এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ছেঁড়াকাঁথা

  • ছেঁয়াবাজীর ছলনা - ২৪

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ছেঁড়াকাঁথা | ০৬ মার্চ ২০২৫ | ২৪৭ বার পঠিত
  • হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার ঠিক পরেই জানা গেল আমাদের জুনিয়ার হাইস্কুলে যে দুজন নতুন শিক্ষিকা পদের জন্য আবেদন করা হয়েছিল, তার মধ্যে একটি অনুমোদন পেয়েছে, এবং সেটি সেলাই ও ওয়ার্ক এডুকেশানের জন্য। অন্যদিকে একটি করণিক পদ ডি আই অফিস থেকে মঞ্জুর করেছে, আবেদন না করা সত্ত্বেও। তার মানে দাঁড়াল মীনাদির চাকরিটা হয়ে গেল আর মা’র হল না। মা’র কপালে টিপ পরার জায়গায়  ত্রিশুলের মত তিনটে খাঁজ প্রায় স্থায়ী হয়ে জেগে রইল কয়েকদিন। তারপর একদিন স্কুল থেকে এসে আমাকে বলল এবার থেকে মা নাকি স্কুল থেকে বাড়ী আসবে না, রান্নাবান্না সকালেই করে রেখে যাবে, আমি যেন এসে নিজে নিয়ে ভাইকে দিয়ে খেয়ে নিই। কিন্তু ভাইকে তো এখনও খাইয়ে দিতে হয়, নিজে খেলে ভাই প্রায় কিছুই খায় না, সবটা ভাত নিয়ে ফেলে ছড়িয়ে থালার মধ্যে নানারকম ডিজাইন বানিয়ে রেখে দেয়। তাহলে? বলতেই মা বলল আমাকেই খাইয়ে দিতে। তারপর বিকেলে বড়মামা বাড়ী এলে মা জানাল গোপালবাবু বলেছেন মা'র পোস্টটা অনুমোদন পায় নি বটে, তবে পেলেও ওটায় বি এড পাশ হওয়া আবশ্যক। 

    এখন নাকি বিটি কোর্স নাম বদলে বি এড হয়ে গেছে। সরকার থেকে ইংরাজী দিদিমণির অনুমোদন দিলেও বি এড পাশ না হলে মা'কে ওঁরা নিতে পারবেন না। তাই ওঁর প্রস্তাব হল মা যেন এখন ঐ করণিক পদেই যোগ দেয়, সেক্ষেত্রে মাসিক মাইনেটা সুনিশ্চিত হবে, মা যেন হাওড়া গার্লসে বি এডে ভর্তি হয়ে যায়। এদিকে মা যেমন ক্লাস নিচ্ছে নিতে থাকুক। ওঁরা কিছু ক্লাস কম করে দেবেন আর এক পিরিয়ড আগে ছেড়ে দেবেন, যাতে হাওড়া পৌঁছে ক্লাস করতে পারে। রাজী না হলেও তো আর মা'র কাছে অন্য কোনও পথ খোলা নেই। এতে অন্তত সরকারী স্কেল অনুযায়ী নিয়মিত মাসিক বেতনের ব্যবস্থা হবে। আর কমিটি থেকে ব্যবস্থা করে টাকা দিতে হবে না। এটাই আপাতত ভাল ব্যবস্থা হল বলে সবাই একমত হয়। তবু বাতাসে ফিসফিসিয়ে ভেসে বেড়ায় 'কেরাণী ... কেরাণী।‘ আবছা আলোচনা শুনি, সবাই যাতে ‘কেরাণী' বলে না ভাবে তাইজন্যই নাকি ক্লাসগুলো দেওয়া হয়েছে। গোপালবাবুর মত মহৎ মানুষ খুবই কম দেখা যায়। শিক্ষিকার বদলে করণিক হওয়াটা একটু নীচুগোছের ব্যপার সেটা বেশ বুঝতে পারি।  

    বোধহয় সেপ্টেম্বর মাস থেকে মা ক্লাস করা শুরু করল, আগেই কিছুদিন ক্লাস হয়ে গেছিল, তবে তাতে কোর্সে ভর্তি হতে অসুবিধে হয় নি। বাসন্তিদি, হাইস্কুলের বড়দিমণি প্রমীলাদির ছোটবোন, হাওড়া গার্লসের বি এড কোর্সের অধ্যাপিকা মা'কে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। মা যখন বাংলাদেশ থেকে এসে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ে নাইন ও টেন পড়ে ম্যাট্রিক দেয়, তখন বাসন্তিদি সেখানকার দিদিমণি ছিলেন। প্রাক্তন এই ছাত্রীটির প্রতি তাঁর মায়া ছিল আর ছিল ‘যতটা পারি মেয়েদের ডিগ্রী বাড়াবার ব্যবস্থা করে দিই' এই ইচ্ছা। তাই ভর্তির সময় পার হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বাসন্তিদি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অসম্ভব সুরেলা কন্ঠে সংস্কৃত স্তোত্রপাঠ করতেন, চন্ডীপাঠও করতেন, কলকাতা দূরদর্শনেও মাঝে মাঝে থাকত তাঁর অনুষ্ঠান। ভুল চিকিৎসায় একটি চোখ তাঁর অন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তা তাঁর জীবনীশক্তিতে থাবা বসায় নি। ঘুরে বেড়াতেন দেশ বিদেশ আর  যেখানেই যেতেন সেখানেই তাঁর চারপাশে কয়েকটি নেড়ি কুকুর, দুই একটা বিড়াল জুটে এত ঠিক। 

    মা বলত হাওড়া গার্লসে তিনি ক্লাসে এসে ডায়াসে বসামাত্রই একটা মোটাসোটা লালচে নেড়ি এসে তাঁর কোলে ওঠার চেষ্টা করত। দুই একবার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি বলতেন ‘যা এবার আমাকে পড়াতে দে।‘ কুকুরটি আস্তে আস্তে ডায়াস থেকে নেমে দুদিকের ফার্স্ট বেঞ্চের মাঝের জায়গাটুকুতে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকত, কখনো কখনো দুই থাবার ফাঁকে মুখ রেখে একটু ঘুমিয়েও নিত্। আবার ক্লাস শেষ হলে আস্তে আস্তে উঠে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে ওঁর পেছন পেছন চলে যেত। মা'র দিন শুরু হত তখন ভোর সাড়ে তিনটে কি চারটেয়। উঠে বাসি কাপড় ছেড়ে মুখচোখ ধুয়েই মা রান্না শুরু করত। একটা শুক্তো কিম্বা তিতাভাজা, শীতের দিন হলে শাক, একটা ডাল, ডালের সাথে খাবার জন্য হয় ঝিরিঝিরি আলুভাজা, নয়ত পোস্ত বড়া কিম্বা পোস্তআলুর বড়া, নয়ত বেগুনভাজা বা  পটলভাজা, একটা নিরামিষ তরকারী, মাছের ঝোল, সকালের খাবার, কোনও কোনওদিন টিফিনের জন্য একটা শুকনো তরকারী, রুটি। 

    তারপর সাড়ে পাঁচটায় কলে জল এলে ভাত বসিয়ে মা যেত স্নান করতে। স্নান করে এসে ঠাকুরকে দিতে দিতেই আমি উঠে মুখ ধুয়ে তৈরী হয়ে নিতাম। তারপর রুটি তরকারী বা পাঁউরুটি জেলি খেয়ে স্কুলে বেরিয়ে যেতাম গাতু আর মনাইয়ের সাথে। মা ভাইকে উঠিয়ে দাঁত মাজিয়ে মোটামুটি তৈরী করে রেখে বেরিয়ে যেত, স্কুলে যাতে প্রেয়ারের আগে পৌঁছতে পারে। অ্যাটেনড্যান্স খাতায় লালকালি না পড়ে, তাই হনহন করে হাঁটত। স্কুলে মোটামুটি তিনটে পিরিয়ড ক্লাস থাকত আর দুটো অফ। সেই অফ পিরিয়ডে মা বসে ছাত্রীদের বেতন নিত, বুককিপিং শিখত। ছাত্রীদের বেতন ছিল মাসে দু'টাকা, উন্নয়ন ফী বাবদ। দশটায় বেরিয়ে আবার হনহনিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশান। ট্রেন ধরে হাওড়া, সেখান থেকে হেঁটে কলেজ। ফিরতে ফিরতে হত প্রায় বিকেল সাড়ে চারটে পাঁচটা। হাতমুখ ধুয়ে ভাত খেতে বসে। দিনে একবারই ভাত খেতে পারে মা। তারপর স্কুলের কিছু কাজ বা খাতাদেখা। সন্ধ্যে হলে ভাইকে নিয়ে পড়তে বসানো। 

    ভাই কিছুতেই পড়তে চায় না, কবিতা মুখস্ত করে না। মা ধৈর্য্য হারায় ... চীৎকার করে বকে, মারেও। আবার চেষ্টা করে পড়া বুঝিয়ে দিতে। এই হট্টগোলের মধ্যে আমি প্রাণপণে ইতিহাস পড়ি, অঙ্ক করি। কখনও কখনও ভয়ে ভয়ে বড়মামার কাছেও নিয়ে যাই। ন'টা বাজলে মা আমাদের রাতের খাবার দেয়। ভাঁড়ার ঘরের কোণে বসিয়ে প্রথমে ভাইকে খাইয়ে দেয়, তারপর তার একটু পাশে আমাকে খেতে দেয়। খেয়ে উঠে ভাইয়ের আর আমার এঁঠো তুলে বাসন কোণায় স্তুপ করে রেখে জায়গাটা প্রথমে এককুচি গোবর আর অল্প জল দিয়ে মুছতে হয়, তারপর ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে। খুব ঘেন্না করে আমার। অন্য কোনও প্রাণীর বর্জ্য কীভাবে আরেকরকম প্রাণীর ব্যবহার্য্য মাটিকে শুদ্ধতা দেয় তা মাথায় আসে না। কোনো কোনোদিন গোবর ততটা শুকনো না থাকলে, জলে দিয়ে মোছার পর লাল টুকটুকে সিমেন্টের মেঝেতে ঘোলা রঙের দাগ হয়। খেয়াল করলে দেখা যায় আসলে সেগুলো অনেক ঘোলা ঘোলা বিন্দুর সমাহার। 

    সদ্য পেটে যাওয়া খাবারদাবারগুলো গলা দিয়ে ফেরত আসতে চেয়ে তোলপাড় করে পেটের ভিতরে।  আমি কোনোমতে দরজার গায়ে আটকে থাকা নধর ফর্সা টিকটিকিটার দিকে তাকিয়ে আরো জল দিয়ে ভিজিয়ে ন্যাকড়া চিপে চিপে জল ফেলে থুপথুপিয়ে চেপে চেপে ঘষে ঘষে মুছি। বাথরুমে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ঘষে ঘষে ধুই, মাইসোর স্যান্ডেল সাবান। ভয়ে ভয়ে হাত তুলে নাকের কাছে আনি,নাঃ বেশ চন্দনের মত গন্ধ।  ততক্ষণে মা ঘরে এসে আমাদের মশারি টাঙিয়ে দিয়ে মশারির একপাশ তুলে চাদর দিয়ে গুঁজে রেখে  বাইরে খাটের একধারে  নিজের পড়াশোনা নিয়ে বসে। একটু পরেই প্রথমে আধশোয়া ও পরে পুরো শুয়ে পড়ে, বই তুলে নেয় হাতে। আস্তে ধীরে বই নেমে আসে বুকের ওপরে। মা অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে। টিউব লাইটটা জ্বলতে থাকে। আমি জেগে গেলে ডেকে দিই, মা উঠে কেমন লাজুক মুখে আবার বই নিয়ে বসে, আবার ঢুলে পড়ে, কখন কত রাতে আলো নিভিয়ে শোয় তা আর  টের পাই না। 

    এই বছরই হাপিয়ার্লির পরে আর পুজোর ছুটির আগে আরো দুটো ঘটনা ঘটে। মা যেদিন  থেকে বি এড পড়তে যাওয়া শুরু করে তারও বেশ মাসখানেক আগে হঠাৎ এক সকালে বাড়ীতে, পাড়ায়, স্কুলে সাংঘাতিক হইচই, উত্তমকুমার মারা গেছেন। এদিকে আমাদের তো বড়দের সিনেমা দেখা বারণ ছিল, সেই যেদিন টিভি এল  দরজার পাশ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা ছদ্মবেশী আর টিভিতেই দেখা খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন  এই হল আমার দেখা উত্তমকুমার। তা তাতে আমার বাপু খুব একটা ভাল টাল লাগে নি, বরং জয়বাবা ফেলুনাথের ফেলুদা সৌমিত্রকে দারুণ ভাল্লেগেছে। সবুজ দ্বীপের রাজা'র কাকাবাবু সমিত ভঞ্জও খারাপ না। কিন্তু এই ডালের বড়ার মত নাকওয়ালা চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া লোকটাকে নিয়ে সকলের এই চোখ ছলছল আদিখ্যেতা দেখে আমি একেবারে অবাক হয়ে যাই। আমার মা, যে নাকি সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকে আর রাগলেই কপালে ভাঁজ পড়ে পড়ে যার টিপের জায়গায় কেমন ত্রিশূলের মত খাঁজ খাঁজ হয়ে গেছে, সেও কেমন নরম নরম মুখ করে ছলছল চোখে ঘোরে!! কতজন যে কেঁদে ভাসাল তার ঠিক নেই। 

    স্কুলে শ্যামা, সুতপা, ছবি, চৈতালী, মনাইরা ভীষণ আলোচনা করে, এমনকি রীতাও তাতে যোগ দেয়!  রীতাকে যে বাড়ি থেকে এত সিনেমা দেখতে দেয়  তা তো জানতাম না!  কি ভাল ওদের বাড়িটা। শুধু আমি আর রীমা বিশেষ কিছু বলতে পারি না। আমি তাও দুটো সিনেমা দেখেছি, রীমা নাকি একটাও দ্যাখেনি। আমি যখন বলি  ‘এম্যাগো ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়!', রীতা বলে না ওঁর ঠোঁট খুব লালচে, ওর দিদি দেখেছে সামনাসামনি, সাদাকালো টিভিতে অমনি দেখায়, তাই আমার মনে হচ্ছে আলগা রং লাগানো, ওটা ঠিক নয়। আমি আর কিছু বলতে পারি না। রীতার দিদি রীনা অন্য কোন স্কুল থেকে যেন ক্লাস ফোরের বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়ে আমাদের স্কুলে এসে সিক্সে ভর্তি হয়েছিল, আমরা তখন ফাইভে। সেই থেকে ওর দিদিকে বৃত্তি পাওয়া মেয়ে বলে আমরা খুব সম্মান করতাম, দিদিমণিরাও ভালবাসতেন। সে যখন দেখেছে, তার ওপরে তো আর কথা চলে না। এদিকে টিভিতে পর পর দেখানো হতে থাকে উত্তমকুমারের সিনেমা। তার মধ্যে দুই তিনটে আমারও দেখার অনুমতি মেলে। তারই মধ্যে একটা নায়ক, আর একটা কি করে জানি না, বন পলাশীর পদাবলী।

    ‘বড়দের সিনেমার সংজ্ঞা অনুযায়ী এটা বড়দেরই সিনেমা। সে যাই হোক এই সিনেমাটার গানগুলো যে কি ভাল লাগল। লুকিয়ে চুরিয়ে বড়দের কান বাঁচিয়ে আমিও গুনগুন শুরু করলাম 
        ‘আহা চলিতে চলিতে বাজায় কাঁকন পরনে নীলাম্বরী 
       পাগল আমি ও রূপ দেখে, মনে হয় যে অঙ্গ থেকে 
     ও রূপ চুরি করি, চুরি করি ---;'
    ছোটদি একদিন শুনতে পেয়ে যায়, বলে ধুস এটা নয় আরো ভাল গান হল
        দেখুক পাড়া পড়শীতে, কেমন মাছ গেঁথেছি বঁড়শীতে-এ
       দেখুক ক্যানে পড়শীতে
       এ যে রুই কাতলা মিরগেল তো লয়
       মারে প্রেমের কাঁটা জান নিতে'
    আমি ভীষণ তর্ক জুড়ে দিই না না সবচে ভাল
        'ভোলা মন, মন আমার এমন করে ছিঁড়ল ক্যানে একতারাটার তার
        তোর উদাস বাউল নেই তো বাউল আ-আ-আ-আ-আর' 

    তর্ক মেটে না, মনাইয়ের সাথেও খুব তর্ক হয়। ও উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা বলতে একবারে গদগদ হয়ে যায়, আমি বলি ভ্যাট ডালের বড়ার মত নাক, তবে হ্যাঁ বনপলাশীর পদাবলীর গানগুলো খুব সুন্দর। মনাই বলে উত্তম-সুচিত্রার সব সিনেমার গানই সুন্দর সুন্দর।  বিকেলবেলা গল্প করার সময় মনাই আমাকে শাপমোচনের গল্প বলে, ইন্দ্রাণীর গল্প বলে। আমি  গল্পের সাথে মিলিয়ে নিই 'সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা', ‘শোনো বন্ধু শোনো প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা' কিম্বা ‘সূর্য্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো; গোধুলীর রঙে হবে এ ধরণী স্বপ্নের দেশ তো’। এতদিন এ সব গান শুনেছি বিবিধ ভারতীতে সন্ধ্যে ৫টা ৪৫এ  ‘মনের মত্ গান, মনে রাখা কথা' অনুষ্ঠানে আর কখনও সখনও কালীপুজোর সময় পাড়ার মাইকে। তাও ছোটদি না থাকলে মনের মত গান শোনা হয় না। আর এখন তো ছোটদি থাকলেও আমি বিকেলটা মনাইয়ের সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দিই। গল্পের সাথে  গানের মিশেলে  আস্তে আস্তে ডালের বড়ার মত নাক ছাড়িয়ে মূখ্য দর্শনীয় হয়ে ওঠে উত্তমকুমারের স্ক্রীন প্রেজেন্স, সাদাকালো টিভির পর্দা জুড়ে  উজ্জ্বল এক উপস্থিতি, আসলে তা অনুপস্থিতিই। 

    ঠিক সময়মত নানারকম ছলছুতো করে দেখতে থাকি বৃহষ্পতিবারের চিত্রমালা। যদিও  ফেলুদা সৌমিত্রকে অসাধারণ লাগে, কিন্তু উত্তমকুমারকে দেখে আর অত নাক সিঁটকাই না। কানে গলায় কতদিন  যেন সমানে লেগে থাকে 
        'মন আ-আমা-আ-আর এমন করে ছিঁড়ল ক্যানে একতারাটার তার 
        তোর উদাস বাউল নেই তো বাউল আ-আ-আ-আ-আর' 
    আসলে এখন অনেক কিছু সত্যি সত্যিই বুঝতে পারি,যেগুলো আগে ভাবতাম বুঝি, কিন্তু আসলে বুঝতাম না। সেই ক্লাস ফোরের অ্যানুয়াল পরীক্ষার পরে দোতলার মাঝের ঘরের তাক থেকে নামিয়ে রবীন্দ্রনাথের নষ্টনীড়, দুই বোন পড়ে ফেলেছি জানতে পেরে ছোটদি বলল নষ্টনীড় নাকি ও ঠিক বুঝতে পারে নি। দুই বোনও ভাল করে বোঝে নি। আমি তো মহা উৎসাহে  কে কার প্রেমে পড়েছে সব বুঝিয়ে দিলাম আর তারপর সেকথা জানতে পেরে মা আমাকে ‘ডেঁপো মেয়ে’ বলে আচ্ছাসে পিটিয়ে দিল। এখন দেখছি  ‘প্রেম’ ব্যপারটা মোটেই তখন বুঝি নি। বইটা নামিয়ে আরেকবার পড়ে ফেলে, বড়মামার আলমারি থেকে শরত রচনাবলী নামিয়ে দত্তা আর পথের দাবীও পড়ে ফেললাম।  

    সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ছোটমামার মেয়ে দোলন হল। হল অবশ্য দিল্লীতে, ছোটমাইমার বাপের বাড়ি, কিন্তু তাতে আমাদের উৎসাহের কিছু কমতি হল না। সেই ভাই আর খুকু প্রায় পিঠোপিঠি, তাও খুকুকে বিশেষ কোলে টোলে নিতে পারি নি। খুকু খুব একটা কোলে আসতে চাইত না। আসবে তো কোন্নগরে ছোটমাইমা পুঁচকিটাকে নিয়ে। রাঁচিতে ছোটমামার ওখানে  যাওয়ার আগে এখানেও দুই একমাস থেকে যাবে। এমনিতে ছোটমাইমার সাথে আমার খুব ভাব সেই ছোটমামার বিয়ের পর ছোটমাইমা যখন এখানে মাস কয়েক ছিল, তখন থেকেই। ছোটমাইমাই প্রথম  শুনিয়েছিল কিশোরকুমার নামক প্রতিভার গল্প। এর আগে আমাদের বাড়ীতে হিন্দী গান, হিন্দী সিনেমা একেবারে কঠোরভাবে বারণ ছিল। এমনকি অনেকসময় পাড়ার মাইকে হিন্দী গান বাজলেও দাদু বা বড়মামা সমস্ত জানলা বন্ধ করে দিতে বলত। কিন্তু  গান তো আর দরজা খটখট করে খোলা দেখে তবে ঢোকে না, তাই ভাই উঠোনে দৌড়াতে দৌড়াতে মনের আনন্দে গায়  ‘কাঁহা জান ফাঁসায়ি-ঈ ম্যায় তো সুলি পে চড়্ গ্যয়া হায় হায় ... ক্যায়সা সিদাসাদা ক্যায়সে ভোলাভালা হাঁ হাঁ।‘  মা বা দিদা শুনতে পেলে ডেকে নিয়ে খুব বকে। 

    অনেকদিন আগে ছোটমামা একটা রেকর্ড প্লেয়ার কিনেছিল, চিনুমামা একবার বেড়াতে এসে তাতে দুদিন ধরে কিশোরকুমারের ‘মেরে নয়না শাঁওন ভাদো' রের্ক্ডটা সমানে বাজিয়ে যাওয়ার পর দিদা চিঠি লিখে রাঁচিদিদাকে অভিযোগ জানিয়েছিল।  এরকম  যখন অবস্থা, তখন ছোটমাইমা আমাকে কিশোরকুমারের আকাশবাণীতে ব্যান হয়ে যাওয়ার গল্প বলে, ব্যান ওঠার গল্প বলে আর ছোট্ট ট্র্যানজিস্টারে বিবিধ ভারতী ধরে কিশোরকুমারের গান হলেই আমাকে ডেকে ভলিউম খুব আস্তে করে দিয়ে শোনায়। সিনেমার গান হলে গল্পটা বলে দেয়, অন্য গানগুলোর কথা বলে। ছোটমাইমার কাছেই আমি প্রথম বনিএমের গান শুনি, অ্যাবা শুনি, ক্লিফ রিচার্ডস শুনি, জানতে পারি লিরিলসুন্দরীর নাম  কারেন ল্যানেল। সেই ছোটমাইমার একটা পুঁচকি হয়েছে আর তাকে নিয়ে এখানে এসে থাকবে গোটা শীতকালটা কারণ রাঁচিতে ভীষণ ঠান্ডা। এই খবরে আমার আনন্দউল্লাসের সীমা থাকে না। শুরু হয়ে যায় দিনগোণা।   

    এদিকে মা স্কুল থেকেই ক্লাসে চলে যায়। বাড়ীতে এসে আমি স্নান করতে করতেই দিদা ভাইকে কুয়োতলায় নিয়ে স্নান করিয়ে দেয় তারপর দুজনকে একসাথে খেতে দিয়ে ভাইকে খাইয়ে দেয়। মা সব আলাদা করে দুজনের থালায় রেখে যায় শুধু দুটো মাছের টুকরো আর ঝোল একটা বাটিতে থাকে। আমার খাওয়া হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি কিন্তু দিদা আমাকে মাছের বাটিতে হাত দিতে দেয় না। নিজে বাটি থেকে একটা একটা করে মাছের টুকরো তুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে, চোখে দেখে বোঝা না গেলে বাটির মধ্যে দুটোকে পাশাপাশি রেখে বোঝার চেষ্টা করে কোনটা বড় কিম্বা কোনটা একটু মোটা। তারপর যেটাকে একটু  ছোট মনে হয় সেই টুকরোটা আমার পাতে তুলে দেয়, বাটি কাত করে ঝোল ঢেলে দেয়। আলু বা অন্য কোনও তরকারি থাকলে তার টুকরো দেয় দুয়েকটা। রোজ রোজ  সপ্তাহে ছ'দিন একইরকম, আগে মেপে দেখে তবে দেবে। ডিম থাকলেও একই ব্যপার, ভাই বেচারি আবার তখন মাছ খেতে একেবারেই ভালবাসত না। 

    এমনি করে দিনগুলো দিব্বি কেটে গিয়ে শীতকালও এসে গেল, পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল, ছোটমাইমাও দোলনকে নিয়ে এসে গেল। ছোটমামা ওদের রেখে আবার রাঁচি গেল কিছুদিন বাদে এসে নিয়ে যাবে। এইসময় লালীরও বাছুর হয়েছে দিন পনেরো কুড়ি হল, প্রচুর দুধ বাড়ীতে। সবাই খুশী বাচ্চাটা একদম টাটকা দুধ পাবে। লালীর বেশীরভাগ বাছুরগুলো এঁড়ে হয়, দুধ ছাড়লেই ওদের বিক্রী করে দেওয়া হয়। আকাইম্যাই ছিল বকনা। দাদু অসুস্থ হয়ে প্রায় ঘরবন্দী হয়ে যাওয়ার পর আকাইম্যাকে বিক্রী করে দেওয়া হয়েছিল। দাদু যতদিন সুস্থ ছিল  অনেক চেষ্টা করেছিল আকাইম্যাকে 'গাভীন' করার, ভেট ডেকে এনে চিকিৎসাও করিয়েছিল। তারপর আকাইম্যা দুইবার ‘ডাক’ও দিয়েছিল। সেই সময় দাদু ওকে পাল খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল কানাইপুরে। কিন্তু শেষ  পর্যন্ত ও গাভীন হয় নি। এদিকে আকাইম্যা আবার ভারী বদমেজাজী ছিল, যখন তখন সুযোগ পেলেই গুঁতিয়ে দিত। তাই দাদু অসুস্থ হওয়ার পর দিদা বড়মামাকে বলে ওকে বিক্রী করে দিতে, কিন্তু কোনও কশাই যেন না কেনে। 

    তাহলে ওকে কে নেবে? আর কেনই বা নেবে? ওকে দিয়ে তো আর হালচাষও করানো যাবে না, তাহলে? বড়মাইমা দুএকবার বলার চেষ্টা করে কে কিনল তা দেখার দরকার কী? ওকে নিয়ে যকী করছে সেটা না জানলেই তো হল। কিন্তু দিদা অনড়, না কশাই নয় এট ঠিক করে জেনে তবেই বিক্রি, নয়ত থাক বাড়িতে। শেষপর্যন্ত অবশ্য খোকা মিস্তিরির পরিচিত আরেকজন এসে কিনে নিয়ে যান। ওঁদের সর্ষের তেলের ব্যবসা, নাকি ঘানি টানাবেন ওকে দিয়ে। আকাইম্যা কিছুতেই যেতে চায় না, মাথা বেঁকিয়ে গলা থেকে দড়ি খোলার চেষ্টা করে। খোঁচা খোঁচা শিঙ দিয়ে গুঁতানোর চেষ্টা করে,  হাত ছাড়িয়ে দড়িশুদ্ধ দৌড় দেবার চেষ্টা করে। যাঁরা নিতে এসেছিলেন তাঁদের একজন হাতের ছপটি দিয়ে নির্মমভাবে সপাৎ সপাৎ করে মারেন,টানতে টানতে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে নিয়ে যান। আকাইম্যার কপালের দুই শিঙের মাঝখানে সাদা টিপের মত অংশটা একবার ঝিকিয়ে ওঠে মাথা উঁচু করার মরীয়া চেষ্টায়, তারপর চলে যায় পুরো দলটা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৬ মার্চ ২০২৫ | ২৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | 103.24.***.*** | ০৭ মার্চ ২০২৫ ১২:৪৮541510
  • গোবরজলের ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত লাগল 
  • | ০৮ মার্চ ২০২৫ ১৮:১৮541531
  • ওই শুদ্ধিকরণটা খুবই চাপের ছিল।  আমার দিদার গোবর ফেটিশ ছিল। সিজনসের একটা পর্বে  দিদা আর গোবরএর একটা ব্যপার আছে। 
     
    গোবর রিলেটেড আরেকটা ব্যপার আছে, পরে কোন  আসবে। 
  • r2h | 208.127.***.*** | ০৮ মার্চ ২০২৫ ২২:০৩541539
  • প্রতিটা পর্ব পড়ে মনে হয় এই লেখাটা কতরকম স্টিরিওটাইপ, স্বস্তিদায়ক, চোখে ঠুলি দেওয়া জনপ্রিয় ধারনা যে ভেঙে দিচ্ছে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন