ক্যাফের ভিতর (একটি ছোট ক্যাফের সজ্জা, দুটো টেবিল, এক টেবিলেবাপন ও অনির্বাণ বসে, অন্য টেবিলে বৃদ্ধ বসে)
অনির্বাণ: (ফোন চোখ রেখে) দেখ ভাই, কটা ফিল্টার মেরে সেলফি দিয়েছি, মুহূর্তের মধ্যে ৪৮৯টা লাইক!
অনির্বাণ: ভাই, এখন তো রিল দেখেই মেয়েরা প্রেমে পড়ে। আমি তো প্ল্যান করছি "ব্রেকআপ ইন 15 সেকেন্ড" সিরিজ বানাবো।
বৃদ্ধ: (শান্ত গলায়) মাফ করবেন, আপনাদের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। বলছিলেন লাইকের কথা... আমি ভাবছিলাম, ফেসবুক না থাকলে মানুষ কীভাবে জানাত পুজোয় নতুন জামা কিনেছে?
বৃদ্ধ: (মৃদু হেসে) আমি সেই মানুষ, যে জীবনে একটা ছবিও আপলোড করি নি, তবু প্রতিটা পোস্টে গিয়ে লিখেছি Nice pic. Keep it up.
বৃদ্ধ: (হালকা গম্ভীর স্বরে) সে তো তোমার মনের মধ্যেও বিশেষ কিছু নেই। তাও তুমি রোজ তিনটে করে মোটিভেশনাল পোস্ট দাও, Be yourself, unless you can be a unicorn.
বাপন: (ফিসফিস করে) ওই কাকুটা কি... চ্যাটজিপিটি নাকি?
অনির্বাণ: (গম্ভীর মুখে ফোনটা নামিয়ে রাখে) আমার মনে হয় একটু সময় বের করে রিয়েল লাইফে ফিরি…
(অনির্বাণ মুঠোফোন এক পাশে রেখে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে)
অনির্বাণ: (নিজের সাথে কথা বলছে) আজকাল নিজের ছবিতেও নিজেকে দেখি না। শুধু অ্যাঙ্গেল আর ফিল্টার দেখি।
বাপন: (পাশ থেকে) তাই বলছিলাম, তুই আস্তে আস্তে রিয়েলিটি থেকে রিল এ পরিণত হচ্ছিস।
(মা এসে ঢোকে, হাতে ফোন, গম্ভীর মুখে)
মা: (কড়া গলায়) এই কী দেখলাম! তুমি আমার স্টোরি শেয়ার করো নি? আমি এত সুন্দর করে “পেয়াঁজ দিয়ে খিচুড়ি” বানালাম, হ্যাশট্যাগ #সানডেমুড দিয়ে দিলাম, আর তুমি সেই পোস্টেই রিঅ্যাক্ট করো নি?
অনির্বাণ: (বিস্ময়ে) মা তুমি কবে থেকে ইনস্টাগ্রামে এসে গিয়েছ?
মা: যখন দেখলাম তুমি আমার সাথে কথা বলো না, শুধু স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকো… তখন ভাবলাম, আমিই স্ক্রিনে ঢুকে পড়ি।
বাপন: (আস্তে) বাহ... পরিবার এখন ফলোয়ার ফার্স্ট!
(ডোরবেল বেজে ওঠে। অর্ণা প্রবেশ করে, চোখে সানগ্লাস, হাতে ট্রাইপড)
অর্ণা: হাই অনি! আজ না একটা কোলাব ভিডিও শুট করবো, “সিনেমার ডায়ালগ দিয়ে প্রেম প্রস্তাব”।
অনির্বাণ: (হতভম্ব) মানে, সত্যি প্রেম? না, কনটেন্ট প্রেম?
অর্ণা: (অভ্যস্ত ভঙ্গিতে) প্রেম-টেম থাক, ভাইরাল হতে হবে আগে। বাকি সব তো এফেক্ট!
মা: (বিস্ময়ে) ওমা! প্রেমও এখন পোস্ট-প্রোডাকশনে যায়?
(অর্ণা ভিডিও সেট-আপ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে)
(আচমকা দরজার বাইরে থেকে জয়ন্ত স্যারের গম্ভীর কণ্ঠ)
জয়ন্ত স্যার: তোমাদের মধ্যে কারও কি অন্তঃসারশূন্যতার সমস্যা আছে?
বাপন: (চমকে) এ আবার কে? ফলোয়ার না ফিলোসফার?
(জয়ন্ত স্যার প্রবেশ করেন — পোশাকে কর্পোরেট, হাতে TEDx লেখা ফোল্ডার)
জয়ন্ত স্যার: আমি জয়ন্ত মুখার্জী। লাইফ কোচ। আমি মানুষের মন থেকে কনটেন্টের দুঃসহ ভার সরিয়ে আত্মার ইনবক্স পরিষ্কার করি।
অর্ণা: (ফিসফিস করে) স্যার লাইভে আসুন না? রিল হবে দারুণ!
জয়ন্ত স্যার: (দার্শনিক ভঙ্গিতে) আমরা আজ এমন এক সময় দাঁড়িয়ে, যেখানে মানুষ আগে জানে কে কী খেয়েছে, তারপর জানে কে কে বেঁচে আছে। আমরা "মুঠোফোনে" বন্দী হয়ে "মুখোমুখি" হারিয়েছি।
বাপন: (আস্তে) স্যার এক্স-মেটা এমপ্লয়ি কিনা কে জানে...
অনির্বাণ: (হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়) আজ আমি কিছুই পোস্ট করবো না। আমি শুধু একটু হাঁটবো। সত্যিকারের আকাশ দেখবো। (অর্ণার দিকে তাকিয়ে) তুমি আসবে?
অর্ণা: (কিছুটা থমকে) আমি আসি... তবে ফোনটা অফ করে?
বাপন: (হেসে) আজকের দিনে এটা প্রেমের প্রস্তাবের চেয়েও বড় কথা!
(সবাই ধীরে হাঁটতে হাঁটতে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়... আলো ধীরে কমে আসে)
ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস (জয়ন্ত স্যার): নিউরনের থেকে রিল বড় হলে, জীবন শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হয়ে যায়। সময় থাকতেই প্লে থেকে পজে আসুন…
তৃতীয় অঙ্ক
স্থান: WiFi-মুক্ত মনোলীন আশ্রম – এক ডিজিটাল ডিটক্স সেন্টার
চরিত্রসমূহ:
- অনির্বাণ
- বাপন
- অর্ণা
- মা
- আশ্রমাচার্য সিগন্যালানন্দজি
- সহযোগী আশ্রমবাসী
দৃশ্য ১:
(এক প্রাচীন স্থাপনার মঞ্চসজ্জা, ফটকে লেখা: "WiFi মুক্ত এলাকা – শুধু মন সংযোগ")
বাপন:(চোখ বড় বড় করে) দেখলি? এখানে ঢুকলেই মোবাইল ‘সাইলেন্ট মোড’ না, পুরো ‘সমাধি মোড’!
অর্ণা: (সন্দেহে) আমার ইনস্টা রিলের প্ল্যান ছিল আজ। কিন্তু.. (একটু থেমে) এই প্রথম মনে হচ্ছে ক্যামেরা ছাড়াও নিজেকে খুঁজতে ইচ্ছা করছে।
মা: (গম্ভীর মুখে) আমি শুধু চাই, কেউ “পেয়াঁজ ছাড়া খিচুড়ি” খাওয়ার পরেও ‘ভালোবাসি মা’ বলুক। হ্যাশট্যাগ ছাড়াও!
দৃশ্য ২:
(সিগন্যালানন্দজি প্রবেশ করেন – পোশাক সন্ন্যাসীর, গলায় পুরনো হেডফোন ঝুলছে)
সিগন্যালানন্দজি: (ধীরে, গম্ভীর স্বরে) ওম… মো-বা-ইলঃ শূন্যং ভব! এখানে আমরা রোজ সকালে "নোটিফিকেশন নিবৃত্তি যোগ" করি। দিন শুরু হয় এই মন্ত্রে – "স্ক্রোল থেকে মুক্তি, সোলের প্রতি ভক্তি"
অনির্বাণ: (হতচকিত হয়ে) গুরুজি, আপনি কে ছিলেন আগে?
সিগন্যালানন্দজি: (দার্শনিক ভঙ্গিতে) আমি এক সময় গুগলের UX হেড ছিলাম। আজ আমি ‘মানব অভিজ্ঞতা’র UX ডিজাইন করি।
দৃশ্য ৩:
(আশ্রমে থাকা কয়েকজন আশ্রমবাসী দাঁড়ায়,একজন প্রাক্তন টিকটক তারকা, এক জন ‘ফেক নিউজ’-এ ক্লান্ত প্রিন্ট সাংবাদিক, আরেকজন “মিম বানাতে বানাতে মানসিক জ্বালায় ভুগছে”)
টিকটক তারকা (রিয়া): আমি এখন দিনে তিনবার আয়নায় তাকিয়ে বলি "তুই রিল নোস, রিয়েল হোস"
সাংবাদিক: আমি এখন কেবল বাতাসের খবর শুনি। কারণ সেটাই সবচেয়ে নিরপেক্ষ!
মিম-মেকার: আমি এখন কেবল নীরবতা এডিট করি। কোনো টেক্সট নয়, শুধু ফাঁকা স্ক্রিন।
দৃশ্য ৪:
(সব চরিত্র একসাথে বসে মেডিটেশন করছে। পেছনে বাজছে “নোটিফিকেশন বিহীন নীরবতা”)
সিগন্যালানন্দজি: (ধীরে ধীরে) তোমরা এতদিন যা ছিলে তা "ডেটা"। এখন সময় নিজেকে "ডি-টক্স" করার। নিজের ভিতরের RAM পরিষ্কার করো। কল্পনার Cache ফাঁকা করো। Reboot করো আত্মাকে…
(হঠাৎ কোথাও একটা নোটিফিকেশনের আওয়াজ “টিং!” সবার মুখ ঘুরে যায় অনির্বাণের দিকে)
অনির্বাণ: (হতাশ মুখে) ওফ্... ওটা আমার মনে বাজলো... ফোনে নয়।
দৃশ্য ৫:
(সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখছে। কারোর হাতে ফোন নেই। মুখে আলতো হাসি।)
অর্ণা: আজ এই প্রথম... একটা ভিউ পেলাম, যার জন্য কেউ ‘কমেন্ট’ চাইছে না।
মা: (আলতো গলায়) আজ এই প্রথম খিচুড়ি খেতে খেতে কেউ ফটো তোলে নি।
বাপন: আজ এই প্রথম গল্পটা নিজের মধ্যে ঘটছে, শেয়ার করার জন্য নয়, অনুভবের জন্য।
অনির্বাণ: (আকাশের দিকে তাকিয়ে) আজকের দিনটা কোনো ফিল্টার ছাড়াই... দারুণ লাগছে।
( আলো ধীরে নিভে আসে... )
পেছনে ভয়েসওভার (সিগন্যালানন্দজি):
"আমরা স্ক্রিনে তাকিয়ে যা হারিয়েছি, তা ফিরিয়ে আনা যায়, তবে ব্যাটারি নয়, মন চার্জ করে।"
শেষ
( কতৃজ্ঞতা স্বীকার : চ্যাটজিপিটি.কম )