এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জানালা

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ আগস্ট ২০২৫ | ৫৬ বার পঠিত
  • আমি.......আমি হরিদাস পাল। মানে যেই হরিদাস পালের কথা শুনে এসেছেন আপনারা সে নই।এবার প্রশ্ন হচ্ছে তবে আমি কে?

    আমি মনে করুন একটা টেবিল,কিংবা একটা টিপট,যাকে বাড়িতে কুটুম এলে বের করা হয়।কিংবা একজন চলচ্ছক্তিহীন কিশোর কিংবা যুবক,যার কিনা সারাটাদিন বিছানায় শুয়েই কাটে।হতে পারি আমি কনজেনিটাল বা জন্মগত পঙ্গু,অথবা কোনো দুর্ঘটনায় চলচ্ছক্তি হারিয়েছি আমি।

    আমি ভাবছি জন্মগত চলচ্ছক্তিহীন যুবকটাই ভালো হবে।তাহলে গল্পটা সাজানো যাবে বেশ।অন্যান্য লেখকরা তো আপনাকে প্রথম থেকেই বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করেন এটা সত্যি কথা,আমি নাহয় আপনাকে স্বাধীনতা দিলাম এটাকে গল্পই ধরুন।নিছক নিষ্কর্মা মনের 'নট সো উর্বর' কল্পনা।

    ছাড়ুন ওসব;জানেন আমার খুব মন খারাপ হয় মাঝে মাঝে,মেনেই নিয়েছি নিজের ভবিতব্য।জানি সারাটা জীবন আমাকে এই বিছানায় কাটাতে হবে,কিন্তু তবুও ইচ্ছা হয়,একবার নিজের পায়ে হেঁটে বাইরে যাওয়ার,একবার বৃষ্টিতে ভেজা ঘাসে চলার,একবার পাহাড়ের গা বেয়ে ছুটে ওঠার,কোনো পুকুরের ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকার, কিন্তু আমি - ওই যে জন্ম থেকে নিজে থেকে নড়তেও অক্ষম।

    মা - বাবা যে কেন আমায় বাঁচিয়েছিলেন বুঝতে পারি না।এটাও বুঝতে পারি না,আমার বেঁচে থেকে কী লাভ?আচ্ছা এখন নাহয় ওঁরা আছেন আমার দেখাশোনা করছেন,কিন্তু ওঁরা মারা গেলে?তখন কে দেখবে আমায়?
    আমি তো এমন কিছু প্রয়োজনীয় কেউ নই যে লোকে আমার পরোয়া করবে,খেয়াল রাখবে,বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবে?

    তবে একটা জিনিস জানেন আমার সব অনুভূতি কিন্তু পুরোমাত্রায় আছে।আমার পুরুষাঙ্গ দাঁড়ায় না বটে,কিন্তু প্রেমের অনুভূতি আমার আছে,আমি প্রত্যক্ষ করেছি অনেকবার।

    একবার আমি তখন ওই বারো কি তেরো বছর বয়সের তরতাজা,(এই মাফ করবেন,তরতাজা হবে না।) কিশোর।আমাদের বাড়িতে একটা মেয়ে এসেছিল,আমারই কোনো আত্মীয়ের মেয়ে। সম্পর্কটা কী যেন?........
    ও হ্যাঁ,মনে পড়েছে - আমার বাবার জেঠুর মেয়ের ভাসুরঝি।
    সে অনেক দূরের সম্পর্ক দাঁড়িয়ে ঢিল মারলেও মাথায় পড়বে না।

    যা বলছিলাম,মেয়েটা ছিল অপূর্ব সুন্দরী।(আমি ঢের তো মেয়ে দেখেছি! ঘর থেকে কোনোদিন বেরোলাম না,মা আর হাতে গোনা গোটা দশেক আত্মীয় ছাড়া আর কটা মেয়ে দেখেছি?)যেমন দেখতে তেমনই দেহগঠন।আমারই বয়সী,ক্লাস সিক্সে পড়ত।কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা ও নিজে থেকে এসে আমার কাছে বসেছিল।বসে জিজ্ঞেস করেছিল,"তোমার নাম কী?"
    আমি প্রথমে এত অবাক এবং পরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম,যে কথাই বলতে পারিনি।তারপর একটু সামলে নিয়ে বললাম,"আমার নাম গনেশ।"(এই যা বলা হয় গেল!)
    সে একটা পাহাড়ি ঝর্ণার মতো কলকল করে বলল,"গনেশ?খুব সুন্দর নাম,আমার নাম ঈপ্সিতা।তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?আমি সিক্সে পড়ি,ফার্স্ট গার্ল।তোমার রোল কত?"
    আমি আবার নির্বাক রইলাম যথারীতি।আসলে আমি এমনিতে কম কথা বলার সুযোগ পাই,সারাদিন শুয়ে থাকি, রাত্রি বেলা মা রান্নাবান্না সেরে এসে বসলে আমাকে গল্প শোনায়,আমি দুচারটে পাল্টা প্রশ্ন করি,এভাবে ঘণ্টা দুই কাটে,আমাকে মা খাইয়ে দেয়,ঘুমিয়ে পড়ি।আর সারাদিন এদিক ওদিক দুচারটে কথা, ব্যস।এবারে এই পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর মতো এই মেয়েটির প্রশ্নের জবাব আমি দিই কী করে?একে তো অপরিচিত,তার উপর কথার ফুলঝুরি।

    তবে ও যতক্ষণ পাশে বসেছিল আমার খুব ভালো লাগছিল।মনে হচ্ছিল ও যদি আজীবন বসে থাকত,আর কথা বলে যেত,আমার খুব ভালো লাগত।এমন করে বেঁচে থাকতেও কোনো কষ্ট হতো না,আফসোস হতো না।

    মেয়েটি আমাদের বাড়িতে প্রায় আট মাস ছিল।ওর বাবা ছিল এক মাল। মানে দুনম্বরি মাল।

    খুলেই বলি।

    ওদের বাড়ি একটা মফস্বল শহরে।যেখানে আমাদের গ্রামের লোকেরা এক কাঠা জমি কেনার স্বপ্ন দেখেজসেখানে ওদের বিঘা খানেক জায়গা ছিল।শুধু ওই জায়গার দামই কয়েক কোটি টাকা।ওদের ওই জায়গা ছাড়াও এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেকগুলো দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়া ছিল।সেই দোকান থেকেই যা ভাড়া পাওয়া যেত তাতেই ওদের এলাহি জীবনযাপন চলত।কিন্তু ওর বাবার তাতে কুলাচ্ছিল না।ওদের যে পৈতৃক ভিটাটি ছিল,সেখানে একটি তিনতলা বাড়ি ছিল। বাড়িটার নিচের দুটো তলা ভাড়া দেওয়া ছিল আর উপরের পুরো একটা তলায় ওরা থাকত।সে বিরাট বড় জায়গা,খান কুড়ি কামরা,প্রতিটি কামরা বিরাট।এক কথায় যাকে বলে স্বর্গসুখ,তাই ওদের ছিল।ওদের বাড়ি ভাড়া থেকেই মাসে আয় ছিল লাখ তিরিশেক টাকা।

    কিন্তু ওই বলে না,সুখে থাকতে থাকতে ভূতে কিলোয়!ওর বাবার হয়েছিল তাই। বাপের একমাত্র ছেলে;এক বোন ছিল তার বিয়ে হয় গেছে।সুতরাং নিরঙ্কুশ ক্ষমতাধর।এদিকে কোনোদিন টাকার কথা চিন্তা করতে হয়নি,তাই অর্থ রোজগারের চিন্তাও নেই।কিন্তু মাথা তো চুপচাপ বসে থাকতে পারে না;ফলে যা হবার তাই হল।ছেলে গেল ফুটে।

    ওদের বাড়ির নিচের তলায় একটা ছোট ব্যাংক ছিল।নাম বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাংক।ছোট মানে খুবই ছোট,ইংরেজিতে যাকে বলে টাইনি বা অতিক্ষুদ্র।সেই ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে ইপ্সিতার বাবার যাওয়া আসা ছিল।ম্যানেজারের হাতে বিশেষ কাজ নেই।তাই বাড়ির মালিক যেতেন,বসে গল্প করতেন।এই করতে করতে ঘনিষ্ঠতা,তারপর বন্ধুত্ব।ওই কুজনদের যেমন বন্ধুত্ব হয় আর কি!

