এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   সমাজ

  • বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ 

    দীপ
    আলোচনা | সমাজ | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৬৪ বার পঠিত
  • সাংবাদিকের চোখে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের অধঃপতন। আগ্রহী হলে পড়তে পারেন।
    -----------------------------------------------------------------
     
    পশ্চিমবঙ্গের অধঃপতন যত রকম ভাবে হয়েছে, তার মধ্যে মানসিকতার অধোগমনটা বোধ হয় সবচেয়ে কম আলোচিত। তবে সেটা যে কোন জায়গায় গিয়েছে, ভাবলেও অবাক হতে হয়। সকলেই জানেন, এখন এসআইআর চলছে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি করছেন বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-রা। এই বিএলও-রা সকলেই আসলে অধস্তন সরকারি কর্মী। এক বড় অংশ স্কুলশিক্ষক। ভোট এলেই সবার আগে ডাক পড়ে স্কুলশিক্ষকদের, স্কুলগুলো পাল্টে যায় ভোটের বুথ বা আধাসেনার ক্যাম্পে। দিনের পর দিন বন্ধ থাকে স্কুল। অন্য কাজ করেন শিক্ষকেরা। যে কোনও সুস্থ, স্বাভাবিক সমাজে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বে দিনের পর দিন এটাই হয়ে চলেছে। "পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র"-এর মহোৎসবে সামান্য স্কুল বন্ধ থাকা নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামান না। তাই কোভিডে বছরভর স্কুল বন্ধ থাকতে পারে; কিন্তু ভোট থেমে থাকে না। এবারেও তাই যথারীতি বিএলও-দের এই কাজের ঠেলায় বহু স্কুলের অবস্থা খারাপ। এমনিতেই পর্যাপ্ত স্কুলশিক্ষক নেই, যারা আছেন, তাঁরাও ক্লাসের বদলে ঢাউস ব্যাগে ফর্ম বোঝাই করে বাড়ি-বাড়ি ঘুরছেন। 

    এতেও কোনও সমস্যা নেই, কারণ পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে সরকারি স্কুলশিক্ষা বলে প্রায় কিছুই নেই। ফলে সমস্যা হলেও তাতে বিশেষ কারওর যায় আসছে না। কিন্তু সমস্যায় পড়ছেন বিএলও হিসেবে কাজ করা সরকারি কর্মীরা। যাদের কাজ ছিল ক্লাসে পড়ানো, তাঁদের ওপর পাহাড়প্রমাণ কাজের চাপ। এটা যে কতটা ঝক্কির, ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। অজস্র নিয়মকানুন আছে নির্বাচন কমিশনের। সব নিয়ম মেনে অত নাম তোলাটাই একটা পরীক্ষা। ফলে কাজের চাপে প্রাণান্ত অবস্থা বিএলও-দের। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। এটুকুও কারওর না বোঝার কথা নয়। ওভারওয়ার্ক কী জিনিস, আমাদের সবারই হয়তো কমবেশি ধারণা আছে।

    কিন্তু তারপরের খবর কী? এরকমই এক বিএলও-র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর প্রকাশ করেছে এক নামী সংবাদমাধ্যম। তার তলায় কমেন্টের বন্যা। কীরকম কমেন্ট জানেন? অজস্র লোক লিখছেন:  

    "বেশ হয়েছে। সারা বছর বসে বসে মাইনে পাবে, এবার বোঝ ঠ্যালা!"

    "এমনিতে তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে স্কুলে যান, তিন ঘন্টা থেকে, একঘন্টা ক্লাসে বসে ভাতঘুম দিয়ে চলে আসেন! এবার একটু কাজ করুন!"

    "একদম কারেক্ট আছে। কাজ করেন কিছু আপনারা? সরকারি কর্মী মানেই তো বসে বসে মাইনে পান!"

    "সব বেসরকারি করে দেওয়া উচিত। তবেই আপনারা ঠেলা বুঝবেন। সরকারি চাকরি করে তো আর কাজ কী জিনিস বুঝলেনই না।"

    "কোভিডের সময় তো সারা বছর ঘরে বসেই মাইনে পেলেন। এখন একটু কাজ করলেই অসুস্থ?"

    "সব নাটক। এদেরকে ঘাড় ধরে কাজ করানো হোক!"

    "নির্বাচন কমিশনকে বলব, এদের যেন ছাড় না দেয়। দরকারে আবার হাসপাতালে যাক, কিন্তু কাজটা যেন করিয়ে নেয়। শুধু ফাঁকি..."

    আগুনের হলকার মতো কমেন্ট। পর পর। সব কমেন্ট এইরকম। একটাও ব্যতিক্রম নেই, সহানুভূতি নেই। এক নৃশংস, আক্রোশ ফেটে যেন গিলে খেতে চাইছে। এক চরম বিবমিষা, বিতৃষ্ণা, ক্ষোভ প্রত্যেকটা কমেন্টের প্রতিটা শব্দে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে। দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, কী হতে পারে কারণ? আসলে এটাও তো পশ্চিমবঙ্গের বাস্তব। এখানে চাকরি নেই, কাজ নেই। ভারতের অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতায় কম খরচে জীবনধারণ করা যায় ভেবে আমরা পুচ্ছ উচ্চে তুলে নাচি। এর উল্টোদিকটাও সত্যি। ভারতের অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতায় বেসরকারি ক্ষেত্রে মাইনে ভয়াবহ কম। এখানে বেশিরভাগ বেসরকারি চাকরিতে নয় ঘন্টা কাজের সময়। অথচ মাইনে দশ হাজার, পনেরো হাজার। কেউ নিজের রেস্ত দেখে সুখী নয়। অথচ এর কোনও প্রতিকার নেই। সবার মধ্যে কাজ করে হতাশা। যার ফল আজকাল আকছার চোখে পড়ে কলকাতার রাস্তাঘাটে। সামান্য ঘটনায় লেগে যায় বিবাদ, বচসা। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালি এক নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতার চাকরি বা সরকারি চাকরি বেছে নিত। এখন সরকারি চাকরিও বেশিরভাগ চুক্তিভিত্তিক, শিক্ষকতার চাকরির হাল দেখতে গেলে একবার বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালেই হবে। অথচ তাতে কারওর কোনও চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, ওই হতাশা উল্টে জমে-জমে তৈরি হয় সরকারি চাকরির প্রতি আক্রোশ। বোধ হয় এই কারণেই এত দীর্ঘদিন ধরে চলা শিক্ষক-নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন বিন্দুমাত্র আমজনতার মধ্যে প্রভাব ফেলেনি। এটাই সত্যি এবং এটাই বাস্তব। এর পরেও রাজ্যের শাসক দল বিপুল ভোটে পরের নির্বাচনে জিতবেন। 

    মজার কথা কী জানেন? ছবিটা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ঠিক এরকম নয়। খবরের কাগজে কেরানিগিরি করি, আজকের একটা খবর বলি? পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও চলছে এসআইআর। একইভাবে সেখানেও বিএলও-দের অবস্থা খারাপ। সম্প্রতি কেরলের কান্নুরে অনীশ জর্জ বলে এক বিএলও এই চাপ সামলাতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন। তারপরের ঘটনা কী জানেন? কেরলে কার্যত ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে। সেখানে শাসক সিপিএম ও বিরোধী কংগ্রেস একযোগে পথে নেমেছে। কার্যত বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের দফতরের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। একই অবস্থা তামিলনাড়ুতেও। সেখানেও অতিরিক্ত কাজের চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বহু বিএলও। প্রতিক্রিয়া? তামিলনাড়ুর অন্যতম শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন বলেছে, আজ থেকেই তারা সারা রাজ্যে এসআইআর কাজ বয়কট করবে। যার জেরে রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। পাশে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষও। আপাতত সমাধানসূত্র কী বের করা যায়, তার চিন্তা চলছে।

    অথচ পশ্চিমবঙ্গে গত দশ বছর ধরে এমনই রাজনীতির ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে যে, ২০০১ সালে জন্ম, ১৫ হাজার টাকা মাইনেতে সাড়ে নয় ঘন্টা কাজ করা যুবকও ফেসবুকে আস্ফালন করে, "সব বেসরকারি করে দিক, ঠ্যালা বুঝবে", এবং একইসঙ্গে লেখে, "ইউনিয়ন খুব খারাপ, ইউনিয়নবাজির জন্যই রাজ্যটার এই অবস্থা!" এই আস্ফালনের ফাঁক দিয়েই দিগন্তে এক অন্ধকার রাত উঁকি মারে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কামাল পাশা | 128.2.***.*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১২:০৩746196
  • এটা আবার কোন সাইট থেকে টুকে আনলি রে দিফেছাগল? লিং না দিয়ে টুকে দিলে গদাম খাবি কিন্তু!  
  • হে হে | 2a0d:bbc7::f816:3eff:fee6:***:*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:০০746197
  • চোট্টাটা ফেসবুক থেকে টুকে এনেছে। কেমন দুগগিবাজ ফেসবুকের লিং দিতে মানা করায় সেইটে চেপে গিয়ে পেস্টিয়েছে।  জালিমাল পুরো।
     
  • উনিজি | 217.178.***.*** | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৪৪746198
  • দিফেছাগল এর মতো লাথখোর পাবলিক কোথায় আবার মাস্টারিও করে। মিনিমাম সততা বিসর্জন দিয়ে ছাত্র পড়াচ্ছে। হা রে চাড্ডি!  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন