সিমলা থেকে কল্পা ২২৪ কিমি, একবারও না থামলে ৭ ঘন্টার যাত্রা। অন্ধকার হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। আমরা কিছু স্যান্ডউইচ প্যাক করিয়ে নিলাম, যাতে গাড়িতেই খেয়ে নিতে পারি। পথে এক জায়গায় সিএনজি নিতে দাঁড়ানো হল, তারপর সোওজা কল্পার দিকে। ক্রমশ দূরের বরফচুড়ারা কাছে এগিয়ে আসতে থাকে, আমরা উঠে নেমে আবার উঠে এগোতে থাকি কিন্নরভূমের দিকে। ... ...
গতবারে যা যা দেখা বা করা হয় নি এবারে সেগুলো করব বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। নাহলে আর সোলো আসাই বা কেন? সেজন্য হেমিস উৎসব দেখে আসার পরেরদিন, ৬ই জুলাই প্রথমে গিয়েছিলাম পেট্রোগ্লিফের সন্ধানে। সে গল্প পরে। গিয়েছিলাম সিন্ধু জাঁসকারের সঙ্গমে, সে গল্প আগেই বলেছি। এখন বরং বলি সিন্ধুঘাট আর লেহ প্যালেসের গল্প। ... ...
নীচে নামতে নামতে একবার মনে হয় এখন যদি একটা ৬ কি ৭ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হয় তাহলে আমাদের বাঁচার কোন সম্ভাবনা তো নেইই, সহজে কেউ জানতেও পারবে না। তখনই মনে হয় হাজার বছরের বেশী এইসব পাহাড়ের ভেতরে গুহায় থেকেছেন শ্রমণরা, বাইরে -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তুমূল তুষারঝড় কিছুই বিচলিত করে নি তাঁদের। এই অপূর্ব থাংকাগুলো এঁকেছেন, পুঁথি লিখেছেন, নকল করেছেন। ... ...
এই বছর থিকসে গোম্পায় আর যাই নি, তবে পেট্রোগ্লিফের খোঁজে যাবার সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় হঠাৎই দেখা পেয়ে যাই একজোড়া মোহনচুড়া পাখির। কি যে সুন্দর দেখতে এই পাখিটাকে। এমনিই রাস্তার পাশে একটা ঝোপমত জায়গায় বসে ছিল। কি ভেবে একটা উড়াল দিল, কয়েক সেকেন্ড পরে অন্যটাও। ঠিক যেন একটা সাদাকালো জিগজ্যাগ ডোরাকাটা সিল্কের পর্দা হাওয়ায় দুলতে দুলতে উড়ে যাচ্ছে থিকসে গোম্পার ছাদের দিকে। ... ...
এই লেখাটা ছেড়ে গিয়েছিলাম প্রায় এক বছর আগে। তালেগোলে সময় গড়াতে গড়াতে আরো একবার ঘুরে আসা গেল দ্বাদশ গিরিবর্ত্মের দেশ থেকে। সেবারে লিখতে লিখতে যে সব 'হলেই হতে পারত কিন্তু হয় নি ট্যুর কন্ডাকটারের অজ্ঞান ঔদাসিন্যে' দু:খগুলো উথলে উঠছিল এবারে সেটা সম্পূর্ণ মিটিয়ে আসতে পারার তৃপ্তিতে খুশীমনে আবার হাত দিলাম লেখাটায়। গতবার আর এবারের অভিজ্ঞতা পাশাপাশিই চলবে। ... ...
হেমিস ফেস্টিভাল ২০২৫ ... ...
ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের আফগানিস্তান যাত্রা ... ...
অতএব মনের মধ্যে তৈরী হয়ে ওঠে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আপাতত মিথ্যে ভান করে নেওয়া একটা চতুর মন। নিজের এই মনটাকে আমি নিজেও ঠিক পুরোটা বুঝে উঠতে পারি কি না কে জানে! এই মন আমাকে দিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে মাথায় ঠেকানোর মত একটা ভঙ্গী করায়, আমি দুধ-ঘী-মধুর সুস্বাদু তরল জিভ দিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে হাতটা পায়ের তলায় মুছে ফেলি। নিজের মনে অবিরাম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, সকলের চোখের আড়ালে এ আমার কেমন প্রতিবাদ? এ তো ভন্ডামি। মন বলে হ্যাঁ ভন্ডামিই তো, ইস্কুলে ইরাদি যখন বলেছিল ‘তোমায় তো মা দেখিয়ে দেন ট্র্যানশ্লেসান' ত্খনও তো বলে ওঠো নি ‘না না মা তো কিচ্ছু পড়া দেখায় না আমাকে' সেইটে ভন্ডামি ছিল না? আমি বলি আহা তখন ঐটে বললে মা তো ভীষণ রাগ করত। মন বলে আর এইটে বললে বুঝি ক্যাডবেরি কিনে দেবে? আরও অনেক বেশী রাগ করবে। আমি বলি কিন্তু সত্যি যদি সরস্বতী জ্যান্ত হয়ে কম নম্বর পাইয়ে দেয়? মন বলে তাহলে তো বুঝেই যাবে আমরা মানুষরা বানাই না, আর ঠাকুররা রাগ করলে নম্বর কম হয়। আমি ব্যাজার হয়ে বলি তখন বুঝে কি ঘন্টা হবে আমার? মন খুশী হয়ে বলে বলে ধ্যুৎ চল তো আজ তো আর পড়াশোনা নেই, কেউ খোঁজ করবে না, এখন চুপিচুপি ওপরে গিয়ে প্রসাদ আর নবকল্লোলের শারদীয়া সংখ্যার ছবিগুলো দেখি বরং। ... ...
একদিন সুযোগ পেয়েও যাই। ছোটমামারা তখন ফেরত চলে গেছে, দিদাকে নিয়ে ব্ড়মামা, মাইমা গেছে পুর্বাশায় মেজমামার বাড়ী। সেদিন আমি দোতলার ঠাকুরঘরে এসে ঢুকি, ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট্ট খাট থেকে নামিয়ে আনি রামকৃষ্ণ, সারদামণি, অন্নদা ঠাকুর, কালীঠাকুর, গনেশঠাকুরের ছবি। দেয়াল থেকে পেড়ে আনি কৃষ্ণরাধার ছবি। তারপর একটা একটা করে ছবির ওপরে উঠে দাঁড়াই, ছবির কাচ যাতে ভেঙে না যায় তাই ঐ ঠাকুরদের বিছানার তোষক নিয়ে ফটোর ওপরে রেখে তার ওপরে দাঁড়াই। সব ফটো জায়গামত রেখে ধার থেকে টেনে আনি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি। এই দুটো ঠাকুরের মূর্তি এনে পুজো হয়, ভোগ দেওয়া হয় আর পুজোর পরের দিন আগের বছরের ঠাকুরের বিসর্জন দেওয়া হয়। এই বছরের ঠাকুর ঠাকুরঘরে থাকে। এগুলো মূর্তি ছবি নয়, এগুলোর ওপরে দাঁড়ানো যায় না, তাই পা দিয়ে ওদের শাড়ি ডলে দিই, পায়ের আঙুল দিয়ে মূর্তির মাথার চুলগুলো রগড়ে দিই। তারপর আবার উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি আর মনে মনে বলি, যে ঠাকুরের দোহাই দিয়ে দিদারা এত মিথ্যে বলে, এতবার অন্যায়ভাবে আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখে, সেই ঠাকুরকে পা দিয়ে ডলে রগড়ে দিলাম। ওদের দেখানো 'ঠাকুর দেখবেন ওপর থেকে' এই ভয় আমি করি না। ওদের উত্তরাধিকার আমি বহন করি না, কোনওদিন করবও না। ... ...