

নামাঙ্কণ: রমিত
কিয়োটো (জাপান) - স্ট্রীটফুড
জাপান আমার খুব প্রিয় দেশ – আর সেই দেশের সবচেয়ে ভালো লাগার শহর আমাকে বাছতে বললে প্রথমেই আসবে কিয়োটোর নাম। জানি না কেন, কিয়োটো আমাকে খুব টানে – এই জায়গায় সৌন্দর্য্য, এখানকার সংস্কৃতি, নানা প্রাচীন মন্দির – তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা রূপকথার মত গল্প – সব জড়িয়ে কেমন মোহময় লাগে সব কিছু। তবে জাপানের এক সময়ের রাজধানী কিয়োটো শুধুমাত্র তার মন্দির, বাগান আর গেইশা এলাকার জন্যই বিখ্যাত নয়, তার সাথে আপনি জুড়ে নিন এখানকার খাদ্য সংস্কৃতি – তা সে প্রথাগত ভাবে জাপানী খাবার রেস্তোঁরাতে খাওয়া হোক বা রাস্তার ধারের স্ট্রীট ফুড, যা নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।
আমরা অনেকেই জানি যে কিয়োটো বহু শতাব্দী ধরে জাপানের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল। তেমন ভাবে লক্ষ্য করলে এখানকার খাদ্য সংস্কৃতিতে দুটি প্রধান ধারার প্রভাব দেখা যায়, এক হল এখানকার রাজকীয় আভিজাত্য ও তাঁদের রীতিনীতি এবং দ্বিতীয় হল বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব।
ইতিহাস জুড়েই আমরা লক্ষ্য করেছি যে দেশের রাজারা যে এলাকায় থাকেন সেখানকার রন্ধনশৈলীতে কিছু না কিছু নতুনত্ব দেখা যায়, কারণ রাজাদের তাঁদের উপযুক্ত খাবার তো খাওয়াতে হবে! ফলে তখনকার শেফ-দের মধ্যে রেষারেষি – নতুন খাবার উদ্ভাবন করে সম্রাটের সুনজরে আসা বা তাঁদের কাছে পুরস্কার জিতে নেওয়া – এ প্রায় সব সাম্রাজ্যেরই পরিচিত দৃশ্য। কিয়োটো-ও তার ব্যতিক্রম নয় - ৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৬৮ পর্যন্ত জাপানের রাজধানী ছিল এই শহর। দীর্ঘ এই সময় জুড়ে শহরটি রাজপরিবার, অভিজাত সম্রাজ্ঞী, সামুরাই এবং মন্দির-সংলগ্ন পুরোহিতদের আবাসস্থল হিসেবে সমৃদ্ধ এক খাদ্যসংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল।
এখানেই কাইসেকি রিয়োরি -এর মতো উচ্চমানের, পরিশীলিত রন্ধনশৈলীর জন্ম হয়। যাঁরা কাইসেকি রিয়োরি এর সাথে তেমন পরিচিত নন, তাঁদের জন্য সংক্ষেপে জানানো যাক, এটা হলো জাপানের একটি বিশেষ ধরনের খাবার পরিবেশনের পদ্ধতি। অনেকটা আজকের দিনের 'ফাইন ডাইনিং'-এর মতো, তবে তার চেয়েও অনেক বেশি ঐতিহ্যবাহী। কাইসেকির এর মূল ধারণা হল - ঋতু অনুযায়ী খাবার! অর্থাৎ, যখন যে সময়ে সবজি বা মাছ সবচেয়ে তাজা, সেটাই পরিবেশন করা হবে। শেফরা শুধু স্বাদের দিকেই নজর দেন না, তারা চান প্রতিটি ডিশ যেন একটি শিল্পকর্ম হয়ে ওঠে। সাশিমি হোক বা গ্রিলড ফিশ, সবকিছুই সাজানো হয় প্রকৃতির মতো করে— যেন আপনি একটি প্লেটের মধ্যে ছোট্ট জাপানি বাগান দেখছেন। তাই কাইসেকি শুধু খাবার খাওয়া নয়, খেতে খেতে আপনি জাপানি সংস্কৃতি ও ঋতু পরিবর্তনের আনন্দ উপভোগ করে নিতে পারবেন। 
কিয়োটোর রান্নাবান্নায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবটা এসেছে মূলত এই এলাকায় অনেক বৌদ্ধ মন্দির থাকার কারণে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের নিরামিষ খাদ্য খান যা সৃষ্টি করে শোজিন রিয়োরি রন্ধনশৈলী। আপনি যদি নিরামিষ বা ভেগান খাবার ভালোবাসেন, তাহলে এ জিনিস আপনার ভালো লাগবে বলেই আমার মনে হয়। শোয়াজিন রিয়োরিতে মাংস, মাছ, এমনকি কটু গন্ধযুক্ত সবজি (যেমন পেঁয়াজ, রসুন) ব্যবহার করা হয় না। এর প্রধান লক্ষ্য হলো— খাদ্যের মাধ্যমে শরীর ও মনকে শান্ত রাখা। এই রান্নায় ডাল, সয়াবিন, ঋতুভিত্তিক সবজি এবং শাক-সবজিকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয় যাতে প্রতিটি খাবারের স্বাদ একদম টাটকা লাগে। এই ঐতিহ্য কিয়োটোর বিখ্যাত টোফু এবং ইউবা (টোফুর সর টাইপের)-এর মতো খাবারগুলির জন্ম দিয়েছে।
এবার যদি আপনি স্ট্রীট ফুডের কথা ভাবেন, তাহলে সে তো আর জটিল রন্ধনশৈলী চালাতে পারবে না রাস্তার ধারে বসে যেখানে পাবলিক খাবো বলে হইহই করছে এবং তাড়া লাগাচ্ছে! তবে কিনা কিয়োটোর স্ট্রীট ফুড সেই টাটকা উপকরণ এবং সিজিন অনু্যায়ী স্বাদের ভারসাম্য ধরে রাখার ঐতিহ্যকে বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে এই এখনও। প্রথমদিকে কিয়োটোর স্ট্রিট ফুড মূলত মন্দিরের আশেপাশে বিক্রি হওয়া সহজলভ্য, নিরামিষ ও সস্তা খাবার ছিল — মোচি, দাঙ্গো, সয়াবিন-ভিত্তিক স্ন্যাকস এবং মৌসুমি ফল। বিশেষত শিনতো ও বৌদ্ধ মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা খাবারই ধীরে ধীরে রাস্তার ধারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদো যুগে (১৬০৩–১৮৬৮) অর্থনীতি ও বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে। তখন কিয়োটোতে কারিগর, শিল্পী, ব্যবসায়ী ও পণ্ডিতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই সামাজিক রূপান্তরে টি-হাউজ, ছোট রেস্তোরাঁ ও খাবারের স্টল বৃদ্ধি পায়। এগুলোতে খাবারের মান, মৌসুমি বৈচিত্র ও পরিবেশনার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিয়োটোর রান্নায় যে সূক্ষ্মতা দেখা যায়—যেমন কম মশলায় প্রাকৃতিক স্বাদ ফুটিয়ে তোলা—তার ভিত্তি এই সময়েই স্থাপিত হয়।
বিশেষত নিশিকি মার্কেট, যা "কিয়োটোর রান্নাঘর" নামে পরিচিত, ১৪শ শতক থেকে এই শহরের খাদ্য সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে আসছে। নিশিকি মার্কেট নিয়ে আলাদা করে তো আগেই লিখেছিলাম। নিশিকি মার্কেট-কে আপনি ধরতে পারেন অনেকটা এ টি দেবের ডিকশেনারীর মত – প্রায় সব কিছু পেয়ে যাবেন এখানে খুঁজলেই! এই নিশিকি মার্কেট-টা আসলে একটা বেশ বড় প্রায় ৪০০ মিটার লম্বা সরু স্ট্রিট – যার দুই ধারে দোকান। ছোট বড় মিলে প্রাট ১৩০টা দোকান আছে এই মার্কেটে। এই নিশিকি মার্কেটের একটা প্রধান সমস্যা হল প্রচণ্ড ভিড়! কিছু কিছু সময় এত বেশি ভিড় হয়, যে চলাফেরা করা দায় হয়ে ওঠে! আর এই মার্কেটের একটা বিশেষত্ব হল এই, যে এখানে যা পাওয়া যায়, তার প্রায় ৯০%-এর বেশি স্থানীয় জিনিস – মানে যাকে বলে লোকাল প্রোডিউস। এই বাজারের ইতিহাস অনেক পুরানো – সেই প্রায় সাড়ে বারশ’ বছর আগে ৭৮২ সালে মাছ বিক্রির মাধ্যমে এই বাজারের শুরু। মাছ বিক্রির সাথে এই বিশেষ স্থানটি বেছে নেবার একটা কারণ আছে – বুঝতেই পারছেন সুশি-র প্রধান অঙ্গ হল একেবারে টাটকা মাছ (যা প্রায় কাঁচা খাওয়া হয়)। তখনকার দিনে তো আর ফ্রিজ ইত্যাদি ছিল না – বরফের ব্যবহারও মনে হয় ছিল না। তাই মাছ বাঁচিয়ে রাখতে কিছু একটা ঠান্ডা তো চাই – আর সেই কাজে সাহায্য করেছিল কিয়োটোর এই নিশিকি মার্কেট এলাকার মাটির তলার ঠান্ডা জল। আর তা ছাড়া, এই জায়গাটা কিয়োটো রাজপ্রাসাদের কাছাকাছিও। 
জাপান বেড়াতে গেলে বা জাপান দেশ সমন্ধে খোঁজ খবর রাখলে আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছেন যে এরা জাতি হিসেবে আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে। এদের খাবারেও তাই বিশাল কিছু বিদেশী প্রভাব পড়েছে এমন নয় – তবে হ্যাঁ, কালের প্রভাবে, বিশেষ করে এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বাইরের কিছুটা ছাপ তো আসবেই। স্ট্রীট ফুডেও কিছু বাইরের ছোঁয়া দেখা যায় আজকাল। ইতিহাসের হিসেবে দেখলে উনিশ শতকের মেইজি পুনরুদ্ধারের পর যখন জাপান পশ্চিমা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত হয়, তখন খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আসে। এই সময়কাল থেকে শুরু করে পশ্চিমা রন্ধনশৈলীর কিছু প্রভাব দেখা যায়, যেমন: করোক্কে (ফরাসি ক্রোকেট থেকে আগত এই জাপানি ক্রকেট আলু বা মাংসের পুর দিয়ে তৈরি করে ব্রেডক্রাম্বসে ডুবিয়ে ভাজা হয়) বা আমেরিকান ডগ (কর্ন ডগের জাপানি সংস্করণ)। এগুলো এখনো আপনি পাবেন কিয়োটোর অনেক জায়গায় – বিশেষ করে যেখানে টুরিষ্টদের প্রাধান্য বেশী। 
কিয়োটো শহরটা এমনই যে পায়ে হেঁটে ঘুরতেই খুব ভালো লাগে। এখানকার পর্যটনের প্রধান আকর্ষণের জায়গাগুলির সামনে আপনি পেয়ে যাবেন নানা ধরণের স্ট্রীট ফুডের দোকান – যেমন ধরুন কিয়োমিজু-দেরা মন্দির যাবার রাস্তার দুই পাশে যে দোকান গুলি আছে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কিছু সময় থেকে গিয়ে স্ট্রীট ফুডের দোকানে ঢুকে কিছু খেয়ে নেওয়া তাই প্রায় রুটিনের পর্যায়ে চলে আসে। সেই জন্য কিয়োটো স্ট্রীট ফুড পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তেমনই কয়েকটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় স্ট্রীট ফুড হলঃ
তাকো তামাগোঃ এটি নিশিকি মার্কেটের খুব জনপ্রিয় খাবার। একটি ছোট আস্ত বেবি অক্টোপাসকে মিষ্টি-নোনতা সয়া সস দিয়ে গ্লেজ করা হয় এবং এর মাথাটি একটি কোয়লের ডিম দিয়ে স্টাফ করা থাকে। এই খাবারটি কাঠিতে গেঁথে পরিবেশন করা হয়।
ড্যাশি-মাকি তামাগোঃ এটি হলো ড্যাশি (এক প্রকার জাপানি ঝোল বা স্টক) ব্যবহার করে তৈরি করা নরম, তুলতুলে এবং রোল করা ডিমের অমলেট। এর স্বাদ খুবই হালকা এবং সুস্বাদু।
মিতারাশি ডাঙ্গোঃ চালের তৈরি ছোট মিষ্টি পিঠা বা ডাম্পলিং। এই ডাম্পলিংগুলি কাঠিতে গেঁথে গ্রিল করা হয় এবং মিষ্টি, সয়া-ভিত্তিক এক ধরণের গাঢ় গ্লেজ দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
ইনারি জুশিঃ টোফু-প্রেমীদের জন্য এটি একটি দারুণ খাবার। এই সুশিতে ভিনিগারযুক্ত ভাতকে ডিপ-ফ্রাই করা মিষ্টি টোফু পকেটের ভেতরে ভরে দেওয়া হয়। কিয়োটোর আরেকটি প্রধান দর্শনীয় জায়গা ফুঁশিমি ইনারি মন্দিরের আশেপাশে এই খাবারের জনপ্রিয়তা বেশি। 
তাইয়াকিঃ দেখতে মাছের আকারের একটি প্যানকেক বা কেক। এটি সাধারণত মিষ্টি লাল শিমের পেস্ট অথবা কাস্টার্ড ক্রিম দিয়ে ভরা থাকে এবং গরম গরম পরিবেশন করা হয়।
ইয়াতসুহাশিঃ এটি কিয়োটোর সবচেয়ে বিখ্যাত মিষ্টি টাইপের খাবারগুলির মধ্যে একটা। এবার যদি আপনি বাঙালি মিষ্টিত্বের স্কেলে একে মাপতে বসেন তাহলেই কেলো! চালের আটা, চিনি এবং দারুচিনি দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এর নরম, স্টিমড সংস্করণকে নামা-ইয়াতসুহাশি বলা হয়, যা প্রায়শই আঙ্কি (মিষ্টি লাল শিমের পেস্ট) বা কাস্টার্ড ক্রিম দিয়ে ভরা থাকে। নাম না জানলেও কিয়োটো গিয়ে থাকলে আপনি এটা খেয়েছেন নিশ্চিত, বিশেষ করে যদি আপনি টুরিষ্ট-গাইডের সাথে যান – এটা আপনাকে ট্রাই করাবেই ধরে নিতে পারেন।
মোচিঃ এটি একধরণের চিবানো যোগ্য নরম রাইস কেক। কিয়োটোতে বিভিন্ন রকম মোচি পাওয়া যায়, যেমন সাকুরা মোচি, কুসা মোচি (মাগওয়ার্ট পাতা দিয়ে তৈরি), দাঙ্গো (স্টিক-এ পরিবেশিত)। সেভাবে দেখতে গেলে মোচি হচ্ছে কিয়োটোর রাস্তার খাবারের প্রাচীনতম প্রতিনিধি। 
মাতচা (বা মাচা) মিষ্টিঃ আগের জিনিসগুলি আপনি ভুলবশতঃ এড়িয়ে যেতে পারলেও, এই মাতচা দেওয়া মিষ্টি এড়িয়ে যাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য! আর এই জিনিস একবার না ট্রাই করে কিয়োটো থেকে ফিরে আসাও মনে হয় ঠিক নয়! পার্শ্ববর্তী উজি অঞ্চলে উন্নত মানের মাতচা (গ্রিন টি)-এর উৎপাদন হওয়ার কারণে কিয়োটোতে মাতচা আইসক্রিম, মাতচা পাফস, বা মাতচা ডাঙ্গোর মতো মিষ্টিগুলি খুব জনপ্রিয়। যেখানে পর্যটকদের আনাগোণা বেশী, সেই সব রাস্তার ধারে সবচেয়ে বেশী দোকান মনে হয় এই মাতচা কেন্দ্রীক! স্যোসাল মিডিয়ায় যে দোকানগুলি ভাইরাল হয়েছে যেখানে খেতে হলে আপনাকে তো রীতিমত লাইন দিতে হবে! 
আমার নিজের দেখতে বেশ ভালো লেগেছিল মাতচা পারফে - ধাপে ধাপে সাজানো থাকে মাচা আইসক্রিম, মাচা জেলি, ঘন হুইপড ক্রিম, মিষ্টি লাল শিমের পেস্ট (আজুকি), চিবাণো মোচি টুকরো আর মুচমুচে ওয়েফার। অনেকটা আমাদের এখানে লম্বা গ্লাসে সার্ভ করা সান্ডে বা টুটি-ফ্রুটির মত আর কি – যদিও খেতে অনেক আলাদা। মাতচা তো অনেক ধরণের হয় – যত গুড় দেবেন তত মিষ্টি হবে, মানে যত দাম দেবেন তত উঁচু মানের জিনিস পাবেন আর কি। কিয়োটোর বিখ্যাত চায়ের দোকান গুলি, যেমন নাকামুরা টোকিচি বা ইতোকিউয়েমন এ গেলে ক্লাসিক মাতচা পারফের দেখা মিলবে। এদের পারফেগুলোতে ব্যবহৃত মাতচা খুব উঁচুমানের আর তাই এদের সবুজ সবুজ রঙ দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। এই সব দোকানেই আপনি পেয়ে যাবেন মাতচা রোল কেক – সে আর এক দারুণ জিনিস - নরম স্পঞ্জ কেকের ভেতরে মাতচা-ইনফিউজড ক্রিম ভরা থাকে।
সি-ফুড অন আ স্টিক: নিশিকি মার্কেটে বিভিন্ন তাজা সামুদ্রিক খাবার কাঠিতে গেঁথে বিক্রি হয়। গ্রিল করা স্কুইড বা টাটকা মাছের স্কেভারগুলি দ্রুত ও সুস্বাদু পথখাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।
সয় মিল্ক ডোনাটঃ সয় মিল্ক ডোনাট আরেক জনপ্রিয় ডেজার্ট। সয়াবিনের দুধ দিয়ে তৈরি বলে এই ডোনাটগুলো খুবই হালকা আর স্বাস্থ্যকর। ছোট ছোট গোল আকারের এই ডোনাটগুলো এত নরম যে একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের স্ট্রিট ফুড প্রায়শই তেল এবং বিভিন্ন প্রকারের তীব্র মসলা দিয়ে দ্রুত পদ্ধতিতে তৈরি হয়। এর সাথে তুলনা করলে কিয়োটোর স্ট্রিট ফুডে তেল ও মসলার ব্যবহার কম। আর একটা জিনিস মনে রাখবেন, বিশ্বের অনেক শহরে হাঁটা-চলা করতে করতে স্ট্রিট ফুড খাওয়া খুব কমন ব্যাপার। কিন্তু জাপানে, বিশেষত কিয়োটোতে, রাস্তায় হেঁটে খেতে খেতে যাওয়াকে অশিষ্ট বলে মনে করা হয়। বেশিরভাগ দোকানেই ক্রেতাদের জন্য খাবারের স্টলের পাশে অথবা বাজারের নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। 
আগেই লিখেছি যে কিয়োটোর সে সব জায়গায় পর্যটকদের যাতাযাত বেশি সেখানেই গড়ে উঠেছে স্ট্রীট ফুডের বেশীর ভাগ কেন্দ্র এবং স্টল। কিন্তু সেই সব স্ট্রিট ফুডের ব্যাপার স্যাপার প্রায় সবই ঘটে দিনের বেলায় – মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া বা দক্ষিণ-এশিয়ার অন্যান্য জায়গার মত এখানে রাতের স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতি খুব একটা জনপ্রিয় নয়। এমনকি নিশিকি মার্কেটের মত জনপ্রিয় জায়গাও সন্ধ্যে ছটা বা সাতটার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। দিনের বেলা যে সব জায়গায় গেলে আপনি স্ট্রীট ফুডের দোকান পেয়ে যাবেন সেই সব জায়গাগুলি হল - ফুশিমি ইনারি শ্রাইন এলাকা, কিয়োমিজু মন্দির এলাকা, আরাশিয়ামা, গিওন এলাকা এবং নিশিকি মার্কেট তো আছেই। ফুশিমি ইনারি এলাকায় আপনি পেয়ে যাবেন ইনারি জুশি (টোফু আবৃত সুশি), মিজু-মারু মোচি -এর মতো মিষ্টি, এবং বিভিন্ন ধরনের সেনবেই। কিয়োমিজু মন্দিরের আশেপাশে মাতচা আইসক্রিম এবং ইয়াতসুহাশি মিষ্টির দোকানগুলি খুব জনপ্রিয়। 
নিশিকি মার্কেটে আপনি পাবেন ফ্রেশ শামুকের জন্য বিখ্যাত দোকান দাইয়াসু, আছে নিশিকি তাকাকুয়ারা – যারা বিক্রি করে কিয়োটো-র লোকাল ডেলিকেসি সুকিমোনো (একধরণের পিকলড্ সবজি, মানে লবণ জলে ভিজানো সবজি)। আছে রেস্টুরান্ট নিশিকিকোজি, যাদের ওয়াকোডন (জাপানিজ রাইস – সাথে চিকেন, ডিম, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে সয়া সসের সাথে বানানো ডিশ) এবং নিশিন সোবা (আটা দিয়ে বানানো খুব সরু সরু নুডলস্ এবং তার থেকে বানানো ডিশ) – খুব বিখ্যাত ডিশ।
সাকুরা (চেরী ফুল ফোটা) এর সময় গেলে আপনি পেয়ে যাবেন আরো অনেক অস্থায়ী খাবারের স্টল – কিছু কিছু জায়গায় চেরী ফুলের গাছের নীচে গড়ে তোলা হয় সাময়িক সেই সব স্টল। সেখানে বসে ঠান্ডা, গরম পানীয় থেকে শুরু করে নারা ধরণের খাবার চেরী গাছের তলায় পাতা তক্তার মতন জায়গায় বসে খেতে কি যে ভালো লাগে তা বোঝাতে পারবো না।
কত আর লিখি! কিয়োটো বেড়াতে গেলে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ান আর ক্লান্ত হলে এই সব দোকানে ঢুঁ মারুন – বসে খেয়ে নিন নানা কিসমের খাবার – অভিজ্ঞতা যে অপূর্ব হবে তার একপ্রকার গ্যারান্টি দেওয়া যেতে পারে। 
হীরেন সিংহরায় | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৪:৫২736339
অরিন | 122.15.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:১২736340
সুকি | 49.205.***.*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৬736366
হীরেন সিংহরায় | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৩৪736368
dc | 2401:4900:7b8b:5581:6516:dac0:4235:***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৯736369