এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • সুভাষজি

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৭ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ বার পঠিত
  • শান এ হিন্দ সুভাষজি দাঁড়িয়ে আছেন। গোটা শহর চারপাশ দিয়ে চলাচল করছে। পাঁচ দিক থেকে রাস্তা আছে। যে কোন  রাস্তা দিয়ে হিন্দুস্থানের  যে কোন প্রান্তে চলে যাওয়া যায়। ফিরেও আসা যেতে পারে। ফিরে আসতে আসতে কাশ্মীর থেকে জাফরান হাতে এক ইনসান চলে এসেছে। সে সুভাষজিকে বলল,“ নেতাজি, কাশ্মীরের লোক আপনার জন্য জাফরান পাঠিয়েছে। ” সুভাষজি হাসলেন মনে হয় কিন্তু তাঁর হাসি দেখা যায়নি। হঠাৎ এমন বিদ্যুৎ চমকের মতো এসে সে হাসি মিলিয়ে গেল যে দেখাই যায়নি। পাথরের মুখ নিয়ে সুভাষজি দাঁড়িয়ে আছেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে। তিনি নন আসলে ঘোড়াই দাঁড়িয়ে , তবে ঘোড়াকে দাঁড় করিয়ে রাখা, ছুট করানো সবই যেহেতু তাঁর আয়ত্তে তাই একথা বলাই যেতে পারে ঘোড়সওয়ার নেতাজি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। আর এক রাস্তা দিয়ে একজন পাঞ্জাবদেশ থেকে এলো। সেখানের মানুষ দেখা গেল এক কৃপাণ পাঠিয়ে দিয়েছে। শহীদ এ আজমের দেশ থেকে আসা কৃপাণ সুভাষজি নিজের কোমরবন্ধে বেঁধে নিলেন। আর এক রাস্তা গেছে মহারাষ্ট্রের দিকে। সে রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে  একজন দেবী ভবাণীর আশীর্বাদধন্য  গেরুয়া ফাগ এনে ছড়িয়ে দিল। শিবাজী  মহারাজের প্রজা, সেখানকার মারাঠা দলিত আর কুনবি চাষীরা ওই ফাগ সুভাষজির জন্য পাঠিয়েছে। দেখা গেল সুভাষজি একবার চোখ মেলে সেই রঙে রাঙিয়ে যাওয়া দেখলেন। তিন নম্বর রাস্তা গিয়েছিল পাখতুনদের দেশে। সেখান থেকে একজন সীমান্ত গান্ধীর দেশের মানুষ নিয়ে আসে এক ধবধবে সাদা কাপড়। খুদা ই খিদমতগাররা এ বিশেষ কাপড় সুভাষজির জন্য পাঠিয়েছে বই আরকিই বা হতে পারে!  চার নম্বর রাস্তাটা সুভাষজি ভালোই চেনেন।  এ পথ সারা বাংলা ঘুরে বারবার তাঁর কাছেই ফিরে ফিরে আসে এ তাঁর বাংলার পথ। সুভাষজির মূর্তিচিহ্নিত ওই বিখ্যাত  মোড়ের আর একটা পথই বাকি থাকে  আর সে বাংলা আসামের বুক চিরে রেঙ্গুন গেছে। সুভাষজির সবচেয়ে প্রিয় ওই পথ । যে পথ দিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ আসার অপেক্ষায় এখনও সুভাষজি ঠায় ঘোড়ার পিঠে   থাকেন। একটা সময় ছিল যখন অনেক মানুষ সুভাষজির ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করত। তাদের কে বোঝাবে প্লেন ক্র্যাশের কথা! কোথায় এক সামান্য এরোপ্লেন আর কোথায় নেতাজি !  আমাদের ছোটবেলায় সেসময়টা আমরাও কিছুটা দেখেছি বটে যখন এরোপ্লেন গুরুত্ব অনেক কম আর নেতাজির গুরুত্ব অনেক বেশি বেশি ছিল। এখানে  এক গোপন কথা আছে যা খুব কম লোকই জানে , মনে রেখেছে আরো অনেক কম লোক।  সুভাষজিই সেই অগ্রগণ্য নেতাজি যিনি ওই পঞ্চম পথ ধরে ধরে পৌঁছে যান রেঙ্গুন। যেখানে এক মকবরায় হিন্দুস্থানের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক দেশপ্রেমিক  শ্রেষ্ঠ বাহাদুর শাহ জাফর শুয়ে আছেন। পঞ্চম পথটি বড়ই বিষণ্ণ  এক সড়ক। নির্জন ও চওড়া ওই সড়ক ধরে যেতে যেতে শেষ মোঘল বাদশাহ সম্পর্কে না হিন্দী না উর্দু  দুয়ে মিলে হিন্দুস্থানী ভাষায় নেতাজি বলছিলেন,“ উনি ছিলেন মানুষের বাদশাহ  আর বাদশাহদের দলে সাচ্চা ইনসান। ” হিন্দুস্থানের শেষ স্বাধীন শাসকের সে  মকবরায় সেই কবে উনিশশো বিয়াল্লিশে , পাঁচ হাজার টাকা নজরানা দিয়েছিলো আজাদ হিন্দ সরকার।
     এভাবে পাঁচ পাঁচটা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তিটা  সব রাস্তার গুস্যা আর কিস্যার আধার হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে । তার কারণ আর কিছুই নয় সেই বিশাল ঘোড়সওয়ারের মূর্তিটা সুভাষজির যে ।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১৭ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বাবর - upal mukhopadhyay
    আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন