এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তন্ত্রপুর

    ARIJIT MUKHOPADHYAY লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ আগস্ট ২০২৫ | ৩৫ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০


    দশম পর্ব:

    "কই....হাতটা দাও দেখি মা?", মায়ের বিগ্রহের চরণের পুষ্প তুলে আচার্য্য রূপাকে তার হাত বাড়িয়ে দিতে বললেন।

    রূপা কেমন যেন আনমনে বিশুর দিকে তাকাল। বিশু সম্মতি দিলে রূপা ধীরে ধীরে ওর ডান হাত বাড়িয়ে দিল প্রজ্ঞানন্দ আচার্য্যর বাড়ানো হাতের দিকে।

    আচার্য্য গলা থেকে নিজের পৈতে টা ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের ওপর জড়িয়ে মায়ের চরণের পুষ্প সমেত নিজের হাত রাখলেন রূপার হাতের ওপরে। এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়তে লাগলেন। বিশু আর গণশা একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখের ঈশারায় কথা বলতে লাগল।

    কয়েক সেকেন্ড পরেই একটা ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিলেন প্রজ্ঞানন্দ আচার্য্য! চোখ খুলেই কিছুটা স্ফীত চোখে তাকিয়ে রইলেন রূপার দিকে! তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় ভ্রু কুঁচকে বলতে লাগলেন,"অসম্ভব! ভয়ংকর!.....এ হতে পারে না!"

    "কী হয়েছে দাদু? কী বুঝলে? কী হতে পারেনা?", গণশা জিজ্ঞেস করল।

    "আমি যতটা সহজ ভেবেছিলাম, এ কাজ ততটাই অসম্ভব! ওই তান্ত্রিক যে সে তান্ত্রিক নন! উনি ত্রিকালোজ্ঞ.....মহা শক্তিশালী! ওনার ক্ষমতার কাছে আমি তুচ্ছ! এ আমার পক্ষে সম্ভব নয় গণশা! ওনার মোকাবিলা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়!"

    "দাদু, অনেক আশা নিয়ে এসেছি তোমার কাছে। তুমি আমাদের এভাবে ফিরিয়ে দিওনা।", গণশা মিনতি করল।

    বিশু হাতজোড় করে বলল,"দাদু? আমি পেপারমিলে কাজ করি। আমার পক্ষে কলকাতায় রূপাকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আমি রূপাকে খুব ভালোবাসি। আমি তো আপনার নাতির মত! আপনার নিজের নাতি হলে পারতেন? এভাবে ফিরিয়ে দিতে?"

    "আহা! ব্যাপার সেটা নয় বাবা! এ তন্ত্রের সাধনা যে কারোর পক্ষে করা সম্ভব নয়! আমি এগোতেই পারি, কিন্তু এর ফল হবে মারাত্মক! কেও যদি আমার নির্দেশ পালনে এতটুকু ভুল করে তবে রূপার প্রাণহানি নিশ্চিত! অত্যন্ত সন্তর্পনে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তবেই এর উপসমের খানিকটা চেষ্টা করা যেতে পারে! তবে আমি আবারও বলছি - এতে প্রত্যেকের জীবনের ঝুঁকি আছে....প্রত্যেকের! ওই তান্ত্রিক মহা শক্তিশালী! পিশাচ ওনার পোষা! ভূত, প্রেত - এরা ওনার আজ্ঞাবহ! উনি এক আঘোরী তান্ত্রিক!"

    "আমরা সবাই রাজি দাদু। তুমি শুধু বল কী করতে হবে?", গণশা বলল।

    "আচ্ছা....দাদু.....এই অঘোরী তান্ত্রিক....... মানে?", বিশু অনুসন্ধিৎসু হয়ে জিজ্ঞেস করল।

    প্রজ্ঞানন্দ আচার্য্য 'হা হা হা' করে তিনবার হেসে উত্তর দিলেন,"সন্ন্যাসী, সাধু, তান্ত্রিকদের অনেক ভাগ আছে বাবা! এখন তো আর সব বলা যাবে না। তোমরা বরং আজ রাতে এসো। আজ মধ্যরাতে মায়ের থানে মহাযজ্ঞ আছে। কেও থাকবে না। শুধু আমি আর তোমরা তিনজন। তখন না হয় সব খুলে বলব? আর রূপা মা'র এই অবস্থার কারণও মা তখনই বলবেন। শুধু এটুকু জেনে রাখো বাবা....যে পথে তোমরা হাঁটতে চলেছ, সেখানে পদে পদে অপেক্ষা করছে বিপদ। রূপা মা যে তান্ত্রিকের কবলে পড়েছে তার কাছ থেকে নিস্তার পাওয়া এত সহজ হবে না বাবা!"

    "বেশ তো? রাতেই না হয় শুনব সব? আমরা তৈরি আছি দাদু। তুমি যা বলবে আমরা তাই করতে প্রস্তুত। তুমি শুধু রূপাকে ঠিক করে দাও দাদু।", গণশা বলল।

    "বেশ। তবে রাত বারোটায় দেখা হচ্ছে! জয় মা!", বলে প্রজ্ঞানন্দ আচার্য্য নতমস্তকে প্রণাম করলেন মায়ের বিগ্রহের সামনে।

    ওরা তিনজনেও প্রণাম করে বেরিয়ে এল গর্ভগৃহ থেকে। তখন প্রায় সন্ধ্যে সাতটা হবে। বেশ আঁধার হয়ে এসেছে চারিদিক। তারপর জঙ্গলের ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক যেন আরও গম্ভীর করে তুলেছে পরিবেশকে! মাঝে মাঝে দূরের ক্ষেত থেকে শেয়ালের ডাকও শোনা যাচ্ছে! গাছের ওপর থেকে নেমে আসা ঝুড়িগুলো কেমন অদ্ভুত লাগছে অন্ধকারে!

    গণশার পিসির বাড়িতে আজ ওদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করেছে গণশা নিজেই। জঙ্গল থেকে বেরিয়েই কিছুটা বামদিকে রাস্তা ধরে এগোলেই ওর পিসির প্রকাণ্ড, পুরোনোদিনের, দুমহলা, চুনসুরকির বাড়ি! সেকালে জমিদারদের এরকম বাড়ি থাকত! গণশার পিসির শ্বশুরমশাই এঁর দাদু রাজা মহেন্দ্রবর্মনের আমলে জমিদার ছিলেন। তবে দুর্গামোহন বাবু অর্থাৎ গণশার পিসেমশাই ই বর্তমানে একমাত্র সদস্য এ বাড়ির। বাকিরা সবাই গত হয়েছেন। দেখভাল করার জন্য এক ভৃত্য আছে বটে তবে সেও প্রায় অথর্ব হয়েই এসেছে - নাম কিংকর।

    (চলবে....)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন