এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  কাঁটাতার

  • ‘রক্তমণির হারে’: বেদনা বিষাদ স্মৃতিকাতরতার আখ্যান

    স্বপন পাণ্ডা
    পড়াবই | কাঁটাতার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৪৫ বার পঠিত
  • ১৯৪৭ উত্তর ভারতবর্ষ জন্ম দিয়েছিল নতুন কিছু শব্দবন্ধের। এই প্রবীণরা কখনও স্বাধীনতা বলেননি, বলেছেন পার্টিশন, তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে শব্দ ভারতের অবদান। পার্টিশনের হাত ধরে এসেছে উদ্বাস্তু। রিফিউজি কলোনি। তারও পরে এসেছে অনুপ্রবেশ। বসেছে কাঁটাতার। এসেছে এনআরসি, নতুন নাগরিকত্ব আইন। শুরু হয়েছে "বৈধ-অবৈধ" বিচার। শোনা যাচ্ছে, নতুন শব্দবন্ধ, "অবৈধ অনুপ্রবেশ"। যাঁরা বিচার করছেন, তাঁদের বিচার কে করে। এসব শব্দের, আখ্যানের জন্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশভাগের এই আদি পাপ, মুছে দেবার আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এভাবেই থেকে গেছে বেদনায়, ভাষায়, আখ্যানে। থেকে গেছে, এবং এখনও যাচ্ছে। সেই আখ্যানসমূহের সামান্য কিছু অংশ, থাকল পড়াবই এর 'কাঁটাতার্' বিভাগের দ্বিতীয় সংখ্যায়।


    "যারা একবার উদ্বাস্তু হয়েছো, তারা আর কোনোদিনই এমন মাটি খুঁজে পাবে না, যেখানে আবার বেঁচে উঠতে পারো।
    যারা হারিয়ে গেছো, তারা বসে থাকো। জিজ্ঞাসা কোরো না, তোমরা কোথায় আছো। বোঝো, তোমরা মরে আছো।
    "
    -ইনতিজার হুসেন

    প্রাচীন ভারতবর্ষের মহাকবি কালিদাস তাঁর একের পর এক কাব্যে-মহাকাব্যে এক আশ্চর্য দেশের কল্পনা করেছিলেন – সে দেশ কখনো রামগিরি পর্বত থেকে অলকাপুরী, কখনো সমুদ্র থেকে হিমালয় পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তারিত। আর সেই হিমালয়, ‘স্থিতা পৃথিব্যা ইব মানদণ্ড’। কাব্যধুনির এই গাম্ভীর্যে সেদিনের মহা ভারতবর্ষকে নিয়ে আমাদের মনে জেগে ওঠে এক সুদূর বিশাল দেশ-কল্পনা। এবং সে দেশ, সেই দেশ শুধু কল্পনার নয়, ভৌগোলিক ভাবেও আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর – তিন সমুদ্র দিয়ে ঘেরা হিন্দুকুশ, কারাকোরাম, হিমালয়, নাগা, আরাকান, পর্বতমালা-বেষ্টিত এক বিশাল ভূখণ্ড – এখন যা খণ্ডিত হলেও, ‘উপমহাদেশ’, এই নতুন নামে ডেকে, চিহ্নিত করে আমরা ভুলতে চাই ১৯৪৭-এর দুঃস্বপ্নের, আত্মঘাতের স্মৃতি। সাতচল্লিশে, আসলে আমাদের "চৈতন্যই হল আক্রান্ত, খণ্ডিত, পরাজিত ও এমনকি লাঞ্ছিতও।"

    দেশভাগ ও স্বাধীনতার চার দশক পরে আমাদের ভাষার প্রধান এক ঔপন্যাসিক দেবেশ রায়, যিনি নিজে আমৃত্যু বহন করে গেছেন খণ্ডিত ভারতবর্ষের খণ্ড-বিখণ্ড হবার নিঃসীম বেদনা, তিনি গড়ে তুললেন দেশভাগ-স্বাধীনতার গল্প সংকলন ‘রক্তমণির হারে’। সাহিত্য অকাদেমি প্রকাশিত এই দুই খণ্ডের সংকলনের প্রথম খণ্ড বাংলাভাষার আখ্যান, দ্বিতীয় খণ্ড উর্দু, হিন্দি, পঞ্জাবি, ওড়িয়া, গুজরাতি, তামিল, ডোগরি, মারাঠি, সিন্ধি, কন্নড় ও ইংরেজি ভাষায় রচিত আখ্যানের অনুবাদ। দুই খণ্ড; দু’টি ভূমিকা। আর এই ভূমিকাদু’টিতে চিন্তক দেবেশ রায় মেলে ধরেছেন সেই হারিয়ে যাওয়া ভারতের আখ্যান, স্মৃতি ও বেদনার ভাষ্য। এবং, যে আশ্চর্য গল্পগুলি দিয়ে গাঁথলেন ‘রক্তমণির হার’, তা এখন এক চিরায়ত ক্লাসিক সংকলন। কারণ, তামাম হিন্দুস্থান ও পাকিস্তানের লেখকদের আখ্যান-সমাবেশে এখানে আমরা স্পর্শ করতে পারছি আজ থেকে পঁচাত্তর বছর আগের সেই বেদনাদীর্ণ আমাদের পূর্বপুরুষের চৈতন্যের আলোড়ন, যা নিয়তি-নির্দিষ্ট হয়ে উত্তরপুরুষের চেতনায় সংক্রমিত হয়ে চলেছে এবং চলতে থাকবে। এ স্মৃতি-সংক্রমণ থেকে আমাদের মুক্তি নেই।

    দেবেশ রায়, এডোয়ার্ড সয়িদ-এর কালচার অ্যান্ড ইমপিরিয়ালিজম বই থেকে তুলে এনেছেন ইতিহাসের এক নৈর্ব্যক্তিক সত্য – "সাম্রাজ্য বস্তুত এক প্রলম্বিত নৈতিক কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনের জন্যেই অধীনস্থ, নীচ, পশ্চাৎপদ জাতিগুলিকে শাসন করতে হবে।" আর এই ‘নৈতিক কর্তব্য’ সাধন করতে গিয়েই ব্রিটিশ শাসকেরা উপমহাদেশের ক্ষমতালোভী কতিপয় রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে ঘটিয়ে তুলতে পারল এমন এক অভাবিতপূর্ব ঘটনা – দেশভাগ। ভারত-চেতনার হত্যা ঘটাতে তারা ঠেলে দিল আমাদের গৃহযুদ্ধে, দাঙ্গায়। রক্তপাত, অবিশ্বাস, ঘৃণার লাভাস্রোতে ছাই হয়ে গেল সাধারণ কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন আর ভবিষ্যৎ। এমন চিরস্থায়ী সেই অভিঘাত যে, সাত দশক পার হয়েও সেদিনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে আমাদের লেখায়, চেতনায়। ক্ষতস্থল থেকে নির্গলিত সে-রক্তস্রোত যেন কখনো থামবার নয়, প্রশমিত হবার নয় ... অথচ, আক্ষেপ এই যে, উর্দু, পঞ্জাবি, ডোগরি ও সিন্ধি ভাষার গল্প সেই স্মৃতিকে যেভাবে লালন করতে পেরেছে, সেই ভয়াবহ সন্ত্রস্ত দিনরাত্রির প্রত্যক্ষতাকে বহুকৌণিক ভাবে উপস্থাপিত করেছে, বাংলা গল্প কিন্তু তা পেরে ওঠেনি। বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, মানিক সতীনাথের মতো লেখকও – "দেশভাগের মত ঘটনার যে অচিন্ত্যপূর্বতা, লক্ষ লক্ষ মানুষের যে উদ্বাসন, পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাসে যে অভাবিত আলোড়ন, সেই আকাঁড়া বাস্তবকে ... দাপটে আঁকড়ে ধরলেন না। দু’টো-একটা গল্প বা উপন্যাসের চেষ্টা হল কি হল না – সেটা বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য এই অভিজ্ঞতাটুকু, যে যুদ্ধ-দুর্ভিক্ষ-দাঙ্গায় বাংলা গল্প-উপন্যাস যে নৈতিক জিজ্ঞাসায় কাতর হয়ে আধেয়-কল্পনার মৌলিক বদল ঘটিয়েছিল, দেশভাগ-স্বাধীনতায় তা ঘটল না। সেই মুহূর্তে বাংলা গল্প-উপন্যাস বস্তুত নীরবই ছিল৷"

