এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে

  • হিমাচলের ইতি উতি - ৫

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১০৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কথা ছিল ৬ তারিখে আমরা সকাল ৮টায় প্রাতরাশ করে ছিটকুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবো। আজ আমাদের সারথী স্থানীয় ছেলে আমন। ছিটকুলের রাস্তায় ওঁকে যেতে হবে না শুনে ইন্দরজিত সাহেব ভারী খুশী হয়েছিলেন। ‘বঅহোওত খারাব রাস্তা হ্যায় ম্যাডামজি’। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল আমরা সাড়ে সাতটা নাগাদ তৈরী হয়ে গেলেও প্রাতরাশের নামোনিশানা আটটাতেও নেই। না-বাবু এক্কেরে ঝেড়ে না বলে দিলেন। 

    আগের দিন রাতেই ললিতকে যেহেতু বলে রেখেছিলাম,  তাঁকেই ফোন করা গেল। তিনি হন্তদন্ত হয়ে এসে তাড়াতাড়ি হাত লাগালেন। খেয়েদেয়ে মোটামুটি ৮.৪০ নাগাদ বেরিয়ে পড়া গেল। আমন অতি স্বল্পভাষী, নিতান্ত অল্পবয়সী একটি ছেলে। হোটেলের সামনের ছোট্ট ঢাল অক্লেশেই তুলে ফেলল আমাদের শুদ্ধই। যাকগে বাবা আমরা তাহলে অতটাও ভারী নই। রওলা ক্লিফ আপাতত বাদ থাক ওদিকে একটার মধ্যে না পৌঁছালে ছিটকুলের পরের পুলিশ চৌকিতে এন্ট্রি নেবে না। তাহলে ছিটকুল পেরিয়ে পরের ভিউ পয়েন্টে যাওয়া যাবে না। 

    রেকংপিও ছাড়িয়ে গাড়ি এগোয় NH505a হয়ে NH5 ধরা। রাস্তা ক্রমশই ভাঙাচোরা হতে শুরু করল। করচাম ড্যামের ওখানে বসপা এসে মিলেছে শতদ্রুর সাথে। এখান থেকে আমরা হাইওয়ে ছেড়ে ঘুরে গেলাম সাংলা ছিটকুল রোডে। রাস্তা আরো খারাপ হল। এক জায়গায় রাস্তা আটকে পাথর সরানোর কাজ চলছে। দুপাশে বেশ কিছু গাড়ি জমা হলে কাজ থামিয়ে এক এক করে ছাড়ে গাড়ি।  আমনের সাথে টুকটাক গল্প করতে করতেই আমরা পোঁছাই সাংলা।  একটা ভিউ পয়েন্টে থেমে কিছুক্ষণ ছবি তোলা হয়। 


    সাংলা থেকে 

    সাংলায় একদম রাস্তার ধার ঘেঁষে একটা চমৎকার হোটেল দেখি, হোটেল দেবভূমি। চমৎকার মানে হোটেলের অবস্থান ভারী সুন্দর জায়গায়। রাস্তার বাঁকের কোণায় অবস্থিত হোটেলের ওপাশের ঘর বারান্দা থেকে সবুজের নানা শেডে ঢাকা পাহাড়ের সারি আর অনেকটা নীচে দ্রুত প্রবাহিনী বসপা নদী। আমরা বলাবলি করি এখানে এসে একবার থাকতে হবে দু চারদিন। তা থাকলে কামরু ফোর্ট দেখা যাবে। ওটা রাস্তা থেকে বেশ অনেকটাই উঁচুতে। অবশ্য সিঁড়ি আছে শুনেছি। 


    নাম না জানা সুন্দর

    কামরু ফোর্ট থেকে সাংলা উপত্যকার অসাধারণ প্যানোরামিক ভিউ পাওয়া যায়।  কাছাকাছিই কোথাও একটা টিবেটান উড ক্রাফট সেন্টারও আছে, সেটাও দেখতে চাই। সাংলার পরে রকছামের কাছাকাছি আরো এক জায়গায় দাঁড়ানো হয়। রকছামে এসেও বসপার ধারে দুদিন থেকে যেতে হবে।  ছিটকুলে আজকাল শুধু পর্যটকই নয়,  টিকটকার আর ভ্লগারদেরও ভীড় বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে রকছাম এখনো সেই শান্ত সুন্দর বসতিই রয়ে গেছে। ট্রাডিশানাল হিমাচলি কাঠের বাড়ি, স্লেটপাথরের ছাদ।  হোটেল হোমস্টের কমতি নেই অবশ্য।  

    এদিকে ৬ তারিখ সকালে বেরোবার আগে ম্যাপ না দেখেই গুগলকাকুকে ইন্দো তিব্বত রোড আর ছিটকুলের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বিশ্বপাকা এআই বলল ছিটকুল হল গিয়ে তিব্বত সীমান্তের শেষ গ্রাম, ওর পরে শিপকি-লা পেরিয়ে তিব্বত যাবার রাস্তা। স্বাধীনতার  পরে  প্রথমবার এই বছর থেকে শিপকি-লা সাধারণ ভারতীয় পর্যটকের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এবারে যাওয়া তো হবে না, তবে পড়ে একটু উত্তেজিত হয়েছিলাম। প্রাচীন বাণিজ্যপথের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এই ইন্দো তিব্বত রোড। 

    আমনকে শিপকি-লা কদ্দুর জিজ্ঞাসা করতেই ফ্যাক করে হেসে ফেলল। ‘সে এদিকে কোথায়? কাল তোমরা নাকো গিয়েছিলে না? ওই নাকোর আগে সঙ্গম ব্রিজ থেকে শিপকি-লা'র রাস্তা যায়।’ যাচ্চলে! পরে ম্যাপ দেখে বুঝলাম ইন্দো তিব্বত রোড বা হিমালয়ান তিব্বত রোড শিপকি-লা হয়ে তিব্বতে ঢুকেছে বটে। ভারতের মধ্যের অংশটুকু এখন NH 5. সাংলা ছিটকুল রোড তো NH 5 ছেড়ে বেরিয়ে  ঘুরে গেছে। ইন্দো টিবেট রোড থেকে ডিট্যুর বলা যায়। ছিটকুল থেকে চারাং ঘাটি হয়ে খিমকুল পাস তিব্বতের সাথে যুক্ত। 


    ছিটকুলে পাবলিক টয়লেট - বাণীটা খেয়াল করবেন 

    যাঁরা কিন্নর কৈলাশ পরিক্রমা করেন তাঁরা কল্পার কাছে তাংলিং গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে চারাং-লা পেরিয়ে ছিটকুল দিয়ে নামেন। মাঝে বিপদসঙ্কুল ক্রিভাস,  গ্লেসিয়ার পেরোতে হয়। রকছামের উচ্চতা ১০০০০ ফিট। ছিটকুল প্রায়  ১২০০ফিট উঁচু। ছিটকুলে ঢোকার পথেই চাপ চাপ বরফ দুইপাশে, বেশ খানিকটা নীচে বসপা নদী হইহই করে চলেছে সাংলার দিকে। তারও ওপারে জমাট বরফ। পাইন আর দেবদারুর গোড়ায়,  কিছু পাতায়ও থুপথুপে বরফ। বলা হয় ছিটকুলের আকাশ বাতাস নাকি ভারতের মধ্যে  সবচেয়ে পরিস্কার, সম্পূর্ণ দুষণমুক্ত। 


    ওই ব্রিজটায় যাবো কী করে রে ভাই? 

    BSNL এর সিগনাল আছে, AQI চেক করে দেখলাম ৫। দিল্লি অঞ্চলে তখন ৫৫০ থেকে ৬৫০ চলছে। নদীর ধারঘেঁষা ক্যাম্পগুলো এ বছরের মত পাট গুটিয়ে চলে গেছে। রাস্তা থেকে বেশ অনেকটা নীচে নদী, ওওই দূরে নীচে একটা ব্রিজ দেখা যাচ্ছে ওপারে যাবার। কিন্তু ব্রিজ অবধি পৌঁছাবার কোন রাস্তা দেখা গেল না। সম্ভবত রিভারবেডে নেমে ছোটবড় বোল্ডার,  নুড়িপাথরের উপর দিয়ে হেঁটে পৌঁছাতে হবে। তবে এই যে কিছু ভ্লগার ছিটকুলে এসে বসপার ধারে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা তাগ করে বলে ওই দেখুন ওপারের পাহাড়গুলো তিব্বত, সেটা একদম ডাহা গুল। 

    ছিটকুল এইদিকে ভারতের শেষ গ্রাম বটে, তবে তিব্বত সীমান্ত ওখান থেকে বেশ অনেকটাই দূর। সিজন এবছরের মত শেষ তাই হোটেল হোমস্টেগুলো বেশিরভাগই ফাঁকা।  জোস্টেলে কিছু পর্যটক আছে মনে হল। ব্যাকপ্যাকাররা অবশ্য সারা বছরই আসে এখানে। রাস্তার ধারে কোন খাবার দাবারের অস্থায়ী দোকান চোখে পড়ে না। গ্রামে ঢুকলে হয়ত এক আধটা পাওয়া যেতে পারে, নাও পারে।  খাওয়া দাওয়া পরে হবে, আগে রানীকান্ডা যাওয়া যাক। ছিটকুল থেকে  দশ কিলোমিটার মত দূরত্ব। 


    যতক্ষণ সেন্ট্রি পোস্টে এন্ট্রি হচ্ছে আমি বরং ছবিই তুলি।

    রানীকান্ডা ভিউ পয়েন্টএর এক কি দেড় কিলোমিটার আগে একটা ITBP র সেন্ট্রি পোস্ট আছে। আমন এন্ট্রি করাতে গিয়ে ফিরে এসে জানাল ড্রাইভার ছাড়াও গাড়ির আরোহীদের যে কোন একজনকে  আধারকার্ড নিয়ে দেখিয়ে এন্ট্রি করতে হবে। সীমন্তিনী গেল এন্ট্রি করতে। আমি দাঁড়িয়ে সেন্ট্রি পোস্টের দিকে পেছন ফিরে উল্টোদিকের ছবি তুলতে লাগলাম। আধার নম্বর, নাম ঠিকানা কোথা থেকে এসেছে, পেশা কী, কেন এসেছে আর ফোন নম্বর লিখে নিয়ে ছাড়ে গাড়ি। সিয়াচেনেও এই নিয়ম দেখেছি। 


    রানীকান্ডা 

    রানীকান্ডায় শুধু রাস্তাটুকু ছাড়া সর্বত্রই বরফে বরফ। ধবধবে সাদা ঝুরঝুরে জমাট বরফ। এদিকে সূর্য এত উজ্জ্বল যে রোদচশমা ছাড়া চোখ খোলা মুশকিল। রাস্তার ডানদিকে বসপার দিকে একটা ঢিপিমত আছে, সেটায় উঠতে পারলে রানীকান্ডা উপত্যকার ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়। সবাই গাড়ি থেকে নেমেই গিয়ে ওইটাতে চড়ছে। না চড়লেও চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। চারিদিক এমন শান্ত, ছবির মত,  যে আপনিই মন শান্ত হয়ে একটা ফুরফুরে আনন্দ খেলা করে। রাস্তার বাঁ পাশে একজন সদা হাস্যমুখ মধ্যবয়সী  ITBPর সেপাই দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে দূরে বসপা হিমবাহ, যেখান থেকে বসপা নদীর সৃষ্টি। 


    সোজা সামনে তাকালে দূরে বসপা হিমবাহ

    এখান থেকে বসপা অনেক নীচে আর বেশ খানিক অংশ বরফজমা। তাও তার কলস্বন কানে আসে দিব্বি। রানীকান্ডা বৃক্ষরেখার উপরে অ্যালপাইন তৃণভূমি।  কিন্নরে মোটামুটি ১০৮০০ ফিট অবধি বৃক্ষরেখা দেখা যায়।  এই অঞ্চলের উচ্চতা সাড়ে এগারো হাজার ফিটের কাছাকাছি। মে জুন মাসে বরফ গলে যাবার পরে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল সবুজ ঘাসে ছেয়ে যায়। রানীকান্ডা মিডোর সেই রূপও অপূর্ব। বসপা নদীর ওইপারে নদীর পাড় ঘেঁষে দেবদারু, পাইন ও পপলার গাছের সারি। সবুজ পাতায় বরফ জমে আলোতে ছায়াতে নীল দেখাচ্ছে। 



    মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে মিলিটারি ট্রাক চলে যাচ্ছে সৈন্য ও মালপত্র নিয়ে। আগেই বলে দিয়েছে এইসময় ক্যামেরা নামিয়ে নিতে হবে। একটা বাইক এসে থামল। বাইকার দম্পতি নেমেই সিপাহীসাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন তিব্বত সীমান্ত এখান থেকে কতদূর? ওঁরা আবার বাইকে চড়তে যেতেই  এরকম কথোপকথন হল
    সিপাহি সাহেব - গাড়ি আর যাবে না। এইখানে পার্ক করুন।
    বাইকার মহিলা - ঠিক আছে হেঁটেই যাবো। কোই বাত নেহি। 
    সি সা - ফিকফিক হাসি
    বা ম - কত দূর? ২ কিমি?
    সি সা।- নাহ (ফিক ফিক)
    বা পু - ৫ কিমি? ৬ কিমি? 
    সি সা - নাহ আরো দূর ( ফিক ফিক)
    বা ম  - ৮ - ১০ কিমি? (খানিকটা মরীয়াভাব) 
    সি সা - না না আরো দূর ( আরো ফিকফিক) 

    আমন দাঁড়িয়ে সিপাহী সাহেবের সাথে গল্প করছিল। আর ধৈর্য রাখতে না পেরে বলে আরে কম করে ৬০ - ৬৫ কিমি দূরে সীমান্ত। অত দূর হাঁটবে কী করে? তাছাড়া সিভিলিয়ানদের অনুমতি নেই আর যাবার। দম্পতি হতাশ হয়ে বাঁ পাশের পাহাড়টার দিকে এগোয়। এসব ক্ষেত্রে  যা হয় আর কি, দেখে মনে হয় এই তো কাছে,  তারপরে পথ আর ফুরায় না। আমরা যখন ফেরার তোড়জোড় করছি,  এরাও বহুক্ষণ  হেঁটে  পাহাড় ধরা না দেওয়ায় ফেরত এসে বাইকে চেপে ছিটকুলের দিকে গেল। 

    https://youtube.com/shorts/zHKo5C-0ypM?si=YLRcKDFmSzCgZKE5
    রানীকান্ডা ভিউ পয়েন্ট

    রানীকান্ডায় বেলা তিনটে অবধি থাকতে দেয়। তবে ITBP চৌকিতে বেলা একটার মধ্যেই এন্ট্রি করাতে হয়।  আমরা ছিটকুলে ফিরে  রিভারবেডে নামি। ছোটবড় পাথর টপকে নদীর পাশে যাই।  সবুজ স্বচ্ছ জল,  জলের নীচের পাথর শেওলা স্পষ্ট দেখা যায়। নদী এখানে বালিকা। বড় বোল্ডারে লেগে অজস্র সাদা ফেনায় ভেঙে বসপা ছুটে চলেছে করচামের দিকে, শতদ্রুর সাথে মিলবে বলে। শতদ্রু তিব্বত থেকে ভারতে ঢুকেছে শিপকি-লার কিছু আগে। শীতের পরে বরফ গললে নদীর পাশে তাঁবু খাটিয়ে থাকার সাময়িক আস্তানা গড়ে ওঠে। নদীর তখন আরেক রূপ। আসবো আবার। আসতেই হবে। 


    সুন্দরী বসপা 

     রকছামে নদীর পাশে একটা চমৎকার কাঠ দিয়ে তৈরী রেস্টুরেন্ট দেখে এসেছিলাম। খোলা দেখেছিলাম বলেই মনে হয়েছিল আমাদের। বেলা প্রায় আড়াইটে বাজে, সেদিকেই যাওয়া যাক এবার। কিন্তু হায় সেখানে পৌঁছে দেখা গেল খোলা বটে তবে রেনোভেশানের জন্য। খাবার পাওয়া যাবে না। আরো দু একটা জায়গায় চেষ্টা করে দেখা গেল সবই বন্ধ। অগত্যা চলো সাংলা বাজার। সে আরো মিনিট পঁয়তাল্লিশের রাস্তা। এদিকে খিদেয় আমাদের পেটে ইঁদুর ছুঁচো সব দৌড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সাংলা বাজারে একটা রেস্টুরেন্ট খোলা পাওয়া
     গেল। 


    সাংলা বাজার

    সেখানেই দোতলার খোলা বারান্দায় বসে অলসচোখে রাস্তা দেখতে দেখতে খাওয়া সারা গেল। স্কুলফেরতা ছাত্রছাত্রীর দল, অফিসফেরতা মহিলা ফিরতিপথে এই রেস্টুরেন্টে ঢুকে হয় কিছু খেয়ে নিচ্ছেন নয়ত প্যাক করিয়ে। মোমো,  থুকপা,  চাউমিন খেয়ে পেট ঠান্ডা করে কল্পার দিকে ফেরা। দেখা যাক রওলা ক্লিফ হয় কিনা। আজকেই কল্পায় আমাদের শেষ দিন, যদি সূর্যাস্তের আগে হোটেল পৌঁছানো যায় তাহলে কৈলাসের উপরে অস্তগামী সূর্যের রঙের খেলাও দেখা হয়ে যাবে। আশায় আশায় আমনকে জিজ্ঞাসা করি,  সেও আশ্বাস দেয় পৌঁছে যাবো। 

    কিন্তু রাস্তা…  সেই ভাঙাচোরা এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় চারটে নাগাদ বেরিয়ে ছটার আগে পৌঁছানো কিছুতেই সম্ভব হয় না। সাংলা পেরিয়ে সেই পাথর সরানো পয়েন্টেও মিনিট পনেরো দাঁড়াতে হয়। আলো কমে আসছে দ্রুত। নীচে নদীর দুপাশে ঝুপসি আঁধার। রওলা ক্লিফ বাদ দিই আমরা, কাল সকালে সিমলা ফেরতের সময় দেখে যাবো। আমাদের চলার পথও ঝাপসা হয়ে আসছে ক্রমশ।  বাঁকে বাঁকে উঁকি দিয়ে যাওয়া কৈলাসের মাথায় তখনো সোনারঙা রোদ্দুর। 


    সোনারঙা রোদ্দুর


    শিবঠাকুর কলকেতে অ্যাইসা দম দিয়েছে… 


    নীচে অন্ধকার নেমেছে ঘোর হয়ে। 

    লালচে সোনালী কৈলাসে আটকে আছে মস্ত একখানা সাদা মেঘ, রোদ্দুরের ছটায় সেও লালচে। আমরা হাসাহাসি করি ‘শিবঠাকুর কলকেতে হেব্বি দম দিয়েছে  দেখি।’ মাঝের দুদিন মেঘ বৃষ্টির পরে আজ আকাশ পরিস্কার ছিল। কিন্তু আমরা কিছুতেই সূর্যের আলো থাকতে থাকতে হোটেলে পৌঁছাতে পারলাম না। থাক আরেকবার তো আসতেই হবে। আমন বলে দেয় নম্বর রইলো, পরেরবার এসেই ফোন কোরো। এতক্ষণে ঠান্ডা হাওয়ায় শীত লাগতে শুরু করে। দৌড়ে হোটেলে ঢুকি, সব গুছিয়ে নিতে হবে। একটু পরে সীমন্তিনী আমায় নিয়ে আরেকবার যায় সেই কিছুমিছু গিফট শপে, আমার কিছু কিনতে হবে যে। অন্ধকার গাঢ় হলে আরেকবার ছাদে গিয়ে কিছু ছবি তোলা। ব্যাসস। 


    মায়াবী রাত 

    এবারের মত কল্পা ভ্রমণ শেষ। কাল থেকে নতুন পথে। 

    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১০৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বাদামি - %%
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • %% | 49.206.***.*** | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৩৪737246
  • ভাল এগোচ্ছে
  • Aditi Dasgupta | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:০৩737248
  • আহা আহা! গাছের ছায়াও দেখি নীল!  টয়লেট সম্পর্কে এই দার্শনিক চিন্তা যেনার মাথায় এসেছে তিনিও নমস্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন