হেলেনা নর্বার্গ-হজ, সোনম ওয়াংচুক এবং লাদাখের পরিবেশ ... ...
রূপটি ছাপিয়ে সে যে অরূপিণী আলো! অন্ধজন তাই বুঝি দেখে তারে কালো ... ...
এরকম একটা অনুভূতি থেকেই হয়ত সেদিন রাজ্যের সব সামগ্রী সদাই করে বাসায় ঢুকেছিলাম মৌসুমের প্রথম ইফতারটার জন্য। কিন্তু ডাইনিং রুম ও রান্নাঘরের সংযোগস্থলে যে এক চিলতে জায়গা আছে, সেখান থেকে একজন বৃদ্ধার মুখ ভেসে উঠতেই পিত্তি জ্বলে উঠল আমার! এমন নয় যে, ঐ বৃদ্ধার গায়ে ঘা-পাঁচড়া-পুঁজ লাগানো! বা, তার চেহারায় ভয়ঙ্কর কিছু বিদ্যমান! বা, তার সাথে আছে পূর্ব কোন অমধুর স্মৃতি! একান্তই নিরীহ গোছের একটি চেহারা, আর কাঁচুমাচু বসার ভঙ্গি! ... ...
২১ নভেম্বর, বাংলাদেশের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী দিবস। আগে পত্রিকায় দেখতাম রঙ্গিন ক্রোড়পত্র বের করত দৈনিক পত্রিকা গুলো। বিমান, ট্যাংক, সৈন্যদের ছবি, সবার উপরে থাকত সাত বীর শ্রেষ্ঠের ছবি। এইটা কেন জানি দেখি নাই। হয়ত বের করে কিন্তু আমি দেখি নাই। সশস্ত্র বাহিনী দিবস সম্পর্কে এই ধারণা ছিল আমার। আর দেখতাম পরেরদিন পত্রিকায় সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানের ছবি, বর্ণনা। এই একদিনে দেখা যেত বিএনপি আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টির নেতারা সবাই এক সাথে হচ্ছে। দুই নেত্রী বা দুই দলের বড় কোন নেতা কথা বলছে এমন ছবি খুব আগ্রহের বস্তু ছিল তখন। সেই দিন বহু আগেই বাসি হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে। তবে নোবেল ম্যান এবার তার কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছে। এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সব দলের মানে আওয়ামীলীগ ছাড়া সব দলের নেতারা সেনানিবাসে হাজির হয়েছিল। আমরা আবার দেখতে পেলাম বিএনপি, জামাতের নেতারা হাসিমুখে সেনানিবাসে। আমরা দেখলাম সমন্বয়কেরা নতজানু হয়ে খালেদা জিয়ার সাথে কথাবার্তা বলছে। হাস্যজ্জল মুখে জামাতের আমির সমন্বয়কদের সাথে কুশল বিনিময় করছে। এমন সৌহার্দপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশই তো আমরা চেয়েছিলাম, তাই না? তো, হয়েই গেল! অবশেষে সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকিল! ... ...
অসুস্থ থাকার ফলে দু দিন আসতে পারেনি এজিএম সাহেব। আজ অফিসে আসার পরপরই রামাকৃষ্ণান দেখা করতে আসে অরুণাভর সাথে। আর যে খবরটা সে দেয়, তার ফলে হন্তদন্ত হয়ে সোজা খুরানার ঘরে আসে চলে আসে অরুণাভ। সম্ভবতঃ তার কেরিয়ারে এই প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিয়েই জি এম-এর কাছে এসেছে সে। খুরানার সেক্রেটারি একটু অবাকই হয় অরুণাভকে দেখে। জানিয়ে দেয় তার বস ঘরেই আছে। দরজাটা একটু খুলে ভিতরে আসার অনুমতি চায় অরুণাভ। “ইয়েস দাস, এস।” ইসারায় চেয়ার দেখিয়ে অরুণাভকে বসতে বলে খুরানা। তারপর হাতের ফাইল সরিয়ে রেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। “স্যার, শুনলাম আমায় রিমুভ করা হচ্ছে?” ... ...
পুরনো বাড়ির কথা বলতে বলতে বড় বেশি সংপৃক্ত হয়ে পড়লাম হারানো দিনের সঙ্গে। সেই আঙিনায় ঝরে পড়া শিউলি সুবাস, সেই অড়হর গাছের সবুজ ডালে বসা সবুজ টিয়া পাখি, শঙ্খ সায়নের টলোমলো পায়ে প্রথম দাঁড়ানোর চেষ্টা, ওদের বাবার স্কুটারের কাঙ্খিত শব্দ পরতে পরতে মস্তিষ্কের পটভূমিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝাঁকুনি দিতে লাগলো। সিদ্ধান্ত --থাক, আলোর ঝলকানিতে পেছনে তাকিয়ে মায়ার খেলা দেখে দরকার নেই। দরকার না থাকলেও দাবি থাকে, আব্দার থাকে। নিজের ইচ্ছাও নেই তা নয়। হারানো সুরে গাওয়া কঠিন তবুও যে টুকু পারা যায়। বলেছিলাম সংক্ষেপে লিখবো। লালির জোরদার দাবি, মানছি না মানবো না। সায়ন বলছে লেখা শেষ করা যায় না। নিজে নিজে শেষ হয়। অতএব সময় নিয়ে আস্তে আস্তে---। ... ...
যে বন্যা নিয়ে লেজেগোবরে করে ফেলেছে ইউনুস প্রশাসন সেই বন্যা নিয়েই কৃতিত্ব নিয়ে নিলেন তিনি! আরে ভাই আমাদের এলাকায় মানুষের ঘর বাড়ি আমরা তুলে দিচ্ছি, আমাদের বন্ধুদের একটা ফাউন্ডেশন আছে তার মাধ্যমে। আমি একেবারে মাঠের খবর জানি যে কিছু করেন নাই আপনেরা! একের পর এক বাড়ি নাই হয়ে গেছে। তীব্র স্রোতে এমন ভাবে বাড়িঘর নিয়ে চলে গেছে যে দেখলে মনে হয় টর্নেডো হয়ে গেছে! আমরা আমাদের সাধ্যমত করছি। সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাই নাই। কিছু বাড়ি আছে দ্রুত দাঁড়া করানো দরকার, বাড়িতে মেয়ে আছে, কলেজে পড়ে, অনার্সে পড়ে এমন মেয়ে আছে বাড়িতে। এরা এখন কই যায়? সচ্ছল পরিবার না, এদের আত্মীয় স্বজনও সব গরিবই, কে জায়গা দিবে? এরা থাকেই কই, বাথরুম করে কই? আমি চোখের সামনে দেখে হতবাক হয়ে গেছি। কিচ্ছু করার নাই যেন! মানুষ কত অসহায় যে হয়ে পড়ে প্রকৃতির হাতে তার এক অন্য রকম নজরানা দেখলাম আমরা। আর তিনি বলছেন বন্যা পরিস্থিতি দারুণ ভাবে সামলিয়েছেন! মিথ্যুক। ... ...
২০২৪ এর অর্থনীতির নোবেল নিয়ে আগের লেখাটায় দুটি বিষয় নিয়ে বিশদে লেখার ইচ্ছে থাকলেও লিখিনি লেখাটি বড় হয়ে যাচ্ছে বলে। তারওপর এই ধরণের লেখা আদৌ কেউ পড়বে কিনা এই নিয়ে একটু সংশয় ছিল। তাও কিছু পাঠক এই না লেখা অংশটা পড়তে চাইলেন বলে দ্বিতীয় পর্বটি লিখলাম। আশা করি পুরো ছবিটা আরেকটু পরিষ্কার হবে। ... ...
এই চাট্টি অনুগল্প এইমাত্র এমনি-এমনি লেখা। কোনো বইয়ে নেই। কিন্তু এই স্যাম্পল দেওয়া হল, কারণ, গুরুচণ্ডালির গোডাউনে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং উৎপটাংতর গপ্পের অভাব নেই। আমার বাছাই কিছু আছে। কিন্তু সে দেবনা। বইমেলা এল বলে। নেড়েচেড়ে বেছে নিন, কোন বইটা বেশি গোলমেলে। গত কয়েক বছরের কটা গল্পসংকলনের নাম দিলাম। অবশ্যই নেড়ে দেখুন, আর পড়া হয়ে গেলে প্রতিক্রিয়া দিন। গুরু স্রেফ বই ছাপেনা, গুরু গদ্যলেখার আন্দোলন, গুরু এক বোতল, যা খুললেই বেরিয়ে আসবে দৈত্য। ... ...
দৈন্য, বাড়িতে অশান্তি, রত্নার প্রত্যাখ্যান সবে মিলে জীবনটা একেবারে বিষিয়ে উঠেছিল। পৈতে হওয়ার পর থেকেই শ্যামল সকাল সন্ধ্যায় আহ্নিক করত। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। বিরক্তিকর জীবনের থেকে ক্ষণিকের মুক্তি পেতে ওই পুজোর সময়টা আরো বাড়িয়ে দিল। থাকত চিলেকোঠার ঘরে। ঠাকুর ঘরটা তারই সংলগ্ন। গীতা, উপনিষদের মত নানা ধর্মগ্রন্থ যোগাড় করে এনে রাতে ঘুম না এলে গুন গুন করে আওড়াত। এইভাবে ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক লাইনের অনেক কিছু তার কণ্ঠস্থ হয়ে গেল। কাটলো কয়েকটা বছর। এই দুঃসময়েতেও সৌম্যদর্শন মিষ্টভাষী যুবকটি নানাভাবে নতুন কিছু মানুষের মন জয় করেছে। তবে এবার আর প্রফেসর পরিচয়ে নয়। পরিচয়টা অনেকটা এইরকম—শিক্ষিত শাস্ত্রজ্ঞ একজন মানুষ, যে জীবনে বহু ভাল ভাল চাকরির সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাতে যোগ দেয়নি। কারণ, সমাজ সেবাই তার ধ্যান জ্ঞান। একই কারণে বিয়েটাও আর করা হয়নি। জীবন ধারণের প্রয়োজনে সামান্য কটা টিউশনি করে। ... ...
বলতে কী, একটা নিশ্চিত ধ্বংসের প্রতীক্ষা করছিলাম যেন আমি! কিন্তু সুখনকে কোন ঋণের দরখাস্ত জমা দিতে দেখা গেল না আমার টেবিলে। উল্টো অফিসে তার কাজের মনযোগ ও গতি দুই-ই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে লাগল। আর এরই মাঝে একদিন বদলী আদেশ চলে এল আমার। ... ...
ফ্রয়েড মেনে নিচ্ছেন এ অবধি তাঁর অনুমানের সপক্ষে কোন শিলালিপি অথবা লৌহ স্তম্ভ খুঁজে পাওয়া যায় নি । যাকে আমরা সম্ভাবনা মনে করি সেটা যেমন সব সময় সত্য নয় তেমনি যেটা সত্য সেটাকে কখনো সম্ভাবনা মাত্র মনে করা হয়ে থাকে। তোরার পাঁচটি বই ( পেন্তেতয়খ )-জেনেসিস , একসোডাস, লেভিতিকুস, নাম্বারস , দয়ত্রনোমি – প্রথম পাঁচশ বছরে একাধিকবার সম্পাদকের টেবিল ঘুরে হিব্রু বাইবেলে স্থান পেয়েছে। তালমুদের প্রণেতাদের মধ্যে সত্যিকারের ঐতিহাসিক অনুসন্ধিৎসা ছিলে কিনা সে প্রশ্নও ফ্রয়েড তোলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অগুনতি উদাহরণ আছে যেখানে কোন জাতি বা জনতার বিশাল উদ্যোগের পুরোভাগে দেখা দিয়েছেন একজন বিশেষ মানুষ যাকে সকলে মান্য করেছেন। আমরা ধরে নিচ্ছি মিশরীয় মোজেস সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন- একটি জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন, তাঁদের দেবেন জীবন যাপনের নিয়মাবলী, আইন । ... ...
হঠাৎই একটা গন্ধ নাকে এল ইন্দ্রনীলের, আর সেটা পেয়েই দ্রুত পায়ে গেল রান্নাঘরের দিকে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল সসপ্যান থেকে জল উথলে পড়ে গ্যাস নিভে গেছে তাই এলপিজির কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্চর্য ব্যাপার হল বিনীতা শূণ্য দৃষ্টিতে সেই দিকেই তাকিয়ে আছে, কিন্তু কিছুই করছে না। ওভেনের পাশে কফির শিশি, চিনির বয়াম, গুঁড়ো দুধ আর কাপ রাখা। ওভেনের রেগুলেটর অন করাই রয়েছে। ইন্দ্র চট করে ভেতরে গিয়ে গ্যাসটা বন্ধ করে। বিনীতার সন্বিত ফেরে। নিজেকে সামলে সে কাপে গরম জল ঢালতে শুরু করে। ... ...
২০২৪ এ অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন আচেমোগলু, জনসন এবং রবিনসন। তাঁদের নোবেল নিয়ে ইতি-উতি সমাজ এবং সংবাদমাধ্যমে অনেকগুলি লেখা চোখে পড়ল। তার বেশিরভাগই হয় ভ্রান্তিমূলক অথবা ধোঁয়াশাপূর্ণ। সেই ভ্রান্তি এবং বিভ্রান্তি কাটাবার প্রয়াস এই প্রবন্ধ। ... ...
আওয়ামীলীগ এবার সবাইকে নুর হোসেন দিবসে নুর হোসেন চত্বরে জড়ো হওয়ার জন্য ডাক দিয়েছে। এই ডাকের রহস্য আমি বুঝিনি। এইটা শুধুই ডাক দিয়ে দেখা? সরকার কেমন আচারন করে? ভেরিফাইড পেজ থেকে যে প্রতি নিয়ত বলা হচ্ছে বিকাল তিনটায় সবাই যেন জিরো পয়েন্টে চলে যায় এইটা কেন? কতজন যাবে? অল্প কয়েকজন গেলে হাস্যকর হয়ে যাবে না? এবং ওই অল্প কয়েকজনকে ধরে বেদুম মাইর দেওয়া হবে, পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। এখন যখন তুমুল ধর পাকড় শুরু হয়ে গেছে তখন কর্মীদের এমন বিপদে ফেলার যুক্তি কী? এতদিন শুধু মামলা হয়েছে। এখন ধরা চলছে সমস্ত শক্তি দিয়ে। যে যেখানে আছে সেখানেই খুঁজে বের করছে পুলিশ। দৈনিক খবর পাচ্ছি হয় ধরা পড়ছে কেউ না হয় কত টাকায় রফা হয়েছে সেই খবর! এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে গুলিস্তান যাওয়ার আহবানের মানে কী? এখনই দেখলাম বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে ছাত্র জনতা নুর হোসেন চত্বর দখল করে বসে আছে! রাতেই তারা অবস্থান নিয়ে নিয়েছে। কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখলাম প্রকাশে বলছে রাম দা নিয়ে আসতে, যারা আসবে সবাইকে কুপিয়ে মনের ঝাল মেটাবে! একজন লিখেছে পুলিশের হাতে দেওয়া যাবে না, পুলিশ কিছু করার আগেই কুপাইতে হবে! যিনি এই পোস্ট দিয়েছেন তার সাথে আমাদের মাহফুজ আলমের গলাগলির ছবিও বের হয়ে আসচ্ছে! তো এই পরিস্থিতিই তো স্বাভাবিক, তাই না? এর মধ্যে কেন ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কর্মীদের? আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা সব আছে দৌড়ের ওপরে, কাদেরকে বলি দেওয়ার জন্য পাঠানো হচ্ছে এখানে? সরকারের তরফ থেকে বলেছে আওয়ামীলীগের এমন কর্মসূচি দেওয়ার কোন সুযোগ নাই! তার মানে তাদের অবস্থানও পরিষ্কার। এমন হওয়ার তো কোন সম্ভাবনা নাই যে আওয়ামীলীগ বিকাল তিনটায় কয়েক লাখ কর্মী জমা করবে গুলিস্তানে? সেই দিন আছে? সেই সুযোগ ছিল যখন এই ছাতার আন্দোলন হাত থেকে চলে যাচ্ছিল তখন। তখন যদি আওয়ামীলীগ ঘোষণা দিত তাহলে দশ লাখ মানুষ ঢাকায় আনা কোন ঘটনাই ছিল না। প্রশাসন ছিল, কর্মীরা ছিল। এই আন্দোলন কোনদিনই এই পর্যন্ত আসতে পারত না। ওই দিন হয়েছে বাসি, এইটা আওয়ামীলীগ ভুলে গেছে? ... ...