যেভাবে ছাদে ছাদে ফুলগাছ বেড়ে ওঠে হাতের যত্নয়, যেভাবে মেঘেরা এসে সাজিয়ে তোলে রঙিনময়লাটে বাড়িদের, যেভাবে কাক দেখলেই ডানা পাওয়ার কথা মনে পড়ে হেরে যাওয়া মানুষদের অনেকটা তেমন একটা ভাব নিয়ে বলা ভাল তেমন এক ঘোর আনন্দ নিয়ে রোশনাই সংকেতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে আরম্ভ করল, “কিছু কথা যদি তুলোর মতোই নাছোড়বান্দা হয় তো কিছু কথা প্লাস্টিকের মতোই একগুঁয়ে সাইকেলের সমান। এরা চুপ থাকে না। অবসাদ ভালবাসে, আর তা নিয়ে যাচ্ছেতাই রকমের হুল্লোড়পনা...”সংকেতের মাথার ওপর দিয়েই সব বেরিয়ে গেল। সে না কিছু বুঝল, না কিছু বোঝার চেষ্টা করল। বোঝার চেষ্টা করবেই বা কী ক’রে! মাথার ওপর দিয়েই যে রোশনাইয়ের সব ... ...
“তোমাকে যদি একব্যাগ বাতাস দিই, কীভাবে খরচ করবে?”রোশনাই একপ্রকার হাসতে হাসতেই সংকেতের দিকে ছুঁড়ে দিল প্রশ্নটা।“কেন জানতে চাইছ বলো তো?”“বলোই না... শুনি একবার!”সামান্য অন্যমনস্ক হ’য়ে সংকেত বলতে শুরু করল—“বাতাসকে খরচ করার আমি কে? বাতাস যে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নিজেকে নিয়ে যাবে, আমাকেও সেই সেই ভাবে এগোতে হবে। বাতাস তো নিজেই নিজেকে অনুবাদ করতে পারে। বাতাসের আলাদা কোনও অনুবাদক প্রয়োজন পড়ে না। তাই আমি বাতাসকে অনুবাদ করতে পারি না। বাতাস নিজেকে যেমনভাবে অনুবাদ করবে, আমাকেও মেনে নিতে হবে তেমনটাই। আমাদের অনেক কিছুর ওপরে অধিকার থাকে না। আমরা জোর ক’রে যখন তার ওপরে অধিকার ফলাবার চেষ্টা করি, তখন সেটা আর তেমন ... ...
“আমারই ভুল। ভুল আমারই। প্রশ্ন করতে শিখিনি। যা শিখেছি, তাকে প্রশ্ন করা বলে না। তবে শোনো, আমরা যখন কোনও কিছুকে একেবারের জন্যই ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবি বা মনে করি, তখন আরও বেশি ক’রেই থেকে যেতে চায় মন সেইখানে। ছাড়তে দিতে চায় না। কিন্তু যদি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারো, তখনই সমুদ্রে পড়লে! তবুও জেনো, সমুদ্রে পড়ার আগে ছোট ছোট সাঁতার শিখে নিতে হয়। প্রস্তুতি সেই অর্থে তিন রকমের— পুকুর, নদী আর সমুদ্র। ছেড়ে দেওয়ার ভাবনা যখন আসে, তখন তুমি পুকুরের কাছে এসে এক পা এগোও সাঁতারে। ছেড়ে যখন দেবে ভাবছ, তখন তোমাকে নদীর কাছে এসে আরও এক পা এগোতে হয় এই ... ...
“ঘরটা একটু গুছিয়ে রাখবে তো! ঘরই যদি গোছাতে না পারলে, যদি না ছাড়াতে পারলে এক এক ক’রে ভাবনার গিঁট— তবে আর কী করলে?”— রোশনাইয়ের দিকে সে কেমন এক অলসচোখে তাকিয়ে কথাগুলো ব’লে গেল সংকেত। রোশনাইয়ের গোটা জীবন দাঁড়িয়ে আছে, যুক্তি এবং আবেগের ওপরে। সে বোঝে, আবেগের মাত্রা একটু বেশি হ’য়ে গেলেই জীবনকে আর মুখে তোলা যাবে না। তাই বুঝেশুনে সে আবেগ খরচ করতে চায়। পেরে ওঠে না। রোশনাইয়ের বয়েস, উনিশ বছর তিন মাস।“না গুছোলেও সমস্যা নেই। যাকে গোছানো দেখছ, দেখতে পাও— সে তো আরও বেশি ক’রেই অগোছালো। ‘গোছানো’ একটা বিশ্বাস। আমি কোনও বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে চাই না।” রোশনাই এমন এক চোখে সংকেতের দিকে তাকিয়ে ... ...
দোষের মধ্যে এই যে, কবিতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি যখন তখন। কিন্তু কিছুতেই নাগাল পাচ্ছি না। ... ...
শ্রীমল্লার বলছি আঁতেল হতে পারলেননা। তাঁর পড়ার উপযুক্ত বইঃকীকরে সিনেমায় চান্স পেতে হয় ... ...
অনেকদিন আগে যাদবপুর ৮বি বাস ট্যার্মিনাস এর সামনে থেকে অটো ধরে সেলিমপুরের প্রায় কাছে এসেই প্রায় চলন্ত অটো থেকেই ঝাঁপ মেরেছিলাম! অটোওলা বলেছিল, আমি পাগল। অটোয় বসে থাকা মেয়েটার সে কী হাসি! আর রাস্তার লোক চমকে গিয়ে আমাকে খানিকটা ধমকে দিয়েছিল... সেই প্রথমবারই একা একা ট্রেনে ক'রে কলকাতায় যাওয়া। আমার তখনও পর্যন্ত ধারণা ছিল, কলকাতায় অটো চলে চিতার দৌড়ের মতোই। আগের অভিজ্ঞতা ছিল চলন্ত অটোয় ওঠার কলকাতায়। তাই ভেবেছিলাম, অটো তো দাঁড়াবে না। আমাকে নামতে হলে প্রায় চলন্ত অটো থেকেই নামতে হবে! বোকার মতো ভাবনা। তখন ছোট ছিলাম। এখন ভাবি, সেদিন যদি মারা পড়তাম কলকাতায়— মৃত্যুর পরে অচিরেই বিখ্যাত হয়ে যেতাম এই দুঃসাহসিক মনোবলের জন্য... ... ...
শিল্প কীভাবে আসে, কেউ জানে না।আমি যে পরিবার থেকে আসছি, সে পরিবারের শিল্পে কোনও পূর্ব ইতিহাস নেই। এমনকী, আমি যে কবিতা লেখার চেষ্টা করি, সে সম্পর্কেও আমার বাড়ির লোকের কোনও ধারণাই নেই। কয়েকমাস আগে আমাদের বাড়িতে জেঠিমা আর পিসিমা এসেছিলেন। তো আমাকে ডাকলেন, আমিও গেলাম। 'এখন কী করছ?' জানতে চাওয়াতে জানিয়েই দিলাম যে, বাংলায় কবিতা লেখার চেষ্টা করছি। বন্ধুদের পড়াই, ওরা তারিফও করে, সমালোচনাও করে। এইই চলে যাচ্ছে। ওঁরা বললেন যে, তাহলে কি কোনও বাচ্চাদের পড়াচ্ছ? এর জবাবে বললাম, একেবারেই না। এই একটাই কাজ করছি সারাদিন— বাংলায় কবিতা লেখার চেষ্টা। মাঝে মাঝে অবাক লাগে, যখন দেখি এত ডাইরি জমে গেছে! কী ক'রে লিখলাম? এত এত কবিতা ... ...
কিছু ঘটনা এতবেশি ভেবেছি যে ভুলতে পারিনি। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একজন ক’রে ‘সে’ থাকে। আমারও ছিল, কিন্তু একতরফা। ‘ছিল’ কেন সেই প্রসঙ্গে আসছি। মেয়েটি কোনওদিনই আমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়নি। কিন্তু আমিই আশায় আশায় এতদিন এই ভেবেই পড়েছিলাম, একদিন সে ফিরবেই। সে মেয়ে আমাকে কতবার জানিয়েওছে, তার কোনও তেমন অনুভূতি হয় না আমার প্রতি। এই মেয়ের সঙ্গে এখনও আমার যোগাযোগ আছে। যদিও নিয়মিত কথা হয় না। কিন্তু আমি এই মেয়ের কাছে কতভাবে যে চিরঋণী! আমার দুঃসময়গুলোয়— পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছে আমার।কিন্তু সম্প্রতি একটা বড় পরিবর্তন ঘটে গেল আমার নিজেরই ভেতরে। সেই মেয়ের প্রতি আমার আর কোনও টান নেই। এমনকী, ভালোবাসাও নেই। মিথ্যে বলছি না। যা অনুভব ... ...
ঐ যে ঐ যে গল্পটা যাচ্ছে দেখুন— ওখানে কিন্তু এখনও জীবনানন্দের যাওয়া আসা আছে। ব্যাপারটা হল যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই। পাখিতে আছে। নদীইইইইইই,– এই সন্ধে হলেই ঘরে ফিরবে। যদিও সন্ধে হয়েই এসেছে। ঘাড়টা সামান্য ডানদিকে ঘোরান— ঘুড়িটাকে দেখুন, কীভাবে মেঘ টপকাচ্ছে! আর কী যেন... হ্যাঁ হল হচ্ছে জীবনানন্দ, জীবনানন্দ, জীবনানন্দ কিন্তু ট্রামের চেয়েও ধীর গতিতে চলতেন... না না চলতেন না, চলছেন তো এখনও! বেশ চলছেন...হিঃ হিঃ হিঃ মেয়েটাকে দেখে এক্ষুনি বমি বেরিয়ে আসছিল আমার। ছেলেটা পাত্তাই দিচ্ছে না। এভাবে প’ড়ে থাকে কেউ? না বিয়ে এখনও হয়নি আমার। কিন্তু এই মেয়েটাকে... মেয়েটাকে দেখতে বড্ড...তেমন অবকাশ নেই, নইলে মেয়েটাকে প্রোপোজ ক’রে আসতাম। কী হতো তবে? এমনই হয়তো হতো, ওদিকে মেয়েটাকে ছেলেটা পাত্তা দিচ্ছে ... ...