এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে

  • দ্বাদশ গিরিবর্ত্মের দেশে - ৭

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ১১ অক্টোবর ২০২৫ | ১০৪ বার পঠিত
  • হেমিস থেকে বেরিয়ে  পরবর্তী গন্তব্য ‘হল অব ফেম’, মূলত ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিচালিত ওয়্যার মেমোরিয়াল, মিউজিয়াম ও স্যুভেনিয়ার শপ। লেহ কার্গিল হাইওয়ের ধারে এই হল অব ফেমে ঢোকার এন্ট্রি ফী ২৫/- টাকা। তবে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে একটা শর্ত আছে। এখানে শুধুমাত্র কার্ড দিয়ে টিকিট কাটা যায়, ক্যাশ বা ইউপিয়াই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা গিয়ে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ি। ব্যাগ হাতড়ে দেখি ডেবিট কার্ড যেমন যত্নে প্যাক করে এনেছিলাম তেমনই হোটেলে রয়ে গেছে, স্লিং ব্যাগে আর ঢোকানো হয় নি।  

    আসলে ইউপিয়াইয়ের বহুল প্রচলনের ফলে কার্ডের ব্যবহার প্রায় হয়ই না। কি ভাগ্যিস সমরেশদার কাছে ওঁর কার্ড ছিল। টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকার পর সেনাবাহিনীর একজন আমাদের সঙ্গী হলেন। প্রথমে দুই তিনটে ঘরে লাদাখের ইতিহাস ভূগোল খাদ্যাভ্যাস উৎসব ইত্যাদি ব্যাখ্যা করার পরে ঢুকলাম ওয়্যার মেমোরিয়াল অংশে। আবারো সেই কার্গিল যুদ্ধের বিস্তৃত বর্ণনা, সিয়াচেন আর তার কর্কশ আবহাওয়া, বুড়িছোঁয়া করে গালওয়ানের কথা। থেকে থেকে জয় হিন্দ করে চীৎকার। 

    এত গোরিলাগিরি আমার পোষায় না বাপু। তবে সেনাবাহিনীর তৈরী বিভিন্ন লোকেশানের মডেলগুলো দুর্দান্ত। লাদাখ রেঞ্জ,  পিরপাঞ্জাল রেঞ্জ আর কারাকোরাম রেঞ্জের হিমবাহ, গিরিপথ, নদীনালা সহ পুরো পর্বতশ্রেণীর ক্ষুদ্র সংস্করণ দেখতে ভারী ভাললাগে। সিয়াচেনে ব্যবহার্য পোশাক,  বাসনপত্র, জুতো ইত্যাদিও প্রদর্শন করা হচ্ছে ছোট্ট একটা প্রকোষ্ঠে। আর রয়েছে কার্গিলযুদ্ধের সময় মৃত পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে পাওয়া আসল চিঠিপত্র, ডায়েরি। এর ফোটোকপি আমরা দেখে এসেছি কার্গিল ওয়্যার মিউজিয়ামে। 

    হল অব ফেমে একটা লাইট এন্ড সাউন্ড শো হয়। গরমকালে রাত ৮টায় আর শীতকালে ৭টায়। ঢোকার সময় ২৫/- টাকা দিয়ে যে টিকিট কাটা হয়েছে তার মধ্যেই লাইট এন্ড সাউন্ড শোও ধরা। তবে আমরা অতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবো না, এখনো লেহ প্যালেস, শান্তিস্তুপ বাকী। দুটো তো হবেই না, পৌনে ছটা বাজে। নেমে তাড়াতাড়ি করে লেহ প্যালেস যেতে বলি আমরা। কি ভাগ্যিস এই রাস্তাটা সারথিমশাই চেনেন। কিন্তু হায় আধঘন্টা বাদে  সেখানে পৌঁছে দেখা গেল প্যালেস বন্ধ হয়ে গেছে ঠিক ছটায়। 


    লেহ প্যালেস থেকে সিটি ভিউ সন্ধ্যে

    অগত্যা প্যালেসের সামনে থেকে  সন্ধ্যের লেহ শহরের ছবি তুলেই নেমে আসি। শান্তিস্তুপেও যাওয়া হল না। মন খারাপ করে সারথিকে বলি আমাদের লেহ মার্কেটেই ছাড়তে। অন্যান্য পাহাড়ি শহরের মতই লেহ মার্কেটও জমজমাট এক খোলা বাজার যেখানে নানারকম মুখরোচক খাদ্য, স্থানীয় শিল্পীদের হাতে বানানো জিনিষপত্র পাওয়া যায়। বাচ্চাকে কোলে শুইয়ে বা পাশে খেলতে দিয়ে লাদাখি মহিলারা বুনে চলেছেন লাদাখি টুপি, মাফলার। সামনে রাখা তৈরী টুপি মাফলার মোজা। 

    তিব্বতী উদ্বাস্তদের দোকানে রংবেরঙের গয়নাগাঁটি, টুকটাক হাতের কাজ। বড় বড় কাশ্মীরি উলেন জিনিষ আর হ্যান্ডিক্রাফটসের দোকান দুই পাশে। এরই মধ্যে বাজার যেখানে নব্বই ডিগ্রি কোণে বেঁকেছে সেখানে কারা যেন কীবোর্ড স্যাক্সোফোন নিয়ে ছোট বক্স মাইক লাগিয়ে গান বাজনা করছে। চারিদিকে মন ভালো করা উৎসব উৎসব ভাব। সমরেশদা বৌদিকে ছেড়ে আমি গুগল ম্যাপ অন করে চললাম লাদাখ বুক শপের খোঁজে। এই দোকানটার বইয়ের সংগ্রহের প্রশংসা পড়েছি। 

    সে দোকানে সেদিন বই খুব বেশী ঘেঁটে দেখার সুযোগ পাই নি হোটেলে ফেরার তাড়ায়। একটা লাদাখের ম্যাপ আর  লাদাখের মনাস্টারি আর প্রাসাদের উপর একটা বই কিনে বেরোতে না বেরোতেই রূপমের ফোন, কোথায় আমি, এবারে ফিরতে হবে। ধুত্তোর লেহ মার্কেটের আবহটাই ভাল করে অনুভব করা হল না! বেজার মুখে ফিরি। সমরেশদারও ম্যাপে খুব উৎসাহ, ওঁকে না নিয়েই ম্যাপ কিনতে যাওয়ায় একটু গজগজ করেন। এত অল্প সময়ে হয় নাকি। 

    হেঁটে হেঁটে হোটেলে ফেরা। পরেরদিন সকালে আটটায় হুন্ডারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। হোটেলের একটু আগেই একটা থাংকার দোকান। জিগ্যেস করি সকালে কখন খুলবেন? বলেন এই নটা কি সাড়ে নটা। হতাশ হয়ে ভাবি যাহ তাহলে আর হল না। হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় নটা। কথা হয় ঘরে গিয়ে একটু হাতমুখ ধুয়ে রাতের খাবার খেতে নামবো আমরা। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই আমার ফোন বাজে, রূপম। খানিক ধানাই পানাই করে আসল কথায় আসেন। 

    আমাকে আরো ১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। সেই যাত্রা শুরুর আগে ইনি বলেছিলেন যে আমার সাথে রুম শেয়ারিঙের কথা ছিল যাঁর তাঁদের পুরো গ্রুপ ক্যান্সেল করেছে, কাজেই আমাকে কিছু অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। আমি তখনই জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত? সেটা উনি দেখে জানাবেন বলেছিলেন,  সেই জানানো হল এই এতদিনে।  চুড়ান্ত অপেশাদারী এই আচরণে অসম্ভব বিরক্ত বোধ করি। সে আবার এখন হাজার তিনেক দিতে হবে আর বাকীটা মানালী পৌঁছে দিলেই চলবে। 

    প্রাণপণে মাথা ঠান্ডা রেখে বলি এতটা অতিরিক্ত খরচের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না কাজেই এভাবে দেওয়া সম্ভব হবে না। এখন কিছুটা আমি ইউপিয়াই করছি। তবে পুরো টাকা উনি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পাবেন। “অক্টোবর”!! ওঁর গলায় হতাশা বিস্ময়। আমি নাচার, আগেই জানতে চেয়েছিলাম, উনি বলেন নি। সেক্ষেত্রে হয়ত ক্যান্সেল করতাম। কে জানে হয়ত সেজন্যই আগে বলেন নি।  Play stupid games,  win stupid prizes. Can't help. নীচে নেমে দেখি বৌদিরা আগেই এসে গেছেন। 

    ৬ই জুলাই ২০২৫

    গতবারে যা যা দেখা বা করা হয় নি এবারে সেগুলো করব বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। নাহলে আর সোলো আসাই বা কেন? সেজন্য হেমিস উৎসব দেখে আসার পরেরদিন, ৬ই জুলাই প্রথমে গিয়েছিলাম পেট্রোগ্লিফের সন্ধানে। সে গল্প পরে। গিয়েছিলাম সিন্ধু জাঁসকারের সঙ্গমে, সে গল্প আগেই বলেছি। এখন বরং বলি সিন্ধুঘাট আর লেহ প্যালেসের গল্প। সিন্ধুঘাট সিন্ধুনদের ধারে একটা সুন্দর বাঁধানো ঘাট ও চত্বর। জুনমাসে এখানে সিন্ধুদর্শন উৎসব হয়। এখন জল যথারীতি ঘোলাটে।  অক্টোবর থেকে মে অবধি পান্নাসবুজ জল দেখা যায়। 

    https://youtube.com/shorts/o7VeF8DWgHQ?si=wOHfHYHZx6t4CHsV
    সিন্ধুঘাট 

    লেহ প্যালেস (প্রাচীন  নাম লাচেন পালকর প্যালেস)  হল নামগিয়াল রাজাদের ৯ তলা বাড়ি। একদম উপরের তলা প্রার্থনা ও পুজাস্থল।  এটা লেহ, মেরাক,  সুমুরের যে হোমস্টেগুলোতে ছিলাম সেখানেও দেখলাম বাড়ির সবচেয়ে উপরের তলাটা প্রার্থনা ও পুজার জন্য নির্দিষ্ট করা থাকে। তার নীচের কয়েক তলা রাজপরিবারের বাসস্থান।  তারপরে দুই তিনতলা দাস দাসীদের বাসস্থান ও একদম নীচের তলা গৃহপালিত পশুদের গোয়াল, আস্তাবল ইত্যাদি। প্যালেসে ঢোকার টিকিট ২৫/- টাকা কাউন্টারে। অনলাইনে আগে কেটে নিলে ২০/- টাকা। 


    লেহ প্যালেস ২০২৫ (একজন প্রহরী নিশ্চিন্তে শুয়ে ঘুমোচ্ছেন)


    প্যালেস প্রহরী

    তা আমি টিকিটের জন্য ৩০/- টাকা দিয়েছিলাম, খুচরো ৫/ টাকা আমার কাছেও কাছেও ছিল না, কাউন্টারের দিদির কাছেও না। বললেন ফেরার সময় নিয়ে যেতে। ৬টায় বন্ধ করার ঠিক আগে গেলাম। তখনো তাঁরা কাছে খুচরো হয় নি, উনি ১০/ টাকাই ফেরত দিয়ে দিলেন। আমি তো অপ্রস্তুত। ওঁকে ফেরত দেবার চেষ্টা করলাম, কিছুতেই নিলেন না। বললাম তাহলে অনলাইনে কাটি, বললেন না না আমি তো টিকিটবই থেকে  দিয়েছি তোমায়, আর অনলাইন হবে না। 


    লে প্যালেসে ট্রাডিশানাল জানালা


    মোটা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরী সিলিং

    প্যালেস প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থায় আসায় কয়েক বছর হল আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেছে। বাইরের দিকের জানলা দরজায় লাদাখের ট্রাডিশানাল সুক্ষ্ম জটিল নকশার কাঠের কাজ করা ডবল লিন্টেল। সিঁড়িগুলো পাথরের, ফলে প্রস্থ ও উচ্চতা দুইই অসমান। ভেতরের দরজা নীচু, আমার মত পাঁচ ফুটিয়াকেও মাথা নীচু করে সাবধানে ঢুকতে হয়। তবে অনেক দরজার মাথাতেই মোটা করে কাপড় জড়ানো যাতে মাথা ঠুকলেও বেশী ব্যথা না লাগে। 


    সিঁড়ি - লেহ প্যালেস (এই সিঁড়িতে ওঠার মুখ কাঠ দিয়ে আটকানো। উঠে যে দরজা তার ওপাশে আর কিচ্ছু নেই। পা বাড়ালেই ব্যাসস) 

    প্যালেসের কিছু অংশ মিউজিয়াম করা হয়েছে। মিউজিয়ামে সাড়ে চারশো বছরের পুরোনো থাংকা, গয়না, বাসনপত্র, দামী পাথর, দু একটা আসবাব  ইত্যাদি রয়েছে। নানা রঙের সেমি প্রেশাস ও প্রেশাস পাথর গুঁড়ো করে তৈরী রঙে আঁকায় থাংকাগুলো আজও এত বছর পরেও উজ্জ্বল।  আর আমার যেটা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লাগল একটা আস্ত গ্যালারি জুড়ে লাদাখের বিভিন্ন গোম্পার সংক্ষিপ্ত বিবরণ আর সেসব গোম্পার ম্যুরাল ফ্রেসকো ইত্যাদির পুনরুদ্ধারের পদ্ধতি ও বিবরণ। 


    সুক্ষ্ম কাজকরা দরজার ফ্রেম  - লেহ প্যালেস
     
     

    লেহ প্যালেস থেকে সিটি ভিউ - দিনের বেলা

    এবারে লেহতে প্রথম দফায় চারদিন ও পরে আরো তিনদিন থাকায় মার্কেটে যাওয়া হয়েছে বহুবার। প্যালেস থেকে ফিরেও গিয়েছিলাম। এই জুন জুলাই মাসে লেহতে অন্ধকার হয় প্রায় রাত আটটায়। অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত মার্কেট থাকে ফাঁকা ফাঁকা, খাবার দোকানগুলো সবে তন্দুরে আগুন দিচ্ছে। হয়ত ছোট একটা তন্দুর জ্বলছে অল্পস্বল্প কিছু বানিয়ে দেবার জন্য। 


     লেহ মার্কেট - সন্ধ্যে হয় হয়।

    মার্কেটের এল পয়েন্টের কোণায় এক মস্ত মসজিদ। মসজিদের পাশের গলি দিয়ে ঢুকে একটু এগিয়ে ডানদিকে আরো সরু একটা গলি দিয়ে ঢুকে দেড়শো মিটার মত এগোলে এক মস্ত গুরুদ্বোয়ারা। ওইখানেই সেন্ট্রাল এশিয়ান মিউজিয়াম। এইটে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু মিউজিয়ামের সংস্কার চলছে বলে দর্শক আনাগোণা বন্ধ ছিল। এই গুরুদ্বোয়ারার সামনেই এক বয়স্ক ভদ্রলোক তন্দুর নিয়ে দাঁড়িয়ে ইয়ারকন্দি মাটন সিঙাড়া বানান। ছোট্ট ছোট্ট সিঙাড়া,  যার লাদাখি নাম সামসো। এক প্লেট ৪০/- টাকা, ৬ পিস। অতি ভাল খেতে। 


     মসজিদ - ওই ডানদিকের গলি দিয়ে গিয়ে আবার ডানদিকে ঘুরতে হবে।

    একদিন রাতের খাওয়া এই সামসো দিয়েই সেরেছিলাম।  সোলো ট্র‍্যাভেলের একটা দারুণ দিক হল বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন পেশার লোকজনের সাথে বন্ধুত্ব হওয়া। এবারে যেমন  হল তাশিখুড়ো, অব্রে আর স্টেফানি, আংডুভাই, করিতকর্মা কর্মা, স্ট্যানজিন শেরিং। 

    তাশিখুড়োর দোকান Tashi's Crafts লেহ মার্কেটের ভেতরে পোস্ট অফিসের পাশের রাস্তা দিয়ে বেশ খানিকটা ভেতরে ঢুকে ডানদিকে। এঁর কথা অণুর পোস্টে পেয়েছিলাম। গতবার জায়গাটা বেরও করেছিলাম কিন্তু  দোকানে ঢোকার সময় হয় নি। এবারে তাই এসে প্রথমদিনই ঢুঁ মারলাম। সাতরঙা টুপি মাফলার সব ৩০০- ৩৫০ রেঞ্জে। ওই জিনিষই মানালির ম্যালে ৯০০- ১২০০ চায় দেখেছি। তাশিখুড়োর বউ খুড়িমা নিজে হাতে এগুলো বোনেন। একেবারে নিখুঁত বুনন। 


    তাশিখুড়োর দোকান

    কিন্তু এহ বাহ্য। তাশিখুড়ো আগে ১৯৭৪ - ৭৭ কলকাতায় আসতেন পসরা নিয়ে। আমি কলকাতার কাছাকাছিই থাকি শুনে কি খুশী। বর্ধমানেও এসেছেন কয়েক বছর।  উনি আমাকে চা না খাইয়ে ছাড়বেনই না। গেলেই প্রথম কথা কেনাকাটি পরে হবে আগে বোসো, চা খাও। আমি চা খাই না শুনে ভারী দু:খিত। ওঁর দোকানের পাথরের কানের দুল, ব্রেসলেট,  মালা খুড়োর বানানো।  বলেছেন সামনের বছর আমার জন্য একটা সাতরঙা উলেন সোয়েটার খুড়িমাকে দিয়ে বুনিয়ে  রাখবেন। 

    অব্রে আর স্টেফানি আমাদের হোমস্টেতেই ছিল। এসেছে প্যারিস থেকে। হেমিস ফেস্টিভালে যাবে, গাড়ি বুক করেছে। হোমস্টের স্ট্যানি আমার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন যাতে শেয়ারিঙে দুপক্ষেরই টাকা একটু কম লাগে। অত:পর ফরাসী ইংরিজি আর বাঙালি ইংরিজিতে বন্ধুত্ব জমে গেল। ওরা আজ, ৬ তারিখ সকালে গেল  মার্কাভ্যালি ট্রেকিঙে। ফিরে আবার যাবে সার্কো সেখান থেকে হাইক করে সোমোরিরি। তারপর এখান থেকে রাজস্থান, তামিলনাড়ু ইত্যাদি। খুব ঘাম হচ্ছে দেখে আমি ওদের শুধু জল না খেয়ে ওয়ারএস মেশানো জল খেতে বলেছিলাম। পরে মেসেজ করেছে তাতে ওদের বেশ উপকার হচ্ছে। 


    অব্রে স্টেফানি 

    আমাদের এই গাড়ির সারথি ছিলেন আংডুভাই। লাদাখি বুদ্ধিস্ট,  গুরু রিনপোচের অনুসারী। শে প্যালেসের গল্প,  নামগিয়াল রাজাদের নানা যুদ্ধের গল্প,  দ্রুকপাদের গল্পস্বল্প ইনি আমাকে অনর্গল বলে যাচ্ছিলেন। এঁর সাথেই  গিয়েছিলাম লেহ'র আশেপাশে ঘুরতে। শহর থেকে সিন্ধু জাঁসকার সঙ্গমের দিকে যেতে এক জায়গায় একটা মূলতানি মাটির পাহাড় আছে।  লোকে বেড়াতে এসে নাকি সেখান থেকে খাবলা খাবলা মূলতানি মাটি নিয়ে যায়। সে আংডুভাই আমাকে এনে দেবেনই। যতই বলি ওসব মাখি না, লাগবে না। উনি ততই  বিমর্ষ হয়ে পড়েন। 


     মাঝেরজন আংডুভাই

    প্রথমদিন লেহ মার্কেটের ভেতরে ঘুরছি আর এটা ওটা ছবি তুলছি, কোথা থেকে ঝুপ্পুস লোমের একজন সুন্দরী ভদ্রমহিলা এসে বলেছিলেন ওহে মনুষ্য ওসব কি খিচিক খিচিক ছবি তুলছ আমার ছবি না তুলে? সত্যি তো। তাড়াতাড়ি বসে পড়ে ছবি তুললাম। তখন তিনি এগিয়ে এসে একদম মুখের সামনে মাথাটা এগিয়ে দিয়ে বললেন  দ্যাখো এই কানের পেছনটায় আমার হাত যায় না। তোমাকে আমার ছবি তুলতে দিয়েছি, এই জায়গাটা ভাল করে চুলকে দিয়ে দামটা দিয়ে যাও  বাপু। 


     ঝুপ্পুস লোমওলা  সুন্দরী

    *তাশিখুড়ো ছবি তুলতে চান নি আমিও আর জোর করি নি।
    *বাকী দুজনের কথা পরে আসবে। 

    (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ১১ অক্টোবর ২০২৫ | ১০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | ১১ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৪৩734819
  • লেখা ছবি ভিডিও সব মিলিয়ে এই পর্বটা বেশ অন্যরকম লাগল। 
  • kk | 2607:fb91:4c21:664d:612d:a986:d888:***:*** | ১১ অক্টোবর ২০২৫ ২২:০৮734825
  • এই যে সময়ের অভাবে কিছু জিনিষ মিস হয়ে যায় এটার জন্য সত্যি বড্ড আফশোষ হয়। লেহ মার্কেটের কথা আরেকটু শুনতে পারলে ভালো লাগতো। আমার যেকোনো বাজারের গল্প শুনতে খুব ভালো লাগে। ছবিগুলো চমৎকার হয়েছে। বিশেষ করে সাদা ভৌ আর কালো ভৌ দুজনকেই আমার খুব পছন্দ হলো। কিন্তু লেহ প্যালেসের সিঁড়ি গুলো, বাপ রে! দেখেই তো ভয় লাগে!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন