এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • লাল রঙ

    Nirmalya Nag লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৭ জুন ২০২৫ | ২২১ বার পঠিত
  • শব্দটা পেয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে এল দাদু। যা ভেবেছিল তাই, লাল গাড়িটার ইঞ্জিন চালু করে ভেতরে বসে আছে অশোক। পিঁইইইই করে হর্ন দিল বার দুই, তারপর দাদুকে দেখে জানলা দিয়ে মাথাটা বার করল সে। হাসি হাসি মুখে বলল, "তাড়াতাড়ি এসো দাদু, তুমি আদর না করলে বেরোতে পারছি না যে।"

    দাদু উত্তর দিল না। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে গাড়িটার সামনে দাঁড়াল। একবার তাকাল হেডলাইট দুটোর দিকে, ঠিক যেন চোখ। এবার দাদুর দৃষ্টি গেল বনেটের দিকে। ইঞ্জিন চালু রয়েছে ভেতরে, বনেটটা কাঁপছে। দাদু শির বার হওয়া দুই রোগা রোগা হাত রাখল তার ওপর, ইঞ্জিনের কাঁপুনি হাত বেয়ে উঠে আসছে দাদুর শরীরে। চোখ বুজে এল তার। একটু আগেই ধুয়ে মুছে ঝকঝকে পরিষ্কার করা হয়েছে গাড়িটা, আস্তে আস্তে হাত বোলাতে লাগল তার গায়ে। কাঁপুনিটা এবার হাত থেকে বুকের দিকে যাবে -- আচমকা থেমে গেল সেটা। 

    চমকে উঠে দাদু চোখ মেলল, তাকাল অশোকের দিকে। বছর ২৫ বয়সের ড্রাইভারটা ইঞ্জিন বন্ধ করে মুচকি মুচকি হাসছে। সোজা হয়ে দাঁড়াল দাদু, হাত তুলে নিল গাড়ি থেকে।
    "ব-বন্ধ করলি কেন?" রাগে প্রায় তোতলা হয়ে গেল দাদু।
    "দিদিমাকে এমন করে আদর করতে বুঝি?" হাসিতে ফেটে পড়ল অশোক। দাদু গাড়ি ছেড়ে পিছন ফিরে এগোল নিজের ঘরের দিকে।
    "দাদু, ও দাদু, শোন শোন, রাগ করলে?... ও দাদু..." অশোকের ডাকে কান না দিয়ে দাদু এগিয়ে চলল দ্রুত পায়ে। খারাপ লাগল অশোকের। নাঃ, ফাজলামিটা বেশি হয়ে গেছে। 

    এক মাথা উষ্কখুষ্ক পাকা চুল, গোঁফদাড়ি চিনেম্যানদের মত দু-এক খাবলা আছে মাত্র। বয়স ৬০ থেকে ৭৫-র মধ্যে কোনও একটা অনির্দিষ্ট জায়গায়। পরণে একটা রংচটা টি-শার্ট আর ঢলঢলে খাকি ফুল প্যান্ট – সেটাও গেঞ্জির দড়ি দিয়ে কোমরে বাঁধা, টি-শার্ট দিয়ে ঢাকা বলে বোঝা যায় না, তবে অশোক জানে। একটা কালো ধুলো-পড়া পুরনো গাড়ির পাশ দিয়ে দাদু ঢুকে গেল নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ হয়ে গল।

    গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল অশোক, একটা সিগারেট ধরাল। দাদুর সংগে তার সম্পর্ক এমনিতে ভালই। হাসি মজা করেই থাকে সে, তবে আজ একটু বেশি হয়ে গেছে। এই গ্যারাজে তার স্যরের গাড়ি আছে আজ কয়েক বছর। দাদু এখানকার দারোয়ান, যদিও তাকে কেউ পাত্তা দেয় না। স্যরের আগে ছিল একটা নীল রঙের গাড়ি, এই লাল গাড়িটা নতুন। আর এটা যবে থেকে এসেছে, দাদুর এই আদরের পাগলামিও শুরু হয়েছে। শুধু ছাড়ার সময়ে নয়, গাড়ি ফিরে এলেও বনেটের ওপর হাত রেখে দাঁড়াবে। অশোক এটাও টের পেয়েছে এ গাড়িতে ময়লা লেগেছে দেখলেই দাদু সবার চোখের আড়ালে সেটা পরিষ্কার করে দেয়, যদিও স্বীকার করে না। আগের গাড়িটাতে করত না, গ্যারাজে থাকা অন্যান্য গাড়িগুলোকেও করে না। এটা লাল রঙের বলেই কি? এ গ্যারাজের ১৬টা গাড়ির মধ্যে আর একটাও লাল নয়। লাল গাড়ির জন্য এত দরদ কেন দাদুর! ড্যাশবোর্ডের ওপর রাখা অশোকের মোবাইল বেজে উঠল। সিগারেট ফেলে তাড়াতাড়ি ফোন ধরল সে -- "এই যে স্যর। এখুনি আসছি।"

    ঘরের ভেতর শুয়ে শুয়ে লাল গাড়িটার বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ পেল দাদু। উঠল না সে, তেলচিটে বিছানায় যেমন চিৎ হয়ে পড়ে ছিল তেমনই থাকল। নিজের পছন্দসই কিছু করা আর এ জীবনে হয়ে উঠল না তার। গাড়িতে একটু হাত রাখে, সেটাও সইল না অশোকের। কারও কিছুই সয় না, কিন্তু তার সবই সয়ে যায়। অশোককে রোজই লাল গাড়িটা ধোয়ামোছা করতে দেখে দাদু। আর যত দেখে ততই রাগ হয়ে যায়। এমন রাগের যে কোনও কারণ নেই সেটা দাদু জানে, রাগ-দুঃখ হাসি-কান্না বাড়ানো কমানোর কোনও রেগুলেটর, বা খোলা-বন্ধ করার সুইচ তো আর নেই যে যেমন খুশি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রথম প্রথম রাগটা অনেক বেশি হত, এখন অবশ্য অনেকটা সামলে নিয়েছে। সে সময়ে দাদুর মনে হত অশোকের কোনও দাবীই নেই লাল গাড়িটার ওপর। একবার তো ভেবেছিল আড়াল থেকে ঢিল ছুঁড়ে মারবে, কিন্তু সাহসে কুলোয়নি। বেকায়দায় লেগে যেতে পারে অশোকের, তা না হলে গাড়িটায় লেগে যেতে পারে, সেটা আরও খারাপ হবে। তা ছাড়া ধরা পড়লে চাকরিটাও চলে যাবার সম্ভাবনা। এই বয়সে আর কোথাও কাজ পাবে না দাদু, এই গ্যারাজই তার সব।

    কিন্তু সত্যিই কি ‘সব’? কিই বা আছে তার এখানে? একটা ন্যাতানো বিছানা, তার কালচে মশারিটার দুটো খুঁট খোলা হয়না, তুলো বের হওয়া তোষক, ময়লা একটা চাদর, ফিতে ছেঁড়া নেয়ারের খাট, তার নিচে রাখা আছে পুরনো ব্যাগে সামান্য কিছু টাকা আর দু-একটা জামা কাপড়, মেঝের এক পাশে ডাঁই করে রাখা পুরনো খবরের কাগজের ওপর আছে স্টিলের থালা গ্লাস আর একটা চিনেমাটির কাপ, এগুলোয় করে সে রোজ দুবেলা খাবার আনে মালিকের ঘর থেকে, বাইরে গ্যারাজের পাশে আছে একটা ভাঙা সোফা যার একটা পাশে এখনো কষ্ট করে বসা যায়। 
    হঠাৎ দাদুর খেয়াল হল এসবের একটা জিনিসও তার নিজের বলা যায় না। সবই পাওয়া কিম্বা আগে অন্য কারোর ব্যবহার করা। তার নিজের কেনা আদৌ কিছু আছে কি? হুঁ, চিরুনিটা, চার টাকা দিয়ে গণেশের দোকান থেকে কিনেছিল। আর কিছু... আর কিছু...

