এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে

  • হিমাচলের ইতি উতি  - ১

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৬৫ বার পঠিত
  • সিমলা
    লাদাখ ঘুরে ফেরার সময়ই মাথায় ঢুকেছিল চাঁদের আলোয় কিন্নর কৈলাস দেখতে হবে। তা তখন ভরা বর্ষা, বৃষ্টি হয়ে লেহ মানালি রোড প্রায় বন্ধ। অতএব ঠিক করি কোজাগরিতে যাবো। কিন্তু পুজোর ছুটিতে বটুগণ হিমাচলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আরো এবারে পুজোর ঠিক আগে উত্তরবঙ্গ সিকিমে প্রবল বর্ষা,  তুমূল ধ্বস ইত্যাদির ফলে আরোই অনেকে হিমাচলমুখী। 

    তো রাসপূর্ণিমাই ভাল, ভীড় তেমন হবে না  ভেবে এই সময়ই যাওয়া স্থির করি। মেঘ টেঘ করতেই পারে, চাঁদের আলোয় কৈলাস যাতে মিস না হয় তাই কল্পায় ৪ দিন থাকার পরিকল্পনা করি।  খানিক দেখে শুনে সীমন্তিনী বুক করে নেয় কল্পার এক হোটেল ৪ রাতের জন্য। আমি বুক করি সিমলায় এক রাতের আস্তানা। আমি যাবো কোন্নগর থেকে ট্রেনে ট্রেনে, সীমন্তিনী আসবে কোর জাটল্যান্ড থেকে সারথিসহ গাড়ি নিয়ে। 

    ৩১শে অক্টোবর যখন হাওড়ায় পৌঁছালাম নেতাজী এক্সপ্রেস ধরতে, তখনো আমার কাছে বার্থ নম্বরের মেসেজ আসে নি। এত লম্বা যাত্রা তাই ফার্স্ট এসির টিকিট কেটেছিলাম। ফার্স্ট এসির কম্পার্টমেন্ট আর বার্থ নম্বর রিজার্ভেশান  চার্ট তৈরীর পরে জানায়। তা সে মেসেজ আর এলোই না,  IRCTC র সাইটে ট্রেন ছাড়া অবধি দেখিয়ে গেল চার্ট নট প্রিপেয়ারড।

    সেকেন্ড বা থার্ড এসি কামরার বাইরে লেখা থাকলেও এর বাইরে শুধুই বাতানুকুল লিখে ছেড়ে দিয়েছে। বিস্তর ঝামেলা করে গোটা প্ল্যাটফর্ম দুবার চক্কর দিয়ে শেষে ১৩৯এ কল করে বার্থ আর কামরার নম্বর জানতে পারলাম। আজকাল তো কাগজে ছাপা রিজার্ভেশান চার্টও তুলে দিয়েছে। রেলের অপদার্থতার কোন সীমা নেই। ট্রেন ছাড়ল ঠিক সময়েই বটে, তবে কালকা পৌঁছাল সোয়া দু ঘন্টা লেটে। 


    কালকা স্টেশান

    ট্রেন লেট না হওয়া প্রায় অসম্ভব তাই পৌঁছানোর নির্ধারিত সময়ের ৪ ঘন্টা পরে ৭টার টয়ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। ভাগ্যিস! এদিকে টয়ট্রেন ছাড়ে ৫ এবং ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে, যা কেবলমাত্র ওভারব্রিজ টপকেই যাওয়া যাবে।  তা গেলাম, একটা ৮ কেজির স্যুটকেস হাতে আর একটা ৮ কেজির ব্যাগ পিঠে নিয়ে ৪৬খানা সিঁড়ি উঠে আবার নামা।  এই পরিশ্রমে চোখে লেগে থাকা অবশিষ্ট ঘুম উধাও। 


    টয়ট্রেন

    প্ল্যাটফর্মে নেমে জুত করে এক কাপ কফি খেয়ে ভিস্তাডোমের খোঁজ করতে গিয়ে শুনি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটাই নাকি ভিস্তাডোম! বলে কি রে! একদম শেষ কামরায় টিকিট বুক করেছিলাম পেছনটা পুরো কাচ দেওয়া কামরা হবে এই আশায়! সে গুড়ে একেবারে বস্তা বস্তা বালি। টয়ট্রেনের ছোট্ট ছোট্ট জানলা, কাচের শাটার। ফলে কখনোই পুরো খোলে না। 


    এই নাকি ভিস্তাডোম!

    কামরার ছাদেও চারখানা চৌকো কাচ লাগানো, ব্যাস। তবে হ্যাঁ সীটগুলো যখন যে দিকে ট্রেন যাচ্ছে সেইমুখো করে নেওয়া যায়, এইটুকুই যা সুবিধে।  এ টয়ট্রেন ডিজেলচালিত, বেশ জোরে চলে। দার্জিলিঙের মত গুটগুট করে যায় না।  রাস্তাটা বড় সুন্দর। কত রঙের বুনো ফুল ফুটে আছে। পুটুশই বেশী যদিও, তবে হালকা বেগুনী,  গাঢ় বেগুনী, গোলাপী লাল,  হালকা হলুদ ছোট ছোট ফুলও প্রচুর। 


    কুউ ঝিক ঝিক

    https://youtube.com/shorts/Zh99_Y5dzIE?si=1M-bp2CPlnqk28xn

    আর আছে ফণিমনসা জায়গায় জায়গায়। বাপরে সে কি মস্ত মস্ত সাইজের,  প্রায় এক একটা বিশাল থালার মত।  ট্রেনটা এত জোরে যাচ্ছে যে কিছুতেই ছবি তোলা গেল না। ছোট্ট ছোট্ট রঙচঙে স্টেশান, শুনশান ফাঁকা পেরিয়ে যাচ্ছে হু হু করে। উচ্চতা বাড়ছে, একটু পরে পরেই ট্রেন ঢুকে যাচ্ছে পাহাড়ের পেটের ভেতর।  এই রেলপথে ১০২ খানা টানেল আছে মোট আর ৮৫ খানা ব্রিজ। 


    বারোগ টানেল 


    ছোট্ট স্টেশান 

    তবে আমরা এতগুলো টানেলে ঢুকি নি তো।  বারোগ টানেল সবচেয়ে বড়, ১.১৪ কিমি লম্বা। সিমলা পৌঁছাতে সময় লাগল সাড়ে চার ঘন্টার মত।  প্রথমে ভেবেছিলাম  বাসে রেকংপিও যাবো, তাই টুটিকান্ডি ISBT র কাছে হোটেল নিয়েছিলাম,  Bhumi Retreat Cottages. হোটেল বলেছিল ISBT  থেকে ৪০০ মিটার দূরত্ব। তা সে বোধহয় এরিয়াল ডিস্ট্যান্স। আদতে তো প্রায় ৯০০ মিটার মত ডাউনহিল। তারপরে আর গাড়ি যায় না। আরো আড়াইশো মিটার মত ঢাল বেয়ে,  সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়। 

    আমি দেড়টার মধ্যে পৌঁছে ঠান্ডাজলে স্নান করে আলুর পরোটা আর দই খেয়ে একটা ঘুম দিলাম। হোটেলটা এমনি ভাল, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সুন্দর বাগান, তাতে ইয়া পেল্লায় ডালিয়া গাঁদা, সুর্য্যমুখী ফুটে রয়েছে। সীমন্তিনী ইমনবাবুকে নিয়ে পৌঁছাল সন্ধ্যে হয় হয় সময়। রাতের খাওয়া এরা আনিয়ে দেবে, তবে নিরামিষ। সে হোক,  খাবার  বেশ ভাল খেতে ছিল। খেয়েদেয়ে ঘুম, কাল লম্বা পাড়ি দিতে হবে। 


    ক্যাফে ১০৩


    ক্যাফে ১০৩

    সকালে সব গুছিয়ে বেরোতে আমাদের একটু দেরীই হয়ে গেল।  বেরিয়ে প্রথমেই গুগল খুঁজে যাওয়া হল Cafe 103. এদের অ্যাম্বিয়েন্স এবং খাবার দাবার বেশ ভাল।  ভারতের বহু জায়গায়  স্ক্র‍্যাম্বলড এগ দিতে বললে হয় কড়া করে ভাজা ভুর্জি টাইপ কিছু দেয়, নয়ত ক্যাতক্যাতে দলা দলা টাইপ দেয়। এরা বেশ ঠিকঠাক স্ক্র‍্যাম্বল্ড এগ দিয়েছিল। গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ,  ব্যানানা মেপল সিরাপ প্যানকেক আর ব্লুবেরি ওয়াফলও বেশ ভাল ছিল।  


    টোস্ট স্ক্র‍্যাম্বলড এগ


    গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ

    এই ক্যাফেটা হাইলি রেকোমেন্ডেড। সিমলা গেলে ট্রাই করতে পারেন। সিমলা থেকে কল্পা ২২৪ কিমি,  একবারও না থামলে ৭ ঘন্টার যাত্রা। অন্ধকার হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। আমরা কিছু স্যান্ডউইচ প্যাক করিয়ে নিলাম, যাতে গাড়িতেই খেয়ে নিতে পারি। পথে এক জায়গায় সিএনজি নিতে দাঁড়ানো হল, তারপর সোওজা কল্পার দিকে। ক্রমশ দূরের বরফচুড়ারা কাছে এগিয়ে আসতে থাকে, আমরা উঠে নেমে আবার উঠে এগোতে থাকি কিন্নরভূমের দিকে। 

    (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    সিমলা
  • ভ্রমণ | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৬৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বেলুর - %%
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শ্রীমল্লার বলছি | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৫৫735901
  • কী দারুণ লেখা!.... 
    ছবিগুলোও সুন্দর.... 
    পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করব, করছি। 
  • kk | 2607:fb91:4c21:664d:a828:887b:1589:***:*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৫৮735902
  • এই রেলরাস্তায় গেছলাম অনেক বছর আগে। সেই টানেলের পর টানেল মনে পড়ে গেলো। ক্যাফে ১০৩ এর ছবিগুলো দেখে তোফা লাগলো। ঐখানে চাঁদ সাহেব হয়ে থেকে যেতে পারলে মন্দ হতোনা। পরের পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন