এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তন্ত্রপুর (৩য় পর্ব)

    ARIJIT MUKHOPADHYAY লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ জুলাই ২০২৫ | ৩৪ বার পঠিত
  • | |


    তৃতীয় পর্ব :

    প্রকৃতির সেই অলৌকিক ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে ওরা যখন বাবার আখড়ার সামনে এল তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে আরও। কালবৈশাখীর তেজ যেন আছড়ে পড়ছে হেতমপুর শ্মশানের মাঠে! ভক্তের দল আশ্রয় নিয়েছে তাঁবুর তলায়!

    বেশ বড় এলাকা ছড়িয়ে বসেছেন এই বিরূপাক্ষ বাবা। অসংখ্য ছোট ছোট তাঁবু রয়েছে এখানে ওখানে, অনেকটা মেলার মত। সামনে একটা গেট, সেই গেট দিয়ে ঢুকে প্রথমটায় কুপন কাটতে হচ্ছে। পরেরটায় প্রসাদ বিলি আর তারও পরেরটায় প্রসাদ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। বিশু অবশ্য বাবার সাথে দেখা করার কুপন গতকাল গণশার সাথে এসেই কেটে নিয়ে গিয়েছিল। তাই লম্বা লাইনে অপেক্ষা করার ব্যাপার হয়ত থাকবেনা। বৃষ্টিতে বেশ ভিজে গেছে সবাই, অবশ্য আর একটু দেরি হলে হয়ত চুবুড়ি ভেজা হত ওরা। ঝড়ের কবলে শক্ত পোক্ত তাঁবুগুলোরও বেহাল দশা হয়েছে! কোনোটার ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা!

    খান চারেক ছোট ছোট তাঁবু পেরিয়ে এসে আখড়ার ঠিক মধ্যিখানে ওরা একটা প্রকাণ্ডাকার তাঁবু দেখল। প্রচণ্ড ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই সেখানে! লোকজন এখানে ওখানে শুয়ে বসে দিব্যি আছে! ছেলে, মেয়ে , বাচ্চা, বুড়ো কেও বাদ নেই! বাবার যে অশেষ কৃপার কথা কনকচাঁপা বলেছিল, তা হয়ত মিথ্যে নয়! নাহলে এত লোকসমাগম হয় কীকরে? লোকজন তো আর বোকা নয় যে এমনি এমনি ক্রোশ মাইল তফাতে থেকেও এই অজ পাড়াগাঁয়ে এসে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অচেনা এক বাবার কাছে পড়ে থাকবে! নিশ্চয়ই ফল হয় বলেই ভক্তের আগমন ঘটে! রূপার মনে তাই একটু একটু করে আশার আলো সঞ্চার হচ্ছে! মনে হচ্ছে এইবার কিছু একটা হবে! আর কারোর কাছে সন্তানহীনতার কারণের উত্তর দিয়ে বেড়াতে হবে না! আর মুখ লুকিয়ে চলতে হবে না আত্মীয়পরিজনদের মাঝেও! অপত্য স্নেহের সুখ থেকে ওরা আর বঞ্চিত থাকবে না!

    বেশ লম্বা লাইন, কেও দাঁড়িয়ে বা কেও বসে অপেক্ষা করছে নিজেদের কুপনে লেখা নম্বরের ডাক শোনার জন্য! মাইকে যেই নম্বর অ্যানাউন্স হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে পড়ি কী মরি করে দৌড়ে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে গিয়ে পড়ছে ভক্তবৃন্দ! সেখানে অবশ্য দুজন সাধু দাঁড়িয়ে, হয়ত বাবার শিষ্য হবেন, ওনারা নম্বর যাচাই করে তবেই ভিতরে বাবার পায়ের কাছে যেতে দিচ্ছেন! বিশুর অবশ্য লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই, ওর কুপন নম্বর ১১। ভক্তদের ভিড় সামলানো বাবার এক শিষ্যের কাছে গিয়ে বিশু কথা বলায় উনি বলেন এখনো পাঁচজনের পরে বিশুর নম্বর, তাও প্রায় চল্লিশ মিনিট তো লাগবেই! উনি আরও বলেন যে বিশুর মত অনেকেই গতকাল এসে কুপন কেটে নিয়ে গিয়েছিল, কাজেই একটু অপেক্ষা তো করতেই হবে!

    এদিক ওদিক দেখতে দেখতে রূপার হঠাৎ চোখ পড়ল বাবা বিরূপাক্ষ তান্ত্রিকের দিকে! একি! এতো সাক্ষাৎ মহাদেব! একেবারে মধ্যমণি হয়ে ধ্যানমগ্ন তিনি! চারিদিকে হাজার ভক্ত! আগে পিছনে শিষ্যের ছড়াছড়ি, কেও পা ধুয়ে দিচ্ছেন, কেও আবার ধুপ ধরিয়ে ধুনো পুড়িয়ে বাবার মণ্ডপ তৈরি করছেন, কেও আবার প্রসাদ বিলিতে ব্যস্ত! বাবার পরণে রক্তিম নিম্নবস্ত্র, ঊর্ধ্বাঙ্গ আদুল! গলায় অসংখ্য হরীতকীর মালা ঝুলছে! দুই বাহুর ঊর্ধ প্রান্তে হরীতকীর বাহুবন্ধনী। মাথায় কাঁচা পাকা জটা যেন লম্বা উস্কোখুস্কো দাড়ির সাথে মিলিয়ে গেছে! কপালে রক্তিম তিলক! সারা শরীরে ভস্মাচ্ছাদন! মহাদেবের বসার ভঙ্গিতে তিনি অধিষ্ঠিত এক জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের ওপর! দাউ দাউ করে জ্বলছে সে অগ্নিকুন্ডের শিখা! কিন্তু আশ্চর্য! সেই লেলিহান শিখার ওপর অধিষ্ঠান করেও বাবার যেন বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই! তিনি তাঁর চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে গভীর ধ্যানে মগ্ন! এতটুকু বিচলতা নেই তাঁর শরীরে!

    বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিশুর ডাক পড়ল। ১১ নম্বর বলতেই বিশু, রূপা আর কনকচাঁপা তিনজন এগিয়ে গেল বাবার থানের দিকে। দুজন শিষ্য কুপন যাচাই করে ওদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিল। ওরা তিনজন হাতজোড় করে এসে বসল বাবা বিরূপাক্ষ তান্ত্রিকের পায়ের ঠিক নিচটায়!

    (চলবে....)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন