এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ছেঁড়াকাঁথা

  •  ছেঁয়াবাজীর ছলনা  - ২৩

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ছেঁড়াকাঁথা | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৩৫৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • ক্লাস এইটের ক্লাসরুমটা বেশ নিরিবিলি মনে আনন্দে হইহল্লা করলেও চট করে বিপদে পড়তে হয় না। বেড়ার ঘরের ক্লাস সেভেন সেই পেছনে স্কুলের মাঠে ঢুকতে, আর এদিকে টীচার্স কমন রুম, ক্লাস নাইন, সিক্স এগুলো সামনের দিকে আরো একটু এগিয়ে। ফলে দিদিমনি না আসা অফ পিরিয়ড কাটে আমাদের খেলাধুলো করে। অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া ছাদ অনেক উঁচুতে, তার অল্প নীচে জানলা, যাকে আসলে একটু বড়সড় ঘুলঘুলিই বলা যায়। সেখান দিয়ে পাশের কোনও বাড়ীর মস্ত অশ্বত্থ গাছের চকচকে সবুজ পুষ্ট পাতা দেখা যায়, শালিখ মা এসে একটা বাসা বানায় পেছনের দিকের ঘুলঘুলিটায়, তাদের পায়ের ধাক্কায় ছিটকে পড়া খড়ের কুচি, ছেঁড়া কাগজ, পাটের ফেঁসোয় ভরে যায় লাস্ট বেঞ্চ্। লাস্ট বেঞ্চে বসে শীলা বল, ছবি বল, শ্যামা, সুতপা। এরা রোজ বসে আর মাঝে মাঝে অন্য কেউ হয়ত জায়গা পায় নি আগের কোনও বেঞ্চে কিম্বা রেখাদির ক্লাসে বসে কোনও সেলাই শেষ করতে হবে, তখন গিয়ে বসে।

    শীলা বল নাকি ছবির চেয়ে তিন চার বছরের বড়, তবে দুই ক্লাসে দুবার ফেল করে ছবির সমান হয়ে গেছে। শীলা খুব ঝগরুটেও, চড়াই কিতকিত খেলায় বিপক্ষদলের সাথে বরাবর শীলার ঝগড়া লাগে। গোধুলির খুব নাচের শখ, গোধুলিকে শীলা বলে ‘তোকে যা বিচ্ছিরি দেখতে, তুই নাচলে কেউ দেখবে নাকি? যারা নাচে, তাদের সুন্দর দেখতে হতে হয়।‘ গোধুলি বড় বড় অসমান দাঁত বের করে হাসে আর বলে ‘আমি কত্থক শিখতে ভর্তি হচ্ছি।‘ অনেক পরে আমি অখন মোটামুটি ভদ্রস্থ চাকরি যোগাড় করতে পেরেছি, শুনেছিলাম গোধুলি নিজেদের বাড়িতে নাচের স্কুল খুলেছে। আরো কয়েকবছর পরে কোন্নগর ছাড়ার আগে গোধুলির নাচের স্কুলের বেশ প্রশংসা শুনেছিলাম। সমাপ্তিও রবীন্দ্রভারতী থেকে মিউজিকে মাস্টার্স করে  শ্বশুরবাড়িতে গানের স্কুল খুলেছে শুনেছিলাম। খবর দিয়েছিলেন শিখাদি। বলেছিলেন ‘কি ভাল শ্বশুরবাড়ি, গানের স্কুল খুলতে দিয়েছে। এদিকে তো পেটে বোমা মারলেও ক্লাসে একটা পড়া বেরোত না।‘

    আমাকে শীলা বলে ‘তোকে ঠিক ঐ হংসরাজের টিয়ার মত দেখতে, ঐরকম বাঁটলুমত, ঐরকম ট্যারাচোখে চশমা, বলেই ফিসফিসিয়ে গান ধরে ‘টিয়া টিয়া টিয়া অজ পাড়াগাঁয়ে থাকে।‘ আমি ‘হংসরাজ' সিনেমা দেখিনি, আমাদের সিনেমা দেখা মানা, তাই ঠিক বুঝতে পারি না টিয়া আসলে কেমন দেখতে।  ছবি খুব ফরসা ধবধবে, একটু হলদেটে নিখুঁত নিদাগ ত্বক, আমুল মাখনের তৈরী পুতুলের মত দেখতে। ছবিকে অনেকেই জিগ্যেস করে ‘শীলা কি তোর সৎবোন?' ছবি একটু লাল হয়ে বলে ‘না’। শীলা ছবিকে ‘ধলি' বলে ডাকে, ওটাই নাকি ছবির ডাকনাম। শীলার কাছেই আমরা শুনি রূপসী ছবি পড়াশোনায়ও ভাল, আজ পর্যন্ত কোনোদিন ফেল করে নি, তাই বাড়ীতে তার খুব আদর। কোনোদিন কোনো খুব বড়লোকের ছেলে ওকে বিয়ে করে নিয়ে গিয়ে সোনার খাটে বসিয়ে রাখবে। শীলার কথায় কোথাও পড়ে গিয়ে নুনছাল উঠে যাওয়া চামড়া আর রক্তের হালকা আঁশটে গন্ধ পাই আমি। 

    গরমের ছুটির কয়েকদিন আগে থেকে আমাদের টিফিনের পরে রোজ একটা দুটো করে পিরিয়ড খালি যেতে থাকে, হয় শিখাদি আসেন নি, নয়ত সুধাদি। রেখাদি মাঝেমধ্যে স্কুলে এলেও ক্লাসে আসেন না। এই পিরিয়ডগুলো আমরা হয় বাইরে নয় ক্লাসে বসে খেলি। বাইরে মানে অবশ্য মাঠে খেলা যায় না, ইরাদি দেখতে পেলেই চীৎকার করে বকেন, অন্য দিদিমনিরাও হয় নিজেরা বকেন নয়ত গিয়ে ইরাদিকে বলে দেন। আমরা টিফিনের সময় যে বেরোই, পরের ক্লাসটা ফাঁকা গেলে আর ক্লাসে আসি না, কমনরুমের পাশ দিয়ে পেছনের রাস্তায় পড়ে বাঁদিক ঘুরে মাস্টারপাড়ার দিকে চলে যাই। ওখানে অনেক অলিগলি, পুকুরপাড়, সেখানে দিব্বি ছোঁয়াছুয়ি খেলা যায়, শুধু খেয়াল রাখতে হয় ভুল করে যেন গোপালবাবুর বাড়ীর দিকে চলে না যাই, তাহলে ধরা পড়ে যাব।  মাঝে মাঝে কিছু মেয়ে মিলে কাছাকাছি গোধুলি বা কাজলদের বাড়ী চলে যায়। আমি অবশ্য কারো বাড়ী যেতে সাহস পাই না, ধরা পড়লে মা যে কী করবে আর কত মারবে সেই ভেবেই আর সাহসে কুলোয় না।

    রীমাও খুব বেশীদূর  যায় না ওরও বাড়ী মাস্টারপাড়াতেই একটু অন্যদিকটায়। ওর বাড়ী থেকে কেউ দেখে ফেললেও ওর বাবা মারবে। তাই আমরা অনেকসময়ই ক্লাসে বসে বসে ম্যাপ পয়েন্টিং খেলি, ফল-ফুল-নাম-দেশ খেলি, কাটাকুটি খেলি। অঞ্জলীদির দেওয়া বাড়ীর কাজের অঙ্কগুলো রীমাকে বাড়ীতে ওর বাবা কিম্বা দিদি দেখিয়ে দেয়, আমি বড়মামার কাছে না যাওয়ার চেষ্টাই করছি সেদিন দিদার কাছে বকুনি খাওয়ার পর থেকে। আমার না পারা অঙ্ক এক আধটা  রীমার থেকে দেখে নিই তাই। একদিন ক্লাসেও বলেছি বুঝতে পারিনি তাই করতে পারি নি। অঞ্জলীদি বকেন নি, একটু ঠোঁট টিপে হেসে অঙ্কটা বোর্ডে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেদিনের সেই রাগটা মাঝেমাঝেই আমার মনে কুটকুটিয়ে দাঁত ফোটায়, কাউকে একটা খুব কষ্ট দিতে, কাঁদিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। ইঁটের পয়েন্টিং করা মেঝের ফাঁক দিয়ে লালপিঁপড়েরা দল বেঁধে বেরিয়ে এসে কোথায় যেন যেতে থাকে সারি দিয়ে, আমি চটি পরা পা তুলে প্রথমে আলতো করে পিঁপড়ের সারির ওপরে বুলিয়ে নিই, লাইনটা ছ্যারাব্যারা হয়ে যায়। কয়েকটা পিঁপড়ে এদিক ওদিক ব্যস্তভাবে হাঁটাচলা করে পথের খোঁজে। এইবার পা নামিয়ে আনি ফ্যাট্ ফ্যাট্ আওয়াজ করে বার দুই তিন চটি ঠুকতেই পিঁপড়েদের আর কোনও চিহ্ন থাকে না, আমার চটি থেকে ঝরে পড়া মাটির গুঁড়োয় ঢেকে যায় ইঁটের ফাঁকফোকরে চেপ্টে যাওয়া লালপিঁপড়েদের কুচি।

    আমাদের ক্লাসের দরজা দিয়ে দেখা যায় হাইস্কুলের শুভ্রাদি পিটি করাচ্ছেন, কখনও কখনও  হাইস্কুলের মেয়েরা দুইহাতে ছোট্ট ছোট্ট লাঠি নিয়ে তাল দিয়ে দিয়ে সবাই একসঙ্গে গান করে করে নাচে। পিটির দিন হাইস্কুলের এইট, নাইন কিম্বা টেনের মেয়েরা  সাদা সালোয়ার, কামিজ আর ওড়না পরে আসে। শুভ্রাদির আদেশ ছিল কামিজের কোমরে সাদা বেল্ট থাকতে হবে আর চওড়া সাদা ওড়না একদিকের কাঁধ বেয়ে নেমে বেল্টের মধ্যে দিয়ে ক্রস করে উঠে অন্যদিকের কাঁধে পরবে, দুই কাঁধে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো থাকবে ওড়না। বেল্ট দিয়ে কামিজ বানাতে নাকি খরচ বেশী পড়ে, তাই অনেকেই  এমনি সালোয়ার কামিজ ওড়না পিন দিয়ে আটকে পরে আসে। কেউ কেউ এমনকি সালোয়ার কামিজও বানাতে পারে না, তারা একঢালা মেরুণ পাড়, আঁচলওয়ালা সাদা শাড়ি প্লিট দিয়ে পরে আঁচলের একটা দিক ঘুরিয়ে এনে সামনে পেটের কাছে পিন দিয়ে আটকে রাখে। পিটি করার বা কাঠিনাচের সময় শাড়িপরা মেয়েদের কারো পেট, কোমরের কাছে শাড়ি সরে গেলে শুভ্রাদি লাঠি দিয়ে ওখানে একটা খোঁচা দিয়ে ঠিক করতে বলতেন, ফলে সবাই তটস্থ থাকত শাড়ি যাতে একটুও না সরে যায় তার জন্য।

    আমাদের জুনিয়ার হাইতে কোনও পিটি দিদিমনি নেই, তাই আমরা মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখি আর বলাবলি করি আমরা যখন নাইনে উঠব তখন আমরাও করতে পারব। শেষ পিরিয়ড পিটি থাকলে অনেকেই বইখাতা বা যারা ব্যগে করে আনে তারা ব্যাগ এনে কমনরুমের বারান্দার কার্নিশে রেখে দেয়, ছুটির ঘন্টা পড়লে ওখান থেকে টেনে নিয়ে দৌড় দেয়। আমাদের সেদিন শেষ পিরিয়ডে মীনাদির সেলাই ক্লাস, উনি তখনও আগের ক্লাস থেকে বেরোন নি, আমরা দিব্বি চেঁচামেচি করছি এমন সময় হঠাৎ পিটিক্লাসের দিক থেকে ভীষণ গন্ডগোল, হাঁউমাউ করে চীৎকার শুরু হয়ে গেল। আমরা প্রথমে দরজার সামনে, তারপর হুড়মুড়িয়ে মাঠে বেরিয়ে দেখি সাদা রঙের শিংছাড়া একটা প্রায় গরু হয়ে যাওয়া বাছুর কার যেন একটা বই মুখে নিয়ে আর্ধেক চোখ বুঁজে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে, আর যে দিদির বই সেই দিদি হাঁউমাউ করে কাঁদছে আর সবাইকে বলছে ওর বইটা এনে দিতে, ওর বাবা আর কিনে দিতে পারবে না।

    শুভ্রাদি বেশ অনেকটা দূর থেকে লাঠি বাড়িয়ে হ্যাট হ্যাট করছেন, বাছুরটা শুনছেও না নড়ছেও না। এদিকে এই বাছুরটার মাথায় ছোট্ট ছোট্ট দুটো শিঙের কুঁড়িমত বেরিয়েছে, এখনও পুরোপুরি শিং বেরোয় নি। ফলে এটার শিং শুলায় আর এইটা কেবলই গুঁতিয়ে বেড়ায়,তাই কেউ ওর কাছে যাচ্ছে না। গোলমাল শুনে দপ্তরী মধুসুদনদাদা, আয়া মিনুদি, অন্য দিদিমনিরাও অনেকে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। মধুসুদনদাদা এসে গরুটাকে লাঠি নিয়ে তাড়া করলে গরুটা বইটাকে মুখে করেই দৌড় দেয়। অন্যদিক দিয়ে মিনুদি এসে একটা দড়ি কেমন করে যেন ছুঁড়ে গরুর গলায় পরিয়ে টান দিতে গরুটা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, দড়ির টানে গলাটা লম্বা হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়, মাথার দুপাশের চোখের কালো  মণিদুটো ঝিকিয়ে ওঠে। মুখ দিয়ে অনেকটা লালা বেরিয়ে লম্বা নালের মত ঝুলে পড়তে থাকে মাঠের ধুলো আর ঘাসের মধ্যে ... বইটা মুখ থেকে খসে পড়ে যায়, গরুটা ‘উমব্যা-অ্যা' করে চীৎকার করে ওঠে।

    শুভ্রাদিও চীৎকার করে ওঠেন ‘ও মিনুউউ গরুটাকে মেরে ফেলিস না-আ।‘  মিনুদি হাত থেকে দড়িটা ছেড়ে দেয়,  গরুটা ধাঁইধাঁই করে দৌড় দেয়, ঈষৎ গোবরমাখা ল্যাজটা পেছনে পতাকার মত উঁচিয়ে। লালা আর ঘাসপাতার টুকরো জড়ানো বইটা পড়ে থাকে, কেউ এগোয় না ওটা তুলতে। এমনকি যার বই সেই দিদিও না। আমরা ক্লাসে ফেরত আসি, নাহলে এবার আমাদের দিকে নজর পড়বে সবার। ক্লাসে এসেই সমাপ্তি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ওর সংস্কৃত ‘হেল্পস ট্যু দ্য স্টাডি' বইটা নাকি খুঁজে পাচ্ছে না। আমাদের ক্লাসে তো গরু ঢোকে নি যে খেয়ে নেবে বা মুখে করে কোথাও নিয়ে যাবে। সংস্কৃত ক্লাসেও তো ও দিব্বি বইটা খুলেছিল,  গেলটা কোথায়? বেঞ্চের তলাগুলো দেখা হয়ে যায়। নেই নেই। শীলা কিসব বলতে থাকে, সমাপ্তি হয়ত বইটা আজ স্কুলে আনেই নি বা টিফিনে বাড়ী রেখে এসেছে, এরকম সব ক্থা। সমাপ্তি ভীষণ আপত্তি করে, গোধুলি মনস্বিতারাও আপত্তি করে  এত ভুল হবে কেন, সমাপ্তি কি বুড়ো মানুষ নাকি?

    শীলাকে হাতমুখ নেড়ে বলতে দেখেই আমার মনে পড়ে যায় শীলার আমাকে ভ্যাঙচানো ‘টিয়া টিয়া টিয়া --'  রাগ হতে থাকে, ভয়ংকর রাগ। দিদার হিসহিসিয়ে ব্কতে থাকা গলাটা মাথার ভেতরে ঢেলে দেয় স্মৃতির বিষ ... আর আমি বলে উঠি ‘লাস্ট বেঞ্চের মেয়েদের বইগুলো ভাল করে খুঁজে দেখ সমাপ্তি।‘  সবাই হঠাৎ এক্কেবারে চুপ করে যায়, সমাপ্তি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকায়। আমি আরো জোর দিয়ে বাক্যটা আবার উচ্চারণ করি। আমি তো দেখে ফেলেছি লাস্ট বেঞ্চে নিজের বইয়ের সামনে দাঁড়ানো  শীলার হঠাৎ নিভে যাওয়া মুখটা, তাই ঠোঁটের কোণা অল্প মচকে একটু হাসি। এইবার কে যেন একটা সায় দিয়ে বলে হ্যাঁ সবার  বইখাতাই একবার সবাই খুঁজে দেখুক, আস্তে করে যোগ করে ‘গোলমালের সময় ভুল করে এখানে সেখানে রেখে হয়ত বেরিয়ে গেছিলি।' আমার উচ্চারণ করা কুৎসিৎ কালো বাক্যটার ওপরে হোয়াইট ওয়াশ করার আলতো চেষ্টায় কে বলে? রীমা? নাকি রীতা? কি জানি আমি খেয়াল করি নি।

    শীলার নিস্প্রভ মুখের দিকে তাকিয়ে আনন্দ পেতে পেতে আমি খেয়াল করি নি মনস্বিতার মুখ রাগে অপমানে লালচে বেগুণী হয়ে গেছে। মনাই এমনিতে সেকেন্ড বেঞ্চে বসে, সেদিন কি জানি কেন লাস্ট বেঞ্চে বসেছিল ... হয়ত জায়গা পায় নি ... হয়ত এমনিই ... আমি খেয়াল করি নি আদৌ। মনাই ভীষণ রেগে বলে ‘লাস্ট বেঞ্চ! লাস্ট বেঞ্চের মেয়েদের বই দেখতে হবে কেন??' আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হই, কিন্তু থামি না। এক অদ্ভুত গোঁয়ার্তুমির বশে আবার উচ্চারণ করি বাক্যটা। মনাই আরো কিছু বলে, আমি শুনি না, হাসিহাসি মুখে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, ওদের দিকে। মনাই ঝটকা মেরে পেছন ঘুরে বেঞ্চে গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পড়ে দুইহাতের মধ্যে মাথা গুঁজে দেয়।  বসে থাকে অমনিভাবে, কেউ এগোয় না, কিছু বলে না।  আমার ভেতরের হিংস্র আনন্দটা হঠাৎই কেমন মিইয়ে যায়। পেটের ভেতরে কেমন খালি খালি লাগতে থাকে। এগিয়ে গিয়ে হাইবেঞ্চের নীচে নীচু হয়ে ওর মুখ দেখার চেষ্টা করি।

    দেখা যায় না, ও মুখটা হাতে গুঁজে হাইবেঞ্চের ওপরে রেখেছে। এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওর হাতের ভাঁজে কপালের যেটুকু অংশ দেখা যাচ্ছিল সেইটুকু ধরে আস্তে করে ঠেলে তোলার চেষ্টা করি  একবার,  দুবার, তিনবারের বার মনাই ঝটকা মেরে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।  চোখ টকটকে লাল, গালে অল্প জলের ধারা। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ আমাকে হাতে পিঠে দুমদাম করে মারতে শুরু করে দেয়।  ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রথম দুই তিন ঘা খাওয়ার পরে স্বাভাবিক প্রতিবর্ত্ম ক্রিয়ার বশেই বোধহয় আমিও উল্টে মারতে শুরু করি। আর আমার হাত যেমন শক্ত তেমনি হাতের জোরও মাশাআল্লাহ্। গোটা ক্লাস হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে, একজনও এগিয়ে আসে না আমাদের ছাড়াতে। মাঝখানে হাইবেঞ্চ রেখে একজন নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে আর একজন খানিকটা  অবাক  হয়ে, আমরা পরস্পরকে কিলাতে থাকি। এরমধ্যেই কে যেন বলে 'মীনাদিমনি ক্লাসে আসছেন।' আমরা দুজনে দুজনকে ছেড়ে দিই।

    ও আবার বসে পড়ে, আমি আমার জায়গায় ফিরে এসে বসি। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ও একবার মুখ গুঁজে বসেও আবার মুখ তুলে বসেছে, চোখও মুছে নিয়েছে। খানিকটা নিশ্চিন্ত বোধ করি। আমি প্রায় নিশ্চিত এইবার মায়ের কাছে অভিযোগ যাবে, আমার কথা, আমার ব্যবহারের জন্য আজ  প্রচন্ড মার খেতে হবে। মনাই কিম্বা অন্য কেউ, হয়ত শীলাই নালিশ করে দেবে।  কিন্তু কিছুই হয় না। লাস্ট পিরিয়ডের আর অল্পই সময় বাকী ছিল, ছুটির ঘন্টা পড়ে যায়, আমরা বইটই গুটিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দিই। মনাই আজ  আমাদের সাথে পুরোটা আসে না, খানিকটা এসে গাতুকে কি যেন একটা বলে অন্যদিকে চলে যায়। গাতু আমাকে জিগ্যেস করে ওকে অমন দেখাচ্ছে কেন? আমি কিছু বলতে পারি না। কিরকম একটা লজ্জা হয় ... খুব লজ্জা। আমি এমনভাবে ঘাড় নাড়ি, যার কোনও অর্থই হয় না। গাতু কী বোঝে কে জানে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চুপ করে যায়, আর কিছু জিগ্যেস করে না।

    আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে সেদিন বিকেলে মনাই আমাদের বাড়ী আসে, কি সব যেন পড়ার কথা জিগ্যেস করে। ওর ফুলে ছোট্ট হয়ে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে আমার খুব খারাপ লাগে, লজ্জা করে, একটু একটু কান্নাও পায়। আমি আস্তে আস্তে বলি ‘আমার খুব অন্যায় হয়েছে রে অমন করে বলা' আরো কিছু বলি, কী তা আর মনে নেই। ও-ও বলে কতকিছু, সেসবও মনে নেই। শুধু মনে আছে তারপর থেকেই আমরা দুজনে ভীষণ ভীষণ বন্ধু হয়ে গেলাম। ‘প্রিয়বন্ধু' যাকে বলে। সেদিন থেকে আজ  পর্যন্ত মনাই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। আরো কত ঝগড়া হয়েছে, খুচখাচ মারামারিও হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্ব এখনও রোদ্দুরভরা শীতের সকালের মত ঝকঝকে নরম গরম।  

    ক্লাস এইটের গরমের ছুটির মধ্যেই বড়মামা একটা টিভি কিনে আনল। ছোটদি ওর মাধ্যমিকের পরেই শ্যামবাজারে ওর মামাবাড়ীতে থেকে পড়তে চলে গিয়েছিল। ছুটিছাটায় কোন্নগরে আসে, কখনও কখনও ছোটদির পরীক্ষা থাকলে বড়মামীমা গিয়ে অনেকদিন করে থেকে আসে শ্যামবাজারে। এইবছর ছোটদির পার্ট ওয়ান পরীক্ষা, পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। গত কয়েকমাসে ছোটদি যখনই বাড়ী আসে টিভি কেনার কথা বলে, কলকাতায় নাকি প্রায় সবার বাড়ীতেই টিভি থাকে আজকাল। আমার জিজির বাড়ীতে অবশ্য টিভি নেই এখনও। কুটুবাবুর বাড়ীতেও নেই। এদিকে দাদুর মস্ত বড় রেডিওটা আজকাল প্রায়ই খারাপ হয়ে যায়, বিশেদা অনেক সময় নেয় সারাতে। দিদা প্রথমদিকে টিভির কথা শুনলেই বলত ‘পুলাপানগুলার পড়াশুনা হইত না। অহন কিননের কাম নাই।' কিন্তু  একে তো ছোটদি পড়েই কলকাতায়, এখানে বেড়াতেই আসে, তায় পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকেই। আর আমাদের দুই ভাইবোনকে মা যে মোটেই টিভি দেখতে দেবে না সে নিয়ে কারো কোনও সন্দেহই ছিল না।

    এদিকে এখন তো আর দুইবেলা রান্নার পাটও নেই, সকালেই সবকিছু করে রাখা হয়। দিদার রুটি দুখানা রাতে খাওয়ার আগে বানিয়ে নিলেই চলে। দাদু তো দুধ-খই খাবে। বড়মামা বড়মাইমা ভাত, সে দুপুরেই করা, রাতে শুধু গরম করলেই চলে। এই কটা লোকের খাবার গরম করতেই বা কতক্ষণ লাগে, সন্ধ্যে রাত্তিরটায় বড়মাইমার সময় কাটেই বা কী করে ... এইসব সাতপাঁচ ভেবে বড়মামা শেষ পর্যন্ত টিভি নিয়েই এল। সাদাকালো ইসি টিভি, সামনে আবার একটা শাটার লাগানো দরজা। ঐটে খুলে টিভি চালাতে হয়। চোখে উজ্জ্বল আলো লেগে চোখ যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তাইজন্য স্ক্রিনের সামনে আলাদা একটা নীল ফাইবারের স্ক্রিন লাগানো, ফলে সব লোকজন, সব  অনুষ্ঠানই নীলাভ স্বপ্নিল লাগে। তখন আমাদের পাড়ায় শুধু দীপুদাদের বাড়ী টিভি ছিল। সেই যেবারে পেলে এলো কলকাতায়, সেই খেলার দিন দুপুরে একট হলুদ ট্যাক্সি চড়ে দীপুদাদের টিভি এসেছিল। বড়মামারটা দ্বিতীয় টিভি গোটা শ্রীপল্লীতে।

    যেদিন টিভি আনা হল সেদিন ছিল শনিবার। তখন শনিবারে বাংলা সিনেমা ও রবিবারে হিন্দী সিনেমা দেখানো হত। সেদিনের সিনেমা ছদ্মবেশী। দাদুর ঘরে টিভি বসানো হল, দাদুর প্রচন্ড আপত্তিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। লোকজন এলে ওটাই বসার ঘর, টিভি ওখানে বসবে না তো ভেতরে থাকবে নাকি? টিভির কার্য্যক্রম শুরু হত বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। শুরুর আগে থেকেই টিভি চালিয়ে রাখা হল, পর্দায় রামধনু রঙের চওড়া চওড়া ডোরা। তার দিকেই তাকিয়ে বসে আছি আমরা সবাই। একসময় শুরু হল দূরদর্শনের অনুষ্ঠান শুরুর বাজনা, গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসে গেল দূরদর্শনের লোগো। সিনেমা শুরুর আগে মা আমাদের দুভাইবোনকে বলে দিল এটা বড়দের সিনেমা, আমরা যেন দেখার চেষ্টাও না করি। আমরা ঘরে গিয়ে যেন এবার পড়তে বসে যাই। আমি আর ভাই বেজার মুখে অনিচ্ছুক পায়ে আস্তে আস্তে নিজেদের ঘরে যাই, আবার উঠে এসে জানলার পেছন থেকে দেখতে থাকি। ঘরে কাউকে নড়াচড়া করতে দেখলে সুরুৎ করে নিজেদের ঘরে ঢুকে যাই, আবার আস্তে আস্তে এসে জানলার পেছনে দাঁড়াই।

    পর্দায় তখন উত্তমকুমার। প্রসাদ, উল্টোরথ,নবকল্লোলের পাতায় ছবি দেখা উত্তমকুমার, জিজির মুখে শোনা শিঙাড়া স্টাইলের চুলওয়ালা উত্তমকুমার। ঘন্টা দেড়েক পরে ভাই আর দাঁড়াতে না পেরে আস্তে করে গিয়ে মা'র কোলে শুয়ে পড়ে। মা পর্দা থেকে চোখ না সরিয়েই জিগ্যেস করে কিরে সব পড়েছিস? ভাই দিব্বি ঘাড় নেড়ে আরাম করে শোয় যেন কতই ঘুম পেয়েছে। আমি একটু এগিয়ে দাঁড়াই ভাল করে দেখার জন্য। এদিকে কোথা থেকে কে জানে প্রায় জনা পনেরো বাচ্চা ছেলে, মেয়ে বড় মহিলা চলে এসেছেন টিভি দেখার জন্য। বড়মাইমা তাঁদের জন্য মেঝেতে ঢালা শতরঞ্চি পেতে দিয়েছে। সাড়ে সাতটায় বাংলা খবর হয়, খবর পড়েন ছন্দা সেন। ছোটদি খুব বিজ্ঞের মত বলে ‘জান তো ছন্দা সেনের মাথায় পরচুলা, ওঁর মাথায় এমনিতে চুলটুল বিশেষ নেই।' টিভি দেখতে আসা ছোট ছেলেমেয়েগুলো অবাক হয়ে একবার পর্দায় দেখে একবার ছোটদির দিকে। কেউ কেউ নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে নেয়, কেউ কেউ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

    দাদু বিরক্ত হয়ে গলাখাঁকারি দেয়, দিদা আরো বিরক্ত হয়ে দাদুকে বলে ‘চুপ কইর‍্যা শুইয়া থাহো, ভালা না লাগলে পাশ ফিইর‍্যা শোও।' আরো কতদিন যেন, প্রায় বছর চার পাঁচ, এরকম অনেক চেনা অচেনা লোক আসত টিভি দেখতে, সিনেমার দিন কিম্বা বিশেষ কোনও খেলা দেখানোর দিনে। কোনও কোনওদিন ঘর ভরে গিয়ে বাইরের বারান্দায়ও লোক বসে কিম্বা দাঁড়িয়ে দেখত জানলা দরজার ফাঁক দিয়ে। মস্তবড় প্রায় অচল রেডিওটা তখনও বসানো দাদুর আলমারীর মাথায়, দুপুরে কেউ হয়ত চালিয়ে মহিলামহল শুনল, কিম্বা সকাল সাতটা চল্লিশে রবীন্দ্রসঙ্গীত। কখনও দিনের পর দিন রেডিও চালালেই ঘরঘর করে আওয়াজ হয়, গান বাজে সঙ্গে বাজে ঘ্যাঁওওও আওয়াজ। কেউ না কেউ তখন  কান মুচড়ে থামিয়ে দেয় রেডিওটাকে। প্রায় অচল দাদুও কখনও বসে কখনও শুয়ে থাকে। ঘরে অতিরিক্ত লোক, তাদের কথাবার্তা, উজ্জ্বল নীল আলো, কল্পজগতের হাসিকান্না মেলোড্রামায় বিরক্ত হয়ে, অতিষ্ঠ হয়ে কখনও কখনও বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলে।

    কেউ না কেউ ততোধিক বিরক্তি প্রকাশ করে কিংবা ধমক দিয়ে বুঝিয়ে দেয় দাদুর বিরক্তি অসুবিধে, এসবই এখন নিতান্তই মূল্যহীন। চলে ফিরে বেড়ানো লোকগুলির অসুবিধে সৃষ্টি কেবলমাত্র। ছানিপড়া ঘোলা চোখে শুন্য দৃষ্টি নিয়ে টিভির দিকে পিছন ফিরে দেওয়ালের দিকে মুখ করে  বসে থাকে দাদু, মেরুদন্ড সোজা রেখে। অল ইন্ডিয়া রেডিও ছেড়ে আমরা কলকাতা দূরদর্শন, দিল্লী দূরদর্শনের যুগে ঢুকে যাই।  
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৩৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aditi Dasgupta | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৮541238
  • আহা, কতদিন পর পুরোনো বন্ধুকে যেন ফিরে পেলাম!  
  • Aditi Dasgupta | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১০541242
  • এই হিস্ হিস্ করে কথা বলা, বিশেষ করে বাচ্চাদের সাথে, আরো বিশেষ করে বাচ্চা মেয়েদের সাথে ---কোনো বিশেষ প্রেক্ষিতে ঘটতো ঠিকই কিন্তু প্রেক্ষিতটাই এখানে মূল নয়, আরো অন্য কোনো জমাট অন্ধকার নিশ্চই ছিল! হয়তো তিনিও আরেক বেচারা, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রক নন, হয়তো অন্য কিছু। পরিণত মানুষের মধ্যেই  এটা দেখা যায় , হয়তো সে এমনিতে সাধারণ আচরণ ই করছেন!  কে জানে কেন!  হয়তো বা প্রবল অসহায় ভালোবাসা থেকেও আসে এই প্রকাশ ---নিজের পিঠেই নিজে চাবুক মারা!
  • বিপ্লব রহমান | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৩541255
  • কি প্রাণবন্ত লেখা! ইস্কুলের সেইসব ধুসর অতীত যেন ফিরে ফিরে আসে...​​​
  • b | 14.139.***.*** | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:০৫541256
  • এ লেখা লিখতে  ধক লাগে। 
  • পাপাঙ্গুল | 150.242.***.*** | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৩541263
  • ছেঁয়াবাজির মধ্যে নিজের দোষগুলোও এড়িয়ে না যাবার একটা অন্যরকম চেষ্টা আছে। ম্যাক্সিম গোর্কির আত্মজীবনী গুলোর মত। 
  • Aditi Dasgupta | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১৭541265
  • @পাপাঙ্গুল  একদম তাই! টানা আর পোড়েনে মন টেনে রাখে!
  • জয় | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৫541266
  • সত‍্যি কি নির্মম ভাবে বলতে পারেন দ! আর ভীষণই নির্মোহ নির্মেদ। অপেক্ষা করি। আয়না দেখব বলে। 
  • r2h | 208.127.***.*** | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৭541270
  • এই লেখাগুলি পড়ে প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক একশো আট রকম কথা মনে হয়, কিন্তু সব জড়িয়ে পেঁচিয়ে আর কিছু লেখা হয় না।

    "...একটা প্রায় গরু হয়ে যাওয়া বাছুর কার যেন একটা বই মুখে নিয়ে আর্ধেক চোখ বুঁজে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে..." -এইটুকু পড়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো, কিন্তু পরের শব্দগুলি পড়ে সেটার জন্য রীতিমত লজ্জা হল।
    দুনিয়ার প্রায় সকল তামাশাতেই কারো না কারো কিছু বিপর্যয় ...
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৪৩541279
  • অদ্ভুত এক নির্মোহ ফিরে দেখা, বার বার কাটা ছেঁড়া নিজেকে। আমরা চুপ করে বসে থাকি দর্শকের মতো, চোখের সামনে লাইভ দেখতে থাকি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন