উৎসব সংখ্যা ১৪৩২ -র সমস্ত লেখার হদিশ পাবেন এই পাতায় ... ...
নদীর পথে শহর জনপদ নদীর পথ রূদ্ধ পদে পদে অন্ধকারে ক্লান্ত পথবাসী ঘুর্ণি জলে মিশছে হতশ্বাস রাত্রি নামে এবং নামে ভোর পলির পাঁকে প্রাচীন জলযান নদীর জলে মানুষ তার শোক ভাসিয়ে দিয়ে ফিরেছে জনপদে ... ...
সারা বর্ষা গ্রীষ্ম বসন্তে কেউ দেখতে পায়না লোকটাকে। শুধু এই শীতের সকালে একটু একটু করে সূর্যের রশ্মি যখন ছড়িয়ে পড়ে সারা পাড়ায়, দরমার বেড়ার একপাশে উইধরা খয়াটে বাতার দরজাটা ঠেলে আস্তে আস্তে সে বাইরে আসে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত নানা কাপড়ে ঢাকা শরীর। ছেঁড়া শার্টের ওপর ময়লা ধূসর পাঞ্জাবি, মাফলার দিয়ে মাথা ঢেকে তার ওপর একটা শাড়ি পাগড়ির মত করে প্যাঁচানো। যা কাপড় যেখানে পেয়েছে তাই চাপিয়ে, একটা রিলিফের কম্বল সারা গায়ে জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাইরের ধারিটায় এসে রোদে বসে। পেছন পেছন ছোট ছেলেটা আসে একটা এলুমিনিয়ামের তোবড়ানো পিকদানী আর চটের আসন নিয়ে। থুতু রাস্তায় ফেলত আগে, সারাবেলার শ্লেষ্মা ধুলোয় মাখামাখি হয়ে ছোপ ছোপ পড়ে থাকত সামনের চলাফেরার রাস্তা জুড়ে। ... ...
আমার বাল্যবন্ধু দাশু হিমালয় বেড়াতে গেছে। সেখান থেকে, সেই পর্বতের চুড়ো থেকেই, আমাদের এই অনেক দূরের এবং নিচের উপদ্রুত উপত্যকায় ছবি পাঠাচ্ছে এমার্জেন্সি ডিস্প্যাচের মত। সেইরকম একটা ছবিতে মেঘের উপর যাদুকরি বেলাশেষের আলো। ওঠার রাস্তায় দাশু বলেছিল, পাহাড়ে উঠতে উঠতে মেঘের রাজ্যে ঢোকার সময় মাথায় নাকি ক্রমাগত ঘাই মেরেছে শক্তির সেই দুই লাইন, আর মনে হয়েছে মেঘ যে গাভীর মত চরে সেটা হয়তো ঐ নিরুত্তাপ, নির্বিকার আকাশের রূপক, মন্থরতার নয়। কে জানে? "দ্য অথর ইজ় ডেড।" আর আমার মনে হচ্ছিল যেন আর কিছু পড়েছি কোথায়। ... ...
আতঙ্কিত এক প্রাণী বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। অতিকায় আর এক প্রাণী গিলে খেতে আসছে। এই দুটি বাক্য লিখে তুহিন চুপচাপ। তুহিনের লেখা আটকে গেছে। একে বলে রাইটারস ব্লক। কলম সরছে না। কলম নয় ল্যাপটপে আঙুল। যা লিখছে, তা মুছে দিচ্ছে। শুধু দুটি বাক্য রয়ে গেছে। এর ভিতরে একটি রাখবে, অন্যটি মুছে দেবে? মুছে দিতে গিয়ে আবার ফুটিয়ে তুলছে তার আঙুল এবং ল্যাপটপের কী-প্যাডের ছোঁয়া। ফোন করল ভব মণ্ডল, দাদা হল? তুহিন বলল, দেরি হবে। ভব নাছোড়বান্দা, বলল, প্রেসে সব চলে গেছে। - কী গেল? - গল্প কবিতা প্রবন্ধ বুক রিভিউ। ... ...
তোমাকে বাড়ির পথে খুঁজি অনেক বেড়ার তার, অনেক জেলের গেট ঘুরে নোঙর পেতেছি এই চেনা বাসস্টপে, আছো তুমি সমান্তরাল এক গলি, তার অন্তঃপুরে? ... ...
তোমাদের গায়ে কি বারুদের গন্ধ আছে? নখের ফাঁকে রূপালি গুঁড়ো? ধুয়ে নিয়ে চাই আমি, নতুন করে বসতে চাই রঙীন কাঁচে ... ...
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যে পার্টির আসার কথা ছিল আসেনি। তাদের ফোন করে কোনো লাভ নেই। গরজটা আমার নয়। বায়নার আদ্ধেক টাকা পেয়ে গেছি। মৃগেলেকে ফোন করে জানতে পারলাম সে রাস্তায় বেরোয়ইনি। খবরে নাকি বলেছে নিম্নচাপের বৃষ্টি আসবে। স্টুডিও থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই বুঝতে পারি লোকটা আজকেও পিছন পিছন আসছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছি। রঙিন রিফ্লেক্টিভ রোদচশমা আঁটা অনুসরণকারী। খেলার মাঠে ক্রিকেটাররা যেরকম পরে। একদিন সোজা ঘুরে গিয়ে জিজ্ঞেস করব ভেবেছি - "আপনি প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর? তনয়ার বাড়ির লোক লাগিয়েছে?" কিন্তু এখন ওর দিকে সময় নষ্ট করে কাজ নেই। আসছে আসুক। নন্দন কাননে ঢুকতে পারবে না। ... ...
পাখিরাও উড়ে যায় একেবারে শূন্য হাতেই ... ...
কাজল লকলকে চোখে সুভাষের দিকে তাকায়। বলে, — মাস্টার হয়েছ! আর এটুকু জানো না? নাকি অযোগ্য তালিকার? সুভাষ প্রথমে কিছুই বুঝতে পারে না! সে কাজলের সঙ্গে বেশি কথা বাড়াতে চায় না সকাল সকাল। পুরো স্কুলের দায়িত্ব তার ঘাড়ে। মিড-ডে মিলের রান্না ঠিক করে বাচ্চাদের অ্যাটেন্ডেন্স রেডি করে তা আবার আপলোড করা। সে এসবে নজর না দিয়ে ভাবে মিড-ডে মিলের হিসেবটা করে ফেলা উচিত। সে ক্লাসরুমগুলোর দিকে চলে যায়। প্রতিটি ক্লাস থেকে টোটাল অ্যাটেন্ডেন্স জোগাড় করে। ছোট নোটবুকটায় লিখে রাখে। এবার তাকে কম্পিউটারে চাপাতে হবে টোটাল নাম্বার এবং মিড-ডে মিলের রান্নাকারীদের বলে দিতে হবে। আজ ডিমের দিন। টোটাল ৪৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী। মানে ৪৫৫টি মতো ডিমের অর্ডার যাবে। কোনও ডিম ভাঙা-ফাটা তো থাকতেই পারে। বাচ্চাদের জিনিস বাচ্চারা খাবে, কিন্তু সেখানে দু-চারজন টিচারও ভাগ বসাবেন। যাইহোক, সুভাষ এই সময়টা খুবই ব্যস্ত থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত না রান্না চেপে যায় ততক্ষণ সে আর কিছুতে মন দিতে পারে না। বাচ্চাদের খাওয়া বলে কথা। তাছাড়া শহরের মাঝখানে স্কুল। একটু এদিক ওদিক হলেই অভিভাবক থেকে পার্টির নেতা, রিপোর্টার থেকে টিকটকওয়ালা সবাই হাজির হবে। ... ...
— বিনা ইনজিশনে মিলন হবেক নাই ক্যানে! ইস্ত্রি মাছ আর পুরুষ মাছে মিলন ত জলের ভিতরে আকছার হচ্ছেই। ইখেনে বাঁধে মাছ চাষের কথা হচ্ছে। ত শুনেন! বাইরে থেকে ধরে আনা মাছগুলোকে পুখোরে মানে বাঁধে ছেড়ে দিয়া হলো। একদিন উয়ারা নিজের মনে ইদিক-উদিক খেলব্যাক, লাফালাফি করব্যাক, লিজেদের মদ্যে ভালোবাসাবাসি করব্যাক। এই ফাঁকে ওই ডাক্তারবাবু করব্যাক কি, যত্ত মাথার ঘিলু বা বিজ্জ জোগাড় করেছিল, সেগুলো একটা খল–নুড়িতে ঘষে ঘষে পেস্ট করে আবার শিশিতে ভরব্যাক। তার সঙ্গে আরও যা যা সব মিশায় সে ত আগেই বলেছি! ... ...
এখন তার স্টুডিওয় আলমারিতে সারি সারি ক্যানভাস। সিরিজ ভিত্তিক কাজ। “মাটির সোঁদা জ্যামিতি”, “রাতের মহুয়া দেহ”, “মেঠো রাস্তার চিলেকোঠা।” সে প্রতিদিন একটি করে ক্যানভাস তৈরি করে, রুটিনে বাঁধা। সকাল আটটা, জলখাবার, স্টুডিও, দুপুরে ডাল-ভাত-মাছ, আবার স্টুডিও। রাত্রে সাদা মদের সঙ্গে সামান্য বাদাম। কোনো শব্দ নেই, তাড়াহুড়ো নেই কেবল ক্যানভাসে রঙের শব্দ। আঁকতে আঁকতে তার হাত কাঁপে না, চোখও না। শুধু মাঝে মাঝে থেমে যায়। ব্রাশ থেমে যায় মাঝ-আঁকায়। টানা তিন মিনিট সে বসে থাকে একরঙা মেঝের দিকে তাকিয়ে। কি যেন মনে করার চেষ্টা করে। ঘাড়ের কাছে হাত বোলায়। মনে করতে পারে না। তারপর আবার। ... ...
লবণাক্ত দিনগুলি ঘরবন্দি থাকি, কখনও পুরানো দিনের কথা নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের মত মনের ভিতর ঘুরে ফিরে আসে। ... ...
আমি কোনও নির্ভুল পূর্বাভাস মনে করতে পারছি না। সাধারণত দেখা যায় বিজয়ীরাই সব চেয়ে বেশি বিস্মিত বোধ করেন। ১৯৬৯এ আইরিশ নাট্যকার স্যামুয়েল বেকেটকে যখন পুরস্কার প্রাপ্তির কথা জানান হয় তিনি ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠেন, “হায়, ঈশ্বর, এ কি সর্বনাশ হল!” ১৯৭১এ পাবলো নেরুদা সুইডিশ অ্যাকাডেমির গোপন সূত্র মারফত খবরটা প্রচারিত হওয়ার তিন দিন আগে সেটা জেনে গেছিলেন। পরের দিন রাতে তিনি প্যারিসে বন্ধুদের নৈশাহারে আমন্ত্রণ করলেন, যেখানে তিনি তখন চিলের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আমরা বুঝেই উঠতে পারলাম না যে আয়োজনটা কিসের জন্য যতক্ষণ না সান্ধ্য পত্রিকায় খবরটা দেখলাম। “ছাপার অক্ষরে না দেখলে আমি কোনও কিছু বিশ্বাস করি না,”, অপরাজেয় হাসির ধুম তুলে তিনি পরে আমাদের ঘটনাটা জানান। ... ...
একটি বালক প্রায় প্রতিদিনই শ্রেণীকক্ষে নানারূপ উৎপাত করিত। সহপাঠীদের জিনিস ছুঁড়িয়া, তাহাদের ঠেলা মারিয়া, চিমটি কাটিয়া তাহার কী সন্তোষ হইতো সেই জানে! সে ইদানিং বালিকাকে ধরিল। তাহার কলম ইত্যাদি কাড়িয়া লইতে লাগিল, চিমটি কাটিতে লাগিল, অবশেষে জলপানের বিরতিতে তাহাকে সহসা এমনই ধাক্কা মারিল যে, সে মুখ থুবড়াইয়া পড়িল, তাহার চশমা ভাঙিল, রক্তপাতও ঘটিল। কী মত অবস্থায় সে গৃহে ফিরিল সেই জানে! কাহাকে নালিশ করা তাহার স্বভাবে ছিলোনা, বন্ধু তাহার হয় নাই তেমন। কাজেই ঘটনার গুরুত্ব পরবর্তী পাঠদানরত শিক্ষকের কাছে ততটা পৌঁছাইলোনা কেবল দু একটি শিশুর অগোছাল বক্তব্যের মধ্য দিয়া ছাড়া। তাহাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হইল মাত্র। মাতৃহৃদয় উদ্বেল হইল। পরবর্তী বিপদের আশংকায় মাতা দৌড়াইলেন। ... ...
মেনকা তোমার মেয়েটিও জানি ছেলেপুলে কোলে নিয়ে কৈলাস ছেড়ে পৌঁছুবে দূর, বন্ধুর পথ দিয়ে। ... ...
বরানগরে আমাদের স্কুলে ইংরেজির ক্লাসে সামারি এবং প্রেসি ( precis ) লিখতে হতো। একটা এসে পড়ে তার সারাংশ লেখাটার নাম সামারি , আর তার সারাংশের নাম প্রেসি। দুশ বছর আগে জার্মানির এসেন শহরে কার্ল বেডেকার সায়েব ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে প্রথম ট্রাভেল গাইড লেখেন , ক্রমে সেটি টুরিস্টের বাইবেলে পরিণত হয়েছিল। নরম্যানডি ল্যান্ডিঙের সময়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের ফ্রান্স ও ফরাসিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ফরেন অফিসের আমলারা খানিকটা তারই মডেলে যেন একটি প্রেসি লিখলেন। দশ হাজারেরও কম শব্দের এই বইতে আছে ফ্রান্সের ইতিহাস ভূগোল রাজনীতি ভাষা প্রশাসন বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য এবং তার সঙ্গে মিশে আছে টাং ইন চিক ব্রিটিশ হিউমর। কত কপি ছাপা হয়েছিল , ক্যান্টিনে খাবারের সঙ্গে এক কপি করে বন্টিত হতো কিনা তা জানা যায় না। কিন্তু এর ঐতিহাসিক মূল্য অনস্বীকার্য। তাই হয়তো এর রিপ্রিন্ট করেছে অক্সফোরডের বোদলেয়ান লাইব্রেরি। ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত খুনিসব্যাক অঞ্চলটা ছিল জার্মানদের অধীনে। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তাই মিত্রবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়তে হয় খুনিসব্যাক শহরকে। মূলত ইংলন্ড ও রাশিয়ার বোমারু বিমান বাহিনীর প্রধান লক্ষই ছিল জার্মানের বিভিন্ন শহরের রেলপথ, বিমানবন্দর, জাহাজঘাটা, সেতু ইত্যাদির উপর পরিকল্পিতভাবে বোমা বর্ষণ করা। সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে খেপে খেপে, তিন চার বছর ধরে, ভারী বোমা বর্ষণ করা হয় কনাইপোফ দ্বীপের সেতুগুলোর উপর। এই বোমা বর্ষণের ফলে ধূলিসাৎ হয়ে যায় স্লটার ব্রিজ (b) ও ব্ল্যাকস্মিথস্ ব্রিজ (d)। নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেলসম্যানস্ ব্রিজ (c) ও গ্রিন ব্রিজ (a)। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাই ব্রিজ (f)। কিন্তু অক্ষত রয়ে যায় টিম্বার ব্রিজ (g) ও হানি ব্রিজ (e)। ... ...
শুধু অপেক্ষায় রয়েছি এখনও কারো ছায়া কুড়িয়ে নিতে অন্যজন আসেনা কখনও। ... ...
তাতে কিছু যায়-আসে না। মাচ অ্যাডো না পড়েও এম-এন-সির ম্যানেজারি দিব্যি করা যায়। ওগুলো আসলে শিং। শিং জানেন তো? চতুষ্পদের নয়, দ্বিপদের। শৃঙ্গী চতুষ্পদের পিঠে একটা কুঁজ থাকে। তীক্ষ্ণ ধারালো শৃঙ্গদ্বয় উপেক্ষা করে যে জড়িয়ে ধরতে পারে সেই পিঠের কুঁজ, তার পুরস্কার অন্য আর এক জোড়া! দ্বিপদ শৃঙ্গীর আহরিত জোড়া কুঁজ যদি কেউ চুরি করতে যায় তার শাস্তি জানেন? ... ...