

ছবি: রমিত
পথ হারাবো বলেই এবার
হেলসিঙ্কিতে এসপ্লানাদির কফি হাউসে বসে সিটিব্যাঙ্কের সহকর্মী নাইজেল বুল বললে, ‘যখন আমাদের জীবন নির্ঝঞ্ঝাটে চলছে তখনই হয়তো বাই ওঠে একটা ঝামেলা বাধানোর’। তার এই মন্তব্যের কারণ সেদিনকার একটা খবর - কানসালিস ব্যাঙ্কের বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা টেক্সাসে একটি সেভিংস ব্যাঙ্ক কিনবে। ফিনল্যান্ডের কানসালিস ওসাকে পানক্কি (ফিনিশে ব্যাঙ্ক) দুর্দান্ত বাণিজ্য করছে তখন, নরওয়ে সুইডেন ফিনল্যান্ডের বাতাসে টাকা উড়ছে; আমরা তাদের পিছনে পিছনে সেই উড়ন্ত টাকা ধরার ধান্দায় লেগে আছি। ফিনল্যান্ড থেকে টেক্সাস অনেক দূর, কোন বাণিজ্যিক কারণে কানসালিস সে মুখো হচ্ছে? নাইজেল বললে, ইফ ইউ ডু নট হ্যাভ এ প্রবলেম, গো, বাই ওয়ান!
সুখে থাকতে ভূতে কিলোয় আপ্ত বাক্যটির দুর্বল ইংরেজি অনুবাদ তাকে শুনিয়েছিলাম।
সেই ব্যাঙ্কটির অস্তিত্ব আজ নেই, এ ঘাট সে ঘাট ঘুরে নাম হারিয়ে এখন নরডেয়া ব্যাঙ্কের আঁচলের কোণায় স্থান পেয়েছে।
চোর পালিয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ আমাদের বুদ্ধি চেতনা জেগে ওঠে এমনটা মনে করার কোন সঙ্গত কারণ আমার ব্যাঙ্কিং জীবনে দেখিনি। বরং উলটোটাই ঘটতে দেখেছি। সর্বনাশের ইঙ্গিত দেখলে প্রতিবার আমরা ভেবেছি, নো, দিস টাইম ইজ ডিফারেন্ট।• চোর যে সর্বদা গায়ে কালো রঙ্গ লেপে রাতের আঁধারে আপনার আমার বাড়িতে সিঁদ কাটে এমন তো নয়। সালভাতোরে ফেরাগামো টাই, আরমানি সুট পরা অনেক চোর ডাকাতের উদয় হয় কর্পোরেট এবং ব্যাঙ্কের বোর্ড রুমে। জানলার বাইরে আকাশে বিদ্যুৎচমক দেখে সি ই ও বলেন, নাথিং টু ওয়ারি অ্যাবাউট। যেমন ২০০৭ সালে যখন সাব প্রাইম সঙ্কটের ভূকম্প পায়ের তলার মাটি নড়িয়ে দিয়েছে, সিটি ব্যাঙ্কের সি ই ও চাক (চার্লস) প্রিন্স সে ব্যবসায় ঢিলে দিতে চাননি। জুলাই ২০০৭ ফাইনান্সিয়াল টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, চিন্তার কিছু নেই। যতক্ষণ বাদ্য বাজছে, আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে, নাচতে হবে (অ্যাজ লং অ্যাজ মিউজিক ইজ প্লেয়িং, ইউ হ্যাভ টু গেট আপ অ্যান্ড ডান্স)। তাঁর নৃত্য শেষ হবার আগেই সিটি ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম বাহান্ন ডলার থেকে কমে পাঁচ ডলারে পৌঁছয়। চাক প্রিন্সকে চাকরি থেকে বিদায়ের বিল্ব পত্রটি ধরানো হলো নভেম্বরের চার তারিখে।
আগের পর্বে দেখেছি ফার্স্ট ব্র্যান্ডস, ট্রিকলর এবং ক্যারিক্স নামের তিনটে প্রায় অচেনা অজানা কোম্পানির নাম দেউলের খাতায় উঠলো। বিচ্ছিন্ন ঘটনা? এই সেদিনের উথাল পাথালের সঙ্গে সম্পর্ক বিহীন? বাজার খারাপ হলে যে কোন ব্যবসাই তো লাটে উঠতে পারে। এ আর নতুন কথা কি?
বছর কুড়ি আগে দেখেছিলাম বাড়ির দাম বাড়তেই থাকবে এই সত্যকে মেনে নিয়ে যদু মধুকে ডেকে বাড়ি বন্ধকি ধার দিয়ে, সে ধার আবার বাজারে বেচার লাভের অর্থে বানানো আকাশচুম্বী অট্টালিকা ধূলিসাৎ হয়েছে। কম সুদে পাওয়া যাচ্ছে অঢেল টাকা, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে তো? সেই নাটকের কলাকার ছিলেন বাণিজ্যিক ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার, তাঁরা পাশা খেলেছেন জনতার জমা অথবা ধারের টাকায়, পণের নাম বন্ধকি বাড়ি জমি।
থিয়েটারে এবার যে নাটক উপস্থাপিত হয়েছে তার চিত্রনাট্য, সংলাপ, রাইজিং অ্যাকশন, ফলিং অ্যাকশন যেন একই সুরে ছন্দে। তার ক্লাইম্যাক্স কেন তবে আলাদা হবে?
এখন রঙ্গমঞ্চের পাদ প্রদীপের তলায় নতুন নাটকের প্রধান চরিত্রে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের নাম নকশা অন্য : ব্যাঙ্কে জমা টাকার, আমেরিকান ট্রেজারি, কোকাকোলার বন্ডের সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি; অধিক আমদানির আশায় টাকার মূল সাপ্লাই আসছে প্রাইভেট ইকুইটি বা বেসরকারি মূলধন এবং প্রাইভেট ডেট অথবা বেসরকারি ঋণদাতাদের ট্যাঁক থেকে। ধরা যাক দু চারটে ইঁদুর এবার এই কথা ভেবে জে পি মরগান বা বারকলেজ ব্যাঙ্কও, ঠিক প্রকাশ্যে নয়, উইংসের আড়াল থেকে পয়সা ছুঁড়ছে।
দিস টাইম ইজ ডিফারেন্ট?
এবার পাশার পণ জমি বাড়ি এবং তার অন্তহীন মূল্যবৃদ্ধির আশা নয়। এবারের পণ ইনভয়েস ডিসকাউটিং; ঋণদাতা ধারটা সরাসরি ফার্স্ট ব্র্যান্ড বা ট্রিকলর নামক গাড়ির পার্ট বা গাড়ি বিক্রেতাকে দিলেন না, তাঁরা এই দুই কোম্পানির বিক্রি বাবদ প্রাপ্য চালানগুলি কিনে নিলেন। অর্থাৎ ৩০/৬০/১৮০ দিন বাদে টাকা শোধ হবে সেই সূত্র থেকে। ট্রিকলর বা ফার্স্ট ব্র্যান্ড নামক নেপোরা দইটি খেলেন, তার দাম চুকোবে গাড়ির ক্রেতা। তাহলে ঝুঁকিটা সেই অগণিত ক্রেতার ওপরে পড়ল। এঁরা কারা? সাব প্রাইম বা হত দরিদ্র মানুষকে বাড়ি কেনার ঋণ দেওয়ার সময় ধরে নেওয়া হয়েছিল এঁরা শোধ দিতে না পারলে ক্ষতি নেই, ইট পাথরের বাড়িটা তো বন্ধক রইলো। ফার্স্ট ব্র্যান্ড বা ট্রিকলরকে ধার দেওয়া হল একটি ইনভয়েসের মূল্যের ভিত্তিতে যার আরেক নাম সাপ্লায়ার ফাইনান্স।
কাগজে লেখো দাম, সে দাম রয়ে যাবে?
একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক।
একজনের দেনা আরেকজনের পাওনা; এর নাম ডাবল এন্ট্রি বুক কিপিং। নিউটনের থার্ড ল অফ মোশনের মতন ইকুয়াল অ্যান্ড অপোজিট রিঅ্যাকশন! যে খাতায় এই সব বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ হয় তার নাম ব্যাল্যান্স শিট (অন্ধের হস্তি দর্শনের মতন এটির নানান রূপ হতে পারে, দু নম্বর, তিন নম্বর খাতার গল্প আমাদের জানা, কখনো সরকারি কখনো বেসরকারি)। ভাগ্যক্রমে তার মাত্র দুটো দিক আছে – সম্পদ এবং দায়বদ্ধতা (অ্যাসেট /লায়াবিলিটি) অন্য ভাবে বলতে গেলে ইকুইটি, ডেট।
ইহা কী, আসে কোথা হইতে?
প্রাইভেট ইকুইটি
ব্যাঙ্কিং এমন একটি পেশা যেখানে যোগ দিতে গেলে কোন নির্ধারিত পাঠক্রম সম্পূর্ণ করার মাথার দিব্যি দেওয়া হয় না। কোন সিলেবাসে কি বিষয়বস্তু পড়ে এসেছি? দুই মহাদেশের তিনটে দেশে চার কর্ম দাতা আমার ডিগ্রি ডিপ্লোমা দেখতে অবধি চায়নি।। ইস্তানবুলে আমাদের সিটি ব্যাঙ্কের ট্রেনিং স্কুলে কখনো সখনো পড়ানোর সময়ে সদ্য গ্র্যাজুয়েট রিক্রুটদের মধ্যে হোয়ারটনের এম বি এর পাশাপাশি কেমিক্যাল এঞ্জিনিয়ার, মাইক্রো বাইওলজিসট এমনকি কেমব্রিজের ঐতিহাসিক পেয়েছি- সবে ব্যাঙ্কের নিয়োগপত্র পেয়েছেন তাঁরা। তাতে তাঁদের কাজটা কি, কেন, কোথায় কিছুই জানানো হয়নি। শিগগির ছ মাসের জন্য নিউ ইয়র্কে যাবেন আমাদের পাঠশালায় অধ্যয়ন করতে। তার আগে এই আমাদের মতন কিছু হাতুড়ে মিস্তিরির সঙ্গে আলাপ সাক্ষাৎ, দুটো গাল গল্প হবে, যার নাম ফায়ারসাইড চ্যাট।
ব্যাল্যান্স শিট নামক যন্ত্রণার সঙ্গে তাদের অনেকেরই পরিচয় ছিল না, থাকার কথা নয়। অ্যাসেট লায়াবিলিটির উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছি, ধরো তোমার কোন বন্ধু একটা বার খোলার জন্যে টাকা চাইছে,, তাকে বলতে পারো একশ ডলার দিতে পারি, তিন ভাবে। বেছে নাও। তোমার কোম্পানির লাভ লোকসানের অংশ নেব, দশ পারসেন্ট মালিকানা দাও, অথবা পাঁচ বছরের জন্যে ধার দিতে পারি, বছরে পাঁচ ডলার সুদ দিও; অথবা বলতে পারো এই একশ ডলার দিলাম, আর এমুখো হইও না। কাহিনির মরাল অতি সহজ – প্রথমটা ইকুইটি, দ্বিতীয়টি ডেট এবং শেষেরটা এইড বা উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ।
যে সব কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রত্যহ কাগজে দেখে আপনি কখনো উল্লসিত হন কখনো ভির্মি খান, সেগুলি নথিবদ্ধ, লিষ্টেড সংস্থা। তাদের শেয়ার কেনা বেচা হয় স্টক মার্কেটে, সেটা মেহতাদের টেরিটরি। আমি টাটা স্টিলে কৌশিক চাটুজ্যেকে ফোন করে বলতে পারি না দুশ টাকা দরে দু’হাজার শেয়ার কিনতে চাই; যদি বলি নিতান্ত ভদ্রতার খাতিরে সে বলবে হীরেনদা, বম্বে হাউসের তিন তলায় আসুন, চা খাওয়াবো, শেয়ার কিনতে হলে আপনার ব্রোকারকে বলুন! পাবলিক কোম্পানিতে শেয়ার কেনা বেচাটাও পাবলিক। কিন্তু আমার উদাহরণের বারের ব্যবসায়ে আমি আমার পছন্দ মতন দামে ইচ্ছে মতন শেয়ার কিনতে পারি, এটি ক্রেতা বিক্রেতার নিভৃত নিগোশিয়েশন। তার দাম এবং সংখ্যাটি রইবে সবার অগোচরে। এর নাম প্রাইভেট ইকুইটি, যদি ধার দিই সেটির পোশাকি নাম প্রাইভেট ক্রেডিট।
এবার ধরুন, আমি একটি দন্ত মঞ্জনের কারখানা খুলেছি, নিজের মূলধন– পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত, নিজ কর্মবলে অর্জিত অথবা সারপ্লাস ভ্যালু থিওরিতে লুণ্ঠিত। ব্যবসা বাড়লে নিজের পুঁজি যখন যথেষ্ট নয় তখন পাড়ার চেনা লোকজনকে বলতেই পারি আমার ব্যবসায় কিছু টাকা লাগাবেন? গত দু বছরের হিসেবটা দেখাতে পারি, খারাপ চলছে না, আপসাইড আছে। তাঁরা জেব খুলে কিছু দিলে পর সেই কোম্পানির লাভ লোকসানের ভাগিদার জুটল। এবার শুধু মিল জুলকে খানাই নয়, কোন ধান্দা কীভাবে চলছে,কোম্পানির গাড়িতে ছেলে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছানো হচ্ছে কেন সে প্রশ্নেরও জবাব দিতে হতে পারে। গতিক খারাপ দেখে কেউ কেটে পড়তে চাইতে পারেন কিন্তু সে শেয়ার কেনার বান্দা একটিই- আমি, এই শেয়ার কেনা বেচার কোন খোলা বাজার বা ফ্লোর নেই।
তাঁতি এমনি খায় তাঁত বুনে। কোম্পানি প্রাইভেট কিন্তু সেখানে অন্য প্রাইভেট মানুষেরা তো সুযোগ বুঝে টাকা লাগাতে পারেন? এখন আমার এই মাজনটির গুণবত্তায় অভিভূত হয়ে শ্যামবাজারের শশী বাবু হয়তো শেয়ার কিনতে চান কিন্তু কাকে কোথায় ফোন করে তা জানাবেন? তাঁর মুরোদ হয়তো দশ হাজার টাকা লাগানোর কিন্তু তাতে আমার কি আগ্রহ থাকতে পারে? বাজারে শশী বাবু কি একা? এমনই আছেন হয়তো আরও অনেকে যারা ভাবেন পাবলিক কোম্পানির খবর তো সবাই রাখে, বরং এমন কোন শেয়ার কিনবেন যার হালচাল জানে খুব কম মানুষ, গোপন কথাটি রবে গোপনে। মুশকিলটা আবার ঐ সংখ্যা নিয়ে – ধরুন দশ হাজার টাকায় একটাও শেয়ার বেচতে রাজি নই। কিন্তু আজ যদি কেউ দশ লক্ষ টাকা নিয়ে হাজির হয়?আবার লোকমুখে দন্ত মঞ্জনের সুনাম শুনে বহু টাকা লাগাতে চান কেউ। সেটা কেবলই চান্সের ব্যাপার? কাজকম্ম খারাপ হচ্ছে না, আনন্দবাজার বা ইকনমিক টাইমসের ছবিতে হাস্যময়ী অভিনেত্রী আমার কোম্পানিতে প্রস্তুত দন্ত মঞ্জনের গুণগান করছেন, টেলিভিশনের বিজনেস প্রোগ্রামে অংশ নেবার জন্য ডাক পড়ছে। আমার কোম্পানি প্রাইভেট – প্রতি ছ মাসে হিসেব দাখিল করতে হয় না, টি ভির বিজনেস বিশেষজ্ঞরা দন্ত মঞ্জন কোম্পানির কর্ম পদ্ধতি বিজনেস মডেলের ছানবিন করেন না, শেয়ারের দাম কোথাও ছাপা হয় না, ট্রেডিং দূর অস্ত। তবু কারো কাছ থেকে খবর পেয়ে- আন্ডারস্ট্যান্ডিং ফ্রম এ রিলায়েবল সোর্স- শ্যামবাজারের শশী বাবু একদিন ফোন করে বললেন, সার, আমাকে অংশীদার করে নেবেন? ব্যবসা আপনি চালাবেন, আমাকে মুনাফার চার ভাগের এক ভাগ ভাগ দেবেন।
শশী বাবুর দশ হাজার টাকাকে করিও না হেলা। আমাদের বীরভূমের গ্রামে একটা চলতি কথা আছে, রাই কুড়িয়ে বেল হয় গো। এমনি অনেক শশী বাবুর পাঁচ, দশ হাজার জুড়ে এক পোঁটলা টাকা নিয়ে বাজারে যে সংঘবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলি বাজারে দেখা দিলেন তাঁদের আমরা চিনলাম প্রাইভেট ইকুইটি বা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রোভাইডার নামে। ফান্ডের কর্ণধারের হাতে তাঁদের জীবনের সঞ্চয় তুলে দিয়ে শশী বাবু, সজল বাবু বলেন, কেসটা দেখবেন সার। পুরো টাকা যেন মার না যায়। বৃহত্তম অংশ অবশ্যই আসে ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, ব্যাঙ্ক, ইন্সিউরেনস, পেনশন ফান্ড থেকে। এবার প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড ম্যানেজাররা সেটা লাগাবেন –ইচ্ছেমত ভেল্কির খেলা লাগাবেন।।প্রাইভেট ইকুইটি বা হেজ ফান্ডের কোন অভিভাবক নেই, কোন রেগুলেটরি সুপারভাইসরি দপ্তরের লোক এসে ছড়ি ঘোরান না। প্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষিত মানুষেরা যেখানে ইচ্ছে ইনভেস্ট করবেন।
১৯৯০ সালে সিটি ব্যাঙ্কের কটন সেন্টার অফিসে কাজ করি, একদিন পরিচয় হলো জোনাথান ফয়ারের সঙ্গে, তাঁর কার্ডে সিটি ব্যাঙ্কের তলায় লেখা ‘সিটিকর্প ভেঞ্চার ক্যাপিটাল’। সেই প্রথম প্রাইভেট ইকুইটির কথা জানলাম, এটি সিটি ব্যাঙ্কের একটি সাইড শো। দু শো মিলিয়ন ডলারের ফান্ড দেওয়া হয়েছে, এঁদের কাজ হল সুযোগ মতন সেটা ব্যবহার করা। টাকা লাগানোটাই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। তাঁদের কাজ এন্ট্রি ও একজিট স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করা অর্থাৎ এই চক্রব্যূহে ঢোকা, ম্যানেজমেন্টে অংশ নেওয়া, প্রফিট করে বেরিয়ে পড়া। আমরা আজ যে অপরিসীম আগ্রহে ইন্টারনেট স্ক্রোল করি, জোনাথানকে দেখেছি তার দশ বিশগুণ বেশি নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত অখ্যাত কোম্পানির বিষয়ে আপাত দুষ্প্রাপ্য খবর জোগাড় করতে। কাজটি মোটে সহজ নয়। এটি একটি বেটিং গেম- কোনটা লম্বা রেসের ঘোড়া, কোনটা রাতারাতি দাঁও মারতে পারে - কোন প্রাইভেট কোম্পানি সফল হতে পারে, কোনটার অধিগ্রহণ করা যায়। নির্ভুল সময় বলে কিছু নেই, সেরকম দূরবীন মেলে না বাজারে – তাই আপনি আমি একই অনুমানে পাবলিক শেয়ার কিনি, বেচি। বেচার পরে দাম বেড়ে গেলে হাত কামড়াই।
যার নাম এখন প্রাইভেট ইকুইটি, বেসরকারি, চেনা জানা লোকের ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগ নতুন কিছু নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ঘর ফেরত আমেরিকান সৈন্যরা আর্মি কমিশন শেষে হাতে যে থোক ডলার পেলেন সেটা বিনিয়োগ করার কাজে এগিয়ে আসেন জে আর হুইটনির মতন দু চারটি ফান্ড। প্রাইভেট ইকুইটির ব্যবসা এই ভাবেই শুরু হয়েছিল। তবে একদা সেটা ছিল একান্ত প্রাইভেট, দুটি পক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ক্রমশ দেখা গেল কিছু ব্যাঙ্ক বা ফান্ড তাঁদের টাকার ছোট একটি পোঁটলা এঁদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, সামান্য কিছু দিলাম। দেখে শুনে লাগান। নয়ের দশকে যখন এই ব্যবসা কাছে থেকে শুরু হতে দেখেছি, তখন আমার প্রথম চেনা সেই প্রাইভেট ইকুইটির পিছনে সিটি ব্যাঙ্কের অভয় আশীর্বাদ ছিল। ১৯৪৬ থেকে ১৯৯০ অবধি সারা পৃথিবীতে প্রাইভেট ইকুইটির কারবারি সংস্থার সংখ্যা ছিল দেড় হাজারের কম, মোট ফান্ড ভ্যালু মেরে কেটে ছয় বিলিয়ন।
আজ তিরিশ হাজারের বেশি প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড কর্ম রত; দুনিয়ার সমস্ত ম্যাকডোনাল্ড, বার্গার কিং এবং কে এফ সি আউটলেট যোগ করলে যা হয় তার চেয়েও বহু গুণ বেশি! অন্তত পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার তাঁরা বিনিয়োগ করেছেন বা নগদে গচ্ছিত রেখেছেন। এই বিশাল অর্থের ভাণ্ডার খুঁজে চলেছে পরশপাথর, এমন সব ঘোড়া যারা প্রতিদিন ডার্বি জিতবে।
প্রাপ্ত ডাটার ভিত্তিতে ভারতে নিয়োজিত প্রাইভেট ইকুইটির (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সহ) পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, সংখ্যাটি ক্রমবর্ধমান।
প্রজ্বলিত অগ্নিতে ঘৃত প্রদানের আয়োজন?
প্রাইভেট ডেট 
ফিনিশিয়ান মুদ্রা, আনুমানিক ৩৬৫-৩৫২ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