এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দুনিয়াদারীর টুকিটাকি পর্ব ১১ : প্রযুক্তি সামন্ত ও স্থবির পৃথিবী : ভবিষ্যতের একটি চিত্র 

    Debanjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ নভেম্বর ২০২৫ | ৯৭ বার পঠিত
  • বিধির বাঁধন কাটলে তুমি

    চিমেরিকা নিয়ে এর আগের লেখাতে দুকথা বলেছি। চিমেরিকা অর্থাৎ চীন আর আমেরিকার যুগ্ম একটি ব্যবস্থা যেটি ঠান্ডা যুদ্ধের শেষ হবার পর থেকেই বিশ্ব অর্থনীতিকে চালিয়েছে, আমার আগের লেখাতে দেখিয়েছি। চীন আর আম্রিকা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের দুটো অর্থনীতি একথা আগেই বলেছি। চীন মূলতঃ শিল্পনির্ভর industrialized অর্থনীতি ওদিকে আম্রিকা স্পেকুলেশন নির্ভর financialized অর্থনীতি। চীন মূলতঃ সারা পৃথিবীর কারখানা এবং সারা পৃথিবীর মধ্যে হয়তোবা সবচেয়ে বেশী রপ্তানী চীন করে এবং এসব কিছুই হয় একমেরু বিশ্বের চালিকা শক্তি ডলারের মাধ্যমে এবং যে প্রচুর পরিমান রপ্তানী চীন করে ডলারের পাহাড় কামায় চীন সেটি তারা মূলতঃ আম্রিকাতেই বিনিয়োগ করতো আম্রিকি ট্রেজারী বন্ড বা অন্য অ্যাসেট কিনে অর্থাৎ চীনের সঙ্গে আম্রিকার বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি তারা এভাবেই মেটাতো, যেটি আমরা দেখেছি দুনিয়াদারীর টুকিটাকি আগের লেখাগুলোতে (এখানে, এখানে ও এখানে)। ২০০৮ পর্যন্ত বেশ চলেছিলো এই ব্যাবস্থা কিন্তু ২০০৮ সালের পরেই যখন আম্রিকি সাব প্রাইম ক্রাইসিস নিয়ে দুনিয়া মন্দাতে ধুঁকছে তখনই চীনের নেতাদের টনক নড়ে ! আরে আমাদের হাতে তো এতো ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার আছে যেগুলো দিয়ে এতো আম্রিকি অ্যাসেট কেনা হয়েছে তাহলে তার ভবিষ্যৎ কি এখন, এরকমই ভেবেছিলেন চীনের নেতারা আর তার ফলেই এর পরে আমরা BRI, CPEC, BRICS এসব নামগুলো শুনতে পাবো আসলে ২০০৮ সালের গ্লোবাল রিসেশনের পরে আম্রিকি অ্যাসেট কেনা নিরাপদ না মনে করে অন্য কোনো লং টার্ম লাভজনক অ্যাসেট কিনবার জন্যই চীনের এই সিদ্ধান্ত ছিলো। এর ফলেই বর্তমানে ট্রাম্পের আমলে চীন আম্রিকার দ্বন্দ্ব এবং অর্থনীতির নতুন কোনো ইকুয়েশানের লক্ষে দরকষাকষি করছে এই দুই দেশ। ট্রাম্প সাহেব তো একে জি-টু পর্যন্ত বলেই ফেলেছেন। ট্রাম্পের বর্তমান ট্যারিফ যুদ্ধও এই উদ্যেশেই করা। কিন্তু ট্রাম্প সাহেব একটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেননা বর্তমানে সেটিই হয়তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আম্রিকা কি গত কয়েক দশকের স্পেকুলেশন নির্ভর financialized অর্থনীতি মডেলটি থেকে বেরিয়ে ফিরে আসবে আবার শিল্পায়নের রাস্তায় ? ট্যারিফ যুদ্ধের ফল জিত বা হার যার হোক না কেন এই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।

    ১৯৭১ সালের পর থেকেই নিক্সন সাহেব যখন গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড তুলে নিলেন তখন থেকেই বলা যায় আম্রিকার আজকের এই স্পেকুলেশন ভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হওয়া শুরু হয়। এর আগে মূলতঃ উৎপাদন, শ্রম, চাহিদা, জোগান এসব নিয়ে পশ্চিমি অর্থনীতি চলতো কিন্তু ১৯৭১ সালের পর থেকেই শুরু হয় পশ্চিমী অর্থনীতিতে চটজলদি মুনাফার জন্যে আরো স্পেকুলেশনের দিকে ঝুঁকে পড়া। নব্বই দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই এই প্রবণতা আরো বাড়তে থাকে যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের অনেক অর্থনীতির দরজাই তখন খুলে যায়। বিশ্বায়নের ফলে পশ্চিমী অর্থনীতিতে ঝোঁক আসে কলকারখানার কাজ আউটসোর্সিং করে তৃতীয় বিশ্বে পাঠিয়ে আরো লাভের মুখ দেখবার এবং সেই বিপুল লাভ দিয়ে শেয়ার বাইব্যাক করে তাকে আরো বেশি দামে বেচে অতি দ্রুত মুনাফা বাড়ানো।

    প্রযুক্তি সামন্তেরা

    আম্রিকি অর্থনীতি স্পেকুলেশন ভিত্তিক এই ব্যাবস্থা হয়ে দাঁড়ায় যখন ১৯৭১ সালের পরে থেকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার জায়গাতে একটু একটু করে আস্তে আস্তে ব্যাঙ্কিং ব্যাবস্থার সবরকম বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়। নব্বই দশকের শুরু থেকে যখন বিশ্বায়ন একমেরু বিশ্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় তখন থেকেই আমরা দেখতে পাই যে আম্রিকি অর্থনীতির একটা নতুন প্যাটার্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।তাহলে আমেরিকার অর্থনীতিটির সিস্টেমটা আমরা যেটা দেখছি সেটা মূলতঃ ধারের উপরেই নির্ভরশীল। জমা খরচের হিসাব করলে বলতে হয় যে, আম্রিকি অর্থনৈতিক সিষ্টেম খরচের জায়গাটা হচ্ছে যুদ্ধ আর সোশ্যাল সিকিউরিটি কিন্তু এসব জায়গাতে খরচা কমানোর চিন্তা করা দুটো পার্টির কারুর পক্ষেই সম্ভব নয় এখন নানা কারণে, তা খরচ কমাতে না পারলে তাহলে আয় বাড়ানো যাক কিন্তু আমরা দেখছি যে ট্যাক্স বাড়িয়ে ঘাটতি কমানোর চিন্তা করাটা কোনো আম্রিকি সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। অর্থাৎ আম্রিকি সিস্টেমে খরচ তো কমেইনা যেহেতু যুদ্ধ বন্ধ হবার কোনোই সম্ভাবনাই নেই বিভিন্ন লবীর চাপে উপরন্তু ট্যাক্স বাড়িয়ে আয় বাড়াবার কোনো সম্ভাবনাই নেই সেকারণেই আম্রিকার পছন্দ আরো ধার করে বাজেট ঘাটতির অঙ্ক মেলানো। অর্থাৎ আম্রিকি অর্থনীতিটার সিস্টেমেই ঘাটতি লুকিয়ে আছে, আর সেই ঘাটতি মেটাতে আরো ধার করো আর যত পারো ধার বাড়াও। যদি ধার করবার লিমিট ছুঁয়ে যায় তাহলে বাড়িয়ে দাও ডেট সিলিং। একারণেই তো এবছরে ট্রাম্প সাহেব রেকর্ড দিনের জন্যে আম্রিকি সরকারটাই বন্ধ করে দিলেন যাকে বলে টোটাল শাটডাউন। অর্থাৎ যখন আম্রিকি সিস্টেম নিজেই এতো ধার করেই চালায় তাহলে চাপ কিসের ? আর করবেই না বা কেন, একমেরু বিশ্বে ডলারই কি মূল ইঞ্জিন নয় !!! ১৯৭১ সালে নিক্সন সাহেবকে তো সেই সময়ের উঠতি অর্থনীতিবিদ তরুণ তুর্কি হ্যাংক পলসন একথাই বলেছিলেন, যে আম্রিকা যদি সারা বিশ্বের থেকে ধার করে তাহলেও কোনো চাপ নেই কেননা আম্রিকার থেকে বেশী চাপ তখন ওসব দেশের যাদের আর্থিক সারপ্লাস আম্রিকাকে ধার হিসাবে দেওয়া। সেই বহু চৰ্চিত টু বিগ টু ফেইল তত্ত্ব। আম্রিকার স্পেকুলেশন ভিত্তিক অর্থনীতির আরেকটা বড় সুবিধা হলো এই টু বিগ টু ফেইল তত্ত্ব। অর্থাৎ ধরুন কোন ব্যক্তি বা সংস্থা অর্থ বিনিয়োগ করে বেশ লোকসান করলো কিন্তু শেষ মেষ অন্য কোন বড় সংস্থা নিজের গাঁটের পয়সা ধার দিয়ে বাঁচিয়ে দেবে। ২০০৮ সালে সাব প্রাইম ক্রাইসিসের পরে তো আমরা সেরকমই দেখেছি তাই না !!! আম্রিকাতে স্পেকুলেশন ভিত্তিক অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এই বিশ্বাসটিরই উপরে। লাগাও বেট যত পারো সে ডটকম, এ আই . রোবট গাড়ী, মিলিটারী ইন্ডাষ্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স যাই হোক না, ফেল করলেও যদি তুমি আম্রিকি সমাজের টপে থাকো কোনো চাপ নেই, সরকার নামক গৌরী সেন তো আছেই তোমাকে আরো ধার দিয়ে বাঁচাতে !!!

    তাহলে আম্রিকার সিস্টেমটা যেখানে স্পেকুলেশন ভিত্তিক অর্থনীতির প্রাধান্য সেখানে বর্তমানে একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ একজন ওয়াল স্ট্রিট দেবতা বা দেবী যিনি কিনা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের থেকে অনেক কম সময়ে অনেক বেশী মুনাফা করিয়ে দেবেন, লেবার এনভায়রনমেন্ট এসবের তোয়াক্কা না করেই যেহেতু আমাদের ওয়াল স্ট্রীটের দেবদেবীরা বাস্তব দুনিয়ার ইট কাঠ পাথর গাঁইতি শাবল কোদালের কালিঝুলী মাখা অর্থনীতির তোয়াক্কাই করেননা, ওনারা একরকম হাওয়া থেকেই বেশ কয়েকগান মুনাফা জোগাড় করে আনেন শুধু স্পেকুলেশন করে মাটির পৃথিবীর অর্থনীতির নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ! এখন যদি কখনো ওয়াল স্ট্রীটের দেবদেবীদের পাশার দান ভুল হয় তাহলেও কুচ পরোয়া নেই, গৌরী সেন আম্রিকি সরকার আর FED তো আছে তাদের বাঁচাতে নাকি ! আর্জেন্টিনার পেসো নিয়ে জুয়া খেলে ডুবে যাওয়া ওয়াল স্ট্রীটের দেবদেবীদের কি বাঁচায়নি ট্রাম্প প্রশাসন এই কদিন আগেই !! তাহলে কিসের চিন্তা !!! সবমিলিয়ে বলা যায় কি বিধির বাঁধন কেটে ফেলেছে এমন শক্তিমান এই স্পেকুলেশন ভিত্তিক পশ্চিমী অর্থনীতি ? মার্ক্স তো কতোদিন আগেই তার ডাইলেক্টিক তত্ত্বে বলেছিলেন যে মুনাফার জন্যে শিল্পপতি যত শ্রমিকদের মজুরী কমাবে একদিনে ততোই তার মুনাফাও কমবে যেহেতু এসব শ্রমিকেরাই তার কারখানার মাল কেনে, আর তাদেরই মাইনে কমে গেলে তাদের মাল কে কিনবে ? কিন্তু এখন পশ্চিমের স্পেকুলেশন অর্থনীতি দেখাচ্ছে যে তার শ্রমিক মালিক এসবের কোনোই প্রয়োজন নেই, শুধু স্পেকুলেশনের জোরে সে দিব্যি পার পেয়ে বেরিয়ে যাবে আর যদি তার ইনভেস্টমেন্ট পরিকল্পনা নাও সফল হয় তাকে বাঁচাতে আছেন তো গৌরী সেন আম্রিকি সরকার ! এই যখন পরিস্থিতি তাহলে তো মার্ক্সিয় ডাইলেক্টিক তত্ত্ব কাজই করছেনা এই স্পেকুলেশন ভিত্তিক ওয়াল স্ট্রিট যে সিস্টেমটা বানিয়েছে সেখানে !!!

    অর্থনীতিবিদ ইয়ানিস ভারুফাকিস তার technofeudalism বা প্রযুক্তি-সামন্ত তত্ত্বে দেখিয়েছেন যে আম্রিকার রাজনৈতিক সিস্টেমটিও এই ওয়াল স্ট্রিটের দেবদেবীদেরই হাতে এবং দুটি পার্টিই তাদের নিয়ন্ত্রণে। উপরন্তু সিলিকন ভ্যালির মহারথীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এমন একটা সিস্টেম তৈরী করে ফেলেছেন এরা যেখানে তাদের কোনো পতন নেই এরা প্রায় অবধ্য হয়ে গেছেন। কোনো নতুন প্রযুক্তি innovation তাদের এই একছত্র ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেনা যেহেতু অন্তর্জাল ও AI কে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষ যেন কোনোদিন পথে না নামে তাদের বিরুদ্ধে তারা সেভাবেই সমগ্র ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। ধরুননা palantir বা amazon এদের এখন মোটামুটি সর্বশক্তিমানের মত ক্ষমতাই আছে বলা যায়। এখন মার্ক্সিয় তত্ত্ব বলে যে ইতিহাস সবসময়ই প্রগতির পথে এগুবে, পুঁজিবাদ নতুন নতুন প্রযুক্তি ইনোভেশন করে নতুন নতুন প্রগতির জন্ম দেবে কিন্তু আম্রিকি স্টক মার্কেট কে দেখলেই দেখতে পারবো যে প্রায় ৫০-৬০ ভাগ মার্কেট capitalization এখন কয়েকটি মাত্র মনোপলি প্রযুক্তি কোম্পানীর হাতেই ঘোরা ফেরা করছে অর্থাৎ নতুন কোনো আর্থিক শক্তির উঠে আসবার এবং নতুন কোনো প্রগতির সম্ভাবনার শেষ। এখন এসব মহারথীদের স্পেকুলেশন ভিত্তিক ব্যবসা ডুবে গেলেও কোনো চিন্তা নেই যেহেতু গৌরী সেন আম্রিকি সরকার তাদের বাঁচাবে এবং পুঁজিবাদের মধ্যে যে যোগ্যতমের উদ্বর্তন নীতি চলে তাকে এই মহারথীরা পরাজিত করছেন। ভারুফাকিস তো এদেরই প্রযুক্তি সামন্ত বলে দেখাচ্ছেন যে এদের মনোপলি অন্য কোনো নতুন আর্থিক শক্তি বা সম্ভাবনার ইতি করে দিচ্ছে অর্থাৎ প্রযুক্তি সামন্তরা পুঁজিবাদের নতুন উদ্ভাবন ও প্রগতির সম্ভাবনার শেষ করেই দিচ্ছেন।

    প্রযুক্তি সামন্তদের হাত ধরে এলো স্থবির পৃথিবী

    অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা অদ্ভুত ব্যাপার। স্পেকুলেশন ভিত্তিক অর্থনীতি যেটি ওয়াল স্ট্রিট গত কয়েক দশকে ধরে পৃথিবী শাসন করেছে সেটি একইসঙ্গে মার্ক্সিয় ডাইলেক্টিক এবং পুঁজিবাদী কম্পিটিশনকে নস্যাৎ করতে সক্ষম। বিধির বাঁধন কাটলে তুমি এমনি শক্তিমান !!! অর্থাৎ আমি আগামী বেশ কিছু সময় পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো পরিবর্তন দেখিনা শুধু ওয়াল স্ট্রিট আর সিলিকন ভ্যালির এই প্রযুক্তি-সামন্তদের হাতে একটা stagnation World বা স্থবির পৃথিবী দেখি যেখানে একটা স্থিতাবস্থার মধ্যেই পৃথিবী ঘুরবে যেখানে এই প্রযুক্তি সামন্তেরা ওয়াল স্ট্রিটের মাধ্যমে ও যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবী শাসন করেন ও তাদের কোনো ইনভেস্টমেন্ট ফেল করলে একমেরু পৃথিবীর অধিপতি আম্রিকি রাষ্ট্র তাদের গৌরী সেন হয়ে বাঁচিয়ে দেন। বলাই বাহুল্য নতুন কোনো প্রগতির সম্ভাবনাই এই পৃথিবীতে আসবেনা। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা হয়তো এরকম বাবস্থাকেই বলেছিলেন "end of history and the last man" যেখানে মানুষের সামনে আর কোনো নতুন আশা বা সম্ভাবনাই নেই সে কর্ম জীবিকা ও উদ্যমহীন এবং সে টিকে আছে শুধু ওয়াল স্ট্রিট আর সিলিকন ভ্যালির এই প্রযুক্তি-সামন্তদের দেওয়া সোশ্যাল সিকিউরিটি জাতীয় দোয়াদক্ষিণাতে এবং সেলফোনে আইপিএল দেখে দেখে। আমি হয়তো নিরাশাবাদী শোনাচ্ছি কিন্তু আমি নিজেকে বাস্তববাদী বলেই মনে করি।

    পুনশ্চ : আমি তাত্ত্বিক বা অর্থনীতিবিদ নই। এই লেখা পড়ে গুরুতে আমার পাঠকেরা আলোচনা করলে অনেক ঋদ্ধ হবো।

    রেফারেন্স
    ১। হিরেন সিংহরায়, "Nobel prize 2022 : a critique"
    ২। Yanis Varoufakis," technofeudalism"
    ৩। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা,"end of history and the last man"   
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৩০736302
  • দেবাঞ্জন

    ভেরুফাকিস ও ফুকুয়ামাড় পাশাপাশি আমার লেখা কোট করছেন দেখে লজ্জিত এবং কৃতজ্ঞ বোধ করছি!  মোটামুটি আপনার বিশ্লেষণের সঙ্গে সহমত। যেদিন (১৫/৮/১৯৭১) নিক্সন বললেন এক আউন্স সোনার বদলে ৩৫ ডলার মূল্য ধরে দিতে আমেরিকান ট্রেজারি নারাজ সেদিন আর্থিক জগতের শেষ গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের সমাপ্তি ঘটল। এর ফলে আমরা দেখলাম ফাইনানশিয়াল অ্যাসেটের অকল্পনীয় বৃদ্ধি (যাকে আমি কাগুজে সম্পত্তি বলি) আজ সারা পৃথিবীতে রেকর্ডেড ফাইনানশিয়াল অ্যাসেটের পরিমাণ ৪৫০ ট্রিলিয়নের বেশি, সারা পৃথিবীর জিডিপি ১১২ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ রিয়াল ইকনমির চার ভাগের এক ভাগ।  যতটুকু হিসেব মেলে কাগজে কলমে ডেরিভেটিভ কন্ট্রাক্টের  ভ্যালু ৩৩০ ট্রিলিয়ন ডলার। ১৯৮০ সালে থেকে টয়োটার ৩০% প্রফিট আসছে ফাইনানশিয়াল প্লে থেকে। আমেরিকান জিডিপি ৩০ ট্রিলিয়ন, ডেট ৩৭ ট্রিলিয়ন – আমেরিকা ট্যাক্স বাড়াবে না, বাড়াবে ডেট সিলিং।  মানে আরও কতোটা ধার নেওয়া যায়;  ধার পাওয়া যাবে কারণ সকলে বিশ্বাস করে ধার যাই হোক না কেন, আমেরিকার  শোধ দেবার ক্ষমতা আছে - যাকে আপনি বললেন টু বিগ  টু ফেইল। চিন অন্য চিন্তা করলে – ট্রেড সারপ্লাস দিয়ে রিয়াল ইকনমির অংশ কেনা, BRI । ইনফ্লেশনের দরুন তার রিয়াল অ্যসেটেরমূল্য বাড়তেই থাকবে। আমেরিকা ক্রমশ হারাচ্ছে এক বিশাল নিবেশককে।

    ভেরুফাকিস দেখিয়েছেন যতোই নতুন প্রযুক্তি আসুক না কেন সেটাড় মালিকানা সীমাবদ্ধ থাকবে কয়েকটি হাতে।  এবারের নোবেল বিজয়ীরা শুমপিটারের থিওরির সমর্থনে দেখালেন বিধ্বংসী এনটারপ্রেনার খেলার ছকটা বদলে দিতে পারেন কিন্তু খেলোয়াড়ের সংখ্যাটি  মনোপলির চেহারা নিচ্ছে, নেবে।  এ থেকে  কোন উদ্ধার নেই। অনেকদিন আগে একটা কথা বাজারে চালু ছিল, দি লাস্ট ম্যান ইন দি বন্ড মার্কেট,  শেষ যে জন কিছু কেনে। তাই ফুকুয়ামার লাস্ট ম্যান আমাকে তারই কথা মনে করিয়ে দেয়।
  • দেবাঞ্জন | 2401:4900:3141:de7c:2b7f:50a0:bbd1:***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৪736341
  • অনেক ধন্যবাদ হিরেনদা l আপনার নোবেল প্রাইজের উপরে বইটি পড়েই ভারুফাকিস এবং Technofeudalism নিয়ে জানতে পেরেছি l আপনার বইটি নতুন করে বিশ্ব অর্থনীতি ও ভূ রাজনীতি নিয়ে আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে l আরো লিখতে থাকুন দাদা l 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন