পঞ্চম পর্ব:
পরের দিন বিশু কাজে বেরিয়ে গেলে রূপা স্নান করে পুজো সেরে তান্ত্রিক বাবার দেওয়া মালাটা তুলসী মঞ্চে একবার ছুঁইয়ে প্রণাম করে পরে ফেলল। বেশ অদ্ভুত দেখতে মালাটা! একটা বড় লকেট ঝুলছে নিচের দিকে। লকেটটা বেশ ভারী, একটা বড় মত চকচকে পাথর দিয়ে তৈরি। পাথরের ওপর কীসব জ্যামিতিক ছবি আঁকা রয়েছে, লেখা রয়েছে মন্ত্র। মালাটা পরতেই হঠাৎ একটা ঝটকা পেয়ে দু'পা পিছিয়ে গেল রূপা। কানের পাশে ফিসফিস করে কেও যেন অদ্ভুত একটা চেনা গলায় কী একটা বলে গেল! ঠিক গতকাল ঝড়ের সময় যে কর্কশ, অদ্ভুতুড়ে গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল, অনেকটা ওরকম! একটু হলেও ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে একবার চারিদিক তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল রূপা।
বিশু সন্ধ্যেয় ফিরেছে। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে বাবার দেওয়া বোতলের জলটা খেয়ে শুয়ে পড়ল রূপা। সারাদিনের ক্লান্তির পর বিশুও গভীর ঘুমে মগ্ন হল।
রাত তখন প্রায় তিনটে বাজে! একটা খট খট শব্দে বিশুর ঘুম ভেঙে গেল! টর্চ লাইটটা নিয়ে বিছানা থেকে নামতেই বিশুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল! ভয়ে ঢোঁক গিলতেও পারছেনা সে। এক জায়গাতে দাঁড়িয়েই থর থর করে কাঁপছে সে! দরজায় দাঁড়িয়ে ও কে? চুলগুলো উস্কো খুস্কো! মাথাটা একদিকে কাত করা! হাতগুলো শক্ত হয়ে দুপাশে ঝোলানো! অন্ধকারে দেখা না গেলেও বিশু বেশ বুঝতে পারছে যে ওটা তার সহধর্মিনী রূপা ছাড়া আর কেও নয়! বন্ধ দরজার ওপর নিজের মাথাটা সজোরে ঠুঁকছে সে, দরজার কাঠে মাথাটা লেগে খট খট শব্দ হচ্ছে! মাঝে মাঝে রূপার পুরো শরীরটা মৃগী রোগীর মত কেঁপে কেঁপে উঠছে! এরকম আচরণ করছে কেন রূপা?
টর্চ টা জ্বালিয়ে সন্তর্পনে পা ফেলতে ফেলতে বিশু এগিয়ে গেল রূপার দিকে। উল্টোদিকে মুখ করে থাকায় মুখটা ঠাহর হলনা! কাঁপা কাঁপা গলায় বিশু ডাকল,"রূ..রূ..রূপা?" কোন সাড়া নেই, দরজায় মাথা ঠুঁকেই যাচ্ছে রূপা! বিশু আবার ডাকল,"রূপা? ওখানে কী করছ? শোবে এসো?" এবারও কোন সাড়া নেই! একেবারে কাছে গিয়ে বিশু রূপার কাঁধে হাত রাখতেই বন্ধ হয়ে গেল মাথা ঠোঁকা! শান্ত ভাবে পিছনের দিকে ঘুরে বিশুকে দেখে অবাক হয়ে রূপার হুঁশ ফিরল! সাধারণ অবস্থায় ফিরেই রূপা খানিকটা অবাক হল! সে কী করছিল নিজেই জানে না! কেন করছিল তাও বুঝতে পারছে না!
"এ কী? তুমি এখনও ঘুমাও নি? আমি এখানে কী করছিলাম?", রূপা জিজ্ঞেস করল।
"হ্যাঁ, এই উঠলাম। এসো আমার সাথে এসো। শোবে এসো।"
বিশু রূপাকে ধরে বিছানায় নিয়ে এল! টর্চের আলো ফেলতেই চমকে উঠল বিশু,"একি! এতো রক্ত!"
"রক্ত? কিন্তু রক্ত এল কোথা থেকে?", রূপার একটুও নিজের কৃতকর্মের খেয়াল নেই। সে নিজের ইচ্ছেয় নয়, বরং অন্য কারোর ইচ্ছেতেই ঘুমের মাঝে উঠে দরজার কাছে এসে নিজের মাথা ঠুঁকছিল! তার কিছুই মনে নেই! কেও যেন জোর করে ওকে তুলে এখানে নিয়ে এসেছে!
বিশু সঙ্গে সঙ্গে মাথার ফাটা জায়গাটা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিল। রূপা বিশুর কোলে মাথা রেখে আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করল। ঘুমিয়ে গেল রূপা কিন্তু সেই রাতে বিশুর ঘুম হল না। কেন এরকম হচ্ছে? তাহলে কী তান্ত্রিক বাবার দেওয়া ওষুধে কাজ হচ্ছে? হলে এরকম আশ্চর্য আচরণ করছে কেন সে? তবে কী কোন অশরীরী আত্মা এ কাজ করাচ্ছে? কিন্তু কেন?
(চলবে....)
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।