    তবু ওই নীরবতার ভেতরে নরেন্দ্রনাথ মিত্র, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, জীবনানন্দ দাশ, রমেশচন্দ্র সেন, দিনেশচন্দ্র রায়, সুলেখা সান্যাল, অমলেন্দু চক্রবর্তীর মতো লেখকেরা কেউ প্রত্যক্ষে, কেউ বা পরোক্ষে বয়ন করেছেন সেদিনের ইতিহাসকে। জীবনানন্দের বাসমতীর উপাখ্যান থেকে সংকলিত টুকরোয় আমরা শুনি নিশিন্দা-যাত্রী প্রভাসবাবু ও প্রগলভ বাটলারের কথাবার্তায় পাকিস্তান গড়ে ওঠার সমসময়ের ইঙ্গিতময় বিবরণ:
    -পাকিস্তান হইব নাকি কত্তা??
    -হবে শুনছি।
    -আউজগাই?
    -হ্যাঁ – শিগগিরই৷
    -আপনারা পাকিস্তানে থাকইয়া না কত্তা?
    -দেখা যাক –
    -থাইক্যা যায়ন মাইয়াপোলা লইয়া, আন্ডাবাচ্চা আরামে থাকব।
    সামান্য বাটলারের ভেতরে ততদিনে এই কথা ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে যে, পাকিস্তান যেন বা এক প্রতিশ্রুত ভূখণ্ড, সেখানে সবাই ‘আরামে থাকব।’ অন্যদিকে, চতুর, শিক্ষিত, হিন্দু মধ্যবিত্তের উদাসীনতা, মুসলমান বাটলারের প্রতি উপেক্ষা – আমাদের নজর এড়ায় না। ঘটনার ধারাবাহিকতায় নরেন্দ্রনাথ মিত্র-র ‘ভুবন ডাক্তার’ গল্পে দেখা যাবে, হিন্দুরা ততদিনে পালাচ্ছে, পালিয়ে গেছে। চলে গিয়ে কেউ কেউ আবার ফিরছে ফেলে যাওয়া জমি-বাড়ি বিক্রি করে দেবার জন্যে। গল্পের কথকের বাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার কাসিমপুর। সে এখন কলকাতার চাকুরে। পাকিস্তান হবার পর পর দেশে ফিরে জমি বিক্রির চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারে, সম্পত্তির তেমন দর নেই, খদ্দেরও নেই। ফেরার আগে দেখা করতে গেল মাসিমার সঙ্গে। মাসিমার চাকরটি মুসলমান কিশর কলম। ডিঙি নৌকোয় কলমের সঙ্গে ফেরার পথে দেখে – "ছোট ছোট খাল গেছে এঁকে বেঁকে। ... দুই দিকে ঝোপ৷ কোথাও বা বাঁশের ঝাড়, সুপারির বাগান, গাব, শ্যাওড়া আর আগাছার জঙ্গল। মাঝে মাঝে দুচারখানা করে বাড়ি। ঘরগুলি তালাবন্ধ। কলম হেসে বুঝিয়ে দিল- হিন্দুরা ভয় পায়া পলাইয়াছে।"

    ভয়ে, নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যাবার এক নিদারুণ বিবরণ আছে রমেশচন্দ্র সেন-এর ‘পথের কাঁটা’ গল্পে। পরাশর হাঁটছে, আসলে পরাশর পালাচ্ছে। জানে না, কে বা কারা তাকে এভাবে পালাতে বাধ্য করল। সে শুধু ভাবে – "কী পাপই যে করেছিলাম। শেষটায় দেশছাড়া, ভিটাছাড়া হইলাম।" তার বাঁ হাতে বোঁচকা, ডান হাতে ভাঙা বালতির ভিতর ময়লা জীর্ণ একটা লণ্ঠন, নুনের মালা, তেলের শিশি, দু-একটা ঘটি-বাটি, আর গরিবের সংসারের সামান্য তৈজসপত্র। সে একা নয়, এভাবেই – "চলিয়াছে কাতারে কাতারে মানুষ – পঙ্গু, অন্ধ, খঞ্জ, সুস্থ, বলবান, যুবা, শিশু, বৃদ্ধ, নর ও নারী। পুব হইতে পশ্চিমে বাক্স-পেটরা হাঁড়ি-কুড়ি বিছানার যোজনব্যাপী বিরাট কিন্তু বিচ্ছিন্ন মিছিল। মানুষগুলার চোখে-মুখে অদ্ভুত ভীতি, সামান্য শব্দেই আঁকাইয়া ওঠে। মাঝে-মাঝে পিছু তাকায়। দূরে অস্পষ্ট কিছু দেখিলেই বলে, ‘ঐ-ঐ’"। সবার মুখে এক প্রশ্ন – পথ আর কতটা? পশ্চিম বাঙলা কত দূর? একই দৃশ্য। দলে-দলে মানুষ চলেছে। পুব থেকে পশ্চিমে। দলে-দলে আসছে পশ্চিম থেকে পুবে। পদে পদে মৃত্যুভয়, মেয়েদের লুট হয়ে যাবার ভয়, কলেরায় মারা যাচ্ছে দলে দলে লোক। খাদ্য নেই, পানীয় নেই, আচ্ছাদন নেই, বান্ধব নেই। ভাত রাঁধলে বুভুক্ষুরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে ভাতের থালায়। তবু যাত্রা অব্যাহত। পথের মা-হারা ছেলেকে কুড়িয়ে নিয়ে নিজের ছেলেকে নিয়ে। হাঁটছে পরাশর। পরাশরের হাঁটার ভেতর যেন সেদিনের পূর্ব পাকিস্তানের তামাম মানুষজন হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে সবকিছু লুট হয়ে যায়। শিশুরা হাতছাড়া হয়ে যায়, মেয়েদের তুলে নিয়ে যায়, ‘আল্লা হো আকবর’ জিগির তুলে অন্ধকারে ঝলসে ওঠে ছুরি। সদাশয় বিধর্মী প্রতিবেশীরা অসহায়, বাঁচাতে পারে না বিপন্ন প্রতিবেশীকে। রমেশচন্দ্র নিরপেক্ষ কথক হয়ে উঠে দেখান সেদিনের পশ্চিম থেকে পুবে যাঁরা হাঁটছিলেন, সেই হতভাগ্যদের কথাও – "চোখে সমান হতাশা, চেহারায় একই রূপ রিক্ততার ছাপ। এরাও ঘর-বাড়ি হারাইয়াছে, সর্বস্ব খোয়াইয়াছে। কারো বাপ মরিয়াছে, কারো ভাই, কারো স্ত্রী। মায়ের চোখের সামনে দুবৃত্তরা ছেলেকে মারিয়াছে।" এই দুই দল যখন মুখোমুখি হয়, তখন – "সামনে আসিয়া একদল আরেক দলের দিকে চাহিয়া নীরবে দাঁড়াইয়া রহিল। দু-দলের দৃষ্টিই শান্ত, স্থির, তাতে হিংসা নাই, দ্বেষ নাই। তাদের চোখে শুধু একটি প্রশ্ন, ‘তোমাদেরও এই দশা ভাই?’ " দেশভাগ ও দেশত্যাগের এমন প্রত্যক্ষ জোরালো আখ্যান, দু’টুকরো হয়ে যাওয়া ছেঁড়া মানচিত্রের এ-প্রান্ত ও-প্রান্তের দীর্ঘশ্বাস একেবারে তুলনারহিত। দেবেশ রায় যে-নীরবতার কথা তোলেন, এ গল্প সেক্ষেত্রে অনন্য ব্যতিক্রম।

    দীনেশচন্দ্র রায়-এর ‘কুলপতি’ গল্পে আমরা পড়ি, এক সম্পন্ন পরিবার তাদের কুলবিগ্রহ কালাচাঁদকে নিয়ে পালাচ্ছে। কালাচাঁদ বহু সম্পত্তির মালিক, সোনা-দানা-হীরেয় বিভাসিত। কিন্তু মর্মান্তিক দেশভাগ সেই ‘কুলপতি’ কালাচাঁদ ঠেকাতে পারেন না, পারেন না পরিবারে একের পর এক মৃত্য। সাতচল্লিশে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক ‘গরম’ হয়ে উঠল। পীরের মাজার অপবিত্র করল হিন্দুরা, পীরসাহেবকে খুন করল। হিন্দুপ্রধান এলাকা। কিন্তু এবার শুরু হল পাল্টা আক্রমণ। সেই আক্রমণের জেরে কালাচাঁদকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালাচ্ছে পরিবার। মৃত সৈনিকদের মতো অন্ধকারে বুকে হেঁটে এগোয় তারা। দূরে জ্বলে ওঠে মশাল। ওরা এগিয়ে আসতে থাকে। ঘিরে ধরে। বৃত্ত ছোট হয়ে আসে। তরুণী বধূটি বুঝতে পারে – "আমি লুঠ হয়ে যাবো। ... দাড়িওয়ালা মুখগুলো হাসিহাসি মুখে, চকচকে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।" যথাসর্বস্ব ওদের হাতে তুলে দিয়ে রফা হল একরকম। একটু এগোবার ছাড়পত্র। রাতে স্বামীর পাশে শুয়ে আছে বধূটি – বুকে, ব্লাউজের মধ্যে লুকনো কালাচাঁদ। দু’জনের মধ্যে এই পাথরের ঠাকুর যেন পাঁচিল তুলে দিয়ে বসে আছে। মেয়েটি ব্লাউজের ভেতর থেকে সেই গামছার ভারি পুঁটলি একটানে বের করে গভীরতর অন্ধকারে ছুঁড়ে দেয়। কুল নেই, তার কুলপতি! অনবদ্য প্রতীকী গল্প। দেশভাগ বদলে দিচ্ছে বহু কিছু – সংস্কার, বিশ্বাস, ধর্মবোধ, নৈতিকতা – সব। মানুষ যেন সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে এগিয়ে চলেছে, শুধু বাঁচতে চায় সে, যেমন করেই হোক বাঁচতে চায়।


    "স্মৃতির নির্মাণক্ষমতা ইতিহাসের চাইতে প্রবলতর।" – দেবেশ রায়।

    উর্দু, পঞ্জাবি, সিন্ধি, হিন্দি ভাষার লেখকেরা তাঁদের ওই নির্মাণক্ষমতার আশ্চর্য সামর্থ্যে, দেবেশ রায়ের আক্ষেপ মিটিয়ে দেন। তাঁরা নীরব থাকেন না, প্রত্যাখ্যান করেন না মহাভুজ সময়কে। বরং গ্রহণ করেন ভয়াল বাস্তবের ধোঁয়া ধুলো নক্ষত্র। কৃষাণ চন্দর-এর ‘পেশোয়ার এক্সপ্রেস’, সাদাত হাসান মান্টোর ‘খোলামেলা সুরাইয়া’। কাশিম-এর ‘কোন দেশের মেয়ে গো ওটা?’, আহমেদ নাদিম কাসমি-র ‘পরমেশ্বর সিং’, পান্ডে বেচান শর্মা ‘উগরা’-র খুদারাম, ভীষ্ম সাহনি-র ‘পালি’ – এই সংকলনের শুধু নয়, এসব গল্প ভারতীয় উপমহাদেশের গর্ব।

    বিশ্বসাহিত্যেও, বিশেষত, কৃষাণ চন্দর ও সাদাত হাসান মান্টোর দাঙ্গা-দেশভাগের আখ্যান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মান্টো, সন্ত কবীরকে চরিত্র কল্পনা করে, টুকরো টুকরো কোলাজের কায়দায় তুলে ধরেছেন সেই ভয়াল সময়ের বিদ্রূপাত্মক প্রতিবেদন। গল্পের শেষটুকু যেন মান্টোর স্বপ্নের ভারত, কবীর নানক সুরদাস লালন সাইয়ের অনুপ্রাণিত এক কল্প-ভারতের ইশারা রেখে চলে যায়:
    "জাতির পিতা মহম্মদ আলি জিন্নাহ প্রয়াত হলেন। সারা দেশ শোকে ডুবে গেল। প্রত্যেকেই হাতে কালো ব্যাজ পরতে লাগল। নিঃশব্দে তাদের দেখে কবীরের গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। শুধু এতগুলি ব্যাজ পরার জন্য এতখানি কাপড় – এ দিয়ে তো ক্ষুধার্তরা এবং উলঙ্গরা শরীর ঢাকতে পারত।" কবীর শোকার্তদের জানাল।
    তারা বলল, "তুমি কমিউনিস্ট। তুমি পঞ্চম বাহিনীর লোক। তুমি পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বাসঘাতক।" এই প্রথম কবীর হাসল। "বন্ধুগণ, আমি কিন্তু হাতে কালো, সবুজ, অথবা লাল কোনও ব্যাজই পরিনি। ”

    পেশোয়ার এক্সপ্রেস অত্যন্ত জনপ্রিয় – বোধহয় সর্বাধিক পঠিত এবং পার্টিশানের গল্পগুলির মধ্যে অনন্য।
    যন্ত্রচালিত রেলগাড়ি এখানে হয়ে ওঠে অযান্ত্রিক। তার জবানিতেই আমরা শুনি - "ভারত ভাগের সময় এমন কতগুলো নারকীয়, অমানবিক, পশুর মতো ব্যবহার মানুষের প্রতি মানুষকে করতে দেখেছি যা আমাকেও প্রচণ্ডভাবে আঘাত দিয়েছে।" এরপর স্টেশনের পর স্টেশন পেরোয় পেশোয়ার এক্সপ্রেস। প্রতিটি কামরায় ভিড়ে ঠাসা আতঙ্কিত হিন্দু। গন্তব্য পঞ্জাব প্রদেশ। আজন্মের প্রিয় জায়গা ছেড়ে চলেছে সবাই অপরিচিত জায়গার উদ্দেশ্যে। শেষবারের মতো তারা দেখে নেয় জন্মভূমির সৌন্দর্য। আবহে চলমান চিত্রমালার মতো চলতে থাকে পাহাড়ের পর পাহাড়, জঙ্গল, সবুজ মাঠ, ফলে ভরা উপত্যকা। হাসান আবদাল এল ট্রেন। শিখ রেফিউজিরা উঠল। এবার তক্ষশীলা – ‘অমানবিক অকল্পনীয় দৃশ্য। একটা মিছিল থামল প্ল্যাটফর্মে। প্রত্যেকের কাঁধে একটি করে হিন্দু শবদেহ। অন্তত শ’দুয়েক। মিছিল, মৃতদেহগুলি বালুচি গার্ডদের হাতে দিল। ওরা মনের মত কাজ পেয়ে জান্তব খুশিতে এক একটা কামরায় দশ-পনেরটি লাশ ঢোকাতে লাগল। ক্ষতিপূরণ হিসেবে এবার ট্রেন থেকে ওরা নামাতে বলল দুশ’জন হিন্দুকে। সার-বন্দী মানুষেরা যেন বলির পশুর মতো ‘জিন্দা-লাশ’। নেতার নির্দেশে ওরা প্রথম পনেরটি লাশ মাটিতে ফেলল। লেখক আশ্চর্য কথকতায়, মনে করিয়ে দিতে থাকেন প্রাচীন তক্ষশীলা-স্মৃতি এবং সমান্তরালে নৈর্ব্যক্তিক ভঙ্গিতে ছোট এক-দু’টি বাক্যের অনুচ্ছেদে
    অনুচ্ছেদে তুলে ধরেন হত্যা-বিবরণী:
    "এই সেই তক্ষশীলা, যার বিদ্যালয়ে-বিশ্ববিদ্যালয়ে ... এশিয়া মহাদেশের সর্বপ্রান্ত থেকে ছাত্ররা আসত সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাঠ নিতে ... আরও পঞ্চাশটা লাশ পড়ল।
    এই সেই তক্ষশীলা, যার সংগ্রহশালায় অপূর্ব, অমূল্য সব মূর্তির সংগ্রহ ছিল ... এবার গেল আরও তিরিশটা হতভাগ্য।
    এই সেই সুপ্রাচীন জায়গা যেখানে রাজা কণিষ্ক ... আরও পঁচিশজনের চিরশয্যা
    এই সেই প্রসিদ্ধ জায়গা যেখানে ভগবান বুদ্ধ অহিংসার বাণী শুনিয়ে মানুষকে শান্তি ও প্রীতির পথ দেখিয়েছিলেন ... এবার শেষ দলটির পালা
    এই জায়গাতেই সর্বপ্রথম ইসলামের পতাকা তোলা হয় ... যা নাকি ভ্রাতৃত্ব ও সবার প্রতি সমান ব্যবহারের মূর্ত প্রতীক ... শেষ দলটিও খতম! আল্লা হো আকবর!"

    প্ল্যাটফর্ম রক্তে ভাসছে। রক্ত গড়িয়ে নেমে আসছে রেললাইনে। চাকায় রক্তের দাগ। গাড়িতে চলেছে জীবিত ও মৃত লাশের দল। রাওয়ালপিন্ডিতে উঠল একদল, হাতে হাতে অজস্র আগ্নেয়াস্ত্র। ছুটন্ত ট্রেনে চেন টানল ওরা। হিন্দু-শিখ মেয়েদের টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে জঙ্গলে নিয়ে চলে গেল। এল ওয়াজিরাবাদ। এখানেই হিন্দু-মুসলমান মিলিতভাবে যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছে বৈশাখী উৎসব। আজ সেখানে প্ল্যাটফর্ম জুড়ে লাশ, লাশ আর লাশ। দূরে দেখা যায় গোটা শহরে আগুন জ্বলছে, পাক দিয়ে উঠছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ব্যান্ড বাজিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ ও ক্ষত-বিক্ষত হিন্দু-শিখ মেয়েদের মিছিল, ট্রেনে তুলে দিল তাদের। দু’টি তরুণী এ চাপ সইতে না পেরে জানলা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাইরে।

    আটারি স্টেশন থেকে পরিস্থিতি বদলে গেল, ট্রেনে উঠল শিখ ও ডোগরা গার্ড। চারদিকে মুসলিম মৃতদেহ দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ল হিন্দু রেফিউজিরা। তারা ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়েছে। অমৃতসর। এবার হিন্দু-শিখরা প্রতিটি কামরায় তল্লাশি শুরু করল, কোথাও হিন্দুর ছদ্মবেশে কোনও মুসলমান লুকিয়ে আছে কিনা। এক কামরায় চার ব্রাহ্মণ যাচ্ছিল, তাদের সন্দেহ হতেই শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ। তারা ধরে ফেলল। প্রথম জন পাকিস্তানের নাম শোনা মাত্র ‘ইয়া আল্লাহ’ বলে উঠতেই তীর-বল্লম তাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল। বাকি তিনজনের পুরুষাঙ্গ পরীক্ষা করে দেখা গেল সবারই ‘সুন্নত’ করা। খতম করে দিল তাদের। ট্রেন ছুটছে, এ যেন ভারত-তীর্থ পরিক্রমায় বেরিয়েছে ট্রেনটা। গভীর জঙ্গল দিয়ে যেতে যেতে ওরা চেন টানল। নেমে গিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া "নিরীহ নিরস্ত্র মুসলিম চাষী পরিবারগুলোকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলল। ... হুংকার শোনা গেল ‘সৎ-শ্রী-আকাল। একটা মুসলমানও বাঁচল না। একটি জাঠ বীরত্ব দেখানোর জন্য বল্লমের ডগায় একটা বাচ্চাকে গেঁথে পতাকার মতো নাচাতে লাগল। বিকৃত মানসিকতার শিকার এরা।"

    জলন্ধর। ওরা মেয়েদের নিয়ে পাকা সোনা রঙের গম খেতে নেমে গেল। এই সব মাঠেই একদিন তরুণীরা গাইত, সুপ্রাচীন ইরি-রঞ্জা, সোন-মহিওয়ালের সুমধুর প্রেমগাথা; আর আজ "ওই খেতগুলো মুহর্তে হয়ে গেল অস্থায়ী বেশ্যালয়। পঁচাত্তরটি পশুর ভোগের বলি হল পঞ্চাশটি নিষ্পাপ তরুণী। ... যে পাপ আজ ঘটল, পাঞ্জাবের যে পবিত্রতা আজ নষ্ট হয়ে গেল – তার জন্য দায়ী শুধুমাত্র আমাদের নেতারা। শত ধিক এদের। পুরুষের পর পুরুষ এরা নরকস্থ হলেও এদের পাপমুক্তি হবে না।"

    সুরাইয়া কাশিম-এর ‘কোন দেশের মেয়ে গো ওটা?’ গল্পের মুন্নিবাইকে পাওয়া গিয়েছিল লাহোর শহরের এমন এক জায়গায়, যার থেকে সমান দূরত্বে এক পাশে ছিল মসজিদ আর এক পাশে এক মন্দির। বেশ্যালয়ের ‘মাসী’ তার এমন এক নাম রাখে, যা দুই সম্প্রদায়েই চলে। শুরু হয়ে গেল "সেই কলঙ্কের দিনগুলো, সেই কুৎসিত অর্থহীন হানাহানি। এ এক বিচিত্র যুদ্ধ। যুদ্ধের শেষে হিন্দু এবং মুসলমান দুই পক্ষই জয়ী হল, পরাজিত হল শুধুমাত্র মনুষ্যত্ব।" দেশভাগের ফলে লাহোরের হীরামণ্ডি ছেড়ে মুন্নিরা দিল্লি চলে আসে। প্রথমে শরণার্থী শিবির। তারপর নতুন জীবন শুরু করতে ‘মাসী’ তার মেয়েদের নিয়ে উঠে আসে এক এমন ঠিকানায়, যেখানে একদা সম্মা বিবি তার মেয়েদের নিয়ে থাকত, এখন সে চলে গেছে সীমান্তের ওপারে লাহোরের হীরামণ্ডিতে। মুন্নি জিজ্ঞেস করে মাসীকে
    - "মা, একটা কথা বলতে পার? মুসলিমরা পাকিস্তান চেয়েছিল, তারা তাই পেল। হিন্দুরা মুসলিমদের হিন্দুস্থান থেকে তাড়াতে চেয়েছিল, তাই হল। কিন্তু আমরা তো কিছুই চাইনি, তবে যত দুঃখ, যত কষ্ট সব আমাদেরই ভোগ করতে হবে কেন, বলো তো?"
    মুন্নি, বোনটি আমার, বেশ্যা হলেও তোর মধ্যে এখনো বিস্ময়টুকু বেঁচে আছে, আছে একটি হৃদয়, কারণ তুই নারী। বেশ্যাপল্লীর মাসীও তো নারী, তাকে তুই ‘মা’ ডাকিস। তিনিও হৃদয়বতী। এ প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারবেন না। এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে নেই। ক্ষমতা-মদির একদল পুরুষ, যাদের কোনো হৃদয় নেই, যাদের চোখ পাথরের মতো, যারা সাতচল্লিশে, আমাদের মহাকবিদের দেশ-চৈতন্যকে পদপিষ্ট করে মহাদম্ভে সিংহাসনে চড়ে বসেছিল, তারা এর উত্তর জানলেও, তা উচ্চারণের নৈতিক সাহস কখনো দেখাতে পারেনি। বোন, রবীন্দ্রনাথের ওই ‘রক্তমণির হার’ দুলছে তোর বুকে, আমাদের সবার বুকে। মনে রাখিস, এই বিষাদ-পাথর আমাদের উত্তরাধিকার।


    রক্তমণির হারে : দেশভাগ-স্বাধীনতার ভারতীয় গল্প-সংকলন
    সংকলন ও সম্পাদনা: দেবেশ রায়
    সাহিত্য আকাদেমি
    মুদ্রিত মূল্য - ২০০ টাকা


    বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২১৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন