এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে

  • ট্রেনযাত্রার পাঁচালি - চিত্রকূট থেকে উদুপী - ২

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩৫৮ বার পঠিত
  • চললুম চিত্রকুট থেকে উদুপী

    তবে দেববাণী‌র মায়ের মতো থার্ড ক্লাসে নয় - সে তো ১৯৭৮ সালে জনতা সরকারের সময়ে‌ই ভারতীয় রেল থেকে উঠে যায়। আমি যাবো শায়িকা শ্রেণীতে - ২৪৩০ কিমি দূরত্ব - শিডিউল অনুযায়ী ৩৬ ঘন্টার ট্রেন যাত্রা‌। তবে শিডিউল ব‍্যাপার‌টা ভারতীয় রেলে হাতি‌র দাঁতের মতো। টাইম টেবিলে এক - স্টেশনে আর এক। তাই স্টেশন টু স্টেশন - চিত্রকুট টু উদুপী লেগেছিল ৪৬ ঘন্টা। মাঝে ছিল ঝাঁসি‌তে ৬ ঘন্টার ট্রেন বদলের ব্রেক। সেই ফাঁকে দেখে এসেছিলাম শহরের মাঝে বীরাঙ্গনা রাণী লক্ষ্মী‍বাঈয়ের প্যালেস - রাণীমহল। 

    ১৫ই জানুয়ারী ২০১৭তে কর্ণাটকের মনিপাল থেকে বেরিয়ে‌ছিলাম ১৬ দিনের একাকী ভ্রমনে। ঝাঁসী, ওরছা, বিদিশা, খাজুরাহো হয়ে শেষ পাতে ছিল চিত্রকুট ধাম। দুটো দিন সেখানে আশ মিটিয়ে ঘুরলাম। প্রাচীন জনপদের বুক চিরে বয়ে চলেছে মন্দাকিনী নদী। তার দুপাশে রয়েছে অনেক পৌরাণিক  তীর্থ স্থল। আমার ঈশ্বর‌ভক্তির টান নেই। তবে প্রাকৃতিক ও স্থানমাহাত্ম‍্যের কারণে এখানে ঘুরে বেড়ানো সুন্দর অভিজ্ঞতা। প্রথমদিন রামঘাট, কামদাগিরি পরিক্রমা, লক্ষ্মণ পাহাড়ে চড়া এসব নিয়ে প্রায় সাত কিমি হাঁটা হয়েছে। দ্বিতীয় দিন শেয়ার  অটোতে বারোজন তীর্থযাত্রীর সাথে মাত্র ষাট টাকায় ষাট কিমি ঘুরে সাত ধাম যাত্রা করে এসেছি। প্রায় ঘন্টা পাঁচেক সময় লেগেছে। একা রিজার্ভ করে গেলে ছশো টাকা  লাগতো। 

    স্বল্প খরচে একাকী ভ্রমণের জন‍্য ভারতবর্ষে জনপরিবহন ব‍্যবস্থা যেমন বাস, ট্রেন, শেয়ার অটো বা জীপ এসব এখনো বেশ সস্তা। তবে মানসিক বাধা, ছ‍্যুৎমার্গ থাকলে বা  আরামপ্রিয় হলে পোষাবে না। সাত ধাম যাত্রার পর প্রায় আটশো পাথুরে সিঁড়ি চড়ে সংকর্ষণ পাহাড়ের মাথায় হনুমান ধারা দেখে এলাম। উপর থেকে চারপাশের দৃশ‍্য সুন্দর। ওঠার দিকে বেশ খাড়াই হলেও পাহাড়ের মাথায় বিস্তৃত সমতল। অনেকটা পঞ্চগনী টেবল টপ এর মতো। ওপরে হু হু বাতাসের মধ‍্যে পরিপাটি এক চায়ের ঝুপড়িতে বসে সময় নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে সুস্বাদু দু কাপ চা পানের স্মৃতি অনেকদিন মনে থাকবে। দোকানীটিও বেশ আমুদে মানুষ।
     
    রাত নটায় স্টেশনে‌র কাছে হোটেল ছেড়ে রেলের রিটায়ারিং রুমের চার বেড ওয়ালা ডর্মিটরিতে এসে উঠলাম। ইংরেজ আমলের বড় ঘর। উঁচু সিলিংয়ে স্কাইলাইট। ঝকঝকে তকতকে। আর কেউ নেই। কেয়ারটেকার আমায় চাবি দিয়ে বললেন, ট্রেনে ওঠার আগে টিকিট কাউন্টারে চাবিটা জমা করে দিতে। যাত্রীর ওপর রেল কর্মচারীর এরকম আস্থা আগে কখনো দেখিনি। ট্রেন আসার কথা রাত সাড়ে এগারোটায়। দুঘন্টা লেট, মানে রাত দেড়টায় আসবে। একটু ক্লান্ত লাগছে। অনেক ধূলোও  খেয়েছি আজ। বাথরুমে গীজার ছিল। তাই গরম জলে চান করে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে ফিরলাম রাত দশটায়। রাত একটায় এ্যালার্ম দিয়ে ভাবলাম ঘন্টা তিনেক একটু ঘুমিয়ে নি। এমন ঘড়ি ধরে ঘুমানোর অভ‍্যেস নেই। শুনেছি নেপোলিয়ন যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার পিঠে বসেই মিনিট দশেকের বেড়ালঘুম দিতে পারতেন। আমি নেপোলিয়ন ন‌ই। তাছাড়া ট্রেনের আওয়াজ, লোকজনের হৈচৈতে ক্লান্ত থাকলেও ঘুম এলোনা। একটু তন্দ্রা মতো এসেছিল, তখন‌ই এ্যালার্ম বাজলো। মোবাইল এ্যাপে দেখি, লেট বেড়ে তিন ঘন্টা হয়ে গেছে। মানে ট্রেন আসবে রাত আড়াইটেয়। 

    লেকিন

    ভাবি ঘুম আর আসবে না, বরং একটু চা খেয়ে আসি। দরজা খুলতে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে বন্ধ। মরেছে! এ আবার কি? রিটায়ারিং রুমে পাশাপাশি দুটো ঘর।  একটা ডাবল বেডেড রুম আর আমি আছি চার বেডের ডর্মিটরিতে। দুটো ঘর জুড়ে চ‌ওড়া, ঢাকা বারান্দা। তার সামনে কোলাপসিবল গেট। সেটা খোলা ছিল। যদি ডর্মে অন্য কেউ আসে ভেবে ওটা বন্ধ করিনি। কেউ মনের ভুলে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনি টেনে দেয়নি তো? তালা অবশ‍্য আমার কাছে। কি করি? কেয়ারটেকারের মোবাইল নাম্বার‌ও নিয়নি। নিলেও লাভ হতো না, কেননা ও এখন বাড়ী গিয়ে ঘুমোচ্ছে। অন‍্য কোথাও দিয়ে টপকে টাপকে বেরোনোর‌ও কোনো উপায় নেই। এতো আচ্ছা গেরো হলো? দু একবার দরজাটা ভেতর থেকে টানাটানি করে জানলা খুলে “কো‌ই হ‍্যায়” বলে চেঁচা‌ই। যদি প্ল‍্যাটফর্ম থেকে কেউ শুনতে পেয়ে এসে খুলে দেয়। 

    হঠাৎ দরজাটা খুলে গেল। বছর তিরিশের এক গ্ৰাম‍্য মহিলা দরজার বাইরে কুন্ঠিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। বেশ সুশ্রী, লালচে ফরসা, সুন্দর গড়ন। সিঁথিতে সিঁদুর। কপালে বড় লালটিপ। আরো দুজন মেঝেতে চাদর পেতে শুয়ে আছেন। এক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। কাঁচুমাচু মুখে মহিলাটি বলেন, “আপ অন্দর মে থে পতা নেহী চলা। বাত্তি বন্ধ থা, সোচা বাথরুম হোগা। ইসি লিয়ে বাহার সে দর‌ওয়াজামে কুন্ডি লাগা দিয়া। বাহার প্ল‍্যাটফর্ম মে বহুত ঠন্ড হ‍্যায়, ইসি লিয়ে ইধর থোড়া লেটনে কে লিয়ে আয়া থা। কোই বাত নেহি, হমলোগ আভি চলে যায়েঙ্গে”। এক নিশ্বাসে লম্বা সাফাই দেন তিনি।

    শরীরে স্বাভাবিক সুস্বাস্থ‍্যের ছটা। প্রসাধনহীন লাবণ‍্যময় মুখে সদ‍্য ভাঙা ঘুমের আভা। একদম ছবি। খুব ইচ্ছে করছিল দু একটা ছবি তুলি তার। এমন স্বাভাবিক সুন্দর মুখচ্ছবি যদি ফ্রেমবন্দি না করতে পারলাম তাহলে আর দুম্বো ফুল ফ্রেম Nikon D750 ক্যামেরা বাটখারার মতো বয়ে বেড়িয়ে কি লাভ!  

     গুলজারের “লেকিন” সিনেমায় ডিম্পল কাপাডিয়ার মুখটা মনে পড়ে গেল। সিনেমায় সে দৃশ‍্য ছিল চলন্ত ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামরায় প‍্যাসেজের জানলা দিয়ে ভেতরে তাকানোর। সিনেমায় ডিম্পল প্রেতাত্মা, তাই শিরশিরে অশরীরী চাহনিতে তাকিয়ে ছিল কামরার ভেতরে বিনোদ খান্নার দিকে। 
     


    এখানে মহিলা‌টি দাঁড়িয়ে আছেন স্থবির প্ল‍্যাটফর্মে। তেমনি আকর্ষনীয় ধারালো মুখ। চাহনি‌ও নিষ্প্রাণ নয় - খুব প্রাণবন্ত। সোজাসুজি আমার দিকে তাকিয়ে জড়তাহীন স্বচ্ছতায় মৃদু লাজুক হাসি মুখে কথা বলছি‌লেন। গ্ৰাম‍্য, শহুরে যেই হোক না কেন, কোনো মহিলা আমার সাথে এমন সাবলীল‌ভাবে কথা বললে মুখে ছিপি এঁটে থাকার মতো বেরসিক আমি ন‌ই। 

      একটা চেয়ার টেনে বসে বলি, “কোই বাত নেহী। আপ বৈঠিয়ে। কাঁহা যায়েঙ্গে আপলোগ?” ব‌উটি মাটিতে পাতা চাদরে বসে পড়ে বলেন, “গঞ্জ বসোদা। ট্রেন চালিশ মিনিটমে আনেওয়ালী বোল রহে থে মাইক মে”। জিজ্ঞাসা করি, “ইন লোগ কৌন হ‍্যায় আপকে সাথ?” বলেন “মেরী পিতাজী ঔর মাজী। হমলোগ হর সাল আতে হ‍্যায় চিত্রকুট ধাম মে।” আমি বলি, “ইসবার কব আয়ে থে আপলোগ?” ব‌উটি বলেন, “আজহী সুবে, সাত বজে। ফির দিনভর সাতধাম যাত্রা, কামদাগিরি পরিক্রমা করকে সব থক গয়ে।” 

       আবার সেই মিষ্টি লাজুক হাসি। হয়তো প্ল‍্যাটফর্ম ছেড়ে রিটায়ারিং রুমের ঢাকা বারান্দার উষ্ণতায় আশ্রয় নেওয়ার অজুহাত দিতে চান। আমি ভাবি, বেশ ভাল‌ই ধকল গেছে আজ। মহিলাটির বাবুজীর মতো বয়েসে আমি এর অর্ধেক‌ও পারবো কিনা সন্দেহ। জানতে চাই, “আপলোগ পাহাড়ীকে উপ্পর হনুমান ধারা ভি গয়ে থে ক‍্যায়া?” এবার ব‌উটি চোখ বড় করে বলেন, “নেহী, নেহী, ওতো বহুত ভারী পঢ় যাতা। উসকে লিয়ে তো ঔর একদিন ঠহরনা মাঙ্গতা।” ভেবেছিলাম গ্ৰামীন পরিশ্রমী মানুষ, হয়তো চলেও যেতে পারে, অসম্ভব নয়। 

      পঞ্চাশ বছর বয়সে জুনাগড়ে দশ হাজার সিঁড়ি ভেঙ্গে গিরনার পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়া, গুরু দত্তাত্রেয় মন্দিরে পৌঁছে আমি যখন হাঁফাচ্ছি, দেখি এক দীর্ঘদেহী, বলিষ্ঠ কাঠিয়াবাড়ী বৃদ্ধ অবলীয়ায়, এক ছন্দে তীব্র খাড়াই সিঁড়ি দিয়ে হাতে একটা মোটা লাঠি নিয়ে উঠে আসছেন। পরে জেনেছিলাম ওনার বয়স ছিয়াত্তর। 

    বলি, “কোই বাত নেহী, ট্রেন আনে তক্ ইধারহী আরাম কিজিয়ে” ব‌উটি এবার হাত তুলে “সুক্রিয়া বাবুজী” বলে নমস্কার করে চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে পড়েন। দরজাটা ভেজিয়ে দিতে গিয়ে বলি, “লেকিন, ভুল সে ফির দর‌ওয়াজামে কুন্ডি মত লগা দেনা”। সে আবার “নেহী, নেহী” বলে সলজ্জে হেসে ফেলে। তার ওই “নেহী, নেহী” বলার ভঙ্গি‌মাটি ভারি সুন্দর লাগে। এসব কথাবার্তার মধ‍্যে বাকি দুজনের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তারা ঘুমিয়ে কাদা।

    বান্ধবী‍র সাথে বিশ্রম্ভালাপ

    রাত প্রায় দুটো বাজতে যায়। অধূনা ক‍্যালিফোর্নিয়া নিবাসী স্কুলবান্ধবী কেতকীকে গুপ্ত গোদাবরী চত্বরে তোলা একটি পুঁচকের কটা ছবি পাঠাই। বেশ ঘোল খাইয়ে‌ছে সে আমায়। মুখটা খুব আদুরে আর চোখদুটি ভারি এক্সপ্রেসিভ বলে কয়েকটি ক‍্যানডিড ছবি তুলতে চেয়েছিলাম। দুর থেকে জুম লেন্সে তুললে হয়তো টের পেতো না। মেয়েটি খুব ছটফটে। আরো কয়েকটি পুঁচকের সাথে খেলছি‌ল। একটু  কাছে গিয়ে তুলতে দেখে টের পেয়ে শুরু করলো দুষ্টুমি। আমায় ছবি তুলতে দেবে না ওর। পাশে‌ই ওদের দোকান। ওর মা মেয়ের দুষ্টুমি দেখে হাসছেন। মেয়েকে কপট বকেন, তসল্লি সে ঠ‍্যহর না জারা, বাবুজী তেরা পিকচার লে রহে তো?

       তাকে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা‌য় বলি, কিছু বলবেন না। এমন প্রাণবন্ত বালিকার পোজ দেওয়া ছবি ভালো লাগে না। আমি ঠিক তুলে নেবো দু একটা। তাছাড়া ডিজিটাল ফটোগ্ৰাফির এই তো সুবিধা। তোলো যতো খুশি, পরে পছন্দের কয়েকটি রেখে ডিলিট করে দাও বাকি। শুরু হয় ওর সাথে আমার আঁখমিচোলি খেলা। পুঁচকেটা ওর সাইজের একটা ছোট্ট হলুদ উড়নি নিয়ে নানা নকশা করে। তবে ছোট তো, কৌতূহল যাবে কোথায়। মাঝে মাঝে টেরি‌য়ে দেখেও আমায়। কী মিষ্টি যে লাগে তার রকমসকম! সেই ফাঁকে তুলে নি তার কয়েকটি ছবি। চলে আসার আগে চকলেট দি‌ই তাকে। তখন আর লজ্জা নেই বিবির। জিরিজিরি হাসে। একাকী ভ্রমণে এমন সব মুহূর্ত বড় আনন্দ‌ময়। বহুদিন পরে এসব ছবি দেখে ক্ষণিকের জন্য ফিরে যাই অতীতে।
     






     
    চলার পথে টুকটাক ছবি পাঠিয়েছি বলে কেতকী জানতো তখন আমি একাকী ভ্রমণে রত। ক‍্যালিফোর্নিয়ায় তখন রবিবার বেলা সাড়ে বারোটা হবে। তৎ‍ক্ষণাৎ উত্ত‍র আসে, এ কে রে? খুব মিষ্টি তো!

    লিখি, চলার পথে দেখা এক পুঁচকে। ও লেখে, ও, আচ্ছা, কিন্তু তুই এতো রাতে জেগে আছিস কেন? লিখি, চিত্রকুট স্টেশনে রিটায়ারিং রুমে বসে আছি ট্রেনের অপেক্ষায়। তিন ঘন্টা লেট। ও লেখে, এ মা! সারাদিন ঘোরাঘুরি করে এত রাত অবধি ট্রেনের জন‍্য জেগে অপে‍ক্ষা করা তো খুব বাজে ব‍্যাপার রে!

    কেতকী সাতাশিতে বিয়ে করে চলে যায় আমেরিকা। তারপর আর যোগাযোগ ছিলনা। বছর পঁচিশ বাদে ফেবু এ্যাকাউন্ট খুলতে পরদিনই মেসেজ আসে - উঃ, কতদিন বাদে তোর পাত্তা পেলাম। কোথায় আছিস? কেমন আছিস? নম্বর আদানপ্রদান হয়। ওই ইন্টারন্যাশনাল কলে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলে কয়েকবার। আসলে পরিণত বয়সে যৌবনকালে‍র মতো ফুরফুরে বন্ধুত্ব আর হয় না। তখন যা হয় তা সামাজিকতা, দায়বদ্ধতা বা প্রয়োজনে নেটওয়ার্কিং। দীর্ঘ অদেখায় পুরোনো বন্ধু‍ত্বে সেই উষ্ণতা না থাকলেও নেভা ধূপের হালকা সুবাস টের পাওয়া যায়। ফেবুতে আমি স্বচ্ছন্দ ন‍ই। ২০১৪তে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার শুরু করতে তারপর থেকে মাঝেমধ্যে হোয়ালাপ হয়। 

    কেতকী ওদেশে বেশ কিছুদিন বসবাসের পরে প্রথমে ওদেশের সবুজপত্র, পরে নাগরিকত্ব পায়। ওকে আর লিখি না যে তিন দশক ওদেশে কাটিয়ে এদেশের অব‍্যবস্থার ধারণা ধূসর হয়ে গেছে তোর। শুনেছি নিউইয়র্ক মেট্রোর গার্ড নির্দিষ্ট সময়ের কুড়ি সেকেন্ড বাদে ট্রেনের দরজা বন্ধ করতেন যাতে টিকিট কাটা শেষ যাত্রী দৌড়ে এসে ট্রেনে উঠতে পারেন। তবে ওই কুড়ি সেকেন্ডের অঘোষিত দেরীও পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাও কাগজে নোটিশ দিয়ে যাতে এতদিন ওই বেহিসেবী সুবিধা পাওয়া যাত্রীদের আবার অসুবিধা না হয়। 

    এ হচ্ছে হমারা ভারত মহান, এখানে সেকেন্ড নয় - লেটের হিসেব হয় ঘন্টায়। ভাগ‍্য ভালো থাকলে মিনিটে। সেই ২০১৭ জানুয়ারি‍তেই তিনদিন একাকী বুদ্ধ‌গয়া বেড়িয়ে সাত তারিখে গয়া স্টেশনে সাত ঘন্টা বসে ছিলাম। রাত আটটার বদলে ট্রেন এলো রাত তিনটেয়। হিসেব মতো, পরদিন। আর একাশি সালে বিহারে সার্ভে ক‍্যাম্পে গিয়ে ফেরার সময় মুঘলসরাই প‍্যাসেঞ্জার মধুপুরে লেট করে এসেছিল বারো ঘন্টা পরে।

    ও লেখে, এ বাবা, এতো খুব বিচ্ছিরি ব‍্যাপার।  আচ্ছা ভারতীয় রেল এত লেট করে কেন রে? লিখি, সবসময় যে রেল দপ্তরের অপদার্থ‌তা, তাও নয়। শীতকালে উত্তর ভারতের অনেক জায়গায় ঘন কুয়াশা পড়ে। আমার ট্রেনটা আসছে যোধপুর থেকে, তাই হয়তো কুয়াশার জন‍্য দেরী হচ্ছে। অন‍্যান‍্য সময়ে এতো লেট করেনা। যাক কি আর করা যাবে। ভালো থাকিস। আমি যাই একটু চা খেয়ে আসি প্ল‍্যাটফর্মে।

    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৩540582
  • চিত্রকূট - উদিপি ট্রেনে ৪৬ ঘণ্টা না ঝাঁসির ৬ ঘণ্টা জুড়ে ? মোট ৫২? 
    স্টেশনের প্রতীক্ষা গৃহে স্বেচ্ছায় তালা বন্দী হয়েছিলাম ফিনল্যান্ডের কৈকালা স্টেশনে ।
    শিশুটি বড় মন ভোলানো । ইউরোপে এমন কারো ছবি তোলা প্রায় অসম্ভব ব‍্যাপার । 
     
    ভাল লাগছে পড়তে 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৪540584
  • টাইম-টেবল একটি ধারণা, একটি প্রস্তাব। এটিকে আরও অনেক জানা এবং অজানা, অনুমেয় এবং অনুমানের বাইরের বিভিন্ন বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে গ্রহণ করতে হবে, চাই বা না চাই। 
     
    সাথে আছি। পরের পর্বের অপেক্ষায়। 
  • kk | 172.56.***.*** | ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:১৭540586
  • বাচ্চা মেয়েটির ছবিগুলো খুব ভালো লাগলো। গল্পটাও ভালো লাগছে পড়তে। চলতে থাকুক।
  • সমরেশ মুখার্জী | ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৫540588
  • হীরেনদা, 
    চিত্রকূট - উদুপী শিডিউল টাইম ৩৬ ঘন্টা। 
    দু দফায় ১০ ঘন্টা লেট ধরে ৪৬ ঘন্টা। 
    মাঝে ঝাঁসিতে গ্যাপ ৬ ঘন্টা ধরে ৫২ ঘন্টা। 
     
    হ্যাঁ, ঐ ভ্রমণে ঐ শিশুটির ছবি আমার স্মৃতি‍তে অমূল্য সম্পদ। চোখ দুটি তার এতো মায়াবী  ! 
  • সমরেশ মুখার্জী | ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৩540590
  • অমিতাভ লান, 
    আমার কাছা খোলা একাকী ভ্রমণে ট্রেনের আসার বা গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়ে‍র ব্যাপারটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যদি না প্রথমবার অচেনা গন্তব্যে পৌঁছতে খুব রাত হয়ে যায়। হলেও কিছু করার নেই। যদি মনে হয় বেশি রাতে শহরে যাওয়া নিরাপদ নয় তাহলে স্টেশনের আশপাশে কামচালাও কোনো হোটেলে থেকে যাবো। তাও না পেলে প্ল্যাটফর্মের একপাশে প্ল্যাস্টিক পেতে, তার ওপর ফোম ম্যাট পেতে, মশারি টাঙ্গিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারি। তাই সাথে একটা সিঙ্গল মশারি নিয়ে চলি। মশায় আমার এ্যালার্জি আছে।  চুরি ছ্যাঁচরামির প্রেক্ষিতে স্টেশনে রাত কাটানো সেফ। 
     
    ব্যাকপ্যাকার শৈলী‍তে ভ্রমণে এমন সব অবস্থার জন্য মানসিক প্রস্তুতি ও সাথে বাস্তবিক জুগাড় থাকে বলে চিন্তা করি না। তাই পাহাড়ের মাথায় কালিঞ্জর কেল্লায় দুটো রাত ৬x৬ ফুট সিকিউরিটি পোস্টের সিমেন্টের মেঝেতে উত্তরপ্রদেশের জানুয়ারি‍র ঠাণ্ডা‍য় বিনদাস কাটিয়ে দিয়েছি। টয়লেট ছিলনা। পাশের ঝোপঝাড়ে কাজ সেরেছি। 
     
    সঙ্গে থাকুন। আরো নানা মশালা আসবে। 
  • . | ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:২৭540591
  • চলুক
  • সমরেশ মুখার্জী | ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৫১540593
  • হীরেনদা,

    আপনার ঐ বাইরে থেকে বন্ধ ওয়েটিং রুমে রাত কাটানোর প্রসঙ্গ‌টা ৪.১২.২৩ কিশোর ঘোষালবাবু লিখিত আপনার “উত্তরের আলোয় অচেনা ইউরোপ ও পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি” ব‍ই প্রসঙ্গে পুস্তক আলোচনা‍য় পড়েছি‍লাম। তখন অবশ্য আপনার অল্প বয়স, শরীর দূরন্ত ঘূর্ণীর মতো চনমনে, মনে অভিযান‍প্রিয়তা। আপনি আপনার জীবন কাটিয়েছেন অদম্য উৎসাহে। এসব অনেকের দ্বারাই হয়ে ওঠে‍না। আমার কাছে আপনি তাই প্রণম্য ব্যক্তি‍ত্ব। কিশোর বাবুর আলোচনায় ঐ অংশ‍টি ছিল এরকম::

    “এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত আধুনিক ট্যুর প্যাকেজ “একুশ দিনে ইউরোপ ভ্রমণ”-এর সঙ্গে একেবারেই মিলবে না। কারণ লেখক কোপেনহেগেন ঘুরেছেন সাইকেলে – যে সাইকেলে সে সময় ব্রেক থাকত না। তিনি ট্রেনে ফিনল্যাণ্ড থেকে কেমি হয়ে সুইডেন যাওয়ার পথে, হোটেলের খরচ বাঁচিয়ে রাত্রে নিখরচায় শান্তিতে ঘুমোনর জন্যে কেমি-কক্কলা-কক্কলা-কেমি জার্নি করেছিলেন। এবং কক্কলা স্টেশনের বন্ধ ওয়েটিং রুমে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন, স্টেশন মাস্টারের অনুমতি নিয়ে। দরিদ্র ভারতীয় সেই ছোকরা অভিযাত্রীর এমন আবদার স্টেশন মাস্টাররা মেনে নিয়েছিলেন সানন্দে, এবং বলেছিলেন, বিরল এই আবদারের কথা আজীবন তাঁরা শোনাবেন তাঁদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিজনের কাছে!”
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন