আপনাকে আর ক'টা মাছ দিই? এরপরেই গৃহকর্তার হাঁক, এ্যাই রসগোল্লার বালতিটা এদিকে নিয়ে আয়... রসময়বাবুর পাত একেবারে ফাঁকা। রসময়বাবু সেই হাঁক শুনে বললেন, একদম নয়। আর পারব না। গৃহকর্তা এবার তাঁর পাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, দে দে পুরো বালতিটাই উপুড় করে দে। খুব পারবেন রসময়বাবু। ভুলে গেলেন? আপনার নাতির অন্নপ্রাশনের ভোজে আমায় উঠতে দেননি। গুনে গুনে চল্লিশখানা রাজভোগ খাইয়ে ছেড়ে ছিলেন। আমিও আজ আপনাকে ছাড়ছি না। সেই শোধ আজ তুলবই তুলব।এই ধরনের কথপোকথনের দিন আমাদের জীবন থেকে বহুকাল আগে হারিয়ে গেছে। ভোজসভার সেই আয়োজন আজ অতীত। সেই লম্বা টেবিলের ওপর পাতলা সাদা কাগজের ওপর কলাপাতা আর ভাঁড় পেতে খাওয়ানোর ... ...
( ৮ ) প্রতাপ ধর মাথা ঠান্ডা রাখল। তার বাস্তববুদ্ধি থেকে সে বুঝতে পারল সে ফাটা বাঁশে পড়েছে। আপাতত ব্যাপারটা সামলে নেওয়ার দরকার। তারপর মামলাটা তলিয়ে ভাবতে হবে। এই পাবলিকও তো কোন অর্ডিনারি পিস মনে হচ্ছে না। বোধহয় লাল পার্টির কেউ হবে, হয়ত অনেকদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল। এর সঙ্গে তার তো এই প্রথম মোলাকাত। মোনাবাবু কি তার সঙ্গে বেইমানি করল ? সে যাই হোক, সে দ্রুত ভেবে নিল, পরিস্থিতিতে এক্ষুণি জল ঢালার দরকার। হিট খুব বেড়ে ... ...
( ৭ ) সকাল পৌনে দশটা নাগাদ মোনাবাবু আর সাগর এসে গুলু ওস্তাগর লেনে চায়ের দোকানে এসে বসল। রাস্তার ওপারে স্কটিশ চার্চ স্কুলের সামনে জমজমাট, কলরবমুখর। স্কুল বসতে চলেছে। উঁচু নীচু নানা ক্লাসের ছেলেপুলেরা হরিণের মতো নিষ্পাপ ভঙ্গীতে সামনের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে। তারা হয়ত শুনেছে এখন জরুরী অবস্থা না কি একটা চলছে, যেটা নিয়ে তাদের মাথা ঘামাবার কথা নয়। যাদের মাথা ঘামাবার তারা মাথা ঘামাচ্ছে। মোনাবাবু বললেন, ' কই কোথায় ... ...
এতো রাগী জিনিকে কখনও দেখিনি। স্কুল থেকে ফিরে ছুঁড়ে ফেললো ব্যাগটাকে। ব্যাগটা ককিয়ে উঠে বললো "Jinny is upset". ইংরেজি পছন্দ করিনা তা নয় তবে...। "জিনির মন কেন খারাপ?""স্কুল থেকে প্রোজেক্ট দিয়েছে। কলকাতার রাস্তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। বন্ধুরা আগে ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। কিছুই বাদ রাখেনি আমার জন্যে।"" পার্ক স্ট্রিট, বইপাড়া, কুমোরটুলি, বড়বাজার, ধর্মতলা... ""সব শেষ। কিছু বাকি নেই।""হুম্। তাহলে particular রাস্তা না নিয়ে থিম ভাব। যেমন কলেজ পাড়া, সাহেব পাড়া... "" সেও গেছে। "ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। দৃষ্টিটা ঝাপসা হয়ে এলো। বুঝলাম সময় হয়েছে। কফি হাউস থেকে দুই যুবক প্রাণপণে দৌড়চ্ছে পাশের শ্যামাচরণের গলি ধরে। পেছনে মানুষরা দৌড়চ্ছে। খুন খুন ... ...
( ৬ ) সাগর সব শুনে বলল, ' থ্রেট দিচ্ছে বলছ। কি থ্রেট দিচ্ছে ? ' অভয় বলল, ' বলেছে, কথা না শুনলে গোটা ফ্যামিলির বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। আমার মেয়েকে নিয়ে এত টানাটানি করছে কেন বুঝতে পারছি না ... ' --- ' উদ্দেশ্য কিছু একটা আছে নিশ্চয়ই। হয়ত কিছু খারাপ কাজ করাতে, যে জন্য কোন মহিলা লাগবে। ওসব কারবার পরে জানলেও চলবে। যেটা জানার দরকার .... ' --- ' হ্যাঁ, কি বলুন না ... ' --- ' তোমাদের এলাকা থেকে কেউ ... ...
( ৫ ) বিশ্বরূপা ছাড়িয়ে সার্কুলার রোডের দিকে কিছুদূর গেলে রঙ্গনা নামে একটা থিয়েটার হল হয়েছে বছর দু তিন হল। তার মুখোমুখি তলা থেকে ভেসে ওঠা মঞ্চের আর একটা থিয়েটার হল হয়েছে, সারকারিনা। রঙ্গনা থিয়েটার হলে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নান্দীকার গ্রুপের নাটকগুলো নিয়মিত শো-এ হয়। তিন পয়সার পালা, মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, শের আফগান এই সব নাটকগুলো নিয়মিত মঞ্চস্থ হয়। বিভূতিবাবু অনেকদিন পর গুটি গুটি ... ...
আগের পর্বের লেখায় যাত্রার শুরুটি করেছিলাম, দেখলাম আপনারা অনেকেই বেশ ভালোবাসা দেখিয়েছেন। আপনাদের মতামত অত্যন্ত জরুরি তাই ওটি দিতে বাঁধ সাধবেন না। এবার তার পরের ভাগটি নিয়ে চলে এলাম। নিক এর সাথে ভ্যানভ্রমণে অনেক আজগুবি জিনিস দেখলাম। টেক্সাস কাপিতল বাদে আরও অনেক জায়গা দেখে তাক লেগে যাওয়ার মতো। নিক অন্তত কমপক্ষে ১২ বছর ধরে এই কাজ করে আসছে। কথাবার্তা থেকে আরও বুঝলাম যে ও আগে একজন standup comic হতে ছেয়েছিল যা তার কৌতুক চেতনা থেকে বেশ ভালই বোঝা যায়। ঘুরতে ঘুরতে নিক নিয়ে গেল দাউন্টাউন এর কিছু বিশেষদর্শন বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রথম যেই ... ...
কলকাতার বিপ্লবীদের দঙ্গলে মাঝে মাঝেই নানা কাণ্ড ঘটে। কিন্তু এবারে যা পড়লাম, সেটা মাত্রার অনেক উপর দিয়ে। সবই "সত্য" ঘটনা, কিন্তু ফিকশনের বাবা। একজন মহিলা, ধরা যাক তাঁর নাম প্রথমা, যিনি সব সময় ছুরি আর পেপার স্প্রে নিয়ে ঘোরেন, তিনি কাল একটা ফেসবুক পোস্ট করেন, যা থেকে এটা জানাজানির শুরু। প্রথমা লিখেছেন, কোনো এক রাতে, তিনি প্রচুর ফেমিনিস্ট আইডিওলজির লোকজন, মহিলা এবং নিজের বাবার সঙ্গে, বাবার বাড়িতে বসে উপরোধে মদ্যপান, গান-বাজনা এইসব করছিলেন। তারপর রাত্তির দুটোয় নিজের ঘরে শুতে গেলে সেখানে একজন মহিলাও শোবার জন্য এসে উপস্থিত হন, ধরা যাক তাঁর নাম দ্বিতীয়া। তারপরে তৃতীয় এক পুরুষ, ধরা যাক তাঁর নাম মহিষাসুর, তিনিও চলে আসেন। দ্বিতীয়া মহিষাসুরকে বলেন, তুমিও ... ...
( ৪ ) মধুমিতা ঘরে ঢুকে বলল, ' এমনি এলাম ... মাসির কাছে এসেছিলাম ... ভাবলাম একটু দেখা করে যাই ... ' পাঁচ ছ' বছরে মধুমিতার চেহারা বিশেষ বদলায়নি। প্রায় একইরকম মসৃন উজ্জ্বল আছে। মধুমিতার এখনও বিয়ে থা হয়নি সেটা এরা সবাই জানে। এ বাড়িতে এল প্রায় এক বছর পরে। তার হাতে কি একটা বেশ মোটা বই রয়েছে। কোন বাংলা উপন্যাস মনে হচ্ছে। বইটা বুকের কাছে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে সহজ সারল্য। অতীশ বলল, ' বসুন ... ইয়ে ... বস না ... ' মধুমিতা একটা চেয়ারে বসে পড়ল। দুর্বার কি ... ...
ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধে রাখবো তোমায়, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চলবো হাতে হাত রেখে- তুমিই হবে আমার জীবনসঞ্চয়ের সঞ্চিতা। প্রতারনা থেকে শুরু করে পরকীয়ার যুগে- আমি থাকতে চাই শুধু তোমারই হয়ে। তুমি কি রাখবে আমায়, তোমার জীবনসাথী করে? ভালোলাগা তো ভালোবাসা নয়!ভালোবাসা থেকেই ভালোলাগা শুরু হয়।তবে আমি কি তোমার ভালোবাসা নই?
( ৩ ) লোকে বলে পৃথিবীটা গোল। চেনা জানা কারও সঙ্গে ঘুরে ফিরে ঠিক দেখা হয়ে যাবে কখনও না কখনও। যেমন অমলের সঙ্গে রাত্রির দেখা হয়ে গেল শ্যামবাজার ট্রামডিপোর সামনে, যেখানে তাদের শেষ সাক্ষাৎকার ঘটেছিল প্রায় দশ বছর আগে। রাত্রি বলল, ' আরে, কি খবর ? কতদিন পরে দেখা হল ... ' --- ' তা ... প্রায় পাঁচ বছর হবে ... ' অমল সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল। রাত্রি লক্ষ করল অমলের চোখে মুখে বেশ বয়সের ছাপ পড়েছে। শরীরে মেদও জমেছে। কথাটা বলে অমল চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। বোধহয় বলবার মতো কিছু কথা খুঁজছে। জীবনের কোন কোন ... ...
( ২ ) রাত্রির বাবা শিবতোষবাবু পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন মাস তিনেক হল। নাতির মুখ দেখার বাসনা অবশ্য পূর্ণ হয়েছিল শিবতোষবাবুর। রাত্রি আর সাগর এখন মাঝে মাঝে গোয়াবাগানে এসে থাকে। ছেলের ছ' বছর বয়স হল। স্কুলে ভর্তি করার দরকার। হিমাদ্রি, সাগরের ছেলে হিমাদ্রি বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অবশ্য ভর্তি হয়েছে গত বছরে। মর্নিং স্কুল। সকাল ছ'টা থেকে সাড়ে ন'টা পর্যন্ত। সাগরই ছেলেকে নিয়ে যাতায়াত করে। রাত্রির স্কুল ... ...
স্বীকার করে নেওয়া ভাল, অন্নদাশংকর রায়ের যে সাহিত্যসূত্র থেকে বহরমপুরের রঙ্গভূমি তাদের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘ পীরিতি পিপাসা’ নাটকটি প্রযোজনা করেছে সেই ‘দু’কান কাটা’ নামে গল্পটা আমি খুঁজে পেতে পড়লাম নাটক দেখার পর। পড়ার পর মনে মনে সাবাশি জানালাম রঙ্গভূমিকে প্রায় একাশি বছর আগে লেখা একটি গল্পের মধ্য থেকে এরকম একটি প্রাণবন্ত নাট্য সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানোর জন্য। এই কৃতিত্ব প্রাথমিকভাবে প্রাপ্য নাট্যকার রাজেন দাসের যিনি একইসঙ্গে এই নাটকের পরিচালক। যা ছিল এক জন বাউল ফকির পথের সাধকের পথ চলার গল্প তাকে সঠিক পরিপ্রেক্ষিতে তুলে ধরার উপকরণ মূল ... ...
( ১ ) শীত প্রায় বিদায় নিয়েছে বলা যায়। রোদ অবশ্য এখনও তেমন তেতে ওঠেনি। সকাল সন্ধেয় ঠান্ডার হাল্কা পরশ লেগে থাকে হাওয়ায়। গঙ্গাপ্রসাদ দোকান খুলে বসেছে সকাল সাতটায়। গায়ে একটা পাতলা চাদর জড়ানো। সুরেশ্বর মল্লিক তিনটে থলে হাতে নিয়ে মানিকতলা বাজারের দিকে এগোচ্ছিলেন গুটিগুটি। গঙ্গার দোকানের সামনে আসতে মল্লিকবাবুকে চোখে পড়ল গঙ্গার। --- ' আরে দাদা ... এত সকাল সকাল ? এত সকালে তো আপনাকে কোনদিন বাজারে যেতে ... ...
গুড মর্নিং, সুপ্রভাত বন্ধুরা। আমি চড়াই বলছি। হ্যাঁ গো হ্যাঁ , সেই ছোট্ট চড়াই। এমন অবাক চোখে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা। কপালে চোখ তুলে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে থাকা তোমাদের মুখগুলো দেখে না সত্যি সত্যিই আমার বেশ মজা হচ্ছে। আজকের তারিখটা কি মনে আছে? না সব ভুলে গেছো ? আজ মার্চ মাসের ২০ তারিখ – আন্তর্জাতিক চড়াই দিবস। আমার মতো এমন ছয় ছোট্ট চেহারার এক পাখিকে নিয়ে একটা দুনিয়াজোড়া আলোচনা, আলোড়ন… সত্যি বলছি আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। কী করে বিশ্বাস করবো বলো, আমি কি সত্যিই তোমাদের কাছে এতটা আদরের, এতটা ভালোবাসার ? জানো বন্ধুরা, একটা সময় তোমাদের ছায়া ঘেরা গ্রাম থেকে ... ...