ঘ্যামা ঘ্যামা বইয়ের বড় বড় ব্যাপার, যেমন গড়ন, তেমনই দাম। ওদিকে নজর না দিয়ে আমরা বানিয়েছি সস্তা কাগজের চটি বই, যা সুলভ ও পুষ্টিকর।
গুরুচণ্ডা৯ চলতে শুরু করল ২০০৪ সালে। প্রথম চটি বই বেরোলো ২০১০-এ। বিজ্ঞাপনের কারবার নেই। নিজেদের লেখা, ছবি, ভিডিও, হাতে গড়া রুটির মতো, সামিজ্যাটের সাইক্লোর মতো ছড়িয়ে রাখি ইতিউতি
জালে (ওয়েব আর কী)। যে খুশি খুঁটে খান। তাতে খুব যে মারকাটারি বিশ্ববিজয় হয়ে গেছে তা নয়। কিছু বইয়ের হাজারখানেক কপি এক বইমেলায় শেষ হয়, কিছু বইয়ের হয় না। প্রথম চটি বইগুলোর কারো কারো
চার-পাঁচটা সংস্করণ হয়েছে, কারো দুটো। ওয়েবে কতজন পড়েন, সঠিক ভাবে মাপা মুশকিল। গ্রুপে কিছু হাজার, সাইটে কিছু। কুড়ি কোটি বাঙালির কাছে এসবই খুব বেশি কিছু না। তবে এই ক’বছরে সস্তায় পুষ্টিকর
চটি বইয়ের ব্যাপারটা বিলক্ষণ বুঝেছি। বিজ্ঞাপনী নেটওয়ার্ক নয়, মডেল সুন্দরীদের মার্জারচলন নয়, ঠোঙা নয়, মোড়ক নয়, লেখা তেড়ে সাইক্লো করুন, সুযোগ পেলে একটু হেঁকে নিন, ব্যস। লেখায় দম থাকলে চুপচাপ
ছড়িয়ে যাবে। ইহাই চটির ম্যাজিক। ঐতিহ্যমণ্ডিত চটি সিরিজ জিন্দাবাদ। জ্জয়গ্গুরু।
স্বাধীন, বাংলাদেশ কেমন আছে? - স্বাধীন(১৭৩) ২০২৪এর জুলাই মাস থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সময়প্রবাহ উত্তাল। শুরুর ঘটনাবলীকে যাঁরা আশাপ্রদ বলে ভেবেছিলেন, এখন তাঁদেরই অনেকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন।
আন্দোলন যখন শুরু হয়, কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। জনজাগরণ কারো চাকর নয়। কিন্তু প্রতিটা জনজাগরণের সময়ই নেপথ্যে কিছু শক্তি হিসেব করে চলে। যেকোনো পক্ষেরই। ১৯১৭ সালে লেনিনের হিসেব তো প্রবাদপ্রতিম হয়ে আছে। যেন বীজগণিত। ৬ তারিখ ক্ষমতা দখলের পক্ষে খুব তাড়াতাড়ি, ৮ এ খুব দেরি হয়ে যাবে। তাই ৭-ই চাই। এবং সেই দিনটা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে আছে। উল্টোদিকে কেরেনস্কিরও কিছু অঙ্ক ছিল, যা আমরা জানি না। বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের রক্তঢালা যখন চলছে, ঠিক তখনই কেউ না কেউ হিসেবও করে চলেছে। প্রাথমিক উন্মাদনা থিতিয়ে পড়ার পর 'মেটিকুলাস প্ল্যান'এর সরকারি ভাষ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
এই উন্মাদ সময়ে সেদিকে নজর দেওয়া অসম্ভব মনে হয়।
কিন্তু কেউ কেউ নজর দিয়েছিলেন, সাধ্যমত লিপিবদ্ধ করে রাখছিলেন সেই সময়ের ঘটনাবলী। এই বই সময়ের সেরকম একটি দলিল।
লেখক গুরুচণ্ডা৯র পাতায় লিখে রাখছিলেন তাঁর অতি প্রিয় দেশের হাল হকিকত। দুই মলাটে ছেপে বের হওয়া এই বইয়ে সঙ্গত আশঙ্কার কারনেই লেখকের পরিচয় গোপন রাখা হল।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের রোমাঞ্চকর গল্পসমূহ - রমিত চট্টোপাধ্যায়(১৭২) সেই কবে কোথায় পড়েছিলাম, এক নদীতে দুই বার স্নান সম্ভব নয়, কিন্তু ছনেন্দ্রনাথের দলে ভিড়ে গিয়ে মনে হচ্ছে যায়, আবার সেই সব দিনে ফিরে যাওয়া যায়; ফেরি পার্কে মাইকে বাজে গান - এক পরদেসি মেরা দিল লে গয়া, হরি মন্দিরে তরুণ সম্মিলনীর নববর্ষ উৎসবে তাই তো নাটক, ভিহার টকিজ সিনেমায় খাঁচার ভেতরে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে দেব আনন্দের সিআইডি দেখা, বঙ্গ বিদ্যালয়ের সামনে আলু কাবলি, হজমি গুলি, আমার ফেলে আসা ঝরিয়া-ধানবাদ, শীত পড়লে আমাদের আমলাপাড়ায় নিউ বেঙ্গল বয়েজ ক্লাবে ব্যাডমিন্টন। এক আশ্চর্য ম্যাজিকে ছনেন্দ্রনাথের সঙ্গে পা ফেলি। এইখানে থেকে যাওয়া যায়? আর ফিরতে ইচ্ছে করে না।
ইউ ক্যান লিভ টোয়াইস!
ক্যালিডোস্কোপে দেখি - অমিতাভ চক্রবর্তী(১৭১) ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় খেলনাগুলোর একটি। তিন আয়নাভরা একটা নলের এক প্রান্তে কয়েকটা রঙ্গীন, হালকা, টুকিটাকি টুকরো-ভাঙ্গা চুড়ি, ছোট পুঁতির দানা। নল ঘোরালে, আয়নারা ঘোরে, টুকরোরা ঘুরে ঘুরে রচনা করে ছবির পর ছবি, অজস্র, অফুরান এক মুহুর্তের ছবি পরের মুহুর্তে হারিয়ে যায়।
অন্ধকার গাঢ় হত। তারার মেলা। ... ওটা কালপুরুষ। আমার বুক কেঁপে উঠত। ওটা লুব্ধক, কালপুরুষের শিকারী কুকুর। ওটা ... আমার আর দেখতে ইচ্ছে করত না। বড্ড বেশী রহস্যময়, বড্ড বেশী ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া।
প্রস্ফুটিত কদম ফুলে হাত রেখেছি আমি, ছোঁয়া নিয়েছি গালে, চোখে, ঠোঁটে তুলে নিয়েছি তার শিরশিরে কোমলতা। এখন থেকে সমস্ত পরম স্পর্শ মাপা হয়ে চলবে এই ছোঁয়ায় ছোঁয়ায়, চাই বা না চাই।
“বাংলাদেশ ২.০”: ১০১ দিন - দীপু আহকাম(১৭০) বাংলাদেশে পরিচিতজনদের সাথে কথা বলে বুঝি- প্রকাশক ও লেখকের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সময়ে এটি বই আকারে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কাকতালীয়ভাবেই গুরুচণ্ডা৯র মানুষজনের সাথে আলাপ। তাঁরা রাজী হলেন, নতুন বাংলাদেশ অথবা 'বাংলাদেশ ২.০' এর প্রথম ১০১ দিনের রোজনামচা প্রকাশে।
এই কয়দিনে বাংলাদেশ ভারত রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক চুড়ান্ত বৈরীতায় নেমে এসেছে। মানুষে মানুষে সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়েছে। মানুষকে উত্তেজিত, মোহগ্রস্ত রাখলে তাতে শাসকদের লাভই হয়। এরকম পরিস্থিতিতে ভারতের একটি প্রকাশনী থেকে এই বইয়ের প্রকাশনা। লেখক হিসেবে আমার জন্য যেমন ঝুঁকি, প্রকাশক হিসেবে গুরুচণ্ডা৯রও হয়তো ঝুঁকি।
তবু এই ঝুঁকিটুকু আমরা নিলাম সম্মিলিতভাবেই। সবশেষে আমরা এক পৃথিবীতে বাস করা, একই ভাষায় কথা বলা, পরস্পরের প্রতি শুভ ইচ্ছা প্রকাশ করা মানুষ।
-দীপু আহকাম
ভোগবতী - বিপুল দাস(১৬৯) ভোগবতী আসলে পাতালগঙ্গা। গঙ্গা স্বর্গে মন্দাকিনী, মর্ত্যে জাহ্নবী, পাতালে ভোগবতী। কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। কোথায়, কোন সমুদ্রে তুফান উঠল, তার ঢেউ এসে লাগে সরসুনার ঝিলে। জলে প্রচণ্ড ঢেউ ওঠে। তাহলে তলে তলে যোগ আছে মহান সমুদ্র আর পাড়াগায়ের এঁদো পুকুরেও। ভোগবতী জলের এক অন্তর্প্রবাহের গল্প। কোথাকার জল অন্তঃসলিলা হয়ে কোন ঘাটে পৌঁছয়, কেউ বলতে পারে না। কোন বনেদি বংশের রক্তধারা অন্তঃসলিলা হয়ে কোন বিশ্বাসবংশে প্রকট হয়ে ওঠে, এ এক আশ্চর্য রূপকথা। তলে তলে জলের মেলামেশা জলে। সংসারে সংকরায়ন অবশ্যম্ভাবী। নইলে বড় বৈচিত্র্যহীন হয় জগত। ভোগবতীও সেই মিলনের গল্প, ঘাট আঘাটের বৃত্তান্ত। কোথাকার জল কোথায় গড়ায় - সেই ইতিহাস।
লেবারের বিদেশ যাত্রা - মঞ্জীরা সাহা(১৬৮) দালাল, দালালের আন্ডারে আবার দালাল, বড় দালাল তার মাসতুতো, ভাই, শালা, জামাই, খুড়ো, মোজায়েক করা বাড়ি, ফেক পাসপোর্ট, লোন, লোন শোধ দিতে আবার লোন - এসব নিয়েই চলছে লটারি কাটার মতো রাজ্যের পাড়া পাড়া থেকে লেবারের বিদেশ যাত্রা। কখনও দেশের অন্য রাজ্যগুলোই বিদেশ। কখনও মোকামা কার্ড, উট, বালি, মরুভূমি, ছাগল, সোনা, ডলার, কফিনে ভরা ডেডবডির সত্যিকারের বিদেশ।
তারে বাঁধা স্বর - মোহাম্মদ কাজী মামুন(১৬৬) মামুন যত্নে গল্প খুঁটে তোলেন গঞ্জ শহর গ্রাম মফস্বল থেকে, সকালের অনাবিল আলো বা সন্ধ্যের রহস্য থেকে, আশেপাশের মানুষদের নৈমিত্তিকতা থাকে। গল্পের চরিত্রগুলির সঙ্গে গল্পকার হেঁটে যান নিঃশব্দে, গল্পের স্থান, কাল, পাত্রে সঙ্গে বদলে যায় তাঁর ভাষা, শব্দের ব্যবহার। বারোটি ছোটগল্পের এই সঙ্কলনে মামুন কখনও পাঠকের কাঁধে হাত রেখে কিসসা শোনান, কখনো নিরাসক্ত কথকের মত বয়ান করেন আখ্যান।
পেশায় ব্যাংকার, নেশায় কথক মোহাম্মদ কাজী মামুন মানুষের কাহিনি বলেন জীবনের মতই বহমান গদ্যময় স্বরে।
পূর্ব ইউরোপের ডাইরি - তৃতীয় খণ্ড - হীরেন সিংহরায়(১৬৫) পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি সিরিজের প্রথম খণ্ডে পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও রাশিয়া, দ্বিতীয় খণ্ডে কাজাখস্তান, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়ার কাহিনি লিখেছেন হীরেন সিংহরায়। সেই কাহিনিতে জনজাতির হর্ষবিষাদ, অর্থনীতির গলিঘুঁজি, রাজনীতির চাল, সংস্কৃত ও ভূগোল জারিত হয়ে আছে ব্যক্তিগত সমানুভূতি ও একাত্মতায়।
তৃতীয় খণ্ডে লেখক নিয়ে চলেছেন আরও চারটি দেশে- ম্যাসিডোনিয়া, স্লোভাকিয়া, চেকিয়া ও হাঙ্গেরি।
ময়ূরঝর্ণা - এক মাওবাদীর জন্মরহস্য - বিতনু চট্টোপাধ্যায়(১৬৪) এই উপন্যাসের কোনও ঘটনা বা চরিত্রের সঙ্গে কেউ যদি দেখা বা শোনা কারও বা কোনও ঘটনার মিল খুঁজে পান, তিনি বুঝবেন তা একেবারেই আকস্মিক বা ঘটনাচক্রে নয়।
ময়ূরঝর্ণা গ্রামের এক আদিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করে বড় হয়ে ওঠা এক যুবকের নাম সিংরাই মান্ডি। সিংরাই মান্ডি নামটা কাল্পনিক। তাঁর আসল নাম লিখলে লালগড় আন্দোলন পর্বে সংবাদপত্র পড়া এবং এরাজ্যে মাওবাদী আন্দোলনের খোঁজখবর রাখা মানুষ সহজেই চিনে ফেলবেন তাঁকে, যার ফলে হয়তো তাঁর এবং পরিবারের সামাজিক জীবন সমস্যায় পড়তে পারে! কিন্তু নামটাই কাল্পনিক, বই ছেড়ে হাতে বন্দুক তুলে নেওয়া থেকে শুরু করে সিংরাই মান্ডির জীবনের প্রত্যেকটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে এই উপন্যাস।
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি - প্রতিভা সরকার(১৬৩) জেলের আখ্যান আমরা কম পড়িনি। জাগরী পড়েছি। জুলিয়াস ফুচিক পড়েছি। হন্যমান পড়েছি। জেলের ভিতরে জেল পড়েছি। কিন্তু সবই বহুদিন আগের। নিদেন পক্ষে সত্তরের দশকের। তাহলে জেল কী উঠে গেছে? রাষ্ট্র কি নরম-সরম-পেলব বার্বি-পুতুলে পরিণত?
আসলে রাষ্ট্র ততটা বদলায়নি, যতটা আমরা বদলে গেছি। যে মস্তিষ্কগুলো চিন্তাভাবনা করত, এখন টিভির সান্ধ্যকালীন খেউড়কেই রাজনীতি ভাবে। মিডিয়াই আপনার জগতের জানলা, তাই জানলা দিয়ে কী দেখা হবে, সেটা তারাই ঠিক করবে।
কনসেন্ট নিয়ে ফাটিয়ে দেওয়া লোকজনকেও এই ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে কিছু বলতে শোনা যায়না। কারণ মস্তিষ্কই কুয়াশায় ঢেকে আছে।
কিন্তু জিনিসটা সেখানেই ফেলে রাখলে তো হবেনা। তাই এই উপন্যাস, দস্তুরমতো রাজনৈতিক, কিন্তু সেটা টিভির রাজনীতি না। জেলের গরাদের ভিতর যে অচিনপাখিরা আছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং হিংস্রতার জগতে, তাদের নিয়ে লেখা।
নিস্তার মোল্লার মহাভারত - দীপেন ভট্টাচার্য্য(১৬২) দীপেন ভট্টাচাযের শব্দ স্নিগ্ধ, বাক্য সুষমামাখা, আখ্যান মানবিক। একই গল্পের মধ্যে বহু গল্পের ইশারা বুনে রাখেন। এবং প্রতিটি ইশারাতেই তিনি এমনভাবে বাঁক নির্মাণ করেন যে পাঠকের কোনো পূর্ব-অনুমানই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে বাধ্য। তাঁর গল্পে বিজ্ঞান, পুরান, কল্পনা, ইতিহাস, দার্শনিকতার অসামান্য সম্মিলন থাকে। থাকে সময় থেকে সময়ান্তরে যাত্রা। বাস্তব জগতকে অনায়াসে টেনে নিয়ে যান যাদুবাস্তবতায়। এর সঙ্গে সহজে মিশিয়ে দেন ফ্যান্টাসি ও সাইফাই কল্প বিজ্ঞানকে। এবং তাঁর উদ্দেশ্য থাকে যে কোনো গল্পকেই সত্যি করে তোলা। এ সত্যি করে তোলার পাশাপাশি তিনি গল্পের পাঠককে তাঁর গল্পের স্থান ও সময় থেকে মাঝে মাঝেই বের্টোল্ট ব্রেশটের এলিয়েনেশন তত্ত্বের মতো করে বিচ্ছিন্ন করে আনেন।
পাকশালার গুরুচণ্ডালি - শারদা মণ্ডল(১৬১) পাকশালার গুরুচণ্ডালি - এটি সেই বই যার প্রস্তুতিতে লেগে যায় পাঁচটি দশক। যে বই মাত্র একটিই লেখা হয়েছে এ পর্যন্ত, পাকশালার কথা বলতে বলতে যা আমাদের হাতে তুলে দেয় এক আশ্চর্য মায়াময় দলিল, সময়ের দলিল। পাঠক, এ বইয়ের লেখার স্বাদই আলাদা। শিখবেন রান্না, জানবেন ইতিহাস। আর তথ্যের সঙ্গে ফল্গু নদীর মত অন্তরে বয়ে চলে জীবনের পাঠ। এ বইতে ধরা আছে মায়েদের গল্প, যা চলে এসেছে উনিশ শতক থেকে তাঁদের মেয়েদের মুখে মুখে। এই মেয়েলি বয়ানে ধরা পড়ে বাংলার ইতিহাস যা বয়ে চলে অন্দর মহলের পথ ধরে। পাকশালার উনুনের আঁচে, মশলার সুবাসে কখনও মেশে ঘাম আর অশ্রুর নোনতা স্বাদ, কখনও বা পরাধীনতার জ্বালায় বিদেশী বয়কটের স্বদেশী আগুনে লঙ্কা বাটা দিয়ে রান্না হয় ইংরেজের কপাল। কোভিড ১৯ শে জবরদস্তির অবসর না হলে হয়তো কোনদিনই এভাবে মিলিয়ে দেখা হতনা সেকাল - একাল। মা মেয়ের বয়ানে বয়ে চলে এই অনবসরের কাব্য থুড়ি পাকশালার গুরুচন্ডালি।
রসুইঘরের রোয়াক (দ্বিতীয় খণ্ড) - স্মৃতি ভদ্র(১৬০) এই বইটিকে ঠিক আত্মকথা বলা হবে, না স্মৃতিকথা, নাকি কালচারাল এনথ্রপলজির শাখায় রাখা হবে, তার ভার সময়ের ওপর রইল।
সময়ের বিচার নিশ্চয়ই যথাসময়ে হবে, কিন্তু পাঠকের বিচারও তো একেবারে তুচ্ছ নয়। এই বইয়ের অতীতাশ্রয়ী দিন, যা অন্তত তিনচার দশক পুরনো, তার ভেতরে লুকিয়ে আছে মখমলমোড়ানো শৈশব। সেই শৈশব, যা আমাদের প্রিয়তম সময়, যা আমাদের অগমগোপনগহন মায়ায় পুনর্বার জড়ায়, যেখানে আমরা সব ঈর্ষাহিংসালালসা ফেলে ঝাঁপ দিতে চাই লিথির জলে, যখন রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, ভেদবুদ্ধি আমাদের মানসজগৎ আবিল করেনি, সেই শৈশবে তিনি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যান। সেখানে খেলে বেড়ায় এক সাতআট বছরের বালিকা, যার দেখার চোখ ও শোনার কান এখনো নির্মলতম, যার হৃদয় এখনো কাকচক্ষুর মত স্বচ্ছ, যার ভালোবাসার সুগন্ধ এখনো সর্বগ্রাসী। সেই এক্কাদোক্কাবালিকার চোখ আর কান দিয়ে তিনি আমাদের এক একটা পাকপ্রণালির গল্প শোনান।
বহু জাতি বহু ভাষা এক রাষ্ট্র স্বাধীনতার পরের কিছু বিস্মৃত টুকরো - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়(১৫৯) হিন্দি যে ভারতবর্ষ জুড়ে রাজত্ব করবে, বাকি সব হবে আঞ্চলিক, ক্রিকেট আর বলিউডের একচ্ছত্র আধিপত্য হবে, ভারতবর্ষকে যুক্তরাষ্ট্র না বলে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে চালানোর চেষ্টা হবে, গণমাধ্যমে সর্বভারতীয় ভাষা হিসেবে থাকবে একমাত্র হিন্দি আর ইংরিজি, এসব ভারত রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে অকল্পনীয় ছিল। এই পুরোটারই ভিত্তি তৈরি হয় ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৭, এই দশ বছরে। স্বাধীন ভারতের গোড়ার দিকের ইতিহাসের সেসব টুকরো কখনই উচ্চারিত হয় না। সব পক্ষই মোটের উপর চেপে গেছেন, বা ভুলে।
সেই দশ বছরের এইসব টুকরোটাকরা নিয়েই এই লেখা।
পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস একেবারেই নয়, কিন্তু এইটুকুও তো জেনে রাখা যাক।
ঘুনসিযন্ত্রের রহস্য - অভিজিৎ মজুমদার(১৫৭) কল্পবিজ্ঞানের গল্প মানেই ভবিষ্যতের কথা। সেই ভবিষ্যতের কথায় গল্পের ছলে জুড়ে দিতে চেয়েছি সমকালকে। যার খানিকটা রাজনৈতিক, খানিকটা সামাজিক। একই সঙ্গে গল্প বলার আঙ্গিক হিসেবে ছুঁতে চেয়েছিলাম, আমাদের ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরকে। যেই কৈশোরে লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া ছিল, বইয়ের পেছনে লুকোনো নীললোহিত ছিল। তাই এই গল্পটায় চরিত্রদের নাম বংশীবদন, গোবর্ধন বা গোবরা, দুষ্টু লোক হাজরা। কানাই মাস্টার আর তার পোড়ো বেড়ালছানা হয়েছে গল্পের প্রোটাগনিস্ট। কৈশোরের হাত ধরে এসেছে দারোগা ভগবান দাস, পদ্ম ঝি, হাজারি ঠাকুর।
চাঁপাফুলের গন্ধে - এস এস অরুন্ধতী(১৫৬) চাঁপাফুলের রঙ কি তবে শুধুই বেদনায় কালো! কোথায় গেল তার সেই মধুর মতো সোনালি রঙ আর ম' ম' করা সুবাস? আনন্দের রামধনু ছটা? এইখানেই এই গল্পগুলোর জয়! যে জটিল আনন্দ বেদনার পশরা সাজিয়েছে এই ক্ষীণতনু গল্পগ্রন্থটি তার পুরো আস্বাদের জন্য ক্ষত গল্পের রূপার মতো সংবেদী মন চাই, যে কিনা সব হলাহলের মধ্যেই খুঁজে নেবে বেঁচে থাকার আনন্দ-অমৃত, কাঠপুতলি আথির মতো বলে উঠতে পারবে, এমনি কত দুঃখ সুখের সুতো দিয়েই জীবনটা বোনা রে। কখনো দুঃখের কালো সুতো নকশা কাটে, কখনো আবার হলদে আশার ফুলকারি খোলতাই হয়। সুখের কথা এখনও তেমন পাঠক বিরল নন।
দিতি ও মহারানি - মৃণাল শতপথী(১৫৪) সত্যজিৎ রায় মনে করতেন ছোটদের গল্প বলার নির্দিষ্ট কোনো ভাষার প্রয়োজন নেই, তা পরিণত মনের মতোই হবে। ছোটদের সঙ্গে খেলার সময়ও তিনি ছোটোভাব দেখাতেন না, ইচ্ছাকৃত জিতিয়ে দেবার চেষ্টাতেও যেতেন না। তাঁর লেখাপত্রের ভাষাতে তারই সাক্ষর। তবু ভাষারও শৈশব থাকে, তার পরিণত হওয়ার দিকে যাওয়া থাকে।
'দিতি ও মহারানি' নামক এই বইতে আছে মাছেদের জগৎ,তাদের জলীয় জীবন,দু:সময় আর উত্তরণের গল্প। গল্পের ভাষা সেখানে শিশুর হলেও পরিণত মন প্রাসঙ্গিক বিষয় খুঁজে নেবে। আছে তিতিয়া, শিশুহীন ভবিষ্যৎ দুনিয়ায় আকস্মিক একটি শিশুর এসে পড়ার বিস্ময়, তাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। এ গল্পের ভাষা কৈশোরের,কল্পবিজ্ঞান-ঋদ্ধ, পীড়নমুক্ত বিশ্বের আকাঙ্ক্ষায় আত্মবলিদানের। আছে দিতি নামে আরেক সদ্যোজাত। প্রকৃতি ও মানব সম্পর্কের বিপন্ন সময়ে এই গল্প দুই মাতৃ-হৃদয়ের দ্বন্দ্বকে সামনে এনে অশ্রুময় কোন প্রশ্ন রেখে যায়।
এই বইয়ের প্রতিটি গল্পে বিষয় অনুযায়ী ভাষা পাল্টেছে, এসেছে অস্কার ওয়াইল্ডের ছন্দময়তা, উঁকি দিয়েছে রূপকথার আঙ্গিক। এই পাঠে ছোটোবড় বিচার নেই, শৈশবকে হেলায় জিতিয়ে দেবার সহজ প্রয়াসও নেই।
বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে,
মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা,
কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
আমাদের কথা
আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের
কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি
জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
বুলবুলভাজা
এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ।
দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও
লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
হরিদাস পালেরা
এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে
পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান
নিজের চোখে...... আরও ...
টইপত্তর
নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান।
এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর।
... আরও ...
ভাটিয়া৯
যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই,
সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক
আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি।
যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।
মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি
বার পঠিত
সকলকে জানান
উপরে যে কোনো বোতাম টিপে পরিচিতদের সঙ্গে ভাগ করে নিন