

ছবি: রমিত
খাবার নিয়ে আগে অনেক লিখেছি – এবার ভাবলাম বিভিন্ন দেশের রাস্তার ধারের খাবার নিয়ে কিছু লেখা যাক। অবশ্য রাস্তার ধারের খাবার নিয়ে লেখা এমন কিছু নতুন নয় – স্ট্রীট ফুড নিয়ে লেখা লিখি তো আজকাল ছেয়ে গ্যাছে। তাই এই নিয়ে লিখতে ইতস্তত করছিলাম – কিন্তু পাই অনুরোধ করল লিখে ফেলতে। তাই ভাবলাম লিখেই ফেলি। আর মনে আছে অনেক দিন আগে কেকে কি একটা প্রসঙ্গে লিখেছিল, খাবার নিয়ে অনেক লেখা থাকলেও সবার লেখার আঙ্গিক তো আর এক নয়। তো সেই সব ভরসাতেই শুরু করি আর কি। আর স্ট্রীট-ফুডের স্বর্গ যদি কোথাও থাকে তাহল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। শুরু করা যাক তা হলে ভিয়েতনামের হ্যানয় শহর দিয়ে -
হ্যানয়ের স্ট্রীটফুড

ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরটি আমার দারুণ লাগে – হয়ত শহরটি সেই দেশের সবচেয়ে সুন্দর শহর নয়, কিন্তু ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিশ্রণ হ্যানয়-কে করে তুলেছে খুবই আকর্ষনীয়। আর আজকের দিনে হ্যানয় তার বৈচিত্র্যময় এবং সুস্বাদু স্ট্রিট-ফুডের জন্য পর্যটকদের কাছে আলাদা করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যেন। এই শহরের প্রতিটি অলিতে-গলিতে, ফুটপাথে, বাড়ির সামনে ছোট ছোট খাবারের দোকানে বিক্রী হচ্ছে কত রকমারী খাবার – এ সবই স্থানীয় লোকেদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেবারে হ্যানয় বেড়াতে গিয়ে এক স্থানীয় গাইডের সাথে ঘুরে দেখেছিলাম সেখানকার লোকেরা কি ধরণের স্ট্রিট-ফুড খায় রোজকার জীবন।
আমরা আজকাল স্ট্রীট ফুড নিয়ে শখের হইচই এবং উথাল পাথাল হলেও একটু তলিয়ে দেখা যাবে, শুধু হ্যানয় বা ভিয়েতনাম কেন, সারা পৃথিবীতেই এই ধরণের খাবার শুরু এক প্রকার প্রয়োজনীয়তা থেকেই এবং এর সাথে জড়িয়ে অনেক শতাব্দীর ইতিহাস। এই যেমন বলা হয়ে থাকে যে হ্যানয়ের খাবারের ইতিহাস তেমন ভাবে বলতে গেলে শুরু হয় প্রায় ১৫০০ বছর আগে থেকে – এবং তখন সেটা ছিল একটি কৃষিভিত্তিক সমাজ। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল, শাকসবজি, ভেষজ এবং মসলা দিয়ে তৈরি খাবার ছিল সেই সময়ে সাধারণ মানুষের প্রধান খাদ্য।
কোন জায়গায় খাবারের বিবর্তন নিয়ে ভাবতে গেলে সেই জায়গার ইতিহাস এড়িয়ে গেলে তো আর চলবে না! কারণ এটা আমরা প্রায় সবাই জানি যে সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে খাদ্যেরও বিবর্তন এবং পরিবর্তন হয়। এবং সেই পরিবর্তন আরো প্রকট হয় যদি সেই জায়গায় এসে মেশে নানা সংস্কৃতি – বলা যেতে পারে খাবারের বিবর্তন হয় যেন। তাই চট করে হ্যানয়ের ইতিহাস একটু দেখে নেওয়া যাক –
১০১০ খ্রিস্টাব্দে লি রাজবংশের রাজা লি থাই তো এই শহরটিকে থ্যাং লং ("উড়ন্ত ড্রাগন") নাম দিয়ে ভিয়েতনামের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩১ সালে নগুয়েন রাজবংশের সময় শহরটির নাম পরিবর্তন করে হ্যানয় রাখা হয়, যার অর্থ "দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি"। এর পরে এল ফরাসীরা – সেই ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসনের আমলে (১৯০২-১৯৫৪) এটি ফরাসি ইন্দোচীনের রাজধানী হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৪ সালে ফরাসিদের পরাজয়ের পর, হ্যানয় উত্তর ভিয়েতনামের রাজধানী হয় এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন বোমাবর্ষণে শহরটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭৬ সালে ভিয়েতনাম পুনর্মিলিত হওয়ার পর থেকে হ্যানয় অবিভক্ত ভিয়েতনামের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
বলা হয়ে থাকে হ্যানয়ের 'ওল্ড কোয়ার্টার' এর গঠনশৈলীই নাকি স্ট্রিট ফুডের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করেছে! ১১ শতকে লাই রাজবংশের সময় এই এলাকাটি মূলত ৩৬টি রাস্তায় বিভক্ত ছিল, যেখানে প্রতিটি রাস্তা একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা বাণিজ্যের জন্য নিবেদিত ছিল। এই সরু, ঘনবসতিপূর্ণ রাস্তায় ফুটপাত বা ছোট দোকান ছাড়া বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর স্থান ছিল না, যা স্ট্রিট ফুড বিক্রেতাদের জন্য আদর্শ স্থান তৈরি করে।
যখন হ্যানয় "থ্যাং লং" নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল এবং রাজকীয় রাজধানী ছিল, তখন এখানকার খাবারে রাজকীয় আভিজাত্য যুক্ত হয়। রাজপরিবারের জন্য তৈরি হতো জটিল ও সুসজ্জিত খাবার - এই সময়ে খাবার হয়ে ওঠে সামাজিক মর্যাদার প্রতীক, যেখানে স্থানীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হতো রাজকীয় ভোজ। ২০শ শতকের শুরুতে, হ্যানয় হয়ে ওঠে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই সময়ে শহরের রাস্তায় বিক্রেতারা দোকান বসিয়ে ব্যবসায়ীদের, শ্রমিকদের ও পথচারীদের জন্য খাবার বিক্রি শুরু করেন। এই স্ট্রিট ফুড ধীরে ধীরে শহরের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। আর এটা তো মানবেন যে, আজকের দিনে, হ্যানয়ের স্ট্রিট ফুড শুধু খাবার নয়, বরং একটি সামাজিক অভিজ্ঞতা — যেখানে মানুষ একসাথে বসে খায়, গল্প করে, এবং শহরের প্রাণবন্ততা উপভোগ করে।
ফরাসীদের শাসনকাল মাত্র বছর পঞ্চাশের হলেও হ্যানয়ে তার প্রভাব প্রচুর – যাঁরা গ্যাছেন তাঁরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে আজকের হ্যানয়ের স্থাপত্য থেকে শুরু করে খাদ্যাভাসেও ফরাসী প্রভাব সুস্পষ্ট – এবং তার জন্যই মনে হয় হ্যানয় আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। ফরসী শাসনের সময় হ্যানয়ের খাবারে আসে নতুন উপাদান ও রান্নার কৌশল - এই সংমিশ্রণ হ্যানয়ের স্ট্রিট ফুড হয়ে ওঠে আরও বৈচিত্র্যময়। ফরাসিরা নিয়ে আসে গমের রুটি, দুধজাত পণ্য, এবং বেকিং -এর মতো রান্নার পদ্ধতি। এর ফলে তৈরি হয় "বান মি" (ফরাসি ব্যাগেটের মধ্যে ভিয়েতনামী উপাদান) এবং "ভিয়েতনামিজ কফি"। এই দুই খাবারই আজকের হ্যানয়ের রাস্তার ধারের দোকান গুলো মাতিয়ে রাখছে।

তাহলে এবার হ্যানয়ের জনপ্রিয় স্ট্রীট ফুডের একটা তালিকা করে ফেলা যাকঃ
• বান মি: এটি ফরাসি ব্যাগেটের- এর সঙ্গে ভিয়েতনামি উপকরণের মিশ্রণে তৈরি এক প্রকার স্যান্ডউইচ। এর মধ্যে মাংস (যেমন শুয়োরের সসেজ, গ্রিল করা মুরগি বা বিফ স্টেক), শসা, গাজরের আচার, ধনে পাতা ও ঝাল সস দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
• ফো: ভিয়েতনামের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রায় জাতীয় খাবার বলতে গেলে। গরুর মাংস বা মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি সুস্বাদু নুডল স্যুপ। ধারণা করা হয়, এটি ২০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ফরাসিদের আনা গরুর মাংস এবং স্থানীয় নুডলসের সংমিশ্রণে তৈরি হয়ে ছিল। এটি প্রাথমিকভাবে ধানক্ষেতের শ্রমিকদের খাবার ছিল, যা পরে জনপ্রিয়তা লাভ করে। চালের নুডলস, পাতলা করে কাটা মাংস (গরু বা মুরগি) এবং বিভিন্ন সুগন্ধি মশলা (যেমন দারুচিনি, এলাচ, আদা) দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তৈরি করা ঝোল বা ব্রথ দিয়ে পরিবেশিত হয়।
• বান চা: এটি হ্যানয়ের একটি বিশেষ খাবার। গ্রিল করা শুয়োরের মাংসের প্যাটি এবং স্লাইসগুলোকে হালকা মিষ্টি ও টক ফিশ সসের ঝোলের মধ্যে ডুবিয়ে পরিবেশন করা হয়। এর সঙ্গে থাকে চালের ভার্মিসেলি নুডলস এবং প্রচুর তাজা হার্বস।
• বান কুয়োন: এটি খুব পাতলা ভাপে তৈরি করা চালের পিঠে, যার ভেতরে সাধারণত কিমা করা শুয়োরের মাংস ও মাশরুমের পুর থাকে। এটিকে সাধারণত 'নুয়োক চাম' সস ও ভাজা পেঁয়াজের সাথে পরিবেশন করা হয়।
• চাকাঃ : এটি হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ম্যারিনেট করা মাছ, যা তেল ও প্রচুর পরিমাণে হার্বস দিয়ে গ্রিল বা হালকা ভাজা করা হয়। এটি নুডলস ও বাদামের সাথে পরিবেশিত হয় এবং এটিও হ্যানয়ে র নিজস্ব সৃষ্টি।
• এগ কফি: এটি পানীয় হলেও হ্যানয়ে র স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতির অংশ। গরম কফির উপর ডিমের কুসুম ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে তৈরি ঘন, ক্রিমি ফেনা ঢেলে দেওয়া হয়।
• চে: এটি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি স্যুপ বা ডেজার্ট, যা গ্রীষ্মকালে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এতে বিভিন্ন প্রকার শস্য, জেলি, নারকেলের দুধ এবং বরফ ব্যবহার করা হয়।
শুধু হ্যানয় নয়, সারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্ট্রীট ফুডের এত জনপ্রিয়তার পিছনে কিন্তু কিছু অন্তর্নিহিত কারণ আছে, যেগুলি সংক্ষেপে এই ভাবে সাজানো যায় – কম দাম এবং সহজলভ্যতা; স্বাদ ও বৈচিত্র্য; ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিফলন; সামাজিক সংযোগের মাধ্যম; দ্রুত ও টাটকা পরিবেশন।

আচ্ছা তা হলে হ্যানয়ের স্ট্রীট ফুডের থেকে অন্য দেশের স্ট্রীট ফুডের কিছু পার্থক্য আছে কি? অন্যান্য দেশের স্ট্রিট ফুড যেমন ফাস্ট ফুড বা তেলযুক্ত খাবারে সীমাবদ্ধ, হ্যানয়ের খাবার কিন্তু তেমন নয়। আর একটা ব্যাপার, এখানকার খাবারে থাকে একদম ফ্রেশ উপাদান এবং সেই অর্থে দেখতে গেলে ভিয়েতনামীজ খাবার বেশ হালকা ধরণের। সেই জন্যই এদের খাবার স্বাস্থকর ও পুষ্টিকরও হয়। পাবলিক দাবি দাওয়া করে কিছু পার্থক্য আছে যেগুলো হল মূলতঃ
• খাবারের প্রকৃতি: সম্পূর্ণ খাবার বনাম চটজলদি স্ন্যাকসঃ বেশিরভাগ দেশের স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতি চটজলদি স্ন্যাকস, ভাজাভুজি বা হাতে নিয়ে খাওয়ার মতো খাবারের ওপর বেশি নির্ভরশীল। যেমন: ভারতের চাট, থাইল্যান্ডের স্কিউয়ার্স বা কবাব। কিন্তু হ্যানয়-এ, রাস্তার খাবার মূলত সম্পূর্ণ একটি প্রধান খাবার হিসেবে গণ্য হয়। এখানে আপনি ফুটপাতে বসে উষ্ণ, বিশাল বাটি ফো, বুন চা, বা বুন রিউ (কাঁকড়ার নুডলস স্যুপ) পরিবেশন করতে দেখবেন।
• রন্ধনশৈলী: সূক্ষ্মতা, ভারসাম্য ও ভেষজের ব্যবহারঃ অন্যান্য দেশের স্ট্রিট ফুডে যেখানে তীব্র মশলার ঝাঁঝ বা মিষ্টি স্বাদের আধিক্য দেখা যায়, সেখানে হ্যানয়ে র খাবারের মূলমন্ত্র হল ভারসাম্য এবং সূক্ষ্মতা।
• স্বাদের ভারসাম্য: হ্যানয়-এর রন্ধনশৈলী মিষ্টি, টক, নোনতা এবং উমামি স্বাদের একটি জটিল কিন্তু সুসমন্বয় তৈরি করে। মশলার তীব্রতা এখানে অপেক্ষাকৃত কম।
• সবুজ ভেষজের প্রাধান্য: থাইল্যান্ড বা ভারতের খাবারের তুলনায় হ্যানয়ে র খাবারে তাজা সবুজ ভেষজ যেমন পুদিনা, ধনে পাতা, থাই বেসিল—এর ব্যবহার অনেক বেশি।
• ঐতিহাসিক ফিউশন: চীনা ও ফরাসি প্রভাবের বিশেষ সংমিশ্রণ। এমন ঐতিহাসিক মিশ্রণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো শহরের স্ট্রিট ফুডে এতটা স্পষ্টভাবে দেখা যায় না।
আগে হ্যানয়ের স্ট্রীট ফুডে ফরাসীদের রন্ধনপ্রণালীর প্রভাব উল্লেখ করেছি, কিন্তু শুধু তো ফরাসী নয়, এদের খাবারে প্রভাব আছে চীনা, জাপানী, থাই, কোরিয়ান ক্যুজিনের। হ্যানয় ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত, তাই স্বাভাবতই যেখানে চীনা সংস্কৃতির প্রভাব ঐতিহাসিকভাবে গভীর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য খ্রিস্টপূর্ব ১১১ অব্দ থেকে ৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভিয়তনাম দীর্ঘ এক সহস্রাব্দ ধরে চীনাদের দ্বারা শাসিত ছিল। হ্যানয়ের স্ট্রীট ফুডে দেখা যায় সয় সস ও স্টার অ্যানিস-এর ব্যবহার, যা ফো-এর মতো স্যুপে স্বাদ বাড়ায়। আর তাছাড়া স্টার-ফ্রাইড খাবার এবং নুডলস-এর বৈচিত্র্য তো আছেই – এর সাথে আছে ডাম্পলিং ও বাও-এর মতো খাবার। চীনা ঐতিহ্য থেকেই 'ইন' এবং 'ইয়াং' বা গরম-ঠান্ডা উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ধারণা ভিয়েতনামের খাবারে স্থান করে নেয়। যেমন, উষ্ণ নুডলস স্যুপের (ফো) সঙ্গে শীতল ও সতেজ শাক-সবজি যোগ করা।

আগেই লিখেছি ফরাসিদের প্রভাব কি ভাবে ঢুকেছে ‘বান মি’ এর মত খাবারে – এই বান মি হল কিনা ফরাসি ব্যাগেটের মধ্যে ভিয়েতনামী উপাদান — যেমন গ্রিলড মাংস, শাকসবজি, এবং চিলি সস। আজকের দিনে যে ভিয়েতনামিজ কফি জনপ্রিয় হ্যানয়ের রাস্তার ধারের প্রায় সব দোকানে তার শুরু কিন্তু সেই সেই ফরাসি কফি সংস্কৃতির সঙ্গে স্থানীয় কনডেন্সড মিল্কের সংমিশ্রণ দিয়ে! অনেকটা আমাদের দেশের সাউথ ইন্ডিয়ান কফির মত আর কি! ফরাসীরা আসবে আর বেকিং সেখাবে না! আজকের হ্যানয়ে নানা ধরণের বেকড খাবারে ফরাসীদের অবদানের ছোঁয়া থেকে গ্যাছে। এছাড়াও, ফরাসিরা গরুর মাংস এবং ব্রথ এর ব্যবহার শুরু করে। ফরাসিদের দীর্ঘ সময় ধরে হাড়ের ব্রথ রান্নার কৌশলটি ভিয়ে তনামি নুডলস স্যুপে ব্যবহৃত হতে শুরু করে, যা বিখ্যাত ফো- এর সমৃদ্ধ স্বাদ এনেছে। ফরাসি রন্ধনশৈলী থেকেই পাতেঁ (মাংসের পেস্ট) এবং মেয়োনিজ-এর মতো উপাদানগুলি আসে, যা বান মি সহ অন্যান্য স্থানীয় খাবারে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
হ্যানয়ের স্ট্রীট ফুডে আপনি পেয়ে যাবেন সুশি রোল, কিমচি, থাই সস ইত্যাদি যা স্বাভাবিক ভাবেই জাপানি, কোরিয়ান ও থাই ক্যুজিনের প্রভাব। হালকা পশ্চিমা ছোঁয়াও আছে বৈকী! সে সব আপনি পেয়ে যাবেন ভিয়েতনামী স্টাইলের বার্গার বা ফ্রাইড চিকেন –এ।
হ্যানয়ে র স্ট্রিট ফুডের ওপর কমিউনিজমেরও প্রভাব আছে – এটি একটি জটিল বিষয় এবং দুটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত: প্রথমত, ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির কঠোরতা এবং দ্বিতীয়ত, ডোই মই নামে পরিচিত অর্থনৈতিক সংস্কারের পর বাজারের উদারীকরণ। তবে ব্যাপার হল এটা এতই জটিল যে আমার জ্ঞান বিতরণের আওতার বাইরে – তাই এই নিয়ে আর ভিতরে ঢুকলাম না।

তাহলে উপসংহারে কি বলব? হ্যানয়ের দিকে গেলে স্ট্রীট ফুড এক্সপ্লোর করার জন্য হাতে কিছুটা সময় রাখুন। বলতে গেলে এই স্ট্রিট ফুডের স্বাদ না নিলে যেন ভ্রমণটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ঘুরে বেড়ান মনের আনন্দে খান আর মনে গেঁথে যাবার মতন স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসুন -
অরিন | 119.224.***.*** | ০১ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:১৭735399
dc | 2402:e280:2141:1e8:c0cd:6ba7:9c1b:***:*** | ০১ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:০৯735400