প্রতিটি দিনই তো দেবীপক্ষ ভাবতে ভালো লাগে –
কেবল সেই ভোরে ওঠা নিয়ে সূর্যের সাথে রাগারাগি
না হয় মাথার কাছে বাজুক চেনা সুর
আধোঘুমে গুন গুন
নিবিড় হয়ে এসে বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষা
টেলারিং বৌদিকে বলা আছে পরে গেলেও দিয়ে দেবে ঠিক
শেষবেলার ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক
কাঠের ঘরে থেকে দেখি কত দেবী উঁকি দেয়
কেউ বলে ঠিক, কেউ বলে সমুদ্রসবুজ রঙে তোমায় বেশী মানায়
দেবীপক্ষের শুরুও তো সেই সিঁড়িতেই
প্রিন্ট নিয়ে রেখছো তো? বেশ বড় কবিতা
আগমনী ছবিটি এঁকে রাখা আছে নিতে ভুলো না
কিভাবে আটকাবে দেখে রাখোনি তো?
আগমনী গান কেবলই উপলক্ষ্য
লাল-সাদা রঙের সন্ধ্যে
এক দেবী দেখবে অন্যকে
প্রতিটি দিনেই দেবীর নূপুর শুনতে পাই -
প্রতিটি দিনই দেবীপক্ষ ভাবতে ভালো লাগে
একসময় হয়ত বোঝা যাবে লাল রঙ কোনদিনই ঠিক করে চেনা যায় না। রঙের প্রকারভেদ নিয়ে তর্কে রাত কাটবে – পাতার রঙ সবুজ, জলের রঙ নীল। গতকাল বিকেলের গল্প শুনবো – তখনও প্রথম রাতের সম্ভাবনা ছিল সমুদ্র সবুজ রঙে। ক্ষয়ে যাওয়া পেনসিল রাতের গন্ধের উদাসীন থেকে আবার জড়িয়ে ধরবে অপেক্ষা।
রঙ মেশানোর খেলায় উচ্ছল থেকে
হাঁটু দিয়ে যদি গড়িয়ে পড়ে অচেনা রঙ, তাহলে কি কারো চোখের পাতায় উঁকি দেবে বিসর্জন?
পেনসিল উত্তর খোঁজে
ফুটে ওঠে কমলা, গোলাপী, ধূসর সাদা
ভিজে যায় বিছানার চাদর
কিছু দাগ প্রিয় হয়, কিছু দাগ ভুলিয়ে দিতে সূর্য ওঠে নিয়ম মেনে
নীল চিনে নিতে লেগেছিল যেমন হাজার বছর
সেই হাজার বছর পেরিয়ে লাল রঙ দেখবে তাকে ভুল বুঝে লেখা হয়েছে কত উপকথা
গাঢ় হয়েছে ক্ষমতা
বড় আদর করতে ইচ্ছে করে নিজেকে – দিন যাপন মেখে নেয় লাল
খুব ইচ্ছে করে লিফটে দেখা হওয়া মেয়েটির মাথায় হাত রাখি
তার জামায় লেগে থাকা ক্লান্তি মুছিয়ে দিই রুমাল দিয়ে
জানি এরপর সে কোথায় যাবে – বাগানের গাছের তলায় গান শুনবে নিজমনে
রোদ এসে ডান গাল গোলাপী করে ছায়া দেবে বামে
জানি না ভিজে চোখ চিনেছিল কিনা সেবার একসাথে উঠতে গিয়ে
গতরাতের যত কিছু সব মিশে গিয়েছিল আধোঘুমে
কাঁচ ভাঙার শব্দ, অনুযোগ, অচেনা পারফিউমের গল্পকথা বা জামার কোণের গোলাপী দাগ
গারদের ওদিকে রূপ বদলায় খুব চেনা কেউ
অভ্যস্ত সকালের স্কুল, ফিতে বাঁধা অফিস, এই বারান্দায় নেটওয়ার্ক না আসা
চেয়ার টানার শব্দ আর আধো ভায়োলিনে কাটানো সারাটা সপ্তাহ শেষে
প্রতিক্ষিত কারো দেরীতে ফেরা
ভাবি হয়ত এবার চেনা গল্পের জন্ম দেবে
দিন কাটে – অপেক্ষায়
বারান্দায় ঝোলানো কাপড়ের দিকে তাকিয়ে চেনা গল্প পাই না
একদিন ঝড়ে উড়ে যায় রঙীন অন্তর্বাস
জানা হয় না কেউ ফেরত নিয়েছিল কিনা -
ফেরত চাইবার টান, ফেরত যাবার মোহ
খুব ইচ্ছে করে মেয়েটিকে বলি ফিরতে হলে গাছের কাছে ফিরো, মোহে থেকো কেবল বাগানের -
শেষ পর্যন্ত তো আমরা জলে ভেসে আসা কাঠের মতই অপাঙতেয় হয়ে যাব একদিন
কেউ তুলে নিয়ে ব্যবহার খুঁজবে আড়ালের
কেউ সন্ধ্যের বারবিকিউর পাশে গুঁজে দেবে উষ্ণতার খোঁজে
অথচ কত সহজেই শুয়ে থাকা যেত লোনা জলের ছোঁয়ায়
অনেক পরে কেউ আদরে হাত বুলিয়ে দেখতো লবণের দানায় ভরা সারা শরীর
জিহ্বার আস্বাদন চাইছে চেনা খাঁজে
এরই মাঝে সেই চেনা খাঁজে জীবনের ইঙ্গিত
ভাষা হারানো আগে হয়ত নিরর্থক সিক্ততার গল্প শোনাতো
মসৃণতা শেষ হবে একদিন
তখন তুমিই উষ্ণতা খুঁজবে বলিরেখায়
হাওয়ামোরগের মত, লবণের ঝাপটা মুখে মেখে নিয়ে
ঘুরে যাবে বাগানের কোণে
অপাঙতেয় আমি গল্প শোনাবো ওপারের
ভেসে আসার, প্রতিফলনের, প্রতিসরণের, অদেখার – নোনতা স্বাদে শুয়ে থাকার
অনেক নীচের তাপমাত্রা ভঙ্গুর করে সবকিছু – একদার চুম্বন, পায়রার পায়ে বাঁধা চিঠির তার। এই সত্য মানুষ জেনেছিল অনেক পরে। তার মাঝে লেখা হয়েছিল লায়লা-মজনুর গল্প, তার মাঝে ব্লকব্লাষ্টার সিনেমার পর্দায় সাদার জন্য, সাদার উপর বসে ছেড়ে দিতে হয়েছে প্রিয় মানুষের আঙুল, বাজাতে হয়েছে বেহালা।
তবে তা হয়ত অর্ধসত্য – এই যে পেলব স্পর্শে কুঁকড়ে গেল কেউ? সেও কি?
সেই যে হাতছানি দিয়েছিল কেউ প্রবল দুপুরে অনেক উপরের তাপে থেকে –
সেও কি উন্মুক্ত চামড়ায় কিছু আকরিক কণা ঘষতে ঘষতে বলে নি, আজ রাতে অন্য গল্প শোনাবো
আজ রাতে দেখাবো অন্য চাঁদ
এই সত্য মানুষ জেনেছিল অনেক আগে। ঘাড়ের কোন বিশেষ জায়গায় পালকের স্পর্শে উন্মোচিত হয় অনেক সম্ভাবনা।
সাদা রঙের পালকে ইতিহাস লেখা হয় – ব্যাঙ্গমা, ব্যাঙ্গমীর গল্পে সাদা রাজকুমার আসে সাদা ঘোড়ায় চড়ে। স্বপ্নের পরীরা সাদা রঙের কাপড়েই হাত ছুঁয়ে বাঞ্ছনার ইতিকথা শোনে
তোমাকে এবার অন্য রঙের গল্প শোনাবো, দেখবে সেই পালকেও লেগে থাকবে আমাদেরই সম্ভাবনা।
কেউ বলেছিল রাতেও সূর্য ওঠে বসন্ত বাতাস লাগলে
বাতাসের সন্ধানে জানালা খুলে শুয়ে ভাবি,
শরীরের সাথে সূর্যের সম্পর্ক আমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিল কি!
গতকাল রাতে হাসনুহানা এসেছিল
আজ বারুদের গন্ধ
এখানে বিপ্লবের গল্প লেখে নি কেউ, বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস
নিওনের আলোও দ্রুত জানায় লেখা হয় নি কিছুই
সময়ের বৃষ্টি গুঁড়ি গুঁড়ি হয়ে বারান্দার লন্ঠনের কাঁচটিকে ঢেকে দেয়
মুখ বাড়িয়ে দিই – যদি পাই হাসনুহানা, বোগেনভোলিয়া বা বাগানের অন্য
রাতের গল্প বলবে বলে হাসে ভেজা লন্ঠন, আমিও বলি
তাহলে শোনাও বারুদের গল্প
গভীর রাতে সূর্য ওঠা
আর কিছুটা নিওন আলোর
আমি এখানে শরীর পেতে আছি
একদিন লিফটে দেখা হয় একাকি - পরের দিন ব্যাগ হাতে
আঙুল ধরে দাঁড়িয়ে দেখি অন্যদিন
খোলস চেনা হাসি হাসে
লিফটের নির্জনতায় ছায়া দেখি আমার পিছনে
খোলসের, হাতের আঙুলের লাল নখের
কেমন জড়িয়ে যায়, কেমন সংগোপন
যেমন নিশি ডেকেছিল সেই রাতে
যেমন হিমে ভিজেছিল সেই ভোর
উষ্ণতা ছড়িয়েছিল এলোমেলো পর্দা
কাঁধের ফিতে সরে গেলে
অনেক নীচে হেঁটে যাওয়া খোলস
একে অপরের সাথে কথা বলে
তাদের দেওয়ালের ছবি জানে এ ফুল বড়ই সাদা
ওপাশের ঘরে আলো জ্বালিয়ে খোলস
নিশির ডাকে সারা দিয়ে হিমে ভেজার প্রস্তুতি নেয়
হয়ত কাল দেখব লিফটের নির্জনতায়
নখের লাল দাগ নিয়ে ব্যস্ত কেউ
চল্লিশ সেকেন্ডেই খোলস ছেড়ে নেমে যাবে
বাকিটা সময় সামনের প্রতিফলনে
দেখব শুধুই রামধনুর প্রতিশ্রুতি -