    ওই নিচের তলায় ছিল এক স্যাঁকরার দোকান।ওই ব্যাংকের ম্যানেজার, ঈপ্সিতার বাবা(নাম চক্রধর) আর স্যাঁকরা মিলে পরিকল্পনা করে ওরা ইমিটেশনের গয়নাকে সোনার গয়না বলে ব্যাংকে বন্ধক রাখবে,তারপর যা টাকা পাওয়া যাবে তা ওরা তিনজন ভাগ করে নেবে।

    পরিকল্পনা ভালোই ছিল;এমনিতে ছোট ব্যাংক,তার উপরে মফস্বল শহরে,কেউ অত নজর দেয় না।ফলে ওদের এই কারবার বছর তিনেক খুব চলল।কিন্তু ব্যাংকের এক কর্মচারী ব্যাপারটা জানতে পেরে ওপরতলার কর্মকর্তাদের জানায়।তদন্তে ব্যাপারটা ধরা পড়ে,ব্যাংকের ম্যানেজারকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং স্বাভাবিকভাবেই তাকে বরখাস্ত করা হয়।

    এদিকে সেই স্যাঁকরা আর চক্রধরবাবু পালিয়ে যান।তিনি এসে আমাদের বাড়িতে ওঠেন। স্যাঁকরার কোনো খবর আর পাওয়া যায়নি।কিন্তু আমার জীবনে একটা সুখস্মৃতি তৈরি হল,যার জন্য এখনও বাঁচতে ইচ্ছা করে।

    তারপর অনেকদিন কেটে গেছে।আর কেউ আসেনি ওরকম আগ্রহ নিয়ে,ভালোবাসা নিয়ে দয়া নিয়ে।আমি আশাও করিনি।আমাকে ও এমন আষ্টেপৃষ্টে মায়ায় জড়িয়েছিল,আমি কাউকে আর দেখতে চাইতাম না।ওরা চলে যাওয়ার পর আমি প্রতিদিন ভেবেছি,এই বুঝি ওরা আসবে - কিন্তু না,ওরা আর কখনোই আসেনি।

    তারপর প্রায় বছরখানেক কেটে যাওয়ার পর আমি খেয়াল করলাম,আমার সেই জানালাটা এখনো আমার দিকে উৎসুকভাবে সমান আগ্রহে তাকিয়ে আছে।প্রতিদিন সে পরিপাটি করে নতুন দৃশ্যপট সাজিয়ে বসে,আমাকে দেখাবে বলে।যদি তার মুখ থাকত আমায় বলত,"এই,একবার দেখো!"
    কিন্তু সে আমার থেকেও হতভাগা।আমি কথা তো বলতে পারি।সে তাও পারে না।
    ওর হাত থাকলে আমার মুখ ঘুরিয়ে দেখাত,সে কী অপূর্ব দৃশ্যাবলির অবতারণা করছে প্রতিদিন,প্রতিক্ষণে।কিন্তু আমি সেই দূরদেশগত উদাসীন একজনের জন্য উদগ্র আশায় বসেছিলাম,যে কখনও আসবে না।

    এরপর ওই জানালা আস্তে আস্তে আমাকে নিজের মোহজালে বন্দী করতে আরম্ভ করল।খুব ধীরে ধীরে মাকড়সা যেমন তার শিকারকে জালে বন্দী করে,কিংবা অজগর যেমন তার শিকারকে খুব ধীরে ধীরে পাকরসে জারিত করে হজম করে ঠিক সেভাবে।আবার নয়।

    কারণ ওতে শিকার যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়,আর আমি সুখের আবেশে ভাসছিলাম।কি বিশাল যে সেই মুগ্ধতা,মায়া - বোঝানোর কোনো ভাষা পৃথিবীতে আছে কিনা জানি না।

    এইসময় একটা কাঠবেড়ালি আমার খুব পরিচিত হয়ে উঠেছিল।সে প্রতিদিন সকালে উঠেই(যদিও ঘুমাত কিনা জানি না।ঘুমাত নিশ্চয়,ঘুমের তো দরকার সবারই হয়।) চারিদিকে ছোট ছোট হঠাৎ ছুট দিয়ে খাবার খুঁজে বেড়াত।তার সাধারণত বিভিন্ন ধরণের বাদাম এবং বীজ পছন্দ ছিল।আমিও জানতাম যে ওরা শকাশী।আর নির্দিষ্ট করে বললে, বীজভোজী।কিন্তু একদিন দেখলাম অবাক ব্যাপার।

    সেদিন শরতের দুপুর।এবছর একদম বৃষ্টি হয়নি।গাছপালা সেই যে গ্রীষ্মের রোদে পুড়ে ঝামা হয়ে গিয়েছিল,আর নতুন করে গজায়নি।তাই আমাদের বাড়ির চারিদিক এমনিতে যেখানে ঝোপঝাড়ে ভর্তি হয়ে যায় এমন সময়,সেও ফাঁকা পড়েছিল।

    আমি কাঠবেড়ালিটাকে বেশ মাসখানেক ধরে দেখছিলাম,প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবারের খোঁজে মরিয়া হয়ে ঘুরে বেড়ায়।কিন্তু খবর খুব একটা পায় না।বেশিরভাগ দিন কিছুই পায় না।বেচারি এমনিতে কত বীজ নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখে দেখেছি।এখন সে অনাহারে,অর্ধাহারে কাটাচ্ছে।

    আমি জানতাম ও কোথায় বীজ লুকিয়ে রাখে।কিন্তু আমার তো আর উঠে যাওয়ার সাধ্য নেই!মাকে একবার বলেছিলাম,কিন্তু মা এমন এক ধমক দিয়েছিল,আর সাহস হয়নি।তবুও আবার একবার বলতে মা বলেছিল,"তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি বলত?মানুষের কথা কে চিন্তা করে, ও কাঠবেড়ালির কথা ভাবছে।আর অমন জায়গায় যে হাত দেব,সাপ-টাপ থাকবে এখন,কামড়ে দেবে কোথায়!তোকে অত চিন্তা করতে হবে না,ওরা ঠিক দেখে নেবে নিজেদের।"

    আমি মায়ের নিষ্ঠুরতায় হতাশ হলাম।কেন এরা একটু সহানুভূতিশীল হয় না?
    কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত?

    কিছুদিন পর যা দেখলাম,তাতে খুশিও হলাম আবার একটা দুঃখ আর আতঙ্কের স্রোত আমার শরীর দিয়ে বয়ে গেল।

    দেখলাম, কাঠবেড়ালিটা একটা ইঁদুরের বাচ্চাকে টেনে বের করছে একটা গর্ত থেকে।তারপর সেটাকে ওই গর্তের মুখে বসেই ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগল।

    মা ইঁদুরটা বারবার গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে নিজের বাচ্চাটাকে বাঁচাতে চেষ্টা করল,কিন্তু কাঠবেড়ালিটা তাকে এমন তেড়ে গেল আর গর্জন করল, আমারও দেখে ভয় লাগল।আমার সেই পরিচিত পরিশ্রমী,নিরামিষাশী কাঠবেড়ালিটা শুধু খিদের জন্য এমন বর্বর,নৃশংস খুনিতে পরিণত হয় গেল?
    আমার হঠাৎ খুব কান্না পেল।আমার কি কিচ্ছু দায় নেই?আমি কি পারতাম না একটু খাবার দিতে ওকে?
    তাহলে তো ও আর এমন হতো না।

    এরপর থেকে প্রতিদিন একই দৃশ্যের অবতারণা হতে লাগল।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, আমার আর অত খারাপ লাগছিল না।বরঞ্চ আমি বেশ কৌতূহল অনুভব করছিলাম।একটা আদ্যোপান্ত নিরামিষাশী প্রাণী কী করে মাংস খায়, তা বেশ আগ্রহের সাথে দেখছিলাম আমি।আসলে সবকিছুই মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপার,আর গা সওয়া হয়ে যেতে হয়।তাহলে যে খুন প্রথমবার চোখের সামনে দেখে মানুষ শিহরিত হয়,আতঙ্কে অজ্ঞান হয়ে যায়,মাসখানেক প্রায়শই দেখলে তাও আর ততটা আতঙ্কের ব্যাপার থাকে না। তা ভাত খাওয়ার মতোই সাধারণ ব্যাপার হয়ে যায়।

    নিজের চারপাশের দেখলেই তো তার ভুরি ভুরি প্রমাণ পাওয়া যায়।

    এরপর থেকে ওই জানালা দিয়ে অদ্ভুত সব দৃশ্য প্রতিদিন দেখতে লাগলাম।আমি রাতটুকু কোনোরকমে কাটাতাম,দিনের আলো ফোটামাত্র জেগে উঠতাম,আজকে কী হবে তা জানার জন্য।

    ওখানে দেখলাম একদিন একটা লোক নিজের  তিনবছরের বাচ্চা মেয়েকে কেটে নিজেও আত্মহত্যা করল।আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমি দুঃস্বপ্ন দেখছি।কিন্তু দুঃস্বপ্নও এত ভয়ানক হয় না।সেই যুক্তিতে নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম,এটা জ্বলজ্যান্ত বাস্তব।

    প্রকৃতি বড় নির্বিকার।সে গণহত্যাতে হিহি করে হাসতে পারে,চরম সুখের মুহূর্তে নির্ঝর কাঁদতে পারে।

    সেদিন সকাল থেকেই আকাশ একেবারে মেঘমুক্ত,রোদ ঝলমলে।হেমন্তের সকাল,তাই রোদের সেই তাপ নেই,কিন্তু একটা হালকা ঝিরঝিরে উত্তুরে বাতাসের দৌলতে চারিদিকে শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছিল।এত সুন্দর ছিল সেই দিনটা,আমি ঈশ্বর হলে সেদিন সব হিংসা পাপ বলে ঘোষণা করতাম,এমনকি আমাকে খুশি করতেও না।

    তো সেদিন দেখলাম একজন লোক চুপিচুপি এসে জানালাটার একদম নিচে দাঁড়াল।আমি যেন তার মনের কথা শুনতে পেলাম।মনে হল আমি যেন কোনো বিশেষ ক্ষমতা পেয়েছি,সে যখনই আমার কার্যকর ব্যাসার্ধের মধ্যে আসে,আমি তার মনের কথা শুনতে পাই,আবার দূরে গেলে আমিও বধির হয়ে যাই।ইচ্ছে হয়,যদি হাঁটতে পারতাম,তাহলে নিশ্চয় ওর সব গোপন কথা, গূঢ় রহস্য আমি জেনে নিতাম।

    লোকটা একদম ছাপোষা একজন।ওর বাড়িতে নিত্য অশান্তি,রোজগার নেই,স্ত্রী ভালো ছিল,কিন্তু ও নিজেই তাকে বেশ্যাবৃত্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে, যাতে সংসারটা অন্তত চলে,না খেয়ে মরতে যেন না হয়।কিন্তু এখন খুব খারাপ লাগে,গ্লানিতে ভোগে।

    বউকে মানা করেছে কয়েকবার।কিন্তু ও শোনে না।বলে,"না করলে খাবে কী?নিজের মুরোদ আছে দুপয়সা রোজগার করার?"
    ও আর কিছু বলতে পারে না।তারপরেও কয়েকবার বলেছিল,কিন্তু এবারে বউ আর ওরকম ভালোভাবে বলেনি।রীতিমতো মেজাজ দেখিয়ে,ধমক দিয়ে বলেছিল,"অপদার্থ,কাপুরুষ একটা মানুষ।দুপয়সা আয় করার মুরোদ নেই,বউকে লোকের কাছে পাঠিয়েছিল সাজিয়ে,এখন খুব খারাপ লাগে,না?"
    ও মিনমিন করে বলতে চেয়েছিল,"কিন্তু এখন তো আর অত অভাব নেই,ভালোই তো চলছে!"
    কিন্তু তাতে ওর বউ বলেছিল,"না চলছে না।আমার চলছে না।আমার তোমার কাছে শুতে ঘেন্না করে।তুমি পারবে প্রতিবারে আমার সাথে শুয়ে সোনার হার দিয়ে,হিরের গয়না দিতে?পারবে তুমি?একজন আমাকে বলেছে পরের মাসে বাজার একটা এক কাঠা জায়গা আমার নামে লিখে দেবে,সেটা ছেড়ে দেব?তুমি আর এ বিষয়ে একটা কথাও বলবে না।তোমাকে লোকের সামনে স্বামী বলে যে পরিচয় দিই,সেটাকে নিজের সৌভাগ্য বলে মনে করবে।"
    ও ভেবেছিল,' আর কিচ্ছু বলব না,আত্মহত্যা করব।'
    কিন্তু শেষ চেষ্টা করতে বলেছিল,"প্রিয়া,একবার ভেবে......"
    কথাটা শেষ করার আগেই দরজায় ঘণ্টা বেজেছিল,প্রিয়ার খদ্দের। প্রিয়া যেভাবে খুশি হয়ে ছুটে গিয়েছিল,ওর আর একটা কথাও মুখে সরেনি।

    ও বেরিয়ে এসেছিল।ভেবেছিল আর নয়,একটা কিছু হেস্তনেস্ত করবেই।

    ও গিয়ে দাঁড়িয়েছিল রেললাইনের পাশে,ট্রেন আসতে এখনো আধঘন্টা বাকি।ও নিজের কথা,নিজের জীবনের কথা,অক্ষমতার কথা ভাবছিল।মেয়ের মুখটা মনে পড়ল।কতই আর বয়স,সামনের মাঘে তিন পড়বে।কি সুন্দর,ঠিক যেন মোমের পুতুলটা!ও নিশ্চিত জানে ওটা ওর মেয়ে।কারণ তখন প্রিয়া একগামী ছিল।ওর জন্মের বছরখানেক পরে যখন ও খরচ সামলাতে পারছিল না,তখনই প্রিয়াকে প্রস্তাবটা দেয়। প্রিয়া প্রথমে ওর মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েছিল।ভেবেছিল ও বুঝি ইয়ার্কি করছে,কিন্তু ওর মুখে অসহায়তা আর মরিয়া ভাব দেখে প্রিয়ার আর বুঝতে বাকি ছিল না,যে ও(রহিম) ইয়ার্কি করছে না। প্রিয়া উঠে চলে গিয়েছিল।

    এর মাঝে মাসখানেক ওদের মধ্যে কোনো কথা ছিল না।এক মাসের মাথায়,একদিন এসে প্রিয়া বলল,"আমি রাজি।"
    রহিম ভুলেই গিয়েছিল ব্যাপারটা।আনমনে রুটিটা ঝোলে ডুবিয়ে মুখে তুলতে তুলতে বলেছিল,"কী রাজি?"
    প্রিয়া নিঃসংকোচে বলেছিল,"শুতে।"
    রহিমের হাঁ করা মুখের থেকে রুটিটা পড়ে গিয়েছিল, থালার কিনারায় লেগে ছড়িয়ে গিয়েছিল চারিদিকে।সে একটু ধাতস্থ হতে জল খেয়েছিল গ্লাস থেকে।তারপর ঢোঁক গিয়ে বলেছিল,"আচ্ছা।"
    আর কোনো কথা মুখ দিয়ে বেরোয়নি।

    তার দুদিন পর থেকে যা শুরু হল,ওর ঘরে থাকা দুর্দায় হয়ে গেল।প্রথম প্রথম প্রিয়া লজ্জা পেত,নিজেকে গুটিয়ে রাখত।কিন্তু যত দিন যেতে লাগল প্রিয়া আরো খোলামেলা আরও নির্লজ্জ হয়ে উঠল।ওর রহিমের উপর যে রাগ ছিল,প্রতিহিংসা সাধনের জন্য ও জোরে জোরে শিৎকার দিত।রহিম প্রথমে কান চেপে থাকত।কিন্তু যখন থেকে প্রিয়া খালি গায়ে কামরা থেকে বেরিয়ে রহিমের সামনে দিয়ে চলাফেরা করতে আরম্ভ করল,রহিমের আর বসে থাকার উপায় রইল না।ও দেখতে পেতো,প্রিয়ার বুকে, পেটে,পিঠে, হাতে,উরুতে নখের দাগ,কামড়ের চিহ্ন।প্রিয়া ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে বেড়াত।প্রথমবারে হয়তো সত্যিই দরকারে এসেছিল,কিন্তু তারপর শুধু দেখানোর জন্য।রাত্রে ওকে ছুঁতে দিত না,প্রতিদিনের কামকাজের গল্প রসিয়ে রসিয়ে শোনাতো দীর্ঘ করে।

    ওর বাড়ি পাকার হচ্ছিল,জৌলুস বাড়ছিল,সম্পত্তিও বাড়ছিল হুহু।কিন্তু ওই বাড়িতে আর একটা দম্পতি,একটা পরিবার বাস করছিল না।বরং সম্পর্কের একটা ভূত অহরহ ওর গলা টিপে ধরছিল।

    ও তবুও বাঁচতে চাইছিল।ও ভেবেছিল,এভাবেই হোক,কিন্তু মেয়েটাকে তো মানুষ করতে পারবে!ওর আর কিছু সাধ নেই।ও যে পাপ করেছে,তার কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই।এর শুধু ভোগান্তি আছে।তাই ভুগছে।

    কিন্তু প্রিয়া ওর এই দুর্বলতা যেদিন টের পেল,তারপর থেকে সে ওই জায়গাতেও কোপ মারতে লাগল।প্রথমদিনের কোপে ঘা হল,এরপর সেই কাঁচা ঘায়ে প্রতিদিন একবার করে কোপ দিত প্রিয়া।শেষে একদিন বলল,"তোমার মেয়েকেও বেশ্যা বানাবো আমি;দেখো।"
    সেদিন ও আর থাকতে পারেনি।দাঁড়িয়ে উঠে সোজা প্রিয়ার গালে এক চড় মেরেছিল।মেরেই বেরিয়ে চলে এসেছিল বাড়ি থেকে।ও শুনতে পাচ্ছিল,প্রিয়া সমানে ওর বাপ-বাপান্ত করে চলেছে।

    তারপর সপ্তাহখানেক কেটে গিয়েছে।ও অনেক ভেবেছে এই কদিন।একবার ভেবেছে অনিন্দ্যাকে নিয়ে কোথাও চলে যাবে,কিন্তু প্রিয়ার অনেক চেনাজানা।ও দেখতে রূপসী,কিন্তু তার থেকেও বড় কথা ও পরীদের বংশজাত।তাই ওর যৌন আবেদন উপেক্ষা করতে পারে এমন মানুষের বাচ্চা এখনও জন্মায়নি।ও চাইলে মরা মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে।তাই পালিয়েও বাঁচা যাবে না।

    ওর প্রথমে খুব খারাপ লাগছিল,এইটুকু বাচ্চা,তাও নিজের।কিন্তু আর কোনো উপায় ওর নেই।

    আমি হরিদাস পাল।আমার জীবনে আমার কিছু নেই,কিচ্ছু নেই।আমি একটি পরজীবী,লোকের অনুভূতি ধার করে বাঁচি।সেদিন রহিমের জন্য খুব খারাপ লেগেছিল,ওর দুঃখ আমার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল।

    তবে একথা সত্যি মানুষের মৃত্যু কম উত্তেজক,আনন্দদায়ক বিনোদন নয়। তা নাহলে রোমানরা এত বড়ো বড়ো অ্যামফিথিয়েটার বানিয়েছিল কিসের জন্য!এই যে মানুষেরা বীভৎস মৃত্যু দেখতে হন্যে হয়ে ছুটে যায়,হুমড়ি খেয়ে পড়ে, ক্যামেরাবন্দী করে - এগুলো কি দুঃখ বা সহানুভূতি প্রকাশের জন্য?শুধুই স্মৃতির উদ্দেশ্যে?

    আমরা রাখঢাক করে বলি,প্রকৃত সত্যটা এত বেশী পীড়াদায়ক আমরা আড়চোখে দেখি তাকে,পারতপক্ষে সামনে আনি না।কিন্তু তাতে কি সত্যটা পাল্টে যায়?

    সেদিন যখন রহিম অনিন্দ্যাকে খুন করছিল,অঝোর ধারায় কাঁদছিল।মেয়েটা রহিমের গলা জড়িয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছিল,"কেন কাঁদছ বাবা?কেঁদো না,আমি আছি তো?"
    আমি রহিমের অনুভূতি আর মনের কথা দুটোই বুঝতে পারলাম।ওর খুব ইচ্ছে করছিল ও বাড়িতে ফিরে যাবে, আনিন্দ্যাকে ও মারতে পারবে না।কিন্তু তাতে অনিন্দ্যার যা হবে, তা মৃত্যুর থেকেও ভয়ানক।ও বাবা হয়ে যদি সেটাকে না আটকাতে পারে, ও মরেও শান্তি পাবে না।

    প্রথমে ও গলা টিপে মারতে চেষ্টা করল।কিন্তু পারল না। অনিন্দ্যা যখন ছটফট করতে লাগল, ও আর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারল না।ভেঙে পড়ল।ততক্ষণে আনিন্দ্যা অচেতন হয়ে গেছে।ও কান্নায় ভেঙে পড়ল মেয়ের অচেতন,নিস্তেজ শরীরটার উপর।

    একটু পরে নিজেকে সামলে ও উঠে গেল।ফিরে এল একটা ছুরি নিয়ে।আগের জায়গায় পৌঁছে সেটি ট্যাঁক থেকে বের করল।কিন্তু আনিন্দ্যাকে কোথাও দেখতে পেল না।আমি জানি আনিন্দ্যা কোথায়।আমি ডেকে উঠলাম,"এই যে!"
    রহিম চমকে উঠে জানালার দিকে তাকাল।আমি তার ভেতরের ভয়টা অনুভব করলাম।বুঝতে পারলাম সে ছুটে পালাবার কথা ভাবছে।আমি তাড়াতাড়ি বললাম,"আনিন্দ্যা ওই ঝোপের দিকে ছুটে গিয়েছে।বেশিদূর যেতে পারেনি বোধহয়।তবে ওদিকটায় কাঁটা আছে তো!"
    এবার রহিমের মনে ভয় থাকলেও সে ঝোপটার দিকে গেল।
    আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

    আধঘন্টা পরে রহিম ফিরে এল।তার হাত ধরে আনিন্দ্যা।তার মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।রহিম তাকে ঠিক আমার জানালার সামনেটাই নিয়ে এসে দাঁড় করলো।তারপর ওর গলায় ছুরির ফলাটা ঠেকিয়ে নিজের মুখটা অন্যদিকে ঘোরাল।এবার ছুরিটা সজোরে একদিক থেকে অন্যদিকে টানল।আমি দেখলাম সুন্দর,ফর্সা,মসৃণ,ছোট্ট গলাটা মাঝখান থেকে ফাঁক হয়ে গেল।সেই ফাঁক থেকে ফিনকি দিয়ে বেরোলো গাঢ় লাল রক্তের ধারা।মাঝখান থেকে শ্বাসনালীর তরুণাস্থির অর্ধবলয়গুলোর সাদা সাদা উপস্থিতি দেখলাম।শরীরটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করতে লাগল।

    রহিম কিন্তু থেমে থাকল না।সে এবার ছুরিটা নিজের গলায় ধরল।তারপর একইভাবে গলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে টেনে দিল।তারপর ছুরিটা ফেলে দিয়ে গলা ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।তারপর মাটিতে পড়ে মেয়ের পাশে ছটফট করতে লাগল।ততক্ষণে আনিন্দ্যার শরীরটা স্থির হয়ে গেছে প্রায়।

    রহিমের রক্তের রং একটু বেশি গাঢ়।

    আমার যে সে কি অদ্ভুত অনুভুতির ককটেল অনুভূত হল,বোঝানো যাবে না।দুঃখ,হতাশা,গ্লানি,আনন্দ,স্নেহ,রাগ,ঘৃণা, গর্ব আরও কয়েকটা মৌলিক ও যৌগিক অনুভূতি আমার সারা শরীরে নেচে বেড়াতে লাগল।আমি ভাবলাম আমার নিজেকে পর্যালোচনা করা দরকার।

    ওই দুটো নিথর শরীর আমাকে নেশার ছোট্ট একটা শট দিচ্ছিল,যতবার আমি ওদের দিকে তাকাচ্ছিলাম।একবার তাকিয়ে বিভোর হয়ে থাকছিলাম কিছুক্ষণ,আবার খানিক পরে ঘোর কাটলে ওদিকে তাকাচ্ছিলাম,আবার কিছুক্ষণ ঘোরে থাকছিলাম।যদি ওরা পচনশীল না হতো,আমি ওদের সারাজীবন আমার জানালার সামনে রেখে দিতাম,নেশা করতাম।কিন্তু বলতেই হল,বলতেই হল ওদের দুঃখজনক পরিণতির কথা।

    আর আমি?
    ওই বললাম না একটু আগে!আমি পরজীবী।

    আমি একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম।ওই ঘটনার পর আমি খেয়াল করলাম,আমি যেন খুব বেশি সংবেদনশীল হয়ে গেছি।স্বাভাবিক পাখির আওয়াজ যেন আমার কাছে মহানিনাদ মনে হয়।ঘুমের ঘোরে মাথার কাছে হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনে চমকে জেগে উঠে দেখি মশা ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার মাথার চারপাশে।এবং এই সংবেদনশীলতা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল।আমি এবার দেওয়ালে টিকটিকির চলার আওয়াজ,মাকড়সার জালের উপর দিয়ে চলার শব্দ,ঘরের মধ্য দিয়ে বাতাসের বিয়ে যাওয়ার শব্দ সব শতগুণ হয়ে আমার কানে বাজতে লাগল।

    আমার চোখ কম আলোয় মারাত্মক শক্তিশালী হয়ে উঠল।দিনের আলোয় আমার চোখ ধাঁধিয়ে যায়।উপায় নেই তাই প্রথমদিন চোখ বুজে ছিলাম।তারপর মা জিজ্ঞেস করল,"হ্যাঁ রে,চোখ বুজে আছিস কেন? কী হয়েছে?"
    আমি বলতে মা একটা আই মাস্ক এনে দিল।তাতে একটু সুবিধা হয়েছে বটে,কিন্তু ওটা খুলে ফেললে?

    আমি আমার চামড়ায় বাতাসের কম্পন,এমনকি লোকের ফিসফিসানির ঢেউ অনুভব করতে লাগলাম।আমার মস্তিষ্কে এত বেশি সংকেত যেতে লাগল,আমার মনে হল আমার মাথা ফেটে যাবে।তাই আমি ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।সে যে কি দুর্বিষহ যন্ত্রণা!

    আমার কার্যক্ষমতার ব্যাসার্ধ আরও বিস্তৃত হয়েছে।আমি এখন প্রিয়াকেও দেখতে পাই।আমি ভেবেছিলাম রহিমের মৃত্যুতে না হোক, আনিন্দ্যার মৃত্যুতে অন্তত সে কাতর হবে।সে কাতর হয়েছিল,আনিন্দ্যার মৃত্যুর জন্যই হয়েছিল।কিন্তু তা ঠিক হারানোর দুঃখ নয়,বরং নিষ্ফল প্রতিশোধস্পৃহা তার অন্তরকে দাবানলের মতো দহন করছিল।সেই তীব্র শোক কিছুদিনে প্রশমিত হয়ে গেল।কিছুদিন পর সে আবার তার আনন্দের সাগরে ডুবে গেল।আগে তার তবুও বাধা ছিল,সংকোচ ছিল,কিন্তু এখন কেউ নেই,কিচ্ছু নেই।

    সে কি আদৌ দোষী,অন্যায়কারিণী?
    আমি জানি না।উত্তরের আশাও করি না।

    আমি ওর অসহায়তা,ওর ভয় অনুভব করতে পারি। ও যে এই নিষ্ঠুর সমাজে একটি সুস্বাদু যৌনাঙ্গবিশিষ্ট মাংসপিন্ড বই আর কিছু না,সে তো ও জানে!
    ও যদি এই কাজ না চালিয়ে যায়,ওর অবস্থা যে ওই রাস্তার ঘেয়ো কুকুরটার থেকেও খারাপ হবে সেটা ও মনশ্চক্ষে স্পষ্ট দেখতে পায়।প্রায়দিনই ঘুম ভেঙে যায় দুঃস্বপ্ন দেখে। ও রহিমের উপর অনেক অত্যাচার করেছে,প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে।কিন্তু রহিম মরে গিয়ে ওর ওপর চরম প্রতিশোধ নিয়ে গেছে।

    আমি কী করে ওকে দোষ দিই?

    পরবর্তী আরও কয়েকটা বছর,আমার মরার আগপর্যন্ত ওই জানালা আমার কাছে পৃথিবীর বহিরঙ্গের সচল চিত্রমালা নিয়ে হাজির হযল।

    কিছুদিন পরে আমি এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হলাম, তা শুধু আমি খবরের কাগজে,লোকমুখে শুনে এসেছিলাম।চাক্ষুষ কখনো দেখিনি।আর দশটা লোকের মতো আমারও ইচ্ছা ছিল,একদিন দেখব।ওই যে,আমরা সবাই ধর্ষকামী,শুধু আমাদের লেভেলটা আলাদা।

    তো যাই হোক,ঘটনাটা বলি।

    একদিন আমি আমার জানালার পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সেটার দিকে তাকিয়ে শুয়েছিলাম। মানে যেমন থাকি আর কি!

    একটা মেয়েকে দেখলাম ছুটে পালাচ্ছে।আমার ক্ষমতার ব্যাসার্ধের মধ্যে চলে আসার জন্য আমি তার মনের ভাব বুঝতে পারলাম।কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য।তার পেছনে দুজন পুরুষ অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে করতে দৌড়ে গেল একটু পরেই।আমি ভেবেছিলাম ওরা বুঝি ওর পাড়ার কেউ লোক বা শত্রু।কিন্তু ওরা আমার ব্যাসার্ধের মধ্যে আসতেই বুঝতে পারলাম,ওরা মেয়েটার বাবা আর দাদা।কিন্তু এত রাগের কারণ কী, তা বোঝার আগেই ওরা আমার আওতার বাইরে চলে গেল।

    আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে রইলাম ওরা আসবে বলে,কিন্তু ওরা আর এল না।সেদিন দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর আমি জেগে রইলাম,এই বুঝি এল,এই বুঝি এল এই ভেবে।কিন্তু ওরা এল না।আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

    অন্যদিন আমার ঘুম বিকেল চারটা বাজতে না বাজতেই ভেঙে যায়।সেক্ষেত্রে আমি ঘড়ির থেকেও নিখুঁত,ঘড়ির কাঁটা আমায় দেখে নিশ্চিত হয়।কিন্তু সেদিন আমি একটু দেরি করে ঘুমানোর কারণে,যখন উঠলাম,তখন বোধহয় সাড়ে ছটা বেজে গেছে।বোধহয় বলছি,কারণ সেদিন ঘুমটা নিজে নিজে ভাঙেনি,আর যখন ভাঙল,তখন ঘড়ি দেখার মতো পরিস্থিতিও ছিল না।

    আমার ঘুম একজনের ফিসফিস আওয়াজে ভাঙল।একটা নারীকণ্ঠ,আমি প্রথমে ভাবলাম বুঝি স্বপ্ন দেখছি।ঈপ্সিতার মুখটা আমার কানের কাছে,বারবার ডাকছে,"এই,এই,ওঠো।কই ওঠো?"
    কিন্তু কণ্ঠস্বরের মরিয়াভাব আর দ্রুততায় আমার তথাকথিত চেনা ঈপ্সিতার ছবি বারবার ভেঙে যাচ্ছিল।শেষে আমার মুখে একটা আঘাত পেয়ে আমি চোখ মেললাম।একটা ঢিল।

    আমাকে চোখ খুলতে দেখে সে একটু স্বস্তি পেল।বলল,"মাফ করবেন।কিছু মনে করবেন না প্লিজ।আমাকে একটু লুকানোর জায়গা দিতে পারবেন?"
    কথাগুলো সে এক নিঃশ্বাসে বলে গেল।আমি তখন অবাক হয়ে দেখছি, এ তো সেই সকালের মেয়েটা।আমার চেতনা আবার সজাগ হয়ে উঠল।

    মেয়েটার নাম পরী।যদিও সে মানুষ,কিন্তু আশ্চর্য সুন্দর মেয়েটি।পরী নামটা সার্থক হয়েছে।আমাকে কোনো মেয়ে নিজে থেকে ডেকে কথা বলছে,এটা আমার কাছে পশ্চিমদিকে সূর্য ওঠার থেকেও বিরল।আমি তখন কত কথা ভেবে চলেছি মনে।কিন্তু ওর মনের ভেতরের কথাগুলো এত চঞ্চল আর ভীত ছিল,যে তারা বারবার আমার ভাবনার জালগুলোর মধ্য দিয়ে গিয়ে জালের দড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলছিল।ক্রমে জালবোনা থামাতে হল।

    মেয়েটির বয়স ওই পঁচিশ হবে মনে হয়।তার মনে ভয়ের যে জাল ঘন হয়ে উঠেছে তা একপুরু হয়ে জমে গেছে ইতিমধ্যে।তার মধ্য দিয়ে ঢুকে অপরপ্রান্তে বেরোনোর অনেক চেষ্টা করলাম।চেষ্টা করলাম যদি তার মনের কথা জানতে পারি;কিন্তু না!
    যত সময় যেতে লাগল প্রতি ক্ষণে, অণুক্ষণে সেই ভয় তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল।আমি প্রচন্ড রেগে তাকে ধমক দিলাম," আরে থামুন না!"
    তাতে তার ভয় তো কমল না,বরং বেড়ে তা আমার দৃষ্টিকেও অস্বচ্ছ করে দিল।আমি তাকে ভেতরে ঢুকতে বললাম।সে জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে আমার বিছানার নিচে ঢুকতে চেষ্টা করল।আমি তাকে মানা করলাম,"এখানে নয়,ওই যে আলমারিটা আছে,ওর ভেতরে ঢুকো।"কিন্তু তাতেও তার ভয় গেল না।আমি তাকে একটু ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।তাতেও সে শান্ত হল না।একটু পরে রাতের দিকে আমি খেয়েদেয়ে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মন পড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলাম,মেয়েটা ঘুমোচ্ছে।আমি দেখলাম,তার মনে ভয়ের পরত অনেকটাই কমে এসেছে।আমি তার মনের গলিতে টহল দিতে লাগলাম।

    ও এখন এমএ লাস্ট ইয়ারে পড়ে।ও যখন কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ত,ওর এক বান্ধবীর দাদা ওকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।ওরও তার প্রতি একটা দুর্বলতা ছিল,তাই ও দেরি করেনি।তবে ও সাবধানী মেয়ে,কদিন সময় চেয়ে নিয়েছিল।অনেক ভেবে দেখছিল, কী কী খারাপ গুণ বা রেড ফ্ল্যাগ আছে ছেলেটার মধ্যে?তেমন কিছু পায়নি।

    ছেলে লম্বা,সুপুরুষ,দেখতে হ্যান্ডসাম।নিজের ব্যবসা আছে।তবে অন্য ধর্মের,এটাই যা সমস্যা।নাহলে ব্যবহার ভালো,চরিত্রে মেয়েঘটিত কোনো দোষ নেই,নেশা করে না,স্বাস্থ্যসচেতন-- সবই আছে।কয়েকজন কাছের বন্ধুকেও জিজ্ঞেস করেছিল,কিন্তু তারাও ওই একটিমাত্র সমস্যা ছাড়া আর কিছু বলতে পারেনি। ও আর ভাবেনি,ওই ধর্ম কিছু না।বাবা একটু প্রাচীনপন্থী রক্ষনশীল বটে,কিন্তু ওকে খুব ভালোবাসেন।ওর খুশির জন্য নিশ্চই মেনে নেবেন।আর তাছাড়া ও নিজের পায়ে দাঁড়ালে বাবা আর মানা করতে পারবেন না।মানা করলেও ও যদি বাড়ি থেকে বেরিয়েও আসে,নিজের খরচ চালিয়ে নেবে।যদি আয়ান না থাকে, তবুও।

    তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে।বেশ সুখেই ছিল ওরা।ওর কলেজ শেষ হল।মাঝে একবছর ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল,তাই ফাঁক গেল,কিন্তু তার পরের বছর ও এমএতে ভর্তি হল।ওই সময়টায় আয়ান ওর মনোবল বাড়িয়ে গেছে।পাশে থেকেছে।প্রায়ই দেখা করতে যেত,অবশ্যই ওই বান্ধবীর সাথে,ওকে(বান্ধবী) ছাড়ার ছুতোয়।বাবা যে সন্দেহ করেছেন, তা ও জানত না।বাবা ঐ বিষয়ে একটা কথাও কোনোদিন উচ্চারণ করেনি।

    ওরা রাতের খাবার খাচ্ছিল সেদিন।দাদা কোথা থেকে জানতে পেরে কথায় কথায় ব্যাপারটা তোলে।উল্টোপাল্টা বলতে আরম্ভ করে আয়ানের নামে।ও প্রথমে চুপ ছিল,ভেবেছিল কিছু বলবে না।কিন্তু দাদা এমন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে গেল ব্যাপারটা,যে ও আর চুপ থাকতে পারেনি।
    -"বেশ করেছি।তোর কী করার আছে কর।"
    ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই গালে একটা তীব্র জ্বালা অনুভব করেছিল।আর মাথাটা টেবিলে ঠুঁকে গিয়েছিল সজোরে।মাথার একটা পাশ কেটে গিয়েছিল।চোখদুটো অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল।যখন স্বাভাবিক হল,দেখল বাবার চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।প্রচণ্ড রাগে ফুঁসছেন,কাঁপছেন। ও কিছু না বলে টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়ে নিজের ঘরে দরজা দিয়ে শুয়ে পড়েছিল বিছানায়।

    বাবা,ওর বাবা!কোনোদিন গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা,একটা বকুনি পর্যন্ত দেয়নি কোনোদিন। 'মা ' ছাড়া কথা বলতেন না।সে আজকে ওর গায়ে হাত তুলল! তাও বিনা দোষে! ও এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না।ভাবছে এটা একটা দুঃস্বপ্ন,জেগে উঠলেই দেখবে সব মিথ্যা।হাসি পেল আমার(হরিদাস পাল)।মানুষ কত মিথ্যা আশা করে!

    তারপর এরকম ঘটনা দৈনন্দিন হয়ে গেল।ওর জেদ আরো তীব্র,তীব্রতর হয় উঠল।বাবা একদিন ওকে ছুরি নিয়ে মারতে ছুটেছিলেন।ভাগ্যিস সেদিন মা ছিল,নইলে সেদিনই ওর গল্প শেষ হয়ে যেত।এদিকে আয়ান ওকে বারবার বলতে লাগল,"তুমি চলে এস,আমরা বিয়ে করে নিই।তোমার তো আঠারো হয়ে গেছে,কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।"
    কিন্তু পরীর জেদ, ও এমন করে বিয়ে কিছুতেই করবে না।

    ওদের বাড়ি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হল।

    আয়ান বারবার ওকে চাপ দিতে থাকায়,ও তাকে বলে দেয়, ও যেন আর ফোন না করে।আয়ান অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয়।এদিকে পরী বাড়ির চাপ সহ্য করতে পারে না।সে ভাবে আত্মহত্যা করবে,কিন্তু আয়ানের কথা ভেবে করতে পারে না।ওর বাবা আর দাদা যে একটা খুব খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছে ও বুঝতে পারে।কিন্তু তা যে কী,সেটা ও বুঝতে পারে না।

    ভাবে কী আর করবে?
    ঘরে বন্ধ করে রাখবে?
    খেতে দেবে না?
    সম্বন্ধ করে করো সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে?
    মেরে তো ফেলবে না!

    কিন্তু গত তরশু সকালে যা হল,তার থেকে মেরে ফেলাও বোধহয় ভালো ছিল।ওর বাবা আর দাদা মিলে ওকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল!
    নিজের বাবা আর দাদা!

    সেদিন সকালে ও উঠে ব্রাশ করে যথারীতি খাবার টেবিলে বসল।মাকে বলল,"মা খাবার দাও।"
    এই বাড়িতে এখন শুধু মায়ের সাথেই ওর সম্বন্ধ একটু স্বাভাবিক।বাকি বাবা আর দাদা ওকে ' খানকি মাগী' ছাড়া কথা বলে না।কিন্তু তাও ও কিছু বলেনি।শুধু যখনই ওরা আয়ানকে ছাড়ার কথা বলেছে,শান্ত,ধীর,ঠান্ডা গলায় বলেছে,"না।" 
    ওরা গালাগালি করেছে,কিন্তু জোর করার সাহস করেনি।

    এই ঘটনার জন্য ওরা নিশ্চয় বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিল।কারণ, আজকে ও যখন মাকে খাবার দেওয়ার কথা বলল,বাবা টেবিলে বসে খবর খেতে খেতে খবর শুনছিলেন মোবাইলে,দাদা খাচ্ছিল আর ওর গতিবিধির দিকে নজর রাখছিল রাগ রাগ চোখে।ও সেটা লক্ষ্য করেছিল।
    হঠাৎ বাবা বললেন,"তা খানকি মাগী, খাবার তো আমার গিলছ,আর চোদাবে ওই হারামজাদাটাকে দিয়ে?"
    ও আর সহ্য করতে পারেনি,বাবাকে বলেছিল,"আমি তোমার মেয়ে ভাবতে আমার ঘেন্না করে।তোমরা থাকো,আমি চললাম।"
    বলেই উঠে চলে আসতে গিয়েছিল।

    দাদা খাবার ফেলে এসে ওর হাতদুটো ধরেছিল এঁটো হাতেই।বাবা রাগে লাল চোখ নিয়ে উঠে এসে ওর গালে এক চড় মেরেছিল ঠাস করে।ওর মাথা ঘুরে গিয়েছিল।তারপর গালটা একহাতে ধরে মুখটা মুখের ঠিক সামনে নিয়ে এসে বলেছিলেন,"কোথায় যাবে? বাইটা আমরাই মিটিয়ে দেব।"
    বলে ওর বুকের উপর থেকে ওড়নাটা সরিয়ে দিতে দিতে বলেছিল,"হারামজাদী,খানকি মাগী,তোর খুব বাড় বেড়েছে,শাস্তি দরকার তোর। আয় তুই আজকে।"
    বলে হিড়হিড় করে টানতে আরম্ভ করেছিল।এমন সময় ওর দাদা ওর হাতদুটো একহাতে ধরে, অন্য হাত দিয়ে ঘাড়টা ধরতে গিয়েছিল ধরার সুবিধের জন্য।ও এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে বাবার যে হাতটায় ওর গলাটা ধরা ছিল সেটাতে প্রাণপণ কামড় দেয়,ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামে।তারপর সেই থেকে ছুটে বেড়াচ্ছে।এখন আমার(হরিদাস পাল) বাড়িতে।

    আমি পঙ্গু মানুষ।আমি কী করতে পারি মেয়েটাকে বাঁচাতে?আমি ভাবলাম মাকে বলি,কিন্তু মা অন্যকিছু ভাবতে পারে,আমাকেই দোষী বলবে এখন,আমাকেই অপরাধী বানিয়ে দেবে কোনো প্রকারে।বাবাকে বলার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি ভাবলাম,যা হোক দেখা যাবে।আজকে ঘুমাই,কাল সকালে উঠে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।মেয়েটাকে কিছু খাওয়াতে পারলে ভালো হতো,কিন্তু রাতের খাওয়া হয়ে গেছে ওর, মায়েরাও নিশ্চই খেয়ে নিয়েছে এতক্ষণে,বাড়তি খাবার কুকুরকে আর বাকিটা কাল গরুকে দেবে বলে জাবের হাঁড়িতে দিয়ে দিয়েছে।যাক কাল সকালে কিছু একটা ব্যবস্থা হবেখন।

    পরদিন ঘুম ভাঙ্গল আবার একটা ফিসফিস আওয়াজে।
    -"এই যে উঠুন, আরে উঠুন না।"
    আমি ঘুম ভেঙে দেখলাম, মেয়েটা।ঘড়ির দিকে তাকালাম,সাড়ে চারটা বাজে।আমি এমন সময় ঘুম থেকে উঠি না।আমার উঠতে উঠতে আটটা বাজে।একটু বিরক্ত হলাম।জিজ্ঞেস করলাম," কী?"
    ও খুব করুন মুখ করে বলল," একটু খাবার দিতে পারেন?খুব খিদে পেয়েছে।আজ তিনদিন কিচ্ছু খাইনি।সারাদিন লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছি।"
    বলতে বলতে মেয়েটির চোখ জলে ঝাপসা হয়ে এল।বুঝতে পারলাম অনেক কষ্টে সাহস সঞ্চয় করে,লজ্জা কাটিয়ে ও কথাটা বলছে আমাকে।কিন্তু এমন সময় খাবার কোথায় পাব?আমার কামরাতে কোনো খাবার নেই।
    আমি বললাম,"খুব খিদে পাচ্ছে কী?এখন তো কিছু পাব না,সকাল হোক,মাকে বলব খাবার দিয়ে যেতে।"
    মেয়েটার মুখ দেখে বুঝলাম,এখন হলেই ভালো হয়,কিন্তু সে একটু মিইয়ে গেল,বলল,"ঠিক আছে।"
    বলে আবার আলমারিতে গিয়ে ঢুকল।আমি বলতে গেলাম,আপনি বাইরেই শুতে পারেন,কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু ও যা ভয় পেয়ে আছে,ওখানে থাকলেই নিজেকে বেশি সুরক্ষিত মনে করবে ভেবে আর কিছু বললাম না।কিছুদিন যাক।

    আমি মাকে বলেছি।

    মা - বাবা দুজনেই ওকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছেন।ইতিমধ্যে ওর বাবা আর দাদা কয়েকবার খোঁজ নিতে এসেছেন,কিন্তু বাবা "আসেনি," বলে বিদেয় করেছে।আমি জানি ওরা সন্দেহ করেছে,কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

    এর পরের দিন আমার জানালায় একটা পুরুষের মুখ দেখা গেল। চারকোণা মুখ,পরীর মুখে সাথে আশ্চর্য মিল।বয়স আন্দাজ সাতাশ -আঠাশ হবে,জানালায় বুক ঠেকিয়ে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসছিল।আমার বুকে ভেতর শুকিয়ে গেল ভয়ে,শিরদাঁড়া জমে গেল, সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল।এমন হাসি যে হাসতে পারে,সে নির্দ্বিধায় মানুষ খুন করতে পারে।

    হলও তাই।তারও দুদিন পরে সন্ধ্যা আটটার দিকে আমি মায়ের গোঙানির আওয়াজ শুনলাম।তারপর সেই ছেলেটা আমার ঘরে ঢুকে এল,পেছন পেছন একজন বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়;দুজনের লম্বা,সুগঠিত চেহারা,চোখে জিঘাংসা, চোয়ালে দৃঢ়তা।আমি বুঝতে পারলাম,ওরা তৈরি হয়েই এসেছে।ছেলেটা সোজা আমার কাছে এসে আমার গলায় ছুরি ধরে বলল,"পরী কোথায় বল,নইলে......"
    বলে আর কথা শেষ করল না।আমার গলায় একটা তরল,আঠালো কিছু একফোঁটা পড়ল।আমি ভয়ে আরো বিছানার সাথে মিশে গেলাম।মিহিস্বরে বললাম,"ওই আলমারিতে আছে।"
    কিন্তু তা এত ধীর স্বরে বলেছিলাম,ছেলেটা শুনতে পায়নি।আমার গালে একটা প্রকান্ড চড় কষাল,দুম করে বোমা ফাটার মতো সব হল,আমার একটা পোকা খাওয়া দাঁত ভেঙে আমার মুখগহ্বরে পড়ল।আমি কিছুক্ষণের জন্য চোখে অন্ধকার দেখলাম,কানটা ঝিঁ ঝিঁ করতে লাগল।ওই অবস্থাতেই শুনতে পেলাম,"শালা, কী বলছিস জোরে বল।"
    আমি বললাম,"ওই আলমারিতে।"
    ওরা আমাকে ছুঁড়ে ফেলে আলমারির দিকে ছুটে গেল।আমি থু করে আমার ভাঙ্গা পোকাখাওয়া দাঁতটা হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম।

    ওরা পরীকে আলমারি থেকে টেনে বের করল।তারপর ওর দাদা ওকে ধরে রাখল,আর ওর বাবা ফড়ফড় করে ওর গত তিনদিনের কাদামাটিতে মাখামাখি জামাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলল।ওর সুন্দর সুডৌল শরীরটা অনাবৃত হয়ে আমার চোখের সামনে প্রকট হল।আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চাইলাম,কিন্তু সাক্ষী হওয়ার যে নেশা,মানবিক কৌতূহল-আমাকে মুখ ফেরাতে দিল না।

    আমি দেখলাম ওর বাবা ওর গালে চড়ের পর চড় মেরে চলেছে আর তার ফাঁকে ফাঁকে স্তনগুলোকে দুহাতে যেন ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে।আমার প্রচন্ড রাগ হল হঠাৎ।আমি চিৎকার করে বলতে চাইলাম,"শুয়োরের বাচ্চা,ওটা না তোর নিজের মেয়ে?"
    কিন্তু আমার সেই প্রচণ্ড চড়টা মনে পড়তেই কুঁকড়ে গেলাম।মুখ দিয়ে একটা টুঁ শব্দটিও বেরোলো না।

    ওরা এরপর পরীকে মেঝেতে শুইয়ে ক্রমাগত ধর্ষণ করে যেতে লাগল,আমি পরীর ছটফটানি আর গোঙানি শুনতে পাচ্ছিলাম,কিন্তু দেখতে পাচ্ছিলাম না ভালো করে।এভাবে আধঘন্টা ওরা ধর্ষণ করার পর একটু থামল।ওরা অন্যমনস্ক দেখে ও(পরী) উঠে ছুটে পালাতে গেল,কিন্তু ওর দাদা খপ করে হাতটা ধরে ফেলল।পরী বারবার কাকুতি-মিনতি করতে লাগল,"দাদা ছেড়ে দাও,আমি তোমাদের সব কথা শুনব।যার সাথে বলবে বিয়ে করব,আয়ানের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখব না।আমি তোমার বোন,নিজের মায়ের পেটের বোন।একটু দয়া করো দাদা।"
    বাবার দিকেও চোখে আকুতি নিয়ে তাকাল।কিন্তু ওরা নির্বিকার।অনুভূতিশূন্য মুখগুলো যেন পাথরে গড়া।

    এরপর ওরা পরীকে আবার শোয়াল।যৌনাঙ্গে আর মলদ্বারে সাথে নিয়ে আসা লাঠি,তারপর ছুরি প্রবেশ করাতে লাগল।চিৎকারে,আর্তনাদে   ঘরের বাতাস ভরে উঠল।ওরা হিসহিসিয়ে উঠল,"চুপ মাগী!"
    এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলল,প্রায় ঘণ্টাখানেক হবে। পরী এবারে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।এম আর ওর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না;গোঙানির আওয়াজও না।ক্রমাগত রক্তপাতে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে,ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে বলতে শুনলাম,"ঈশ্বর তোমাদের বিচার করবেন।"
    আমি হাসলাম।

    ওরা পরীর অচেতন শরীরটা টানতে টানতে দরজা দিয়ে নিয়ে গেল।পেছনে রক্তের স্মৃতি রেখে গেল।আমি দর্শক হলাম।জানালা বন্ধ রাখতে হবে,আগেই রাখলে হত।তাহলে আজকে অনেক কিছুই এড়ানো যেত।কিন্তু নেশার এটাই তো বিশিষ্টতা।জানি মরব,কিন্তু তবুও ছাড়তে পারি না।

    আমার পরীর কথা ভাবতে ভালো লাগছিল না।আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম আমার নিজের মৃত্যুর।ভাবতে লাগলাম,ওরা আমাকে কী কী ভাবে মারতে পারে।আমি একটা,দুটো,তিনটে.....একশ বত্রিশ রকমের উপায়ের কথা ভাবলাম,কিন্তু তখনও ওরা এল না।

    আমি ভাবছি,ওরা কী করছে?
    এমন সময় জানালার কাছে একটা জটলা।দেখলাম একদল পুলিশের সাথে পরীর বাবা আর দাদা।পুলিশগুলো বলে বলে দিচ্ছে আর ওরা দুজন পরীর শরীরটা কেটে টুকরো টুকরো করছে।তারপর পুলিশের কুকুরগুলোর দিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে। ওরাও নিশ্চয় খুব ক্ষুধার্ত,নইলে সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিয়ে ছেঁড়া-ছিঁড়ি করে খেয়ে নিত না। পুলিশগুলোর তা দেখে সে কী উল্লাস।

    ওরা আবার বাজি ধরছে।প্রতিবারে যখন একটা করে মাংসের টুকরো ছুঁড়ে ফেলে,তার আগে ওরা বাজি ধরে কোন কুকুরটা খেতে পারবে।খেলার নিয়ম আবার কী,যে কুকুর মাংসের টুকরোটা ধরেছে তাকে গণ্য করা হবে না,বরঞ্চ যে খাচ্ছে তাকেই ধরা হবে।আর যদি একের বেশি কুকুর খায়,তাহলে যে বেশি খেয়েছে তাকে ধরা হবে।কিন্তু কে বেশি খেয়েছে তা নিয়ে ওদের প্রায়ই লড়াই হতে লাগল।কয়েকজন পুলিশ মরল তাতে।ওদের লাশগুলো কুকুরে ছিঁড়ে খেল।ওদের প্রত্যেকের হাতে নতুন ঘড়ি,নতুন সোনার চেন থেকে আলো ঠিকরে এসে আমার চোখ কানা করে দিল।যেকজন মরে গেল,তাদের ঘড়িগুলো অন্য পুলিশে খুলে নিল তড়িঘড়ি।

    এই করতে করতে ওদের(পরীর বাবা ও দাদা) কাজ শেষ হল।ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে উদ্ধত হাসি হাসল।জ্যান্ত পুলিশগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,"স্যার,চলুন।"

    ওরা চলে গেলে জায়গাটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল।আমার খুব একলা লাগল হঠাৎ।হোক না ওরা খুনি,মানুষ তো?

    এরপর একপশলা বৃষ্টি নামল।সব ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেল।আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বৃষ্টির জন্য যে দায়ী ছিল,তাকে আজ  স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ওকে দেখে আমি আশ্চর্য হলাম।আগেও কয়েকবার দেখেছি,কিন্তু তখন ওর সীমাহীন সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি।কিন্তু এখন দেখলাম ওর শরীরে পচন ধরেছে,সেই পচনশীল শরীরে চরে বেড়াচ্ছে টাকা।তারা খুবলে খুবলে ওর প্রকাণ্ড শরীরের মাংস খাচ্ছে আর পরমানন্দে মলত্যাগ করছে।বৃষ্টিতে চারিদিক ঠান্ডা হয়ে গেল।গত কদিনের যে দাবদাহ গেল!

    এরপর কদিন বেশ ভালোই গেল।জানালা দিয়ে এখন শুধু নির্মল প্রকৃতি দেখা যায়। সেই মাংসাশী কাঠবেড়ালিটা আসে।এই কদিন আমি কিচ্ছু খাইনি।মা আর বাবার মৃতদেহটা পচতে আরম্ভ করেছে।তার বিকট দুর্গন্ধ আমার খালি পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে আনার আয়োজন করেছে।কয়েকবার আঁতকার এসেছে,কিন্তু খালি পেট কি আর বমি হয়?প্রচণ্ড খিদেয় আমার পেট ক্রমাগত বিদ্রোহ করে চলেছে,আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি,কিন্তু ওরা কোনো কথা শুনতে চাইছে না।ওদের খাবার ছাড়া আর কোনো দাবি নেই,অন্য কোনো প্রলোভন নেই।

    এর পরের কয়েকদিন শুধু আমার নিজের সাথে লড়াই করে কেটে গেল।খিদের প্রচণ্ড তাড়নার হাত থেকে বাঁচতে আমি বেশি বেশি করে ঘুমাতে লাগলাম।কিন্তু ঘুম আর কত হবে,একটা সময়ের পর ঘুমও আর ধরতে চায় না।আমি শুধু চোখ বুজে শুয়ে খিদে সহ্য করতে লাগলাম।আমার শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসতে লাগল।মনে হল,এই সব আমার পূর্বকৃত পাপের ফল।যদিও আমি মনে মনে জানি,এসব মিথ্যা।কর্মফল বলে যা হয়, তা শুধু কয়েকজনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।যদি ধরা পড়ে আর যদি গরীব ও নিচু শ্রেণীর হয়।নাহলে কর্মফল পাপরূপে জমা হয়,কাল্পনিক পরলোক বা পরজন্মের জন্য।

    মৃত্যু আসছে,আমি তার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।ধীর কিন্তু প্রত্যয়ী এবং দৃঢ় সে পদক্ষেপ।প্রতি পদক্ষেপে সে আমার কাছে, আরও কাছে আসছে।মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারি তার অনিবার্যতা অস্বীকার করতে,কিন্তু তা কি করা যায়?

    যায় না।তাই সে একদিন এল।তখন আমার অচেতন অবস্থা।মাথার কাছে এসে দাঁড়ালে আমি তাকে দেখলাম।সে কী ভয়ঙ্কর, কী বিশাল, কী মহান!

    কত বুদ্ধিমান, দোর্দণ্ডপ্রতাপ মহাবীর,রাজা - মহারাজা,মন্ত্রী,সেনাপতি,আমলা সবাই তার কাছে পরাভূত হয়েছে।আমি তো সাধারণ একজন মানুষ।নিজেকে স্বান্তনা দিতে লাগলাম,কিন্তু ভয় কি হয়নি?

    হয়েছে,প্রচণ্ড রকমের হয়েছে।সে আমার শরীর ছুঁল না,প্রাণ শুঁষে নিতে লাগল।এরপর ধীরে ধীরে সব চেতনা লোপ পেল,সবার আগে বাড়তিগুলো,তারপর স্বাভাবিক।আমি জানতাম আর কোনোদিন এই পৃথিবীতে আসতে পারব না।প্রচণ্ড দুঃখ আমার বুকের ভেতর থেকে দমকা হওয়ার মতো বেরিয়ে এল।একটা হেঁচকি,সাথে চোখের কোন থেকে জল গড়িয়ে পড়ল আমার।

    আমি পঙ্গু ছিলাম,কোনোদিন পায়ের তলায় সকালের শিশিরভেজা ঘাসের ছোঁয়া পাইনি,কিন্তু আশা ছিল,একদিন পাব।আমার বাবা ছিল,মা ছিল,এত লোক ছিল আমার চারিপাশে,গাছপালা,পশুপাখি - ওরা ভালো ছিল,খারাপ ছিল,কিন্তু ছিল তো!ওরা তো আমিই ছিলাম।ওরা সবাই আমার প্রতিচ্ছবি,আর আমি ওদের।

    জানি ওই যে মৃত্যুর মূর্তি ওটা যে সত্যি নয়,নিছক আমার কল্পনা তাও জানতাম।কিন্তু সবকিছুকে মানুষের রূপে কল্পনা করা ছাড়া আর কোনো রূপ তো জানতাম না।

    আমি মরে গেলাম।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০৯ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫৭733142
  • ভালো লেখা।
     কিন্তু পোস্ট করার আগে টাইপোগুলো দেখে নেবেন তো!
  • পাগলা গণেশ | ০৯ আগস্ট ২০২৫ ১১:১৮733143
  • দেখেছিলাম।কিছু রয়ে গেছে বোধহয়।
    ক্ষমা করবেন,দেখে নিচ্ছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন