যে তৈলাক্ত পদার্থ প্রদীপকে জ্বালিয়ে রাখে সে পদার্থের যোগানি ক্রমশ কমে আসছে ; প্রদীপের আলো আস্তে আস্তে নিভে আসছে। মনে হচ্ছে একদিন হঠাৎই প্রদীপ আর আলো দিতে পারবে না। সে দিন কবে জানি না। ছিয়াশী বছর পার করে মনে হলো এক সাধারণ জীবনের টুকরো টুকরো কিছু ঘটনা, কিছু অবিশ্বাস্য কাহিনী, কিছু কাকতালিয় যোগাযোগ, কিছু চিন্তা ভাবনা লিখে রেখে যাই। স্বাচ্ছল্য থেকে দারিদ্র্য, ব্যর্থতা থেকে সাফল্য, আনন্দ দুঃখ বেদনা বিচ্ছেদ, প্রেম ভালোবাসা, উত্থান পতন, মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা, সব মিলে এ এক বর্ণময় জীবন । কেউ হয়ত দেখবে না এ লেখা, কেউ হয়ত শুনবে না এ কাহিনী। তবু আমার উত্তরসূরীদের জন্য রেখে গেলাম এই অভিজ্ঞান। যদি কোনো অলৌকিক ঘটনাচক্রে কোনো উত্তরসূরী বা উৎসাহী কোনো মানুষ এ-লেখা আবিস্কার করে তা হলে সে আমার জীবনের শরিক হবে; আমাকে নতুন কোন আসরে পৌঁছে দেবে।
এ লেখা যখন শুরু করেছিলাম তখন শুধু নিজের জন্যই লিখছিলাম। আমিই এর একমাত্র পাঠক । সময়ে সময়ে পাতা উল্টে পুরানো দিনের চিন্তা ভাবনা ও ঘটনার রাজ্যে বিচরণ করার সুযোগ পাব বলে। কোনদিন যে এ লেখা অন্য কেউ দেখবে তা ভাবিনি। অনেক কাল পরে যখন মাঝে মাঝে জীবনের কিছু কিছু ঘটনা পৌত্র পৌত্রীকে গল্পচ্ছলে শোনাচ্ছিলাম তথন পুত্র বুবাই (অংশুমান) বলল আমি এ সব কথা লিখে রাখছি না কেন, যাতে বড় হয়ে ওরা পড়তে পারে । তারপর ওরই পুনঃপুনঃ তাগিদে নতুন উদ্যোগে লিখতে শুরু করলাম । ভাবলাম কত কিছুই তো হয়েছে আমার জীবনে, লিখে রেখে যাই ওদের জন্য। লেখার গুরুত্ব পরিবর্তিত হল।
নিজের জন্য লেখা, যা বাক্সবন্দী থাকবে, তাতে যা মনে হয় তাই লেখা যায়। পাঠক যখন পুত্র ও উত্তরসূরিরা হতে পারে তখন লেখায় সেই লাগাম-ছাড়া ভাব থাকে না আর । তারপর প্রস্তাব এলো এটাকে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করার । তার অর্থ আমার সকল কর্মকান্ড উন্মোচিত হয়ে যাবে পৃথিবীর আপামর জনতার কাছে। আমার জীবনের কথা আর ‘রবে না গোপনে’। আমার জীবনের খঁটিনাটি কেউ জানে না । আমার সমগ্র ‘আমি’কে একাধারে কেউ দেখেনি । জীবনের সব ঘটনা , সকল আলো অন্ধকারের দিনগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরা সহজ নয় । এটি কঠিন কর্ম --- প্রচুর সাহসের প্রয়োজন। আমার সে সাহস আছে কি ?