এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ছেঁড়াকাঁথা

  •  ছেঁয়াবাজীর ছলনা  - ২৫ 

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ছেঁড়াকাঁথা | ১০ মে ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • নতুন বছরে ক্লাস নাইন, শাড়ি  পরে যেতে হবে স্কুলে, মেরুণ পাড় সাদা শাড়ি।  মা একদিন কলকাতা গিয়ে গড়িয়াহাটের অমৃত বস্ত্রালয় থেকে কিনে আনল লালচে মেরুণ পাড়  কোরা রঙের শাড়ি  আর অমনই লালচে মেরুণ রঙের ব্লাউজ। শাড়ি টা অবশ্য বাড়ী আনল না ভবানীপুরে নেমে সোজা নদীয়া শাল রিপেয়ারিঙ্ স্টোর্সে ধুয়ে কোরা তুলতে দিয়ে এল। আর্জেন্টে কাচিয়ে কোরা তুলে ধপধপে সাদা শাড়ি টা জিজি এসে দুদিন বাদে পৌঁছে দিয়ে গেল। এদিকে কোন্নগরের শ্রীদুর্গা বস্ত্রালয় থেকেও একটা মেরুণ পাড়  শাড়ি  কেনা হল, এটা আর কোরা টোরা নয়, কালচে সাদা রঙ প্রথম থেকেই আর পাড়টাও কেমন জামের কষের মত বেগুনীঘেঁষা মেরুণ। আমার তো ওটা একদমই মেরুণ মনে হল না, কিন্তু আমাদের স্কুলের ড্রেস বলে নাকি ওরা ওরকম শাড়ি ই বিক্রী করে। দুটো কিনে রাখা হল কারণ দুই বছর চালাতে হবে আর বর্ষাকালে ভিজে টিজে যেতে পারে, এইসব ভেবেই। আমি অবশ্য শাড়ি  পরতে শিখে গেছি সেই ক্লাস সেভেন থেকেই।

    ছোটবেলাইয় আমার একটা তুঁতে রঙের দশহাত শাড়ি ছিল, জিজির কিনে দেওয়া। মাঝে মাঝে বড়মাইমা পরিয়ে দিত। বড় হবার পরে  আমি যখন সেভেনে উঠলাম জিজি একটা শ্যাওলা সবুজ রঙের শাড়ি  দিয়েছিল হলুদ পাড়ওয়ালা, ভেতরে উজ্বল হলুদ রঙের বড় বড় চক্রের মত ছিল। ছোটমাইমা বলেছিল ওটা বাঁধনি কাজ।  ওটা আমি মাঝে মাঝে শখ করে বাড়ীতে পরে বসে থাকতাম। সেভেনে পুজোর সময় নাকি জন্মদিনে মা কিনে দিল খুব সুন্দর একটা হাল্কা বেগুনী রঙের ডিসিএম মিলসের ছাপা শাড়ি । ছোটদি  যখন ক্লাস সেভেন তখনই নাকি দিদা ওকে পুরো শাড়ি  ধরাতে চেষ্টা করেছিল, পারে নি অবশ্য বড়মাইমাদের আপত্তিতে। আমাকে  এই নাইনে উঠতেই দিদা একবার বাড়ীতেও শাড়ি  পরার কথা বলায় আমি একেবারে না শোনার ভান করেছিলাম। তারপর মা'কে বলেছিল কিনা জানি না, তবে মা আমাকে কিছু বলে নি। মা'র দুয়েকটা রঙীন শাড়ি  তখ্নও আছে, সেগুলোও আমারই। বাবা যেদিন অসুস্থ হয় তার আগের দিন মা বোম্বে ডাইং থেকে একটা খয়েরী রঙের ওপরে সাদা ফুল আঁকা পাড়, গায়ে সাদা ছোট ছোট তারার মত ফুলফুল শাড়ি  পছন্দ করে কিনে এনেছিল নিজের জন্য।

    পরেরদিনই বাবা সন্ধ্যেবেলা অসুস্থ হয় আর তার পরের সকালেই মা'র বাকী জীবনের মত রঙীন শাড়ি  পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যায়। সেই শাড়ি টা অপয়া বলে কেউ নিতে চায় নি, মা'ও দিতে চায় নি। বড়মাইমা একবার বলেছিল ওটা বুড়ীর মা-মাসিকে দিয়ে দিতে, মাসিও সাদা শাড়ি  পরে, ওর কোনও মেয়েকে দিয়ে দেবে নিশ্চয়। মা কিছুতেই রাজী হয় নি, খালি বলে ‘না শাড়ি টা যদি সত্যি অপয়া হয়... জেনেশুনে কার সর্বনাশ করব?' আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছি এই শাড়ি টাও আমি পরব, আমিই পরব। আর একটা শাড়ি  আছে মায়ের, চকোলেট রঙের সিল্ক,সোনালি জরির পাড়, জরির চৌকো চৌকো বুটি একটু দূরে দূরে। ওটা আমি দুই তিনবার সরস্বতী পুজোয় বা স্কুল ছুটির দিনে পরেছি। খুব পছন্দ আমার শাড়ি টা। এটাও নাকি ছোটদি নিয়ে নিতে চেয়েছিল, মা আর পরবে না বলে। কিন্তু শাড়ি টা একটু হাতে ছোট, ছোটদির ছোট হয়, তাই রয়ে গেছে। আমি বেঁটেখাটো মানুষ, ক্লাস ফাইভের পর আর লম্বা হই নি, তাই আমার খুব একটা অসুবিধে হয় না। 

    জিজির আবার শাড়ি  কেনার ভীষণ ঝোঁক, নিজের জন্যও কেনে,  মা,ছোড়দি, দিদিভাইদের জন্যও কেনে, এখন আবার আমার জন্যও কিনে আনে।  জিজির স্কুলটা বেশ দাঁড়িয়ে গেছে এতদিনে। কাকে কাকে সব ধরেটরে যেন আইসিএসই বোর্ডের অ্যাফিলিয়েশান পেয়েছে, ফলে জিজির স্কুলের বাচ্চারা এখন সরাসরি আইসিএসই পরীক্ষায় বসতে পারে। আগে কয়েকবছর নবনালন্দা স্কুল থেকে পরীক্ষা দিতে হত। ঐজন্য তখন বেশী ছাত্রছাত্রী হত না। এখন প্রচুর ছাত্রছাত্রী আসছে তাই জিজির এখন হাতে অনেক টাকা থাকে। প্রত্যেক মাসেই প্রায় রমেশ মিত্রর মোড় ছাড়িয়ে জগুবাজারের দিকে এগোলে যে রামকৃষ্ণ বস্ত্রালয় আছে, সেখান থেকে শাড়ি  কিনে আনে। যখন দাদুরাম মারা যায়, তখনও তো বাবা কলেজে পড়ে, বাড়ীতে খুব অভাব, জিজির শাড়ি  ছিঁড়ে গেছিল সবকটা।  ঠাকুমা বলেছিল জিজিদের জ্যাঠামশাই এলে তাঁকে বলতে। জিজি শাড়ি র কথা বলায় তিনি নাকি বলেছিলেন ‘যা পাড়ার কারো থাইক্যা মাইগ্যা পর গা।' সেই অপমানে জিজির নাকি শাড়ি দেখলেই মাথার মধ্যে সব গোলমাল হয়ে যায় আর খালি খালি কিনে ফেলে।

    অত অত শাড়ি একলা পরবে কী করে! তাই চেনা অচেনা আধাচেনা সবাইকে দিয়ে বেড়ায়। দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পরে ঢাকিরা আসে সব বাড়িতে। জিজি তখন আলমারি খুলে তিনখানা কি চারখানা শাড়ি যা হাতে ওঠে একবারও না দেখেই দোতলার জানলা দিয়ে ঢাকিদের হাতে ফেলে দেয়, সে দামী সিল্কের শাড়িই উঠুক কি টাঙ্গাইল ঢাকাই। কতজনে সামনে দিব্বি হেসে হেসে শাড়ি  নিয়ে নেয় আর আড়ালে ‘পাগলীকে  যে কোনও শাড়ি  একটু ভাল বললেই দিয়ে দেয়' বলে মুখ মচকে হাসাহাসি করে। জিজি বুঝতে পারে জানেও সেগুলো,তবু নিজেকে থামাতে পারে না। জিজির সেই জ্যাঠামশাই কবে মারা গেছেন ... তাঁকে দেখাতে না পেরেই বোধহয় জিজি বাকী সমস্ত পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে  চায় জিজির স্বোপার্জন কিনে নিতে পারে গোটা একটা দোকানের সমস্ত শাড়ি । বাকী পৃথিবী ফুটে থাকা কাঁটার কথা  জানে না। হাসে, মুখ ভ্যাঙচায়, জিজি রক্তাক্ত হয়, তবু থামতে পারে না।

    ক্লাস নাইন মানে হাইস্কুল, জুনিয়ার হাইয়ের পাট শেষ। আর টালির চাল মাটির মেঝে নয়, নাইন টেন দুটো ক্লাসই মূল বিল্ডিঙে পাকা ঘর। মেয়েদের স্কুলের সেই বাড়ী, যা নিয়ে তিন বছর আগে ম্যানেজিং কমিটির ভোট হল, অবশ্য তৈরী হয়নি এখনো, শুরুই হয় নি মোটে। শুনতে পাই আবার নাকি স্কুল কমিটির নির্বাচন আসছে। এবারে গোপালবাবুদের জিতে যাওয়ার কথা। যাঁরা ওঁদের বিরুদ্ধে স্কুলের ফান্ড আটকে রাখার, অপব্যবহার করার এমনকি নয়ছয় করার অভিযোগ এনেছিলেন এই তিন বছরে তাঁরাও সেই ফান্ড নিয়ে কিছু করে উঠতে পারেন নি। কেউ কেউ নাকি জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেয়েদের স্কুলের বাড়ী তৈরী কবে শুরু হবে?  উত্তরে সেই রেজিস্টার্ড সোসাইটির ফান্ড ব্যবহারের আইনগত অসুবিধের কথাই শোনা গেছে, যা গোপালবাবুরাও বলতেন। তাহলে যে অতসব অভিযোগ ছিল? সেসব নাকি সব মিটে গেছে। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের কথা যাঁদের নামে অভিযোগ ছিল, তাঁরাও কেউ কিছু রাগ টাগ করেন না, অন্তত আমরা দেখি না। শোনা যায় ছেলেদের স্কুল মানে রাজেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যালরের কমিটি দর্শনবাবুদের হাতেই থাকবে আর মেয়েদেরটা গোপালবাবুদের।

    কোনও স্কুলেরই পড়াশোনা, পরিকাঠামোর অবস্থা বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন হয় না, সব যেমন ছিল তেমনই থেকে যায়। আমার ভারী অবাক লাগে, মা'কে জিগ্যেস করলে মা বিশেষ কিছু বলতে চায় না, খুব একটা মাথা ঘামায় এমনও মনে হয় না। শুধু পুরবীদিদিমণি অনেকটা বিতৃষ্ণা নিয়ে বলেন ‘লালঝান্ডাপার্টি এরকমই বদমাইশ, মিথ্যে কথা বলে কচি কচি ছেলেগুলোর মাথা চিবিয়ে খায়।' মা শুনে আবার বলে হ্যাঃ পুরবী নিজেই তো এক লালঝান্ডিওয়ালি। স্কুলে বন্ধুদের মধ্যে একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি পূরবীদির বর নাকি লালপার্টি করতেন সেই সূত্রেই ছেলেও শুরু করে ক্লাস টেন থেকেই। তারপর মাধ্যমিক কোনোমতে পাশ করে গেলেও সারা দিনরাত পার্টির কাজ করে করে উচ্চমাধ্যমিক আর পাশ করতে পারেই নি, এখনও পারে নি। কথা ছিল পার্টি থেকেই ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করবে, সেও হয় নি এখনও। অন্তত উচ্চমাধ্যমিকও পাশ না হওয়ায় সে চাকরি হওয়ার খুব একটা আশাও নাকি নেই। উনি আর ওঁর বর দুজনেই যদিও চাকরি করেন, তবু ছেলের নিজস্ব কোনও রোজগার নেই। নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে যা বোঝায় সেটা হওয়ার কোনও উপায়ও দেখা যাচ্ছে না।

    কেমন যেন অদ্ভুত লাগে আমার, সব কেমন যেন গুলিয়ে দেওয়া। একে তো ‘পার্টি' বলতে এ আদর্শটাইপ ধারণা হয়েছিল সেটা একটু ধাক্কা খেল এই স্কুলের বাড়ি হবে বলে না করা, টাকা নয়ছয়ের অভিওগ তুলে সেটা আবার চাপা দিয়ে দেওয়া দেখে। তার ওপরে পূরবীদিদিমণি নিজে পার্টি করতেন এমন কথা কেউই বলল না। ওঁর বর এবং ছেলে করে অথচ মা কেমন অবলীলায় ওঁকেও ‘লালঝান্ডিওয়ালি' বলে দিল, ওঁর একেবারে অন্য মত জেনেও!! অনেক প্রশ্ন জমা হয় মনে কিন্তু কাউকেই জিজ্ঞাসা করার সাহস হয় না। এমনিতেও দিদা, বড়মামা কংগ্রেস হেরে যাওয়াতে বেশ রাগ করে। আর মা সবসময় বলে এসব কোন পার্টিফার্টির কথা একদম না শুনতে। জিগ্যেস করলে আবার যদি মার খেতে হয়। এরমধ্যে একদিন দিদিমণিদের মধ্যে আলোচনা শুনে ফেলি যে স্কুলের আলাদা বাড়ী ঝটপট না হওয়াই ভাল। হয়ে গেলেই দুপুরে স্কুল হয়ে যাবে, তখন অনেক বেশীক্ষণ স্কুলে থাকতে হবে। এমন চার সাড়ে চার ঘন্টাতেই কাজ মিটে যাবে না। মনের উপরে আরও একটা ধুলোটে পরত জমা হয়।

    ক্লাস নাইনে উঠে আমার রোল নাম্বার হল ৩৭, গত্ পাঁচ বছরের রোল নাম্বার ছিল ১ ফলে আমার ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে। জিগ্যেস করে জানতে পারি হাইস্কুলের যে ফার্স্টগার্ল মিতা গোস্বামী সে আমার চেয়ে প্রায় ১৩৩ নম্বর কম পেয়েছে, তাও হাইস্কুল বলে ওর রোল নাম্বার ১। আমি বাড়ীতে এসে মা’কে জিগ্যেস করি তাহলে  আর আমরা এক স্কুল এক স্কুল বলি কেন? অন্য স্কুল থেকে এলে যেমনি হয় তেমনই তো হয়েছে। মা বলে না না এখানে তো আর অ্যাডমিশান টেস্ট দিতে হয় নি। আমি বলি দিতে হলেই বা কী হত? আমি তো পরীক্ষা দিয়েই হিন্দু গার্লসে চান্স পেয়েছিলাম, হীরালাল পালেও পেয়েই যেতাম। আর আমাকে ফাইভেই তাহলে হাইস্কুলে দাও নি কেন? তাহলে তো এখন আমার রোল নাম্বার ১-ই থাকত। মা কিছু বলতে পারে না, শুধু বলে প্রমীলাদির সাথে একবার কথা বলবে। তারপর আবার মত বদলে বলে গোপালবাবুর বাড়ী গিয়ে কথা বলবে নাহয়। গোপালবাবু, বিজয়বাবুর সাথে কথা বলেও অবশ্য কিছু হয় না। সকলেই বারবার বুঝিয়ে বলেন আরে রোল নাম্বার দিয়ে কী আসে যায়, নাইনের অ্যানুয়ালে ফার্স্ট হলেই তো আবার্ ক্লাস টেনে উঠে ১ হয়ে যাবে।

    আরো বলেন জুনিয়ার হাই থেকে ফার্স্ট হয়ে নাইনে ওঠায় ফার্স্ট প্রাইজও পাবো। বুঝতে পারি কিছুতেই কিছু হবে না। আমার খালি খালি কেমন অপমান লাগতে থাকে।  মনে হতেঁ থাকে আমার সাফল্যের অর্জনগুলো নষ্ট করে দিতে পারলেই সবাই খুশী হয়। ভারী অসন্তোষ জমা হয় মনে, পাঁচ বছর ধরে ক্লাসে নিজের এক নম্বর জায়গা নিয়ে ছোট্ট একটা গর্বের জায়গা গড়ে উঠেছিল। বাড়ীতে আমাকে ওরা যতই ফেলের মধ্যে ফার্স্ট  বলুক না কেন, আমি জানতাম স্কুলে, আমাদের ক্লাসে আমিই সেরা। আমি সেলাই পারি না ভাল হাতের কাজ করতে পারি না, কিন্তু তবুও সব মিলিয়ে আমার টোটাল নম্বর সবচেয়ে বেশী থাকে। ডানদিকের ফার্স্টবেঞ্চের প্রথম জায়গাটা আমারই বাঁধা। সেই ফাইভে আমি যে স্কুলে যেতে চাইতাম সেখানে এরা দিল না, আবার রোল নাম্বারটাকেও অকারণে কেমন পিছিয়ে দিল। তাহলে সিক্সে হাইস্কুলেই ভর্তি করে নি কেন রে বাপু? একবার অন্য একটা মন বলে এবারে আর কেউ ফেলের মধ্যে ফার্স্ট বলতে পারবে না, সঙ্গে সঙ্গে এই মনটা ফুঁসে উঠে বলে ‘ফার্স্ট' শব্দটাই তো মুছে দিল।

    দু তিনদিন রাগ করে পেছনে গিয়ে থার্ড বা ফোর্থ বেঞ্চে বসি। কিন্তু নাইনের ঘরটা মস্ত হলঘর, ফার্স্ট বেঞ্চ থেকেই বোর্ড অনেকদূর, থার্ড বেঞ্চ থেকে কিছুই দেখতে পাই না। আবার গুটিগুটি ফেরত আসি ফার্স্টবেঞ্চে। কার ওপরে যে রাগ করেছিলাম কে জানে! কেউ তো খেয়াল করেও দেখে নি। এখানে ছায়াবীথিদি, কণিকাদি, বেলাদি, মীরাদিরা আমাকে মা'য়ের মেয়ে বলে চেনেন, কেউ কেউ যেমন শান্তিদি, পদ্মাদিরা দাদুর নাতনী বলেও চেনেন। কিন্তু আমি আসলে কেমন, কোথায় বসতাম সেসব কেউই জানেন না। মিতা গোস্বামী তো বরাবর সেকেন্ড বেঞ্চের কোণায় বসে। ক্লাসেও এতদিনকার পঁচিশ তিরিশ জন মেয়ের বদলে পঁয়ষট্টি জনের জমজমাট ক্লাস তাই এইসব বেঞ্চ বদলাবদলি কেউই খেয়াল করে না। প্রথমদিকে একটু আলগা আলগা থাকলেও দেড় দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাইস্কুলের মেয়েদের সাথে আমরা দিব্বি মিশে গেলাম। শুধু আমার মাঝে মাঝেই, এমনকি বছরের শেষ দিকেও, নাম ডাকার সময় ৩৭ এ ‘উপস্থিত' বলতে মনে থাকত না।

    নাইন টেন কেমন যেন হুড়মুড়িয়ে কেটে গেল, ঠিক করে মনেও পড়ে না কার পরে কে এল, কী হল। শুধু মনে আছে আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে হঠাৎ আমাকে বোঝাতে শুরু করে দিল মাধ্যমিকে খুব বেশীরকম ভাল নম্বর পাওয়া কত জরুরী আর কতই সহজ। হাতেগরম সব উদাহরণ আসতে লাগল কোথায় কে দিনে চোদ্দ ঘন্টা পড়ে, কে ষোলো আর কে আঠেরো। আমি ভাবি তাহলে এমন কেউও আছে নাকি যে দিনে বাইশ কিম্বা ২৩ ঘন্টাই পড়ে! কিন্তু না তেমন কারো খবর পাওয়া যায় না। মা খোঁজখবর করে আমাকে রাজেন্দ্র স্মৃতির ইংরিজির মাস্টারমশাই সুপ্রকাশবাবুর কাছে ভর্তি করে দিয়ে এল একদিন, বেতন মাসে পঁচিশ টাকা। এমনিতে তিরিশ তবে মা জুনিয়র হাইস্কুলে ক্লাস নেয় একথা শুনে উনি পাঁচ টাকা কম দিতে বলেন। মনাইও এখানেই ভর্তি হল, আর ছিল দুজন আমাদের ক্লাসের আর দুজন ক্লাস টেনের মেয়ে। মোট ছয় জন মেয়ে। আমরা টেবিল বেঞ্চিতে বসতাম। পেছনে চৌকির উপরে দুজন ছেলে বসত আমাদের ক্লাসেরই। সপ্তাহে তিনদিন বিকেলে চারটে থেকে ছ'টা। ঠিক কেন আমাকে প্রথমেই ইংরিজির কোচিঙে ভর্তি করা হল, সেটা আমি বুঝি নি।

    আমার আসলে অসুবিধে হত অঙ্ক নিয়ে, বাকী সবই ক্লাসে যা পড়ানো হত তাতেই বুঝে যেতাম। পাটীগণিত দিব্বি পারতাম, অসুবিধে হত বীজগণিত আর জ্যামিতি পরিমিতিতে। দাদু শিখিয়েছিল পাটীগণিত, সে এক্কেবারে সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু দাদু অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে বীজগণিত জ্যামিতি ভাল করে  শেখানোর কেউ ছিল না। ফলে বাকী জীবনেও আর অঙ্কটা ভাল করে শেখাই হল না আমার। এদিকে ভাই ততদিনে ক্লাস থ্রী, শিশু শিক্ষা সদন ছেড়ে এখন পড়ে হাতিরকুলে শিবচন্দ্র শিক্ষা ভবনে। শিবচন্দ্র দেবের আদর্শে ওঁর কোনও উত্তরপুরুষ বাচ্চাদের জন্য ক্লাস ফোর অবধি স্কুল চালু করেছিলেন। এখনও সরকারী অনুমোদন পায় নি তাই কালীতলা কলোনী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ক্লাস ফোরের বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ায়। পড়াশোনা নিয়ে কোনও অহেতুক চাপও দেয় না আর ক্লাসে নাকি অল্প ছাত্রছাত্রী নিয়ে খুব যত্ন করে পড়ায়।  এদিকে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস সিক্সের আগে  ওদের ইংরাজী পড়ার কথা নয়, আর ওরাই এই নিয়মের প্রথম ব্যাচ। কিন্তু এই স্কুলটা অল্প স্বল্প ইংরাজী পড়ায়, এইসব কারণেই ভাইকে ওখানে দেওয়া।

    মা বিএডে ভর্তি হওয়ার পর  ভাইয়ের পড়া আর একদমই প্রায় দেখতে পারত না, আর যেটুকুও বা দেখাতে যেত ভীষণ রেগে যেত, চেঁচামেচি মারধোর করত। ঐজন্য সবার পরামর্শে  শিবচন্দ্র শিক্ষাভবনের গুরুদাস স্যারকে ঠিক করে দিল ভাইকে বাড়ী এসে পড়ানোর জন্য। তা ভাইয়ের ইংরিজী শিক্ষা নিয়ে আপামর আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী খুবই চিন্তিত। এইসব দেখেশুনেই বোধহয় মা তাড়াতাড়ি আমাকেও ইংরাজীর কোচিঙে দিল। কিছুদিন বাদে অঙ্কের জন্য একজন অল্পবয়সী ভদ্রলোক, যাঁকে আসলে ‘ছেলে' বললেই ঠিক হয়, নিযুক্ত হলেন। ইনিও সপ্তাহে তিনদিন পড়াতেন, তবে বাড়ী এসে| সন্ধ্যেবেলা দুই আড়াই ঘন্টা অঙ্ক করাতেন| এঁর আসল নাম মোটেই মনে পড়ে না,  বাড়ীতে ‘অন্ধকারাইশ্যা' বলে উল্লেখ করা হত। ইনি এলেই অবধারিত লোডশেডিং হয়ে যেত আর তিন চার ঘন্টা করে নিভে থাকত। এক আধদিন হয়ত আসেন নি আর কোনও কারণে কারেন্টও যায় নি, ব্যাস  নাম হয়ে গেল ‘অন্ধকার রাশি যার' তাই থেকে অন্ধকারাইশ্যা। ইনি তখন বিকম পাশ করে টিউশনি করতেন। থাকতেন আমাদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় চ্যাটার্জী কলোনীর একটা বাড়ীতে।

    স্কুলে যাওয়া আসার পথে কোনদিন যদি দূর থেকে এঁকে দেখতাম, কে জানে কেন, ইনি সঙ্গে সঙ্গে সুড়ুৎ করে বাড়ীর ভেতরে চলে যেতেন। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, আমি দূর থেকেই মাস্টারমশা-আ-ই বলে চীৎকার দিয়েছিলাম। সেদিন উনি দাঁড়িয়েছিলেন বটে তবে খুবই অপ্রস্তুত ভঙ্গীতে ‘ওহ স্কুল থেকে আসছ?’ বলেই ঢুকে গেছিলেন, আমি উত্তর দেওয়ার আগেই। আমি অবশ্য মেজমামার মত কিছু বলতাম না। মেজমামারা কুচবিহার থেকে বদলী হয়ে এসে কোন্নগরে কিছুদিন ছিল। সেইসময় অনেকদিনই  সকালে অফিস যাওয়ার আগে বাজারে যেত, এসে হুড়মুড়িয়ে স্নান করে খেয়ে অফিসে যেত। রোজই নাকি বেরোলে রাস্তায় রায়দাদু জিগ্যেস করত ‘কি সুভাষ বাজারে যাও?' কয়েকদিন ‘হ্যাঁ' বলার পরে একদিন মেজমামা বলেছে ‘না মশারি টাঙাই'। তারপর বাড়ী এসে বলে ‘রোজ রোজ একই কথা জিগায়, আজ  দিসি বইল্যা’। তা আমি অমন কিছু তো বলি নি। দুর্গাপুজোর পরে যেদিন ইনি পড়াতে এলেন, মা আগেই বলে রেখেছিল প্রণাম করতে।

    আমার অবশ্য একেবারেই ইচ্ছে ছিল না অমন ছোকরা মত প্রায় অচেনা একজনের পায়ে হাত দেওয়ার। প্রণাম না করলে আবার পিটুনি খাব ভয়ে উনি ঘরে ঢুকতেই আমি নীচু হওয়ার উপক্রম করতে দেখেই উনি ‘না না' করে ওঠেন। কিন্তু মা ভেতরের দরজা থেকে ‘না না শিক্ষককে প্রণাম না করলে বিদ্যালাভ হয় না' বলায় আমি অগত্যা আরো নীচু হই, কিন্তু ইনি একেবারে তিড়িং লাফ মেরে দরজা দিয়ে বারান্দায় গিয়ে পড়েন। যাবার পথে দরজার ফ্রেমে মাথাটা একটু ঠুকেও যায়। আমি প্রাণপণে হাসি চাপি। এরপরে অবশ্য মা’ও আর জোর করে নি। ক্লাস টেনে ওঠার মাস চারেক পরে উনি একটা চাকরি পেয়ে পড়ানো ছেড়ে দেন। তখন আমাকে  গোপালবাবুর অঙ্ক কোচিনে ভর্তি করে দেওয়া হ্য়, ব্যস! সপ্তাহের আরো তিনদিনের বিকেলও আলোজ্বলা ছোট্ট ঘরে কাটাবার ব্যবস্থা হয়ে যায়। উপরি পাওনা ঐ তিনদিন বিকেলবেলাও যাওয়া আসার পথে ভাগাড়ের গন্ধ্ শোঁকা। তবে গোপালবাবু অঙ্ক বোঝাতেন বেশ ভাল। বীজগণিত আর বিশেষ করে জ্যামিতির ভয়টা কেটে যায় অনেকটাই। বড়মামা বা অন্ধকারাইশ্যা বইয়ের এ অঙ্কগুলো পারতাম না সেগুলো করে দিত, কিন্তু খুব একট বোঝাত না।  

    আমরা যেবার নাইনে, অঞ্জুদিরা সেবারে মাধ্যমিক দিল। অঞ্জুদি জুনিয়র হাইস্কুল থেকে ক্লাস সিক্সের বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল। তখন আমরা ফোরে একবার আর সিক্সে একবার বৃত্তি পরীক্ষা দিতাম। অঞ্জুদি বৃত্তি পাওয়ায় স্কুলে সবাই ভাবত অঞ্জুদি মাধ্যমিকেও দারুণ করবে। নাইনে উঠে অঞ্জুদি অতিরিক্ত বিষয় নেয় অঙ্ক যেটা মণীষাদির করানোর কথা। মণীষাদি অসম্ভব বিরক্ত হতেন অতিরিক্ত অঙ্কের ক্লাস নিতে। আমরা অনেকেই শুনেছি দেখেছি সেই বিরক্তির ঝাঁঝালো ঝাপটা। অঞ্জুদি মানুষটা ভারী নিরীহগোছের, খুব আস্তে কথা বলে, একটু দূর থেকে প্রায় শোনাই যায় না। বলিয়ে কইয়ে একেবারেই নয়, ক্লাসের পরে কোন প্রশ্ন জিগ্যেস করতে টিচার্সরুমে এলেও নাকি খুবই কুন্ঠিত ভঙ্গীতে আসে। অঞ্জুদির দিদি মঞ্জুদি বেশ কয়েকবার ফেল টেল করে অঞ্জুদির সাথেই নাইন টেন পড়ে এবারে একসাথে পরীক্ষা দেবে। সে অবশ্য অত মৃদুভাষী নয়, তবে পড়াশোনায় ভাল না বলে তাকে দিদিমণিরা এমনিই কেউ খুব একটা পাত্তা দিতেন না। অনেকটা লম্বা অঞ্জুদি ঈষৎ কুঁজো হয়ে বইখাতাগুলো হাতে করে বুকের কাছে ধরে যখন স্কুলে আসত  তখন আমি অনেকদিনই দেখে অবাক হয়ে ভাবতাম বৃত্তিপাওয়া মেয়ে এমন কুন্ঠিতভাবে চলে কেন?

    সবচেয়ে অবাক লাগত বড়দির বিরক্তি দেখে। বড়দিও অঞ্জুদির ওপরে খুব রাগ করতেন, বিরক্তি দেখাতেন কেন অমন মিনমিন করে বলে। একধরণের নিরূপায়ভাবে তাকিয়ে থেকে অঞ্জুদি সকলের বিরক্তি সয়ে যেত। মণীষাদি ওকে বলতেন অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে অঙ্ক ছেড়ে বায়োলজি বা হোম সায়েন্স নিতে। মাধ্যমিকে অঞ্জুদি কোনওরকমে ফার্স্ট ডিভিশান পায়। জুনিয়র হাইস্কুলের দিদিমণিদের আশা চূর্ণ করে অঞ্জুদি কোনও বিষয়েই লেটার পায় না। স্কুলে মার্কশিট আনতে যাওয়ার দিন যখন প্রণাম করতে যায়, তখনও বড়দি নাকি ওর মৃদুভাষী সত্ত্বাটির প্রতি নিজ বিতৃষ্ণা সরবে জ্ঞাপন করেন। বড়দির এই বিতৃষ্ণা মা'র কাছে শুনে আমি খুব অবাক হই। মাও অবাক হয়েছিল, অঞ্জুদির জন্য আমার মায়া হয়। আমাদের অবাক হবার কারণ, বড়দি মানে প্রমীলাদি এত ধীরে আর এত মৃদুস্বরে কথা বলতেন যে সমস্ত ক্লাস একেবারে চুপ করে না থাকলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বেঞ্চি থেকে কিচ্ছু শোনা যেত না। প্রমীলাদির ক্লাসে  সবাই একেবারে নিশ্চুপ হয়ে শুনত, উনি পড়াতেন বাংলা দ্বিতীয় পত্র অর্থাৎ ব্যকরণ। সংস্কৃতর সঙ্গে তুলনা করে করে বেশ সুন্দর বোঝাতেন, আমাদের অনেকেরই খুব ভাল লাগত।

    ওঁর ক্লাস থাকত ঠিক টিফিনের পরের পিরিয়ডে আর  এই ক্লাসে একটা দুর্ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ছিল| সম্পূর্ণ নিংশব্দ ক্লাসে ফিসফিসের চেয়ে সামান্য একটু উঁচুস্বরে পড়াচ্ছেন প্রমীলাদি আর এইসময়ই ক্লাসের কোনও এক জায়গা থেকে ভেসে আসবে ‘পুঁউঁ' করে একটি আওয়াজ এবং তারপরেই সকলের ইতিউতি  চাউনি ও হাসি চাপার প্রাণপণ চেষ্টায় খি খি খুক খুক। কোনও কোনওদিন বড়দি পড়িয়েই চলতেন সবকিছু উপেক্ষা করে। আবার কোনও কোনওদিন বিরক্ত হয়ে হাত থেকে বই নামিয়ে ভুরু কুঁচকে জিগ্যেস করেতেন ‘তোমরা সকালে প্রাতঃকৃত্যাদি সমাপন না করেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হও?' এরপরে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক আরো কিছু উপদেশ, কিন্তু মুশকিল হল এরকম প্রশ্নে আমাদের নিরুদ্ধ হাসির বাঁধ প্রায় ভাঙো ভাঙো হয়ে যেত। একে তো এই বিপথগামী ঢেকুরের শব্দ শুনলেই হাসি পায়,  তারপরে ওঁর ঐ শুদ্ধ বাংলায় করা প্রশ্নে সে হাসি আরো জোরদার হত মাত্র। এদিকে অনেক মেয়েই সকালে কিছুই খেয়ে আসে না, টিফিনেই কিছুমিছু খায়। কাজেই টিফিনের পরের পিরিয়ডেই এরকম দুর্ঘটনা বেশী ঘটত।

    তা বড়দি যেহেতু অত্যন্ত মৃদুভাষী, তাই তিনি তেমন জোরে বকতেও পারতেন না, ফলে একসময় এইসব ঘটনা উনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা শুরু করেন ও নিজের মত পড়িয়ে যেতে থাকেন। এখন ভাবলে একটু খারাপ লাগে যে স্কুলের ছাত্রীদের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল হয়েও সকলেই সকালে কিছু খেয়ে আসতে পারে না, এই ব্যপারটা হয় জেনেও উপেক্ষা করতেন অথবা খেয়ালই করতেন না। অথচ আমাদের শেখানো হয় এঁদের সবাইকেই শ্রদ্ধা করতে হবে। ওদিকে নিজের চেয়ে দুর্বল ও মৃদুভাষী অঞ্জুদির প্রতি বিরক্তি প্রকাশে তাঁর কোনও দুর্বলতা অবশ্য দেখা যেত না। অনেক পরে, অনেক বড় হয়ে একদিন রাস্তায় কথা বলতে গিয়ে জেনেছিলাম উনি চান নি অঞ্জুদিও ওঁর মত মৃদুভাষী হোক। তাতে যে কেউ কথা শুনতে চায় না পাত্তা দেয় না তা উনি ভালই জানতেন, তাই চেয়েছিলেন অঞ্জুদি নিজেকে বদলে নিক। কিন্তু এটাই যদি উনি একটু সময় নিয়ে অঞ্জুদিকে আলাদা করে ভালভাবে বুঝিয়ে বলতেন, তাহলেই হয়ত ফল হত, অঞ্জুদি ক্রমশঃ আরো গুটিয়ে যেত না।

    আমার খুব আশা ছিল নাইনে উঠে  একসেট সাদা সালোয়ার কামিজ হবে পিটিক্লাসের জন্য। গত দুই বছর দিদিদের তাইই পরতে দেখেছি। কিন্তু ইতোমধ্যে অনেক অভিভাবকরাই  সালোয়ার কামিজ কিনতে তাঁদের অপারগতা জানিয়েছেন ফলে আমাদের বছর থেকে ওটা ঐচ্ছিক হয়ে গেল। যারা পারবে তারা পরে আসবে, যারা পারবে না তারা শাড়ি  পরেই পিটি করবে। এমনিতেই আমাদের শাড়ি  কাঁধে প্লিট দিয়ে পিন  আর আঁচলের একদিক ঘুরিয়ে এনে সামনে বাঁদিকে পেটের কাছে পিন করতে হত, যাতে কোনওভাবেই কোমরের কোনও অংশ দেখা না যায়। তা এইভাবে শাড়ি  পরায় পিটি করতে তেমন কোনও অসুবিধে হত না। আমাদের বাড়ীতে সালোয়ার কামিজ নামক পোষাকটা নিষিদ্ধ অথচ আমার খুব ভালো লাগে। সেই যে সেজমামার ওখানে গিয়ে একসেট উপহার পেয়েছিলাম, সেটা টাইট ফিটিং বলে মা বিশেষ পরতেই দেয় না। তাই আশা ছিল যদি স্কুলের দৌলতে পরা হয়, তা সেও হল না।

    ‘ধিতাং ধিতাং বোলে, কে মাদলে তান তোলে' গানের সাথে কাঠিনাচ শিখে ভারী আনন্দ হল। এই গানটা আমাকে প্রায় মাস চারেক দখল করে ছিল, একটু সুযোগ পেলেই গুনগুনিয়ে নিতাম। নাইনেই আমাদের সেলাই ক্লাস বন্ধ হয়ে ওয়ার্ক এডুকেশান শুরু হয়। কল্পনাদি করাতেন, বেশ ধৈর্য্যশীল, অত্যন্ত যত্ন করে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিতেন। নাইন টেনে আমরা বানিয়েছিলাম সাবান, বই বাঁধানো, কুলের আচার, ইঁচড়ের আচার আর লেবুর আচার। এছাড়া বিভিন্ন পাতা সংগ্রহ করে একটা খাতা বানাতে হয়েছিল। আর ক্লাসের সবাই মিলে একদিন ফিনাইল বানিয়েছিলাম। বই বাঁধানো শিখে আমি বাড়ীর বেশ কিছু বই বাঁধিয়ে ফেলেছিলাম। আমার দেখাদেখি ভাই কাগজের পাতা সমান মাপে কেটেকেটে প্রথমে কুট্টি কুট্টি বই বানালো তারপর তাদের বাঁধালো। তিন কি চার সেন্টিমিটার মাপের পুঁচকে পুঁচকে বইগুলো যে কি সুন্দর দেখতে হয়েছিল। আসলে সেগুলোকে খাতা বলা যায়, সাদা পাতা দিয়ে বানানো তো। কুলের আচার আর ইঁচড়ের আচার মা বানিয়ে দিয়েছিল।

    কিন্তু সাবান বানানো কিছুতেই আমার দ্বারা হল না। চারবার চেষ্টা করলাম, কোনওবারেই সাবান জমল না। এদিকে মনস্বিতার দিব্বি একবারেই চমৎকার জমে গেল। ও আমাকে বলেছিল বানানোর সময় ওকে ডাকতে, কিন্তু কি জানি কেন মা কিছুতেই ওকে ডাকতে দিল না, সাবানও জমল না। মা'ই গিয়ে গাতুর সাথে কথা বলে এলো যে ওর পরীক্ষার পরে ওর সাবান আমি জমা দেব। আপাতত ওর একটা সাবান স্কুলে নিয়ে কল্পনাদিকে দেখিয়ে আনা হবে, তারপর আগামী বছর ওর মাধ্যমিকে ওয়ার্ক এডুকেশান পরীক্ষায় দেখানো হয়ে গেলে আবার আমি নিয়ে আসব। তার পরের বছর আমার পরীক্ষার শেষে ফেরত দেব। মনাই একটু দুঃখ পায়, রাগও করে ওকে না ডেকে অমন ত্যাকত্যাকে নরম সাবান বানিয়ে রেখেছি বলে। আমি কিছু বলতে পারি না, মায়ের ওপরে রাগ হতে থাকে। এদিকে এমনি সব ঠিকঠাক চললেও গাতুর সাবান আমি যখন স্কুলে দেখালাম তখন সেটা ছিল মেরুণমত অনেকটা লাইফবয় সাবানের রং। অথচ আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন বের করে দেখি সাবানদুটো  থেকে থেকে একদম উজ্বল কমলা রঙের হয়ে গেছে।

    অমন রং দেখেই বোধহয় পরীক্ষকমশাই আমার একটা সাবান নিয়ে চলে গেলেন। আমি যখন কুন্ঠিতভাবে গাতুকে বলতে গেলাম ও হেসেই কুটিপাটি। অন্য সাবানটা দেখে ও বিশ্বাসই করতে পারছে না যে ও-ই এগুলো বানিয়েছিল। এদিকে হোম সায়েন্স যাদের ঐচ্ছিক বিষয় ছিল তারা তিন চারটে রান্না করেছিল দুই বছরে। আমরাও তার ভাগ পেয়েছিলাম খাওয়ার সময়। শুনেছি হিন্দু গার্লসে হোম সায়েন্সের মেয়েরা নাকি এক এক বছরেই আটটা ন'টা করে রান্না করেছে স্কুলে। ওখানে মেয়েদের বাড়ী থেকে বিভিন্ন রান্নার জিনিষপত্র আনতে বললে সবাই নিয়ে আসে, আমাদের স্কুলের মেয়েরা অনেকেই অত খরচ করতে পারে না। তাই বুঝেশুনে অল্প উপকরণ দিয়ে সহজে হয়ে যাবে এমন দুটো করে পদ প্রত্যেক বছরে করান পূরবীদি। আমি অত অঙ্ক করতে নির্ঘাৎ পারব না আর অঞ্জুদির প্রতি মণীষাদিদিমণির ঐ অসীম বিরক্তি আর রাগ দেখে ভয়েও আমি অঙ্কের কথা ভাবিই নি। নিয়েছিলাম বায়োলজি, পদ্মাদি পড়াতেন, বেশ যত্ন করেই পড়াতেন।

    এদিকে আমি আবার একেবারেই আঁকতে পারি না, তা আমার প্র্যাকটিক্যাল খাতার যাবতীয় ছবি মনস্বিতাই এঁকে দিত, পরে উচ্চমাধ্যমিকেও তাই দিয়েছে। আমি ওর ভূগোল খাতায় ম্যাপ এঁকে রং করে দিতাম, ও আবার আমার ভূগোল খাতায় ভারতের বিভিন্ন  রাজ্যের বাড়ীঘরের ছবি এঁকে দিত। মাধ্যমিকের বাংলায় আমাদের দুটো সহায়ক পাঠ ছিল ‘কবিতাসংকলন' ও ‘গল্পসংকলন'।  গল্পসংকলন আসলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছের একটা সংক্ষিপ্ত রূপ, গল্পগুলো পড়ে পুরো গল্পগুচ্ছ পড়ার ইচ্ছে তীব্র হয়। কোথাও থেকে যোগাড় করা যায় না, বাংলার শিক্ষিকা ছায়াবীথিদি বলেন যদি বাংলায় লেটার পাও আমি তোমাকে গল্পগুচ্ছ চারখন্ড কিনে দেব। আমি যদিও লেটার পাই নি, কিন্তু মাধ্যমিকের পরে স্কুল থেকে  'বিশেষ পুরস্কার' হিসেবে গল্পগুচ্ছ  দেওয়া হয়েছিল।  

    কবিতাসংকলনে অবশ্য অনেকের কবিতাই ছিল, সেইখানেই পড়েছিলাম কালিদাস রায়ের 'বর্ষে বর্ষে দলে আসে বিদ্যামঠতলে ---' কবিতাটা|

    কিন্তু কালিদাস রায়ের ‘চাঁদ সদাগর' কবিতাটা একেবারে মাথায় গেঁথে যায়। আমার বাড়ীর খাতায় নীল আর কালো কালির কলম দিয়ে বড় বড় করে লিখে রাখি  
                                  'শিখাইলে এই সত্য, তুচ্ছ নয় মনুষ্যত্ব, দেব নয় মানুষই অমর
                                   মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর'
    পুরুতমশাইদের ওপরে বিতৃষ্ণা দিয়ে যা শুরু হয়েছিল, সত্যনারায়ন পুজোর পরে দিদার 'চন্নামিত্তি' নেওয়ার ডাক শুনে আমি সবার আগে পৌঁছলেও আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে আগে ভাইকে, ছোটদিকে দিয়ে তারপর আমাকে দেওয়া যার ভিৎ তৈরী করেছিল এই কবিতা তাকে শক্তপোক্ত চারটে দেওয়াল দেয়। তাই এরপরে নাইন থেকে টেনে ওঠার সময়কার ছুটিতে যখন ছোটমামারা বেড়াতে আসলে আমার সবসময় ছোটমাইমার সাথে গল্প করা নিয়ে বড়মামা প্রচন্ড বকে আর  মা বলে ‘ঠাকুরকে ডাক' আমি প্রবল বিতৃষ্ণা ও বিরক্তিতে ভাবি ঠাকুর আবার কী! ঠাকুর ফাকুর সব বাজে কথা।

    এরপরে যখন দিদাও ছুতোনাতায় গল্প করা নিয়ে, বারান্দায় দাঁড়ানো নিয়ে  বকতে থাকে, পড়াশোনা না করা নিয়ে ব্কতে থাকে, তখন আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি। একদিন সুযোগ পেয়েও যাই। ছোটমামারা তখন ফেরত চলে গেছে, দিদাকে নিয়ে ব্ড়মামা, মাইমা গেছে পুর্বাশায় মেজমামার বাড়ী। সেদিন আমি দোতলার ঠাকুরঘরে এসে ঢুকি, ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট্ট খাট থেকে নামিয়ে আনি রামকৃষ্ণ, সারদামণি, অন্নদা ঠাকুর, কালীঠাকুর, গনেশঠাকুরের ছবি। দেয়াল থেকে পেড়ে আনি কৃষ্ণরাধার ছবি। তারপর একটা একটা করে ছবির ওপরে উঠে দাঁড়াই, ছবির কাচ যাতে ভেঙে না যায় তাই ঐ  ঠাকুরদের বিছানার তোষক নিয়ে ফটোর ওপরে রেখে তার ওপরে দাঁড়াই। সব ফটো জায়গামত রেখে ধার থেকে টেনে আনি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি।  এই দুটো ঠাকুরের মূর্তি এনে পুজো হয়, ভোগ দেওয়া হয় আর পুজোর পরের দিন আগের বছরের ঠাকুরের বিসর্জন দেওয়া হয়। এই বছরের ঠাকুর ঠাকুরঘরে থাকে। এগুলো মূর্তি ছবি নয়, এগুলোর ওপরে দাঁড়ানো যায় না, তাই পা দিয়ে ওদের শাড়ি ডলে দিই, পায়ের আঙুল দিয়ে মূর্তির মাথার চুলগুলো রগড়ে দিই।

    তারপর আবার উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি আর মনে মনে বলি, যে ঠাকুরের দোহাই দিয়ে দিদারা এত  মিথ্যে বলে, এতবার অন্যায়ভাবে আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখে, সেই ঠাকুরকে পা দিয়ে ডলে রগড়ে দিলাম। ওদের দেখানো 'ঠাকুর দেখবেন ওপর থেকে' এই ভয় আমি করি না। ওদের উত্তরাধিকার আমি বহন করি না, কোনওদিন করবও না।  
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১০ মে ২০২৫ | ৪৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বাবর - upal mukhopadhyay
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ১০ মে ২০২৫ ২২:২১731241
  • এই সিরিজটা পড়লে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায় কেমন ভাবে পরতের পর পরত জুড়ে একটা মানুষ তৈরী হয়েছে। অন্য মানুষদের আপাত তুচ্ছ রুডনেস, তাচ্ছিল্য, অ্যাপ্রিশিয়েশনের অভাব, ডিসক্রিমিনেশন, পরিস্থিতিদের নানা রং কেমন ভাবে একটা চরিত্রের নানা আকৃতি, রং, টেক্সচার তৈরী করে। এই ব্যাপারটা এই সিরিজের একটা খুব বড় আকর্ষণ। শেষের কটি বোল্ড অক্ষরে লেখা শব্দের সাথে আমি একাত্ম বোধ করি। মনে হয় খুব আপন একটা কনসেপ্টকে জড়িয়ে ধরতে পারলাম। আর, লেখার আরেক জায়গায়, আরেকবার স্পষ্ট করে বুঝতে পারি "বাকী পৃথিবী ফুটে থাকা কাঁটার কথা  জানে না।" পৃথিবীর সব রক্তাক্ত জিজিদের পরিষ্কার দেখতে পাই। তাদের কেউ দেখেনা।
  • . | ১০ মে ২০২৫ ২২:৫২731244
  • শেষের প‍্যারাগ্রাফটা বুঝতে হলে সেই পরিস্থিতির মধ‍্য দিয়ে যেতে হয়। প্রত‍্যেক মানুষের জীবনেই এই ধরনের নানান পরিস্থিতি থাকে যা শুধু সে নিজেই জানে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন