এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২২

  • এক্সাম পেপার

    মোহাম্মদ কাজী মামুন
    ইস্পেশাল | উৎসব | ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ২৮০১ বার পঠিত
  • অ-মৃত | হায়দারি মঞ্জিল থেকে | দুটি কবিতা | ক্যুও ভ্যাদিস | কি করবেন মাস্টারমশাই | ২০২২ এ পুজো বিষয়ক কয়েকটি লেখা | ক্ষত | এক গুচ্ছ কবিতা | অরন্ধন | শমীবৃক্ষের বুকের আগুন | তিনটি কবিতা | ধুলামুঠি | অনিমা দাশগুপ্তকে মনে পড়ে? | যে রূপ আশ্বিনের | এক্সাম পেপার | কুহক | প্রজাপতি প্রিমিয়াম | চিকিৎসা, সমাজ, দাসব্যবসা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর – টুকরো চিত্রে কলকাতা ও বাংলা | ভাস্কর্য | তিনটি কবিতা | স্বর্ণলতা | পাখি | অথ অহল্যা - গৌতম কথা | দুগ্গি এলো | আহ্লাদের কলিকাল | রুদালি টু ডট ও | অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো | প্রত্নতত্ত্বে তৃতীয় স্বর : প্রাচীন টেপ হাসানলু'র সমাধিগুলি | করমুক্ত | শারদ গুরুচণ্ডা৯ ২০২২ | একে একে নিভে গেছে সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমার আলো | মিষ্টিমহলের বদলটদল | নিজের শরীর নিজের অধিকার – পোশাক ও মেয়েদের আজকের দুই লড়াই | উমেশ, ইউসুফ এবং প্রাইম টাইম | কবিতাগুচ্ছ | উৎসব মনের | তিনটি অণুগল্প | বর্ডার পেরোলেই কলকাতা | রূপালি চাঁদ, সুমিতা সান্যাল আর চুণীলালের বৃত্তান্ত | দেবীপক্ষ ও অন্যান্য | দুটি সনেট | নদীর মানুষ | বৃংহণ | শ্যামাসংগীতের সাতকাহন | নবনীতার কয়েকদিন | ভিআইপির প্রতিমাদর্শন এবং.. | বেইজ্জত | পায়েসের বাটি | শারদ সম্মান | দুটি কবিতা | মালেক আব্দুর রহমান


    এক হাতে বন্ধ গেইটটা থাপড়াতে থাপড়াতে অন্য হাতে যখন মানিব্যাগ থেকে গুঁজে দিচ্ছিল ভাড়াটা, বইখানা তার বগল থেকে গড়িয়ে পড়ছিল নীচের দিকে আর হাতঘড়ির কাঁটাটা গজগজ করে উঠছিল উপরের দিকে। এরপর ভেতরের বিশাল মাঠটা দৌঁড়ে আর দালানের লম্বা সিড়ি পেরিয়ে যখন এসে দাঁড়ালো বিশালকায় হলটার গুহামুখে, চ্যাটচ্যাটে শুকনো মাটির নির্জন ধ্বংসাবশেষের সাথে রেলিংয়ে গজানো শেকড়বাকড়ও তার সাথী হল। সে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকলো ওখানে, মুনি-ঋষির মত, কারো দিকে না তাকিয়ে, মুখ থেকে কোন শব্দ নির্গত না করে। হয়তো সিলেবাস শেষ করার প্রাণান্ত তাড়ায় রিকশার মধ্যে যে পাতাগুলো উল্টেছিল পাগলের মত, তাই ফের চোখের সামনে ভেসে উঠছিল, বিভিন্ন আকার ও আকৃতিতে - কোনটার হয়ত পেট ফুলে উঠছিল , কোনটার বা হাতা ঝুলে পড়ছিল, আবার কোনটির বেরিয়ে পড়ছিল নগ্ন পা - কখনো এল তারা সোজাসুজি, কখনো বা বাঁকাতেড়া হয়ে। বইটা বগল থেকে নেমে ততক্ষণে আংগুলের খাঁজে শুয়ে পড়েছে, আর ভেতর থেকে শত শত সহপাঠী খাতা থেকে মুখ তুলে চাইছে।

    সর্বশেষ প্রশ্নপত্রটা বিলি করার পর পরীক্ষক যখন হলটির ডায়াসে এসে পৌঁছুলেন, চোখ পড়া মাত্রই দৌড়ে গেলেন দীপের দিকে, আর হাত থেকে বইটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে একটা প্রশ্নপত্র গুঁজে দিলেন। খাতা আগে থেকেই রাখা ছিল, সামনের পকেটটা অনেকক্ষণ ধরে কামড়ে থাকা জ্যামিতি বক্সটা কোনমতে বের করে দীপ তার জন্য নির্ধারিত আসনে সটান বসে পড়ল। হাঁটতে হাঁটতেই এক ঝলক দেখে নিয়েছিল, এখন পুরো প্রশ্নপত্রটা দেখে তো সে আনন্দে আটখানা হয়ে উঠলো। শতভাগ কমন! এমনকি ‘অথবা’ দেয়া বিকল্প প্রশ্নগুলোও তার ঝাড়া মুখস্ত। কোনটা রাখবে, আর কোনটা ছাড়বে, এ নিয়ে বেশ কিছুটা সময় ভাবলো সে। পরে জ্যামিতি বক্সটা খুলে যুৎসই একটি কলম বেছে নিয়ে লিখতে শুরু করলো। পুরনো হয়ে যাওয়ার পর জ্যামিতি বক্সটা সে সাজিয়েছে কলম, পেন্সিল, রাবার, হাইলাইটার, স্কেলের বাহারে। কিছুক্ষণ লেখার পর কলমটা তার কাছে ভোঁতা মনে হল, যে গতিতে লেখার কথা, পারছে না মনে হল। দীপ তখন অন্য একটি কলম হাতে নিল, কিন্তু মনে ধরলো না। এরপর বাকী যে কয়টা কলম এনেছিল, সব কটাই বাক্সটা থেকে খসালো একে একে। কিন্তু কোনটাই যখন তাকে সন্তুষ্ট করতে পারলো না, তখন সে ফের প্রথম কলমটি দিয়েই লিখতে শুরু করল।

    হঠাৎ কি একটা শব্দে জানালার বাইরে চোখ চলে গেল তার - বিল্ডিংটার পেছনের দিকটা, একটা কৃষ্ণচূড়া হাত বাড়িয়ে আছে সেখানে, কয়েকটা পাখি কিচিরমিচির করছে তার বুকে আসন পেতে। পাখিগুলোর নরম পালক দেখতে দেখতে হঠাৎ দীপের মনে পড়ে গেল যে, তার একটি পরীক্ষা চলছে - খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জীবনের ভাগ্য নির্ধারন করে দিতে পারে তার। খানিকটা শিউরে উঠেই সে খাতায় মন দিল, কিন্তু কিছুদূর লিখেই তার মনে হল, আরে সব তো ঠাঠা মুখস্ত, কলম গুঁজলেই লেখা আসছে, একটুও মনে করতে হচ্ছে না কিছু, পনের মিনিট দেরীতে ঢুকলেও আধা ঘন্টা আগেই হল থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। ভাবতে ভাবতে সে আবার মাথা তুলে বাইরে তাকালো।

    স্কুলদেয়াল ছাড়িয়ে চোখে পড়ছে ধলপুরের বিশাল মাঠটা। শূন্য মাঠটা কি মায়াবী দেখাচ্ছে আজ! আজ হল থেকে বেরিয়েই বাসায় ছুটবে না, আগে থেকেই ঠিক করা আছে, দুইটা ম্যাচ হবে, দলের প্রধান পেসার হিসেবে পুরো দশটি ওভার দৌঁড়ুতে হবে তাকে। তারপর ঘেমে নেয়ে উঠতে উঠতে চলে যাবে দুই কিলো দূরে শত শত বছর ধরে হা করে দাঁড়িয়ে থাকা কেল্লাটায়, এক লাফে পড়বে ওর মধ্যে ফুটে থাকা দীঘিটাতে। জলের পর্দা কাঁপিয়ে দাপিয়ে বাসায় ফিরে আসতে আসতে যখন সন্ধ্যেতারা জ্বলতে শুরু করবে, দুটো মুখে দিয়ে আবার বেরিয়ে পড়বে তাদের বয়সীদের দিয়ে গড়া ক্লাবটির উদ্দেশ্যে। আজ কেউ গালমন্দ করবে না বাসায়, অথবা, করলেই শুনতে যাচ্ছে কে! খুব বেশী চটে গেলে মা বড়জোর শোনাতে পারে, ‘বাপের রক্ত!’ হয়ত আরেকটু বিস্তারিত করলে বের হয়ে আসতে পারে পুরনো কাসুন্দি, দীপের বাবা ক্লাব-নাটক করে মস্ত বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নিজের পায়ে নিজেই কিভাবে দলেছে। সেইদিনগুলিতে দীপের বাবা যখন টগবগে যুবক, আর দীপের দাদার শত বিঘে জমির হিসেব দেখতেও হয় না তাকে কলেজপড়ুয়া ছেলের সার্টিফিকেট ঝুলে থাকায়, সারাটা রাত সে কাটিয়ে দিতো নাটক-পালা রচনা, নির্দেশনা, রিহার্সেল আর চুড়ান্ত মঞ্চায়নে। পরে যখন ভোরের সূর্য উঁকি মারতে থাকতো, সেও খানিক উঁকি মারতে মারতে ঢুকে পড়তো বিশাল বাড়িটির সদর ঘরটিতে, আর অনেকটা বেলা পর্যন্ত বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতো সেখানেই। দীপ অবশ্য এই সাংস্কৃতিক কান্ডকারখানাগুলো একদমই মাথায় রাখতে পারে না। বানানো নাটমঞ্চ থেকে ক্লাবের টিটির কোর্টটা তাকে অধিক নেশাগ্রস্ত করে, এখানেও ডজ্‌ আছে, তবে তা দেয়া হয় প্রতিপক্ষকে, দর্শককে নয়। দাবা বা ক্যারোমের ডিঙ্গিগুলো ডিঙ্গিয়ে আজ যখন সে টিটির ময়দানে নামবে, প্রাণপণ এটা লড়াই চালাবে সাব্বিরকে হারাতে, ঐ মোটকুটার সাথে তার জয়ের রেকর্ড এখনো শূন্য।

    ঝড়ের গতিতে একটি সার্ভ, চোখে অন্ধকার দেখছিল দীপ, হঠাৎ পায়ের একটা ধুপ্‌ধাপ্‌! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল রবিন আর সুস্মিতের সিট অদল-বদল করে দেয়া হচ্ছে। এমনিতে তো মুখ চাওয়াচাওয়ি করে না, কিন্তু আজ কি করে এত ঘনিষ্ঠ হল যে স্যারের ঘোলাটে চশমাকেও ঘায়েল করতে পারলো না? আবারো ভাবনার অতলে হারাচ্ছিল, কিন্তু আচানক নিজের খাতাটার দিকে চোখ পড়তেই কেঁপে উঠলো! মাত্র দু পাতা লিখেছে, প্রথম প্রশ্নটার উত্তরের একতৃতীয়াংশও এগুতে পারেনি। দুমদাম কলম ফোটাতে লাগলো কাগজ জুড়ে; এক সময় কলমটা পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হলে সে জ্যামিতি বক্সটায় হাত বাড়াতে গেল, কিন্তু নিজের অজান্তেই চোখটা চলে গেল আবার বাইরে- বারান্দা দিয়ে যাচ্ছে দপ্তরী মশাই। এই লোকটিকে অদ্ভুত ভাল লাগে দীপের, কত যে ক্ষেপানো হয়, তবু মুখে কোন রা নেই। লোকটা নাকি উচ্চশিক্ষিত, তারপরো কেন এই পদে এই প্রশ্নের রয়েছে হাজারো উত্তর তাদের বন্ধুদের কাছে। দপ্তরি আংকেল কি একটা কাগজ সঁপে দিয়ে গেলেন স্যারের হাতে যা খুঁটে খুঁটে দেখার সময় দীপের চোখজোড়া ব্যস্ত হয়ে পড়ল স্যারের পোশাক নিয়ে। একটি ব্রাউন কালারের স্যুট পরে আছেন তিনি। আজকালকার শিক্ষকেরা গল্পের বইতে পড়া ঢিলে পায়জামা পাঞ্জাবি বড় একটা পরেন না। যতই দিন যাচ্ছে, রাস্তায় সাহেবী স্যুট বেশী করে চোখে পড়ছে। দেশ যে এগুচ্ছে, তারই একটি প্রতিচ্ছবি হয়তো! দীপ গা এলিয়ে দিয়ে আরো ভাল করে দেখতে থাকে স্যুটটাকে - স্যুটটার দাম কত হতে পারে? কোথা থেকে বানিয়েছেন? এরকম কয়টা স্যুট আছে? অন্যগুলো কী রঙের?

    ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজলো। এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। আঁতকে উঠলো দীপ। এখনো অর্ধেকটা বাকি প্রথম প্রশ্নটার। এরপর রয়েছে আরো তিনটে প্রশ্ন, সব সমান মার্কসের। এখন পর্যন্ত পরীক্ষার বরাদ্দ মোট সময়ের এক-তৃতীয়াংশ খেয়ে ফেলেছে সে, অথচ উত্তর করতে পেরেছে মোট নম্বরের মাত্র এক অষ্টমাংশ ! কিন্তু অচিরেই যুক্তি গজিয়ে উঠলো ব্রেইনের এঁটেল মাটিতে - এতটা ভাল পড়া আছে যে বাকী সময়টা একটানা লিখে যেতে পারলে লেটার মার্ক্স থেকে তাকে বঞ্চিত করার সাধ্য থাকবে না কারো। তবে আগেভাগেই হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে চিন্তাটা সে করেছিল, এ মুহূর্তে বিসর্জন দিতেই হল। হ্যাঁ, কিছু সময় তারপরো থাকবে, এখন থেকেই যদি মাথাটা অন্য কোথাও না ঘামিয়ে পুরো গুঁজে দিতে পারে খাতাটায়। আর সেই সময়টা সে রিভিশানের জন্য ব্যয় করবে আজ। যদিও রিভিশান দিতে তার একদমই ভাল লাগে না, সবগুলো উত্তর লেখার পর প্রশ্নের জঞ্জালটা কাঁধ থেকে নামানোর জন্য মনটা আইটাই করতে থাকে। সুতরাং, আবার কলমের ঝড় বইতে শুরু করলো তার পিন দিয়ে আটকানো এক্সাম-পেপারটিতে।

    পলাশী যুদ্ধের অন্তিম দৃশ্যে এসে হাজির হয়েছে এখন দীপ। সেই চিরচেনা কাহিনি, এগিয়ে আসছে লর্ড ক্লাইভের দল, কিন্তু ওদিকে যন্ত্রের মত দাঁড়িয়ে আছে মীর জাফর। নবাবের ঘনিষ্ঠ পাত্রমিত্রেরা সবাই বিশ্বাসঘাতকতা করবে তার সাথে, কাউকে পাশে পাবে না সে, পতন হবে একজন দেশপ্রেমিক শাসকের, একই সঙ্গে ভুলুন্ঠিত হবে স্বাধীনতার সূর্য দুশ বছরের জন্য! এ জায়গাটাতে এসে বিস্বাদ জেগে উঠে দীপের কলমে, বিদ্রোহ করতে চায় আংগুলের নার্ভগুলো, নিজের অক্ষরগুলো বিদঘুটে লাগে তার কাছে, বিতৃষ্ণা ফেনিয়ে উঠে। সিরাজ লোকটাকে কখনোই সে পছন্দ করতে পারেনি। আগাগোড়া ব্যর্থ একটা লোক কিনা অভিষিক্ত বীরের মর্যাদায়! ইতিহাসের কানটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে তার মাঝে মাঝে!

    যখন নতুন প্রশ্নটা কলমের ডগায় তুলে নেয়, তখন দেড় ঘন্টা পেরিয়ে গেছে, হাফ টাইম হলেও খেলার মত বিরতি মেলে না পরীক্ষার হলে। একটা গতি চলে এসেছে হাতে - বুঝতে পারে দীপ। এরপর গটগট করে লিখে চলবে সে, আর দেরী হবে না - গনগন করে জ্বলতে থাকা মশালে বিশ্বাসের জ্বালানি পুরতে থাকে যেন সে। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের কাহিনিটা তার ঝরঝরে হয়ে আছে সেই ব্রিটিশ যুগ থেকেই যেন, দাদার চোখে সে দেখে ক্ষুদিরাম, তিতুমির, সূর্যসেনদের … তার রক্তে আগুন ধরে তখন। দাদা নাকি ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে শরীক হয়েছিল। তার বাবা অবশ্য ঐ যুগটা পায়নি, আর একটা জীবন পর্যন্ত কোন দুঃখ দুর্দশাই তাকে ছুঁতেও পারেনি। মায়ের কাছেই শোনা, দেহের সাথে ওজন করে সোনায় মুড়ে যখন ঘরে আনা হয় তাকে, দাদা নিজের গড়া বিশাল আড়তটায় খানিক সময় দেয়ার জন্য কাতর মিনতি জানিয়েছিলেন ছেলেকে, কিন্তু মঞ্জুর হয়নি। দীপের কলেজ-পাস বাবা চাকরিতেই ঢোকে, আর সঙ্গে চলতে থাকে সমাজ সেবা। কৈশোর আর যৌবনের গোড়াটা পার করেছেন একটি শ্রেণীহীন সমাজের সবক নিতে নিতে, কত স্বপ্ন তখন তার বাবার চোখে, স্ফুলিঙ্গ আকারে জ্বলতে থাকে তারা, কিন্তু একটি স্থির আঁধার না পেয়ে উড়তে থাকে ক্রমশ, একটা ছাড়ে তো আরেকটাতে ঢোকে! আর এ করতে করতে একটা সময় নাকি চাকরী থেকে সাসপেন্ডও হয় সে। তখন দাদা কয়েক কানি জমি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তাদের ছয়ভাইবোনের সংসারটিকে নিজ হাতে চালাতে গিয়ে। এই সময়েই পুরনো বইয়ের নেশাটা ফিরে আসে বাবার। সারা দিন রাত বই নিয়ে পড়ে থাকতেন, একটা সময় নাকি দীপের দাদা তার চাচাদের ডেকে বলেছিলেন, “ওকে এনে বেঁধে রাখো ঘরের সাথে।“ তারপরো কিছু হয়নি। তার দাদাজানের আক্ষেপ ছিল, “এতই যহন বইয়ের নেশা, তাইলে ওকালতি পড়ল না ক্যান! তাও বোজতাম, দুইগগা বই লেকছে, কামে লাগতো মাইনসের!”

    একটা কাতর স্বর এক্সাম হলের নিরবতাকে ভেঙে খান্‌খান্‌ করে খাতা থেকে বের করে দিল দীপকে। শফিক ডান হাতটা বাড়িয়ে ধরে স্যারের পিছু পিছু হাঁটছে, আর শেষবারটির জন্য মাফ করে দেয়ার কাতর আহবান জানাচ্ছে। স্যারের হাতে ওর খাতাটা ধরা, এদিক-ওদিক পায়চারি করছেন চিন্তার দলা পাকিয়ে, যেন একটা গোপন কুঠুরি খুঁজছেন খাতাটিকে বন্দী করার জন্য, যেন শফিক বা অন্য কেউ যেতে না পারে ছিনতাই করে। অনেকক্ষণ অনুনয় বিননয় করার পরও যখন সাড়া এল না, তখন কাঁদো কাঁদো মুখটাতেই একটা জেদ ফুলিয়ে বিদ্রোহী নায়কের ভঙ্গিতে হল ছাড়লো শফিক। আর ওর মিলিয়ে যাওয়া বিন্দুগুলো জমে জমে অল্প সময়েই একটা একতলা দালান গেঁথে গেল দীপের চোখের সামনে। হয়েছিল কি, রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল, বা, বড়জোর জসিম উদ্দীনের কবিতাই মুখস্ত লিখতো তারা। সেবার কী এক অজানা কারণে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমেরবাতি…’ লিখতে দিল। বেশীরভাগেরই ড্রপ হল প্রশ্নটা, পাক্কা দশ মার্কস! এদিকে পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও আরও যে ছড়া-কবিতাগুলি দীপের মুখস্ত ছিল, বাবার মুখে শুনে শুনে, সেখানে থেকে কমন পড়ে গেল। খুশীতে গদ্‌গদ্‌ হয়ে যখন শব্দগুলো তুলে দিচ্ছিল খাতার উপর, খেয়াল করলো, পাশের সিটে বসা মাসুদ তার খাতার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পুরোটাই তুলে নিয়েছে। মাথায় রক্ত চড়ে গেল দীপের, কলমটা দিয়ে ঘ্যাচাং কেটে দিল পুরো পাতাটা! আচ্ছা, মাসুদ যদি কমপ্লেইন করতো, তাহলে! বুকটা কেঁপে উঠলো দীপের, আর সাথে সাথেই দ্বিতীয় ঘন্টার ঢং নেচে উঠলে দীপ গোল্লাছুট লাগিয়ে ছুটে এল এক্সাম পেপারে। দ্বিতীয় প্রশ্নটার অর্ধেকটা বাকী এখনো।

    হাজী শরীয়তুল্লার ফরায়েজী আন্দোলনের অন্তিম মুহূর্তে চলে এসেছিল, হঠাৎ তার মাথায় শক্ত নোঙ্গর ফেলল প্রশ্নটা। এটি কি সত্য সত্যই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ছিল? তার বাবার এ নিয়ে দ্বিমত আছে। দাদাজান নাকি মনে করতেন, ফরায়েজী আন্দোলন ব্রিটিশবিরোধী তো বটেই, এমনকি এ হচ্ছে সব আন্দোলনের মা, যেকোন সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একে কাজে লাগানো যায়। তাহলে কি তাদের মুক্তিযুদ্ধেও প্রযোজ্য ছিল এই আন্দোলন? অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া দাদাজানের পক্ষে একান্তই অসম্ভব হতো, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই নাকি তার দাদার অসুখটা দেখা দেয়। তার বাবা যে কিনা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে তাদের জেলায় সব থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর পুরো নিষ্ক্রিয় হয়ে যান, দাদার মৃত্যুটা তাকে ধ্যানগ্রস্ত মুনিতে পরিণত করে। দিনের পর দিন ভাবনার গুহায় ঢুকে থাকতেন, দীপের মা ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো চুলোয় উঠছে দিনরার মনে করিয়ে দেয়ার পরও পাক্কা তিনমাস পরে রইলেন গ্রামের বাড়িতে। পরে ঢাকায় ফিরে সংগঠন, সমাজসেবা সব ছেড়েছুঁড়ে যখন সংসারে ফুল টাইম মনোনিবেশ করলেন, তখন চারপাশের লোকজন যারপরনাই অবাক হল। কিন্তু কিছুদিন যেতেই দেখা দিল তীব্র অভাব; ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছিল, এত বড় সংসার নতুন চাকরীর অল্প বেতনে কুলোচ্ছিল না। চড়া সুদে ঋণ করতে লাগলেন বাবা, আশা ছিল বেতন থেকে আস্তে আস্তে শুধে দেবেন। কিন্তু চাকরী জীবনে সুবিধে করতে পারেননি কখনোই। বিত্তশালী পরিবারের সন্তান বাবা বস্‌কে কেয়ারই করতে চাইতেন না একদম। এজন্য পদন্নোতি ছুটেছে একের পর এক। আরো একটা সমস্যা ছিল, রাজনীতি ছাড়লেও আদর্শের বলয়টা বুদবুদ করতো সব সময়; ফলে ভিন্নধর্মী কাউকে পেলে নসিহত করতে চাইতেন, আর এ করতে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মত চাকরী হারালেন। চাকরি বাজারের পাথুরে দেয়ালে যখন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে তার দেহ আর মাথা, পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত বাদবাদকী জমিগুলোও চলে গেল অন্যহাতে, অনেকটা পানির দরে। দীপের বড় ভাইটা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে একটি কারখানার মেকানিকে লেগে গেল। বড় ও মেজ বোনটাকে বরের হাতে সঁপে দিতে হল তেমন যাচাই-বাছাই ছাড়াই।

    যখন শেষ হল দ্বিতীয় প্রশ্নটা, ঘড়ির চোখ বুলাতেই কেঁপে উঠলো দীপ! হাতে আছে মাত্র আধা ঘন্টা, আর দুটো প্রশ্নঃ এর মানে হল, মাত্র এক ষষ্ঠাংশ সময়ে মোট মার্কসের অর্ধেকটার জন্য পরীক্ষা দিতে হবে! আতঙ্কে ঘাম ছুটতে তার, আর এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করা যাবে না, এমনকি মরনের চিন্তা করার টাইম নাই! তার এক্সাম পেপার হঠাৎ করেই কাপড় চোপড় খুলে দৌঁড়ুতে শুরু করল পাগলের মত, হাওয়ার সাথে প্রবল ঘর্ষনে লিপ্ত হল কলমের নিব, হাতের লেখারা মেলে দিল পাখা, কোথায় মাত্রা, কোথায় লাইন, কোথায় র ফলা, আর কোথায় ই বা জ ফলা – ইয়ত্তা রইল না। দীপের শুধু একটুকু আশা, সুন্দর না হোক, এমনকি বুঝতে না পারুক, কিন্তু সে যে লিখেছে, সে যে জানে উত্তরগুলো, অন্তত সেটুকু স্বীকার করুক পরীক্ষক। বাইরের চিন্তারাজীকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে এতটা সময় পরে সে ফিরে এসেছিল এক্সাম পেপারের মাঠে, পুরোপুরি, ঠিক কতটুকু লিখবে, কতটুকু ছেড়ে দিবে, কোন জায়গাটা লিখলে পরীক্ষক গদগদ হয়ে যাবে, সব মাথায় এসে যাচ্ছিল। এখন যতদূর চোখ যায়, শুধুই পরীক্ষা, সে একজন নাবিক, তার কলমটা একটা জাহাজ, আর এক্সাম পেপারটা একটি আদিগন্ত সমুদ্র, এ ছাড়া আর কিছু নেই চোখের সামনে!

    হঠাৎ শেষ ঘন্টাটা বেজে উঠল এক বিপুল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে! টিচারের ছায়া দেখে ভুত দেখার মত ছিটকে গেল দীপ! কেন জানি, পরিদর্শক দয়াদ্র হয়ে পাশ কাটালেন তাকে। পুরো হলটা ঘুরে আসতে আরো মিনিট সাতেক ব্যয় করে যখন পুনরায় দাঁড়ালেন তিনি দীপের আসনটি ধরে, তখনো শেষ প্রশ্নটার সিকিভাগ শেষ করতে পারেনি দীপ। খেলার মাঠেও এমন হয় তার, যখন সে গতিটা পেয়ে গেছে, লাইন ও লেংথ খুঁজে পেয়েছে, তখনই আঙুলটা উঁচু করে তুলে ধরেছেন আম্পায়ার। খাতাটা টেনে নেয়ার আগেই টিচারের হাতে জমা দিয়ে যখন দীপ বেরিয়ে গেল হলটা থেকে বিরাট একটা গুমোট-শ্বাস ছড়িয়ে দিতে দিতে, একটুও বল পাচ্ছিল না, পায়ের পাতা ভারী হয়ে উঠেছিল ক্লান্তিতে! পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে প্রথমবারের মত একটি রিকশা ডাকলো সে – মানিকনগরের বাসাটায় পৌঁছে দিতে। বাসা বলতে বড় ভাইয়ের বাসা, বাবা-মায়ের সাথে দীপ ও তার ইমিডিয়েট বড় বোনটিও যেখানে এসে জুটেছে। একটি অটোসার্ভিসের কারখানা দিয়ে তার বড় ভাই এখন কাঁচাপয়সায় সয়লাপ। মেজ ভাই একটি কেরানির চাকরি নিয়ে সেই কবেই আলাদা হয়ে গিয়েছে।

    বাসার দরজাটা মেলতেই দেখতে পেল বাবাকে, ছিটকানিটা খুলতে তিনিই এসে দাঁড়িয়েছেন। কোলে জায়নামায, মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্ভবত, অথচ এখনো আজান হয়নি। বয়সের সাথে সাথে বাবার হিসাবজ্ঞান প্রখর হয়ে উঠেছে। সব কিছু কাঁটায় কাঁটায় মাপা থাকে এখন বাবার। ডায়াবেটিসের নিয়মকানুন এত অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন যে ডাক্তার অবাক হয়ে যান! কখন ঘুমোবেন, কতটুকু খাবেন, কিছুটা সময় হাঁটবেন, টিভির দিকে কতটা চাইবেন, তা ঠাঠা মুখস্ত পড়া। দীপরা কোনকিছুতে অনিয়ম করলে ভীষণ রাগ করেন। একবার দীপ কলটা ভালমত বন্ধ না করেই বেরিয়ে গিয়েছিল বাথরুম থেকে, চিৎকার করে পাড়া জড়ো করলেন কয়েক ফোঁটা জল অপচয়ের জন্য। কিন্তু তবু বাবা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছেন, অনেকদিন পর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব কান্না পেয়ে গেল দীপের!

    “কী, পরীক্ষা ভালো হয় নাই?“ – দীপের মলিন মুখটার দিকে চেয়ে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন বাবা।

    “খুব ভাল প্রিপারেশান তো নিছিলাম … কিন্তু শ্যাষ …“ কথা আটকে যায় দীপের, আমতা আমতা করতে থাকে মাথাটা নীচু করে।

    “এইডাই সমস্যা…বেশী প্রিপারেশান নিলেই আর শ্যাষ করা যায় না!” দরজাটা পেরিয়ে ঝুঁকে পড়া দেহখানা নিয়ে মসজিদ পানে এগুনোর সময় বিড়বিড় করতে শোনা যায় বাবাকে।



    ছবি - মিডজার্নি এ-আই

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    অ-মৃত | হায়দারি মঞ্জিল থেকে | দুটি কবিতা | ক্যুও ভ্যাদিস | কি করবেন মাস্টারমশাই | ২০২২ এ পুজো বিষয়ক কয়েকটি লেখা | ক্ষত | এক গুচ্ছ কবিতা | অরন্ধন | শমীবৃক্ষের বুকের আগুন | তিনটি কবিতা | ধুলামুঠি | অনিমা দাশগুপ্তকে মনে পড়ে? | যে রূপ আশ্বিনের | এক্সাম পেপার | কুহক | প্রজাপতি প্রিমিয়াম | চিকিৎসা, সমাজ, দাসব্যবসা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর – টুকরো চিত্রে কলকাতা ও বাংলা | ভাস্কর্য | তিনটি কবিতা | স্বর্ণলতা | পাখি | অথ অহল্যা - গৌতম কথা | দুগ্গি এলো | আহ্লাদের কলিকাল | রুদালি টু ডট ও | অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো | প্রত্নতত্ত্বে তৃতীয় স্বর : প্রাচীন টেপ হাসানলু'র সমাধিগুলি | করমুক্ত | শারদ গুরুচণ্ডা৯ ২০২২ | একে একে নিভে গেছে সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমার আলো | মিষ্টিমহলের বদলটদল | নিজের শরীর নিজের অধিকার – পোশাক ও মেয়েদের আজকের দুই লড়াই | উমেশ, ইউসুফ এবং প্রাইম টাইম | কবিতাগুচ্ছ | উৎসব মনের | তিনটি অণুগল্প | বর্ডার পেরোলেই কলকাতা | রূপালি চাঁদ, সুমিতা সান্যাল আর চুণীলালের বৃত্তান্ত | দেবীপক্ষ ও অন্যান্য | দুটি সনেট | নদীর মানুষ | বৃংহণ | শ্যামাসংগীতের সাতকাহন | নবনীতার কয়েকদিন | ভিআইপির প্রতিমাদর্শন এবং.. | বেইজ্জত | পায়েসের বাটি | শারদ সম্মান | দুটি কবিতা | মালেক আব্দুর রহমান
  • ইস্পেশাল | ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ২৮০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সাফকাত | 116.58.***.*** | ০৭ অক্টোবর ২০২২ ১২:০৮512594
  • অনিয়ন্ত্রিত মানব মনের চিন্তা-ভাবনা আর পরিশেষের দার্শনিক ভাষ্য " অনেক আশা নিয়ে শুরু হওয়া জীবনের শেষ হয় অনেক হতাশায়"
    আমরা চাই এক আর হয় আরেক।
     
    ধন্যবাদ লেখককে।
  • প্রতিভা | 103.118.***.*** | ০৭ অক্টোবর ২০২২ ২০:৩৭512605
  • গল্পটার একটা আলাদা টান আছে। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আর স্ট্রিম অফ কনশাসনেস টেকনিক মিলে মিশে খুবই বিশ্বাসযোগ্য ভাবে পেশ করেছেন লেখক। দুটো সমান্তরাল কাহিনিসূত্র শেষে এসে জোড়া লেগে যায়। দীপ আর দীপের বাবা আমাদের বোধে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ হয়ে ওঠে যেন! 
     
    লেখক নবীন এবং খুবই সম্ভাবনাময়! 
  • রুমি বন্দ্যোপাধ্যায় | 2409:4060:181:7d53:55e9:ae77:e6fd:***:*** | ০৭ অক্টোবর ২০২২ ২১:২৫512607
  • বিষয়ভাবনা খুব অন্যরকম। একটা গল্পের ভিতর দিয়ে আরেকটা গল্প বলার কৌশলটি প্রশংসনীয়। ভালো লাগল।
  • Tumpa Biswas | 2409:4060:2e0d:bcba:2648:9c7c:c0a1:***:*** | ০৮ অক্টোবর ২০২২ ১০:২৭512613
  • আসলে দৌড়ের শুরুটা আমাদের আয়ত্তাধীন হলেও শেষটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে হয় হামেশাই।আর কে না জানে মন খামখেয়ালি নবাবজাদা। তার চলন,স্পন্দন, স্থিতি,গতি সবই তার মর্জিতে চলে।অতএব পরীক্ষার খাতা থেকে ভাবনার অস্থিরতায় তার যাতায়াত এমনই অবাধ হয়।
  • Lina Roychowdhury | 115.96.***.*** | ০৮ অক্টোবর ২০২২ ১১:২১512615
  • অসামান্য লেখা! ব্যতিক্রমী ভাবনা এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ আমি! 
  • Yeasmina parvin | 2409:4061:2e90:c264::b64b:***:*** | ০৮ অক্টোবর ২০২২ ১৫:১৫512625
  • বেশ সুন্দর।
  • মিতা ঘোষ | 203.17.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪৫512644
  • অভিনব বিষয়।  পরীক্ষার পেপার যে কারো গল্প লেখার বিষয় হতে পারে, মাথাতেই আসেনি। সুনির্মানও বটে...
  • শৈবাল চক্রবর্তী | 43.226.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১২:০২512650
  • বিষয় ভাবনায় অভিনবত্ব যেমন আছে, পরিবেশনায় আর বিন্যাসেও অন্য মাত্রা।
    এক্সামিনেশন হলে বসে পরীক্ষার্থীর ভাবনার সুতো ধরে এই গল্প বলার, কনশাস, সেমি-কনশাস অবস্থানে কলমের অনায়াস চলনটি বেশ সপ্রতিভ।
    এই গল্পটি লিনিয়ার ফর্মে 'আরেকটি গল্প' হয়ে থাকত কিন্তু এই এক্সপেরিমেন্টে 'হঠকে' হয়ে রয়ে গেল।
  • মিলন কিবরিয়া | 43.239.***.*** | ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫৭512675
  • ভালো লেগেছে। চেনা অথচ ভিন্নতর। 
  • অনিমেষ গুপ্ত | 122.172.***.*** | ১১ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫৯512708
  • চমৎকার লাগল।  বেশ লেখা। 
  • দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম | ১১ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৫০512716
  • গল্পের বয়নভঙ্গি চমৎকার। একটা গল্পের প্লটে অন্য গল্প বলার প্রয়াসও সহজাত। কিছু দৃশ্যের স্মরণও করালো যেন। অভিনন্দন। 
  • দেবলীনা | 2401:4900:1cc4:f380:e5f8:4408:a32a:***:*** | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২২:০৩512733
  • ছবির ভিতরে ছবি, গল্পের ভিতরে গল্প- আহা অনবদ্য লেখা। ভীষণ সাবলীল আর ভীষণ বাস্তব।ছোটবেলায় পরীক্ষার হলে বসে দেখতাম কে পেনসিল চিবোচ্ছে, কে টোকাই  করছে, দিদিমনির সাথে আজকে দিদিমনির বরের কেন ঝগড়া হল- আর এই করতে করতেই পরীক্ষা শেষের ঘন্টা। ওই যে "বেশী প্রিপারেশান নিলেই আর শ্যাষ করা যায় না!”। 
    পড়তে পড়তে কোথায় যেন মনে হল- এ গল্প কেবলমাত্র এক্সাম হলেরই কি? নাকি তার চাইতে ঢের বড় কোন পরীক্ষার হলের কথা বলা হচ্ছে যেখানে এখানে- যাতে অনেক প্রস্তুতি নিয়েও হো হারান হেরে গেছি সকলে- ক্লান্তিতে ভেঙে আসছে শরীর, হাত সরছে না- তবু থামার উপায় নেই.....
  • Dipen Bhattacharya | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২৩:০২512739
  • প্রথম থেকেই পাঠকের মনটিকে লেখক ধরে রেখেছেন, পাঠকের অতীতকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সমান্তরাল কয়েকটি রেখায় এগিয়ে গিয়েছেন যার প্রতিটি বিষয়বস্তুতে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যা গুরুভার হয়নি শেষ পর্যন্ত। ইতিহাসের কিছু সন্ধিক্ষণের ব্যাপারে নিজের কিছু মতামতের ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিন্তু খোলসা করেননি, এই কৌশলটি যথাযত। আর মনে হয়েছে পরীক্ষার যুদ্ধে তার অংশগ্রহণ,  জীবনযুদ্ধে তার পিতার কর্মকান্ডের সাথে একটি সাযুজ্য রেখে এগিয়েছে। এটিও বেশ চমৎকার। লেখককে অভিনন্দন। - দীপেন    
  • শাহনাজ পারভীন | 103.73.***.*** | ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৩৪512768
  • জীবনের গতিপথ ভাবনায় ভরপুর। জীবন চলবে কতো দূর তা মলিন হয়ে রয় সর্বদাই। একেবারে দ্যাথ্যহীন কন্ঠ ও ব্যঞ্জনায় হয় অভিষিক্ত পরিবারের কাছে। কখনোই কিছু শতভাগ নিশ্চিত সম্ভব নয়। তাই তো গদগদ করে পড়াটা ও যায়গা পেল এক্সাম পেপারে অসম্পূর্ণ রূপে। তাহলে পরিপূর্ণতা কি বা কাকেই সে
    ভালোবাসে।
  • দেবাশিস সেনগুপ্ত | 2405:201:8005:cc62:7968:3a41:8f23:***:*** | ১২ অক্টোবর ২০২২ ২১:২৩512773
  • খুব ভালো লাগল। গল্পের ভিতর আরেকটা গল্প লুকিয়ে আছে। মাল্টিডাইমেনশনাল প্লট। শেষটাও সুন্দর। আরো লিখুন। শুভেচ্ছা রইল।
  • মোঃ রাকিব হাসান | 43.245.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:১৩516181
  • অসাধারণ গল্প, খুবই ভালো লাগলো আর অনেক বেশি উপভোগ করলাম। আর গল্পটা পড়তে পড়তে আমি নিজেও কয়েকবার কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম কারণ আমিও আগে ক্রিকেট খেলতাম, তাই আমার নিজের এক্সাম এবং এক্সামের পরে ক্রিকেট খেলার কথাগুলোও মনে পড়ে গেল
  • Kuntala | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৩:১৮516182
  • শেষ  লাইন টি  হৃদয়  নিংড়ে লেখা. পরীক্ষার   খাতায়  জীবন  যেরকম 
  • রূপালী | 103.218.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৯:৫৮516979
  • অদ্ভূত সুন্দর!!! 
    জীবনটাই একটা এক্মাম পেপার।মানুষ জীবনের শুরুতে এত এত রঙিন স্বপ্ন দেখে।সে ভাবে সুন্দর করে জীবন সাজাবে।কিন্তু, জীবন আসলে অন্যরকম।মানুষ যা চায় তা সে পায় না।জীবন মাঝে আসে নানা চড়াই উৎরাই।তখন শেষে এসে এমনই হয় জীবন। কার নিয়তি তে কি লেখা আছে তা কেউ জানে না। এটা নিয়তির খেলা মাত্র!!! 
    লেখক কাজী মামুন আপনাকে সাদুবাদ জানাই এত ছোট পরিসরে এত সুন্দর করে মনুষ্য জীবনের উপলব্ধি কে তুলে  ধরার জন্য।শুভ কামনা নিরন্তর।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন