আরেক শঙ্কিত দেশ ফিনল্যান্ড। তাঁদের অবশ্য বাঙ্কার আছে। খবর পাই সেখানে, বিশেষ করে পূর্ব অঞ্চলে, মানুষজন অস্ত্র সংগ্রহ করছেন। ১৯৩৯ সালের শীতকালীন যুদ্ধে ( উইন্টার ওয়ার) ফিনরা সোভিয়েত ইউনিয়নের আক্রমণ কেবল ঠেকান নি, কষে কয়েক ঘা দিয়েছিলেন। এবার স্থিতি বেশ জটিল। রাশিয়ান মতিগতির সম্বন্ধে সন্দিহান ফিনল্যান্ড ন্যাটোর দ্বারস্থ হবে – এটি সেই লাল শালু যা দেখলে শ্রী পুতিন উচ্চকিত হয়ে ফিনল্যান্ডে হানা দিতে পারেন। শোনা যাচ্ছে সুইডেনও নিজেকে বিপন্ন বোধ করছে। শিগগির ন্যাটোর দুয়োরে করা নাড়তে পারে। ... ...
কাগজে কলমে রোমানিয়ার ইউক্রেন সীমান্ত প্রায় ছশো কিলোমিটার লম্বা কিন্তু তার মাত্র অর্ধেকটা স্থলপথ। বাকিটা জলপথ- পার হতে হয় দানিউব নদী অথবা কৃষ্ণ সাগরের ব দ্বীপ দিয়ে। ক্যালে থেকে প্রধান রোমানিয়ান চেক পয়েন্ট সিরেত প্রায় বাইশ শো কিলোমিটার, আবশ্যিক বিরতি সহ চব্বিশ ঘণ্টার ড্রাইভ। সেখান থেকে ইউক্রেনের ট্রেন বা রাস্তার যোগাযোগ তেমন ভালো নয়। আরেকটা সমস্যা রোমানিয়ার নিজের আভ্যন্তরীণ পরিবহন কাঠামো। দু দশক আগে হাঙ্গেরিতে বাণিজ্যের সূত্রে গিয়ে দেখেছি ভিয়েনা থেকে বুদাপেস্ত (এম ওয়ান) এবং বুদাপেস্ত থেকে রোমানিয়ান বর্ডার যাওয়ার চমৎকার অটোবান (এম সেভেন) তৈরি হয়ে গেছে। ... ...
আমাদের গ্রামে যে সব ইউক্রেনিয়ান পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হবে তাঁদের আজ এক লম্বা প্রশ্নোত্তরের ফর্ম ভর্তি করতে হচ্ছে – এই সব শিশু এবং তাঁদের মাতারা যে সন্ত্রাসবাদী বা অলিগারকের সন্ততি নন সেটি প্রথমে প্রমাণ করতে হবে। এই পদ্ধতির কেতাবি নাম ভেটিং। বিশ বছর আগে চেলসি ক্লাব এবং লন্ডন শহরে একাধিক অট্টালিকা কেনার সময়ে রোমান আব্রামোভিচকে ব্রিটেন কোন প্রশ্ন করে নি। আজ অন্তত মুখরক্ষার্থে ব্রিটিশ সরকার এইসব অপ্রিয় প্রশ্ন করছেন। মিখাইল ফ্রিডমান গত সপ্তাহে লন্ডনে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি নাকি সেই ডাক্তারের ২০০ পাউনডের ফি দিতে পারেন নি – সব টাকা আটকে আছে। ... ...
১৯৪৫ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ চার্টারের অন্যতম ফাউনডার মেম্বার ইউক্রেন।সমীর সার আরও বলেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে যোগ দেবার সময়ে ইউক্রেনকে স্বতন্ত্র হয়ে যাবার (রাইট টু সিসিড) অধিকার দেওয়া হয়, সংবিধানের ৬৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী। মহান অক্টোবর বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নে যোগ দেয় নি। দেশের মধ্যে বিবদমান নানা দলের লড়াই চলছে সেই সুযোগে সোভিয়েত ইউনিয়ন বন্ধুর হাত বাড়িয়ে বলল – আহা, আপোষে ঝগড়া ঝাঁটি করো না। এসো আমার ঘরে এসো। আমি তোমার বড়ো ভাই। গলে মিলো। সেটা ১৯২২। সেই আলিঙ্গন থেকে মুক্তি চাইছে ইউক্রেন। ... ...
পাশের গ্রাম বিসলি থেকে সাইমন এলেন কাল সন্ধ্যেয়। মা ইউক্রেনিয়ান, তাঁর বাবা জন্মেছেন মুসুরিতে, ইংরেজ , কলকাতার ডন বসকো স্কুলে পড়েছেন! সাইমনড় স্ত্রী ইরিনা ইউক্রেনিয়ান দিদিমা নাৎসিদের অগ্নি চুল্লী থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ইংল্যান্ডে আসেন। সাইমন একদা বার্লিনে কাজ করেছেন ভালো জার্মান বলেন। আমাদের সংগ্রহশালা থেকে টিনের খাবার, জামা কাপড় নিয়ে গেলেন। জানা গেলো এতো সামগ্রী জড়ো হচ্ছে যে এবার যাত্রা হবে ট্রাকে। সারি সারি ট্রাক চলেছে পোল্যান্ডের দিকে। ওষুধ পত্র পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে ছোট প্লেনে। বালিগঞ্জের বিভিন্ন ফারমাসি থেকে আমার যোগাড় করা দুশো আমক্সিসিলিন উঠবে সেই প্লেনে। ঘড়ির কাঁটার মতো চলছে কাজ। ... ...
এই যুদ্ধ প্রতি মুহূর্তে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের পরিবারকে এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক বন্ধুজনকে। আমার রোমানিয়ান স্ত্রীর কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনকালটা গল্পে পড়া কাহিনি নয়। মাখনের জন্য দীর্ঘ লাইন। কাঠের টুল পেতে হোম ওয়ার্ক করেছে সেখানে। যে কোনো বিরোধী মতামতের মানুষকে পাড়া থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেছে নিয়মিত। অত্যন্ত গোপনে রেডিও ফ্রি ইউরোপ শুনেছে বাবার পাশে বসে। চাউসেস্কু শহর ভ্রমণে বেরুলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পতাকা নেড়েছে। সেটাই নিয়ম ছিলো। ... ...
- আমাদের বাড়িটা খুলে দিতে পারি? - মানে ঢুকতে ভিসা পাসপোর্ট লাগবে না? - স্টপ ইট। বলছি আমি একা মানুষ। নানান বাড়িতে ঘোরাঘুরি করে দান সংগ্রহ আর প্যাক করার চেয়ে ভালো হয় যদি সেই সব দান আমাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। তাহলে বাড়িতে বসে আমি আর কয়েকজন সেগুলো বেঁধে দিতে পারি। শুক্র থেকে রবিবার মায়াও সাহায্য করবে। - তাহলে চালাঘর আর সুইমিং পুলটাও খুলে রাখো। এখন কেউ কি আর জলে নামবে? ... ...