ছবি: রমিত
ইংল্যান্ডের জীবনে এখানেই আমি বেশিদিন কাজ করেছি। ইউনিভ্যাক ছেড়ে আই সি এ-লে যোগ দেওয়ার প্রায় দেড় বছর পর এক সুইস কন্সালটেন্সি কোম্পানির আমন্ত্রণে আমি আবাদান ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজিতে (A I T) কাজ নিয়ে ইরানে চলে যাই। (সে কথা পরে বলছি) ইরানে এক বছর কাটিয়ে আমি আবার আই সি এলে যোগ দিই।
আই সি এ-লে বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন পদে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন দায়িত্বে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। কখনো হ্যারো, কখনো সেন্ট্রাল লন্ডন, কখনো সাউথ লন্ডন, ব্রাকনেল, রেডিং, স্টিভেনেজ, লেছঅ্যার্থ গার্ডেন সিটি। তবে এর মধ্যে সাউথ লন্ডনে পাটনি ব্রিজ হেড অফিসে ও ব্রাকনেলে ডেভেলপমেন্ট সেন্টারেই সময় কেটেছে বেশি।
আশির দশকে আই সি এল আধুনিক ল্যাপটপের পুর্বসূরী এক মাইক্রো কম্পিউটার তৈরি করে।
সেই মেশিন ইউরোপে পরিচয় করার জন্য আই সি এল একটি ছোট দল গঠন করে। সেই দলে আমি ছিলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলো। আমি কখনো সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড যাইনি। সুযোগ পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলাম। এই দেশগুলো ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো থেকে আলাদা। এই সব দেশের নাগরিকদের তুলনামূলকভাবে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বেশি ও জীবনযাত্রার মান উন্নত। আমরা প্রধানত রাজধানী শহরেই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতাম; স্টকহোম, হেলসিঙ্কি, কোপেনহাগেন। যেখানে যেতাম সেখানে যে কোম্পানি আমাদের আমন্ত্রণ করত তারা আমাদের একদিন ডিনারে নিমন্ত্রণ করত। মনে পড়ছে না কোথায়, স্টকহোম না হেলসিঙ্কি, ডিনার টেবিলে এক নতুন অভিজ্ঞতা হল। মস্ত বড় ডিনার টেবিল; আমরা ক’জন ছাড়া ডিনার টেবিলে কোম্পানির পদস্থ অফিসার ও কর্মীরা। তারা সবাই সস্ত্রীক আমন্ত্রিত। আসনের ব্যবস্থা ছিল – পুরুষ, মহিলা, পুরুষ, মহিলা অনুসারে। আনুষ্ঠানিক ভাবে টেবিল সাজানো; খাদ্য পরিবেশনে সুন্দর পোশাক পরিহিত পুরুষ ও মহিলা। পরিবেশন শুরু হল। আমাকে এক পরিসেবিকা আমার প্লেটে খাবার দিতে এল। আমি তাকে ‘না’ করে আমার পাশের মহিলা দেখিয়ে বললাম, “লেডিস ফার্স্ট”। পরিসেবিকা একটু হেসে অতি বিনয়ে আমাকে বলল, “না স্যর, আমি আপনাকেই আগে পরিবেশন করব।” তারপরে বুঝিয়ে দিল পরিবেশনকারী যদি পুরুষ হয় তবে সে আগে মহিলাকে দেবে, আর পরিবেশনকারী যদি মহিলা হয় তবে সে আগে পুরুষকে দেবে। শিখলাম – এক এক দেশে এক এক রীতি। আমি ডিনারে মন দিলাম।
প্রদর্শনীর ফাঁকে ফাঁকে শহর দেখতে বেরিয়ে পড়তাম। সন্ধ্যা বেলায় দুচোখ ভরে শহর দেখতাম। ছোট বেলায় ‘লিটল মারমেডের’ নাম শুনেছিলাম। কোপেনহাগেনে কোনদিন আসব ভাবিনি। এলাম যখন তখন ‘লিটল মারমেড’ না দেখে ফিরে যাব? ম্যাপ নিয়ে খুঁজে খুঁজে গেলাম দেখতে। সমুদ্রের ধারে একটা বড় পাথরের উপর কালো পাথরের ‘লিটল মারমেড’, ছোট্ট মৎসকন্যা।
জায়গাটা প্রায় নির্জন। দুএকজন পর্যটক ছাড়া বিশেষ কেউ নেই। আমি সমুদ্রসৈকতে কিছুক্ষণ বসে পরিবেশটা উপভোগ করতে থাকলাম।
স্টকহোম বল্টিক সাগরের উপর একটি সুন্দর শহর; চোদ্দটি ছোট ছোট দ্বীপ দিয়ে গড়া। এই দ্বীপগুলোকে যুক্ত করে রেখেছে পঞ্চাশটি সেতু। সমুদ্রতীরে জল থেকে উঠে এসেছে বড় বড় প্রাসাদততুল্য অট্টালিকা। দেখে আমার খুব অবাক লাগছিল। স্টকহোমের আর এক নাম ‘Venice of the North’ বা ‘উত্তরের ভেনিস’। এখানেই আছে বিখ্যাত নোবেল মিউজিয়াম আর, সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা, ঐতিহাসিক জাহাজ ‘ভাসা’ মিউজিয়াম।
স্টকহোম
স্টকহোম, কোপেনহাগেন, হেলসিঙ্কিতে প্রদর্শনী শেষ করে লন্ডনে ফিরে এলাম। এই সফরটা আমি খুব উপভোগ করেছিলাম।
এর আগে এক সময় আমি আই সি এল-র সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ডেটাস্কিলে কাজ করেছিলাম। ডেটাস্কিলের একটা হোটেল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়ার ছিল। আমি সেই সিস্টেমের প্রোজেক্ট ম্যানেজার ছিলাম। আমার দায়িত্বে ছিল এশিয়ান দেশগুলো। আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল হায়াত গ্রুপ অফ হোটেলস। হায়াত হোটেল পৃথিবী সর্বত্র আছে। সিঙ্গাপুর ও হংকং-এ হায়াত হোটেলে আমাদের সিস্টেম প্রথম চালু হয়। আমাকে তাই মাঝে মাঝে এই দেশগুলোতে যেতে হত।
একবার সিঙ্গাপুর হায়াত হোটেলে আমাদের সিস্টেম চালু করতে ও ত্বত্তাবধান করতে আমাকে বেশ কয়েক মাস সিঙ্গাপুরে থাকতে হয়েছিল। সিঙ্গাপুর থেকে আমাকে হংকং ও সিডনি যেতে হত। তখন অনু একা দুটি বালক পুত্র নিয়ে নিপুণভাবে সংসার চালিয়েছিল। বহুদিন পরে লন্ডনে যেদিন ফিরলাম সেদিন অনু সব ঘরগুলো ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছিল। ফুল আর ফুল, সাদর অভ্যর্থনার পরিবেশ, কেমন একটা পবিত্র উৎসব-উৎসব ভাব। আমার বেশ ভাল লাগছিল, মন ভরে উঠেছিল। অনুর খুশী-খুশী মুখ। একসময় একান্তে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, “আর কোথাও যেও না। আমার ভাল লাগে না”। সে এক অপূর্ব অনুভূতি।
আই সি এল তখন বিশাল এক রাজ্যের মত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যেমন প্রায় পৃথিবীর সর্বত্র উপনিবেশ ছিল তেমনি সব দেশে ছিল আই সি এল-র উপস্থিতি। এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, কানাডার বিভিন্ন স্থানে আই সি এল-র অফিস ছিল। ভারতবর্ষ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম উপনিবেশ, সুতরাং ভারতবর্ষে যে আই সি এল-র এক বিরাট কোম্পানি থাকবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। যদিও স্বাধীনোত্তর ভারতে তথা সারা পৃথিবীতে আমেরিকান কম্পিউটার কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ছিল সব্চয়ে বেশি। বিশেষ করে আই বি এম ছিল পৃথিবীর এক নম্বর কম্পিউটার কোম্পানি। ভারতবর্ষেও তাই।
তবুও আই সি এল-র ব্যবসা ভারতবর্ষে ভালই ছিল। প্রায় সব প্রদেশেই এদের অফিস ছিল, বড় বড় শহরে তো বটেই। তখন ভারতীয় আই সি এল-র প্রধান ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যর গভর্ণর জেনারালের মত একজন ইংরেজ – লন্ডনের কোন উচ্চপদস্থ একজিকিউটিভ। সত্তর দশকে এই ছবিটার হঠাৎ পরিবর্তন হল। ভারত সরকার নির্দেশ দিল সমস্ত বিদেশী কোম্পানিগুলোকে এদেশে ব্যবসা করতে হলে তাদের ভারতীয়করণ করতে হবে, অর্থাৎ তাদের কোম্পানিতে অর্ধশতাংশের বেশি ভারতীয় অংশীদার থাকতে হবে। অনেক বিদেশী কোম্পানি এই শর্তে রাজি হল না। অনেকেই ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে গেল। যারা চলে গেল তাদের মধ্যে অন্যতম আই বি এম – পৃথিবীর বিখ্যাত কম্পিউটার কোম্পানি।
আই বি এম-মুক্ত ভারতবর্ষ হয়ে গেল কম্পিউটার বাজারের খোলা মাঠ। আই সি এল এই শর্তে রাজী হয়ে অর্ধ শতাংশের বেশি ভারতীয় অংশীদারদের বিক্রি করে দিল। ইংরেজ অফিসাররা ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এল। ভারতে আই সি এল-র প্রধান প্রতিদ্বন্দী ছিল আই বি এম। আই বি এম-র অবর্তমানে আই সি এল-র ব্যবসা আরও সহজ হয়ে উঠল। কিন্তু ভারত সরকারের কম্পিউটার বিষয়ক পলিসি ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল ও আদিম। দেশে কোন কম্পিউটার শিল্প নেই বা কোথাও কোন উদ্যোগ নেই। বিদেশ থেকে কম্পিউটার আমদানি করলে প্রচুর কর দিতে হত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমতি পাওয়া যেত না। একমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা আনুষঙ্গিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি পাওয়া যেত।
ভারতবর্ষে আমার আই সি এল-কালে মনে আছে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আমরা মধ্য শক্তি সম্পন্ন ২৯ টি কম্পিউটার বিক্রি করেছিলাম স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এস বি আই সেগুলিকে নিতে পারেনি। সারা দেশ জুড়ে ব্যাঙ্কে ধর্মঘট শুরু হয়েছিল। ট্রেড ইউনিয়ন কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেয় নি।
তখনো আই সি এল পুরোপুরি ভারতীয়করণ হয়নি। আই সি এল-স্বার্থ লন্ডনের হেড অফিসই দেখাশুনা করত। ভারতীয়করণের পর একদিন ভারতবর্ষের আই সি এল স্বাধীন হল। ম্যানেজমেন্ট সব ভারতীয়, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এক পার্সী ইঞ্জিনীয়ার, প্রেম শিবদাসানী। কিন্তু লন্ডন আই সি এল তখনও ভারতীয় ব্যবসায়ের বড় অংশীদার এবং ভারতীয় আই সি এল দেখাশুনা করে। লন্ডনে আই সি এল-র ইন্ডিয়া অফিসের ডাইরেক্টর মিঃ জ্যাকসন। ইন্ডিয়া অফিস বা ইন্ডিয়া ট্রেডিং-র ম্যানেজার অমলেন্দু বিশ্বাস, আমি। এই পদের ক্ষমতা বেশি ছিল না কিন্তু মর্যাদা ছিল অনেক। সেই সঙ্গে ছিল অনেক দায়িত্ব ও কাজ। দুই দেশের ব্যবসায়িক আদান প্রদান এই অফিস তথা আমার মাধ্যমেই হত।
সেই সময়ে ভারত সরকারের কিছু ক্যাবিনেট লেভেলের মন্ত্রী ও সেক্রেটারী স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গের সান্নিধ্যে এসেছিলাম ও তাদের কাজকর্মের পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ভারতের প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্তারা বা সরকারের উঁচু মহলের মন্ত্রী ও আমলারা প্রায়ই লন্ডনে আই সি এল-এ আপ্যায়িত হত। আর সেগুলোর দায়িত্ব অবধারিতভাবে আমার উপরেই আসত। এমন একটা সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করি।
আই সি এল-র হেড অফিস টেমসের দুই তীরে পাটনি ব্রিজের দুই প্রান্তে দুটি বিশাল বাড়িতে। তারই একটাতে আমার অফিস। ভারত সরকারের এক উচ্চস্থানীয় আমলা, ডঃ কুমার, লন্ডনে এসেছেন আই সি এল-র ডাইরেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে। ভারত সরকার সমস্ত দেশ জুড়ে শুধু রেলওয়ের জন্য একটা কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরী করতে চায়। পৃথিবীর সব খ্যাতনামা কম্পিউটার কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ করেছে সেই বৃহৎ প্রজেক্টের রূপায়ণ করতে। ডঃ কুমার ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে পৃথিবী সফরে বেরিয়েছেন সেই সব কোম্পানিগুলো পরিদক্ষণ করে যোগ্য কোম্পানি নির্বাচন করতে। গুরু দায়িত্ব – বহু কোটি টাকার এই মেগা-প্রজেক্ট বাস্তবায়িত করবে যারা তাদের নির্বাচন কমিটির প্রধান ডঃ কুমার।
আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটা দেশ ঘুরে লন্ডনে এসেছেন ডঃ কুমার। এটাই তাঁর শেষ গন্তব্যস্থান, আই সি এল। আমার অফিসে এসে আমাকে দেখে ডঃ কুমার একটু অবাক হয়েছিলেন, মুখের ভাব দেখে বুঝেছিলাম, বোধহয় কোনো ভারতীয়কে এই পদে তিনি আশা করেন নি। পরে মনে হয়েছিল তিনি বোধহয় একটু খুশীই হয়েছিলেন। যথারীতি আমি সকলের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছিলাম। সেই লাঞ্চে আমার ডাইরেক্টর জাকসন সাহেব ও আরো কয়েকজন আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে পরে। দিনটা খুব মনোরম ছিল, সূর্য আলো ভরা সুন্দর দিন। আমরা পাটনি ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি।
যেতে যেতে বললাম আমি একটা ফ্রেঞ্চ রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছি। বলা বাহুল্য আমাদের কথাবার্তা সব ইংরেজীতেই হচ্ছিল। ফ্রেঞ্চ রেস্টুরেন্ট শুনে কুমার সাহেব হিন্দিতে বললেন, আমি হিন্দি বুঝতে পারি কিনা। আমি বললাম, আমি বুঝতে পারি কিন্তু ভাল বলতে পারি না। তিনি বললেন, তিনি অনেকদিন ভারত ছেড়েছেন। বেরিয়ে এসে শুধু বিদেশী খাবারই খাচ্ছেন। ভারতীয় খানা হলে খুশী হতেন। হিন্দিতেই বললেন যাতে অন্য কেউ বুঝতে না পারে। আমি হেসে বললাম, ঠিক আছে, তাই হবে। সেক্রেটারিকে বললাম, তুমি অফিসে গিয়ে ফ্রেঞ্চ রেস্টুরেন্টের লাঞ্চ ক্যানসেল করে দাও। (সে সময়ে কোন মোবাইল ফোন ছিল না।) সৌভাগ্যবশতঃ আমার এক প্রিয় ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ছিল পাটনি ব্রীজের উল্টো প্রান্তে। আমারা সকলে সেই দিকে চলতে শুরু করলাম। অনেক কথা হল কুমার সাহেবের সঙ্গে। বিদায় নেবার আগে আমাকে আন্তরিকতার সঙ্গে বললেন দেশে গেলে অবশ্যই যেন ওঁর সঙ্গে দেখা করি।
কয়েক মাস পরে আমি দেশে গেলাম। ভারতবর্ষ ছাড়ার পর অনেক বার দেশে এসেছি কিন্তু এমনভাবে কেউ আমাকে অভ্যর্থনা করেনি। সে এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। নতুন রূপে নতুন পরিচয়ে এই প্রথম আমি ভারতের মাটিতে পা দিলাম। বোম্বে এয়ারপোর্টে এসে প্লেন থামল। আমি নামলাম। একজন এসে জিগ্যেস করল আমি অমল বিশ্বাস কিনা। (লন্ডনে আসার পর আমার নামটা কর্মজীবনে অমল বিশ্বাস হয়ে যায়।) আমি সায় দিলে সে বলল, “দিন, স্যার, আপনার ব্যাগটা দিন।” আমি কিছু বলার আগেই সে প্রায় জোর করেই আমার হাত থেকে আমার ব্রিফ কেসটা নিয়ে নিল। একে আই সি এল ইন্ডিয়া পাঠিয়েছে। অভ্যর্থনার প্রথম নজির। এর পর আমাকে আর কিছু করতে হয় নি। সে-ই পাসপোর্ট কনট্রোল, কাস্টমস ইত্যাদি ঝামেলা মিটিয়ে আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিল। বোম্বের বিখ্যাত তাজ হোটেলে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল।
আই সি এল ইন্ডিয়ার ম্যানেজমেন্ট লেভেলের মানুষরা মাইনে ছাড়াও অনেক রকম সুযোগ সুবিধা পেত। তাদের মধ্যে অন্যতম একটা ছিল কোন একটা বড় ক্লাবের সদস্য হওয়া। বম্বেতে বম্বে জিমখানা ক্লাব, দিল্লীতে দিল্লী জিমখানা ক্লাব বা কলকাতায় টালিগঞ্জ ক্লাব। সেদিন সন্ধ্যায় কোম্পানির মার্কেটিং ডাইরেক্টর আমাকে বম্বে জিমখানা ক্লাবে নিমন্ত্রণ করে উচ্চপদস্থ কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। মিসেস সালডানা, সেলস ম্যানেজার, ইউরোপিয়ান রীতিতে আমার চিবুকে চিবুক ছুঁয়ে সম্বর্ধনা করল। এই ক্লাবগুলো বৃটিশদের সৃষ্টি, তাদের অফিসারদের বিনোদনের জন্য। এককালে কোন ভারতীয়ের এই ক্লাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এদের আদব কায়দা, নিয়ম কানুন, পোষাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি সব ইংল্যান্ডের অভিজাত ইংরেজ ক্লাবগুলির মত। স্বাধীনতার পর এই ক্লাবগুলিও ভারতীয় তত্বাবধানে চলে আসে। কিন্তু স্বদেশী হয়েও ইংরেজীয়ানা পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। পোষাক পরিচ্ছদে ও আচার ব্যবহারের অনেক রীতি ও বিধি-নিষেধ ইংরেজ আমলের মতই আছে। সেই সন্ধ্যায় অন্য এক ভারতীয় সমাজের সঙ্গে আমার পরিচয় হল যা আমার অভিজ্ঞতায় ছিল না।
বম্বেতে দুদিন কাটিয়ে দিল্লীতে এলাম। দিল্লীর অভ্যর্থনাও বম্বের মতই, কেউ কম যায় না। কুমার সাহেবকে কথা দিয়েছিলাম দিল্লী এলে ওঁর সঙ্গে দেখা করব। সুতরাং একদিন দিল্লীর শাখা প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে কুমার সাহেবের অফিসে গেলাম কোন রকম অ্যাপয়েন্টমেন্ট না করেই, প্রায় অতর্কিতে। কুমার সাহেবের অফিসের সামনে একটা ঘর, সেখানে ওঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকারী লোকেরা অপেক্ষমান। দেখলাম প্রায় পঁচিশ–ত্রিশ জন বসে আছে। দেখে মুষড়ে পড়লাম। এদের পরে যদি আমাদের ডাক পড়ে তাহলে প্রায় তিন চার ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
আমার সহকারীকে বললাম, চলুন, ফিরে যাই। এতক্ষণ বসে থাকতে পারব না। তিনি বললেন, আপনি আপনার কার্ডটা পাঠিয়ে দিন। দেখুন কি হয়। আমার কার্ড দিলাম ওঁর সেক্রেটারির হাতে। সেক্রেটারি কার্ড দিয়ে ফিরে এসে বলল, আসুন, ভিতরে আসুন। আমি অবাক। এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে হল না। কুমার সাহেব সহাস্য মুখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। “কবে এসেছেন। একটা খবর দেন নি কেন?” দু একটা ব্যবসায়িক কথা বার্তার পর বললেন, “কোথায় উঠেছেন।“ আমি বললাম, “তাজ প্যালেস হোটেলে।“ উনি বললেন, “আজ সন্ধ্যায় কি করছেন।” সন্ধ্যাটা আমি খালি রেখেছিলাম। বললাম, “কিছু না।” উনি বললেন, “ঠিক আছে। আমি ফোন করব।”
সে দিনই কুমার সাহেবের ফোন পেলাম। বললেন, “চলে আসুন হায়াত হোটেলে। আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে যা অফিসে বলতে পারতাম না।”
যথা সময়ে হায়াত হোটেলে গিয়ে হাজির হলাম। লাউঞ্জে কুমার সাহেব আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে অভ্যর্থনা করলেন। বললেন, “কি ড্রিঙ্ক করবেন?” আমি বললাম,” আপনি যা করছেন আমিও তাই।“ উনি বললেন উনি কোন অ্যালকোহল ড্রিঙ্ক করেন না। অতএব দুজনে কফি নিয়ে বসলাম। দু’একটি সৌজন্যমুলক কথা বার্তার পর উনি শুরু করলেন। সেই সব কথার তাৎপর্য সংক্ষেপে এই রকম।
কুমার সাহেব কিছুদিনের মধ্যেই অবসর নেবেন। অবসর নেবার আগেই তিনি একটা কম্পিউটার সংক্রান্ত ব্যবসায় শুরু করতে চান। অনেক দিন ধরেই সেই ব্যবসায়ের নেতৃত্ব ও পরিচালনা করার মত একজন দক্ষ ও সক্ষম ব্যক্তির খোঁজ করছিলেন। তিনি মনে করেন আমি সেই ব্যক্তি। আই বি এম দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অনেক বিদেশী কোম্পানি তাদের গরিষ্ঠ অংশ ভারতীয় অংশীদারদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কম্পিউটার সংক্রান্ত জিনিষপত্রের চাহিদা বাড়ছে কিন্তু ভারতে সে সব দ্রব্যের উৎপাদন হচ্ছে না। বিদেশী দ্রব্যের উপর আমদানী কর অনেক বেশী, কোন কোন বস্তুর উপর আমদানী কর একশত অংশেরও বেশী। এবং আমদানী করার জন্য বিশেষ লাইসেন্স প্রয়োজন। এমন কি ভারতেও এ সব উৎপাদনের ব্যবসা করতে চাইলেও লাইসেন্সের প্রয়োজন। সেটা ‘লাইসেন্স রাজের’ যুগ। উন্নত টেকনোলজি বা প্রযুক্তি বিষয়ক বাজার প্রায় খোলা মাঠ। সরকারি নেক নজরে আছে এমন ব্যাবসায়ীদের জন্য সে এক স্বর্ণযুগ।
কুমার সাহেব বললেন ক্যাপিটাল জোগাড় করতে তাঁর কোন অসুবিধা হবে না। আর লাইসেন্স পেতেও খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আপাতত তাঁর দিল্লীর বাড়ীর কিছু অংশ তিনি ছেড়ে দেবেন কোম্পানির অফিসের জন্য। এখন আমি যদি রাজী হই তবে তিনি পাকাপাকি কথাবার্তা শুরু করবেন।
আমি কি স্বপ্ন দেখছি। এ কি প্রলোভন না মরিচীকা!
এত কথা বলার পর কুমার সাহেব থামলেন। আমিও অনেক ক্ষণ চুপ করে ছিলাম। এত তথ্য হজম করতে সময় লাগল। এর ভাল-মন্দ খতিয়ে দেখার মত মানসিক অবস্থা তখন আমার ছিল না। “আর কতদূরে নিয়ে যাবে মোরে, হে সুন্দরী।” মাথার ভিতরে কত রকমের চিন্তা একসঙ্গে এসে ঘুরপাক খেতে লাগল। তার মধ্যে প্রবল যে দুটো ছিল তা হল ভয় আর অনিশ্চয়তা। কি হবে আমি যদি কুমার সাহেবের ইচ্ছা ও আশা রূপায়িত করতে না পারি। কি হবে আমি যদি অকৃতকার্য হই। আমার মধ্যে এখনও কি সেই উচ্চাশার অদম্য আকাংক্ষা আছে? এখনো আছে কি সেই আগুন যা আমাকে অজানা ভবিষ্যতের সন্ধানে দেশ ছাড়া করেছিল?
তখন কিছু ছিল না তাই কিছু হারাবার ভয় ছিল না। এখন অনেক কিছু পেয়েছি, স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে, সুতরাং হারাবার ভয় আছে। আবার একটা নতুন যুদ্ধ শুরু করার মত মানসিক প্রস্তুতি আছে কি? যদি পিছলে পড়ি তবে অনু, বুবাই, গৌতম কি আমাকে ক্ষমা করবে? সারি দিয়ে নেতিবাচক চিন্তাগুলো ভীড় করে এলো। অন্যদিকে ইতিবাচক ছবিটা উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মত হাতছানি দিতে থাকল। হয়ত ভবিষ্যতে আমি ভারতবর্ষের এক বিখ্যাত সফটয়ার হাউসের বা কম্পিউটার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। অথবা এমন কোনো সংস্থার কর্ণধার যেখানে আমার দেশবাসীর হাজার হাজার যুবক যুবতীরা তাদের ভবিষ্যত জীবন খুঁজে পেয়েছে ।
আমি কুমার সাহেবকে বললাম, আমাকে ক’দিন সময় দিন। আমি আপনাকে জানাব। ভারত সফর শেষ করে ইংল্যান্ড ফিরে নানা কাজের মধ্যে ডুবে গেলাম। কুমার সাহেবকে আর জানানো হয়নি আমার সিদ্ধান্তের কথা। সে অপরাধবোধ এখনো আমাকে যন্ত্রণা দেয়।
কিছুকাল পরে আই সি এল পুরো কোম্পানিটা ভারতীয় মালিকদের হাতে তুলে দিল। লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিসের ডাইরেক্টর জ্যাকসন সাহেব অন্য ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব নিয়ে চলে গেল। আমার আর কাজ নেই। আই সি এল মস্ত বড় কোম্পানি --- এর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, বিভিন্ন শাখা প্রশাখা। এই ডিপার্টমেন্ট এবং শাখা প্রশাখাগুলি স্বাধীন, নিজেরা নিজেদের প্রয়োজন মত কর্মী নিয়োগ করে। কোন পদ খালি হলে আই সি এল-র নিজস্ব নিউজ লেটার বা সংবাদপত্রে সেটা বিজ্ঞাপিত হয়। আই সি এল-এ কর্মীরা যে কেউ সেই পদে আবেদন করতে পারে। আমাদের পারসোনেল বা হিউম্যান রিসোরসেস (Personnel or Human Resources Department) ডিপার্টমেন্ট ইতিমধ্যে আমার অভিজ্ঞতা সকল শাখা প্রশাখাকে জানিয়ে দিয়েছিল। আমি ফোন পেতে শুরু করলাম। দু তিনটি ডিপার্টমেন্ট আগ্রহ দেখাল।
প্রেম শিবদাসানি আই সি এল ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। ভারতবর্ষে নতুন কোম্পানির নাম ICIM বা ইকিম। প্রেম শেষ বারের মত লন্ডনে এল – নতুন দায়িত্ব বুঝে নিতে এবং হিসেব নিকেশ দেনা পাওনা মিটিয়ে নিতে। একদিন প্রেম শিবদাসানির সঙ্গে আমাদের সভা হল। সভা শেষে প্রেম আমাকে একান্তে ডেকে বলল,
--“ মিঃ বিসওয়াস, এবার তুমি কি করবে ঠিক করেছ?“
--“ আমি এখনো কিছু মনস্থ করিনি। তবে বোধ হয় আই সি এল-ই থাকব। দু একটা অফার পেয়েছি।“
--- “ দেখো, ইন্ডিয়াতে আমরা নতুন করে কোম্পানিটা তৈরি করছি। তোমাদের মত লোকের আমার খুব প্রয়োজন। ইন্ডিয়াতে তোমার মত কম্পিউটারে অভিজ্ঞ মানুষের অভাব। তুমি যদি আসতে চাও তবে আমি তোমাকে ভাল পজিশন দিতে পারি।“
লোভনীয় প্রস্তাব। আমার একটা মন দেশে ফিরে যেতে উৎসুক। অন্য মন ইংল্যান্ডের স্বচ্ছন্দ প্রতিষ্ঠিত জীবন ছেড়ে যেতে নারাজ। তবু কোন সম্ভাবনাকেই আমি প্রথম উচ্চারণেই ‘না’ করিনা। আমি একটু সময় নিলাম, তারপর জানতে চাইলাম কি ধরণের বেতন ও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। উত্তরে প্রেম যা বলল তা এই রকম।
সেযুগে কোন ভারতীয়, সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার কর্মীকে প্রধান মন্ত্রীর থেকে বেশি বেতন দেওয়া যেত না। আক্ষরিক হিসাবে অর্থ মূল্যে প্রধান মন্ত্রীর বেতন তুচ্ছ, তা সে যত বেশিই বা কম হোক। ইংল্যান্ডেও প্রধান মন্ত্রীর বেতন তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বৃটেনে অনেক বেসরকারি সংস্থার সি ই ও বা ম্যানেজিং ডাইরেক্টর প্রধান মন্ত্রীর থেকে বহুগুণ বেশী বেতন পায়। এদেশে ঊর্ধতন বেতনের কোন সীমা বাঁধা নেই। প্রেম বলল যে সে আমাকে বেতন হিসাবে বেশি দিতে পারবে না তবে অন্যান্য অনেক সুযোগ সুবিধা দিতে পারবে। যেমন, বম্বে বা পুনাতে ভালো বাসস্থান, ছেলেদের ইন্টারনাশানাল স্কুলে পড়াশুনার খরচ, গাড়ী, মিসেসকে সাহায্য করার জন্য হাউসমেড, জিমখানা ক্লাবের মেম্বারশিপ। আমি বলেছিলাম, আমি মাকে দেখতে কলকাতা যাব মাঝে মাঝে। তার জন্য খরচ আছে। প্রেম বলেছিল, সারা ভারতবর্ষে সব বড় শহরেই ইকিম-এর অফিস আছে, কলকাতাতেও। আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন কলকাতা সফরে গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করে আসতে পারি। অর্থাৎ স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন তা পেতে আমাকে বেতনের টাকায় প্রায় হাতই দিতে হবে না। এ তো স্বপ্ন: এর জন্যই তো এই অভিযান, এতো দিনের অপেক্ষা!
বাড়ীতে এসে অনুকে সব বললাম। অনু যেতে রাজী নয়। দেশ মানে অনুর কাছে বম্বে বা পুনা নয়। ওর কাছে দেশ মানে কলকাতা। তাছাড়া আমার মনে একটা দ্বিধা দেখা দিল এবং সেটাই বুঝি সবচেয়ে বড় অন্তরায়। এতকাল আমি লন্ডন থেকে ইন্ডিয়া ম্যানেজার হিসেবে আই সি এল (অধুনা ইকিম) দেখাশুনা করেছি। ভারতবর্ষ থেকে সম্মানিত কেউ আই সি এল পরিদর্শনে এলে আমি তাদের অভ্যর্থনা করেছি। তাদের সঙ্গে আমার এক বিশেষ পরিচিতি স্থাপিত হয়েছিল। প্রেমের সঙ্গে আমার সম্পর্ক তখন এক রকমের ছিল। প্রেম নিশ্চয় আমাকে অন্য চোখে দেখত। দেশে ওর কোম্পানিতে কাজ নিয়ে গেলে ও তখন আমার ‘বস’ হবে। তখন ও আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে তা আমি জানিনা। সে অনিশ্চয়তা আমাকে সন্দিহান করে তুলল। যদি কোন কারণে আমি ওর ব্যবহারে আঘাত পাই তাহলে আমি তা সহ্য করতে পারব না। যদি আমি ওর আশানুরূপ কাজ করতে না পারি তাহলে কি হবে? অনিশ্চয়তা, অনিশ্চয়তা!
পরের দিন আমি প্রেমকে অজস্র ধন্যবাদ দিয়ে ওর প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করলাম।
মাস খানেক পরে আই সি এল-র ব্রাকনেল অফিস থেকে আমি একটা অফার পেলাম। কাজটা আই সি এল-র এক ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টে। ব্রাকনেল আমার হ্যারোর বাড়ী থেকে চল্লিশ মাইলের উপর। অফিস বলল এই বাড়ী বিক্রি করে ব্রাকনেলে বাড়ী কিনে চলে এস। জানি অনু কিছুতেই রাজী হবে না। আমার খুব ইচ্ছা নেই। আবার আই সি এল ছাড়তেও ইচ্ছা করছে না। আর কাজটাও ভাল ও গুরুত্বপূর্ণ। আর না ভেবে কাজটা নিয়ে নিলাম। হ্যারো থেকেই গাড়ী নিয়ে যাতায়াত শুরু করলাম।
ক্রমশঃ