    "কি হল কি দাদু, কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি, শুনতে পাও না?" দরজায় দাঁড়িয়ে মালিকের ছেলে। ২২-২৩ বছর বয়স। টাকা, ব্যাগ আর ফর্দ ধরিয়ে দিল সে। গণেশের দোকানে যেতে হবে।
    বিছানা ছেড়ে উঠতেই হল এবার, সস্তার প্লাস্টিকের চটিটা পায়ে গলিয়ে খেয়াল হল এটাও তার নিজের পয়সায় কেনা। নামেই গ্যারাজের দারোয়ান, আসলে ঘরের খুচরো ফাইফরমাশ খাটার লোক, ভাবল দাদু। 
     
    উপায় নেই, এই বয়সে কেউ কাজ দেবে না। সত্যি কথা বলতে কি দাদু গ্যারাজের কোনও কাজেই আসে না, শরীরে দেয় না। বছর পনের আগে যখন এখানে আসে তখন তবু কিছু কাজে আসত, এখন তো কেবল দিন গোণা। ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে গণেশের দোকানের তাকে সাজানো জিনিসগুলো দেখছিল দাদু। খেয়াল হল চিরুনি, চটি ছাড়াও সাবান, তেল টুথপেস্ট এগুলো তার নিজের কেনা। কোনটারই আয়ু বেশি দিনের নয়, কেবল পায়ের তলার চটিটা ছাড়া। একটা কাপড়ের জুতোও আছে, শীতকালে ব্যবহার করে আর কদাচিৎ দূরে কোথাও যেতে হলে। বেশ কয়েক বছর আগে কেনা, আর বেশি দিন যাবে না। কোন কিছুই তার টেঁকে না, ভাবতে ভাবতে দোকান থেকে ফিরে এল দাদু। গ্যারাজের পাশেই মালিকের বাড়ি, ব্যাগটা সেখানে পৌঁছে দিয়ে ফিরে এল ঘরে।

    ঘর! একে কি ঘর বলে? চারটে দেওয়াল আর মাথার ওপর ছাত থাকলেই কি ঘর হয়? ঘরে মানুষ লাগে, আপনার জন লাগে, হাসি আর কান্না লাগে, আনন্দ দুঃখ শোক ফুর্তি সব লাগে। যেমন ছিল বকুলিয়াতে, তাদের গ্রামে, মুর্শিদাবাদ জেলায়। দাদুর মনে পড়ল তাদের বাড়িতে ছিল খড়ের চাল, বড় উঠোন, উঠোনের এক পাশে তুলসীতলা, অন্যদিকে ঢেঁকিঘর, একটা কাঁঠাল গাছও ছিল, সে গাছে দোলনা লাগানো, তাতে ছোটরা দোলে, মাঝে মাঝে বড়রাও, উঁচু মাটির দেওয়ালের বেড়া, বেড়ার বাইরে একটু দূরেই নদী, পবিত্র গঙ্গা নদী।

    নদীর ঘাটে স্নান করত গ্রামের লোক। বুড়ো দুর্গা পন্ডিত খুব সকালে গঙ্গায় নেমে কোমর জলে দাঁড়িয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ত। বাইরে থেকে আত্মীয়স্বজন কেউ এলে নদীর ধারে তাদের বেড়াতে নিয়ে এসে বেশ গর্ব হত সকলের। বিকেলে খেলা হত নদীর পাশের মাঠে। আর সন্ধ্যের পর বড়রা আড্ডা জমাতো সেখানে। একটু দূরে ছিল একটা শ্মশান। ভক্তিদার বোনকে ওখানে পোড়ানো হয়েছিল। নদীর ধারের একটা বকুল গাছেই ভোর বেলা ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছিল ভক্তিদার বিধবা বোনকে। একটা আমড়া গাছের ডাল ঝুঁকে থাকত জলের দিকে, সে ডাল থেকে ঝাঁপ দিয়ে জলে পড়ত ছেলেরা, দু-একটা মেয়েও। নদীর তীরে সভ্যতা গড়ে ওঠে, দাদুর মনে পড়ল ছোটবেলায় পড়েছিল স্কুলের বইতে। সভ্যতা কাকে বলে দাদু জানে না, বইতে ছিল হয়তো, মনে নেই আজ। স্কুলটাও আর নেই, সেটা...

    "দাদু-উ-উ-উ....." এ ডাক দাদু চেনে, খাবার ডাক। মালিকের বাড়ির কাজের মেয়েটা রান্নাঘরের জানলা থেকে ডাকছে। চানটা আজও হল না, মরুকগে চান। খাবারের ডাক আসতে আজ বেশ দেরি হয়েছে। ঘরের কোণ থেকে থালা আর বাটি তুলে নিয়ে দাদু চলল বাড়ির দিকে।

    একটা খবরের কাগজ পেতে নিজের ঘরে খেতে বসল দাদু। ভাত, কিসের যেন ডাল, আলু-ফুলকপির তরকারি আর কাটা মাছের ঝোল। ভাতের স্তুপের মধ্যে গর্ত করে তার মধ্যে ঝোল ঢালতেই ওপরের কিছু ভাত নিচে গড়িয়ে পড়ল ঝোলের মধ্যে। ব্যাপারটা চেনা লাগল দাদুর। নিচের দিকে একটা ধাক্কা, তাতেই ওপর থেকে খসে পড়ল সব। ভাঙনের মত, পবিত্র গঙ্গা নদীর ভাঙন।

    খাওয়া শেষ করে কালো গাড়িটার বাম্পারে পিঠ দিয়ে বসল দাদু। লাল গাড়িটার জায়গাটা ফাঁকা। আরও অনেকগুলো জায়গাই তাই। গ্যারাজের এই দিকটায় কেবল মাথার ওপর ছাদ, এক দিক দেওয়াল, অন্য তিন দিক খোলা। ষোলটা গাড়ির মধ্যে মাত্র সাতটা রয়েছে এখন। ওই পাশে যে পুরো ঢাকা দেওয়া গ্যারাজের অংশটা আছে, যেটার ভাড়া বেশি, সেটা তো সব সময়েই আবছা অন্ধকারে মোড়া থাকে, চোদ্দটা গাড়ি ধরে ওখানে। কাজের দিনে তার আট-দশটাই বেরিয়ে যায়। অন্ধকারের ভেতর ফাঁকা জায়গা যেন গিলতে আসে দাদুকে। তার চেয়ে বাইরেটাই ভালো – তুলনায় অনেক খোলামেলা, দুটো কদম গাছ, একটা জামরুল গাছও আছে। এখন পৌষ মাস, হালকা ঠান্ডা আছে। এখানে এই সময়ে একটু রোদ আসে, বসলে একটু ঝিমুনি লাগে। লাল গাড়ির ফাঁকা জায়গাটা অন্য দিন বিশ্রী দেখায়। আজকের দিনটা অবশ্য আলাদা। আজ নদীর কথা মনে পড়ছে, ফিরে আসছে অনেক বছর আগের কথা।

    ভাঙন, ভাঙন সব খায়। ঘরবাড়ি, গাছপালা, স্কুল কলেজ, মন্দির মসজিদ, শ্মশানঘাট কবরস্থান, মানুষজন, গরুছাগল, রাস্তাঘাট, সংসার। নদী হল আগুনের মত, কিছুই রাখে না। ভুল হল, আগুন ছাই ফেলে রাখে, নদী আরও নির্মম -- সে রাখে শুধু স্মৃতি। 
     
    কত স্মৃতি। তিন চার জন বন্ধুর সাথে আলপথে ছুটে যাচ্ছে যে বাচ্চাটা, সে দাদু নয়, কারো নাতি। ইস্কুল থেকে ফেরার পথে গাছ থেকে ঢিল ছুঁড়ে কুল পাড়ছে... নদীর ধারে ডাঙ্গুলি খেলছে, ক্লাস টেনে ফেল করে পড়াশোনা ছেড়ে দিল, বটতলায় পুঁটি (ভাল নাম পার্বতী)-কে দেখে শরীরে একটা কাঁপুনি তৈরি হল, বাবার কথায় একটু একটু করে চাষের কাজ শিখতে শুরু করল, জমিজমা ছিল কিছু, একদিন পুঁটি অন্য কারও বৌ হয়ে গেল, তারপর একদিন...

    "পিঁইইইইইইইইইপ......।" চমকে তাকিয়ে দাদু দেখল লাল গাড়িটা ফিরে এসেছে। এত তাড়াতাড়ি ফিরল কেন? সবে তো বিকেল গেল, এখনও অল্প আলো রয়েছে। এমনিতে তো ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা-আটটা হয়। উঠে পড়ল দাদু, গ্যারাজের আলোটা জ্বেলে দিয়ে নিজের ঘরে এল, এখানে অবশ্য জমাট বাঁধা অন্ধকার। তাও দরজাটা ভেজিয়ে দিল সে, আলোটাও জ্বাললো না।

    অশোক দেখল দাদু তার দিকে তাকালোই না, সোজা ঘরে ঢুকে গেল। এখনও মেজাজ গরম নাকি! নাঃ, দাদুর মুড ঠিক করা দরকার। কিছুক্ষণ পরে দাদুর দরজায় ঠুক ঠুক শব্দ। বেরিয়ে এসে দাদু দেখে অশোকের হাতে একটা চা ভর্তি কাঁচের গ্লাস, আর দুটো ছোট কাগজের কাপ।
    "এস দাদু, চা খাওয়া যাক। একা একা খেতে ইচ্ছে করছে না।" দাদু দাঁড়িয়ে রইল সামান্য সময়, বোধ হয় ভাবল চা খাবে কি না, তারপর হাত বাড়াল।
    "বসা যাক।" ভাঙা সোফাটার এক পাশে বসে পড়ল অশোক, তারপর পাশের ফাঁকা জায়গাটা দেখিয়ে ইসারায় দাদুকে বসতে বলল। বসে খুব একটা আরাম অবশ্য নেই। দাদু বসলে কাপে চা ঢেলে দাদুকে দিল অশোক। কাগজে মোড়া কেক করে এগিয়ে দিল। কেকে কামড় দিয়ে দু চুমুক চা খেয়ে দাদু জিজ্ঞাসা করল, "আজ তাড়াতাড়ি ফিরলি যে।"
    "স্যরের বিয়ের নেমন্তন্ন আছে, ফুল ফ্যামিলি। একটু পরে নিয়ে যাব।" চায়ের কাপ হাতে উঠে দাঁড়াল অশোক।
    "উঠলি যে? বললি যে একটু পরে যাবি?"
    "পেছনে লাগছে। খোঁচা আছে একটা।"
    "আমার অসুবিধে হয় না।"
    "তুমি স্পেশাল লোক দাদু..." হাসল অশোক, এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু দেখল, তারপর বলল "এস।"
    "কোথায়?"
    "আরে এসই না।"

    অশোকের পিছন পিছন গিয়ে দাদু একটু আড়ষ্ট হয়ে গেল। পিঁক পিঁক করে চাবি টিপে লাল গাড়িটার দরজা খুলেছে সে। বনেটের ওপর ডান দিকে একটা ধূসর দাগ চোখে পড়ল দাদুর। এর ঠিক পাশে শুরু হচ্ছে একটা লম্বা দাগ – আসলে ডিজাইনের স্টিকার, চলে গেছে পিছনের দরজা পেরিয়ে। বাঁ দিকেও রয়েছে এমন আর একটা স্টিকার। গেঞ্জির প্রান্ত দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষে বনেটের ওপরের দাগটা তুলে দিল দাদু, আশেপাশে ধুলো রয়ে গেল অবশ্য।

    "মোছার কাপড়টা দে তো।" ড্রাইভারের আসনে বসতে যাচ্ছিল অশোক, কথাটা শুনে একটু ভাবল, তারপর দরজার নিচের দিকে রাখা কাপড়টা এগিয়ে দিল। কাপড়টা নিয়ে সেটা ভাল করে দেখল দাদু, অশোকের খেয়াল হল কাপড়টার রঙও লাল। গাড়ির ছাদে রাখা চায়ের কাপ দুটো হাতে নিল অশোক। দাদু ওদিকে মুছে দিয়েছে বনেটের ধুলো। তারপর পরম মমতায় তাকিয়ে আছে সেদিকে। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে কাপড়টা এগিয়ে ধরল দাদু। অশোকের দুহাতে চায়ের কাপ, ইসারায় দরজার নিচের দিকে রাখার জায়গাটা দেখিয়ে দিল। দাদু নিচু হয়ে কাপড়টা রাখছে, অশোক ঘুরে অন্যদিকের দরজায় চলে এল।

    "ওখানেই বস।" থমকে গেল দাদু। খোলা দরজা দিয়ে একবার ভেতর দিকে দেখল, তারপর গুটি গুটি পায়ে গাড়ির সামনে গেল। "তুইই না হয় ওদিকে.... " ততক্ষণে প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েছে অশোক। সেখান থেকেই ফের ইসারা করে ড্রাইভারের আসনেই বসতে বলল। দাদু বুঝল তাকে ওখানেই বসতে হবে। যেখানে বসলে নাকি গাড়ির সব কিছু করা যায়, সেখানেই।
     
    নিজের ঘোলাটে চোখ দুটো দিয়ে গাড়ির চোখের দিকে তাকাল দাদু। এখন অবশ্য চোখে আলো জ্বলছে না, তবু যেন দাদুর দিকেই তাকিয়ে আছে গাড়িটা। একটু আগেই পরিষ্কার করা বনেট যেন লাল ওড়নার মত চোখের একটু ওপরে পাতা রয়েছে। দু চোখের নিচের গ্রিলটা যেন ঠোঁট, স্টিকারটা যেন কপালের পাশে কাটা দাগ...

    দাদুর কাছে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব, লাল গাড়ি আর গাড়ি থাকছে না... মনে পড়ে যাচ্ছে অনেক অনেক পুরনো এক সময়ের কথা... ৩৫-৪০ বছর আগের কথা...
    ...এক নতুন যুবক বসে আছে বিছানায়... তার সামনে লাল শাড়ি আর লাল ওড়নায় ঢাকা এক কিশোরী.... পুঁটি নয়, পুঁটি তার হয়নি, এ পুঁটির মত আর এক জন যে তার হবে... কী যেন নাম ছিল?...

    অশোক দেখল ধীর পদক্ষেপে ড্রাইভারের দরজার কাছে ফিরে এল দাদু। চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে কাগজের কাপটা বাইরে ফেলে দিল সে। দাদুকে ড্রাইভারের আসন দেখিয়ে দিল, "বস।" সামান্য চেষ্টায় দাদু বসে পড়ল, দরজাটাও বন্ধ করল, হাত রাখল স্টিয়ারিং-এর ওপর। 

    ...লাল শাড়ির দুই কাঁধের ওপর হাত রেখেছে যুবক... একটা হাল্কা কাঁপুনি টের পাচ্ছে শরীরে... লাল শাড়ির কাজল পরা দু চোখ বন্ধ হয়ে গেছে... কোথা থেকে শব্দ আসছে মনে হচ্ছে একটা... বুকের মধ্যের ঢিপ ঢিপ শব্দ বোধ হয়... কাঁপুনিটা বাড়ছে... গলা শুকিয়ে আসছে... একটা ঢোঁক গিলল সে...

    "চা-টা তো ঠান্ডা হয়ে গেল।" অশোকের কথায় দাদু তাকাল তার দিকে, কিন্তু দাদুকে এমন ভাবে কখনও দেখেনি অশোক। ঘোলাটে চোখ দুটো যেন জ্যোতি ফিরে পেয়েছে, গাড়ির মধ্যের অন্ধকারেও সেটা টের পেল অশোক। চোখ ফিরিয়ে নিল দাদু, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, কিছু খুঁজছে নাকি?
    "দাদু!"
    "এটা-- এটার চাবি কই?"
    অবাক হল অশোক, তবে কথা না বাড়িয়ে চাবি এগিয়ে দিল সে।
    "চালিয়ে দে।"
    "তুমি নিজেই পারবে।" অশোক বলে দিল কেমন করে ইঞ্জিন চালু করতে হবে। দাদু কাঁপা হাতে চাবি ঘোরাতেই ঘুমন্ত গাড়ি জেগে উঠল। ধ্বক ধ্বক করে উঠল তার চার সিলিণ্ডারের হৃৎপিণ্ড, কাঁপতে লাগল সারা শরীর। আর সেই কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ল দাদুর শরীরে। মেঝেয় রাখা পা, স্টিয়ারিঙে রাখা হাত, আর ড্রাইভারের আসনে থাকা কোমর কেঁপে উঠল থরথর করে। 

    ...তার হাত তখন উঠে এসেছে লাল শাড়ির গালে... হাতের উলটো পিঠ দিয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে কাজল পরা চোখ, কপালের ডান দিকের কাটা দাগ, কান থেকে ঝোলা দুল, লিপস্টিক লাগানো পাতলা ঠোঁট, আর নাকের ডগা যার ওপর এসে পড়েছে কপাল থেকে বা সিঁথি থেকে খসে যাওয়া সিঁদুর... ধীরে ধীরে কাছে এগোচ্ছে মুখ... একের কাঁপুনি সঞ্চারিত হয়েছে অন্যে... বুকের ভেতর আর ঢিপ ঢিপ নয়, দুম দুম শব্দ... যেন ঢোল বাজছে... বুকেই বাজছে কি... দুটি মুখে একে অন্যের উষ্ণ শ্বাস এসে পড়ছে... 

    দুম দুম শব্দটা ফেটে পড়ল ঘরের বন্ধ দরজায়। কেউ দরজায় ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নাম ধরে চিৎকার করে ডাকাডাকি। ছিটকে বিছানা থেকে উঠে পৃথিবীর সমস্ত রাগের আগুন নিয়ে দরজা খুলল যুবক। হাউমাউ করে ঘরে ঢুকল মা। বাইরে সব ছোটাছুটি করছে, কান্নার আওয়াজ আসছে। কী হয়েছে? লাল শাড়ির চোখে মুখে ভয় ঢুকেছে। অন্য একটা কাপড় দিয়ে লাল শাড়িকে ঢেকে দিল মা। শাড়িকে না গায়ের গয়নাকে? হুড়মুড় করে ঘরে এল বাবা। চিৎকার করে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলল। তারপরেই আবার ছুটে চলে গেল। ভাঙন। নদীর পাড় ভাঙছে, আর সেই সংগে আরও অনেক কিছু--

    আবার একটা শব্দ। অশোকের মোবাইল বেজে উঠল। "আসছি স্যর।... দাদু, এবার আমি যাব।"

    দাদুর সাড়া নেই। স্টিয়ারিং-এ হাত, চোখের দৃষ্টি উইন্ডস্ক্রিন ভেদ করে কোথায় চলে গেছে কে জানে। অশোক নিজের দিকের দরজা খুলে বাইরে এল, ড্রাইভারের দরজা খুলে চাবি ঘুরিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করল। ফের ডাকল, "দাদু!" দাদু ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল, কোন দিকে না তাকিয়ে ফিরে চলল নিজের ঘরের দিকে। অশোক বেরিয়ে গেল গাড়ি নিয়ে।

    ঘরের স্থির অন্ধকার তখন তোলপাড় হচ্ছে ভাঙনের তীব্র জলধারায়। মা আর লাল শাড়িকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে যুবকটি দেখল নদী সামনে এসে গেছে, হরিহর কাকার পাকা দোতলা বাড়িটার গায়ে এসে গেছে নদী, কয়েক মিনিটের মধ্যে চোখের সামনে বাড়িটা তলিয়ে গেল। প্রথমে সুপুরি গাছগুলো সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করার ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে নুয়ে পড়ল জলের দিকে, তার পর দোতলার বারান্দার দেওয়ালটা ভেঙ্গে নেমে এল, তার পর বারান্দাটা, দ্রুত ওপর থেকে নিচে খসে পড়ল ছাত, এক তলার ঘরগুলো কাত হয়ে ক্রমশ নেমে গেল জলের মধ্যে, ফোয়ারার মত তীব্র জলের ছাট ভিজিয়ে দিল সবাইকে। মানুষের কান্না, গরু-ছাগলের আর্তনাদের মধ্যে দিয়ে জল ঘুরতে ঘুরতে দ্রুত এগিয়ে আসছে তাদের বাড়ির দিকে। বিস্ফারিত চোখে এতক্ষণ দেখছিল যুবকটি। এবার খেয়াল হল পালাতে হবে, সবাই দৌড়চ্ছে। যুবকটিও দৌড় দিল লাল শাড়ির হাত ধরে, ভিড়ের মধ্যে দ্রুতই হাত ছেড়ে গেল। 

    পরে দেখেছিল তাদের বাড়ি আর নেই, ঢেঁকিঘর, কাঁঠাল গাছ কিছুই নেই। নদীর ঘোলা জল সে জায়গায় খেলা করে বেড়াচ্ছে। আগের রাতের জান্তব চেহারা নদীর আর নেই, তবে সাপের মত জলের ফণা ছোবল দিচ্ছে মাটিকে, আর মাটির ছোট বড় টুকরো খসে খসে পড়ছে জলের মধ্যে। আর যে মুহূর্তে সেই মাটি ধ্বসে যাচ্ছে, নদী কি যেন পৈশাচিক উল্লাসে লাফিয়ে পড়ে তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। মাকে দেখেছিল বুক ফাটিয়ে হাহাকার করতে, বাবা চুপ করে আকাশের শূণ্যতার দিকে তাকিয়েছিল। 

    লাল শাড়ি কোথায় গেল? সে এদিককার মেয়ে নয়, ভাঙন দেখেনি নিশ্চয় আগে। কোথায় গেল সে হাত ছেড়ে যাওয়ার পর? লাল শাড়ির কথা যুবককে কেউ বলতে পারেনি। কেউ না। তারই বৌ, সেই তো জানবে। যে বাড়িটা নেই, যে বাড়িতে নিজের কেউ নেই, পুঁটু ছিল না, লাল শাড়িও রইল না, সে বাড়িতে আর ফেরেনি যুবকটি। নদীর জলের ওপর কচুরিপানার মত ভাসতে ভাসতে এক সময়ে এসে ঠেকেছে এই গ্যারাজে।

    লাল গাড়িটা কখন ফিরল সে রাতে, সেটা আর খেয়াল করেনি দাদু।

    (দেশ পত্রিকা, ২ আগস্ট ২০১৯ সংখ্যা)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৭ জুন ২০২৫ | ২২১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কবিতা  - Suvankar Gain
    আরও পড়ুন
    বাবর - upal mukhopadhyay
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন