এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ছেঁড়াকাঁথা

  • ছেঁয়াবাজীর ছলনা  - ১৯ 

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ছেঁড়াকাঁথা | ০৭ মার্চ ২০২৪ | ১০০৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী সবপুজো শেষ হয়ে স্কুল খোলে। মাঠের জায়গায় জায়গায় মাটি তখনও থকথকে নরম, পাশের মাঠ এখনও জলে ভরা, জল নামার জায়গা নেই। শিমূল গাছটা কিন্তু তেমনি সোজা হয়ে আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি সবুজ পাতাভরা ঝাঁকড়া মাথা। আর আছে ধুতরা, আকন্দ, ঘেঁটু আর আরো কিসব বুনোফুলের ঝোপগুল। এরা কেউ জমা জলে মরে যায় নি? নাকি আগের গাছগুলো মরে গিয়ে এরা আবার নতুন করে হল? নাঃ, তাহলে এত তাড়াতাড়ি এত বড় হবে কী করে! স্কুলের  টিউবওয়েলের জল খেতে বারণ করেন দিদিমণিরা, স্কুলের দক্ষিণ পশ্চিমকোণের গোলাপী রঙের তিনতলা বাড়ীর সাথে ব্যবস্থা হয়েছে, আমরা গিয়ে ওদের টিউকল থেকে জল খেয়ে আসতে পারব। সারা সকাল ধরে দলে দলে মেয়ে যায়, ঝড়াং করে গেট খোলে, কলকলিয়ে কথা বলতে বলতে, হাহা হিহি করে হাসতে হাসতে ক্যাঁ-অ্যা-চ ক্যাঁ-অ্যা-চ করে টিউকল পাম্প করে করে জল খায় আবার ঝড়াং করে গেট বন্ধ করে ফেরত আসে; ওঁরা বিরক্ত হন কিনা জানা যায় না, তবে এই জিনিষ চলতেই থাকে পাঁচদিন, দশ দিন, পনেরো দিন, কুড়ি দিন। তারপর একদিন নাইনের দিদিরা খুব কিরকম যেন মুখ করে বলল 'আমরা আর ঐ বাড়ীতে জল খেতে যাব না, যতদিন না  স্কুলের কল ঠিক হচ্ছে ততদিন জল খাব না।'

    টিফিন টাইমে গুজগুজ ফুসফুস, চাপা গুমোট ভাব চারিদিকে, কিন্তু আমাদের তো কেউ কিছু বলেটলে না। দিদিমণিরা কেউ খেয়াল করলেন কিনা জানি না। পরেরদিন রীমা এসে বলল ও দিদির  কাছে শুনেছে ঐ বাড়ীটার দোতলায় দাঁড়িয়ে একটা ছেলে নাকি ওদের দেখে দাঁত বের করে নিঃশব্দে হাসত, ওরা যেন দেখতে পায় নি এমন ভাব করে চলে আসত, কাল ছেলেটা ‘ঐটা' বের করে তুলে নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখিয়েছে। আমরা তো এখন আর তত ছোট নেই, অনেকেই এর মধ্যে ‘বড় হয়ে’ গেছি মাসিক ঋতুচক্র শুরু হয়েছে, তাই বুঝতে অসুবিধে হয় না। শুনে কেমন গা গুলানো ভাব হয় যেন এক্ষুণি বমি হবে, গলা দিয়ে উঠে আসবে রাতের খাবারের টুকরো টাকরা,টকজল, ভাসিয়ে দেবে এই ক্লেদ, ঘেন্না। কিন্তু বুঝি না কেন ছেলেটা অমনি করল? কেন বন্যা হয়ে যাওয়ার এতদিন পরেও আমাদের কলের জল ঠিক হয় নি? কেন আমাদেরকেই অন্য জায়গায় যেতে হয় জল খেতে? কেন এখনও স্কুলের বাড়ী তৈরী শুরু হয় নি? নতুন কমিটি যে এসেই শুরু করবে বলেছিল! বমি হয় না, শুধু গলার কাছে বমিভাব দলা পাকিয়ে থাকে। দিদিমণিরা কিছু জানতে পারেন কিনা জানি না, তবে দুই একদিনের মধ্যেই কারা সব এসে স্কুলের টিউকলের জল পরীক্ষা করে বলে গেল আমরা খেতে পারি।

    এমনিতেও কেউ ওখানে যাচ্ছিল না, এখন তো আর দরকারই নেই। শুধু আমি টের পাই শৈশবের শক্ত সিমেন্ট বাঁধানো উঠোন থেকে নেমে যাচ্ছি ‘বড় মেয়ে' হওয়ার মাঠে। কোথাও তলতলে কাদাভরা, কোথাও  কচি সবুজ ঘাসভরা ঝুরঝুরে মাটি, কোথাও বা আবার সবুজ ঘাসের নীচে থকথকে কাদা। ওপর থেকে কিচ্ছুটি বোঝা যায় না, পা দিলেই বসে যাবে পা, হাঁটু পর্যন্ত এঁটে ধরবে আঠালো কালো কাদা। নিজে নিজেই বুঝে যাই আমাকে ঐ সবুজ ঘাস আর ঝুরঝুরে মাটি দেখে দেখে খুঁজে খুঁজে এগোতে হবে, যতদিন না শক্ত মাটি, সিমেন্টের রাস্তা পাচ্ছি। নরম না-বোঝা বেলায় ফেরবার কোনও উপায় নেই। দুই বছর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে ছোটদি দোতলার মধ্যের ঘরে জানালার উপরের তাকে রাখা বইগুলো সব পড়ে ফেলছিল, নষ্টনীড়, দুই বোন, ভারত প্রেমকথা, শেষের কবিতা। বলেছিল দুই বোন, নষ্টনীড় পড়ে মাথামুন্ডু বোঝে নি, রবি ঠাকুরের গানগুলোই ভাল।  লুকিয়ে লুকিয়ে  আগেই পড়ে ফেলায় আমি ছোটদিকে ভাল করে মানে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, কার সাথে কার প্রেম হয়ে গেছে এইসব। আসলে  প্রেম তখন সন্ধ্যের আকাশে কালপুরুষের লুব্ধকের মত কিরকম কুকুর কিন্তু কুকুর নয় টাইপ ধারণা। এতদিনে ব্যপারটা একটু একটু স্পষ্ট হচ্ছে যেন।       

    এইবারে অ্যানুয়াল পরীক্ষার প্রশ্ন হয় খুব সোজা, পরীক্ষাও হয় বেশ একটু দেরী করে, তাও শিবানীরা পাশ করতে পারে না। ওরা আরো অনেকের সাথেই বন্যার সময় স্কুলে এসে উঠেছিল, ফিরে গিয়ে দেখে ওদের বাড়ী ভেঙে বসে গেছে মাটির মধ্যে অনেকটা, আর চালের টালি কারা যেন খুলে নিয়ে চলে গেছে। ওর বাবা নাকি প্রায় বেশীরভাগ দিনই গিয়ে দেখে আসতেন, তখন ঠিকঠাকই ছিল, জল নেমে যেতে ওরা বাড়ী ফেরার তোড়জোড় শুরু করার পরই হাওয়া হয়ে যায় টালিগুলো। কারা যেন ‘রিলিপ' দিতে এসেছিল, তারা কয়েকটা বাঁশ, দরমার বেড়া, বেশ কয়েকটা মোটা মোটা চাটাই দিয়ে গেছে। তাই দিয়েই কোনও মতে একটা মাথাগোঁজার জায়গা বানিয়ে তাতেই আছে ওরা চারবোন, বাবা মা, ঠাকুমা আর পিসি। শিবানী আমার সাথে আর কথা বলে না, আমি কিছু জিগ্যেস করলে অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়। ও কী শুনতে পেয়েছিল দিদার বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো?  অতদূর থেকে কী শোনা যায়? তাহলে কি দিদার মুখেই ফুটে উঠেছিল এমনভাব যা ওকে এত দূরে ঠেলে দিল, কিছুতেই আর ভাব করার কোনও উপায় নেই! শিবানী ক্লাসে বলে ওরা কানাইপুরে চলে যাবে, ওখানে লোক এমন খারাপ নয়, এপারের লোকজন খুব খারাপ।

    কানাইপুরের নাম শুনেছি আমরা, রেললাইনের ওপারে নবগ্রাম, তার পরে কানাইপুর। কে জানে সে কতদূর! রেজাল্ট বেরোবার পরে শিবানীদের আর স্কুলে দেখি নি। হয়ত ওরা কানাইপুরে গিয়ে নতুন টালিওলা বাড়ী বানিয়েছিল, হয়ত ওদের বাবার কারখানার লক আউট খুলে গিয়েছিল, হয়ত সেখানে বন্ধুর বাড়ী গেলে বন্ধু আদর করে ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসে গল্প করে, বাড়ীর লোক বকে দেয় না। আমাদের সপ্তম শ্রেণী সেই ঢোকার মুখের সরু রাস্তার ধারে মাঠের কোণায় টালির চাল আর চাটাইয়ের বেড়া দেওয়া মাটির ঘর। বন্যার পর মাটি আরেকবার গোবরগোলা দিয়ে শক্ত করে লেপা হয়েছে। এখানে যতখুশী চেঁচানো যায়, মূল স্কুলবাড়ি থেকে খুব একটা শোনাটোনা যায় না, দিদিমণিরাও এতদূরের ক্লাসে একটু দেরী করেই আসেন, ঘন্টা পড়তেই চলেও যান। আমাদের নতুন অঙ্কদিদিমণি অঞ্জলীদি, বেশ যত্ন করে অঙ্ক করান।  ইনি আবার নাকি আমার মায়ের ছাত্রী ছিলেন, সেই মা যখন বিয়ের আগে হিন্দু গার্লসে পড়াত তখন। বীজগণিত নামে একটা নতুন বিষয় শুরু হয়, সংস্কৃত শুরু হয়, বিজ্ঞান দুটো ভাগ হয়ে যায়, ফিসিক্যাল আর লাইফ সায়েন্স। ক্লাস ফাইভে হিন্দী ছিল তৃতীয় ভাষা হিসেবে। সিক্সে ছিল না। সংস্কৃতের অক্ষরগুলো হিন্দীর মত।  

    প্রথমে বিয়ের জন্য আর তার একমাস পরে কি যেন অসুখ হয়ে অঞ্জলীদি অনেকদিন ছুটি নেন, বীজগণিত করানোর কেউ থাকে না। পাটীগণিত আমাকে দাদু এত ভাল করে শিখিয়েছে যে কেশব নাগের বই দেখে দেখে আমি নিজেই করে যাই, অঙ্কের ফাঁকা ক্লাসে অন্য কাউকে কাউকে দেখিয়েও দিই। কিন্তু বীজগণিত আর জ্যামিতি বাঘ হয়ে ভয় দেখায় বইয়ের মধ্যে থেকে। ছোটমামার বিয়ে হবে, তাই দাদু খুব ব্যস্ত, ভাল মেয়ে খোঁজা, দোতলায় একটা বাথরুম বানানো, বাড়ী রঙ করানো, কাজের তো শেষ নেই। মা স্কুলে শুনেছে ইংরিজি আর সেলাইয়ের দিদিমণি রাখতে গিয়ে ফান্ডে তো আর টাকাপয়সা নেই, নাহলে তিন চারমাসের জন্য একজন অঙ্কের দিদিমণি রাখা যেত। আমাকে বারবার বলে ভাল করে পড়াশোনা করতে, বাবা আকাশ থেকে দেখে খুশী হবে। বাবা আকাশ থেকে দেখছে এই কথাটা আমার আর আজকাল তেমন বিশ্বাস হয় না, তবে মা'কে কিছু বলি না। ছোট ছোট মাছ এখন আমি নিজেই যতটা পারি বেছে খেয়ে নিই, মাছ  খেতেই হবে। বাড়ীর সক্কলে বিশ্বাস করে মাছ না খেলে পোস্টাই হয় না, মাথা খোলে না, তাই সপ্তাহের ছয়দিনই যে কোনওভাবে  মাছ যোগাড় করে মা। আমি এখন জানি কাটাপোনার অনেক দাম, রোজ খাওয়া সম্ভব নয় আমাদের।

    মা বলে নিজে নিজে পড়তে, অনেক পড়লে বড় হয়ে অনেক ভাল চাকরি পাব, আরো বলে কেউ হাজারবার বললেও যেন কক্ষণো চাকরি ছেড়ে না দিই। আমি চুপ করে শুনি। এপ্রিল মে মাসে শকুন্তলা কালীপুজো খুব বিখ্যাত, এই কালী আগে ডাকাতে কালী নামেই পরিচিত ছিল। ১৮৩৬ এর পর যখন ইংরেজ সরকার রেললাইন বসানো শুরু করে, তার পরেও অনেকদিন পর্যন্ত গোটা কোন্নগর নবগ্রাম অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা, মাঝখান দিয়ে সরু পায়েচলা পথ, জঙ্গলে এলাকা ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন ডাকাত আর ঠগীদের ডেরা। বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা তৃতীয়া বা তার ঠিক পরের শনিবারের রাতে  এই ডাকাতে কালীকে পুজো দিয়ে বচ্ছরকার ব্যবসা শুরু করত ডাকাত ও ঠগীর দল। মস্ত অশ্বত্থ গাছের নীচে মায়ের থান সম্বচ্ছর পড়ে থাকে রক্তমাখা হাঁড়িকাঠ নিয়ে, গাছের ওপরে বাস করে দলে দলে শকুন, তাই এই থানের আরেক নাম শকুন্তলা মায়ের থান।  চন্দ্রভূক অমাবস্যার রাতে কে বা কারা এসে পুজো দিয়ে যায়, ছাগবলি, মহিষবলি, কখনও কখনও বা নরবলিও দেয় মনস্কামনা পূরণের জন্য। তারপর  গায়ে রেড়ীর তেল মেখে হাতে লাঠি কিম্বা কাটারি নিয়ে বেরিয়ে যায় ‘কাজে’। এই একদিন শুধু ঢাকঢোল পিটিয়ে আলো জ্বালিয়ে মায়ের পুজো হয়, নিয়মমত মূর্তি বানানো হয় সূর্যাস্তের পর, দ্বিতীয় প্রহর শেষ হলে পুজো শুরু আর সূর্যোদয়ের আগেই মায়ের বিসর্জন হবে গঙ্গায়।  

    কাছাকাছি আরো তিনটি জায়গায় একই নিয়মে পুজো হয়, তবে তারা তত জাগ্রত ঠাকুর নয় বলে কথিত। বিদেশী শাসক ঠগী ও ডাকাত দমনের জন্য জঙ্গল কেটে সাফ করে, যাকে হাতের সামনে পায় তাকেই জেলে পুরে দেয়। আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে সমৃদ্ধ জনপদ,  গড়ে ওঠে শকুন্তলা কালীর মন্দির। নিয়মিত পুজো কিছু হয় না, তবে লোকে এসে খালি বেদীতে জল ঢেলে যায়, শনি মঙ্গলবারে একটু ঘটা বেশী হয়, বাকী তিনটি থানেরও একইরকম গতি। দুটি কোন্নগরের মধ্যেই, আর একটি নাকি কানাইপুর ছাড়িয়ে। বৈশাখ মাসে পুজোর দিন অগণিত লোকে ভোরবেলায় গঙ্গা স্নান করে বেদীতে জল ঢালে। ভোর চারটে থেকে জল ঢালা শুরু, লাইনের শুরুর দিকে থাকার জন্য আর বৈশাখের চড়া রোদ্দুর এড়ানোর জন্য লোকে আগেরদিন রাত বারোটা থেকে গিয়ে লাইন দেয়। আমাদের বাড়ী থেকে মাইকে শোনা যায় ‘জলঢালা যাত্রীদিগের প্রতি অনুরোধ তাঁরা নিজেরা সুশৃঙ্খলভাবে জল ঢালুন ও অপর যাত্রীকে জল ঢালার সুযোগ করে দিন। গর্ভগৃহে অযথা ভীড় বাড়াবেন না।‘ পূণ্যার্থীদের কেন যাত্রী বলা হয় জানি না।  যাঁরা দন্ডী কাটার মানত করেছিলেন এবং মনের ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে তাঁরা গঙ্গায় স্নান করে দন্ডী কেটে মন্দিরে যান, সঙ্গে কেউ একজন থাকেন জলের ঘট নিয়ে, মন্দিরে পৌঁছে সেই জল ঢালেন বেদীতে।

    কঠিন,প্রায় অসম্ভব কোন ইচ্ছেপূরণ ও ভক্তির তীব্রতা অনুযায়ী কেউ কেউ সেই বারোমন্দির ঘাট থেকে সোয়া কিলোমিটার রাস্তা পুরোটাই দন্ডী কেটে আসেন। কেউবা রাজেশ্বরীতলা থেকে অর্ধেক পথ আর কেউ আবার মন্দিরের অল্প কিছু দূর থেকে। প্রায় বিকেল পর্যন্ত চলে এই জল ঢালা ও দন্ডী কাটা, কত দূর দূর থেকে লোক আসে ট্রেনে বাসে করে। বন্যার পরে এবারে শম্ভু চ্যাটার্জী স্ট্রীটের অবস্থা খুব খারাপ, মস্ত মস্ত গর্ত আর ভাঙা খোয়ায় ভর্তি। পুজোর মাসখানে আগে প্রথমে রাস্তায় খোয়া আর স্টোন চিপস ফেলা হল, বয়স্করা বললেন নতুন মিউনিসিপালিটি রাস্তায় তাপ্পি দিচ্ছে, মানুষকে খুশী করার জন্য। তারপর দেখা গেল বেশ ভাল করে রোলার চালিয়ে পিচ ঢেলে আবার রোলার চালিয়ে সুন্দর করে রাস্তা বানানো হল। সবাই একবাক্যে প্রশংসা করতে লাগল, জল ঢালা, দন্ডী কাটার বেশ সুবিধে হল। পুজোর দিন মন্দিরের পাশে দুটো মিউনিসিপালিটির জলের ট্যাঙ্কার সারাদিন সারারাত রইল। এখন আর সূর্যাস্তের পর ঠাকুর বানানো সম্ভব নয়, তাই ঠাকুর অনেক আগে থেকেই বানানো হয়, শুধু চক্ষুদান হয় সূর্যাস্তের পর।  তারপর সমবায় ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে সোনার গয়না বের করে পরিয়ে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। ঠাকুরের নাকি একশোভরির ওপরে সোনার গয়না, সব ভক্তদের দেওয়া।  

    আর কোনও ব্যাঙ্ক অতরাতে খোলা থাকে না, তাই সমবায় ব্যাঙ্কে রাখা হয় আর ঐ একদিন সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা সারারাত খোলা থাকে। বিসর্জনের আগে গয়না খুলে আবার ভল্টে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, সূর্যোদয়ের আগেই বিসর্জন হয়, হতেই হয়।  কোনও কারণে একটুও দেরী হয়ে গেলে সবাই খুব ভয়ে থাকে, কারো না কারো প্রাণহানি নাকি হবেই হবে| এই পুজোর ব্যবস্থাপকরা কেউ ব্রাহ্মণ, কায়স্থ বা বৈদ্য নন, সকলেই ডোম, নমশুদ্র বা অন্য কোনও তথাকথিত অন্ত্যজ শ্রেণী, যাঁদের পূর্বপুরুষরা একসময় এই অঞ্চলে থাকতেন, পুজো করতেন। উচ্চশ্রেণীর লোকে উপহাসের সুরে বলে এঁরাই ছিলেন সেইসব ঠগী ও ডাকাত। তবে খুব বেশী কিছু কেউই বলেন না, কারণ ‘মা' নাকি ‘খুব জাগ্রত।‘ ভক্তরা সারাদিন উপোস করে মাঝরাতের পর পুজো শেষ হলে চরণামৃত পান করে তবে উপোস ভঙ্গ করেন। আমাদের বাড়ীতে তো মা, বড়মামীমা, দিদা উপোস করেই, অনেকবছরই জিজি আসে, বড়মামীমার দিদি মানে মণিমা-মাসী আসে, সমস্ত বাড়ীতেই প্রায় আত্মীয়্স্বজন আসে। এইবার শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পৌরসভা থেকে বাঁশ বেঁধে দন্ডীর জন্য লেন বানিয়ে দিয়েছে, জায়গায় জায়গায় বড় বড় ফ্লাড লাইট লাগিয়ে দিয়েছে যাতে যাত্রীদের রাত্রে অসুবিধে না হয়, পানীয় জলের গাড়ী দিয়েছে।  

    পাড়ার বড়রা কেউ কেউ ফিসফাস করেন ‘হবে না, ওরা তো ছোটলোকদের মাথায় তুলবেই, ওদের ভোটেই তো এল।‘  অন্যকেউ আবার বলেন ‘সে যাই হোক সুবিধে তো ভালই করেছে, যে জন্যই করুক, উপকার তো সবাই পাচ্ছি।‘ ভোররাতে জল ঢেলে এসে সারাদিন উপোস করেও মা আমাকে আর ভাইকে নিয়ে মেলায় যায়। ভাই ট্যামটেমি কেনে আর ছোট্ট কাঠের গাড়ী। গাঢ় গোলাপী আর সবুজ রঙ করা বাক্সমত, কাঠের গন্ধের সাথে কাঁচা রঙের গন্ধ মেশামেশি। আমি কাঁচের চুড়ি কিনব, কিছুতেই সামনের দোকানেরগুলো পছন্দ হয় না। মা বাড়ী এসে ভাইকে রেখে আবার আমাকে নিয়ে বেরোয়। দিদারা খুব গজগজ করে, সারাদিন উপোসের পরে দুবার করে যাওয়া, আমাকেও কিসব যেন বলে লোভ টোভ। মা কিন্তু ওসব কিছুতে কান না দিয়ে আমার হাত ধরে বলে ‘চল দেখি কালীতলা কলোনীর ভেতরের মাঠের দোকানগুলো, উদ্বাস্তু সহায়ক সমিতির কাছের দোকানগুলোও দেখে আসি।‘ আমিও নিশ্চিন্তে মা’র হাত ধরে বেরিয়ে যাই। সাদা, কালো আর জলরঙের ওপরে সোনালী কাজ করা চুড়ি কিনি, গাঢ় সবুজ রঙের পাতলা ফিনফিনে চুড়ি কিনি গোছাভরে আর কিনি লাল টুকটুকে ঢেউ খেলানো  একগোছা। সবই এক ডজন করে। দুইহাতভরে চুড়ি পরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি, মনে হয় এই জগতে আনন্দ ধরে রাখার জায়গাই নেই। কি যে সুন্দর এই জগৎটা।

    কালীতলায় সারারাত ধরে হাজারের ওপরে পাঁঠাবলি হয়, একটা দুটো মোষের বাচ্চাও। বলির মানত থাকলে আগে থেকে নাম লিখিয়ে স্লিপ নিতে হয়। নবগ্রাম, রিষড়া, ধর্মডাঙা, মোড়পুকুর থেকে যত লোক পাঁঠা নিয়ে যায়, সব আমাদের বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়েই যায়। পাঁঠাগুলো কি কিছু বোঝে? নাকি অত আলো লোকজন দেখে ঘাবড়ে যায়? অনেক পাঁঠাই দেখি কিছুতেই যেতে চায় না, রাস্তায় বসে পড়ে, ম্যাঁ-হ্যাঁ-হ্যাঁ করে  চীৎকার করতে থাকে, ইচ্ছাপূরণের সুখে তৃপ্ত মালিক তার পাঁঠাকে টেনে হিঁচড়ে, তাও না হলে কোলে তুলে মন্দিরে গিয়ে লাইন দেয়। বলির পরে মাথা ও ধড়ের কিছু অংশ মন্দির কমিটি রেখে বাকী পাঁঠা মালিককে ফেরত দেয়। পরেরদিন মন্দিরের পিছনে সেই মাথা বিক্রী হয়, লোকে লাইন দিয়ে কেনে, মহাপ্রসাদ, তাই বাড়ী নিয়ে পেঁয়াজ রসুন ছাড়া ‘নিরামিষ পাঁঠা' রেঁধে খায়। এইবারে আমাদের বাড়ীতেও জোড়া পাঁঠা এনে রাখা হয়েছে। গতবছর ছোটদির উচ্চমাধ্যমিক ছিল, ভীষণ কঠিন সেই পরীক্ষায় পাশের জন্য বড়মামীমা একটা আর দিদা একটা পাঁঠা মানত করেছিল। এইবারে সেই উদযাপন। আমরা অবশ্য এইসব মানত টানতের কথা জানতাম না। দাদু আর বড়মামা গিয়ে কিনে আনে সর্বসুলক্ষণযুক্ত নিখুঁত দুটো পাঁঠা, একটা বাদামী আর সাদায় মেশা আর একটা কুচকুচে কালো, যেন কালো মখমলি ভেলভেটের  তৈরী।

    গেটের পাশের মালতীলতা এই সময়টা সাদা আর গোলাপী থোকা থোকা ফুলে ভর্তি হয়ে থাকে, ফুলের থোকার মাঝে মাঝে আর্ধেক কালো আর আর্ধেক লালচে বাদামী বড় বড় পিঁপড়ে। ভাই আর আমি পিঁপড়ে এড়িয়ে সাবধানে মালতীপাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়াই পাঁঠাদুটোকে।  ছোটমামা বলে ওরা নাকি কাঁঠালপাতা ভালবাসে, সে গাছ সেই গোয়ালের পিছন দিকে আর গোড়ায় কাঠপিঁপড়ের বাসা। চুপিচুপি হারিকেনের কেরোসিন একটু নিয়ে পায়ে মেখে সে পাতাও ছিঁড়ে এনে খাওয়াই। সে হয়ে গেল আজ  প্রায় দশদিন। আমি ভেবেছিলাম এদের পুষতে আনা হয়েছে। আজ  দুই হাতভরে কাঁচের চুড়ি কিনে ঝলমলে খুশীতে বাড়ী ফিরে অবাক হয়ে  দেখি ওদের স্নান করানো হয়েছে,  জিজ্ঞাসা করে শুনি মানতের কথা। ওদের নাকি বলি দেবার জন্যই কিনে আনা হয়েছে। ছোটমামা লোভ দেখায় আগামীকাল দুপুরে সুস্বাদু মাংসভাতের, মহাভোগের। গা গুলিয়ে ওঠে আমার, আর অন্ধকার অমাবস্যা ঢুকে যেতে থাকে আমার ভেতরে, ছেয়ে ফেলে মাথা, চোখ। ওদের যে এখনও নাম রাখা হয় নি, ঠিক করতে পারি নি বলে। ওরা যে এখনও ভীষণ ছোট। ওদের গায়ে তো বেশী মাংসই নেই, তাহলে বলি দেবে কেন? আমাকে কেউ বলে নি কেন ওদের বলি দেবে!?

    মনিমা-মাসী বলে ‘তুই তো আচ্ছা ন্যাকা মেয়েরে! এতদিন ধরে এনে রাখা হয়েছে আর তুই নাকি জানতিস না? কোন জগতে তোর মন পড়ে থাকে শুনি?'  কে যেন বলে ‘একটা শুভকাজে অমন অলক্ষণের মত গোমড়া মুখ করে থেকো না, যাও ঘরে যাও।‘ কে বলল ‘শুভকাজ’? মা? নাঃ মা'র তো ভীষণ মাথা ধরেছে, নির্জলা উপোস করে অত ঘোরাঘুরিতে। সন্ধ্যেবেলা স্নান করানোর জন্য, নাকি কিছু বুঝতে পেরে কে জানে, ওরা কেমন শক্তমত হয়ে গেছে, গায়ে হাত দিলেই পিঠ কাঁপিয়ে শক্ত আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দাদু, বড়মামা আর ছোটমামা ওদের নিয়ে চলে যায় মন্দিরে লাইন দিতে, বড়রা সবাই উপোস করে ক্লান্ত, ঘরে পাখার নীচে একটু গড়িয়ে নিতে যায়, যতক্ষণ না চরণামৃত আসে। আমি ভেতরের বারান্দায় পা ঝুলিয়ে অন্ধকার উঠোনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকি ভেতরে বাইরে অন্ধকার নিয়ে। কচি পাঁঠা, বাচ্চা মোষ বলি দেওয়া হয়, বড় ছাগল বা মোষ তো দেয় না। গল্পের বইয়ে পড়েছি যক বসাতেও আগে বাচ্চা ছেলেকে অন্ধকুপে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলত। ডাকাতরাও কচি ছেলে ধরে এনে বলি দিত। বাচ্চাদেরই বলি দেয়, মারে, তাহলে আমাকেও কি মেরে ফেলতে পারে? মন বলে খুব পারে, ওরা মারার আগেই তুই নিজেই মর না কেন।  

    চমকে উঠি কিরকম, শরীরের মধ্যে  আনচান করে ওঠে ... সে কি ভয়, নাকি মৃত্যুর অমোঘ টান? জানি না, কিন্ত মনের মধ্যে অন্য আরেকটা মন কুটকুট করে বলেই চলে দেখ না তোকে ওরা আর শাস্তি দিতে পারবে না, খুব জব্দ হবে। আমি ফিসফিস করি না না একবার মরে গেলে আর ফিরে আসা যায় না। বাবা তো এলো না আর, পারলে ঠিক আসত আমি জানি। কিন্তু সে আমার নিজের কানেও পৌঁছায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত বাড়তে থাকে,বাইরে একটু দূর থেকে ভেসে আসা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া পাঁঠাদের ডাক, কালীতলা থেকে ভেসে আসা উদ্দাম ঢাক ও কাঁসির শব্দ আমার মাথায় বুনে চলে মৃত্যুর নকশা, এঁকে চলে রক্তেভেজা চিত্রকল্প, আমাদের ক্লাসের কল্পনা সানার দাদা, যিনি কালীতলায় সমস্ত বলি একা হাতে দেন, আমার মাথার ওপরে তুলে ধরেছেন ঝকঝকে খড়্গখানা কে যেন আমার পা দুটো টেনে ধরেছে, হাড়িকাঠে আটকানো গলায় চাপ লাগছে, আমি উঠে পালাতে চাইছি, পারছি না, দিল... দিল ...এইবার নামিয়ে দিল খড়্গটা। নাঃ পালাতে চাই না, মেরে ফেল আমাকে তোমরা, আমি এক্ষুণি মরে যেতে চাই। কতদিন, মাস বছর পরে বুঝেছিলাম, তীব্র মৃত্যুকামনার মধ্য দিয়ে সে ছিল এক কিশোরী শরীরের প্রথম জেগে ওঠা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ মার্চ ২০২৪ | ১০০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:b588:2f45:5560:***:*** | ০৭ মার্চ ২০২৪ ২০:৪৬529082
  • কী নাড়া দেওয়া লেখা!
  • Aditi Dasgupta | ০৭ মার্চ ২০২৪ ২১:৪০529090
  • কতদিন অপেক্ষা করে ছিলাম, আজ এক ঝাঁকুনি দিলে! 
     
    আচ্ছা সাদা কালো জলরং এর চুড়ি কি আলাদা আলাদা ভাবে সাদা ,কালো আর জলরং? নাকি একটা চুড়ি তেই অতগুলি রং? ৩ডজন না ৫ডজন কিনেছিলে? আমার খুব জানা দরকার।কেনো জানিনা। কল্পনা করছি খালি।
  • | ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:১২529102
  • অদিতি, এক চুড়িতেই তিনটে রঙ। কালো সাদা জলরঙ পরপর। ৩ ডজন মোট। 
     
    হ্যাঁ মাস দুয়েক দেরী হল। এবারে আবার তাড়াতাড়ি দিতে পারব আশা করছি।
     
  • দীমু | 182.69.***.*** | ০৮ মার্চ ২০২৪ ১০:০১529105
  • হ্যাঁ আরো তাড়াতাড়ি আসতে থাকুক yes 
  • স্বাতী রায় | 117.194.***.*** | ০৮ মার্চ ২০২৪ ২০:১৪529117
  • জীবন্ত লেখা!
  • r2h | 165.***.*** | ০৮ মার্চ ২০২৪ ২০:৪৭529118
  • "...হয়ত ওরা কানাইপুরে গিয়ে নতুন টালিওলা বাড়ী বানিয়েছিল, হয়ত ওদের বাবার কারখানার লক আউট খুলে গিয়েছিল, হয়ত সেখানে বন্ধুর বাড়ী গেলে বন্ধু আদর করে ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসে গল্প করে, বাড়ীর লোক বকে দেয় না।..."
     
    :(
  • | ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫১529142
  • সকলকে ধন্যবাদ।
  • Aditi Dasgupta | ১৩ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪১529330
  • আপনার লেখা পড়তে পড়তে যেন সন্ধ্যার বাতাসে ভুলে যাওয়া কোনো গান, কোনো গন্ধ, কোনো কথা ---কে যেন কাকে বলছিলো ---ভেসে আসে । আশ্চর্য এই মাদকতা সৃষ্টি সহজ কথা নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন