এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দত্তক প্রসঙ্গে 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৭০৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • বইমেলা ঘনিয়ে এল। বইয়ের দাম ক্রমশ আকাশছোঁয়া হচ্ছে বলে গুচ্ছের অনুযোগ শোনা যাচ্ছে, এবং যাবে। তা, আমরা, অর্থাৎ গুরুচণ্ডা৯র এই নিয়ে দীর্ঘদিনের বক্তব্য আছে। আমরা আমাদের বইয়ের ডাকনাম রেখেছি চটি বই। বইয়ের উপরে আস্ত দুখানা চটির ছবি ছেপে দিই আমরা। এই ব্যাপারটা, কেউ পছন্দ করেন, কেউ করেননা। চন্দ্রিল, প্রতুলদা পছন্দ করেন বলেছিলেন, মনে আছে। কিন্তু কথা হল, এটা কেন দিই? মজা করে? নাঃ, নয়। হোঁতকা মলাট-ওয়ালা হাজার টাকার বইয়ের বিরুদ্ধে ওইটাই আমাদের বিবৃতি। বাংলা বাজারে অকারণেই বই হার্ডকভার করে হোঁৎকা দেখানো হয়, অল্প কপি ছেপে পাগলের মতো দাম রাখা হয়, এবং দিনের শেষে কেউ বই পড়েন না বলে হাহাকার শোনা যায়। কিন্তু কথা হল, এক পিস বইয়ের দাম হাজার টাকা হলে লোকে কটা বইইবা কিনবে? যারা মাল্টিপ্লেক্সে পাঁচশো টাকা দিয়ে সিনেমা দেখে, তারা কিনতে পারে, কিন্তু তাতেও মেরেকেটে খানদুই। একসঙ্গে তো কেউ দুটো সিনেমা দেখেনা। এবং তার বাইরের যে বিপুল জনসমষ্টি, তারা কিনবেই না।

    ঠিক এই জন্যই আমরা পেপাপব্যাক বার করি, এবং রোগাপাতলা হয় বলে তার নাম রেখেছি চটি বই। এখন বই তুলনায় মোটাসোটা হলেও, নামটা এবং পেপারব্যাক গড়নটা থেকেই গেছে। এবং বলাবাহুল্য আমরা বইয়ের দাম কম, বাজারের হাওয়ার তুলনায় খুবই কম রাখি। নীতিগতভাবেই। ওটাই মডেল। দাম কম এবং আরও বেশি লোকের কাছে পৌঁছনো। সেটা ঠিকই আছে, কারণ আমরা বই বেচে কেউ তিনতলা বাড়ি বানাতে যাচ্ছিনা, আমরা মুনাফামুখী নই, একটি ট্রাস্টের পরিচালনায় চলি, এসব বুক বাজিয়ে বলতেই পারি। এবং মডেলটা একরকম ভাবে সফল। আমাদের একটা পরিচিতি আছে। প্রতি বইমেলাতেই লোকজন আসেন, কেনেন। রীতিমতো একটা কমিউনিটি মজুত। তার অনেককেই চিনে গেছি, কাউকে কাউকে চিনতে না পেরে কেলেঙ্কারি করি ফেলি, কিন্তু সেসব অন্য গপ্পো। আসল কথা হল মডেলটা চালু।

    এবার এর একটা সমস্যাও আছে। বইয়ের বিক্রি খুবই ভালো হলেও, আমাদের মেরেকেটে টাকাটা উঠে আসে, কারণ দাম কম। কখনও সামান্য কিছু ক্ষতিও হয়, কিন্তু সেটা সামলে নেওয়া যায়। একবার কলেজ স্ট্রিটে বন্যা হল, অনেক বই নষ্ট হল, সেগুলো অবশ্য বড়ো ক্ষতি। কিন্তু সেও সামলে নেওয়া গেছে। এবং এগুলোর কোনোটাই কোনো সমস্যা না, কারণ আমরা মুনাফার জন্য এই খেলায় নামিনি। তাহলে সমস্যাটা কী? সমস্যা এই, যে, এইভাবে চললে আমাদের টাইটেলের সংখ্যা প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছেনা। এখন বোধহয় শদুই আছে, কিন্তু সেটাও যা ছাপতে চাই তার চেয়ে অনেক কম। তার কারণ একটাই। প্রাথমিক বিনিয়োগ কম থাকায়, যেটুকু রোল করছে, সেটা থেকেই পরের বই ছাপতে হচ্ছে, এবং আমরা বছরে দশ-বারোর বেশি বই ছেপে উঠতে পারছিনা। শুরুর দিকে, এটা কোনো সমস্যা ছিলনা। ছাপার জন্য অত বই ছিলনা। কিন্তু এখন তো ঠিক শুরুর দিক না। প্রকাশযোগ্য বইয়ের সংখ্যা দেখি ভালই। কিন্তু অত বই ছেপে উঠতে পারিনা। ফলে ক্ষতিটা পাঠকেরই হয়। এই হচ্ছে সমস্যা।

    সমস্যা সমাধানের একটা উপায় হতে পারে, ঝট করে বইয়ের দাম বাড়ানো। সেটা করতে চাইনা একেবারেই। নীতিগতভাবে চটি বই শুরু করার লক্ষ্য একটাই ছিল, কম দামে সস্তা বই পাঠকের কাছে পৌঁছনো। সেটা থেকে সরে ‘দামী’ প্রকাশক হবার কোনো মানে নেই। সেটা ভাবাও হচ্ছেনা। পরিবর্তে আরেকটা উপায় ভাবা হয়েছে। অনেকদিন থেকেই। যদি বইয়ের স্পনসরশিপ নেওয়া যায়। ব্যক্তি করুন বা প্রতিষ্ঠান (যদিও কেন কোনো প্রতিষ্ঠান এটা করবেন, জানা নেই, কিন্তু তবুও, বলা তো যায়না)। কাগজে-কলমে সেটার নাম দেওয়া হয়েছে "বই দত্তক নেওয়া"। মডেলটা এরকমঃ যাঁরা প্রোজেক্টটায় আগ্রহী, হাত তুললেন। আমরা সম্ভাব্য বইয়ের নাম বা তালিকা তাঁদের কাছে উপস্থিত করলাম। এবার সেখান থেকে বেছে নিয়ে (যদি পছন্দ হয়) একটি বইয়ের আংশিক খরচ আগ্রহীদের মধ্যে থেকে কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান বহন করলেন। বইতে তাঁদের নাম দেওয়া হল। লেখকও কিছু টাকা পেলেন, বইয়ের দামও সস্তা রাখা হল। বলাবাহুল্য টাকাটা দত্তকদাতা ফেরত পাবেননা। ওটা বইয়ের পরবর্তী সংস্করণে রোল করবে। এক্সক্লুসিভলি।

    আমার/আমাদের দিক থেকে মডেল এটাই। চটি পাঠকের কাছে পৌঁছনোর একটা পন্থা। পাঠকসংখ্যা বাড়ানো, পাঠকের কাছে বই নিয়ে যাওয়া, এই আমাদের ঘোষিত অবস্থান। চটি একটা উপায়। চটি ছাপব, দরকার হলে অন্য পন্থাও নেব। কিন্তু পাঠকের ভিত্তি বাড়ানোর অবস্থান থেকে এই মুহূর্তে সরছিনা।

    বইয়ের জন্য দত্তক চাইলে অনেকেই জানতে চান বিষয়টা কী। তাই বিশদে লিখে দিলাম। বিষয়টায় আগ্রহী হলে জানাবেন। আগ্রহী না হলেও, বইমেলায় অবশ্যই আসবেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • এবাবা | 103.244.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৭540247
  • সেকি, ছাপা টেকস্ট থেকে ইউনিকোড বের করতে আবার সাহায্য লাগে নাকি? আ্যাক্রোব্যাট ২০২৩ থেকে তো বাংলা ওসিয়ার ঢুকিয়েছে। পিডিএফ খুললেই ওসিয়ার করে ইউনিকোড দিয়ে দেয়। আর্কাইভ ডট অর্গ এ তুললে কিছুক্ষণের মধ্যে টেকস্ট অনলি ভার্সান দিয়ে দেয়। আর গুগুল ড্রাইভে তুলে ওপেন অ্যাজ গুগুল ডক তো আছেই। একাধিক কলামে লেখা থাকলে একস্ট্রাক্ট করা টেকস্ট ওসিয়ারে ঘেঁটে গেলে পিডিএফ এডিট করে সিঙ্গল কলামের একাধিক পাতা বানিয়ে নিলেও হয়। গুরু থেকে তো বহু বই স্ক্যান থেকে ওসিয়ার করে হয়েওছে।
  • মে লি খোঁ | 42.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২৬540251
  • ও:, অগ্রগতি তেমন না হলে তো আর এবারে হওয়ার মতো নয়। কনটেন্ট তৈরি হবে, দুবার প্রুফ দেখা হবে, লেখক ফাইনাল প্রুফ দেখবেন, ভূমিকা লেখা হবে, লেয়াউট হবে, প্রচ্ছদ হবে, তার অ্যাপ্রুভাল হবে...। 
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন