এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তন্ত্রপুর ( ৯ম পর্ব )

    ARIJIT MUKHOPADHYAY লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৯ বার পঠিত
  • | | | | | | | |
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
    নবম পর্ব:
     
     
     
    কালীমন্দিরের সামনে আসতেই "দাদু?" বলে হাঁক দিল গণশা। কিছুক্ষণ পরে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এলেন বছর ষাটের এক প্রৌঢ়। গায়ে গেরুয়া বসন, চুল দাড়ি পেকে সাদা হয়ে গিয়েছে। ভদ্রলোক বেশ লম্বা, গায়ের রং উজ্জ্বল। বিরূপাক্ষ তান্ত্রিকের মতোই দাড়ি আর চুল লম্বায় বেড়ে গিয়ে মিলেমিশে একাকার, তবে বিরূপাক্ষ তান্ত্রিকের সাথে বাহ্যিক রূপার তফাৎ অনেকটাই। ওনাকে দেখে একটা অদ্ভুত রকমের ভক্তি আসে মনে, যা বিরূপাক্ষ বাবা কে দেখে মোটেই আসে নি। হাতে, গলায় বেশ কয়েকটা করে হরীতকীর মালা ঝুলছে ইয়া লম্বা লম্বা। কপালে লাল তিলক যেন নীচ থেকে ওপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে উঠে গেছে। এই ঘন জনমানবহীন জঙ্গলে সূর্য ডোবার পরও উনি যে একা এই মন্দির চত্বরে রয়েছেন তা ওনার সাহসের বেশ প্রশংসার দাবি রাখে। বিশুর একটুও চিনতে অসুবিধে হল না যে ইনিই সেই প্রজ্ঞানন্দ আচার্য্য!
     
    গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়েই গণশাকে দেখে উনি ঈষৎ হেসে বলে উঠলেন,"হু হু হু ..... বুড়ো দাদুকে অ্যাদ্দিনে মনে পড়ল তাহলে?"
     
    গণশা ওনাকে প্রণাম করে বললেন,"দাদু, তুমি তো জানো, আমাদের কাজের চাপ কিরকম? মালিক ছাড়তেই চায়না।.......... দাদু? এই যে এই আমার বন্ধু, আমার সাথেই কাজ করে, বিশু। আর ও হল রূপা - বিশুর স্ত্রী, যার কথা তোমায় বলেছিলাম।"
     
    ফিসফিস গলায় দুবার ' রূপা....রূপা ' বলতে বলতে আকাশের দিকে তাকালেন প্রজ্ঞানন্দ আচার্য্য। তারপর বললেন,"আয় ভিতরে নিয়ে আয় ওদের। মায়ের থানে একটু বোস দিকি?"
     
    ওনার পিছু পিছু ওরা তিনজন প্রবেশ করল গর্ভগৃহের ভিতর। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও ভিতরটা বেশ বড়। ঢুকতেই যেন একটা সুন্দর গন্ধ ভেসে এল নাকে! এ গন্ধ সচরাচর পাওয়া যায়না! ধূপের নয় - তবে এক স্বর্গীয়, সুন্দর, পুষ্পল সৌরভ! বেশ অন্ধকার ভিতরে। অভ্যেস না থাকলে কারোর পক্ষে সবকিছু ঠাহর করা মুসকিল। ধুনোর গন্ধে মো মো করছে গোটা গর্ভগৃহ। আর সেই ধুনোর ধোঁয়ায় যেন সবকিছু বেশ আবছা লাগছে। এককোনে একটা মোমবাতি জ্বলছে বড়, বেশ খানিকটা মোম গোলে একটা মোটা আস্তরণ তৈরি করেছে মেঝেতে। তার পাশে একটা বড় লম্বা প্রদীপ। আর সেই প্রদীপের আলোর ছটা গিয়ে পড়ছে মা'র মুখের ওপর! 
     
     
    এতক্ষণে সবার দেবীমূর্তির দিকে চোখ পড়ল! অদ্ভুত মায়া সে মুখে! দেবীর দু চোখ যেন জীবিত! যেন কিছু বলতে চাইছে! তৃতীয় নেত্র যেন ক্রোশানোল স্ফীত! জিহ্বা থেকে যেন লেলিহান ক্ষুধা ঝড়ে পড়ছে - দুষ্কর্মের ক্ষুধা, বদলোকের ক্ষুধা, পাপের ক্ষুধা! এ রক্তিম পিপাসা যেন জগতের সব কলুষ এক নিমেষে গিলে নিয়ে জগতকে কলুষমুক্ত করার জন্য সদা জাগ্রত! মুন্ডুমালা যেন এপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত দোদুল্যমান! এক হাতে খর্গ যেন বলির অপেক্ষা করছে কারোর! অন্যহাতে আশীর্বাদ বর্ষিত হচ্ছে জগতের ওপর! আরেক হাতে অসুরের গলাকাটা শির বিস্ফারিত চোখে চেয়ে আছে অনুপায় হয়ে! ঘন কালো এলোকেশরাশি আর মায়ের শ্যামাবর্ন ধুনোর ধোঁয়া ভর্তি সেই গর্ভগৃহের আবছা আধো আলোছায়ার সাথে পূর্ণভাবে মিশে গিয়ে অদ্ভুত এক আলোড়ন তৈরি করছে ভক্ত হৃদয়ে! বিশু যে এখান থেকে খালি হাতে ফিরে যাবে না তা সে বেশ বুঝতে পারছে এখন।
     
     
     
    (চলবে....)
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন