এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  গান

  • পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র থেকে আরবসাগর : রাহুল দেববর্মণ

    সম্বিৎ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | গান | ১৮ জুলাই ২০২৫ | ৪১ বার পঠিত
  • শচীন দেববর্মণ | সলিল চৌধুরী | রাহুল দেববর্মণ
    শচীন দেব বর্মন মনে করতেন পুত্র রাহুল গানের দিক দিয়ে নিজের বাবাকে নয়, সলিল চৌধুরীকে গুরু মানতেন। এ কথা ঠিক সলিলের সঙ্গে রাহুলের ইনফর্মাল গুরু-শিষ্য সম্বন্ধ ছিল। সলিল নিজেও রাহুলের কাজের ওপর খুবই শ্রদ্ধা রাখতেন। একসময়ে শুধু যে "আমাদের ফিল্মসঙ্গীতে শেষ কুড়িবছরে একমাত্র উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল রাহুলের আসা" এ কথা বলেছিলেন তাই নয়, শোনা যায় অনেক ক্ষেত্রেই মনে করতেন রাহুলের কাজ সলিলের জেনারেশনের সঙ্গীতকারদের কাজকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে, রাহুলের ঘনিষ্ঠ মিউজিশিয়ান ভানু গুপ্ত একদিন রাহুলকে জিগেস করেছিলেন কেন তিনি তাঁর গানে সঞ্চারী রাখেন না। তার উত্তরে রাহুল সলিল চৌধুরীর সুরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া 'না যেওয়া না, রজনী এখনও বাকি' গান শুনিয়ে বলেছিলেন, "যেদিন আমি এরকম সঞ্চারী সুর করতে পারব, সেদিন আমার গানে সঞ্চারী থাকবে।" [R.D.Burman, The Man, The Music - Anirudha Bhattacharjee, Balaji Vittal]

    একটি অসম্ভব চিত্তাকর্ষক অ্যারেঞ্জমেন্ট রাহুল দেব বর্মন, ওরফে শচীনকর্তার পঞ্চম, করেছিলেন 'ঘর' ছবির 'তেরে বিনা জিয়া যায়ে না' গানে। সেখানে একাধিক মাদল দিয়ে মাদলতরঙ্গ (তবলাতরঙ্গের মতন) তৈরি করে বিভিন্ন নোটে ও কর্ডে সেগুলো বাজিয়েছিলেন। এক রেডিও প্রোগ্রামে (মেরা সঙ্গীত যাত্রা - সংগীতসরিতা) রাহুল বলেছিলেন, লাইনের শেষে যে স্বরে গান (লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া) থামছে, মাদলতরঙ্গ সেই নোটে বাজছে। খুবই নতুন ধরণের কাজ। অথচ ভেবে দেখলে ঠিক এরকম কাজ সলিল করে গেছেন 'পাল্কির গান'-এ। সেখানে মাদলতরঙ্গের বদলে পাল্কি বেহারাদের সম্মিলিত 'হুননা' ধ্বনি। সেখানে যে স্বরে লাইন শেষ হচ্ছে 'হুননা হুননা' রিফ্রেন ঠিক সেই স্বরে হচ্ছে। ওখানে কোরাসের গলা, এখানে মাদলতরঙ্গ।

    একই ভাবে সলিলের সিগনেচার কাজ কোরাসে কল-রেসপন্স রাহুলে ব্যবহার করলেন 'বন্ধে হাথ' ছবিতে 'ও মাঝি ও মাঝি যায়ে কাঁহা" গানে। গানের শুরুতেই হামিং দিয়ে সুরের কল-রেসপন্স তৈরি হয়। সেটাই আবার পরে গিয়ে কথা-সুরের ডায়লগ হয়ে যাচ্ছে:

    একক - নয়নো মে মেরে
    কোরাস - ঘটা ঘনঘোর।
    একক - সাঁসো মে মেরে
    কোরাস - পওয়ন কা শোর।

    এগুলো হয়ত খুব সচেতনভাবে করা নয়, যদিও সচেতনভাবে করা হতেও পারে, কারণ সলিলের বহু গান রাহুলের একেবার একেবারে অন্তস্থ করা ছিল। [R.D.Burman, The Man, The Music - Anirudha Bhattacharjee, Balaji Vittal]

    রাহুল যেন ছেলেবেলা থেকেই তৈরি হচ্ছিলেন সঙ্গীত তৈরি করবেন বলে। আলী আকবর খাঁ-সাহেবের কাছে কিছুদিন সরোদ শিক্ষা করলেও বা ব্রজেন বিশ্বাসের কাছে তবলা শিক্ষা করলেও নিজের বাবার মতন গুরু ধরে দীর্ঘদিন ক্লাসিকাল কেন কোন সঙ্গীতই তাঁর শেখা হয়নি। কিম্বা অপর গুরু সলিল চৌধুরীর মতন পেশাদারী দক্ষতায় বাঁশির মতন কোন একটা যন্ত্রেও দক্ষ হয়ে ওঠেননি। কিন্তু অল্প বয়েস থেকেই হিন্দি ফিল্মসঙ্গীতের কর্মকান্ড কাছে থেকে দেখে আহরণ করেছেন নানবিধ সাঙ্গীতিক প্রকরণ। আর শুষে নিয়েছেন বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গীত। শোনা যায় অ্যাফ্রিকান তাল ও জ্যাজে তাঁর বিশেষ উৎসাহ ছিল। অথচ সেই লোকই তার সঙ্গীতজীবনের প্রথম সুর করছেন মালগুঞ্জি রাগে লতা মঙ্গেশকরের জন্যে 'ঘর আ যা ঘির আয়ে'। 'প্রথম সুর' বললাম বটে, কিংবদন্তী এই যে কিশোর রাহুলের দুটি গানের সুর বাবা শচীনদেব নিজের ছবিতে চালিয়েছিলেন। একটি 'ফান্টুশ' ছবিতে 'অ্যায় মেরি টোপি পলটকে আ' এবং 'পিয়াসা' ছবির 'সর যো তেরা চাকরায়ে'। কিন্তু নিজের নামে করা প্রথম ছবিতেই রাগসঙ্গীতের প্রয়োগ করলেন। এর পরেও, যখন সুযোগ এসেছে, অসাধারণ কিছু রাগাশ্রয়ী গান বাঁধলেও, সঙ্গীতজীবনের প্রথম বছর পনেরো তাঁকে এই ইমেজের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে যে তাঁর সুর করা গান ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিপ্রতীপে অবস্থান করে। রাজু ভরতন লিখেছেন যে সুর-শৃঙ্গার সংসদ পুরস্কার, যা হিন্দি ছবির গানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রয়োগের জন্যে দেওয়া হয়, একবার রাহুল প্রায় জিতে গিয়েছিলেন 'চন্দন-কা-পালনা' ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া 'ও গঙ্গা মাইয়া' গানের জন্যে। একেবারে শেষ মুহূর্ত্যে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে যে রাহুল দেব বর্মনকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পুরস্কার দেওয়া একেবারেই শাস্ত্রবিরোধী কাজ হবে। অতএব তাঁর নামে ঢ্যাঁড়া পড়ল।

    রাহুল প্রথম থেকেই চেয়েছিলেন নিজের জন্যে এক নতুন পথে যেতে যাতে লোকে না আঙুল তুলতে পারে যে বাবার তৈরি পথে হেঁটে রাহুল সাফল্য পেয়েছেন। কাজেই লোকসঙ্গীত আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ভিত্তি করে গড়ে তোলা শচীন কর্তার সাম্রাজ্যে রাহুল বিশেষ করে আমদানী করলেন বিদেশী সুর, বিদেশী তাল, বিদেশী আওয়াজ। আমি বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই 'আওয়াজ' শব্দে। সঙ্গীতে, সে গানে হোক কি আবহসঙ্গীতে, নতুন আওয়াজের ব্যবহারে রাহুল ছিলেন বিশেষ মনস্ক এবং খুবই দক্ষ। এছাড়াও শব্দের ক্ল্যারিটি - স্পষ্টতা - নিয়ে রাহুলের মনোযোগ এতটাই ছিল যে আজও তাঁর গান পরবর্তীতে গৃহীত অনেক আধুনিক প্রকৌশল ব্যবহার করা গানের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে।

    অনেক সঙ্গীত পরিচালকই গানের সুরে রাগের শুদ্ধতা রাখতে চান না। তার একটা কারণ একই রাগে অনেক গান হলে সেই সব গানে বৈচিত্র্য আনা শক্ত। তাছাড়া আধুনিক সঙ্গীতে গানের কথার সঙ্গে, আমেজের সঙ্গে - সিনেমার গান হলে সিচুয়েশনের সঙ্গে - সাযুজ্য রাখতে রাগের শুদ্ধতা থেকে সরে যেতে হয়। রবীন্দ্রনাথ এ সম্বন্ধে বহুদিন আগেই লিখে গেছিলেন, "আজ গান শুনিলে সকলে দেখিতে চান, জয়জয়ন্তী, বেহাগ বা কানেড়া বজায় আছে কি না; আরে মহাশয়, জয়জয়ন্তীর কাছে আমরা এমন কী ঋণে বদ্ধ, যে, তাহার নিকটে অমনতরো অন্ধ দাস্যবৃত্তি করিতে হইবে? যদি স্থল বিশেষে মধ্যমের স্থানে পঞ্চম দিলে ভালো শুনায় কিম্বা মন্দ শুনায় না, আরা তাহাতে বর্ণনীয় ভাবের সহায়তা করে, তবে জয়জয়ন্তী বাঁচুন বা মরুন, আমি পঞ্চমকেই বাহাল রাখিব না কেন - আমি জয়জয়ন্তীর কাছে এমন কী ঘুষ খাইয়াছি যে তাহার এত গোলামি করিতে হইবে? [সংগীতচিন্তা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর] রাহুল দেব বর্মণ অবশ্যই এই পথের পথিক। রাগরূপের শুদ্ধতা নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা ছিল না। তাই সহজেই তোড়ির সঙ্গে খাম্বাজ মিশিয়ে 'অমর প্রেম' ছবির গান 'রয়না বীত যায়ে' তৈরি করতে পারেন, সহজেই সন্ধ্যের সিচুয়েশনে গানে ভৈরবীর পর্দা ব্যবহার করতে পারেন ('চিঙ্গারি কোই ভড়কে'), দেশ-নটমল্লার-তিলককামোদ মিলিয়ে-মিশিয়ে 'এক চতুর নর' তৈরি করতে পারেন - সবই এই সঙ্গীতদর্শনের প্রভাব। তবে মনে রাখতে হবে তিনি যখন রাগ মেশাচ্ছেন তখন কিন্তু দুই রাগের মিশ্রণে নতুন  কোন মিশ্র রাগ তৈরি করছেন না যেমন ধরুন পন্ডিত রবিশংকর তিলককামোদ ও শ্যামকল্যাণ মিশিয়ে নতুন তিলকশ্যাম রাগের সৃষ্টি করেছেন। রাহুলের সিনেমার গানে রাগগুলো নিজদের স্ব স্ব রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

    যেখানে রাগভিত্তিক বা ধ্রুপদী সঙ্গীত প্রয়োগের সুযোগ এসেছে, রাহুল নিজের সুরের সঙ্গে অবলীলায় বাবার খাজানায় হাত বাড়িয়েছেন। 'কিনারা' ছবিতে 'মিঠে বোলে বোলে' গানে বাবার বাংলা 'মধুবৃন্দাবনে দোলে রাধা'র সুর  ব্যবহার করেছেন। 'ইজাজত' ছবির 'খালি হাথ শাম আয়ি হ্যায়' গানে বাবার 'মালাখানি ছিল হাতে' গানের সুর ব্যবহার করলেন। এমনকি আশা ভোঁশলের জন্যে বাংলা বেসিক গান 'কথা দিয়ে এলে না' গানে বাবার 'কথা দিয়ে এলে না'-র ছায়া পাওয়া যায় প্রথম দু লাইনে।

    রাহুলের বিরুদ্ধে শুদ্ধতাবাদীদের একটা বিরাট অভিযোগ যে রাহুল বিদেশী গান থেকে প্রচুর সুর আত্মস্থ করতেন। বিরুদ্ধবাদীরা অবশ্যই 'আত্মস্থ' শব্দ ব্যবহার করেননা। করেন 'চুরি' শব্দটা। প্রথমতঃ বিদেশী গানের সুর ভারতীয় গানে ব্যবহার আজকের ব্যাপার নয়। সুরকাররা যেদিন থেকে বিদেশী সুরের খোঁজ পেয়েছেন, সেদিন থেকেই নিজেদের সুরে তার ইস্তেমাল করা শুরু হয়েছে। অতুলপ্রসাদ সেন ইটালির গন্ডোলাচালকদের গানের সুর ব্যবহার করেছেন 'উঠ গো ভারতলক্ষ্মী' গানে; রবীন্দ্রনাথের অন্যের সুরে কথা বসান গানের একটা নতুন নামই হয়ে গেছে 'ভাঙা গান'; নজরুল দিশি-বিদেশী সুর নিজের গানে ব্যবহার করতে পিছপা হননি। হিন্দি গানের অন্য সুরকাররা পিছিয়ে ছিলেন না। এছাড়াও বিদেশি সুর আত্মস্থ করলে ছিছিক্কার পড়ে, কিন্তু রাগসঙ্গীতের বন্দিশ আত্মস্থ করলে পড়েনা - এ বিচার কেমনধারার, কে জানে! এর বাইরেও যেটা বলার, রাহুল কিছু বিদেশী গান যেমন টপ-টু-বটম আত্মস্থ করেছেন, তিনি বেশিরভাগ বিদেশী সুরের গানই প্রথম কিছু বারের (মাত্রার) বেশি আত্মস্থ করেননি। তারপরে নিজের পথে চলেছেন। তবে এই ব্যাপারে চরম কথা বলেছিলেন রাহুলের বাবা শচীন দেববর্মন। কেউ শচীনকর্তাকে বলেছিলেন, "দেখেছেন কর্তা, সলিল চৌধুরী কেমন কায়দা করে মোৎজার্টের সিম্ফনির সুর হিন্দি গানে লাগিয়ে দিলেন!" কর্তা বলেছিলেন, "আসল কথাটা হল কায়দা করে লাগান। সবাই অন্যের সুর লাগায়, আমিও 'জন-গণ-মন'র 'পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠ'র সুর নিজের গানে লাগিয়েছি, কিন্তু কায়দা করে লাগাতে জানতে হয়।"

    কিন্তু সঙ্গীতকার হিসেবে যেখানে রাহুলের অনন্য, তা হল শুধু ভারতেরই নয়, সারা বিশ্বের নানা ধরণের সঙ্গীত থেকে মিউজিকাল এলিমেন্ট নিয়ে তা গানে প্রয়োগ করা। এবং এমন সেই প্রয়োগ যে বিভিন্ন এলিমেন্টের আত্তীকরণ ঘটে যায় সহজভাবে। 'মহুয়ায় জমেছে আজ মৌ গো' গানের কথার-সঙ্গে-সঙ্গতি রাখা সুরে সহজেই সাঁওতালি বা রাঢ় অঞ্চলের সুরের কথা মনে করাবে। তার জন্যে রাহুলের গানের শুরু প্রথম দু লাইনে সাঁওতালি সুরের পেন্টাটোনিক স্কেল (পাঁচ স্বরের আরোহণ-অবরোহণ) ব্যবহার করলেন। কিন্তু তার পরে আর সুরকে আর পাঁচ স্বরে বেঁধে রাখালেন না। একই রকমভাবে বিদেশী তালে রাহুলের খুব আকর্ষণ ছিল। দক্ষিণ অ্যামেরিকার তাল বসানোভাকে আত্মস্থ করে বহু গানে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বিশেষ তালের থেকেও যা রাহুল আত্মস্থ করেছিলেন, সেটা হল সিঙ্কোপেশনের প্রয়োগ। সিঙ্কোপেশনের বাংলা বা ভারতীয় কোন নাম আছে কিনা জানিনা। সিঙ্কোপেশন লিখে বোঝানও শক্ত। বরং আগে উইকিপিডিয়ায় কী লেখা আছে সেটা উদ্ধৃত করি - "  **Syncopation** is a musical term meaning a variety of rhythms played together to make a piece of music, making part or all of a tune or piece of music off-beat"। অর্থাৎ গানের লাইন সবসময়ে একই মাত্রায় শুরু হচ্ছে না। তালবাদ্য হয়ত চার মাত্রায় বাজছে, কিন্তু গানের লাইন কখনও প্রথম মাত্রায়, কখনও দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ মাত্রায় শুরু হচ্ছে (অনামিকা ছবির 'লোগোঁ না মারো ইসে' শুনুন)। এই কাজ আগেও হয়েছে। সলিল চৌধুরীও এই কাজে খুবই দড় ছিলেন। কিন্তু সামগ্রিক উপস্থাপনায় রাহুল সিঙ্কোপেশনকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, তা ওঁর পূর্বসুরিদের থেকে অনেকটাই ওপরে।

    আর যে ব্যাপারে রাহুল দেববর্মন বোধহয় একা হাতে সমসাময়িক হিন্দি তথা ভারতের পপুলার সঙ্গীতের দিকবদল করেছিলেন, সেটা হল গানের অ্যারেঞ্জমেন্ট - বিশেষতঃ তালের নতুনত্ব, তালবাদ্য ব্যবহারের নতুনত্ব এবং সামগ্রিকভাবে গানের অ্যারেঞ্জমেন্টে তালবাদ্যকে - যাকে ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা রিদম সেকশন বলেন - এক মুখ্য ভূমিকা দেওয়া। এ কাজে রাহুল অসাধারণ কিছু যন্ত্রশিল্পীর সহায়তা পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গানের চেহারা কী দাঁড়াবে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অথবা দায় সঙ্গীত পরিচালকের। একটা সময় ছিল যখন বম্বের সব নতুন সুরকারই পঞ্চমের মতন রিদম করতে চাইতেন। এ ব্যাপারে মান্না দে আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে পঞ্চমের রিদম অনুকরণ করে পঞ্চম হওয়া যাবে না।
     
    শচীন দেববর্মণ, সলিল চৌধুরী ও রাহুল দেববর্মণ - আশ্চর্য হয়ে দেখি উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গীতের প্রভাব তিনজনের ওপরেই আছে। শচীনদেব তো ত্রিপুরার ভূমিপুত্র। সঙ্গীতজীবনের ভিত তৈরি হয়েছে ত্রিপুরার আর কুমিল্লার লোকসঙ্গীতে। সলিল চৌধুরীও বারবার নিজের সঙ্গীতজীবনে আসামের জীবন ও সেখানকার লোকসুরের প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। রাহুলের অবশ্য মাটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। কৈশোর অব্দি শহর কলকাতায় কাটিয়ে, তারপর থেকে বম্বেতে। কাজেই লোকসুরের সঙ্গে যা আলাপ পরিচয় তা শচীনদেবের সূত্রে, এবং শচীনদেবের আত্মীয় ও গান-বাজনার সঙ্গীদের মধ্যে দিয়ে। হিন্দি 'বালিকা বধূ' ছবির 'বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায়' গানের মাঝে যে ভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকসঙ্গীতের আদলে রাহুল নিজে গেয়ে ওঠেন 'ও মাঝি রে, যাইও পিয়াকে দেশ' - এই তিন সুরসম্রাটের বিরাট সাঙ্গীতিক সম্ভারে আমি সেভাবেই লোকসঙ্গীতের কখনো বিস্তৃত, কখনো শীর্ণ কিন্তু সর্বদাই গভীর স্রোত বইতে দেখি।
     
    [শেষ] 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    শচীন দেববর্মণ | সলিল চৌধুরী | রাহুল দেববর্মণ
  • ধারাবাহিক | ১৮ জুলাই ২০২৫ | ৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন