শুক্রবারে জোজিলায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। সেদিন কোন গাড়ি যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না। পরিকল্পনা করার সময় এই ব্যপারটা খেয়াল রাখতে হয়। জোজি পাস পেরিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম লাদাখে, খানিকদূর এগিয়ে এন্ট্রি পোস্টে সারথী আসিফ গিয়ে গাড়ির নম্বর, কতজন আরোহী, কোথায় যাচ্ছেন ইত্যাদি লিখিয়ে এলেন। ক্রমশ এসে গেলাম দ্রাস। এই দ্রাস হল বিশ্বের দ্বিতীয় শীতলতম অঞ্চল, সাইবেরিয়ার ঠিক পরেই। যদিও জোজিলা পেরোনর পরেই অতিরিক্ত শীতভাব কমে গেছে, আর নেমেছে বৃষ্টি। আশেপাশের পাহাড় মাটি থেকে সবুজের ছোঁয়া উধাও। এমনিতে এ অঞ্চলে বৃষ্টি বিশেষ হয় না, বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল তো। কিন্তু বৃষ্টি যেন আমাদের পিছন ছাড়ছেই না। সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম জলের ফোঁটাগুলো অনেকসময়ে পড়ার আগেই জমে গিয়ে ফ্লারিজ সৃষ্টি করছে, সামনেটা ধূসর অন্ধকার।
https://photos.google.com/album/AF1QipMt1adHItu96KIjId6-qRcBvzk0HL0yizg6y7Q/photo/AF1QipO_FofUmL984n5v81HhbHYg7sYOUjJuNQcfqrA ধুসর পাহাড় বিষ্টি বিষ্টি দ্রাস শহর পেরিয়ে কিছুদূর এগোতেই বৃষ্টি উধাও, আকাশ প্রায় পরিস্কার, দিব্বি সুজ্জিমামা কটমট করে তাকাচ্ছেন। কার্গিল ওয়্যার মেমোরিয়ালের বেশ কিছুটা আগে রাস্তার পাশের এক বড়সড় খাবার দোকানে থামা হল মধ্যাহ্নভোজ সারতে। আমি তো ভেবেই এসেছি মোমো আর ম্যাগি দিয়ে গোটা যাত্রাপথের মধ্যাহ্নভোজ চালাবো। সমুদ্রতল থেকে যত বেশী উচ্চতায় যাওয়া হয়, খাবার ব্যপারে ততই সতর্ক থাকতে হয়। পেট পুরো ভর্তি বা পুরো খালি রাখতে নেই, সবসময় যেন কিছুটা ভরা থাকে। খুব তেলমশলার খাবারও খাওয়া ঠিক নয়। সেদিক থেকে এই দুটোই খুব নিরাপদ খাবার। তো এরাও শুদ্ধ শাকাহারি ধাবা, একপ্লেট ভেজ মোমো অর্ডার করে বাইরে এসে বসি। সমরেশদা দেখলাম কট্টর সিঙাড়াভক্ত। সিঙাড়া দেখেই উনি আর কোনদিকে না তাকিয়ে সিঙাড়া অর্ডার করলেন।
হাই অলটিচ্যুডে যাবার সময় আরেকটা জিনিষ খেয়াল রাখতে হয়, সেটা হল সারাক্ষণ অল্প অল্প করে জল খেয়ে যাওয়া, প্রতি আধঘন্টায় এক চুমুক আমার জন্য ঠিক মাপ। তো সেই সকালে বেরিয়ে এতক্ষণ ধরে জল খেয়ে খেয়ে বাথরুমে যাওয়া প্রয়োজন। ওয়্যার মেমোরিয়ালেও নিশ্চয় বাথরুম পাওয়া যাবে, কিন্তু আমার আহমদনগর আর্মি ক্যান্টনমেন্টের লেডিজ টয়লেটের বিভীষিকা মনে পড়ে যাওয়ায় ধাবা সংলগ্ন ড্রাই টয়লেটই বেশী নিরাপদ মনে হল। তা গেলাম। দোকানের বাইরে জনা দুয়েক শালওলা শাল, ফিরন, সালোয়ার কামিজের মেটিরিয়াল, টুপি, কার্পেটের পসরা নিয়ে বসে আছেন। আমাদের দেখেই তাঁরা খুলে দেখাতে উৎসুক। সবই নাকি হাতে তৈরী। আড়চোখে দেখে তা অনশ্য মনে হল না, দিব্বি মেশিন এম্ব্রয়ডারি। কিন্তু আমরা তো কিছু কিনবোনা। ওঁরাই বললেন এখন ট্যুরিস্ট প্রায় নেইই, সে অবশ্য আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
কার্গিল ওয়্যার মেমোরিয়ালে ঢোকার জন্য কোন এন্ট্রি ফি নেই। তবে কোন একটা ফোটো আইডি লাগে, আধার বা ভোটার আইডি। ব্যাগ ট্যাগ সঙ্গে নেবার নিয়ম নেই, তাই পকেটে ফোন ভরে ব্যাগ রাস্তার উল্টোদিকে পার্কিঙে রেখে এসেছি। ফোটো আইডির কথা জানা ছিল না। ফোনেও সেই মুহূর্তে নেটওয়ার্ক নেই যে বের করে দেখাবো। অগত্যা আমরা তিনজনে আবার পার্কিঙে ফেরত গিয়ে যে যার আইডি নিয়ে এলাম। প্রথমে একজন আমাদের ভেতরে কোথায় কোথায় ছবি তোলা যাবে, কী কী করা যাবে তার তালিকা দিলেন। যেটা কানে লাগল, ভেতরে কোথাও নাকি বসার নিয়ম নেই। কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন তাহলে কী বিধান কে জানে। আশা করি তখন ওঁরাই বসতে দেবেন। মেমোরিয়াল প্রাঙ্গনে ছবি তোলায় বাধা নেই। তবে মিউজিয়ামের ভেতরে তোলা নিষেধ।
ওয়্যার মেমোরিয়াল গেট জাতীয় পতাকা যে তীক্ষ্ণ চুড়াকে পয়েন্ট করছে ওটাই টোলোলিং টপ শ্রীনগর লেহ হাইওয়েতে জোজিলার দিক থেকে আসতে কার্গিল শহরের ৫০ কিলোমিটার আগে ১৯৯৯ এর কার্গিল যূদ্ধজয়ের স্মৃতিসৌধ হিসেবে এই ওয়্যার মেমোরিয়াল তৈরী করেছে ভারতীয় সেনা। যে কোন সেনা পরিচালিত জায়গার মতই গোটা চত্বরে অপুর্ব সুন্দর ফুলের বাগান করা। মিগ২১ ফাইটার প্লেন আর বোফর্স কামান সাজানো। জাতীয় পতাকার ঠিক পেছনে যে খোঁচামত পর্বতশৃঙ্গ দেখা যাচ্ছে ওটাই সেই বিখ্যাত টোলোলিং টপ। মিউজিয়ামের ভেতরে বেশ কয়েকজন জড়ো হলে একজন এসে কার্গিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, গতিপ্রকৃতি, বিভিন্ন সেক্টরে বীরদের গল্প শুনিয়ে ছবি, মডেল দিয়ে বুঝিয়ে দেন। পাকিস্তানি সেনার থেকে বাজেয়াপ্ত করা বন্দুক, মেশিনগান উলটো করে ঝোলানো আছে দেওয়ালে, বাজেয়াপ্ত করা পাকিস্তানি পতাকা উলটো করে টাঙানো – ভারতের জয়ের স্মারক।
মিগ২১ বোফোর্স বিজয়ীপক্ষ নাকি সবসময় বিজিতের বাজেয়াপ্ত করা অস্ত্র, পতাকা উলটো করে মাটির দিকে মুখ করে টাঙিয়ে রাখে বললেন। যদিও আর কোথাও এরকম রাখা হয় বলে শুনিনি। মিউজিয়ামের দ্বিতীয় হলে ক্লে, বালি, থার্মোকল দিয়ে গোটা দ্রাস বাটালিক সেক্টরের মডেল বানানো আছে। কঠিন যুদ্ধের স্পটগুলো, যেমন টোলোলিং টপ, টাইগার হিল, বাটরা টপ ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখানো ও বোঝানো। কার্গিল যুদ্ধের ওপরে প্রকাশিত বিভিন্ন বই, সিনেমার ডিভিডি সাজানো আছে। আর রয়েছে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনাদের ছবি, তাদের লেখা শেষ চিঠির ফোটোকপি, ব্যক্তিগত ব্যবহারের কিছু জিনিষপত্র। নিতান্ত বাচ্চা বাচ্চা সব ছেলে – ১৭ থেকে ২৫ এর মধ্যে বয়স, কেমন অকাতরে মরে গেল আর যে বুড়ো পাকামাথারা যুদ্ধ বাধায় তাদের পাতের মাটন হুইস্কি দিব্বি ঠিকঠাক। একগাদা মন খারাপ নিয়ে বেরিয়ে খানিক এদিক ওদিক ঘুরে গাড়িতে ফেরত।
রুক্ষ পর্বতশ্রেণীর মাঝে নদীকে ঘিরে একফালি সবুজ শ্রীনগর লেহ জাতীয় সড়ক বরাবর কিছুদূর এগোতে পাশ থেকে সঙ্গ নেয় দ্রাস নদী। দুপাশের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী সম্পূর্ণ ন্যাড়া, বাদামী খয়েরি রয়েরি রঙ, কোথাও আলগা মাটি পাথর। কিন্তু নদীর দুপাশ একেবারে ঘন সবুজ গালিচা বিছানো। মূলত দেওদার গাছই বেশী চোখে পড়ল। কোথাও কোথাও ছোট ছোট খেত, অল্প কয়েকটা মাটির বাড়ি। রূপম আগেই বলেছিলেন ওয়্যার মেমোরিয়াল আর কার্গিল শহরের মাঝামাঝি কোথাও একটা দূরের ঘন সবুজ গাছের মধ্যে একটা মসজিদের ঝকঝকে সোনালি গম্বুজ দেখা যায়, সে নাকি অদ্ভুত সুন্দর লাগে দেখতে। জায়গামত সারথিকে বলে গাড়ি দাঁড় করিয়েও দিলেন। হুড়মুড়িয়ে নেমে দেখি সত্যিই বড় সুন্দর। চারিদিকে বাদামীর নানা শেডে উঠে যাওয়া সারি সারি পাহাড়, অনেক নীচে এক নদীকে ঘিরে ঘন গাঢ় সবুজ উপত্যকা, আর তার মাঝখানে ঝকঝকে সোনালী গম্বুজ আর তিনটে মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক মসজিদ।
কারকিৎচু উপত্যকা - মসজিদ-ই-শরীফ বেলা প্রায় সাড়ে তিনটে, আকাশে এলোমেলো কিছু মেঘ ওদিকের কোণটা ছায়াছায়া করে রেখেছে আর একপাশ থেকে আসা প্রখর সূর্যকিরণ পড়ে সোনালী গম্বুজ আর মিনার যেন জ্বলছে। গোটা দৃশ্যটা মনে হচ্ছে ভার্মিয়ের আঁকা কোন ছবি, শুধু থ্রি ডাইমেনশানাল এই যা। এমন অপার্থিব আলোমাখা দৃশ্যকে ধরে রাখবে এমন ক্যামেরা আজও তৈরী হয় নি। তবু কিছু ছবি তো তুলতেই হয় যাতে পরে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে এই মুহূর্তটায় ফিরে যাওয়া যায়। টিপিকাল ট্যুরিস্ট স্পটের বাইরে অপরূপ এই দৃশ্যটা দেখানোর জন্য রূপমকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু তিনখানা মিনার কেন? বরাবর তো মসজিদে চারটে মিনারই দেখেছি। আসিফভাইকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল শিয়া মসজিদে তিনখানাই মিনার থাকে। এই অঞ্চলে শিয়া মুসলমানের প্রাধান্য বেশী তাই পরেও আরো কিছু তিন মিনারওয়ালা মসজিদ দেখেছি।
মসজিদ-ই-শরিফ - ক্লোজ আপ কিন্তু ওই মসজিদের নাম জায়গার নাম কিছুই জানা গেল না তখন। ফিরে এসে বিস্তর খোঁজাখুজি করে বের করলাম মসজিদের নাম মসজিদ-ই-শরীফ, জায়গাটা হল কারকিৎচু উপত্যকা। ট্যুরিস্টদের গন্তব্য হিসেবে এই উপত্যকা এখনো সেভাবে পরিচিত নয়। নিতান্ত অ্যাডভেঞ্চারাস বাইকার ট্রেকাররা কেউ কেউ গেছেন। টেম্পো ট্র্যাভেলার ভর্তি করে করে ট্যুরিস্টের দল গিয়ে হাজির হওয়ার আগেই কারকিৎচু উপত্যকা থেকে একবার ঘুরে আসতে হবে। সম্ভবত পাকিস্তান সীমানার খুব কাছাকাছি হওয়ার ফলে এই অঞ্চলের বিস্তারিত গুগল ম্যাপ পাওয়া বেশ কঠিন। কাগজে ছাপা ম্যাপ যে খানদুই কিনে এনেছি তাতেও কারকিৎচু উপত্যকা প্রায় নেইই। যাই হোক সেসব পরে দেখা যাবে, আপাতত আর মিনিট কুড়ির মধ্যেই আমরা গিয়ে পৌঁছালাম কারগিলের রয়্যাল কার্গিল হোটেলে, সুরু নদীর একদম গা ঘেঁষে।
সুরু নদী - হোটেলের ব্যালকনি থেকে কার্গিল শহরটা বেশ ঘিঞ্জিমত, ছয় সাততলা উঁচু উঁচু হোটেল, বেশ কিছু ব্র্যান্ডের জামাকাপড়, জুতো, খাবারদাবারের দোকান চোখে পড়ল। আমাদের হোটেল অবশ্য সেসব ভীড়ভাট্টা কাটিয়ে কার্গিলের বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক ইকবাল ব্রীজ ছাড়িয়ে একটু পরে সুরুনদীর ওপরে একটা ছোট্ট ব্রীজ পেরিয়েই ডানদিকে। হোটেলটা বেশ বড়সড়। ঘর অতি চমৎকার। কিন্তু সবচেয়ে ভাল হল ঘর লাগোয়া ব্যালকনিটা, একদম নদীর উপরে। ব্যালকনির দরজা খুললেই খরস্রোতা সুরুর বয়ে চলার আওয়াজ কান জুড়িয়ে দেয়। আমাদের ঘর ছিল রাস্তার লেভেলেই। নীচে আরো দুটো লেভেল আছে, উপরে দুটো। সবচেয়ে নীচের লেভেলে সোফা, চেয়ার দোলনা দিয়ে সাজানো বসার জায়গা, পাঁচিলের ওপাশেই নদীর কলকল ছলছল। ঘন্টা দুই আড়াই ব্যালকনিতে আয়েশ করে বসে নদীর গান শুনে, বয়ে যাওয়া দেখেই কেটে গেল।
আয়েশ সন্ধ্যের দিকে ঘর থেকে বেরোলাম কফি টফি কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখতে। তো দেখা গেল গোটা হোটেলে গেস্ট আমরা চারজন আর সার্ভিস দেবার জন্য একজনই আছেন। রিয়াজ, এঁর কথা বিশেষ করে বলতে হয়। গাড়ি থেকে মালপত্র নামিয়ে ঘরে পৌঁছে দেওয়া থেকে জলের বোতল তোয়ালে ইত্যাদি ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নেওয়া, রান্না করা, খাবার পরিবেশন থেকে বাসনপত্র পরিস্কার করা সবই এই রিয়াজ হাসিমুখে করলেন। আমাদের মালপত্র আমরাই টেনে নিচ্ছি দেখে খুব ব্যস্ত হয়ে দৌড়ে এসে টেনে নিলেন। রাত্রে আইসক্রিম বানিয়েছিলেন, বৌদি খান না শুনে বেশ দুঃখিত হলেন। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঠিক যেন আপ্যায়ন হচ্ছে না বলে ভাবছেন। এখানে এবং এর পরেও লাদাখের অন্যত্র দেখেছি অতিথি আপ্যায়ন ব্যপারটা এঁরা এমন আন্তরিকভাবে করেন যেমনটা আর কোথাও দেখি নি।
তা কফির খোঁজে গিয়ে বোঝা গেল রিয়াজ হোটেলে নেই, বাইরে কোথাও গেছেন। সম্ভবত বাজার করতে। ইতোমধ্যে এলাকার ভৌবাবুরা হোটেলের বাইরে জমা হয়েছেন নতুন অতিথিদের দেখতে। বেরিয়ে তাদের সাথে একটু গল্পস্বল্প করে ভেতরে এসে বসার পরে দেখি হোটেলের পো্ষ্য বেড়াল কাচের দরজার এপাশ থেকে পিঠ ফুলিয়ে গরগর করছে। বাকী ভৌবাবুরা অন্য হোটেলে খবরাখবর নিতে চলে গেলেও একজন দরজার বাইরে বসেই রইলেন আর সামান্য নড়াচড়া দেখলেই ল্যাজ ট্যাজ নেড়ে একশা। এঁকে ব্রিটানিয়ার নতুন বিস্কুট পেয়ারা-লঙ্কা ক্রিম খান দুই দিতে ইনি সেটা এতই পছন্দ করলেন যে পারলে চাতালের সিমেন্ট টিমেন্ট শুদ্ধু চেটে সাফ করেন। পুরো প্যাকেটটাই অগত্যা দিলাম। রিয়াজ ফিরলেন এবং অত্যন্ত দামী গাড়িখানার জানালার কাচ না তুলে, লক না করেই জাস্ট দরজা বন্ধ করে ভেতরে চলে এলেন।
"Hey hooman come pet me " "তবে রে পাজি (কুকুর) ইস্টুপিড " সন্ধ্যের আবছায়া ঘোর হলে ... রূপমের কাছে শুনলাম গাড়িখানা নাকি চাবি লাগানো অবস্থায় এরকমভাবেই বাইরে থাকে। অন্যান্য হোটেল বা বাড়িতেও একইরকম। লক টকের প্রয়োজন ওখানে হয় না। রিয়াজের রান্নার হাতটাও চমৎকার। রাতের খাওয়া ডাল তরকারি চিকেন সহযোগে দিব্বি হল। শেষপাতে স্ট্রবেরি আইসক্রিম। ঘরে ফিরে আবার ব্যালকনি। নদীর ওপারে একটাই বাড়ি। আর একটা আধা তৈরী হওয়া হোটেল। ব্রিজের মুখে একট বেখাপ্পা বড় ফ্লাডলাইট। ওইটে না থাকলেই সবচেয়ে ভাল হত। কত গল্পই যে বলে যায় সুরু নদী ... রাত বারোটা অবধি বসে শুনে ঘুম। ভোর হল এক মোটামুটি ঝকঝকে সকালে। আকাশ নীল, তবে মেঘ আছে বেশ কিছু। ঝটপট তৈরী হয়ে নদীর কাছে, ব্রীজের উপরে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যে সমরেশদা বৌদিও আসেন। খানিক হাঁটাহাটি করে ফিরে প্রাতরাশ খেয়ে বেরোনর জন্য তৈরী আমরা। আজকের গন্তব্য লামায়ুরু হয়ে লেহ।
সকাল বেরোতে অবশ্য আরেকটু দেরী হল কারণ আসিফভাই তৈরী ছিলেন না। জোজিলার সাড়ে এগারো হাজার ফিটের পর কার্গিল বেশ একটু নীচুতে, ৮৭৮০ ফিট। আজ থেকে আমাদের ওঠা শুরু হবে, এর পরে আর দশ হাজার ফিটের নীচে থাকা হবে না হিমাচলে না নামা পর্যন্ত। এখানে বলে রাখি কার্গিলে না থেকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে গারকোনে থাকা যেতে পারে। গারকোন হল অ্যারিয়ান ভ্যালি বা আর্য্য উপত্যকার একটা গ্রাম। শ্রীনগর থেকে সকাল সকাল বেরোলে আর জোজিলায় স্নো বাইকিং জাতীয় কোন অ্যাকটিভিটি না করলে বা জোজিলা কিছু সময় বন্ধ না থাকলে গারকোন অবধি সহজেই পৌঁছানো সম্ভব। রাস্তাঘাট এদিকটায় অসম্ভব ভাল। আর অ্যারিয়ান ভ্যালীর সৌন্দর্য্য, বাসিন্দাদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য অবশ্যই দেখার মত। আমার মতে কার্গিলে না থেকে গারকোনে থাকাই ভাল। যাক সে যখন যাব তখন ওখানকার কথা লিখব, আপাতত লেহ যাওয়া যাক।