একটি ভূতের গল্প
নড়ে উঠল চোখজোড়া! মোনাজাতে বুঁজে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে খুলে পড়েছিল তারা, আর সেই ফাঁকেই চকিতে এসে মিলিয়ে গেছে বস্তুটা!
শহীদ বেদী থেকে ফেরার পথে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসের বাকি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, হঠাৎ..। এবার আর ভুল হয়নি, গেল শীতেই তো ডেকে এনেছিলেন, আর হ্যান্ডশেক করতে করতে বলেছিলেন, “কঠিন রাজনৈতিক কলাম বাদ দিয়ে ভূতের গল্পও তো লিখতে পার!“ সাংবাদিক হারামিটা আরো রক্তগরম করা সম্পাদকীয় লিখতে শুরু করল!
দিনশেষে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন! বাগানের শেষ প্রান্তের জঙ্গলটাতে হঠাৎ কী দেখে চোখজোড়া আবার নড়ে উঠে জামান সাহেবের! সেখানে তখন একটি মস্ত হাত মাটি থেকে গজিয়ে উঠে আকাশের কালিতে লিখে চলেছে একটি ভূতের গল্প!
(সমাপ্ত)
....................
বন্ধু
তিন গোয়েন্দা সিরিজের নতুন বইটার শেষের পাতায় এসে পৌঁছেছিল শাহান। শেষ এক্সামটা দিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে আজ টিফিন-বাঁচানো পয়সা দিয়ে বইটা কিনে নিয়েছিল। স্কুলের পাশের লাইব্রেরিটায় বেশ কদিন ধরে বইটিকে ঝুলতে দেখলেও আজকের দিনটির অপেক্ষা ছিল তার।
এক রুদ্ধ্বশ্বাস উত্তেজনায় রীতিমত কাঁপছিল শাহান! শেষটায় সে যা ভাবছে, বা, চাইছে, তাই হবে তো? বইয়ের জগতে পুরো ডুবে গিয়েছিল সে, আশেপাশের জগত নিয়ে কোন হুঁশ ছিল না! কিন্তু হঠাৎই তার চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল কী যেন একটা, আর দৃষ্টিকে কিছুক্ষণের জন্যে পুরো অন্ধকার করে দিল। পরে চোখ সয়ে আসতেই দেখতে পেল, একটা প্রমাণ সাইজের পোকা ঘুরঘুর করছে পুরো ঘরটিতে। এরকম পোকা আগে দেখেছে কিনা মনে করতে পারল না সে। কী অদ্ভুত এর পা’গুলো, আর রয়েছে লেজ ও শুঁড়ের বাহার! গায়ের রংটা চোখ জুড়িয়ে দেয়! কে জানে, কত ধরণের রং মাখানো আছে সেখানে!
বইটা হাতে ধরা অবস্থাতেই এক দৃষ্টিতে চেয়েছিল শাহান তার ঘরের এই নতুন অতিথিটির দিকে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। হঠাৎ পোকাটা সামান্য নড়ে উঠল, আর শাহানের মনে হল, যেন পোকাটা তার দিকেই চেয়ে আছে। কেন জানি, ভীষন ভয় করতে লাগল তার; মনে হল, এখুনি ধেয়ে আসবে তার দিকে, ফুটিয়ে দেবে ধারাল হুল! পোকাটার হাত থেকেই বাঁচতে হয়ত, সে বইটা শিয়রে রেখে দিয়ে বাতিটা নিভিয়ে দিল, আর কাঁথা মুড়ি দিয়ে হাত-পা শক্ত করে শুয়ে রইল। তার কেবলি মনে হচ্ছিল, পোকাটা কাঁথা ভেদ করেও চলে আসতে পারে তার কাছে! তাই সে অনেকটা সময় ঘুমকে ঠেকিয়ে রাখল।
একটা সময় পোকার সাথে লড়াই করছে, এমন স্বপ্ন দেখতে দেখতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল শাহান। অবশ্য ভোরে ঘুম ভাঙলে সে স্বপ্নটির কিছুই মনে রইল না। বরং, গোয়েন্দা কাহিনিটির শেষের পাতাটা মনে পড়তেই শাহান হাত-মুখ না ধুয়েই হাতে তুলে নিতে গেল বইটা, আর সঙ্গে সঙ্গে চোখজোড়া একদম স্থির হয়ে গেল!
একটা পোকা প্রায় শেকড়ের মত করে গেঁথে রয়েছে বইটিতে! পোকাটার চোখদুটো মনে হল চেয়ে রয়েছে তারই দিকে! কি অসম্ভব মায়া সেখানে! হঠাৎ তার মনে হল, পোকাটা হয়ত তাকে আক্রমণ করতে আসেনি, তার বন্ধু হতে এসেছিল!
শাহানের হঠাৎ খুব কান্না পেয়ে গেল। গোয়েন্দা কাহিনিটির শেষ পাতাটা পড়ার কথা আর মনে রইল না তার!
(সমাপ্ত)
…………………………………………………………………………………………………………….
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।