এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন পর্ব ১৬

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১২ জুলাই ২০২৫ | ৪০ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত 



    কয়েক মাসের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া উত্তাল হয়ে উঠল। ক্রমশঃ জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষের সংখ্যা বাড়তে থাকল। বড় বড় শহরগুলোতে শান্তি রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াল। দোকানে বাজারে সিনেমায় আগুন জ্বলল। রাস্তায় গলিতে এখানে সেখানে মৃতদেহ দেখা যেতে লাগল। সাধারণ নাগরিক আর স্বাধীন ভাবে চলা ফেরা করা নিরাপদ মনে করল না। আস্তে আস্তে সব যানবাহন বন্ধ হয়ে গেল। গুজব ছড়াল এয়ারপোর্টও বন্ধ হয়ে যাবে শীঘ্রই। তবুও তখনো দেয়াল ঘেরা আবাদানে তেমন কিছু অশান্তির আঁচ পড়েনি। আমাদের জীবনযাত্রা প্রায় আগের মতই চলছিল। তেমনি আড্ডা, ব্যাডমিন্টন, গানের আসর। তবু সকলের মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা ও ভয়, কি হবে কাল। আমার জানাশোনার সকলেই স্বামী স্ত্রী দুজনে থাকে – ছেলেমেয়েরা বোর্ডিং হাউসে থেকে পড়াশুনা করে, আমেরিকা, ইংল্যান্ড বা ভারতে। শুধু আমরাই ছেলেদের এখানে নিজেদের কাছে রেখেছি। আমরা বুবাই গৌতমকে কাছ ছাড়া করতে চাইনি। স্কুল শেষ হলে তো ওরা চলেই যাবে, তাই যতদিন সুযোগ পাই, যতদিন একসঙ্গে থাকা যায়, থাকি।

    এখানে আসার পর বাইরের জগতের সঙ্গে প্রায় কোনো যোগাযোগ নেই। প্রথমে কয়েকবার লন্ডনে ফোন করেছিলাম কিন্তু কিছুদিন পরেই আবাদানের বাইরে আর কানেকশন পাওয়া যেত না। কিন্তু প্রফেসর কালিজুরির কাছ থেকে ফোন পেতাম মাঝে মাঝে। উনিও আমাদের নিরাপত্তার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। বাইরের জগত আমাদের কাছে বন্ধ হয়ে গেল। একটা ইংরেজি নিউজপেপার পেতাম, কিন্তু সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। রেডিওতে ইরানি কোনো স্টেশন পেতাম না। ইরাকি স্টেসন পেতাম কিন্তু সেখানে শুধু সাদ্দাম হোসেনের প্রোপাগান্ডা। লোকের মুখে নানা রকম খবর শুনি, তার কিছু পরস্পর বিরোধী, কিছু ভয়ের। শুনলাম কিছুদিনের মধ্যেই আবাদান থেকে বাহির হওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে, এমন কি এয়ারপোর্টও। ডঃ শর্মা বললেন উনি মিসেসকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। মহিলাদের এখানে রাখা বুঝি আর নিরাপদ নয়। পরে শুনলাম রাজু ও ডঃ রাইডুও তাই করছেন। কিছুদিনের মধ্যে আবাদানের বিদেশী বসতি প্রায় মহিলা শূণ্য হয়ে গেল। আমার ভয় করতে লাগল অনুর বয়সী কোন বিদেশী মহিলা থাকল না আবাদানে। অনুর জন্য চিন্তায় আমার অস্বস্তি শুরু হল। আমি আমাদের নিরাপত্তার জন্য শঙ্কিত হয়ে পড়লাম।

    যানবাহন বন্ধ হয়ে গেল, দোকানপাটও। আস্তে আস্তে বন্ধ হচ্ছে স্কুল কলেজ অফিস, সব কর্মস্থান। শোনা যাচ্ছে যে কোনো সময় এ আই টি-র দরজাতেও তালা ঝুলবে। এমনি একটি দিনে এ আই টি-তে ডঃ কোহেন আমাকে ডেকে বললেন, “বিকাল বেলা আমাদের বাড়ি চা খেতে এস। কিছু কথা আছে।” আমি তো অবাক। ডঃ কোহেনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয় নি। উনি আমেরিকান, এ আই টি-তে ইংরেজীর অধ্যাপক। উনি নিজের বাড়িতে জার্মান ভাষার ক্লাস করতেন, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে। যে জার্মান ভাষা শিখতে ইচ্ছুক সেই আসতে পারে। কোনো পারিশ্রমিক নেই। আমিও সেই ক্লাসে নাম লিখিয়েছিলাম। কিন্তু এই দুর্যোগের কারণে সে ক্লাস চলেনি বেশী দিন। এ-হেন কোহেন কেন যে আমাকে চায়ের নিমন্ত্রণ করল তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। অবাক হয়েছিলাম বটে, তবে উৎসুকও ছিলাম। 

    যথাসময়ে কোহেন সাহেবের বাংলোয় হাজির হলাম। আবার অবাক হবার পালা। দেখি শুধু আমি নই, আরও অনেকে এসেছেন। কয়েক জনকে চিনি, কিন্তু বেশীরভাগ মানুষকেই চিনি না। মনে হল সবাই আমেরিকান বা ইউরোপিয়ান। ব্যতিক্রম শুধু আমরা দুজন ভারতীয়, আমি আর দিলীপ দামলে। দিলীপ আমার সহকর্মী, আমারই মত লন্ডন থেকে এসেছে। সদ্য বিবাহিত। স্ত্রী এসেছিল ওর সঙ্গে। কিন্তু এ সব দেখেশুনে কয়েক দিন আগেই লন্ডনে ফিরে গেছে। দিলীপও আমার মত অবাক। আমরা দুজনে মুখ চাওয়া-চায়ি করছি। কোহেন সাহেবের বাংলোটা বেশ বড়। মনে হল প্রায় তিরিশ চল্লিশ জন লোক এসেছেন। চা এলো। তবু যেন চা-এর পার্টি বলে মনে হচ্ছে না। কেমন যেন একটা থম থমে ভাব। 

    কয়েক মিনিট পর এক ভদ্রলোক, যাকে আমি আগে কখনো দেখিনি, একটা টেবিলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন, “বন্ধুগণ, আমার নাম (নামটা আজ আর মনে নেই)। আমি একজন সি আই এ (CIA) এজেন্ট। আমাদের কাছে খবর এসেছে, যে কোনো মুহুর্তে এয়ারপোর্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এবং তারপর এদেশ থেকে বাহির হবার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ইউ এস সরকার আমেরিকান নাগরিকদের জন্য এক বিশেষ প্লেনের ব্যবস্থা করেছে। যারা যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের জানান হচ্ছে যে তারা যেন আজকে বাড়ি গিয়ে এক একজনের জন্য একটি স্যুটকেস নিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকেন। যে কোনো সময়ে আপনি একটা টেলিফোন পাবেন। তাতে নির্দেশ পাবেন কোথায় যেতে হবে। আপনি আপনার পরিবারসহ গন্তব্য স্থানে গিয়ে গাড়ি রেখে ইগ্নিশন কী একজস্ট পাইপের মধ্যে রেখে অপেক্ষা করবেন। আমাদের লোক এসে আপনাদের নিয়ে প্লেনে পৌঁছে দেবে। এই প্লেন আপনাদের গ্রীস পর্যন্ত নিয়ে যাবে এবং আপনারা প্রত্যেকে মাথাপিছু ৭০ ডলার হাত খরচ পাবেন।”

    বাড়ি ফিরে অনুকে সব কথা বললাম। অনু তো হতভম্ভ। অনুকে বুঝিয়ে বললাম--- তুমি বুবাই গৌতমকে নিয়ে ইন্ডিয়াতে চলে যাও। আমার কন্ট্রাক্ট না শেষ হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকতেই হবে। আমার অবস্থা ওকে বোঝাবার চেস্টা করলাম। স্যুইস কোম্পানির সঙ্গে আমার চুক্তি একবছরের। এক মাসের ছুটি বাদ দিলে আমাকে ন্যুনতম এগারো মাস কাজ করতে হবে। প্রতিমাসে আমার প্রাপ্য অর্থের পঞ্চাশ ভাগ আমার স্যুইস ব্যাঙ্কে জমা পড়বে। বাকী পঞ্চাশ ভাগ আমার বোনাস যেটা আমি এখন পাব না। চুক্তি শেষে এক বছরের বোনাস একসঙ্গে আমার ব্যাঙ্কে জমা পড়বে। চুক্তিভঙ্গ করলে বোনাস আমি পাব না। লন্ডনের নিরাপদ স্বচ্ছন্দ জীবন ফেলে রেখে, আত্মীয় স্বজন গানের আসর বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে, এত আশা এত ঝক্কি নিয়ে এদেশে এসে, উদ্দেশ্য সফল হবার আগেই চলে যেতে মন চাইছিল না। সব চেয়ে বড় কথা এদেশে কাজ নিয়ে আসার প্রধান আকর্ষণ ছিল অর্থ। তাই এত আয়োজন এত পরিকল্পনা করার পর প্রায় শূন্য হাতে ফিরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। অনু মন দিয়ে সব শুনল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর বলল --- আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। যা হবার তা হবে। আদর্শ সহধর্মিনী। বুঝলাম অনুকে রাজী করানো যাবে না। সুতরাং স্যুটকেস আর গোছানো হয়নি। প্রত্যাশিত ফোন কল যখন এল তখন আমি সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করলাম। 

    যে প্রশ্নটা করার জন্য মনটা ছটফট করছিল সে প্রশ্ন জিগ্যেস করার আগেই স্বতঃস্ফুর্ত হয়ে কোহেন সাহেব ব্যাখ্যা করলেন। কেন দিলীপ ও আমার মত ভারতীয়কে এমন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকা ইত্যাদি সব দেশের গভর্মেন্টই তাদের নাগরিকদের আবাদান থেকে ইভাকুয়েট করছে, অর্থাৎ তাদের ইচ্ছুক নাগরিকদের সরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে দেশে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভারত সরকার তেমন কিছু করছে না। আমি একদিন এখানে ভারত সরকারের প্রতিনিধিকে (চার্জ-ডি-এফেয়ার্স) এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তর এসেছিল, ইরানের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের সম্পর্ক – ইরানে ভারতীয়রা নিরাপদ। আমার সংশয় ছিল, আমি এবং আমার পরিবারকে খুব একটা নিরাপদ বলে মনে হচ্ছিল না। কোহেন সাহেব আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন। যদিও আমি ভারতীয় (আমার তখন ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট) কিন্তু আমি ইংল্যান্ডে বসবাস করি এবং ইংল্যান্ড থেকে মনোনীত হয়ে ইরানে এসেছি তাই ওরা আমাকে ব্রিটিশ হিসেবে দলভুক্ত করেছে। ব্যাপারটা পরিষ্কার হল কিন্তু আমি এই সুযোগ নিইনি। 

    অবাক হয়ে ভাবছিলাম। সিনেমা গল্পে উপন্যাসে সি আই এ-র অদ্ভুত সব কার্যকলাপ শুনেছি বা পড়েছি কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে তাদের কাজের শরিক হইনি বা তেমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি। সি আই এ এজেন্ট যেমন যেমন বলেছিল, পরের দিনেই সব যানবাহন দোকানপাট স্কুল কলেজ সব বন্ধ হয়ে গেল। এ আই টি-ও বাদ গেল না। এয়ারপোর্ট তো বটেই। বাস্তবে নাটকের দ্রুত পট পরিবর্তনে আমি রোমাঞ্চিত হলাম। আবাদান যেন শ্মশান পুরী।

    সব কিছু বন্ধ হলেও আমাদের ক্যাম্পাসের ভিতর স্টাফ শপ খোলা আছে। সুতরাং আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। অবশ্য আমরা আগে থেকেই এমন কিছুর আশঙ্কা করে যথেষ্ট খাবার ও প্রয়োজনীয় বস্তু মজুত করে প্রস্তুত হয়ে ছিলাম। কিন্তু স্থানীয় মানুষদের এরকম কোনো সুবিধা ছিল না। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য তদের সাধারণ দোকান বাজারের ভরসায় থাকতে হত। অথচ সাধারণ নাগরিককে অনাহারে দিন কাটাতে হয়নি। বিপ্লবীদের সাংগঠানিক পরিকল্পনা ও কার্যক্ষমতা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। এদের তত্বাবধানে প্রতিদিন সকালে প্রত্যেক পরিবারের দ্বারে দ্বারে রুটি চাল ডিম সবজি পৌঁছে যেত। 

    বিপ্লবের শেষ অধ্যায়। ইরান ধর্মীয় রাষ্ট্র হবে না পলহভি বংশ শাসিত রাজ্য থাকবে? আয়াতোল্লা খোমেনির নেতৃত্বে ধর্মীয় বিপ্লব প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইরানে আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল তুদে পার্টি – ইরানের কম্যুনিস্ট পার্টি। কিন্তু ধর্মীয় আন্দোলন জনপ্রিয় হতে শুরু করলে তুদে পার্টির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। ইরান ইসলামিক রাষ্ট্র হোক এই ইচ্ছা অধিকাংশ মানুষের কল্পনায় বাসা বাঁধল। বিদ্রোহের দাবানল ক্রমে ক্রমে ছোট বড় সব শহরে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। শাহ-র পুলিশ মিলিটারি ও শাসন যন্ত্র রুষ্ট জনতাকে সর্বতোভাবে দমন করতে সক্ষম হচ্ছিল না। শাহ বোধ হয় আমেরিকান সাহায্য যতটা পাবে মনে করেছিল ঠিক ততটা পাছিল না। আমার যেন মনে হল শাহ আর সর্ব শক্তি দিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ করছেন না। মানসিক ভাবে যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে্ন। আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। 

    অবশেষে ১৯৭৯ সালের ১৬ই জানুয়ারী পহলভি রাজ বংশের শেষ রাজা রেজা শাহ তেহেরানের রাজ প্রাসাদ ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে চলে গেলেন, রিজেন্সি কাউন্সিল ও শাপুর বক্তিয়ার-র হাতে রাজ্য শাসনের ভার দিয়ে। কিন্তু এ অবস্থা বেশি দিন চলল না। রাজার বিশ্বস্ত সেনাপতি ও সেনা-রাও কেউ কেউ বিপ্লবীদের মতে সায় দিল। প্যারিস থেকে আয়াতোল্লা খোমেনি তেহেরান শহরে এসে নামলেন। দিনটা ছিল ১লা ফেরুয়ারি ১৯৭৯। সে কি মহা সমারোহ। লক্ষ লক্ষ নরনারী বালক বালিকা বৃদ্ধ বৃদ্ধা রাস্তায় নেমেছে আয়াতোল্লাকে সম্মর্ধনা জানাতে। এক উন্মত্ত আবেগে সারা দেশটা আবিষ্ট হয়ে আছে। দেশটা স্থাণুর মত থমকে গেছে। সব কিছু অচল, অথচ শৃংখলা বজায় আছে, শান্তিতে আঘাত লাগেনি। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ বিধিগত নীতি অনুযায়ী (অফিসিয়ালি) পহলভি রাজবংশের পতন ঘোষিত হল। এবং সে বছরের মার্চ মাসে ইরান ইসলামিক রিপাব্লিক রূপে প্রতিষ্ঠিত হল।

    একটা প্রচন্ড ঝড়ের পর এখন সব শান্ত। যেন কোনো রোগী অত্যন্ত দুরূহ অস্ত্রোপচারের পর প্রাণের সংকেত দিচ্ছে। সদ্যজাত যেন চীৎকার করে জানাতে চাইছে ‘আমি এসেছি’। এই সন্ধিক্ষণের সময় এমন কিছুদিন কোনো সরকার ছিল না। অথচ বিপুল ভাবে তেমন কোনো প্রচন্ড বিশৃংখলা দেখা দেয়নি। বেশ কিছুদিন হল এ আই টি বন্ধ। আমি ঘরে বসে আছি। যে কাজের জন্য এদেশে আসা সে কাজ আমাকে করতে হচ্ছে না আর। এক দারুণ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে। কবে যে এ অবস্থার শেষ হবে কেউ জানে না। আমরা শহরবন্দি হয়ে আছি। আয়াতোল্লা খোমেনি ফিরে আসার পর দেশ একটু শান্ত হল। আর ইসলামিক রাষ্ট্র সরকার গঠন করার পর দেশে অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে ভাবে আইন শৃংখলা স্থাপিত হল। কিন্তু দেশে রাতারাতি সামাজিক প্রথা রীতি নীতি আচার ব্যবহারের আমূল পরির্বতন দেখা গেল। বিশেষ করে নারী সম্প্রদায়ের। মহিলাদের পোষাক আচার ও করণীয় বিষয়ে আইন করা হল। মহিলাদের পোষাকে হিজাব বা চাদর বাধ্যতামুলক করা হল। আমি যখন কয়েক মাস আগে এদেশে এলাম তখন ইরানে নারী পুরুষের পোষাক পরিচ্ছদ আচার ব্যবহার মেলামেশা বা খাওয়া দাওয়াতে কোনো আইন বা বাধ্যবাধকতা ছিল না। ইউরোপীয় বা পশ্চিমী ধারার সঙ্গে কোনো পার্থক্য দেখতে পাই নি। হঠাৎ তাই এই পরির্বতন অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছিল। 

     


    ১৯৭০-এ ইরানী মহিলারা 



    আবাদানে রাস্তার ধারে জল নিকাশের জন্য খোলা ড্রেন আছে। আবাদান মরুভূমির শহর, কোনো দিন বৃষ্টি দেখিনি, শুধু মার্চ মাসের কয়েক দিন দু-এক ফোঁটা ছাড়া। তাতে মাটি ভেজে না, ড্রেনে জল যাওয়া তো দূরের কথা। এক সন্ধ্যায় ম ম গন্ধে বাতাস ভরে গেল। উৎসুক হয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি ড্রেন দিয়ে জলের মত তরল কিছু বয়ে যাচ্ছে। আকাশের দিকে চাইলাম --- বৃষ্টির ছিটে ফোঁটা নেই। আমার মত উৎসুক অনেকেই বাইরে বেরিয়ে এসে ছিল। একজনের কাছে শুনলাম, রেভল্যুশনারি গার্ড (Revolutionary Guard) স্টাফ শপের গুদাম থেকে বীয়ার, হুইস্কি, জিন, ভদকা ইত্যাদি সব মাদকীয় পানীয় বাইরে ড্রেনের মুখে স্তুপাকার করে গুলি চালিয়েছে। সেই সব ড্রাম ক্যান বোতলের অসংখ্য ছিদ্র থেকে ঝরণার মত পানীয় ড্রেন দিয়ে প্রবহমান। এখন থেকে ইসলামিক রাষ্ট্রে সুরা পান নিষিদ্ধ।

    অনেকদিন পর এ আই টি র দরজা খুলল। আমি কাজে এলাম। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আগের মত কিন্তু ঠিক যেন আগের মত নেই। অনেক চেনা মুখ খুঁজে পাচ্ছি না। ডিপার্টমেন্টের কী অবস্থা, আগামী দিনে কী কী কাজ হবে তার পরিকল্পনা করার জন্য সেক্রেটারিকে ডেকে পাঠালাম। তাকে দেখে চমকে উঠলাম। আপাদমস্তক হিজাবে ঢাকা। এসে পযর্ন্ত ওকে দেখে আসছি, পরনে স্কার্ট বা অন্য কোনো পশ্চিমী পোশাক। আজ এই বেশে দেখে চমক তো লাগবেই। আরো অবাক হলাম দেখে যে ওর সঙ্গে এসেছে আরো একজন পুরুষ। প্রশ্ন করে জানলাম, ও আমার ঘরে আর একা আসতে পারবে না, সঙ্গে একজন পুরুষকে থাকতে হবে। 

    আমার বাংলোর কাছেই একটা সুইমিং পুল আছে। বুবাই গৌতমকে নিয়ে ওখানে যাই নিয়মিত। গন্ডগোল ডামাডোলের সময় সুইমিং পুলটা বন্ধ ছিল। শুনলাম অনেক দিন পর এবার খুলেছে। বুবাই গৌতমকে নিয়ে পুলে গেলাম। গেটে রেভল্যুশনারি গার্ড আমাদের আটকে দিল। নোটিস দেখলাম, সপ্তাহের কোন কোন দিন পুরুষরা ব্যবহার করতে পারবে আর কোন কোন দিন মহিলারা। পুরুষ ও মহিলা একই দিনে এক সঙ্গে সাঁতার কাটতে পারবে না। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন ছিল মেয়েদের জন্য।

    ইরান বদলে গেছে, ইরান বদলে গেল। এক নতুন অধ্যায় শুরু হল। 

    এ আই টি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। কিন্তু আগের মত নেই। যে সমস্ত প্রফেসর, একাডেমিক স্টাফ, কর্তা ব্যাক্তি ও কর্মচারীদের সাভাকের চর বলে সন্দেহ করা হয়েছিল তারা হয় পলাতক নয় কারাগারে। এ আই টির প্রেসিডেন্ট ডঃ কোর্মিকেও দেখা গেল না আর। আমার এক অভিজ্ঞতার কথা বলি। ডঃ তাহানির অনুরোধে আমি কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের কিছু ছাত্রের স্পেশাল প্রজেক্ট দেখশোনা করতাম। এদের মধ্যে একটি ছাত্র তার প্রজেক্ট ছাড়াও কম্পিউটার বিষয়ে পড়াশুনার সাহায্যের জন্য প্রায়ই আসত আমার কাছে। তার সঙ্গে আমার ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ঊর্ধে এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ছেলেটি সুপুরুষ, স্বাস্থ্যবান, মাথায় কোঁকড়ান ঘন চুল। অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও মেধাবী। নম্র ও বিনয়ী, কিন্তু কোথাও একটা অসন্তুষ্টি ও আক্রোশ আছে যা অসতর্ক মুহূর্তে বেরিয়ে আসে। পরে জেনেছিলাম ছেলেটি বিপ্লবী দলের মধ্যে আছে। তার নাম ফারহাদ। (ঠিক নামটা মনে নেই।) ডামাডোলে এ আই টি বন্ধ হওয়ার অনেক দিন আগে থেকেই লক্ষ্য করছিলাম ফারহাদ নিয়মিত আসে না। তারপর ওকে আর দেখতে পাই না। আমি অনেককে জিগ্যেস করলাম ফারহাদের খবর কেউ জানে কিনা। ওর নাম শুনলেই সবাই চুপ করে যেত। 

    বিপ্লব শেষে এ আই টি যেদিন খুলল। সেদিন অফিসে আমার কাছে একজন একটি ছেলেকে নিয়ে এল। বলল একজন আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। আমার সামনে একটি ছেলেকে নিয়ে এল। আমি একে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হল না। আমার সামনে দাঁড়িয়ে এক প্রায় কঙ্কালসার, ন্যুব্জ, মুণ্ডিত মস্তক একটি ছেলে। দুটি চোখ কোটরে ঢুকে আছে, ভাসা ভাসা চাহনি। ভাল করে কথা বলতে পারছে না। ছেলেটি বলল, “স্যর”। হঠাৎ আমার কানে এল অতি পরিচিত এক স্বর। আমার স্মৃতি সজাগ হয়ে উঠল। এ কণ্ঠস্বর ভুলবার নয়। সব পাল্টে গেলেও গলার স্বর পালটায় না। আমি বলে উঠলাম “ফারহাদ ?” 

    এ আই টি থেকে সাভাক ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে সাভাকের জেলে। সেখানে ইনটেরোগেশন ও অত্যাচার। শাহ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ইসলামিক রিপাবলিক সাভেকের জেল থেকে বিপ্লবীদের মুক্তি দেয়। ফারহাদও মুক্তি পেয়েছে। তবে স্বাস্থ্য, বুদ্ধি ও মস্তিষ্ক আর আগের মত নেই। আমি বিপ্লবের আর এক দিক দেখলাম। আমি সাভাকের অস্তিত্বের স্বাক্ষী হয়ে রইলাম। 

    আমার কাজ ঢিমে তালে চলছে। নতুন কিছু করার পরিকল্পনা নেই আর। ডঃ তাহানিও আর আমাকে কোনো চাপ দিচ্ছেন না। আমারো কন্ট্রাক্ট প্রায় শেষ হয়ে এল। দেখে শুনে মনে হচ্ছে এরা আর বিদেশিদের নিয়োগ করবে না। আমেরিকান তো নয়ই।

    দোকান পাট বাজার বাণিজ্য ক্রমশঃ স্বাভাবিক হয়ে এল। এয়ারপোর্ট খুলে গেল, প্লেন চলতে হুরু করল আবার। আমি মনস্থির করে ফেললাম, এদেশে আর নয়। তবে তখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কোথায় যাব, কি করব। প্রফেসর কালিজুরি আশ্বাস দিলেন ইরাক, লিবিয়া ও জার্মানিতে কাজ আছে। আমি যদি ইচ্ছা করি তবে উনি ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে এবার কোথাও গেলে একা একাই যেতে হবে – সপরিবারে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সে প্রস্তাবে আমার সায় নেই। দ্বিধা করছিলাম। মন বলছিল দেশে ফিরে যাই। দেশে তখন কম্পিউটার বিশারদের বিশেষ অভাব। আমার মত কম্পিউটার অভিজ্ঞ ব্যাক্তির চাহিদা অনেক। ইংল্যান্ডে যে পদে কাজ করছিলাম সে রকম পদ ও অর্থের কাজ আর পাব কিনা তার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে সে বিষয়ে এই মুহুর্তে কোনো চিন্তা না করলেই চলবে। কিছুদিন ছুটি নিই। আপাততঃ কিছুদিন কোনো কাজ না করলেও চলবে, অর্থ সমস্যা হবে না। 

    অনেকদিন ইরানে কাটানো হল, কিন্তু দেশটাকে দেখা হল না ভাল করে। আবাদানের গন্ডির বাইরে যাওয়া হয়নি। আমি তবু তেহেরান শহরটা মোটামুটি দেখেছি; যদিও রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছি। কিন্তু অনু আবাদানের বাইরে কিছুই দেখেনি। অবশ্য অনু মাঝে মাঝে মিসেস শর্মা বা ওর এক মিশরীয় বান্ধবীর সঙ্গে বাসরা শহরে শপিং করতে যেত। বাসরা আবাদানের পাশেই একটা শহর--- দোকান পাট – বিশেষ করে সোনার দোকানের জন্য বিখ্যাত ছিল। অনু ফিরে এসে গল্প করত --- দোকানে দোকানে কেমন ঝুড়িতে করে স্বর্ণমুদ্রা রাখা আছে, দোকানের সামনে লোহার তারে সোনার হার, সোনার অলঙ্কার ঝুলছে। তখন ইরানে সোনা খুব সস্তা। সোনা বা বিলাসী বস্তু, কোনো কিছুতে অনুর কোনো আসক্তি নেই। আমার কাছে কোনদিনো ও কোন সোনার গয়না চায় নি। অনুর কাছে টাকা থাকত যথেষ্ট; ইচ্ছা করলে অনেক সোনা কিনতে পারত কিন্তু কেনেনি। কিছু স্বর্ণমুদ্রা কিনেছিল উপহারের জন্য; দেশে গিয়ে সকলকে উপহার দেবে বলে। মনে আছে একবার অনু বাসরা গেল সোনা কেনার জন্য। অনু পুতুল ভালবাসতো খুব – দেশ বিদেশের পোষাকপরা বিভিন্ন ধরণের পুতুল। বাসরাতে সোনা কিনতে গিয়ে একটা দোকানে একটা জাপানী পুতুল দেখে এত মুগ্ধ হয়ে গেল যে সোনা না কিনে সেই পুতুলটা কিনে নিয়ে এল। এটা এখনো আমাদের বসার ঘরে সাজানো আছে। আমি নিজে হাতে একটা কাঁচের বাক্স তৈরি করে যত্নে রেখেছি তাকে।
     


    সেই জাপানী পুতুল



    ক্রমশঃ 
     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০২৫ | ৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন