এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন পর্ব ৬

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৩ মে ২০২৫ | ৫১ বার পঠিত
  • ছবিঃ রমিত 


    যতবারই লিখতে বসি ততবারই বসিরহাটের বাড়ি হারানোর সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আমি ও খোকন বাইরে। মা একা, সঙ্গে হাঁদি চিমু ---হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। দুদিন বাদে যারা পরীক্ষা দেবে তারা আজ গৃহহীন। কল্পনা করা যায়? শুধু গৃহহীন নয়, বড় দুই ভাই বাইরে, দাদা হাওড়ায় আর মেজদা যাদবপুরে এঞ্জিনীয়ারিং কলেজে, তাদের চিন্তায় বড় ভাইদের অনুপস্থিতিতে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর কর্তব্য। 

     


    খোকন (বিমলেন্দু) যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে 



    সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে। একদিকে অসুস্থ বাবা যন্ত্রণায় ছটফট করছে, অন্য দিকে অর্থাভাব। মাথার উপর হাজার চিন্তা, সহস্র সমস্যা। পড়ায় মন বসে না। পড়াশুনা করার মত অনুকূল আবহাওয়া নেই। তবু এই অবস্থার মধ্যে থেকেও ওরা পরীক্ষায় যে ফল করেছে তা বাহবার যোগ্য। ওদের একাগ্রতার ও দৃঢ় সংকপ্লের যে পরিচয় সেদিন ওরা দিয়েছিল উত্তরকালে ওরা তার যথাযত পুরস্কার পেয়েছিল। হাঁদি চিমু দুজনেই এই রকম প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করে চাটার্ড একাওউন্টান্ট হয়ে স্বচেষ্টায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আমাদের সেই দুঃসময়ে হাঁদি ও চিমু যে সাহস, সহনশীলতা ও মনোবল নিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তা প্রশংসার যোগ্য। ওরা না থাকলে আমাদের যে কি দুর্গতি হত তা কল্পনা করা যায় না। 
     

     



    সে দিনের হাঁদি (নির্মলেন্দু) ও চিমু (কমলেন্দু) 



    মা অনন্যা, কি অসাধারণ মনোবল। বড় দুই পুত্র সংসারের বাইরে। অসুস্থ স্বামী, চার নাবালক পুত্রকন্যা। সংসারে কোন আয় নেই। বাঙ্গালী ঘরের গৃহবধুরা দুর্দিনে যার আশ্রয় নেয় মা-ও তার আশ্রয় নিল। শেষ সম্বল সেই গয়নার বাক্স। আমাদের পাড়ায় একটা ছোট স্যাঁকরার দোকান ছিল। মার সুসময়ে, বাবার যথেষ্ট উপার্জন কালে মা এই সোনার দোকান থেকে গয়না গড়াত। মা ছিল সম্ভ্রান্ত উকিল-গিন্নী ক্রেতা। এই স্যাঁকরার নাম রামানন্দ। বহু দিনের আলাপ পরিচয়ের ফলে মা ও রামানন্দের ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্ক ছাড়িয়ে এক মানবিকতার সম্পর্ক তৈরি হয়ে উঠেছিল। মায়ের দুঃসময়ে এই বিক্রেতা হয়ে উঠল মায়ের পরিত্রাতা। একটার পর একটা গয়না বন্ধক দিয়ে মা রামানন্দর কাছ থেকে টাকা আনত সংসার চালানোর জন্য। হাঁদি ছিল মাধ্যম। হাঁদির হাত দিয়েই হত সব লেন দেন। 

    রামানন্দ অতীব সহৃদয় মানুষ। অনেক সময় গয়না না নিয়েই টাকা দিতে চাইত। কিন্তু মা কোনদিন তেমন করে টাকা নেয় নি। এ সব কথা আমি কিছুই জানতাম না। মা আমাকে কোনদিন বলেনি। কোন দুঃখের কথা, কোন কষ্টের কথা মা আমার কানে তোলে নি। আমি হাঁদির মুখে শুনেছি মা চলে যাওয়ার পর। হাঁদির কাছে শুনেছি রামানন্দ ওকে বলেছিল, গয়নাগুলো নিয়ে যেতে। বলা বাহুল্য মা সেগুলো আর নেয় নি। রামানন্দর ছোট্ট সোনার দোকান, একাই কাজ করে, অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। ধনী তো নয়ই। কিন্তু মনের দিক দিয়ে ওর থেকে ধনী আমি কাউকে দেখিনি। রামানন্দ, তোমাকে আমি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। 

    মা আমার চাপা আগ্নেয়গিরি। ভিতরে জ্বলন্ত লাভা টগবগ করে ফুটছে, কিন্তু আগ্নেয়গিরির মুখ বন্ধ। অন্তর্নিহিত অগ্নিস্রোত কখনো উৎক্ষিপ্ত হয় নি ভূতলে। 
    মা বাইরে শীতল, শান্তির প্রতিমা। 
    মা আমার অতুলনীয়া। 

    বাবা মায়ের গৌরবের দিনে আমাদের বাড়ীতে থাকত অনেক লোকজন। মেজ কাকার মেয়ে বেলাও থাকত। বেলা সুন্দরী ছিল --- স্বর্ণচাঁপার মত গায়ের রং, নিটোল মুখ, ঋজু তন্বী দেহ। মেজ কাকিমাকে আমি দেখিনি। মায়ের মুখে শুনেছি মেজকাকিমাকেও দেখতে খুব সুন্দর
    ছিল। অকালে কাকিমার মৃত্যু হয়। বাবা মা তাই বেলাকে বসিরহাটের বাড়িতে নিজেদের কাছে নিয়ে চলে আসে। বেলা আমার থেকে কয়েক বছরের ছোট। তখনো খুকু জন্মায় নি। বেলাই তখন আমার একমাত্র বোন। বেলাকে আমি খুব ভালবাসতাম। মার উদ্যোগে বাবা বেলার বিয়ে দিলেন। বেলার শ্বশুরালয় দক্ষিণেশ্বর-কামারহাটিতে। 

    লন্ডন থেকে আমরা যখন দেশে যেতাম তখন অনু প্রতিবার একদিন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গিয়ে শিব পূজো করে আসত। কোন বার বাদ যায় নি, আর দক্ষিণেশ্বর গেলেই অবধারিত বেলার কাছে যেত। দেখাও হত আর লুচি সহযোগে উপবাস ভঙ্গও হত। কয়েক বার এমন হয়েছে আমি যেতে পারিনি কিন্তু কাউকে না কাউকে সঙ্গে নিয়ে অনু দক্ষিণেশ্বরে গিয়েছে এবং বেলার বাড়ীও। বেলা ওর বৌদির সঙ্গে একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। আমরা তখন লন্ডনে। একদিন এক মর্মান্তিক খবর শুনলাম। বেলা আত্মহত্যা করেছে। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কি জানি আমরা যদি দেশে থাকতাম, তাহলে অনু হয়ত বেলার মনের কথা জানতে পারত, অনু হয়ত ওকে বোঝাতে পারত, তাহলে হয়ত এভাবে ওর জীবনাবসান হত না। যদি যদি যদি ... হয়ত হয়ত হয়ত ...। আমার জীবনে এমনি ‘যদি’ ‘হয়ত’ বার বার আমাকে পীড়া দিয়েছে। 

    বাবার খুড়তুত বোন শেফালী থাকত আমাদের বাড়িতে। বাবার কাকা, শেফালীর বাবা, মারা যাওয়ার কিছু কাল পরে বাবা শেফালীকেও নিয়ে আসেন নিজের সংসারে, বসিরহাটের বাড়িতে। বাবা যেমন, বাবা তেমনি। সবার অসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। অথচ সেই মানুষের জীবন গৃহহারা, বিনা চিকিৎসায়, চরম দারিদ্র্যর মধ্যে শেষ হয়ে গেল। কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় নি। অবাক পৃথিবী!! 

    শেফালী আমার পিসিমা। আমরা দুজনে প্রায়ই একই বয়সী ... পিসিমা বোধহয় আমার থেকে একমাসের বড় হবে। পিসিমা আমার খেলার সাথী, তুই-তোকারির সম্পর্ক, দুজনে একসঙ্গে বড় হয়েছি। আমি তখন বোধহয় দশম শ্রেণীতে পড়ি। বাবা মা পিসিমার বিয়ের জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। পিসিমাকে দেখতে ভালো --- সম্বন্ধ পেতে অসুবিধা হয়নি। ঘটা করে পিসিমার বিয়ে হল। শুনেছি মায়ের গয়নার কিছুটা গিয়েছিল পিসিমার বিয়েতে। আমাদের পাড়াতে চন্ডীদার (চণ্ডী মিত্র) একটা ডেকরেটিং -এর দোকান ছিল। চন্ডীদার সঙ্গে আমার বেশ ভাল আলাপ ছিল। আমিই উদ্যোগী হয়ে চণ্ডীদাকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছিলাম রঙিন কাপড়ের প্যান্ডেল করে বিয়ের আসর করতে; আর লাউডস্পিকারে সানাইর সুর ও গান বাজাতে। সে কালের বসিরহাটে অভিনবত্ব। 
     

     



    পিসেমশায় (সুনীল কুমার বিশ্বাস) ও পিসিমা (শেফালী)



    কালে পিসেমশাই, সুনীল কুমার বিশ্বাস -এর সঙ্গে আমার হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কলকাতায় কসবায় পিসিমা পিসেমশায়ের ফ্ল্যাটে আমি কিছুদিন ছিলামও। লন্ডন থেকে যতবারই আমরা কলকাতায় যেতাম ততবারই আমরা পিসিমার সঙ্গে দেখা করতাম। কখনো ভুলিনি। এঁরা কেউই আর নেই। 

    ১৯৫৩ সালে আমি স্কুল ফাইনাল পাস করে কলকাতায় স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হলাম – বিজ্ঞান বিভাগে। তখন হাওড়ায় মামার বাড়ীতে থাকতাম। মামার বাড়ীতে থাকার জায়গার অভাব ছিল। ছাদে উঠার সিঁড়ির উপরে একটা বিছানা ছিল। সেই বিছানাটা আমার আস্তানা। বিছানা থেকে সিলিঙের উচ্চতা প্রায় চার ফুটের মত। বিছানার উপর বসা যেত কিন্তু একটু অসতর্ক হলে মাথা ঠুকে যেত সিলিঙে। এই বিছানাই আমার শোয়ার জায়গা, এই বিছানাই আমার পড়ার জায়গা। আমার আলাদা কোন পড়ার টেবিল চেয়ার ছিল না। 

    সে সময় মামার বাড়ীতে অনেক লোকজন থাকত। বৃদ্ধ দাদু (মায়ের বাবা), দিদু (মায়ের মা), বড় মাসীমা (মায়ের বড় বোন – গয়াদার মা), গয়াদা (বড় মাসীমার ছেলে), ও তারাদি (বড় মাসীমার মেয়ে), মেজ মামা আর ছোট মামা। বাড়ী একটা কিন্তু সংসার দুটো --- বড় মামা তার সংসার নিয়ে আলাদা থাকত। দুটো রান্নার জায়গা ছিল। সে বাড়ীতে আমার সঙ্গী ছিল আমার দুই বোন, তারাদি ও শৈলদি (বড় মামার মেয়ে)। তারাদি আর শৈলদি দুজনেই আমার থেকে কয়েক বছরের বড়। বাড়িতে যতক্ষণ থাকতাম ততক্ষণ এদের সঙ্গেই আমার সময় কাটত – এরাই আমার কথা বলার মানুষ, এরাই আমার বন্ধু। 

    বাবা আমার হাতখরচের টাকা পাঠাতেন --- কলেজের মাইনে, বাস ভাড়া, টিফিন ইত্যাদির জন্য। কিন্তু সে টাকা আমার হাতে দিতেন না --- দিতেন দিদুকে। দিদু তার থেকে প্রতিদিন আমার বাস ভাড়া দিত এবং সময়মত কলেজের মাইনে দিত। মাসীমা আমাকে মায়ের মত ভালবাসত। মাসীমাই আমার নিত্য প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখত। পরে অবশ্য আরও দুই নারী এসেছিল এবাড়িতে যারা আমাকে খুব স্নেহ করত, আমার ভালমন্দের দিকে নজর রাখত। এরা দুজন, মেজমামীমা ও ছোটমামীমা। মামার বাড়ীতে থাকার জায়গার অভাব ছিল কিন্তু স্নেহ ভালবাসার অভাব ছিল না। আমি মামা মামীমাদের, দিদু মাসীমার অফুরন্ত স্নেহ ভালবাসা পেয়েছি। আমি এদের কাছে চির ঋণী, চির কৃতজ্ঞ। 

     

     


    মেজ মামা ব্রজেন্দ্র নাথ রায় 

     

     


    ছোটমামা ভূজেন্দ্র নাথ রায় 



    ইংল্যান্ড থেকে যখনই আমরা কলকাতায় যেতাম তখনই আমরা মামার বাড়ী যেতাম। যখনি যেতাম তখনি মেজমামার হাতে অতি বিনীতভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে কিছু অর্থ দিতাম। এতে মামার কিছু হত কিনা জানিনা কিন্তু আমি তৃপ্তি পেতাম। এমনই একবার গিয়ে দেখলাম মামার বাড়ির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ছোটমামা নেই আর। মেজ মামীমা চলে গিয়েছে। আমার অতি ভালবাসার দুজন নেই আর --- বাড়িটা কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগল। বাড়ির নক্সাটাও পাল্টে গেছে। বাড়িটা ভাগ হয়ে গেছে তিন মামার মধ্যে। ছোটমামার ছেলে মানু (শঙ্কর) পুরানো বাড়িটার কিছুটা ভেঙ্গে নতুন করে বিন্যাস করেছে। আমার সেই ছাদের সিঁড়ির আস্তানাটা নেই আর। আমার ছাত্র জীবনের স্মৃতি চিহ্ন মুছে গেছে। 

    পুরানো বাড়ি ভেঙ্গে নতুন ছাদ তৈরি হয়েছে। সুতরাং আমার সেই বিছানা আর নেই। যাদের সে কালে দেখেছিলাম তাদের এখন বয়স বেড়েছে। যাদের শিশু অবস্থায় দেখেছিলাম তারা এখন বিবাহিত, ঘোর সংসারী। নীচে দুটো ছবি দিলাম। এ ছবিতে যারা আছে, তাদের মধ্যে ছজন এ পৃথিবীতে নেই আর--- বড় মাসীমা, মেজমামা, মা, ছোটমামীমা, অনু ও গয়াদা। তবু স্মৃতি রেখে যাই। তাদের ছবি তুলে এনেছিলাম। 

     

     


    মানু (শংকর), দিলীপ, অনু, খুকু, (বসে) বড় মাসীমা, মেজমামা, মা, ছোটমামীমা, লেখক। 

     


    শিউলি, লেখক, পিউ (খোকনের মেয়ে), খুকু, অনু, গয়াদা, (বসে) মা ও ছোটমামীমা। 



    গয়াদা ও মেজমামার কথা অন্যত্র আরো বলেছি। 

    .. ... ... 

    আবার নীলখাতায় ফিরে আসি, ১৯৬৪ সালে --- সেদিনের আমার মনের অন্তর্দ্বন্দ নিয়ে।

    তবু বুঝি সেই পথ শেষ হয়ে গেছে। জীবনের সেই দারুন উদ্ভাসিত আবেগ বুঝি আর তেমন নেই। সব কিছুর গতি পাল্টেছে। আমার জীবন আমার কর্ম আমার বিস্তৃতি আমার চিন্তা; সব কিছু এখন সু-কে ঘিরে। আমার পৃথিবীর সব শক্তির উৎস সু। বুঝতে পারছি সু-কে ছেড়ে আমার মুক্তি নেই। সু-কে পেয়ে বোধহয় পেতে পারি সু-র চিন্তা থেকে রেহাই।

    সাধ ছিল সু-কে যখন আনবো তখন আমার ঘরে কোন অভাব থাকবে না। পরিচ্ছন্ন ঘরে সাজানো সংসারে ওকে এনে তুলবো। কোন দিকে কোন অভাব থাকবে না, ধারে কাছে কোথাও অসুন্দর থাকবে না। আমার জীবনের পূর্ণ বসন্তে ওকে বরণ করে আনবো। নৈবেদ্যর থালাটি পূর্ণ থাকবে। শুধু ও এসে চূড়ায় আসন নেবে। পূর্ণ হবে আমার নৈবেদ্য। অতীতের অনেক সাধের মতো আমার এ সাধও যে মিটবে না, তা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ। সুতরাং অকালেই আনতে হবে ওকে -- আমার এই অভাবের সংসারে। কষ্ট ওর কপালে আছে আমি নিরুপায়। আর শুধু আমাকে পেয়েই যদি ও সুখ পায় তবে সেটাই হবে ওর একমাত্র সুখ।

    দক্ষিণেশ্বর ৬-৪-৬৪

    কৈশোর ও প্রাক যৌবন

    এক দারুন অবক্ষয়ের যুগে আমাদের যৌবন শেষ হতে চলেছে। প্রথম বই নিয়ে যখন স্কুলে যেতে শুরু করেছি তখন সারা পৃথিবী জুড়ে হিংসার মাতামাতি। শুভ বিদ্যারম্ভের মঙ্গল শঙ্খের বদলে যুদ্ধের কানাড়া বেজেছে। সারা ভারতবর্ষ তখন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে। গান্ধীজীর আগ্রহে ও মতে ভারতবর্ষ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইংরেজের সহযোগিতা করছে। আমি তখন নেহাতই ছোট। তবু সেই কৈশোরেই লক্ষ্য করেছিলাম পাড়ায় বাড়িতে ফিসফিস কথাবার্তার মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক লুকিয়ে আছে। হিরোশিমা নাগাসাকির কালো ধোঁয়ায় সভ্য মানুষের নিঃশ্বাস আটকে আছে। যুদ্ধের হাওয়ায় বাংলার সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। সামাজিক আদর্শ নীতিবোধ ইত্যাদি কেমন যেন উল্টে পাল্টে গেল। এতদিন পর্যন্ত স্বদেশীয়ানা ও দেশপ্রেমের যে ভিতটা সমাজের মূলে ছিল সেটাও কেমন যেন ভেঙ্গে গেল রাতারাতি। একটা হঠাৎ বড়লোকি সমাজের পত্তন হয়ে গেল। স্বাধীনতার পর অবস্থাটা আরো সাংঘাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং এরাই হয়েছে দেশের শিরোমণি।

    প্রাক স্বাধীনতা যুগে স্বদেশীয়ানায় যারা মাতাল হয়েছিল তারা ভোল পাল্টালো। যেন এতদিন চোখ বন্ধ করে কানামাছি খেলছিল, এখন চোখ খোলা পেয়ে হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই নিয়ে ঘর সাজাচ্ছে। আমরা আর অন্যের কথা ভাবি না। বাঃ, এতদিন যে কষ্ট করলাম তা কি এমনি এমনি! 

    ভারতবর্ষ স্বাধীন হলো। স্বাধীনতার পুরস্কার পেল বাংলা। দেশ ভাগ হলো। এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, কালোবাজার, দুর্ভিক্ষ, সহ্য করেও যে বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছিল সেই বাংলাদেশই একবারে মুখ থুবড়ে পড়ল, হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত শরণার্থী মানুষের চাপে। অবাক চোখ নিয়ে একটা কিশোর এই সমস্ত ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশীদার হলো। 

    আমাদের পরিবারে এর ঢেউ যত সংঘাতিকভাবে লাগতে পারতো তত সাংঘাতিকভাবে লাগেনি। কিন্তু আগাগোড়া সমাজ জীবনে যে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন হচ্ছিল সেটা সেই বয়সেই আমি টের পাচ্ছিলাম। তার অবশ্য একটা কারণ ছিল। আমরা থাকতাম একটা নাম করা মফঃস্বল টাউনে এবং একেবারে শহরের কেন্দ্রে। কলকাতার মতো মস্ত শহরে যে আলোড়ন পরোক্ষভাবে কোনো কিশোরের চেতনায় লাগতে পারত তেমন কোন স্পন্দন বা আন্দোলন এই ছোট শহরে কোনদিন সরাসরি তার মনে ঘা দিত না। পিতা ছিলেন সফল আইনজীবী সুতরাং খুব স্বাভাবিকভাবেই শহরেই বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল। বলতে বাধা নেই যে, পিতা যথেষ্ট পরিমাণে সমাজ ও রাজনীতিতে উৎসুক ছিলেন না যদিও শেষ বয়সে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। 

    তিনি ছিলেন একটু বেশি রকমের শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষ। সব সময় আমাদের সকল রকম উত্তেজনা থেকে আগলে রাখতেন। শুধুমাত্র পড়াশুনা ছাড়া আর অন্য কিছুতে মন দিই তা তিনি চাইতেন না। যাই হোক, আরো একটা কারণ ছিল যা আমাকে সমস্ত রাজনৈতিক আবহাওয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে রাখত। সেটা টাউন হলের পাশের মাঠটা। টাউন হল আমদের বাড়ি থেকে দু’মিনিট। এই টাউন হলের একটা ঘরে আমাদের লাইব্রেরী; এই টাউন হলের পাশের মাঠই আমার খেলার মাঠ। এই স্থানই আমার প্রাণের বন্ধু। শহরের যত কিছু সভা সমিতি তা সে যে রকমই হোক না কেন প্রায় সমস্তই এই মাঠে হতো। ফলে আমি, প্রথম দিকে খুব আগ্রহ না থাকলেও তার শ্রোতা হয়ে পড়েছিলাম। আর গর্বের কথা এই যে ভারতবর্ষের প্রায় সব ধরনের আন্দোলনের ঢেউই এই শহরে এসে লাগত।

    বিবাহ

    ভারতীয় আইন অনুযায়ী বিবাহ রেজেট্রি করার পর বর-কন্যার বাসস্থানের আদালতে রেজিস্ট্রেসনের নোটিস দিতে হয়। আসানসোল বর্ধমান আদালতের অধীনে। তাই বর্ধমান আদালতে আমাদের বিয়ের নোটিস প্রকাশিত হয়েছিল। সেই নোটিস দেখে কোন এক সময় কোনো একজন অনুর বাড়িতে খবর দিয়েছিল। খবর পেয়ে অনুর সেজদা (কচি অরফে অমলেন্দু ভুষণ দাস) আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তারপর ইতিহাস। দুই পরিবার মিলে দিন-ক্ষণ দেখে আমাদের সামাজিক প্রথায় বিবাহের ব্যবস্থা করে।

    … … যে উৎসাহ যে প্রচন্ড তাগিদ ছিল এতদিন তা বিয়ের সেই তথাকথিত সামাজিক ব্যাপারের আওতায় পড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত ব্যাপারটাই যেন গতানুগতিক হয়ে গেল। অনুমোদিত বিয়ের নিয়ম মাফিক দেখাশোনা দেনা পাওনা কথাবার্তা তারপর সেই অনুষ্ঠান। এর অনেক কিছু আমি পছন্দ করি না কিন্তু জীবনের অনেক কিছু অনেক জিনিষই যেমন ইচ্ছা না থাকলেও করতে হয় এটাও তেমনি। আমাকে করতেই হবে। অবশ্য সু-র দাদাকে একটা চিঠি দিয়েছি। লিখেছি বিবাহে পণ ইত্যাদি আমি সমর্থন করি না। আমি চাইনা আমারই বিবাহে তেমন কিছু ঘটুক। আমার বিয়ের ব্যাপারেও আমার কোন কথারই কিছু মূল্য নেই। অবশ্য একমাত্র সুখের বিষয় পাত্রী আমার মনোনীতা ও আকাংক্ষিতা। পৃথিবীতে কোন কিছুই আর আকর্ষণীয় নয় একমাত্র সু ছাড়া। ওই, আমার শেষ ভরসা, ওর প্রেমই আমার একমাত্র মূলধন। সু যদি আমাকে আবার আগের মত মাতাল করে রাখতে পারে, উৎসাহী করে রাখতে পারে, তবেই শেষ রক্ষা হবে। জীবন সম্বন্ধে বড়ই হতাশ হয়ে পড়েছি।

    আমার সম্বন্ধে ও আমাদের যৌথ জীবন সম্বন্ধে সু-র কি ধারণা আছে জানিনা। আমার দারুণ ভয় করে ও যদি যথেষ্ট বাস্তববাদী না হয় তবে ওর সব রকম কল্পনা ঠিক ঠিক না মিললে ও মুষড়ে পড়বে। আর ও যদি মুষড়ে পড়ে তবে আমার পায়ের তলার মাটি সরে যাবে। কোথাও আর আশ্রয় পাব না। অবশ্য সু যদি এমনি থাকে তবে দাম্পত্য জীবনে আমার থেকে সুখী আর কেউ হবে না। 

    দক্ষিণেশ্বর ২০-৫-৬৪ 

    আজ ২৭শে মে ১৯৬৪। বেলা দুটো (?) মিনিটে নেহেরুজী পলোকগমন করলেন। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের এক অধ্যায়ের শেষ হয়ে গেল। তখন টেবিলে বসে কাজ করছিলাম। একজন লোক এসে খবরটা দিল, আমি শুনলাম। কিন্তু মনের মধ্যে কোনরকম প্রতিক্রিয়া হলো না। আসলে আমরা অনেকদিন থেকেই নেহেরুজীর প্রতি আস্থা হারিয়েছিলাম। কলকাতায় গেলাম। কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। শুধু দোকানপাট বন্ধ, অফিস ছুটি। জনতার হাবভাব বা কথাবার্তা শুনে এমন কিছু মনে হলো না যে দেশে সাংঘাতিক কিছু ঘটে গেছে। একটা পরিবর্তন আমার কাম্য।

    দক্ষিণেশ্বর ২৭-৫-১৯৬৪

    অনুভূতিটা আমাকে মাঝে মাঝে সাংঘাতিকভাবে নাড়া দেয়। (সু-কে) অনুকে আমি আমার সমস্ত চেতনা দিয়ে ভালোবাসি। আমার কাছে ও যেন একটা সমগ্র অস্তিত্ব। শুধু একটা মেয়ে নয়, একটা প্রাণ নয়, যেন আরো কিছু। অনুকে ছাড়া অন্য কাউকে কি আমি এত ভালবাসতে পারতাম! আমার পৃথিবীতে এমন কোন মেয়ে দেখিনি যাকে আমার ভাল লাগে। কোন মেয়ে কি ভালো কবিতা পড়ে তন্ময় হয়ে যেতে পারে, গানের জন্য সংসার ছাড়তে পারে, উৎকৃষ্ট ছবি দেখে পাগল হতে পারে? মেয়েদের সম্পর্কে লেনিনের একটা উক্তি মনে পড়ছে --- এমন একটা মেয়ে দেখাতে পারো যে দাবা খেলতে পারে, মার্কস বুঝতে পারে, রেলওয়ে টাইম টেবিল পড়তে পারে? আমার তো মনে হয় এদেশে এমন মেয়ে সত্যিই বিরল। হয়ত বা আমি কোন মেয়েকেই ভালোবাসি না। বোধহয় কাউকেই ভালোবাসি না। শুধু অনু নামে একটি অস্তিত্ব যা আমার নিজেরই চিন্তা আকাঙ্ক্ষা দিয়ে গড়া, তাকে আমি ভালোবাসি। যার হৃদয় ভাবতে গেলেই অনুর কথা মনে পড়ে, যার দেহ ভাবতেই অনু সামনে এসে দাঁড়ায়, যার স্পর্শ মনে হলেই অনুর উত্তাপ আমার গায়ে লাগে। হয়তো আমি নিজেরই দ্বিতীয় কোন সত্তাকে ভালোবাসি যা অনুরই মতো। অনু কি আমার ভালবাসার সম্মান আজীবন রাখবে, যে সম্মান অনুর নিজেরই।

    দক্ষিণেশ্বর ১৩-৮-৬৪

    … … শেষ পর্যন্ত সামাজিক বিয়েটা আমাদের হল -- গত ১২ ডিসেম্বর ১৯৬৪ সাল, শনিবার ২৬শে অগ্রহায়ণ, আসানসোলে সন্ধ্যা লগ্নে নির্বিঘ্নে বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের সময় দেখলাম অনু অত্যন্ত অসুস্থ। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি নিজে নিজে। দুজনে সব সময় ধরে ছিল। আমার হাতে যখন হাত রাখল তখন ওর হাত ঠক ঠক করে কাঁপছে। ও সারাক্ষণই অধোবদন ছিল --দৃষ্টি একেবারে মাটির দিকে। এমনকি শুভদৃষ্ঠির সময়ও আমার চোখে ভালো করে চোখ রাখেনি। ওর অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছিল বিবাহ নামক অনুষ্ঠানটা তাড়াতাড়ি সারা হলেই বাঁচি। বাসরে এসেও একই অবস্থা। সেই যে চোখ বন্ধ করে লেপ মুড়ি দিল, সকাল সাতটার আগে চোখ আর খোলেনি। ভাবছিলাম অনুর এই অবস্থার সবটাই কি নির্জলা অসুস্থতা, বা অন্য কিছু। অথবা অসুস্থতা এবং অন্য কিছু দুটো মিলে ওকে একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলেছিল। বাসরে কয়েকজন অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে ছিল আর ছিল ওর দিদিরা এবং দুজন বৌদি। আমার কয়েকটি বন্ধুও ছিল বাসরে --- কফি হাউসের বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সহকর্মী সুনীল হালদার ও সনৎ বোস। সাধারণ কিছু কথাবার্তা হচ্ছিল। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও তারা কোন কিছুতে যোগ দিতে পারছিল না। আমিও কোন কথাবার্তায় উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। পাশে অসুস্থ ও শয্যাশায়ী কনে এবং অসংলগ্ন কিছু কথাবার্তা। সব মিলে আসর টিমটিম করছিল। হয়তো আরো কিছুক্ষন এমন অবস্থায় থাকতো যদি না ওর ভাইয়ের, বাদলের, শুঁয়োপোকা হাতে প্রবেশ ঘটত এবং তাই দেখে কনের ‘ওরে বাপরে’ বলে লেপের তলায় অন্তর্ধান ঘটত সারা রাতের জন্য (শুঁয়োপোকাতে অনুর দারুণ ভয়)। যাই হোক নায়িকা যখন লেপের তলায় তখন আসর বা বাসর কিছুই জেগে থাকতে পারে না। অগত্যা সকলের গুটি গুটি প্রস্থান। 

    সেই ঘরেই এদিক ওদিক অনেকে শুয়ে পড়ল। আলো নিভল। অন্ধকারে অনুকে স্পর্শ করলাম। কোন সাড়া নেই, প্রায় স্পন্দনহীন, যেন চেতনাহীন দেহ। হাতটা সরিয়ে নিলাম এবং আমিও চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। চোখে ঘুম নেই এবং আশ্চর্য আমার মন বেবাক ফাঁকা, কোন ভাবনা নেই, চিন্তাহীন আমি জেগে আছি এমন ঘটনা শুধু সেদিনই ঘটেছিল। চুপচাপ কতক্ষণ পড়েছিলাম মনে নেই। আমার হাতের উপর মৃদু চাপে আচ্ছন্নতা কাটল। চারিদিকে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার, এদিকে ওদিকে দু-চারটি ঘুমন্ত দেহ। হাত বাড়িয়ে জানলাটা খুলে দিলাম একটু হাওয়ার আশায়। চাঁদ উঠেছিল জানতাম না। অপ্রত্যাশিত আলো এসে ওর মাথায় কপালে লাফিয়ে পড়ল। আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকলাম।

    আমার বিয়েটাই কেমন যেন। কোন কিছুই আর পাঁচটা বিয়ের মত নয়। অথচ সকলে মিলে আমাদের বিয়েটাকে আর পাঁচটা বিয়ের মত করতে চেয়েছিল। তবুও মাঝে মাঝে কেমন যেন এঁকে বেঁকে যাচ্ছিল। ছাদনাতলায় কনে অসুস্থ হয়ে পড়ল, একা দাঁড়াতে পারে না। বাসরের দীপ নিভল মধ্য রাত্রের আগেই। আর পরদিন বর-কনে ঘরে না ফিরে চলল অন্যত্র। ইচ্ছাটা আমার মনেই ছিল তাই যখন সেজদা বলল যে পাঁশকুড়াতে গিয়ে বাবাকে প্রণাম করে আসতে তখন আমি সে প্রস্তাবকে লুফে নিলাম। ওর বাবা বিয়েতে আসেননি এটা অনুর যে কতটা লাগবে তা আমি বুঝেছিলাম তাই আমি ভাবছিলাম কেমন করে কত তাড়াতাড়ি বাবার সঙ্গে দেখা করা যায়।

    পরদিন বেলা একটা নাগাদ রওনা হলাম আসানসোল থেকে। সঙ্গে একটা পুরো ব্যাটেলিয়ান ---মেজদা মেজ বৌদি ওদের বাচ্চা, সেজদা সেজ বৌদি ওদের বাচ্চা, ছোড়দি সবাই চলেছে বাবাকে বোঝাতে। এদের মধ্যে এমন একটা ভাব ছিল যে যেন একটা অত্যন্ত অপরাধ হয়ে গিয়েছে। ক্ষমা চেয়ে বৃদ্ধকে শান্ত করতে হবে। সারা রাস্তায় ট্রেনে এরা জল্পনা-কল্পনা করেছে কোথায় কে কিভাবে বাবাকে ধরবে এবং কে কেমন করে কোন কথা বলে তাঁকে শান্ত করবে। এদের এই ভাবসাব দেখে আমার অত্যন্ত খারাপ লাগছিল। মাঝে মাঝে হাসিও পাচ্ছিল। অনু কোনো কিছু অন্যায় করেনি, আমিও করিনি। অথচ এরা এমন ব্যবহার করছিল যে আমরা যেন এক অপরাধ করে ফেলেছি। সকলে মিলে আমাকে বারবার বুঝিয়েছে। বাবা বৃদ্ধ হয়েছেন, রেগে হয়তো অনেক কটু কথা বলতে পারেন, আমি যেন কিছু মনে না করি। এরা জানে না আমি কখনোই কিছু মনে করতাম না। এর থেকে অনেক বেশি অপমানিত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে, অনেক বেশি বিপর্যয়ের কল্পনা করে, অনেক কিছু প্রতিকূল অবস্থার কথা চিন্তা করে আমি অনুকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

    যাহোক প্রায় রাত্রি একটার সময় দেশের বাড়িতে পৌঁছানো গেল। আমি ও আমরা সকলে অত্যন্ত অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে অনুর বাবা আমাকে যথেষ্ট স্নেহের সঙ্গে ও সমাদর করে গ্রহণ করলেন। পরদিন নিজে বসে যত্ন করে আমাকে খাইয়ে তবে ছাড়লেন। অনু সত্যি খুশী হয়েছে বাবার অভ্যর্থনা দেখে। আমার সেটাই কাম্য ছিল।

    এই দুদিন অনু একটাও কথা বলেনি।

    দক্ষিণেশ্বর ২-১-৬৫ 

    স্বাভাবিক ভাবে সামাজিক প্রথায় আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হল। মার্চ মাসে রেজেস্ট্রি করে আইনমত আমরা স্বামী-স্ত্রী রূপে শপথ নিই। রেজিস্ট্রির কাগজে সই করার পর রেজিস্ট্রার মহাশয় বলেছিলেন কিছুদিন পরে সার্টিফিকেটটা নিয়ে যেতে। কয়েকমাসের মধ্যেই আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে অগ্নিসাক্ষ্য করে আবার বিয়ে হয়ে গেলে আমি নিছক কুঁড়েমি করে অপ্রয়োজনীয় ভেবে সেই সার্টিফিকেট আর নিতে যাইনি। সেই অদূরদর্শিতার ফলে পরবর্তীকালে লন্ডনে এসে আমাকে অনেক আফসোস করতে হয়েছে। আমরা দুজনে যে আইনের চোখে বিবাহিত দম্পতি সেটা প্রমাণ করতে আমাকে অবিশ্বাস্যভাবে নাজেহাল হতে হয়েছে। এই বিশেষ কাগজের অভাব আমাদের অনেক সুযোগ সুবিধা ও দেশ ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত করেছে। মনে আছে আমাকে অনুকে নিয়ে আয়্যারল্যান্ড ওদের দেশ সফরের ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল।

    ... ... ... 

    আজ প্রায় পনেরো দিন হয়ে গেল সু-কে ছেড়ে এসেছি। এই পনেরো দিন আমার অসহ্য রকমের একা লাগছে। মনে হচ্ছে সু-কে ছেড়ে আমি কোনদিন থাকিনি। মনে হচ্ছে সু-কে ছেড়ে আমি এক দন্ডও থাকতে পারবো না। ইতিমধ্যে দু দুটো চিঠি লিখেছি অথচ আশ্চর্য আমাকে ও একটাও চিঠি দেয়নি। একা থাকার যন্ত্রণা ওকে কি মাঝে মাঝে অন্তত চিঠি লেখার কথাও মনে করিয়ে দেয় না? ও কেমন চুপচাপ থাকতে পারে, নিঃসঙ্গতা কেমন করে ওকে আমার কথা ভুলিয়ে দেয়। অথবা আমি হয়তো ভুল করছি। ও হয়তো নিঃসঙ্গ নয়, হয়তো ও-বাড়ি ওর সত্তায় এমন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে যে ও-বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও ওর ভালো লাগেনা, অন্য কিছু মনে করতে চায় না। হয়তো আমার ঘর আমার সংসার ওর ভালো লাগেনি। নইলে এমন হবে কেন, কোন সাড়া নেই কেন? এতদিন যে আমাকে ছেড়ে আছে তার জন্য কোন বেদনা নেই কেন? স্মরণের স্বীকৃতিও বা কোথায়? অন্তত এ বাড়িতে থাকার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা লিখেও একটা চিঠি দিতে পারতো। 

    এ ক-দিন আমাকে ওর কেমন লাগলো সে কথা জানার জন্য যে আমি উৎসুক হয়ে আছি। এই দিন, এই মিলনের জন্য যে আমরা বছরের পর বছর প্রতীক্ষা করেছি। এর জন্য যে আপ্রাণ যুদ্ধ করেছি, কত ভয়কে তুচ্ছ করেছি, কত সাংঘাতিক বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আজ আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে সত্যি করেছি। অথচ আজ বিয়ের কুড়ি দিনের মধ্যেই তুমি যেন কেমন হয়ে গেলে। একটা খবরও নাওনা আমি কেমন আছি। না, আমার ইচ্ছার কোন খবরই তুমি রাখো না। কিন্তু আমার কেন এমন হয়। আমি কেন তোমার মত হতে পারি না। কেন সবসময় তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে? কেন তোমাকে নিয়ে সব সময় হাজার ইচ্ছার ফানুষ ওড়াই। প্রেমিকা তো অনেকেরই থাকে, ভালো হয়তো অনেকে বাসে, কিন্তু তাদের সবারই মন কি আমার মত? এমনি আকুলি বিকুলি করে। জানিনা, জানিনা একজন মানুষ আর একজনকে এমন করে ভালবাসতে পারে কিনা। কিন্তু আমার এমন কেন হলো! 

    একি আচ্ছন্নতা, একি গভীর বিহ্বল তন্ময়তা। অনুক্ষণ আমি সু-কে নিয়ে পরিকল্পনা করছি। পর মুহূর্তে হয়তো তা নাকচ করছি। না, ওটা থাক। আচ্ছা এমন করে যদি শুরু করা যায় তবে কেমন হয়। হ্যাঁ ওকে জিজ্ঞেস করতে হবে। অথবা যাগগে পড়াশোনার জন্য আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। গানটাই ভালো করে শিখুক। গলাটা ওর বেশ ভালই। চাই কি নাম-ও করে ফেলতে পারে। নইলে নিদেন রেডিও তো আছেই। একটা সুযোগ কি পাবেনা? হ্যাঁ ভালো কথা। রেডিওতে অডিশন দেওয়ার কথা যেন শুনেছিলাম একবার। সেটার কি হলো? কিম্বা এই টাকায় সু কি সংসার চালাতে পারবে? ওর কষ্ট হবে না তো? আচ্ছা ও যদি চাকরি করে তবে কেমন হয়। দুজনের আয়ে সংসারটা স্বচ্ছন্দে চলবে। না, সু-কে চাকরি করতে দেব না। সবসময় ও ঘরে থাকবে। ওকে কষ্ট করতে হবে না। ও প্রিয়দর্শিনী প্রিয়সঙ্গিনী মনোরঞ্জনী হয়ে থাকবে। শুধু আমার, আমারই। আমাকে গান শোনাবে, আমাকে উৎসাহ দেবে,আমাকে আনন্দে ভরপুর করে রাখবে। ভালোবাসায় মাতাল করে রাখবে। উপার্জনের দৈনন্দিন গ্লানি ওকে মাখতে দেব না। এমনি হাজার রকমের প্রশ্ন করছি আমি মনে মনে। 

    ওকে নিয়ে আমার অনেক আশা। ও আমার সব সুখের একমাত্র উৎস।

    ... ... ...

    আবার চাকরি ছাড়লাম। ইন্ডিয়া ফয়েলস-এর চাকরিটা ছাড়লাম। জর্জ সল্টার নামে নতুন একটা ফার্মে চাকরি নিলাম। ফার্মটা মোটে বছর দুই হয়েছে। এখনো ভালো করে দাঁড়ায়নি, দাঁড়াবে কিনা আদৌ জানিনা। কোম্পানি যদি টেঁকে এবং চাকরি যদি থাকে তবে এখানে কয়েক বছর থাকবো আশা আছে। ইন্ডিয়া ফয়েলসের চাকরিটা অনেকদিন থেকেই ছাড়ব ভাবছিলাম কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না। মনে মনে দারুন অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে যোগাযোগ ঘটলো। আমার এক পূর্বতন সহকর্মী রঞ্জিত চৌধুরী হঠাৎ একদিন ফোন করে খবর দিল যে ওদের ফার্মে ডেপুটি চিফ ইন্সপেক্টর-এর পজিশন খালি আছে। ও একটা অ্যাপ্লিকেশন করতে বলল। বিজ্ঞাপনটা কাগজে আমিও দেখেছিলাম। যদিও জানতাম না যে ওটা ওদেরই অফিস। কিন্তু পদটার গুরুত্ব বিবেচনা করে আমি আর দরখাস্ত করতে সাহস করিনি। রঞ্জিতের কথা শুনে শেষ পর্যন্ত একটা অ্যাপ্লিকেশন করেই দিলাম। যথারীতি কতগুলো ইন্টারভিউয়ের সিঁড়ি ভেঙ্গে অবশেষে চাকরিটা পেয়ে গেলাম। কিন্তু এই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা আমার প্রায় নেই। তাই চাকরিটা পাওয়ার পর দারুণ ভয় পেয়েছিলাম কি করে সামলাবো তাই ভেবে।

    অনু তো রীতিমত মুষড়ে পড়েছিল আমার চিন্তিত ও গম্ভীর মুখ দেখে দেখে। অবশ্যই একথা সত্য অনুর উৎসাহ ও প্রভূত আগ্রহ না থাকলে আমার এ কাজটা হয়তো নেওয়াই হত না। আমার নতুন চাকরির জন্য বোধহয় পৃথিবীতে অনুই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে --- এমনকি আমার থেকেও বেশি। যাহোক আজ এ কাজে যোগ দেওয়ার ২৫ দিন পরে ভয় অনেকখানি কেটেছে এবং মনে হচ্ছে আমার কিছু অসুবিধা হবে না। 

    আমি আমার ভাগ্যের কেরামতি দেখে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। হঠাৎ কোথাও কিছু নেই কে এক বন্ধু ফোন করে খবর দিল এবং একটা নতুন চাকরি জুটলো। ভাগ্যের মোড় ফিরলো। অথচ এতদিন ধরে কত চেষ্টা করেছি কত ইন্টারভিউ দিয়েছি কিন্তু কোথাও কিছু হয়নি। আমেরিকান রেফ্রিজারেটরও ঠিক এমনি করে হঠাৎ চাকরি পেয়েছিলাম। বাবা তাঁর মাসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য একটা চিঠি লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়নি। ঘটনা ক্রমে দেখা হলো তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি তখন বেড়াতে বেরোচ্ছিলেন, আমিও তাই ওঁর সঙ্গে রাস্তায় নামলাম। পথে পড়ল তাঁর এক বন্ধুর বাড়ি যিনি আমেরিকান রেফ্রিজারেটররের ম্যানেজার। আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তারপর চাকরি হয়ে গেল। ইন্ডিয়া ফয়েলসের চাকরিও প্রায় একই ভাবে তেমনি করে। আমি তখন কলকাতার বহুবাজার অঞ্চলে ক্ষেত্রদাস লেনে এক মেস বাড়িতে থাকি। আমাদের রাস্তা পেরিয়ে দু’পা হাঁটলেই ছোট মামার চেম্বার।

    ছোটমামা হোমিওপ্যাথী ডাক্তার – এল আই সি বিল্ডিং-এর পাশেই ছোটমামার চেম্বার। আমি সময় পেলেই মামার চেম্বারে গিয়ে বসতাম। মামা সুযোগ পেলেই তাঁর সম্ভ্রান্ত রোগীদের সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিতেন। এমনি এক ভদ্রলোক ইন্ডিয়া ফয়েলসের উচ্চপদস্ত অফিসার। মামার আগ্রহে তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন রবিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। রবিন সাহেবের সঙ্গে ইন্টারভিউর পর নিয়োগপত্র হাতে এসেছিল। 

    আমি অবাক হয়ে দেখেছি আমার যখন যা দরকার হয়েছে তখন ঠিক সেই জিনিষটা পেয়ে গেছি এবং তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ভাবে। আগে থেকে কিছু মাত্র ইঙ্গিত পাই নি। কখনো কি ভেবেছিলাম অনুর সঙ্গে আবার দেখা হবে কলকাতায় এবং আমি ওকে বিয়ে করতে পারব শেষ পর্যন্ত। অথচ আসানসোলে ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হওয়ার পর আমি ওকে প্রতি মুহূর্তে আকাঙ্ক্ষা করেছি কিন্তু ওই অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে থেকে ওকে বিয়ে করার কল্পনা করা বাতুলতামাত্র --- একথা বুঝতে পেরে সেই ইচ্ছাকে দমন করার জন্য প্রাণপণ চেস্টা করেছি। 

    মনে আছে কটকে চৌদুয়ারে অভাবনীয় স্বাচ্ছন্দ্য ও সচ্ছলতার মধ্যে থেকেও শুধুমাত্র অনুর চিন্তা আমার সেই দিনগুলোকে দুঃসহ করে তুলেছিল। শেষ পর্যন্ত অনুকে আমি পেলাম। মনে প্রাণে চেয়েছিলাম বলেই পেলাম। ঘটনা গুলো ঘটে গেল অনুকে পাওয়ার অনুকূলে। ভাবলে আশ্চর্য হয়ে যাই --- দৃশ্যগুলো ঠিক যেন পর পর সাজানো। আমি অনুকে পাব বলেই যেন ও কলকাতায় এলো, আমি অনুকে পাব বলেই যেন আমার চাকরিতে হঠাৎ হঠাৎ উন্নতি হল অতি অল্প সময়ে। আমি অনুকে পাব বলেই যেন অনু সব বাধা-বিপত্তি তুচ্ছ করে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। সব, সব কিছু ঘটেছে যেন আমি অনুকে পাব বলে। সেই অনু, আমার হৃদয়, আমার সব আকাঙ্ক্ষার মূর্তিমতী রূপ, আমার সারা জীবনের সঙ্গী, আমার সারা জীবনের প্রেরণা। সেই অনুর শরীরে আমার সন্তান আস্তে আস্তে অবয়ব পাচ্ছে।

    ক্রমশ:
     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৩ মে ২০২৫ | ৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন