যারা খবর দেখেননি তাদের জন্য আজকের তাজা খবর এই যে রাজস্থানে আমির শেখ নামে এক ব্যক্তিকে, নাগরিকত্বের সচিত্র পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র বাংলা ভাষা বলার অপরাধে ডিটেইন করা হয়, এবং অভিযোগ এই যে, ডিটেনশন ক্যাম্পে কিছুদিন বন্দী থাকার পর তাকে বসিরহাট সীমান্তে এনে একটি পে-লোডার মেশিনের সাহায্যে কাঁটাতারের ওপারে ছুঁড়ে দেওয়া হয়। আমির শেখ মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা, আমির শেখের সচিত্র পরিচয়পত্র ছিল, আমির শেখ কাজ করতেন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে, দোষ বলতে এক তিনি বাঙালি, আর দুই তিনি শ্রমিক ছিলেন বিজেপি-শাসিত একটি রাজ্যে।
আমির শেখ একা নন, এই এক-ই ঘটনা ঘটে চলেছে গত কয়েক বছর ধরে, এবং ক্রমাগত বাড়ছে। চাঁচল থেকে হরিয়ানায় গেছিলেন আলম আলি, আধার কার্ড দেখানো সত্ত্বেও তাকে, জোর করে শুধু অন্তর্বাস পরিয়ে অভুক্ত অবস্থায় একটি জানলাবিহীন কুঠুরিতে বন্দী করে রাখা হয় আরও ন’জনের সাথে, বাধ্য করা হয় বাথরুম ও পুলিশের জুতো পরিষ্কার করতে। তাঁরও অপরাধ? তিনি বাংলা ভাষী মানুষ। শুধু ২০২৫ সালের গত কয়েক সপ্তাহের খবর অনুযায়ী গুরগাঁও, ঝাজ্জর, দিল্লি, ঝাড়সুগুদা সহ নানা জায়গায় এদের মতই শতশত বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিক আটক হয়েছেন, এবং তাদের আইনী পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও “বাংলাদেশি” বলে হয়রানি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত তিন মাসের মধ্যেই ২৯শে মার্চ হরিয়ানায় ৩০০, ২৫শে জুন ঝাজ্জড়ে ৭, ২৬শে জুন ও ৭ই জুলাই দিল্লিতে ৬ এবং ৮, ১১ই জুলাই ঝাড়সুগুদায় ২৭৭ জন অত্যাচারিত, আক্রান্ত। এতোগুলো আলাদা জায়গায় একই প্যাটার্নের নিহিত অর্থ এই যে এটি পরিকল্পিত আক্রমণ, বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এবং এটি প্রশাসনের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া সম্ভব নয়। এর উত্তরে আমাদের রাজ্য পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপাততঃ পাওয়া খবর অনুযায়ী শুধু একটি হোয়াটস-অ্যাপ নম্বর শেয়ার করেছেন। আপৎকালীন কোনো ব্যবস্থা সরকার এই গত ৯০ দিনে নেননি।
কিন্তু এই পরিকল্পিত আক্রমণ শুধু বিজেপিশাসিত রাজ্যের পুলিশের একার কাজ নয়, এদের নৃশংসতাকে বৈধতা দিতেই একাধিক লোক মিডিয়ায় অথবা রাস্তার মিছিলে দাবী করছেন এইসব আক্রমণের ঘটনা সাজানো, বানানো, এবং তৃণমূলের পালে হাওয়া দেওয়ার একটি ফিকির বই কিছু নয়। মহঃ সেলিম বলেছেন, এরকম আগেও হয়েছে, এইভাবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না। এরা কেউ সত্যিটা জানেন না এমন নয়, কিন্তু অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তার থেকে স্বাভাবিকভাবেই তারা ভোটের ডিমিনিশিং মার্জিন নিয়ে অধিক চিন্তিত। এদের কেউ রামপন্থী, কেউ বামপন্থী, এবং সকলেই বাঙালির সুরক্ষা ও অধিকারের পরিপন্থী।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যার প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। কতজন আক্রান্ত যেটুকু খবরে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কতজন বিপন্ন? এবং রাজ্য সরকারের দায়িত্ব কী? প্রশ্ন, অভিবাসী শ্রমিকদের কতজন বাংলা থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে গেছেন কাজের সূত্রে, এবং তার উল্টোদিকে বাইরের অন্যান্য রাজ্য থেকে কতজন বাংলায় এসেছেন কাজের খোঁজে?
এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা পাওয়া যাবে ডিসেম্বর ২০২৪-এর – বিবেক দেবরয় ও দেবীপ্রসাদ মিশ্রার লেখা একটি গবেষণাপত্রে, যার শিরোনাম “Examining volume and directions of domestic migration in India using novel high-frequency data” (EAC-PM Working Paper No. 35/2024) (দেবরয় ও মিশ্রা’র (২০২৪)-কে সংক্ষেপে দে-মি-২৪ বলবো পরের অংশটুকুতে।) আমি সেই পেপার পড়ে যা-যা বুঝেছি তার কিছু এখানে লিখে রাখি, স্বীকার করে নিয়েই যে আমি অর্থনীতির ছাত্র নই, কাজেই কিছু ভুল ব্যাখ্যা করে থাকলে অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী।
যাই হোক, এই গবেষণাপত্রে দে-মি-২৪ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ছবিটি তুলে ধরেছেন। লেখকদের পর্যবেক্ষণ এই যে মোটের উপর, ডোমেস্টিক মাইগ্রেশন অর্থাৎ অভ্যন্তরীন অভিবাসন আগের থেকে কমেছে, আগের থেকে প্রায় ১১.৭৮% কমে এখন চল্লিশ কোটি, এবং অভিবাসনের হার কমে হয়েছে ২৮.৮৮%।
এখানে দুটো কথা বলে নেওয়া দরকার। প্রথমত, ডেটা অর্থাৎ তথ্য-উপাত্তের সমস্যা। আভ্যন্তরীণ অভিবাসনের তথ্য-উপাত্ত মূলত আসে জনগণনা অর্থাৎ সেন্সস থেকে, যা হয় দশ বছরে একবার। আমাদের দেশের শেষ সেন্সস হয়েছিল ২০১১, ঠিক সময়ে চললে ২০২১-এ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু প্যানডেমিকের ফলে সেটি হয়নি। সেও অতীত আজ বেশ কয়েক বছর, এবং সরকারী দীর্ঘসূত্রিতার ফলে পরের সেন্সস হবে ২০২৬, ফল বেরুতে বেরুতে ২০২৭, আর তারও পরে সেই উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আরও দেরি। অর্থাৎ, সেই ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই কিঞ্চিৎ পুরানো। দ্বিতীয়ত, সেন্সসের সংজ্ঞানুযায়ী অভিবাসন বলতে, এক রাজ্যের মধ্যেই অভিবাসীও পড়েন, আবার এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যেও। আমাদের দেশে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে অভিবাসনের সংখ্যা চিরকাল-ই রাজ্যের মধ্যে অভিবাসনের চাইতে অনেক কম। উদাহরণ-স্বরূপ – ২০১১ সালের সেন্সাস অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মোট অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর মধ্যে ২ কোটি ৯০ লাখ রাজ্যের ভেতরেই (ইন্ট্রা-স্টেট) স্থানান্তর করেছেন; এদের বাদ দিলে ৪৩.৯৫ লাখ মানুষ অন্যান্য জায়গা থেকে বাংলায় এসেছেন (ইন-মাইগ্রেন্ট) এবং ২৪.৫০ লাখ মানুষ বাংলা থেকে অন্যান্য জায়গায় গেছেন (আউট-মাইগ্রেন্ট)। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দে-মি-২৪-এর টেবল ৩-এ অন্য দেশ (লাস্ট রেসিডেন্স আউটসাইড ইণ্ডিয়া) এবং ‘আনক্লাসিফায়েড’ – এইরকম দুটি ‘অরিজিন’ বা উৎস আছে, এরাও ইন-মাইগ্র্যান্ট জনসংখ্যার অংশ। নিচের ছবিতে নেট = ইন - আউট হিসেবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অবস্থানের একটা মোটামুটি ধারণা দেওয়া হ’ল। ছবির বাঁদিকে যেসব রাজ্য – মহারাষ্ট্র, দিল্লি – সেগুলি জনপ্রিয় গন্তব্য, তে অনেক বেশি লোক আসে কর্মসংস্থানের আশায়, আর বাঁদিকে যেগুলি সেগুলি জনপ্রিয় উৎস – উত্তরপ্রদেশ, বিহার।
এবার আমরা এর মধ্যে থেকে পশ্চিমবঙ্গের অংশটুকুতে আলো ফেলব। পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী এই আউট-মাইগ্র্যান্ট-রা, অর্থাৎ যারা আদতে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা, কিন্তু কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে গেছেন তারা কোন-কোন রাজ্যে থাকেন? নিচের ছবিতে দিলাম প্রথম দশটি গন্তব্য। যে রাজ্যগুলিতে অত্যাচারের খবর পড়েছি তার সবকটিই এখানে উপস্থিত। এটিও সেন্সাস ২০১১-র ডেটা অনুযায়ী।
আর ২০১১ অব্দি দেশের সামগ্রিক ছবিটা এইরকম – ১৯৯১, ২০০১, ও ২০১১ সালে, ভারতবর্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৬০ লক্ষ, ৩ কোটি ২৭ লক্ষ, এবং ৪ কোটি ৫০ লক্ষ, রাজ্যের মধ্যে, রাজ্যের বাইরে সব মিলিয়ে। এই সময়েই দেশের ওয়ার্ক-ফোর্স-ও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, হিসেব কষলে দেখা যাবে, ২০০১ সালে ওয়ার্কফোর্সের ৮.১৫% ছিলেন অভিবাসী, ২০১১-তে সেটা বেড়ে হয়েছে ৯.৩৪%।
২০২৪-এ দাঁড়িয়ে কে কোথায়? এইটি মাপতে, দে-মি-২৪ তাই ব্যবহার করেছেন, তিনটি হাই-ফ্রিকোয়েন্সি (এবং ম্যাসিভ!) ডেটাসেট –
১) ভারতীয় রেলওয়ের আনরিজ়ার্ভড টিকিট সিস্টেম অর্থাৎ ইউ-টি-এস থেকে যাত্রীর সংখ্যা (যাতে প্রায় তিরিশ কোটি ডেটাপয়েন্টস) - আনরিজার্ভড টিকিট ব্যবহৃত হয়েছে ‘ব্লু কলার’ অভিবাসী-সংখ্যার প্রক্সি হিসেবে।
২) টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইণ্ডিয়া অর্থাৎ ট্রাই থেকে মোবাইল ফোন রোমিং-এর ডেটা, আর
৩) জেলাভিত্তিক ব্যাঙ্কিং ডেটা।
বলাই বাহুল্য, এগুলি প্রত্যক্ষ সেন্সস ডেটার অভাবে অন্য সারোগেট/সাপ্লিমেন্টারি ডেটা থেকে অভিবাসন মাপার কাজে লাগবে, এবং এদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে – যেমন ট্রেনের ডেটা স্টেশনভিত্তিক, শহরভিত্তিক নয় – যে ব্যক্তি থানেতে নামলেন, তিনি হয়তো যাচ্ছেন পুনে, আবার যিনি হাওড়া থেকে ট্রেন ধরলেন তার বাড়ি হয়তো অন্যত্র। তাছাড়া, উৎসবে-পার্বণের সময় ট্রেনযাত্রা বেশি হয়, যেমন হয় পারিবারিক অনুষ্ঠানে। এবং ট্রেনের টিকিটের তথ্যে বয়স-লিঙ্গ ইত্যাদি অমিল। তবুও, দে-মি-২৪, ২০১১ অব্দি পাওয়া ডেটায়, রিগ্রেশন লাইন টেনে দেখাচ্ছেন যে এই অসংরক্ষিত টিকিটের সংখ্যা অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ‘রোবাস্ট প্রেডিকটর”। সেই ডেটা থেকে কী দেখা যাচ্ছে? প্রথম দশ স্টেট-টু-স্টেট রুটের মধ্যে পাঁচ নম্বরে বিহার -> পশ্চিমবঙ্গ। এবং, উল্লেখ্য ব্যাপার “যে রাজ্য থেকে” অর্থাৎ সোর্সের প্রথম দশে আসলে ৬টি রাজ্য – বিহার চারবার, উত্তরপ্রদেশ দুবার, আর গন্তব্য-রাজ্য দেখলে প্রথম দশে মহারাষ্ট্র ৩ বার, দিল্লি দুই। আবার গন্তব্য স্টেশন দেখলে ২০১২, ২০২৩ দুই বছরেই হাওড়ার র্যাঙ্ক তিন।
এ ছাড়াও, দে-মি-২৪-এর গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ট্রাই-এর মোবাইল রোমিং ডেটা – অর্থাৎ ভি-এল-আর (ভিজ়িটর লোকেশন রেজিস্টার)। যে কোনো মোবাইল ডিভাইস একসঙ্গে একটিই ভি-এল-আরে কানেক্ট করতে পারে, এবং একসাথে একাধিক ভি-এল-আরে কারুর পক্ষে থাকা সম্ভব নয় – এই ভি-এল-আরের ভিত্তিতেই সার্ভিস প্রোভাইডার-রা বুঝতে পারেন একটি ডিভাইস ‘হোম’ অঞ্চলে না ‘রোমিং’। বলাই বাহুল্য, রোমিং-এর ডেটা আমাদের শুধুই জানাচ্ছে সেই সিমকার্ডটি কেনা হয়েছিল কোথা থেকে আর ব্যবহৃত হচ্ছে কোথায়। কিন্তু এই ডেটায় দিকনির্দেশ, কোথা থেকে কোথায়, নেই। এ ছাড়াও আরেকটি সমস্যা এই যে হয়তো অনেক অভিবাসী-ই গন্তব্যে পৌঁছে, সেইখানে একটি নতুন সিম কার্ড কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন - সেক্ষেত্রে তিনি অভিবাসী কিন্তু রোমিং ক্রাইটেরিয়ায় ধরা পড়বেন না।
ট্রাইয়ের রোমিং ডেটা থেকে দে-মি-২৪ মূলতঃ দেখিয়েছেন সিজ়নাল ভ্যারিয়েশনের খুঁটিনাটি। সংক্ষেপে বললে, ওদের সিদ্ধান্ত এই যে, এপ্রিল থেকে জুন মাসে এর মান সবথেকে বেশি, আর তার ঠিক পরেই নভেম্বর–ডিসেম্বরের সময়ে। এপ্রিল-জুন অর্থাৎ গরমকালে সম্ভবত অধিকাংশ পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফেরে। আর শীতকালের ‘পিক’ সম্ভবতঃ উৎসব বা বিয়ের মরসুমের যাতায়াতের জন্য, আর ঠিক এর পরেই, জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে কম।
--
দে-মি-২৪’এর হিসেব অনুযায়ী ২০১১-এর তুলনায় গোটা দেশেই অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের হার কমেছে, ওঁদের হিসেবে ২০২৩ সালে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় আনুমানিক ৪০,২০,৯০,৩৯৬ – অর্থাৎ, ২০১১ সালের সেন্সাসে গোনা ৪৫,৫৭,৮৭,৬২১ জনের তুলনায় প্রায় ১১.৭৮% কম। ফলত ২০১১ সালে, যদি মাইগ্রেশন রেট হয়ে থাকে ৩৭.৬৪%, এখন তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮.৮৮%–এ। কিছু সহজ-সরল জিনিষ ধরে নিলে, হিসেব কষে দেখা যাবে, পশ্চিমবঙ্গে এই হিসেব অনুযায়ী আউট-মাইগ্র্যান্টের সংখ্যা ২১.২১ লাখ। তারা ছড়িয়ে আছেন সারা দেশে।
এবং সেই ২১ লক্ষ মানুষের বিপদে এই মুহূর্তে রাজ্যের অবদান একটি মাত্র হেল্প-লাইন!
তবে, কয়েকটা কথা মোটামুটি পরিষ্কার করে বলে রাখা যায়। এক, ভারতের সর্বত্রই পরিযায়ী শ্রমিকদের আন্তঃরাজ্য অভিবাসন কম এটা ঘটনা, কিন্তু নেট মাইগ্রেশন বিচার করলে পশ্চিমবঙ্গ সবার পিছে, সবার নিচে এরকম ধারণাটি ভুল। বরং কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অনেকটাই তার উল্টো। তবে, মনে রাখা দরকার একে দে-মি-২৪ বলেছেন, 'ব্লু কলার মাইগ্রেশন', অর্থাৎ, এই ছবি/রিপোর্ট থেকে স্কিলড লেবার বা 'দক্ষ শ্রমিকে'র অভিবাসন বোঝা যাবে না। তারা ঐ পেপারের, এবং এক-ই কারণে এই লেখাটির আওতার বাইরে।
দুই, এই আতঙ্কের আবহাওয়ায় যদি অন্যান্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা শ্রমিকরা ফিরে আসতে থাকেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের জন্য তাদের রাজ্যে কাজের যোগান সুনিশ্চিত করার কিছুটা দায়িত্ব এসে বর্তায় রাজ্য সরকারর উপরেও। অতএব, এই অভিবাসী শ্রমিক, যাদের এমনিতেও সামাজিক সুরক্ষাকবচ বলে প্রায় কিছুই নেই, তাদের সংরক্ষণের দাবি অত্যন্ত ন্যায্য।
তিন, ঠিক কতটা অত্যাচার হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে তার সম্যক ধারণা করার আশু প্রয়োজন। এ কথা প্রায় সমস্ত ক্রিমিনোলজিস্ট বা সমাজতাত্ত্বিক জানেন যে অভিবাসী জনতার উপরে সংঘটিত অপরাধের আণ্ডার-রিপোর্টিং-এর হার সবথেকে বেশি। ভেবে দেখুন, যে অসহায় শ্রমিককে রাত্রি দুটোয় পুলিশ এসে তুলে নিয়ে যায় বিনা অপরাধে, সে নালিশ করবে কার কাছে? আইন-প্রশাসন- কে তার পাশে? এই মুহূর্তে কেউ না।