পঞ্চম পর্ব: পরের দিন বিশু কাজে বেরিয়ে গেলে রূপা স্নান করে পুজো সেরে তান্ত্রিক বাবার দেওয়া মালাটা তুলসী মঞ্চে একবার ছুঁইয়ে প্রণাম করে পরে ফেলল। বেশ অদ্ভুত দেখতে মালাটা! একটা বড় লকেট ঝুলছে নিচের দিকে। লকেটটা বেশ ভারী, একটা বড় মত চকচকে পাথর দিয়ে তৈরি। পাথরের ওপর কীসব জ্যামিতিক ছবি আঁকা রয়েছে, লেখা রয়েছে মন্ত্র। মালাটা পরতেই হঠাৎ একটা ঝটকা পেয়ে দু'পা পিছিয়ে গেল রূপা। কানের পাশে ফিসফিস করে কেও যেন অদ্ভুত একটা চেনা গলায় কী একটা বলে গেল! ঠিক গতকাল ঝড়ের সময় যে কর্কশ, অদ্ভুতুড়ে গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল, অনেকটা ওরকম! একটু হলেও ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে একবার চারিদিক তাকিয়ে ভিতরে ... ...
চতুর্থ পর্ব: বেশ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতার পর বাবা চোখ খুললেন। সে চোখ বিকেলের অস্তমিত সূর্যের মত রক্তিম! চোখের মণি যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম! যেন কিছু বলতে চাইছে! ও চোখের দিকে তাকালেই যেন সব রোগ সেরে যায়! সব বাধা কেটে যায়! ভয়ানক হলেও সে চোখের দিকে তাকালে অদ্ভুত এক নিশ্চুপ শ্রদ্ধার জন্ম নেয় ভিতরে! "এত দেরি করলি যে মা? তোর গর্ভে সন্তান না আসার যন্ত্রণার চিকিৎসা ওসব ডাক্তার বদ্যি কিস্যু করতে পারবে না! ওখানে যাওয়া বৃথা।......... পাপ! পাপ! সব পাপের ফল!", মোটা কর্কশ গলায় রূপার দিকে তাকিয়ে বিরূপাক্ষ তান্ত্রিক বললেন। সে গলার আওয়াজ ধীর হলেও মুমূর্ষ! শান্ত হলেও গভীর! যেন বাবা আগে থেকেই ... ...
তৃতীয় পর্ব : প্রকৃতির সেই অলৌকিক ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে ওরা যখন বাবার আখড়ার সামনে এল তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে আরও। কালবৈশাখীর তেজ যেন আছড়ে পড়ছে হেতমপুর শ্মশানের মাঠে! ভক্তের দল আশ্রয় নিয়েছে তাঁবুর তলায়! বেশ বড় এলাকা ছড়িয়ে বসেছেন এই বিরূপাক্ষ বাবা। অসংখ্য ছোট ছোট তাঁবু রয়েছে এখানে ওখানে, অনেকটা মেলার মত। সামনে একটা গেট, সেই গেট দিয়ে ঢুকে প্রথমটায় কুপন কাটতে হচ্ছে। পরেরটায় প্রসাদ বিলি আর তারও পরেরটায় প্রসাদ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। বিশু অবশ্য বাবার সাথে দেখা করার কুপন গতকাল গণশার সাথে এসেই কেটে নিয়ে গিয়েছিল। তাই লম্বা লাইনে অপেক্ষা করার ব্যাপার হয়ত থাকবেনা। বৃষ্টিতে বেশ ভিজে গেছে ... ...
দ্বিতীয় পর্ব: রবিবার বিশুদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। সকালেই ওরা স্নান সেরে নতুন জামা কাপড় পরে তৈরি। শুধু মিতন আর কনকচাঁপার টোটো নিয়ে আসার অপেক্ষা। রূপার আর তর সয়না, বলে,"একবার গিয়ে দেখো না গো? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো?" বিশু উত্তর দেয়,"দেরি কেন হবে? মিতন ঠিক সময়ে এসে হাজির হবে দেখো, ওর সময়জ্ঞান আছে। দেখলে না? সেবার বাস ধরতে গেলুম, কেমন ঠিক সময়ে পৌছে দিল?" ঠিক এমন সময় টোটোর হর্ন শুনে বিশু বেরিয়ে দেখে মিতন হাজির, সঙ্গে ওর স্ত্রী কনকচাঁপা। দুজনে এক্কেবারে পরিপাটি হয়ে এসেছে। এসব ব্যাপারে কনকচাঁপার আবার একটু বেশিই আগ্রহ। তুকতাকে সে খুব বিশ্বাসী। জ্যোতিষ, তন্ত্র, শাস্ত্র সে খুব মেনে চলে। বাড়িতে ঠাকুর প্রণাম ... ...
প্রথম পর্ব: হেতমপুর গ্রামে নতুন বিয়ে হয়েছে রূপার। নতুন বলতে বছর তিনেক হবে। বাপের বাড়ি পাশের গ্রামেই - বেলডিহা। বিশু - ওর স্বামী, শহরের একটা পেপারমিলে কাজ করে। পরিবারে তেমন আর কেও নেই। বিশুর বাবা মা দুজনেই গত হয়েছেন বেশ কয়েকবছর হল। আর্থিক অনটনের কথা বাদ দিলে ওদের সমস্যা একটাই - রূপা এখনও নিঃসন্তান। বিয়ের তিনবছর পরেও বিশুর কোন সন্তান না হওয়ায় শহরে ডাক্তারও দেখিয়েছে অনেক, কিন্তু আশানুরূপ ফল এখনও পেয়ে ওঠেনি। পাড়ার লোকজনও অনেক কটূক্তি করে ওদের। এমনকি রূপাকে কুনজর, কুপরামর্শ বা কুপ্রস্তাব দিতেও ছাড়েনি। এই সন্তান না হওয়ার সমস্যা ছাড়া ওদের জীবনে আর কোন সমস্যা ছিলনা এযাবৎ। পয়সা কড়ির ... ...
"খোকা ফোন ধরল?", অরুণাদেবী বিছানায় শুয়ে শুয়েই অত্যন্ত ধীরে ধীরে ওনার স্বামী সৈকতবাবু কে জিজ্ঞেস করলেন। সৈকতবাবু অরুণাদেবীর মাথার কাছে এসে বসে স্ত্রীর মাথায় কোমলভাবে হাত বোলাতে বোলাতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,"নাহ্! হয়ত ব্যস্ত আছে। খোকার কাজের অনেক চাপ। তুমি চিন্তা করো না অরুণা, আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করছি।" আজ বিজয়া দশমী। সৈকত মজুমদার একসময় হাইকোর্টে কেরানির চাকরি করতেন। বছর দশেক হল রিটায়ার করেছেন। এখন উনি আর ওনার স্ত্রী অরুণাদেবী বোলপুরের কাছে ওনাদের দেশের বাড়িতেই থাকেন। ওনাদের বাড়িতে আবার দুর্গাপুজোও হয়। একসময় মজুমদার পরিবারের দুর্গাপুজো খুব ধুমধাম করে হত, এখন অবশ্য জাস্ট নিয়ম রীতি রক্ষার্থেই পুজোটা হয়, তবে পরিবারের সবাই মিলে পুজোর কটা দিন আনন্দের কোন খামতি ... ...
"আমি চুরি করিনি!" - লিখে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা এক নাবালকের! এটা কি সমাজের বিপর্যয় নয়? মনুষ্যত্বের হেরে যাওয়া নয়? মানুষের আধুনিকতার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মত একটা ঘটনার পিছনে দোষী কারা? দোষ কী শুধু সেই 'সিভিক' কাম দোকানদারের? নাকি নাবালকের অভিভাবকের? অথবা সমাজের? নাকি আমাদের সবার? পাঁশকুড়ার ঘটনা! চিপসের প্যাকেট হাতে একটি ছেলেকে ধাওয়া করে সিভিক-দোকানদার! ছেলেটি নাবালক, সপ্তম শ্রেণী মাত্র! ভরা বাজারে দাঁড়িয়ে চোর অপবাদ দেওয়া হয় তাকে! বাচ্চা ছেলেটি জোর গলায় সেই অপবাদের বিরুদ্ধে চিৎকার করে! কিন্তু সে জানতই না যে তার চিৎকার শোনার মত লোকজন এই 'সুস্থ মেকি' সমাজে আর বেঁচে নেই। সেদিনের সেই অপমান মেনে নিতে পারেনি ... ...
ফেলুদা, তোপসে আর লালমোহন বাবু একবার ট্রেকিং-এ গিয়েছিলেন। রাত্রিবেলা পাহাড়ের কোলে একটা জায়গায় বিশ্রামের জন্য আশ্রয় নিলেন ওনারা। বেশ কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর ফেলুদা হঠাৎ লালমোহনবাবুকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞেস করলেন, "বলুন তো? কী দেখছেন?" লালমোহনবাবু অনেক কষ্টে চোখ খুলে তাকিয়ে একটু গানের সুরে বললেন, "কেন? টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার! হাউ আই ওয়ান্ডার হোয়াট ইউ আর!" ফেলুদা আবার জিজ্ঞেস করল, "এর থেকে আপনি কী বুঝছেন?" লালমোহনবাবু দুহাতের দশটা আঙুল দিয়ে বুকের ওপর তবলা বাজাতে বাজাতে তৎক্ষণাৎ বললেন, "ধূর মশাই! এ আবার বলতে? মিলিয়নস অফ স্টারস! বিলিয়নস অফ গ্যালাক্সিস! নাহ্ এই দৃশ্যটা আমার পরের উপন্যাসে ঢোকাতেই হচ্ছে মশাই! ভাগ্যিস আপনার সঙ্গে ... ...
"আচ্ছা রীতিকা....তুমি কোনোদিন ফ্লাইটে ট্রাভেল করেছ?", অফিস থেকে ফিরেই কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে জুতোটা খুলে ঘেমো জামার হাতাটা গোটাতে গোটাতে সৌমেন জিজ্ঞেস করল।"না...হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করছ যে?", রান্নাঘর থেকে সরবত করতে করতে রীতিকা উত্তর দিল।বেসিনে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ধুয়ে তোয়ালেতে মুখ মুছতে মুছতে সৌমেন বলল,"কাল প্রিয়াংশু আর ওর মিসেস সিমলা মানালি ঘুরতে যাচ্ছে.......দিল্লী অবধি ডাইরেক্ট ফ্লাইট..... তারপর ওখান থেকে বাই কার মানালি। সিমলাটা মানালি কমপ্লিট করে তারপর যাবে বলল। সাতদিনের ট্যুর!""ধরো।", বলে সরবতের গ্লাসটা সৌমেনের হাতে দিয়ে ওর পাশে সোফায় বসল রীতিকা।এক চুমুকে পুরো গ্লাসটা নিঃশেষ করে হাঁফাতে হাঁফাতে সৌমেন বলল,"আমরা কতদিন কোথাও ঘুরতে যাইনি বল?""হ্যাঁ, অনেকদিন......বিয়ের পর সেই ... ...
‘সিঁদুরের‘ বদলা নিতে মক ড্রিলের ধোঁয়াশায় চলছে অপারেশন ‘সিন্দুর‘! ৮ই মে এর কালরাত্রি! ছুটে আসছে পাক – ড্রোন! ভারতীয় সেনা সেগুলো চুটকি মেরে ভূপতিত করছে ‘সুদর্শন‘ এর কেরামতিতে। গোটা রাত সারা ভারত জেগে! মানচিত্র থেকে মুছে গেছে করাচি বন্দরের চিহ্ন! আই. এন. এস বিক্রান্ত স্বমহিমায় ফিরে আসছে তেরঙ্গা টাঙিয়ে! আবারও অ্যাটাক! আবারও ভারতীয় ডিফেন্স পরাজিত করেছে পাকিস্থানের জঙ্গিসুলভ মানসিকতাকে! ছুটিতে থাকা সৈনিকেরা ফিরে আসছে সীমান্তে! বন্ধ হয়েছে সীমান্ত লাগোয়া সমস্ত স্কুল কলেজ! রাত ৮ টা থেকে সকাল ৬ টা অবধি ব্ল্যাকআউট! কমানো হয়েছে পর্যটকদের ইতিউতি ঘোরা! শুধু রাজধানী নয়, সমুদ্রতীরবর্তী শহর মুম্বাইয়েও বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা! প্রাণ যাচ্ছে কত মানুষের, শহীদ ... ...