এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন - পর্ব ২১

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩০ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত 



    সল্ট লেক পর্ব ৪

    মুকুলবাবু আমাকে তাঁর এক সহকর্মী উকিল, তরুণজ্যোতি ব্যানার্জীকে কেসটা দিলেন। তরুণ বাবুই কেসটা করতেন। কিন্তু কোর্টে যখন শুনানী হত তখন তরুণবাবুর সঙ্গে মুকুলবাবুকেও ফীজ দিতে হত। ভারতবর্ষের Judicial System বা আইন পরিষেবা অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলে। কাজ প্রায় হয় না বললেই চলে। শুনলাম কোন কোন সিভিল বা দেওয়ানী মামলার নিষ্পত্তি হতে কুড়ি পঁচিশ বছর লাগে। আমার মামলা যখন কোর্টে উঠে তখন কোন এক অজুহাতে অন্যপক্ষ অনুপস্থিত থাকে ও সময় নেয়। পরের শুনানির দিন পড়ে তিন থেকে ছ’মাস পরে। এই ভাবে যদি চলে তাহলে আমার জীবদ্দশায় এ মামলা শেষ হবে না। আর যতদিন মামলা চলবে ততদিন আমি আমার অংশ বিক্রি করতে পারব না।

    খোকন তাই চায়। আমার লন্ডনের ফিরে যাওয়ার টিকিট দুবার বাতিল করতে হল। আমি অনির্দিষ্ট কালের জন্য এখানে থাকতে পারব না। আমাকে অন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তরুণ বাবু পরামর্শ দিলেন যে আমি একজনকে পাওয়ার-অফ-এটর্নি দিয়ে লন্ডনে ফিরে যেতে পারি। উনি তার সাহায্যে এখানে মামলা চালাতে পারবেন। হাঁদির এক ছোটবেলার বন্ধু বিপ্লব গুহ থাকে বারাসাতে। বিপ্লব তরুণজ্যোতিকে খুব ভালভাবে চেনে– ওদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বিপ্লব অতি ভদ্র ও বিনয়ী। আমি যেহেতু হাঁদির দাদা, সেহেতু তারও দাদা। আমার সঙ্গে শালীন ব্যবহার করে; ও সাহায্য করতে আগ্রহী। বিপ্লবকে পাওয়ার-অফ-এটর্নি দিয়ে আমি লন্ডনে চলে এলাম। ও-ই আমার হয়ে কাগজ পত্রে সই করবে, হাজিরা দেবে এবং উকিলদের ফীজ ও মামলার খরচ দেবে। আমি যখন দেশে যাব তখন ওকে টাকাটা দিয়ে দেব বা হাঁদির মারফত পাঠিয়ে দেব।

    বারাসাত কোর্টে মামলা অতি মন্থর গতিতে চলছে। আমি তরুণজ্যোতিকে নিয়মিত ফোন করি। কোন আশার আলো দেখি না। বছর ঘুরে যায়, তরুণজ্যতি একদিন বললেন আমাকে সাক্ষী দিতে হবে। আমি দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। অর্জুনকে বললাম আমাদের জন্য একটা গেস্ট হাউস দেখে রাখতে। মনে মনে আশঙ্কা ছিল গত বছরের মত আবার যদি খোকন গেটে তালা দিয়ে রাখে তবে তো আবার হয়রান হতে হবে। বাড়ির খুব নিকটে একটা গেস্ট হাউসে আমি আর অনু উঠলাম। অর্জুনকে বললাম দেখে এস আমাদের বাড়িতে তালা দেওয়া আছে কিনা। অর্জুন এসে বলল, গেট খোলা। অর্জুন গিয়ে এক বছরের ধুলো পরিষ্কার করে বাসযোগ্য করার পর আমরা সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে গিয়ে উঠলাম।

    বাড়ি বিক্রির খবর পেয়ে বহু লোক, প্রোমোটার, সাধারণ ভদ্রলোক, দালাল, কত রকমের মানুষ আসতে লাগল বাড়িতে। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক লোক টেলিফোনে কথা বলেছে, বা বাড়ি দেখতে এসেছে। তাদের নিয়ে আমি ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম এবং একটু বিরক্তও বটে। তাদের অনেকেই উপরের ঘরগুলোও দেখতে চাইত। কিন্তু খোকন কাউকে আমাদের ঘর দেখতে উপরে উঠতে দিত না। বাধা দিত; শুধু মুখে নয়, সশরীরে দুহাতে সিঁড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকত।

    আমার বাড়িতে অচেনা লোক আসছে বলে খোকন থানায় গিয়ে ডাইরি করে আসত বারবার। যা কোনদিন আমাকে করতে হবে কল্পনা করিনি অগত্যা আমাকে তাও করতে হল। আমিও থানায় অভিযোগ করে ডায়েরি করতে লাগলাম। বাড়িতে শান্তি ছিল না --- পুলিশের আনাগোনা ছিল নিয়ত। খোকন আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে বা মতামত না নিয়েই সদর দরজার সামনে একটা লোহার গেট লাগিয়েছিল এবং দরজার উপরে একটা সি সি ক্যামেরা লাগিয়েছিল। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম– এ বাড়িটা সত্যি কি আমার?

    প্রতিদিনই ক্রেতারা আসত বাড়ি দেখতে কিন্তু মামলা হচ্ছে শুনে কেউ আর কিনতে রাজি হত না। দু-একজন ধূর্ত প্রোমোটার কিনতে রাজি হত কিন্তু তারা এত অল্প দাম দিতে চাইত যে তাতে সল্টলেকে একটা ভাল ফ্ল্যাটও পাওয়া যায় না। আমার দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে তারা অতিরিক্ত লাভ করার আশায় উদগ্রীব হয়ে ছিল। মামলা ঢিমেতালে চলছে। নিস্পত্তি হওয়ার কোন আশা দেখতে পাচ্ছিলাম না। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাই বলতে শুরু করল, “ ও বাড়ি তুমি বিক্রি করতে পারবে না। ওর কথা ভুলে যাও।“

    আশাহত হয়ে আমার মনোবল ক্রমশঃ নিম্নমুখী। এই সময় বুবাই অশীন উমা বেড়াতে এল সল্টলেকে। বুবাই এসেই অন্যান্য বছরের মত মেজকাকুর (খোকন) সঙ্গে দেখা করতে গেল এবং স্বাভাবিক ভাবে কথাবার্তা ও গল্পে বসে গেল। আমি একটু অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম। খোকন আমাকে অপমান করেছে, আমাকে গৃহচ্যুত করার চেষ্টা করেছে, আমার নামে কেস করেছে এবং সে কাজটা যে অন্যায় সেটা ওকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। ওর সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করলে ও ভাববে ও যা করেছে সেটা অন্যায় নয়। আমার বাবা মাকে কেউ অপমান করলে বা অকারণে কষ্ট দিলে আমি তার প্রতিবাদ করব। তাকে বুঝিয়ে দেব যে তার অপকর্মকে আমি সমর্থন করি না। তার সঙ্গে আমি হাসিমুখে কথা বলব না। কিন্তু বুবাইর ব্যবহার অন্য রকমের। বুবাই উদারপন্থী, সরল মনের মানুষ। মেজকাকুর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে আপস-আলোচনার পথ খোলা রাখতে চায়। আমার সঙ্গে বুবাইর তর্ক হল। বুবাই আমাকে অনেক উপদেশ দিল। বুবাই পালি ভাষায় শ্লোক আবৃত্তি করে বোঝাল – “এ মোহ আগুনের বলের মত, যতক্ষণ হাতের মুঠোয় রাখবে ততক্ষণ জ্বালা যন্ত্রণা, হাত থেকে ফেলে দিলে যন্ত্রণা-মুক্তি, তখন শান্তি। সুতরাং এ নিয়ে আর চিন্তা করো না। সব ছেড়ে দিয়ে লন্ডনে চলে যাও। যা হবার হবে। শান্তি পাবে।”

    সত্যই কি শান্তি পাব? অনুর আর আমার রক্ত-জল-করা পরিশ্রমের ফসল এ বাড়ি। একে এত সহজে ছেড়ে দিলে কি শান্তি পাব? আমি তো চিরকাল যুদ্ধ করে এসেছি। আজ কি আমি আত্মসমর্পণ করব? তাছাড়া এ তো অন্যায়, আর আমি তো চিরদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছি। পার্থক্য শুধু, এ লড়াই আমার ন্যায্য অধিকারকে রক্ষা করার জন্য। সেই মুহুর্তে নিজেকে বড় অসহায় মনে হল। মনে হল আমি বড় একা। একাই লড়তে হবে আমার এ যুদ্ধ।

    বুবাই চলে যাওয়ার কিছুদিন পরে, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার মর্যাদা বিসর্জন দিয়ে, অপমান ভুলে খোকনকে ডেকে আলোচনায় বসার জন্য বললাম। সাতদিন পরে ও আমার সঙ্গে আপোস-আলোচনায় বসতে রাজি হল। বহুদিন পর আমরা দুজনে মুখোমুখি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে শুরু করলাম। বললাম, “ আমার অংশ আমি বিক্রি করতে চাই কিন্তু তোর সমর্থন ছাড়া তা করা সম্ভব হচ্ছে না। হয় তুই আমার অংশটা কিনে নে, নয় তোর অংশটা আমাকে বিক্রি করে দে। “ খোকন বলল আমার অংশ কেনার মত টাকা ওর নেই। উত্তরে আমি জানতে চাইলাম ও কত টাকা চায় ওর অংশটার জন্য। ও বলল, “ আড়াই কোটি টাকা।” আবার অবাক হবার পালা আমার। অবিশ্বাস্য! আমার ৭৫% অংশের জন্য কেউ অত টাকা দিয়ে চাইছে না; আর ও ওর ২৫% অংশের জন্য চায় আড়াই কোটি টাকা! বুঝলাম ও চায় না আমি কখনো এ বাড়ি বিক্রি করতে পারি। এরপর আর আলোচনা চলে না। আমি উঠে পড়লাম।

    কয়েক বছর আগে প্রিয়াঙ্কা জৈন ও মিস মমতা আগরওয়ালকে (ঠিক মনে পড়ছে না আগরওয়াল কিনা) আমি নীচের বড় ঘরটা ভাড়া দিয়েছিলাম। ওরা সে ঘরে একটা ছোটদের নার্সারী করেছিল। সেটা খুব ভাল চলছিল। অনু যেহেতু চাইল্ড ডেভেলপমেন্টের উপর অনেক কাজ করেছে সেহেতু মমতাকে তার কাজে খুব উৎসাহ দিত এবং ইংল্যান্ড থেকে কিছু বইপত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে যেত মমতার জন্য। পরে যখন ২০১৬ সালে প্রোমোটার দিলীপকে বাড়ি বিক্রি করব বলে চুক্তিপত্রে সই করেছিলাম তখন মমতাকে ঘরটা ছেড়ে দিতে বলি। মমতার নার্সারী খুব জমে উঠেছিল এবং ও অনেক টাকা খরচ করে ঘরটা নার্সারীর উপযুক্ত করে সাজিয়েছিল। ওকে উঠে যেতে বলতে আমার খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু প্রোমোটার বলল বাড়িতে ভাড়াটে থাকলে ও বাড়ি কিনবে না। সুতরাং আমাকে মমতাকে বলতেই হল। ও ঘর ছেড়ে দিয়ে চলে গেল।

    দুবছর পরে যখন আবার দেশে গেলাম মামলা তখন জোর কদমে চলছে। মমতা একদিন এসে আমাকে বলল, “ তোমার বাড়ি তো বিক্রি হল না। তোমার ওই ঘরটা আবার আমাকে দাও। আমি আবার শুরু করি। সব কিছু তো করাই আছে আমাকে তো আর নতুন করে খরচ করতে হবে না।” প্রস্তাবটা মন্দ না। আমি আমার ল-ইয়ার তরুণজ্যোতির মতামত চাইলাম। উনি বললেন আইনগতভাবে তাতে কোন সমস্যা নেই। আপনার ঘর আপনি ভাড়া দিতেই পারেন। আমি সেইমত মমতাকে ঘরটা ভাড়া দিয়ে চাবি ওর হাতে তুলে দিলাম।

    যেদিন মমতার ঘরে ঢোকার কথা সেদিন দুপুরে মধ্যদিনের আহার শেষ করে উপরের ঘরে আমি নিদ্রাছন্ন। হঠাৎ নীচের থেকে শোরগোল ও চিৎকারের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মমতা চীৎকার করে বলছে “মিস্টার বিশ্বাস, কাম ডাউন কুইকলি।” আমি তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে দেখি, ছোটন, খোকনের ছেলে, সেই ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ক্যামেরাতে ওদের ছবি তুলছে। আমি যেতে মমতা আমাকে উত্তেজিত ভাবে অভিযোগ করল। বলল, “ দেখুন, এই ছেলেটি আমাদের ঘরে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। বলছে এ বাড়িতে মামলা চলছে। তোমরা এ ঘরে ঢুকতে পারবে না।”

    আমার সাধারণত রাগ হয় না। আর রাগ হলেও তার বহিঃপ্রকাশ হয় না অতি সহজে। কিন্তু সেদিন আমার প্রচণ্ড রাগ হল। ছোটন বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলে, অল্প বয়স। ওর বা ওদের কিছু বলার থকলে আমাকে বলতে পারে। কিন্তু আমি যাকে আমার বাড়ির চাবি দিয়েছি তাকে কিছু বলা মানে তো আমাকে অপমান করা। আমি ছোটনকে বকাবকি করতে শুরু করলাম। কিন্তু ও আমার কথা গ্রাহ্যই করল না এবং ছবি তুলতেই থাকল।

    এমন অবস্থায় আমি আগে কখনো পড়িনি। এই অবস্থায় মানুষ কি করে জানি না। কিন্তু কিছু একটা করা উচিত। অন্ততঃ এমন ঘটনা যে ঘটেছিল তার একটা সাক্ষ্য প্রমাণ রাখা দরকার। আমি আর দেরী না করা থানায় গেলাম। থানার ও-সি আমার ডায়েরি নিলেন না। কিন্তু উপদেশ দিলেন, “ আপনি আপনার ভাড়াটিয়া মিস মমতাকে বলুন একটা ডায়েরি করতে।” মমতা গিয়ে একটা ডায়েরি করেছিল। অনুমতি ছাড়া কোন মহিলার ছবি নেওয়া আইন বিরুদ্ধ। ও-সি মমতার ডায়েরি নিয়েছিলেন এবং একটা এফ আই আর (FIR) করেছিলেন ছোটনের নামে।

    কিছুদিন পরে পুলিস এসেছিল আমার বাড়িতে। খোকন আমার নামে অন্য এক থানায় এক ডায়েরি করেছিল। পুলিস এসে প্রশ্ন করেছিল এ বাড়িতে থাকার আমার কোন অধিকার আছে কি না। বাড়িটা যে আমার সেটা প্রমাণ করতে আমাকে তাৎক্ষণিক তাদের আমার দলিল দেখাতে হয়েছিল। উপকার করতে গিয়ে কী দশা হল আমার!

    কোভিড তখন সমাজ জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। মমতা নার্সারী বন্ধ করে দিল। কিন্তু ওরা চলে গেলেও মমতা ও প্রিয়াঙ্কা সেই কোভিড দুর্যোগে দিনে আমাকে খুব সাহায্য করেছিল। বোতলের (বিসলেরি) পানীয় জলের সরবরাহ থেকে শুরু করে আমাদের নিয়মিত ওষুধ এনে দেওয়া ও অনু পড়ে গেলে লোক পাঠিয়ে সাহায্য করা পর্যন্ত বহু প্রয়োজনে আমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। ওদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।

    অনুর শরীর ভাল হচ্ছে না; অত্যন্ত দুর্বল। ও সারা জীবন আমার শরীরের দিকে কড়া নজর রেখেছে। ও নিজে রান্না করে আমাকে খাইয়েছে; আমার খাবারের দায়িত্ব ও অন্য কাউকে দিতে রাজি নয়। ওকে অনেক বুঝিয়ে আমি একটা রাঁধুনি রেখেছিলাম। কিন্তু রাঁধুনির পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না। অনু রান্নার তত্বাবধান করত; রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকত, দেখত রাঁধুনি বেশী তেল মশলা দিচ্ছে কিনা। এমনই এক দিনে রান্নাঘরে সেই জীবন-পরিবর্তনকারী অকল্পনীয় দুর্ঘটনা ঘটল। অনু রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে গেল। রাঁধুনি ছাড়া বাড়িতে আমি একা। অনু মেঝেতে যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। আমরা ওকে তুলতে পারছি না। আমার বন্ধু মলয় রায়ের পরামর্শে অনুকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এক বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম।

    এবার যখন দেশে এলাম তখন দেখলাম একটা বিরাট এস ইউ ভি (SUV) গাড়ি আমাদের বাড়ির ড্রাইভওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখে অবাক। গাড়িটা বেশ বড়। এমনভাবে পার্ক করা যে সদর দরজায় সামনেটা খুব সংকীর্ণ হয়ে গেছে। জিনিষ পত্র হাতে নিয়ে যাওয়া খুব কষ্টকর। আমাদের সঙ্গে বড় বড় সুটকেস ছিল। সেগুলো নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢোকা খুব সহজ হয় নি। পরে খোকনকে বলেছিলাম গাড়িটা সরাতে। ও বলেছিল, গাড়িটা পিউর। ( পিউ খোকনের বড় মেয়ে )। পিউ এখানে থাকে না। ওর একটা ফ্ল্যাট আছে। ওর গাড়ি এ বাড়িতে কেন আছে বুঝতে পারলাম না। খোকন ও পিউ বলল ও গাড়ি সরানো যাবে না। খোকনকে কাকুতি মিনতি অনুরোধ, সব কিছু করেও ফল হল না। খোকন বলল ড্রাইভওয়েতে গাড়ি রাখার অধিকার আছে ওর। ও গাড়ি সরাবে না। (তা হলে আমি গাড়ি কিনলে কোথায় রাখব?)

    বাড়িতে ঢুকতে বের হতে খুব অসুবিধা হত। অতিথি ও নিমন্ত্রিতদের আসতেও অসুবিধা হচ্ছে দেখে আমার লজ্জা হত। খোকনকে অনুরোধ মিনতি করে কিছু ফল হল না দেখে বিরক্ত হয়ে আমি একদিন থানায় গেলাম অভিযোগ করতে। ও-সি বললেন এটা আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার উনি কিছু করতে পারবেন না। সুতরাং এই অসুবিধা নিয়েই আমার বাড়িতে আমাকে থাকতে হবে এবং থাকতে হল।

    অনু রান্নাঘরের মেঝেতে ছটফট করছে। আমি এম্বুলেন্স ডেকেছি। অনেকক্ষণ পরে এম্বুলেন্স এলো। সদর দরজার সামনে পিউর বিরাট গাড়ি দাঁড়িয়ে – অনুকে স্ট্রেচারে শুইয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। অত জায়গা নেই। সুতরাং ওরা অনুকে চ্যাংদোলা করে অতি কষ্টে বিপদজনকভাবে এম্বুলেন্সে নিয়ে তুলল।

    হসপিটালে গিয়ে এক্স-রে হল। এক্স-রে দেখে ডাক্তার বললেন, “ ফিমার বোন ভেঙ্গে গেছে। এখুনি অপারেশন করতে হবে।” আমি বললাম, “ অপারেশন করতে হলে আমি ইংল্যান্ডে করাব।” উনি প্রায় ব্যঙ্গোক্তিচ্ছলে বললেন, “যদি পারেন তবে নিয়ে যান। উনি তো উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।”

    অগত্যা আমি কলকাতাতেই অপারেশন করাতে রাজি হলাম। অনুর হার্টের অবস্থা ভাল নয় এবং ও রক্ত তরল হওয়ার ওষুধ খায়। সে ওষুধ বন্ধ না করলে অপারেশন করা যাবে না। তার জন্য অন্ততঃ সাতদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া উনি ওঁর হাসপাতালে অপারেশন করার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। যেখানে হার্টের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছে সেখানে করতে চান। সেইমত সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে অনুর অপারেশন হল।বাড়ি এসে অনুর ফিজিও ইত্যাদি শুরু হল। দুর্ভাগ্যবশতঃ ঠিক এই সময়ে সারা পৃথিবী জুড়ে দেখা দিল মহামারী। সেটা ২০১৯ সাল, কোভিড প্যানডেমিক সারা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। সবাই আতঙ্কিত, অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে যায় না। গেলেও মুখোশ পরে যেতে হয়। এককথায় সবাই ঘর বন্দী। কেউ কারুর কাছে যায় না, ছুঁতে ভয় পায়। একমাস ফিজিও করার পর কোভিডের ভয়ে আমি ফিজিওকে আসতে বারণ করে দিলাম। অনু তখন একটু একটু হাঁটতে পারে কিন্তু পায়ে ঠিকমত জোর নেই। মাঝে মাঝে পড়ে যায়। এ ছাড়া ছোটবড় অন্যান্য অসুখেও ভুগছিল। এই শারারিক যন্ত্রণা ওর মানসিকতায় প্রতিফলিত হল। স্বাভাবিক হাসিখুশি ব্যবহারে রুক্ষতা ও অসহিষ্ণুতা দেখা দিল। কারণে অকারণে রাগ অভিমান করত। অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে পড়ল। অল্প কারণে উতলা হয়ে পড়ত। আমাকে কিছুক্ষণ না দেখতে পেলে কাঁদতে শুরু করত। আমার দুশিন্তা আরও বেড়ে গেল।

    এই সময় শুক্লা প্রায়ই আসত এবং ওকে সঙ্গ দিত। শুক্লা ওর ছোড়দার মেয়ে; হাওড়ার শিবপুরে থাকে। বড় ভাল মেয়ে, সহৃদয়; পিসিমণিকে খুব ভালবাসে। শুক্লাকে খবর দিলেই ছুটে চলে আসত। আমাকে যেদিন বারাসাত কোর্টে যেতে হত সেদিন শুক্লা এসে অনুর সঙ্গে থাকত। সল্টলেকের বাড়িতে শুধু আমি আর অনু। শুক্লা না থাকলে আমি অনুকে একা রেখে কোথাও যেতে পারতাম না। আমাদের অসময়ে শুক্লা আমাকে অনেক উপকার করেছে। আমি ওর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

    এমনিতেই কোর্টে ঠিকমত কাজকর্ম হয় না, আর কোভিডের কারণে কোর্ট একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। শুধু কোর্ট নয় একান্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবা ছাড়া সব কর্মস্থান বন্ধ হয়ে গেল। দেশ প্রায় অচল। অনু লন্ডনে ফিরে আসার জন্য উতলা হয়ে উঠল। বুবাই গৌতমও প্রতিদিন ফোন করে চলে আসতে বলছে। অনু উঠতে বসতে আমাকে উত্যক্ত করতে থাকল টিকিট কাটার জন্য।

    ততদিনে আমাদের প্রায় দুবছর হয়ে গেছে কলকাতায়। আমিও কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। ঠিক করলাম লন্ডনে ফিরে আসব। কিন্তু আসার পথ বন্ধ। বিভিন্ন দেশের সরকার আন্তর্জাতিক ভ্রমণের উপর বিধি নিষেধ জারি করেছে। ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট ভারতবর্ষ থেকে কোন যাত্রীকে গ্রহণ করছে না। আমাদের যাত্রা স্থগিত রাখতে হল।

    কয়েক মাস পরে কর্মজগতের নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হল। কোর্ট খুলল আবার। আমাদের কেসের শুনানির দিন এল। আমার উকিল তরুণজ্যোতি আশ্বাস দিলেন, কেস চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে এবং শীঘ্রই বিচারকের সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। এই সময় এক প্রোমোটার আমার বাড়ি দেখে প্রথম সাক্ষাতেই কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিল। এর কথাবার্তা পোশাক পরিচ্ছদ একটু অন্য রকমের। লম্বা চুল, মাথায় টুপি, গায়ে এই গ্রীষ্ম কালেও জ্যাকেট। নাম সব্যসাচী ব্যানার্জী। বড় সাদা মার্সিডিজ গাড়ি চড়ে। অনেক আলাপ আলোচনার পর আমরা একটা মূল্যে রাজি হলাম। ও আমাকে বাড়িটা বাজার থেকে তুলে নিতে বলল সুতরাং আমি অন্য কাউকে বাড়ি দেখাতে বিরত থাকলাম। কথা হল একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব্যসাচী নব্বই ভাগ টাকা দিয়ে চুক্তিপত্র সই করবে।

    আমি সেইমত একটা কাগজে ওকে লিখে দিলাম। কিন্তু দিন যায়, নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেল। সব্যসাচী টালবাহানা করতে লাগল। আমি অধৈর্য হয়ে পড়লাম। বুঝলাম ও টাকা যোগাড় করতে পারছে না অথচ বাড়িটাও ছাড়তে চাইছে না। শেষ পর্যন্ত আমি ওকে বলে দিলাম যে আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না এবং আমি অন্য কাউকে বিক্রি করব। সব্যসাচী ক্ষেপে গেল। আমাকে উকিলের চিঠি দিল যে আমি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছি বলে আমার নামে মামলা করবে। এবং হুমকি দিল যে ও দেখে নেবে যে আমি যেন কখনো এ বাড়ি বিক্রি করতে না পারি। আমি ভয় পাই নি। আমি তার উত্তরে কড়া করে চিঠি দিলাম। সব্যসাচী আমার কাছে আবার এসে আর সাতদিন সময় চাইল।

    ইতিমধ্যে কুমার নামে এক প্রোমোটার, যে এই বাড়ী কিনতে আগে আগ্রহ দেখিয়ে ছিল, সে আবার ফিরে এল। সে সব্যসাচীকে চেনে। কুমার বলল সব্যসাচীর টাকা নেই; ও কোনদিন এত টাকা জোগাড় করতে পারবে না। দেখলাম কুমার সব্যসাচীর কার্যকলাপের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানে। বলা বাহুল্য সব্যসাচী সাতদিনের মধ্যে টাকা দিতে পারেনি। সুতরাং আমাদের চুক্তি নাকচ হয়ে গেল। এবার কুমারের কথাবার্তায় আন্তরিকতা ও গুরুত্বের ভাব অনেক বেশী। বেশ কিছুদিন ধরে অনেক আলাপ আলোচনা হল। শেষ পর্যন্ত রফা হল যে ও সব জেনেশুনে মামলা সহ এই বাড়ি কিনবে, তবে আমি যে মূল্য চাইছি তার থেকে ও কম মূল্য দেবে। আমি তখন হতাশার শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। যে কোন রকমে এই অচলাবস্থা থেকে বেরিরে আসতে পারলে বাঁচি। রাজি হয়ে গেলাম। কোন কারণে খোকনের উকিল পর পর দুবার কোর্টে অনুপস্থিত থাকায় বিচারক মামলা খারিজ (Dismiss) করে দিল। কুমার বাড়িটা নিজে না কিনে রবি খৈতান নামে এক ধনী ব্যবসায়ীকে দিয়ে দিল। প্রতিশ্রুতিমত রবি খৈতান আমাকে ৯০% টাকা দিলে আমি চুক্তিপত্রে সই করলাম। চুক্তিপত্র রেজিস্ট্রি হয়ে গেল। সল্টলেকে সম্পত্তি কেনাবেচা করতে হলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি নিতে হয়। কথা হল যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার দলিল করার অনুমতি দেবে তখন বাকী ১০% টাকা আমাকে রবি খেতান আমাকে দেবে।

    সেই বিভাগের নাম “ডিপার্টমেন্ট অফ আরবান ডেভেলপমেন্ট এন্ড মিউনিসিপ্যাল এফেয়ার্স” (Department of Urban Development & Municipal Affairs ) বা নগরায়ণ। নগরায়ণের অনুমতি ছাড়া বাড়ি বিক্রি করা যাবে না এবং চূড়ান্ত দলিল রেজেস্ট্রি করা যাবে না। সুতরাং রবি খেতান নগরায়ণে আবেদন করল। নোটিস পেয়ে খোকন নগরায়ণে ওর আপত্তি জানাল এবং আদালতে আবার পুরানো মামলা পুনর্জীবিত করার আবেদন করল। খোকনের আপত্তি মেনে নগরায়ণ রবি খৈতানকে অনুমতি দিল না। কুমার ও রবি খৈতান সমস্যায় পড়ল। কথা ছিল চুক্তিপত্রে সই করার পর দু-সপ্তাহের মধ্যে আমাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। কুমার আমাকে চাপ দিতে লাগল বাড়ি ছেড়ে দেবার জন্য।

    আমি তাড়াতাড়ি অনুকে নিয়ে একটা ছোট ফ্লাট ভাড়া নিয়ে সল্ট লেকের বাড়ি ছেড়ে চলে এলাম। বুবাই গৌতম প্রতিদিন লন্ডনে ফিরে আসার জন্য ফোন করছে। এখানে আমার কাজ শেষ; লন্ডনে ফিরে যাব এবার। কিন্তু কুমার ও রবি খেতান আমাকে অনুরোধ করল আর দুমাস থেকে যেতে – তার মধ্যেই ওরা নগরায়ণ থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে পারবে। এত টাকা দিয়ে বাড়ি কিনে দলিল না হওয়া পর্যন্ত আইনত ওরা বাড়ির মালিক হতে পারবে না। আমার সেটা ভাল লাগছিল না। ওদের অনুরোধ মেনে আমি আরো ক’টা দিন থেকে যেতে রাজি হলাম। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও কুমার ও রবি নগরায়ণের কাছ থেকে অনুমতি নিতে পারল না। আমার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটল।

    ইতিমধ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় যাত্রীদের উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। যাত্রীরা আসতে পারে তবে প্লেন থেকে নেমে দুই সপ্তাহ মনুষ্য সংস্পর্শ থেকে আলাদা (Quarantine) থাকতে হবে। গৌতম আমাদের দুসপ্তাহ এক লন্ডন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিল। অনুর শরীর খুবই খারাপ। ও এত দূর প্লেনে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে আমার চিন্তা হল। ও যাতে যত্নে আরামে ভ্রমণ করতে পারে সে জন্য আমি উচ্চমূল্যে বিজনেস শ্রেণীর টিকিট কাটলাম। ৩১ জুলাই ২০২১ সালে প্রায় দুবছর দেশে কাটিয়ে লন্ডনগামী প্লেনে উঠলাম। সৌভাগ্যবশতঃ ১ অগাস্ট যখন লন্ডনে নামলাম তখন শুনলাম সেদিন থেকে যাত্রীদের আর Quarantine-এ থাকতে হবে না। গৌতম আমাদের সোজা হ্যারোর বাড়ীতে নিয়ে এল।

    দিন যায়, মাস যায়; অনেক চেষ্টা করেও কুমার ও রবি নগরায়ণের অনুমতি পাচ্ছে না। অবশেষে ওরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হল। হাই কোর্টে কেস করে কোর্ট অর্ডার নিয়ে এলো। হাই কোর্টের আদেশে নগরায়ণ রবি খৈতানকে দলিল করার অনুমতি দিল। রবি আমাকে দলিলে সই করার জন্য কলকাতায় যাওয়ার অনুরোধ করল। অনুকে চব্বিশ ঘণ্টা দেখাশুনা করতে হয়; ওকে ছেড়ে আমি এক মুহুর্ত বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। দেশে যাওয়া তো কল্পনার বাইরে। ওদের সে কথা জানিয়ে দিলাম। বললাম পাওয়ার-অফ-এটর্নিতে কাজ হবে কিনা। ওরা খোঁজ নিয়ে বলল, হবে। দেশে নিশ্চিন্তে যাকে আমি পাওয়ার-অফ-এটর্নি দিতে পারি সে আমার সেজ ভাই, হাঁদি। হাঁদিকে আমি ভরসা করি। হাঁদিকে বললাম। হাঁদি এককথায় রাজি। আমার প্রয়োজনের সময়ে সর্বদা হাঁদি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

    কলকাতায় থাকার সময় দরকার হলে হাঁদি দিল্লী থেকে ছুটে এসেছে আমাকে সাহায্য করতে। হাঁদি শুধু আমার ভাই নয়, আমার বন্ধু ও পরামর্শদাতা। আমার যখনই সমস্যা এসেছে তা নিয়ে হাঁদির সঙ্গে আলোচনা করেছি। এবারো হাঁদি আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। লন্ডনে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের অফিস থেকে পাওয়ার-অফ-এটর্নি করে হাঁদিকে পাঠিয়ে দিলাম। কিন্তু কলকাতায় কোন কাজ একদিনে হয় না। হাঁদিকে কলকাতায় কয়েক সপ্তাহ গিয়ে থাকতে হল এক ঘণ্টার কাজের জন্য। হাঁদি আমার হয়ে দলিলে সই করে দিল। সল্টলেকের সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। ২০১৬ সালে যে প্রকল্পের শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে বাড়ি বিক্রির সেই দুরূহ কর্ম, যা আমার পরিচিত সবাই বলেছিল অসম্ভব, সেটা সারা হল।

    এই ক’টা বছর আমার জীবনের বড় যন্ত্রণাদায়ক সময়; সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়। তবু খোকনের উপর আমার কোন বৈরীভাব নেই। ওকে আমি এখনো ভালবাসি। ওর কষ্ট হলে আমার কষ্ট হয়। ও সুস্থ থাকুক, সুখে থাকুক, শান্তিতে থাকুক এই কামনা করি।



    ক্রমশ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন