসিখুশি আমার প্রথম বই। তখন আমি পড়তে শিখে গিয়েছি মনে হয়। কবে আমার অক্ষরজ্ঞান হয় তা আর মনে নেই। ক্লাস ওয়ান-টু পড়িনি, একেবারে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়েছিলাম বেলগাছিয়ার মনোহর একাডেমিতে। বাড়িতে আমার প্রথম শিক্ষক ছিলেন রাখালবাবু। বস্তিতে থাকতেন, তাঁর ভাই বাজারে আলু বিক্রি করতেন। তা আমি পরে দেখেছি। এঁরা সব পূর্ববঙ্গের মানুষ। অবস্থার ফেরে জীবন এমন হয়েছিল। বাজারে যে চায়ের দোকান ছিল ব্রজেনবাবুর, তাঁর পুত্র তপন আমাদের বন্ধু। তারাও ছিল বড় ঘর। অবস্থার ফেরে তার বাবা এপারে এসে চায়ের দোকান করে সংসার নির্বাহ করতেন। তপনের বোন শিখা আমার বোন অপর্ণার সহপাঠী। তাকে আমাদের এক বন্ধু ছোটন, এখন সে বেঁচে নেই, বলত চা-উলি। খুব খারাপ লাগত। ছোটনরা ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। এসব যেমন বলত, আবার তপনের সঙ্গে মিশতও। এমনিতে সেই সময়ে ধনী দরিদ্রে ভেদাভেদ ছিল না বিশেষ। পূর্ববঙ্গে জমি নির্ভর মানুষ দেশভাগে কী বিপন্ন হয়েছিল তা এখন বুঝতে পারি।
আমরা যারা দিন আনি, দিন খাই পর্ব - ২ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ৩৩১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
একবার একটি রুগ্ন ছেলেকে নিয়ে কী বিষম বিপদই না হয়েছিলো। মধ্য এশিয়ার যে অঞ্চল থেকে শাহেনশাহ বাবর এসে হিন্দুস্তানের দখল নিলেন, সেই বীররসসিক্ত ফরগনার আসেপাশে কোথাও একটি পরিবারের গল্প। বাড়ির ছেলেটি ছোট থেকেই রুগ্ন, প্রায় নানা অসুখ বিসুখে ভোগে। মধ্য এশিয়ার মানুষদের সাথে যাঁরা মিশেছেন তাঁরা জানবেন --- শারীরিক দুর্বলতা ওখানে একটা ভীষণরকম লজ্জার ব্যাপার। গল্পের রুগ্ন ছেলেটি, বাংলায় হলে হ্যত তার নাম হত অমল, সোভিয়েত আজ্ঞাধীন বর্তমান উজবেকিস্তানে তারই নাম হলো স্পার্টাক। তো, স্পার্টাক ছোট থেকেই বাড়িসুদ্ধ সবার আলোচ্য বস্তু। আমাদের দেশে হলে মা ঠাকুমা আজ এই মন্দির কাল সেই পীরের থানে মানত করত -- হেই বাবা রোগ ভালো করে দাও। কিন্তু স্থানমাহাত্ম্য এমনই, স্পার্টাককে নিয়ে বাড়ির লোকের আলোচনা --এর বোধহয় স্পার্মকাউন্ট খুব একটা ভালো হবেনা।
বৃত্তরৈখিক - পর্ব ৩ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ২১৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জয়মালিকা সেনের কর্মকাণ্ডের ঠিক ঠিক মতো সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে পান না সোমেশ্বর। শুনেছেন, শুরু হয়েছিলো বনসৃজনের পরিকল্পনা নিয়ে। পাথুরে, ঊষর পাহাড়িয়া জমিতে বহু গাছ পুঁতেছিলেন তিনি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধব, এবং বহু যত্নে বাঁচিয়েছিলেন তাদের, বাড়িয়েও ছিলেন। কত গাছ? হদিশ করা মুশকিল। হয়তো এক লক্ষ, পাঁচ লক্ষও হয়তো বা। এ সবই শোনা কথা। জয়মালিকা নিজেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যার কথা বলেন। কিন্তু আসলে সংখ্যাটি অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক। জমি এবং প্রকৃতির চরিত্র অনেকটাই বদলিয়ে দেবার মতো যথেষ্ট সংখ্যক বৃক্ষরোপণ যে হয়েছিলো, সে বিষয়ে তো সন্দেহ নেই। আজ এখানে ধান ফলে, প্রতিটি মরশুমে শাক-সবজিও ফলানো হয়। বড় বড় ফলের গাছ, আম-কাঁঠাল-আতা-গাবের অভাব নেই। ফুল ফোটে হাজারো রকমের, বসন্তে অশোক-পলাশের লাল, নীল পাহাড়ের পটে অপরূপ শোভা ধরে। গো পালন হয়, প্রায় পঁয়ত্রিশ-চল্লিশটা ষাঁড়-গোরু-মোষের সংসার।
করোনার দিনগুলি - সপ্তদশ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ২৯০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমি ভিজিট রেখে বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছিলাম, ছেলেটির বাবা বলল, ডাক্তারবাবু, দয়া করে টাকাটা রেখে দিন। সবার তো দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমার ছোট্ট একটা মুদির দোকান আছে। লকডাউনে লোকজনের অবস্থা নিজের চোখে দেখেছি। তেমন কয়েকজনকে যদি পয়সা না নিয়ে দেখে দেন। ক্ষমতা থাকলে আরও দিতাম।
আমি কিছুতেই নেব না। আর ছেলেটির বাবা দুহাত জোর করে দাঁড়িয়ে আছে। বলছে, আমি গরীব ডাক্তারবাবু, কিন্তু আমারও তো কিছু করতে ইচ্ছে করে।
গরীব? কে গরীব? যে তার সীমিত সাধ্য নিয়েও এই অকালে অন্যের পাশে দাঁড়াতে চাইছে? নাকি গরীব তারা, যারা এই মহামারীর সময়েও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াচ্ছে?
বনমহোৎসবের ব্যাপারস্যাপার : অনিন্দিতা রায় সাহা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ২১ জুলাই ২০২১ | ২৫৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এবার প্রশ্ন, গাছ তো লাগানো হবে, কিন্তু কোন প্রজাতির গাছ? জানা থাকা ভালো যে, সমস্ত গাছ দূষণকে সমানভাবে রোধ করতে পারে না। গাছেদের এই ক্ষমতা পরীক্ষা করার যে সূচক তাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় বায়ু দূষণ সহনশীলতা সূচক (Air Pollution Tolerance Index বা APTI). এই APTI সংখ্যাটি ধূলিকণা এবং বায়বীয় দূষকের প্রতি গাছের সহনশীলতা বুঝতে সাহায্য করে। এটি পাতায় ক্লোরোফিল, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, অম্ল-ক্ষারক অনুপাত বা pH ফ্যাক্টর এবং জলীয় সামগ্রীর স্তরের উপর নির্ভর করে। এর মান যত বেশি, গাছের দূষণ রোধ করার ক্ষমতাও তত বেশি। গবেষণায় পাওয়া বিভিন্ন গাছের APTI মানের সাধারণ গড় হচ্ছে: পর্ণমোচী ১৪-২৪, চিরহরিৎ ১২-২০, ঝোপঝাড় ১০-১৮ এবং ঘাস ১৬-২৯। এগুলি সাধারণভাবে প্রাপ্ত APTI মানের ভিত্তিতে সংজ্ঞাবদ্ধ করা হয়েছে। এই হিসেব অনুযায়ী আমাদের খুব চেনা কিছু গাছের গুণ দেখে নেওয়া যাক।
আমার পুজো : দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ৯০৬ বার পঠিত
সাত তলার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দুড়দাড় করে লিফ্টের দিকে এগোতে এগোতে আকাশ দেখার চেষ্টা করি আমি -- আর রোজের মতো আরও একবার বুঝতে পারি কার্পেটে মোড়া এই করিডোরে কোথাও এমন ফাঁক নেই, জানলা তো দূর অস্ত, যেখান দিয়ে একফালি আকাশ দেখা যায়! অথচ দেশে থাকতে পুজো মানেই তো আগে আকাশের দিকে চোখ রাখা- ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমীর হিসেবে আকাশের রং গাঢ় বা হাল্কা হওয়ার হিসেব কষে নেওয়া- শরতের আকাশের "নীলত্ব" আর বাঙালির "পুজোত্ব"কে এক করে দেওয়ার সে অভ্যেস বিলেতের এই এত বছরের বসবাসের অভ্যেসেও অনভ্যাস হয়ে ওঠে না কোন তাগিদে? ভাবতে ভাবতে পেন্টন রাইসের রাস্তা বেয়ে কিংস ক্রসের মোড়ে চলে এসেছি। কখন, টের পাই নি। টের পেতে চাইও নি বোধহয়! বৃষ্টিভেজা, মেঘকালো লন্ডনের সকালে সকালের কোনো রংই লাগে নি
বৃত্তরৈখিক ৪ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩১৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এর মধ্যে একটা কাণ্ড ঘটে গেলো, এক দুপুরবেলা। বাইরের ঘরে বসে ছিলো তুলিকা আর জয়ি, দুজনে মিলে প্ল্যান করছিলো কেমন হবে পরের সংখ্যা শাম্বর প্রচ্ছদ। তুলির সামনে একটা বড় সাদা কাগজ, হাতে পেনসিল, একটা দুটো আঁচড় পড়েছে কাগজটায়, আর গলা ছেড়ে গাইছে জয়ি, মরি লো মরি আমায় বাঁশিতে ডেকেছে কে, এমন সময় বাইরের থেকে জোরে জোরে দরজায় ধাক্কার শব্দ, আর তার সাথে উচ্চকিত কণ্ঠ: কে গায় আমার গান, আমার গান গাইছে কে! থেমে যায় জয়ি, একটু ঘাবড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসু চোখমুখে তাকায় তুলির দিকে। ঠোঁট উলটিয়ে, বিস্ফারিত চোখে, দুটো হাতের কব্জি ঘুরিয়ে বোঝায় তুলি সে-ও বুঝছে না কিছু। এমন সময় আবার দরজায় ধাক্কা: কে গাইছে আমার গান?
যারে তুমি নিচে ফেল … : সফি মল্লিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৭৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আমাদের দেশের রাজনীতিকরা যেমন ‘দেশ সেবা’ করার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেন, আমাদের শিক্ষক চিকিৎসক ইত্যাদি পেশাগুলিও মানুষের কাছে যথেষ্ট ‘সম্মানের’। দুঃখ হল দেশ সেবাটা যেমন শিশুপাঠ্যের মধ্যেই বন্দী থাকে। বাস্তবে শিক্ষকদের সম্পর্কে জনমানসের মনোভাব রাস্তাঘাটে কান পাতলেই বুঝতে পারবেন। আমি শিক্ষক বলতে প্রাথমিক শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক সকলকেই রেখেছি। কেউ কেউ বলতেই পারেন, না গবেষকদের প্রতি শ্রদ্ধা এখনো অটুট আছে। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন গবেষকদের প্রতিও শ্রদ্ধা আর অবশিষ্ট নেই। তাঁরা শুধু অর্থের অপচয় করেন বা স্বজন পোষণ করেন এরকম অভিযোগ সর্বত্র শুনতে পাবেন। মোদ্দা কথা পেশা হিসাবে শ্রদ্ধা আর অবশিষ্ট নেই। তাই চলচ্চিত্রের নায়ক বা নায়িকা, ক্রিকেট খেলোয়ার বা রিয়েলিটি শো-র গায়ক, এরাই কিশোর-তরুণদের চোখে আইডল, মডেল, আদর্শ।
কাজ বাড়ছে, মজুরি কমছেঃ শ্রমিকদের নিউ নর্মাল : স্বাতী ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪৬০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
সুন্দরবনের সন্দেশখালি, ন্যাজাটের বানভাসি গ্রাম বাউনিয়া। মেয়েরা এসেছিল মেডিক্যাল ক্যাম্পে ডাক্তার দেখাতে, তারই মধ্যে একটু ফাঁক পেয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসাল বেঞ্চিতে। পেট মোটা এক বিগ শপারে ঠাসা শাড়ি, এক মহিলা ঝুঁকে পড়লেন, অন্যরা বলতে লাগল, ‘বেগুনিটা নয় রে, হলুদটা দেখা।’ হলুদ শাড়িই বেরোল, দু’ধারটা ধরে মেলে দাঁড়ালেন দু’জন, আর সেই গাছ উপড়ে-পড়া, ছাদ উড়ে-যাওয়া বিধ্বস্ত গ্রাম যেন নিমেষে হেসে উঠল। পীতবস্ত্রে অজস্র সোনালি চুমকি, পাড়ে আরও ঘন হয়ে শোভা বাড়াচ্ছে, আর আঁচলে যেন জোনাকির মেলা। এমন অপরূপ শাড়ির কারিগরদের মুখ ম্লান। আগে ১২০ টাকা দিত শাড়িতে চুমকি বসাতে, এখন ৮০ টাকা দেবে বলছে ব্যবসায়ীরা। একটা গোটা শাড়িতে কাজ করতে তিন দিন থেকে সাত দিন লাগে। কত ঘণ্টা, তা চুমকির ঘনত্ব দেখে আন্দাজ করা কঠিন নয়। এই কাজের দাম ৮০ টাকা হলে ঘণ্টায় ক’টাকা মজুরি দাঁড়ায়, ভাবলে মনে মনে মরে যেতে হয়।
শেষে কি নিজেকে খাবে? : অমিতাভ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪০৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
দুনিয়ায় এখন আর্থিক অসাম্য যতখানি, টমাস পিকেটি সাক্ষী, শিল্প বিপ্লবের পর আর কখনও অসাম্য এতখানি বাড়েনি। অসাম্য জিনিসটা তার নিজের কারণেই খারাপ— জিনিসটা অন্যায়, অনৈতিক। কিন্তু, পুঁজিবাদের একটা কু-অভ্যাস, তা নৈতিকতার যুক্তিকে স্বীকার করতে চায় না। কাজেই, চাহিদা-জোগানের দিক থেকেও যে অসাম্য জিনিসটা খারাপ, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল।ধরুন, মোট ১০০ টাকা আছে, সেটাকে দু’রকম ভাবে ভাগ করা যায়— দশ জনের মধ্যে দশ টাকা করে; আর, এক জন ৯১ টাকা, বাকি ন’জন এক টাকা করে। দ্বিতীয় বিকল্পে শেষ ন’জনের ক্রয়ক্ষমতা বলে কার্যত কিছু নেই, ফলে তাঁদের চাহিদাও নেই। প্রথম জনের হাতে অনেক টাকা, কিন্তু ভোগব্যয়ে খরচ করার প্রথমত একটা সীমা আছে; আর দ্বিতীয়ত, প্রাথমিকপ্রয়োজন মেটানোর পর যে ভোগব্যয়, তাতে খরচ হওয়া টাকার বণ্টনও এই দ্বিতীয় বিকল্পের মতোই অসম।
অতিমারী - শিকারী ও শিকার : বিষাণ বসু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩৮১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কোভিড থেকে বাঁচার জন্যে সুরক্ষাসামগ্রীর দাম বেড়েছে বহুগুণ। N95 মাস্কের দাম কোভিড পরিস্থিতির আগে যা ছিল, কিছু ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে তার দশগুণ - পরবর্তীতে দামে কিছুটা লাগাম টানা গেলেও, কোভিড-পূর্ব দামে পৌঁছানো যায় নি। পিপিই কিট বা হেড শিল্ড সবকিছুর ক্ষেত্রেই তা-ই। এর সাথে বাড়তি বিপদ, নিম্নমানের সামগ্রীকেও চড়াদামে বেচে দেওয়া। সরকারি কমিটি, যাদের দায়িত্ব গুণমান যাচাই করা, তাঁরা প্রবল উদ্যোগে এবিষয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন - এমন অপবাদ কেউই দিতে পারবে না। যাঁরা এইধরণের সুরক্ষাসামগ্রী তৈরী করেন, যাঁদের এবিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে - বিশ্বজুড়ে কোভিড মাথাচাড়া দেওয়ার সময়েই তাঁরা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কী পরিমাণ বাড়তি সামগ্রী প্রস্তুত করে রাখা প্রয়োজন - অভিযোগ, সরকার তাঁদের একাধিক চিঠির উত্তরটুকুও দেননি।
দখিন হাওয়ার দেশ - ৩ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪১৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যাণ্ডের দেশের মানুষের মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা | এই যেমন ধরুণ কথাবার্তায়, উচ্চারণে | আপনি জানেন অজি (অস্ট্রেলিয়ান) আর কিউইদের (নিউজিল্যাণ্ডের মানুষ) ইংরিজি কমনওয়েলথ দেশেরই মতন, বানানবিধি প্রভৃতি সব এক রকমের, কিন্তু উচ্চারণের বেলা কিউই ইংরেজী স্বরবর্ণ এক সিলেবল এগিয়ে আর অস্ট্রেলিয়ান (“অজি”) এক সিলেবল পিছিয়ে। ব্যাপারটা কেমন জানেন? মনে করুন আপনি ফিশ আর চিপস (মাছভাজা আর আলুভাজা) কিনতে অস্ট্রেলিয়ায় গেলেন, সে খাবারের উচ্চারণ সেখানে “ফিঈঈশ” আর “চিঈঈঈপস”, আর ওই একই খাবার, টাসমান সাগর পেরিয়ে কিউইর দেশে তার উচ্চারণ হয়েছে “ফশ” (“ফুশ” ও চলতে পারে) আর “চপস” (“চুপস”) ও দিব্যি চলতে পারে। তারপর ধরুন পাভলোভা নামের মেরাং |
সুদর্শন দর্শন: পর্ব ১ : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৭৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
১৯৫৬ সাল, স্যরের নির্দেশমতো, উইক ইন্টারেকশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন সুদর্শন। পড়লেন এনরিকো ফের্মি, বারনিস ওয়েল্ডন সার্জেন্ট, হিডেকি ইউকাওয়া, সাং-ডাও লি, চেন-নিং ইয়াং প্রমুখ। এই সমস্ত পদার্থবিদদের রচনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে চলেছেন সুদর্শন। যত পড়ছেন ততই যেন একটা ভাবনা তাঁর মাথায় চেপে বসছে। পড়ছেন যতটুকু ভাবছেন তার চেয়েও গভীরে। উইক ইন্টারেকশনের বেনিয়মের মুখে লাগাম পরাতে মনে মনে বুনে চলেছেন এক নতুন যুক্তিজাল।
কোলকাতায় কোভিড পরীক্ষার হালহাকিকত : সাবিনা ইয়াসমিন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৪২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
নিউমার্কেট এবং কলকাতা কর্পোরেশনের নিকটেই রক্সি সিনেমা হলটা নিশ্চয় অনেকেই চেনেন। ওর সামনে দিয়ে কতোবার হেঁটে গেছেন অতীতে,যেখানে ওই সিনেমা হলটার উলটোদিকের ফুটপাতে সাব্বির ব্যাগওয়ালা বসতো নানানরকমের জুটের এবং কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে! মনে আছে? যেটাতেই হাত দিতেন, ঝাঁকড়াচুলো সাব্বির বলতো "ওনলি থ্রি হান্ড্রেড।" ওই রক্সি সিনেমা হলটা এখন কলকাতা কর্পোরেশনের স্থায়ী কোভিড টেস্টের সেন্টার। দারুণ ব্যবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রত্যেক কর্মীই ভীষণ সহানুভূতি সহকারে এবং সুশৃঙ্খলভাবে নিজের নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে এই সেন্টারটার কথা জানেন না বলে গিজগিজে ভীড় নেই। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওই বড়ো বড়ো ঘরগুলোর কোথাও কোনো মন খারাপের ছায়া বা বিষণ্ণতা লুকিয়ে নেই। যাঁর কোভিড পজিটিভ ধরা পড়বে, তিনি ওখান থেকে ভয় নিয়ে বেরোবেন না। তাঁর মনে হবে কোয়ারেন্টিনে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবো। আর হবেনও তাই। উচ্চবিত্তরাও কিন্তু নিশ্চিন্তে যেতে পারেন। পুরসভা,সরকারি,ঘিনঘিনে, গন্ধ,জানোয়ারের মতো ব্যবহার, ছোটলোকদের জায়গা...ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে এসব কথা মনেই হবে না। ছুটি এবং লকডাউনের দিন ছাড়া বাকি সব দিন খোলা।
হিপনোসিস নিয়ে দু'চার কথা : ডাঃ অভীক লায়েক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩৪৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
হিলগার্ড আর ওয়াইৎসেনহফার তৈরি করেন স্ট্যানফোর্ড হিপনোটিক সাসেপটিবিলিটি স্কেল। তাঁরা দেখেন মোটের ওপর ৮-১০% জনতা আছে, যারা হাইলি হিপনোটাইজেবল। ৮৪-৮৮% মডারেট আর ৪-৬% লো। ওই হাই এবং কিছু মডারেট লোকের মধ্যেই সেই বৈশিষ্ট্যাবলী আছে যাতে তারা খুব সহজে হিপনোটাইজড হতে পারে, এবং তাদের ক্ষেত্রেই হিপনোসিস খুব কার্যকরী চিকিৎসাপদ্ধতি হতে পারে কিছু কিছু রোগের জন্য। তাঁরা আরো দেখলেন যে এই বৈশিষ্ট্যগুলোও স্ট্যাটিক না, বয়সের সাথে একটু আধটু পাল্টায়। সাধারণত ৯-১২ বছর বয়সের জনতা যারা বেশি কল্পনাপ্রবণ, ফ্যান্টাসিতে থাকে, এবং যাদের কনক্রিট অপারেশনাল থিঙ্কিং তৈরি হচ্ছে, তারা বেস্ট ক্যান্ডিডেট। মজার ব্যাপার, সাময়িকভাবে এলেসডি বা এমডিএমএ জাতীয় ড্রাগ বা সেনসরি ডিপ্রাইভেশন কিছুক্ষণের জন্য এই হিপনোটাইজেবিলিটি বাড়িয়ে দিতে পারে, যদিও সেটা বেশিক্ষণ টেকে না। আর হ্যাঁ, কোন ধরনের লোক সহজে হিপনোটাইজড হবে আন্দাজ করার কোনো নিখুঁত রুল অব থাম্ব নেই, মোটামুটি মনোসংযোগদক্ষতা, একাগ্রতা, কল্পনাপ্রবণ ও অনুভূতিপ্রবণ মানুষের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমার সামনের লোকটি হাই হিপনোটাইজার কি না, তা বোঝার স্কেল থাকে, এবং সাধারণত তা বোঝার পর হাই জনতাদেরই হিপনোসিস অফার করা হয় চিকিৎসার ক্ষেত্রে। পাতি লক্ষ্মণবিচার আর কি। সেইসব টেল টেল সাইন দেখে বোঝার চেষ্টা করা হয় সামনের ইনি সেই গিফটেড ৮% এর মধ্যে পড়েন কিনা। মার্কিনীরা সেইসব লিস্টির গালভরা নাম দিয়েছে - "হিপনোসিস ইন্ডাকশন প্রোফাইল", " স্ট্যানফোর্ড হিপনোটিক সাসেপটিবিলিটি স্কেল", "হার্ভার্ড গ্রুপ স্কেল অব হিপনোটিক সাসেপটিবিলিটি", "বারবার সাজেস্টিবিলিটি স্কেল" ইত্যাকার। এর মধ্যে ঐ হিপনোসিস ইন্ডাকশন প্রোফাইলটায় তো মাথার ওপর দিকে তাকাতে বলে চোখে স্ক্লেরার ভিজিবিলিটি দেখেই কিসব বোঝা যায় বলে দাবী করে। আর তার মেডিক্যাল ব্যাখ্যাওয়ালা হাইপোথিসিস রয়েছে গুটিকয়, যদিও এভিডেন্স বেসড নয়। সবার ওপরে, যিনি করবেন, তাঁর মানুষ চেনার এতদিনের অভিজ্ঞতা।
বৃত্তরৈখিক (৫) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৯১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পবিত্র পরিচয় করিয়ে দিলো, এই আমিনুলদা, বিপ্লবের ভার বহন করতে করতে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হওয়ার যোগাড়; আর উজ্জয়িনী, উজ্জয়িনী ভৌমিক, এত বড় নামটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে, সাবজেক্টিভ আর অবজেক্টিভ কণ্ডিশন মিলে গেলেই ওজনদার নামটা ত্যাগ করে বিপ্লবকে নিয়ে নেবে মাথায়। আমিনুলদা, আমাদের নতুন কমরেড সোমেশ্বর, সোম বলে ডাকতে পারো, ফাটাফাটি কবিতা লেখে। লাল-টালের ছিটে আছে, রক্তপাতও ঘটাচ্ছে একটু একটু, আর এই ওর বন্ধু স্বরাজ। একে একে বিভিন্ন কলেজের কিছু কিছু ছেলেমেয়ে আসতে শুরু করলো, আড্ডা শুরু হলো, একটু-আধটু কবিতা, গান, আর তার পরেই জোর তর্ক। এ তর্কে যোগ দিতে পারলো না সোমেশ্বর, বিষয়টা প্রায় অজানাই ওর। তেনালী নামের কোন একটা জায়গায় কম্যুনিস্ট পার্টির লোকজনরা কিছু একটা মীটিং করেছে, সেই মীটিং নিয়েই তর্ক।
নতুন শিক্ষানীতি- প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভাল না খারাপ ? - পর্ব ১ : অবন্তী চক্রবর্তী মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : শিক্ষা | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪৪৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
যাঁরা কোলকাতায় ক্লাসে বসে ছাত্রছাত্রীর কাছে শিক্ষাতত্ত্ব (education theory) পরিবেশন করছেন আর যে মানুষটি রোজ ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে তিনঘণ্টা দৌড়ে স্কুলে পৌঁছে একটা ছোটো বাচ্চার ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে সাধনা করছেন তাঁদের দর্শন এবং মতামত কিন্তু আলাদা। ভাগ্যবশত দু-বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলার বহু শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে মতামত আদানপ্রদানের সুযোগ পেয়েছিলাম, সীমিত সুবিধা, সীমিত সংস্থান, সীমিত অর্থ সংস্থানের মধ্যেই, প্রত্যহ অনেক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করেই তাঁদের অপ্রতিহত যাত্রা এবং সাফল্য। সেখানে পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল যে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা ও উন্নত পরিকাঠামো অবশ্য প্রয়োজন। শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে আমার আলোচনার একটা বড়ো অংশ জুড়েছিল, ‘Authentic learning'-এর প্রসঙ্গ, এই প্রক্রিয়ায় স্কুলে শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে inquiry based learning, project based learning কীভাবে প্রয়োগ করা যায়?
গান্ধী হওয়া অত সহজ নয় : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩১৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
১৯২২ সালে গান্ধীর ডাকে পথে নামা আন্দোলনকারীরা যখন গোরক্ষপুরের চৌরিচৌরায় থানার ভিতরে ঢুকে ইংরেজসেবক ২২ জন পুলিশকে খুন করেছিল, গান্ধী আন্দোলন তুলে নিয়ে তাঁর পত্রিকা ‘নবজীবন’-এ লিখলেন, গোরক্ষপুরের চৌরিচৌরার ওই ঘটনার জন্য আমিই সব থেকে বেশি দায়ী।
চলতি বছরের ২৪ মার্চ রাতে নরেন্দ্র মোদি ৪ ঘণ্টার নোটিসে লকডাউন ঘোষণা করে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে ফেলে দিলেন। সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী বাড়ি ফেরার পথা প্রায় দু’শো জনের মৃত্যু হল রাস্তায়, রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে, পথ দুর্ঘটনায়, পথে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায়। খাবার, পানীয় জলের অভাবে তারা ধুকতে ধুকতে পায়ে হেঁটে, সাইকেলে, ভ্যানে চেপে রওনা দিয়েছিলেন বাড়ির পথে। তার পরও বহুবার নানান বাহারি পোশাকে নরেন্দ্র মোদি সরকারি ক্যামেরার সামনে এসেছেন। একবারও কিন্তু স্বীকার করলেন না যে তাঁরই ভুলে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনন্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। গান্ধী কি শুধু বসার কায়দায় আর বক্তৃতা দিয়ে হওয়া যায়!
আজ থেকে চার বছর আগের কথা। আচমকা নোট বাতিল করে গোটা দেশকে তিনি বিপাকে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন সব কালো টাকা বেরিয়ে পড়বে। দেখা গেল তা হল না। সব টাকাই ব্যাঙ্কে ফেরত এল। বলেছিলেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ কমবে। যার কোনও লক্ষণই নেই। ওই সময় টাকার জন্য ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িবে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কখনও তো নরেন্দ্র মোদি বলেননি যে তিনি মানুষের এই দুর্ভোগের দায় নিচ্ছেন! লাইনে দাঁড়িয়ে বয়স্ক মানুষদের মৃত্যুর দায় তিনি নিচ্ছেন, কেউ কখনও শোনেনি তঁর মুখে এমন কথা।
বৃত্তরৈখিক (৬) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩০৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শুধুমাত্র ছবি আঁকার জোরে টাকা-পয়সা আয় করে কলকাতায় কাটিয়ে এসেছে জয়ি কয়েক মাস, শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেককেই চেনে সে এখন, জয়ি এখন স্বাভাবিক নেতা ওর বন্ধু-বান্ধবীদের। সবাই মিলে ঠিক হয়েছে পরের সংখ্যা থেকে শাম্ব ছাপানো হবে, আর হাতে-লেখা নয়। রাঁচি থেকে শ্যামলিমা-অরুণিমাও এলো; দুজন সম্পাদক, অরুণিমা আর জয়ি। তুলি প্রস্তাব দিয়েছিলো শাম্বর ঠিকানাটাও বদলিয়ে এখন কলকাতায় জেঠুর বাড়ির ঠিকানা দেওয়া হোক, সে প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেলো। জয়ি বললো কলকাতার হাজারো লিট্ল্ ম্যাগাজিনের মধ্যে শাম্ব হারিয়ে যাবে, এখানকার ঠিকানাই ভালো।
পেনসিলে লেখা জীবন (পর্ব ৪) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪০৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আমি গেলেই ডাকতেন, ও খোকা, মিত্তিরবাবুর বাড়ির ছেলে না ?
হ্যাঁ, বলতে তাঁর একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে আসত আমার দিকে। “ভাত খেয়েচ? কী দিয়ে ভাত খেলে ? মাছ খেইলে ? কী মাছ। মাছের কালিয়ায় কি ফুলকপি ছিল। টমটমের চাটনি ছিল কি ? ক্ষীর খেয়েচ কাঁটাল দিয়ে। মাংস কবে খেয়েচ খোকা…”
এখন বুঝতে পারি ক্ষুধার্ত মানুষের জিজ্ঞাসা ওসব। গরিব কাহার পাড়ার মানুষের না ছিল জমি, না ছিল কাজ। অন্ন সংস্থান হবে কী করে ? ভোটো কাহার রিকশা করেছিল, তা তার নিজের না অন্য কারোর টাকায় কেনা তা জানতাম না। গ্রামের বাঁড়ুজ্যে বামুনের সঙ্গে ভোটো কাওরার খুব বিবাদ ছিল। রিকশায় চেপে তিনি এক টাকা ভাড়া হলে আট আনা দিতেন। আট আনা বাকি থাকল। বাকিটা শোধ দিতেন না। বাঁড়ুজ্জ্যে মশায়ের ছেলেদের নাম ছিল, ধরুন, অমলকিশোর, বিমলকিশোর, কমলকিশোর, কুনালকিশোর...। ভোটো কাহার কী করল, তার ছেলেদের নাম সব বদলে অমলকিশোর, বিমলকিশোর...। করে দিল। সেই নামে ডাকা শুরু করল। বাঁড়ুজ্জ্যে মশায় রেগে কাঁই। একদিন বেজায় খাপ্পা হয়ে রাস্তায় ঝগড়া, তাঁর ছেলের নামে নিজের ছেলের নাম রেখেছে কেন ভোটো ? ভোটো উদাসীন হয়ে জবাব দিয়েছিল, নাম কি কারোর নিজের সম্পত্তি। মেয়ের নামও বাঁড়ুজ্জ্যে মশায়ের মেয়ের নামে রেখেছিল, ছায়া, মায়া...
নতুন শিক্ষানীতি- প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভাল না খারাপ ? - পর্ব ২ : অবন্তী চক্রবর্তী মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩৬৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়নি, ধরা যাক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোভিডের মতো কোনো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিপদের সময় কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বহাল রাখা যাবে? বন্যা অথবা ঝড় হলে (একটি শহর যেভাবে মোকাবিলা করবে একটি প্র্যত্যন্ত গ্রাম সেভাবে বাস্তবিকভাবেই পারবে না, কোনো দুর্গম অঞ্চলে অবস্থা আরও শোচনীয়) বা এজাতীয় কোনো অস্বাভাবিক ও কঠিন সময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? জুলাই মাসে যখন এই নীতিটি প্রকাশ করা হচ্ছে, তখন কোভিডের সর্বাধিক সীমা ছোঁওয়ার একটা পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে, মাসের পর মাস যেখানে স্কুল বন্ধ, তখন শিক্ষাব্যবস্থায় কী বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার, এমতাবস্থায় শিক্ষকরা কীভাবে পড়াবেন এরকম কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি। অনলাইন এবং অফলাইন লার্নিং-এর কী পদ্ধতি এরকম পরিস্থিতিতে কেমনভাবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে তার কোনো উল্লেখ নেই। ইন্টারনেট না থাকলে শিক্ষা কীভবে বহাল থাকবে? এরকম কোনো বিষয়ই উঠে আসেনি। এই প্রসঙ্গে বলি, আমি আপ্লুত, যে কোভিডের এই আস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কিছু নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আজ সফল। এই কঠিন সময়ে, কোনো সাহায্য ব্যতীত, নিজস্ব উদ্যোগে নতুন শিক্ষণকৌশল উদ্ভাবন করে শিশুদের কাছে পৌঁছোতে পেরেছেন।
ত্রুটিপূর্ণ কৃষিনীতি ও তার পল্লবগ্রাহী বিরোধিতা -প্রথম পর্ব : বিবেক সেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩৬৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই তথ্যগুলোর বিচারে বলা যায়, নীতি আয়োগের কৃষি, কৃষক ও কৃষিপণ্য মূল্য নিয়ে যে ধারণা তা অত্যন্ত মায়োপিক। আমাদের কৃষির সমস্যা সমাধানের জন্য নয়, শুধুমাত্র কৃষিপণ্য বাজারে কিছু অ্যাগ্রিগেটরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে। নতুন আইন কোনো সমাধানই নয়। তেমনি এখনই এর জন্য কৃষকের ভয়ানক সর্বনাশ হয়ে যাবে এমনও নয়। আবার ফড়ে বলে যে সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছে তাও নয়। এটা ঠিক মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়েরা ভোক্তা যে মূল্য পণ্যের জন্য দেয় তার ১০-৭০% বিভিন্ন পণ্যের জন্য পেয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। অর্থনীতিতে কিছু ভূমিকা এরা পালন করেছে, তা নানা কারণে কৃষকের পক্ষে যায়নি। যতক্ষণ না সেই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয় মধ্যস্বত্বভোগী থাকবেই, তা সে ধুতি পরা গ্রাম্য হোক আর কর্পোরেট সংস্থাই হোক। এই মুহূর্তে কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বাজারজাত করা শুরু হলে খুব দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, পণ্যসংগ্রহের জন্য কর্পোরেটকে সেই ফড়েদের ওপরেই নির্ভর করতে হবে।
নীতি আয়োগের আলোচনায় আরও যা লক্ষ করা হয়নি তা হল অকৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ভারতের অর্থনীতির যা চেহারা তাতে একে লুম্পেন অর্থনীতি আখ্যা দেওয়াই যায়। কৃষিতে অবাঞ্ছিত শ্রমিক বা এরপর উপার্জন হারানো ফড়ে (ধরে নিলাম হবে) কোথায় যাবে? গ্রামে শুধু নয়, আমাদের শহরেও লুকোনো রয়েছে বেকারত্ব। এসব দেখেও না দেখার ভান করা কৃষিনীতি ও তার ওপর ওপর বিরোধিতা আসলে নিজেদের সামগ্রিক ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা, সরকারের এবং বিরোধী পক্ষের।
খিচড়ি ও জাহাঙ্গিরি ফরমান রহস্য! : নীলাঞ্জন হাজরা
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০১ অক্টোবর ২০২০ | ৫৫৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
ধন্য খিচুড়ি। চাল-ডালের কিংবা বাজরার, নাকি তিলের? নিরামিষ বা আমিষ, হিন্দু নৈবেদ্য, জৈন মহাপণ্ডিতের শাস্ত্র, বৌদ্ধ মঠের অনুশাসন, মুসলমান বাদশাহি মহল-ই-খুরাক পাজ়ি, চিকিৎসকের ভেষজালয়, অকিঞ্চনের হেঁশেল, ভোজের একান্ন পাত—সর্বত্র বিরাজমান এ পাকোয়ানে কী বিপুল বৈচিত্র্যে আমরা ভারতবাসীরা যুগে যুগে একাত্ম হলাম! সে এক মহারহস্য বটে… কম রঙিন নয় কালাপানি পার করে তার বিলেত মায় মিশর পাড়ির কিস্সা। শুরু হল খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। নীলাঞ্জন হাজরা।
বৃত্তরৈখিক (৭) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৩ অক্টোবর ২০২০ | ৩০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
হাওড়ায় এক নতুন জগতের মধ্যে এসে পড়লো যদুগোপাল। এতদিন পর্যন্ত সারিখোল গ্রাম আর নবদ্বীপের বাইরের জগৎ সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিলো না তার, এই তার প্রথম নাগরিক জীবন। শশধর বেদান্তবাগীশের বাড়িটি পাকা, চওড়া রাস্তার উপর ত্রিতল ইমারত। বাড়ির নীচের তলার সামনের অংশে, একেবারে রাস্তার উপর তাঁর দু কামরার চতুষ্পাঠী বা টোল। সাইনবোর্ডে লেখা শশধর শাস্ত্রীয় সংস্কৃত শিক্ষালয়। ঘর দুটোয় দুটো করে দরজা, কোনাকুনি। একটার সামনে দাঁড়ালে অন্যটা পেরিয়ে চোখ যায় না। একটা রাস্তার সঙ্গে সংযোগ করে, অন্যটা অন্দরের সঙ্গে। সেই দরজা পেরিয়ে অন্দরে ঢুকলে দেখা যাবে আরও তিনটে ঘর, সামনে টানা বারান্দা। বারান্দার সামনে উঠোন, পেরিয়ে রান্নাঘর। এই ঘর তিনটের একটা ব্যবহার করা হয় টোলের আবাসিক ছাত্রদের বাসস্থান হিসেবে, টানা চৌকিতে যেখানে শুতে পারে পাঁচ-ছ জন ছাত্র। বাকি ঘর দুটোর মধ্যে একটার ব্যবহার ভাঁড়ার ঘর হিসেবে, যে ভাঁড়ার উল্টো দিকের রান্নাঘরে ব্যবহৃত হয়।
দখিন হাওয়ার দেশ - ৪ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ০৮ অক্টোবর ২০২০ | ৩০৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, টেকাপো শুধু ক্রাইস্ট চার্চ থেকে শুরু করলে তবেই পথে পড়বে, পুকাকি হ্রদ আপনি যে পথেই আসুন দেখতে পাবেন। পুকাকি থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়কপথে মাউন্ট কুক, হাইওয়ে ধরুন। তবে পারলে আর কারও হাতে স্টিয়ারিং-এর ভার তুলে দিন, কারণ বাঁদিকে লেক পুকাকি পড়বে একটু পরেই, আর তার পর সারাটা পথ জুড়ে শুধু মাউন্ট কুক দেখতে পাবেন। সে এক অপার্থিব মনভোলানো দৃশ্য, এক গগনচুম্বী পর্বতমালা আপনার গোটা পথের সামনেটায়, একপাশে লেক পুকাকি, তারপর দু-পাশে উঠেছে অজস্র পাহাড়ের সারি, তাদের কারও কারও মাথায় বরফের চাদর, কোথাও খরস্রোতা নদী আর ব্রিজ পেরিয়ে একসময় আদিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকার মাঝখান দিয়ে গাড়ি চলে দাঁড়াবে মাউন্ট কুক শহরের মাঝখানে।
অনুবাদকের কী করণীয় তার নির্দেশ মেলে শিশিরকুমারের তরজমায় : অমিয় দেব
বুলবুলভাজা | পড়াবই : পারাপার | ০৪ অক্টোবর ২০২০ | ৩৮২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শিশিরকুমার দাশ। বহুধা প্রবাহিত তাঁর সাহিত্য-প্রতিভা— ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসচর্চার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম, এ দেশে তুলনামূলক সাহিত্যচর্চার দিশারিদের একজন, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, শিশুসাহিত্যস্রষ্টা, সম্পাদক এবং তরজমাকার। তিনটি গ্রিক নাটকের তাঁর করা তরজমা অনুবাদকলার উজ্জ্বল নিদর্শন। ফিরে পড়লেন লেখক ও শিক্ষাবিদ অমিয় দেব।
আগস্ট -গণতন্ত্রের জন্মসুখ নাকি দুটি ঐহিক সমাধির স্মৃতি ? (পর্ব ২ ) : অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৫ অক্টোবর ২০২০ | ২২২৮ বার পঠিত
আজকের গণতন্ত্র হল, বেশিরভাগ মানুষকে বেশিরভাগ সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা আর সংখ্যাগরিষ্ঠতার মানদণ্ডে সংসদে অধিষ্ঠিত হওয়া । অনেকে বলতে পারেন, তাহলে সরকার পরিবর্তন হচ্ছে কী করে ? হচ্ছে, কেননা যে পক্ষ যখন সফলভাবে মানুষকে বোকা বানাতে পারছে তখন তার দিকে পালাবদলও হচ্ছে । এখানে বোকা বানানোটা আসল, কে বানালো, কীভাবে বানালো সেটা বড় কথা নয় । মাঝে মাঝে তো সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শের দলগুলির মধ্যেও রফা হয়ে যায়, তারা একা না পেরে উঠলে একত্রে বোকা বানানোর পরিকল্পনা করে । এটা কিছুটা ধূমপান-মদ্যপান কিংবা টেলিভিশনের মত ব্যাপার। সকলেই জানে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কিন্তু তবুও সেটাই এদেশের জিডিপি নির্ধারক । সকলেই জানে টিভি বোকাবাক্স, তবুও সে সন্ধ্যেবেলার বৈঠকী আকচা-আকচির মধ্যে নিজের সুবিধাবাদের পক্ষ নির্বাচনে আত্মসমর্পণ করবে । বড় মুখ করে বলবে, গণতন্ত্র উদযাপনের এর চেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ আর কী আছে যেখানে বিরোধীরা এসে খোলাখুলি তুলোধুনা করতে পারছে সরকারকে। সে বুঝবেই না, যারা পারছে তাদের মধ্যে সে নিজে পড়ে না । ভাববে না, কেন পড়ে না ? সে শুধু জানে, তার অংশগ্রহণে বিপদ আছে । আর এই নাকচ করতে না পারাটাই আজকের গণতন্ত্রের বৃহত্তম বিপদ ।
অফলাইন,অনলাইন, সিলভারলাইন : রঞ্জন সেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ০৫ অক্টোবর ২০২০ | ৩১০৩ বার পঠিত
অনেকে বলবেন, কেন লোকপ্রসার প্রকল্পের সহায়তা আছে, সরকারি রেশন আছে, বাবুদের দেওয়া রিলিফ আছে, সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা হল, পেশাগত কাজ বাবদ আয় কখনোই কোন অনুদানের বিকল্প নয়। তার থেকেও বড় কথা হল, এই মানুষগুলি বাঁচেন তাদের শিল্প পরম্পরাকে ঘিরে। সেটাই তাদের আনন্দ, গর্ব এবং জীবন। নিজেদের ভালোবাসার জিনিসটাকে ধরেই তারা জীবিকার রাস্তা গড়তে চান। তা না করতে পারলে হীনমন্যতা আর মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন।
আমাদের উন্নয়ন, পরিকল্পনা সবকিছুতেই সংখ্যা একটা বিষয়। কিন্তু যারা দেশ তো বটেই বিদেশের দরবারেও দেশের সাংস্কৃতিক পরম্পরাগুলিকে তুলে ধরছেন; যাদের কাজের সুবাদে ছৌ নাচ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী পরম্পরার আন্তর্জাতিক তালিকায় স্থান পেয়েছে; পটচিত্রের নাম জানেন সারা পৃথিবীর শিল্প রসিকরা; তারা কী আর একটু গুরুত্ব আশা করতে পারেন না?
উঠে আসো আতঙ্ক আর ভয়ের রাত্রি পেছনে ফেলে : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৭ অক্টোবর ২০২০ | ২৯৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এক নারীকে পুরোপুরি উলঙ্গ করে তার ওপর নির্যাতন করছে প্রভাবশালী মাস্তানরা।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বড়খাল এর পাশে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার,বাদল ও কালামের নৃশংস নির্যাতনের শিকার এই নারী,বহু বার পায়ে ধরে বাবা ডাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি এই নারীর।তারা খুব নারকীয়ভাবে এই নারীর যৌনাঙ্গ ও সমস্ত শরীরে নির্যাতন করে।
যেখানে এই নারীর যৌনাঙ্গে টর্চ লাইট ও হাত ঢুকিয়ে দিয়ে খুব খারাপভাবে নির্যাতন করা হয়েছে,যা ৭১এর বর্বরতাকেও হার মানায়। সম্পূর্ণ ভিডিওটি প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন পোস্টদাতা।
এই একটি ঘটনার বহুমাত্রিকতা আসুন একটু তলিয়ে দেখি, এই সদম্ভ উল্লাসকারী ধর্ষকগুলির বয়স কত? আঠারো থেকে ত্রিশ। পরপর দুটি প্রজন্ম। তারা কেন করেছে এই ঘৃণ্য অপরাধ? আমাদের বিশ্বাসযোগ্য বিশ্বাসকে ভেঙেচুরে, ভাবতে পারেন এই জেনারেশন কাজটি করেছে তাদের ‘পবিত্র দায়িত্ব’ ভেবে! ভাবতে পারেন, নারীটির প্রাক্তন স্বামী তার ঘরে এসেছিল বলে তাকে শায়েস্তা করার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ তারা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছে কাঁধে। ভাবুন, পড়শির বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রজন্মের বৌদ্ধিক পতন।
আমি বাংলার, বাংলা আমার, ওতপ্রোত মেশামেশি… : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৭ অক্টোবর ২০২০ | ২৯২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এমনই এক নির্মম বাস্তবতায় সবশেষ, ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরের বলপাইয়া আদাম এলাকায় পাহাড়ি গ্রামের ভেতরে ঢুকে নয়জন সেটেলার বাঙালি হামলা ও লুঠপাঠ চালায়। এ সময় তারা বাড়ির প্রতিবন্ধী চাকমা মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে। লক্ষ্যণীয়, সেপ্টেম্বরেই খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও মহালছড়িতে দুজন পাহাড়ি স্কুলছাত্রী এবং বান্দরবানে এক ত্রিপুরা নারী ধর্ষিত হয়েছেন, আদিবাসী বলে এ পর্যন্ত কোনো ঘটনারই সুরাহা হয়নি।
ওই ঘটনার পর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের একজন প্রতিনিধি নির্যাতিতা প্রতিবন্ধী মেয়েটির বাড়িতে যান। তিনি দেখেন, মেয়েটির মা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর আহাজারি করে বলছেন, “আমরা কি এদেশের নাগরিক নই? তাহলে কেন আমাদের ওপর এমন অত্যাচার?”
সাংবাদিক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কয়েক বছর আগে বাবা ও ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
পাহাড়ের আরো আট-দশটা নির্যাতনের ডামাডোলে প্রতিবন্ধী নারী গণধর্ষনের ঘটনাটিও হয়তো হারিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু এক্ষেত্রে সোচ্চার হয় দেশ। করোনাক্রান্তির ভেতরেই পাহাড়ে তো বটেই, খোদ ঢাকার শাহবাগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন একের পর এক প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।
বৃত্তরৈখিক (৮) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ অক্টোবর ২০২০ | ২৯২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
দরবেশ শাহ্ হেমন্তকে দেখে খুব খুশি, ওর ধারণা ছিলো হেমন্ত বুঝি স্টীল প্লান্টেই চাকরি করছে, সেরকমই তো কথা ছিলো, তাই বুঝি যোগাযোগ রাখার সময় পায় না। জয়মালিকাকে দেখে অবাক ও, হেমন্তর মেয়ে এত বড়! তারপর অবিশ্যি হিসেব-টিসেব করে বললো, না এমনই তো হবার কথা! ও যে নিজেই বুড়ো হয়ে গেছে সেকথা ওকে মনে করিয়ে দেবার কেউ নেই, তাই ওর সব কিছু গুলিয়ে যায় এখন! কী প্রয়োজনে এসেছে জয়মালিকার কাছে শুনে ও পিঠ চাপড়ে দিলো জয়মালিকার। এ-হি তো চাই, খুব স্মার্ট তোমার মেয়ে হেমন্ত, কোথায় কোথায় সুযোগ আছে দু চোখ মেলে দেখতে জানে! এমনটা যদি তুমি হতে আমার পুরো কারবারটা আজ তোমারই হতো!
বাংলায় বিসূচিকা : নির্মাল্য দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০১ নভেম্বর ২০২০ | ৭৩৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
‘আজাদি ঝুটা’ ছিল কিনা জানিনা, তবে তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে ১৯৫০-র দশকের পটভূমিতে বাংলায় কলেরার বিবরণে, আর শরৎচন্দ্রের ব্রিটিশ আমলের বাংলায় কলেরার বিবরণের মধ্যে মূলগত কিছু ফারাক দেখা যায়। ‘আরোগ্য নিকেতন’-এ কলেরা আটকাতে ‘শিক্ষিত ছেলেরা’ ‘কোদালি ব্রিগেড’ নামে পরিশ্রুত জলের জন্য কুয়ো খুঁড়ছে। সরকারি ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টরেরা পুকুরে ব্লিচিং পাউডার গুলে দিয়ে জলকে শোধন’ করছে, ‘অ্যান্টি-কলেরা ভ্যাকসিন ইনজেকশন’ বা ‘কলেরার টিকে’ দিচ্ছে।৩ এই ধরণের জনস্বাস্থ্যের কিছু তৎপরতা ও জনসচেতনতা কিন্তু বাংলায় কলেরা মোকাবিলায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ককের ভিভরিও কলেরির বিষের ধারণার সাত দশক পরে স্বাধীন ভারতে ১৯৫১ সালে তা নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে এলেন এক বাঙালিই। কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী শম্ভুনাথ দে। শম্ভুনাথ খরগোশে পরীক্ষা করে দেখলেন, কলেরার আক্রমণ স্থল অন্ত্র। ভিভরিও কলেরি থেকে তিনি কলেরার বিষ আলাদা করে খরগোশে প্রয়োগ করে ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম হলেন। এটা কলেরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এক দিশা দিল। এর আগে ধারণা ছিল, কলেরা টক্সিন আসলে ব্যাকটিরিয়ার কোষ প্রাচীরে থাকা এন্ডোটক্সিন থেকে হয়। শম্ভুনাথ প্রমাণ করলেন, কলেরা টক্সিন ব্যাকটিরিয়ার কোষ থেকে নিঃসৃত হয় (এক্সোটক্সিন)। তাই ব্যাকটিরিয়া ছাড়াও খালি এই বিষই ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম। শম্ভুনাথ দের এই আবিষ্কারের পর দু দশকের মধ্যেই কলেরা টক্সিনের গঠন, প্রকৃতি সবই জেনে ফেলা সম্ভব হয়। কোলকাতায় নিজের গবেষণাগারে যৎসামান্য যন্ত্রপাতির ওপর ভর করে ‘ভারতীয় কলেরা’র গবেষণায় বাঙালির এই অবদান স্বীকৃতি পায় বিশ্বে। ১৯৫৯ সালে বিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই কাজ। তাঁর কাজ এতটাই আলোড়ন ফেলে যে নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জসুয়া লিডারবার্গ শম্ভুনাথকে নোবেল পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত করেন। শম্ভুনাথের দেখান পথে হেঁটে পরবর্তী কালে কলেরা গবেষণার দৃষ্টিকোণ পালটে যায়। এবং পরের ষাট বছরে সারা পৃথিবীতে কলেরা টক্সিনের ওপর হাজার হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। অবশ্য বাঙালি স্বাভাবিক ভাবেই শম্ভুনাথের কথা বিশেষ জানেও না, আর জানলেও মনেও রাখেনি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
ডিসেম্বর : অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৯ অক্টোবর ২০২০ | ৩৬৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
শিউলিকে বোঝাতে পারি না, যা দেখি তা নয়—সত্য তাই যা আমরা দেখি না। সে তখন হো হো করে হাসে। বলে, তুমি সেই তেমনি রয়ে গেলে—আগের মতই। পাল্টালে না, বদলালে না—এমন লোককে নিয়ে আর পারি না। ওকে বলি, এমন কথা তো ছিল না শিউলি। কথা ছিল, তোমাকে একটি নদী উপহার দেব। সঙ্গে একটি নৌকা। নদীতে ভেসে যাবে নৌকা, জলের উপর সূর্যাস্তের আলো—এমতাবস্থায় কত পাখি উড়ে যেতে পারে আকাশ দিয়ে—কল্পনা করে দ্যাখো একবার।
ও বলে, আমি কল্পনা করতে পারি না। তুমি যা তোমাকে আমি তাই দেখি। দেখি শুনি, একা-একা কথা বলি। তার মধ্যে নদী নেই, সূর্যাস্ত নেই, নৌকা নেই। মাটির দোতলাবাড়ি’র পিছনে আমাদের চাষজমি। আমরা সেখানে মৌরি চাষ করি। ধনে আর জিরে। এই যে চাষজমি, এই যে চাষজন্ম—যেন তা আমাদের হাতে আছে অনন্তকাল। চাষ করতে করতে আমরা যখন সেই মাটির নীচে চলে যাই—দেখি সেখানে প্রাচীন জ্যোৎস্নাসকল পড়ে আছে।
আর আমি অবাক হয়ে যাই শিউলির কথায়। এই তো কী সুন্দর কবিতার মত কথা বলে সে, কবিতার মতন চলন তার—কবিতার মত জীবন। অথচ সে বলে, আমি কবিতা লিখতে পারি না, কারণ আমি তা লিখিনি কখনও। কবিই সত্য আর জগত মিথ্যে—একথা তাকে বোঝাতে পারি না। সে একপাক ঘুরে গিয়ে বলে, ওসব হল তোমার কল্পনা। কবি হয়েই হয়েছে তোমার মুসকিল। জানো তো, কবিরা গজদন্তমিনারে বাস করে? আবোলতাবোল লেখে—আসলে ওসব কোনো কবিতাই নয়! অবাক হয়ে বলি, এসব কী বলছ তুমি শিউলি? জানো আমি কী ঠিক করেছি? এই গোটা ডিসেম্বর মাসটা তোমাকে উপহার দিতে চাই। একী কম কথা হল?
হাত উল্টে শিউলি বলে, ঠিক আছে, দিলে না-হয়—কিন্তু তার পর? এই গোটা ডিসেম্বর নিয়ে আমি কী করব? ডিসেম্বরের সমস্ত শিশির আমার গায়ের উপর ঝরবে। সমস্ত শীত আমাকে কাঁপাবে। প্রজাপতিরা আমার গায়ে বসবে। বলো, তখন আমি কী করব?
টুক্কা : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৩ অক্টোবর ২০২০ | ৩৯১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
নাজমা বিকেল হলে দোতলার ছাতে আসবে। তারিক একথা জানে। তিতুও। এছাড়াও তারিক জানে, নাজমা স্কুলে কখন বেরুবে, আর, সেই সময়ে তার গায়ে থাকবে একটা অব্যর্থ লালচে টিউনিক। ওই সময়ে, নাজমা, তিতুকে সে বলেছে, একদম নীলমের মাফিক।
নীলম, নীলম। চাংকি পান্ডের হিরোইন। সাদা জামা, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো পরিহিত হিলহিলে চাংকি। ওর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে নাচে নীলম। উজ্জ্বল নীলম। লাল ফিতে চুলে বাঁধা থাকে তার। গায়ে লাল ফ্রক। পায়ে যেমন জুতো থাকে সেরকম জুতো সে যদিও নাজমার পায়ে দেখেনি। সত্য বোসের বেটি পরে অমন হিলতোলা জুতা, অমন ফ্রক। কিন্তু, দশটায় টিউনিক গায়ে যখন নাজমা বেরুবে, তখন সে আদতে নীলম। ওই সময় তার পথের একপাশে বসে থাকবেই তারিক, হয় হরলালের পুকুরের ধারে, নয় রাস্তাটা যেখানে বাঁক নেয়, সেই তুঁতগাছের নীচে, কোনোদিন তিতু সঙ্গে থাকবে, কোনোদিন সে একা, কিন্তু ওই সময়ে নাজমার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখবেই তারিক। একই দৃশ্য, তবুও কেন যে নতুন মনে হয়! তার যাওয়ার পরে সঙ্গে তিতু থাকলে তারিক বলবেই, কেমন দেখলি, আজ? আর হয়ত এমনই চাপাগলায় কথাবার্তা হবে তার ও তিতুর:
অশৌচ : কুণাল বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৪ অক্টোবর ২০২০ | ৪৫০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল সে।
চোখের সামনে আকাশ ধীরে ধীরে বেগুনি হয়ে ওঠে। আলতা রঙের পোঁচ পড়ে তার উপর। শুধু জনারণ্যে কিছু ঘুড়ি, পাখিদের প্রতিনিধি। গঠন নয়, ঘুড়ি চেনা যায় তার উড্ডয়ন-কৌশলে। উদ্বাস্তু কলোনি থেকে চাক চাক ধোঁয়া, যেন নোয়াঠাকুমার আর্তি, খুঁজে নেয় আলপথ—ফরিদপুর। তাদের গতিপথ বিভ্রান্ত সরল, অর্থাৎ বক্র।
গুলের আঁচ ওঠা উনুন—খানিক উপরে বুড়ির দু'টো চোখ আর ফুলে ওঠা টিকোলো নাক এক প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে, যা আকারে ক্রমশ বড় হতে থাকে।
মাথার ভিতর শৃঙ্খলিত ধ্বনি, রঙ আর হঠাতই কালো হয়ে ওঠে আকাশ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু, সব সত্যি। সবচেয়ে বড় সত্য এই রাত, তার বেদনা, যা কেবল অনুবাদে সাবলীল...
কুকুরেরা জেনে গেছে সব। সন্ধ্যার আজান আর মিলিটারি রুট মার্চ পরপর শুনে নমনীয় করে তোলে নিজেদের। স্থির হয়। সঙ্গম স্থগিত রাখে আজ।
ছেলেটি : সুদেষ্ণা মৈত্র
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ২৭০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমার মা আঁকতে পারেন, প্রতিমা গড়তে পারেন। মামাবাড়িতে প্রতিমা তৈরি হয়। মা, মাসি ,মামা সবাই হাত লাগাতেন শিল্পীর সঙ্গে। সে অভ্যাস মায়ের এখনও আছে। যদিও এখন কিছুই করা হয়ে ওঠে না। ইনটারনেট দেখে আঁকতে ভাল লাগে মায়ের। মাঝেমাঝে তাই আঁকেন। আর আমায় আঁকায় উৎসাহ দিয়ে যান খুব। ভালো লাগে না আমার, যখন মাকে আত্মীয়, পাড়া পড়শীরা বলে ‘অংশু মেয়ে হলে ভালোই হত।আসলে তোমার মতো তো ও অনেকটা’! মা উত্তর দেন না । মনে মনে হয়েতো কিছু উত্তর দেন। তবে আমায় বলেন, ‘আমার অংশু কিসে কম! ওর পড়তে ভালো লাগেনা, তো লাগে না।বাবু আমার পাশ তো করে যাচ্ছে’।আবার কখনও মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, ‘আমার বাবুর মতো কেউ আলপনা দিতে পারে’? বাবাকেও নালিশের সুরে মনের কথা বললেন। বাবা তখনই বলে ওঠেন, ‘ছাড় ওসব কথা’।
পুজোতে এবার মামাবাড়ি যাব ঠিক হয়েছে। সোনাদিদি আসছে বিদেশ থেকে। বড়োমাসিও আসতে পারে। সোনাদিদি বিদেশে গবেষণার জন্য গেছে। পুজোর পর আমাদের বাড়িতে থাকবে দু মাস, গবেষণার কাজের জন্য। আমার আঁকার অন্যতম ভক্ত সোনাদিদি।
মহালয়ার পর পরই চলে এলাম দাদুর বাড়িতে। কী আনন্দ! দালানে বসে বসে ঠাকুরের সাজ পরালাম। সোনাদিদিও এলো হাত লাগাল। ঢাকের বাদ্যি বাজল। পাড়ার অনেকে এল। সোনাদিদির প্রশংসা করল। আমারও করল। তবে আমাকে, মাকে আবার শুনতে হল অংশু মেয়ে হলে কত ভালো হত। সোনাদিদি শুনছিল আর হাসছিল।
জ্ঞানীজাদুকর, গণজাদুকর : পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৮ অক্টোবর ২০২০ | ২৯১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
দীপকদা হলে কেমন ভাবে এই খেলাটা দেখাতেন ? তিনি প্রথমে মঞ্চের মাঝখানে এসে দাঁড়াতেন। নিজের নাম বলতেন। তারপর বলতেন-- ম্যাজিক ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, হস্তকৌশল বা চাতুরী। তারপর নিজের খালি-হাত দেখিয়ে বলতেন, এই যে আমার খালি-হাত, যেখান থেকে জাদুকরেরা বের করে আনেন টাকা, রুমাল বা সিগারেট। যেমন, এই মুহূর্তে আমার হাতে এসে গেছে ফুল। তেমনি আরেক ধরনের মানুষ আছেন, যাঁরা মুঠো থেকে বের করেন তাবিজ, কবচ, মাদুলি। আর সেসব সাধারণ মানুষের হাতে দিয়ে বলেন, আপনার ছেলে পাশ করে যাবে, আপনার স্বামী সুস্থ হয়ে উঠবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এঁরাও কিন্তু আমার মতই জাদুর কারবারি। কিন্তু এঁরা কিছুতেই তা স্বীকার করেন না। বদলে নিজেদের বাবা, যোগী বা গুরু বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
জাদুকর মাত্রেই জানেন, ব্লেন্ডো খেলাটি হল চারটে ছোটো রঙিন রুমালকে মিলিয়ে, একটি চাররঙা বড়ো রুমালে পরিণত করার ম্যাজিক। কিন্তু দীপকদা চারটি চাররঙা রুমালকে, একটি কাগজের রোলের মধ্যে ভরে দিয়ে ,যখন ম্যাজিক করে তাদের জুড়ে দিয়ে একটা মস্ত বড় রুমাল বের করেন, যাতে ওই সব রঙই রয়েছে, তখন ভারতবর্ষের একজাতি-একপ্রাণ- একতার গান বেজে ওঠে। তাই এইসব ম্যাজিক মানুষ বহুকাল ভালবেসে মনে রাখেন।
আগস্ট -গণতন্ত্রের জন্মসুখ নাকি দুটি ঐহিক সমাধির স্মৃতি ? (পর্ব ৩) : অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১১ অক্টোবর ২০২০ | ১৭৫০ বার পঠিত
ভারতবর্ষের সংবিধান যখন লেখা হয় তখন হাতে ছিল আমেরিকা (১৭৭৬ সাল), আয়ারল্যান্ড(১৯৩৭ সাল) এবং ইউনাইটেড নেশন চার্টারের (১৯৪৫ সাল) অন্তিম পান্ডুলিপি । ফলে ভারতের সংবিধান পাশ্চাত্য প্রভাবে যে ভাষায় লেখা হল তা আধুনিকতম গণতন্ত্রের উচ্চারণ করেছিল ঠিকই । কিন্তু, ভারতবর্ষের ভাবমননে অধিষ্ঠিত ছিল সনাতনী ধারার প্রবাহ । যে ধারা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বা সম্রাট অশোক কিংবা আকবর এঁদের মধ্যেও একটা গণতান্ত্রিক মনোভঙ্গির স্বকীয়তার ছাপ রেখেছিল, কেননা এঁরা গায়ের জোরের চেয়ে ন্যায়পরায়ণতাকে বেশি মর্যাদা দিতেন । গান্ধীজীর মধ্যেও এই ধারার একটা প্রভাব দেখা যায় যখন তিনি কংগ্রেসকে বলেন, “স্বাধীনতা কংগ্রেস পায়নি, পেয়েছে ভারত । মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে সবচেয়ে দক্ষ লোকেদের দিয়ে, তাঁরা যে-পার্টিরই লোক হন”। তাই যতই নেহেরুর প্রধানমন্ত্রীত্ব বিনা-গণনির্বাচনে স্থির হোক স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের ক্ষমতার ভাগ-বাঁটোয়ারায় ডাক পড়েছিল সকলের । এমনকি আর. কে. ষন্মুখম চেট্টি, বি. আর. আম্বেডকর ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মত ব্রিটিশ-অনুরাগী মানুষেদেরও। গান্ধীজীর অভিভাবকত্বে মন্ত্রীসভা গঠনে উদারতায় ত্রুটি ছিল না, অন্তরে শুধু অভাব ছিল গণতান্ত্রিকতার। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ঔদার্যটুকুর কথাও বেমালুম ভুলে গিয়ে জাতীয়তাবাদের আড়ালে বর্বরতার রাজত্ব কায়েম হয়েছে । নেতৃবর্গের মধ্যে এক ধরণের অদ্ভুত প্রবণতা দেখা গেছে ও যাচ্ছে - পথপ্রদর্শকের ভূমিকা ছেড়ে ক্ষমতালোভী রক্তচক্ষু বাহুবলীর ভূমিকায় উত্তরণ ।
মত্ত মাদল বাজিয়ে ... : প্রবুদ্ধ মিত্র
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০২ নভেম্বর ২০২০ | ৩৫৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
খুব বেশিদিন নয়, মাত্র অর্ধশতক আগের কথা এসব। কোন্ বিত্তে এই ফুলের শিশুদের অবস্থান তা বোঝার বয়স তাদের ছিলনা। তাদের পাপড়ি মেলে জীবনের দিকে প্রথমবার চোখ তুলে তাকানোর সেই মধুর কালপর্বে মুখে মুখে ছড়ার অবাধ গতায়াত ছিল। যে বাংলা ছড়ায় তাদের বর্ণপরিচয়ের হাতেখড়ি সেই অ-এ অজগর সত্যিই তেড়ে আসে কিনা বা আ-এ আমটি পেড়ে খাওয়া কতটা সহজলভ্য তা তাদের কল্পনা শক্তিকে উস্কে দিতে যথেষ্ট ছিল। যে কল্পনায় রং তুলির কাজটা অনায়াসে করে দিত তাদের ঠোঁটের ফাঁক আলগা হয়ে বেরোনো মরমী বাংলা ছড়া। বা, বাস্তবের হাটের যে অতুলনীয় রূপকল্প যেমন, উচ্ছে বেগুন পটল মুলো/ বেতের বোনা ধামা কুলো/ সর্ষে ছোলা ময়দা আটা / শীতের রাপার নক্শা কাটা.., তা কি সংসার যাপন সম্পর্কে শিশু হৃদয়ে এক আবিলতা এনে দেয় না ? জীবনের সহজিয়াকে বুঝতে কোমল হৃদয়কে কি ছড়ার এই ছবি যথেষ্ট উৎসাহ দেয় না ?
যে ছড়াতে পল্লীবাংলার ঋতুবদলের ছবি শিশুমনকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসে তা তো স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকার কথা। আমরা কি কোনো দিন ভুলে যাবো-
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে..। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ জড়িয়ে আছে যার পরতে পরতে। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,/ একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। অথবা, আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর/ মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
এ তো গেল রবীন্দ্রনাথ জানার সহজপাঠ। বাংলার শিশু সমাজ যাঁকে এক কথায় হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছিল। কে যেন ততক্ষণে আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে অন্য কাড়ানাকাড়া। রিন্ রিন্ করে বেজে চলেছে সুকুমারের আবোল তাবোল।
মারীর দেশে মারীর বেশে : ডাঃ সৌম্যকান্তি পান্ডা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ১২ অক্টোবর ২০২০ | ১৪৯৬ বার পঠিত
অ্যাম্বুলেন্সের বদ্ধ জায়গার মধ্যে একটু শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তাছাড়া মোটামুটি নির্বিঘ্নেই পুরো ব্যাপারটা মিটে যায়। প্রথম রাতে ডক্টরস' কেবিন খালি পাওয়া যায় নি। জেনারেল ওয়ার্ডেই রাত্রিবাস। আহা! 'জেনারেল ওয়ার্ড' বলে নাক শিঁটকোবেন না যেন.. এই হাসপাতালের 'জেনারেল ওয়ার্ড' বহু কর্পোরেট হাসপাতালকে গুনে গুনে খান পাঁচেক গোল দেবে। এসি ওয়ার্ড, দামী বেড, পরিষ্কার চাদর, পাশে ড্রয়ার সহ র্যাক। বেডগুলোর মাঝে ছ'ফুটের বেশি দূরত্ব বজায় রাখা। সিল করা পানীয় জলের বোতল, কৌটোয় সাজানো খাবার, দু-বেলা চা। সাথে স্টাফেদের আন্তরিক ব্যবহার। নিজের কথা বলছি ভেবে বাঁকা হাসি দেবেন না। সবার কথা ভেবেই বলছি। যেহেতু সাথে বাড়ির লোক কেউ নেই তাই বয়স্কদের বকেঝকে নিজেদের হাতে করে খাইয়ে দেওয়া, সময়মতো ওষুধ-জল পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি সবটাই অত্যন্ত দক্ষতা আর মানবিকতার সাথে তাঁরা করে চলেছেন। নিয়মিত জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তাররা দেখভাল করছেন। সবটাই ওই পিপিই-র অসহ্য কষ্ট নিয়ে। প্রাথমিক অব্যবস্থা কাটিয়ে সরকার কোভিড নিয়ে যে রকম ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছেন তাতে তাঁদের অকুন্ঠ প্রশংসা প্রাপ্য। এখনো অনেক অভাব, অনেক অভিযোগ আছে জানি। তবু, এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা যতখানি করেছেন সেটাও অনেক।
ক্যালাইডোস্কোপ : কেকে
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০১ নভেম্বর ২০২০ | ২৬৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সে এক ঝলমলে দিন ছিলো গ্রীষ্মকালে। বাকেট্লিস্টের একটা বাক্সে টিকচিহ্ন দেবার জন্য আমি সাঁতার কাটতে গেছিলাম । গ্রেট লেকগুলোর মধ্যে একটায়। মিশিগান।
গভীর অন্ধ্কার জল, তার মধ্যে আস্তে আস্তে নিজের বল্গা খুলে দিতে হয়। আমি টের পেয়েছিলাম জল আমার সাথে কথা বলছে। না, ওর কথা 'শোনা' যায়না। তোমায় বুঝতে হবে, সারা শরীর দিয়ে। ও স্রোতের ভাষা বলে। ঢেউ এর ভাষা। অতলের ভাষা। তরলের। আর আরো কতকিছুর, পৃথিবীর শব্দ দিয়ে যার নাম বলা যায়না।
বিশাল গভীর মিশিগান, আমার সাথে কথা বলেছিলো। আপনজনের মত।
সেই থেকে আমি জলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। মিসিসিপি নদী ভয়ানক রেগে থাকে। মানুষরা ওকে এমন বিষিয়ে দিচ্ছে। রাগবে না তো কি করবে? হুরন লেক আবার খুব লক্ষ্মী মতো। মিশুকে, হাসিখুশি। মস্ত লেক সুপিরিয়র কি গম্ভীর! আমার সেই কঠিন নিষ্ঠুর শিকারী কাকুর মত। যিনি এককথায় আমার জন্য নিজের প্রাণটা দিয়ে দিতে পারতেন! ডেড সী ও চুপচাপ খুব। ইন্ট্রোভার্ট। সমাহিত। অথচ ভূমধ্য সাগর? ভূমধ্য সাগর আমাকে বলেছিলো ওকে 'খাতুনা' বলে ডাকতে। এক নম্বরের ফ্লার্ট একটা!
না, এসব আমি বলতে যাইনা কারুর কাছে। বলে কী হবে? আমি যে জলের সঙ্গে কথা বলতে পারি কেউ তো আর বিশ্বাস করবে না?
জীবন খুঁজে পাবি : রঞ্জন সেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৫ অক্টোবর ২০২০ | ৫০৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
এবার পুজোয় চলুন তেপান্তর। দেখুন তেপান্তরের দুর্গাপুজো। বাংলার গ্রামীণ দুর্গোৎসবের সাবেক চেহারাটি ফুটে উঠবে আপনার চোখের সামনে। মনে পড়বে বাড়ির বড়দের কাছ থেকে শোনা, পালকি নিয়ে কলাবৌ স্নান, আরতি, ভোগ, অঞ্জলি, সিঁদুর খেলা এবং বিসর্জন মিলিয়ে পুজোর চেনা ছবিটি। মন্ডপ সংলগ্ন মাঠে বাউল-ফকিরি গান, ছৌ নাচের সঙ্গে থাকবে পুরনো দিনের পুজোর সান্ধ্য অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অঙ্গ থিয়েটার। ভোগ ছাড়াও অতিথিদের জন্য রয়েছে খাওয়াদাওয়ার এক আন্তরিক আয়োজন। ছড়ানো সবুজ আর নানারকম পাখির ডাক আপনার মন ভালো করে দেবে। অজয় নদের তীরে সাদা বালির প্রান্তর এখন কাশফুলে ঢাকা। কাছেই রয়েছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষিত ইছাই ঘোষের দেউল। ইতিহাস পাগল মানুষেরা চলে যেতে পারেন সেখানেও। ৪একর জোড়া এলাকায় ছড়ানো ছোট ছোট কটেজে অতিথিদের থাকার চমৎকার ব্যবস্থা। এমনিতে এখানে প্রায় ১০০ জন অতিথি থাকতে পারেন। তবে পুজোর সময় ভিড় এড়াতে এখানে ৬০জন পর্যটকদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দশমীর দিন স্থানীয় আদিবাসীদের দাঁসাই পরব। দেখুন তাদের দাঁসাই নাচ, শহুরে সংস্কৃতি পেরিয়ে এক অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। ঘরে ফিরলেও তেপান্তর জেগে থাকবে আপনার অন্তরে।
রুহানি পর্ব ১০ - মাই সাহিবা : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৭ অক্টোবর ২০২০ | ২২৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
একটা নতুন দেশে। বুখারা থেকে বদায়ুন। ইউরেশিয়ার স্টেপ অঞ্চল থেকে হিন্দ। হেরাট, কাবুল, কান্দাহার, গজনি, লাহোর। ক্যারাভান আর ভ্রমণকারীদের জন্য সেটাই ছিল নিরাপদ রাস্তা। তারা আরব তুর্ক সম্প্রদায়ের মানুষ। হিন্দ-এ এসে জুলেইখা তুর্ক দাস সুলতান ইলতুতমিসের নাম শোনে। ওই যাযাবর তুর্ক থেকেই এসেছেন সুলতান। কঠিন জীবন নতুন নয় জুলেইখার কাছে। যাযাবর তুর্ক কষ্টসহিষ্ণু। মধ্য এশিয়ার যাযাবর গোষ্ঠী হিন্দ-এ ঢুকে যতই সুস্থির জীবনকে ভালোবাসেছে ততই মেয়েদের লড়াক্কু ভাবটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেছে। ইলতুতমিসের মেয়ে রাজিয়ার মধ্যে জুলেইখা সেইসব যোদ্ধা আমাজনদের শেষ ছায়া দেখতে পান। মেয়েদের তিনি দাপিয়ে বেড়াতে দেখেছেন, তারা যুদ্ধ করত, পুজোর পুরুত হত, দলের নেত্রী হত।
বৃত্তরৈখিক (৯) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৭ অক্টোবর ২০২০ | ২০৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
কেন, কী ভাবে ওখানে থাকে, ওর চাকরি এখানে কোন্ সূত্রে হলো, সবটা শুনে হালদার বাবু বললেন, তাহলে তো প্রথমেই আপনার শিফ্ট্ করা দরকার। ওখানে থাকবেন কেন? এখন তো আপনার এনটাইট্ল্মেন্ট ডী-ওয়ানে। দাঁড়ান, আমি দেখছি, বলে একটা ফাইল নিয়ে আসেন হালদার বাবু। উল্টে-পাল্টে বললেন, তিনটে কোয়ার্টার খালি আছে ডী-ওয়ানে, তেইশ নম্বর, একচল্লিশ আর আটাত্তর। আজ যাবার আগে আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে যাবেন তিনটে কোয়ার্টারের, দেখে নিন তিনটেই, বলে দেবেন কোন্টা পছন্দ। রিপেয়ার-পেন্টিং সব করিয়ে দেব তিন-চার দিনের মধ্যে। এই সপ্তাহেই শিফ্ট্ করে নিন, আমি কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে কথা বলে রাখবো, গাড়ি-টাড়ি নিয়ে চলে যাবে, ওর লোকজনরাই সব গুছিয়ে গাছিয়ে দিয়ে আসবে।
দখিন হাওয়ার দেশ - ৫ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১৭ অক্টোবর ২০২০ | ৪১৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
তরঙ্গার বিদায়গাথা শুনতে পেয়ে সমুদ্রের দেবতা টাঙারোয়া জেলি ফিশ, সমুদ্রের ফেনা, আর সমুদ্রের শৈবালকে পাঠিয়ে দিলেন শিশুটিকে রক্ষা করার জন্য | তারা তাকে নিয়ে গেল শিশুটির পূর্বপুরুষ টামানুই-টে-রা’য়ের দেশে | সেখানকার লোক শিশুটিকে বাঁচিয়ে তুলল। তারপর টামানুই মাউইকে অদেখা জগতের কত রহস্যই না শেখালেন। মাউই পাখিদের সঙ্গে কথা বলতে শিখল, পাখিরা তাকে দিল ওড়ার ক্ষমতা। মাছেরা তাকে দিল শ্বাস, মাছেদের সঙ্গে সে সাঁতার কেটে বেড়াত। হাওয়া তাকে দিল স্বর, মাটি তাকে দিল আপন পরিচয়, তারারা তাকে দিল দিকনির্ণয়ের ক্ষমতা, আর আকাশের কাছে সে পেল উচ্চাভিলাষ। যখন সে বড়ো হল, একদিন টামানুইয়ের সঙ্গে তার যুদ্ধ হল, সে-যুদ্ধে তার বজ্রের মতন দণ্ড দিয়ে সে আঘাত করল টামানুইকে, টামানুই পড়ে গেলেন। এখন মাউই হল নেতা। তখন টামানুই মাউইকে বললেন, “দ্যাখো, তুমি তো পৃথিবীকে টাঙারোয়ার দেওয়া উপহার। এবারে তুমি নিজেকে নিজে খুঁজে পাও, যাও বেরিয়ে পড়ো, সর্বত্র তোমার নাম প্রচারিত হোক মাউই-টিকি-টিকি-আ-তরঙ্গা বলে।”
করোনার দিনগুলি - ত্রিবিংশতিতম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৭ অক্টোবর ২০২০ | ৩০৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আজ এক ভদ্রলোককে তিনজন যুবক পাজাকোলা করে আনল। সঙ্গে একজন সদ্য যুবতী। ভদ্রলোকের মেয়ে। সে শুধু বলছে, 'ডক্টর, আগে আমার বাবাকে দেখুন। খুব সিরিয়াস অবস্থা।'
জিজ্ঞাসা করলাম, 'হয়েছেটা কি?'
কিছুতেই বলতে চায়না। শুধু বলছে, 'জ্বর এসেছিলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে গেছে।'
অবশেষে কাগজপত্র ঘেঁটে বার করলাম তিনদিন আগের করোনার রিপোর্ট- পজিটিভ।
বললাম, 'একি, একে এভাবে চেম্বারে নিয়ে এসেছেন কেন? আর আপনারা জড়াজড়ি করে যেভাবে আনলেন, তাতে তো আপনাদেরও করোনা হবে।'
যুবক তিনজন হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। 'করোনা?? কিন্তু ওযে বলল..'
বললাম, 'এনাকে বাঁচাতে হলে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে। এই দেখুন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮২% এ নেমে গেছে। শিগগিরী একে এম্বুলেন্সে তুলুন।'
কিন্তু এম্বুলেন্সে তোলার জন্য কেউই এগিয়ে এলো না। বস্তুত ওই তিন যুবককে আর খুঁজেই পাওয়া গেল না।
বাংলা হরফ ও একটি প্রত্যাশিত মৃত্যু : সুস্নাত চৌধুরী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২১ অক্টোবর ২০২০ | ৩৮৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
গত শতকের শেষ আর চলতি শতকের শুরুর দিকে কলকাতা ও আশপাশের মফস্সলে রাতারাতি প্রায় স্ক্র্যাপের দরে বিক্রি হয়ে যেতে থাকল লেটারপ্রেসগুলি, তার জায়গায় ভুঁইফোঁড়ের মতো গজিয়ে উঠল ডিটিপি ইউনিট। আপাতভাবে মনে হবে, তাতে তো ভালোই হল। ঠিক, কিছু ভালো হলও। মুদ্রণের শ্রম কমল, সময় কমল, হয়তো খরচও খানিক কমল। প্রযুক্তির যে ব্যবহারিক সুফলগুলি অবশ্যকাম্য। কিন্তু এই যে মুদ্রণ ব্যাপারটিকে ‘আপাতভাবে’ বেশ সহজ মনে হতে লাগল, মনে হতে লাগল চাইলেই ছাপাছাপির ছোটোখাটো ব্যাবসা শুরু করে ফেলা যায়, এমনকী পাঞ্জাবি পরে সম্পাদক বা প্রকাশকও হয়ে ওঠা যায় বেমালুম, তাতে ঠিক কী কী ক্ষতি হল বাংলা বাজারে, তা আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো একটু অশ্লীলই হবে। সে-প্রসঙ্গ থাক বরং। তবে, গ্রুমড হওয়ার, শিক্ষানবিশি করার, হাতে-কলমে কাজ শেখার প্রসঙ্গ যে একপ্রকার উঠেই গেল, তা অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যায়।
রসনামঙ্গল – ৪ : ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ২২ অক্টোবর ২০২০ | ২১০৮ বার পঠিত
বাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের যুগ থেকে কোম্পানি-রাজের পত্তন পর্যন্ত রচিত নানা বাংলা গাথা চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয়র রঙিন বিবরণে ভরপুর। উঠে আসে বাঙালির রসনা-সংস্কৃতির বিবর্তনের ছবি। এ কিস্তি জুড়ে রইল ‘মিট’-এর ছড়াছড়ি, এমনই ছড়াছড়ি যে আজকের যুগে রীতিমতো চোখ ছানাবড়া হয়। ছাগল তো বটেই, সঙ্গে শুয়োর, হরিণ, হাঁস, বেজি, শজারু আবার শামুক, কচ্ছপ আর তার ডিমও! লিখছেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।
দখিন হাওয়ার দেশ - ৬ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ২৯৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
রবীন্দ্রনাথ আমাদের বিশ্বকবি শুধু নন, এই মহামনীষীর লেখার সূত্রে আমরা অনেকেই জগৎ চিনেছি। অথচ কী আশ্চর্য, রবীন্দ্রনাথ পড়লে আপনার কখনও মনেই হবে না নিউজিল্যান্ড বলে কোনো কহতব্য দেশ আছে, বা সেদেশে ইংরেজ বাদে আর কেউ থাকে, বা আর কোনো পুরোনো সভ্যতা ছিল যার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলি ঘাঁটলে নিউজিল্যান্ডের মাত্র একটি উল্লেখ পাবেন ইংরেজের কলোনি প্রতিষ্ঠার সূত্রে একটি প্রবন্ধে। অথচ দেখুন, রবীন্দ্রনাথের সময়, তাঁর বাল্যকালে বহু ভারতীয় তথা বাঙালি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে পাড়ি জমিয়েছেন, নানা অবস্থায়। রবীন্দ্রনাথ কি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের কথা জানতেন না? রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক ক্যাথারিন ম্যানসফিল্ড (তখন ইংল্যান্ডে থাকতেন), নিউজিল্যান্ডে-জাত লেখিকা, রবীন্দ্রনাথ কি তাঁর কথা জানতেন না? নাকি মনে করার মতন কেউ নন বলে মনে করেননি?
বৃত্তরৈখিক (১০) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ২৭৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
স্কুলে যেতে শুরু করলো সতীনাথ, মহা উৎসাহে। বাবার টোলের মতো আসন পেতে বসতে হয় না সেখানে, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চি-ডেস্কের ব্যবস্থা। স্যররা চকখড়ি দিয়ে দেয়ালে টাঙানো ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে লিখে পড়ান, সমস্ত ক্লাসের ছেলে একসাথে দেখতে পায় সে লেখা। টিফিনের ছুটিতে দৌড়োদৌড়ি-খেলাধুলো হয়, খুবই মজা। অনেক কিছু নতুন নতুন শিখেছে সে, কিন্তু বাড়িতে শেখাবার কাউকে পাওয়া যায় না। বড়দিকে পড়তে বললেই রান্নাঘরে মায়ের কাছে পালিয়ে যায়, ছোড়দির সাথে খুব ভাব তার, ভাইকে খুশি করার জন্যে খাতা পেনসিল নিয়ে পড়তে বসেও সে, কিন্তু কী বোকা ! এতদিনেও ঠিক ঠিক মতো এ-বি-সি-ডি শিখতেও পারলো না। দশ বার দিন পর পর ফুলকাকা আসে খড়গপুর থেকে, তাকেই সতীনাথ পড়ায়, সে শিখেও যায় চটপট।
ভিস্যুয়াল কোটেশন এবং সত্যজিতের ছবি : দেবরাজ গোস্বামী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৩৬৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
শিল্পকলার অন্য ক্ষেত্রে, মানে ছবি আঁকা, মূর্তি গড়া বা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যদি কেউ এই ধরনের রেফারেন্স বা কোটেশন ব্যবহার করেন তাহলে কি সেটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে গন্য হবে ? আমার উত্তর হচ্ছে ‘না’। যদি কোন শিল্পী তাঁর পূর্বজ আরেকজন শিল্পীর কোন আইকনিক কাজকে অন্য ভাবে অন্য কনটেক্সটে বা অন্য মাধ্যমে ব্যবহার করে আলাদা কোন বার্তা দিতে চান, তাহলে সেটাও শিল্পের একটা ভ্যালিড পদ্ধতি বলেই ধরে নিতে হবে । এই পদ্ধতিতে সাধারণত শিল্পী তাঁর রেফারেন্স সোর্সকে গোপন রাখতে চান না বরং সেটাকেই তাঁর নিজস্ব সৃষ্টির একটা এন্ট্রি পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করবার চেষ্টা করেন । এ বিষয়ে সেরা উদাহরণ হচ্ছে পিকাসোর পঞ্চাশের দশকের বেশ কিছু ছবি, যেখানে তিনি ভেলাস্কেথ, গোইয়া, এদুয়ার মানে প্রমুখ শিল্পীর আঁকা কিছু বিখ্যাত মাস্টারপিস ছবির পুনর্নির্মাণ করেছিলেন ।
সুকিয়ানা - বাড়ির পুজো – পুজোর বাড়ি - ৪ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৪৫৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আরও অনেক কিছুর সাথে দুর্গা পুজো মনে করিয়ে দেয় আমার রিসার্চ বিষয়ক প্রথম ব্যর্থতার কথা। বাড়িতে বাজি বানাতে গিয়ে—না, বাজি বানাতে ব্যর্থ হইনি, ব্যর্থ হয়েছিলাম হাতে বানানো রংমশাল আর তুবড়ির ধোঁয়া কমাতে। বানাতাম সেসব মাল জবরদস্ত, কিন্তু বড়ো বেশি ধোঁয়া হত। সে অনেক দিন আগেকার কথা।
একসময় আমাদের দাদারা লায়েক বয়েসে পৌঁছে ঠিক করল বাড়িতেই বোম-বাজি ইত্যাদি বানাতে হবে। আমরা তখন খুবই ছোটো। কানেকশন এল নেপালদার বন্ধু অদয়দার চেনা সূত্র ধরে—সেই মাস্টার-এর সাথে। মাস্টার নাকি কংগ্রেস জামানায় পেটো বানাত দুরদার—সিপিএম আমলেও বানাত, তবে খুব খাতির থাকলে তবেই। আমাদের পুরানো বাড়ির ছাদেই সেই বোম-বাজি বানানোর শুরু। তুবড়ির খোল কেনা আসত কুমোর বাড়ির থেকে—বাকি বোম বানানোর মালমশলা মেমারি বাজারের এদিক ওদিক হতে। সোরা, গন্ধক, অ্যালুমিনিয়াম/লোহাচুর, স্পাইরো পাউডার ইত্যাদি। তখন অত রেগুলেশন ছিল না সোরা (পটাশিয়াম নাইট্রেট) বিক্রি নিয়ে। পরে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়, লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করা যাবে না এবং বিক্রি করলেও কতটা পরিমাণে ইত্যাদি। তবে সত্যি কথা বলতে কী সবই চেনাশোনা সার্কেলের জন্য জিনিস মার্কেটে থাকলে এবং বেআইনি না হলে মালমশালা পেতে কোনোদিন আসুবিধা হয়নি। তবে জমাটি কেস ছিল কাঠকয়লার বেলায়। সঠিক কাঠকয়লা বাজি বানানোর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানবেন। আর কোন্ পাগলা নাকি বলেছিল সবচেয়ে ভালো কাঠকয়লা হয় আকন্দ গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে!
একজন : অলোক গোস্বামী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৬ অক্টোবর ২০২০ | ৩৬০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
যদিও সব কাঠই চালান যায় এক শহর থেকে অন্য শহরে, যদিও সব করাতই সরবরাহ করে শহর, যদিও শহুরে মুনাফা কোনোদিনই সংগত করে না এখানকার সস্তা শ্রমের, তা বলে কোনো শহরকে তো কাঠচোর শহর বলা যায় না! কেন-না শহর মানেই সভ্যতা। সভ্যতা মানেই বিপ্লব। বিপ্লব মানেই অগ্রগতি। অগ্রগতি মানেই মানুষের ক্রমমুক্তি। তাকে তো আর যা-ই হোক কাঠচোর উপাধি দেয়া যায় না। দিলে নিজের মুখেই থুতু পড়ে, উত্তর পুরুষের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে, পূর্ব পুরুষের কথাসাগর নিমিষে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে, শিক্ষা, সংস্কার, মূল্যবোধ, সংস্কার, স্বাস্থ্যসূচি, গণতান্ত্রিক বাতাবরণ, মেহনতি ঐক্য, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, সূর্য অভিযান, ইত্যাদি প্রভৃতি যাবতীয় শব্দ হয়ে পড়ে মূল্যহীন।
আইনের শাসন: উত্তর-পূর্বাঞ্চল : পার্থপ্রতিম মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৮ অক্টোবর ২০২০ | ২২০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরকারি কর্মীর হাতে, পুলিশের হাতে, সেনাবাহিনীর হাতে, বিচারকদের হাতে, সাংবাদিকদের বা প্রচার মাধ্যমের হাতে, ব্যবসায়ীদের হাতে, এমনকি জঙ্গিদের হাতেও থাকে স্বেচ্ছাচারিতার অগাধ ক্ষমতার উপস্থিতি। তারাই ক্ষমতা বৃত্তের ভরকেন্দ্র। সাধারণ মানুষ এখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।
উত্তমকুমার, চন্দ্রমুখী এবং ... : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৭ অক্টোবর ২০২০ | ৩৯০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
সেদিন থেকেই শুরু। রাতের বেলায় উপর নীচ করতে থাকা ঘামাচি ভরা পিঠে হাত রেখে মালতী ভাবে উত্তমকুমারের পিঠে হাত রেখেছে। স্তনের মোচড়েও ব্যথা লাগে না আর। বরং শরীর গলে গলে পড়ে। সব থেমে গেলে তেলচিটে বালিশে মাথা রেখে বচ্চন মুখ হাঁ করে ঘুমায়। মুখের গড়ানো লালে বালিশ ভেজে। পাশে শুয়ে মালতীর কিছুই চোখে পড়ে না। ঠোঁটের উপর ঘামের বিন্দু জমে। আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো হাতে মুছে দেয়। উত্তমকুমারের নরম ছোঁয়ার মত । ঘরে অলীক সুবাস ঘোরে। ইচ্ছে করেই বুকে কাপড় টানে না। একটুকরো চাঁদের আলো এসে পড়ে গলায়, পেটে, স্তনবৃন্তে। যেন ওই পুরু ঠোঁট ঘুরে বেড়ায় তার শরীরে। কল্পসুখে সে শিউরে শিউরে উঠে। তারপর কখন ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়। স্বপ্নে সুচিত্রাকে সরিয়ে দেয় মালতী, ঢুকে পড়ে উত্তমকুমারের বাহুর মধ্যে।
উত্তমকুমারই অবশ্য থেকে যান। মাত্র দেড় বছরের মাথায় লাথি মেরে মেরে বচ্চন একদিন ঘর থেকে বার করে দেয়। ততদিনে ভাইরা ডাগর হয়েছে। নিজের নিজের কাজ-কর্ম শুরু করেছে। তারা দিদির পাশে দাঁড়ায়। বলে, “বাড়িতে এসে কদিন বসে থাক। দেখবি, সুড়সুড় করে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে আবার এসে তোকে নিয়ে যাবে।” প্রথম প্রথম মালতীও তাই ভাবে। কিন্তু দেখে বচ্চন ফেরত নিতে এলে, বাড়ির সকলের বিগলিত মুখ। আর শোনে, “মায়ের শরীর খারাপ, রান্নাবান্না নিয়ে বহুত ক্যাচাল। রোজ রোজ ভাল লাগে না। নাহলে কোন শ্লা ...।” আবার বচ্চনের হাত ধরে নদী পেরোয়, শ্বশুরবাড়ি যায়। শরীরের ঘা এতদিনে শুকিয়েছে। আরেকবার উত্তমকুমারকে আঁকড়ে ধরে হাত ।
তপন সিংহ – যে জন আছেন মাঝখানে ...! : শুভময় সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ৩০ অক্টোবর ২০২০ | ৩২১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকের উত্তরসূরী হিসেবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন বা আরও পরে ঋতুপর্ণরা যখন আলোচনায় চলে আসেন, তখনও কিন্তু কিছুটা ব্রাত্যই রয়ে যান তপন সিংহের মতো কিছু পরিচালক! হ্যাঁ, তপন সিংহ হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি এপার আর ওপারের মাঝের সেই সবুজ, স্নিগ্ধ এক ভূখন্ড যেখানে রয়ে যায় অদ্ভুত এক ভালোলাগা এবং সে ভালো লাগা কেবলই এন্টারটেনমেন্টজনিত ভালো লাগা নয়, সে ভালো লাগায় রয়ে যায় চিন্তার কিছু স্পেস, শিল্পের কিছু অনিবার্য শর্তপূরণ! সম্ভবত 'দ্য হিন্দু' পত্রিকা তাঁর 'দাদাসাহেব ফালকে' পাবার পর তপন সিংহের সিনেমা নিয়ে লিখেছিল – 'Complex ideas through a simple narrative.....!' হ্যাঁ, সত্যি তিনি পারতেন। তাঁর ছবির সুদীর্ঘ তালিকা থেকে মাত্র একটি ছবিকে আলোচনায় আনতে চাই, উদাহরণ হিসেবেই, 'গল্প হলেও সত্যি'! কোনো এক আলাপচারিতায় তপন সিংহ একবার বলেছিলেন – 'আমার হতাশ লাগে এই ভেবে যে দর্শক ছবিটাকে শুধুই হাসির ছবি হিসেবে নিল'! একজন পরিচালক হিসেবে তো হতাশ হবারই কথা এবং ন্যায্য কারণেই। যারা সিনেমাটি দেখেছেন, আরেকবার ভাবুন তো, 'গল্প হলেও সত্যি' কি নেহাতই হাসির ছবি? নির্ভেজাল হাসি আর এন্টারটেইনমেন্ট? রবি ঘোষের অসামান্য অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে বাঙালি দর্শকের কি একবারও মনে হয়নি, আপাত হাসির আড়ালে সিনেমাটির এক অন্তহীন স্পেস তৈরির কথা? প্রথম যখন 'গল্প হলেও সত্যি' দেখি, বয়েস নেহাতই কম। সেসময় নির্ভেজাল হাসি নিয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন সিনেমাটা বেশ কয়েকবার দেখি, অনুভব করেছি একজন কুশলী পরিচালক কীভাবে তৈরি করেন ভাবনার স্পেস!ইংল্যান্ডের পাইনউড স্টুডিও থেকে সরাসরি কলকাতা, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে পরিচালনায়, বাংলা সিনেমার দর্শক পেল এক পরিচালককে যিনি হেঁটে গেলেন মাঝের এক পথ বেয়ে। পাশাপাশি দু'টো পথেরই হাতছানি ছিল। বিস্তর আন্তর্জাতিক ছবি দেখার সুবাদে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ঘরানাগুলোর সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় পরিচয়, অন্যদিকে তথাকথিত আপাত জনপ্রিয়তার হাতছানিও ছিল। দুটো রাস্তাকেই সহজে এড়িয়ে মাঝামাঝির যে পথ তিনি বেছে নিলেন তাতে ঝুঁকি নেহাতই কিছু কম ছিলনা। 'গল্প হলেও সত্যি' দেখতে দেখতে তপন সিংহ সম্পর্কে সেই মন্তব্য বোধহয় ভীষণভাবে অনুভব করি – " A magical union of liberate art and critical populism made Tapan Sinha middle-of-the road – Bengali Cinema. যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্টোরিলাইন সেই ধনঞ্জয়ের আবির্ভাব থেকে সিনেমার শেষদৃশ্যে অদ্ভুত এক ধোঁয়াশার মধ্যে তার মিলিয়ে যাওয়া, পুরোটাই এক রহস্যময়তায় ঘেরা! কোথা থেকে এল ধনঞ্জয়, নানান প্রশ্নে তার হেঁয়ালি মাখানো উত্তর, একসময় চলেই বা গেল কোথায়, কোনো উত্তরই যনো প্রাত্যহিক বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনা, কিন্তু ভীষণভাবেই প্রাত্যহিকতায় গড়ে ওঠে এ কাহিনীর নির্মাণ, চরিত্র, আঙ্গিক!
হে অতীত, কথা কও : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ৩০ অক্টোবর ২০২০ | ৩৭৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
“আপনার ভূতের ভয় নেই?” প্রশ্ন করল মায়া।
“না, আমার কোনদিন-ই ভূত প্রেতের ভয় নেই। আমি বরং খুশি হতাম ওর ভূত যদি এসে বলে যেত ও আত্মহত্যাটা করল কেন।” হালকা সুরে বলল অনন্ত।
কাণ্ডটা দেখো, ভাবল সত্যার্থী, গল্প শুরু হতেই সেই ত্রিদিব সামন্তর কথা এসে পড়ল। না কি মায়াই সূক্ষ্ম কৌশলে গল্পকে সেই পথে ঠেলে দিচ্ছে!
"সেই, ওনার ভূতই সম্ভবতঃ বলতে পারবে কেন করেছিলেন ঐ কাণ্ড,” বলল অপালা, “সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যার অতীত।"
"হ্যাঁ, ওটা আর কোনদিন জানা যাবে না। বহুবার আলোচনা করেও এ ঘটনাটার কোন ব্যাখ্যাই আমরা কখনো খুঁজে পাই নি। একেবারে ব্যাখ্যার অতীত যাকে বলে।" - হাত পা নেড়ে প্রবল ভাবে নিজের মত জানালেন সমর।
"তাই ভাবছেন?" উস্কে দিল মায়া।
"ভাবাভাবির কিছু নেই আর।” বলল সমর, “পুরো ঘটনাটাই অভাবনীয়। হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল একটি লোক, সাফল্যের চূড়ান্তে রয়েছে, পুরনো বন্ধুরা মিলে দিব্যি গল্প-গুজব করছি সবাই, হ্যাঁ অন্তত পাঁচ-ছজন ছিলাম আমরা সেই রাতে। ভবিষ্যতে কী কী করতে চলেছে তাই নিয়ে তার কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা। সেই লোক ডিনার টেবিল থেকে উঠে তিনতলায় নিজের ঘরে চলে গেল। কিসের জন্য? খোলা বারান্দা টপকে নীচে লাফিয়ে পড়ে ঘাড় মটকে মরে যাওয়ার জন্য! কেন? কিসের জন্য? কোনদিন আর সেটা জানা যাবে না। কোনদিন না।"
"কোনদিন জানা যাবে না কথাটা কি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায় না, সমরবাবু?" হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করল মায়া।
সমর অবাক হয়ে তাকাল ওর মুখের দিকে।
"বুঝলাম না। কী বলতে চাইছেন আপনি?"
"একটি সমস্যা এক সময় সমাধান করা যায়নি মানে কি কোনদিনই আর সমধান করা যাবে না?"
"হাঃ! দেখুন মিস মূর্তি, যে সমাধান সেইদিন বের করা যায়নি, আজকে, দশ বছর বাদে সেই সমাধান আপনি খুঁজে বার করবেন?"
মায়ার মুখের মৃদু হাসি একটু ছড়িয়ে, কৌতূকী বাঁক নিয়ে আবার আগের অবস্থানে ফিরে এলো।
“ইতিহাস কিন্তু তাই বলে সমরবাবু। আমাদের দেখাগুলো একান্তই আপেক্ষিক। ঘটনাকে ঠিকভাবে বুঝতে হলে তাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার দরকার পরে। তিনটে মাত্রায় ঘটনাকে পুরো দেখা যায় না। চতুর্থ মাত্রাটিকে জুড়তে লাগে – সময়। চার মাত্রার ক্যানভাসে সমস্ত উপাদানগুলো ঠিকঠাক মতন বসে পুরো ছবিটা ফুটিয়ে তোলে।”
অলক সেন এই সময় সামনের দিকে ঝুঁকে এল, যেন বিলাপ করে গলা ভেঙ্গে গেছে এমন হাহাকারের স্বরে বলে উঠল -
এই স্বপ্ন, এই গন্তব্য! : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ৩৭৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
“পরব হল, এই ধর আমোদ, নাচ গান। সোহরাইতে ঠাওর করিসনি, কেমন নাচ করে বিটিছেলারা?” ধাতুরির ফ্যাসা কণ্ঠে চঞ্চল জীবের কামজ্বর চিতাধূমচালিত চৈত্রের বিশুদ্ধ পাতার ন্যায় অন্তর্হিত হইবার পূর্বে যেরূপ অবশেষ রাখিয়া যায়, ধাতুরি সেমতো চক্ষু উন্মীলন করিয়া বুধনিকে অবলোকন করিল, সে দংশনে শীতপত্রের বিশুষ্কতা, ফলত নিষ্ফল—“এই, এই যে সারদাপ্রসাদ আর বুধনি, উয়াদের বাপলা হবেক সব্ব অগ্রে। উয়ারা বর বউ হবেক, গাঁও জুড়ে বসবেক ভোজ, উয়ার অন্তে আসবেক বারুনি পরব। কিত্তে মজা! মজাই মজা!” হাহাকার করিয়া বুড়া বাতাস ধাতুরির জিহ্বা চুম্বন করিল।
ঢুঢু : মলয় রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০১ নভেম্বর ২০২০ | ২১৩৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
ফড়িংচাঁদরা যেদেশে থাকতেন, বেস্পতি নামটা সেখানকার । এর সঙ্গে নির্দেশ করা হতো বিভিন্ন যুগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রচনায় খেলানো পৌরাণিক চরিত্রকে। সে দেশের সনাতন সাহিত্যমতে বেস্পতি তাদের বৈদিক যুগের একজন ঋষি, যিনি দেবতাদের পরামর্শ দিতেন। মধ্যযুগের বইতে এই বেস্পতি গ্রহকেও ইঙ্গিত করত। বৈদিক বইতে উনি হলেন বাগ্মিতার দেবতা, আর কখনও কখনও তাঁকে অগ্নিদেবতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতো প্রাণবায়ুরা।ঋগবেদে লিখেছিল, কে যে লিখেছিল কে জানে, পৃথিবীর প্রথম উজ্জ্বল আর পবিত্র মহাআলোক থেকে বেস্পতির জন্ম যিনি সব অন্ধকার দূর করে দ্যান । কোথাও কোথাও তার মূর্তি দেখেছে ফড়িংচাঁদ, হাতে দন্ড ও পদ্ম আর জপমালা, আরেকটা পুরাণে প্রাণবায়ুরা লিখেছিল বেস্পতি তারাকে বিয়ে করেছিলেন আর সেই তারাকে নাকি চাঁদ কিডন্যাপ করে একটা ছেলে পয়দা করে তার নাম বুধ। ব্রহ্মা চাঁদের উপর চাপ দিয়ে তারাকে তাঁর স্বামী বেস্পতির কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন। ফড়িংচাঁদরা কুলকিনারা পান না যে এতো পাওয়ারফুল হয়েও বেস্পতি কেন বদলা নেয়নি ।
কলকাতা ও তাহাদের কথা : সৈকত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ৩৪৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
কারোর মনে হতে পারে কলকাতা শহরটি - উত্তর দক্ষিণে লম্বাটে, পূর্ব-পশ্চিমে কম চওড়া শহরটি তার জালিকাটা রাস্তা ও জায়গাগুলি সমেত - যেন একটি বৃহদাকার জাল যে জালের মধ্যে কোন মানুষ পড়ে যেতে পারে, পড়ে গিয়ে কলকাতা শহরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে! এরকম হয়ত পুরোটা নয় যে এই জালের কেন্দ্রে মিনোটরের মতো কেউ আছে যার কাজই হল এক এক করে কলকাতার মানুষদের শুধুই গ্রাস করে যাওয়া আর সেই কাজ থামানোর জন্য থিসিউসের ম্তো কারোর দরকার, শহরটা হয়ত অতখানি কুটিল বা বিভ্রান্তিকর নয়, বিভিন্ন মানুষ তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে কলকাতায় এসেছে, অনেকেই জন্মাবধিই এই শহরে থেকেছে যে শহর তাদের আশ্রয় দিয়েছে, ফলে সব চরিত্রই এই শহরের মধ্যে হারিয়ে যায়নি, কেউ নিশ্চয়ই সেখানে নিজেকে খুঁজেও পেয়েছে। কিন্তু এমনও বোধ হয়, এই শহরের এক কালো আত্মা আছে যাকে পুরোপুরি বুঝে ওঠা যায়নি, যে নিজেকেও ক্রমাগত বদল করেছে, যে এক কুহক তৈরী করে যার নিয়ন্ত্রণে চরিত্ররা থাকতে বাধ্য হয়; মূলতঃ এই শহর হয়ত ক্রীতদাস -ক্রীতদাসীদের শহর হয়েই রয়ে গেছে, সেই সময় থেকেই যেদিন থেকে গ্রামগুলো শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে, ফলে কিছু মানুষ ও মানুষী এই শহরের কালো আত্মার গ্রাস থেকে চেষ্টা করেও মুক্ত হতে পারেনি।
অন্য রূপকথা : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৫ নভেম্বর ২০২০ | ৩৫৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
"ঘরে চল, এইখানেই দাঁড়ায়ে থাকবি নাকি ছেমড়ি?" হানিফার ডাকে হুঁশ ফেরে সাকিনার। ব্যাগটা তুলে হানিফার পিছন পিছন ভিতরে ঢোকে সে। ঘরের ভিতরটা কিছুটা বদলেছে বটে। উঠোনের ওপারে আগে কাঁটাগাছের বেড়া ছিল, মাঝে মাঝে ফাঁকা। ওখানটায় একটা ঘর উঠেছে। পাকঘরটা ছিল ডান দিকে, বাম দিকে খালপাড়ে খাটা পায়খানা। এখন ওখানে পাকা পায়খানা হয়েছে, রাস্তাটায় একটু সিমেন্ট দেওয়া। রান্না হচ্ছে এদিকের বারান্দার এক কোনে, সেখানে দুটি বউ কাজ করছে। সম্ভবতঃ জলিল আর খলিলের বিবি ওরা। ওদের আসতে দেখে একটু অবাক হয় দুজনেই। তাদের কাছে ডাকে হানিফা, "এই দেখ ছেমড়িরা, আমার একখান মাইয়া আছে কইছিলাম না? এই হইল সাকিনা বানু - আমার সই জারিনার মাইয়া। কিন্তু আসলে আমারই। ছালাম কর"
কুয়াশা ও লালিগুরাস : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৬ নভেম্বর ২০২০ | ২৪৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমার ফুলফুল ছিটওয়ালা জামায় নোংরা লেগেছে। হাত দিয়ে জামার ধুলো পরিষ্কার করছিলাম আমি। নিচু হয়ে জামার ওপর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম যেখানে আমার শরীর ভয়ঙ্করভাবে ক্রমশ পাহাড়চুড়া হয়ে উঠছে, সেখানে কালো রং লেগে রয়েছে। কখন ? কখন এখানে কালো রং লেগেছে, কিছুই টের পাইনি। কাল রাতে এই কালো রং দিয়েই তো ফরেস্ট বাংলোর দেয়ালে বীরু লিখেছে – ওয়েলকাম টু গোর্খাল্যান্ড। আমার হঠাৎ মনে হল এই শরীর, শরীরে ফুটেওঠা লালিগুরাস, ঝাউপাতার মত আমার মাথার চুল, পাহাড়ি ঝোরার মত কখনও শুকনো, কখনও ভরাট আমার হাসিকান্না, শরীরের উপত্যকাজুড়ে চা-বাগান, অর্কিড-ক্যাকটাসের নার্সারি, মকাই-এর খেত – আমিই গোর্খাল্যান্ড।
বৃত্তরৈখিক (১১) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ২৬৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সতীনাথ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, আমি কলেজে ফিলসফি পড়তুম। প্রথম যখন হেগেল-মার্কস পড়েছি, আমরাও মনে মনে মার্কসকে শ্রদ্ধা করেছি; তোর এখন যে বয়েস, এ বয়েসে হয়তো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা বেঁচে গিয়েছিলুম, মার্কসিস্ট হওয়ার কথা ভাবিওনি। কেন জানিস? নৈতিক সংঘাত। আমাদের আজন্ম শিক্ষা নাস্তিক মার্কসের মেটিরিয়ালিজ্ম্ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো আমাদের। তোদের তো আমি সেভাবে মানুষ করতে পারিনি। এই তো, এখনই সন্ধ্যা-আহ্ণিক বন্ধ করে দিয়েছিস, বাইরে কার হাতে কী খেয়ে বেড়াস আমি ভয়ে জিজ্ঞাসাই করি না। আমি এখনো বেঁচে আছি, তা সত্ত্বেও পৈতেটা পর্যন্ত ফেলে দিয়েছিস তুই, যদুগোপাল ন্যায়রত্নের পৌত্র !
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - দ্বিতীয় পর্ব - ভারতবর্ষের সুলতানী যুগ : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ৩৮০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভারতে যখন সুলতানী যুগ, তখনও পৃথিবীর বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ১২৮ অব্দে নির্মিত রোমের প্যান্থেওন। দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ইস্তানবুলের আয়াসোফিয়া (তখন গীর্জা)। আয়াসোফিয়ার গম্বুজ ইঁটের। প্যান্থেওন ইঁটের গম্বুজ ছিল না, কংক্রীটের, তবে একই পদার্থবিদ্যার নিয়মে তৈরী। প্যান্থেওনের সমতুল্য মাপের গম্বুজ ভারতে তৈরী হয় অনেক পরে- সপ্তদশ শতকে- সেটিও একটি সমাধি, যার কথা আমরা পরে বলব। প্যান্থেওনের আরএকটা বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এটিই এই বিশ্বে একমাত্র বাড়ী যা টানা ১৯০০ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে- আগে রোমান মন্দির ছিল, পরবর্তীকালে গীর্জা।
মহাযুদ্ধের পটভূমি : অনিল ঘোষ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৯ নভেম্বর ২০২০ | ৩৮৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
চলার গতি বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে কোমরের দুলুনি। ওই দুলুনি জল বাঁচানোর জন্য। জল, খাবার জল। এই সোঁদরবনের গাঁ গেরামে বড়ো মহার্ঘ এই জল। কেউ একফোঁটা খরচ করে না অকারণে। করতে নেই। কেননা জল এখানে মাথা কুটলেও মিলবে না কোথাও। কেমন মজা বোঝো! মজাটি নিয়ে শরিফা আর ওর মিতেনি জীবন ঢালির বউ নেকি এক সময় খুব হাসাহাসি করত। জলের দেশের মেয়ে ওরা। জলের অভাব ব্যাপারটা মাথায় ঢোকে না কিছুতেই। মুখে বলেও, ধুস তাই আবার হয় নিকি! ভাত নি, কাপড় নি সে তো বুঝি, তা বলে পানি নি!
শরিফার স্বামী ময়জুদ্দি হেসে বলে, হয় হয়। এটাই তো মজা র্যা। সোঁদরবনে পানি আছে, তবে লোনা, খাবার পানি খুব কম।
হ্যাঁ, দেখেছে শরিফা, উলার চকে আট-আটটা টিউকল বসল। পানি উঠল বালি গোলা। খাওয়া দূরে থাক, মুখে দিলে ওয়াক থুঃ। পুকুরের পানি! সে তো তিন-চার মাস। খেলে পেটে ঘা হয়। বলে আর্সেনিক। তবে পানি কোথায়! হুই ডাঁসা নদী পার হও। ভবানীপুরে ডিপ টিউকল করেছে পঞ্চায়েত। সেখান থে পানি নে এসো। কিন্তু যাবে কীভাবে? বড়ো বাধা যে নদী। ছোটো-বড়ো নাও যা আছে, সব মাছ মারতে যায় বাদায়, চালানি যায় হাসনাবাদে। দু-একখানা নাও যা আছে, সেখানে ফ্যালো কড়ি মাখো তেল। কলসি-বালতি পিছু এক টাকা, নগদা-নগদি। টাকা দাও আর পানি নাও। কার আছে পয়সা! উলার চকের মানুষের চাষবাসের উপর জীবন। ছ-মাস কাজ, বাকি সময় জোন খাটো, নাও চালাও নয়তো বিশপুরের হাটে মাল বও। না হলে উঞ্ছবৃত্তি করে চালাও। তাই পানি নিয়ে চলে টানাপোড়েন। কখনও মারপিট, মেয়ে হলে ইজ্জতের উপর হামলা। অনন্ত ঢালির বউ আয়না এক কাণ্ড ঘটিয়েছে। সে শরীরের রং ঢং দেখিয়ে মাঝিদের বশ করে পানি আনত। কিন্তু রসিক মাঝি সেয়ানা খুব, সুযোগ বুঝে একদিন হামলে পড়ল ওর উপর। আর আয়নাও তেমনি৷ ইজ্জত বাঁচাতে দিল হালের বাড়ি কষিয়ে। এক ঘায়ে কাত রসিক। আয়না এখন জেলে। ওর রুগ্ন ছেলেটা মা মা বলে উলার চকের আকাশ বাতাস ভারী করে চলেছে।
গ্রামবাংলার গরিব দাওয়ায় পড়ে থাকে মহার্ঘ্য জ্যোৎস্না : মৃণাল শতপথী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৯ নভেম্বর ২০২০ | ৩৯৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
সকালগুলো মনোরম এ সময়। বাতাসের গায়ে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে শুরু করে। উৎসবের ফুল শিশিরভেজা ঘাসে ছড়িয়ে দেয় গাছ, একটা মনকেমনের সুগন্ধ শরীরময় আনচান করে। এসময় সূর্য ওঠার আগে বিছানা ছাড়তেও আলস্যি নেই। গ্রামের বাড়িতে থাকলে পুকুরঘাটের ভাঙা পাথরের ধাপে বসে জলে ভাসা কুয়াশা দেখতাম। সেই কুয়াশা কেমন মৃদু বাতাসে ধোঁয়া কেটে কেটে উড়ে গিয়ে স্থির হত ওপারে শুরু হওয়া হৈমন্তী ধান-জমির এক মাথায়। রাতের জল লেগে আছে ধানের শিষের আনত শিরে, যেন ঘুমভার জড়িয়ে আছে সারা খেতে । কবে পড়া ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’-র লাইনগুলি মনে পড়ে, ‘কোলে ধান, কাঁখে ধান নিয়ে একেকটি গাছ নিঃসাড়ে ঘুমায়। কুয়াশা চুঁইয়ে শিশিরের একেকটি বিন্দু শীষের ওপর স্বপ্নের তরল ফোঁটার মতো পড়লে ধানগাছের ঘুম আরও গাঢ় হয়।’
সদ্য কচি ধানে দুধ আসার সময় ধানের ভারী ঘুম হয়। তার আগে দীর্ঘ শ্রমের ইতিবৃত্ত। মাটি তৈরি হবে বলে কৃষক তার ভাঙা গাল নিয়ে নীচে নয় আকাশের দিকে তাকায়। শুরুতে কয়েক পশলা বৃষ্টি পেলে মাটির কঠোর বুক ভেজে, নরম হয়। লাঙল দিতে সহজ তখন। এক ফসল তুলে নিয়ে আর-এক বোনার আগে জমিতে থেকে যায় কেটে নেওয়া ফসলের অবশেষ। খড়ের নড়ার গোড়ায় জল পেলে সে মাটি চষতে কষ্ট নেই। তবু এক-এক শীতের সন্ধ্যায় জমির পর জমিতে ধু ধু আগুন জ্বলে, নড়ায় ধরানো আগুন। চাষির অন্ধবিশ্বাসে নড়ার ছাই জমিতে মিশে উর্বর হয়! সন্ধে-নামা বাতাসে তার ধোঁয়া কুয়াশার মতোই স্থির হয়ে থাকে বহুক্ষণ।
টিয়া : জিৎ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৯ নভেম্বর ২০২০ | ২০৪৫ বার পঠিত
সন্ধ্যে হয়ে গেছে, কিন্তু পটলকে খুঁজে কোথাও পাচ্ছি না। এই ঘর, ওই ঘর, দোতলা, বাইরে—সব জায়গায় খুঁজলাম। “পটল! পটল!” কোনো সাড়া নেই।
মনটা একটু খারাপ লাগতে শুরু করল। রাত বেড়েছে। কিন্তু পটলের কোনো খোঁজ নেই। সামনে একটা গাড়ি আসছে। নিশ্চয়ই আমার মাতাল বাপ। দরজা খুলে ঢুকল মাতাল বাপ, সঙ্গে আবার আর-একজন। জানি না আবার একে মা বলতে হবে কি না। লোকেরা মা-বাবার জন্য ছটফট করে আর আমি? আমার মা-বাবার অভাব নেই। নিজেকে কেমন যেন বিশ্বসন্তান বলে মনে হয়।
জানলা দিয়ে দেখি টিয়া কী করছে। দেখি একটা সাদা কাপড়ে জড়িয়ে আছে। ওর ঘরে একটা গোল চাঁদের মতো লাইট আছে। টিমটিম করে জ্বলে রাতের বেলায়, কেমন যেন মুক্ত আকাশের খোঁজ দেয়। কোন্ এক সপ্নের দেশে নিয়ে যায়, যেখানে আমার টিয়া হয়তো তার সবুজ ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়।
জোছনার পিদিম জ্বলা দিগন্তে : লুবনা চর্যা
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ২৩৩৮ বার পঠিত
জোছনার পিদিম জ্বলা দিগন্তে নির্জন পৃথিবী। তবু এই নির্জনতায় কেউ যেন কাউকে খোঁজে, বাতাসের কোট পরা অদৃশ্যমানতাকে জনে জনে জিজ্ঞেস করে। সবুজ লাউয়ের লতায় পেঁচানো কুঁড়েঘর হয়ে যায় নির্বাসিত এক গভীর দ্বীপ। আগত শীতের হিম আঙ্গুল ঘাড়ের দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। যেন ভয় নেই কোন, নেই আহত হওয়ার সতর্কতা, কোথাও কোন তিক্ততার আঁচড় ছাল ছিঁড়ে চিহ্ন রেখে যায় নাই- শুধু ভালবাসা আছে ঘাসে ঘাসে শিশির হয়ে, চাঁদের অপূর্ব দৃষ্টি হয়ে। এই বোধ নিয়ে জোনাকি উড়ে যায়, লক্ষ লক্ষ বরই ফুল হাসে পাতার ফাঁকে ফাঁকে, দূরে কোন অচেনা পাখি ডেকে ওঠে অচেনা মানুষের গাঁয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দার ভিতরে বাঁশি বাজিয়ে বসন্ত নড়েচড়ে ওঠে।
দারিয়াবান্দা চিক খেলার দিনগুলো : মুহম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১২ নভেম্বর ২০২০ | ৩২৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
দারিয়াবান্দা, কুতকুত (এইটা সম্ভবত আন্তর্জাতিক খেলা, অনেক বিদেশি সিনেমায় দেখছি তারাও কুতকুত খেলে! নিয়ম কানুনে হয়ত পার্থক্য আছে কিন্তু খেলে।) ফুলটোকা বা গোলাপ টগর, রুমাল চোর, কানামাছি, মোরগ লড়াই, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বাইস্কোপ , আজকে আর কেউ খেলে না। এর মধ্যে দারিয়াবান্দা খুব জনপ্রিয় একটা খেলা। ব্যাডমিন্টন কোর্টের মত করে কোর্ট কাটা হত। একদল দাগে দাঁড়িয়ে থাকত অন্য দল ঘর গুলাতে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে হবে। দাগে যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা দাগে পা রেখে ঘরের ভিতরে যারা আছে তাদের ছোঁয়ার চেষ্টা করবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময়ও যদি ছোঁয়া যায় তাহলেও চলবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘর এভাবে পুরোটা যেতে হবে আবার আসতে হবে। সবাই মরে গেলে অন্য দলের সুযোগ। এই খেলার একটা আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। দারিয়াবান্দা খেলা একটু নরম প্রকৃতির, মেয়েরাও অংশ নিতে পারত। এটার একটা পুরুষালি ধরণ ছিল। এতে হাত পা যেমন খুশি তেমন ছুঁড়ে বিপক্ষকে ঘায়েল করা যেত। কেউ হয়ত লাফ দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করল, অন্য জন হয়ত সোজা লাথি মেরে ফেলে দিল! বেশ ভয়ংকর একটা ব্যাপার ছিল। এর নাম ছিল চিক। আমরা দারিয়াবান্দা খেললে কেউ কেউ মেয়েদের খেলা খেলছি বলে খেপানোর চেষ্টা করত। কিন্তু চিক খেলছি দেখলে! হুম, এবার হচ্ছে খেলা! কতদিন যে চিক খেলে হাত পায়ে ব্যথা পেয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। সেই ব্যথাও এখন সুখের মনে হয়। কী অদ্ভুত সময় পার করে এসেছি। এখন ভাবলে পরাবাস্তব কিছু বলে মনে হয়।
গাঁওবুড়ো : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ১৬২১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
কুসুমপুরের ঝোপঝাড় জলশূন্য ডোবা, পুকুর পেরিয়ে দমকা একটা মাঠের মধ্যে এসে পড়ে। এই মাঠ, কুসুমপুরের বিশাল ডাহি, সামান্য চড়াই উৎরাই, পাথুরে গেরুয়া ভূমি, মাথার উপর বিস্তীর্ণ আকাশ, দিগন্তে বিলীন এই বিশাল পৃথিবীতে আলো গাঢ় হয়ে আসছে। গাঢ় আলোর ভিতর কৃষ্ণবর্ণের মানুষ একা হাঁটছে; এখন এই রকম দৃশ্য। যেতে হবে বহুদূর। মাঠ পার হয়ে গাঁ পেরিয়ে জঙ্গল, সেই জঙ্গল পেরিয়ে আবার মাঠ জঙ্গল গ্রাম ডাহি এই রকমই তো পথ। কত বছর আগে এই গাঁয়ে এসেছিল বুড়ো তা আর স্মরণে থাকে না। সেই যে বার যুদ্ধের উড়োকল ভেঙে পড়েছিল নিশ্চিন্তার ওপারে তারও অনেক আগে। যুদ্ধের উড়াকল। হ্যাঁ। ঘড়ঘড় শব্দে সে আকাশে চোখ মেলে। মাথায় পাখা ঘুরিয়ে হেলিকপ্টার যাচ্ছে কলাইকুন্ডার দিকে।
তুজ়ুক-ই-বাকরখানি : নীলাঞ্জন হাজরা
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৮ নভেম্বর ২০২০ | ৩৬৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শাহজাহানের জমানাতেই আমি অন্তত প্রথম বাকরখানির মোটামুটি প্রামাণ্য রেসিপি পাচ্ছি। নুসখা-ই-শাহজাহানি-র ১২৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৮৪৬ সাধারণাব্দের একটি অনুলিপি বা কপি থেকে। মনে রাখা দরকার, এটি মধ্যযুগীয় বা প্রাচীন পুথির ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। মূল কেতাবটি যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জন্য কপি করা হত, এবং প্রায়শই প্রথম কপিটি হারিয়ে যেত। তাই আজকের দক্ষ সম্পাদককে তার বিভিন্ন কপি অনুসরণ করে একটি গ্রহণযোগ্য রূপ তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু তাতে তো নামের উৎসের ধাঁধার সমাধান হল না। ময়দা, দুধ, ঘি, ডিম দিয়ে তৈয়ার এ রুটির নাম বাকরখানি কেন?শাহজাহানের জমানাতেই আমি অন্তত প্রথম বাকরখানির মোটামুটি প্রামাণ্য রেসিপি পাচ্ছি। নুসখা-ই-শাহজাহানি-র ১২৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৮৪৬ সাধারণাব্দের একটি অনুলিপি বা কপি থেকে। মনে রাখা দরকার, এটি মধ্যযুগীয় বা প্রাচীন পুথির ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। মূল কেতাবটি যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জন্য কপি করা হত, এবং প্রায়শই প্রথম কপিটি হারিয়ে যেত। তাই আজকের দক্ষ সম্পাদককে তার বিভিন্ন কপি অনুসরণ করে একটি গ্রহণযোগ্য রূপ তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু তাতে তো নামের উৎসের ধাঁধার সমাধান হল না। ময়দা, দুধ, ঘি, ডিম দিয়ে তৈয়ার এ রুটির নাম বাকরখানি কেন?
রাঘবসাহিত্য: খোয়াব আর বাস্তবের গল্পভুবন : পারভিন হোসেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ২৫৮৬ বার পঠিত
ছক বহির্ভূত, নামবিহীন, সময়স্তব্ধ শূন্য কোনো পরিসর তৈরি করতে চেয়েছিলেন রাঘব? নাকি, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ-বছর-মাস প্রভৃতি খোপে বদ্ধ কথার ভগ্নাংশ কুড়িয়ে, জুড়ে তাকে অসীম, মুক্ত ক্রমনির্মীয়মাণ পরিসরে স্থাপন করেছেন? কথা যেখানে অমর, সম্পৃক্ত, অবিনির্মিত, অনুক্ষণ!
বিহারের অভিজ্ঞতা, বাংলার চ্যালেঞ্জ -- দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথোপকথন :
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৭ নভেম্বর ২০২০ | ৪৪৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকতম কোনো বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ে উঠবে, সেরকম আশা নেই। কিন্তু মূল বিষয়গুলো, যেমন লকডাউনের অভিজ্ঞতা, অর্থনীতির মন্দা, রোজগারের সমস্যা, কৃষকের সমস্যা এই ব্যাপারটা পশ্চিমবঙ্গেও মোটামুটি একই রকম। একইভাবে কৃষি বিলের প্রভাবও খুব আলাদা কিছু নয়। এইসব গুলোরই একটা সর্বভারতীয় চরিত্র আছে, যেমন সর্বভারতীয় শ্রমিক ধর্মঘটের আছে। এইসবগুলোকে যদি আন্দোলনের রূপ দেওয়া যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গেও একই রকম আলোড়ন তোলা সম্ভব। কেন্দ্রে বা রাজ্যে আলাদা সরকার থাকাটা এক্ষেত্রে সমস্যা নয়। সমস্যা হল, ২১শে রাম এবং ২৬শে বাম, এরকম একটা কথা ফিসফিস করে ছড়ানো হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই কোনো বামের মাথা থেকে বেরোয়নি, বুদ্ধিটা আরএসএস এর। কিন্তু কথাটা ছড়িয়ে গেছে। বা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা বিভাজন তৈরির জন্যই ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে, কৃষকদের নিয়ে, শ্রমিকদের নিয়ে, শিক্ষানীতি নিয়ে আন্দোলন করতে পারলে আশা আছে।
মৃত্যুর জানলা দিয়ে জীবন : চণ্ডিকাপ্রসাদ ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৮ নভেম্বর ২০২০ | ৩৫১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
জীবনের সব লেনদেন মিটিয়ে মৃত্যুর মিছিল অনবরত যেখানে এসে থামে, সেই ‘উদ্ধারণপুরের বাতাসের সঙ্গে শ্মশান-ভস্মের মধুর মিতালি।... এপারে শিউড়ী, সাঁইথে, কাটোয়া কান্দী, ওপারে বেলডাঙা, বহরমপুর, লালগোলা, কৃষ্ণনগর -- সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে উদ্ধারণপুরের চিতাভস্ম। নামে মানুষের মাথায়, নামে ক্ষেত মজুরের বুকে, নামে সকলের তৃষ্ণার জলের আধার দীঘি সরোবরে। মিশে যায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে। সবার কাছে চিতাভস্মের সাদর আহবান পৌঁছে দেয় উদ্ধারণপুরের বাতাস। কেউ টের পায় না কবে কখন উদ্ধারণপুরের অমোঘ আহবান এসে পৌঁছে গেল হৃৎপিণ্ডের মধ্যে। সেই নির্মম পরোয়ান অগ্রাহ্য করার শক্তি নেই কারও’।
বাঙালি কবে থেকে 'ব্যবসা বিমুখ' ? : দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৮ নভেম্বর ২০২০ | ৩৭৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বাঙালির ব্যবসার ইতিহাসে প্রথম যে বিদেশীরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বর্ধিষ্ণু বাংলার বিখ্যাত বন্দর চট্টগ্রাম ও সপ্তগ্রামে গ্রামে ব্যবসা করতে আসে, তারা হল পর্তুগীজ। পর্তুগীজরা বাংলায় এসেছিল ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু তারও বছর কুড়ি আগে উত্তমাশা অন্তরীপ প্রদক্ষিণ করে এদেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল ভাস্কো-ডা-গামা। যদিও এর অনেককাল আগে থেকেই বাংলার বণিকেরা পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপে। তা হলে বাঙালির ব্যবসার বিমুখতার কথাটা চালু হলো কবে?
মোটামুটি ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে কথাটার সূত্রপাত অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকে। এর প্রধান কারণ বিদেশী বণিকদের কুচক্র। বাঙালি বণিকের জয় গান শোনা গিয়েছিল গুপ্ত যুগেরও আগে, ফা-হিয়েন এর ভ্রমণকালে, অর্থাৎ ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রিস্টাব্দের সময়ে। সমুদ্রবন্দর তাম্রলিপ্তের রমরমা তারও আগে। কালিদাস, পাল যুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্য, মনসামঙ্গল, কবিকঙ্কণ, ডাক ও খনার বচনে বাণিজ্যনিপুণ বাঙালির জয় গান শোনা গেছে। সবই তো আর কবির কল্পনা নয়। একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায়, বাঙালি কোনোকালেই ব্যবসাবিমুখ, অলস বা ফাঁকিবাজ ছিলনা। ফা-হিয়েন এর লেখা থেকে জানা যায়, তাম্রলিপ্ত থেকে ১৪ দিনের পথে সিংহল পৌঁছে যেত বাঙালি বণিকের দল। মুক্ত ব্যবসায়ী বণিকেরা, তেজপাতা পিপুল মসলিনের সওদাগরেরা এই বন্দর থেকেই বিদেশ রওনা হতেন। পান সুপারি ও নারকেলের চাহিদাও ছিল প্রচুর। তখন থেকেই 'সোনার বাংলা' কথাটা চালু। সোনার বাংলা এমনি এমনি বিনা পরিশ্রমে গড়ে ওঠেনি। যুগ যুগ ধরে বাংলায় ব্যবসা করতে বিদেশীরা বিনা কারণে আসেনি। ‘সোনার বাংলা’র কথা তারা জেনেছিল বাংলার বণিকদের কাছ থেকেই।
দখিন হাওয়ার দেশ - ৮ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ২০ নভেম্বর ২০২০ | ১৭৭০ বার পঠিত
মাওরী লোককথা অনুযায়ী আকাশপিতা রাঙি আর ধরিত্রীমাতা পাপার সন্তানেরা আমাদের খাবারের সংস্থান করেছেন, খাবার “উপহার” দিয়েছেন | তাঁদের আকাশরূপী সন্তান টানে আমাদের পাখী দিয়েছেন খাবার জন্য; সমুদ্র, আরেক সন্তান, যার নাম টাঙারোয়া, দিয়েছেন মাছ, হাউমিয়া দিয়েছেন জঙ্গলের বুনো খাবারদাবার, আর রঙো দিয়েছেন চাষবাস করে উৎপন্ন খাবার। সেকালে মাওরীরা প্রধানত তিন ভাবে রান্না করত, ঝলসে বা গ্রিল করে, সেদ্ধ করে, আর মাটির নীচে আগুণ জ্বালিয়ে উমু বা হাঙি পদ্ধতিতে।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - তৃতীয় পর্ব - ভারতবর্ষের মুঘল যুগ : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ নভেম্বর ২০২০ | ৪১৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আগের পর্বের আলোচনাটা অনেক বেশী দিল্লী-কেন্দ্রিক ছিল। এই পর্বে বিজাপুর, লক্ষ্ণৌ এবং মাইসোরের আলোচনা হল। এবার বলব বাংলার কথা। অর্থনৈতিকভাবে মুঘলযুগে বাংলার বিশেষ স্থান ছিল, কিন্তু যে কারণেই হোক, বাংলায় খুব আড়ম্বরপূর্ণ সমাধি নেই। বাংলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমাধিসৌধ হল ত্রিবেণীর জাফর খাঁ গাজী মসজিদ, মালদহের একলাখি সমাধিসৌধ আর ফতে খাঁর সমাধিসৌধ, এবং মুর্শিদাবাদের আজিমুন্নিসা বেগমের সমাধি। এর মধ্যে প্রথম দুটি সুলতানি যুগের, শেষের দুটি মুঘল বা মুঘল-পরবর্তী যুগের। প্রথমটি সমাধির থেকেও দরগা এবং মসজিদ হিসাবে বেশী পরিদৃষ্ট হয়। দিল্লীতে আমরা যেরকম দেখেছি, বাংলায়ও একইরকম বিবর্তন দেখা যায়।
বাংলা সিনেমা লাটে উঠল কেন? : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ৮৬৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
সোজা চোখে দেখলে, বাংলা সিনেমা একরকম করে যে ধ্বংস হয়েছে, তার কারণ বাজার নয়, কারণটি রাজনৈতিক। বস্তুত একটি পদ্ধতিগত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাংলা সিনেমার 'কলকাতা ঘরানা'টিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তাঁত শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন সম্পন্ন হয়েছিল ৩০ বছরের মধ্যে। সঙ্গে ছিল মন্বন্তর, এবং কিছুদিনের মধ্যেই হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর, ৩০ বছরের মধ্যে সিনেমা শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন হয়ে গেছে, এবং একটু আগে থেকে হিসেব করলে মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, সবই ছিল সঙ্গে, শুধু কালানুক্রমটি একটু উল্টে পাল্টে গেছে।
গাছপালা অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর পশুপাখি -- বুখাননের চট্টগ্রাম : ফিরোজ আহমেদ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ১৯৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শুধু পাহাড়গুলো চাষের আওতায় আনলেই চলবে না, সব ঝোপঝাড়ও কেটে ফেলতে হবে, কেননা সেগুলো অপ্রয়োজনীয়। কেননা সেখানে স্থান নেয় নানান বুনো জানোয়ার। এই প্রাণীরা ফসলে ভাগ বসায়, কিংবা মাংসাশী হলে মানুষ আর গবাদি পশুর ওপরই হামলা চালায়। পাহাড়ে কোনো বুনো প্রাণীর প্রাকৃতিক আশ্রয় থাকা চলবে না।
পাহাড়ের মতোই সেই একই ভাবনার নমুনাই আমরা দেখতে পাবো উপকূলীয় অরণ্যের বেলাতেও। উপকূলীয় এই শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদেরা এমনিতেও তখন মারা পড়ছে খাড়ি দিয়ে আসা জোয়ারের লোনা জল বন্ধ করায়, কিন্তু যেটুকু বাকি আছে, সেগুলোও কেটে ফেলার তাগিদ দিচ্ছেন বুখানন। এভাবেই ৯ এপ্রিলের ভুক্তিতে রামুর উপকূলে গজিয়ে ওঠা 'অপ্রয়োজনীয়' সুন্দরী গাছদের জন্যও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বুখানন, নোনা জোয়ারের আগমনে সেগুলোর একটা বড় অংশের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে যাওয়ায় সন্তোষও প্রকাশ করছেন
দখিন হাওয়ার দেশ - ৯ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ২৮ নভেম্বর ২০২০ | ৩১৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট স্থানীয় মহিলাদের বেকিং কম্পিটিশন। তা নিউজিল্যাণ্ড বেকিং এর সবচেয়ে তুখোড় উদাহরণ পাভলোভা আর পাই। আমাদের যেমন রোল, পাটিসাপটা, সিঙারা, যাকে সাদা বাংলায় পথের খাবার বা স্ট্রীট ফুড বলা যেতে পারে, নিউজিল্যাণ্ডের স্ট্রীট ফুড বলতে যদি কিছুকে নির্দেশ করতে হয়, সে হবে পাই | যে কোন মাংস (বীফ, পর্ক, ল্যাম্ব, মুরগী, মাছ, মায় মেটে) এবং শাকসবজি আর মিশিয়ে রান্না করে পাইয়ের খোলের মধ্যে ভরে দিন; তারপর তার ওপরে চীজ কুরিয়ে বা কেটে পরতে পরতে রাখুন, এবার পাইয়ের ময়দার খোলের “ঢাকনা” বন্ধ করে দিন, বন্ধ করার পর ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিট রেখে বেক করুন | পাই তৈরী।
পেন্সিলে লেখা জীবন (৯) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৮ নভেম্বর ২০২০ | ৪০৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আমি গেছি দূর মফঃস্বলে চাকরি করতে। তখন যা দিন, মোবাইল ফোন কেন সেই মফঃস্বলে ইলেকট্রিকের আলো ছিল না, পোস্ট অফিস ছিল না। চিঠি ফেলতে ভিন গাঁয়ে যেতে হত। চিঠি দিলে একমাস আগে কলকাতা পৌঁছত না। বাস থেকে নেমে এক ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটতে হত অফিস মানে হল্কা ক্যাম্পে পৌঁছতে, এমনই সে জায়গা। ছোটনাগপুরের মালভূমির লেজা সেই অঞ্চল। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের একটি কন্যা। বয়স তার আড়াই তিন। সে তার ঠাকমাকে বলল, ছেলেধরা নিয়ে গেছে বাবুজিকাকাকে। হারিয়ে গেছে, আর ফিরবে না। শিশু যা শোনে তাই বলে। তাকে যা বলে ভয় দেখান হয়, সেও তাই বলে ভয় দেখায় ঠাকমাকে। মা তখন পিতামহী। মায়ের ঘুম আসে না। ছুটিতে বাড়ি এলে জিজ্ঞেস করে মা রাধারানি, কী খাই, কেমন জায়গা। ডাল আলু সেদ্ধ আর কুঁদরি পোস্ত ? মাছ হয় না? মাংস ? সকাল বিকেল মুড়ি, কেন পরোটা লুচি করে দিতে পারে না ? জানেই না মা ওসব। আমাদের দেশটা আসলে খুব গরিব। গ্রামটা আরো গরিব। শুনতে শুনতে মা চুপ। বুঝতে চাইছিলেন দেশটাকে আমার চোখ দিয়ে। ধরা গলায় বললেন, তুই বরং চাকরি ছেড়ে দিয়ে আয়, অন্য কিছু দেখ।
না, চাকরি আমার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, দেশটাকে আমি চিনতে পারছি দিনে দিনে।
মা চুপ করে থাকলেন, অবশেষে বললেন, দেশ সব জায়গা থেকে চেনা যায়।
জমি মাটি মানুষ না চিনলে বড় হওয়া যায় না।
মা বলল, বড় হবি তুই ? কী করে, প্রমোশন কবে হবে ?
প্রমোশন না মা, লিখতে চাই, গল্প লিখছি, শুনবে?
আমি কী বুঝব, কিন্তু তুই যদি নিজে বুঝিস হচ্ছে, তবে ছাড়বিনে, ধরে রাখবি, ছাড়বিনে একদম।
মন্ত্র পেয়ে গিয়েছিলাম।
সার্টিফিকেট (৬) : রাহুল দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ নভেম্বর ২০২০ | ২৫১৩ বার পঠিত
অমলকান্তি সব শুনে বলে উঠল, “আমি শুধু একটা কথাই বলব, কাজের সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার থেকে বাবাকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে, সার্টিফিকেট দেওয়ার মতো কাজ। তিনি প্রাজ্ঞ, মহৎ, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ, গোটা দেশ একথা জানে। তিনি যে এই ধরনের হঠকারিতা করতে পারেন না, সেকথাও সবার জানা। তিনি এখন অন্যের ওপরে নির্ভরশীল। কিন্তু সেই নির্ভরতা যেন তাঁর পক্ষে আশঙ্কাজনক না হয়ে ওঠে, সেটা আমাদের সবাইকেই দেখতে হবে...”
অন্য ভাষার কবিতারা : ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩৫৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমরা পাই সারগর্ভ উপদেশ, জ্ঞানের ফুলঝুরি, আমাদের কি করা উচিত ছিল, তার লম্বা ফিরিস্তি, ভবিষ্যতে কি শিক্ষা নেওয়া উচিত, নিজেকে কেমনভাবে পাল্টে নেওয়া উচিত, কি করলে এমনটা ঘটতো না। এ জেনে আমার কি লাভ? আমি কি পালটে ফেলবো এসব জেনে? আমি বিষ খেয়েছি, জেনে বা না জেনে, কিন্তু তোমার কাছে আমি শুধু একটু উপশম চাই। তার বদলে আমরা পাই, পুকুরে ডুবতে থাকা আপনাকে না বাঁচিয়ে, সাঁতার না জেনে আপনার পুকুরে নামা খুব অন্যায় হয়েছে, সেই মতামত, পুকুরের পাড়ে সাবধানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের থেকে। আর তারা কে? তারা বলে তারা আপনার বন্ধু। বলে, আমরা তোমার বন্ধু না হলে কি দরকার ছিল আমাদের সময় নষ্ট করে এইসব বলার। কিন্তু আপনি কি চান, আপনার কি দরকার, সেটা কেউ শুনেছে তাদের মধ্যে?
উৎসবের না দেখা দিক : ঈশান চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩৬৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ততক্ষণই মাথা ঘামাব, যতক্ষণ তা সেলেবল, এবং যতক্ষণ তা টোকেনিজমের গন্ডীর ভেতরে থাকে- উৎসবের প্রাঙ্গনে এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কী হতে পারে? যাক্, যেকথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, "অন্যরকম পুজো" বা চলতি কথায় নিউ নর্মালের পুজো, অনেক নেই-এর পুজো -এ আমাদের, প্রতিবন্ধী মানুষদের বাৎসরিক অভিজ্ঞতা।
বলিভিয়ায় প্রতিবিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে : অর্ণব সাহা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩০৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
১১ নভেম্বর, মেক্সিকোর বিদেশমন্ত্রী মার্সেলো এব্রার্দ মোরালেসকে রাজনৈতিক আশ্রয়দানের কথা ঘোষণা করেন। কিউবা, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, উরুগুয়ে এবং ভেনেজুয়েলার সরকার বলিভিয়ার ঘটনাকে ‘সামরিক-আমলাতান্ত্রিক ক্যু’ হিসেবে ঘোষণা করে। পরদিন, ১২ নভেম্বর, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন অতি দক্ষিণপন্থী জেনাইন অ্যানেজ। মোরালেস মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্যকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। এমনকী ৩৮ সদস্যের ইলেক্টোরাল কমিশনের সমস্ত সদস্যকেই বরখাস্ত করা হয়।
পেন্সিলে লেখা জীবন (৯) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১১ ডিসেম্বর ২০২০ | ৪৫৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আমার ক্যাম্প অফিসে। করণ্ডায়। মানুষের মুখের কথা বলি। যে মুখগুলি মনে আছে তার ভিতরে প্রধান মুখটি নিখিল প্রধানের। নিখিলবাবুকে আমি প্রথম যখন দেখি আমি তখন ২৩, তিনি ৫০। তিনি সেটেলমেন্টের ডি-গ্রুপ কর্মচারী। উপরওয়ালা স্যার, বাবুদের কাছে পিয়ন। এখন পিয়ন শব্দটি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হচ্ছে। কর্মচারীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ —চার শ্রেণীতে ভাগ করে সেইভাবেই অভিহিত করা হয়। এর অন্যথা হলে প্রতিবাদ হয়। প্রতিবাদ এবং সংগঠিত থেকে তাঁরা কিছুটা সম্মান আদায় করে নিয়েছেন। তবে এখনো সামান্য হোমগার্ড জেলার এস,পি, র বাড়ির বাজার করেন কি না, জামা কাপড় কাচেন কি না, ফাই ফরমাস খাটেন কি না জানি না। হয়তো বদল হয়েছে, হয়তো বদল হয়নি, এ ঘটনা সামান্য কনস্টবলের মুখে শোনা।
বৃত্তরৈখিক (১৪) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | ২৮৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সময় জয়মালিকার কাছে বড় দামি। দু বছর তো এই কলেজেই সময় নষ্ট হয়ে গেলো তার, বিকাশদার কথা শুনে। শুনছে বিকাশদাও নাকি ছেড়ে দেবে, সরকারি কলেজে জয়েন করবে নাকি। কিন্তু জয়মালিকার তো সময় নেই, সে অপেক্ষা করতে চায় না। সে শুধু চায় আরও বেশি বেশি লোক তার ছবি দেখুক। মিসেস পাণ্ডে সেই স্কুলের সময়েই বলেছিলেন সে আঁকে অন্য সবায়ের মতো নয়, ঠিক নিজের মতো কোরে। তার মানে তার নিজের স্টাইল তো তৈরি হয়েই গেছে, তাহলে আর কেন কলেজে যাওয়া !
জয়মালিকা ভেবেছিলো অন্তত একজন তাকে ঠিক ঠিক বুঝবে। তাই শক্তিদার সমর্থন চেয়েছিলো ও। কিন্তু শক্তিদা, শক্তিদার মতো মানুষও, ঐ বিকাশদার মতোই কথা বললো। সব আর্টেই অনুশীলন করতে হয় রে জয়ি, কঠোর অনুশীলন, বলেছিলো শক্তিদা। কিন্তু কেন? কেন সবাইকেই অনুশীলন করতে হবে?
‘মৃত্যুর পাশে মুখ বাড়িয়ে দেয় জীবন’ : হিন্দোল ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ২৮১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সুভাষ মুখোপাধ্যায়। জীবনের অন্তিম পর্বের একগুচ্ছ কবিতা। তবু এর পাঠে কদাচ বোধ হয় না এ কোনো অশীতিপরের রচনা। বরং যেন এক পথ-ভোলা পর্যটক, জগতের অসংতিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুতা পাতিয়ে ফেলেছেন নীরবে। এবং তারই মধ্যে সম্পৃক্ত তাঁর কবিতার অতি-পরিচিত রাজনৈতিক দর্শন, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, রসিকতা, ব্ল্যাক হিউমর, এসমস্ত কিছুই। পড়লেন হিন্দোল ভট্টাচার্য।
কৃষক আন্দোলনের দাবির নেপথ্যে : সজল ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ২৯৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আইন তিনটি আপাতদৃষ্টিতে কৃষি বিপণনে কর্পোরেটদের আরো বেশি সুবিধা করে দেবার বন্দোবস্ত। কৃষি বিপণনে কর্পোরেটরা আছে অনেকদিন ধরেই। পেপসি আলুর চুক্তি চাষ আজ এক দশক কি তারও বেশি দিন ধরে চলছে। কিন্তু জমছে না। মেট্রো ক্যাশ এন্ড ক্যারিও প্রায় আট বছর হতে চলল, মান্ডি বা এপিএমসি লাইসেন্স নিয়ে কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পাইকারি ব্যবসা করছে। খুচরো ব্যবসায় টাটা বিগ বাস্কেট, রিলায়েন্স ফ্রেশ, আদানি বিগ বাজার চলছে কিছুদিন হল। আগরওয়াল এঞ্জিন তেল, আদানি ফরচুন তেল, টোডি ইমামি তেল -- এসব তো আরো বহুদিনের ব্যাপার। কিন্তু কৃষি বিপণনে থাকলে শুধু ঠিক জমছে না, কৃষি বিপণনে থাকার ছদ্মবেশে চাষ বা কৃষিকে নিয়ন্ত্রণ করা, এক দায়িত্ববিহীন ক্ষমতা -- এ নাহলে আর কর্পোরেট কেন?
বেণীর সঙ্গে মাথা : বিশ্বেন্দু নন্দ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ৪৫৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
আমরা কারিগর ব্যবস্থার মানুষেরা, বড় কৃষক বা কুলাক আর কর্পোরেট কৃষকের মধ্যে মৌলিক ভেদ করি। কুলাকেরা গ্রামের মাটিতে থাকে। সে বৃহত্তর গ্রাম সমাজের অংশ, গ্রামের ওঠাপড়া, অন্যান্য সমাজের ভাল থাকা মন্দ থাকায় তার যায় আসে, গ্রামের কারিগরদের, তার কৃষির কাজের অঙ্গাঙ্গী হাতিয়ার। সে সাধারণত একফসলি চাষ করে না – তাই সামগ্রিকভাবে যান্ত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তার পথ নয়। তার উৎপন্ন ফসলের বাজার গ্রামে বা তার আশে পাশে। তার মূল লক্ষ্য বিদেশের বাজার নয়, স্থানীয় বাজার, উদ্বৃত্ত সে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু কর্পোরেট কৃষকেরা দেশিয় চাষের জোর, তার মৌলিকতা, ফসল বৈচিত্র বিষয়ে চরম উদাসীন।
হামরি লচকে যব কমরিয়া… : দামু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : চেখেছি পথে যেতে | ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩৬৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
হো সারি দুনিয়া হিলে-লা! সোনপুর! সবাই জানে দুনিয়ার বৃহত্তম পশুমেলার কথা। কিন্তু যাঁরা নভেম্বরের বিহারি কড়ক-ঠণ্ড্-এ সে মেলা থেকে শুধু জানোয়ার দেখেই ফিরে এলেন, হায়, তাঁদের অনাস্বাদিতই রয়ে গেল খাঁটি দহি-চুড়ার সাথে ফুলকপির ডালনা ও খাট্টা আচারের বিচিত্র কম্বো, ঘি-জবজবে লিট্টি, বটের পাখির কষা, মিয়া মিঠাই, হরিহরনাথের মহাপ্রসাদ ক্ষীর, ফারা-পুলি আর তিন-পেগ-রাম-রসিক চোখে নৌটঙ্কির তিরছি নজরিয়ার এক আশ্চর্য রঙিন দুনিয়ার সাংস্কৃতিক আস্বাদ। দামু মুখোপাধ্যায়
গ্রাম-জীবন, লোকজীবন, প্রান্তিক জীবনের অন্তর্গর্ভের গম্ভীরা তাঁর লেখায় : স্বপ্নময় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ২০ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩৬৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সুধীর চক্রবর্তী। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। অনন্য প্রাবন্ধিক। অসাধারণ বাগ্মী। তেমনই ছিলেন একজন চিরায়ত শিক্ষক, যে শিক্ষক স্নেহপ্রবণ, যে শিক্ষকের আশীর্বাদমুদ্রা সতত তাঁর ছাত্রদের মাথার উপরে। বিবিধ বিষয়ে তাঁর গভীর গবেষণা। প্রেম, প্রকৃতি, মানুষ ও ঈশ্বর সম্পর্কিত যে বোধগুলি লোকধর্মগুলি নুড়িপাথরের মতো পড়েছিল, সুধীরবাবু তর্জনী নির্দেশে দেখালেন, এই দ্যাখো, এগুলো রত্ন। লিখছেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী
বইবৈভব - ৩; চার্লি চ্যাপলিন: সান্নিধ্যের দুর্লভ উষ্ণতা আসে : শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বইবৈভব | ২০ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩৭৯২ বার পঠিত
চ্যাপলিন তাঁর আত্মজীবনী লিখেছেন, একাধিক ভাষ্যে; তাঁর প্রামাণ্য জীবনী লিখেছেন ডেভিড রবিনসন। কিন্তু সারাজীবন তিনি সযত্নে আড়াল করে রেখেছেন তাঁর ছবি তৈরির প্রক্রিয়া। সাক্ষাৎকারে, বক্তৃতায়, সাংবাদিক সম্মেলনে অনেক কথা বলেছেন তিনি নিজের জীবন ও বিশ্বাস বিষয়ে; এত মানুষের সঙ্গে পরিচয়, আলাপ ও সঙ্গ ঘটেছে তাঁর, তাঁরাও লিখেছেন, তাঁর সম্পর্কে; এই সব কিছু মেলালে চ্যাপলিনের যে জীবনচিত্র তৈরি হয়ে ওঠে, তা তাঁর জীবনী বা আত্মজীবনীর ধরাবাঁধা, সুবিন্যস্ত বৃত্তান্ত তথা পরিচিতি পেরিয়ে আরও বিস্তীর্ণ হয়ে ওঠে।
পেন্সিলে লেখা জীবন (১১) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ৪৬৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
তার গ্রাম মৌচুরিয়ার সেই বন্ধুর নাম বুধন টুডু। বুধন নকশাল ছিল। কলকাতার বাবুদের সঙ্গে বেলপাহাড়ির দিকে বিপ্লব করতে গিয়েছিল। বাবুরা কেউ ধরা পড়েছে, কেউ ফিরে গেছে বাড়ি। বুধনকে পুলিস খুঁজছিল অনেকদিন। কিন্তু পাত্তা করতে পারছিল না। সে খুব বুদ্ধিমান। বার বার পুলিশকে ধোঁকা দিয়েছে। ধরতে পারলে জেলে ঢুকিয়ে দেবে। মেরেও ফেলতে পারে। সে কোথায় থাকে, কোথা থেকে গ্রামে ফেরে, তা পুলিশের খোঁচড় বুঝে উঠতেই পারে না। তার দেড় বিঘে জমিন আছে চাষের। সেই জমিই তাকে টেনে এনেছিল গ্রামে। ধান কাটার সময় গত অঘ্রানে এসেছিল। তখন পুলিস টের পায়নি। যখন খবর গিয়েছিল, সে কাজ সেরে পালিয়েছিল। এই বর্ষার দিনে চাষের টানে আবার ফিরে এসেছিল। গ্রামের চাষিবাড়ির ছেলে, প্রায় ভূমিহীন বুধন। জমি পাবে ভাত পাবে, তাই শহরের বাবুবাড়ির ছেলেদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। বিপ্লবের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বাবুবাড়ির ছেলেরা ফিরে গেছে শহরে।
বৃত্তরৈখিক (১৬) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ২৫৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবে সোমেশ্বর। সব হিসেবেরই কী গণ্ডগোল হয়ে গেলো? উনসত্তর সালে চারু মজুমদার নতুন পার্টির নাম ঘোষণা করলেন, সি-পি-আই (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। কিন্তু পার্টি তৈরি হবার আগেই তো পার্টি ভেঙে গেছে ! আগের পাঁচ বছর ধরে ইঁটের ওপর ইঁট গেঁথে গেঁথে যে মন্দির তৈরি করছিলেন চারু মজুমদার, সে মন্দিরে মাথা নীচু করে ঢুকতে চাইলো না যারা, যারা মার্কসবাদকে সর্বশক্তিমান বলে প্রণাম করতে রাজি হলো না, পিকিং রেডিও ঘোষিত রোজনামচার সাথে যারা নিজেদের রোজনামচাকে মেলাতে পারলো না, একেকটি 'খতম' থেকে আশ্চর্য অলৌকিক উপায়ে একেকটি মুক্তাঞ্চল গঠনের ম্যাজিকে যারা বিশ্বাস করতে পারলো না, কমরেড চারু মজুমদারের লাইনই একমাত্র সরলরেখা, এই মন্ত্রকে যাদের মনে হলো আজগুবি, তারা তো আগেই শ্রেণীশত্রু ঘোষিত হয়ে গেছে ! তারপর তো রাস্তাঘাটে-অলিতে গলিতে শুধুই মৃত্যুর মিছিল !
অতিমারি যা দেখিয়ে দিল : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩৩৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
আয়ুর্বেদ সহ বিভিন্ন প্রাচীন চিকিৎসাবিধিতে বিভিন্ন সময়, পরিবেশ ও কালে স্থিত মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে কেমন আচরণ হওয়া উচিত এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে। আমি আয়ুর্বেদ খানিকটা জানি। অন্য দেশের এবং চিকিৎসাব্যবস্থার কথা কথা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারবোনা। এজন্য আয়ুর্বেদে সীমাবদ্ধ থাকছি।
আয়ুর্বেদে “সাত্ম্য” বলে একটি ধারণাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ধারণাটি হল – বিপুল বিশ্ব জগৎ বা (macrocosm)-এর মাঝে মানুষ বা অন্য যেকোন জীবিত কণা হচ্ছে অণুবিশ্ব বা microcosm। এ দুয়ের ভারসাম্য দিন, ঋতু, স্থান, সময়, ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিঘ্নিত হয়। এ ভারসাম্যকে সমস্ত দিক থেকে রক্ষা করতে পারলে মানুষ সুস্থ থাকে, না পারলে অসুখের আবির্ভাব হয়।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - পঞ্চম পর্ব - নকশ-এ-রোস্তম : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০১ জানুয়ারি ২০২১ | ৩৬৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
জন্মপরিচয়ের উপর এত গুরুত্ব কেন? তার কারণ দারায়ুস সাইরাসের বংশজাত ছিলেন না, আর সাইরাস এবং তিনি একই বংশজাত সেটা প্রমাণ করার দায় তাঁর ছিল। তার জন্য আমাদের দেখতে হবে দারায়ুস কীভাবে সিংহাসনে বসেন। সাইরাসের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় ক্যাম্বিসেস, আর তার মৃত্যুর পর সাইরাসের অন্য পুত্র বরদিয়া। কিন্তু রাজদরবারের সাতজন সম্ভ্রান্ত মানুষ দাবি তোলেন এই বরদিয়া সত্যিকারের বরদিয়া নয়, সে আসলে একজন ম্যাজাই (জাদুকর), যে ছদ্মবেশ ধরে বরদিয়া সেজে বসে আছে- যার আসল নাম গৌমাত। সাতজন সম্ভ্রান্ত মিলে এই গৌমাতকে হত্যা করে- দারায়ুস তাদেরই একজন। ইতিহাস কোনওদিনই জানতে পারবে না এই গৌমাত আদৌ কোনও ছদ্মবেশী বহুরূপী ছিল, না কি সিংহাসনের ন্যায্য উত্তরসুরী বরদিয়াই ছিল, যাকে ছলনা করে সরানো হয়।
বৃত্তরৈখিক (১৭) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০১ জানুয়ারি ২০২১ | ১৫৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
রেস্ট হাউজের বারান্দায় দুটো চেয়ার পেতে দিয়ে চৌকিদার গেলো সাহেবকে খুঁজতে। বিক্রম বললেন, কনের বাড়িতে আপনি থাকতে চাইবেন তা আমি জানি। কিন্তু সত্যি-সত্যিই থাকা যাবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। আপনি আমার নামটা যদি খেয়াল করে থাকেন তা হলে বুঝতে পারবেন আমি ঠিক আপনাদের মতো ভদ্দরলোক সমাজের মানুষ নই, আমিও, যাকে আপনারা বলেন ট্রাইবাল, মুণ্ডা। তবে মুণ্ডা আর সাঁওতালরা সংখ্যায় বেশি, অনেক আগেই ক্রিশ্চান মিশনারিদের সংস্পর্শে এসেছে, অনেকেই লেখাপড়া শিখেছে ওদেরই দয়ায় – ইনক্লুডিং মী। কিন্তু খাড়িয়ারা সংখ্যায় অনেক কম। ওদের মধ্যে আবার তিন রকমের ভাগ আছে। যাদের বলে দুধ-খাড়িয়া আর ধেলকি-খাড়িয়া তারা জঙ্গল ছেড়েছে আগেই, এখন চাষবাস করে, সাঁওতাল-মুণ্ডাদের থেকে ওদের চট করে আলাদা করতে পারবেন না।
পেন্সিলে লেখা জীবন (১২) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৯ জানুয়ারি ২০২১ | ৩৯০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
শ্যামলবাবুর সঙ্গে মেশা আমার জীবনের এক মহার্ঘ স্মৃতি। তা ছিল অম্ল এবং মধুরতায় মেশানো। প্রথমে শ্যামলবাবু ধরেই নিয়েছিলেন আমার দ্বারা তেমন লেখা হবে না। বন্ধুরাই বলে। আর শৈবাল বলে। একদিন তো আমাকে বলেই বসলেন, লেখা অভ্যাস করো, প্রতিদিন লেখো, তবে তুমি এদের সঙ্গে মেলামেশার উপযুক্ত হয়ে উঠবে। ভয় করতাম খুব। একদিন তুষার সমীরের সঙ্গে সন্ধ্যায় গিয়েছি শ্যামলদার বাড়ি। ওরাই টেনে নিয়ে গিয়েছিল। পান করা হল। শ্যামলদা আমাকে নিয়ে পড়লেন। আমার কাছে কুলটিকরির খবরাখবর নিলেন। হাটের খবর, চালের দর, সবজির দর ইত্যাদি। সুবর্ণরেখা এবং ডুলং নদীর কথা শুনলেন। তিনি বললেন বিদ্যাধরীর মৃত্যুর কথা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যা দেখেছিলেন। তাঁর রাখাল কড়াই, চন্দনেশ্বরের মাচানতলায় ইত্যাদি গল্পে আর কুবেরের বিষয়আশয় উপন্যাসে যা আছে।
বৃত্তরৈখিক (১৮) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ জানুয়ারি ২০২১ | ২১৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শুধু যে ছবি কেউ কেনেনি তা-ই তো নয় ! এতগুলো খবরের কাগজ আর পত্রিকায় নিজে গিয়ে সম্পাদক আর যাদের যাদের চিনতো, উদ্বোধনের দিনে আসার জন্যে নেমন্তন্ন কোরে এসেছিলো তাদের। কোনও কাগজে, কোনও পত্রিকায়, কেউ একটা মন্তব্যও করলো না ! এ ছাড়াও কলকাতায় ওর চেনা-জানা লোক তো কম নেই। শিল্পসাহিত্য মহলে যারা ঘোরাঘুরি করে, যাদের মধ্যে অনেকেই কিছু-না-কিছু লিখেছে-এঁকেছে শাম্বর জন্যে, তাদেরও তো অনুরোধ করেছিলো আসার জন্যে, কতজনই বা এলো ! এমনকি এসেওছিলো যারা, ওর ছবির বিষয়ে ভালোমন্দ মন্তব্যই বা করলো তাদের মধ্যে কতো জন ! জঙ্গল নিয়ে, জঙ্গলে ওর যাওয়া-থাকা-সময় কাটানো, এ সব নিয়েও উৎসাহ দেখালো অনেকে, কিন্তু ছবির বিষয়ে খুব একটা গুরুত্বই কেউ দিলো বলে মনে হলো না।
দখিন হাওয়ার দেশ - ১০ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ০৯ জানুয়ারি ২০২১ | ৩০৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পলিনেশিয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে এখানে আসবার পর মাওরিরা দেখলেন যে এ প্রকৃতপক্ষে এক প্রকাণ্ড দ্বীপভূমি, সরাসরি প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বটে, কিন্তু তটরেখা মিলিয়ে দেখলে প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এক দেশ, যার প্রায় সর্বত্র বসতি স্থাপন করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, ভারি বৈচিত্রপূর্ণ ও বর্ণময় এক দেশ - একদিকে যেমন ঘন সমুদ্রতটের জঙ্গল, অন্যদিকে তুষারমণ্ডিত গিরিশ্রেণী। তুষারশুভ্র গিরিশ্রেণী এঁরা এর আগে দেখেন নি, তার নাম দিলেন “হুকা” (বাং: ফেনা) |
NO VOTE TO BJP স্লোগান এবং তা নিয়ে কয়েকটি কথা : অনিকেত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | বিতর্ক | ১৩ জানুয়ারি ২০২১ | ৪৯৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
সমস্যা সম্ভবত সিপিএমের দৃষ্টিভঙ্গিতেই লুকিয়ে আছে। কদিন আগে একটা মিম, সিপিএমের লোকজন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ছড়িয়েছে, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কোনও এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, কেরালার কোনও এক জায়গায় বিজেপি মিউনিসিপালিটির এক আধটা আসন জিতেছে, কী ভাবছেন বিজয়ন? তিনি নাকি বলেছেন, ঐ এলাকার মানুষের শিক্ষাগত মান বাড়ানোর ব্যাপারটা আমরা চিন্তা করছি। বিজেপির মত এক ফ্যাসিস্ত দল, কেরালায় সামান্য হলেও সংগঠন বাড়াচ্ছে কারণ মানুষ অশিক্ষিত, মানুষের বোধ বুদ্ধি নেই, মানুষ ভুল করছেন। এই ঔদ্ধত্য কোথা থেকে আসে?
"আন্দোলনে অন্নদাতা": কার্নিভালে যুদ্ধের স্বর : বহ্নিহোত্রী হাজরা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ | ২৭৬৫ বার পঠিত
এখানে একেবারে বিপরীত একটি নির্মাণ চোখে পড়েছে, ধর্ম প্রতিবাদীর অবলম্বন হয়ে উঠছে অথচ এখানে ধর্ম সহাবস্থানের, হানাহানির নয়। আন্দোলনে ধর্মীয় এই বাতাবরণ একটা দিক, কিন্তু আন্দোলনের চালকের ভূমিকায় আছে কীর্তি কিষাণ ইউনিয়ন, ক্রান্তিকারী কিষাণ ইউনিয়ন, বিকেইউ একতা (উগ্রাহাঁ), বিকেইউ (ক্রান্তিকারী), কিষাণ সংঘর্ষ সমিতি, কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির মত সংগ্রামী ধারার সংগঠনগুলি। আন্দোলনের হার না মানা মনোভাব এবং আপোসহীন সংগ্রামের অঙ্গীকার এবং সাধারণ কৃষকদের সচেতন রাজনৈতিক ভাষ্যে কোথাও খামতি নেই।
মিনিয়াপলিস থেকে যাদবপুর: ভায়া খৈরলাঞ্জি-হাথরাস (পর্ব ১) : রাজা ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২০ জানুয়ারি ২০২১ | ৩২৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
জামিনে মুক্ত বারোটি বর্ণহিন্দু পরিবারের পুরুষ, মহিলা, এমনকী নাবালকরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে সুরেখা, সুধীর, রোশন, আর সতের বছরের প্রিয়াঙ্কার ওপর। ভাইয়ালাল সেই সময় বাড়ির বাইরে ছিলেন, বাঁচাতে পারেননি তাঁর পরিবারের কাউকে। বাড়ি থাকলেও বাঁচাতে পারতেন বলে মনে হয় না। হয়ত নিজেই বাঁচতেন না। বর্ণহিন্দু মহিলারা টেনে বের করে আনে সুরেখা, সুধীর, রোশন, প্রিয়াঙ্কার দলিত দেহগুলি, আর ছুঁড়ে দেয় তাদের পুরুষদের উন্মত্ত বাহুতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে।
পেন্সিলে লেখা জীবন (১৩) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ | ৩৯৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
‘মাঠ ভাঙে কালপুরুষ’ ছাপার জন্য আমি ঝাড়গ্রাম কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে ২০০০ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই ঋণ দুবছর কয়েক মাস ধরে সুদসহ শোধ করেছিলাম। তখন মাইনে পেতাম শ’পাঁচেক টাকা। আমি তখন একেবারেই অচেনা এক নবীন লেখক। অমৃত পত্রিকায় লেখার সুযোগ পেয়েছি সদ্য। গল্প যা বেরিয়েছে, লিটল ম্যাগাজিনে। কবিপত্র, অনুক্ত, পরিচয়, সংক্রান্তি---ইত্যাদি পত্রিকায়। লিখে উপার্জন হয়ই না প্রায়। বই ছিল ৭ ফর্মা মানে ১১২ পাতার। অ্যান্টিক নামের একটি মূল্যবান কাগজে লেটার প্রেসে ছেপে বেরিয়েছিল সেই বই। খুব সম্ভবত সুকিয়া স্ট্রিটের হরিপদ পাত্রের ছাপাখানা সত্যনারায়ন প্রেসে কম্পোজ হয়েছিল। আমি এইসব কথা বলছি এই কারণে যে সেই লেটার প্রেস, অ্যান্টিক কাগজ, সীসের অক্ষর, কাঠের গালি এখন হারিয়ে গেছে। এক একটি খোপে এক এক অক্ষর। ই-কার, আ-কার, উ-কার, এ-কার সব আলাদা আলাদা খোপে। কম্পোজিটরের সব মুখস্ত থাকত। কী দ্রুতই না সিসের অক্ষর সাজিয়ে সাজিয়ে গোটা বই নির্মাণ করে ফেলতেন। হ্যাঁ, সেই লেটার প্রেস, সেই ছাপাখানা উঠে গেছে।
দখিন হাওয়ার দেশ - ১১ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ | ৩০১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
টাসমানরা দুটো জাহাজ নিয়ে এসেছিলেন, একটার নাম জিহান আর অন্যটার নাম হিমসকার্ক যেখানে টাসমান স্বয়ং ছিলেন। এর মধ্যে জিহান নামে জাহাজটি থেকে একটি ছোট নৌকো ডাচরা সমুদ্রে নামিয়ে হিমসকারক জাহাজে নিয়ে এসেছিল, এবার সেটি জিহানের দিকে ফেরত যাবে, এমন সময় আরো তেরো জন মাওরি সম্বলিত আরেকটি নৌকো করে এগিয়ে এসে সজোরে ডাচ নৌকোটিকে ধাক্কা মারে | এর ফলে তিন-চারজন ডাচ নাবিকের মৃত্যু হয়। ডাচরা অবশ্য তৎক্ষণাৎ গুলি গোলা ছোঁড়ে, তবে তাতে বিশেষ সুবিধে হয়নি। মাওরিরা একটি মৃতদেহ নৌকোয় তুলে ফেরৎ যায়। মাইকেল কিং পেঙ্গুইন হিস্ট্রি অফ নিউজিল্যাণ্ডে লিখেছেন মাওরিরা তাদের মানা অনুযায়ী, যেকালে পরাজিত সৈনিকদের মেরে ফেলে খেয়ে নেওয়াই তাদের রীতি রেওয়াজ, খুব সম্ভবত এই মৃত ডাচটিকে রান্না করে তাই খেয়ে ফেলে থাকবে।
মহাশ্বেতার সঙ্গে ইলিয়াসের সংলাপ: অরণ্যের অধিকার : মহাশ্বেতা দেবী - আখতারুজ্জমান ইলিয়াস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৬ আগস্ট ২০১৩ | ১১৭২ বার পঠিত
মহাশ্বেতা: ...আমার বিয়ে হয় কুড়ি, পরে একুশে, বিজন ভট্টাচার্য’র সঙ্গে। গণনাট্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা, ফাউন্ডার অ্যাক্টর, নাট্যকার, গীতিকার, গায়ক। তখন, তার আগে ১৮ বছর বয়সে আসে ৫০ এর মহা মন্বন্তর। তখনই আমি যেটুকু দূর্ভিক্ষের জন্য কাজ করি, তার ফলে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত আন্দোলনের সাথে আমার সেটুকু যোগাযোগ হয়। তারপর জীবনের বেশ কিছু পর্ব অন্যভাবে যায়। এখন ৬০ থেকে শুরু হয় কি ৬২ থেকে, তারপর ৭৫ সাল পর্যন্ত যে কারণেই হোক, আমি পালামৌ জেলায় বার বার যাই। এবং ইনসিডেন্টলি জানতে পারি ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে...যা দেখতাম, বন্ডেড লেবার সিস্টেমের কথা জানতে পারি এবং তখন আমার আগ্রহ বন্ডেড লেবারে। তার স্ট্যাটেস্টিক্স গ্রহণ করা, তারপর নানা রকম হেনতেন করতে করতে গ্রামে গ্রামে ঘোরা। প্রায় পালামৌ জেলাই পায়ে হেঁটে ঘোরা হয়ে গেল। তার লড়াই, সে সব লিখেটিখে সেসব অন্যভাবে চলল।
বৃত্তরৈখিক (২০) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ৩০ জানুয়ারি ২০২১ | ২৯৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
মিষ্টি হাসে জয়মালিকা। সামনের গ্লাসটার কমলা রঙের সফ্ট্ ড্রিঙ্কটায় ছোট একটা চুমুক দিয়ে বলে, থ্যাঙ্ক য়্যু। একটা কথা একটু বিশদে বলে দিই। কুরুখ আমাদের ভাষার নাম, ঐ ভাষার সুবাদেই আমাদের অঞ্চলের লোকরা আমাদের কুরুখ বলে পরিচয় দেয়। আসলে যে উপজাতির মানুষ আমরা, তার নাম হলো ওরাওঁ। এ নামটা অনেক বেশি পরিচিত, আপনারা অনেকেই শুনেছেন নিশ্চয়ই। আর, সৌন্দর্যের যে কথা ম্যাডাম বললেন, সেটার সম্বন্ধে শুধু এইটুকুই বলবো, আমি আমাদের অঞ্চলের সেরা সুন্দরী নই, এমনকি, সেরাদের মধ্যে একজনও নই। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে, আমাদের গণমাধ্যমে তথাকথিত ট্রাইবালদের যে অতি পরিচিত মুখটা দেখানো হয়, সেটা কোন্ ট্রাইবের কেউ জানে না। ট্রাইবাল-মেনস্ট্রীম ডিভাইডের ট্রাইবাল ফেস ওটা।
দখিন হাওয়ার দেশ - ১২ : অরিন বসু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ৩০ জানুয়ারি ২০২১ | ৩০২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সময়সারণী বেয়ে আরেকটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। সাল ১৮১০, কলকাতা থেকে সিটি অব এডিনবরা নামে একটি জাহাজ পাড়ি দিল নিউজিল্যাণ্ডের উদ্দেশ্যে এবং বে অফ আইল্যাণ্ডে নোঙর ফেলল। যাত্রী তালিকায় নাম পাবেন না, এমনকি জাহাজের ইংরেজ আর অন্যান্য ইউরোপীয় নাবিকদের তালিকাতেও তাকে খুঁজে পাবেন না, সে এক লশকর। উনবিংশ শতকের সে কালে লশকরদের জাহাজে, বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধের মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার জাহাজে বিশেষ খাতির। তাদের নাম-ধাম জানা নেই, শুধু জানা আছে তার সাকিন খুব সম্ভবত বাংলার কোথাও। সে জাহাজ নোঙর করা মাত্র উধাও হয়ে গেল। সেই অঞ্চলে তখন কোরোকোরো নামে মাওরীদের দলের নেতার (রাঙাটিরা) মস্ত প্রভাব, তিনি সেই যুবককে তাঁদের কাছে (নঙাপুহি) আশ্রয় দিলেন।
বইবৈভব - ৪; ফিরে আসি, ফিরে যাই ‘রক্তকরবী’-তে : শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বইবৈভব | ৩১ জানুয়ারি ২০২১ | ৫৯৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
‘রক্তকরবী’র অনুপ্রেরণায় ছবি এঁকেছিলেন পরিতোষ সেন, শ্যামল দত্ত রায়, প্রকাশ কর্মকার, রবীন মণ্ডল, বিজন চৌধুরী, হিরণ মিত্র, ঈশা মহম্মদ, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, ওয়াসিম কাপুর, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিপ্রা ভট্টাচার্য, শুভাপ্রসন্ন, যোগেন চৌধুরী, ‘রক্তকরবী’র নাট্যাভিনয়ের প্রাপ্তি, পরীক্ষা ও সমস্যা বিষয়ে লিখেছিলেন থিয়েটারের প্রবীণ ও তরুণ নির্মাতা কুমার রায়, বিশাখা রায়, সুমন মুখোপাধ্যায়, শিব মুখোপাধ্যায়, শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় (শুভাশিস পরে দৃষ্টিহীন শিল্পীদের নিয়ে ‘রক্তকরবী’র একটি অসামান্য প্রযোজনা তৈরি করেছিলেন)। মণিপুরের রতন থিয়াম তাঁর নিজস্ব নাট্যভাবনাকে রূপ দিয়েছিলেন একটি রেখাচিত্রে।
গুজরাটি পাঠ : গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ ও আমি : প্রবোধ পারিখ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : শঙ্খ ঘোষ | ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ৩৭০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আশ্চর্য এক বিদেশি পথে আগন্তুক, কিন্তু পথ হারানোর কোনো ভয় নেই, আমি এই কবিতাগুলিকে ছুটতে দিই আমার আগে আগে এবং একটি মাত্রার জন্যও তাদের অনুসরণ করা ছাড়ি না, চলি যেখানে তারা আমাকে নিয়ে যায়। একটি ধীর পদক্ষেপের পর আর-একটি ধীর পদক্ষেপে ‘পার্কস্ট্রিট থেকে গড়িয়ায় / আর তার মুক্তদেশে সোনালি সপ্তর্ষিরেখা রেখে’! চলে যাই গ্রামে গ্রামান্তরে, শহরে শহরে, ময়দানে, সেইসব জায়গায় যেখানে কোনোদিনই যাইনি। গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছে সওয়ার হয়ে আমি চলি, তিলমাত্র ভয় নেই যে পৌঁছাব না হয়তো।
কবিতা তাঁর চির নূতন— শব্দের ভিতরে অনুভবের অতল গর্ভগৃহ : হৃষিকেশ মল্লিক
বুলবুলভাজা | পড়াবই : শঙ্খ ঘোষ | ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ৪১৩৫ বার পঠিত
‘খবর’ শীর্ষক কবিতায় যে দৃশ্যপট চোখে পড়ে, তা এমন— সব জায়গায় কাঁপিয়ে ঢোকে খবর। আধা খোলা দরজা ঠেলে ভেতরে কে ঢোকে? না, খবর। জানালার ধার ধরে ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ে কে? না, খবর। এদিক-ওদিক, যে দিকে হেলান দিলে চেপে ধরে কে? না, খবর। ঘরে বাইরে সর্বত্র খবরের রাজ। ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলে স্তূপের মতো উপরে চেপে বসে খবর। রুদ্ধ হয়ে যায় নিশ্বাস। মৃত শরীরের উপর খবর নাচে আহ্লাদে, নেচে চলে। গভীর শ্লেষ থেকে নিমেষেই পরিহাস তুলে আনেন শঙ্খদা অনায়াসে, যেমন ‘কোমা’ থেকে চেতনায় ফিরে আসে চেতনাহত।
দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প - ষষ্ঠ পর্ব - মিশরের পিরামিড : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৪৮৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
অন্ত্যেষ্টিশিল্পের আলোচনা এখানেই শেষ। অনেক দেশ এবং অনেক সময়কালের কাহিনী বাকী রইল। আশা করি সেগুলি তুলে ধরার জন্য কখনও এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে ফিরে আসব। যাবার আগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই- কেন এই ধারাবাহিক শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন সমাজের সামাজিক গঠন, তাদের ভিতরকার উঁচু-নিচুর শ্রেণীভেদ, লিঙ্গবৈষম্য, সাজপোশাক, খাদ্যাভ্যাস এগুলো তাদের সমাধি ও অন্যান্য বিদায়-উপহার দেখে বোঝা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বনাম গোষ্ঠীবোধ- কোন সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটারও আভাস পাওয়া যায়। পরলোক বিষয়টিকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কীভাবে কল্পনা করে এসেছে তার ধারণা পাওয়া যায়। বোঝা যায় সমাজগুলির শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন। পাওয়া যায় সামরিক অভিযানের কাহিনী, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিষয়ে অনেক তথ্য। পাওয়া যায় কিছু প্রেমকাহিনী, কিছু সমাধিলেখ, কিছু কবিতা। সামগ্রিকভাবে মানবসভ্যতার লিপিবদ্ধ ইতিহাসের অভাবকে অনেকটাই পুষিয়ে দেয়- অন্ত্যেষ্টিশিল্প।
ফেসবুক: মুখোশের আড়ালে মুখের কিছু ঝলক : অর্ক দেব, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, সিরিল স্যাম
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৫১১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
এইসব পুরোনো বীভৎসতার ছবিকে সামনে রেখে বর্তমানের পরিস্থিতিকে যখন পড়ি, তখন বুঝতে পারি কিচ্ছু বদলায়নি। আমাদের মন বদলায়নি, সংহতি-মৈত্রীর শুভ উদ্যোগগুলিকে আজও ব্যর্থ করতে সমান ভাবে সক্ষম রাজনীতির লোকেরা, আর আমজনতা নেহাত ক্রীড়নক। গোদের উপর বিষফোঁড়ার নাম সোশ্যাল মিডিয়া। মুখে মুখে কথা ছড়াত আগে, তাকে পুলিশ আটকে রাখতে পারত অঞ্চল ঘিরে, কিন্তু আজকের নতুন দানবকে বধ করার কোনো একমুখী কৌশল নেই। দাঙ্গাবাজদের হাতে এই অস্ত্র কালাশনিকভের থেকেও বেশি ভয়ংকর। আজ যারা আগুন লাগায় তারা ঠান্ডা ঘরে বসে গোটাটাই অপারেট করে। সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে ওঠে সেই অপারেশনের বেসক্যাম্প। খবরের আগে ‘ভাইরাল’ হয় ভুয়ো খবর। প্রত্যক্ষ দাঙ্গাবাজেরা আজ প্রথমে রাস্তায় নামেন না, তাঁদের খোঁজ পেতে পেতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ঘরবাড়ি। পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা গত পাঁচ-ছয় বছরে বারবার ঘটেছে, যখন সবটা বোঝা গিয়েছে তখন লাশ গোনা ছাড়া আর কোনো কাজই বাকি ছিল না। ৩৬ বছর বয়সি মার্ক জুকারবার্গের ব্রেন চাইল্ড ফেসবুককে মানুষখেকো দৈত্যের ভূমিকা নিতে দেখে ভূতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে নাগরিক সমাজ। কার্যসিদ্ধিতে হাসি চওড়া হয়েছে দাঙ্গা-সওদাগরদের। হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনা, মালদহ, হাওড়ায় বারবার রক্ত ঝরেছে। আমরা চিনব তাদের, যারা এই জায়গাগুলিতে আগুন লাগাল, জানব কীভাবে ছলে-বলে-কৌশলে ফেসবুককেই অস্ত্র বানাল তারা।
বৃত্তরৈখিক (২১) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২৮০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এটা আসলে একটা লাক্ষার কারখানা ছিলো, বললো হেমন্ত। কারখানা মানে এমন কিছু নয়, সোজা জঙ্গল থেকে নিয়ে এসে এখানে জমা করতো লোকজন, তারপর রোদ্দুরে দেওয়া, ধোয়া, শুকোনো টুকোনো, এই সব। এক্সপোর্ট হতো, লাভও হতো ভালোই। কম্পানির মালিক মারোয়াড়ি, সে লোকও ভালো। আমার সাথে যখন আলাপ হলো তখন মনে হলো ও বেঁচে গেছে। পুরুলিয়া শহরে আর কলকাতায় ওদের নানা রকমের ব্যাবসা আছে, এখানকার ব্যাবসায় সময় দিতে পারছিলো না। সে দায়িত্বটা নিলাম আমি। কিন্তু শুধু সেটাই নয়, কারখানা দেখাশোনার জন্যে আমার মতো লোক ও হয়তো আরও পেতে পারতো। ওর সমস্যা ছিলো অন্য জায়গায়। এই যে কম্পাউণ্ডটা, প্রায় বিঘে চল্লিশ জমি, এই জমিটা ওর নিজের নয়। এটা ট্রাইবাল ল্যাণ্ড। আইন অনুযায়ী এই জমিটা ও নিতে পারছিলো না। লোকটা আমাকে খুবই বিশ্বাস করে। ওকে আমি যখন আমার শিডিউল্ড্ ট্রাইব স্টেটাসের কথা বললাম, ও যেন হাতে স্বর্গ পেয়ে গেলো। জমিটা ও কিনে নিলো আমার নামে।
শানিত সূক্ষ্ম হিউমারে কেটেকুটে দেখেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানস : জয়া চৌধুরী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : সীমানা ছাড়িয়ে | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২৯৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মারিও বেনেদেত্তি। উরুগুয়ের সাহিত্যিক। লেখার জগত বহুধা বিস্তৃত। প্রবন্ধ, চিত্রনাট্য, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান রচনা, গান গাওয়া সব দিকে ছড়িয়ে আছে তাঁর প্রতিভা। রয়েছে একাধিক বহুল পঠিত ও প্রশংসিত উপন্যাস। তবে হিস্পানিক সাহিত্যে ছোটো গল্পের সম্রাট। ১৯৭৪-এ সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে নির্বাসনে থাকতে হয়েছে বহু বছর। লিখছেন স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক ও তরজমাকার জয়া চৌধুরী
ভিন্নায়ন: খোলা বাজারের পৃথিবীতে গ্রহান্তর : দেবসত্তম পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৩৭৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এখন বুঝতে পারি যে সেবার কানকুনে গিয়ে আমি এই ভিন্নায়নেরই জালে পড়েছিলাম। সেখানে সবই আছে, একেবারে দস্তুরমতো, ঝাঁ-চকচকে, কিন্তু, আমি যেন থেকেও নেই। আমি যেন সব পেতে চাই, কিন্তু কোথায় যেন বাধে। আমার একইরকম পোশাক-পরিচ্ছদ, একই বুলি, একই পড়াশুনো, একই গবেষণা - তবুও আমি আর সবার থেকে দূরে, আর সবার থেকে ভিন্ন। দস্তয়েভস্কির লেখায় যেন এক ভিন্নায়িত মানুষেরই মনের গোপন
অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা ভয়মিশ্রিত বিস্ময়বিষাদের অনুরণন ধরা পড়ে।
পথ ও রেখা – ৩ : সূর্যের থিয়েটার : হিরণ মিত্র
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : পথ ও রেখা | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২৯৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
প্যারিস। শুধু ছবির দেশ, কবিতার দেশই নয়। চমকে দেওয়া আভঁ গার্দ নাটকের দেশও। তেমনই নাট্যকার আরিয়ান মুশকিন। আজব তাঁর নাট্যশালা। সবাইকে সব কাজ করতে হয়। শৌচালয় পরিষ্কার, আহার প্রস্তুত, পোশাক বানানো, নিজেদের সাজিয়ে তোলা, মহড়ায় থাকা আর মঞ্চ নির্মাণ, সব কর্মে পটু হওয়া আবশ্যক। পোশাকি নাম—Theatre du Soleil। সূর্যের থিয়েটার। হিরণ মিত্র
বৃত্তরৈখিক (২২) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২০১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সুদেশের বাড়ি সারপেন্টাইন লেনে। মিনিট তিনেক হেঁটেই ওরা পৌঁছিয়ে যায়। ঠিক এরকম বাড়ি কখনও দেখেনি জয়ি। ছোট দরজাটা প্রায় রাস্তার ওপর। সেটা দিয়ে ঢুকলে সামনেই একটা সিঁড়ি। সিঁড়িটা সিমেন্টের, যথেষ্ট অপরিসর, এবং পুরোপুরি শুকনো নয়। সিঁড়িটার আংশিক ভিজে থাকার কারণটা বুঝতে সময় লাগে না। সিঁড়ির পাশেই একটা খোলা জায়গা, জায়গাটা ভিজে, এবং সেখানে দু-তিনটে লোহার বালতি। খোলা জায়গাটার শেষে প্লাস্টার-খসা যে দেয়ালটা ওপরে উঠে গেছে, রং-চটে যাওয়া সেই দেয়ালের নীচের অংশে খানিকটা ক্ষয়ে যাওয়া একটা দরজা। বোঝা যায় ওটার ভেতরটায় স্নান করার জায়গা, যেখানে কোন জানলা আছে বলে অন্তত বাইরের থেকে বোঝা যায় না। খোলা জায়গাটা ভেজা কেন, এবং কেনই বা ওখানে বালতিগুলো, সেটা বোঝা যায় এবার।
পেন্সিলে লেখা জীবন (১৫) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৪০১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
মনে পড়ে গেল পরের কথা। বলেই নিই। এখন ফেব্রুয়ারি চলছে। ২১ আসছে। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা দিবস। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতার আগে যত না বাংলাচর্চা ছিল, এখন তা কমেছে। ক্রমশ কমেছে। বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ব কম আমাদের এখানে যত সরকার এসেছে, সকলের। কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, বা বর্তমান সরকার কেউ বাংলা ভাষাকে আলাদা ভাবে মর্যাদা দেয়নি। ১৯৯৩ সাল ছিল বাংলা ১৪০০ সালের আরম্ভ। নতুন শতাব্দী। আমরা একটি আন্দোলন করেছিলাম, সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহার, কলকাতা সহ সমস্ত পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা স্কুলশিক্ষায় আবশ্যিক করা, বাংলা ভাষাকে দূরদর্শনে হিন্দি ও অন্য ভাষার সম-মর্যাদা দেওয়া। তখন কেবল টিভি আসেনি। দূরদর্শন ভরসা। দূ্রদর্শনে বাংলার সময় কমিয়ে দিয়ে হিন্দির আধিপত্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই আন্দোলনের কথা লিখিত থাকা উচিত। আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক আশিস ঘোষ, এবং সমাজকর্মী রতন বসু মজুমদার ছিলেন আন্দোলনের নেতৃত্বে। আমি ছিলাম, আফসার আমেদ ছিলেন, প্রবুদ্ধ মিত্র, কবি গৌতম চৌধুরী, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সব নাম এখন আর মনে নেই। ভাষা শহিদ স্মারক সমিতির উদ্যোগে এই আন্দোলন। আমরা দূরদর্শনের সামনে ধর্না দিয়েছিলাম মঞ্চ বেঁধে। স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম। দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে একটি অপূর্ব অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেখানে আমজাদ আলি সরোদে ‘আজি বাংলা দেশের হৃদয় হতে কখন আপনি…’ বাজিয়ে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। এই আন্দোলন সমস্ত কলকাতায় ছড়িয়ে গিয়েছিল। আমি শিয়ালদা স্টেশনে পথসভায় বক্তৃতা করেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের চাপে সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের এক উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন আমি আলিপুরে চাকরি করি সদর মহকুমা ভূমিসংস্কার আধিকারিকের দপ্তরে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (বর্তমান মুখ্যসচিব) ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, অতিরিক্ত জেলা শাসক ( ভূমি সংস্কার )। । তাঁর একটি অসামান্য গুণ, এক ঘণ্টা বক্তৃতা দিলেও একটিও ইংরেজি বা অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করবেন না। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল এই কাজের দায়িত্ব। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাঁর সঙ্গে এই কাজে যুক্ত হতে চাই কি না। যুক্ত হয়েছিলাম। আমাদের প্রথম কাজ ছিল পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ব্লক অফিসে কত বাংলা টাইপ রাইটার লাগতে পারে এই কাজের জন্য, তা হিসেব করা। কম্পিউটার আসেনি তখন। তারপর পরিভাষা তৈরি। বাংলাদেশে পরিভাষা তৈরি আছে, তার সাহায্য আমরা নিতে পারি। কত মিটিং করেছি আমরা। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরেও গিয়েছি। তারাপদ রায় তখন ডিরেকটর অফ কালচার। তিনিও পরামর্শ দিতেন। কাজ অনেকটা এগিয়েছিল। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাজে আমাকে যুক্ত করে রাইটার্স বিল্ডিং থেকে আদেশনামা বের করতে উদ্যোগী হলেন। এক সকালে অফিসে গিয়ে শুনি এডিএম (এলআর) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে এডিএম (জেলা পরিষদ) করে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।
ভাষাদিবসের বিশেষ: "অনেকেরই বলার সময় - খেয়াল থাকে না" : ঈশান চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৩৮৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
বিশেষভাবে সক্ষম, ভিন্নভাবে সক্ষম বা "দিব্যাঙ্গ" —এর মধ্যে তো প্রকাশ পায় প্রতিবন্ধী মানুষদের এক উঁচু পেডেস্টালে তুলে দেওয়ার মনোভাব। প্রতিবন্ধীমাত্রই তার কিছু বিশেষ ক্ষমতা, ভিন্ন ক্ষমতা, দৈব ক্ষমতা ইত্যাদি থাকতে হবে। কারো যদি তেমন ক্ষমতা থাকে থাকুক, আপত্তি নেই, আমার তো নেই। হলফ করে বলতে পারি, অধিকাংশ প্রতিবন্ধী মানুষদেরই তেমন কোনো দৈব ক্ষমতা নেই। তবে কেন এই চাপিয়ে দেওয়া বিশেষণ?
পর্ব – ১৯: খিচুড়ি ও তার ইয়ার-দের খোঁজ : নীলাঞ্জন হাজরা
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২৪৩৮ বার পঠিত
এখানে খিচুড়ি থেকে দু-দণ্ড সরে ঘিয়াৎশাহি সুলতানের হেঁশেলের ‘ভাত’ নিয়ে একটু চর্চা করার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছি না। এ কেতাবে যেসব বৈচিত্র্যময় ‘ভাতের’ কথা আছে তা ভেতো বাঙালিকে পদে পদে অপ্রস্তুত করবে! যেমন, চিনি মেশানো গোলাপজল কিংবা গোলাপ-গন্ধী চিনি (গুলশকর) দেওয়া ভাত, জংলি আঞ্জির দেওয়া ভাত, তালমিছরি দেওয়া ভাত, ‘দুটি সোনার মোহরের মাপে চাকা চাকা করে কাটা দশটি কলা আর দুই শের কিশমিশ দেওয়া ভাত’, সেঁকা ছোলা আর সেঁকা তিল দেওয়া ভাত, দুঘ কিংবা রস কিংবা সুগন্ধি জল কিংবা কুমড়োর রস মেশানো ভাত, সেঁকা তিল, মেথি, এলাচ, লবঙ্গ, লেবুর রস, নুন, ঘি এবং ঘিয়ে ভাজা হিং দেওয়া ভাত, দুঘ আর রসুন দেওয়া ভাত, বড়ি, মাংস আর লেবু দেওয়া ভাত, টক কমলার রস, কুমড়োর রস, লেবুর রস, মিষ্টি কমলার রস, পোমেলোর (সদাফল) রস কিংবা কামরাঙার রস মেশানো আলাদা আলাদা কিসিমের ভাত…
বৃত্তরৈখিক (২৩) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ২৬২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এতো সমৃদ্ধ এবং এতো প্রাচীন ভাষার নিজস্ব কোন লিপি নেই। সংস্কৃতের কন্যা নয়, অতএব উত্তরভারতীয় ভাষাগুলোর মতো দেবনাগরী-সম্ভূত লিপি গড়ে ওঠেনি সাঁওতালি ভাষার জন্যে। লিপিহীন এই কথ্য ভাষা তাই হোঁচট খেতে খেতেই চলতে বাধ্য হচ্ছে ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির জগতে। এই অবস্থার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন ভাষাবিদ এক শিক্ষিত লড়াকু সাঁওতাল, তাঁর নাম রঘুনাথ মুর্মু। শুধু লিপি তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, ছাপাখানার কাজ শিখে, একটা একটা করে তৈরি করেছেন সাঁওতালি অক্ষর – জন্ম নিয়েছে অলচিকি লিপিমালা। তাঁর একনিষ্ঠ শিষ্যদের মধ্যে জলধর একজন, সে সাঁওতালি এবং বাংলা, দুটি ভাষাতেই সমান স্বচ্ছন্দ, দুটি ভাষাতেই কবিতা লেখে। রঘুনাথ নামে একটি মাসিক পত্রিকা চালায় সে, পত্রিকাটি দ্বিভাষিক – সাঁওতালি আর বাংলা – সে-ই সম্পাদক এবং প্রকাশক। এই পত্রিকায় মাঝে মাঝে লেখে নিলীন এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহকর্মী কয়েকজন।
বৃত্তরৈখিক (২৫) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৩ মার্চ ২০২১ | ৩০৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
নিলীন অকপটেই স্বীকার করে ছবির এগজিবিশন অর্গানাইজ করার ব্যাপারে কোনই ধারণা নেই ওর, কিন্তু সবাই মিলে চেষ্টা করলে হবে না কেন? বান্দোয়ানে ওর বন্ধু আছে জলধর, সাঁওতাল সমাজে তার খুব প্রতিষ্ঠা, তার সাহায্য নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তা ছাড়া সুদেশ আর জয়ি মিলে কলকাতায় একটা এগজিবিশন তো করেছিলো আগেই। আর বোম্বেতে মহেশের সাথেও ছিলো, সেগুলোর থেকেও তো নিশ্চয়ই খানিকটা শিখেছে ওরা।
খুশিঝোরাতে এগজিবিশন করার কথা জয়ির মাথায় আসেনি আগে, কিন্তু এখন সে রীতিমতো উত্তেজিত। শুভেন্দুদাকে জিজ্ঞেস করে, খুশিঝোরাতে যদি করি এগজিবিশন, যাবেন আপনি?
বৃত্তরৈখিক (২৬) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২০ মার্চ ২০২১ | ২০০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আজ পাঁচ তারিখ রোববার, সতেরো তারিখ শুক্রবার সে, জয়ি আর জুঁই পৌঁছোবে খুশিঝোরা – সুকান্তর যাওয়ার কথাটাও বললো সে, অ্যাজ আ গেস্ট – উনিশ তারিখ রোববারের মধ্যে সবাই যেন আসে। খুশিঝোরা সমিতির প্রথম ফর্মাল মীটিঙে। তুলি শুনে বললো আমি তো যেতে পারবো না এ কদিনের মধ্যে, তোরা সবাই মিলে যা ঠিক করবি, সেটাই হবে, আমার দিক থেকে কোন আপত্তি নেই। অরুণিমা শ্যামলিমা সুজয়, তিনজনেই বললো আসবে। খবর দেওয়া গেলো না নিলীনকে, যে টেলিফোনে ওর সাথে যোগাযোগ রাখে জয়ি, সেটা য়্যুনিভার্সিটিতে ওর ডিপার্টমেন্টের টেলিফোন, কাজেই কালকের আগে যোগাযোগ করা যাবে না ওর সাথে। এ দায়িত্বটা নিলো জয়ি, আর তার সাথে বাবার মারফত জলধরকেও খবর দেওয়া।
বামিস্লামিক সোনালী কাবিন অথবা কমিয়নিষ্ট ফ্রন্ট অফ আলিমুদ্দীন(ফুরফুরা) : জালাল উদ্দীন
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ০৭ মার্চ ২০২১ | ৬৩৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩১
বিমানবাবুরা জামায়েত উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকারী বলে সিদ্দিকুল্লাকে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি মনে করেন। পড়াশোনা করার জন্য বিখ্যাত কমরেডরা ‘জামায়েত উলেমায়ে হিন্দ’ শব্দবন্ধের মানে জানে না, সংস্থাটির ইতিহাস জানে না। চাড্ডিমান্য সংজ্ঞা অনুযায়ী দাড়ি আর টুপি ছাড়া সিদ্দিকুল্লার কোন নেড়েগুণ নাই। অধুনা রাজনৈতিকোচিত হার্মাদপনা, বাটপাড়ি অবশ্যই আছে। তবু, বিমানদা যখন বলেছেন, তখন সিদ্দিকুল্লা জামাতে উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকার বলেই সাম্প্রদায়িক। তাই বিমানদার এককাঠি সরেস, নিরেট, একেবারে একটা আস্ত জ্যান্ত পীরজাদা চাই! উলেমায়ে হিন্দ বনাম স্বয়ং শ্রীমান পীরজাদা! ইহা ধ্রুপদী প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
ফুলকো লুচি আর কমপ্লান-বাচ্চার মায়েদের না-গল্প : অনিন্দিতা রায় সাহা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৭ মার্চ ২০২১ | ২১৭৪ বার পঠিত
১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মহিলা ও পুরুষ, যাঁদের উৎপাদনশীল বা কর্মক্ষম বলে গণ্য করা হয়, তাঁদের খাদ্যাভ্যাসের একটা তুলনামূলক পরীক্ষার ফলের দিকে নজর দেওয়া যাক। যে খাদ্যদ্রব্যগুলি এতে বিবেচনা করা হয়েছে তা হল দুধ/দই, ডাল, সবুজ শাক-সবজি, ফল, ডিম, মাছ, মাংস। প্রতিটি ক্ষেত্রেই শতকরা হিসেবে মহিলারা অনেকখানি পিছিয়ে। অবশ্য এমন নয় যে পুরুষেরা সকলেই নিয়মিত এইসব খাবার খান। তবু তাঁরা যা খান বা যা তাঁদের খেতে দেওয়া হয়, মহিলারা তাও পান না বা সামাজিক অভ্যাসবশত নিজেরা নেন না।
শুখা স্লোগানে ফ্যাসিবাদ রোখা যায় না : ছন্দক চ্যাটার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১১ মার্চ ২০২১ | ৮৯২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭৭
৩৫ বছর এই রাজ্যে তথাকথিত বাম শাসন ছিলো, যেখানে বড় মাত্রায় সমাজের প্রায় প্রতিটি বর্গের মানুষ কোন না কোন ভাবে পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলো। রাজনৈতিক ভাবে কী হয়েছে, সে আলোচনা স্বতন্ত্র, কিন্তু আসলে গোটা সমাজ জুড়ে কোন দর্শন চারিয়ে গেছে তার দিকে নজর দিতে হবে। পার্টির সমর্থক পার্টির লোকাল কমিটির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে না, পার্টির লোকাল জোনালের বিরুদ্ধে, জোনাল জেলার বিরুদ্ধে, জেলা কমিটি রাজ্য কমিটির বিরুদ্ধে, রাজ্য কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি পলিটব্যুরোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারবে না। পলিটব্যুরো যা ঠিক করছেন তা স্তরে স্তরে পালন করার নির্দেশ আসছে, এর মধ্যে দিয়ে ‘কেন্দ্র’র প্রতি আনুগত্য এবং নির্ভরশীলতা তৈরি হয়, সেই সমাজে সব থেকে যা শক্তিশালী হয়, তা ফ্যাসিবাদী মনোভাব।
জয়ের বিশ্বজয় - ১২ : জয় মণ্ডলের সাথে আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : ঘুমক্কড় | ১১ মার্চ ২০২১ | ৩৫৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আমি তো স্থানীয় ভারতীয় নই, আগন্তুক। আমার কাছে কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, খয়েরি চামড়া এ সবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সেসময়ের মধ্যেই আমি বুঝে ফেলেছিলাম যে, আমরা সবাই মানুষ। আমাদের সংস্কৃতি আলাদা, খাদ্যাভ্যাস আলাদা, ধর্ম আলাদা—কিন্তু আমরা সবাই মানুষ। শিরায় একই রক্তে বইছে। তুমি এটাকে কেতাবি দর্শন বলতে পার, কিন্তু এটা আমার অভিজ্ঞতা। আমাকে দেখেই ওরা বুঝেছিল যে আমি আফ্রিকান নই। এমনকি আমাকে জিজ্ঞাসাও করল, আমি ‘মুইন্ডি’ নাকি।
জনযুদ্ধ কারে কয়! : বিশ্বজিৎ হাজরা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৪ মার্চ ২০২১ | ৩৫৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
একজন সেই রাতে কান পেতে পেতে শব্দমাহাত্ম্য চিনতে শিখিয়েছিলেন বেশ দরদ দিয়ে। কাছে-দূরে ওই চাপা-গম্ভীর শব্দগুলো, যেগুলো ইকো হতে হতে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো বোমার। আর মাঝে-মধ্যে, নেহাতই খাপছাড়া ভাবে, ওই অস্ফুট ফট্-ফট্ শব্দগুলো হলো বুলেটের। বন্দুক ছোড়া হচ্ছে। সর্বনাশ! আবার শুরু হলো নাকি? হার্মাদদের আক্রমণ? জিজ্ঞেস করায় দু-দিকে কনফিডেন্টলি ঘাড় নেড়ে তিনি বলেছিলেন, নাঃ। সে আওয়াজ আলাদা। এগুলো ‘অ্যাকশন’-এর আওয়াজ নয়। ‘অ্যালার্ট’ করার আওয়াজ। দু’পক্ষই দু’পক্ষকে বলতে চাইছে … সাবধান … এগিও না … আমরাও তৈরি আছি! ঢোঁক গিলে বুঝেছিলাম, কখনো কখনো ডোভার লেনের চেয়েও উচ্চাঙ্গের মিউজিক চর্চা হয় লড়াইয়ের ময়দানে।
আব্বাসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তিনটি বা দুটি কথা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৫ মার্চ ২০২১ | ৭৯৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
বামরা অনেকদিন মাটির কাছাকাছি লোককে ফোকাসে আনেনি। টিভিতে যে মুখগুলি, সবই শিক্ষিত। যেটুকু নড়াচড়া, তাও শিক্ষিত অংশটিকে নিয়েই। কেন, সে অবশ্য বোঝা মুশকিল, দেবলীনা হেমব্রমের মতো নেত্রী থাকতেও। কিন্তু সে অন্য কথা। যে কোনো কারণেই হোক, আব্বাস, এই কাঁচা আনকোরা মাটির গন্ধটি সরবরাহ করছেন। তিনিই এখন পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের প্রতিভূ।
বদলে যাওয়া নন্দীগ্রামে : স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১৫ মার্চ ২০২১ | ৪০২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
শুভেন্দুর মূল তাস, যা বোঝা গেল দুইটি। এক, নন্দীগ্রামে মমতা বহিরাগত। দুই, সাম্প্রদায়িক বিভাজন। এই এলাকায় গত বছর দশেক ধরে আরএসএস-এর নানা সংগঠন তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে একটা 'মুসলিম আগ্রাসন' সংক্রান্ত টেনশন এমনিতেই আছে। শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক সব সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বক্তৃতা সেই আগুনকে আরও উস্কে দিয়েছে।
নন্দীগ্রামের জনবিন্যাসের অঙ্কে চোখ বোলালে দেখা যাচ্ছে ওখানে ৩০/৩৪ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে বলে যে আলোচনা চলছে তা একটু বাড়াবাড়ি। নন্দীগ্রাম বিধানসভা গঠিত নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে। ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী এই দুই ব্লক মিলিয়ে মোট ৩৩১,০৫৪ জনসংখ্যার ২৪৪,৬৬৭ জন, অর্থাৎ ৭৩.৯৬% হিন্দু, এর মধ্যে ৫৪,৫০৩ (১৬.৪৬%) জন তপসিলি জাতি ভুক্ত। আর মুসলিম জনসংখ্যা ৮৫,৬৯৬, বা ২৫.৮৮%।
কৃষি ও পরিবেশ: বিজয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথোপকথন : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : কৃষি | ২২ মার্চ ২০২১ | ৩৯৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আমার একটা চেষ্টা থাকে, আমার পদ্ধতিতে কিছু বায়ো অর্গানিক বস্তু নষ্ট হলেও, কিছু যাতে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হয়। কোন কোন মাঠে অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করি। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য হল নানা ধরনের ডেটা জেনারেট করা। কোথাও কোন ডেটা নাই, পাঁচবিঘে জমিতে কতটা চুনোমাছ হতে পারে, কেউ বলতে পারে না। পুঁটি, মৈয়ে মাছে কতটা পুষ্টি কী আছে, তার কোন হিসেবও নেই কোথাও। গুণীন চ্যাটার্জি, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, কিছু কাজ করেছিলেন, কেঁচোর চাষ করেছিলেন, জমির উপকারে লাগবে বলে, ধান মাঠে মাছের চাষ কিছু করেছিলেন।
পেন্সিলে লেখা জীবন (১৭) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২০ মার্চ ২০২১ | ৪৪৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
আমার সদ্য প্রকাশিত শারদীয় সংখ্যার উপন্যাস তিনি করবেন কি না জিজ্ঞেস করতে গিয়ে দেখি সমরেশ বসু। বললেন, ভালো লিখেছ উপন্যাস, তবে আরও নিবিষ্ট হতে হবে, তুমি পারবে উপন্যাস লিখতে। আমার পক্ষে ওই কথাগুলি যেন আশীর্বাদ হয়েছিল। প্রকাশক, কলেজ স্ট্রিট পাড়ার কর্তৃত্বময় ব্যক্তিত্ব। গম্ভীর কন্ঠস্বর। সমরেশ বসুর কথা শুনে বললেন, দিয়ে যাও, ছাপব। তারপরের কাহিনি হৃদয় বিদারক। বই ছাপা আর হয় না। আমি থাকি শালতোড়া। কলকাতায় আসি। এসে খোঁজ নিই। হবে হবে শুনি। এক বছর গেল, দু-বছর গেল, তিন বছর গেল, বই আর বেরোয় না। ১৯৯০-এর বইমেলার পর ফেব্রুয়ারি এক হঠাৎ হয়ে যাওয়া তপ্ত দুপুরে গেছি তাঁর কাছে। তাঁর সামনে বসে আছেন এক অগ্রজ লেখক। খুব সিনিয়র ছিলেন না তিনি। আমি বইয়ের কথা প্রকাশক মশায়কে জিজ্ঞেস করতে তিনি ক্রুদ্ধ গলায় বললেন, আপনি প্রায়ই আসেন কেন বলুন দেখি, বিরক্ত করেন কেন?
চিরবঞ্চিতদের দাবি নিয়ে রাজনীতি ছাড়া পথ নেই : কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ২৩ মার্চ ২০২১ | ৩০২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা না ঘটা নিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করে এসেছি, এবং সেটা সঙ্গত কারণেই। কিন্তু, হিংসার ঘটনা না ঘটা মানেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দূর হয়ে গেছে – এই ভাবনার মধ্যে অতি সরলীকরণ থেকে গেছে। বরং বলা চলে, বাংলার রাজনীতি, এবং রাজনীতি নিয়ে বিদ্যাচর্চা ও অন্যান্য আলোচনায় সামাজিক বিভাজনে ধর্ম, জাতি, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলোকে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই এড়িয়ে যাওয়ার পিছনে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষে মানুষে দূরত্ব বেড়ে চলা – সেটা আর্থ-সামাজিক দিয়েও যেমন বেড়েছে, তেমনি সাংস্কৃতিক দিয়েও বেড়েছে।
নতুন কৃষি আইন ও কৃষকের প্রতিরোধ: সাম্প্রতিক আলোচনাসভার অনুলিখন - দ্বিতীয় পর্ব : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : কৃষি | ২৬ মার্চ ২০২১ | ৪১১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
গ্রামীণ জীবন ও কৃষি বিষয়ের প্রখ্যাত সাংবাদিক পি সাইনাথ এবং অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশের বক্তব্যের সংক্ষেপিত অনুলিখন, রাইট টু এডুকেশন ফোরামের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল। এই আলোচনাসভাটি গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং মূলত বুদ্ধিজীবীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, বিষয়টি রাজনৈতিক হলেও, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে যে মতাদর্শের ভূমিকা থাকে তার অবশ্যম্ভাবী উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও, আলোচনাটি, বক্তাদের গুণেই দলীয়, বিশেষত নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে খুব সম্পর্কিত কিছু হয়ে ওঠেনি।
নন্দীগ্রামের সেই রাত -- সম্পাদকের বক্তব্য : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৯ মার্চ ২০২১ | ১৫১১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১৩
টেকনিকালি উদ্ধৃতির মধ্যের বক্তব্যের সরাসরি কোনো দায় নেবার প্রয়োজন না থাকলেও (যিনি বলেছেন, সেটা তাঁর দায়), নৈতিক দায়িত্বের কিছুটা নিশ্চয়ই লেখক এবং সম্পাদকের উপর বর্তায়। সে দায়, অবশ্যই স্বীকার করা দরকার। করছিও। ভবিষ্যতে, আশা করি, যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না, হলে, অবশ্যই এই শিক্ষা কাজে লাগবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটুকুও মাথায় রাখতে হবে, যে, পরিস্থিতিটি যুদ্ধক্ষেত্রেরই ছিল। ক্ষয়ক্ষতি, খুন-জখম, মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সব মিলিয়েই। যে সরকারি দল যুদ্ধক্ষেত্রের হত্যালীলার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল নিজের রাজ্যের অধিবাসীদের, তারও সেই ভয়াবহ অপরাধ স্বীকার করার সময় হয়েছে। এই লেখাটির যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁরা এই প্রসঙ্গটি পুনরুত্থাপন করেছেন যখন, তখন আশা করি, এই বিষয়টিও মাথায় রাখবেন।
বৃত্তরৈখিক (২৮) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৩ এপ্রিল ২০২১ | ২৬২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
তোমার প্রতিভা ছিলো, বারবার বলছি জয়ি। প্রতিভা না থাকলে ভূদেবদার মতো অমন খুঁতখুতে লোক তোমার প্রথম ছবিটাই কিনে নিতেন না। আর শুধু ঐটুকু কেনাই তো নয়, কলকাতার লিট্ল্ ম্যাগাজিন ওয়র্ল্ডে আর বিজ্ঞাপন-ইলাস্ট্রেশনের জগতে তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে কতো মানুষের সাথে কথা বলেছেন শক্তিদা আর ভূদেবদা, তা তো তোমার চেয়ে বেশি কেউই জানেনা। শুধু ঐটুকুই নয়, তোমার প্রতিভার স্ফুরণের জন্যে বোধ হয় ঠিক ঐ সময়টায় একজনের প্রয়োজন ছিলো, এমন একজন যে তোমাকে ঠিক ঠিক দিশা দেখাতে পারবে, যে তোমার দক্ষতার পরের ধাপটায় তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে হাত ধরে। নিখিলেশদার মাধ্যমে তোমাকে বিকাশ ভট্টাচার্যর কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন শক্তিদা। বিকাশ ভট্টাচার্যর মতো এ যুগের শ্রেষ্ঠ চিত্র-প্রতিভাদের একজন নিজে তোমার সাথে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন ছবি আঁকার পাঠ দিতে। এ কথা তুমিই আমাকে বলেছো জয়ি যে তোমার তা পছন্দ হয়নি। পালিয়েছিলে তুমি।
বৃত্তরৈখিক (২৯) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ২৩৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
অস্থির বোধ করে জয়মালিকা। কলকাতা শহরে তার কোম্পানীর গেস্ট হাউজে একা একা বিছানায় শুয়ে গত কয়েক বছরের নানা ঘটনার কথা মনে আসে তার। যে এগজিবিশন আজ তার এত পরিচিতি এনে দিয়েছে, কলকাতার নানা খবরের কাগজ আর পত্রিকা তাকে নিয়ে এতো আলোচনা করেছে যে এগজিবিশনের ফলে, কয়েক বছর আগে সেই এগজিবিশনেরই একটা ছোট সংস্করণ এই খোদ কলকাতা শহরেই তো অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। কেউ আসেনি সেদিন দেখতে, একটা লাইনও আলোচনা হয়নি কোথাও ! কী হলো এর মধ্যে, তফাৎটা কোথায় ! নিলীনের বই? কিন্তু, কতোটা আলোচনা হয়েছে নিলীনের বইকে নিয়ে? নিলীনের বই-ই যদি খ্যাতি এনে দিয়ে থাকে তার, তাহলে সে বই নিজে খ্যাতি পেয়েছে কতটুকু?
বৃত্তরৈখিক (৩১) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৪ এপ্রিল ২০২১ | ২৫০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই ভূগোলের বাইরেও একটা ভূগোল আছে। সে ভূগোল জঙ্গলের মানুষকে নিয়ে। সে ভূগোল যে অঞ্চলের সেই অঞ্চলের যে কোন জায়গা ধরে কিছুক্ষণ হাঁটলেই শাল-মহুয়ার জঙ্গল, ছোট-বড়ো পাহাড়, লালচে মাটি যার অনেকটাই কাঁকুড়ে, অজস্র তিরতিরে ছোট ছোট নদী-ঝোরার গুনগুনানি, আর কালোকোলো বেঁটেখাটো মানুষ – আপনি মাইলের পর মাইল হাঁটুন – এই একই দৃশ্য – মাইলের পর মাইল। কতো মাইল? কতো মাইল আমি ঠিক ঠিক জানিনা, কিন্তু অনেকটাই। এখান থেকে হাঁটতে শুরু কোরে বাঁকুড়া-মেদনীপুরের ভেতর দিয়ে ঢুকে যান সিংভূমে; ঘাটশিলা-জামশেদপুরের কারখানাগুলোর দক্ষিণে এসে ময়ূরভঞ্জ-কেওনঝর-সম্বলপুর হয়ে পশ্চিমে গিয়ে পৌঁছিয়ে যান সুন্দরগড়-রায়গড়-সরগুজা, তারপর আবার পূবের দিকে এসে পালামৌ-হাজারিবাগ-রাঁচি-গিরিডি-সাঁওতাল পরগণা দিয়ে ধানবাদ হয়ে ফিরে আসুন এই পুরুলিয়ায়।
মোদি-শাহদের নতুন আবিষ্কার, ‘সরকারচুরি’ : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ৩০ মার্চ ২০২১ | ৪২০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
বিজেপি কোনও রাজ্যে নির্বাচনে যদি হেরেও যা্য়, তবু বিজেপি সেখানে সরকার গড়তে পারে। বিজেপি সম্পর্কে এখন বলা হয়, জিতলে আমরা সরকার গড়ব, আর হারলে, তোমরা বিরোধী আসনে বসবে। মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, গোয়া সহ বেশ কিছু রাজ্যে হেরে গিয়েও সরকার গড়ে বিজেপি প্রমাণ করে দিয়েছে, ভোট বা নির্বাচন একটা ধাপ মাত্র, সরকার গড়ার জন্য ভোটে জিততেই হবে, তার কোনও মানে নেই।
নাগরিকত্ব সংশোধনী, ২০১৯ - বিভাজনের বিধান : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ৩০ মার্চ ২০২১ | ৩৯৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আফগানিস্তানকে সি এ এর আওতায় রাখা হল, কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হল না, এই বিসদৃশতার পিছনে একটিই কারণ থেকেছে। তা হল, এই আইন ধর্মীয় নিপীড়নের কথা বলেছে, জাতিগত নিপীড়নের কথা বলে নি। ধর্মীয় নিপীড়নের পিছনেও একটি মাত্র ধর্মকে দায়ী করে এই আইনের প্রণয়ন, তা হল ইসলাম। সহজ বাংলায় ইসলাম-বিদ্বেষই এই আইনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। শ্রীলঙ্কান তামিলদের উপেক্ষা করাও সেই কারণে, যে তাঁদের দুর্গতির পিছনে মুসলিম-প্রধান কোনও রাষ্ট্রকে দায়ী করা যায় না।
কোভিড-১৯ অতিমারী : রাজা ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০২ এপ্রিল ২০২১ | ২৯৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সাফল্যের ইতিহাস উল্লেখ্য বিষয় হলেও সেই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য নয়। প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য পাঠকদের কাছে এই সত্য পরিবেশন করা যে প্রাণঘাতী জীবাণুর সঙ্গে মানব সভ্যতায় সংঘাত এই প্রথম নয়। একশ বছর আগে ১৯১৮-র আর একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যাকে স্প্যানিশ ফ্লু বলা হয়, এক বছরে প্রায় পাঁচ কোটি (৫০,০০০,০০০)মানুষের প্রাণ হরণ করেছিল। শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ, জওয়ান কেউ রেহাই পায়নি ভাইরাসের কবল থেকে। ১৯১৮র ভয়াবহ প্যান্ডেমিকের পর এক শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, এবং প্রযুক্তিগত বিদ্যায় অভাবনীয় উন্নতি সত্ত্বেও, স্প্যানিশ ফ্লুএর চেয়ে শতভাগ দুর্বল কোভিড-১৯-এর হাতে এক বছরে সাতাশ লক্ষ (২,৭২০,০০০)মানুষের প্রাণনাশ কি এই প্রমাণ করে যে রক্তপিপাসু প্রকৃতির হাতে মানুষ আজও অসহায়?
নির্বাচনী প্রচারে জনজীবনের মূল বিষয়গুলি কি উপেক্ষিত? : অচিন চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ০৬ এপ্রিল ২০২১ | ৩৫০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মানবোন্নয়ন হলেই কি বিনিয়োগ হুড়মুড় করে চলে আসবে? না। বিনিয়োগ আসে দশরকম কারণে। খয়রাতি বেশির কারণে বিনিয়োগ কমবে না। বিনিয়োগ যে কারণে কমবে সেখানে প্রশাসনিকতার একটা ভূমিকা আছে। প্রশাসনিকতা কতটা সক্রিয় তার উপর অনেকটা নির্ভর করছে এবং অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতার দিক থেকেও দেখতে হবে। একটা ইতিহাস থাকে অনেক সময় এবং সেখানে ইতিহাসের কতকগুলো মিথ, সেগুলোও চালু থাকে। এখানে যেমন চালু ধারণা শ্রমিক অসন্তোষ অনেক বেশি বলে বিনিয়োগ হত না, হয় না। আমরা আমাদের গবেষণা থেকে দেখিয়েছি যে শ্রমিক অসন্তোষটা যে ছিল না তা নয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ার অন্য অনেকগুলো কারণ ছিল। এগুলো নানান রকম গবেষণা থেকে আজকাল উঠে আসছে। কিন্তু মানুষের মনে এই যে অতিকথাগুলো ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে, সেগুলোর জন্য কিন্তু আমাদের একটা প্রধান বাধা হচ্ছে, জনজীবনে যেগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস, সেগুলো নিয়ে আমরা খুব একটা কথা বলে উঠতে পারছি না। এইটা কিন্তু আমাদের একটা ধারাবাহিক লড়াইয়ের ব্যাপার, আমি বলব। এই মিথগুলো, এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো, এগুলোর সঙ্গে লড়তে হবে। একটু পরিসংখ্যান মিশিয়ে, মানুষজন যেগুলো নিয়ে চর্চা করেন, সেগুলোর ভিতরে ঢুকে একটু একটু বোঝার চেষ্টা করা।
দুইটি টাক একটি দাড়ি: বিজেপির জনসমর্থনের দাবির ঢক্কানিনাদ : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ০৯ এপ্রিল ২০২১ | ৩৭১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
অর্থবল, মিথ্যাচার শেষ হাসি হাসবে নাকি আমাদের ভাষা, প্রগতিশীল ঐতিহ্যের, সহাবস্থানের অহংকার, আমাদের শিরদাঁড়া সোজা হবার পথ বেছে নেবে, তা সময়ে বোঝা যাবে, তবে দেশ জুড়ে বিজেপির পরাক্রমের তত্ত্ব খ্যাখ্যা হাস্যরবে পরিত্যাগ করুন। আর বিজেপি (আদি) ও বিজেপি (নব্য) সততার দাবি করলে, কাটমানির দুঃখ ভোলার জন্য তিনদিন বিশ্রাম নিয়ে, অট্টহাস্যের সঙ্গী উপযুক্ত ঘোড়া ভাড়ায় পেতে ময়দানে, ভিক্টোরিয়ার সামনে থেকে ঘুরে আসুন।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - প্রথম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৩৩১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভ্যাকসিন নিয়ে সবার মধ্যে এতো ভয়, অথচ করোনা নিয়ে কারও মন কোনো ভয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। সব দলই ভোটের আগে জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ইশতেহারে দারুণ দারুণ কথা লিখেছেন। কিন্তু সেসব দলের মিছিল, জনসভা দেখলেই টের পাওয়া যায়, ওই কথা গুলি কেবল কথার কথা। নিশ্চিতভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন বাংলায় ঢুকে পড়েছে, তখনও তারা জনসভায়, মিছিলে ভিড় বাড়াতে ব্যস্ত। যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্কের ব্যাবহার ইত্যাদির কোনো অস্তিত্ব নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নীতি- আদর্শগত নানা রকম পার্থক্য আছে, কিন্তু এই একটা ব্যাপারে তারা মোটামুটি একই রাস্তায় হাঁটছে।
সুকিয়ানা – ১৮ পর্ব (গাজন) : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৩৬৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
গতবারে করোনার কারণে গাজন হয় নি, সব লকডাউন ছিল। কেবল মাত্র টিম টিম করে দুজন সন্ন্যাসী হতে হয় বলে হয়েছিল – এটা নাকি নিয়ম, যাদের বলা হল নীলে আর মূলে। তো গতবার গাজনের চারদিনের দুদিন রাতে বিশাল ঝড়ে কারেন্ট ইত্যাদি ছিল না, আর এদিকে জমকালো উৎসব হচ্ছে না বলে জেনারেটর ভাড়া করা হয় নি। ফলে ওই দুই সন্ন্যাসী, বিটু আর উদয় ঘুটঘুটি অন্ধকারে শিবতলায় শুয়ে ছিল প্রবল গরমে আর বিশাল মশার কামড় খেয়ে। মশার কামড় খেয়ে এত খিস্তি দিচ্ছিল দুজনে শিবদুয়ারে যে সেই খিস্তি রাতের বেলায় নিঃস্তব্ধতার জন্য বহুদূর শোনা যাচ্ছিল। কোন এক গুরুজন থাকতে না পেরে নাকি বলতে এসেছিল, “এই তোরা সন্ন্যাসী হয়ে ঠাকুর দুয়ারে বসে এত মুখ খারাপ করছিস, এই চারটে দিন মুখ খারাপ না করলেই কি নয়!
উন্নয়ন, দুর্নীতি তাস বাতিল, বাকি চার দফা ভোটে শীতলকুচিই বিজেপির পাকিস্তান : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ১৩ এপ্রিল ২০২১ | ৩০৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
নিরস্ত্র জনতার উপর গুলি চালানো এবং হত্যার পর দেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই সব মন্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর তা নিয়ে নীরব থাকা, একটাই কথা বলে। সেটা হল, ঘৃণা এখন ভারতে শাসকের রাজনীতির সব থেকে জরুরি উপাদান। এর সঙ্গে মিলিয়ে নিন আরও কয়েকটি তথ্য। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আন্দোলনকারীদের পোশাক দেখে চিনতে। মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্যকে শাহিনবাগকে উদ্দেশ্য করে জনতাকে দিয়ে বলাতে দেখা গিয়েছিল, ‘গোলি মারো সালোকো’। মোদী মন্ত্রিসভারই আরেক মন্ত্রীকে দেখা গিয়েছিল আখলাখ খুনে গ্রেফতার হওয়া এক অভিযুক্তের স্বাভাবিক মৃত্যুর পর, সেই শবযাত্রায় উপস্থিত থাকতে, যেখানে হত্যায় অভিযুক্তের ওই মৃতদেহ জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। সেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর টুইটে তাকে বলা হয়েছিল ‘শহিদ’। এই সব কিছু একই সুতোয় বাঁধা। আর এই মুহূর্তে তারা সবাই সক্রিয় শীতলকুচিতে।
দুটি সুর যেখানে মিশে যায় : হামিরউদ্দিন মিদ্যা
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৫০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
রমজান মাস পড়ল। সে সময় চলছে বাগদি পাড়ার পুন্যি পুকুরে জবকার্ড থেকে মাটি কাটার কাজ। বেলা বারোটা। সব পাড়া থেকেই দু-চারজন করে কাজে লেগেছে। যারা রোজা রেখেছে, খালি পেটে টলছে। তখন বাগদি পাড়ার কেউ একজন বলে উঠল, তুমরা যারা রোজা রেখেছ, ঘর যাবে তো চলে যাও। বাকি কাজ আমরাই করে দিব। এত রোদে খালি পেটে আর খাটতে হয় না।
দুগি বাগদির মেয়েটার বিয়ে লেগেছে মাছডোবায়। জামাইকে দিতে হবে একখানা নতুন সাইকেল, হাত ঘড়ি, আর নগদ পনেরো হাজার টাকা। কোথায় পাবে দুগি! খালেবিলে, নদীতে, মুয়ানে মাছ ধরে সে। দুগি গেল মল্লিকপাড়ার ঝড়ো মল্লিকের কাছে। গিয়ে সব কথা বলে আবদার করে বসল, ও চাচা, দুগিটার বিয়ে লাগাইছি। তুমি কিছু দিবে নাই?
ঝড়ো মল্লিক বলল, ও মা, এ তো খুশির খবর! মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিস, কিছু দিতে হবে বইকি। তা কী দিলে খুশি হবি বলত?
আবদুল চাচা তো সাইকেলটা দিচ্ছে, তুমি একখানা ভালো হাত ঘড়ি কিনে দিও তাইলে।
লা দিভিনা কোম্মেদিয়া : অনির্বাণ বসু
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৫১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সিন্ধু নদকে ছেড়ে ইসমত আর কীর্তনখোলা নদীকে ছেড়ে সআদত এসে পড়েছিল এক নতুন দেশে, যেখানে তারা সংখ্যালঘু। তবু তারা বেছে নিয়েছিল এই দেশটাকে, কেন-না, মাঝখানের এই দেশটাই জুড়ে রেখেছিল পরস্পরের জন্মভূমিকে। পালানোর আগে স্থির হয়েছিল, দু'জনের দেখা হবে দিল্লিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে─সবে পঁচিশ বছর বয়স তখন তার, সেভাবে সেজে ওঠেনি তখনও, ওরা চিঠিতে জানিয়েছিল, জেনেছিলও এমন-কি, সেই প্রায় সদ্যোজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনেই থাকবে তারা; সেখানেই দেখা হবে তাদের, বহুদিনের দাবদাহের পর বৃষ্টি নামবে চোখের পাতায়─আনন্দজল। সআদত তাকে বাংলা ভাষাশিক্ষার কিছু প্রাইমার রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠালেও ইসমত তখনও বাংলা ভাষাটা পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারেনি, কারণ যেহেতু তার বাড়িতে সবাই উর্দুতে কথা বলে, ফলত তার বাংলা বলার অক্ষম চেষ্টায় ক্রিয়াপদ গুলিয়ে যায় এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে উর্দু শব্দ। সআদত যে তাকে বাংলা শেখার জন্য জোরাজুরি করেছিল, তা নয়; বরং ইসমত নিজেই চেয়েছিল ভাষাটা শিখতে : ওদের বিয়ের পর সআদতের আম্মি-আব্বুর সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করে তোলার উপায় হিসাবেই বিষয়টাকে দেখেছিল ইসমত আর তাই বছর ঘুরতে-না-ঘুরতেই মোটামুটি চলনসই একটা কথোপকথনের ভাষা, নিজের মতো করে, তৈরি করে নিতে পেরেছিল সে।
নিয়ন বাতি : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ১৭০২ বার পঠিত
কমল বলে, “এই বাড়ি আপনাদের কাছ থেকে আমি কিনে নেব। দেখবেন আমি কেমন যত্ন করে রাখব। নতুন বাঁধন দেব, ভাঙ্গা ইঁট বদলাব, চুনকাম করব।”
মজিবুল মাথা নেড়ে হাসে, বলে, “এমনই হবার কথা ছিল, কমলবাবু।”
রেজওয়ানা বোঝে না মজিবুল কী বলতে চায়। তারপর কমল বলে, “কাল শুক্রবার। ছুটির দিন। আমার একটা অনুরোধ রাখুন আপনারা। আজ রাতে আপনারা এখানে থেকে যান। রাতের খাবার তৈরি। মনে করুন আপনারা আজ স্বাধীন, বেড়াতে এসেছেন আপনাদের শহরেরই আর এক প্রান্তে এক হোটেলে।” রেজওয়ানা কমলের দিকে তাকায়, একটা সন্ধ্যায় কমলের মুখটা মনে হয় বয়সে ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে।
এমন ভাবে জীবনকে দেখা যেতে পারে, ভাবে রেজওয়ানা, এভাবেও বেঁচে থাকা যায়। দুজনে যে কখন কমলের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করল তারা নিজেরাই জানল না। সন্ধ্যাতারা কখন ডুবে গেছে। রেজওয়ানা কবির আর ড্রাইভার সেলিমকে ফোন করে খবরটা জানিয়ে দিল।
আলতাফি কিসসা : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ১৩৭৮ বার পঠিত
এই তো গেল খাওয়াদাওয়া। আলতাফের আরও অনেক গুণ। সে গড়গড়িয়ে সংস্কৃত বলতে পারে, ইতিহাসের বৈদিক যুগ তার খুব পছন্দের, কেনোপনিষদে কত নম্বর সূক্তে যম নচিকেতাকে কী কী বলেছিল সে সব তো বটেই উর্দু আরবি কোরান হাদিসও একইরকম ভাবে হজম করে ফেলেছে মহাভারতের ইল্বল বাতাপির মতো। তারপর আগেই বলেছি তার পরোপকারের তুলনা নেই। আলতাফের খুব পছন্দের শব্দ হল ইত্তেফাক অর্থাৎ কিনা কোইন্সিডেন্স অর্থাৎ কিনা সমাপতন। ওতেই জীবনের সব রহস্য লুকিয়ে আছে বলে ওর মনে হয়। এই যেমন আমার বন্ধু রিনা আর্কাইভের গবেষণা করতে দিল্লিতে না এলে আলতাফের সঙ্গে আমার দেখাই হত না। এরকম অজস্র ইত্তেফাকের কাহিনি নিয়ে আলতাফের সোজা সরল মজার জীবন। আমি বললুম, চলো, হজরত নিজামুদ্দিনের দরগায় একদিন যাই। যেখানে উনি সাধনা করতেন সে নাকি খুব শান্তির জায়গা। আমার বন্ধুরা বলেছে। আলতাফ একটু চুপ করে রইল, বলল, আপনি বলছেন, আমি নিশ্চয়ই যাব কিন্তু আমি মসজিদ দরগায় যাই না, তাই আপনাকে হয়তো ভালো করে গুছিয়ে সব বলতে পারব না। আমি বললাম সে তো আমিও নিয়মিত মন্দিরে যাই না। তাতে কী এসে গেল? মেহবুব-এ- ইলাহি এই সুফিসাধকের দরগায় সব ধর্ম আর জাতের মানুষরা যায়। আর এখানেই পাশাপাশি চিরশান্তিতে শুয়ে আছেন মুরিদ আর মুরশিদ, শিষ্য আর গুরু। চিস্তি সুফিয়ানা সিলসিলা ধরে রেখেছে বিখ্যাত শায়ের, সংগীতজ্ঞ, কাওয়ালির স্রষ্টা, ভাষার জাদুকর আমির খুসরো আর তাঁর গুরু নিজামুদ্দিন আউলিয়ার গভীর প্রীতিময় আখ্যান।
ভয় : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৪৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আরে ধুর, ছেলেটা হাত দিয়ে যেন হাওয়া তাড়ায়। এক জায়গায় দুবার কখনও হবে না, টেররিস্টরা কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলে? আবার কোথাও করবে, পুলিশ টিকিও ছুঁতে পারবে না।
পুলিশও কোন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না। দুই টেররিস্ট তো পরশুদিনই এনকাউন্টারে মারা গেছে। একটা তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পরে সুবিমলের মুখে। কিন্তু কি অডাসিটি , তারপরেও আবার ব্লাস্ট হয়েছে। তার মানে বুঝতে পারছ? গমগম করে ওঠে সুবিমলের গলা। পাকিস্তানের মদত আর ট্রেনিং। সবকটা মুসলমানকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলে তবে যদি কিছু হয়।
কিন্তু এনকাউন্টার করল কেন? খবরের কাগজ থেকে মুখ সরাল উপরের বার্থের লোকটা এবার। ওদের ধরতে পারলে তো বরং কিছু খবর জানা যেতো। হয়তো পরের ব্লাস্টটা হত না।
সবাইকে চমকে দিয়ে সালমা বলে ওঠে, আল্লা জানেন, পিছন থেকে গুলি করে মেরেছে ছেলেটাকে, ওদের হাতে তখন কোন হাতিয়ার ছিল না। তার জলভরা চোখ বোরখার সীমানা ছাড়ায়।
হঠাত কামরাটা এক মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কিন্তু পর মুহূর্তে সুবিমল ঝাঁঝিয়ে ওঠে, বেশ করেছে, এতগুলো নিরীহ লোকের জান নিতে ওদের তো হাত কাঁপেনি। দেশের দুষমন সব। ধরে ধরে সবাইকে গুলি করে মারা উচিত।
সালমার কান্না আর নিঃশব্দ রইল না। বাধ্য হয়ে রমাকে বলতে হল , তুমি থামো তো একটু। সব জায়গায় গিয়ে তোমাকে পুলিশগিরি করতে হবে না।
তিরিশে সেপ্টেম্বর : অনিল ঘোষ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২০৬৮ বার পঠিত
সাম্য অনেক বিষয়ে গল্প লিখেছে, কিন্তু দাঙ্গা বা সম্প্রীতি নিয়ে একটিও নয়। নয় মানে লিখতে পারেনি। লিখবে কী, আজ পর্যন্ত দাঙ্গার সঙ্গে ওর প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ ঘটেনি। খুব ছেলেবেলার একটা দৃশ্য ওর মনে আছে। ওরা যে শহরে থাকে, সেখানে হঠাৎ কী কারণে যেন গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায়। কী গণ্ডগোল, কোথায় হচ্ছে-- এসবের কিছুই জানা নেই সাম্যর। ও দেখল ওর বাবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছবি। বাবা অফিস কোয়ার্টারের সিঁড়ি বেয়ে একবার উঠছেন, আবার নেমে আসছেন উদ্বিগ্ন মুখে। একটা আতঙ্কের পরিবেশ যেন। ওই ছোটোবেলায় এসব বোঝার কথা নয় ওর। বোঝেওনি। বাবার ওই সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামার মধ্যে কেমন মজা পেয়ে গিয়েছিল। আজও যখন দাঙ্গার প্রসঙ্গ আসে, তখনই চোখে ভেসে ওঠে সেই সিঁড়ি ভাঙার দৃশ্যটা। এরপর দাঙ্গার সঙ্গে ওর পরিচয় ঘটে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে। সেই ৬ ডিসেম্বর সাম্য ছিল স্বরূপনগরে, থানার উদ্যোগে একটা যাত্রা উৎসবে। সন্ধের সময়ও জানে না কী ঘটনা ঘটে গেছে দূরে অযোধ্যা নগরীতে। থানার ও সি পরিচিত। তিনি যেন কেমন অস্থির ছিলেন। মুসলমান অধ্যুষিত স্বরূপনগরে সেদিন ব্রজেন দে-র বাঙালি পালা খুব জমেছিল। হিন্দু-মুসলিম শিল্পীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভেরী বাজিয়েছিলেন রঙ্গমঞ্চে। মাঝরাতে সাম্যরা ফিরেছিল। রাস্তায় দেখেছিল যাত্রা ফেরত মানুষেরা ফিরে যাচ্ছে গল্প করতে করতে। তাদের মধ্যে হিন্দু ছিল, মুসলমানও ছিল। ইছামতী নদী পার হয়ে শহরে যখন প্রবেশ করল, তখনই আতঙ্কের সঙ্গে ওর পরিচয় ঘটল। মোড়ে মোড়ে পুলিশ। সাম্যদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথা থেকে আসছেন, কী ব্যাপার ইত্যাদি। এই ব্যাপারটা নিয়ে একটা গল্প লিখেছিল সাম্য। আতঙ্কের পরিবেশে মানুষের স্বাভাবিক আচরণের গল্প। এই স্বাভাবিকতা যেন দাঙ্গার বিরুদ্ধে দৃপ্ত প্রতিবাদ।
তবু সেখানে দাঙ্গা ছিল না। চেষ্টা করেও লিখতে পারেনি সাম্য। এখন যেন সেই সুযোগ এসে গেল সাম্যর।
লুঙ্গি সংক্রান্ত বিতর্ক অবসানের অকরুণ কাহিনী : বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৬৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
প্রতিবেশী সবজে বা ক্যাটক্যাটে নীল চেক-লুঙ্গি যে শুধু পোষাক নয়, পুরোনো ঢাকার রিকসার মত একটা পশচাদমুখী, মধ্যযুগীয়, অন্ধকারাচ্ছন্ন মানসিক অবস্থা। সর্বস্তরের নতুন বাঙ্গালি নারী তাই পুরুষকে সাথে নিয়েই আর পিছিয়ে থাকতে রাজি নন। দৈনন্দিনে, সামাজিক অনুষ্ঠানে,সদর্থে খেলানো বা হাতে নেওয়া কুচি ধুতি বা নানা কাট পাজামারা তাই এগোচ্ছে।
কিছু কিছু প্রযুক্তি যেমন প্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না, লুঙ্গিও পারলো না। দুটি সুবিধে কিন্তু ছিল। উত্থান সংক্রান্ত। প্রথমটি হল সম্প্রীতির আবহে খোলা আকাশের নীচে শিশিরে ভেজা গ্রাম বাংলায় প্রাত:কৃত্য। দ্বিতীয়টি হল ঘটনাচক্রে অনিচ্ছামৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে কোনো কোনো পুরুষের প্রাথমিক সামাজিক পরিচয় জেনে নেওয়ার সর্বজনীন সুবিধে। এই পদ্ধতি ১৯৪৬ নাগাদ মধ্য কলকাতায় আবিষ্কৃত হবার পর থেকেই জনপ্রিয়তার কারণে প্রায় জাতীয় ঐতিহ্য হয়ে উঠেছিল। অপিমোড-পুরনারীর বাচ্চা তথ্য সংগ্রাহক দের এতোটা জানার কথা নয়।
যাই হোক লুঙ্গির বিরুদ্ধে এই প্রবল জনমত প্রতিষ্ঠার পরের নয়, তার অল্প পূর্বের ঘটনা নিয়েই আমাদের সুশান্ত-অনিতার গল্প। তখনো সমাজে তর্ক চলছিল। বিবর্তনের গতি তখনো হয়তো কিছুটা সহমর্মী-শ্লথ ছিল।
বসন্ত উৎসব : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৭১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
“জানি না”, অস্থির সীতাপ্রসাদ মাথার চুল খামচে ধরল। “কিন্তু গত বছরের সব কটা ঘটনা পর পর খেয়াল করে দেখো। মে মাসে প্রভুজির হুকুম আসল। আমরা ত্রিশূল নিয়ে গ্রাম ঘুরে ঘুরে কবরখানায় হামলা চালালাম। এখানে, ঠিক এই জায়গাতে,” সীতাপ্রসাদ এলোমেলো হাত চালাল চারপাশে, “এখানে আমাদের গোটা দল এসে কবরগুলো একটার পর একটা খুঁড়লাম। এমনকি পচে গলে যাওয়া বডিগুলোকেও ছাড়িনি । যেসব জেনানারা কংকাল হয়ে গিয়েছিল তাদের বাদ দিলাম শুধু। তারপর কাজ হয়ে গেলে লাশগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলাম যাতে সকলে দেখতে পায়। পরদিন থেকে টেনশন শুরু হল। বলা হল ওরা অ্যাটাক করবে, তাই পার্টি অফিস থেকে রাত্রিবেলা তলোয়ার আর ত্রিশূল বিলি হল। আমরা হামলা চালালাম। খুনখামারি যা হবার তা তো হল, ওদের সবাই চলে গেল রিফিউজি ক্যাম্পে। সব কিছুই জুন মাসের মধ্যে মিটে গেছে। ভোটার লিস্ট চেক করে দেখো, যে কয়খানা ঘর এখনো টিকে আছে তাদের একটাতেও কোনো জোয়ান মদ্দ নেই। আগাছা সাফ করে দেবার মত উপড়ে ফেলেছি। তাহলে এতদিন বাদে এই মার্চ মাসে এমন কাজ করল কে? কে এমনভাবে খুন করল তিনজনকে? আশেপাশের গাঁও গুলোর কেউ নয় কারণ এই কাজ করবার জন্য গায়ের যা শক্তি লাগে তা ওই কয়েকঘর বুড়োহাবড়াদের মধ্যে নেই। আর এমনভাবে বডিগুলো সাজিয়ে রাখল ঠিক যেভাবে আমরা ঐ লাশগুলোকে সাজিয়ে রেখেছিলাম।
আত্মপক্ষ : আফসার আমেদ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৪৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
গতকাল সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনি। এক দুশ্চিন্তায়। শেষ মুহূর্তে এখানে চলে আসার দুর্ভাবনা আমাকে পেয়ে বসেছিল। কেন না আমরা মুসলমান। হিন্দু এলাকায় থাকব। নিরাপত্তাহীন এক ভয় আমাকে গ্রাস করেছিল। কেন না এখন গুজরাতে ভয়াবহ দাঙ্গা চলছে। বীভৎস সব খবর বেরোচ্ছে সংবাদপত্রে। আমার স্ত্রী নাসিমা খবরের কাগজ পড়ে না, তার এ নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা ছিল না। আমি একা একা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি, স্ত্রী পরিবারকে মহিষবাথানে যে নিয়ে যাচ্ছি, ঠিক করছি কি? এখানের পরিস্থিতি যে খারাপ হবে না, তার নিশ্চয়তা কি আছে। গ্রামে মুসলমান এলাকায় থাকি, খানিকটা মনে জোর পাই। মহিষবাথানে তো সবাই হিন্দু, আমরা একমাত্র মুসলমান।
জায়গা কেনার সময় এ কথা মাথায় আসেনি। মানুষজন যেভাবে জায়গাজমি কেনে, বাড়ি ঘরদোর করার স্বপ্ন দেখে, আর পাঁচজনের সঙ্গে আমার কোনও তফাত ছিল না। বরং মনে হয়েছিল হিন্দু এলাকায় মুসলমানরাও থাকবে। সহাবস্থানের প্রেম খুঁজেছিলাম। আর সেই প্রেমকে শেষ পর্যন্ত লালন করতে পেরেছিলাম বলে গতরাত দুর্ভাবনায় কাটিয়েও আজ মহিষবাথানে চলে আসতে পেরেছি।
গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশিত "নির্বাচিত গল্পপাঠ' গ্রন্থ থেকে।
যুদ্ধে যা ঘটেছিল : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৫৪৭ বার পঠিত
মাননীয় মহোদয়, আমাদিগের দেশ নাই। দেশ নাই তাই কিছুই নাই। হাসপাতাল, ইস্কুল, ব্লক আপিস, পঞ্চায়েত, থানা, চৌকি, রেশন কার্ড, ইলেকট্রিক, জল কিছুই নাই। মোবাইলের সিমও নাই। ফলে গ্রাম হইতে বাহিরে ইন্ডিয়া গেলে ভয় হয় কখন অনুপ্রবেশের দায়ে ধরা পড়ি। অথচ আমরা তো ইন্ডিয়াই হইতাম, ভাগ্যের ফেরে হই নাই। অকাল বৃষ্টি আমাদিগে এই করিয়াছে। ইন্ডিয়ার ইস্কুল কলেজে পড়ার কোনো উপায় নাই মিথ্যা পরিচয় গ্রহণ করা ব্যতীত। ছিটমহলের কন্যার জন্য ইন্ডিয়া বা বাংলাদেশ, কোথাও পাত্র পাইবার উপায় নাই। ছিটমহলের পাত্রকে কেহ কন্যাদান করিতে চাহে না। যাহার কোনো দেশ নাই, তাহার চালও নাই, চুলাও নাই, তাহাদের মাথার আকাশ ফুটা হইয়াই আছে, ফলে গ্রীষ্মে প্রখর রৌদ্র, বর্ষায় প্রবল ধারাপাত হইয়াই থাকে। জানি দেশ পাইলে ইহা আর থাকিবে না। অনাথের নাথ হইবে।
আমাদিগের পাশের গ্রাম মদনাগুড়ির সব রহিয়াছে। সেই যুদ্ধের সময় মদনাগুড়ির আকাশ ভেঙে অকাল বৃষ্টি হয় নাই। তাই ফসলও মরে নাই। এখন মদনাগুড়ি যাইতে বাতৃগাছ পার হইতে হইবে। বাতৃগাছ বাংলাদেশ, মদনাগুড়ি ইন্ডিয়া। তাহার পাশে সিঙিমারি নদী ইন্ডিয়া। নদী লইয়া বাজি ধরেন নাই প্রভুগণ। কেন না নদীর ভিতরে প্রজা নাই। খাজনা দিবে কোনজন? মানুষ সমেত গ্রাম হস্তান্তরে সুখ অনেক।
স্মৃতি ও অন্যান্য ধূসরতার শহর : সায়ন্তন চৌধুরী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৫৯৫ বার পঠিত
নার্গিস ভাবছিল দিল্লির কথা; দাঙ্গার অদ্ভুত অদ্ভুত খবর আসছিল দিল্লিতে। ওসমান সাহেব তখনও দোনামোনায় ভুগছেন, কেননা দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে, এটা যেন অবিশ্বাস্য ঠেকছিল তাঁর কাছে। করলবাগের বাড়িটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিল তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা। দলে দলে লোক চলেছে ট্রেনে করে পাকিস্তান, ওদিকে লাহোর থেকে শিখ পরিবাররা আসছে দিল্লি। যে যেখানে পারছে, ফাঁকা বাড়ীতে, বাগানে, রাস্তার পাশে উদ্বাস্তু মানুষেরা আশ্রয় খুঁজছে। কে যেন বলেছিল, নার্গিসের মনে পড়ে না, সীমান্ত পেরিয়ে অমৃতসরে শুধু খুন হওয়া লাশ নিয়ে ঢুকেছে একটা ট্রেন। একদিন বেলার দিকে ওসমান সাহেব বাইরের ঘরে বসে কিছু ব্যবসার কাগজপত্র দেখছিলেন। নার্গিস বাড়ীর ভেতরে ছিল। হঠাৎ রাস্তায় আর্তনাদ ও গোলমালের শব্দ শুনে সে ঘরের জানলার কাছে গিয়ে রাস্তাটা দেখার চেষ্টা করতে করতেই ওসমান সাহেবের চিৎকার তার কানে এল — জানলার কাছে যাস না। ততক্ষণে বাইরের দরজাটার গায়ে লোকগুলো লাথি মারতে শুরু করেছে। নার্গিস শুধু একঝলক দেখতে পেল একটা কনুই অব্দি কাটা হাত রাস্তায় পড়ে আছে, যেটা থেকে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে তখনও। তার বাবা ঘরে ঢুকেই তাকে জানলার কাছ থেকে টেনে এনে একটা থাপ্পড় মারলেন তার গালে। সেদিন তারা কোনোক্রমে বেঁচে যাবার পর দিল্লি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যায় ওসমান সাহেবের কাছে।
মানুষ মানুষের জন্য? : শক্তি দত্তরায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২৩২২ বার পঠিত
আমার বাবা জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও পূর্বপুরুষের আদিবাস ছিলো ভাটি অঞ্চলের ময়মনসিংহে। মাটির সূত্রে, ভাষার সূত্রে যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা, নাইবা থাকলো ব্যক্তিগত পরিচয়, পারেননি দুর্ভাগ্যের দিনে তাদের প্রতি উদাসীন থাকতে। একটি পলায়নপর ক্ষুধাতুর, ক্লান্ত দলকে নিজের সীমিত ক্ষমতায় একটু বিশ্রাম একটু আহার দিতে চেষ্টা করেছেন। বাবা দুঃসাহস করেছিলেন। নিজে আক্রান্ত হতে পারতেন। বাগান আক্রান্ত হতে পারতো। ঘরছাড়া মানুষ যেটুকু সম্বল পারে নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলো অজানা নূতন ঠিকানার খোঁজে। পথেই ছেড়ে যেতেও হচ্ছিলো কিছু। এক দর্জি তার সেলাইকলটি --ফুটমেশিনটি নিয়ে যাত্রা করেছিলো, যেখানেই যাক করে খেতে তো হবে। পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে সেটি বাবার কাছে বিক্রি করে গেলো। ওটি বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলনা আর, পাথেয়র প্রয়োজনও ছিল। আমাদের মা আমাদের সম্বতসরের জামাকাপড় সেই মেশিনে সেলাই করতেন। সেই মেশিনে জড়িয়ে ছিলো ঘরহারার দীর্ঘশ্বাস ।
দাঙ্গা পরবর্তী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ৩৩২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
- বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ লড়ছে এমন কিছু মুক্তিসেনা লুকিয়ে আছে ঐ ক্যাম্পগুলোতে। অস্ত্র চালান করা, আন্তর্জাতিক রেডিও স্টেশন অপারেট করা, সবেতে আছে ছেলেগুলো। শিতলখুচি বর্ডার দিয়ে ওরা পারাপার করে। আজ যাদের দেখছো, কাল গেলে দেখবে তাদের মুখগুলো পালটে গেছে। সে যাক, ওদের দেশের স্বাধীনতার লড়াই ওরা কেমনভাবে লড়বে ওরা বুঝবে। কিন্তু খুকি...
- খুকি কী ? খুকি কেমন কইরা আসলো এইসবের মধ্যে ?
মা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে।
- শোনো, তোমার খুকি না হাতে এতোদিন হাতকড়া পরতো, যদি ইন্দিরা গান্ধীর হুকুমে পুলিশ অন্যদিকে তাকিয়ে না থাকতো। রিলিফ দেবার নাম করে চরে যায়, ছেলেগুলোর সঙ্গে মেলামেশা করে। একটি মুসলমান ছেলের সঙ্গে নাকি সম্পর্কও হয়েছে। সারা টাউনে ঢি ঢি পড়ে গেছে তো। আর তার সঙ্গে তুমি মেয়েকে পাঠিয়ে দিলে!
ও শান্তি ও স্বদেশ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২২৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
থকথক করে কেঁদে ফেলে ছেলেটি , আমি মোছলমান বলি মা আমারে বাঁচায় নাই স্যার— যাতি আসতি কতবার ভালো ভালো কলা দিছি দুগগা মার পায়ের তলায়—বলাইকাকার সাথি কতবার ডাকিছি মা, ওমা জগজ্জননী আমারে একটু বুদ্ধি দাও মা --
প্রাণ খুলে শ্বাস নেন নূরতাজ মন্ডল। যাক বলাই সাহা্রা তাহলে মিথ্যে বলেনি কাল মাঝরাতে। ছেলেটা সত্যি নিরীহ। বলাই সাহার বউ কি যেন বলেছিল, গোপাল। তা গোপালই বটে ! একটু বেশি ভালো মানুষ। সমাজের লোকেরা যাদের বোকা বলে তেমন সোজা সরল মানুষ।
কৃস্টালের পেপার ওয়েটটা টেবিলের কাঁচের উপর ঘুরাতে ঘুরাতে নূরতাজ মন্ডল উপলব্ধি করেন, এই ছেলেটার ভালোমানুষি মনে এবার পাপ ঢুকে পড়বে। জেল বাস হয়ত তিনি রক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু ছেলেটা এবার সাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে। ওর মনে মানুষকে সহজে বিশ্বাস করার সরলতা মুছে গিয়ে অন্যদের মত জেঁকে বসবে আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবানকে ভাগ করে নেবার শিক্ষা। জন্ম নিবে ঘৃণা । মানুষকে ধর্ম দিয়ে ভাগ করতে শিখে যাবে ছেলেটা।
এক হাতের চেটো দিয়ে অন্য হাত মুছে নিয়ে তিনি মনে মনে হাসেন, এই তো এই জগতের বাস্তব শিক্ষা। ছেলেটার বুদ্ধির কমতি ছিল। এবার তা পূর্ণ হলো
পেন্ডুলাম : জয়ন্ত দে
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২০৪১ বার পঠিত
অগত্যা জামা টেনে পকেটে মানিব্যাগ ঠেসে বেরিয়ে পড়লুম। ফিরে মিষ্টির প্যাকেট রান্নাঘরে জমা করে বসলুম বারান্দায়। গল্প খুব জমে উঠেছে...
... আমরাও ঠিক করে ফেললাম, একজন হিন্দু মরলে দশজন মুসলমান মারব। আমাদের ভেতর তখন আগুন জ্বলছে। জিন্নার ডাইরেক্ট অ্যাকশন, লীগ প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দির মুসলমান যুবসমাজকে সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান, এক-একটা হিন্দুর দোকান লুট হচ্ছে– জওহরলাল পান্নালাল, কমলালয় স্টোর্স, কে.সি বিশ্বাসের মতো বড় দোকান। মুসলমান দোকান ওরা চিহ্ন দিয়ে রেখেছিল, লুটের হাত থেকে বাঁচাতে। এমন কি হাঙ্গামা হতে পারে ধরে নিয়ে মুসলমানদের জন্য এ্যাম্বুলেন্স মজুত রেখেছিল। লীগ প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে করে লীগের লোকদের জন্য ছোরাছুরি, পেট্রল, কেরোসিনও নিয়ে যাওয়া হয়।
আমি সামুর ছেলের দিকে তাকাই। চোখ দুটো বড়। যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, ঠোঁট দুটো একটু ফাঁকা, শুকনো খট খট করছে। বুঝতে পারি মুখ দিয়েই এখন বাতাস চলছে ওর। নিচু স্বরে বলি, বাবা।
কিন্তু ওরা বোঝেনি আমরাও ভেতরে ভেতরে তৈরি ছিলাম। ন্যাকড়ার বল বানিয়ে কেরোসিনে চোবানো হল। বোমা বাঁধা হল। এমনকি টেরিটরিয়াল আর্মিতে কাজ করে এরকম কিছু লোক বন্দুকের যোগান দিল। বোমা-লাঠি-বন্দুক নিয়ে গঠিত হল প্রতিরোধ বাহিনী।
এরপর বাবা কী বলবে আমি জানি। বাবা আজ সংক্ষেপে বলছে, তবু আমি জানি বাবা কী বলবে। ছেলেটি কঠিন চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকের ভেতর ছটফট করছে হাওয়া। বাবাকে থামাতেই হবে। গলা তুলে ডাকার চেষ্টা করি, বাবা, বাবা ও... ।
গুডবাই : সাদিক হোসেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২১৩৯ বার পঠিত
আমি ওর কিউরোসিটি আরও বাড়িয়ে দিয়ে সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ছেচল্লিশের দাঙ্গা’ বইটি খুলে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’ চ্যাপ্টারটি পড়তে শরু করে দিলাম।
দাদাজীর মৃত্যুর পর তার দেরাজ থেকে তরবারি হাতে জিন্নাহের একটি ছবি পাওয়া গেছিল। ছবিটি একটি প্রচারপত্র। তাতে কী লেখা ছিল তা ঠিক পড়া যাচ্ছিল না। তবে শিলা সেনের ‘মুসলিম পলিটিক্স ইন বেঙ্গল’ বইটিকে সূত্র হিসাবে ধরে নিলে এই প্রচারপত্রের ভাষা ছিল এই রকমঃ আশা ছেড়ো না। তলোয়ার তুলে নাও। ওহে কাফের, তোমার ধ্বংসের দিন বেশি দূরে নয়।
আমার ভাবতে বেশ অসুবিধা হয় আমার পূর্বপুরুষ কোনও একসময় এই স্লোগানটির সঙ্গে একাত্মবোধ করেছিল।
কিংবা এমনও তো হতে পারে, সময়ের উত্তেজনা তাঁকে এতটাই গ্রাস করে ফেলেছিল যে তিনি তাঁর স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিলেন!
‘সময়ের উত্তেজনা’ শব্দবন্ধটির প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া জরুরি। এই শব্দবন্ধটি অনেকটা মদের মতো। এই শব্দবন্ধটি এমন এক পরিসর সৃষ্টি করে যেখানে ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রকে অনায়াসেই ঊহ্য রাখা সম্ভব। ‘সময়ের উত্তেজনা’ একটি নেশা, যেখানে এই নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা মানুষগুলির আচরণকে আমরা তাদের নিজেদের দ্বারা সজ্ঞানে নির্বাচিত আচরণ হিসাবে ভাবতে চাই না। যেন কোনও মাতাল সুনসান রাতে গাল দিতে দিতে ঘরে ফিরছে। ‘সময়ের উত্তেজনা’ লঘু হয়ে এলে, তাই, একটি নিরাপদ আস্তানার সন্ধান আমরা পেয়ে যাব, এটুকু আশা করে থাকি।
কিন্তু দাদাজী কি শেষপর্যন্ত কোনও নিরাপদ আস্তানার সন্ধান পেয়েছিলেন? কেনই বা তিনি জিন্নাহের ছবিটি কুটি কুটি করে কেটে ছিঁড়ে ফেলে দেননি?
স্পাই : মোজাফ্ফর হোসেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২২১৫ বার পঠিত
আমরা যে রকম খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঠা বের করি, গাছটি নড়েও না, চড়েও না, এই অচেনা বৃদ্ধও সে রকম প্রাণ থেকেও জড়ের মতো পড়ে থাকে। গাছের মতো একটি বারও নিজে থেকে প্রাণের প্রমাণ দিতে যায় না। এক দল হতাশ হয়, অন্য দল নতুন উদ্যম নিয়ে শুরু করে। একটা পরিপূর্ণ শব্দ ওর মুখ থেকে যে বের করতে পারবে, সে যেন গ্রামে বীরের মর্যাদা পাবে!
আমরা যখন একঘেয়ে দৃশ্যে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলাম, তখনই আমাদের মধ্য থেকে বোমাটা ফাটাল কেউ।
স্পাই! দেখোগে ভারতের স্পাই। বোবা-পাগলের ছদ্মবেশে তথ্য নি’ পালাচ্ছি। কেউ একজন বলল ভিড়ের ভেতর থেকে। সঙ্গে সঙ্গে জনতা চাঙা হয়ে ঘুরে দাঁড়াল। মুহূর্তে সকলে যেন নিশ্চিত হয়ে গেল, লোকটি স্পাই ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। গ্রামের পশ্চিমে খাড়া মাইল ছয়েক হাঁটলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। আমাদের গোপন কোনো তথ্য নিয়ে সীমান্ত দিয়ে পালাচ্ছে বলে আমরা ধরে নিলাম।
স্পাইদের নিয়ে গ্রামে অনেক গল্পের প্রচলন ছিল। একটা গল্পের কথা তখনই মনে পড়ল। এরা এমন কৌশলী ও নিবেদিত দেশপ্রেমিক হয় যে, কোনো দেশে স্পাইগিরি করতে গিয়ে বিয়ে-সংসার পর্যন্ত করে। তারপর মিশন শেষ হলে বিনা বাক্যে স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে স্বদেশে ফিরে যায়। এমনভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যে তাদের এই ছদ্মবেশ ধরাও যায় না।
আমাদের ভেতর থেকে কেউ কেউ এরই মধ্যে পরীক্ষা করতে শুরু করেছে। প্রথমেই একজন কঞ্চির মাথায় চুলগুলো পেঁচিয়ে টান মারল জোরে। নকল চুল হলে উঠে আসত। কিন্তু মাত্র কয়েকটা চুল ছিঁড়ে এল। বৃদ্ধের গায়ের রং আসল কি না, মুখে মেকআপ দেওয়া কি না, পরীক্ষা করার জন্য হাবু ভাই পেছনের গর্ত থেকে এক বালতি ঘোলা পানি তুলে ওর মাথায় ঢেলে দিল। গায়ের রং যেমন ছিল, তেমনই থাকল। মাঝখান থেকে সকলের সন্দেহটা থেকে গেল।
দৌড় : অরিন্দম বসু
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৬ এপ্রিল ২০২১ | ২০৮৪ বার পঠিত
সইদুল তার ঘোড়াদের নিয়ে চলে যেতে যেতে একবার তাকাল ধ্রুবর দিকে। তারপর বলল, ‘আল্লার বল আর ভগমানেরই বল, দুনিয়া তো একটাই। কত জমি কেড়ে নেবে আমাদের কাছ থে? জমি থাকবে, মাঠও থাকবে। দৌড়ও থাকবে। দৌড় চললি তোর সাথে আমার মেলামেশাও চলবে। আমরা নড়বড়ে না হলিই হল।’
ঘোড়াগুলো যে পথে দৌড়ে আসবে তার দু’ধারে এখন ঘেঁষাঘেষি লোক। দূরে কলাগাছের সারির গায়ে গায়ে মানুষও সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। পুকুরপাড়ের উঁচু জমিতে জায়গা করে নিয়েছে অনেকে। যারা পেরেছে তারা চড়ে বসেছে আশপাশের গাছের মাথায়। দু-একটা পাকা বাড়ির ছাদেও উঠেছে। কাগজের ভেঁপু পোঁ পোঁ করে বাজছে নাগাড়ে।
উত্তর দিকে, মাঠের শেষমাথায় দুটো বাঁশ দূরে দূরে খাড়া করে রাখা। তাদের মাঝখানের দড়িতে খিরীশ গাছের ছোট ছোট ভাঙা ডাল ঝোলানো পরপর। ওখানে পৌঁছতে পারলেই দৌড় শেষ। ধ্রুব সেই জায়গা থেকে বেশ কিছুটা দূরে ভিড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বউ, ছেলে-মেয়ে মাঠের উল্টোদিকে।
দক্ষিণ দিক থেকে হইহই উঠল। দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই আওয়াজের ঢেউ ভেসে আসছে এদিকেও। ওই দেখা যাচ্ছে ঘোড়াদের। কেশর উড়ছে হাওয়ায়। খুরের দাপটে উড়ছে সাদা ধুলো আর কালো ছাই। ছিটকে যাচ্ছে ঘাস-পাতা-খড়ের কুচি। ধ্রুবর সামনে দিয়ে চলে গেল কয়েকটা ঘোড়া। তাদের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে যেন। নাকের পাটা ফুলে উঠেছে। ধ্রুব দেখতে পেল সইদুলের মাদি ঘোড়াটা ছুটতে ছুটতে আসছে। তার থেকে অনেক দূরে বাচ্চাটা। এই যাঃ, পাগলি তো দাঁড়িয়ে পড়ল। আরে, সে তো উল্টোবাগে চলেছে। হলটা কী?
সুকিয়ানা – ১৯ পর্ব (দুই প্যালেস মিউজিয়ামের গল্প) : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১৭ এপ্রিল ২০২১ | ২৭৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
“দরকার হলে এক দেশ আবার পুনর্জন্ম নিতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে পুনরায় উদ্ধার করা অসম্ভব”! তখনকার দিনের এক খুব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ টি ভি সুং পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এই কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে ২০,০০০ ক্রেট (বড় বাক্স) ভরা দুষ্প্রাপ্য চীনের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে প্যালেস মিউজিয়াম থেকে। সব কিছু প্যাকিং হয়ে যাবার পরে এবার অপেক্ষা – ঠিক কবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চালু করা হবে সেই নিয়ে নির্দেশ আসার জন্য মিউজিয়ামের স্টাফেরা অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩ সালে নির্দেশ এল পরিবহন চালু করার। সকাল বেলা গোটা বারো চোদ্দ মোটর গাড়ী এবং ৩০০ মত রিক্স ঢুকলো ফরবিডেন সিটিতে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল চরম – সবাইকে ব্যাজ দেওয়া, গাড়িতে স্পেশাল নাম্বারিং করা – এই করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত আটটার সময় তিয়েনমেন স্কোয়ারের সামনের রাস্তা, যেটা সেখান থেকে জেনগ্যায়াংমেন ট্রেন স্টেশনের দিকে গেছে সেখানে কার্ফু-র মত জারি করে দেওয়া হল। একমাত্র পারমিশন নিয়ে এবং স্পেশাল ব্যাজের লোকেরাই এই এলাকায় ঢুকতে পারত সেই রাতের বেলা। রাত নটার সময় সারি দিয়ে গাড়ি গুলি প্যালেস মিউজিয়াম থেকে রওয়ানা দিল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, সেই গাড়ির সাথে যোগ দিল আশে পাশের একজিবিশন হল থেকে বোঝাই গাড়িগুলিও। ট্রেন স্টেশনে গিয়ে সব কাঠের ক্রেট বোঝাই হল ২১টা ট্রেনের বগিতে।
ম্যাংগো পীপল, ম্যাংগো ফ্যাসিজম : দেবসত্তম পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ৪২৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে মার্কিন সাংবাদিক মিল্টন মায়ার গিয়েছিলেন জার্মান মহানগর ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে একটা গ্রামে। উদ্দেশ্য: গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে বোঝা যে, নাজ়ি পার্টির শাসনে থাকাটা সাধারণ গ্রাম্য জার্মান নাগরিকের চোখে কেমন ছিল। মায়ার সেখানে দশ জন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন, এবং তাঁদের সাথে কথা বলে তাঁদের চিন্তাভাবনা বুঝে দেখার চেষ্টা করেছিলেন। মায়ার আবিষ্কার করেন যে, সেই দশজনের মধ্যে কেবলমাত্র একজন (হ্যাঁ, ঠিক-ই ভাবছেন, মানে মাত্র ১০ শতাংশ) মনে করতেন যে, হিটলারের নাজ়ি পার্টির শাসন ছিল স্বৈরাচারী শাসন।
আশা রাখো। বললেন, শঙ্খ ঘোষ।। : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | অন্যান্য | ২২ এপ্রিল ২০২১ | ৪৫৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
১৯৯২ এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর তাঁর লেখা নিয়েছি। আর ২০০২ এ গুজরাট গণহত্যার সময় তিনি পথে নেমেছেন। অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায় ওরফে মধুদা ও আমি স্যারের বাড়ি যাই। বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সভা করি তাঁর বাড়িতে দেবেশ রায়, সৌরীন ভট্টাচার্য, জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন। গড়ে ওঠে গুজরাট সংহতি সমিতি। অন্তত ৪০ বার আমরা পথে পথে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছি।
এর মধ্যে ৩৩ টিতে স্যার সরাসরি উপস্থিত থেকেছেন। ধর্মতলা, রাজাবাজার, রিপন স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট,শ্যামবাজার কোথায় নয়?
নির্বাচনী প্রচারে জনজীবনের মূল বিষয়গুলি কি উপেক্ষিত? : অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ২২ এপ্রিল ২০২১ | ২৬৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমরা খুব কম শুনি। আমরা অনেক বেশি বলি। আমরা বলতে ভালোবাসি। আমরা বলতে চাই। বলাটা খুব জরুরি। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের শোনাটাও তো ভীষণ জরুরি। এবং আমরা বহুলাংশে শুধু আমাদের কথা শুনি। এমনকি, আমাদের যে সব রাজনৈতিক দল শ্রমজীবী মানুষের রাজনীতি করেন বলে মনে করেন, দাবি করেন— সে দাবি হয়তো অনেকাংশে সত্যিও বটে— তাঁরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষকে তাঁদের কথা বলেন, শ্রমজীবী মানুষের কথা তাঁরা তুলনায় অনেক কম শোনেন। আমার মনে হয়, এই শোনার অভ্যাস এখন আমাদের অনেক বেশি তৈরি করতে হবে। যদি সেটা তৈরি করতে পারি, তা হলে দেখা যাবে, আমাদের রাজনৈতিক প্রচারের মধ্যে, আমাদের রাজনৈতিক কথোপকথনের মধ্যে প্রথমত আমরা কী নিয়ে কথা বলব এবং দ্বিতীয়ত, আমরা সেই কথাগুলো কীভাবে বলব, দুটোর ক্ষেত্রেই হয়তো আমরা আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে অনেক বেশি করে পৌঁছতে পারব।
নির্বাচনী প্রচারে জনজীবনের মূল বিষয়গুলি কি উপেক্ষিত? : অচিন চক্রবর্তী, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ২৯ এপ্রিল ২০২১ | ৩০২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কৃষককে একটা শ্রেণি হিসেবে দেখার সমস্যা আছে। কারণ কৃষক এক রকম নয়, কৃষকের অনেক স্তর রয়েছে। এবং ভারতবর্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রদেশে, বিভিন্ন রাজ্যে এই স্তরবিন্যাসটাও ভীষণ আলাদা। পাঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস আর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস— দুটো একেবারেই মেলে না, ঐতিহাসিক ভাবেই মেলে না, খুবই আলাদা। পশ্চিমবঙ্গে কেন কৃষি আন্দোলন খুব একটা জোরদার হচ্ছে না, নির্বাচনী বিষয় হয়ে উঠছে না, তারও একটা কারণ সম্ভবত এই তফাতটার মধ্যেই আছে।
করোনা ও আমরা : অভিজিৎ মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২৩ এপ্রিল ২০২১ | ২৯৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আরেকদল বলে চলেছে, সরকার কী করবে? মানুষগুলোই বদ। মানুষগুলোই কোনও কথা শোনে না। তাই তো বটে। রাজনৈতিক প্রচার থেকে কুম্ভমেলা, তাতে তো সরকারের কোনও দায় নেই। যাবতীয় সচেতনতার প্রচার যে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল, তাতে সরকারের দায় নেই। দাবাই ভি আওর কড়াই ভি বলে চলা নেতা মাস্ক না পরে ব্রিগেডে সভা করছে, সরকারের কোনও দায় নেই। কোভিড টাস্কফোর্স যে গত দু-মাস কোনও মিটিং করে নি তাতেও সরকারের দায় নেই। মানুষ যে আজ লকডাউন শব্দটা শুনলে রেগে যাচ্ছে, তাতেও রাষ্ট্রের দায় নেই। অক্সিজেন বিদেশে এক্সপোর্ট হল, সরকারের কোনও দায় নেই। খাদ্য থেকে ওষুধ, কোনও কিছুতেই সুরক্ষা দেওয়ার কোনও দায় রাষ্ট্রের নেই। সব মানুষদের দোষ।
এর বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আছে আরেক যুযুধান পক্ষ। মাস্ক পরতে বললে তারা নিয়ে চলে আসছে গরীব মুটে-মজুরদের অসহায়তার কথা। তারা দুটো কথা ভুলে যাচ্ছে। এক, মহামারীতে সব থেকে বেশি কষ্ট সহ্য করবে ওই নীচেরতলার মানুষগুলোই। যে যত ওপরে, তার চিকিৎসা পাওয়ার সুরক্ষা তত বেশি। দুই, একথা অর্থনীতিতে প্রমাণিত সত্য যে গরীবদের চিকিৎসা ও তৎসংক্রাম্ত আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা কম।
ভিখুরাম আর করোনার ভূত : ডাঃ শ্যামল চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২৩ এপ্রিল ২০২১ | ৩২০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
বাঙালি এতকাল ভোটমগ্ন ছিল। ঘুম ভাঙছে এতদিনে! যখন বলা হচ্ছিল, মহারাষ্ট্র দিল্লি গুজরাট মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা ট্রেনের যাত্রী দের সবাইকে অন্তত 'ৱ্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট' করে ট্রেনে ওঠানো হোক, সবাই ভোটধ্যানে ছিলেন। আগেরবারের অভিজ্ঞতা বলছে, একমাস আগে থেকে এবার অন্তত এয়ারপোর্টে টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক হলে এত রোগ ছড়াতে পারত না বাঙলায়। এসব বলতে গিয়ে 'জিঙ্গল বেল আইটি সেল' এর খাতায় নাম তুললেন যারা, তাদের গাল দিন মনের সুখে। শুধু মাথায় রাখুন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না।
মাস্ক না - পরে, দূরত্ববিধি না মেনে যারা ঘুরে বেড়িয়েছি যত্রতত্র, দিল্লি বাঙলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে গেলেন যারা, সঙ্গে আনা বহু স্ট্রেনের করোনা ভাইরাস তাদের অনেককেই রেয়াত করবে না। 'ভাইরাসের স্মৃতি নেই', বিলকুল ঠিক, তবে ভাইরাসটা কিন্ত মানুষ মারতে আসে নি, এসেছে নিজেদের বাঁচাতে। নিজে বাঁচতে মরণকামড় এবারও হয়তো দেবে না, এখনো পর্যন্ত সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুহার কুড়ি সালের তুলনায় সামান্য বেশি, খুব বেশি নয়। তবে, এই ঢেউই শেষ নয়, লাইনে আছে আরও অনেক বাস্তুচ্যুত ভাইরাস, গোটা বিশ্ব জুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে একের পর এক স্ট্রেন, কোনটা নবজাতক, কোনটা হাইব্রিড, বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন ভাইরাস নিয়ে কাজ করে চলা বিজ্ঞানীরা।
পেন্সিলে লেখা জীবন (২০) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ৩০ এপ্রিল ২০২১ | ৩৮৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
পিপলস বুক সোসাইটি আমাকে বলেছিল, অতিবৃষ্টিতে বাঁধাইখানায় জল ঢুকে ফর্মা নষ্ট হয়ে গেছে। যারা নতুন লিখতে এসেছিলেন, তাঁরা বইটি পড়তে চান, পি বি এস-এ গিয়ে খুঁজে পান না। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর সরকার বদলেছে। ২০১৩ সালে বইমেলায় আমাকে পি বি এস-এর একজন ডাকলেন, আসুন আসুন। আমি পি বি এস-এ যেতাম না বই নিয়ে ঐ ব্যাপার হয়ে যাওয়ার পর। বিরক্ত হয়েই ওঁদের প্যাভিলিয়নে ঢুকে দেখি নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান স্বমহিমায় বিরাজমান। সেই চল্লিশ টাকা দাম। দশ বছর আগের দাম। ঝকঝকে ফর্মা। সেই পুরোন ছাপা। কী হয়েছিল এতদিন? তাঁরা বললেন ফর্মা হারিয়ে গিয়েছিল, খুঁজে পেয়েছেন আবার। ভুল জায়গায় রক্ষিত হয়েছিল। মিসপ্লেসড। এমন হয় আমি শুনিনি আগে। না কি বইটি তাঁরাই বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন অদৃশ্য চাপে। কিন্তু পি বি এস-এর মানুষগুলি আমার প্রিয়জন। প্রত্যেকে আদর্শবাদী। ত্যাগী। আমি অনীক পত্রিকায় তিরিশ বছর এক নাগাড়ে লিখেছি। দীপঙ্কর চক্রবর্তী এবং রতন খাসনবিশ পরম শ্রদ্ধার মানুষ। অনীকের সঙ্গে পি বি এস সরাসরি যুক্ত না হলেও অনীক পত্রিকা পি বি এস থেকেই বিক্রি হয়। ওঁদের ভিতরে বন্ধুতার সম্পর্ক। অনীক এবং পি বি এস-কে আমি আলাদা করে দেখতাম না। এই ঘটনায় সব গোল পাকিয়ে গিয়েছিল। মনে পড়ে যায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কথা, যাঁরা পার্টি করেন, তাঁদের কাছে সাহিত্য শিল্পের চেয়ে দলের মূল্য বেশি। নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান উপন্যাস কিন্তু এক দলের নিন্দা করে অন্য দলের সমর্থনে লেখা তথাকথিত পার্টির লেখা নয়। এই উপন্যাস বামপন্থী দলের প্রতি বিষোদ্গারের নয়। কিন্তু ভিখারী পাশোয়ানের নিরুদ্দেশের ঘটনা সেই সময় হিমালয়ের চেয়ে ভারি হয়ে উঠেছিল সরকারের কাছে। পার্টির কাছে। একটি মানুষ যে কত তুচ্ছ, কত অবহেলার-- প্রশাসন, পুলিশ এবং বিত্তবানের কাছে, সেই লেখাই এই লেখা। উপন্যাসটি মুখে মুখে রটেছিল। এক সংবাদপত্রে এর আলোচনা করেছিলেন বিখ্যাত এক লেখক। মুখে আমাকে বলেছিলেন অনেক কথা, মা লিখ। ২৫০/৩০০ শব্দ কোনোরকমে লিখেছিলেন। এই রিভিউ নিয়ে সেই ভবিষৎবাণীই করেছিলেন পি বি এস কর্ণধার প্রশান্তবাবু। মৃণালবাবুর ছবি করা নিয়েও তিনি বলেছিলেন, হবে না।
বৃত্তরৈখিক (৩২) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০১ মে ২০২১ | ২৪২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
কর্পোরেট অফিস আর কলকাতায় পার্থক্য অনেক। কলকাতায় সোমেশ্বরই ছিল বস, অতএব সাধারণভাবে অফিসের চালচলন, ম্যানেজার আর অন্য কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক, ওঠাবসা ইত্যাদি, ঠিক নিয়ন্ত্রণ না করলেও সোমেশ্বরের রুচি আর পছন্দের ছাপও পড়ত তাতে। কর্পোরেট অফিস অন্য রকমের। সেখানে অনেক ডিপার্টমেন্ট, অনেক কমিটি, বিদেশী ভিজিটর্স, নানা রকমের প্রেজেন্টেশন আর পার্টি। বেশির ভাগ কাজের দিনগুলোতেই যেহেতু ট্যুরে থাকে সোমেশ্বর, অতএব নিজের কাজের বাইরের এসব ব্যাপারে ও থাকেই না প্রায়। মুম্বইতে থেকেও এক-আধটা সান্ধ্য পার্টিতে না গেলে চলে না, কাজেই সেটুকুই ওর জনসংযোগ। কিন্তু ওকে যে বিশেষ কেউ লক্ষ্য করে, তা-ও মনে হয়না।
বৃত্তরৈখিক (৩৩) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৮ মে ২০২১ | ২৫৫৭ বার পঠিত
ওই কচি বয়েসে স্কুলের পরীক্ষা পাশের পর মেয়ে যেদিন বললো কলেজে পড়বে না ও, ছবি আঁকবে আর ছবিই আঁকবে শুধু, সেদিন মেয়ের কেরিয়ার পরিকল্পনার একটা অস্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছিলো হেমন্ত। ঠিক ঠিক যে ব্যাপারটা বুঝেছিলো, তা নয়। ততদিনে জয়ির তুলির সাথে বন্ধুত্ব আর তুলির বাবার প্রায়-মেয়ে-হয়ে-ওঠার ব্যাপারটা জেনেছে ও। ওরা অনেক বড়লোক, অনেক লেখাপড়া জানে; ভেবেছে ওদের সংস্পর্শে নিজের সম্বন্ধে যে পরিকল্পনা করেছে জয়ি, সেটাকে বাধা দেওয়া ঠিক হবে না। শক্তি চট্টোপাধ্যায় নামের এক কবির সাথে কথা বলে যেদিন জয়ি পাড়ি দেয় কলকাতায়, ও আপত্তি করার কোন কারণ খুঁজে পায়নি। শুধু নিজের জমানো সামান্য টাকা আর বুকভরা আশীর্বাদ ছাড়া ওর কিছুই দেবার ছিলো না মেয়েকে।
বৃত্তরৈখিক (৩৫) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২২ মে ২০২১ | ২৬৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জাওয়া ফুল কী জানেন? জাওয়া ফুল আসলে ফুল নয়, তিন বা পাঁচ বা সাত রকমের দানাশস্যের অঙ্কুর, যা তারা বপন করেছিলো নিজের নিজের শালপাতার থালায় সাত দিন আগে, আর অঙ্কুরোদ্গম করিয়েছিলো রোজ সন্ধ্যেতে জল ছিটিয়ে। পুজোর পর চলবে হাঁড়িয়া পান আর সারা রাত ধরে নাচ; নাচে যোগ দেবে মেয়ের দল আর ধামসা-মাদল নিয়ে ছেলেরা। পরের দিন সকালে, ঐ যে মেয়েরা লুকিয়ে রেখেছিলো ভিজে বালিতে দানাশস্য ছড়ানো জাওয়াগুলো, সেগুলোর থেকে অঙ্কুরিত বীজ উপড়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে তারা, আর সেগুলো ছড়িয়ে দেবে নিজের নিজের বাড়িতে। করম উৎসব বন্ধুত্বেরও উৎসব। বীজ ভাগ করা হয়ে গেলে মেয়েরা পরস্পরকে পরিয়ে দেবে রাখী, এই রাখীর নাম করমডোর। এখন থেকে ওরা করমসখী...
বৃত্তরৈখিক (৩৬) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৯ মে ২০২১ | ১৯৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
হলঘর যে দুটো ছিলো, যেখানে জয়ির ছবির এগজিবিশন হয়েছিলো, তার মধ্যে একটাকে এখন বানানো হয়েছে ডাইনিং হল, লম্বা একটা টেবিল, দু সারি চেয়ার আর ছোট একটা কাঠের আলমারি। আগে যে দুটো অফিস ঘর ছিলো তার মধ্যে একটাকে চিকিৎসালয় বানিয়ে নিয়েছে সুকান্তদা। ডাক্তারের টেবিল, সামনে রোগী আর তার সঙ্গী বসার জন্যে দুটো চেয়ার। একটা চাদর দিয়ে ঘরটা ভাগ করে তার আড়ালে রোগী পরীক্ষার ব্যবস্থা। সেখানে টেবিলের নীচে একটা ওজন নেবার যন্ত্র। ডাক্তারের টেবিলে স্টেথোস্কোপ, একটা কাচের গ্লাসে থার্মোমিটার, প্রত্যেকবার এসেই কোন একটা তরল ঐ গ্লাসে ঢেলে থার্মোমিটারটা তাতে ডুবিয়ে দেয় সুকান্তদা, অন্য একটা গ্লাসে আরও কিছু টুকিটাকি। কাছাকাছি গ্রাম দুটোর মানুষরা এতদিনে সবাই জেনে গেছে এই ডাক্তারবাবুর কথা। ভীড় সামলাতে হিমসিম খেয়ে যেতে হয়।
জয় বাংলা : দেবতোষ দাশ
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ০২ মে ২০২১ | ৩২১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কবীর সুমন সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার বাড়ির সামনে বাজারে যে-মাসি ক্যানিং থেকে রোজ এসে শাকসব্জী নিয়ে বসেন, তাঁর সারাদিনে জলবিয়োগের কোনও জায়গা ছিল না, সরকার বাজারে একটি ‘পথের সাথী’ নামক স্নানাগার করে দিয়েছেন যেখানে স্নান-পায়খানা-পেচ্ছাপ ছাড়াও খানিক বিশ্রামও করা যায়। ‘পথের সাথী’ এখন বড় রাস্তার ধারে দৃশ্যমান। সংস্কৃতি মানে কেবল গান-বাজনা-গল্প-কবিতা লেখা নয়, এই ‘পথের সাথী’ নির্মাণ বা নির্মাণের ভাবনাও একটা সংস্কৃতি। ওই মাসি সারাদিন কীভাবে টয়লেটবিহীন হয়ে কীভাবে থাকেন, কী আশ্চর্য, কেউই ভাবেননি আগে! বাংলার বিপুল এই নারীসমাজ দু’হাত ভরে নিজেদের মেয়ে মমতাকে জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা ও আশীর্বাদ।
বিজেপিকে হারাতে বাঙালির ঐতিহাসিক ভূমিকা : শুভাশিস মৈত্র
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : বিধানসভা-২০২১ | ০৪ মে ২০২১ | ৮১৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬২
আমাদের এই ভাঙা-চোরা, কালি-ঝুলি মাখা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা যে গণতন্ত্র আছে সেটাকে রক্ষা করাই আমাদের এখন প্রধান কাজ। ভবিষ্যৎ প্রমাণ করবে, কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায়, সেই কাজে বাঙালি একটা বড় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করল, এবারের ভোটে বিজেপিকে রুখে দিয়ে। বাঙালি বজেপির বিরুদ্ধে একটা শক্তিকে চেয়েছিল। বিজেপিও তার বহুমাত্রিক, সর্বগ্রাসী আক্রমণ দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছিল কে তার প্রধান শত্রু। সিপিএমের ‘বিজেমূল’ প্রচারে মানুষ একেবারেই কান দেয়নি। বাঙালির কাছে এই মুহূর্তের বাস্তবতা এটাই যে, তৃণমূল নেত্রী মমতা ছাড়া তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনও শক্তি ছিল না। যারা তাঁকে ভোট দিলেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূল নেত্রী অতীতে কী কী বলেছেন, কী কী করেছেন এই সব অসংখ্য প্রশ্ন এবং তর্ক সরিয়ে রাখলেন। বিজেপির পরাজয় তারই পরিণতি।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - পঞ্চম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ০৮ মে ২০২১ | ২৯১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
রোগীরা সবাই শেষে একটাই প্রশ্ন করেন, ‘ডাক্তারবাবু, ভয় নেই তো?’ উত্তর দিতে গিয়ে ইদানীং মেজাজ হারাচ্ছি। বলছি, ‘আমি জ্যোতিষী নই।’ এই প্রথম মাঝে মাঝে অন্যদের দেখে হিংসে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি যদি ডাক্তার না হয়ে অন্য কিছু হতাম, বেশ হতো। বাড়িতেও সকলের মুখ ভার। রাতে ফিরে যেটুকু সময় বাড়িতে থাকছি সেটুকু সময়েও অজস্র ফোন। একটা ফোনে কথা বলতে বলতে তিনটে মিসকল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই হাসপাতালে বেডের জন্য, অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য, ভ্যাকসিনের জন্য ফোন করছেন। এসব ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই বলতেও খারাপ লাগছে। আমি সারাদিন রোগী দেখে বাড়ি ফিরে স্নান করি। ফোনের ঠ্যালায় স্নান করতে করতে রাত বারোটা বাজছে।
মহামারি, ফ্যাসিবাদ ও ভয় : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১২ মে ২০২১ | ২৯১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করছেন যে আমরা অতিমারির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি; ৩০ মার্চ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে; ২৭ এপ্রিল বলছেন সরকার মারির মোকাবিলায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেক বেশি প্রস্তুত, সারা দেশে যখন খোলা আকাশের নীচে লাইন দিয়ে চুল্লি জ্বলছে তখন নির্লজ্জ ভাবে মিথ্যা বলছেন যে বেড, অক্সিজেন, ওষুধের কোনও অভাব নেই; ২৯ এপ্রিল গর্ব করছেন মৃত্যুহার সারা বিশ্বে ভারতেই সবচেয়ে কম (১.১১%); পরের দিন আবার গর্ব করছেন যে ২.৬৯ লক্ষ মানুষ আরোগ্য লাভ করেছে, ২.২৮ কোটি মানুষ টীকাকরণের জন্য নাম লিখিয়েছে এবং আবারও নির্লজ্জ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন যে কোনও রাজ্য সরকারের কাছে টীকা মজুত নেই। এর সাথে আছে হিমালয়সম দম্ভ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং হিরো সাজবার উদগ্র বাসনা। ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের কাছে ত্রাতা সাজলেন। নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন যে, ভারত বহু দেশকে টীকা সরবরাহ করে পৃথিবীকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তিন মাসের মধ্যে দেখা গেলো টীকার অভাব এতোই প্রকট যে নিজের দেশের বরিষ্ঠ নাগরিকদেরই দু ডোজ দিতে পারা যাচ্ছে না। তিনি এতোই বেপরোয়া, বাংলার মসনদ দখলে এতোই মত্ত যে ১৭ এপ্রিল যখন কোভিড ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখনো নির্বাচনী সভায় সদম্ভে দাবি করলেন যে এতো মানুষ এর আগে কোনও সভায় তিনি দেখেননি।
কোম্পানির কাগজ : অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ১৩ মে ২০২১ | ৩৫৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
রাস্তার ধারেই বাড়ি ছিল আমাদের। তখন গ্রামের কাঁচা রাস্তা। বর্ষায় জঘন্য কাদা। গরমে এই ধুলো। আর হেমন্তে সে মাখামাখি থাকত শিশিরে। একদিন একটা লোক, সঙ্গে চটপটে লোকের দশজনের একটা টিম, যারা ফিতে দিয়ে রাস্তা মাপছিল। যারা সরকারি রাস্তার জায়গা দখল করে বাড়ি করেছে, তাদের বাড়ি ভেঙে রাস্তা বের করে নেবে সরকার। আমাদের মাটির ঘরের অর্ধেকটা ভাঙা পড়বে। কানে পেনসিল গোঁজা লোকটা জানিয়ে দিল। দাদু বলল, একশ বছর আগের এই আমাদের মাটির ঘর। এখন এই তুমি দুদিনের ছোকরা এসে বলছ ভেঙে দেবে? ব্রিটিশ আমলের ঘর কি এখন ভাঙা যায়? সরকারি লোক গম্ভীর মুখে বলে, মাপে যা বেরিয়েছে, সেটা আমি কেবল জানিয়ে গেলুম। এবার প্রশাসন বুঝবে।
বরকত নামে কেউ একজন ছিল এই শহরে
: মোজাফ্ফর হোসেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ১৩ মে ২০২১ | ২৭৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ফোনটা পেয়েই এই সাত-সকালে বের হতে হলো। জিরো পয়েন্টে একটা ডেড-বডি পাওয়া গেছে। আপাতত এটুকুই জানতে পেরেছি। সাব-ইন্সপেক্টর কল করে জানালেন বিষয়টি। এ আর নতুন কী! প্রথম প্রথম এ-ধরনের সংবাদ শুনে বেশ ঘাবড়ে যেতাম, মনটা বিষিয়ে উঠত, আবার এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদও জেগে উঠতো ভেতরে ভেতরে। এখন হই বিরক্ত— সময়মতো না ঘুমাতে পারার বিরক্ত; খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ঠিকঠাক না হওয়ার জন্য বিরক্ত, স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণে বিরক্ত।
গিয়ে দেখি একঝাঁক মানুষ জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারও কারও চোখ থেকে ঘুমের ঘোর তখনো কাটেনি। কেউ কেউ বেরিয়েছিল হাঁটাহাঁটি করতে, লাশটা দেখে সংগত দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে গেছে। সবার দৃষ্টি খানিকটা ওপরে। জিরো পয়েন্টের মাঝামাঝি পরিত্যক্ত পোলের সাথে গলাই দড়ি পেঁচিয়ে ঝুলে আছে মাঝবয়স্ক এক লোক। লোকটির কাঁধে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একটি কাক। এতগুলো লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্যই কিনা কা-কা-কা করেই যাচ্ছে; কিংবা ঘটনার সাক্ষী দিচ্ছে কি সে?
আমাদের পরিভাষায় লোকটার নাম এখন ডেড-বডি। বোঝা গেল কেউ মেরে এখানে টাঙিয়ে রেখেছে। খুনিরা মাঝে মধ্যে পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে এ-ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়— কখনো আবার শরীর থেকে হাত-পা-মাথা আলাদা করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। একবার আমাকে সেরকম একটা কেস সামলাতে হয়েছিল— শরীর মেলাতে মেলাতে হয়রান। মাথাটাই পাওয়া যায় না। শরীর দেখে সরকারি পক্ষের একটা পরিচয় দাঁড় করানো হলো, কিন্তু মাথা পেয়ে দেখা গেল
পেন্সিলে লেখা জীবন (২১) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১৫ মে ২০২১ | ৩৬৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গঙ্গাধর গ্যাডগিল মরাঠী সাহিত্যে ছোট গল্পের জন্য খ্যাতনামা। সেদিন তাঁর সঙ্গে আলাপের পর বেরিয়ে এসে বন্ধুদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে, তুষার বলল, কেঁচিয়ে দিয়েছিস, এখান থেকে আমেরিকায় যাওয়ার সাহিত্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, তোর হলো না। হাসাহাসি হলো। সেদিন ছিল শেষ দিন। ইউথ হোস্টেলে ফেরার বাসে সঙ্গে ছিলেন তামিল ভাষার প্রবীণ লেখক অশোক মিত্রণ। এটি তাঁর লেখার নাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গ্যাডগিলের সঙ্গে কী কথা হলো ? আমি বলতে, তিনি পরামর্শ দিলেন, “তোমার লেখার পদ্ধতি তোমার, তা নিশ্চয় মিঃ গ্যাডগিল দেখতে যাবেন না, কিন্তু এই সমস্ত মানুষের কথাকে সাময়িক সমর্থন করতে হয়, উনি তো তোমাকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে থাকলেন।”
ফেসবুকের প্রোপাগান্ডা—একটি সরেজমিন তদন্ত : সৌরভ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বইপ্যাঁচা৯ | ১৬ মে ২০২১ | ৩৫৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ফেসবুক। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তম সামাজিক মাধ্যমগুলির অন্যতম। ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাহিত্যিক, শৈল্পিক, বাণিজ্যিক—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা প্রতিনিয়ত এই প্ল্যাটফর্মটিতে চর্চিত নয়। প্রশ্ন হল, ফেসবুক কি নেহাতই নিরপেক্ষ একটি মাধ্যম? নাকি পর্দার আড়ালে চলে গভীর সামাজিক-রাজনৈতিক খেলা? এ নিয়েই একটি সাম্প্রতিক বই। পড়লেন সৌরভ চট্টোপাধ্যায়
ব্রজ রায়ঃ অনতিক্রম্যকে অতিক্রম করাই যার পথ : মৃন্ময় সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা | ১৬ মে ২০২১ | ৪০৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
ব্রজ রায়দের লড়াই থামে না। একের পর এক বাধা পেরোতে হয়। ব্রজ রায় মনে করতেন, আদর্শ কমিউনিস্ট হতে গেলে একজন ব্যক্তিকে নিজের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়। জীবনচর্যায় নিরন্তন চাই সেই বোধের অনুশীলন। অনাড়ম্বর জীবন যাপনই কেবল নয়, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি ছিলেন সেই আদর্শের সৈনিক। আন্দোলন যাতে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ার কাজ থেকে সরে না আসে, সরকারি বা বিদেশি অনুদান নির্ভর সংগঠনে পরিণত না হয় সে বিষয়েও শেষদিন পর্যন্ত সচেষ্ট ছিলেন। কারণ এন জি ও’র নামে অরাজনীতির রাজনীতিকে তিনি ঘৃণা করতেন। অভ্যাসবশত আমরা অনেকেই এমন শব্দ ব্যবহার করি, ভাববাদী ধারণা থেকেই যেগুলির জন্ম। কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে প্রয়াত শব্দটি আমরা প্রায়শই ব্যবহার করি। কিন্তু তাঁর এই শব্দে আপত্তি ছিল। শব্দটির সঙ্গে চলে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। যাওয়া মানেই তো গন্তব্যস্থল রয়েছে। তাঁর মতে মৃত্যুর পর ইহলোক থেকে পরলোকে যাওয়ার ধারণা থেকেই মৃত ও প্রয়াত কে সমার্থক করা হয়েছে। তাই এই শব্দের ব্যবহার মানে, পরলোকের ধারণাকে মেনে নেওয়া। আমরা অনেকেই ভাগ্যবাদী না হয়েও সৌভাগ্য, দুর্ভাগ্য এসব কথা ব্যবহার করি। তাঁর সামনে কেউ এসব শব্দ ব্যবহার করলেই তিনি আপত্তি করতেন। অভ্যাস ভাঙ্গাই তো এগিয়ে চলার শর্ত। সারা জীবন তিনি পথ খুঁজে এগিয়ে গেছেন, অনতিক্রম্যকে অতিক্রম করে। মৃত্যুর পরে তাঁর উত্তরসূরীরা সেই কাজই করলেন। করোনায় মৃত্যুর পর তাঁর দেহ রোগ নির্ণায়ক ময়নাতদন্তের কাজে লাগলো। গণদর্পণের কমরেডদের প্রচেষ্টা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সদিচ্ছা ছাড়া একাজ হত না। প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সির জন্য তাঁর লড়াই কয়েক কদম এগিয়ে গেলো। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজেই রাজ্যের প্রথম মরণোত্তর দেহদান হয়েছিল আর সেখানেই হল প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি। দুটি ঘটনার সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন ব্রজ রায়। এভাবেই এগিয়ে চলে ইতিহাস।
রবীন্দ্রনাথের জনশিক্ষার আদর্শ ও শ্রীনিকেতন : সীমান্ত গুহঠাকুরতা
বুলবুলভাজা | আলোচনা | ১৮ মে ২০২১ | ৩৯৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
এ তো গেল সামাজিক আচার-বিচার সংক্রান্ত চাপ, যা রবীন্দ্রনাথকে সামলাতে হয়েছিল। কিন্তু এর পাশাপাশি শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাটাকেই ভিতর থেকে বদলে দেবার জন্য রীতিমত অন্তর্ঘাত চলতে থাকে। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়ার পর থেকেই শান্তিনিকেতনে এই মারণ-জীবাণু প্রবেশ করে। নোবেল-প্রাপকের বিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়িয়ে আত্মপ্রসাদ ও সামাজিক গরিমাবৃদ্ধির তাড়নায় সেখানে সামাজিকভাবে উচ্চ আর ধনী অভিজাত শ্রেণীর ভিড় বাড়তে থাকে। এই শ্রেণীটির অর্থ এবং তজ্জনিত ক্ষমতার জোর ছিল প্রবল। মূলত তাঁদের চাপেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক অবাঞ্ছিত পরিবর্তনেও সায় দিতে বাধ্য হন। আগে এখানে মণ্ডলীপ্রথায় শিক্ষা হত, অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক একই সঙ্গে মাটিতে বসে পড়াশুনা হত। তিরিশের দশকেই তার পরিবর্তে শিক্ষকদের জন্য উঁচু মাটির বেদী তৈরি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর ছাত্রদের নিজেদের বাসন মেজে নেবার রীতিও উঠে যায়। ছবি আঁকা, গান, হাতের কাজ, গ্রামসেবা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মূল পাঠক্রম থেকে সরিয়ে ‘আনুষাঙ্গিক পাঠক্রমে’ পরিণত করা হয়। ১৯৩১ সালে বিশ্বভারতীর তরফে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতে শান্তিনিকেতন ওই সময় কী কী বিষয়ে পঠন পাঠন হয় এবং কী কী পরীক্ষা বা ডিগ্রি দেওয়া হয়, তার উল্লেখ ছিল। তাতে এও জানানো হয়েছিল যে, বিশ্বভারতীর ছাত্রদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আই.এ এবং বি.এ পরীক্ষা দেবারও ব্যবস্থা আছে। মহান রাবীন্দ্রিক শিক্ষাদর্শ থেকে মুখ ঘুরিয়ে এই যে বিশ্বভারতীর কেরানী-গড়ার প্রথাগত শিক্ষার দিকে চলন, তা-ই রবীন্দ্রনাথকে হতাশ করে তুলেছিল। ১৯২৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানাচ্ছেন, “একদিন এই কলেজের বিরুদ্ধে মাথা তুলেই একলা আমার তরী ভাসিয়েছিলুম --- কিন্তু তরী ঘুরেফিরে এলো সেই কলেজের ঘাটেই। বসে বসে দেখছি … শান্তিনিকেতন আপন আইডিয়ালের গর্ব ভাসিয়ে দিয়ে ছেলে পাশ করাচ্ছে। … ভাগ্যে ছিল আমার কলাভবন এবং শ্রীনিকেতন। আমার শেষ বয়সের সমস্ত চেষ্টা যদি ঐ কলাভবন সংগীত ভবনের জন্য দিতে পারতুম … মনে করতুম জীবন সার্থক হয়েছে।“
প্রেম এবং বিভিন্ন ধারাবাহিক দৃশ্য সম্পর্কে : সায়ন্তন চৌধুরী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২১ মে ২০২১ | ৩৯০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমি একটু আহত মুখে আমার পড়ার টেবিল থেকে নীলচে কভারের ‘কালেক্টেড ফিকশনস’ বইটা এনে ওর সামনে ফেলতাম; সেটাই তখন আমার সংগ্রহের সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন। আমি বোর্হেসের মতো লেখক হব, আমি ঘোষণা করতাম। — বোর্হেস কে? — সে অবাক হয়ে জানতে চাইত। বিশ শতকের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম লেখক, আমি কায়দা করে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলতাম, প্রথমজন অবশ্যই ফ্রাঞ্জ কাফকা। বোর্হেস সম্পর্কে আমার মুগ্ধতা, বলা বাহুল্য, শুধু সাহিত্যগত কারণে ছিল না। বোর্হেস যে মায়ের পরিবারের রীতি অনুযায়ী সৈনিক হতে না চেয়ে বাবার বিশাল লাইব্রেরির ভেতর আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিলেন, এইটা আমাকে দারুনভাবে টানত। তেহরানের দিনগুলোয় যেসব উদ্ভট নিষেধাজ্ঞা আমাদের সহ্য করতে হতো, ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন বাসিজের খপ্পরে পড়তে পড়তে কয়েকবার আমি ও আমার বন্ধুরা বেঁচে যাই, এসবকিছুর মধ্যে বোর্হেসের আয়না ও গোলকধাঁধার জগতে ঘুরে বেড়ানো ছিল আমার জন্যে সব থেকে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা।
মিউকর সংক্রমণ সম্পর্কিত দু একটি কথা : ডাঃ অর্জুন দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২১ মে ২০২১ | ৫০৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
মিউকর সংক্রমণ চিরকালই ডায়াবেটিস কিংবা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যাদের কম তাদের মধ্যেই দেখা যেত। এই বছরও যেসব কোভিড রোগীদের ডায়াবেটিস আছে অথবা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগ আছে অথবা মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যেই এই রোগটির সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে শুধু এটা বললেই চলবে না, তার কারণ কিছু কোভিড রোগী যাদের বয়স কম, যাদের ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগ নেই, যারা স্টেরয়েড পাননি তাদের মধ্যেও কিন্তু দেখা যাচ্ছে , যা খুবই বিরল। এ থেকে আমরা এই ধারণা করতে পারি যে, করোনা রোগটি মানুষের শরীরে নিশ্চয়ই এমন বিশেষ কিছু করছে যাতে এই ছত্রাক সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই প্রসঙ্গে এটাও বলে দেওয়া ভাল যে, সাধারণ মানুষের নাকে এমনিতেই যে মিউকর থাকে তা কিন্তু কোনো ক্ষতি করে না, কারণ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে তাদের এর থেকে কোনো ক্ষতিই হয় না। শুধু তাদেরই হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে সেটা কোভিড হোক বা ডায়াবেটিস হোক বা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজ রোগ হোক বা তাদের এমন ওষুধ দেওয়া হয়েছে যথা স্টেরয়েড বা অন্যান্য ওষুধ যেগুলো কিনা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় আর তাদের মধ্যেই এই ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
শেষ অভিষেক : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২১ মে ২০২১ | ৩২০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কিসের বই তা জানে না মানোয়ারা, শুধু তার প্রথম পাতায় লেখা ‘আশিস চৌধরি’। এই নামটা আম্মি বারে বারে লেখাত। নামটা যে আব্বুর, সেটা মানোয়ারা জেনে ফেলেছিল। আম্মিকে আর জিজ্ঞেস করার দরকার পড়ে নি। আম্মির কথায় ও শুধু বড় বড় অপটু হরফে লিখত, আশিস চৌধরি। একটা কুড়িয়ে আনা পেন্সিল আঁকড়ে। হলদেটে কাগজের উপর আবছা লেখা। আম্মি মারা যাওয়ার পর আবার একদিন কাগজের তাড়াটা নিয়ে বসেছিল মানোয়ারা। আগের লেখাগুলো আর পড়াই যায় না, এতই আবছা।
আম্মি মারা যাওয়ার পর এই ঘরটার অলিখিত মালিক হয়ে গেছে মানোয়ারা। কে যেন একবার বলেছিল, বাচ্চা মেয়ে, একা থাকলে জিন-পরিতেও ধরতে পারে, নাজনিনের ঘরের মেঝেতে শুক বরং ও। তাতে খালা ভাগ্যিস রাজি হয় নি। খুব কেঁদে কেঁদে বলছিল, “কী দোষ করেছি আমি যে আমার ঘরে ওই বেজন্মা বাচ্চাটাকে ঢোকাতে বলছ?”
শতবর্ষে সুকুমারী ভট্টাচার্য (১৯২১-২০১৪) : মনুবাদী স্থবিরতা নয়, বেদে আছে নিরন্তর প্রশ্ন তোলার শিক্ষাও : কণাদ সিংহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ২৩ মে ২০২১ | ২৯৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ঋগ্বেদে কবি নেম ভার্গব ঘোষণা করেছেন, ইন্দ্র নেই, কারণ কেউ তাঁকে দেখেনি। চার্বাক দর্শন বস্তুজগৎকেই একমাত্র অস্তিত্ব বলে মনে করেছে। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ বলে, যতদিন জীবন আছে যজ্ঞ ক’রে যাওয়া উচিত, কারণ মৃত্যুর পর মানুষের কী হয় তা অজ্ঞাত। ‘বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য’ গ্রন্থে সুকুমারী ভট্টাচার্য তুলে ধরেছেন বৈদিক সাহিত্যে প্রশ্ন, সংশয়, অবিশ্বাসের উত্তরাধিকার। লিখছেন ইতিহাসের অধ্যাপক কণাদ সিংহ
চিরকালীন সমস্যার সমাধানে প্রতীচ্য ও প্রাচ্যের মেলবন্ধন – এক দার্শনিকের জীবন - প্রথম কিস্তি : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০২১ | ৩৭৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
মাদের দেশে ‘দর্শন’ বলে আলাদা কোনো বিষয় কখনও ছিল কি? বেদে, উপনিষদে যা আছে বা মহর্ষি কপিল, কণাদ, জৈমিনি, ব্যাস, মধ্বাচার্য, রামানুজম, শঙ্করাচার্য ইত্যাদিরা যা বলে বা লিখে গিয়েছিলেন তৎকালে তা ‘দর্শন’ নামে বিবেচিত হতো কি? সম্ভবত না। প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ ও অপার বৈচিত্র্যময় এই জগতের দিকে তাকিয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও কৌতূহলী হয়েছিলেন অগাধসলিলা সরস্বতী নদীর তীরের আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেরা। তারই ফল স্বরূপ যেগুলি বিবেচিত হয়েছে সাংখ্য, বৈশেষিক, পূর্বমীমাংসা, উত্তরমীমাংসা, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ইত্যাদি হিসেবে, এগুলির ভিতর দিয়ে তাঁরা যা বলতে চেয়েছিলেন নিজেদের জীবন-চর্যায় তাই তাঁরা প্রতিভাত করে গিয়েছিলেন, যার অন্ত বোধিতে বা মুক্তিতে। এমনকি বস্তুবাদী চার্বাকেরাও চর্যায় ছিলেন বস্তুবাদী দর্শনানুগ। অর্থাৎ, আদিতে দর্শন আসলে জীবন-চর্যার নামান্তর ছিল ও পরিশেষে জীবনের অন্তিম লক্ষের সন্ধানী। এসব দূর অতীত বা সুপ্রাচীন কালের কথা। স্বতন্ত্র একটি বিষয় হিসেবে ‘দর্শন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বহু পরে মূলত পাশ্চাত্যের হাত ধরে। আমাদের নিকটবর্তী সময়ে বিংশ শতাব্দীর দর্শন বলে যা পরিচিত বলা বাহুল্য তা জোরালো ভাবে পাশ্চাত্যেরই অবদান। এর সূত্রপাত মোটামুটি ভাবে George Edward Moore-র আধুনিক বাস্তববাদের হাত ধরে, প্রসারিত হাল আমলের Slavoj Zizek পর্যন্ত।
উৎসকথা : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৮ মে ২০২১ | ২৪৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এবার বাহাত্তর দেখল দিঘির মাঝখানে জল সামান্য পাক খাচ্ছে। ফাল্গুন চৈত্রে ফাঁকা মাঠে যেমন শুকনো বাতাসের ঘুর্ণি ওঠে, ধুলোবালি, শুকনো পাতা, ছেঁড়া কাগজ – সব শূন্যে তুলে নেয় সেই বাতাস, পুকুরের মাঝখানে ঠিক তেমন একটা জলের ঘুর্ণি আস্তে আস্তে নীচের দিকে টান দিতে শুরু করেছে। বাহাত্তরের কত বার ইচ্ছে হয়েছে গরম বাতাসের সেই ঘুর্ণির ‘চোখ’-এ ঢুকে পড়তে। দেখি না, কী হয়। যদি বাতাস তাকে শূন্যে উড়িয়ে নিয়ে যায়, যদি অনেক দূরের এক অচেনা দেশে নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়, যেখানে কেউ তাকে হারামজাদা বলবে না, বাপঠাকুরদার নাম জানতে চাইবে না।
অবাধ অভীপ্সা : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৮ মে ২০২১ | ২৮৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এর এক সপ্তাহ পরে ক-র বাড়ি গিয়েছিলাম। ওনার স্ত্রী, যিনি আমাকে নিকট আত্মীয় ও আপনজনের মতো দেখতেন, তাঁকে বললাম হোমিওপ্যাথির বাক্সদুটো দেখব। উনি বাক্স নিয়ে এলে পরে ডালা খুলে দেখলাম এখনো প্রতিটি বাক্সে দুটো করে চিরকুট রয়ে গেছে। চারটে চিরকুটেই লেখা ‘বিয়ে নয়’। ক-র দর্শন নিয়ে যে গবেষণা বন্ধ করেছি তা নিয়ে আর ক্ষোভ হল না, ভাবলাম ক আসলে ভাল দার্শনিক ছিলেনই না। উনি বলতেন স্বাধীন চিন্তা ও অদৃষ্টবাদ দুটিই বিভ্রম, কিন্তু সেটা যে বিভ্রম নয় তা প্রমাণ করতেই হয়তো আমি রেবাকে বিয়ে করেছিলাম। আমার স্বাধীন চিন্তাকে প্রতিষ্ঠা করতে যে আমি যে এটা করব সেটা ওনার বোঝা উচিত ছিল। ক নিজের দর্শনে বিশ্বাস না করে নিম্নমানের এক পদ্ধতিতে আমাকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন, যৌন-নিপীড়করা বোধহয় তাদের বৌদ্ধিক দর্শন জীবনে আরোপ করতে পারে না। ফিরে এসে রেবাকে কথাটা বলতে ও বলল, “তাহলে ক সবকটা চিরকুটে ‘বিয়ে’ লিখলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে না – শুধুমাত্র তোমার স্বাধীন ইচ্ছার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে?”
সেলিব্রেশন : আহমেদ খান হীরক
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৮ মে ২০২১ | ২৫৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
পুলিশের সাথে বার্তালাপ পছন্দ করে নি সাবকনসাস। সে বলছে, বাসায় চলো…! রিকশা স্টার্ট নিতেই পেছন থেকে পুলিশের হাঁক—ওই ব্যাটারি, সামনে দাঁড়া! আমি আর রিকশাওয়ালা, দুজনেই, ঘাড় ঘুরিয়ে, পুলিশটাকে দেখে, যেন দেখিই নি এমনভাব করে, গতি না বাড়িয়ে না কমিয়ে, চলতে থাকি। সাবকনসাস টোকা দিতে থাকে--বাসায় চলো! কিছু এগিয়ে এলেই একটা মোড়। মোড়ের আগে অন্ধকার। আলোর কাছে পৌঁছানোর আগেই মোটর সাইকেল। পুলিশ। ‘ওই ব্যাটা, তোকে না দাঁড়াইতে কইলাম!’ রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে যায়। আমি নেমে যাই। ‘হাতে কী?’ ‘কাবাব।' ‘আর?’ ‘মদ।' ‘কী মদ?’ ‘কেরু।' ‘লাল না সাদা?’ ‘লাল।' ‘আপনি তো ভালো মানুষ। কোনো যাতনা ছাড়াই সব বইলা দিলেন।
পেন্সিলে লেখা জীবন (২২) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৯ মে ২০২১ | ৪১০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
আমার একটা বিশ্বাস আছে। তাকে আমি সত্য মনে করি। সত্য আপেক্ষিক হলেও, এই সত্যে পৌঁছতে পেরেছি আমি। একে ধরে থাকি। ক্ষমতাকে মনে করি অন্ধকারের পথে যাত্রা। ছিল না, তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি হয়ত। সিভিল সার্ভিসে না যাওয়াও তাই হয়ত। ধ্রুবপুত্র উপন্যাস এই কথাই বলেছে শেষ পর্যন্ত। বুদ্ধের দর্শন তাইই ছিল। নিজেকে নিঃশেষ করতে করতে, শূন্যের কাছে আত্মসমর্পণ। ‘হে নবীন সন্ন্যাসী’ উপন্যাসটি সেই কথা বলতে চেয়েছে। আমি কলহ করি। সুনাম আছে। কিন্তু যখন বুঝি ভুল হয়েছে, আবার এগিয়ে যাই। হে বন্ধু, কাছে এস, হাত ধরো। বন্ধুদের অনেকে ফেরে। ফেরেও না দেখেছি। না ফিরে অপমানও করেছে সত্য।
চাঁদের টুকরো ও একটি মেয়ে সংক্রান্ত : শুভম মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৮ মে ২০২১ | ২৫৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
যাগগে, আমি মূল প্রসঙ্গ থেকে আমার বায়োগ্রাফিতে চলে যাচ্ছি। সরি। যে কথা বলছিলাম, অনেকদিন পর আবার সন্ধেবেলা কাজ থেকে ফেরবার সময় পথের ধারে একটি মেয়েকে চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে অনেকদিন পর আবার মাথা গরম হয়ে গেলো। কিন্তু কাজ, আর বাড়িতে কিছু সমস্যা নিয়ে মাথাটা এতই টেনশনে ছিলো, সেদিন আর বেশিক্ষণ ওখানে দাঁড়ালাম না। বাড়ি চলে এলাম। শুধু মেয়েটির চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকার দৃশ্যটা মনের ভিতর বাকি রাতটা, পরের সারাটা দিন একটা অস্বস্তি দিয়ে গেলো। দ্বিতীয় দিন ফিরছি। এক দৃশ্য। আজও অস্বস্তি। রাগ কম, অস্বস্তিই বেশি। চেষ্টা করলাম বিষয়টা না ভাবার। এরকম ভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো।
আর কবে আসবে বিকল্প পাঠক্রম? : শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ৩০ মে ২০২১ | ২৯১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
শিক্ষকতার চাকরি করি, সেই অবস্থান থেকে লজ্জিতবোধ করলেও, স্বীকার করতে কোনও বাধা নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে, বিশেষত কেন্দ্রীয় সংস্থা ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাঠক্রমকে এত অপ্রাসঙ্গিক ও হাস্যকর আগে মনে হয়নি। চারিদিক যখন বালির প্রাসাদের মতো ভেঙে পড়ছে, তখন দেশের শহরকেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা এমনই আচরণ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পাঠক্রমের সঙ্গে তিলমাত্র আপসে না গিয়ে, যেন অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার অসহয়তাটুকুকে বাদ দিলে বাদবাকি সব একদম স্বাভাবিক আছে; এমনকি উন্নতিও করছে।
জনসংখ্যা নিয়ে গালগল্প ও বাস্তব: একটি গুরুত্বপূর্ণ বই : অচিন চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | বইপত্তর | ৩০ মে ২০২১ | ৩৫৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কুরেশির বিশ্লেষণে যেমন আছে তথ্যের সমাহার তেমনই আছে যুক্তির জোর। বস্তুত, বইটাতে তিনি যা লিখেছেন তার অনেক কিছুই জানা। অবশ্য, সবার নয়, যাঁরা জানতে চান তাঁদের – অনেকেতো জানতে চানই না। এ বই, বিশেষত শেষের দিকে, “জনসংখ্যার রাজনীতি” বিষয়ক অষ্টম অধ্যায়টা পাঠকের মনকে বিশেষভাবে বিচলিত করবে। এই অধ্যায়ে কুরেশি হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারিত জনসংখ্যা বিষয়ক গালগল্পগুলোকে ভেদ করে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। আশা করা যায় যে, এখানে উপস্থাপিত তথ্য ও সেগুলোর ব্যাখ্যা ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন রোধ করার কাজে লাগবে।
বঙ্গভোট, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটারের মনদখলের লড়াই : অর্ক দেব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৩ জুন ২০২১ | ২৯১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কিন্তু এতদসত্ত্বেও শেষেশ বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে এ যাবৎ কালে বহু আলোচনা সামনে এসেছে। আদি-নব্য সংঘাত, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঠিক করতে না পারা, মেরুকরণের তাস ঠিক মতো কাজে না আসা ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ ব্যখ্যা রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর অতি হিন্দুত্ব, যোগী আদিত্যনাথের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডের হুঙ্কার ইত্যাদি নানা কিছু। আমার মনে হয়েছে এর কারণ 'আরবিট্রারি মেকানিজম', খেয়ালখুশির নীতি। ২০১৪-এর আগে থেকেই বিজেপি আর স্রেফ রাজনৈতিক দল নয়, তার কর্মপরিচালন পদ্ধতি একটা কর্পোরেট হাউজের মতোই। ভোট পরিচালনার জন্য আইটি-সেল সহ নানা বিভাগের কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, টার্গেট ঠিক করে দেওয়া হয়। পাখির চোখটাও সুনির্দিষ্ট থাকে। ঠিক যেমন কোনও পণ্যের বাজারিকরণের ক্ষেত্রে প্রচার অভিযান যে ভাবে হয়, বিজেপিও সেইটাই করে। এমনটাই হয়ে এসেছে এ যাবৎ। বিজেপি ঘেঁষা বুদ্ধিজীবী সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিজেপির ভোট বিস্ফোরণ না হওয়া নিয়ে। তাঁর যুক্তি, বিজেপি যথেষ্ট হিন্দুত্বের প্রচার করেনি। মোহিত রায়ের যুক্তি একরকম ভাবে ঠিকই। বিজেপির নির্বাচন পটীয়ানরা এই একটা ইস্যুতে লক্ষ্য স্থির না করে যেখানে যেমন সেখানে তেমন নীতি নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। কোথাও চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীকে মুসলিম বিরোধিতা ও হিন্দুত্বের মুখ করতে। কোথাও চেয়েছেন নতুন জেলার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরতে। কোথাও আবার মতুয়া তাস, রাজবংশী তাস ফেলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর অভিন্নহৃদয় সহোদর। ভার্চুয়াল ক্যাম্পেনিংও হয়েছে তদনুসারী। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ঈষৎ জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিমাত্রেই বলবে, বিপর্যয়ের কারণটাই এইটাই, একটি মূল ফোকাস ঠিক করতে না পারা।
তাদের শিক্ষকরা সবাই হবেন সলিল বিশ্বাসের সন্তান : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ০২ জুন ২০২১ | ৪৫০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
এদেশটার নাম ভারত, তাই আশা করি না, কিন্তু অন্য দেশে হলেও হতে পারে, হওয়া উচিত, তাঁর ইতালির বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্রদের সম্মিলিত চিঠিভিত্তিক গ্রন্থের অনুবাদ, "আপনাকে বলছি স্যার" বইটির অবশ্যপাঠ। অন্তত শিক্ষকদের শিক্ষাদান করবার আগে এ বই পড়াই উচিত। শিক্ষা যখন পণ্য, আর শিক্ষার্থীরা বাজার নামক দাবাবোর্ডে দিব্যি জ্যান্ত বোড়ে, তখন বিকল্প শিক্ষার ওপর এ বই হয়তো কাউকে অন্য পথের সন্ধান দেবে। আরেকজন সলিল বিশ্বাস তৈরি হবেন যাঁর মনন জুড়ে থাকবে বিকল্প শিক্ষা ভাবনা। ব্রাজিলের নিপীড়িতের শিক্ষাবিদ পাউলো ফ্রেইরি হবেন যাঁর দিগদর্শক।
উত্তরপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলে শ্মশানের স্তব্ধতা : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৩ জুন ২০২১ | ২৬৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
খবরে প্রকাশ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দু হাজারের কম হয়ে যাওয়ার কারণে রাজ্যে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। যে রাজ্যে কোনও সংবেদনশীল প্রশাসন নেই, নেই নূন্যতম স্বাস্থ্যব্যবস্থা সেখানে লকডাউন থাকলেও বা কী না থাকলেও বা কী? এখনো অক্সিজেন, বেড, ওষুধ অমিল তেমনই দাহ করার কাঠের চূড়ান্ত অভাব। পাওয়া গেলেও দাম এতো চড়া যে গরিব মানুষের পক্ষে তা কেনা দুঃসাধ্য। এখনো মৃতদেহ কোনও রকমে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে, কুকুর বিড়াল তা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছে। কোথাও প্রিয়জনের দেহ জঞ্জালের ট্রাকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, কোথাও সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কিছু জায়গায় গণচিতা জ্বলছে। সুপ্রিম কোর্ট মৃতদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান করার কথা বলছেন, কিন্তু এই নেই-রাজ্যের জড়ভরত মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের কাছে এসব কথা মূল্যহীন। উত্তরপ্রদেশে নীরবে যা ঘটে গেল তা এক কথায় নরমেধ। মানবতার বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত অপরাধ ইতিহাস মনে রাখবে। সব কুছ ইয়াদ রাখা যায়েগা।
ভ্যাকসিনের নীতি ও রাজনীতি : একটি বক্তৃতা : ডঃ অচিন চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৪ জুন ২০২১ | ২৫৩৫ বার পঠিত
আজকে ১৩৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই মনে করবে টিকা নেওয়া দরকার যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা অসম্ভব। হাজার বারোশ টাকা খরচ করে টিকা নিতে যাবে ভারতের কত শতাংশ মানুষ? অনেকের ক্ষমতা নেই, কিন্তু এটা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল আমি এতে খরচ করব কি করব না এটা অর্থনীতির নিয়ম। এর সঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্ন। অর্থনীতির প্রশ্ন আর ন্যায্যতার প্রশ্ন আলাদা করে বলতে চাইছি এই কারণে যে, আমেরিকাতে শোনা যাচ্ছে আমি ততক্ষণ সুরক্ষিত নই যতক্ষন না সবাই সুরক্ষিত। এটার মানে হচ্ছে আমার নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু এটা সংক্রমক রোগ, অতএব যতক্ষণ সেটা ঠেকাতে না পারছি আমি সুরক্ষিত নই। এখানে কিন্তু একটা সেল্ফ ইন্টারেস্ট-ই আমাকে এই কথা বলাচ্ছে। সরকারও একরকম ভাবে এই সেল্ফ ইন্টারেস্টটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তোমার প্রয়োজনেই দরকার অন্যদের ফ্রিতে টিকা দেওয়ার। এটা আমরা অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বলতে পারি। এখানে প্রশ্ন হল, যদি রোগটা সংক্রমক না হয় তাহলে কি আমি প্রতিবেশীর থেকে সেই ইন্টারেস্টটা দেখতে পাব না? আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে আমি তো সংক্রমণ করছি না কাউকে, তাহলে কি পাশের বাড়ির মানুষটির কিছু এসে যাবে না? সেল্ফ ইন্টারেস্ট ছাড়া সমাজে আর কিছু আমাদের প্রণোদিত করবে না? তাহলে টিকার বন্টনের ক্ষেত্রে সব যুক্তিগুলোকে যদি শুধু সেল্ফ ইন্টারেস্টে নিয়ে আসি, যেটা এক্সটার্নিলিটির আর্গুমেন্ট, তাহলে ন্যায্যতার বা সমানুভুতির কোনও পরিসর থাকবে না? এই এক্সটার্নিলিটির জন্য অবশ্যই সরকারের ভূমিকা আছে। একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার এই ভাবে বোঝাচ্ছে যে, যতক্ষণ না সবাই সুরক্ষিত হচ্ছে তুমিও সুরক্ষিত নও। এটা আমি আমার সেল্ফ ইন্টারেস্ট থেকেই চাইব সবাই সুরক্ষিত হোক। এমনকি দরকার হলে পাশের বাড়ির লোকের যদি পয়সা না থাকে, আমি তাকে পয়সা দিয়ে বলব টিকাটা নিতে। কারণ আমি নিজে সুরক্ষিত থাকতে চাই। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্য মোটিভেশন নিয়েও ভাবতে হবে।
বীরসিংহের সিংহশিশু বিদ্যাসাগর বীর: পাঠ-প্রতিক্রিয়া (১) : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০৪ জুন ২০২১ | ৪৩৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আমাদের ছোটবেলায় একজাতের বই বাড়িতে এবং স্কুলে অবশ্য পাঠ্য ছিল – মহাপুরুষদের জীবনী। তাতে ক্ষুদিরাম, নেতাজি ও সূর্য সেনের মত স্বাধীনতা সংগ্রামী, রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও আম্বেদকরের মত সমাজসংস্কারক, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিক এবং চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মত ধর্ম সংস্কারক সকলেই একসারিতে জায়গা পেতেন।
এঁদের জীবনীর একটি ছাঁচ আছে। এঁরা কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রেরিত। এঁদের জন্মসূত্রেই প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। এঁরা কখনও ভুল করেন না। কাজেই ভুল স্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না।
বৃত্তরৈখিক (৩৭) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৫ জুন ২০২১ | ১৯৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
যে মীটিং হলো এবার তাতে সুকান্তদা আর জুঁইদি আসেনি, ওদের আশাও করেনি জয়ি। শ্যামলিমাও আসতে পারেনি, ওর শ্বশুরবাড়িতে কিছু একটা উৎসব আছে, ওরা সপরিবার গেছে সেখানে। তুলিও যথারীতি অনুপস্থিত। গেস্ট হাউজটা নিয়মিত চালাতে হবে, মীটিঙে যারা ছিলো সবাই একমত। সিনেমার লোকরা যদি শেষ পর্যন্ত পছন্দ করে খুশিঝোরাকে, সেটাও খুশিঝোরার পক্ষে, অন্তত আর্থিক ব্যাপারটা মাথায় রাখলে, ভালোই হবে, বললো প্রায় সবাই; বিশেষ করে মাত্র এক রাত্তির গেস্ট হাউজে থেকে যে টাকাটা ওরা দিয়েছে, সেটা তো অভাবনীয়, বললো কোষাধ্যক্ষ অনলাভ। সবাই সিনেমার ব্যাপারে উৎসাহী, শুধু নীরব জলধর। ও ঠিক জানে না, কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো ওর সিনেমার ব্যাপারটায়, কী অস্বস্তি স্পষ্ট করে বোঝাতে পারবে না, কাজেই চুপ করে থাকাই ওর মনে হলো ভালো।
বৃত্তরৈখিক (৩৮) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১২ জুন ২০২১ | ৩০৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
হঠাৎ যুবকদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করে, এখানে যদি থেকে যেতে চাই আমরা দুদিন, কাছাকাছি অ্যাকোমোডেশন কোথায় পাবো?
এখান থেকে বাঁ দিকে গিয়ে মাইল আষ্টেক দূরে বান্দোয়ান নামে একটা ছোট শহর আছে, সেখানে শুনেছি পি-ডব্ল্যু-ডি-র একটা ডাক-বাংলো গোছের কিছু আছে, খোঁজ করে দেখতে পারেন। বাঁদিকে না গিয়ে যদি ডান দিকে যান, তিন-চার মাইলের পর সাত-ঘুরুং নদীর কাছে একটা সরকারি ট্যুরিস্ট লজ গোছেরও আছে শুনেছি। এ ছাড়াও যেখানে বসে আছেন সেই চৌহদ্দির মধ্যে চারখানা ঘর আছে, তবে তা কী পছন্দ হবে আপনাদের?
বৃত্তরৈখিক (৩৯) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৯ জুন ২০২১ | ২৫৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এইবার এই চারটে অ্যামাউন্ট আলাদা আলাদা বাণ্ডিল করে একটা একটা খামে ঢুকিয়ে রাখো, জয়ি ড্রয়ার খুলে কতকগুলো খাম বের করে, আর রাবার ব্যাণ্ড। নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে উৎপল। জয়ি বলে, এদিকে এসো, আমার পাশে। উৎপল চেয়ার ছেড়ে উঠে জয়ি যেখানে বসে আছে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। জয়ি চাবি দিয়ে একটা ড্রয়ার খোলে, উৎপলকে বলে, এই টাকার বাণ্ডিলগুলো আর তোমার হিসেবের কাগজটা এই ড্রয়ারে রাখো। এবার চাবিটা দেয় উৎপলকে, ভালো কোরে চাবি দাও। চাবি দেওয়া হয়ে গেলে ওর কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে নিজের ব্যাগে ঢোকায় জয়ি, বলে, টাকাগুলো ব্যাঙ্কে জমা দিতে হবে, ব্যাঙ্কে গিয়েছো কখনো?
সেন্ট্রাল ভিস্তা এবং লাক্ষাদ্বীপ - পরিবেশের ওপর জোড়া আক্রমণ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২১ | ৪১২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
খুবই আশ্চর্যের বিষয়, রাষ্ট্র কোনভাবেই পরিবেশ প্রতিবেশের আরো অবনতি হতে পারে এমন বিষয়কে ছাড়পত্র দেবে না, যদি না পক্ষে খুব শক্তিশালী যুক্তি থাকে, এটা এদেশের পরিবেশ আইনের একেবারে মূল কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট সেন্টাল ভিস্তার ওপর যে রায় দিয়েছে তাতে এর কোনো ছাপ নেই। যদিও পিটিশনাররা সবিস্তারে জানিয়েছিলেন কিভাবে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট এক্টকে কলা দেখিয়ে জমির ব্যবহারে দ্রুত পরিবর্তন করা হয়েছে, কিভাবে হেরিটেজ এবং আর্কিটেকচারাল বিবেচনাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে এবং পরিবেশের পক্ষে এই প্রজেক্ট কতখানি ক্ষতিকারক সে সম্বন্ধে কোনোরকম বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা না করেই এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে,তবুও সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে কোনো পরিবর্তনে বাধ্য না করেই পুরো প্রজেক্টকে ছাড় দেয়। শেষ পয়েন্টটিতে তাদের মনে হয়েছে বৃক্ষ সংরক্ষণের সরকারি প্রতিশ্রুতিতেই কাজ হবে এবং পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে খানকতক স্মগ টাওয়ার বসালেই যথেষ্ট হবে। পরিবেশ ভাবনা এবং দূষণ কমানো যে এক ও অভিন্ন বিষয় নয়, সেটা বোঝার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে বিরল।
মাকোন্দোয় দুর্গাপূজা : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ১৮৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
দুগ্গাপূজা নিয়ে অত বলাবলির বা কি আছে, অত আনন্দেরই বা কি আছে। সেসব বলবে পাল্লিনের মত কচিকাঁচারা। আমায় কেন, বৃদ্ধ মানুষ !
শুধু ছোটবেলায় একবার লাল জামা কিনে দেওয়া হয় নি বলে গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছিলাম। নালেঝোলে মেখে, মাটি চেটে , মেঝের শানে ঠাঁই ঠাঁই করে মাথা ঠুকে গুগলু বানিয়ে তবে ক্ষান্ত দিইছি। আর ক্যাপ ফোটানোর একটা ব্যাপার ছিল। ক্যাটকেটে কালো পিস্তলগুলো সব, নারকেল তেলের গন্ধমাখা। তায় আবার রোল ক্যাপগুলো কিছুতেই ফাটতে চাইত না। আর সেবার কে যেন একটা ঝিনচ্যাক রূপোলী পিস্তল কিনে দিল। দেবদূত-ফেবদূত কিছু একটা ভেবেছিলাম, লোকটাকে।
চার : কৃষ্ণকলি রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ৫৬৬ বার পঠিত
এখন আকাশ। কুচকুচে। ধ্যাৎ এটা শুক্লপক্ষ, ক্যালেন্ডার বলেছে। তো? আমি কুচকুচেই দেখতে পাই; তারা ছিটানো। আজি যত তারা ........ফুটকি ফুটকি ফুটকি। জ্বলজ্বলে। সবুজ। অগুন্তি, না অগুন্তি নয়, গোনা যায়। সফটওয়্যার আছে, আই পি ল্যাব। আই পি ল্যাব ভাইরাস গুনে চলে। টেন টু দি পাওয়ার এইট। সেভেন। এইট। সাইবারগোল্ড দিয়ে রং করা সবুজ ওরা সব, অ্যানোডিস্ক ফিল্টারকে কুচকুচে কালো দেখায়। আই পি ল্যাবের কখনো ভুল হয় না। মেথানলের গন্ধকে ও অকারণ আজে অগুরু ব'লে ভাবেনি। একটা প্যাঁচা ডাকছে কোথাও, চী-ঋ-ঋ-ঋ , আমারে কুড়ায়ে নেবে । আমার তোবড়ানো অলফ্যাক্ট্রি আবার ভুল বলতে থাকে ..... রূপশালী রূপশালী রুপশালী, ধুস। জানলায় আকাশ টোকা দেয়। শুক্লপক্ষই। নিরাচন্দের পর ছ দিন চলে গেছে।
এলোমেলো আশ্বিনের খড় : সঙ্গীতা ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ৬৭২ বার পঠিত
স্কুলজীবনে পুজোর সময় বেশি মজা হতো ফাংশান আর তার রিহার্সালে। সারা বছর তার জন্য পথ চেয়ে থাকতাম। সেবার আমার ক্লাস সেভেন। পুজোর ফাংশানের রিহাসালে ওকে প্রথম দেখি। পাড়ায় নতুন এসেছে তখন। আমরা সেক্টর এ,ওরা সেক্টর বি। ও ক্লাস ইলেভেন,শহরের নামকরা মিশনারী স্কুলে। ফাংশানটা সে বছর কেন যেন একটু বেশি জমজমাট। আমরা রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, ওরা সুকুমার রায়ের ঝালাপালা। আমি বয়কাট, স্কার্ট-টপ, ও চশমা, জিন্স।
নিউক্যাসল : অরিজিৎ মুখার্জী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ৬৫৬ বার পঠিত
শেষ কবে কলকাতার পুজো দেখেছি? বছর কুড়ি আগে বোধহয়। পুজো দেখার গপ্পো সকলে জানে, আর সকলের মতনই ছোটবেলায় কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, মণ্ডপে যাওয়া - পারোলিনের পুজোর সঙ্গে আমার ছোটবেলার পুজোর কোন তফাৎ প্রায় নেইই। আরো পরে পুজো আর টানতো না - ভিড়, শব্দ, আলো থেকে দূরে নিজের দশ ফুট বাই দশ ফুটের রাজ্যে একটা বই, বা বেহালা, বা টেপরেকর্ডার - এই নিয়ে সময় কাটতো। লাল চশমা পরা আমি পুজো থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতুম। রাস্তায় যেতে-আসতে যেটুকু চোখে পড়ে সেটুকু ছাড়া বাকিটা পুজো না-দেখা বললেই চলে। তারপর শুরু যাযাবরের জীবন, এঘাট সেঘাটের জল খাওয়া, লাল চশমার ওপর বাস্তবের প্রলেপ পড়া - তখন পুজোর মানে পুজা-অর্চনা থেকে বদলে হয় নিছক আড্ডা - শুন্য আর এক, এই দুটো সংখ্যার বাইরে একটা গেট-টুগেদার...
ফুডপ্লাজা : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ৬৫২ বার পঠিত
কাঁকলাড়ু, পটলের মিষ্টি, আরসে, খোশবাস, গুলিচপ, শিব বোঁদে, তামাকভোগ, মায়েস, মাছঢাক, সিদ্ধির কচুরি
বাহন = ধোবি কা কুত্তা : আর্য্য ভট্টাচার্য্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৬৭৩ বার পঠিত
বলার আগে অনেকবার ভাবলাম এসব বলা পলিটিকালি কারেক্ট হবে কিনা? কিন্তু যা দেখলাম, বুঝলাম তার একটা খতিয়ান না দিলেই নয়, আর আজকের যুগে তথ্য সেন্সর করা যায় না, জানেনই তো নেটে সব মেলে। হয় আমি, নয়ত অন্য কেউ, তাহলে আমিই নয় কেন? বলেই দিই, সিংহি মশাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। হ্যাঁ হ্যাঁ মা দূর্গার বাহন সিংহি মশাইয়ের কথাই বলছি। গত একদিন হল ওনাকে কেউ দেখে নি। পুজোর ঠিক আগে আগে এরকম একটা ঘটনায় তুমুল শোরগোল পরে গেছে। সবাই কানাঘুষো করছে, মা দূর্গার মুখটা আগুনের মতন টকটকে লাল।
বাৎসল্য : পান্থ রহমান রেজা
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪১৩ বার পঠিত
'এইইইইইই পাখি নিবেন, পাখি। কথা বলা পাখিইইইইই।'
ঝন্টুদের উঠানে মার্বেল খেলছিল রাশেদ। পাখিওয়ালার ডাক শুনেই কান খাড়া হয়ে যায়। ভুলে যায় নিজের চালের কথা। পাখিওয়ালার ডাক কোন দিক আসছে, তা বোঝার চেষ্টা করে। এরপর দৌড়ে বড় রাস্তায় গেলে পাখিওয়ালার সামনে পড়ে যায়। পাখিওয়ালার খাঁচায় কত পাখি! ময়না, চন্দনা, মুনিয়া, ডাহুক।
'কোন পাখি কথা বলে।'
'এই যে খোকা, ময়না পাখি।'
পরজনমে হইও গাধা : সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ১৬৯২ বার পঠিত
মানুষের নানা রকম শখ থাকে, কেউ মানুষ মারে কেউ মোবাইল কেনে, ইচ্ছেমত, একেরপরে এক। মোদ্দা কথা হল অপচয়। কীভাবে কে কতখানি অপচয় করবে সেটাই তার সখ। বাঈজি পোষা, ঘুড়ির সুতোয় বেঁধে বা ফানুসে টাকা ওড়ানো, বিড়ালের বিয়ে দেওয়া সবই তখন ব্যাকডেটেড। নতুন কিছু একটা সখ আবার না থাকলেই নয়। রানী যা আবদার করেন রাজা তা না করতে পারেন না। আর রাজকন্যা তো দুজনকারই ইস্যু। এখন থেকে সখটা যদি নারচার না করা যায় তবে কী আর বড় বয়সে অভ্যাস করান যাবে? রাজকন্যার বয়েস তখন মাত্র বারো। রাজা রানীকে ছুঁয়ে ওয়াদা করলেন, এক বছরের মধ্যে রাজকন্যার জন্য সলিড ও ইউনিক একটা শখ না বার করতে না পারেন তবে রাজ সিংহাসন ছেড়ে বনবাসে চলে যাবেন।
একটি অতিবাস্তবিক গল্প : মলয় রায়চৌধুরি
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৮৩০ বার পঠিত
বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার ও প্রখ্যাত সমকামী দেওতা খান্নার সেলাই করা উজ্জল লাল নিল সবুজ আর খয়েরি রঙের পোশাকে ওনাদের দেখে কে! পোশাকের ফেব্রিক ও নরম টেক্সচার পালক পালক| ঠোঁটে লাইক-মি লাল গোলাপী এমনকি কালচে লিপস্টিক, পোশাকের সঙ্গেই ম্যাচিং করা। দশ বারটি তরুণীর বকবকিয়ে দল যাকে বলে জেনারেশন এক্স, ডাবল এক্স, ট্রিপল এক্স, ওনাদের যিনি নেতৃস্থানীয়া, তাঁর নাম কমলেকামিনী দেবী। না, দেবী - দেবতা কাটেগরির দেবী নন ! হাজব্যান্ড মাত্রেই তো ড্যুড আর তাই হস্তান্তরযোগ্য বলে, উনি বরেদের পদবির মালিকানা সেই কবেই ত্যাগ করেছেন।
দ্য আদার সাইড : কৃষ্ণকলি রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৭৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
হলটায় রোজ রোজ একটাই সিনেমা চলে। মিনিটরা আরো মিনিটদের ডাকে, ঘন্টারা আরো ঘন্টাদের, দিন,সপ্তা,মাস,বরষ ডাকে। আরো সব দিন, সপ্তা,মাস, বরষকে। সবার চোখের মণি জুড়ে এই একটা সিনেমাই চলে। মানুষ গুলো তাতে হাঁটে, বসে, ঘোরে, ফেরে। মানুষগুলোর চারপাশে হাওয়ায় ধুলোর কণার মত কথা ওড়ে। ছোটছোট গোলগোল কথা, বড়মত কোণাচে কথা, ভাঙাভাঙা গুঁড়োগুঁড়ো কথা।ওড়ে। সিনেমাটায় ঠিক এত ঘন্টা এত মিনিট পরে একটা মেরুন রঙের ট্রাম চলে যায়, সেই সময়েই রাস্তা পেরোয় একটা হলুদ ছাতা, আকাশ জুড়ে বিষ্টি থরথর ক'রে কাঁপতে থাকে।
ক্ষরা ও খুনের অবেলা : আনোয়ার সাদাত শিমুল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৬০৭ বার পঠিত
তাকে সনাক্ত করা গেলে, অন্তত একবার প্রমাণসহ দেখা মিললে, খুন করা হবে।
এ সিদ্ধান্তে কোনো দ্বিধা নেই, সংকোচ নেই। সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয়েই গেছে, তখন ফেরার পথও নেই। খুন করার পরে, নিজের কাছে অথবা অন্য কারো কাছে, কোনো কার্যকারণ কিংবা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যেতে হবে না। পৃথিবীতে সব কিছু সবাইকে জানতে হয় না, অনেক কিছু না জেনেই মানুষ বেঁচে থাকে এবং মরে যায়। তাই তাকে মরে যেতে হবে। তার মৃত্যুর কারণ পৃথিবীর মানুষ জানবে না। হয়তো সে নিজেই জানবে না কেনো তাকে মেরে ফেলা হলো কারণটি অথবা কারণগুলো তাকে জানতে দেয়া হবে না।
প্রশান্ত কিশোর- বাংলার নির্বাচন এবং তারপর : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১০ জুন ২০২১ | ৩২০৪ বার পঠিত
আজকের সময়টা তথ্যের সময়, যাঁর কাছে যত তথ্য, তিনি তত বেশি শক্তিশালী। যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্প। তারপর সেই তথ্য সংশ্লেষণ করে, অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে, সমস্যা চিহ্নিত করে, আবার সেই মানুষটির কাছে পৌঁছনোর প্রক্রিয়াটিই এই প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা করেছেন এই নির্বাচনের শেষ অবধি। এর পাশাপাশি, নির্বাচনী প্রচারে, কোন নেতা কীভাবে কোন জায়গায় কতটুকু বলবেন, কোন সাংবাদিক সম্মেলনে কোন কথা বলা হবে সেই সমস্ত কিছু আগে থেকে ঠিক করা ছিল, সৌজন্য আইপ্যাক। কোন জায়গায় কে প্রার্থী হবেন থেকে শুরু করে কাকে দলে রাখা উচিত হবে না, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাকে দলে কতটুকু স্থান দেওয়া হবে, সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে এই সংস্থা। আরো অনেক বিষয় হয়তো কাজ করেছে। ‘বিজেপিকে ভোট নয়’ যাঁরা প্রচার করেছিলেন তাঁদের হয়তো অবদান আছে কিন্তু দিনের শেষে আইপ্যাকের ভূমিকা বড় নির্ধারক হয়ে দাঁড়াল।
অন্য ভাষার কবিতা - নূর উন্নাহার : অনুবাদ - চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১১ জুন ২০২১ | ৩৮০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
একদম হালআমলের শিল্পী এবং কবি। মেয়েটির জন্ম পাকিস্তানে, করাচীতে। ইউটিউব,ব্লগ,সোশ্যাল মিডিয়াতে অতি অভ্যস্ত। সমালোচকের বক্তব্য- "...নূর বলেছেন তাঁর নামের অর্থ, দিনের আলো। এই নাম,যথার্থ, কারণ তাঁর বইয়ের প্রতিটি লেখায় আছে এক আলোভরা জাদু। যা, আমাদের কাজ করতে, বেঁচে থাকতে, ভালোবাসতে প্রাণ জোগায়..."
পেন্সিলে লেখা জীবন (২৩) : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১২ জুন ২০২১ | ৪৭১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
সবটাই দামোদর নদের বালি উত্তোলন নিয়ে। ও হলো সোনার খনি। তিনি এক ব্যবসায়ীকে নিষিদ্ধ করেছেন চিঠি দিয়ে, সেই ব্যবসায়ী দিন পনের বাদে গাড়ি হাঁকিয়ে আমাকে এসে বলছেন, স্যার বলে পাঠালেন, কাগজপত্র, চালানে সই করে আমার কাজ শুরু করিয়ে দিতে। বললাম, স্যার চিঠি দিয়ে বন্ধ করেছেন, স্যার চিঠি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা রহিত না করলে তো আমি কোনো চালানে স্বাক্ষর করতে পারব না, লিজ অর্ডার দিতে পারব না। যাদব মশায় জোরাজুরি করতে লাগলেন। তিনি আমাকে হঠাৎ বলেছিলেন, আপনার বই কী বেরুলো স্যার, কত কপি ছাপা হয়, আমি কিনিয়ে নিবো। অপমানিত লেগেছিল। স্যরি। আপনি নিজেই তো বাংলা পড়তে পারেন না, আমি অফিসে বই বেচতে বসি না। তিনি না পেরে আবার জেলা সদরে ছুটলেন। বলে দিলাম, লিখিত অর্ডার যেন তিনি না নিয়ে আসেন। অফিসিয়াল চিঠি যেভাবে আসে, সেই ভাবেই আসে যেন। স্যার অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, তাঁর পাঠানো ব্যবসায়ীকে আমি প্রত্যাখ্যান করায়।
ইভান দেনিসোভিচের ষাট বছর : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২৫ জুলাই ২০২১ | ২৬১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সুকোভ কোনও সময় টুপি পরে খাবার খায় না। সেটা খুলে সে হাঁটুর ওপর রাখে। তার দিয়ে তৈরি করা একটি চামচ যেটা সেই ১৯৪৩ সাল থেকে তার সঙ্গী সেটা সে তার পায়ের ছেঁড়া ন্যাকড়াগুলোর মধ্যে থেকে বার করে। চামচ দিয়ে দুটো বাটির তরল নাড়িয়ে দেখে। গরম, ধোঁয়া উঠছে। এক চামচ সে মুখে দেয়, আরও এক চামচ। উষ্ণতা তার শরীরের জমে থাকা হিম ভেদ করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। আঃ স্বর্গীয়! তার মুখ উদ্ভাসিত, কোনও কষ্টই তার কাছে আর কষ্ট নয়। লপসিটা সে নাড়ায়, চলে যাবে, মাছের একটা সেদ্ধ ক্ষীণ কাঁটাও আছে যেটার সঙ্গে ফুলকো পাখনার টুকরাটাকরা লেপটে আছে। প্রতিটি কাঁটা সে শুষে নিঃশেষিত করে ফেলে, ছিবড়ে করে টেবিল ভরিয়ে দেয়। ৎসজারের বাটিতে আবার একটা বরফঘেয়ো আলু! কোনও তাড়াহুড়ো নেই তার, ধীরে সুস্থে খায়। আলুটা মিষ্টি, কিন্তু শক্ত। সুকোভ একটা বাটির তরল শেষ করে অবশিষ্টটা কাচিয়ে দ্বিতীয় বাটিতে ঢেলে দেয়। সেটাও চেটেপুটে চকচকে করে দিয়ে তবে তার শান্তি।
সবার জন্য এক বই কতটা মানবিক! : সুদেষ্ণা মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ১৫ জুন ২০২১ | ৩৯১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন বোর্ডের বাংলা সিলেবাসের নির্মিতি অংশ নিয়েই আমার মনে এমন প্রশ্ন জাগে। ধরা যাক, সমার্থক শব্দ পড়াতে গিয়ে জলের প্রতিশব্দ শিখিয়েছি- অপ, সলিল,অম্বু, উদক, তোয়, পয়ঃ, নীর, পানি, ইলা ইত্যাদি। বা কন্যা শব্দের প্রতিশব্দ শেখাতে হয়েছে তনয়া, দুহিতা, আত্মজা, নন্দিনী, মেয়ে, দারিকা, ইত্যাদি। বা পৃথিবীর প্রতিশব্দ শেখাতে গিয়ে শিখিয়েছি- ধরা, ধরণী, বসুধা, ভূ, ধরিত্রী, মেদিনী, ক্ষিতি, জগত ইত্যাদি। এত সমার্থক শব্দ মুখস্থ করিয়ে পড়ুয়াদের লাভ কী! কিন্তু আমরা যারা পড়াই তাদের শেখাতেই হবে। অন্ধের মতো মুখস্থ করা ছাড়া ছোটোদের কাছেও কোন উপায় থাকে না!
আদ্দিকালের শহরনামা - দ্বিতীয় পর্ব : শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ১৮ জুলাই ২০২১ | ২৪১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
তবে শেষপাতে বলতেই হয়, কলকাতার পথঘাটের আনাচে কানাচে যতটা স্বচ্ছন্দে বিহার করেছেন হার্ট, লোক বা সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর ধারণা ততটাই অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট এবং নেড়াতথ্যের ভারে জর্জরিত। কাহিনি উঠে আসে না সেই থেকে; বড়জোর কিছু কিছু টুকরো ছবি দেখতে পাওয়া যায় বড়জোর। যেমন জানা যায়, ইংরেজদের আসারও আগে পর্তুগিজদের শুরু করা ক্রীতদাস প্রথা কিভাবে কোম্পানির শাসনকালেও বহাল তবিয়তে ছিল, ১৭৮৯ সন অব্দি। দাসপ্রথার সঙ্গে জড়িত বর্বরতার প্রতীক বা অমানবিকতার ইতিহাস, কোনোকিছুই মান্য হয় নি সেকালে। দিব্যি চলেছে দৈনিকে দাস কেনাবেচার, বা পালিয়ে গেলে সেই কারণে দেওয়া বিজ্ঞাপন। কেউ দাস কিনলে কাছারিতে রেজিস্ট্রেশন করাতে হতো সেই দাসের। তারপর নিংড়ানো শুরু।
অসিত কর্মকারের উপন্যাস ‘বাঁক বদলের উপাখ্যান’-এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া : ধীরাজ বোস
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৮ জুলাই ২০২১ | ৩২৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বিষয় নির্বাচন, ঘটনাবহুল দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ সেই বিষয়কে পর্বে পর্বে বিন্যস্ত করা, চরিত্রনির্মাণ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সংঘাতের চিত্রণ, বিশেষত নারীচরিত্রের রহস্য, সৌন্দর্য, সংকীর্ণতা এবং মহত্বের অসাধারণ উন্মোচন, নদী-জল ভিত্তিক জীবনের ছবিকে তার নিজস্বতায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং সর্বোপরি জীবনকে জয় করা এবং তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য জোটবদ্ধ লড়াইয়ের অনিবার্যতা - এ সবই অসামান্য স্বাভাবিকতায় প্রতিষ্ঠিত এই উপন্যাসে। লেখকের মুন্সিয়ানার মূলে আছে এই নিপীড়িত, নিঃস্ব মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখে পরম মমতা এবং ভালবাসায় তাদের আত্মীয় করে নেওয়া। নইলে এই উপন্যাস রচনা করা সম্ভব হত না। বিশেষত ওপার বাংলার মানুষের কথ্য ভাষার এমন নিপুণ ব্যবহার গভীর বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়ার উপলব্ধ সত্য যে কত খাঁটি তা অসিত কর্মকারের এই গভীর এবং নিবিড় কর্মে ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত। একেবারেই ত্রুটি নেই,এ কথা আমি বলব না। রাজনীতি, দল এই প্রসঙ্গগুলো এসেছে তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নয়। সে যাই হোক, অসিত কর্মকার তাঁর যে সৃষ্টি আমাদের উপহার দিলেন তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব।
চিরকালীন সমস্যার সমাধানে প্রতীচ্য ও প্রাচ্যের মেলবন্ধন – এক দার্শনিকের জীবন - তৃতীয় কিস্তি : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৬ জুন ২০২১ | ৪১৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
Wittgenstein মনে করতেন দর্শন ও জীবন বা জীবনযাপন সম্পৃক্ত! এই জন্য তাঁর দর্শন Liberation-এর দর্শন বা মুক্তির দর্শন হিসেবেও পরিচিত। Russell-কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘How can I be a logician before I am a human being?’। এখানে এসে পূর্ব-পশ্চিম কোথাও একটা মিলে যায়। আদি ভারতে যাজ্ঞবল্ক্য, গার্গী, মৈত্রেয়ীরা তাঁদের নিজস্ব পথে দার্শনিক সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজেছিলেন আর বিংশ শতাব্দীতে পশ্চিমে আরেকজন মনীষী দার্শনিক তাঁর নিজস্ব প্রতিভায় পৌঁছলেন প্রায় সেই একই পথে! সম্ভ্রমের ব্যাপার হল Wittgenstein আমাদের দেশে আধুনিককালে যার সঙ্গে তাঁর চিন্তা ও বুদ্ধির সবচেয়ে বেশি সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি তথাকথিত কোনো দার্শনিক বা ধর্মগুরু বা সমাজসংস্কারক ছিলেন না, ছিলেন মূলত একজন কবি। প্রকৃতপক্ষে যে উপনিষদীয় ভারত রবীন্দ্রনাথের আধুনিক উদার ও সংস্কারমুক্ত মনের অনুপ্রেরণা ছিল তার সাথে এসে মিশেছিল পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, অন্যদিকে যুক্তিবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন Wittgenstein-এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছিল উপনিষদীয় প্রজ্ঞা। মৃত্যুর আগে তাঁর বলে যাওয়া শেষ কথা ছিল, ‘Tell them I have had a wonderful life’।
বাঁধরক্ষা এবং কিছু নিবিড় স্বার্থের গল্প : সীমান্ত গুহঠাকুরতা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ১৯ জুন ২০২১ | ৪৫২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
অনেকেই হয়তো জানেন না, পৃথিবীতে মাত্র দুটি অঞ্চল আছে, যার প্রায় পুরো বসতিটাই সমুদ্রতল থেকে অনেকখানি নীচে – একটি হল হল্যান্ড আর অন্যটি আমাদের সুন্দরবন। সমুদ্রের খুব কাছে হওয়ায় জোয়ার-ভাটায় সুন্দরবনের নদীগুলিতে জল ওঠানামা করে কুড়ি থেকে পঁচিশ ফিট। তাই সুন্দরবনের সে সমস্ত দ্বীপে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, জোয়ারের সময় সেগুলো সবই চলে যায় জলের নীচে, জেগে থাকে শুধু গাছপালার মাথা। আর যে দ্বীপগুলোতে মানুষের বাস, জোয়ারের জল যাতে সেই দ্বীপগুলোকে ডুবিয়ে দিতে না পারে, সেই কারণেই প্রতিটি দ্বীপকে চারপাশে বেড় দিয়ে রাখে দেড় মানুষ বা দু-মানুষ সমান উঁচু বাঁধ। জোয়ারের জলের প্রবল চাপ ধারণ করে রাখে সেই বাঁধ। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, একবার কোনো জায়গায় সেই বাঁধ ভাঙলে নোনাজল ঢুকে বেশ কয়েকটি গ্রাম আর কয়েকশো একর জমিকে ডুবিয়ে দেয়। এই কারণেই নদীবাঁধগুলোকে বলা হয় সুন্দরবনের লাইফ-লাইন বা জীবন-রেখা।
ভাইজার : জয়া বর্মন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জুলাই ২০২১ | ২৭১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে আর কর্পোরেটের স্ট্রেসগরিমা ইত্যাদি ভাষ্যের অন্তরালে প্রকৃত ভারতবর্ষের মানব সম্পদের পরিচর্যায় সরকারি ব্যবস্থার অবদানকে ভুলতে থাকার কারণ বিবিধ হতে পারে। সরকারের নিজের দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলার ইচ্ছা, সর্বগ্রাসী মুনাফাপিপাসা, জনগণের সঙ্গত ক্ষোভ - এইসব অনেক কিছুই তার মধ্যে থাকা সম্ভব। তার পরেও, যেসব জায়গায় পৌঁছে যাওয়া পুঁজির কাছে লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় পৌঁছনোর দায় রাষ্ট্রযন্ত্রের। সেই যন্ত্রকে সচল রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিকূল পথে চলতে গেলে শুধু চাকরির দায়ের বাইরেও, মানুষের প্রতি পারস্পরিক মমতা এক আবশ্যিক উপাদান হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারি বা অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের অভিপ্রায়। আজকের পর্বে থাকছে সত্তরের দশকের ত্রিপুরায় সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক জয়া বর্মনের অভিজ্ঞ্তা। আপনিও আপনার অভিজ্ঞ্তা নিয়ে লিখুন খেরোর খাতা অথবা হরিদাস পাল বিভাগে, কিংবা সম্পাদকীয় বিবেচনার জন্যে ইমেল করুন guruchandali@gmail.com ঠিকানায়।
ভালো রেখো সাইকেল : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৬ জুন ২০২১ | ২৫৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সাইকেল আর বই, এই তাঁর জগৎ। রাজাবাজারের বাড়িতে বইয়ের ভিড়ে বাকি সব কিছুই অদৃশ্য বলা চলে। সে বাড়িতে প্রথম যে দিন গেলাম, বিচিত্র অভিজ্ঞতা। রূপদার গলা শুনতে পাচ্ছি, মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছি না। অনেক পরে নজর করি, দুটি বইয়ের তাকের ফাঁকে এক চিলতে জায়গায় গা এলিয়ে রূপদা। কথায় কথায় বললেন, দেশের বাড়ি থেকে সে দিনই সকালে ফিরেছেন। জানতাম, দেশের বাড়ি ভগবানপুর। অনুমান করতে পারছিলাম, রূপদা কীভাবে গিয়ে থাকতে পারেন। তবু, খানিক মজা করার জন্যই বললাম, এই গরমের মধ্যেও কি নন-এসি বাসে…। বাক্যটি শেষ করার ফুরসত পেলাম না। রূপদা যেন রীতিমতো অপমানিত বোধ করলেন। পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন, বাস কেন? সাইকেল থাকতে বাস কেন?’ মার্জনা চেয়ে বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু বম্বে রোডে ঝড়ের গতিতে চলা গাড়ির মধ্যে সাইকেলে চলাফেরা ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে না! রূপদা কথাটা কানেই তুললেন না।
বিজ্ঞান -- অপবিজ্ঞান -- যুক্তিবাদ -- কোভিড১৯ -- টিকাকরণ : অমিতাভ সেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৬ জুন ২০২১ | ৭১৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৪
ছোটবেলা থেকেই আস্থা রেখেছিলাম বিজ্ঞানে, সত্যে, যুক্তিতে। ঠিক সেই কারণেই আজ যাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে বাধ্য হলাম, তাঁদের একএকটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবেই ধরতাম। তাঁরা যখন কিছু লিখতেন, বলতেন, যাচাই না করেই সেই ফ্যাক্টগুলো মেনে নিতাম, অনেক সময় দ্বিমত হতাম তথ্যের ব্যাখ্যায়, কিন্তু তথ্যে বা basic framework এ নয়। একটা আস্থা ছিলো, বিশ্বাস ছিলো, শ্রদ্ধা ছিলো - তাঁদের সততায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিবৃত্তিতে। কিন্তু এখন যখন দেখি এঁদের অনেকেই পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাস্তবকে অস্বীকার করে অন্ধ বিশ্বাসের প্রচার করেন তখন মানতেই হলো, কোভিড১৯ অনেক কিছুই কেড়ে নিয়ে গেল তার মধ্যে নিয়ে গেলো এই আস্থাটাও, এতেও কম রিক্ত হলাম না – অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে । এই বয়সে আস্থার জায়গা খুব কম, সেখানেও যখন টান পড়ে, হতাশ লাগাটা বোধহয় অস্বাভাবিক নয়।
বৃত্তরৈখিক (৪২) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ জুলাই ২০২১ | ২৩৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
উৎপল জানতো পলিথিনের ব্যাগে লাউয়ের বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হয়, নিজের হাতে আগে করেনি কখনো। গোয়াল থেকে পচা গোবর নিয়ে এলো শুকি, মাটি আর বালির সাথে সেটা মিশিয়ে তৈরি হলো জমি, বীজ বপন করা হলো তাতে। জলধর বললো ব্যাগের নীচে ফুটো করে দাও দু-তিনটে, ওখান থেকে জল ঝরে যাবে। বীজ থেকে চারা, তারপর সুস্থ সবল চারাগুলোকে মাটিতে পুঁতলো ওরা। পুকুর-পাড়ের মাটি তো শুকিয়েই গিয়েছিলো এতদিনে, সেই মাটিকে একটু ঝুরঝুরে করে নেওয়া হলো, দেখতে দেখতে চারাগুলো বেড়ে উঠলো বেশ খানিকটা। এবার শুকির কাজ, চারাগুলোর গায়ে গায়ে কঞ্চি বেঁধে দেওয়া। চারা আর একটু বড়ো হলে কঞ্চির ওপর মাচা, মাস দুয়েকের মধ্যেই ফল !
বৃত্তরৈখিক (৪৩) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৭ জুলাই ২০২১ | ২২০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
জলধর বলে একদিন, সবই তো হচ্ছে জয়িদি, কিন্তু টীচারের কী হবে ! স্কুলে এখন এতোগুলো বাচ্চার জন্যে রান্না করতে হয় রোজ, তাছাড়া গেস্ট হাউজের ঘরগুলোও তো প্রায়ই ভর্তি থাকে আজকাল। বান্দোয়ান থেকে নিমাই নামের একজনকে নিয়ে এসেছে জলধর, সে রঘুনাথকে সাহায্য করে। তাছাড়াও লকি-শুকি। এমনকী প্রতুলবাবুও এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে, কাজেই অসুবিধে হয় না। পুকুরপাড়ে লাউ কেন, এখন কুমড়ো আর বেগুনও হচ্ছে, গাছপালা যা লাগানো হয়েছিলো সবই বাড়ছে তরতর কোরে ! গেটের উল্টো দিকে লকিশুকিদের জমিতে তৈরি গোয়ালে এখন আরও কয়েকটা গোরু, এমনকী মোষও দুটো! সবই হচ্ছে জয়িদি, স্কুলের টীচারের কী হবে?
বৃত্তরৈখিক (৪৪) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৪ জুলাই ২০২১ | ২২৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে উৎপল, আর কোদাল হাতে স্কুলের আটটা বাচ্চা লেগে যায় মাটি কাটার কাজে। আটটার মধ্যে তিনটে নেহাৎই দুবলা, ওদের দিয়ে মাটি কাটানো যাবে না। ওরা শুধু কাটা মাটি সরিয়ে সরিয়ে রাখবে। আর মেয়ে তিনটে পুকুর থেকে জল নিয়ে এসে মাঝে মাঝে মাটিতে ঢেলে মাটি নরম রাখবে। ঘন্টায় ঘন্টায় ছুটি, তখন প্রাণ ভরে জল খাওয়া, সঙ্গে মুড়কি আর বাতাসা। তিন ঘন্টার পর গরম ফেনা ভাত আর আলুভাতে। তারপর আবার কাজ, কিন্তু ঘন্টায় ঘন্টায় জল খাওয়ার ছুটিটা থাকেই। দুপুরে ভাতের সাথে ডাল থাকে, সঙ্গে একটা সবজিও। সন্ধ্যের আগেই কাজ শেষ। চানটান সেরে জামাকাপড় বদলিয়ে বাচ্চারা বসে ডাইনিং হলের মেঝেতে খেজুর পাতার চাটাই বিছিয়ে। পাশে একটা চেয়ার পেতে বসে জয়ি, এখন লেখাপড়ার সময়। লেখাপড়া কিন্তু এগোয় না বেশি দূর, ক্লান্ত বাচ্চারা ঢুলতে থাকে একটু পরেই।
বৃত্তরৈখিক (৪৫) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ৩১ জুলাই ২০২১ | ২৪২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এই লাইনের মানে কী হলো? – জলধর বলে, ধারমুর শেখানো করম পুজো আমরা এখন সবাই মানি; মানি, তাই বাঁচি মাথা উঁচু করে। অনেক দিন আগে, তা প্রায় একশো বছর হবে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের ভাষা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। তখন ইংরেজ আমল, আমাদেরই জঙ্গলের জমি কেটে খনি বানিয়ে ওরা আমাদের বাপ-দাদাদের তখন কুলি বানাচ্ছে, হাজার মাইল দূরে ওদের চা-বাগানে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কুলির কাজ করার জন্যে, আর আমাদের বাপ-দাদারাও নিজেদের ভাষা ভুলে ওদের ভাষাই শেখার চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে জন্ম নিলেন এক আশ্চর্য মানুষ যিনি অনুভব করলেন মাতৃভাষা মানুষের কাছে কত বড়ো সম্পদ।
বৃত্তরৈখিক (৪৬) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৭ আগস্ট ২০২১ | ২২৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ক্লাস ফোর-এ বসেই পাশের ঘর থেকে প্রতুলবাবুর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। ক্লাস টূ আর ক্লাস থ্রী একসাথে বসিয়ে পড়াচ্ছেন তিনি। শোনা যায় ছেলেমেয়েদের সমবেত কণ্ঠস্বরও। তারা মুখস্থ করছে কিছু একটা। সম্ভবত ইংরিজির পাঠ। এ-এন-টি অ্যান্ট, অ্যান্ট মানে পিঁপড়ে, তারপরেই এ-জি-ই এজ, এজ মানে বয়স, এবং পরেরটাই এ-ডবল এস অ্যাস, অ্যাস মানে গাধা। ছেলেমেয়েরা কী শিখছে বোঝা যায় না, কিন্তু ছাত্রশিক্ষকের সমবেত পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা না কোরে পারা যায় না ! নিলীন স্থির করে এবার মেদনীপুর ফিরে গিয়ে ও নিজে যে স্কুলে পড়েছিলো সেখানকার শিক্ষকদের সাথে একটু আলোচনা করবে।
বৃত্তরৈখিক (৪৭) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৪ আগস্ট ২০২১ | ২৩২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ছেলেগুলো আসলে গণ্ডগোল করার মতলবেই এসেছিলো। বললো, চব্বিশ ঘন্টা সময় দিচ্ছি, তার মধ্যে না হলে আগুন জ্বালিয়ে দেবো। এখানকার এস-ডি-পি-ও কে চিনতাম আমি, ডি-এস-পি কেও চিনি, খবর দিলে হয়তো সাহায্য পেতাম, কিন্তু সে রাস্তায় যাইনি। সেদিন গেলাম না কলকাতায়। একজন মিস্ত্রীকে চিনতাম, যে আমাদের টয়লেট অনেকগুলো তৈরি করেছে। খোঁজ করে করে তাকে ধরলাম, সেপটিক চেম্বার সারাবার ব্যবস্থাটা হলো। বান্দোয়ানের হাসপাতালে গেলাম, কোনই ব্যবস্থা করা গেলো না। মিস্ত্রী বললো, কাউকে দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করিয়ে যদি ঢাকাঢুকি দিয়ে কোথাও রেখে দিতে পারি, ও পরের দিন সেগুলো সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে দেবে। তারপর কী করলাম জানেন? গোটা কয়েক ড্রাম কিনে বান্দোয়ান থেকে ফিরলাম।
শঙ্খ ঘোষ—ফিরে পড়া : নীলাঞ্জন হাজরা
বুলবুলভাজা | পড়াবই : শঙ্খ ঘোষ | ৩০ জুন ২০২১ | ৫০৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সাহিত্যসৃষ্টি পঠিত হয় বারংবার। সময়ের ব্যবধানে। কখনো বা একই পাঠক তাঁর প্রিয় বইটিতে ফিরে ফিরে যান, জীবনের নানা মুহূর্তে। প্রায়শই একই লেখা পাঠ থেকে পাঠান্তরে আনে ভিন্ন অনুভব, ভিন্ন অর্থ। এ কথা মাথায় রেখেই নির্মিত হয়েছে এই বিশেষ সংখ্যা। শঙ্খ ঘোষের যে কোনও একটি বই ফিরে পড়ুন, লিখুন এ মুহূর্তের ভাবনা— এই ছিল এই সংখ্যার লেখকদের কাছে অনুরোধ। কোন বই নিয়ে কে লিখবেন, ছিল না তার কোনো নির্দেশ। ফলত, একই বইয়ের পৃথক পাঠপ্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে একাধিক লেখকের কলমে, ঘটেছে এমনটাও। সংখ্যাটিকে তা আরও সমৃদ্ধ, কৌতূহলোদ্দীপক করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আকবর বাবরের মা : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৩ জুলাই ২০২১ | ২৪২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
পরিযায়ী শ্রমিক কথাটা তখন শুনিনি। কোনও খবর লিখিনি। শ্রমিক, শ্রমিক নেতা, শ্রমমন্ত্রী, কারও মুখে শুনিনি শব্দ দু’টি। খবরের কাগজ, টেলিভিশনের খবরে এ নিয়ে কোনও খবর, আলোচনা নজরে আসেনি। মইনুল, আমিনুল এবং ওদের আরও অনেকের সঙ্গে আমাদের তখন রোজকার আড্ডার সম্পর্ক। ওদের মুখেই জানতে পারি, মুর্শিদাবাদের গ্রামে জোয়ান ছেলেদের অনেকেই গ্রামছাড়া। কেউ কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। কেউ পুলিশের ভয়ে এলাকাছাড়া। সে জেলার খবর শিরোনামে আসে গঙ্গা-পদ্মা-জলঙ্গির ভাঙন আর সিপিএম-কংগ্রেস মারামারি-খুনখারাপির সুবাদে। ছাপা হয়, খোলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচার, মানুষ পাচার, নানা সামগ্রী চোরাচালানের খবর। আর ছাপা হয় আইএসআই চর ধরার রোমহর্ষক কাহিনি।
পুরুষার্থ (২) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৩ জুলাই ২০২১ | ২২৯৪ বার পঠিত
ঋষভ লক্ষ্য করেছে, ভাল স্মৃতি মন ভাল করে। ভাল স্মৃতির অভাব তার পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনে নেই। প্রয়োজনের থেকে বেশিই আছে। তবে সব ভাল স্মৃতিকে রোমন্থন করতে ইচ্ছা হয় না। খালি একটা স্মৃতি আছে যেটাকে মন্থন করা যায়, যার সবটা মনে নেই, হয়তো সবটা সে বোঝেনি। হয়তো একটু ধোঁয়াশা ছিল, অতএব সেই ধোঁয়াশার পিছনের বস্তুটিকে নিজ মাধুরী দিয়ে সাজানো যায়। যা করার সময় বা সাহস সেই চারবছর আগে হয়নি, এখন করা যায়, কল্পনায়। সেইজন্য হয়তো এই ধোঁয়া ধোঁয়া স্মৃতিটার রোমন্থনযোগ্যতাটা একটু বেশি!
পুরুষার্থ (৩) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ জুলাই ২০২১ | ১৯৫৯ বার পঠিত
জেট ল্যাগ হলে, বা জ্বরজারি হলে, মাঝরাতে অনেক সময় এরকম বাজে ভাবে ঘুম ভাঙে। এরকম বাজে একটা স্বপ্ন আসে, ঘাম দেয়। ঘুম ভাঙারপর মানুষ টের পায় না সে কোথায় আছে। ঋষভ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যেখানে ওর ঘুম ভাঙল জায়গাটা কোথায়? ওর কলকাতার বাড়ি, না আমেরিকার বাড়ি, না কি হাম্পির হোটেল। হোটেলের খাট থেকে তো বাঁ দিক দিয়ে নামার কথা, এখানে তো মনে হচ্ছে উল্টোটা। স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবার পরেও যেন হাত-পা বাঁধা! ঋষভ শুনেছিল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে একটা কিছু হয়- মানুষ ভাবে সে জেগে আছে- কিন্তু হাত-পা ঘুমন্ত মানুষের মত অচল!
পেরিয়েছ দেশ কাল মাটি (৩) : সুকন্যা কর ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৭ জুলাই ২০২১ | ৩৪৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলাম ধবধবে সাদা পোশাক ও টুপি পরা অল্পবয়সী এক ছেলে। বাক্স ধরতে এসেছে। আমি আর কথা বললাম না। এই ডিস্ট্রিবিউশন আমার জন্য, আমার গাড়ির জন্য খুব পরিশ্রমের। কয়েকটা স্টক পয়েন্ট ঠিক করা হয়। এরপর ক্লায়েন্টদের ঐ ঠিকানা শেয়ার করা হয় যাতে নিজেরা তুলে নেয়। আমার বাকি সহকর্মীদের ক্লায়েন্টরা অডি, বিএমডাব্লু, মার্সেডিজ চড়ে যায় ডোনেশন নিতে (ঐ আরেক মজার গল্প, পরে বলব)। আর আমার সদ্য এদেশে আসা অভাগা ক্লায়েন্টদের প্রায় কারো গাড়ি নেই। যাদের আছে, খুব মেজাজও আছে সঙ্গে। যাদের গাড়ি নেই, তাদের অনেক অনুনয় বিনয় করতে হয় গাড়ির সার্ভিস পেতে হলে।
ইহুদি রসিকতা ৭ : শনিবারে সাবাথে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৩ জুলাই ২০২১ | ৪৮৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই উনচল্লিশটি বিধান বিস্তৃত হল। জেফ্রি আমাকে বোঝালেন সেটি খুবই সহজ ছিল। এই ধরো বিজলি/ইলেক্ট্রিসিটি। সুইচ টিপলে আলো বা অগ্নির উৎপাদন হল। প্রাথমিক উনচল্লিশটি বিধানে আগুন জ্বালানো মানা। তাই এটির বারণ। মোজেসের আমলে মোটর গাড়ি, বিজলি বাতি, হাওয়াই জাহাজ, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন ছিল না। সাবাথের রীতি নীতি অনুসারে বাতিল হল গাড়ি চালানো বা চড়া, বিজলি বাতি জ্বালানো বা নেভানো টেলিভিশন দেখা ফোন করা বা ধরা। বই পড়তে পারেন অবশ্যই। তবে আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে নয়। তার সুইচ অন করাটা একটা কাজ!
মৃত্যু বলো, হত্যা বলো
: প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৭ জুলাই ২০২১ | ৪১৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
মৃত্যু বলতে চাই, মৃত্যু লিখতে চাই। শুরুতে না হয় শেষে, সমস্ত চেতনা জুড়ে থাকার মতো এই মৃত্যুর নিদারুণ অপচয়। যতো জীবনে লগ্ন হবার স্বপ্ন দেখবো, ততোই মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা নিয়ে আসবে স্ট্যান স্বামীর এই অনর্থক মৃত্যু, নির্দয় হত্যা। ভারত রাষ্ট্রকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে কেন সাজানো মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, কেনই বা মাওবাদী যোগের মিথ্যা অপবাদ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কর্পোরেটের পথ নিষ্কন্টক করার জন্য আর কতো বলিদান চাই, উত্তর দিতে হবে।
রাজারানি সংবাদ- তৃতীয় পর্ব : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১০ জুলাই ২০২১ | ২৫৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
লোহিতসাগর বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। ফিনিসিয় নাবিক, টায়ারের রাজা সকলের সাহায্যে রাজা সলোমনের বাণিজ্যের কী দাপট! শেবার তো সবই আছে পণ্য আছে, নৌকা আছে, পণ্যের বাজার আছে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খোদ সলোমন। শেবার বণিকেরা দূর দূর দেশে আগের মত সহজে চলে যেতে পারছে না। না জলে, না স্থলে। তাদের মশলা তাদের রজন সুগন্ধি, নিজেদের দেশে নয়, দূর দূর দেশে এসব পণ্যের প্রবল চাহিদা! নিজেদের দেশে কে কিনবে এসব? তাদের স্বচ্ছন্দ বাণিজ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর তুলে দিয়েছেন সলোমন! দেশের সম্পদ সমৃদ্ধি বাড়বে কী করে যদি বাণিজ্য ঠিকমত না হয়?
ডেলি প্যাসেঞ্জারি মানে/ দিন আনি দিন খাই : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১০ জুলাই ২০২১ | ২৮৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ট্রেনের কামরা তখনও অন্ধকার৷ দর দর করে ঘামছেন কয়েকশো মানুষ৷ কিন্তু পিন ড্রপ সায়লেন্স৷ খিস্তি-খেউড়, ঠেলাঠেলি সব থেমে গিয়েছে৷ কামরা ভর্তি জনতা মন দিয়ে রেডিও-র স্থানীয় সংবাদ শুনছেন৷ সংবাদ পাঠক এ বার খবর পড়া থামিয়ে বলছেন, ‘এই কমপার্টমেন্টে, আপনাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী ক’জন? বড়জোর পাঁচ-দশ জন৷ বাকিরা! বাকিদের কী হবে? তাদের কী দোষ? তারাও কি সব সত্ মায়ের সন্তান?’ আরও বললেন, ‘তবে খেয়াল রাখবেন, সরকারি কর্মচারীর মাইনে বাড়লে দু’পয়সা আপনার পকেটেও আসবে৷ ওরা কিনলে তবে তো আপনি বেচবেন? এখন তো এ-কূল ও-কূল দু’কূল যাওয়ার জোগাড়৷ উনি (জ্যোতি বসু) বলে দিয়েছেন, দিতে পারব না৷ কেন্দ্র না দিলে দিতে পারব না৷
নকশিকাঁথা (২) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৪ জুলাই ২০২১ | ২৫৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভোগান্তি হয়েছিল অবিদুল্লাহেরও। ওর চোখ টেনে কী যে দেখেছে, জামার উপর চক দিয়ে দাগ টেনে দিল। ওকে টেনে একদিকে নিয়ে গেল আরও কীসব পরীক্ষা করতে।
এইসব প্রশ্ন, তত্ত্বতালাশ পেরিয়ে জার্মান কসাই, ইহুদি দর্জি, জাপানি সুসি কারিগর, নরওয়ের চাষি, পোলান্ডের সিগার কারখানার কর্মী সবাই নেমে গেল। তারা কেউ যাবে পেনসেলভেনিয়া, কেউ মিশিগান, কারো রাস্তা ভার্জিনিয়ার দিকে। রয়ে গেল শুধু বারো জন চিকনের ব্যাপারি। আর দুজন চিনা। চিনাদের ব্যাপারটা আরও গোলমেলে, চাইনিজ এক্সক্লুসান অ্যাক্টে ওদের এই দেশে ঢোকাই এখন মুশকিল। তার উপর ওদের কথাও কেউ সহজে বুঝতে পারে না।
এত টাকা দিয়ে আমি কী করব! : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৭ জুলাই ২০২১ | ২৪১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সেই সকালে, বাবুদা যে দিন দু’টাকা চেয়ে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছিলেন, আমার হাতে সে দিন অনেক টাকা৷ কিন্তু আমার নয়, স্কুলে এনসিসি-র অনুষ্ঠানের জন্য সহপাঠীদের চাঁদার টাকা৷ রবিবার সকালে এনসিসি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা৷ সাত-পাঁচ না ভেবে, একটু যেন দয়াপরবশ হয়ে স্কুলে ঢোকার মুখে, চার ধারে কেউ কিছু বুঝতে না-পারে, এমন ভাবে বাবুদার হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে হাঁটা দিলাম৷
পখালরাজা : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ২৯ জুলাই ২০২১ | ২৭২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
পখাল একটা বিরাট লেভেলার। রাজা প্রজা, ধনী নির্ধন, সাধু ভণ্ড, সৎ অসৎ, সাহসী দুর্বল, মন্ত্রী জনগণ সব্বাইকে এক পাল্লায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেটা কী? নিঃশর্ত পখালপ্রীতি। এই একটিমাত্র বিষয় যেখানে কোন মতপার্থক্য চলবে না। রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনটুনির ঘরেও সেই ধন আছে! নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, পখালরাজের চরণে। এমনকি স্বয়ং শ্রীজগন্নাথদেবও স্নেহ করেন তাকে।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলুক, পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে অনলাইন শিক্ষার পরিকাঠামোকেও মজবুত করা হোক : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২১ জুলাই ২০২১ | ৩১২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
p>অনলাইন ক্লাস ইস্কুলের বিকল্প হতে পারবে না কোনওভাবেই - তা প্রথম থেকে জানা ছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থাকল গত পনেরো ষোলো মাসে - ততটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবারও বোধহয় কথা ছিল না।
বিশেষ করে যত ঘরে স্মার্ট ফোন আছে, ইন্টারনেট ডেটা প্যাক যতটা সস্তা হয়েছে আগের চেয়ে তার হিসাব নিকাশ করলে মনেই হয় যে অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থেকেছে, তার চেয়ে প্রসারিত হতে পারত।
কেন অনলাইন ক্লাস আরো খানিকটা প্রসারিত হতে পারল না সেই আলোচনা একটা স্বতন্ত্র বিষয়। সেখানে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক, কানেকশান ও গতির সহজলভ্যতা এসবের প্রশ্ন আছে, ছোটদের মনঃসংযোগের প্রশ্ন আছে, শিক্ষাদপ্তরের পরিকল্পনার খামতি নিয়েও প্রশ্ন যে একেবারেই নেই তাও নয়।
কেন এতদিনেও বিভিন্ন শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক ক্লাস মেটেরিয়াল এক জায়গায় রাখার একটা ওয়েব সাইট ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে ফেলা গেল না, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সময় সুযোগ মত ঢুকতে পারত আর দেখে নিতে পারত তাদের পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ভিডিও, ছবি, চার্ট, ম্যাপ, গ্রাফ, লেখা ইত্যাদি তা বোঝা দুষ্কর।
ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন রাখার আর উত্তর পাওয়ার জায়গাও সেখানে রাখা যেতে পারত, ওয়েব পোর্টালটিকে ইন্টার্যাকটিভ করে তোলার অনেক সুযোগ তো প্রযুক্তি করেই দিয়েছে। তবুও সেই সুযোগকে ব্যবহার করে নেবার দিকে শিক্ষা দপ্তর এগোলেন না।
এই অতিমারীকে মোকাবিলা করে এই সময়ে শিক্ষাকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা যে এক একটি বিদ্যালয় ও তার শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের বিষয় নয়, সেই উদ্যোগ যতই আন্তরিক হোক না কেন শেষ পর্যন্ত একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো এই বিপুল সমস্যার মোকাবিলায় জরুরি - তা শিক্ষা দপ্তর বুঝে উঠতে পারেন নি বলেই মনে হয়।
এই সমস্ত নানা ধরনের বিষয় ছাড়াও অন ক্লাইস ক্লাস সংক্রান্ত সমস্যাটা অনেকটাই অর্থনৈতিক।
এ যুগের সংকট – ফ্রয়েড পুনর্পাঠ : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৩ জুলাই ২০২১ | ৩৭১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সৌন্দর্য কোনো জন্মান্ধ মানুষকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যেমন অসম্ভব, তেমনি, মন যদি সঠিকভাবে গ্রহণক্ষম না হয়, তা হলে রসপোলব্ধি দুষ্কর। ধীশক্তিও সাধারণভাবে বুদ্ধি বলতে যা বোঝায় তা নয়। ধীশক্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা দুর্লভ বস্তু, বোধ ও বুদ্ধির এক অতি উন্নত স্তরকে প্রজ্ঞা বলে। বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মধ্যে তফাতটা গুণগত, পরিমাণগত নয়। ধীশক্তির ফসল বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। রসের ফসল সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এটা খুবই আশ্চর্যের যে এই মাধ্যমগুলির উৎপত্তির মূলে যে সংস্কৃতি নামক জিনিসটি কাজ করছে, তা যে ‘জৈবিক’, নিছক আবেগের ব্যপার নয়, তা মানবসমাজ বহু যুগ পরেও বুঝতে পারে নি।
আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ নজরবন্দি : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২২ জুলাই ২০২১ | ৪১০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এখানেই একটা মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন এসে যায়। গোপনীয়তা মানে কোনও কিছু লুকোনো নয়, উল্টে প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব জায়গা থাকাটাই গোপনীয়তা, যা কোনওভাবেই অন্য কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যাঁরা ভাবছেন যে তাঁর ব্যক্তিগত ফোনে তো এই স্পাইওয়ার সরকার ঢোকায় নি, তাহলে তাঁর এই বিষয়ে না ভাবলেও চলবে, তাঁরা সম্পুর্ণ মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। যেহেতু কোনও একটি ব্যক্তির সমস্ত কিছুর নাগাল পাওয়া সম্ভব এই স্পাইওয়ারের দৌলতে, সুতরাং তাঁর কন্টাক্ট তালিকারও নাগাল পাওয়া এমন কিছু কঠিন নয়, সেই সুত্র ধরে তাঁদের অর্থনৈতিক লেনদেনও যে সরকার দেখছে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়?
অনলাইনের ফস্কা গেরো : কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২১ জুলাই ২০২১ | ২৪৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভার্চুয়াল ক্লাসরুম বা আপিসঘরে দৃশ্যমানতা কিঞ্চিৎ উচ্চস্তরের, মানে পর্দার ক্যামেরার নজর ব্যক্তির উর্ধাঙ্গটুকুতেই সীমাবদ্ধ। ‘বিলো দ্য বেল্ট’ ইনফরমাল হলে সমস্যা নেই। বাঁকুড়ার গামছার সঙ্গে শার্ট-টাই-ব্লেজার পরে উচ্চপর্যায়ের মিটিং চলছে দেখলে অতএব ভিরমি খাওয়া নিষ্প্রয়োজন। মিটিং-ধারী দাঁত খিচিয়ে বলবেন, "তাতে কোন মহাভারতটা অশুদ্ধ হচ্ছে ,শুনি! আমি তো আর এই পোশাকে সমুদ্রসৈকতে সেলফি তুলতে যাচ্ছিনা।" ক্যামেরা চালু করা যে ক্লাসে জরুরি নয়, তার ড্রেস কোডে আবার রংচটা, ফুটোফাটা ভেন্টিলেটেড গেঞ্জিও নাকি চলতে পারে। তা বলে পরীক্ষার দিনেও? দইয়ের ফোঁটা অবসোলিট হয় হোক, পাটভাঙা জামাটুকু তো অন্তত পরবে!
চাষার ভোজন দর্শন – ৫ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২২ জুলাই ২০২১ | ৪০৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
খাবার গল্প করতে গিয়ে সৌন্দর্য্য বোধের কথা উঠছে কেন? এটাই মূল কারণ – যদি নামী কোন ফ্রেঞ্চ রেষ্টুরান্টে খেতে যান, তাহলে সেটা নিজেই টের পাবেন। ধরুণ – একটা বিশাল স্টাইলের সাদা প্লেট দেবে – কিন্তু মাঝখানে ১০ গ্রাম মাংস, দুটো বীনসের দানা, এককাছি সবুজ পাতা চেরা। আর সেই মাংসের অর্ডার নেবার সময় আপনাকে ওয়েটার/ওয়ের্টেস সেই চিকেনের (যদি চিকেন অর্ডার করেন) বাল্যকাহিনী শোনাবে! চিকেন এই খেত, বনেবাদাড়ে খেলে বেড়াতো, তার মামারবাড়ি ওখানে, জবাই করার আগে সে এই এই জায়গা ভ্রমণ করেছে ইত্যাদি। প্রথম দিকে ঘাবড়ে যেতাম – এখন আলতো করে বলে দিই, চিকেনের জীবনগাথা শোনায় আমার ইন্টারেষ্ট নেই!
আমি মরলে শ্মশানে যাইয়ো গদাধর : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৪ জুলাই ২০২১ | ২০৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এক দিন কথায় কথায় শ্যামলদা বললেন, ‘চল যাই, গদাধর কর্মকারের সঙ্গে দেখা করে আসি৷’ মদ আছে, মাতলামো নেই, চরিত্রটা বেশ মনে ধরেছিল শ্যামলদার৷ পর দিন সাতসকালে গদাদার দোকানে হাজির হলাম শ্যামলদার ইচ্ছার কথা জানাতে৷ দেখি, চায়ের কাপে পাতি লেবু নিংড়ে রস বের করে এক চুমুকে রস মুখে পুড়ে পাড়া কাঁপিয়ে বললেন, ‘বোম বোলে’৷ শ্যামলদা তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে চাওয়ার হেতু শুনে বললেন, ‘কিন্তু আমি তো মদ ছেড়ে দিয়েছি৷’ বললাম, সে কী! কবে ছাড়লেন! বললেন, ‘দিনক্ষণ কি মনে থাকে৷ স্বপ্নে বাবা (মানে ত্রিনাথ ঠাকুর) কইল, অনেক খাইসস, আর না৷ এ বার ছাড়৷ ব্যাস, ছাইড়া দিলাম৷ নতুন নেশা লেবুর রস। রোজ সকালে একটা।’ বললাম, ‘আপনি যে বলেছিলেন, ডাক্তার বলেছেন, মদ ছাড়লেই বিপদ৷’ সহাস্যে বললেন, ‘ডাক্তার কি বাবার থিকাও বড় পণ্ডিত?’
দানিশ সিদ্দিকি : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : রাজনীতি | ২৪ জুলাই ২০২১ | ২৮৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
দানিশ বারবার বলেন, জীবন বিপন্ন করে তিনি ছবি তুলতে চান না। এমনকি আহত হওয়ার বিনিময়েও একটা ভালো ছবি তুলতে চান না। বলেন, একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাংবাদিক জানেন কীভাবে কনফ্লিক্ট জোন কভার করতে হয় নিজেকে বাঁচিয়ে। বন্দুক তাক করা উগ্র হিন্দুত্ববাদীর সামনে অনভিজ্ঞ সাংবাদিকরা ভুল করে চলে গেলে তিনি তাদের সরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন, অসাধারণ এবং আর এস এস সন্ত্রাসের মুখ হয়ে ওঠা সেই ছবিটি তোলার থেকেও অক্ষত থাকা ও রাখাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি সবসময় নিজেকে ভয় পেতে শেখান, নইলে কখন এমন কিছু করে ফেলবেন যাতে শারীরীক ক্ষতি হবে। বলেছেন, তিনি যে অতিমানব নন, এটা নিজেকে ভুলতে দেননি কোনদিন। তাহলে কি ধরে নেব যে গড়পড়তা স্বার্থপর সংসারী মানুষের থেকে দানিশ সিদ্দিকি আলাদা কেউ নন? কিন্তু তাহলে দানিশের কর্মজীবনের প্রধান অ্যাসাইনমেন্টগুলো হিসেবে আঁটানো যাবেনা, যার মধ্যে মোসুলের যুদ্ধ, রোহিঙ্গা ক্রাইসিস, দিল্লির মব লিঞ্চিং, শ্রীলংকার বিস্ফোরণ এবং আফগানিস্তানের তালিবান আর আফগান সেনা সংঘর্ষ আছে।
নকশিকাঁথা (৬) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২১ আগস্ট ২০২১ | ২৫৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আমার কাছে আসে তো টাকা বদলে ডলার নিতে। কার কাছে কী টাকা দেখলেই সব বুঝি। কান এঁটো করে একচোট হাসল ডক্টর। রেখেও যায় ওদের টাকা, আমি ওদের হয়ে সুদে খাটাই।
এবার লোকটার আসল ব্যবসাটা বোঝা গেল। গোবিন্দর আরো শোনার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু আক্রাম আলি পেছন থেকে খালি গুঁতাচ্ছিল। অবশ্য কথায় কথায় দেরি হয়ে যাচ্ছে অনেক।
ওরা বেরোচ্ছিল, লোকটা পিছন থেকে ডাকল। শোন, শোন। যে পথে যাচ্ছো সেখানে পাউন্ডে দিলে ঘাঁটা পড়ে যাবে তোমাদের। তার চাইতে আমার এখানে ডলার বানিয়ে নিয়ে যাও।
কথাটা সত্যি। লোকটার কাছ থেকে পাউন্ড ভাঙ্গিয়ে দশ দশ ডলার হাতে নিয়ে বেরোল দুজনে। বোঝা গেল এটা লোকটার সাইড ব্যবসা। কিংবা এটাই আসল, দোকান খুলে রেখেছে শুধু লোক টানার জন্য। ডক্টর লোকটা বেরোবার আগে আর একবার মনে করিয়ে দিল জাহাজ থেকে পালালে তাদের জীবনটা কেমন বেবাক ভাল হয়ে যেতে পারে।
আক্রাম দাঁড়িয়ে থেকে দোকানির কথা শুনতে না চাইলেও, রাস্তায় বেরিয়ে সেই কথা তুলল আবার। জুইতোর কথা কইছে গোবিনদা, জায়াজো আর না গেলে কিতা ওয়?
কথা কইবার বেলা খুব সওজ রে, অতো সুজা বিষয় নায় মনো রাখিস; যুদি একবার পুলিশোর আ'তো পড়স, তে কিতা অইবো?
কেনে, তুমরার ক্লাবার সাব কিতার লাগি? তান আ'তো রেজগি ধরাই দিলেই অইবো।
ওয়, তুমরার ওউ ক্লাবার সাব অখনও টিকিয়া আছে নি দেখ, মরিয়া মাটির মিশি গেছে!
বাপ নাই তে কিতা অইছে, পুয়া ভাতিজা তো বেটার আছে; তারার চলাফিরাত কুনু উঁচনিচ দেখছো নি কুনু দিন?
পান্তা হুজুগায় নমঃ : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ২৯ জুলাই ২০২১ | ৩০৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
ইউটিউবের বদান্যতায় যে বাঙালির এখন ঘরে ঘরে শেফ, বিভুঁইয়ের মাস্টারশেফের ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিযোগীদের ড্রিবলিং করে টিকে থাকা শীর্ষ তিনের একমাত্র মহিলাটির জটিল-কুটিল খাবারের বদলে এই 'সাধারণ' রান্নাটি ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশনায় তাঁরা কিঞ্চিৎ পাজল্ড। এমনিতেই ক্লান্তিকর মানিমেকিং সর্বস্ব মধ্যবিত্ত মিডিওকার বাঙালি, আঁতেল প্রমাণান্তে, এট্টু গাঁয়ের ছোঁয়া পেলেই আহা উহু করতে করতে গায়ের ক্যামাফ্লোজখানা নালেঝোলে ভিজিয়ে ফেলেন; তাঁরা গালভরা নাম দেন 'ফোক', তাপ্পর ফোকি (রি নয়, সেটার সহমর্মী কোনভাবেই নন বলেই বাহুল্য) সেজে নববর্ষে পান্তা ইলিশ খান, মাঝেমাঝে মাটির দেওয়ালে সাজা রেঁস্তোরায় কচুভর্তা খেয়ে ভাবসমাধি যান। অতএব, এই পান্তাকে অ্যান্টিক্লাস স্ট্রাগলের মর্যাদা না বাঙালির নেকু স্মৃতিরোমন্থনের সোৎসাহ পৌষপার্বণ বলা হবে সে সিদ্ধান্তে আসতে তাঁরা গলদঘর্ম হচ্ছেন, বৈকি।
প্রফুল্লচন্দ্র বনাম জগদীশ-বিবেকানন্দ : দুই প্যারাডাইমের দ্বন্দ্ব : আশীষ লাহিড়ী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০২ আগস্ট ২০২১ | ৫৭৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৫
এর তাৎপর্য, বিজ্ঞানের ইউরোপ-কেন্দ্রিক উৎপত্তি সম্বন্ধে যে-ধারণা তখন বিদ্বৎমহলে প্রচলিত ছিল, তা বদলানোর মতো মালমশলা পেশ করলেন প্রফুল্লচন্দ্র। ইতালির Archivio di storia della Scienzia এই বইয়ের সমালোচনা করে যে-কথা বলল তা আরো তাৎপর্যপূর্ণ: ‘সবদেশেই একদল লোক থাকে, নির্বোধ সংকীর্ণ স্বাজাত্যবোধের দ্বারা চালিত হয়ে যারা বিশ্বাস করে যে বিজ্ঞান কেবল তাদেরই দেশে বিকশিত হয়েছে, এবং সেটা তাদেরই সম্পত্তি। কিন্তু আরেকদল মানুষ আছে যাঁদের রয়েছে উপযুক্ত শিক্ষাগত প্রস্তুতি, রয়েছে তথ্য সংগ্রহ করার, বিচার করার ও তা নিয়ে লেখবার মতো মনীষা। এঁরা যখন নিজ দেশ সম্বন্ধে প্রকৃত মমত্ব ও স্বাভাবিক দক্ষতা নিয়ে কোনো কাজে নিয়োজিত হন, তখন তাঁদের মধ্যে কাজ করে একটা উদার দর্শন, একটা সংস্কারমুক্ত মন। সুতরাং ,এঁদের রচনা আমরা গভীর মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করতে বাধ্য ৷ ভারতে রসায়নের ক্ষেত্রে স্যার পি সি রায়ের স্থান ঠিক এরকমই। তাঁর কাছে আমরা অনেক কাজের জন্যই ঋণী। ... কিন্তু যে মহান কীর্তির জন্য তাঁর নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে সেটি হল তাঁর রচিত আদিকাল থেকে শুরু করে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যকাল পর্যন্ত ভারতীয় রসায়নচর্চার এই অতুলনীয় ইতিহাসটি।’
ক্রিটিক্যালি আচার্য'জ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০২ আগস্ট ২০২১ | ৪০৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
মুশকিল হলো যে মানুষটা সারাজীবন ব্রিটিশ পুলিশের নেক নজরে থাকলেন, যাঁর নামে ঢাউস ফাইল তৈরি হলো আইবি দপ্তরে, তাকে ইংরেজের পোষ্য বললে ঠিক হয় কি? তবু শুনি তিনি নাকি বেঙ্গল কেমিক্যালসে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় নাইট্রিক এসিডের উৎপাদন অব্যাহত রেখে ইংরেজ সরকারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তা খালি ইংরেজ সরকার বলা হচ্ছে কেন, ভাই? মিত্রশক্তি বলে একটা কিছু ছিলো না তখন? নাইট্রিক এসিডের আকালে ভারত থেকে, এই কলকাতা থেকে নাইট্রিক এসিড যোগানো হয়েছে, তা ইস্তেমাল করে মিত্রশক্তি জিতেছে। ভালো হয়েছে। আপনার আমার গ্রেটার, লেসার ইভিল বেছে নেবার স্বাধীনতা আছে, আচার্যের নেই? তিনি কাইজারের তুলনায় ইংরেজকে লেসার ইভিল ভেবেছেন, সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন। এতে এতো আপত্তির কী আছে? নাকি ক্রিটিকালি দেখতে হবে বলেই যা খুশি তাই বলে দেওয়া যায়!
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আত্মচরিত – একটি জাতীয়তাবাদী পাঠ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০২ আগস্ট ২০২১ | ৩৯৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ত অধ্যায় ছিল খুলনার দুর্ভিক্ষ, উত্তরবঙ্গের বন্যায় কংগ্রেসের হয়ে সেবাকার্যে প্রবেশ করা। সুভাষচন্দ্র বসু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, এই সেবাকার্যের মূল দায়িত্ব প্রফুল্লচন্দ্রের উপর আসে। তিনি মন্তব্য করেন যে এর মাধ্যমে কংগ্রেস বাংলার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে এবং ভোটদেওয়া হোক বা আন্দোলন হোক, এই জনসাধারণ ‘গান্ধী মহারাজের’ শিষ্যদের হাত ছাড়বে না। এর পাশাপাশি তিনি এও দেখেন, যে এই সব দুর্গতিই সরকারি নীতির প্রত্যক্ষ ফল। যেমন, রেলের জন্য অবিবেচনাপ্রসূত বাঁধ দেওয়া বন্যার জলকে নামতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় এই সমস্যাগুলি বোঝেন, কিন্তু হোয়াইট ম্যানস বার্ডেন কাঁধে নেওয়া সরকারি অফিসাররা বোঝেন উল্টোটা। গ্রামের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন ভেঙে যাওয়াই এই বিভিন্ন দুর্গতির পিছনে একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন। এবং সেই সংগঠনের উপর জোর দেওয়া, কংগ্রেসের কর্মসূচীর মূল ফোকাসে গ্রামপুনর্গঠনের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যাদির উপর তিনি জোর দেন। হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার সমাধানের পথও এর মধ্যে তিনি দেখতে পান।
আসলে, গান্ধি-রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি, তার একজন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। গান্ধিজি প্রচারের জন্য, আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অনেকগুলিকে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ আত্মচরিতে চরকা বিষয়ক অনুচ্ছেদটি। চরকা এমন এক প্রশ্ন, যেখানে জাতীয়তাবাদী বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র বিশ্বমানবতাপন্থী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে রেহাই দেন নি। চরকা-খদ্দরে অনাস্থাশীল কবি প্রফুল্লচন্দ্রের পত্রাঘাতের উত্তরেই চরকার সমালোচনায় নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি লেখেন। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের চরকা-স্মালোচনা যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের, মুক্ত মানবতার প্রশ্নে, প্রফুল্লচন্দ্রের আত্মচরিতের চরকা অধ্যায়টি বস্তুনিষ্ঠ।
বেঙ্গল কেমিক্যাল: স্বপ্ন বিকিয়ে যায় : রবীন মজুমদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা | ০৩ আগস্ট ২০২১ | ৫৭৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৬
আমরা বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণ হিসেবে গণ্য করি যে সময়কে, প্রফুল্লচন্দ্র তারই এক প্রতিভূ।ইউরোপের নবজাগরণের সঙ্গে তুলনীয় নাই হতে পারে আমাদের নবজাগরণ, হওয়া উচিত নয় এবং সম্ভবও নয়।
কিন্তু বিজ্ঞান-কারিগরি ও শিল্পের আমূল পরিবর্তন কে বাদ দিয়ে কোনো রকম নবজাগরণের কথাই ওঠে না।সেদিক থেকে দেখলে নিজেদের মত করে বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের আত্তীকরণ করে, নিজেদের সমাজ সংস্কৃতি ইতিহাসের সঙ্গে সুসমঞ্জস ভারী শিল্পের পথিকৃৎ বলতে হয় প্রফুল্লচন্দ্রকেই। তিনি যেন প্রাচ্যের পার্কিন (স্যার উইলিয়াম হেনরি পার্কিন, কৃত্রিম জৈব রঞ্জক পদার্থের সংশ্লেষণ পদ্ধতির প্রথম উদ্ভাবক এবং শিল্পপতি, ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের নতুন ঘরানার প্রতিনিধি - বিজ্ঞানী এবং শিল্পপতি)। কিন্তু না, আমাদের ভাবনায় নবজাগরণ আসতে পারে, 'স্বদেশী শিল্প' হতে পারে, কিন্তু 'পুঁজি ‘ ‘শিল্প ' এসব হতে পারে না।আমরা বরং আক্ষেপ করেছি, এ হে, প্রফুল্লচন্দ্রের মত একজন ঋষিতুল্য মানুষ কিনা পুঁজিপতি বনে গেলেন!
একটু বিপথে চলে যাচ্ছি বোধহয়।বেঙ্গল কেম-এর মত একটা উদ্যোগ যে শুধুমাত্র একটি উৎপাদনশিল্প, একটি কারখানা নয়, তার উপযোগিতা যে শুধু লাভ ক্ষতির হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করলাম না!
নকশিকাঁথা (৭) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ আগস্ট ২০২১ | ২১৪৭ বার পঠিত
বোঝা গেল টোনিয়ার গলা যতই বাচ্চা মেয়ের মত রিনরিনে হোক, সে নিজেও অনেক ঘাটের জল খাওয়া মানুষ। ম্যানহাটনে বোর্ডিং হাউজ খুলে বসেছে, নিগ্রো হলেও সে হেলাফেলার লোক নয়। তার আশ্রয়ে আরও পাঁচজনা থাকে, তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব টোনিয়ার মাথায়। যেসব মেয়ে থাকে তার বোর্ডিং হাউজে তারাও যে সব ধোয়া তুলসী পাতা সেরকম তো নয়। কিন্তু তারা বাইরে যা করে করুক, নিজের চত্বরে সে কোন ঝামেলা ঢুকাবে না।
টোনিয়ার পিছু পিছু গোবিন্দ সারেং চলল। বেশি দূরে নয়, সেভেন্থ অ্যাভেনিউতে একটা দোতলা কাঠের বাড়ি। বাইরের দরজার মুখে বোর্ড লাগান – টোনিয়াজ বোর্ডিং হাউজ। তাই বলে এমন কিছু জাঁদরেল বাড়ি নয়, তবে শক্ত পোক্ত। কাঠের দেওয়ালে হলুদ আর বাদামি রঙের পোঁচ খুব পুরনো নয়। বাড়ির একপাশ দিয়ে কাঠের সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়। সেখানে সারি সারি ঘর, একেক তলায় পাঁচ ছটা করে হবে। বেশ কটা ঘরে আলো জ্বলছে, আবার দুই একখানা অন্ধকার। দোতলায় ঘরগুলোর সামনে দিয়ে টানা বারান্দা চলে গেছে, বারান্দার রেলিংয়ের মাঝখানের একটা পাট ভাঙা, ঝুলছে। সেদিকে দেখিয়ে টোনিয়া হাসল, দেকেচো ওখেনটা কেমন আড় হয়ে ঝুলচে? অর্থপূর্ণ হাসি হেসে তাকাল গোবিন্দর দিকে।
নকশিকাঁথা (৮) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১১২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ক্যাটোরবাসী বিছানায় একটা হাল্কা সুবাস ছিল। কোন মন কাড়া আতরের গন্ধ, নারী শরীরের সুগন্ধি আবেশ। গোবিনের মনে পড়ছিল দামুর মায়ের কথা, রমনাবি। গত বিশ বছরে বিবির সঙ্গে মোলাকাত হয় দুই বছরে একবার। গোবিন বাড়ি ফিরলে তার তাম্বুল খাওয়া ঠোঁটের হাসি ছড়িয়ে পড়ে, পায়ে আলতার পোঁচ পড়ে, হাটে চুপড়ি ভরা নোলা আর খলিসা মাছ বেচে জালালের বিলে ধুন্দুলের খোসা দিয়ে ঘসে ঘসে সিনান করে চালা ঘরের বিছানায় গোবিনের কাছে ঘন হয়ে আসত। রমনাবির পাক দেওয়া পাটালি গুড়ের মত চামড়ায় নাক ডুবিয়ে আঁশটে গন্ধে সিনা জুড়াত গোবিনের। মৎস্যগন্ধা নারী তার লেজের ঝপটায় ভাতারকে পাকে পাকে জড়িয়ে নিত একদম। স্বপ্নে দামুর মায়ের জন্য ছটফট করে উঠল দশ ঘাটের পানি-ছ্যাঁচা, ব্রিটিশ জাহাজের পোড় খাওয়া লস্কর গোবিন্দ সারেং। দামুর মা, জীর্ণ বেড়ায় ঘেরা তার একচালা ঘর, ভিটের এক ছটাক জমিতে মাথা দোলানো নিমের শীতল বাতাস, স্বপ্নে তাকে ঘিরে ধরেছিল। ক্যাটোর বিছানায় যখন ঘুম ভাঙল গোবিন্দের, তখনও মনে জেগে রইল পায়ের তলায় শক্ত জমির কথা, পায়ের পাতায় ধুলা মাখার সুখানুভূতি। গোবিন্দ সাব্যস্ত করল যা হয়েছে সে বাচ্চা পীরের দোয়া। এই যে আক্রাম হঠাৎ করে চোখের সামনে কোন ভোজবাজিতে হাফিস হয়ে গেল সেটা আখেরে ভালই হল। তাকে জাহাজে ফিরতে দিল না। যে ইঞ্জিন রুমের জন্য বছরের পর বছর বাঙ্কার থেকে চাঁই চাঁই কয়লা বয়ে নিয়ে এসেছে, হাতুড়ি মেরে মেরে সেই কয়লা ভেঙেছে, কিংবা ফার্নেসের হ্যাচ খুলে আগুনে কয়লা ঠেলেছে, সে জাহাজি জীবন আর তাকে টানছিল না। সেই কোন জোয়ান বয়সে মাছ ধরার জাল গুটিয়ে রেখে জাহাজের খোলে প্রবেশ করেছিল গোবিন্দ। তার দেশ বিদেশ দেখার হাউশ মিটেছে। অনেক দেশের লোক দেখেছে সে-ও সত্যি, কিন্তু জীবনের এতগুলো বছর কেটে গেছে তিরিশ-হাত পানির নিচে, সে যেন এক অন্য পৃথিবী। যেখানে জীবনের সব চাওয়া পাওয়া জড়ো হয় হাতের ফুলে ওঠা পেশিতে।
নকশিকাঁথা (১০) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
চারজনে চলল সার দিয়ে। মাথায় দুটো পেটি, পিঠে একখান বোঁচকা, দুই হাতেও দু’টো করে পোঁটলা। একেকজনকে দেখে মনে হচ্ছে চলমান গন্ধমাদন পর্বত। জোয়ান ছেলে, তাকতদার, গাঁ-গঞ্জে এমন বয়েছে ঢের। ওরা মোকসাদকে বেশি কিছু নিতেই দেয়নি। পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে তো সেই, তার উপর বুজুর্গ মানুষ।
বুঝলে মিয়া, এই শহরের পথের নিশান বেশ সিধা সিধা, ক্ষেতের আলের মত। সার দিয়ে এইসব ইস্ট্রিট গেছে, ওদিক থেকে আবার তাঁতের মাকুর মত আভেনু এয়েচে সব। নাক বরাবর চলতে থাকো।
তাপবিদ্যুৎ বাড়ছে না, পরমাণু বিদ্যুৎও তাই (প্রথম কিস্তি) : প্রদীপ দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ আগস্ট ২০২১ | ৫৭৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৫
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) মতে জলবায়ু বদল থামাতে গেলে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বর্তমান বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়, তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে বেঁধে রাখতে হলে ২০২৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বর্তমান হারের দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে হবে। তবে শুধু নবায়নযোগ্য শক্তির বৃদ্ধিই জলবায়ু বদল রোখার জন্য যথেষ্ট নয়, সবুজায়ন বৃদ্ধি করলেও তা হবে না। তা করতে গেলে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন বন্ধ করতেই হবে। কেবল কয়লাই নয়, গ্যাস ও জৈবভর পোড়ানোও বন্ধ করতে হবে।
ব্রিটেনের কার্বন ট্র্যাকার এবং কাউন্সিল অন এনার্জি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার (সিইইডব্লু) যৌথ ভাবে প্রকাশিত এক স্টাডি রিপোর্ট ‘রিচ দ্য সান’-এ জানিয়েছে যে, উদীয়মান দেশ কম খরচের নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশ্বের নব্বই ভাগ অঞ্চলেই নবায়নযোগ্য শক্তি সবচেয়ে সস্তা। এইসব দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির মধ্যে ভারতের ভাগ ৯ শতাংশ, আবার আগামী দিনে সম্ভাব্য বৃদ্ধির ২০ শতাংশ। চিনের চাহিদা বৃদ্ধির ভাগ ৫০ শতাংশ, সম্ভাব্য বৃদ্ধির ভাগ ৩৯ শতাংশ। বেশিরভাগ উদীয়মান দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পেরিয়ে যাবতীয় বৃদ্ধি নবায়নযোগ্য শক্তি থেকেই পেতে চলেছে। ২০১০ সালে ভারতে নবায়নযোগ্য শক্তি ছিল ২০ গিগাওয়াটের কম, ২০২১-এর মে মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৯৬ গিগাওয়াট। বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে ধরলে তা হয়েছে ১৪২ গিগাওয়াট বা দেশের মোট বিদ্যুতের ৩৭ শতাংশ।
রাজারানি সংবাদ- পঞ্চম পর্ব : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ০৭ আগস্ট ২০২১ | ২৫১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
"যে অংশটুকু বাকি ছিল এই কাহিনির, লিখে গেলাম। এই কাহিনিকে মরে যেতে দিও না। আলো হাতে, প্রেম বুকে নিয়ে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে, হৃদয়ে সাহস নিয়ে আমরা সবসময় মানুষের পাশে পাশেই থেকেছি। তাপিতকে শান্ত কর। ভ্রান্তকে পথ দেখাও আলমিত্রা। তোমার কাছে এসে যেন লোকে শান্তি পায়। মাছি হয়ো না, মৌমাছি হও।
তুমি স্বেচ্ছায় আমার পথ বেছে নিয়েছ। আমি চলে যাবার পর থেকেই শুরু হোক তোমার পথ চলা। শেবার রানির বাকি কাহিনি লিখে গেলাম। রানির মত হও। একাকী, সাহসী, ব্যতিক্রমী, নির্জন । "
অন্তর্জলি যাত্রায় অপেক্ষমান যাত্রী : শর্মিষ্ঠা রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ১০ আগস্ট ২০২১ | ৩৩৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন, মানে এলআইসির কথাই বলছি। সেই মানুষটির কথা ভাবুন - অফিস-ফেরত এক-কাপ চায়ের খরচ বাঁচিয়ে, সস্তা সাবানে দাড়ি কামিয়েও, প্রতিটি পাই-পয়সা তুলে রেখেছেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে - যাতে শেষ বয়সে টাকার জন্য বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসা, ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষা - আটকে না যায়। কোনও এক শুভ্র, নির্মল সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি তিনি জানতে পারেন - এই প্রতিষ্ঠানগুলি বেমালুম ভ্যানিশ হয়ে গেছে, তাহলে তো তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ারই কথা।
হ্যাঁ, এটাই ঘটতে চলেছে। আমাদের আপাত-নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের আড়ালে নিঃশব্দে মাথা তুলেছে এক সর্বগ্রাসী সর্বনাশের আয়োজন। পড়তে থাকুন...
পান্তা প্রসঙ্গে : কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ১২ আগস্ট ২০২১ | ২৯৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
আমি আগে বাঙাল, পরে বাঙালি। আজীবন ইস্টব্যাংগল, আমরণ লালহলুদ। শবাসনে ক্যান্ডিক্রাশ খেলতে খেলতে বাঙালদের জেদ, পরিশ্রম, স্ট্রাগলের গৌরবের আঁচ পোহাই।... ইলিশ না ভালোবেসে যতখানি বাঙাল হওয়া সম্ভব। আশৈশব পান্তা না ছুঁয়ে বড় হলে যতখানি বাঙাল হওয়া সম্ভব।
আমি শুঁটকির ওমে বেড়ে উঠেছি, কচুর কন্দ, ডাঁটা, লতি, পাতার পাহাড়ে চাপা পড়ে গেছি, জেনেছি যে পৃথিবীতে একমাত্র বিষাক্ত না হলে সমস্ত ঘাসপাতা বেটে খাওয়া যায় - খালি পান্তা আমার সিলেবাস থেকে বাদ পড়ে গেছে।
অথচ পড়ার কথা ছিল না। পড়তে থাকুন...
আলাপহীন সম্পর্ক : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৪ আগস্ট ২০২১ | ১৩৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
মাইকে ঘোষণা হয়, অবরোধ উঠে গিয়েছে৷ পরবর্তী ডাউন ট্রেন ইছাপুর স্টেশন ছাড়ছে৷ ওই পথটুকু ঘড়ি ধরে আসলে, সোদপুরে সেই ট্রেনের পৌঁছতে আরও মিনিট কুড়ি৷ সময় যত গড়ায়, চোখের সামনে ভাসতে থাকে ট্রেনের চেনা ছবিটা — মালপত্রে উপচে পড়া ট্রাক, লরির মত - ট্রেনের ইঞ্জিন, ড্রাইভার-গার্ডের কামরার বাইরে, দরজার পাদানিতে, ভিড়ের গায়ে ভিড় লেপ্টে৷ মাঝে মধ্যে কানে আসে, সেই ট্রেন থেকেই আগে কোথাও রেলের পোস্টে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছেন কোনও যাত্রী৷ ট্রেনের ছাদও বাদ যায় না। সেখান থেকে মাঝেমধ্যেই ওভারহেড তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে টপাটপ মানুষ মরে। এই আছি, এই নেই - কী বিচিত্র জীবন।
স্মৃতি-পাহারার বন্দোবস্ত ও বাঁটোয়ারার ৭৫ : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ১৫ আগস্ট ২০২১ | ৩২৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
বইটি পড়তে পড়তে আচ্ছন্ন লাগে, প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হই। একেবারে তরতরে সাহিত্যিক বাচনে গল্পচ্ছলে যেন লেখা হয়েছে বিবরণগুলি। ফলত ইতিহাস হয়ে উঠেছে জীবন্ত, সজীব, নড়ে চড়ে বেড়ানো। আমাদের পড়া যাবতীয় পুরনো সাহিত্যকর্ম, নানা গল্প উপন্যাসে যে বিন্দু বিন্দু পার্টিশন-যাপন, তার যাবতীয় ফাঁক-ফোকর পূর্ণ করার দায় নিয়ে এসেছে এই বই। এই বই আসলে চেয়েছে নিজের শর্তে কথা বলতে, নিজের মত করে চলতে চেয়েছে গদ্যের ভেতর দিয়ে। কোন নস্টালজিয়াকে প্রশ্রয় দেয়নি, একপেশে গল্পও বলতে চায়নি - যেখানে কোনও একটি ধর্মের মানুষই উৎপীড়িত...। এখানে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ এই তিন গোষ্ঠীর মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখের গল্প থেকে যায়। এই গল্পগুলো জুড়ে জুড়ে একটা ছিন্নভিন্ন সময় ও ছিন্ন জনজাতির কথা চলে আসে।
একরকম শারীরিক বেদনাবোধ জাগে, ভেতরে ভেতরে ক্ষত বিক্ষত লাগে - কেননা আমার পরিবারও পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উচ্ছিন্ন পরিবার।
সুতারা, বাসন্তীদের কথা : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ১৫ আগস্ট ২০২১ | ৪৮৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
"আমাদের দেশভাগ এক জটিল, বহুস্তরীয় ইতিহাস। বিভিন্ন ছোটগল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথায় তার বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়েছে। কোনও একটি লেখা তো তার সব কোণ ধরতে পারে না। তার উপর উদ্বাস্তু শব্দটা তো আর কোন সমসত্ত্ব গোষ্ঠীকে বোঝায় না। বিভিন্ন জাত-ধর্ম-লিঙ্গ-দেশ-কালের স্থিতির ভিত্তিতে একেক জনের দেশভাগের স্মৃতি একেক রকমের। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লেখা জুড়ে জুড়ে তৈরি হয় এক রক্তমাখা ইতিহাস। সেখানে হতাশা, দুঃখ, যন্ত্রণার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগ্রাম, সাফল্য আর ব্যর্থতার কাহিনি। যে দেশভাগ মধ্যবিত্ত উচ্চবর্ণ বাঙালি পুরুষের কাছে ধন-মান-প্রাণ নিয়ে পলায়ন, এবং পরবর্তীকালে এক ধরণের স্মৃতিমেদুরতার জন্মদাতা, সেই একই দেশভাগ অন্য অনেক মেয়েদের ব্যক্তিগত যাতনার উৎসমুখ।"
জ্যোতির্ময়ী দেবীর "এপার গঙ্গা, ওপার গঙ্গা" আর গোপালচন্দ্র মৌলিকের "দেশভাগ ও ননীপিসিমার কথা" - পড়লেন স্বাতী রায়।
‘আগুনপাখি’, অভিবাস ও ‘দেশ’ ভাবনা : রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ১৫ আগস্ট ২০২১ | ২৭৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
"পশ্চিমবাংলার বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক মুসলিম পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে লেখক সুকৌশলে বুনে দিয়েছেন – সাতচল্লিশের আগের অখণ্ড ভারতের উত্থান-পতন, তদানীন্তন রাজনীতি, বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, দেশগঠন ও সামাজিক অবক্ষয়ের আখ্যান। এ কাহিনীর নায়ক সময়। সমাজ, ইতিহাস ও রাজনীতি মিলেমিশে গেছে এ উপন্যাসে। একটি পরিবারের নানা ওঠাপড়ার ছবি আঁকতে আঁকতে গোটা একটি সমাজের উত্থান-পতনের চিত্র এঁকে দিয়েছেন কাহিনীকার। বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুঠাম গদ্য পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখক আগাগোড়া উপন্যাসটিতে রাঢ়বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন।" হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’ নিয়ে লিখলেন রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায়।
ইয়ে দাগ দাগ উজালা, ইয়ে শাব-্গজিদা সেহর : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : রাজনীতি | ১৬ আগস্ট ২০২১ | ৩৫৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, ব্যথিত বৃদ্ধ ঠিক করেন নোয়াখালির গ্রামে গ্রামে, বিহার-কলকাতা-দিল্লি-পাঞ্জাবের দাঙ্গা-বিদ্ধস্ত বস্তিতে তিনি শেষ চেষ্টা করে দেখবেন। তাঁর সারাজীবনের আদর্শ - অহিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করবেন। সঙ্গী তাঁর অক্ষয় সাহস আর হাতে-গোনা কয়েকজন অনুগামী। বিহারে হিন্দুরা তাঁদের আচরণ পরিবর্তন না করলে তিনি আমরণ অনশনের হুমকি দেন '৪৬-এর নভেম্বর মাসে। আর '৪৭ এর জানুয়ারি মাসে তিনি শুরু করেন তাঁর নোয়াখালি ভ্রমণ। দাঙ্গার শিকার নোয়াখালির সংখ্যালঘু হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মনোবল জোগানো আর সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মন পরিবর্তনের জন্য এই তাঁর যাত্রা-সাত সপ্তাহের এই যাত্রায় ১১৬ মাইল তিনি পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। জল-কাদার মধ্য দিয়ে, ভাঙা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে, বিরুদ্ধ-ক্রুদ্ধ মানুষের ঘৃণা পেরিয়ে, সংশয়-অবিশ্বাস পেরিয়ে, মৃত্যুভয় পেরিয়ে খালিপায়ে তাঁর এই হাঁটা - এ হাঁটার তুলনীয় নজির পৃথিবীর মানুষ খুব বেশি একটা দেখে নি। তাঁর পথে ক্রুদ্ধ মুসলমানদের ছড়ানো ময়লা তিনি একবার নিজের হাতে পরিষ্কার করেছিলেন। প্রতিদিন সকালে তাঁর যাত্রা শুরু হত রবীন্দ্রনাথের 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে' গান দিয়ে। সুমিত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন - 'সেটি হয়ে উঠেছিল তাঁর প্রিয় স্তোত্র।' শুরুতে কিছু প্রতিরোধ ছিল - সাংবাদিক শৈলেন চ্যাটার্জি লিখেছেন - মুসলমানরা তাঁকে বিশ্বাস করত না; পরে তারা বুঝতে শুরু করল - এই মানুষটি সাধারণ একজন মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দু নয়, এ অন্য কিছু। লাইন দিয়ে মানুষ তাঁকে দেখতে আসত, তাঁর চলার পথে ভিড় করে জোড়হাতে দাঁড়িয়ে থাকত তারা - তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পীড়িত মানুষজনকে সান্তনা দিতেন, প্রার্থনা করতেন, সম্প্রীতির কথা বলতেন।
পেরিয়েছ দেশ কাল মাটি (৫) : সুকন্যা কর ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২১ আগস্ট ২০২১ | ২৭৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
২০১৯ - আমার দেখা প্রথম রমজানে ফুড ডিস্ট্রিবিউশনে বিএমডাব্লিউ, অডি, মার্সেডিজ চড়ে লোক আসছে ডোনেশন নিতে। যেমন পোশাকের জৌলুস, তেমন গয়না। মহিলারা সবাই বোরখা আর হিজাব। শরীরের যতটুকু দেখা যায় দামিদামি মণি-মুক্তো-হিরে। চড়া মেকআপ। আপাদমস্তক ব্র্যান্ডেড। তখনো রোহিঙ্গা ক্লায়েন্ট আমি দেখিনি।
আমার জ্ঞানের পরিধি যতটা জানে রিফিউজি শব্দকে - তাকে গরিব হতে হবে। আমার রিফিউজি কলিগ আর এই ডোনেশন নিতে আসা মানুষদের সাথে ঐ সংজ্ঞার কোন মিল নেই।
রোহিঙ্গা ক্লায়েন্টরা ওদের ধারেকাছে আসতে পারবে না। আফগানি, ইরানি ক্লায়েন্টের বাড়ি ঢুকলে সুন্দর গন্ধ। দারুন সব চায়ের সেট। অসাধারণ চা, পেস্তা, বাদাম, বিরিয়ানি, ফিরনি।
রোহিঙ্গা ক্লায়েন্টের বাড়ি জুতোর জঙ্গলের পাশে রান্না, দুর্গন্ধ ভরা ঘর। দম বন্ধ হয়ে আসে। জুতোর পাশে বসি। পানের পিকের পাশে বসি। নিজেও পান খাই।
কেমন আছো, কেমন আছিস, কেমন আছেন : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২১ আগস্ট ২০২১ | ২৩২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কী খবর, কেমন আছিস, মাসিমার কী খবর, মেসোমশাই ভালো আছেন, ইত্যাদি কথাগুলি সবার কাছেই কেমন বহুকাল না শোনা ঠেকল।
অথচ, এই তো সেদিনের কথা, পাড়ায় কারও বিয়ে হলে নতুন বউ কিংবা বরকে দেখতে প্রতিবেশীরা রাস্তায় এসে দাঁড়াতেন। পাড়ার কেউ গত হলেও দেখা যেত একই দৃশ্য। শেষ যাত্রা চাক্ষুষ করতে গোটা পাড়া যে যার বাড়ির গেটে এসে দাঁড়াত। মাঝরাত কিংবা ভোররাতে দেহ শ্মশানের যাবে শুনে অনেকে একে তাঁকে অনুরোধ করতেন, ‘যাওয়ার সময় আমারে একটু ডেকে দিও।’ কেউ কেউ জানালার ধারে বসে সারা রাত কাটিয়ে দিতেন শেষ যাত্রার সাক্ষী থাকবেন বলে। তার আগে চলত মৃতের স্মৃতিচারণা।
সব কিছু যে কবে বদলে গেল তারও কি খবর রেখেছি আমরা?
অলিম্পিকঃ সাতটি তারার তিমির : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : খেলা | ২১ আগস্ট ২০২১ | ৩১২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সুতরাং আমরা এই লেখায় অন্তত কয়েকজন এমন ক্রীড়াবিদের নাম লিখে রাখি যাঁদের কথা শোনা যাচ্ছেনা। ধরা যাক দীক্ষা ডগরের কথা। গল্ফে অদিতি অশোকের পাশাপাশি ইনিও ফাইনাল রাউন্ডে খেলছিলেন। গল্ফেই উদয়ন মানে, অনির্বাণ লাহিড়ী পুরুষদের ইভেন্টে ছিলেন। ২০ কিমি রেসওয়াক ইভেন্টে ফাইনাল রাউন্ডে ছিলেন সন্দীপ কুমার, রাহুল রোহিলা, ইরফান থোরি (পুরুষ ), প্রিয়াংকা গোস্বামী এবং ভাবনা জাট (মহিলা )। মহিলাদের ডিসকাস থ্রো তে কমলপ্রীত ক'র । রোইং এ অর্জুন লাল এবং অরভিন্দ সিং। সেইলিং এ পুরুষদের ইভেন্টে বিষ্ঞু সার্ভানন, কে সি গণপতি, বরুণ ঠক্কর, এবং মহিলাদের ইভেন্টে নেত্রা কুমানন। শুটিং এ সৌরভ চৌধুরি। কুস্তির দীপক পুনিয়ার কথা আমরা তাও একটু আধটু শুনতে পেয়েছি, পঞ্চম স্থানে শেষ করায়। হাতে গোনা যে কয়েকজনের নাম এখানে লেখা হলো, এঁরা সবাই স্ব স্ব বিভাগে ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছিলেন। এর বাইরে রয়ে গেলেন বহু ক্রীড়াবিদ, যাঁদের অনেকের নাম আর কোনদিনই প্রচারের আলো পাবেনা। প্রসঙ্গত ভারত এবার মোট ১২০ জনের দল পাঠিয়েছিলো, দেশের ইতিহাসে এর থেকে বেশি খেলোয়াড় আগে কখনো অলিম্পিকে অংশ নেন নি।
লেবারের বিদেশ যাত্রা ৭ : মঞ্জীরা সাহা
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২১ আগস্ট ২০২১ | ২২৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
খাজা মণ্ডলের কাজ শুরু হয়েছিল সৌদির রিয়াদ শহরে। দত্তফুলিয়ার অফিস-ঘরে এই কার্পেন্টারের ইন্টারভিউতে দালাল কী কী প্রশ্ন করেছিল জানিনা, তবে উঁচু উঁচু বিল্ডিঙের আলো-ঝলমলে রাজধানী শহরে গিয়ে খাজার প্রথম কাজটা ছিল আন্ডার-কন্সট্রাকশন বিল্ডিঙের পিলারে, ছাতে, তক্তায় পেরেক ঠোকা। ঢালাই হবে তারপর। সৌদি আরবের সব থেকে বড় শহরের এদিক-সেদিক গিয়ে গিয়ে চলেছে কাজ। মধ্যভাগের মালভূমির উপর বিশাল বিশাল বিল্ডিং-এর পাশে আরও সব বিশাল বিশাল বিল্ডিং উঠছে। মুসলিম পাড়ার মাটির বাড়ির খাজা মণ্ডলের পায়ের তলায় তখন কেবল বালি। দিনের শেষে সেলাই করা প্যান্টের ভাঁজে ভাঁজে, শরীরের ভাঁজে ভাঁজে, বুক-পকেটে বালি আর বালি। বালি খুঁড়ে মজবুত ভাবে উঠতে লাগল পিলারের উপর পিলার। ওই শীর্ণকায় শর্ট-হাইটের খাজা মণ্ডল বেয়ে বেয়ে উঠতে লাগল উঁচু উঁচু বিল্ডিঙের বাইরে দিয়ে। কখনও সেফটি-বেল্ট বেঁধে। কখনও সব আয়োজন ছাড়াই নিজের হাত পায়ের ভরসায়। নানা সাইজের পেরেকে হাতুড়ি পেটা করলেও ঘাম বেরোয় না শরীর বেয়ে। ছোটবেলা থেকে মাঠেঘাটে কাজ করে বেড়ালেও – এমন চড়া রোদ, এমন জ্বলুনি ধরানো তাপ গায়ে লাগেনি কখনও। ঝাঁঝালো শুকনো রোদে পুড়তে থাকল খাজা মণ্ডলের চামড়া। মাসের শেষের বেতন মাসের শেষে দেওয়া বন্ধ হ’ল। ছ’মাসের বেতন বাকি রেখে হাতে দিল বাকি কয়েক মাসের বেতন। নিয়মে দাঁড়িয়ে গেল – কখনওই পুরো বেতন দেবেনা একসঙ্গে। খরচির হিসেব কড়ায় গণ্ডায় রাখল কন্ট্রাক্টর। দু’বছর-আড়াই বছর পর, বাড়ি ফেরার সময় হলে, মালিক কিছু ডিরহাম সেরকমই রেখে, দিত বাকি। কিছু দিত হাতে। কন্ট্রাক্টর বলত, আবার আসবি – তখন পাবি। এভাবে বিদেশের মালিকের কাছে পাওনা বাকি রেখে খাজা মণ্ডল সাত বছরে বাড়ি আসে দু’বার।
উপমহাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তর বাঁকগুলি মোড় নেওয়ার আখ্যান : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২২ আগস্ট ২০২১ | ৩০৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
হায়দারের উপন্যাসের পাঠক-মাত্রেই জানেন, অজস্র চরিত্র ও দ্রুতগামী ঘটনাক্রমের সাথে তাল রাখতে গেলে পাঠককে সদা সতর্ক থাকতে হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, তাদের সামাজিক অবস্থা, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরগুলির মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া – এমন অনায়াস বয়ানে বুনে চলেন, যেন এক মহানদী – যাতে এসে মিশছে শাখানদীরা, বেরিয়ে যাচ্ছে উপনদীরা, আবার ঘুরে এসে হয়ত মিশছে মূল নদীতে। এই বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও সামাজিক স্তরের চরিত্রগুলো এত নিখুঁত বিস্তারিত – তাদের প্রায় রক্ত-মাংসের মানুষের মতই অনুভব করা যায়। এই উপন্যাসে রসবোধ আর দুঃখ হাত ধরাধরি করে চলে। এক প্যারাগ্রাফ পড়ে হেসে ফেলতে না ফেলতেই, পরের প্যারাগ্রাফ প্রায় বিধ্বস্ত করে দেয়। অথচ কোথাও একটুও তাল কাটে না, একটুও আরোপিত মনে হয় না।
দেশভাগ - নাটকে যেমন এসেছে : অনুরাধা কুন্ডা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : নাটক | ২৩ আগস্ট ২০২১ | ৩৯৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
উনিশশ’ পাঁচে বঙ্গ-ভঙ্গ হয়েছিল। মামনুর রশিদের লেখা নাটক ‘ভঙ্গ বঙ্গ’। কাস্টমস আর ইমিগ্রেশনের সময়। বেনাপুল, হরিদাসপুরের কথা। স্মাগলার রাজা আর যৌনকর্মী মালিনীর কাহিনী। দেশভাগের সঙ্গেই এসেছে কাঁটাতার। বর্ডার। স্মাগলিং। মেয়েরা দেহব্যবসাতে নেমেছে। এই কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে, ঘুরে বেড়াতে চায় এক আশ্চর্য মানুষ। যদি নদীকে, বাতাসকে দু’ভাগ করা না যায়, যদি পাখি সব আকাশে ঘুরে বেড়াতে পারে, তবে মানুষ কেন পারে না? কেউ আটকাতে পারে না তাকে। সে চলে যায় সীমানা পার হয়ে। ইমিগ্রেশন আউট অব কন্ট্রোল। এইখানে যুক্ত হয় রক্তকরবীর রাজা, রঞ্জন, নন্দিনী। সেই আশ্চর্য মানুষ, নিয়মভাঙা মানুষ রক্তকরবী খুঁজছে।
দশমী দিবসে: কালান্তর বিষাদের আখ্যান : রবিন পাল
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২২ আগস্ট ২০২১ | ২৪৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বাষট্টি অধ্যায়-বিশিষ্ট ৩৩৬ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির পট উত্তোলিত হয় বীরাঙ্গনা দাসীর প্রসঙ্গায়নে। বীরাঙ্গনা নামটি আমাদের মনে পড়িয়ে দেয় মাইকেল সৃষ্ট বীরাঙ্গনা কাব্যের শকুন্তলা, তারা, রুক্মিণী, কেকয়ী, সূর্পনখা, দ্রৌপদী, ভানুমতি, দুঃশলা, জাহ্নবী, উর্বশী, জনাকে। এই বীরাঙ্গনা ওপার থেকে এপারে এসেছে, পুত্র বা কন্যার সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল; কিন্তু কলকাতা, বসিরহাট, অনায়াস যাতায়াত করেছে। তার নিরন্তর পথিক বৃত্তি, সবাইকে হাস্যমুখ করানাের চেষ্টা বিস্মিত করে। কিন্তু সাদা থান, সেমিজ, বগলে পুঁটলি নিয়ে প্রৌঢ়া কপােতাক্ষ স্বপ্নে বিভাের, মধুসূদনের রচনা, মধুজীবনী সে লােকজনকে শুনিয়ে বেড়ায়, মধুজীবন ও রচনা পাঠে বালক বৃদ্ধ সকলকে উৎসাহ জোগায়। তার এই নিরন্তর মাইকেলচর্চা নিজের ও অন্যের দুঃখ ভােলায়। ইনি নাকি মাইকেলের দৌহিত্রী, সবার কাছে মাইকেল দিদিমা। আর অসম্পৃক্ত পাঠকের কাছে বীরাঙ্গনা মাইকেল প্রসঙ্গের চারণ কবি, ফরাসী এবাদুরদের মতােই। পুত্র কোর্টের মুহুরি, মেয়ের শ্বশুর বাড়ি দিল্লিতে। পথপরিক্রমা জীবনেরই, বুড়ি বীরাঙ্গনাকে মাইকেল উদ্বুদ্ধ করে, কপােতাক্ষ তাকে দেয় স্নেহ ও বিষাদ। তবে বিরলে ছাড়া এ অনুভব জাগে না। নিরন্তর তার চোখ ছলছল করে - "কেমনে ফিরিব—হায়রে কে কবে মােরে, ফিরিব কেমনে শূন্য লঙ্কাধামে আর।' বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ-দুটোই শূন্য হয়ে গেছে তার মতে। দিদিমা অভিরামের বেলগাছিয়ার বাড়িতে প্রায়ই এসে ওঠে, যেন আপনজন। হাবুলের পাকিস্তান মানি না জেহাদ বুড়ি মানে না। চারপাশের লোককে সময়ে অসময়ে সে মধুজীবন, মধু রচনা শোনায়।
'তবু'র মধ্যে নিরন্তর দোল খায় যে 'পেন্ডুলাম' : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২২ আগস্ট ২০২১ | ২৭০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
৭৫ বছরে কিছু পাল্টায়নি, কারণ আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো অনড় হয়ে আছে ঘৃণার পাহাড়। পাল্টাতে হলে সেটাকে সরাতে হবে। দাঙ্গার আগুন আর রক্ত সত্য, সত্য মানুষের নিষ্ঠুরতা। কিন্তু তাকে পেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো 'তবু', যেগুলোর কাছে যাওয়া খুব কঠিন কাজ। কিন্তু এমন মানুষ তো বিরল নন, যারা দাঙ্গায় সর্বস্ব খুইয়েছেন, কিন্তু তবু সাম্প্রদায়িকতাকে মনে স্থান দেননি। এখনই মনে পড়ছে সদ্য প্রয়াতা সীমা দাসের কথা যাঁর আত্মজৈবনিক "দ্যাশ থেকে দেশে" বইটি প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিল। মিহির সেনগুপ্তের সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম, অমর মিত্রের দেশভাগ-বেদনার উত্তরাধিকার পড়লেই বোঝা যায় উভয় পক্ষেরই দাঙ্গা-উত্তর মানসিকতা কী হওয়া উচিত।
এই আগুন ও রক্ত আর ঐ 'তবু'র মধ্যে নিরন্তর দোল খায় যে পেন্ডুলাম তার নাম মানুষের মন। যখন সে থামে, দেখা যায় তা নিশ্চিত
হেলে আছে 'তবু'-র দিকেই।
বলপূর্বক উচ্ছেদ- বারংবার রাষ্ট্রের নিশানা হয় প্রান্তজনেরা : পার্থ সিংহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৩ আগস্ট ২০২১ | ২১২৭ বার পঠিত
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন বলপূর্বক উচ্ছেদকে মানবাধিকারের উপর জঘন্যতম আঘাত বলে অভিহিত করেছে। জবরদস্তি উচ্ছেদ শুধু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদকেই লঙ্ঘন করে না, এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিপত্র, শিশু অধিকারের নীতি, নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের অবসানের নীতি, জাতিগত বৈষম্যের অবসানের নীতিসহ একাধিক নীতিকেও লঙ্ঘন করে।....
– এমনই বিপন্ন সময়ে প্রায় অলক্ষ্যে হরিয়ানা সরকার অকথ্য অত্যাচারে উচ্ছেদ করল খোরিগাঁও-এর লক্ষাধিক গরিব মানুষকে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক ছিল – দরিদ্র মানুষের প্রতি দেশের শীর্ষ আদালতের চূড়ান্ত হৃদয়হীন এবং বৈষম্যমূলক আচরণ। জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে অল্পই জায়গা পেয়েছে এ হেন ব্যাপক রাষ্ট্রীয় উৎখাত। দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক বৃত্তেও তেমন গুরুত্ব পায়নি প্রান্তবাসী বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর উপর ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রের এই নৃশংসতা।
মার্কিনি ঠিকাদারি ও তালিবানি তান্ডব : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৩ আগস্ট ২০২১ | ২৪৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আফগানরা স্বাধীনচেতা জাতি। ব্রিটিশরাও তাঁদের পুরোপুরি পদানত করতে পারেনি। তারা ব্রিটিশদের রক্ষাধীন ছিল, প্রটেক্টোরেট। গত চার দশকে মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই তাঁদের কব্জা করতে পারেনি। দেশটা জ্ঞাতি ও উপজাতি রেষারেষি ও দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ। দেশের বিভিন্ন পকেটে, দুর্গম অঞ্চলে যুদ্ধবাজ সামন্তসর্দারদের সার্বিক আধিপত্য, যেখানে ধর্মের চেয়েও নিজের ক্ল্যান বা উপজাতির প্রতি আনুগত্যই ছিল প্রধান। আশির দশক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ানকে আটকানোর জন্য উগ্র ধর্মান্ধ সৌদি জঙ্গিদের মাধ্যমে আমেরিকানরা প্রথম এখানে ধর্মীয় মৌলবাদ রফতানি করে। আজকের তালিবানি উত্থান সেই নীতিরই বিষফল। এটা নিশ্চিত যে তালিবানিরা পালটাবে না। প্রতিদিন মধ্যযুগীয় বর্বরতার নতুন সব নমুনা প্রকাশ্যে আসছে। কিছু অসমসাহসী মহিলা এবং সামান্য কিছু জায়গায় সর্দারদের মিলিশিয়া প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। এটা চলবে, কারণ আফগানিস্তান এমন একটা দেশ যেখানে যুদ্ধ চিরন্তন। একটাই রাস্তা, আফগানদের তাঁদের নিজেদের মতো থাকতে দেওয়া হোক। হয়তো তাতে আফগানিস্তান আগামী দিনে সৌদি আরবের মতো একটা ‘সভ্য’, ‘আধুনিক’ (যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার জন্য কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করতে হয়) মৌলবাদী দেশ হয়ে উঠতে পারবে। ইতিহাস বারবার শিক্ষা দিচ্ছে যে বহিরাগত শক্তি সেখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে শুধুমাত্র হিতে বিপরীতই হবে।
তালিবানি দখল এবং RAWA র প্রতিক্রিয়া : সাক্ষাতকার- সোনালী কোলাৎকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৫ আগস্ট ২০২১ | ৩১৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
নারী অধিকার”, “গণতন্ত্র”, “জাতির গঠন” এগুলি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর লক্ষ্য ছিল, এসব কথা আফগানিস্তানে ঠাট্টারই নামান্তর! আমেরিকা আফগানিস্তানে এসেছিল এই অঞ্চলের স্থিতি বিঘ্নিত করে একে সন্ত্রাসবাদের মুক্ত-ভূমিতে পরিণত করার মাধ্যমে এর আশেপাশে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলির, বিশেষত চিন এবং রাশিয়াকে ঘিরে ধরার পাশাপাশি এই অঞ্চলের স্থানীয় অর্থনীতিকে ছিবড়ে করে শুষে নেবার লক্ষ্য নিয়ে। অবশ্যই এরকম ভাবার কোন কারণ নেই যে মার্কিন সরকার নিজেদের বাহিনীর এরকম লজ্জাজনক অপসারণ চেয়েছিল, যার ফলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আবার মার্কিন বাহিনীকে ফিরে আসতে হল বিমানবন্দরগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যাতে তাদের আমলা এবং অন্যান্য কর্মীদের নিরাপদে বার করে নিয়ে যাওয়া যায়।
আমরা বিশ্বাস করি, আমেরিকা আফগানিস্তান ছেড়ে গেছে তাদের তৈরি পশুদের (তালিবান) কাছে পরাজিত হয়ে নয়, ফিরেছে তাদের নিজস্ব দুর্বলতার কারণে। এই অপসারণের দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে বলে আমরা মনে করি।
চাষার ভোজন দর্শন – ৯ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৬ আগস্ট ২০২১ | ৪৭৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
আজকাল আমি পারতপক্ষে ব্যুফে (বা বাফে, যেমন বলবেন)–তে খাওয়া দাওয়া এড়িয়ে চলি। এর প্রধান কারণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারা। ভাবুন একবার, কেউ বলল - যাই খাও বা যতটা পরিমাণেই খাও না কেন, বিলের পরিমাণ একই! এই প্রলোভন জয় করা – আমি তো ক্ষুদ্র মনুষ্য, বড় বড় মহাপুরুষের মানসিক জোরে কুলায় না। বহু সচেতন পাবলিক দেখেছি, যারা, এমনিতে যাকে বলে পুষ্টি এবং ক্যালোরি, হিসেব করে খায় – কিন্তু ব্যুফে-তে গিয়ে অন্য মানুষ হয়ে ওঠে। আমারও প্রায় অনুরূপ অবস্থা, ভিতর থেকে একটা কম্পিটিটেটিভ মনোভাব চাড়া দিয়ে ওঠে। ও খাচ্ছে আর আমি পারব না! বা পয়সা যখন দিয়েছি, তখন খেয়ে শোধ তুলতে হবে – এই চক্করে পড়ে মাঝে মাঝে এত খেয়ে ফেলেছি যে শেষে টেবিল থেকে ওঠার অবস্থা থাকে না!
বিনি সুতোর বাঁধন! একটি নাগরিক কল্পনা : তুহিনাংশু মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৫ আগস্ট ২০২১ | ২১৪২ বার পঠিত
আমরা খুঁজে পাই আমাদের চরিত্রদের, না তারা কোন অভিজাত শহরের উচ্চ মধ্যবিত্ত নয়, নয় কোন অলীক রূপকথার নায়ক নায়িকা কিংবা রহস্যময়ী কোন অতি-মানবী। আমরা দেখতে পাই তারা নেহাতই ছাপোষা জীবনের মালিক। ব্যক্তিগত কিছু কথাবার্তা চলে, দুটি চরিত্রের ভেতর আমরা দর্শক একটু একটু করে ঢুকি। ছবির এই অংশে ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং জয়া আহসান উভয়ের অভিনয় যথাযথ, চিত্রগ্রহণ ও মোটামুটি ভাবে সাবেকি, যেন অতি পরিচিত বিষয় আমরা দেখতে পাই অতি সহজে ভাবেই। ছবির আসন্ন ভবিষ্যতের জন্য, পরিচালকের লুকোনো তাসে ট্রাম্প করার প্রয়োজনে যে এ এক প্রস্তুতি চাল, তা দর্শক হিসাবে আমরা ধরতে পারিনা। এর কিছু মুহূর্ত পর আমরা যখন তাদের নতুন ভাবে আবিষ্কার করা শুরু করি, আমরা বুঝি যে সহজ সরল ভঙ্গির বহিঃ কাঠামোয় লেখক তথা পরিচালক আসলে হাঁটতে চান শহুরে মনস্তত্ত্বের জটিল সারণি ধরে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৬ আগস্ট ২০২১ | ২০৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ত্রয়োদশ শতকের প্রাচীন শহর কাওলের ধ্বংসাবশেষ। একেই সম্ভবত স্ট্যানলে দুর্গ বলছেন
এমবুয়ামাজি থেকে প্রায় ষাট মাইল দক্ষিণে, মাফিয়া বা মনফিয়া দ্বীপের বিপরীতে রুফিজি নদীর সবচেয়ে উত্তরের মুখ: এর থেকে আরও এক ডিগ্রি দক্ষিণে গেলে পড়বে কিলওয়ার বিখ্যাত বন্দর, দাস ব্যবসায়ীদের বিখ্যাত আড়ত। মৃমা নামের এই ভূখণ্ডটি সভ্য বিশ্বের দৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আজকের দিনে যখন দাসেদের প্রশ্নটি বহু উত্তেজিত আলোচনার কেন্দ্রে, তখন আমাদের সকল মনোযোগ এখানেই প্রবলভাবে জড়ো হওয়ার দরকার। আমাদের কাছে এই অঞ্চলের গুরুত্ব তার বন্দরগুলির কারণে – মোম্বাসা, বুয়েনি, সাদানি, হুইন্ডে, বাগামোয়ো, কাওলে, কনডুচি, দার সালাম, এমবুয়ামাজি ও কিলওয়া – আফ্রিকার অভ্যন্তরে ধরে আনা, চুরি করে আনা বা কেনা দাসেদের তিন-চতুর্থাংশ এখান থেকেই বিদেশে পাঠানো হয়। এই কথাটা মনে রাখা উচিত।
দুই গেঁয়ো যোগীর কথা : মাধব চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৭ আগস্ট ২০২১ | ৩৫৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বনগাঁয়, উদ্বাস্তু-শিবিরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কলেরার প্রাদুর্ভাব। স্যালাইনের জোগান যথেষ্ট না হওয়ায় মুত্যু-মিছিল। একসময় দেখা গেল, মোট আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩০%। বনগাঁ উদ্বাস্তু-শিবিরে এইসময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পাঠানো হল ডা. দিলীপ মহলানবিশকে....
কলেরার জীবাণু দূষিত জল আর খাবার দিয়ে শরীরে ঢোকে আর বংশবৃদ্ধি করে এক বিষাক্ত রাসায়নিক তৈরি করে, যার প্রভাবে রোগী উদরাময়ে আক্রান্ত হয়। কলেরার জীবাণুর আবিষ্কারক জার্মান বিজ্ঞানী ডা রবার্ট কখ (১৮৪৩-১৯১০) পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, এই পদার্থ আমাদের অন্ত্র থেকে শোষিত হয়ে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। ডা. শম্ভুনাথ দে অত্যন্ত সরল এক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রমাণ করেন, কলেরার জীবাণু-নিঃসৃত বিষাক্ত পদার্থ জীবাণু-কোষের বাইরে চলে আসে এবং রোগের যাবতীয় লক্ষণ সৃষ্টি করে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে থেকেই....
আমার ক্ষোভের সীমা ছিল না, যখন ব্যক্তিগত আগ্রহে তাঁর অবদান সম্বন্ধে বইপত্র ঘাঁটতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, যে-শহরে আমার বাড়ি, সেই শহরেরই এক কোণে তিনি থাকতেন-
দুই গেঁয়ো যোগীর গল্প ....
উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী – কালাজ্বর, ইউরিয়া স্টিবামিন এবং আমাদের সামাজিক বিস্মৃতি : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৭ আগস্ট ২০২১ | ৬২৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
যাঁরা ব্রহ্মচারীর মতো জীবন যাপন করেন, তাঁদের উপাধি হয় ব্রহ্মচারী। একটি কম সমর্থিত মত হল, যে কেশবচন্দ্র ভারতী শ্রীচৈতন্যদেবকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা দেন। তাঁর বড়দাদা গোপালচন্দ্র ভারতী দীক্ষার পরে নিজেদের মুখোপাধ্যায় উপাধি ত্যাগ করে ব্রহ্মচারী উপাধি গ্রহণ করেন। এদের নবম বা দশম বংশধর হচ্ছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।
এক অনন্যসাধারণ মেধার অধিকারী এই মানুষটির গ্র্যাজুয়েশন ১৮৯৩ সালে হুগলি মহসিন কলেজ থেকে – অংক এবং কেমিস্ট্রি নিয়ে ডাবল অনার্স, Thysetes মেডেল পান। এরপরে ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে এমএ পাশ, সাথে গ্রিফিথ মেমোরিয়াল প্রাইজ। একই সময়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এলএমএস ডিগ্রি পান ১৮৯৯ সালে। ১৯০০ সালে এমবি ডিগ্রি – মেডিসিন এবং সার্জারি দু’টিতেই প্রথম হয়ে গুডিভ এবং ম্যাকলিওডস মেডেল পান। ১৯০২ সালে এমডি পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরে ১৯০৪ সালে পিএইচডি অর্জন। বিষয় ছিল “Studies on Haemolysis”। তাঁর পিএইচডির থিসিসের সংক্ষিপ্ত এবং উন্নত চেহারার নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় বায়োকেমিক্যাল জার্নাল-এ ১৯০৯ সালে “Some Observations on the Haemolysis of Blood by Hyposmotic and Hyperosmotic Solutions of Sodium Chloride” শিরোনামে। এছাড়াও ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে Mente মেডেল এবং এশিয়াটিক সোসাইটির উইলিয়াম জোন্স মেডেল লাভ করেন।
পরবর্তী সময়ে প্রায় সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে গবেষণার নির্ভুল লক্ষ্যে। প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার, ল্যান্সেট, ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, বায়োকেমিক্যাল জার্নাল, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এর মতো জার্নালগুলোতে।
সেদিনই রাতে বৌদির ফুলশয্যা : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৮ আগস্ট ২০২১ | ২৪৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
দুর্যোগ কেটে গেলে পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে কারও কারও কথায় অভিমান ঝরে পড়ত, ‘সে দিন আমি এত করে যেতে চাইলাম, তোমরা রাজি হলে না৷' কেউ বলতেন, ‘রাতবিরেতে দরকার হলে আমায় ডেকো৷ রাতে আমি তো জেগেই থাকি। এক দিন না হয় হাসপাতালে বা শ্মশানে রাত জাগব।' তেমন একজনকে এক দিন বললাম, ‘কাকু, আপনাকে তো ফার্স্ট ট্রেনে অফিস ছুটতে হয়৷ আপনি কী করে হাসপাতালে রাত কাটাবেন!’ দার্শনিকসুলভ জবাব এল, ‘জীবনটা অফিস আর বাড়িতেই থমকে আছে বুঝলি৷ মাঝেমধ্যে রুটিন বদল করা ভালো৷ একটু হাসপাতাল-টাসপাতাল গেলে মন্দ কী?’
বৃত্তরৈখিক (৪৯) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ আগস্ট ২০২১ | ১৮১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সকাল নটা নাগাদ জলখাবার। চানটান করে তৈরি হয়ে ডাইনিং হলের দিকে যেতে গিয়ে জয়মালিকাকে দেখতে পায় সোমেশ্বর আর সম্ভৃতা, নিজের ঘরের বাইরের বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে সে। গূড মর্ণিং, বলে সম্ভৃতা এগিয়ে যায়, তার পেছনেই সোমেশ্বর। জয়মালিকার ঘরের পাশের ঘরটায় একটা জানলা আছে, যেটা খোলে বারান্দাটায়। সেই জানলার সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্কুলের বড়ো ছেলেমেয়েরা, হোস্টেলে যারা থাকে, সবাই। ছেলেমেয়েরা ওদের চেনে, আগে কয়েকবার আসায় দেখা হয়েছে ওদের সাথে। দেখা হতেই বলে, গূড মর্ণিং স্যর, গূড মর্ণিং ম্যাডাম। কী ব্যাপার, লাইন কিসের? – জিজ্ঞেস করে সোমেশ্বর।
বৃত্তরৈখিক (৫০) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৪৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
প্রতুল বাবু বলেন, ঠিক রুটিন কিছু নেই সোমদা, আপনি আর সোমদি যে যে ক্লাসে পড়াতে চান, চলে যান। তারপর আমি আর মুজফ্ফর যাবো। ইংরিজি প্রায় পড়ানোই হয়নি কখনো, যে দুয়েকজন একটু-আধটুও জানে তাদের মুজফ্ফর আর আমি আলাদা করে ক্লাসের বাইরে গাইড করার চেষ্টা করেছি। বাকিরা কিছুই জানে না প্রায়। বাংলার অবস্থাও খুবই খারাপ, তবে বোধ হয় ইংরিজির মতো অতটা নয়। ক্লাস ওয়ানে রাজীবই যাক, ওটা ও-ই ম্যানেজ করতে পারে ভালো।
বৃত্তরৈখিক (৫১) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আগস্টের শেষে যখন তিন-চারদিনের জন্যে কলকাতায় গেলো সোমেশ্বররা, ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনদের এই উপলব্ধির কথাই বললো ওরা। অতল দারিদ্রসীমারও নীচের মানুষ যারা, তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে এসে পড়াতে গেলে – এবং তা-ও সরকারি সাহায্য ছাড়া – হয়তো জয়মালিকা সেনের রাস্তাই ঠিক ঠিক রাস্তা, এই পথে চলতে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াবে সহজ-খ্যাতির যে চোরাগলিগুলো, সেগুলোকে অতিক্রম করাই এখন সাধনা ওদের। যে ছেলেমেয়েদের কাছাকাছি পৌঁছোবার ক্ষমতাই ছিলো না ওদের, জয়মালিকা সেন তাদের কাছাকাছি আসার সুযোগ তো কোরে দিয়েছেন, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতেই হবে।
বৃত্তরৈখিক (৫২) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
অস্বস্তিকর নীরবতাটা ভাঙাতেই বোধ হয় কবিদের মধ্যে একজন বলে ওঠে, আচ্ছা জয়মালিকাদি, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে? আমরা তো অনেকদিন ধরেই আসছি এখানে, দুটো পরিবর্তন খুব চোখে পড়ে আজকাল। প্রথমটা হলো আপনার রুচির পরিবর্তন। আমরা বরাবর দেখেছি আপনি মাছ-মাংস ভালোবাসতেন, বিশেষ কোরে খাসির মাংস। এখানে খাসির মাংস ভালো পাওয়া যায় না, কতোবার বেড়াতে বেড়াতে কোন গ্রামের হাটে ভালো মাংস দেখে আমরাই নিয়ে এসেছি আপনার জন্যে, মনে আছে? অথচ এখন সেই আপনিই মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, এটা কেন? আর দ্বিতীয় যে পরিবর্তন সেটা তো একেবারে মূলে।
চাষার ভোজন দর্শন – ১০ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩২৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আমাদের বাঙলার রাজা লক্ষণ সেনের (শুনেছি বখতিয়ার খিলজি যখন বাঙলা আক্রমণ করেন, তখন লক্ষণ সেন নাকি বসে ভাত খাচ্ছিলেন – আক্রমণের খবর শুনে হাত না আঁচিয়েই ঘোড়ায় চড়ে পিছনের দরজা দিয়ে হাওয়া!) মত এই খেমাই রাজাদেরও প্রধান এবং প্রিয় খাদ্য ছিল ভাত – সাথে মেকং এবং টোনলে-স্যাপ নদীর মাছ, গেঁড়ি-গুগলি-শামুক-ঝিনুক, একদম টাটকা ধরা। ট্রাডিশ্যানাল খেমাই ক্যুজিনের প্রধান ডিশগুলি ছিল – স্যুপ, স্যালাড, একটা মাছের কোর্স, একটা মাংসের ডিশ, শাকসবজি এবং ভাত। মুখে জল আনা নানা রকমের সস বানাতে ছিল এরা প্রসিদ্ধ – আর খাবারে নানাবিধ মশলা এবং সুগন্ধি ইনফিউজ করার চেষ্টা করত। আর একটা কথা, কাম্বোডিয়ার রান্না বান্নায় রসুন কিন্তু বেশ দিল খুলে ব্যবহার করা হয়। শেষ পাতের মিষ্টি বলতে তা ছিল ফলমূল এবং নারকেল থেকে বানানো। সব মিলিয়ে বেশ জমকালো ব্যাপার।
পুরুষার্থ (১১) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০২১ বার পঠিত
প্লেন একটু একটু করে রাতের আকাশে উঠল। আজ পূর্ণিমা। রাত্রি আটটার ধূসর কমলা রঙের একথালা চাঁদ আকাশে! তলায় দেখতে পেল, সমুদ্রের পাড় দেখা যাচ্ছে, আর আলো-অন্ধকারের বিন্যাসটা দেখে ব্যাকওয়াটারের অস্তিত্বটাও বোঝা যাচ্ছে। সমুদ্র আর ব্যাকওয়াটারের মাঝে কত কত গ্রাম। কোনও একটা গ্রাম হয়তো কুজিপল্লি। তলার কোনও একটা বিচে শুয়ে আছে সে আর সারথি! বালির মধ্যে থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে কুড়িয়ে সে মালা গাঁথছে একের পর এক, আর পড়িয়ে দিচ্ছে সারথির বুকের উপর। পূর্ণিমার চাঁদে জল চকচক করছে, সেই জলে ওরা ভেসে বেড়াচ্ছে – না, শান্ত তুঙ্গভদ্রা নদীর কোরাকল ভেলা নয়, দোল খাওয়া সমুদ্রের মাঝে মেছো নৌকায়। প্রতিবারই সারথি তার হাতে একটা জিনিস তুলে দেয়, কল্পনার রসদ, নতুন নতুন কল্পনার রসদ। কল্পনা কল্পনাই, কল্পনা সারথির মতনই মিথ্যা বলে, কল্পনা সারথির মতনই মন ভোলানো গল্প বলে, কল্পনাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে!
ফিট আছি হে.. : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ৩১ আগস্ট ২০২১ | ৩৫১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কয়েকবছর হল, জীবনের দুটো নিয়ন্ত্রককে আমরা বরণ করে নিয়েছি বেশ। প্রথমটা ছোট্ট একটা স্ক্রিন বসানো রবারের ব্যান্ড। কব্জিতে তা এঁটে রাখতে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, স্নান করার সময়ও খোলা নিষ্প্রয়োজন। পোশাকি নাম ফিটনেস ট্র্যাকার। আপনার চলন, শয়ন, স্বপন-বপন সব কিছু সেই ১৫ গ্রামের ছোট্ট ডিভাইস মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। স্মার্ট ফোনের লেজুড় হয়ে কল, এসএমএস, হোয়্যাটসঅ্যাপের নোটিফিকেশন তো পাঠাবেই, ডায়ালের তলায় রাখা ইনফ্রারেড আলো আপনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপবে, হৃৎস্পন্দন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে।
আফগানিস্তান রুমিরও জন্মভূমি : পলাশ পাল
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৫০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
বাস্তবিক, কুড়ি বছর আগে, ২০০১ সালে আমেরিকা ও যৌথবাহিনী যখন তালিবান ও আল-কায়দাকে ধ্বংস করতে আফগানিস্তান অভিযান চালিয়েছিল, তারা এমন একটি ভাব করেছিল যেন শুধুমাত্র তালিবানদের উৎখাত করাই নয়, ‘রক্ষণশীল’ আফগান সমাজের আধুনিকীকরণ এবং সেখানকার নারীদের রাতারাতি পশ্চিমী নারীতে পরিণত করাই তাদের অগ্রাধিকার। সেই সঙ্গে একটি মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি পশ্চিমী ধাঁচের উদার গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে শান্তি ও প্রগতির পতাকা তুলে ধরাও ছিল তাদের প্রতিশ্রুতির তালিকায়। কিন্তু গত দুই দশকে যে-সব ছবি উঠে এসেছে, তাতে এ-কথা আজ স্পষ্ট যে, শান্তি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বা উন্নয়ন কোনটাই তাদের লক্ষ্য ছিল না। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পরে পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে, রাশিয়া, চীন ও ইরান— মার্কিন সাম্রাজ্যের প্রতিস্পর্ধী এই দেশগুলির চারপাশে একটি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি তৈরি করাই ছিল আফগানিস্তান দখলের প্রধান উদ্দেশ্য।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৬১৪ বার পঠিত
কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি যে সাদা মানুষেরা এখানকার লোকদের 'মুলুঙ্গু' বা আকাশের দেবতার ভাষা শেখাচ্ছে, তাদের কিভাবে ফসল বপন করতে হয় বা ফসল কাটতে হয় বা বাড়ি বানাতে হয় তা শেখাচ্ছে , শেখাচ্ছে কিভাবে আরও স্বচ্ছন্দে থাকা যায়— মোদ্দা কথা, তাদের সভ্য করে তুলছে। আর পুরোন কাদেতমারের লোকরা সেই দেখে খুশিতে হাত ঘষছে। তবে কিনা সফল হতে গেলে, একজন নাবিককে যেমন দড়িদড়া সামলানো, পাল গোটানো থেকে হাল ধরা অবধি নৌকা চালানোর সব গুণই রপ্ত করতে হয়, মিশনারিকেও তেমন নিজের সব কাজেই পটু হবে। নরম-সরম মেয়েলি মানুষ হলে চলবে না, জার্নাল-লিখিয়ে বা ঝগড়ুটে তার্কিকও চলবে না, রেশমী-পোশাক-প্রিয় পাদ্রী হলেও হবে না— প্রভুর বাগানের একজন উদ্যমী পুরোদস্তুর শ্রমিক হতে হবে তাঁকে – যেন ডেভিড লিভিংস্টোন বা রবার্ট মোফ্যাটের ছাঁচে গড়া।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৪৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বাগামায়ো ও উসেগুহহার সিম্বামওয়েন্নির মধ্যে আমাদের অভিযান সর্বোচ্চ যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, সেটা হাজার ফুটের বেশি হবে না, আর কিঙ্গারু হেরার উত্তরে, দিলিমা শীর্ষ নামে যে পাহাড়গুলো পরিচিত, এখানে ওখানে তাদের একেকটা পাহাড়চূড়া বাদ দিলে, মিকেসেহের আশেপাশে ভূমি কিন্তু ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠেছে। টানা সমান্তরাল ঢেউ এর মত, পাহাড়ের শিরগুলো গভীর জঙ্গল বা মসৃণ ঘাসে ঢাকা— ঢালগুলো সুচারুভাবে পশ্চিমদিকে তরঙ্গের তলদেশের গভীরে নেমে যাচ্ছে, এর মধ্যে দিয়েই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে জল বয়ে গিয়ে উঙ্গেরেঙ্গেরিতে পড়ে।
ইহুদি রসিকতা ১২: ওষুধে ডাক্তারে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩১৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
রোগ থেকে আরোগ্যের এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণের পরাকাষ্ঠা শুনে ডাক্তার হ্যারিস মৃদু হাসলেন। বললেন, ‘আপনাদের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে শুধু নয়, স্নান সবার পক্ষেই একটি আবশ্যিক প্রাত্যহিক অনুষ্ঠান। তবে ইহুদিদের কাছে নয়! তাদের একটা ঐতিহাসিক জলাতঙ্ক আছে! আমি যদি রুগীকে স্নান করতে বলি, সে খুব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করবে, স্নান করতে হবে কেন? আমার অসুখটা কি এতোই কঠিন?’
এ নিয়ে গল্পের শেষ নেই ।
কারলসবাদ (কারলোভি ভারি, আজকের চেক)
সেখানে মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে খনিজ জল। জলের দ্বারা স্বাস্থ্য – সানুস পের আকুয়াম । এস পি এ - স্পা !
ইলান গেছে জল চিকিৎসার টিকিট কাটতে ।
কাউন্টারের মহিলা : একটা কেন, একসঙ্গে যদি বারোটা টিকিট কাটেন, সস্তা হবে। এগারোটার দামে বারোটা পাবেন ।
ইলান (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ) : আমি কি আর বারো বছর বাঁচবো ?
মহামারীর মদিরা ও বাঙালির নৈতিকতা : অর্যমা ঘোষ, শুভদীপ মন্ডল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩৬৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
এই মদ্যপান নিয়ে বাঙালির নৈতিক দ্বন্দ্বের ইতিহাস বড় পুরাতন। মূলধারার সাথে অস্ফুট লোকাচারের পার্থক্য তো ছিলই; কিন্তু মূল সুর ছিল সহাবস্থানের। কথিত আছে, একবার শাক্ত সাধক কমলাকান্তকে মদ্যপান করতে দেখলে, বর্ধমানরাজ তেজচন্দ্র তিরস্কার করেন। প্রত্যুত্তরে মাতৃভক্ত কমলাকান্ত মদ্যকে দুগ্ধে পরিণত করে সেই দুধে দেবীপ্রতিমার পূজা করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রতিভূ তেজচন্দ্রের কাছে যা অনৈতিক, সাধক কমলাকান্তের কাছে তা নয়। ভারতীয় লোকাচারের ঊর্ধ্বে থাকা সাধক সামাজিক নিয়মনীতির অধীন নন। কমলাকান্তের মতই, সাধক রামপ্রসাদও মদ্যপান করতেন। পণ্ডিতসমাজের প্রধান কুমারহট্ট এ নিয়ে তাঁকে তিরস্কার করলে, রামপ্রসাদ বলতেন, “সুরাপান করিনা আমি / সুধা খাই জয় কালী বলে”। কিন্তু সব প্রেমিক যেমন দেবদাস নয়, সকল মদ্যপই রামপ্রসাদ নয়। শাক্তমতে গুহ্যসাধন-ক্রিয়ায় মদ্যপানের যে রীতি, তা প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ না হওয়াটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ‘প্রাত্যহিক জীবন’ তো কোন সমসত্ত্ব ধারণা নয়, বরং তা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন। একদিকে প্রাক-ঔপনিবেশিক বঙ্গীয় উচ্চবর্গ যেমন পারতপক্ষে মদ্যপান এড়িয়ে চলেছে, মঙ্গলকাব্যের অন্ত্যজ শ্রেণি অবশ্য শুঁড়িখানায় ক্রমাগত ভিড় জমিয়ে গেছে। তাই মদের বিচারেই বাঙালি অনেক আগেই ‘আমরা-ওরা’-র ব্যবধান তৈরি করে ফেলেছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৪৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আমাদের পদযাত্রা এবং অভিজ্ঞতার দৈনন্দিন বিবরণীতে পথচলার সময় সে দেশের প্রকৃতি যেমন ভাবে আমাদের চোখে ধরা দিয়েছে তার একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। ঘোর মাসিকার মরশুমে আমরা উপকূল এলাকা দিয়ে গিয়েছিলাম। বর্ষাকাল যত গড়ায়, আমরাও ঘাসের উপর বৃষ্টির প্রভাব লক্ষ্য করতে থাকি।
মাসিকা ঋতু শুরুর সময়ে কদাচিৎ হাঁটুর উপরে ঘাস দেখা যেত; কিন্তু বর্ষার শেষের দিকে, তারা লকলকিয়ে পুরো বেড়ে উঠেছে। বর্ষাশেষের মাসখানেক পরে, ঘাসেরা যখন বেশ রোদে ভাজা ভাজা হয়ে যায়, তখন দেশীয়রা ঘাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, আর এর পরের দিনগুলোতে সারা দেশে শুধু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শব্দ শোনা যায়, কাল ধোঁয়ার ঘন আস্তরণে দেশ ঢেকে যায়, এমনকি ধোঁয়ার থেকে রং ধার করে আকাশও কাল হয়ে যায়।
তাপবিদ্যুৎ বাড়ছে না, পরমাণু বিদ্যুৎও তাই (দ্বিতীয় কিস্তি) : প্রদীপ দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৪৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পরমাণু বিদ্যুৎশিল্পের এখন হতচকিত অবস্থা। চিন, ভারত, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশে যে পরমাণু বিদ্যুতের প্রসার নিয়ে কথা হয় তার আসল কারণ এইসব দেশ হয় পরমাণু অস্ত্রধারী, অথবা তা হতে চায় .... তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিপদ, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা, তেজস্ক্রিয় বর্জ্যপদার্থের সমস্যা, চুল্লির ডিকমিশনিং নিয়ে রাষ্ট্রের দুশ্চিন্তা তেমন নেই। এসব দুশ্চিন্তা প্রতিবাদীদের এবং তার জন্য পরমাণু রাষ্ট্রের মত বদল হয় না। খরচ বেশি, প্রযুক্তিগত প্রতিকূলতা বেশি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি সস্তা – এই তিন কারণেই পরমাণু বিদ্যুতের প্রসার বন্ধ হয়ে গেছে .... বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রায় কিছুই কমেনি .... অন্য বছরের মত এ বছরও বিশ্বে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ,ঝড়, বন্যা, দাবানল ও অন্য্যান্য বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। এ বছর জার্মানি ও বেলজিয়ামের বন্যায় দুশ’র বেশি মানুষ মারা গেছে – যা কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না।
সিরিয়াস রামগরুড়ের ছানাদের জন্য নয় : সুজন দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
বুদ্ধিদীপ্ত বেজায় মজাদার একটি বই যেখানে কল্পনা, বাস্তব, রহস্য আর খ্যাপামি দিব্যি মাখামাখি হয়ে বসে আছে!
পড়তে পড়তে মনে পড়ে যাচ্ছিল লীলা মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, শিবরাম, জেমস থারবারকে...
কিন্তু ওইটুকুই, বাস্তবে স্টাইলটা লেখিকার একান্তই নিজস্ব। আমি বলি কি, ভূমিকা পড়ে সময় নষ্ট করবেন না; ঝাঁপিয়ে পড়ুন মূল বইয়ের পাতায়।
একটা সতর্কবার্তা – সিরিয়াস রামগরুড়ের ছানাদের জন্য এই বই নয়।'
ফুরায় না তো তোমায় পাওয়া : রেশমী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এই হচ্ছেন কুমুদি! সেই প্রথম আলাপের দিন থেকে শুরু, তারপরেও বহুবার দেখা হয়েছে বিভিন্ন আড্ডায়, আর বারবার দেখেছি আমরা সবাই যখন আড্ডা-হা-হা-হি-হি তে মশগুল হয়ে যেতাম, কুমুদি বরাবর ওই নরম গলায় আমাদের কর্তব্য-কর্ম মনে করিয়ে দিতেন, যদিও গুরুজনসুলভ হম্বিতম্বির লেশমাত্র দেখিনি কখনো। নারী-স্বাধীনতা নিয়ে গুরুগম্ভীর কথাও বলতেন না কখনো, নিজের কৃতিত্বও ঢাক পিটিয়ে বলেননি কখনো – কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে, সংসার, গবেষণা, লেখালেখি ... এই প্রবাসে একা হাতে কত কী-ই না সামলেছেন! কোথাও কোনও মেয়ের কৃতিত্ব দেখলে বা অন্য কারুর কাছে শুনলেও কী অপরিসীম খুশি হতেন। মনে আছে ... ছন্দা গায়েন যখন হিমালয়ের বুকে হারিয়ে গেল চিরতরে, তা নিয়ে ভাটিয়ালির পাতাতে কুমুদির লেখায় যে হাহাকার দেখেছি, তা একেবারে মনের গভীর থেকে উঠে আসা, কোন কৃত্রিমতা ছিলনা তাতে।
কুমুদি, কেবলী, জয়ন্তী অধিকারী : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৬১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এ নয়, কুমুদি, অর্থাৎ জয়ন্তী অধিকারি, কেবল কেবলির কথাই লিখেছেন। আসলে তো তিনি কেমিস্ট্রির পন্ডিত। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। রীতিমতো গম্ভীর প্রবন্ধও লিখেছেন বিস্তর। গুরুতেই লিখেছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারি, কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে নিয়ে। কিন্তু তিনি এমনই কেবলিময়, যে, চোখে দেখার আগে, এসব বিশ্বাস করা ছিল কঠিন। যেমন কঠিন ছিল বিশ্বাস করা, যে, কুমুদি আর নেই। জলজ্যান্ত জয়ন্তী অধিকারি হঠাৎই একদিন দিল্লি শহরে নেই হয়ে গেলেন। দিল্লি শহর দাঁড়িয়ে রইল শুধু খটখটে কুতুবমিনারকে নিয়ে।
যিনি গেলেন, তিনি অবশ্য ডঃ জয়ন্তী অধিকারি। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। কেবলি তো অজর অমর অক্ষয়। তার মৃত্যু নেই। নামে কেবলি হলেও আসলে যে স্মার্ট, স্কলারশিপ পেয়ে রিসার্চ করে। কটকট করে কথার উত্তরও দেয়। সত্তরের দশকের সবুজ শাড়ি পরা সেই মেয়েটি কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের পাশ দিয়ে এখনও তো হেঁটেই যাচ্ছে, সবুজ শাড়ি পরেই। অবিকল একই রকম ভঙ্গীতে।
আমি কুমুর প্রেমে পড়েছিলাম : অরণ্য
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আমি কুমুর প্রেমে পড়েছিলাম। শুধু আমি নয়, আমরা সবাই, যারা গুরুতে লিখতাম, গল্প করতাম, ২০০৯ ও তার পরবর্তী কিছু বছর।
কী ইচ্ছে ছিল, দিল্লী যাব, সামাসামনি আড্ডা মারব, অনেক অনেক ক্ষণ। তা হল না, গুরুতে আড্ডার স্মৃতি-ই রয়ে গেল। অমন বন্ধু আর হয় না।
কুমু-র লেখা ছিল মজাদার, রসে টইটম্বুর। মজার আড়ালে থাকত এক প্রীতিময়, মানবিক মুখ, স্নেহার্দ্র, ভালবাসায় জরজর - মানুষের ওপর বিশ্বাস ছিল অটল। মন খারাপের দিনে, বহু আঘাতে রক্তাত্ত সময়ে, ওর লেখা বিশল্যকরণীর কাজ করত
জাদুগর, জাদুগর : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
২০১৯ র দিল্লি বইমেলাতে কুমুদির এতাবৎ প্রকাশিত লেখাগুলোর থেকে কিছু লেখা একসঙ্গে করে একটা বই বেরোল। কুমুদির রোমহর্ষক গল্পসমূহ। গুরুচন্ডা৯-র থেকেই। এই বইতে সব গল্পই অতি প্রিয়। আর বইটা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমার ইচ্ছে করে পুরো বইটাই কোটেশন হিসেবে তুলে দেই। গল্পগুলো মানে প্লটগুলো মজাদার তো বটে, কিন্তু প্লটের অন্তর্নিহিত মজা আর চরিত্র বর্ণন কুমুদির অননুকরণীয় সরস বর্ণনায় যে কোথায় উঠে গেছে তা আর কি বলব। ই যেমন ধরুন না সাইকেল চালাতে শেখার গল্পটাই – প্রথম সাইকেল চালাতে শেখার অনেক মজার মজার গল্প আমাদের অনেকেরই স্টকে আছে, কিন্তু সেই গল্পই একবারটি পড়ে দেখুন কুমুদির বয়ানে, “একটি সাইকেল ও দেহলিজ”
। দেখবেন কখন যেন আপনিও আওড়াতে শুরু করেছেন, “ডরাইলেই ডর”। কোন গল্প ছেড়ে কোন গল্পের কথা বলি! কেবলীর কলেজ জীবন, গোবু মহারাজের সঙ্গে তার প্রেম জীবন এবং বিবাহপর্ব - এসব তো আমাদেরই গল্প, শুধু নিজেরা যেন দেখতে শিখি নি – কুমুদি হাতে ধরে দেখিয়ে দিলেন।
চাষার ভোজন দর্শন – ১২শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩৩৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
আচ্ছা এটা মনে রাখবেন, যে হট পটের সাথে ওই ফন্ডু বলে যে জিনিসটা আছে – তার একটা বেসিক পার্থক্য আছে। হট পটে আপনি খাবার বানাবেন বা ফোটাবেন একটা জলীয় স্যুপে – আর ফন্ডুতে রান্নার তেল ব্যবহার করা হয়। হট পটের স্ট্যান্ডার্ড রান্নার উপাদানগুলি হল – খুব পাতলা করে কাটা মাংসের টুকরো, সবুজ পাতার সবজি, মাশরুম, নানা প্রকারের ন্যুডল্স্, কাটা আলু, টফু, নানাবিধ বিনস্, মাছ বা সি-ফুড। এই সব উপাদানই সরু সরু করে কাটা থাকে – তা না হলে ওই মৃদু আঁচে ফুটতে থাকা স্যুপে সিদ্ধ হয়ে খাওয়ার মত হতে রাত হয়ে যাবে! তা ছাড়া এক্সট্রা সস রাখা থাকে পাশে – আপনি নিজের ইচ্ছেমতন খাবার স্পাইসি বানিয়ে নিতে পারবেন সিদ্ধ হয়ে যাবার পর।
শিল্পকলার তাত্ত্বিক ভাগাভাগি থেকে দেশভাগের শিল্প : দেবরাজ গোস্বামী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : শিল্পকলা | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৭৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
দেশভাগ বিষয়টি কোনো রাতারাতি ঘটে যাওয়া আকস্মিক ঘটনা নয়, অনেকদিন ধরেই একটু একটু করে তার প্রেক্ষিত তৈরি করা হয়েছিল – ঠিক সেইরকমই, সেই সময়ের ভারতীয় শিল্পীদের কাজে তার যে প্রতিফলন রয়েছে তাও ঠিক একদিনের ঘটনা নয়। .... আশ্চর্যের ব্যাপার হল, বাংলার নাটক, সাহিত্য, ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে দেশভাগের বিষয়টির যে জোরালো উপস্থিতি, তা কিন্তু চিত্রকরদের কাজের মধ্যে নেই। দেশ ভাগ হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ বাস্তু হারিয়ে শেষ সম্বল নিয়ে এপার বাংলায় চলে আসছে – এমন দৃশ্য আমরা সমকালীন ফোটোগ্রাফ এবং কিছু পরে নির্মিত চলচ্চিত্রে দেখতে পেলেও খুব কম শিল্পীই এই বিষয় নিয়ে সরাসরি ছবি এঁকেছেন। চিত্রকলা এমনই এক দৃশ্যভাষা, যেখানে কেবলমাত্র চোখে দেখা দৃশ্যের একটা চটজলদি ডকুমেন্টেশন করে দিলেই চলে না, শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা, মনন এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ কাজের অঙ্গ হয়ে যায়। চলচ্চিত্রের মত ন্যারেটিভ মিডিয়াম নয় বলেই, চিত্রকলার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং যথেষ্ট ম্যাচিওরিটি দাবি করে। ফলে চিত্রকরদের কাজে আমরা দেশভাগ যতটা পেয়েছি, তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি তার রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতের অনুসন্ধান। ....
রক্তের সম্পর্ক : অমল সরকার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৬১২ বার পঠিত
এনআরএসে তখন যন্ত্রণাকাতর যাত্রীদের আর্তনাদ, পরিজনের কান্না৷ রেডিও, টিভিতে খবর পেয়ে বাড়ি না ফেরা যাত্রীর পরিজনের ভিড় থিক থিক করেছে৷ আহতদের রক্ত দরকার৷ হাসপাতালে রক্ত নেই৷ অদূরে মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বেশ কয়েক জনকে৷ দেওয়ালে দেওয়ালে তখনও সিপিএমের ছাত্র-যুবদের লেখা সবটা মুছে যায়নি, ‘রক্ত দিয়ে গড়ব মোরা সাধের বক্রেশ্বর৷’ বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গড়ার অঙ্গীকার৷ কাগজে খবর হয়েছিল, বক্রেশ্বরের জন্য দেওয়া বিপুল রক্ত মজুতের ব্যবস্থা না থাকায় নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ অথচ হাসপাতাল সেদিন রক্তশূন্য৷
এনআরএসের এমার্জেন্সির ভিড়ে হঠাৎ সেই তরুণের সঙ্গে দেখা, বিকালে যাকে রেলকর্তার ঘরে দেখেছি৷ তার সঙ্গে নানা বয়সের আরও জনা দশ-পনেরো লোক৷ ছেলেটি গলা চড়িয়ে হাঁক পাড়ছে, ‘ডাক্তারবাবু কার রক্ত দরকার? কার দরকার, কার দরকার? আমরা রক্ত দেব৷’
আমাগো ভানু : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | বাকিসব : নেট-ঠেক-কড়চা | ০৬ অক্টোবর ২০২১ | ৫০০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৬
শুনেছিলাম, এই বসুশ্রীতেই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আর সত্যজিৎ রায়ের আলাপচারিতার গল্প। যদিও সত্যজিৎবাবুর ছবিতে শেষ পর্যন্ত ভানুর অভিনয়ের সুযোগ হয়নি, তবে দু’জনের পরিচয় অবশ্য ‘পথের পাঁচালী’র সময় থেকে। বসুশ্রীতে সেই ছবি দেখে মন্টু বসুর অফিস ঘরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন ভানু। সত্যজিৎও তখন সেখানে বসে। ভানু তাঁকে চেনেন না। পরিচয় হতেই ভানুর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘‘মশাই, করেছেন কী! আপনি তো কালে-কালে কানন দেবীর মতো বিখ্যাত হবেন!’’
অনেকদিন পরে, এই বসুশ্রীতেই, সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র প্রথম ‘শো’-য়ের শেষে বেমক্কা প্রশ্ন করেছিলেন কোনও সাংবাদিক। শুনে আমাগো ভানুর ঝটিতি জবাব, “লেখাপড়া না-জানলে উনি (সত্যজিৎ রায়) তাঁর ছবিতে পার্ট দেন না।”
শুনে অপ্রস্তুত সত্যজিৎ রায় তখনই ‘না-না’ বলে ওঠেন। সবিনয় বলেন, আমি ওঁর খুবই গুণগ্রাহী। উপযুক্ত রোল থাকলে অবশ্যই ভানু বাবুকে নেব।”
পথরেখা : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সুবিনয় রায়ের গান শুনতে গিয়ে দেখলাম সেখানে বিভূতিভূষণ উপস্থিত। " কী অচেনা কুসুমের গন্ধে" জেগে উঠছে ছবি, আর আমি ভাবছি একের পর এক মৃত্যুমিছিলের কথা। যে মানুষ চলে গেলেন, তাঁদের যাওয়া নয়, তাঁদের সঙ্গে সামান্য কিছু কথা, দেখা, কয়েকটি মুহূর্ত। ছোটবেলার বন্ধু, বন্ধুদের বাড়ির লোক চলে গেলেন খুবই অলক্ষ্যে। আরো এমন অনেক মানুষ যাঁদের চিনিনা। কিন্তু শোক ছাপিয়ে এই ভাবনা প্রবল যে এই এঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সেইসব জমানো মুহূর্তেরা থেকে গেল। এইসব যখন হয়েছে, তখন ভাবিনি কোন কোন পথের বাঁকে আনন্দময় স্মৃতি জমে উঠছে। হেলায় কুড়িয়ে বইয়ের ভাঁজে রাখা সেসব ফুলই অপূর্ব রূপ নিয়েছে এখন।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৫০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বর্বর জাতিরা যুগে যুগে যে ভাগ্যের ওঠাপড়া দেখে এসেছে, এই সেগুহহা উপজাতির বিশিষ্ট ও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠাটা আমাদের সামনে সেই ভাগ্য পরিবর্তনের একটা উদাহরণ তুলে ধরে। তিরিশ বছর আগেও সেগুহহারা দেশের একটি সংকীর্ণ অঞ্চলে বসবাস করত। জায়গাটা সাম্বারাদের ও ডোদের দেশের মাঝখানে। উসাগারা পাহাড়ের পূর্বদিকে ডোরা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, কিন্তু দাস-ব্যবসায়ীরা এদের জীবনে ধ্বংস ডেকে এনেছে, এদের সংগঠিত দস্যুদের হাতে তুলে দিয়েছে। দস্যুদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসঘাতক মৃমারা, পালিয়ে যাওয়া দাসেরা, জাঞ্জিবারের আইনের চোখে অপরাধীরা, আসামীরা ও অপহরণকারীরা- উসাগারা থেকে সমুদ্র অবধি এলাকার জঙ্গলগুলো এই ধরণের লোকে থিকথিক করত।
চাষার ভোজন দর্শন – ১৩শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩০৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কনফারেন্সে এমন জবরদস্ত লাঞ্চ হলে, তার নেগেটিভ দিক হচ্ছে, লাঞ্চের পরের টকগুলোতে খুব কম লোক হাজির হবে। যারা হাজির হবে, তারাও অনেকে ঢুলবে! আমাকে দু’একবার কোন কোন সেশনের চেয়ারম্যান হতে হয়েছিল, তাই স্টেজ থেকে একদম সামনা-সামনি দেখি অডিয়েন্স কেমন ঢুলছে! আর যদি কোনো সরকারি কোম্পানির বড় কর্তা টক দেয়, তো রুম ভরে যাবে – সেই ভরা রুমে লোকে ঢেকুর তুলছে, কেউ নিঃশব্দে বাতকর্ম করে দিল ধরুন – মাটন রোগান জুসের ঢেকুর বা পাদের গন্ধ কি আর রুম ফ্রেশনার দিয়ে আটকানো যায়!
বৃত্তরৈখিক (৫৪) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০২ অক্টোবর ২০২১ | ১৮৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
দুপুরের খাওয়া চল্লিশজন ছেলেমেয়ের জন্যে, ফাইফ সিক্স সেভেন আর এইট। পেট-ভরা ভাত দেওয়া হয় ওদের, সকালের মতো ফ্যানা-ভাত নয়, ফ্যান-গালা ভাত। আর মনে রাখবেন, ওদের পেট-ভরা মানে আপনাদের পেট-ভরা নয়। ভাত ওরা অনেক বেশি খায়, এবং যতটা খায় ততটাই দেওয়া হয়। আমার মনে হয় না পেট-ভরা নিয়ে কোন দুঃখ ওদের আছে। পেট ভরে। রোজই। তবে হ্যাঁ, তরকারির একটা মাপ আছে, সে মাপটা বুঝিয়ে দেওয়া আছে নিমাই আর সুনীলকে। সেটা যে যথেষ্ট নয়, তা আমরা সবাই জানি, নিমাই আর সুনীলও জানে।
বৃত্তরৈখিক (৫৫) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ অক্টোবর ২০২১ | ১৫৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
দুপুরে খাওয়ার সময় পুলকেশও বসেন ওদের সাথে, এবং পুলকেশের বিশেষ অনুরোধে জয়মালিকাও। য়্যোরোপের গল্প হয়, পাঁচ জায়গায় সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছে জয়মালিকা, ধরণী মাতার আরাধনা যে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম আর ভারতের ইণ্ডিজেনাস পপুলেশনের দার্শনিক চিন্তার মহাসম্মিলনের ফসল, ভারতীয় ধর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতীক, আদিবাসী ধর্ম আর ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মিলনস্থল, এ চিন্তা নাকি আলোড়ন তুলেছে যেখানে যেখানে গেছে ও সেখানেই। ও যে বক্তৃতা দিয়েছে তার ইংরিজি অনুবাদ, এক একটি কপি পাঁচ য়্যুরো হিসেবে একশো কপি – যা ও সঙ্গে কোরে নিয়ে গিয়েছিলো – সবই বিক্রি হয়ে গেছে ! এসব আলোচনা খুব একটা প্রভাব ফেলে না সোমেশ্বরের ওপর, ও মনে মনে ভাবছিলো জয়মালিকা কী বাচ্চাদের পাদুকাবিহীন ফাটা-পাগুলো লক্ষ্য করেছে আজ !
বৃত্তরৈখিক (৫৬) : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৩ অক্টোবর ২০২১ | ১৬৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
মিনতি, মিনতির মতো মুখচোরা মেয়ে, সে-ও জিজ্ঞেস করেছে, কতো তাড়াতাড়ি? কতো তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিতে হবে? তখনো ধৈর্য হারায়নি উৎপল, বলেছে আটটার মধ্যে। তখন লক্ষ্মীকান্ত বলেছে, ঠিক আছে, আমরা ছটার সময় পড়তে বসে যাবো, আটটার মধ্যে পড়া হয়ে যাবে। উৎপল তো কখনও এরকম জবাব দিতে শোনেনি ওদের, ও রেগেমেগে বলেছে, কী পড়তে বসে যাবো পড়তে বসে যাবো করছো, একজনও বসবে না ডাইনিং হলের চেয়ারে। তখন নাকি তিন-চারজনে মিলে একসাথে বলেছে, ঠিক আছে স্যর, আমরা মেঝেতে বসবো। আর তারপর আস্পর্ধা দেখুন, ক্লাস সেভেনের নবীন ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেছে তখন, স্যরকেও কী মেঝেতে বসতে হবে ! বিশেষ কোরে নবীনের এই প্রশ্নে উৎপল খুবই আপসেট। আর সত্যি কথা বলতে কী, আমিও একটু শঙ্কিত।
অতিমারীর অভিজ্ঞতায় নগর পরিকল্পনার প্রশ্ন : কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৯০০ বার পঠিত
বিশ্বজোড়া অতিমারী এই প্রথম নয়, তবু গত প্রজন্ম ও বিগত মহামারীর থেকে যা কিছু আমরা শিখে থাকি - তা ঠিকমতো প্রয়োগ করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এমন দ্রুত-বর্ধনশীল মহানগরগুলির ক্ষেত্রে। তবে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু শেখার আছে, এমনকি ধারাভির বাসিন্দাদের আপৎকালীন ব্যবস্থা থেকেও! যেমন, উগান্ডার কাম্পালাতে মূলত অপারগ বা বয়স্কদের জন্য স্থানীয় উৎপাদকরা একটি অ্যাপের সাহায্যে সাইকেলে জরুরী জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এমন সব উদ্যোগের ফলে রোগের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কম হতে পারে, কিন্তু নাগরিকদের জীবিকা হারানো, অনাহার, ভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা-বিভ্রাট ও অন্যান্য দুর্ভোগের কোনও যথাযথ হিসাব বা তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার সুদক্ষ ব্যবস্থার অভাব ও অনীহার জন্য।
নকশিকাঁথা (১১) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লম্বা লম্বা শিক লাগানো পেল্লায় তার কপাট। সেই শিক ধরে ভিতরে চোখ রাখল ফায়জল। সঙ্গে সঙ্গে যেন আলিবাবার গুহার মত এক আজব দুনিয়া চিচিং ফাঁক হয়ে চোখের সামনে হাজির। কি বনবন করে ঘুরছে সবাই। সঙ্গে গান করছে কেউ মিঠে সুরে। ছোট-বড়, রোগা-মোটা, বাচ্চা-বুড়ো সবাই চরকি-ঘোরান ঘুরতে ঘুরতে খলখল করে হাসছে। জীবনটা এত মজার, এসব না দেখলে বোঝাই যায় না। পায়ে পায়ে ভেতরে ঢুকে গেছিল ফায়জল, নিজেকে গুটিয়ে কারো সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি না করে। ভিতরে কত রকমের বাতি ঝুলছে। চলতে চলতে এক আয়নার সামনে গিয়ে তার চোখ কপালে। হুবহু তার মত একটা লোক, শুধু কেউ যেন হামান দিস্তা দিয়ে এমন পিষে দিয়েছে লম্বায় এক হাত আর চওড়ায় তিন হাত। পোশাক দেখে শুধু বুঝতে পারল, যে এটা তার নিজের সুরত। এমন সেই সিসার কেরামতি। এমনি অনেক সিসা দিয়ে একটা দেওয়াল মুড়ে রেখেছে। কোনখানে ফায়জল বেঁটে, তো কোথাও হিলহিলে লম্বা, আর এক জায়গায় সে হয়ে গেল বেলুনের মত গোল। যেন এখুনি হাওয়া বেলুন হয়ে উড়ে যাবে। আলেফ ডেকে না নিয়ে এলে সেখানেই বুঝি পুরো দিনমান কাটিয়ে দিত ফায়জল।
বর্ডার, কাঁটাতার, খণ্ডিত দেশ : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
মাটি ভাগ হয়, দেশ ভাগ হয়, মানুষ, পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জন্ম জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা গ্রাম, ঝিল, পুকুর, বনবাদাড়, ঘরবাড়ি বিদীর্ণ করে দেয় দিল্লির শাসকের কাঁচি। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী আসিফ সামিনার পরিবার এপার-ওপার হয়ে যায়, তাদের সদ্য প্রস্ফুটিত প্রেমের মাঝে রাষ্ট্র খুঁটি পুঁতে দেয়। প্রবল ঝুঁকি নিয়ে তারা খণ্ডিত হয়ে যাওয়া নাজির বিলের কাছে দেখা করে, সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখে, তারপর একদিন সীমান্তরক্ষীর গুলিতে দুই উজ্জ্বল তরুণ তরুণী পাচারকারীর লাশ হয়ে যায় ....
সম্পাদক বিমল চক্রর্তীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ ত্রিপুরার দেশভাগের গল্প একসাথে গ্রন্থিত হয়েছে এরকমটা অন্তত এই প্রতিবেদকের আগে কখনো নজরে আসেনি। সেদিক থেকে এই সংকলনটি অনন্য ...
‘রক্তমণির হারে’: বেদনা বিষাদ স্মৃতিকাতরতার আখ্যান : স্বপন পাণ্ডা
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৪৭ বার পঠিত
দেবেশ রায়, এডোয়ার্ড সয়িদ-এর কালচার অ্যান্ড ইমপিরিয়ালিজম বই থেকে তুলে এনেছেন ইতিহাসের এক নৈর্ব্যক্তিক সত্য – “সাম্রাজ্য বস্তুত এক প্রলম্বিত নৈতিক কর্তব্য।” সেই কর্তব্য পালনের জন্যেই অধীনস্থ, নীচ, পশ্চাৎপদ জাতিগুলিকে শাসন করতে হবে। আর এই ‘নৈতিক কর্তব্য’ সাধন করতে গিয়েই ব্রিটিশ শাসকেরা উপমহাদেশের ক্ষমতালোভী কতিপয় রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে ঘটিয়ে তুলতে পারল এমন এক অভাবিতপূর্ব ঘটনা – দেশভাগ। ভারত-চেতনার হত্যা ঘটাতে তারা ঠেলে দিল আমাদের গৃহযুদ্ধে, দাঙ্গায়। রক্তপাত, অবিশ্বাস, ঘৃণার লাভাস্রোতে ছাই হয়ে গেল সাধারণ কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন আর ভবিষ্যৎ। এমন চিরস্থায়ী সেই অভিঘাত যে, সাত দশক পার হয়েও সেদিনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে আমাদের লেখায়, চেতনায়।
নকশিকাঁথা (১২) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০২ অক্টোবর ২০২১ | ২০১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
তাদেরকে সাদাদের কামরা থেকে নাবিয়ে দিল না কেউ। টিকেট দেখতে এসে লালমুখো গুঁফো লোকটা অনেকক্ষণ চোখ সরু করে সবার চেহারা জরিপ করল। এরা নিজেদের জান পেটের মধ্যে সিঁধিয়ে বসে ছিল। ভাবটা যেন কিছুই হয়নি, কিন্তু বুক গুড়গুড় করছে। শেষ অবধি লোকটা জিগেস করল, হিন্দু? চেকার আসার আগেই পাঁচকড়ি চোখ বুজে হরিনামে ডুবে গেছিল। মোকসাদ মাথা নেড়ে সায় দিল। ফ্রম ক্যালকাট্টা। আর তুমি? লালমুখোর নজর ইরুবার দিকে। ইরুবা দাড়িতে হাত বুলিয়ে দাঁত বের করে বলল, হিন্দু ফ্রম কালকাত্তা। সে লোক ভুরু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইল। কি নাম তোমার? ইরুবা এত কিছু ভেবে রাখেনি। বলল, ইরুবা। কোথায় যাচ্ছো? নিউ অরলিন। সে লোক এবার ইরুবার কাঁধে এক থাবা মেরেছে। কথা বলছো যেন মিসিসিপির নিগার, আর ভেক ধরেছো হিন্দুর? মুহূর্তে ইরুবা দিল এক লাফ, যেন জলজ্যান্ত হনুমান ....
নকশিকাঁথা (১৩) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ অক্টোবর ২০২১ | ১৫৬৯ বার পঠিত
হাঁ করে গিলছিল আলেফ আর বসির। রেলের ইস্টিশানে নেবে অবধি দেখেছে এই শহরের রঙ-ঢঙ। যেন রোজকার উৎসব লেগে আছে। পথে পথে রঙ্গ রসিকতা, নাচ গানের আওয়াজ, গ্রাহকের প্রতীক্ষায় পশরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা, কিছুই চোখ এড়ায়নি তাদের। নিউ ইয়র্কের দশ-বিশ তলা ইমারত ওদের কাছে নতুন ছিল। কি তার চমক আর চেকনাই। আশবারি পার্কে দরিয়াপারের মেলা দেখে চুঁচড়োর দরগার বচ্ছরকার পরব ফিকে পড়ে গেছিল এ জন্মের মত। কিন্তু এই শহরের সাজ সহরত নকশা এমন, যেন চারদিকে আমোদের ভিয়েন বসেছে। এমন কোন রঙ তারা জানে না, যার কয়েক পোঁচ পড়েনি কোথাও না কোথাও। থেকে থেকে নিশেন উড়ছে। তাতে কত রকমের মুখ, জন্তু জানোয়ারের চেহারা দিয়ে চিত্র বিচিত্র করে রেখেছে। এই শহর তার উচ্ছল প্রাণ আর বেঁচে থাকার জীবন্ত ছবি নিয়ে শুরুতেই তাদের খুব টেনেছে।
নকশিকাঁথা (১৪) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৩ অক্টোবর ২০২১ | ১০৪৬ বার পঠিত
গোবিন্দর শরীরে যে এত ঘুম জমে ছিল, সে নিজেও জানত না। দিনভর ঘুমাতে কসুর করেনি শুরুর ক’টা দিন। জাহাজের স্টকহোল্ডে কাজ করে শরীরখানা এমন দুমড়ে মুচড়ে যায়, সবসময় ঘুমের জন্য মুখিয়ে থাকে। দু’দিন এমনি গেল। তারপর বদনখান এমন ঝরঝরে হয়ে গেল, মোটে ঘুমই আসে না চোখে। শুয়ে থাকলে বরং গায়ে বেদনা। ওইটুকু তো ঘর, হাত-পা খেলানোর ঠাঁই নেই। পায়চারি করার পরিসর দূরস্থান। সে বেচারা কি করে? বিছানার উপরেই গ্যাঁট হয়ে বসে রইল রাতভোর। বন্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে আলো ফুটল, ঘরের হলুদ আলোর সঙ্গে ছায়া ভুবন তৈরি করল। মানুষের মন বড় অদ্ভুত। জাহাজের জন্য মন আকুলি-বিকুলি করে উঠল গোবিন্দের। অথবা ঠিক জাহাজের জন্য নয়, শুধু একটু বাইরে যাওয়ার জন্য। একটু বাইরের আলো বাতাস, মানুষের মুখ, কারো সঙ্গে দু’টি কথা কইবার তরে পাগলপারা ছটফটানি। ঠিক যেমন একেকবার ফার্নেসে কয়লা ঢেলে গোটা শরীরখান শুকিয়ে যেত, আর ইচ্ছা হত দেয় এক ঝাঁপ মাঝদরিয়ায়, নিশ্চিত মরণ জেনেও, এখন তেমনি ধরা পড়ুক চাই যা খুশি হোক – বাইরে একদম যাওয়া চাই – এমন একটা বেপরোয়া ভাব তাকে গ্রাস করছিল।
বাংলার নবাবি কেল্লা ও কেল্লাবাসীর কিসসা - ২ : ফারুক আব্দুল্লাহ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৪০৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
ছোটে নবাব সাহেবের সাথে বিশাল আকৃতির জরাজীর্ণ বালাখানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রাসাদের ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময় নবাব সাহেব জানালেন, বর্তমানে এই বালাখানাই নাকি কেল্লা নিজামতের সব থেকে পুরনো প্রাসাদ। এই প্রাসাদ নিয়ে একটি গল্পও শোনালেন, বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকাজ চলাকালীন, কোনো এক জরুরি কাজে নবাব হুমায়ুন জা-কে নাকি ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল। ইংল্যান্ডে তিনি উঠেছিলেন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বাকিংহাম প্যালেসে। অল্পবয়সী নবাব প্যালেস দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, এবং মুর্শিদাবাদে বাকিংহাম প্যালেসের মত একটি প্রাসাদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হুমায়ুন জা তাঁর সেই ইচ্ছের কথা একদিন সময় সুযোগ বুঝে রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছেও প্রকাশ করেন, এবং সেই মর্মে মহারাণীর কাছ থেকে একটি লিখিত অনুমতিও চেয়ে নিয়ে আসেন। মুর্শিদাবাদে ফিরেই তিনি বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকার্য বন্ধ করে, বাকিংহাম প্যালেসের আদলে একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করার আদেশ দেন। সেদিনের সেই প্রাসাদটিই নাকি আজকের হাজারদুয়ারি।
ভুয়ো অভিযোগের বিভীষিকায় সন্ত্রস্ত আদিবাসী জীবন : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০১ অক্টোবর ২০২১ | ১৪৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গ্রামের নাম এদেসমেত্তা, জেলা বিজাপুর, ছত্তিসগড়। জেলাশহর থেকে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। ১৭-১৮ মে, ২০১৩র রাতে গ্রামের ৩০-৪০ জন মানুষ বীজ পান্ডুম উৎসব পালন করার জন্য মিলিত হয়েছে। বীজ পান্ডুম হচ্ছে ফসলের বীজের মাধ্যমে নতুন জীবনের আগমনকে উদযাপিত করা। প্রায় হাজার জনের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের ঘিরে ধরে, নির্বিচারে গুলি চালায়; ৮ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৪ জন নাবালক। মাওবাদীদের মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোবরা ইউনিট উল্লসিত, তাঁরা উগ্রপন্থীদের একটি দলকে নিকেশ করে দিয়েছে। এলাকার মানুষ মানতে নারাজ, তাঁরা বলেন যে এঁরা সবাই ছিলেন নিরীহ গ্রামবাসী, কেউ মাওবাদী নন। তুমুল হৈচৈ হয়। তখন রাজ্যে রমন সিংয়ের বিজেপি সরকার যাদের প্রবল দমন-পীড়নে আদিবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ঘটনাটি নিয়ে এতো সাড়া পড়ে যায় যে সেই সরকারও বাধ্য হয় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে।
বুদ্ধদেব গুহ পড়া : সম্বিৎ বসু
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৩ অক্টোবর ২০২১ | ৪৬৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
তেমনই বুদ্ধদেব গুহ, থিম্যাটিকালি না হলেও, বাঙালি শহুরে, উচ্চবিত্ত আর ধনী চরিত্রদের বাংলা মূলধারার সাহিত্যে আনলেন। বুদ্ধদেব গুহর বাইরে মূলধারায় উচ্চবিত্ত চরিত্র সেরকমভাবে এসেছে কি? তার একটা কারণ অবশ্যই আমাদের সাহিত্যিকরা ব্যক্তিগত জীবনে মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরীরা ধনী ঘরের সন্তান ছিলেন। তাঁদের গল্পে উচ্চবিত্ত ও ধনী চরিত্র এসেছে সময়ে সময়ে, কিন্তু শরৎচন্দ্র থেকে হালফিলের যে উপন্যাস পড়ি, সেখানে উচ্চবিত্ত চরিত্র খুব কম ক্ষেত্রেই মূল চরিত্রের স্থান পেয়েছে ওই কারণে।
উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি – সামাজিক বিস্মৃতিতে বিলীন এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৬ অক্টোবর ২০২১ | ৩০৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
স্থান – ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ড, ২৬ অক্টোবর, ১৮৩১। তথাকথিত “ভারতীয়” কলেরায় আক্রান্ত প্রথম রোগী চিহ্নিত হল। মারাও গেল। এক বছরের মধ্যে ২৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হল কলেরায়। যদিও ল্যান্সেট-এর সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৫০,০০০। এ সময়ে এখানে এলেন এডিনবার থেকে সদ্য পাস করে বেরনো ২২ বছরের এক উজ্জ্বল মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট। স্নাতক হন ডাবলিনের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ থেকে। ইতিহাস ঘেঁটে আমরা এই যুবকের তিনটি নাম পাচ্ছি – প্রথমে উইলিয়াম স্যান্ডস, পরে উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি, এবং সবশেষে উইলিয়াম ও’শনেসি ব্রুক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠার যুগের শিক্ষক হিসেবে এবং দ্বিতীয় নামটিতে সবচেয়ে বেশি গবেষণাপত্র লেখার সুবাদে আমরা তাঁকে জানবো উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি বা শুধু ও’শনেসি বলে।
কিসসা গুলবদনী : সুপর্ণা দেব
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ২৫৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
বাদশা আকবর ফুফুর হাত দু’টো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন, “গল্প শুনতে এসেছি ফুফু হজরত।”
ফুফু এবারে একটু দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলে ওঠেন, “কেন রে? দরবার খানকে ছুটি দিয়েছিস নাকি? দরবার খান ছেড়ে শেষে আমাকে নিয়ে পড়লি কেন?”
জালালুদ্দিন আকবর বললেন, “সে আলাদা আর আপনি আলাদা। সে আমাকে কোথায় কোথায় নিয়ে যায় আমি তার হদিশ রাখতে পারি না। উড়িয়ে নেয়, ভাসিয়ে নেয়। একরাশ রঙে সাঁতার কাটি। কখনো রক্তে টগবগে তুফান ছুটিয়ে দেয়। আমাকে খেপিয়ে দেয়, মাতিয়ে দেয়। কিন্তু কখনো মন চায় গাছের ছায়ায় বসতে, শান্ত হতে চায়। জিরোতে চায়, ঘরে ফিরতে চায়, পিদিমের আলোয় বসে থাকতে চায়। আপনি আমার সেই জিরেন, সেই ছায়া, ফুফু হজরত। তা ছাড়া দরবার তো বানিয়ে বানিয়ে গল্প শোনায় শুধু। আমাদের ঘরের কথা, বাবার কথা, দাদুর কথা – এসব আপনি ছাড়া আমাকে আর কে শোনাবে ফুফু হজরত?”
...গেয়ে ধান কাটে চাষা... : অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৮ অক্টোবর ২০২১ | ২৯৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
যে কোনো বাঙলা সাহিত্য বা ভাষার ইতিহাসের স্কুলপাঠ্য সিলেবাস বা বইতে চর্যাপদকেই আরম্ভ বা প্রথম নিদর্শন বলা হয়েছে।
যেটা আমাদের স্কুলপাঠ্য বইতে লেখা নেই, সেটা হল, এই পুঁথি শুধু বাঙলার নয়, ওড়িয়া, অহমীয়া, ভোজপুরি এইরকম বেশ কয়েকটি ভাষারও পূর্বপুরুষ। ওই সব ভাষার সাহিত্যের ইতিহাস বইতেও একই কথা লেখা আছে। তাই প্রশ্ন আসে, এটা আদি নিদর্শন বটে, কিন্তু এ ভাষা তখনো কি বাঙলা হয়নি?
এই চর্যাপদের কবি বা গীতিকাররা নিজেদের কোথাকার লোক ভাবতেন? তাঁরা কি নিজেদের বঙ্গবাসী ভাবতেন?
এই ভাষাকে কোন সময় থেকে বাঙ্গালা বলা শুরু হয়েছিল?
বাঙ্গাল অরিজিনালি কারা ছিল?
এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা, যা স্কুলপাঠ্য বইয়ে নেই.. পড়তে থাকুন।
সই : অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ২১৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
প্রথমদিন তিস্তা লাহিড়ি’র দিকে একঝলক তাকিয়েই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল শুভশ্রী’র। ভদ্রমহিলাকে যখন দেখে সে, একেবারে অভিভূত হয়ে গিয়েছিল, এমনিই ব্যক্তিত্ব তাঁর। পরনে ছিমছাম একটি তাঁতশাড়ি, মুখে হালকা প্রসাধন, চোখে শৌখিন ফ্রেমের চশমা। গায়ের রঙ এই বয়সেও যেন ফেটে পড়ছে। চুল কালার করা, কালোর সঙ্গে মেরুন রঙ। বেশ লাগে তাঁকে দেখতে।
তিনি ইজিচেয়ারে বসেছিলেন। তাঁর বসাটা এমন জায়গায় ছিল, যেখান থেকে বাইরে-ভেতর দেখা যায়। তিনি দু’হাত বাড়িয়ে তাকে গ্রহণ করলেন। শুভশ্রী দু’হাত তুলে ‘নমস্কার ম্যাডাম’ বলতেই তিনি এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, এসো এসো, আমার সই।
চালচিত্রের চালচলন : রঞ্জন সেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ছবিছাব্বা | ১১ অক্টোবর ২০২১ | ৩২০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
পুজোর চালচলন যে বদলাচ্ছে এ আর কোন নতুন কথা নয়। অতিমারি এই বদলানোর পালে বাতাস লাগিয়েছে। তবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক চালচিত্র বদলালেও প্রতিমার পিছনে চালচিত্র এখনও একইরকম। থিম, টিম, স্পনসর, মেন্টরদের ধামাকার সামনে দাঁড়িয়ে সে এখনও আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতিকে। চালচিত্র যেন বাংলার প্রাচীন সামাজিক জীবনের এক রেট্রসপেকটিভ, অতীতের এক ঝাঁকি দর্শন। প্রতিমার পিছনের অর্ধচন্দ্রাকৃতি পরিসরে দাঁড়িয়ে সে বলে অসুর বিনাশের জন্য সমস্ত দৈবশক্তির মহামায়ার রূপ নেওয়ার কাহিনি; দেবীর গার্হস্থ্য জীবন; ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ছাড়াও নানা দেবদেবীর ছবি ও কাজকর্মের চিত্রকল্প। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভাষায়, “ক্রমে দুর্গার গায়ে রঙ উঠিল, রঙ শুকাইল, চালচিত্রে ঘরবাড়ি, সাজসজ্জা ক্রমে যেন ফুটিয়া উঠিতে লাগিল। বোধ হইতে লাগিল মহাদেব যেন সত্যসত্যই ষাঁড়ের উপর বসিয়া বিবাহ করিতে যাইতেছেন।”
পুত্রার্থে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১২ অক্টোবর ২০২১ | ৪৭০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
মা তিনদিন পর সত্যি সত্যি চলে গেল, কিন্তু শ্মশান থেকে ফিরে আগুন ছুঁয়ে বাথরুমে স্নান করতে করতেই বুঝলাম, বুড়ি কোথাও যায়নি। প্রথমেই নাকের পাশটা সুড়সুড় করছিল বলে একটু ঘষে দিলাম। তারপরই আয়নায় তাকিয়ে দেখি, সেখানে এক খয়েরি আঁচিলের জন্ম হয়েছে। ঠিক যেমনটি মায়ের ছিল। এখনো ছোট, কিন্তু ঠিক জানি, এটা তত বড়ই হবে, যত বড় মায়েরটা ছিল। কান্না পেয়ে গেল। ওমা! দেখি, যেমন ভাবে মায়ের ঠোঁট তিরতির নড়ত কান্না চাপার সময়, অবিকল সেই ভঙ্গিতে আমার ঠোঁট নড়ছে। তাজ্জব হয়ে গেলাম, আমার তো কান্না পাবারই কথা নয়, আমি তো রাবার ক্লথের ওপর গু-মুতের তীব্র গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে মা-কে আর আয়াকে বেদম ধমকাতাম আর রোজ চাইতাম বুড়ি এবার আমায় রেহাই দিক!
শুধু আঁচিল বা একরকম ভাবে কান্নার দমক সামলানো নয়, এরপর থেকে অবাক হয়ে দেখলাম আমার প্রতিটা ব্যাপারে মা ঢুকে পড়ছে।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৮ অক্টোবর ২০২১ | ৫১৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
একটা পিঁড়িতে উবু হয়ে বসে মা রান্না করত। রান্না হয়ে গেলে ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে উনুন নিকোনো হত আর উনুন থেকে একটা সুন্দর সোঁদা গন্ধ উঠত, ঠিক বৃষ্টি পড়লে যেমন হয়, তেমন। আমার বোন ঐ গন্ধের লোভে উনুন চাটত। অনেক বারণ, বকাঝকা করলেও তাকে থামানো যেত না। উনুনে সোঁদা গন্ধ উঠলেই, পিলপিল করে দৌড়ে ছোট্ট জিভ বার করে উনুন চেটে দিত। ভাঁড়ে রসগোল্লা বা দই এলেও সেই সব ভাঁড় কামড়াত। এত দুরন্ত, সামলানো যেত না – বাবা ওর নাম দিয়েছিল বিলবিলে বাহাদুর। সকলে যখন জিজ্ঞেস করত, বাবা কি নাম দিয়েছে? – গরবিনী উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করত – বিব্বিলে ভা-দুর। আমি বইপত্র নিয়ে থাকতাম, রান্নাঘরের দিকে অত নজর ছিল না, কিন্তু বোনের ছিল। দুপুরবেলা যখন কেউ দেখত না, ও-ই গিয়ে শিক দিয়ে, বড়দের মত উনুন খোঁচাত।
রানার ছুটেছে তাই : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ অক্টোবর ২০২১ | ৬১৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
স্পিডে যেতে যেতে হঠাৎ খেয়াল করে, পরের সিগনালের চৌমাথার বেশ একটু আগে ওই বাসটা সাইড নিচ্ছে। আরে আরে, এখানে স্টপ নেই তো, বাস দাঁড়াচ্ছে কেন? স্পিড কমিয়ে ব্রেকটা ছোঁয় গিরীশ। ওদিকে বাসে উঠেই শীতল টের পায়, দু’পায়ের ফাঁকে গরম স্রোত নেমে আসছে কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে। ‘আরে আরে মুতনা হ্যায় তো টয়লেট কিঁউ নেহি গ্যয়ে? বদতমিজ আওরত তু ঝল্লি হ্যায় কা?’ কন্ডাকটারের কর্কশ চিৎকারে সারা বাসের লোক ঘুরে ওকে দেখতে থাকে। কয়েকজন হেসে ওঠে, এক মহিলা এসে পিঠে খোঁচা মেরে বাস থেকে নেমে যেতে বলে। বাসের বেশিরভাগ লোক সায় দিয়ে গলা মেলায়। বাস ততক্ষণে পরের সিগনালে। কে যেন জলের বোতল খুলে জল ছুঁড়ে দেয় গায়ে, বাসের মধ্যে হুরডা পার্টি শুরু হয়ে যায়। হেল্পার দুই থাবড়া মেরে বাস থামিয়ে ওকে হাত ধরে টেনে নামিয়ে দেয়। ওকে নামিয়ে দিয়ে হোঃ হোঃ করে হাসতে হাসতে বাসটা চলে যায়।
বিসর্জনের চিত্রকলা : দেবরাজ গোস্বামী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ছবিছাব্বা | ১৬ অক্টোবর ২০২১ | ৩০৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
প্রথম দর্শনে ছবিটি দেখে মনে হয়, এ যেন আফ্রিকার আদিম অরণ্যের গভীরে, কোন নরখাদক আদিম উপজাতির উৎসবের ছবি। তারপর, রাতের বেলায় জঙ্গলের মধ্যে, মশালের আলো এবং ধোঁয়ায় মিছিলের কয়েকজনের কাঁধে প্রকাণ্ড কালী-প্রতিমাটি দেখে বোঝা যায় – এ ছবি, এদেশের তো বটেই, একেবারে বাংলার দৃশ্য। কালীর দুই হাতে ঝুলে থাকা দু’টি মুণ্ডু এবং মশালের আলোর পিছনে প্রতিমার বিরাট ছায়া যেন ছবিটিকে রহস্যময়তার সঙ্গে সঙ্গে ভীতিপ্রদও করে তোলে। ছবিটিতে আঁকিয়ের নিজের অবস্থানও বেশ রহস্যময়। দৃশ্যটি দেখে মনে হয়, শিল্পী যেন গাছপালার ফাঁক দিয়ে, নিজেকে যথাসম্ভব গোপন রেখে, দৃশ্যটি দেখছেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলায় আফ্রিকার আদিম অরণ্যে অ্যাডভেঞ্চারের যেসব কিশোর-পাঠ্য গল্প উপন্যাস প্রকাশিত হত, তার অলঙ্করণের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে স্যাল্টিকভের আঁকা ছবির আশ্চর্য মিল। কৈশোরে এইসব গল্পে আফ্রিকার আদিম উপজাতিদের যে রোমাঞ্চকর কাহিনী পড়ে আমরা শিহরিত হয়েছি, স্যাল্টিকভের ছবিতে আমাদের কয়েক প্রজন্ম আগের পূর্বপুরুষদেরই সেইভাবে চিত্রিত হতে দেখা যায়। এইটাই মানব সভ্যতার বিরাট আয়রনি।
বাসায় চুরি : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ অক্টোবর ২০২১ | ২৪৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
তিনি জানালেন, আমাদের বাসায় যে চুরি হইছে, আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন। আমার বড় ভাই হাসানুর রহমান সাহেবের স্ত্রী যেইভাবে ঘটনাটি বর্ননা করছেন, আপনারা দেখেছেন উনি কিরকম মিথ্যাবাদী। উনি বলতে চাইছেন আমার ছোট ভাই মিজানুর রহমান কোনভাবে এই চুরির সাথে দায়ী। কিন্তু এইটি পুরা মিথ্যা কথা। আমার ভাই মিজানুর রহমান পাঁচ অক্ত নামাযী মানুষ। তিনি বিড়ি সিগারেট কিছুই খান না। আমরা যখন ছোট আছিলাম, তখন ঝড়ের দিনে আমগাছের নিচে আম, জামগাছের নিচে জাম পড়ে থাকত, অনেক পড়ে থাকত। আমার ভাই মিজানুর রহমান মিজান কোনদিনই ঐসব আম জাম হাতে নেন নাই। তিনি কীভাবে চুরি করবেন? তাও নিজের ঘরে তিনি কেনোই বা চুরি করতে যাবেন? আপনারা কস্মিনকালে শুনেছেন কেউ নিজের ঘরে চুরি করে?
মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২০ অক্টোবর ২০২১ | ৩১৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
চোখা চোখের তলায় ছিলবিল করছিল ব্যঙ্গ। সন্তুর শান্ত চোখেও এবার হাসি ছড়াচ্ছে, মৃদু, খুব মৃদু। তপোব্রত অপ্রস্তুতের মত, সামান্য। অপরার সংগে সন্তুর প্রেম বোধ হয় কয়েক মাসের। অপরাকে সঙ্গে নিয়ে সন্তু দিল্লি এসেছে। এটা ঠিক, সন্তুই বেসিক্যালি তপোব্রতর বন্ধু, আর অপরাকে ও প্রায় চেনেইনা, এটাও ঠিক। তাহলে? প্রশ্নটা সন্তুকে করায় কি দোষ হয়েছে কিছু? সরাসরি অপরাকেই করা উচিত ছিল? অপরার কি খারাপ লাগল ব্যাপারটায়? না এমনি, ফচকেমি করছে শুধু? মুখ দেখে ত বোঝা যাচ্ছে না, অথচ কথাটা আলটপকা বল্লেউ তার মধ্যে এক ধরনের ঠেশ আছে। সামান্য ঝাঁঝালো। "আমি"র ওপর একটু বেশি জোর।
তপোব্রত একটু অফ হয়ে গেল, একটু অন্যমনস্ক। আমি -টা বেশি এই মেয়েটার। কেমন, মেয়েটা? এই অপরা? একটু কৈফিয়ত দেবার মত করে তপোব্রত বলল, আসলে প্যাট্রিয়ারকাল সোসাইটি ত। তাছাড়া তুমি ওর সঙ্গে এসেছো। তাই ওকেই জিজ্ঞেস করা সমীচীন হবে ভাবলাম, বুঝলে না?
উৎসবের মরশুমে কেমন আছে মুর্শিদাবাদের কেল্লা নিজামত ? : ফারুক আব্দুল্লাহ
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : ঘুমক্কড় | ২১ অক্টোবর ২০২১ | ২৬০৩ বার পঠিত
দুঃস্বপ্নের মতো আসা কোভিড দু বছর আগের সমস্ত ছবিই সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল।দুটি লকডাউনের ধাক্কায় একেবারে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল সমগ্র কেল্লা নিজামত এলাকা।কেল্লা জীবন্ত হয় পর্যটকদের আগমনে, পর্যটকরা শুধু কেল্লার জৌলুশই বৃদ্ধি করে না সেই সাথে কেল্লার ভেতরের অজস্র সাধারণ মানুষের জীবিকা অর্জনের মাধ্যমও হয় তাঁরা।কিন্তু লকডাউনে সব কিছু বন্ধ থাকায় কেল্লা পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়ায় কেল্লার টাঙ্গাওয়ালা,নৌকার মাঝি, টোটোওয়ালা, হোটেলওয়ালা, রেস্টুরেন্টওয়ালা, আইস্ক্রিমওয়ালা, ফুচকাওয়ালা,ছোট হকার, সৌখিন দ্রব্যের দোকানদার, চাওয়ালা,পার্কিং ব্যাবসায়ী, সবাই হঠাৎ করেই জীবিকা হারায় ৷ সবাইকেই চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়েছিলো।
অ্যাক্রস্টিক দড়াবাজি : একক, ফরিদা, টিম, হুতো
বুলবুলভাজা | কাব্য | ২২ অক্টোবর ২০২১ | ২৯৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
অ্যাক্রস্টিকের সঙ্গে অ্যাক্রোব্যাটের শব্দগত মিল দেখে অভিধান খোলা গেল। তাতে অ্যাক্রোব্যাটের মানে লেখা আছে মল্ল, মত পরিবর্তনকারী, দড়াবাজিকর, ব্যায়ামবিদ, ঘনঘন দলপরিবর্তনকারী, রজ্জুনর্তক, ব্যায়ামকুশলী। শব্দের মিলটা কিছু না, তবে অ্যাক্রস্টিক লেখার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ, দড়াবাজি, রজ্জুনর্তন, ব্যায়াম - এইসবের অল্প মিল আছে।
সমবেতভাবে মনে হল, পুজোর ফুর্তি, হাঁটাহাঁটি, জুতোয় ফোস্কা, বাঁকা এয়ারগানে বেলুন - এসব তো সুদূর, শব্দ, ছন্দ নিয়ে একটু রজ্জুনর্তনই না হয় হোক। ভাবের ঘরে চুরি হলে কী, আমাদের ভঙ্গীও কম নয়। পাঠক যদি আমোদ পান তাহলেই ধন্য।
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার : সংগ্রামী লাহিড়ী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : গান | ২৪ অক্টোবর ২০২১ | ৩৩৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
"সুকান্তর রানার কবিতাটি পড়ে সে চমকে উঠেছিল। কোনোদিন তো ভাবেনি, পিঠে চিঠির পাহাড় আর টাকার বোঝা নিয়ে ছুটে চলা ডাকহরকরার কথা? পিঠে বোঝা নিয়ে সারা রাত দৌড়ে যায় সে, মানুষের চিঠি, টাকা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দেয় সূর্য ওঠার আগেই। তাকে কি কেউ চিঠি লেখে? যৎসামান্য অর্থে দিন-গুজরান, অভাব যার নিত্যসঙ্গী, সেই রানার নিজেও কি কোনোদিন ভেবে দেখেছে তার দুঃখের কথা? না কি তার সব বোধ, অনুভূতি গেছে অসাড় হয়ে? এ কবিতা পড়ে সলিলের চোখ খুলে গিয়েছিল। তখন থেকেই গান বাঁধার ইচ্ছে, রানারের ছুটে চলার গান। "
চাষার ভোজন দর্শন – ১৭শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৮ অক্টোবর ২০২১ | ২৫০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
কাছে এগিয়ে আমার কেমন যেন সন্দেহ হল – বিশাল কিছু আলো জ্বলছিল না বলে ঠিক ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তবুও, মেক্সিকান এদের তো মনে হচ্ছে না! একদম কাছে গিয়ে খাবারের লিষ্টে চোখ বোলাচ্ছি, মনে হল যে বাংলা ভাষা শুনলাম! আরো ভালো করে বলতে গেলে, আমাদের কলকাতার উচ্চারণে বাংলা নয়, বাংলাদেশের বাংলা। লন্ডনে বাংলাদেশী বাংলা শুনতে পাওয়া কোনো অবাস্তব ব্যাপার নয়, কিন্তু টুপি পরে মেক্সিকান স্টলে খাবার বিক্রি করছে – এমনটাও চট করে দেখা যায় না! আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, বাঙালি নাকি”? একগাল হেসে উত্তর এল, “জি দাদা, আপনে কোথাকার?”
নকশিকাঁথা (১৬) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৬ নভেম্বর ২০২১ | ১০৮৭ বার পঠিত
এই লোকটাকে আগেও দেখেছে পিয়েরে, প্রায় রোজই তো দেখে আজকাল। দেখে গা-পিত্তি জ্বলে যায় তার। ইস্ট ইন্ডিয়ার থেকে আসে এরা। মুখটা দেখ? বাইরে থেকে নতুন কেউ এসে গেঁড়ে বসার চেষ্টা করছে ভাবলেই রাগ হয় পিয়েরের। এমন নয়, যে তার কোনো কাজ মার যাবে, কিন্তু সব দেশ থেকে হাড়-হাভাতেগুলো এখানে এসে জমাবে, সেটাও তার ভাল লাগে না। এমনিতেই আজকাল নিগ্রোগুলোর বাড় বাড়ছে খুব। ট্রেমের দিকটা তো পুরোটাই ওদের দখলে। এই লোকটার চেহারা যদিও আলাদা। এদের মতন আরও দুই তিনজনকে দেখেছে মার্দি গ্রাঁর সময়। খুব ব্যবসা জমেছে এদের। হিন্দু জিনিস কিনতে লোকের উৎসাহ দিন দিন বাড়ছে। এই হিন্দুগুলো নিগ্রোদের থেকে আলাদা, শহরের সব জায়গায় পৌঁছে যায়। ওদের আসা-যাওয়ায় কোন বাধা-নিষেধ লাগেনি। হয়তো চেহারার জন্য। কাটা কাটা চেহারার মাজা রঙের এই লোকগুলো, হয়তো চোখের ওইরকম দৃষ্টি বা মাথার ওই গোল টুপির কারণে কেমন দার্শনিক বা শিল্পী স্বভাবের মনে হয়, কিন্তু আসলে খুব বজ্জাত। সেটা ঠিক বুঝতে পারে পিয়েরে, লোক চেনে তো। ফুটপাথে থুথু ফেলল পিয়েরে।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৪ নভেম্বর ২০২১ | ৩১৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
আমাদের গ্রামের বাড়ি বসিরহাটের আড়বালিয়ায়। সেখানে একরকম ছোটো দানা লালচে কমলা রঙের পাতলা পাতলা ভাঙা মুসুর ডাল পাওয়া যেত। দোকানে বলত, মারুতি-ভাঙা ডাল। ঐ ডালে মা ফোড়ন না দিয়ে, শুধু ডালসেদ্ধ করত। কাঁচা ডালে জল দিয়ে, তাতে কাঁচা সর্ষের তেল, নুন, মিষ্টি, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বসিয়ে দিত। সে ডালে কি যে ছিল! ঐ সেদ্ধ ডাল যেন অমৃত লাগত খেতে। আমার বিয়ের পরেও কিছু বছর আড়বেলেতে ঐ ডাল পেয়েছি। আমার কর্তাও ঐ ডালসেদ্ধর প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু এখন আর পাই না। আর মাঝে মাঝে মা রাতে সাদা কাপড়ে ডাল বেঁধে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িতে ফেলে দিত। তারপর সেই টাইট ডালের বল কাঁচা সর্ষের তেল আর নুন দিয়ে মাখা হত। বেশ খেতে লাগত।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১১ নভেম্বর ২০২১ | ২৭৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মা রকমারি সরবৎ বানাতে পারত। দেশি লেমোনেড – লেবু চিনির সরবৎ তো ছিলই, এছাড়া কাঁচা আমপোড়া সরবৎ, পাকা আমের ভাজা মশলা দেওয়া সরবৎ, রোজ সিরাপ মিশিয়ে তরমুজের সরবৎ, মিষ্টি দইয়ের ঘোল, টক দই আর পুদিনার সরবৎ - এইসব। হাতিবাগানে সিনেমা দেখতে গেলে, বাবা একটা দোকানে গুঁড়ো বরফ দেওয়া আম আর দইয়ের সরবৎ খাওয়াত। আর ধর্মতলায় গেলে প্যারামাউন্টের সরবতের ভাণ্ডার তো ছিলই। সর্দি-কাশি হলে মা মিছরি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর আদা ফুটিয়ে, গরম সরবৎ বানিয়ে, কাপে করে নিয়ে এসে বলত, খেয়ে নে। গলায় খুব আরাম হত।
আবার লজ্জা! : মুহম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০১ নভেম্বর ২০২১ | ৩৭৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩২
ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রায়ই একটা কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা দেশ কেমন তা জানতে হলে, সেই দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে তা জানতে হবে। আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে? এখানেই লজ্জায় মুখ লুকাতে হয় সংখ্যাগুরুর। আমারা ভাল রাখতে পারিনি আমার প্রতিবেশীকে। নানা প্রতিবেদন, গবেষণা প্রমাণ করছে যে আমরা কত যত্ন করে দেশের বিশাল একটা অংশের মানুষকে স্রেফ দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। গবেষণা বলছে, প্রায় একটা দেশের মত জমি আমরা দখল করেছি শুধু মাত্র দেশছাড়া করেই! কত চমৎকার না ব্যাপারটা? এই যে পরিস্থিতি – তা হুট করেই তৈরি হয়েছে? আকাশ থেকে নাজিল হয়েছে গজব?
সংখ্যাগুরুর পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নানা অনুভূতি। পোশাকে অনুভূতি, জুতাতে অনুভূতি, চোখের দৃষ্টিতে অনুভূতি। পান থেকে চুন খসলে এই সব অনুভূতি আঘাত প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে সংখ্যালঘুর কোন অনুভূতি নাই। পেটে নাই, রক্তে নাই, ঘরবাড়ি কোথাও কোন অনুভূতি নাই।
কাণ্ডারী হুঁশিয়ার! : বিপ্লব রহমান
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৫ নভেম্বর ২০২১ | ২৮১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বাস্তবে, হিন্দু ধর্মের মন্দির, পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য জুমার নামাজের যে মিছিলগুলো বের হয়েছিল, মসজিদে-মাদ্রাসায় মাইকিং করে ধর্মানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত, জেহাদি জোশে যারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর!’ ধ্বনিতে বিধর্মী-কাফেরদের ওপর হামলা করেছিলেন, ভাঙচুর, লুঠপাঠ ও অগ্নিসংযোগ করে বদলা নিতে মরিয়া ছিলেন, তাদের কোনো দল ছিল না, ওই জেহাদি মিছিলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, কমিউনিস্ট পার্টি – সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল, মিছিলকারীদের একটিই পরিচয় তখন যেন প্রধান, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!’
ঋত্বিক, বিপ্লব ও আজকের অবক্ষয় : তুহিনাংশু মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা | ০৫ নভেম্বর ২০২১ | ২৭৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
এখন ঋত্বিককে সমকাল আপন করে নেয়নি, সে নেয়নি যেমন ভ্যান গঘকে নেয়নি, কাফকাকে নেয়নি, নেয়নি রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তকে। তবে ঋত্বিকের ক্ষেত্রে এই প্রত্যাখ্যান যতটা না মানুষের তার চেয়ে বেশি সিস্টেমের, সমান্তরাল ছবি কিংবা বাম রাজনীতি শুধু নয়, অতিবাম কিংবা নিতান্ত সাধারণ গণসংগঠন কেউই তাঁকে বুঝে উঠতে পারল না। তবে যে বাম রাজনীতি ৫০ এর দশকের উদ্বাস্তু আন্দোলনের আয়নায় নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করল, তারা ঋত্বিক নামক এই ধারালো ছুরিটিকে কেন যে হাতে তুলে নিল না তা ভেবে আমার ধন্দ লাগে বৈকি। যদিও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা সাদান হোসেন মানটোর মতন ঋত্বিকও কোন প্রতিষ্ঠানের বক্ষলগ্ন হতে পারেন না, কারণ ইতিহাসের কাছে তাঁদের পরিচিতি তাঁরা গণশিল্পী, মানুষের শিল্পী, সত্যের ও সময়ের রূপকার। সেই কারণেই কোমল গান্ধার চলচ্চিত্র না হয়ে হয়ে ওঠে কালের এক প্রবন্ধ। কুমারসম্ভবের অনুষঙ্গে ঋত্বিক যেন লিখতে বসেছিলেন তাঁর সমকাল, গণনাট্যের বিরোধ, দুই বাংলার বিরহ আর আমাদের শকুন্তলার আর্ত চোখে আনতে চেয়েছিলেন বন্ধনমুক্তির আকুল আবেদন। সুবর্ণরেখার অন্তিম হৃদস্পন্দন যেমন আমাদের লজ্জায় অবনত করে রাখে, আমাদের প্রজন্মকে উপহাস করে এই বলে যে দেশভাগ দ্যাখে নাই, দাঙ্গা দেখে নাই, মন্বন্তর দেখে নাই! ছুঁড়ে ফেলে দেয় ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ যাত্রাকে আগুনের কোলে, উত্তর আধুনিকদের সাথে কোন রকম বাদানুবাদে টেবিল গরম না করেই। যেমন নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার সুযোগ না পেয়েই তিনি লিখে ফেলেন দলিতের ভাষ্য যেখানে রাম জননী কৌশল্যা হয়ে ওঠেন এদেশের অন্ত্যজ জাতের এক রাণী, শ্রী রাম হয়ে ওঠেন বাগদি সন্তান তেমনি আবার কোমল গান্ধার তুলনামূলক নিকট কালের এক পর্যায় থেকে কিছু টুকরো শট সোজাসুজি আমাদের দিকে ছুঁড়ে মারে।
নকশিকাঁথা (১৭) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৩ নভেম্বর ২০২১ | ১০৪০ বার পঠিত
মাউন্ট বাউতে ভাল আছিস তাহলে? অ্যাবসিন্থ হাতে নিয়ে গুছিয়ে বসে জিজ্ঞেস করল ডিওয়েন।
সেসব কতা বাদে হবে। আগে তোর কথা ক’ তো দেকি। শিকাগোর কতা। শুনেচি ওধারে নাকি সাদা আর কালোর মদ্দে কোন ফারাক নেই কো।
বলতে গিয়ে একবার থমকাল ডিওয়েন। নেই আবার আছেও। সেরকম না হলে আমি আবার ফিরে এলাম কেন। তবে হ্যাঁ, সেগ্রিগেশন নেই সেটা ঠিক। স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে মুচকি হাসল সে। আমি যখন ট্রেনে করে যাচ্ছিলাম, ট্রেন যেই ইলিনয় ঢুকেছিল, আমি কি করেছিলাম বল তো একবার?
কি?
সিধা ঢুকে গেলাম সাদাদের কামরায়। একটা অদ্ভুত কথা কি জানিস, আমাদের এই দক্ষিণের শহরে থেকে থেকে আমরা ভাবি – যা কিছু সাদাদের, সব বুঝি ভাল। ওদের বাগানওলা বাড়ি, জামা কাপড় ধোপদুরস্ত, মেয়েরা হাঁটছে মাটির দু’ ইঞ্চি উপর দিয়ে – ওদের দিকে তাকালে পর্যন্ত গায়ের চামড়া খুলে নেবে। আর আমাদের নিগ্রোদের সব নোংরা, ভাঙাচোরা। অথচ ওই কামরায় ঢুকে কি দেখেছিলাম বল তো? কামরার মেঝেতে যত কাগজ, খেয়ে ফেলা উচ্ছিষ্ট, কি নেই! ঠিক আমাদের নিগ্রোদের কামরার মতই গন্ধ। সাদা মেয়েরাও বসেছিল সেই কামরায়, ওই নোংরার মধ্যেই। পা পুরোদস্তুর মাটিতে। They also piss and shit like us.
চাষার ভোজন দর্শন – ২০শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৮ নভেম্বর ২০২১ | ২৪৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
প্রচুর প্রচুর রেস্টুরান্ট পাবেন লিসবনে, যারা এই ফাদু মিউজিকের সাথে ডিনার অফার করে। তবে কিনা, সব ট্যুরিস্টিক জায়গার মতই, লিসবনেও ফাদু মিউজিক নিয়ে ব্যবসা চালু হয়ে গেছে পুরোদস্তুর। খুব বেশি ট্যুরিস্টের ভিড় হলে যা হয় – অনেক স্ক্যাম টাইপের আছে। মানে ফাদু মিউজিকের নামে আলতু ফালতু গান গেয়ে এবং একদম ফালতু খাবার দিয়ে প্রচুর চার্জ করবে। .... আমার মতে, ভালো জায়গাতে টার্গেট করাই ভালো – খরচ হবে ঠিক আছে, কিন্তু অথেন্টিক জিনিস পাবেন, ঠকার চান্স কম। আর সস্তায় বাজিমাত করতে গেলে সেই তেমন অভিজ্ঞতা হবে, যা আমার একবার হয়েছিল অন্য পাবলিকের অ্যারেঞ্জ করা ডিনার উইথ বেলি ড্যান্সিং-এ গিয়ে। পাশের ছেলে সেই নাচ দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে, বেলি ড্যান্সিং-এ কি বেলি নড়বে?” আমি বললাম, “তেমনই তো কথা!”। সে ছেলে হতাশ হয়ে বলল, “অনেকক্ষণ তো নাচ হয়ে গেল, কিন্তু বেলি তো দূরের কথা, শরীরের কোন অঙ্গ নড়ছে সেটাই বুঝতে পারলাম না!”
হতে হতেও হলনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ০৯ নভেম্বর ২০২১ | ৩৪৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভাল ক্যামেরা হাতে নিয়ে “গ্রাম দেখাব” বলে শুট করতে গ্রামে চলে গেলে গ্রাম হয়তো ভালই দেখা যায়, কিন্তু সিনেমা তো ঠিক ফোটোগ্রাফির প্রদর্শনী নয়। নায়ককে "যাও বাবা, চোঙা ফুঁকে পাড়ার লোককে চাট্টি ভালোভালো কথা শুনিয়ে এস" বলে উপন্যাসের মাঠে খেলতে নামিয়ে দিলে যেমন ভালো সাহিত্য হয়না, তেমনই সিনেমা বা সিরিজ ভাল হতে গেলে ড্রোনে চড়ে ফোটোগ্রাফিক গ্রামদর্শনের চেয়ে অধিক কিছু প্রয়োজন। বস্তুত এ সিরিজে ড্রোনের ব্যবহার এত বেশি, যে, পরিচালককে নির্দ্বিধায় ড্রোনাচার্য আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দৃশ্যশ্রাব্যের কুরুক্ষেত্রে, এমনকি "ভালো খেলিয়াও পরাস্ত" হতে গেলেও সঙ্গে কিছু কুশলী অস্ত্রচালনাও প্রয়োজন। ন্যূনতম যেটুকু দরকার, তা হল টান-টান, নির্মেদ চিত্রনাট্য। পরিচালনা এবং সম্পাদনার ক্ষেত্রে একাধারে দরকার মমত্ব এবং কঠোর ও নির্মম কুশলতা।
গৌরি বিলের বৃত্তান্ত : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১২ নভেম্বর ২০২১ | ৩৭০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
দুর্গাপূজার আগে আগে মিস্ত্রী আনা হতো ধান রাখার কড়োই তৈরি করার জন্য।
তাদের পাণ্ডা ছিল শীতল কাকা।
তারা এসে অনেকদিন থাকতো, খেতো, আর কড়োই বুনতো। এই কাজটা সবাই পারে না। একটা কড়োই বুনতে অনেকদিন সময় লাগতো। মড়াই বোনা বরং অনেক সহজ। মড়াইটা খড় পাকিয়ে বিচালি তৈরি করে বুনতে হতো, আর কড়োই বাঁশের বাতা দিয়ে। মড়াই নিয়মমতো ছোট-বড় করা যেতো। কড়োই একবার তৈরি হয়ে গেলে আর কিচ্ছুটি করা যেত না ।
-- " বুঝলা দাদুভাই, ষাট মণ, আশি মণ, নানা মাপের কড়োই হইতো। যতো বড় পরিবার, যতো সম্পন্ন গিরস্থি -- তত বড় কড়োই। "
প্রথমে মাটিতে বাতা পুঁতে পুঁতে গোল করে পানের ডাবরের মতো একটা ফ্রেম বানানো হতো। তারপর তারমধ্যে আরো সরু সরু বাতা দিয়ে দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে কড়োই বোনা হতো। ঝুরি, চুপড়ি, ধামা বানানোর মতোই একটা পদ্ধতি। কড়োইয়ের ফ্রেম এতো বড় তাই দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া যেতো না। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি হলে, দড়ি দিয়ে বেঁধে পাঁচিল টপকে অনেক কষ্ট করে ভিতরে নিয়ে যেতে হতো। অনেক লোকও লাগতো তার জন্যে। এইসব কঠিন কঠিন কাজ করার সময় তারা মুখে নানা আওয়াজ করতো। গান করতো।
শীতলকাকা যখন কাঠের কাজ করতে আসতো, ঠাকুমারা চুপ করে তার কাজ দেখতেন। জল থেকে কাঠ বা তালগাছের কাঁড়ি তুলে এনে সেগুলো ‘বাইশ’ দিয়ে কি সুন্দর মসৃণ করে ছুলে ছুলে দরজা জানলার ফ্রেম বানিয়ে ফেলতো। যন্ত্রগুলোর নামও শেখাতো শীতলকাকা। বাটালি, বাইশ, করাত, ছেনি, হাতুরি আরো অনেককিছু থাকতো তার ব্যাগে।
-- "একটাই প্রশ্ন শীতলকাকা প্রত্যেকবার আমাগো জিগাইতো। “আচ্ছা কওতো, একটা ব্যাগে একশোটা যন্ত্র আছে, তা থেকে ‘বাইশ’টা তুইলা নিলে কটা থাকব ?”
বাইশ বিয়োগ কইরাই উত্তর দিতাম। কাকা ঘাড় নাড়াইয়া কইতো, “উহুঁ হয় নাই , হয় নাই। ভালো করে ভাবো।” আমরাও চিৎকার কইরা কইতাম, “নিশ্চয়ই হইসে, তুমি ভুল কইতাসো।”
সে বলতো, “না রে বোকা নিরানব্বইটা হইব। একটা যন্ত্রের নামই তো ‘বাইশ’।”
প্রত্যেকবার এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হতেই হতো। অন্যেরা ঠিক বললেও, লানছু ঠাকুমা প্রতিবার গল্পটা শোনার জন্য, ভুল উত্তর দিতেন।
কাকা ছিলেন তার নামের মতোই শান্ত শীতল।
নকশিকাঁথা (১৮) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২০ নভেম্বর ২০২১ | ১২৫১ বার পঠিত
তোর হিন্দু ফকিরের কতা ক বরন’, ওদের চার্চে গেচিলি বুজি? সে কি আমাদের ফাদার ইমানুয়েলের মত?
চার্চ না রে, ওই উৎসবে দেশ বিদেশের কত লোক এসেছিল ধর্মের কথা বলতে। চিন, জাপান, ইউরোপ। তেমনি এসেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া থেকে, ওরা হিন্দু। ইমারত গড়া হয়ে গেছে। আমার তখন কাজ জুটেছিল সাফসুতরো রাখার দলে। কাতারে কাতারে লোক আসছে তো। খাচ্ছে-দাচ্ছে মজা লুটছে। সবদিক তকতকে রাখতে হবে। আমি সারাদিন ঝাড়ুপোঁছা নিয়ে ঘুরে বেড়াই। আমার সেদিন কাজ জুটেছিল যেখানে, সেখানেই হচ্ছিল সমস্ত দেশের এক ধর্মসভা। ওই সারাদিন কচকচি আর কি। আমার ওতে কি কাজ। তবু ভাল লাগছিল শুধু সাদারা নয়, কালো, বাদামী, হলুদ সব রঙের লোকেরা কথা বলছে আর সাদারা সেসব কথা শুনছে। কিন্তু কি যে ছাতার মাথা বলছে আমি কি ছাই বুঝতাম কিছু, নিজের মনে সভাঘরের পাশ ঘেঁষে ঝাড়ু দিচ্ছি। এমন সময় এলো সেই হিন্দু ফকির।
চাষার ভোজন দর্শন – ২১শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৫ নভেম্বর ২০২১ | ২১৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আপেল পাই জিনিসটার সাথে যদি আগে পরিচিত না থাকেন, এবং আমস্টারডামে গিয়ে প্রথমবার ট্রাই করেন, তাহলে হয়তো আপনার মনে এটা হালকা ভাবে ভেসে উঠতে পারে, যে – এটা কি আর এমন ব্যাপার, যার জন্য এত নামডাক? খুব বেশি কারিকুরি তো দেখতে পাচ্ছি না এই আপেল পাই-এ! এই ভাবনাটা মনের মধ্যে এলেই নিজেকে একটু ক্যালিব্রেট করে নেবেন – ভেবে নিন আপনাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করছে প্যারামাউন্ট-এর সরবত, নকুড়ের সন্দেশ বা আমিনিয়ার বিরিয়ানি নিয়ে! এইসব খাদ্য এমন সুউচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, যে পার্থিব তর্ক করে কিছু হবে না – যার হয়, তার হয় টাইপের কেস।
নোটবন্দীর সাতকাহন: পাঁচবছর পর : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ১৬ নভেম্বর ২০২১ | ২২১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
উনি যা করেন দেশের ভালর জন্যেই করেন। বেশ সাহসী এবং আউট অফ দ্য বক্স ভাবনা চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু একটু সময় দেবেন তো! আমার গিন্নি আমার পেনশনের টাকার থেকে কিছু সরিয়ে ওঁর শাড়ির ভাঁজে রাখেন, সব ৫০০ ও ১০০০ টাকায়। আমি টের পেয়েও টের না পাওয়ার ভান করি; সেগুলোর কী হবে?
ব্যাঙ্কে চাকরি করেছি। যোগ দেবার একমাসের মধ্যে, মানে জানুয়ারি ১৯৭৮ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ৫০০, ১০০০, ৫০০০ ও ১০০০০ টাকার নোট ব্যান করেছিল, কিন্তু সেগুলো বাজার থেকে তুলে নেওয়ার আগে সময় দিয়েছিল যাতে পাবলিকের অসুবিধে না হয়। এরকম রাত্তিরে মাত্র ৪ ঘন্টার সময় নয়, এ তো একেবারে ‘উঠল বাই, কটক যাই’ কেস!
ব্যাপারটা বোঝার জন্য বিভিন্ন চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী মোদীজি, বিত্তমন্ত্রী অরুণ জেটলী ও বিত্ত সচিব শক্তিকান্ত দাসের বক্তব্য মন দিয়ে শুনে যা বুঝলাম, তা’হল এই:
পড়তে থাকুন - নোটবন্দীর পর ৫ বছর..
পায়ের তলায় সর্ষে (এবং কোভিড) - পুয়ের্তো রিকো : পর্ব - ১ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১৩ নভেম্বর ২০২১ | ২৪৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
সেই ছোট থেকেই একটা রেটরিকাল প্রশ্ন শুনে আসছি - ন্যাড়া বেলতলায় যায় কবার? এসক্যাম্ব্রিয়ন সমুদ্রতটে পৌঁছে প্রশ্নটা মর্মে এসে বিঁধলো। বিশাল সমুদ্রতট, সাদা বালি দিয়ে ঢাকা। সমুদ্র যত নয়নাভিরাম, ততই ভীতিপ্রদ। জায়গায় জায়গায় বেজায় ঢেউ, দুয়েকজন সার্ফিং করছেও দেখা গেল। তার ওপরে দেখলাম বিস্তর লোক, প্রায় কার্নিভ্যালের মত আবহাওয়া। দিনটা শুক্র বা শনিবার নয়, সম্ভবত বুধবার। এত লোকের কি কোন কাজ নেই, কি জ্বালা ! মনটা দমে গেল, মানসচক্ষে দেখতে পেলাম আমায় খাবি খাওয়া অবস্থায় জল থেকে তুলে নিয়ে আসা হচ্ছে, তীরের লোকেরা হেসে খুন। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত দেখলাম স্নরকেলিং এর বাকি সদস্যদের।
পনেরোর নামতা : প্রজ্ঞা চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো : কুমুদির জন্য (ক) | ১৪ নভেম্বর ২০২১ | ৩২৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
এ কি! এটা আবার কার ঘর! তার বেড়াল এঞ্জেলের বদলে মোটা, কালো, মস্ত একটা ল্যাব্রাডর কী করছে? ওরে বাবা!! কামড়ে দেবে না তো! আর ওর সুন্দর ফুল ফুল আঁকা ঘরটা? ওটা তো পুরোটাই গ্রে হয়ে গেছে! মা বাবার ঘরে যাবে বলে যেই না দরজাটা খুলেছে, অমনি ঊর্মি সোজা রান্নাঘরে! রান্নাঘরের দরজাটা খুলে দ্যাখে, রাস্তা!!আর একটা পোস্টারের ওপর কী যেন হাবিজাবি লেখা আছে। একটু তলার দিকে ইংলিশে লেখা আছে, “প্যারিস – ওয়ান কিলোমিটার ইস্ট”। আর তার তলায় লেখা, “লোরেইন – ওয়ান কিলোমিটার ওয়েস্ট।“
বান্ধবী : সুবর্ণরেখা দেবনাথ
বুলবুলভাজা | গপ্পো : কুমুদির জন্য (খ) | ২৮ নভেম্বর ২০২১ | ৩০৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
পাড়ার বাসস্টপ পেরিয়ে একটু গিয়েই মেট্রো স্টেশনটা, প্ল্যাটফর্ম এর পাশের দোকান থেকে প্রতিদিন এক কাপ চা না খেলে দিন শুরু হয় না, ট্রেনে চেপে বসলাম, আমার পাশে একটা মেয়ে বসলো দুই স্টপ পর, প্রতি দিন ৩ ঘন্টা ট্রেনে বসতে ভালো লাগে না, লোক জন কথাও বলে না। মেয়েটার চুল ছোট করে ছাঁটা, মেটে লাল রঙের। মুখ দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তারপর হঠাৎ, আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
"কিছু জিজ্ঞেস করবেন? এতক্ষণ ধরে কারো চোখে কারোর তাকিয়ে থাকা একটু ইমপোলাইট, তাই না?"
ম্যাজিক : তিস্তা রায় চৌধুরী
বুলবুলভাজা | গপ্পো : কুমুদির জন্য (ক) | ১৪ নভেম্বর ২০২১ | ২৩৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মিনি কিছুদিন ধরেই দেখছিলো যে স্কুলের প্রীতি দিদিমণি কিরকম একটা চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু এটা শুধু মিনির চিন্তার মধ্যে একটা। ওর বন্ধু বৃওমি বম্বে চলে যাচ্ছে। ওর দিদি, হিয়া, কেমন একটা করছে, কথা বলে না, ভালো করে খায় না, মনে হয় না ভালো ঘুম হয়।
মিনি গোয়ায় থাকতো, সমুদ্রের ঠিক পাশে। ওর মা আর দিদির সঙ্গে। বাবা নাকি মাসে দুই দিন বাড়ি থাকে। মিনি সাঁতার কাটতে এত ভালোবাসে যে ওর স্কুলের ইউনিফর্মের নিচে একটা সুইম স্যুট পড়ে থাকে, স্কুল শেষ হলেই জলে নামবে।
চার বিচ্ছুর কান্ড : শরণ্যা সিনহা
বুলবুলভাজা | গপ্পো : কুমুদির জন্য (ক) | ১৪ নভেম্বর ২০২১ | ২৫০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
এক ছিল শান্ত , নিরিবিলি পাড়া। সেই পাড়াতে একটা বাড়িতে থাকতাে একটি পরিবার। পরিবারে ছিল দাদু , দিদা, বাবা, মা আর দুই বিচ্ছু ছেলে মেয়ে – টগর আর রবি। বিছুদুটোর খেলার সাথী ছিল একটা কুকুর টম আর একটা বেড়াল মিনি। ওরা সারাদিন টম আর মিনির সাথে খেলে বেড়াত। একদিন ওরা ঠিক করল টম আর মিনিকে ঘােরাতে নিয়ে যাবে। বড়রা বারবার ওদের মানা করল। দাদু বলল, “তােরা ওদের সামলাতে পারবি না।” মা বলল , “রাস্তার কুকুরেরা ওদের তাড়া করবে।” কিন্তু ওরা শুনলে তাে!
নোটবন্দীর উদ্দেশ্য ও বিধেয়: ফিরে দেখা : রৌহিন ব্যানার্জী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অর্থনীতি | ১৬ নভেম্বর ২০২১ | ৩০৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
নোটবন্দীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল, দেশজুড়ে তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াই বা কী ছিল, এসবই এখন ভারতবাসী মাত্রেই তো বটেই, পৃথিবীর প্রায় সকলেরই মোটামুটি জানা। তবু হয়তো আলোচনার কারণে সে সব চর্বিত চর্বণ দু’য়েকবার উঠে আসবে। এটিএমের সামনে সেইসব সুদীর্ঘ লাইন, লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু, নগদ টাকার হাহাকার, ছোট ব্যবসাদারদের আর্তনাদ, আরও অসংখ্য গল্প এখন এদেশের লোকগাথা হয়ে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু আজ আমরা মূলতঃ দেখব, পাঁচ বছর পর, নোটবন্দী আমাদের কী দিল না দিল, সেই ব্যালান্স শিটের হিসেব।
বাংলার নবাবি কেল্লা ও কেল্লাবাসীর কিসসা - ৩ : ফারুক আব্দুল্লাহ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৮ নভেম্বর ২০২১ | ২৭৭৯ বার পঠিত
বড়ে কোঠির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সেই শুভ দিন এল ১৮২৯ সালের ২৯শে আগস্ট। সেদিন কেল্লার ভেতরে বহু ইংরেজ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। নবাব হুমায়ুন জা স্বয়ং সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে, একটি সোনার ইট গেঁথে, প্রাসাদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে নবাব নাজিম নিজে প্রাসাদের ভিতের ভিতরে নামলেও, সেখান থেকে উঠতে পারেননি – কারণ ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করে নবাব নাকি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। মাটির নীচে, অত গভীরে হয়তো অক্সিজেন কম ছিল। যাই হোক, অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর ভৃত্যরা উপরে তুলে নিয়ে এসে শুশ্রূষা করতেই নবাবের জ্ঞান ফিরে আসে। এই ঘটনাটি সে সময়ে বেশ শোরগোল ফেলেছিল।
নকশিকাঁথা (১৯) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৭ নভেম্বর ২০২১ | ১২০৪ বার পঠিত
সন্ন্যাসী এক পা এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন। যেন কি অপরিসীম শক্তি তার শরীরে প্রবেশ করল। নিজেকে গুটিয়ে রেখো না। তোমার গায়ের যে কালো রঙের চামড়াটা, সেটা ঠিক আমার পরনের কমলা রঙের পোশাকের মত। আবরণ মাত্র। আসল লোকটা ভিতরে আছে – সেখানে আমাদের সবার যিনি ঈশ্বর, তিনি কোন ফারাক রাখেননি ব্রাদার। সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল আমি মানুষ। পড়ে থাকা ঝাড়ুটা তুলে হাতে ধরিয়ে দিলেন। তুমি যে কাজই কর না কেন, সব কাজের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন। অন্য সব কোট-প্যান্ট পরা লোকের মতই, তোমারও আমার সামনে এসে কথা বলার সমান অধিকার।
ডিওয়েনের সেদিন মনে হয়েছিল, যেন শুধু তার জন্যে একটা মন্ত্র উচ্চারণ করলেন সন্ন্যাসী। উনি চলে যাচ্ছিলেন, কি মনে করে আবার ফেরত এলেন। স্মিত হেসে নিজের মাথার কমলা রঙের কাপড়টা খুলে তার হাতে দিলেন, এটা তোমার কাছে রাখো ভাই।
পরিবার - হিংসা - ভালোবাসা: “মেইড” : মৌপিয়া মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৬ নভেম্বর ২০২১ | ২৪৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
মাঝরাতে শিশু কন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে যখন একটু মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয় দরকার, যখন গার্হস্থ্য হিংসার ফলে বাড়ি ছেড়েছে প্রমানিত হলে রাষ্ট্রের অনেক পরিষেবা পাওয়া সহজ হয়ে যায়- পাওয়া যায় উপার্জনের রাস্তা , মাথা গোঁজার জায়গা এবং পেট ভরানোর খাবার-তখনও মেয়েটি সমানে বলতে থাকে যে, সে কিন্তু গার্হস্থ্য হিংসার শিকার নয়, তার মেয়ের বাবা তাকে মারেনি, ভয়ানক গাল মন্দ করেনি, পরকীয়ায় লিপ্ত নয় । শুধু সে নেশা করে ফিরে চেঁচিয়ে ওঠে, দরজায় ঘুসি মেরে দরজায় গর্ত করে দেয় আর কিছু বাসন কোসন ছুঁড়ে ফেলে ভাঙে। পরের দিন আবার ঠিক হয়ে যায়। সে আসলে মেয়েকে খুবই ভালবাসে, তাকেও বাসে।
পায়ের তলায় সর্ষে (এবং কোভিড) - পুয়ের্তো রিকো পর্ব - ২ : মিঠুন ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ২৭ নভেম্বর ২০২১ | ২৫০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
তীরে এসে তো আর প্রেস্টিজ ডোবাতে পারিনা, তাই মুখে হিন্দি শেখা ডাকাবুকো অভিনেতার মত হাঁ হাঁ কিঁউ নেহি টাইপের ভাব করে ভেসে পড়তে হলো। এই অঞ্চলটা প্রায় একইরকম তবে বৈচিত্র্য আরো বেশি। মিনিট কুড়ি ধরে সেখানেও কুস্তি করে তারপর একসময় মুক্তি পেলাম। বীরের মত জল থেকে উঠে এলাম, মুখের ভাবটা আরো ঘন্টা দুই জলে থাকতে পারলেই ভালো হতো। শুনলাম ৫০-৫৫ বছরের ঐ ভদ্রলোক, যিনি সপরিবারে স্নরকেলিং করতে এসেছেন, তিনি অগাধ সমুদ্রে সাঁতার দিয়ে একটা কচ্ছপের পেছনে ধাওয়া করেছিলেন। তারপর এতদূরে চলে যান (এবং কচ্ছপটা এতই দ্রুতগামী) যে তাঁর ভয় হতে থাকে ফিরতে পারবেন না। অতঃপর বুদ্ধিমানের মত ফিরে এসেছেন। বুঝলাম যে লড়াইটা আদপেই সংস্কৃত আর হিন্দির না, বস্তুত তারা হলো "অলসো র্যান" ক্যাটাগরি। আসল হিরো হলো হলিউড, সেখানে সবই সম্ভব। কচ্ছপটা জোর বেঁচে গেছে।
চতুর্দশ অশ্বারোহী -- প্রথম পাঠ : চয়ন সমাদ্দার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ২৮ নভেম্বর ২০২১ | ২০৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আসলে, মেধা-যুক্তি-বিতর্কের সঙ্গে কায়েমি স্বার্থ কোনওদিনই পেরে ওঠে না। তখন, সব কালে, একটি পথই অনুসৃত হয়। চরিত্রহনন আর কুৎসা রটনা।
একেবারে, এক জিনিস ঘটেছিল খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের সঙ্গে। মূলতঃ লুক্রেশিয়াসের রচনা থেকে তাঁর দর্শন রেনেসাঁসের সময় ইওরোপ জানতে পারে। এবং পরম শক্তিশালী, জ্ঞানবিপণির চাবিকাঠির রক্ষক চার্চ, তাঁর দর্শন - যার সঙ্গে যাবজ্ জীবং সুখং জীবেৎ - এর আশ্চর্য মিল - কে অসংযত বেলেল্লাপনার সমার্থক বলে দেগে দেয়। ইংরিজিতে এপিকিউরিয়ান বলতে লাগামছাড়া ইহসুখবাদী (হেডনিস্ট) এক মানুষকে বোঝানো হয় আজও।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৬) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৬২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
প্রাণকৃষ্ণ দত্তের কলিকাতার ইতিবৃত্ত বইতে পড়লাম, কলকাতার বহু প্রাচীন পরিবারে এখনও সতীর সিঁদুর পুজো করা হয়। তার অর্থ, আমার মামার বাড়ির পরিবার, বইয়ে বর্ণিত তেমনই একটি পরিবার। জেনে-ইস্তক আমার শরীরের শিরা উপশিরা কাঁপছে। চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য – বইতে যেমন পড়েছি, সালঙ্কৃতা, মাথায় সিঁদুর, পায়ে আলতা, আলুলায়িত কেশ, খালি পা, বধূকে পথ দিয়ে ধরে নিয়ে চলেছে নাপিতানীরা। সিদ্ধি জাতীয় কিছু খাইয়ে চেতনা কিছুটা বিস্রস্ত করে দেওয়া হয়েছে। পথে মাঝেমাঝেই লোকেরা এসে সতীর সিঁদুর নিয়ে যাচ্ছে। চিতার ওপরে মৃত স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে চিতায় বসেছেন বধূ, ডালপালা দিয়ে ঢাকা দেওয়া হল। অগ্নিসংযোগ করা হল, লোক ভেঙে পড়েছে, চারিদিকে ঢাক-ঢোল বাজছে, জয়ধ্বনি উঠেছে – লেলিহান আগুনের শিখায় জ্বলে যাচ্ছে বাংলার উজ্জ্বল ইতিহাস, চৈতন্যের ভক্তিবাদ, সন্ন্যাসীদের শিবজ্ঞানে জীবসেবা – কান মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। ছি ছি ছি! আর আমি ভাবতে পারছি না। ছয় প্রজন্ম আগে, কে মা তুমি প্রাণ দিয়েছ? তোমার মৃত্যু নয়, জীবন জানতে চাই আমি। তুমি কোন বাড়ির মেয়ে, কি তোমার নাম? কোনো সূত্র তো নেই।
নকশিকাঁথা (২০) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৮৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
চকচক করে উঠেছিল আমিনার চোখ, আশা আর আনন্দে চোখের কোলে টলটল করছিল দুটো মুক্তোদানা। ডান হাতে খামচে ধরেছিল মনিরুদ্দির পেটি। একটা খপর এনে দাও আমায়। আজ থে তুমি আমার ভাইজান হলে, আলেফের খপর তোমাকে আনতেই হবে ফের।
কি কুক্ষণে মনিরুদ্দি সেদিন ব্যাপারি বুদ্ধি খেলিয়ে ভাইজান হবার সুবাদে কম পয়সায় মাল খরিদ করেছিল। তখন কি জানত ওয়াহিদ বক্স কোনো খবর আনতে পারবে না। মোদ্দা কথা হল, ওয়াহিদ নিজে তো যায়নি, এরকম বছর বছর লোক যায়। তার মধ্যে থাকবে কোনো এক আলেফ। কিন্তু যদি দশজনা যায়, ফেরে মুরুব্বি গোছের দু’জন। ক’মাস বাদে তারা আবার সঙ্গীসাথী জুটিয়ে পেটি নিয়ে সফরে রওয়ানা হয়ে যায়। আর সবার যাওয়ার জায়গা – সে-ও কি এক? বুঝিয়েছিল ওয়াহিদ বক্স। কেউ যায় লন্ডন, জোহানেসবার্গ, আবার এক দল যাবে নিউ ইয়র্ক, নিউ অরলিন, ভ্যাঙ্কুভার – এমনই হরেক বন্দর। কে আলেফ আলি, সে কোন দিকে গেছে, কে জানবে তার ঠিকানা?
আমাদের স্ক্রিনশট সভ্যতা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বলবই | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ৩৪১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
... এই লাইনে এ লেখার সমালোচনা হওয়া খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। হয়নি, সেটাই এই লেখার উপজীব্য। হয়নি, কারণ, একটা বড় অংশের লোক, যাঁরা হইচই করছেন, তাঁরা উপন্যাস এবং গল্প, কোনোটাই পড়েননি। কী পড়েছেন? না, ফেসবুক আর আনন্দবাজারের চিঠি। কনিষ্কর অভিযোগ, শ্রীজাতর উত্তর। হয় প্রোফাইলে গিয়ে পড়েছেন, কিংবা তাও নয়, স্ক্রিনশট পেয়েছেন, হাতের গোড়ায়, এবং চোখ বুলিয়ে উদ্ধার করেছেন। এরকমও লোকজন গর্ব করে বলছেন, যে, দু’পক্ষের বক্তব্যই পড়লাম, অমুকেরটা আমার বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। অতএব অমুক চোর (অথবা নয়)। এ যেন, “জানলার বাইরে কি বৃষ্টি পড়ছে?” – এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলছেন, “গুগল আর ইয়াহু দু’জনেরই বক্তব্য পড়লাম। আমার জানলার বাইরে বৃষ্টি পড়ছে কিনা, এ ব্যাপারে ইয়াহুর বক্তব্যই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হল”।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৮) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৫৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
কুমোরটুলিতে দুটো বড় পুজো। সেখান থেকে রাস্তা পেরিয়ে মদনমোহনের বাড়ি। ও’ বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠে, বিশাল ঠাকুর-দালান পেরিয়ে, অপরূপ মদনমোহন দর্শন করতাম আমরা চারজন – বাবা, মা, আমি, বোন। তখন ঘুণাক্ষরেও জানতাম না – ইনি বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের মদনমোহন, যিনি দলমাদল কামান দেগে শত্রু তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। একদিন ঐ বিষ্ণুপুরে আমি দাঁড়াব, বালুচরী নিয়ে পিএইচডি করার জন্য। আর মদনমোহনের মন্দিরে দাঁড়িয়ে শুনব, তিনি তো এখানে নেই, বাগবাজারের গোকুল মিত্রের বাড়িতে বাঁধা পড়ে আছেন। দু’কুড়ি বয়সে মন্দির-চত্বরে এ কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য হলেও মাথা দুলে গিয়েছিল আমার। বালিকা-বেলায়, অবোধ বয়সে দেখেছিলাম তোমায়, বড় সুন্দর। তুমিই কি নিয়ে এলে আমায় এখানে গবেষণার জন্য!
চাষার ভোজন দর্শন – ২৪শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৪৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আমিও সেদিন তাই করলাম। পাশ দিয়ে ওয়েটার যাচ্ছিল, তাকে বললাম, “আচ্ছা ওমলেট পাব কোথায়”? সে বলল ওমলেট স্টেশনে চলে যান! ওমলেটের যে আবার স্টেশন হয়, তা কে জানত! তো যাই হোক, যেন বেমানান না লাগে – এমনভাবে দুলকি চালে ওমলেট স্টেশন খুঁজতে বেরুলাম। সেই প্রকাণ্ড জায়গা পাক দিয়ে, প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় দেখতে পেলাম, এক শেফ এক গাদা ডাঁই করে রাখা ডিমের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বুঝতে পারলাম এই সেই মোক্ষ স্থান! গিয়ে চাইলাম ওমলেট – ব্যস, প্রশ্নবাণে গেলাম ফেঁসে! প্রায় ৫ মিনিটের ইন্টারভিউ দিয়ে, ১০ মিনিট বাদে ওমলেট নিয়ে টেবিলে ফিরলাম।
মাঝ সমুদ্র যাত্রা ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : ঘুমক্কড় | ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৮৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
প্রথমবার অফশোর সারভাইভ্যাল ট্রেনিং করতে যাচ্ছি – আমাকে ঠিকানা দিয়ে দেওয়া হল ট্রেনিং সেন্টারের – ম্যাপ দেখে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। শেষে গিয়ে পোঁছলাম – এখানে আমাদের কোম্পানির হাজারো কিসিমের ট্রেনিং হয় – জঙ্গলের মধ্যে একটা নদীর পাশে। এই ট্রেনিং নিয়েই আলাদা করে লেখা যায় – তবে আজকের লেখা প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি অফশোর সারভাইভ্যাল ট্রেনিং এক সপ্তাহের হয়। থিওরি থেকে শুরু করে প্রচুর প্র্যাক্টিক্যাল – পাশ করলে তবেই সার্টিফিকেট। অনেক কিছু শিখতে হত – আগুন কেমন করে নেভাবেন, ফার্স্ট-এড, এক বোট থেকে অন্য বোটে কি ভাবে দড়ি দিয়ে ঝুলে ট্রান্সফার করবেন নিজেকে, প্ল্যাটফর্মে বিপদ হলে জলে কেমনভাবে ঝাঁপ মারবেন, লাইফ-বোট কি ভাবে অপারেট করবেন – ইত্যাদি। পাঁচ দিনের মধ্যে দুই দিন প্রায় জলেই কাটাতে হত – বিশাল সুইমিং পুলের মত ব্যবস্থা আছে, যদিও গভীরতা সাধারণ সুইমিং পুলের থেকে অনেক বেশি। সেখানে শেখানো হত জলে বেঁচে থাকার পদ্ধতি – লাইফবোট না থাকলে কতক্ষণ জলে ভেসে থাকা যায় গ্রুপ করে ইত্যাদি।
নকশিকাঁথা (২২) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ | ৮৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ঘটনার এমন উল্টো টানে আব্দুল আর দামোদর সমান হতবাক। আব্দুলের জন্য ব্যাপারটা আরও মর্মান্তিক। পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে শুনে এলা ছুটতে ছুটতে হাজির। বাড়ি ভাড়া মার যাওয়ার ভয়ে নয়, আব্দুলের এই বিপদ যে তারও। ক’দিনেই এমন জমে গেছিল দু’জনের। এমন তুখোড় মেয়েটা এই ঘটনায় একদম বোবা হয়ে গেছে, চোখ ছলছল করে দাঁড়িয়ে আছে। জালে ঘেরা গাড়ির বাইরে দাঁড়ানো এলাকে আবদুল সান্ত্বনা দিতে ছাড়েনি, কিন্তু তাতে কি হয়? একবার যদি আব্দুলকে আবার ব্রিটিশ শিপে চড়িয়ে দেয়, এই দেশের কোনো বন্দরে এসে লাগতে লাগতে বছর ঘুরে যাবে। অন্য কোনো দেশেও তো পাঠাতে পারে। সেটা এলাও বোঝে, আব্দুলও জানে। জানলেও মন কি মানে? সেই থেকে এক কথা আব্দুলের মুখে, গোবিন্দদা একটা পথ তো বাতলাও। আমাকে যে বেথেলহেমে ফিরতেই হবে।
সমাজতন্ত্রের নতুন দিশার সন্ধানে কোবাড গান্ধী : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বলবই | ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৬৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, কোনও আন্দোলন অহিংস না সহিংস হবে – এই প্রশ্ন অবান্তর। হিংসা তো সর্বত্র, সর্বব্যাপী; রাষ্ট্র তো সামান্য অজুহাতে নিরীহ, অসহায় নাগরিকদের দমন-পীড়ন করে, গুলি চালায়, হত্যা করে। আসল ব্যাপারটা হল, ‘কীভাবে’ জিততে হবে। তিনি কৃষক আন্দোলনের উদাহরণ উত্থাপন করেন, কীভাবে তাঁরা সম্পূর্ণ অহিংস পন্থায় রাষ্ট্রকে নতজানু হতে বাধ্য করেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম্যুনিস্টরা কোনদিনও এসব নিয়ে ভাবেনি। তারা ভীষণ গোঁড়া, সংকীর্ণমনা, উদ্ভাবনী চিন্তাকে আমল দেয় না; বাস্তবে কোনও নতুন চিন্তাকে নেতৃত্ব বিপজ্জনক মনে করে এবং সেই ব্যক্তিকে দলে টার্গেট করে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। সাংগঠনিক ব্যবস্থা ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’র কথা ধরা যাক। তত্ত্বগতভাবে এর থেকে বেশি গণতান্ত্রিক কিছু হয় না, কিন্তু বাস্তবে নেতা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের খুশি মত যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
অনলাইনে বাজার নাকি বাড়ির রান্না? : দীপঙ্কর দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ | ৩০৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
কার্যত এখন দুয়ারে বাজার। বাড়ি থেকে বেরোলেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভ্যানে সবজি, ফল সবই সারি সারি। দু’পা এদিক ওদিক হাঁটলেই পথের পাশেও ছোটখাটো বাজার – মাছ, মাংস সবই মিলছে। মলে ঢুকলে অজস্র পণ্যের মধ্যেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেলোফেনে মোড়া থার্মোকলের পাত্রে টুকরো করে কাটা সবজি। ছোট পরিবারের উপযোগী শুক্তো রাঁধতে গেলে যে যে আনাজ প্রয়োজন সবই সাজানো রয়েছে তাতে। তবে সে সবজির সতেজতা, কোটার নিপুণতা – এসব যাচাই করার সূক্ষ্ম বিচারবোধসম্পন্ন দক্ষ বাজারু আজ আর কোথায়? গুছিয়ে বাজার বা রসিয়ে রান্না করার সেই মানসিকতা বা অবসর কোথায় আজকের অণু-পরিবারের ব্যস্ত জীবনে? ছেলেমেয়ের পড়াশুনো সামলে কর্তা-গিন্নি নাজেহাল কর্পোরেট যুগের চাকরি বাঁচাতে। আধুনিক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে কবেই বিদায় নিয়েছে শিল-নোড়া। মডিউলার কিচেনে স্থান করে নিয়েছে মিক্সার-গ্রাইন্ডার বা ফুড প্রসেসর। আদা-বাটা, রসুন-বাটা তো পাউচেও হাজির। সর্ষের পাউডার প্যাকেট থেকে বের করে উষ্ণ জলে গুলে নিলে সর্ষেবাটাও রেডি। সাবেকি সিনেমা হলের নস্টালজিক সাদা-কালো ছবির জায়গায় এখনকার মাল্টিপ্লেক্স বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্যে যেমন বিশেষ ধরণের মুভির চল, ঠিক তেমনই খেয়াল করলে দেখা যাবে নোনা-ধরা, হলুদ দেওয়ালের রান্নাঘর থেকে বেরনো সেই সব অতুলনীয় পদগুলির জায়গা নিয়েছে আজকালকার ফিল-গুড ফ্যামিলির টিপটপ মডিউলার কিচেনের উপযোগী হালফিল ক্যুইজিন।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৯) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৪৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
... - ভালো ভাজা হল কিনা, বুঝব কি করে?
- আঁচ বাড়িয়ে প্রথমে নাড়বি, তারপর আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিবি। একটু পরে আবার খুন্তি দিয়ে নিচের আনাজ ওপরে করে দিবি। ভাজা হয়ে এলে দেখবি, একটা সুবাস পাবি। কড়ায় আনাজের পরিমাণ কম মনে হবে। মানে, আয়তন কমে আনাজগুলো জরে যাবে। আনাজ কড়ায় দেবার আগে হলুদ মাখিয়ে নেয় অনেকে। না নিলেও অসুবিধে নেই। হলুদ পরে দেওয়া যাবে। কাঁচা রাঁধুনির হাতে হলুদে পোড়া ধরে যেতে পারে। আর নুনটা প্রথমেই দিবি না। একটু ভাজা হবার পর দিবি। নুন দেবার পর আনাজ থেকে জল বেরিয়ে যায়।
- বাবা! অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয় দেখছি।
- অনেক কিছুর ব্যাপার নয়। ধারণা হয়ে গেলে দেখবি থোড় বড়ি খাড়া। রান্নাও তো বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান। নিয়ম, সূত্র, পরিচ্ছন্নতা, শৈলী, ঘরানা সব মিশে আছে। ...
নকশিকাঁথা (২৩) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৪২৫ বার পঠিত
স্টিলের কালো তোরঙ্গ একটা। এমন নয়, যে তাঁর খোয়া যাওয়া বাক্সের সঙ্গে একেবারেই একরকম দেখতে। আসলে এতদিন জাহাজে যাত্রা করে তিনি এত ক্লান্ত ছিলেন আর এঁরা সকলে উপস্থিত হয়ে তার জিনিসপত্রের জিম্মা নিয়ে নিয়েছিলেন, তাই কালীপ্রসাদ অত খেয়াল করে দেখেননি। নাহলে চেহারায় অনেক অমিল আছে। এটি যেন কতকাল আগের তৈরি, এর শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন আছে।
কালীপ্রসাদের বাক্সটি ছিল নতুন। যখনই বাড়ি থেকে বাইরে পা দিয়েছেন, একটি বস্ত্র সম্বল করে, পদব্রজে ঘুরে বেড়ানো সন্ন্যাসীর আর কি লাগে? এইবার নেহাত এতদূরে যাত্রা, আবার কবে ফিরবেন ঠিক নেই। তাই নিজের সমস্ত অমূল্য গ্রন্থ সঙ্গে নিয়ে আসবার জন্যে তোরঙ্গ কেনা হয়েছিল।
নকশিকাঁথা (২৫) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৮ জানুয়ারি ২০২২ | ১৭৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বারলেস্ক থিয়েটার উত্তেজনায় ফেটে পড়ছিল, থরথর করে কাঁপছিল প্রেক্ষাগৃহ, ছাদের থেকে ঝাড়লন্ঠন এই খুলে পড়ে বুঝি। বাতাসে উড়ছিল মাথার থেকে ছেড়ে দেওয়া টুপি, কারুর গুলি পাকিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ডলারের নোট, সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়া উল্লাস। আক্রাম রুথকে হাওয়ায় ছুঁড়ে দিতেই, সে ডান পায়ের তর্জনীতে ভর করে মঞ্চে অবতরণ করে, তার প্রথাগত ভঙ্গিতে মঞ্চের সামনের ভাগে এসে পা তুলে দিল আকাশপানে, আর একই ঘূর্ণিটানে সবার চোখের দৃষ্টি টেনে নিয়ে ভেসে গেল মঞ্চের পিছনে। নাচের এই শেষ অংশে এসে দর্শককে সেই দুই মুশকো পাহারাদার আর আটকে রাখতে পারে না মোটে।
শরৎকুমারকে পুনরায় নির্মাণ- এক প্রস্থান বিন্দুর খোঁজ
: যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ | ৩২০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
প্রথমেই বলি এ লেখা খুব সামান্য লেখা। তাড়া হুড়োর লেখা। ফেসবুক পোস্টের চেয়ে সামান্য বড় কিন্তু নিবন্ধের চেয়ে অনেক বেশি অগোছাল আর তরল। তবু এই দু-চারদিনে যেটুকু লিখে উঠতে পারলাম। অবিশ্বাস্য ফাঁকা ভাবের ভেতরেও।
পুরোনো একটি ছবিতে দেখছি শরৎকুমার পুরোপুরি কর্পোরেট বেশে। যে সময়ের ছবি, সে সময়ে কবি বললেই মনে আসে ধুতি ও শার্ট, ধুতি ও পাঞ্জাবি, ধুতি ও ফতুয়া। পাজামা পাঞ্জাবি। শরৎ সেখানে বিপ্রতীপ, স্মার্ট, পাশ্চাত্য পোশাকে অনায়াস।
আমরা এও জেনেছি তখন, ততদিনে, যে, শরৎকুমার সওদাগরি আপিসের চাকুরে। অফিসার। তখন বাতাসে ভাসে যে যে পেশার কথা, তথাকথিতও সাহিত্যিক, কবির, তা ছিল মান্য অধ্যাপক বা শিক্ষকের পেশা। সেখানেও তিনি অপ্রতিম, অতুলনীয়।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১০) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ | ২০৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গাঁজা গাছের ডগার কচি পাতাগুলোকেই সিদ্ধি পাতা বলে। সেই পাতা সরবত করার আগে বারবার খুব চটকে চটকে ধুয়ে নিতে হয়। সব কষ বেরিয়ে গেলে পাতা ধোয়া জল একেবারে স্বচ্ছ হয়ে যায়। তখন সেই পাতা বেটে সরবত বানানো হয়। পাতা বাটার সঙ্গে আরও কয়েকটা জিনিস বাটতে হয়, যেমন – গোলমরিচ, চারমগজ আর মৌরি। এই বাটাটা একেবারে চন্দনের মত মিহি করে বাটতে হয়, তারপর ছেঁকে নিতে হয়, যাতে কোনো দানা না থাকে। এখন মিক্সার গ্রাইন্ডারের যুগে মিহি করে বাটা খুব সহজ, তবে যে যুগের কথা বলছি, তখন তো যন্ত্রের ব্যাপার ছিল না। শিলনোড়ায় মেয়েদের হাতের জোরেই এসব কিছু করতে হত। এর সঙ্গে পরিমাণমত দুধ, চিনি আর জল মিশিয়ে পাতলা সরবত বানানো হত। এতে ওষধি গুণ আছে, ঘুম এসে যায়। দশমীতে এই সিদ্ধির সরবত বানানো খুব প্রাচীন প্রথা। কি জানি, আমার মনে হয়, ....
চাষার ভোজন দর্শন – ২৫শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ | ২১১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সে ছেলে দাবি করেছিল, যে তারা নাকি পরিবেশপন্থী, খুব সন্তর্পণে সব কিছু বাছাই করে। খুব ভালো লাগল শুনে – অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু যে ডিশ নামাল সামনে, তাই দেখে আমি সেই ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম – “এই তোমাদের পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা?” বাঁধাকপিগুলোকে বাড়তে দেয়নি পর্যন্ত! কুঁড়ি ছিঁড়ে নিয়ে প্লেটে সাজিয়ে দিয়েছে!
আর সিদ্ধ বাঁধাকপি – সে কেমন খেতে? তা আর নাই বা বললাম! আমাদের কালো জার্সি গরুটা পর্যন্ত শেষ বয়েসে মুখ ঘুরিয়ে নিত এ জিনিস দেখে!
ডিসক্লেমার: অনেকে আবার দাবি করেন, এগুলোকে বাঁধাকপির কুঁড়ি না, ব্রাসেলস্ স্প্রাউট বলে! চাষার ছেলে তো, অত কি আর বুঝি!
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৪৮০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
সম্পূর্ণ ঘটনাচক্রে, একটি অখ্যাত গ্রামে ব্যাঙ্কিং শিক্ষাদানের সুযোগে, আমার যে শুধু পোল্যান্ড-সহ লৌহ-যবনিকার আড়ালে ঢাকা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হল, তা-ই নয়, অ্যালান হার্স্টের মত এক অসাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। সিটি ব্যাঙ্কে যোগ দেবার আগে তিনি আমেরিকার ডেমোক্রাট দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপ এবং আই টি সেল নামক আধুনিক জনসংযোগের তুখোড় মাধ্যম ভোটারদের তখনও অজানা। পার্টির ইস্তাহার, ম্যানিফেস্টো এবং বক্তৃতার ড্রাফট লিখতেন লেখাপড়া জানা ভদ্র মানুষজন। গুজব শুনেছি, উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন নামক এক যুবকের নির্বাচনী ভাষণের খসড়া করেছেন অ্যালান। বত্রিশ বছর বয়েসে ক্লিনটন লিটল রক, আরকানসাসের (মতান্তরে আরকানস’) রাজ্যপালের অফিসে অধিষ্ঠিত হলে, আপন রাজনৈতিক কর্তব্য সমাপ্ত হয়েছে মনে করে অ্যালান ব্যাঙ্কিং-এ এলেন। সিটি ব্যাঙ্কে সিকি-শতাব্দী কর্ম করেন, মুখ্যত উন্নয়নশীল পূর্ব ইউরোপে।
চিলি: গণতন্ত্র ও বামপন্থার সন্ধান চলছে : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৯৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
আমরা জানি ৫৫% ভোট পেয়ে গ্যাব্রিয়েল বোরিক, ছাত্র আন্দোলনের বহু ব্যারিকেড পেরিয়ে, পুলিশি দমনপীড়নের মোকাবিলা করে, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৪৬ লক্ষ ভোট পেয়েছেন যা তাঁর যে কোনও পূর্বসুরিদের চেয়ে বেশি। বোরিক দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি নিও লিব্যারাল অর্থনীতির প্রবল বিরোধী। “চিলি নিও লিব্যারিলজমের জন্মভূমি ছিল, এখানেই সেটার কবর খোঁড়া হবে,” তিনি ডাক দিয়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পেনশন এবং কর সংস্কার করতে তিনি বদ্ধপরিকর। তিনি সামাজিক ন্যায়ের আওয়াজ তুলেছেন। তাঁর সরকারে মহিলা, মূলবাসী এবং এলজিবিটিকিউদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তাঁর দল বামপন্থী; তিনি মার্কসবাদী কিনা, তার কোনও ইঙ্গিত এখন অবধি পাওয়া যায়নি। তিনি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করার পক্ষপাতী।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১১) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৬ জানুয়ারি ২০২২ | ২২০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
.... এই পাতুরি ভাজার সব চেয়ে সুবিধে হল, কোনো সুতো, দড়ি কিচ্ছু লাগবে না। এমনিই সুন্দর মুড়ে থাকবে, কিন্তু মচমচে হবে। পরে আমার এক অধ্যাপিকা বন্ধু একটা খুব দরকারি পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেইমত বাড়িতে ইলিশের পাতুরি করতে গেলে আমি আর বাজারওলাদের পিছনে পড়ি না একটু কলাপাতার জন্য। আমার কর্তামশাইয়ের বাগানের শখ। ফ্ল্যাটের বারান্দায়, জানলায় মাচা বেঁধে শাকপাতি, শসা সব ফলান। তাই চালকুমড়ো, কুমড়ো, লাউ যখন যেমন পাই, টুক করে পাতা কেটে নিয়ে ওতেই পাতুরি বানাই। একেবারে পাতাসমেত খাওয়া যায়। শহরে কলাপাতা পাওয়া ভীষণ মুশকিল। তাই ইলিশ পাতুরির জন্য অন্তত আমার বাড়িতে এখন নো কলাপাতা বিজনেস।
চাষার ভোজন দর্শন – ২৬শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০৬ জানুয়ারি ২০২২ | ২২২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সেদিন আমরা সকাল থেকে আরবিক/মিডল-ইস্টার্ন খেয়ে যাচ্ছিলাম বলে আমাদের হোস্ট বাছল ইতালিয়ান রেস্টুরান্ট। আমাকে আর মুখ খোলার অবকাশই দিল না – কারণ ইতালিয়ান ক্যুজিন আমার সবসময়ই ফেভারিট, অবশ্য যদি ভালো করে বানাতে পারে তবেই! রেস্টুরান্টে গিয়ে দেখা গেল, দুটো অপশন আছে – ভিতরে বসে খাওয়া এবং আউটডোর ডাইনিং। অবশ্যই আউটডোর ডাইনিং বেশি আকর্ষণীয়, বাইরে ১২ ডিগ্রি ঠান্ডা এবং হালকা বাতাস বইছে। এই অবস্থায় আউটডোর ডাইনিং করার কী মানে কে জানে! আমি মৃদুভাবে ভাবপ্রকাশ করলাম, দাদা, বাইরে কি খেতেই হবে? এদিকে আমার হোস্টের সেই রেস্টুরান্ট খুব ভালো লেগেছে আগের বার খেয়ে, তাই এইবারেও অতিথিসৎকার করতে বাইরেই বসা ঠিক হল। আমাকে আশ্বস্ত করা হল এই বলে, যে দেশে প্রচুর গ্যাস – তাই নাকি খেতে বসে ঠান্ডা লাগলে আমার পিছনে গ্যাসবাতি জ্বেলে দেবে! তাহলে আর ঠান্ডা লাগার চান্স নেই।
চাষার ভোজন দর্শন – ২৭শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৩ জানুয়ারি ২০২২ | ২৫৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সেদিনের আগে জানতাম না, যে এই রুটির মত জিনিসটাকে ওরা বলে ‘ইনজেরা’। এটা বেস করেই ওদের নানা খাবার গড়ে উঠেছে – আপনি নিরামিষ, আমিষ, ভাজাভুজি – যা-ই চান, এই রুটির উপর পরিবেশিত হবে। আর আমাদের ভারতীয় ক্যুজিন-এর মত ইথোপিয়ান ক্যুজিনেও ‘কারি’-র ব্যবহার প্রচুর, বেশ মশালাদার খাবার বানায় এরা। আমাদের মত এরাও ব্যবহার করে লঙ্কা, আদা, রসুন, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং জিরা।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১৩) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২০ জানুয়ারি ২০২২ | ২৫৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
ছেলেটি আগামীকাল “ভোর” চলে যাবে গ্রামের বাড়িতে। ওর বাড়িতে নাকি ‘দুর্গো’ পুজো হয়। শুনেছিলাম দুর্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন দুর্গা। তবে এমন সরাসরি দুর্গোপুজো করতে কাউকে দেখিনি। ওর কথাবার্তায় বাংলাটা অন্যরকম। ও ভোরে বেরোয় না, ভোর ভোর বেরোয় না, ‘ভোর’ বেরোয়। কচুরির দোকান থেকে খায় না। কচুরি দোকান, মিষ্টি দোকান, পান দোকান, মুদি দোকান থেকে জিনিস কেনে, ষষ্ঠী বিভক্তির অস্তিত্ব ওর বাংলায় নেই। ল্যাবে আড়ালে সবাই মজা করে। সে অবশ্য, জগাদার কথাও এরকম। ‘চলে গেলাম’ – বোঝাতে বলে, ‘পালিয়ে গেলাম’। চলে যাওয়া আর পালিয়ে যাওয়া আমাদের কাছে আলাদা, ওদের কাছে এক।
নকশিকাঁথা (২৭) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২২ জানুয়ারি ২০২২ | ১৬৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমরা কোনো প্রশ্ন করি না কেন? কেন সব ঘাড় গুঁজে মেনে নিই?
ততদিনে আমরা আর ক্রীতদাস নই, কিন্তু সে কেবল নামেই। মাথা ঝুঁকিয়ে কাজ করে যাওয়ার বাইরে কিছুই শিখিনি। রেভারেন্ড ওয়ালেস তার বক্তিমে থামিয়ে আমার দিকে সোজা চোখে তাকাল। কী বলতে চাইছ হে ছোকরা? আমার হাতে একটা বই ছিল, সেটার দিকে তাকিয়ে বলল, দু’পাতা পড়েই নিজেকে পন্ডিত ভাবছ বুঝি? শুনি তোমার বিদ্যের বহর। কী বলতে চাও?
বললাম তো। যা দেখছি চারদিকে সব কিছুকে প্রশ্ন করতে হবে।
আমরা এখানে ভগবানের কথা বলছি – জেসাস। সেটা কি মাথায় ঢুকেছে খোকা?
তাকেও প্রশ্ন করো।
চু-উ-প! ফেটে পড়েছিল রেভারেন্ড ওয়ালেস। আর একটা কথা না।
আমার তখন রক্ত নবীন, হেঁকে উঠলাম, কেন চুপ করব? সাদাদের ভগবান নিয়ে আমাদের এত আহ্লাদ কিসের?
দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে জমায়েতের দিকে তাকিয়ে রেভারেন্ড ওয়ালেস বলে উঠল, দ্যাখো, এই জন্যেই কি আমরা নিগ্রো বাচ্চাদের পড়তে-লিখতে শেখাচ্ছি?
আমার মাথায় তখন আগুন দপদপ করছে। আমিও সমানে চেঁচিয়ে বললাম, তুমি কিছুই শেখাচ্ছ না, সাদাদের বলে দেওয়া বুলি আওড়াচ্ছ।
নিশি ভোর হল জাগিয়া : সংগ্রামী লাহিড়ী
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ২২ জানুয়ারি ২০২২ | ২১৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
পরের গান মিশ্র পাহাড়িতে একটি দাদরা। 'ছোড় ছোড় বিহারি নারি দেখে সগরি'। দুই ধৈবতকে নিয়ে খেলছেন, পাহাড়ি ধুনে মন উদাস। 'ম্যায় জল যমুনা, ভরন গয়ি বিন্দা, লপট ঝপট সে মে ফোরি গাগরি'। রাধার কলসি ভাঙে, মনও কি ভাঙে? ভাঙন কি একদিনের? একটু একটু করে ভাঙে নদীর পাড়। বিরহ অক্ষয় হবে, প্রিয় ফিরবে না কোনোদিন। তারই প্রস্তুতি চলে যেন, পাহাড়ির আকুল করা সুরে। এটি প্রচলিত কথা ও সুরের দাদরা। আগেও শুনেছে। কিন্তু এমন করে মন হারায়নি। সে নিশ্চিত, বিরজু মহারাজ জাদু জানেন।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১৪) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৭ জানুয়ারি ২০২২ | ২৪৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
বিয়ের চারদিনের দিন এক ঘটনা ঘটল। এখানে বাসি বিয়ে হয় না। চৌথী হয়। ঐদিন রাতে শাড়ির আঁচলে পাঁচটা ফল বেঁধে ঘুমোতে হয়। ভোরে পুকুরে ডুব দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ভোররাতে বর ঘুম থেকে ডেকে বলে, নিচে কলটানার আওয়াজ। মা উঠে পড়েছে। তুমি উঠে পড়। আমার আর হুঁশ নেই। শেষে দরজায় ঠকঠক। নভেম্বরে বালির ঠান্ডা, হু হু করে কাঁপতে কাঁপতে খিল খুললাম। দেখি বাইরে মোটা শাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শাশুড়ি মা। পুকুরে নামা অভ্যেস নেই। এই ঠান্ডায় শাল জড়িয়ে... বলির পাঁঠা হয়ে চললাম। পুকুরের সামনে শাশুড়ি বললেন, গাছের আড়ালে জামা বদলে নাও। বলে আমার পরনের শাড়িটা পুকুরে কেচে মেলে দিলেন। আর বললেন, চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়। কাউকে কিচ্ছু বলার দরকার নেই। আমার ওপরে যা চলেছে তা বৌয়ের ওপর হতে দেব না।
মনে ভাবি, আড়বালিয়ায় যদি এমন হত, জ্যাঠাইমারা বলতেন – একটা দিন মানতে হয়। ওষুধ খেয়ে নেবে। রীতি-রেওয়াজ এক ফুঁয়ে উড়িয়ে আমার প্রাণরক্ষা করলেন ইনি। না হলে হাসপাতালের শয্যা অপেক্ষায় ছিল।
'ফিল্মে ডাক পাইনি তো' – শাঁওলি মিত্রের সাক্ষাৎকার (প্রথম পর্ব) : অনুরাধা কুন্ডা
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ : স্মৃতিকথা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৭৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
জানো, ভাবলাম সিগারেট খেয়ে দেখি। বাবার প্যাকেট থেকেই সিগারেট খেলাম। মা তো বাথরুমের সামনে গিয়ে (বাবা তখন স্নানে) চেঁচাচ্ছেন... দ্যাখো, তোমার মেয়ে কী করছে! বাবা কিছুই বললেন না! তারপর আরো এক কাণ্ড। বহুরূপীতে হিমাংশু কাকা বললেন – তুই সিগারেট খেতে পারিস? আমি বললাম – এ আর এমন কী? পারি তো! তবে আমি ঐ সব চারমিনার-টিনার খাই না, ডানহিল-টিল হলে খাই। হিমাংশুকাকা বললেন – এই নে, খা। ছোটবেলায় একেকটা অদ্ভুত জায়গায় অহংকার থাকে না? যে এটা আমি পারব না? খেলাম। আর বহুরূপী ভীষণ ডিসিপ্লিন্ড জায়গা। সেখানে আমি সিগারেট খাচ্ছি – সবাই ভয়ে কাঁটা। যথারীতি বাবার কানে উঠে গেল। বাবা ডেকে বললেন – তুই সিগারেট খেয়েছিস? খেতে পারিস, সেটা কিছু নয়, তবে কিনা গলাটা খারাপ হয়ে যাবে... অভিনয়টা আর করতে পারবি না। বাবার ঐ ধরণ ছিল।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১৫) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৩৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
তবে জাউ হলে দারুণ আনন্দ হত। ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলতে হবে। শীতের সকালে একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনি, খুব হৈ হৈ হচ্ছে। সবাই খড়ের গাদার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তড়বড়িয়ে খড়ের গাদাটা কাছ থেকে দেখতে গেলাম। দেখি, খড়ের গায়ে অনেক সাদা সাদা ব্যাঙের ছাতা ফুটে আছে, ঠিক যেন খড়ের ফুল। আর মাটির কাছের ছাতাগুলো লালচে। এগুলো দেখে সবাই আনন্দ করছে। এবার আমার সঙ্গে কর্তার যা কথোপকথন হল, তা এইরকম –
- এগুলো কী?
- ছাতু ফুটেছে, খড়-ছাতু।
- মানে? মাশরুম?
- হ্যাঁ, দারুণ খেতে। মাংসের মত। মাকে বলব আজ সকালে জাউ করতে।
- ঝাউ করা কী?
- আরে দূর! ঝাউ নয় জাউ। খেলে বুঝবে।
তুষার যুগ ও আয়লান কুর্দি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৪১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
না, গত পাঁচশ’ বছরে এমন শীত কেউ দেখেনি, তাপমাত্রা এইভাবে কখনো মুখ থুবড়ে পড়েনি। এই তো সেদিন হঠাৎ ধেয়ে আসা তুষার ঝড় আর বরফ এক রাতে মেরে ফেলেছে ২০০০ সুইডিশ সৈন্যকে – যারা রাশিয়ার সীমান্তে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। ভেনিসে বড় বড় খাঁড়ি জমে এমন হয়েছিল, যে মানুষ তাদের ওপর চলতে গিয়ে দেদার আছাড় খাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে ক্ষুধার্ত নেকড়েরা দলবদ্ধভাবে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। পুরো বাল্টিক সাগর জমে পাথর। সমস্ত নদী জমে পাথর, যানবাহনের অভাবে ব্যবসা লাটে উঠেছে। প্রথম প্রথম লন্ডনবাসী মহা ফূর্তিতে জমে যাওয়া টেমসের ওপর স্কেটিং, খানাপিনা ইত্যাদি করছিল। তারপর অবস্থা দাঁড়াল – ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।
'ফিল্মে ডাক পাইনি তো' – শাঁওলি মিত্রের সাক্ষাৎকার (দ্বিতীয় পর্ব) : অনুরাধা কুন্ডা
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ : স্মৃতিকথা | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১০৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
– আর ‘পুতুলখেলা’র প্রয়োজন? ২০০৪ সালে?
– ‘পুতুলখেলা’ প্রথম হয়েছিল ২০০২ সালে। পুংশাসিত সমাজে নারী এবং পুরুষের কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে তো! যেমন, পুরুষকে রোজগার করতেই হবে, তাকে নিজেকে নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত করতেই হবে আর মেয়েকে ইনফিরিওর হতেই হবে, মিষ্টি মিষ্টি হতেই হবে। এগুলি কিন্তু সমাজ-আরোপিত ভূমিকা। যে যা নয়, সেরকম তাকে করতে হচ্ছে, ভান করতে হচ্ছে। এখন এরকম ব্যাপার তো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঘটছে। স্বামী-স্ত্রীর ইউনিট-এর মধ্যে, অর্থাৎ যেটা সমাজের মূল অংশ, সেখানে যদি ভান থেকে যায়, মিথ্যাচার থাকে, আর তার মধ্যে বাচ্চারা বড় হয় – সেই মিথ্যাচার তারাও গ্রহণ করবে, আর সেই মিথ্যাচারের বিষ সমাজে ছড়াবে। সমাজকে সুস্থ করতে হলে অসুখটা সারানো দরকার, সিম্পটম দূর করে তো অসুখ সারানো যাবে না। দরকার হল, নিজেদের নিজেরা ঠিক করা।
আবার ‘ডলস্ হাউস’-এ নোরার বান্ধবী ক্রিস্টিন, এখানে যে কৃষ্ণা – এই চরিত্রটাকে কিন্তু ভর দিয়ে দাঁড় করানো হয়নি। ব্যক্তি হিসেবে রিয়ালাইজেশনের খুব দরকার আছে। একটি নারী তো আগে একজন ব্যক্তি। এই ব্যক্তি মানুষ হিসেবে নারীর বা তার স্বামীর রিয়ালাইজেশনটা খুব দরকার।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১৬) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২০১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
মাঝেমধ্যে দেখতাম, ঐ মেয়ে-বৌরা মশলাপাতি, আটা-ময়দা, চিনি কিছু কিছু নিয়ে যাচ্ছে আড়াল করে। শাশুড়ি মায়ের কানে তুললাম কথাটা। তিনি হাসলেন। বললেন কিছু বাসনও গেছে এভাবে। পুকুরে মাজা হয় তো। মাজার সময়ে ভাসিয়ে বা ডুবিয়ে দেয়। অন্ধকারে তুলে নিয়ে যায়। বললাম, সে কী, তুমি কিছু বল না? তিনি বললেন, সে অনেক কথা। বড় কিছু না হলে সব জিনিস দেখতে নেই। কথাটা শুনলাম, কিন্তু মানতে পারলাম না। কর্তার কানে তুললাম। কর্তা বললেন, খবরদার এসব ব্যাপারে নাক গলিও না। মা যেমন বলছে, তেমনিভাবে চল। আমরা এখানে থাকি না। দু’দিনের অতিথি। আমরা ওদের রাগিয়ে দিয়ে ঝামেলা করে চলে যাব, তারপর সারাবছর কী হবে? যার হাতে রান্নাঘর, তার হাতে জীবন। ওসব মায়ের হাতে ছেড়ে দাও। পরে অবশ্য অনেক দাম দিয়ে বুঝেছি, কেন শাশুড়ি মা বলেছিলেন, সব জিনিস দেখতে নেই।
উপনিবেশ, আর্যতত্ত্ব এবং কেশব সেনের ব্রাহ্মসমাজ (১) : বিশ্বেন্দু নন্দ
বুলবুলভাজা | বিতর্ক | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৮৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
১৮৫৭-র যুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে ম্যাক্সমুলারের রান্না করা ‘ভারতভূমিতে ককেসাসিয় আর্য আগ্রাসন তত্ত্ব’ (এখন থেকে আর্যতত্ত্ব) ঔপনিবেশিক বাজারে সভ্যতা-বিস্তার আর সাম্রাজ্যরক্ষার ককটেল বানিয়ে খাইয়ে দেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে প্রাচীন আর্যতত্ত্বের নবতম রূপকার ম্যাক্সমুলার প্রথমে আর্যকে জাতিবাচক অভিধায় অভিহিত করে যতদূর-সম্ভব ভুল করেছিলেন। কিছু পরে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সংস্কৃত ভাষায় বডিন অধ্যাপনার প্রতিযোগিতায় ছিটকে গিয়ে তিনি পূর্বের নিজ-অবস্থান সংশোধন করে, আর্য শব্দের জাতিবাদিতা কেড়ে, তার নখ-দাঁত বিচ্ছিন্ন করে নিরীহ ভাষাগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিলেন। কিন্তু ততদিনে আর্যতত্ত্ব মোটামুটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি তৈরি এবং তাকে জোরদার করার কাজে সহায়ক হয়েছে। কেশবচন্দ্র শুধু যে ‘বৈজ্ঞানিক’ আর্যতত্ত্ব অবলম্বনে ব্রিটিশদের ভারতবর্ষের ‘বিছড়ে হুয়ে ভাই’ বলবেন না, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে ‘গডসেন্ড, ভগবৎ-ইচ্ছা’ আখ্যায় ভূষিত করে ব্রাহ্ম ভাইবেরাদারদের উপনিবেশ লুঠে ছোটতরফ ভদ্রবিত্তের চাকুরি, দালালি, উমদোরির অংশিদারিত্বও নিশ্চিত করবেন....
নকশিকাঁথা (৩০) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৬০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
দেকো, সিবিল ওয়ার হইচিল এখেনে, তারপর যতেক নিগ্রো ছিল সবাইকে বেবাক আজাদ করে দিল। দিল তো? কিন্তু সাদাদের সেটা কদ্দিন সইবে বল দিকিন? সব তো ফিরিঙ্গিদেরই জাতভাই। যা দেছেল, সব কুটুকুটু করে ফেরত নিতে চায়।
সেটা কীরকম? ফের জুতে দেবে ওদের?
না, তা নয়, কিন্তু নতুন আইন করেছে সরকার, অনেক নিগ্রোদের ভোট থাকবে নাকো।
ভোট? সেইটা কি এস্রাক ভাই? প্রশ্নটা জয়নাল করল, কিন্তু শব্দটা অজানা তাদের সবার।
এই দেশের লোক তা আমাদের মতুন নয়কো, এরা নিজেদের পছন্দমত সরকার বানায়, তাকেই বলে ভোট। মাথা চুলকিয়ে এটুকুই বলতে পারে এস্রাক। যা বলেছিল তার বউ-বেরাদর। নিগ্রোদের আর পছন্দ করতে দেবে না, যা করবে সাদারা।
মনিকা ভিত্তি – আন্তনিওনির মানসকন্যা : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৬৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
মনিকা ভিত্তিকে আন্তনিওনির মানসকন্যা বলার কারণ শুধুমাত্র এই নয় যে ওঁর একক নির্দেশিত চোদ্দ পনেরটি ছবির মধ্যে পাঁচটিতেই মনিকা অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের প্রধানতম ছবি গুলির তালিকায় নিশ্চয়ই সব ছবি পড়বে না। পড়বে ‘অপুত্রয়ী’, পড়বে ‘চারুলতা’, পড়বে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ইত্যাদি। কারণ, এগুলিতেই সত্যজিৎ-বীক্ষার সর্বোত্তম প্রকাশ ও বিকাশ দেখা গেছে। একই ভাবে আন্তনিওনির ক্ষেত্রে নাম করতে হবে তাঁর প্রখ্যাত ট্রিলজি – ‘লাভেন্তুরা’(১৯৬০) , ‘লা-নত্তে’(১৯৬১), ‘লা-এক্লিপ্স’(১৯৬২)-এর, নাম করতে হবে ‘দি রেড ডেসার্ট’(১৯৬৪)-এর। মনিকা ভিত্তিকে ছাড়া এই ছবিগুলোর কথা স্রেফ ভাবা যায় না!
নকশিকাঁথা (৩১) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৫৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
পথেঘাটে মেয়ে মোটে নেই। গঙ্গার ঘাটে দেখেছিল হিন্দুঘরের মেয়েরা জলে ডুব দিয়ে নাইতে নেমেছে। এদিকটায় এসে দুই একটা মেয়ে দেখেছে, তাদের চলনবলন একেবারেই আলাদা। কী টকটকে গায়ের রং, তেমনি অদ্ভুত চুলের রং। চুল কার এমন লাল হয়! আমিনা তাজ্জব বনে যাচ্ছিল! এদের সবারই সাজগোজের ভারি বাহার, ছোট ছোট ফ্রক, বুকের আঁচলটুকু অবধি নেই। পায়ে চামড়ার জুতো, তাতেই বা কত কায়দা। আমিনা জুতো পরা কোনো মেয়ে কোনোদিন দেখেনি। এমন দুই-একজনকে কোনো ফিরিঙ্গির হাতে হাত গলিয়ে হিহি হাহা করতে করতে যেতে দেখল আজ। ওরা মেয়ে, কিন্তু যেন মেয়ে নয় – অন্য জগতের। এদেরই কি ওয়াহিদ বেবুশ্যে বলেছিল? তাদের গ্রামেও বদনাম হওয়া মেয়ে থাকে, কিন্তু তাদের সাজ পোশাকে না আছে রং, চলা ফেরায় না এই ঢং।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১৭) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৪৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
মেজ নন্দাই যখন শ্বশুর বাড়িতে আসতেন, আমাকে বক্সীবাজারে নিয়ে যেতেন। কতরকম যে নোনামাছ বাজারে, তাদের চেহারা, আকৃতি সব কিছু অদ্ভুত। আমি অবাক হয়ে যেতাম। মাছগুলো বেশ স্বাদু, কিন্তু দামে কম। কম তো হবেই, স্থানীয় সমুদ্রের মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। শহরের মানুষ তো খেতে জানে না, তাই দামও ওঠে না। কিন্তু এই মাছগুলো এখানকার মানুষের শরীরে সস্তা প্রোটিনের যোগানদার। আর দীঘা-মোহনায় ইলিশ উঠলে, বাড়িতে ফোন চলে আসে। তখন বর, দেওর, আরো কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে কাকভোরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। কারখানা থেকে থার্মোকলের বাক্স কিনে রেখেছে বেশ কয়েকটা। তার মধ্যে টাটকা ইলিশ ঠেসে বরফ দিয়ে চওড়া সেলোটেপ দিয়ে সিল করে নিয়ে আসে। শহরেও এভাবে ইলিশ নিয়ে আসি আমরা। প্রতিবেশী, নিকটজন ইলিশ উপহার পেলে খুবই খুশি হয়। হাওড়া স্টেশনের পাশে ইলিশের নিলাম হয়। সেখানেও যাওয়া হয় কখনো-সখনো।
সুন্দরবনের বাঘারু : শ্যামল চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৫২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
মনে পড়ে যায়, রবি একদিন বলেছিল গল্পটা। বড় নিকাশি নালা গায়েব, যেটুকু বেঁচে, পরিষ্কার হয় না। একবার জনপদের, এমনকি স্কুলের মাঠের জল কিছুতেই নামে না। পাবলিকের হল্লায় নালা পরিষ্কার করতে লোক লাগাল পঞ্চায়েত। একদিনের কাজ শেষ হয় তিনদিনে। নালা সিল হয়ে ছিল কোটি কোটি প্লাস্টিকের চিকচিকি, ব্যাগ, মোড়ক, গ্লাস আর থার্মোকলের ট্যুরিস্ট বাটি-থালায়।
আটাত্তর, দু’ হাজার, আয়লা, আম্পান, ইয়াস। একের পর এক বন্যা। সন্দেশখালির নালার হাজার মেগাটন প্লাস্টিক তুলে নিয়ে যেতে লরি লেগেছিল গোটা কুড়ি।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (১৮) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২২৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
‘চোদ্দ বছর বয়সে এ সংসারে এসেছি। তারপর চারপাশে কত মেয়ের যে না খেয়ে, মার খেয়ে মৃত্যু দেখলাম তার ইয়ত্তা নেই। যখন যেভাবে পারি, যতটা পারি এদের বাঁচানোর চেষ্টা করি, তবু অনেক লড়াই হেরে যেতে হয়। এইসব মেয়েগুলো যে বাড়ির লোকের কাছে মর্যাদা পায় না, তাদেরই কিছু সুরাহা করার জন্য রান্নাঘর থেকে লুকিয়ে কিছু নিয়ে যায়। সবসময় চাইতে হয়তো মানে লাগে। তাই এদের কিছু বলতে পারি না। আজ দশটাকার জিরেগুঁড়ো নিয়ে যাকে বকব, কাল পরশু হয়তো সে কাঁচা বয়সের কাজল চোখে চিতেয় উঠবে। এমন আগে ঘটেছে, তাই কিছু বলতে পারি না। ওসব সংসারের খরচ হিসেবে ধরে নিই।’ শাশুড়ি-মার কথাগুলি মর্ম ভেদ করে আমার।
নকশিকাঁথা (৩২) : বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৪৫৫ বার পঠিত
এই মত্ত জনতা মেয়েদের মধ্যেও চার্লসকে খুঁজে পেল। কিংবা মেয়ে সেজে চার্লস লুকিয়েছে কিনা, সেটা বুঝতেই যেন তাদের পোশাক খুলে চামড়া মাংস ঘেঁটে তারপর নিকেশ করল। নিউ অরলিন্সের রাস্তায় রক্ত জমাট বাঁধছিল।
আগের কাল আর নেই, যে নিগ্রো মানেই নিরস্ত্র, পড়ে পড়ে মার খাবে। তাদের কাছেও আছে বন্দুক, ছোরা, লাঠি। জায়গায় জায়গায় খণ্ডযুদ্ধ। নিউ অরলিন্স জ্বলছিল।
হই হই করে সাদাদের দল ছুটল ট্রেমে, ওখানে গেলেই পাবে চার্লসকে, কিংবা তাদের জাতভাইদের। একজন পুলিশকে শুইয়ে দিয়েছে কিনা একটা নিগ্রোর বাচ্চা!
উপনিবেশ, আর্যতত্ত্ব এবং কেশব সেনের ব্রাহ্মসমাজ (২) : বিশ্বেন্দু নন্দ
বুলবুলভাজা | বিতর্ক | ১৮ মার্চ ২০২২ | ২৩০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
রামকমল যখন কলকাতার শাসক কেষ্টুবিষ্টুদের সঙ্গে দিনরাত ওঠাবসা করছেন, সেই সময় ১৮৩০-এর অগাস্টের গোড়ার দিকে কলকাতায় পাদ্রি হিলের প্রথম বক্তৃতা। বক্তা একে প্রণম্য ইওরোপীয় পাদ্রি, তায় বক্তৃতার বিষয় রাজার ধর্ম, [কলকাতার] হিন্দু সমাজের পাঁজর পর্যন্ত কেঁপে উঠল। কলকাতার সমাজ কাঁপল ইয়ং বেঙ্গলিদের নতুন খাদ্যাভ্যাসে। রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক, কলিকাতার কথায় লিখছেন,
‘... হিন্দু কলেজের ছেলেরা হেনরী ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং হেয়ার সাহেবের শিক্ষায় প্রকাশ্যভাবে অখাদ্য খাইতে আরম্ভ করিয়াছিল ও হিন্দুধর্মের প্রতি অনাস্থা দেখাইতে লাগিল। মহেশচন্দ্র ঘোষ ও কৃষ্ণ[মোহন] বন্দ্যোপাধ্যায় খৃষ্টান হইল। রামমোহন ব্রাহ্মধর্ম (তখনও ধর্ম হয়নি) প্রচার করিলেন। সমাজে ও কলিকাতার হিন্দুধর্ম গেল গেল রব পড়িয়া গেল। রামকমল সেন হিন্দু কলেজ হইতে উক্ত ডিরোজিওকে ছাড়াইতে গেলেন, কিন্তু উইলসন, হেয়ার ও শ্রীকৃষ্ণ সিংহের (কালীপ্রসন্ন সিংহের পিতামহ) জন্য তাহা পারিলেন না। উক্ত সেনকে মিন্টের ও ব্যাঙ্কের দেওয়ান করিয়া কোম্পানি বশ করিয়া ফেলিল। ডিরোজিও নিজে ইহাদের ধন্যবাদ দিয়া চাকরি ছাড়িয়া দিলেন। ... ডিরোজিওর ছাত্রেরা সকলেই কোম্পানির বড় চাকরীয়া ডিপুটি কলেক্টর হইল’।
সীমানা - ১ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৯ মার্চ ২০২২ | ৪১৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
খবর শুনে মা কাঁদল না, তবে পরের দিন আমাদের বস্তিতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল। পেট পুরে খেল ওই দুজন লোক, তারপর চলে গেল। আমি ততদিনে সেকেণ্ড ক্লাশ, মানে ক্লাশ নাইন-এ উঠেছি। মা আমাকে বলল, আমাকে যুদ্ধে যেতে হবে। আর যেতে হবে মেসপটমা না কী বলে, সেই আরব দেশেই। শুধু আমাকে বলেই ক্ষান্ত হল না মা, বস্তির সবাই জানল পিংলাকে তার মা যুদ্ধে পাঠাবে। আমাদেরই বস্তির মাতব্বর গোছের একজন শুধু মাকে সাবধান করে দিল, এখনই কিছু কোরো না, কেউ যদি বলে দু পয়সা খরচ করলেই সে তোমার ছেলেকে যুদ্ধে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দেবে, বিশ্বাস কোরো না তাকে। আঠের বছর অন্তত বয়েস না হলে যুদ্ধে নেয় না। আর তা ছাড়া সাহেবরা সব দেশের ছেলেদের নেয়, কিন্তু বাঙালিদের নেয় না যুদ্ধে। বাঙালিদের জন্যে শুধু ইশকুল আপিস আর কোর্টের কাজ, সাহেবরা বাঙালির হাতে বন্দুক দেবে না।
দেউচা-পাঁচামিঃ কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্ন : স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২১ মার্চ ২০২২ | ১৮২৬ বার পঠিত
ঘনঘন পট পরিবর্তন হচ্ছে দেউচা-পাঁচামিতে। গত বছর নভেম্বর ডিসেম্বর নাগাদ দু-তিনটি স্থানীয় ভাবে গড়ে ওঠা গণ কমিটির নেতৃত্বে আন্দোলন হচ্ছিল। ইতিমধ্যে, জানুয়ারিতে মূলত দেউচার বাইরে, রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় উপস্থিত থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিও, কিছু দেউচার স্থানীয় নেতৃত্বের সাথে মিলে, বীরভূম জমি, জীবন, জীবিকা ও পরিবেশ বাঁচাও মহাসভা গড়ে তোলে। পাল্টা, ওই সিঙ্গুরের ন্যানো বাঁচাও কমিটির মত-
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২০) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৪ মার্চ ২০২২ | ২৩১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এমনি গোঁজ করে থাকা প্যাঁচা মুখ এই প্রথম নয়, আগেও দেখেছি আমি। অল্পবয়সে একবার পিজি হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি ছিলাম কয়েকদিন। একদিন গভীর রাতে দেখি ওয়ার্ডের সব আলো জ্বলে উঠল। ডাক্তার, নার্স – সব খুব ছোটাছুটি করে বেড রেডি করছেন। তারপর বেনারসী পরা এক সালঙ্কারা মেয়েকে সেখানে শুইয়ে দেওয়া হল। আনতে আনতে মেঝেতে রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছিল। বিশাল ওয়ার্ডের সেই অনন্ত সংখ্যক বেডে পড়ে আছি পেটকাটা মেয়ের দল। কিছুটা নির্বিকার উদাসীনতা, কিছুটা ক্রোধ, কিছুটা উদ্বেগ – সব খেলা করে মেয়েদের মনে। গরীব কিংবা বড়লোক, হিন্দু নাকি মুসলমান, বিয়েওলা বা অনূঢ়া, অল্পবয়সী না পাকাচুলো - সব ধরণের মেয়ে সাক্ষী রইল ঘটনার। চোখের পাতা এক হল না। এরপর সকাল হলে ...
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২১) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ৩১ মার্চ ২০২২ | ১৪৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কখনও মনে পড়ে – সরস্বতী পুজো হচ্ছে, সদর দরজার কাছে বাঁদিকে প্রথম ঘরে ঠাকুর। ঘর জুড়ে অনেক কিছু সাজানো। দূরে ঠাকুরের পাশে কয়েকটা বই রাখা, ওপরেরটা আমার। নীল মলাটের ওপর লাল আর সাদা দিয়ে লেখা। আমার বইটা নিয়ে নিয়েছে সবাই। এত জিনিস টপকে আমি যেতেও পারছি না যে তুলে আনব। মা সমানে বোঝাচ্ছে, যে, ঠাকুরের কাছ থেকে বই তুলে নিতে নেই। কিন্তু আমার ভবি ভোলার নয়। বারবার দরজা দিয়ে বইটা দেখছি, সদর দরজা অবধি দৌড়োচ্ছি আর প্রচণ্ড চেঁচিয়ে কাঁদছি। আচ্ছা, কী বই ছিল ওটা? দেওয়ালে ক্যালেন্ডার, মা কোলে করে ক্যালেন্ডারের সামনে আমায় নিয়ে গিয়ে বলছে, ‘এটা কে? আমি বলছি বিবেকান্দ-নন্দ।’ মা হাসছে, আমি হাততালি দিচ্ছি।
বামেদের প্রাসঙ্গিক হতে গেলে অন্যরকম অনুশীলন দরকার : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৪ এপ্রিল ২০২২ | ২৯১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
গতকাল যখন পার্ক সার্কাসের একটি খাবারের দোকানের সামনে জমায়েত হচ্ছিলেন বেশ কিছু এনআরসি বিরোধী কর্মীরা, তখন পুলিশ এসে বলে ওই স্থানে জমায়েত করা যাবে না। কারণ, ওই জমায়েতের নাকি কোনও অনুমতি নেই। অথচ নির্বাচন কমিশনের থেকে প্রাপ্ত অনুমতিপত্র দেখানো হলেও তাঁরা বলেন, অনুমতিতে বলা নেই যে ঐ স্থানে জমায়েত হয়ে মিছিল শুরু করা যাবে। আর কথা বাড়ালে গ্রেপ্তার করা হবে। কোনও কথা বাড়ানোর সুযোগই দেওয়া হল না, সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হলো প্রসেনজিত বসু, মনজর জমিল, ইমতিয়াজ আলি মোল্লা, অমিতাভ চক্রবর্তী-সহ দশজনকে। ঘটনাচক্রে আমরা কয়েকজন তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে। পুলিশ এসে আমাদের বলল, এইখানে জমায়েত করা যাবে না। আমরা উল্টে বললাম, দু’জন মানুষ কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে কথা বলাও অপরাধ নাকি? এটা কি উত্তরপ্রদেশ? ...
"অরূপ বৃন্দাবন ও অন্যান্য পদ" - পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১০ এপ্রিল ২০২২ | ২৩১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
শব্দখেলায় সোমনাথের পটুত্ব আরও নানা কবিতায় ছাপ রেখে গেছে। ‘মাধব মথুরা মত যাও’ -তে শুধু অনুপ্রাসের চমৎকার ব্যবহারে চমৎকৃত হই না, অবাক দেখি ব্রজবুলির মধ্যে অবলীলায় জায়গা করে নিচ্ছে স্টেশন, গাড়ি, স্টিমার শব্দগুলি। বেখাপ্পা তো নয়ই, বরং অন্য শব্দ বসানো যাবে না এমন অমোঘ। শব্দ বার বার এই পদগুলিতে ব্রহ্ম হয়ে এসেছে, কারণ যে শব্দ, সেইই মাধব!
উচ্চশিক্ষার বামনাবতার: প্রত্যক্ষদর্শীর কলমে : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ | ১২ এপ্রিল ২০২২ | ৯১২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭১
উচ্চশিক্ষায়তনগুলির ঝকঝকে দেওয়াল, চকচকে আসবাব, ছিমছাম পড়ুয়ার দল। ধূলো ঢোকে না - এমন পরীক্ষাগার, মাছি গলে না - এমন পাহারা। খাওয়া ভাল, হাওয়া ভাল, সবচেয়ে ভাল - পরিবেশ। সত্যিই কি সবই পাউরুটি আর ঝোলাগুড়? ছায়া পড়ে না, আলোকোজ্জ্বল করিডরের কোথাও? মেঘ জমে না - সাজানো ক্যাম্পাসের ওপর? নিঃসীম অন্ধকার নেই কোনো ঝলমলে মুখের আড়ালে?
আছে হয়তো - খবরে আসে না। কিল খেয়ে কিল হজম করেন - কখনো ছাত্র, কখনো শিক্ষক। অনুচ্চারিত কোড আছে কোথাও - আর্মি ক্যাম্পসদৃশ। চোখের তলায় পরিশ্রমের কালি দেখা গেলেও, পিঠের বিশাল ডিপ্রেশনের বোঝা অদৃশ্যই থাকে। ঘনঘন নষ্ট হয় একেকটা স্বপ্ন। কদাচিৎ, একটা করে জীবনও শেষ হয়ে যায়।
কোথাও তো দরকার, এই গুনগুন, ফিসফাস গুলোর জায়গা হওয়ার? অ্যাকাডেমিয়ার কণ্ঠস্বর অনেক, বক্তব্যও বিভিন্ন - এ সব কথা মনে রেখেই, শুরু হল গুরুর নতুন বিভাগ,
"উচ্চশিক্ষার আনাচেকানাচে"
ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী - উচ্চশিক্ষার অঙ্গনের যে সব কথা এতদিন জানাতে পারেননি কোথাও - লিখে পাঠান গুরুচণ্ডা৯-তে। নিজের কথা, পাশের কিউবিকলের কথা, পরিবারের লোকের কথা। এমন কাউকে চেনেন - যাঁর আছে এমন অভিজ্ঞতার সঞ্চয়? লিখতে বলুন তাঁদের।
সব লেখাই প্রবন্ধ হতে হবে তার মানে নেই। প্রবন্ধ আসুক, অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি হোক, বিতর্ক জমুক। ফিসফিসগুলো জোরে শুনতে পাওয়া গেলেই হল।
আজকের লেখা - 'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক' একজন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২৩) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৪ এপ্রিল ২০২২ | ১৭০৬ বার পঠিত
প্রত্যেকটা মানুষ, সে তিনি মনীষী হোন আর যেই হোন, তিনি সেই যুগের হাতে বন্দি। হয়তো উনি আজকের যুগে থাকলে, সেযুগে নিজের বলা অনেক কথাই ফেলে দিতেন। আমি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে একটা বই পড়েছিলাম – রমাতোষ সরকারের লেখা। সেখানে উনি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন, কেন দেড় হাজার বছর আগেকার গণনার সূর্যসিদ্ধান্ত না মেনে আধুনিক সরকারি বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মানতে হবে। ঐ বইতে একটা জায়গায় উনি লিখেছেন, যে সূর্য সিদ্ধান্ত রচয়িতা সে যুগের মানুষের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। কারণ পূর্বপ্রচলিত বেদাঙ্গ জ্যোতিষ না মেনে, ঐ বইতে তৎকালীন আরব এবং রোমান গণিত ব্যবহার করা হয়েছিল। কাজেই তিনি আজকে কোনোভাবে এসে পৌঁছলে নিজের আগের গণনা বর্জন করে, আধুনিক বিজ্ঞানটাই নিতেন। আজকে যে ঐ পঞ্জিকার গণনায় ভুল থাকছে, সেটা ঐ গ্রন্থকারের পক্ষে অগৌরবের নয়।
নববর্ষ জিজ্ঞাসা : তপোধীর ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ১৯৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
যেহেতু অস্তিত্ব নিছক একক নয়, সামূহিক – ‘কে আমি’ থেকে পৌঁছে যাই ‘কে আমরা’: এই জিজ্ঞাসায়। পারিবারিক পরিচয়েও নিহিত রয়েছে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরম্পরা, রয়েছে বৌদ্ধিক ঐতিহ্যের আলো-ছায়া, রয়েছে চিৎপ্রকর্ষ অর্জনের দীর্ঘ ইতিহাস। এতে কত অজস্র উচ্চাবচতা, কত নতুন সূচনাবিন্দু। এসব ভাবতে গিয়ে দেখি, জাতিসত্তার বিচিত্র হয়ে ওঠায় ‘আমি’ ও ‘আমরা’-র অভিজ্ঞান অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত। ভাষাই জাতির পরিচায়ক, ধর্ম কখনই নয়।
রেকর্ড নম্বর সহ অকৃতকার্য : সৈকত বন্দোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ৮৩৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪৩
বাঙালির দ্বিতীয় প্রজন্ম ক্রমশ বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। শুধু বিদেশে বা ভিন রাজ্যেই না, খোদ কলকাতা শহরেও। কিন্তু এসব নিয়ে বলতে গেলে বাঙালি নিজেই হাঁ হাঁ করে উঠবে। তারা সর্বভারতীয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক হচ্ছে। আরও কী-কী হচ্ছে, ঈশ্বরই জানেন। সেখানে এসব ছোটো মনের পরিচয় দেওয়াটা ঠিক না।
যদিও, যুক্তি দিয়ে জিনিসটা বোঝা দুষ্কর। বাঙালি যদি দিল্লি কিংবা নিউ-ইয়র্কে গিয়ে হিন্দি কিংবা ইংরিজি ভাষী হয়ে ওঠে, সেটাই যদি দস্তুর হয়, তবে বাংলায় এসে অন্যভাষীদের বঙ্গভাষী হয়ে ওঠারই কথা। আবার অন্যভাষীরা বাংলায় এসে যদি নিজের ভাষা বজায় রাখে, বা রাখতে পারে, অন্যত্র বাঙালিদেরও তেমনই হবার কথা। এর কোনোটাই হয়না। ভারতীয় বাঙালির কাছে এর কোনো ব্যাখ্যাও নেই। সম্ভবত অস্বস্তিকর বলেই। আর সেই জন্য প্রশ্নটা তোলাই ট্যাবু। তুললে কঠিন-কঠিন ইংরিজি গালি বর্ষিত হতে পারে।
সীমানা - ৩ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৬ এপ্রিল ২০২২ | ৪৫৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কাজী উত্তর দেবার আগেই উঠে দাঁড়ান ডঃ শহীদুল্লাহ্, বলেন, আমার এবার যাবার সময় হল। যাবার আগে একটা কথা তোমাকে বলি কাজী। আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এখন তোমার পরিচয় হওয়া দরকার। সুধাকান্তবাবু বলেছেন রবীন্দ্রনাথ নিজেও তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে চান। কবে যে ওঁকে পাওয়া যাবে আমি ঠিক জানি না। শুনেছি, বিদেশ থেকে কয়েকদিন আগে ফিরেছেন। ইদানীং প্রায়ই বিদেশে যাচ্ছেন, কাজেই এর পরের বিদেশ যাত্রার আগেই ধরতে হবে। আমি যোগাযোগ করছি, এক-দেড় মাসের মধ্যেই ধরতে চাই। জোড়াসাঁকোয় নয়, চেষ্টা করব শান্তিনিকেতনে গিয়ে দেখা করতে, সেখানে উনি অনেক খোলামেলা। তুমি আমার সঙ্গে আসবে তো?
সীমানা - ৪ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ৪৩৩০ বার পঠিত
কিছু ঠিকই, কিন্তু সেই কিছুটা কী? খুলেই দেখা যাক, বলতে বলতে বাটিটা তুলে নিয়ে চাপা দেওয়া থালাটা সরিয়ে দেয় নজরুল। এক বাটি আলুর দম, কড়া মশলায় বেশ লালচে দেখাচ্ছে। দে গোরুর গা ধুইয়ে – উচ্ছ্বসিত নজরুলের চিৎকৃত কণ্ঠস্বর শোনা যায়, মাহ্মুদের দোকান থেকে রুটি নিয়ে আয় শৈলজা, রাত্তিরের ডিনারটা জমে যাবে। তারপর মোহিতলালের দিকে ফিরে বলে, স্যার, ক’খানা রুটি আপনার জন্যে?
বৈচিত্র্যময় জগতে পদার্থবিদ্যা অথবা পদার্থবিদ্যায় প্রতিভা-সন্ধানের একটি ‘গোল-গরু’ মডেল : Howard Georgi
বুলবুলভাজা | আলোচনা : উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ | ২০ এপ্রিল ২০২২ | ২৫৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
হয়তো নিজেদের অজ্ঞাতেই, আমরা (পদার্থবিদরা) পদার্থবিদ্যা-র পেশাকে, ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’-এর একটি উদাহরণ হিসেবে দেখি – যে রূপকে সর্বদাই, অনেক লড়াইয়ের পর, সবচেয়ে কেঁদো বাঘটিই জঙ্গলের রাজা হয়ে ওঠে। সেই কারণে, পড়ানোর বা আলাপচারিতার সময়, নিয়োগের সময় এবং সর্বোপরি নিজেদের মাথার মধ্যেই, আমরা পদার্থবিদদের একটি তালিকায় ক্রমানুসারে সাজাই, আর “সর্বোত্তম”-এর সন্ধান করতে থাকি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বোধ, রাশিবদ্ধ এবং অঙ্কের ভাষায় প্রকাশিত না হচ্ছে, আমাদের শান্তি নেই। স্বভাবতই, পদার্থবিদদের নিয়ে চিন্তা করতে বসেও, আমরা অভ্যাসবশত সেই চিন্তাকে ‘গাণিতিক’ মাপজোকে ফেলি। ঠিক তখনই আমাদের বক্তব্য হয়, “যদি আমাদের সাজানো লিস্টে শ্বেতাঙ্গ পুরুষ প্রার্থী ‘ক’, সংখ্যালঘু প্রার্থী ‘খ’-এর উপরে থাকে, তবে আমরা ‘ক’-কে নিতে বাধ্য, আর সেই কারণেই, ‘বৈচিত্র্যে’র জন্যে আমাদের পক্ষে কিস্যুটি করা সম্ভব নয়!”
এর থেকে বড় ভুল কথা আর হয় না!
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২৪) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২১ এপ্রিল ২০২২ | ১৮৩৭ বার পঠিত
ময়দানকে বলা হয়, কলকাতার ফুসফুস। কারণ ফাঁকা জায়গা, গাছগাছালি আছে। পূর্ব কলকাতার জলাভূমিকে বলা হয় কলকাতার কিডনি। কারণ উত্তর কলকাতায় বাগজোলা খাল, মধ্যে কেষ্টপুর খাল আর দক্ষিণ কলকাতার টালি নালা – এই তিনটে প্রবাহ কলকাতার সব ময়লা জল টেনে নিয়ে ঐ জলাভূমিতে ফেলে। জলাভূমির মধ্যে মাছ চাষ হয়, মাছগুলো ঐ ময়লা জলের সঙ্গে ভেসে আসা জৈব পুষ্টিকর পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। অন্য কোনো খাবার দেওয়া হয় না। জলাভূমিগুলোর মাঝখানে আবার সবজি চাষও হয়। মাছ ময়লা খেয়ে ফেলে বলে, ঐ জলাভূমিতে কলকাতার নোংরা জল পরিষ্কার হয়ে যায়। ঐ ভাল জল জলাভূমি থেকে যায় কুল্টি গাঙ বলে একটা নদীতে। সেই নদী আবার মিশেছে মাতলা নদীতে। ঐ নদীপথ ধরে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে কলকাতার ব্যবহৃত জল চলে যায় বঙ্গোপসাগরে। যদি এতবড় শহরের ময়লা জল সরাসরি যেত, তবে সুন্দরবনের অনেক বেশি ক্ষতি হত। মাঝখানে ময়লা টেনে পরিষ্কার করে দেয় বলে ঐ জলাভূমিকে কলকাতার কিডনি বলে।
অন্তর্তদন্তের আঁচ ও বুদ্ধিদীপ্ত হৃদয় : যশোধরা রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ২২৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ভালো লেখা যে পাঠকের চোখে পড়বেই, কখনোই তাকে উপেক্ষা করে চাপা দিয়ে রাখা যাবে না – তার প্রমাণ বহুদিন ধরে নিজের লেখালেখির জগতে নীরবে কাজ করে যাওয়া প্রতিভা, যাঁকে আবিষ্কার করতে আমাদের বাঙালি পাঠকের বেশ দেরি হয়েছে। দেরিতে হলেও, প্রতিভা has arrived – এ কথা তো অনস্বীকার্য। ইতিমধ্যেই গল্প বাদ দিয়েও, আমি তাঁর প্রচুর নন-ফিকশন নিবন্ধ পড়েছি নেট দুনিয়ার এদিকে ওদিকে, কোথাও কোথাও বিষয়ের প্রচণ্ড অভিঘাতে স্তব্ধ হয়েছি। গুরুচণ্ডালির পাতায় তাঁর এই বইয়ের অধিকাংশ নিবন্ধ আগে পড়া ছিল, তথাপি তারা আবার আক্রান্ত করল আমাকে, পাঠক হিসেবে। বৃক্ষহত্যা, জল নষ্ট করা, নদীখনন/ নদী হনন, বে-আইনি খাদানে মাইনিং, নিলামে তোলা কয়লা ব্লক, পরিবেশ দূষণ, আলোক দূষণ, অতিমারী, অতিমারীতে মেয়েদের অবস্থা, অতিমারীর লকডাউন ও তাতে প্রশাসনের ভূমিকা, পরিযায়ী শ্রমিকদের চূড়ান্ত দুরবস্থা। নানা বিষয়ে লিখিত ১৯টি লিখন এখানে এক মলাটে।
দিল্লি ‘দাঙ্গা’ ২.০ ও বুলডোজার গণতন্ত্র : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৭ এপ্রিল ২০২২ | ১৮৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জাহাঙ্গিরপুরী সি-ব্লক যেখানে মূলত ঝামেলা হয়েছে সেখানে প্রধানত বাঙালি মুসলিমদের বাস। এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই চার দশক আগে রুটিরুজির টানে বাংলা ছেড়ে এখানে এসে বসবাস করছেন। এঁরা মূলত ছাঁট এবং অন্যান্য ছোট ব্যবসায় যুক্ত। যেমন আনোয়ার যাঁকে প্রধান অভিযুক্ত বলা হচ্ছে, তাঁর আদিবাড়ি হলদিয়ায়। আরেক অভিযুক্ত শেখ সোহরাবের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণার সাগর অঞ্চলে। দুটি জায়গায় দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের লোক এসে ঘুরে গেছেন। এঁদের সবার বৈধ ডকুমেন্ট আছে। সোহরাব দিল্লি পুরসভার কর্মী, তাঁর বাবাও দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদে কাজ করেছেন। তবুও তাঁদের ভারতীয়ত্ব সন্দেহের মুখে; তাঁরা নাকি বাংলাদেশি; তাঁদের নথিপত্র সবই নাকি জাল, ভোটে ফায়দা নেওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের তৈরি করে দেওয়া। আজকের ভারতে মুসলিমরা নিত্য নতুন সংকটে জর্জরিত হচ্ছেন; আর যে মুসলিমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছেন তাঁদের সংকট তো আরও গভীর, তাঁদের তৎক্ষণাৎ বহিরাগত, বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে যাঁরা এই দেশে বাস করছেন তাঁদেরও বিদেশী তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে! শুধু দিল্লি নয়, সারা ভারতে আজকে এটাই ট্রেন্ড! এক ধর্মগুরু তো নিদান দিয়েই দিয়েছেন যে, বাঙালি হলেই সন্দেহের!
কাদামাটির হাফলাইফ : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ১৬৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
তা এই নাটক নিয়ে লেগে গেল গণ্ডগোল। তখন সিপিএমের পরিচালন সমিতি পরাজিত। কংগ্রেস ও আর এস এস জোট জিতেছে। স্কুল চালান কার্যত আর এস এস নেতা জগজ্জ্যোতি মিত্র। তিনি ১৯৮৩তেই পুরস্কার হিসেবে বাছাই করতেন-- 'তাজমহল কি হিন্দু মন্দির' গোছের বই। বাংলায় প্রথম হলে এই বই বাঁধা পুরস্কার।
তা জগজ্জ্যোতি বাবু বললেন এই নাটক রাষ্ট্রবিরোধী। করা যাবে না। সৌম্য সৌমেন ওরা কংগ্রেসি পরিবারের ছেলে। ওঁরা জেদ ধরল, এই নাটকই হবে। নাটকটা খারাপ কিনা বলুন। সৌমেন সৌম্য দুজনের বাবাই পরিচালন সমিতির সদস্য। তাঁরা পড়লেন ফাঁপড়ে। ছেলে বড় না কমিটি? শেষে প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু চক্রবর্তী আসরে নামলেন। বললেন, নাটক হবে। তবে কিছু অংশ বাদ দিতে হবে। উনি বললেন, তুই এইগুলো কেটে দে। অমলেন্দুবাবুর বাংলা ক্লাস আমরা দুই পিরিয়ড ধরে করতাম। ছুটি হয়ে গেছে কখন। আমরা উঠছি না। উনিও থামতেন না। আমি বললাম, স্যার, আপনি কেটে দিন।
বললেন, কী সমস্যায় ফেললি।
প্রবাসে আমার বাড়ির ইদ : নীলু ইসলাম
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ০৬ মে ২০২২ | ১৯৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আমিও আমার মায়ের মতো রাত জেগে ইদের আগের দিন রান্না করি। ইদের দিন বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন মিলে সারাদিন খাই দাই আর আড্ডা দিই। টেবিলে সব সাজানো থাকে, পটে চা থাকে। বেশির ভাগ ইদে আমার মেনু হয় নানা রকম বেকিং গুডস, দুধ সেমাই, জর্দা সেমাই, কখনো কখনো চালের জর্দা, রসমালাই, সরের মিষ্টি, বা নানা রকম নাড়ু, চটপটি, কাবাব বা আলুর চপ। পোলাও, রোস্ট, বিফ কারি, বেগুনবাহার, মাটন চাপ, ইত্যাদি। আর মায়ের ট্রাডিশন ধরে রাখতে সব রকম ডাল দিয়ে খিচুড়ি।
ইদের স্মৃতি : সারিকা খাতুন
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ০৬ মে ২০২২ | ১৪২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ইদের দিন সকালে মা গরম পানি করে কাকিমা'র ঘরের ছাদে সাবান শ্যাম্পু মাখিয়ে গা ধোয়াতো, তারপর নতুন জামা পরিয়ে, চুলে ক্লিপ বেড়ি (হেয়ার ব্যান্ড) লাগিয়ে, পন্ডস বডি লোশন গায়ে ও মুখে পন্ডস ক্রিম লাগিয়ে, লিপস্টিক কাজল টিপ দিয়ে সাজিয়ে এমনকি জুতো পরিয়ে দিতো, তারপর দুই ভাইকে পাঞ্জাবি পায়জামা পরিয়ে আব্বার সঙ্গে আমাদের পাঠাতো ইদগাহে।
তখনো মেয়েরা তৈরি হইনি, মেয়েদের ইদ গাহে যেতে নেই, মেয়েরা ছেলেরা একসঙ্গে তৈরি হয়ে কী হবে? আগে ছেলেরা স্নান করে তৈরি হয়ে চলে যাক। তারপর ঝট করে স্নান করে রান্না ঘরে রকমারি রান্না করতে বসে পড়ার মত মেয়ে হইনি।
বৃন্ত কুসুম : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ০৬ মে ২০২২ | ১২৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
- কী হয়েছে? তোমরা কোনটা করতে পারনি?
- সব পেরেছি মেডাম, কিচ্ছু ছাড়িনি।
- তাহলে? ভাইভা কেমন হয়েছে? কে ভাইভা ধরেছেন, কোনো ম্যাডাম নাকি স্যার?
- একজন স্যার, একজন মেডাম – দু’জন মিলে ভাগ করে।
- যিনি ভাইভা ধরছিলেন, তিনি ঐ কলেজের ইন্টারনাল নাকি এক্সটার্নাল, সেটা জেনেছ?
- সেটা জানি না মেডাম, বুঝতে পারিনি।
- কী জিজ্ঞেস করেছিলেন? তোমরা কি ভালো করে উত্তর দিতে পারনি? মুখগুলো কেমন ভারভার ঠেকছে।
(এবার সমস্বরে)
- উত্তর কী দেব মেডাম? দু’জনের কেউ তো ভূগোলের প্রশ্ন তেমন করলেনই না।
- সে কী! তাহলে কী ভাইভা হল?
চাষবাস অধিবাস : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৭ মে ২০২২ | ২১৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
যেখানে যেখানে নক্সালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়েছিল সেখানে বর্গা নথিভূক্তির কাজ আরম্ভ হয় আগে। গোপীবল্লভপুরে ডেবরায়, উত্তরবঙ্গে...সর্বত্র। জমির চাষী কে ? খুঁজে বের কর, নাম নথিভুক্ত করে তাদের চাষের অধিকার পোক্ত কর। অপারেশন বর্গা। আমিও সান্ধ্য মিটিং করেছি গোপীবল্লভপুরের গ্রামে। সারাদিন চাষীর তাদের কাজে ব্যস্ত। তাদের তখন সময় কোথায় ? সন্ধ্যায় ইস্কুলবাড়ি কিংবা অমনি কোথায়, এমন কি গাছতলায় হেজাক জ্বেলে মিটিং। ভয় নেই। তুমি কোন দাগের চাষী বলো, জমির রেকর্ড হাজির। তার নাম লিখে নিয়ে পরদিন জমিতে গিয়ে দাগ দেখিয়ে দিতে বললে তবে সে সাহস পেল। দুয়ারে সরকারকে যেতেই হয়। না গেলে অপারেশন বর্গা সফল হত না। কিন্তু ইতিমধ্যে বাবুরা, আমরা বুঝে গেছি কী করতে হবে। দলবদল করলাম নিঃশব্দে। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় এসে বর্গাদারকে নিবৃত্ত করলাম নথিভুক্ত হতে। অনেক বছর বাদে, একুশ শতকের আরম্ভে মেমারি পেরিয়ে এক গঞ্জে গিয়েছিলাম পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। অমুক সামন্তবাবুর বদান্যে সেই অনুষ্ঠান। সারাদিন সব হয়ে গেলে তাঁর বাড়িতে মধ্যাহ্নের আহার শেষ বেলায়। তিনিও কানুনগো ছিলেন। পরে প্রমোশনে উপরে উঠেছিলেন অনেক। তাঁর পুত্র এম এ পাশ। মোটর সাইকেলে চেপে চাষবাস দেখে। বর্গাদার নেই জমিতে।
হারা মোরগ : হামিরউদ্দিন মিদ্যা
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৭ মে ২০২২ | ২০১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
মাঠে মাঠে সরষের ফুল এসেচে। উঁচু,নিচু টিলা জমি। সব ইখন হলুদ। ইখন তো ফুলেরই পরব। সরু লিকলিকে আলপথ ধরে হেঁটে হেঁটে মেলা দিখতে যাচ্ছে বুড়ো,বুড়ি,ছেলে-ছুকরা। কেউ কেউ লাল মোরাম রাস্তা ধরে ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে সাইকেল চালিয়ে ছুটচে। বনের পাশেই ডাঙা টিলা মাঠ,উখানেই মেলা বসেছে। মনোহারি জিনিসের দুকান,বাচ্চাদের বাঁশি,ডুগডুগি খেলনা। কত রকমের খাবার দাবার,তেলে ভাঁজা,ঝিলাপি। কুথাও বা গাছের তলায় মাটির হাঁড়ি-কুড়ি বিচছে। এক জায়গায় সাইকেল,পিক-আপ ভ্যান দাঁড় করানো সারি সারি। ইকটো সাঁওতাল বুড়হা ঘুরে ঘুরে আড়বাঁশি বিচছে। লিজেই সুর তুলচে মন গেলে। লাল ধুলো উড়ছে আকাশে। সেই ধুলো মেখেই মেয়ে মরদ হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। আশপাশের সব গিরাম থিকেই ভিড় জমিয়েছে। শুধু কি সাঁওতাল? বাবুরাও মজা লুটতে আইচে।
হংসেশ্বরী : যাজ্ঞসেনী গুপ্ত কৃষ্ণা
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৮ মে ২০২২ | ২০৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
একটু বেলা পড়ার দিকে পদ্মপাতায় খাবার সময় ও জোরে জোরে নাক টানত, আর বলত, আঃ! কী সুন্দর গন্ধ গো বাবা! যেন ভোজ খাচ্ছি। অথচ গাছ কীই বা রাঁধতো তার পাতায়? আওতার গাছ, যতটুকু রোদ-জল রুক্ষ মাটি থেকে টেনে নিতে পারে, তা বইতো নয়? সেই তো শাক ডাঁটা, বিড়ির ডাল। বড্ড জোর চুনোমাছের চটচটে করে ঝাল। কোথাও জল ছিঁচে, নাহলে জাল টেনে ধরা। বিক্কিরি করার পর বাকিটা রান্না। বড্ড ভালো রান্না করতো। পদ্মপাতায় খেলে মনে হবেই ভোজবাড়িতে খাচ্ছো। ও আঙুল চেটে চেটে খেতো। পাত আঙুলের ডগায় পরিষ্কার হয়ে যেত। ওর খাওয়া দেখে ওরা দুজনে কী খুশিই না হতো! হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকত ওর দিকে। তারপর তিনজনে একসঙ্গে হেসে উঠত।
বড় সুন্দর ছিলো সেসব দিন।
কাদামাটির হাফলাইফ : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৪ মে ২০২২ | ২০৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আমাদের গ্রামে হিন্দু মুসলমান সবার প্রধান আনন্দ ছিল মাঘ মাসের ওলাইচণ্ডী পূজার মেলায়।
দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা আছে-- আছে ইদ বকরিদ মহরম--- কিন্তু মাঘ মাসের মেলাই আসল মিলবার জায়গা। সেটা হলেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ। আত্মীয় স্বজন কুটুম আসার এই তো আসল সময়।
দুর্গাপূজার সময় অনেকের ঘরেই অভাব। ইদ বকরিদ ধান ঝাড়ার সময় কবার আর হয়?
পৌষ মাসে ধান কাটা শেষ। মাঘ মাসের ১৯ তারিখ মেলা। হাতে পয়সাও ম্যালা।
ফলে আনন্দের অর্থই আলাদা। কাঠের নাগরদোলা, পাঁপড় চপ বেগুনি পেঁয়াজি ঘুগনি, জিভে গজা পান্তুয়া লেডিকেনির দোকান বসে মেলায়। দুর্গাপূজা বা ইদে তো সেসব অনুপস্থিত।
বাঁশি কেনা, ঘড়ি কেনা, টিকটক কেনা, লাট্টু কেনা, রঙিন চশমা-- সেতো ইদ বকরিদ দুর্গাপূজায় সবার সম্ভব নয়।
সাম্প্রদায়িক হিংসার দুই বছর: কেমন আছো দিল্লী? : মোহিত রণদীপ শুভ প্রতিম
বুলবুলভাজা | আলোচনা : NRC/CAA | ১০ মে ২০২২ | ২৫৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খবর আসছিল প্রতিবাদের। উত্তর-পূর্ব দিল্লীর জাফরাবাদ, চাঁদবাগ, খাজুরি খাস, পুরোনো মুস্তাফাবাদ, সেলামপুর, তুর্কমান গেট, করডমপুরি, সুন্দর নগরী, লালবাগ, উত্তর-পশ্চিম দিল্লীর ইন্দরলোক, দক্ষিণ দিল্লীর নিজামুদ্দিন, হৌজরানী, উত্তর দিল্লীর সদর বাজার। সারা দেশ দেখছিল জামা মসজিদ চত্বর, ইন্ডিয়া গেট- শ্লোগানে, গানে উত্তাল! উত্তাল সারাদেশ! তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। কলকাতাতেও পার্ক-সার্কাস, রাজাবাজারে আমরা দেখেছি শাহিনবাগের মতোই সংখ্যালঘু নারীসমাজের নেতৃত্বে নানাবিধ প্রতিকূলতাকে জয় করে দীর্ঘমেয়াদি অসামান্য প্রতিবাদী জমায়েত।
আমরা কি রোজ চক্রাকারে ঘুরতেই থাকবো, কৃত্রিম সমস্যার মধ্যে? : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১১ মে ২০২২ | ১৭৪৫ বার পঠিত
যাঁদের সংবিধান রক্ষা করার দায়িত্ব, তাঁরা যদি তাঁদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বা বলেন মেয়েরা হিজাব পরে আসতে পারবে না, তখন যাঁরা ঘৃণার রাজনীতির ফেরি করে চলেছেন তাঁদের সুবিধাই হয়। কোনও মানুষ কী খাচ্ছেন, বা কী পরছেন, তা দেখার বদলে রাজনৈতিক নেতারা যদি একটু হলেও কত মানুষ খেতে পাচ্ছেন না, বা কত মানুষের পরিধানের জন্য একটির বেশি দুটি জামা নেই, তা নিয়ে চিন্তিত হতেন, তা হলে কি ভালো হতো না?
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২৭) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১২ মে ২০২২ | ১৭৩৯ বার পঠিত
– ব্রাহ্ম বৌরা বুঝি সিঁদুর পরে না জেঠিমা?
– সঠিক জানি না, তবে না পরাই উচিত। বইতে পড়েছি, ১৮৫০ নাগাদ যে ব্রাহ্ম বিবাহ আইন হয়, তাতে আন্তর্বর্ণ বিবাহ ও বিধবাবিবাহ সমর্থন, বাল্যবিবাহ রদ, স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক দ্বিতীয় বিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ এবং বিবাহবিচ্ছেদ স্বীকৃত ছিল। বিবাহের রীতি হিসেবে বলা যায়, সাবালক পাত্র-পাত্রীরা ব্রাহ্ম সমাজ মন্দিরে উপস্থিত হয়ে স্ব-স্ব ধর্মে বহাল থেকে ব্রাহ্ম রীতিতে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করতে পারত। কিন্তু সাবালক হবার বয়স ধরা হয়েছিল চোদ্দো বছর। ব্রাহ্ম বিয়েতে সংস্কৃতের পরিবর্তে বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ হয়৷ শেষে বর-কনে, অভিভাবক, উপস্থিত অতিথিরা প্রার্থনা সভায় অংশ নেন এবং ব্রাহ্ম সংগীত গেয়ে বর-কনের মঙ্গল কামনা করেন। যৌতুক দেওয়া নেওয়া ও বিরাট লোক খাওয়ানো, বিলাসিতা, আড়ম্বর এসব চলে না।
অ্যাবনর্ম্যাল : কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৩ মে ২০২২ | ৩৩৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
‘মা দেখো বুকাই আবার বেডকভার চাপা দিয়েছে’ চেঁচিয়ে, ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় না থেকে চাদর কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করত। পুকাই চিরকালই অস্বস্তিজনকরকম নর্ম্যাল। পরিবেশপরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজপোশাকে বিশ্বাসী। শীতে বেশি, গরমে কম, সমুদ্রস্নানে আরও কম। কালই দেখলাম, কার্লসবাড বিচে সপরিবারে উল্লসিত স্নানের ছবি আপলোড করেছে, বিকিনিপরিহিত।
না, ফেসবুকে নিজের নামে নেই আমি। ফেক থেকে দেখেছি।
উত্তরকালের অপেক্ষায় : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৩ মে ২০২২ | ২০৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শৈশবের ক্ষণস্থায়ী চিত্রণ, দুরন্ত বালকের দৌরাত্ম্য, মা-বাবার স্নেহ, গ্রামের শীতের সকাল, পল-অনুপল কৈশোরের স্মৃতি, প্রথম প্রেমের ব্যর্থতা, অসংখ্য ভুল সিদ্ধান্তের আবছায়া জাল হাতের মুঠোর আঙুলের ফাঁক দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে যায়। এরপর আসে যুদ্ধের স্মৃতি, অসিতোপলের নির্দেশে সে দিতার কাছ থেকে একটি ঘড়ি নিয়ে এসেছিল, সেই ঘড়িটি চিতাদের বিরুদ্ধে সমতলের মানুষকে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এর সঙ্গে একটা বেদনাবোধ জড়িয়ে আছে। রাতের ধাবমান ট্রেনের কাচের জানালায় বৃষ্টির জল ঝরে পড়ে। জানালায় মুখ লাগিয়ে পড়তে চায় সে না-থামা স্টেশনের ঝাপসা নামফলক, স্মৃতির স্টেশন থাকে থামতে দেয় না। ট্রেন থামানোর সুযোগ থাকলে সে নেমে সঙ্কেত বদলে দিত, এই লাইনে তার ভ্রমণ করার কথা নয়। এক অসীম ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
ডাবল নিরলস : তাতিন বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | সমোস্কিতি | ১৬ মে ২০২২ | ৩১৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৩
কিন্তু, আমরা দেখি আকাদেমির সদস্যদের মধ্যে ভাষাবিদ কেউই নেই। সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, কয়েকজন আমলা বা প্রকাশক এবং সাহিত্যিকদের মধ্যেও মাত্র একজন এইমুহূর্তে সরাসরি অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ, ভাষাচর্চার লোক প্রায় কেউই নেই। সাহিত্যিকরা ভাষাকে দিশা দেখাতে পারেন, কিন্তু ভাষার সংস্কার বিশারদদের কাজ। এবং বাংলাভাষা যেহেতু বহুভাষার থেকে পুষ্টিগ্রহণ করে, বিবিধ ভাষার এক্সপার্টদের আকাদেমির প্রথমসারির নিয়ামকের ভূমিকায় থাকার দরকার তা নেই। তাহলে কারা আছেন? যাঁরা আছেন, তাঁরা সকলেই প্রায় সাহিত্যিক, তদুপরি তাঁরা সকলেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। আকাদেমির চেয়ারম্যান বাংলার বিশিষ্ট নাট্যকার, কিন্তু তিনি তো মন্ত্রীও। তিনি নিরলসভাবে রাজনীতিটিও করেন। আকাদেমির আরেকজন প্রভাবশালী সদস্যের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, তিনি কবি। ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান, উৎপলকুমার বসু তখনও সাহিত্য আকাদেমি পান নি।
বাংলা স্ল্যাং-একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৫ মে ২০২২ | ২৯৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
অজিত রায় দেখছেন কীভাবে ভদ্দরলোকের ভাষা আসলে ক্ষমতার ভাষা, এবং তারাই স্ল্যাংকে ছোটলোকের ভাষা বলে মুটেমজুর কুলিকামিন ,চাষি জেলে ও বেশ্যাদের মুখের ভাষাকে অপাংক্তেয় করে দেয়। দাগিয়ে দেয় নিকৃষ্ট, অপকৃষ্ট, ইতরদের ভাষা বা ছোটলোকদের ভাষা বলে। আমরা জানি, পাওলো ফ্রেরি তাঁর ‘পেডাগজি অফ অপ্রেসড্’ এ দেখিয়েছেন কীভাবে অভিজাতকুলের ভাষা আসলে ক্ষমতাকে ধরে রাখার হাতিয়ার হয় এবং বঞ্চিতেরা ভাষা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে, ভুগতে বাধ্য করা হয়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৭৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৯ মে ২০২২ | ১৪৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
পাথুরে জলখাত ধরে নিচে নামছি তো নামছি। গোটা জায়গাটাই নুড়ি পাথরের ভরা। শেষে আমরা এসে পৌঁছলাম একটা শুষ্ক, পাথুরে উপত্যকায়। আমাদের চারদিকে হাজার ফুট উঁচু সব পাহাড়ের রাজত্ব। যে গিরিখাতটা ধরে আমরা চলছি, সেটা চারদিকে পাক খেতে খেতে নামছে, ধীরে ধীরে আরও চওড়া হচ্ছে আর শেষে এটা ছড়ানো সমভূমিতে পরিণত হয়েছে, তার ঢাল পশ্চিমে। রাস্তাটা, খাত ছেড়ে, উত্তরদিকে একটি নিচু গিরীষিরায় গিয়ে পৌঁছেছে। সেখান থেকে একটা পরিত্যক্ত জনবসতি দেখা যায়।
অনেক কথা যাও যে বলি : শ্যামলী আচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ মে ২০২২ | ২০৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এফএম প্রচার তরঙ্গে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য সেই সময়, নয়ের দশকের মাঝামাঝি, ডেকে নেওয়া হল কলকাতা বেতারে ড্রামা অডিশন পাশ করা শিল্পীদের। প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ ধরে নিলেন, যাঁরা আকাশবাণীতে শ্রুতিনাটক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের সঠিক বাংলা উচ্চারণ আর কণ্ঠস্বর নিয়ে কোনও দ্বিধা বা সংশয়ের কারণ নেই। এই প্রসঙ্গে জানাই, রেডিওর নাটক বিভাগে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই জানেন – বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য হয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটক অবলীলায় ছুঁয়ে যেতে হয় এই পরীক্ষায়। বিভিন্ন বাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ শোনার জন্য চোখা কান পেতে থাকেন পরীক্ষকরা। আজও এই পরীক্ষা দুরূহ। এই পরীক্ষা-পারাবার পার হয়েও অবশ্য তারপরে অনেকে আর সেভাবে সুযোগ পান না অভিনয়ের খামতির জন্য, তবে সে প্রসঙ্গ এখানে গৌণ। এখানে মূল উপজীব্য, কণ্ঠস্বর, পরিবেশনা, উপস্থাপনা। .... শ্রোতাকে আকৃষ্ট করার মত বিষয় ভাবতে হবে, কথার মধ্যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার গর্হিত অপরাধ, ইংরেজির ঝোঁকে বাংলা বলা অমার্জনীয়। অনুষ্ঠানের নাম ‘টক শো’। অবশ্যই ‘লাইভ’। তাকে নানান চেহারায় ‘কণ্ঠদান’ করতে এগিয়ে এলেন বাংলা ভাষার দক্ষ ‘কথাশিল্পী’রা। ইংরেজিতে তাঁরা ‘টক শো প্রেজেন্টার’, বাংলায় ‘অনুষ্ঠান উপস্থাপক’। হে পাঠক, লক্ষ্য করুন, ‘আর জে’ বা ‘রেডিও জকি’রা তখনও ঝাঁপিয়ে পড়েনি বাংলা সংস্কৃতিতে।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২৯) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৬ মে ২০২২ | ১৭৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আচ্ছা জেঠিমা, আমরা তিনজন যে মোহনবাগানের মেয়ে হলাম, সেটা কি ধোপে টিকবে?
কেন? টিকবে না কেন?
আমরা যে খুব ইলিশ খাই।
তাতে কী? মোহনবাগানীরাও ইলিশ খায়, ইস্টবেঙ্গলীরাও চিংড়ি খায়। তাতে ভালবাসা কমে না।
লাবণ্যর হাতের একটা রেসিপি করতে পারি, খাবি? কৃষ্ণার কাছে শিখেছি, কাঁচা ইলিশের ঝাল।
মা, রান্নাটা কিন্তু দেখব, কীভাবে কর। কুমুদিনী-লাবণ্য-কৃষ্ণা-শারদা – আর একটা নাম জুড়ে যাবে রঞ্জাবতী। মানুষ থাকবে না, রান্নার ঘরানা চলতে থাকবে।
কাল কাঁচা ইলিশের ঝাল করলে পরশু ডাব চিংড়ি করবে জেঠিমা।
ঠিক হ্যায়, করতেই হবে। আজ ইস্টবেঙ্গলী ইলিশ রান্না হলে কাল তো মোহনবাগানী চিংড়ি রান্না হতেই হবে।
তাহলে আমি ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিচ্ছি, কাল, পরশু বাড়িতে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের নামে ফুটবল – খাদ্য উৎসব হবে, অরগানাইজড বাই আওয়ার টু প্রিন্সেসেস।
নজরুল ও (অ)সামাজিক মন - (১) : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৭ মে ২০২২ | ১৯৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
তিনি লিখছেন, 'মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী / আর হাতে রণতূর্য'। সত্যই তাই । প্রেম প্রকৃতি বিক্ষোভ বিদ্রোহ বিপ্লব এসেছে তাঁর লেখায়। আবার একই সঙ্গে এসেছে বৈপরীত্যমূলকভাবে ঈশ্বরে অনাস্থা ও আস্থা । কেউ বলতে পারেন, ঈশ্বর নয়, ঈশ্বরের নামে করে খাওয়া ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাঁর এই জেহাদ।
'গ্রাম উঠে আসে নাগরিক স্থাপত্য নিয়ে তাঁর লেখায়। খনি অঞ্চলের মানুষ। খনন করেন মানুষের মন, রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, দল—শ্রমিকের উদ্যমে, কৃষকের আবেগে, বুদ্ধিজীবীর পাণ্ডিত্যে, আবহমান বাংলা কবিতার সুরে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৭৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৬ মে ২০২২ | ১০২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গোটা সকালটা ফেরিঘাটে ক্যানোর মালিকদের সঙ্গে ফালতু কথায় নষ্ট হল। অবশেষে বেলা পাঁচটায় আমরা মালাগারাজি নদীর বাম তীরে ইহাতা দ্বীপের সামনে পৌছালাম। কিয়ালার পশ্চিমে, দেড় ঘণ্টা দূরে ইহাতা দ্বীপ। ফেরি পারাপারের জন্য শেষমেষ রফা হল আট গজ কাপড় ও চার ফান্ডো সামি-সামি বা লাল পুঁতি, তখনই সেটা দিয়ে দেওয়া হল। এই ছোট, বেঢপ, টলমলে ক্যানোতে মালপত্র-সহ চারজন নদী পার করতে পারে। যাত্রী আর মালপত্র বোঝাই নৌকাগুলোর মাঝিরা যখন তাদের নৌকা নিয়ে রওনা হল, তখন তাদের অন্যদিকেই থেমে থাকার নির্দেশ দেওয়া হল, আর আমাকে অবাক করে, আরও দাবি জানানো হল। মাঝিরা দেখেছিল, যে এর মধ্যে দু’টি ফান্ডো মাপে খাটো, তাই আরও দুটো ফান্ডো অবশ্যই দিতে হবে, আর নাহলে নদী পারাপারের চুক্তি বাতিল। অগত্যা আরও দুটো ফান্ডো দিতে হল, তবে কিনা প্রভূত প্রতিবাদ, বাকবিতন্ডার পরে – এই দেশের যা নিয়ম।
টবের গাছ নন, জনতার কবি নজরুল : তৌহিদ হোসেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ইতিহাস | ২৭ মে ২০২২ | ২০৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
ব্যাপারটা নিছক ব্যক্তিগত হলে দরকারই ছিল না এত কথার। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে কবিতার নামে কী দেখছি আমরা? স্বকাম-মর্ষকাম কিম্বা ভঙ্গিসর্বস্বতা। একটু অন্যরকম ভাবেন যাঁরা, তাঁদেরও, যোগ থাকলেও আত্মীয়তা নেই জনগণের সাথে। অথচ, সমস্যার কি অন্ত আছে দেশে? কোথায় সেই ক্রোধ ও ফরিয়াদ? কঠিন কঠিন কথায় কীসব নিদান দেন মনীষী কবিরা! আর ক্লীব হলে যা হয়, প্রকৃত প্রেম, নির্মল আনন্দ থেকেও বঞ্চিত আধুনিক কবিকুল। প্রেমের কথা উঠলই যখন – বেশি ফেনিয়ে-গেঁজিয়ে না ভেবে, নরনারীর প্রেমকে যদি স্বাভাবিক চোখে দেখি, গানে-কবিতায় অদ্বিতীয় নজরুল।
সীমানা - ৬ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ মে ২০২২ | ৪১১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সত্যি কথা বলি কাজীদা, আস্তে আস্তে কেমন ভালই লেগে গেল শিবপুরকে। ননী জেঠুর অনুমতি নিয়ে আরও দুয়েকটা বাচ্চাকে পড়াই, হাতখরচের টাকা উঠে যায়। নানা মানুষের সঙ্গে মিশি, সাহিত্য সভায় যাই, লাইব্রেরিতে কিছু কাজের দায়িত্ব পাই, গান্ধি বিফল হলে যে লড়াই লড়তে হবে, তার আঁচ গায়ে লাগে, মিছিল-মিটিংয়েও যাই। পিংলার সঙ্গে তো সেইভাবেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল একদিন। করাচির কথা, আপনার কথা সব শুনেছি। একদিন বলল আপনার ‘নবযুগ’-এর কথা। মাঝেমধ্যে গঙ্গা পেরিয়ে ‘নবযুগ’ কিনেও আনে। সেই ‘নবযুগ’ পড়িয়েছি একজনকে। আপনার সঙ্গে তিনি আলাপ করবেন। কাল আসবেন একবার?
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের আগে যে চারটি অজুহাত অতিক্রম করা প্রয়োজন : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০১ জুন ২০২২ | ২৬৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মে ২০১৪ সালে, যখন শ্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০৬ ডলার ছিল। তারপর বেশ কয়েক বছর দাম মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং যথাক্রমে আবারও তেলের দাম বৃদ্ধি পায় । আট বছর পর, ২০২২ সালের মে মাসে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আবার ব্যারেল প্রতি ১০৬ ডলারের সমান। কিন্তু এরই মধ্যে পেট্রোলের দাম ৭১ টাকা থেকে বেড়ে ১০২ টাকা হয়েছে (কেটেকুটে ৯৭ টাকা), ডিজেলের দাম ৫৫ টাকা থেকে ৯৬ টাকা (কাটার পর ৯০ টাকা) এবং গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ৪১০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। এর মানে হল পেট্রোল, ডিজেল এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণ আন্তর্জাতিক বাজার নয় বরং কেন্দ্রীয় সরকার এবং কিছুটা রাজ্য সরকারগুলির বর্ধিত কর।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩০) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০২ জুন ২০২২ | ২০৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
তরকারিতে নুন কম বেশি হলে কী করতে হয় গো মা?
– কম হলে খুব একটা অসুবিধে নেই, দিয়ে খাওয়া যায়। বেশি হলে বিপদ।
– বেশি হলে কী করব?
– রান্না অনুযায়ী হবে। ধর, মাংসের ঝোলে নুন বেশি হয়েছে। তখন গরম জল মিশিয়ে ঝোল পাতলা করতে পারিস। যদি দেখিস আর জল মেশালে গামছা কাঁধে ঝোল পুকুরে নামার অবস্থা হবে, তখন এক দেড় চামচ টক দই, এক চিলতে হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো আর ময়দা মিশিয়ে দিতে পারিস। টকে নুন টেনে নেবে, ঝোলও পাতলা হবে না। দইয়ে হলুদ, লঙ্কা মিশিয়ে দিলে রংটাও হাল্কা হবে না। আবার ধর ঘুগনি জাতীয় কিছুতে নুন বেশি হলে তেঁতুল গোলা জল বা লেবুর রস মেশানো যেতে পারে। যদি টমেটো দেওয়া রান্না হয়, তবে টমেটো ঘিসনিতে ঘষে পিউরি বানিয়ে আলাদা ফোড়ন কড়ায় একটু ফ্রাই করে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। হাল্কা ফ্রাই না করলে আবার কাঁচা টমেটোর গন্ধ উঠবে।
রসুইঘরের রোয়াক (দ্বিতীয় ভাগ) - ৪ : স্মৃতি ভদ্র
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ০২ জুন ২০২২ | ২৪৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভোরের আজানের শব্দে ঠাকুমার ঘুম ভাঙলে ফুরিয়ে যায় আমারও ঘুম। আর আজ তো ঘুম ভাঙার অজুহাত আছেই, “ও ঠাকুমা, আমার হাতটা ধুয়ে দেবে একটু? দেখো মেহেন্দি শুকিয়ে সারা বিছানায় গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়েছে”।
ঠাকুমার সাথে আমিও নেমে আসি উঠোনে। বরইগাছের মাথা ছুঁয়ে থাকা আকাশটাই আলো ফুটছে একটু একটু করে। সেই আলো মিশে যাচ্ছে শ্বেতকাঞ্চনের ঝাড়ে। চারপাশের নীরবতার সাথে তাল মিলিয়ে ফিসফিস করে উঠি, “ও ঠাকুমা, পূজার ফুল তুলবে না আজ?”
কলঘর থেকে একঘটি জল এনে ঠাকুমা ঢেলে দেয় আমার হাতে। ঠাকুমার আঁচলে ভেজা হাত মুছি আমি। আবছা অন্ধকারে তাকাই আমার হাতের দিকে। মেহেন্দি আঁকা চাঁদটা কেমন জ্বলজ্বল করছে।
ঠাকুমা বারান্দায় রাখা ফুলের সাজি শ্বেতকাঞ্চনে ভরে দেয়। সেখান থেকে কয়েকটা ফুল মুঠোয় করে নাকের কাছে আনতেই ফুলের ঘ্রাণ ছাপিয়ে নাকে এসে ধাক্কা দেয় মেহেন্দির ঘ্রাণ। আমি ঠাকুমার দিকে তাকাই, “ও ঠাকুমা, আজ ঈদ”।
সকল গৃহ হারালো যার : অনিন্দিতা রায় সাহা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২২ | ১৫৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বহু সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, বহুদিন ধরে কাজ করছে, রিপোর্ট জমা দিচ্ছে। নীতি নির্ধারণ হচ্ছে, আইনকানুন লেখা হচ্ছে। তবু কেন মেটে না সমস্যা? তাবৎ বিশ্বের সব দেশ হাতে হাত রেখে চলতে কেন এতো অপারগ? কারণ, যেমন বাড়ির মধ্যে আমি আর আমার গৃহসহায়িকার দায়িত্ব আর ভূমিকা একরকম নয়, তেমনিই ধনী আর দরিদ্র দেশগুলির গপ্পোগুলোও আলাদা আলাদা।
হননকাল ও প্রতিভা সরকারের লেখনী : অনুরাধা কুন্ডা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২২ | ২২০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
প্রতিভা কুড়ুলকে কুড়ুল বলেন। সরকার ও কর্পোরেটের মিলিজুলি আঁতাত খুলে দিতে তাঁর দ্বিধা নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উন্নয়নের নামে যে অরণ্য ধ্বংস, বন্য প্রাণ হত্যা চলছে, নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিকত্ব,তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন তিনি। প্রতিবছর উৎসবের সময় ভাবি, এত অতিরিক্ত আলো কেন, এত শব্দ কেন। নেহাতই কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই আতিশয্যের ফলে, সে বড় ছেলেভুলানো কথা।
মাধব গ্যাডগিল, মানুষ ও প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্র : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২২ | ২৭৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
মাহুতেরা বলাবলি করছিল এই অরণ্য তো কেবল ট্যুরিস্টদের মনোরঞ্জনের জন্য নয়। এটা পাখি,বাদুড়, বাঁদর,কাঠবেড়ালি এবং অন্য অনেক প্রাণীর বসতি। ডুমুর গাছ খুবই উপকারি, কারণ বছরে অনেকবারই এতে ফল আসে আর যখন অন্য কোনও ফল পাওয়া যায় না, তখন শুধুমাত্র ডুমুর ফলে বেঁচে থাকে এমন প্রাণীও আছে। এই যে যথেচ্ছ এই গাছের ডালপালা ভাঙছি, এক মাহুত আরেক জনকে বলল, এতে কিন্তু বনের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে । আমাদের ভেবে দেখা উচিত এটা আমরা চালিয়ে যাব কিনা।
কিন্তু কী জানো.. : সঞ্চারী সেন
বুলবুলভাজা | বাকিসব | ০৯ জুন ২০২২ | ২৫৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
আর একটি মিলনকাহিনীও আমার গোচরে আছে, অভয় দিলে বলি। সেবার লখনৌ থেকে ফিরছি, পুজোর সময়, কামরায় প্রচন্ড ভিড়। আমাদের এক পরিচিতের ওপরে দায়িত্ব ছিল টিকিটের, সে সেগুলির কনফার্মেশন না করেই আমাদের হাতে গুঁজে দিয়ে শেষ মুহূর্তে গা ঢাকা দিয়েছে। অথচ ফিরতেই হবে, উপায় নেই।
অমৃতসর মেইল এর টিকিট পরীক্ষক মহবুব আলম, সহৃদয় হয়ে ব্যবস্থা করে দিলেন সকলের কোনোরকমে। দিলীপ কুমারের মতোই সুদর্শন, অমায়িক, মধুর লখনৌয়ি জবানের অধিকারী মহবুবের মুখে একটি গল্প শুনেছিলাম সেদিন। শোনাই।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩১) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১০ জুন ২০২২ | ১৫২৬ বার পঠিত
- সেনবাড়ির ঝোল আর মাছের ঝালের তফাৎটা কি?
- তফাতের বদলে তুলনা বলছি।
১। দুটোতেই তেলে পাঁচফোড়ন আর লঙ্কা ফোড়ন পড়ে। কাঁচা লঙ্কা অথবা শুকনো লঙ্কা - আপরুচি খানা। মা কাঁচা লঙ্কা দিত, আমিও তাই।
২। ঝোলে নানারকম সব্জি দেওয়া যাবে। কিন্তু ঝালে সেটা হয়না। ঝালে আমার মা মাঝে মাঝে আলু বা বেগুন, অথবা শীতের সময়ে পেঁয়াজ কলি বা কচি শিম ভেজে দিতো, যেকোনো একরকম।
৩। আজকাল সারাবছর টমেটো পাওয়া যায় বলে, দুটোতেই টমেটো দেওয়ার চল হয়েছে। আমাদের ছোটবেলায় টমেটোর এত ব্যবহার ছিলনা।
৪। হলুদ দুটোতেই কমন।
৫। ঝোল বা ঝাল হবে নোনতা স্বাদের। কোনো মিষ্টি পড়বেনা।
৬। ঝোলের মশলা হচ্ছে প্রধানত ধনে; জিরে দিলে খুব অল্প, মা জিরে দিতনা। ডালনা বা দমে জিরে হল প্রধান, কিন্তু ঝোলে নয়। বেগুন দিয়ে ঝোল হলে হাল্কা সর্ষে ধোওয়া জল দেওয়া যাবে।
আমার একটা পৃথিবী আছে : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ১৪ জুন ২০২২ | ২৫৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
- এই অবস্থায় অফ লাইন পরীক্ষা হলে তো নম্বর কমে যাবে ম্যাডাম, সবার কাছে অসম্মান হবে, যদি পাশ করতে না পারি! ইউনিভার্সিটি কি কোনোদিন আমাদের কথা বুঝবে না?
চমকে উঠি ওদের কথা শুনে। এই তো কদিন আগে লকডাউন চলাকালীন ওদের কত ভয় ছিল, ‘আমাদের সবাই করোনা ব্যাচ বলবে, আমরা কোথাও চাকরি পাব না’ – সেই দূরের ভয়গুলো তুচ্ছ হয়ে এখন কাছের ভয়গুলো বড় হয়ে উঠেছে! সত্যিই তো, গত দু’বছর প্রাণ খুলে হাসা হয়নি, বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি হয়নি, টিফিন ভাগ হয়নি। বন্ধু, বা শিক্ষক কাউকে মনের কাছাকাছি পায়নি – তাই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাত্মতা হয়নি। এরা নিজেদের খুব একা ভাবছে মনে হচ্ছে। আর সেজন্যই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিপক্ষ ভাবছে। হায় হায়! এতদিন আমি কেবল নিজের দুঃখ নিয়ে বিলাস করছিলাম। এদের দুঃখ, ভয়, টানাপোড়েন আমার চেয়ে শতগুণ বেশি। বরং এই প্রৌঢ়ত্বে এসে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সামলে আমি নিজে যতটা শান্তভাবে এই মনখারাপের মোকাবিলা করছি, এরা তো সেটাও পারছে না। হঠাৎ চিন্তাসূত্র ছিন্ন হয়ে যায় এক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ক্লাসের ছাত্রীর কথা শুনে,
- ম্যাডাম দিল্লির দিকে তো বেশ কিছু করোনা কেস হচ্ছিল। পরীক্ষার আগে যদি এদিকে একটু বেড়ে যায়, তাহলে খুব ভাল হয়।
কাদামাটির হাফলাইফ : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১১ জুন ২০২২ | ১৭৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ওদিকে দেখি অনেক ক্যাম্প। সেখান থেকে ডাকছে, আসুন কমরেড। কোথাও কোথাও রুটি গুড় কাগজে মোড়া কোথাও লুচি আলুর দম। কড়াই ভর্তি আলুর দম। আমি দেখছি কড়াইয়ের নাম। দেখি, ও মা, ধীরেন।
কড়াইকেও মনে হল, কমরেড কড়াই।
আমরা ছোটো। জল তেষ্টা পেয়েছে।
একজন স্বেচ্ছাসেবক বললেন, কমরেড খোকা, ওইদিকে জলের ট্যাঙ্ক আছে।
আমাকেও কমরেড বলেছে।
মনে হল, অনেক বড় হয়ে গেছি।
আনন্দে জল এসে গেল চোখে।
কেউ আমাকে কমরেড বলেছে।
সীমানা - ৭ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ জুন ২০২২ | ৪১৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আপনি যে একদিন বিখ্যাত হবেন তা আমার জানা ছিল, আমি মুজফ্ফর সাহেবকে বলছিলুম, আমার বিশ্বাস ছিল আপনি একদিন দেশবিখ্যাত এক লেটোশিল্পী হবেন। এখন তো দেখছি আপনি একজন দেশবিখ্যাত লেখক কবি এবং গায়ক, প্রায় ঠিকই ছিল আমার ধারণাটা। কিন্তু আপনি কি জানেন, ছেলেবেলায় আলাপ না হওয়া সত্ত্বেও আমি কেন আপনাকে মনে রেখেছি? আমার মায়ের কাছে শুনেছিলুম আমি নাকি এক ফকিরের আশীর্বাদে জন্মেছিলুম। ফকির মানে কী, আমি জানতুম না তখন। কিন্তু আপনার বাবা তো অজয়ের দুপারেই বিখ্যাত ছিলেন। আমি যখন শুনলুম তাঁর নাম ফকির আহ্মদ, কেউ না বলা সত্ত্বেও আমি ধরে নিলুম, ইনিই নিশ্চয়ই সেই ফকির, এঁর আশীর্বাদেই আমি জন্মেছি।
তাজমহলের বিবিধ সত্তা : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ইতিহাস | ১৫ জুন ২০২২ | ১৯১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
এই আমলক, কলস, উল্টোনো পদ্মফুল- হিন্দু শিল্পরীতির প্রভাবগুলো কিন্তু মুঘল আমলের অনেক আগে থেকেই ভারতীয় মুসলিম শিল্পে দেখা যায়। সৈয়দ ও লোদী বংশের সমাধিসৌধগুলোতে এদের দেখা পাওয়া যায়। বরং সেইযুগের কিছু হিন্দু প্রভাব, যেমন মকরতোরণ তাজমহলে নেই। মকরতোরণ হল দরজার উপরে দুদিকে মকরের মত দেখতে ভাস্কর্য যা হিন্দু মন্দিরে বহুপ্রচলিত।
ভারতীয় গম্বুজের সূচনা ত্রয়োদশ শতকে বলবনের সমাধির মাধ্যমে। প্রথমে অর্ধগোলক আকৃতি থেকে শুরু করে, ইউরোপীয় গম্বুজগুলি একটু সঙ্কুচিত হয়ে মোচার আকৃতি নেয়, কিন্তু ভারতীয় এবং রাশিয়ান গম্বুজগুলি তাদের মধ্যদেশকে কিছুটা স্ফীত করে পেঁয়াজের আকার ধারণ করে । হয়তো এই পেঁয়াজের আকারটা আসলে পদ্মের আকৃতি। মন্দিরের ছাদ থেকে ঝুলানো পাথরের বা পোড়ামাটির তৈরি উল্টানো পদ্ম এর অনুপ্রেরণা হতে পারে।
তাজমহলকে শুধু শাহজাহানের সৃষ্টি বললে এর সঙ্গে যুক্ত ডিজাইনার, আর্কিটেক্ট আর ইঞ্জিনিয়ারদের অবজ্ঞা করা হবে। তাঁদের ব্যাপারেও জানা যাক। সব মিলিয়ে ৩৭ জন ডিজাইনার এবং আর্কিটেক্টের নাম মুঘল সরকারি নথি থেকে পাওয়া যায় যাঁরা তাজমহলের প্রধান স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩২) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৬ জুন ২০২২ | ১৪৭৬ বার পঠিত
উনি নাকি লিফলেট ছাপাতেন। তাতে সহজ বাংলায় লেখা থাকতো স্বাস্থ্য বিধি, তারপরে মেয়েদের কেন লেখাপড়া করা দরকার, দেশের ভালোর জন্য কী কী করা উচিত - এইসব। বাগবাজারের বিশ্বকোষ লেনে একটা প্রেস ছিল। সেই প্রেসে ছাপানো হত। কুমুদিনীর বই দুটোও ঐ প্রেসেই ছাপানো হয়েছিল। তাছাড়া অন্য লেখালেখি ছিল। পরিবারের সকলেই বলেছে, কিন্তু চোখে কিছু দেখিনি। আর একথাও শুনেছি, লেখালেখির থেকে ওঁর নিজস্ব উপার্জন ছিল। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা মা বলেছিল, উনি শোভাবাজার রাজবাড়িতে থাকা কালীনই নিয়মিত সাহিত্য সভা করতেন। সেখানে সমাজের বড় মানুষেরা আসতেন। ধীরে ধীরে সেইসব সংসর্গে আরও অনেক সভা সমিতির কাজে জড়িয়ে পড়েন। সবগুলো নিরামিষ সাহিত্যের ব্যাপার ছিলনা। সেখানে সক্রিয় ইংরেজ বিরোধিতার গল্প ছিল। স্বামী শরৎ মারা যাবার পরে, উনি যে রাজবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন, তার এটাও একটা কারণ। শরতের দাপটে সব চুপ থাকতো। কিন্তু তিনি না থাকাতে পরিস্থিতি ঘুরে গেল।
সীমানা - ৮ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ জুন ২০২২ | ৩৮৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আসল কারণটা অন্য। গতকাল ওই যে খিলাফৎ কমিটির নোটিশটা ছাপানো হয়েছিল, সেটার জন্যেই বন্ধ করল কাগজটা, রাগ আর সামলাতে পারল না। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন ওই নোটিশ কাল বসুমতীতেও বেরিয়েছে? কই, তাদের তো বন্ধ করেনি। কিন্তু, সে যাই হোক, করেছে, ভালোই হবে। আজকের কাগজের জন্যে যে এডিটরিয়ালটা লিখেছিলাম – দুর্যোগের পাড়ি – সেটা মোসলেম ভারতে ছাপিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছি। নবযুগকে আজ জুলুম করে বন্ধ করার খবরটা নিশ্চয়ই বেরোবে দুয়েকটা অন্য কাগজেও। যারা এতদিনেও নবযুগ পড়েনি, বাংলা খবরের কাগজের সেই পাঠকদেরও নবযুগের ব্যাপারে কৌতূহল বাড়বে। এখন যতদূর তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের কাগজটা আবার বের করা চাই। আমার তো মনে হয় একটু কষ্ট করে হলেও ওই দুহাজার টাকা আজই জমা দিয়ে দেওয়া উচিত।
সীমানা - ৯ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ জুলাই ২০২২ | ৩৮৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
বর্ধমান ছাড়াবার পর নজরুল গান ধরেছে আবার, এমন সময় কামরায় উঠল তিন-চারজন বাউলের একটা দল। শান্তিনিকেতনের পথে রেলের কামরায় এই বাউলরা প্রায়ই ওঠে, আর উঠেই গান গায়। সঙ্গে থাকে তাদের একতারা, আর কোন কোন সময় পায়ে ঘুঙুরও। বাউল, ভিক্ষে করাই এদের পেশা, যাত্রীসাধারণেরও সেটা জানা। ফলে, ঠিক ঠিক চাইতেও হয়না ভিক্ষে, গান শেষ হলে অনেক যাত্রী নিজেরাই ডেকে সাধ্যমতো যা পারে, দেয়। আজ এই বাউলরা উঠে নজরুলের গান শুনে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। একটু পর, তাদের মধ্যে একজন গানের সঙ্গে একতারায় মৃদু আওয়াজ তোলে, ঘুঙুরের শব্দে তালও রাখে কেউ। নজরুল চোখ মেলে হাসে, তারপর চোখ বুজে গাইতে থাকে আবারও।
“আমার পথকে এত ভয় কেন তোমার?” : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৯ জুন ২০২২ | ২০০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গোকারাকন্ডা নাগা সাইবাবা, একজন শিক্ষক, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, দলিত ও আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত একজন সমাজকর্মী। জীবনসঙ্গিনী বসন্ত কুমারির জন্মদিনে একটি চিঠিতে তিনি তাঁর বিস্ময় ব্যক্ত করেন। বলেন, আমরা তো সামান্য কর্মী, সামান্য উপায়ে সামান্য মানুষদের জন্য কাজ করি! তাহলে এই পরাক্রমশালী রাষ্ট্র কেন আমাদের আশা, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের স্বপ্নকে ভয় পায়? আমরা কি কাউকে কোনও ভাবে কষ্ট দিয়েছি? কারো ক্ষতি করেছি? কেন আমাদের জীবনের ওপর এই আক্রমণ? কেন আমাদের স্বপ্নগুলোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়? কেন আমাদের আশা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়?
রসুইঘরের রোয়াক (দ্বিতীয় ভাগ) - ৫ : স্মৃতি ভদ্র
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ২৩ জুন ২০২২ | ২৪২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমলাপাড়ার নিরিবিলি বাসাটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আমার বুকের ভেতর কেমন করে ওঠে। আমি ফিসফিস করে বলি, “ও মনিপিসি, বাবার শহরের চাকরি কবে ফুরাবে?”
মনিপিসি কি একটু হেসে উঠল? অন্ধকারে তা ঠাওরে উঠতে পারলাম মা। তবে আমার কাছে আরেকটু সরে এসে মনিপিসি বলল, “এই শহরের পর আরোও বড় শহর, তারপর আরোও বড় শহরে যেতে হবে তোকে। তোকে অনেক বড় হতে হবে মনি”।
মনিপিসির স্বরে কিছু একটা আছে। উত্তর খুঁজে পাইনা আমি। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করি, “বড় হলে কি আর নিজের বাড়ি, নিজের জায়গাতে আর ফেরা যায় না?”
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩৩) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৩ জুন ২০২২ | ১৬০৬ বার পঠিত
এ বাড়িতে পশু পাখিকে, গাছকে, ঘাসকে, পুকুরের মাছকে খেতে দেওয়ার, সম্মান করার এক প্রাচীন প্রথা আছে। আমার বাপের বাড়ির গ্রাম আড়বালিয়াতে এমন কখনও দেখিনি। সেই প্রথা হল গমা পূর্ণিমাতে প্রকৃতি পুজো। পুজোতে সকল পশুপাখির প্রতিনিধিত্ব করে গমা বুড়ি অর্থাৎ গোমাতা। এইদিন খুব সকালে গোয়ালের যত গরু আছে তাদের পরিষ্কার করে স্নান করিয়ে দুই শিঙে রাখী বেঁধে দেওয়া হয়। সারাদিন ধরে পুজোর জন্য আস্কে পিঠে তৈরি করা হয়। সেদ্ধ চাল আগের দিন সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকাল সকাল বেটে নেওয়া হয়। এবার তাতে একটু নুন আর অল্প অল্প করে গরম জল মিশিয়ে খুব ভালো করে ফেটানো হয়। কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখা হয়, যাতে মণ্ডটা একটু ফেঁপে যায়, তারপর মাটির সরায় পাতার জ্বালান দিয়ে একটা একটা করে আস্কে পিঠে তৈরি হয়।
হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্ব্বী! : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৪ জুন ২০২২ | ২২৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র রাজাপক্ষের ভাই গোটাবায়া রাজাপক্ষ ডিফেন্স মিনিস্টার হয়ে নির্মমভাবে তামিলদের দমন করলেন। জাফনায় ও অন্যান্য দ্বীপে সেনাবাহিনী অসামরিক জনতাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করল। আন্দোলনের কার্যত সমাপ্তি ঘটল ১৮ই মে, ২০০৯ সালে, লিট্টের সর্বেসর্বা প্রভাকরণ ও অন্যদের মৃত্যুতে। বিশ্বজুড়ে অসামরিক নাগরিকদের হত্যার ছবি ও দলিল দেখে মানবাধিকার লংঘনের তদন্তের দাবি উঠল। রাষ্ট্রসংঘের অনুমান অনুযায়ী কয়েক দশকের ওই সংঘর্ষের ফলে অন্তত ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ প্রাণ বিনষ্ট হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছেন কয়েক লক্ষ নাগরিক।
তারপর সিংহলী বৌদ্ধ নাগরিকের প্রবল সমর্থনের ভিত্তিতে আজ রাজাপক্ষ পরিবারের পাঁচভাই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিত্তমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা আদি দেশের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে – যা প্রায় দুর্ভিক্ষগ্রস্ত কিছু আফ্রিকান দেশের কথা মনে করায়।
কালো রামধনু - ১ : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৫ জুন ২০২২ | ৩৮২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
ওলায় বসে জানলার কাচটা নামিয়ে দিল সৌম্য। এমনিতেই এসি ওর পছন্দ নয়, তার ওপর এই প্যানডেমিকের সময় মনে হয় একটু খোলামেলা থাকাই ভাল। সৌম্য ভেবেছিল তুহিনদের বাড়ি যেতে যেতে ও রজতের সাথে মায়ের এখানে আসার ব্যপারটা নিয়ে একটু কথা বলে নেবে। সোহিনীদেবী রজতকে চেনেন সৌম্যর বন্ধু এবং ওদের ডিটেক্টিভ এজেন্সি সৌরলোকের পার্টনার হিসেবে। তিনি জানেন, যে কাজের প্রয়োজনে রজতকে প্রায়ই সৌম্যর বাড়ি থেকে যেতে হয়। তাই সৌম্যর বাড়িতে সব সময়ই রজতের জন্য স্পেয়ার টুথব্রাশ, জামাকাপড়, ঘরে পরার পায়জামা, চপ্পল ইত্যাদি থাকে। কিন্তু রজত আর সৌম্য যে কাজের পার্টনারের থেকেও বেশি কিছু, সেটা ওঁর জানা নেই। ফলে, সোহিনীদেবী কলকাতায় এলেই রজতকে কিছু দিনের জন্য পাততাড়ি গোটাতে হয়। এবং প্রতিবারই এই নিয়ে একটা মন কষাকষি হয়।
সমকামিতা ও বিবর্তন: পাঠ প্রতিক্রিয়া : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ২৬ জুন ২০২২ | ২৩৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই বইটাতে সুদীপ্ত দু’টি দুরূহ কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রথমত সহজে বিজ্ঞান বলা, আর দ্বিতীয়ত বাংলায় বিজ্ঞান বলা। এই দু’টিই যে কতটা কঠিন কাজ – সেটা যারা কখনো চেষ্টা করেছেন, তাঁরাই জানেন। সেই কাজটা আরো কঠিন হয়ে যায়, যখন আপনি এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে বসেন, যার অনেকটাই এখনো কুয়াশায় ঢাকা। সমকামিতার কারণ এখনো তর্কাতীতভাবে জানা যায়নি। এর পেছনের একটা কারণ বিষয়টির জটিলতা, অপর কারণটি রাজনৈতিক। সমকামিতা জেনেটিক না এপিজেনেটিক না হরমোনাল না সামাজিক এই নিয়ে বহু পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব আছে। এই জট পাকানো বিষয়টিকে বইটিতে সুন্দরভাবে গুছিয়ে ধাপে ধাপে পরিবেশন করা হয়েছে, যাতে সহজে গ্রহণ করা যায়, কোথাও ধাক্কা খেতে না হয়। যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সুদীপ্ত খুব সুন্দরভাবে একদম গোড়ার কথাগুলোও পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
কবিতার শত্রু মিত্র ** : পুরুষোত্তম সিংহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ২৬ জুন ২০২২ | ১৭৩৫ বার পঠিত
এ এক সাংস্কৃতিক বয়ান। সমাজ পরিবেশ পরিস্থিতি সহ গত শতকের সাতের দশকের উত্তাল আবহ, সময়ের জটিলতা, রাজনীতি ও ব্যক্তি মানুষের দ্বিরালাপ। কবিমনের অনুভূতিতে সব দেখা-বোঝা-জানা। আবেগ রোমান্টিসিজম বলতে বলতেই জীবনের ভিতরে, সময়ের ভিতরে উঁকি ঝুঁকি দেন। কেন এই আখ্যান লেখার প্রয়োজন হল এই কুজ্ঝটিকাপূর্ণ সময়ে? কবি তার দায়বদ্ধতা থেকে সরে এসেছেন। কেন কবিতা লিখি এই বয়ানে বিবিধ জবাবদিহি উঠে আসে। ভালোলাগা, আনন্দ দান, কাজ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কবিতাই তো দেশকে, মানুষকে পথ দেখাবে। কবির সেই সমাজচেতনা, দায়বদ্ধতা অস্তগামী হয়েছে। জীবনের বেলাভূমিতে কবিতা কোন পথে যাত্রা করবে? বিষাদময় সময়ে, সন্ত্রাসের পটভূমিকায়, রাষ্ট্রীয় নির্যাতনে কবি ও কবিতা কতখানি গ্রহণযোগ্য তার হিসাব নিকেশের পক্ষ-বিপক্ষের আখ্যান ‘নতমুখ চরাচর’।
হাওয়া বদল : তীর্থঙ্কর গুহ ঠাকুরতা
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ১৭০৯ বার পঠিত
২০০১ সালে যখন প্রথম queer rights নিয়ে সক্রিয় হই, তখন আমি ১২ ক্লাসের ছাত্র। সবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছি। তারপর ২০০৩-০৪ সালে প্রথম ডকুমেন্টারি ছবি “পিকু ভাল আছে”। শহরের কাগজে কাগজে রিভিউ আর কলেজ, ঘর, পাড়ার কোণায় কোণায় উৎসহিষ্ণু, অবাক, বিদ্রূপাত্মক চোখ – ছেলেটা কী বলে রে বাবা!
এমনকি শহরের closeted গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল মানুষেরাও internalised phobia থেকে থু থু করে উঠল – “দিব্বি ছিলাম বাপু, ৩৭৭ ধারা থেকে বেঁচে, ক্যাসুয়াল ডেট করে। দিল সব ফাঁস করে”।
আমি যেভাবে প্রাউড : সৌমি দত্ত
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ১৯৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আমার বন্ধুদের মধ্যে যেন বোমা পড়ল। কেউ ভাবতে পারেনি আমি ওই সম্পর্কে কখনও থাকব না, এমন হতে পারে। আর কারণটা জানাতে শুরু করলাম সবাইকেই, কিছু না লুকিয়ে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ হল। সমকামী ও রূপান্তরকামী নারীপুরুষ সকলে। একটা অদ্ভুত জগৎ। সবটার সঙ্গে নিজেকে না মেলাতে পারলেও, চেষ্টা করতাম – যতটা পারা যায় জ্ঞান সঞ্চয় করতে। মনে হত, আর কোনও পরীক্ষা কি আছে, যা থেকে বোঝা যাবে আমি কী? আমার তো কোনও সমকামী সম্পর্কও নেই। কী করে প্রমাণ দেব, যে আমি সমকামী? কী করে বাকিদের বোঝাব, যে আমার সম্পর্ক ভাঙার আর কোনও কারণ নেই এটা ছাড়া? কী করে জাস্টিফাই করব আমার দাবি?
পাড়ার বিয়ে : অরিত্র দাস
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ১৬৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
“কী রে, তোর বিয়েতে কবে খাব... ???”
এই প্রশ্ন তো সয়ে গেছে এবং আমি বেশ ইনোভেটিভ উত্তরও দিই। তার ভয়ে আর কেউ এই কথা আর তোলে না। তবে একটা জিনিস অনুভব করি – যেটা আজকাল বেশ মনে হয়; সেটা হল একটা অদ্ভুত exclusion – অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার একটা অনুভূতি ... আরও কেমন লাগে, যখন দেখি, যে সেই বিবাহিত জুটিদের নিজেদের মধ্যেকার হাসা-হাসি-ইয়ার্কি, সেখানেও সেই exclusion-এর একটা অনুভূতি। অথচ আমার মনে কিন্তু একটা অপূর্ণ সাধ রয়েই গেছে – বিয়ে করার, ঘর বাঁধার – এইসব শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি শুনলে এই ইচ্ছেগুলো বেশ নড়েচড়ে ওঠে, নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়, মন কেমন করিয়ে তোলে।
হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইল না কেহ... : সুদীপ দে
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ১৪৫৭ বার পঠিত
জানতাম না LGBT+ কাকে বলে। শুধু জানতাম একটি শব্দ ‘Gay’ আর এটাও জানতাম যে আমাকে সবসময় প্রমাণ করতে হবে যে আমি কোনো অবস্থাতেই Gay নই ... “এই বেটা, বেটিন্তর মতো হাটস কিতা, বুক ফুলাইয়া হাট” (মেয়েদের মতো হাঁটছিস কেন, বুক ফুলিয়ে হাঁট), বাবার এই কথাগুলো এখনো মাঝে মাঝে কানে বাজে। বা বোনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটু রূপচর্চা করলে বাবা যখন বলতেন, “দুনিয়ার যত বেটিয়ামী কাম তোর” (পৃথিবীর সব মেয়েলোকের কাজ তোকে করতেই হয়) তখন মনের অজান্তেই একটা প্রশ্ন জাগত, কেন আমি এমন। কেন আমি এত হাত নাড়িয়ে কথা বলি, কেন আমার ছেলেদের শরীরের কাছঘেঁষা হয়ে থাকতে ভাল লাগে, কেন আমি ছেলেদের মত হাঁটতে পারি না।
হে চিরসারথি, তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি : নির্ঝর মন্ডল
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ১৩৮৮ বার পঠিত
ঠাকুমার মতন আরও শত শত স্পর্শে গায়ে কাঁটা দিল রথের, রথের রশির। তাতেই নড়েচড়ে চলতে শুরু করলেন তালধ্বজ, দেবদলন এবং নন্দীঘোষ। রথ, পথ আর মূর্তি অন্তর্যাপন করলেন আমার, তোমার এবং সকলের। ঐশ্বরিক হয়ে উঠল গায়ে লেগে থাকা সময়টুকু। জনজোয়ারের প্রবল উচ্ছাসে ঢেকে গেল জন্মমৃত্যু। তাদের গায়ে তখন সূর্যের মতন তেজ। প্রবল বৃষ্টি তাঁর কাছে এসে ইলশেগুঁড়ি হয়ে যায়। আল্পনা এঁকে যায় রশির গায়ে সাতরঙা রোদ। রামধনু হয়ে ওঠে জনজোয়ার, আনন্দতরঙ্গ তোলে আমাদের বুক ছাপিয়ে। লক্ষ লক্ষ রোদের কণা, বৃষ্টির ছাঁট আর প্রজন্মব্যাপী আনন্দস্পর্শ রামধনুর ভার বয়ে নিয়ে চলে। তাঁকে টানতে হয় না আলাদা করে। কেবল ছুঁয়ে পথ চলতে হয়।
ছেলে হতে গেলে : অরূপ রতন দে
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ১৭৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ভদ্রমহিলা বললেন, আসলে ছেলে তো, ফুলটুল দেখলে আবার পছন্দ করবে না।
আমার মনে হল বলি, ছেলের বিয়ের পর খাটটা কি ক্যাকটাস দিয়ে সাজাবেন?
পৌরুষের এই সামাজিক নির্মাণ পুরুষকেই বেঁধে রেখেছে নির্মম শিকলে।
ছেলেরা ফুল পছন্দ করবে না, বন্দুক পছন্দ করবে।
ছেলেরা শান্তির পক্ষে থাকবে না, যুদ্ধের পক্ষে থাকবে।
ছেলেরা ফল খাবে না, মদ খাবে....
অগ্নিপথ - দশ মিথ্যা ও আসল রূপ : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : রাজনীতি | ০১ জুলাই ২০২২ | ২১৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
স্থায়ী চাকরিতে যে বেতন, ভাতা, পেনশন, গ্র্যাচুইটি এবং প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় তার থেকে কি চার বছরের কাঁচা চাকরি ভালো হবে? চার বছর পর নিশ্চিত সরকারি বা বেসরকারি চাকরির সব কথাই ভাঁওতাবাজি। বাস্তবটা হল যে, সরকার ১৫-২০ বছর ধরে চাকরি করা প্রাক্তন সেনাদেরই চাকরি দিয়ে উঠতে পারেনি। মোট ৫,৬৯,৪০৪ প্রাক্তন সেনা চাকরির জন্য নাম নিবন্ধন করেছিলেন, যার মধ্যে মাত্র ১৪,১৫৫ জন প্রাক্তন সেনা (অর্থাৎ মাত্র ২.৫%) সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি খাতে চাকরি পেয়েছেন।
উভকামী বিদ্বেষ অথবা 'এই বাইগুলো এত ফাজিল হয় না মাইরি!' : রঙ্গন
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ২০১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এত থিওরি কপচে কীই বা হয়? আমার খোঁজার পরিধি আপনার দ্বিগুণ বলে হিংসে করেই বা কী হবে? চলুন না প্রেমে পড়ি, প্রেমিকের কি আর ওরিয়েন্টেশন হয়? ব্রহ্মা শতরূপাকে মেপে কেটেছেঁটে সাইজ করে নিলেও, শিব কিন্তু অত ঝামেলায় যাননি। শক্তি হোন বা হরি, যেমন-কে-তেমন গ্রহণ করেছেন। প্রেমিকের মাপকাঠিতে তাই তাঁর চেয়ে ভারি আর কেউ নেই। আর একটা কথা, যে থাকার সে থাকবেই, ঠেলে সরিয়ে দিলেও শেষ মুহূর্ত অবধি সম্পর্কটাকে বাঁচানোর জন্য লড়ে যাবে। আর যে না থাকার, সে স্ট্রেট গে বাই ট্রান্স যাই হোক না কেন থাকবে না। বিশ্বাস করুন, মেঘে মেঘে বয়েস তো কম হল না, নিজের ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
প্রাইডের ডাক : শঙ্খদীপ মুসাফিরানা
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ১২৩২ বার পঠিত
এ লেখা তোমার কাছে যাবে, তুমি পড়বে, এ ভ্রমে আমি নেই। তবু যদি এই উড়োচিঠি হাজির হয় তোমার কাছে কোনোদিন, কোনোভাবে – নিজে থেকে শুধু মেসেজ কোরো ‘পড়েছি’। আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে তোমায় কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করব না। অর্ক, ভালবাসা তো প্রকাশ পেতে চায়। পৌঁছাতে চায় গন্তব্যে। অনেকের ভালবাসা সে পথে হাঁটা শুরুই করে না। আমাদের করেছিল। আমি বিশ্বাস করি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে যেই হারিয়ে ফেলার কষ্ট তো যাওয়ার নয়। তবু তুমি ‘পড়েছি!’ জানালে, জানব, একসাথে না হোক, আমরা কোনো একভাবে গন্তব্যে পৌঁছলাম।
সম-সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসী নিয়োগকারীদের জন্য একটি বার্তা : সুদীপ্ত দাস
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৩ জুলাই ২০২২ | ১৬৮৫ বার পঠিত
যদিও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরণ তার পূর্ণ রূপে এখনো বহুদূর, ছোট ছোট ধাপ নেওয়া হচ্ছে, কিছু সংলাপ শুরু হয়েছে। তবে এই সংলাপগুলোর বেশিরভাগই বৈচিত্র আর অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নীতি বিষয়ক, নানান পরিচয়ের মান্যতা প্রদান, আর প্রান্তিক মানুষজনের প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ যাতে তারা নানান জায়গায় চাকরি পেতে আবেদন করেন। বিশেষ করে স্টার্টআপ, নন-প্রফিট সংস্থা, ছোট ছোট ফর প্রফিট কর্মক্ষেত্রগুলো যেগুলো সামাজিক ন্যায় এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ। এদের বেশিরভাগ কর্মখালির বিজ্ঞাপনগুলোয় লেখা হয় "আমরা সম-সুযোগে বিশ্বাসী চাকুরী দাতা এবং প্রান্তিক গোষ্ঠী যেমন প্রান্তিক জাতি, লিঙ্গ, যৌনতা এবং দক্ষতার মানুষদের আবেদন জানাতে উৎসাহিত করি।"
কিন্তু, আমরা যখন "সমান সুযোগ"-এর কথা বলছি, আমরা কি ইক্যুইটি-র থেকে সরে যাচ্ছি?
ফ্যাকাশে রামধনুরা : অভিনব দত্ত (অভি)
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৪ জুলাই ২০২২ | ১৭৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
মাত্র চার বছর আগে অবধি আমরা আইনত বলতে পারতাম না, যে আমরা এলজিবিটিক্যু+ সম্প্রদায়ের মানুষ বা তাঁদের অধিকার নিয়ে কাজ করি। একটা লার্জার হিউম্যান রাইটস ছাতার তলায় ‘জেন্ডার’-এর আওতায় আমাদেরকে ফেলা হত। ফলে যা হওয়ার তাই হল – মানবাধিকার কমিশনের এক রিসার্চে যা উঠে এল, তা হল ৯২% ট্রান্সজেন্ডার মানুষ কোনোরকমের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত নয়। অথচ সরকারি স্তরে এই মানুষদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার কোনো পরিকল্পনাই নেই। ২০২১ সালে ভারত সরকারের সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট মন্ত্রক সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বশক্তিকরণ বাবদ যদি ১০০ টাকা খরচ করে থাকে, তার মধ্যে মাত্র ৪ পয়সা খরচ করেছিল ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্য – প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচ কোটি। অপরদিকে ভারতের কর্পোরেটগুলো সিএসআর বাবদ যে বিপুল অর্থ খরচ করে সামাজিক কারণে, সেখানে নারী কল্যাণ বা উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট জায়গা পেলেও, ট্রান্সজেন্ডার বা লার্জার এলজিবিটিক্যু+ সম্প্রদায়ের মানুষেরা জায়গা পাননি এখনও।
কালো রামধনু - ২ : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ জুলাই ২০২২ | ২০৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
লম্বা-চওড়া, জিম করা সুদর্শন তুহিনকে একবার দেখে চোখ ফেরানো শক্ত ছিল। সবথেকে আকর্ষণীয় ছিল ওর চোখ দুটো। ভাসা ভাসা স্বপ্নালু। আর হাসলে গালে টোল পড়ত। সব মিলিয়ে মনে হত, যেন বলিউডের কোনও রোম্যান্টিক হিরো। ওরকম চেহারা আর ওই রকম ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে যে কেউ অন্তত গোটা কতক প্রেম তো করতই। কিন্তু তুহিন ছিল লাজুক, একটু অন্তর্মুখী। সম্ভবত নিজের সেক্সুয়ালিটিকে অন্যদের, বিশেষত আগ্রহী মেয়েদের থেকে দূরে রাখতেই, নিজের চারপাশে একটা গণ্ডি টেনে রাখত তুহিন। তার জন্য কেউ কেউ ওকে অহংকারী ভাবলেও, সৌম্য অন্তত জানে, যে ও আদপেই ওরকম ছিল না। সৌম্যর সঙ্গে একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক শুরুতেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল তুহিনের। তবে একে অন্যের ওরিয়েন্টেশনের ব্যপারে জানতে সময় লেগেছিল আরো অনেকদিন।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৪ জুলাই ২০২২ | ১২৯৬ বার পঠিত
মাথার টুপি খুলে তাঁকে বললাম: 'ডঃ লিভিংস্টোন, তাই তো?'
‘হ্যাঁ,’ তিনি মৃদু হেসে বললেন, নিজের টুপিটি সামান্য তুলে।
আমি নিজের মাথায় ফের টুপিটা বসালাম, আর তিনিও ফের টুপি পরলেন, আর আমরা দু'জনের হাত আঁকড়ে ধরলাম, তারপর আমি জোরে জোরে বললাম: ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ডাক্তার, আপনার সঙ্গে দেখা হল।’
তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমিও খুশি যে আপনাকে এখানে স্বাগত জানাতে পারছি।’
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩৫) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৪ জুলাই ২০২২ | ১৯৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
- এই দেখ, মধ্যবিত্ত গৃহস্থ বাঙালি বিয়ের ভোজ নিয়ে কী লিখছেন মহেন্দ্রনাথ দত্ত:
‘কলাপাতায় বড় বড় লুচি আর কুমড়োর ছক্কা। কলাপাতার এক কোণে একটু নুন। মাসকলাই ডালের পুরে আদা মৌরি দিয়ে কচুরি, নিমকি, খাজা, চৌকো গজা, মতিচুর এইসব সরায় থাকিত। আর চার রকম সন্দেশ থাকিত। আগে গিন্নিরা নিজেরাই রাঁধিতেন। কিন্তু একদল লোক খুঁত ধরে ভোজ পণ্ড করে দিত বলে মেয়েরা আর রাঁধিতেন না। ’
- একদল লোক খুঁত ধরে খাওয়াদাওয়া পণ্ড করে দিত?
- হ্যাঁ রে, নিন্দেমন্দ, খুঁত ধরা, গাল পাড়া, ঘোঁট পাকানো, জাতপাত তুলে ভোজ বয়কট – এইসব নষ্টামি খুব ছিল।
- এ বাবা!
- আবার এটা কি জানিস, কলকাতার বিয়েবাড়িতে অনেক দুষ্ট লোক যেত জুতো চুরি করতে। সেই জন্য গৃহকর্তার সঙ্গে চাকরও যেত জুতো পাহারা দিতে। বিয়েবাড়ির সামনে ঘোড়ার গাড়ি আর পালকির পার্কিং প্লেস বানাতে হত।
- হি হি।
কালো রামধনু - ৩ : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৬ জুলাই ২০২২ | ২৭৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মানসের কাছ থেকে যতটুকু জানা গেল, তা হল এই, যে শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তুহিন আর ঋক পার্টিতে পৌঁছয়। তারপর যথারীতি হাই-হ্যালো, নাচ, ড্রিংক্স এসব চলছিল। সবাই বেশ ভাল মুডেই ছিল। কথা নেই, বার্তা নেই – কোথা থেকে ওই আমন শর্মা নামে ছেলেটা এসে তুহিনকে চুমু খেতেই পুরো সিচুয়েশন পাল্টে গেল। ঋক তো রেগে টং। তারপর খানিক কথা কাটাকাটির পর তুহিন আর ঋক দু’জন পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। নাহ্, কোথায় গেছিল সেটা মানস জানে না। পার্টিতে তুহিনের হাতে গ্লাস ছিল, সে ব্যপারে মানস নিশ্চিত। কিন্তু কী খেয়েছে, কার থেকে খেয়েছে – তা মানস জানে না।
চাষার ভোজন দর্শন – ৩০শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২১ জুলাই ২০২২ | ১৫০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সেই কুকিং ইভেন্টের আয়োজন হয়েছিল আমস্টারডাম শহরের একপ্রান্তে, মানে মূল শহর কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে ‘দি কুকফ্যাব্রিক’ (বাই ফার্ম কিচেন) নামে সেই কুকিং ওয়ার্কশপ। আইডিয়া বেশ সিম্পল – সব অংশগ্রহণকারী একসাথে রান্নাবান্না করবে। নিজেদের মধ্যে টিম বানিয়ে কম্পিটিশন করবে, পুরো কোর্স মিল বানিয়ে বা বেশি সময় হাতে না থাকলে এক একটা টিম ডিনার/লাঞ্চ-এর এক একটা পদ বানিয়ে। আমার যেখানে গিয়েছিলাম, কুকফ্যাব্রিক-এর সেই ওয়ার্কশপটা বেশ বড়সড় জায়গা জুড়ে আছে – প্রায় ১২০০ বর্গমিটার। বিখ্যাত ডাচ টিভি শেফ জুলিয়াস জেসপার এই মুহুর্তে জড়িয়ে আছেন এই সংস্থার সঙ্গে। তাঁর তৈরি মেনুই এখানে রান্না করা হয়। মোটমাট ১৮টি কুকিং স্টেশন আছে, আর আছে ৩টি ডেমোনস্ট্রেশন কিচেন। সব মিলিয়ে ২৭০ জন মত পাবলিক এখানে বসে খেতে পারে। আর মর্ডান কিচেনে যা যা থাকে, সবই পর্যাপ্ত সাপ্লাই দেওয়া হয় – তাই ছানা কেটে গেলে বলতে পারবেন না, যে হাতের কাছে নাড়ার কিছু ছিল না বলে এমন হল!
“অন্ধ বিশ্বাসের উপনিবেশ” – কয়েকটি পর্যবেক্ষণ : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ১৯ জুলাই ২০২২ | ১১১০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪৩
লেখাটির মাঝে কিছু সত্য আছে। আবার সত্যকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে লেখকের নিজের মর্জিমাফিক বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়নি, দুয়েকটি বিষয় এবং প্রধানত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর (“বরিষ্ঠ সম্পাদক” নন, সত্যের খাতিরে বললে) পিটার দোশীর একটি বা দুটি প্রবন্ধকে হাতিয়ার করা হয়েছে। এর বাইরে অসংখ্য গবেষণাপত্র আছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ল্যান্সেট, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মান্য জার্নালগুলোতে। এবং এ জার্নালগুলো কর্পোরেটদের টাকায় নিয়ন্ত্রিত হয়না। এসব জার্নালে স্বাধীন গবেষণাপত্র ছাপা কর্পোরেট ফান্ডিংয়ের বদান্যতা ছাড়া। যদি বিজ্ঞানের এই স্বাধীন পরিসর না থাকে তাহলে বলা ভালো – প্রপঞ্চময় এ কর্পোরেট বিশ্বে কেউ স্বাধীন নয়। স্বাধীন হওয়া সম্ভবও নয়, “জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া” ফুটিয়ে না দিলে।
এখানে একবার স্মরণ করে নেওয়া ভালো – যখন বিভিন্ন রকম সাক্ষ্যপ্রমাণ, উপাত্ত বা সম্ভাবনা থেকে শুধুমাত্র নিজের অনুকূলে বা পক্ষে যায় এরকম উপাত্ত, প্রমাণ বা সম্ভাবনাকেই বাছাই বা নির্বাচন করা হয় তখন যে হেত্বাভাস বা অনুপপত্তি (অর্থাৎ ভ্রান্ত যুক্তি) সংঘটিত হয়, তাকে যুক্তিবিদ্যায় পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই বা ইংরেজি ভাষায় চেরি পিকিং (Cherry picking) বলা হয়। পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই হতে পারে। তবে জনবিতর্কে এই ভ্রান্তি একটি বড় সমস্যা।
সীমানা - ১০ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৩ জুলাই ২০২২ | ৩৫০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আলি আকবর বলল, আমি তো কবে থেকেই বলছি খবরের কাগজে চাকরি করে আপনি আপনার প্রতিভার অপচয় করছেন। ছেড়ে দিন ওসব চাকরি, আপনার উচিত সর্বক্ষণের সাহিত্যসেবী হওয়া। নজরুল পেট চাপড়িয়ে বলল, কিন্তু মধ্যপ্রদেশ কি রাজি হবে? আফজালুল বলল, ঠিক আছে, আমি আপনাকে একটা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনি যদি সাহিত্যের হোলটাইমার হন, আর আপনার যাবতীয় রচনা আমাকে দেন মোসলেম ভারত-এর জন্যে, আমি তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে একশো টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। প্রমিস! আপনার প্রতিভার তুলনায় এ-টাকাটা কিছুই নয় আমি জানি, কিন্তু আপনার মধ্যপ্রদেশ মনে হয় শান্ত থাকবে এতে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২১ জুলাই ২০২২ | ১৩৩২ বার পঠিত
কথোপকথন শুরু হল। কী নিয়ে? সত্যি বলছি, ভুলে গেছি। উঁহু! পরস্পরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছিলাম, যেমন ‘আপনি এখানে কীভাবে এসেছেন?’ ও ‘এতদিন কোথায় ছিলেন? - গোটা পৃথিবীর লোক জানে যে আপনি মৃত।’ হ্যাঁ, এভাবেই কথা শুরু হল: তবে ডাক্তার আমাকে কী বলেছিলেন, আর আমিই বা তাকে কী বলেছিলাম, সেসব সঠিক বলতে পারব না, কারণ আমি তো তার দিকে হাঁ করে তাকিয়েই ছিলাম, যে মানুষটার পাশে এখন মধ্য আফ্রিকায় বসে আছি, তাঁর দারুণ চেহারা ও মুখের প্রতিটা দাগ মুখস্থ করছিলাম।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩৬) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২১ জুলাই ২০২২ | ২৩০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
- যাই বল জেঠিমা, মেয়ের বিয়েতে নিরামিষ হওয়াটা কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। মেয়েদের কী দোষ?
- দোষ গুণের কথা নয়, এ হল এক একটা পরিবারের রীতি।
- তাই বলে, মেয়ের বিয়েতে কোফতা কাটলেট, ফ্রাই, কালিয়া, পাতুরি কিচ্ছু হবে না? সব ছেলেদের হবে?
- কেন হবে না? সব হবে।
- কী করে হবে? বলছ তো নিরামিষ।
- নিরামিষে তুই যা যা বললি – সব হয়।
- অসম্ভব।
- হয় রে হয়। এঁচোড়ের, মানে গাছ পাঁঠার কালিয়া হয়, ছানার পাতুরি হয়, লাউ পাতায় মশলা পোরা পাতুরি হয়, মুড়িঘণ্টের বদলে মোচার চণকান্ন, চালপটল হয়, কাঁচকলার কোফতা, থোড়ের কোফতা হয়, আর কাটলেট কত নিবি? বিটের কাটলেট, সয়াবিনের কাটলেট, পনির কাটলেট, বাঁধাকপির কাটলেট – সব হয়। মাশরুমের ফ্রাই দারুণ খেতে হয়। তাছাড়া পটলের দোরমা, ওলের ভর্তা – এসবও হয়। আমাদের দেশে নিরামিষ রেসিপি আমিষের থেকে কম কিছু নেই।
আমার তারাশঙ্কর : অমর মিত্র
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ২৪ জুলাই ২০২২ | ১৮৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি দেখেছি। আমি নিজেই বিস্মিত হই, আমাদের গদ্য সাহিত্যের তিন স্তম্ভ, তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য দু'জনকে আমি দেখিনি, তারাশঙ্করকে আমি দেখেছি। দেখাটা আশ্চর্য ব্যাপার মনে হয়। ঈশ্বরকে দেখা যায়, সৃষ্টিকর্তাকে? বড় লেখক তাে সৃষ্টিকর্তা। তিনি চারপাশের বাস্তবতা থেকে নানা উপাদান সংগ্রহ করে নিজের মতাে করে একটি জগৎ নির্মাণ করেন। যা দেখেছেন লেখক তা দিয়ে তাঁর পৃথিবী নির্মাণ করেন, তার ভিতরে আমাদের না দেখা এক পৃথিবী গড়ে ওঠে। বড় লেখক, বড় শিল্পী তা করেন। বাস্তবতা আর কল্পনা মিলে মিশে যায় সেখানে। সীমাহীন কল্পনাই তাে এই ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিসূত্রে নিয়ে গেছে।
দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হলে কি রামপ্যারি ন্যায় বিচার পাবেন? : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : রাজনীতি | ২২ জুলাই ২০২২ | ১৫১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
২২ জুন, দ্রৌপদী মুর্মুর এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার খবর আসে। তার ঠিক ১০ দিন পরে, মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলা থেকে খবর এলো যে সাহারিয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের ৩৮ বছর বয়সি এক মহিলা, রামপ্যারিকে, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাঁর পরিবারকে মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে ৬ বিঘা জমি দেয়া হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে কাগজপত্রও ছিল। কিন্তু জমি দখল করে বসেছিল আদিবাসী নন এমন সমাজের মানুষেরা। জবরদখল করার পরে তারা আবার সেখানে কৃষিকাজও করছিল। উপরন্তু, রামপ্যারির পরিবারকে হুমকিও দিচ্ছিল ওরা। এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তা আগে, রামপ্যারি ও তাঁর স্বামী অর্জুন, পুলিশকে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানায় এবং তাঁদের কাছে সুরক্ষাও চায়। কিন্তু, কিছুই করা হয়নি। রামপ্যারি যখন মাঠে গিয়ে আপত্তি জানান, তখন তারা সেখানেই ওঁর গায়ে ডিজেল ছিটিয়ে ওঁকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভিডিও-ও পাওয়া যায়। এইবারে আমি ভাবতে বসলাম, যদি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হন তাহলে কি রামপ্যারি ও তাঁর পরিবার ন্যায় বিচার পাবেন?
রানারের ডায়েরি : নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৩ জুলাই ২০২২ | ১১০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কুঁদলি/কুঁদরি/তলি, নোনা এইসব ছিল প্রান্তিক মানুষ, কুড়ানিদের খাবার। এখানে ওখানে যারা অস্থায়ী সংসার পেতে থাকত। কয়েকজন বা একা। চট বা মাদুরে জড়ান সংসার পাতত, মাটির ছোট উনুন তুলে কদিন রেঁধে বেড়ে খেত, আবার চলে যেত। হাট থেকে কুড়ানো সবজি ফল, ছাঁট। এখান ওখান থেকে সংগ্রহ করা মেটে আলু, ডুমুর, ওল, নোনা, কচু, হরেক রকম শাক, গুগলি, কাঁকড়া এসব দিয়ে তাদের খাবার তৈরি হতো। ভাতে ভাত সেদ্ধ অথবা সব মিলিয়ে একটা ঝোল।
কলঙ্কের ক্লাব : স্বাতী ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | খবর : মায়া মিডিয়া | ২৪ জুলাই ২০২২ | ১৬৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
২২ জুলাই কলকাতা প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে এক কলঙ্কের দিন। কলকাতার সাংবাদিকদের এক লজ্জার দিন। যাঁদের তোলা ছবি এক একটি ছবি সহস্র বাক্যের সমান, তাঁরা নাকি ‘সাংবাদিক’ নন। হয়তো আরও কিছু সদস্য বৃষ্টি, ব্যস্ততা ঠেলে ভোট দিতে এলে অন্য রকম হত ফলটা। সে আক্ষেপ বারবার ঠেলা দিচ্ছে চিন্তাকে। কিন্তু কলকাতার শতাধিক সাংবাদিক যে মনে করেন, চিত্রসাংবাদিকরা সাংবাদিক নন, সে কথাটা ছুরির মত বিঁধছে। তবে কি ছোঁয়ান্যাপার ভয়ের মত, ক্রমাগত আমরা অন্যকে ছোট করে নিজেকে শুদ্ধ, ভদ্র, সম্মানযোগ্য রাখার চেষ্টা করতে করতে কাণ্ডজ্ঞানকেও ফিনাইল-জলে ধুয়ে ঝেঁটিয়ে বের করে দিয়েছি? ভুলে যাচ্ছি, যোগ্যকে মর্যাদা দিতে না জানার মত অযোগ্যতা আর কিছুতে নেই?
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩৭) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৮ জুলাই ২০২২ | ২০২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
- দেখ মা, আমাদের বাড়িতেও গোপীনাথ কৃষ্ণ। আবার তোমার আড়বালিয়ার বাড়িতেও যে সতীমা, আউলচাঁদ – সেখানেও কৃষ্ণের প্রভাব তুমি বলেছিলে। সারা বাংলা জুড়ে এত কৃষ্ণ কী করে এল মা? কৃষ্ণ তো মথুরা, বৃন্দাবনের লোক – মানে উত্তর প্রদেশের। মৃত্যু গুজরাটে। পশ্চিম থেকে এভাবে পূর্বে চলে এল?
- সে তো আসবেই। এক দেশ, এক সংস্কৃতি। কিন্তু তুই যেটা ভাবছিস কৃষ্ণের প্রভাব – পুরোটা তা নয়। বহিরঙ্গে আমরা অনেক বেশি দুর্গাপুজো আর কালীপুজো করছি। মাছ, মাংস খাওয়ারও কমতি নেই। কিন্তু গৃহদেবতা হিসেবে যে কৃষ্ণ থেকে গেছেন, সেটা হল চৈতন্যের প্রভাব।
- শ্রীচৈতন্যদেব? কিন্তু তাঁর কথা তো খুব একটা ভাবি না। মানে আলাদা করে তাঁর পুজো বা স্মরণ – এসব তো হয় না।
- হয়, তুই বুঝতে পারিস না।
- কেন বুঝতে পারব না? তুমি বোঝাও।
রাষ্ট্র-অতি রাষ্ট্র, নাগরিক-অনাগরিক এবং হাড়-হাভাতে ফ্যাতাড়ুরা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ৩০ জুলাই ২০২২ | ২০৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আরো একধাপ এগিয়ে আবার আমার আপনার মতো কোন অর্বাচীন, অকালপক্ক, অর্ধশিক্ষিত দেখে এর মাঝে hegemony তথা মান্যতা নিয়ে টিঁকে থাকবার নানা রকমের কৃৎ-কৌশল রয়েছে। কৃৎ-কৌশল রয়েছে রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্রের হয়ে ওঠার চারিত্র্যলক্ষণের মধ্যে আছে ক্রমশ ঘৃণাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া – শব্দে, চিত্রকল্পে, প্রাত্যহিক সংলাপে। হিংসাকে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী করে তুলতে হবে (spectacularized violence)। ধীরে ধীরে এগুলোকে সহনীয় করে তোলা। নিজের নিয়মেই সহনীয় হয়েও যায়। যাকে পছন্দ করিনা তাকে ‘দানব’ বানিয়ে দাও (demonization), শিক্ষা থেকে থেকে সরিয়ে দাও প্রশ্ন করার সাহস, উৎসাহ এবং পরিসর। শিক্ষকেরা হয়ে যাক educational managers, ছাত্রের মাঝে “কেন?”-র প্রবাহ তৈরি করার কোন জ্ঞানভিক্ষু নয়। একটি সংস্কৃতির জন্ম হবে যার ভিত্তি হবে কেবল তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর, শুধুমাত্র বর্তমানকে চিনি বুঝি যাপন করি, অন্য কিছু নয়। অতীতের এবং ইতিহাসের পুনর্নিমাণ হবে। সমাজের অন্ধকার জগৎ, যাদেরকে চালু ভাষায় লুম্পেন বলা হয়) আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেবার, ক্ষমতার বৃত্তের সাথে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে।
কালো রামধনু - ৫ : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ৩০ জুলাই ২০২২ | ২০৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
সৌম্য জিজ্ঞেস করলো, “কেন একথা বলছেন বলুন তো?”
- কারণ খুঁজে বের করা তো আপনার কাজ। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক যে কতটা ‘মধুর’ ছিল, সেটা আপনি বাড়ির কাজের লোকদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
- তাই বুঝি? দু’জনের মধ্যে এই তিক্ততার কোনো বিশেষ কারণ ছিল কি?
- বিশেষ আর কী? নিজের ওরিয়েন্টেশন লুকিয়ে বিয়ে করা, এটাই কি যথেষ্ট কারণ নয়? আপনার বন্ধু ছিলেন, এখন আর পৃথিবীতে নেই, তবুও বলছি, কাজটা কিন্তু তুহিনবাবু ঠিক করেননি। আর এই সবের পর যদি স্ত্রী অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেন, তাকে কি দোষ দেওয়া যায়? আরে বাবা, বাড়িতে হাঁড়ি না চড়লে মানুষ তো খাবার বাইরে থেকে অর্ডার করবেই, তাই না?
একটি প্রতারক শূন্যতা ...স্মরণে কবি প্রবুদ্ধসুন্দর কর : চিরশ্রী দেবনাথ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ৩১ জুলাই ২০২২ | ২৩৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
কবিতার সঙ্গে আপোষহীন এই মানুষটিকে তাই পড়তেই হবে বর্তমান এবং উত্তর প্রজন্মকে। নিন্দিত এবং নন্দিত হওয়া যেকোনো সৃজনশীল মানুষের যাত্রাপথের পাথেয়, কেউ হয়তো ইচ্ছে করেও অধিক আলোচিত হওয়ার জন্য নিজেকে নিন্দিত এবং সমালোচিত হতে দেন, এসময়টা তখনই আসে যখন সৃজনশীলতার গতিপথে সামান্য ছায়া ঘনিয়ে ওঠে, একজন কবির কাছে এই সময়টা হলো সবচেয়ে কঠিন এবং অন্ধকারতম সময়। কোনো কোনো কবি তখন স্তব্ধ থাকেন, সরিয়ে রাখেন নিজেকে, কেউ বা অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠেন, সমস্ত বিষয়েই আক্রমনাত্মক বিচ্ছুরণ, কবিতা তখন শ্লেষ, বিদ্রুপ এবং কবির স্বভাবগত তীক্ষ্ণ মেধা ও শব্দের ওপর আসুরিক ও ঐশ্বরিক দখলে এক একটি যন্ত্রণাদায়ক উল্কির মতো বিঁধতে থাকে পাঠককে, এই চলমান সময়ে কবি প্রবুদ্ধসুন্দরের লেখাকে আমার তাই মনে হয়েছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৪ আগস্ট ২০২২ | ৯৭০ বার পঠিত
আমি পসরার মূল্য দিয়েছি, ওঁকে সাহায্য করার জন্য এতদূর এসেছি। তবে গত রাতে ওঁকে যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে যে, আমাকে যেরকমটা বিশ্বাস করানো হয়েছিল উনি ঠিক ততটা কিপটে, মনুষ্যদ্বেষী নন। স্বল্প কথায় উনি আমাকে অভ্যর্থনা করলেও, আমার সঙ্গে করমর্দন করার সময় যথেষ্ট আবেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ তাঁর পিছু নিলে তিনি যদি সে মানুষের প্রতি এতই বিরক্ত হতেন, তাহলে কি আর আমায় ওই ভাবে স্বাগত জানাতেন?
সীমানা - ১১ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৬ আগস্ট ২০২২ | ৩৫৪৪ বার পঠিত
আম গাছটা খুঁজে পেতে যে অনেকটা সময় গেল এমন নয়। নজরুল অবাক হয়ে দেখে, এই যে ছ-সাত বছর বাদে সে ফিরে এসেছে দরিরামপুরে, কিছুই যেন বদলায়নি। এই আমগাছটা, এর সামনের পুকুরটাও তো ঠিক আগের মতোই আছে। এখানে বসে বসেই দূরে বিচুতিয়া বেপারীর বাড়িটা দেখা যায়, বাড়ির সামনের কাঁঠাল গাছটা একই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, কোথায় গেল মাঝখানের এতগুলো বছর! নজরুলের মনে হয়, সে যেন স্কুলের পর ওই বাড়িটাতেই কোনরকমে বইখাতাগুলো রেখে দৌড়ে এখানে এসে বসলো এইমাত্র। সূর্য অস্ত যাবার আর বেশি দেরি নেই, লালচে আকাশের রং পুকুরের জলে পড়ে নিস্তরঙ্গ জলটারও রংও বদলিয়ে দিল। এরই মাঝে এক দঙ্গল কিশোরীর কলধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুকুর-পার। ওরই মধ্যে শ্যামলা একটি মেয়ে, বন্ধুদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বোধ হয় নজরুলের দিকে তাকিয়ে নিল একটা মুহূর্তের জন্যে। তার শিথিল বেণী থেকে কি খসে পড়ল একটা ছোট্ট মাথার কাঁটা? কবে যেন সেই ছোট্ট কাঁটাটাকে বুক-পকেটে ভরে নিয়ে যত্ন করে রেখে দিয়েছিল নজরুল তার ছোট টিনের বাক্সটায়। তারপর চুরুলিয়া-আসানসোল-শিয়ারশোল-কলকাতা-নৌশহরা-করাচি হয়ে আবার কলকাতায় যখন ফেরে নজরুল বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রীটের ঠিকানায়, তখন ওর জিনিসপত্রের মধ্যে মুজফ্ফর আহ্মদের চোখে পড়ে যায় এতদিন-ধরে-যত্ন-করে-রেখে-দেওয়া ওই মাথার কাঁটা!
রানারের ডায়েরি : নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৬ আগস্ট ২০২২ | ১২৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এই তো একবছর হয়নি, আমার অজাতশত্রু বোন, আমার অজাতশত্রু ভাই পূর্ণ মেজাজে ডালপালা মেলে ধরেছে। তাদের পাতা ঝরে পড়ছে। পাতাগুলো ঝাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে তাদেরই ছায়ার নীচে মাটিতে। এছাড়া মাটিকে আচ্ছাদিত করে আছে কিছু প্যারা ঘাস, লজ্জাবতী, দুর্ব্বো। ভাইয়ের গায়ে লতিয়ে উঠছে অপরাজিতা। ঝরাপাতা বাদামী থেকে কালো হয়ে উঠেছে। ঘাস-পাতা-গুল্ম আচ্ছাদিত মাটি রসে টইটম্বুর। সেখানে প্রতিনিয়ত মাননীয় মিলিপেড, সেন্টিপেড, কেঁচো, শামুক, পিঁপড়ে ও অন্যান্য (আমার নাম না জানা) পোকাদের চলাফেরা। তারাই তো মাটির স্বাস্থ্য, মসৃণতা এইসব বজায় রাখবেন – যাতে মাটি গ্যালন গ্যালন জল ধরে রাখতে পারে তার পেটের ভেতরে। আর ফুল-পাতা-ঘাস যা ঝরে পড়বে সবাইকে জারিয়ে করে দেবে মাটির খাবার। মাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
টুকরো ছবির ফ্রেম : শ্যামলী আচার্য
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১৬৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সাহিত্য নয়, কথকতা। পড়তে পড়তে মনে হয়, কথকতাও নয়, চিত্রনাট্য। সাবলীল গদ্যের টানে টেনে নিয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রই যেন। প্রতিটি ছোট ছোট অভিজ্ঞতা আর তার আগে-পরে বহু ফ্ল্যাশব্যাক মুহূর্তকে লেখক ধরেন কখনও ক্লোজ শট, কখনও মিড শট, কখনও লং শটে। তাঁর ক্যামেরার চোখে কখনও ভি শান্তারাম, কখনও বিমল রায়, কখনও গুলজার। ছোটখাটো চেহারার ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত আদ্যন্ত বাঙালি যে মানুষটি বাংলা সাহিত্যের পুনর্নির্মাণ করেছেন সেলুলয়েডে, তাঁর নির্ভার স্মৃতিচারণে কী অবলীলায় ধরা পড়েছে ষাট-সত্তর দশকের বোম্বে থেকে কলকাতা। শচীনকর্তার বাড়ি থেকে হেমন্ত কুমারের সঙ্গে আড্ডা, বিমল রায় থেকে সত্যজিৎ রায়ের সাহচর্য, ম্যাডাম কাননবালা থেকে মিসেস সেনের কাছের মানুষ, মহানায়ক উত্তম থেকে ম্যাটিনি আইডল রাজ কাপুরের সখ্যতা... বর্ণময় জীবন কি একেই বলে?
সুপ্রিম কোর্টের সিলমোহর সেই তিমিরেই : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৬ আগস্ট ২০২২ | ২৪১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
সকালবেলা। জোরে জোরে দরজায় বেল বাজছে। আপনি দরজা খুললেন। খুলেই কিছু অফিসারদের দেখতে পেলেন: "আমরা ইডি। আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সাথে যেতে হবে। এক্ষুণি।" আপনি তাদের সাথে তাদের অফিসে পৌঁছালেন। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়: "আপনি কি গত বছর আপনার একটা প্লট গুপ্তজিকে বিক্রি করেছিলেন?" আপনি বললেন: "হ্যাঁ, আমার নিজস্ব প্লট ছিল, কোনো বিতর্কিত সম্পত্তি ছিল না। দু নম্বরি করে বিক্রি করিনি, কোনো কালো মামলাও নেই। সঠিক পন্থায় নথিভুক্ত, সাক্ষী, সমস্ত প্রমাণও আছে আমার কছে।"
তারা আপনার প্রমাণের প্রতি একটুও আগ্রহী নয়: "আপনি কি জানেন যে গুপ্তা, যার কাছে আপনি প্লট বিক্রি করেছেন, ব্যবসায় কারচুপি করার জন্য তার বিরুদ্ধে ৪২০ র মামলা আছে?" আপনি মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন: "দেখো ভাই, আমি তার কাছে প্লট বিক্রি করেছি, কন্যাদান করিনি। সম্পত্তির এজেন্ট চুক্তিটা করেছে। পেমেন্ট চেকের মাধ্যমে এসেছে। তার সাথে, তার পরিবার বা ব্যবসার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। মাস কয়েক আগে আমি খবরের কাগজে পড়লাম যে তার বিরুদ্ধে কিছু ফর্ম রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব তো আমাদের চুক্তির পরে ঘটেছে।" আপনি মনে করলেন,যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। বিষয়টা মিটে গেছে।
কিন্তু তখনই আপনার মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়বে: "মনে হচ্ছে আপনি PMLA (প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট) আইনটার ব্যাপারে কিছু জানেন না। আপনি এই আইনের অধীনে একজন অপরাধী। কারণ অপরাধের আয় আপনার পকেটে পৌঁছেছে। কাজেই আপনিও একজন অপরাধী। এই অপরাধের দরুন আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার করছি!"
শাসকের রক্তচক্ষু ও অদম্য, অবিচল তিস্তা শেতলবাদ : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১৮৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
তিস্তা লিখছেন তিনি গুজরাটি হওয়ায় গর্বিত। এক সময় ঐ রাজ্য তাঁর ছোটবেলার সুখস্মৃতির অঙ্গ ছিল। রাতের ট্রেনে বোম্বে থেকে আহমেদাবাদ যাওয়া, মা বোনের সাথে পুরানো শহরের জামাকাপড়ের বাজারে চক্কর মারা, তাঁকে এখনো শিহরিত করে। ‘ফেমাস’ নামক রেস্টুরেন্ট থেকে কুচো লঙ্কা, পেঁয়াজ ও পুদিনা পাতা দেওয়া মাংসের সামোসার কথা মনে হলে এখনো তাঁর জিভে জল আসে। ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রের হয়ে ঐ রাজ্যে গিয়ে তাঁর সেই সযত্নে লালিত স্মৃতিমেদুরতা ধাক্কা খেল। তখন লাল কৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা চলছে, গুজরাটে সেটার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিস্তা বিভিন্ন শহর পরিক্রমা করাকালীন কিছু ঘটনার সাক্ষী হন যা তাঁকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত করে তোলে। ট্রেনে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে উল্লসিত হয়ে বলতে শোনেন হিন্দুত্ব ও হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা এখন খুব জনপ্রিয়! হিংসাত্মক কার্যকলাপ করা, খুন করায় গুজরাটিদের যে ভয় ছিল সেটা এঁরা খতম করে দিয়েছে। এটা দারুণ! একবার শহরের গণ্যমান্য মানুষ রউফ ওয়ালিউল্লার সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে মুসলিমদের সমস্যা সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে, সেই বিখ্যাত সামোসা কিনে, ফ্লাইট ধরে বোম্বে বাড়ি ফিরে এসেছেন। সাক্ষাৎকার থেকে বাড়ি, এতে মাত্র এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় অতিবাহিত হয়েছে। বাড়ি ফেরা মাত্র ফোনঃ রউফসাব খুন হয়ে গেছেন!
আরএসএস নিয়ে মহাদেবের ‘সত্য’ সমালোচনা : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১১ আগস্ট ২০২২ | ১১৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই হলেন দেবনুরা মহাদেব। এক আইকনিক কন্নড় সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, জনসাধারণের বুদ্ধিজীবী এবং কর্ণাটকের এক শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক কর্মী। এতই মুখচোরা এবং আত্মপ্রচার বিমুখ, যে মাঝে মাছে সন্দেহ হতে শুরু করে, যে এই লোকটি জনজীবনে করছে টা কী। জনতার মনোযোগ থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার বিশেষ প্রতিভা রয়েছে তাঁর। মঞ্চে তাঁকে হঠাৎই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা— কেউ হয়তো দয়াপরবশ হয়ে বলল: উনি ধূমপান করতে গেছেন। মহাদেব সর্বদা এবং বিরক্তিকরভাবে দেরিতে চলেন, এমনকি আমার তুলনায়ও, সবসময় একটু অপ্রীতিকর, হয়তো কিছুটা বিকৃতও। সেটা কিন্তু বোহেমিয়ান কবির যত্ন সহকারে পরিকল্পিত অসাবধানতা নয়, তাঁর জীবনের এক আলাদা ছন্দ আছে, আছে নিজস্ব পূর্বাপরবোধ, যা চিরাচরিত কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তির ক্ষেত্রে কল্পনাই করা যায়না।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৩৯) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১১ আগস্ট ২০২২ | ১৫২৭ বার পঠিত
আমুদী মাছটাও বেশ সুস্বাদু। বিয়ের আগে খাওয়া দূরস্থান, এসব মাছের কখনও নামও শুনিনি আমি। একটু ছোট আকারের লালচে স্বচ্ছ ধরণের চেহারা মাছটার। নুন-হলুদ মাখিয়ে ভাজা হয়, তবে ফ্যাসার মত কড়া করে নয়। সর্ষের তেলে কয়েক দানা চিনি ফেলে শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দেওয়া হয়। পেঁয়াজ কুচো, আদা রসুন বাটা, হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে কষে তেল ছেড়ে গেলে টমেটো বাটা মেশায় রুনাদা। আবার মশলাটা কষে। এইভাবে দু’বার করে কষে ধৈর্য ধরে এক একটা রান্না করে রুনাদা, আমি দেখি। এবার অল্প জল দিয়ে মাছগুলো ঢেলে দেয়। এবারে বেশ ছ’-সাতটা নধর কাঁচালঙ্কা আস্ত আস্ত ঝোলে ফেলে চাপা দিয়ে দেয়। আর এমন চৌখস, উনুন থেকে কড়া নামিয়ে দেবে ঠিক সময়ে, কিন্তু ঢাকা খুলবে না। পুরো ভাপটা ঠান্ডা হয়ে রান্নার ঝোলে ঢুকে যাবে। আর খাওয়ার সময়ে ঝোলে একটা অসাধারণ কাঁচালঙ্কার গন্ধ বেরোয়, কিন্তু ঝাল হয় না। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি রান্নায় ঐ কাঁচালঙ্কার ফ্লেভার আনার, এখনও সফল হতে পারিনি।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১১ আগস্ট ২০২২ | ১১৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
১৮৬৯ সালের অক্টোবরে আমাকে লিভিংস্টোন আবিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মিঃ বেনেট টাকা নিয়ে বসে ছিলেন আর আমিও যাওয়ার জন্য তৈরি। পাঠক, লক্ষ্য করবেন যে আমি কিন্তু সরাসরি তাঁকে খুঁজতে চলে যাইনি। এই কাজ শুরু করার আগে আমার আরও অনেক কাজ ছিল, অনেক হাজার মাইল পেরোতে হয়েছিল। ধরুন যে, প্যারিস থেকে সোজা জানজিবারে পৌঁছে গেলাম, সাত বা আট মাস পরে, সম্ভবত, উজিজিতে আমাকে পাওয়া যেত তাহলে, কিন্তু লিভিংস্টোনকে তখন সেখানে পাওয়া যেত না; তিনি তখন লুয়ালাবাতে ছিলেন; এবার আমাকে তাহলে মান্যুয়েমার আদিম বনের মধ্য দিয়ে, লুয়ালাবার আঁকাবাঁকা পথ ধরে, তাঁকে ধাওয়া করে কয়েক শত মাইল ঘুরে ঘুরে মরতে হত।
স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরে : সচ্চিদানন্দ দত্ত রায়
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১৫ আগস্ট ২০২২ | ২১৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
আশঙ্কা ও বিষাদের হাত ধরে ১৪ ই অগাস্ট '৪৭ এসেছিল- আমরা পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে গেলাম। তবে স্কুলে বা বাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা ওঠে নি। মাঝে, অখণ্ড বাংলা গঠনের কথা নিয়ে শরৎ বসু, কিরণশঙ্কর রায়, সোহরাবর্দি প্রভৃতি নেতারা বহু আলোচনা করলেও, হিন্দু-মুসলমান রাজনৈতিক নেতারা প্রায় সকলেই এ প্রস্তাব অন্তত তৎকালীন পরিবেশে অবাস্তব মনে করলেন। বর্ণহিন্দুরা পাকিস্তানের মুসলমান গরিষ্ঠতার শাসন মেনে নিতে অপ্রস্তুত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য মহাত্মা গান্ধীর আন্তরিক প্রয়াস তাঁদের মনে বিন্দুমাত্র সাহস যোগাতে পারল না।
আমাদের বাড়ির আট- নয় গৃহস্থ পরিবারের মধ্যে পড়ে রইলাম আমরা তিন - চার ঘর। মা বাবার ওপর চাপ দিতে লাগলেন কলকাতায় সপরিবার চলে যেতে। বাবা তখনও গররাজি। এভাবে এক বছর কেটে গেল। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে টেনের ক্লাস আরম্ভ হল। ততদিনে স্কুলের মাঠ চোর-কাঁটায় ভরে গেছে, খেলাধুলা হয় না। গ্রামের ক্লাবের অবস্থাও সঙ্গীন। টিমটিমে আলো-ও জ্বলে না সন্ধ্যের পরে। ম্লান সন্ধ্যা। নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব ঘিরে ধরতে লাগল।
ঐ বছরই, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দূর্মূল্যতা সম্পর্কে বাবা এক পত্রে লিখছেন , " চালের দাম মণ প্রতি ২১-২২ টাকা; দুধঃ টাকায় তিন - সাড়ে তিন সের; নারকেল ১ জোড়া ৮-১০ আনা। পত্রের তারিখ ২৪শে এপ্রিল, ১৯৪৮।
দ্যাশের মাটি : সঙ্ঘশ্রী সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ আগস্ট ২০২২ | ১৯৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সারাটা দাঙ্গার সময় খোকনের কলকাতায় কাটলো। কি আতঙ্ক, কি আতঙ্ক রে বাপ। রোজ অপেক্ষায় থাকে এই বোধহয় কেউ ছুরি হাতে বাসায় ঢুইক্যা আইলো। দাঙ্গা কি আর আগেও দ্যাখে নাই খোকন, ছোটখাটো কম হয় নাই দ্যাশেও।কিন্তু মাতব্বররা সালিসি করসে, কার দোষ ঠিক কইরা দিসে, থাইম্যা গেসে। ১৯৪৬ এর দাঙ্গার এক্কেরে আলাদা। কলুটোলা, রাজাবাজার,পার্কসার্কাস সব বেবাক চুপচাপ। লিচুবাগানের ঘটনার পর তো কলকাতা থম মাইর্যা গেলো। দ্যাশের খবরও খুব খারাপ। নোয়াখালি, আরও কত জায়গার খবর আসে। খোকন অস্থির হইয়া ওঠে, ভিতরে ভিতরে। দাঙ্গার আগুনে সব ছাড়খার।সন্ধ্যাবেলা পিসা আর পিসার বন্ধু অমলবাবু কত কথা কয়, খোকন শোনে একমনে।অমলবাবু বলেন " বুঝলে মিত্তির, লীগ আর হিন্দুমহাসভার নেতাদের বোঝানোই গেলো না, এ লড়াই হিন্দু মুসলমানের বিরুদ্ধে নয়, এ ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে" পিসা কয়,"স্বাধীনতা ও যেই ভাবে আইলো, তাতে লাভ কী হইল অমলবাবু? দ্যাশভাগ আর লাখে লাখে মানুষ আজ ভিটা মাটি ছাইড়া আইতাসে পূর্ব পাকিস্থান থিকা,দাঙ্গা কমলেও এই ভয় কী কমবো কোনোদিন! দুইটা জাতির বিশ্বাস, ভালোবাসা তলানিতে আইসা ঠেকলো ব্রিটিশের শয়তানি আর নেতাদের ভুল চালে।" অমলবাবু কন, ' দাঙ্গা সাধারণ হিন্দুও চায় না মুসলমানও চায় না।চায় শুধু দাঙ্গাবাজগুলো" খোকন ভাবে মামুদ, আনোয়ার তো তারে ভালোবাসে, চিঠি দেয়। খোকন কবে আইবি রে? খোকন তুই নাই তাই ফুটবল খেলা জমে না। তাদেরও অন্তরে বিষ?
ছেড়ে আসা গ্রাম : সোমেন্দ্র নাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১৫ আগস্ট ২০২২ | ১৭২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
পঞ্চক্রোশী। নদী নয়, গ্রামের নাম। আমার নিজের গ্রাম। নামের হয়ত ইতিহাস আছে। সবটা আজ মনেও নেই, থাকবার কথাও নয়। তবু পাবনা জেলার উপান্তে সিরাজগঞ্জ থেকে পাঁচ ক্রোশ দূরের এই গ্রামে আমার জন্ম। নামের ইতিহাস যাই হোক, গ্রামটি যে এককালে নেহাত ছোট ছিল না তার প্রমাণের অভাব নেই। তার পুরনো আভিজাত্যের পরিচয় পাওয়া যায় নানা কাহিনী বিজড়িত কতকগুলো পরিত্যক্ত ভিটে থেকে, আর পাওয়া যায় হৃত-গৌরব জমিদারবাড়ির চুনকাম খসা, নোনাধরা ইঁটের তিন তলা দালানের চোরা কুঠরির গহবর থেকে -- যেখানে এখন চামচিকে আর লক্ষ্মীপেঁচার তত্ত্বাবধানে পড়ে রয়েছে রৌপ্য-নির্মিত আসা-সোঁটা, বল্লম, বিরাট আকারের ছাতি, চিত্র-বিচিত্র করা ভাঙা একটি রাজকীয় পালকি আর বস্তাপচা অজস্র শামিয়ানা, তাঁবু আর শতরঞ্চি। জীবনের যে সময়টা রূপকথা শোনবার বয়স সে সময়ে এমন কোন সন্ধ্যা বাদ যায় নি যেদিন ঠাকুমার মুখ থেকে শুনতে পেতাম না আমাদের গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির নানা অপরূপ কাহিনী।
দেশভাগের দান : সায়ন্তন সরকার
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১৭ আগস্ট ২০২২ | ১৬৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
গল্প শুনতে যে মানুষ ভালোবাসে, তার বোধহয় গল্প বলার লোকও ঠিক জুটে যায়। পরের দিন সুমনকাকু আসতেই তাকে বললাম, তোমার বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বল। স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখ নিয়ে শুরু করল সুমন কাকু, “বাবাকে ওরা গুলি করে মেরেছিল। আমি আর দাদা পালিয়েছিলাম, আমাদেরও ধরেছিল, কিন্তু পরে ছেড়ে দেয়। তখনই পালিয়ে আসি এখানে।”
যে লোকটা এমনি সময় বড্ড বেশি কথা বলে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলার সময় দেখলাম অল্প কথায় কাজ সারল – আমি আর ঘাঁটালাম না। সত্যি বলতে, জিজ্ঞেস করার সাহস হল না। সুমন কাকু কিন্তু তখনও হাসছেন, বাবার মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা বলছেন – কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ-ক্ষোভ কিছুই নেই – কেমন যেন নির্লিপ্ত। এটাই দেশভাগের দান, এই মানুষগুলোর চোখের জল কেড়ে নিয়েছে ৪৭, ৭১ –এই বছরগুলো। এরা আর কিছুতেই আশ্চর্য হয় না।
ড্রয়ারওয়ালা কাঠের টেবিল : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১৭ আগস্ট ২০২২ | ২৮৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৯
সে যাক, এ তো আমার দাদুর গল্প নয়, দেশভাগের কাহিনী, যার গায়ে লেগে আছে, আগুন, হত্যা, অসম্মান আর সব হারাবার টক টক গন্ধ। কিন্তু একথা তো ঠিক, দেশভাগ সম্বন্ধে আমার জ্ঞান পুঁথিগত হয়েও হতে পারেনি ঐ ড্রয়ার দুটির জন্য। আসলে আজকাল স্মৃতি নির্ভর অভিজ্ঞতা, গল্পকাহিনী, এগুলোও ইতিহাসের অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তাই মনে পড়ল ঐ অবিনাশী ড্রয়ার দুটির কথা, যে দুটোতে এখনও রয়ে গেছে মা, ঠাম্মা, দিদা এমনকি প্রতিবেশীদেরও নিজস্ব অভিজ্ঞতা অথবা নিছকই শোনা কথা। টুকরো টুকরো আলাপ এবং প্রলাপ, যাদের জোড়া দিলে উঠে আসে এই উপমহাদেশের একটি বালিকার অকিঞ্চিৎকর শৈশব এবং সেই শৈশবের গায়ে লেগে থাকা এক ভয়ংকর অবিমৃষ্যকারিতার তীব্র গন্ধ। দেশভাগের অনেক পরে জন্ম বলে যে বালিকার পাওনা ছিল একটি নিরুপদ্রব মেয়েবেলা, যে ছিল এইসব ঘটনা থেকে অনেক দূরে, দেশভাগের গল্পকথার অভিঘাত তাকেও ছাড়েনি। চারপাশে মন পালটে দেওয়া, মনুবাদী করে তোলার সমস্ত মাল মশলাই তৈরি ছিল, কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ঐ গল্প ভর্তি গোপন দুটি ড্রয়ার আর সাহিত্যপাঠ। ভাগ্যিস!
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৪০) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৮ আগস্ট ২০২২ | ১৬৮৫ বার পঠিত
রুনাদা আসলে খিচুড়ি হোক, কি মাংস – রান্নার স্বাদটা দারুণ করে। তার কারণ আমিষ নিরামিষ কী সব সিক্রেট মশলা বানিয়ে রাখে। কাঁচা এবং ভাজা দু’রকম। কাঁচা মশলা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে, ওটা দিয়ে রান্না হয়। আর ভাজা মশলা উনুনের আঁচে চাটুতে শুকনো ভেজে গুঁড়ো করে বানায়। ওটা রান্না হয়ে গেলে ওপর থেকে ছড়িয়ে দিতে হয়। ধীরে ধীরে মিশে যায়। মশলাগুলো বানিয়ে যত্ন করে আলাদা আলাদা কাগজে মুড়ে কৌটোয় তুলে রাখে, যাতে গন্ধ না উড়ে যায়। এই রান্নাঘরের মাইনে করা মেয়ে বৌদের ঐ মশলা ছোঁয়ার জো নেই। রুনাদার ধারণা, এই মশলা ওদের হাতে পড়লে নষ্ট হবে। যেখানে সেখানে খোলা রেখে দেবে, হয়তো বেশি ঢেলে দেবে বা কম। সবচেয়ে বড় কারণটা অবশ্য মুখে বলে না। যদি আঁচলে ঢেলে নিয়ে পালায়, এত কষ্টের জিনিস।
দক্ষিণ দামোদর জনপদ : কৃষ্ণা মালিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৭ আগস্ট ২০২২ | ১৩৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
দু’দিকে দুটো লোক – সামনে আর পিছনে দুটো হ্যাজাক ধরে আছে। মালকোঁচা মেরে পরা ধুতি বা গামছা, প্রায় আধ-ন্যাংটা কালোকোলো সন্ন্যাসীরা পরস্পরের এক হাত আর তাদের হাতের দণ্ড ধরে অর্ধ গোলাকৃতি একটা বেড় তৈরি করেছে। নাচছে ভূতের মত। মাঝে মাঝে – বল গঙ্গাধরের চরণের সেবা লাগি, বল তারকনাথের চরণের সেবা লাগি মহাদেব – ইত্যাদি শিবের নানান নাম করে টেনে টেনে বলে চলেছে।
যেটা সবচে’ আশ্চর্য লাগে, তা সন্ন্যাসীদের অমন গলা ছেড়ে মহাদেব – ডাকও নয়, ছায়া-ছায়া ভূতুড়ে নাচও নয়। আশ্চর্য হল – সেই বেড়ের মাঝখানে আমাদের ক্ষুদিরাম মাস্টারমশাই যে! এবং তিনি নাচছেন! এগিয়ে – পিছিয়ে। তিনি তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে পথ শেষ করতে চাইছেন, কিন্তু সেই উপবাসী, আধন্যাংটা সন্ন্যাসীরা – কোথা থেকে এত জোস পেল কে জানে, তারা কিছুতেই এগোতে দিতে চায় না। সামান্য পথ আসতেও তাই দীর্ঘ সময় লাগে।
রাগী, ছাত্র-পেটানো অথচ ছাত্র-দরদী, স্নেহ বৎসল মাস্টারমশাই-এর সব গাম্ভীর্য ওই গাজনের সন্ন্যাসীরা ঘুচিয়ে দিয়েছে। ধুলো হয়ে উড়ছে হ্যাজাকের আলোয় – তাঁরই অটল গম্ভীর মুখোশখানা।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৮ আগস্ট ২০২২ | ১৩৭৮ বার পঠিত
ডাঃ লিভিংস্টোনের বয়স প্রায় ষাট, অবশ্য শরীর সেরে ওঠার পরে তাঁকে পঞ্চাশও পেরোয়নি এমন মানুষের মত দেখাচ্ছিল। তাঁর চুল এখনও বাদামী রঙের, তবে রগের কাছে একটা দুটো ধূসর দাগ দেখা যায়; তাঁর গোঁফ-দাড়ি ঘোর ধূসর। প্রতিদিন দাড়ি কামান। তাঁর হালকা বাদামি রঙের চোখ, দারুণ ঝকঝকে; বাজপাখির মতন তীব্র দৃষ্টি। শুধুমাত্র তাঁর দাঁতই তাঁর বয়সের দুর্বলতা প্রকাশ করে; লুন্ডার কঠিন খাদ্য তাঁর দাঁতের সারিটি ধ্বংস করেছে। শিগগিরই একটু মোটা মতন হয়ে গেলেও, তাঁর চেহারা সাধারণের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা, কাঁধটা একটু সামান্য ঝোঁকা। হাঁটার সময় তাঁর পদক্ষেপ ভারী হলেও দৃঢ়, অনেকটা একজন অতি-পরিশ্রান্ত মানুষের মত। একটা নৌবাহিনীর টুপি পরেন, তার ডগাটা অর্ধবৃত্তাকার, এই টুপি দিয়েই তাঁকে সারা আফ্রিকা চেনে। যখন তাঁকে প্রথম দেখি, তাঁর পোশাক তাপ্পি-মারা, তবু অত্যন্ত পরিষ্কার।
সীমানা - ১২ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৭ আগস্ট ২০২২ | ৩৬১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
অনেক দিন পর কবিতা বেরোল হাত থেকে। বেশ কয়েকবার কবিতাটা পড়ে কাজি নিজে। বেশ হয়েছে, ভালই হয়েছে!– নিজের মনেই বলে কাজি, তারপর ব্যাগ থেকে বের করে একটা লুঙ্গি। মাথা দিয়ে গলিয়ে দেয় লুঙ্গিটা, এবার জামাকাপড় বদলিয়ে পুকুরে নামবে সে। এমন সময় দ্রুতপদে দেখা যায় দুলিকে, সে আসছে পুকুরের দিকেই, নিশ্চয়ই তাকেই ডাকতে আসছে। একটু অপেক্ষা করে কাজি, দুলি এসে পৌঁছোয়, তাড়াতাড়ি আসায় একটু জোরে জোরে শ্বাস টানছে সে। কাজি বলে, আমি একটা ডুব দিয়ে আসি, তু্মি ততক্ষণ পড় এই কবিতাটা, খাতাটা দেয় দুলির হাতে।
এক পুলিশ অফিসারের চোখে গুজরাট ‘দাঙ্গা’ : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২১ আগস্ট ২০২২ | ২৯৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
‘হোয়াই গুজরাট’? তিস্তা শেতলবাদ তাঁর বই ‘ফুট সোলজার অফ কন্সটিটিউশন’ এ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কেন গুজরাটকেই সংঘ পরিবার হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ল্যাবরেটরি হিসাবে বেছে নিয়েছিল? তিস্তা উত্তরে বলছেন গুজরাট হচ্ছে মহাত্মা গান্ধীর রাজ্য, অহিংসা, শান্তির পীঠস্থান। তাঁর এই মতাদর্শকে নিশ্চিহ্ন করার এটাই তো আদর্শ জায়গা! আরবি শ্রীকুমার, গুজরাটের ভূতপূর্ব ডিজি, যিনি সুপ্রিম কোর্টের নজিরবিহীন রায়ের কারণে জাকিয়া জাফরি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, তিনি তাঁর বই ‘গুজরাতঃ বিহাইন্ড দ্য কার্টেন্স’ এ লিখছেন এগারশো শতাব্দীতে সোমনাথ মন্দিরে গজনির সুলতান মাহমুদের আক্রমণের স্মৃতি সচেতন ভাবে হিন্দু মানসিকতায় জিইয়ে রাখা হয়েছে। এর ফলে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে রাজ্যে বারবার সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখা গেছে। ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর মাত্র সাত বছর বাদে সেখানে বড় দাঙ্গা হয়। ১৯৬৯, ১৯৮৫, ১৯৯২, প্রায় প্রতি দশকেই গুজরাটে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখা গেছে। ১৯৬৯ সালে তো ৬০০ জনের মৃত্যু হয়।
তাতকুরার অন্দরমহল : অরুণ কান্তি দাস
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২২ আগস্ট ২০২২ | ১৪৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমার ছোটবেলা ইতিহাসের এক ক্রান্তিকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত অবস্থা, ৫০-এর দুর্ভিক্ষ(খ্রীষ্টাব্দ ধরলে ১৯৪৩), ভারতের স্বাধীনতা, নেতাজীর যুদ্ধ প্রচেষ্টা, বোম্বাই-এর রাজকীয় নৌসেনার বিদ্রোহ, দেশভাগ(বাংলা ও পাঞ্জাব), পাঞ্জাবের-তত-নয় কিন্তু বাংলার অকথ্য দুর্দশার শুরু – যা এখনো এই ৭০-৭১ বছর পরেও চলছে। এতে বাংলার সাধারণ মানুষের কিছু ভুল থাকলেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভুল, স্বার্থপরতা, চিন্তার দৈন্য, দলাদলিও কম দায়ী নয়। তাই ভাবলাম, ওই সময়ে আমাদের বাড়ির, পাড়ার, গ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু লেখা সম্ভব, চেষ্টা করব। মনে রাখতে হবে যে এই লেখা ইতিহাস লেখা হয়। বরং কৈশোরে পা দেওয়া আট বছরের ছেলে যা দেখেছিল ও নিজের মত বুঝেছিল, তার বর্ণনা। তবে এটাও ঠিক বয়স বাড়লে বুদ্ধি সামান্য পেকেছে, আর তাই আগের দেখাগুলি কখনো কখনো অন্যরকম মনে হয়েছে। তাই একটু “ইধার উধার” হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই।
অ্যালফ্রেড হিচককের ছবি – অপরাধের অন্তরাল : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২২ আগস্ট ২০২২ | ২৫৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
ফিল্ম আর্কাইভের প্রতিশ্রুতি থাকতো প্রত্যেক বুধবার করে। প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যা ছ-টায় দেখানো হত ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক, নন্দন তিন-এ। তবে সব বুধবার হত না। আর্কাইভের একটা ফোন নম্বর জোগাড় করেছিলাম আমরা। বুধবার শো-য়ের ঘণ্টা তিনেক আগে ফোন করে কি ছবি এবং তার থেকেও বড় হল আজ দেখানো হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে নেওয়া হত। ৯৮-৯৯ সাল ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে নন্দনের অধিকর্তা ছিলেন অংশু শূর। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব, সিনে সেন্ট্রাল, আইজেন্সটাইন সিনে ক্লাব, আর্কাইভের শো ও আরো অনেক ফিল্ম সোসাইটি - এসব মিলিয়েও আমরা পরিমিত আহার পাচ্ছি না মনে করেই সম্ভবত নন্দনে শুরু হল মাসিক রেট্রোস্পেক্টিভ! নন্দনের অধিকর্তা বদলে গিয়ে তখন নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেক মাসে না হলেও মোটামুটি নিয়মিতভাবেই মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিচালকের এক-গুচ্ছ ছবি দেখানো হত। নন্দনের মূল গেট দিয়ে ঢোকার আগে বাঁ-দিকের কাঁচের শোকেসে নতুবা ডান দিকে দাঁড় করানো স্ট্যান্ডে আটকানো থাকতো এই কর্মসূচির কাগজ। ছবিগুলি দেখানো হবে নন্দন দুই-এ। যারা দেখতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ থাকত নন্দনের লাইব্রেরি থেকে বিনি পয়সার পাস জোগাড় করে নেওয়ার! প্রথম রেট্রোস্পেক্টিভ দেখানো হয় অ্যালফ্রেড হিচককের (১৮৯৯-১৯৮০)! চারটি ছবির কথা পরিষ্কার মনে আছে, 'রোপ'(১৯৪৮), 'রিয়ার উইন্ডো'(১৯৫৪), 'সাইকো'(১৯৬০) এবং 'দা বার্ডস'(১৯৬৩)!
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৫ আগস্ট ২০২২ | ১৩৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
যদি তাঁর চরিত্রের ধর্মীয় দিকটি বিবেচনা না করি, ডাঃ লিভিংস্টোনকে জানা সম্পূর্ণ হবে না। তাঁর ধর্ম তাত্ত্বিক ধর্ম নয়, বরং এ এক ধ্রুব, অকপট, আন্তরিক অনুশীলন। কাউকে দেখানোর জন্যও না, উচ্চকিতও না, শান্ত, ব্যবহারিক জীবনে এই সদাজাগ্রত বোধের প্রকাশ। একেবারেই আক্রমণাত্মক নয়। এই বিষয়টা কখনও কখনও বিরক্তিকরও বটে, যদি অপ্রাসঙ্গিক না হয়। তাঁর মধ্যে ধর্মের মাধুর্য বিরাজমান; কেবল ভৃত্যদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহারই না, স্থানীয় গোঁড়া মুসলমান বাসিন্দাদের প্রতি, তাঁর সংসর্গে আসা সকল মানুষের প্রতি আচরণেই তাঁর ধর্মভাবের প্রকাশ। তীব্র মেজাজ, উদ্যম, প্রাণবন্ত স্বভাব আর সাহসের অধিকারী লিভিংস্টোন এটা ছাড়া অবশ্যই নিঃসঙ্গ, কঠোর প্রভু হয়ে উঠতেন। ধর্ম তাঁকে পোষ মানিয়েছে, তাঁকে একজন খ্রিস্টান ভদ্রলোক বানিয়েছে: অমার্জিত, একগুঁয়েমিকে পরিমার্জিত, অবদমিত করেছে; ধর্মের প্রভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন একজন অতি কাম্য সঙ্গী ও অতি-প্রশ্রয়দাতা প্রভু - এমন একজন মানুষ হয়েছে যাঁর সঙ্গ বেশ ভাল মাত্রায় উপভোগ্য।
রসুইঘরের রোয়াক (দ্বিতীয় ভাগ) - ৯ : স্মৃতি ভদ্র
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ২৫ আগস্ট ২০২২ | ২৪২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এরপর তাড়াতাড়ি বারবেলা আসার অদম্য ইচ্ছে নিয়ে আমি ঢুকে পড়লাম স্কুলের গণ্ডিতে। ঊষাদি, মঞ্জুদি, অশোকাদি, আল্পনা-আপা, নুরজাহান-আপা – যত না পড়া ধরে, তারচেয়ে বেশি গল্প করে। কার বাসা গতবছরের বন্যায় ডুবে গিয়েছিল, কে যুদ্ধের বছরে শরণার্থী হয়ে ক্যাম্পে গিয়েছিল, কার বাড়ির আতা গাছে ফল ধরেছে — সে সব গল্পে গল্পে যতটুকু পড়া বাদ পড়ে, তার সবটুকুই ষোলোআনায় পুষিয়ে দেয় দীপঙ্কর স্যার। কড়া ধাঁচের ছোটখাটো মানুষটি শুধু স্কুলে পড়িয়েই ক্ষান্ত হয় না, প্রতিদিন বিকেলে বাসাতেও যায় আমাকে পড়াতে।
কিন্তু আজ বিকেলে আমি কী ভাবে দীপঙ্কর স্যারের কাছে পড়ব? আমি মনে মনে পণ করে ফেলি, স্যার যতই বকা দিক, আজ আমি ছুটি নেবই নেব।
কাদামাটির হাফলাইফ : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৮ আগস্ট ২০২২ | ১৭২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
বাবার গাল শক্ত হলেই আমি সাধারণত দৌড় দিতাম। আজ অসতর্ক। পেয়েছে।
কিন্তু চড় খেয়েই সজাগ হয়ে, দে দৌড় দে দৌড়।
৫০০ মিটার দৌড়ে এসে ধরেছে।
ধরেই গলায় পা, তোকে আজ মেরেই ফেলবো।
আমি কাঁদছিও না, ছাড়তেও বলছি না।
চুপ করে শুয়ে আছি।
এদিকে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। আমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়। কোনোদিন স্কুল কামাই করি না। পরীক্ষা দিচ্ছি না। মোবাইল না থাকলেও সেযুগেও খবর বাতাসের চেয়ে দ্রুত ছড়াত।
খবর পেয়ে হেডমাস্টার মশাই এসে গেলেন।
বাবা ছাড়বেন না, ওর খুব অহঙ্কার। আমি চাই ফেল করুক।
আমি ওর মধ্যেই বলছি, ইতিহাসে আমি কোনোদিন ফেল করবো না।
বাবা বললেন, তোকে যেতেই দেবো না।
এদিকে অন্য শিক্ষকরাও হাজির।
আধঘন্টা পর হলে গেলাম পরীক্ষা দিতে।
ধুলোটুলো ঝেড়ে।
স্যাররাই কেউ কলম এনে দিলেন।
এই বাবার মতো অসাধারণ মানুষ আমি খুব কম দেখেছি।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৪২) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৪৭১ বার পঠিত
অনেকক্ষণ থেকেই দেখছিলাম, ছোট জা আমাকে চোখ মটকাচ্ছে। ... একটু দূরে আছে বলে ওর ইশারা বুঝতে পারিনি, খাওয়ার দিকেই একতানমন হয়ে ছিলাম। পরে কথা বলে বুঝলাম, জা আমার খাওয়া দেখে ইশারা করছিল, এখনই অতটা পরিমাণ খেয়ে না নিতে। ওর কথাটাকে সত্যি করে, চাটনির পরে এল সাদা ভাত আর ঘি। তারপর একে একে পোস্ত ছড়ানো লাল শাক ভাজা, মুড়োর ডাল, ছ্যাঁচড়া, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস, ঘন টমেটোর চাটনি, দই, মিষ্টি, পান। এমন দুই পর্বের খাওয়া দেখে, খেয়ে আমার মনটা ভীষণ অবাক, আর পেটটা খুব ক্লান্ত হয়ে গেল।
অশোক স্তম্ভ থেকে জাতীয় পতাকা: মোদি সরকার জাতীয় প্রতীকগুলোর মানেই বদলে দিচ্ছে : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২২৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
দ্য প্রিন্টের ওপিনিয়ন এডিটর রমা লক্ষ্মী এই পদ্ধতিকে “বৃহৎ-ই-সেরা, প্রযুক্তি-সজ্জিত, চমকপ্রদ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এটাই মোদি-র সযত্নে তৈরি করা এই ক্ষমতাবান ভাবমূর্তিকে বিকশিত করার তন্ত্র। যদি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয় থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধগুলির দিকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়, তাহলে ঠিক একইভাবে গ্র্যান্ড স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এবং আম্বেদকর মেমোরিয়াল হচ্ছে প্রাক-স্বাধীনতা পর্বের থেকে বর্তমান শাসকরা যা কৌশলে চুরি করে নিজেদের অনুকুলে ব্যবহার করতে পারে, তারই প্রচেষ্টা। সেন্ট্রাল ভিস্তা এখনও উদ্বোধন করা হয়নি, তবে আমরা অনুমান করতে পারি, যে এটা একটা মহিমা প্রচার এবং বিস্ময়ে তাক লাগানোর প্রচেষ্টা হবে। সম্ভবত ওয়াল্টার বেঞ্জামিন ‘দেখনদারির রাজনীতি’ বলতে এইটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। যা জনসাধারণকে ফাঁকা বুলি দিয়ে প্রভাবিত করে, যা চারুকলা, বিনোদন এবং চমকের ভেল্কিতে মানুষকে বাস্তব পরিস্থিতি ভুলিয়ে মাতিয়ে রাখে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১১৯৩ বার পঠিত
এক রাতে আমার নোট-বই বের করলাম, আর তাঁর মুখ থেকে তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কে বক্তব্য শোনার জন্য বসলাম; নিঃসংকোচে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বললেন। তার একটি সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হল। ডাঃ ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৬৬ সালের মার্চ মাসে জাঞ্জিবার দ্বীপ থেকে রওনা দেন। পরের মাসের ৭ তারিখে তিনি সদলবলে কিন্ডিনি বে থেকে আফ্রিকার অভ্যন্তরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁর দলে ছিল বোম্বাই থেকে আসা বারোজন সিপাই, কোমোরো দ্বীপপুঞ্জের জোহানার নজন লোক, সাতজন মুক্তি পাওয়া দাস, আর দু'জন জাম্বেজির লোক। তাদের পরীক্ষামূলক ভাবে দলে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ছটা উট, তিনটে মোষ, দুটো খচ্চর আর তিনটে গাধা। এইরকম মোট ত্রিশজন লোক সঙ্গে ছিল, যাদের মধ্যে বারোজন যেমন সিপাই ছিল, যারা দলকে পাহারা দেবে। তাদের বেশিরভাগই এনফিল্ড রাইফেল দিয়ে সজ্জিত । সেই রাইফেলগুলো বোম্বাই-এর সরকার ডাক্তারকে উপহার দিয়েছিল।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৪৩) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৩৩৮ বার পঠিত
পরে আমি অনেক ভেবেছি জানিস। সকালের পায়েস, বিকেলে সেটা কয়েকমাসের বাচ্চার পক্ষে বিষ, গ্রামে তো অত ঢাকা-চাপা দেবার অভ্যেস নেই। আর এ বাড়িতে সব কিছু কাজের লোকের ওপরে নির্ভর। রুপোর টাকার কোনো দরকার ছিল না। তাও যখন দেওয়া হল, সেটা মুখে লাগানোর আগে গরম জলে ফুটিয়ে নেওয়া দরকার ছিল। আর এ জায়গাটা ঊপকূল। ভূগর্ভস্থ জলস্তর মাটির খুব কাছে। বিভিন্ন স্তরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ফিল্টার হওয়ার সুযোগ পায় না। তাই জলের কোয়ালিটি খুব খারাপ। এখন আমরা বড়রা কেনা জল খাই। ঐ জলে ধুয়ে বাচ্চার মুখে দেওয়া অন্যায় হয়েছিল। আমি কিন্তু তখন প্রফেসর। পুঁথিগত জ্ঞান-বিজ্ঞান সবই জানা ছিল। কিন্তু আমি হাতেকলমে রান্নাবান্না নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। বইয়ের জগতে বাস করতাম। সবকিছুতে বড়দের ওপরে নির্ভর করে চোখ বুজে বসে থাকতাম। আমি তখন মা হয়েছি, তবে প্রকৃত মা হতে পারিনি। অযোগ্য ছিলাম। সেই ঘটনা থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, রান্না আমায় শিখতে হবে। আর হেঁশেলে কর্ত্রী হতে হবে। মূর্খ রাঁধুনিদের ওস্তাদি বন্ধ করতে হবে। আর সন্তানের খাওয়া দাওয়ার জন্য গুরুজন, লঘুজন কারোর ওপরে ভরসা করব না, ভগবান এলেও না।
প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা সুপ্রিম কোর্ট মীমাংসা না করায় আমি হতাশ : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১১৮৯ বার পঠিত
আমি বলছি না, যে ওপরে সেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত সত্য। আসুন আমরা অনুমান করি যে এইগুলি অসত্য ছিল, এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারপরেও, যখন মাটির তলায় চাপা দেওয়া এইসব অভিযোগগুলোকে ওপরে তুলে এনে তা জনসমক্ষে পেশ করা হয় এবং আইনি প্রকিয়ার মাধ্যমে কয়েক ডজন নথিপত্র, তথ্য, উপাত্ত, প্রমাণ-সহ সেগুলো হাজির করা হয় – তখন আমরা কি আশা করতে পারি না, যে আদালত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি ফয়সালা করবে, যাতে কোনো ভুলত্রুটি না থাকে? আমরা যদি ধরেও নিই, যে অভিযোগগুলি সত্য হলেও, সংশ্লিষ্ট বিচারকদের আচরণ বাইরের থেকে প্রভাবিত হয়নি – তারপরেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং আর্থিক নথি প্রকাশের নির্দেশিকা নিয়ে আসতে এই মামলাগুলি খতিয়ে দেখা কি সাহায্য করবে না? এবং যদি এই অভিযোগগুলিতে সত্যের কোনো উপাদান থেকে থাকে তবে এই ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু শুনানি কি বিচারবিভাগীয় দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি ও সংস্কারের সহায়ক হত না?
কালো রামধনু - ১১ : অভিজিত মজুমদার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২১১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
সৌম্য বলল, “এটাকে আসলে বলে ইন্টার্নালাইজড হোমোফোবিয়া। অনেক হোমোফোবিক মানুষ আসলে নিজেরাই গে বা লেসবিয়ান। নিজেদের ওরিয়েন্টেশনকে ঢাকতে এরা ওভার কম্পেনসেশন করে আরো বেশি বেশি হোমোফোবিক হয়ে যায়। এরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে, যে যদি এরা কুইয়ার মানুষজনকে সাপোর্ট করে, তবে লোকে এদের কুইয়ার ভাববে। তুষারবাবুও তাদের মধ্যে একজন। তার সাথেই ছিল কনজারভেটিভ ভোটব্যাংক হারানোর ভয়। সব মিলিয়ে উনি ওই রকম হোমোফোবিক হয়ে উঠেছিলেন। তবে শুধু তুষারবাবু নন, মনে রাখিস আমাদের পলিটিশিয়ানদের অনেকেই এর শিকার। আমি ধরে ধরে এরকম বেশ কয়েকজন পলিটিশিয়ানের নাম বলে দিতে পারি। বিশেষত দিল্লি আর ব্যাঙ্গালোরের। আর আনন্দের মত এরকম অল্পবয়সী, আকর্ষক ছেলেরা এইসব হাই এন্ড ক্লায়েন্টদের গোপনে সার্ভিস দেয়, ফর সাম ক্যুইক ক্যাশ। অল গোজ ওয়েল যতক্ষণ না কোনও গোপন ক্যামেরায় কিছু রেকর্ড হয়ে যায়।”
দক্ষিণ দামোদর জনপদ : কৃষ্ণা মালিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৩৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
রাঢ়ের এই অঞ্চলের অতীতের ইতিহাস আমরা মঙ্গলকাব্যগুলোতে পাই। ... তারা কি দুর্যোধনের মত মারাত্মক? ব্যাপক সামাজিক ধ্বংস, হত্যালীলার নায়ক? মাহুদ্যা আর ভাঁড়ুদত্তের মধ্যে প্রথম জন কেমন যেন মাথা গরমের, আর দ্বিতীয় জন লোভী, কুচুটে। যারা ঝিল বোজাতে চায়, তারা ব্যাপকভাবে অন্ধকারের মানুষ এমনটা নয় কিন্তু! চরম ধ্বংসাত্মক মনোভাব এখানকার মানুষের তেমন নেই। উচ্চকিত মন্দ নেই, গড়পরতা ভাল, গড়পরতা মন্দ।” বলতে বলতে আচমকা হেসে ফেললেন তিনি। বললেন, “তোমরা যদি কখনও উপন্যাস লেখ, এই এলাকার পটভূমিতে মহৎ উপন্যাসের সাদা মানুষ কালো মানুষ নিয়ে মুশকিলে পড়বে। আপাদমস্তক “কালো” মানুষ বোধহয় আঁকতে পারবে না, যদি বাস্তব থেকে চরিত্র খোঁজো। আবার সব ভাল মানুষের পো যদি সেই লেখার চরিত্র হয়, তবে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না নিশ্চিত। কৃত্রিমতার অভিযোগ উঠতে পারে কিন্তু!
সীমানা - ১৩ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৩৫১২ বার পঠিত
বিয়ের দিন স্থিরই হয়ে গেল, শুভস্য শীঘ্রম যেমন বলেছিল আকবর। জ্যৈষ্ঠ পেরিয়েই। আষাঢ়ের তেসরা। আসমতুন্নেসা মেয়েকে নিয়ে এখন এই বাড়িতেই থাকছে, বিয়ে মামাবাড়ি থেকেই হবে। নজরুলের আত্মীয়স্বজনদের খবর দেওয়া হবে কীভাবে, জানতে চাইলেন আলতাফ আলি। আমার কোন আত্মীয় নেই, বলে নজরুল, কুমিল্লার সেনগুপ্ত পরিবারই আমার আত্মীয়, বিরজাসুন্দরীই আমার মা, ওঁদের জানান। আলতাফ বলে, তাহলে কুমিল্লায় চলেই যাই, ওঁরা তো আমাদেরও আত্মীয়, বিশেষ করে আকবরের আর আমার। নজরুল বলে, যাবার আগে আমাকে বলবেন, আমি একটা চিঠি লিখে দেব মাকে।
করোনাকালীন দিনগুলিঃ পাঠপ্রতিক্রিয়া : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৮৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
বইটা একটা ভয়াল নকশিকাঁথার মাঠ। ছুঁচের নিপুণ বুনুনিতে গাঁথা হয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট কোলাজ। তাতে নানান চিত্র, নানান শহরের টুকরো ছবি। কোলকাতা থেকে মুম্বাই, পুনে, কেরল এবং পাটনা। সবমিলিয়ে ধীরে ধীরে উপন্যাসটি ৭২ টি পর্বে এবং পঞ্চাশ হাজার শব্দের বয়নে এক মহাকাব্যিক আকার নেয়। আর বইটি নিখাদ উপন্যাস, সমসাময়িক জীবনের জীবন্ত দলিল, কিন্তু কখনই খবরের কাগজের রিপোর্ট নয়।
একশ বছর আগের স্প্যানিশ প্লেগে শুধু শহর কোলকাতায় দু’কোটি মানুষের মরে যাওয়ার গল্প আমাদের আজ তেমন বিচলিত করে না। ও তো অনেক আগের কথা, তখন ভারত ছিল ব্রিটিশের উপনিবেশ। তখন তো টিবি’রও তেমন চিকিৎসা ছিল না। স্ট্রেপটোমাইসিন আবিষ্কার হয়নি।
আজ স্বাধীন ভারতে এমনটি হতে পারে না। তখন এত হাসপাতাল ছিল না। এত প্রাইভেট হাসপাতাল ছিল না। খোলা বাজারে এত ওষুধ পাওয়া যেত না। আমরা নিশ্চিন্ত থাকি। এখন মানুষের গড় আয়ু তখনকার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কোন চিন্তা নেই।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৫১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লুন্ডা বা লোন্ডা দেশে পা রাখার পরেপরেই, কাজেম্বে শাসিত এলাকায় প্রবেশ করার আগে, লিভিংস্টোন চাম্বেজি নামের একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ নদী পেরিয়েছিলেন। দক্ষিণের সেই ব্যাপ্ত, বিশাল নদী, যে নদীর নামের সঙ্গে লিভিংস্টোনের নাম চিরকাল জড়িয়ে থাকবে, তার সঙ্গে এর খুবই নামের মিল। ব্যাপারটা সেই সময়ে লিভিংস্টোনকে বিভ্রান্ত করেছিল, আর সেই কারণেই , তিনি এই নদীকে তার প্রাপ্য মনোযোগ দেননি, বিশ্বাস করেছিলেন যে চাম্বেজি তাহলে আদতে জাম্বেজিরই উৎস ধারা, আর তাই তিনি মিশরের যে নদীর উৎসের সন্ধান করছেন, তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই। পর্তুগিজ তথ্যের সত্যতার উপর গভীর বিশ্বাস রাখাই তার দোষ হয়েছিল। এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য তাকে অনেক, অনেক মাসের ক্লান্তিকর পরিশ্রম করতে হয়েছে, অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৪৫) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৩৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
– সুমিতাদিদা আর নিনাদিদা এখন কেমন আছেন, মা?
– আছেন বলতে জরাগ্রস্ত, নব্বই ছুঁই ছুঁই। আর নিনাদিদা তো মানসিকভাবে সুস্থ নয়, অল্পবয়সে উত্তমকুমারকে বিয়ে করবে বলে পাগল হয়ে গিয়েছিল। তাই বিয়ে-থাও হয়নি।
– মানে? উত্তমকুমারকে বিয়ে করতে চাইতো?
– হ্যাঁ, হাসছিস? বহুমেয়েই তখন এমন পাগল ছিল। স্টার থিয়েটারে শ্যামলী দেখে নিনাদিদা পাগল হয়ে গেল। রোজ স্টারের দরজায় বসে থাকত। উত্তমকুমার কখন ঢুকবেন, কখন বেরোবেন। তারপর ধীরে ধীরে বিকার গ্রাস করলো। বলতো, উত্তমকুমার ওকে নিয়ে যাবে। মেহগনি কাঠের কারুকাজ করা পুরোনো ড্রেসিং টেবিলের বিরাট আয়নার সামনে সেজেগুজে বসে থাকতো, উত্তমের সঙ্গে বেরোবে বলে ....
সীমানা - ১৪ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০১ অক্টোবর ২০২২ | ৩১৪৩ বার পঠিত
নজরুল চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা, বলে, আলি যখন বিয়ের প্রস্তাব দেয় আমাকে, আমি তখন জিজ্ঞেস করেছিলুম, আপনি কি আপনার ভাগ্নীর মতামত নিয়েছেন? সে কি চায় আমাকে? যে উত্তর আমি পেয়েছিলুম তা হল, আপনি চাইলে ও এক কাপড়ে আজ রাতেই বেরিয়ে যাবে আপনার সঙ্গে। বিয়ের দিন রাত্তিরে যখন বুঝতে পারলুম ওদের ওই আকদের শর্ত কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে, তখন বাসরে আমি নার্গিসকে প্রস্তাব দিয়েছিলুম – মনে রেখো মুজফ্ফর ভাই, আকদে আমি সই করিনি, কিন্তু ইজাব কবুল তো হয়েছিল – আমি প্রস্তাব দিয়েছিলুম, আমার হাত ধর, আমরা বেরিয়ে যাই। গলাটা ধরে আসে কাজির। কিছুক্ষণ নিঃশব্দ বসে থাকে সে। তারপর বলে, ও রাজি হয়নি।
দক্ষিণ দামোদর জনপদ : কৃষ্ণা মালিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০১ অক্টোবর ২০২২ | ১১৩৫ বার পঠিত
অনন্তর কানে কিছুই গেল না, যেন সে বধির, যেন বা অন্ধ। আর এক দিকের দাঁড়ে আজ লোক নেই, তাই আজ এই মহাবিপদের সামনে পড়ে গেল তারা।
“পাঁচু, সামাল” বলতে বলতে সে ততক্ষণে হালে বসে পড়েছে। দু’জনে প্রাণপণ চেষ্টা করে নৌকো সোজা করার। কিন্তু ঘূর্ণিতে পড়ে গেছে নৌকো। মোচার খোলার মতো তারপর জলের কুটিল প্যাঁচাল টানে সেটা একমুখে ছুটে গেল প্রথমে, তারপর ঘুরতে লাগল ঘূর্নির ভেতর।নৌকো ভয়ঙ্করভাবে দুলতে দুলতে হেলে গিয়ে জল ঢুকতে লাগল। দুজনেই তখন অন্ধ।ইষ্টদেবতাকে ডাকতেও ভুলে গেল তারা। স্বর্ণকেশিনী ময়াবিনী নারীর মতো নৌকো সমেত সোনালি পাট তাদের জ্ঞানহারা করে দিলেও সমানে তারা চেষ্টা চালাতে লাগল, তবু নৌকো ছেড়ে লাফ দেবার কথা প্রথমে মাথায় এল না।
অ-মৃত : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০২ অক্টোবর ২০২২ | ৩১১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৩
"ওই দ্যাখ, খাল পরিষ্কার করার একটা লোক পাঁকে পড়ে আর উঠতে পারছে না," কে যেন চিৎকার করে উঠল। সদ্য ঘুম ভাঙা মুখগুলো অমনি একসঙ্গে ঘুরে গেল কাদাজলে ভরা খালটার দিকে। দু'দিন তুমুল বৃষ্টির পর যেটা কানায় কানায় ভরা আর ময়রার দোকানে সদ্য তৈরি গরম রাবড়ির ট্রে-র ওপর থেকে ওঠা অল্প সাদা ধোঁয়ার মতো যার পুরোটা জুড়ে উঠছে তীব্র দুর্গন্ধের ভাপ।
এমনিতেই কেষ্টপুর খালের ধারের বস্তিগুলোর ঘুম ভাঙে অনেক সকালে, কল আর পায়খানার দখল নিয়ে মেয়েদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ঢালু পারে জায়গা প্রচুর, কিন্তু আব্রু নেই। তাই ওখানে কেবল বাচ্চা আর পুরুষ মানুষের ভিড়। ঝগড়াঝাঁটি ক্যালোর ব্যালোর লেগেই আছে।
তার ওপর আবার একটা জলজ্যান্ত মানুষ খালে নেমে দ্রুত পাঁকে ডুবে যাচ্ছে, এই নতুন উত্তেজনায় গোটা বস্তি ভেঙে পড়ল খালের ধারে। কারও হাতে নিমডালের আধ খাওয়া দাঁতন, কেউ সেফটিপিন আটকান ব্লাউজের ফাঁকে ঝুলে পড়া মাই চোষা বাচ্চা কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে, সোমত্ত মেয়েরা নজর আটকাবে বলে ব্রা হীন নাইটির বুকের ওপর আলগোছে গামছা ফেলে রেখে ঝুঁকে পড়ে ডুবন্ত লোকটাকে দেখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই আবার ঘরের খেয়ে বনের মোষ-চরানেরা দৌড়ে গেল পুজো প্যান্ডালের পাশে রাস্তা আটকে ফেলে রাখা লম্বা বাঁশ আনতে।
২০২২ এ পুজো বিষয়ক কয়েকটি লেখা : দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৩ অক্টোবর ২০২২ | ১৫৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বন্ধুরা অনেকেই ভালো নেই। কারও কাজের সমস্যা তো কারও পরিবারের সদস্যের প্রয়াণ, কারও জটিল অফিস বা বাড়ির রাজনীতি-তবু এসবের মধ্যেও পুজো আসে। এখনও। এও কি এক রকম বিস্ময় না? যখন জীবনটা এখানেই শেষ ভেবে নিয়েছে অনেকে, তখনই অজানা সুন্দরের ডাক এসে জানায়, এখনও প্রেম আছে। শড়িপরা মেয়েটিকে দেখে ভালোলাগছে আবার..সে যখন কাফেতে চোখে চোখে যা বলার বলে মিলিয়ে গেল, বুকের ধুকপুক জানালো, পুজো আসছে..যখন আবার পাহাড়ের কুলকুল ঝর্ণাডাক এসে জানাচ্ছে, অনেকদিন কাজের চাপে কোথাও যাওয়া হয়নি এবার কিন্তু দুম করে কোথাও বেরিয়ে পড়তেই হবে..কাউকে না পেলে একাই রাক্স্যাক নিয়ে পাহাড়ে ক দিন বেরিয়ে পড়ার সাহস জানালো, পুজো আসছে, পুজো আসছে, বয়স হলেও পুজো আসেই।
এক্সাম পেপার : মোহাম্মদ কাজী মামুন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ২৩৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
সর্বশেষ প্রশ্নপত্রটা বিলি করার পর পরীক্ষক যখন হলটির ডায়াসে এসে পৌঁছুলেন, চোখ পড়া মাত্রই দৌড়ে গেলেন দীপের দিকে, আর হাত থেকে বইটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে একটা প্রশ্নপত্র গুঁজে দিলেন। খাতা আগে থেকেই রাখা ছিল, সামনের পকেটটা অনেকক্ষণ ধরে কামড়ে থাকা জ্যামিতি বক্সটা কোনমতে বের করে দীপ তার জন্য নির্ধারিত আসনে সটান বসে পড়ল। হাঁটতে হাঁটতেই এক ঝলক দেখে নিয়েছিল, এখন পুরো প্রশ্নপত্রটা দেখে তো সে আনন্দে আটখানা হয়ে উঠলো। শতভাগ কমন! এমনকি ‘অথবা’ দেয়া বিকল্প প্রশ্নগুলোও তার ঝাড়া মুখস্ত। কোনটা রাখবে, আর কোনটা ছাড়বে, এ নিয়ে বেশ কিছুটা সময় ভাবলো সে। পরে জ্যামিতি বক্সটা খুলে যুৎসই একটি কলম বেছে নিয়ে লিখতে শুরু করলো।
যে রূপ আশ্বিনের : জগন্নাথদেব মণ্ডল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ১৪৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ভোররাত থেকেই জলহাওয়া মেঘ থমথমে। সকাল থেকেই চারিদিক আঁধার।ভোর শেষ হয়নি তখনো।চারিদিক জনহীন, বাজারের দিকে শুধু ভিড়। সাইকেলে চেপে ঘুরে ঘুরে দেখছি দশদিক।ফলের ঝাঁকা নিয়ে পাতাইহাটের লোক, নতুন গামছা নিয়ে জগদানন্দপুর, মাটির জিনিস ও পদ্মফুল নিয়ে ঘোড়ানাশের মানুষজন বসে আছে।
ঢাক নিয়ে আসে ঢাকিদের ভিড়ের পাশাপাশি সাহেবতলার কাছে দেখলাম একদল হিজড়ে।ঢাকে এখন বক মেরে পালক গাঁথা বন্ধ হয়েছে। হিজড়েদের হাতে ঢোলক একটা, রঙিন জামাকাপড়, দূরের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে।
বোলান নাচের দল, গাজনের সঙ, রিক্সা চড়ে হাততালি দিয়ে পাড়া কাঁপানো হিজড়ে দেখে বড়ো হয়েছি।ঢোল কাঁধে কোমর বাঁকিয়ে নেচে-কুঁদে বলেছে - 'এই বাবু, টাকা না দিলে তোর উঠোনে দাঁড়িয়ে শাড়ি তুলে ঢোলে জল ঢেলে দিব'।সেই নাচের কী তীব্রতা,সমস্ত না-পাওয়া নাচে ফুটিয়ে তুলে কী প্রচণ্ড বেঁচে থাকা, চড়া গলার খটখটে গান আকাশের ঠোঁট অবধি ছুঁয়ে ফেলছে।
চিকিৎসা, সমাজ, দাসব্যবসা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর – টুকরো চিত্রে কলকাতা ও বাংলা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৮ অক্টোবর ২০২২ | ৪৬৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
কলকাতার বিকাশ এবং বাংলার বিকাশ এক ধারায় হয়নি। আজকের দুনিয়ার মতো সেদিনের দুনিয়া “গ্লোবালাইজড” হয়ে যায়নি। এজন্য উপনিবেশের অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কলকাতা যেভাবে পরতে পরতে রূপান্তরিত হয়েছে, সেভাবে সমগ্র বাংলার রূপান্তর ঘটেনি। উনবিংশ শতাব্দীর ৩য় দশকের আগে কলকাতার সাথে বৃহত্তর গ্রামীণ বাংলার উভয়মুখী যাত্রাও দুর্বল ছিল। ফলত কলকাতার খণ্ডচিত্র ভিন্নধর্মী – বাংলার অন্য অংশের চেয়ে।
সমাচার দর্পণ পত্রিকায় ১০ কার্তিক ১২৪১ তথা ২৫ অক্টোবর ১৮৩৪-এ প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছিল – “বঙ্গ দেশে যে ৩ কোটি লোক আছে তাহারদিগকে ইঙ্গলণ্ডীয়রা ৯০০ সামান্য গোরা সিপাহী ও ১০০ ফিরিঙ্গি ও ২১০০ সামান্য সিপাহী অর্থাৎ বরকন্দাজ লইয়া জয় করিলেন এবং মুষ্টি পরিমিত সৈন্যের অধ্যক্ষ ৩১ বৎসর বয়সের মধ্যে এক জন অর্বাচীন অর্থাৎ লার্ড ক্লাইব ছিলেন ... দেখুন বঙ্গদেশীয় জমিদারদের মধ্যে ঘোড়ায় চড়িতে পারেন এমত ৫০ জন পাওয়া ভার অতএব বঙ্গদেশীয় লোকেরদের দ্বারা কি প্রকারে ভয় সম্ভাবনা।” (ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদিত, সংবাদপত্রে সেকালের কথা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১৯৩)
এ লেখার মাঝে চরম আত্মগ্লানি আছে। কিন্তু কলকাতার জনসমাজকে এ কথাগুলো সেভাবে স্পর্শ করেছিল কি?
প্রজাপতি প্রিমিয়াম : কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৮ অক্টোবর ২০২২ | ৩০০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
প্রথমদিন তোমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে লেগেছিল হার্ডলি সাঁইত্রিশ সেকেন্ড, কিন্তু মাথার অ্যালবামে পজ বাটনের প্রিভিলেজ আছে।
কারও রসিকতায় হেসে ওঠার মুহূর্তটায় তোমাকে স্থির করে দিই। ঠোঁট নয়, গলা নয়, শরীরের ভরকেন্দ্র থেকে ঘূর্ণি তুলে বেরিয়ে এসেছে তোমার হাসি যেমন আসে, কক্ষপথ থেকে ছিটকে দেয়, পতন সামলাতে তোমাকে আশেপাশের কাউকে বা কিছুকে আঁকড়ে ধরতে হয়। এগিয়ে যাই। এত কাছে যাতে আমার নিঃশ্বাসে তোমার ঘাড়ে লেপ্টে থাকা চুল উড়তে পারে। প্রদক্ষিণ করি। মনোযোগ দিই গ্রীবার বাঁকে। বোজা চোখের পলকে। দাঁতের সুসংবদ্ধ শুভ্রতায়। জিভের গোলাপি আভায়।
কাঁপুনি ধরে প্রতিটি রোমকূপে। শরীরের ভেতর আরেকটা শরীর জাগে। জানালার ওপারে আমগাছের মাথায় গনগনে চাঁদ। পূর্ণিমা আসন্ন, বা সদ্য গত। সে গলন্ত সোনার আঁচে শুয়ে তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ছাই হয়ে যাই।
রুদালি টু ডট ও : স্বাতী রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১১ অক্টোবর ২০২২ | ১৭৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
কিন্তু কাল রাতে একটা জব্বর নাম এসেছে মাথায়। সেটা নিনিকে বলতে হবে। আর দশটা কাজে জড়িয়ে পড়ার আগে। তাই অপেক্ষা করে পৃথা। মেপে মেপে ক্যারাফেতে জল ঢালে। বসিয়ে দেয় বার্নারে। তারপর গ্যাসের নব ঘোরায়। খোলা জানলা দিয়ে চুইয়ে আসে ভোরের তরল, পাতলা অন্ধকার। এক দৈবী আলোর মত গ্যাসের শিখারা লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে। হাইড্রোকার্বনের অণুগুলো ক্যারাফের তলা ছোঁয়। পৃথার মনে পড়ে যায়, ওর মায়ের কথা। প্রথম যেদিন ওকে কাঁচের ক্যারাফে গ্যাসের আগুনে বসাতে দেখেছিল, কি ভয়টাই না পেয়েছিল! যদি আগুনের শিখায় কাঁচ ফেটে যায়! ওই ভয়টা! ভয়টাও ওদের পোর্টফোলিওতে চাই। মনে মনে নোট করে পৃথা। হয়ত এক্ষুণি কাজে লাগবে না। কিন্তু ইটস ইউনিক। কিছুটা না-জানা, ফ্লেম প্রুফ ব্যাপারটাই মা বোঝে না, কিছুটা মেয়েকে সব বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাওয়া, সব কিছুর একটা পারফেক্ট পাঞ্চ।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৩ অক্টোবর ২০২২ | ৯৩৩ বার পঠিত
উগুহহা বন্দর থেকে একদল ব্যবসায়ীর সঙ্গে তিনি রওনা হলেন প্রায় সোজা পশ্চিমদিকে, উরুয়ার উদ্দেশে। পনের দিন হেঁটে পৌঁছালেন বামবারেতে। এটা মান্যেমার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ হাতির দাঁতের ভাণ্ডার। স্থানীয়রা জায়গাটাকে বলে , মান্যুয়েমা। প্রায় ছ'মাস ধরে তিনি বামবারেতে আটকে রইলেন। পায়ে একটা ঘা হয়েছিল, মাটিতে পা ফেললেই সঙ্গে সঙ্গে তার থেকে পুঁজ-রক্ত বেরচ্ছিল। সেরে ওঠার পরে, তিনি উত্তর দিকে রওনা হন। বেশ কিছু দিন পর লুয়ালাবা নামের এক প্রশস্ত হ্রদ-জাত নদীর পাশে এসে পৌঁছান। এই নদী উত্তর ও পশ্চিম দিকে বয়ে চলেছে। কিছু কিছু জায়গায় আবার দক্ষিণ মুখোও তার চলা। সব মিলিয়ে বেশ গুলিয়ে দেওয়া ব্যাপার। এক থেকে তিন মাইল পর্যন্ত চওড়া নদী। নিজের জেদ ছেড়ে তিনি এর আঁকাবাঁকা গতিপথ অনুসরণ করার চেষ্টা করেন, শেষকালে দেখলেন লুয়ালাবা গিয়ে পড়েছে সরু, দীর্ঘ কামোলোন্ডোর হ্রদে। যেখানে গিয়ে পড়েছে সেই জায়গাটা মোটামুটি ৬° ৩০' অক্ষাংশ। আর একে দক্ষিণে অনুসরণ করে, তিনি আবার সেইখানে এসে পৌঁছেছিলেন যেখানে তিনি লুয়াপুলাকে মোয়েরো হ্রদে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২০ অক্টোবর ২০২২ | ১১৯০ বার পঠিত
সবাই জানে যে হাতির দাঁতের ব্যবসা কেন্দ্রগুলো নীল নদের পেথেরিকের নামাঙ্কিত শাখা ধরে প্রায় ৫০০ মাইল অবধি ছড়ানো। এই কথাটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে যখন বলা হয়েছিল যে গোন্ডোকোরো, ৪° উত্তর অক্ষাংশে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুট উপরে অবস্থিত আর এদিকে যে জায়গায় থামা হয়েছিল সেই ৪° দক্ষিণ অক্ষাংশের জায়গাটারও উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ২০০০ ফুটের সামান্য বেশি। দুটো নদীই সমুদ্র থেকে ২০০০ ফুট উঁচুতে, একে অপরের থেকে ৮° অক্ষাংশ দুরে, অথচ দুটোকে এক ও একই নদী বলা হচ্ছে, এই ব্যাপারটা কিছু মানুষের কাছে একটা ভারি আশ্চর্য কথা বলে মনে হতে পারে। তবে বিস্ময় প্রকাশে লাগাম পড়ানো ভাল, এটা বুঝতে হবে যে এই বিপুল, বিস্তৃত লুয়ালাবা মিসিসিপির চেয়েও চওড়া, এটা একটা হ্রদজাত নদী; মাঝে মাঝেই এত বিপুল-পরিমাণ জল একেকটা ছড়ানো হ্রদ তৈরি করে ফেলেছে; তারপর আবার খানিক সরু হয়ে চওড়া নদীর চেহারা নিয়েছে, আবার আরেকটা হ্রদ তৈরি করেছে, আর সে কারণেই, ৪° অক্ষাংশ বা তার থেকেও উত্তরে ডাক্তার আবার একটা বড় হ্রদের কথা শুনেছিলেন।
যতক্ষণ না লুয়ালাবা, যেখানে ডাক্তার থেমেছিলেন আর বাহর গজলের দক্ষিণতম বিন্দু, যেখানে পেথেরিক এসেছিলেন, এই দুটি নদীর উচ্চতা নিখুঁত নির্ভুল ভাবে জানা যায়, ততক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।
করমুক্ত : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৩ অক্টোবর ২০২২ | ২১৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
‘রাইনার, এই যে সব মানুষ তোমাদের ব্যাঙ্কের হলঘরে বসেছিলেন, এঁরা কারা? এদের কাউকে ব্যাঙ্কার কেন, এমনকি শিল্পপতি বলেও তো মনে হল না?’
রাইনার বললে, চুপ কর দেখি (জাই রুহিগ)। তুমি কি মনে কর তোমাদের গোষ্ঠীবদ্ধ ঋণের পারিশ্রমিক নিয়ে আমাদের ব্যাঙ্ক চলে? ঘরভাড়া ওঠে না। এখানকার খরচা জান? যাদের দেখলে, তারা আমাদের প্রাইভেট ব্যাঙ্কের গণ্যমান্য মক্কেল। সোজা বাংলায় (এর সরাসরি জার্মান আছে – আউফ ডয়েচ গেজাগট) করপ্রদানের পরিমাণ কমানোর জন্য আমাদের সঙ্গে এখানে কারবার করে। অ্যাকাউন্ট খোলে। টাকা তোলে। জমা দেয়। তারাই আমাদের রুটি রুজির মালিক’।
আমার প্রশ্ন তখনো ফুরোয়নি। আমি বললাম, রাইনার, এদের পোশাক-আশাক, এমনকি সম্পূর্ণ বেমানান স্পোর্টস জুতো দেখলে তো হাঘরে মনে হয়। এরা তোমাদের মূল্যবান মক্কেল? কী গুল দিচ্ছ?’
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৪৭) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৩ অক্টোবর ২০২২ | ১৬৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
উমমম, দারুণ জিনিস এনেছে আজ, মাঝারি সাইজের একেবারে টাটকা জীয়ন্ত চিংড়ি মাছ। পুরোনো স্মৃতি মনে আসে। ওয়েটল্যান্ডে যখন দু’জনে চাকরি করতাম, কর্তা একবার পুকুরের গলদা চিংড়ি রান্না করে অফিসে নিয়ে গিয়েছিল। চিংড়িগুলো এতটাই তাগড়া ছিল, যে দুটো চিংড়ি ছ’ টুকরো করে আমরা ল্যাবের ছ’জন প্রোজেক্ট সায়েন্টিস্ট টিফিনে হাপুস হুপুস করে খেয়েছিলাম। সে গলদার দাঁড়াগুলো একেবারে নেভি ব্লু আর মোটা মোটা। কাঁকড়ার দাঁড়ার মতো দাঁতে চেপে ভেঙে খেতে হয়েছিল। কিন্তু এগুলো গলদা নয়, চাপড়া চিংড়ি। রান্নার বৌদের হাতে ছাড়লে ওরা সেই একটাই জানে – সেটাই করবে। ডুমো ডুমো আলু, নারকেল বাটা, আর সেই কাঁচা কাঁচা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি ঝোল। ওরা যা পারে করুক। আমি একটু চিংড়ি আলাদা করে চিংড়ি থেঁতো বানাব।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৪৮) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২০ অক্টোবর ২০২২ | ১৪৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
– রাঁচীর দেহাতি চিকেন রান্নাটা কি ফণীজেঠুর আনা চিকেন দিয়ে করা সম্ভব? যদি হ্যাঁ হয় তা'লে কোন কথা নেই। যদি না হয়, তবে কেন সম্ভব নয়? দিশি চিকেন আর দেহাতি চিকেনের তফাৎ কী?
– দিশি চিকেন আর দেহাতি চিকেন – ব্যাপারটা একই। ওটা ভাষার তফাৎ। পোল্ট্রির বাইরে যেসব মুরগি বাড়িতে পোষা হয়, স্বাভাবিক খাদ্য খেয়ে বাঁচে, ওষুধ ইঞ্জেকশন দিয়ে মাংস বাড়ানো হয়না, তেমন চিকেন। তবে হ্যাঁ, বাংলায় যে জাতের মুরগি পোষা হয়, আর ঝাড়খন্ডী আদিবাসীরা যেমন পোষে, তাদের মধ্যে কিছু আলাদা থাকতে পারে। দিশি মোরগের জাতিভেদ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
নবনীতার কয়েকদিন : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২২ | ১৯৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
বাবা হঠাৎ মারা গেলে কী হবে জানত না নবনীতা, কিন্তু মা-ও যে জানত না সেটা ও বুঝল পরে। কষ্টেসৃষ্টে সংসার চলত, কিন্তু চলত তো। মারা যাবার পর মা বলল, বাবার মরদেহ হাসপাতালে দান করা হবে, সেটাই বাবার ইচ্ছে ছিল। রাণীকুঠিতে কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার ভ্যাটের পিছনে প্রায়-পড়া-যায়-না এরকম দেওয়াল লিখন একটা মাঝে-মাঝেই দেখেছে নবনীতা, সেখানেই একটা ফোন নম্বর দেখেছিল ও, মরণোত্তর দেহদানের জন্যে। নম্বরটা দেখে এসে সেখানে ফোন করল নবনীতা, এক ভদ্রলোক এসে দেখে গেলেন, তারপর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে একজন ডাক্তার আর দলবল নিয়ে এসে নিয়ে গেলেন দেহটা। ওর ভয় ছিল ওরা হয়তো পয়সা-কড়ি চাইবে কিছু; চাইল না কিন্তু, একটা ছাপা কাগজে শুধু সই করাল মাকে দিয়ে। নবনীতাকে ওরা বলেওছিল ওদের সঙ্গে হাসপাতালে যেতে, ও যেতে চায়নি। ওদের মুখ দেখে মনে হল একটু অবাক হয়েছে ওরা, কিন্তু বলল না কিছু। সেদিনই সন্ধ্যেবেলা ওদের একজন এসে হাসপাতালের সার্টিফিকেট একখানা দিয়ে গেল, বলল, এটা দিয়ে কর্পোরেশন থেকে ডেথ-সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। তা ছাড়াও ব্যাঙ্কে, অফিসে, নানা জায়গায় কাজে লাগবে এটা, কাগজটা যেন হারিয়ে না ফেলে ওরা।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৩ নভেম্বর ২০২২ | ১১৫২ বার পঠিত
এইভাবে যতদূর সম্ভব গবেষণা করে, এলিফ্যান্টাইন বা তার থেকেও দূরে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আর অন্যের মুখের কথা থেকেও এইটুকুই জানতে পেরেছি। এলিফ্যান্টাইন শহর পেরিয়ে আরও উজানে যেতে গেলে এলাকাটা খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে, তাই, এখানে, নৌকার দুদিকে দড়ি বেঁধে এগোতে হয়, যেমনটা লাঙ্গলে বলদ জোতার সময় করতে হয়; কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে গেলে স্রোতের টানে নৌকা ভেসে চলে যায়। এইভাবে চার দিনের পথ চলা। এখানে নীল নদ এঁকেবেঁকে চলে। বারো শোয়েনি পথ এইভাবে চলতে হয়; আর তারপরে একটা সমভূমি আসে, সেখানে নীল নদ একটা দ্বীপের চারপাশে প্রবাহিত হয়; এর নাম ট্যাকোম্পেসো। এলিফ্যান্টাইনের লাগোয়া উজান এলাকায় ও দ্বীপটার অর্ধেকাংশে ইথিওপিয়ানরা বাস করে; বাকি অর্ধেক অংশে মিশরীয়রা থাকে। এই দ্বীপের কাছেই একটা বিস্তীর্ণ হ্রদ রয়েছে, যার সীমানা বরাবর ইথিওপিয়ান যাযাবরদের বাস।
পায়েসের বাটি : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ১৬৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শিখা পায়েসের বাটিটা নিয়ে ছাদে উঠল। দোতলা বাড়ির ছাদ। চিন্তিত মুখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে, একবার পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে, সবদিক নজর করে শেষে পায়েসের বাটিটা সে ছাদের পাঁচিলে রাখল। তারপর গলার মঙ্গলসূত্রটা চেপে ধরে কি যেন ভাবা শুরু করল। পাশের বাড়ির ছাদে সপ্তর্ষি, বছর চোদ্দর ছেলে হবে, হাতে খাতা, মুখে পেন। খাতা উল্টেপাল্টে দেখছে আর পাশে বসে থাকা পায়রাটাকে কীসব পড়ে শোনাচ্ছে। ছেলেটি একঝলক শিখাকে দেখল, শিখা সেটা খেয়াল না করে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এল।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – রাশিয়া ৯ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩০ অক্টোবর ২০২২ | ২১৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
“গ্রিগরি, এতক্ষণ আপনি আমি দু’জনেই প্রভূত রেড ওয়াইন পান করেছি। একটা ল্যাটিন প্রবাদ আছে – ভিনো ভেরিতাস। মদ্যে নিহিত আছে সত্য। তাই বলি, আমরা আফ্রিকাতে যাদের সঙ্গে কারবার করি, তাঁদের পূর্ণ সততা সম্বন্ধে সন্দিহান হওয়া স্বাভাবিক। সে সন্দেহ আমাদের আছে। যে ঋণ গ্রহীতাদের কথা বলছেন, নিজেরাও জানেন তাঁদের সততা বিবাদিত। তাঁরা এটাও জানেন যে আমরা ব্যাঙ্কাররা সেই একই সন্দেহ পোষণ করি। সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। তাই যে বৃহৎ খনিজ তেলের ডিলগুলির কথা আপনি ভাবছেন – যেমন এঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, কঙ্গো – সেখানে আমরা সম্যক সাবধানতা পূর্বক ঋণ দিয়ে থাকি। এক পয়সা মারা যায়নি। আমাদের রাশিয়ান অভিজ্ঞতা বলে আপনাদের দেশেও সেই একই সমস্যা। আপনাদের ব্যাবসায়িক কর্মকর্তারা আরমানি স্যুট পরে দারুণ আমেরিকান ইংরেজিতে বক্তিমা দিলেও আমাদের সন্দেহ দূরীভূত হয় না। সেটি প্রকাশ করলে আবার আপনারা ক্ষিপ্ত হন”।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৪৯) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৩ নভেম্বর ২০২২ | ১৫৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
একদিন হল কী, আমি দোতলায় বাচ্চাদের মাংস রান্না করেছি, তেল কড়াটা বারান্দায় একপাশে সরিয়ে রেখেছি। কর্ণাকে নিয়ে কোনো ঝামেলা ছিলনা। একজায়গায় বসিয়ে খাইয়ে, মুখ মুছিয়ে, পিঠ চাপড়ে দিলেই ঘুমিয়ে পড়তো। ওর পর্ব মিটিয়ে ছুটকীকে নিয়ে পড়তাম। ও দৌড়োতো, আমিও থালা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতাম। মেয়ে মাংসের তেলকড়া নিয়ে তেল মাখতে বসল, সেই ফাঁকে আমি দুটো দুটো গাল মুখে ঢুকিয়ে দিই। এমন সময়ে রুণাদা বাটি ভরা টমেটোর চাটনি দিয়ে গেল। আমি জানি রুণাদা যে বাটিটাতে চাটনি এনেছে, সে বাটিটাও আগে খাবার জলে ধুয়ে নেয়। এখানে সমুদ্র কাছে বলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি। তাই মাটির স্তরে জল প্রাকৃতিক ভাবে ফিল্টার হবার সুযোগ পায়না। টিউবয়েল খুঁড়লে এক পাইপে জল পাওয়া যায়, লোকে তাই আরও গভীরে যাবার জন্য খরচ করেনা। আর এই জল খেয়ে ঘরে ঘরে পেটের বালাই। আমরা যতদিন থাকি খাবার জল কিনতে হয়। বাড়িতে খরচ করে মেশিন বসাতে ভয়। পরের বার এসে হয়তো দেখবো, ভোল্টেজের জন্য মেশিন পুড়ে গেছে, বা ঝেড়ে মুছে সব ফাঁকা।
একটি দেশের কি ‘স্বধর্ম’ থাকতে পারে? তাকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে? : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৪ নভেম্বর ২০২২ | ১১৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
কীসের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে ভারতের স্বধর্ম আজ আক্রমণের মুখে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য নিবন্ধের প্রথম পর্বে আমি স্বধর্মের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বোঝাতে চেয়েছি যে স্বধর্ম আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতার সেই অংশ, যাকে আমরা সর্বোত্তম হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। অর্থাৎ মানব জীবনের আদর্শ হল স্বধর্ম খুঁজে বের করে তাকে অনুসরণ করা।
এখন প্রশ্ন জাগে, একটি দেশের কি স্বধর্ম থাকতে পারে? আপনি যদি এর বাইরের রূপটি নিয়ে চিন্তা করেন, তবে কথাটি অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। ধর্ম তাই, যা ধারণ করা যায়। ধারণ করার জন্য প্রয়োজন চেতনাশীল ধারক। তাই একজন মানুষের ধর্ম থাকতে পারে। পশুপাখি বা গাছ-গাছালিরও থাকে। কিন্তু দেশের মত একটা অচেতন সত্ত্বার কীভাবে ধর্ম থাকতে পারে? দেশ যদি মানচিত্রে চিহ্নিত একটি রেখা হয়, তবে তার ইতিহাস এবং আবহাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু ধর্ম থাকতে পারে না।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১০৮৩ বার পঠিত
এই দুটো কাজ সুসম্পন্ন হলে, একমাত্র তারপরই, নীল নদের রহস্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব। হ্রদের থেকে জন্ম নেওয়া লুয়ালাবা নদী অজস্র হ্রদের মধ্যে দিয়ে বিপুল জলধারা নিয়ে যে দুটি দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে, সেই দেশদুটি হল রুয়া (স্পেক যাকে বলেছেন উরুওয়া) ও মান্যুয়েমা। এই নদীর বিপুল জল রাশি দেখলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। ইউরোপ এই প্রথম জানল যে ট্যাঙ্গানিকা ও কঙ্গো নদীর পরিচিত উৎসগুলির মধ্যে লক্ষ লক্ষ নিগ্রো জাতির বসবাস। যে সাদা মানুষেরা আফ্রিকার বাইরে এমন শোরগোল তোলে, তাঁদের এই নিগ্রোরা কখনও চোখেও দেখেওনি, তাদের কথা শোনেওনি। অসাধারণ শ্বেতাঙ্গদের প্রথম প্রতিভূ হিসেবে ডাঃ লিভিংস্টোনকে দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছিল, তিনি মনে হয় তাদের মনে একটা অনুকূল ধারণা তৈরি করতে পেরেছেন।
সীমানা - ১৭ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১২ নভেম্বর ২০২২ | ৩৩৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পলিটিক্স্ তো এক-একজনের এক-এক রকমের হতে পারে। যেমন ধরুন আপনি নিজেই ন্যাশনাল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ হয়েছেন। তার মানে তো এই নয় যে, সরকারী স্কুল-কলেজ যারা এখনও ছাড়তে রাজি নয় আপনি তাদের বিরোধী। মূল একটা ঐকমত্য থাকলেই সংবাদপত্রে এক সঙ্গে কাজ করা যায়, বলে মুজফ্ফর, সেখানেই আমাদের প্রগতিশীলতা। নানা মতকে একটা প্ল্যাটফর্মে এনে আলোচনায় কোন আপত্তি নেই আমাদের। নিজেদের একটা মত থাকতেই পারে, কিন্তু বিরুদ্ধ মতকেও যথেষ্ট শ্রদ্ধা দেখিয়ে সেই মত কাগজে ছাপতে কোন আপত্তি হবে না আমাদের। তবে হ্যাঁ, কৃষক শ্রমিক অভুক্ত অর্ধভুক্তদের কথা আমরা লিখব, লিখব পূর্ণ স্বাধীনতার কথা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পাব না। সংবাদপত্র কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের মুখপত্র এ কথা আমরা বিশ্বাস করি না, কিন্তু তাঁবেদারও নয় কারো।
দক্ষিণ দামোদর জনপদ : কৃষ্ণা মালিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১২ নভেম্বর ২০২২ | ৯০২ বার পঠিত
আমি বনে-বাদাড়ে ফুলফল তুলে বেড়াতাম - কোথায় বেজির গর্ত, কোথায় সাপের খোলস, কোন ঝোপে কোন গাছ, তাদের আলোছায়ার সঙ্গে কেমন অচেনা নতুন দেশে এসে পড়ার বিস্ময়। যা দেখি, সবই অনির্বচনীয়। বেজির গর্ত দেখে মনে হতো পাতালের বামনের দেশ পর্যন্ত চলে গেছে ওই গহীন সুড়ঙ্গ। সেখানে যক্ষের পুরী, নাকি পৃথিবীর অতল তল কে জানে? কিছু প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াই ভালো। কল্পনায় অজস্র সম্ভাবনা মনকেও দূরগামী করে। ঝড়ে পড়া জাহাজের মাস্তুলে উড়ে এসে বসা অ্যালবাট্রস, যে এনে দেয় আশার আনন্দ, এনে দেয় গভীর পর্যটনের স্বাদ আর বয়ে আনে সুগভীর বেদনার মতো বহু দূর অভাবনীয় সমুদ্রের পেটের ভেতরের নতুন গন্ধভরা বাতাস, বিপদগ্রস্ত নাবিকের যে পথপ্রদর্শক। সেসবই ভাষার অতীত। আমার ঘোরাঘুরিতে বিরক্ত মা বকাবকি করত। ভয় পেতো কবে অপঘাতে মরেই যাব।
আত্মদীপা : সুচেতনা মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : পড়শির কথা | ১৩ নভেম্বর ২০২২ | ১৪৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
প্রতিদিন খুব ভোরে কাঁখে কলসি নিয়ে গাঁয়ের অন্য বউদের মতোই নদীতে জল আনতে যায় কিশোরী পদ্মাবতী। তবে বাকিদের মতো তড়িঘড়ি সে ফিরে তো আসেইনা, বরং তাঁর ফেরার সময় রোজ সূর্যদেব উঠে পড়েন মাঝ আকাশে। রোজকার দেরি দেখে শাশুড়িমা নিশ্চিত হন, ছেলের বউটি নিশ্চই অন্য কারো সাথে জড়িয়েছে সম্পর্কে, তাই তাঁর মন বুঝি নেই ঘরে ফেরায়। এছাড়াও এই বউয়ের অজস্র দোষ। সেই কবে থেকেই গুছিয়ে রান্নাবান্না- সংসার করা, খেয়ে না খেয়ে শশুড়বাড়ির সবার সেবা করা, স্বামীর প্রতি স্ত্রীধর্ম পালন করা তো দূর, সন্তানধারণ করতেও নারাজ সে, এমনকি বিয়ের পর রীতি অনুযায়ী পদ্মাবতী নামেও তাঁর অনীহা। কেউ জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দেয় বিবাহপূর্ব লাল্লেশ্বরী বা লাল্লা নামে। এই আজব সব ধৃষ্টতার ওপর রোজকার তাঁর এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি যেন আগুনে ঘি ঢালে। পদ্মাবতীর স্বামীকে উস্কে দেন শাশুড়ি, ঘরের অবাধ্য অলক্ষ্মী বউটিকে উচিত শাস্তি দেওয়ার জন্য...
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৫১) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৭ নভেম্বর ২০২২ | ১৫৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এর মধ্যে আবার শুনলাম মতির ছেলেরা ফের বাবার কাছে গিয়েছিল বলতে যে অভিযোগ যেন তুলে নেয়। বাপ বলে পাঠিয়েছে, তোদের মাকে বল আমাকে নিঃশর্ত আইনি বিচ্ছেদ দিয়ে দিতে, তবে মামলা তুলব। সপ্তাহ খানেক পর কোর্টের খবর আসে, জানা যায় কাগজটা ভুয়ো। এমন কোন কাগজ আদালতে জমাই পড়েনি। সবই মতির বরের চালাকি। মা আর তিন ছেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। পুলিশ আসবে শুনে সকলেই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ওরাও তো আর সব সময়ে সোজা পথে চলে না। তবে ডামাডোলে রেশন কার্ড ফেরৎ পাবার কথাটা ধামাচাপা পড়ে যায়। শহর থেকে বিস্তর ফোনাফুনি করে মতি যাতে চাল গম পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়। মতি অনেক জ্বালিয়েছে ঠিকই, ওর এই দুর্দশার দিনে মোটেই খুশি হতে পারি না। বরঞ্চ কপালে করাঘাত করে ভাবি, এই মতি এখনও স্বপ্ন দেখে যে তার যোগ্য বর ওকে আবার ঘরে নেবে, আবার ও তার সঙ্গে সংসার করবে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৭ নভেম্বর ২০২২ | ১০৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আরবরা যে দেশেই যাক না কেন, নিজের জাতের নাম ডোবাতে তারা সবসময় মুখিয়ে থাকে। তবে এর কারণ অবশ্য আরবের প্রকৃতি, গায়ের রং বা জাত নয়, এর একমাত্র কারণ হল কেবলমাত্র দাস-বাণিজ্য। যতদিন জাঞ্জিবারে দাস-ব্যবসা চলবে, ততদিন এই এমনিতে উদ্যমী আরবদের বিরুদ্ধে গোটা আফ্রিকার আদিবাসীদের ঘৃণা জেগে থাকবে। জাঞ্জিবার থেকে আফ্রিকার অন্দরে যাওয়ার মূল পথ বরাবর এই নিষ্ঠুরতার কাহিনীগুলো অজানা, তার কারণ এই যে এখানকার স্থানীয়দের হাতে বন্দুক ছিল, সেই সঙ্গে কীভাবে সেই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে হয় তাও তাদের শেখানো হয়েছিল, আর সেই বন্দুকের ব্যবহারে মোটেই তারা পিছপা ছিল না।
ঠাঁইনাড়া – অন্য পর্ব (১) : ষষ্ঠ পাণ্ডব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২০ নভেম্বর ২০২২ | ১৮৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
বাংলা পড়া শেখার কথা সায়েরা একদিন ভয়ে ভয়ে আলীর দাদীকে বলেও ফেলে। আলীর দাদী কিন্তু মোটেও রাগ করলেন না। উলটো তিনি বললেন, মেয়েদের বাংলা পড়তে ও লিখতে, গোনাগুনতি শিখতে পারা উচিত। তাহলে তারা নামাজ শিক্ষাসহ ইসলামী বইগুলো পড়তে পারবে, নিজের বাচ্চাকাচ্চাকে দ্বীনি এলেম শেখাতে পারবে, খসম দূরে কোথাও কাজে গেলে তাঁকে চিঠি লিখতে পারবে, চিঠি লিখে নিজের বাবা-মায়ের খোঁজও নিতে পারবে। তাছাড়া মেয়েরা যদি গোনাগুনতি না শেখে, পাই পাই হিসেব করতে না পারে তাহলে সংসারের আয়-রোজগার বারো ভূতে লুটে খাবে। সায়েরার ইচ্ছার কথা শুনে আলীর দাদী ঠিক করলেন তিনি মেয়েদেরকে বাংলা আর হিসেবও শেখাবেন। এই কথা জানার পরে মেয়েদের বাবারা তো বটেই আলীর চাচা (কাকা) মান্নাফ, ইয়ার নবী আর হারুনও বেঁকে বসলেন।
ধ্রুবপুত্র : রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ২০ নভেম্বর ২০২২ | ১৫৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সত্য না ইন্দ্রজাল? এ প্রশ্নের উত্তর আকাশের মেঘে।
"আজ দীপাবলি। বিশালার ঘরে ঘরে ধনদাত্রী লক্ষ্মীর আরাধনা, অলক্ষ্মীর বিদায়। সন্ধ্যায় এই বিশালা নগর - অবন্তী দেশের রাজধানী উজ্জয়িনী, কণকশৃঙ্গ মহাকালেশ্বর মন্দির, দুই নদী শিপ্রা, গন্ধবতীর বুক দীপের আলোয় আলোকিত হবে। অবন্তী দেশের প্রতিটি গৃহের দুয়ারে, বাতায়নে প্রদীপ জ্বলবে। আজ দীপোৎসব, আলোকোৎসব ,কোথাও কোন অন্ধকার থাকবে না।"
মনের গভীরে জ্বলে উঠল অপূর্ব এক আলো। মুহূর্তে পৌঁছে গেলাম ভারতবর্ষের এক প্রাচীন নগরীতে। বর্ণনার কুশলতায় বহুযুগ আগের সেই দীপাবলির রাতের আলোকময় সন্ধ্যার ছবিটি আঁকা হয়ে গেল। সাহিত্যিক অমর মিত্রের 'ধ্রুবপুত্র' উপন্যাস শুরু থেকেই পাঠক মনে সঞ্চার করে এক মুগ্ধতার বোধ।
সীমানা - ১৮ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৬ নভেম্বর ২০২২ | ৩২২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পবিত্র বোধ হয় আবার কিছু বলবার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সুভাষ নজরুলের দিকে তাকিয়ে বলল, নজরুল সাহেব, আজ সকালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে আপনি যখন কনফার্ম করলেন আপনিই নজরুল ইসলাম, আমি তখনই আপনাকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছিলাম। সেই জন্যেই আমি আপনার নবযুগের কথাটা তুলছিলাম। আপনারা তো এতক্ষণে শুনেইছেন, কয়েকমাস আগে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবার বাসনায় আমি চিত্তরঞ্জন দাশ মশায়ের সঙ্গে দেখা করি। তিনি অতি স্নেহে আমাকে তাঁর সঙ্গী করতে রাজি হলেন। আমাকে তিনি প্রথম দিনেই দুটো কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন; এক, গৌড়ীয় বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষতা, এবং দুই, বাংলায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচারের দায়িত্ব। ওই যে স্টেট্স্ম্যানের মন্তব্যের যে-কথা পবিত্রবাবু বলছিলেন সেটা ওই প্রচারেরই একটা অংশবিশেষ। কিন্তু আমার বাসনা আছে, বাংলার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটা বাংলা দৈনিকপত্র বের করার। আমি ভাবছিলাম, এ ব্যাপারে যদি আপনার সক্রিয় সাহায্য পাওয়া যায়।
দক্ষিণ দামোদর জনপদ : কৃষ্ণা মালিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৬ নভেম্বর ২০২২ | ১২৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শিবিরা এত গরীব, ওদের কীকরে সংসার চলে সেটা একটা ভাবার বিষয়। কেউ জিগ্যেস করলে শিবি তার কাজের ফিরিস্তি দেয়, “বাড়ির মেয়েদের কাচ থে কিচু না কিচু কাজ জুটেই যায়। কেউ বলে, শিবি চাল পাছড়ে দে – শিবি চাল বেছে দে – শিবি উঠোন ঝাঁট দিয়ে দে – গোয়াল পরিষ্কার করে দে, ধান ভেনে দে, চাল কুটে দে—কত কত ফাই ফরমাশ! মিলনীও কাজ করে সমান তালে। তবে ছেলেদের সমান মজুরি ও পায় নে কুনোদিনই। অবশ্য আমিও পাই না।তবু বোনের থে কিচু বেশি মজুরি পাই মেয়েদের মদ্যি বেশি চৌকোস বলে”। অথচ সে পরিশ্রমে, দক্ষতায় পুরুষদের সঙ্গে সমানে তাল মেলাতে পারে। কিন্তু সেকথা মানছেটা কে?
সেই যে শিরীন ... বাস্কেটবল, হকি আর ক্রিকেটে : সুচেতনা মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : খেলা | ২৫ নভেম্বর ২০২২ | ১৩৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
শিরীন, একমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড় যিনি একটি-দুটি নয়, তিন -তিনটি খেলায় আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন…
বিদেশের কিংবদন্তি ইয়ান বথাম, ভিভ রিচার্ডস, জন্টি রোডস…আর বিস্মৃত শিরীন কন্ট্র্যাক্টর কিয়াসের মধ্যে কোন মিল কি আদৌ আছে?...
অথবা ভারতের কোটার রামস্বামী, সোমনাথ চোপড়া, ইফতিকার আলী খান পতৌদি বা হালের সোহিনী কুমারী বা যুজবেন্দ্র চাহালের সঙ্গেই বা শিরীন কন্ট্র্যাক্টর কিয়াসের কতখানি মিল বা অমিল??
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০১৯ বার পঠিত
এটা সত্যিই দুঃখজনক যে, আবিষ্কারকরা যেটাকে অবিসংবাদিত সত্যি বলে জেনেছেন, সেটাও বলতে পারবেন না, বললেই তাঁদের দাগিয়ে দেওয়া হবে যে তাঁরা দেশের ভৌগোলিকদের প্রিয় তত্ত্বগুলির বিরোধিতা করার জন্য দল বেঁধেছেন। বা অভিযোগ করা হবে যে সুপরিচিত তথ্যগুলোকে তাঁরা বিকৃত করছেন। বিদগ্ধ মিঃ কুলি' একজন আরবের কথার ভিত্তিতে একটা গোটা মধ্য আফ্রিকা জোড়া বৃহৎ হ্রদের রূপরেখা এঁকেছিলেন। সেই হ্রদ নিয়াসা, টাঙ্গানিকা ও এন'ইয়ানজা ইত্যাদি বেশ কয়েকটা হ্রদকে জুড়ে রয়েছে। এদিকে লিভিংস্টোন, বার্টন, স্পেক, গ্রান্ট, ওয়েকফিল্ড, নিউ, রোশার, ইয়োন্ডারডেকেন এবং বেকার যখন প্রমাণ করলেন যে, এগুলো একটা না অনেকগুলো আলাদা আলাদা হ্রদ, আলাদা আলাদা নামের, দূরে দূরে ছড়ানো, তখন কেন তিনি একবারও স্বীকার করবেন না যে তিনি ভুল করেছেন?
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৫৩) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০৮৭ বার পঠিত
স্বর্গে গেছেন মা, সেই পঞ্চাশের দশকে। আমাদের জন্মের দু’দশক আগেই তিনি গত হয়েছেন। আমরা শুধু গল্প শুনেছি। আমার মা বাবার বিয়ে হয়েছিল ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার বছরে। মায়ের তখন চোদ্দ বছর বয়েস। ভব আপা মায়ের পিসশাশুড়ি। বারো বছরে বিধবা। মায়ের কাছেই শুনেছি – তাঁর লম্বা চওড়া চেহারা, ফর্সা রং, টিকোল নাক, ধবধবে থান পরা, সবাই ডাকত ভবপা – ভব আপাকে দেখে নাকি চোখ ফেরানো যেত না। কিন্তু কেউ কাছে ভিড়তে পারত না, এমনই তাঁর ব্যক্তিত্ব। কারোর তোয়াক্কা রাখতেন না। তাঁর দাপটে বাড়ি থেকে পাড়া কাঁপত। সেই যুগের গ্রামে এমনধারা মহিলা একেবারেই ব্যতিক্রমী। নিজের আলাদা ঘর, স্বপাক আহার। সঙ্গে থাকত পনেরো-ষোলোটা বিড়াল।
জালিয়াঁওয়ালা বাগের জার্ণাল : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
যা ছিল হাহাকার থেকে উদ্ভূত এক বিরাট অনুভূতি-স্থল, দেশপ্রেমের চরম নিশান, তা হয়ে গেল 'বাগান', প্রমোদ-উদ্যান না হলেও ভ্রমণবিলাসীর রম্য কানন! তবে কি পাঞ্জাবেরই একার দায় ইতিহাসের এই রক্ত দিয়ে লেখা অধ্যায়কে অটুট রাখবার? দিল্লি- হরিয়ানা সীমান্তে কিষাণ কিষাণীরা উধম সিং-এর ছবি-আঁকা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আন্দোলন করেন আর আমরা দলে দলে ছুটি ওয়াগা বর্ডারে, যেখানে দু দেশের ইউনিফর্ম পরা সৈনিকের দল ঝুঁটিওয়ালা মোরগের মতো বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে রোজ অবনমিত করে যার যার দেশের পতাকা। প্রবল করতালি, হাজার মোবাইলের ঝলকে শেষ হয় সেই বিচিত্র নাচনকোঁদন, নকল দেশপ্রেমের উচ্ছাসে আকাশ বাতাস ভরে ওঠে। অথচ জালিয়ানওয়ালাবাগ আমাদের ভ্রমণ সূচিতে কদাচিৎ থাকে, ঘরের শিশুটিকে কখনও বলি না উধম সিং, ভগত সিং-এর কাহিনি! এই সত্যিকারের শহিদ-এ-আজমদের ভুলে গিয়ে নির্মাণ হতে থাকে নতুন শহিদ, ব্রিটিশের কাছে লেখা মুচলেকাকে কার্পেটের নীচে ঠেলে দিয়ে শহিদত্ব আরোপকে নতমস্তকে মেনে নিই।
এইখানে, এই পরিস্থিতিতে আলোচ্য বইটির গুরুত্ব অসীম। খুবই সুলিখিত, অজস্র সাদা কালো ছবিতে সাজানো বইটি হাত ধরে আমাদের নিয়ে যায় সঠিক ইতিহাসের কাছে, সেই অর্থে সত্যেরও কাছাকাছি।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১১১২ বার পঠিত
লিভিংস্টোন ও আমি, টাঙ্গানিকা হ্রদের উত্তর প্রান্ত দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করার পরে যদি জিজিদের অযৌক্তিক দাবি বা ভয়ের কাছে নতি স্বীকার করে, রুসিজি নদীর সমস্যার সমাধান না করেই উন্যানয়েম্বেতে ফিরতে বাধ্য হতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেশে ফিরে সকলের ঠাট্টা তামাশার পাত্র হতাম। কিন্তু জানতাম যে জিজিদের, বিশেষ করে ওই হাস্যকর বর্বর কানেনা সর্দারকে দলে নেওয়ার জন্যেই ক্যাপ্টেন বার্টন ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই আমরা সতর্ক ছিলাম। বুঝেছিলাম যে এই ভৌগলিক সমস্যাটার সমাধানের ক্ষেত্রে এই ধরনের লোকেরা আমাদের কোন সাহায্যই করবে না। আমাদের সঙ্গে কয়েকজন ভাল নাবিক ছিল, খুবই অনুগত। ভাবলাম, শুধু একটা ক্যানো ধার করতে পারলেই সবকিছু ঠিকঠাক হবে।
ঠাঁইনাড়া – অন্য পর্ব (৪) : ষষ্ঠ পাণ্ডব
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৪৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
জাহেরা কসাই বাড়ির মেয়ে। তাঁর হাঁকডাক কম নয়, দরকারে ছুরি-চাপাতিও চালাতে পারেন। চাইলে তিনি প্রবল প্রতিরোধ করতে পারতেন, হৈচৈ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেসবের কিছুই করলেন না। তাঁর সকল প্রতিরোধের শক্তি গত কয়েক মাসে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেদেশে নারীর পরিধেয় ব্লাউজ, পেটিকোট বা শেমিজ বিহীন শাড়ি আর পুরুষের পরিধেয় ধুতি বা লুঙ্গি—সেদেশে তাদের যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বেশি আয়াসের দরকার হয় না, সম্পূর্ণ বিবস্ত্রও হতে হয় না। নাজির খাঁ’র ভারি দেহের নিচে নিষ্পেষিত হতে হতে জাহেরা ভাবলেন, উদয়াস্ত পরিশ্রম করলে তাঁদের তিন জনের দু’বেলার খাবার হয়তো জোটানো যাবে, কিন্তু সবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়তি কিছু মূল্য দিতে হবে। বাইরের দুনিয়ায় শেয়াল শকুনের খাবার হবার চেয়ে এটা হয়তো মন্দের ভালো হল।
সীমানা - ১৯ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ৩১৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কাগজখানা হাতে নিয়েই কাজি বলে, এ কী! প্রথমেই তো বানান ভুল।
কেন, কোন্ বানানটা?
এই যে, কাঠবেড়ালী।
ঠিকই তো আছে; ক-য় আ-কারে কা আর ঠ কাঠ, ব-য় এ-কারে বে র-য় আ-কারে রা আর ল-য় দীর্ঘ ঈ, লী। কাঠবেরালী।
আরে, এ তো বাঙালদের বানান হল, ভুল।
তুমি কি তাহলে ইংরাজি বানান চাও?
ইংরাজি নয়, ইংরিজি। কিন্তু সেটাই বা চাইব কেন? বিশুদ্ধ বাংলা বানান, কাঠবেড়ালী। ব-য়ে শূন্য র নয়, ড-য়ে শূন্য ড়-য়ে আ-কার, ড়া। বেড়ালী, কাঠবেড়ালী।
দক্ষিণ দামোদর জনপদ : কৃষ্ণা মালিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পিসি কাচের চুড়ি পরতে না পারলেও অঘ্রাণমাসের মেলায় কিনে ফেলল। তবে লুকিয়ে রাখল বেলোয়ারি চুড়ি। সুযোগ মতো পরা, যখন কাকু বাড়ি থাকবে না। সেবার শীত শেষের মুখেই হবে হয়তো, অত মনে নেই, বৃষ্টি হল বেশ। হতে পারে আমার কল্পনা প্রবণ মন ছবি বানাচ্ছে, তাই সেই ছবিতে সুন্দর করে মিলে যাবে যে দৃশ্য মন সেটাই দেখছে। দেখলাম, অকাল বৃষ্টির দিন পশ্চিম দুয়ারি ঘরের ধারিগোড়ায় বসে পিসি চুড়ি ঘুরিয়ে হাতখানা দেখছে। আচমকা কাকু হাজির বাইরে থেকে। এক লাথিতে পিসি ছিটকে পড়ল উঠোনে। বৃষ্টির জলের ভেতর পড়ল আছাড় খেয়ে, হাতের চুড়ি ভেঙে খানখান। যেন অপমানিত, অতৃপ্ত চুড়িগুলি চরম অভিমানে শীতের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চোখ ভরা জল নিয়ে তাকিয়ে আছে চরম বিস্ময়ে। ভাঙা চুড়িগুলি ভিজতে লাগল। ভিজছে পিসি। তার চোখ মুখ থেকে জলের ধারা নামছে। সে ধারা বৃষ্টির, না চোখের তা অবশ্য আমি বলতে পারব না। বৃষ্টির দিনে ভাঙা রঙিন চুড়ি খেলি কুঁড়িপিসির সঙ্গে, চুড়ির গায়ে কত কত সুখ দুঃখ লেগে থাকে সঙ্গোপনে।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – কাজাখস্তান ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কোনো এক সুপ্রভাতে হয়তো মন ভালো ছিল, তাই প্রকৃতি কাজাখকে দিলেন ইউরেনিয়াম, তামা, শিসে, ক্রোমিয়াম, দস্তা, লোহা, হীরে এবং অগাধ খনিজ তেলের ভাঁড়ার। কিন্তু এই আশ্চর্য ধন সম্পদ খুঁজে দেখেননি, তার পরোয়া করেননি যাযাবর জনতা। সে অমৃত পড়ে রইল আসা যাওয়ার পথের ধারে। এ দেশের মানুষ স্থায়ী ভাবে বাস করতেন না কোথাও। মোঙ্গল রক্ত শরীরে আর মন উড়ু উড়ু। যাযাবরের মত আসা যাওয়া—আজ এখানে, কাল ওখানে। দেশটা এত বড়ো, যে, চরৈবেতি বলে চরে খাওয়ার কোনো অসুবিধে ছিল না।
দীর্ঘ জনযাত্রায় তাঁদের চোখে পড়েছে দেশের বিস্তৃত প্রান্তরে একটি ক্ষিপ্র গতির প্রাণী এখানে ওখানে দৌড়ে বেড়ায়। হেঁটে ক্লান্ত যাযাবরেরা হঠাৎ কোনো এক সময়ে তার ওপর চড়ে বসলেন। সে প্রাণী খুব একটা প্রতিবাদ হয়তো করেনি, করলেও তার কথা লিখে রাখবার মতন ট্রাভেল রাইটার জোটেনি।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৫৫) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৫২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
- সাতরকম ভাজা কী কী?
- যেদিন যেমন বাজারে ওঠে—চাকা চাকা গোল আলু ভাজা, লম্বা লম্বা পটল ভাজা, পাতলা করে কাটা কুমড়ো ভাজা, বোঁটা সমেত বেগুন ভাজা, চাকা করে কাঁচকলা ভাজা—এগুলো রোজই হবে, যতদিন পুজো চলবে। তার সঙ্গে ধর ডুমো করে ঢ্যাঁড়শ ভাজা বা ফুলকপি ভাজা হল – সব মিলে সাতরকম। অষ্টমীর দিন আর একটা বাড়বে—ধর কলমি শাক ভাজা হল, নবমীর দিন ধর এগুলোর সঙ্গে নারকেল ভাজা হল—এইরকম। সবসময়ে যে এই যা বললাম, সেগুলোই হবে, তা নাও হতে পারে। উচ্ছে ভাজা, গাজর, শিম বা কুঁদরি ভাজা—কতরকম হতে পারে। ভাজার কি আর শেষ আছে? বাড়িতে এতগুলো কলা গাছ, থোড় ভাজা হতেও বাধা নেই।
হর হর ট্যাবলেট : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সমাজ চিত্র বলে, ট্যাবলেট তার কাজ করে গিয়েছে নীরবে নিভৃতে। গায়ের মধ্যে সামান্য যে আঁচড় পড়েছিল, তা এখন ঘা হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষেত্রেই। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টের খাতা দেখে শিক্ষকদের চোখ কপালে উঠেছে। বিদ্যায়-বুদ্ধিতে-জ্ঞানে এমন বহু পরীক্ষার্থী হার মানিয়েছে বেসরকারি স্কুলে পড়া পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়াদেরও। টেস্টের ফলাফল দেখে আক্ষরিক অর্থেই ভীত ও সন্ত্রস্ত শিক্ষক শিক্ষিকারা বলছেন, ‘টেস্টেই যদি এমন হাল হয়, ধারাবাহিক পড়াশোনার এই যদি নমুনা হয়, বোর্ডের পরীক্ষায় যে ভরাডুবি হবে।’ জানতে পারলাম, কল্পতরুর মতো নম্বর দিয়েও নাকি পাশ করানো যাচ্ছে না বহু পড়ুয়াকে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০২৩ বার পঠিত
একটা বটগাছের নিচে ছাউনি খাটানো হল; চারপাশে টাঙ্গানিকার হালকা-ধূসর জলরাশি, তার পাশে ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া পাহাড়ের সারি। পাম-কুঞ্জ, কলাঝাড়, সাবু-সহ শস্যখেত দিয়ে সাজানো নিয়াসাঙ্গা গ্রামটি অবস্থিত নিয়াসাঙ্গা নদীর মুখে। তাঁবুর কাছেই গ্রামবাসীদের ছোট-বড় আধা ডজন ক্যানো ছিল। তাঁবুর দরজার সামনেই যতদূর চোখ যায় মিষ্টি জলের রাশি মৃদু বাতাসকে ডাক পাঠাচ্ছে— দূরের উগোমা, উকারাম্বা চোখে পড়ে। ঘন-নীল-শিরা-লাঞ্ছিত মুজিমু দ্বীপপুঞ্জও ফুটে ওঠে চোখের সামনে। আমাদের পায়ের তলায় পরিষ্কার, জলে-ধোয়া নুড়ি, সমুদ্রের অস্থির ঢেউয়ে ভেসে ভেসে কূলে এসে সারি বেঁধে জমা হয়, কোথাও বা স্তূপের আকার নেয়। আমাদের ডাইনে বাঁয়ে পিছনে যে পাহাড়ের রাশি সেগুলো কি দিয়ে তৈরি তা এই পাথরগুলোর থেকেই হদিশ পাওয়া যাবে।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৫৬) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৩৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
অন্নদা দিদি হলেন গল্পের ভাণ্ডার। আমি তাঁকে খুবই পছন্দ করি, তিনিও আমাকে ভালোবাসেন। কারণ বুড়ো মানুষের কথা কেউ শুনতে চায়না, সময় নষ্ট মনে করে। আর আমি তাঁকে ডেকে ডেকে গল্প শুনি। অন্নদা দিদি বলেন, আগের দিনে কথা ছিল, “যার আছে মাটি, তাকে দাও বেটি।” অর্থ খুব পরিষ্কার। যার জমিজমা আছে, সঙ্গতি আছে সে ঘরেই মেয়ের বিয়ে দিতে হয়। সেই আপ্ত বাক্য মেনে, আমার দাদা শ্বশুর তারিণী প্রসাদের সাত বোনেরই বিয়ে হয়েছিল জমিদারের ঘরে। বড় জনের বিয়ে হল বালিসাইতে। তার পরের জনের বালেশ্বরের খরসুয়াতে, পরের জন মানে তৃতীয়া গেলেন বালিসাইয়ের কাছাকাছি গড় মুহুরি ওরফে গড় ভৌঁরিতে।, চতুর্থ জন কেয়াবটতলায়, পঞ্চম জন মোহনপুরে, ষষ্ঠ কন্যা মানে দ্য গ্রেট ভব অপার শ্বশুর বাড়ি ছিল এগরায়। সপ্তম কন্যে গেলেন কাঁথির দুরমুঠে।
সত্যিই কি কাকতালীয়? : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৪২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পদ্ম আমাদের জাতীয় ফুল, সেটা আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু পদ্ম যে একটি রাজনৈতিক দলেরও নির্বাচনী প্রতীক, সেটা হয়তো অনেক বেশি মানুষ জানেন। ছোটদের ঐ পত্রিকায় পদ্ম ছাড়া অন্য যে ফুলের ছবি বাচ্চারা এঁকেছে, সেই ফুলের সঙ্গে আবার অন্য আরো একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীকের সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য। বিষয়টি শুধু ছবি হলে একরকম ছিল, কিন্তু যেহেতু বাচ্চারা এঁকেছে, তাই এই সম্পর্কে কথা বলা জরুরী। বাচ্চারা এমনিতে যা দেখে, তাই তাঁদের মনে গেঁথে যায়। শিক্ষিকারা হয়তো বাচ্চাদের ফুলের ছবি আঁকতে বলেছেন, কিন্তু বাচ্চারা ঐ ছবিই এঁকেছে, যা তারা বিভিন্ন রাস্তাঘাটে, বিভিন্ন ফ্লেক্স, ব্যানার, দেওয়ালে দেখছে এবং প্রতিনিয়ত দেখে চলেছে। যাঁরা মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা ভালো বলবেন হয়তো এই বিষয়ে, কিন্তু বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৫৭) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৪৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
যে রাজা কোনারকের সূর্য মন্দির তৈরি করেছিলেন, সেই রাজাই রেমুনার এই গোপীনাথের মন্দির তৈরি করেন। এখন ঘটনা হল, শ্রীচৈতন্যের গুরু যে ঈশ্বর পুরী, তাঁর গুরু হলেন মাধবেন্দ্র পুরী। তিনি একবার এই মন্দিরে কিছুদিন আশ্রয় নিয়েছিলেন। মন্দিরে থাকার সময়ে তিনি জানতে পারেন এই মন্দিরে গোপীনাথকে ক্ষীর নিবেদন করা হয়। আমার শ্বশুরবাড়ির স্থানীয় ভাষায় পায়েস, ক্ষীর এইসব ভোগকে বলা হয় ক্ষীরিভোগ। একদিন পুজোর আগে ঠাকুরের সামনে পরপর ক্ষীরের পাত্রগুলি এনে রাখা হচ্ছিল। মাধব ঠাকুরের মনে হল, ইশশ্, যদি একবার চেখে দেখতে পারতাম কেমন স্বাদ, তবে আমার আশ্রমেও আমি ঠিক এমনই ভোগের ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু এই ভাবনা আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চমকে উঠলেন, এ কী সর্বনাশ করে ফেললেন। তিনি যে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। তাঁর কি সাজে দেবতার ভোগ দেবতাকে নিবেদন করার আগে নিজে সেবন করার ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দেওয়া?
সীমানা - ২১ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ২৭১৭ বার পঠিত
গতকাল, কাজি বলে, ঘুম আসছিল না কাল রাতে; তারপর হঠাৎ কেমন মনে হল, একটা কবিতা লিখতে হবে। ওদিকে মুজফ্ফর তখন গভীর ঘুমে। আমি উঠে ভয়ে ভয়ে আলোটা জ্বালালুম, পাছে ওর ঘুম ভাঙিয়ে দিই। দেখলুম ও ঘুমিয়েই চলেছে, আলো বুঝতেও পারছে না। তখন লিখতে শুরু করলুম, পেনসিল দিয়ে। কেমন যে একটা তোলপাড় হচ্ছিল মনের মধ্যে বোঝাতে পারব না আপনাকে। মনে হচ্ছিল, দোয়াত-কলম দিয়ে পারব না লিখতে, কালি শুকিয়ে যাওয়া, দোয়াতে আবার কলম ডোবানো, এসব করতে পারব না, করার সময় হবে না। পেনসিল দিয়ে কিন্তু ঝর ঝর করে লেখাটা হয়ে গেল অবিনাশদা। লেখাটা দেখুন, বিশেষ কিছু কাটাকুটি নেই, যেন আমার মাথার মধ্যে ছিলই কবিতাটা। শুরু করতেই নিজেই নিজেকে যেন টেনে নিয়ে গেল। লেখা শেষ হতে, মুজফ্ফরকে ঘুম ভাঙিয়ে টেনে তুললুম। কাউকে একটা শোনাতেই হবে।
অশ্রাদ্ধজ ভূত - কতিপয় আধিভৌতিক প্রশ্ন : অশোক মুখোপাধ্যায় (নান্দীমুখ)
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৩৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
বরানগর নিবাসী, কলিকাতাস্থ ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট-এর ভাষাতত্ত্ব বিভাগের জনৈক বিশিষ্ট ভূতপূর্ব অধ্যাপক তাঁহার পিতা মাতার মৃত্যুর পর যথাবিহিত শ্রাদ্ধশান্তি করান নাই। নিজ পল্লীতে তিনি ও তাঁহার পরিবার “নাস্তিক” বলিয়া পরিচিত। ইহাতে উক্ত ভদ্রলোকের ঊর্ধ্ব পিতৃপুরুষের (জেনানাকুলও তাহার অন্তর্ভুক্ত বলিয়া গণ্য করিতে হইবে) দেহত্যাগী আত্মাসমূহের পিণ্ডলাভ ঘটে নাই, তাহারা জল পায় নাই। সুতরাং ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত হইয়া তাহারা পুরাতন লোকালয়ে আসিয়া যে কথঞ্চিত দৌরাত্ম্য করিবে, ইহাতে বিস্ময়ের কিছু মাত্র নাই। তথাপি, যাঁহারা ইহাতে সত্যই বিস্মিত হইতেছেন, তাঁহাদিগকে আমি পুরাতন শাস্ত্রসমূচয় পুনর্বার পাঠের জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করিতেছি।
সমস্যা আরও জটিলতর হইয়া উঠিয়াছে, শোনা যাইতেছে, সেই পূর্বাত্মাগণ সংশ্লিষ্ট লোকালয়ে আগমন করিয়া তাহাদিগের নিজস্ব আপন আপন পুরাতন আস্তানা খুঁজিয়া পাইতেছে না। ফলত, তাহারা ক্ষুন্নিবৃত্তির তাড়ণায় এবং তৃষ্ণা নিবারণার্থ যত্র তত্র প্রবেশ করিতেছে, অপরাপর অনাত্মীয়গণকেও নাকি যারপরনাই বিরক্ত করিতেছে। স্বাভাবিক।
ইন্দ্রাণী দত্তের গল্পসংকলন সূর্যমুখীর এরোপ্লেনঃ পাঠ -প্রতিক্রিয়া : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গত দেড়দশক ধরে ইন্দ্রাণী দত্তের ছোটগল্প প্রবুদ্ধজনের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁর কাহিনীর বুনোট, গল্প বলার ধরণ, দৈনন্দিন জীবনের কাঁকর-বালি বেছে স্বর্ণরেণু আহরণের ক্ষমতা পাঠককে আবিষ্ট করে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে উনি বাংলাভাষার অগুনতি লেখকদের ভীড়ে হারিয়ে যান না। যে ক’জন সমসাময়িক ছোটগল্প লেখককে সিদ্ধিপ্রাপ্ত বলে আঙুলে কর গুনে চিহ্নিত করা যায়—নিঃসন্দেহে উনি তার অন্যতম।
প্রথম গল্পসংগ্রহ ‘পাড়াতুতো চাঁদ’ গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশনই ছেপে বের করেছিল। এটি সে’ হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ। যথারীতি, চটিবই সিরিজের, এবং ১২৮ পাতার বইটির দাম মাত্র ১৩০ টাকা। এটি বেরিয়েছিল করোনাকালে, ২০২০ সালের বইমেলায়।
উনি লেখেন কম। সুদূর প্রবাসে জীবিকার এবং সংসারের দায় মিটিয়ে ফাঁকে ফোকরে চলতে থাকে তাঁর অধ্যয়ন এবং লেখাপত্তর। না, আমার ওপরের দুটো অবজার্ভেশন পরস্পরবিরোধী নয়। উনি যখন পাবলিক ফোরামে কোন লেখা পেশ করেন সেটা একবার পড়লেই বোঝা যায়—বড় যত্নে লেখা। ফরমাইশি লেখা নয়, ধর-তক্তা-মার-পেরেক গোছের তাড়াহুড়ো লেখা নয়।
বোঝাই যায় এ লেখা অনেকদিন ধরে মনে মনে কম্পোজ হচ্ছে , কাটছাঁট হয়েছে। একটি শব্দ বা লাইনও অনাবশ্যক নয়।
আমার বই-এর অনুবাদের পুরস্কার বিতর্ক প্রসঙ্গে : কোবাদ ঘ্যান্ডি
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৭৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
মূল বইটির বিষয়ে বলতে গেলে বলতে পারি যে, ইংরাজি বইটি ২০২১ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশের আগে করণ থাপার, বরখা দত্তের মত সাংবাদিকরা আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। দ্য উইক ম্যাগাজিনে কভার স্টোরি হয়। অ্যামাজনে বইটি অনেকদিন ধরেই বেস্ট সেলার হিসাবে আছে এবং বিক্রিও ভালই হচ্ছে। মারাঠি, পাঞ্জাবি, বাংলা, কন্নড় ও হিন্দীতে অনূদিত হয়েছে। তামিল অনুবাদ-ও শীঘ্রই আসছে। বইতে আপত্তিজনক কি কি আছে তা যদি কেউ তুলে ধরতে পারতেন তাহলে ভালো হত। আমি বলতে পারি, এই বইতে এমন কিছুই নেই যাতে একে মাওবাদী বলা যায়। বইটির উপসংহার বলছে যে পরিবর্তনের জন্য আনা যে কোনও সামাজিক প্রকল্প সফল হতে গেলে তাতে ব্যাক্তিত্বের স্বাভাবিকতা, অকপটতা, সততা, সারল্যের মত ভ্যালু বা মূল্যবোধের স্থান থাকতেই হবে – এমন কিছু গুণ যা আমি আমার প্রয়াত স্ত্রী অনুরাধার মধ্যে দেখেছিলাম। সেই সাথে, স্বাধীনতার অন্যতম উদ্দেশ্যই হতে হবে অধিকাংশের জন্য সুখ/আনন্দ। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তাদের কি অসুবিধা? তদুপরি, এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে মূল বিচার্য ছিল অনুবাদের উৎকর্ষ। তিনি এই কাজটি করেছেন একজন পেশাদার অনুবাদক হিসাবে। যাঁর জীবিকা অনুবাদের ওপর নির্ভরশীল, তাঁর থেকে পুরস্কার কেড়ে নিয়ে সরকার কি বার্তা দিতে চাইল?
ভারতের ‘রাজনৈতিক’ সেলফি শিকারিরা : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১১০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমি কয়েক বছর আগের একটি সেলফি হামলার কথা ভুলতে পারি না। তখন দুই সন্তানকে নিয়ে দিল্লির বিশ্ব বইমেলায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ ছোট সন্তান চোখের আড়ালে চলে যায়, তখন সবে সাত বা আট বছর তার বয়স। চলন্ত ভিড়ের মাঝখানে তাকে খোঁজার সময় আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করেছিল। সেই মুহূর্তে আমার কাঁধে একটি হাত অনুভব করলাম, “যোগেন্দ্রজি, এক সেলফি হো যায়ে (একটি সেলফি হয়ে যাক?)”, আমি শুনলাম এবং সেটা উপেক্ষা করে চারপাশে তাকাতে থাকলাম। তখন সেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেলফি শিকারি আমাকে একপাশে টেনে নিয়ে গেল। আমি তাকে আমার পরিস্থিতি বোঝালাম এবং ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। “অবশ্যই,” তিনি বললেন, “পর এক সেলফি তো বনতি হ্যায়”। আমি ঘুরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই অবস্থায় কেউ তার সঙ্গে এমন করলে তার কেমন লাগবে? তিনি সহানুভূতিতে মাথা নাড়লেন এবং তবুও সেলফি তুলতে গেলেন!
এক কাপ চা - পর্ব ১ : কল্যানী ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৩৫১ বার পঠিত
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে।
এক কাপ চা - পর্ব ২ : কল্যানী ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৫৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে।
এক কাপ চা - পর্ব ৩ : কল্যানী ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ | ৯৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে।
সীমানা - ২২ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ | ২৭৬৮ বার পঠিত
আগুন জ্বললো পরের দিন, সম্পূর্ণ নতুন আবহে। এমনটা কাজি দেখেনি আগে; দোলের আগের দিন, সন্ধ্যে পেরিয়ে তখন রাত অনেকটাই। পরের দিন পূর্ণিমা, আজই আকাশ ভেসে যাচ্ছে আলোর বন্যায়। নানারকমের কাঠকুটো যোগাড় করে গ্রামের ছেলেরা এসে জমিদারবাবুর প্রাঙ্গনে আগুন জ্বালাল। ছেলের দল বলল নেড়াপোড়া, কিরণশঙ্কর বললেন চাঁচর। তারপর বললেন, ওদের নেড়াপোড়া কথাটাও কিন্তু বেশ যুক্তিযুক্ত। ধানকাটা হয়ে গেছে, পিঠেপায়েসের উৎসবও শেষ। এখন নতুন করে জমিতে কাজ শুরু হবে, তার আগে ক্ষেতে পড়ে-থাকা শস্যস্তম্ব, মানে, শস্য কেটে নেবার পর ক্ষেতে পড়ে থাকে যেটুকু, যাকে গ্রাম্য ভাষায় নেড়া বলে, তা পোড়ানো হবে।
প্রযুক্তি নির্ভর নির্বাচন আসলে গণতন্ত্র হরণ নয় তো? : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ১১১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভারতের নাগরিকেরা কি তবে আর ভারতীয় গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না? অন্তত নির্বাচন কমিশনের তথ্য তো তাই বলছে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং তারপরে যে কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ভোটদানের হার ক্রমশ কমছে। গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মৌ চুক্তি অবধি করেছিল, যাতে সেই সব সংস্থাতে কর্মরত মানুষেরা ভোট দিতে অনীহা প্রকাশ না করেন। যে সমস্ত কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না, তাঁদের নামের একটি তালিকা অবধি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। বিরোধীদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই বন্দোবস্ত তো ‘বাধ্যতামূলক’ ভোটদানের প্রক্রিয়া, কোনও গণতন্ত্রে একজন মানুষ, নানান কারণে ভোট নাও দিতে চাইতে পারেন, তা’বলে কি একজন মানুষকে ভোটদানে অংশ নিতে বাধ্য করা যায়?
গদ্য সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে আশীষ লাহিড়ীর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডাঃ পর্ব ১ : রূপক বর্ধন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
প্রথমত, কবিতা ব্যাপারটাই, মানে সেই রবীন্দ্রনাথের কথায়, ফুলের গন্ধের মত। ব্যাপারটা কী ইউ ক্যানট ডিফাইন। মানে এই অস্পষ্টতাটাই কবিতার বৈশিষ্ট্য। আমি যেমন কবিতা একেবারে লিখতে পারি না। একসময় রবীন্দ্রনাথের কিছু গান বা কবিতা অনুবাদের চেষ্টা করেছি। আমার ভাই সৌমিত্রও করতো, আমারা একে অপরের সঙ্গে মেলাতাম; কিন্তু আমি দেখেছি যে আমার হাতে সেটা প্যারাফ্রেজিং হয়ে যাচ্ছে। মানে সেটা পড়ে মূল কবিতার অর্থটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু দ্যাট ইজ নট দি পোয়েম। কাজেই কবিতার ক্ষেত্রে ওই যে এক্সট্রা মাত্রাটা, সেটা শুধু তার লজিক নয়, শুধু তার শব্দ নয়, অথবা সবকিছু মিলিয়ে, ধরো তার ধ্বনি, মানে এই সবকিছু মিলিয়ে যে বাড়তি ব্যাপার, আমার মনে হয় অনুবাদে সেটা সম্ভবই না। তাহলে কি বলবে কবিতা অনুবাদের কোনো মানে নেই? এক অর্থে হয়তো নেই! রবীন্দ্রনাথ নিজেই তার প্রমাণ। কোনো কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ইংরেজি গীতাঞ্জলি বেশ ভালো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই! কিন্তু যারা গীতাঞ্জলিকে বাংলা-গীতাঞ্জলি হিসেবে পড়েছে তারা সেই রসটা খুঁজে পাবে না। অর্থাৎ যে লোক বাংলা জানে না তার কাছে কিন্তু ওটার মূল্য আছে এবং সেখানেই আমি বলবো কবিতা অনুবাদের সার্থকতা; যেটা বুদ্ধদেব বসুও পয়েন্ট আউট করেছিলেন।
রুহানি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এ এক অদ্ভুত বই। পাতার পর পাতা উলটেও আমি ঠিক করতে পারিনি এ কোন বৃক্ষের ফুল, কোন জনরেঁ এর উৎস। প্রবন্ধ, ইতিহাস, রসনা-রেসিপি, ইদানীং ফুড-ব্লগ নামে যা জগত-বিখ্যাত, শিল্প ও শিল্পীর ওপর কিছু কথা, নাকি কেবলই মনোহরণ দাস্তান বা আখ্যানগুচ্ছ। সব কাননের ফুলের সুবাস পাওয়া যাবে এতে আলাদা করে, আবার প্রত্যেকটি মিলেমিশে একটি নিবিড় কথকতা! বাংলা সাহিত্যে এরকম আর কিছু আছে কি?
স্যাটেলাইট ট্রান্সফার : মোহাম্মদ কাজী মামুন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : দোল | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১৩৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
চেম্বারটির সাথেই একটা জানালা ছিল, সে জানালাটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল মোরসালিন। শম্পা চলে যাওয়ার পর ফাইলগুলো নিয়ে বসেছিল, এর মধ্যে তো একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, একটি বিশাল বিজনেস প্লান, কোম্পানির এই শাখা অফিসটার চেহারা একাই বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু কিছুদূর যেয়ে মাথাটা গুলিয়ে গিয়েছিল! এত দিন ধরে মেহনত করেছে যার জন্য, যার পুরো রূপরেখাটা তার দেয়া, সেই কাঠামোটাই যেন খুব অচেনা লেগেছিল, আর মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছিল। জানালাটার বাইরে তখন চলচ্চিত্রের রিলের মত ছুটে চলেছিল মানুষ, যানবাহন। এমনকি একটা নেড়ি কুকুরকেও রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ুতে দেখা গেল, কি এক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে রয়েছে যেন সে, কিসের যেন এক তাড়া! এমনই এক তীব্র চলার স্রোত জানালার নীচের রাস্তাটিতে যে মনে হয়, জড় দোকানপাট ও বিপনিবিতানগুলোরও চাকা গজিয়েছে!
সীমানা - ২৩ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২৬২১ বার পঠিত
ভালো লাগে না কাজির, সে স্বভাবতই খোলামেলা চরিত্রের মানুষ, এই-যে দুলির সঙ্গে এমন একটা ঘনিষ্ঠতার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল সে, সেটাকে যে যথাসাধ্য গোপন করার চেষ্টা করতে হচ্ছে, এ তার ভালো লাগে না। কিন্তু গোপন না করেই বা কী উপায়? দুলি তো একেবারেই ছেলেমানুষ; নিজের ভালো যদি নিজে সে বুঝত! কাজির মতো একজন ছন্নছাড়া বিষয়আশয়হীন গৃহহীন অর্থসংস্থানহীন মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অর্থ যদি সে বুঝত! বোঝে না, তাই কাজির দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কিন্তু কাজির যে চিৎকার করে সারা পৃথিবীকে জানাতে ইচ্ছে করছে! ছন্নছাড়া হতে পারি, কিন্তু আমার মতো ভাগ্যবান কে আছে!
গদ্য সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে আশীষ লাহিড়ীর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডাঃ পর্ব ২ : রূপক বর্ধন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৫১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সে যাই হোক, তোমায় একটা আবিষ্কারের গল্প বলি শোনো। এসব কথায় কথায় উঠে আসে। সুগতবাবু রবীন্দ্রনাথকে নানান জায়গায় কোট করেছেন ওঁর বইতে, তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিকতা বা কট্টর-জাতীয়তাবাদ-বিরোধিতা ইত্যাদির উপর জোরও দিয়েছেন। তো এক জায়গায় ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরে নতুন শতাব্দীর সময়টাকে ধরতে গিয়ে উনি রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটা কোট করছেন, 'শতাব্দীর সূর্য আজি রক্তমেঘ মাঝে অস্ত গেল'। এইটা দিয়ে উনি তখনকার পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, যে কেন রবীন্দ্রনাথ এটা লিখলেন। এইটারই আবার রবীন্দ্রনাথের করা একটা অনুবাদ ন্যাশনালিজম বইয়ের পরিশিষ্টে আছে। তো আমি রবীন্দ্রনাথের বাংলাটা আর ইংরেজিটা মেলাতে গিয়ে দেখলাম ইট ইজ এ রেভিলেশান। কারণ প্রথম লাইনগুলো হুবহু এক, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারপর দেখি কবিতার লাইন আর মিলছে না। আবার কয়েকটা লাইনে দেখি নাহ এই কবিতা থেকেই নেওয়া, খানিক দূর যাওয়ার পর দেখি আবার মিলছে না! ইংরেজি কবিতাটা বেশ বড়, আর বাংলাটা ততটা বড় নয় কারণ ওটা সনেট- ১৪ লাইনের। বাংলাটা লেখা হয়েছিল ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর, আর উনি ওটার ইংরেজি করছেন ১৯১৩ কি ১৪ সালে- যদ্দূর সম্ভব; কাজেই ততদিনে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৬১) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বিয়ের পরে নতুন বউ, শ্বশুর বাড়িতে দুর্গাপুজো, শাশুড়ি বরণ শেখাচ্ছেন, সিঁদুর খেলা, বরের ক্যামেরায় সিঁদুর মাখা মুখের ছবি, মত্ত হয়ে ছিলাম। বাড়িসুদ্ধ সবাই মাতোয়ারা। হঠাৎ চোখে পড়লো, সবার প্রিয় বড়দি, আমার বড় ননদ ঘরে মুখ চেপে ডুকরে কাঁদছে। বিধবা বলে এই আনন্দে তার অধিকার নেই, নিজের বাড়িতেও। সেদিন বিজয়ার আর একটা নির্মম মানে বুঝলাম - সধবার স্বীকৃতি আর আনন্দের তলায় বিধবার দুঃখ। সধবার অধিকারের উলটো দিকে রয়েছে বিধবার নিঃসঙ্গতা - একরকম সামাজিক বহিষ্কার। এ চাবুক চোখে দেখা যায়না, তাই আসল চাবুকের চেয়ে অনেক কঠিন আর ধারালো, চামড়া কেটে গভীরে বসে যায়। ঐ দৃশ্য দেখার আগে বিজয়া দশমী যে কিছু মেয়ের জন্য এতটা অপমানের তা বুঝতে পারিনি। এখন দশমীর বরণে পারুল কে ডাকি। অল্প বয়সে পারুলের বর সুরাটে কাজ করতে গিয়ে এইডসে মারা যায়। তিনটি শিশু সন্তানসহ একঘরে পারুলকে শাশুড়ি আশ্রয় দেন। পারুল বলে, "হ গো বৌদি, মো কি ঘরো পূজা করিনা? শুধু সিন্দুর দিবানি, প্রদীপ, ধূ্প, মিষ্টি, জড়ো, পানো সবু দিবা"। প্রথাগত শিক্ষার নাগালের বাইরে থাকা আত্মবিশ্বাসী নারীকে বড় ভালো লাগে।
আমার স্বদেশ লুঠ হয়ে যায় প্রতিদিন প্রতিরাতে – আমাদের “হিন্দু” হয়ে ওঠা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২৮৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
প্রসঙ্গান্তরে, প্রতিবছর আমরা ১৫-ই আগস্ট তথা স্বাধীনতা দিবসের দিনটিতে যথেষ্ট পরিমাণ বেলপাতা-ফুল-পাঁজি-বাতাসা নিয়ে স্বাধীনতার গল্প শুনি। ২০১৭ সালে দুই দিনাজপুর এবং মালদার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়ঙ্কর বন্যা শুরু হয়েছিল ১৫ আগস্ট। এক হাঁটু জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে গ্রামের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন, সাথে কয়েকজন বাচ্চা শিক্ষার্থী ছিল। পরের দিন সংবাদপত্রের খবর হয়েছিল এ ঘটনা। সমস্ত বঞ্চনা, অনাদর, অবহেলা, অবান্তর মৃত্যু, বুভুক্ষা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাজারো ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও মানুষের স্মৃতিতে নির্মিত হয় স্বাধীনতা দিবসের বর্ণময় চিত্রকাব্য – এমনকি জীবনে কোন বর্ণ না থাকা সত্ত্বেও। এখানে এসে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা – হবসবম, হানা আরেন্ট, নর্বার্ট এলিয়াস, স্পিভাক, লাকাঁ আদি সমস্ত বিশ্ব তত্ত্বসাম্রাজ্যের শাসক সম্রাটেরা – ভেঙ্গে পড়তে থাকে মানুষের শরীরী অভিজ্ঞতা বা emobodied experience-এর কাছে। অদ্ভুতভাবে অনেকেরই সেদিন মনটাও হয়তো বা একটু উড়ুক্কু থাকে।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং রেপুবলিকা স্রাপসকা ১ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ১৫৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ক্রোয়েশিয়ান চৌকির পুলিস কিঞ্চিৎ কৌতূহলী। আমার চেহারার সঙ্গে আমার পাসপোর্টের রঙ, গাড়ির নম্বর প্লেট এবং পার্শ্ববর্তিনীর মুখ কোনটাই মেলে না, প্রায় কখনোই। চার দশক কেটে গেছে, পুলিশের বিস্ময় আমাকে আর বিস্মিত করে না। এখন কেবল পরবর্তী সংলাপের অপেক্ষা। পরিচ্ছন্ন ইংরেজিতে জানতে চাইলেন ঠিক কোথায় যাচ্ছি—মস্তার? বললাম, মস্তার যাবো, তবে মেজুগরিয়ে হয়ে। রোদিকাকে দেখিয়ে বললাম ইনি যে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা মহিলা, একবার মা মেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান!
লেবারের বিদেশ যাত্রা ১৪ : মঞ্জীরা সাহা
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ১২৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জল নয়। জল নয়। খটখটে রোদে চকচক করে ওঠা বালি ওখানে। সেই গল্পের মত। ওরকম জলের মত দেখতে লাগে। কাছে গিয়ে দেখা যায় বালি। বলে মরীচিকা। ঠা-ঠা-পোড়া রোদে গা-হাত-পা-সারা শরীর যেন জ্বলে জ্বলে উঠছে। এই কোথায় গেল! করকর করা চোখ দুটো গুনছে এবার। উনষাট, ষাট, একষট্টি, বাষট্টি… না একটা নেই তো। চারিদিকে যতদূর বালির ঢেউয়ের দিকে চোখ যায়, খোঁজার চেষ্টা করছে। তারপর ঝাপসা। আটষট্টি, ঊনসত্তর… না মিলছে না। কোনও একটা নাম ধরে চ্যাঁচাচ্ছে। আলম ইকবাল বা ইমরান…। ডাকছে। বারবার। মুখের ভেতর শুকনো জিভটা নড়ে নড়ে উঠছে। শুকনো গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোতে চাইছে না। বা-আ-বু…ল আ-বু…ল। না, সাড়া নেই।
সত্যবতী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : দোল | ০৯ মার্চ ২০২৩ | ২৪৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
রাস্তার ধারে ঝুপসি গাছপালাগুলো অব্দি কুয়াশার কম্বল মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটু বাতাস বইলে দেখায় বিশাল দৈত্যের মাথা নাড়ার মতো। ধোঁয়া-ওঠা বুক নিয়ে এলিয়ে পড়ে থাকা নদীর দিক থেকে কেমন একটা গোঁওওও শব্দ ভেসে আসে, যেন কেউ কাঁদে, কষ্টে গা মোচড়ায়, নিজের গলায় নিজের দশ আঙুল চেপে ধরে।
তাতে গা শিরশির করলেও অষ্টমী ভালোই জানে আসল বিপদ লুকিয়ে আছে পেছন বাগে। সে বিপদ যে কখন বিদ্যুতের মতো ঘাড়ের ওপর অব্যর্থ লাফিয়ে পড়বে কেউ জানে না। সে এক আশ্চর্য হলদে আগুনের শিখা, তাকে দেখার আগেই নিজের কানেই শুনতে পাবে নিজের ঘেঁটি ভাঙার মট মট শব্দ, আর কিছু বোঝার আগেই এতো আলহাদের শরীরখানা তেনার কষে ঝুলতে থাকবে। যেন তুমি আর মানুষ নও হে, দাঁত বার করা মরা বেড়াল একটা। শিউরে উঠে অষ্টমী তার কালো ফাটা হাতখানি কোঁকড়া চুলে ঢাকা ঘাড়ের ওপর আলগোছে বুলিয়ে নেয়। রক্ষে কর সোনার বন্ন বনবিবি, মা আমার!
ভয় তাকে পেড়ে ফেলে, হঠাৎ এমন কাঁপুনি দেয় যে শরীরের সমস্ত রোঁয়া খাড়া দাঁড়িয়ে ওঠে।
মায়ার জঞ্জাল – আত্মপরিচয়ের ভাবনা : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১০ মার্চ ২০২৩ | ১৯৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
শ্রেণি বিভাজনে আজ যদি প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন-প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন-বুর্জোয়া, বুর্জোয়া, পেটি-বুর্জোয়া ইত্যাদি বলা হয় তাহলে মানুষ যার পর নাই বিরক্ত হবেন। আবার সেইসব বস্তাপচা বিশেষণ! এসব বিংশ-শতাব্দীর ব্যাপার, একবিংশ শতাব্দীতে এইসব চলে না। একবিংশ শতাব্দী হল উত্তরাধুনিকতার যুগ এবং উত্তরাধুনিকতা বামপন্থা বা মার্কসবাদকে আধিপত্যকামী বা হেজিমনিক মনে করে ও বিরোধিতা করে। ব্যাপার যে এখন আরও অনেক জটিল এবং উক্ত বিশেষণগুলি যে এখন আর এদের সম্যক পরিচয় বহন করে না জগার মত সিন্ডিকেট-বস বা বিউটি (দেশান্তরিত ও অত:পর স্বামী কর্তৃক বিক্রিত), মালাদের মত একবিংশ শতাব্দীর শহুরে যৌনকর্মীদের দেখলে অবশ্যই বোঝা যায়। সত্য বিউটিদের সঙ্গে জগা গণেশ এবং চাঁদু সোমাদের সঙ্গে সুধাময়দের পরিবার - দুটি আলাদা উলম্বে স্থাপিত।
বিবাহ অভিযান : বর্ন ফ্রী
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ১৪ মার্চ ২০২৩ | ১৭০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
উফফ্ দু-দন্ড যে একটু শান্তিতে দিন কাটাবো তার যো নেই। হতভাগাগুলো আবার “দাও দাও” আবদার শুরু করেছে। হ্যাঁ রে অনামুখোর দল, এই যে তোদের কথামত ৩৭৭ সরালুম, তাতেও তোদের আশ মিটল না। না, মানে আমরা সরিয়েছি তা নয়, সুপ্রীম কোর্ট সরিয়েছে, কিন্তু আমরা কি তাতে কিছু বলেছি? হুঁ হুঁ বাবাসকল, এ হল অমৃতকাল, সবকা বিকাশ না করে ছাড়ব না। এই যা, বাবাসকল বলে দিলাম, তোদের তো আবার কে বাবা আর কে মা তার ঠিকঠিকানা নেই। আজকে দাড়িগোঁফওয়ালা শাড়ি পরে ঘুরছে তো কাল আরেকজন মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাচ্ছে। এরকম ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল চলতে থাকলে আমরা কী আর তাল রাখতে পারি?
যাক গে, যাক। যে কথা বলছিলাম। ৩৭৭ গেল কি গেল না, তোরা এসে উপস্থিত হলি বে করব বায়না নিয়ে। বলি বিয়ে কি ছেলের হাতের মোয়া না নোটবন্দী যে চাইলেই করে ফেলবি? এ হল অতি গুরুতর বিষয়, সমাজের হিত, দেশের ভিত, আর ঐতিহ্যের মিথ সব এতে মিলেমিশে আসে। অমন বিয়ে করব বললি আর অমনি আমরা অনুমতি দিয়ে দিলাম, এ আবার হয় না কি?
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৬৪) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৬ মার্চ ২০২৩ | ৯৮৩ বার পঠিত
— ঠাকুমা বলেছিলেন যে, প্রতি সন্ধেবেলাতেই বাড়ির দুর্গামন্ডপে বয়স্ক জ্ঞানীগুণী লোকেরা আসতেন। চা, তামাক, জলখাবার চলত। তারিণী বসে গড়গড়া টানতেন। আর সকলে মিলে নানা বিষয় আলোচনা হত। একদিন সেই সভায় তারিণী বৌমাকে রান্নাঘর থেকে ডেকে পাঠালেন, সবার সঙ্গে বসতে বললেন। বৌমা এত গুরুজনদের সঙ্গে বসবে কী, লজ্জায় ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে রইল। তারিণী বললেন, 'এই লজ্জা সংকোচ ভাঙতে হবে বৌমা, তোমাকে মেয়েদের ইস্কুলের ভার নিতে হবে। নতুন ইস্কুলের দরখাস্ত করা হচ্ছে।'
— তখন ঠাকুমা কী করল?
— ওরে ঠাকুমা পণ্ডিত বাড়ির মেয়ে, বাড়িতে টোল, চতুষ্পাঠী - এসব জন্ম থেকে দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু নিজে কীকরে করবে, এই ভেবে পা কাঁপছিল, বুকের ভেতর ভয় করছিল।
— তারপর?
আহা মরি বাংলা ভাষা : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২১ মার্চ ২০২৩ | ৩৪৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সম্প্রতি, ১৯ মার্চ, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুর শহরে বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনদের এক বিপুল সমাবেশ দেখা গেল। প্রায় লক্ষাধিক বাঙালি বাংলা ভাষাকে ভালোবেসেই একত্রিত হয়েছিলেন এমনটাই ভাবা যায়। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে, বাংলা ভাষাটিকে ধীরে ধীরে বিদ্যালয় পঠনপাঠন থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং বাংলা ভাষার পুন:বহালের দাবি নিয়ে জামশেদপুর শহরের, গোপাল ময়দান, বিষ্টুপুরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন। জানি না, সরকারের টনক কতটা নড়বে কিন্তু এই দাবি চাইতে আসা মানুষজনদের দেখে খুব আশাবাদী। তবে কি ২১শে ফেব্রুয়ারির মত, ১৯ শে মে -এর মত আরেকটি দিন ১৯শে মার্চ সংযোজিত হবে ভাষা আন্দোলনে? বাঙালি অলস জাতি এই অপবাদ মুছে ফেলে শুধুমাত্র ভাষার দাবিতে জেগে উঠবে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি?
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৬৭) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১৬৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
এসে গেল শীতকালের দিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভ্যাকসিন মানুষের হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে শিগগির। আনলক চতুর্থ পর্ব চলছে। যেহেতু কলেজ এখনও খোলেনি, তাই আমার লকডাউন বহমান, থামার জো টি নেই। লকডাউনের অবসরে কর্তামশাই আমার এই একচিলতে বাসার জানলাগুলো বাগান করে ভরিয়ে দিয়েছেন। জানলা থেকে পুঁইশাক কেটে খাওয়া চলল নানারকম, কখনো শাক, কখনও শুধু ডাঁটা অথবা পুঁইমিটুলির চচ্চড়ি। বিলোনোও হল কিছু নিকট আত্মীয় আর প্রতিবেশীকে। এখন ঐ জানালার একফালি রোদে তার বীজ শুকনো হচ্ছে আবার নতুন করে বোনার জন্য। বারান্দাকে তো একটু বড়সড় জানলা হিসেবে ভাবাই যায়, সেখানে তিনি ফলিয়েছেন ছোটো ছোটো বেগুন, দুরকম - সাদা আর বেগুনি। এখন শীতকালে দক্ষিণের জানলায় রোদ আসে বেশ। ছোটোবেলার স্মৃতি আর ইউ টিউবের পড়া মিশিয়ে, রান্নার মেয়েটির সঙ্গে যুক্তি করে থালায় থালায় দিলাম বড়ি। শুকোতে দিলাম সেই জানলায়।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৬৬) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ৩০ মার্চ ২০২৩ | ১০৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আমাদের কর্তা গিন্নি দু'জনের জীবনেই ঝুলন পূর্ণিমার স্মৃতি মনের ঝিলের গভীর স্তরে সাজানো আছে। আমার স্মৃতিতে ভরে আছে - কাঠকলে গিয়ে বস্তা করে কাঠের গুঁড়ো আনা, সেগুলো নানারকম রঙ করা, গ্রাম, শহর, জঙ্গল সব পাশাপাশি, একধারে পাহাড়, নদী, ঝরনা - সেই পাহাড়ের মাথায় শিব ঠাকুর। প্যাকিং বাক্স ওপরে ওপরে রেখে, কাদা জলে ছোপানো কাপড় দিয়ে ঢেকে সেই পাহাড়, কায়দা করে শিব ঠাকুর বসানো। নিচে বড় মোটর সাইকেলের পাশেই ছোট ছোট হাতির সারি। স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে করা একরত্তি পুকুরে উত্তরাধিকারে পাওয়া এক মস্ত পোর্সেলিনের হাঁস। আর ঝুলন যেদিন শেষ হয়, সেদিন হল রাখী।
রিষড়ার রামনবমী : উৎপল দেবনাথ
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ০৩ এপ্রিল ২০২৩ | ৩৬৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
কখনও একটা গোটা বাজারকে প্রাণভয়ে দৌড়োতে দেখেছেন? আজ তাই দেখতে হলো। আট থেকে আশি সবাই দৌড়াচ্ছে। দেখলাম এ দৌড়ের কোনও জাত নেই, ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, বয়স নেই, লিঙ্গ পরিচয় নেই – কিচ্ছু নেই, বিশ্বাস করুন কিচ্ছু নেই। থাকার মধ্যে আছে কেবল ভয়, প্রাণের ভয়। সবকটা লোক তেড়ে পালাচ্ছে।
অপেক্ষা : তিয়াসা হোড়
বুলবুলভাজা | গপ্পো : কুমুদির জন্য (গ) | ১৮ জুলাই ২০২৩ | ১৭৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
"দিম্মা, ও দিম্মা! শোনো না, আমাদের না একটা লেখাকে ব্যাখ্যা করতে বলেছে, তুমি আমায় একটু সাহায্য করবে? ও দিম্মা!"
মণিমালা দেবী আকস্মিক এই ডাকে পেছন ফিরতেই দেখলেন, মিমি তার গলা জড়িয়ে খাটের উপর বসে! এখনো তার গালে অতীতের কথা চিন্তা করার প্রমাণ দৃশ্যমান।
"এ বাবা, দিম্মা! তুমি কাঁদছো?"
"না, দিদিভাই! ও এমনি। তুমি বলো কী বলছিলে!"
"দিম্মা আমাদের স্কুলে না একটা লেখাকে ব্যাখ্যা করতে বলেছে! তুমি আমায় একটু বলে দেবে?"
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৬৮) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৩ এপ্রিল ২০২৩ | ১১২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমার কর্তা এমন ব্যবস্থা করেছিলেন যে, যতদিন আমরা আড়বালিয়ায় থাকব, বড়জেঠু, মেজজেঠু, সেজজেঠু কারোর পরিবারে আলাদা হাঁড়ি চড়বেনা, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হবে। সে বড়ঘরের ছেলে, বাড়িতে অনেক লোকজনের থাকা খাওয়ার আয়োজনের জন্য কীভাবে সুচারু বন্দোবস্ত করতে হয় - এসব বিষয়ে অল্প বয়স থেকেই বেশ পাকাপোক্ত। তাই আমাকে কিছুই মাথা ঘামাতে হয়নি। ওর এই ব্যবস্থায় আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম, কারণ কয়েকদিনের জন্য হলেও আমার ছোটবেলা যেন ফিরে এসেছিল।
নতুন অতিথি শিউলিফুল : দেবাদৃতা ভাদুড়ি
বুলবুলভাজা | গপ্পো : কুমুদির জন্য (খ) | ০৬ জুন ২০২৩ | ১৩৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কিন্তু গোলুর মনকেমন যায় না। ক্রমশ বাড়ে। চোখের সামনে মেয়েটাকে কষ্ট পেতে দেখতে ভালো লাগছে না গোলুর। হঠাৎ আকাশ থেকে একটা শিউলিফুল এসে পড়ে। একটু বড়! গোলু যেই না হাতে নেয়, ফুলটা কথা বলতে শুরু করে। বলে, "গোলু, তোমার মনে আছে মেঘ দিদির কথা?" গোলু বলে, "হ্যাঁ। কেন বলো তো?" "ওই আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছে। তোমার দুঃখ মেটাতে। কি হয়েছে তোমার?" শিউলি ফুল বলে ওঠে। কিন্তু গোলু কিছু বলেনা। ওর মনে হয় স্বপ্ন দেখছে। গোলু বলে, "জানো তো, ওই যে মুখুজ্যেদের বাড়ির কাছে, একটা মেয়ে বসে আছে, পুরনো গোলাপি জামা পরে, ওর খুব কষ্ট। পুজোয় একটাও জামা হয়নি। খুব দুঃখ। এদিকে দেখো।
মুর্শিদাবাদবাসীর ঈদ উদযাপনের কথা : মোঃ আব্দুল উকিল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৪ এপ্রিল ২০২৩ | ১১৮৮ বার পঠিত
সাদা-কালোর মধ্যে যে সম্পর্ক, ভালো মন্দের মধ্যেও অনুরূপ একই ধরনের সম্পর্ক বলা যেতে পারে। একে অপরকে ছাড়া সকলেই যেন গুরুত্বহীন। তবে ভালো ও মন্দকে পাশাপাশি রাখলে এমন কোনো মানুষ নেই যে সে ভালোকে পছন্দ করবে না।সকলেই ভালো থাকতে চাই। আর ভালো থাকার জন্যই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান। সেই সব উৎসব দেখা গেছে কখনও পরিবারকেন্দ্রিক আবার কখনও বা সমাজকেন্দ্রিক। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন উৎসব যেমন আবির্ভূত হয়েছে, আবার কিছু কিছু উৎসব কালের আবর্তে বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায়। এমনকি কিছু উৎসব তার রূপের পরিবর্তন করেছে। যাইহোক না কেন উৎসব মানেই কতগুলো বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে, হতে পারে তা রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়।
বন্ধুত্ব : ঊর্জস্বতী রায় চৌধুরী
বুলবুলভাজা | গপ্পো : কুমুদির জন্য (খ) | ২৯ মে ২০২৩ | ১৪৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আজ এক্কা দোক্কা খেলছিল ওরা, পাশ থেকে হঠাৎ শুনতে পেল, “এটাকে পাগলা গারদে দেয় নাকেন রে? মাথায় তো আমার ঠাকুমার থেকেও বেশি ছিট, হি হি হি”, কাকে নিয়ে ঠিক কথাটা বলল বুঝতে পারল না ঠিক তিথি, ওরা আর তিথিরা ছাড়াতো কেউ নেই। “কীরে তোর পালা তো এবার” শতাব্দীর ডাকে আবার খেলায় মন দিল সে, যদিও মনটা খচখচ করতে থাকল, কারণ মাঝে মাঝেই দেখেছে লোকে অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে চেয়ে থাকে, হাসাহাসিও করতে ছাড়ে না আড়ালে, যেমন নীলাকাকিমা চেয়েছিল আজ। বৃষ্টি বা ঠাণ্ডার দিন ঘরে ওরা লুডো বা দাবা-টাবা খেললেও মাঝেই মাঝেই মাকে একদুৃষ্টে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, অথচ ও বুঝতে পারে না ওর দোষটা কোথায়! বাইরে ফিটফাট পরিপাটি হয়েই বেরোয় ও, শতাব্দীও তাই, তবুও। আচ্ছা, আজ কী ওর সম্পর্কেই কথা বলছিল ওই দাদাগুলো?
বলছিল হয়ত, সে যাক।
লহরা : সুদীপ্ত গাঙ্গুলী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১১২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এখন আর ঘর ছেড়ে এদিক ওদিক যাবার দরকার পড়ে না। পুঁটি তবু ঘরে থাকে না, অনেকদিনের অভ্যেস। তাছাড়া যত বড় হচ্ছে ততই এ ঘর যেন তার কাছে খুবই ছোট হয়ে যাচ্ছে, স্বপ্নগুলো এ ঘরে আর খেলে না। জানলা দিয়ে আকাশ দেখা যায় না, বরং পিঙ্কিদের কোঠার পাঁচিল দেখা যায় । ভাইকে নিয়ে লালবাতির বাল্যশিক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে আসে পুঁটি, আর নিজে চলে যায় মন্টুদাদের ক্লাবে। সেখানে পট্টির বাকি ছেলেরা থাকে, ক্যারাম পিটায়, বিড়ি-সিগারেট-গাঁজা ফোঁকে, কেউ কেউ মদও খায়। পুঁটির সেখানে কোনও কাজ নেই, তবুও সেখানেই যায়, অকাজের ছেলেদের এই একটা যাবার জায়গা আছে এখানে।
গুচ্ছকবিতা : অত্রি ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০২ মে ২০২৩ | ১৫৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কালো পৃষ্ঠা, লাল কালি, সাদা পিঁপড়ে সবটাই অদেখা ও না-ছোঁয়া। এবং, এই পরিপ্রেক্ষিতে সপাট তানে একটি আধখাওয়া হিউম্যান বডিকে, যার মুন্ডটি পুরুষ, যার দেহটি নারী, তাকে ছিন্ন করে দেওয়া হল। দৃশ্যটি ঘটিবামাত্র, পৃষ্ঠাটি নারী হয়ে ওঠে, কলমটি পুরুষ, পিঁপড়েটি লাল, সাদা ও কালো হয়ে ওঠে।
বিমলানন্দের বাড়ি : অনিন্দিতা গোস্বামী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৭ মে ২০২৩ | ১৪২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
রাস্তা পেরিয়ে ঢুকল সেই বাড়িটায়। সাদা ফলকের ওপর লেখা প্রফেসর বিমলানন্দ রায়। সে বাগানের কল থেকে জল নিয়ে একটু একটু করে গাছগুলোয় জল দিল। তারপর আবার দরজায় কান রাখল। অবিকল গতকালকের মতো শব্দ। তকমক, কচতক। সে বোঝার চেষ্টা করলো, নাহ, টাইপরাইটার তো নয়। কীসের শব্দ? খাবার চিবানোর শব্দ কি? হ্যাঁ। তা-ই তো মনে হচ্ছে। দুটো মানুষ যেন কিছু খাচ্ছে। ফাঁকা ঘরে প্রতিধ্বনিত হয়ে তা বিকট আকার নিচ্ছে। দেওয়ালে দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে সেই শব্দ। জল খাওয়ার শব্দ। জলের গ্লাস ঠক করে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখার শব্দ। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডাকল, প্রফেসর রায়! মিসেস রায়! শুনছেন? বাড়িতে কেউ আছেন? তারপর বন্ধ তালাটা ঠকঠক করে দু'বার ঠুকলো সে দরজার ওপর। কোন সাড়াশব্দ পেল না। কেবল সেই এক শব্দের ওঠা নাম। যেন চোয়াল, দাঁতের মাড়ি, জিভ, লালা আর পিষন যন্ত্রের অদ্ভুত ককটেল। চর্বিত চর্বন।
নাটকঃ ইব্রাহ্মিন লোদি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ১০ মে ২০২৩ | ২২৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সূত্রধর ১: (টেনে-টেনে) অনেক অনেক বছর আগের কথা। অনেক দূরে এক দেশ ছিল। সে দেশে বড় বড় ক্ষেত, লম্বা লম্বা নদী, উঁচু-উঁচু পাহাড়, আর গভীর-গভীর সমুদ্র। সেখানে গোলা-ভরা ধান, নদী-ভরা জল, গোয়াল-ভরা গরু, গাছ ভরা হনুমান।
সূত্রধর ২: (থামিয়ে) ছোটো করে বল না। এত লম্বা করলে লোকে পালাবে।
সূত্রধর ১: (বিরক্ত হয়ে) লোক জমবে বলেই তো লম্বা করছি। অ্যানাউন্সমেন্টের কী বুঝিস তুই। সব ধর-তক্তা-মার-পেরেক নাকি? যাই হোক। (আবার শুরু করে) সেখানে ছিলেন এক রাজা। রাজা যেমন বড়, তেমনি ধার্মিক।
সূত্রধর ২: (থামিয়ে) রাজার দুই রানী। সীতা আর গীতা। রানীদের গা ভরা গয়না, প্রজাদের পকেট ভরা মায়না। কোথাও কোনো অভাব নেই, কেউ করেনা বায়না।
সূত্রধর ১: (আরও বিরক্ত) তোদেরকে কে স্টেজে তুলে দেয় রে? প্রজাদের পকেটে কোনো পয়সা নেই।
সূত্রধর ২: অ্যাঁ? তবে খায় কী?
সূত্রধর ১: প্রজারা টাকার কলে লাইন দেয়। রোজ কিছু করে করে টাকা ছাড়া হয়। যারা পায়, তারা খায়। যারা পায়না, তারা পরেরদিন আবার লাইন দেয়। রাজা এসেই সব মোহর বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন।
সূত্রধর ২: কেন?
সূত্রধর ১: যাতে লোকেরা মোহর নিয়ে অপচয় না করতে পারে।
সূত্রধর ২: সব টাকা এখন রাজার ভান্ডারে? হেবি বুদ্ধি তো।
সূত্রধর ১: তোর মতো গাড়ল হলে কি আর রাজা হত? রাজত্ব হত?
সূত্রধর ২: আর রানী?
সূত্রধর ১: ওরে পাঁঠা, এ রাজার কোনো রানী নেই।
সূত্রধর ২: এ বাবা, বিয়ে করেনি? দেখতে বাজে?
সূত্রধর ১: দেখতে বাজে? ছাতির মাপ জানিস? ইয়াব্বড়ো ছাতি। এত বড়, যে, বৌকেও ভয় পায়না। একজন বৌ আছে, কিন্তু সে রানী নয়। আলাদা থাকে।
নাটক: একটি মেয়ে ও নাগরিকের গল্প : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ০৪ মে ২০২৩ | ২০৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
চন্দ্রোদয়। ছোটদের সামনেই বলতে হবে, বুঝলে? ওদের মনটা এখন জলের মত স্বচ্ছ, আমাদের এই স্বচ্ছ স্বর্গভূমির মতো। ভালো খারাপ চিনতে শিখুক, আদর্শ কাকে বলে সেটা বুঝতে শিখুক, ওরাই তো আমাদের নতুন স্বর্গভূমির ভবিষ্যৎ। সামনের নির্বাচন থেকে আমরা সব অবোধ শিশুকে ভোট দেবার অধিকার দেব, জান না? শিশুরাই ভোট দেবে এখন থেকে, বিধর্মী আর না-ধর্মীরা সব বাতিল। হুঁঃ, দেশছাড়া করে ছাড়ব সব কটাকে। (বলরামকে) কী বলরাম, সেই ধর্ষণের কেসটা... মেয়েটাকে যখন হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এক্স-রে করবার জন্যে, তখন সেই অ্যাম্বুলেন্সকে তোমার ওই নম্বরহীন লরিটা দিয়ে ধাক্কা মারার ব্যবস্থা করনি তুমি?
বলরাম। আমিই করেছিলুম গুরুজি। কিন্তু সে তো আপনার পরামর্শেই।
অজন্তার পথ ধরে - ২ : প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : দেখেছি পথে যেতে | ১১ মে ২০২৩ | ১৩৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসছিল – এমন চিত্রকর্মের সলতে পাকানো পর্বটি কেমন ছিল এবং গুহার দেওয়ালে, পিলারে এবং ছাদে এমন মসৃণ চিত্রকর্ম কীভাবে সম্ভব হল? বিভিন্ন চিত্র গবেষণা থেকে যেটুকু জানা গেছে, তা হল মাটি-কাদার সঙ্গে গোবর ও তুষের গুঁড়োর মিশ্রনের প্রলেপ দিয়ে প্লাস্টার হত, তার ওপর চুণের আস্তরণ দিয়ে মসৃণ করে তার ওপর চিত্রিত হয়েছে সেইসব অমূল্য চিত্রাবলী। রং তৈরি হত মূলত বিভিন্ন লতাগুল্ম, গাছের রস, খনিজ পদার্থ, iron oxide, manganese di oxide এবং কাঠকয়লা। এইসব মিশ্রিত রং টেম্পারা পদ্ধতিতে চিত্রায়ণ হয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, প্রায় ২ হাজার বছর ধরে সময়ের ঝড়ঝাপ্টা সহ্য করে এখনও অনেকটা রয়ে গেছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১১ মে ২০২৩ | ৮০৮ বার পঠিত
প্রথমটা হল সিলুরে, জিজিরা যাকে সিংগা বলে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে চার, এমনকি ছ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আমি যেটার ছবি এঁকেছিলাম, সেটা সাড়ে আটত্রিশ ইঞ্চি লম্বা, ওজন দশ পাউন্ড, তবে কিনা এটা ছোট মাছ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছিল। অত্যন্ত চর্বিযুক্ত মাছ, পিঠের রং গাঢ়-বাদামী, আর পেটের দিকটা হালকা বাদামী, প্রায় সাদাই হয়ে যাওয়া। এই মাছ আঁশবিহীন। নদীতে হ্রদে যেরকমটা আমরা পেয়ে থাকি, এটা সেই রকমেরই। গোম্বে নদীতে শ’য়ে শ’য়ে এই মাছ ধরা হয়, কাটাকাটি করে শুকানো হয় আর আরব, আচারে-ব্যবহারে মুসলমান হয়ে যাওয়া নিগ্রো ও সোয়াহিলিদের কাছে বিক্রির জন্য উন্যানেয়েম্বেতে নিয়ে যাওয়া হয়।
লেবারের বিদেশ যাত্রা ১৭ : মঞ্জীরা সাহা
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৩ মে ২০২৩ | ১১২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গের আকাশে লাশগুলোর ওপর ভোর থেকে বিকেলে তিনদিন ধরে সূর্য ছিল নানা পজিশনে। কালো প্লাস্টিকের ভেতর শুয়ে থাকা আধপোড়া, বেশি পোড়া, ঠান্ডা ঠান্ডা লাশগুলোর শরীর হয়ে উঠছিল গরম। কখনও রাতের অন্ধকারে কালো-কালো, উঁচু-নীচু, রোগা-মোটা প্লাস্টিকের উপর আধ-খাওয়া চাঁদের আলো এসে পড়ছিল। ভোররাতের দিকে আবার কিছুটা তাপ ছাড়ছিল ওই স্থবির শরীরগুলো। ঠান্ডা আস্তে আস্তে আরও বেড়েছিল।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৭১) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৮ মে ২০২৩ | ১২৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আমি একটা ফেসবুকের পাতা বানিয়েছিলাম, সেখানে নানা ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা লেখা, আঁকা, মোবাইলে তোলা ফটো, নিজের করা হাতের কাজ, রান্নার ছবি, গান, নাচ বা আবৃত্তির ভিডিও - লকডাউনে যে যা পাঠাত, সেগুলো আপলোড করতাম। এছাড়া ওদের মন ভাল করার অন্য কীই বা উপায় ছিল! বেশিরভাগ তো সব দূরদূরান্তে অজ পাড়াগাঁয়ে বাড়ি, কলেজের কাছে মেস করে থাকে। নিজেরা হাত পুড়িয়ে রান্না করে খায়। একবার একটা পিজি ব্যাচ পাশ করে মেস ছাড়ার আগে আমাদের নেমন্তন্ন করে মাংস ভাত খাইয়েছিল। যা হোক, আলটপকা দু সপ্তাহের লকডাউন হতে দু তিনটে জামাকাপড় নিয়ে সব বাড়ি চলে গিয়েছিল। বই খাতা মেসে পড়েছিল, আর যে ওগুলো নিতে ফিরতে পারবেনা, তা তো স্বপ্নেও ভাবেনি। বাড়িতে বসে লেখা পড়া যে করবে, উপকরণ ছিলনা। আমি যখন বলতাম এই তো রবীন্দ্র জয়ন্তী এসে গেল, কিছু লিখে পাঠাও। অনেকে বলেছিল, ঘরে কাগজ নেই ম্যাডাম। তখন আমি বললাম, যে ওমা! লিখতে বুঝি সব সময়ে কাগজ লাগে? আমি তো মোবাইলে লিখি। তখন আর্জি এলো কোন, জয়ন্তী নয়, শুধু আমাদের জন্য মোবাইলে লিখুন ম্যাডাম।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ক্রোয়েশিয়া (হ্রাভতস্কা) : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ মে ২০২৩ | ১৭৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
আগাথা ক্রিস্টির মার্ডার অন দি ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (অ্যান্ড দেয়ার ওয়্যার নান—যা থেকে হিন্দি ছবি গুমনাম—এর পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস) যাঁরা পড়েছেন, অবিলম্বে এই দৃশ্যটি চিনতে পারবেন। প্রথম চলচ্চিত্র ভার্শনটি (১৯৭৪) দেখেছিলাম—তাতে মেগাস্টার কাস্ট: আলবার্ট ফিনি (যাঁকে আগাথা ক্রিস্টি এরকিউল পোয়ারোর চরিত্রে একেবারে পছন্দ করেননি), শন কোনারি, জন গিয়েলগুড, ইনগ্রিড বেরগমান, ভেনেসা রেডগ্রেভ, জ্যাকেলিন বিসে এবং আরও অনেকে। পরে জেনেছি গার দে লেস্ত, প্যারিস থেকে বাইশশো কিলোমিটার দূরের ইস্তানবুলগামী ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ইউরোপের পয়লা দূরপাল্লার ট্রেন। সময় লাগত তিন দিন। সেকালে খুব কম ট্রেন তার আপন দেশের গণ্ডির বাইরে গিয়ে স্টিমের ধোঁয়া ছেড়েছে।
রহস্যময় তিব্বতের পথে পথে : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২১ মে ২০২৩ | ২৬৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
এতক্ষণ যা লিখলাম সে নিতান্ত ভূমিকা মাত্র। আসল যাত্রাপথের বিবরণ চমকপ্রদ, রোমহর্ষক। সবচেয়ে বড় কথা হল সেই পৃথিবী, পৃথিবীকে আবিষ্কারের সেই বিস্ময় আমরা ফেলে এসেছি বহু বছর আগে, এখন আর চাইলেও সেরকম যাত্রা করা সম্ভব নয়। পদে পদে প্রাকৃতিক বাধা বিপত্তি, চৈনিক প্রহরা সে যাত্রাকে করে তুলেছিল রোমহর্ষক, বিপদসংকুল। ঋতু হিসেবে তখন গ্রীষ্মের শুরু হলেও অধিকাংশ জায়গায় বরফ তখনো গলে নি, রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেকটা নীচে। এই অবস্থায় অধিকাংশ যাত্রাপথ লেখক কাটিয়েছেন জুতো এমনকি মোজা ছাড়া। অনেকদূর এগিয়ে তবে এক তিব্বতি যাযাবর দলের থেকে তিব্বতি উলের মোজা কেনেন, আরো পরে প্রায় লাসা পৌঁছিয়ে কেনেন জুতো। আস্তে আস্তে অভ্যাস করেন নুন মাখন মেশানো চা খাওয়া, সম্পূর্ণ অন্ধকারে পাহাড়ি পথে হাঁটা আর কোনও প্ররোচনাতেই মুখ না খোলা, মৌনী হয়ে থাকা।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৭২) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৫ মে ২০২৩ | ১২৫৫ বার পঠিত
লকডাউনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের অতি নিদারুণ এই দিনগুলি কোনমতে কাটছিল। খেয়াল করলাম, আমাদের অনার্সের বেশ কিছু ছেলেমেয়ে গ্রুপ চ্যাটে অনেকদিন কোন কথা বলছেনা। ফোন করলেও ফোন ধরছেনা। কী করে যোগাযোগ করি ভেবে পাইনা। শেষে তাদের বন্ধুদের কাজে লাগিয়ে জানলাম, প্রত্যেকের বাড়িতেই একাধিক নিকটাত্মীয় মারা গেছেন। এদিকে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি তলানির দিকে, যারা আসে, তারাও ঠিকমত সাড়া দেয়না। বুঝি মনটা ওদের ভালো নেই। এর মধ্যে অনেক গুলিই ঘটনা ঘটল - তার মধ্যে দুটো বলছি। পিজি ক্লাসের একটি ছেলে আর একটি মেয়ে হঠাৎ করে গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গেল, সব যোগাযোগ বন্ধ। অনেকবার ধরে ফোন করতে করতে জানতে পারলাম, ছেলেটার কারণ কী।
সীমানা - ২৯ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ জুন ২০২৩ | ২০১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কলকাতায় রাজরাজেশ্বরী মন্দিরে কোন ধর্মীয় মিছিলকে উপলক্ষ করে শুরু হয়ে গেল হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কলকাতার সঙ্গে কাজির নিত্য-যোগাযোগ, দাঙ্গার খবরে বিপর্যস্ত সে। এবারের সম্মেলন উপলক্ষে সে যে উদ্বোধন সঙ্গীত রচনা করল – পরে সেই সঙ্গীত বিশ্বখ্যাত হয়েছে, সুভাষচন্দ্র সদর্পে বলেছেন, আমরা জেলেই থাকি বা জেলের বাইরে, এই গান আমাদের সব সময় উদ্দীপিত করবে, সব সময় এই গান আমরা গাইব। লিখেই তার বন্ধু দিলীপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে, একটা গান লিখেছি, স্বরলিপি পাঠাচ্ছি তোমায়। এখনকার এই দাঙ্গার সময়ে, এই গান আমরা দুজনে একসঙ্গে গাইব এবারের প্রদেশ কংগ্রেসের উদ্বোধনে:
দুর্গম গিরি কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ক্রোয়েশিয়া ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৪ জুন ২০২৩ | ১৩০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
হলফ করে বলতে পারি নিজের চোখে দেখা—কনটিনেন্টাল ব্যাঙ্ক ফ্রাঙ্কফুর্টের অফিসার জামিনদাতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরে তাঁর বিবরণীতে (কল নোট) লিখছেন: “আমাদের দীর্ঘ মধ্যাহ্ন ভোজনের শেষে, কফি পান করার সময়, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সি-ই-ও জামিনদাতা—হের ফিশার—বললেন, তাঁরা এই কোম্পানির সমর্থনে আছেন ও থাকবেন”। তখন ঠিক কটা বাজে, কোন দিন, কফির আগে না পরে এই রূপ আশ্বাসবাণী দেয়া হয়েছিল, তার ফিরিস্তি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল কে জানে। জার্মানি ছেড়ে আসার আগেই এই আশ্বাসবাণী যে ঋণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি, তার বহুত নমুনা দেখে এসেছি।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৭৪) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৯ জুন ২০২৩ | ১০৭৭ বার পঠিত
আমাদের ধারণা ছিল কলেজের ছেলেমেয়েরা তো বড় হয়েছে, এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে ওদের সচেতনতার শিক্ষা খুব বেশি প্রয়োজন নেই, কারণ টেলিভিশন বা সমাজ মাধ্যমের কারণে এরা সব কিছুই দেখেছে, শুনেছে, জেনেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম একেবারেই ভুল ভেবেছি। যেহেতু প্রথম ঢেউয়ে গ্রাম তেমনভাবে আক্রান্ত হয়নি, তাই এই ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই অসুখটার ণত্ব ষত্ব কিছু জানেনা। টেলিমেডিসিন কি, অসুখের প্রোটোকল কি? কতদিনের মধ্যে কী ধরণের পরীক্ষা করাতে হবে, পরীক্ষা কোথায় হয়? অক্সিজেন কেন, কখন লাগতে পারে এগুলো তারা বিশেষ কিছুই জানেনা। তাছাড়া বেশিরভাগের বাড়িতে অক্সিমিটার তো দূর থার্মোমিটার পর্যন্ত নেই।
মুদ্রার সঙ্গে খেলা, বিদ্যুতের সঙ্গে খেলার মতোই, এক তুঘলকি শখ : যোগেন্দ্র যাদব
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৭ জুন ২০২৩ | ৯৯৩ বার পঠিত
বাস্তব হল এই, যে, রিজার্ভ ব্যাংকের নিজস্ব রিপোর্ট অনুযায়ী – ৯৯.৩ শতাংশ নোট ব্যাংকে ফিরে এসেছে। বড় ব্যাগধারী রাজাদের টাকা ডোবেনি, গরিবদের সুদে পড়ে থাকা কিছু নোট অবশ্যই পচে গেছে। বোঝাপড়া ছিল, যে, দুর্নীতিবাজরা নোটের বান্ডিল লুকিয়ে রাখে। দেখা গেল—তারা আমাদের চেয়ে বেশি চালাক এবং তাদের টাকা বেনামি সম্পত্তি, জমিজমা বা হীরা ও গহনাতে রূপান্তরিত করে রাখা হয়। জাল নোটের সংখ্যা অনেক বেশি বলেও দাবি করা হয়েছে। পরে, রিজার্ভ ব্যাংক নিজেই জানিয়েছিল যে জাল নোটের অনুপাত মাত্র ০.০০০৭ শতাংশ।
বাসতেই হবে ভালো : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২২ জুন ২০২৩ | ১৩৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
বাইনারি দুনিয়ায় কোনও লিঙ্কে ক্লিক করতে না করতেই দেখি, পর্দাজুড়ে হুটোপাটি করছে শেয়ার করার বিভিন্ন আয়োজন। আমার এক কবিবন্ধুর কথায়, “সুরাসিক্ত লিঙ্ক আঁকশি বাড়িয়ে বিষ-আলিঙ্গনের কথা বলে।” যখন কোনও খবর পড়ি, পনেরো সেকেন্ড যেতে না যেতেই দেখি, লাইক করার হরেক টুল নেমে আসছে স্ক্রিন জুড়ে। পড়া স্তব্ধ করে দিয়ে বলে, লাইক করো আগে। কিভাবে করতে চাও বলো। তুবড়ির ফুলকির মতো উড়ে আসে হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আর ইমেলে শেয়ার করার আইকন। কোনও বিষন্ন খবরে তুমুল রেগে এমন অপশন বন্ধ করে দিয়ে দেখেছি, দশ সেকেন্ড পরে ফের হাজির হয়েছে অপশন অমনিবাস। মানেটা হল, শুধু আমি পড়লেই হবে না, মেঘের ওপাশ থেকে গর্জনের মতো তা বিলিয়ে দিতে হবে বিশ্বচরাচরে। আমি জানি, প্রতিটি লিঙ্কের পর্দার ওপারের ডেটাবেস আমার শেয়ার করার দলিলের খবর রাখে। যত বেশি শেয়ার করব, সংস্থার আরও বড় প্রিয়পাত্র হব আমি। আমার সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে ফুটে উঠবে ওই সংস্থার এমন খবরের আরও, আরও ফিড। পালাবার পথ নেই।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৭৬) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২২ জুন ২০২৩ | ১২৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
- মা, শ্বেত পাথরের টেবিলের গল্পটা বলবে বলেছিলে!
- টেবিলের গল্প? টেবিলের তো আর আলাদা কোন গল্প হয়না রে বাবু, এ হল টেবিলের চারপাশের মানুষের গল্প।
- সেটাই বল শুনি।
- শোন তবে। আমাদের ছোটবেলায় খুব রেডিওতে নাটক শোনার চল ছিল। যেদিন যেদিন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের শ্বেত পাথরের টেবিল নাটকটা হত, সেদিন মা, মামা, মাসিরা সব কাজ ফেলে রেডিও ঘিরে বসত আর নানান মন্তব্য করত। নাটকটা শেষ হয়ে যাবার পরেও অনেকক্ষণ সেই আড্ডা চলতেই থাকত। আলোচনার মূল কথা হল, এ তো আমাদের বাড়ির গল্প, সঞ্জীব বাবু কীভাবে জানলেন? ইত্যাদি। সেই সব গল্প থেকেই প্রথম জানতে পারি যে, আমার মামার বাড়িতে এককালে বিশাল এক নকশাকাটা শ্বেত পাথরের টেবিল ছিল।
- নাটক থুড়ি গল্পটার সঙ্গে মিলটা কী?
- গল্পটা তোকে পড়তে হবে, তবে তো? মোবাইলে খোল, গুগলে আছে।
- আচ্ছা, ওয়েট, দেখি,
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২২ জুন ২০২৩ | ৬৯৮ বার পঠিত
উভিনজায় ঢুকতেই যে সম্ভাষণ শুনতে পাই তার থেকেই বোঝা যায় যে এক নতুন উপজাতি, নতুন রীতিনীতির সঙ্গে এবার পরিচিত হতে যাচ্ছি। দুজন ভিনজার মধ্যে প্রথম পরিচয় একটি ভয়ানক ক্লান্তিকর ব্যাপার। পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা দুহাত বাড়িয়ে দেয় আর ‘‘জাগো, জাগো’’ বলতে থাকে। তারপরে, একে অপরের কনুই আঁকড়ে ধরে হাত ঘষতে থাকে আর দ্রুত বলতে থাকে, ‘‘জাগো, জাগো, জেগে ওঠো, জেগে ওঠো,’’ যার শেষটা হয় "হু, হু" দিয়ে। তাতে পারস্পরিক তৃপ্তি বোঝায়। মেয়েরা এমনকি কাঁচা বয়সের ছেলেদেরও অভিবাদন করে। সামনে পিঠ ঝুঁকিয়ে, আঙ্গুলের ডগা দিয়ে পায়ের আঙ্গুল ছুঁয়ে। অথবা পাশে ঘুরে, হাততালি দিয়ে বলে, ‘‘জাগো, জাগো, জেগে ওঠো, জেগে ওঠো, হুহ, হুহ’’। পুরুষরাও হাততালি দেয় আর একই শব্দে জবাব দেয়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৯ জুন ২০২৩ | ৫৯৭ বার পঠিত
নিজেদের কালো ভালুক-চামড়া, উজ্জ্বল পারস্য দেশীয় কার্পেট ও পরিষ্কার নতুন মাদুরের উপর গুছিয়ে বসে ভারি আরাম হল। দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে আরামসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমাদের পিকনিকের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গল্প শুরু হল। লিভিংস্টোন আমাদের রুসিজির যাত্রাকে পিকনিকই বলে থাকেন। মনে হচ্ছিল পুরোন সুখের স্মৃতিচারণ করা দিনগুলো ফিরে এসেছে। যদিও আমাদের বাড়িটা নেহাতই সাধারণ, চাকরবাকরেরাও নেহাতই সামান্য, নগ্ন, বর্বর; তবু উন্যানিয়েম্বে থেকে সেই ঘটনাবহুল যাত্রার পর এই বাড়ির কাছেই আমার লিভিংস্টোনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল— এই বারান্দাতে বসেই টাঙ্গানিকা হ্রদের পশ্চিমপারের বহুদূরের, মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলোর সম্বন্ধে তাঁর বিস্ময়কর গল্পগুলো শুনেছিলাম; ঠিক এই খানেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়; আর সেই থেকে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে আর তিনি যখন বললেন যে আমার প্রহরায়, আমার খরচে আর আমারই পতাকার তলায় তিনি উন্যানিয়েম্বে যেতে চান, আমি তো সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে গেলাম।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৮২) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৩ আগস্ট ২০২৩ | ১৫৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
- মা কী বলবে বলেছিলে মনে আছে?
- কী রে?
- দাদুরা আড়বালিয়ার বাড়ি ছেড়ে শহরে কেন গিয়েছিল?
- ইচ্ছে হয়েছিল তাই গিয়েছিল।
- না, বল ঠিক করে, বলতেই হবে। তোমার মামার বাড়ির কথা তো অনেক শুনলাম। আমার মামার বাড়ির কথা জানবোনা বুঝি? আড়বালিয়ার অমন প্রাচীন ইতিহাস নেই?
- সে তো নিশ্চয়ই আছে, তবে কিনা রাজা মহারাজাদের সাত পুরুষ, দশ পুরুষ সব নাম নথি পাওয়া যায়, সাধারণ মানুষের সেসব লেখা থাকেনা, তাই হারিয়ে যায়। আমাকে নিয়ে কেবল চার পুরুষের কথাই জানি।
- সেটাই বল, আমাকে তো জানতে হবে।
- জানতে হবে? সংক্ষেপে জানবি নাকি বিশদে?
- ওসব জানিনা, তুমি যা জানো আমাকে বলতে হবে।
- তাহলে তোকে কিন্তু ধৈর্য ধরে অন্তত সোয়াশো বছর আগের আড়বালিয়ায় যেতে হবে। পারবি?
- তাই নাকি! চল, চল, শিগগির।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৮০) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২০ জুলাই ২০২৩ | ১৩০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ছোট বেলায় দেখতাম, মায়ের তেমন কোন ভাল শাড়ি ছিলনা। কোথাও নেমন্তন্ন থাকলে মা কোন বন্ধুর থেকে শাড়ি চেয়ে নিয়ে পরত। সেকালে এমন চল ছিল অবশ্য। ইমিটেশন গয়না পরত। একজোড়া কানের রিং ছাড়া মায়ের আর কোন সোনার গয়না ছিলনা। ব্যাপারটা আমার খারাপ লাগত। একটু বড় হতে একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলাম - ‘এত বড়ো বংশের মেয়ে লাবণ্য। বড় ঘরের বৌ! গয়না ছিলনা মা? বন্ধুরা সব গল্প করে, ঠাকুমার বালা, দিদার বিছে হার। তোমার তো কিছু নেই। তোমাকে দেয়নি?
- সব গেছে, দেবে কী করে?
- গেছে মানে, কীকরে গেল সব? প্রথমে বললে হারমোনিয়াম গেছে, তারপর বললে, দিদার হাতের কাজগুলো গেছে। এখন বলছ গয়না গাঁটি গেছে। গেল কীভাবে, সেটা তো বলো। মা বলল,
- আজ কথায় কথায় অনেক বেলা হয়ে গেল মা, আবার একদিন হবে। মেলা কাজ পড়ে আছে।’
- যাঃ জানা হলনা তবে?
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৭৯) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ১৩ জুলাই ২০২৩ | ১১৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
- ওহ, রুশ ভাষায় মাকে বুঝি নেনকো বলে? আর কী কী শিখেছিলে?
- বাড়িতে বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে অনেক গুলো ডিকশনারি ছিল। সেখান থেকে এ টি দেবের ইংরেজি থেকে বাংলা ডিকশনারির শেষে দেখলাম গ্রিক আর রুশ বর্ণমালা রয়েছে। ব্যাস আর আমায় পায় কে? দিনরাত নতুন বর্ণমালা মকশো চলল রাফ খাতায়। প্রগতি প্রকাশনের রুশ গল্পের বাংলা অনুবাদ যত আছে, সব নিয়ে খাটে ছড়িয়ে বসলাম। মলাটের পরের পাতায় বাংলার নিচে ছোট ছোট করে রুশ ভাষাতেও লেখা থাকত। উভচর মানুষ বইটার লেখক আলেকজান্ডার বেলায়েভ। রুশ বর্ণমালা মিলিয়ে দেখলাম, লেখা আছে, এ বেলায়েভ। বাংলায় মস্কোর নিচে যা লেখা আছে, তা বাংলা মতে উচ্চারণ করলে দাঁড়ায় মস্কভা - মানে মস্কো। হায় কপাল! ইস্কুলের ভূগোল বইতে লেখা আছে, মস্কো শহর মস্কোভা নদীর ধারে। ভুল, এ যা দেখছি, তাতে মস্কো শহর মস্কো নদীর ধারে। দৌড়লাম, মাকে এই নতুন আবিষ্কার জানানোর জন্য। মা শুনে বেশ অবাক হল, বলল -
- ‘বাবা! পড়ে ফেললি তুই। তুই যেমন রুশ ভাষা শেখার চেষ্টা চালাচ্ছিস, আমার মাও এভাবে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করত।’
পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৭৮) : শারদা মণ্ডল
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ০৭ জুলাই ২০২৩ | ১১৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
- তোমার ছোটবেলার সিনেমার গল্প বল।
- আরে তখন যুগটাই ছিল, যে কোনো উপলক্ষে আত্মীয় স্বজন- বন্ধু বান্ধব মিলে সিনেমা দেখতে যাবার যুগ। জ্ঞান হওয়ার আগে থেকে অসিত বরণ, উত্তম কুমারের সিনেমা দিয়ে হাতেখড়ি। মামার বিয়ে হল - নতুন বৌকে নিয়ে মায়ার সংসার। রবিবার এলো তো বাবা মার হাত ধরে সব্যসাচী। মাসিমণির বিয়ের কথা চলছে, নতুন পাত্রকে নিয়ে চিরন্তন। কালে কালে বাবার হাত ধরে টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দ্য সী, এন্টার দ্য ড্রাগন, গ্রেট এসকেপ, গানস অফ নাভারোন। অবশ্য হিন্দি সিনেমায় বাধানিষেধ ছিল। স্কুল পাশ করে কলেজ পর্যন্ত শুধু সফেদ হাতি আর পার। কলেজে উঠে ও ব্যথাও মিটে গেল। নুন শোয়ে ফুল অর কাঁটে, প্রতিবন্ধ, লমহে - আহা কীসব দিন।
- দাঁড়াও, কলেজে উঠি, তারপর আমিও যাব।
- যাবি।
- সিনেমা দেখে দেখে সিনেমা প্রীতি?
- না না তা কেন? আসল হল, চরিত্র চিত্রণ, কোন সিন কীভাবে তোলা হচ্ছে, এসবের চুলচেরা আলোচনা।
- কীরকম?
অশোক বনের সীতারা : কল্যানী মিত্র ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০২ জুলাই ২০২৩ | ১৬৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
নাহ, সীতা ও বোধহয় এঁদের থেকে ভালো ছিলেন, ওনার আসে পাশে রাবণ নিযুক্ত চেড়ি রা সর্বদাই মুখের কাছে খাদ্য বস্তু, এটা ওটা ধরছেন, রাবণ মাঝে মধ্যে এসে মিষ্টি কথায় চিঁড়ে ভেজাবার চেষ্টা করছেন আর সীতার সেখানে কাজ বলতে যাকে বলে "ল্যাদ" খাওয়া আর মাঝে মাঝে রামের নাম ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠা। "এঁরা" বলতে এদেশে অর্থাৎ আমেরিকায় যে সমস্ত সদ্য বিবাহিতা নারী ভারত থেকে স্বেচ্ছায় এসে উপস্থিত হন তাঁদের গল্প কিন্তু অন্য। সিনেমায় দেখা আমেরিকা আর শিকড় উপড়ে আসা অভিবাসী ভারতীয়দের জীবনযাত্রার মধ্যে বিশাল ফারাক। কুড়ি বছর আগে সেটা আরোই কঠিন ছিল কারণ বর্তমানে ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, স্থানীয় অঞ্চলে ভারতীয় দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি, ভারতীয়দের জোট বেঁধে নির্দিষ্ট শহরে থাকা ইত্যাদি বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত যেন একেবারে হাতের মুঠোয় এসে গেছে, তবুও যে সমস্ত সমস্যা রয়ে গেছে তা চিরন্তন।
রক্তাক্ত পঞ্চায়েত : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১১ জুলাই ২০২৩ | ২০০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
গোড়াতেই নিজেদেরকে প্রশ্ন করা যায় – এরকম হিংস্রতা, রক্তপাত, অবান্তর মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তির ধ্বংস আমাদের কাছে খুব অজানা বা অপ্রত্যাশিত ছিল কী? ওপরে যে ছবিটি আছে সেরকম ছবি তো আমরা যখন তখন দেখে থাকি। আমাদের স্নায়ু বা চিন্তার ওপরে আদৌ কোন ছাপ ফেলে কি? আমরা তো সইয়ে নিয়েছি। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, মনন, অনুভূতি বা, একটু বাড়িয়ে বললে, আমাদের সুকুমার প্রবৃত্তি এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। Numbing of our collective consciousness – আমাদের সামগ্রিক চেতনার বিবশতা। কিন্তু এগুলো তো একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে, প্রতি মুহূর্তে সমস্ত রকমের মিডিয়ার অপার মহিমায়, ছাপার অক্ষরে এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় (যদি কখনো কিছু হয়ে থাকে) আমরা একটি অসংবেদনশীল পিণ্ডে পরিণত হচ্ছি? যদি সমাজতত্ত্ব এবং আমাদের পারিবারিক জীবনের প্রেক্ষিতে দেখি তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিকারক যে ফলাফল জন্ম নিচ্ছে তার চরিত্র হল শিশু থেকে কিশোর এবং সদ্য যৌবনে পা-রাখা (বাংলা শুধু নয়, সমগ্র ভারত জুড়েই) প্রজন্ম একে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিচ্ছে। এমনকি হিংস্রতার মাঝে আমোদও পাচ্ছে।
কুন্দেরা কি আদৌ প্রাসঙ্গিক : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১৩ জুলাই ২০২৩ | ১৩৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কাফকা কেন এখনও প্রাসঙ্গিক, এবং পূর্বইউরোপেও ভীষণভাবে সমসাময়িক, তা নিয়ে কুন্দেরা একদা একটি লম্বা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সে পূর্ব ইউরোপ অবশ্য আর নেই। কুন্দেরাও আর নেই। তাই এবার আমাদের লেখার সময়। ওইসব পুরোনো পুরোনো লেখা, যার বহুলাংশই সোভিয়েত-যুগ নিয়ে লেখা, সেসব কি আদৌ প্রাসঙ্গিক আর? মার্কেজ, কুন্দেরা আর একো, এই তিনজন আমাদের যৌবনের বিদেশী হিরো ছিলেন, হলিউডি ক্লিন্ট ইস্টউড যেন, কিন্তু সেটা তো কুন্দেরা পড়ার কোনো কারণ হতে পারেনা। সেই সোভিয়েত নেই, সেই বার্লিন পাঁচিল নেই, সেই লৌহ-যবনিকা আর নেই, এমনকি প্রাহার সেই বসন্তও আর নেই। তাই, কেন কুন্দেরা?
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৪ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৩ জুলাই ২০২৩ | ৭৭৮ বার পঠিত
নিজের চার্টখানা বার করলাম - আমি নিজেই সেটা তৈরি করেছিলাম - তার উপর আমার অটুট ভরসা। উন্যানয়েম্বে যাওয়ার এমন একটা পথ খুঁজে বার করলাম যে পথে একটাও কাপড় নজরানা দিতে হবে না - আর জঙ্গল ছাড়া আর কিছু খারাপ জিনিসও পথে পড়বে না। সেই পথ ধরে চললে ভিনজাদের আর লুঠেরা হহাদের পুরো এড়ানো যায়। আর এই শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ পথটি দক্ষিণে চলেছে জলের ধার দিয়ে দিয়ে, উকারাঙ্গা ও উকাওয়েন্দির উপকূল ধরে কেপ টংওয়ে পর্যন্ত। কেপ টংওয়েতে যেখানে পৌঁছব, সেটা উকাওয়েন্দির ইউসাওয়া জেলার ইটাগা, সুলতান ইমরেরা গ্রামের বিপরীতে ; এর পরে আমরা আমাদের পুরানো রাস্তায় পড়ব। যে রাস্তা ধরে আমি উজিজি যাওয়ার জন্য উন্যানয়েম্বে থেকে পাড়ি দিয়েছিলাম। ডাক্তারকে এই রাস্তার কথা বললাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এর সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যাপারটা বুঝলেন; আর যদি আমরা ইমরেরায় পৌঁছাই, আমার যেমন মনে হয়েছিল, তাহলে তো প্রমাণই হয়ে যাবে যে আমার চার্ট ঠিক না ভুল।
পঞ্চায়েত - বাঁকুড়া থেকে হুগলী : নৃপেন্দ্রনাথ দে
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : পঞ্চায়েত নির্বাচন-২০২৩ | ১৫ জুলাই ২০২৩ | ৮২৫ বার পঠিত
কর্মস্থল বাঁকুড়ায়, ভোট হুগলীতে। আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম ভোট দিতে যাবো না। বাঁকুড়া থেকে সিঙ্গুরে গিয়ে ভোট দিয়ে সেই দিনেই ফেরা পোষাবে না। পরে মতবদল হল। সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। কারণ কয়েকটা বিশেষ কারনে আমাকে একবার বাড়ি ফিরতেই হবে। তাই ভোটের দিনেই ফিরি, রথ দেখা কলা বেচা একসাথে হবে...
সেদিন সকাল সাড়ে ছটায় বের হলাম। এখান থেকে দুর্গাপুর স্টেশন ৩০ কিমি প্রায়। রাস্তায় পুরো শান্ত পরিবেশই পেলাম। দিকে দিকে নানা দলের দলীয় পতাকা উড়ছে। ট্রেনে চলেছি, সেদিন ট্রেনটাও অনেকটা ফাঁকা, তাই জানালার ধারে বসে, মাঠ ঘাট দেখতে দেখতে... কোথাও ভোট হচ্ছে, ভোটের লাইন দেখা যাচ্ছে ... দূর থেকে অন্তত কোনো গন্ডগোল চোখে পড়ল না।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ক্রোয়েশিয়া ৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৬ জুলাই ২০২৩ | ১১৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
জাগ্রেবের দুই শিল্পী, অলিঙ্কা ও দ্রাঝান একদিন অনুভব করলেন তাঁদের কণ্ঠে জড়ানো গভীর ভালবাসার মন্দার মালিকা ম্লান হয়ে এসেছে – এবার কি খেলা ভাঙার খেলা? ভালবাসার স্বর্গ হতে বিদায় নেওয়ার কাল আসন্ন হলে দ্রাঝান বলেন, “আচ্ছা, আমাদের এই চারটে বছরের প্রেমের, এক অন্তহীন খুশির দিনগুলির স্মৃতি কি হারিয়ে যাবে? তুমি আমি একসঙ্গে হয়তো কিছু কিনেছি, ছবি এঁকেছি তোমার। ভোলার পালা শুরু হলে এই ছবি, ওই পেয়ালা তারা কি চলে যাবে জঞ্জালের স্তূপে?”
যদুবাবুর টিউশনি – প্রোবাবিলিটি ও প্যারাডক্সের গল্প : অধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৭ জুলাই ২০২৩ | ১৫০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এখানে এ কথাটাও বলা উচিত, যে “আলোচনা করার যোগ্য” হওয়ার অর্থ এই নয় যে একজন আকর্ষণীয়ভাবে অথবা সুন্দর ভাষায় একটি বিষয়ের বর্ণনা করতে পারেন। তার থেকেও বড় কথা, মজাদার ভাবটি ধরে রাখতে গিয়ে, প্রায়শই গুরুতর সূচকগুলির সাথে আপোষ করা হয়। লেখক সেই আপোষটুকু না করেই তার হাস্যরসটি দিব্যি ধরে রাখতে পেরেছেন।
বইটিতে আলোচিত গল্পগুলোর সম্বন্ধে আমি কিছু বলে দিতে চাই না। তবে, আমি অবশ্যই বলব যে লেখক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রোবাবিলিটি অর্থাৎ সম্ভাবনাতত্ত্বের প্রয়োগগুলিকে সহজে বোঝানোর জন্য খুব যত্ন নিয়ে গল্পগুলি বেছেছেন। একইসঙ্গে, কিছু গল্প এও ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে সম্ভাবনাতত্ত্ব এবং পরিসংখ্যানগত (স্ট্যাটিস্টিক্যাল) ধারণার আইনের ভুল প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যা - প্যারাডক্সিক্যাল পরিস্থিতিতে পরিণত হতে পারে। বিষয়-নির্বাচনের দক্ষতা, ভাষা ও গভীরতার ভারসাম্যের জন্য লেখককে অভিনন্দন।
আমি বাংলা পড়তে পারে এমন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সহ সকলকে বইটি সুপারিশ করছি। লেখার ভাষা হাল্কা হলেও বইটি “সিরিয়াস-রিডিং”। যদুবাবু/জ্যোতিষ্কের লেখা প্রবন্ধ থেকে সবাই কিছু না কিছু শিখতে পারবে।
পঞ্চায়েত ভোট কি কোনদিনই শান্তিপূর্ণ হবে না? : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : পঞ্চায়েত নির্বাচন-২০২৩ | ১৭ জুলাই ২০২৩ | ৭৯৬ বার পঠিত
উপরোক্ত কথাগুলো বলা এই কারণে যে যতটা সম্ভব সুষ্ঠু ভাবে ভোট করা যায় যদি একজন শক্ত, বজ্রকঠিন ব্যক্তি, যিনি নিয়ম জানেন, সংবিধান জানেন, তিনি যদি পুরো প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকেন। সরকার, তা সে যত শক্তিশালিই হোক, তাদের খেয়াল খুশি মতো সেই ব্যক্তিকে পরিচালিত করতে পারে না। আমাদের রাজ্যে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়িয়ে গেছে যে নির্বাচন, বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলেই খুনোখুনি হবে, বহু লোক মারা যাবে। এটা যেন ভবিতব্য, এর অন্যথা যেন হতে পারে না!
ধারাবাহিক মিলান কুন্দেরা : চিত্রলেখা চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ২৩ জুলাই ২০২৩ | ১৩০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মিলান কুন্দেরার মত তকতকে স্বচ্ছতার সাথে খুব কম ঔপন্যাসিককে পড়া যায় । তাঁর গদ্য জলের মত পাতলা, স্পষ্ট, সহজবোধ্য, সহজপাঠ্য। তাঁর তীক্ষ্ণ, কড়া, অব্যাহতিহীন সুশৃঙ্খল বুদ্ধিমত্তা পাঠককে একইসাথে উত্তেজিত এবং উত্যক্ত করে। কুন্দেরার ন্যারেটিভ ভয়েস মনোরমভাবে অন্তরঙ্গ, কখনও আবার স্বীকারোক্তিমূলক, হামেশাই আনন্দ ছলনা সম্মোহিনী প্রতারণা প্রবণ — প্রলোভিত করে। কুন্দেরা শহুরে, কুন্দেরা রুচিশীল, যুক্তিসঙ্গত। পরিশীলিত সতর্ক বিদ্রূপে তাঁর গুরু গাম্ভীর্য কম, সঙ্গে নাস্তিকবাদের হতাশার প্রান্তে ঘোরাফেরা করা চিন্তা — গল্পকার হিসেবে এ এক অমোঘ অবদান।
তোমার ছোঁয়ায় তোমার আলোয় : মঞ্জিস রায়
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ২৮ জুলাই ২০২৩ | ১৩৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
“১৯৮৪ সালে হ্যালির ধূমকেতু যখন এসেছিল, তখন বিড়লা মিউজিয়াম হ্যালির ধুমকেতু দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল। তখন আমি সবে এই বিজ্ঞানের জগতে ঢুকেছি। সেই সময়ে আমার ওঁকে প্রথম দেখা। একজন মানুষ, যিনি দৌড়ে একবার ছাদে যাচ্ছেন একবার নিচে নামছেন। কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা দেখে তার সমাধান করতেন। এর পর অল ইণ্ডিয়া অ্যামেচার অ্যাস্ট্রোনমার্স মিট, সারা ভারত জুড়ে অপেশাদার আকাশপ্রেমীদের সংগঠন, তার যে মিট, সেটা আমরা প্রেসিডেন্সি কলেজে করেছিলাম। সেই মিটটার জায়গা খোঁজার জন্য আমাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বেরিয়েছেন কখনও নেহেরু চিলড্রেন্স মিউজিয়াম, কখনও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। এরপর একেবারে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে সংগঠন করার পরে। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওঁর সঙ্গে করি এবং শিখি যে বিজ্ঞান কিভাবে ডেমনস্ট্রেট করতে হয়।
স্কুল শিক্ষার সংস্কার ও দশ দফা দাবি : সীমান্ত গুহঠাকুরতা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২৮ জুলাই ২০২৩ | ৪৩৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯৭
দোষটা কি শুধুমাত্র অতিমারীই? অতিমারীর কাঁধে বন্দুক রেখে কোনো বৃহত্তর শক্তি তাঁর স্বার্থসিদ্ধির জন্য ময়দানে নেমে পড়েনি তো? প্রশ্নটা গুরুতর। এবং পাপী মনে প্রশ্নটা আসছে এই কারণেই যে, অতিমারী আগে-পরে বিগত পাঁচ বছরের রেকর্ড ঘাঁটলে দেখা যাবে, কমবেশী প্রতিবছরই গড়ে প্রায় দু-মাস করে গরমের ছুটি দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলোতে। এর পাশাপাশি রয়েছে গড়ে প্রতি বছর একটি করে ভোট-উৎসব, যার জন্য কমবেশি পনেরো দিন থেকে এক মাস স্কুল-বাড়িগুলো অধিগ্রহণ করা হয়। যেদিন এই নিবন্ধটি লিখছি, সেদিনকার সংবাদপত্রেই এই মর্মে প্রতিবেদন রয়েছে যে, দুমাস গরমের ছুটি এবং একমাস পঞ্চায়েত জনিত ছুটির পর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার একটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি দশ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে, ফলে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধান শিক্ষককেই মাইক হাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচারে নামতে হয়েছে।
একটি মহাকাব্য, একটি উপন্যাস ও সাদ্দাম হুসেন : প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২০ আগস্ট ২০২৩ | ১০৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
উপন্যাসটি আশ্চর্যজনকভাবে একজন প্যারানয়েড, নিজের জালে আটকে পড়া শাসকের চরিত্র চিত্রায়িত করেছে। যখন জাবিবা বলেছেন, “আপনার প্রাসাদের দিকে তাকান: মোটা দেয়াল, জানালা প্রায় নেই, অন্ধকার, বাইরের বাতাস ঢুকতে পারেনা, বাঁকানো করিডোর। এখানে থেকে আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো এক দানবের বাড়িতে বাস করছি। এখানে শুধু রাক্ষস বাস করতে পারে, এখানে ষড়যন্ত্রের বীজ অঙ্কুরিত হয়। রাজার দুর্গ তার কাছে কারাগারে পরিণত হয়েছে: যেমন মোটা দেয়াল আপনাকে বাইরে কী চলছে তা শুনতে বাধা দেয়, ঠিক যেমন আপনি খুব কমই দিনের আলো বা তাজা বাতাস পেতে পারেন, তেমনি বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য আপনার আর্তনাদ কখনই শোনা যাবে না। তার উপর আপনার পালানোর পথ অবরুদ্ধ, এবং আশেপাশে এমন কেউ নেই যে আপনাকে সাহায্য করবে।”
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মভিটা ও বসতবাড়ি : শিখা সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ০২ আগস্ট ২০২৩ | ১৩৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা বাঙালি’ কবিতায় তাঁর সম্বন্ধে লিখেছিলেন, “বিষম ধাতুর মিলন ঘটায়ে বাঙালি দিয়াছে বিয়া...”, আবার একই বছরে জন্ম হওয়াতে তাঁর সত্তর বছরের জন্মদিনে বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশস্তিপাঠে বলেন, “কালের যাত্রাপথে আমরা একই তরণীর যাত্রী...”। তাঁকে বাঙালি চেনে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, দেশপ্রেমী, ছাত্রদরদী, দানবীর, ব্যাবসায়ে উদ্যোগী পুরুষ হিসেবে। এ লেখায় তাঁর জীবনের এমন কিছু অংশের কথা বলবো, যার কিছু অন্যান্য বইয়ে পাওয়া গেলেও, বাকি আমি জেনেছি পারিবারিক গল্প হিসেবে।
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্ম—অবিভক্ত বাংলার (ব্রিটিশ ভারত) খুলনা জেলার কপোতাক্ষ নদীর তীরে রাড়ুলি কাটিপাড়া গ্রামে এক প্রাচীন জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে। সাল ১৮৬১, তারিখ ২রা আগস্ট। বংশের পুর্বপুরুষ দেওয়ান মানিকলাল রায়চৌধুরী বাংলার নবাবের থেকে দক্ষিণদেশে অনেকগুলো তালুক পত্তনি পেয়ে কপোতাক্ষ-তীরে এই অঞ্চলে, গাছপালা কেটে, জঙ্গল পরিষ্কার করে, জমিদারি স্থাপনা করেন। রায়ের আল বা আলি থেকে গ্রামের নাম হয় রাড়ুলি আর গাছপালা কেটে স্তুপ করে রাখা পাশের গ্রামের নাম কাটিপাড়া। মানিকলাল যথেষ্ট অর্থশালী ছিলেন। ভারী লোহার কড়িকাঠের বরগা, চুন-সুরকি দিয়ে তিনি অন্দরমহলে মহিলাদের জন্য একটি দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেন। এই অন্দররমহলেরই একতলার একটি ঘরে, মানিকলালের বংশধর হরিশ্চন্দ্র রায়চৌধুরীর স্ত্রী ভুবনমোহিনী দেবী জন্ম দেন প্রফুল্লকে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৩ আগস্ট ২০২৩ | ৮৫০ বার পঠিত
উরিম্বা কাওয়েন্দির একটা বড় জেলা। যদিও একই নামের একটি গ্রামও রয়েছে - সেখানে ইয়োম্বেহের থেকে পালিয়ে আসা লোকেরা থাকে, তারা লোজেরির ব-দ্বীপে বাসা বেঁধেছিল। যদিও রুসিজির দ্বীপের মতোই অস্বাস্থ্যকর জায়গা, তবু তাদের মনে হয়েছিল দক্ষিণ কাওয়েন্দির সুলতান পুম্বুরুর এলাকার আশেপাশের থেকে অনেক বেশি যুতসই। বিজয়ীদের ভালমতো তাড়া তাদের অভ্যাস নাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে হল, কারণ তারা খুব ভীতু আর অপরিচিতদের প্রতি ঘোর অবিশ্বাসী, কোনমতেই তাদের গ্রামে আমাদের ঢুকতে দিল না। অবশ্য সত্য বলতে, যে পচা গলা জায়গাটার উপর তারা আস্তানা গেড়েছিল, সেদিকে এক ঝলক দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমার ধারণা যে একদম ওই এলাকায় —না, দু'পাশেই কয়েক মাইল জুড়ে —একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষের পক্ষে এক রাত ঘুমানো মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। গ্রামের দক্ষিণে যাওয়ার পথে, আমি টংওয়ে উপসাগরের শেষতম দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, কিভাঙ্গা বা কাকুঙ্গু পাহাড়ের উঁচু চুড়ো থেকে প্রায় দেড় মাইল পশ্চিমে একটি উপযুক্ত ক্যাম্পিং-এর জায়গা পেলাম। ডাক্তার যা মাপজোক নিলেন সেই অনুসারে আমরা ৫° ৫৪' দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থান করছিলাম।
কর্মী সংগঠন ও সংহতির দায়দায়িত্ব : কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ আগস্ট ২০২৩ | ১২২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
টাটা এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ৭৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কিছু বলবার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ পেয়ে আমি একই সঙ্গে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ এবং যারপরনাই সংকুচিত। দেশের প্রাচীনতম কর্মী সংগঠনগুলোর অন্যতম এই সংগঠনের বিপুল প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি ও অর্জিত অভিজ্ঞতার তুলনায় আমার জ্ঞান অতি তুচ্ছ। সুতরাং আজকের এই সভায় এমন কিছু বোধ হয় বলতে পারব না, যা আপনাদের অজানা। তা সত্ত্বেও আপনাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি এই কারণে যে, জানা কথাগুলোও বারবার বলার প্রয়োজন হয়। এটাই জ্ঞানীদের অভিমত। যে বাস্তবতায় আমরা দিন কাটাই তাকে যদি বদলাবার দরকার হয়, অথচ কাম্য পরিবর্তনটি আসে না, তাহলে পরিবর্তনের প্রয়োজন ও উপায় নিয়ে আমাদের কথা বলে যেতেই হবে। যেমন, আমাদের যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তানুশীলক অমর্ত্য সেনকে বারবার একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, আপনি পুরনো কথাগুলোই বারবার বলে যাচ্ছেন, নতুন কিছু বলছেন না, কেন? তাঁর উত্তরটি অপরিবর্তিত, যতক্ষণ পুরনো সমস্যাগুলো থাকবে ততক্ষণ সেগুলো নিয়ে কথা বলে যেতে হবে, কারণ নতুন কথা বলার জন্য নতুন বাস্তবতার প্রয়োজন।
বাদানুবাদ : সৈয়দ আযান আহমেদ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : সীমানা ছাড়িয়ে | ০৬ আগস্ট ২০২৩ | ১০১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
যোগ্যতা অবশ্য আজকাল কোনও মাপকাঠিই নয়, বুক জোড়া আত্মবিশ্বাসটাই আসল রাজা। সাহস করে নামতে পারলে বাকিটা গুগল ট্রান্সলেটর দেখে নেয়। দুর্বোধ্য অনুবাদে ন্যূনতম দায়বদ্ধতা কারোর না, বইবাজারের এই ভরা বসন্তে, প্রকাশক দিব্য ঘুমন্ত, অনুবাদক তো চির ক্লান্তই, চাঙ্গা কেবল অনুবাদ যন্ত্র! দিতে যা দেরি, মুহূর্তে বঙ্গানুবাদ। হ্যাঁ, বাংলা অক্ষরমালা থাকবে ঐটুকুই নিশ্চিন্তে বলা যায়, বাকিটা কপালজোরের হিসাব নিকাশ। বললাম, "life is full of problems that are, quite simply, hard". গুগল ট্রান্সলেটরে খাবি খেয়ে দাঁড়াল: "জীবন এমন সমস্যায় পূর্ণ যেগুলো, বেশ সহজ, কঠিন।" চমৎকার! কাজেই সাড়ে তিন পাতার আড়মোড়া ভেঙে অনুবাদ উপন্যাস চলল সেলফের সব চেয়ে দুরূহ কোনায় একটু গা গড়াতে। তারপর ... তারপর মরণ ঘুম! ক্রেতা-কাম-পাঠক গেল ভুলে ওই শিরোনামের কোনও বইকে গাঁটের কড়ি দিয়ে বড় সাধ করে আপ্যায়ন করেছিল সে।
হাসপাতাল থেকে “হসপিটাল ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন” – মেডিসিনের নতুন যুগ : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৮ আগস্ট ২০২৩ | ১২৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এসকেলেপিয়াস, আমরা বোধ করি সবাই জানি, প্রাচীন গ্রিসের মেডিসিনের পৌরাণিক দেবতা। তাঁর মন্দিরে যাবার জন্য, অবশ্যই রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে, এই আকুলতা। মন্দির, মঠ, চার্চগুলোতে আর্ত মানুষের নিরাময় করার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকত সে আদিম কাল থেকে।
ইউরোপের উদাহরণে আবার ফিরে আসব। তার আগে ভারতের প্রথম আয়ুর্বেদ গ্রন্থ তথা শাস্ত্র বলে স্বীকৃত চরক-সংহিতারও সংকলনকালের সময়কালের কিছু আগে পরে (আয়ুর্বেদের সবচেয়ে মান্য গবেষক মিউলেনবেল্ডের মতে এ সময়কাল খুব বেশি হলে ১৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দের আগে হতে পারেনা, বা খুব বেশি হলে ১০০ খ্রিস্টাব্দ – মিউলেবেল্ড, A History of Indian Medical Literature, IA, পৃঃ ১১৪) বৌদ্ধযুগে কিছু হাসপাতালের হদিশ পাওয়া যায়।
অসিধারী ও বেনামী বন্দুকবাজ : সৈয়দ আযান আহমেদ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১২ আগস্ট ২০২৩ | ৮১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
‘দ্য ম্যান উইথ নো নেমে’র মাথায় উঠল ছেঁড়াফাটা বাদামি টুপি, গায়ে কোঁচকানো কাপড়চোপড়, হাতে রইল পুরনো ০.৪৫ রিভলভার। এমনই এক চরিত্র যে নিজের আর্থিক মুনাফা ছাড়া অন্য কোন বিষয়েই আগ্রহ দেখায় না বিশেষ।
এবং যার নৈতিকতা পেন্ডুলামের মত সতত দোদুল্যমান। তাকে একবার মনে হয় ন্যায়পরায়ণ, আবার পরমুহূর্তেই মনে হয় দুর্নীতিগ্রস্ত। ছবির সর্বত্র ‘দ্য ম্যান উইথ নো নেম’কে ভাল এবং খারাপের মধ্যে যে কোন একটা দিককে বেছে নিতে হয়। দর্শক হিসেবে আমরাও ধন্দে থাকি, কোনও এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী হবে তার প্রতিক্রিয়া? দর্শকের পক্ষে গল্পের ভবিষ্যদ্বাণী খাড়া করাটাই অসম্ভব হয়ে ওঠে। আর এটাই হল ছবিতে তৈরি হওয়া বেশ কিছু শক্তিশালী মুহূর্তের জ্বালানী। এই নামহীন মানুষটি আগ বাড়িয়ে অন্যদের রক্ষা-টক্ষা করে না, অন্যায়-টন্যায় সংঘটিত হচ্ছে দেখলেও থাকে নিরুত্তাপ উদাসীন, এবং ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের উপকার করে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে নিশ্চিত হচ্ছেন এই উপকারের বিনিময়ে সেও উপকৃত হবে।
বেগম হোসনে আরা মুক্তা ও হাজেরা খাতুন: অসামান্য প্রাণের সাক্ষ্য : হাসান মোরশেদ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ইতিহাস | ১৬ আগস্ট ২০২৩ | ৭৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
“যেদিন আমার শ্বশুড় বাড়িতে আগুন দিল, তখন চারদিকে কানাকানি, গুনগুন হচ্ছে। তখন আমি বুঝতে পারছি, কী একটি ঘটনা ঘটছে কিন্তু আমাকে কেউ আর প্রকাশ করে না। তখন আমি খুব অস্থির হয়ে গেছি জানার জন্য- ‘তোমরা বলো না কেন? কী হয়েছে?’ কেউ বলতে চায় না। আমি মামার বাড়ির দালানে ছিলাম। কাউকে না বলে লুকিয়ে আমি ছাদের উপর গিয়েছি। যেয়ে দেখি ছাদ থেকে—নৌকা দিয়ে মিলিটারিরা আমার বিছানা, আমার বালিশ, আমার তোষক, আমার কোল বালিশ, আমার বেড কাভার— আমি এগুলো দেখে চিনে ফেলেছি। ওরা নৌকায় আরাম করে শুয়ে। আমি তখন চিৎকার করছি। আমার বান্ধবীরা— খালাতো, মামাতো বোনরা ছিল। ওরা দৌড়ে গিয়েছে আমাকে থামানোর জন্য। তখন তো জেনেই ফেলেছি যে আমার শ্বশুড় বাড়িতে আগুন দিয়েছে।...”
নুনু যখন শনাক্তকরণের চিহ্ন (পর্ব ১) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : স্বাধীনতা | ১৭ আগস্ট ২০২৩ | ৬২৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
- আপনারা তো প্লাস্টিক সার্জারি করেন।
- করি। আপনার না অন্য কারো?
- আমার।
- নাক সোজা করতে গেলে ২৫ লাখ। গাল তোবড়াতে গেলে ৩০। অবিকল পড়া মুখস্থের মতো বলে মেয়েটা, মেয়ে না কলের পুতুল কে জানে। - ঠোঁটও ঠিক করি। কিন্তু মেলদের ওটা লাগেনা। - আপনার বাজেট কত?
মনির গলা কেঁপে যায়। - মানে, মুখে না, একটু নিচে।
- ঘাড়, গলা, এগুলোয় হবেনা। ওগুলো ভগবান দিয়েছেন। যা দিয়েছেন তাই নিয়েই খুশি থাকুন। ওখানে আমরা হাত দিইনা। বুকে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করি। সেটাও আপনার লাগবেনা। ভুঁড়ির ফ্যাট বার করে দেওয়া যায়। রেট কত চেক করে বলতে হবে। তবে সিক্স প্যাক হবেনা। ওটা আপনাকে নিজেকেই বানাতে হবে।
- মানে, ভুঁড়িও না। তলপেটের সাইডটা।
- বুঝিয়ে বলুন।
চোখ-কান বুজে মনি বলে ফেলে - ওই জেনিটালস সাইডটা। আঃ। বলে ফেলে কী আরাম।
নুনু যখন শনাক্তকরণের চিহ্ন (পর্ব ২) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : স্বাধীনতা | ১৮ আগস্ট ২০২৩ | ৩২৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
বাড়ি ফিরে আরেক প্রস্থ ঝামেলা। ফ্ল্যাটবাড়ির দরজায়ই বিজনবাবু। সব্য তখনও গাড়ি থেকে নামেনি, ভালো করে নাকি পার্ক করছে। সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শমিতা, তখনই বিজনবাবু। সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। বয়স্ক মানুষ, ওদিকের ফ্ল্যাটে থাকেন। খুব যে দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা হয়, তা নয়। কিন্তু আজ শমিতাকে দেখে কীরকম আশ্বস্ত হন মনে হয়। - আপনি বাড়ি ছিলেননা না?
শমিতা বলে, না, এই তো ফিরছি।
- ও। আসলে আমি একটু গিয়েছিলাম।
- কোথায়?
- আপনাদের ফ্ল্যাটে। আপনারা কেউই ছিলেননা না?
শমিতা একটু অবাক হয়ে বলে, এই সময় তো কোনোদিনই আমরা থাকিনা।
- সে তো জানি। বিজনবাবু চিন্তিত গলায় বলেন। - আসলে ওদিকে একটা আওয়াজ পেলাম। ভাবলাম চোর-ডাকাত নাকি। একবার নক করে দেখি। যা দিনকাল।
সীমানা - ৩৪ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৪৭৭ বার পঠিত
সুভাষবাবু তো স্পষ্টই বললেন, “নজরুলকে বিদ্রোহী কবি বলা হয় – এটা সত্য কথা। তাঁর অন্তরটা যে বিদ্রোহী, তা স্পষ্ট বুঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে যাব – তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব তখনও তাঁর গান গাইব। আমি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সর্বদাই ঘুরে বেড়াই, বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত শুনবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু নজরুলের 'দুর্গম-গিরি-কান্তার-মরু'র মত প্রাণ-মাতানো গান কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না।” কাজিদা নিজেও তো সম্বর্ধনার উত্তরে বলেছিল,
“...আমি জানি, আমাকে পরিপূর্ণরূপে আজও দিতে পারিনি; আমার দেবার ক্ষুধা আজও মেটেনি। যে উচ্চ গিরিশিখরের পলাতক সাগরসন্ধানী জলস্রোত আমি, সেই গিরিশিখরের মহিমাকে যেন খর্ব না করি, যেন মরুপথে পথ না হারাই!– এই আশীর্বাদ আপনারা করুন।”
এত কালো মেখেছি দু'হাতে : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ১২১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ফেসবুকের ওই পোস্টটার মধ্যে হয়তো আঠা ছিল। আর স্ক্রল ডাউন করতে পারলাম না। একজন লিখেছেন, ‘স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে এই শোরগোলের আয়ু আর মাত্র কয়েকদিন, যে কদিনের মধ্যে নতুন কিছু এসে এই ঘটনাকে চাপা না দিয়ে দেয়।’ দিন তিনচারেক আগের সেই পোস্টের ভবিষ্যৎ-বাণী ফলতে দেখেছি ইতিমধ্যেই। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন, বিগ ডে মহা-ধামাকায় তেলের সঙ্গে আটা ফ্রি আর অনলাইন খুচরো বিপণিতে নতুন কোনও ফোন উদ্বোধনের লিমিটেড টাইম ডিলের গর্জনে ক্রমশ আড়ালে চলে যাচ্ছে স্বপ্নদীপের মৃত্যু। কবীরের সুমনের গানে ছিল, 'শ্লোগান পাল্টে হয়ে যায় ফিসফাস'। এমন শিরোনামও ক্রমশ পর্যবসিত হবে টুকরো খবরে। তারপরে, আমাদের মন থেকে স্রেফ মুছে যাবে এই অকালপ্রয়াণ। পুজো এগিয়ে আসছে ক্রমশ। আশ্বিনের শারদপ্রাতে, বেঁচে থাকার শ্রেষ্ঠ উৎসবে নিজেদের গায়ে জরির ঝালর পরব সবাই। আজকে যে খবরে মন উথালপাথাল, তা জাঙ্ক হতে দেরি নেই আর।
যাদবপুরে র্যাগিং – ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের অন্বেষণ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২০ আগস্ট ২০২৩ | ৫৫৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ঐতিহ্যের মধ্যে র্যাগিং-এর ঘটনাগুলিকে (একটি বীভৎস মৃত্যুর ঘটনার পাশাপাশি যখন বহু বছর ধরে হয়ে আসা অত্যাচারের বিভিন্ন বয়ান উঠে আসছে) কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, এইটা আমাদের ভাববার বিষয়। ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে র্যাগিং একটি অতিসংক্রামিত সামাজিক ব্যাধি। বিভিন্ন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০০০ সাল থেকে ভারতের বিচারব্যবস্থা এবং শিক্ষানিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি র্যাগিং প্রতিরোধে কড়া ব্যবস্থার নিদান দেয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ব্যবস্থাগুলির প্রায় কোনওটিই লাগু হয়নি। এবং ছাত্রদের মধ্যেও র্যাগিং বিরোধী কোনও সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। বরং, এই কথা শোনা গেছে, ২০০৭ সালে নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিরা র্যাগিংকারীদের শাস্তির বিরোধিতা না করায় বাকি ছাত্রদের একটি অতিসরব দলের চাপে তাদের পদত্যাগ করতে হয়। আমরা জানি, র্যাগিং পরম্পরামেনে চলে। জুনিয়র ব্যাচের ছাত্ররা পরের বছরের জুনিয়র ব্যাচকে র্যাগ করে। এক প্রতিষ্ঠানের র্যাগিং-এর গল্প শুনে আরেক প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা র্যাগিং-এ উদ্বুদ্ধ হয়। সম্ভবতঃ সেই ধারা ধরেই কলোনিপ্রভুদের বহু বদঅভ্যেসের মতন এই প্রথাও এদেশের শিক্ষিত সমাজে ঢুকেছিল। আর, পরম্পরা হিসেবে একটি অপরাধকে বহুজনের মধ্যে মান্যতা দিয়ে দিলে, তথাকথিত বিবেকবান ব্যক্তিও অনেকক্ষেত্রে তাতে লিপ্ত হতে সংকোচ বোধ করেন না। কিন্তু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিকভাবে এ পরম্পরার বাহক, তা তো ঠিক এর বিপরীতমুখী।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – স্লোভেনিয়া ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ১৬৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী—এই আপ্তবাক্যকে অবহেলা করে বাহাদুরি দেখাবার চিরাচরিত বাঙালি অভ্যাস কখনও ত্যাগ করিনি। লিলিয়ানার কাছে শোনা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার এই সুযোগ। বললাম, ভিটেক, যতটুকু জানি – পোলিশ, চেক, স্লোভেনিয়ান একই স্লাভিক ভাষা পরিবারের সদস্য। তফাৎ আছে ব্যাকরণে, বাক্য বিন্যাসে, কিন্তু নিত্যদিনের ব্যবহারের শব্দ প্রায় এক। পোলিশে তোমরা গোনো ইয়েদনা দ্ভা ত্রি, স্লোভেনিয়ানরা গোনে এনা দ্বা ত্রি; পোলিশে কেনা হলো কুপিচ, এরা বলে কুপিতি। কার্ড কেনা নিয়ে কথা। তুমি তো আর দোকানদারের সঙ্গে ব্লেদ শহরের মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা বিষয়ে কোনো আলোচনায় বসছ না!
আবার মোহনের মানুষখেকো - ২ : উপল মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৬২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এইভাবে অসংখ্য বন বাংলোর কথা ভাবতে ভাবতে বুকিং করা বাংলোটার কথা গুলিয়ে গেল এরকম সমস্ত এফ আর এইচ-য়ের ক্ষেত্রেই হয়। এসব জায়গা সাহেবরা খুঁজে, পেতে, ঘোড়ার পিঠে চড়ে, হেঁটে ঘুরে ঘুরে আবিষ্কার করেছে তারপর জঙ্গল চিহ্নিত করে, দখল করে, সুরক্ষিত করে বানিয়েছে আর প্রতিনিধিত্ব স্থানীয় করে তুলেছে—জঙ্গলের প্রতিনিধি হল বনবাংলো বা এফ আর এইচ, এরকমই চেয়ে এসেছে বৃটিশ সাহেবরা। যাদের স্থান মাহাত্ম্য বুঝতে হত যুদ্ধের কারণে।
সর্বনামই যেখানে নাম হয়ে উঠতে পারে : পুরুষোত্তম সিংহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৫৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
জীবনের অন্ধকারমালাই সুবিমলের পাঠক্রম। খুন, জখম, সন্ত্রাস, ধর্মীয় বিভেদ, বিস্ফোরণ, পুলিশি অত্যাচার অন্যদিকে যৌনতার নন্দনকানন। যৌন মিলনের যে পরম তৃপ্তি তা নারী-পুরুষ উভয়ই ভোগ করে কিন্তু পরক্ষণেই জাগে সামাজিক গ্লানি। এই দ্বন্দ্বই সুবিমলের টার্নিং পয়েন্ট। কেন জাগে পাপবোধ? কেন দঃশিত হয় নরনারীর সামাজিক বোধ, কেন স্বীকার করে না পরকীয়া? কেন মেনে নেয় না জীবনের স্বাভাবিক দাবিকে। এই যে সেক্স করা ও তাকে সামাজিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি না দেওয়া এই আলো অন্ধকার নিয়ে তিনি আখ্যানের ভেলা ভাসান। এমনকি তিনি মারাত্মক ভাবে চেতনার গান বাজান। তা বিপ্লব হোক বা মধ্যবিত্ত বিবেক হোক। চেতনা না থাকলে নতুন জোয়ার সম্ভব নয় তা কেবল আয়োজন সর্বস্ব। অথচ আজ আয়োজন সর্বস্ব পরিমণ্ডলের রমরমা। উৎসবের ফানুস উড়িয়ে চেতনাহীনতার মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টির যে ডাক তা যে যথার্থই ভিত্তিহীন তা তিনি প্রয়োগ করে দেখান। সমাজের বিবিধ স্তরের বয়সের নারীর দৈহিক চাহিদাকে সামনে রেখে নারী মনস্তত্ত্বের নিপুণ বিশ্লেষণে অবতীর্ণ হন। এত বড় সমাজ, এত বড় পরিমণ্ডল, এত শ্রেণি, বয়স বিভাজনে সকলেরই কম বেশি যৌনতা আছে। তার নানা রকমফের প্রক্রিয়া, চাহিদা, সম্পর্ক। বেশিরভাগই আড়ালে আবডালে। বিভাজনোত্তর সমাজে নারী পুরুষ পারিবারিক সম্পর্ককে অস্বীকার করে আড়ালে মিলিত হয়েছে। কোথাও ক্লেদ নেই, গ্লানি নেই। আছে এক তৃপ্তির আনন্দ। তার বহুবিধ বয়ান নিয়ে এই আখ্যান। ভাষা আগ্রাসন থেকে জাতি খণ্ডীকরণ, বাঙালির হুজুকে প্রবণতা থেকে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের শূন্য অবয়ব কোন কিছুই নজর এড়িয়ে যায় না। জগাখিচুরি হিন্দি, ইংরেজি মিডিয়াম, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির আদ্যশ্রাদ্ধ, পক্ষ-বিপক্ষে কোন্দল, সংস্কৃতির নষ্টচরিত্র, আধিপত্যবাদের সংস্কৃতি মিলিয়ে দিনের আলোর পরিমণ্ডলের উপর সুবিমল বুলডোজার চালান নিজস্ব ভঙ্গিতে।
কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বামপন্থী মহলে তাঁর খুব বদনাম। গ্রামে থাকতেই শুনেছি। কিন্তু পরে আলাপ হতে দেখলাম, দারুণ প্রশাসক। বিজ্ঞান ক্লাব করতে গিয়ে দেখলাম, তিনি আমাকে খুবই পছন্দ করছেন এবং ভরসা করছেন। সুধীর দাঁ সিএমএস স্কুলে একদম পড়াশোনা হয় না, এই বদনাম ঘুচিয়ে স্কুলকে খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ করে তুললেন। শিক্ষক হিসেবে খুব সুনাম ছিল না, কিন্তু প্রশাসক হিসেবে অসাধারণ হিসেবে ১৯৮২-তে দেখা দিলেন সুধীর দাঁ। স্কুলের বামপন্থী শিক্ষকদের ডেকে বললেন, আমাদের রাজনৈতিক মত আলাদা কিন্তু স্কুলে কোনও রাজনীতি নয়। স্কুলের উন্নয়নই আসল। সিএমএস স্কুল তখন লোকে কানাকানি করতো আলু পটল বেচনেওয়ালেদের ছেলেরা পড়ে। ওমা, সুধীরবাবুর দক্ষ পরিচালনায় শহরের দুই সেরা স্কুল মিউনিসিপ্যাল স্কুল এবং টাউন স্কুলকে ছাপিয়ে উঠল। ১৯৮৪-তে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আজিজুল হক চতুর্থ স্থান পেলেন। হইহই পড়ে গেল শহরে।
সীমানা - ৩৬ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৫৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
প্রকাশন জগতের মানুষ, নজরুল বিস্ময় দেখায়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী জাহানারাকে চোখে দেখেননি! বলেন কী! গল্প লেখেন, সেই গল্প ছাপানোর জন্যে কোন পত্রিকার সম্পাদককে ধরাধরি করেন না, নিজেরই পত্রিকা আছে। অসাধারণ সুন্দরী সে তো বললুমই, ধনীর দুলালী; মালদা থেকে বাংলার সমস্ত উত্তর দিক হয়ে পশ্চিমে বিহারের মিথিলা পর্যন্ত যে ভূমি, তার প্রধানতম জমিদার বংশ – জমিদার না বলে রাজবংশই বলা উচিত – তার সন্তান। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে হাল আমলের কল্লোলের লেখকগোষ্ঠীর অনেক লেখকের সঙ্গেই এঁর যোগাযোগ। সাধারণত থাকেন কলকাতায়। আপনার মতো আমিও চিনতুম না গত বছর পর্যন্ত।
শিক্ষানীতির অশিক্ষা ও সর্বজনীন প্রশ্নের দাবি : কুমার রাণা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৩৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কাঞ্চনমূল্যে প্রতিভা তৈরি অজস্র ছোটবড় কারখানা এখন আর কোনো বিসদৃশ, লজ্জার ব্যাপার নয়, বরং, সমাজ এই ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মস্তিষ্কে জায়গা করে দিয়েছে। যারা এই বাজারে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, তাদের অনুপাতটি কম হতে পারে, কিন্তু, অর্থ ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তির জোরে তারা সংখ্যাগত লঘুত্বকে সহজেই অতিক্রম করে গোটা সমাজকে নিজেদের প্রতাপে প্রভাবিত করে।
সেই প্রভাব নামতে থাকে দেশের হাজার হাজার সরকারি, এমনকি অনেক বেসরকারি স্কুলেও। যেমন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুল। ছাত্রছাত্রীরা খেতমজুর, গরিব চাষি, ভ্যান চালক, বা ছোট ব্যবসায়ী বাড়ির সন্তান। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয়, শিক্ষকের সংখ্যা তুলনায় কম হলেও কাজ চালিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। অথচ, এখান থেকে পাস করার পর, কতজন যে শিক্ষাব্যবস্থায় টিকে থাকবে তার “গ্যারান্টি নেই।” “কেন নেই?” “এরা ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার, তার ওপর সবার মা-বাবা ট্যুশন দিতে পারে না, পারলেও কমজোরি মাস্টার দেয়, ভাল মাস্টার দেওয়ার ক্ষমতা নেই।” “স্কুলে কি লেখাপড়া হয় না?” “হয়, কিন্তু আমরা কী করতে পারি? এরা প্রাইমারিতে কিছু শিখে আসে না, এখানে আর কতটা শেখাব?” এ সবে সমস্যার তালিকা দেওয়া শুরু। পর্যবেক্ষক যত এগোবেন, ততই তিনি দেখতে পাবেন, এক বিশ্বাসের প্রতিমূর্তি, “টাকা ছাড়া বাচ্চার লেখাপড়া হবে না”।
দেশ ভাগ এবং ভারতবর্ষ – এক উলঙ্গ ইতিহাস-১ : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২৫২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমাদের ভারতবর্ষ যখন ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’-এ বুঁদ হয়ে আছে সেসময়ও কি ভারতের টুকরো হয়ে যাওয়াকে বাদ দিয়ে কোনভাবে লেখা যায় এ দেশের টুকরো হয়ে যাবার কোন কাহিনী?
জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে তাঁর Remembering Partition: Violence, Nationalism and History in India (২০০৩) গ্রন্থের গোড়াতেই দু’টি প্রশ্ন তুলেছেন – (১) সরকারি সহস্র-অযুত বয়ানের মধ্য থেকে ‘ইতিহাস’ কিভাবে ‘সত্য’-কে (১৯৪৭-এর হিংসার সত্যকে) জন্ম দেবে, (২) সেদিনের সেই চরম মুহূর্তগুলোকে আজকের ইতিহাসে কিভাবে “struggle back into history” ঘটাবে? (পৃঃ ৪) এ গ্রন্থেরই অন্তিমে লেখক এক জরুরী প্রশ্ন রেখেছেন – “What would it mean to imagine India as a society in which the Muslim does not figure as a ‘minority’, but as Bengali or Malayali, labourer or professional, literate or non-literate, young or old, man or woman?” (পৃঃ ২০৫)
গ্রন্থ পরিচয় - আমার আফ্রিকা : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আফ্রিকার সঙ্গে আমার কাব্যিক পরিচয়, আমার চেতনার ঊষাকালে। কোন কোন রোববার, রবি ঠাকুরের সঞ্চয়িতা খুলে আমার পিতৃদেব আমাদের কিছু কিছু কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল “আফ্রিকা”। মা বলতেন, “ওইটুকু ছেলে এই কবিতার মর্ম কী বুঝবে?” বাবা বলতেন, “মর্ম এখন নাই বা বুঝল। এই অমোঘ শব্দ-চয়ন, অন্ত্যমিলহীন ছন্দের এমন ঝংকার, বিষয়ের ব্যাপ্তি, নিষ্ঠুর সভ্যতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও এমন মানবিক আবেগ। এগুলোই আপাততঃ ওর মনে বসত করুক না - মর্ম উদ্ধারের সময় তো পড়েই রইল আজীবন”। আমার প্রতি তাঁদের উভয়ের বিবেচনায় এতটুকু ফাঁকি ছিল না। আর বড়ো বিলম্ব হলেও, ওই কবিতার মর্মোদ্ধার হল, হীরেন সিংহরায় মহাশয়ের “আমার আফ্রিকা” গ্রন্থটি পড়ে।
কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
ছাত্র ফেডারেশনের হয়ে সদস্য করতে বা ক্লাস ডায়াসিংয়ে গেলে গভীর চোখে তাকাত শোভা। ২৫ পয়সা দিয়ে এসএফআই-য়ের সদস্য পদ নিয়েছিল সবার আগে। সে সময় ২৫ পয়সা অনেক। তিনটে চপ বা পাঁচটা আইসক্রিম হতে পারতো। একটা পাঁউরুটির দাম তখন ১৫ পয়সা। বাপুজী কেক তখন বাজারে আসেনি। আরামবাগের পপুলার বা কোহিনূর কেকের দাম ২০ পয়সা। শোভা এখন ঝাড়া হাত পা। বর অবসরে। বন্ধুদের গ্রুপে কবিতা লেখে আর সবাইকে তাগাদা দেয়, চলো দেখা করি। সে এক্কেবারে তিনদিনের দীঘা ট্যুর ফেঁদেছে। কয়েকজন জুটেও গেছে। প্রসেনজিৎ রায়, সস্ত্রীক নবকুমার, সস্ত্রীক রমেশ, সস্ত্রীক আজম, সস্ত্রীক পীযূষ, নন্দিনী, মালা। প্রসেনজিৎ চুপচাপ ছেলে। পুনর্মিলনে বিরাট ভুমিকা নেয় অনন্তদা, জ্যোতির্ময়, সুবীর রক্ষিতদের সঙ্গে।
সীমানা - ৩৭ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২৭৩ বার পঠিত
সব ধর্মেরই ধর্মীয় গোঁড়ামি কাজির অপছন্দ, সমাজের নানা রকমের মনুষ্যকৃত ভেদাভেদের সে বিরোধী, সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অক্ষম বা দুর্বলের উপর দমননীতির বিবর্তিত কায়দা-কানুনগুলো ধ্বংসের জন্যে লড়াই করতে সে সদাপ্রস্তুত; মানুষের প্রতি ভালোবাসা তার সীমাহীন, এবং তাই সে স্বাধীনতার লড়াইয়ে সৈনিক হয়েছে, অথচ নির্দিষ্ট কোন আদর্শের পথে অবিচলিত পথিক কোনদিনই হতে পারেনি। গান্ধীর মতাদর্শ অনুসরণ করে সে লড়াই করেছে যেমন, বাঘা যতীনের পথ বা বলশেভিকদের পথও তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সাম্যের গান গাইতে গাইতে যখন সে শ্রমিক-কৃষকের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে, শ্রমিক-শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের বাংলা-অনুবাদ করছে, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় মুসলমানদের জন্যে সংরক্ষিত আসনে কংগ্রেস-প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও তার অসুবিধে হয়নি।
টডের রাজস্থান ও বাঙালি হিন্দুর সাম্প্রদায়িকতাঃ একটি ঔপনিবেশিকতা বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গী : স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ৩৭৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩০
১৯০২ এর সেপ্টেম্বরে, মৃত্যুর মাস তিনেক আগে, কাশ্মীরে থাকাকালীন,কর্নেল জেমস টডের ‘অ্যানালস অ্যান্ড অ্যানটিকুইটিস অফ রাজস্থান’ বইটি দেখে সহচরদের বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “বাঙলার আধুনিক জাতীয় ভাবসমূহের দুই তৃতীয়াংশ এই বইখানি হইতে গৃহীত।”
ভুল কিছু বলেননি। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মাইকেল মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র হয়ে জ্যোতি-রবি-অবন ঠাকুর, কার কল্পনাকেই-বা প্রভাবিত করেনি টডের বই-এর মুসলমান শাসকদের বিরুদ্ধে রাজপুত পৌরুষ ও নারী সতীত্বের আপোষহীন লড়াইয়ের চিত্র? ‘কেতুনপুরে বকুল-বাগানে/কেসর খাঁয়ের খেলা হল সারা।/যে পথ দিয়ে পাঠান এসেছিল/সে পথ দিয়ে ফিরল নাকো তারা’ পড়েছি রবীন্দ্রনাথের ‘হোরিখেলা’ কবিতায়। “বিধর্মী শত্রু সোনার মন্দির চূর্ণ করে বল্লভীপুর ছারখার করে চলে গেল,” পড়েছি অবন ঠাকুরের রাজকাহিনীতে।
স্বাস্থ্য, দেহ, মেডিসিন, জনস্বাস্থ্য এবং গান্ধী – পুনর্বিবেচনা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক, দার্শনিক এবং জীবনবোধের বিশিষ্টতা এমন সর্বব্যাপী যে তাঁর এ দিকগুলোকে নিয়ে চর্চা অনেক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকেরা করেছেন। এদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুটি বিষয় সহজেই চোখে পড়ে – প্রথম, তাঁর ধারণায় ও বীক্ষণে অহিংসার স্থান এবং দ্বিতীয়, তাঁর লেখা “হিন্দ-স্বরাজ” পুস্তিকাটি ও এ পুস্তিকায় নিহিত ধারণার ব্যাপ্তি। তুলনায় গান্ধীর বোধে মেডিসিনের দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসা, দেহ, দেশজ চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা কম।
সীমানা - ৩৮ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
দুশো? ঠিক আছে, বললেন গুরুদেব। আমি কিন্তু তোকে শান্তিনিকেতন ছাড়তে বলছি না। শান্তিনিকেতনে তুই কারো দয়ায় থাকিস না, এখানে থাকার অধিকার তোর স্বোপার্জিত। আমি শুধু তোকে নিজের চোখে, অন্যের প্রভাব ছাড়া, সম্পূর্ণ নিজের দৃষ্টিতে জায়গাটা দেখতে পাঠাচ্ছি। যতদিন ভালো লাগে, থাকবি। ফিরে আসতে ইচ্ছে না করে যদি, আসবি না। যদি ইচ্ছে করে ফিরে আসতে, কারোকে জিজ্ঞেস করবার দরকার নেই। এখানে তোর নির্দিষ্ট কাজ তো আছেই।
অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৭৩০ বার পঠিত
কোভিড, বিধ্বংসী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বইপাড়ার বিবরণ ‘মার্কো পোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ২০২০’ আখ্যানে এসেছিল। বাঙালি যত আধুনিক হল, যত অর্থবান হল, বিনোদনের নানা উপকরণ পেতেই বই ত্যাগ করল। মধ্যবিত্ত, সংস্কৃতিপ্রবণ মানুষ কেউ কেউ বইকে আঁকড়েই বাঁচতে চাইল, স্বপ্ন দেখল। বাড়ি গাড়ি ভোগবাদের আতিশয্য বিসর্জন দিয়ে কেউ বাইরে মত্ত হল। ভোগবাদে ভেসে যাওয়া, ক্ষমতার অন্দরমহলে থাকা মানুষ বইকে অবহেলা করতে শুরু করল। বিমলের প্রতি অখিলের মনোভাবের মধ্য দিয়ে লেখক কালের ধ্রুব সত্যের তরঙ্গমালা এঁকে চলেন।
পবিত্র ভূমি ১ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ অক্টোবর ২০২৩ | ২৮১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪২
বহু দিন ধরে ঐতিহাসিকরা, তাত্ত্বিকরা উৎস খুঁজতে চেষ্টা করেছেন এই দশকব্যাপী ভয়ানক, বিষময় সংঘর্ষের। কেউ দায়ী করেন অটোমান সাম্রাজ্যের পতনকে, কেউ ব্রিটিশ চক্রান্ত বা ১৯১৭-র বেলফোর ঘোষণাকে, কেউ বা বারংবার ব্যর্থ হওয়া শান্তিপ্রস্তাব অথবা বহু শতাব্দীর বঞ্চনার ইতিহাসকে। সেইসব কূট তর্কের মধ্যেই দ্রুত বদলে যায় জেরুজালেম, ইতিহাসের চিরস্থায়ী রক্তাক্ত রঙ্গমঞ্চ, যা একইসাথে ক্রিশ্চান, ইহুদি ও ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী মানুষের পবিত্র ভূমি। কারুর বধ্যভূমি, কারুর নির্বাসন, কারুর বা প্রতিশ্রুত নিজভূম।
ইতিহাসের ক্লাস নয়, একজন সাধারণ মানুষের ডায়রির পাতায় ধরে রাখা সেই আমূল বদলের একটুকরো ছবি, হীরেন সিংহরায়ের কলমে।
ট্রফি : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
Tame birds sing of freedom, wild birds fly....
হাওয়াবিহীন দিনগুলিতে আকাশকে চুপসানো বেলুনের খণ্ড মনে হয় - ফ্রেমে আটকানো; যেদিন বাতাস ওঠে, নীল বেলুনের টুকরো ঢাউস শামিয়ানা হয়ে উড়তে থাকে, মেঘ আর ডানারা মোটিফ তৈরি করে - সাদা কালো লাল নীল মেঘ ছেনে ছোটো ডিঙি, বড় বড় পালতোলা নৌকো, বিশাল সব দুর্গ, হাতি, উট আর বুড়ো মানুষ। তার ওপর ঘুড়িরা লাট খায়, জেট চলে যাওয়ার ঘন সাদা লাইন ফিকে হতে হতেই একগুঁয়ে উড়োজাহাজরা উড়ে যায় আচমকা। পাখিরা চক্কর কাটে আর চক্কর কাটে, শেপ ফর্ম করে - ভি, ওয়াই, এম, এ, ডব্লিউ; কখনও তারা মানুষের কাছাকাছি নেমে আসে এমন, যেন ডানার কথা ভুলেই গিয়েছে। ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখি- ডান হাত মাথার নিচে, বাঁ হাত শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে, কাঁধের খুব কাছেই চেটো- তাতে তিনটে আঙুল। যেন ডানা। আমি হৃদয়রাম, পঁয়ত্রিশ বছরের এক্ট্রোড্যাকটাইলি পেশেন্ট। উড়তে পারি না অথচ বাঁ কাঁধে কারো হাত ঠেকলে খাঁচায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পাই।
আসলে এ'সবই ডানার গল্প।
পবিত্র ভূমি ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
“শুনুন, এটা অনুসন্ধানের ইসরায়েলি কায়দা ! প্রথম জন আপনার সঙ্গে কথা বলে দ্বিতীয় জনকে পাঠাবার আগে রিপোর্ট দিয়েছে, আপনি কি বললেন। সেই লিস্টি মিলিয়ে দ্বিতীয় জন আপনাকে চেক করে। থিওরি হচ্ছে আপনি সত্যি বললে প্রতিবার তাই বলবেন, কোন ক্রিয়া পদ বিশেষ্য বিশেষণ একটু ওদিক হতে পারে,আপনার কণ্ঠস্বরে উষ্মা দেখা দিতে পারে। কিন্তু পর পর তিন বার ধারাবাহিক ভাবে মিথ্যে বলাটা শক্ত কাজ। নিরাপত্তার লোকেদের মনে সন্দেহ হলে আপনাকে পাঁচবারও প্রশ্ন করতে পারে। হিথরোতে আপনি ক্লিন চিট পেয়েছেন। যখন বেন গুরিওন হাওয়াই আড্ডায় নামলেন, আপনি একেবারে কোশার মানুষ ! এখন আপনি আমাদের অফিস কেন, এই উলটোদিকের পার্লামেন্টে গিয়ে একবার উঁকিঝুঁকি দিয়ে আসুন না !”
মশা-ই : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১২০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মণিমালা নীচু হয়ে সুখশয্যায় শোয়া সুকান্তের মুখের সামনে হাত নিয়ে ঢেলে দিল ভাজা মৌরি। সুকান্ত মুখ বন্ধ করে জড়িয়ে ধরল মণিমালাকে, টেনে নিল নিজের বুকের ওপর। সুকান্তর বুকে মণিমালার বুক থেপসে গেল। একটুও আগুন জ্বলল না ঠিকই, কিন্তু সুকান্ত পুড়ে ছাই হতে লাগল। ছাড়ো, ছাড়ো আমার এখনো রাজ্যের কাজ বাকি। আমার পাশে শোয়াটাও তোমার একটা কাজ। ছাই কাজ। ঠিক তাই, সেই থেকে পুড়ে পুড়ে আমি ছাই হচ্ছি। ইস, আমি এখন তাহলে এসে ছাইয়ের গাদায় শুলাম? ছাইয়ের গাদা, উঁ, ছাইয়ের গাদা, দেখাচ্ছি কেমন ছাইয়ের গাদা। নরম ও আরামের সুখশয্যার ওপর সুকান্ত চেপে ধরল আগুনতপ্ত মণিমালাকে। তারপর মণিমালার মুখের কাছে মুখ নামিয়ে বলল মশলা খাবে? মণিমালার দু চোখে সর্বনাশের ডাক, তার আঁখিপাখি পাখা ঝাপটিয়ে বলল, খাবো।
কোন নাম নেই : এস এস অরুন্ধতী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
করুণাদের বাড়ির দুদিক জুড়ে পুকুর আর সামনে বিশ্বাসদের আদিম উদোম বাড়ি। বাড়িটার জায়গায় জায়গায় পলেস্তেরা খসে গেছে। সেই বাড়ির ভেতর থেকে কখনো ভেসে আসে শরিকি খেউর, কখনো টেলিভিশনের সস্তা চটুল গান। এই বিশ্বাস বাড়ির চৌহদ্দিটুকুকেও কত্তারা ছাড়েনি। খুপরি ইটের ঘর বানিয়ে ভাড়া বসিয়েছে। ননা, মনি, সতুদের মত দিন আনা দিন খাওয়া লোকেরা ভাড়া নিয়েছে সেসব ঘর। ননার মা রাতদিনের কাজ করে, মনির বাপটা মিলে কাজ করত, এখন মিল বন্ধ। এখন কেবল নিয়ম করে মনির মাকে পেটায়। সতুর বাপ মুদির দোকানে মাল মাপে, ওরাই এখনো একটু ভালো আছে, গেরস্ত মতো।
গুনাহ! গুনাহ! : মোহাম্মদ কাজী মামুন
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
প্রথম প্রথম পরীক্ষা শেষে ঘটনাটা ঘটলেও, এক সময় এর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ল। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও মামার সাথে ঘুমোতে যাবার আবদার থাকতো মোরসালিনের! তবে লিটন নামের এই যুবকটি কিন্তু তার আপন মামা ছিল না। মায়ের এত দূর সম্পর্কের ভাই ছিল যে, মোরসালিন মনে রাখত পারত না ক্রমটা। লিটন মামা একটা বইয়ের দোকনে চাকরি করত, আর থাকত পুরনো ঢাকার একটি স্যাঁতসেতে মেসে, যার দোতলায় উঠতে উঠতে পিচ-কালো নোনা-ধরা দেয়াল, কড়িবর্গায় রাজত্ব করা ধুলোর পুরু আস্তর, আর পলেস্তরা খসে শ্যাওলা গজানো ইটের কংকালে উঁকি মারা অবশ্য দ্রষ্টব্য ছিল যে কোন পরিদর্শকের জন্য। এছাড়া রয়েছে কাঁথা বালিশের ম্যাড়মেড়ে বাসী গন্ধ। একটা পুরনো দিনের এলিয়ে পড়া আলনা, আর হাঁটু-ভাঙা রঙ-উঠা চৌকির তলা চেপে ধরা একটা ফেটে পড়া বিরস-বিবর্ণ ট্রাঙ্ক। সব মিলিয়ে দমবন্ধ অবস্থা!
পবিত্র ভূমি ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
সাফ সুতরো পবিত্র সমাধির গিরজেতে দেখা দিলো এক ধর্ম সঙ্কট। যিশুকে ঈশ্বরের সন্তান জ্ঞানে বন্দনা করার অধিকার সকল ক্রিস্টিয়ানের। কিন্তু তাদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধল সেই বন্দনার আচরণ প্রক্রিয়া নিয়ে - কে কোথায় কি ভাবে কোন ঘণ্টা বাজিয়ে কোন ধুনো দিয়ে কবার পাখা নেড়ে দিনের মধ্যে কতবার প্রার্থনা করবে তাই নিয়ে লড়াই চলে ; দেবস্থানের ঠিক কোন কোণায় কে দাঁড়াবে তার মীমাংসা হয় নি, এই নিয়ে মারামারি হয়েছে প্রভুর ক্রুশের সামনে। ধর্মের এই কুরুক্ষেত্রের লিগে ছজন প্লেয়ার, ছয় পুরুত, পূজারী পক্ষ – গ্রিক অর্থোডক্স (তাদের গলা সর্বদা উঁচুতে, আমাদের ভাষায় বাইবেল লেখা হয়েছে, বাবা, নইলে কি কেউ জানতে প্রভু এয়েছেন?), আর্মেনিয়ান চার্চ (দুনিয়ার পয়লা ক্রিস্টিয়ান দেশ, যখন বাকিরা পুতুল পুজোয় ব্যস্ত), মিশরের কপটিক (প্রভুর বাল্যকাল কেটেছে আমাদের দেশে), ক্যাথলিক (রোমের সে মহান গিরজে কে বানালো শুনি?), ইথিওপিয়ান চার্চ (সলোমনের বউ আমাগো দ্যাশের মাইয়া), সিরিয়ান চার্চ (ক্রিস্টিয়ানের পয়লা দীক্ষা, দামাস্কাসের পথে?)। প্রত্যেকে চান তাঁদের আপন নিয়ম মাফিক এই গিরজের পরিচালনার ভার এবং চাবি।
পবিত্র ভূমি ৭ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০১ নভেম্বর ২০২৩ | ৯২১ বার পঠিত
"ইংরেজের যতোই টেকনিকাল জ্ঞান থাকুক না কেন, জমির মালিক কনস্তানতিনোপেলের অটোমান সুলতান ; তিনি খামখা কূটবুদ্ধি ইংরেজকে রেল লাইন পাতার জন্য জমি দেবেন কেন? তিনি বললেন কেটে পড়ো, দান খয়রাতি করলে রাজ্য চলে না। ততদিনে ইংরেজ সেই লাইনের মাপজোক, এমনকি কোন খানে লাইন পড়বে তার অঙ্ক অবধি কষে ফেলেছে। খরচা হয়েছে, উশুল নেই। এবার তারা নরম সুরে ধর্ম সহিষ্ণু সুলতানের কাছে ইংরেজ (এবং কিছু ফরাসি) আবেদন জানাল, জাহাঁপনা, আপনি ক্রিস্টিয়ান, ইহুদিদের ধর্মস্থলের মেরামত করে দিয়েছেন, আপনার মহিমা অপার। একবার ভেবে দেখুন যাঁদের জন্য আপনার এই অসামান্য অবদান, তাঁদের, মানে ইহুদি ক্রিস্টিয়ান তীর্থযাত্রীদের পুণ্য শহর জেরুসালেমে পৌঁছুনোর পথে অনেক ঝকমারি, জাহাজ থেকে নেমে দুর্গম গিরি পার হতে হয়। সেই সব তীর্থ যাত্রী যদি জাফা (তেল আভিভের পত্তন এই মাত্তর ১৯০৯ সালে ; জাফা অতি প্রাচীন শহর) বা হাইফাতে জাহাজ থেকে নেমে ট্রেন ধরে সিধে জেরুসালেম যেতে পারেন তাহলে যাত্রী সংখ্যা ও সুলতানের তিজউরিতে অর্থাগম বাড়ে (জিজিয়া কর অবিশ্যি ততদিনে উঠে গেছে)। এই কাহিনি শুনে সুলতানের উজির বললেন হঠাৎ ইংরেজ ফরাসি এ তল্লাটে কেন হাজির হলেন তাঁরা নিজের রাজত্ব সামলান গিয়ে। এ হলো গিয়ে ১৮৬৫ সালের কথা।"
গভীর জল : মৃণাল শতপথী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ নভেম্বর ২০২৩ | ১০১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
শীতের রাতে আগুনে তিনজোড়া হাত উপুড় হয়ে আছে। উত্তুরে হাওয়ায় চাদরমুড়ি দেওয়া তিনটে শরীর আগলে থাকে আগুনকে। তিনজোড়া চোখে তার ছায়া কাঁপে। কাঠ ফাটার পট পট শব্দ। জমা খড়কুটো থেকে অল্প তুলে আগুনে দিলে চিড়বিড়িয়ে ওঠে। দূর হাইওয়ে ধরে শব্দ করে ছুটে যাচ্ছে ট্রাক। তাদের ব্রেক কষার আওয়াজে মিলন পিয়াসি হস্তিনীর ডাক ভ্রম হয়। ধীরেই কথা বলে তারা। ফিসফিস হাসি। রাত গভীর হু হু নীরব। জোরে শব্দ উঠলেই একটা স্থির ভেঙে টুকরো হয় বুঝি। শীত আর আগুন ঘেঁষাঘেঁষি থাকলে শরীর-কথায় ওম চায়। কেউ বলে ওঠে,
- একজন করে আমাদের গোপন গল্পগুলো বলি চল আজ। শর্ত হলো, যে গল্প এর আগে কোথাও করিনি। অবসর পাইনি, অথবা তুমুল সংসারী, শান্তি বিঘ্ন হোক চাইনি, কিংবা বেমালুম ভুলেই ছিলাম,মনে করতে চাইনি।
আগুনে কুটো পড়ে কিছু। হাইওয়ে ভেঙে আরও কয়েকটি ট্রাকের গর্জন দূরে মিলায়। একজন কেউ তার গল্পটা শুরু করবে এখন।
কন্যাকুমারী : রঞ্জন রায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
আমি সপ্তাহে দু-দিন উপোস রাখি—মঙ্গলবার বজরংবলির উপোস, শনিবার শংকর ভগবানের। তবে এই সব উপোসে চা এবং ফল খাওয়া যায়; অন্ন, মানে ভাত-রুটি-তরকারি, না খেলেই হল। সাধারণতঃ আমি কাঠগোড়া বাসস্ট্যান্ডে সিন্ধি ভদ্রলোকের একটা বড় ফলের দোকান থেকেই কিছু কলা, আপেল, সফেদা ও মুসম্বি কিনে নেই। আজ সেটা হতে পারে নি।
ওখানে বিলাসপুর কোরবার বাস অন্ততঃ দশ মিনিট দাঁড়ায়। ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, খালাসিরা চা-জলখাবার খায়। কিছু যাত্রীও বাদ যায় না। ফলের দোকানের পাশেই গুপ্তা হোটেল। সেখানে চা খেয়ে সবাই পাশের গলিতে যায় তলপেটের চাপ হালকা করতে।
ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-১ : সৌমিত্র ঘোষ
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
একটা ঢিল ছোড়া যাক। ঢিলটা কাক-ওড়া সরলরেখা ধরে যেতে থাক। যদিও কাকেরা সরলরেখায় ওড়ে, বিষয়টা এমন, মানে, প্রামাণ্য নয়। বিষয়টা কাক নয় ঢিল, ঢিলটা মহাজাগতিক দ্রুতগতিতে সাঁই সাঁই ধাবমান, সরলরেখা কিম্বা প্যারাবোলায়। সরলরেখা, প্যারাবোলা বা নেহায়েৎ ছাপোষা বক্ররেখা ধরে যেতে যেতে ঢিল টাল খেতে বা লড়খড়াতে পারে, নাও পারে। বিষয়টা সেটা নয়। মানে, ঢিলটা কি আদৌ আছে? থাকলেও সেটা কি দৌড়োচ্ছে? আরো মোদ্দা কথা যেটা, সেটা কি ছোড়া হয়েছে? এ সব প্রশ্নের মীমাংসা ধীরে ধীরে হবে, কিম্বা আদৌ, কখনোই হবে না।
ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-২ : সৌমিত্র ঘোষ
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১২২৩ বার পঠিত
ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিলেন কিনা তা এই কাহিনীর উপজীব্য নয়। ট্যাঙ্কশংকরের ভর হয়েছিলো, এমন একটা কথা এসেছে। এখন, রেট্রোস্পেক্টিভ বিশ্লেষণে মনে হয়, যেটাকে ভর বলা হচ্ছে সেটা আসলে বাইপোলারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কিম্বা রোদ লেগে বায়ু চড়ে গিয়েছিলো, পিত্ত প্রকুপিত হয়েছিলো, এসবও হতে পারে। মোদ্দা, ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে আবির্ভুত হয়ে লুঙ্গি কোমরে তুলে অর্থাৎ নিচের যন্ত্রপাতি বার করে কতক্ষণ নেচেছিলেন সে সব উদলা প্রসঙ্গে এ কহানি বিলকুল ঢুকবে না। হতে পারে, তিনি এখনো নাচিতেছেন।
বেলার বেতার : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১০ নভেম্বর ২০২৩ | ১৪৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
সারাদিন অপেক্ষা করে নওশাদ, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। রাতে ঘুম ভেঙে গেলে নওশাদের মনে পড়ে তার কী করা উচিত, সে রেডিওর ডায়াল ঘুরিয়ে ১২০ কিলোহার্টজ বেছে নেয়। তারপর কয়েকবার “নওশাদ বলছি” বলে। ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে রেডিও প্রাণ পায়। বেলার কন্ঠ, “আপনি সেন্ট্রাল রোডের পেছনের বাড়িগুলির মধ্য দিয়ে কাঁটাবন পার হবেন। আজিমপুর দিয়ে লালবাগে ঢুকবেন। নদী আপনাকে সাঁতরে পার হতে হবে রাতে।” নওশাদ রুদ্ধশ্বাসে বলে, “তারপর?” আবার সারাদিন নিস্তব্ধতা। সন্ধ্যায় নওশাদ ৮০ কিলোহার্টজে বার্তা পাঠায়, “নদীর ওপাড়ে কি প্রতিরোধ কমিটির কেউ থাকবে?” ভোরে বেলার কন্ঠ ভেসে আসে, “না আপনাকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত হেঁটে আসতে হবে, আমি সেখানেই আছি।”
বিপজ্জনক খেলা : অর্ণব সাহা
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১০ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শোভাবাজার রাজবাড়ির পিছনের গেটের কাছে ইন্দুর চেহারা, অবয়ব একটু একটু করে পরিস্ফুট হচ্ছিল শৌভিকের। যেন কিছুটা উৎকণ্ঠা, কিছুটা সতর্কতা নিয়ে জোরকদমে হাঁটছে সে। কাঁধে একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগ। বোঝাই যাচ্ছে সে পিছুটান ফেলে রেখে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে আজ। উল্টোদিকে শৌভিকের সঙ্গে কিন্তু কোনও ব্যাগ নেই। এমনকী পকেটে পার্সও নেই। আসলে শৌভিকের এমনিতেও কোনও পিছুটান নেই। মাঝেমধ্যেই সে রাতেরবেলা পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়ে কলকাতার রাস্তায়, রাতের জীবন দেখবে বলে। একাধিকবার ফুটপাতে শুয়ে থেকেছে সারারাত। ভিখারি-চোর-মাতাল-কাগজকুড়ুনিদের সঙ্গে। এরকমই এক রাতে, তার মনে আছে, এক স্বল্পবয়সি ভিখারিনি, যার মরদ একসপ্তাহ অন্য মেয়ের ডেরায় কাটিয়ে ফিরে এসেছে, লোকটাকে চ্যালাকাঠ হাতে শাসিয়েছিল—“আর কোনওখানে নয়। তোর ঠিকি ওইখানটায় মারব। মর্দানি জন্মের মতো ঘুচে যাবে, বাঞ্চোত”।
ভোলবদল : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১৫৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
একদিন খাবার টেবিলে আলাপ হল পেটার এবং ডাগমারের সঙ্গে, তারা হামবুর্গ থেকে এসেছে। এমনি ছুটিতে কতজনের সঙ্গেই তো পরিচয় হয় কিন্তু এরা একটু অন্য রকম। ডিনারে পেটার আসে স্যুট পরে, ডাগমার ককটেল ড্রেসে। পরে দেখা গেলো বিচেও তারা রীতিমত ব্রানডেড পোশাক পরে। যুদ্ধের পরে ইয়েন্সের বাবা মা প্রায় এক বস্ত্রে লাইপজিগ থেকে মিউনিক আসেন, অনেক কষ্টে সৃষ্টে একমাত্র ছেলেকে পালন পোষণ করেছেন। ইয়েন্স আঠার বছর বয়েসে ব্যাঙ্কে শিক্ষানবিশি (আউসবিলদুং), তারপর ব্যাঙ্কে কাজ। ইয়েন্স কাজের বাইরে কদাচিৎ স্যুট পরে -মনে প্রশ্ন জাগল এখানে এই ক্রোয়েশিয়ার রেসরটে পেটার স্যুট পরে কেন? আনেলিজে লক্ষ্য করেছে তাদের কথা বার্তার স্টাইল উঁচু মাপের, কেতা দুরুস্ত। সকলকে আপনি বলে, করমর্দন করার কালে ঠিকমত মাথাটি ঝুঁকিয়ে দেয়।
পবিত্র ভূমি ১২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ১০৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কফির কাপ হাতে নিয়ে রিচারড গোল্ডস্টোনের সামনে হাজির হয়ে সুপ্রভাত জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছেন? বললেন কেপ টাউন। ইতিমধ্যে রোদিকা যোগ দিয়েছে বলতে শুরু করলো সে তাঁর রিপোর্ট পড়েছে, তার মনে হয়েছে অনেক স্পষ্ট কথা সেখানে বলে হয়েছে। বাকি সময়টুকু তিনি আমাদের কথা নিয়ে কাটিয়ে দিলেন, আমরা কে, কোথাকার, কখনো দক্ষিণ আফ্রিকা গেছি কিনা। এই সুযোগে জানালাম কাজে কর্মে তো বটেই, এমনকি ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে জোহানেসবুরগ গেছি। বিনীত অনুরোধ জানালাম, আপনার সঙ্গে আমার স্ত্রীর ছবি তুলতে পারি কি? তখুনি রাজি হলেন। তারপর আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট, তিনি কেপ টাউনের পথে। রোদিকা বললে কিছু জিজ্ঞেস করাই হলো না! বললাম দুঃখ পাবার কারণ নেই। আমাদের সঙ্গে কথা বললেন এই ঢের। অমন ডাকসাইটে আইনজ্ঞ বলে কথা।
আবোল তাবোল : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | নাটক | ১২ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমড়াগাছের নীচে একটি সভা বসেছে। এখন মাঝ রাত্তির। সভায় উপস্থিত বকচ্ছপ, বিছাগল, হাঁসজারু, গিরগিটিয়া, হাতিমি, মোরগরু, সিংহরিণ। একটু উঁচু জায়গায় বসে আছে প্যাঁচানি, সে এই সভার সভাপতি। সকলেরই চোখে জল, সমবেত চাপা কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন সময় হাত তুলে প্যাঁচানি উপস্থিত সবাইকে শান্ত হবার ইঙ্গিত দেয়, এক মুহূর্তে কান্নার শব্দ থেমে যায়, প্যাঁচানি হুট হুট শব্দে সকলের আচরণ অনুমোদন করে। এমন সময় ঘুম-ভেঙে-উঠে-আসা হরু চোখ কচলাতে কচলাতে প্রবেশ করে।
পবিত্র ভূমি ১৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
যিশু নামের একজন মানুষের কথা খুব শোনা যাচ্ছে। গুজব তিনি পঙ্গুকে সচল করেন, অন্ধকে দৃষ্টিদান করেন, সাতটা রুটি আর কয়েক টুকরো মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষকে পেট পুরে খাওয়ান। এই বার্তা রটি গেল গ্রামে শহরে, তিনি এবার জেরিকো আসবেন। জাকেউস এক ধনী ব্যক্তি, তখন জেরিকোর ট্যাক্স কালেক্টর, শহরে বাজারে তাঁকে কেউ পছন্দ করে না। এমন মানুষও কৌতূহলী হলেন- কে এই যিশু? তাঁকে কি আগে ভাগে দেখা যায়? একটা সমস্যা ছিল- জাকেউস মাথায় খাটো। যিশুর ভক্ত গোষ্ঠীর ভিড়ভাট্টার ভেতরে তিনি কি সেই যিশু নামক মানুষটির কাছাকাছি যেতে বা তাঁকে দেখতে পাবেন? জাকেউস একটা শর্ট কাট বের করলেন - শহরের ঢোকার মুখে চৌরাস্তার মোড়ে ছিল একটি সিকামুর গাছ, তিনি সেই গাছে চড়ে বসলেন।
এক রাজা, দুই কবিরাজ : স্বাতী ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
দেশের রাজার ভারী অসুখ করেছে। মুখে হাসি নেই, চোখের তলায় কালি, মাঝেমাঝেই কাতরে কাতরে ওঠে আর বলে, ‘ও হো হো, আমি আর বাঁচব না।’ আমেরিকা থেকে সাহেব ডাক্তার এল। টিপেটুপে দেখে বলল, ‘মহারাজ, বেদনাটা চিনচিন না ঝনঝন, উপর থেকে নীচে, না পাশ থেকে মাঝে?’ রাজা রেগে গিয়ে বলল, ‘সবই আমি বলে দিলে তোমাকে হাওয়াই জাহাজের টিকিট কেটে আনা হল কেন হে?’
পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা : সমরেশ মুখার্জী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৪৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
রিনকিন বলেন তাঁর গভীর মানসিক দ্বন্দ্ব বা Moral Dilemmaই নানাভাবে হানা দিচ্ছে তাঁর দুঃস্বপ্নে। সাদা পবিত্রতার প্রতীক। যেহেতু তিনি তাঁর ধর্মবিশ্বাস, স্কাউটিংয়ের শপথ, গীর্জায় নেওয়া বিবাহ শপথের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেন নি তাই তাঁর হারানো পবিত্রতাবোধ প্রতিশোধ নিতে স্বপ্নে শ্বেত-কঙ্কাল হয়ে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। র-বাবু বলেন, যদি স্ত্রীকে ত্যাগ না করি - ফ-মণিকেও বিয়ে না করি - তবে স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ তলানিতে ঠেকেছে বলে ফ-মণির সাথে মেলামশা করে নিছক আনন্দ পেতে চাই - কেমন হয়? রিনকিন বললেন, এভাবে দু নৌকায় পা দিয়ে চলা শক্ত তবু চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি দুই মহিলাই, বিশেষ করে আপনার স্ত্রী, তা মেনে নেন তো ভালোই। তবে আমার পরামর্শ এখন কিছুদিন কার্টুন আঁকা থেকে বিশ্রাম নিন, ফ-মণি থেকেও দুরে থাকুন, দেখুন তাও ঐ দুঃস্বপ্ন ফিরে আসছে কিনা।
মারীকথা : মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৪৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ওই পুরোনো খবরটাতেই জানতে পারি মাণিক্যপুরে থাকতো দুরকম মানুষ, আঁখি আর নয়ন| প্রথমে সবাই বেশ মিলে মিশেই থাকতো, তারপর তাদের ধর্ম আলাদা হলো, এলো বিচ্ছেদরেখা | সেকি বাইরের মানুষের জন্য? কে জানে? আঁখি চা চাষ করে, নয়ন ধান। আঁখি ভেড়া পোষে, নয়ন গরু। আঁখি গাঁজা খায় তো নয়ন তামাক| রাত্রে নিজেদের বানানো নেশাটুকু খেয়ে আঁখি নাচ গান করে, নয়নও | আর তাদের মধ্যে লড়াই চলতেই থাকে| সীমানা নিয়ে লড়াই, ধর্ম নিয়ে লড়াই,চাষের জমি, জল, মাণিক্যপুরে নতুন কি হবে সব কিছু নিয়ে লড়াই|
ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথঃ মহাকাব্যের দুই পিতা ও তাদের রাজধর্ম : তামিমৌ ত্রমি
বুলবুলভাজা | প্রবন্ধ | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আবার মহাকালের রথে চেপে আমরা যদি অতীততর ধূসরতায় প্রবেশ করি, তাহলে সেই পাশা উলটে যাওয়ার দিনে কৈকেয়ীর কাছে নির্মম সত্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দশরথ যতই ঘন ঘন জ্ঞান হারান, বুকে করাঘাত করে বিলাপ করুন, কৈকেয়ীকে অভিসম্পাত দিন,কৌশল্যার প্রতি হঠাৎ উদবেলে হাহাকার করে উঠুনএমনকী তাঁকে বন্ধন করে রাজ্যভার গ্রহণ করতে রামকে পরামর্শ দিন না কেন, রাম যদি পিতৃসত্য না রক্ষা করতেন, তাহলেই কি দশরথের মান থাকত? অত দুঃখের মধ্যেও দশরথের দার্শনিক সত্ত্বাটির নাগাল রাম নিশ্চিত পেয়েছিলেন। দুই পিতার চোখের মণি দুই পুত্র দুই মহাকাব্যের পথ ধরে গিয়েছেন দুই সম্পূর্ণ বিপরীত রাস্তায়। কার শেষে আলো, কার শেষে অন্ধকার, সে জানে রসিক – হৃদয়; পাঠক-সত্ত্বা।
বিজেপির দুর্নীতি- কিছু তথ্য, কিছু কথা : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী তখনও ক্ষমতায় আসেননি, সারা দেশে তখন একটাই শ্লোগান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’, যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, নিজেও চুরি করবো না, অন্যকেও চুরি করতে দেবো না। সারা দেশের সমস্ত মানুষ তখন একযোগে একটাই কথা বলছেন, একমাত্র নরেন্দ্র মোদীই পারবেন, দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে। মানুষের মনে তখন অনেক আশা, গত সত্তর বছর ধরে, কংগ্রেস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলো যেভাবে চুরি করে, দেশটাকে ফোঁপড়া করে দিয়েছে, তাতে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীই এখন একমাত্র পারেন দেশকে রক্ষা করতে। তাই শ্লোগান উঠেছিল, ‘আব কি বার, মোদী সরকার’, অর্থাৎ এবার চাই মোদী সরকার। কিন্তু আজকে যখন আমরা ২০২৪ সালের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছি, তখন কি মনে হচ্ছে, দুর্নীতি কমেছে?
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ৯২৭ বার পঠিত
যদিও উপরে বলা এইসব ভাল ভাল জিনিসের আমাদের অভাব ছিল, তবু আমাদের কাছেও লবণে-জারানো জিরাফ ও জেব্রার জিভের আচার ছিল; হালিমাহের বানানো উগালি ছিল; এছাড়া মিষ্টি আলু, চা, কফি, ড্যাম্পার বা স্ল্যাপজ্যাকও ছিল; কিন্তু সেসব খেয়ে খেয়ে মুখে চড়া পড়ে গিয়েছিল। আমার দুর্বল পেট, বিভিন্ন ওষুধ, ইপিকাপ, কোলোসিন্থ, টারটার-এমেরিক, কুইনাইন এইসব খেয়ে খেয়ে বিরক্ত, কাতর। এইসব হাবিজাবি খাবারের বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদ করছিল। "ওহ, একটা গমের রুটি!" আমার মন কাঁদছিল। "একটা রুটির জন্য পাঁচশ ডলারও দিতে পারি!"
উত্তরের আলোয় অচেনা ইউরোপ এবং পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৫৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
দীর্ঘদিন আমরা ইংরেজদের দাসত্বে থাকলেও, আমাদের বাল্যে বিলেত অর্থাৎ ইংল্যাণ্ড সম্বন্ধে বেশ সমীহ জাগানো একটা ধারণা তৈরি করেছিলেন, আমাদের বিলেত-ফেরত ডাক্তার ও ব্যারিষ্টাররা। তাছাড়া ইউরোপের যে কটি দেশ সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল ছিল, সেগুলি হল, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, স্পেন, গ্রীস ইত্যাদি। আরও কিছু দেশ যেমন, পোল্যাণ্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়াকে চিনতাম সে দেশের ডাকটিকিট সংগ্রহের সুবাদে। এখনও মনে আছে, পোল্যাণ্ড, হাঙ্গেরি এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার স্ট্যাম্পগুলি, ইংল্যাণ্ডের “মহারাণি” মার্কা একঘেয়ে স্ট্যাম্পগুলির তুলনায় অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক ছিল। আরেকটা দেশের নামও মনে আছে - “নিশীথ সূর্যের দেশ” নরওয়ে!
আলোচ্য গ্রন্থদুটি পড়া শেষ করে মনে হল, লেখকের হাত ধরে ইউরোপের ওই অচেনা-অজানা-অস্পষ্ট দেশগুলি থেকে এইমাত্র যেন ঘুরে এলাম।
সংসদে কিছু যুবকের ঢুকে পড়া: মূল যে কথাটা উঠছে না : সুমন সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১০৪৪ বার পঠিত
কেন ঐ যুবকেরা সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে, ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ শ্লোগান তুলেছিলেন সেই প্রশ্নও সামনে চলে আসতে পারে। একদিকে বিজেপির ছোট বড় নেতারা, বিষয়টিকে বলছেন, শুধুমাত্র নিরাপত্তাজনিত খামতির ফলে এই ঘটনা ঘটেছে, অন্যদিকে যে যুবকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদি ধৃত যুবক-যুবতীদের মধ্যে কোনও একটি নামও সংখ্যালঘু মুসলমান হতো, তাহলে কি শাসকদল এবং তাঁদের পোষা গণমাধ্যম এই রকম চুপচাপ থাকতো? তখন কি এই আক্রমণকে সামনে রেখে, তাঁরা হিন্দু মুসলমানের মেরুকরণের রাজনীতি করতেন না?
হীরেন সিংহ রায়-এর ‘আমার জার্মানি’ - একটি আলোচনা (দ্বিতীয় পর্ব) : মিলন দাস
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
বয়স্ক জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, আমিই সেই জার্মান সৈনিক। ডেভিড সেটা বুঝলেন। কারও মুখে কোনো কথা নেই। উনচল্লিশ বছর আগে ইলিনয়ের ডেভিড দে ফ্রিস অস্ত্র হাতে জার্মানির হেসেনের এক পরাস্ত জার্মানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। চারদিকে যখন খুন কা বদলা খুন হচ্ছে, সেখানে অস্ত্রহীন জার্মানকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন তার ওপরওয়ালার অফিসে। তার পরিচয়পত্র নাম ইত্যাদি নথিবদ্ধ করে, তাকে যুদ্ধবন্দির সম্মান দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের শেষে বিজেতারা ফিরেছেন শিকাগো ইলিনয়, আর বিজিত ফিরেছেন হেসেন, জার্মানি।
জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন প্রথমে। ডেভিডও ততক্ষণে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে পড়েছেন। চার দশক আগের দুই শত্রু। একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন।
কাদামাটির হাফলাইফ - পাঠ প্রতিক্রিয়া : সুপান্থ বসু
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ | ১০১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
গাছের যে অংশ থাকে মাটির ওপরে তাই আমরা দেখি। অর্থাৎ কাণ্ড , শাখা, ডালপালা আর পাতা - ফুল - ফল। আর যা থাকে মাটির নীচে, সেটা অদৃশ্যগোচরই রয়ে যায়। যেমন, শিকড়। শিকড় সন্ধান করতে লাগে.... খুঁজলে পাওয়া যায়। আর না খুঁজলে, বিস্মৃতির অতলে। আমাদের আদত যাপন চিত্রের এক অনুপুঙ্খ ধারা - বিবরণ হিসেবে নয়, ধারণ করে রাখে যে সব পাতা, সে সব পাতাগুলো এক জায়গায় জড়ো করলে হয় ইতিহাস। ইমানুল হকের লেখা 'কাদামাটির হাফলাইফ' সে অর্থে ইতিহাস।
সীমানা - ৪০ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৭২৮ বার পঠিত
কাজিদার আহ্বান তো আর ব্যর্থ হবে না, কয়েকদিন পরেই চিঠি লিখে কলকাতায় হাজির হয় পিংলা। স্বদেশীয়ানা, দেশপ্রেম – এইসব উত্তেজনাকর শব্দগুলোর কী আবেদন কাজিদার কাছে, তা পিংলার চেয়ে বেশি কে-ই বা জানে! কিন্তু যে উত্তেজনায় শুরু, কিছুদিন বা কয়েকবছর সেই উত্তেজনার বেগেই এগিয়ে চলা আর তারপর হঠাৎই একদিন উত্তেজনাতেই শেষ! কাজিদা যখন বহরমপুরের জেল-এ, তখন তাকে একটা চিঠি লিখেছিল পিংলা – তার স্পষ্ট মনে আছে সে চিঠির কথা – তাতে সে অভিযোগ করে বলেছিল স্পষ্ট কোন রাজনৈতিক আদর্শ কাজিদার জন্যে নয়, সে কখনও বিপ্লববাদী কখনও গান্ধীবাদী; মুজফ্ফর আহ্মদ সঙ্গে থাকলে সে আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রের কথা চিন্তা করে, জেলে-চাষা-শ্রমিক-কৃষকের জয়ধ্বনি তখন তার কথাবার্তায়, মিটিং-মিছিলে আর গানে-কবিতায়।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘিরে কিছু ভাবনা : নন্দিনী সেনগুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৬০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
প্রথমে অবশ্য খবরগুলোই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হয়েছিল যে এটা কি কোনো রাজনৈতিক চক্রান্ত? সামনে লোকসভা নির্বাচন, কিছুদিন আগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের সরকারি অফিসারেরা মার খেয়ে এসেছেন সেই জায়গা থেকে এবং সেই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতা শেখ শাজাহান ফেরার, এই ঘটনাপ্রবাহ তো জানা ছিল। কিন্তু নেতা যে আসলে নেতা নন, মাফিয়া, সেই বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত জানা ছিল না। মাফিয়ার সম্পত্তি তো আর দ্বীপের মধ্যে আকাশ থেকে পড়েনা, মাটি থেকে সেখানে গজিয়ে ওঠে না টাকার গাছ। একটু একটু করে মানুষকে শোষণ করে ফুলেফেঁপে ওঠে ক্ষমতার ধ্বজাধারী। সম্পত্তি সেখানে ধ্রুবক, শুধু তার মেরুকরণ ঘটে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৮০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
উন্যানিয়েম্বে জায়গাটা এখন আমার কাছে মাটির পৃথিবীতে স্বর্গের মতন। লিভিংস্টোনও কম খুশি নন; তিনি একটা আরামদায়ক ঘরে ছিলেন, উজিজিতে তাঁর কুঁড়েঘরের তুলনায় সেটা একটা রাজপ্রাসাদ। আমাদের ভান্ডারের জিনিসপত্র এসেছে বাগামোয়ো থেকে, দেড়শও বেশি কুলির মাথায় চেপে। কাপড়, পুঁতি, তার ও হাজার-একটা ভ্রমণ সংক্রান্ত লটবহর তো আছেই। এছাড়াও অজস্র ঐহিক বিলাসদ্রব্যে ভরা সে ঘরগুলো। আমারই পঁচাত্তর বস্তা হরেক রকম জিনিস আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী এখন লিভিংস্টোনের হাতে তুলে দেওয়া হবে, নীল নদের উৎসের দিকে তাঁর অভিযানের জন্য।
অন্নদাতাদের অসম্মান দেশের মানুষকে অপমান : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভারতের মানুষের আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে গিয়েছে। তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন এ দেশে ধর্মের কদর রুটির চেয়ে বেশি। এ দেশে যারা প্রকৃতই আমাদের খেতে দিচ্ছেন, তাঁদের উপর নেমে আসছে অত্যাচার। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পেশা কী?এ প্রশ্নের উত্তরে পুরোহিত, রাজনীতিবিদ, সেনা, বিজ্ঞানী, শ্রমিক নয়, আসবে কৃষকদের কথা। কৃষকরাই আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন। আর তাঁরাই এ দেশের রাজধানীতে ব্রাত্য। এ জন্য এ দেশের শাসকমহলে কোনও লজ্জা তো নেই, বরং শাসনের অহঙ্কার রয়েছে।
কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১০৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
দোকানপাটের চরিত্র বদলে গেছে। আগে শুধু থাকতো সব মিলিয়ে গোটা ১০-১৫ টি দোকান। বৈশিষ্ট্য গ্রামীণ। বারোয়ারিতলা তথা ওলাইচণ্ডী পূজার কাছে জিলিপি, জিভে গজা, গজা, কাঠিভাজা, এবং রসগোল্লার দোকান। পরপর দুটি। তারপর চপ বেগুনি পাঁপড়ভাজা। আর গোলামহলের দুপাশে মাঝেরপাড়া যাওয়ার রাস্তা ধরে বাচ্চাদের খেলনার দোকান। লাট্টু, কটকটি, তালপাতার সেপাই, বাঁদর লাঠি, ছোট ঢোল ইত্যাদি। থাকতো সংসারের জিনিস। খান দুই তিন দোকান। হাঁড়ি কুড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার কড়াই, তাওয়া, কাঠের বেলুনি, খুন্তি ইত্যাদি। আগে বেশিরভাগ থাকতো লোহার। মাটির হাঁড়ি কুড়ি, জালার দোকানও বসতো। আশির দশকে তার ঘন্টা বাজল। স্টিলের বাসনকোসন ঢুকল ১৯৮৫র পর।
সীমানা - ৪১ : শেখ্র্নাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৬৮৫ বার পঠিত
পিংলা বলে, তুমি যখন বলছ কবিতা লেখা তোমার স্বাভাবিক ভাবে এখন আসছে না, বাদ দাও কবিতা লেখা। সিনেমা অনেক বড় ফীল্ড ওতেই মন দাও না তুমি। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ যখন রাশিয়া থেকে ফিরলেন – আমাকে নয়, কিন্তু – গুরুদেবের আশপাশে যে-সব গুণী মানুষরা সব-সময়ই থাকেন, শুনলুম কবি তাদের বলেছেন, ওখানে আইজেনস্টাইন নামের একজনের তৈরি করা ব্যাট্ল্শিপ পোটেমকিন নামে দীর্ঘ একটা সিনেমা উনি দেখে এসেছেন, সেই সিনেমার সঙ্গে এখানে যে-সব সিনেমা দেখেছেন তার কোন তুলনাই হয় না। উনি নাকি বলেছেন, অনেকের ধারণা সিনেমা আর কিছুই না, শুধু ক্যামেরায় তোলা একটা নাটকের মতো। এমনকি, নিজের নটীর পূজা সম্বন্ধেও নাকি বলেছেন, ওটা কোন সিনেমাই হয়নি, সিনেমা আধুনিক মানুষের আবিষ্কৃত একটা সম্পূর্ণ অন্যরকমের শিল্প – এ ছবি-আঁকা-মূর্তি-গড়া নয় যা গুহাবাসী মানুষরাও করত, এ কবিতা-লেখা-গান-গাওয়া নয় যা বেদ-উপনিষদের সময়েও মানুষের আয়ত্ব ছিল – এই শিল্পের ভাষাই অন্য, এবং সে-ভাষা এখন ক্রমাগত তৈরি হয়ে চলেছে, আর শিল্পের নতুন নতুন চমক শিখছে মানুষ।
স্বচ্ছন্দ, নির্লিপ্ত আয়নায় সমকাল : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ০৩ মার্চ ২০২৪ | ১২২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
নিউ ইয়র্কে বলে, ইউ ক্যান টেক দি গার্ল আউট অফ ব্রনক্স বাট ইউ ক্যান নট টেক দি ব্রনক্স আউট অফ দি গার্ল। ভারমুক্ত আমি চলে এসেছি অনেক দূরে ইংল্যান্ডের সারেতে কিন্তু কুণালের লেখা মনে করিয়ে দিল, ‘ইউ ক্যান নট টেক বরানগর আউট অফ মি’। কুণাল আমার চেয়ে অনেক ছোটো হবেন, কিন্তু তিনি আর আমি দেখেছি এক আশ্চর্য উত্তাল সময়কে –দিকে দিকে ছড়ানো লাল আগুনের উত্তাল কলকাতা একাত্তর, সেখানে তিনি অর্থনীতি পড়ছেন, অমর্ত্য সেনের পভার্টি অ্যান্ড ফেমিনের কথা বলছেন আর তুষার রায়! রতন বাবু রোডের, আমাদের তুষারদার ব্যান্ডমাষ্টার অঙ্ক কষছেন ম্যাজিক লুকিয়ে চক এবং ডাস্টার।
কভি হার, কভি জিৎ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৬ মার্চ ২০২৪ | ১৬১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
আর দায় নেই চুপটি থাকার, বলব যা আজ চাইবে মন,
ভক্তকূলও ঝুঁকিয়ে মাথা, ঘুরবে পিছে সর্ব ক্ষণ।
গান্ধীবাড়ির হিসাব জিগাই, ঠিক ভুলে যাই আম্বানি,
নীরব, মেহুল ? - দূর মহাশয়, সবার কি আর নাম জানি?
নারদাতেও যেমনি টাকা, নেয়নি মোটে ভোন্দুও,
গ্রিটিংস কার্ডেই খাম ভরা সব, পাঠিয়েছিল বন্ধু ওর।
যুদ্ধাপরাধী, সাবধান! (পর্ব - ১) : নূপুর রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | প্রবন্ধ | ১১ মার্চ ২০২৪ | ১৩৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভাবতেই আশ্চর্য্য লাগে, অসহায় মানুষদের নির্বিচারে ঠান্ডা মাথায় খুন করে যারা, তাদের বাঁচানোর জন্য কত না আইনের মারপ্যাঁচ রয়েছে, নিত্যনতুন তৈরিও হচ্ছে, অথচ ইউক্রেনে ব্রোভারি'র চার বছরের বাচ্চা মেয়েটির উপর যে রুশ সৈন্যরা যৌন নিপীড়ন করল, তার বাবার সামনে বন্দুকের মুখে তার মাকে গণধর্ষণ করল, তাদের পৈশাচিক অপরাধের দায়ভার কে নেবে? অথবা বুচার ৬৯ বছর বয়সী পেনশনার ভ্যালেন্টিনা জেন--কী দোষ ছিল তাঁর? ২৫ মার্চ, ২০২২-এ রাশিয়ার দখলদার বাহিনী ভ্যালেন্টিনাকে তাঁরই বাড়ির উঠোনে গুলি করে হত্যা করে। ভ্যালেন্টিনার মৃতদেহটি সেখানেই পড়ে ছিল যতক্ষণ না ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রাশিয়ানদের কবল থেকে ৩১ মার্চ বুচাকে আবার মুক্ত করে– এত বড়ো অন্যায়ের কি কোনো বিচার নেই?
সীমানা - ৪২ : শেখ্র্নাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ মার্চ ২০২৪ | ৮৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ঠিকই বলেছেন আপনার শাশুড়ি, বলে ভূতসিদ্ধ। সম্ভবত ওই মেয়ের ভূতই ঢুকেছে আপনার স্ত্রীর শরীরে, আর খুড়িমা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন ওর আক্রমণ রুখতে। যাই হোক, বলতে থাকে ভূতসিদ্ধ, গত দশ দিনে ওকে – মানে ওই ভূতকে – আমি অনেকবার নামিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। ওকে বুঝিয়েছি ও ভুল মানুষকে ধরেছে। তাকে ছেড়ে ওর চলে যেতেই হবে। ও রাজি নয়। অনেক ভয় দেখিয়েছি আমি, তবুও ছেড়ে যেতে ও রাজি নয়। এখন রাস্তা একটাই। ভূত তাড়াবার মহৌষধ একজন ভূতকে দিয়েই আমি তৈরি করিয়ে নেব। কিন্তু শুধু যে সময় লাগবে তাই-ই নয়, অনেক কষ্ট অনেক খরচ। পেরে উঠবেন আপনি? সময় ধৈর্য এবং খরচ, এ-চিকিৎসায় এই তিনটের কোনটাই কম হলে চলবে না।
আবার মোহনের মানুষখেকো - ৯ : উপল মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ মার্চ ২০২৪ | ১০৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আনিসকে কেন্দ্রে রেখে আসরাফুলের আর আদমখোরের ব্যাপারে দুটো সুস্পষ্ট মত বেরিয়ে এসেছে।প্রথম মত , ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সার্চ পার্টি খুবই তৎপর ছিল কিন্তু তারা আসরাফুলের শরীরের কিছু পাচ্ছে না। দ্বিতীয় মত, করবেট আর ডাঃ রাওয়াতের টিম খুঁজে পাচ্ছে আসরাফুলের ডান হাত যা আদমখোর খায়নি। দুজনে মিলে এই সিদ্ধান্তে এলেন : বাঘটা মেয়ে বাঘ, যার সঙ্গে দুই সাব অ্যাডাল্ট। দ্বিতীয় মতটা যেহেতু ববিচাঁদের স্টেটমেন্টের সঙ্গে মেলেনি, তাই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সাহাবরা ওটার সম্পর্কে চুপ। মিডিয়াও ববিচাঁদের কথাই বলে চলে কারণ সে জীবিত ,কথা বলতে পারে, যা হাজার চেষ্টা করলেও আসরাফুল পারবে না।
যুদ্ধাপরাধী, সাবধান! (পর্ব - ২) : নূপুর রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | প্রবন্ধ | ১৮ মার্চ ২০২৪ | ১০১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
ঘটনাক্রম জটিল থেকে জটিলতর হয়ে চলেছে, কিন্তু কথায় আছে না: "আশায় বাঁচে চাষা"। আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ব্রিকস দেশগুলির (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) আসন্ন ১৪ তম শীর্ষ সম্মেলন। যে কোনো দেশ, যে আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা সনদ, রোম সংবিধি অনুমোদন করেছে, সে দেশের এখতিয়ারের মধ্যে আসা একজন অভিযুক্ত যুদ্ধপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা, এই বছরের ব্রিকস আয়োজক, সে আবার আইসিসির এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সুতরাং, চেপে বসুন দর্শকবৃন্দ, খেলা চালু হলো বলে! ভয় একটাই: জুমা'দের মতো বিশ্বাসঘতকেরা থাকতে আল-বশির'দের আর নাগাল পায় কে? ভাববেন না, আমি আগে থাকতেই কূ গাইছি, আসলে ঘরপোড়া গরু তো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরাই!
বহুত্ববাদী ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কতটা বাস্তব সঙ্গত? : ডঃ দেবর্ষি ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৪ মার্চ ২০২৪ | ৯৭০ বার পঠিত
সম্প্রতি বিজেপি পরিচালিত, যা রাজ্যপালের অনুমোদন সাপেক্ষে আইনে পরিণত হয়ে সমগ্র উত্তরাখণ্ড রাজ্যে লাগু হবে। উত্তরাখণ্ড সরকারের এই পদক্ষেপ ভারতবর্ষে আবহমান কাল ধরে প্রতিষ্ঠিত ও লালিত ‘বহুত্ববাদ’ সম্পর্কিত বেশ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রশ্নও খুঁড়ে বার করে ফেলেছে। ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বা ‘ইউসিসি’ আসলে এমন কিছু দেওয়ানি বিধি, যার দ্বারা ধর্ম-বর্ণ-জাতপাত নির্বিশেষে সমাজের সকল অংশের মানুষের ব্যক্তি জীবনের ধারাকে এক সূত্রে বেঁধে রাখার উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত জাতীয় নিয়মবিধি, যা সকলের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার, দত্তক ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়সমূহের অভিন্ন নিয়মবিধি ‘ইউসিসি’-র আওতাধীন।
কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৩ মার্চ ২০২৪ | ১০৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
প্রতিবাদে বাবাও বোধহয় কাঁসার থালাতেই খেতেন।
'হিন্দু' বাড়িতে কাঁসার থালা সম্মানসূচক হলেও আমাদের বাড়িতে যতদিন ঠাকুমার শাসন ছিল, কাঁসার থালা ছিল সংরক্ষিত।
গেলাম। খেলাম। কাঁসার থালায় চুড়ো করে ভাত। পাশে আলু ভাজা, একটা সব্জি, ডাল আর হাঁসের মাংস। হাঁসের মাংস ততো মশলাদার নয়।
খেলাম তো বটে, মনে মনে খচখচ করতে লাগল, ভাতটা কি পাথর হয়ে পেটে থেকে যাবে।
রাত কাটলে, দিব্যি সব, পায়খানা হয়ে বেরিয়ে গেল।
তা অনেকেই বোধহয়, এখনো আমার ঠাকুমার মতো হয়ে আছেন।
সীমানা - ৪৩ : শেখ্র্নাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৩ মার্চ ২০২৪ | ৯৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
অসুস্থ সুভাষ তখন জামাডোবায়, তাঁর চিকিৎসক-বড়দার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। সারা বাংলা যখন ক্ষোভে উত্তাল, বিশেষ একটি উচ্চকিত কবিকণ্ঠের কোন স্বর শোনা গেল না কিন্তু সেই মুহূর্তে। সে-কণ্ঠটি বেশ কিছুদিন ধরেই নীরব হয়ে আছে। শুধু রাজনীতিতেই যে সে নীরব তা-ই নয়, সবাই জানে কবিতা সে আর লেখেই না প্রায়, গ্রামোফোন কম্পানীর রিহার্স্যাল রূমের বাইরে যা বলে সে, তাতে ঘন ঘন আল্লাহ্ বা কোন ভগবানের নাম শোনা যায়, কোন পরম শক্তির অস্পষ্ট ইচ্ছার কথা সাধারণের বোধগম্যতার ঊর্ধ্বেও হয়তো শোনা যায় কখনও কখনও! তরুণ সুভাষ যে “জ্যান্ত মানুষের” নেতৃত্বে কংগ্রেস দলকে উজ্জীবিত করবার আশায় ভলান্টিয়ার বাহিনী গড়ে তোলবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক সময়, সেই নজরুল – আজকের প্রায় নিঃস্ব নজরুল – কী করছিলেন তখন? শোনা যায়, অনেককেই তখন পণ্ডিচেরিতে স্থিত অরবিন্দর সঙ্গে তাঁর যোগ-শরীরে সাক্ষাতের কাহিনী কেমন-একটা ঘোরের মধ্যে শোনাতেন তিনি সেই-সব দিনে। অরবিন্দকে যোগ-শরীরে নিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে নজরুল কি পরামর্শ করছিলেন কিছু? তাঁর যাবতীয় বঞ্চনার কাহিনী অন্তত মনে-মনেও নিবেদন করছিলেন যোগাভ্যাসের পায়ে?
মহারাজা ছনেন্দ্রনাথের রংবেলুন ও একপাটি চটির গল্প : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : দোল | ২৬ মার্চ ২০২৪ | ১৬৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
যাইহোক, নিচের পরিস্থিতি দেখে ছেনু ঠিক করল, আহত সৈন্যদের বোমা মারার কোনো মানে হয়না। তাদের আশেপাশের কিছু বাড়ির ছাদ থেকেও মাঝে সাঝে শেলিং হচ্ছে, তাই যেসব সৌভাগ্যবান সেসব এড়িয়ে তাদের বাড়ি পর্যন্ত বেরঙিন, বেদাগ জামায় আসতে পেরেছে, শুধুমাত্র তাদেরকেই সে নিশানা করবে। পুঁচকে হলেও তার হাতের টিপ মারাত্মক। সে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে তাক করে টপাটপ রং-বেলুন ছুঁড়ছে আর গায়ে ঠিকমতো পড়লেই বারান্দা থেকে ছুট। এভাবে অন্তত গোটা ছাব্বিশ লোককে সে উজালার খরিদ্দার বানালেও দুঃখের বিষয় উজালা কোম্পানি এতবড় উপকারের প্রতিদান কোনো দিনই তাকে দিতে পারেনি, হয়ত বিষয়টা তাদের গোচরেই আসেনি, কে জানে।
ক্যালিডোস্কোপে দেখি - দোল : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : দোল | ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৬১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৫
এইবার বাবা তার কারিগরি দক্ষতার প্রকল্প চালু করল। লতানে গাছের জন্য মাচা বাঁধার খুঁটি বানাতে লাগবে বলে বেশ কিছু বাঁশের টুকরো রাখা ছিল। তারই একটাকে নিয়ে এসে দা, করাত, আর কি কি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাটাকাটি করে একটা নল বানিয়ে ফেলা, তারপর সেটার যেদিক থেকে রঙ বের হবে সেদিকের দেয়ালে, তুরপুন দিয়ে ছ্যাঁদা করা ইত্যাদির পরে একটা লম্বা টুকরোর দুই প্রান্তে দুই কাপড়ের টুকরো জড়িয়ে একটা দিক হাতলের কাজে আর অন্য দিকটা বাঁশের খোলের মধ্যে ঢুকিয়ে রঙ টানা আর বের করার পিস্টন বানিয়ে ফেলতেই পিচকারি তৈরি হয়ে গেল। আর আমাদের পায় কে! কিন্তু তিনজনের জন্য দুটো পিচকারি করা হয়েছিল, এইটাতে সুবিধা হয়েছিল না অসুবিধা সেইটা এখন আর নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যেটা নিশ্চিত করে বলা যায় সেটা এই যে সমস্ত বাহুবলি সিনেমায় যেমন দেখায়, অস্ত্রশস্ত্র যতই ব্যবহার হোক, চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হাতাহাতি সম্মুখ সমরে। প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে শক্তিশালি দলও হেরে যায়, আমারাও আমাদের সেই প্রথম বছরের যুদ্ধে মনে হয় না খুব সুবিধা করতে পেরেছিলাম। পরের বছর থেকে রসদ সংগ্রহের দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নিয়েছিলাম। হাতের তালুতে রঙ মেখে নিয়ে এগিয়ে চলো, যুদ্ধে হেরে যাওয়া কোন কাজের কথা না। মুস্কিল হল, এই রঙের যুদ্ধশেষে সবাই একই রকম হেরে বসে। সবাই রঙে রঙে রাঙা আজব প্রাণী।
সিরাজ: এক ভাগ্যবিড়ম্বিত নবাব - প্রথম পর্ব : তোর্সা দে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১০৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
সুবা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানান দোষগুণ বহুল আলোচিত এবং এই নিয়ে প্রচুর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ইতিহাসের সহজলভ্য জনপ্রিয় সূত্রগুলি দেখলে, সেখানে সচরাচর তাঁকে নিয়ে একতরফা বিরূপ অভিমতই চোখে বেশি পড়ে, যেমন- সর্বসাধারণের তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস উইকিপিডিয়া তে সিরাজ যে তথ্য পাওয়া যায় তা বাঙালির পক্ষে খুব স্বস্তিকর নয়। শুধু সিরাজ নয়, ওই শতকের বাংলার ইতিহাস আমরা সচরাচর যেভাবে পাই তা যেন বাংলা ও বাঙালির প্রতি একটু বেশিই বিরূপ। ইতিহাসের student হয়ে ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে জেনেছি ঐতিহাসিক বিবরণ লেখার প্রধান শর্ত হল নিরপেক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করা। সময় বা মহাকাল ও সেই নিয়ম মেনে চলে। তবে ওই অষ্টাদশ শতকের বর্ণনা একটি জাতির প্রতি কীভাবে এত বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে, খটকা লাগে। এই লেখা সেই খটকা, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।
পুস্তক সমালোচনা : সাদা পর্দার আলো (শুভদীপ ঘোষ) : সোমনাথ ঘোষ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০১ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
শুভদীপের প্রবন্ধগুলি কিন্তু সেইসব চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে যাদের কাজ শৈল্পিক ভাবে নিপুণ। শুভদীপের প্রবন্ধে যেমন আছেন গোদার, বার্গম্যান, আন্তনিওনি, হিচকক, চ্যাপলিন তেমনই আছেন কিয়ারোস্তামি, ওজু, আমাদের সত্যজিৎ, মৃণাল এবং বর্তমান সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার নুরি বিলজ সিলান।
যে কোন সফল প্রাবন্ধিকের লেখনীর একটা নিজস্ব স্টাইল থাকে। শুভদীপের লেখনীর দুটি বৈশিষ্ট্য আছে। দ্বিতীয়টির কথায় আমরা একটু পরে আসছি। শুভদীপ কোন প্রবন্ধের শুরুতেই সাধারণত মূল বিষয়ে সরাসরি প্রবেশ করেন না। এখানে মূল বিষয় বলতে বলা হয়েছে চলচ্চিত্র বা চলচ্চিত্রকার সম্পর্কিত আলোচনা। লেখকের একাধিক প্রবন্ধই শুরু হয় কোন উদাহরণ/ উপমা বা কোন সংজ্ঞার ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ দিয়ে। যেহেতু প্রবন্ধগুলি সময়কাল অনুযায়ী সাজানো (বইয়ের সর্বপ্রথম প্রবন্ধ তার সাম্প্রতিকতম লেখা), তাই বোঝা যায় সময়ের সাথে লেখক এই স্টাইলটি রপ্ত করেছেন।
ক্যালিডোস্কোপে দেখি - দূরবীন : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
অনেক দূরের জিনিষ দেখতে পাওয়া আর তার ফলে যে সব তথ্য যোগাড় হল তাই দিয়ে অতীতের বিভিন্ন সম্ভাব্য ছবি ফুটিয়ে তোলা, আধুনিক মহাকাশ গবেষণা আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কত রকমের তরঙ্গের ব্যবহার, কত রকমের দূরবীন, কত মাপজোক। অনেকে নিজের দরকারে বা শখে একনলা কি দোনলা দূরবীন কেনেন, ব্যবহার করেন, সাজিয়ে রাখেন। আমি এ পর্যন্ত যে দু-তিনটি কিনেছি, নিতান্ত মামুলি, খেলনার বেশি মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়। হারিয়েও গেছে তারা। তবে অন্য একটি দূরবীন মাঝে মাঝে ব্যবহার করি। স্মৃতির দূরবীন, ফেলে আসা জীবনের ছবি দেখতে। কতটা অতীত দেখতে পাওয়া যায়? যাচ্ছে? বেশীর ভাগ ছবি-ই ফোকাসের বাইরে। তবু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে, যেন ডিজিটাইজ করে, পিক্সেল জুড়ে জুড়ে রেন্ডারিং করে নানা ভাঙ্গাচোরা টুকরো থেকে এক একটা ছবি বার করে আনা। যা ঘটেছিল তার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া, যতটা পারা গেল।
বাংলা থেকেও বুরুডির : নরেশ জানা
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : ঘুমক্কড় | ১৭ মে ২০২৪ | ১০১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
শেষ হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে বু্রুডির ভেতর গড়ে যখন পৌঁছলাম তখন মেলা তুঙ্গে উঠেছে। ভীড় উপচে পড়ে গড়িয়ে পড়বে নীল হ্রদের ভেতরে। ঝুটা মতির গয়নার দোকান সার দিয়ে বসে। ওদিকেই ভীড়টা বেশী বটে কিন্তু পাথরের গয়না, ডোকরাও রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও মধুবনি আর ওড়লি ঘরানার ছাপা শাড়ি। এক সদ্য গোঁফ ওঠা তরুনের হাত ধরে বউ টানছে ওদিকে। বসেছে অসাধারণ বাঁশ আর বেতের ঝুড়ি, ঠাকা, কুলা, মান তো আছেই আর আছে পাথরের বাসন কোসন। কোনও এক পাশ থেকে সাঁওতালি যাত্রার ঘোষনা করা হচ্ছে। মেলা থেকে একটু দুরে হাঁড়িয়া বিক্রি করতে বসেছেন মধ্য বয়সী মহিলার দল। হাঁড়ির মুখে গামছা বেঁধে বাসি ভাত ঘষেই চলেছে তাঁরা। সন্ধ্যা গড়ালেই বাড়বে বিক্রি বাটা। জুয়ার চরকি ঘুরছে বনবন। হাব্বাডাব্বার কৌটায় নড়ছে ঝান্ডি, মুন্ডি, চিড়িয়া আর কাফান।
সীমানা - ৪৪ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৭০৪ বার পঠিত
হ্যাঁ শোন, বলে সে, যাবার আগে তোমাকে আর একটা অনুরোধ করব। এই অনুরোধটা সুধাকান্তদাদার পক্ষ থেকে। সুধাকান্তদাদা বলেছেন, গত-বছর সতেরই ফেব্রুয়ারিতে তুমি নাকি রেডিওতে বাংলা ছন্দ নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করেছিলে। রেডিওর ভাষায়, কথিকা। ওঁর ভাষাতেই বলি, উনি বলেছেন, অনবদ্য। বলেছেন, এই কথিকা শুনে উনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না তুমি কীভাবে সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছ, কবিতা তোমাকে ছেড়ে গেছে! সুধাকান্তদাদা আমাকে বিশেষ করে তোমাকে বলতে বলে দিয়েছেন যে, তুমি যে শুধু কবিতা লেখা চালিয়েই যাবে তা-ই নয়, রেডিওতে তুমি কবিতা রচনার একটা শিক্ষাবাসরও চালু করতে পার। তুমি ইচ্ছে প্রকাশ করলে রেডিওর কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই রাজি হবে। শুধু যে নতুন কবির দল আর কবিতা লেখায় উৎসাহীরাই এতে উপকৃত হবে তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠিত অনেক কবিরও তুমি তাতে কৃতজ্ঞতাভাজন হবে।
বিপ্লবের আগুন : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
রাজামশাইয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মহামন্ত্রীমশাই বললেন, “আপনার রাজত্বকালের পনের বছর পূর্ণ হতে চলল। প্রথম দুবছরের কিছু গৌণ বিদ্রোহ এবং দু-একটা ছোটখাটো যুদ্ধের পর এই রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছে। অতএব অস্ত্র-শস্ত্রের কোন ঝনৎকার বহুদিন শোনা যায়নি। অসিবল্লভের সমস্যাটা ঘটছে সেখানেই। অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবহার যদি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, অস্ত্র-শস্ত্রের চাহিদা যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণের কোন প্রয়োজনই থাকছে না। অসিবল্লভের কথায় ওর অস্ত্রনির্মাণশালায় যে ভাণ্ডারগুলিতে ও নির্মিত অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষণ করে, সেগুলিতে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। উপরন্তু, সংরক্ষিত অস্ত্রশস্ত্রগুলির অনেকাংশই দীর্ঘ অব্যবহারে জং ধরে এবং ধুলো পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে”।
রাজামশাই চিন্তিত মুখে বললেন, “হুঁ। তার মানে, আপনি কি বলতে চাইছেন, রাজ্যের পক্ষে নিরঙ্কুশ শান্তিও কাম্য নয়”?
কোশিশ কিজিয়ে : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১০৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
“বহনোঁ অওর ভাইয়োঁ...আজ আমরা যে বিষয় শিখবো – সে বিষয় প্রত্যেক লেডিস ও জেন্টসের পক্ষে অত্যন্ত জরুরী শিক্ষণীয় বিষয়। পরন্তু আমাদের দেশে যে শিক্ষাবেওস্থা আছে, তাতে এই শিক্ষা আমাদের দেওয়া হয় না। আমাদের দেশের বাচ্চারা পচ্চিমদেশের অনুকরণ করে যে শিক্ষা লাভ করে, তাতে তারা যে শুধু ভোগময় জীবনের প্রতি লালচি হয় তাই নয়, বরং পাপের দিকে নিরন্তর দৌড়তে থাকে। তারা কদাপি মনমে শান্তি পায় না, দিনরাত পয়সা, প্রমোশন, আলিসান ফ্ল্যাট, লেটেস্ট মডেলের দামি গাড়ি, বছরে একবার ফোরেন টুরের স্বপ্ন দেখতে দেখতে, অন্দরসে খোকলা হয়ে যায়, পরেসান হতে থাকে। বাড়তে থাকে স্ট্রেস – মান্সিক চাপ। মেরেকো আকসর পুছা যাতা হ্যায়, বাবা, ইস সে ক্যায়সে মিলেগি ছুটকারা? কেয়া মুক্তি কি কোই ভি উপায় নেহি হ্যায়? আমি বলি, কিঁউ নেহি, বেটা, অবশ্য উপায় হ্যায়। .."
সুফি : আফতাব হোসেন
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৮১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
- 'মাস্টার, সালা বদ রক্তে ভরে গেল শরীলটা, চুলকানি খুব, সাদা পুঁজ জমে রোজ, গেলে দিয়ে সুখ পাই খুব...কিরিম টিরিম দে কিছু ...'
বিদিগুচ্ছিরি মার্কা হাসে। রাগ করি না আজকাল, দিয়ে দিই, দিলেও লাভ হয় না। এর আগে হাজারবার দিয়েছি, নিওষ্পরিন, মারকিউড়োক্রম সব। মাখেই না ...
কেউ বলে মাস্টারের দরদ বেশি, কেউ আবার ওর বুকের ছেঁড়া বোতামে আমার চোখের দোষ খোঁজে। আমি গান্ডু সারাজীবন, চোখে কাফের, আমি কি খুঁজি ... কি যে খুঁজি ...কে জানে?
ফকির ফয়জুল্লাহ - প্রথম পর্ব : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
তালাশ মাহমুদ বললেন, বেশি বুজরুকি দেখালে, আর বেশি বললেই যুক্তি শক্ত হয় না। আপনার ম্যাডামের সব কেচ্ছাকাহিনী শেষ করে দেব সামনের লেখায়। তাই সময় লাগছে। এর মধ্যে এখন আবার আরেক জরুরী কাজে যেতে হচ্ছে। সেখানে ক'দিন থাকতে হবে, পরিস্থিতি কেমন হবে, কীরকম সময় পাব জানি না। যদি সময় পাই তাহলে ওখানে বসেই লেখা শেষ করে আপনাকে পাঠিয়ে দেব। চিন্তার কিছু নেই। একশো ভাগ নিশ্চিত থাকুন, আমি জিতবই। কারণ আমার আগ্রহ সত্যে।
সবুর খান বললেন, তাহলে আগে কিছু বলুন, দুয়েকটা পয়েন্ট।
তালাশ মাহমুদ বিরক্ত স্বরে বললেন, কী আর বলব, এসব রেট্রোফিটিং, কিছু জেনারালাইজড অনুমান করে, তারপর যেটা মিলে ওইটারেই আপনারা সবাই মিলে সামনে আনেন। এসব চালাকি তো নতুন না।
পাঁচটি কবিতা : অমিতরূপ চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | ৪৫২ বার পঠিত
কোনো সমুদ্রের হোটেলে বন্ধ ঘরের মধ্যে আমি মরে গেছি। ধরো, সেসময় ভোর পেরিয়ে সকাল। ঘরের জানালার কাচে বাইরের সাদা আলো। প্রতিদ্বন্দী অন্য হোটেলের ঘরগুলিতে যারা আছে- যেসব সংসার অথবা একলা মানুষ, তারা এসময় জেগে উঠে প্রকৃতির টানে হয়তো বাথরুমে, হয়তো নির্ভার হয়ে এসে বিছানায়। কেউ রাতের কোঁকড়ানো চুল চিরুনি লাগিয়ে সোজা করছে, কেউ ভুল মোজা ভুল পায়ে পরে তা আবার সংশোধন করছে। সমুদ্রে ঢেউ উঠে পাড়ে ছুটে আসছে পরপর। সকালের নরম, শীতল ঢেউ। সৈকত নির্জন। শুধু বিগতদিনের আস্ফালন, রক্তপাত বা ধস্তাধস্তির ছাপ বালিতে লেগে আছে। জীবন্ত হয়ে আছে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া দুইজোড়া পায়ের ছাপ। বহুদূর তারা পাশাপাশি হেঁটে গিয়ে বাঁক নিয়ে কোথাও অদৃশ্য হয়েছে। ঝাউবন ঠাণ্ডা। তার গোড়ায় গোড়ায় পরিষ্কার বালি। হোটেলের ডেস্কে যে মানুষ কর্তব্য সামলাতে এইমাত্র এসে বসল, সে এখানে আসার আগে বাতাসে তার শেষ হাই ত্যাগ করে এসেছে। সমুদ্রের হোটেলে যে মেয়েরা আছে, এখন তাদের জল দিয়ে ধোয়া পরিচ্ছন্ন যোনি। জামার নীচে শান্ত স্তন। যেসব পুরুষেরা দিগ্বিজয় করে এখানে এসেছে, তাদের পুরুষ্ট লিঙ্গ এখন মৌনসাধকের মতো ক্ষমাশীল। তাদের মুখগহ্বরে শুদ্ধ আত্মার গন্ধ। তাদের আঙুলের গাঁটে বাদশাহের মতো অসংখ্য চুনি-পান্নার আংটি সকালের আলোয় ঝিকমিক করছে
বর্ষশেষ, বর্ষশুরু : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | ৮৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, এক সন্ধ্যা থেকে আরেক সন্ধ্যা, এক পূর্ণ-চন্দ্র থেকে এক চন্দ্র-হীন রাত কিংবা আরেক পূর্ণ-চন্দ্র, শীত থেকে গ্রীষ্ম, বাড়ির সামনে গাছের ছায়া ঘুরতে থাকে, আজ যেখানে ছায়া পড়েছে আবার কত সকাল বাদে এই ছায়া সেখানে প্রায় অমনি করে এসে পড়বে, দিন, রাত, পক্ষ, মাস, ঋতু, বছর, কোথাও সারা বছর জীবন এক ভাবে ভিজে যায় কি পুড়ে যায়, কিংবা একই ফুল ফোটে, চিরবসন্তের কোকিল ডেকে যায়, কোথাও ঋতুতে ঋতুতে লহরের পর লহর তুলে প্রকৃতি বদলে যায়, দেয়ালে নতুন ক্যালেন্ডার আসে – কোথাও কেবলই দিন গুনে, কোথাও শীতে পাতাখসা গাছেদের ডালে ডালে বসন্ত আসার মাঝে, কোথাও বসন্তের দিন ফুরালে আকাশ, বাতাস আগুন হয়ে ওঠার আগে, শরীর দিয়ে, চেতনা দিয়ে যতি খুঁজে নিই আমরা, বর্ষশেষ, বর্ষশুরু।
ফকির ফয়জুল্লাহ - পঞ্চম পর্ব : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | ৫২৬ বার পঠিত
সম্পদ বা ক্ষমতা কোনটাতেই তালাশ মাহমুদের আগ্রহ নেই। পুর্বপুরুষের জমিদারীর কোথায় কী আছে এগুলি জানার ব্যাপারেও কোনোদিন তার আগ্রহ হয় নি। তার আগ্রহ কেবল রহস্যে, এবং রহস্য উদঘাটনে। এর জন্য দেশ দেশান্তরে ছুটে যেতেও তিনি পিছপা হন না।
আশরাফ আলী খানের কথা শুনে তিনি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন এখানে তার কোন কাজ নেই। ফলে, একটা সুযোগ বের করেই কেটে পড়তে হবে।
সম্ভবত, আশরাফ আলী খান এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি এমনিতে থাকবেন না, তাই ঐ ম্যাডামকে নিয়ে এসেছেন। যাতে ওই দ্বৈরথকে কেন্দ্র করে তালাশ মাহমুদ রয়ে যান।
হাসনাহেনার উপরে নীল আলোর ব্যাপারটাতে তালাশ মাহমুদ আগ্রহ বোধ করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু একজন মাত্র সাক্ষী ঘটনার, এবং তার নিজেরই অবস্থা এখন ঠিক নেই, ফলে এটাকে বেশী পাত্তা দেবার মত বিষয় মনে হলো না। মোটকথা, তালাশ মাহমুদ চান না আশরাফ আলী খানের রাজনীতির ঘুটি হতে।
ফকির ফয়জুল্লাহ - ষষ্ঠ পর্ব : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | ৫১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ফকির ফয়জুল্লা বলতে থাকলেন, এই ফকির ফয়জুল্লা সময়ে সময়ে, স্থানে স্থানে ঘুইরা এইখানে আসছে, আর তোরা তারে বাইর কইরা দিবি? কয়দিনের জিন্দেগী তদের? কারে কী কস? সব ক'টারে একবারে খাইয়া ফেলবো!
পুরা জঙ্গল যেন গম গম করছিলো ফকির ফয়জুল্লার স্বরে।
উপস্থিত সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।
তালাশ মাহমুদের দিকে তাকিয়ে ফকির ফয়জুল্লাহ বললেন, এদের নিয়া যান। কী বালের তদন্ত করেন আপনে? কোন প্রমাণে এখানে আসছেন দলবল নিয়া? প্রমাণ থাকলে আইসেন, আমি নিজেই ধরা দিব।
তালাশ মাহমুদ বললেন, কিন্তু আপনে কে? এই গ্রামে কী করছেন?
ফকির ফয়জুল্লা বললেন, আমি কে এইটা জানতে কি আসছেন দলবল নিয়া? আমি ফকির ফয়জুল্লা, আমি স্থানে স্থানে ঘুরি, সময় থেকে সময়ে গতান্তরিত হই। আমার কাজ শেষ হওয়ার আগে আমারে কেউ সরাইতে পারব না। এইখান থেকে দূর হন।
ফকির ফয়জুল্লা উত্তরের অপেক্ষা না করে, তাদের তাচ্ছিল্য করেই ভেতরে চলে গেলেন।
ফকির ফয়জুল্লাহ - সপ্তম পর্ব : মুরাদুল ইসলাম
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৬১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
তালাশ মাহমুদ ভ্রূ কুঁচকে বললেন, আপনে এসবে বিশ্বাস করেন?
দ্বিজদাস বললেন, বিশ্বাস অবিশ্বাস পরের ব্যাপার। কিন্তু ব্যাপারগুলা তো আপনারই কাজের বিষয়। ঠিক কি না?
তালাশ মাহমুদ বললেন, তা ঠিক। কিন্তু আমি যুক্তি দিয়ে বিচার করে সমাধান করতে চেষ্টা করি। সব সময় যে পারি সমাধানে যেতে এমন না।
তালাশ মাহমুদ খেয়াল করলেন দ্বিজদাস একটু ইতস্তত করছেন। পুলিশের একজন বিভাগীয় প্রধান কালু সর্দারের খুনের জন্য এই গ্রামে এসেছেন তালাশ মাহমুদ বিশ্বাস করেন না। তার আসার অন্য কোন কারণ আছে। তালাশ মাহমুদ সেটা বুঝার চেষ্টা করছিলেন।
দ্বিজদাস এই সময়ে বললেন, পৃথিবীতে ভালোর শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে মাহমুদ সাহেব। সব আপনার যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। এই যুদ্ধটা না লাগলেও হতো। তাছাড়া আমাদের দেশের দিকেই দেখেন, কেমন অশান্ত পরিস্থিতি। ঢাকায় বড় ঝামেলা হবে আভাস পেলাম। স্যারের এই সময়ে ঢাকায় থাকা দরকার। স্যারকে অনুরোধ করলাম। কিন্তু তিনি এখানে একটা বড় আয়োজনে আটকা পড়ে গেছেন। আপনি কি উনাকে একবার রিকুয়েস্ট করবেন আমাদের হয়ে?
তালাশ মাহমুদ বললেন, আমার কথা তো উনি শুনবেন না। আর এখানের আয়োজন একাই সামাল দিচ্ছেন। তাও, আমি বলে দেখব। ঢাকায় কী নিয়ে ঝামেলা হবে বলছেন?
তিনটি কবিতা : অরিত্র চ্যাটার্জি
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৬২৩ বার পঠিত
ভালোবাসার কাছে যদি পারো, খুলে রেখো
তোমার মুখোশ ও দস্তানা
এসব এমন, এমনই একটা সময়
যখন নিজের কাছে নিজের উপস্থিতি সন্দিগ্ধ ঠেকছে খুব
খানিক তফাত রেখে তোমায়
নিরীক্ষণ করছে তোমারই পাথরের অবয়ব, ওই
তার চোখের মণিহীন চাউনি, ধারালো
পেরেকপ্রবণ দৃষ্টিতে দূরের নীলাকাশে, অনাগত মেঘের
মত ওই তোমার ছায়া লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে
দেখো, সবুজাভ দেওয়ালের গায়ে লেগে থাকা তার
টুকরো হাতের ছাপ, অঙ্গ ও মাংসপেশি,
সারেতে থাই নববর্ষ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৮৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
থাইল্যান্ডে দোল নেই। কিন্তু নববর্ষের দিনে আছে জল ছোঁড়াছুঁড়ির খেলা। এপ্রিল মাসে বেজায় গরম। লাওস কামবোদিয়া থাইল্যান্ডের পথে ঘাটে সেদিন জল আক্রমণের ধুম পড়ে যায়; মারো পিচকারি! সেটা ছবিতে মাত্র দেখেছি। আমাদের এই মন্দিরে তার একটা ছোটো এডিশন আছে – এক ভিক্ষু ঝ্যাঁটা দিয়ে সবার মাথায় জল ছড়িয়ে দেন। দুঃখের বিষয় যে থাইল্যান্ড বা লাওসের স্টাইলে আমরা তাঁকে জল কামান দিয়ে আক্রমণ করতে বা তাঁকে পাল্টা ঝাপটা মারতে পারি না! নববর্ষের পরবের অন্য রিচুয়ালগুলি মোটামুটি অনুসরণ করা হয়ে থাকে ন্যাপহিলের অনুষ্ঠানে - যেমন প্রার্থনার পরে ভিক্ষুদের খাদ্য দ্রব্য দান। সকলে আনেন কিছু না কিছু, সার দিয়ে বসে থাকেন দানের জন্য, ভিক্ষু সেটি গ্রহণ করলে পরেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন। অল্প বয়েসি ছেলে মেয়েরা বয়স্ক নারী ও পুরুষের পা ধুইয়ে দেন, পিতা মাতার গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক সেটি। পুণ্য অর্জনের আরেকটি পন্থা - বুদ্ধ মন্দির বা স্তূপ নির্মাণে শ্রমদান। মাঠের মধ্যে বালি দিয়ে তৈরি স্তূপ মন্দির আছে, দূরে এক কোনায় রাখা বালির পাহাড়; সেখান থেকে পাত্র ভরে কিছুটা বালি এই নির্মীয়মাণ মন্দিরে পৌঁছে দেওয়াটা একটা সিম্বলিক সহায়তা। নববর্ষের এই দিনে নতুন জামা পরা আবশ্যিক, নিজের বা পরিবারের জন্য অর্থ ব্যয় কম,দান বেশি এবং মদ্যপান বারণ!
সীমান্তরেখা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৯২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
কলকাতার মানুষজনেরা এইসবের হুজ্জোতির খবর রাখে না। তাদের মন ভুলোবার হরেক চিজ আছে। এইরকম ঝামেলাওয়ালা জায়গায় দুদিনের ছুটি কাটাতেও কেউ আসে না, যতই জাগ্রত তীর্থস্থান হোক না কেন!
এটা একেবারেই সীমান্ত-এলাকা, কাঁটা তারের এ পাশে লাল নিশান ওড়া ভ্রামরী দেবীর মন্দির, খুব জাগ্রত জ্যান্ত তীর্থ, ওপাশে সবুজ মাথাওয়ালা গম্বুজ, সোনা পীরের থান। মানত রাখলে নাকি কেউ খালি হাতে ফেরে না। দুপাশেই যতদূর চোখ যায় সবুজ খেত, যার বুক চিরে দৌড়ে চলে গেছে মানুষ সমান কাঁটাতার। ছুঁচলো কাঁটা, খুব শক্ত তার, আর দবেজ। সেই ছুটন্ত তারের লাইন বরাবর রাতবিরেতে বুটজুতোর মসমস, সন্দেহ জাগলেই ঘন ঘন হুইসিলের আওয়াজ। তবে তাতে কী আর কিছু বন্ধ থাকে! যার যা করার সে তাই করে যায়, কাজের মতো কাজকাম চলে, নদীর মতো নদী বহে যায়। শুধু মাঝেমধ্যে কাঁটাতারের এপাশে ওপাশে আচমকা দুম শব্দের সঙ্গে লাশ পড়ে। চাপা আর্তনাদ, দৌড়োদৌড়ির শব্দ। তারপর সব চুপচাপ।
ইলেকটোরাল বন্ড, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি এবং আমাদের সহনশীলতার পরীক্ষা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ভোটের ঠিক আগে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি কত টাকার ইলেকটোরাল বন্ড কিনেছে এ নিয়ে কয়েকদিন আগেও সর্বস্তরের (প্রিন্ট এবং ইলেকট্রোনিক) সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরে খবর হচ্ছিল। ইলেকটোরাল বন্ড এবং ওষুধ কোম্পানির নিবিড় যোগ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। শিক্ষিত জনতার একটি বড় অংশই, আশা করা যায়, এ বিষয়ে অবহিত। শুধু কিছু তথ্য প্রাসঙ্গিক হবার কারণে যোগ করা যায়। এবং, ভেবে দেখতে হবে, এর সাথে আমাদের দেশের ওষুধনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সংযোগ আছে। ... ... হেটেরো গ্রুপসের মতো একই পরম্পরায় ইন্টাস, লুপিন, ম্যানকাইন্ড, মাইক্রোল্যাবস, টরেন্ট ফার্মা, জাইডাস ফার্মা, গ্লেনমার্ক, সিপলা ইত্যাদি কোম্পানির অফিসে প্রথমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের জন্য হানা দেওয়া হয় এবং এরপরে সবাই ইলেকটোরাল বন্ড কেনে কোটি কোটি টাকার। ওষুধের দামের ওপরে এর প্রভাব সহজেই অনুময়ে। দান-খয়রাতি করার জন্য এরা টাকা খরচ করেনা। ওষুধের মার্কেটিং (যার মধ্যে ডাক্তারকে দেওয়া উপঢৌকনও আছে) ইত্যাদির জন্য কোটি কোটি খরচ করে। না করলে হয়তো ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের আরেকটু নাগালের মধ্যে থাকতে পারত।
সীমানা - ৪৫ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৬৬ বার পঠিত
নজরুল এবারেও কোন জবাব দেয়নি। সামনে একটা দড়ি-বাঁধা ফাইল, সে খোলে সেটা। একেবারে ওপরের কাগজখানা হাতে তুলে নেয়, যা লেখা আছে কাগজে তাতে চোখ বোলায় একটু, আবার রেখে দেয় ফাইলে। ঘরে আরেকবার ঢোকে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ; এবার একটু দ্রুততর, বলে, মানুষকে কন্ট্রোল করতে পারছে না পুলিশ, ধাক্কাধাক্কি হাতাহাতি চলছে। এবার ধারাবিবরণী একটু বন্ধ করে তোমার কবিতাটা পড়া দরকার। কোনরকমে এই কথাগুলো বলে নিজের একটা হাত সে বাড়িয়ে দেয় নজরুলের দিকে। নজরুল নৃপেনের হাতটা ধরে, ফাইলটাও সঙ্গে নেয়। ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে স্টুডিওর ভেতরে যায় ওরা, পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসে। যে দু'জন মাইকের সামনে বসেছিল, দুজনেরই কানে একটা করে ইয়ারফোন। শবযাত্রার সঙ্গে অতি ধীরগতিতে রেডিওর গাড়ি চলতে চলতে শবযাত্রার যে সংক্ষিপ্ত ধারাবিবরণী সরাসরি পাঠিয়ে দিচ্ছে রেডিওর স্টুডিওয়, ইয়ারফোনে তা শুনে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সম্প্রচারযোগ্য ভাষায় তার তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে দুজন ঘোষকের একজন বেতারে তা পাঠিয়ে দিচ্ছে তার নিজস্ব কণ্ঠস্বরে। দ্বিতীয় জন, এখন যে শুধু ইয়ারফোনেই মনোযোগী, চেয়ারে বসে-থাকা নজরুল-নৃপেনের দিকে সে হাত তুলে ইঙ্গিত করতেই নৃপেন কাজির হাতে হাত রাখে। কাজি একটুও সময় নষ্ট না করে পড়তে শুরু করে:
বিপ্লবের আগুন : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৮৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ডামল মায়ের দিকে তাকিয়ে চোক নাচিয়ে মুচকি হেসে বলল, “আমার বাপ তোরে কোনদিন কয়েচিল, কোতা যায়, কী করে? শুধোলি কইত “আজকাজ”। আমারও সেই “আজকাজ”। তয় কোন আজা, কেমন আজা, তার আনি কে, সেটি বুলতে পারবনি। আমার বাপও ওই কাজই করত, সে কতা তুই, জানিস। তুই যে ওই ভুঁড়ো-শেয়াল নাদুটাকে ঢিট করেছিলি, সে কতাটা জেনেই বাপ আমার, তোকে-আমাকে ছেড়ে লিশ্চিন্তে বাইরে বাইরে কাজে ফিরতে পারত। তুই আমার বৌ হুলটার বুকেও অমন বল এনে দে দিকিন, মা”।
“নে, নে আমারে আর বেশি ভালাই বুলোতি হবে নি। আজকাজ করিস না কি ছাইপাঁশ করিস, বুজি না বাপু। আজার সঙ্গের নোকেরাও দেকেচি – কেমন সোন্দর সাজপোশাক পরে, মাথায় পাগ বাঁধে, গলায় এতএত সোনার হার পরে। তোদের বাপ-ব্যাটার মতো অখদ্দ্যে চেহারার কাউকে কোনদিন দেকিনি”।
ডামল অবাক হয়ে বলল, “তুই আবার আজা-আনিদের কবে চাক্ষুষ করলি, মা?”
এই জীবনের তিনকাহন (শুক্লা রায়) : মালিনী সিদ্ধান্ত
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ২১ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এই জীবনের তিনকাহন-এর প্রথমপর্ব, ‘বাপের বাড়ি’। লেখিকার জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-এ বাড়ি। ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাবা, জ্যাঠা, কাকা, পিসি সকলে মিলে বিশাল এক যৌথ পরিবার। চন্দননগরে সংস্কৃত টোল পণ্ডিতের বংশগত জীবিকা ছেড়ে শিক্ষা-চাকরির জন্য ঠাকুরদার কলকাতায়ন। তারপরে কলকাতায় বাড়ি বানিয়ে পাকাপাকি ভাবে বসবাস। বাবা-কাকা-জ্যাঠারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা আইনজীবী। বাড়ি ভর্তি ভাই-বোনেরা, আর আছেন গোপালজিউ। সেইজন্য বাড়িতে আমিষ খাবারের প্রচলন নেই। ভাই-বোনেরা মিলে বাড়িটাকে পুরো মাতিয়ে রাখে। কখনও থিয়েটার, কখনও হাতে-লেখা পত্রিকা প্রকাশ, আবার কখনও বা নিখাদ দুষ্টুমি। সঙ্গে বিজয়া, দোল, ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মতো চিরাচরিত উৎসব পালন তো লেগেই আছে। সেখানেও অবশ্য পারিবারিক বৈশিষ্ট্যের বিশেষ কিছু স্বাক্ষর আছে। অন্দরের অন্তর লেখিকার লেখায় এক নিরবচ্ছিন্ন চিত্রপটে ধরা দিয়েছে।
সাদা খাম : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২২ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
তার স্ত্রী তাকে ফিরে আসতে না করেছিল, অনেক অনুনয় করেছিল, কিন্তু সে শোনেনি। বিমানবন্দরে নামামাত্রই তাকে আটক করা হয়েছিল। নিয়ে আসা হয়েছিল রাজধানী থেকে বহু দূরে এই বন্দিশিবিরে। সে জানত এরকমই হবে।
সকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো অন্য একটি ঘরে, পার হতে হতো একটি করিডর, এক পাশে দেয়াল, অন্য পাশে পর পর আটটি কামরা, এর মধ্যে একটি ছিল তার। কিন্তু সেটা সে বুঝতে পারত না, কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকত চোখ। ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগলে বুঝতে পারত বাড়িটি থেকে সে বের হয়েছে। এর পরে ত্রিশটি পদক্ষেপ, অন্য একটি বাড়িতে ঢোকা। সেখানে একটি ঘরে তাকে চেয়ারে বসিয়ে চোখের বাধন সরিয়ে নেওয়া হতো। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আসত কমিসার।
প্রথম দিন সে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি কে আপনি জানেন?’ কমিসার বলেছিল, ‘আমি জানি আপনি জনগণের শত্রু, এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।’ বেশি জানা কমিসারের জন্য ভালো নয়।
সুর : অনুরাধা কুন্ডা
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ৯৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ফোন বেজে উঠতেই শ্যামশ্রীর গলা ভেসে এলো। ছটফটে, তরতরে শ্যামশ্রীর গলা নয়। রাগী, কড়া শ্যামশ্রীর গলাও নয়। চটপটে, স্মার্ট নয়। একটু ভেজা ভেজা। দরদী। নরম।
ত্রিলোকেশের এখন ঠিক যেমন দরকার তেমনটি।
যখন যেমন দরকার, তেমনটি।
যখন খোলামেলা চাই তখন খোলামেলা।
যখন লাজুক চাই তখন লাজুক।
যখন লাস্য চাই তখন লাস্য।
এইভাবেই। ঠিক এইভাবেই প্রোগ্রামড করা আছে।
কন্ঠস্বর, চলাফেরা, ওঠাবসা, ফুড হ্যাবিট, যৌনতা , এমনকি পটি টাইমিং পর্যন্ত।
শ্যামশ্রী না। শ্যামশ্রীর ক্লোন। শ্যামশ্রী দত্তগুপ্ত টু। হাইট পাঁচ পাঁচ। রঙ মাজা। চুল স্ট্রেইট। গোল্ডেন হাইলাইট।
অবিকল ওরিজিনাল শ্যামশ্রী।
ইদ বৈশাখ মানে মা : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৮৬ বার পঠিত
সকাল সকাল একটা আম পাই। তার গায়ে সদ্য পাড়া আঠার গন্ধ।
যাঁরা এই গন্ধ জানেন, তাঁরা মানবেন, কীভাবে মাতাল করে তোলে এই গন্ধ।
কোনও কৃত্রিম গন্ধ একে প্রতিস্থাপন করতে এখনও পারে নি। অন্তত আমার জানা মতে।
সোঁদা মাটির গন্ধ একেক জায়গায় একেক রকম।
একেকটা আমের জাতের একেক রকম গন্ধ। কিন্তু আঠার গন্ধ বোধহয় এক।
নাহলে ৬-১০ বছরের এক বালকের নাকে স্মৃতিতে ডুব মেরে থাকা গন্ধ কীভাবে আজ ঝড় তুলে দিলে প্রৌঢ় মনে!
মায়ের গায়ের গন্ধ যেমন শিশুকে চিনতে শেখায়, তেমন আমের গন্ধ সাবালকত্বকে।
একা একা আম পাড়া ঢিল মেরে, গুলতি ছুঁড়ে, আঁকশি দিয়ে, আরেকটু বড় হলে গাছে উঠে--সাবালকত্বের লক্ষণ। বয়স নয়, আনন্দের। পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়া যেমন আরেক আনন্দ।
আনন্দের কী কোনও ব্যাঙ্ক আছে?
এআই কী এই আনন্দ কোনও দিন দিতে পারবে? পারবে লিখতে সহজ সহজ সুখ আর অতি সরল আনন্দের গন্ধের কথা।
মায়ের হলুদ মাখা আঁচলের, গায়ের গন্ধ কি দিতে পারবে কোনও রোবট?
উনিশে এপ্রিল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
মীরজাফর তো শুনে হাঁ। কুচ মানে? এ কি রাজকার্য না ফুক্কুড়ি, যে সক্কালবেলা একটু মেজাজ খারাপ হয়েছে বলে লালমুখোদের সঙ্গে একদম যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে? রাজা-বাদশাদের খেয়ালকে একটু তোয়াজ করতে হয়—সবাই জানে, কিন্তু এই আস্ত গাছপাঁঠাটা যেমন আহাম্মক, তেমনই বদমেজাজি—রাজনীতি তো বোঝেই না, আদবকায়দাও না। নবাব না হনুমান বোঝা মুশকিল, ওদিকে ধড়িবাজি আছে দুশো আনা। কোন এক ভাগাড় থেকে তুলে এনে মোহনলালকে মহারাজা বানিয়ে মাথার উপর বসিয়েছে, সেটা আবার ওর চেয়েও এককাঠি বাড়া। সে মালটা বিষ খেয়ে অবশ্য এখন আধমরা, দরবারে নেই—এই এক রক্ষে।
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে…….. : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ৮৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মার্চ ও এপ্রিল পরপর দু মাসে দুজন স্বনামধন্য সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী দীর্ঘ কারাবাসের নরক-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৭ই মার্চ অধ্যাপক জি এন সাইবাবা প্রায় এক দশকের কারাবাসের পর নাগপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। এর প্রায় এক মাস বাদে ভীমা কোরেগাঁও (বিকে) মামলায় ধৃত নারী ও দলিত অধিকার কর্মী, অধ্যাপক সোমা সেন জামিন পান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই দুজনের মুক্তি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক, কিন্তু যা ঢের বেশি অস্বস্তিকর তা হচ্ছে তাঁদের গ্রেপ্তার, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিচার বা বিচার না-হওয়া পুরো বিচারব্যবস্থার স্বরূপকে নগ্ন করে দিয়েছে। সাইবাবার কাহিনি বহু চর্চিত, তবুও সেটাকে আমরা ফিরে দেখব এবং কোন কারণে অধ্যাপক সোমা সেন সহ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ধৃত অন্যান্যদের এতো বছর কারাবাস করতে হল, এবং কয়েকজনকে এখনো করতে হচ্ছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করব।
স্লোভাকিয়া ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৮২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
একদা ইউরোপের মাঝখানে কোথাও বসবাস করতেন স্লাভ জাতি। কালে খাদ্যের অকুলান হলো, নিয়মিত তুরকিক অভিযানে জীবন বিপর্যস্ত–দেড় হাজার বছর আগে ভাগ্য সন্ধানে তাঁরা ইউরোপের তিন দিকে বেরিয়ে পড়লেন। পোল্যান্ডের প্রচলিত লোকগাথা অনুযায়ী তিন স্লাভিক ভাই, লেখ চেখ রুশ গেলেন তিন দিকে–উত্তর দিকে লেখ, পুবে রুশ দক্ষিণে চেখ। লেখ বাসা বাঁধলেন আজকের পোল্যান্ডে (লেখ নামক বিয়ার তাঁর নামকে অমর করে রেখেছে) বেলারুশ; রুশ যেখানে থামলেন সেটি আজকের রাশিয়া, ইউক্রেন (আক্ষরিক অর্থে সীমানা), চেখ ভাই গেলেন দক্ষিণে, আজকের বলকান অবধি। কালক্রমে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলেন সকলে। পশ্চিমে কেন যান নি তার কোন ব্যাখ্যা পাই নি। হয়তো বর্বর গথ ভিসিগথ জাতির নৃশংস আচরণের কাহিনী শুনেছিলেন অথবা এই তিন অঞ্চলে তাঁরা পেলেন বাসযোগ্য ভূমি; লোভ বাড়ান নি।
বিপ্লবের আগুন - পর্ব তিন : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৯৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
এখন এই বেলা আড়াই প্রহরে রাজপথে পথচারীর সংখ্যা বেশ কম। কয়েকজন রাজপুরুষ ঘোড়ার পিঠে দুলকি চালে নগর পরিদর্শন করছে। সকালের প্রথম প্রহরান্ত থেকেই বিপণিতে ক্রেতাদের ভিড় জমতে থাকে। এখন পথের দুধারের বিপণিগুলিও প্রায় ক্রেতাহীন। সূর্যের তেজ যত বাড়তে থাকে নাগরিক ক্রেতারা গৃহাভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এই সময় বরং আশপাশের গ্রাম থেকে আসে গ্রাম্য লোকজন - ঘোড়া কিংবা গোশকটে। তাদের আশাতেই বণিকরা শূণ্য বিপণিতে ধৈর্য ধরে বসে থাকে। পড়শি বণিকদের সঙ্গে গল্পসল্প করে সময় কাটায়। সাধারণতঃ এই গ্রাম্য ক্রেতারা সরল হয়। কথার তুবড়িতে তাদের ভুলিয়ে ফেলা যায় সহজেই। তাদের সঙ্গে কিছুটা তঞ্চকতা করে, নাগরিক ক্রেতাদের তুলনায় বেশ দুকড়ি উপরিলাভ করে নিতে পারে বণিকেরা। তবে আজকাল গ্রাম্য ক্রেতারাও শহরমুখো হচ্ছে কম। আজকাল কিছুকিছু বণিক, গাধার পিঠে, বলদের গাড়িতে পসরা সাজিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। ঘরের মেয়েরা সরাসরি তাদের পছন্দ মতো বাসন-কোসন, রান্নার সরঞ্জাম, মশলাপাতি, কাপড়চোপড়, প্রসাধনী সামগ্রী হাতে নিয়ে, নেড়েচেড়ে, দেখেশুনে কিনতে পারে। কারণ শহরে আসে পুরুষরা।
ক্যালিডোস্কোপে দেখি - বৃষ্টি : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
প্রকৃতি একটু একটু করে খুলে দিচ্ছিল তার জাদু-দরজা। ঘরের একদিকের দেয়ালের পাশে ছিল লম্বা লম্বা পাতার কিছু গাছ। তাতে অদ্ভুত দেখতে কিছু কলি। ধীরে ধীরে কলিরা বড় হচ্ছিল। হঠাৎ এক সকালে দেখি, কলি নয়, ফুল। কি অবিশ্বাস্য সুন্দর ফুল! বাবাকে গিয়ে ধরলাম, কি ফুল বাবা? বাবা বলল, কলাবতী। এমন ও ফুল হয়, এমন ও নাম হয়! আমার চেতনার কূল ভাসিয়ে বাজতে থাকে কলাবতী, কলাবতী, কলাবতী। তারপর একদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামে। গায়ে সেদিন অল্প অল্প জ্বর।
মা বলে,
– আজ আর দুজনের কারো, স্কুলে গিয়া কাজ নাই।
আমি চাদর মুড়ি দিয়ে হাত-পা ঢেকে বিছানায় বসে থাকি, জানালার পাশে। দেখি, কলাবতী বৃষ্টিতে স্নান করে। পাতার গা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে – টুপ – – টুপ, টুপ টুপ। ফুলের গা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে – টুপ – – টুপ, টুপ টুপ।
ঠাকু’মা এসে পাশে দাঁড়ায়।
– কেমন আছ অহন?
– ভালো।
– জলীয় বাতাস লাগাইও না। জ্বর বাড়ব।
জানালার পাল্লা অনেকটা বন্ধ হয়। একটু ফাঁক রাখা থাকে–নাতির জন্য, কলাবতীর জন্য।
ছোট দু’ ভাই এবার ঘিরে আসে,
– ঠাকুমা গল্প বলো।
ভুলভুলাইয়ায় ছনেন্দ্রনাথ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১০৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
সেদিন সকালে তেতলার পিসিমার ঘরে বসে এক মনে ড্রয়ার ঘাঁটছিল ছেনু। ওটা আসলে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের রত্ন ভান্ডার। যত রাজ্যের উদ্ভট জিনিসের ভিড় থেকে মনমতো জিনিসগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে একটা বল্টু লাগানো লম্বা স্ক্রু ভারি পছন্দ হয়েছে, বল্টুটা খুলতে যাবে, ঠিক এমন সময় দোতলা থেকে হইচই কানে এল। শেয়ালদার মতো ব্যস্ত এলাকায় হট্টগোল তো সর্বক্ষণ লেগেই আছে, কিন্তু এই হইচই এর শব্দটা ভারি মিঠে, আর তার মধ্যে একটা চেনা চেনা গলাও উঁকি দিচ্ছে, তাই ছেনু আর থাকতে পারলো না, স্ক্রুটা ফেলে রেখে সিঁড়ি দিয়ে এক দৌড়ে নিচে নেমে এল।
আমার জার্মানি - জলের ধারে বসে থাকার স্মৃতি : অভিজিৎ সেন
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১২ মে ২০২৪ | ৯৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
‘আমার জার্মানি’ বইটা পড়ে শেষ করার পর খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ বলেন যে আমি এই বইটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি তাহলে তাঁকে বলতেই হবে যে ক্ষমা করবেন মহোদয়, আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে’, কারণ ওটা সম্ভব নয়। এ বই পড়তে হবে থেমে থেমে , রসিয়ে রসিয়ে, অনুভব করে করে, প্রত্যেকটা অনুচ্ছেদের মর্ম অনুধাবন করে।
দয়াময়ী-সন্ধেবেলা : জগন্নাথদেব মণ্ডল
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০৩ মে ২০২৪ | ৯৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সন্ধেবেলা দয়াময়ীর এই কথাটুকু মনে পড়ল দয়াময়ীর দয়াময়ী ছাড়া কেউ নেই। আজানে তখন আকাশ ফেটে গেছে, গলে গলে নামছে অন্ধকারের প্রথম দিককার রঙ। পেয়ারা ফুলের মতো মুখ নিয়ে ও কান পেতে শুনল সরসর করে কোথাও কিছু একটা বাজছে। বোঝা গেল, একেবারে একা একটা তালগাছ মাঠের মাঝখানে হাওয়ায় পাতাদের কাঁপাচ্ছে।
ভাত খেতে বসে ওঁর বুক উদাস হয়, একজন কেউ থাকলে ভালো হত। এই এতবড়ো নীলসাদা রঙীন বাড়ি,দেওয়ালে সদ্য চুনকামের গন্ধ বুকে উঠে আসে। চিরকাল মাটির ঘরে, পাতার ঘরে দিন কেটেছে। সরকারি প্রকল্পের একা একা বিধবার মতো ফাঁকা বাড়িতে অস্বস্তি হয়, সন্ধ্যামালতী ফুলের চেয়েও নরম মা দেখে যেতে পারল না এই ঘরদোর।
নিজেকে নিজের জল গড়িয়ে নিতে হলে, ভাতের পাতে কাঁচালঙ্কা-নুন বারবার আনতে যেতে হলে ভালো লাগে না। এতো যত্নে করা রান্নাবান্না অর্থহীন হয়ে পড়ে যতোক্ষণ না কেউ সেই খাবার খেয়ে একমুখ হাসিতে তারিফ করে ওঠে। চিংড়ি মাছের মাথার চচ্চড়ি তারিফ না করলেও মুখ তুলে অন্তত বলুক বিচ্ছিরি হয়েছে খেতে, এ রান্না খাওয়া যায় না। পরের দিন সে সব মায়ামমতা ঢেলে এমন মোচাঘন্ট রাঁধবে সেদ্ধ ছোলার তুক কাজে লাগিয়ে যে, কর্তাকে থালা অবধি চেটে খেতে হবে।
ক্যালিডোস্কোপে দেখি - দিনের শেষে : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৪ মে ২০২৪ | ৭১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
এমন একটা দিন যায় না যেদিন অন্তত একবার তাঁর গানের কোন কলি, কবিতার কোন পংক্তি, নাটকের কোন সংলাপ বা কোন চিত্রকর্মের কথা স্মরণ করা হয়নি। অথচ এমন ত নয়, তাঁর বিপুল সৃষ্টির এক কুচির বেশী কিছু পড়া হয়েছে আমার! আবার তাঁকে বাদ দিয়ে আর কিছুই পড়িনি, শুনিনি, দেখিনি এমনও ত নয়! তবু তাঁর কাছে না এসে উপায় থাকে না। তবে তাঁর যে সৃষ্টি সেই শৈশব-কৈশোর-প্রথম যৌবনে আদৌ সেভাবে বুঝিনি তা হচ্ছে তাঁর গান। যত দিন গেছে, জীবন যত পাক খেয়েছে, তলিয়ে গেছে, আর ভেসে উঠেছে, তত বেশী করে আমার আশ্রয় মিলেছে তাঁর গানে। ছোট বেলায় গানের চরণগুলি আসত-যেত, হাওয়া যেমন আসে, যায়, সহজ-সরল, সাবলীল, একান্তই পরিচিত। যত দিন গেল, গানগুলি বয়ে আনতে লাগল অনাঘ্রাত সুগন্ধ, অশ্রুত বাণী, অদেখা রূপ। একেক বিকেলে, সন্ধ্যায়, মোহন সিংয়ের কন্ঠে যখন অমৃত-বাণী ছড়িয়ে পড়ে, ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমার চেতনা, আমার শরীর বসে থাকে চুপটি করে, আর অঝোর ধারে কোথা হতে উপচে আসে শ্রাবণ, বন্ধ দু চোখ বেয়ে। নাই থাকল আমার কোন জীবনদেবতা। আমার নিজস্ব বেদনা আরও কোন বৃহত্তর বেদনায় মিলেমিশে আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
কী আমাদের জাত আর ধর্মই বা কী! : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৫ মে ২০২৪ | ৯৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
তথাকথিত নীচু জাতের নারীর সঙ্গে তথাকথিত উঁচু জাতের পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তানের জাত কী হবে সুপ্রিম কোর্টে এইরকম একটি কেস উঠেছিল (civil appeal no 654 of 2012, decided on January 18, 2012)।
সুপ্রিম কোর্টের অবজারভেশনের একটি অনুবাদ নীচে রইল।
ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ যদি আদিবাসী এবং অ-আদিবাসীর মধ্যে হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয়, সন্তান পিতার কাস্টেই পরিচিত হবে। এই ধরে নেওয়াটা জোরদার হয়, যদি এইরকম বিয়েতে পুরুষটি উঁচু জাতের হয়। কিন্তু এই ধরে নেওয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে কখনই অপরিবর্তনীয় নয়। এইরকম বিয়ের সন্তানের প্রমাণ করার স্বাধীনতা থাকবে যে সে শিডিউল কাস্ট/ ট্রাইবের মায়ের দ্বারা আজন্ম পোষিত হয়েছে। উঁচু জাতের পিতার সন্তান হয়ে সে জীবনে কোনো সুযোগ সুবিধেই পায়নি, উপরন্তু বঞ্চনা, অমর্যাদা, অপমান এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছে, যেমনটি তার মায়ের কাস্টের লোকেরা হয়ে থাকে।
স্লোভাকিয়া ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১১ মে ২০২৪ | ১১৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
প্রায় ষাট বছর আগের এই ফলকে বানান অন্য রকম হলেও জওহরলাল নেহরুকে চিনলাম। ইংরেজি বাদে প্রায় কোনো ইউরোপীয় ভাষায় ‘জ’ ধ্বনির সমার্থক কোন অক্ষর নেই। স্লোভাকে ডি জেড দিয়ে সেই ধ্বনি সৃষ্টি করা হয়েছে (জার্মান ভাষায় এই একই ধাঁচে লেখা হয়) কিন্তু নেহরুর পরে যিনি উল্লেখিত,তাঁকে আমরা চিনি অন্য নামে। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধির নাম পরিবর্তন করে তাঁকে গান্ধিওভা বানানো হয়েছে। তাঁরও ছাড় নেই, তাঁকেও পরিচিত হতে হবে স্লোভাক কায়দায়,স্বামীর নামের সাথে ‘ওভা’ যুক্ত হয়ে। বিশ বছর বাদে,১৯৫৮ সালের কার্লোভি ভারি (জার্মান কারলসবাদ,চার্লসের স্নানাগার!) ফিলম ফেস্টিভালে মাদার ইন্ডিয়া ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন নারগিসোভা! এখানে একটু শর্টকাট নেওয়া হয়েছিল,সঠিক আইন মানলে পুরস্কার ফলকে লেখা হতো নারগিস রাশিদোভা (তাঁর বাবার নাম আবদুল রাশিদ) সুনীল দত্তের সঙ্গে ততদিনে বিয়েটা হলে তিনি হতেন নারগিস দত্তভা (প্রসঙ্গত এক মেক্সিকান অভিনেত্রীকে বাদ দিলে কার্লোভি ভারি ফেস্টিভালে নন কমিউনিস্ট দেশের কেউ পাত্তা পেতেন না – নারগিস সেই ট্র্যাডিশন ভাঙ্গেন,এর পরে ১৯৭২ সালে রঞ্জিত মল্লিক ইন্টারভিউ ছবির জন্য বেষ্ট অ্যাকটর এ্যাওয়ার্ড পান)। স্লোভাকিয়াতে ফিল্মের পোষ্টারে,খবর কাগজে,টেলিভিশনে শ্যারন স্টোন হন শারনে স্টোনোভা, মেরিলিন মনরো হয়ে যান মেরিলিন মনরোভা।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৬ মে ২০২৪ | ৫৪২ বার পঠিত
১৭ ই মার্চ।—কোয়ালাহ নদীর কাছে পৌঁছালাম, রুবুগার একজন স্থানীয় বাসিন্দা এই নদীকে ন্যাহুবা বলে, আরেকজন বলে উন্যাহুহা। মাসিকা ঋতুর প্রথম বৃষ্টিপাত হল এই দিনে; উপকূলে পৌঁছনোর আগেই আমার গায়ে ছাতা পড়ে যাবে। গত বছরের মাসিকা ২৩শে মার্চ শুরু হয়েছিল, আমরা তখন বাগামোয়োতে আর শেষ হল ৩০ এপ্রিল।
পরের দিন উন্যামওয়েজি সীমান্তের পশ্চিম তুরায় অভিযান থামালাম আর ২০ তারিখে পূর্ব তুরায় পৌঁছালাম; অল্প কিছুক্ষণ পরেই, একটা বন্দুকের জোর শব্দ শোনা গেল, আর ডাক্তারের চাকর সুসি ও হামওয়দা এসে হাজির, সঙ্গে উরেডি ও আমার আরেকজন লোক।
রঙের জীবন, জলের জীবন : জগন্নাথদেব মণ্ডল
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১৭ মে ২০২৪ | ১০৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
অনবরত আল ধরে ধরে হাঁটা। জনবসতির চিহ্ন যেখানে মুছে গেছে সেখানে মাথা পেতে শুয়ে পড়া। ঘাসে একটু ওম। পোকামাকড়ের কিরকির শব্দ। কুয়োর নীচ থেকে দ্যাখা আকাশ। কতো লেজচেরা কালো কালো পাখি। চোখে জড়িয়ে আসছে ঘুমের আঠায়। এই মাঠ, ধানজমি, পাখি, পুকুর, আকাশ, অস্তরাগের মেঘ এই সমস্তটাই আমার সমাধি, নাভিতে মোম বসানো ছেলে বিড়বিড় করে এইসব ভাবে।
বিপ্লবের আগুন - পর্ব পাঁচ : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ মে ২০২৪ | ৫৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
গতকাল সারা দিন ও রাত একটানা হেঁটেছে ভল্লা। একে তো তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। যন্ত্রণা এবং ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে চাইছে তার শরীর। তবু সে হেঁটেছে অবিরাম। আজ রাত্রির আট প্রহরে সে এসে পৌঁছল বিশাল এক সরোবরের পাশে। বীজপুর চটির জনাই তাকে দিক নির্দেশ করে বলেছিল, এই পথ ধরে একদম নাক বরাবর গেলে ডানদিকে একটা সরোবর পাবি। ওই সরোবরটা ছোট্ট একটা পাহাড়ের কোলে। ওখান থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখতে পাবি – যতদূর চোখ যায় – ছোটছোট ঝাড়ি আর কাঁটাঝোপের জঙ্গলে ভরা ঢালু জমি। তার মানে তুই নোনাপুর গ্রামের চৌহদ্দিতে পৌঁছে গেলি। ভল্লার মনে হল এটাই সেই সরোবর। জনাই আরও বলেছিল, ওই সরোবরের পশ্চিম পাড়ে দাঁড়ালেই তোর ডানদিকে দেখতে পাবি একটা পায়েচলা সরুপথ নেমে গেছে সাপের মতো এঁকেবেঁকে। ওই রাস্তা ধরে, খুব বেশি না, আধক্রোশেরও কম, হাঁটলেই পেয়ে যাবি, নোনাপুরের গ্রামপ্রধানের বাসা। নাম জুজাক। এমনিতে লোক খারাপ না, তবে বড্ডো বদরাগী। একবার রেগে গেলে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তবে ওর বউটা খুব ভালো। মনে খুব মায়া-মমতা।
সীমানা - ৪৭ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ মে ২০২৪ | ৬৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
গিরিবালা দেবী আর প্রমীলা দুজনেই বললেন, নজরুলের সঙ্গে অরবিন্দর সূক্ষ্মদেহে দেখা হবার কথা নজরুল আগেও অনেকবার বলেছে। শুধু তাঁদেরই নয়, বলেছে আরও অনেককেই। কেউ বিশ্বাস করেছে, কেউ করেনি। তাতে কিছুই আসে-যায়নি নজরুলের, তবে এবারের মতো এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েনি আগে। এবার এতটাই অসুস্থ নজরুল যে অফিসে যেতে পারল না বেশ কয়েকদিন। এদিকে কলকাতার য়্যুনিভার্সিটি থেকে ইন্টারমীডিয়েট পরীক্ষায় বাংলার পরীক্ষক নির্বাচিত করে তার কাছে একরাশ উত্তরপত্র আর পরীক্ষকের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলী পাঠিয়ে দিয়েছে য়্যুনিভার্সিটি। নবযুগে নজরুলের সহকারী কালীপদ গুহ ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরীক্ষকের কাজ করেছে আগে। সে-ই উত্তরপত্র পরীক্ষায় নজরুলকে সাহায্য করতে শুরু করল। ফজলুল হক সাহেব নজরুলকে জানিয়েছেন, শরীর যতদিন সম্পূর্ণ ভালো না হয় ততদিন তার অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। অমলেন্দু বা কালীপদদের ডাকিয়ে এনে বাড়িতে বসেই পত্রিকা সম্পাদনার কাজও চালিয়ে যেতে পারে সে। এই সুযোগে কালীপদ থাকতেই শুরু করল নজরুলের বাড়িতে, এখন নজরুলের যে অবস্থা তাতে ঘড়ি-ধরে কাজ করা তো সম্ভব নয় তার পক্ষে। চব্বিশ-ঘন্টায় যখনই কাজের মূড আসবে তখনই কাজ! সেই সময় কালীপদ সঙ্গে না-থাকলে কি চলবে?
কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন
: ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১৮ মে ২০২৪ | ৭০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
রণোভাইয়ের সঙ্গে আমার বেশ জমে গেল। আমার বাবার মতো দিলদরিয়া গোছের মানুষ। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বললেন, কাল বাসায় আসুন ১২ টা নাগাদ। ধানমন্ডিতে বাড়ি। দেখলাম সবাই চেনেন বাড়িটি। কথা শেষ ঊঠছি। বললেন, আরে যাবেন কোথায়? খেয়ে যাবেন। একসঙ্গে বের হবো।
তাঁর মা, স্ত্রী, ভাই, ভাইয়ের বৌ, মেয়ে রাণা, ভাইঝি পুতুল--সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। মেয়ে রাণা তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। আস্তে আস্তে অনুচ্চস্বরে টেলিফোনে কথা বলতেন। খাওয়ার টেবিল দেখি নানান খাবারে ভর্তি। এটা কিন্তু ঘোষিত দাওয়াত না। এত খাবার বাড়ির টেবিলে আগে দেখিনি। আমাদের এখানে তখন তো জামাইকেও আট দশ পদের বেশি খাওয়াতে দেখিনি। আইবুড়ো ভাত হলে আলাদা। ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি, ইলিশ, কাঁচকি--সব আছে। এই প্রথম আমার কাঁচকি খাওয়া। খেতে ভালোবাসি। তাও সংকোচ হচ্ছিল। বললেন, আরে এই বয়সে এত ভেবেচিন্তে খেলে হবে, খান।
সীমানা - ৪৮ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৫ মে ২০২৪ | ৫৪২ বার পঠিত
স্যর স্ট্র্যাফোর্ড আর দ্বিতীয়বার দেখা করেননি গান্ধীর সঙ্গে, করে লাভ ছিল না। তিনি অবিশ্যি সত্যি-সত্যিই ভারতের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন, সেরকমই পরিকল্পনা ছিল তাঁর, কিন্তু সেই পরিকল্পনার ধার ধারতেন না তাঁর বস, উইনস্টন চার্চিল। সেই সময়কার ভাইসরয় লিনলিদগোও চার্চিলেরই দলে। ক্রিপ্সের মতো অনেক সোশ্যালিস্ট দেখা আছে তাঁদের। হামবাগ সব! জওহরলাল আর সেই সময়কার কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি মৌলানা আজাদ অবিশ্যি ক্রিপসের সঙ্গে একমতই ছিলেন, ছিলেন এমনকি রাজাগোপালাচারিও, যদিও লীগের ব্যাপারে কংগ্রেসের অবস্থানের প্রতিবাদে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন রাজাগোপালাচারি নিজে। এখন গান্ধী একাই বিরোধীপক্ষ, যদিও নিজে গান্ধী মনে করেন না তা। তিনি মনে করেন সমস্ত দেশবাসী তাঁর পক্ষে। তিনি একবার সঙ্কেত দিলেই প্রায় প্রতিটি ভারতবাসী নেমে পড়বে রাস্তায়, তাদের মুখে থাকবে একটাই কথা, ভারত-ছাড়! যদি নিজে থেকে না ছাড়, আমরাই ছাড়াব তোমাদের। করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে!
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের নামরহস্য : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৫ মে ২০২৪ | ৮৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩০
ব্যস, এই সুযোগের অপেক্ষাতেই তো ছেনু ছিল, এক ছুটে দুধের গ্লাস হাতে তেতলার সিঁড়িতে উঠে পড়ল। এবার পা টিপে টিপে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সিঁড়ি দিয়ে তেতলায় পৌঁছে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলো কেউ আছে কিনা। যখন দেখতে পেল চারিদিক ফাঁকা, কেউ তার দিকে নজর রাখছে না, তখন গ্লাস থেকে এমন করে এক চুমুক দুধ খেলো, যাতে চলকে কিছুটা দুধ মুখ বেয়ে নেমে আসে, তারপর একটা বিচ্ছিরি মুখ করে কোনোক্রমে ঢোঁক গিলে সেই এক চুমুক দুধ গলা দিয়ে চালান করে নিচু হয়ে বসে ড্রেনের মুখটায় বাকি দুধটা আস্তে করে ঢালতে লাগল। ঢালতে ঢালতেও কড়া নজর চারদিকে, এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল। ধীরে ধীরে পুরো দুধটাই ঢালা হয়ে গেলে আস্তে করে উঠে আবার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল।
মোবাইলে ‘না’ নির্বাচনে কমিশনের! : অর্ণব মণ্ডল
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : লোকসভা - ২০২৪ | ২৭ মে ২০২৪ | ৭৯৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
সম্ভবত, কোনও ভোটার যাতে পোলিং বুথে ঢুকে ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে না পারেন, সেই জন্যই মোবাইল ফোন, ক্যামেরা বা এই ধরনের কোনও রকম বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়ে বুথে প্রবেশের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু, ভিডিও বা ছবি তো নির্বাচনী স্বচ্ছতার জন্য আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায় বুথের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের দৃশ্য ধরা পড়েছে। পোলিং অফিসারদের হুমকি দিয়ে সম্মিলিত ভাবে বুথ জ্যাম, দেদার ছাপ্পা – এসব ঘটনা তো আমাদের কাছে অতিপরিচিত। তাই বুথের ভেতরে যদি কেউ বা কয়েকজন মিলে গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করে, ভোটারদের কাছে ফোন থাকলে সেটার ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে তৎক্ষণাৎ, যেটা পরে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করে অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে সেগুলো কাজে লাগতে পারে। শুধু ইভিএম মেশিনে একজনের ভোটদানের দৃশ্য যাতে অন্য কেউ না তুলতে পারে, সে বিষয়ে কড়া নজর রাখতে হবে।
নরেন্দ্র মোদীর গুজরাট মডেল - দ্বিতীয় পর্ব : প্রদীপ দত্ত
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : লোকসভা - ২০২৪ | ২৮ মে ২০২৪ | ১৩২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির (সিএমআইই) তথ্য দেখায় যে, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, গুজরাটে এই ধরনের বিনিয়োগকারী সম্মেলনগুলিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতির মাত্র ২৫ শতাংশ দিনের আলো দেখেছিল৷ অনেক বিজেপি শাসিত রাজ্য একে মডেল হিসাবে গ্রহণ করেছে। যেমন -- হ্যাপেনিং হরিয়ানা, মোমেন্টাম ঝাড়খণ্ড, রিসার্জেন্ট রাজস্থান ইত্যাদি। উত্তরপ্রদেশ (ইউপি ইনভেস্টর সামিট), পশ্চিমবঙ্গ (বেঙ্গল গ্লোবাল সামিট), ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশাও বিনিয়োগের উপযুক্ত গন্তব্য হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য ভাইব্রেন্ট গুজরাট সামিটের অনুরূপ সংস্করণ আয়োজন করেছে। কিন্তু সব জায়গাতেই একই কান্ড– বড় বড় ঘোষণার কিছুকাল পর দেখানোর মতো কিছু নেই। ইভেন্টের সময় যে মৌ (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়, খুব কমই প্রকৃত বিনিয়োগ হয়, কারণ মৌগুলির কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এই জাতীয় শোগুলির পর বলার মতো কর্মসংস্থান যে হয় এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যও নেই।
পায়েল কাপাডিয়ার ছবি, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৯ মে ২০২৪ | ৬৬৪ বার পঠিত
পায়েল কাপাডিয়ার ছবিতেও এই রাজনৈতিক সচেতনতার আভাস পাওয়া যায়। তাঁর ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল রাজনীতি আর ব্যক্তিগত জীবন সমান্তরাল ভাবে চলে, এমনও মনে হতে পারে যেন দুটো ভিন্ন কাহিনি। রাজনীতি বলতে দলীয় মিটিং, মিছিল নয়, কোন ইস্যু, বিক্ষোভ, প্রতিবাদকে পূর্বনির্ধারিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা নয়, নির্মোহ ভাবে বৃহত্তর ও ব্যক্তিগত পরিসর কে ফুটিয়ে তোলা। পায়েল আগেও কান উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন, পুরষ্কার জিতেছেন। ২০১৭ সালে তাঁর ‘আফটারনুন ক্লাউডস’ একমাত্র ভারতীয় ছবি যা উৎসবে নির্বাচিত হয়েছিল। ২০২১ সালে তাঁর তথ্যচিত্র ‘আ নাইট অফ নোইং নাথিং’ সেরা ডকুমেন্টারি ছবির জন্য ‘গোল্ডেন আই’ পুরষ্কার পায়। এই ছবিতে ২০১৫ সালে FTII এ মহাভারত-খ্যাত গজেন্দ্র চৌহানকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ করার প্রতিবাদে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা দেখান হয়েছে। প্রসঙ্গত পরিচালক নিজে এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন যার জন্য তিনি প্রায় সাড়ে চার মাস ক্লাস বয়কট করেছিলেন এবং তাঁর অনুদানও বন্ধ হয়ে গেছিল। ছাত্রদের এই প্রতিবাদ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে এক কলেজের ছাত্রী তার প্রেমিকের অনুপস্থিতি অনুভব করছে। একই চিঠিতে সে লিখছে ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে সে বুঝে উঠতে পারছে না, হয়তো স্ট্রাইক করার জন্য তাঁদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মুসলিম যুবককে চোখ বেঁধে, কোমরে পিস্তল ঠেকিয়ে পুলিশের জিপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, একই সাথে মেয়েটি চিঠিতে তার চারিপাশের বাস্তব, কল্পনা, স্বপ্ন, ফ্যান্টাসি উজাড় করে দিচ্ছে। এই ভাবে পরিচালক পলিটিকাল আর পারসোনালের মধ্যে আন্তসম্পর্ক খুঁজছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন।
'মোদী কি গ্যারান্টি': বিজ্ঞাপনতন্ত্রের এক নয়া রাজনৈতিক প্রয়োগ : অত্রি ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : লোকসভা - ২০২৪ | ৩১ মে ২০২৪ | ৭০২ বার পঠিত
'নিও-লেফট' বামপন্থার তাত্ত্বিক রেমন্ড উইলিয়ামস, তার বহুপঠিত 'অ্যাডভার্টাইজিং: দ্য ম্যাজিক সিস্টেম' নিবন্ধে দেখিয়েছিলেন, কিভাবে সমাজপরিমন্ডলের ব্যক্তিমানুষ পুঁজিতন্ত্রের দৌলতে 'বিষয়' হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে 'নির্বাচক'মাত্র এবং স্বয়ম্ভূ 'জনতা'র সার্বভৌম অবস্থান থেকে সে হয়ে ওঠে 'জনমত' নামক একরৈখিক, সমসত্ত্ব কন্ঠস্বর। সিদ্ধান্ত গ্রহণ গণতন্ত্রের একটি ফাংশনে' পর্যবসিত হয়, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রণোদনা জোগানোর জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়, যাতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠকে একটি বিশেষ শাসনকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে সংগঠিত করা যায়, তৈরি করে নেওয়া যায় নিজেদের প্রয়োজনীয় 'জনমত'। এই ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠকে জনপিন্ড হিসাবে দেখা হয়, যাদের মতামত, জনসমূহ হিসাবে গৃহীত হবে, ব্যক্তি হিসাবে নয়, এই রূপান্তর 'বিজনেস অফ গভর্নেন্সের' একটি জরুরী ফ্যাক্টর। ব্যবহারিক পরিপ্রেক্ষিতে, এই রাজনীতি, বৃহৎ-পুঁজি, আমলাতন্ত্র ও বিজ্ঞাপনীজগতের মিলিঝুলি জাদুকাঠামো দীর্ঘ সময়ের জন্য সফলও হতে পারে, কিন্তু সামাজিক সমস্যাগুলি বর্ণনা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠে, যেহেতু প্রচারকের পেশা এবং প্রচারকের বাস্তবতার ব্যবধান রয়েছে। অধিকন্তু, শাসক একটি অত্যাধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রকৃত ক্ষমতার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে আগ্রাসী ভূমিকা নেওয়ার ফলে, পুরানো সামাজিক-রাজনৈতিক প্রশ্নগুলি অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে এবং, নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ সমস্ত সামাজিক কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে।
ভ্রমণের বিষ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২৪ | ৯৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
আমি বিদ্যাকে শুধোই, শুধু পাহাড়ের কি কোনো একক দেবতা নেই, যিনি তাকে রক্ষা করতে পারেন লাগাতার ধ্বংস আর নির্বিচার আক্রমণ থেকে? তাকে বলি, সমস্ত পাহাড়ের রাণী যে হিমাচল প্রদেশ তার চেহারা দিনের দিনের পর দিন যেভাবে কুৎসিত হয়ে উঠছে, তা কল্পনাতীত। পাঞ্জাব পেরিয়ে হিমাচলের সীমানায় ঢুকলেই শুধু উন্নয়ন, নির্মাণ, জেসিপি আর ট্রাকের পর ট্রাক! ট্যুরিজম পয়সা আনে, এজন্য রাস্তার পর রাস্তা তৈরি হচ্ছে, সিঙ্গল লেন ডাবল হচ্ছে বিয়াসের পাশে, সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে যাচ্ছে জেসিপি। ধুলোভরা গাড়ি চলার রাস্তাই হয়ত খুব শিগগিরই উন্নয়নের একমাত্র প্রতীক হয়ে উঠবে।
পরিযায়ী শ্রমিক, মহিলা ভোটার আর ২০২৪ নির্বাচনের কিছু গণিত : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : লোকসভা - ২০২৪ | ০৮ জুন ২০২৪ | ৬০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মঙ্গলসূত্র, মুসলিম, মাটন, মাচ্ছি, মোষ, মুজরা- এসবের মাঝে যে দুটো ম-এর কাহিনী চাপা পড়ে গেছে সেটা হল মহিলা ভোটার আর মাইগ্রেন্ট লেবারার। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দুই দফায় যে বিষয়টা নজর কেড়েছিল সেটা ছিল ভোট শতাংশ কমে যাওয়া। নির্বাচনের শেষের দিকে যেটা নজর কেড়েছে সেটা হল পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশিমাত্রায় অংশগ্রহণ। নারীদের মধ্যে অতিরিক্ত ভোটদানের হার বিশেষভাবে দেখা গেছে বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় এবং ঝাড়খণ্ডে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হল বিহার। বিহারে প্রথম দফায় নারীদের ভোট শতাংশ পুরুষের চেয়ে কম ছিল। দ্বিতীয় দফা থেকে বাড়তে শুরু করে। বিহারে যেটা কমেছে সেটা হল পুরুষদের ভোটদানের হার- এটা ৫৫.১% থেকে ৫৩.৩% এ নেমে এসেছে। মহিলাদের ভোটদানের হার ৫৯.৪% যা ২০১৯এর প্রায় সমান।
খাদ্য এবং খাদ্য ফসলের দূষণ একটি নীরব ঘাতক - সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ও সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ন সমাধান : শ্যামল অধিকারী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : কৃষি | ১২ জুন ২০২৪ | ৬৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
FSSAI (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) এর চরম ব্যর্থতা। খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং রাসায়নিক পেস্টিসাইড নিয়ন্ত্রণ করতে FSSAI সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দায়ের করা একটি পিটিশনে বলা হয়েছে যে কীটনাশক যুক্ত খাবারের ব্যবহার সারাদেশে ক্যান্সার রোগের প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে এবং তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কীটনাশক এবং ক্যান্সারের মধ্যে একটি সরাসরি বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে কীটনাশক যুক্ত খাবার, তার ব্যবহার, অতিব্যবহার এক বিরাট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবেদনকারী সারা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন যা দেখায় যে কীটনাশকের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। সিনিয়র আইনজীবী অনিথা শেনয়, আবেদনকারী অ্যাডভোকেট আকাশ বশিষ্ঠের পক্ষে উপস্থিত হয়ে সুপ্রিম কোর্টকে জানালেন। পাশাপাশি পিটিশনে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এর মতো রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ফল কৃত্রিমভাবে পাকানো, আপেলের মত ফলগুলির রং বা আবরণ প্যারাফিন, শেলাক এবং পলিথিনের মত উপাদান দিয়ে তৈরি মোম দিয়ে পলিশিংয়ের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ডাল এবং খাদ্যশস্যে কৃত্রিম রং ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করা হয়। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ 17 মে, 2024 পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ও মান অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে (FSSAI) নোটিশ জারি করেছে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া চেয়েছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৩ জুন ২০২৪ | ৪২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমাদের শিবির থেকে, আমেরিকান কনসালের কাছে চিঠি দিয়ে তিনজনকে জাঞ্জিবারে পাঠিয়েছিলাম, সেই সঙ্গে 'হেরাল্ড'-এর কাছে টেলিগ্রাফ পাঠানোর জন্যও। রাজদূতকে অনুরোধ করেছিলাম যে তিনি যেন একটা-দুটো ছোট বাক্স ভরে কিছুমিছু বিলাসদ্রব্য দিয়ে লোকদের ফেরত পাঠান যা ক্ষুধার্ত, জীর্ণ, ছ্যাতলাধরা মানুষজন তারিফ কুড়াবে। বার্তাবাহকদের বৃষ্টি- অনাবৃষ্টি, নদী- বন্যা কোনো কিছুর জন্যই থামতে বারণ করা হয়েছিল - যাতে তারা তাড়াহুড়ো করল না আর তারা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আমরা তাদের ধরে ফেললাম এমন ঘটনা না ঘটে। প্রবল উৎসাহে "ইনশাআল্লাহ, বানা" বলে তারা রওনা দিল।
নিট কেলেঙ্কারি - পর্দা ফাঁস : ভিডিও গুরু
বুলবুলভাজা | ভিডিও গুরু | ১৪ জুন ২০২৪ | ৭৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে নিয়ে বাংলা মিডিয়া এখনও মোটামুটি চুপচাপ, যেটুকু না বললে নয়, সেইটুকু বলছে। যদিও এরকম হবার সম্ভাবনা আছে, যে, নিটই স্বাধীন ভারতবর্ষের বৃহত্তম কেলেঙ্কারি। হ্যাঁ, আদালতের রায়ের পরেও ব্যাপারটা বদলায় না। কিন্তু মূলধারার মিডিয়ার হাতে ছেড়ে দেব বলে তো আমরা কাজ করছিনা। এই ভিডিওটা দেখুন, বিশদে পুরোটা বলা আছে।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও বিদেশি চকলেটের বাক্স : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১৫ জুন ২০২৪ | ১৪৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
আজকে সকালে তেতলার পিসিমার কাছে যে চিঠিটা এল, দাদা মানে পিসিমার ছেলে অনেকক্ষণ ধরে পিসিমাকে পড়ে পড়ে শোনাচ্ছে। ছেনু গিয়ে দু'বার দরজার সামনে থেকে ঘুরেও এল, কত লম্বা চিঠি রে বাবা! শেষে আর থাকতে না পেরে ছেনু গিয়ে পিসিমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, কার চিঠি গো? দেখা গেল অদ্ভুত ব্যাপার, পিসিমা হাসছে, অথচ চোখের কোণে জল, পিসিমা হেসে বলল, কে আসছে জানিস? কান্টু আসছে রে কান্টু, তোর কান্টু দাদা। এদ্দিন পর ও আসছে, শুনে বিশ্বাসই করতে পারছি না, তাই তো বারবার করে শুনছি।
ছেনু ছোট্ট থেকে পিসিমার কাছে কান্টুদার অনেক গল্প শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন কান্টুদাকে চোখে দেখেনি আজ পর্যন্ত। অবশ্য দেখবেই বা কি করে, ছেনুর জন্মের আগেই তো পিসিমার বড় ছেলে কান্টুদা সেই সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার করে কি একটা দেশ আছে, কানাডা না কি নাম, সেইখানে চলে গিয়েছিল। সেই থেকে সেখানেই থাকে আর মাঝে মধ্যে চিঠি লিখে খবরাখবর জানায়। শুরুর দিকে বাংলায় লিখত বটে কিন্তু পরে কি জানি কেন শুধু ইংরেজিতেই চিঠি পাঠায়, তাই অন্যরা পিসিমাকে তর্জমা করে পড়ে পড়ে শোনায় কি লিখেছে।
অন্ধ ও বধিরের দেশে? : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৬ জুন ২০২৪ | ১০৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত রসিকার ছেলে উপন্যাসে রোহিত ভেমুলার ছায়ায় গড়া কেন্দ্রীয় চরিত্র রোশনের পাশে আছে ফয়জান, স্বনামে নয়, তার নাম ওখানে ফয়জল। তার মৃত্যুর পর মা ছুটে এসেছেন অতদূর থেকে। তাঁর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ, তার বর্ণনা আছে। সেই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন কাগজের রিপোর্ট ঘেঁটে লেখা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনেকের ইন্টারভিউ নিয়ে তারপর তিলে তিলে গড়া হয়েছে এই দুর্ভাগা তরুণের চরিত্র। তাকে দাঁড় করানো হয়েছে রোহিত ভেমুলার পাশে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায় এই ২০১৬ এবং ২০২২ কে এক সুতোয় গেঁথে ফেলাকে অন্যায়ের প্রবহমানতা দেখাবার পক্ষে খুবই কার্যকরী হয়েছে বলে ভেবেছেন।
আমরা পড়ে দেখতে পারি উপন্যাসের কিছুটা অংশ, যেখানে মায়ের চোখের জল আর প্রবল আকুতি বৃথা হয়ে যাচ্ছে। এমপ্লুরা নামের রাসায়নিক দিয়ে যে নরপশুরা ফয়জানের মৃতদেহ অবিকৃত রাখবার চেষ্টা করেছিল, তাদের নির্লিপ্ততা। রসিকার ছেলে প্রকাশ করে গুরুচন্ডা৯ যে সামাজিক যুদ্ধের সূচনা করেছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অমিতাভ চক্রবর্তীদের প্রতিবেদন।
রাষ্ট্রের নিশানায় অরুন্ধতী রায় : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৮ জুন ২০২৪ | ৮৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
২১শে অক্টোবর, ২০১০ দিল্লির এলটিজি অডিটোরিয়ামে ‘আজাদি দ্য ওনলি ওয়ে’ নামক আলোচনাসভায় অরুন্ধতী প্রধান বক্তা ছিলেন। সেখানে আরও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন হুরিয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, এসএআর গিলানি, প্রখ্যাত কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাও এবং সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ কাশ্মীরের প্রাক্তন অধ্যাপক, শেখ সওকাত হুসেন। প্রথম দুজন ইতিমধ্যে প্রয়াত, ভারভারা রাও অসুস্থ, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় জামিনে মুক্ত। সুশিল পন্ডিত নামে এক তথাকথিত সমাজসেবী ওই সভায় ‘প্ররোচনামূলক’ বক্তব্য রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং একটি এফআইআর দায়ের করেন। দীর্ঘ তেরো বছর বাদে দিল্লি পুলিশ ধারা ১৫৩এ, ১৫৩বি, ৫০৪, ৫০৫ এবং ইউএপিএ ধারা ১৩ অনুযায়ী লেখিকা এবং অধ্যাপক হুসেন কে অভিযুক্ত করেন। তখন দিল্লির লেফট্যানেন্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা শুধুমাত্র আইপিসির অধীনে ধারাগুলি মোতাবেক বিচার শুরু করার অনুমতি দেন। ২০২৪এ বিজেপি/এনডিএ সরকারের তৃতীয় অবতার ভূমিষ্ঠ হবার পর নতুন উদ্যমে গভর্নর, অভিযোগ যিনি বিভিন্ন সময়ে শাসকের ‘হ্যাচেট ম্যান’ হয়ে কাজ করেছেন, ইউএপিএ ধারায় তাঁদেরকে বিচার করার অনুমতি প্রদান করেন। অনেকের মতে এটা একটা আইনি বাধ্যবাধকতা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬৮ ধারা অনুযায়ী যেহেতু তিন বছরের অধিক কোন অপরাধের বিচারের ওপর নিষেধ রয়েছে তাই ইউএপিএ ধারায় লেখিকাকে ফের কাঠগড়ায় টানার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
ভারতীয় রেলের 'কবচ' কুণ্ডল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ভিডিও গুরু | ১৯ জুন ২০২৪ | ১৩০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
রেলসুরক্ষা ব্যবস্থা কবচ নিয়ে হইহইয়ের কোনো শেষ নেই। দুর্ঘটনারও কোনো শেষ নেই। এই বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে রেলমন্ত্রী কবচের উন্নতির কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ৩০৪০ কিলোমিটার রেলপথে অপটিকাল ফাইবার বসানো হয়েছে, বসানো হয়েছে ২৬৯ টা কবচ টাওয়ার। ওদিকে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পরে, আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত চার বছরে ঘটেছে ছাব্বিশটা রেল দুর্ঘটনা। কবচ প্রবর্তনের আগে এত দুর্ঘটনা দেখা যেত কী? বা এর ভগ্নাংশও? সম্ভবত না। তাহলে কবচে আদৌ কি কারো কোনো লাভ হচ্ছে?
সহজ উত্তর হল, হ্যাঁ, হচ্ছে। ২০২৩ সালে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সে পর্যন্ত কবচের জন্য খরচা হয়েছিল ৩৫১ কোটি টাকা। আর ২৩-২৪ সালের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭১০ কোটি টাকা। দুটোকে যোগ করলে হয় ১০৬১ কোটি টাকা [২]। কোথায় যায় এই টাকা? কীভাবে খরচ হয়? কবচের প্রযুক্তি ভারতের সরকারি সম্পত্তি হলেও, ব্যাপকহারে এর যন্ত্র কিন্তু সরকার বানায়না। বানায় বেসরকারি কোম্পানিরা। তাদের বরাত দেওয়া হয়। এদের ইংরিজিতে বলা হয় ওইএম বা অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার। সেই বরাতেই যায় এই টাকার সিংহভাগ।
স্লোভাকিয়া ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২২ জুন ২০২৪ | ৬২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কোন একদিন মারটিনে যাবার ইচ্ছে থেকে গিয়েছিল তার সুযোগ একদিন জুটল। কোসিতসে থেকে ব্রাতিস্লাভা যাবার পথে নেমেছিলাম, খানিকটা কাজে খানিকটা কৌতূহলে।
মারটিনে পথ চলতে চোখে পড়ে বাড়ির গায়ে আঁকা প্রকাণ্ড মুরাল। তারা হয়তো কোন গভীর অর্থ বহন করে, জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে নি। দক্ষিণ জার্মানির ব্যাভেরিয়াতে দেখেছি এমনি দেওয়ালজোড়া স্থির চিত্র, যাকে জার্মানে বলে হাওয়াই চিত্রকলা (লুফতমালারাই)। তবে তার সাইজ অনেক ছোটো। হোহে তাতরা বা উঁচু তাতরা পর্বতের নাম শুনেছি জার্মানিতে। সেটা যে ঠিক কোথায় জানতাম না, সে আমলে ফ্রাঙ্কফুর্টের পূর্বে কোথায় কি আছে জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। পূর্ব ইউরোপে আসা যাওয়া শুরু হলে জ্ঞান বাড়লো - আল্পস থেকে যে পর্বতমালা শুরু হয়ে টানা হিমালয়ে গিয়ে মিশেছে ইউরোপে তার নাম কোথাও উলিয়ান আল্পস (স্লোভেনিয়া), তাতরা (স্লোভাকিয়া), কারপাত (রোমানিয়া)। এই অখণ্ড শৈলশ্রেণি স্লোভাকিয়ার উত্তরে পোল্যান্ডের সঙ্গে সীমানা নির্দেশ করে। পোলিশ অংশে আছে জাকোপানে যেটি পোল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কি রেসর্ট, দীর্ঘদিনের পোলিশ বান্ধবী ক্রিস্টিনা প্রতি বছর স্কি করতে যায়। সেই তাতরার দর্শন পেলাম দক্ষিণ প্রান্ত থেকে। মারটিন শহর তার ছায়ায়, তুরেতস নদীর কোলে আশ্রিত (জার্মান নাম তুরতস সাঙ্কট মারটিন) পথ চলতে দূর পাহাড়কে কাছের মনে হয় সঞ্জীবচন্দ্রের পালামউ ভ্রমণ মনে পড়ে। আরও মনে পড়ে জলপাইগুড়ির দিনগুলি – প্রসন্ন দিনে দিগন্তে হিমালয়ের রেখা, কাঞ্চনজঙ্ঘার ইশারা।
লুঠ হয়ে গেল আস্ত জঙ্গল : ভিডিও গুরু
বুলবুলভাজা | ভিডিও গুরু | ২২ জুন ২০২৪ | ৫৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
অনেকেই নিট বা নেটের দুর্নীতি নিয়ে চিন্তিত। সঙ্গত কারণেই। দেশে লুঠের রাজত্ব চলছে, এ খবর নতুন না। হাজার হাজার কোটি টাকা শিল্পপতিরা লুঠ করে নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন, আমরা জানি। তাঁদের অনাদায়ী ঋণ মকুব করে দেওয়া হচ্ছে, আমরা জানি। সরকারি সংস্থাগুলিকে খোঁড়া করে বা না করে জলের দরে বেচে দেওয়া হচ্ছে, আমরা জানি। কিন্তু যা অনেকেই জানেননা, আস্ত পুকুর শুধু নয়, আস্ত জঙ্গল, জলাভূমি, নদী সবই চুপচাপ চুরি হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, বিশ্বাস না হলেও খবরটা শত শতাংশ ঠিক।
পুস্তক সমালোচনা : স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন, নয়নজোড়া কৌমুদী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ২৩ জুন ২০২৪ | ৭১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পুজোর লেখার তাড়া তো রয়েইছে। তাই বলে তো আর হুমড়ি খেয়ে সবসময় লেখা যায় না, তাই লেখা, পড়া, সংসারের কাজ, প্রায়ই বিরাট দেশটার অলিগলি চিনে নেবার জন্য বেরিয়ে পড়ার প্রস্তুতি, এইসবের ফাঁকে ফাঁকে খুব ভালো বই পেলে এখনও গোগ্রাসে পড়ে ফেলি। সেইরকম বইয়ের সংখ্যা দিন দিন আমার দেরাজে বর্ধমান! এবার আসানসোলে বসেই পড়ে নিলাম জয়া মিত্র-দির “স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন” আর তার পরেই একেবারে অন্য স্বাদের আর একটি, অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর “নয়নজোড়া কৌমুদী।”
বুলডোজার, হকার আর শপিং মল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৯ জুন ২০২৪ | ১১২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মন্দা কাটার পর ২০১১ সাল নাগাদ শুরু হয় দ্বিতীয় বিপ্লব। মল তৈরি হতে থাকে দ্রুতগতিতে। বড়, মাঝারি শহরগুলো ছেয়ে যেতে শুরু করে মলে। একটা হিসেব পাওয়া যায়, যে, ২০১৭ সালে, গোটা ভারতে ৬০০ টার মতো মল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এর বেশিরভাগটাই ২০১১র পরে। মলগুলো নানারকম ছিল, কিন্তু যদি কেউ ২০১১র পরের মলগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য মনে করে দেখেন, তো মনে করতে পারবেন, এগুলো আগের মলগুলোর থেকে আলাদা। নতুন মলগুলোয় এবং পুরোনো গুলোও বদলে ফেলা হয় এমন ভাবে, যে, সেগুলো আর শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, সময় কাটানোর জায়গা হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত, অজস্র রেস্তোরাঁ, খেলার জায়গা এবং অবশ্যই একটি মাল্টিপ্লেক্স। আন্দাজ করা যায়, মলের দোকানগুলো জিনিস বেচলেও, মলগুলো আসলে বিক্রি করছিল জীবনযাত্রার ধরণ। শনিবার বা রবিবার মধ্যবিত্তরা সময় কাটাতে মলে আসবে, মলগুলোই হবে গন্তব্য, এবং লোকে এসে পড়লে পয়সা তো খরচ করবেই, এইটাই ছিল লক্ষ্য।
ভারত সরকার, প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে, এই পুরো প্রক্রিয়াটার পিছনে ছিল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই পুরো সময়টাতেই বিক্রির ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের নিয়মকানুন শিথিল করা হয় এবং মলগুলোর একটা বড় অংশই ছিল বিদেশী পুঁজির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে হঠাৎ একদিনের ঘোষণায় ভারতে চালু করে দেওয়া হয় নোটবন্দী। নগদ টাকায় লেনদেন কার্যত দীর্ঘদিনের জন্য খোঁড়া হয়ে যায়। একই সময় চালু হচ্ছিল ই-কমার্সের নানা ব্যবস্থা, অ্যাপ, এবং টাকাহীন লেনদেনের নানা ব্যবস্থা। নোটবন্দীর ক্ষেত্রে কারণ দেখানো হয়েছিল, কালো টাকা উদ্ধার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়েকবছর পরে দেখা যায়, প্রায় কোনো কালো টাকাই উদ্ধার করা যায়নি, ফলত গোটা নোটবন্দীকেই একটা বৃহৎ কেলেঙ্কারি বলা যেতেই পারে। এই সময় সরকারকে সরাসরি দেখা গেছে অ্যাপ দিয়ে লেনদেনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, অ্যাপ, বড় খুচরো কোম্পানি, এবং মলগুলোর সুবিধা করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। শুধু এদেরই সুবিধা করে দিতে নিশ্চয়ই না, আরও অনেক সুবিধাভোগীও অবশ্যই ছিল, কিন্তু এরা যে সেই তালিকার অন্তর্গত, সে নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই।
ভারতীয়তার আড়ালে ফিরছে পরাধীন আমলের কালা কানুন : নরেশ জানা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০১ জুলাই ২০২৪ | ১৪৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
এবার আমরা দেখে নেই কিভাবে চালু হতে যাওয়া নতুন আইন বিধিতে পুলিশ রাজ কায়েম করা হয়েছে। একটা উদাহরণ নেওয়া যাক, ভারতীয় সংবিধানের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বাক স্বাধীনতা, সভা, সমিতির অধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। এই দিকে নজর রেখে সুপ্রিম কোর্ট বারবার ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আইন বাতিল করতে বলেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছেন, সরকারের বিরোধিতা মানে রাষ্ট্রের বিরোধিতা নয়। পুরানো আইন অর্থাৎ আইপিসি ১২৪(এ) ধারায় স্থগিতাদেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন কাউকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় অভিযুক্ত করা যাবেনা। কিন্তু নতুন আইন অর্থাৎ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৫০ ও ১৫২ ধারায় কৌশলে রাষ্ট্রদ্রোহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে বক্তব্যে অথবা লিখিত, বা সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা, বা দৃশ্যমান উপস্থাপনা দ্বারা, বা বৈদ্যুতিন যোগাযোগ দ্বারা, অথবা আর্থিক উপায় ব্যবহার করে বা অন্যভাবে উত্তেজিত বা উত্তেজিত করার চেষ্টা করে যাতে বিচ্ছিন্নতা বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বা কেউ যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে উৎসাহিত করে যার দ্বারা ভারতের সার্বভৌমত্ব বা একতা বা অখণ্ডতাকে বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তবে তা উক্ত ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে শাস্তির যেখানে আগে নূন্যতম ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ছিল তা নতুন আইনে নূন্যতম ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন করা হয়েছে।
স্বামী জ্ঞানবৎসল এবং মহিলারা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ভিডিও গুরু | ০১ জুলাই ২০২৪ | ১১১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
একটা ভিডিও ক্লিপ বাজারে এসেছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের কোনো এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যেটা কলকাতায় হচ্ছিল, সেখানে এক স্বামীজি আছেন বলে দর্শক আসনের সামনের দিক থেকে সব মহিলাদের তুলে পিছনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটা মোবাইলে তোলা। কথা ভালো শোনা যাচ্ছেনা। কিন্তু কোনো মহিলা যে সামনের সারিতে বসবেনা, এটা ঘোষণা করা হচ্ছে, সেই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ভিডিওর সত্যমিথ্যা অবশ্য আমরা যাচাই করিনি। কিন্তু এর তো খবরও বেরিয়েছে।স্বামীনারায়ণ মন্দিরের স্বামী জ্ঞানবৎসলকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করে আনা হয়। তিনি খুব সম্ভবত মহিলাদের মুখ দেখেননা। তাই তিনি আসার আগেই আয়োজকরা সামনের সারি থেকে সব মহিলাদের তুলে পিছনে পাঠিয়ে দেন। শুধু তাইই না, খবরে এও বেরিয়েছে, ব্যাকস্টেজে যে মহিলারা কাজ করছিলেন, তাঁদেরও পাঠিয়ে দেওয়া হয় পিছনের সারিতে।
বাংলায় গণপিটুনির ভয়াবহ ভাইরাল ভিডিওরা : ভিডিও গুরু
বুলবুলভাজা | ভিডিও গুরু | ০২ জুলাই ২০২৪ | ৮১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কে এই পেটানোর নেতৃত্বে? অভিযোগ, এই লোকটি স্থানীয় তৃণমূল নেতা। নাম তাজিমুল হক। ডাকনাম জেসিবি। একটি বুলডোজার কোম্পানির নামও জেসিবি। ইনিই বোধহয় আস্ত বুলডোজার। অভিযোগ, যে, ইনি পিটিয়েছেন তো বটেই, নৃশংস মারধরের পরেও আহত দুই যুবক-যুবতীকে পুলিশের কাছে যাওয়া তো দূরের কথা, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের সাহায্য করলে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ার পর, রবিবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ জেসিবি-কে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু তার আগেই কে ভিডিও ছড়িয়েছে তার সন্ধানে গ্রামে দাপিয়েছে জেসিবি'র বাহিনী, সন্দেহের ভিত্তিতেই তারা মাসুদ নামের এক যুবকের বাড়ি ভাঙচুরও করে দিয়েছে।
স্লোভাকিয়া ৭ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৬ জুলাই ২০২৪ | ৬৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ভোরের ফ্লাইট। যখন শহরে ঢুকছি তখন আবছা আলো। ট্যাক্সির জানলা থেকে দেখি আট তলা দশ তলার অ্যাপারটমেনট, ধূসর বর্ণ, বহুকাল দেয়ালে কোন রঙের পোঁচ পড়ে নি। বাতাসে টু স্ট্রোক এঞ্জিনের ফেলে যাওয়া আধ পোড়া পেট্রোলের গন্ধ। আমার হাতের চিরকুটে লেখা ঠিকানা দেখে ট্যাক্সি আমাকে যেখানে নামিয়ে দিলো সেটা একটা টিপিকাল কমিউনিস্ট আমলের পাঁচ তলা অ্যাপারটমেনট ব্লক। কাচের জানলা হয়তো পঞ্চাশ বছরের পুরনো। দু পাশে ফ্ল্যাট, মধ্যিখানে ওপরে যাওয়ার সিঁড়ি। নিচের তলায় একটি দরোজার সামনে লাইন দিয়ে মোটামুটি নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কিছু মানুষ। কেউ কেউ ধূমপানে রত। এতো বছর সিটি ব্যাঙ্কে কাজ করছি ততদিনে অন্তত পঞ্চাশটা দেশে সিটি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ দেখেছি তার সঙ্গে এ একেবারে মেলে না। ঠিক জায়গায় এসেছি কিনা সন্দেহ হলো।
দোতলায় যেতে হবে জানা ছিল (প্রিভে প্রশদিয়ে)। মাঝের সিঁড়ির দরোজায় বেল নেই, পরিচিতি জানানোর ওঠে না। সে সিঁড়ির চেহারা বড়ো বাজারের কোন পুরনো বাড়ির মতো , দেওয়ালে পানের পিকটাই যা নেই। দোতলায় উঠে চমকাতে হলো। হলদে রঙের একটা ঝাঁ চকচকে দরোজার ওপরে সিটি ব্যাঙ্ক লেখা দেখে। এমনকি এন্ট্রি ফোন! বেল টিপলে এক মহিলার কণ্ঠ শোনা গেলো। তিনি ঘণ্টি বাজিয়ে আমাকে দরোজা ঠেলতে বললেন -একেবারে স্টেট অফ দি আর্ট ! যিনি দেখা দিলেন তাঁর নাম ইওয়ানা, এতক্ষণ তিনি আমার পথ দেখছিলেন বলে জানালেন। এক নজরেই বোঝা গেলো এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড তিন কামরার কমিউনিস্ট কালের ফ্ল্যাট যার তুল্য দেখেছি সারা পূর্ব ইউরোপে। ঢুকতেই বাঁ হাতে টয়লেট, ডাইনে রান্নাঘর, হলের তিন দিকে তিনটি ঘর । উত্তরে টালিন বা সেন্ট পিটারসবুরগ ( পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি প্রথম পর্ব পশ্য, ছবি সহ) থেকে দক্ষিণে স্কোপয়ে অবধি সমস্ত অ্যাপারটমেনট একই বিশ্বকর্মার প্ল্যান বা মর্জি মাফিক তৈরি। তফাৎ শুধু ঘরের সংখ্যায়, দুই বা তিন । তবে এ ফ্ল্যাটের অন্দরের চাকচিক্য আছে- সিটি ব্যাঙ্ক বলে কথা ! যদি লন্ডন থেকে আমাদের ডেপুটি সিইও ডেভিড গিবসন হঠাৎ এসে হাজির হন , তাঁর কাছে মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। বাইরেটা দেখেই অবশ্য তিনি মূর্ছা যেতে পারেন।
লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট রাইট : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৯ জুলাই ২০২৪ | ৯৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
আশার কথা, এই মিছরির ছুরির থেকে এবার রাষ্ট্র বেরিয়ে পড়েছে। ন্যায়, অন্যায়, ধর্ম, খাদ্য নানান সংহিতা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্র আর মুখ লুকিয়ে থাকতে রাজি নয়। দেশদ্রোহীদের কড়া হাতে শায়েস্তা করা হবে। পুলিশ চাইলেই যে কাউকে দেশবিরোধিতার জন্য টেনে নিয়ে চলে যেতে পারে। কারণ রাষ্ট্র মানেই লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট রাইট। কিন্তু আগামীদিনের ভারতবর্ষ ঠিক কেমন হয়ে উঠতে পারে? ধরুন আমাদের বুকশেলফ ভরে উঠতে পারে বিভিন্ন সংহিতায়। কী খাব? তার জন্য খাদ্যসংহিতা। কী পরব? তার জন্য পোশাকসংহিতা। কী রকম চুল কাটব? তার জন্য কেশসংহিতা (পুরুষের জন্য একরকম, মেয়েদের জন্য আরেকরকম), কাকে বিয়ে করব? তার জন্য সংহিতা (বিবাহসংহিতা), কার সঙ্গে প্রেম করব? তার জন্য সংহিতা (প্রেমসংহিতা)। এর পর ধীরে ধীরে বেরোবে কাশিসংহিতা, হাঁচিসংহিতা, পাদসংহিতা, মিলনসংহিতা, কন্ডোমসংহিতা, ইত্যাদি প্রভৃতি।
বিপ্লবের আগুন - পর্ব তেরো : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৩ জুলাই ২০২৪ | ৪৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জনা খুব দৃঢ় স্বরে বললে, “বিপদকে আমরা ভয় পাই না”।
ভল্লা তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে নিয়ে বলল, “খুব আনন্দ পেলাম শুনে। আসন্ন বিপদকে যদি কেউ বুঝতেই না পারে, সে বিপদকে ভয় পাবে কেন? একটি শিশু যখন জ্বলন্ত প্রদীপের শিখা ধরতে যায়, তাকে সাহসী বলব, না বীর বলব, আমি আবার ঠিক বুঝে উঠতে পারি না”।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ, খেলনাবাড়ি আর পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১৩ জুলাই ২০২৪ | ৯০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
ছেনু দেখল, সত্যিই তো, পকাইকে তো এবার চড়তে দিতেই হয়, বেচারি এতক্ষণ ধরে অপেক্ষায় রয়েছে। তার ওপর ওরই ঘোড়া যখন। আজ সকালে পকাইদের বাড়ি এই ঘোড়াখানা আসতেই পকাই তাড়াতাড়ি ছেনুকে ডেকে এনেছে। সেই ঘোড়াখানা দেখেই তো ছেনু আনন্দে আত্মহারা। উফ্, ঘোড়া বটে একখানা। কি সুন্দর লালের ওপর সাদা,কালো, হলুদ দিয়ে রং করা, পিঠের উপর চওড়া করে বসার আসন পাতা, ঘাড়ের কাছে কেশরের পাশ দিয়ে আবার ধরার জন্য দুটো হাতল রয়েছে, খাড়া খাড়া কান, সাথে তেমনি টানা টানা চোখ - দেখেই চোখ জুড়িয়ে চায়। এ যা ঘোড়া, পক্ষীরাজ না হয়ে যায় না! সত্যিই, মহারাজ যেন এমন একটা ঘোড়ারই সন্ধানে ছিলেন এতদিন ধরে। তাই সে ঘোড়া দেখে আর লোভ সামলাতে পারেননি, পকাইয়ের জন্য আনা ঘোড়ায় নিজেই টপ করে বসে পড়েছেন। আর ঘোড়ায় চেপে টগবগ টগবগ করে সেই যে ছুটিয়েছেন, ডানা মেলে এদিক ওদিক ঘোরার মধ্যে আর সময়ের হুঁশ ছিল না। পকাই ধৈর্য হারিয়ে আবার ঘরে চলে গিয়েছিল, ফিরে এসেও যখন দেখল মহারাজের ঘোড়ায় চড়া শেষ হয়নি, তখন চিৎকার জুড়তেই ছেনুর টনক নড়ল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৮ জুলাই ২০২৪ | ৩৪৭ বার পঠিত
কিরাঙ্গোজি তার শিঙা বাজাতে থাকল, আস্টলফো১-এর জাদু-শিঙ্গার মতন প্রায় বিস্ফোরণের সম্ভাবনা দেয় আর কি! স্থানীয়রা ও আরবরা আমাদের চারপাশে ভিড় করে এলো। আর সেই উজ্জ্বল পতাকা, যার নক্ষত্রগুলি মধ্য আফ্রিকার বিশাল হ্রদের জলের উপর দুলেছিল, যেটি উজিজিতে দুর্দশাগ্রস্ত, নির্যাতিত লিভিংস্টোনের কাছে ত্রাণের প্রতিশ্রুতি হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিল, সে আবার সমুদ্রে ফিরে এলো - ছেঁড়া অবস্থায় তা সত্য, তবে কোন ভাবেই অসম্মানিত নয়- ছিন্ন-ভিন্ন, কিন্তু পূর্ণ-সম্মানে।
চেকিয়া এক : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ জুলাই ২০২৪ | ৭১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আলাপ জমে গেলো ফ্রান্তিসেকের সঙ্গে। টি টুয়েন্টি নামক দানবের দুরাচার শুরু হবার আগে টেস্ট ক্রিকেটের মাঠে গল্প বেশি জমতো - অনেকক্ষণ যাবত মাঠে কিছুই ঘটে না, স্যাকরার ঠুক ঠাক চলে ব্যাটে বলে। ফুটবলের মাঠে সেটা সম্ভব নয়। তবু খেলার আগে, মাঝে, হাফ টাইমে কিছু কথা। আমরা তাঁকে একাধিক বিয়ারে আপ্যায়িত করেছি, কিছুতেই দাম দিতে দেব না! ভারত ও পূর্ব ইউরোপের ভাইচারা যুগ যুগ স্থায়ী হোক। দুজন ভারতীয়ের সঙ্গে এই ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে দেখা হবে তিনি ভাবতে পারেন নি! আমার ট্রিভিয়া লাইব্রেরির শ্রীবৃদ্ধির জন্য যত না প্রশ্ন, ভারত সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞানস্পৃহা অনেক বেশি। ততক্ষণে তাঁর টিম আইনত্রাখত ফ্রাঙ্কফুর্টের হাতে বেশ ঝাড় খাচ্ছে, ৩-০ গোলে পিছিয়ে এবং তাঁর মনোযোগ বিভ্রান্ত। তাই প্রস্তাব দিলাম- তিনি যদি চান আমরা একত্র হেঁটে শহরে ফিরতে পারি, এক ঘণ্টার পথ। ট্রামে বেজায় ভিড় হবে। ফ্রান্তিসেক বললেন যদি আমরা তাঁকে ট্রেন স্টেশনের কাছাকাছি অবধি সঙ্গ দিতে পারি তাঁর খুব উপকার হয়, রাতের ট্রেন ধরবেন। সেটাই আমাদের লজিস্টিক, ফ্রাঙ্কফুর্ট হাউপটবানহফের সামনে আমরা বারো নম্বর ট্রাম ধরে বাড়ি ফিরব।
বৈদিক গণিত বিপন্ন? : সুনন্দ পাত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ | ২৩ জুলাই ২০২৪ | ৩২০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
গত ১২ই জুলাই, শুক্রবার, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পনেরোতম আন্তর্জাতিক গণিত-শিক্ষণ কংগ্রেস-এর সম্মেলন থেকে অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়নকে নিরাপত্তা-আধিকারিকরা প্রহরা দিয়ে বের করে দেন। তাঁর ব্যাজ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করা হয়। কারণ হিসেবে তাঁকে বলা হয়, যে, সেদিন সকাল ন-টায় অধ্যাপক আশিস অরোরা-র বৈদিক গণিতের অধিবেশনে তাঁর করা কিছু মন্তব্যকে কিছু অন্য অংশগ্রহণকারীর শাসানিমূলক ও ভীতিপ্রদ মনে হয়েছে। কতটা আতঙ্কের উদ্রেককারিণী এই ভারতীয় গণিত-অধ্যাপক? কতটা ভয়ঙ্কর তাঁর উপস্থিতি, যার ফলে তাঁকে শিক্ষকদের সম্মেলন থেকে বের করে দিতে হয়? ‘বৈদিক গণিত’ ঠিক কীরকম বিপন্ন হয়েছিল তাঁর উপস্থিতিতে? এসব কথা জানতে, সেই অধিবেশনেরই আরেক শ্রোতা এবং ওই সম্মেলনের আরেক নিমন্ত্রিত বক্তা, ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থিওডর চাও-এর বয়ান পড়ে ফেলুন।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ আর বিরাট রাজার মাঠ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৭ জুলাই ২০২৪ | ৯৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
বড়দা তখন আর কথা বলবে কি, চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছে মাঠটা পুরো গমগম করছে, ভাঙা বাড়িটাও গোটা হয়ে গিয়ে ঝকঝকে তকতকে, লোকে লোকে জায়গাটা ছয়লাপ। মাঠ জুড়ে বড় বড় টেবিল পাতা, পাশে সার দিয়ে চেয়ার। ওয়েটাররা রান্নাঘর থেকে প্লেটে করে সব গরমাগরম খাবার দাবার এনে টেবিলে রেখে যাচ্ছে। বড় ঘরটা জুড়েও সব বড় বড় শ্বেত পাথরের টেবিল রাখা।
সেখানেও লোক ভর্তি। ওয়েটাররা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। রান্নাঘরে বিশাল বিশাল হাঁড়ি, ডেকচি, কড়া নিয়ে ঠাকুররা সব রান্না করছে। বাড়িটার সামনে জ্বল জ্বল করছে নাম- 'শিয়ালদা রেস্টুরেন্ট'। বড় ঘরের এক কোণায় সাদা গদি পাতা। তাতে বালিশে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বাবা বসে আছেন। পাশের টেবিলে ক্যাশ বাক্স সামলিয়ে হিসেব দেখছে জগন্নাথদা। ওয়েটাররা এসে মুখস্ত হিসেব বলছে আর সেই অনুযায়ী লিখে নিচ্ছে পরপর। ঠিক যেন কালকের ঘটনা।
অন্য দেশের পাখি - ১ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ জুলাই ২০২৪ | ৮২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
জোড় সংখ্যাগুলো দেখে মনে হল বোধ হয় ঠিকই ভেবেছি, তা না হলে অন্তত একটা লাইনের মোট সংখ্যা বিজোড় হওয়া উচিত ছিল। আচ্ছা, সংখ্যাগুলো যদি সত্যিই জোড়ায় জোড়ায় থাকে, তাহলে তার মানে কী? তার মানে প্রতি দুটো সংখ্যা মিলে কিছু একটা বলতে চাইছে, জোড়াগুলোর বাঁ দিক বা ডান দিকের সংখ্যাগুলোর আলাদা করে কোন মানে নেই। এবার নিজের কাগজটা আবার দেখায় মুড়কি, এই দেখ না, তখন আমি প্রতিটা জোড়ার বাঁ দিকের সংখ্যাগুলোর তলায় একটা করে, আর ডান দিকের সংখ্যাগুলোর তলায় দুটো করে ছোট ছোট দাগ দিতে শুরু করলাম। এই সময় উল্কিদি এসে পেছনে দাঁড়ালো আমার, সরি উল্কিদি, তোমার সঙ্গে কথা বলিনি তখন, আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা।
ক্যালিডোস্কোপে দেখা – দেখতে শেখা : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ৩৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
বাবা এবার খাতা টেনে নিয়ে দুই দেয়ালের দূরের প্রান্তের খাড়া দাগগুলো উপরে নীচে একটু করে মুছে দিল। সামনের দেয়ালের দূরের প্রান্ত-দাগ একটু বেশি মোছা হল। মাটির আর উপরের শোয়ানো দাগগুলোও এবার মুছে যেমন দরকার সেইভাবে খাড়া দাগগুলোর সাথে জুড়ে দেওয়া হল। এতক্ষণে আমি তফাৎটা বুঝে গেছি। কেমন ঠিক ঠিক দেখাচ্ছে এখন! এবার এর সাথে মিলিয়ে দরজা-জানালা, বাড়ির মাথার চাল, এসব বসিয়ে দিলেই হয়ে যাবে।
- রেল লাইন দেখেছিস কখনো?
- হ্যাঁ, মামাবাড়ি যাওয়ার সময়।
- প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে লাইন বরাবর তাকিয়ে দেখেছিস?
- মনে পড়ছেনা।
- আবার কখনো সু্যোগ পেলে তাকিয়ে দেখবি, মনে হবে লাইনদুটোর মাঝে ফাঁক সমানে কমে গেছে। অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পেলে দেখবি একসময় লাইনদুটো গায়ে গায়ে মিশে গেছে। আসলে তাদের মাঝে সব সময় একই দূরত্ব থাকে কিন্তু আমরা দেখি অন্য রকম। ছবি আঁকার সময় কোথা থেকে, মানে কোথায় দাঁড়িয়ে জিনিষটাকে দেখে ছবিটা আঁকছ, সেইটা ইম্পর্ট্যান্ট। তেমনভাবে ধরা একটা ডিমকে দেখে আঁকলে সেইটা ডিমের মত নয়, একেবারে একটা বলের মত দেখাবে। একদম উপর থেকে সোজাসুজি দেখলে বাড়িটারে দেখাবে স্রেফ একটা চারকোণা ছাদ, আর কিছুনা।
চেকিয়া দুই : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ৭১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ইন্টারকমে ফোন করে সেক্রেটারি ক্রিস্টেলকে বলে দিলেন আমার সঙ্গে তিনি আসন্ন অডিট নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত আছেন, কেউ ফোন করে যেন তাঁকে বিরক্ত না করে।
- আপনারা পাবে যখন বিয়ারের অর্ডার করেন, তখন বলেন না ‘আইন পিলস বিটে'?
- হ্যাঁ, মানে সোনালি রঙের যে বিয়ার সেটাই তো, তাকে পিলস বলে।
- পিলস কথাটা এলো কোথা হতে জানেন কি? আমার দেশের প্লজেন শহরের নাম থেকে! দুনিয়া জোড়া বিয়ারের ব্যবসায় এই শহরের নাম জড়িয়ে আছে!
জলে বার্লি ও খামির গেঁজিয়ে বিয়ার বানানোর পদ্ধতিটা অন্তত দশ হাজার বছর প্রচলিত, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো অ্যালকহলিক পানীয়। বিয়ার জলের বিকল্প। মিশরের পিরামিড কর্মীদের বেতনের অংশ ছিল বিয়ার,চার হাজার বছর আগে বিশ্বের অন্যতম আইন প্রণেতা (ল গিভার) হাম্মুরাবির কোডে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিয়ারের বিশেষ ভূমিকা নির্দিষ্ট হয়েছে। রাজা এর উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সামাজিক সম্মান অনুযায়ী দৈনিক বিয়ার বিতরিত হবে ; আমলারা পাবেন পাঁচ লিটার, মজুরেরা দু লিটার।
বিয়ারের ইতিহাসে বোহেমিয়ার বিশিষ্ট অবদান আছে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে, চারটি বিভিন্ন জলধারার সঙ্গমে প্রতিষ্ঠিত ছোট্ট শহর প্লজেনের(জার্মান পিলসেন) আড়াইশো নাগরিককে বিয়ার বানানোর অধিকার দেন বোহেমিয়ান রাজা ওয়েনসেসলাস। প্রাগ শহরের মধ্যমণি আজ ওয়েনসেসলাস চত্বর; তিনি চেকিয়ার রক্ষক সন্ত -প্যাট্রন সেন্ট। কালে কালে নাগরিকরা গড়ে তোলেন আমাদের আমূল দুধের মতন এক বিয়ার সমবায়! কিন্তু সে বিয়ার ক্রমশ মুখে দেওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি একদিন সাড়ে তিন হাজার লিটার বিয়ার প্লজেন শহরের মাঝে এক নর্দমায় ঢেলে দিয়ে নগর পিতারা কোন সুযোগ্য বিয়ার জাদুকরের সন্ধানে গেলেন ব্যাভেরিয়া।
বিয়ার বানানোয় ব্যাভেরিয়ার বিশেষ সুনাম ছিল -তাদের এক রাজা ১৫১৬ সালে শুদ্ধতার আইন প্রচলন করেন-সে মোতাবেক জল বার্লি এবং হপ (এক ধরনের গাছের ফল যা থেকে বিয়ারের তিক্ততা আসে) ছাড়া বিয়ারে কিছুই মেশানো যাবে না, কোন কেমিক্যাল তো নয়ই। ইস্ট অথবা খামির সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নি এই বিধানে। ব্যাভেরিয়াতে সন্তরা বিয়ার গ্যাঁজাতেন গোপনে পাহাড়ের গুহায় অর্থাৎ তাঁদের পদ্ধতি ছিল কোল্ড, বটম ফারমেনটেশান যার স্বাদ অতি উত্তম কিন্তু বর্ণ ছিল ঘোলাটে। প্লজেনের বিয়ার গোয়েন্দারা ভুলিয়ে ভালিয়ে অর্থের প্রলোভন দিয়ে উনত্রিশ বছরের ইওসেফ গ্রোল নামের এক ব্যাভেরিয়ান সাধুকে তিন বছরের চুক্তিতে পাকড়াও করে নিয়ে এলেন। সাল ১৮৪২। খানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ইওসেফ গ্রোল সোনালি রঙের এক অসাধারণ পানীয় প্রস্তুত করলেন – তার নাম দেওয়া হলো প্লজেন্সকি প্রাজদ্রোই। অস্ট্রিয়ান হাবসবুরগ সম্রাটের আমলে প্লজেন শহরের জার্মান নাম অনুযায়ী নগর পিতারা এই বিয়ারের নাম দিলেন পিলসনার উরকেল (পিলসেন আদি উৎস)!
কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ৪৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গুলি ডাং? সে আবার কী? ৫০ বছর পর হয়তো এ-জন্য টীকাকারের প্রয়োজন হবে। জানতে চাইবে, গুগল বা বুগুল খুলে, হোয়াট ইজ গুলি ডাং, বুড়ি বসন্তী, ভাটা খেলা, নুনচিক/ গাদি/ জাহাজ খেলা। তাই লিখে দেওয়া সমীচীন। বন্ধুরা কেউ সাহায্য করবেন?
গুলি মানে বন্দুকের নয়, দুদিক ছুঁচলো একটা কাঠের দু ইঞ্চি থেকে চার ইঞ্চি একটা সরু টুকরো। ডাং হচ্ছে কাঠেরই একটা দুফুট থেকে তিন ফুটের একটা ডান্ডা। মাটিতে শোয়ানো গুলিকে ছুঁচলো দিকে ডান্ডা পিটিয়ে মাটির উপরে তুলে বা রেখে এক বা একাধিক বার ড্রিবল করে যত দূরে পাঠাবে, ততো পয়েন্ট জুটবে। হাতের ওই ডান্ডা বা গুলি দিয়ে মাপ হবে।
গুলিকে শূন্যে যতবার পেটানো হবে মাপ হবে ততোগুণ। অনেকটা ক্রিকেটের বড়দা।
উইকেটের বদলে পেছনে একটা গর্ত থাকবে।
বিপক্ষের লোক একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে গুলি ছুঁড়বে ওই গর্তে ফেলার জন্য। ডাং খেলি সেটিকে মেরে সপাটে দূরে পাঠাবেন। মাঝে যদি দুই বা ততোধিক বার শূন্যে পেটাতে পারেন তাহলে ততোগুণ পয়েন্ট হবে।
আর ক্রিকেটের মতো ফিল্ডার বা বিপক্ষের খেলোয়াড় থাকবে ক্যাচ ধরার জন্য।
ধরলেই খেলি / খেলোয়াড় আউট।
অন্য দেশের পাখি - ২ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ আগস্ট ২০২৪ | ১০৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আসলে কী জানিস তো, সায়েন্স শুধুমাত্র কয়েকজন হাতে গোনা লোকের জন্যে, তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন শুধু অল্প কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী, এ রকমটা মানতে চাইছেন না এখনকার বিজ্ঞানীরা। তাই বিজ্ঞানের নানারকমের আবিষ্কার, নানারকমের আইডিয়া, এসব ব্যাপারে আজকাল সারা পৃথিবীতেই অনেক পপুলার লেকচার আয়োজন করে বিভিন্ন সায়েন্টিফিক ইনস্টিট্যুট। হায়দ্রাবাদে এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা – সেন্ট্রাল ইনস্টিট্যুট অব ইংলিশ, ওসমানিয়া য়্যুনিভার্সিটি, এসব জায়গার লোকজনদের জানাতে হবে না?
তিনটি প্রাচীন কবিতা : জগন্নাথদেব মণ্ডল
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০৯ আগস্ট ২০২৪ | ৫৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আমগাছে ভরা বাড়ির ভিতরে বসে তিরতির করে বুক কাঁপছিল মা মরা রুকুর। / পাশের পুকুরে মাগুরের মাথায় ঘি জমলে ছটফট করছিল জলের মাছ। / / এদিকে আজকের মতো সন্ধ্যা করে এসেছে চারিদিকে। / বাড়ির সকলে গেছে শনিবারের পুজোয়, / ফিরতে অনেক অনেক রাত হবে। / / এমনি সময়ে ভানুমতীর খেল জানা তালেব দা এসে আঁধার ঘর আরো আঁধার করে বসে আছে। / যেন পাহাড়ের কালোমেঘ নেমেছে ঘরের মাথায়। / / তার কালো পুরুষ্টু চেহারা, সারা গায়ে সুন্দর রোম, নাভিতে ঘূর্ণি, কোঁকড়াচুলো, এক হাতে পেতলের বালা, কোমরের তাগায় ফুটো কড়ি বাঁধা আছে। / / রুকু সন্ধে দিয় এল, পরনে গামছা, চায়ের জল চাপিয়ে বসে রইল খালি গায়ে তালেবের কাছে।
বাংলাদেশ অভ্যুত্থান ও পশ্চিমবঙ্গঃ ঠিক কি ঘটছে দু’পার বাংলায়? : স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১১ আগস্ট ২০২৪ | ৩৪৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১২
ছাত্ররা আশাতীত সাফল্য দেখিয়েছে। তার পরেও দৃঢ়তা দেখিয়েছে। স্বৈরাচার না মৌলবাদ, এই প্রশ্নের বাইরে স্বৈরাচার ও মৌলবাদ উভয়কেই দূরে রাখার যে প্রকল্প তারা ঘোষণা করেছে, তার সাফল্যের ওপর শুধু বাংলাদেশ নয়, দুই বাংলার পারষ্পরিক সম্পর্কও নির্ভর করছে। এসবের সাথে তাঁরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেরও বিরোধিতা করতে পারবেন কিনা সেটা অনেক বড় প্রশ্ন হয়ে যায়। কিন্তু তাঁরা যদি ‘৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা আবার ফিরিয়ে আনতে পারেন, সেটাই হবে, আমার মতে, তাঁদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এরকম কোনও উদ্দেশ্যের কথা অবশ্য তাঁরা এখনও ঘোষণা করেননি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আরেকটা কাজ করতে পারেন। যখনই কেউ মুজিব মুর্তি ভাংচুরের প্রসঙ্গ তুলে বলতে আসবে মুসলমানদের দেশ বাংলাদেশ এত খারাপ যে জাতির জনককেও ছাড়ে না, তাঁকে আগে একবার জিজ্ঞেস করে নেবেনঃ “আর ভারতের জাতির জনকের হত্যা বিষয়ে তোমার/আপনার কি মত?” তাঁরা যদি গান্ধী হত্যার তীব্র নিন্দা না করেন, বুঝে যাবেন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত নিয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যাথা নেই; না তাঁরা স্রেফ বাংলাদেশকে ব্যবহার করে এদেশের মাটিতে নিজেদের বিষবৃক্ষের ফসল তুলতে চাইছেন।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও চলচ্চিত্তচঞ্চরি : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১০ আগস্ট ২০২৪ | ৯১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
কিন্তু সিনেমা ছেনুকে ছাড়লে তবে তো। আবার কিছুদিন পর একদিন খবর এলো জামাইবাবুদের অফিস থেকে নাকি পূরবীতে 'ঝিন্দের বন্দি'-র স্পেশ্যাল শো এর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জামাইবাবু ছেনুকে এসে বলল, "দেখো এটাতে কিন্তু ভূতটুত কিচ্ছুটি নেই। খুব বিখ্যাত সিনেমা, ভীষণ ভালো লাগবে। আর সিনেমাহলে ভয় পাওয়ার দুর্নাম ঘোচানোর এটাই সুবর্ণ সুযোগ।" তা ছেনুও সেই শুনে রাজি। জামাইবাবুর অফিসের অনুষ্ঠান বলে কথা, সেজেগুজে যেতে হবে। এই বারের পুজোয় ওকে যে সুন্দর কোটটা কিনে দিয়েছিল জামাইবাবু, ওটাই পরে যাওয়া মনস্থির করল। যাওয়ার দিন সকাল থেকে ছেনু চান টান করে চুল আঁচড়ে তৈরি। হাফ প্যান্টের সাথে কোটটা মানিয়েছেও খুব ভালো। টাইম মতো জামাইবাবু চলে এলো ওকে নিতে। ওখানে গিয়ে হলটা দেখে তো ছেনুর ভারি ভালো লাগল। অনেক লোকও এসেছে। সবার সাথে প্রথম বারের মতো ছেনু কোনো সিনেমা হলের মধ্যে ঢুকল। ঢুকেই দেখে সামনে বিশাল সাদা পর্দা। এখানেও সেই ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট এর মতো পরপর চেয়ার পাতা। প্রথমে বেশ কয়েকজন মিলে প্রদীপ জ্বালানোর পর, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শুরু হল। সেটা শেষ হতেই নানারকম গুরুগম্ভীর বক্তৃতা। একে একে সব মিটলে, শুরু হল আসল আকর্ষণ - সিনেমা।
চেকিয়া তিন : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ৭০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
সীমানা পেরিয়ে সেথায় যাওয়ার সুযোগ জুটলো এতদিনে! সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে অরটউইন ও আমি হেনরি ফোরডের প্রপৌত্রের কারখানায় বানানো একটি গাড়ি চড়ে যাত্রা শুরু করি এক দেশের পানে যার নাম চেকোস্লোভাকিয়া থেকে সদ্য চেকিয়া নামে পরিবর্তিত হয়েছে।
গাড়িতে বেশিদূর যাওয়ার আগে, একটু অতীতে ফিরে যেতে হবে।
আমার কাছে বোহেমিয়া, চেকিয়া জড়িয়ে আছে একটি পরিবারের সঙ্গে। রাজনীতির বলি হয়ে কয়েকশ বছরের বাসভূমি হারানোর সে কাহিনি বইয়ে পড়ি নি, শুনেছি হের রুডলফ ক্রাইবিখের কাছে। তখন জানতাম না একদিন সেই দেশ সেই মাঠ সেই পথ দেখব নিজের চোখে, অনুমান করতে চাইব ছিন্নমূলের বেদনা। কাজটা সহজ নয়।
কয়েকশ বছর আগে আমাদের পূর্ব পুরুষ রাজস্থান থেকে সুদূর পূবে এই বাংলায় বাসা বেঁধেছিলেন। তাঁদের উত্তর পুরুষ আজও পুজোর সময়ে গ্রামের আটচালায় বসে নক্ষত্রের পানে চেয়ে তাদের স্মরণ করতে পারে। মোড়ল পুকুর, বেলে মাঠ, শাঁখের চক আমি তেমনই দেখেছি যেমন আমার বাবা দেখেছিলেন। র্যাডক্লিফের ছুরিতে যখন পূর্ব বাংলা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন, আমাদের পরিবারের গায়ে পড়েনি তার কোন আঁচ। আমাদের সেই পুকুর মাঠ বাগান থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অন্তত যতদিন না কেউ কাগজ চাইবেন বা বলবেন আপনারা তো বিদেশি।
বিপ্লবের আগুন - পর্ব আঠারো : কিশোর ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ৪৯৩ বার পঠিত
__ইতিহাসে তিনি সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত নামেই প্রসিদ্ধ। শুরুর দিকে, যখন তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক চন্দ্রগুপ্ত মাত্র, যখন নন্দ-সাম্রাজ্যের সীমান্তবর্তী কিছু কিছু অঞ্চল তিনি নিজের আয়ত্তে আনছিলেন, রাজধানীতে নন্দরাজার সেনাপ্রধানরা, তাঁকে ডাকাতই মনে করেছিল। তারা ভাবত, হতভাগা ডাকাতটাকে, একবার ধরতে পারলে শূলে চড়াবো। সেনাপ্রধানদের সে স্বপ্ন অবশ্য পূর্ণ হয়নি।
অন্য দেশের পাখি - ৪ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ৭০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
চন্দ্রশেখর বললেন, এবার একটু কাজের কথা সেরে নিই। তোমাদের সঙ্গে ন্যাশনাল অবজার্ভেটরীর সম্পর্কটা কিন্তু টপ সিক্রেট, কোনমতেই কারো এটা জানা চলবে না। আমি তোমাদের একটু বুঝিয়ে বলছি। ন্যাশনাল অবজার্ভেটরীর বিভিন্ন দায়িত্বের মধ্যে প্রধান যেটা, সেটা হলো ব্রাজিলে খনিজ তেল এবং গ্যাসের অনুসন্ধান। আমি বলছি অনুসন্ধান, কিন্তু তার মানে শুধুমাত্র অনুসন্ধানই নয়, এই তেল বা গ্যাস কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, কার কতটুকু ব্যবসা করার অধিকার, কী দামে কার কাছে এসব বিক্রি করা হবে, এমনকি সে ব্যাপারেও ন্যাশনাল অবজার্ভেটরী ব্রাজিল সরকারের কনসালট্যান্ট।
পচা চালকুমড়োর ছাঁচে গড়া সমাজকে ভেঙে ফেলার পদকীর্তন : পুরুষোত্তম সিংহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ৫৩০ বার পঠিত
দেবজ্যোতি রায় গল্প, গপ্প, কাহিনি, ছোটোগল্প কিছুই লিখতে চাননি। তিনি একটি দর্শন রচনা করতে চেয়েছেন। তিনি একটা নিজস্ব গদ্যসরণিতে হেঁটে যেতে চেয়েছেন। যে পাঠক গদ্যসরণি, অস্তিত্বের আত্মখননে আসতে চান তাকে স্বাগত, যে চান না তাকে সদম্ভে নিকুচি করা। তিনি কোনো লক্ষে পৌঁছতে চাননি। অস্তিত্বের জায়মান অন্ধকারে যে বিদ্রোহ, আত্মগ্লানি, সংশয়, যৌন পিপাসা, বিভ্রান্ত প্রবণতা, সংস্থিতির অহমিকা, মরবিড, অ্যাবসার্ড তাই দেখাতে চেয়েছেন। মধ্যবিত্ত মেকিবোধের সমূল উৎপাটন ঘটাতে চেয়েছেন। ফলে তাঁকে নেমে যেতে হয়েছে অন্ধকারের জগতে। সভ্যতার জাতীয় সড়ক দিয়ে না গিয়ে জাতীয় সড়কের আশেপাশে যে অলিগলি, যেখানে মানুষ আত্মত্রাণের জন্য নীরবে অবস্থান করে অথবা নিজের চাহিদা-পিপাসা মেটাতে গোপনে প্রবেশ করে সেই বন্ধ দুয়ারে প্রবেশকের তালাচাবির আবিষ্কারক তিনি।
নিজস্ব আলোছায়ার সংকলন : দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ২৫ আগস্ট ২০২৪ | ৫৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
জোহানেস ভার্মিয়েরের আঁকা, হ্যান্স এন্ডারসনের ছোট জলকন্যার গল্প, নরওয়ের দেবতা জেন্ডার ফ্লুইড লোকি, একানড়ে সব মিলেমিশে যায় এই দুনিয়ায়। সেখানে আলোর অন্যরকম রং। কথা বলা খরগোশ, ভেড়ার ছানা, জ্ঞানের পেঁচা লেখককে সেই দুনিয়ার দরজার সন্ধান দেয়। সেখানে লেখক 'রাইড দ্য ওয়াইল্ড হর্স' ধ্যানের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন যেখানে প্রতিটি অনুভূতি একেকটা উদ্দাম বুনো ঘোড়ার মত। অভিযোগ একটিই, বইটি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।
অন্য দেশের পাখি - ৫ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ৫১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ওদের মালপত্রগুলো বূটে রেখে দিল ড্রাইভার, তারপর পেছনের সীটে আরাম করে বসল ওরা। গাড়ি স্টার্ট নেবার পর প্রথম কথা বললেন এসপিণ্ডোলো; মনে রেখো, তোমরা যে কাজ করতে এসেছ, সে কাজের সঙ্গে আমার কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই, আর আমার কোন রকমের এক্সপার্টিজও নেই। উদ্ধার-করা প্রাণীদের বাঁচাবার চেষ্টা করতে পারি আমি, কিন্তু উদ্ধারের কাজে কোন অভিজ্ঞতাই নেই আমার। লী আমাকে বলেছেন ফল্গু এবং তার সহকারীদের ওপর ওঁর দারুণ ভরসা, অতএব দারুণ ভরসা আমারও।
নীলাচলে ছনেন্দ্রনাথ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১০১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
ওদিকে বেড়ানোর গন্ধে গন্ধে ছোদ্দি আর ছেনু চলে এসেছে দৌড়ে দৌড়ে। ছেনু বলল, আমার তো আপিস আর কলেজ কিচ্ছুটি নেই, আমিই নিয়ে যাব তোমায়। আর ছোদ্দি জানাল তার রোজ রোজ ইস্কুল যেতে মোটেই ভাল্লাগেনা। তাই ক'দিন ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাবে তার ভোট সবচে আগে পড়বে।
কিন্তু আমাদের মহারাজ যতই বীরপুরুষ হন, সেনাপতি না থাকলে কি আর যুদ্ধযাত্রায় বেরোনো যায়! তাই সবার সম্মতিক্রমে এই যাত্রার সেনাপতি হিসেবে বেনাকেই মনোনীত করা গেল। তার ওপরই দায়িত্ব পড়ল হলিডে হোম ঠিক করে সবাইকে নিয়ে পুরী ঘুরিয়ে আনার। বেনা তো এই দায়িত্ব পেয়ে খুব খুশি। সেও কোনোদিন পুরী যায়নি, নতুন জায়গা দেখা হবে, ঘোরাঘুরি হবে। বড়দা এরমধ্যে ওদের ট্রেনের টিকিটও কেটে নিয়ে এসেছে। ট্রেনের নাম আগেই বলেছি, পুরী এক্সপ্রেস, সেকেন্ড ক্লাস সিটিং, মানে বসে বসে যেতে হবে। যাক শেষ মুহূর্তে টিকিট পাওয়া গেছে এই ঢের।
ছোড়দার আগেই পুরী ঘোরা। খুব ছোট্টবেলায় মামা আর দিদিমার সাথে গিয়েছিল। তখন তো এরকম হলিডে হোম ছিল না, পাণ্ডার বাড়িতে আট আনা দিয়ে থাকত। ছেনু গিয়ে তাই ছোড়দার কাছে প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে ফেলেছে," হ্যাঁরে, মা বলছিল, ওখানে নাকি এত্ত জল?"
- জল আছে তো, এত বড় সমুদ্র, জল থাকবে না!
- সমুদ্রটা কত বড়? আমাদের এই বাবুঘাটের গঙ্গার মতো?
- না না, বিশাল, বিশাল বড়। আর তাতে সব দোতলা সমান ঢেউ আসে। এক ঝাপটায় লোককে উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। আর সমুদ্রের ধারটা কেমন জানিস তো, পুরো বালি দিয়ে ঢাকা। ওই সামনের বাড়িটা তৈরি হওয়ার সময় এত বালি এসেছিল মনে আছে? তার থেকে অনেক অনেক বেশি বালি ওখানে।
- বাবুঘাটের মতো সবাই নাকি ওখানে গিয়েও চান করে? অত ঢেউ হলে চান করে কি করে?
- ওখানে বেশি দূর যেতেই নেই, গেলেই ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে। নুলিয়ারা আছে, ওরা বাচ্চাদের ধরে ধরে সেই গভীর সমুদ্রে চান করাতে নিয়ে যায়, তারপর তাদের কি হয় কেউ জানেনা। খুব সাবধান! আর জলটা এমন নোনতা, চোখে মুখে ঢুকে গেলেই জ্বালা করে। আর ঢেউ এসে গেলে ওমনি ছুট্টে পালিয়ে যেতে হয়।
চেকিয়া ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ৬২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
উইল আমাকে নিয়ে গেলো পুরনো প্রাগের মাঝখানে। যে ইহুদি পরিবারের বাড়িতে তেসরা জুলাই ১৮৭৫ সালে শিশু কাফকার জন্ম গ্রহণ করেন, সেটি একদা তৈরি হয়েছিল প্রাগের সেন্ট নিকোলাস গিরজের ক্যাথলিক পুরুতদের বসবাসের জন্যে! ১৮৯৭ সালে ইহুদি ঘেটোর অবসানের সময় সে বাড়ি ভাঙা পড়ে, আজ কেবল মাত্র তার পুরনো দুয়োরটা দেখা যায়। অতএব কাফকার আদি বাড়ি আপনি দেখতে পাবেন না। তাতে কি, প্রাগের সবচেয়ে প্রখ্যাত সন্তানের স্মরণে এই বছর বিশেক আগে পৌরসভা সেখানে বানিয়েছেন কাফকা স্কোয়ার (নেমেসতে ফ্রান্তসে কাফকি)। একদা সেন্ট পিটারসবুরগে আনার সঙ্গে ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট উপন্যাসে দস্তয়েভস্কির কল্পিত রাসকোলনিকভের বাড়ি, উপাসনার গিরজে খুঁজেছিলাম। উইলের সঙ্গে হাঁটলাম কাফকার স্কুলের পথে - প্রথম বিদ্যাপীঠ ডয়েচে কনাবেনশুলে বা কিন্ডারগার্টেন, আজকের মাসনা নামক পথে। মাইসলোভার বাড়ি থেকে কিন্সকি পালাস চত্বরের মধ্যে আলটষ্টেডার ডয়েচে গিমনাসিউম মিনিট কয়েকের পথ। আট বছর বাদে কাফকা গেলেন কার্ল ফারদিনান্দস ডয়েচে ইউনিভেরসিতেতে। সে সময়ে বোহেমিয়ান কার্ল বিশ্ববিদ্যালয় দু ভাগে বিভক্ত - কার্ল ফারদিনান্দে পড়ানোর মাধ্যম জার্মান, অন্যটিতে চেক মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়। সেটিও হাঁটা পথ মাত্র। ধর্ম চর্চা প্রাগের সিনাগগে – তার নামটি বিচিত্র। নতুন-পুরনো সিনাগগ! সারা ইউরোপের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সেখানে সবচেয়ে দীর্ঘদিন প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিতা হ্যারমানের কঠোরতম শাসন উপেক্ষা করে যুবক কাফকা প্রতি শনিবার সিনাগগে হাজরে দিতে অস্বীকার করেন। পিতার সঙ্গে কাফকার নিরন্তর মতভেদ তাঁর ব্রিফে আন ডেন ফাটার (বাবাকে চিঠি) পুস্তকে স্পষ্ট।
হে বৃক্ষনাথ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আবার কখনো কখনো এত গাম্ভীর্য। এত উদাসীন! এত ঈর্ষান্বিত! এত কষ্ট! অভিমান! অভিযোগ! আসলে কমলদা কখনো নিজেকে আড়াল করেন নি। তাঁর লোভ ছিল, তাঁর ইচ্ছে আছে, তিনিও চান, তিনিও পেতে পারেন, তাঁরও যোগ্যতা আছে— সবকিছুই তিনি বলতেন। তাঁর কথায় বোঝা যেত তিনিও যোগ্য। তিনি আড়াল জানতেন না। আবার হয়তো কখনো কখনো বর্ম এঁটে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিতেন একের পর এক নগ্নরূপ। আমি যদিও কখনো চাইতাম না তাঁর চোখ দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে দেখতে, তিনিও হয়ত চাইতেন না, কিন্তু তাও তাঁর অনবদমিত মন সেইসব কষ্টের কথা বলে ফেলত। বলত, উপেক্ষা, অবজ্ঞার কথাও। বোঝাতে চাইতেন, বাংলা সাহিত্য ফুরিয়ে যাবে নাহয়। এসব জেনেও মেনে নেব আমরা! ইত্যাদি ইত্যাদি!
তিনি বলতেন, বাংলার বাইরে থেকে লেখালেখি করার অসুবিধে। কষ্ট। উপেক্ষার কথাগুলো।
ক্যালিডোস্কোপে দেখা – বদল : অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
কুচবিহারে বাবার চাকরিতে বদলি হয়ে যাওয়ার সুবাদে প্রথম ‘বদলি’ কথাটার সাথে পরিচয়। কথাটা আচমকা এসে উদয় হলেও আস্তে আস্তে তাকে মর্মে মর্মে অনুভব করলাম। জানলাম, জ্ঞান হওয়া ইস্তক যে বাড়িটিকে আমার পরম নিশ্চিন্তের থাকার আস্তানা বলে জেনে এসেছি, সেটায় আমরা ভাড়া থাকি এবং বড়দের নিজেদের পরিস্থিতির কারণে যে কোন সময় সেখান থেকে চলে যেতে হতে পারে। পরে অবশ্য এই বদলি, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে সরে যাওয়া, কখনো বাধ্য হয়ে, কখনও স্বেচ্ছায়, আর তার সাথে সাথে জীবন যাপনের বদল ঘটে যাওয়া, জীবনের অংশ হয়ে গেল। যাপনের এক পর্যায়ে এসে এও জেনেছি যে চুক্তিপত্র করে বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে নেওয়া বাড়িতে আমার অধিকারও চূড়ান্ত নয়। তা আদতে আরও বড় এক অদৃশ্য চুক্তিভিত্তিক, চুক্তি – রাষ্ট্রের সাথে, যেদিন রাষ্ট্র চাইবেনা কিংবা তার সমর্থন সরে যাবে, তার প্রতিনিধি কিংবা তাকে পরাজিত করা বিজেতা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এসে বলবে - “ওটা দিতে হবে”, এই অধিকার ছেড়ে দিতে হবে, দিতে হয়; হয়ত তখন চলে যেতে হয় সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা কোন দুনিয়ায়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৭৪ বার পঠিত
মিঃ নিউ এর থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ বিদায় নিলাম। তাঁর মহৎ, উচ্চ মার্গের পেশাযাপনের নিরিখে তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ধারণা উচ্চ। বন্ধুত্বপূর্ণ, সমালোচনার মাধ্যমে তাঁর ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিলে নিশ্চয় তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন। উপরের চিঠি থেকে পাঠক ঠিকই বুঝবেন যে ডসন, হেন এবং নিউ-এর সম্পর্ক বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, জাঞ্জিবারে বর্তমান খবরাখবর থেকে যে কোন অপরিচিত লোক ধারণা করবেন যে এই তিনজন ভদ্রলোক পরস্পরের দিকে ছুরি উঁচিয়েই আছেন। তবে এসব আপাত বিরোধ, উপরিতলের ঝামেলা, কোনও গভীর শত্রুতা নয়।
অপরাজিতা বিল: সদিচ্ছা ও অদক্ষতা ঢাকা দেওয়ার এক হাস্যকর প্রচেষ্টা : শুভজিৎ সিংহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সামগ্রিকভাবে, এদেশের নারী, বিশেষত রূপান্তরকামী, ভিন্ন যৌনতার মানুষদের প্রতি ঘৃণ্য সামাজিক বিরূপতা তথা পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা, নির্যাতনের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই সামগ্রিক সামাজিক কণ্ঠস্বর অবশ্যই নতুন রাজনৈতিক বোধের জন্ম দেয়, যা ঠিক ক্ষমতাসীন কোনও দল বিশেষের বিরুদ্ধে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে প্রচলিত রাজনৈতিক পরিসরের সমস্ত ক্ষমতান্ধ দলগুলো এবং প্রচলিত পুরুষ আধিপত্যবাদী সমাজ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক, সর্বনিয়ন্ত্রক ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে এক গণ প্রতিবাদ। প্রথাগত রাজনৈতিক দলের বাইরে অজস্র সামাজিক সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার আন্দোলনের সংগঠন, বিশেষত চিকিৎসকদের সংগঠন, এমন কি প্রান্তিক মানুষের আওয়াজ, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে, প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে, সর্বোপরি প্রচলিত সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্রমাগত স্বর তুলেছে, প্রায় প্রতিদিনই মিছিল নিয়ে পথের দখল নিচ্ছে।
এমন বিসদৃশ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলা গণ বিক্ষোভের আঁচে দিশেহারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে, ধর্ষকের কঠোর শাস্তির জন্য বিধানসভায় বিশেষ একটি বিল (Aparajita Woman and Child (West Bengal Criminal Laws Amendment) Bill, 2024) পাশ করালেন ৩রা সেপ্টেম্বরে। মজার ব্যাপার, তিলমাত্র বিতণ্ডা না করে সভার উভয় পক্ষই সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ করেছে। বিরোধী বিজেপিরও দেখানো দরকার ছিল ধর্ষণ অপরাধ কমাতে তারাও কতো উদগ্রীব। কারণ, সম্প্রতি অসরকারী সংস্থা এডিআর-এর প্রকাশিত তথ্যে, সারা দেশের নিরিখে বিজেপির এমএলএ, এমপিরাই (১৩৪ জনের মধ্যে ৪৪ জন) যে সর্বাধিক নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত। মোদীর সময়কালে (২০১৪ থেকে ২০২২), সারা দেশে নারী নির্যাতনের হার ৩১% বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিলটির প্রয়োজন কি ছিল? ধর্ষণ অপরাধীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না প্রচলিত আইনে, নাকি কঠোর শাস্তির আইনের অভাবেই নিত্য নারী নির্যাতন হচ্ছে রাজ্যে? এর অভাবেই কি সরকারের প্রশাসন নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিরোধে, প্রতিবিধানে সেভাবে কাজ করতে কাজ করতে পারছিল না? প্রশ্নগুলোয় যাওয়ার আগে দেখে নিই কি বিশেষত্ব রয়েছে এই বিলে।
আলো আঁধারের জলছবি : অমিতাভ সেন
বুলবুলভাজা | প্রবন্ধ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ – এরা আজ ,একটি তরুণ সম্ভাবনাময় প্রাণের এই ট্র্যাজিক পরিণতিকে, শুধু নিজেদেরই পণ্যটা বাজারে বেশি বেশি করে বিক্রি করতে ব্যবহার করছে না কী? একজন সঞ্চালককেও দেখলাম না যাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি বিন্দুমাত্র খারাপ আছেন – সেটাই স্বাভাবিক ব্যাবহার, একজন পেশাদার সঞ্চালকের। কিন্তু, আমরাই প্রথম এই করেছি, সেই করেছি, দেখতে থাকুন, সঙ্গে থাকুন বলে যাত্রা পালার সং এর মত আচরণটাও সভ্য দেশে আশা করা যায় না। একজায়গায় স্থির হয়ে বসে পরিষ্কার বাংলায় তথ্য ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন করা অর্থাৎ হনুমানোচিত লাফ ঝাঁপ না দিয়ে, বাজনা বাদ্যি ছাড়া, একজন পেশাদার সংবাদ পাঠক, যাঁর মান ও হুঁষ দুটোই আছে – তা বোধহয় আজ এক বিলুপ্ত প্রজাতি।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৫১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
কাজটার মাহাত্ম্য কোথায়? যাকে খুঁজতে যাওয়া সেই পথিক হারিয়ে যায়নি। তিনি বেঁচে আছেন। যদি তিনি মারা যেতেন, আর তাঁর কাগজপত্র উপজাতিদের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত, তাহলে আমি কাগজের প্রতিটি টুকরো ও তাঁর আবিষ্কারের প্রতিটি বস্তু , তাঁর হাড়গুলি সহ উদ্ধার করে এনে যাদের কাছে সেসব মূল্যবান, তাঁদের হাতে তুলে দিতাম। যে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, সেটা ততটা মহৎ নয় যতটা বুদ্ধির। আমি তাঁকে অসুস্থ, নিঃস্ব অবস্থায় পেয়েছি; আমার উপস্থিতি দিয়ে আমি তাঁকে আনন্দ দিয়েছি, আমার রসদ দিয়ে আমি তাঁকে স্বস্তি এনে দিয়েছি।
অন্য দেশের পাখি - ৯ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ভেতরে ঢুকে কিন্তু ওরা হতবাক। ঠিক এমন ধরণের কিছু দেখবে ওরা আগে ভাবেনি। দেখে মনে হয় জঙ্গলেরই একটা অংশ, কিন্তু প্রজাপতিদের ধরে রাখার জন্যে বিরাট একটা জায়গা – শোনা গেলো ছ'শো স্কোয়ার মিটার – জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এত রং-বেরঙের প্রজাপতি এক জায়গায়, মনের আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা, অজস্র গাছের পাতায় আর ফুলে তাদের রাজত্ব। ছোট ছোট খাল কাটা, তার ওপর আরও ছোট ছোট সাঁকো, ঘাসে-পাতায়-সাঁকোর রেলিঙেও প্রজাপতিদের মেলা, পথ-ভোলা কোন প্রজাপতি ওদেরও চুলে-মুখে-গায়ে – এমন মজার অভিজ্ঞতা ওদের হয়নি কখনো আগে।
অন্য দেশের পাখি - ১০ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এত বিচিত্র রকমের প্রজাপতি একই জায়গায়, জঙ্গলের অংশ হলেও ঠিক জঙ্গল নয়, গাছপালাগুলোর উপর মানুষের হাত স্পষ্ট, প্রজাপতিদের থাকবার আর ডিম পাড়ার সুবিধে হবে এমন বাছাই করা সব গাছ-গুল্ম, কেয়ারি-করা বাগানের মতোই খানিকটা। মানুষের কাটা ছোট ছোট জলাশয়, তার উপর ছোট ছোট সাঁকো – ভালো হলেও খুব স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা বলে মনে হয় না, এগুলোই আমার আবিষ্কার। আর তা ছাড়া মাউন্ট হাউজের ওই অগুনতি প্রজাপতির প্রদর্শন তো ভোলা যাবে না কোনদিনই। পিন দিয়ে লাগানো না থাকলে মনে হতো এখনই বুঝি বা উড়ে যাবে!
চেকিয়া ৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
মায়া জানতে চাইলে এই একটা সাদা মাটা ঘরে কি দেখার আছে?
- মায়া, চারশ বছর আগে এখানে দুই বিবাদী পক্ষের একটি মিটিং হয়েছিল।
- কি নিয়ে বিবাদ?
- ধর্ম এবং জমি।
- দুটো আলাদা ধর্মের লড়াই?
- না, ধর্মটা একই, ক্রিসটিয়ানিটি। প্রভু এক, সেই যিশুখ্রিস্ট, কিন্তু পক্ষ দুই – ক্যাথলিক, যারা পোপকে মানে আর প্রটেস্টান্ট যারা বড়ো তরফের পুরোহিতকে মানতে রাজি নয়। তাদের ভজনালয় আলাদা হয়ে গেছে, ফলে গিরজের সম্পত্তিও ভাগ হচ্ছে। এখানে সেই নিয়ে বিতণ্ডা হচ্ছিল কিন্তু দু পক্ষ সহমত হলেন না কাজেই এক পক্ষকে বেরিয়ে যেতে হলো।
- সে তো হতেই পারে।
- আচ্ছা ধরো তোমাদের উওকিং হাইস্কুলে কিছু ছেলেমেয়েকে যদি শিক্ষক ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন, তারা কি ভাবে যাবে?
- কেন, দরোজা দিয়ে! শাস্তি হিসেবে বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকবে।
- ঠিক। কিন্তু এখানে তা হয় নি। ক্যাথলিক হাবসবুরগ রাজার দুই সম্মানিত প্রতিনিধি রাজকীয় চিঠি এনে বললেন ক্যাথলিক জমিতে প্রটেস্টান্ট গিরজে বানানো যাবে না। শুনে প্রটেস্টান্ট বোহেমিয়ান কাউন্ট’রা ক্ষিপ্ত হয়ে দুই রাজপ্রতিনিধি ও তাঁদের সেক্রেটারিকে ওই জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলেন। এর নাম ডিফেনেসট্রেশন অফ প্রাগ*। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, জানলা দিয়ে মানুষ ছোঁড়ার অগণতান্ত্রিক কায়দা প্রাগ ও বোহেমিয়া থেকে আগেও ঘটেছে। নিচে নেমে গিয়ে দেখাবো ঠিক কোনখানে তাঁরা ভূপতিত হন।
- পতন ও মৃত্যু?
- না, এই উচ্চতা থেকে পড়েও তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান! ক্যাথলিকদের মতে মাতা মেরি তাদের রক্ষা করেন- ফলে হাওয়ায় ভেসে এই তিন জন সুস্থ দেহে নিচে নেমেই ভিয়েনা মুখে পালান। প্রটেস্টান্ট মত অনুযায়ী তাঁরা এই টাওয়ারের গা দিয়ে গড়িয়ে পড়েন এক অশ্ববিষ্ঠা স্তূপে যা বহুকাল কেউ পরিষ্কার করে নি – ফল সফট ল্যান্ডিং! যে যেটা মানবে।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের ধানবাদ অভিযান : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
একি! এখানেও এত জন উঠবে নাকি? আমরা তালে বসব কোথায়?, মহারাজ রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছেন কাণ্ড দেখে। ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ আছে বৈকি। এইটুকু ট্যাক্সির সামনের সিটে টপাটপ চার জনকে উঠে বসতে দেখে তিনি হাঁ হয়ে গেছেন। আগের গাড়িগুলোতেও কেমন আট দশজন করে লোক ঠেসেঠুসে উঠে পড়ছিল। এই গাড়িতে যে এত লোক ধরতে পারে এটাই মহারাজের ভাবনার বাইরে। এবার কি হবে ভেবেই ওনার দম আটকে আসছে। মামা পাশ থেকে আশ্বাস দিলো, না না, চিন্তা নেই, পেছনে শুধু চার জনই উঠবে আমাদের গাড়িতে, একটা সিট বেশি নেওয়া হয়েছে দিদিমার জন্য। পিছনে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ, মামা আর দিদিমাকে ঠেলেঠুলে আরও এক জন এসে চেপে বসল। মালপত্র যা কিছু ছিল সব ডিকিতে ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে। ওদিকে সামনে চারজন বসেছে বললে ভুল হয়, কোনমতে এঁটে গেছেটাই সঠিক কথা, কিন্তু এর পর ড্রাইভারকাকুই বা বসবে কোথায়? দেখা গেল ড্রাইভার তো উঠলই আরেকজন লোকও উঠে পড়ল, সে নাকি সামনে নেমে যাবে। উঠে তো সবাই পড়েছে, এদিকে গাড়ির দরজা তো কিছুতেই বন্ধ হয়না। মহারাজ ভাবছিলেন, এ নিয়ে সবাই বুঝি ভয়ানক চিন্তায় পড়বে, কিন্তু কোথায় কি, দিব্যি নিশ্চিন্ত মনে একটা মোটকা মতো নারকেলের দড়ি বের করে ড্রাইভারকাকু খুব কষে দরজাটা আটকে দিল। আটকে দিল মানে একেবারে গাড়ির সথে ফট করে লেগে গেল, তা কিন্তু নয়, দরজা হাওয়াতেই দাঁড়িয়ে, তবু গাড়ির ফ্রেমের কিছুটা কাছাকাছি আনা গেল, সেটাই সান্ত্বনা। গাড়ি জোরসে ঝাঁকুনি দিলে কেউ অন্তত যাতে ছিটকে পড়ে না যায়। পড়ে গেলে ড্রাইভারেরই মুশকিল, একটা সিটের টাকা মার যাবে, তাই এই ব্যবস্থা - মামা উবাচ। এদিকে ড্রাইভারকাকুও অর্ধেক সিটের বাইরে বেরিয়ে আছে, কোনোমতে বাঁ হাত বাড়িয়ে স্টিয়ারিং ধরে আছে। ওইদিকটা পরের গাড়ির ড্রাইভার এসে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে গেছে। শেষমেশ দড়িদরা বেঁধেছেঁদে গাড়ি ধানবাদ স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করল। রাস্তায় একগাদা ধুলো ওড়াতে ওড়াতে গাড়ি ছুটে চলেছে আর খানাখন্দে চাকা পড়লেই সব যাত্রীরা মিলে শূন্যে লাফিয়ে উঠছে।
অন্য দেশের পাখি - ১১ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ৩৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সাইজে প্রায় এক ফুটের মতো। বড়োসড়ো হলেও খুব লাজুক পাখি, আপন মনে একা-একা ঘুরে বেড়ায়, সাধারণত দেখা দেয় না। পুরুষদের পালকের রঙ প্রধানত নীচের দিকে কালো আর ওপরের দিকে সোনালী-গেরুয়া, চোখে পড়ার মতো একটা বিরাট ঝুঁটি থাকে মাথায়, গায়ে সূর্যের আলো পড়লে বহু দূর থেকেও ঝকঝকে লালচে সোনালী পাখিটাকে দেখতে পাওয়া যায়। এরা রুপিক্যুলা বর্গের পাখি, এই বর্গের অন্য পাখিটার নাম গায়ানান কক-অব-দ্য-রক, প্রায় একই রকমের দেখতে।
চেকিয়া ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
পোল্যান্ডের একটি গ্রামে কিছু পোলিশ ব্যাংকারকে জড়ো করে আমরা পশ্চিমি মুক্ত অর্থ ব্যবস্থার যে ঢক্কা নিনাদের সূচনা করেছিলাম সেটি নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হয়। স্টচনিয়া গদিনিয়া নামক এক প্রায় দেউলে সরকারি জাহাজ নির্মাতার জন্য সিটি ব্যাঙ্ক যে সামান্য এক কোটি ষাট লক্ষ ডলার বাজার থেকে তুলতে পেরেছিল, সেটিকে পূর্ব ইউরোপের প্রথম আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ডিলের সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে। সেটা ১৯৯৪।
পশ্চিমের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশে অচেনা বাণিজ্য সংস্থায় কিছু ব্যাঙ্ক আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ডলার লগ্নি করার সাহস দেখালেন; আমার উন্মাদনা তখন তুঙ্গে, ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে গ্রাহাম বওলির ফোন পেয়ে রীতিমত গর্বিত বোধ করি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমরা কিভাবে এই ডিলের ফি নির্ধারণ করেছি। তুলনামূলক দর বা মার্কেট রিডের কোন প্রশ্ন ওঠে না কারণ এ ধরণের ঋণের আয়োজন কখনো হয় নি।
বলতে পারতাম আঙ্গুল গুণে। বলতে হলো বাজারে কোন ডিল না হয়ে থাকলেও আমরা কিছু এমপিরিকাল তথ্যের সহায়তা নিয়েছি। সেটা একেবারে বাজে কথা। ভিত্তিহীন। বাট হু কেয়ারস!
এদিকে আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাটা যে কি, কিভাবে ঘটল সে সব না বুঝেই চতুর্দিকে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন, পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানো হচ্ছে। পাবলিকের ধারণা আমরা কোন নতুন স্বর্ণ খনির সন্ধান পেয়েছি। স্বাভাবিক। পশ্চিম ইউরোপে মন্দার বাজার বাড়িঘরের দাম কম, শেয়ার বাজার অতল জলের সন্ধানে ধাবিত ; সেই কিছু বাঁধাধরা খদ্দের, দু পয়সা সুদ বাড়ালে তারা চোখ রাঙ্গাবে। তাই ছাড়িয়া নিশ্বাস, যতো বকরা পুবের মাঠে এই তাদের বিশ্বাস। কিন্তু ব্যাঙ্কের ঋণ যারা মঞ্জুর করেন সেই সব গুরুরা সেটা মানলে তবেই না তাঁরা সে মাঠে নামতে পারেন।
শুক্র ভারতী : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ৫৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
১৯২৮ সাল নাগাদ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, শুক্রের আকাশ ঘিরে রয়েছে ঘন ও পুরু কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের আস্তরণ। মেঘের সেই স্তর ভেদ করে শুক্র পৃষ্ঠ থেকে কোনো আলোই মহাকাশের বুকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে শুক্র পৃষ্ঠের কোনো আলো এসে পৌঁছতে পারে না পৃথিবীর বুকেও। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায়, শুক্র পৃষ্ঠ থেকে যদি কোনো আলো পৃথিবীর বুকে এসে না পৌঁছয়, তাহলে শুক্র গ্রহকে আমরা দেখি কী করে? ঘোলাটে সাদা রঙের যে শুক্র গ্রহকে দেখে থাকি আমরা, আদতে তা হলো শুক্র গ্রহকে ঘিরে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড মেঘমালার বহিঃস্তর থেকে প্রতিফলিত সূর্যালোক। শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্রের মাটি থেকে কোনো আলো মহাকাশের বুকে ছড়িয়ে পড়ে না বলেই, শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্র ভূমিকে কখনই দেখতে পাওয়া সম্ভবপর নয়। শুক্র সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পরই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, আলোকচিত্র নয়, একমাত্র রেডার চিত্র বা রেডিও ওয়েভই পারে শুক্র পৃষ্ঠের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে। কারণ, মেঘের স্তর ভেদ করে স্বচ্ছন্দে শুক্র পৃষ্ঠে পৌঁছে যেতে পারে রেডিও তরঙ্গ। শুক্র পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে ফের মেঘের স্তর ভেদ করে বেড়িয়েও আসতেও সক্ষম সে তরঙ্গ। অথয়েব শুক্র পৃষ্ঠের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য রেডার চিত্রই একমাত্র ভরসা। আর ঠিক সেই লক্ষ্য নিয়েই শুক্রের উদ্দেশ্যে পাইওনিয়র শুক্রযান দু’টো পাঠিয়েছে নাসা। শুক্র পৃষ্টের কাছাকাছি পৌঁছে, শুক্র পৃষ্ঠের উদ্দেশ্যে রেডিও ওয়েভ নিক্ষেপ করবে দুই শুক্রযান। শুক্র পৃষ্ট থেকে সেই তরঙ্গের প্রতিফলন সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাবে তারা। পাইওনিয়র ভেনাস দু’টোর উপর তাই একটু বেশিই ভরসা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর বিজ্ঞানীদের মোটেও নিরাশ করে নি পাইওনিয়র ভেনাস ১ ও ২। শুক্রের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে, বহু আকাঙ্খাকিত চমৎকার কিছু রেডার চিত্র পাঠিয়েছে তারা। সেই রেডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানালেন, শুক্র পৃষ্ঠের বিশাল আয়তনের দুই উচ্চভূমিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। ৫,৬০০ কিমি ও ১০,০০০ কিমি ব্যাসবিশিষ্ট সেই উচ্চভূমি দুটোকে সহজেই শনাক্ত করা যাচ্ছে। দুটো নতুন নাম দিয়ে এবার এই উচ্চভূমি দুটোর নামকরণের কথা ভাবলেন তাঁরা।
অন্য দেশের পাখি - ১৩ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সেটা আপনাকে না বলার আর কোন মানে হয় না, এখন হয়তো আপনার কাছ থেকে আমাদের অনেক সাহায্য নিতে হবে। আর সত্যি কথা হল, আমাদের যা উদ্দেশ্য তার সঙ্গে আপনার কাজের কোন সংঘাত তো নেইই, বরঞ্চ একটা আর একটার পরিপূরক বলতে পারেন। যাঁর নির্দেশে কাজটা আমরা করতে এসেছি, তাঁর পরামর্শ ছিল আমরা যেন আমাদের উদ্দেশ্য যতটা পারি গোপন রাখি, এটা নিয়ে কোন হৈ চৈ যেন না হয়, তাই প্রথম আলাপেই আপনাদের জানাইনি ব্যাপারটা।
অন্য দেশের পাখি - ১৪ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সত্যি কথা বলছি হেফা, আমরা একেবারেই বোকা হয়ে গেছি, কী কারণ বুঝতেও পারছি না। তবে ডিরেক্টর সাহেব আর আপনি যখন কাল আমাদের সঙ্গে কথা বলে চলে গেলেন, সাহেব বললেন কালই ফিরে আসবেন প্রজেক্টে, আমরা তখন দুজনে মিলে ইঞ্জিন-টিঞ্জিন সব খুলে দেখলাম। কার্ব্যুরেটরে অনেক জল ঢুকেছে, কনভেয়রটা খুলে গেছে আর প্রপেলারটার দেখলাম ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি, একটা ব্লেড তো ভেঙেই গেছে, তাছাড়া কাদা জমে প্রায় সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে গেছে, ঘুরছেই না ভালোভাবে।
পাল্টে যাচ্ছে কি আফ্রিকার গৃহযুদ্ধের চালচলন? : নূপুর রায়চৌধুরী
বুলবুলভাজা | প্রবন্ধ | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৮০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩০
দেখুন, যুদ্ধ-বিগ্রহের ব্যাপার আফ্রিকায় কোনো নতুন কথা নয় । ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু হলেও মোটামুটি ১৯৬০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন বা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল আফ্রিকা মহাদেশ। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই আফ্রিকার দেশগুলো যেন গৃহযুদ্ধ এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘর্ষের জন্য পাল্লা দিয়ে বাজি ধরেছিল । হাড়-হিম করা ভয়াবহ সব সংঘর্ষ: চাদ (১৯৬৫-৮৫), অ্যাঙ্গোলা (১৯৭৪ সাল থেকে), লাইবেরিয়া (১৯৮০-২০০৩), নাইজেরিয়ান সিভিল ওয়ার (১৯৬৭), উগান্ডার দা লর্ড’স রেসিসটেন্স আর্মি ইন্সার্জেন্স (এলআরএ) (১৯৮৭), লাইবেরিয়া সিভিল ওয়ার (১৯৮৯), সোমালি সিভিল ওয়ার (১৯৯১), সিয়েরা লিওন সিভিল ওয়ার (১৯৯১), রুয়ান্ডান জেনোসাইড (১৯৯৪), রিপাবলিক অফ দা কঙ্গো সিভিল ওয়ার (১৯৯৭–১৯৯৯), এরিট্রিয়ান-ইথিওপিয়ান ওয়ার (১৯৯৮), – আর কত নাম নেব?
এই সব যুদ্ধের ইতিহাস খুঁটিয়ে দেখলে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, গত কয়েক দশকে আফ্রিকার যুদ্ধের প্রকৃতি ও পদ্ধতি উল্লেখযোগ্যভাবে পাল্টে গেছে। "পুরানো বা ঐতিহ্যগত যুদ্ধ’’ এবং "নতুন যুদ্ধ" এ দুইয়ের মধ্যে স্বতন্ত্র পার্থক্য ধরা পড়ে । তবে সব সময় এই বিভাজনের সীমারেখা টানা অত সোজা নয়, কোনো কোনো যুদ্ধে এই দুয়েরই প্রভাব দেখা যায়, সেই যুদ্ধকে তখন ‘’মিশ্র প্রকৃতির (Hybrid)’’ বলে সাব্যস্ত করা হয় । ব্যাপারটা তাহলে একটু খতিয়ে দেখা যাক ।
চেকিয়া ৭ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ৩৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মায়াকে সংক্ষেপে জানালাম চেক আলফাবেটে যদিও অক্ষর বেয়াল্লিশটি, স্বর বর্ণ সাতটি, তারা এই সীমিত স্বর বর্ণগুলি অনেক ভেবে চিন্তে খরচা করেন, যেমন মৃত্যুর প্রতিশব্দ Smrt, শোনায় স্মরত্। এর পিছনে মুখের ব্যায়াম ছাড়া আর কোন যুক্তি আছে জানি না। BRNO উচ্চারণ বরনো অথবা ব্রনো। জার্মানরা অবশ্য এর একটা সহজ ভার্শন রেখে গেছে, ব্রুইন। এই রাজ্যের নাম মোরাভিয়া, চেকে মোরাভা, সেখানে ভাওয়েল আছে মাঝে ও শেষে। জার্মান আরও সহজ, মেহরেন।
মেয়েকে আরেকটা ট্রিভিয়া শোনানোর সুযোগ ছাড়া গেলো না।
চেক ভাষায় আনো (ano, শুনলে নো মনে হয়) হলো হ্যাঁ! আরেকটিমাত্র ইউরোপীয় ভাষায় এমনি গোলমেলে ব্যাপার আছে - গ্রিকে নে মানে হ্যাঁ!
ব্যবসায়ের নামে পূর্ব ইউরোপ বেড়ানোর দিন ফুরিয়েছে। ভিয়েনায় আমার অনাদি ব্যাঙ্কের বোর্ড মিটিং সেরে গাড়ি ভাড়া করেছি চেক সন্দর্শনের বাসনায়। প্রথম স্টপ ব্রুইন, ভিয়েনা থেকে মাত্র একশ মাইল। গাড়িতে বা ট্রেনে দেড় ঘণ্টা (ভাড়া আটশো টাকা!) ইতিহাসে পড়া হাবসবুরগ সাম্রাজ্যের দিগন্ত খুলে যায় চোখের সামনে, তাকে সত্বর চেনা হয়ে যায়। ভিয়েনার শোয়েখাত হাওয়াই আড্ডা থেকে বেরিয়ে শহরে যাবার পথে নির্দেশিকা চোখে পড়ে – এই দিকে প্রাগ, ব্রুইন,ওই বুদাপেস্ত, জাগ্রেবের রাস্তা- হাবসবুরগ রাজত্বের পুরনো জেলা সদর! এককালে কাঁটাতার, ওয়াচ টাওয়ার ছিল এখন সীমানা অবধি নেই। চেনা অচেনা জায়গা পার হয়ে যাই, এমনি হঠাৎ কখন পার হয়েছি আর্কডিউক ফ্রান্তস ফারদিনান্দের স্ত্রী সোফি ফন হোহেনবুরগের পৈত্রিক জমিদারি।
চেকোস্লোভাকিয়া নামের দেশ কোন কালে ছিল না; ছিল কয়েকটি রাজ্য বোহেমিয়া, মোরাভিয়া, চেক সাইলেসিয়া, আপার হাঙ্গেরি (আজকের স্লোভাকিয়া), আটশ বছর পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য, তারপর হাবসবুরগ এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজত্বের (১৮৬৭-১৯১৮) অংশ। আমরা বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়াকে বেশি চিনি, এদের নাম প্রায় একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। বোহেমিয়া আয়তনে বড়ো, প্রাগ তার রাজধানী, ব্যাভেরিয়ার সঙ্গে গায়ে লাগা, জার্মান ভাষা সংস্কৃতি ও শিক্ষার পীঠস্থান; মোরাভিয়া আজকের চেক রিপাবলিকের এক তৃতীয়াংশ, রাজধানী বরনো, চেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর,ইউরোপের ষাট নম্বরে।
সিনেমার আলো : সুপ্রতীক চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ৫৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সিনেমার আলো কতরকম হয়? স্বেন নিকভিস্ট এর উত্তরে বলেছিলেন যে আলো অনেকরকম হয়। সম্ভ্রান্ত, স্বপ্নবৎ, নিঃস্ব, জীবন্ত, মৃত, পরিচ্ছন্ন, দৃঢ়, তীর্যক, যৌনময়, আবছা, বিষাক্ত, রহস্যময়, উত্তপ্ত, অন্ধকারাচ্ছন্ন, হিংস্র, প্রেমময়, পতনশীল, শান্ত এবং বিবর্ণ!
নিকভিস্ট বার্গম্যানের কুড়িটি ছবির সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন। দুবারের অস্কার বিজয়ী।
এই যতরকম আলোর কথা বলা হল তারমধ্যে সবচেয়ে পরিচিত আলো কোনটা জানি না! আলোর গভীরে একটা ইমেজ থাকে,যেটা শুধুই অনুভূতিগ্রাহ্য! যেমন ধরুন "শান্ত আলো"! আপাত ভাবে এর কোনো অর্থ হয় না। এবার এই "শান্ত আলো" শব্দ দুটিকে নিয়ে একটু ভাবা যেতে পারে। ধরে নিন একটা মধ্যবিত্ত গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে নিঝুম অপরাহ্নের আলো এসে পড়েছে। একটা বিড়াল ঘুমোচ্ছে। গৃহস্থের ঘর ভেতর থেকে বন্ধ! এই নিবিড়তাকে শান্ত ভাবা যেতেই পারে। অর্থাৎ আলোর চরিত্র নির্ভর করছে তার সাবজেক্টের ফর্মের ওপর।
অন্য দেশের পাখি - ১৫,১৬ : শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ১৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
দু দিন কেটে গেছে, কোন সুরাহা হল না। তৃতীয় দিনে কামিলার যে ডাক্তার বন্ধু, সে হাতে লেখা একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিল, রেসিডুয়াল ট্রেসেস অব কোকেইন। এটাই ভাবা ছিল ফল্গুর, রিপোর্ট পেয়ে সে বুঝলো তার চিন্তা ঠিক পথেই এগোচ্ছে। আরও একটা ঘটনা। রাত্তিরবেলা ফোন করেছিলেন এসপিণ্ডোলো। পুরো ঘটনাটা ফল্গুর কাছ থেকে শুনে নিলেন, বললেন, তুমি সম্ভবত ঠিকই ভেবেছ, জঙ্গলেরই কয়েকজন মানুষকে লাগানো হয়েছে তোমাদের বিরুদ্ধে, এখনও পর্যন্ত অপরাধ যা সংঘটিত হয়েছে তা সবই করেছে জঙ্গলের মানুষ, তবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমরা যাতে জঙ্গলের মানুষের সাহায্য পাও সে দায়িত্ব আমার।
উৎসব উৎকণ্ঠা : সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ২৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সেদিন সন্ধেবেলায় সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছি, হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। কাপটা টেবিলের ওপর নামিয়ে সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি দরজার সামনে বাপি দাঁড়িয়ে আছে। চাবি এনে দরজা খুলতে খুলতেই প্রশ্ন করি – “ কী ব্যাপার বাপি ? হঠাৎ এমন সময়ে?” ম্লান হেসে বাপি উত্তর দেয় – “এই তোমার কাছে এলাম একটু পরামর্শের জন্য।” পরামর্শ? তাও আবার আমার মতো এক অচল গাড়ির গাড়োয়ানের কাছে?” “তুমি হলে মাস্টারমশাই মানুষ, তোমার সঙ্গে কথায় আমি পেরে উঠবো না।” – বেশ বিনয় করে কথাটা বলে বাপি। এই অবসরে আমার স্ত্রী বাপির জন্যও এক পেয়ালা চা এনে হাজির করেছেন। সেই কাপে ঠোঁট ঠেকিয়ে বাপি বলে, –“সামনের পরবের ছুটিতে বাড়ির সবাই মিলে একটু বেড়াতে যাবো বলে ঠিক করেছি।” বাপি মনের কথা সবটা বলে উঠতে পারে না, আমার গিন্নি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে ওঠেন, – “ বাহ্! এতো খুব ভালো কথা। যা ,যা, ঘুরে আয়। আমিতো তোর কাকুকে বলে বলে হয়রান হয়ে গেলাম। কতদিন বাড়ির বাইরে যাওয়া হয়না। তাই কোথায় যাবি ঠিক করলি? পাহাড় না সমুদ্র?” এক নাগাড়ে এতো কথা শুনে বাপিতো একরকম নাজেহাল। আমতা আমতা করে বাপি বলে,-- “এখনো তা ঠিক করে উঠতে পারিনি কাকিমা। মেয়েটা এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে ওর দাবি তাই সবার আগে। ওর ইচ্ছে এবার পাহাড় দেখতে যাবে, অন্যদিকে ওর মায়ের ইচ্ছে সমুদ্র দেখতে যাবে। আমি তো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কোথায় যাব। এই উৎসবের সময় এলেই আমার বুক , মাথা সব ধরফর করতে শুরু করে। একেতো পরবের জন্য কেনাকাটার খরচ,তার ওপর এই বেড়াতে যাওয়ার খরচ! সামলাবো কী করে,তা ভেবেই আমার ঘুম উড়েছে। কাকু, আমায় একটা উপায় বাতলে দাও দেখি।”
রাশিচক্রের চক্রব্যূহে: জ্যোতিষশাস্ত্র এবং ইন্টারনেট-যুগে জ্ঞানগম্যির রকমসকম : সুব্রত রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭৪
একখানা সাত-বাসি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। রাজা যাবেন যুদ্ধে। রণসজ্জা প্রস্তুত। কিন্তু বাদ সেধেছেন রাজজ্যোতিষী। রণক্ষেত্রে রাজার সাক্ষাৎ মৃত্যুযোগ নাকি দেখতে পাচ্ছেন তিনি! রাজজ্যোতিষীর গণনাকে রাজা অব্যর্থ বলে ভাবেন। সব কাজেই নেন তাঁর পরামর্শ। এবারেও তাঁর সাবধানবাণী ফেলতে পারছেন না। এদিকে সেনাপতি রেগে কাঁই। সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র, রণকৌশল – সব কিছুতেই প্রতিপক্ষের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থেকেও এভাবে রণে ভঙ্গ দিতে তাঁর বেজায় আপত্তি। রাজজ্যোতিষীর ডাক পড়ল রাজসভায়। আবারও রাজার মৃত্যুযোগ ঘোষণা করে সর্বসমক্ষে তিনি সগর্বে জানান যে, তাঁর গণনা কখনও ভুল হয় না। “বটে!”, সেনাপতি শুধোন, “তা আপনার নিজের মৃত্যু বিষয়ে কোষ্ঠীতে কিছু লেখেনি?” রাজজ্যোতিষী ঝটপট উত্তর দেন, “লিখেছে বই-কি, সেনাপতি! গণনা করে দেখেছি যে, বাঁচব আরও বহু বছর। থুত্থুড়ে বুড়ো হয়েই মরব আমি।” সেনাপতি মৃদু হেসে বলেন, “না গো মাননীয় মহাশয়, আপনি আর এক মুহূর্তও বাঁচবেন না”, এবং কথাটা শেষ হওয়ার আগেই চকিতে কোমরে গোঁজা তরোয়ালটা খাপ থেকে বের করেই রাজজ্যোতিষীর কাঁধ লক্ষ্য করে চালিয়ে দেন নিখুঁত নিশানায়। ঘচাং করে ধড় থেকে মুণ্ডুটা আলাদা হয়ে যায়..
গল্পটা সেকেলে হলেও এর নৈতিক উপদেশটুকুর প্রয়োজন এখনও ফুরোয়নি, অন্তত সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষার খবর তেমনই ভাবাচ্ছে। গোড়াতেই সেগুলো একটু দেখে নিলে মন্দ হয় না। ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে জ্যোতিষ-বাণিজ্যের মোট বহরটা ছিল প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাপে এবং তা বার্ষিক প্রায় ৬ শতাংশ হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জন্মছক দেখে ভাগ্যগণনা ছাড়াও এই সওদার মধ্যে আছে নিউমেরোলজি, পামিস্ট্রি, ট্যারট কার্ড গণনা, বাস্তুশাস্ত্র ইত্যাদির পরামর্শ-খরচ এবং মহার্ঘ গ্রহরত্নের বিক্রিবাটার হিসেব। জ্যোতিষশাস্ত্রের এই বিপুল বাজারে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছেন গড়ে লাখখানেক করে নতুন জ্যোতিষী [Allied Market Research 2023]। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় বিশ্বখ্যাত পিউ ফোরাম জানিয়েছিল যে, মার্কিন মুলুকে প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ জ্যোতিষে ঘোর বিশ্বাসী [Gecewicz 2018]। ব্রিটেনে এই বিশ্বাস কিছুটা কম (১৯%) হলেও ইউরোপের অনেক দেশেই জ্যোতিষে আস্থাশীল মানুষের শতকরা হিসেব মার্কিনীদের মতোই, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি। যেমন, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়ামে তা ৩০ শতাংশের ওপরে। ইউরোপের অনেক দেশেই প্রতি তিনজনের একজন মানুষ ভাগ্যে বিশ্বাস করেন [PEW Research Center 2018: 135]। ভারতের চিত্র অবশ্য আরও ভয়াবহ। ২০২১ সালের পিউ-সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, এদেশে ভাগ্যবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ এবং জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন শতকরা ৪৪ জন ভারতীয় [Sahgal et al 2021: 206]। আরও একটি পরিসংখ্যান তাৎপর্যপূর্ণ যে, কোভিড অতিমারির পর থেকে জ্যোতিষে বিশ্বাস ও জ্যোতিষ ব্যবসার পালে যেন একটা ধাক্কা লেগেছে, ধাক্কাটা এসেছে প্রধানত জ্যোতিষের অনলাইন বাজারের হাত ধরে। কাজেই, বিষয়টিকে নিয়ে একটু চর্চা করার দরকার আছে।
‘জ্যোতিষশাস্ত্র’ (astrology) শব্দটার গায়ে বেশ-একটা জ্যোতির্বিজ্ঞানের (astronomy) গন্ধ মাখানো আছে! অনেকেই দুটোকে এক বলে ভাবেন। এ হেন ভ্রান্তিকে গোড়াতেই শুধরে নেওয়া দরকার। তবে কেবল এটুকু হলেই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও যখন বিষয়টিকে চর্চার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন বিজ্ঞান না-হোক, যে কোনও প্রকারের জ্ঞানচর্চার দিক থেকেও এর আদৌ কোনও মূল্য আছে কিনা, খতিয়ে দেখা দরকার তা-ও। এরই সঙ্গে, ফলিত জ্যোতিষ আদৌ ফলে কিনা, তার উত্তরও আমাদের পেতে হবে।
নোবেল ২০২৪- অর্থনীতির গবেষণায় ইতিহাসের প্রয়োগ : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | ৬৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ইতিহাসে নোবেল পুরস্কার হয় না, কিন্তু এবারের অর্থনীতির নোবেল অনেকটাই ইতিহাস ঘিরে। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারে গাণিতিক বিষয়েরই প্রাধান্য- রাশিবিজ্ঞান, গেম থিওরি, ফিনান্সিয়াল ম্যাথমেটিক্স। ২০২৪এ অর্থনীতির নোবেল পেলেন দারন আসেমোগলু (Daron Acemoglu), জেমস এ. রবিনসন (James Robinson) আর সাইমন জনসন (Simon Johnson)। বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন - সাধারণ মানুষের সুখসমৃদ্ধিতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানব্যবস্থা কী ধরণের ভূমিকা পালন করেছে এবং করতে পারে।
এঁদের মধ্যে প্রথম দুজনের লেখা একটা উল্লেখযোগ্য বই হল "Why Nations Fail: The Origins of Power, Prosperity, and Poverty"- অর্থনীতির চেয়ে বইটিকে ইতিহাসের বইই বেশি করে বলা যায়। বইটিতে দারন আসেমোগলু এবং জেমস এ. রবিনসন দেখিয়েছেন কেন কিছু রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়, আর অন্যরা দারিদ্র্যের জালে আটকে থাকে। তাঁদের মতে, একটি দেশের সাফল্যের মূল কারণ হল তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমন্বয়মূলক প্রতিষ্ঠান (inclusive institutions) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেয়, এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আনে। এর বিপরীতে, শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান (extractive institutions) ক্ষমতা ও সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত করে, আর সমাজকে অসাম্য, স্থবিরতা এবং ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যায়।
কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন : ইমানুল হক
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ০৯ নভেম্বর ২০২৪ | ২১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গ্রামে আগে ছেলেদের প্রচুর কাজ ছিল। চাষে সাহায্য করা পড়াশোনা করা ছাড়াও ক্লাব করা ফুটবল খেলা, হাডুডু কবাডি নুনচিক / গাদি/ জাহাজ খেলা, শীতে ভলিবল খেলা, ডাংগুলি পেটানো, মার্বেল খেলা, ভাটা খেলা, নিদেন পক্ষে দাবা চাইনিজ চেকার লুডো বা বাগ বন্দি বা তাস খেলা। নাহলে আড্ডা দেওয়া।
যাত্রা নাটকের মহলা দেওয়া। সবাই নাটক যাত্রা না করলেও মহলা দেখতে বা শুনতে ভিড় করতেন। নানা ধরনের খেলার দর্শক হতেন। আড্ডায় গিয়ে কথা শুনতেন।
মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়েরা বিকেলে পাড়া বেড়াতেন। এ ওর চুল বেঁধে দিতেন। কেউ নতুন কোনও সেলাই ফোঁড়াই কুটুম বাড়ি গিয়ে শিখে এলে শিখতে যেতেন।
পুজোর ভিড়ে ছনেন্দ্রনাথ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১০ নভেম্বর ২০২৪ | ৪৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
"ও কাকিমা, ওরা আমায় কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না, তুমি একটু বলে দাও না।"
ছেনুর মা ভেতরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছিলেন, হঠাৎ পিছন থেকে এরকম ডাক শুনে অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন কাঁদো কাঁদো মুখে হাফপ্যান্ট পরা একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, ছেনুর মতো একই বয়স বা এক দু বছর বড় হবে হয়তো।
ছেনুর মা, তাকে ডেকে বললেন, কি হয়েছে? তোমার নাম কি?
সে আরো কাঁদো কাঁদো মুখে জানাল, তার নাম চন্দন।
তার কথা থেকে জানা গেল প্যান্ডেলের সামনে হুটোপাটি করে খেলাধুলোর সময় ছেনু নাকি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে, এবং সে টাল সামলাতে না পেরে পড়বি তো পড় প্যান্ডেলের ওপর গিয়ে পড়েছে। এবং সেই পতনের ফলে প্যান্ডেলের এক জায়গার কাগজের সাজসজ্জা ফর ফর করে ছিঁড়ে যায়। প্যান্ডেলের লোকজন সেই অবস্থায় দেখতে পেয়ে চেপে ধরে বকাবকি করে, কিন্তু চন্দন পেছনে মুখ ঘুরিয়ে দেখে আসল অপরাধী পগারপার। ফলে এক তরফা সব বকুনি তাকেই শুনতে হয় আর প্যান্ডেলের ডেকোরেশন নষ্ট করার জন্য প্যান্ডেলের কাছে খেলাও বারণ হয়ে যায়। আজ যেই সে ওখানে খেলতে গেছিল, ওমনি ডেকরেটরের লোকজন হাতুড়ি নিয়ে তাড়া করেছে।
পরীক্ষার বন্ধু : শুভাশিস পাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১০ নভেম্বর ২০২৪ | ৩৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
দিন দুয়েক কাটলো, এক একদিন কাটে আর পাহাড় প্রমাণ টেনশন বাড়তে থাকে, পরীক্ষা চলে এলো। সার্জারী একটা সাগর, medicine একটা সাগর। কি কি করে পেরবো, যদি বা উৎরে যাই, biostat বই চাপা পড়ে বোধয় গত জন্মে মরেছিলাম, কিছুতেই মাথায় ঢোকেনা। হোস্টেল থেকে বেরোনো বন্ধ, লোকজনের মুখ দেখিনা, ফুট খানেক দাড়ি হয়েছে, সেই নিয়েই সাপ্তাহিক অন কল করতে যাই। তার আবার সুবিধে ও আছে!
সেই বাসি দাড়ির শোনা গল্প; আমাদের এক সিনিয়র ডিউটিতে, সেদিন নার্সিং হোম এ তুলকালাম শুরু হয়েছে কি একটা কারণে, আগুন টাগুন লাগিয়ে দেয় আর কি! কই ডাক্তার, শুয়োরের বাচ্চা ডাক্তার কোথায়! এইসব হাকডাক চলছে। সেই দাদা হেলথ সার্ভিস করা লোক, বাঘা বাঘা জায়গায় একা নাইট ডিউটি করে এসেছে, যেখানে দিনের বেলা লোকে দল বেঁধে চলে সমাজবিরোধীদের ভয়ে। তাকে এই শহুরে শখের ঝামেলাবাজরা কি করবে?
তো সেই দাদা, শার্ট টার্ট আউট করে, চুল উস্কো খুস্কো করে, ১৫ দিনের না কাটা দাড়ি নিয়ে লিফট দিয়ে না নেমে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করবে যেই, দেখছে হুড়হুড় করে বানের জলের মত বিষখ্যাত জায়গার লোক ঢুকছে ওয়ার্ডে। হাতে পেলে একটা মার ও মাটিতে পড়বেনা, কার ভুল, কি গন্ডগোল, কিচ্ছু বলার জো নেই। বেশ কিছু লোক সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে সেই দাদাকে দেখলো বটে, দামী শার্ট প্যান্ট, যদিও আউট করা। কিন্তু ওই যে বাঁচিয়ে দিল ১৫ দিনের অশৌচ মার্কা দাড়ি।