আবার ঈশ্বর গুপ্তু; এবার তাঁর "পাঁটা" পদ্যে কি লিখেছেন দেখুন,
"মাছে কিছু আছে মান বাঙালির কাছে।। কিন্তু মাছ পাঁঠার নিকটে কোথা রয়? দাসদাস তস্য দাস তস্য দাস নয়।। এই দুই তিন চারি ছেড়ে দেহ ছয়। পাঁচেরে করিলে হাতে রিপু রিপু নয়।। তঞ্চ ছাড়া পঞ্চ সেই অতি পরিপাটি। বাবু সেজে পাটির উপরে রাখি পাটি।। পাত্র হয়ে পাত্র লয়ে ঢোলে মারি চাটি।
এই কথা লিখে লিখছেন,
ঝোলমাখা মাস নিয়া চাটি করে চাটি।। টুকি টাকি টুকু টুকু মুখে দিই মেটে। যত পাই তত খাই সাধ নাহি মেটে।। ঝোলর সহিত দিলে গোটা গোটা আলু। লক্ লক্ ললো ললো জিব হয় লালু।। সাবাস সাবাস রে সাবাসী তোরে অজা। ত্রিভুবনে তোর কাছে কিছু নাই মজা।। কোনো অংশে বড়ো নয় কেহ তোর চেয়ে। এত গুণ ধরিয়াছ পাতা ঘাস খেয়ে।।"
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, পাঁটা
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত দেখাই যাচ্ছে মাংস খেতে খুব ভালবাসতেন। মাংসপ্রেমী মানুষের তাঁর আমলে তো বটেই, এ যুগেও, এই "health consciousness" এর আমলেও, সে উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি। আপামর বাঙালী আর মাংস রান্না করে খাওয়ার একটি নিবিড় সম্বন্ধ রয়েছে। যদিও মঙ্গলকাব্যে মাংসের তুলনায় দেখা যায় মাছের প্রিপারেশনের প্রাবল্য। আবার এদিকে শহুরে কলকাতার বাঙালী রবিবার মাংসের দোকানের সামনে লাইন দেয়। এক পাড়ার সঙ্গে অন্য পাড়ার মাংসের দোকানে কোথায় কে সেরা মাংস বেচে তাই নিয়ে আড্ডায় আলোচনা, আমাদের দু্র্গোৎসবে অনেকের বাড়িতে নবমীর দিনে মাংস না হলেই নয়।
এখানে একটা ব্যাপার একটু লিখি, আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত । যদিও আমরা বাঙালিরা সাধারণভাবে খাদ্যপ্রিয়, এবং বাংলায় রন্ধনপ্রক্রিয়া বা রেসিপি নিয়ে বহু লেখালিখি হয়েছে, বিভিন্ন রান্নার যে ব্যাকরণ বা ধরুণ টেকনিকের ব্যাপার আছে, তার যে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, এমনকি স্বাস্থ্যগত যোগ রয়েছে, এ নিয়ে মানুষের উৎসাহ থাকতে পারে, তবে তাকে নিয়ে চর্চা বিশেষ চোখে পড়েনি। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ও হরগোপাল বিশ্বাসের "খাদ্য-বিজ্ঞান" একটি অতি চমৎকার বই। সে বই আজকের দিনে ফুড সায়ান্সের চমৎকার নিদর্শণ যদিও খাবার এবং পুষ্টি নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্রে সে বইতে সুন্দর করে লিখেছেন তথাপি রান্না, রান্নার প্রক্রিয়া, ও সংলগ্ন বিষয়গুলো নিয়ে আরেকটু আলোচনা আজকালকার দিনে সঙ্গত বলে আমার মনে হয়। বিশেষ করে খাবার ও রান্নার মডার্নাইজেশনের যুগে এই ব্যাপারগুলোর চর্চার একটা জায়গা রয়েছে। সেদিক থেকে এই লেখাটিতে রান্না ও খাওয়ার সাহিত্যে উপস্থিতি, প্রক্রিয়া, এবং রন্ধনশাস্ত্র গত কিছু দিক নিয়ে সামান্য আলোচনার অভিপ্রায়ে এই লেখাটি লিখছি।
এখন আর কথা না বাড়িয়ে একটি রান্না পেশ করি, তারপর তার বিনির্মাণ করা যাবেখন বিশেষ করে হোটেলের রান্নাকে আমরা আমাদের বাড়ির হেঁসেলে কীভাবে নিয়ে আসতে পারি, তাই নিয়েও দু চার কথা লেখার অভিপ্রায়।
চম্পারণের রান্না করা মাংস
বিহার রাজ্যের চম্পারন নামে জায়গাটির নাম শুনলে আমি শুধু মহাত্মা গান্ধী আর চম্পারণ সত্যাগ্রহ এই অবধি জানতাম, সত্যাগ্রহী শান্তিপ্রিয় মানুষেরা যে এমন সাংঘাতিক পশুমাংস রান্নার ব্যাপারে ওস্তাদ, জানা ছিলনা। সে যাই হোক, প্রথমে রান্নাটির একটি ভিডিও দেখাই | দিল্লি ফুড ওয়াকস নামে এক ইউটউব চ্যানেলের জনৈক ভদ্রলোক চম্পারণ আর মোতিহারী ঘুরে আবিষ্কার করেছেন এরা কীভাবে চম্পারণ প্রদেশের বিখ্যাত মাংস রান্না করে। এরা ছাগলের মাংস রান্না করে দেখাচ্ছে, আমরা সে মাংস কোথা থেকে এসেছে, সে ছাগলের কত বয়স, বৃদ্ধ না তরুণ, সে সব কিছুই জানি না, যিনি ভিডিও তুলেছেন, তিনিও এ নিয়ে জানতে চাননি, তবে তাঁর রান্নাটি কি করে হয় তাতে উৎসাহ ছিল। ভিডিওটি দেখে আমার মনে হল, আমরা চাইলে ভেড়ার মাংস, বা ধরুন এমনকি এঁচড়, পনির, টোফু দিয়েও করে দেখতে পারি। মানে এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য আমরা রেস্তোঁরায় নয়, বাড়িতে সহজভাবে এ জিনিস করতে পারি কি না, বা এই রান্নায় কি ব্যাপার হচ্ছে তাকে নিয়ে আলোচনা করা।
ভিডিওটি দেখুন,
রান্নাটিকে যদি ভেঙে দেখি, এরা করছেন কী?
এক, মাংসের টুকরো গুলো ছোট করে কাটছেন (কিভাবে কাটছেন জানা নেই, সাইজ দেখে মনে হচ্ছে)
দুই, একটি মাটির হাঁড়িতে মাংসের টুকরো গুলো দিয়ে তার ওপরে পেঁয়াজ "বাটা" এবং রসুনের প্রলেপ দিচ্ছেন
তিন, তার ওপর মসলা দিলেন, আমার মনে হয় হলুদ, লঙ্কাগুঁড়ো, গোলমরিচ দিলেই যথেষ্ট হবে, অন্তত বাড়িতে পরীক্ষা করার জন্য
চার, মাটির হাঁড়িটিকে ঢিমে আঁচের আগুনে বসাচ্ছেন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রাখছেন, কত তাপমাত্রায় রাখছেন জানা গেল না | তবে অঙ্গারের রঙ দেখে তাপমাত্রা মাপার কাজ বিশেষ করে জেমস আরবান ও সঙ্গীদের গবেষণা থেকে মনে হয়, ৫০০ বা তারও বেশী তাপমাত্রায় হয়ত জ্বলছে [৬], যেহেতু খোলা হাওয়ায় জ্বলছে, সঠিক তাপমাত্রা বিচার করা সহজ নয়
পাঁচ, এই জ্বলন্ত অঙ্গারে এরা হাঁড়ি রাখছেন ৪৫ মিনিট
ছয়, তারপর হাঁড়ি টি আগুনের তাপ থেকে বের করে পনেরো মিনিট "rest" করছেন, তারপর খুলে খাবার পরিবেশন করছেন
ব্যাপারগুলো একটু বিশ্লেষণ, বলা যাক, বিনির্মাণ করে দেখা যাক:
প্রথমত, মাংস ব্যাপারটি আসলে যেকোন প্রাণীর শরীরের হাড়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রোটিন ("Muscle")। আমরা এখানে skeletal muscle, হাড়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মাংস দেখছি। কিঞ্চিৎ সরল করে বললে, এই মাংসে দু রকমের "তন্তু" রয়েছে, একটির নাম actin এবং আরেকটি myosin, এগুলো এক ধরনের মোটা সুতোর মতন দেখতে। সুতো গুলো একটা আরেকটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে ।
সুতোগুলির ভেতরে অনেকটা প্রায় ৭০% জলীয় পদার্থ থাকে, বাকি অংশ myoglobin নামের আরেকটি প্রোটিন, যেখান থেকে কাঁচা মাংসের টকটকে লাল রঙটা আসে । কাঁচা মাংস চিবিয়ে খেলে দেখা যাবে মাংসের একটি স্বাভাবিক নরম পেলব ভাব থাকে, এবং সে ঈষৎ অম্ল (মনে ধরুন ph ৫ বা ছয়ের কাছাকাছি) । কিন্তু কাঁচা মাংসের অভাব তার স্বাদে ও ঘ্রাণে, সেটা মাংসের সুগন্ধ, যার জন্য মাংস রান্না করে খেলে একদিকে তার টেক্সচার আর অন্যদিকে তার সুগন্ধ দুটোই পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে রান্না করলে মাংস শক্ত হয়ে যায়, তার নরম টেক্সচারটি আর থাকে না। রান্না করা মাংসের সুগন্ধর উৎস হল মাংস রান্না করার সময় মাইয়ার্ড রিঅ্যাকশন যার কথা এর আগে লিখেছি য়ে উচ্চ তাপে অন্তত জল ফোটবার যা তাপমান (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তার চেয়ে চড়া তাপে মাংসের মধ্যে কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন হয়ে এই জাতীয় ফ্লেভার মলিকিউল তৈরি হয়, এ নিয়ে ডোনাল্ড মট্রম সাহেবের লেখা উৎসাহীরা পড়ে দেখতে পারেন [১] Motrom লিখছেন শুধু মাইওয়ার্ড রিঅ্যাকশন ই নয় উচ্চ তাপে আরও নানান রকমের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে মাংসোয় গন্ধ ও স্বাদের পরিবর্তন হতে থাকে। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে মাংস কতক্ষণ রাঁধবেন? সেটি আবার অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। সবথেকে বড় কথা, আপনি কিরকম মাংস খেতে চান? কাঁচা মাংস স্বভাবতই নরম অনেকটা স্পঞ্জের মতন, তাকে যত গরম করবেন বা তাতে যত তাপ দেবেন, তত সে জল ছাড়তে শুরু করবে এবং শক্ত হতে থাকবে, আবার অনেক ক্ষণ ধরে তাপ দিতে থাকলে একসময় মাংসের থেকে কোলাজেন গলে গিয়ে জিলেটিন বেরিয়ে সে আবার আরো নরম হবে। আমরা সাধারণত মাংস রীতিমত মশলা মিশিয়ে চড়া তাপে বা প্রেশার কুকারে রান্না করে খাই। সাহেব কাঁচা মাংস প্যাকেট থেকে খুলে কোন রকম ম্যারিনেশনের বালাই না করে বারবিকিউতে চড়িয়ে দেয় সামান্য সময়ের জন্য, অতঃপর সস মাখিয়ে সুখে চিবোয়। এছাড়াও মাংস রান্নার আরো নানান পদ্ধতি আমাদের ও পাশ্চাত্যে রয়েছে। সুতরাং, আর সমস্ত কিছু রান্নার মতোই মাংস রান্নার ক্ষেত্রেও উত্তাপ ও সময়ের একটি সমন্বয়ের ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। এখানে আরেকটি ব্যাপার সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। মাংসের গায়ে লেগে থাকা জীবাণুর (মুরগির মাংসের ক্ষেত্রে বা শুয়োরের মাংসের ক্ষেত্রে Ecoli বা Campylobactor বিশেষ করে মারাত্মক) কথা মাথায় রাখতে হবে। কাজেই অল্প রান্না করা বা এমনকি বাইরে সামান্য শক্ত ও ভিতরে কাঁচা লালচে বা গোলাপি আভার মাংস খেতে মন চাইতে পারে, তবুও এই ব্যাপারগুলি বিবেচনা করে না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। যদিও স্বাদের জন্যে অনেকে পছন্দ করেন মাংসকে অল্প একটু রান্না করা, যেমন ধরুন ৬০-৬৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রান্না করে দেখা যাচ্ছে মাংসের ভেতরটা তখনও গোলাপী, বাইরের দিকটা পাঁশুটে বা সাদাটে হয়েছে । বিলিতি কায়দায় রোস্ট [০] করার সময় অনেকে মাংসের সাইজ অনুযায়ী বা ওজন অনুযায়ী অঙ্ক কষে রান্না করেন। আপনি চাইলে রোস্ট টাইমার ব্যবহার করে দেখতে পারেন, বিবিসির সাইট থেকে দেখুন https://www.bbc.co.uk/food/articles/roast-calculator আপনি যদি এই টাইমার ধরে মাংস রান্না করতে চান তো খেয়াল রাখবেন যে এই ধরনের ক্যালকুলেটর রোস্ট জাতীয় রান্নার জন্য উপযুক্ত, অন্য রান্নার ক্ষেত্রে ততটা কাজে নাও লাগতে পারে, এক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা। এই ভিডিওতে যিনি চম্পারণ প্রদেশের মাংস রান্না করছিলেন, তিনি অঙ্গারে মাটির সরা রেখে ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছিলেন। আপনি যদি এই রান্না বাড়িতে করতে চান, আপনিও ওভেনে মাটির পাত্র বসিয়ে (মনে রাখবেন সে পত্রটিকে প্রথমে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে অন্তত ৩০ মিনিটে ভিজিয়ে রাখবেন না হলে পাত্রটি ফেটে যেতে পারে, এবং ঠান্ডা ওভেন এ শুরু করবেন, কখনও গরম আগে থেকে তাতানো ওভেনে এই খাবারটি রান্না করবেন না ) রান্না করতে পারেন। মনে রাখবেন আপনার রান্না করার সময় আরো দীর্ঘ হবে। আরেকটি বিষয় এখানে স্মরণে রাখা ভালো যে এই রাঁধুনি ভদ্রলোক কিন্তু রান্না হবার সময় নির্ধারণ করেছিলেন কখন মাটির পাত্রটি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল সেই মত হিসেব করে। আপনি মাটির বা চীনেমাটির বাসনে রান্না করলে যদিও তাতে বড় ছিদ্র থাকে, আপনার পক্ষে স্টিম বেরোন দেখা সম্ভব নাও হতে পারে। ইনি রান্নার সময় শেষ হবার পর অন্তত পনেরো মিনিট রান্নাটি হতে দিয়েছিলেন। হ্যারল্ড ম্যাকগি তাঁর "On Food and Cooking" বইতে লিখছেন যে মাংস যখন রান্না হতে থাকে, তখন ক্রমাগত তাপের প্রভাবে মাংসে নানান রকমের প্রতিক্রিয়া এবং পরিবর্তন হয় [২]। যখন তাপমান ৬০-৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসএর কাছাকাছি পৌঁছয়, তখন মাংসের ভেতরকার fibre খুলতে থাকে, এবং মাংস থেকে জল বেরোতে থাকে। এ ব্যাপারটি আমরা নিজেরাও পরীক্ষা করে দেখতে পারি যে মাংসের টুকরো (বা পাকা মাছের টুকরো) যদি গরম কড়ায় তেলে ফেলে ভাজতে থাকেন, দেখবেন চড়চড করে আওয়াজ হচ্ছে। এই আওয়াজের কারণ মাংসের বা মাছের ভেতর থেকে জল বেরিয়ে বাষ্পীভূত হচ্ছে। এর আরো পরে যখন আরো একটু উত্তাপ দেওয়া যায়, তখন দেখা যাবে মাংস কিছুটা শুকনো হবে, বিশেষ করে ভেতরের ফাইবার থেকে জল বেরোনোর ফলেই এই শুষ্কতা, এবং আরও উত্তাপ পেলে মাংসের ভেতরের কোলাজেন যখন গলতে শুরু করবে, মাংস আবার কিছুটা রসসিক্ত হয়ে উঠবে। যখন আরও উত্তাপ পাবে, মাংস এই অবস্থায় তার বাইরের দিকে মাইয়ার্ড রিঅ্যাকশন হতে শুরু করবে, এবং ঈষৎ কালচে আভা দেখতে পাওয়া যাবে, মাংসে একটি crispness আসবে। এবার মনে করুন, যে চম্পারণ মাংসের ক্ষেত্রে এরা মুখ ঢাকা মাটির হাঁড়ি ব্যবহার করেছেন, যার গায়ে অজস্র ছোট ছোট ছিদ্রপথে মশলা আর জল বেরোচ্ছে, যার জন্য মাংসের ভেতর থেকে জল যেমন বেরোচ্ছে তেমনি জল প্রবেশ করছে, বাষ্পীভূত হয়ে জল ও তেল মিশে একটি emulsion তৈরি হচ্ছে। মাংসের ফ্যাট, তেলের আর মশলার সংমিশ্রণ আমাদের নাকে এবং জিভে অপূর্ব স্বাদ গন্ধ এনে দেয়। যার জন্য এই খাবারটি খেতে যারা ভালবাসেন তাদের প্রিয়। আপনি যদি এই একই রান্না বাড়িতে করে খেতে চান, তাহলে ১) একটি মাটির পাত্র নিন (বা সিরামিক এর পাত্র নিন, কাঁচের casserole pot হলেও চলবে) ২) তাতে মাংস ছোট টুকরো করে কেটে পেঁয়াজ রসুন মসলা মেশান, জল দেবার প্রয়োজন নেই, পেঁয়াজের রস থেকে জল আসবে ৩) পাত্রটি একটি ঠান্ডা ওভেনে ১৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অন্তত দেড় থেকে দু ঘণ্টার জন্য বসিয়ে রাখুন ও ওভেন চালু করুন। একটি ব্যাপার খেয়াল রাখবেন যে আপনার ওভেনে কিন্তু কখনোই ৫০০ ডিগ্রির আশেপাশে তাপমান পৌঁছবে না, সেক্ষেত্রে আপনি সময় বাড়ান, অন্তত দু ঘন্টা রাখুন। যাঁরা আরো চড়া তাপ চান, তাঁরা পিৎজা স্টোন বা পিৎজা স্টিল ব্যবহার করতে পারেন (বাড়িতে পিৎজা করা নিয়ে পরে বিস্তৃত করে লিখব)। সে জিনিস দেখতে এমন হয়
৪) দেড় থেকে দু ঘণ্টা পর দেখবেন সুগন্ধ বেরোচ্ছে, তখন ওভেনের তাপ কমিয়ে আরও ১৫ মিনিট মতো রাখুন আপনার চম্পারণ মাংস প্রস্তুত। এটিকে একটি ফর্মুলার মত করে যদি ভাবি, দেখব যে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ঘরানায় মাটির পাত্রে এই ধরনের খাবার প্রায় একই রকম পদ্ধতিতে মানুষ রান্না করেছে। যেমন জাপানি শেফ Hasegawa Akari তাঁর donabe পাত্রে ভেড়ার মাংসের স্টু রান্না করেন [৩], মরক্কোর ল্যাম্ব ট্যাজিন ও এইভাবেই রান্না হয় [৪]। কাজেই চম্পারণ মাংস রান্নায় কোন আলাদা রকমের "যাদু" নেই বলে আমার অন্তত মনে হয়। তবে এরা যেহেতু ঐ রকম তাপে রান্না করেছে, মাংসের ওপরতলার দিকটি শুকিয়ে মাইয়ার্ড রিঅ্যাকশন হয়ে মাংস কালচে আকার ধারণ করেছে, এবং অনেকে পছন্দ করেন। খুব সাবধান, ঐ জিনিস যতটা পারবেন কম খাবেন, কারণ আজ অবধি কেউ সেইসব খাবার নিয়ে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ না দিলেও এ থেকে যে ক্যানসার হতে পারে, বিশেষ করে অন্ত্রের ক্যানসার, সাবধান হওয়াই ভাল। এ বিষয়ে Foodsafety সংস্থার সাবধানবাণী পড়ে দেখুন: https://foodsafety.institute/food-toxicology-public-health/maillard-reaction-flavor-toxicity-cooked-foods/ এবারের পর্বটি শেষ করব এর ঠিক উল্টো ধারার তৈরী একটি রেসিপি দিয়ে। এটিও মাংসের বা পাঠার মাংসের রেসিপি, উত্তর ভারত এবং পাকিস্তানে জনপ্রিয় এর নাম "মাটন পানি ফ্রাই", রান্নাটি বহু ইসলাম মতাবলম্বী মানুষ ঈদের উপবাসের পর খান, রান্নাটি শুধু জলে মাংস সেদ্ধ করে করা হয়। প্রথমে এই রান্নার প্রক্রিয় ও প্রকরণ দেখুন, তারপর রান্না টি বিনির্মাণ করে দেখব। রান্নাটি তে ইনি যা করেছেন, সংক্ষেপে:
যতটা মাংস তার তিনগুণ জল নিলেন (ধরুন ৫০০ গ্রাম মাংসে ১৫০০ গ্রাম জল নিলেন )
প্রথমে কড়ায় জল ফোটালেন
তারপর ফুটন্ত জলে মাংসের টুকরো ছাড়লেন
তার সঙ্গে মশলা মেশালেন (নুন, গোলমরিচ, লঙ্কা ইত্যাদি )
এবার মাংস মেশানো জলটিকে simmer করলেন ৪৫ মিনিট ধরে
ঢাকা খুলে দেখা গেল জলের পরিমাণ কম হয়েছে
মাংসের আর জলের মিশ্রণে গরম মশলা দিয়ে এবারে আঁচ বাড়িয়ে ঘন করলেন
রান্না প্রস্তুত এখানে একেবারেই আগের রান্নাটির উলটো, এবং এখানে কোন অবস্থাতেই মাংসে Maillard Reaction হয়ে মাংসে কালচে রঙ ধরার ও টক্সিসিটি হবার যো নেই। কিন্তু যেটি হচ্ছে: এক, আপনি মাংস এবার আর ঠাণ্ডা জলে দিচ্ছেন না, তাকে ফুটন্ত জলে সরাসরি ফেলছেন। এখানে জল ফোটার দু একটা বিষয় নিয়ে আসা যেতে পারে। সাধারণত ভাবে ফুটন্ত জল একটি চমৎকার থারমোমিটারের কাজ করে, কাজ সমতলভূমিতে জল ফুটছে মানে আপনি ধরে নিতে পারেন যে সে জলের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, আর জল যতক্ষণ না ফুটছে, অল্প করে পাত্রের তলা থেকে বুদ্বুদ নীচ থেকে ওপরে আসছে, কিন্তু টগবগ করে ফোটেনি, তার মানে ধরতে পারেন ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপ রয়েছে। তবে এ শুধু সমতলভূমির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে যাবেন, তত কম তাপমাত্রায় জল ফুটবে। প্রতি হাজার ফুট উচ্চতায় এক ডিগ্রি করে জলের boiling point কমবে, কাজেই ব্যাপারটি খেয়ালে রাখতে হবে। একই রকম ভাবে প্রেশার কুকারে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জল ফোটে এবং সেখানে রান্নার অন্যরকম। অতএব, যেই আপনি ফুটন্ত জলে মাংসের টুকরোগুলো ফেলবেন, দেখবেন তখনই মাংসের বাইরের দিকটায় পাঁশুটে বা সাদাটে রঙ ধরে গেল। এই ব্যাপারটি অনেকটা গরম চাটুতে মাংস দেবার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ করা যায়। এইখানে একটি ব্যাপার লেখার আছে। আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে (১৮৫০ সালে) জার্মান রসায়নবিদ ও চিকিৎসক ইউস্টাস ফন লিবিগ ("Justus von Liebig"), Researches on the Chemistry of Food বইতে লিখেছিলেন [৭], "When it is introduced into the boiling water, the albumen immediately coagulates from the surface inwards, and in this state forms a crust or shell, which no longer permits the external water to penetrate into the interior of the mass of flesh…. The flesh retains its juiciness, and is quite as agreeable to the taste as it can be made by roasting; for the chief part of the sapid ("স্বাদগন্ধের উৎসরূপ") constituents of the mass is retained, under these circumstances, in the flesh. And if the crust can keep water out during boiling, it can keep the juices in during roasting, so it’s best to sear the roast immediately, and then continue at a lower temperature to finish the insides." ইউস্টাস সম্ভবত বলতে চাইছেন যে ফুটন্ত জলে মাংস ফেলা মাত্রই মাংসের albumen মাংসখণ্ডের গায়ে এমন জমাট বেঁধে যাবে যে সে আর মাংসের ভেতর থেকে জল বেরোতে দেবে না। ফলে মাংস খুবও রসালো হয়ে রান্না হবে। অনেকে এই ব্যাপারটি এখনো বিশ্বাস করে প্রচার করেন, এমনকি অগুস্ত এসকোফিয়ে অবধি তাই ভাবতেন ও পড়াতেন, যদিও আদপে ব্যাপারটি তেমন নয়। লিবিগ লিখেছিলেন ১৮৫০ সালে, ১৯৩০ সালের সমসাময়িক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেল যে ঐভাবে মাংস থেকে জল বেরোয় না, বরং মাংস যেমন শুকোনোর শুকিয়ে যায়। হয়ত মাংসের ফাইবার কিছুটা গুটিয়ে যায়, যার জন্য মাংসের থেকে জল নির্গত হয়ে চারপাশের জলের মধ্যে আবার মিশে যেতে থাকে, ফলে মাংসের জল বরং শুকিয়ে যায়। এই ব্যাপারটি যারা টোফু রান্না করেন তাঁরা ভাল জানেন ও ব্যবহার করেন। টোফুকে রান্না করতে গেলে তার ভেতর থেকে জল কিছুটা বের করে দিতে হয়। অনেকে ভারি পাথর বই ইত্যাদি রাখেন, তবে তাতে কাজ বিশেষ হয় না। বরং টোফুকে ফুটন্ত জলে খানিকক্ষণ রেকে দিলে দেখবেন তার থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে যাবে। দুই, এখানে যেটা করা হয়, প্রথমবার ফূটন্ত জলে মাংস দেবার পরই জলটিকে অল্প আঁচে নামিয়ে আনা হয়। এতে করে কম বা নরম বা ঢিমে আঁচে মাংসটি রান্না হতে থাকে, এবং জল "কমে" আসে। ফলে মাংস একদিকে যেমন রসসিক্ত হয়, তেমন দেখবেন তাতে Maillard Reaction হবে না, কারণ সেই reaction হতে গেলে যে তাপমাত্রার প্রয়োজন এই পদ্ধতিতে তা কখনোই সম্ভব নয়। তিন, এরা শেষের দিকে খানিকটা জল ফুটিয়ে "বের" করে দেন, যাতে রান্নাটি "মাখামাখা" হয়, কিন্তু আমরা চাইলে অন্যভাবেও করতে পারি। রান্নার আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ার খাতিরে আমরা xanthan gum বা নেহাত অ্যারারুট বা ময়দাও দিতে পারি। কিন্তু ব্যাপারটি ঐ এক, ঢিমে আঁচে দীর্ঘক্ষণ ধরে রান্না। কিন্তু যদি রান্না অতক্ষণ ধরে না করতে চাই? প্রেশার কুকার আর ম্যারিনেড করে রান্না করি? তথ্যপঞ্জী: [০] বিলিতি কায়দায় রোস্ট কিন্তু বাঙালীর রোস্টের থেকে আলাদা [১] https://doi.org/10.1016/S0308-8146(98)00076-4 [২] https://en.wikipedia.org/wiki/On_Food_and_Cooking [৩] https://musubikiln.com/blogs/journal/hasegawa-akaris-spring-donabe-recipe-lamb-and-vegetable-stew [৪] https://www.seriouseats.com/lamb-and-prune-tagine-recipe-11681891 [৬] Urban, J.L., Vicariotto, M., Dunn-Rankin, D. et al. Temperature Measurement of Glowing Embers with Color Pyrometry. Fire Technol 55, 1013–1026 (2019). https://doi.org/10.1007/s10694-018-0810-3 [৭] ইউস্টাস ফন লিবিগ Researches on the Chemistry of the Food. Med Chir Rev. 1847 Oct 1;6(12):405-415. PMID: 29919163; PMCID: PMC5101743.
(বাকী, পরের পর্বে …)
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে,
মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা,
কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
আমাদের কথা
আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের
কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি
জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
বুলবুলভাজা
এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ।
দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও
লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
হরিদাস পালেরা
এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে
পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান
নিজের চোখে...... আরও ...
টইপত্তর
নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান।
এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর।
... আরও ...
ভাটিয়া৯
যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই,
সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক
আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
টইপত্তর, ভাটিয়া৯, হরিদাস পাল(ব্লগ) এবং খেরোর খাতার লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র কোন দায়িত্ব নেই। | ♦ :
পঠিত সংখ্যাটি ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ থেকে, লেখাটি যদি তার আগে লেখা হয়ে থাকে তাহলে এই সংখ্যাটি সঠিক পরিমাপ নয়। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি।
যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।
মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি
বার পঠিত
সকলকে জানান
উপরে যে কোনো বোতাম টিপে পরিচিতদের সঙ্গে ভাগ করে নিন
গুরুচন্ডা৯ বার্তা
গুরুতে নতুন?
এত নামধাম দেখে গুলিয়ে যাচ্ছে? আসলে আপনি এতদিন ইংরিজিতে সামাজিক মাধ্যম দেখে এসেছেন। এবার টুক করে বাংলায়ও সড়গড় হয়ে নিন। কটা তো মাত্র নাম।
গুরুর বিভাগ সমূহ, যা মাথার উপরে অথবা বাঁদিকের ভোজনতালিকায় পাবেনঃ
হরিদাসের বুলবুলভাজা : গুরুর সম্পাদিত বিভাগ। টাটকা তাজা হাতেগরম প্রবন্ধ, লেখালিখি, সম্ভব ও অসম্ভব সকল বিষয় এবং বস্তু নিয়ে। এর ভিতরে আছে অনেক কিছু। তার মধ্যে কয়েকটি বিভাগ নিচে।
শনিবারের বারবেলা : চিত্ররূপ ও অক্ষরে বাঙ্ময় কিছু ধারাবাহিক, যাদের টানে আপনাকে চলে আসতে হবে গুরুর পাতায়, ঠিক শনিবারের বারবেলায়।
রবিবারের পড়াবই : পড়া বই নিয়ে কাটাছেঁড়া সমালোচনা, পাঠপ্রতিক্রিয়া, খবরাখবর, বই নিয়ে হইচই,বই আমরা পড়াবই।
বুধবারের সিরিয়াস৯ : নির্দিষ্ট বিষয় ধরে সাপ্তাহিক বিভাগ। ততটা সিরিয়াসও নয় বলে শেষে রয়ে গেছে ৯।
কূটকচা৯ : গুরু কিন্তু গম্ভীর নয়, তাই গুরুগম্ভীর বিষয়াশয় নিয়ে ইয়ার্কি ফুক্কুড়ি ভরা লেখাপত্তর নিয়েই যতরাজ্যের কূটকচা৯। কবে কখন বেরোয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
হরিদাস পাল : চলতি কথায় যাদের বলে ব্লগার, আমরা বলি হরিদাস পাল। অসম্পাদিত ব্লগের লেখালিখি।
খেরোর খাতা : গুরুর সমস্ত ব্যবহারকারী, হরিদাস পাল দের নিজের দেয়াল। আঁকিবুঁকি, লেখালিখির জায়গা।
টইপত্তর : বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। বাংলায় যাকে বলে মেসেজবোর্ড।
ভাটিয়া৯ : নিখাদ ভাট। নিষ্পাপ ও নিখাদ গলা ছাড়ার জায়গা। কথার পিঠে কথা চালাচালির জায়গা। সুতো খুঁজে পাওয়ার দায়িত্ব, যিনি যাচ্ছেন তাঁর। কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।
লগিন করে থাকলে ডানদিকের ভোজনতালিকায় যা পাবেনঃ
আমার গুরুঃ আপনার নিজস্ব গুরুর পাতা। কোথায় কী ঘটছে, কে কী লিখছে, তার মোটামুটি বিবরণ পেয়ে যাবেন এখানেই।
খাতা বা খেরোর খাতাঃ আপনার নিজস্ব খেরোর খাতা। আঁকিবুকি ও লেখালিখির জায়গা।
এটা-সেটাঃ এদিক সেদিক যা মন্তব্য করেছেন, সেসব গুরুতে হারিয়ে যায়না। সব পাবেন এই পাতায়।
গ্রাহকরাঃ আপনার গ্রাহক তালিকা। আপনি লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা পাবেন নোটিফিকেশন।
নোটিঃ আপনার নোটিফিকেশন পাবার জায়গা। আপনাকে কেউ উল্লেখ করুক, আপনি যাদের গ্রাহক, তাঁরা কিছু লিখুন, বা উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটুক, জলদি পেয়ে যাবেন নোটিফিকেশন।
বুকমার্কঃ আপনার জমিয়ে রাখা লেখা। যা আপনি ফিরে এসে বারবার পড়বেন।
প্রিয় লেখকঃ আপনি যাদের গ্রাহক হয়েছেন, তাদের তালিকা।