প্রাকৃতিক বিপর্যয় (মানে যাকে অ্যাক্ট অফ গড বলা হয় ইন্সিওরেন্সের ভাষায় – যেমন ভূমিকম্প, সাইক্লোন, বন্যা ইত্যাদি) ছাড়া হাওড়া ব্রিজ কোনদিন যদি শুধু ক্ষয়ে গিয়ে দুম করে ভেঙে যায়, তাহলে তার জন্য প্রধানত দায়ী হবে আমাদের মুখ থেকে ফেলা থুতু – বিশেষ করে পানের বা গুটখার পিক। বিশ্বাস হচ্ছে না? না হলেও কিছু করার নেই – কারণ এটাই ঘটনা। এই লেখার বাকিটা পড়বেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার – কিন্তু একটা অনুরোধ মনে রাখুন, হাওড়া ব্রিজের যত্রতত্র দয়া করে থুতু ফেলবেন না।
বেশ কিছুদিন আগে দিল্লির লৌহস্তম্ভ নিয়ে লিখেছিলাম, বিস্তারে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করেছিলাম যে প্রায় ১৬০০ বছরেও এই স্তম্ভ কেন ক্ষয়ে যায় নি। তারপরে লিখেছিলাম আইফেল টাওয়ার নিয়ে – সেখানেও বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম এই দৈত্যাকার লোহার স্তম্ভটিকে আবহাওয়া হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গুস্তাভো আইফেল কী কী ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রতি সাত বছর অন্তর রঙ করা হয় আইফেল টাওয়ার – কত রঙ লাগে, কেমন খরচা হয় তাও লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম যে এর পরে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি নিয়ে লিখব, কারণ এটাও একটা বিশাল মূর্তি এবং সমুদ্রের ধারে ক্ষয়কারী আবহাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, সেটা নিয়েও অনেক ভাবতে হয়।
তারপর ভাবলাম, স্ট্যাচু অব লিবার্টি নিয়ে লেখার আগে আমাদের হাতের কাছে, আমাদের গর্বের হাওড়া ব্রিজ নিয়ে কিছু লেখা যাক। এই ব্রিজও তো পুরোপুরি লোহার তৈরি, তাও একদম গঙ্গার উপরে, গ্রীষ্ম, আমাদের দেশের ভারি বর্ষা – সবই প্রায় আশি বছর হতে চলল হাওড়া ব্রিজ সহ্য করে চলেছে। তাহলে এ জিনিস টিকে আছে কী করে? ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় হাওড়া ব্রিজের জন্য তা জানেন কি?
পেটের দায়ে (এবং কিছুটা ভালোবাসা থেকেও) ধাতু এবং ধাতুক্ষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয় আমাকে। তো সেই ভাবে দেখতে গেলে হাওড়া ব্রিজ নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারি। অনেক ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে এই ব্রিজ তৈরির ইতিহাসে। কিন্তু আজ খুব বেশি গভীরে যাব না – শুধু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো উল্লেখ করে দেব যেগুলো মনে রাখতে পারলেই যথেষ্টেরও বেশি!
হাওড়া ব্রিজের মোট দৈর্ঘ্য ৭০৫ মিটার মত এবং সেতুটি দুদিকে দুই ফুটপাথ মিলিয়ে ২২ মিটার মত চওড়া। হাওড়া ব্রিজের উচ্চতা ৮২ মিটার (মানে ২৮ তলা বাড়ির সমান উচ্চতার) – আর সেতুর যে ঝোলা অংশটি দেখেন তার দৈর্ঘ্য ৪৬০ মিটারের মত। ইঞ্জিনিয়ারিং টার্মে এই ব্রিজটি হচ্ছে ‘ব্ল্যালেন্সড ক্যান্টিলিভার’ ডিজাইনে তৈরি। হাওড়া ব্রিজটি তৈরি করতে মোটমাট লেগেছিল ছাব্বিশ হাজার টন ইস্পাত এবং তার সিংহভাগটাই এসেছিল আমাদের আরেক গর্বের টাটা স্টিল থেকে।
আর একটা জিনিস আমরা ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছে, তা হল হাওড়া ব্রিজ বানাতে কোন নাট-বল্টু ব্যবহার করা হয় নি। এটা কিন্তু কোন উপকথা নয়, একদম খাঁটি সত্যি। আমাদের হাওড়া ব্রিজ বানাতে সত্যিই কোন নাট-বল্টু ব্যবহার করা হয় নি, হয়েছিল রিভেট জয়েন্ট। এটা কেমন জিনিস – ধরুন যে দুটো জিনিসকে জুড়বেন তাদের কাছে এনে বল্টুটা লাগালেন – কিন্তু এবার নাট লাগাবেন না, বরং ওই ওই বোল্টের বেরিয়ে থাকা দুই দিকের অংশটা ঘা মেরে মিশিয়ে দেবেন দু দিক থেকে ডিম্বাকৃতি করে। এটা সাধারণত গরম করে করা হয়, কারণ ঠান্ডা হলে সেই বোল্ট একটু সংকুচিত হয়ে আরো টান টান করে রাখবে কাঠামোকে।
এমন রিভেটেড জয়েন্ট দিয়েই তৈরি হয়েছে হাওড়া ব্রীজ
হাওড়া ব্রিজের ডিজাইন ইত্যাদি এবং তার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ বেশি ঢুকব না – আপনারা নিজেরাও ইচ্ছে হলে গুগল সার্চ করে পড়ে নিতে পারেন, অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন। আজকে আমরা দেখে নিচ্ছি এই ব্রিজকে ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে আমরা কী করছি। ভিতরে ঢোকার আগে ক্ষয় নিয়ে আপনাদের একটু হালকা আইডিয়া দিয়ে রাখি - বিশাল চুলচেরা বিচারে না ঢুকে এটা মোটামুটি মনে রাখুন যে ধাতুক্ষয় পুরোপুরি রোধ করা প্রায় একেবারেই অসম্ভব। ধাতু ক্ষইবেই – থার্মোডায়নামিক্স তাই বলছে। এর ব্যত্যয় নেই। তাহলে এবার আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে তোমাদের মত ইঞ্জিনিয়ারকে বাপু পোষা কেন! এর উত্তরও আমার রেডি – আমাদের কাজ ওই ‘কাইনেটিক্স’ পার্টটা নিয়ে বেশির ভাগ সময়। ধাতু পঞ্চাশ হাজার বছর, নাকি পাঁচ হাজার, নাকি পঞ্চাশ, নাকি পাঁচ বছর, নাকি পাঁচ মাসে মধ্যে ক্ষয়ে যাবে সেটাই দেখার। আমাদের কাজ হচ্ছে এই ক্ষয় প্রসেসটা যতটা সম্ভব ধীরে এবং বিলম্বিত করা।
আর এই ক্ষয়কে বিলম্বিত করতেই অন্য অনেক ধাতুর ব্রিজের মতই হাওড়া ব্রিজকেও রঙ করা হয় প্রতি ছয় বছর অন্তর। শেষ বার হাওড়া ব্রিজকে রঙ করা হয়েছিল ২০১৪ সালে – সেই মত গত বছর আবার রঙ হবার কথা ছিল – জানি না করোনা এবং ভোটের চক্করে নতুন রঙের ছোপ লেগেছে কিনা। যদি কেউ ইদানিং হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে যান একটু খেয়াল করে বলবেন তো যে রঙ হচ্ছে কিনা বা নতুন রঙ দেখতে পাচ্ছেন কিনা পিলার গুলোতে!
যদি প্রশ্ন করেন, ভাই যদি রঙ না করি তাহলে কেমন রেটে ক্ষইবে? কেমন হারে ক্ষয় হবে সেটা একটা আপেক্ষিক ব্যাপার – কারণ মরুভূমির মাঝে লোহা যেমন হারে ক্ষইবে তার থেকে সমুদ্রে/নদীর ধারে থাকা লোহা অনেক তাড়াতাড়ি ক্ষইবে – মূলত লবণাক্ত ভাব এবং বেশি আপেক্ষিক আর্দ্রতার জন্য। মোটামুটি ধরে রাখুন রঙ না করলে হাওড়া ব্রিজের লোহা প্রতি বছরে ক্ষইবে হাফ-মিলিমিটার মত। মানে গত আশি বছরে লোহা ক্ষয়ে যাবার কথা ৪০ মিলিমিটার! খেয়াল করে দেখবেন ব্রিজের বিমগুলো বেশির ভাগই এত চওড়া নয়! এত চওড়া বিম বা লোহার পাত দিয়ে ব্রিজ বানাতে গেলে প্রচুর প্রচুর খরচা, দেউলিয়া হয়ে যাবার মত অবস্থা। এবার যদি এই ব্রিজ আরব দেশের শেখ বানাতো – আগেই বলে দিত, “টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না”! টাকার চিন্তা না থাকলেও এত মোটা মোটা লোহার বিম দিয়ে কাজ করার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেশন আছে। সেই সব খুঁটিনাটিতে ঢুকবো না।
তাহলে কী ভাবে ঠিক করা হয় কত মোটা বিম বা লোহার পাত ব্যবহার করা হবে? প্রথমে হিসেব করা হয় এই স্ট্রাকচারাল লোড বহন করার জন্য কত মোটা হওয়া দরকার। ধরুন আপনি গণনা করে বের করলেন ৩০ মিলিমিটার মোটা পাত হলেই চলে যাবে। এর উপরে আপনি যোগ করবেন ক্ষয়ের জন্য অ্যালাওয়েন্স – আপনি যানেন যে রঙ করা হবে ব্রিজকে, তাই এ ব্রিজ আর প্রতি বছরে হাফ মিলিমিটার রেটে ক্ষইবে না। ঠিকঠাক রঙ থাকলে একদমই ক্ষইবে না, কিন্তু ঠিক সময়ে আপনি রঙ করবেন তার নিশ্চয়তা কী? রুল অফ থাম্ব অনুযায়ী আমরা ধরে নিই যে ম্যাক্সিমাম ০.১ মিলিমিটার হারে প্রতি বছরে ক্ষইবে। মানে ব্রিজ একশো বছরের জন্য ডিজাইন করলে আপনি এক্সট্রা লোহা যোগ করে দেবেন ০.১*১০০ = ১০ মিলিমিটার। ফলে যতদিন পর্যন্ত আপনার ক্ষয় ওই ১০ মিলিমিটারের মধ্যে থাকবে, ততদিন ব্রিজের স্ট্রাকচার টিকে থাকবে। হাওড়া ব্রিজের বিভিন্ন পিলারে এমন বিভিন্ন অ্যালাওয়েন্স আছে লোহার – সমস্যা হল আমরা পানের আর গুটকার পিক ফেলে ফেলে সেই অ্যালাওয়েন্সের প্রায় সবটাই খেয়ে ফেলেছি! আর একটু বেশি ক্ষইলে বিশাল খরচা করে সরকারকে বাড়তি লোহা জুড়ে রেনফোর্স করতে হবে সেই কাঠামো!
হাওড়া ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট। তিন প্রধান ক্ষয়-এর ঝুঁকি থেকে ব্রিজকে বাঁচাতে এরা সদাই তৎপর –
১) লোহার ক্ষয় আবহাওয়া জনিত কারণে। এটা নিয়ে বিশেষ কিছু আমাদের করার নেই এত বড় স্ট্রাকচার বলে – এর থেকে বাঁচানোর একটাই উপায়, ঠিক ঠাক রঙ করে রাখা ব্রিজকে। আর রঙের ড্যামেজ হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি রিপ্যায়ার।
২) পাবলিক বেশ উল্টোপাল্টা ভাবে গাড়ি চালায় ব্রিজের উপর দিয়ে – অ্যাক্সিডেন্ট ইত্যাদি হচ্ছে, এটা সেটা ঠুকে দিচ্ছে, ভেঙে দিচ্ছে বেপরোয়া গাড়ি। সংজ্ঞাগত দিক থেকে দেখতে গেলে এগুলো ঠিক ‘করোশন’ নয়, বরং মেকানিক্যাল ড্যামেজ। তবুও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৩) মানুষের মুখ থেকে ফেলা পান বা গুটখার থুতু এবং পাখির বিষ্ঠা। থুতু নিয়ে আগেই বলেছিল, কিন্তু এটাও মনে রাখবেন যে হাওড়া ব্রিজে হাজার হাজার পাখির বাসা আছে এবং দিন রাত এরা সেই লোহার স্ট্রাকচারে বিষ্ঠাত্যাগ করে যাচ্ছে – পানের পিকের মতই এই পাখির বিষ্ঠারও ক্ষয়কারী ক্ষমতা প্রচুর।
অনেক আগে সরকার ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে এত বেশি মাথা ঘামাত না – কারণ ব্রিজের বয়স তখন কম ছিল। আর এমনিতেই আমাদের কালচারে রোগ না হলে চেক-আপের প্রয়োজনীয়তা তেমন ভাবে অনুভব করি না আমরা। তাই এখন হাওড়া ব্রিজের যত বয়স হচ্ছে, ততই রোগ প্রকট হচ্ছে – নিয়মিত চেক আপ বা চোখে চোখে রাখা জরুরী হয়ে উঠেছে। এই সব কারণেই কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট ২০০৮ সালে হাওড়া ব্রিজে ৬ ছয় খানা হাই ডেফিনেশন ক্যামেরা লাগিয়েছে। এর মধ্যে দুটি ক্যামেরা লাগানো আছে ব্রিজের নিচে, নৌকা, জাহাজ ইত্যাদির চলাচল নজরে রাখতে।
হাওড়া ব্রিজে যে রঙ করা হয় তা মূলত লোহাকে আবহাওয়ার হাত থেকে বাঁচাবার জন্য। সাধারণ রঙ কিন্তু পানের পিক/গুটখার বা পাখির বিষ্ঠার হাত থেকে দীর্ঘ সময় লোহাকে রক্ষা করাতে পারে না। এর মূলে আছে পানেক পিক/গুটকার থুতু বা পাখির বিষ্ঠায় থেকে যাওয়া ক্ষয়কারী ক্যেমিক্যালস। আমাদের পাকস্থলী থেকে বেরুচ্ছে বলে তা ক্ষয়কারী হবে না এমন ব্যাপার নেই – অতএব এমন একদমই ভাববেন না যে পেটের পাকস্থলীর চামড়াকেই কিছু করছে না, তো সেটা এবার লোহাকে কী করবে! এটা একটা ক্ল্যাসিক্যাল ভুল – আমাদের পাকস্থলীতে যে অ্যাসিড নির্গত হয় তার অম্লত্ব খুব বেশি (মানে pH খুব কম)। আমাদের শরীর এমন ভাবেই অভিযোজিত যে পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণ এই অম্লত্ব সহ্য করে নেয় – কিন্তু লোহাকে যদি এই অ্যাসিডে ডুবিয়ে রাখেন, তাহলেই গেল! নিজে সরল এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন – এই যে এত কোল্ডড্রিংকস খান, পাকস্থলীর চামড়ার কিছু হয়েছে (কোল্ডড্রিকংস বেশি খাওয়া খুব একটা ভালো নয়, তবে সেটা অন্য কারণের জন্য)? কিন্তু একটা লোহার গজাল নিয়ে কোকা-কোলার বোতলে ডুবিয়ে রেখে এক মাস পরে দেখতে পারেন তার কী অবস্থা হয়েছে!
গুটকা আর পানের পিক ফেলে এই অবস্থা হাওড়া ব্রীজের স্তম্ভগুলির
যাইহোক, পাখির বিষ্ঠা, মানুষের মুখের পানের পিক/গুটখা যে হাওড়া ব্রিজের এই খারাপ অবস্থা করেছে তা কোলকাতার পোর্ট ট্রাস্টের নজরে আসে ২০০৩ সাল নাগাদ। অবশ্য নজরে এরও আগে এসেছিল, কিন্তু অ্যাকশন নিতে নিতে ২০০৩ হয়ে যায়। বছরে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে কনট্রাক্ট দেওয়া হল হাওড়া ব্রিজ থেকে পাখির বিষ্ঠা সাফের জন্য। ২০০৪ সালে পোর্ট ট্রাস্ট পুরো হাওড়া ব্রিজ ঢেলে রঙ করল ৬৫ লক্ষ টাকা খরচ করে। গোটা ব্রিজ রঙ করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয় – সব মিলিয়ে প্রায় ২২ লক্ষ বর্গ মিটার মত লোহা রঙ করতে হল – দরকার পড়ল ছাব্বিশ হাজার লিটার রঙের।
পাখিদের তো আর শেখানো যায় না যে তোরা হাওড়া ব্রিজে আর মল ত্যাগ করিস না বাপু! এত তো জায়গা রয়েছে! কিন্তু দেখা গেল শুধু পাখি নয়, মানুষদের শেখানোও খুব চাপ – এত পোস্টার, অনেক সচেতনতা ক্যাম্পেনের পরেও পাবলিক পানের আর গুটকার পিক হাওড়া ব্রিজের পিলার গোড়ায় ফেলা বন্ধ করল না। পিলারের গোড়ার ঠাকুর দেবতার ছবি আটকেও তেমন সাফল্য এল না। আগে যেমন লিখেছি, পানের/গুটখার থুতু বেশ বেশ অম্ল এবং তাই লোহার জন্য ক্ষতিকারক। প্রথমে পিলারের গোড়া গুলি বার বার রঙ করা হচ্ছিল এবং পরিষ্কার করা হচ্ছিল – কিন্তুতেই কিছু হল না। বরং দেখা গেল মাত্র চার বছরে, ২০০৭ থেকে ২০১১ এর মধ্যে পান/গুটখার পিক পিলার ক্ষইয়ে দিয়েছে ৩ মিলিমিটার! দৈনিক হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ ব্যবহার করেন প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ (১-৫ লক্ষের মধ্যে)। এর মধ্যে শতকরা এক ভাগও যদি থুতু ফেলেন, তাহলে দৈনিক পিলারে থুতু ফেলছেন কয়েক হাজারের মত লোক! সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়!
এই ভাবে চলতে দেওয়া যায় না – তাই এবার কোলকাতার পোর্ট ট্রাস্ট অন্য পরিকল্পনা করল – ২০ লক্ষ টাকা খরচা করে পিলারের চারিদিকে ফাইবার গ্লাসের কভার দিয়ে দিল – ফ্যাল এবার কত ফেলবি পিক! প্রচুর থুতু ফেলা হলে ধুয়ে দেওয়া হবে আর এই ফাইবার গ্লাস ভেঙে গেলে আবার নতুন এনে রিপ্লেস করে দেওয়া হবে। এই ভাবে অন্তত মূল স্তম্ভ তো ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচবে! জানি না এখনো এই ফাইবার গ্লাসের কভার হাওড়া ব্রিজের পিলারে আছে কিনা।
চারিদিকে ফাইবার গ্লাসের কভার দিয়ে স্তম্ভগুলিকে বাঁচাবার চেষ্টা
পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি – শুধু উন্নত দেশই নয়, ভারতের থেকে অনেক গরিব দেশেও গেছি। কিন্তু নিজেদের দেশের ঐতিহ্যের প্রতি, নিজেদের দেশের গর্বের সম্পদের প্রতি আমাদের মত উদাসীনতা এবং ডোন্ট-কেয়ার ভাব, আমি পৃথিবীর অন্য কোন দেশে দেখি নি! খুব লজ্জা লাগে।
আমরা ভারতীয় ।..নোংরা থাকা আমাদের মজ্জ্যাগত , যত্র তত্র থুতু পেচ্ছাব করা আর শহর তাকে বাড়ির ডাস্টবিন করে রাখা এই হচ্ছে আমাদের জাতীয় ধৰ্ম ।.নাহলে মেলা অনুষ্ঠানে বা নেতা নেত্রী দের সঙ্গম স্থলে বা হাট বাজারে আপনি কাউকে বলতে যান তো ।..একেবারে ঝাঁ ঝাঁ কোরে উঠবে ।..""আপনার কি হলো ?"" নিজের চরকায় ইয়ে দিন >>>জ্ঞ্যান দিচ্ছে , এবংশেষে বঙ্কু পালের চিৎকার এবং মার !!!!মনে হয় , হাওড়া সেতু টা স্যার লেসলি ভুল করে কলকাতায় তৈরি করেছেন !!এই অসভ্য অসংবেদনশীল জাতির জন্য ওই গোসাবার গ্রামের বাঁশের সেতুই ভালো !!!!
বিষয়টি খুব একটা 'দিব্যি' না হলেও, আলোচনাটা দিব্যি লাগলো। আগের খারাপ লাগতো এসব জেনে; এখন কেমন যেন সয়ে গেছে। সেটা হয়তো আরও খারাপ। বিষয়টি নিয়ে অবগত করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
কয়েকটি মুদ্রণ প্রমাদ আছে। লেখক যদি একটু দেখে, সম্পাদকদের সঙ্গে সেটি ঠিক করার ব্যাপারে কথা বলে নেন...
হাওড়া ব্রিজের ইতিহাস ও নির্মাণ খুবই ইন্টারেষ্টিং বিষয় . এই নিয়ে বিশদ লেখা পেলে খুশি হবো |
এইটা খুব ভালো বিষয় নিয়ে বলেছেন। অপনার বিষয় যেহেতু মেটালার্জি তাই আরো মনোগ্রাহী হল আলোচনা টি। কিছুদিন আগেও এটা নিয়ে পেপারে খুব লে খা লি খি হয়েছিল। আর হ্যাঁ, এখনো ওই কভার গুলো আছে পিক আটকাানর জন্য।
সত্যি বলতে কি ভারত যেখানে ঐতিয্য ও সংস্কৃতির পীঠস্থান সেখানে ভারতীয় রা এত উদাসীন এসব ব্যাপারে খুবই খারাপ লাগে। খালি সামনে গিয়ে সেলফি তুলতে আর দেওয়ালে নাম লেখাতেই উৎসাহ। মেন্টেনেন্স সরকার করবে, আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই।
ঠাকুর দেবতার ছবি লাগিয়েও কাজ হয় নি শুনে খারাপ লাগলো! আমরা বাঙালিরা কিছু মানি আর না মানি, ঠাকুর দেবতা খুব মানি! সেই ঠাকুর দেবতাই যদি থুতু ফেলা বন্ধ করতে না পারে তাহলে খুবই চিন্তার বিষয়!
খুব ভালো টপিক। এবং একই সঙ্গে লজ্জার। পিক ফেলন্ত গুটখা পাবলিক পেলেই চিকন বেইত দিয়া সপাসপ মাইর দরকার।
শালা খোট্টার ব্যাটারা হাওড়া ব্রিজ ইস্তক কো কিলায়কে কাঁঠাল পাকায় দিয়া।
তবুও বাঙালির খোট্টা প্রেম ঘোচে না।
সুন্দর লেখা।
এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়লোঃ
এক মারোয়াড়ি অস্ট্রেলিয়ায় বেড়াতে গেছে ছেলের কাছে। ছেলে গাড়ি নিয়ে এসে এয়ারপোর্টে বাবাকে পিক আপ করেছে। হঠাৎ এক জায়গায় পুলিশ গাড়ি আটকাল, রিপোর্ট গেছে গাড়ি থেকে কেউ রক্তবমি করছিলো, ঝটিতি ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্স এলো, মেড়ো বাপ-ব্যাটাকে চেক করে কিছু না পেয়ে চলে গেলো হাতে বিশাল টাকার বিল ধরিয়ে। আসলে বাপ প্লেন থেকে নেমে অভ্যেস মত এক প্যাকেট গুটকা মুখে ফেলেছিলো, রাস্তায় পিক ফেলেছে, লোকে ভেবেছে ক্যানসার পেসেন্ট, রক্তবমি করছে।
ডিসকভারি চ্যানেলে হাওড়া ব্রিজ নিয়ে একটা ডকমেন্টারি দেখছিলাম, সেটাই বছর দুয়েক আগে ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়ার সময় মনে পড়লো। ব্রিজের যারা পরিচ্ছন্নতা কর্মি, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন, নিভৃতে কি অসামান্য অবদানই না রেখে চলেছেন!
খুব গভীর ধারণা নিয়ে লেখা। ব্রাভো
ধন্যবাদ সবাইকে
শুভংকরবাবু, দেখছি মুদ্রণ প্রমাদগুলো নিয়ে কি করা যায়।
মহুয়া, ইচ্ছে আছে হাওড়া ব্রীজ নিয়ে বিস্তারে লিখব একদিন সামনে, সেখা যাক কবে সময় বের করতে পারি -
শঙ্খ, গল্প নয়, এমন ফাইন দিতে হয়েছে অনেককেই - কিন্তু শিক্ষা নয় না! ভারতে ফিরে আবার যা কে সেই!
কিন্তু এভাবে ফাইবার গ্লাসের ফুল কভার দিলে ভেতরে ময়েশ্চার জমে অক্সিডাইজিঙ করোসন আরো বেড়ে যাবেনা ? ক্রায়োজেনিক লাইন গুলোতে যে কারণে CUI হয় ?
জীও সুকি!
আপনি খুব ভাল মাস্টারমশাই। টেকনিক্যাল বিষয়ে অনীহা সত্ত্বেও আমার মত অনেকে আপনার লেখা পড়ে বলে আমার বিশ্বাস। একবার বিদ্যাসাগর সেতুর স্ট্রাকচার ও মেন্টেনান্স নিয়ে কিছু লিখবেন?
সন্তোষ বাবু,
আপনার এই বাক্যাংশটি দেখুনঃ
"বা নেতা নেত্রী দের সঙ্গম স্থলে"!!
একটু ইল্লি করতে ইচ্ছে হোল।
আচ্ছা, বাঙালী কি সাদা পান বা দোক্তা জর্দা দিয়ে সাজা পান খায় না? খেলে পিক বা থুতু গিলে নেয়? রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি কিন্তু এ ব্যাপারে অন্য কথা বলছে।
তাহলে কি নাজিদের জন্যে ইহুদী, বিজেপির জন্যে মুসলমান, আর বাঙালিদের জন্যে খোট্টা?
এসব গুটখা, দোক্তা, পান মশলা ব্যান করা খুব দরকার। সাদা পান চলতে পারে ব্যাস। এগুলো বাাংলা তথা ভারতের লজ্জা। আর প্যাকেট গুলো কিিভাবে বায়ো ডি গ্রেডবল মেটিরিয়াল দিয়ে বানানো যায় সেও দেখতে হবে । চিপসের , কেকের , বিস্কুটের মোড়কে সব জায়গা খালি নোোংরা করে। আম জনতার বিবেেচনা বোধ লুপ্ত হয়েেছে।
অমিতাভদা, হাওড়া ব্রীজের পিলারের গায়ে যেভাবে ফাইবার গ্লাস লাগানো হয়েছে তাতে করে করোশন আন্ডার ইনশুলেশন এর প্রবলেম হবে না। কারণ এই ফাইবারগ্লাস বেরিয়ার গুলো পুরো ওয়াটার প্রুফ নয়, আর তা ছাড়া এদের মধ্যে কোন ইনশুলেশন নেই যারা জল শুষে নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করবে, যেটা হট বা কোল্ড ইনসুলেশনে প্ল্যান্টে দেখা যায়
রঞ্জনদা, ধন্যবাদ - আমার বন্ধু প্রফোসরেরা সেই একই কথা বলে :) যে কেন আমি অ্যাকাডেমিক লাইনে গেলাম না - দুজনা তো আমাকে প্রায়ই গালাগাল দেয়! কি আর করা যাবে!
বাঙালী প্রচুর পিক ফেলে - আমাদের দিকে সাদা মাটা হিসেব ছিল, মিঠে পাতি পান খেতে তেমন পিক ফেলা লাগে না - খয়ের না থাকলেও নয়।
রমিতবাবু, ব্যান করা দরকার, কিন্তু কে আর করবে! অনেক ট্যাক্স আসে এখান থেকে
চিউবল টোব্যাকো থেকে অনেক রেভেেনিউ আসে ঠিক। কিন্তু আলকোহল থেকেও তো বিশাল রেভেনিউ আসে। সেও তো অনেক স্টেটে ব্যন। আর প্যাক গুলো তো বাায় ডিি গ্রে ডে বল করাই যায়। অনেক নোংরা র গতি হয়।
"তাহলে কি নাজিদের জন্যে ইহুদী, বিজেপির জন্যে মুসলমান, আর বাঙালিদের জন্যে খোট্টা?"
খোট্টা কে প্রেম বিলোলে যে লেজ ধরে হনহন করে বিজেপি চলে আসবে যে।
সে যাক বঙ্কিমবাবু মাধবীনাথের জবানিতে কী বলেছেন দেখুন :
সাব ইনস্পেক্টর মাধবীনাথকে বিলক্ষণ জানিতেন–ভয়ও করিতেন–পত্রপ্রাপ্তি মাত্র নিদ্রাসিংহ কনস্টেনবলকে পাঠাইয়া দিলেন। মাধবীনাথ নিদ্রাসিংহের হস্তে দুইটি টাকা দিয়া বলিলেন, “বাপু হে–হিন্দি মিন্দি কইও না–যা বলি, তাই কর। ঐ গাছতলায় গিয়া, লুকাইয়া থাক। কিন্তু এমন ভাবে গাছতলায় দাঁড়াইবে, যেন এখান হইতে তোমাকে দেখা যায়। আর কিছু করিতে হইবে না |”
তাই কই মশাই - অত হিন্দি মিন্দি কইয়েন না। খোট্টারে প্রেম বিলাইলে হিন্দি কওন ছারা পথ থাইকব না। টিকিও রাখন লাগব। গুটখা পান মসালা খাইয়া পিকও ফালান লাগব। হ্যাগো গাছের তলায় লুকাইয়া রাখনই মঙ্গল।
একটা কথা মনে হলো - ১৯৮৫র আগে কলকাতায় কেউ পান মসালা বা গুটখা প্যাকেট বন্দি হয়ে বিক্রি হতে দেখেছেন কী? আমার তো মনে পড়ে না। বাঙালির সঙ্গদোষে রঙ্গ আর কী।
লেখাটা এখনো পড়া হয় নি তাই মন্তব্য করতে চাইছিলাম না। কিন্তু না লিখে পারা গেল না।
১৯৮৫ র বহু আগে থেকেই যে কোনও সরকারি বিল্ডিঙে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে প্রায় সমস্ত সিঁড়ির কোণা আর্ধেক উচ্চতা অবধি লাল পানের পিকে রঞ্জিত দেখেছি। পাশের বাড়ির ভদ্রলোক হাঁটতে ভালবাসতেন বলে রাইটার্স থেকে বেরিয়ে অফিসের পর প্রায়ই হেঁটে অনেকটা আসতেন। এর মধ্যে সপ্তাহে অন্ত দুইদিন তাঁকে বাড়ি এসে সোজা কুয়োতলায় গিয়ে হুড়মুড় করে মাথায় গায়ে জল ঢালতে দেখতাম। কারণ চলতি পথে বাসের জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে কেউ না কেউ হ্যাক থু করেছে।
নব্বইয়ের দশকে অফিসের বাস ধরার জন্য গিরিশ পার্ক অঞ্চলের এক জায়গায় দাঁড়াতাম আমরা। অবধারিত উপর থেকে এক পোঁটলা নোংরা গায়ে মাথায় পড়ত কারো না কারো। গিরিশ পার্ক দেখেই লাফিয়ে উঠছেন যারা তাঁদের জন্য বলে রাখি, কোনোদিন দেরী হলে এক বাজখাঁই পুরুষকন্ঠ চীৎকার দিত 'অ্যাই রমলা বাসি নোংরা একনো বারেন্দায় ক্যানো' বলে।
গিদরামোতে বাংআলি খুব একটা পিছিয়ে নেই।
লেখাটা ভালো লাগলো। সুকির লেখা খুব ভার্সেটাইল, সেই জিনিষটা আমার খুব ভালো লাগে।
হাওড়াতে হেগে হাসে হনু হাওরে