ঘর বানানো বিষয়ক প্রস্তাবনা
ঘর বানানোর জন্য প্রথমেই লাগবে একটুকরো জমি।
আপনাকে দেখে নিতে হবে যে জমিটা যেন বৃষ্টিতে ভেসে না যায় এবং ডুবে না যায় বন্যায়। ফলে জমি বিষয়ক সাধারণ জ্ঞানের সাথে আপনার লাগবে প্রাকৃতিক কিছু প্রবৃত্তি। জমিটি নির্বাচিত হলেই আপনি তখন চারটি দেয়ালের কথা ভাববেন; এবং অতি অবশ্যই চার দেয়াল আপনি জমিনের ওপর স্থাপন করবেন না। ঝড়ো বাতাস আর প্রকৃতির বিভিন্ন গজব থেকে রক্ষার স্বার্থেই আপনি চারটি দেয়ালকে আসলে প্রোথিত করবেন মাটির ভেতরে। ঠিক গাছ যেভাবে নিজেকে রাখে। তবে আপনি কোনো শেকড়, কখনোই, স্থাপন করতে পারবেন না।
চারটি দেয়াল হওয়ার পরেই কেবল আপনি ছাদের কথা ভাবতে পারেন। কেননা প্রকৃতি চারপাশ থেকে হানাদার হয়ে উঠতে পারে তা না; বরং উবুর হয়ে আক্রমণ চালাতে পারে আকাশ থেকেও; এবং জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন না যে ওপরে আছে অন্তত সাতটি আসমান।
ফলে আপনাকে স্থাপন করতে হবে ছাদ। কংক্রিটের ছাদ এখন সবচেয়ে ভালো। আপনি পাথর বা ইট যে কোনো কিছুই বিকল্প হিসেবে নিতে পারেন। আপনাকে আটকাতে হবে সমূহ বিপদ; যেন মেঝেতে শুয়ে, ওপরের দিকে তাকিয়ে, আপনি নিশ্চিত হতে পারেন; বোধ করতে পারেন নিরাপদ।
তবে এসব সম্পন্ন করলেই আপনি একজন গৃহপতি হয়ে উঠবেন তা কিন্তু নয়। ঘরের অন্যতম শর্ত হচ্ছে জানালা। চার দেয়ালে আপনাকে অন্তত দুটো জানালা নির্মাণ করতে হবে। জানালাগুলো তৈরি হবে দেয়ালের ভেতর গর্ত খুঁড়ে। গোলাকার বা চৌকো। এগুলো আপনাকে ঘরের ভেতর প্রকৃতিকে আসতে সাহায্য করবে। আলো ও তাপ, ঝঞ্ঝা ও বাতাস, ধুলো ও বালি—জানালা দিয়েই আপনার গৃহে প্রবেশ করবে। এবং অবশ্যই, এ বিষয়ে আপনার লাগবে, প্রাকৃতিক কিছু প্রবৃত্তি।
তবে জানালা সম্পন্ন করলেই আপনার কাজ ফুরিয়ে যাচ্ছে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। জানালায় অবশ্যই আপনাকে কপাট দিতে হবে। যেন আলো ও তাপ, ঝঞ্ঝা ও বাতাস, ধুলো ও বালি--জানালা দিয়ে আসতে না পারে। এবং আপনি যদি আরেকটু জ্ঞানী হন, আপনি অবশ্যই জানালায় স্থাপন করবেন পর্দা। তাতে প্রকৃতি বিষয়ক উদ্বেগে আপনি পাবেন বেশ খানিকটা উপশম।
অবশ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘর বানানোর সময় আপনাকে নিশ্চিতভাবেই একটা দরজা বানাতে হবে। শুধুমাত্র প্রবেশের জন্য না, যেন দরজাটা দিয়ে আপনি বেরিয়েও যেতে পারেন কোনো এক অরণ্যের দিকে।
পাগলাগারদ
তিন পাগল একদিন ঢুকে গেলো তাজমহলে।
মমতাজমহলের রূপ নিয়ে তাদের কোনো কৌতুহল ছিল না।
মোঘলদের স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে তাদের কোনো উৎসাহ ছিল না।
শাহজাহানের শিল্পনিষ্ঠুরতা নিয়েও তাদের ছিল না কোনো দার্শনিক ভঙ্গি।
তাদের যা ছিল তা হলো একান্ত বৃত্তিবাসনা।
তারা শীতল পাথরে মল এবং
নিবিঢ় স্থাপনায় মূত্র ত্যাগ করতে ভালোবাসলো।
তারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনের দিকেই খেয়াল রাখলো এবং হাতে করে মল নিয়ে কেবলই ঘৃণা ছড়াতে শুরু করলো।
এবং আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভালোবাসার অপরূপ নিদর্শন হিসেবে কথিত এই ভবনে ঘৃণাই ছড়ালো সবচে দ্রুত। ফলে, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তাজমহল ভরে উঠলো দেশী বিদেশী হাজার পাগলে।
ছয় মাসের মধ্যে তাজমহলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পাগলাগারদ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলো।
পত্রিকায় খবর হলো--পাগল যেখানে থাকে সেটাই পাগলাগারদ।
মহাত্মা পুঁটি
আমাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো দেয়ালটা ভেঙে ফেলা। এপার-ওপার যেহেতু দেখা যায়, ফলে ওটা কাঁচের; এবং, যেহেতু, কাঁচের, লেজভাঙা ট্যাংরাটা বলেছে, ওটা ভাঙা সহজ হবে!
কিন্তু হয় নি।
রুমের লাইট নিভে গেলে, দুই পায়ের অদ্ভুত শরীরগুলো ঝগড়া থামিয়ে ঘুমাতে গেলে, আমরা জেগে উঠি। পানির ভেতর খলবল করি। কয়েক জন কয়েক জনকে ছুঁড়ে মারি দেয়ালে দেয়ালে। ভাঙে না।
কিন্তু, যেহেতু, এই বন্দী থাকা অসহ্য লাগে, ভ্যাবদা মাছ ছলকে ওঠে বারবার। লুড়িদের ভেতর থেকে বেছে নেয় একটা গোল পাথর।
একটা সারা রাত কাটে পাথর দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে। ভোরে, আমাদের ঘুম এলে, দেখি একটা ছোট্ট চিড় ধরেছে স্বচ্ছ দেয়ালে। আমরা পরপর পাঁচ রাত পার করি সেই ফোকড়ে।
আর তাতে, ভেঙে পড়তে শুরু করল একুইরিয়ামটা। ভাগ হয়ে যেতে থাকল দেয়ালগুলো। পানি বেরিয়ে যেতে থাকল হড়হড় করে। খুশিতে বগল বাজালাম আমরা। এই তো পেয়ে যাচ্ছি স্বাধীনতা!
শুধু পুঁটিটা সন্দেহের গলায় বলল, পানি ছাড়া শুধু স্বাধীনতায় আমরা বাঁচতে পারব?
আমরা জানি না, আমরা অবশ্য জানতেও চাইলাম না!