এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ছেঁড়াকাঁথা

  • ছেঁয়াবাজীর ছলনা  - ২৬ 

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ছেঁড়াকাঁথা | ২৯ মে ২০২৫ | ১৩০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • নাইন টেনে পড়বার সময়ই বড়দের বই পড়বার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞাটা খানিক আলগা হয়ে যায়, খানিকটা ছায়াবীথিদি আর পদ্মাদির জন্যই বলতে হবে। এই দুজনই টিচার্সরুমে বিশেষভাবে আমার ভাষা ও শব্দচয়নের প্রসংশা করেন। আমি অব্শ্য সেসব জানতাম না, একদিন মা শুনি দাদাকে বলছে আমার ঐ সমানে গল্পের বই পড়ে যাওয়ারও কিছু উপকারিতা আছে। উপকারিতা বা অপকারিতা জানি না, ছাপা অক্ষর সত্যিই আমার বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। ঐ অক্ষরগুলোই ভুলিয়ে দেয় সমস্ত ক্ষোভ, রাগ, ছোটখাট অপ্রাপ্তির হিসেব। নিষেধাজ্ঞা আলগা হওয়ার অর্থ অনেক বই এখন সবার সামনেই পড়তে পারি। অঙ্কখাতায় লুকিয়ে, টেস্ট পেপারের মত মলাট দিয়ে পড়তে হয় না। আর একটা সুবিধে হল মা এখন স্কুলের লাইব্রেরী থেকে অনেক বই আনে, সেগুলোও পড়তে পারি। আবার বড়মামা কোন্নগর পাবলিক লাইব্রেরী থেকে যেগুলো আনে সেগুলোও প্রায় সবই পড়তে পারি। পাবলিক লাইব্রেরীতে তিনটে কার্ড, দাদু ছোটমামা আর বড়মামার নামে, তাতে তিনটে বই আনা যায়।

    ছোটমামা সেই কবে যখন এখানে থাকত তখন নিজের আর দাদুর নামে দুটো কার্ড করিয়েছিল। পরে মেজমামারা কুচবিহার থেকে এসে কিছুদিন ছিল তখন মেজমামা একটা করায়। সেটা আবার পুর্বাশায় ফ্ল্যাট কিনে চলে যাওয়ার সময় বড়মামার নামে ট্র্যান্সফার করিয়ে দিয়ে যায়। বড়মামা অফিস থেকে এসে লাইব্রেরী যায়। চেষ্টা করে খুব মোটামোটা দেখে বই আনতে, যাতে একমাসের মধ্যে আর যেতে না হয়। এমনি করেই আমার পড়া হয়ে যায় নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘তালপাতার পুঁথি' বিমল মিত্রের ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম', 'সাহেব বিবি গোলাম' প্রমথ নাথ বিশীর ‘লালকেল্লা', ‘কেরী সাহেবের মুন্সী' চাণক্য সেনের ‘পুত্র পিতাকে' আশুতোষ মুখার্জীর ‘আনন্দরূপ' নীহাররঞ্জন গুপ্তের কালো ভ্রমর, মৃত্যুবাণসহ অনেকগুলো কিরীটি রায়ের গল্প। এখানে একটা মজা হত, মা জিগ্যেস করত কী বই পড়ছিস? কার লেখা? আমি হয়ত বললাম নীহার গুপ্ত, মা বলবে বড়দের বই? আমি বলতাম না না সেই যে ‘তালপাতার পুঁথি’ সেই অনেকদিন আগেকার ইংরেজ শাসন শুরুর সময়কার কলকাতার গল্প সেইরকম। মা'ও অমনি শান্ত হয়ে মেনে নিত। আমি বুঝে গেছি ‘বড়দের বই’ মানে যে বইয়ের মূল কাহিনী প্রেমনির্ভর। তাই ওটুকু বাঁচিয়ে বলতাম।

    আসলে তখন মা'র পক্ষে আর গল্পের বই পড়ার সময় বের করা সম্ভবই ছিল না, ফলে যাচাই করা সম্ভব নয়। এদিকে স্কুলের দিদিমণিদের কাছে শুনেটুনে খুব একটা আর বারণও করতে চায় নি। তো, এইভাবেই আনন্দরূপ দেখিয়ে পড়ে ফেলি ‘নগর পারে রূপনগর', ‘পরকপালে রাজারানী', নারায়ন সান্যালের শার্লক হেবোর গল্প দেখিয়ে পড়ে ফেলি ‘দন্ডক শবরী' আর সেইটে দেখিয়ে আবার ‘হংসেশ্বরী’।  বড়মামা একবার নিয়ে এল মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’। আহা সে কি বই, সেই থেকে সমানে খোঁচাই বড়মামাকে মুজতবা আলীর আরো বই আনবার জন্য। বড়মামা গিয়ে অত খুঁজতে চায় না, কাউম্টারে যে বইগুলো থাকে তার মধ্যে থেকেই নিয়ে আসে আর এমনি করেই বারবার আনা হয় ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম', এদিকে বিমল মিত্তিরের লেখা আমার একেবারেই ভাল্লাগেনা। অনেকদিন পরে এনে দেয় মুজতবা আলীর ‘শবনম' আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সোনালী দুঃখ’। দুটো  বইই  বেশ বাজে লাগে। ফলে আবার নামিয়ে আনি দাদুর আলমারী থেকে বাঁধানো মাসিক বসুমতী। আবার পড়ে ফেলি বারি দেবীর ‘বাতিঘর'।

    এও কেমন যেন ন্যাকাটে গল্প, তবু এটা থেকেই লালকুঠী সিনেমা হয়েছে। তাই আরেকবার মন দিয়ে পড়ে ফেলি। লালকুঠীর গল্পটা মনাই আমাকে বলেছে আর ‘কারো কেউ নই গো আমি, কেউ আমার নয়'গানটা তো প্রায় সব পুজোর সময় মাইকে একবার করে বাজবেই। বাঁধানো বসুমতীতেই পড়েছিলাম আশুতোষ মুখার্জীর ‘কাল তুমি আলেয়া' আর ‘পঞ্চতপা', পড়েছিলাম ‘নদী থেকে সাগরে'। কার লেখা মনে নেই, কিন্তু এই গল্প থেকেও সিনেমা হয়েছিল। আমাদের বিকেলের আড্ডায় আমি মনাইকে বই পড়া গপ্প বলতাম আর ও আমাকে সিনেমার গপ্প বলত। সেই সময় মনাই আমাকে এই গল্পটা বললে আমি চিনতে পেরেছিলাম। বড়মামা প্রায়ই আনে সুবোধ চক্রবর্তীর ‘রম্যানি বীক্ষ্য'র বিভিন্ন খন্ড। রম্যানী বীক্ষ্য পড়তে তখন বেশ ভাল লাগত। একে তো কত কত বেড়াতে যাওয়ার জায়গার গল্প, তার সাথে আবার গোপাল স্বাতীর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম। কিন্তু খান আষ্টেক বই পড়ার পরে গোপাল স্বাতী আর গোপালের মামা মামীমাকে ভারী একঘেয়ে লাগতে লাগল।

    ততদিনে সুবোধ চক্রবর্তীরই লেখা ‘শ্বাশ্বত ভারত' সিরিজের ছয় খন্ড জিজির বাড়ী থেকে এনে পড়া হয়ে গেছে। আর অসুরদের প্রতি করা সমস্ত অন্যায় পড়ে টরে দেবতাদের ওপরে বিরাগ বিতৃষ্ণা প্রায় ঘেন্নাই আরো বেড়েছে। এদিকে আমাদের স্কুলেও যে লাইব্রেরী আছে সেটা আমরা কেউ জানতামই না। এখন মা মাঝেমধ্যে বই নিয়ে আসে তাতেই জানতে পারি কাঠের আলমারীতে তালা দেওয়া থাকে বইয়েরা। প্রতিবছর যখন বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের জন্য বই কিনতে যান দিদিমণিরা ত্খনই পাঠাগার খাতে বরাদ্দ টাকা দিয়েও বই কিনে আনা হয়। তাহলে সেই বই ছাত্রীদের কখনও দেওয়া হয় না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মা বলে ‘হ্যাঃ ঐ ভাগাড়ের স্কুলে আবার লাইব্রেরীর বই? পড়বে কে? তোর অসুবিধে কী? তোকে তো দিলাম এনে’। শুনে ধাক্কা খাই, জানি এই নিয়ে আরো কথা বললে মা রেগে যাবে। কিন্তু তবু চুপ করতে পারি না বলে ফেলি ‘কিন্তু আমরা তো কেউ জানিই না যে এমন গল্পের বই আছে তাহলে আর পড়ব কী করে?' এইবারে মা সত্যি রেগে যায়, খুব জোরে ধমক দেয়। আমার মনখারাপ লাগে, খুব খারাপ।  নিজের জন্য, ক্লাসের সব্বার জন্য খারাপ লাগে।  মনে হয় ‘ভাগাড়ের স্কুল'এর তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা আমাদের চামড়ায় জ্বলুনি ধরিয়ে ধরিয়েই যাবে সারাটা জীবন। আমরা কেউ কিচ্ছুটি করতে পারব না।

    ক্লাস নাইনের পঁয়ষট্টিজনের ক্লাস থেকে কমে ক্লাস টেনে আমাদের ছাত্রীসংখ্যা হয় পঁচিশ। আগেই শুনেছিলাম খুব বেছে তোলা হয় টেনে, কারণ মাধ্যমিক দিতে তো আর ‘অগা বগাকে পাঠানো যায় না’। অগা বগারা নাইন অবধি উঠে গেল কী করে এ প্রশ্ন করার সাহস অবশ্য আমাদের হয় না। ক্লাস নাইনে অঙ্ক করাতেন শৈলদি। হাসিখুশী ছোট্টখাট মানুষটি, ছাত্রীরা কেউ বুঝতে পারে নি বললে ভারী বিচলিত হয়ে যেতেন, অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বোঝাতেন। ওঁকে ছাত্রীরাও কেউ তেমন ভয় পেত না। গোধুলী বা সমাপ্তির মত যারা এমনকি বাংলা ক্লাসেও মুখ খুলত না তারাও শৈলদিকে নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করত। বুঝতে না পারলে বলত। বাংলার ছায়াবীথিদি এমনিতে খুব হাসিখুশী, ক্লাসে অনেক গল্প করতেন, সকলের বাড়ীর খবরাখবর নিতে চাইতেন;  কিন্তু কথায় ছুরির ধার, যখন তখন হেসে হেসে অপমান করতেন মেয়েদের। মেয়েদের পোশাক, শরীর, বাড়ন্ত গড়নের দিকেও ছিল তাঁর তীক্ষ্ণ নজর।

    পদ্ম মাঝি, প্রচন্ড মোটাসোটা, নাইনে তার ওটা তৃতীয় বছর। এখনকার দিন হলে ওকে ‘ওবিস' বলত। পদ্ম নাকি  নেমন্তন্নবাড়ীর কাঠের ফোল্ডিং চেয়ারগুলোতে বসতে পারত না, বসলেই ভেঙে পড়ে যেত। ওকে ওর স্থুলত্ব নিয়ে ছায়াবীথিদি নিয়মিত বলতেন, এমনকি এও বলেছেন যে বিয়ের পর পদ্মের খুব অসুবিধে হবে। এখানে লক্ষ্যণীয় ছায়াবীথিদি নিজেও খুবই মোটা ছিলেন। ফলতঃ এটি তাঁর জীবন থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা কিনা সেই নিয়ে বাংলা ক্লাসের পরে ইলা, শীলা, সুস্নাতা, রীতা বসাকরা  আলোচনা শুরু করে। এদিকে আমি রীমা, রীতা মন্ডল ঠিক করে বুঝে উঠতে পারি না বিয়ের সাথে স্থুলত্বের বিরোধটা ঠিক কোথায় এবং কতটা বেশী। তবে পদ্ম বেচারী এমন সিঁটিয়ে যায় যে পরপর কয়েকদিন স্কুলেই আসে না। ইতিহাসের শান্তিদিও অবশ্য পদ্মকে রোগা হওয়ার চেষ্টা করতে বলেন কারণ তা না হলে মেদের ভারে ওর হার্টে চাপ পড়বে। শান্তিদির কথা শুনে পদ্ম করুণভাবে জানায় ও খায় খুবই কম আর এত মোটা বলে ওর মা'ও ওকে বেশী খেতে দেন না, কিন্তু তাও ও কিছুতেই রোগা তো হচ্ছেই না বরং আরো মোটা হয়ে যাচ্ছে।

    শান্তিদি ওকে ডাক্তার দেখাতে বলেন। পদ্ম নাকি মহামায়াকে বলেছিল ওর বাবা ওদের পাড়ার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলেন। কিন্তু তিনি নাকি একেবারে কিছু শুনতেই চান নি, খাওয়া কমিয়ে সকালে মাঠে দৌড়াতে বলেছেন। এদিকে দৌড়ানো তো দূরের কথা, একটু জোরে হাঁটলেই ওর ভীষণ হাঁফ ধরে যায়। আমাদের সাথে পাশ করতে না পারায় পদ্মকে টিসি নিতে বলা হয়, কারণ একই ক্লাসে তিন বছরের বেশী এমনকি আমাদের ভাগাড়পাড়ার স্কুলও রাখতে রাজী নয়। পদ্ম বা তার বাড়ীর লোক কেউই টিসি নিতে আসেন নি, শুনেছিলাম ও পড়া ছেড়ে দিয়েছে। কে জানে কোনওদিনই ওর অসুখ ধরা পড়েছিল কিনা!এমনিভাবেই আমাদের অবাক প্রশ্ন, দিদিমণিদের অবজ্ঞা, আরো অনেক টুকিটাকি খুশী, লোভ, হিংসে  নিয়ে আমরা পৌঁছে যাই ক্লাস টেন পেরিয়ে মাধ্যমিকের দোরগোড়ায়। ক্লাস টেনে আমরাই ছিলাম সরস্বতীপুজোর উদ্যোক্তা, প্রত্যেক বছর প্রত্যেক স্কুলেই তাই হয়। সরস্বতীপুজোর সময় অঞ্জলী দিতে হয় বাড়ীতে একবার আবার স্কুলে গিয়েও।

    বাড়ীতে আমি চেষ্টা করি না দেওয়ার, কিন্তু হয় না। মা জোর করে ধমক দিয়ে অঞ্জলী দেওয়াতে নিয়ে আসে। কিছুতেই মুখ দিয়ে বেরোয় না ‘না আমি অঞ্জলী দেব না’, বরং মুখ বুজে ফুল বেলপাতা হাতে নিই। একটাও মন্ত্র উচ্চারণ করি না বরং মনে মনে আওড়াই ‘মানুষই দেবতা গড়ে তাহারই কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর'। আবার ফুল বেলপাতা ছুঁড়েও দিই মূর্তির পায়ের দিকে। মনে মনে যা তীব্রভাবে অস্বীকার করে চলি মুখে কিছুতেই তার প্রকাশ হয় না বরং দিব্বি সকলের মনরাখা কাজগুলো আপাতভাবে চালু থাকে। মনে মনে বলি এই ঠাকুরটা আসলে কেউ নয় কিচ্ছু নয় আমরা ফুল বেলপাতা দিচ্ছি তাই। কিন্তু তাহলে বাকীদের বলে দিচ্ছি না কেন? মা বকবে? মারবে? বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে বলবে ‘জিজির বাড়ী চলে যা'  হ্যাঁ বলতে পারে। তাহলে আপাতত এসব না বলাই ভাল। যখন স্বাধীন হয়ে যাব, চাকরি করব তখন বলব।  তখন কেউ কিছু বলতে পারবে না। কিছু বললেও  তখন আর আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না।

    অতএব মনের মধ্যে তৈরী হয়ে ওঠে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আপাতত মিথ্যে ভান করে নেওয়া একটা চতুর মন। নিজের এই মনটাকে আমি নিজেও ঠিক পুরোটা বুঝে উঠতে পারি কি না কে জানে! এই মন আমাকে দিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে মাথায় ঠেকানোর মত একটা ভঙ্গী করায়, আমি দুধ-ঘী-মধুর সুস্বাদু তরল জিভ দিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে হাতটা পায়ের তলায় মুছে ফেলি। নিজের মনে অবিরাম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, সকলের চোখের আড়ালে এ আমার কেমন প্রতিবাদ? এ তো ভন্ডামি।  মন বলে হ্যাঁ ভন্ডামিই তো, ইস্কুলে ইরাদি যখন বলেছিল ‘তোমায় তো মা দেখিয়ে দেন ট্র্যানশ্লেসান' ত্খনও তো বলে ওঠো নি ‘না না মা তো কিচ্ছু পড়া দেখায় না আমাকে' সেইটে ভন্ডামি ছিল না? আমি বলি আহা তখন ঐটে বললে মা তো ভীষণ রাগ করত। মন বলে আর এইটে বললে বুঝি ক্যাডবেরি কিনে দেবে? আরও অনেক বেশী রাগ করবে। আমি বলি কিন্তু সত্যি যদি সরস্বতী জ্যান্ত হয়ে কম নম্বর পাইয়ে দেয়? মন বলে তাহলে তো বুঝেই যাবে আমরা মানুষরা বানাই না, আর ঠাকুররা রাগ করলে নম্বর কম হয়। আমি ব্যাজার হয়ে বলি তখন বুঝে কি ঘন্টা হবে আমার? মন খুশী হয়ে বলে বলে ধ্যুৎ চল তো আজ তো আর পড়াশোনা নেই, কেউ খোঁজ করবে না, এখন চুপিচুপি ওপরে গিয়ে প্রসাদ আর  নবকল্লোলের শারদীয়া সংখ্যার ছবিগুলো দেখি বরং।

    ক্লাস টেনে একটা নতুন জিনিষের সাথে পরিচয় হয়েছিল, প্রশ্নোত্তরের বই। স্কুলে বোধহয় কোনও দিদিমণি বলেছিলেন, সেই শুনে মা গিয়ে একদিন তিনটে মোটা মোটা বই কিনে নিয়ে এল, বাংলা, ইতিহাস আর ভূগোলের। বাংলা নিয়ে আমার তেমন কোনও ভয়টয় ছিল না, কিন্তু ইতিহাস ভূগোল নিয়ে বিলক্ষণ ছিল। ইতিহাস পড়াতেন শান্তিদি, এমনিতে মানুষটা ভারী ভাল ছিলেন। স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠানে তাঁরই মূল উদ্যোগ থাকত, গান নাচ, বিভিন্নরকম খেলার আয়োজন করানোর। কিন্তু পড়ানোর সময় শুধুই বই দেখে রিডিং পড়ে যেতেন। এখন যখন ভালবেসেই ইতিহাসের বই পড়ি, তখন ভাবতে অবাক লাগে এমন চমৎকার বিষয়টাকে কি জাদুবলে অমন কঠিন করে তুলেছিলেন উনি! ওঁর কি ইতিহাস পড়তেও ভাল লাগত না? ভূগোলের মীরাদি অবশ্য পড়াতেন যথাসাধ্য যত্ন করে। কিন্তু হাইস্কুলের মেয়েরা, যারা এর আগের দিদিমণি লীনাদির কাছে পড়েছে ফাইভ সিক্সে তারা বলে লীনাদির পড়া আর বাড়ী গিয়ে পড়তে হত না, সব এমনিই মনে থেকে যেত।

    লীনাদি বিয়ে হয়ে অ্যামেরিকা চলে যাওয়ায় মীরাদি আসেন। ওদের কাছে শুনে শুনেই হয়ত আমাদেরও মীরাদির পড়ানো তেমন ভাল লাগত না। এখন মনে করলে বুঝি অন্য দিদিমণিদের মত ঈষৎ তাচ্ছিল্য নিয়ে নয়, মীরাদি পড়ানোর চেষ্টা করতেন ওঁর যথাসাধ্য। কিন্তু কোনও কারণে অনুপস্থিত লীনাদির কাছে জনপ্রিয়তায় হেরে যাওয়ায় মেয়েরা ওঁর পড়া কেউ বোঝার চেষ্টাও খুব করত না। ঐ মোটা মোটা সাজেশান বইগুলোতে অনেক প্রশ্নোত্তর লেখা ছিল। কিন্তু একবার পড়া হয়ে যাওয়ার পর আমার আর দ্বিতীয়বার পড়তে ইচ্ছে করত না কোনোটাই। খালি গল্প শুনতাম কোথায় কে যেন এবিটিএ টেস্ট পেপার তিনবার করে আর এসটিএ টেস্ট পেপার তিনবার করে শেষ করেছে। কে যেন শুধু স্ন্বান খাওয়া আর অল্প একটু ঘুম ছাড়া সবসময় পড়ে। কে যেন সমস্ত গল্পের বই নিজে নিজেই তালা দেওয়া আলমারীতে তুলে দিয়েছে, শুধু পড়ে আর লেখে। কারা যেন বলে একটা স্টার আর দুই তিনটে বিষয়ে লেটার পাওয়া তো খুবই সাধারণ ব্যপার, মাধ্যমিক তো এখন নিরক্ষরতা দূরীকরণ পরীক্ষা হয়ে গেছে।

    আমি শুনে যাই, প্রাণপণে আরও বেশী করে পড়ার সময় বাড়ানোর চেষ্টা করি। আমার ভাল লাগে না পড়তে, যে গল্পগুচ্ছের ছোট সংস্করণটা বারবার উল্টেপাল্টে পড়তাম নাইনে, সেটা আর ছুঁতেই ইচ্ছে করে না। খালি মনে হয় জিজি ‘সেই সময়' কিনেছে, নিয়ে এসে পড়ে ফেলি। মা বলে রেখেছে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলে ঐ বই পড়তে পাব। জিজিকেও বলে রেখেছে ভুলেও যেন ঐ বই এখন কোন্নগরে না আসে। মা জানে না অনেকদিন আগে ছোটমামা যখন হিন্দমোটরে চাকরি করার সময় বাড়ীতে সাপ্তাহিক দেশ রাখত তখন আমি ‘সেই সময়’ পড়তাম লুকিয়ে লুকিয়ে। তারপর ছোটমামা রাঁচি চলে গেল, দেশও বন্ধ হয়ে গেল।  কিন্তু বিন্দুবাসিনী আর গঙ্গানারায়ণের কী হল সে তো আমার জানা হয় নি। খুব জানতে ইচ্ছে করছে যে এখন। আমি বই খুলে আকাশ পাতাল ভাবি। চুপ করে থাকতে দেখলে মা অনেকসময়ই বলে ‘জোরে জোরে পড়'। আমি যা হোক একটা বই টেনে নিয়ে যে কোন একটা পাতা খুলে জোরে জোরে পড়তে শুরু করি। একটা ছাইছাই রঙের ভয় ঘিরে থাকে সবসময়। আমি পারব না, এরা যা চাইছে সেই ‘মাধ্যমিকে প্রচন্ড ভাল রেজাল্ট করতে' নির্ঘাত পারব না।

    আমার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে রেজাল্ট বেরোনোর  দিনেই ভাইয়েরও ক্লাস ফোরের বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোয়। শিবচন্দ্র শিক্ষাভবন নয়, এবছর ওরা কালীতলা কলোনী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রেজাল্ট পায়। শিবচন্দ্র অ্যাফিলিয়েটেড নয়, তাই ক্লাস ফোরের শংসাপত্র সরকার অনুমোদিত স্কুল থেকে নিয়ে তবেই কোন হাইস্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে। বাড়িতে কথা হয় রাজেন্দ্র স্মৃতি বেশ খারাপ স্কুল, কোন্নগর হাইস্কুলও খুব একটা ভাল না।  প্রচুর বখা ছেলে দেখা যায়। নবগ্রাম বিদ্যাপীঠই ভাল, ছোটমামাও ওখান থেকেই মাধ্যমিক দিয়েছিল। মা একটু ভয় পায়, ভাই যদি অ্যাডমিশান টেস্টে চান্স না পায়, ও তো পড়তেই চায় না একেবারে। তবে  ভাইয়ের নাম অবশ্য প্রথম তালিকাতেই এসে যায়। সবাই একমত হয় শিবচন্দ্র শিক্ষাভবনে পড়াশোনা ভালই হয়। রিঙ্কুর জ্যাঠতুতো ভাই বিল্টু, বিদ্যাপীঠে ক্লাস সেভেনে পড়ে। মা গিয়ে কথা বলে আসে, ভাই রোজ ওর সাথেই স্কুলে যাবে আর ফিরবে। শিবচন্দ্রে ওদের কোন নির্দিষ্ট ড্রেস ছিল না।  বিদ্যাপীঠে  ক্লাস এইট  পর্যন্ত খাকি হাফপ্যান্ট সাদা শার্ট, নাইন টেন খাকি ফুলপ্যান্ট।

    ভাইটা আমার বড্ড লাজুক। সেই যে শিশু শিক্ষা সদনে ভর্তি হয়ে ক্লাসে বসতে চাইত না প্রথম বছরে, তারপরে সেটা কেটে গেলেও ক্রমশ অপরিচিত বা অনেকদিন দেখা না হওয়া কারো সামনে আসতে চাইত না। শিবচন্দ্রে ওর সাথেই আমাদের পাড়ার দুটো বাচ্চা মেয়েও পড়ত একই ক্লাসে। নীলাঞ্জনা আর চুমকি রোজ বিকেলে আমাদের বাড়ি আসলেই ভাই গিয়ে খাটের তলায় লুকিয়ে পড়ত। ওরা দুজনে ঢুকে টেনে বের করার পরে তিনজনে দিব্বি খেলত। প্রথমদিকে এটাকে খেলা ভাবলেও ক্রমশ দেখা গেল দাদা বা সেজমামা মেজমামারা এলেও ভাই গিয়ে লুকিয়ে পড়ছে, জোর করে টেনে হিঁচড়ে বের না করলে বেরোচ্ছেই না। মা রেগে উঠতে লাগল, বকাবকি, কানে মোচড়। ভাই কাঁদে না, খুব ব্যথা লাগলে শুধু চোখ দিয়ে জল পড়ে নিঃশব্দে, ও আরো গুটিয়ে যায়। পড়া আর স্কুলের সময় বাদ দিয়ে উঠোনে আপনমনে খেলে বেড়ায়। একটা ক্যাম্বিস বল বা মাঝারি সাইজের ঢিল নিয়ে দেওয়ালে ছুঁড়ে ফেরত এলে ব্যাট দিয়ে মারে। যতদিন গরু ছিল, বাছুর হত, বাছুরেরা ছিল ওর খেলার সঙ্গী।

    গরু বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরে হয় একা একা ব্যাটবল দিয়ে খেলত অথবা মাটি দিয়ে ঘরবাড়ি রাস্তা বানাত আমাদের রান্নাঘরের সিঁড়ির পাশের উঠোনে। ব্র্যাবোর্ন রোডের ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পরে জিজির বাড়ি যাবার সময় দেখে এসে সিঁড়ির পাশে ছোট্ট একটা ফ্লাইওভার বানালো, তাতে নারকেলের মুচি দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট ট্যাক্সি গাড়ি বানিয়ে বসিয়ে দিল। ভাইয়ের চোখও খুব তীক্ষ্ণ, অনেক দূর অবধি দেখতে পায়। আমার মত নিসট্যাগমাস পায় নি। নারকেল গাছে কাকের বাসার ভেতরটা দেখে বলত কী কী আছে। আমার খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ভাই বিকেলে আমার সাথে যেতেঁ চাইত, মা’ও যেতে দিত না, ‘মেয়েদের খেলায় তুই কি খেলবি?’ আমিও নিতে চাইতাম না। ভয় পেতাম, আমি তো ভাল দৌড়াতে পারি না, কেউ দলে নিতে চায় না, ভাইকে নিয়ে গেলে যদি আর খেলতেই না নেয়। আমার খেলা বন্ধ হওয়ার পরে ভাই নিজে কোনোদিনই কারো সাথে খেলতে গেল না। কে জানে হয়ত আমার সাথে তখন গেলে আস্তে আস্তে মানুষের সাথে মেশাটা ওর পক্ষে সহজ হত।   

    দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পরীক্ষা এসে শেষও হয়ে যায়। আমাদের সিট পড়েছিল হীরালাল পাল স্কুলে। সেই স্কুল যেখানে শুভ্রা রিঙ্কুরা রোজ  দল বেঁধে পড়তে যেত, সেখানে আমরা যাই পরীক্ষা দিতে। শুভ্রাদের সিট পড়েছে হিন্দমোটরের দেশবন্ধু গার্লসে। দুবেলা পরীক্ষা, আমার মর্নিং স্কুলের অভ্যেস, তিন চারঘন্টা পরেই মনে হয় এবারে তো ছুটি হয়ে যাবে, আর লিখতে ইচ্ছে করে না। দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষায় তো একেবারেই ইচ্ছে করে না লিখতে। হীরালাল পাল স্কুল আমাদের বাড়ী থেকে বেশ দূরে, সেই নবগ্রামের প্রায় শেষপ্রান্তে। তাই সকালে পৌঁছে দিয়ে আসা আর বিকেলে নিয়ে আসার জন্য মা ঠিক করে দিয়েছিল লক্ষ্মীদাদার রিক্সা। লক্ষ্মীদাদা আসলে  বুড়ীর মা-মাসির জামাই। ওর মেয়ে বুড়ীর বর, আগে নাকি ও-ও দাদুদের বাড়ী কাজ করত। বাইরের কাজ, উঠোন বাগান সাফ করা, গরুর কাজ, গরু দোয়ানো এইসব। পরে রিক্সা চালাতে শুরু করে। বড়মাইমা বলে লক্ষ্মীদাদার নাকি ভীষণ মুখ, মুখের ওপরে ঠাশঠাশ করে কথা বলে। এদিকে আমি দেখি লক্ষ্মীদাদা কথা প্রায় বলেই না, কিছু জিগ্যেস করলেও হুঁ হাঁ দিয়ে কাজ সেরে দেয়।  তবে কোনও  রিক্সাওলা অন্যায়ভাবে ঘাড়ের ওপরে এসে পড়লে মুখ ছুটিয়ে তাকে একেবারে মজা দেখিয়ে দেয়।

    টিফিনের সময় প্রতিদিন মা আসে একটা ডাব, মাখনলাগানো চারটে ক্রীম ক্র্যাকার বিস্কুট আর একটা সন্দেশ নিয়ে। ডাবটা খেতে আমার একদম ভাল লাগে না, কিন্তু মা শোনে না, খালি বলে 'ডাবে পেট ঠান্ডা হয় খেয়ে নে’। শেষ পরীক্ষার দিন সকালে অঙ্ক আর বিকেলে ঐচ্ছিক বিষয়, আমার তো বায়োলজি। টিফিনের সময় থেকেই শরীর একটু একটু খারাপ লাগে, মা'কে কিছু বলি না। আর তো তিনঘন্টা তারপরেই ছুটি ছুটি, তিনমাসের মত ছুটি। আজ  সারা সন্ধ্যে আমাদের পোস্তায় বসে মনাইয়ের সাথে গল্প করব। তার পরের কথা আর ভাবতে ইচ্ছে করে না। দ্বিতীয়ার্ধে প্রশ্নপত্র দেওয়ার পর পরই আমার গা গুলিয়ে ওঠে আর বসতে পারি না।  দৌড়ে বাথরুমের দিকে যেতে চাই, পারি না ... পরীক্ষাহলের সামনের বারান্দায় বমি  করে ফেলি। বমির দমকে বারান্দায়ই বসে পড়ি। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে, দোতলার বারান্দার মেঝে ফুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে। স্কুলে কোনওদিন এমন হয় নি আর অন্য স্কুলে এসে এ কি লজ্জা ছিহ্! লম্বা, কোঁকড়াচুল, কালো চশমাপরা রমা কাঞ্জিলালদি এসে বারবার বলেন সিকরুমে গিয়ে শুয়ে পরীক্ষা দিতে। আমি কিছুতেই রাজী হই না। বেঞ্চে বসে লেখার চেষ্টা করি, ছবি আঁকার চেষ্টা করি ...শেষঘন্টা বেজে যায় ... আর ছুট্টিইইইইইই|

    কর্মশিক্ষা পরীক্ষার দিন ইস্কুলে গিয়ে শুনলাম রীতা বসাকের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে!! সে আবার কি! এই আট দশদিনের মধ্যে কারো বিয়ে হয় নাকি? আর বিয়ে এখন? সে তো চাকরি করে তবে করতে হয়! ওমা রীতা সত্যি সত্যি কপালে মাথায় একগাদা সিঁদুর পরে হাতে অনেক চুড়ি শাঁখা পলা এইসব পরে পরীক্ষা দিতে এল। ওকে ঘিরে রইল কয়েকজন, কিসব ফিসফিস করে গল্প আর খি খি করে ওদের হাসি চলতে লাগল, আমাদের ঘেঁষতেই দিল না ধারেকাছে। কি যেন একটা গোপন জগত ওরা আমাদের থেকে আড়াল করে রাখল। রাখল তো রাখল ভারী বয়েই গেল, কর্মশিক্ষা আর শারীরশিক্ষা শেষ হতে না হতেই ছোটমামা এল রাঁচি থেকে আর মা'কে জিগ্যেস করল আমায় নিয়ে যাবে কিনা। আমি তো একপায়ে খাড়া। দিব্বি লাফাতে লাফাতে চলে গেলাম ছোটমামার সাথে। হাওড়া-রাঁচি-হাতিয়া এসপ্রেসের স্লিপার ক্লাসের আপার বার্থে শুয়ে শুয়ে আমি ব্লেড দিয়ে সীটের মধ্যে লিখি ‘হাতিয়ায় হাতি যায়' আর কি আশ্চর্য্য দেখো সেই কামরাতেই ফেরার সময়ও আমার সিট পড়ে, সেই আপার বার্থেই!! ছাইরঙের চামড়ার সীটের মধ্যে আমার সেই অ্যাঁকাব্যাঁকা লেখা ঠিক গোলছাপটার পাশেই।

    রাঁচিতে ছিলাম মাত্র এক সপ্তাহ, প্রথমে দারুণ ভাল লাগলেও তৃতীয় দিন থেকেই মন খারাপ লাগতে শুরু হল। একে তো ওদের ওখানে মাত্র দুটো বই পেলাম পড়বার। সেই বই দুটোই পাঁচ ছবার করে পড়া হয়ে গেল, তাও ছোটমামা আর বদলে আনে না।  একদিন সকালে উঠে ছোটমামার স্কুটারে চেপে আমরা গেলাম প্লেন দেখতে। রাঁচিতে ছোট্ট এয়ারপোর্ট  দিব্বি সামনে গিয়ে দেখা যায় প্লেন হুউশ করে উড়ে যায়, নেমে আসে। কিন্তু হুড্রু, জোনা, নেতারহাট কিচ্ছু দেখা হয় না, ছোটমামার তো অফিস আর ছোটমাইমা দোলনকে নিয়েই নাজেহাল হয়ে থাকে সারাদিন। মনে মনে ভারী ইচ্ছে হয় ওসব জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার, কিন্তু হয় না বেড়ানো। কেউ উল্লেখও করে না, আমিও বলতে পারি না কিছু। আমার খালি ফিরে আসতে ইচ্ছে করে, মনাইয়ের সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করে। এক সপ্তাহ বাদে ছোটমামারা শকুন্তলা কালীপুজোয় আসবে বলে ঠিক করে আর আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। রাঁচি থাকতে ছোটমামা বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি একদিন একলা একলা বেরোই রাস্তাঘাট, জায়গাটা  ঘুরে দেখতে, ছোটমাইমাকে বলেছিলাম ‘তুমি তো না করবে না, তাই বেরোব’।

    আমার কেমন যেন ধারণা হয়েছিল ছোটমাইমা বারণ করবে না, কিছু বলবে না। কিন্তু ছোটমাইমা আমাকে কিছু না বললেও ছোটমামাকে বলে দেয়। ছোটমামা কোন্নগরে এসে মা'কে নালিশ করে। আমার কথাও কিছুটা বদলিয়ে বলে আমি নাকি বলেছি ‘তুমি বারণ করলেও শুনবো না।‘  মানেটা তো বদলে গেল তাতে, মা’ও রেগে গেল খুব। কিন্তু আমার কিছু বলতে, আপত্তি করতে ইচ্ছে হয়  না। কথা বদলে দেওয়া নিয়ে সেই যবে থেকে কোন্নগরে এসেছি তবে থেকেই আমার সমস্যা হচ্ছে। একটা দুটো শব্দ বদলে দিলেই যে বাক্যের মানে বদলে যায় এটা  কেন যে এরা বোঝে না। আগে খুব রেগে যেতাম, চীৎকার করে আপত্তি করতাম।   আজকাল আমার আর আগের মত সকলের সাথে কথা বলতে, সবকথায় উত্তর দিতে ইচ্ছা হয় না, বরং চুপ করে দেখতে আর মনে মনে ভাবতে বেশ লাগে। আগে ছোটদি বাড়ি এলে সন্ধ্যেবেলায় ওর সাথে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করতাম। এখন হয় মনাইয়ের সাথে গল্প করি নয় ছাদে বা একতলার বারান্দায় চুপ করে বসে থাকি। ছোটদির সাথে আলাদা করে আর গল্প হয় না।  

    মা রাগ করে কেন বিকেলে ছোটদির সাথে গল্প করি না। আমার যে ভাল লাগে না। তাতে আরো রাগ করে, নিজের লোকেদের এরকম ভাবা খুব খারাপ। শকুন্তলা কালীপুজোর সময় জিজি আসে আর বলে এবার তাহলে আমার সাথে চল। আমি আবার একপায়ে খাড়া, একে তো কলকাতা, তায় জিজির বাড়ীতে এখন গাদা গাদা বই। তাছাড়াও সামনেই দুটো বাড়ী পরে তরুণ সমিতির লাইব্রেরী, সন্ধ্যে হলেই গিয়ে বই বদলে আনা যায়। আর ফিরতে চাইলেও অসুবিধে নেই, জিজিকে বললেই এসে ঠিক দিয়ে যাবে। কিন্তু সে তো পুজোর পরের দিন। পুজোর দিনে  জিজি ছাড়া বড়মাইমার দিদি যাঁকে আমি মাসিমনি বলি, সেও এসেছে। এরা সব্বাই উপোস করবে। শকুন্তলা কালীপুজোয় ঠাকুর আসে সূর্যাস্তের পরে আর বিসর্জন হয় পরেরদিন সূর্য ওঠার আগেই। পুজো শেষ হয় মাঝরাত পার করে, তারপরে হয় পাঁঠা বা মোষ বলি। রাত দশটার পরে বড়মামা গিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে আসে, তারপরে দিদারা সবাই জল খায়, সাবুমাখা খায়।

    সন্ধ্যেবেলা যখন ঠাকুর আসে মা’রা তখন কালীতলায় মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে। কোনবছর সেই সময় যেতে না পারলে বা ঠাকুর আগেপরে এসে গেলে মন্দিরের বাইরে লাইন দিয়ে দেখতে হয়। যে ঘরে ঠাকুর বসে তার পশ্চিমদিকের জানলা দিয়ে ঠাকুরের ডানপাশ দেখা যায়। পুজো তো দুপুরবেলাই মন্দিরে নাম ঠিকানা আর গোত্র লিখে জমা নিয়ে নেয়। আগের রাতের জলঢালা হয় খালি বেদীতে। সাধারণ ভক্তের জন্য ঠাকুর আসবার সময়ই একমাত্র পুরো মুখ দর্শন করা সম্ভব। তাই মা’রা খুব চেষ্টা করে ওইসময় দেখতে। এবারেও মা বড়মাইমা আর মাসিমনি গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দেখে এসেছে, ঠাকুরবাহকদের ছুঁড়ে দেওয়া সাদা বাতাসা কুড়িয়ে এনেছে। জিজি বলল অত ভীড়ে ধাক্কাধাক্কি হবে,যাব না বাপু পরে লাইন দিয়ে দেখবো। আমি চললাম জিজির সাথে। লাইন শুরু হয়ে গেছে প্রায় বাঞ্ছারাম মিত্র লেনের মুখ থেকে। মন্দিরের পাশে এসে প্রবল ভীড়ের চাপে আমার আর জিজির মাঝখানে কারা সব অচেনা মানুষজন ঢুকে গেল।

    মেয়েদের লাইনের ডানদিকে ঠিক পাশেই ছেলেদের লাইন, মাঝে দুই সারি বাঁশ দিয়ে আলাদা করা। ঠাকুরের জানালায় কুড়ি কি তিরিশ সেকেন্ডের বেশী কাউকে দাঁড়াতে দেয় না স্বেচ্ছাসেবকেরা, তাই দুটো লাইনই মোটামুটি এগোচ্ছে। এই সময়ই হঠাৎই বুকের ডানদিকে তীক্ষ্ণ একট ব্যথা, হলদেটে নখওয়ালা কুচকুচে কালো একজোড়া আঙুল, তর্জনী আর মধ্যমা, পাশের ছেলেদের লাইনের মানুষের দেওয়ালের মধ্যে সরু ফাঁক দিয়ে একটা  কবজি বেরিয়ে এসে সাঁড়াশির মত চিমটে ধরেছে বুকের মাংস। শাড়ি ব্লাউজ অন্তর্বাস ভেদ করেও চামড়ায় মাংসে তীব্র জ্বলুনি ছড়িয়ে যাচ্ছে। এত ভীড়, এত্ত এত্ত ভীড় যে নড়েচড়ে কোথাও সরতেও পারছি না। কয়েক সেকেন্ড বাদেই হাতটা সুড়ুৎ করে ফিরে গেল, মানুষের দেওয়ালটা আবার সলিড জমাট হয়ে গেল। আমাদের লাইনটা আবার এগোতে শুরু করল। আমি কেমন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, অনেকক্ষণ কোন কথা বলতে পারি নি, ঠাকুরও দেখি নি। পাশের লাইনটার দিকে তাকিয়ে বারেবারে বোঝার চেষ্টা  করছিলাম কে? কেন?

    প্রথমবার ভায়োলেটেড হওয়ার বিস্ময়, বিপন্নতাবোধ কাটার পরে হল প্রচন্ড রাগ। বাড়িতে কাউকেই বলতে পারলাম না, কেমন যেন মনে হল বললে আমাকেই বকবে, মারতেও পারে। অনেকদিন পর্যন্ত একলা একলা দাঁত কিড়মিড় করতাম আর মনে মনে ভাবতাম ওই আঙুলজোড়া শক্ত করে চেপে ধরে চীৎকার করলে হত। কিংবা ... কিংবা শক্ত করে ধরে রেখে প্রাণপণে কামড়ে ধরলে হত। মোটকথা শক্ত করে চেপে ধরলে লোকটা আড়াল থেকে বেরোতে তো বাধ্য হত। কিচ্ছু করতে না পারার অসহায়তা, রাগ বেশ অনেকবছর ছিল, যতদিন না এরকম আরেকজনকে দেদারসে পেটাতে পেরেছিলাম। বলব সেইকথা যথাসময়ে। তবে এর পরে কোনদিনই আর চুপচাপ চলে আসি নি। জিজির বাড়ীতে অগাধ স্বাধীনতা। মনের আনন্দে বই পড়ি, জিজি স্কুল থেকে এলে কোনো কোনোদিন রমেশ মিত্রর মোড়ে গিয়ে নাথ ব্রাদার্স বা তার পাশের রূপান্তর থেকে দুই একটা বই কিনেও আনা হয়। এইসময়ই আশাপূর্ণা দেবীর অনেক বই পড়া হয়।

    আশাপূর্ণা দেবীর গল্প নিয়ে একবার ভারী মজা হয়েছিল। তখন আমি ক্লাস টেনে  পড়ি, কি একটা উপন্যাস, মা স্কুলের লাইব্রেরী থেকেই এনে দিয়েছিল ‘বালুচরি' নাকি ‘বালুচর' নাম। সেই উপন্যাসের শেষে গল্পের প্রধান চরিত্র মহিলা, তাঁর তখন চল্লিশের উপরে বয়স, যাবতীয় সাংসারিক দায়িত্ব সেরে বিয়ে করতে যাবেন, তাঁর একখানি লাল বেনারসী পরে বিয়ে করবার বড় সাধ, সেই নিয়ে কোন কোন দিদিমণির সাথে যেন মতদ্বৈধ হয় আমার। যদ্দুর মনে পড়ছে প্রমীলাদি আর ছায়াবীথিদি। সবই অবশ্য মা'র মাধ্যমে, মা'ই এসে বলে ওঁরা বলছেন নায়িকা লাল শাড়ি পরতে চাইছেনা মোটেই। আমার একেবারেই উলটো মনে হচ্ছে, কিন্তু চাইলেই বা কি? বুঝি না ওঁদের আপত্তি কেন?  আমি প্রচুর চেষ্টাচরিত্র করে আশাপূর্ণা দেবীর ঠিকানা যোগাড় করে ফিরতি পোস্টকার্ড জুড়ে দিয়ে একটা চিঠি লিখেছিলাম পুরো বিবরণ দিয়ে। আর কি আশ্চর্য্য! তিনি সেই পোস্টকার্ডে উত্তর লিখেও পাঠিয়েছিলেন। উত্তরটা আমার পক্ষে হওয়ায় আমি মা'কে জোর করেছিলাম স্কুলে নিয়ে দেখাতে। সেই থেকে স্কুলেও আমার বেশ ডেঁপো মেয়ে বলে নাম হয়ে যায়।

    তা তখন স্কুল প্রায় শেষেরই দিকে আর ততদিনে বেশ টের পাচ্ছিলাম  আমার চারপাশে একটা অদৃশ্য বর্ম গড়ে উঠছে, যাতে ধাক্কা খেয়ে ঠিকরে যাচ্ছে সব টিটকিরি, ঠাট্টা, ব্যঙ্গ আর কটুবাক্য। কিন্তু আশাপূর্ণা দেবী যত পড়ি তত আমার দেখা চারপাশের সব লোকজনকে যেন আরো বেশী করে চিনতে পারি। কেমন একটা আবছা বোধ হয় সত্যবতীর মতই আমিও হয়ত কোনোদিন চেনা সক্কলকে ছেড়ে কোথাও একটা চলে যাব। চেনাপরিচিত আত্মীয়রা প্রায় কেউ ঠিক আমার স্বজন নয়, হতে পারবেও না। এই বোধ আমাকে গভীর শূন্যতা দেয়, একইসাথে একধরণের স্বস্তিও দেয়। খুব আস্তে ধীরে অনেক গভীরে কোথাও একটা শেকড় ছেঁড়া শুরু হয়।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৯ মে ২০২৫ | ১৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ২৯ মে ২০২৫ ২২:৩৪731748
  • কি রকম হঠাৎ শেষ হয়ে গেল।  মন খারাপ লাগে। বইয়ের দুনিয়ায় কেমন সুন্দর ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম আপনার সঙ্গে। যদিও আমি অন্য যুগের কিন্তু সেই সব বই পাওয়া ও পড়ার অভিজ্ঞতা আমাদের একই। আজ বুঝি ভাগ‍্যিস কি অল্প বয়েসে এতো পড়ে ফেলেছিলাম । আপনার মতন। নইলে কি আর সময় সুযোগ হতো। সাপ্তাহিক দেশ ! কড়ি দিয়ে কিনলাম পড়া - সে ভালো মোটে ও লাগে নি কিন্তু অপেক্ষা করতাম - এমন একটা জায়গায় তিনি শেষ করতেন! 
     
    আমাদের ছেলেদের মায়েরা কখনো টিফিন আনতেন না। জীবন সন্ধ‍্যায় এতো স্মৃতির সারি সাজানোর জন‍্য অনেক ধন্যবাদ জানাই। 
     
  • স্বাতী রায় | ২৯ মে ২০২৫ ২৩:৩৪731751
  • বিয়ের পর গল্প শুনেছি, আসানসোলে একটি ছেলের মা পরীক্ষা চলাকালীন দুপুর বেলা স্টোভ কড়াই নিয়ে এসে লুচি ভেজে ছেলেকে  খাওয়াতেন।
  • kk | 172.58.***.*** | ২৯ মে ২০২৫ ২৩:৪৯731752
  • পদ্মর জন্য মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। ভাইয়ের জন্যও। ভাইয়ের সাথে অনেক আইডেন্টিফাই করলাম তো আমি। আর শেষ লাইনটা! কত যে আধবোঝা, আবছা-বোঝা অনুভূতি আকার পায় তোমার এই লেখা পড়ে!
  • হীরেন সিংহরায় | ৩০ মে ২০২৫ ০১:৩৫731755
  • স্বাতী 
    ধন‍্য সেই মাতা যিনি লুচি ভেজে খাওয়াতেন! আমাদের বরানগরের হাঘরেদের সেই সৌভাগ্য হয় নি! 
  • b | 14.139.***.*** | ৩০ মে ২০২৫ ০৯:৪৫731760
  • ১। একটা আনরিলেটেড প্রশ্ন ঃ  কয়েকদিন আগে ভাটিয়ালিতে অ্যান্ডর লিখেছিলেন যে শরতচন্দ্রের নায়িকারা একেবারে ম্যাগো টাইপ। অথচ আমার মায়ের মতে, ওনার টিন এজে (এখন ৭৭ +  ) অন্যান্যদের তুলনায় শরৎচন্দ্রের লেখা দারুণ ভাল্লাগতো কারণ শরতবাবু   মেয়েদের অনেক উঁচু জায়গায় বসিয়েছেন, শুধু মেয়েদের কথাই বলেছেন, আর কেউ এভাবে বলে নি ইত্যাদি ইত্যাদি  । এদিকে আপনি বলছেন আশাপূর্ণা দেবীর কথা। 
    এই দুজনকে কমপেয়ার করার জায়গা আছে কোথাও ? 
    ****
    ২। আপনার লেখার মধ্যে একটা আপাত নির্লিপ্তি আছে । সেটা ঘটনাগুলোর বীভৎসতাকে বাড়িয়ে দেয়। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন