এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  ঘুমক্কড়

  • মিজোরামঃ যেখানে পায়ের নিচে মেঘের খেলা

    Nirmalya Nag লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ঘুমক্কড় | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৯ বার পঠিত
  • থেনজল থেকে লাঞ্চ সেরে সাঙ্গাউ পৌঁছতে প্রায় ছ’ ঘন্টা লাগল গাড়িতে। দুপুরের চমৎকার খাওয়া ততক্ষণে পুরো হজম হয়ে গেছে, রাস্তায় একটা চায়ের দোকানও চোখে পড়েনি যে গলা একটু ভিজিয়ে নেওয়া যাবে। অন্ধকার হয়ে গেছে, হেডলাইটের আলোয় ঝকঝকে পিচের রাস্তা ধরে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে নাকা বলল, “স্যার, সব জায়গায় থাকার ভাল বন্দোবস্ত থাকে না। যেখানে থাকবেন, কাছাকাছির মধ্যে সেটাই একমাত্র জায়গা।“ নাকার কথায় বুঝলাম সাঙ্গাউ-এর হোটেলটা আহামরি কিছু হবে না। তবে সেটা যে এমন হবে তা ভাবিনি - ঘরের মেঝের মান্ধাতার আমলের ভিনাইল ফ্লোরিং উঠে গেছে কয়েক জায়গায়, দুটো নড়বড়ে সিঙ্গল খাট, বাথরুমে গিজার আছে তবে কাজ করে না, এমনকি ঘরের দরজাটাও ঠিক মত আটকায় না। পোশাক রাখা আয়না লাগানো আলমারি, প্লাগ পয়েন্ট, টিভি আর ইণ্টারকমের ফোন নিয়ে আর কিছু না হয় নাই বললাম।

    নাকা কুন্ঠিত ভাবে এসে বলল ডিনার রেডি। নাকার পুরো নাম লালরামনাকা হামতে - আমাদের বছর ৪০ বয়সের ট্যুর অপারেটর কাম ড্রাইভার কাম ট্রাবল শুটার। রাজধানী আইজলে চমৎকার থাকার ব্যাবস্থা করেছিল আমাদের। আমরা মানে দুটো পরিবারের ছ’ জন। মিজোরামে ঘোরার ব্যবস্থাপনা যেহেতু আমিই করেছিলাম তাই বাকি পাঁচ জন আমার মুন্ডপাত করছেন -- কেউ সজোরে, কেউ নীরবে।

    ডিনার করতে গিয়ে দেখা গেল হোটেলের খাবারের মান ঘরের সম্পূর্ণ বিপরীত - খুবই সুস্বাদু। যাই হোক, মিজোরামের খাবারের বিষয়ে পরে ফেরা যাবে। ভাল খাবার পেয়ে পাঁচ জনের মুড একটু ভাল হয়েছে। ঘরের মেঝেতে একটা এক্সট্রা গদি পেতে আর গায়ে একটা পুরনো কম্বল জড়িয়ে রাতটুকু কাটিয়ে দিলাম।



    বেরাতে এলে চিরকাল আমার ভোরবেলা ঘুম ভাঙে। আর ঘুম ভাঙলেই হোটেল থেকে বেরিয়ে পরা আমার রুটিন। বেরিয়ে এলাম, কাল রাতে আশপাশটাও ভাল করে দেখা হয়নি। অন্ধকার পুরো কাটেনি এখনও, তাই যেটুকু দেখতে পেলাম তা হল হোটেলটা একটা একতলা বাড়ি, সামনের রাস্তাটা কংক্রিটের, আর সেই রাস্তায় হোটেলের ঠিক উল্টোদিকে একটা বাস স্ট্যান্ডের মত শেড, যেখানে বসার জন্য সিমেন্টের বেঞ্চ রয়েছে। শেডের নিচে দাঁড়িয়ে দেখলাম আকাশ ক্রমশঃ গোলাপী হয়ে উঠছে, আর দেখলাম মেঘ - তবে আকাশে নয়।

    শেডের পাশেই ছোটবড় টিলার ক্রমশঃ নিচে নেমে গেছে, আর তার পরেই খাদ, খাদের ওপারের পাহাড়ও চোখে পড়ছে। আর সেই খাদ ভর্তি হয়ে জমে আছে মেঘ - বাংলার আকাশে যেমন পেঁজা তুলোর মেঘ শরৎ কালে ভেসে বেড়ায়, তেমন মেঘদেরi কেউ যেন নিয়ে এসেছে মিজোরামে, জমাট বাঁধিয়ে রেখে দিয়েছে দুই পাহাড়ের মাঝখানে। কিনারায় দাঁড়ালে মনে হবে পায়ের নিচে খেলা করছে মেঘের দল। মনে পড়ল অনেক বছর আগে সিকিমের এক পাহাড়ের খাদের পাশে এসে দেখেছিলাম পাখির ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে পায়ের নিচ দিয়ে। আসলে সাধারণভাবে যাদের আমরা যেখানে দেখে থাকি, তার ব্যতিক্রম হলে অবাক লাগে। সিকিমে, হিমাচল প্রদেশে বা উত্তরাখন্ডে দেখেছি দুই পাহাড়ের মাঝের মেঘ উপরে উঠে আসে একটু বেলা হলেই। আড়াল করে দেয় দূরের পর্বতের সৌন্দর্য। কিন্তু এখানে তা নয়। আইজলের টুরিস্ট লজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছি দূরে ঠিক একই রকম ভাবে মেঘ জমে আছে, যাকে আমরা প্রথমে কোনও হ্রদ ভেবেছিলাম। আর সাঙ্গাউতে কাছ থেকে দেখে মনে হল যে ওগুলো জমে যাওয়া তুষার যার ওপর দিয়ে হেঁটে দিব্যি ওপারের পাহাড়ে চলে যাওয়া যাবে। 



    সাঙ্গাউ গ্রামটা বেশ বড়, আমরা আছি তার এক পাশে। ডিসেম্বর মাসের শেষ, দু’ দিন পরেই বড়দিন, ক্রিশ্চান প্রধান মিজোরামের সব চেয়ে বড় উৎসব। আমাদের হোটেল থেকে ২০০ মিটার দূরেই একটা চার্চ তৈরি হচ্ছে, আকাশের মৃদু আলোয় ওটা শিলহুট হয়ে আছে, কাজ শেষ না হলেও সেখানে ক্রিশমাস পালন করা হবে। আর সেই চার্চের পিছন দিকে দেখা যাচ্ছে - যদিও বেশ কিছুটা দূরে - একটা পাহাড়, সূর্যের আলো এখনও পড়েনি বলে কালো দেখাচ্ছে।

    “ওইটাই ব্লু মাউন্টেন,” পাশ থেকে বলল নাকা, কখন এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারিনি। সেই ‘নীল পাহাড়’ দেখতেই আমরা আইজল থেকে প্রায় ২৩০ কিমি দূরে সাঙ্গাউতে এসেছি। আরও কিছুক্ষণ পরে সেখানে যাব, তবে পাহাড়ের ওপর যেতে ফোর-হুইল ড্রাইভ গাড়ি লাগবে, তার বন্দোবস্ত নাকা করে রেখেছে। অফ-রোডে যাওয়ার জন্য এই লাগে গাড়ি যার ইঞ্জিন চারটে চাকাতেই সমান শক্তি পাঠায়, সাধারণ গাড়ির মত শুধু সামনের দুটো চাকায় নয়।



    কিছুক্ষণ পরেই সোনালী রঙা রোদে ভরে গেল চারদিক, দূরের সার দেওয়া বাড়িগুলোকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখন। ইতিমধ্যে আমার স্ত্রী এসে যোগ দিয়েছেন হাঁটায়। আমাদের হোটেলটা একটা টিলার ওপরে, হাঁটতে ভালই লাগছিল, আশেপাশের বাড়িতে ছাগল, মুরগি, শুয়োর পুষেছে, একটা কুকুর এসে আলাপ করে গেল, গায়ের রং তার কালো আর খয়েরি মেশানো। দক্ষিণপূর্ব মিজোরামের লংতলাই জেলার এই গ্রামে লোকজন বেশ কষ্ট করে ভাঙা ভাঙা হিন্দি বা ইংরেজি বলেন, ফলে কথাবার্তা চালাতে একটু অসুবিধে হয়। হঠাৎই একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এসে আলাপ করলেন, ভাল হিন্দি বলেন, এককালে সেনাবাহিনীতে ছিলেন কি না; সঙ্গে গেলেন কিছু দূর পর্যন্ত।

    হোটেলে ফিরে ব্রেকফাস্ট সেরে এই বার ব্লু মাউন্টেনের দিকে। ভাল রাস্তা ছেড়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলল খানাখন্দে ভরা পাথুরে পথ দিয়ে। বেলা হয়ে গেছে বেশ, তবু পাশের খাদে মেঘেরা জমে আছে আগের মতই। মাত্র দু’ কিলোমিটার রাস্তা, কিন্তু যেতে প্রায় ১০ মিনিট লাগল পাশের গ্রামে। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ফোর-হুইল ড্রাইভ গাড়ি। কিন্তু যেটা আশা করিনি তা হল, গাড়ি মানে মিনি ট্রাক। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে তার স্টোরেজ এরিয়াতে উঠে পড়লাম সবাই, এমনকি দুই মধ্যবয়সিনীও। সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে নাকাও এল আমাদের সাথে, বলে দিল পাশের দুই দিক আর মাথার উপরের গাছের ডাল সম্পর্কে সাবধান থাকতে। সামান্য পথ এগিয়ে এক জায়গায় প্রবেশমূল্য দিতে হল, তারপরেই শুরু হল অভিযান, একটা ছোটখাটো জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে।

    দু’দিন আগের বৃষ্টির জন্য মাটি এখনও ভিজে, বেশি বৃষ্টি হলে এই ট্রিপ করাই সম্ভব নয়। কাঁচা মাটির ওপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ট্রাক, হেলেদুলে আস্তে আস্তে উঠছে উপরের দিকে। গাছের ডালপালা মাঝে মাঝে আমাদের ছুঁতে চাইছে, মাঝে মাঝে তাদের ছায়ায় সূর্যের আলো গায়ে লাগছে না, একটু পরেই আবার পাতার চাঁদোয়া সরে যাচ্ছে। রাস্তা খুব সংকীর্ণ, শুধু একটা গাড়িই যেতে পারে; আর পাঁচটা পাহাড়ি পথের মত এখানেও কিছুক্ষণ পরপরই রয়েছে হেয়ারপিন বেন্ড, যার দু-তিনটে পেরোতে আমাদের অভিজ্ঞ চালককেও বেগ পেতে হল। উল্টো দিক থেকে আর একটা ট্রাক এলে কী হবে? নাকা অভয় দিল; এই পথে একটাই ট্রাক চলে, আর আমরাই সেটার সওয়ার। ঝাঁকুনিতে হাত-পা খুলে যাওয়ার জোগাড়, সকালের ব্রেকফাস্ট হজম হয়ে গেল। আর আমাদের মিনিট কুড়ির যাত্রা যখন হঠাৎই শেষ হয়ে গেল; দেখলাম আমরা একটা মোটামুটি সমতল জায়গায় এসে পৌঁছেছি। আমাদের ট্রাক যেখানে আমাদের নামাল সেখানে একটা ছোট বাড়ি - যার গায়ে লেখা ‘ফার পাক ফরেস্ট রেস্ট হাউস, ফংপুই’। ব্লু মাউণ্টেনেরই স্থানীয় নাম ফংপুই (বাংলায় যার অর্থ হতে পারে চমৎকার ঘাসজমি), মিজোরামের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, সমুদ্রতল থেকে ২১৫৭ মিটার উঁচু। ফংপুই একটা ন্যাশনাল পার্কও বটে। ‘ফার পাক’ জায়গাটা আসলে ওই জঙ্গলের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা জমি। আমরা অবশ্য পাহাড়ের চুড়ায় নয়, থেমেছি মাঝামাঝি একটা জায়গায়। শৃঙ্গে পৌঁছতে ঘন্টা দুই ট্রেক করতে হবে, দুঃখের বিষয় আমাদের হাতে সেই সময় নেই।



    গাড়ি পিছনে রেখে আমরা শুকনো ঘাসে ঢাকা মেঠো পথ দিয়ে এগিয়ে চললাম, সামনে সামান্য দূরে একটা বিরাট গাছ, যার নিচ থেকে নাকা আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কাছে গিয়ে দেখলাম কিনারায় এসে গেছি, সামনে গভীর খাদ সোজা নেমে গেছে নিচের দিকে, আর তার ওপারে নীলাভ সবুজ পাহাড়ের সারি - ডাইনে, বাঁয়ে, সামনে যতদূর দৃষ্টি যায়। শৃঙ্খলাপরায়ন সেনাবাহিনীর মত তারা যেন অপেক্ষা করছে আদেশের অপেক্ষায়। এইবার বোঝা গেল কেন এর নাম ব্লু মাউন্টেন। মাথার ওপরে ঝকঝকে নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে বাংলার শরৎ কালের মত কয়েক টুকরো সাদা মেঘ, যদিও এখন ডিসেম্বর মাস। সামনে পাহাড়ের কিনারায় একটা প্রশস্ত পাথরের চাতাল, তার পাশেই একটা লোহার বেঞ্চ। চাতালে বা বেঞ্চে বসে সামনের পাহাড়ের শোভা দেখতে দেখতে কাটিয়ে দেওয়া যায় দীর্ঘ সময়। বাঁ দিকে আমাদের পাহাড়ের একটা অংশে কিছুটা নিচে চোখে পড়ল একটা গর্ত, সেখানে নাকি পাহাড়ি ছাগলদের বাস। কী ভাবে যে তারা ওইখানে পৌঁছায় কে জানে। সামনের ওই পাহাড়ের সারির মধ্যেই কোথাও রয়েছে আন্তর্জাতিক সীমানা। নবনীতা দেবসেন তাঁর ‘ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহানে’ বইতে জানিয়েছিলেন কী ভাবে ট্রাকে চড়ে তিনি অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং গিয়েছিলেন, যেটা চিন সীমান্তের গায়ে। আর আমরা একই ভাবে এলাম আর এক দেশের সীমানায় – মায়ানমার যাকে এককালে বর্মা বলে ডাকা হত।

    ফংপুই ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে রডোডেনড্রন, নানা রকম বাঁশ আর জংলী অর্কিড, নানারকম পাখি আর পশুও আছে, আমরা ফার পাকে অবশ্য তেমন কিছু দেখতে পাইনি। ফংপুইতে আসা যায় নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।

    নামার পথে আবার ওই মিনি ট্রাক, এবার চোখে পড়ল চেরি ফুলের গাছ। হালকা গোলাপী রঙের ফুলে ভরা গাছেরা নীল আকাশের পশ্চাতপটে হালকা হাওয়ায় কাঁপছে তিরতির করে। আশ্চর্যের ব্যাপার ওঠার সময়ে এদের খেয়ালই করিনি। চেরি ফুল উত্তরপূর্বের অন্যান্য রাজ্যেও দেখা যায়।



    দুপুরে খাওয়ার পর সাঙ্গাউ-এর হোটেলে টাকা দেওয়ার সময়ে জানা গেল এই মাসেই ওনাদের লিজ শেষ হবে (এই জন্যই মনে হোটেলের ওই অবস্থা), জানুয়ারিতে অন্য কেউ দায়িত্ব নেবে। দুই মাঝবয়সী মহিলা আর একজন তরুণী চালাচ্ছিলেন এই হোটেল; তাঁদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ফিরে চললাম মিজোরামের রাজধানীর উদ্দেশ্যে।

    এবার মিজোরামের ইতিহাস একটু জেনে নেওয়া যাক। বলে রাখা ভাল এই ইতিহাসের সমস্ত তথ্যই রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া। উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য অনেক উপজাতির মতো মিজোদেরও উৎপত্তিও রহস্যে ঘেরা। মনে করা হয় যে খ্রিস্টপূর্ব ২১০ অব্দে চিনে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন অনেকেই সে দেশ ছেড়ে চলে যায়, আর তাদেরই একটা অংশ পরিস্থিতির চাপে প্রথমে বর্মা আর পরে ভারতে চলে আসে। ১৮৯৫ সালে মিজো হিলস আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসেবে ঘোষিত হয়। স্বাধীনতার আগে ভারতের গণপরিষদ সংখ্যালঘু ও উপজাতিদের সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে। এর অধীনে একটি সাব-কমিটি তৈরি হয় উত্তর-পূর্বের উপজাতি বিষয়ক বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। এর পরামর্শ মত সরকার কিছুটা স্বায়ত্তশাসন দিলেও তা মিজোদের খুশি করতে পারেনি। এই হতাশা আর ১৯৫৯ সালের দুর্ভিক্ষজনিত সমস্যা জন্ম দেয় সহিংস আন্দোলনের, যার লক্ষ্য ছিল মিজোদের জন্য সার্বভৌম ভূমি প্রতিষ্ঠা। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই ১৯৭১ সালে  মিজো হিলসকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার প্রস্তাব দেয়। ১৯৮৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মিজোরাম রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয়।

    আইজল থেকে সাঙ্গাউ আসার সময়ে আমরা আরও দু-তিনটে জায়গা দেখেছি, সেগুলোর কথা এইবার বলে দিই। ‘লিয়ানফুঙ্গা বুং’ হল মিজোরামের সব চেয়ে বড় বট গাছ, সাতিক অঞ্চলের একজন এই গাছ লাগিয়েছিলেন তাঁর বাবার স্মৃতিতে, দুই দশকেরও বেশি আগে। আজ সেই গাছের উচ্চতা প্রায় ৭৩ ফুট আর গুঁড়ির বেড় ১২১ ফুট। ছায়া ঘেরা জায়গাটা খুব সুন্দর, একটা কংক্রিটের নৌকা এমন ভাবে তৈরি যে তাতে বসলে মনে হয় পাহাড়ের খাদের ওপর শূণ্যে ঝুলে আছি। আর দেখলাম কর্কট ক্রান্তি রেখা। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক রোডের ধারে একটা চমৎকার স্থাপত্যের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে এই রেখাকে। উত্তরপূর্বাঞ্চলে মিজোরাম আর ত্রিপুরার ওপর দিয়ে গেছে কর্কট ক্রান্তি রেখা। তুইপুই বলে একটা প্রায় সমতল জায়গায় দেখা হয়ে গেল একটা শান্ত নদী আর তার মধ্যে থাকা এক ঝাঁক মাছের সঙ্গে। এদের খেতে দেওয়ার জন্য সোয়া চাংক্স বিক্রি হচ্ছে পাশেই , আমরাও কিনে জলে ফেললাম, আর গারা (Gara) শ্রেণীভুক্ত সেই মাছেরা - দেখতে অনেকটা মাগুরের মত - কাড়াকাড়ি করে খেয়ে নিল। কৃত্রিমভাবে কিছু করা হয়নি বলে এখানকার একটা রুক্ষ সৌন্দর্য আছে। এই নদীর ওপরের সরু ব্রিজ পেরিয়ে আমরা ঢুকে গিয়েছিলাম জঙ্গলে, এর পরে এসেছিল সাঙ্গাউ, রাজধানী থেকে প্রায় সাত ঘন্টার পথ, চারটে জেলা পেরিয়ে।



    নাকার প্রস্তাব ছিল সাঙ্গাউ থেকে ফেরার সময়ে আমরা বাক্তায়াং গ্রামে যাই, পৃথিবীর সব চেয়ে বড় পরিবার দেখে আসি। জিওনা চানা, এই পরিবারের প্রধান, মারা যান ২০২১ সালে; রেখে যান ৩৮ স্ত্রী, ৮৯ জন সন্তান আর ৩৬ জন নাতিনাতনিকে। বহুবিবাহ ওনার ধর্মগোষ্টীতে চালু। যাই হোক, নাকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আমরা ফিরে এলাম থেনজলে, যে হোটেলে লাঞ্চ করেছিলাম দু’দিন আগে। জায়গাটা ভাল লেগেছিল। কাঠের ঘর, ঢুকলেই পাইনের গন্ধ; অন্যান্য ব্যাবস্থাও বেশ ভাল। 

    ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা দেখলাম দিলপুই লেক, বেশি বড় না হলেও সুন্দর করে সাজানো, বেশ কিছু অ্যাকটিভিটির বন্দোবস্ত আছে। এছাড়াও ভ্যানতং ফলস, যেটা রাজ্যের সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাত। দেখলাম দূর থেকে, খুব একটা পছন্দ হয়নি বলে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। তবে তুইরিহিয়াও জলপ্রপাত বেশ অন্যরকম। ‘প্রিজনারস অফ দ্য সান’ গল্পে টিনটিন দড়ি ছিঁড়ে জলপ্রপাতের পিছনে চলে গিয়েছিল মনে আছে তো? তুইরিহিইয়াও সেই রকম, তবে প্রায় বিনা কসরতেই এই পাতলা জলের দেওয়ালের পিছনে একটা গুহা মতো জায়গায় চলে যাওয়া যায়, গা প্রায় না ভিজিয়েই।



    প্রাচীন শিকারী মিজোদের গ্রামীন জীবনযাত্রা কেমন ছিল তাই নিয়ে মিজোরামে একাধিক গ্রাম সাজানো আছে, তবে সঙ্গে নাকার মত গাইড না থাকলে কিছু বোঝার উপায় নেই। টুরিস্টদের জন্য তথ্য দেওয়া কোনও বোর্ড নেই। এর আগে যে বট গাছের কথা বললাম সেখানে যে বোর্ড ছিল সেটা মিজো ভাষায় লেখা, আর দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সবচেয়ে বড় সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াই এম এ-র তরফ থেকে।

    ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফিরে এলাম আইজলে, পরের দিনই ক্রিশমাস। নাকার বাড়ি থেকে ঘন ঘন ফোন আসছে, সন্ধ্যা থেকেই নানা অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। আর নাকা আমাদের নিয়ে একের পর এক নামী বেকারি শপে ঘুরছে, কোথাও কেক নেই, সব দোকানের শো-কেস খালি। শেষ পর্যন্ত একটা অ-নামী দোকান থেকেই কেক নিতে হল। এখানে পশ্চিম বাংলার মত প্যাক করা কেক বড়দিনের এক মাস আগে থেকে পাওয়া যায় না, প্রায় সবই হোম-মেড। রোজই তৈরি হয়, ফলে সব সময়েই ফ্রেশ পাওয়া যায়। বছরের যে সময়েই আপনি যান না কেন, ওখানকার কেকের স্বাদ নিতে ভুলবেন না যেন, বিশেষ করে জোট (Zote) বেকারির। ওখান থেকে পরে আমরা কেক পেয়েছিলাম; বাড়িও নিয়ে এসেছিলাম। আইজলে আমরা উঠেছিলাম সরকারি চালতলাং টুরিস্ট লজে, সেখানে আমাদের নামিয়ে দিয়ে নাকা ফিরে গেল, আর তার পরেই আমরা একটা জোর ধাক্কা খেলাম।

    রিসেপশন থেকে জানাল ক্রিসমাশ উপলক্ষে খাবার সময়ের একটু পরিবর্তন করা হয়েছে, সেই নতুন নিয়ম জারি থাকবে তিন দিন। লাঞ্চ করতে হবে ১১টার সময়ে আর ডিনারের সময় বিকেল পাঁচটা; আইটেম নির্দিষ্ট করা আছে, তার বাইরে যাওয়া যাবে না। অবশ্য আমরা ঘরেও খেতে পারি, ওরা দিয়ে যাবে। বড়দিনের সময়ে দোকানপাট প্রায় কিছুই খোলা থাকবে না, তাই বাইরে খাওয়ার প্রশ্ন নেই। বাইরে থেকে আনানো পিজ্জা দিয়ে ডিনার করে নেওয়া হল। পরের দিন হালকা ব্রেকফাস্ট আর তাড়াতাড়ি লাঞ্চ সেরে টুরিস্ট লজ থেকে বেরিয়ে পরলাম সবাই মিলে। আজ নাকা চার্চে থাকবে সপরিবারে; আর আমরা পায়ে হেঁটে পরিকল্পনাহীন ভ্রমন করব আইজল শহরে।



    সমুদ্রতল থেকে ১১৩২ মিটার উঁচুতে মিজোরামের রাজধানী। বেশ বড় ছড়ানো শহর, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, গাড়িতে গাড়িতে ছয়লাপ, তবে হর্নের বিকট শব্দ নেই অন্যান্য জায়গার মত। এই শহরে হর্ন বাজানোটা একদমই ভাল চোখে দেখা হয় না। অন্যান্য পাহাড়ি শহরের মত গাড়ি চলে মোটামুটি নিয়ম মেনেই, তবে ট্রাফিক জ্যাম হয় না বললে ভুল হবে। চালতালাং টুরিস্ট লজ থেকে বেরিয়ে মিনিট তিনেক হেঁটে গেলেই একটা চার্চ, মহিলা-পুরুষ-বাচ্চাদের সুন্দর পোশাকে দেখা যাচ্ছে, সন্ধ্যাবেলা চার্চের বাইরে অনুষ্ঠান হবে, তার জন্য ছোট স্টেজ তৈরি হচ্ছে। তার পাশ দিয়ে গিয়ে বড় রাস্তায় পড়লাম আমরা। প্রায় ফাঁকা পথ, দোকান টোকান সব বন্ধ, দু-একটা গাড়ি আর স্কুটার-বাইক যাচ্ছে যার সওয়ার হল তরুণ-তরুণীরা, আমাদের এখানে দুর্গাপুজোর সময়ে যেমন দেখা যায় আর কি। দু-একটা বাইক বা গাড়ি এমন ভাবে গেল, মনে হল ফরমুলা ওয়ান রেসিং এর জন্য অভ্যাস করছে। দু-একটা ছোট দোকান অবশ্য খোলা, তবে সেখানে কেবল বিস্কুট, চিপস, সফট ড্রিংক ইত্যাদি পাওয়া যায়। হেঁটে আরও কিছুটা এগিয়ে শহরের অন্য একটা দিকের সুন্দর ভিউ পাওয়া গেল। ফুটপাথে বসে কয়েকজন ফুচকা বিক্রি করছে, বিক্রেতাদের দেখে বিহার বা উত্তর প্রদেশের লোক মনে হল। একটা দেওয়ালে চমৎকার ওয়াল আর্ট গ্রাফিটি এঁকে রেখেছে কেউ, তার সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে ছেলেমেয়েরা। আমাদের হোটেলের কাছে একটা কবরস্থানও আছে, ক্রিসমাসের সময় বলে অনেকেই আসল বা নকল ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে সেই জায়গা যেখানে তাদের প্রিয়জন ঘুমিয়ে আছে। কালকের আনা কেক-পেস্ট্রি আর ওই ছোট দোকান থেকে কেনা সফট ড্রিংক আর বিস্কুট দিয়ে তোফা জলযোগ হল সন্ধ্যাবেলা; সেটাই আজকের ডিনার।

    খাবারের অসুবিধের জন্য নাকা বারবার মাফ চাইল, যেন এর জন্য ও নিজেই দায়ী। এর পর আমাদের ডিনার আর লাঞ্চের বন্দোবস্ত করল আইজলের একটা ভাল হোটেলে আর ক্লাবে, আগে থেকে খবরাখবর নিয়ে রেখে।

    ছোট একটা ফলস দেখে আমরা গেলাম রেইক তলাং-এর উদ্দেশ্যে; আইজল থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় ভাষায় তলাং মানে চূড়া বা শৃঙ্গ। এখানেও টঙে ওঠার জন্য আলাদা গাড়ি নিতে হল, যদিও রাস্তা পাকা। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ছোট কাঠের রেস্টুরেন্টে চা খাচ্ছি, আলাপ হল কলকাতার বেহালা অঞ্চলের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনি ওপরে যাননি, পরিবারের অন্যরা গেছে। ওপরে উঠে যেখানে আমরা গাড়ি থেকে নামলাম, সেখান থেকে একদিকে রেলিং দেওয়া চওড়া কংক্রিটের চাতাল; আর অন্যদিক ওপরে উঠে গেছে পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা। আমরা উঠে গেলাম সেই রাস্তা ধরে, দেখলাম মিজো হিলসের সৌন্দর্য, শুনলাম এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত নাকি অসাধারণ; তবে আমরা যখন গেছি তখন দুপুরের রোদ জ্বলজ্বল করছে।

    সূর্যোদয় তো আমরা টুরিস্ট লজের বারান্দা থেকেই চমৎকার দেখতে পাচ্ছি রোজই, অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখলাম পরের দিন। তবে সে কথা আর একটু পরে, আপাতত চলুন লালসাভুঙ্গা পার্কে। এখানকার বিশেষত্ব হল একটা সুইং ব্রিজ। কাঠের পাটাতন আর স্টিলের দড়ি দিয়ে বানানো প্রায় ১০০ মিটার লম্বা এই পুল দুলতে থাকে কেউ হেঁটে গেল, সেটাই থ্রিল,সেটাই মজা। পুলটা বাঁধা আছে দু’ দিকের টাওয়ারের সঙ্গে। পুল পেরিয়ে ওপারে গেলেই ভিউ পয়েন্ট, পাখির চোখের দৃষ্টিতে ধরা পরবে আইজল শহরের একাংশ আর গাছে ঢাকা পাহাড়ের সারি। শেডের নিচে বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় বেশ কিছুটা সময়।



    ঠিক একইভাবে সময় কাটিয়ে দেওয়া যায় সলোমনস টেম্পলে। নামে টেম্পল হলেও আসলে এটা ক্রিশ্চিয়ান চার্চ, আর তবে মূলধারার চার্চগুলোর সঙ্গে এর যোগ নেই। আইজল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিশাল জায়গা নিয়ে এই দুধসাদা চার্চ ভবন, যার ভেতরে বসতে পারে তিন হাজার লোক, আর বাইরের চত্বর ধরলে সংখ্যাটা আরও কয়েক হাজার। মিজো ভাষায় ‘কোহরান থিয়াংলিম’ বা ‘পবিত্র চার্চ’ প্রতিষ্ঠা করতে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন ডক্টর এল বি সাইলো ১৯৯১ সালে, তারপর প্রায় ২০ বছর ধরে ধীরে ধীরে এই চার্চ গড়ে উঠেছে। ২০২৪-এর ২৭ ডিসেম্বর আমরা এই চার্চে ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই সদস্যদের ভিড় বাড়তে লাগল। একজন স্বেচ্ছাসেবক, দেখে মনে হল কলেজ পড়ুয়া হবে, খুব নম্রভাবে আমাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। উত্তর পেয়ে জানালেন আমরা যতক্ষণ খুশি থাকতে পারি, এমনকি ওনাদের যে অনুষ্ঠান এখনই শুরু হবে তাতেও যোগ দিতে পারি। এত গাড়ি আর মানুষ এসে গেল আমরা টুরিস্টরা বেরিয়ে যেতে বাধ্য হলাম। ওখান থেকে নাকাকে খুঁজে পেতে কিঞ্চিৎ বেগ পেতে হয়েছিল।



    নাকা খুব কথা বলে; মিজোরামের নানা দ্রষ্টব্য জিনিস নিয়ে, নিজেকে নিয়েও। “সে কহে বিস্তর মিছা, যে কহে বিস্তর” -- এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে ওর অনেক কথাই এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বার করে দিয়েছি। মুথি তলাং নিয়েও বলেছিল অনেক কিছু। সেখানে পৌঁছে দেখি একটা টিলার ওপরে একটা ছোট রেস্টুরেন্ট আর তার থেকে সামান্য উঁচুতে একটা বড় ক্রশ, বসার জায়গাও রয়েছে। সামনের পাহাড়ে আইজলের একাংশ দেখা যাচ্ছে, তবে আহামরি কিছু নয়। নাকা বলল, “আর একটু অপেক্ষা করুন।”সূর্য ডুবতে লাগল আর আমরা ক্রমশ কথা হারিয়ে ফেললাম। আকাশ কমলা রং ধারন করেছে, আর শহরে আলো জ্বলে উঠেছে - যেন অজস্র হীরের কুচি ছড়িয়ে দিয়েছে কেউ পাহাড়ের গায়ে। আমরা আরও কিছুক্ষণ থাকতে চাইছিলাম, নাকা ফিসফিস করে বলল, “এর পর নামতে অসুবিধে হবে, সিঁড়িটা সরু।”টিলা থেকে নেমে আমরা এলাম রেস্টুরেন্টের সামনে। থাকলাম আরও অনেকক্ষণ, মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে রইলাম আকাশের দিকে। এর পর নাকা আর একটা জায়গায় যাকে আইজল ভিউ পয়েন্ট বলে, রাতের আলো ঝলমল শহর দেখা যাচ্ছে সেখানকার রেস্টুরেন্ট থেকে, তবে বড় ভিড়। মুথির সূর্যাস্তের নেশা কেটে যাওয়ার ভয়ে সেখানে বেশিক্ষণ থাকলাম না।



    পরের দিন ফেরা; আমাদের ইনার লাইন পারমিট (আই এল পি) শেষ হয়ে গেছে আগের দিন। নাকা বলেই দিয়েছিল এক দিনের জন্য মেয়াদ বাড়াবার প্রয়জন নেই। এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে চিড়িয়াখানা যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু রাস্তায় জ্যাম। রিস্ক নেওয়া গেল না, আইজল থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে লুংলেই এয়ারপোর্ট। রাস্তায় দেখলাম তৈরি হচ্ছে সাইরাং রেল স্টেশন, যেটি ২০২৫-এর সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী।

    এয়ারপোর্টে পৌঁছে প্রাপ্য টাকা দিলাম নাকাকে, এর আগে এক পয়সাও দিতে পারিনি, কলকাতা থেকে বুক করার সময়ে অ্যাডভান্স হিসেবেও নয়। “ওইভাবে কাজ হয় না এখানে,” সবিনয়ে জানিয়েছিল নাকা। এক সপ্তাহ বলতে গেলে যার তত্ত্বাবধানে ছিলাম, এবার বিদায় নিলাম তার কাছ থেকে। এয়ারপোর্টে ঢুকে যাওয়ার আগে নাকা বলল, “বাইরে আছি; সিকিউরিটি চেক হয়ে গেলে আমায় জানাবেন। তারপর আমি চলে যাব।“ জানিয়ে দিলাম সব মিটলে। সময় হলে বেরিয়ে এলাম পাহাড় আর গাছে ঘেরা এয়ারসাইডে। সাত দিনে আগে মেঘলা আকাশের নিচে যেখানে নেমেছিলাম দুশ্চিন্তা নিয়ে, সেখান থেকে ফিরে চললাম এক মনমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা নিয়ে।

    (এই লেখা কিঞ্চিৎ সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ‘আজকাল সফর’ পত্রিকার নভেম্বর ২০২৫ সংখ্যায়।)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন