অসাধারণ একটি বিশ্লেষণ পড়ে অনেককিছু জানতে পারলাম। অমূল্য তথ্যে সমৃদ্ধ সুগভীর প্রবন্ধটি পড়তে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রথমেই আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। কয়েকটি বিষয় একটু খটকা লাগার জন্য কিছু বিনম্র প্রশ্ন রাখছি।
১.'বঙ্গভঙ্গ রোখার প্রচেষ্টার নেপথ্যে ছিলো মদনমোহন মালব্যের সভাপতিত্বে থাকা কংগ্রেসের হিন্দু সাম্প্রদায়িক অবস্থান।' -- এই বঙ্গভঙ্গ মূলত ছিলো ব্রিটিশের একটি কৌশল যাতে স্বাধীনতা সংগ্রামের আঁতুড়ঘর বঙ্গপ্রদেশকে দ্বিধাবিভক্ত করা যায়। তাই তৎকালীন জ্ঞানীগুণী মনীষী এবং সকল সচেতন মানুষ এর বিরোধিতা করেন। বঙ্গভঙ্গ রোখার প্রচেষ্টা যদি কংগ্রেসের 'হিন্দু সাম্প্রদায়িক অবস্থান' হয়, তবে কি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী,শ্রী হীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখও সেই ধারাতেই পড়ছেন? রাখীবন্ধন উৎসবও কি কোনো 'সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন'?
২.'গান্ধীজীর সঙ্গে মুসলিম মন জয় করার প্রতিযোগিতায় নামতে পারতেন কমিউনিষ্টরা' -- তবে কি গান্ধীজীর "ঈশ্বর-আল্লাহ তেরে নাম/সবকো সম্মতি দে ভগবান!" কোনো মন জয়ের মন্ত্র? যদি তাই হয় তবে একদিকে চরমপন্থী হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার প্রতিষেধক হিসাবে মুসলিম জনতার মন জয় করা উচিত ছিলো। এটিকে 'competitive communalism' ছাড়া আর কিছু কি বলা যেত?
৩. 'চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের পর বহু সদস্য কমিউনিষ্ট হয়েছিলেন,কিন্তু তাঁদের পূর্বের সন্ত্রাসবাদী মন-মানসিকতা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়নি।' --- সুতরাং এই যুক্তিতে স্বয়ং মাষ্টারদা সূর্য সেন ছিলেন সন্ত্রাসবাদী? হ্যাঁ, ব্রিটিশের চোখে সেটা তো অবশ্যই ছিলো। কিন্তু তৎকালীন পরাধীন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য দুঃসাহসী ও সুসংগঠিত পথে আত্মত্যাগী বিপ্লবী আজও ব্লগপোষ্টে 'শিশুসুলভ' আখ্যা পেলেন দেখে কেমন একটা লাগলো!
প্রসঙ্গত:, বঙ্গভঙ্গের আগে থেকে পূর্ববঙ্গের ছোটোলাট বামফিল্ড ফুলার মুসলিমদের বোঝাতে থাকেন যে হিন্দুরা চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে,তাই বঙ্গভঙ্গ হলে তাদেরই উন্নতি হবে। সুতরাং সাম্প্রদায়িক বিভাজন প্রশ্নে মুসলিমরা ফুলারের কাছে 'সুয়োরানির আদর' পেতে শুরু করে।কিন্তু বঙ্গভঙ্গের মূল উদ্দেশ্য কি সত্যি সংখ্যালঘুদের সুবিধাদান ছিলো?
পরিশেষে বলি, ক্যাবিনেট মিশন যখন ১৯৪৬ সালে পুনরায় তিনজন সদস্য নিয়ে আসে, তাঁদের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলির সচিব প্যাথিক লরেন্স, অ্যাডমিরাল এ.ভি.আলেকজান্ডার সহ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসও ছিলেন। এবারের সুপারিশগুলি দেখে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ মন্তব্য করেন , "ক্যাবিনেট মিশন যা প্রস্তাব করছে,বিভাজন-সমস্যার এর চেয়ে ন্যায্য সমাধান আর হয় না।" তবে কি এক্ষেত্রেও সংখ্যালঘুদের পিছনে ঠেলার প্রশ্নটি তোলা যায়? যদি কেউ বলে, 'আমি চাই না বাড়িতে কফি হোক!" বললেই বোঝা যায় যে সে চায়ের ভীষণরকম ভক্ত ? নাকি দুটি ধারণা সম্পর্কবিযুক্ত? হতে পারে বাড়িতে ক্যাফিনযুক্ত কোনো পানীয়ই সে পছন্দ করে না।