এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  ঘুমক্কড়

  • সুন্দরী চান্দেরী

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ঘুমক্কড় | ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ৯৪৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • সেবার মধ‍্যপ্রদেশে একাকী ভ্রমণকালে ৫ই মার্চ ২০১৯ সকাল সাতটায় এক জৈনতীর্থ থেকে র‌ওনা হয়ে চারবার লোকাল বাস বদলে, ২৭০ কিমি পাড়ি দিয়ে চান্দেরী পৌঁছলাম রাত আটটা‌য়। তখনো বিদায়ী শীতের আমেজ ছিল বলে ক্লান্ত লাগেনি। পথশোভা‌ও আনন্দ দিয়েছে।

    মহাভারতে‌ উল্লেখ আছে চান্দেরী‌রাজ শিশুপালের। আদিতে নগরীর নাম ছিল চেদিরাজ। কালে কালে হয়েছে চান্দেরী। বেতয়া ও উর্বশী নদীর মাঝে বিন্ধ‍্যাচল পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক শহর। বাসস্ট‍্যান্ডের অদুরে ল‍্যান্ডমার্ক দিল্লি গেট। নির্মাণ শুরু হয় মালোয়ার সুলতান দিলাবর খান ঘোরীর রাজত্ব‌কালে (১৩৯৮-১৪০৫)। সম্পূর্ণ হয় তাঁর পুত্র হোসাঙ শাহের শাসনকালে ১৪১১ সালে। তোরণ পেরোতে প্রাচীন সদর বাজার। ১৫৪৫এ কালিঞ্জর কেল্লা দখল করতে গিয়ে ফৌত হ‌ওয়ার আগে ১৫৪২এ শের শাহ সুরী গেছেন এই পথে। ১৩৪২এ ইবন বতুতা‌র ডায়েরী‌তে‌‌ও উল্লেখ আছে এ পথের। প্রায় সাতশো বছর পর সেই পথে চললাম রাতের আশ্রয়ে‌র খোঁজে। 

    হোম‌ওয়ার্ক করে জানা ছিল ওখানে কাছাকাছি দুটো জৈন ধর্মশালা আছে। একটা আকারে বড়ো, বয়সে প্রাচীন কিন্তু স্ট‍্যাটাসে খাটো। অন‍্যটা নবীন। ওটা খানদানী‌দের ব‍্যাপার হতে পারে ভেবে এড়িয়ে গিয়ে প্রাচীনে‌ই গেলাম। সেখানে নবনির্মিত ব্লকে সংলগ্ন বাথরুম সহ দ্বিশয‍্যা ঘরের ভাড়া চারশো। খুব‌ই ন‍্যায‍্য। কিন্তু আমার দিনপ্রতি স্বেচ্ছারোপিত তিনশোর বাজেট বহির্ভূত। পুরোনো ব্লকে কমন টয়লেট ওয়ালা রুমের ভাড়া দুশো।  ম‍্যানেজার সাহেবকে দেখালাম সকালে ছেড়ে আসা জৈনতীর্থ‌র রসিদ। ওখানে দুদিন সন্ত আবাসে থেকেছি নিখরচায়। তবু একশো টাকা দিয়েছিলাম। সেখান‌কার ম‍্যানেজার সেটা ভগবান আদিনাথের মন্দির নির্মাণ‌কল্পে দান হিসেবে রসিদ কেটেছিলেন। সেটা দেখে চান্দেরী‌র ম‍্যানেজার মশাই বলেন, ঠিক আছে একশোই দেবেন। আসলে এদের প্রধান আমদানি বিয়ের অনুষ্ঠানে। আমার মতো ছুটকো একাকী যাত্রী একশোয় থাকলে‌ও তাই কিছু এসে যায় না। 

    একশোতে এর বেশী বাহুল‍্যের আশা বাতুলতা
     
    রুমে স‍্যাক রেখে টয়লেট পরিদর্শনে গিয়ে দেখি জল নেই। জল‌ থাকলে বালতি দুয়েক দে গরুর গা ধু‌ইয়ে মোডে ঝরাস করে ঢাললেই বাকিসব মানসিক। দ্বারস্থ হ‌ই ম‍্যানেজারের। তাঁর হয়তো আমায় টুকুন পছন্দ হয়েছিল তাই গাছের‌‌‌‌ খাবার, তলার‌‌ও কুড়োনোর ব‍্যবস্থা করে দিলেন। দ্বিতল নতুন ব্লকের (সবুজ তীর) একতলায় গুচ্ছ ঘর খালি। তার একটা‌র চাবি দিয়ে বললেন, বাইরে গেলে চাবি‌টা আমার টেবিলে রেখে যাবেন। ফলে দিব‍্যি থাকলুম দু রাত বড়সড় একতলা পুরোনো ব্লকের (লাল তীর) ঘরে আর স্নান করে হালকা হলুম নতুন ব্লকের বাথরুমে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের মতো ব‍্যাপার আর কি।

    ধর্মশালার মাঝে বড় চত্বর থেকে দূরে অন্ধকারে চান্দেরী কেল্লার টঙে আলোকিত কিলা কোঠি নজর কাড়লো। ফ্রেশ হয়ে গেলুম ইবন বতুতা‌র পথে। ছোট হোটেলে ডিনার করে এসে শুয়ে পড়লাম। 
     

    রাতে বুঝি‌নি, সকালে ধর্মশালার সামনে বড় মাঠের পাশে দেখলাম রাজা-রাণী মহল (লাল তীর), বাঁদিকে দুরে শ তিনেক ফুট উঁচু পাহাড়ের মাথায় চান্দেরী কেল্লা (সবুজ তীর)। 
     
    প্রাতরাশ করে পদব্রজে গেলাম বাদলমহল গেট। ওখান থেকে শেয়ার অটোয় দশ টাকায় গেলাম চার কিমি পশ্চিমে কোশাক মহল। ১৪৪৫ এ মালোয়ার সুলতান মামুদ শাহ খিলজি নির্মিত আফগান শৈলী‌র ভব‍্য সৌধ। তাঁর জৌনপুর বিজয়ের স্মারক‌। গ্ৰীক ক্রশের মতো চারতলা স্মারকটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত। তবু টিকে থাকা বিশাল খিলানগুলির আভিজাত্য সমীহ জাগায়। ওপর থেকে চারপাশের দৃশ‍্য মনোরম। ASI ১৯২৩ সালে সৌধটির সংস্কার করে, সংলগ্ন বাগিচা নির্মাণ করে আজ‌ও সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছে। 

    কোশাক মহল
     

    ছাদহীন কোশাক মহলের খিলান সমূহ
     

    কোশাক মহলের পূবে বড় বাগিচা
     
    মহল দেখে অন‍্য একটি শেয়ার অটোয় এক‌ই পথে তিন কিমি পিছিয়ে নামলাম খান্দারজী মোড়ে। এবার শুরু হন্টন। মনোরম আবহাওয়ায় সুন্দর প্রকৃতির মাঝে নির্জন পথে একটা ন‍্যাপস‍্যাক নিয়ে আপন ছন্দে হাঁটায় আমার ক্লান্তি নেই। অপূর্ব এর আনন্দ। সোয়া কিমি হেঁটে উঠে এলাম কাটিঘাটি। (লাল তীর)।

    কাটিঘাটির নির্জন পথে
     

    কাটিঘাটি তোরণ
     
    এখানে নেটে পাওয়া জনৈক উত্তম মণ্ডলের পোষ্ট থেকে একটু পার্শ্বপ্রসঙ্গের উল্লেখ হয়তো মন্দ লাগবে না - ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার যুদ্ধে রাণা সংগ্রাম সিংহের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মেদিনী রাওয়ের নেতৃত্বে রাজপুতরা বাবরের বিরুদ্ধে জোট বাঁধে। খবর পেয়ে ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি চান্দেরী দুর্গ অবরোধ করেন। অনিবার্যভাবেই ভেতরে আটকে পড়ে রাজপুত বাহিনী। সকাল বেলাতেই বাবর দুর্গ আক্রমণ করার আদেশ দিলেন। এরপরের ঘটনা সম্পর্কে বাবর তাঁর আত্মজীবনী "বাবরনামা"-য় জানাচ্ছেন - আমার সৈনরা দলে দলে দুর্গ প্রাকারে উঠতেই দ্রুত পালিয়ে গেল তারা। স্ত্রী-পরিজনদের নিজের হাতে খুন করে যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে এসে বেপরোয়া আক্রমণ করলো আমাদের। কিন্তু আমার সৈন্যদের পাল্টা আক্রমণে পিছু হটলো রাজপুত বাহিনী। ২০০/৩০০ জন রাজপুত মেদিনী রাওয়ের ঘরে ঢুকলো। সেখানে একজন ধারালো তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বাকিরা একে একে তাদের গলাটা এগিয়ে দেয় আর তলোয়ারের কোপে মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে তার কাটা মুণ্ডু। এভাবে সকলেই তারা স্বেচ্ছামৃত‍্যু বরণ করলো। খোদার কৃপায় খুব কম সময়ের মধ্যেই (২/৩ ঘণ্টা) শেষ হলো দুর্গ জয়। এরপর চান্দেরী দুর্গের উত্তর-পশ্চিমে একটি ছোট পাহাড়ের ওপর কাফেরদের কাটা মুণ্ডু দিয়ে একটি স্তম্ভ তৈরির আদেশ দিলাম।
     
    চান্দেরী‌তে একটা জনশ্রুতি প্রচলিত - আলাদীনের মতো এক জিন নাকি বাবরের সৈন্য‌দলের কামান নিয়ে যাওয়ার জন‍্য ঐ কাটিঘাটি রাতারাতি বানিয়ে দেয়। তবে ঐতিহাসিক তথ‍্য অনুযায়ী রাস্তা তৈরির জন‍্য এখানে গিরিশিরার (ঘাটি) কিছুটা অংশ কাটা হয় মাণ্ডু‌র সুলতান গীয়াসুদ্দিন শাহের শাসনকালে জিমন খানের নির্দেশে ১৪৮০ সালে। তাই নাম কাটিঘাটি। অর্থাৎ এটি বাবরের ১৫২৭ সালে চান্দেরী কেল্লা আক্রমণের আগে থেকেই ছিল। কর্তিত অংশটি বৃহৎ ও দর্শনীয়। দৈর্ঘ্যে ১৯৫ফুট, প্রস্থে ৪০ফুট ও উচ্চতায় ৮২ফুট। পাহাড় কেটে‌ই তৈরি তোরণটি যাতায়াতের পথটি চ‌ওড়া‌য় ১২ফুট, উচ্চ‌তায় ১৯ ফুট। মুখ‍্য ভূমিকা‌য় রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কাপুর অভিনীত হরর মুভি  "স্ত্রী" নির্মিত হয় চান্দেরী‌র প্রেক্ষাপটে। শেষ দৃশ্যে শ্রদ্ধা যেখান থেকে বাসে উঠে চলে যাচ্ছে সেখানে সিনেমা‌য় একটা হলুদ বোর্ড দেখানো হয়েছে - চান্দেরী বাস স্ট‍্যান্ড। বাস্তবে ওটা কাটিঘাটি। ওপথে কোনো বাস‌ চলে না। তাই অমন কোনো বোর্ড‌ও নেই। ওটা সিনেমার জন‍্য সাময়িক লাগানো হয়েছিল।

    কাটিঘাটিতে বসে আছে শ্রদ্ধা

    ঐ পথে আরো দু কিমি হেঁটে নেমে এলাম ১৬৯৮ সালে তৈরী ঘন গাছপালায় ছাওয়া রামনগর মহলে। গোয়ালিয়র রাজ মাধো রাও সিন্ধিয়ার দ্বারা ১৯২৫ সালে ওটা‌র ভালো‌রকম মেরামতি হয়। এখন সংগ্ৰহালয়। ওখানে রয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ শতকের কিছু হিন্দু দেব দেবীর খন্ডিত মূর্তি। ওগুলি আশপাশের এলাকা থেকে খননে পাওয়া গেছে। বিষ্ণু‌র বামন অবতারটি অক্ষত।  মহলটি আদিতে ছিল মহারাজা দূর্জন সিং বুন্দেলার শিকারগাহ। প্রাসাদের পূব দিকে  গভর্নর বাহজাত খান নির্মিত বৃহৎ জলাশয় মেহজাতিয়া তালাওয়ের উত্তরে জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়। পরিবেশ খুব সুন্দর। ১৫২৭এ চান্দেরী আক্রমণের সময় বাবর এখানে‌ কিছুদিন ছিলেন। 

    ছায়া সুনিবিড় রামনগর মহল
     

    সাজিয়ে রাখা পুরাকীর্তি
     

    বামন অবতার প্রায় অক্ষত
     

    মহলের পূব দিশায় সংলগ্ন মেহজাতিয়া তালা‌ও
     

     
    এখানে‌ প্লাস্টিক বিছিয়ে খানিক গড়িয়ে নিলুম
     
    চৌকিদার কোথাও গেছেন। সব খোলা পড়ে আছে। টিকিটের বালাই নেই। আমি ছাড়া কোনো দর্শক‌ও নেই। নিস্তব্ধ মহল আপন মনে ঘুরে দেখলাম। সঙ্গে ছিল ফল, চিকি, বিস্কুট। তাই দিয়ে লাঞ্চ সেরে দোতলা‌য় সরোবরমুখী ব‍্যালকনিতে প্লাস্টিক বিছিয়ে খানিক গড়িয়ে নিলুম। ঘন্টা‌ দেড়েক ওখানে কাটিয়ে চললুম ফিরতি পথে তিন কিমি দুরে পবিত্র জৈনতীর্থ খান্দারগিরি। 


     
    পথে এক বয়স্ক ফেরিওয়ালা‌কে দেখলাম বাঁ বগলে চ‍্যাপটা বাক্স, ডান কাঁধে বড় ব‍্যাগ নিয়ে চলেছেন। কাটিঘাটিতে গিয়ে পাথরের বেঞ্চে একটু বিশ্রাম নিতে বসলেন। আমি‌ও গিয়ে পাশে বসে বলি এদিকে কেন এসেছি‌লেন? ওপরে কাঁচ লাগানো বাক্সটা দেখিয়ে বলেন, গাঁ‌ওতে গেছি‌লাম, যদি কিছু বিক্রিবাটা হয়। বাক্সে সস্তা মেকি গয়না। বলি, আর ব‍্যাগে কি আছে? বলেন, ছোটদের জামা কাপড়। বলি, বিক্রি‌বাটা কেমন হোলো? করুণ হেসে বলেন, আজ ওদিকে কিছুই হোলো না। 
    আমার কাছে মুগের লাড্ডু ছিল। বাক্স বার করে বলি, নিন। না না করে‌ও নিলেন একটা। বোতল‌টা এগিয়ে বলি, জল খাবেন? আলগোছে খেয়ে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে বলেন, আপনি এদিকে? বলি, বেড়াতে এসেছি। একটু পরে উনি, আচ্ছা আসি, বলে বাক্স বগলে, ব‍্যাগ কাঁধে ওঠেন। আমি বসে থাকি কাটিঘাটির ভ‍্যান্টেজ পয়েন্টে। চারপাশে মনোহর দৃশ্যে‌র মাঝে ক্লান্ত পদক্ষেপে নেমে যাচ্ছেন এক বয়স্ক ফেরিওয়ালা। ভাবি আমি কখনো সখনো হাঁটি মনের আনন্দে, ওনাকে রোজ এমন হাঁটতে হয় পেটের দায়ে। এতো হাঁটাহাঁটি করে দিনের শেষে যদি আশানুরূপ বিক্রি‌বাটা না হয়, কেমন লাগে বাড়ি ফিরতে? 
     

     
    ২০১৭ ডিসেম্বরে হর্ণবিল ফেস্টিভ্যাল দেখতে নাগাল‍্যান্ড যাওয়ার পথে দুদিন ছিলাম গুয়াহাটিতে। দ্বিতীয় দিন বশিষ্ঠ আশ্রমে দেখেছি‌লাম এমন‌ই এক মাঝবয়সী ফেরিওয়ালাকে। সেও গ্ৰামের মধ‍্যে গেছি‌লো কিছু মনোহারী দ্রব‍্য বেচতে। আমার শ খানেক মিটার আগে আগে আন্দাজ দেড় কিমি হেঁটে এলো সে আওয়াজ দিয়ে (Hawker's call) এদিক ওদিক দেখতে দেখতে। কিছুই বিক্রি হোলো না। বশিষ্ঠ আশ্রমের গেটের পাশে সামান রেখে সে একটু  বিশ্রাম নেবার জন‍্য দাঁড়ালো। পড়ন্ত বিকেলে শুন‍্য দৃষ্টিতে দুরে তাকিয়ে থাকা মুখটি আজ‌ও মনে পড়লে বেশ হন্ট করে। মাঝে কিছুদিন বাদ দিলে আজীবন আমি চাকরি করেছি। উচ্চাশা ছিলনা বলে সাপুড়ে‌র মতো পেশাকে বশ করে জীবন এবং ভ্রমণের শখ উপভোগ করেছি চুটিয়ে। এক মাস LWP নিয়ে চলে গেছি HMI দার্জিলিংয়ে মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করতে। ছিল‌না প্রমোশন, ইনক্রিমেন্টের হ‍্যাংলামো। পেলে ভালো লেগেছে। না পেলে অবশ্যই খারাপ লেগেছে কিন্তু হাহুতাশ ছিল না। মাসান্তে মাইনে পাবো সেটা‌ই ছিল নিশ্চিন্ততার আশ্বাস। তাই ফেরিওয়ালা‌দের দৈনন্দিন অনিশ্চয়তা আমায় বেশ বিচলিত করে।
     

     
    কাটিঘাটি থেকে আধ কিমি নেমে ডানহাতি আধ কিমি দুরে সাতশো বছরের প্রাচীন জৈনতীর্থ খান্দারগিরি। পাহাড়ের গায়ে খোদিত ৪৫ফুট উঁচু আদিনাথের মূর্তি (সবুজ তীর)। বৃষ্টির জলে মূর্তির শরীরে পড়া কালো ছোপে প্রাচীনত্বের ছাপ। আছে পাহাড় কেটে বানানো আরো কিছু গুহামন্দির। ১২৩৬ সালে নির্মিত ৬নম্বর গুহাটি প্রাচীনতম‌।
     

     
    ওখান থেকে এক কিমি উত্তরে চাকলা বাউড়ি। বর্গাকার একটি ধাপকুয়া। মহিলা‌দের স্নানের জন‍্য পঞ্চদশ শতকে মান্ডুর সুলতানের তৈরি। বাউড়ি‌র পশ্চিমে ১৬৮৪তে নির্মিত দুটি রাজপুত শৈলীর ছত্রী রয়েছে। পূর্বে পাহাড়ের শিরে চান্দেরী কেল্লার দক্ষিণ প্রান্তে বারাদরীটি লাগলো নাকছাবির মতো। 
     

    জামা মসজিদের প্রবেশ‌পথ
     
    চাকলা বাউড়ির তিনশো মিটার উত্তর-পশ্চিমে জামা মসজিদ। মালোয়া জয়ের খুশিতে ১২৫২ সালে গিয়াসউদ্দিন বলবন দ্বারা নির্মিত। এর তিনটি গম্বুজ দুর থেকে দৃশ‍্যমান। অন্দরে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ। প্রবেশতোরণ ও প্রার্থনা কক্ষের পাথরের কাজের সুক্ষতা বিষ্ময়কর। কয়েক সারি  খিলানের দালানদুটি‌‌ও চমৎকার।
     

    মসজিদের অন্দরে
     

    চমৎকার খিলানের সমন্বয়
     

     
    হাতি‌র শুঁড়ের করবেলগুলি Interesting but Structurally Delicate - মানে এগুলি সরলরেখায় হলে অনেক মজবুত হোতো - তবে দেখতে দৃশ‍্যনন্দন। খুঁটিয়ে দেখে মনে হলো ওগুলো নিছক Decorative - বেরিয়ে থাকা ঢালু ছাদের ভারবহনে ওগুলি‌র কোনো ভূমিকা নেই। ঐ ছাদ Self supported.
     

    পাথরের কাছের সুক্ষ্ম‌তা অত‍্যন্ত উচ্চমানের

     
    সচরাচর কোনো মসজিদের ছাদে দর্শকদের যেতে দেয়না। এখানে সিঁড়ি (সবুজ তীর) দিয়ে উঠে দুরে চান্দেরী কেল্লার দৃশ‍্য সুন্দর লাগলো (লাল তীর)‌।


    জামা মসজিদে‌র বিপরীতে বাদল মহল গেট। পাঁচিলে ঘেরা ছশো ফুট দীর্ঘ মনোরম বাগিচার পূবে পাথরের গায়ে সুক্ষ্ম খোদাইয়ের কারুকার্য‌মন্ডিত উঁচু তোরণ। তবে তোরণ দুটির পরে কোনো মহল নেই। দুটি মিনার যেন আকাশ ছোঁয়া দুটি হাত। ওখান থেকে চান্দেরী কেল্লার দৃশ‍্য মনোরম।
     

    বাদল মহল প্রাঙ্গনের বাগিচা
     
    ওখান থেকে কেল্লা যাওয়ার পথে‌ বাঁদিকে পড়লো সুফি সন্ত নিজামুদ্দিনের পারিবারিক মকবরা। সমাধির ফলক ও পাথরের জালির কাজ উচ্চমানের। 

    সুফি সন্ত নিজামুদ্দিনের পারিবারিক মকবরা
     

    পাথরের জালির সুক্ষ্ম কাজ বিষ্ময়কর
    মকবারা দেখে একটু এগিয়ে ডাইনে হাতি গেট পেরিয়ে বাঁহাতি চড়াই পথ উঠে গেছে কেল্লার মূল প্রবেশপথ খুনি দর‌ওয়াজা‌য়। বাবরের হানায় চান্দেরীরাজ  মেদিনী রায়ের বহু সৈন‍্য ঐ প্রবেশপথেই প্রতিরোধে প্রাণ হারায়। সেই রক্তাক্ত ঘটনার স্মৃতি‌তে নাম হয়েছে খুনি দর‌ওয়াজা। উপরে গিয়ে উত্তরে হাওয়া মহল থেকে পাখির চোখে নীচে বাদল মহল অপূর্ব লাগলো। হাওয়া মহলের পাশে খিলজি মসজিদ ও নৌখান্ডা মহল‌। 


    হাতি গেট পেরোতেই ….

    চান্দেরী কেল্লার কৌনিক প্রান্তটা দেখে মনে হোলো টাইটানিনের নাকের মতো - মনশ্চক্ষে মনে হয় - ঐ তো দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্গীয় কেট - পিছনে মুগ্ধ লিওনার্দো!
     

    এগিয়ে চলি খুনি দরোয়াজা‌র দিকে….

    পিছন ফিরে তাকাই ফেলে আসা পথে… নীচে ছড়িয়ে আছে চান্দেরী নগরী
     

    রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী - খুনি দরোয়াজা
     

    ভিতর থেকে দেখা খুনি দর‌ওয়াজা
     
    একাদশ শতাব্দী‌তে প্রতিহার রাজা কীর্তি‌পাল নির্মাণ করেন এই কেল্লা। নাম দেন কীর্তি‌দূর্গ। পরে চান্দেরী‌তে মালোয়ার সুলতান, মূঘল, বুন্দেলা, সিন্ধিয়া এহেন নানান রাজবংশের শাসনকালে কেল্লায় যোগ হয় বিভিন্ন অংশ। বর্তমানে অতীতের ৫ কিমি দুর্গপ্রাচীরের কিছু অংশ, হাওয়া মহল, খিলজি মসজিদ, খুনি দর‌ওয়াজা, বারাদরী, কিলা কোঠি টিকে আছে। ১৫২৭এর যুদ্ধে  মেদিনী রায়ের পরাজয়ে প্রায় ছশো রাজপুত রমণী এখানে জহর ব্রত পালন করেন। তার‌ই করুণ স্মৃতি হিসেবে আছে জৌহর স্মারক। তার কাছেই আছে বৈজু বাওড়ার সমাধি।
    নৌখান্ডা মহলের ছাদ থেকে দৃশ‍্যমান নীচে বিস্তৃত চান্দেরী শহর, দক্ষিণে কাটিঘাটি, উত্তরে লক্ষ্মণ মন্দির ও হৌজ খাস তালাও। পূবে আট কিমি পাখিওড়া দুরত্বে বেতয়া নদীর ওপর রাজঘাট ড‍্যাম নির্মাণের ফলে সৃষ্ট বিশাল জলাধার রাণী লক্ষীবাঈ সাগর। সিপাহী যুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সাথে থাকায় গোয়ালিয়রে‌র সিন্ধিয়া রাজবংশ উপঢৌকন পান চান্দেরী। তিনশো বছরের প্রাচীন কিলা কোঠি সংস্কার করে তাঁরা বানিয়ে নেন তাঁদের অবসর যাপনের রাজকীয় আবাস। বর্তমানে এম.পি ট‍্যূরিজমের হেরিটেজ হোটেল। 
     

     
    কিলাকোঠির (লাল তীর) ভ‍্যান্টেজ লোকশন। এটাই গতরাতে ধর্মশালার চত্বর থেকে দেখেছি। দুরে রাণী লক্ষীবাঈ সাগরের নীলাভ জলরাশি

    কিলাকোঠি হেরিটেজ হোটেল
     

    কিলাকোঠিতে থাকলে এখানে বসেই সুন্দর সময় কেটে যাবে কয়েকদিন - তৃপ্ত হবে ছোটাছুটি‌তে ক্লান্ত শরীর, মন
     

     
    আবার ক্ষণিকের জন‍্য মন বিষন্ন‌ও হতে পারে জৌহর স্মারকে এসে ….
     

     
    অতীতে রাজপুত সৈন‍্য ও রমণীদের আত্ম বলিদানের স্মৃতি‌চিহ্ন দেখে
     

     
    চান্দেরী কেল্লা‌য় কীর্তি দুর্গ

     
    কীর্তি‌দূর্গের অভ‍্যন্তরে নৌখাণ্ডা মহলের ছাদ থেকে চারপাশ সুন্দর দৃশ‍্যমান… যেমন…

     
    একটু দক্ষিণ-পশ্চিমে কোশাক মহলের দিশায়..

     
    বা উত্তর পশ্চিমে খিলজি মসজিদ (সবুজ তীর) হয়ে দৃষ্টি চলে গেল দুরে পাহাড়ের মাথায় আলী জী দরগা (নীল তীর), আরো ডাইনে খাড়া টিলার শিরে হজরত মেহমান শাহ দরগাহ … পরদিন গেছি‌লাম ওদিকে
     
    নৌখাণ্ডা মহলে আলাপ হোলো ASI গার্ড অজিতের সাথে। কথায় কথায় বলে, বছর দুয়েক আগে দুটি অস্ট্রেলিয়ান তরুণী কেল্লা দেখতে এসে এমন‌ পড়ন্ত বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে কেল্লার দক্ষিণে বারাদরি দেখতে যাচ্ছিল। ওখানটা একটু দুরে, একদম নির্জন। আমি ওপরে বসেছিলাম। দেখি গোটা চারেক মার্কামারা বকাটে ছেলে ওদের দিকে যাচ্ছে। আমি ক‍্যারাটে জানি। নানচাক্কুটা নিয়ে দ্রুত ওদিকে যাই। খালি হাতেই অমন দু একটা মর্কটের মহড়া নিতে পারি। নানচাক্কু থাকলে তো জলভাত। ছেলেগুলো আমায় চেনে, দেখেই সটকে পড়লো। না হলে আজেবাজে কিছু হতে পারতো। তাহলে ভারতের বদনাম, চান্দেরী‌র কলঙ্ক। মেয়েদুটো কিছু জানতেও পারলো না। ঘুরেফিরে চলে গেল। 
     
    বলি, রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা ও অধিকাংশ মানুষের‌ যদি এমন কর্তব‍্যবোধ থাকতো, হয়তো দেশটা অন‍্যরকম হোতো। অজিত বলে, আপনার একটু সময় আছে, তাহলে একটা জিনিস শোনাতাম। বলি, আমার কোনো তাড়া নেই। মহলের একটা ঘর স্টোরের মতো। স্টিরিও সিস্টেম রয়েছে‌। অজিত পেন ড্রাইভে মিনিট দশেকের একটু অডিও শোনালো‌। কেল্লায় লাইট এ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের জন‍্য রেকর্ড করা হয়েছিল। তখন‌ও অবধি চালু হয়নি তা। পরে হয়েছে কিনা জানি না। কিন্তু সেদিন আসন্ন সন্ধ্যায় নির্জন কেল্লায় শব্দের মাধ্যমে বাবরের কেল্লা আক্রমণ, মেদেনী রায়ের বাহিনীর ও জহরব্রত করা নারীদের আর্তনাদে ক্ষণিকের জন‍্য মানসিক‌ভাবে চলে গেলাম পাঁচশো বছর পিছনে। 
     
    অজিত বলে, আবার যদি কখনো আসেন এখানে এবং আমি‌ও থাকি, নিয়ে যাবো আপনাকে সিংপুর মহল, পিপার খো প্রপাত, কাটোতি খো মন্দির। খো মানে গিরিখাত। যেমন পাঁচমাড়ীতে আছে হান্ডি খো।  আপনার যেমন একা বেড়ানোর নেশা দেখছি, সারাদিন ধরে হেঁটে হেঁটে ঘুরছেন, ওসব জায়গায় গেলে খুব ভালো লাগবে। তবে ওগুলো জঙ্গলে‌র ভেতরে, নিজস্ব বাহন না হলে যাওয়া মুশকিল, একা যাওয়া‌ও ঠিক নয়। আমি আপনাকে বাইকে নিয়ে যাবো। 
     
    বলি, এই বিরাট দেশের বহু কিছু এখনো দেখা‌ বাকি, ক্রমশ বয়স হচ্ছে, কতোদিন এভাবে একা ঘুরতে পারবো জানি না, তাই এক জায়গায় সচরাচর দুবার যাইনা। কিন্তু চান্দেরী ভারি সুন্দর। একটা মিস্টি‌ক চার্ম আছে। তার ওপর আপনার এমন আমন্ত্রণ। হয়তো আসতেও পারি আবার কখনো এখানে। এবারে তো হোলো না, তখন যাবো ২২ কিমি দুরে বুড়ি চান্দেরী‌, ২৮কিমি দুরে থুবোনজী, ৪১ কিমি দুরে পরমহংস দয়ালজী প্রতিষ্ঠিত আনন্দপুর অদ্বৈত মঠ, তার কাছেই ঈশাগড়। অজিত বলে, বাবা, আপনি তো না গিয়ে‌ও এসব জানে‌ন দেখছি! বলি, হ‍্যাঁ ভাই, বছরে একবার শীতে দীর্ঘ একাকী ভ্রমণে বেরোনোর আগে আমি বাড়িতে বসে একটু হোম‌ওয়ার্ক করি। 
     
    সন্ধ্যার প্রাক্কালে নেমে এলাম নীচে। চা খেয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আটটা নাগাদ গেলাম  দিল্লি গেটের কাছে মহাবীর হোটেলে। দিনে তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি। জমি‌য়ে ভেজ ডিনার সারলাম। সারাদিনে প্রায় ১২ কিমি হেঁটেছি। রুমে ফিরে শুতেই ডুবে গেলাম নিটোল ঘুমে। 
     
    পরদিন সকালে গেলাম দিল্লি গেট থেকে আধা কিমি উত্তর-পশ্চিমে পরমেশ্বর তালাও সংলগ্ন লক্ষ্মণ মন্দিরে। জনশ্রুতি এই তালাওয়ে নিয়মিত স্নান করে রাজা কীর্তি‌পালের দুরারোগ্য ব‍্যাধির নিরাময় হয়। পথে পড়লো রাজা দেবী সিং ও ভরত শাহর সুরম‍্য ছত্রী। কিছু অনামা ছত্রী ও দরগাহ‌ও রয়েছে আশপাশে। নজর কাড়ে মন্দিরের উত্তরে অনেকখানি জায়গার ওপর শাহজাদী কি রৌজা। 

     
    পরমেশ্বর তালাও‌ থেকে চান্দেরী কেল্লা থেকে দেখা আলী জী দরগা (নীল তীর) ও মেহমান শাহ দরগাহ (লাল তীর) আর একটু পরিস্কার দেখা গেলো
     

    ভরত শাহ বুন্দেলা‌র ছত্রী
     

    লক্ষ্মণ মন্দিরের ডানদিকে পিছনে শাহজাদী কি রৌজা (লাল তীর)
     
    শাহজাদী কি রৌজার ইতিহাস‌টি খুব বিয়োগান্তক। পঞ্চদশ শতকে তৎকালীন চান্দেরী‌র হাকিমের (গভর্নর) কন্যা মেহরুনিসা সেনাপ্রধানের প্রেমে পড়েন‌। পিতার এই সম্পর্ক নামঞ্জুর। তিনি সেনাপ্রধান‌কে যুদ্ধে পাঠালেন। পিছনে পাঠালেন কিছু বিশ্বস্ত ঘাতককে - নির্দেশ ছিল সেনাপ্রধান যেন যুদ্ধ থেকে বেঁচে না ফেরে। কিন্তু হাকিমের পরিকল্পনা বাঞ্ছিত উপায়ে ফলপ্রসূ হোলো না। সেনাপ্রধান যুদ্ধে জিতে ফিরে‌ এলেন কিন্তু হাকিমের অনুচরদের কল‍্যাণে মারাত্মক জখম হয়ে। বর্তমান স্থ‍্যাপত‍্যটির কাছেই তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে মারা গেলেন। মেহরুনিসা খবর পেয়ে ছুটে গেলেন প্রেমিকের কাছে, এটা যে পিতা‌র‌ই ষড়যন্ত্র তা সে জানতে পারেনি, কিন্তু প্রেমাস্পদের মৃত্যুর পর বেঁচে থাকা নিরর্থক বোধে ওখানে‌ই আত্মঘাতী হন। হাকিম কন‍্যা‌কে খুব ভালো‌বাসতেন। শোকতপ্ত, অনুতাপদগ্ধ পিতা ওখানেই ওদের যুগ্ম সমাধি বানালেন আনুমানিক ১৪২০ থেকে ৩৫ সালের মধ‍্যে। সমাধিসৌধের ওপরে গম্বুজ‌টি ভেঙে পড়ে গেছে কিন্তু দে‌ওয়াল‌গুলি টিকে আছে।
     

    শাহজাদী কী রৌজা (সমাধি)
     

    সমাধির শিরে গম্বুজ ভেঙে পড়ে গেছে, আর …
     

    …উন্মুক্ত আকাশতলে সমাধিতে মেহরুনিসা শায়িতা তার প্রেমাস্পদের পাশে - জীবনে মিলন হয়নি  - মরণে‌ কাছাকাছি

    ওখান থেকে চারশো মিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এক বৃহৎ কৃত্তিম জলাশয় - হৌজ খাস। ১৪৬৭তে মামুদ শাহর সময়ে রাজকীয় অবসর বিনোদনের নিমিত্তে তৈরি। পাশে বৃহৎ মেলা গ্ৰাউন্ড। চৈত নবরাত্রিতে ১৫ দিনের মেলা বসে। কেল্লার নীচে জাগেশ্বরী মন্দিরের জাগৃতি মাতার প্রতিরূপ - তৃতীয়া থেকে পঞ্চমী - তিন দিনের জন‍্য এখানে সাময়িক ভাবে স্থাপনা করা হয়। তখন পুলিশ প্রহরায় মূল মন্দির থেকে মাতার অলঙ্কার সমূহ এনে প্রতিকৃতিতে পরানো হয়। তিনদিন পরে সেসব আবার চলে যায় মূল মন্দিরে। বহুদিন ধরে চলে আসছে এই প্রথা। 
     

    হৌজ খাস তালাও - পাড়ে মেলা গ্ৰাউন্ড - দুই দরগাহ আরো স্পষ্টভাবে দৃশ‍্যমান
     
    ছশো মিটার পশ্চিমে টিলার টঙে ঝকঝকে সবুজ আলি জী দরগা চুম্বকের মতো টানলো। চান্দেরী বাইপাসের পাশ দিয়ে‌ উঠে গেছে সাদা সিঁড়ি। দরগাহ থেকে হৌজ খাস সহ চারপাশের দৃশ‍্য যেন পিকচার পোষ্টকার্ড। 

    জনহীন আলী জী দরগা
     

    আলি জী দরগা থেকে নীচে হৌজ খাস তালাওয়ের বাঁদিকে বড় মেলা গ্ৰাউন্ড (সবুজ তীর) - দুরে কেল্লায় কিলাকোঠি (লাল তীর) থেকে গতকাল এই দরগাহ দেখেছি‌লাম
     
    দরগাহ থেকে নেমে এসে  দু কিমি হেঁটে পৌঁছলাম জঙ্গলে‌র মাঝে বত্তীস বাউড়ি। আয়তকার কুয়োয় নামার বত্রিশটি সিঁড়ি। তাই এই নাম। ১৪৮৫তে গিয়াসউদ্দিন খিলজির সময়ে তৈরি। চান্দেরী‌তে আছে প্রায় ১২০০  বাউড়ি বা ধাপ কুয়ো। আকার, নির্মাণ‌কৌশল ও সৌন্দর্যে এটি‌ই সবার সেরা। ASI এর কল‍্যাণে সুন্দর ভাবে সংরক্ষিত। বাউড়ি‌র দক্ষিণ-পূর্বে তিনশো মিটার দুরে টিলার টঙে হজরত মেহমান শাহর দরগাটি (লাল তীর) যেন আকাশে‌র গায়ে বাউড়ি‌র মুকুট। 
     

    বত্তীস বাউড়ি
     

    মার্চের শুরুতে জলস্তর - পাথরের গায়ে দাগ থেকে বোঝা যায় বর্ষার পর বাউড়ি‌তে কতটা ওঠে জলস্তর
     

    বাউড়িটি লম্বাতেও অনেকটা 
     
    ফেরার পথে দেখলাম বড়া মাদ্রাসা। আদতে ছিল সমাধি। পাথরের কাজ অনবদ‍্য। শাহজাদী রৌজা‌র মতো এখানে‌ও গম্বুজটি ভেঙে পড়ায় ওপরে আকাশের চাঁদোয়া। একটু দুরে বিশাল কদীমী মসজিদ প্রাঙ্গণে রয়েছে ইদগাহ।
     

    বড়া মাদ্রাসা
     

    বড়া মাদ্রাসা চত্বর থেকে পশ্চিমে টিলার শিরে হজরত মেহমান শাহ দরগাহ - গতকাল থেকে দেখে‌ছি - সময়াভাবে ওখানে আর যাওয়া হয়নি।

    সময়াভাবে দেখা হোলোনা শহরের মধ‍্যে জাগেশ্বরী মন্দির, মুসা বাউড়ি, পুরানা আদালত, কীর্তি‌নারায়ন মন্দির‌ ও আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। সারা চান্দেরী জুরে ছড়িয়ে আছে নানা প্রাচীন স্মারক। এখন মনে হয় চান্দেরী‌তে আরো একটি দিন থাকলে ভালো হোতো। সেদিন আর একবার বর্ষার অনতিপরে  আসার আশা বুকে পুষে ছেড়ে গেলাম চান্দেরী। এখন দেখা আধ শুকনো তালাও‌গুলি তখন থাকবে কানায় কানায় ভরা। বাউড়ি‌তে টলটল করবে জল। শুষ্ক বৃক্ষগুলি হয়ে থাকবে পত্রময় সবুজ। মনশ্চক্ষে উপলব্ধি হয় তখন সুন্দরী চান্দেরী‌ সেজে থাকবে অন‍্য রূপে। সেবার বেলা একটার গুনা-ললিতপুর বাসে র‌ওনা হলাম পরবর্তী গন্তব্যের পথে।
    (খুব লো রেজোলিশন রাখায় 57 টি ছবি সমেত লেখা‌টির pdf ফাইলের সাইজ হয়েছে 11.5 mb)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ৯৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীমু | 182.69.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:২৩525319
  • নীল আকাশের জন্য ছবিগুলো দারুণ এসেছে। বিশেষ করে গম্বুজের বৃত্তটা। এই জায়গাটার নাম আপনার লেখাতেই প্রথম জানলাম। কাছেপিঠে ট্রেন স্টেশন নেই বলে আমার র‍্যাডারে ধরা পড়েনি। laugh 
  • kk | 2607:fb90:ea0c:cd31:c5e4:bfd6:bab5:***:*** | ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩৬525320
  • আমি চান্দেরী শাড়ির কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু জায়গাটা নিয়ে তেমন কিছুই জানা ছিলো না। আপনার লেখায় এত কিছু জানতে পেরে খুব ভালো লাগলো। অনেকগুলো বাড়িরই আর্কিটেক্চার খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো। আর পাথরের সুক্ষ্ম কারুকাজ তো অসাধারণ। ঐ গম্বুজ ভেঙে যাওয়া গোল আকাশের ছবিটা আমারও খুব ভালো লেগেছে। অনেক ছবিই খুব সুন্দর। তার মধ্যে চারপাশে সোনালী একটা পটভূমিকার মধ্যে 'শ্রদ্ধা'র নীল প্রোফাইলটা হঠাৎ খুব ভালো লেগে গেলো। এই লেখাটার মধ্যে একটা বিষন্নতা আছে, যেটা লেখা শেষ হবার পরেও রেশ রেখে গেলো।
  • হীরেন সিংহরায় | 85.255.***.*** | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৪৪525345
  • আপনার সংগে ঘুরে এলাম ইতিহাসে পড়া দেশে!নীল আকাশের তলে। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:০৬525349
  • @ দীমু / kk / হীরেনবাবু

    চান্দেরীর সৌন্দর্য্য আপনাদের ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। সত্যিই খুব সুন্দর জায়গা। Sparsely populated ধূবেলা‌ লেগেছিল Quiet n Quaint - কিন্তু চান্দেরী‌ একটা প্রাচীন প্রাণবন্ত শহর - তবে তার‌ও পরতে পরতে যেন আজ‌ও জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মায়া। তাই মনে হয়েছে চান্দেরী নিছক একটি পর্যটন স্থল নয় - it is not to be seen alone but to be soaked with - তাই প্রথম দিন যেভাবে আলস‍্যময় ভঙ্গিতে ঘুরেছিলাম, দ্বিতীয় দিনটাও যদি ওখানে থেকে আর একটু সময় নিয়ে ঘুরতাম….  

    আগ্ৰহী‌দের জন‍্য ASI কৃত চান্দেরী‌র মূল দ্রষ্টব্য স্থান‌গুলি‌র একটা ম‍্যাপ‌ও রাখলাম। চান্দেরী কেল্লায় তুলেছিলাম, লেখা‌য় দিতে ভুলে গেছি।


     
  • Kishore Ghosal | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৪০525375
  • অপূর্ব লেখা ও ছবিগুলি। 
    মধ্যপ্রদেশের বহু জায়গাতেই গেছি - কিন্তু এভাবে ঘোরা হয়নি - চান্দেরী তো নয়ই। ভীষণ ভালো লাগল। 
  • শিবাংশু | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৪৭525384
  • ভালো লাগলো। 
     
    ওর্ছা থেকে টিকমগড় পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসেছি।  চান্দেরি যাওয়া হয়নি আর, 
  • r2h | 208.127.***.*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:২৮525386
  • সমরেশবাবুর সব লেখাগুলোই খুব ভালো লাগছে, পড়তে দেরি হয়ে যায়, আর বলা হয়ে ওঠে না। ছবিও!
  • সমরেশ মুখার্জী | ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৪525412
  • @ কিশোরদা, হীরেনদা, রঞ্জনদা, শিবাংশুবাবু,  kk, 
    ইন্দ্রানী, রীতা বন্দোপাধ্যায়, r2h, যোষিতা, দীপাঞ্জন, অমিত, অরণ‍্য, & / এবং ….

    আমাদের পুত্রদেব তার বেড়ুক পিতার দৌলতে দশ বছর বয়সের মধ‍্যে‌ই বহু জায়গায় ঘুরে নিয়ে‌ছে। আমার সে সৌভাগ্য হয়নি। আমি প্রথম ভ্রমণে গেছি বাবার সাথে পুরী - আঠারো বছর বয়সে। তবে ১৯৮২ তে ২২ বছর বয়সে চাকরি পেয়ে ভাইজ‍্যাগে গিয়ে - মানে আর্থিক‌ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে - সেই যে বেড়ানোর নেশায় ধরলো - সে ঘোর আজ‌ও কাটেনি।

    প্রথম চাকরিতে ছমাস ট্রেনিং পিরিওডে সিক লিভ ছাড়া আর কোনো ছুটি ছিল না। তখন‌ একটা সাইটে (পাইলিংয়ের) কাজ শেষ ও অন‍্য সাইটে কাজ শুরুর মাঝে তিনমাসের মাথায় ডিসেম্বরে ভাইজ‍্যাগ থেকে হাওড়া এলাম  বসের বদান্যতায় ৫ দিনের বিশেষ ছুটি নিয়ে। কিন্তু এক প্রিয় বন্ধু‌র সাথে ঘাটশিলা, রাঁচি, নেতারহাট ঘুরে আসার পোকা নড়ে উঠলো। চলে গেলাম। বাড়ি ফিরে ভাইজ‍্যাগে ফেরার পথে বিজয়‌ওয়ারাতে পোষ্টিং দাদার কাছে গেলাম ওর বাড়িতে ফেলে যাওয়া কিছু জিনিস পৌঁছাতে। সেখান থেকে আবার ওর সাথে মাদ্রাজ, মহাবলীপুরম ঘুরে ১২ দিন বাদে ভাইজ‍্যাগে ফিরলাম।
     
     সাইট ইনচার্জ‌ বললেন, কী ব‍্যাপার, ৫ দিনের জন‍্য বাড়িতে বাবা মার সাথে দেখা করতে গিয়ে এতো দেরী? যা সত‍্য তাই বললাম - স‍্যার, খুব ইচ্ছে করছিল, তাই কদিন বন্ধু‌য, দাদার সাথে বেড়িয়ে এলাম। চাইলে LWP করতে পারে‌ন। তখনো নতুন সাইটে শুরু হয়নি। বস আমার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে সব এ্যাবসেন্ট প্রেজেন্ট করে দিলেন। অকপট সত‍্যভাষণের ফল সর্বদা না হলেও অনেকবার পেয়েছি। জীবনে এমন বস বেশ কয়েকটি পেয়েছি। তার প্রতিদান‌ও দিয়েছি চুটিয়ে কাজ করে - কারণ এক হাতে তালি বাজে না। 

    কর্মজীবনে‌ অকারণে ছুটি নিতাম না। ইলেকশন র‍্যালি করার মতো ঝটিকা সফর ভ্রমণ আমার কোনোদিন পছন্দ নয় - বিশেষতঃ প্রথম যাওয়া কোনো জায়গায়। আমার সৌভাগ্য, প্রোজেক্টে কাজ করেও, কাজের অবস্থা বুঝে ছুটি নিয়ে বেড়াতে যেতে চাইলে ছুটি না পাওয়া কখনো আমার ভ্রমণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় নি।
    পেশগত জীবনে একটিমাত্র তেঁড়েটে বস চারবছর  জ্বালিয়ে‌ছে। তার ক্ষেত্রে ইমেলে লিভ ইন্টিমেশন পাঠিয়ে, চাইলে LWP করতে পারে‌ন জানিয়ে, বেড়াতে চলে গেছি। তবে কিছু করেনি কারণ barking dog never bites.

    তবে সাড়ে পঞ্চান্নয় কর্মজীবনে ইতি টেনে আরো নানাবিধ বেড়ানোর সাথে বছরে একবার শীতে দীর্ঘ একাকী ভ্রমণের যে চসকা লেগেছে - এর মোহমায়া  অনন‍্য - জমে ক্ষীর হয়ে গেছি এ আনন্দে। তবে বেড়াতে যাওয়া সব জায়গা নিয়ে -  যেমন বহু প্রচলিত জায়গা‌র ওপর লিখতে ইচ্ছে করে না।

    গুরুতে ব্লগ লেখার সুযোগ পেয়ে তাই ভুলে যাওয়ার আগে নানা ভ্রমণের থেকে বিশেষ কিছু মনে রাখার মতো জায়গায় ভ্রমণস্মৃতি লিখে রাখছি। আপনাদের এমন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আনন্দ‌দায়ক লাগছে জেনে উৎসাহ পাচ্ছি।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন