একমাস পেরিয়ে গেছে, ৩ এপ্রিল (২০২৫) শীর্ষ আদালতের এক সিদ্ধান্ত বয়ে এনেছে গভীর সামাজিক অভিঘাত। বিপুল প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির জন্য বাতিল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনকৃত (এসএসসি) ২০১৬-র পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই। পাঁচ বছরেরও বেশি চাকরি করার পর রাতারাতি চাকরিচ্যুত হতে চলেছেন ২৫৭৩৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। জালিয়াতিতে অভিযুক্ত রাজ্য সরকারের অতি উচ্চতর পদাধিকারীরা। সংশ্লিষ্ট (সাবেক) মন্ত্রীসহ তাঁরা জেলে বন্দি রয়েছেন। নানান সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের নির্যাস– এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিপুল দুর্নীতির কারণে এবং কমিশনের অসহযোগিতায় জালিয়াত বা দোষী এবং নির্দোষী নিয়োগপ্রাপ্তদের বাছাই করার তথ্যপ্রমাণ ছিল না, তাই সমগ্র প্যানেল বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে আদালত। সম্প্রতি রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে রায়টি ফের পর্যালোচনার জন্য আবেদন জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। ... ...
১৯৪৬ সাল। আমার মা তখন ভিক্টরিয়া ইনস্টিটিউশন এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কলেজ ছাড়া বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক অল্পই। তাও যাতায়াত পর্দা ঢাকা ঘোড়ার গাড়িতে। আগের বছর মেজ মামা বিয়ে করেছেন এক বাঙালি ক্রিশ্চিয়ান মহিলাকে। চিঠি মারফত শুধু ওই খবরটুকুই দিয়েছেন বাবা মাকে, এবং এ তরফ থেকে "বউ নিয়ে তুমি বাড়ি এসো" জাতীয় কোন চিঠি যায়নি। এর মধ্যে ১৯৪৬ এর আগস্ট মাসে নৌ সেনা মেজো মামার কন্যার জন্মের দশ দিনের মাথায় হঠাৎ যুদ্ধে ডাক পড়ল। স্থির করল কচি মেয়েকে নিয়ে খিদিরপুরে মেজ মামিমার বাপের বাড়িতে ওদের রেখে আসবে । কিন্তু হাওড়া স্টেশনে আসতেই সমস্ত ট্যাক্সি বলল লক্ষ টাকা দিলেও ওদিকে যাবে না। দাঙ্গাকারীরা শুধু ওদের নয়, দুধের শিশু, তার মা কাউকেই ছাড়বে না। মেজমামা তখন "আমার মা কিছুতেই ফেরাবেন না" দৃঢ় বিশ্বাসে শ্যামপুকুরে দাদুর বাড়িতে এসে মেয়ে বউকে রেখে গেলেন। নতুন বউ, নতুন নাতনি সবকিছুর আনন্দ খুবই ক্ষণস্থায়ী হলো, কারণ পরদিনই সকালে বাড়ির সামনে দেখা গেল পাড়ার ছেলেরা, যাদেরকে বড়জোর মস্তান বলা যায়, এতদিন পর্যন্ত গুন্ডা বলা যেত না, তারা একটা মুসলমান মজুর কে পিটিয়ে মারছে। বেচারি লুকিয়ে ছিল তিন দিন, পেটের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে খাবার খুঁজতে বেরিয়েছিল। এই বীভৎসতা সহ্য করতে না পেরে দাদু বললেন অন্তত আমার বাড়ির সামনে থেকে সরে যা তোরা। ... ...
খেরোর খাতায় লেখা দেওয়ার বিস্তারিত পদ্ধতি। ছবিসহ বুঝিয়ে বলা আছে এখানে। ... ...
সারাদিনের অতিরিক্ত পরিশ্রমে যাত্রা শুরু হওয়ার কিছু পরেই চোখ খুলে রাখা দায় হতো। বড়দের বলে রাখতাম, যুদ্ধের দৃশ্য, আমাদের ভাষায়, সিন, এলেই জাগিয়ে দিতে। কেরিচু কেরিচু ক্যাঁ বলে একটা বাজনা বাজতো। আর তলোয়ার নিয়ে সে কী লড়াই। একটু পড়তে পারার পর থেকেই যাত্রার বইগুলো আমার মুখস্থ হয়ে যেতো। কোন বই ( যাত্রা) এবার ধরা হবে, সে-নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যেত মাঘ মাসের যাত্রা শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই। কিন্তু মহলা সেই আশ্বিন কার্তিক মাসে। তার আগে কত পালা দেখা পড়া চলতো। বই পড়া আর তার সঙ্গে রোজ সন্ধ্যায় মহলা দেখা-- এই নিয়ে বই তো মুখস্থ হবেই। ... ...
গত কয়েকদিন ধরেই, বিশেষ করে গতকাল রাত থেকে প্রায় সমস্ত মূলধারার মিডিয়া, ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপে (ট্যুইটার/এক্স, ফেসবুক, হোয়াটস-অ্যাপ ইত্যাদি) নাগাড়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হয়েছে। সেইগুলি ছড়ানোর কাজ শুরু করেছে মূলধারার মিডিয়া এবং তাদের প্রচার করা খবর সত্যি বলে ধরে নিয়ে সেগুলিকে দাবানলের মত সারাদেশে ছড়িয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে অভূতপূর্ব আতঙ্ক (এবং কোনোক্ষেত্রে উল্লাস)। এই ভুয়ো খবরের যুদ্ধে ভারতের মূলধারার মিডিয়া, যা বহুদিন ধরেই শুধুমাত্র প্রোপাগাণ্ডা মেশিন, যেমন দুষ্ট, তেমনি দুষ্ট পাকিস্তানি ফেক নিউজের কারখানাগুলিও। যুদ্ধবিক্ষত গাজা বা অন্যান্য অঞ্চলের ফুটেজ তো আছেই, তার সাথে খুঁড়ে বের করা হয়েছে কোথায় গ্যাস সিলিণ্ডার ফেটে পুরনো বিস্ফোরণের ভিডিও, কোথায় পুরনো এয়ারপ্লেন ক্র্যাশের ভিডিও, কোথাও আবার ভিডিও গেম সিমুলেশনের ছবি। এইগুলি দুইদেশের মিডিয়া অজান্তে, দুর্ঘটনাবশত করে ফেলেনি, করেছে রীতিমত পরিকল্পনা করে এবং সম্ভবত অনেকে মিলে, এবং কো-অর্ডিনেটেড ভাবেই, এক একটি মিডিয়া দখল করেছে এক-একটি অঞ্চল, কেউ শিয়ালকোট, কেউ লাহোর, কেউ করাচি, কেউ ইসলামাবাদ। ভুয়ো খবরের লক্ষ্যবস্তুগুলিও যথাসম্ভব আলাদা আলাদা করার উদ্দেশ্য মানুষ এবং ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সিদের আরও আরও দিশেহারা করে দেওয়া, আর কিছু নয়। ... ...
হয়তবা, প্রতিটি যুদ্ধের খবর আমাদের তৃপ্তি দেয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, খুঁজে খুঁজে আমরা পড়ি সে-সব , দেখি, আলোচনা করি, গালি দেই, আমাদের দুর্বল হৃদয়গুলো তেতে ওঠে, আমাদের নিজের নিজের রায়ে ঘোষিত অপরাধীদের ধ্বংস কামনায় আমরা একাত্ম হই। প্রাগৈতিহাসিক সমবেত আক্রমণের উল্লাস-ধ্বনি আমাদের ফিরিয়ে দেয় - যুদ্ধ, আহা যুদ্ধ! ... ...
বেশির ভাগ এক তলা বাড়িতে ভরা দিঘড়ি পাল পাড়া আর আগের মতো স্বাভাবিক নয়। এই অঞ্চলটায় আর্থিক অসাচ্ছল্যের চিন্হ চারপাশে। পাল পরিবার বারোই এপ্রিল সন্ধে বেলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে , বাড়ি চড়াও হবার ঘটনার ঘন্টা পাঁচেক বাদে বি এস এফের লোকজন তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ফাঁকা বাড়িগুলোর জন্যেই যেন এলাকায় থমথমে ভাব। লোকে ভয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। জেলাটার নাম মুর্শিদাবাদ , জেলাওয়ারি মুসলিম জনসংখ্যায় দেশে বৃহত্তম - দুহাজার এগারোর জনগণনা অনুযায়ী সাতচল্লিশ লক্ষ। এই সংখ্যাটা জেলার মোট জনসংখ্যার দুইতৃতীয়াংশ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকে ওয়াকফ ( সংশোধনী ) বিল ২০২৫ পাশ করে পাঁচই এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সই দেওয়ার পরই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিল। প্রতিবাদীরা পথে - রাজপথে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায় আর সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি করে। আগের দিন সন্ধেতে কয়েক কিলোমিটার দূরে পুলিশের গুলিতে দুজন মুসলিম যুবক মারাত্মক আহত হয়। তা বলে দিঘড়ি , জাফরাবাদ, রানিপুল আর বেদবনাতে কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে বাড়ি আক্রমণ হতে পারে । এখানে , হিন্দু আর মুসলিম এতো গা ঘেষাঘেষি করে থাকে যে না জানা থাকলে বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল কোন বাড়ি হিন্দুর আর কোনটা মুসলিমের । সবাই শান্তিতে বসবাস করে। কিন্তু এই সব বসতিতে বারোই এপ্রিল উন্মত্ত জনতা এসে বেছেবেছে হিন্দু বাড়িগুলোতেই চড়াও হলো। ... ...
প্রতিমানাটক নামে মহাকবি ভাসের একটি নাটক আছে। আমাদের এই নাটকটি ভাসের নাটকের বঙ্গানুবাদ নয়। এর পরিণতি ভিন্ন। প্রথম অঙ্কের প্রেক্ষাপটটি ভাসের অনুসারী এবং প্রেক্ষাপটের যুক্তিতেই কয়েকটি সংলাপ প্রায়-অনুবাদ। তাঁর নিজের সময়ে ভাস ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী নাট্যকার; আমি ভাবতে ভালোবাসি, আজকের দিনে লিখলে ভাসের নিজের নাটকটিও হয়তো এই ধরণের কোন পরিণতি পেতে পারতো। মহাকবির মূল নাটকটি ছাড়াও এ নাটক রচনায় আমি শ্রদ্ধেয় রাজশেখর বসুর বাল্মিকী রামায়ণের সারানুবাদটি ব্যবহার করেছি। যাঁরা এই রামায়ণটি পড়েছেন তাঁরা জানেন বাংলায় চলিত ভাষার ভঙ্গীতে সাধু ভাষার ব্যবহারে রাজশেখর বসু শুধুমাত্র সিদ্ধহস্তই ন'ন, কোন কোন জায়গায় তাঁর ভাষার কোন বিকল্পই হয় না, ফলত সে রকম দু-একটি জায়গায় আমার নাটকের সংলাপ প্রায় রাজশেখরের রচনা থেকে হুবহু নেওয়া হয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাবার প্রশ্ন নেই, তাঁর ভাষাটি এখন আমাদের উত্তরাধিকার। নাটকের শেষ অঙ্কে দূতের দুর্মুখ নামটি ভবভূতির উত্তররামচরিত থেকে নেওয়া। ... ...
ফ্রাঙ্কফুর্টে বারন রোটশিল্ডের বাড়িতে ঘটক হাজির ঘটক হের রোটশিল্ড, আমি আপনার পাঁচ লক্ষ মার্ক বাঁচিয়ে দিতে পারি। রোটশিল্ড (অবাক হয়ে ) কী করে ? ঘটক আপনি বলেছেন আপনার হবু জামাইকে দশ লক্ষ মার্ক যৌতুক দেবেন। ঠিক তো? রোটশিল্ড হ্যাঁ, মনের মতন জামাই পেলে নিশ্চয় দেব। ঘটক আমি একটি ভালো ছেলের সম্বন্ধ এনেছি। সে পাঁচ লক্ষ মার্ক যৌতুক পেলে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি। ... ...
আমি আমার ভাগ্যের কেরামতি দেখে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। হঠাৎ কোথাও কিছু নেই কে এক বন্ধু ফোন করে খবর দিল এবং একটা নতুন চাকরি জুটলো। ভাগ্যের মোড় ফিরলো। অথচ এতদিন ধরে কত চেষ্টা করেছি কত ইন্টারভিউ দিয়েছি কিন্তু কোথাও কিছু হয়নি। আমেরিকান রেফ্রিজারেটরও ঠিক এমনি করে হঠাৎ চাকরি পেয়েছিলাম। বাবা তাঁর মাসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য একটা চিঠি লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়নি। ঘটনা ক্রমে দেখা হলো তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি তখন বেড়াতে বেরোচ্ছিলেন, আমিও তাই ওঁর সঙ্গে রাস্তায় নামলাম। পথে পড়ল তাঁর এক বন্ধুর বাড়ি যিনি আমেরিকান রেফ্রিজারেটররের ম্যানেজার। আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তারপর চাকরি হয়ে গেল। ইন্ডিয়া ফয়েলসের চাকরিও প্রায় একই ভাবে তেমনি করে। আমি তখন কলকাতার বহুবাজার অঞ্চলে ক্ষেত্রদাস লেনে এক মেস বাড়িতে থাকি। আমাদের রাস্তা পেরিয়ে দু’পা হাঁটলেই ছোট মামার চেম্বার। ... ...
আসল কথাটা হলো দৃশ্যগতভাবে রাজনৈতিক ভাবে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি দল ঠিক এক ভঙ্গিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা লঙ্ঘন করে মেতে উঠল সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের মন্দির নির্মাণে। অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রী, আর দীঘায় মুখ্যমন্ত্রী— কেউ নিজের হাতে পুজো করে, আর কেউ যজ্ঞে আহুতি দিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে— নিজের হিন্দুত্বের প্রমাণ পেশ করলেন। কে কত বড় হিন্দু এ যেন তার প্রমাণ দেওয়ার প্রতিযোগিতা। ভারতের সংবিধান যে রাষ্ট্রকে এইরকম কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দেয় না, দেখা গেল যে, সে কথাটি মনে রাখার দায় কোনও তরফেরই নেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মাচারণ করতেই পারেন, কিন্তু সেটা কী প্রকাশ্যে করতে পারেন? অবশ্য এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলতেই পারেন, তিনি শুধু অনুকরণ করেছেন মাত্র। দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যদি করতে পারেন, একই ধরনের কাজ, তিনি তো চুনোপুঁটি মাত্র। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে। যদি সেটাও সত্যি হয়, তাহলেও কিছু বদল হয় কি? অনুষ্ঠানটির ধর্মীয় চরিত্র তাতে পাল্টায় কি? হিন্দু ধর্মের মন্দির কোনও মন্ত্রবলে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন পহেলগাঁও তে ধর্ম দেখে দেখে সন্ত্রাসবাদীরা মানুষকে মেরেছে, যখন তার পরবর্তীতে পুরো দেশ জুড়েই নতুন করে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ তীব্র হয়ে উঠছে, যখন ওয়াকফ আইন নিয়ে বিরোধিতা এবং তারপরে মুর্শিদাবাদে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে মুসলমানরা অতি বিপন্ন বোধ করছেন, ঠিক সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্দির উদ্বোধন করে কী বার্তা প্রেরণ করলেন, তা বোঝার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁর নিশ্চিত ভাবেই আছে। যে মুসলমানরা এতদিন তাঁকে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কী মনে হয়েছে, তা একবারও তিনি কি ভেবেছেন? ... ...
শনের সাহচর্যে ডাবলিনে গিয়ে দেখলাম দুশ বছর আগেই প্রখর আইরিশ মেধা এই সঙ্কটের সমাধান করে ফেলেছে; যেমন কোনো পাবের লম্বা বার একাধিক ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত, আপনার সামনে সুধাভাণ্ডের সমারোহ সমেত বারটেন্ডার, কিন্তু আপনার দু পাশে পাতলা কাঠের আবরণ, পেছনে স্বতন্ত্র দ্বার বা পর্দা; আপনাকে বা আপনার সহচর /সহচরীকে তাবৎ জনতা দেখতে পাচ্ছে না, আপনি তাদের কলকণ্ঠ শুনছেন। যে স্নাগের প্রশংসায় শন পঞ্চমুখ, সেটি বার থেকে এক পা দূরের ছোটখাটো কেবিন, যেখানে আপনি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসে সান্ধ্য আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, একপাশে একটি খোপের ভেতর দিয়ে বার টেন্ডার আপনার ইচ্ছা জানতে চাইবে এবং তদনুযায়ী বিয়ার পৌঁছে দেবে, কখনোই পর্দা ঠেলে আপনার আড্ডায় ঢুকে বলবে না, এই যে আর কি চাইলেন? ... ...
একপাশে দেখলাম বসার জায়গা করা আছে। তার ধারে পুজোর বেদী, কিছু ঘিয়ের প্রদীপ। ধাপ কাটা বেদীটি বৌদ্ধ ভক্তদের পুজোর জন্য। প্রতি বুদ্ধ পূর্ণিমায় ভক্তরা আসেন। আর ত্রিশূল দিয়ে সাজানো বেদীটি হিন্দুদের জন্য। সেখানে হর পার্বতী - পুরুষ/প্রকৃতির পুজো হয় মাঘী পূর্ণিমায়। কিন্তু কী এমন মাহাত্ম্য আছে এই জলাশয়ের যে এই দুর্গম অঞ্চলে আজও মানুষ পাহাড় ডিঙিয়ে আসেন! ... ...
অপরাধীকে মহিমান্বিত করার এই প্রবণতা স্বাধীন ভারতের অন্যতম জঘন্য অপরাধ, গান্ধী-হত্যা দিয়েই শুরু হয়েছিল। এটা সর্বজনবিদিত যে তাঁর হত্যার পর সঙ্ঘীরা বাজি ফাটিয়ে উল্লাস করেছিল, মিষ্টি বিতরণ করেছিল। স্বাধীনতার পর কয়েক দশক চুপচাপ থাকার পর নব্বইয়ের দশকের পর থেকে তাঁকে বরেণ্য করে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রজ্ঞা ঠাকুর, সাক্ষী মহারাজের মতো বিজেপি সাংসদরা গডসেকে দেশভক্ত বলে অভিহিত করার পরেও দল তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে তারপরেও তাঁরা পার্টির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং বিপুল ভোটে জিতেছেন। ... ...
স্কুল গ্রাউন্ডের ঠিক মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে, একবার গোল ঘুরে চারধারটা দেখে নিল। কী সুন্দর রঙিন লাগছে, রোদ ঝলমল নীল আকাশের নীচে, মাটিতে যেন রামধনু নেমে এসেছে। সীমানা বরাবর মাঠের দুই ধারে সারি সারি স্টল,যেমনটা হয় প্রতিবার। বাইরের লোক আসা শুরু হয়নি এখনো, স্টলে স্টলে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতির উত্তেজনা তুঙ্গে। অন্যান্যবারে তারাও এই সময় নিজের নিজের স্টলে ব্যস্ত থাকত, টিচারদের বকাবকি, হাঁকডাক, এটা ভুলে যাওয়া সেটা ভুলে যাওয়া, স্টলের সাজ, নিজেদের সাজ, সবেতে শেষ মুহূর্তের ছোঁয়া দিয়ে নেওয়া। অবশ্য নিজেদের সাজ বলতে পরণে সেই স্কুল ড্রেস, তবু এত লোক আসবে, এই বিশেষ দিনে, তাই ওরই মাঝে সম্ভব হলে চুলের ছাঁটে সামান্য হেরফের, মাথায় শ্যাম্পু, নখে পালিশ, হাল্কা লাইনার, কড়া ডিসিপ্লিনের টীচাররাও এদিন ওটুকু নাদেখা করে দেয়। ... ...
এটা সত্যি আমি বড় বেশি কাঁদি আশা মৃত হলে কাঁদি অন্যের কান্না দেখে কাঁদি অথচ সেদিন আমার চোখে জল এলো না। তখন দিনের আলো নেভে নেভে সূর্য ছিল না তবু পাঁচ যুবকের চোখে কালো চশমা কঠিন সাদা মুখে বেপরোয়া বোহেমিয়ানা পা গুলো জাপটে আছে ময়লা নীল জিন গায়ে ঢোলা চামড়ার জ্যাকেট এক হাতে সিগারেট অন্য হাতে বিয়ারের ক্যান ... ...
"ফিরলেন? উইক এন্ডে কী করছেন?" এই অনিবার্য প্রশ্ন আসতেই আমি মনে মনে হেসে ফেলি। এক গতে বাঁধা সবকিছু। এতটুকু বৈপরীত্য নেই একটা দৃশ্যের সাথে আরেকটা দৃশ্যের। এই নিপুন অভিনয়ের পুনরাবৃত্তি আমাকে কম বয়েসের একটা পাগলামির কথা মনে করিয়ে দেয়। বক্সঅফিস-হিট হিন্দি সিনেমা দেখতে যাচ্ছি মফঃস্বলী সিনেমা হলে। পরপর তিনবার। তিনবারই আলাদা করে রিকোয়েস্ট এসেছে শুধু আমার জন্য। কারণ, আমি স্মার্ট, আমি কথা বলতে জানি। ওদের ভাষায় বললে, আমি 'অ্যাকটিং ভালোই জানি।' এসব ক্ষেত্রে কী করে অজুহাতকে প্রায়োরিটি হিসাবে সেট করতে হবে তা আমার জানা। কোন গলি দিয়ে অভিসারিকাকে নিয়ে গেলে সবচেয়ে কম লোক দেখবে, কোন চায়ের দোকানের পিছনে নিভৃত গুমটি আছে, মেলার মাঠের কোন দিকটার লাইটপোস্টের আলোটা জনস্বার্থে ভাঙা থাকে এসব নিগূঢ় তথ্য সাপ্লাই করে মফঃস্বলের প্রধান দূতী হয়ে উঠেছি তাই, এইসব গোপন অভিসারে আমি ফার্স্ট চয়েস। এ বিষয়ে অন্য ছেলেপিলেরা চেষ্টা করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারত না। ... ...
বড়রাস্তার ধারের মাচানে কয়েকজন ওম নিচ্ছে গুটিসুটি। একপাশ দিয়ে যে সরু রাস্তা বেঁকেছে ওদিকে এগোলেই গ্রাম- কাঁপতে কাঁপতে কেউ একজন বলে দিল। আমরা গলা ভিজিয়ে বাঁক নিলাম। রাস্তার কাজ হয়নি কোনোদিন অথবা হয়েছিল দায়সারা এখন খারাপ হয়ে গেছে। হোঁচট খাচ্ছি আটকে যাচ্ছি। দেখেশুনে যেতে হচ্ছে। কেউ একজন আসছে টুংটাং টুংটাং। -এখানে ধুমগাঁ কতদূরে? -ওই সাঁকো দেখছেন। ওটা পেরিয়ে বাঁক নেবেন। দুপাশে ক্ষেত। আর একটু গেলে একটা পুরনো মড়া গাছ পাবেন। তাবিজ কবজ গুপ্তরোগ চিকিৎসার চিরকুট চেটানো আছে ওর গায়ে স্থানীয় সংবাদ আছে যুদ্ধের খবর আছে নিখোঁজ আর কে কবে কী করেছিল তার বিজ্ঞাপন। গাছের পাশ দিয়ে যে আলপথ ওটা ধরে এগোলেই গাঁ। ধন্যবাদ জানিয়ে গতি বাড়ালাম। ... ...