মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হল বঙ্গবন্ধু সহ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া চারশজনকে মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবে না যেহেতু তাঁরা কেউ সরাসরি সম্মুখ সমরে লড়াই করে নাই! এই যুক্তি দিয়ে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী বলা হবে এখন থেকে, মুক্তিযোদ্ধা না। বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা বললেই কী আর না বললেই কী? একই কথা খাটে তাজউদ্দীন আহমেদসহ বাকি শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রে। প্রশ্নটা হচ্ছে এদের চেষ্টার! কী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যদি কোন ভাবে ছোট করা যায় এঁদেরকে। কোনভাবে যদি আরেকটু নামানো যায় তাঁদের অবস্থান থেকে। এরা যে সূত্র দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাপ মাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাতিল করছে সেই সূত্রে তো মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানীকেও মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবে না! তিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করেছেন? এখন দেখেন তো শুনতে কেমন লাগে যে যাকে সেনাপতি বানানো হল যুদ্ধের তিনিই যোদ্ধা না! দারুণ না? ... ...
এক চাঁদনী রাতের নাট্য আখ্যান। প্রভাতী শুভকামনা জানিয়ে পাঠানো এক ছড়িয়ে পড়া ছড়াকে মাথায় রেখে এই আশ্চর্য দাম্পত্য আখ্যানের নির্মাণ প্রয়াস। নিয়মিত সাহিত্য পাঠের অভ্যাস এখনও সেভাবে আত্মস্থ করতে বোধহয় আমরা পারিনি। আমরা সবাই নাটকের অভিনয় দেখতেই অভ্যস্ত। তবে মঞ্চের কুশীলবরা এই সাহিত্য রসের ধারাতেই মজে থাকেন। নাটিকাটি পড়ুন ও অকপট মতামত জানান। ... ...
ইন্দ্রনীলের একটা কথা মনে পড়ে গেল বিনীতার; একবার সে ইঙ্গিত করেছিল যতদিন এই প্রোজেক্টের কাজ শেষ না হবে, ততদিন তার ভালমন্দ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম। ব্যাপারটা অনেকটা পর্বতারোহীদের মত - এই অভিযাত্রীরা বেশিরভাগ সময়ে দুর্ঘটনায় পড়েন চূড়ায় আরোহন করার পর। তার একাধিক কারণ থাকে - শিখরে পৌঁছাতে প্রচুর শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করার পর তারা যখন নামতে শুরু করেন, ক্লান্তি তাদের গ্রাস করে, ফলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। অনেকেই আবার আত্মতুষ্টির শিকার হন, ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর একটা বিষয় হল সামনে কোনও বড় লক্ষ্য না থাকা। যে কাজ করার জন্য এত কষ্ট করা, তা শেষ হয়ে গেছে, এখন ফিরে যেতে হবে প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবনে। এই মন খারাপ থেকেই আসে অবসাদ। ... ...
কার্ল গর্ব করে বলতেন যে তার বম্বসাইট – কুড়ি হাজার ফিট উপর থেকে একটা আচারের কৌটোয় বোমা ফেলতে পারে। ইউএস নেভি কার্লের উপরে কতটা নির্ভর করেছিলেন সেটা একটা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। ম্যানহাটন প্রোজেক্টের নাম নিশ্চই সবাই জানেন। সেই ব্রহ্মাস্ত্র বানাবার জন্যে ইউএস মিলিটারি ৩ বিলিয়ন ডলার খরচা করে। আর এই নর্ডন বম্বসাইট বানাতে তারা ১.৫ বিলিয়ন ডলার খরচা করে। অর্থাৎ গোটা মিলিটারির মাথা, স্ট্র্যাটেজিস্ট সবাই এতখানি কনভিন্সড ছিলেন যে এই একটা যন্ত্রই যুদ্ধে তাদের এডভান্টেজ বাড়িয়ে দেবে। আর খোদ কার্ল নর্ডন মনে করতেন তিনি ভগবানের কাজ করছেন। তিনি মনে করতেন তার যন্ত্র যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা কমবে কারণ তার যন্ত্র এতটাই সঠিক যে মিত্রশক্তি কেবল তাদেরই মারবে যাদের তারা মারতে চায়। অহেতুক কোন বাইস্ট্যান্ডারের প্রাণ যাবে না। কি সাংঘাতিক তার মরালিটি। বস্তুত তখনো আমরা ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ল দেখি নি। ইয়েলে তখনো মিলগ্রামের এক্সপেরিমেন্ট হয় নি। লয়ালিটি কাকে বলে তা আমার শিখি নি। ... ...
শিল্প চলে গেলে শিল্পনগরীরা ভুতুড়ে পোড়োবাড়ি হয়ে যায়। যেমন ডেট্রয়েট। যেমন হুগলি নদীর দুপাড়ের সারি সারি চটকল। মাংস কাটার কারখানা ভেঙে স্টারবাকসের কফিশপ তৈরী হয়। যারা মাংস কাটত তারা সেখানে কাজ পাবে না। কারণ ধোপদুরস্ত পরিষেবা দিতে পারবে না। অপরাধ বাড়ে। উদাহরণ হিসেবে মার্গারেট থ্যাচারের 'বিগ ব্যাং' , যার ফলে যুক্তরাজ্যে অবশিল্পায়ন শুরু হয়। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ... ...
কেন্দ্রাতিগ বলেরও (centrifugal force) অন্তত একটি উদাহরণ তিনি আবিষ্কার করেছিলেন: দড়ির মাথায় বেঁধে জলভরা পেয়ালা ঘোরালে, জল বাইরে বেরিয়ে আসে না। উদ্ভিদের যৌনজনন সম্পর্কে তিনি জানতেন আর বিবর্তন ও যোগ্যতমের উদ্বর্তন নিয়ে তাঁর নিজস্ব তত্ত্ব ছিল (যদিও বেশ আজগুবি, মানতেই হবে)। মূল কথাটি: “সে এক বিস্ময়কর দৃশ্য—অগুণতি, সমস্ত সম্ভাব্য আকার-আকৃতির নশ্বর গোষ্ঠীর জীব ছড়িয়ে ছিল সর্বত্র।”... জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রসঙ্গে: চাঁদ যে প্রতিফলিত আলো ছড়ায়, তা তিনি জানতেন, তবে সূর্য সম্পর্কেও তাঁর একই ধারণা ছিল; তিনি বলেছিলেন, যে আলো এক জায়গা থেকে অন্যত্র যেতে সময় নেয়, কিন্তু তা এতই কম, যে আমাদের ঠাহর হয় না; তিনি এও জানতেন, যে, পৃথিবী আর সূর্যের মাঝে চাঁদ এসে পড়ে বলে সূর্যগ্রহণ হয়—মনে হয় এ তথ্য তিনি জেনেছিলেন আনাক্সাগোরাসের থেকে। ... ...
যাঁরা একটু আলবোড্ডে টাইপের, যাঁরা তাঁদের মানুষটিকে প্রাণ ভরে বিশ্বাস করেন, চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন এবং স্বামীর প্রতিটি কথাই বেদবাক্য বলে মনে করেন, তাঁরা কী করবেন? ... ...
সেকেলে ঔপনিবেশিকতার দাপট হয়তো লোপ পেয়েছে কিন্তু বিলকুল লোপাট হয়ে গেছে এমনটা কখনোই নয়। পণ্যবাদী ঔপনিবেশিকতার পর্ব পার হয়ে তার নব উত্তরণ ঘটেছে বর্জ্য ঔপনিবেশিকতাতে। শিল্পায়নের হাত ধরেই এসেছে বহু বিচিত্র বর্জ্যের সম্ভার যা বিপর্যয় ডেকে আনছে পৃথিবীর প্রাকৃতিক শৃঙ্খলায়, বিপন্ন হচ্ছে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই এখন বাস্তব সত্য যে দরিদ্র দেশগুলো এখন পুঁজিবাদী ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর বর্জ্যের ভাগাড়। ... ...
বার্লিন নামক একটি কাঁটাতার ঘেরা দ্বীপ থেকে পাওয়া বারো ঘণ্টার ভিসায় ‘ওপাড়া ‘ ( পূর্ব বার্লিন) ঘুরে এসেছি মাঝে সাঝে, পারগামন মিউজিয়ামে বাবিলনের গেট , নেফারতিতির মুখোশ , হাতির পিঠে চড়ে জাহাঙ্গীরের বাঘ শিকারের আঁকা ছবি দেখেছি , এমনকি অত্যন্ত সস্তায় – তিন মার্কে- ব্রেখটের তিন পয়সার পালা ( দ্রাই গ্রশেন ওপার )। অন্যের কথা বলতে পারি না তবে আমার বলতে দ্বিধা নেই , ভৌগোলিক বিচারে সামান্য দূরত্বে বাস করলেও ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সেই দিনগুলিতে পুবের বিষয়ে আমার জ্ঞান ও কৌতূহল ছিল সীমিত । তাই ঝড়ের রাতে জানলা খুলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভেতরে কোনো মাতাল হাওয়া বয়ে যেতে দেখলাম না । সাতাশে জুনের কথা কতজনের মনে আছে জানি না। এমনকি ৯ই নভেম্বর ১৯৮৯ কে আজ যেমন যুগান্তকারী দিন বলে মনে করা হয় সেই সময় অকুস্থলের নিকটে থেকেও থেকে আমার তা মনে হয় নি – এসব ঘটছে দূরে কোথাও, যা ছুঁয়ে যায় নি আমাকে । আমি বিদেশি, নিজের দেশেও আমার ছিন্নমূল হবার কোন কাহিনি নেই , আমার কাছে ঢাকা বিক্রমপুর কোন স্থানের নাম , যে নাম বহন করে না কোনো বেদনা । পঁয়তাল্লিশ বছর বাদে বিভক্ত জার্মানির জুড়ে যাওয়াটা কি তাহলে একটা ফুট নোট মাত্র ? ... ...